Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

See Our Articles In Different Styles... Grid View List View

শুক্রবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২৩

আল-হিসনুল ওয়াকী বা প্রতিরোধক দূর্গ

Views:

A+ A-

 আল-হিসনুল ওয়াকী বা প্রতিরোধক দূর্গ




রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত প্রয়োজনীয় দো‘আর এক অনবদ্য সংকলন) 

সূচিপত্র



ক্রম

বিষয়

পৃষ্ঠা

1.      

ভূমিকা

 

2.     

সূরা আল-ফাতেহা পড়া

 

3.     

আয়াতুল করসী

 

4.     

সূরা আল-বাকারা-এর শেষ দুই আয়াত

 

5.     

সূরা আল-ইখলাস এবং মুআউওয়াযাতাইন

 

6.     

لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إلَّا بِاللَّهِ

 

7.     

بِسْمِ اللَّهِ

 

8.     

بِسْمِ اللّهِ الَّذيْ لَا يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْ ءٌ فِي الْأرْضِ وَلَا فِي السّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيْعُ العَلِيْمُ.

 

9.     

حَسْبِي اللَّهُ لَاإلهَ إلَّا هُوَ عَلَيْهِ  تَوَكَّلْتُ  وَهُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيْمِ

 

10.  

بِسْمِ اللّهِ تَوَكَّلْتُ عَلىَ اللَّهِ وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إلَّا بِاللَّه.

 

11.   

لا إلهَ إلّا اللّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلىَ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ.

 

12.  

اَعُوْذُ بِاللّهِ الْعَظِيْم وَبِوَجْهِهِ الْكَرِيْمِ وَسُلْطَانِهِ الْقَدِيْمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ.

 

13.  

ইস্তেগফার ও সাইয়্যেদুল ইস্তেগফার

 

14.  

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর বেশি বেশি দুরূদ পড়া

 

15.  

জামা‘আতের সাথে ফজরের সালাত আদায়

 

16.  

أسْتَوْدِعُكُمُ اللّهَ الّذِيْ لَا تُضِيْعُ وَدَائعُهُ.

 

17.  

اَلْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِيْ عَافَانِيْ مِمَّا ابْتَلَاكَ بِهِ وَفَضَّلَنِيْ عَلَى كَثِيْرٍ مِمَّنْ خَلَقَ تَفْضِيْلاً.

 

18.  

ফজরের সালাত জামা‘আতের সাথে আদায় করা

 

19.  

গোপনে প্রকাশ্যে সদকা করা

 

20.  

গুনাহ থেকে দূরে থাকা

 

21.  

চোখ লাগা থেকে হিফাযত

 

22.  

শয়তানের ছড়িয়ে পড়ার সময় শিশুদের হিফাযত করা

 

23. 

বিপদ ও দুর্যোগের ভেতর হিকমত এবং সে সময়ের করণীয়

 

24.  

মুমিন ও সৎ লোকদের বিপদে পতিত হওয়ার ভিতর হিকমত ও কল্যাণ নিহিত

 

25.  

প্রতিদিনের সংক্ষিপ্ত আমল

 

26. 

যিকির

 

27.  

আয়াত

 

28. 

সালাত ও আযানের ফযীলত

 

29.  

অসুস্থতা ও মৃত্যু

 

30. 

সদকা

 

31.  

সাওম

 

32. 

যিলহজের প্রথম দিনের আমল

 

33.                

ইলম ও নিয়ত

 

34. 

সবর ও জিহাদ

 

35. 

আত্মীয়তা

 

36.                

মহব্বত ও ইহসান

 

37. 

উত্তম চরিত্র

 

38.                

আল্লাহর ভালোবাসা

 

 

ভূমিকা

 

بِسۡمِ ٱللَّهِ ٱلرَّحۡمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ

الحمد لله وكفى وسلام على عباده الذين اصطفى، أما بعد.

আমার কয়েকজন সুহৃদ বন্ধু নিত্য প্রয়োজনীয় দোআর ওপর একটি বই লেখার পরামর্শ দিলো। কলেবর বুদ্ধির ফলে পাঠক বিরক্তিকরভাবে যাতে বইটিকে গ্রহণ না করেন -সাথে এ পরামর্শ দিতেও তারা ভুল করে নি। বিজ্ঞ উলামায়ে কিরাম এ বিষয়ে হাদীসের সনদসহ অনেক কিতাব রচনা করেছেন বৃহৎ কলেবরের দরুন পিপাসুরা স্বভাবতই সেগুলো পড়তে হিম্মত হারিয়ে ফেলে। ইমাম বুখারী রহ. রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন: “আমি যখন তোমাদেরকে কোনো কিছু করার আদেশ দেইতখন তোমরা সাধ্যানুসারে তা করার চেষ্টা কর”


শাইখ ইমাম আবু আমর ইবনুস সালাহ রহ.-কে প্রশ্ন করা হয়েছিলকী পরিমাণ যিকির করলে মুমিন নর-নারী আল্লাহর কাছে অধিক যিকিরকারী সাব্যস্ত হবেতিনি উত্তর দিয়েছিলেনযদি সে সকাল-সন্ধ্যাদিন-রাত ও বিভিন্ন অবস্থায় পঠিত দো‘আগুলো নিয়মিত আদায় করেতবেই আল্লাহর দরবারে অধিক যিকিরকারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে।

আব্দুল্লাহ ইবন বুসর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিতজনৈক সাহাবী রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে আরয করলইয়া রাসূলুল্লাহ! শরীআতের হুকুম তো অনেক রয়েছেআমাকে এমন কোনো আমল বলে দিন, যা আমি নিজের জন্য অযীফা বানিয়ে নিবো। তিনি উত্তরে বললেন: “তোমার জিহ্বা যেন সর্বদা আল্লাহর যিকির দ্বারা সিক্ত থাকে’’

সন্দেহ নেইনিয়মিত স্বল্প আমল অনিয়মিত অধিক আমলের তুলনায় অনেক উত্তম। রাসূলের হাদীসে এর প্রমাণ আমরা দেখতে পাই, ‘‘সর্বোত্তম আমল তাইযা নিয়মিত করা হয়।’’

এ পুস্তকের ভিতর আমি সহীহ হাদীসের আলোকে বাস্তব অভিজ্ঞতাসহ সংক্ষিপ্তাকারে নিত্য প্রয়োজনীয় দোআগুলো একত্র করেছি। আল্লাহর কসম দিয়ে বলতে পারিএ দো‘আগুলো অনুসারে নিয়মিত আমলকারীকে আল্লাহ তাআলা সন্তান-সন্তুতিধন-সম্পদসহ শয়তানের যাবতীয় ধোকা এবং যমানার সব রকমের আপদ-বিপদ থেকে হিফাযত করবেন।

পরিশেষে আল্লাহর কাছে সাহায্য কামনা করছিতিনি যেন এ পুস্তক লেখার উদ্দেশ্য পূর্ণ করে দেন এবং আমাদের সকলকে উপকৃত হওয়ার তাওফীক দান করেন।

 

০১/০৯/১৪২২ হিজরী 

বিনীত গ্রন্থকার

 


 

এক

সূরা আল-ফাতিহা পড়া

একবার, তিনবার, সাতবার অথবা তার চেয়ে বেশিসর্ব রোগের নিরাময়ের জন্য।

ফযীলত:

এক. বিষাক্ত প্রাণীর দংশনের চিকিৎসা।

আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, 

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণের একদল সফরে বের হলেন। সফরকালে তারা আরবের কোনো এক এলাকায় যাত্রা বিরতি দিলেন। সে এলাকার লোকদের কাছে তারা মহেমানদারীর আবেদন করলেনকিন্তু তার মেহমানদারী করতে অস্বীকার করলো। ঘটনাক্রমে সাহাবীগণের কাফেলা সেখানে অবস্থানকালেই তাদের গোত্রপতিকে বিচ্ছু দংশন করে। তার চিকিৎসার জন্য তারা অনেক চেষ্টা-তদবীর করে বিফল হয়। তখন তাদের একজন বললোতোমরা যদি এ নবাগত পথিকদের কাছে যেতেহতে পারে তাদের কেউ কিছু জানে।

লোকটির কথা অনুযায়ী এলাকার লোকজন সাহাবীগণের কাছে এসে বললোহে কাফেলার যাত্রীদল! আমাদের সরদারকে বিচ্ছু দংশন করেছেআমরা তার চিকিৎসার জন্য বহু চেষ্টা করে বিফল হয়েছি। তোমাদের মধ্যকার কেউ কি এ বিষয়ে কিছু জানো?

সাহাবীগণের একজন তখন বললেনহ্যাঁআমি জানি। আল্লাহর কসম! আমি ঝাড়ফুঁক জানি। কিন্তু আগে চুক্তি করআমাদেরকে কী দেবেকারণ আমরা তোমাদের নিকট মেহমানদারী চেয়েছিলামতা কর নি। তখন তাদের সঙ্গে একপাল বকরির চুক্তি হলো।

অতঃপর সে সাহাবী তাদের সঙ্গে গিয়ে সূরা আল-ফাতিহা অর্থাৎ الحمد لله পড়তে থাকলেন এবং রোগীর গায়ে ফুঁক দিতে লাগলেন। এভাবে কিছুক্ষণ পড়ার পর সরদার সুস্থ হয়ে উঠলো। কেমন যেনো এখন-ই তাকে শৃঙ্খল মুক্ত করা হলো।[1]

দুই. পাগলামির সফল চিকিৎসা

খারেজা স্বীয় চাচা থেকে বর্ণনা করেনতিনি বলেছেন: 

আমরা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবার থেকে ফিরে আসার পথে আরবের এক গ্রামে পৌঁছলে তারা আমাদের বললোআমরা জানতে পেরেছি আপনারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছ থেকে কল্যাণ নিয়ে এসেছেন। অতএব, আপনাদের নিকট কী কোনো রোগ নিরাময়কারী কিছু আছেকারণ আমাদের এখানে শৃংখলাবদ্ধ এক পাগল আছে।

আমরা উত্তর দিলামহ্যাঁআছে। তখন তারা শৃংখলাবদ্ধ এক পাগলকে নিয়ে এলো তিনি বলেনআমিই তখন লাগাতার তিনদিন সকাল-বিকাল সূরা আল-ফাতিহা পড়ে ওকে ঝাড়লাম। ঝাড়ার নিয়ম ছিলো যতবার সূরা আল-ফাতিহা শেষ করেছিততবার ওর গায়ে হালকা থুথু দিয়েছি। এ নিয়মে ঝাড়ার পর সে সম্পূর্ণরূপে সুস্থ হয়ে উঠলো। তখন তারা আমাকে এর পারিশ্রমিক দিতে চাইলোকিন্তু আমি নিতে অস্বীকার করলাম এবং বললামরাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস না করে নিবো না।

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলে তিনি উত্তর দিলেন: হ্যাঁতা গ্রহণ করে খাও। কতজন মিথ্যা ঝাড়ফুঁক করে সে পারিশ্রমিক খায়আর তুমি সত্যভাবে ঝাড়ফুঁকের মাধ্যমে খাচ্ছো।[2]

তিন. টিউমার জাতীয় রোগের চিকিৎসা

আল্লামা ইবন হাজার রহ. ইরাকের এক শাইখের ঘটনা বর্ণনা করেন। শাইখ বলেনশৈশবে আমার চোখের ভ্রুর উপরে ছোট্র মেজের মতো ছিলো। ফলে আমার চোখের ভ্রু ঝুলে পড়লো। যে কারণে ভালো করে তাকানো আমার পক্ষে কষ্টকর হয়ে দাঁড়ালো। সেময় একজন আমাকে বললোবাগদাদে এক ইয়াহূদী আছে সে ভ্রু ফেঁড়ে টিউমার বের করে দেয়। কিন্তু ইয়াহূদী হওয়ায় তার কাছে যেতে মন বেশি সায় দিলো না। এর কিছু দিন পরের ঘটনা। একরাতে আমি স্বপ্নে দেখি কেউ আমাকে বলছেঅযুর সময় এর উপর সূরা আল-ফাতিহা পড়। আমি তাই করলাম। এভাবে কয়েক দিন যাওয়ার পর হঠাৎ একদিন চেহারা ধোয়ার সময় মেঝটা এমনিতেই পড়ে গেলো এবং দাগও মুছে গেলো। তখন আমি বুঝতে পারলামএটা সূরা আল-ফাতিহারই বরকত।

তারপর থেকে আমি নিজের জন্য সূরা আল-ফাতিহাকে জ্বরসহ বিভিন্ন রোগের ঔষধ বানিয়ে নিলাম। আল-হামদুলিল্লাহ! অধিকাংশ রোগই আল্লাহর হুকুমেই সেরে গেছে।[3]

চার. আব্দুল মালেক ইবন উমায়ের রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনরাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন

“সূরা আল-ফাতিহা সকল রোগের শিফা।[4]

ইমাম ইবনুল কাইয়্যেম রহ. বলেনআমি মক্কায় দীর্ঘ সময় অবস্থান করেছি। সে সময় আমার নানা রোগ-ব্যধি দেখা দিতো; কিন্তু এর চিকিৎসার কোনো ডাক্তার বা ঔষধ পেতাম না। আমি তখন সূরা আল-ফাতিহার মাধ্যমে নিজের চিকিৎসা করেছি এবং এর আশ্চর্য তাছির দেখেছি। শুধু নিজে করেছি তাই নাবরং কেউ আমার নিকট ব্যাথার অভিযোগ করলেতাকেও সূরা আল-ফাতিহার ওপর আমল করার কথা বলতাম। তাদের অনেকেই খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতো।

এতক্ষণ তো হাদীসে বর্ণিত ঘটনা এবং সলফে সালেহীনদের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করলাম।

বর্তমানকালেও আল্লাহর ফযলে এ সূরার মাধ্যমে অনেক দৈহিক ও মানসিক রোগের চিকিৎসা সু-সম্পন্ন হয়েছে এবং তারা সম্পূর্ণরূপে সুস্থতা অর্জন করেছে। এর জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যেপ্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ সূরার নামকরণ করেছেন রুকুইয়া’ অর্থাৎ নিরাময়কারী এবং তিনি কোনো রোগ নির্ধারিত করেন নি।

 

দুই

আয়াতুল করসী

﴿ٱللَّهُ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ ٱلۡحَيُّ ٱلۡقَيُّومُۚ لَا تَأۡخُذُهُۥ سِنَةٞ وَلَا نَوۡمٞۚ لَّهُۥ مَا فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَا فِي ٱلۡأَرۡضِۗ مَن ذَا ٱلَّذِي يَشۡفَعُ عِندَهُۥٓ إِلَّا بِإِذۡنِهِۦۚ يَعۡلَمُ مَا بَيۡنَ أَيۡدِيهِمۡ وَمَا خَلۡفَهُمۡۖ وَلَا يُحِيطُونَ بِشَيۡءٖ مِّنۡ عِلۡمِهِۦٓ إِلَّا بِمَا شَآءَۚ وَسِعَ كُرۡسِيُّهُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضَۖ وَلَا يَ‍ُٔودُهُۥ حِفۡظُهُمَاۚ وَهُوَ ٱلۡعَلِيُّ ٱلۡعَظِيمُ ٢٥٥﴾ [البقرة: ٢٥٥]

· সকালে একবারবিকালে একবাররাতে ঘুমের সময় একবার এবং প্রত্যেক ফরয সালাতের পর একবার পড়া।

ফযীলত:

এক. হিফাযতকারী ফিরিশতা নিয়োগ

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সদকায়ে ফিতরের দেখাশোনা করার জন্য আমাকে নিযুক্ত করেছিলেন। রাতে এক ব্যক্তি এসে উভয় হাত ভরে শস্য নিতে আরম্ভ করে। আমি তাকে হাতেনাতে ধরে বললামঅবশ্যই তোমাকে আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে নিয়ে যাবো। সে তখন বললআমি একজন গরীব লোক। আমার ওপর পরিবার পরিজনের বোঝা রয়েছে এবং আমি অত্যন্ত অভাবগ্রস্ত। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, এ কথা শুনে আমি তাকে ছেড়ে দিলাম।

সকাল বেলা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, আবু হুরায়রা! গত রাতে তোমার কয়েদি কী করেছে?

আমি উত্তরে বললাম ইয়া রাসূলু্ল্লাহ! তার পরিবার পরিজনের বোঝা ও অত্যন্ত অভাবগ্রস্থতার কথা শুনে আমার দয়া হয়েছে। ফলে তাকে আমি ছেড়ে দিয়েছি।

তিনি তখন বললেনসাবধানে থেকো। সে তোমার সঙ্গে মিথ্যা বলেছেআবার আসবে।

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ কথার কারণে আমার দৃঢ় বিশ্বাস জন্মাল যেসে নিশ্চয় আবার আসবে। সুতরাং আমি তার অপেক্ষায় রইলাম। ঠিকই সে রাতে আগের মতো দুই হাত ভরে শস্য নিতে লাগলো। আমি তাকে ধরে বললামতোমাকে আমি অবশ্যই রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে নিয়ে যাবো।

সে বললআমাকে ছেড়ে দিন! আমি অভাবগ্রস্তআমার ওপর পরিবার পরিজনের বোঝা রয়েছে। আগামীতে আমি আর আসবো না। তার ওপর আমার দয়া হলোফলে এবারও আমি তাকে ছেড়ে দিলাম। সকাল বেলা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, আবু হুরায়রা তোমার কয়েদীর কী হলো?

আমি উত্তর দিলামইয়া রাসূলুল্লাহ! সে তার কঠিন প্রয়োজন ও তার পরিবার পরিজনের বোঝার অভিযোগ করলোসে জন্য তাকে ছেড়ে দিলাম। তিনি বললেন, সাবধানে থেকো। সে মিথ্যা বলেছেআবার আসবে। সুতরাং আমি অপেক্ষায় রইলাম। পর দিনের ঘটনাপূর্বের মতোই সে রাতে এসে হাত ভরে শস্য নিতে লাগলো। আমি তাকে ধরে বললামঅবশ্যই আমি তোমাকে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট নিয়ে যাবো। এ তৃতীয়বার এবং শেষ সুযোগ। তুমি অঙ্গীকার করেছিলে আর আসবে নাকিন্তু আবারো এসেছ। সে তখন বলল আমাকে ছেড়ে দিনআমি আপনাকে এমন কিছু বাক্য শিখিয়ে দিবোযার দ্বারা আল্লাহ তাআলা আপনার উপকার করবেন। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম সেই বাক্যগুলো কী?

সে উত্তর দিলো আপনি রাতে বিছানায় ঘুমাতে যাওয়ার সময় আয়াতুল কুরসী’ পড়ে নিবেন। এতে আপনার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন হিফাযতকারী নিযুক্ত থাকবে এবং সকাল পর্যন্ত কোনো শয়তান আপনার নিকট আসবে না।

সকাল বেলা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, গত রাতে তোমার কয়েদীর কী হলো?

আমি উত্তর দিলামইয়া রাসুলুল্লাহ! সে আমাকে বললএমন কিছু বাক্য শিখিয়ে দিবেযার দ্বারা আল্লাহু আমার উপকার করবেন। সে কারণে এবারও আমি তাকে ছেড়ে দিয়েছি।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেনসে বাক্যগুলো কীআমি উত্তরে দিলামসে আমাকে বলেছে আপনি রাতে বিছানায় ঘুমাতে যাওয়ার সময় আয়াতুল কুরসী’ পড়ে নিবেন। এতে আল্লাহর পক্ষ থেকে আপনার জন্য একজন হিফাযতকারী নিযুক্ত থাকবে এবং সকাল পর্যন্ত কোনো শয়তান আপনার নিকট আসবে না।

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম তখন আমাকে বললেন, মনোযোগ দিয়ে শোন! যদিও সে মিথ্যাবাদী কিন্তু তোমার সাথে সত্য কথা বলেছে। হে আবু হুরায়রা! তুমি জানোতিন রাত ধরে কার সাথে কথা বলেছিলেআমি উত্তর দিলামনা। তিনি বললেনসে ছিলো শয়তান।[5]

দুই. জান্নাতে যাওয়ার মাধ্যম

আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিতরাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাম আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন

যে ব্যক্তি ফরয সালাতের পর আয়াতুল কুরসী’ তিলাওয়াত করবে, মৃত্যু ছাড়া অন্য কিছুই তার জান্নাতে প্রবেশের অন্তরায় হবে না[6]

তিন. ঘর ও স্থান থেকে শয়তান দূরকারী

আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিততিনি বলেছেন, 

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণেরর একজনের সাথে জিন্নের সাক্ষাৎ হলে জিন্ন তার সঙ্গে মল্লযুদ্ধে লিপ্ত হলো। যুদ্ধে জিন্ন হেরে গেলো। তিনি তখন জিন্নকে বললেন, আমি দেখছি তুমি একেবারেই দুর্বল! তোমাদের জিন্ন সম্প্রদায় সবাই কি তোমার মতো? নাকি তোমাদের মধ্যে তুমিই এরূপ?

জিন্ন বলল: আল্লাহর কসম! না, বরং আমি তাদের মধ্যে শক্তিশালী একজন। কিন্তু যদি তুমি দ্বিতীয় বার আমার সঙ্গে কুস্তি করযদি তাতে তুমি আমাকে হারিয়ে দাও তাহলে তোমাকে আমি এমন জিনিস শিখিয়ে দিবো যার দ্বারা তুমি উপকৃত হবে।

তিনি বললেন, হ্যাঁঠিক আছে। দ্বিতীয়বার আমি তার সঙ্গে কুস্তি করলাম এবং তাকে হারিয়ে দিলাম। জিন্ন তখন বললো, ٱللَّهُ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ ٱلۡحَيُّ ٱلۡقَيُّومُۚ  পড়। যে ঘরে তুমি এটা পড়বেসে ঘর থেকে শয়তান গাধার ন্যায় বায়ু ছাড়তে ছাড়তে বেরিয়ে যাবে এবং সকাল হওয়া পর্যন্ত সেখানে ঢুকবে না।

উপস্থিত সবাই প্রশ্ন করলো, হে আবু আব্দুর রহমান! কে সে ব্যক্তিতিনি উত্তর দিলেন, তোমাদের কি উমার ইবনুল খাত্তাব ছাড়া অন্য কারো কথা মনে হয়?[7]

চার. রোগের প্রতিষেধক

ওয়ালীদ ইবন মুসলিম রহ. থেকে বর্ণিত

এক ব্যক্তি গাছের ভিতর নড়াচড়া শুনতে পেয়ে জিজ্ঞেস করলোকে তুমিকিন্তু কোনো উত্তর পেলো না। তখন সে আয়াতুল কুরসী’ পাঠ করলে শয়তান নেমে আসলো। সে ব্যক্তি শয়তানকে জিজ্ঞেস করলোআমাদের ঘরে রোগী আছেবল তো কী দিয়ে চিকিৎসা করবোশয়তান উত্তর দিলো, যে জিনিসের মাধ্যমে আমাকে গাছ থেকে নামিয়ে এনেছে[8]

সুতরাং দেখুন, কিভাবে লোকটি বোকার মত শয়তানকে ডেকে রোগের ঔষধ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করছে অথচ তার কাছেই রয়েছে সেটার ঔষধ। সাধারণত মূর্খরাই জিনদের সাথে এ রকম প্রশ্নের মত কাজ করে থাকে।

 

তিন

সূরা আল-বাকারা-এর শেষ দুই আয়াত

﴿ءَامَنَ ٱلرَّسُولُ بِمَآ أُنزِلَ إِلَيۡهِ مِن رَّبِّهِۦ وَٱلۡمُؤۡمِنُونَۚ كُلٌّ ءَامَنَ بِٱللَّهِ وَمَلَٰٓئِكَتِهِۦ وَكُتُبِهِۦ وَرُسُلِهِۦ لَا نُفَرِّقُ بَيۡنَ أَحَدٖ مِّن رُّسُلِهِۦۚ وَقَالُواْ سَمِعۡنَا وَأَطَعۡنَاۖ غُفۡرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيۡكَ ٱلۡمَصِيرُ ٢٨٥ لَا يُكَلِّفُ ٱللَّهُ نَفۡسًا إِلَّا وُسۡعَهَاۚ لَهَا مَا كَسَبَتۡ وَعَلَيۡهَا مَا ٱكۡتَسَبَتۡۗ رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذۡنَآ إِن نَّسِينَآ أَوۡ أَخۡطَأۡنَاۚ رَبَّنَا وَلَا تَحۡمِلۡ عَلَيۡنَآ إِصۡرٗا كَمَا حَمَلۡتَهُۥ عَلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِنَاۚ رَبَّنَا وَلَا تُحَمِّلۡنَا مَا لَا طَاقَةَ لَنَا بِهِۦۖ وَٱعۡفُ عَنَّا وَٱغۡفِرۡ لَنَا وَٱرۡحَمۡنَآۚ أَنتَ مَوۡلَىٰنَا فَٱنصُرۡنَا عَلَى ٱلۡقَوۡمِ ٱلۡكَٰفِرِينَ ٢٨٦﴾ [البقرة: ٢٨٥،  ٢٨٦]

·         সন্ধ্যায় একবার অথবা ঘুমের পূর্বে একবার অথবা ঘরে একবার পড়া।

ফযীলত:

এক. সব কিছুর জন্য যথেষ্ট

আবু মাসউদ আনসারী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিতরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন

যে ব্যক্তি রাতে সূরা আল-বাকারা-এর শেষ দুই আয়াত পড়বেএ দুই আয়াত তার জন্য যাথেষ্ট।[9]

দুই. তিন রাতের জন্য শয়তানকে ঘর থেকে দূরকারী

নু‘মান ইবন বশীর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিতরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন

আল্লাহ তাআলা আসমান জমিন সৃষ্টির দুই হাজার বছর পূর্বে একটি কিতাব নাযিল করেছেন। উক্ত কিতাব থেকে দু’টি আয়াতে নাযিল করেছেন। যার ওপর তিনি সূরা আল-বাকারা শেষ করেছেন। এ দু’টি আয়াত যে ঘরে পড়া হবেতিন রাত পর্যন্ত শয়তান সে ঘরের নিকটে আসবে না।[10]

ফায়েদা: আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “আমি মনে করি না কেউ বিবেকবান হলে কিভাবে সূরা আল-বাকারার শেষ তিনটি আয়াত পড়ার আগে ঘুমাবে।”[11]

 

চার

সূরা আল-ইখলাস এবং মু‘আউওয়াযাতাইন

﴿قُلۡ هُوَ ٱللَّهُ أَحَدٌ ١ ٱللَّهُ ٱلصَّمَدُ ٢ لَمۡ يَلِدۡ وَلَمۡ يُولَدۡ ٣ وَلَمۡ يَكُن لَّهُۥ كُفُوًا أَحَدُۢ ٤﴾ [الاخلاص: ١،  ٤]

﴿قُلۡ أَعُوذُ بِرَبِّ ٱلۡفَلَقِ ١ مِن شَرِّ مَا خَلَقَ ٢ وَمِن شَرِّ غَاسِقٍ إِذَا وَقَبَ ٣ وَمِن شَرِّ ٱلنَّفَّٰثَٰتِ فِي ٱلۡعُقَدِ ٤ وَمِن شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ ٥﴾ [الفلق: ١،  ٥]

﴿قُلۡ أَعُوذُ بِرَبِّ ٱلنَّاسِ ١ مَلِكِ ٱلنَّاسِ ٢ إِلَٰهِ ٱلنَّاسِ ٣ مِن شَرِّ ٱلۡوَسۡوَاسِ ٱلۡخَنَّاسِ ٤ ٱلَّذِي يُوَسۡوِسُ فِي صُدُورِ لنَّاسِ ٥ مِنَ ٱلۡجِنَّةِ وَٱلنَّاسِ ٦﴾ [الناس: ١،  ٦] 

·         সকাল সন্ধ্যা ও ঘুমের আগে তিনবার এবং প্রত্যেক সালাতের পর একবার পড়া।

ফযীলত:

এক. সব কিছুর জন্য যথেষ্ট

আব্দুল্লাহ ইবন খুবাইব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, প্রবল বৃষ্টি ও কঠিন অন্ধকারাচ্ছন্ন এক রাতে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খোঁজে বের হলাম আমাদের ইমামতি করার জন্য। দীর্ঘক্ষণ অনুসন্ধানের পর তাকে পেলাম। তখন তিনি আমাকে বললেন, বল। আমি নীরব রইলাম। তিনি পুনরায় বললেনবল। আমি নীরব রইলাম। সকাল সন্ধ্যায় তিনবার তুমি পড়ে নাও-

قُلْ هُوَ اللَّهُ أحَدٌ

قُلْ أعُوْذُ بِرَبِ الْفَلَقِ

قُلْ أعُوْذُ بِرَبِ النَّاسِ

যা তোমার জন্য সব কিছু থেকে যথেষ্ট হবে।[12]

দুই. দু’টি উত্তম সূরা যার বিনিময়ে চাওয়া যায় এবং যার দ্বারা আশ্রয় চাওয়া যায়:

উকবা ইবন আমির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 

“হে উক্ববা আমি পঠিত দু’টি উত্তম সূরা সম্পর্কে জানাব। কুল আউযু বিরাব্বিন নাস, কুল আউযু বিরাব্বিল ফালাক। হে উকবা, যখনই তুমি ঘুমাবে বা ঘুম থেকে উঠবে তখনই এ দু’টি সূরা পড়বে। কোনো যাচ্ঞাকারী কিংবা কোনো আশ্রয়প্রার্থী এ দু’টির মতো অন্য কোনো কিছু দিয়ে আশ্রয় চায় ন।”[13]

তিন. জিন্ন-ইনসানের অনিষ্ট থেকে রক্ষাকারী

আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকেতিনি বলেন, 

সূরা নাস ও ফালাক নাযিল হওয়ার আগ পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিন্ন-ইনসানের চোখ লাগা থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাইতেন। এ দুই সূরা নাযিল হওয়ার পর এ দু’টির ওপর আমল শুরু করেন এবং বাকী সব ছেড়ে দেন।[14]

 

পাঁচ

لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إلَّا بِاللَّهِ

·         কোনো সংখ্যা নির্ধারিত না করে যত বেশি সম্ভব পড়া।

ফযীলত:

এক. জান্নাতের ভাণ্ডারসমূহের একটি ভাণ্ডার

আবু মূসা আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনরাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেন: 

আমি কী তোমাকে জান্নাতের ভাণ্ডারসমূহ থেকে একটি ভাণ্ডারের সুসংবাদ দেবো না?

আমি আরয করলামঅবশ্যইবলুনইয়া রাসূলুল্লাহ! তিনি তখন আমাকে বললেন: لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ এ বাক্যটি পড়।[15]

দুই. বিপদ থেকে মুক্তির ক্ষেত্রে আশ্চর্যজনক ফলপ্রদ

আল্লামা ইবনুল কায়্যেম রহ. বলেন, কঠিন কাজ সহজে উদ্ধার করাকষ্ট-ক্লেশ হালকা করাক্ষমতাসীনদের দরবারে প্রবেশের ভয়-ভীতি দূর করা এবং প্রতিকূল পরিস্থিতিকে অনুকূলে আনার ক্ষেত্রেও এ কালেমার বিশাল প্রভাব রয়েছে।[16]

প্রখ্যাত মুসলিম সেনানায়ক হাবিব ইবন সালামাহ রহ. শত্রুর মুখোমুখী হওয়ার সময় অথবা দুর্গ অবরোধের সময় لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ পড়াকে প্রাধান্য দিতেন। একবার রোমের একটি দূর্গ ঘেরাও করে মুজাহিদগণ যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার প্রাক্কালে এ কালেমা পড়ে তাকবীর দেওয়ার সাথে সাথে দূর্গটি ধসে পড়ে।[17]

তিন. সকল রোগ-ব্যধির প্রতিষেধক যার নিম্নস্তর হলো চিন্তা

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিতরাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন

যে ব্যক্তি لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ পড়বে তার জন্য এটা নিরানব্বইটি রোগের প্রতিষেধক হিসাবে কাজ করবেএর সর্বনিম্ন হলো, চিন্তা দূর হয়ে যাবে।[18]

( لا حول ولا قوة إلا باللهএর উদ্দেশ্য ও মর্ম হলো কোনো কল্যাণ অর্জন করা বা অকল্যাণ থেকে বেঁচে থাকা একমাত্র আল্লাহর হুকুমেই সম্ভব।)

চার. ক্ষতি নিরোধক, যার সর্বনিম্ন পর্যায় হলো দারিদ্রতা:

মাকহূল বলেন, (সুতরাং যে কেউ বলবে, ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ, ওয়ালা মানজা মিনাল্লাহি ইল্লা ইলাইহি’ বলবে তার সত্তরটি ক্ষতি নিরোধ হবে, সর্বনিম্নটি হচ্ছে, দারিদ্রতা।)[19]

ছয়

بِسْمِ اللَّهِ

·         যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করার পূর্বে বলা।

ফযীলত:

এক. মানুষের সঙ্গে শয়তানের খাওয়া বা রাত যাপন থেকে হিফাযত।

জাবির ইবন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শোনেছেন,

«إِذَا دَخَلَ الرَّجُلُ بَيْتَهُ، فَذَكَرَ اللهَ عِنْدَ دُخُولِهِ وَعِنْدَ طَعَامِهِ، قَالَ الشَّيْطَانُ: لَا مَبِيتَ لَكُمْ، وَلَا عَشَاءَ، وَإِذَا دَخَلَ، فَلَمْ يَذْكُرِ اللهَ عِنْدَ دُخُولِهِ، قَالَ الشَّيْطَانُ: أَدْرَكْتُمُ الْمَبِيتَ، وَإِذَا لَمْ يَذْكُرِ اللهَ عِنْدَ طَعَامِهِ، قَالَ: أَدْرَكْتُمُ الْمَبِيتَ وَالْعَشَاءَ».

“মানুষ যখন নিজের ঘরে প্রবেশ ও খাওয়ার সময় আল্লাহর যিকির (স্মরণ) করেতখন শয়তান স্বীয় সঙ্গীদেরকে বলেএখানে তোমাদের জন্য রাত যাপন ও রাতের খানা কোনোটিরই সুযোগ নেই। আর যখন মানুষ আল্লাহর যিকির (স্মরণ) ছাড়া ঘরে প্রবেশ করেতখন শয়তান তার সঙ্গীদের বলেএখানে তোমরা রাত যাপনের জায়গা পেয়ে গেছ। আর যখন খাওয়ার সময়ও আল্লাহর যিকির না করে তখন শয়তান স্বীয় সঙ্গীদেরকে বলে তোমরা এখানে রাত যাপনের জায়গা এবং খাবার উভয়টাই পেয়ে গেছ”[20]

দুই. প্রত্যেক কাজ বরকতপূর্ণ করা

নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনেক পদ্ধতিতে বর্ণিত হয়েছে যে, 

“প্রত্যেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ যদি বিসমিল্লাহ দিয়ে, অন্য বর্ণনায় এসেছে, “যিকির দ্বারা” শুরু করা না হয়, “সেটা কর্তিত হবে।” অপর বর্ণনায় এসেছে, “সেটা লেজ কাটা হবে”।[21]

তিন. শয়তানের ক্ষতি থেকে হিফাযত

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 

“আদম সন্তানের গুপ্তাঙ্গ ও জিন্নের চোখের মাঝের পর্দা হলো বাথরূমে যাওয়ার সময় ‘বিসমিল্লাহ’ পড়া”[22]

অভিজ্ঞতার ফসল:

খালেদ ইবনুল ওয়ালিদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু যখন হীরায় অবতরণ করলেন, তাকে জানালো হলো যে সাবধান, বিষ সম্পর্কে সাবধান থাকবেন, অনারবরা আপনাকে বিষপানে হত্যা করতে পারে, তিনি তখন বললেন, নিয়ে এসো, নিয়ে আসা হলে তিনি তা হাতে নিলেন, এবং বিসমিল্লাহ বলে তা পান করে নিলেন, কিন্তু বিষ তার কোনো ক্ষতি করলো না।[23] 

স্মরণীয়:

উপরে বর্ণিত সবই বিসমিল্লাহর ফযীলত। কাজেই প্রত্যেক মুসলিমের কাজ হলো সকল কাজে ও সর্বাবস্থায় ‘বিসমিল্লাহ’ বলার অভ্যাস গড়ে তোলা, যাতে কাজে-কর্মে পূর্ণ বরকত হয় এবং সাথে সাথে শয়তান থেকেও হিফাযত হয়।


সাত

بِسْمِ اللّهِ الَّذيْ لَا يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْ ءٌ فِي الْأرْضِ وَلَا فِي السّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيْعُ العَلِيْمُ.

·         সকাল-বিকাল তিনবার পড়া

ফযীলত:

এক. সকল প্রকার অনিষ্ট ও আকস্মিক বিপদ থেকে রক্ষাকারী

উসমান ইবন আফ্ফান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিতরাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন

যে ব্যক্তি সকাল সন্ধ্যায় তিনবার নিম্নের দো‘আটি পড়বে,

بِسْمِ اللّهِ الَّذيْ لَا يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْ ءٌ فِي الْأرْضِ وَلَا فِي السّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيْعُ العَلِيْمُ.

কোনো কিছু তার ক্ষতি করতে পারবে না।[24] অপর বর্ণনায় রয়েছেহঠাৎ কোনো বিপদ তার ওপর আসবে না।[25]

দো‘আর উচ্চারণ: বিসমিল্লা-হিল্লাযী লা ইয়াদ্বুররু মা'আসমিহী শাইউন ফিল আরদ্বি ওয়ালা ফিস সামা-ই, ওয়াহুওয়াস সামী'উল 'আলীম।

দো‘আর অর্থ: আমি ঐ আল্লাহর নামেই (সকাল-সন্ধ্যা) করলামযার নামের সংস্পর্শের ফলে আসমান-জমিনের কোনো জিনিস ক্ষতি করে না। তিনি সর্বশ্রোতাসর্বজান্তা। 

অর্থাৎ কোনো কারণ ব্যতীত সেখানে হঠাৎ করে বিপদ আসবে না।

অভিজ্ঞতার ফল:

উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে এ হাদীসের বর্ণনাকারী আবান ইবন উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু এক সময় পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। তখন এক ব্যক্তিযে তার থেকে এ হাদীস শুনেছিলতাকে দেখে বিস্ফারিত নেত্রে তার দিকে তাকিয়ে থাকে (যেন সে চোখের ভাষায় বলতে চাচ্ছিলআপনিই তো আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ হাদীস শুনিয়েছিলেনতাহলে আবার আপনি কেমন করে এ রোগে আক্রান্ত হলেন?) আবান রহ. লোকটিকে বললেনতোমার কী হলো যে এভাবে তুমি তাকিয়ে আছোকসম আল্লাহর! আমি উসমানের ওপর মিথ্যা বলি নিআর উসমানও রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর মিথ্যা বলেন নি; কিন্তু সত্য কথা হলোযে দিন আমি এ ব্যাধিতে আক্রান্ত হইসেদিন কোনো কারণে অত্যাধিক রাগাম্বিত হয়েছিলাম। ফলে এ দোআ পড়তে ভুলে গিয়েছিলাম।[26]

স্মরণীয়:

উল্লিখিত ঘটনা থেকে বুঝা গেলঅতিরিক্ত ক্রোধ কিংবা ভয়-চিন্তা-হাসি-কান্না ইত্যাদির বেলায় বেশি উত্তেজিত ও আবেগপ্রবণ হওয়া মানুষের জন্য অকল্যাণ ডেকে আনে। বিশেষ করে রাগ। এসব মুহুর্তে শয়তান উপস্থিত হয় এবং মানুষের ক্ষতি করে, তাকে তার কর্তব্য কর্ম ভুলিয়ে দেয়। যেমনটি ঘটেছিল আবান এর বেলায়। অথবা সেটাকে দুর্বল করে দেয়। সুতরাং কোনো মানুষ যখন এ যিকিরগুলো বলার পরও বিপদমুক্ত হয় না তখন আশ্চর্য হয়ো না। কেননা শয়তান কোনো সুযোগ পেয়ে সেখানে ঢুকে পড়েছে।


আট

أعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللّهِ التّامَاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ.

·         সন্ধায় তিনবার এবং কোনো স্থানে অবতরণ করে একবার পড়া।

ফযীলত:

এক. বিচ্ছুর বিষনাশক

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: 

এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বললো, ইয়া রাসূলুল্লাহ! রাতে বিচ্ছুর দংশনে আমার ভীষণ কষ্ট হয়েছে। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন তাকে বললেন, যদি তুমি সন্ধ্যায়

أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ 

-এ দোআটি পড়ে নিতে তাহলে বিচ্ছু কখনো তোমার কোনো ক্ষতি করতো না।[27]

দো‘আর উচ্চারণ: আ'ঊযু বিকালিমা-তিল্লা-হিত্ তা-ম্মা-তি মিন শাররি মা- খালাক্ব।

দো‘আর অর্থ: আমি আল্লাহর সমস্ত কালেমা দ্বারা তার সমস্ত মাখলুকের অনিষ্ট থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।

অভিজ্ঞতা:

হাদীসের বর্ণনাকারী সুহাইল রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমাদের পরিবারের লোকেরা এ দো‘আ মুখস্ত করে রেখেছিলো এবং প্রতি রাতে আমল করতো। এক রাতে এক মেয়েকে বিষাক্ত প্রাণী দংশন করলো; কিন্তু সে কোনো প্রকার কষ্ট অনুভব করলো না।[28]

ইমাম কুরতুবী রহ. বলেন এ সংবাদ সত্য এবং নির্ভুল। এর সত্যতা আমরা দলীল-প্রমাণ ও প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতাসহ জেনেছি।[29]

দুই. স্থানের সব প্রাণীর ক্ষতি থেকে হিফাযত

খাওলা বিনতে হাকিম সুলামিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন

আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিযে ব্যক্তি কোনো স্থানে অবতরণ করে এ দোআ পড়বে,

أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ

সেখানে অবস্থানকালে কোনো বস্তু তার ক্ষতি করবে না।[30]

দো‘আর উচ্চারণ: আ'ঊযু বিকালিমা-তিল্লা-হিত্ তা-ম্মা-তি মিন শাররি মা- খালাক্ব।

দো‘আর অর্থ: আমি আল্লাহর সমস্ত কালেমা দ্বারা তার সমস্ত মাখলুকের অনিষ্ট থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।


 

নয়

حسبي الله لا إله إلا هو عليه توكلت وهو رب العرش العظيم.

·         সকালে সাতবার এবং সন্ধ্যায় সাতবার পড়া।

ফযীলত:

দুনিয়া ও আখেরাতের চিন্তার জন্য যথেষ্ট

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনরাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন

যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যায় সাতবার এ দোআ পড়বে আল্লাহ তা‘আলা তার তার দুনিয়া ও আখেরাতের সমুদয় চিন্তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবেন[31]

দো‘আর অর্থ: আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। তিনি ছাড়া কোনো মা‘বুদ নেইতাঁরই ওপর আমি ভরসা করলামতিনিই মহান ‘আরশের মালিক।

 

দশ

بسم الله، تَوَكَّلْتُ عَلَى اللَّهِ، وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ.

·         ঘর থেকে বের হওয়ার সময় একবার পড়া।

ফযীলত:

তিনটি বিষয়ের জন্য বড় কার্যকর

আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন

যে ব্যক্তি ঘর থেকে বের হওয়ার সময় এ দোআ পড়েতাকে বলা হয় অর্থাৎ ফিরিশতারা বলেতোমার কাজ সমাধা করে দেওয়া হয়েছে। সমস্ত অকল্যাণ থেকে তোমাকে রক্ষা করা হয়েছে। তোমাকে সঠিক পথ প্রদর্শন করা হয়েছে। আর শয়তান তার থেকে দূর হয়ে যায়।[32]

সুনান আবু দাউদের বর্ণনায় রয়েছে

এ দোআ পড়ার পর এক শয়তান অপর শয়তানকে বলে, কি করবে তুমি এমন লোক দিয়ে যাকে পূর্ণরূপে পথ দেখানো হয়েছেযাকে যথেষ্ট করা হয়েছে এবং যাকে রক্ষা করা হয়েছে?[33]

দো‘আর উচ্চারণ: বিসমিল্লা-হি, তাওয়াক্কালতু 'আলাল্লা-হি, ওয়ালা হাওলা ওয়ালা ক্বুওয়াতা ইল্লা- বিল্লাহ্।

দো‘আর অর্থ: আমি আল্লাহর নামে বের হচ্ছিতাঁর ওপরই আমার সকল ভরসা। কোনো কল্যাণ পাওয়া অথবা কোনো অকল্যাণ থেকে বেঁচে থাকা একমাত্র তার হুকুমেই সম্ভব হতে পারে।

 

একাদশ

لَا إلَهَ إلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ وَلَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كلِّ شَيْ ٍ قّدِيْرٌ.

·         সকাল-সন্ধ্যায় দশবারদৈনিক একশতবার বা তার চেয়ে বেশিআর বাজারে ঢুকার সময় একবার পড়া।

ফযীলত:

এক. বড় হিফাযত মাধ্যম ও বিরাট সাওয়াব

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনরাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন

যে ব্যক্তি সকাল বেলায় এ দো‘আটি দশবার পড়বেআল্লাহ তাআলা থাকে একশত নেকী দান করবেন। তার একশত গুনাহ মাফ করে দিবেনএকটি গোলাম আযাদ করার সমান সাওয়াব দান করবেন এবং ঐ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত তাকে হিফাযত করবেন। আর যে ব্যক্তি সন্ধ্যা বেলায় এ দোআ পড়বেসেও এ সমস্ত পুরস্কার প্রাপ্ত হবে।[34]

অপর বর্ণনায় রয়েছে

যে ব্যক্তি দিনে একশত বার উক্ত দো‘আটি পড়বে সে দশটি গোলাম আযাদ করার সমান সাওয়াব লাভ করবেআর একশত নেকী অর্জন করবে। তার একশত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবেঐ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত সে শয়তান থেকে হিফাযতে থাকবে। ঐ দিন সে সব চেয়ে উত্তম আমলকারী হিসেবে সাব্যস্ত হবে। তবে হ্যাঁকেউ যদি তার চেয়েও বেশি পড়েতবে ভিন্ন কথাউক্ত ব্যক্তিই ইত্যাকার সকল সওয়াবের মালিক হবে।[35]

দো‘আর অর্থ: আল্লাহ ছাড়া কোনো মা‘বুদ নেইতিনি এককতার কোনো অংশীদার নেইরাজত্ব এবং প্রশংসা তাঁরইতিনি সর্ব বিষয়ের ওপর ক্ষমতাবান।

দুই. বাজারে প্রবেশকালে আল্লাহর সঙ্গে লক্ষ লক্ষ নেকীর ব্যবসা!

উমার ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিতরাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 

যে ব্যক্তি বাজারে প্রবেশ করে নিম্নের এ দোআটি পড়বে,

لَا إلَهَ إلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ وَلَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الحَمدُ يُحْيِيْ وَيُمِيْتُ وَهُوَ حَيٌّ لَا يمُوْتُ بِيَدِهِ الخَيْرَُ وَهُوَ عَلَى كل شَيْ ءٍ قَدِيْرٌ.

আল্লাহ তাআলা তার জন্য দশ লক্ষ নেকী লিখে দিবেন। তার দশ লক্ষ গুনাহ মুছে দিবেন এবং তার দশলক্ষ মর্যাদা উন্নত করে দিবেন।

অপর এক বর্ণনায় আছে তার জন্য জান্নাতে একটি মহল তৈরি করে দিবেন।[36]

দো‘আর অর্থ: আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই তিনি এককতাঁর কোনো শরীক নেইরাজত্ব এবং ক্ষমতা তাঁরইতিনিই জীবিত করেন এবং মৃত্যু দান করেন তিনি চিরঞ্জীবতার মৃত্যু নেইসকল কল্যাণ তার হাতেতিনি সর্ব বিষয় ক্ষমতাবান।

হাদীসের বর্ণনাকারী হাকেম রহ. বলেনআমি খোরাসানে গিয়েছিলাম। তখন সেখানকার দায়িত্বশীল কুতাইবা ইবন মুসলিমের দরবারে হাযির হয়ে বললামআপনার জন্য হাদিয়া নিয়ে এসেছি এবং তাকে এ হাদীস শুনালাম। এরপর থেকে তিনি দৈনিক নিজ বাহনে আরোহন করে বাজারে যেতেন এবং এ দোআ পড়ে ফিরে আসতেন।

প্রিয় পাঠক! এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছুই নেই যেএ ছোট আমলের জন্য এতো বিরাট পুরস্কার! কারণমহান আল্লাহ তাআলা সর্বাধিক দাতা। তাঁর দান সর্বব্যাপী। এটা তার তার পক্ষ থেকে ঘোষণা যেবাজারে গিয়ে তাঁর সাথে ব্যবসা করা অন্যের সঙ্গে ব্যবসা করার তুলনায় অনেক বেশি লাভজনক, যাতে বান্দা দুনিয়ার ব্যবসায় ডুবে আপন প্রভূকে ভুলে না যায়। শয়তান প্রাণান্ত চেষ্টা করে বাজারের লোকদের ওপর নিজের কর্তৃত্ব চালানোর জন্য। যে কারণে যত রকম মিথ্যাধোকাবাজিপ্রতারণাখিয়ানত হৈ হুল্লোড় -সব বাজারেই হয়।

আবু উসমান রহ. সালমান রহ. থেকে বর্ণনা করেনতিনি বলেছেন: তোমার পক্ষে যদি সম্ভব হয়তাহলে বাজারে সর্বাগ্রে প্রবেশকারী এবং সর্বশেষ প্রত্যাবর্তনকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। কেননাবাজারে শয়তানের যুদ্ধক্ষেত্র সেখানে সে পতাকা স্থাপন করে।[37]

কায়েস ইবন আবু গারযা রহ. বলেনরাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে তাশরীফ আনলেন। আমরা দালালী করতাম। তিনি এসে বললেনহে ব্যবসায়ী সমপ্রদায়! ব্যবসায়ে শয়তান হাযির হয় ও গুনাহ হয়ে থাকে। কাজেই ব্যবসা করার সঙ্গে সঙ্গে তোমরা বিশেষভাবে সাদকাও কর।[38]

 

বারো

أعُوْذُ بِاللَّهِ العَظِيْمِ وَبِوَجْهِهِ الكَرِيْمِ وَسُلْطَانِهِ القَدِيْمِ مِنَ الشَيْطَانِ الرَّجِيْمِ.

·         মসজিদে প্রবেশের সময় একবার পড়া।

ফযীলত:

আব্দুল্লাহ ইবন আমর ইবনুল ‘আস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে প্রবেশ কালে এ দোআ পড়তেন-

أعُوْذُ بِاللَّهِ العَظِيْمِ وَبِوَجْهِهِ الكَرِيْمِ وَسُلْطَانِهِ القَدِيْمِ مِنَ الشَيْطَانِ الرَّجِيْمِ.

যখন এ দোআ পড়া হয় তখন শয়তান বলেসে সারা দিনের জন্য আমার হাত থেকে নিরাপদ হয়ে গেলো।[39]

দো‘আর অর্থ: আমি মহান আল্লাহতাঁর দয়াময় সত্তা ও তার চিরস্থায়ী বাদশাহীর আশ্রয় গ্রহণ করছি বিতাড়িত শয়তান থেকে

 

তেরো

ইস্তেগফার ও সাইয়্যেদুল ইস্তেগফার

তন্মধ্যে রয়েছে-

 سَيِّدُ الِاسْتِغْفَارِ Gesأَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الَّذِي لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الحَيَّ القَيُّومَ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ.

·         পরিমাণ নির্ধারিত ছাড়া যত বেশি সম্ভব পড়া।

ফযীলত:

এক. শয়তানের প্রভাব বিস্তার থেকে বাঁচার হাতিয়ার

আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনরাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 

যে ব্যক্তি

أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الَّذِي لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الحَيَّ القَيُّومَ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ. 

পড়বেতার গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবেযদিও সে জিহাদের ময়দান থেকে পালায়নকারী হয়।[40]

দো‘আর উচ্চারণ: আস্তাগফিরুল্লা-হাল্লাযী লা ইলা-হা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যূমু ওয়া আতূবু ইলাইহি।

দো‘আর অর্থ: আমি সেই মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছিযিনি ব্যতীত কোনো সত্য ইলাহ নেইযিনি চিরঞ্জীবসংরক্ষণকারী এবং তাঁরই নিকট আমি তওবা করছি।

সাদ্দাদ ইবন আউস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 

সাইয়্যেদুল ইস্তেগফার (অর্থাৎ মাগফেরাত চাওয়ার সর্বোত্তম পদ্ধতি) হলো, তুমি এভাবে বলবে-

اَللّهُمَّ اَنْتَ رَبِيْ لَا إلَهَ إلَّا اَنْتَ خَلَقْتَنَيْ وَاَنَا عَبْدُكَ وََاَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعَدكَ مَااسْتَطْعْتُ اَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَر مَا صَنَعْتُ اَبُوْءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَاَبُوْءُ بِذَنْبِيْ فَاغْفِرْلِيْ فَإنّهُ لَا يَغْفِرُ الذّنُوْبَ إلَّا اَنْتَ .

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন

যে ব্যক্তি দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে দিনের যে কোনো অংশে এ ইস্তেগফার পড়বেসে যদি ঐ দিন সন্ধ্যার পূর্বে মারা যায়তাহলে জান্নাতবাসী হবে। অনুরূপ ভাবে কেউ যদি রাতের কোনো অংশে এ ইস্তেগফার পড়ে আর সকাল হওয়ার আগে মারা যায়তাহলে সে ও জান্নাতবাসী হবে।[41]

দো‘আর উচ্চারণ:

“আল্লাহুম্মা আনতা রব্বী,

লা-ইলাহা ইল্লা আনতা

খালাকতানী ওয়া আনা আবদুকা

ওয়া আনা আলা আহদিকা ওয়া ও’য়াদিকা মাসতাত’তু

আউযুবিকা মিন শার্ রি মা ছা’নাতু

আবূউলাকা বিনি’মাতিকা আলাইয়্যা

ওয়া আবূউলাকা বিযামবী

ফাগ্ ফির্ লী ফাইন্নাহু লা-ইয়াগফিরুয্ যুনূবা ইল্লা আনতা”

দো‘আর অর্থ: হে আল্লাহ! আপনিই আমার রব আপনি ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেইআপনিই আমাকে সৃষ্টি করেছেন। আমি আপনার বান্দাআমি সাধ্যনুযায়ী আপনার সাথে কৃত অঙ্গীকার ও ওয়াদার ওপর প্রতিষ্ঠিত আছিআমি নিজের কৃত বদ আমল থেকে আপনার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি। আমার ওপর আপনার যে সব নি‘আমত রয়েছেতা স্বীকার করছি এবং স্বীয় গুনাহের স্বীকারোক্তি দিচ্ছি। অতএব, আপনি আমাকে ক্ষমা করুন কেননা আপনি ভিন্ন কেউ গুনাহ মাফ করতে পারে না।

দুই. আল্লাহর আযাব হতে নিরাপত্তা।

আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, আল্লাহর আযাব থেকে মুক্তির জন্য জমিনের বুকে দু‘টি নিরাপত্তা ছিল দু‘টির একটি উঠে গেছে, আরেকটি অবশিষ্ট আছে, তোমরা সেটাকে আঁকড়ে ধর।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন, 

‘‘হে নবী! আপনি তাদের ভিতর থাকা অবস্থায় আল্লাহ তাদের শাস্তি দিবেন না এবং তারা ইস্তেগফার করতে থাকলেও তিনি তাদের শাস্তি দিবেন না।’’[42]

তিন. চিন্তা থেকে মুক্তি, বৃষ্টি বর্ষণ এবং সম্পদ ও সন্তানাদি অর্জন

আল্লাহ তাআলা কুরআনে কারীমের ভেতর এস্তেগফার ও তওবার প্রক্রিয়া বয়ান করার ক্ষেত্রে বলেছেন, 

‘‘তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর, তিনি ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদেরকে সমৃদ্ধ করবেন ধন-সম্পদ সন্তান-সন্ততি দ্বারা এবং তোমাদের জন্য স্থাপন করবেন উদ্যান ও প্রবাহিত করবেন নদী-নালা।[43]

ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 

যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার করতে থাকে আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য প্রত্যেক অসুবিধায় মুক্তির পথ করে দেন। তাকে দুশ্চিন্তা থেকে নাজাত দেন এবং কল্পনাতীত স্থান থেকে তাকে রিযিক দান করেন। [সূরা নূহ, আয়াত: ১০-১২]


চৌদ্দ

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর বেশি বেশি দুরূদ পড়া

·         সকালে দশবারবিকালে দশবার আর বেশির কোনো সীমা নেই।

ফযীলত:

এক. চিন্তা থেকে মুক্তি, গুনাহ মার্জনা এবং দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ এর মাধ্যমে অর্জন করা

উবাই ইবন কা‘ব তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, (একদিন আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম) হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনার ওপর অধিক পরিমাণে দুরূদ পাঠ করতে চাই। কাজেই আমি আমার দোআ ও যিকিরের সময় থেকে দুরূদের জন্য কত সময় নির্দিষ্ট করবোতিনি উত্তর দিলেন: যে পরিমাণ তুমি চাও। আমি বললাম: এক চতুর্থাংশ সময়তিনি উত্তর দিলেন: তুমি যা চাও। তবে যদি বেশি করো তা তোমার জন্য মঙ্গলজনক হবে। আমি বললাম: তাহলে কি অর্ধক করবো। তিনি উত্তর দিলেন তুমি যা পছন্দ কর। তবে যদি আরো বেশি কর তা তোমার জন্য মঙ্গলজনক হবে। আমি বললাম তাহলে দুই-তৃতীয়াংশ করি। তিনি উত্তর দিলেন। যে পরিমাণ তুমি ইচ্ছা কর। তবে যদি আরো বেশি কর তবে তা তোমার পক্ষে উত্তম হবে। আমি বললাম: তাহলে আমি আমার সম্পূর্ণ সময় আপনার ওপর দুরূদ পড়ার জন্য নির্দিষ্ট করবে। তিনি তখন বললেন: তাহলে আল্লাহ তাআলা তোমার সব চিন্তা দূর করে দিবেন এবং তোমার গুনাহও মুছে দিবেন।[44]

শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ.-কে এ হাদীসের তাফসীর সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তখন তিনি বলেছিলেন[45], “উবাই ইবন কা‘ব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর কিছু দো‘আ ছিল যা তিনি নিজের জন্য করতেন। তখন তিনি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করলেন, আমি কি সে দো‘আর এক চতুর্থাংশ আপনার জন্য সালাত-সালামে আদায়ে ব্যয় করব? তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদি তার থেকেও তুমি বাড়াও তবে তা তোমার জন্য কল্যাণকর হবে। তখন উবাই বললেন, তাহলে কী অর্ধেক দো‘আ আপনার জন্য সালাতা-সালামে ব্যয় করবো? তখন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদি তুমি এর চেয়েও বাড়াও তবে তা তোমার জন্য উত্তম হবে। শেষ পর্যন্ত উবাই রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, তাহলে কি আমি আমার দো‘আর স্থলে সবটুকুই আপনার জন্য সালাত-সালাম আদায়ে ব্যয় করব? তখন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “তাহলে তা তোমার যাবতীয় চিন্তা-ক্লেশের জন্য যথেষ্ট হবে আর তোমার গুনাহ ক্ষমা করা হবে”। কারণ যে কেউ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর একবার সালাত-সালাম পাঠ করবে আল্লাহ তার জন্য সেটার বিনিময়ে দশবার সালাত-সালাম পাঠ করবেন।”

ইমাম শাওকানী বলেন, “এ দু’টি অভ্যাসে দুনিয়া ও আখেরাতের যাবতীয় কল্যাণ নিহিত রয়েছে। কারণ যাকে আল্লাহ তা‘আলা চিন্তা-ক্লেশ থেকে মুক্তি দিবেন সে তো দুনিয়ার যাবতীয় কষ্ট ও তার আনুষাঙ্গিক বিষয়াদি থেকে মুক্তি লাভ করল; কারণ প্রতিটি কষ্টই চিন্তা-ক্লেশ থেকে উদ্ভূত যদিও তার পরিমাণ কম হয়। আর আল্লাহ যার গুনাহ ক্ষমা করেছে সে তো আখেরাতের কষ্ট থেকে নিরাপদ হয়ে গেল, কারণ আখেরাতে তো কেবল বান্দার গুনাহই বান্দাকে ধ্বংস করবে”[46]। 

দুই. রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুপারিশ লাভ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«من صلى علي حين يصبح عشراً وحين يمسي عشراً أدركته شفاعتي يوم القيامة»

“যে কেউ সকাল বেলা দশবার আমার উপর সালাত-সালাম পেশ করবে, আর বিকাল বেলা দশবার পেশ করবে, সে কিয়ামতের দিন আমার সুপারিশ লাভে ধন্য হবে” [47]

তন্মধ্যে উত্তম সালাত হচ্ছে, দুরূদে ইবরাহীম (সালাতে যে দুরূদ পড়া হয়)

اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ، وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ، اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ، وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ.

আর সংক্ষিপ্ত দুরূদ হচ্ছে যাতে সালাত ও সালাম উভয়টিই রয়েছে, যেমন বলা যে,  اللهم صل وسلم على نبينا محمد(অথবা صلى الله عليه وسلم)

 

পনেরো

জামা‘আতের সাথে ফজরের সালাত আদায়

·         প্রতিদিন তার নির্দিষ্ট সময়ে।

ফযীলত:

এক. মানব ও জিন্ন শয়তান থেকে হিফাযতে থাকার সালাত:

মুসলিম রহ. জুনদুব ইবন আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«من صلى الصبح في جماعةٍ فهو في ذمة الله، فلا يطلبنكم الله في ذمته بشيء، فإنه من يطلبه من ذمته بشيء يدركه ثم يكبه على وجهه في نار جهنم»

“যে কেউ সকালের (ফজরের) সালাত জামা‘আতের সাথে আদায় করলো, সে তো আল্লাহর যিম্মাদারীতে চলে গেলো। সুতরাং আল্লাহ যেনো তোমাদেরকে তার যিম্মাদারীর কোনো কিছুতে পাকড়াও না করেন কারণ, যাকে আল্লাহ তার যিম্মাদারীতে থাকা কোনো বিষয়ের ব্যাপারে ধরার জন্য পাবেন তাকে তো জাহান্নামের আগুনে অধোমুখে নিক্ষেপ করবেন”[48]

হাদীসের অর্থ হচ্ছে, “যে কেউ একমাত্র আল্লাহর একনিষ্ঠ করে ফজরের সালাত জামা‘আতের সাথে আদায় করবে, সে দুনিয়া ও আখেরাতে আল্লাহর নিরাপত্তা ও অঙ্গীকারে চলে যাবে”।

আর হাদীসের ভাষ্য, “সুতরাং আল্লাহ যেনো তোমাদেরকে তার যিম্মাদারীর কোনো কিছুতে পাকড়াও না করেন” এর অর্থ হচ্ছে, এমন কোনো কাজ করা থেকে নিষেধ করা যা তাকে আল্লাহর পাকড়াওয়ের ভিতর ফেলবে, সেটা হচ্ছে, যে কেউ ফজরের সালাত জামা‘আতের সাথে আদায় করবে তার সাথে যেন কোনো অপছন্দনীয় কাজ করা না হয়। হাদীসে বর্ণিত, ‘তাকে নাগালে পাবেন’ এর অর্থ তাকে পাকড়াও করবেন। কারণ তাঁর পাকড়াও থেকে কোনো পলায়নকারীর পালানোর স্থান নেই, যদি তিনি তাকে তালাশ করেন।

সুতরাং দেখুন, যে ব্যক্তির ফজরের সালাত ছুটে যায় কিভাবে তার দিন যাবতীয় অপছন্দনীয় বিষয়ে পূর্ণ থাকে। আর তার বিপরীতটিও দেখুন। আর এ বিষয়টি অত্যন্ত পরীক্ষীত সত্য।   

 

ষোল

أستودعكم الله  الذى لا تضيع ودائعه

ফযীলত:

ধর-সম্পদসন্তান-সন্ততি ইত্যাদি চুরি ও যে কোনো দূর্ঘটনা থেকে হিফাযত

ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিতরাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন

কোনো জিনিস যখন আল্লাহর কাছে গচ্ছিত রাখা হয়তিনি নিশ্চয় সেটা হিফাযত করেন।[49]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিতরাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন

যে কেউ সফরে যাওয়ার ইচ্ছা করেতার উচিৎ যাদেরকে রেখে যাচ্ছেতাদের জন্য দোআ পড়া।[50]

أَسْتَوْدِعُكُمُ اللهَ الَّذِيْ لَا تُضِيْعُ وَدَائِعُهُ

দো‘আর অর্থ: আমি তোমাদেরকে ঐ আল্লাহর কাছে গচ্ছিত রাখছিযিনি তাঁর নিকট গচ্ছিত জিনিস বিনষ্ট করেন না।

এ সংরক্ষণ শুধু সফরের ক্ষেত্রে নয়সর্বক্ষেত্রেই ব্যাপক। এর ফলে পরিবার-পরিজনঘর-বাড়িধন-সম্পদসহ সব কিছুই জিন্ন-ইনসানের অনিষ্ট থেকে হিফাযতে থাকবে। এর মাধ্যমে প্রকাশ পায় যে, বান্দা ছোট-বড় সকল কাজেই আল্লাহর মুখাপেক্ষী।

আর যদি বান্দা বলে,

«أستودع الله الذي لا تضيع ودائعه ديني ونفسي وأمانتي وخواتيم عملي، وبيتي وأهلي ومالي، وجميع ما أنعم الله به علي»

অর্থাৎ ‘আমি সে আল্লাহর কাছে আমানত রাখছি যার কাছে কোনো আমানত বিনষ্ট হয় না। আমার নিজের দীন, আত্মা, আমানত, শেষ আমল, আমার ঘর, আমার পরিবার, আমার সম্পদ, আর আল্লাহ আমার ওপর যে সব নে‘আমত দান করেছেন সে সব কিছুই’ তবে আল্লাহ সেগুলোও হেফাযত করবেন। সেগুলো খারাপ কিছু দেখবে না। মানুষ ও জীনের যাবতীয় খারাবী থেকে তা হিফাযত থাকবে।


 

সতের

اَلْحَمْدُ لِلّه الذِيْ عَافَانِيْ مِمَّا ابْتَلاَكَ بِه وَفَضَّلَنِيْ عَلى كَثِيْرٍ مِّمَّنْ خَلَقَ تَفْضِيْلاً.

·         কোনো বিপদগ্রস্তকে দেখে নিঃশব্দে একবার পড়া।

ফযীলত:

সম্পদসন্তান প্রভৃতি বিপদ-দূর্যোগ থেকে হিফাযত থাকবে।

ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিতরাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন

যে ব্যক্তি কোনো বিপদগ্রস্তকে দেখে এ দোআ পড়বে-

اَلْحَمْدُ لِلّه الّذِيْ عَافَانِيْ مِمَّا ابْتَلاَكَ بِه وَفَضَّلَنِيْ عَلى آكثِيْرٍ مِّمَّنْ خَلَقَ تَفْضِيْلاً.

সে সারা জীবন ঐ বিপদ থেকে নিরাপদের থাকবে।[51]

দো‘আর অর্থ: সমস্ত প্রশংসা সেই মহান আল্লাহর নিমিত্তেযিনি আমাকে সেই অবস্থা হতে নিরাপত্তা দান করেছেনযেই অবস্থায় তোমাকে লিপ্ত করেছেন এবং তিনি আমাকে তাঁর অনেক সৃষ্টির ওপর শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করেছেন।

এ সংরক্ষণ সকল বিপদের বেলায় প্রযোজ্য। আপনি কোনো পীড়িত ব্যক্তিকে দেখলে এ দোআ পড়ে নিনযাতে দয়াময় আল্লাহ আপনাকে উক্ত পীড়া থেকে নিরাপদে রাখেন। যদি দেখেন কারো সন্তান বিপথে চলে গেছে তাহলে উপহাস-তিরস্কারের ক্লেদাক্ত পথে না চলেআপনি বরং এ দোআ পড়ুনযেনো আপনার সন্তানকে মহান আল্লাহ সু-পথে পরিচালিত করেন। অনুরূপভাবে যদি কোনো সড়ক দূর্ঘটনা দেখেন বা শুনতে পান যেঅমুকে ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেতাহলেও এ দোআ পড়ুন। এভাবে সর্বক্ষেত্রে পড়া বিধেয়।

কোনো বিপদগ্রস্তকে দেখে মূর্খ লোকদের মতো ঠাট্টা-বিদ্রূপ ও সমালোচনার ভ্রান্ত পথ না মাড়িয়ে এ দোআ পড়ার সাথে সাথে তার থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজে সতর্ক হয়ে চলাযাতে সে রকম ভুল তার দ্বারা সংঘটিত না হয়। পাশাপাশি তাকে উপদেশ দেওয়া ও সাধ্যনুযায়ী তার সাহায্য-সহযোগিতা করা। কেননা যেমনিভাবে দোআ পড়লে বিপদ থেকে রক্ষা হয়তেমনিভাবে বিপদগ্রস্তদের নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করলে অনেক সময় সে বিপদে নিজেকেই নিপতিত হতে হয়। হাদীসে এসেছেরাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনতুমি আপন ভাইয়ের কোনো বিপদের ওপর আনন্দ প্রকাশ করো না। কারণহতে পারে আল্লাহ তা‘আলা দয়াপরবশ হয়ে তাকে বিপদ থেকে মুক্তি দিয়ে দিবেনআর তোমাকে সে বিপদে ফেলে দিবেন।[52]

হাদীসে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শামাতা’ শব্দ ব্যবহার করেছেনযার অর্থ হলো কাউকে এমন গুনাহের কথা বলে লজ্জা দেওয়াযে গুনাহ থেকে সে তওবা করে ফেলেছে অথবা কারো দৈহিক গঠন বা কথা বলা ও চলার ধরণ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রেুাপ করা। এটা খুবই মারাত্মক অপরাধযা থেকে কেবল বুদ্ধিমানেরাই বাঁচতে পারে।

  

আঠারো

গোপনে ও প্রকাশ্যে সদকা করা

·         সব সময়

ফযীলত:

এক. বিপদ-আপদ থেকে রক্ষার ক্ষেত্রে দাতার জন্য বড় মাধ্যম

আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিতরাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন

নেক কাজ খারাপ মৃত্যু থেকে বাঁচায় এবং বিপদ ও ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করে।[53]

দুই. আল্লাহর ক্রোধকে নিভিয়ে দেয়

আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনরাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন

গোপনে সদকা করা আল্লাহ তা‘আলার ক্রোধ ঠাণ্ডা করে দেয়।[54]

তিন. রোগের চিকিৎসা

আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনরাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন

সদকার মাধ্যমে তোমরা রোগীদের চিকিৎসা কর।[55]

ইবনুল হাজ রহ. বলেনসদকার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো রোগীর নিজের কাছে স্বীয় জীবনের মূল্য অনুযায়ী আল্লাহর কাছ থেকে নিজের জীবনকে কিনবে। সদকার ফলাফল অবধারিত। কারণ, সংবাদদাতা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেমন সত্যবাদীতেমনি যার ব্যাপারে সংবাদ দিয়েছেনসে আল্লাহ তা‘আলাও অপার দায়াবান ও অনুগ্রহশীল। সুতরাং আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও ভরসা রেখে রোগের গুরুত্ব অনুপাতে সুস্থতার নিয়তে সদকা করে দেখুন আল্লার ওয়াদা কেমন।[56]

বাস্তব সত্য হলো বান্দা আল্লাহর কাছে যে পরিমাণ দো‘আকান্নাকাটি করে তার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে সে পরিমাণই সাহায্য আসে।[57]

আর এ কথাও অভিজ্ঞতা সাক্ষ্য দেয় যেবান্দার রিযিক ও তার দান এবং ব্যয়ের অনুসারে রুটি ছাড়া অন্য কিছুই ছিলো না। সে সওয়াল করলে তিনি বাঁদীকে ডেকে বললেনওকে রুটিটি দিয়ে দাও।

বাঁদী বললো: আ

Print Friendly and PDF

বাঁদীর কথা: তার নির্দেশ মতো রুটিটি আমি মিসকীনকে দিয়ে দিলাম। সন্ধ্যায় ইফতারের সময় হলে এমন একজন আমাদের জন্য ভুনা বকরী ও রুটি হাদিয়া নিয়ে আসলোযে ইতোপূর্বে কখনো আমাদের হাদিয়া দেয় নি। তিনি তখন আমাকে ডেকে বললেন, এখানে থেকে খাওএটা তোমার রুটি থেকে উত্তম।[58]


উনিশ

গুনাহ থেকে দূরে থাকা

·         সর্ব সময়

ফযীলত:

বিপদ আসার প্রতিবন্ধক ও পতিত বিপদ মুক্তির বড় মাধ্যম।

আল্লাহ তাআলা আনুগত্যের প্রভাব বয়ান করতে গিয়ে বলেছেন:

﴿ وَلَوۡ أَنَّ أَهۡلَ ٱلۡقُرَىٰٓ ءَامَنُواْ وَٱتَّقَوۡاْ لَفَتَحۡنَا عَلَيۡهِم بَرَكَٰتٖ مِّنَ ٱلسَّمَآءِ وَٱلۡأَرۡضِ وَلَٰكِن كَذَّبُواْ فَأَخَذۡنَٰهُم بِمَا كَانُواْ يَكۡسِبُونَ ٩٦ ﴾ [الاعراف: ٩٦] 

“জনপদের অধিবাসীগণ যদি ঈমান আনতো এবং তাকওয়া অবলম্বন করতোতবে আমি তাদের জন্য আকাশ ও পৃথিবীর বরকতের দ্বার উন্মুক্ত করে দিতাম”[59]

অপর দিকে গুনাহ-অবধ্যতার প্রভাব ও পরিণাম বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন: 

“আল্লাহ তাদের অপরাধের কারণে তাদেরকে পাকড়াও করেছেন” [সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ৯৬]

সাউবান রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন

নিশ্চয় গুনাহ করার কারণে মানুষ রুজী থেকে বঞ্চিত হয়। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১১]

অপর এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন

অতিরিক্ত পাপ ও অন্যায়ে লিপ্ত না হলে মানুষ ধ্বংস হয় না।[60]

 

বিশ

চোখ লাগা থেকে হিফাযত

যার ওপর চোখ লাগার ভয় আছেতার করণীয় হলো বেশি সাজগোছ করা থেকে দূরে থাক। বিশেষ করে লোক সমাগমের জায়গায় যেমন, মার্কেটঅনুষ্ঠান ইত্যাদি। কারণএসব স্থানে ভালো-মন্দ সব ধরনের লোকের সমাবেশ ঘটে। অভিজ্ঞতায় দেখা গেছেযারা সাজগোছ বেশি করে তাদের ওপরই নজর লাগে।

ইমাম বগভী রহ. উল্লেখ করেছেন: উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু সুদর্শন চেহারার এক শিশুকে দেখে তার অবিভাবককে বললেন: ওর থুতনীর নিচে ছোট্ট একটি ছিদ্র করে কালো করে দাও।[61]

 

একুশ

শয়তানদের ছড়িয়ে পড়ার সময় শিশুদের হিফাযত করা

জাবির ইবন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিতরাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন

যখন রাতের আঁধার নেমে আসে অথবা সন্ধ্যা হয়ে যায়তখন তোমরা শিশুদের বাইরে যেতে দিও না। কেননাসে সময় শয়তানরা ছড়িয়ে পড়ে। তবে রাতের কিছু সময় পার হয়ে গেছে ওদেরকে ছেড়ে দাও এবং বিসমিল্লাহ বলে ঘরের দরজাসমূহ বন্ধ কর। কারণশয়তান বন্ধ দরজা খুলতে পারে না।[62]

বিপদ ও দূর্যোগের হিকমত এবং সে সময়ের করণীয়

বিপদ-বালাইদূর্যোগমহামারী হলো মহান স্রষ্টা আল্লাহর মহাজাগতিক অদৃষ্টবাদের বিধান। তিনি বলেছেন,

“নিশ্চয় আমি তোমাদেরকে ভয়ক্ষুধাধনপ্রাণ এবং ফল-শস্যের কোনো একটির অভাবের দ্বারা পরীক্ষা করবো এবং আপনি ঐসব দৈর্যশীলদেরকে সুসংবাদ প্রদান করুন”[63]

আলাই-বালাই আল্লাহর পক্ষ থেকে মুমিন-কাফির উভয়ের ওপর আসে। তবে সেটা মুমিন বান্দার জন্য শাস্তির সাথে সাথে রহমতও। কারণ, এর দ্বারা তর আখেরাতের শাস্তি হালকা করা হয় অথবা তার পাপের প্রায়শ্চিত্ত হয়। অথবা তার মর্যাদা বৃদ্ধি পায় অথবা তার ঈমান ও সবরের পরীক্ষা হয়। অপরদিকে কাফেরের জন্য তার কুফুরী ও নাফরমানির সাজা হয়ে থাকে।

যাই হোক বুদ্ধিমানের পরিচয় হলোএর পরিণাম আল্লাহর তাকদীরের ওপর সোপর্দ করা। কখনো তিনি এক সম্প্রদায়কে বিপদে ফেলেনঅথচ অন্য সম্প্রদয় আরো বেশি অপরাধে লিপ্ত। কখনো আবার মুমিনকে পরীক্ষায় ফেলেনকাফিরকে ঢিল দেন অথবা কাফিরদেরকে তাদের সৎ কাজের প্রতিদান হিসেবে দুনিয়াতে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য দান করেন। কাজেই আমাদের সসীম জ্ঞান দিয়ে আল্লাহর অসীম কুদরতের হিকমত জানা অসম্ভব।

সারকথা হলোআপদ-বালাইয়ের মূল কারণ বান্দার পাপঅবাধ্যতা ও কুফুরী। এর ওপর কুরআন-হাদীসের অসংখ্য দলীল রয়েছে। কুরআন মাজীদে এসেছে,

“মানুষের কৃতকর্মের কারণে জলে ও স্থলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পেড়েছেতিনি তাদেরকে কোনো কোনো কর্মের শাস্তি আস্বাদান করানযাতে তারা ফিরে আসে’’ [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ৫৫]

উরস ইবন আমীরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনরাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন

আল্লাহ তাআলা কিছু লোকের ভুলের কারণে সকলকে ‘আযাব দেন না। অবশ্য ঐ অবস্থায় সকলকে ‘আযাব দেনযখন হুকুম পালনকারীগণ শক্তি থাকা সত্ত্বেও অমান্যকারীদেরকে বাধা না দেয়। [সূরা আর-রূম, আয়াত: ৪১]

মুমিন ও সৎ লোকদের বিপদে পতিত হওয়ার ভিতর হিকমত ও কল্যাণ নিহিত

এক. তার ঈমানদারীর আলামত

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হলো

কোন ব্যক্তি সবচেয়ে বেশি কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হয়তিনি উত্তর দিলেন: নবীগণএরপর নেককারগণএরপর যারা তাদের নিকটবর্তী। এভাবে তাদের পর যারাআক্রান্ত হয় তারা। দীনের মজবুতী হিসেবেই মানুষ পরীক্ষার সম্মুখীন হয়। যদি দীনের ওপর বেশি মজবুত থাকে তাহলে সে হিসেবে পরীক্ষাও কঠিন আসেআর যদি দীনের ওপর শিথিল থাকে। তাহলে পরীক্ষাও হালকা হয়।[64]

দুই. বান্দা আল্লাহর প্রিয় হওয়ার নির্দশন

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন

আল্লাহ তা‘আলা যখন কোনো সম্প্রদায়কে ভালোবাসেনতখন তাদেরকে পরীক্ষা করেন।[65]

তিন. আল্লাহ বান্দার কল্যাণ কামনার নির্দশন

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন

আল্লাহ তাআলা যখন বান্দার মঙ্গল চানতখন দুনিয়াতেই তাকে শাস্তি দিয়ে দেনআর তিনি যখন বান্দার অমঙ্গল চানতখন তাকে দুনিয়াতে শাস্তি দেন না। যাতে আখিরাতে তার শাস্তি কঠিন হয়।[66]

চার. বান্দার প্রায়শ্চিত্ত হয়যদিও সেটা হালকা হয়

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেনআমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি

যখন কোনো মুসলিম কাঁটাবিদ্ধ হয়অথবা তার চেয়েও কম কষ্ট পায়এর দ্বারা আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে তার জন্য একটি মর্যাদা লিখে দেওয়া হয় এবং একটি গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।[67]

পরীক্ষা কখনো ভালোর মাধ্যমে হয়। যেমন সম্পদ বৃদ্ধি। কখনো আবার হয় মন্দের মাধ্যমে হয়। যেমন, ক্ষুধাঅসুস্থতা। আল্লাহ তাআলা বলেন, “আমি তোমাদেরকে মন্দ ও ভালো দ্বারা বিশেষভাবে পরীক্ষা করে থাকি”[68]

আল্লাহর তাকদীর অনুযায়ী পরীক্ষা আসলে সে সময় মুসলিমের করণীয়:

এক. সবর করা, কোনো অসমত্তষ্টি প্রকাশ বা অভিযোগ না করাসেই সাথে নিম্নোক্ত দোআ পড়া।

إِنَّا لِلّهِ وَإِنَّاإِلَيْهِ رَاجِعُوْنَ، اَلَّلهُمَّ أَجُرْنِيْ فِيْ مُصِيْبَتِيْ وَاَخْلِفْ لِيْ خَيْرًا مِّنْهَا.

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রী উম্মে সালামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেনআমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিকোনো বান্দা যখন বিপদে পতিত হয় আর এ দোআ পড়েআল্লাহ তাআলা তাকে উক্ত মুসীবতের ওপর সাওয়াব দান করেন এবং হারানো জিনিসের বিনিময়ে তা অপেক্ষা উত্তম জিনিস দান করেন। উম্মে সালামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেনযখন আমার স্বামী আবু সালামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহুর ইন্তেকাল হয়ে গেলোতখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে যেভাবে দোআ পড়ার হুকুম দিয়েছিলেনএভাবে দোআ পড়লাম। ফলে আল্লাহ আমাকে আবু সামাহ থেকে উত্তম বদলা দান করলেন। অর্থাৎ রাসূলুল্লাহকে স্বামী হিসেবে পেলাম। [সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত: ৩৫]

দুই. রেজাবিল কাযাঅর্থাৎ আল্লাহর ফয়সালার ওপর সন্তুষ্ট থাকা। কারণ, কোনো হিকমত ও মঙ্গলের উদ্দেশ্যেই তিনি পরীক্ষায় ফেলেছেন। এর ওপর শুরুতেই আলোচনা করা হয়েছে।

তিন. শোকর আদায় করা। এটা হলো আল্লাহর কাছে বান্দার আত্মসমর্পনের সর্বোত্তম স্তর। কারণ, এ অবস্থায় সে একমাত্র আল্লাহর জন্যই প্রশংসা করেছেন।

আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেনরাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 

সর্বপ্রথম যাদেরকে জান্নাতের দিকে আহ্বান করা হবেতারা ঐ সকল লোকযারা সুখে-দুঃখে সর্বাবস্থায় আল্লাহর প্রশংসা করেছে।[69]

সবররেজাবিল কাযা এবং শোকর এগুলো হলো তাকদীরের ভালো-মন্দ ও আল্লাহর হিকমতের ওপর পরিপক্ক ও মজবুত ঈমানের নিদর্শন। কেননা হাদীসে এসেছে“প্রত্যেক বস্তুর একটি হাকীকত আছে। কোনো বান্দা ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমানের হাকীকত পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে নাযতক্ষণ পর্যন্ত তার অন্তরে এরূপ দৃঢ় বিশ্বাস না হবে যেযেসব অবস্থা তার ওপর এসেছেতা আসতই আর যেসব অবস্থা তার ওপর আসে নি, তা কখনোই আসত না।[70]

চার. শরী‘আত নির্দেশিত পন্থায় বিপদ মুক্তির জন্য চেষ্টা-তদবীর করা যেমন, আল্লাহর নিকট তওবা করা। করণ, যেমন গুনাহের ফলে বিপদ আসেতেমনি আল্লাহর নিকট কৃত গুনাহ থেকে তওবা করলে বিপদ কেটে যায়।

কবুলের আত্মবিশ্বাস নিয়ে আল্লাহর কাছে দোআ ও কান্নাকাটি করাতাড়াহুড়া না করা তাড়াহুড়ার মানে হলো এরূপ কথা বলা যেআমি অনেক দোআ করেছি; কিন্তু আল্লাহ আমার ডাক শোনেন নি।

সকাল-সন্ধ্যার নিয়মিত যিকির ও দো‘আগুলো পড়া। এর দ্বারা হয়তো বিপদ পুরো কেটে যাবে অথবা হালকা হবে।

আমাকে খুব ভালো করে স্মরণ রাখতে হবে যেআল্লাহর হুকুমে এসব যিকির-আযকার ও দো‘আর ফলাফল কম-বেশি হবে দুই কারণে।

এক. এ কথার ওপর স্থির বিশ্বাস রাখা যেএটা হক ও সত্য এবং আল্লাহর হুকুমে উপকারী।

দুই. খুব মনোযোগ দিয়ে পড়া। কারণএগুলো দো‘আআর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনউদাসীন মনের দোআ আল্লাহ কবুল করেন না। বিপদ মুক্তির জন্য সবচেয়ে উত্তম মাধ্যম হলো অসুখ থেকে সুস্থতা অর্জনের নিয়তে কুরআন তিলাওয়াত করা। কুরআনের প্রতিটি আয়াতই শিফা।

  

প্রতিদিনের সংক্ষিপ্ত আমল


আমল

নিয়ম

ফযীলত

আয়াতুল কুরসী পড়া

সকাল-সন্ধ্যায় একবারঘুমের সময় একবারপ্রত্যেক ফরয সালাতের পর একবার

হিফাযতকারী ফিরিশতা নিয়োগশয়তানকে ঘর থেকে দূরকারীজান্নাতে যাওয়ার মাধ্যম

সূরা আল-বাকারার শেষ দুই আয়াত পড়া।

সকালে অথবা বিকালে একবার অথবা ঘরে পড়া।

সকল অনিষ্ট থেকে রক্ষা ও তিনদিনের জন্য শয়তানকে ঘর থেকে দূরকারী।

সূরা আল-ইখলাস (قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ) মু‘আউওয়াযাতাইন: )সূরা নাস ও ফালাক পড়া।(

সকাল-বিকাল তিনবারঘুমের সময় একবারপ্রত্যেক ফরয সালাতের পর একবার।

সবকিছুর অনিষ্ট থেকে রক্ষা ও জিন্ন ইনসানের ক্ষতি থেকে হিফাযত

بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لَا يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الأَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاءِ، وَهُوَ السَّمِيعُ العَلِيمُ.

সকালে তিনবারবিকালে তিনবার পড়া।

সকল খারাবী থেকে হিফাযত ও আকস্মিক বিপদ আসার প্রতিবন্ধক।

أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ.

সন্ধ্যায় তিনবারকোনো স্থানে নেমে একবার পড়া।

স্থানের সবপ্রাণীর ক্ষতি থেকে হিফাযত ও বিচ্ছুর বিষনাশক।

حسبي الله لا إله إلا هو عليه توكلت وهو رب العرش العظيم.

সকালে সাতবারবিকালে সাত বার পড়া।

দুনিয়া ও আখিরাতের চিন্তার জন্য যথেষ্ট।

رَضِيتُ بِاللَّهِ رَبًّا، وَبِالْإِسْلَامِ دِينًا، وَبِمُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَبِيًّا.

সকালে একবারবিকালে একবার।

আল্লাহ তা‘আলার ওপর জরুরি হয়ে যায় যেকিয়ামতের দিন তাকে সন্তুষ্ট করে দিবেন।

لَا إلَهَ إلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ وَلَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيءٍ قُدِيْرٌ.

সকালে দশবারসন্ধ্যায় দশবারদিনে ১০০ বার তার চেয়ে বেশি।

১০০ নেকী লেখা হয়১০০ গুনাহ মাফ করা হয়১০টি গোলাম আযাদ করার সমান সাওয়াব লাভ হয় এবং বিপদ থেকে বড় সুরক্ষা

لَا إلَهَ إلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ وَلَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الحَمدُ يُحْيِيْ وَيُمِيْتُ وَهُوَ حَيٌّ لَا يَمُوْتُ بِيَدِهِ الخَيْرَُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ.

বাজারে প্রবেশের সময় একবার পড়া।

১০ লক্ষ নেকী লেখা হয়১০ লক্ষ গুনাহ মাফ হয়। অপর বর্ণনায় রয়েছে জান্নাতে তার জন্য একটি মহল তৈরি করা হয়।

اَلَّلهُمَّ إِنِّيْ اَعُوْذُ بِكَ مِنْ الْحُزْنِ وَأَعُوْذُبِكَ مِنْ الْعَجْزِ  وَالِكَسْلِ وَأَعُوّْذُبِكَ مِنَ الْجُبْنِ وَالْبَخْلِ وَأَعُوْذُبِكَ مِنْ غَلَبَةِ الدَّيْنِ وَقَهْرِ الرِّجَالِ.

সকালে একবারবিকালে একবার পড়া।

চিন্ত-পেরেশানী দূর হয়ে যাবে এবং ঋণ মুক্ত থাকবে।

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর বেশি বেশি দুরূদ পড়া। সর্বোত্তম হলোদুরূদে ইবরাহীম অর্থাৎ যে দুরূদ সালাতে পড়া হয়।

বেশির কোনো সীমা নেইসর্বনিম্ন হলো-সকালে দশবার বিকালে দশবার

চিন্তা ও গুনাহ মাফের জন্য যথেষ্ট হবে এবং রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শাফা‘আত লাভ হবে।

বিসমিল্লাহ পড়া।

প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ কাজের পূর্বে পড়া।

শয়তানের ক্ষতি থেকে হিফাযত এবং বরকত অর্জনের মাধ্যম।

بِسْمِ اللَّهِ تَوَكَلْتُ عَلَى اللَّهِ وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إلَّا بِاللّهِ.

ঘর থেকে বের হওয়ার সময় একবার।

কাজ সমাধা হয়ে যাবেবিপদ থেকে বেঁচে থাকবে এবং শয়তান থেকে হিফাযত হবে।

أعُوْذُ بِاللَّهِ العَظِيْمِ وَبِوَجْهِهِ الكَرِيْمِ وَسُلْطَانِهِ القَدِيْمِ مِنَ الشَيْطَانِ الرَّجِيْمِ.

মসজিদে প্রবেশের সময় একবার।

সারাদিন শয়তান থেকে হিফাযত।

ইস্তেগফার পড়া

أسْتَغْفِرُ اللَّهَ الَّذِيْ لَا إلَهَ إلّأ هُوَ الحَيُّ القَيُّوْمُ وَأتُوْبَ إلَيْهِ.

যত বেশি সম্ভব পড়া।

চিন্তা দূর হবেরুজী প্রাপ্ত হবেআল্লাহর ‘আযাব থেকে নিরাপদ থাকবে।

لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إلَّا بِاللّه.

পরিমাণ নির্ধারণ ছাড়া যত বেশি পারা যায় পড়তে থাকা।

জান্নাতের ভাণ্ডার সমূহের একটি ভাণ্ডার এবং ৯৯টি রোগের ঔষধসর্বনিম্ন হলো চিন্তা।

নিয়মিত গুরুত্বের সাথে মসজিদে জামা‘আতের সাথে সময় মতো সালাত আদায় করা।

খুশুইতমীনানআদব ও মহব্বতের সঙ্গে।

জিন্ন-ইনসান ও শয়তানসহ সবকিছুর অনিষ্ট থেকে হিফাযত।

أَسْتَوْدِعُكَ اللَّهَ الَّذِي لَا تَضِيعُ وَدَائِعُهُ.

যে কোনো জিনিস হিফাযত করতে ইচ্ছা হয় তার উপর একবার পড়া।

সন্তান ও সম্পদ চুরি যাওয়া এবং ধ্বংস হওয়া থেকে হিফাযত

اَلْحَمْدُ لِلّهِ الَّذِيْ عَافَانِيْ مِمَّا ابْتَلاَكَ بِه وَفَضَّلَنِيْ عَلى كَثِيْرٍ خَلَقَ تَفْضِيْلاً.

কোনো বিপদগ্রস্ত, ক্ষতিগ্রস্ত, দুর্ঘটনা ইত্যাদি দেখে বা শুনে একবার পড়া।

ঐ বিপদ থেকে সে নিরাপদ থাকবে।

বি.দ্র: এক. বর্ণিত সকল দো‘আগুলো সহীহ হাদীস থেকে সংগৃহীত।

দুই. প্রতিদিনের দো‘আগুলো ফজরআসর অথবা মাগরিবের পর আদায় করা।

তিন. সূরা আল-ফাতিহার কথা বলা হয় নি কারণ, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ফাতিহার কোনো আমল বর্ণিত নেই। তবে হ্যাঁচিকিৎসার কথা বর্ণিত হয়েছেসেটা হলো প্রয়োজন।

 

এমন কিছু বিশেষ আমল যার ওপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিরাট সাওয়াব ও পুরস্কারের কথা উল্লেখ করেছেন


যিকির

* আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনরাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন

দু’টি কালেমা এমন আছে যা আল্লাহর কাছে অতি প্রিয়জবানে খুব হালকা এবং মিযানের পাল্লায় অত্যন্ত ভারী। সে কালেমা গুলো এই-[71]

سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِه سُبْحَانَ اللهِ الْعَظِيْمِ.

* জুওয়াইরিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিতনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কাছ থেকে ফজরের সালাতের সময় বেরিয়ে গেলেনআর তিনি সালাতের স্থানে যিকিরে লিপ্ত রইলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চাশতের সালাতের সময় ফিরে এলেন। তিনি তখনও পূর্বের অবস্থাতেই বসে আছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন তাকে জিজ্ঞেস করলেনতুমি কি ঐ অবস্থায়ই আছযে অবস্থায় আমি তোমাকে রেখে গিয়েছিলাম?

তিনি উত্তর দিলেন জী, হ্যাঁ। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বললেন: 

তোমার কাছ থেকে যাওয়ার পর আমি চারটি বাক্য তিনবার পড়েছি। সেগুলোকে যদি তোমার সকাল থেকে এ পর্যন্ত কৃত সমস্ত আমলের মোকাবেলায় ওজন করা হয়তাহলে সে কাব্যগুলোই ভারী হয়ে যাবে। বাক্য গুলো হলো-

سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِه عَدَدَ خَلْقِه وِرِضَا نَفْسِه وَزِنَةَ عَرْشِه وَمَدَادَ كَلِمَاتِه.

দো‘আর অর্থ: আমি আল্লাহ তা‘আলার তাসবীহ ও প্রশংসা বর্ণনা করছিতাঁর সমস্ত মাখলুকের সংখ্যা পরিমাণতাঁর সন্তুষ্টি পরিমাণতাঁর ‘আরশের ওজন পরিমাণ এবং তাঁর কালেমাসমূহ লেখার কালি পরিমান।[72]

* জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন

যে ব্যক্তি

سُبْحَانَ اللَّهِ العَظِيمِ وَبِحَمْدِهِ 

বলে তার জন্য জান্নাতে একটি খেজুর গাছ লাগিয়ে দেওয়া হয়।[73]

* আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিততিনি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন, 

যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধায় একশত বার এ দো‘আ পড়বে

سُبْحَانَ اللَّهِ العَظِيمِ وَبِحَمْدِه 

তার গুনাহ মাফ হয়ে যাবেযদিও তা সমুদ্রের ফেনার থেকে বেশি হয়।[74]

* আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিতরাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন

যে ব্যক্তি খানা খেয়ে এ দোআ পড়ল-

اَلْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِيْ أَطْعَمَنِيْ هَذَا الطعَامَ وَرَزَقَنِيْهِ مِنْ غَيْرِ حَوْلٍ مِّنِّيْ وَلاَ قُوَّةٍ.

দো‘আর অর্থ: “সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি আমাকে এ খানা খাইয়েছেন এবং আমার চেষ্টা ও সামর্থ ছাড়া আমাকে নসীব করছেন।” 

তার অতীত-ভবিষ্যতের গুনাহ মাফ হয়ে যায়।

আর যে ব্যক্তি কাপড় পরিধান করে এ দোআ পড়ল-

اَلْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِيْ كَسَانِيْ هَذَا الثَّوْبَ وَرَزَقَنِيْه مِنْ غَيْر حَوْلٍ مِّنِّيْ وَلاَ قُوَّةٍ.

দো‘আর অর্থ: “সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি আমাকে এ কাপড় পরিয়েছেন এবং আমার চেষ্টা ও সামর্থ ছাড়া আমার নসীবে জুটিয়েছেন।” 

তার অতীত-ভবিষ্যতের গুনাহ মাফ হয়ে যায়।[75]

 

আয়াত


* আবুদ দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনরাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন

যে ব্যক্তি সূরা কাহাফের প্রথম দশ আয়াত মুখস্ত করবে সে দাজ্জালের ফিতনা থেকে নিরাপদে থাকবে। এক বর্ণনায় সূরা কাহাফের শেষ দশ আয়াত মুখস্থ করার কথা উল্লেখ আছে।[76]

* আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন

কুরআনে কারীমে ত্রিশ আয়াত বিশিষ্ট এমন একটি সূরা রয়েছে, যা তার পাঠকারীর জন্য সুপারিশ করতে থাকবেযতক্ষণ না তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়। তা হলো -সূরা তাবা-রাকাল্লাযী।[77]

* জুনদুব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনরাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন

যে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্য কোনো রাতে সূরা ইয়াসীন পড়ে তাকে মাফ করে দেওয়া হয়।[78]

 

সালাত ও আযানের ফযীলত


* আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনরাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন

যে ব্যক্তি চল্লিশ দিন ইখলাসের সাথে জামাআতে সালাত আদায় করেতার জন্য দুটি পরওয়ানা লেখা হয়।

       এক. জাহান্নাম থেকে মুক্তির পরওয়ানা

       দুই. মুনাফেকী থেকে মুক্তির পরওয়ানা[79]

* আউস ইবন আউস সাকাফী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনআমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিযে ব্যক্তি জুমু‘আর দিন উত্তমরূপে গোসল করেঅতি প্রত্যুষে মসজিদে যায়সওয়ারিতে আরোহণ না করে পায়ে হেঁটে যায়ইমামের কাছাকাছি বসে মনোযোগ সহকারে খুৎবা শোনে, খুৎবার সময় কোনো অহেতুক কথা বলে নাসে প্রতি কদমের বিনিময়ে এক বছর সাওম ও এক বছর রাতের ইবাদতের সাওয়াব লাভ করবে।[80]

* আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনরাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন

লোকেরা যদি আযান ও প্রথম কাতারে সালাত আদায়ের সাওয়াব জানতো এবং লাটারী ছাড়া আযান ও প্রথম কাতার অর্জন করা সম্ভব না হতোতবে অবশ্যই তারা লটারী করতো।[81]

* আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনরাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন

যে ব্যক্তি দৈনিক বার রাকাত সালাত পড়ার পাবন্দী করেআল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতে মহল তৈরি করেন। চার রাকাত সালাত জোহরের পূর্বেদুই রাকাত জোহরের পরেদুই রাকাত মাগরিবের পরদুই রাকাত ইশার পর এবং দুই রাকাত ফজরের পূর্বে।[82]

* উসমান ইবন আফ্ফান রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনরাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন

যে ব্যক্তি ফজরের সালাত জামাআতের সাথে আদায় করে সূর্যোদয় পর্যন্ত আল্লাহ তাআলার যিকিরে মশগুল থাকেঅতঃপর দুই রাকাত নফল সালাত পড়েসে হজ ও উমরার সাওয়াব লাভ করেআনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনরাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনবার বলেছেন: পরিপূর্ণ হজ ও উমরাপরিপূর্ণ হজ ও উমরার পরিপূর্ণ হজ ও উমরার সাওয়াব লাভ করে।[83]

 

অসুস্থতা ও মৃত্যু


* আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেনরাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন

যে ব্যক্তি জানাযায় হাযির হয় এবং জানাযার সালাত শেষ হওয়া পর্যন্ত থাকেতার এক কীরাত নেকী লাভ হয়। আর যে ব্যক্তি জানাযায় হাযির হয় এবং দাফন শেষ হওয়া পর্যন্ত জানাযার সাথে থাকে, তার দুই কীরাত নেকী লাভ হয়।

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হলোদুই কীরাত কীতিনি উত্তর দিলেনদুটি বড় পাহাড়ের সমান।[84]

অপর বর্ণনায় রয়েছেতন্মধ্যে ছোট পাহাড়টি উহুদ পাহাড়ের মতো।[85]

* মুহাম্মাদ ইবন আমর ইবন হাযম রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনরাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন

যে মুমিন আপন কোনো মুমিন ভাইয়ের মুসীবতে তাকে সবর করার ও শান্ত থাকার জন্য বলেআল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তাকে ইজ্জতের পোশাক পরাবেন।[86]

* আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনআমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি

যে মুসলিম কোনো অসুস্থ মুসলিমকে সকালে দেখতে যায়সন্ধ্যা পর্যন্ত সত্তর হাজার ফিরিশতা তার জন্য দোআ করতে থাকে। আর যে সন্ধ্যায় দেখতে যায়সকাল পর্যন্ত সত্তর হাজার ফিরিশতা তার জন্য দো‘আ করতে থাকে এবং জান্নাতে সে একটি বাগান পায়।[87]


সদকা


* আবু মুসা আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনরাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন

প্রত্যেক মুসলিমের উচিৎ সদকা করা। লোকেরা জিজ্ঞেস করলোযদি সদকা করার মতো কিছু তার কাছে না থাকেতাহলে কী করবে?

তিনি উত্তর দিলেন: নিজ হাতে মেহনত মজদুরী করে নিজের উপকার করবে এবং সদকাও করবে।

লোকেরা জিজ্ঞেস করলোএটাও যদি না করতে পারেঅথবা (করতে পারে তবুও) করলো না?

তিনি উত্তর দিলেন: কোনো অসহায় মুখাপেক্ষী ব্যক্তিকে সাহায্য করবে। লোকেরা জিজ্ঞেস করলোযদি তাও না করেতিনি উত্তর দিলেন: কাউকে ভালো কথা বলে দিবে।

লোকেরা আবার জিজ্ঞেস করলোযদি এটাও না করেতিনি উত্তর দিলেন: তাহলে কারো ক্ষতি করা হতে বিরত থাকবে। কেননাএটাও তার জন্য সদকা।[88]

* আবু যর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনরাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন

তোমরা আপন (মুসলিম) ভাইয়ের জন্য মুচকি হাসি সদকা, কাউকে তোমার সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করা সদকা, কোনো পথভোলাকে পথ বলে দেওয়া সদকা, দূর্বল দৃষ্টি সম্পন্ন লোককে রাস্তা দেখানো সদকা, রাস্তা থেকে পাথরকাঁটাহাড্ডি (ইত্যাদি) সরিয়ে দেওয়া সদকা এবং তোমাদের নিজের বালতি হতে নিজ (মুসলিম) ভাইয়ের বালতিতে পানি ঢেলে দেওয়া সদকা।[89]

* হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনআমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে

তোমাদের পূর্বে কোনো উম্মতের মধ্যে এক ব্যক্তি ছিলযখন মালাকুল মঊদ তার রূহ কবজ করার জন্য আসল (এবং রূহ কবজ হওয়ার পর সে এ দুনিয়া ছেড়ে অন্য জগতে চলে গেল) তাকে জিজ্ঞেস করা হলোতুমি কি দুনিয়াতে কোনো নেক আমল করেছিলে?

সে উত্তর দিলআমার জানামতে (এরূপ) কোনো আমল আমার নেই। তাকে বলা হলো, (তোমার জীবনের ওপর) দৃষ্টি দাও (এবং চিন্তা করে দেখ।)

সে উত্তর দিলআমার জানামতে (এরূপ) কোনো আমল আমার নেই, তবে দুনিয়াতে আমি মানুষের সাথে বেচা-কেনা করতাম। সে ক্ষেত্রে আমি ধনীদেরকে সুযোগ দিতাম আর গরীবদেরকে মাফ করে দিতাম। তখন আল্লাহ তাআলা এ ব্যক্তিকে জান্নাতে প্রবেশ করালেন।[90]


সাওম


* আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনরাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন

যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় একদিন সাওম পালন করবেআল্লাহ তাআলা ঐ এক দিনের বিনিময়ে জাহান্নাম এবং সে ব্যক্তির মাঝে সত্তর বছরের দূরত্ব সৃষ্টি করে দিবেন।[91]

* আবু কাতাদা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিততিনি বলেনরাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন

আমি আল্লাহর নিকট আশাবাদী যে‘আরাফার দিনের সাওম তার পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী এক বছরের গুনাহ মুছে দিবেআর আশুরার দিনের সাওম তার পূর্বেবর্তী এক বছরের গুনাহ মুছে দিবে।[92]


যিলহজের প্রথম দিনের আমল


* আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনরাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন

যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ করে এবং তাতে কোনো অশ্লীল কাজ না করে বা কথা না বলেতাহলে সে ঐ দিনের মতো নিষ্পাপ হয়ে ফিরবেযে দিন তার মা তাকে জন্ম দিয়েছিল।[93]

* যায়েদ ইবন আরকাম রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিততিনি বলেন

একদা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেনহে আল্লাহর রাসূল! এ কুরবাণী কী? তিনি উত্তর দিলেন: তোমাদের পিতা ইবরাহীম আলাইহিস সালামের সুন্নাত।

   তারা পুনরায় জিজ্ঞেস করলহে আল্লাহর রাসুল! এতে আমাদের কী রয়েছে?

   তিনি উত্তর দিলেন: কুরবানীর পশুর প্রতিটি লোমের পরিবর্তে একটি করে নেকী রয়েছে।[94]

   * ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিততিনি বলেনরাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনদিনসমূহের মধ্যে যিলহজের প্রথম দশ দিনে কৃত আমল আল্লাহর নিকট সবচেয়ে অধিক প্রিয়।

   সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেনহে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও নয় কী?

   তিনি উত্তর দিলেন: আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও নয়কিন্তু যে ব্যক্তি আপন জানমাল নিয়ে বের হয় এবং তার (জান ও মালের) কিছুই নিয়ে ফেরে না। অর্থাৎ নিজে শহীদ হয়েছে আর তার মালও আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় হয়েছে। সুতরাং এমন জিহাদ অবশ্য এ দিনসমূহে কৃত আমল অপেক্ষা উত্তম।[95]


ইলম ও নিয়ত


* নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনপ্রকৃত পক্ষে দুনিয়া হলো চার ব্যক্তির জন্য।

এক. এমন বান্দা- যাকে আল্লাহ তাআলা সম্পদ ও ইলম উভয় দান করেছেন। তবে সে তা খরচ করতে আপন রবকে ভয় করে (অর্থাৎ হারাম পথে ব্যয় করে না।)আত্মীয় স্বজনের সাথে সদ্ব্যবহার করে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য মালর হক মোতাবেক আমল করে (অর্থাৎ যথাস্থানে খরচ করে)। ঐ ব্যক্তি হলো সর্বোচ্ছ মর্যাদার অধিকারী।

দুই. এমন বান্দা- যাকে আল্লাহ ইলম দান করেছেন; কিন্তু সম্পদ দান করেন নি। তবে সে সত্য এবং সঠিক নিয়তে বলে যদি আমার মাল থাকততাহলে আমি অমুকের ন্যায় সাওয়াবের পথে খরচ করতাম। এ দুব্যক্তির সাওয়াব একই সমান।

তিন. এমন বান্দা- যাকে আল্লাহ মাল দিয়েছেন, কিন্তু ইলম দান করেন নি। ইলম না থাকার দরুন সে নিজের সম্পদের ব্যাপারে স্বেচ্ছাচারিতায় লিপ্ত হয়ে পড়ে। এতে সে আল্লাহকে ভয় করে নাআত্মীয়-স্বজনের আর্থিক হক আদায় করে না এবং নিজ সম্পদ হক পথে ব্যয় করে না। এ ব্যক্তি হলো সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট পর্যায়ের।

চার. এমন বান্দা- যার কাছে মালও নেইইলমও নেই। সে আকাংখা করে বলেযদি আমার নিকট সম্পদ থাকততাহলে আমি অমুক ব্যক্তির মতো (যেখানে সেখানে) ব্যয় করতাম। এ বান্দাও তার নিয়ত অনুযায়ী হবে এবং তাদের গুনাহ হবে বরাবর অর্থাৎ মন্দ নিয়তের কারণে গুনাহের ক্ষেত্রে সে হবে তৃতীয় ব্যক্তির সমান।[96]

* আবু বাকরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনআমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি

তুমি হয়ত আলেম হও অথবা তালেবে ইলম (ইলমের তালাশকারী) হও অথবা মনোযোগ সহকারে ইলমের শ্রবণকারী হও অথবা ইলম ও আলেমদের ভালোবাস। (এ চার ছাড়া) পঞ্চম প্রকার হয়ো নাতাহলে ধ্বংস হয়ে যাবে। পঞ্চম প্রকার হলো তুমি ইলম ও আলেমদের সাথে শক্রতা পোষণ কর।[97]


সবর ও জিহাদ


* আবু সাঈদ খুদরী ও আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিতরাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনমুসলিম যখনই কোনো ক্লান্তিরোগচিন্তা কষ্ট ও পেরেশানীতে পতিত হয়এমনকি একটি কাঁটাও ফুটে তবে এ কারণে আল্লাহ তাআলা তার গুনাহসমূহ মাফ করে দেন।[98]

* সাহল ইবন সা‘দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতরাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন

যে ব্যক্তি আমার জন্য তার উভয় চোয়াল ও উভয় পায়ের মধ্যবর্তী অঙ্গের দায়িত্ব গ্রহণ করবে (অর্থাৎ মুখ ও গুপ্তাঙ্গকে হারাম পন্তায় ব্যবহার করবে না)আমি তার জন্য জান্নাতের দায়িত্ব নিবো।[99]

* সাহল ইবন হুনাইফ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিতরাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন

যে ব্যক্তি একান্ত নিষ্ঠার সাথে আল্লাহর কাছে শাহাদাত কামনা করবেআল্লাহ তাকে শহীদের মর্যাদায় পৌঁছানযদিও সে বিছানায় (অর্থাৎ জিহাদ না করে ঘরে এমনিতে) মৃত্যু বরণ করে।[100]

* সাহল ইবন সা‘দ, রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনরাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন

আল্লাহর রাস্তায় (অর্থাৎ জিহাদে যেয়ে) একদিন পাহারা দেওয়া দুনিয়া ও দুনিয়ার ওপর সমস্ত কিছু থেকে উত্তম।[101]


আত্মীয়তা


·      উম্মে সালামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেনরাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন

যে মহিলার এ অবস্থায় মৃত্যু হয় যেস্বামী তার প্রতি সন্তুষ্ট থাকেসে জান্নাতে যাবে।[102]

·      আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেনরাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন

যে ব্যক্তি এ কন্যা সন্তানদের কোনো বিষয়ের ওপর জিম্মাদারী গ্রহণ করল এবং তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করলতবে এ কন্যাগণ তার জন্য জান্নামের আগুন থেকে রক্ষার অসীলা হবে।[103]

·      আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনরাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন

যে ব্যক্তি এটা কামনা করে যেতার রিযিক প্রশস্ত হোক ও তার হায়াত দীর্ঘ হোকতার উচিৎ নিজ আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা।[104]


মহব্বত ও ইহসান


·         এক ব্যক্তি এসে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে নিবেদন করলহে আল্লাহর রাসূলুল্লাহ্! কিয়ামত কবে হবে? তিনি উত্তরে বললেনকিয়ামতের জন্য তুমি কী প্রস্তুত রেখেছোলোকটি বললআমি কোনো আমল করতে পারি নিতবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে মহব্বত করি।

·         রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনযাকে তুমি মহব্বত কর (কিয়ামতের দিন) তার সাথেই তুমি থাকবে।

·         আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনইসলামের আবির্ভাবের পর আমি মুসলিমদেরকে কখনো এরূপ খুশি হতে দেখি নিযেরূপ তারা একথা শুনে খুশি হয়েছেন।[105]

·         উবাদা ইবন সামেত রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনআমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিমুমিন নর-নারীর জন্য যে ব্যক্তি মাগফিরাতের দোআ করবেআল্লাহ তা‘আলা তার জন্য প্রত্যেক মুমিন নর-নারীর বিনিময়ে একটি করে নেকী লিখে দিবেন।

·         আবু মাসউদ বদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনরাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনযে ব্যক্তি সৎকাজের পথ দেখায়সে সৎ কর্মকারীদের সমান সাওয়াব লাভ করে।

·         সাহল রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনরাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন

আমি এবং এতীমের লালন-পালনকারী জান্নাতে এরূপ কাছাকাছি হব- একথা বলে তিনি শাহাদাত এবং মধ্যমা আঙ্গুলি দ্বারা ইশারা করেছেন এবং দুই আঙ্গুলের মাঝখানে সামান্য ফাঁকা রেখেছেন।[106]

·         সাফওয়ান ইবন সুলাইম রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনরাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 

বিধবা নারী ও মিসকীনের প্রয়োজনীয় কাজে দৌড় ঝাঁপকারীর সাওয়াব আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারীর ন্যায় অথবা ঐ ব্যক্তির সাওয়াবের ন্যায়, যে দিনে সাওম পালন করে ও রাতভর ইবাদত করে।[107]

·         আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনরাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন

যে ব্যক্তি আপন মুসলিম ভাইয়ের সম্মান রক্ষার জন্য প্রচেষ্টা চালায় আল্লাহ তাআলা নিজে দায়িত্ব নিয়েছেন যেকিয়ামতের দিন সে ব্যক্তি থেকে জাহান্নামের আগুন হটিয়ে দিবেন।[108]

·         বারা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনরাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন

মুমিন যখন মুমিনের সাথে সাক্ষাৎ করেতাকে সালাম দেয় এবং তার হাত ধরে মুসাফাহা করেতখন উভয়ের গুনাহ এমনভাবে ঝরে পড়েযেমন বৃক্ষ থেকে পাতা ঝরে পড়ে।[109]


উত্তম চরিত্র


·         আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনআমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি

মুমিন আপন সচ্চরিত্র দ্বারা সাওম পালনকারীর এবং রাতভর ইবাদতকারীর মর্যাদা লাভ করে থাকে।[110]

·         মু‘আয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিতরাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন

যে ব্যক্তি গোস্বা পূর্ণ করার ক্ষমতা রাখা সত্ত্বেও গোস্বা দমন করে নেয় (অর্থাৎ ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও যার ওপর গোস্বা তাকে কোনো রকম শাস্তি দেয় না) কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তাকে সমস্ত মাখলুকের সামনে ডাকবেন এবং অধিকার দিবেন যেজান্নাতের হুরদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা নিজের জন্য পছন্দ করে নাও।[111]

·         আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনরাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন

আমি ঐ ব্যক্তির জন্য জান্নাতের কিনারায় একটি ঘরের জিম্মাদারী নিচ্ছিযে হকের ওপর থেকেও ঝগড়া ছেড়ে দেয়। ঐ ব্যক্তির জন্য জান্নাতের মধ্যখানে একটি ঘরের জিম্মাদারী নিচ্ছিযে ঠাট্রা-বিদ্রেুপের মধ্যেও মিথ্যা কথা বর্জন করে। আর ঐ ব্যক্তির জন্য জান্নাতের সর্বোচ্চ স্তরে একটি ঘরের জিম্মাদারী নিচ্ছিযে নিজের চরিত্রকে ভালো বানিয়ে নেয়।[112]

আল্লাহর ভালোবাসা


·      রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন

যার চিন্তা শুধুই আখেরাত হয়আল্লাহ তার অন্তরে অমুখাপেক্ষীতা সৃষ্টি করে দেন। তার জমাকৃত বা গোছানো বিষয়াবলী শামাল দেন। দুনিয়া তার কাছে তুচ্ছ হয়ে আসে। অপরদিকে যার চিন্তা শুধুই দুনিয়া হয়আল্লাহ তাআলা তার সামনে সদা অভাব অনটন রেখে দেনতার গোছানো বিষয়াবলী ছড়িয়ে দেনদুনিয়া তার কাছে নির্দিষ্ট ও পূর্ব নির্ধারিত পরিমাণই এসে থাকে (অর্থাৎ যতই সে মেহনত করুক না কেনযেটুকু তার তকদীরে আছেসেটুকুই সে প্রাপ্ত হয়)[113]

·      উমার ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনরাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন

তোমরা যদি আল্লাহ তাআলার ওপর পরিপূর্ণভাবে তাওয়াক্কুল করতেতাহেল তোমাদের এমনভাবে রুজী দেওয়া হতযেমনভাবে পাখীদের রুজী দেওয়া হয়ে থাকে। ওরা সকালে খালি পেটে বের হয়ে যায় আর সন্ধ্যায় ভরা পেটে ফিরে আসে।[114]

সমাপ্ত



[1] হাকেম ১/৫০২

[2] সহীহ বুখারী ১০/১৯৮

[3] আল আছার ফিল আযকার, পৃ: ২০

[4] দারেমী

[5]  সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৩১১

[6]  নাসায়ী, ৫/৩৩৯; সহীহুল জামে ৫/৩৩৯

[7] সুনান দারেমী ২/৪৪৭-৪৪৮; উত্তম সনদে। বাইহা্ক্বী তার মুখতাসারুদ দালায়েল (৭/১২৩)।

[8] সুয়ূতী রহ. এর লুকাতুল মারজান, পৃ: ১৫০

[9] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫০১৯; সহীহ মুসলিম, ৮০৮।

[10] মুসতাদরাকে হাকেম ১/৫৬২

[11] ইবন তাইমিয়্যাহ, আল-কালিমুত তাইয়্যিব, পৃ. ১৯

[12]  তিরমিযী ৩/১৮৩

[13]  জামেউল উসুল ৪৯১/৪২৯।

[14]  তিরমিযী ২/২০৬

[15] সহীহ বুখারী ১১/১৯৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৭০৪

[16] ওয়াবিলুস সাইব লি ইবনিল কাইয়্যেম (পৃ: ৯৮)

[17] ওয়াবিলুস সাইব লি ইবনিল কায়্যিম (পৃ. ৯৮)

[18] মুসতাদরাকে হাকেম (১/৫৪২) এবং এর সনদকে সহীহ বলেছেন।

[19] সহীহ আত-তিরমিযী, ৩/১৮৬। আলবানী বলেন, তা মাকতু‘।

[20] মুসলিম, হাদীস নং ২০১৮।

[21] তিরমিযী; আর আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন, সহীহুত তিরমিযী: ৪৯৬।

[22] অর্থাৎ বরকতহীন হবে, হাদীসটিকে একদল আলেম বিশুদ্ধ বলেছেন, যেমন ইবনুস সালাহ, নাওয়াওয়ী তাঁর আযকার গ্রন্থে। ইবন বায রহ .বলেন, হাদীসটি তার শাওয়াহেদ সহ হাসান হাদীস।

[23] বাইহাকী, আবু নু‘আইম, তাবরানী ও ইবন সা‘দ সহীহ সনদে তা বর্ণনা করেন, দেখুন, ইবন হাজার, তাহযীবুত তাহযীব, খ. ৩, পৃ. ১২৫।

[24]  তিরমিযী, হাদীস নং ৩৩৮৫

[25]  সহীহ সুনান আবি দাউদ, ৫০৮৮, ৫০৮৯।

[26] সহীহ সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং ৪২৪৪  

[27]  সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৭০৯

[28]  তিরমিযী ৩/১৮৭

[29]  ফতুহাতুর রববানিয়া ৩/৯৪

[30] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৭০৮

[31]  যাদুল মা‘আদ ২/২৭৬

[32]  তিরমিযী, হাদীস নং ৩৪২২

[33]  সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং ৫০৯৫

[34]  মুসনাদে আহমদ ৪/৬০

[35]  সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৬৯১

[36] তিরমিযী, হাদীস নং ৩৪২৪

[37]  সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৪৫১

[38]  তিরমিযী, হাদীস নং ১২০৮

[39] সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৬৬

[40]  তিরমিযী ৫/৫৬৯

[41]  সহীহ বুখারী ৭/১৫০

[42] সহীহ বুখারী ৭/১৫০

[43] আবু দাউদ ২/৮৫

[44]  তিরমিযী ৭/১৫২

[45]  ইবনুল কাইয়্যেম, জালাউল আফহাম, পৃ. ৭৯।

[46]  তুহফাতুয যাকেরীন, পৃ. ৩০।

[47]  সহীহ তারগীব, হাদীস নং ৬৫৯

[48]  ইমাম মুসলিম, (২/১২৫)। 

[49] মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ৫৬০৫

[50] মুসনাদে আহমাদ ২/৪০৩

[51]  মুসনাদে আহমাদ ২/৪০৩

[52]  মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ৫৬০৫

[53] সহীহ মুসলিমহাদীস নং ২/১২৫

[54] সহীহুল জামে ২/৩৭৯৫

[55] মুজামুস সগীর ২/১০৩৩

[56] সহীহুল জামে ১/৩৩৫৮

[57] আল-মাদখাল লি-ইবনিল হাজ ৪/১৪১-১৪২

[58] সহীহুল জামেহাদীস নং ১৯৫২

[59] মুয়াত্তা ইমাম মালেক ২/৯৯৭

[60] ইবন হিব্বান, হাদীস নং ৮৭২

[61] সুনান আবু দাউদহাদীস নং ৪৩৪৭

[62] শহরুস সুন্নাহ ১৩/১১৬

[63] জামেউস সহীহ, হাদীস নং ৩৩০৪

[64] মাজমায়ে যাওয়ায়েদ ৩/১১

[65] তিরমিযীহাদীস নং ২৩৩৮

[66] মাজমায়ে যাওয়ায়েদ ৩/১১

[67] তিরমিযীহাদীস নং ২৩৪০

[68] সহীহ মুসলিমহাদীস নং ৬৫৬১

[69] মাজমায়ে যাওয়ায়েদ ৭/৪০৪

[70] সহীহ মুসলিমহাদীস নং ২১২৭

[71]  আল জাওয়াবুল কাফী (পৃ: ৮)

[72]  সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৫৬৮

[73]  সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৯১৩

[74]  তিরমিযী, হাদীস নং ৩৪৬৫

[75]  সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং ৪০২৩

[76]  মুসতাদরাকে হাকেম ১/৫১৮)

[77]  সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৮৮৩

[78] তিরমিযী, হাদীস নং ২৮৯১

[79]  ইবন হিববান ৬/৩১২

[80]  তিরমিযী, হাদীস নং ২৯১

[81]  সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৪৫

[82] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬১৫

[83] সহীহ মুসলিমহাদীস নং ১৪৯১

[84] তিরমিযীহাদীস নং ৫৮৬

[85] সহীহ মুসলিমহাদীস নং ২১৮৯

[86] সহীহ মুসলিমহাদীস নং ২১৯২

[87] ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১৬০১

[88] তিরমিযীহাদীস নং ৯৬৯

[89] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬০২২

[90] তিরমিযীহাদীস নং ১৯৬৫

[91] সুনান নাসাঈ, হাদীস নং ২২৪৭

[92] সহীহ মুসলিম ১/৩৬৮

[93] সহীহ বুখারী ১/২০৬

[94] ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২২৬

[95] সহীহ বুখারীহাদীস নং ১২৭; মেশকাত, হাদীস নং ১২৮

[96] তিরমিযীহাদীস নং ২২৬৭

[97] মাজমায়ে যাওয়ায়েদ ১/৩২৮

[98] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৬৪১

[99] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৪৭৪

[100] সহীহ মুসলিম ২/১৪১

[101] সহীহ বুখারী ১/৪০৫

[102] তিরমিযীহাদীস নং ১১৬১

[103] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৯৯৫

[104] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৯৮৬

[105] সহীহ বুখারী ২/৯১১

[106] মাজমায়ে যাওয়ায়েদ ১/৩৫২

[107] সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং ৫১২৯

[108] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৩০৪

[109] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬০০৬

[110] মুসনাদে আহমদ ৬/৪৪৯

[111] মাজমায়ে যাওয়ায়েদ ৮/৭৫

[112] আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৭৯৮

[113] আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৭৭৭

[114] আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৮০০

__________________________________________________________________________________

লেখক : আব্দুল্লাহ ইবন মুহাম্মদ আস-সাদহান

অনুবাদ: জাকের উল্লাহ আবুল খায়ের

সম্পাদনা: আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া - আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান

সূত্র: ইসলামহাউজ


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন