Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

See Our Articles In Different Styles... Grid View List View

শনিবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

অন্তর-বিধ্বংসী বিষয়সমূহ : নিফাক

Views:

A+ A-

 অন্তর-বিধ্বংসী বিষয়সমূহ : নিফাক 




ভূমিকা
الحمد لله رب العالمين، والصلاة والسلام على نبينا محمد، وعلى آله وصحبه أجمعين.
সকল প্রশংসা আল্লাহ তাআলার জন্য যিনি সমগ্র জগতের প্রতিপালক। আর সালাত ও সালাম আমাদের নবী মুহাম্মদের উপর এবং তার পরিবার পরিজন ও সকল সাহাবীগণের উপর।
মুনাফেকি বা কপটতা হল এমন একটি কঠিন ব্যাধি, যার পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ ও মারাত্মক ক্ষতিকর। মুনাফেকি বা কপটতা মানুষের অন্তরের জন্য এত ক্ষতিকর যে, তা মানুষের অন্তরকে সম্পূর্ণ নষ্ট করে দেয়, যার ফলে একজন মানুষ দুনিয়াতে ঈমান হারা হয় এবং দুনিয়া থেকে তাকে বেঈমান হয়ে চির বিদায় নিতে হয় মানুষের অন্তর নষ্ট করার জন্য মুনাফেকি বা কপটতার চেয়ে মারাত্মক ক্ষতিকর আর কোন কিছুই হতে পারে না। একজন মানুষ কখনই মুনাফেকি বা কপটতাকে পছন্দ করে না। কিন্তু তারপরও তাকে তার অজান্তে মুনাফেকি বা কপটতাতে আক্রান্ত হতে হয়। বিশেষ করে নিফাকে আমলী বা ছোট নিফাক এর অর্থ এ নয় যে, মানুষ মুনাফেকি বা কপটতাকে প্রতিহত করতে অক্ষম বা মুনাফেকি বা কপটতা হতে বেঁচে থাকা মানুষের জন্য অসম্ভব। যারা মুনাফেকিকে হালকা করে দেখে বা নিফাক হতে নিজেদের রক্ষা করার চেষ্টা কম করে তারাই মুনাফেকিতে আক্রান্ত হয়। নিফাক মানুষের যাবতীয় ভাল ও প্রশংসনীয় গুণকে ছিনিয়ে নেয় ও ঘৃণার পাত্রে পরিণত করে। কুরআনে করীমে আল্লাহ তাআলা মুনাফিকদের অবস্থা তাদের গুণ ও তাদের তৎপরতা তুলে ধরে একটি সূরা নাযিল করেন। আমরা এ কিতাবে নিফাকের সংজ্ঞা, প্রকার, মুনাফিকদের চরিত্র ও নিফাক থেকে বাঁচার উপায়গুলো সংক্ষিপ্তাকারে আলোচনা করব। যারা এ কিতাব লিখতে আমাদের সহযোগিতা করবে এবং মানুষের মধ্যে তা প্রকাশে অংশ গ্রহণ করবে আমরা তাদের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
وصلى الله وسلم على نبينا محمد.



Read More---

মুসলমানের চারিত্রিক গুণাবলী

Views:

A+ A-

মুসলমানের চারিত্রিক গুণাবলী 

 


মুসলমানের চারিত্রিক গুণাবলী

ইসলামী শরীয়ত হচ্ছে একটি পরিপূর্ণ জীবন পদ্ধতি যা সকল দিক থেকে সার্বিকভাবে মুসলমানের ব্যক্তিগত জীবনকে গঠন করার ব্যাপারে অত্যন্ত গুরুত্বারোপ করেছে এসব দিকের মধ্যে গুনাবলি শিষ্টাচার ও চরিত্রের দিকটি অন্যতম। ইসলাম এদিকে অত্যন্ত গুরুত্বারোপ করেছে। তাইতো আকীদা ও আখলাকের মাঝে সম্পর্ক স্থাপন করে দিয়েছে, যেমন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, 
"মুমিনদের মধ্যে পরিপূর্ণ ঈমানদার হচ্ছে সে ব্যক্তি, যে তাদের মধ্যে সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী।" [আহমাদ, আবু দাউদ, তিরমিযি ]

সুতরাং উত্তম চরিত্র হচ্ছে ঈমানের প্রমাণবাহী ও প্রতিফলন। চরিত্র ব্যতীত ঈমান প্রতিফলিত হয় না বরং নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সংবাদ দিয়েছেন যে, তাঁকে প্রেরণের অন্যতম মহান উদ্দেশ্য হচ্ছে চরিত্রের উত্তম দিকসমূহ পরিপূর্ণ করে দেয়া। 
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, 
"আমি তো কেবল চরিত্রের উত্তম দিকসমূহ পরিপূর্ণ করে দিতে প্রেরিত হয়েছি।" ইমাম আহমাদ ও ইমাম বুখারী আদাবুল মুফরাদে বর্ণনা করেছেন। 

এ কারণেই আল্লাহ তাআলা উত্তম ও সুন্দরতম চরিত্রের মাধ্যমে তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রশংসা করেছেন। 
আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَإِنَّكَ لَعَلى خُلُقٍ عَظِيمٍ
"নিশ্চয়ই আপনি মহান চরিত্রে অধিষ্ঠিত।" [সূরা আল কালাম : ৪]

কোথায় এ চরিত্র বর্তমান বস্তুবাদী মতবাদ ও মানবতাবাদী মানুষের মনগড়া চিন্তা চেতনায়? 
যেখানে চরিত্রের দিককে সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করা হয়েছে, তা শুধু সুবিদাবাদী নীতিমালা ও বস্তুবাদী স্বার্থের উপর প্রতিষ্ঠিত। যদিও তা অন্যদের উপর জুলুম বা নির্যাতনের মাধ্যমে হয়। অন্য সব জাতির সম্পদ লুন্ঠন ও মানুষের সম্মান হানীর মাধ্যমে অর্জিত হয়।
একজন মুসলমানের উপর তার আচার-আচরণে আল্লাহর সাথে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে, অন্য মানুষের সাথে, এমনকি নিজের সাথে কি ধরনের আচরণ করা উচিত ইসলাম তার এক অভিনব চকমপ্রদ চিত্র অংকন করে দিয়েছে। যখনই একজন মুসলমান বাস্তবে ও তার লেনদেনে ইসলামী চরিত্রের অনুসরণ করে তখনই সে অভিষ্ট পরিপূর্ণতার অতি নিকটে পৌঁছে যায়, যা তাকে আরো বেশি আল্লাহর নৈকট্য লাভ ও উচ্চ মর্যাদার সোপানে উন্নীত হতে সহযোগিতা করে। পক্ষান্তরে, যখনই একজন মুসলমান ইসলামের চরিত্র ও শিষ্টাচার হতে দূরে সরে যায় সে বাস্তবে ইসলামের প্রকৃত প্রাণ চাঞ্চল্য, নিয়ম-নীতির ভিত্তি হতে দূরে সরে যায়। সে যান্ত্রিক মানুষের মত হয়ে যায়, যার কোন অনুভূতি এবং আত্মা নেই।

ইসলামে ইবাদতসমূহ চরিত্রের সাথে কঠোরভাবে সংযুক্ত: 
যে কোন ইবাদত একটি উত্তম চরিত্রের প্রতিফলন ঘটায় না তার কোন মূল্য নেই। আল্লাহর সামনে নামায আদায়ের ক্ষেত্রে দেখা যায় নামায একজন মানুষকে অশ্লীল অপছন্দ কাজসমূহ হতে রক্ষা করে, আত্মশুদ্ধি ও আত্মার উন্নতি সাধনে এর প্রভাব রয়েছে। 
আল্লাহ তাআলা বলেন,
إِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَرِ
"নিশ্চয়ই নামায অশ্লীল, অপছন্দনীয় কাজ হতে নিষেধ করে।" [ সূরা আল-আনকাবুত :৪৫ ]

অনুরূপভাবে রোযা তাক্কওয়ার দিকে নিয়ে যায়। আর তাক্বওয়া হচ্ছে মহান চরিত্রের অন্যতম, যেমন- 
আল্লাহ তাআলা বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ
"হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরয করা হয়েছে যেমনি ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর যাতে তোমরা তাক্বওয়া লাভ করতে পার।" [ সূরা আল বাকারা : ১৮৩ ]
Read More---

বুধবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

মুসলমানের আদব বা শিষ্টাচার

Views:

A+ A-

মুসলমানের আদব বা শিষ্টাচার 

 


মুসলমানের আদব বা শিষ্টাচার

ইসলাম এমন কিছু উন্নত শিষ্টাচার, সুন্দর স্বভাব ও বৈশিষ্ট্যের উপর মুসলিম সন্তানদের গড়ে তোলার উপর গুরুত্বারোপ করেছে, যেটা মুসলিম প্রজন্মের শিক্ষা প্রশিক্ষণ, লালন-পালন ও তাদের চরিত্র বিনির্মাণে ভূমিকা পালন করে থাকে। কথা কাজের ক্ষেত্রে উন্নত পন্থা অবলম্বন, সৎ স্বভাব গ্রহণ ও ঘৃণিত তথা মন্দ স্বভাব পরিত্যাগে নির্দেশনা দিয়ে থাকে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতের জন্য আদব তথা শিষ্টাচারের সকল দিকগুলোই বর্ণনা দিয়েছেন। এমনকি যুদ্ধের ময়দানের শিষ্টাচার কি হবে, তাও বলে দিয়েছেন। তিনি তাদেরকে যুদ্ধের সময় নারী-শিশু এবং যে সকল বৃদ্ধ যুদ্ধ করে না তাদেরকে হত্যা করতে নিষেধ করেছেন। বারণ করেছেন গির্জা ও আশ্রমে আশ্রয় গ্রহণকারী পাদ্রী, ধর্মযাজক ও সন্নাসী এবং শষ্যক্ষেত্রে চাষাবাদরত চাষীকে হত্যা করতে। এবং মৃতের দেহ বিকৃত করতে ও নিষেধ করেছেন। এমনিভাবে আরো অনেক আদব রয়েছে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বলে দেয়া শিষ্টাচার তথা আদবের মধ্যে রয়েছে খাদ্য-পানীয় গ্রহণ, পোষাক-পরিচ্ছদ, নিদ্রা, স্ত্রী মিলন ও দাম্পত্য জীবনের আদব ছাড়াও অনেক বিষয়। এমনকি তিনি পায়খানায় প্রবেশের আদব ও বলে দিয়েছেন, যেমন: 
সালমান ফারেসী (রাঃ) থেকে বর্ণনা এসেছে, তিনি বলেন, 'মুশরিকরা আমাদেরকে বলে, এ কেমন কথা তোমাদের নবী তোমাদেরকে সকল কিছুই শিক্ষা দেন, এমনকি পায়খানা করার নিয়মও ?! তিনি বললেন, 'হ্যাঁ! তিনি আমাদেরকে পায়খানা -পেশাবের সময় কেবলা মূখী অথবা কেবলাকে পিছনে দিয়ে বসতে বারণ করেছেন। ডান হাতে ঢিলা- কুলুখ ব্যবহার, তিনটির কম পাথর ঢিলা হিসাবে ব্যবহার অথবা হাড় কিংবা গোবর দিয়ে ঢিলা ব্যবহার থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।' মুসলিম

ইসলামই হচ্ছে একমাত্র জীবন ব্যবস্থা যা সমগ্র মানব জীবনের জন্য একটি নির্ভুল পদ্ধতি এঁকে দিয়েছে। যার মাঝে রয়েছে জীবনের প্রতিটি স্তর ও বিভাগের সুষ্ঠু সমাধান। এটা মানব রচিত কোন জীবন বিধান নয় যে, তার মাঝে সত্য মিথ্যার সম্ভাবনা থাকবে, বরং এটা হচ্ছে আল্লাহ প্রদত্ত জীবন বিধান, যা তার অনুসারীদের জন্য দুনিয়ার জীবনে বয়ে নিয়ে আসে কল্যাণ, শান্ত্তি ও মানুষিক স্বস্তি, আর কিয়ামতের কঠিন দিনে পুরস্কৃত করে তার চিরস্থায়ী সুখের জান্নাত। 
আল্লাহ বলেন- 
"আমরা কিতাবে (কুরআনে) কোন কিছুই বাদ দেইনি।"[ সূরা আনআম ৩৮ আয়াত ]

আত্মার সুষ্ঠু গঠন ও পরিশুদ্ধি এবং সুন্দর চরিত্র বিনির্মাণে নবুওয়তী আদবের একটি সুন্দর প্রভাব ও সুদূর প্রসারী ফলাফল রয়েছে। নবুওয়তী আদব তথা ইসলামী শিষ্টাচার জাতির জন্য এমন কিছু ধারাবাহিক প্রজন্ম উপহার দিয়েছে, সত্যবাদিতা, আমানতদারিতা, চারিত্রিক নিষ্কুলুষতা, পবিত্রতা, আদল ইনসাফ, ব্যক্তিত্ব, লজ্জাশীলতা, দয়া দাক্ষিণ্য এবং শক্তি-সামর্থ ও বীরত্বে যাদের তুলনা ইতিহাসে বিরল। হতাশাগ্রস্থ মজলুমের সহযোগিতায় ও তাদের জুড়ি নেই। ইসলামী শিষ্টাচার ও নবুয়তী চরিত্র থেকে দূরে সরে যাওয়াই হচ্ছে বর্তমান মুসলিম উম্মার দুর্বলতার কারণ। মুসলিম উম্মাহ যদি অপর জাতির দাস সূলভ অনুসরণ থেকে বেরিয়ে আসতে পারে, যদি ফিরে আসে তাদের সক্বীয়তা এবং সত্যিকার ইসলামী শিষ্টাচারের দিকে, তাহলে অবশ্যই তাদের হারানো গৌরব, সম্মান ও মর্যাদা ফিরে আসবে। মুসলিম জাতি কি এ ব্যাপারটি অনুধাবন করবে ?

Read More---

জান্নাতের পথে

Views:

A+ A-

জান্নাতের পথে 

 



بِسمِ اللَّهِ الرَّحمٰنِ الرَّحيمِ

লাভ-লোকসানের মাঝে একজন মুসলিমের একটি মূল্যবান দিন

প্রিয় ভাই!

 আল্লাহ্ তা‘আলার হক আদায়ে সচেষ্ট হোন। আল্লাহ্ তা‘আলা আপনাকে হেফাযত করবেন।
আপনি কি ফজরের সালাত জামা‘আতের সাথে আদায় করেছেন? ফজরের সালাতে আল্লাহ্ তা‘আলার যে সকল হক রয়েছে দিবসের শুরুতে তা কি আপনি যথাযথ আদায় করেছেন? 
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বিষয়ে বলেছেন:
مَنْ صَلَّى الْفَجْرَ فِيْ جَمَاعَةٍ فَهُوَ فِيْ ذِمَّةِ اللهِ
‘যে ব্যক্তি ফজরের সালাত জামা‘আতের সাথে আদায় করল, আল্লাহ স্বয়ং ঐ ব্যক্তির হেফাযতকারী হয়ে যান।’’[1]

 আপনি কি পাঁচ ওয়াক্তের সালাত আল্লাহর ধ্যানে ভয় ও বিনয় নম্রতা এবং একাগ্রচিত্তে (অর্থাৎ খুশু খুযুর সাথে) আদায় করেছেন?
মহান আল্লাহ্ বলেন:
﴿حَٰفِظُواْ عَلَى ٱلصَّلَوَٰتِ وَٱلصَّلَوٰةِ ٱلۡوُسۡطَىٰ وَقُومُواْ لِلَّهِ قَٰنِتِينَ ٢٣٨﴾ [البقرة: ٢٣٨]
‘‘তোমরা সালাতের প্রতি যত্নবান হও, বিশেষকরে মধ্যবর্তী (‘আসরের) সালাতের এবং আল্লাহর সামনে (সালাতে) তোমরা বিনম্রচিত্তে দাঁড়াও।’’[2]

• পাঁচ ওয়াক্ত ফরয সালাতের পূর্বে ও পরে যে সমস্ত সুন্নাত সালাত রয়েছে আপনি কি সেগুলো সঠিকভাবে আদায় করেন? আপনি কি প্রতিদিন বার বার তাওবাহ্ করেন এবং বেশী বেশী ইসতেগফার ও ক্ষমা প্রার্থনা করেন? 
মহান আল্লাহ্ এ বিষয়ে বলেন:
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ تُوبُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ تَوۡبَةٗ نَّصُوحًا﴾ [التحريم: ٨]
‘‘হে মু’মিনগণ! তোমরা আল্লাহ্‌র কাছে তাওবাহ কর---খাঁটি ও বিশুদ্ধ (খালেস) তাওবাহ।’’[3]

• হে মুসলিম! আপনার শরীরের অঙ্গ প্রতঙ্গের প্রতিটি জোড়ার জন্য সাদকাহ দেয়া আবশ্যক। আর আপনার জন্য এটি খুব সহজেই সম্ভব। (কেননা) চাশতের সময় দু’রাকাত সালাত আদায় করলে তা জোড়াগুলোর (সাদকাহ হিসেবে) গণ্য হয়ে যায়। যা মহান আল্লাহ্‌র দিকে প্রত্যাবর্তনকারী সত্যবাদী লোকদের সালাত।
Read More---

মুসলমানের চারিত্রিক গুণাবলী

Views:

A+ A-

মুসলমানের চারিত্রিক গুণাবলী

 



মুসলমানের চারিত্রিক গুণাবলী

ইসলামী শরীয়ত হচ্ছে একটি পরিপূর্ণ জীবন পদ্ধতি যা সকল দিক থেকে সার্বিকভাবে মুসলমানের ব্যক্তিগত জীবনকে গঠন করার ব্যাপারে অত্যন্ত গুরুত্বারোপ করেছে এসব দিকের মধ্যে গুনাবলি শিষ্টাচার ও চরিত্রের দিকটি অন্যতম। ইসলাম এদিকে অত্যন্ত গুরুত্বারোপ করেছে। তাইতো আকীদা ও আখলাকের মাঝে সম্পর্ক স্থাপন করে দিয়েছে, যেমন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, 
"মুমিনদের মধ্যে পরিপূর্ণ ঈমানদার হচ্ছে সে ব্যক্তি, যে তাদের মধ্যে সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী।" [আহমাদ, আবু দাউদ, তিরমিযি ]

সুতরাং উত্তম চরিত্র হচ্ছে ঈমানের প্রমাণবাহী ও প্রতিফলন। চরিত্র ব্যতীত ঈমান প্রতিফলিত হয় না বরং নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সংবাদ দিয়েছেন যে, তাঁকে প্রেরণের অন্যতম মহান উদ্দেশ্য হচ্ছে চরিত্রের উত্তম দিকসমূহ পরিপূর্ণ করে দেয়া। 
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, 
"আমি তো কেবল চরিত্রের উত্তম দিকসমূহ পরিপূর্ণ করে দিতে প্রেরিত হয়েছি।" ইমাম আহমাদ ও ইমাম বুখারী আদাবুল মুফরাদে বর্ণনা করেছেন। 

এ কারণেই আল্লাহ তাআলা উত্তম ও সুন্দরতম চরিত্রের মাধ্যমে তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রশংসা করেছেন। 
আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَإِنَّكَ لَعَلى خُلُقٍ عَظِيمٍ
"নিশ্চয়ই আপনি মহান চরিত্রে অধিষ্ঠিত।" [সূরা আল কালাম : ৪]

কোথায় এ চরিত্র বর্তমান বস্তুবাদী মতবাদ ও মানবতাবাদী মানুষের মনগড়া চিন্তা চেতনায়? 
যেখানে চরিত্রের দিককে সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করা হয়েছে, তা শুধু সুবিদাবাদী নীতিমালা ও বস্তুবাদী স্বার্থের উপর প্রতিষ্ঠিত। যদিও তা অন্যদের উপর জুলুম বা নির্যাতনের মাধ্যমে হয়। অন্য সব জাতির সম্পদ লুন্ঠন ও মানুষের সম্মান হানীর মাধ্যমে অর্জিত হয়।
একজন মুসলমানের উপর তার আচার-আচরণে আল্লাহর সাথে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে, অন্য মানুষের সাথে, এমনকি নিজের সাথে কি ধরনের আচরণ করা উচিত ইসলাম তার এক অভিনব চকমপ্রদ চিত্র অংকন করে দিয়েছে। যখনই একজন মুসলমান বাস্তবে ও তার লেনদেনে ইসলামী চরিত্রের অনুসরণ করে তখনই সে অভিষ্ট পরিপূর্ণতার অতি নিকটে পৌঁছে যায়, যা তাকে আরো বেশি আল্লাহর নৈকট্য লাভ ও উচ্চ মর্যাদার সোপানে উন্নীত হতে সহযোগিতা করে। পক্ষান্তরে, যখনই একজন মুসলমান ইসলামের চরিত্র ও শিষ্টাচার হতে দূরে সরে যায় সে বাস্তবে ইসলামের প্রকৃত প্রাণ চাঞ্চল্য, নিয়ম-নীতির ভিত্তি হতে দূরে সরে যায়। সে যান্ত্রিক মানুষের মত হয়ে যায়, যার কোন অনুভূতি এবং আত্মা নেই।

ইসলামে ইবাদতসমূহ চরিত্রের সাথে কঠোরভাবে সংযুক্ত: 
যে কোন ইবাদত একটি উত্তম চরিত্রের প্রতিফলন ঘটায় না তার কোন মূল্য নেই। আল্লাহর সামনে নামায আদায়ের ক্ষেত্রে দেখা যায় নামায একজন মানুষকে অশ্লীল অপছন্দ কাজসমূহ হতে রক্ষা করে, আত্মশুদ্ধি ও আত্মার উন্নতি সাধনে এর প্রভাব রয়েছে। 
আল্লাহ তাআলা বলেন,
إِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَرِ
"নিশ্চয়ই নামায অশ্লীল, অপছন্দনীয় কাজ হতে নিষেধ করে।" [ সূরা আল-আনকাবুত :৪৫ ]

অনুরূপভাবে রোযা তাক্কওয়ার দিকে নিয়ে যায়। আর তাক্বওয়া হচ্ছে মহান চরিত্রের অন্যতম, যেমন- 
আল্লাহ তাআলা বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ
"হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরয করা হয়েছে যেমনি ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর যাতে তোমরা তাক্বওয়া লাভ করতে পার।" [ সূরা আল বাকারা : ১৮৩ ]

রোযা: অনুরূপভাবে শিষ্টাচার, ধীরস্থিরতা, প্রশান্তি, ক্ষমা, মুর্খদের থেকে বিমুখতা ইত্যাদির প্রতিফলন ঘটায়। 
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, 
"তোমাদের কারো রোযার দিন যদি হয়, তাহলে সে যেন অশ্লীল কথাবার্তা না বলে, হৈ চৈ না করে অস্থিরতা না দেখায়। যদি কেউ তাকে গালি দেয় অথবা তার সাথে লড়াই করে সে যেন বলে দেয় আমি রোযাদার। বুখারী ও মুসলিম

যাকাত: অনুরূপভাবে অন্তরকে পবিত্র করে, আত্মাকে পরিমার্জিত করে এবং তাকে কৃপণতা, লোভ ও অহংকারের ব্যধি হতে মুক্ত করে। 
আল্লাহ তাআলা বলেন,
خُذْ مِنْ أَمْوَالِهِمْ صَدَقَةً تُطَهِّرُهُمْ وَتُزَكِّيهِمْ بِهَا
"তাদের সম্পদ হতে আপনি সাদকাহ গ্রহণ করুন যার মাধ্যমে আপনি তাদেরকে পবিত্র ও পরিমার্জিত করবেন।"
[ সূরা তাওবাহ ১০৩ আয়াত ]

হজ্জ: আর হজ্জ হচ্ছে একটি বাস্তবমুখী প্রশিক্ষণশালা আত্মশুদ্ধি এবং হিংসা বিদ্ধেষ ও পঙ্কিলতা থেকে আত্মাকে পরিশুদ্ধি ও পরিমার্জনের জন্য।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
فَمَنْ فَرَضَ فِيهِنَّ الْحَجَّ فَلَا رَفَثَ وَلَا فُسُوقَ وَلَا جِدَالَ فِي الْحَجِّ
"যে এ মাস গুলোতে নিজের উপর হজ্জ ফরয করে নিল সে যেন অশ্লীলতা, পাপাচার ও ঝগড়া বিবাদ হজ্জের মধ্যে না করে।" সূরা আল বাকারাহ : ১৯৭

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, 
"যে ব্যক্তি অশ্লীল কথা-বার্তা ও পাপ কর্ম না করে হজ্জ পালন করল, সে তার পাপ রাশি হতে তার মা যেদিন জন্ম দিয়েছে সে দিনের মত নিষ্পাপ হয়ে ফিরে এল।" বুখারী ও মুসলিম।

ইসলামী চরিত্রের মৌলিক বিষয়সমূহ

১. সত্যবাদিতা
আল্লাহ তাআলা এবং তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের যে সকল ইসলামী চরিত্রের নির্দেশ দিয়েছেন, তার অন্যতম হচ্ছে সত্যবাদিতার চরিত্র। 
আল্লাহ তাআলা বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَكُونُوا مَعَ الصَّادِقِينَ
"হে ঈমানদারগণ আল্লাহকে ভয় কর এবং তোমরা সত্যবাদীদের সাথী হও।" সূরা আত-তাওবাহ : ১১৯ 

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, 
"তোমরা সততা অবলম্বন গ্রহণ কর, কেননা সত্যবাদিতা পুণ্যের পথ দেখায় আর পূণ্য জান্নাতের পথ দেখায়, একজন লোক সর্বদা সত্য বলতে থাকে এবং সত্যবাদিতার প্রতি অনুরাগী হয়, ফলে আল্লাহর নিকট সে সত্যবাদী হিসাবে লিপিবদ্ধ হয়ে যায়।" মুসলিম

২. আমানতদারিতা
মুসলমানদের সে সব ইসলামী চরিত্র অবলম্বনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে তার একটি হচ্ছে আমানতসমূহ তার অধিকারীদের নিকট আদায় করে দেয়া। 
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُكُمْ أَنْ تُؤَدُّوا الْأَمَانَاتِ إِلَى أَهْلِهَا
"নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন আমানতসমূহ তার হকদারদের নিকট আদায় করে দিতে।" সূরা আন নিসা : ৫৮
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সম্প্রদায়ের নিকট আল আমীন উপাধি লাভ করেছিলেন, তারা তাঁর নিকট তাদের সম্পদ আমানত রাখত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তার অনুসারীদের মুশরিকরা কঠোর ভাবে নির্যাতন শুরু করার পর যখন আল্লাহ তাকে মক্কা হতে মদীনা হিজরত করার অনুমতি দিলেন তিনি আমানতের মালসমূহ তার অধিকারীদের নিকট ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা না করে হিজরত করেননি। অথচ যারা আমানত রেখেছিল তারা সকলেই ছিল কাফের। কিন্তু ইসলাম তো আমানত তার অধিকারীদের নিকট ফিরিয়ে দিতে নির্দেশ দিয়েছে যদিও তার অধিকারীরা কাফের হয়।

৩. অঙ্গীকার পূর্ণ করা
ইসলামী মহান চরিত্রের অন্যতম হচ্ছে অঙ্গীকার পূর্ণ করা। 
আল্লাহ তাআলা বলেন :
وَأَوْفُوا بِالْعَهْدِ إِنَّ الْعَهْدَ كَانَ مَسْئُولًا
"আর অঙ্গীকার পূর্ণ কর, কেননা অঙ্গীকার সম্বন্ধে জিজ্ঞাসিত হবে।" সূরা ইসরা : ৩৪

আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকরা মুনাফিকের বৈশিষ্ট্যের মধ্যে গণ্য করেছেন।

৪. বিনয়
ইসলামী চরিত্রের আরেকটি হচ্ছে একজন মুসলমান তার অপর মুসলিম ভাইদের সাথে বিনয়ী আচরণ করবে। সে ধনী হোক বা গরীব। 
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
وَاخْفِضْ جَنَاحَكَ لِلْمُؤْمِنِينَ
"তুমি তোমার পার্শ্বদেশ মুমিনদের জন্য অবনত করে দাও।" সূরা আল হিজর : ৮৮

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, 
"আল্লাহ তাআলা আমার নিকট ওহী করেছেন যে, 'তোমরা বিনয়ী হও যাতে একজন অপরজনের উপর অহংকার না করে। একজন অপর জনের উপর সীমালংঘন না করে।" -মুসলিম।

৫. মাতা-পিতার প্রতি সদ্ব্যবহার
মাতা-পিতার প্রতি সদ্ব্যবহার উত্তম চরিত্রের অন্যতম। আর এটা তাদের অধিকার মহান হওয়ার কারণে, যে অধিকার স্থান হল আল্লাহর হকের পরে।ি 
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
وَاعْبُدُوا اللَّهَ وَلَا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا
'আর আল্লাহর ইবাদত কর, তাঁর সাথে কোন কিছুকে শরীক করো না, এবং মাতা-পিতার প্রতি সদ্ব্যবহার কর।" [সূরা আন-নিসা : ৩৫ আয়াত
আল্লাহ তাআলা তাদের আনুগত্য, তাদের প্রতি দয়া ও বিনয় এবং তাদের জন্য দু'আ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। 
আল্লাহ তাআলা বলেন :
وَاخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحْمَةِ وَقُلْ رَبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا
"তাদের উভয়ের জন্য দয়ার সাথে বিনয়ের ডানা নত করে দাও এবং বল, হে আমার রব! তাদের প্রতি দয়া কর যেভাবে শৈশবে আমাকে তারা লালন-পালন করেছেন।" [ সূরা আল ইসরা : ২৪ ]

এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করল, 'হে আল্লাহর রাসূল! আমার উত্তম আচরণ পাওয়ার সবচেয়ে বেশী অধিকারী ব্যক্তি কে ? তিনি বললেন, 'তোমার মা।' অত:পর জিজ্ঞেস করল তারপর কে? তিনি উত্তর দিলেন, 'তোমার মা।' অতঃপর জিজ্ঞেস করল তার পর কে? তিনি উত্তর দিলেন, 'তোমার মা।' অতঃপর জিজ্ঞেস করল তার পর কে? উত্তর দিলেন, 'তোমার পিতা।' বুখারী ও মুসলিম

মাতা-পিতার প্রতি এ সদ্ব্যবহার ও দয়া অনুগ্রহ অতিরিক্ত বা পূর্ণতা দানকারী বিষয় নয় বরং তা হচ্ছে সকল মানুষের ঐক্যমতের ভিত্তিতে ফরযে আইন।

৬. আত্মীয়তার সর্ম্পক বজায় রাখা
আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা ইসলামী চরিত্রের অন্যতম। আর তারা হচ্ছে নিকটাত্মীয়গণ যেমন, চাচা, মামা, ফুফা, খালা, ভাই, বোন প্রমূখ।
আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা ওয়াজিব, আর তা ছিন্ন করা জান্নাত হতে বঞ্চিত ও অভিশাপের কারণ। 
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
فَهَلْ عَسَيْتُمْ إِنْ تَوَلَّيْتُمْ أَنْ تُفْسِدُوا فِي الْأَرْضِ وَتُقَطِّعُوا أَرْحَامَكُمْ ﴿২২﴾ أُولَئِكَ الَّذِينَ لَعَنَهُمُ اللَّهُ فَأَصَمَّهُمْ وَأَعْمَى أَبْصَارَهُمْ ﴿২৩﴾
" যদি তোমরা ক্ষমতা পাও, তাহলে কি তোমরা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করবে? তারা তো ঐ সব লোক যাদের প্রতি আল্লাহ অভিশাপ করেছেন। এতে তিনি তাদেরকে বধির করে দিয়েছেন এবং তাদের দৃষ্টি অন্ধ করে দিয়েছেন।" সূরা মুহাম্মাদ : ২২-২৩

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, 
"আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী বেহেশ্‌তে প্রবেশ করবে না।" বুখারী ও মুসলিম

৭. প্রতিবেশীর প্রতি সুন্দরতম ব্যবহার
প্রতিবেশীর প্রতি সুন্দরতম ব্যবহার হচ্ছে ইসলামী চরিত্রের অন্যতম। প্রতিবেশী হচ্ছে সে সব লোক যারা আপনার বাড়ীর আশে পাশে বসবাস করে। যে আপনার সবচেয়ে নিকটবর্তী সে সুন্দর ব্যবহার ও অনুগ্রহের সবচেয়ে বেশী হকদার।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا وَبِذِي الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِينِ وَالْجَارِ ذِي الْقُرْبَى وَالْجَارِ الْجُنُبِ
"আর মাতা-পিতার প্রতি সদ্ব্যবহার কর, নিকটাত্মীয়, এতিম, মিসকীন নিকটতম প্রতিবেশী ও দূরবর্তী প্রতিবেশীর প্রতিও।" সূরা আন-নিসা : ৩৬
এতে আল্লাহ নিকটতম ও দূরবর্তী প্রতিবেশীর প্রতি সদ্ব্যবহার করতে ওসিয়ত করেছেন। 

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেনঃ 
'জিবরীল আমাকে প্রতিবেশীর ব্যাপারে ওসিয়ত করতেছিল এমনকি আমি ধারণা করেনিলাম যে, প্রতিবেশীকে উত্তরাধিকার বানিয়ে দেয়া হবে।' বুখারী ও মুসলিম
অর্থাৎ আমি মনে করেছিলাম যে ওয়ারিশদের সাথে প্রতিবেশীর জন্য মিরাসের একটি অংশ নির্ধারিত করে দেবে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আবু যর রা. কে লক্ষ্য করে বলেন, 'হে আবু যর! যখন তুমি তরকারী পাক কর তখন পানি বেশি করে দাও, আর তোমার প্রতিবেশীদের অঙ্গীকার পূরণ কর।" মুসলিম

প্রতিবেশীর পার্শ্বাবস্থানের হক রয়েছে যদিও সে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের প্রতি অবিশ্বাসী বা কাফের হয়।

৮. মেহমানের আতিথেয়তা
ইসলামী চরিত্রের আরেকটি হচ্ছে মেহমানের আতিথেয়তা। 
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বাণী, 
"যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং পরকালের প্রতি বিশ্বাস করে সে যেন তার মেহমানকে সম্মান করে।" বুখারী ও মুসলিম।

৯. সাধারণভাবে দান ও বদান্যতা
ইসলামী চরিত্রের অন্যতম দিক হচ্ছে দান ও বদান্যতা। আল্লাহ তাআলা ইনসাফ, বদান্যতা ও দান কারীদের প্রশংসা করেছেন। 
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
الَّذِينَ يُنْفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ثُمَّ لَا يُتْبِعُونَ مَا أَنْفَقُوا مَنًّا وَلَا أَذًى لَهُمْ أَجْرُهُمْ عِنْدَ رَبِّهِمْ وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ
"যারা আল্লাহর রাস্তায় নিজেদের সম্পদ ব্যয় করে অতঃপর যা খরচ করেছে তা থেকে কারো প্রতি অনুগ্রহ ও কষ্ট দেয়ার উদ্দেশ্য করে না, তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের নিকট প্রতিদান রয়েছে। তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুশ্চিন্তাও করবে না।" সূরা আল বাকারাহ : ২৬২

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, 
'যার নিকট অতিরিক্ত বাহন থাকে সে যেন যার বাহন নেই তাকে তা ব্যবহার করতে দেয়। যার নিকট অতিরিক্ত পাথেয় বা রসদ রয়েছে সে যেন যার রসদ নেই তাকে তা দিয়ে সাহায্য করে।" মুসলিম

১০. ধৈর্য্য ও সহিষ্ণুতা
ধৈর্য্য ও সহিষ্ণুতা হচ্ছে ইসলামী চরিত্রের অন্যতম বিষয়। অনুরূপভাবে মানুষদের ক্ষমা করা, দুর্ব্যবহারকারীকে ছেড়ে দেয়া ওজর পেশকারীর ওজর গ্রহণ করা বা মেনে নেয়াও অন্যতম। 
আল্লাহ তাআলা বলেন :
وَلَمَنْ صَبَرَ وَغَفَرَ إِنَّ ذَلِكَ لَمِنْ عَزْمِ الْأُمُورِ
"আর যে ধৈর্য্য ধারণ করল এবং ক্ষমা করল, নিশ্চয়ই এটা কাজের দৃঢ়তার অন্তর্ভূক্ত।" সূরা আশ শুরা : ৪৩

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, 
'তারা যেন ক্ষমা করে দেয় এবং উদারতা দেখায়, আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করে দেয়া কি তোমরা পছন্দ কর না?' রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, "দান খয়রাতে সম্পদ কমে যায় না। আল্লাহ পাক ক্ষমার দ্বারা বান্দার মার্যাদাই বৃদ্ধি করে দেন। যে আল্লাহর জন্য বিনয় প্রকাশ করে আল্লাহ তার সম্মানই বৃদ্ধি করে দেন।" [মুসলিম ] 

তিনি আরো বলেন, 
"দয়া কর, তোমাদের প্রতি দয়া করা হবে। ক্ষমা করে দাও তোমাদেরও ক্ষমা করে দেয়া হবে।" আহমাদ

১১. মানুষের মাঝে সমঝোতা ও সংশোধন:
ইসলামী চরিত্রের আরেকটি হচ্ছে মানুষের মাঝে সমঝোতা ও সংশোধন করে দেয়া, এটা একটি মহান চরিত্র যা ভালবাসা সৌহার্দ প্রসার ও মানুষের পারষ্পারিক সহযোগিতার প্রাণের দিকে নিয়ে যায়।
আল্লাহ তাআলা বলেন :
لَا خَيْرَ فِي كَثِيرٍ مِنْ نَجْوَاهُمْ إِلَّا مَنْ أَمَرَ بِصَدَقَةٍ أَوْ مَعْرُوفٍ أَوْ إِصْلَاحٍ بَيْنَ النَّاسِ وَمَنْ يَفْعَلْ ذَلِكَ ابْتِغَاءَ مَرْضَاةِ اللَّهِ فَسَوْفَ نُؤْتِيهِ أَجْرًا عَظِيمًا
"তাদের অধিকাংশ শলাপরামর্শের মধ্যে কল্যাণ নেই। কেবল মাত্র সে ব্যক্তি ব্যতীত যে সাদকাহ, সৎকর্ম ও মানুষের মাঝে সংশোধনের ব্যাপারে নির্দেশ দেয়। যে আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে এসব করে অচিরেই আমরা তাকে মহা প্রতিদান প্রদান করব।" সূরা আন নিসা : ১১৪

১২. লজ্জা:
ইসলামী চরিত্রের অন্যতম আরেকটি চরিত্র হচ্ছে লজ্জা। এটা এমন একটি চরিত্র যা পরিপূর্ণতা ও মর্যাদাপূর্ণ বৈশিষ্ট্যের দিকে আহবান করে। অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা হতে বারণ করে। লজ্জা আল্লাহর পক্ষ হতে হয়ে থাকে। ফলে মুসলমান লজ্জা করে যে, আল্লাহ তাকে পাপাচারে লিপ্ত দেখবে। অনুরূপভাবে মানুষের থেকে এবং নিজের থেকেও সে লজ্জা করে। লজ্জা অন্তরে ঈমান থাকার প্রমাণ বহন করে। 
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, 
'লজ্জা ঈমানের বিশেষ অংশ।' বুখারী ও মুসলিম।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন, 
"লজ্জা কল্যাণ ছাড়া আর কিছুই নিয়ে আসে না।" বুখারী ও মুসলিম

১৩. দয়া ও করুণা:
ইসলামী চরিত্রের আরেকটি উল্লেখযোগ্য চরিত্র হচ্ছে দয়া বা করুণা। এ চরিত্রটি অনেক মানুষের অন্তর হতে ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। ফলে তাদের অন্তর পাথরের মত অথবা এর চেয়েও শক্ত হয়ে গেছে। আর প্রকৃত মু'মিন হচ্ছে দয়াময়, পরোপকারী, গভীর অনুভূতি সম্পন্ন উজ্জল অনুগ্রহের অধিকারী। 
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
ثُمَّ كَانَ مِنَ الَّذِينَ آَمَنُوا وَتَوَاصَوْا بِالصَّبْرِ وَتَوَاصَوْا بِالْمَرْحَمَةِ ﴿১৭﴾ أُولَئِكَ أَصْحَابُ الْمَيْمَنَةِ ﴿১৮﴾
"অত:পর সে তাদের অন্তর্ভূক্ত হয় যারা ঈমান এনেছে পরস্পর পরস্পরকে ধৈর্য্য ও করুণার উপদেশ দিয়েছে। তারা হচ্ছে দক্ষিণ পন্থার অনুসারী।" সূরা আল-বালাদ : ১৭- ১৮

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, 
"মুমিনদের পারস্পরিক সৌহার্দ্য, করুণা, অনুকম্পার উপমা হচ্ছে একটি শরীরের মত। যখন তার একটি অঙ্গ অসুস্থ হয় গোটা শরীর নিদ্রাহীনতা ও জ্বরে আক্রান্ত হয়।" মুসলিম

১৪. ইনসাফ বা ন্যায়পরায়ণতা:
ন্যায় পরায়ণতা ইসলামী চরিত্রের আরেকটি অংশ। এ চরিত্র আত্মার প্রশান্তি সৃষ্টি করে। সমাজে নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা এবং বিভিন্ন প্রকার অপরাধ বিমোচনের দিকে নিয়ে যায়। 
আল্লাহ তাআলা বলেন :
إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُ بِالْعَدْلِ وَالْإِحْسَانِ وَإِيتَاءِ ذِي الْقُرْبَى
"নিশ্চয়ই আল্লাহ ন্যায়পরায়ণতা ইহসান ও নিকটাত্মীয়দের দান করতে নির্দেশ দেন।" সূরা আল নাহাল : ৯০
আল্লাহ তাআলা বলেন :
اعْدِلُوا هُوَ أَقْرَبُ لِلتَّقْوَى
"ইনসাফ কর, এটা তাক্বওয়ার অতীব নিকটবর্তী।" সূরা আল মায়িদা : ৮

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, 
"ন্যায়পরায় ব্যক্তিরা আল্লাহর নিকট নূরের মিম্বরের উপর বসবে। তারা হল সে সব লোক, যারা বিচার ফয়সালার ক্ষেত্রে, পরিবার-পরিজনের ক্ষেত্রে এবং যে দায়িত্বই পেয়েছে তাতে ইনসাফ করে।"

১৫. চারিত্রিক পবিত্রতা:
ইসলামী চরিত্রের অন্যতম বিষয় হচ্ছে চারিত্রিক পবিত্রতা। এ চরিত্র মানুষের সম্মান সংরক্ষণ এবং বংশে সংমিশ্রন না হওয়ার দিকে পৌঁছে দেয়। 
আল্লাহ তাআলা বলেন :
وَلْيَسْتَعْفِفِ الَّذِينَ لَا يَجِدُونَ نِكَاحًا حَتَّى يُغْنِيَهُمُ اللَّهُ مِنْ فَضْلِهِ
"যাদের বিবাহের সামর্থ নেই, তারা যেন চারিত্রিক পবিত্রতা গ্রহণ করে। যতক্ষণ না আল্লাহ তার অনুগ্রহে তাকে সম্পদশালী করেন।" [ সুরা আন নূর-৩৩ ]

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরশাদ করেছেন, 
"তোমরা আমার জন্য ছয়টি বিষয়ের জিম্মাদার হও। তাহলে আমি তোমাদের জন্য জান্নাতের জিম্মাদার হব। যখন তোমাদের কেউ কথা বলে সে যেন মিথ্যা না বলে। যখন তার কাছে আমানত রাখা হয় তখন যেন খেয়ানত না করে। যখন প্রতিশ্রুতি দেয় তা যেন ভঙ্গ না করে। তোমরা তোমাদের দৃষ্টি অবনত কর। তোমাদের হস্তদ্বয় সংযত কর। তোমাদের লজ্জাস্থান হেজাফত কর।" [ হাদীসটি তাবারানী বর্ণনা করেছেন এবং হাদীসটিকে 'হাসান' বলেছেন ]
ইসলামের এ সব চরিত্রে এমন কিছু নেই যা ঘৃণা করা যায়। বরং এসব এমন সম্মান যোগ্য মহৎ চারিত্রাবলী যা প্রত্যেক নিষ্কলুষ স্বভাবের অধিকারীর সমর্থন লাভ করে। মুসলমানগণ যদি এ মহৎ চরিত্র ধারণ করত তাহলে সর্বস্থান থেকে তাদের নিকট মানুষ আগমন করত এবং দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে তারা প্রবেশ করত যেভাবে প্রথম যুগের মুসলমানদের লেন-দেন ও চরিত্রের কারণে সে সময়ের মানুষ ইসলামে প্রবেশ করেছিল।

সমাপ্ত

লেখক: আদেল বিন আলী আশ-শিদ্দী / আহমদ আল-মাযইয়াদ
تأليف: عادل بن علي الشدي/ أحمد المزيد
অনুবাদ: সাইফুল্লাহ আহমাদ
ترجمة : سيف الله أحمد
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান
مراجعة : عبد الله شهيد عبد الرحمن
সূত্র: ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব
المكتب التعاوني للدعوة وتوعية الجاليات بالربوة بمدينة الرياض
Read More---

অন্তরের আমল: দ্বীনদারি

Views:

A+ A-

অন্তরের আমল: দ্বীনদারি

 



ভূমিকা
الحمد لله رب العالمين، والصلاة والسلام على نبينا محمد، وعلى آله وصحبه أجمعين.
যাবতীয় প্রশংসা মহান রাব্বুল আলামীনের যিনি সমগ্র জাহানের প্রতিপালক। আর সালাত ও সালাম নাযিল হোক আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপরযিনি সমস্ত নবীগণের সেরা ও সর্বশ্রেষ্ঠ আরও সালাত ও সালাম নাযিল হোক তার পরিবার, পরিজন ও সাথী-সঙ্গীদের উপর।

অন্তরের আমলসমূহের অন্যতম আমল হল, পরহেজগারি ও দ্বীনদারি পরহেজগারি ও দ্বীনদারি হল, দ্বীনের খুঁটিসমূহ তথা ভিত্তিসমূহের একটি অন্যতম ভিত্তি ও খুটি। তাকওয়া, পরহেজগারি ও আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এর ভয় ছাড়া ঈমানদারি চলে না। মনে রাখতে হবে, দ্বীনদারি মানবাত্মা ও অন্তরকে যাবতীয় নাপাকী-অপবিত্রতা থেকে পবিত্র করে এবং বিভিন্ন ধরনের মানবিক ব্যাধি-হিংসা, বিদ্বেষ, পরশ্রিকাতরাতা ইত্যাদি হতে মুক্ত করে। পরহেজগারি ও দ্বীনদারি হল, ঈমানী বৃক্ষের ফল এবং ঈমানের সৌন্দর্য। দ্বীনদারি ছাড়া ঈমান, ফল ছাড়া বৃক্ষের মত। ঈমানের পরিপূর্ণতার জন্য দ্বীনদারি আবশ্যক। তবে দ্বীনদারি কি তা আমাদের অবশ্যই জানা থাকতে হবে। আমরা অনেকেই পরহেজগারি ও দ্বীনদারি কি তা জানি না। এ জন্য পরহেজগারি  দ্বীনদারি সম্পর্কে আলোচনা খুবই জরুরি। যাতে আমরা কোনটি দ্বীনদারি আর কোন গোড়ামি তা জানতে ও বুঝতে পারি।


আমরা এ কিতাবে দ্বীনদারিورع- এর সংজ্ঞা, হাকীকত, উপকারিতা ও ফলাফল ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করব। সাথে সাথে এখানে থাকবে কিভাবে আমরা দ্বীনদারি অর্জন করতে পারি তার আলোচনা, মুত্তাকী ও পরহেজগার হিসাবে আমরা নিজেকে কিভাবে গড়ে তুলতে পারি তার আলোচনা আর আমার এ রিসালাটি, অন্তরের আমলসমূহের ধারাবাহিক আলোচনারই একটি অংশ বিশেষ একটি ইলমী প্রশিক্ষণ সেন্টারে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাকে আলোচনা করার সুযোগ দিয়েছিলেন, তখন আমি এ বিষয়টির উপর আলোচনা করি। আমার আলোচনাটিকে রিসালা-পুস্তিকা- আকারে রূপ দেয়া হয়। আমার সাথে কিছু আহলে ইলম সাথী ছিল, যারা আমাকে বিভিন্নভাবে এ বিষয়ে সহযোগিতা করেন।
আমরা তাদের জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নিকট কামনা করি, তিনি যেন তাদের ও আমাদের সবার জন্য যাবতীয় কল্যাণ ও কামিয়াবিকে সহজ করে দেন এবং ইলম ও আমলের পথকে উন্মুক্ত করে দেন। নিশ্চয় তিনি আমাদের প্রার্থনা শোনেন এবং কবুল করেন। আমীন।
মুহাম্মাদ সালেহ আল-মুনাজ্জেদ


বিষয়ের গুরুত্ব

আল্লামা তাউস রহ. বলেন, ঈমানের দৃষ্টান্ত হল, বৃক্ষের মত, তার মূল, কাণ্ড ও ডাল-পালা হল, এ কথার সাক্ষ্য দেয়া, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এর রাসূল। আর ঈমান বৃক্ষের ফল হল, পরহেজগারি ও দ্বীনদারি। যে বৃক্ষের ফল নাই তার মধ্যে কোন উপকারিতা নাই। আর যে লোকের মধ্যে দ্বীনদারি নাই তার মধ্যে কোন কল্যাণ নাই[1]
কাসেম ইবনে উসমান রহ. বলেন, পরহেজগারি ও দ্বীনদারি হল, দ্বীনের খুঁটি[2] আরো মনে রাখতে হবে, আসল ইবাদতই হল, দ্বীনদারি অর্জন করা। হারেস ইবন আসাদ আল-মুহাসেবী রহ. বলেন, আসল ইবাদত হল, দ্বীনদারি কাসেম আল-জুয়ী রহ. বলেন, দ্বীনের মূল হল, পরহেজগারি ও দ্বীনদারি অবলম্বন করা। দ্বীনদারি হল একজন বান্দার যোগ্যতার আসল প্রমাণ[3]। ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু ও আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তারা উভয়ে বলেন,
« لا تنظروا إلى صلاة أحد ولا صيامه، وانظروا إلى صدق حديثه إذا حدث، وإلى أمانته إذا ائتمن، وإلى ورعه إذا أشفى»
“তোমরা কোন মানুষের সালাত ও সাওমের দিকে দেখে তার দ্বীনদারি বিচার করবে না। যখন সে কথা বলে তখন সত্য বলে কিনা তা দেখবে, যখন তার নিকট আমানত রাখা হয়, তখন তার আমানতদারিতার প্রতি লক্ষ্য করবে এবং যখন অসুস্থ হয়, তখন তার দ্বীনদারির প্রতি লক্ষ্য করবে”[4]
সালফে সালেহীনগণ দ্বীনদারি কিভাবে অর্জন করতে হয়, তা শিখতো। আল্লামা জাহহাক রহ. বলেন,
“আমাদের যুগে আমরা দ্বীনদারি শিখতাম। তিনি আরও বলেন, আমরা আমাদের সাথীদের দেখতাম তারা কিভাবে দ্বীনদারি অর্জন করা যায় তা শিখতো”

দ্বীনদারির সংজ্ঞা:
আভিধানিক অর্থ: অভিধানে এর অর্থ হল, সংকোচ বোধ করা।
কিন্তু শব্দটির মূল অর্থ হল, হারাম থেকে বিরত থাকা, তারপর শব্দটিকে রূপক অর্থে ব্যবহার করা হলে, তার দ্বারা উদ্দেশ্য হল, মুবাহ ও হালাল বস্তু থেকে বিরত থাকা[5]
পারিভাষিক অর্থ:
শব্দটি পারিভাষিক অর্থ বিষয়ে আলেমদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে।
আল্লামা ফুজাইল ইবনে আয়াজ রহ. বলেন,
الورع: اجتناب  المحارم
الورع তথা দ্বীনদারি হল, নিষিদ্ধ বিষয় হতে বিরত থাকা”[6]
আল্লামা ইবরাহীম ইবনে আদহাম রহ. বলেন,
الورع: ترك كل شبهة، وترك ما لا يعنيك، وترك الفضلات
“পরহেজগারি ও দ্বীনদারি হল, সন্দেহযুক্ত বস্তু, অনর্থক কর্মকাণ্ড ও অতিরঞ্জিত কোন কাজ করা হতে বিরত থাকা”[7]
আল্লামা ইবনুল কাইয়্যেম দ্বীনদারির সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেন,
الورع: ترك  ما يُخشى ضرره في الآخرة
“দ্বীনদারি হল, যে কাজ করলে আখিরাতের ক্ষতির আশংকা রয়েছে, তা পরিহার করা”[8]
আবু বকর মুহাম্মদ ইবন আলী আল কাতানী রহ. বলেন,
الورع:  هو ملازمة الأدب، وصيانة النفس
“দ্বীনদারি হল, শিষ্টাচারিতা অবলম্বন করা এবং আত্মার হেফাজত করা”[9]
Read More---