Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

See Our Articles In Different Styles... Grid View List View

শুক্রবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২৩

ফাজায়েলে আ’মাল বা এই জাতীয় কিতাব পড়া জায়েজ নয়

Views:

A+ A-

 ফাজায়েলে আ’মাল বা এই জাতীয় কিতাব পড়া জায়েজ নয়


ফাজায়েলে আ’মাল পড়া জায়েয নয় এবং এতে বর্ণিত কাহিনীতে বিশ্বাস করে এমন ইমামের পেছনে নামায পড়াও জায়েয নয়

সৌদী আরবের গবেষণা ও ফাত্‌ওয়া ইস্যুকারী স্থায়ী কমিটির ফতোয়া নাম্বার – ২১৪১২
ফাত্‌ওয়া আল-লাজ্‌নাহ আদ্-দা’ইমাহ, খণ্ড- ২, পৃষ্ঠা- ২৮২-২৮৪। 

প্রশ্নঃ

শাইখ মুহাম্মাদ যাকারিয়া (রহ) ভারত ও পাকিস্তানের বিখ্যাত ধর্মীয় পণ্ডিতগণের মধ্যে একজন, বিশেষ করে তাবলীগ জামায়াতের (ইসলামের দিকে ডাকে এমন একটি দল) অনুসারীদের মধ্যে। তাঁর লিখা অনেকগুলো কিতাব রয়েছে যার মধ্যে “ফাজায়েলে আ’মাল” একটি, যেটি তাবলীগী গ্রুপগুলোর ধর্মীয় আলোচনার সময় পড়া হয়ে থাকে এবং যেটিকে এই গ্রুপের সদস্যরা সহীহ আল বুখারীর মতই শ্রদ্ধা করে। আমি তাদের মধ্যে একজন ছিলাম। এই বইটি পড়তে গিয়ে আমি দেখলাম যে এর মধ্যে কিছু কিছু বক্তব্য অগ্রহণযোগ্য ও অবিশ্বাস্য। সুতরাং আমি আমার এই সমস্যাটা আপনাদের সুবিখ্যাত কমিটির কাছে পেশ করছি, এই আশায় যে আপনারা এর সমাধান দিতে পারবেন। এই বর্ণনাগুলোর মধ্যে হচ্ছে আহমেদ রিফাঈর লিখা একটি বর্ণনা, যেখানে তিনি দাবী করেন যে হজ্জ্ব সমাপনের পর তিনি রাসুলুল্লাহ, সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রওজা জেয়ারত করতে যান এবং নিম্নলিখিত কবিতাংশটি পাঠ করেনঃ


“যখন আমি দূরে ছিলাম, আমি আমার আত্মাকে পাঠিয়ে দিতাম আমার পক্ষ থেকে মাটিকে চুম্বন করার জন্যে। এখন যেহেতু আমি স্বশরীরে ও আত্মায় উপস্থিত, আপনার ডান হাত বাড়িয়ে দিন যেন আমি চুম্বন করতে পারি।”

এই বাক্যগুলো পড়ার পর রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ডান হাত বের হয়ে আসে আর তিনি তাতে চুম্বন করেন। এই ঘটনাটি বর্ণিত আছে আস সুয়ূতী রচিত “আল হাওয়ী” নামক গ্রন্থে।

তিনি আরো দাবী করেন যে এ মহান ঘটনাটির প্রত্যক্ষদর্শী ছিল প্রায় ৯ (অথবা ৯০) হাজার মুসলিম এবং তারা সবাই সেই বরকতময় হাতও দেখতে পান, যার মধ্যে শাইখ আবদুল কাদের জ্বিলানী (রহ) ও তখন মসজিদে নববীতে ছিলেন। এই কাহিনীর আলোকে আমি নিম্নোক্ত প্রশ্নগুলো উত্থাপন করতে চাইঃ

১। এটি কী কোন সত্য ঘটনা নাকি ভিত্তিহীন গল্প?

২। সুয়ূতী রচিত “আল হাওয়ী” কিতাবটির সম্বন্ধে আপনাদের মত কী যেটির মধ্যে এই কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে?

৩। যদি এই গল্প সঠিক না হয়, এমন কোন ঈমামের পেছনে নামাজ পড়া জায়েজ হবে কী যেই এই গল্পটি বয়ান ও বিশ্বাস করেন?

৪। এমন কিতাব কোন মসজিদের ধর্মীয় আলোচনা সভায় পড়া জায়েজ হবে কী, যেহেতু ব্রিটেনে তাবলীগ গ্রুপগুলি মসজিদে এই কিতাবটি পড়ে থাকে? এই বইটি সৌদী আরবেও ব্যাপক প্রচলিত, বিশেষ করে মদীনা মুনাওয়ারাতে কারণ এর লেখক দীর্ঘ সময়ের জন্য সেখানে বসবাস করতেন।

শ্রদ্ধেয় উলামাবৃন্দ, দয়া করে আমাদেরকে সন্তোষজনক জবাব দিয়ে পথ দেখাবেন কী, যেন আমি এটিকে স্থানীয় ভাষায় অনুবাদ করে বন্ধু-বান্ধব, সহকর্মী ও অন্য সকল মুসলিমদের মাঝে বিলি করতে পারি এই বিষয়ে কথা বলার সময়?

উত্তরঃ

এই গল্পটি মিথ্যা এবং একদম ভিত্তিহীন। মৃতব্যাক্তি সম্বন্ধে সাধারণ নিয়ম হচ্ছে, নবী-রাসুল বা সাধারণ মুসলিম যেই হোন না কেন, তিনি তাঁর কবরে নড়া-চড়া করতে পারেন না। যে বর্ণনা করা হয় যে রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাফেঈ-র জন্যে বা অন্য কারো জন্যে তাঁর হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন – এটি সত্য নয়; বরং এটি একটি ভিত্তিহীন বিভ্রম, যা কোনমতেই বিশ্বাস করা উচিত নয়।


তিনি (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আবু বকর (রা) এর জন্যে তাঁর হাত বাড়িয়ে দেন নি, উমার (রা) এর জন্যে দেন নি, অথবা অন্য কোন সাহাবীর জন্যেও না। কারোই উচিত হবে না সুয়ূতীর কিতাব “আল-হাওয়ী” থেকে এই কাহিনী বর্ণনা করে বিভ্রান্ত হওয়া, কেননা অনেক আলেমদের মতে, সুয়ূতী তার কিতাবে বর্ণিত বর্ণনা গুলোর বিশুদ্ধতা পরীক্ষা করেন নি। তাছাড়া, যে ঈমাম এ কাহিনী বিশ্বাস করে তার পেছনে সলাত আদায় করাও জায়েজ হবে না, কারণ সে তার আক্কিদাগত দিক থেকে ত্রুটিপূর্ণ এবং কুসংস্কারে বিশ্বাসী।

ফাজায়েলে আমল বা এই জাতীয় কিতাব মসজিদে বা অন্য কোথাও পড়া জায়েজ নয় যার মধ্যে কুসংস্কার রয়েছে এবং মানুষের কাছে মিথ্যা প্রচার করে, কারণ এসব মানুষকে বিভ্রান্ত করে ও তাদের মধ্যে কুসংস্কার ছড়ায়।

আল্লাহ্ সুবহানা ওয়া তাআলা যেন সকল মুসলিমদেরকে সত্যের পথে পরিচালিত করেন। তিনি সর্বশ্রোতা ও উত্তরদাতা। আল্লাহ্ আমাদের সাফল্য দান করুন। আল্লাহ্ সুবহানা ওয়া তাআলার শান্তি ও দয়া বর্ষিত হোক আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তাঁর পরিবার ও সাহাবীগণের উপর।


গবেষণা ও ফাত্‌ওয়া ইস্যুকারী স্থায়ী কমিটি

চেয়ারম্যানঃ আশ-শাইখ ‘আবদুল ‘আযীয ইব্‌ন ‘আবদুল্লাহ আল আশ-শাইখ
সদস্যঃ আশ-শাইখ বাক্‌র আবু যাইদ, 
সদস্যঃ আশ-শাইখ সালিহ আল ফাওযান, 
সদস্যঃ আশ-শাইখ ‘আবদুল্লাহ ইব্‌ন গুদাইইয়ান


মূল ফতোয়ার লিঙ্কঃ  A False Story



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন