Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

See Our Articles In Different Styles... Grid View List View

শুক্রবার, ৩০ নভেম্বর, ২০১৮

রমযান মাসের ঐতিহাসিক ঘটনাবলী ও এর কিছু শিক্ষা

Views:

A+ A-





মযান মাসের ঐতিহাসিক ঘটনাবলী ও এর শিক্ষা

রহমত, মাগফিতার ও নাজাতের পয়গাম নিয়ে প্রতি বছর আমাদের দুয়ারে ফিরে আসে রমযান। মানবসৃষ্টির ঊষালগ্ন থেকেই এ মাসে সংঘটিত হয়েছে অসংখ্য ঘটনা। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহাগ্রন্থ আল-কুরআন এ মাসেই নাযিল হয়েছে। বিজয়ের মাসখ্যাত রমযানেই মুসলিমগণ বদরের প্রান্তরে কাফিরদের পরাজিত করে ইসলামের বিজয় নিশান উড়িয়ে দিয়েছিল বিশ্বের দরবারে। রমযানের নানা ঘটনাতে রয়েছে আমাদের মূল্যবান উপদেশ ও শিক্ষা আল-কুরআনে আল্লাহ তাআলা পূর্ববর্তী নবী রাসূলদের ঘটনা উল্লেখ করে বলেছেন 
﴿وَكُلّٗا نَّقُصُّ عَلَيۡكَ مِنۡ أَنۢبَآءِ ٱلرُّسُلِ مَا نُثَبِّتُ بِهِۦ فُؤَادَكَۚ وَجَآءَكَ فِي هَٰذِهِ ٱلۡحَقُّ وَمَوۡعِظَةٞ وَذِكۡرَىٰ لِلۡمُؤۡمِنِينَ١٢٠﴾ [هود: ١٢٠] 
“আর রাসূলদের এসকল সংবাদ আমরা তোমার কাছে বর্ণনা করছি যার দ্বারা আমরা তোমার মনকে স্থির করি, আর এতে তোমার কাছে এসেছে সত্য এবং মুমিনদের জন্য উপদেশ ও স্মরণ” [সূরা হূদ, আয়াত: ১২০]
﴿كَذَٰلِكَ نَقُصُّ عَلَيۡكَ مِنۡ أَنۢبَآءِ مَا قَدۡ سَبَقَۚ وَقَدۡ ءَاتَيۡنَٰكَ مِن لَّدُنَّا ذِكۡرٗا ٩٩ مَّنۡ أَعۡرَضَ عَنۡهُ فَإِنَّهُۥ يَحۡمِلُ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ وِزۡرًا١٠٠﴾ [طه: ٩٩،  ١٠٠] 
“পূর্বে যা ঘটে গেছে তার কিছু সংবাদ এভাবেই আমরা তোমার কাছে বর্ণনা করি। আর আমরা তোমাকে আমার পক্ষ থেকে উপদেশ দান করেছি। তা থেকে যে বিমুখ হবেঅবশ্যই সে কিয়ামতের দিন পাপের বোঝা বহন করবে” [সূরা ত্বা-হা, আয়াত: ৯৯-১০০]
অতএব, ঘটনা শুধু জানানোর জন্যই এখানে উল্লেখ করা উদ্দ্যেশ্য নয়; বরং এর থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়া মূল লক্ষ্য। আলোচ্য প্রবন্ধে রমযানের ঐতিহাসিক ঘটনাবলী ও শিক্ষা নিয়ে আলোকপাত করা হয়েছে।

১ রমযান:
ক- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়াত লাভ:
রমযান মাসকে আল্লাহ তাআলা আসমানী কিতাবসমূহের নাযিলের মাস হিসেবে নির্বাচন করেছেন। এ মাসেই নাযিল হয় মানবতার মুক্তির দিশারী সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানী কিতাব ‘আল-কুরআন’। ইবন ইসহাকের মতে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানে হেরা গুহায় জিবরীল আলাইহিস সালামের আগমনে অহীপ্রাপ্ত হন[1]। তাঁকে বলা হলো:
﴿ٱقۡرَأۡ بِٱسۡمِ رَبِّكَ ٱلَّذِي خَلَقَ ١ خَلَقَ ٱلۡإِنسَٰنَ مِنۡ عَلَقٍ ٢ ٱقۡرَأۡ وَرَبُّكَ ٱلۡأَكۡرَمُ ٣ ٱلَّذِي عَلَّمَ بِٱلۡقَلَمِ ٤ عَلَّمَ ٱلۡإِنسَٰنَ مَا لَمۡ يَعۡلَمۡ٥﴾ [العلق: ١،  ٥] 
“পড় তোমার রবের নামেযিনি সৃষ্টি করেছেন। তিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষকে আলাক থেকে। পড়আর তোমার রব মহামহিম, যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি মানুষকে তা শিক্ষা দিয়েছেনযা সে জানত না” [সূরা আল-‘আলাক, আয়াত: ১-৫]
ইবন ইসহাক দলীল হিসেবে এ আয়াত পেশ করেন, 
﴿شَهۡرُ رَمَضَانَ ٱلَّذِيٓ أُنزِلَ فِيهِ ٱلۡقُرۡءَانُ هُدٗى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَٰتٖ مِّنَ ٱلۡهُدَىٰ وَٱلۡفُرۡقَانِۚ فَمَن شَهِدَ مِنكُمُ ٱلشَّهۡرَ فَلۡيَصُمۡهُۖ وَمَن كَانَ مَرِيضًا أَوۡ عَلَىٰ سَفَرٖ فَعِدَّةٞ مِّنۡ أَيَّامٍ أُخَرَۗ يُرِيدُ ٱللَّهُ بِكُمُ ٱلۡيُسۡرَ وَلَا يُرِيدُ بِكُمُ ٱلۡعُسۡرَ وَلِتُكۡمِلُواْ ٱلۡعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُواْ ٱللَّهَ عَلَىٰ مَا هَدَىٰكُمۡ وَلَعَلَّكُمۡ تَشۡكُرُونَ١٨٥﴾ [البقرة: ١٨٥] 
“রমযান মাসযাতে কুরআন নাযিল করা হয়েছে মানুষের জন্য হিদায়াতস্বরূপ এবং হিদায়াতের সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে মাসটিতে উপস্থিত হবেসে যেন তাতে সিয়াম পালন করে। আর যে অসুস্থ হবে অথবা সফরে থাকবে তবে অন্যান্য দিবসে সংখ্যা পূরণ করে নেবে। আল্লাহ তোমাদের সহজ চান এবং কঠিন চান না। আর যাতে তোমরা সংখ্যা পূরণ কর এবং তিনি তোমাদেরকে যে হিদায়াত দিয়েছেনতার জন্য আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা কর এবং যাতে তোমরা শোকর করো” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১৮৫]
Read More---

আল্লাহর প্রিয় বন্ধুদের কারামত (অলৌকিক কর্মকাণ্ড) এবং তাঁদের মাহাত্ম্য

Views:

A+ A-
আল্লাহর প্রিয় বন্ধুদের কারামত (অলৌকিক কর্মকাণ্ড) এবং তাঁদের মাহাত্ম্য


 আল্লাহর প্রিয় বন্ধুদের কারামত (অলৌকিক কর্মকাণ্ড) এবং  তাঁদের মাহাত্ম্য 


মহান 
 আল্লাহ বলেছেন,
﴿ أَلَآ إِنَّ أَوۡلِيَآءَ ٱللَّهِ لَا خَوۡفٌ عَلَيۡهِمۡ وَلَا هُمۡ يَحۡزَنُونَ ٦٢ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَكَانُواْ يَتَّقُونَ ٦٣ لَهُمُ ٱلۡبُشۡرَىٰ فِي ٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَا وَفِي ٱلۡأٓخِرَةِۚ لَا تَبۡدِيلَ لِكَلِمَٰتِ ٱللَّهِۚ ذَٰلِكَ هُوَ ٱلۡفَوۡزُ ٱلۡعَظِيمُ ٦٤ ﴾ (يونس : ٦٢،  ٦٤) 
“মনে রেখো যেআল্লাহর বন্ধুদের না কোন আশংকা আছে আর না তারা বিষণ্ণ হবে। তারা হচ্ছে সেই লোক যারা ঈমান এনে তাক্বওয়া অবলম্বন করে থাকে। তাদের জন্য সুসংবাদ রয়েছে পার্থিব জীবনে এবং পরকালেওআল্লাহর বাণীসমূহের কোন পরিবর্তন নেইএটাই হচ্ছে বিরাট সফলতা।” (সূরা ইউনুস ৬২-৬৪ আয়াত)
আরও বলেন,﴿ وَهُزِّيٓ إِلَيۡكِ بِجِذۡعِ ٱلنَّخۡلَةِ تُسَٰقِطۡ عَلَيۡكِ رُطَبٗا جَنِيّٗا ٢٥ فَكُلِي وَٱشۡرَبِي﴾ (مريم: ٢٥،  ٢٦) 
“তুমি তোমার দিকে খেজুর গাছের কাণ্ড হিলিয়ে দাওওটা তোমার সামনে সদ্যপক্ব তাজা খেজুর ফেলতে থাকবে। সুতরাং আহার করপান কর---।” (সূরা মারয়্যাম ২৫-২৬ আয়াত)
তিনি আরও বলেছেন,
﴿ كُلَّمَا دَخَلَ عَلَيۡهَا زَكَرِيَّا ٱلۡمِحۡرَابَ وَجَدَ عِندَهَا رِزۡقٗاۖ قَالَ يَٰمَرۡيَمُ أَنَّىٰ لَكِ هَٰذَاۖ قَالَتۡ هُوَ مِنۡ عِندِ ٱللَّهِۖ إِنَّ ٱللَّهَ يَرۡزُقُ مَن يَشَآءُ بِغَيۡرِ حِسَابٍ ٣٧ ﴾ (ال عمران: ٣٧) 
“যখনই যাকারিয়া মিহরাবে (কক্ষে) তার সঙ্গে দেখা করতে যেততখনই তার নিকট খাদ্য-সামগ্রী দেখতে পেত। সে বলত, ‘হে মারয়্যাম! এসব তুমি কোথা থেকে পেলে?’ সে বলত, ‘তা আল্লাহর কাছ থেকে। নিশ্চয় আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পর্যাপ্ত জীবিকা দান করে থাকেন।” (সূরা আলে ইমরান ৩৭ আয়াত)
Read More---

প্রশ্নোত্তরে ইসলামী জ্ঞান

Views:

A+ A-



 
প্রশ্নোত্তরে ইসলামী জ্ঞান 

সংকলন ও গ্রন্থনা : মুহা: আবদুল্লাহ্‌ আল কাফী (লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়)

(১ম পর্ব)
বিষয়: ঈমান ও আক্বীদা

১. প্রশ্নঃ আমাদের সৃষ্টিকর্তার নাম কি?
উত্তরঃ আল্লাহ্‌।
২. প্রশ্নঃ আল্লাহর কতগুলো নাম রয়েছে?
উত্তরঃ আল্লাহ তা’আলার নাম অসংখ্য-অগণিত।
৩. প্রশ্নঃ আমাদের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ্‌ কোথায় আছেন?
উত্তরঃ সপ্তাকাশের উপর আরশে আযীমে। (সূরা ত্বহাঃ ৫)
৪. প্রশ্নঃ আল্লাহর আরশ কোথায় আছে?
উত্তরঃ সাত আসমানের উপর।
৫. প্রশ্নঃ আল্লাহ কি সর্বস্থানে বিরাজমান?
উত্তরঃ না। আল্লাহ্‌ সবজায়গায় বিরাজমান নন। তিনি সপ্তকাশের উপর সুমহান আরশে সমুন্নত। (সূরা ত্বাহাঃ ৫)
৬. প্রশ্নঃ আল্লাহর কাজ কি?
উত্তরঃ সৃষ্টি করা, রিযিক প্রদান, বৃষ্টি বর্ষণ, লালন-পালন করা, সাহায্য করা, জীবন-মৃত্যু প্রদান, পরিচালনা করা, সবকিছুর উপর কর্তৃত্ব করা, তত্বাবধান করা ইত্যাদি।
৭. প্রশ্নঃ তাওহীদ কাকে বলে?
উত্তরঃ তাওহীদ অর্থ একত্ববাদ। পরিভাষায়ঃ ইবাদতের ক্ষেত্রে আল্লাহকে একক নির্দিষ্ট করার নাম তাওহীদ।
৮. প্রশ্নঃ তাওহীদ কত প্রকার?
উত্তরঃ তাওহীদ ৩ প্রকার।
৯. প্রশ্নঃ তিন প্রকার তাওহীদ কি কি?
উত্তরঃ (১) তাওহীদে রুবূবিয়্যাহ্‌ বা কর্ম ও পরিচালনার একত্ববাদ (২) তাওহীদে উলূহিয়্যাহ্‌ বা দাসত্বের একত্ববাদ (৩) তাওহীদে আসমা ওয়া ছিফাত বা নাম ও গুণাবলীর একত্ববাদ।
১০. প্রশ্নঃ তাওহীদে রুবূবিয়্যাহ্‌ কাকে বলে?
উত্তরঃ আল্লাহ্‌ তাঁর কর্ম সমূহে একক- তাঁর কোন শরীক নেই, একথা মেনে নেয়ার নাম তাওহীদে রুবূবিয়্যাহ্‌
১১. প্রশ্নঃ তাওহীদে উলূহিয়্যাহ্‌ কাকে বলে?
উত্তরঃ বান্দার ইবাদত-বন্দেগী ও দাসত্ব এককভাবে আল্লাহর জন্যে নির্দিষ্ট করার নাম তাওহীদে উলূহিয়্যাহ্‌।
১২. প্রশ্নঃ তাওহীদে আসমা ওয়াস্‌ সিফাত কাকে বলে?
উত্তরঃ কুরআন ও হাদীছে আল্লাহর অনেক সুন্দর সুন্দর নাম ও গুণাবলী উল্লেখ রয়েছে, যা তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব ও পরিপূর্ণতার প্রমাণ বহন করে, সেগুলোকে কোন প্রকার ধরণ-গঠন নির্ধারণ না করে বা অস্বীকার না করে সেভাবেই মেনে নেয়ার নাম তাওহীদে আসমা ওয়াস্‌ সিফাত।
১৩. প্রশ্নঃ তাওহীদে রুবূবিয়্যাহ্‌র উদাহরণ কি?
উত্তরঃ সৃষ্টি করা, রিযিক দেয়া, বৃষ্টি দেয়া, লালন-পালন করা, সবকিছুর উপর কর্তৃত্ব করা, তত্বাবধান করা ইত্যাদি।
১৪. প্রশ্নঃ তাওহীদে উলূহিয়্যাহ্‌র উদাহরণ কি?
উত্তরঃ ঈমান, ভয়-ভীতি, আশা-আকাঙ্খা, ভালবাসা, দু’আ-প্রার্থনা, সাহায্য কামনা, উদ্ধার কামনা, রুকূ-সিজদা ইত্যাদি।
১৫. প্রশ্নঃ তাওহীদে আসমা ওয়া ছিফাতের উদাহরণ কি?
উত্তরঃ الرحمن আর্‌ রাহমান, السميع আস্‌ সামী’ (শ্রবণকারী) البصير আল বাছীর (মহাদ্রষ্টা), العلو আল ঊলু (সুউচ্চ) ইত্যাদি।
১৬. প্রশ্নঃ আল্লাহর ৯৯টি নাম মুখস- করার ফযীলত কি?
উত্তরঃ মুখস- করে আমল করলে বিনিময় জান্নাত।
১৭. প্রশ্নঃ ‘মুমিনের কলব আল্লাহর আরশ’ এটা কার কথা?
উত্তরঃ এটা মানুষের বানানো কথা। আল্লাহ বা রাসূলের কথা নয়। (জাল হাদীছ)
১৮. প্রশ্নঃ আল্লাহ কি নিরাকার?
উত্তরঃ না। কেননা তাঁর অসি-ত্ব ও সত্তা আছে। যার সত্তা ও অসি-ত্ব থাকে তাকে নিরাকার বলা যায় না।
১৯. প্রশ্নঃ “আল্লাহ সর্বস’ানে বিরাজমান নন, তিনি সপ্তকাশের উপর আরশে থাকেন।” একটি যুক্তি দিয়ে কথাটি বুঝিয়ে দাও।
উত্তরঃ “আল্লাহ্‌ কোথায় আছেন?” এ প্রশ্নটি ছোট্ট একটি শিশুকে জিজ্ঞেস করলে, তার নিষ্পাপ মুখ থেকে জবাব আসবে ‘তিনি উপরে বা আকাশে আছেন’- সে কখনোই বলবে না ‘আল্লাহ্‌ সবজায়গায় আছেন’।
২০. প্রশ্নঃ আল্লাহ যদি নিরাকার না হন, তবে তাঁকে কি দেখা সম্ভব?
উত্তরঃ হ্যাঁ, তাঁকে দেখা সম্ভব। তবে এ দুনিয়ায় চর্ম চোখে সম্ভব নয়। আখেরাতে জান্নাতীগণ আল্লাহকে দেখবেন। (সূরা ক্বিয়ামাহ্‌ঃ ২২-২৩, বুখারী, মুসলিম, নাসাঈ)
২১. প্রশ্নঃ ঈমান কাকে বলে?
উত্তরঃ ঈমান মানে বিশ্বাস। পরিভাষায়ঃ অন-রে বিশ্বাস, মুখে স্বীকার ও কর্মে বাস-বায়নকে ঈমান বলে।
২২. প্রশ্নঃ ঈমান কি কমে ও বাড়ে?
উত্তরঃ হ্যাঁ, ঈমান কমে ও বাড়ে।
২৩. প্রশ্নঃ কিভাবে ঈমান কমে বাড়ে?
উত্তরঃ সৎকাজের মাধ্যমে ঈমান বাড়ে, আর অসৎ কাজ করলে ঈমান কমে।
২৪. প্রশ্নঃ ঈমানের শাখা কতটি?
উত্তরঃ সত্তরের অধিক।
Read More---

আল্লামা মুহাম্মদ নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহ:) এর জীবনী

Views:

A+ A-





আল্লামা মুহাম্মদ নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহ:) এর জীবনী

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
প্রিয় বন্ধুগণ, আজ আপনাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিব এমন একজন ব্যক্তিত্বের সাথে যাকে বর্তমান শতকের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। হাদীস গবেষণায় যিনি বর্তমান পৃথিবীতে একজন আলোড়ন সৃষ্টিকারী মহান ব্যক্তি। ইলম চর্চায় তার জীবনীতে আমাদের প্রেরণার যথেষ্ট খোরাক রয়েছে। প্রবল ইচ্ছা শক্তি, অসীম সাহস, সুদৃঢ় মনোবল আর ইখলাস ভরা প্রত্যয় থাকলে কিভাবে একজন মানুষকে আল্লাহ তায়ালা সাধারণ ঘড়ির মেকার থেকে শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ হাদীস বিশারদে পরিণত করে তার জ্বলন্ত উদাহরণ হচ্ছেন আল্লামা আলাবানী। অত:এব আর কাল বিলম্ব না করে আসুন, আমরা হাদীসে নববীর এই নিরলস খাদেম, সালফে সালেহীনের বাস্তব প্রতিচ্ছবি, মুহাদ্দিস, ফকীহ, দাঈ, ইসলামী চিন্তাবিদ, লেখক ও গবেষক আল্লামা মুহাম্মদ নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহ:) এর সাথে পরিচিত হই।
প্রারম্ভিকা: আল্লামা মুহাম্মদ নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহ:) আধুনিক যুগে মুসলিম জাহানের একজন স্বনামধন্য আলেম। আধুনিক বিশ্বে শাইখ আলবানীকে ইলমে হাদীসের ক্ষেত্রে বিশেষ করে ইলমুল জারহে ওয়াত তাদীলের[1] ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র প্রতিভাধারী আলেম হিসেবে গণ্য করা হয়। ইলমে মুস্তালাহুল হাদীসের[2] ক্ষেত্রে তিনি অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য বক্তিত্ব। 
মুহাদ্দিসগণ বলেছেন: “তিনি যেন ইবনে হাজার আসকালানী, হাফেয ইবনে কাসীর প্রমুখ ইলমুল জারহে ওয়াত তাদীলের আলেমদের যুগকে আবার ফিরিয়ে এনেছিলেন।”

জন্ম ও পরিচয়:

নাম: মুহাম্মদ নাসিরুদ্দীন (১৯১৪-১৯৯৯ খৃষ্টাব্দ) পিতার নাম: আলহাজ্ব নূহ। দাদার নাম: নাজাতী। ডাক নাম: আবু আব্দুর রহমান। ইউরোপের মুসলিম অধ্যুষিত দেশ আলবেনিয়ায় তার জন্ম হওয়ায় তাকে আলবানী বলা হয়। তিনি ১৩৩৩ হিজরী মোতাবেক ১৯১৪ খৃষ্টাব্দে আলবেনিয়ার রাজধানী স্কোডার (Shkodër-বর্তমান নাম তিরানা) এ জন্ম গ্রহণ করেন। তার পরিবার ছিল দরিদ্র। কিন্তু দীনদারী ও জ্ঞানার্জন তাদের দারিদ্রতার উপর ছিল বিজয়ী। তার পিতা ছিলেন আলবেনিয়ার একজন বিজ্ঞ আলেম। ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞানার্জনের জন্য মানুষ তার কাছে ছুটে যেত। তিনি সাধ্যানুযায়ী মানুষকে দ্বীনের জ্ঞান দিতেন এবং তাদেরকে দিক নির্দেশনা প্রদান করতেন। তিনি তুরস্কের ইস্তাম্বুলে শরীয়াহ বিষয়ে শিক্ষকতা করেন।
আলবেনিয়ায় প্রেসিডেন্ট আহমদ জাগু পশ্চাত্য সেকুলার সভ্যতার দিকে ধাবিত হয়ে নারীদের পর্দা নিষিদ্ধ করলে তিনি শিশু আলবানীকে নিয়ে সপরিবারে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে হিজরত করেন।

শিক্ষা জীবন:

দামেস্ক আসার পর আলবানীর বয়স নয় বছরের কাছাকাছি হলে তার পিতা তাকে সেখানকার ‘স্কুল অব এইড চ্যারিটি’ নামক একটি স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন। সেখানেই তিনি কৃতিত্বের সাথে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন।
Read More---

ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী প্রবর্তন ও প্রবর্তক: একটি ঐতিহাসিক পর্যালোচনা

Views:

A+ A-






ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী প্রবর্তন ও প্রবর্তক: একটি ঐতিহাসিক পর্যালোচনা

পরম করুণাময় আল্লাহর নামে শুরু করছি। তাঁর জন্যই সকল প্রশংসা। সালাত ও সালাম মহান রাসূল, আল্লাহর হাবীব ও মানবতার মুক্তিদূত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, তাঁর পরিবারবর্গ ও সঙ্গীদের উপর। আজকের বিশ্বে মুসলিম উম্মার অন্যতম উৎসবের দিন হচ্ছে ‘‘ঈদে মীলাদুন্নবী’’। সারা বিশ্বের বহু মুসলিম অত্যন্ত জাঁকজমক, ভক্তি ও মর্যাদার সাথে আরবী বৎসরের ৩য় মাস রবিউল আউআল মাসের ১২ তারিখে এই ‘‘ঈদে মীলাদুন্নবী’’ বা নবীর জন্মের ঈদ পালন করেন। কিন্তু অধিকাংশ মুসলিমই  এই ‘‘ঈদের’’ উৎপত্তি ও বিকাশের ইতিহাসের সাথে পরিচিত নন। যে সকল ব্যক্তিত্ব এই উৎসব মুসলিম উম্মার মধ্যে প্রচলন করেছিলেন তাঁদের পরিচয়ও আমাদের অধিকাংশের অজানা রয়েছে। এই নিবন্ধে আমি উপরোক্ত বিষয়গুলি আলোচনার চেষ্টা করব।

১) ঈদে মীলাদুন্নবী: পরিচিতি:

ক) ‘‘মীলাদ’’ শব্দের অর্থ ও ব্যাখ্যা:
মীলাদ শব্দের আভিধানিক অর্থ: জন্মসময়। এই অর্থে ‘‘মাওলিদ’’ শব্দটিও ব্যবহৃত হয়[1]। আল্লামা ইবনে মানযূর তাঁর সুপ্রসিদ্ধ আরবী অভিধান ‘‘লিসানুল আরবে’’ লিখছেন: ميلاد الرجل: اسم الوقت الذي ولد فيه"" অর্থাৎ: ‘‘লোকটির মীলাদ: যে সময়ে সে জন্মগ্রহণ করেছে সে সময়ের নাম।’’[2] স্বভাবত:ই মুসলিমগণ ‘‘মীলাদ’’ বা ‘‘মীলাদুন্নবী’’ বলতে শুধুমাত্র রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্মের সময়ের আলোচনা করা বা জন্ম কথা বলা বোঝান না। বরং তাঁরা ‘‘মীলাদুন্নবী’’ বলতে রাসূলুল্লাহ্র (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের) জন্মের সময় বা জন্মদিনকে বিশেষ পদ্ধতিতে উদযাপন করাকেই বোঝান। আমরা এই আলোচনায় ‘‘মীলাদ’’ বা ‘‘ঈদে মীলাদুন্নবী’’ বলতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্ম উদযাপন বুঝাব। তাঁর জন্ম উপলক্ষে কোন আনন্দ প্রকাশ, তা তাঁর জন্মদিনেই হোক বা জন্ম উপলক্ষে অন্য কোন দিনেই হোক যে কোন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাঁর জন্ম পালন করাকে আমরা ‘‘মীলাদ’’ বলে বোঝব। শুধুমাত্র তাঁর জীবনী পাঠ, বা জীবনী আলোচনা, তাঁর বাণী, তাঁর শরী‘আত বা তাঁর হাদীস আলোচনা, তাঁর আকৃতি বা প্রকৃতি আলোচনা করা মূলত: মুসলিম সমাজে মীলাদ বলে গণ্য নয়। বরং জন্ম উদযাপন বা পালন বা জন্ম উপলক্ষে কিছু অনুষ্ঠান করাই মীলাদ বা ঈদে মীলাদুন্নবী হিসেবে মুসলিম সমাজে বিশেষভাবে পরিচিত।

খ) ‘‘মীলাদ’’ বা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মদিন:
মীলাদ অনুষ্ঠান যেহেতু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মদিন পালন কেন্দ্রিক, তাই প্রথমেই আমরা তাঁর জন্মদিন সম্পর্কে জানতে চেষ্টা করব। স্বভাবত:ই আমরা যে কোন ইসলামী আলোচনা কুরআনুল কারীম ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীসের আলোকে শুরু করি। কুরআনুল কারীমে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ‘‘মীলাদ’’ অর্থাৎ তাঁর জন্ম, জন্ম সময় বা জন্ম উদযাপন বা পালন সম্পর্কে কিছুই বলা হয়নি। কুরআন করীমে পূর্ববতী কোন কোন নবীর জন্মের ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে, তবে কোথাও কোনভাবে কোন দিন, তারিখ, মাস উল্লেখ করা হয় নি। অনুরূপভাবে ‘‘মীলাদ’’ পালন করতে, অর্থাৎ কারো জন্ম উদযাপন করতে বা জন্ম উপলক্ষে আলোচনার মাজলিস করতে বা জন্ম উপলক্ষে আনন্দ প্রকাশের কোন নির্দেশ, উৎসাহ বা প্রেরণা দেওয়া হয় নি। শুধুমাত্র আল্লাহর মহিমা বর্ণনা ও শিক্ষা গ্রহণের জন্যই এসকল ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। ঐতিহাসিক তথ্যাদি আলোচনার মাধ্যমে এর আত্মিক প্রেরণার ধারাবাহিকতা ব্যহত করা হয় নি। এজন্য আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মদিন সম্পর্কে আলোচনায় মূলত: হাদীস শরীফ ও পরবর্তী যুগের মুসলিম ঐতিহাসিক ও আলেমগণের মতামতের উপর নির্ভর করব:

Read More---

আয়েশা রাদিআল্লাহু ‘আনহার ফজিলত

Views:

A+ A-





ভূমিকা :


উম্মুল মুমেনিন আয়েশা রাদিআল্লাহু ‘আনহার মর্যাদা বলার অপেক্ষা রাখে না, ইসলাম ধর্মে তিনি এক অপরিহার্য ব্যক্তিত্ব, তার সম্পর্কে কুরআন ও হাদিসের বাণী উল্লেখ করাই যথেষ্ট। বিশেষ করে যার ব্যাপারে কুরআন নাযিল হয়েছে, যার বিষয়টি কিয়ামত পর্যন্ত তিলাওয়াত করা হবে, তার বিষয়ে নতুন কিছু লেখার সাধ্য আমাদের লিখনির নেই। কারণ, আল্লাহর ফয়সালার পর কোন ফয়সালা নেই, আল্লাহর বাণীর পর কোন বাণী নেই। তবুও হতভাগা কিছু লোক তার ব্যাপারে অপবাদ আর কুৎসা রটনা করে নিজেদের আখেরাত বরবাদ করছে।

জন্ম :
সিদ্দিকা বিনতে সিদ্দিক, উম্মে আব্দুল্লাহ আয়েশা বিনতে আবু বকর ইব্ন আবু কুহাফা ইব্ন উসমান। মাতা : উম্মে রুমান ব্নিতে আমের ইব্ন ‘উআইমির আল-কিনানি। নবুওতের চতুর্থ অথবা পঞ্চম বছর ইসলামের মধ্যে তিনি জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন ফর্শা ও খুব সুন্দর, এ জন্য তাকে হুমায়রা বলা হতো।


বিয়ে ও হিজরত :
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে যখন তার পিতা মদিনায় হিজরত করেন, তখন পিতা আবু বকর আব্দুল্লাহ ইব্ন উরাইকিতকে তাকে নিয়ে আসার জন্য দুইটি অথবা তিনটি উটসহ প্রেরণ করেন, অতঃপর তিনি বোন আসমা, মা উম্মে রুমান ও ভাইসহ তার সাথে মদিনায় হিজরত করেন।
হিজরতের কয়েক মাস আগে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাথে বিয়ের আক্দ সম্পন্ন করেন যখন তার ছয় বছর। হিজরতের দ্বিতীয় বছর তাকে উঠিয়ে নেন যখন তার নয় বছর। বিয়ের পূর্বে তার আকৃতি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে স্বপ্নে দেখানো হয়েছে। জিবরিল আলাইহিস সালাম তার কাছে এসে আয়েশার ছবি পেশ করে বলেন :

" ﻫﺬﻩ ﺯﻭﺟﺘﻚ ﻓﻲ ﺍﻟﺪﻧﻴﺎ ﻭﺍﻵﺧﺮﺓ " ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ ﻭﺃﺻﻠﻪ ﻓﻲ ﺍﻟﺼﺤﻴﺤﻴﻦ .

“এ হচ্ছে তোমার দুনিয়া ও আখেরাতের স্ত্রী”। তিরমিযি হাদিসটি বর্ণনা করেছেন, তবে বুখারি ও মুসলিমে এর মূল বিষয় উল্লেখ রয়েছে।
তাকে ব্যতীত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন কুমারী নারী বিয়ে করেননি। এটা তার এক বিরল সম্মান, যা অন্য কোন স্ত্রীর ছিল না। এ কারণে তিনি জীবন ভর গর্ব করেছেন। তিনি একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলেন :

" ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ، ﺃﺭﺃﻳﺖ ﻟﻮ ﻧﺰﻟﺖَ ﻭﺍﺩﻳﺎً ﻭﻓﻴﻪ ﺷﺠﺮﺓٌ ﻗﺪ ﺃُﻛِﻞ ﻣﻨﻬﺎ ، ﻭﻭﺟﺪﺕَ ﺷﺠﺮﺍً ﻟﻢ ﻳُﺆﻛﻞ ﻣﻨﻬﺎ ، ﻓﻲ ﺃﻳﻬﺎ ﻛﻨﺖ ﺗﺮﺗﻊ ﺑﻌﻴﺮﻙ ؟ " ﻗﺎﻝ : ‏( ﻓﻲ ﺍﻟﺘﻲ ﻟﻢ ﻳﺮﺗﻊ ﻣﻨﻬﺎ ‏) ، ﻭﻫﻲ ﺗﻌﻨﻲ ﺃﻧﻪ ﻟﻢ ﻳﺘﺰﻭﺝ ﺑﻜﺮﺍً ﻏﻴﺮﻫﺎ ، ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ،

“হে আল্লাহর রাসূল, আপনি যদি কোন উপত্যকায় অবতরণ করেন, যাতে রয়েছে অনেক গাছ, যা থেকে উট খেয়েছে, আর একটি গাছ দেখেন যা কোন পশু ভক্ষণ করেনি, আপনার উট আপনি কোথায় চরাবেন, বলুন ? তিনি বললেন : “যে গাছে কোন পশু মুখ দেয়নি”। এর দ্বারা তার উদ্দেশ্য ছিল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ব্যতীত কোন কুমারী নারী বিয়ে করেননি। (বুখারি)

তিনি আরো বলেন :

ﻟﻘﺪ ﺃﻋﻄﻴﺖ ﺗﺴﻌﺎً ﻣﺎ ﺃﻋﻄﻴﺘﻬﺎ ﺍﻣﺮﺃﺓ ﺇﻻ ﻣﺮﻳﻢ ﺑﻨﺖ ﻋﻤﺮﺍﻥ، ﻟﻘﺪ ﻧﺰﻝ ﺟﺒﺮﻳﻞ ﺑﺼﻮﺭﺗﻲ ﻓﻲ ﺭﺍﺣﺘﻪ ﺣﺘﻰ ﺃﻣﺮ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺃﻥ ﻳﺘﺰﻭﺟﻨﻲ، ﻭﻟﻘﺪ ﺗﺰﻭﺟﻨﻲ ﺑﻜﺮﺍً ﻭﻣﺎ ﺗﺰﻭﺝ ﺑﻜﺮﺍً ﻏﻴﺮﻱ، ﻭﻟﻘﺪ ﻗﺒﺾ ﻭﺭﺃﺳﻪ ﻟﻔﻲ ﺣﺠﺮﻱ، ﻭﻟﻘﺪ ﻗﺒﺮﺗﻪ ﻓﻲ ﺑﻴﺘﻲ، ﻭﻟﻘﺪ ﺣﻔﺖ ﺍﻟﻤﻼﺋﻜﺔ ﺑﻴﺘﻲ، ﻭﺇﻥ ﻛﺎﻥ ﺍﻟﻮﺣﻲ ﻟﻴﻨﺰﻝ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﻫﻮ ﻓﻲ ﺃﻫﻠﻪ ﻓﻴﺘﻔﺮﻗﻮﻥ ﻋﻨﻪ ﻭﺇﻥ ﻛﺎﻥ ﻟﻴﻨﺰﻝ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺇﻧﻲ ﻟﻤﻌﻪ ﻓﻲ ﻟﺤﺎﻓﻪ، ﻭﺇﻧﻲ ﻻﺑﻨﺔ ﺧﻠﻴﻔﺘﻪ ﻭﺻﺪﻳﻘﻪ، ﻭﻟﻘﺪ ﻧﺰﻝ ﻋﺬﺭﻱ ﻣﻦ ﺍﻟﺴﻤﺎﺀ، ﻭﻟﻘﺪ ﺧﻠﻘﺖ ﻃﻴﺒﺔ ﻭﻋﻨﺪ ﻃﻴﺐ، ﻭﻟﻘﺪ ﻭﻋﺪﺕ ﻣﻐﻔﺮﺓ ﻭﺭﺯﻗﺎً ﻛﺮﻳﻤﺎً . ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺑﻮ ﻳﻌﻠﻰ


“আমাকে নয়টি বৈশিষ্ট দেয়া হয়েছে, যা মারইয়াম বিনতে ইমরান ব্যতীত কোন নারীকে দেয়া হয়নি। আমার ছবি নিয়ে জিবরিল অবতরণ করেন, অতঃপর আমাকে বিয়ে করার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নির্দেশ দেন। তিনি শুধু আমাকেই কুমারী বিয়ে করেছেন, আমি ব্যতীত তিনি কোন কুমারী বিয়ে করেননি। যখন তার রূহ কব্জা করা হয়, তখন তার মাথা আমার কোলে ছিল। তাকে আমার ঘরেই কবর দিয়েছে। ফেরেশতারা আমার ঘর ঘিরে রেখেছিল। ফেরেশতারা যদি তার কাছে অহী নিয়ে আসত, আর তিনি তার স্ত্রীর সাথে থাকতেন তারা দূরে সরে যেত, যদিও ফেরেশতারা তখনও তার নিকট আসত, যখন আমি তার সাথে তার লেপের ভেতর থাকতাম। আমি তার খলীফা ও একনিষ্ঠ বন্ধুর মেয়ে। আমার পবিত্রতা আসমান থেকে নাযিল হয়েছে। আমি পবিত্র অবস্থায় পবিত্র ব্যক্তির নিকট জন্ম গ্রহণ করেছি। আমাকে আল্লাহর মাগফেরাত ও সম্মানিত রিযকের ওয়াদা করা হয়েছে”। {আবু ইয়ালা}


রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মহব্বত :

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অন্তরে আয়েশা রাদিআল্লাহ আনহার যে মহত্ব ও মর্যাদা ছিল, তা অন্য কোন স্ত্রীর জন্য ছিল না। তার প্রতি এ মহব্বত তিনি কারো থেকে গোপন পর্যন্ত করতে পারেননি, তিনি তাকে এমন ভালবাসতেন যে, আয়েশা যেখান থেকে পানি পান করত, তিনিও সেখান থেকে পানি পান করতেন, আয়েশা যেখান থেকে খেত, তিনিও সেখান থেকে খেতেন। অষ্টম হিজরিতে ইসলাম গ্রহণকারী আমর ইব্নুল আস রাদিআল্লাহু আনহু তাকে জিজ্ঞাসা করেন :

" ﺃﻱ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﺃﺣﺐ ﺇﻟﻴﻚ ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ؟ " ، ﻗﺎﻝ : ‏( ﻋﺎﺋﺸﺔ ‏) ﻗﺎﻝ : ﻓﻤﻦ ﺍﻟﺮﺟﺎﻝ ؟ ﻗﺎﻝ : ‏( ﺃﺑﻮﻫﺎ ‏) ﻣﺘﻔﻖ ﻋﻠﻴﻪ .

“হে আল্লাহর রাসূল, আপনার নিকট সবচেয়ে প্রিয় কে ?” তিনি বললেন : “আয়েশা”। সে বলল : পুরুষদের থেকে ? তিনি বললেন : “তার পিতা”। {বুখারি ও মুসলিম}
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাথে খেলা-ধুলা, হাসি-ঠাট্টা ইত্যাদিতে অংশ গ্রহণ করতেন। কোন এক সফরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাথে দৌড় প্রতিযোগিতায়ও অংশ নেন।

আয়েশা রাদিআল্লাহ আনহা আরো বর্ণনা করেন, যার দ্বারা তার সাথে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্নেহ, মমতা ও আদর-সোহাগের প্রকাশ পায়, তিনি বলেন :

( ﻭﺍﻟﻠﻪ ﻟﻘﺪ ﺭﺃﻳﺖ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﻳﻘﻮﻡ ﻋﻠﻰ ﺑﺎﺏ ﺣﺠﺮﺗﻲ ، ﻭﺍﻟﺤﺒﺸﺔ ﻳﻠﻌﺒﻮﻥ ﺑﺎﻟﺤﺮﺍﺏ ، ﻭﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﻳﺴﺘﺮﻧﻲ ﺑﺮﺩﺍﺋﻪ ﻷﻧﻈﺮ ﺇﻟﻰ ﻟﻌﺒﻬﻢ ﻣﻦ ﺑﻴﻦ ﺃﺫﻧﻪ ﻭﻋﺎﺗﻘﻪ ، ﺛﻢ ﻳﻘﻮﻡ ﻣﻦ ﺃﺟﻠﻲ ﺣﺘﻰ ﺃﻛﻮﻥ ﺃﻧﺎ ﺍﻟﺘﻲ ﺃﻧﺼﺮﻑ ‏) ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺣﻤﺪ .

“আল্লাহর শপথ, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছি, তিনি আমার ঘরের দরজায় দাঁড়াতেন, হাবশিরা যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে খেলা-ধুলা করত, আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে তার চাদর দিয়ে ঢেকে নিতেন, যেন আমি তাদের খেলা উপভোগ করি তার কাঁধ ও কানের মধ্য দিয়ে। অতঃপর তিনি আমার জন্য দাঁড়িয়ে থাকতেন, যতক্ষণ না আমিই প্রস্থান করতাম”। {আহমদ}

যেহেতু প্রসিদ্ধ ছিল আয়েশাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট অন্য স্ত্রীদের তুলনায় বেশী প্রিয়, তাই সবাই অপেক্ষা করত আয়েশার ঘরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবে আসবেন, সে দিন তারা তাকে হাদিয়া ও উপহার সামগ্রী পেশ করত। {সহিহ বুখারি ও মুসলিমে অনুরূপ বর্ণনা এসেছে।}

তার প্রতি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মহব্বতের আরেকটি আলামত হচ্ছে, মৃত্যু শয্যায় তিনি আয়েশার নিকট থাকার জন্য অন্যান্য স্ত্রীদের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছেন, যেন আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহা তাকে সেবা শুশ্রূষা প্রদান করেন।


আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহার আরো একটি প্রসিদ্ধি ছিল যে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে আত্মসম্মান বোধ করতেন, রাসূলের প্রতি যা তার অকৃত্রিম ও সত্যিকার মহব্বতের প্রমাণ ছিল। তিনি তা এভাবে ব্যক্ত করেন :

" ﻭﻣﺎ ﻟﻲ ﻻ ﻳﻐﺎﺭ ﻣﺜﻠﻲ ﻋﻠﻰ ﻣﺜﻠﻚ ؟ " ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ .

“কেন আমার মত একজন নারী, আপনার মত একজন পুরুষকে নিয়ে কেন আত্মসম্মান বোধ করবে না ?” {মুসলিম}


একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ঘরে অবস্থান করছিলেন, রাসূলের অপর স্ত্রী খানাসহ একটি পাত্র তার নিকট প্রেরণ করেন, আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহা পাত্রটি হাতে নিয়ে ভেঙ্গে ফেলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খানা জমা করতে করতে বলতে ছিলেন :

( ﻏﺎﺭﺕ ﺃﻣﻜﻢ ‏) ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ .

“তোমাদের মা ঈর্ষা ও আত্মসম্মানে এসে গেছে”। {বুখারি}

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনই কোন নারীকে বিয়ে করতেন, আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহা তাকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতেন, যদি কোন বিশেষত্ব বা বৈশিষ্টের কারণে সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুকুল্য লাভ করে থাকে, তাহলে তিনিও তা অর্জন করার জন্য প্রতিযোগিতা করবেন। এ ঈর্ষা ও আত্মসম্মানের বিরাট একটি অংশ লাভ করেছেন খাদিজা রাদিআল্লাহু আনহা, কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে খুব স্মরণ করতেন।


কোন এক রাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জান্নাতুল বাকিতে (কবরস্থানে) গমন করেন, আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহা ধারণা করেন, তিনি হয়তো কোন স্ত্রীর ঘরে যাবেন, তাকে ঈর্ষায় পেয়ে বসল, তিনি তার পিছনে রওয়ানা দিলেন গন্তব্য জানার জন্য, অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে তিরষ্কার করে বলেন :


( ﺃﻇﻨﻨﺖ ﺃﻥ ﻳﺤﻴﻒ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻚ ﻭﺭﺳﻮﻟﻪ ؟ ‏) ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ .


“তুমি কি ধারণা করেছ যে, তোমার উপর আল্লাহ ও তার রাসূল অন্যায় আচরণ করবে ?” {মুসলিম}


ফজিলত :
তার ফজিলত সম্পর্কে আলোচনা শেষ হবে না, শেষ হবারও নয়, তিনি ছিলেন সিয়াম পালনকারী, রাত জাগরণকারী মহিষী নারী, তিনি অনেক ভাল কাজ আঞ্জাম দিয়েছেন, প্রচুর দান-সদকা করেছেন। তার অধিক দান-সদকার কারণে তার নিকট খুব কম অর্থ-সম্পদই বিদ্যমান থাকত। এক সময় তিনি একলাখ দিরহাম সদকা করেন, এক দিরহামও অবশিষ্ট রাখেননি নিজের কাছে।

আবু মুসা রাদিআল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন :

( ﻛﻤُﻞ ﻣﻦ ﺍﻟﺮِّﺟﺎﻝ ﻛﺜﻴﺮ ﻭﻟﻢ ﻳﻜﻤﻞ ﻣﻦ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ ﺇﻻ ﻣَﺮﻳﻢ ﺑﻨﺖُ ﻋﻤﺮﺍﻥ ، ﻭ ﺁﺳﻴﺔ ﺍﻣﺮﺃﺓُ ﻓﺮﻋﻮﻥ ، ﻭﻓﻀﻞُ ﻋﺎﺋﺸﺔ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ ﻛﻔﻀﻞ ﺍﻟﺜﺮﻳﺪ ﻋﻠﻰ ﺳﺎﺋﺮ ﺍﻟﻄﻌﺎﻡ ‏) ﻣﺘﻔﻖ ﻋﻠﻴﻪ .

“পুরুষদের থেকে অনেকেই পূর্ণতা লাভ করেছে, কিন্তু নারীদের থেকে কেউ পূর্ণতা লাভ করতে পারেনি, তবে মারইয়াম বিনতে ইমরান, ফিরআউনের স্ত্রী ব্যতীত, আর আয়েশার ফজিলত অন্য নারীদের উপর যেমন সারিদের (সারিদ : গোস্ত ও রুটের মিশেলে তৈরি আরবদের নিকট এক প্রকার প্রিয় খাদ্য) ফজিলত সকল খাদ্যের উপর”। {বুখারি ও মুসলিম}

তার ফজিলতের আরো একটি উদাহরণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেন :

( ﻳﺎ ﻋﺎﺋﺸﺔ ﻫﺬﺍ ﺟﺒﺮﻳﻞ ﻳﻘﺮﺃ ﻋﻠﻴﻚ ﺍﻟﺴﻼﻡ ، ﻓﻘﺎﻟﺖ : ﻭﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺴﻼﻡ ﻭﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ‏) ﻣﺘﻔﻖ ﻋﻠﻴﻪ .

“হে আয়েশা, এ হচ্ছে জিবরিল, তোমাকে সালাম দিচ্ছে, তিনি বলেন : ওআলাইহিস সালাম ও রাহমাতুল্লাহ”। {বুখারি ও মুসলিম}
বয়স কম সত্বেও তিনি ছিলেন বুদ্ধিমতি, ধীমান ও দ্রুত আত্মস্থকারী। এ জন্যই তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অধিক ইলম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন, নারীদের মধ্যে তিনিই সর্বাধিক হাদিস বর্ণনাকারী। উম্মতে মুহাম্মাদিতে কোন নারী নেই, যিনি তার চেয়ে ইসলাম সম্পর্কে অধিক জ্ঞানের অধিকারী।


তার জ্ঞানের পরিচয় এ থেকেই পাওয়া যায় যে, আবু মুসা রাদিআল্লাহু আনহু বলেন :

" ﻣﺎ ﺃﺷﻜﻞ ﻋﻠﻴﻨﺎ ﺃﺻﺤﺎﺏ ﻣﺤﻤﺪ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﺣﺪﻳﺚٌ ﻗﻂ ﻓﺴﺄﻟﻨﺎ ﻋﺎﺋﺸﺔ ، ﺇﻻ ﻭﺟﺪﻧﺎ ﻋﻨﺪﻫﺎ ﻣﻨﻪ ﻋﻠﻤﺎً " ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ .

“মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবি, আমাদের উপর কোন বিষয় অস্পষ্ট ও জটিল হলে, আমরা আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহাকে জিজ্ঞাসা করতাম, তার নিকট সে বিষয়ে কোন না কোন ইলম অবশ্যই পেতাম”। {তিরমিযি}

মাসরুক রহ.-কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল : আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহা কি ফারায়েজ (উত্তরাধিকার বিধান) সম্পর্কে ভাল জানেন ? তিনি বলেন :

ﺇﻱ ﻭﺍﻟﺬﻱ ﻧﻔﺴﻲ ﺑﻴﺪﻩ، ﻟﻘﺪ ﺭﺃﻳﺖ ﻣﺸﻴﺨﺔ ﺃﺻﺤﺎﺏ ﻣﺤﻤﺪ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﻳﺴﺄﻟﻮﻧﻬﺎ ﻋﻦ ﺍﻟﻔﺮﺍﺋﺾ " ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺤﺎﻛﻢ .

“নিশ্চয়- আল্লাহর কসম যার হাতে আমার জীবন, আমি মুহাম্মদের বড় বড় সাহাবিদের দেখেছি, ফারায়েজ সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞাসা করতে”। {হাকেম}

জুহরি রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন :

ﻟﻮ ُﺟﻤﻊ ﻋﻠﻢ ﻧﺴﺎﺀ ﻫﺬﻩ ﺍﻷﻣﺔ ، ﻓﻴﻬﻦ ﺃﺯﻭﺍﺝ ﺍﻟﻨﺒﻲ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ، ﻛﺎﻥ ﻋﻠﻢ ﻋﺎﺋﺸﺔ ﺃﻛﺜﺮ ﻣﻦ ﻋﻠﻤﻬﻦّ " ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﻄﺒﺮﺍﻧﻲ .

“যদি এ উম্মতের সকল নারীদের একত্র করা হয়, যার শামিল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অন্যান্য স্ত্রীগণও, তবুও আয়েশার ইলম তাদের ইলমের চেয়ে অধিক হবে”। {তাবরানি}

ইলমে ফিকাহ ও ইলমে হাদিসের পাশাপাশি কবিতা, জিকিৎসা বিজ্ঞান, আরবদের বংশ পরম্পরা বিষয়েও তিনি অধিক পাণ্ডিত্বের অধিকারী ছিলেন। এসব ইলম তিনি স্বামী ও নিজ পিতা থেকে অর্জন করেন। তার নিকট আরো ইলম ছিল আরবদের বিভিন্ন দল ও প্রতিনিধির, যারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আগমন করেছিল।


এ উম্মতের উপর তার বরকত অনেক, তিনি কুরআনের বেশ কিছু আয়াত নাযিলের পটভূমি ছিলেন, তার মধ্যে রয়েছে তায়াম্মুমের আয়াত। একদা তিনি বোন আসমা রাদিআল্লাহু আনহা থেকে একটি হার ঋণ নেন, পরে তার থেকে যা হারিয়ে যায়, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কতক সাহাবিকে হার খুঁজে আনার জন্য প্রেরণ করেন, হার অনুসন্ধানে তাদের সালাতের সময় হয়ে যায়, তাদের নিকট পানি ছিল না, তাই তারা ওযু ব্যতীত সালাত আদায় করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে তারা অভিযোগ করেন, অতঃপর তায়াম্মুমের আয়াত নাযিল হয়, তখন উসাইদ ইব্ন হুজাইর আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহাকে বলেন :


" ﺟﺰﺍﻙِ ﺍﻟﻠﻪ ﺧﻴﺮﺍً ، ﻓﻮﺍﻟﻠﻪ ﻣﺎ ﻧﺰﻝ ﺑﻚ ﺃﻣﺮ ﻗﻂ ﺇﻻ ﺟﻌﻞ ﺍﻟﻠﻪ ﻟﻚِ ﻣﻨﻪ ﻣﺨﺮﺟﺎً ، ﻭﺟﻌﻞ ﻟﻠﻤﺴﻠﻤﻴﻦ ﻓﻴﻪ ﺑﺮﻛﺔ " ﻣﺘﻔﻖ ﻋﻠﻴﻪ .


“আল্লাহ তোমাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন, তুমি যখনই কোন সমস্যায় পতিত হয়েছ, তোমার জন্য আল্লাহ তা থেকে মুক্তির পথ করে দিয়েছেন এবং মুসলিমদের জন্য তাকে বরকত রেখেছেন”। {বুখারি ও মুসলিম}
যখন আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহা মিথ্যা অপবাদের ঘটনার শিকার হোন, আল্লাহ তার পবিত্রতা ঘোষণা করে আসমান থেকে কুরআন নাযিল করেন, কিয়ামত পর্যন্ত যা তিলাওয়াত করা হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
“নিশ্চয় যারা এ অপবাদ[1] রটনা করেছে, তারা তোমাদেরই একটি দল। এটাকে তোমরা তোমাদের জন্য অকল্যাণকর মনে করো না, বরং এটা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। তাদের থেকে প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য রয়েছে, যতটুকু পাপ সে অর্জন করেছে। আর তাদের থেকে যে ব্যক্তি এ ব্যাপারে প্রধান ভূমিকা পালন করেছে, তার জন্য রয়েছে মহাআযাব। যখন তোমরা এটা শুনলে, তখন কেন মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীরা তাদরে নিজেদের সম্পর্কে ভাল ধারণা পোষণ করল না এবং বলল না যে, ‘এটা তো সুস্পষ্ট অপবাদ?”। {সূরা নূর : ১১-১২}
অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিসতাহ ইব্ন আসাসাহ, হাস্সান ইব্ন সাবেত ও হামনাহ বিনতে জাহশকে অপবাদের শাস্তি প্রদানের নির্দেশ প্রদান করেন, এরা অশ্লীলতার অপপ্রচার করেছিল, ফলে তাদেরকে শাস্তি প্রদান করা হয়।
আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহা সাতান্ন হিজরিতে মুত্যু বরণ করেন, তখন তার বয়স হয়েছিল তেষট্টির চেয়ে কিছু বেশী। তার সালাতে জানা পড়ান আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু। অতঃপর জান্নাতুল বাকিতে তাকে দাফন করা হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পাশে তার ঘরে তাকে দাফন করা হয়নি। কারণ, তিনি নিজের উপর প্রাধান্য দিয়ে ওমর ইব্ন খাত্তাব রাদিআল্লাহু আনহুকে সে জায়গাটি প্রদান করেন। আল্লাহ তাদের উপর ও সকল উম্মাহুতুল মুমিনদের উপর সন্তুষ্ট, তারাও তার উপর সন্তুষ্ট।
উম্মুল মুমেনিন আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহার সম্পর্কে আরো কিছু হাদিস ফজিলত :


এক. আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :

ﺍُﺭِﻳﺘُﻚ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﻨﺎﻡ ﺛﻼﺙ ﻟﻴﺎﻝ ﺟﺎﺀﻧﻲ ﺑﻚ ﺍﻟﻤَﻠَﻚ ﻓﻲ ﺳَﺮَﻗَﺔٍ ﻣﻦ ﺣﺮﻳﺮ ﻓﻴﻘﻮﻝ ﻫﺬﻩ ﺍﻣﺮﺃﺗﻚ، ﻓﺄﻛﺸﻒ ﻋﻦ ﻭﺟﻬﻚ ﻓﺈﺫﺍ ﺃﻧﺖ ﻫﻲ ﻓﺄﻗﻮﻝ ﺇﻥ ﻳَﻚُ ﻫﺬﺍ ﻣﻦ ﻋﻨﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﻳُﻤْﻀﻪ . ‏( ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ ﻓﻲ ﺻﺤﻴﺤﻪ ﻛﺘﺎﺏ ﻓﻀﺎﺋﻞ ﺍﻟﺼﺤﺎﺑﺔ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻨﻬﻢ – ﻓﻀﺎﺋﻞ ﻋﺎﺋﺸﺔ ﺃﻡ ﺍﻟﻤﺆﻣﻨﻴﻦ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻨﻬﺎ، ﺍﻟﻤﺠﻠﺪ ﺍﻟﺜﺎﻣﻦ، ﺍﻟﺠﺰﺀ ﺍﻟﺨﺎﻣﺲ ﻋﺸﺮ، ﺻﻔﺤﺔ : ‏( 202 ‏) ﺩﺍﺭ ﺇﺣﻴﺎﺀ ﺍﻟﺘﺮﺍﺙ ﺍﻟﻌﺮﺑﻲ، ﺑﻴﺮﻭﺕ، ﺍﻟﻄﺒﻌﺔ ﺍﻟﺜﺎﻧﻴﺔ : 1392 ﻫـ - 1972 ﻡ ).


“আমাকে তিন দিন স্বপ্নে দেখানো হয়েছে তোমাকে, রেশমের একটি পাত্রে তোমাকে নিয়ে এসে মালাক বলে এ হচ্ছে তোমার স্ত্রী, আমি তার চেহারা খুলে দেখি তুমিই সে নারী। অতঃপর আমি বলি, এটা যদি আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়, তবে অবশ্যই তা বাস্তবায়ন হবে”। {মুসলিম- অষ্টম খণ্ড, পনেরতম অংশ, পৃষ্ঠা : (২০২) দারু ইহইয়াউত তুরাসিল আরাবি, বইরুত, দ্বিতীয় মুদ্রণ, হি.১৩৯২, ই.১৯৭২}


ইমাম নববি রহিমাহুল্লাহ বলেন : ﺳَﺮَﻗَﺔ সীন ও রা-তে ফাত্হ (জবর) বিশিষ্ট ﺳَﺮَﻗَﺔ শব্দের অর্থ রেশমের সাদা টুকরো। আর ﺇﻥ ﻳﻚ ﻣﻦ ﻋﻨﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﻳﻤﻀﻪ অর্থ : এটা যদি আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়, তাহলে অবশ্যই তিনি তা সত্যে রূপ দেবেন ও বাস্তবায়ন করবেন।

দুই. আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন :

ﻗﺎﻝ ﻟﻲ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : ﺇﻧﻲ ﻷﻋﻠﻢ ﺇﺫﺍ ﻛﻨﺖ ﻋﻨﻲ ﺭﺍﺿﻴﺔ ﻭﺇﺫﺍ ﻛﻨﺖ ﻋﻠﻲ ﻏﻀﺒﻰ ﻗﺎﻟﺖ ﻓﻘﻠﺖ : ﻭﻣﻦ ﺃﻳﻦ ﺗﻌﺮﻑ ﺫﻟﻚ ﻗﺎﻝ : ﺃﻣﺎ ﺇﺫﺍ ﻛﻨﺖ ﻋﻨﻲ ﺭﺍﺿﻴﺔ ﻓﺈﻧﻚ ﺗﻘﻮﻟﻴﻦ ﻻ ﻭﺭﺏ ﻣﺤﻤﺪ ﻭﺇﺫﺍ ﻛﻨﺖ ﻏﻀﺒﻰ ﻗﻠﺖ ﻻ ﻭﺭﺏ ﺇﺑﺮﺍﻫﻴﻢ ﻗﺎﻟﺖ ﻗﻠﺖ : ﺃﺟﻞ ﻭﺍﻟﻠﻪ ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﻣﺎ ﺃﻫﺠﺮ ﺇﻻ ﺍﺳﻤﻚ . ‏( ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ ﻓﻲ ﺻﺤﻴﺤﻪ ﻛﺘﺎﺏ ﻓﻀﺎﺋﻞ ﺍﻟﺼﺤﺎﺑﺔ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻨﻬﻢ – ﻓﻀﺎﺋﻞ ﻋﺎﺋﺸﺔ ﺃﻡ ﺍﻟﻤﺆﻣﻨﻴﻦ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻨﻬﺎ، ﺍﻟﻤﺠﻠﺪ ﺍﻟﺜﺎﻣﻦ، ﺍﻟﺠﺰﺀ ﺍﻟﺨﺎﻣﺲ ﻋﺸﺮ، ﺻﻔﺤﺔ 203 ﺩﺍﺭ ﺇﺣﻴﺎﺀ ﺍﻟﺘﺮﺍﺙ ﺍﻟﻌﺮﺑﻲ، ﺑﻴﺮﻭﺕ، ﺍﻟﻄﺒﻌﺔ ﺍﻟﺜﺎﻧﻴﺔ 1392 ﻫـ - 1972 ﻡ ).

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেন : তুমি কখন আমার উপর সন্তুষ্ট থাক আর কখন গোস্বা কর আমি তা বুঝতে পারি। তিনি বলেন, আমি বললাম : কিভাবে আপনি তা বুঝেন ? তিনি বললেন : তুমি যখন আমার উপর সন্তুষ্ট থাক, তখন বল, এমন নয়- মুহাম্মদের রবের কসম, আর যখন আমার উপর গোস্বা কর, তখন বল, এমন নয়- ইবরাহিমের রবের কসম। তিনি বলেন, আমি বললাম : অবশ্যই হে আল্লাহর রাসূল, তবে আমি শুধু আপনার নামটাই ত্যাগ করি”। {মুসলিম, অষ্টম খণ্ড, পনেরতম অংশ, পৃষ্ঠা : (২০৩) দারু ইহইয়াউত তুরাসিল আরাবি, বইরুত, দ্বিতীয় মুদ্রণ, হি.১৩৯২, ই.১৯৭২}


তিন. আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত :

ﺃﻧﻬﺎ ﻛﺎﻧﺖ ﺗﻠﻌﺐ ﺑﺎﻟﺒﻨﺎﺕ ﻋﻨﺪ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗﺎﻟﺖ : ﻭﻛﺎﻧﺖ ﺗﺄﺗﻴﻨﻲ ﺻﻮﺍﺣﺒﻲ ﻓﻜﻦ ﻳَﻨْﻘَﻤِﻌْﻦَ ﻣﻦ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗﺎﻟﺖ ﻓﻜﺎﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳُﺴَﺮِِّﺑُﻬُﻦ ﺇﻟﻲ . ‏( ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ ﻓﻲ ﺻﺤﻴﺤﻪ ﻛﺘﺎﺏ ﻓﻀﺎﺋﻞ ﺍﻟﺼﺤﺎﺑﺔ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻨﻬﻢ – ﻓﻀﺎﺋﻞ ﻋﺎﺋﺸﺔ ﺃﻡ ﺍﻟﻤﺆﻣﻨﻴﻦ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻨﻬﺎ، ﺍﻟﻤﺠﻠﺪ ﺍﻟﺜﺎﻣﻦ، ﺍﻟﺠﺰﺀ ﺍﻟﺨﺎﻣﺲ ﻋﺸﺮ، ﺻﻔﺤﺔ 204 ﺩﺍﺭ ﺇﺣﻴﺎﺀ ﺍﻟﺘﺮﺍﺙ ﺍﻟﻌﺮﺑﻲ، ﺑﻴﺮﻭﺕ، ﺍﻟﻄﺒﻌﺔ ﺍﻟﺜﺎﻧﻴﺔ 1392 ﻩ - 1972 ﻡ ).

তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট খেলনা দিয়ে খেলতেন। তিনি বলেন, আমার বান্ধবীরা আমার কাছে আসত, তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (-কে দেখে তার) থেকে আড়ালে চলে যেত, তিনি তাদেরকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিতেন”। {মুসলিম, অষ্টম খণ্ড, পনেরতম অংশ, পৃষ্ঠা : (২০৪) দারু ইহইয়াউত তুরাসিল আরাবি, বইরুত, দ্বিতীয় মুদ্রণ, হি.১৩৯২, ই.১৯৭২}


ﺍﻟﺒﻨﺎﺕ অর্থ : ছোট পুতুল, যা দিয়ে মেয়েরা খেলাধুলা করে। ইমাম নববি তার ব্যাখ্যায় বলেন : কাযি ‘আয়ায বলেছেন এ হাদিসে পুতুল দ্বারা খেলার বৈধতা রয়েছে, যেসব পুতুলের আকৃতি নিষিদ্ধ।
ﻓﻜﻦ ﻳَﻨْﻘَﻤِﻌْﻦَ ﻣﻦ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ অর্থ : ইমাম নববি এর ব্যাখ্যায় বলেন : তারা লজ্জা ও ভয়ে আড়ালে চলে যেতেন, কখনো ঘর বা অন্য কোথাও প্রবেশ করত- এ অর্থই অধিক সঠিক।
ﻳُﺴَﺮِِّﺑُﻬُﻦ ﺇﻟﻲ অর্থ : ইমাম নববি এর ব্যাখ্যায় বলেন : তাদেরকে তিনি আমার কাছে পাঠিয়ে দিতেন, এটা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দয়া ও দাম্পত্য জীবনের একটি সুন্দর আচরণ।



চার. আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত :


ﺃﻥ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻛﺎﻧﻮﺍ ﻳَﺘَﺤَﺮَّﻭْﻥ ﺑﻬﺪﺍﻳﺎﻫﻢ ﻳﻮﻡ ﻋﺎﺋﺸﺔ ﻳﺒﺘﻐﻮﻥ ﺑﺬﻟﻚ ﻣﺮﺿﺎﺓ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ . ‏( ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ ﻓﻲ ﺻﺤﻴﺤﻪ ﻛﺘﺎﺏ ﻓﻀﺎﺋﻞ ﺍﻟﺼﺤﺎﺑﺔ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻨﻬﻢ – ﻓﻀﺎﺋﻞ ﻋﺎﺋﺸﺔ ﺃﻡ ﺍﻟﻤﺆﻣﻨﻴﻦ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻨﻬﺎ، ﺍﻟﻤﺠﻠﺪ ﺍﻟﺜﺎﻣﻦ، ﺍﻟﺠﺰﺀ ﺍﻟﺨﺎﻣﺲ ﻋﺸﺮ، ﺻﻔﺤﺔ 205 ﺩﺍﺭ ﺇﺣﻴﺎﺀ ﺍﻟﺘﺮﺍﺙ ﺍﻟﻌﺮﺑﻲ، ﺑﻴﺮﻭﺕ، ﺍﻟﻄﺒﻌﺔ ﺍﻟﺜﺎﻧﻴﺔ 1392 ﻩ - 1972 ﻡ ).

“মানুষ তাদের হাদিয়া পেশ করার জন্য আয়েশার পালার অপেক্ষায় থাকত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সন্তুষ্টি অর্জন করার জন্য”। {মুসলিম, অষ্টম খণ্ড, পনেরতম অংশ, পৃষ্ঠা : (২০৫) দারু ইহইয়াউত তুরাসিল আরাবি, বইরুত, দ্বিতীয় মুদ্রণ, হি.১৩৯২, ই.১৯৭২}


পাঁচ. হিশাম তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, লোকেরা তাদের হাদিয়া পেশ করার জন্য আয়েশার দিনের অপেক্ষা করত। আয়েশা বলেন :


ﻓَﺎﺟْﺘَﻤَﻊَ ﺻَﻮَﺍﺣِﺒِﻲ ﺇِﻟَﻰ ﺃُﻡِّ ﺳَﻠَﻤَﺔَ، ﻓَﻘُﻠْﻦَ : ﻳَﺎ ﺃُﻡَّ ﺳَﻠَﻤَﺔَ ﻭَﺍﻟﻠَّﻪِ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ ﻳَﺘَﺤَﺮَّﻭْﻥَ ﺑِﻬَﺪَﺍﻳَﺎﻫُﻢْ ﻳَﻮْﻡَ ﻋَﺎﺋِﺸَﺔَ ﻭَﺇِﻧَّﺎ ﻧُﺮِﻳﺪُ ﺍﻟْﺨَﻴْﺮَ ﻛَﻤَﺎ ﺗُﺮِﻳﺪُﻩُ ﻋَﺎﺋِﺸَﺔُ ﻓَﻤُﺮِﻱ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺃَﻥْ ﻳَﺄْﻣُﺮَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ ﺃَﻥْ ﻳُﻬْﺪُﻭﺍ ﺇِﻟَﻴْﻪِ ﺣَﻴْﺚُ ﻣَﺎ ﻛَﺎﻥَ ﺃَﻭْ ﺣَﻴْﺚُ ﻣَﺎ ﺩَﺍﺭَ، ﻗَﺎﻟَﺖْ : ﻓَﺬَﻛَﺮَﺕْ ﺫَﻟِﻚَ ﺃُﻡُّ ﺳَﻠَﻤَﺔَ ﻟِﻠﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻗَﺎﻟَﺖْ : ﻓَﺄَﻋْﺮَﺽَ ﻋَﻨِّﻲ، ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﻋَﺎﺩَ ﺇِﻟَﻲَّ ﺫَﻛَﺮْﺕُ ﻟَﻪُ ﺫَﺍﻙَ ﻓَﺄَﻋْﺮَﺽَ ﻋَﻨِّﻲ، ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﻛَﺎﻥَ ﻓِﻲ ﺍﻟﺜَّﺎﻟِﺜَﺔِ ﺫَﻛَﺮْﺕُ ﻟَﻪُ، ﻓَﻘَﺎﻝَ : " ﻳَﺎ ﺃُﻡَّ ﺳَﻠَﻤَﺔَ ﻟَﺎ ﺗُﺆْﺫِﻳﻨِﻲ ﻓِﻲ ﻋَﺎﺋِﺸَﺔَ ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﻭَﺍﻟﻠَّﻪِ ﻣَﺎ ﻧَﺰَﻝَ ﻋَﻠَﻲَّ ﺍﻟْﻮَﺣْﻲُ ﻭَﺃَﻧَﺎ ﻓِﻲ ﻟِﺤَﺎﻑِ ﺍﻣْﺮَﺃَﺓٍ ﻣِﻨْﻜُﻦَّ ﻏَﻴْﺮِﻫَﺎ " ‏( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ : 3515 )

আমার সতিনরা উম্মে সালামার নিকট একত্র হয়, তারা বলে : হে উম্মে সালামা, লোকেরা তাদের হাদিয়ার জন্য আয়েশার পালার অপেক্ষা করে, আয়েশা যেমন কল্যাণের আশা করে আমরাও তেমন আশা করি, তুমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বল, তিনি মানুষদের বলে দেবে, তিনি যেখানে থাকেন অথবা যে ঘরেই থাকেন, তারা যেন তার নিকট হাদিয়া পেশ করে। তিনি বলেন : উম্মে সালামা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তা বলে শোনান। উম্মে সালামা বলেন : তিনি আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন। তিনি পুনরায় যখন আমার কাছে আসেন, আমি তাকে তা স্মরণ করিয়ে দেই, তিনি আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন। যখন তৃতীয়বার আমি তাকে স্মরণ করিয়ে দেই, তিনি বলেন : হে উম্মে সালামা তুমি আয়েশার ব্যাপারে আমাকে কষ্ট দিয়ো না। আল্লাহর শপথ, একমাত্র সে ব্যতীত আমি তোমাদের কারো লেপে থাকাবস্থায় অহী নাযিল হয়নি”। {বুখারি : ৩৫১৫}


ছয়. মুহাম্মদ ইব্ন আব্দুর রহমান ইব্ন হারেস ইব্ন হিশাম থেকে বর্ণিত : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রী আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহা বলেছেন :


ﺃﺭﺳﻞ ﺃﺯﻭﺍﺝ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓﺎﻃﻤﺔ ﺑﻨﺖ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺇﻟﻰ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓﺎﺳﺘﺄﺫﻧﺖ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﻫﻮ ﻣﻀﻄﺠﻊ ﻣﻌﻲ ﻓﻲ ﻣِﺮْﻃِﻲ ﻓﺄﺫﻥ ﻟﻬﺎ ﻓﻘﺎﻟﺖ ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺇﻥ ﺃﺯﻭﺍﺟﻚ ﺃﺭﺳﻠﻨﻨﻲ ﺇﻟﻴﻚ ﻳﺴﺄﻟﻨﻚ ﺍﻟﻌﺪﻝ ﻓﻲ ﺍﺑﻨﺔ ﺃﺑﻲ ﻗﺤﺎﻓﺔ، ﻭﺃﻧﺎ ﺳﺎﻛﺘﺔ ﻗﺎﻟﺖ ﻓﻘﺎﻝ ﻟﻬﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : ﺃﻱ ﺑُﻨﻴﺔ ﺃﻟﺴﺖ ﺗﺤﺒﻴﻦ ﻣﺎ ﺃﺣﺐ؟ ﻓﻘﺎﻟﺖ : ﺑﻠﻰ ﻗﺎﻝ : ﻓﺄﺣﺒﻲ ﻫﺬﻩ ﻗﺎﻟﺖ : ﻓﻘﺎﻣﺖ ﻓﺎﻃﻤﺔ ﺣﻴﻦ ﺳﻤﻌﺖ ﺫﻟﻚ ﻣﻦ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓﺮﺟﻌﺖ ﺇﻟﻰ ﺃﺯﻭﺍﺝ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓﺄﺧﺒﺮﺗﻬﻦ ﺑﺎﻟﺬﻱ ﻗﺎﻟﺖ ﻭﺑﺎﻟﺬﻱ ﻗﺎﻝ ﻟﻬﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓﻘﻠﻦ ﻟﻬﺎ ﻣﺎ ﻧﺮﺍﻙ ﺃﻏْﻨَﻴﺖ ﻋﻨﺎ ﻣﻦ ﺷﻲﺀ ﻓﺎﺭﺟﻌﻲ ﺇﻟﻰ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓﻘﻮﻟﻲ ﻟﻪ ﺇﻥ ﺃﺯﻭﺍﺟﻚ ﻳﻨﺸﺪﻧﻚ ﺍﻟﻌﺪﻝ ﻓﻲ ﺍﺑﻨﺔ ﺃﺑﻲ ﻗﺤﺎﻓﺔ ﻓﻘﺎﻟﺖ ﻓﺎﻃﻤﺔ ﻭﺍﻟﻠﻪ ﻻ ﺃﻛﻠﻤﻪ ﻓﻴﻬﺎ ﺃﺑﺪﺍ ﻗﺎﻟﺖ ﻋﺎﺋﺸﺔ : ﻓﺄﺭﺳﻞ ﺃﺯﻭﺍﺝ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺯﻳﻨﺐ ﺑﻨﺖ ﺟﺤﺶ ﺯﻭﺝ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻭﻫﻲ ﺍﻟﺘﻲ ﻛﺎﻧﺖ ﺗُﺴَﺎﻣِﻴﻨﻲ ﻣﻨﻬﻦ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﻨﺰﻟﺔ ﻋﻨﺪ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻭﻟﻢ ﺃﺭ ﺍﻣﺮﺃﺓ ﻗﻂ ﺧﻴﺮﺍ ﻓﻲ ﺍﻟﺪﻳﻦ ﻣﻦ ﺯﻳﻨﺐ ﻭﺃﺗﻘﻰ ﻟﻠﻪ ﻭ ﺃﺻﺪﻕ ﺣﺪﻳﺜﺎ ﻭﺃﻭﺻﻞ ﻟﻠﺮﺣﻢ ﻭﺃﻋﻈﻢ ﺻﺪﻗﺔ ﻭﺃﺷﺪ ﺍﺑﺘﺬﺍﻻ ﻟﻨﻔﺴﻬﺎ ﻓﻲ ﺍﻟﻌﻤﻞ ﺍﻟﺬﻱ ﺗَﺼَﺪَّﻕ ﺑﻪ ﻭﺗَﻘَﺮَّﺏ ﺑﻪ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻣﺎ ﻋﺪﺍ ﺳَﻮْﺭَﺓً ﻣﻦ ﺣِﺪَّﺓٍ ﻛﺎﻧﺖ ﻓﻴﻬﺎ ﺗُﺴْﺮِﻉُ ﻣﻨﻬﺎ ﺍﻟﻔَﻴْﺌَﺔ ﻗﺎﻟﺖ : ﻓﺎﺳﺘﺄﺫﻧﺖ ﻋﻠﻰ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻭﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻣﻊ ﻋﺎﺋﺸﺔ ﻓﻲ ﻣﺮﻃﻬﺎ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺤﺎﻟﺔ ﺍﻟﺘﻲ ﺩﺧﻠﺖ ﻓﺎﻃﻤﺔ ﻋﻠﻴﻬﺎ ﻭﻫﻮ ﺑﻬﺎ ﻓﺄﺫﻥ ﻟﻬﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓﻘﺎﻟﺖ ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺇﻥ ﺃﺯﻭﺍﺟﻚ ﺃﺭﺳﻠﻨﻨﻲ ﺇﻟﻴﻚ ﻳﺴﺄﻟﻨﻚ ﺍﻟﻌﺪﻝ ﻓﻲ ﺍﺑﻨﺔ ﺃﺑﻲ ﻗﺤﺎﻓﺔ ﻗﺎﻟﺖ : ﺛﻢ ﻭﻗﻌَﺖْ ﺑﻲ ﻓﺎﺳﺘﻄﺎﻟﺖ ﻋﻠﻲ ﻭﺃﻧﺎ ﺃﺭﻗﺐ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻭﺃﺭﻗﺐ ﻃﺮﻓﻪ ﻫﻞ ﻳﺄﺫﻥ ﻟﻲ ﻓﻴﻬﺎ ﻗﺎﻟﺖ : ﻓﻠﻢ ﺗﺒﺮﺡ ﺯﻳﻨﺐ ﺣﺘﻰ ﻋﺮﻓﺖ ﺃﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻻ ﻳﻜﺮﻩ ﺃﻥ ﺃﻧﺘﺼﺮ ﻗﺎﻟﺖ : ﻓﻠﻤﺎ ﻭﻗﻌْﺖُ ﺑﻬﺎ ﻟﻢ ﺃﻧْﺸَﺒْﻬَﺎ ﺣﺘﻰ ﺃﻧْﺤَﻴْﺖُ ﻋﻠﻴﻬﺎ ﻗﺎﻟﺖ : ﻓﻘﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻭﺗﺒﺴﻢ : ﺇﻧﻬﺎ ﺍﺑﻨﺔ ﺃﺑﻲ ﺑﻜﺮ . ‏( ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ ﻓﻲ ﺻﺤﻴﺤﻪ ﻛﺘﺎﺏ ﻓﻀﺎﺋﻞ ﺍﻟﺼﺤﺎﺑﺔ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻨﻬﻢ – ﻓﻀﺎﺋﻞ ﻋﺎﺋﺸﺔ ﺃﻡ ﺍﻟﻤﺆﻣﻨﻴﻦ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻨﻬﺎ، ﺍﻟﻤﺠﻠﺪ ﺍﻟﺜﺎﻣﻦ، ﺍﻟﺠﺰﺀ ﺍﻟﺨﺎﻣﺲ ﻋﺸﺮ، ﻣﻦ ﺻﻔﺤﺔ : ‏( 207-205 ‏) ﺩﺍﺭ ﺇﺣﻴﺎﺀ ﺍﻟﺘﺮﺍﺙ ﺍﻟﻌﺮﺑﻲ، ﺑﻴﺮﻭﺕ، ﺍﻟﻄﺒﻌﺔ ﺍﻟﺜﺎﻧﻴﺔ 1392 ﻩ - 1972 ﻡ ).

“রাসূলের অন্যান্য স্ত্রীগণ ফাতেমা ব্নিতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট প্রেরণ করেন, তিনি ঘরে প্রবেশ করার অনুমতি চান, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার বিছানায় আমার সাথে শয়নাবস্থায় ছিলেন, তিনি তাকে অনুমতি দেন, অতঃপর সে বলল, হে আল্লাহর রাসূল, আপনার স্ত্রীরা আমাকে আপনার কাছে প্রেরণ করেছেন, তারা আপনার কাছে ব্নিতে কুহাফার সাথে ইনসাফ চায়, আমি তখন চুপ। আয়েশা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন : হে আদরের মেয়ে, আমি যা পছন্দ করি, তুমি কি তা পছন্দ কর না ? সে বলল : অবশ্যই। তিনি বললেন : অতএব একে মহব্বত কর। আয়েশা বলেন : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ কথা শোনে ফাতেমা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অন্যান্য স্ত্রীদের কাছে ফিরে গিয়ে তার কথা ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উত্তর শোনাল, তারা তাকে বলল : তুমি আমাদের কোন কাজই করনি। তুমি আবার ফিরে গিয়ে বল : আপনার স্ত্রীরা আবু কুহাফার মেয়ের ব্যাপারে ইনসাফের কসম দিচ্ছে। ফাতেমা বলল : আল্লাহর কসম আমি তার ব্যাপারে কোন কথা বলব না। আয়েশা বলেন : অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীরা যয়নব বিনতে জাহশ রাসূলের স্ত্রীকে প্রেরণ করেন, তাদের তুলনায় তাকেই তারা রাসূলের নিকট আমার সমকক্ষ মনে করত, আমি যয়নাবের মত দীনদার কোন নারী দেখিনি, খুব মুত্তাকি, সত্যবাদী, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষাকারী, প্রচুর সদকাকারী, তবে কঠোর মেজাজের কারণে তার মধ্যে গোস্বার প্রবণতা বেশী ছিল, কিন্তু যখন তা প্রকাশ পেত, খুব দ্রুত তিনি গোস্বা প্রশমিত করে নিতেন। আয়েশা বলেন : সে এসে রাসূলের নিকট অনুমতি চায়, তিনি তাকে অনুমতি দেন, তখনও তিনি আয়েশার বিছানায় তার সাথে সে অবস্থায়ই ছিলেন, ফাতেমা যে অবস্থায় দেখেছিল। সে বলল হে আল্লাহর রাসূল, আপনার স্ত্রীরা আমাকে আপনার নিকট প্রেরণ করেছে, তারা আপনার নিকট বিনতে আবু কুহাফার ব্যাপারে ইনসাফ তলব করে। আয়েশা বলেন : অতঃপর সে আমাকে ভৎর্সনা আরম্ভ করে আমার উপর চটে যায়, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখতে ছিলাম, পর্যবেক্ষণ করতে ছিলাম তার চোখের পলক, তিনি আমাকে এ ব্যাপারে অনুমতি দেন কি না, যয়নব আমার উপর চটেই যেতে ছিল, অবশেষে আমি লক্ষ্য করলাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার প্রতিশোধ গ্রহণ অপছন্দ করবেন না, অতঃপর আমি যখন তাকে প্রতি উত্তর আরম্ভ করি, তাকে কোন সুযোগ দেয়নি, আমি আমার প্রতিশোধ নিয়ে নেই। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসলেন আর বললেন : নিশ্চয় এ হচ্ছে আবু বকরের মেয়ে”। {মুসলিম, অষ্টম খণ্ড, পনেরতম অংশ, পৃষ্ঠা : (২০৫-২০৭) দারু ইহইয়াউত তুরাসিল আরাবি, বইরুত, দ্বিতীয় মুদ্রণ, হি.১৩৯২, ই.১৯৭২}


ﻣﺮﻃﻲ অর্থ : উল অথবা রেশমের কাপড়, সেলাই বিহীন প্রত্যেক কাপড়কেই এ নামে অবিহিত করা হয়।
ﻳﺴﺄﻟﻨﻚ ﺍﻟﻌﺪﻝ ﻓﻲ ﺍﺑﻨﺔ ﺃﺑﻲ ﻗﺤﺎﻓﺔ অর্থ : ইমাম নববি এর ব্যাখ্যায় বলেন : তারা অন্তরের মহব্বতের ব্যাপারে পীড়াপীড়ি করছিল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের মাঝে কর্ম, রাত যাপন ইত্যাদিতে সমতা রক্ষা করতেন, কিন্তু অন্তরের মহব্বত হিসেবে আয়েশাকে তাদের সবার চাইতে বেশী ভালবাসতেন। সকল মুসলিম ঐক্যমত যে, অন্তরের উপর আল্লাহ তা‘আলা চাপিয়ে দেননি, এ ব্যাপারে সমতা রক্ষা করাও জরুরী নয়, কারণ এর উপর আল্লাহ ব্যতীত কারো কুদরত নেই, শুধু কর্মের ব্যাপারে ইনসাফের নির্দেশ রয়েছে।
ﻓﺄﺣﺒﻲ ﻫﺬﻩ অর্থ : আয়েশাকে মহব্বত কর।
ﻣﺎ ﻧﺮﺍﻙ ﺃﻏْﻨَﻴﺖ ﻋﻨﺎ অর্থ : আমরা তোমরা দ্বারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যা আশা করেছিলাম, তুমি তার কিছুই করতে পারনি।
ﺗﺴﺎﻣﻴﻨﻲ অর্থ : ইমাম নববি এর ব্যাখ্যায় বলেন : তারা তাকে সম্মান ও মর্যাদার ব্যাপারে আমার সমকক্ষ মনে করত।
ﻣﺎ ﻋﺪﺍ ﺳَﻮْﺭَﺓً ﻣﻦ ﺣِﺪَّﺓٍ ﻛﺎﻧﺖ ﻓﻴﻬﺎ ﺗُﺴْﺮِﻉُ ﻣﻨﻬﺎ ﺍﻟﻔﻴﺌﺔ অর্থ : তিনি পরিপূর্ণ গুনের অধিকারী ছিলেন, কিন্তু তিনি কড়া মেজাজের ছিলেন, দ্রুত গোস্বা করতেন, তবে রাগান্বিত হলে সাথেই তা দমন করে নিতেন, তার উপর জেদ ধরতেন না।
ﺛﻢ ﻭﻗﻌَﺖْ ﺑﻲ ﻓﺎﺳﺘﻄﺎﻟﺖ ﻋﻠﻲ অর্থ : অতঃপর সে আমার উপর আক্রমণ আরম্ভ করে, দীর্ঘক্ষণ আমাকে আক্রমণ করে।
ﻓﻠﻤﺎ ﻭﻗﻌْﺖُ ﺑﻬﺎ ﻟﻢ ﺃﻧْﺸَﺒْﻬﺎ ﺣﺘﻰ ﺃﻧْﺤَﻴْﺖُ ﻋﻠﻴﻬﺎ অর্থ : আমি তাকে তিরষ্কার আরম্ভ করে তাকে কোন সুযোগ দেয়নি, অবশেষে আমি তার থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করি।


ইমাম নববি এর ব্যাখ্যায় বলেন, এখানে এর কোন প্রমাণ নেই যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়েশাকে অনুমতি দিয়েছেন, না তাকে চোখে ইশারা করেছেন, না অন্য কোনভাবে। আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহার কথার অর্থ হচ্ছে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চোখ পর্যবেক্ষণ করছিলাম, কিন্তু যয়নব বিরতিহীন আমাকে বলে যাচ্ছে দেখে, আমি বুঝতে পারি যে, আমি প্রতিশোধ গ্রহণ করলে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা অপছন্দ করবেন না। অতঃপর ইমাম নববি বলেন : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চোখ দিয়ে ইশারা করবেন এটা বিশ্বাস করাও বৈধ নয়, কারণ তার উপর চোখের খিয়ানত হারাম ছিল, এখানে শুধু এতটুকু বিদ্যমান যে, আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহা নিজের প্রতিশোধ নিয়েছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে নিষেধ করেননি।

ﺇﻧﻬﺎ ﺍﺑﻨﺔ ﺃﺑﻲ ﺑﻜﺮ অর্থ : এর দ্বারা তার সমঝ ও বিতর্কে বিজয়ের দিকে ঈঙ্গিত করা হয়েছে।


সাত. আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন :


ﺇﻥْ ﻛﺎﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻟﻴﺘﻔﻘﺪ ﻳﻘﻮﻝ ﺃﻳﻦ ﺃﻧﺎ ﺍﻟﻴﻮﻡ ﺃﻳﻦ ﺃﻧﺎ ﻏﺪﺍ ﺍﺳﺘﺒﻄﺎﺀ ﻟﻴﻮﻡ ﻋﺎﺋﺸﺔ ﻗﺎﻟﺖ : ﻓﻠﻤﺎ ﻛﺎﻥ ﻳﻮﻣﻲ ﻗﺒﻀﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻴﻦ ﺳَﺤْﺮﻱ ﻭﻧﺤﺮﻱ . ‏( ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ ﻓﻲ ﺻﺤﻴﺤﻪ ﻛﺘﺎﺏ ﻓﻀﺎﺋﻞ ﺍﻟﺼﺤﺎﺑﺔ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻨﻬﻢ – ﻓﻀﺎﺋﻞ ﻋﺎﺋﺸﺔ ﺃﻡ ﺍﻟﻤﺆﻣﻨﻴﻦ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻨﻬﺎ، ﺍﻟﻤﺠﻠﺪ ﺍﻟﺜﺎﻣﻦ، ﺍﻟﺠﺰﺀ ﺍﻟﺨﺎﻣﺲ ﻋﺸﺮ، ﻣﻦ ﺻﻔﺤﺔ : ‏( 208 ‏) ﺩﺍﺭ ﺇﺣﻴﺎﺀ ﺍﻟﺘﺮﺍﺙ ﺍﻟﻌﺮﺑﻲ، ﺑﻴﺮﻭﺕ، ﺍﻟﻄﺒﻌﺔ ﺍﻟﺜﺎﻧﻴﺔ 1392 ﻫـ - 1972 ﻡ ).

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুসন্ধান করতেন, আর বলতেন আজ আমি কার ঘরে, আমি আগামি কাল কার ঘরে, যেন আয়েশার দিন খুব দেরিতে আসছে, তিনি বলেন : অতঃপর যখন আমার নাম্বার আসে, আল্লাহ তাকে আমার বুক ও গলার মাঝ থেকে কব্জা করে নেন”। {মুসলিম, অষ্টম খণ্ড, পনেরতম অংশ, পৃষ্ঠা : (২০৮) দারু ইহইয়াউত তুরাসিল আরাবি, বইরুত, দ্বিতীয় মুদ্রণ, হি.১৩৯২, ই.১৯৭২}


ﺍﺳﺘﺒﻄﺎﺀ ﻟﻴﻮﻡ ﻋﺎﺋﺸﺔ অর্থ : আয়েশার প্রতি অধিক মহব্বতের কারণে, যেন তার সিরিয়াল আসতে খুব দেরি হচ্ছে মনে করতেন।
ﻓﻠﻤﺎ ﻛﺎﻥ ﻳﻮﻣﻲ ﻗﺒﻀﻪ ﺍﻟﻠﻪ অর্থ : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগ্রহ দেখে সবাই তাকে আয়েশার ঘরে থাকার অনুমতি দেন, অন্তিম সময়ে তিনি তার সেবাই গ্রহণ করেন, যখন আয়েশার পালার দিনটি আসে, আল্লাহ তার রূহ কব্জা করেন। অর্থাৎ যদি মনে করা হয়, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তার স্ত্রীগণ অনুমতি দেননি, প্রত্যেকের ঘরেই পালাক্রমে থেকেছেন, তবুও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর দিনটি আয়েশার পালার দিন হতো।
ﻗﺒﻀﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻴﻦ ﺳﺤﺮﻱ ﻭﻧﺤﺮﻱ অর্থ : আল্লাহ তাকে আমার বুক ও গলার মাঝখান থেকে কব্জা করেছেন।


আট. আনাস ইব্ন মালেক রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন :

ﺳﻤﻌﺖ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﻘﻮﻝ : ﻓﻀﻞ ﻋﺎﺋﺸﺔ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ ﻛﻔﻀﻞ ﺍﻟﺜﺮﻳﺪ ﻋﻠﻰ ﺳﺎﺋﺮ ﺍﻟﻄﻌﺎﻡ . ‏( ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ ﻓﻲ ﺻﺤﻴﺤﻪ ﻛﺘﺎﺏ ﻓﻀﺎﺋﻞ ﺍﻟﺼﺤﺎﺑﺔ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻨﻬﻢ – ﻓﻀﺎﺋﻞ ﻋﺎﺋﺸﺔ ﺃﻡ ﺍﻟﻤﺆﻣﻨﻴﻦ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻨﻬﺎ، ﺍﻟﻤﺠﻠﺪ ﺍﻟﺜﺎﻣﻦ، ﺍﻟﺠﺰﺀ ﺍﻟﺨﺎﻣﺲ ﻋﺸﺮ، ﻣﻦ ﺻﻔﺤﺔ : ‏( 211 ‏) ﺩﺍﺭ ﺇﺣﻴﺎﺀ ﺍﻟﺘﺮﺍﺙ ﺍﻟﻌﺮﺑﻲ، ﺑﻴﺮﻭﺕ، ﺍﻟﻄﺒﻌﺔ ﺍﻟﺜﺎﻧﻴﺔ 1392 ﻫـ - 1972 ﻡ ).
“আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শোনেছি, তিনি বলতেন : সকল নারীদের উপর আয়েশার ফযিলত তেমনি, যেমন সারিদের ফযিলত সকল খাদ্যের উপর”। {মুসলিম, অষ্টম খণ্ড, পনেরতম অংশ, পৃষ্ঠা : (২১১) দারু ইহইয়াউত তুরাসিল আরাবি, বইরুত, দ্বিতীয় মুদ্রণ, হি.১৩৯২, ই.১৯৭২}
হাসান ইব্ন জায়েদ ইব্ন আলী ইব্ন হুসাইন ইব্ন আলী ইব্ন আবি তালিব রাদিআল্লাহু আনহুর দরবারে এক লোক উপস্থিত ছিল, সে আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহাকে অশ্লীলতাসহ উল্লেখ করে। হাসান বললেন :

ﻓﻘﺎﻝ ﺍﻟﺤﺴﻦ ﻳﺎ ﻏﻼﻡ، ﺍﺿﺮﺏ ﻋﻨﻘﻪ، ﻓﻘﺎﻝ ﻟﻪ ﺍﻟﻌﻠﻮﻳﻮﻥ ﻫﺬﺍ ﺭﺟﻞ ﻣﻦ ﺷﻴﻌﺘﻨﺎ، ﻓﻘﺎﻝ ﻣﻌﺎﺫ ﺍﻟﻠﻪ، ﻫﺬﺍ ﺭﺟﻞ ﻃﻌﻦ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻨﺒﻲ ،

হে যুবক, তার গর্দান উড়িয়ে দাও। আলী পন্থী লোকেরা বলল, সে তো আমাদের শী‘আ পন্থী! তিনি বললেন : মা‘আ-যাল্লাহ (আল্লাহর কাছে পানাহ চাই), সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অপবাদ দিয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :

ﭽﯛ ﯜ ﯝ ﯞﯟ ﯠ ﯡ ﯢ ﯣﯤ ﭼ ﺍﻟﻨﻮﺭ : ٢٦ ﻓﺈﻥ ﻛﺎﻧﺖ ﻋﺎﺋﺸﺔ ﺧﺒﻴﺜﺔ ﻓﺎﻟﻨﺒﻲ ﺧﺒﻴﺚ، ﻓﻬﻮ ﻛﺎﻓﺮ، ﻓﺎﺿﺮﺑﻮﺍ ﻋﻨﻘﻪ، ﻓﻀﺮﺏ ﻋﻨﻘﻪ . ‏( ﺍﻟﺼﺎﺭﻡ ﺍﻟﻤﺴﻠﻮﻝ )

“দুশ্চরিত্রা নারীরা দুশ্চরিত্র পুরুষদের জন্য এবং দুশ্চরিত্র পুরুষরা দুশ্চরিত্রা নারীদের জন্য। আর সচ্চরিত্রা নারীরা সচ্চরিত্র পুরুষদের জন্য এবং সচ্চরিত্র পুরুষরা সচ্চরিত্রা নারীদের জন্য”। {সূরা নূর : ২৬} অতএব আয়েশা যদি দুশ্চরিত্রা হয়, তাহলে আমাদের নবীও দুশ্চরিত্র ! সে কাফের, তার গর্দান উড়িয়ে দাও। অতঃপর তার গর্দান উড়িয়ে দেয়া হয়”। {সারিমুল মাসলুল}

আবু মুহম্মাদ ইব্ন হাযম জাহেরি নিজ সনদে হিশাম ইব্ন আম্মার থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন : আমি মালেক ইব্ন আনাসকে বলতে শোনেছি, আবু বকর ও ওমরকে যে গালি দেবে, তাকে দোররা মারা হবে, আর আয়েশাকে যে গালি দেবে, তাকে হত্যা করা হবে। তাকে বলা হল : আয়েশার ব্যাপারে কেন হত্যা করা হবে ? তিনি বললেন : আল্লাহ তা‘আলা আয়েশার ব্যাপারে বলেছেন :


“আল্লাহ তোমাদেরকে উপদেশ দিচ্ছেন যে, যদি তোমরা মুমিন হও, তাহলে আর কখনো এর পুনরাবৃত্তি করবে না”। {সূরা নূর : ১৭}
অতএব যে তাকে অপবাদ দিল, সে কুরআনের বিরোধিতা করল, আর কুরআনের বিরোধিতাকারী হত্যার উপযুক্ত।


আবু মুহাম্মদ রাহিমাহুল্লাহ বলেন : মালেকের কথা এখানে সঠিক, তাকে গালি দেয়া পরিপূর্ণ কুফরী এবং আল্লাহকে মিথ্যারোপ করা, কারণ তিনি তার পবিত্রতার ঘোষণা দিয়েছেন। {মুহাল্লা : ১৩/৫০৪}
আবুল হাসান সাকলি বর্ণনা করেন, কাজি আবু বকর তৈয়ব বলেছেন : আল্লাহ যখন কাফেরদের আরোপ করা অপবাদগুলো উল্লেখ করেন, তখন তিনি নিজেই নিজের পবিত্রতা ঘোষণা করেন, যেমন তিনি বলেছেন :


“তারা বলে, আল্লাহ সন্তন গ্রহণ করেছেন। তিনি পবিত্র মহান”। (সূরা ইউনুস : ৬৮)



অনুরূপ মুনাফিকরা আয়েশার উপর যে অপবাদ আরোপ করেছে, তা উল্লেখ করার সময়ও তিনি পবিত্রতার ঘোষণা দেন, যেমন তিনি বলেন :

“আর তোমরা যখন এটা শুনলে, তখন তোমরা কেন বললে না যে, এ নিয়ে কথা বলা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তুমি অতি পব্রিত মহান”। (সূরা নূর : ১৬)
আল্লাহ আয়েশার পবিত্রতা ঘোষণার সময় অনুরূপ নিজের প্রশংসা করেছেন, যেমন তিনি পবিত্রতা ঘোষণা করার সময় করেছেন। এর মধ্যে মালেকের কথা “আয়েশাকে গাল-মন্দকারীকে হত্যা করা হবে” এর সমর্থন রয়েছে। এর অর্থ আয়েশার অপবাদ আল্লাহর নিকট এতটাই মারাত্বক, যতটা স্বয়ং তাকে গালি দেয়া মারাত্বক, কারণ আয়েশাকে গালি দেয়া মূলত তার নবীকে গালি দেয়া। আর আল্লাহ তা‘আলা তার নবীকে গালি ও কষ্ট দেয়া, নিজের কষ্টের সাথে তুলনা করেছেন, আর আল্লাহকে কষ্ট দানকারীর শাস্তি হল হত্যা, অতএব তার নবীকে কষ্ট দানকারীর শাস্তিও হত্যা। আল্লাহ ভাল জানেন”। {কাজি ‘আয়ায প্রণিত ‘আশ-শিফা’ : ২/২৬৭-২৬৮}


সমাপ্ত

[1] এটি উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহার প্রতি মিথ্যা অপবাদের ঘটনা। ৬ষ্ঠ হিজরীতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনু মুস্তালিক যুদ্ধ থেকে ফিরার পথে একস্থানে রাত্রিযাপনের জন্য অবস্থান করেন। রাতের শেষ ভাগে আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহা প্রাকৃতিক প্রয়োজনে একটু দূরে যান। কিন্তু পথে তিনি তার গলার হারটি হারিয়ে ফেলেন। তিনি তার খুঁজতে থাকেন। এদিকে কাফেলা রওনা হয়ে যায়। তিনি হাওদার ভিতরেই আছেন মনে করে কেউ তার খোঁজ করেনি, কারণ তার শারীকি গড়ন ছিল হালকা। হার খুঁজে পেয়ে তিনি এসে দেখেন যে, কাফেলা চলে গেছে। তখন তিনি ছুটাছুটি না করে সেখানেই বসে পড়েন। এ আশায় যে কাফেলার রেখে যাওয়া মালামালের সন্ধানে নিয়োজিত কোন লোক আসবেন। অবশেষে এ কাজে নিয়োজিত সাফওয়ান রাদিআল্লাহু আনহা সকাল বেলায় আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহাকে দেখতে পেলেন এবং নিজের উটে তাকে আরোহণ করিয়ে নিজে পায়ে হেটে উটের রশি টেনে সসম্মানে তাকে নিয়ে কাফেলার সাথে মিলিত হন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মুনাফিক সর্দার আব্দুল্লাহ ইব্ন উবাই কয়েকজনকে সাথে নিয়ে আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহার ব্যাপারে মিথ্যা অপবাদ রটাতে থাকে। অবশেষে আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াতগুলো নাযিল করে আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহাকে নির্দোষ ঘোষণা করেন এবং অপবাদ রটনাকারীদের কঠোর শাস্তির কথা জানিয়ে দেন। এই ঘটনাটি ‘ইফক’ এর ঘটনা হিসেবে প্রসিদ্ধ।
_________________________________________________________________________________


লেখক: সানাউল্লাহ নজির আহমদ
সম্পাদনা: ড. আবু বকর মো. যাকারিয়া
সূত্র: ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব



আরও পড়ুনঃ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের গুণাবলী
আরও পড়ুনঃ আল্লামা মুহাম্মদ নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহ:) এর জীবনী
আরও পড়ুনঃ ইমাম বুখারী (রহ.) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী
আরও পড়ুনঃ নবী জীবনী
ডাউনলোড করুনঃ মহানবী (সাঃ) এর জীবনী গ্রন্থঃ আর রাহীকুল মাখতূম – ফ্রি ডাউনলোড
ডাউনলোড করুনঃ বইঃ আসহাবে রাসূলের জীবনকথা - ফ্রি ডাউনলোড


পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না কিন্তু।





Read More---

নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি নূরের তৈরি?

Views:

A+ A-




নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি নূরের তৈরি?

প্রশ্ন: আমি দু’টি কিতাবে পড়েছি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর প্রথম সৃষ্টি, আল্লাহ তাকে স্বীয় নূর থেকে সৃষ্টি করেছেন, এবং তার কারণে অন্যান্য মখলুক সৃষ্টি করা হয়েছে। এ বিষয়ে আমার জ্ঞান পরিপক্ব নয়, অতএব আমাকে স্পষ্ট করে বলুন। শোকরান।

উত্তর: আলহামদুলিল্লাহ,
এ জাতীয় একটি প্রশ্ন সৌদি আরবের স্থায়ী ফতোয়া বোর্ড ‘লাজনায়ে দায়েমা’র নিকট করা হয়েছিল, আমরা এখানে প্রশ্নসহ তা উল্লেখ করছি: “প্রশ্ন: অনেক মানুষের বিশ্বাস, সকল বস্তু মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নূর থেকে সৃষ্টি, আর তার নূর আল্লাহর নূর থেকে সৃষ্টি তারা এ মর্মে হাদিস বর্ণনা করে: “আমি আল্লাহর নূর, আর প্রত্যেক বস্তু আমার নূর থেকে সৃষ্ট”। তারা আরো বর্ণনা করে: “আল্লাহ তা‘আলা সর্বপ্রথম মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নূর সৃষ্টি করেছেন”। এ জাতীয় হাদিসের কোনো ভিত্তি আছে কি? তাদের আরেকটি হাদিস নিম্নরূপ:
" أنا عرب بلا عين أي رب أنا أحمد بلا ميم أي أحد "
“আমি আরব আইন ব্যতীত অর্থাৎ আমি رب (রব), আমি আহমদ মীম ব্যতীত অর্থাৎ আমি أحد (আহাদ), একক সত্ত্বা বা আল্লাহ”। এ জাতীয় কথার কোনো ভিত্তি আছে কি?
Read More---

কবরের আযাব

Views:

A+ A-



হযরত সামুরা বিন জুনদুব(রা) বলেন, রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রায়ই তার সাহাবীদেরকে জিজ্ঞেস করতেন যে, তোমাদের মাঝে কেউ কি কোনো স্বপ্ন দেখেছ ?একদিন সকালে তিনি নিজেই বলতে লাগলেন যে, আজ রাতে আমার নিকট দুজন লোক এল এবং বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে নিয়ে গেল।যাওয়ার পথে আমরা শায়িত একটি লোকের নিকট দিয়ে অতিক্রম করলাম। এই শায়িত লোকটির মাথা অপর একটি লোক পাথর দিয়ে আঘাত করছিল। পাথর মারার পর মাথা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে পাথরটি দূরে ছিটকে পড়ছে। পুনরায় মারার জন্যে লোকটি পাথর সংগ্রহ করতে গেলে এই ফাকে মাথা পুনর্জন্ম নিয়ে নেয় এবং ঐ লোকটি ফিরে এসে আবার পাথর মারে। এভাবে অনবরত চলছে।

আমি আমার সাথীকে বললাম, সুবহানাল্লাহ ! এই দুজন ব্যক্তি কে ? আমার সাথী বলল, আরো সামনে অগ্রসর হও।

আমরা সামনে অগ্রসর হলাম। দেখলাম একটি লোক চিত হয়ে শুয়ে আছে আর অপর একটি লোক লোহার একটি করাত দিয়ে তার মুখের এক পাশের চোয়াল চিরছে। এক পাশ চিরে যখন অন্য পাশে চিরতে যাচ্ছে তখন পূর্বের চিরা অংশ জোড়া লেগে যাচ্ছে। এভাবে অনবরত উলট-পালট করে তাকে চিরছে।

আমি বললাম, সুবহানাল্লাহ ! এই ব্যক্তি কে ? আমাকে বলা হলো আরো সামনে চলো।

আমরা সামনে অগ্রসর হয়ে একটি চুল্লি দেখতে পেলাম। চুল্লির মাঝে খুব হৈ চৈ এর শব্দ শোনা যাচ্ছিল। চুল্লিতে ঊঁকি মেরে দেখতে পেলাম তাতে উলংগ কিছু নারীপুরুষ রয়েছে। আগুনের লাভা যখন তাদের তলদেশ থেকে উদগীরণ করে তখন তারা চিৎকার করে উঠে, আর দেখলাম সেখানে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে অসহনীয়। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এরা কারা ? আমাকে বলা হল আরও সম্মুখে অগ্রসর হও।

সামনে অগ্রসর হয়ে একটি নহর পেলাম। যার পানি রক্তের ন্যায় লালবর্ণের। এ পানিতে একটি লোক সাঁতার কাটছিল। অপর একটি লোক অনেকগুলো পাথর নিয়ে নদীর কিনারে দাঁড়ানো। সাঁতারু লোকটি সাঁতরিয়ে যখন নদীর কিনারে আসে তখন তার মুখ খুলে দেয় এবং কিনারায় লোকটি তার মুখে একটি পাথর ঢুকিয়ে দেয়। এমনটা হচ্ছিল বারবার। আমি জানতে চাইলাম, এই লোকটি কে ? আমাকে বলা হল , আরোও সামনে অগ্রসর হও।

সামনে গিয়ে অত্যন্ত কদাকার একটি লোকের সাক্ষাৎ পেলাম। তার নিকট আগুন ছিল এবং সে আগুন প্রজ্জ্বলিত করছিল এবং চতুর্পাশে চক্কর কাটছিল। আমি জানতে চাইলাম এই লোকটি কে ? জবাব এলো আরো সামনে অগ্রসর হও।

আমরা সামনে অগ্রসর হয়ে একটি শ্যামল উদ্যানে উপস্থিত হলাম।উদ্যানের মধ্যবর্তী স্থানে এত দীর্ঘকায় একজন ব্যক্তির সাক্ষাৎ পেলাম যে উচ্চতার কারণে তার শির আমাদের নজরে আসছিল না।আর এই দীর্ঘ লোকটির পাশে অনেকগুলো শিশুর সমাগম। আমি ইতোপূর্বে এই শিশুদেরকে কখনো দেখিনি। আমি জিজ্ঞেস করলাম এই সকল লোক কারা ? উত্তর এল আরো সামনে অগ্রসর হও।
অতঃপর আমরা দৃষ্টিনন্দন মনোরম একটি উদ্যানে প্রবেশ করলাম। এত নন্দিত উদ্যান আমি এর আগে কখনো দেখিনি।আমি আমার সঙ্গীটির নির্দেশে ভিতরে প্রবেশ করলাম। ভেতরে দেখি স্বর্ণ রূপার নির্মিত একটি শহর।আমরা শহরের প্রধান ফটকের নিকট এলাম। আমাদের জন্য ফটক খোলা হল। অতঃপর ভিতরে প্রবেশ করলাম। প্রবেশ করার পর আমাদের সামনে কিছু লোক এল যাদের দেহের অর্ধাংশ অত্যন্ত সুন্দর কিন্তু অপরাংশ অত্যন্ত কদাকার। আমার সঙ্গীটি তাদেরকে বলল, তোমরা সামনের নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়। তারা যেয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল। নদীটি ছিল খুবই প্রশস্ত, দুধের ন্যায় শুভ্র ছিল এর জলরাশি। তারা নদী থেকে উঠে আসার পর তাদের দেহের বিকৃতি দুরীভূত হয়ে গেল। সর্বাংগ রূপ ধারণ করল সৌন্দর্য্যের দ্যুতিতে। আমার সঙ্গীটি আমাকে বলল – এটি হল ‘আদন জান্নাত’; এটিই তোমার মূল নিকুঞ্জ। আমি দৃষ্টি উঠালাম। দেখি একটি শুভ্র বর্ণের মহল। সঙ্গীটি বলল, এটিও তোমার নীড়। আমি বললাম, আল্লাহ তোমার কল্যাণ করুক। আমাকে আমার নিলয়ে একটু প্রবেশ করতে দাও। সে বলল- এখন নহে। তবে তুমি অবশ্যই এই মহলে প্রবেশ করবে।
এরপর আমি প্রথম থেকে এ পর্যন্ত যা কিছু দেখলাম এর রহস্য জানতে চাইলাম। সে বলল-

প্রথম যে ব্যক্তি যার মাথা চূর্ণ হতে দেখেছ সে হলো কোরআনের জ্ঞান অর্জনকারী ওই ব্যক্তি যে কোরআনের জ্ঞান অর্জন করে ভুলেও গিয়েছে এবং ফরয নামায ছেড়ে ঘুমিয়ে পড়ে। তার সাথে এমন আচরণ কিয়ামত পর্যন্ত করা হবে।

দ্বিতীয় ব্যক্তি যার মুখমন্ডল চিরতে দেখেছ সে হল ঐ ব্যক্তি যে সকালে ঘর থেকে বের হয় এবং দিনভর মিথ্যা কথা বলে বেড়ায়। তার সাথেও কিয়ামত পর্যন্ত এমন আচরণ করা হবে।

তৃতীয়, চুল্লির ভিতর উলংগ নারী পুরুষ জ্বলতে দেখেছ, এরা হল ব্যভীচারী নারী পুরুষ।

চতুর্থ দৃশ্যটি হল সুদ ভক্ষণকারীর যাকে তুমি রক্তের নদীতে সাঁতার কাটতে দেখেছ।

পঞ্চম, যাকে আগুন প্রজ্জ্বলিত করতে দেখেছ সে হল জাহান্নামের ভারপ্রাপ্ত ফেরেশতা।

ষষ্ঠ উদ্যানের দীর্ঘ লোকটি হল, হযরত ইব্রাহীম(আ) ;আর আশেপাশের শিশুরা হল ইসলামের মৃত্যু বরণকারী শিশু।

সপ্তম, শ্রেণীর লোক হল পুণ্য অর্জনকারী ওই সকল লোক যারা পুণ্যের পাশাপাশি কিছু পাপের ও মিশ্রণ ঘটিয়ে ফেলেছে। কিন্তু অবশেষে আল্লাহর রহমত তাদেরকে ঘিরে ফেলেছে এবং মন্দের অভিশাপ থেকে নিজেকে মুক্ত করে নিয়েছে। রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, এরপর এই সাথীরা নিজেদের পরিচয় দিয়ে বলল, আমি হলাম জিবরাঈল(আ) এবং সে মিকাঈল(আ)।
(বুখারি, বায়হাকি)

আলোচনাঃ

উলামাগণ বলেন- এই হাদীসটি কবরের আযাবের সত্যতার ব্যাপারে একটি জ্বলন্ত প্রমাণ। কেননা নবীদের স্বপ্ন সত্য হয়ে থাকে। হাদীসে বলা হয়েছে যে তার সাথে কিয়ামত পর্যন্ত এ ধরনের আচরণ করা হবে। এ থেকে বোঝা যায় যে, এটি বরযখ জগতের ঘটনা।

হযরত আলী(রা) বলেন – বর্ণিত ঘটনায় আরো আতিরিক্ত আছে যে,অগ্নি প্রজ্বলনকারী ব্যক্তিটি জাহান্নামের কর্তা। যখন কোনো বস্তু আগুনের সীমানা থেকে বেরিয়ে পড়ে তৎক্ষনাৎ সে ওটিকে আগুনে ফিরিয়ে দেয়। আর উলংগ নারী-পুরুষেরা হল ব্যভিচারী। আর দুর্গন্ধ যা ছড়াচ্ছে তা তাদের লজ্জাস্থান থেকে নির্গত। অপর আরেকটি দল এমন দেখা গেছে যে, তাদের মল দ্বার দিয়ে আগুন প্রবেশ করে মুখ দিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে। এরা হল – সমকামী পুরুষ। আর দুধের ন্যায় সাদা নদীটি হল হাউসে কাউসার।

হযরত আবু সাঈদ খুদরী(রা) বলেন –রাসুল(সা) ঐ স্বপ্নের মাঝে এক পর্যায়ে একটি দস্তরখানা দেখতে পেলেন যাতে ভূনা গোশত রাখা ছিল। কিন্তু কোন আহারকারী ছিলনা। অপরদিকে এর পাশেই আরেকটি গোশতের সমাহার। এটি ছিল দুর্গন্ধময় মাংসের সমাহার। কিন্তু এখানে বেশ কিছু আহারকারীর উপস্থিতি ছিল। রাসূল(সা) এ সম্পর্কে জানতে চাইলে বলা হল, এরা ওই সকল লোক যারা হালাল খাদ্য পরিত্যাগ করে হারাম খাদ্যকে অধিক পছন্দ করে।
রাসুল (সা) আরো একদল লোক দেখলেন, যাদের পেট ঘরের ন্যায় বড় ও প্রসশ্ত। তারা যখন উঠে দৌড়াতে চায় তখন পেটের ওজনের কারনে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। তারা আক্ষেপ করে বলে – হে আল্লাহ ! তুমি কিয়ামত সৃষ্টি করো না। এই বলে তারা কান্নাকাটি করে। এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার পর জানা গেল যে এরা উম্মতে মোহাম্মদীর সুদখোর লোক। রাসুল (সা) আরেকটি দল দেখলেন, যাদের ওষ্ঠদ্বয় উটের ওষ্ঠদ্বয়ের মত। তাদের মুখে পাথরের নলা পুরে দেওয়া হচ্ছে। পাথর পেটে যেয়ে মলদ্বার দিয়ে আবার বের হয়ে যাচ্ছে। জিজ্ঞেস করে জানা গেল যে, এরা ইয়াতীমের সম্পদ ভক্ষণকারী লোক।
তিনি আরো এমন একটি দলকেও দেখলেন যাদের পাঁজর থেকে মাংস কেটে খেতে দেয়া হচ্ছে। আর বলা হচ্ছে, খেয়ে নাও যেভাবে তোমার ভাইয়ের মাংস খেতে। জিজ্ঞাসা করার পর জানা গেল যে, এরা হল গীবতকারী এবং পরনিন্দা অন্বেষণকারী। এ ধরণের আচরণ এদের সাথে কিয়ামত পর্যন্ত হবে।
(বায়হাকি)

Read More---