Views:
A+
A-
রমযানের বিষয়ভিত্তিক হাদিস : শিক্ষা ও মাসায়েল (১ম পর্ব)
১. রমযানের পূর্বে সওমের নিষেধাজ্ঞা
রমযানের বিষয়ভিত্তিক হাদিস : শিক্ষা ও মাসায়েল (১ম পর্ব)
ভূমিকা
সকল প্রশংসা দু’জাহানের পালনকর্তা আল্লাহ তা‘আলার জন্য, এবং দরূদ ও সালাম সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসূলের ওপর।
অতঃপর: রমযান মাস এ উম্মতের এক বিশেষ মাস। এ মাসে তারা ইবাদত, আমল ও কল্যাণকর কাজে মনোযোগী হয়, কুরআন, হাদিস ও উপদেশ শ্রবণ করে, তাই অনেক আলেম এতে বিশেষ দরস ও মজলিসের ব্যবস্থা করেন, যা সাধারণত ফজর ও এশার পর প্রদান করা হয়। কতক দরস হয় সংক্ষেপ, আবার কতক হয় দীর্ঘ ও বিস্তারিত। কতক দরস ওয়াজ-উপদেশে সীমাবদ্ধ থাকে, আবার কতক থাকে মাসআলা-মাসায়েলে। কতক দরস হয় শিক্ষা ও আদর্শের ওপর, আবার কতক হয় আমল ও ফযিলতের ওপর। কেউ কুরআন-হাদিসে সীমাবদ্ধ থাকেন, কেউ তাতে আরো বৃদ্ধি করেন ইত্যাদি। আমি পূর্ব থেকে সিয়াম, ইতিকাফ, রমযানের কিয়াম ও লাইলাতুল কদর বিষয়ে হাদিস জমা করতে ছিলাম, সাথে লিখতে ছিলাম কতক ফায়দা ও মাসায়েল, যেন বিশেষভাবে দ্বীনের দায়ি ও মসজিদের ইমামগণ এবং সাধারণভাবে সকলে উপকৃত হয়। অতঃপর এসব হাদিস, শিক্ষা ও মাসায়েলসহ সুন্দরভাবে বিন্যাস করে খুব সংক্ষিপ্ত ত্রিশটি দরস তৈরি করি, যা ফজরের পর মসজিদে পেশ করার উপযোগী। এগুলোকে আমি বেজোড় সংখ্যায় রেখেছি, যেমন ১, ৩, ৫, ও ৭নং দরসসমূহ। আর ত্রিশটি দরস তৈরি করি একটু দীর্ঘ ও বিস্তারিত, যা এশার পূর্বে মসজিদে পেশ করার উপযোগী। এগুলোকে আমি জোড় সংখ্যায় রেখেছি, যেমন ২, ৪, ৬ ও ৮নং দরসসমূহ। কারণ মসজিদের ইমামগণ রমযানে এ দু’টি সময়ে দরস দিয়ে থাকেন। এ দরসগুলো তৈরিতে আমি নিম্নের পদ্ধতি অনুসরণ করেছি:
এক: প্রত্যেক দরসের ভিত্তি রেখেছি কুরআন ও হাদিসের ওপর, যদি শিরোনামের অনুকূলে কোন আয়াত পেয়েছি, তাহলে তা উল্লেখ করেছি, অতঃপর হাদিস উল্লেখ করেছি। আর শিরোনামের অনুকূলে কোন আয়াত না থাকলে সরাসরি উক্ত বিষয়ের হাদিস উল্লেখ করেছি।
দুই: আমি নির্দিষ্ট বিষয়ে সকল হাদিস জমা করিনি, তবে সেখান থেকে পরিপূর্ণ ও উপযুক্ত হাদিস বাছাই করার চেষ্টা করেছি।
তিন: টিকাতে সংক্ষেপে হাদিসের সূত্র ও তার হুকুম উল্লেখ করেছি।
চার: হাদিস বাছাই করার ক্ষেত্রে দলিল হিসেবে পেশ করার উপযুক্ত সহিহ ও হাসান হাদিসগুলো নির্বাচন করেছি, দুর্বল হাদিস এড়িয়ে গেছি, তবে যেসব হাদিসের ক্ষেত্রে ইখতিলাফ রয়েছে, সেখানে বিশুদ্ধ অভিমত বাছাই করার চেষ্টা করেছি, যার সংখ্যা খুব কম।
পাঁচ: প্রথমে বুখারি ও মুসলিমের হাদিস, অতঃপর তাদের একলা বর্ণিত হাদিস, অতঃপর সুনানের চার কিতাবের হাদিস উল্লেখ করেছি, বিশেষ কারণ ব্যতীত এ নিয়মের বিপরীত করিনি। প্রথমে মারফূ, অতঃপর মৌকুফ, অতঃপর মনীষীদের বাণী উল্লেখ করেছি।
ছয়: হাদিস উল্লেখ করে তার থেকে নিঃসারিত শিক্ষা ও মাসায়েল উল্লেখ করেছি, যার কতক আমার নিজের গবেষণার ফল, তবে অধিকাংশ সংগ্রহ করেছি বিভিন্ন ব্যাখ্যা গ্রন্থ, ফতোয়া ও অন্যান্য গ্রন্থ থেকে। ইখতিলাফি মাসআলায় আমার নিকট যেটা অধিক বিশুদ্ধ মনে হয়েছে, তাই উল্লেখ করেছি, ইখতিলাফ উল্লেখ করি নি। বিশেষভাবে সৌদি আরবের ফতোয়ার অনুসরণ করেছি, যেন মানুষ অপরিচিত ফতোয়া শ্রবণ করে বিভ্রান্তিতে লিপ্ত না হয়।
সাত: আলেমদের ইজতেহাদের ফসল শিক্ষণীয় বিষয় ও মাসায়েল উল্লেখ করেছি।
আট: হাদিসগুলো হরকতসহ উল্লেখ করার চেষ্টা করেছি, যেন পড়তে সমস্যা না হয়, পাঠক ও শ্রবণকারী সহজে তার অর্থ উদ্ধারে সক্ষম হয়।
আল্লাহ আমাদের এ সংকলন থেকে উপকৃত হওয়ার তাওফিক দান করুন।
সংকলক
ইবরাহিম ইব্ন মুহাম্মদ আল-হাকিল
সোমবার, ১৩/৭/১৪২৭হি.
সংকলক
ইবরাহিম ইব্ন মুহাম্মদ আল-হাকিল
সোমবার, ১৩/৭/১৪২৭হি.
১ | ২ | ||
৩ | ৪ | ||
৫ | ৬ | ||
৭ | ৮ | ||
৯ | ১০ | ||
১১ | ১২ | ||
১৩ | ১৪ | ||
১৫ | ১৬ | ||
১৭ | ১৮ | ||
১৯ | ২০ | ||
২১ | ২২ | ||
২৩ | ২৪ | ||
২৫ | ২৬ | ||
২৭ | ২৮ | ||
২৯ | ৩০ | ||
৩১ | ৩২ | ||
৩৩ | ৩৪ | ||
৩৫ | ৩৬ | ||
৩৭ | ৩৮ | ||
৩৯ | ৪০ | ||
৪১ | ৪২ | ||
৪৩ | ৪৪ | ||
৪৫ | ৪৬ | ||
৪৭ | ৪৮ | ||
৪৯ | ৫০ | ||
৫১ | ৫২ | ||
৫৩ | ৫৪ | ||
৫৫ | ৫৬ | ||
৫৭ | ৫৮ | ||
৫৯ | ৬০ |
১. রমযানের পূর্বে সওমের নিষেধাজ্ঞা
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
«لا يَتَقَدَّمَنَّ أحَدُكُم رَمَضَانَ بصَومِ يومٍ أو يومَينِ إلا أنْ يَكونَ رَجُلٌ كان يَصُومُ صَومَه فَليَصُمْ ذَلكَ اليَوم» رواه الشيخان.
“তোমাদের কেউ যেন একদিন বা দু’দিনের সওমের মাধ্যমে রমযানকে এগিয়ে না আনে, তবে কারো যদি পূর্বের অভ্যাস থাকে, তাহলে সে ঐ দিন সওম রাখবে”।[1]
তিরমিযিতে হাদিসটি এভাবে এসেছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«لا تَقَدَّمُوا الشَّهرَ بِيَوْمٍٍ ولا بِيَومَين إلا أن يُوَافِقَ ذَلكَ صَوْماً كَانَ يَصُوُمُهُ أَحَدُكُم...».
“তোমরা একদিন বা দু’দিনের মাধ্যমে (রমযান) মাস এগোবে না, তবে সেদিন যদি সওমের দিন হয়, যা তোমাদের কেউ পালন করত...”
শিক্ষা ও মাসায়েল:
এক. রমযানের সতর্কতার জন্য তার পূর্বে সওমের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। ওলামায়ে কেরাম বলেছেন: হাদিসের অর্থ: তোমরা সওমের মাধ্যমে রমযানের সতর্কতার নিয়তে রমযানকে এগিয়ে আনবে না।[2]
ইমাম তিরমিযি রাহিমাহুল্লাহু বলেন: “আহলে ইলমের আমল এ হাদিস মোতাবেক। তারা রমযান মাস আসার আগে রমযান হিসেবে সওম পালন করা পছন্দ করতেন না। হ্যাঁ কেউ যদি পূর্ব থেকে নির্দিষ্ট দিন সওম পালন করে, আর সেদিন রমযানের আগের দিন হয়, তবে এতে তাদের নিকট কোন সমস্যা নেই”।[3]
তিন. এ দিন যার সওমের দিন, সে এ থেকে ব্যতিক্রম, যেমন কাফফারা বা মান্নতের সওম, এবং যার এ দিন নফল সওমের অভ্যাস রয়েছে, যেমন সোমবার ও বৃহস্পতিবার।
চার. এ নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে সবচে’ যৌক্তিক যে হিকমত বর্ণনা করা হয়েছে তা হলো, রমযানের সওম শরয়ি চাঁদ দেখার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, সুতরাং যে শরয়িভাবে চাঁদ দেখার এক বা দু’দিন আগে সওম রাখল সে শরিয়তের এ বিধানে ত্রুটির নির্দেশ করল, এবং যেসব ‘নস’ বা দলিলে চাঁদ দেখার সাথে সওম সম্পৃক্ত করা হয়েছে, তা সে প্রত্যাখ্যান করল।[5]
ছয়. এ হাদিস থেকে জানা গেল, নফল ও ফরয ইবাদতের মাঝে প্রাচীর ও বিরতি রয়েছে, যেমন শাবানের নফল ও রমযানের ফরযের বিরতি সন্দেহের দিন সওম পালন করা হারাম। অনুরূপ রমযানের শেষ ও শাওয়ালের প্রথম দিন তথা ঈদের দিন সওম পালন করা হারাম। ইব্ন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু ও একদল সলফ ফরয ও নফল সালাতের মাঝে বিরতি সৃষ্টি করা মোস্তাহাব বলেছেন, যেমন কথাবার্তা বলা বা নড়াচড়ার করা বা সালাতের স্থানে আগ-পিছ হওয়া।[7]
সাত. শরয়িত আঁকড়ে ধরা ওয়াজিব, তাতে বৃদ্ধি বা হ্রাস করা বৈধ নয়, কারণ তা দ্বীনের মধ্যে বাড়াবাড়ি অথবা দ্বীন থেকে বিচ্যুতির আলামত। সতর্কতামূলক রমযানের আগে রমযানের নিয়তে সওমের নিষেধাজ্ঞা থেকে এ বিষয়টি স্পষ্ট হয়।
২. মাসের শুরু-শেষ নির্ধারণ
আব্দুল্লাহ ইব্ন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা রমযান প্রসঙ্গে বলেন:
«لا تَصُومُوا حَتَّى تَرَوا الهِلال، ولا تُفْطِروا حَتَّى تَروْهُ، فَإِنْ غُمَّ عليكُمُ فاقْدُرُوا لهُ» رواه الشيخان.
“তোমরা সওম রাখবে না যতক্ষণ না হেলাল (নতুন চাঁদ) দেখ, আর সওম ছাড়বে না যতক্ষণ না তাকে দেখ, আর যদি তোমাদের থেকে তা অদৃশ্য হয়, তাহলে মাস পূর্ণ কর”।
বুখারির অপর বর্ণনায় আছে:
«إِذا رَأَيتُمُوهُ فصُومُوا، وإِذا رَأَيتمُوهُ فأفطِرُوا، فَإِنْ غَمَّ عَلَيكُم فاقدُرُوا له».
“যখন তোমরা তা (নতুন চাঁদ) দেখ সওম পালন কর, আর যখন তোমরা তা দেখ সওম ভঙ্গ কর, যদি তা তোমাদের থেকে আড়াল হয়, তবে ত্রিশ দিন পূর্ণ কর”।[8]
জমহুর ওলামায়ে কেরাম বলেন: যদি ঊনত্রিশ তারিখ চাঁদ দেখা না যায়, তাহলে ত্রিশ দিন পূর্ণ করবে।[9] যেমন অন্যান্য বর্ণনায় এসেছে:
«فَإِنْ أُغْمِىَ عَلَيْكُم فَاقْدُروا لَهُ ثَلاثِين»، ورِوايةُ: «فَعُدُّوا ثَلاثينَ» ورِوايَةُ: «فَأَكْمِلُوا العَدَدَ» وكُلُّها في صَحِيحِ مُسْلِمٍ.
“যদি চাঁদ তোমাদের থেকে আড়াল করা হয়, তাহলে তার ত্রিশ দিন পূর্ণ কর”। অপর বর্ণনায় এসেছে: “ত্রিশ দিন গণনা কর”। অপর বর্ণনায় এসেছে: “সংখ্যা পূর্ণ কর”। এসব বর্ণনা মুসলিমে রয়েছে।[10]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
«إِذا رأَيتُم الهِلالَ فصُومُوا، وإِذا رَأيتُمُوهُ فَأَفْطِروا، فإن غُمَّ عَلَيكُمْ فصُومُوا ثلاثِينَ يَوماً».
“যখন তোমরা চাঁদ দেখ সওম পালন কর, আবার যখন তোমরা চাঁদ দেখ সওম ত্যাগ কর। যদি তা তোমাদের থেকে আড়াল করা হয়, তাহলে ত্রিশ দিন সিয়াম পালন কর”।
«صُومُوا لِرُؤْيَتِهِ، وَأَفْطِرُوا لِرُؤْيَتِهِ، فَإِن غُمَّ عَلَيْكُمْ فَأَكْمِلُوا عِدَّةَ شَعْبَانَ ثَلاثينَ».
অপর বর্ণনায় আছে: “তোমরা চাঁদ দেখে সওম রাখ ও চাঁদ দেখে সওম ত্যাগ কর, যদি তোমাদের থেকে আড়াল করা হয়, তাহলে শাবানের ত্রিশ দিন পূর্ণ কর”।
«فَإِن غَبِيَ عَلَيْكُمْ فَأَكْمِلُوا عِدَّةَ شَعْبَانَ ثَلاثِينَ» رواه الشيخان.
অপর বর্ণনায় আছে: “যদি তা তোমাদের থেকে লুকিয়ে থাকে, তাহলে শাবানের ত্রিশ দিন পূর্ণ কর”। বুখারি ও মুসলিম।[11]
আব্দুল্লাহ ইব্ন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
«تَرَاءَى النَّاسُ الهلالَ فَأَخْبَرْتُ رَسُولَ الله ﷺ أَني رَأَيْتُهُ فَصَامَهُ وأَمَرَ النَّاسَ بِصيَامِهِ» رواه أبو داود وصححه ابن حبان والحاكم.
“লোকেরা চাঁদ দেখছিল, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সংবাদ দিলাম, আমি চাঁদ দেখেছি, অতঃপর তিনি সওম পালন করেন ও লোকদের সওম পালনের নির্দেশ দেন”।[12]
শিক্ষা ও মাসায়েল:
এক. রমযানের সওম শরয়ি চাঁদ দেখার ওপর নির্ভরশীল। যদি মেঘ, ধুলো, ধুঁয়া ইত্যাদি চাঁদ দেখার ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়, তাহলে শাবান মাসের ত্রিশ দিন পূর্ণ করা ওয়াজিব।
দুই. যদি মেঘ বা ধুলো ইত্যাদির কারণে চাঁদ দেখা না যায়, তাহলে সতর্কতাস্বরূপ শাবানের শেষ দিন সওম রাখবে না। কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন: “চাঁদ না দেখা পর্যন্ত সওম পালন কর না”। আর নিষেধাজ্ঞার দাবি হচ্ছে হারাম।
তিন. যখন চাঁদ দেখা প্রমাণিত হলে সওম ওয়াজিব, তারপর জ্যোতিষ্ক ও গণকদের কথায় কর্ণপাত করা যাবে না।[13]
চার. ইসলামি শরিয়তের সরলতার প্রমাণ যে, সওম রাখা ও ত্যাগ করা চাঁদ দেখার উপর নির্ভরশীল করেছে, যার জন্য শিক্ষার প্রয়োজন হয় না, দৃষ্টি সম্পন্ন প্রত্যেক ব্যক্তি তা দেখতে পায়, পক্ষান্তরে যদি তা নক্ষত্রের উপর নির্ভরশীল করা হত, তাহলে অনেক জায়গায় মুসলিমদের নিকট চাদেঁর বিষয়টি কঠিন আকার ধারণ করত, যেখানে গণক ও জ্যোতিষ্ক অনুপস্থিত।[14]
পাঁচ. যে দেশে চাঁদ দেখা গেল, তার অধিবাসীদের ওপর সওম ওয়াজিব। যে দেশে চাঁদ দেখা যায়নি, তার অধিবাসীদের ওপর সওম ওয়াজিব নয়, কারণ সওমের সম্পর্ক চাঁদ দেখার সাথে, দ্বিতীয়ত চাঁদের কক্ষপথ বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন।[15]
ছয়. রমযানের চাঁদ দেখার ক্ষেত্রে একজন বিশ্বস্ত (শরিয়তের ভাষায় আদেল) ব্যক্তির সাক্ষী গ্রহণযোগ্য, যার প্রমাণ ইব্ন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর হাদিস। কিন্তু রমযান সমাপ্তির সংবাদের জন্য দু’জন নির্ভরযোগ্য লোকের সাক্ষী অপরিহার্য। একাধিক হাদিস দ্বারা এ বিষয়টি প্রমাণিত।[16]
আট. যে চাঁদ দেখে তার দায়িত্ব দেশের প্রধান বা তার প্রতিনিধির নিকট সংবাদ পৌঁছে দেয়া।
নয়. আধুনিক প্রচার যন্ত্র থেকে প্রচারিত রমযান শুরু বা সমাপ্তির সংবাদ বিশ্বাস করা জরুরী, যদি তা দেশের প্রধান বা তার প্রতিনিধি থেকে প্রচার করা হয়।
দশ. মাসের শুরু-শেষ জানার জন্য ত্রিশে শাবান ও ত্রিশে রমযানের চাঁদ দেখা মোস্তাহাব।
এগার. নারী যদি চাঁদ দেখে, তার সাক্ষী গ্রহণ করার ব্যাপারে আলেমদের দ্বিমত রয়েছে। শায়খ ইব্ন বায রাহিমাহুল্লাহু তার চাঁদ দেখার সাক্ষী গ্রহণ না করার অভিমত প্রাধান্য দিয়েছেন, কারণ চাঁদ দেখা পুরুষদের বৈশিষ্ট্য, এ ব্যাপারে তারা নারীদের থেকে অধিক জ্ঞানের অধিকারী।[18]
৩. সওম ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভ
ইব্ন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
«بنُيَ الإسْلامُ على خمَسْ:ٍ شهَادةِ أنَّ لا إلَه إلَّا اللهُ وأنَّ مُحمَّداً رَسُولُ الله، وإِقَامِ الصَّلاةِ، وإيتَاءِ الزَّكَاة، والحجِّ وَصَومِ رَمَضَانَ» رواه الشيخان.
“ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি বস্তুর ওপর রাখা হয়েছে: সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ব্যতীত কোনো মাবুদ নেই, এবং মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল, সালাত কায়েম করা, যাকাত প্রদান করা, হজ সম্পাদন করা ও রমযানের সওম পালন করা”।[19]
আবু জামরাহ নসর ইব্ন ইমরান রাহিমাহুল্লাহু বলেন: “একদা আমি ইব্ন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু ও শ্রোতাদের মাঝে দোভাষীর কাজ করছিলাম। তিনি বললেন: আব্দুল কায়েস গোত্রের প্রতিনিধি গ্রুপ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে উপস্থিত হন, তিনি তাদের বলেন: কোন গ্রুপ বা কোন সম্প্রদায়ের লোক? তারা বলল: আমরা রাবিয়াহ গোত্রের। তিনি বললেন: স্বাগতম প্রতিনিধি গ্রুপ বা স্বাগতম রাবিয়াহ সম্প্রদায়, তিরষ্কার ও ভর্ৎসনা মুক্ত। তারা বলল: আমরা আপনার নিকট আগমন করি অনেক দূর থেকে। আপনার ও আমাদের মাঝে রয়েছে মুদার গোত্রের কাফেরদের এ গ্রাম, এ জন্য হারাম তথা সম্মানিত ও যুদ্ধ নিষিদ্ধ মাস ব্যতীত আপনার কাছে আমরা আসতে পারি না। অতএব আমাদেরকে উপদেশ দিন, যা আমরা আমাদের রেখে আসা ভাইদের নিকট পৌঁছাব এবং যার ওপর আমল করে আমরা সকলে জান্নাতে যাব। তিনি তাদের নির্দেশ দিলেন চারটি বিষয়ের: নির্দেশ দিলেন এক আল্লাহর ওপর ঈমানের। তিনি বললেন: তোমরা কি জান আল্লাহর ওপর ঈমান কি? তারা বলল: আল্লাহ ও তার রাসূল ভাল জানেন। তিনি বললেন:
«شَهَادَةُ أَنَّ لا إِله إلَّا الله وأَنَّ مُحمداً رَسُولُ الله، وإِقَامُ الصَّلاةِ، وإيتَاءُ الزَّكَاةِ، وصَومُ رَمَضَانَ، وتُعْطُوا الخُمُسَ من المَغْنَم... قال: احْفَظُوهُ وأَخْبِرُوهُ مَنْ وَرَاءَكُم» رواه الشيخان.
“সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ব্যতীত কোনো মাবুদ নেই, মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল, সালাত কায়েম করা, যাকাত আদায় করা, রমযানের সওম পালন করা ও গনিমতের এক পঞ্চমাংশ দান করা... তিনি বললেন: এগুলো মনে রাখ ও তোমাদের রেখে আসা ভাইদের বল”।[20]
শিক্ষা ও মাসায়েল:[21]
এক. ঈমান ও ইসলামের বর্ণনা, অর্থাৎ ঈমান হচ্ছে অন্তরের স্বীকৃতি আর ইসলাম হচ্ছে আত্মসমর্পণ ও বাহ্যিক আনুগত্য। ঈমান ও ইসলাম একসঙ্গে উল্লেখ হলে এ অর্থ প্রকাশ করে, যদি আলাদা উল্লেখ হয়, তখন একে অপরের অর্থ প্রকাশ করে।
দুই. মূলত ইসলাম হচ্ছে আল্লাহ ও তার রাসূলের সাক্ষ্য দেয়া, তবে ইসলামের মৌলিক আমল হিসেবে সালাত, যাকাত, সওম ও হজ তার সাথে সম্পৃক্ত করা হয়।
তিন. এ পাঁচটি রোকন বা তার আংশিক ত্যাগ করা আল্লাহর অবাধ্যতা প্রমাণ করে।
চার. ইসলামে সিয়ামের গুরুত্ব অপরিসীম, তাই সিয়ামকে তার রোকন স্থির করা হয়েছে।
পাঁচ. দ্বীনের গরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো জানা জরুরী। ওয়াজিবের ওপর আমল করা, হারাম থেকে বিরত থাকা এবং মানুষের নিকট দ্বীন পৌঁছে দেয়া, যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে বলেছেন: “তোমরা এগুলো মনে রাখ ও তোমাদের রেখে আসা ভাইদের পৌঁছে দাও”।
৪. রমযানের ফযিলত
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إذا دَخَلَ شَهرُ رَمَضَانَ فُتِحَتْ أَبْوَابُ السَّمَاءِ، وَغُلِّقَتْ أَبوَابُ جَهَنَّمَ، وسُلْسِلَتِ الشَّيَاطِينُ» رَوَاهُ الشَّيخَان.
“যখন রমযান মাস আগমন করে, তখন আসমানের দরজাসমূহ খুলা হয়, জাহান্নামের দরজাসমূহ বদ্ধ করা হয় এবং শয়তানগুলো শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়”।[22] অপর বর্ণনায় আছে:
«إذا كَانَ أَوَّلُ ليْلَةٍ من شَهرِ رَمَضَانَ صُفِّدَتِ الشَّياطِينُ ومَرَدَةُ الجِنِّ، وغُلِّقَتْ أبوَابُ النَّارِ فَلَمْ يُفْتَحْ منْهَا بَابٌ، وفُتِحَتْ أَبوَابُ الجَنَّةِ فلمْ يُغْلَقْ منْها بَابٌ، ويُنَادِي مُنَادٍ: يا بَاغِيَ الخَيرِ: أَقْبِلْ، ويا بَاغِيَ الشَّر: أَقْصِرْ، ولله عُتَقَاءُ مِنَ النَّار وذَلكَ كُلَّ لَيْلَةٍ».
“যখন রমযানের প্রথম রাত হয়, শয়তান ও অবাধ্য জিনগুলো শৃঙ্খলিত করা হয়, জাহান্নামের সকল দরজা বন্ধ করা হয়; খোলা হয় না তার কোন দ্বার, জান্নাতের দুয়ারগুলো খুলে দেয়া হয়; বদ্ধ করা হয় না তার কোন তোরণ। এবং একজন ঘোষক ঘোষণা করে: হে পুণ্যের অন্বেষণকারী, অগ্রসর হও। হে মন্দের অন্বেষণকারী, ক্ষান্ত হও। আর আল্লাহর জন্য রয়েছে জাহান্নাম থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত অনেক বান্দা, এটা প্রত্যেক রাতে হয়”।[23]
হাদিসে বর্ণিত: “হে পুণ্যের অন্বেষণকারী অগ্রসর হও, হে মন্দের অন্বেষণকারী ক্ষান্ত হও”। অর্থ: হে কল্যাণ অনুসন্ধানকারী, তুমি আরো কল্যাণ অনুসন্ধান কর। এটা তোমার মুখ্য সময়, এতে অল্প আমলে তোমাকে অধিক প্রদান করা হবে। আর হে মন্দের প্রত্যাশী, তুমি ক্ষান্ত হও, তওবা কর, এটা তওবা করার মোক্ষম সময়।
অপর বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাহাবিদের সুসংবাদ প্রদান করে বলেছেন:
«أَتَاكُمْ رَمَضَانُ شَهرٌ مُبارَكٌ فَرَضَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ صِيَامَهُ، تُفَتَّحُ فيه أَبوَابُ السَّمَاءِ، وتُغْلَّقُ فِيهِ أَبْوَابُ الجَحِيمِ، وتُغَلُّ فيه مَرَدَةُ الشَّياطِينِ، لله فيهِ لَيلَةٌ خَيرٌ مِنْ أَلْفِ شَهْرٍ، مَنْ حُرِمَ خَيرَهَا فَقَدْ حُرِم».
“তোমাদের নিকট বরকতময় মাস রমযান এসেছে, আল্লাহ এর সওম ফরয করেছেন। এতে জান্নাতের দ্বারসমূহ খোলা হয়, জাহান্নামের দরজাসমূহ বদ্ধ করা হয়, শিকলে বেঁধে রাখা হয় শয়তানগুলো। এতে একটি রজনী রয়েছে যা সহস্র মাস থেকে উত্তম। যে তার কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হল, সে প্রকৃত অর্থে বঞ্চিত হল”।[24]
আবু হুরায়রা অথবা আবুসাইদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তারা বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إِنَّ لله عُتَقَاءَ في كُلِّ يَوْمٍٍ ولَيلَةٍ، لكُلِّ عَبدٍ مِنْهُم دَعوَةٌ مُستَجَابَةٌ» رواه أحمد.
“প্রত্যেক দিনে ও রাতে আল্লাহর মুক্তিপ্রাপ্ত বান্দা রয়েছে, তাদের প্রত্যেকের জন্য রয়েছে দো‘আ কবুলের প্রতিশ্রুতি”।[25]
জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إنَّ لله عِنْدَ كُلِّ فِطْرٍ عُتَقَاءَ، وذَلكَ كُلَّ لَيلَة» رواه ابن ماجه.
শিক্ষা ও মাসায়েল:
এক. রমযান মাসের ফযিলত যে, এতে জান্নাতের দরজাসমূহ উন্মুক্ত করা হয়, জাহান্নামের দরজাসমূহ বদ্ধ করা হয় ও শয়তানগুলো শৃঙ্খলে আবদ্ধ করা হয়। রমযানের প্রত্যেক রাতে তা সংঘটিত হয়, শেষ রমযান পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।
দুই. এসব হাদিস প্রমাণ করে যে, জান্নাত-জাহান্নাম আল্লাহর সৃষ্ট দু’টি বস্তু, এগুলোর দরজাসমূহ প্রকৃত অর্থে খোলা ও বদ্ধ করা হয়।[27]
তিন. ফযিলতপূর্ণ মৌসুম ও তাতে সম্পাদিত আমল আল্লাহর সন্তুষ্টির কারণ, যে কারণে জান্নাতের দরজাসমূহ খোলা ও জাহান্নামের দরজাসমূহ বদ্ধ করা হয়।
চার. রমযানের সুসংবাদ প্রদান ও তার শুভেচ্ছা বিনিময় বৈধ। কারণ সাহাবিদের সুসংবাদ প্রদান ও তাদেরকে আমলের প্রতি উদ্বুদ্ধ করার জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের এসব বৈশিষ্ট্যের বর্ণনা দিতেন। অনুরূপ প্রত্যেক কল্যাণের সুসংবাদ প্রদান বৈধ।
পাঁচ. অবাধ্য শয়তানগুলো এ মাসে আবদ্ধ করা হয়, ফলে তাদের প্রভাব কমে যায় ও মানুষ অধিক আমল করার সুযোগ পায়।
ছয়. বান্দার ওপর আল্লাহর অনুগ্রহ যে, তিনি তাদের সিয়াম হিফাজত করেন, তাদের থেকে অবাধ্য শয়তানের প্রভাব দূর করেন, যেন সে তাদের ইবাদত বিনষ্ট করার সুযোগ না পায়।[28]
সাত. এসব হাদিস থেকে শয়তানের অস্তিত্বের প্রমাণ মিলে। তাদের শরীর রয়েছে, যা শিকলে বাঁধা যায়। তাদের কতিপয় অবাধ্য, রমযানে যাদেরকে শৃঙ্খলবদ্ধ করা হয়।[29]
আট. রমযানের বিশেষ মর্যাদা সেসব মুমিনগণ অর্জন করবে, যারা এর যথাযথ মর্যাদায় দেয় ও এতে আল্লাহর বিধান পালন করে। পক্ষান্তরে কাফের, যারা এতে পানাহার করে, এর কোন মর্যাদা দেয় না, তাদের জন্য জান্নাতের দরজাসমূহ খোলা ও জাহান্নামের দরজাসমূহ বদ্ধ করা হয় না। তাদের শয়তানগুলো বন্দি করা হয় না, তারা জাহান্নাম থেকে মুক্তির যোগ্য নয়।[30] অতএব এ মাসে তাদের মৃতরা আল্লাহর শাস্তি থেকে মুক্তি পাবে না।
নয়. যে মুসলিম কাফেরদের সঙ্গে মিল রাখল, যেমন রমযানের মূল্য দিল না, এতে পানাহার করল, সওম ভঙ্গকারী কাজ করল, অথবা সওমের সওয়াব হ্রাসকারী কর্মে লিপ্ত হল, যেমন গীবত, চোগলখুরী, মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া ও এসব বৈঠকে উপস্থিত হওয়া, বলা যায় সে রমযানের ফযিলত থেকে বঞ্চিত হবে, তার জন্য জান্নাতের দরজাসমূহ উন্মুক্ত ও জাহান্নামের দরজাসমূহ বদ্ধ করা হবে না, তার শয়তানগুলো শৃঙ্খলাবদ্ধ থাকবে না।
দশ. সুরায়ে ‘সাদ’-এর ৫০নং আয়াতে জান্নাতের প্রশংসায় বলা হয়েছে:
﴿جَنَّٰتِ عَدۡنٖ مُّفَتَّحَةٗ لَّهُمُ ٱلۡأَبۡوَٰبُ ٥٠﴾ [ص: 50]
“চিরস্থায়ী জান্নাত, যার দরজাসমূহ থাকবে তাদের জন্য উন্মুক্ত”।[31] এ আয়াত রমযানের উপরোক্ত বৈশিষ্ট্যের বিপরীত নয়, কারণ এ আয়াত জান্নাতের দরজাসমূহ সর্বদা উন্মুক্ত থাকার দাবি করে না। দ্বিতীয়ত এ আয়াত কিয়ামতের দিন সম্পর্কে। অনুরূপ জাহান্নাম সম্পর্কে সুরায়ে জুমারের ৭১নং আয়াত:
﴿حَتَّىٰٓ إِذَا جَآءُوهَا فُتِحَتۡ أَبۡوَٰبُهَا ٧١﴾ [الزمر: 71]
“অবশেষে তারা যখন জাহান্নামের কাছে এসে পৌঁছবে তখন তার দরজাগুলো খুলে দেয়া হবে”।[32] হতে পারে এর পূর্বে জাহান্নামের দরজাসমূহ বদ্ধ থাকবে।[33]
এগার. লাইলাতুল কদর ফযিলতপূর্ণ। এ রাত লাইলাতুল কদর বিহীন হাজার মাস থেকে উত্তম। এ রাতের বরকত থেকে যে মাহরুম হল, সে অনেক কল্যাণ থেকে মাহরুম হল।
বারো. রমযানের প্রত্যেক রাতে আল্লাহর মুক্ত করা কতিপয় বান্দা থাকে। যারা আল্লাহর মহব্বত, সওয়াবের আশা ও শাস্তির ভয়ে সওম রাখে, সওম হিফাজত করে, কিয়াম করে, ইহসানের প্রতি যত্নশীল থাকে ও অধিক নেক আমল করে, তারা মুক্তির বেশী হকদার।
তের. জাহান্নাম থেকে মুক্ত এসব বান্দার জন্য আল্লাহর নিকট দো‘আ কবুলের ওয়াদা রয়েছে। তারা দু’টি কল্যাণ লাভ করেছে: জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও দো‘আ কবুলের প্রতিশ্রুতি।
চৌদ্দ. মুসলিমদের উচিত সওয়াব বিনষ্ট বা হ্রাসকারী কর্ম থেকে সওম হিফাজত করা, যেমন চোখ, কান ও জবান সংরক্ষণ করা, তাহলে ইনশাআল্লাহ জাহান্নাম থেকে মুক্তির সনদ মিলবে।
পনের. সওম পালনকারীর উচিত অধিক দো‘আ করা, কারণ তার দো‘আ কবুলের সম্ভাবনা রয়েছে।
৫. ফরয সওমের নিয়ত
হাফসা বিনতে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«مَنْ لم يُجْمِعِ الصِّيامَ قَبلَ الفَجْرِ فَلا صِيامَ لَه»
“যে ফজরের পূর্বে সওমের নিয়ত করল না, তার সওম নেই”।
ইমাম নাসায়ি এভাবে বর্ণনা করেছেন:
ইমাম নাসায়ি এভাবে বর্ণনা করেছেন:
«مَنْ لم يُبَيِّتْ الصِّيامَ قَبْلَ الفَجْرِ فَلا صِيامَ لَهُ».
“যে ফজরের পূর্বে রাত থেকে সওম আরম্ভ করল না, তার সওম নেই”।[34]
আব্দুল্লাহ ইব্ন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলতেন:
আব্দুল্লাহ ইব্ন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলতেন:
«لا يَصُومُ إِلَّا مَنْ أَجْمَعَ الصِّيامَ قَبْلَ الفَجْرِ» رواه مالك.
রাত থেকে সওম আরম্ভ করার অর্থ হচ্ছে: রাত থেকে সওমের দৃঢ় ও চূড়ান্ত নিয়ত করা, যে ফজরের পূর্বে সওমের দৃঢ় নিয়ত করল না, তার সওম হবে না।[36]
ইমাম তিরমিযি রহ. বলেন: আলেমদের নিকট এ হাদিসের অর্থ হচ্ছে: রমযান মাসে ফজরের পূর্বে যে সওম আরম্ভ করল না, অথবা রমযানের কাযা অথবা মান্নতের সওমে যে রাত থেকে নিয়ত করল না, তার সওম শুদ্ধ হবে না। হ্যাঁ, নফল সওমের নিয়ত ভোর হওয়ার পর বৈধ। এটা ইমাম শাফেয়ী, আহমদ ও ইসহাকের অভিমত।[37]
শিক্ষা ও মাসায়েল:
এক. সিয়ামে ইবাদতের নিয়ত করা জরুরী, যদি কেউ স্বাস্থ্য রক্ষা, ডাক্তারের পরামর্শ, পানাহারের প্রতি অনীহা বা অন্য কারণে খাদ্য ও স্ত্রীগমন থেকে বিরত থাকে, তার এ বিরত থাকা শরয়ি সওম গণ্য হবে না, সে এ কারণে সওয়াব পাবে না।
দুই. নিয়ত অন্তরের আমল, অতএব যার অন্তরে এ ধারণা হল যে, আগামীকাল সে সওম রাখবে, সে নিয়ত করল।
তিন. ওয়াজিব সওম যেমন রমযান, মানত ও কাফফারার ক্ষেত্রে পূর্ণ দিন তথা সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সওমের নিয়তে থাকা জরুরী। যে ব্যক্তি দিনের কোন অংশে সওমের নিয়ত করল, তার সওম পূর্ণ দিন ব্যাপী হল না, তাই তার সওম শুদ্ধ হবে না। এ জন্য ওয়াজিব সওমে সুবহে সাদিকের পূর্ব থেকে নিয়ত করা জরুরী।
চার. রাতের যে কোন অংশে ফরয বা নফল সওমের নিয়ত করা বৈধ। নিয়ত করার পর সওম পরিপন্থী কোন কাজ করলে নিয়ত নষ্ট হবে না, নতুন নিয়তের প্রয়োজন নেই।
৬. সিয়ামের আদব
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«الصيام جنة، فإذا كان أحدكم صائما فلا يرفث ولا يجهل، فإن امرؤ شاتمه فليقل : إني صائم، إني صائم». رواه الشيخان
“সিয়াম ঢাল, সুতরাং তোমাদের কেউ সিয়াম অবস্থায় হলে সে যেন অশ্লীলতা ও মুর্খতা পরিহার করে, যদি কেউ তাকে গালি দেয়, সে যেন বলে: আমি রোযাদার, আমি রোযাদার”।[38] অপর বর্ণনায় এসেছে:
«وإذا كان يوم صوم أحدكم فلا يرفث ولا يصخب، فإن سابه أحد أو قاتله فليقل إني امرؤ صائم».
“তোমাদের কারো যখন সওমের দিন হয়, সে যেন অশ্লীলতা ও শোরগোল পরিহার করে, কেউ যদি তাকে গালি দেয় বা তার সাথে মারামারি করে, সে যেন বলে: আমি রোযাদার”।[39]
অপর বর্ণনায় এসেছে:
«لا تساب وأنت صائم، وإن سابك أحد فقل : إني صائم، وإن كنت قائما فاجلس».
“সওম অবস্থায় তুমি গালি দেবে না, যদি কেউ তোমাকে গালি দেয় তাহলে তাকে বল: আমি রোযাদার। আর যদি তুমি দণ্ডায়মান থাক, বসে যাও”।[40]
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«مَنْ لَم يَدَعْ قَوْلَ الزُّورِ وَالعَمَلَ بِهِ وَالجَهْلَ فَلَيسَ لله حَاجَةٌ أَنْ يَدَعَ طَعَامَهُ وشَرَابَهُ» رواه البخاري.
“যে মিথ্যা কথা ও তদনুরূপ কাজ এবং মূর্খতা পরিত্যাগ করল না, তার পানাহার বর্জনে আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই।”[41]
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন:
«الصِّيامُ جُنَّةٌ مِنَ النَّار، فَمَنْ أَصْبَحَ صَائِماً فلا يَجْهَلْ يومَئِذٍ، وإِنْ امْرُؤٌ جَهِلَ عَلَيهِ فلا يَشْتُمْهُ، ولا يَسُبُّه، وَلْيَقُلْ: إِني صائِم...» رواه النسائي .
“সিয়াম জাহান্নামের ঢাল, যে সওম অবস্থায় ভোর করল, সে যেন সেদিন মুর্খতার আচরণ না করে। কেউ যদি তার সাথে দুর্ব্যবহার করে, সে তাকে তিরষ্কার করবে না, গালি দেবে না, বরং বলবে: আমি রোযাদার।”[42] আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত:
«أَنَّهُ كَانَ وأَصْحَابُهُ إِذَا صَامُوا قَعَدُوا في المَسْجِدِ، وقَالَوا: نُطَهِّرُ صِيَامَنَا».
“তিনি ও তার সাথীগণ যখন সিয়াম পালন করতেন মসজিদে বসে থাকতেন, আর বলতেন: আমাদের সওম পবিত্র করছি”।[43]
শিক্ষা ও মাসায়েল:
এক. সিয়াম জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেয়, কারণ সে প্রবৃত্তি থেকে বিরত রাখে, আর জাহান্নাম প্রবৃত্তি দ্বারা আবৃত।
দুই. রোযাদারের জন্য রাফাস হারাম, রাফাস হচ্ছে অশ্লীল কথা, কখনো সহবাস ও তার আনুষঙ্গিক কর্মকাণ্ডে ব্যবহার হয়।[44] এসব থেকে রোযাদার বিরত থাকবে, তবে যে নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে সক্ষম, তার জন্য চুম্বন ও স্ত্রীর সাথে মেলামেশা বৈধ।
তিন. রোযাদারের জন্য মুর্খতাপূর্ণ আচরণ হারাম, যেমন চিৎকার ও শোরগোল করা, অযথা ঝগড়ায় লিপ্ত হওয়া ইত্যাদি।
চার. রোযাদার যদি করো গালমন্দ, চিৎকার ও ঝগড়ার সম্মুখীন হয়, তাহলে তার করণীয়:
(১). গালমন্দকারীকে অনুরূপ প্রতি উত্তর করবে না, বরং ধৈর্য ও সহনশীলতা অবলম্বন করবে।
(২). তার সাথে কথা পরিহার করবে, যেন সে মূর্খতার সুযোগ না পায়। কতক বর্ণনায় এসেছে:
«وإنْ شَتَمَهُ إِنسَانٌ فلا يُكَلِّمْهُ».
(৩). তাকে বলবে: “আমি রোযাদার”। উচ্চস্বরে বলবে, যেন সে মূর্খতা থেকে বিরত থাকে ও প্রতি উত্তর না করার কারণ বুঝতে পারে। ফরয-নফল সব সওমের ক্ষেত্রে অনুরূপ করবে।[46]
(৪). যদি সে বিরত না হয়, তবে বারবার বলবে আমি রোযাদার, আমি রোযাদার।
(৫). এ পরিস্থিতিতে যদি সে দাঁড়ানো থাকে, বসার সুযোগ হলে বসে যাবে, যেরূপ অন্যান্য বর্ণনায় এসেছে, যেন গোস্বা নিবারণ হয়, প্রতিপক্ষ ও শয়তান পিছু হটে।
পাঁচ. এ সকল হাদিস থেকে এ কথা বুঝে নেয়ার অবকাশ নেই যে, অশ্লীলতা, গালিগালাজ, মুর্খতার আচরণ, অসার ও অযথা বিতর্ক শুধু সওম অবস্থায় নিষেধ, অন্য সময় নয়, বরং সর্বাবস্থায় এগুলো নিষেধ ও হারাম, তবে সওম অবস্থায় এগুলোতে লিপ্ত হওয়া জঘন্য অন্যায়, কারণ এসব সওমের মূল উদ্দেশ্যকে নস্যাৎ করে।[47]
ছয়. ইসলামি জীবন-দর্শনের পবিত্রতা, তার অনুসারীদের ভদ্র আচরণ শিক্ষা দেয়া ও মূর্খদের এড়িয়ে চলার অভিনব কৌশল।
সাত. যদি রোযাদারের ওপর কেউ জুলুম করে, তাহলে সহজতর উপায়ে তার প্রতিকার করবে, এ থেকে রোযাদারকে নিষেধ করা হয়নি।[48]
আট. সত্যিকারের সিয়াম পাপ থেকে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সিয়াম, মিথ্যা ও অশ্লীলতা থেকে মুখের সিয়াম, পানাহার থেকে পেটের সিয়াম, স্ত্রীসহবাস ও যৌনতা থেকে লিঙ্গের সিয়াম।[49]
নয়. অধিকাংশ আলেম একমত যে, গীবত, পরনিন্দা, মিথ্যা কথা, মূর্খতাপূর্ণ আচরণ ইত্যাদি কাজগুলো সিয়াম ভঙ্গ করে না, তবে তার সওয়াব অবশ্যই হ্রাস করে, এ জন্য সে গুনাহ্গার হবে।[50]
দশ. এ থেকে প্রমাণ হলো যে, সিয়ামের উদ্দেশ্য শুধু ক্ষুধা-পিপাসা সহ্য করা নয়, বরং মূল উদ্দেশ্য প্রবৃত্তি দুর্বল করা, গোস্বা নিবারণ করা, কু-প্রবৃত্তির চাহিদা নস্যাৎ করা ও নফসে মুতমায়িন্নার আনুগত্য করা, যদি সিয়াম দ্বারা এসব অর্জন না হয়, তাহলে সিয়াম রাখা না-রাখার মত, কারণ সিয়াম তার ওপর কোন প্রভাব ফেলতে পারেনি।[51]
এগার. এ হাদিস থেকে বুঝা যায় যে, মিথ্যা কথা, মিথ্যা নির্ভর কাজ সকল অন্যায়ের মূল। এ জন্য আল্লাহ মিথ্যাকে শির্কের সাথে উল্লেখ করেছেন:
﴿فَٱجۡتَنِبُواْ ٱلرِّجۡسَ مِنَ ٱلۡأَوۡثَٰنِ وَٱجۡتَنِبُواْ قَوۡلَ ٱلزُّورِ ٣٠﴾ [الحج: 30]
“সুতরাং মূর্তিপূজার অপবিত্রতা থেকে বিরত থাক এবং মিথ্যা কথা পরিহার কর”।[52] এ আয়াতে আল্লাহ পৌত্তলিকতার অপরাধের সাথে মিথ্যাকে উল্লেখ করেছেন। এ থেকে মিথ্যার ভয়াবহতা প্রতীয়মান হয়।[53]
৭. এক সাথে সিয়াম রাখা ও ভঙ্গ করা
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«الصَّوْمُ يَوْمَ تَصُومُونَ والفِطْرُ يَوْمَ تُفْطِرُونَ والأَضْحَى يَوْمَ تُضَحُّونَ» رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وقَالَ: حَدِيثٌ حَسَنٌ غَريبٌ.
“সেদিন সওম, তোমরা যেদিন সওম পালন করবে, সেদিন ইফতার, তোমরা যেদিন ইফতার করবে, সেদিন কুরবানি, তোমরা যেদিন কুরবানি করবে”। তিরমিযি, তিনি বলেছেন: হাদিসটি হাসান, গরিব।
আবু দাউদের এক বর্ণনায় আছে:
«وَفِطْرُكُمْ يَوْمَ تُفْطِرُونَ وَأَضْحَاكُمْ يَوْمَ تُضَحُّونَ».
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«الفِطْرُ يَوْمَ يُفْطِرُ النَّاسُ، وَالأَضْحَى يَوْمَ يُضَحِّي النَّاسُ»
শিক্ষা ও মাসায়েল:
এক. এ হাদিস ইসলামি শরিয়তের সৌন্দর্য ও সহজতার প্রমাণ বহন করে, মানুষ যা করতে পারবে না, তার ওপর তা চাপিয়ে দেয়া হয়নি। ইবাদতের সময় নির্ধারণে সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি তথা চোখে দেখার উপর নির্ভর করা হয়েছে।
দুই. ইসলামি শরিয়ত একতার প্রতি যথেষ্ট গুরুত্বারোপ করেছে, যেমন সে মুসলিমদেরকে এক সাথে সওম রাখা, ভঙ্গ করা ও একসাথে ঈদ উৎযাপনের নির্দেশ দিয়েছে।
তিন. চাঁদ দেখায় শরয়ি পদ্ধতি অনুসরণ করা, অথবা চাঁদ দেখায় বাঁধার কারণে ত্রিশ দিন পূর্ণ করার পর যদি মাসের শুরু-শেষ ভুল প্রমাণিত হয়, তাহলে তা ক্ষমাযোগ্য। হাফেয ইব্ন আব্দুল-বার রহ. বলেন: “সকল ওলামায়ে কেরাম এ ব্যাপারে একমত যে, যদি যিলহজ মাসের চাঁদ দেখার ভুলের কারণে দশ তারিখে ওকুফে আরাফা করে, তবে তা যথেষ্ট হবে। তদ্রূপ ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা। আল্লাই ভাল জানেন”।[56]
চার. এসব হাদিস প্রমাণ করে যে, ঈদ হওয়ার জন্য সবার এক হওয়া জরুরী। যদি কেউ একা ঈদের চাঁদ দেখে তার জন্য জরুরী সবার সাথে ঈদ করা। সে সবার সাথে সওম রাখবে, ভঙ্গ করবে ও কুরবানি করবে। ইবনুল কায়্যিম রহ. বলেন: “এ থেকে প্রমাণিত হয়, একা চাঁদ প্রত্যক্ষকারীর ওপর চাঁদ দেখার বিধান বর্তায় না, সওম রাখা ও ভঙ্গ করার ক্ষেত্রে সে অন্যদের মত”।[57]
এ থেকে বলা যায়, কেউ যদি একা চাঁদ দেখে, তাহলে তার সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হবে না, কারণ সে একা সওম রাখবে না, বরং মানুষের সাথে সওম রাখবে। তার বিধান অন্যান্য মানুষের ন্যায়, এ হাদিস থেকে তাই বুঝে আসে”।[58]
৮. তারাবির সালাতের অনুমোদন
আব্দুর রহমান ইব্ন আব্দুল কারি রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন: “আমি ওমর ইব্ন খাত্তাবের সাথে রমযানের রাতে মসজিদে যাই, তখন মানুষেরা পৃথকভাবে নিজ নিজ সালাত আদায় করছিল। আবার কেউ কতক লোকের সাথে জামাতসহ সালাত আদায় করছিল। ওমর বললেন: আমার মনে হয় এক ইমামের পিছনে তাদের সকলের সালাত আদায়ের ব্যবস্থা করলে, খুব সুন্দর হবে। অতঃপর তিনি উবাই ইব্ন কাবের পিছনে সবাইকে সালাত আদায়ের নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে কোন রাতে আমি তার সাথে বের হয়ে দেখি লোকেরা এক ইমামের পিছনে সালাত আদায় করছে, তখন ওমর বললেন: এটা খুব সুন্দর বিদআত। তবে যারা এ সালাতে অনুপস্থিত, তারা উত্তম এদের থেকে, অর্থাৎ শেষ রাতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে প্রথম রাতে যারা ঘুমাচ্ছে, তারা এদের চেয়ে উত্তম। তখন মানুষেরা প্রথম রাতে সালাত আদায় করত”।[59]
ইমাম মালেকের এক বর্ণনায় আছে: “ওমর ইব্ন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু উবাই ইব্ন কাব ও তামিমুদ দারি রাদিয়াল্লাহু আনহুমাকে সবার সাথে এগারো রাকাত সালাত আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন: ইমাম সাহেব শত আয়াতের অধিক বিশিষ্ট সূরাসমূহ তিলাওয়াত করতেন, আমরা দীর্ঘ কিয়ামের কারণে লাঠির ওপর ভর করতাম, আমরা ফজরের আগ মুহূর্ত ব্যতীত বাড়ি ফিরতাম না”।[60]
ইব্ন খুযাইমার এক বর্ণনায় আছে: ওমর বলেন: “আল্লাহর শপথ, আমার ধারণা আমি যদি এক ইমামের পিছনে তাদের সবাইকে একত্র করি, তাহলে খুব ভাল হবে। অতঃপর ওমর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তিনি উবাই ইব্ন কা‘বকে সবার সাথে সালাত আদায়ের নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে ওমর তাদের দেখতে যান, তখন সবাই এক ইমামের পিছনে সালাত আদায় করছিল, তিনি বলেন: এটা খুব সুন্দর বিদআত। যারা এ সালাত থেকে ঘুমিয়ে আছে তারা উত্তম, (অর্থাৎ প্রথম রাতে ঘুমিয়ে যারা শেষ রাতে সালাত আদায় করে)। তখন লোকেরা প্রথম রাতে সালাত আদায় করত। তারা রমযানের শেষার্ধে কাফেরদের ওপর লানত করত:
الَّلهُمَّ قَاتِلْ الكَفَرَةَ الَّذِينَ يَصُدُّونَ عَنْ سَبِيلِك، ويُكَذِّبونَ رُسُلَكَ، ولا يُؤْمِنُونَ بِوَعْدِك، وخَالِفْ بينَ كَلِمَتهِم، وأَلْقِ في قُلُوبِهِم الرُّعْبَ، وأَلْقِ عَلَيْهِم رِجْزَكَ وعَذَابَكَ إِلهَ الحَقِّ،
“হে আল্লাহ, তুমি কাফেরদের ধ্বংস কর, যারা তোমার রাস্তা থেকে মানুষদের বিরত রাখে, তোমার রাসূলকে মিথ্যারোপ করে, তোমার প্রতিশ্রুতির ওপর ঈমান আনে না। তুমি তাদের মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টি কর, তাদের অন্তরে ভীতির সঞ্চার কর। হে সত্য ইলাহ, তুমি তাদের ওপর তোমার আযাব ও শাস্তি নাযিল কর”। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর দরূদ ও সালাম পাঠ করে মুসলিমদের জন্য কল্যাণের দো‘আ ও ইস্তেগফার করবে। তিনি বলেন: তারা কাফেরদের ওপর লানত, নবীর ওপর দরূদ ও মুমিনদের জন্য দো‘আ-ইস্তেগফার শেষে বলতেন:
الَّلهُمَّ إِياكَ نَعْبُدُ، ولَكَ نُصَلِّي ونَسْجُدُ، وإِلَيكَ نَسْعَى ونَحْفِدُ، ونَرْجُو رَحمَتكَ رَبَّنا، ونَخَافُ عَذَابَكَ الجِدَّ، إِنَّ عَذَابكَ لمن عَادَيتَ مُلْحِق،
“হে আল্লাহ আমরা একমাত্র তোমার ইবাদত করি, তোমার জন্য সালাত আদায় করি ও সেজদা করি। আমরা তোমার নিকট দৌড়ে যাই ও তোমার নিকট দ্রুত ধাবিত হই। তোমার রহমত প্রত্যাশা করি হে আমাদের রব, তোমার আযাব ভয় করি, নিশ্চয় তোমার আযাব তোমার শত্রুদের নিশ্চিত স্পর্শ করবে”। অতঃপর তাকবীর বলবে ও সেজদার জন্য ঝুঁকবে”।[61]
শিক্ষা ও মাসায়েল:
এক. তারাবির সালাত সুন্নত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সূচনা করেন, কিন্তু মুসলিমদের ওপর ফরয হওয়ার আশঙ্কায় তিনি তা ত্যাগ করেন। লোকেরা এ সালাত একা একা আদায় করত তার ও আবু বকরের যামানায়, যখন ওমরের যুগ আসে তিনি সবাইকে এক ইমামের পিছনে একত্র করেন। এভাবে তিনি নবীর সুন্নত জীবিত করেন। তার যামানা ও তার পরবর্তী যামানার মুসলিমগণ একমত যে, তারাবির জামাত মুস্তাহাব।[62]
দুই. কম মর্যাদাপূর্ণ ব্যক্তি কখনো এমন সুন্নত জীবিত করেন, অধিক মর্যাদাপূর্ণ ব্যক্তি যা করতে পারেন নি। যেমন মহান এ সুন্নত জীবিত করার তওফিক আল্লাহ ওমরকে দিয়েছেন, আবু বকরকে দেননি, অথচ তিনি ওমরের চেয়ে উত্তম। সকল কল্যাণের ক্ষেত্রে তিনি ওমরের চেয়ে অগ্রগামী ছিলেন। ওমর বলেছেন: “আল্লাহর শপথ আমি কোন জিনিসে তার অগ্রগামী হতে পারব না”।[63]
রমযানে আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন মসজিদের পাশ দিয়ে অতিক্রম করতেন, তাতে বাতি জ্বালানো দেখে বলতেন: “আল্লাহ ওমরের কবরকে নূরান্বিত করুন, যেমন তিনি আমাদের মসজিদগুলো নূরান্বিত করেছেন”।[64] অর্থাৎ সালাতে তারাবিহ দ্বারা। তাই মুসলিম কোন কল্যাণের ব্যাপারে নিজেকে ছোট বা হীন মনে করবে না, আল্লাহ তার থেকে এমন খিদমত নিতে পারেন, যা তার চেয়ে উত্তম ব্যক্তিদের থেকে নেননি। এটা আল্লাহর অনুগ্রহ, তিনি যাকে ইচ্ছা এ অনুগ্রহ দান করেন।
তিন. মুসলিমদের জামাত ও তাদের একতা বিচ্ছিন্নতা থেকে উত্তম। ইমামের কর্তব্য মুসলিমদের মাঝে একতা প্রতিষ্ঠা করা।
চার. সুন্নতের ব্যাপারে ইমামের ইজতিহাদ মেনে নেয়া অন্যদের ওপর অবশ্য জরুরী, এতে তার আনুগত্য করা ওয়াজিব। যেমন ওমর যখন তাদের সবাইকে এক ইমামের পিছনে একত্র করেন, সাহাবায়ে কেরাম তা মেনে নেন ও ওমরের আনুগত্য করেন।
পাঁচ. সবাই মিলে সুন্নত জীবিত করা ও একসাথে ইবাদত আদায় করা বরকতপূর্ণ। কারণ জমাতে প্রত্যেকের দো‘আ প্রত্যেককে অন্তর্ভুক্ত করে। এ জন্য জমাতের সালাত একাকী সালাতের চেয়ে সত্তরগুণ বেশি ফযিলত রাখে। সায়িদ ইব্ন জুবাইর রহ. বলেছেন: “আমার নিকট সূরা গাশিয়াহ পাঠকারী ইমামের পিছনে সালাত আদায় করা অধিক উত্তম, একাকী সালাতে আমার একশ আয়াত তিলাওয়াত করার চেয়ে”।[65]
ছয়. কারণবশত কোন আমল ত্যাগ করলে, কারণ শেষে তা পুনরায় আরম্ভ করা দুরস্ত আছে, যেমন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু রমযানের তারাবির জামাত পুনরায় আরম্ভ করেন।
সাত. কুরআনের হাফেয ও কুরআনের অধিক জ্ঞানের অধিকারী ব্যক্তি যথাসম্ভব ইমামতি করবেন, যেমন ওমর তাদের মধ্যে বড় কারী উবাই ইব্ন কা‘বকে প্রাধান্য দিয়েছেন। এটা উত্তম কিন্তু ওয়াজিব নয়, কারণ ওমর তামিমে দারিকেও ইমামতির দায়িত্ব দিয়েছেন, অথচ তার চেয়ে বড় কারী সাহাবিদের মধ্যে বিদ্যমান ছিল।
আট. তারাবির সালাতে অন্যান্য মুসলিমদের ন্যায় নারীরা মসজিদে উপস্থিত হতে পারবে, অনুরূপ ফিতনার আশঙ্কা না থাকলে শুধু নারীদের পুরুষ ইমামতি করতে পারবে।
নয়. ইমাম যদি ইমামতের নিয়ত না করে, তবু মুসল্লি তার পিছনে ইকতিদা করতে পারবে।
দশ. দুই সালাম অথবা চার সালাম অথবা কিয়ামের পর যদি ইমামের বিরতি নেয়ার অভ্যাস থাকে, তাহলে এ বিরতিতে মুক্তাদির নফল পড়া বৈধ নয়। ইমাম আহমদ এটা মাকরুহ বলেছেন, তিনজন সাহাবি থেকে তিনি তা বর্ণনা করেন: উবাদাহ ইব্ন সামেত, আবু দারদাহ ও উকবাহ ইব্ন আমের রাদিয়াল্লাহু আনহুম।[66]
এগারো. এক ইমামের পিছনে তারাবিহ শেষ করে, যদি অন্য ইমামের পিছনে তারাবির জমাতে শরীক হয়, এতে দোষ নেই।[67]
বারো. রমযানের নফল ব্যতীত অন্য নফলের জন্য ক্রমান্বয়ে একত্র হওয়া বৈধ নয়, বরং অন্যান্য নফল একসাথে আদায় করা বিদআত, যেমন রাতের নফলের জন্য একত্র হওয়া অথবা নির্দিষ্ট রাতে নফল আদায়ের জন্য একত্র হওয়া ইত্যাদি। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান ব্যতীত কোন নফলে সাহাবিদের একত্র করেন নি। তিনি যেহেতু ফরয হওয়ার আশঙ্কায় ত্যাগ করেছেন, তাই পরবর্তীতে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তা জীবিত করেন।
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
«كانَ رَسُولُ الله ﷺ يُصْبِحُ جُنُباً ثُم يَغتَسِلُ ثم يَغْدُو إلى المسْجِدِ ورَأسُهُ يَقطُرُ ثم يَصُوم ذَلكَ اليَوم» رواه أحمد.
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যুষ করতেন নাপাক অবস্থায়, অতঃপর গোসল করে মসজিদে যেতেন, তখনো তার মাথা থেকে পানি টপকাত, অতঃপর সেদিনের সওম পালন করতেন”।[68]
আবু বকর ইব্ন আব্দুর রহমান নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জনৈক সাহাবি থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন:
«لَقَدْ رَأَيتُ رَسُولَ الله ﷺ بِالعَرْجِ يَصبُّ على رَأْسِهِ الماءَ وهُو صَائِمٌ مِنَ العَطَشِ أو من الحَرِّ» رواه أبو داود.
আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আরজ নামক স্থানে দেখেছি, তিনি সওম অবস্থায় মাথায় পানি দিচ্ছেন, পিপাসার কারণে অথবা গরমের কারণে”।[69]
ইমাম বুখারি রহ. বলেন: ইব্ন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু সওম অবস্থায় কাপড় ভিজিয়ে গায়ে রেখেছেন। ইমাম শাবি রোযা অবস্থায় গোসলখানায় প্রবেশ করেছেন। ইব্ন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: “সওম অবস্থায় রান্নার ডেগ চেখে দেখা বা কোন বস্তুর স্বাদ পরীক্ষা করা দোষের নয়”। হাসান রহ. বলেন: “রোযাদারের কুলি ও শীতলতা অর্জন দোষের নয়”। ইব্ন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: “যখন তোমাদের কারো সওমের দিন হয়, সে যেন সকালে তেল দেয় ও চিরনি করে”। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: “আমার ছোট একটি হাউজ আছে, তাতে আমি সওম অবস্থায় ডুব দেই”।[70]
শিক্ষা ও মাসায়েল:
এক. রোযাদারের জন্য জায়েয আছে গরম বা তৃষ্ণা হালকা করার জন্য পুরো শরীর বা কোন অংশে পানি দেয়া, এটা ওয়াজিব গোসল, অথবা মোস্তাহাব গোসল অথবা বিনা প্রয়োজনে হতে পারে।[71]
তিন. ইবাদতকারীর কষ্ট হলে বৈধ উপায়ে তা লাঘব করা দোষের নয়, এটাকে অধৈর্য গণ্য করা হবে না, এর থেকে বিরত থাকা ঠিক নয়।
চার. মানুষ দুর্বল ও অপারগ, তার উচিত কষ্ট দূর করার জন্য বৈধ উপায় গ্রহণ করা।
পাঁচ. সওম অবস্থায় গোসলখানায় গরম পানি ব্যবহার করা বৈধ, অনুরূপ সুগন্ধি ও তৈল ব্যবহার করা, চিরনি করা বৈধ, ঘ্রাণ জাতীয় বস্তুর কারণে সওম নষ্ট হয় না, এগুলো রোযাদারের জন্য মাকরুহ নয়।
ছয়. রোযাদার ঠাণ্ডা ও পবিত্রতা অর্জনের জন্য হাউজ, ট্যাংকি, পুকুর ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারবে, এ কারণে সওম নষ্ট হবে না।
সাত. প্রয়োজনে বাবুর্চি খানার স্বাদ পরীক্ষা করতে পারবে, তবে তা যেন পেটে প্রবেশ না করে। ইমাম আহমদ রহ. বলেন: “আমার কাছে পছন্দনীয় হলো সওম অবস্থায় খাবারের স্বাদ পরীক্ষা না করা, তবে কেউ তা করলে সমস্যা নেই”।[73]
বারা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবিদের অভ্যাস ছিল, তাদের সিয়াম শেষে যখন খানা উপস্থিত হত, আর তারা খানা না খেয়ে যদি ঘুমিয়ে যেতেন, তাহলে সে রাত ও পরবর্তী দিনে তারা খেতেন না। কাইস ইব্ন সিরমা আল-আনসারি রাদিয়াল্লাহু আনহু সওম শেষে খানার সময় স্ত্রীর কাছে এসে বললেন: তোমার নিকট খাবার আছে? উত্তরে স্ত্রী বলল: নেই, তবে আমি তোমার জন্য ব্যবস্থা করছি। সে ছিল দিনের কর্মক্লান্ত, তার দু’চোখে ঘুম এসে গেল। তার স্ত্রী এসে তাকে দেখে বলল: আফসোস আপনি বঞ্চিত হলেন। পরদিন যখন দুপুর হল, তিনি সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়লেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বিষয়টি অবগত করানো হল। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা নাযিল করলেন:
﴿أُحِلَّ لَكُمۡ لَيۡلَةَ ٱلصِّيَامِ ٱلرَّفَثُ إِلَىٰ نِسَآئِكُمۡۚ ١٨٧﴾ [البقرة:187]
“সিয়ামের রাতে তোমাদের জন্য তোমাদের স্ত্রীদের নিকট গমন হালাল করা হয়েছে”।[75] তারা এ আয়াতের কারণে খুব খুশি হলেন, অতঃপর নাযিল হল:
﴿وَكُلُواْ وَٱشۡرَبُواْ حَتَّىٰ يَتَبَيَّنَ لَكُمُ ٱلۡخَيۡطُ ٱلۡأَبۡيَضُ مِنَ ٱلۡخَيۡطِ ٱلۡأَسۡوَدِ مِنَ ٱلۡفَجۡرِۖ ١٨٧﴾ [البقرة: 187]
মুয়ায ইব্ন জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “সালাতের তিনটি ধাপ অতিক্রম করেছে, অনুরূপ সিয়ামের তিনটি ধাপ অতিক্রম করেছে... তিনি সালাতের তিন ধাপ উল্লেখ করেন। অতঃপর সিয়ামের ব্যাপারে বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক মাসের তিন দিন ও আশুরার সওম পালন করতেন। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা নাযিল করেন:
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ كُتِبَ عَلَيۡكُمُ ٱلصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُونَ١٨٣﴾ إِلى قَولِه: ﴿طَعَامُ مِسۡكِينٖۖ ١٨٤﴾ [البقرة:183-184]
“হে মুমিনগণ, তোমাদের উপর সিয়াম ফরয করা হয়েছে, যেভাবে ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর... একজন দরিদ্রকে খাবার প্রদান করা”।[78] তখন যার ইচ্ছা সওম পালন করত, যার ইচ্ছা ইফতার করত ও প্রত্যেক দিনের বিনিময়ে একজন মিসকিনকে খাদ্য দিত। এটা তখন হালাল ছিল, অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা নাযিল করেন:
﴿شَهۡرُ رَمَضَانَ ٱلَّذِيٓ أُنزِلَ فِيهِ ٱلۡقُرۡءَانُ﴾ إِلى ﴿أَيَّامٍ أُخَرَۗ ١٨٥﴾ [البقرة:185]
“রমযান মাস, যাতে কুরআন নাযিল করা হয়েছে... অন্যান্য দিবসে সংখ্যা পূরণ করে নেবে”।[79] এরপর থেকে যে রমযান পায়, তার ওপর সওম ওয়াজিব হয়, মুসাফির সফর শেষে কাযা করবে, যারা বৃদ্ধ- সওম পালনে অক্ষম, তাদের ব্যাপারে ফিদিয়া তথা খাদ্য দান বহাল থাকে”।[80]
মুসনাদে আহমদের অপর বর্ণনায় আছে: “আর সিয়ামের ধাপ হচ্ছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় আগমন করে প্রত্যেক মাসে তিন দিন সওম পালন আরম্ভ করেন। ইয়াযিদ ইব্ন হারুন বলেন: “তিনি নয় মাস তথা রবিউল আউয়াল থেকে রমযান পর্যন্ত প্রত্যেক মাসে তিন দিন ও আশুরার সওম পালন করেন। অতঃপর আল্লাহ তার উপর সিয়ামের ফরয নাযিল করেন:
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ كُتِبَ عَلَيۡكُمُ ٱلصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُونَ ١٨٣﴾ إِلى هَذِهِ الآيةِ: ﴿وَعَلَى ٱلَّذِينَ يُطِيقُونَهُۥ فِدۡيَةٞ طَعَامُ مِسۡكِينٖۖ ١٨٤﴾ [البقرة: 183-184]
“হে মুমিনগণ, তোমাদের উপর সিয়াম ফরয করা হয়েছে, যেভাবে ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর... আর যাদের জন্য তা কষ্টকর হবে, তাদের কর্তব্য ফিদয়া, একজন দরিদ্রকে খাবার প্রদান করা”।[81] তিনি বলেন: তখন যার ইচ্ছা সওম পালন করত, যার ইচ্ছা খাদ্য প্রদান করত, খাদ্যদান যথেষ্ট ছিল। তিনি বলেন: অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা অপর আয়াত নাযিল করেন:
﴿شَهۡرُ رَمَضَانَ ٱلَّذِيٓ أُنزِلَ فِيهِ ٱلۡقُرۡءَانُ﴾ إِلى قَوْلِهِ ﴿فَمَن شَهِدَ مِنكُمُ ٱلشَّهۡرَ فَلۡيَصُمۡهُۖ ١٨٥﴾ [البقرة: 185]
“রমযান মাস, যাতে কুরআন নাযিল করা হয়েছে... সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে মাসটিতে উপস্থিত হবে, সে যেন তাতে সিয়াম পালন করে”।[82] তিনি বলেন: আল্লাহ তা‘আলা মুকিম ও সুস্থ ব্যক্তির উপর সিয়াম জরুরী করে দেন, অসুস্থ ও মুসাফিরকে তাতে শিথিলতা প্রদান করেন। আর যে সিয়াম পালনে অক্ষম, তার ব্যাপারে খাদ্যদান বহাল থাকে। এ হল দু’টি ধাপ। তিনি বলেন: তারা ঘুমের আগ পর্যন্ত পানাহার ও স্ত্রীগমন করত, যখন তারা ঘুমাইত তা থেকে বিরত থাকত। তিনি বলেন: কায়েস ইবন সিরমাহ নামক জনৈক আনসারি সওম অবস্থায় সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করেন, অতঃপর স্ত্রীর নিকট এসে এশার সালাত আদায় করেন। অতঃপর পানাহার না করে ঘুমিয়ে পড়েন, অবশেষে সকালে উঠেন ও সওম রাখেন। তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দেখেন যে, সে খুব ক্লান্ত হয়ে গেছে। তিনি বললেন: কি হয়েছে, তোমাকে এতো ক্লান্ত দেখছি কেন? সে বলল: হে আল্লাহর রাসূল, আমি গতকাল কাজ করেছি, অতঃপর বাড়িতে এসে শুয়ে পড়ি ও ঘুমিয়ে যাই, যখন ভোর করেছি, সওম অবস্থায় ভোর করেছি। তিনি বলেন: ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু ঘুম থেকে উঠে স্ত্রীগমন করে ছিলেন। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে বলেন: অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা নাযিল করেন:
﴿أُحِلَّ لَكُمۡ لَيۡلَةَ ٱلصِّيَامِ ٱلرَّفَثُ إِلَىٰ نِسَآئِكُمۡۚ﴾ إِلى قَوْلِه: ﴿ثُمَّ أَتِمُّواْ ٱلصِّيَامَ إِلَى ٱلَّيۡلِۚ] ١٨٧﴾ [البقرة: 187]
“সিয়ামের রাতে তোমাদের জন্য তোমাদের স্ত্রীদের নিকট গমন হালাল করা হয়েছে... অতঃপর রাত পর্যন্ত সিয়াম পূর্ণ কর”।[83]
শিক্ষা ও মাসায়েল:
এক. ইবাদতের এ সহজ রূপ বান্দার উপর আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ, কারণ সিয়াম ফরযের ধাপগুলোতে দেখা যায়: সূর্যাস্তের পর যে ঘুমিয়ে পড়ত অথবা এশা থেকে ফারেগ হত, সে আগামীকালের সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থাকত, এ জন্য তারা খুব কষ্ট ও ক্লান্তির সম্মুখীন হত, যেমন উপরে এক সাহাবির ঘটনা থেকে জানলাম। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা রমযানের রাতে পানাহার ও স্ত্রীগমন বৈধ করে তাদের ওপর সহজ করলেন, সূর্যাস্তের পর ঘুমিয়ে যাক বা জাগ্রত থাক। এটা ছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে রুখসত। সকল প্রশংসা আল্লাহর।
দুই. স্বামীর খেদমত করা একজন ভাল স্ত্রীর বৈশিষ্ট্য ও একান্ত হিতাকাঙ্ক্ষী হওয়ার আলামত।
তিন. এতে সাহাবিদের ধর্মপরায়ণতা, আল্লাহর আদেশের কাছে নতি স্বীকার করা, তাঁর বিরোধিতাকে ভয় করা এবং প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে আল্লাহকে স্মরণ করার দৃষ্টান্ত রয়েছে। কতক বর্ণনায় এসেছে: “স্ত্রী আসতে দেরী করেন, ফলে সে ঘুমিয়ে যায়। স্ত্রী এসে তাকে জাগ্রত করেন, কিন্তু সে আল্লাহ ও তার রাসূলের নাফরমানী অপছন্দ করে খানা থেকে বিরত থাকেন ও সওম অবস্থায় সকাল করেন”।[84] অপর বর্ণনায় আছে: “তিনি মাথা রেখে তন্দ্রায় যান, তার স্ত্রী খানা নিয়ে এসে বলে: খান, সে বলে: আমি তো ঘুমিয়ে ছিলাম। সে বলল: আপনি ঘুমাননি। অতঃপর সে অভুক্ত অবস্থায় প্রত্যুষ করে”।[85]
চার. আল্লাহর পক্ষ থেকে রুখসত তথা শিথিল বিধান পেয়ে আনন্দ প্রকাশ করা বৈধ, এটা আযীমতের বিপরীত নয়, কারণ উভয় আল্লাহর পক্ষ থেকে, তিনি যেরূপ রুখসত পছন্দ করেন, অনুরূপ আযীমত পছন্দ করেন।
পাঁচ. আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার ওপর রহমত যে, তিনি তাদের জন্য এমন ইবাদত রচনা করেন, যাতে রয়েছে তাদের অন্তর ও আত্মার পরিশুদ্ধতা।
ছয়. আল্লাহ অনভ্যস্ত বিষয়ে বিধান দানে বিভিন্ন ধাপ গ্রহণ করেন, যেমন তিনি সালাত ও সিয়াম তিন ধাপে ফরয করেন। অনুরূপ মদ নিষেধাজ্ঞার বিধান বিভিন্ন ধাপে এসেছে, যেন তারা ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়।
সাত. রোযা ক্রমান্বয়ে ফরয হয়েছে, কারণ ইসলামের সূচনাকালে তারা রোযায় অভ্যস্ত ছিল না। যেমন মুয়ায থেকে বর্ণিত হাদিসের দ্বিতীয় বর্ণনায় এসেছে, তিনি বলেন: “তারা সিয়ামে অভ্যস্ত ছিল না, তাদের উপর সিয়াম খুব কষ্টকর ছিল”।[86]
আট. তিন ধাপে সিয়াম ফরয হয়েছে:
১. প্রতিমাসে তিন দিন ও আশুরার রোযা।
২. রমযানে রোযা পালন বা খাদ্য দান, সিয়াম পালনে অনিচ্ছুকদের কোন একটি বেছে নেয়ার ইখতিয়ার।
৩. রমযানের রোযা সুস্থ ব্যক্তির ওপর ফরয, রোযার পরিবর্তে খাদ্য দানের বিধান শুধু বৃদ্ধ ব্যক্তির জন্য প্রযোজ্য, যে রোযা পালনে সক্ষম নয়, সে রোগী এর অন্তর্ভুক্ত, যার আরোগ্য লাভের সম্ভাবনা নেই।
১১. তারাবির সালাতের বিধান
যায়েদ ইব্ন সাবেত রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চাটাই দ্বারা একটি ছোট হুজরার ন্যায় বানিয়ে তাতে সালাত আদায়ের জন্য বের হন, লোকেরা তার পিছু নিল ও তার সাথে সালাত আদায় করতে লাগল। অতঃপর তারা পরবর্তী রাতে উপস্থিত হল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিলম্ব করলেন, বের হলেন না, তারা জোরে আওয়াজ দিতে লাগল ও দরজায় ছোট পাথর নিক্ষেপ করে জানান দিচ্ছিল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের নিকট রাগান্বিত অবস্থায় বের হলেন, অতঃপর বললেন: তোমাদের এ কর্ম দেখে আমার ধারণা হচ্ছে তোমাদের ওপর এ সালাত ফরয করে দেয়া হবে, তোমরা তোমাদের ঘরে সালাত আদায় কর, কারণ ব্যক্তির সালাত ঘরেই উত্তম, শুধু ফরয ব্যতীত”।[87]
অপর বর্ণনায় আছে: “আমার আশঙ্কা হচ্ছে তোমাদের ওপর এ সালাত ফরয করা হবে, আর যদি ফরয করা হয় তোমরা তা আদায় করতে পারবে না”।[88]
শিক্ষা ও মাসায়েল:
এক. দুনিয়ার প্রতি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনাসক্তি, তিনি খুব নরমাল ও অনাড়ম্বর আসবাব পত্র ব্যবহার করতেন।
দুই. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিক ইবাদত করতেন, অথচ তার অগ্র-পশ্চাতের সকল পাপ মোচন করা হয়েছে।
তিন. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্যের প্রতি সাহাবিদের আগ্রহ।
চার. কিয়ামুল্লাইলের ফযিলত, বিশেষ করে রমযানে।
ছয়. তারাবির সালাত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত, তিনি এর সূচনা করেছেন। অতঃপর উম্মতের ওপর ফরয হওয়ার আশঙ্কায় তা ত্যাগ করেন। পুনরায় ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তা জীবিত করেন।[90]
সাত. আমির বা মুসলিম প্রধান যখন অভ্যাসের বিপরীত কিছু করেন, তখন তার কারণ বলে দেয়া উচিত, যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন।[91]
আট. উম্মতের ওপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দয়া যে, তিনি তাদের ওপর ইবাদতের চাপ কমিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ তাকে আমাদের পক্ষ থেকে উত্তম প্রতিদান দান করুন। আমির ও মুরুব্বিদের উচিত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ আদর্শ গ্রহণ করা।[92]
নয়. অনিষ্ট থেকে সুরক্ষার জন্য কতক স্বার্থ ত্যাগ করা বৈধ, অনুরূপ অধিক গুরুত্বপূর্ণকে অগ্রাধিকার দেয়া জরুরী।[93]
দশ. জমাতের সাথে নফল আদায়ের সময় আযান ও ইকামত নেই, যেমন তারাবির সালাত।[94]
এগার. নফল সালাত মসজিদের তুলনায় ঘরে পড়া অধিক উত্তম, তবে যে নফল জামাতসহ পড়া উত্তম তা ব্যতীত, যেমন ইস্তেস্কা ও তারাবির সালাত।[95]
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿إِنَّمَآ أَمۡوَٰلُكُمۡ وَأَوۡلَٰدُكُمۡ فِتۡنَةٞۚ وَٱللَّهُ عِندَهُۥٓ أَجۡرٌ عَظِيمٞ ١٥﴾ [التغابن:15]
﴿وَنَبۡلُوكُم بِٱلشَّرِّ وَٱلۡخَيۡرِ فِتۡنَةٗۖ وَإِلَيۡنَا تُرۡجَعُونَ ٣٥﴾ [الأنبياء:15]
“আর ভাল ও মন্দ দ্বারা আমি তোমাদেরকে পরীক্ষা করে থাকি এবং আমার কাছেই তোমাদেরকে ফিরে আসতে হবে”।[97] আয়াতদ্বয়ে “ফিতনা” শব্দটি পরীক্ষা অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। ইব্ন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু এর অর্থ বলেন: “আমি তোমাদেরকে সুখ-দুঃখ, সুস্থতা-অসুস্থতা, প্রাচুর্য-দারিদ্র, হালাল-হারাম, পাপ-পুণ্য এবং হেদায়েত ও গোমরাহির মাধ্যমে পরীক্ষা করব”।[98]
হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন:
«مَنْ يَحفَظُ حَدِيثاً عَنِ النَّبيِّ ﷺ في الفِتنَة؟ قَالَ حُذَيْفَةُ: أَنا سَمِعْتُهُ يَقُولُ: فِتنَةُ الرَّجُلِ في أَهْلِهِ ومَالِهِ وجَارِهِ تُكَفِّرُهَا الصَّلاةُ والصِّيامُ والصَّدَقَةُ»
“ফেতনা সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিস কার মনে আছে? হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: আমি তাকে বলতে শুনেছি, ব্যক্তির ফিতনা তার পরিবার-পরিজনে, মাল-সম্পদে ও তার প্রতিবেশীর মধ্যে, যার কাফফারা হয় সালাত, সিয়াম ও সদকা ।[99]
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর থেকে বর্ণনা করেন:
«لِكُلِّ عَمَلٍ كَفَّارَةٌ، والصَّوْمُ لي وَأَنَا أَجْزِي به...» رواه البخاري .
মুসনাদে আহমাদে রয়েছে:
«كُلُّ العَمَلِ كَفَّارَةٌ والصَّوْمُ لي وَأَنَا أَجْزِي به...»
অপর বর্ণনায় আছে:
«كُلُّ العَمَلِ كَفَّارَةٌ إِلَّا الصَّوْمَ لي وَأَنَا أَجْزِي به...» .
আবু হুরায়রাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন:
«الصَّلَواتُ الخَمسُ، والجُمعَةُ إلى الجُمُعةِ، ورَمَضَانُ إلى رَمَضَانَ، مُكَفِّراتٌ مَا بَينَهنَّ إذا اجْتُنِبَتْ الكَبَائرُ» رواه مسلم.
“পাঁচ ওয়াক্ত সালাত, এক জুমা থেকে অপর জুমা, এক রমযান থেকে অপর রমযান, মধ্যবর্তী সময়ের জন্য কাফফারাস্বরূপ, যদি কবীরাহ গুনাহ থেকে বিরত থাকা হয়”।[103]
আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি:
«مَنْ صَامَ رَمَضَانَ وعَرَفَ حُدُودَهُ وتَحفَّظَ مما كَانَ يَنبَغِي لَه أَنْ يَتَحَفَّظَ فيهِ كَفَّرَ ما قَبْلَه» رَوَاهُ أَحْمَدُ وَصَحَّحَهُ ابنُ حِبانَ.
“যে রমযানের সওম পালন করল, তার সীমারেখা ঠিক রাখল এবং যা থেকে বিরত থাকা দরকার তা থেকে সে বিরত থাকল, তার পূর্বের পাপ মোচন করা হবে”।[104]
শিক্ষা ও মাসায়েল:
এক. কল্যাণ-অকল্যাণ উভয় দ্বারা মানুষকে পরীক্ষা করা হয়, কল্যাণের পরীক্ষা যেমন: অধিক সম্পদ ও নিয়ামত। অকল্যাণের পরীক্ষা যেমন: বিপদ-আপদ দুঃখ-বেদনা, রোগ-ব্যাধি লেগে থাকা।
দুই. সন্তান ও সম্পদ মানুষের জন্য পরীক্ষা, কারণ মানুষ তাদের মহব্বত, ভালবাসা ও হিতকামনায় আল্লাহর হক নষ্ট করে, পরকালে যা শাস্তির কারণ। তাদের দ্বারা পরীক্ষার অপর দিক হলো, শরিয়ত আমাদেরকে তাদের ওপর অনেক দায়িত্ব দিয়েছে, যেমন তাদের শিক্ষা-দীক্ষা, ভরন-পোষণ ইত্যাদির ব্যবস্থা করা, সেসব বিষয়ে ত্রুটি করা পরকালে শাস্তির কারণ।[105]
তিন. পাপ ও নাফরমানী ফিতনার অন্তর্ভুক্ত, যেমন বেগানা নারী অথবা হারাম মালে জড়িত ব্যক্তি ফিতনায় পতিত, অনেক সময় নেককার লোকেরা এতে পতিত হয়।[106]
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿إِنَّ ٱلَّذِينَ ٱتَّقَوۡاْ إِذَا مَسَّهُمۡ طَٰٓئِفٞ مِّنَ ٱلشَّيۡطَٰنِ تَذَكَّرُواْ فَإِذَا هُم مُّبۡصِرُونَ ٢٠١﴾ [الأعراف: 201]
“নিশ্চয় যারা তাকওয়া অবলম্বন করেছে যখন তাদেরকে শয়তানের পক্ষ থেকে কোন কুমন্ত্রণা স্পর্শ করে তখন তারা আল্লাহকে স্মরণ করে। তখনই তাদের দৃষ্টি খুলে যায়”।[107] তিনি অন্যত্র বলেন:
﴿وَٱلَّذِينَ إِذَا فَعَلُواْ فَٰحِشَةً أَوۡ ظَلَمُوٓاْ أَنفُسَهُمۡ ذَكَرُواْ ٱللَّهَ فَٱسۡتَغۡفَرُواْ لِذُنُوبِهِمۡ وَمَن يَغۡفِرُ ٱلذُّنُوبَ إِلَّا ٱللَّهُ وَلَمۡ يُصِرُّواْ عَلَىٰ مَا فَعَلُواْ وَهُمۡ يَعۡلَمُونَ ١٣٥﴾ [آل عمران: 135]
“আর যারা কোন অশ্লীল কাজ করলে অথবা নিজদের প্রতি যুলম করলে আল্লাহকে স্মরণ করে, অতঃপর তাদের গুনাহের জন্য ক্ষমা চায়। আর আল্লাহ ছাড়া কে গুনাহ ক্ষমা করবে ? আর তারা যা করেছে, জেনে শুনে তা তারা বার বার করে না”।[108]
চার. কোন গুনাহে যে বারবার লিপ্ত হয়, তার উচিত অধিক সওয়াবের কাজ করা, কেননা নেক কাজ গুনাহ মুছে দেয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿إِنَّ ٱلۡحَسَنَٰتِ يُذۡهِبۡنَ ٱلسَّئَِّاتِۚ ١١٤﴾[هود: 114]
“নিশ্চয়ই ভালকাজ মন্দকাজকে মিটিয়ে দেয়। এটি উপদেশ গ্রহণকারীদের জন্য উপদেশ”।[109] সন্দেহ নেই, অধিক পরিমাণ নেক কাজ গুনাহের শৃঙ্খল থেকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করে। অতঃপর আল্লাহ তার নেক আমলের কারণে তাকে খালেস তওবা করার তওফিক দান করেন।
পাঁচ. এসব হাদিস প্রমাণ করে সিয়াম কাফফারা। সুতরাং আবু হুরায়রার হাদিসে বর্ণিত ‘সিয়াম কাফফারা নয়’ এর অর্থ হচ্ছে, সাধারণ আমল শুধু কাফফারা, কিন্তু সিয়াম কাফফারা হওয়ার সাথে সাথে অতিরিক্ত সওয়াবও আছে। একনিষ্ঠ-ভাবে আল্লাহর জন্য সম্পাদিত সিয়ামে এ ফযিলত লাভ হবে।[110]
ছয়. ইমাম নববী রহ. বলেন: “কখনো বলা হয়: ওযু যদি গোনাহের কাফফারা হয় তাহলে সালাত কিসের কাফফারা? আর সালাত যদি কাফফারা হয়, তাহলে জামাতের সালাত, রমযানের সওম, আরাফার সওম, আশুরার সওম এবং ফেরেশতাদের আমীনের সাথে বান্দার আমীনের মিল কিসের কাফফারা? কারণ এসব আমল সম্পর্কে বর্ণিত আছে এগুলো কাফফারা। আলেমগণ এর উত্তর দিয়েছেন: এসব আমল কাফফারার যোগ্য, যদি কাফফারা করার জন্য ছোট পাপ থাকে, তাহলে তার কাফফারা করে, যদি ছোট-বড় পাপ না থাকে, তাহলে এর দ্বারা নেকী লিখা হয় ও মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়। আর যদি কোন কবিরা গোনাহে লিপ্ত হয়, আশা করি এ কারণে তা হালকা হবে।[111]
সাত. এসব আমল দ্বারা বান্দার হক মাফ হয় না, ছোট বা বড় নেক আমলের কারণে কোন হক মাফ হয় না। বরং তা থেকে অবশ্যই মুক্ত হতে হবে, অথবা তার থেকে হালাল করে নিতে হবে।[112]
আট. সিয়ামের ফলে পাপ মোচন হয়।
নয়. সিয়ামের এসব ফযিলত সে লাভ করবে, যে সওম বিনষ্টকারী বস্তু থেকে স্বীয় সওম হিফাযত করবে, যেমন আবু সাঈদ খুদরির হাদিসে এসেছে:
«وعَرَفَ حُدُدَهُ وتَحَفَّظَ ممَا كَانَ ينْبَغِي لهُ أنْ يتَحَفَّظَ فِيه»
“সওমের সীমারেখা ঠিক রাখল ও সেসব বস্তু থেকে নিরাপদ থাকল, যা থেকে নিরাপদ থাকা জরুরী”।
সারকথা, মুসলিমদের উচিত রমযানের রাত-দিন হারাম কথা যেমন গীবত, পরনিন্দা ও হারাম দৃষ্টি থেকে নিজেকে হিফাযত করা, যা টেলিভিশন-ইন্টারনেট ও বিভিন্ন প্রচার যন্ত্রে প্রচার করা হয়, যার কুফল অন্যান্য সময়ের চেয়ে রমযানে বেড়ে যায়। আল্লাহ আমাদেরকে হিদায়াত ও সঠিক পথে থাকার তওফিক দান করুন।
১৩. সাদা তাগা ও কালো তাগার অর্থ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿وَكُلُواْ وَٱشۡرَبُواْ حَتَّىٰ يَتَبَيَّنَ لَكُمُ ٱلۡخَيۡطُ ٱلۡأَبۡيَضُ مِنَ ٱلۡخَيۡطِ ٱلۡأَسۡوَدِ مِنَ ٱلۡفَجۡرِۖ ١٨٧﴾ [البقرة: 187]
“আর আহার কর ও পান কর যতক্ষণ না ফজরের সাদা রেখা কাল রেখা থেকে স্পষ্ট হয়”।[113] আদি ইব্ন হাতেম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: যখন নাযিল হল:
﴿حَتَّىٰ يَتَبَيَّنَ لَكُمُ ٱلۡخَيۡطُ ٱلۡأَبۡيَضُ مِنَ ٱلۡخَيۡطِ ٱلۡأَسۡوَدِ مِنَ ٱلۡفَجۡرِۖ ١٨٧﴾ [البقرة :187]
আমি একটি কাল রশি ও একটি সাদা রশি হাতে নেই এবং তা আমার বালিশের নিচে রেখে দেই। অতঃপর আমি রাতে বারবার তাকাতে থাকি, কিন্তু আমার নিকট তা স্পষ্ট হয়নি। প্রত্যুষে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এ ঘটনার বর্ণনা দেই। তিনি বললেন: এটা হচ্ছে রাতের কাল রেখা ও দিনের সাদা রেখা”।[115]
শিক্ষা ও মাসায়েল:
এক. আল্লাহর নির্দেশ বাস্তবায়নে সাহাবিরা ছিলেন অধীর আগ্রহী, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর নাযিলকৃত ওহী তারা দ্রুত বাস্তবায়ন করতেন। অপর বর্ণনায় এসেছে: আদি ইবন হাতেম রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: “হে আল্লাহর রাসূল, আপনি আমাকে যা বলেছেন সব বুঝেছি, তবে সাদা তাগা ও কালো তাগা ব্যতীত। আমি গত রাতে দু’টি তাগা সঙ্গে করে ঘুমাই, একবার এ দিকে, আরেক বার সে দিকে তাকাতে থাকি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেসে দিলেন। অতঃপর বললেন: এ কালো তাগা আর সাদা তাগার অর্থ আসমানে বিদ্যমান রাত-দিনের সাদা-কালো রেখা”।[116] দেখার বিষয় আদি এ আয়াতের অর্থ বাস্তবায়নের জন্য বালিশের নিচে সাদা ও কালো তাগা পর্যন্ত রেখেছেন।[117]
দুই. সাহাবায়ে কেরাম ইবাদত সংক্রান্ত বিষয়ে জটিলতা সৃষ্টি না হলে প্রশ্ন থেকে নিবৃত থাকতেন। বুঝার জন্য তারা যথাযথ চেষ্টা করতেন, যখন অপারগ হতেন রাসূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করতেন। অনুরূপ প্রত্যেক মুসলিমের কর্তব্য প্রথমে জিজ্ঞাসা না করে বুঝার চেষ্টা করা, ইবাদত সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জটিলতা ব্যতীত জিজ্ঞাসা না করা।
তিন. আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
﴿وَكُلُواْ وَٱشۡرَبُواْ حَتَّىٰ يَتَبَيَّنَ لَكُمُ ٱلۡخَيۡطُ ٱلۡأَبۡيَضُ مِنَ ٱلۡخَيۡطِ ٱلۡأَسۡوَدِ مِنَ ٱلۡفَجۡرِۖ ١٨٧﴾ [البقرة: 187]
“আর আহার কর ও পান কর যতক্ষণ না ফজরের সাদা রেখা কাল রেখা থেকে স্পষ্ট হয়”।[118] এর অর্থ হচ্ছে: তোমরা খাও এবং পান কর, যতক্ষণ না দিনের সাদা রেখা রাতের কালো রেখা থেকে স্পষ্ট হয়। আর এটা হয় সুবহে সাদিক উদিত হওয়ার পর”।[119]
চার. কঠিন মাসআলা ও দুর্বোধ্য শব্দসমূহ বিজ্ঞ আলেমদের নিকট জিজ্ঞাসা করা।
ছয়. ফজর উদিত হওয়া পর্যন্ত পানাহার বৈধ। পানাহার অবস্থায় যদি কারো ফজর উদিত হয়, আর সে মুখের খানা বের করে ফেলে, তার সওম শুদ্ধ, খেতে থাকলে সওম শুদ্ধ হবে না।[121]
১৪. ঋতুবতী নারীর ইফতার ও কাযা
মুয়াযাহ বিনতে আব্দুল্লাহ আল-আদাবি রাহিমাহুল্লাহ বলেন: আমি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বলি: “ঋতুবতী কেন সওম কাযা করে, সালাত কাযা করে না? তিনি বললেন: তুমি কি হারুরি? আমি বললাম: আমি হারুরি না, কিন্তু আমি জিজ্ঞাসা করছি, তিনি বললেন: আমাদের এমন হত, অতঃপর আমাদেরকে শুধু সওম কাযার নির্দেশ দেয়া হত, সালাত কাযার নির্দেশ দেয়া হত না”।[122]
মুয়াযাহ থেকে ইমাম তিরমিযির এক বর্ণনায় আছে, সে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বলে: “আমাদের প্রত্যেকে কি ঋতুকালীন সালাত কাযা করবে? তিনি বললেন: তুমি কি হারুরি? আমাদের কারো ঋতুস্রাব হলে, কাযার নির্দেশ দেয়া হত না”।[123]
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে ঋতুবতী হতাম, অতঃপর পবিত্রতা অর্জন করতাম, তিনি আমাদেরকে সওম কাযার নির্দেশ দিতেন, কিন্তু সিয়াম কাযার নির্দেশ দিতেন না”। এ হাদিস ইমাম তিরমিযি বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন হাদিসটি হাসান। অতঃপর তিনি বলেন: “এ হাদিস অনুযায়ী আহলে ইলমের আমল, অর্থাৎ ঋতুবতী নারী সিয়াম কাযা করবে, সালাত কাযা করবে না। এ ব্যাপারে তাদের দ্বিমত সম্পর্কে জানি না”।[124]
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা “তুমি কি হারুরি” বলে, এ প্রশ্নের প্রতি অনীহা ও বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। হারুরি খারেজি সম্প্রদায়ের একটি গ্রুপ। কুফার নিকটে অবস্থিত হারুরা শহরে তাদের বসতি, এ জন্য তাদেরকে হারুরি বলা হয়, সেখান থেকে তাদের উৎপত্তি। তাদের মধ্যে ছিল দ্বীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি ও কঠোরতা।[125] তাদের কেউ হাদিস ও ইজমার বিপরীত ঋতুবতী নারীর উপর ঋতুকালীন সালাতের কাযার নির্দেশ দিত।[126] এ জন্য তিনি বিরক্তি প্রকাশক শব্দ দ্বারা তাকে জিজ্ঞাসা করেছেন, তুমি কি তাদের কেউ?
শিক্ষা ও মাসায়েল:
এক. দ্বীনের মধ্যে বাড়াবাড়ি ও কঠোরতা হারাম। কুরআন-হাদিসের সীমারেখায় অবস্থান করা ও সে অনুযায়ী আমল করা ওয়াজিব। আল্লাহর দেয়া শিথিলতা বা রুখসত গ্রহণ করা। দ্বীনের ব্যাপারে যেরূপ বাড়াবাড়ি খারাপ, অনুরূপ বাহানা তালাশ নিন্দনীয়। মধ্যম পন্থা অবলম্বন করা উত্তম, অর্থাৎ কুরআন-হাদিসের ওপর আমল করা।
দুই. দ্বীনের ব্যাপারে কঠোরতা আরোপকারীদের নিষেধ করা বৈধ, যেন সঠিকভাবে শরিয়তের বাস্তবায়ন হয় এবং কোন সমস্যার সৃষ্টি না হয়।
তিন. কোন প্রশ্নের কারণে প্রশ্নকারী সম্পর্কে যদি মুফতির মনে খারাপ ধারণা জন্মায় তাহলে প্রশ্নকারীর ব্যাখ্যা দেয়া উচিত যে, তিনি গোড়া নন বরং জানতে ইচ্ছুক, যেমন মুয়াযাহ বলেছেন: “আমি হারুরি নই, কিন্তু প্রশ্ন করছি” তখন মুফতির কর্তব্য দলিল দ্বারা তার প্রশ্ন দূর করা, যেমন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা করেছেন।
চার. শরিয়তের মূল ভিত্তি আল্লাহ ও তার রাসূলের নির্দেশ। এ জন্য আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা তাকে বলেছেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সওম কাযার নির্দেশ দিতেন, সালাত কাযার নির্দেশ দিতেন না। অর্থাৎ যদি সালাতের কাযা ওয়াজিব হত, তাহলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবশ্যই তাদের কাযা করার নির্দেশ দিতেন। কারণ তিনি ছিলেন উম্মতের সবচেয়ে হিতাকাঙ্খি, তিনি উম্মতের জন্য প্রত্যেক বিষয় স্পষ্ট করে গেছেন।[127] মুসলিমের কর্তব্য আল্লাহর নির্দেশে পরিপূর্ণ সোপর্দ হওয়া, তার শরিয়তকে সম্মান প্রদর্শন করা ও দলিলের সামনে থেমে যাওয়া। আদেশগুলো বাস্তবায়ন করা, যেহেতু শরিয়তের আদেশ, নিষেধাজ্ঞা থেকে বিরত থাকবে, যেহেতু শরিয়তের নিষেধ, কারণ বুঝা যাক বা না যাক।
পাঁচ. ইব্ন আব্দুল বার রহ. বলেছেন: “ঋতুবতী নারী সিয়াম পালন করবে না, বরং কাযা করবে, তবে সালাত কাযাও করবে না। এ বিষয়ে উম্মতের ইজমা রয়েছে। আল-হামদুলিল্লাহ। সকল মুসলিম যেখানে একমত, সেটা সঠিক ও চূড়ান্ত সত্য”।[128]
ছয়. নারীর ওপর ইসলামি শরিয়তের ছাড় এই যে, তাদেরকে সালাত কাযার নির্দেশ দেয়া হয়নি, কারণ সালাত দিনে একাধিক বার, যার কাযা খুব কষ্টকর। এ জন্য নারীদের উচিত আল্লাহর শোকর আদায় করা।
সাত. নারী যদি ফজর উদিত হওয়ার সময় পাক হয়, তাহলে সে দিনের সওম তার শুদ্ধ হবে না, কাযা করা জরুরী, কারণ যখন ফজর উদিত হয়েছে, তখন সে ঋতুবতী। নারী যদি সূর্যাস্তের সামান্য আগে ঋতুবতী হয়, তাহলে তার সওম বাতিল, কাযা করা ওয়াজিব।[129]
নয়. নারী যদি সূর্যাস্ত যাওয়ার সামান্য পর ঋতুবতী হয়, তাহলে সে দিনের সওম শুদ্ধ।
দশ. নারী যদি সওম অবস্থায় রক্ত আসা অথবা তার ব্যথা অনুভব করে, সূর্যাস্তের আগে বের না হয়, তাহলে তার সওম শুদ্ধ।[130]
এগার. এ হাদিস থেকে বুঝায় অসুস্থ ব্যক্তি সওম ভঙ্গ করতে পারবে, যদিও তার সওমের ক্ষমতা থাকে, যদি রোগ বৃদ্ধির আশঙ্কা থাকে। কারণ ঋতুবতী নারী একেবারে দুর্বল হয় না, বরং রক্ত বের হওয়ার কারণে তার ওপর সওম কষ্টকর, আর রক্ত বের হওয়া একটি রোগ।[131]
জায়েদ ইব্ন খালেদ জুহানি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«مَن فَطَّرَ صَائماً كَانَ له مِثْلُ أَجْرِهِ غَيْرَ أَنَّهُ لا يَنقُصُ مِن أَجْرِ الصَّائِمِ شَيئاً»
“যে রোযাদারকে ইফতার করাল, তার রোযাদারের ন্যায় সাওয়াব হবে, তবে রোযাদারের নেকি বিন্দুমাত্র কমানো হবে না”।[132] অপর বর্ণনায় আছে :
«مَنْ فَطَّر صَائماً أَطعَمَهُ وسَقَاهُ كَانَ لَهُ مِثْلُ أَجْرِهِ مِنْ غَيْرِ أَنْ يَنقُصَ مِنْ أَجْرِهِ شَيء».
“যে রোযাদারকে ইফতার করাল, তাকে পানাহার করাল, তার রোযাদারের সমান সওয়াব হবে, তবে তার নেকি থেকে বিন্দুমাত্র হ্রাস করা হবে না”।[133]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তাকে এক মহিলা ইফতারের জন্য দাওয়াত করল, তিনি তাতে সাড়া দিলেন এবং বললেন: “আমি তোমাকে বলছি, যে গৃহবাসী কোন রোযাদারকে ইফতার করাবে, তাদের জন্য তার অনুরূপ সওয়াব হবে। মহিলা বলল: আমি চাই আপনি ইফতারের জন্য আমার কাছে কিছুক্ষণ অবস্থান করুন, বা এ জাতীয় কিছু বলেছে। তিনি বললেন: আমি চাই এ নেকি আমার পরিবার হাসিল করুক।[134]
শিক্ষা ও মাসায়েল:
এক. আল্লাহ তা‘আলার অসীম অনুগ্রহ যে, তিনি কল্যাণের নানা ক্ষেত্র উন্মুক্ত করেছেন। যেমন তিনি মানুষের প্রতি অনুগ্রহ করার আহ্বান জানিয়ে মহান সওয়াবের ঘোষণা দিয়েছেন।[135]
দুই. রোযাদারকে ইফতার করানো একটি ফযিলতপূর্ণ আমল, যে রোযাদারকে ইফতার করাবে সে তার ন্যায় নেকি লাভ করবে।
তিন. রোযাদারকে ইফতার করালে তার বদলা আল্লাহ নিজের পক্ষ থেকে প্রদান করেন, রোযাদারের পক্ষ থেকে নয়। অতএব রোযাদারের সামান্য নেকি হ্রাস হবে না, এটা আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহের আলামত।[136]
চার. এ থেকে বুঝা যায় ইফতারের দাওয়াত গ্রহণ করা বৈধ, বুজুর্গি দেখিয়ে বা নেকি কমার আশঙ্কায় তা প্রত্যাখ্যান করা বাড়াবাড়ি। কারণ অপরের নিকট ইফতার করলে রোযাদারের পুণ্য কমে না। তবে শুধু মিসকিনদের জন্য ইফতারের দাওয়াত হলে, সেখানে ধনীদের যাওয়া ঠিক নয়।
পাঁচ. আত্মীয়দের সঙ্গে সদাচার ও তাদের খুশির জন্য দাওয়াতে সাড়া দেয়া ও ইফতার করা বৈধ, যেন তাদের পুণ্য হাসিল হয়, যেমন আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু করেছেন।
ছয়. যে ইফতার করাবে, সে নেকি ও অপরের প্রতি ইহসানের নিয়ত করবে, বিশেষ করে রোযাদার যদি গরিব হয়।
সাত. রোযাদারকে বাসায় নিয়ে আপ্যায়ন করা, বা খাবার প্রস্তুত করে তার জন্য পাঠিয়ে দেয়া ইফতার করানোর শামিল, তবে অপচয় না করা, বিশেষ করে রকমারি ইফতারের এ যুগে।
আট. কেউ যদি গরিবকে টাকা দেয়, যার কিছু দিয়ে সে ইফতার করল, বাকিটা সংগ্রহে রেখে দিল, বাহ্যত তা ইফতার করানোর হাদিসের অন্তর্ভুক্ত হবে, অধিকন্তু সে আর্থিকভাবে উপকৃত হল।
ইব্ন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজ থেকে এসে উম্মে সিনান আনসারিকে বলেন: তুমি কেন হজ করনি? সে বলল: অমুকের পিতা, অর্থাৎ তার স্বামীর কারণে। তার চাষাবাদের দু’টি উট ছিল, একটি দ্বারা সে হজ করেছে, অপরটি আমাদের জমি চাষ করেছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: “নিশ্চয় রমযানের ওমরা আমার সাথে হজের সমান”।[137]
অপর বর্ণনায় আছে: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«فإِذا جَاءَ رَمَضَانُ فاعتَمرِي فإنَّ عُمْرةً فيه تَعْدِلُ حَجَّة».
উম্মে মাকাল রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেছেন:
«اعْتَمرِي في رَمَضَانَ فإنَّها كَحَجَّة» رواه أبو داود.
অনুরূপ হাদিস বর্ণিত হয়েছে জাবের, আনাস, আবু হুরায়রা ও ওয়াহাব ইব্ন আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে।[140]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী: “রমযানের ওমরা হজের সমান”। ইব্ন বাত্তাল রহ. বলেন: “এর দ্বারা বুঝা যায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে যে হজের কথা বলেছেন, তা নফল ছিল, কারণ উম্মত এ বিষয়ে একমত যে, ওমরা কখনো ফরয হজের স্থলাভিষিক্ত হয় না। এখানে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী “হজের বরাবর” দ্বারা উদ্দেশ্যে সাওয়াব ও ফযিলত, যা মানুষের কিয়াস ও ধারণার ঊর্ধ্বে, আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তার অনুগ্রহ দান করেন”।[141]
শিক্ষা ও মাসায়েল:
এক. বান্দার ওপর আল্লাহর অশেষ অনুগ্রহ যে, তিনি অল্প আমলের বিনিয়ে অধিক সওয়াব দান করেন। এ জন্য আমরা আল্লাহর শোকর আদায় করি।
দুই. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখতেন ও তাদের খবর নিতেন। আল্লাহ যাকে তার বান্দাদের দায়িত্ব দান করেন, তার উচিত অধীনদের সাথে দয়ার আচরণ করা, তাদের হিতকামনা করা ও খবরাখবর নেয়া এবং তাদের দ্বীন ও দুনিয়ার স্বার্থে কাজ করা।
তিন. ফরয হজের মোকাবেলায় যথেষ্ট নয় রমযানের ওমরা। অবশ্য সওয়াবের দিক থেকে সমান, কিন্তু এ কারণে ফরয আদায় হবে না। এ ব্যাপারে সবাই একমত।[142]
পাঁচ. এসব হাদিসের উদাহরণ, যেমন এসেছে সূরা ইখলাস কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান, অর্থাৎ সওয়াবের বিবেচনায়, কিন্তু সূরা ইখলাস তিলাওয়াত করা পূর্ণ কুরআন তিলাওয়াত করার সমান নয়।
ষষ্ট. রমযানের মর্যাদার কারণে ওমরা হজের সমমর্যাদা লাভ করে, কারণ রমযান মাসে ওমরাকারী ওমরার ফযিলত ও রমযানের ফযিলত লাভ করে। এ বরকতপূর্ণ সময় ও মক্কার পবিত্রতার কারণে ওমরা হজের সমান, যে হজ যিলহজ মাসের বরকতপূর্ণ সময় ও মক্কার পবিত্র স্থানে আদায় করা হয়।[144]
দ্বিতীয়ত রমযানের ওমরায় রয়েছে অধিক কষ্ট, কারণ সওম অবস্থায় আমল কষ্টকর, বা সফরের কারণে যদি সওম ত্যাগ করে, তবু সফরের কষ্ট কম নয়, পরবর্তীতে আবার কাযার কষ্ট। এরূপ কষ্ট রমযান ব্যতীত অন্য মাসে হয় না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওমরার নির্দেশ করে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বলেন:
«إِنَّها عَلى قَدْرِ نَصَبِك، أَو قَالَ: عَلى قَدْرِ نَفَقَتِك» رواه مسلم.
সাত. রমযান মাসে ওমরাকারী এ সওয়াব অর্জন করবে, মক্কায় অবস্থান করুক, বা ওমরা শেষে বাড়ি ফিরুক।
আট. এ হাদিস প্রমাণ করে না যে, তানয়িম অথবা হেরেমের বাইরে গিয়ে একমাসে বারবার ওমরা করা, অথবা একদিনে বারবার ওমরা করা বৈধ, বর্তমান যুগে প্রচলিত এ আমল সুন্নত পরিপন্থী, সাহাবিদের আমলের বিপরীত, তাদের কারো থেকে বর্ণিত নেই যে, তারা এক সফরে একাধিক ওমরা করেছেন।[146]
নয়. রমযানে ওমরাকারী ও বায়তুল্লাহ শরীফে ইতিকাফকারীর কর্তব্য আল্লাহর নিষিদ্ধ বস্তু থেকে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হিফাজত করা। কারণ মক্কার পাপ অন্য স্থানের পাপের তুলনায় অধিক ক্ষতিকর, বিশেষভাবে যদি রমযানের মহান মাসে হয়।
দশ. পরিবার ও সন্তানসহ যে রমযান মাসে হারাম শরীফে অবস্থান করে, তার কর্তব্য পরিবার ও সন্তানদের প্রতি খেয়াল রাখা, যেন তারা হারামে লিপ্ত না হয়, অন্যথায় সে সওয়াবের পরিবর্তে পাপ ও গুনাসহ বাড়ি ফিরবে, যেহেতু সে তাদের প্রতি খেয়াল রাখেনি।
এগার. যখন রোযাবস্থায় ওমরার নিয়তে মক্কায় পৌঁছে, সে হয়তো সওম ভেঙ্গে ওমরা আদায় করবে, অথবা সূর্যাস্তের অপেক্ষা করে ইফতারের পর তা আদায় করবে। সওম ভঙ্গ করে ওমরা আদায় করাই উত্তম, কারণ ওমরার নিয়ম মক্কায় পৌঁছা মাত্র তা আদায় করা, যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেছেন।
[12] আবু দাউদ: (২৩৪৩), দারামি: (১৬৯১), দারাকুতনি: (২/১৫৬), বায়হাকি: (৪/২১২), তাবরানি ফিল আওসাত: (৩৮৭৭), ইব্ন হিব্বান: (৩৪৪৭) ও হাকেম: (১/৫৮৫), হাদিসটি সিহহ বলেছেন। হাকেম বলেছেন মুসলিমের শর্ত মোতাবেক। আল-মাজমু গ্রন্থে ইমাম নববী হাদিসটি সহিহ বলেছেন: (৬/২৭৬)
[16] তিরমিযি রহ. তার জামে তিরমিযিতে: (৩/৭৪) বলেছেন: “সওম ত্যাগ করার বিষয়ে দু’জন নির্ভরযোগ্য ব্যক্তির সাক্ষী অপরিহার্য, এতে কোন আলেমের দ্বিমত নেই”। ইমাম নববী শারহু মুসলিমে বলেছেন: “অর্থাৎ কতক মুসলিমের চাঁদ দেখা যথেষ্ট, সবার দেখা জরুরী নয়, তবে কমপক্ষে দু’জন নির্ভরযোগ্য ব্যক্তির সাক্ষী অবশ্য জরুরী। বিশুদ্ধ অভিমত অনুযায়ী সওমের ক্ষেত্রে এক ব্যক্তির সাক্ষী গ্রহণযোগ্য, কিন্তু সওম ভঙ্গের ক্ষেত্রে দু’জন নির্ভরযোগ্য ব্যক্তির সাক্ষী ব্যতীত চাঁদ দেখা গ্রহণ করা যাবে না, আবু সাউর ব্যতীত সবাই এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। তিনি সওম ভঙ্গের ক্ষেত্রে এক ব্যক্তির সাক্ষী যথেষ্ট মনে করেন”। মাজমু ফাতাওয়া ইব্ন বায: (১৫/৬২)
[18] ইব্ন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর হাদিসের উপর ভিত্তি করে যারা চাঁদ দেখার ক্ষেত্রে এক ব্যক্তির সাক্ষী কবুল করা বৈধ বলেন, তারা এ ব্যাপারে নারী ও গোলামের সংবাদ গ্রহণযোগ্য মনে করেন, যেমন খাত্তাবি আবু দাউদের টিকা মাআলেমুস সুনানে উল্লেখ করেছেন: (২/৭৫৩)
[23] তিরমিযি: (৬৮২), ইব্ন মাজাহ: (১৬৪২), সহিহ ইব্ন খুযাইমাহ: (১৮৮৩), সহিহ ইব্ন হিব্বান: (৩৪৪৩৫), হাকেম: (১/৫৮২), তিনি বুখারি ও মুসলিমের শর্ত মোতাবেক হাদিসটি সহিহ বলেছেন। আলবানি সহীহ জামে তিরমিযিতে এ হাদিস সহিহ বলেছেন।
[34] আবু দাউদ: (২৪৫৪), তিরমিযি: (৭৩০), নাসায়ি: (৪/১৯৬), ইব্ন মাজাহ: (১৭০০), আহমদ: (৬/২৮৭), সহিহ ইব্ন খুযাইমাহ: (১৯৩৩), এ হাদিসটি মওকুফ ও মারফূ উভয়ভাবে বর্ণিত আছে, তবে মওকূফ বর্ণনা অধিক বিশুদ্ধ।
[40] নাসায়ি ফিল কুবরা: (৩২৫৯), তায়ালিসি: (২৩৬৭), ইব্ন খুযাইমাহ: (১৯৯৪) ও ইব্ন হিব্বান: (৩৪৮৩) হাদিসটি সহিহ বলেছেন।
[54] আবু দাউদ: (২৩২৪), তিরমিযি: (৬৯৭), ইব্ন মাজাহ: (১৬৬০), দারাকুতনি: (২/১৬৪), আব্দুর রায্যাক: (৭৩০৪), ইসহাক: (৪৯৬)
[56] আত-তামহিদ: (১৪/২৫৬), শায়খ ইব্ন বায রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন: “শরয়িভাবে চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে যদি মানুষ ভুল করে, তাহলে তারা সওয়াব পাবে ও পুরস্কৃত হবে”। মাজমু ফাতাওয়া ও রাসায়েল: (১৫/১৩৩)
[62] একাধিক আলেম এ মতের ওপর ইজমা বর্ণনা করেছেন, তার মধ্যে অন্যতম ইমাম নববী, দেখুন: তাহযিবুল আসমা ওয়াল লুগাত: (২/৩৩২)
[64] ইব্ন আসাকের তার তারিখে বর্ণনা করেছেন: (৪৪/২৮০), এবং ইব্ন আব্দুল বার তার তামহিদ গ্রন্থে: (৮/১১৯)
[67] আনাস ইব্ন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু এটা বৈধ বলেছেন, ইমাম আহমদ বলেছেন এতে কোন সমস্যা নেই। দেখুন: মুগনি: (১/৪৫৭)
[68] আহমদ: (৬/৯৯) নাসায়ি ফিল কুবরা: (২৯৮৬), আবু ইয়ালা: (৪৭০৮), বায্যার: (১৫৫২), তায়ালিসি: (১৫০৩), তার সনদ সহিহ, হাদিসটি বুখারি ও মুসলিমে আছে অন্য শব্দে।
[69] আবু দাউদ: (২৩৬৫), আহমদ: (৩/৪৭৫), মুআত্তা মালেক: (১/২৯৪), তার থেকে মুসনাদে শাফি: (১/১৫৭), হাকেম: (১/৫৯৮), হাদিসটি সহিহ বলেছেন ইব্ন আব্দুল বারর ফিত তামহিদ: (২২/৪৭), হাফেয ফি তাগলিকিত তালিক: (৩/১৫৩), আইনি ফি উমদাতিল কারি: (১১/১১), আলবানি ফি সহিহ আবু দাউদ।
[74] ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা: ফাতাওয়া নং: (৯৮৪৫) শায়খ উসাইমিন “ফাতাওয়া আরকানুল ইসলামে” তিনি অনুরূপ ফাতাওয়া দিয়েছেন, ফাতাওয়া নং: (৪৮৪)
[80] আবু দাউদ: (৫০৭), আহমদ: (৫/২৪৬), তাবরানি ফিল কাবির: (২০/১৩২), হাদিস নং: (২৭০), হাকেম: (২/৩০১), তিনি হাদিসটি সহিহ বলেছেন, আর ইমাম যাহাবি তার সমর্থন করেছেন। দ্বিতীয় বর্ণনা আহমদ থেকে নেয়া, হাকেম তা সহিহ বলেছেন ও ইমাম যাহাবি তার সমর্থন করেছেন, কিন্তু তাতে দুর্বলতা রয়েছে, তবে তার অন্যন্য শাহেদ হাদিস আছে।
[86] আবু দাউদ: (৫০৬), বায়হাকি ফিস সুনান: (৪/২০১), ফাযায়েলুল আওকাত: (৩০), আলবানি সহিহ আবু দাউদে হাদিসটি সহিহ বলেছেন।
[102] এ হাদিস ইব্ন রাহওয়েহ থেকে বর্ণিত, মাজমাউয যাওয়ায়েদে হায়সামি তা আহমদ থেকে বর্ণনা করেছেন: (৩/১৭৯), তিনি বলেছেন: এর বর্ণনাকারীগণ সহিহ গ্রন্থের বর্ণনাকারী।
[132] তিরমিযি: (৮০৭), ইব্ন মাজাহ: (১৭৪৬), নাসায়ি ফিল কুবরা: (৩৩৩০-৩৩৩১), সহিহ ইব্ন খুযাইমাহ: (২০৬৪), ইব্ন হিব্বান: (৩৪২৯), নাসায়ি আয়েশা থেকে মওকুফ হিসেবেও বর্ণনা করেছেন, দেখুন: নাসায়ি ফিল কুবরা: (৩৩৩২), আব্দুর রায্যাক আবু হুরায়রা থেকে মওকুফ হিসেবে বর্ণনা করেছেন, দেখুন: আব্দুর রায্যাক: (৭৯০৬)
[139] আবু দাউদ: (১৯৮৯), নাসায়ি ফিল কুবরা: (৪২২৬), তিরমিযি: (৯৩৯), তিনি বলেছেন হাদিসটি হাসান, গরিব। ইব্ন খুযাইমাহ: (৩০২৫), ও হাকেম: (১/৬৫৬), সহিহ বলেছেন, হাকেম বলেছেন হাদিসটি সহিহ মুসলিমের শর্ত মোতাবেক।
[146] মাজমুউল ফাতাওয়া: (২৬/২৯২), যাদুল মায়াদ: (২/৯৩), তাহযিবুস সুনান: (৭/৩৬)
সংকলন: ইবরাহিম ইব্ন মুহাম্মাদ আল-হাকিল
_________________________________________________________________________________
সংকলন: ইবরাহিম ইব্ন মুহাম্মাদ আল-হাকিল
অনুবাদক: সানাউল্লাহ নজির আহমদ
সম্পাদনা : আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
সূত্র : ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন