Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

See Our Articles In Different Styles... Grid View List View

মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

সহজ ফিকহ শিক্ষা (২য় পর্ব)

Views:

A+ A-

 সহজ ফিকহ শিক্ষা (২য় পর্ব)




১ম পর্ব | ২য় পর্ব

৩- যাকাত
যাকাতের আহকাম
যাকাতুল ফিতর

ইসলামের তৃতীয় রুকন যাকাত

ক- যাকাত শরী‘আতসম্মত হওয়ার হিকমত:
ইসলামী শরী‘আত কিছু সুউচ্চ ও সুমহান হিকমতের কারণে যাকাত ফরয করেছে। নিম্নে কিছু হিকমত আলোচনা করা হলো: 
১- কৃপণতা, লোভ-লালসার ব্যধি থেকে মানুষের আত্মিক পবিত্রতা অর্জন।
২- গরীব-দুঃখী মানুষের দুঃখ কষ্ট ভাগাভাগি করে সমবেদনা জ্ঞাপন, অভাবী, দুর্ভিক্ষ ও বঞ্চিত মানুষের অভাব পূরণ করা।
৩- সর্বসাধারণের জন্য কল্যাণকর সমাজ প্রতিষ্ঠা করা; যার ওপর ভিত্তি করবে মুসলিম উম্মাহর জীবন ও সৌভাগ্য।
ধনীদের কাছে অঢেল সম্পদ, ব্যবসায়ী ও পেশাদারদের হাতে যাতে সম্পদ পুঞ্জীভূত হয়ে না থাকে, ধনীদের মাঝেই যেন আবর্তিত না হয়, এ জন্য ইসলাম যাকাতের ব্যবস্থা করেছে।
খ- যাকাতের পরিচিতি:
নির্দিষ্ট শর্তের ভিত্তিতে, নিসাব পরিমাণ সম্পদ থেকে, নির্দিষ্ট পরিমাণ ফরয সম্পদ, যাকাতের নির্ধারিত হকদারকে প্রদান করা।
এটা বান্দার জন্য পবিত্রকরণ ও তার আত্মার পরিশুদ্ধি। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿خُذۡ مِنۡ أَمۡوَٰلِهِمۡ صَدَقَةٗ تُطَهِّرُهُمۡ وَتُزَكِّيهِم بِهَا١٠٣﴾ [التوبة: ١٠٣]
“তাদের সম্পদ থেকে সদকা (যাকাত) গ্রহণ কর। এর মাধ্যমে তাদেরকে তুমি পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করবে”। [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ১০৩]
গ- ইসলামে যাকাতের অবস্থান:
এটি ইসলামের পাঁচটি রুকনের অন্যতম একটি রুকন। আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে সালাতের পাশাপাশি যাকাতের কথা উল্লেখ করেছেন।
ঘ- যাকাতের হুকুম:
নির্দিষ্ট শর্তের ভিত্তিতে নিসাব পরিমাণ সম্পদের যাকাত আদায় করা প্রত্যেক মুসলিমের ওপর আল্লাহ ফরয করেছেন। আল্লাহ তাঁর কিতাবে যাকাত ফরয করেছেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাকাত গ্রহণ করেছেন। ছোট-বড়, নারী-পুরুষ, সুস্থ-অসুস্থ বা জ্ঞানশূন্য যাদেরই ওপর যাকাত ফরয তাদের থেকে যাকাত গ্রহণের আদেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
 ﴿خُذۡ مِنۡ أَمۡوَٰلِهِمۡ صَدَقَةٗ تُطَهِّرُهُمۡ وَتُزَكِّيهِم بِهَا١٠٣﴾ [التوبة: ١٠٣]
“তাদের সম্পদ থেকে সদকা (যাকাত) গ্রহণ কর। এর মাধ্যমে তাদেরকে তুমি পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করবে”। [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ১০৩]
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَنفِقُواْ مِن طَيِّبَٰتِ مَا كَسَبۡتُمۡ وَمِمَّآ أَخۡرَجۡنَا لَكُم مِّنَ ٱلۡأَرۡضِۖ ٢٦٧﴾ [البقرة: ٢٦٧]    
“হে মুমিনগণ, তোমরা ব্যয় কর উত্তম বস্তু, তোমরা যা অর্জন করেছ এবং আমি জমিন থেকে তোমাদের জন্য যা উৎপন্ন করেছি তা থেকে”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৬৭]
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন,
﴿وَأَقِيمُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتُواْ ٱلزَّكَوٰةَۚ﴾ [البقرة: ١١٠] 
“আর তোমরা সালাত কায়েম করো ও যাকাত দাও”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১১০]
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«بُنِيَ الإِسْلاَمُ عَلَى خَمْسٍ: شَهَادَةِ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ، وَإِقَامِ الصَّلاَةِ، وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ، وَالحَجِّ، وَصَوْمِ رَمَضَانَ».
“ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি। এ কথার সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ ব্যতীত কোনো (সত্য) ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল, সালাত কায়েম করা, যাকাত দেওয়া, হজ করা এবং রমযান মাসের সিয়াম পালন করা”।[37]
যেসব সম্পদের ওপর যাকাত ফরয:
চার ধরণের সম্পদের ওপর যাকাত ফরয। সেগুলো হলো:
মূল্যবান সম্পদ, পশু, জমিন থেকে উৎপাদিত ফসল ও ব্যবসায়িক সম্পদ।
১- মূল্যবান সম্পদ হলো সোনা, রুপা ও কাগজের নোট:
বিশ মিসকাল সোনা হলে এতে যাকাত ফরয হবে। এতে (দশমাংশের চতুর্থাংশ হারে) চল্লিশ ভাগের একভাগ তথা ২.৫% হারে যাকাত ফরয হবে।
রুপা দুইশত দিরহাম হলে এতেও (দশমাংশের চতুর্থাংশ হারে) চল্লিশ ভাগের একভাগ তথা ২.৫% হারে যাকাত ফরয হবে।
বর্তমানে প্রচলিত কাগজের নোট মূল্যবান সম্পদের হিসেবে হিসেব করা হবে। এ নোটের সম্পদ যদি সোনা বা রুপা যেকোন একটির নিসাবের সমান হয় এবং এক বছর অতিক্রম করে তবে এতে (দশমাংশের চতুর্থাংশ হারে) চল্লিশ ভাগের একভাগ তথা ২.৫% হারে যাকাত ফরয হবে।
২- চতুষ্পদ প্রাণির যাকাত:
উট, গরু ও ছাগল মরুভূমি ও প্রাকৃতিক চারণভূমি থেকে খাদ্য আহরণকারী হলে এতে যাকাত ফরয হয়। নিসাব পূর্ণ হলে এবং একবছর অতিক্রান্ত হলে নিম্নোক্ত হিসাব অনুযায়ী যাকাত আদায় করতে হবে:
ক- ছাগলের যাকাত:
৪০-১২০টি মেষের জন্য ১টি মেষ।
১২১-২০০টি মেষের জন্য ২টি মেষ।
২০১-৩০০টি মেষের জন্য ৩টি মেষ।
৩০০ এর অতিরিক্ত হলে প্রতি একশতে ১টি করে মেষ দিতে হবে।
খ- গরুর যাকাত:
গরুর সর্বনিম্ন নিসাব ৩০ থেকে ৩৯টি গরুর জন্য ‘তাবী‘ বা তাবী‘আ (এক বছর বয়সী) ১টি গরু যাকাত দিতে হবে।
৪০-৫৯টি গরুর জন্য মুসিন্না বা দু’বছর বয়সী ১টি গরু যাকাত দিতে হবে।
৬০টি গরুর জন্য দু’টি তাবী‘ বা একবছর বয়সী ২টি গরু যাকাত দিতে হবে।
এভাবে প্রতি ৩০টির জন্য এক বছর বয়সী ১টি ‘তাবী‘ বা তাবী‘আ গরু এবং প্রতি ৪০টি গরুর জন্য একটি মুসিন্না বা দু’বছর বয়সী ১টি গরু যাকাত দিতে হবে।
গ- উটের যাকাত:
উটের সর্বনিম্ন নিসাব ৫টি থেকে ৯টি উটের জন্য পূর্ণ একবছর বয়সী ১টি ছাগল যাকাত দিতে হবে।
১০-১৪টি উটের জন্য ২টি ছাগল যাকাত দিতে হবে।
১৫-১৯টি উটের জন্য ৩টি ছাগল যাকাত দিতে হবে।
২০-২৪টি উটের জন্য ৪টি ছাগল যাকাত দিতে হবে।
২৫-৩৫টি উটের জন্য একটি বিনতে মাখাদ্ব উট বা এক বছর বয়সী ১টি স্ত্রী উট যাকাত দিতে হবে।
৩৬-৪৫টি উটের জন্য বিনতে লাবূন বা দু’বছর বয়সী ১টি স্ত্রী উট যাকাত দিতে হবে।
৪৬-৬০টি উটের জন্য হিক্বাহ বা তিন বছর বয়সী ১টি স্ত্রী উট যাকাত দিতে হবে।
৬১-৭৫টি উটের জন্য জায‘আহ বা চার বছর বয়সী ১টি স্ত্রী উট যাকাত দিতে হবে।
৭৬-৯০টি উটের জন্য দু’টি বিনতে লাবূন বা দু’বছর বয়সী ২টি স্ত্রী উট যাকাত দিতে হবে।
৯১-১২০টি উটের জন্য দু’টি হিক্কাহ বা তিন বছর বয়সী ২টি স্ত্রী উট যাকাত দিতে হবে।
১২ এর পরে প্রতি ৪০টি উটে এক বিনতে লাবূন বা এক বছর বয়সী ১টি স্ত্রী উট, আর প্রতি ৫০টি উটে এক হিক্বাহ বা তিন বছর বয়সী ১টি স্ত্রী উট যাকাত দিতে হবে।
উট, গরু ও ছাগল ইত্যাদি গৃহপালিত চতুষ্পদ প্রাণি যদি ব্যবসা ও উৎপাদনশীল সম্পদ হিসেবে গণ্য করা হয় তবে এগুলো বছর অতিক্রম করলে এর মূল্য ধরে ২.৫% হিসেবে যাকাত দিবে।
আর যদি গৃহপালিত প্রাণি ব্যবসায়িক সম্পদ না হয় তবে এতে যাকাত নেই।
স্ত্রী পশু যাকাত হিসেবে আদায় করতে হবে; শুধু গরুর যাকাতের ক্ষেত্রে এবং বিনতে লাবুনের পরিবর্তে ইবন লাবুন বা হিক্কাহ বা জিয‘আ বা যাকাতের নিসাব পুরোটাই যদি পুরুষ পশু হয়, সে ক্ষেত্রেও পুরুষ পশু যাকাত আদায় করা যাবে।
৩- জমিন থেকে উৎপাদিত ফসলের যাকাত:
সমস্ত খাদ্যশস্য, ওজন করা ও গুদামজাত করা যায় এমন ফলমূল যেমন, খেজুর, কিসমিস ইত্যাদিতে নিসাব পূর্ণ হলে যাকাত ফরয। আর এর নিসাবের পরিমাণ হলো ৩০০ সা‘, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সা‘ অনুযায়ী, যা প্রায় ৬২৪ কিলোগ্রাম।
নিসাব পূর্ণ করতে একই প্রকারের ফল একই বছরের সব ফল একত্র করা হবে। যেমন, সব ধরণের খেজুর।
খাদ্যশস্য ও ফলের যাকাতের পরিমাণ:
১- বিনা খরচে প্রাকৃতিক বৃষ্টির পানিতে বা ঝর্ণার পানিতে উৎপাদিত খাদ্যশস্য ও ফলমূলে ‘উশর বা এক দশমাংশ (১০%) হারে যাকাত ফরয।
২- শ্রম নির্ভর সেচ, যেমন কূপ ইত্যাদি থেকে পানি এনে সেচ দেওয়া সাপেক্ষে যে ফসল উৎপন্ন হয় তাতে যাকাতের পরিমাণ হলো অর্ধ ‘উশর (৫%)।
৩- যেসব খাদ্যশস্য ও ফলমূল কিছু বিনা খরচে বৃষ্টির পানিতে এবং কিছু শ্রম নির্ভর সেচ, যেমন কূপ ইত্যাদি থেকে পানি এনে সেচ দেওয়া সাপেক্ষে উৎপন্ন হয়েছে তাতে ৭.৫% হারে যাকাত ফরয।
খাদ্যশস্যে যখন দানা পরিপক্ক হয় এবং খোসাযুক্ত হয় এবং ফলমূল যখন পরিপক্ক হয়ে খাওয়ার উপযোগী হয় তখন এতে যাকাত ফরয হয়।
শাকসব্জি ও ফলমূল ব্যবসার জন্য হলে কেবল এতে যাকাত ফরয হবে, তখন এতে নিসাব পূর্ণ হলে ও বছর অতিক্রান্ত হলে এর মূল্য থেকে ২.৫% হারে যাকাত দিতে হবে।
সামুদ্রিক মূল্যবান জিনিস যেমন, মণিমুক্তা, নীলকান্তমণি ও মাছ ইত্যাদিতে কোনো যাকাত নেই। তবে এগুলো যদি ব্যবসার জন্য হয় তবে এতে ব্যবসার মালের মতো নিসাব পূর্ণ হলে ও বছর অতিক্রান্ত হলে ২.৫% হারে যাকাত দিতে হবে। 
রিকায তথা গুপ্তধন বলতে জমিনের নিচে পুঁতে রাখা ধন সম্পদ। এ সম্পদ কম হোক বা বেশি হোক কেউ তা পেলে ফাইয়ের খাত তথা গরীব, মিসকীন ও কল্যাণকর কাজে এক পঞ্চমাংশ (২০%) হারে যাকাত আদায় করতে হবে।    
৪- ব্যবসায়িক সম্পদের যাকাত:
ব্যবসায়িক সম্পদ বলতে পশু, খাদ্য, পানীয় ও যন্ত্রপাতি ইত্যাদি বেচা-কেনার মাধ্যমে লাভের উদ্দেশ্যে জমা রাখা হয়। কারো কাছে ব্যবসায়িক সম্পদ নিসাব পরিমাণ থাকলে এবং তা একবছর অতিবাহিত হলে গরীবের সর্বাধিক সুবিধাজনক হিসেবে বছর শেষে সমস্ত মূল্যমানের ওপর ২.৫% হিসেবে যাকাত ফরয হবে। তবে ব্যবসায়িক পণ্যের যাকাত সে ব্যবসায়িক পণ্য থেকে দেওয়াও জায়েয।
যেসব ব্যবসায়িক পণ্য নিজের প্রয়োজনে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে; ব্যবসার নিয়তে নয়, এতে যাকাত নেই।
যখন পশু ও ব্যবসায়ী পণ্য নিসাব পরিমাণ হয়ে যাবে, তখন পশু থেকে আগত বাচ্চা এবং ব্যবসা থেকে অর্জিত লভ্যাংশে ‘বছর পূর্ণ হওয়ার বিষয়টি’ মূলবস্তুর সাথে সংশ্লিষ্ট হবে। (অর্থাৎ পশুর বাচ্ছা ও ব্যবসায় অর্জিত লভ্যাংশের জন্য আলাদা বছর পূর্ণ হতে হবে না। মূল পশু ও মূল ব্যবসায়ী পণ্যের বছর পূর্ণ হওয়াই যথেষ্ট)
যাকাত ফরয হওয়ার শর্তাবলী:
(১) স্বাধীন, (২) মুসলিম, (৩) নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক, (৪) যাকাতের সম্পদ পুরোপুরি মালিক হওয়া এবং (৫) উক্ত নিসাব পরিমাণ মালের এক বছর অতিক্রম হওয়া। তবে খাদ্য শস্য ও ফলমূল এবং রিকাযে এক বছর অতিক্রম হওয়া শর্ত নয়।


যাকাত আদায়

ক- যাকাত আদায়ের সময়:
মানত ও কাফফারার মতো যাকাত তাৎক্ষণিক আদায় করা ফরয। কেননা আল্লাহর আদেশ সাধারণভাবে তাৎক্ষণিক আদায় করাই কামনা করে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿وَءَاتَوُاْ ٱلزَّكَوٰةَ﴾ [البقرة: ٢٧٧] 
“এবং তোমরা যাকাত দাও”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৭৭]
তবে যাকাত প্রদানকারী প্রয়োজনের সময়ে দেওয়ার জন্য, আত্মীয়দের দেওয়ার জন্য ও প্রতিবেশীর জন্য বিলম্ব করতে পারবে।
খ- যাকাত অস্বীকারকারীর হুকুম:
কেউ জেনে-শুনে ইচ্ছাকৃত ভাবে যাকাত ফরয হওয়া অস্বীকার করলে সে যাকাত আদায় করলেও আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও উম্মাহর ইজমাকে অস্বীকার এ মিথ্যা প্রতিপন্ন করার কারণে কাফির হয়ে যাবে এবং তাকে তাওবা করতে হবে; কিস্তু তাওবা না করলে তাকে কুফরীর কারণে হত্যা করা হবে। আর কেউ যাকাত ফরয হওয়াকে স্বীকার করে; কিন্তু কৃপণতা ও অবজ্ঞার কারণে যাকাত আদায় করতে অস্বীকৃতি জানালে তার থেকে জোর করে যাকাত আদায় করা হবে এবং হারাম কাজে লিপ্ত হওয়ার কারণে তাকে শাস্তি ও তিরস্কার করা হবে।
শিশু ও পাগলের পক্ষ থেকে তার অভিভাবক যাকাত আদায় করে দিবে।
গ- যাকাত আদায়ের সময় যে কাজ করা সুন্নাত:
১- যাকাত না আদায়ের অপবাদ থেকে মুক্তি পেতে প্রকাশ্যে যাকাত আদায় করা সুন্নাত।
২- যাকাতের হকদারের কাছে যথাযথভাবে যাকাত পৌঁছাতে নিজেই তদারকি করা।
৩- যাকাত প্রদানের সময় এ দো‘আ পড়া:
«اللهم اجعلها مغنما ولا تجعلها مغرما» 
“হে আল্লাহ এটাকে গণীমত হিসেবে পরিণত কর, জরিমানা হিসেবে নয়”।
৪- যাকাত গ্রহীতা যাকাত গ্রহণের সময় এ দো‘আ পড়া:
« أجرك اللّه فيما أعطيت. بارك لك فيما أبقيت وجعله لك طهورا».
“তুমি যা দিয়েছ তাতে আল্লাহ প্রতিদান দিন, যা বাকী রেখেছ তাতে বরকত দিন আর তা তোমার জন্য পবিত্রকারী বানিয়ে দিন।”
৫- নিজের যেসব আত্মীয়-স্বজনের দায়-দায়িত্ব নেওয়া অত্যাবশ্যকীয় নয় সেসব গরীব আত্মীয়-স্বজনকে যাকাত প্রদান করা সুন্নাত।
যাকাতের খাতসমূহ:
যাকাতের খাত হলো আটটি। আল্লাহ তা‘আলা এসব খাত সম্পর্কে বলেছেন,
﴿إِنَّمَا ٱلصَّدَقَٰتُ لِلۡفُقَرَآءِ وَٱلۡمَسَٰكِينِ وَٱلۡعَٰمِلِينَ عَلَيۡهَا وَٱلۡمُؤَلَّفَةِ قُلُوبُهُمۡ وَفِي ٱلرِّقَابِ وَٱلۡغَٰرِمِينَ وَفِي سَبِيلِ ٱللَّهِ وَٱبۡنِ ٱلسَّبِيلِۖ فَرِيضَةٗ مِّنَ ٱللَّهِۗ وَٱللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٞ ٦٠﴾ [التوبة: ٦٠] 
“নিশ্চয় সদকা হচ্ছে ফকীর ও মিসকীনদের জন্য এবং এতে নিয়োজিত কর্মচারীদের জন্য, আর যাদের অন্তর আকৃষ্ট করতে হয় তাদের জন্য; (তা বণ্টন করা যায়) দাস ‘আযাদ করার ক্ষেত্রে, ঋণগ্রস্তদের মধ্যে, আল্লাহর রাস্তায় এবং মুসাফিরদের মধ্যে। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত, আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়”। [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ৬০]
এরা হলো:
১- ফকির: ফকির হলো যারা নিজের ও পরিবারের অবশ্য প্রয়োজনীয় আসবাবপত্রের সামান্য কিছু পায় না।
২- মিসকীন: যারা নিজের ও পরিবারের অবশ্য প্রয়োজনীয় আসবাবপত্রের কিছু পায়ে থাকে বা অর্ধেকের বেশি পায়, তবে তাদের অভাব থাকে।
৩- যাকাত আদায়ে নিয়োজিত কর্মচারী: যারা যাকাতের সম্পদ পাহারা দেন, যাকাত জমা করেন, অভাবগ্রস্তদের মাঝে বণ্টন করেন ইত্যাদি যাকাতের কাজে নিয়োজিত ব্যক্তি যাদেরকে বাইতুল মাল থেকে বেতন নির্ধারণ করে দেওয়া হয় নি।
৪- দীনের প্রতি যাদের অন্তর আকৃষ্ট করা উদ্দেশ্য: নিজগোত্রে সম্মান ও আনুগত্যের পাত্র এমন নেতৃবর্গ যাদেরকে অর্থদান করলে ইসলাম গ্রহণ করার অথবা মুসলিমদেরকে নির্যাতন করা থেকে বিরত থাকার অথবা তাদের ঈমানে মজবুতি সৃষ্টি হওয়ার অথবা তাদের অনুরূপ কারো ইসলাম গ্রহণ আশা করা যায়।
৫- গোলাম আযাদ: তারা হলো মুকাতিব দাস (যে দাসত্ব থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য টাকা দেওয়ার ব্যাপারে মনিবের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে এমন) দাসকে তার দাসত্ব থেকে মুক্ত করার জন্য যাকাতের টাকা থেকে দেওয়া যাবে।
৬- ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি: ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি দু’ধরণের:
ক- অন্য মানুষের মধ্যে সমঝোতা করতে গিয়ে ঋণগ্রস্ত হয়েছে।
খ-যার জিম্মায় ঋণ রয়েছে এবং সে তা আদায় করতে সক্ষম নয় তাকে তার ঋণগ্রস্ততা থেকে মুক্ত করার জন্য যাকাতের সম্পদ দেওয়া যাবে।
৭- আল্লাহ রাস্তায় দান: (আল্লাহর রাস্তা) বলতে বুঝায় আল্লাহর রাস্তায় বিনা বেতনে জিহাদকারী লোক, আল্লাহর পথের দা‘য়ী ও তাদের কাজে প্রয়োজনীয় উপকরণ ব্যয়ে তাদেরকে যাকাতের অর্থ দেওয়া হবে।
৮- মুসাফির: সফর অবস্থায় যে নিঃস্ব ও অর্থশূন্য হয়ে পড়েছে এবং নিজ দেশে যাওয়ার কোনো সম্পদ তার কাছে নেই এমন ব্যক্তিকে যাকাতের অর্থ দেওয়া যাবে।


যাকাতুল ফিতর

১- যাকাতুল ফিতর শরী‘আতসম্মত হওয়ার হিকমত:
যাকাতুল ফিতর শরী‘আতসম্মত হওয়ার হিকমত হলো এ সাদাকা সাওম পালনকারীর আত্মাকে ভুলত্রুটি ও অশ্লীল কথাবার্তা থেকে পবিত্র করে। এমনিভাবে ঈদের দিনে ফকির ও মিসকীনকে অন্যের কাছে সাহায্য চাওয়া থেকে মুক্ত রাখে।
২- যাকাতুল ফিতরের পরিমাণ ও যেসব খাদ্য থেকে আদায় করা যাবে:
যাকাতুল ফিতরের পরিমাণ হলো প্রত্যেক ব্যক্তির পক্ষ থেকে এক সা‘ করে আদায় করতে হবে। আর সা‘ হচ্ছে চার মুদ্দ। আর এক সা‘ প্রায় তিন কিলো। দেশের প্রচলিত মানব-খাদ্য থেকে, যেমন গম, খেজুর, চাল, কিসমিস অথবা পনির দ্বারা আদায় করতে হবে।
৩- যাকাতুল ফিতর কখন ওয়াজিব ও কখন আদায় করতে হয়:
ঈদুল ফিতরের রাত আগমনের সাথে সাথেই যাকাতুল ফিতর ওয়াজিব হয়। আর যাকাতুল ফিতর আদায়ের সময় হচ্ছে ঈদের একদিন বা দু’দিন পূর্ব থেকে। কারণ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা এভাবে করতেন। আর আদায়ের উত্তম সময় হচ্ছে ঈদের দিন সূর্যোদয়ের পর ও ঈদের সালাতের সামান্য পূর্ব পর্যন্ত। কেননা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষকে ঈদের সালাতে বের হওয়ার পূর্বে আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন।
৪- কাদের ওপর যাকাতুল ফিতর ওয়াজিব:
ঈদের দিন ও রাতে যে মুসলিম ব্যক্তি তার নিজের ও পরিবারের খাবারের অতিরিক্ত খাদ্যের মালিক হবে তার ওপর ও তার দাস-দাসী, নারী-পুরুষ, ছোট-বড় সকলের ওপর যাকাতুল ফিতর ওয়াজিব। মাতৃগর্ভে ভ্রূণের পক্ষ থেকেও যাকাতুল ফিতর আদায় করা মুস্তাহাব।
৫- যাকাতুল ফিতর বণ্টনের খাতসমূহ:
সাধারণত যাকাতের খাতসমূহই হলো যাকাতুল ফিতরের খাত। তবে অন্য খাতের চেয়ে ফকির ও মিসকীনকে প্রদান করা উত্তম।  কেননা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
« أغنوهم عن السؤال في هذا اليوم».
“তোমরা তাদেরকে এ দিনে (ঈদের) কারো কাছে হাত পাতা থেকে মুক্ত রাখো।”
=====

৪- সাওম

সাওমের হুকুম ও বিধিবিধান

ইসলামের চতুর্থ রুকন রমযানের সাওম

সাওমের পরিচিতি ও সাওম ফরয হওয়ার ইতিহাস:
১- সাওম পরিচিতি:
শাব্দিক অর্থ: বিরত থাকা। আর পারিভাষিক অর্থে সাওম হলো: ইবাদতের নিয়াতে সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত খাদ্য, পানীয় স্বামী-স্ত্রীর মিলন ও সাওম ভংগকারী যাবতীয় জিনিস থেকে বিরত থাকা।
২-সাওম ফরয হওয়ার ইতিহাস:
আল্লাহ তা‘আলা উম্মাতে মুহাম্মাদীর ওপর সাওম ফরয করেছেন যেমনিভাবে পূর্ববতী উম্মাতের ওপর সাওম ফরয করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ كُتِبَ عَلَيۡكُمُ ٱلصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُونَ١٨٣﴾ [البقرة: ١٨٣]    
“হে মুমিনগণ, তোমাদের উপর সিয়াম ফরয করা হয়েছে, যেভাবে ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর।” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৩]
আর এটি ছিল দ্বিতীয় হিজরীর শাবান মাসে।
সাওমের উপকারিতা:
সাওমের রয়েছে আত্মিক, সামাজিক ও শারীরিক উপকার। সেগুলো: 
-  সাওমের আত্মিক উপকারের মধ্যে রয়েছে এটি মানুষকে ধৈর্য শিক্ষা দেয় ও তাকে শক্তিশালী করে। ব্যক্তিকে আত্মনিয়ন্ত্রণ শিক্ষা দেয় এবং এর ওপর চলতে সাহায্য করে। সাওমের মাধ্যমে মানুষ তাকওয়া অর্জন করে এবং সাওম মানুষকে তাকওয়া শিক্ষা দেয়।
-  সাওমের সামাজিক উপকারের মধ্যে রয়েছে এটি জাতিকে শৃংখলা, একতা, ন্যায়পরায়নতা ও সমতা বজায় রাখতে অভ্যস্ত করে। মুমিনের মধ্যে ভালোবাসা, রহমত ও সচ্চরিত্র ইত্যাদি গুণ অর্জনে সাহায্য করে। এছাড়াও সমাজকে সব ধরণের অন্যায় ও বিশৃংখলা থেকে মুক্ত রাখে।
-  সাওমের শারীরিক উপকারিতা হলো: সাওম মানুষের নাড়িভুঁড়ি পরিষ্কার করে ও পাকস্থলী সুস্থ রাখে। শরীরকে অতিরিক্ত ঝামেলা থেকে মুক্ত রাখে ও অতিরিক্ত ওজন কমায়। 
রমযান মাস শুরু হওয়া সাব্যস্ত করার পদ্ধতি:
দু’টি পদ্ধতির যে কোনো একটির দ্বারা রমযান মাস শুরু হওয়া সাব্যস্ত হবে। তাহলো:
১- আগের মাস তথা শাবান মাস ত্রিশ দিন পূর্ণ করে, একত্রিশতম দিনকে রমযানের প্রথম দিন ধরে অত্যাবশ্যকীয়ভাবে সাওম পালন শুরু করবে।
২- শাবান মাসের ত্রিশতম রাতে চাঁদ দেখা গেলে রমযান সাব্যস্ত হবে এবং পরের দিন থেকে সাওম পালন করা ফরয হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿فَمَن شَهِدَ مِنكُمُ ٱلشَّهۡرَ فَلۡيَصُمۡهُ﴾ [البقرة: ١٨٥] 
“সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে মাসটিতে উপস্থিত হবে, সে যেন তাতে সিয়াম পালন করে”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৫]
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«إِذَا رأيتم الهلال فَصُومُوا، وَإِذَا رَأَيْتُمُوهُ فَأَفْطِرُوا، فَإِنْ غُمَّ عَلَيْكُمْ فَأَكْمِلُوا الْعِدَّةَ ثَلَاثِينَ يَوْمًا»
“যখন তোমরা চাঁদ দেখবে তখন সাওম পালন করবে, আবার যখন তা দেখবে তখন সাওম ভঙ্গ করে ঈদুল ফিতর পালন করবে। আর যদি আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকে তাহলে তাঁর সময় হিসাব করে ত্রিশ দিন পূর্ণ করবে।”[38]
রমযানের চাঁদ কোনো এলাকার লোকজন দেখলে তাদের উপর সাওম শুরু করা ফরয; কেননা চাঁদের উদয় স্থান স্থানভেদে ভিন্ন। যেমন এশিয়াতে চাঁদের উদয় স্থান ইউরোপের উদয় স্থান থেকে আলাদা, আবার আফ্রিকার উদয় স্থান আমেরিকার উদয় স্থান থেকে ভিন্ন। এ কারণে প্রত্যেক অঞ্চলের জন্য আলাদা হুকুম। তবে যদি পৃথিবীর সব মুসলিম একই চাঁদ দেখে এক দিনে সবাই সাওম পালন করে তাহলে তাতে ইসলামের সৌন্দর্য্য, পরস্পর ভালোবাসা, একতা ও ভ্রাতৃত্ব প্রকাশ পায়।
রমযানের চাঁদ একজন বা দু’জন সৎ ও ন্যায়পরায়ণলোকের দেখার সাক্ষ্য দিলেই তা যথেষ্ট হবে। যেহেতু রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজনের সাক্ষ্যের ওপর ভিত্তি করে রমযানের সাওম পালনের অনুমতি দিয়েছেন।[39] কিন্তু শাওয়াল মাসে ঈদের চাঁদ দেখার জন্য কমপক্ষে দু’জন সৎ লোকের সাক্ষ্য লাগবে। কেননা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন সৎলোকের সাক্ষ্য গ্রহণ করে সাওম ভঙ্গ করতে অনুমতি দেন নি।[40]
রমযান মাসের সাওম পালন ফরয:
রমযান মাসের সাওম পালন ফরয হওয়া কুরআন, সুন্নাহ ও ইজমা দ্বারা তা প্রমাণিত। এটি ইসলামের অন্যতম একটি রুকন। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿شَهۡرُ رَمَضَانَ ٱلَّذِيٓ أُنزِلَ فِيهِ ٱلۡقُرۡءَانُ هُدٗى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَٰتٖ مِّنَ ٱلۡهُدَىٰ وَٱلۡفُرۡقَانِۚ فَمَن شَهِدَ مِنكُمُ ٱلشَّهۡرَ فَلۡيَصُمۡهُ﴾ [البقرة: ١٨٥] 
“রমযান মাস, যাতে কুরআন নাযিল করা হয়েছে মানুষের জন্য হিদায়াতস্বরূপ এবং হিদায়াতের সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে মাসটিতে উপস্থিত হবে, সে যেন তাতে সিয়াম পালন করে”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৫]
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 
«بُنِيَ الإِسْلاَمُ عَلَى خَمْسٍ: شَهَادَةِ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ، وَإِقَامِ الصَّلاَةِ، وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ، وَالحَجِّ، وَصَوْمِ رَمَضَانَ»
“ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি। এ কথার সাক্ষ্য দওেয়া যে, আল্লাহ ব্যতীত কোনো (সত্য) ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল, সালাত কায়েম করা, যাকাত দেওয়া, হজ করা এবং রমযান মাসের সিয়াম পালন করা”।[41]
সাওমের রুকনসমূহ:
১- নিয়ত করা। আল্লাহর আদেশ পালন করতে ও তার নৈকট্য লাভের প্রত্যাশায় অন্তরে সাওমের দৃঢ় সংকল্প করা। কেননা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«إِنَّمَا الأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ»
“প্রত্যেক কাজ নিয়াতের ওপর নির্ভরশীল”[42]
২- বিরত থাকা: সাওম ভঙ্গকারী কারণ খাদ্য, পানীয় ও স্বামী-স্ত্রীর মিলন ইত্যাদি থেকে বিরত থাকা।
৩- সময়: এখানে সময় বলতে দিনের বেলাকে বুঝানো হয়েছে। সূর্যোদয়ের পূর্ব থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়।
সাওম ফরয হওয়ার শর্তাবলী:
সাওম ফরয হওয়ার শর্ত চারটি। তা হলো:
১- ইসলাম।
২- বালেগ তথা প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া।
৩- আকেল তথা জ্ঞান সম্পন্ন হওয়া।
৪- সাওম পালনে সক্ষম হওয়া।
তাছাড়া মহিলাদের সাওম শুদ্ধ হতে হায়েয ও নিফাস থেকে পবিত্র হওয়াও শর্ত।
সাওম শুদ্ধ হওয়ার শর্তাবলী:
১- ইসলাম।
২- রাত থেকেই সাওমের নিয়ত করা।
৩- আকেল তথা জ্ঞান সম্পন্ন হওয়া।
৪- ভালো-মন্দ পার্থক্যকারী প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া।
৫- হায়েয থেকে পবিত্র হওয়া।
৬- নিফাস থেকে পবিত্র হওয়া।
সাওমের সুন্নাতসমূহ:
১- তাড়াতাড়ি ইফতার: সুর্যাস্তের সাথে সাথেই দ্রুত ইফতার করা।
২- তাজা বা শুকনা খেজুর বা পানি দিয়ে ইফতার করা। এগুলো ক্রমান্বয়ে অর্থাৎ একটি পাওয়া না গেলে অন্যটি দিয়ে ইফতার করা মুস্তাহাব। তিন বা পাঁচ বা সাত ইত্যাদি বেজোড় সংখ্যক দিয়ে ইফতারি করা মুস্তাহাব।
৩- ইফতারের সময় দো‘আ করা। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইফতারের সময় এ দো‘আ করতেন,
«اللهم لك صمنا وعلى رزقك أفطرنا، فتقبل منا إنك أنت السميع العليم».
“হে আল্লাহ! আমরা আপনার জন্যই সাওম পালন করলাম, আপনার দেওয়া রিযিকে ইফতার করলাম। অতএব, আপনি আমাদের সাওম কবুল করুন। নিশ্চয়ই আপনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী”।[43]
৪- সাহরী খাওয়া: সাওম পালনের নিয়তে শেষরাতে কিছু খাওয়া ও পান করার নাম সাহরী।
৫- রাতের শেষভাগে বিলম্বে সাহরী খাওয়া।
সাওমের মাকরূহসমূহ:
সাওম পালনকারীর জন্য কিছু কাজ করা মাকরূহ। কারণ এর মাধ্যমে তার সাওম নষ্ট হয়ে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে; যদিও এ কাজগুলো সরাসরি সাওম নষ্ট করে না। তন্মধ্যে:
১- অযুর সময় কুলি ও নাকে পানি দেওয়ায় অতিরঞ্জিত করা।
২- স্ত্রীকে চুম্বন করা। কেননা এতে যৌন উত্তেজনায় মযী বের হওয়া বা মিলনের সম্ভাবনা থাকে, ফলে কাফফারা ওয়াজিব হয়ে যাবে।
৩-যৌন উত্তেজনাসহ স্ত্রীর প্রতি পলকহীনভাবে একাধারে তাকিয়ে থাকা।
৪- যৌন কাজের চিন্তা করা।
৫- হাতের দ্বারা স্ত্রীকে ষ্পর্শ করা বা তার শরীর স্পর্শ ও ঘর্ষণ করা।
যেসব ওযরগ্রস্ত ব্যক্তির সাওম ভঙ্গ করা জায়েয:
১- হায়েয ও নিফাসগ্রস্ত নারীর সাওম ভঙ্গ করা ফরয।
২- কাউকে ধ্বংস থেকে উদ্ধার বা রক্ষা করতে হলে যদি সাওম ভঙ্গ করতে হয় তবে তখন তার জন্য সাওম ভঙ্গ করা ওয়াজিব। যেমন, ডুবে যাওয়া বা এ ধরণের ব্যক্তিকে রক্ষা করা।
৩- যে সফরে সালাত কসর করা সাওম ভঙ্গ করা জায়েয সে ধরনের সফরকারীর জন্য সাওম ভঙ্গ করা সুন্নাত।
৪- সাওম পালনে রোগ বৃদ্ধি হতে পারে এমন আশঙ্কা থাকলে অসুস্থ ব্যক্তির জন্য সাওম ভঙ্গ করা বৈধ।
৫- মুকিম ব্যক্তি দিনের বেলায় সফর করলে তার জন্য উত্তম হলো সাওম ভঙ্গ না করা, যেহেতু এ ব্যাপারে আলেমদের মতানৈক্য রয়েছে।
৬- গর্ভবতী অথবা দুগ্ধদানকারী নারী যদি তার নিজের ক্ষতির আশঙ্কা করে অথবা তার সন্তানের ক্ষতির আশঙ্কা করে তবে তার জন্য সাওম ভঙ্গ করা বৈধ হবে। যদি নিজের ক্ষতির কোনো ভয় না থাকে, শুধু বাচ্চার ক্ষতির আশঙ্কা থাকে তাহলে সে অবস্থায় তাকে কাযা করার সাথে ফিদিয়া তথা প্রতিদিনের সাওমের পরিবর্তে একজন মিসকীনকে খাদ্যদান করতে হবে।
সাওম ভঙ্গের কারণসমূহ:
সাওম ভঙ্গের কারণ নিম্নরূপ:
১- রিদ্দা তথা মুরতাদ হয়ে গেলে সাওম ভঙ্গ হয়ে যাবে।
২- মারা গেলে।
৩- সাওম ভেঙ্গে ফেলার দৃঢ় নিয়ত করলে।
৪- সাওম রাখা বা ভেঙ্গে ফেলার ব্যাপারে সন্দিহান হলে।
৫- ইচ্ছাকৃত বমি করলে।
৬- পশ্চাত পথ দিয়ে বা ইনজেকশন করে শরীরে খাদ্য ঢুকালে।
৭- হায়েয ও নিফাসের রক্ত বের হলে।
৮- মুখে কফ জমা করে গিলে ফেললে।
৯- সিঙ্গা লাগালে সিঙ্গাকারী ও সিঙ্গাকৃত ব্যক্তি উভয়ের সাওম ভঙ্গ হয়ে যাবে।
১০- স্ত্রীর দিকে বারবার চেয়ে থাকার কারণে ইচ্ছাকৃত বীর্যপাত হলে সাওম ভেঙ্গে যাবে।
১১- স্ত্রীকে চুম্বন বা তার শরীর স্পর্শ বা হস্তমৈথুন বা যৌনাঙ্গ ব্যতীত অন্য পথে সহবাস করার কারণে মনি (বীর্যপাত) বা মযী বের হলে। 
১২- পেটে, গলায় বা ব্রেণে খাদ্য ও পানীয় জাতীয় কিছু চলে গেলে সাওম ভেঙ্গে যাবে।
সতর্কীকরণ:
রমযানে দিনের বেলায় যৌনাঙ্গ বা যৌনাঙ্গ ব্যতীত অন্য পথে ইচ্ছাকৃত সহবাস করলে সাওম ভেঙ্গে যাবে এবং এতে কাযা ও কাফফারা দু’টি-ই আদায় করতে হবে। এসব কাজ যদি ভুলে করে ফেলে তাহলে তার সাওম সহীহ হবে এবং তাকে কাযা ও কাফফারা কোনোটিই করতে হবে না।
কোনো নারীকে রমযানে দিনের বেলায় জোর করে সহবাস করা হলে বা না জানার কারণে সহবাস করলে বা সে নারী ভুলে সহবাস করলে তার সাওম সঠিক। তবে সে নারীকে জোরপূর্বক সহবাস করতে বাধ্য করা হলে তার ওপর শুধু কাযা করা ওয়াজিব হবে। আর সে ইচ্ছাকৃত এসব কাজে অনুগত হলে তাকে কাযা ও কাফফারা উভয়টি করতে হবে।
সাওমের কাফফারা হলো একজন মুমিন দাস মুক্ত করা। দাস মুক্ত করতে অক্ষম হলে দু’মাস একাধারে সাওম পালন করা। দু’মাস সাওম পালনে অক্ষম হলে ৬০ জন মিসকীনকে খাবার প্রদান করা। ৬০ জন মিসকীনকে খাবার প্রদান করতেও যদি অক্ষম হয় তবে তার থেকে কাফফারা রহিত হয়ে যাবে।
স্বামী যদি যৌনাঙ্গ ব্যতীত অন্য পথে সহবাস করে তাহলে স্বামীকে তা কাযা করতে হবে এবং আল্লাহর কাছে তাওবা করতে হবে।
রমযানের কাযা তাৎক্ষণিক আদায় করে দেওয়া সুন্নাত। কোনো ওযর ব্যতীত ইচ্ছাকৃত পরবর্তী রমযান পর্যন্ত বিলম্ব করলে তাকে কাযার সাথে প্রতিদিন একজন মিসকীনকে খাদ্য দান করতে হবে।
কেউ মানতের সাওম বা মানতের হজ যিম্মায় রেখে মারা গেলে তার অভিভাবকেরা তা কাযা করে দিবে।

যেসব দিন সাওম পালন করা মুস্তাহাব, মাকরূহ ও হারাম
ক- যেসব দিন সাওম পালন করা মুস্তাহাব:
নিম্নোক্ত দিনসমূহে সাওম পালন করা মুস্তাহাব:
-   আরাফার দিনের সাওম। আর তা হচ্ছে হাজী ব্যতীত অন্যরা নয় তারিখ সাওম পালন করবে।
-   মুহাররম মাসের নয় ও দশ বা দশও এগারো তারিখ সাওম পালন করা।
-   শাওয়ালের ছয়টি সাওম।
-   শা‘বান মাসের প্রথমার্ধে অর্থাৎ পনের তারিখের আগে সাওম পালন।
-   মুহাররম মাসে সাওম পালন করা।
-   প্রতিমাসের বেজোড় তিনদিন অর্থাৎ (১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ) সাওম পালন করা।
-   প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার সাওম পালন করা।
-   একদিন সাওম পালন করা আবার একদিন সাওম পালন না করা অর্থাৎ একদিন পরপর সাওম রাখা।
-   বিবাহ করতে অক্ষম যুবক-যুবতীদের সাওম পালন করা।
যেসব সাওম পালন করা মাকরূহ:
-   আরাফাতের ময়দানে অবস্থানরত হাজী ব্যক্তির আরাফার দিনে সাওম পালন।
-   শুধু জুমু‘আর দিন সাওম রাখা।
-   শা‘বান মাসের শেষের দিন সাওম পালন।
এসব দিন সাওম পালন করা মাকরূহ তানযিহী।
আর নিম্নের দিনগুলোতে সাওম পালন করা মাকরূহ তাহরিমী। সেগুলো হচ্ছে:
১- সাওমুল বিসাল তথা দু বা ততোধিক দিন বিনা ইফতারে লাগাতার সাওম পালন করা।
২- ইয়ামুশ-শাক তথা শা‘বান মাসের ত্রিশতম দিনে সাওম পালন করা।
৩- সারা বছর বিরতিহীনভাবে একাধারে সাওম পালন করা।
৪- স্বামী উপস্থিত থাকা অবস্থায় তার অনুমতি ব্যতীত স্ত্রীর নফল সাওম পালন করা।
যে দিনগুলোতে সাওম পালন করা হারাম:
আর নিম্নের দিনগুলোতে সাওম পালন করা হারাম। সেগুলো হচ্ছে:
১- ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিনে সাওম পালন করা হারাম।
২- আইয়্যামে তাশরীক তথা যিলহজের ১১, ১২ ও ১৩ তারিখ এ তিনদিন হাদই যবেহ করতে অক্ষম তামাত্তু ও কারিন হাজীগণ ব্যতীত অন্যদের সাওম পালন করা হারাম।
৩- মহিলাদের জন্য হায়েয ও নিফাসের দিনে সাওম পালন করা হারাম।
৪- অসুস্থ ব্যক্তি সাওম পালন করলে যদি তার অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকলে তার সাওম পালন করা হারাম।
=====

৫- ই‘তিকাফ ও এর বিধি-বিধান

প্রকারভেদ ও শর্তাবলী

ই‘তিকাফ

ই‘তিকাফের পরিচিতি:
শাব্দিক অর্থে ই‘তিকাফ অর্থ বাস করা, লেগে থাকা, অবস্থান করা ও আটকে রাখা।
পারিভাষিক অর্থে ইবাদতের উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট নিয়াতে ও নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে মসজিদে অবস্থান করা।
ই‘তিকাফ শরী‘আতসম্মত হওয়ার হিকমত:
১- ই‘তিকাফের মাধ্যমে দুনিয়ার কর্মব্যস্ততা থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহর ইবাদতে নিজের অন্তরকে নিয়োজিত করা।
২- মহান মাওলা আল্লাহর সমীপে তার আদেশ পালন, তার দরবারে তাঁর দয়া ও রহমত লাভের প্রত্যাশায় নিজেকে সমর্পণ করা।
ই‘তিকাফের প্রকারভেদ:
১- ওয়াজিব ই‘তিকাফ: মানতের ই‘তিকাফ পূর্ণ করা ওয়াজিব। যেমন কেউ বলল, আমি যদি অমুক কাজে সফল হই তাহলে তিনদিন ই‘তিকাফ করব অথবা যদি আমার অমুক কাজটি সহজ হয় তাহলে আমি ই‘তিকাফ করব।
২- সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ: এর উত্তম সময় হলো রমযান মাসের শেষ দশদিন ই‘তিকাফ করা।
ই‘তিকাফের রুকনসমূহ:
১- ই‘তিকাফকারী: কেননা ই‘তিকাফ এমন কাজ যার জন্য একজন ই‘তিকাফকারী প্রয়োজন।
২- মসজিদে অবস্থান করা: আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেছেন,
«لا اعتكاف إلا في مسجد جماعة».
“জামাত হয় এমন মসজিদ ছাড়া কোনো ই‘তিকাফ নেই”।[44]
কেননা ই‘তিকাফকারী যখন জামা‘আত হয় এমন মসজিদে ই‘তিকাফ করবে তখন সে সালাতের জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি নিতে পারবে। আর সালাতের পূর্ণ প্রস্তুতি হলো জামা‘আতে সালাত আদায় করা।
৩- ই‘তিকাফের স্থান: ই‘তিকাফকারী যেখানে ই‘তিকাফের জন্য অবস্থান করে।
ই‘তিকাফ শুদ্ধ হওয়ার শর্তাবলী:
১- ই‘তিকাফকারী মুসলিম হওয়া। অতএব কাফিরের ই‘তিকাফ সহীহ হবে না।
২- ভালো-মন্দ পার্থক্যকারী জ্ঞানসম্পন্ন হওয়া। অতএব, পাগল ও শিশুর ই‘তিকাফ শুদ্ধ হবে না।
৩- পুরুষের জন্য এমন মসজিদে ই‘তিকাফ করতে হবে যেখানে জামা‘আত অনুষ্ঠিত হয়। [নারীর জন্য যে কোনো মসজিদ হতে পারবে]
৪- ই‘তিকাফকারীকে জুনুবী তথা অপবিত্রতা, হায়েয ও নিফাস থেকে পবিত্র হতে হবে।
যেসব কারণে ই‘তিকাফ ভঙ্গ হয়ে যায়:
১- সহবাস করা, যদিও এতে বীর্য নির্গত না হয়। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿وَلَا تُبَٰشِرُوهُنَّ وَأَنتُمۡ عَٰكِفُونَ فِي ٱلۡمَسَٰجِدِۗ﴾ [البقرة: ١٨٧] 
“আর তোমরা মাসজিদে ই‘তিকাফরত অবস্থায় স্ত্রীদের সাথে মিলিত হয়ো না।” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৭]
২- সহবাসের দিকে ধাবিত করে এমন সব কাজ করা।
৩- বেহুশ ও পাগল হওয়া, চাই মাদক বা অন্য যেকোন কারণে হোক।
৪- মুরতাদ হলে।
৫- ওযর ব্যতীত মসজিদ থেকে বের হওয়া।
যেসব বৈধ ওযরে মসজিদ থেকে বের হওয়া যাবে:
যেসব কারণে ই‘তিকাফকারী মসজিদ বা ই‘তিকাফের স্থান থেকে বের হতে পারবে তা তিন ধরণের। সেগুলো হচ্ছে:
১- শর‘ঈ ওযর: যেসব মসজিদে জুমু‘আ ও ঈদের সালাত আদায় হয় না সেসব মসজিদে ই‘তিকাফ করলে জুমু‘আ ও ঈদের সালাতের জন্য বের হতে পারবে।
এর কারণ ই‘তিকাফ হচ্ছে গুনাহের কাজ ছেড়ে আল্লাহর নৈকট্য লাভের ইচ্ছা করা। আর জুমু‘আ ও ঈদের সালাত ছেড়ে দেওয়া নাফরমানী ও গুনাহের কাজ যা ই‘তিকাফের সাথে করা চলে না।
২- স্বভাবগত ওযর: যেমন পেশাব, পায়খানা বা স্বপ্নদোষ হলে ফরয গোসল করা ইত্যাদির জন্য মসজিদে ব্যবস্থা না থাকলে বের হওয়া। তবে এর শর্ত হচ্ছে যতটুকু প্রয়োজন শুধু ততটুকু সময় মসজিদের বাহিরে থাকা, এর চেয়ে বেশি সময় না থাকা।
৩- জরুরি ওযর: যেমন কেউ ই‘তিকাফ চালিয়ে গেলে তার সম্পদ হারিয়ে যাওয়া বা ধ্বংস হওয়া বা নিজের ক্ষতির আশঙ্কা করলে তখন বের হতে পারবে।
====

৬- হজ

হজের বিধি-বিধান
‘উমরা ও এর বিধি-বিধান

ইসলামের পঞ্চম রুকন হজ

১- হজের পরিচিতি:
হজ  (حج)শব্দের আভিধানিক অর্থ: ইচ্ছা করা ও কোনো গন্তব্যের দিকে গমন করা। কোনো কাজ বারবার করা।
পারিভাষিক অর্থে: বিশেষ ইবাদত আদায়ের উদ্দেশ্যে সুনির্দিষ্ট সময়ে মক্কা গমন করার ইচ্ছা করা।
২- ইসলামে হজের অবস্থান:
হজ ইসলামের পঞ্চ রুকনের মধ্যে পঞ্চম রুকন। নবম হিজরিতে হজ ফরয হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿وَلِلَّهِ عَلَى ٱلنَّاسِ حِجُّ ٱلۡبَيۡتِ مَنِ ٱسۡتَطَاعَ إِلَيۡهِ سَبِيلٗاۚ٩٧﴾ [ال عمران: ٩٧] 
“এবং সামর্থ্যবান মানুষের ওপর আল্লাহর জন্য বায়তুল্লাহর হজ করা ফরয”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৯৭]
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«بُنِيَ الإِسْلاَمُ عَلَى خَمْسٍ: شَهَادَةِ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ، وَإِقَامِ الصَّلاَةِ، وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ، وَالحَجِّ، وَصَوْمِ رَمَضَانَ».
“ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি। এ কথার সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ ব্যতীত কোনো (সত্য) ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল, সালাত কায়েম করা, যাকাত দেওয়া, হজ করা এবং রমযান মাসের সিয়াম পালন করা”।[45]
৩- হজের হুকুম:
আল্লাহ তার (সক্ষম) বান্দার ওপর জীবনে হজ পালন করা ফরয করেছেন।
« الحج مَرَّةً، فَمَنْ زَادَ فَهُوَ تَطَوُّعٌ»
“হজ জীবনে একবার, কেউ এর চেয়ে বেশি করলে তা তার জন্য অতিরিক্ত (নফল)”।[46]
হজের অর্থ: বিশেষ ইবাদত আদায়ের উদ্দেশ্যে সুনির্দিষ্ট সময়ে মক্কা গমন করার ইচ্ছা করা।
৪- উমরা:
উমরার পরিচিতি: উমরার শাব্দিক অর্থ পরিদর্শন করা, সাক্ষাৎ করা। আর পারিভাষিক অর্থে উমরা হলো: কতিপয় নির্দিষ্ট কাজ নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে পালন করা।
‘উমরার হুকুম:
জীবনে একবার উমরা পালন করা ওয়াজিব।
৫- হজ ও উমরা শরী‘আতসম্মত হওয়ার হিকমত:
ইসলামে হজ ও উমরা শরী‘আতসম্মত হওয়ার অন্যতম হিকমত হলো পাপ-পঙ্কিলতা থেকে মানুষের অন্তরকে পবিত্র করা যাতে আখিরাতে আল্লাহর দেওয়া সম্মানিত স্থানের (জান্নাতের) অধিবাসী হওয়া যায়। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
« من حج هذا البيت فَلَمْ يَرْفُثْ، وَلَمْ يَفْسُقْ، رَجَعَ كَيَوْمِ وَلَدَتْهُ أُمُّهُ»
“যে ব্যক্তি এ ঘরের হজ পালন করলো এবং অশালীন কথাবার্তা ও গুনাহ থেকে বিরত রইল, সে নবজাতক শিশু, যাকে তার মা এ মুহূর্তেই প্রসব করেছে, তার ন্যায় নিষ্পাপ হয়ে ফিরবে”।[47]
৬- হজ ও উমরা ফরয হওয়ার শর্তাবলী:
হজ ও উমরা ফরয হওয়ার শর্তাবলী নিম্নরূপ:
১- ইসলাম।
২- আক্বল বা জ্ঞানসম্পন্ন হওয়া।
৩- বালিগ হওয়া।
৪- হজে গমনের সামর্থ থাকা। অর্থাৎ হজে যাওয়া আসার যাতায়াত খরচ, খাদ্য ইত্যাদির সামর্থ্য থাকা। 
৫- স্বাধীন হওয়া।
৬- উপরের পাঁচটি শর্তের সাথে মহিলাদের জন্য অতিরিক্ত আরেকটি শর্ত রয়েছে, তা হলো মুহরিম থাকা। মুহরিম ব্যতীত হজ পালন করলে গুনাহগার হবে, যদিও তার হজ আদায় হয়ে যাবে।
-  শিশু হজ করলে তার হজ নফল হিসেবে সহীহ হবে, তবে বালিগ হলে তার ওপর হজ পালন করা ফরয হবে।
-  কারো ওপর হজ ফরয হওয়ার পরে হজ পালন না করে মারা গেলে তার পরিত্যক্ত সম্পত্তি থেকে তার পক্ষ থেকে হজ করানো ফরয।
- কেউ নিজে হজ পালন না করলে সে অন্যের পক্ষ থেকে হজ পালন করতে পারবে না। নফল হজ বা উমরা পালনের জন্য যেকোন কাউকে স্থলাভিষিক্ত করা সহীহ।
হজ তথা মানাসিকের প্রকারভেদ:
১- শুধু উমরা পালন করা।
২- শুধু হজ পালন করা।
৩- হজ ও উমরা একত্রে পালন করা।
৪- উমরা পালন করে কিছুদিন ইহরাম থেকে মুক্ত হয়ে আবার হজ পালন করা।
-   শুধু শুধু উমরা পালন বছরের যে কোনো সময় করা যায়। তবে সর্বোত্তম উমরা হলো যা হজের সাথে বা রমযান মাসে পালন করা হয়।
-   ইফরাদ হজ তথা শুধু হজ হলো হজের দিনে শুধু হজের জন্য ইহরাম বাঁধা, এর আগে বা পরে উমরা পালন না করা।
-   আর কিরান তথা হজের সাথে উমরা হলো শুরু থেকেই হজ ও উমরার জন্য ইহরাম বাঁধা এবং হজ ও উমরার কিছু কাজ একত্রে করা। ফলে হজ ও উমরার জন্য একবারই তাওয়াফ ও সা‘ঈ করা।
-   আর তামাত্তু হজ হলো সবচেয়ে উত্তম হজ। হজের মাসে প্রথমে উমরার জন্য ইহরাম বাঁধা। অতঃপর উমরার জন্য সা‘ঈ ও তাওয়াফ শেষে হালাল হয়ে যাওয়া। অতঃপর একই বছর যিলহজ মাসের আট তারিখ হজের জন্য ইহরাম বাঁধা এবং তাওয়াফ, সা‘ঈ, আরাফাতের ময়দানে অবস্থান ইত্যাদি হজের কার্য সম্পন্ন করা। তামাত্তু ও কারিন পালনকারীর উপর হাদী যবেহ করা ওয়াজিব।
হজ ও উমরার রুকনসমূহ:
-   হজের রুকন চারটি। সেগুলো হলো: ইহরাম, বাইতুল্লাহর তাওয়াফ, সাফা ও মারওয়ায় সা‘ঈ ও ‘আরাফায় অবস্থান। এ চারটি রুকনের কোনো একটি ছুটে গেলে হজ বাতিল হয়ে যাবে।
-   উমরার রুকন তিনটি। সেগুলো হলো: ইহরাম, তাওয়াফ ও সা‘ঈ। অতএব, এগুলো আদায় না করলে উমরা আদায় হবে না। এ সব রুকনের বিস্তারিত বিবরণ নিচে দেওয়া হলো:
প্রথম রুকন: ইহরাম
ইহরাম হলো: হজ বা উমরা পালনের নিয়াতে হজ বা উমরার কাজে প্রবেশের নিয়ত করা এবং সাধারণ সেলাই করা কাপড় ছেড়ে ইহরামের পোশাক পরিধান করা।
ইহরামের ওয়াজিবসমূহ:
ইহরামের ওয়াজিব তিনটি। সেগুলো হচ্ছে:
১- মিকাত থেকে ইহরাম বাঁধা:
শরী‘আত প্রণেতা যেসব জায়গা থেকে হজ ও উমরার জন্য ইহরাম বাঁধতে নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। সুতরাং হজ বা উমরা পালনকারীকে ইহরামের নিয়ত ব্যতীত এ সব স্থান অতিক্রম করা জায়েয নেই।
২- সেলাইবিহীন কাপড় পরিধান করা:
পুরুষ মুহরিম সেলাইকৃত জামা, কামিছ, টুপিওয়ালা জামা, পাগড়ি পরবে না। কোনো কিছু দিয়ে মাথা ঢেকে রাখবে না। জুতো পরবে, চামড়ার মোজা বা কাপড়ের মোজা পরবে না, তবে জুতো না পেলে চামড়ার মোজা বা কাপড়ের মোজা পরতে পারবে। নারী নিকাব ও হাতমোজা পরবে না।
৩- তালবিয়া পাঠ করা। তালবিয়া হলো নিম্নোক্ত এ দো‘আ পড়া।
«لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ، لَبَّيْكَ لاَ شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ، إِنَّ الحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالمُلْكَ، لاَ شَرِيكَ لَكَ»
“আমি উপস্থিত, হে আল্লাহ! আমি উপস্থিত। আপনার কোনো শরীক নেই। নিশ্চয় প্রশংসা ও নি‘আমত আপনার এবং রাজত্বও, আপনার কোনো শরীক নেই”।
মুহরিম মিকাত থেকে ইহরাম পরিধান করার সময় তালবিয়া পড়বে এবং এ দো‘আ পাঠ না করে মিকাত অতিক্রম করবে না। পুরুষ উচ্চস্বরে এবং (নারীরা আস্তে আস্তে) বেশি বেশি পরিমাণে ও বার বার প্রত্যেক উঠা, বসা, চলা, ফেরা, সালাতের আগে-পরে ও কারো সাক্ষাতে তালবিয়া পাঠ করবে। উমরা আদায়কারী উমরার তাওয়াফ শেষ করলে তালবিয়া পাঠ শেষ করবে এবং হজ আদায়কারী জামরায়ে ‘আকাবাতে পাথর নিক্ষেপ শেষে তালবিয়া পাঠ সমাপ্ত করবে।
দ্বিতীয় রুকন: তাওয়াফ
তাওয়াফ হলো কা‘বা ঘরের চারপাশে সাতবার ঘোরা। এর সাতটি শর্ত। সেগুলো হচ্ছে:
১- তাওয়াফ শুরু করার নিয়ত করা।
২- ছোট বড় সব ধরণের অপবিত্রতা থেকে পবিত্র থাকা।
৩- সতর ঢেকে রাখা। যেহেতু তাওয়াফ সালাতের মতোই।
৪- মসজিদের ভিতর দিয়ে বাইতুল্লাহর তাওয়াফ করা, যদিও বাইতুল্লাহ থেকে দুর দিয়ে হয়।
৫- তাওয়াফের সময় বাইতুল্লাহ যেন তাওয়াফকারীর বাম দিকে থাকে।
৬- তাওয়াফে সাতটি চক্কর দেওয়া।
৭- ধারাবাহিকভাবে ও বিরতিহীন তাওয়াফ করা। ওযর ব্যতীত বিলম্ব করবে না।
তাওয়াফের সুন্নাতসমূহ:
১- রমল করা: পুরুষদের জন্য তাওয়াফে কুদূম তথা আগমনি তাওয়াফের প্রথম তিন চক্করে রমল করা সুন্নাত। রমল হলো তাওয়াফের সময় দ্রুত পদে চলা। নারীরা রমল করবে না।[48]
২- ইযতিবা করা: তাওয়াফে কুদূমের সময় ইযতিবা করা। ইযতিবা হলো ডান বগলের নিচে চাদর রেখে ডান কাঁধ উন্মুক্ত রাখা। এটা শুধু পুরুষের জন্য প্রযোজ্য, নারীদের জন্য নয়। সাত বার তাওয়াফের পুরো সময়ই ইযতিবা করবে।
৩- হাজরে আসওয়াদ চুম্বন: তাওয়াফ শুরু করার সময় ও সম্ভব হলে প্রতি চক্করে হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করা। সম্ভব হলে রুকনে ইয়ামানী স্পর্শ করা।
৪- প্রথম চক্কর তাওয়াফ শুরু করার সময় এ দো‘আ পড়া:
«بسم اللّه واللّه أكبر. اللهم إيمانا بك وتصديقا بكتابك ووفاءً بعهدك واتباعا لسنة نبيك r».
“বিসমিল্লাহ আল্লাহু আকবর, হে আল্লাহ আপনার ওপর ঈমান, আপনার কিতাবের ওপর সত্যায়ন, আপনার ওয়াদা পূরণ ও আপনার নবীর অনুসরণে (আমি তাওয়াফ শুরু করছি)।”
৫- তাওয়াফের সময় দো‘আ করা: তাওয়াফের সময় আল্লাহর কাছে যে কোনো দো‘আ করতে পারে, তবে প্রত্যেক চক্কর শেষ করার সময় এ দো‘আ পড়া সুন্নাত:
﴿رَبَّنَآ ءَاتِنَا فِي ٱلدُّنۡيَا حَسَنَةٗ وَفِي ٱلۡأٓخِرَةِ حَسَنَةٗ وَقِنَا عَذَابَ ٱلنَّارِ ٢٠١﴾ [البقرة: ٢٠١] 
“হে আমাদের রব, আমাদেরকে দুনিয়াতে কল্যাণ দিন। আর আখিরাতেও কল্যাণ দিন এবং আমাদেরকে আগুনের ‘আযাব থেকে রক্ষা করুন”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২০১]
৬- তাওয়াফের সময় মুলতাযিমে দো‘আ করা। আর মুলতাযিম হলো হাজরে আসওয়াদ ও বাইতুল্লাহর দরজার মধ্যবর্তী জায়গা।
৭- সাত তাওয়াফ শেষে মাকামে ইবরাহীমে দু’রাকা‘আত সালাত আদায় করবে। এ সময় মাকামে ইবরাহীম তার ও কা‘বার মাঝখানে রেখে এর পিছনে দু রাকা‘আত সালাত আদায় করবে। প্রথম রাকা‘আতে সূরা আল-ফাতিহার পরে ‘সূরা আল-কাফিরূন’ এবং দ্বিতীয় রাকা‘আতে সূরা আল-ফাতিহার পরে সূরা আহাদ তথা কুল হুআল্লাহু আহাদ পড়বে।
৮- এ দু’রাকাত সালাত শেষে যমযমের পানি পান করবে।
৯- সা‘ঈ করার আগে হাজরে আসওয়াদের কাছে গিয়ে তা স্পর্শ করবে।
তৃতীয় রুকন: সা‘ঈ:
সা‘ঈ হলো সাফা ও মারওয়ার মাঝে ইবাদতের নিয়াতে হাঁটা। এটি হজ ও উমরার রুকন।
ক- সা‘ঈর শর্তাবলী:
সা‘ঈর শর্তাবলী নিম্নরূপ:
১- নিয়ত করা: কেননা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«إِنَّمَا الأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ»
“প্রত্যেক কাজ নিয়তের ওপর নির্ভরশীল”[49]
২- তাওয়াফ ও সা‘ঈর মধ্যে তারতীব ঠিক রাখা। আগে তাওয়াফ করা, পরে সা‘ঈ করা।
৩- সা‘ঈর সাত চক্করের মাঝে ধারাবাহিকতা ও বিলম্ব না করা, তবে সামান্য বিলম্বে কোনো অসুবিধে হবে না, বিশেষ করে তা যদি প্রয়োজনে করা হয়।  
৪- সাত চক্কর পূর্ণ করা। সাতের কম করলে বা কোনটি আংশিক করলে সা‘ঈ আদায় হবে না। যেহেতু সা‘ঈ মূলত সাত চক্কর পূর্ণ করার সাথে শর্তযুক্ত।
৫- বিশুদ্ধ তাওয়াফের পরে হওয়া, চাই তা ওয়াজিব তাওয়াফ হোক বা সুন্নাত তাওয়াফ।
খ- সা‘ঈর সুন্নাতসমূহ:
সা‘ঈর সুন্নাতসমূহ নিম্নরূপ:
১- পুরুষের জন্য দুই সবুজ চিহ্নিত জায়গা যেখানে ইসমাঈল আলাইহিস সালামের মা হাজের আলাইহাস সালাম পায়ের দ্বারা আঘাত করে চলেছেন সে জায়গা সাধ্যানুযায়ী দ্রুত অতিক্রম করা সুন্নাত।  দুর্বল ও মহিলারা স্বাভাবিক গতিতে হাঁটবে।
২- দো‘আর জন্য সাফা ও মারওয়ায় উঠা।
৩- সাফা ও মারওয়ায় সাতবার সা‘ঈ করার সময় বেশি বেশি দো‘আ পড়া।
৪- সাফা ও মারওয়ায় তিনবার “আল্লাহু আকবর” ও এ দো‘আ পড়া:
«لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ، أَنْجَزَ وَعْدَهُ، وَنَصَرَ عَبْدَهُ، وَهَزَمَ الْأَحْزَابَ وَحْدَهُ»
“আল্লাহ ব্যতীত কোনো সত্য ইলাহ নেই, তিনি এক। তাঁর কোনো অংশীদার নেই। রাজত্ব তাঁরই। প্রশংসাও তাঁর। সকল বিষয়ের ওপর তিনি ক্ষমতাবান। আল্লাহ ব্যতীত কোনো সত্য ইলাহ নেই, তিনি এক। আল্লাহ তাঁর অঙ্গীকার পূর্ণ করেছেন ও তাঁর বান্দাকে সাহায্য করেছেন এবং একাই শত্রুদেরকে পরাজিত করেছেন”।[50]
৫- তাওয়াফের সাথে সাথেই সা‘ঈ করা। তবে কোনো শর‘ঈ ওযর থাকলে ভিন্ন কথা।
চতুর্থ রুকন: ‘আরাফাতের ময়দানে অবস্থান
‘আরাফাতের ময়দানে অবস্থান বলতে ৯ যিলহজ যোহরের পর থেকে ১০ই যিলহজ ঈদের দিন ফজরের সালাতের পূর্ব পর্যন্ত সেখানে অবস্থানের নিয়াতে কিছুক্ষণ থাকা। কেউ ঈদের দিনের ফজরের সালাতের আগে অবস্থান করতে না পারলে তার ‘আরাফাতের ময়দানে অবস্থান শুদ্ধ হবে না এবং তার হজ বাতিল বলে গণ্য হবে। তখন সে উমরা করে হালাল হয়ে যাবে। পরের বছর সে উক্ত হজ পালন করবে। হজের ইহরাম বাঁধার সময় বাধাপ্রাপ্ত হলে হালাল হয়ে যাওয়ার শর্ত না করে থাকলে হাদীও প্রদান করতে হবে। কেউ বাইতুল্লায় যেতে শত্রু দ্বারা আক্রান্ত হলে হাদী পাঠাবে এবং যেখানে বাধা পাবে সেখানেই হালাল হয়ে যাবে।
কেউ অসুস্থ বা অর্থ হারিয়ে যাওয়ার কারণে হজে আসতে বাধাগ্রস্ত হলে তখন সে শর্তকারী হলে (সময় এ কথা বলা: আমার গন্তব্য সেখানেই শেষ যেখানে আমি বাধাগ্রস্ত হবো) তখন সেখানে হালাল হয়ে যাবে, তাকে কিছু হাদী হিসেবে দিতে হবে না। আর যদি শর্ত না করে থাকে তাহলে হালাল হবে এবং তার সাধ্যমত হাদী পাঠাতে হবে।
হজের ওয়াজিবসমূহ:
হজের ওয়াজিব সাতটি। তাহলো:
১ - মিকাত থেকে ইহরাম বাঁধা।
২- যে ব্যক্তি দিনের বেলায় ‘আরাফাতে অবস্থান করবে তার জন্য সূর্যাস্ত পর্যন্ত ‘আরাফাতে অবস্থান করা।
৩- কুরবানীর রাত মুযদালিফায় মধ্যরাতের বেশি অবস্থান করা।
৪- আইয়ামে তাশরীকে মিনার রাতগুলো মিনায় যাপন করা।
৫- ধারাবাহিকভাবে তিন জামরায় কঙ্কর নিক্ষেপ করা।
৬- মাথা মুণ্ডন বা চুল ছোট করা।
৭- বিদায়ী তাওয়াফ।
উমরার ওয়াজিবসমূহ:
উমরার ওয়াজিব দু’টি:
১- মক্কাবাসী হালাল এলাকা থেকে এবং মক্কার বাইরে থেকে আগতরা মিকাত থেকে ইহরাম বাঁধা।
২- মাথা মুণ্ডন বা চুল ছোট করা।
কেউ উপরোক্ত রুকনের কোনো একটি ছেড়ে দিলে তার হজ ও উমরা আদায় হবে না।
কারো হজ ও উমরার ওয়াজিব ছুটে গেলে তাকে দম (প্রাণি যবাই) দিতে হবে। তবে সুন্নাত ছুটে গেলে তাকে কিছু দিতে হবে না।
ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজসমূহ:
হজ বা উমরা অবস্থায় এসব নিষিদ্ধ কাজ করলে তার ওপর ফিদিয়া তথা যবেহ করা ওয়াজিব হয়। অথবা মিসকীনদের খাদ্য দান করতে হবে। অথবা  সাওম পালন করবে। হজ অথবা উমরার ইহরাম বাঁধলে নিম্নোক্ত কাজসমূহ নারী পুরুষ উভয়ের জন্য করা হারাম:
১- শরীরের যেকোনো অঙ্গ থেকে চুল মুণ্ডানো, কাটা অথবা উপড়ে ফেলা।
২- হাত ও পায়ের নখ কাটা।
৩- এমন কোনো কাপড় দিয়ে পুরুষের মাথা ঢেকে রাখা যা মাথার সাথে লেগে থাকে। নারীদের চেহারা ঢেকে রাখা, তবে ভিনপুরুষ থাকলে ঢেকে রাখবে।
৪- পুরুষের ক্ষেত্রে সেলাই-করা পোশাক পরা। সেলাই করা পোশাক অর্থ এমন পোশাক যা মানুষের শরীরের মাপে অথবা কোনো অঙ্গের মাপে সেলাই করে তৈরি করা হয়েছে, যেমন স্বাভাবিক পরিধানের পোশাক, প্যান্ট-পাজামা, জামা, ইত্যাদি।
৫- সুগন্ধি লাগানো।
৬- ভক্ষণ করা হয় এমন স্থলজ শিকার-জন্তু হত্যা করা বা শিকার করা।
৭- বিবাহ করা।
৮- সহবাস করা। প্রথম তাহাল্লুল  হওয়ার আগে (১০ তারিখ মাথা মুণ্ডানো বা চুল ছোট করার পূর্বে) সহবাস করলে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের হজ বাতিল হয়ে যাবে। তাকে বাতিল হওয়া সত্বেও তাকে বুদনা তথা পূর্ণ একটি উট দম হিসেবে দিতে হবে, হজের বাকী কাজ পূর্ণ করতে হবে এবং পরের বছর আবার হজ করতে হবে। আর প্রথম তাহাল্লুল (১০ তারিখ মাথা মুণ্ডানো বা চুল ছোট করার পরে) সহবাস হলে তার হজ বাতিল হবে না, তবে তাকে ছাগল দম হিসেবে যবাই করতে হবে।
৯- স্ত্রীর যৌনাঙ্গ ছাড়া অন্যভাবে সহবাস করলে এতে বীর্যাপাত হলে বুদনা ওয়াজিব হবে আর বীর্যাপাত না হলে ছাগল ওয়াজিব হবে। তবে উভয় অবস্থাতেই হজ বাতিল হবে না।
ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজের বিধানের ক্ষেত্রে মহিলারা পুরুষের মতোই; তবে সেলাইকৃত কাপড় পরিধান করার ব্যাপারে আলাদা। তারা ইচ্ছামতো সেলাইকৃত জামা-কাপড় পরতে পারবে তবে তা অশ্লীল হতে পারবে না। তারা মাথা ঢেকে রাখবে এবং চেহারা খোলা রাখবে, তবে গাইরে মুহরিম তথা পরপুরুষ থাকলে চেহারাও ঢেকে রাখবে।
হজে তিনটি কাজের যেকোন দু’টি কাজ করলে প্রথম তাহাল্লুল বা প্রাথমিকভাবে নিষেধাজ্ঞামুক্ত হয়ে যায়। সেগুলো হচ্ছে:
১- তাওয়াফ 
২- পাথর নিক্ষেপ ও
৩- মাথার চুল মুণ্ডানো বা কাটা।
তামাত্তু হজ পালনকারী মহিলা তাওয়াফের আগে হায়েযগ্রস্ত হলে এবং সে হজের কার্যক্রম ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা করলে তখন সে ইহরাম বাঁধবে এবং এতে সে ক্বারিন হজকারী হিসেবে গণ্য হবে। হায়েয ও নিফাসগ্রস্ত নারীরা তাওয়াফ ব্যতীত হজের সব কাজ করবে, শুধু তাওয়াফটি পবিত্র হলে আদায় করবে।
মুহরিম ব্যক্তির জন্য খাওয়া যোগ্য পশু যেমন, মুরগি ইত্যাদি যবেহ করা বৈধ। হিংস্র ও ক্ষতিকর প্রাণী যেমন, সিংহ, নেকড়ে বাঘ, চিতাবাঘ, সাপ, বিচ্চু, ইঁদুর ও সব ধরণের ক্ষতিকর প্রাণি হত্যা করা জায়েয। এমনিভাবে তার জন্য সামুদ্রিক প্রাণী শিকার করা ও খাওয়া জায়েয।
মুহরিম ও গাইরে মুহরিম সকলের জন্য মক্কার হারাম এলাকার গাছ কাটা ও আগাছা উপড়ে ফেলা হারাম। তবে ইযখির কাটা যাবে। এমনিভাবে হারাম এলাকার প্রাণীও হত্যা করা হারাম। কেউ এসব করলে তাকে ফিদিয়া দিতে হবে। মদীনার হারাম সীমানা থেকেও গাছ কাটা হারাম, তবে কেউ গাছ কেটে ফেললে তাকে কিছু ফিদিয়া দিতে হবে না।
কারো উল্লিখিত সহবাস ব্যতীত ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজের কোনো একটি করার বিশেষ প্রয়োজন দেখা দিলে যেমন, মাথার চুল মুণ্ডানো বা সেলাইকৃত পোশাক পরা ইত্যাদি করলে তাকে ফিদিয়া দিতে হবে। সে নিচের যেকোন একটি আদায়ের মাধ্যমে এ ফিদিয়া আদায় করতে পারবে। সেগুলো হলো:
১- তিনদিন সাওম পালন করবে।
২- অথবা ছয়জন মিসকীনকে খাদ্য দিবে। প্রত্যেককে এক মুদ গম বা চাল বা এ জাতীয় খাদ্য দান করতে হবে।
৩- অথবা ছাগল যবেহ করতে হবে।
কেউ অজ্ঞতাবশত বা ভুলে বা জোরপূর্বক ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজ করলে সে গুনাহগার হবে না এবং তাকে কোনো ফিদিয়াও দিতে হবে না। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذۡنَآ إِن نَّسِينَآ أَوۡ أَخۡطَأۡنَا﴾ [البقرة: ٢٨٦] 
“হে আমাদের রব! আমরা যদি ভুলে যাই, অথবা ভুল করি তাহলে আপনি আমাদেরকে পাকড়াও করবেন না।” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৮৬]
কেউ ইহরাম অবস্থায় ইচ্ছাকৃত স্থলজ প্রাণী হত্যা করলে তাকে অনুরূপ প্রাণী ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, উক্ত প্রাণী যবাই করে হারামের অধিবাসী মিসকীনদেরকে খাদ্য খাওয়াতে হবে অথবা এর মূল্যে খাদ্য ক্রয় করে তা মিসকীনকে খাওয়াতে হবে, প্রত্যেক মিসকীনকে এক মুদ পরিমাণ খাদ্য দিতে হবে। অথবা প্রত্যেক মুদের পরিবর্তে একদিন সাওম পালন করতে হবে। আর হত্যাকৃত প্রাণীর যদি অনুরূপ প্রাণী পাওয়া না যায় তাহলে তাকে উক্ত প্রাণীর মূল্য ধার্য করে সে মূল্য দ্বারা খাদ্য ক্রয় করে তা হারামের অধিবাসী মিসকীনদেরকে খাদ্য খাওয়াতে হবে। প্রত্যেক মিসকীনকে এক মুদ পরিমাণ খাদ্য দিতে হবে। অথবা প্রত্যেক মুদের পরিবর্তে একদিন সাওম পালন করতে হবে।
বীর্যপাত ছাড়া সহবাসের ফিদিয়া উপরোক্ত বিশেষ প্রয়োজনে ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজে লিপ্ত হওয়ার ফিদিয়ার মতোই। অর্থাৎ সাওম পালন বা খাদ্য দান বা ছাগল যবেহ করা।
আর হজে প্রাথমিক নিষেধাজ্ঞামুক্ত হওয়ার আগে সহবাস করলে বুদনা (উট) ফিদিয়া দিতে হবে। উট যবেহ করতে অক্ষম হলে হজের দিনগুলোতে তিনদিন ও হজের পরে বাড়ি ফিরে বাকী সাত দিন সাওম পালন করতে হবে। আর প্রাথমিক নিষেধাজ্ঞামুক্ত হওয়ার পরে সহবাস করলে শুধু কষ্টের কারণে করা কাজের ফিদিয়া (অর্থাৎ সাওম পালন বা মিসকীনকে খাদ্য দান বা ছাগল যবেহ করা) দিলেই হবে।
তামাত্তু‘ ও ক্বারিন হজ আদায়কারী মক্কাবাসী না হলে তাদের ওপর হাদী তথা ছাগল বা উটের সাত ভাগের একভাগ বা গরুর সাত ভাগের একভাগ যবেহ করা ওয়াজিব। আর কেউ হাদী যবেহ করতে না পারলে সে হজের দিনগুলোতে তিনদিন ও বাড়ি ফিরে বাকী সাত দিন সাওম পালন করবে।
হজ পালনে বাধাগ্রস্ত ব্যক্তি হাদী যবেহ করতে না পারলে দশ দিন সাওম পালন করে হালাল হবে।
কেউ একই ধরনের নিষিদ্ধ কাজ বারবার সম্মুখীন হলে সে ফিদিয়া আদায় না করে থাকলে একবার ফিদিয়া আদায় করলেই হবে, তবে শিকার করলে তার জন্য আলাদা আলাদা ফিদিয়া দিতে হবে। আর কেউ ভিন্ন ধরণের নিষিদ্ধ কাজ একাধিক বার করলে যেমন, একবার মাথা মুণ্ডন করলো, তারপরে নখ কাটলো তাকে প্রত্যেকটি কাজের জন্য আলাদা আলাদা ফিদিয়া আদায় করতে হবে।
মিকাত
মিকাতের প্রকারভেদ:
মিকাত দু’প্রকার। তাহলো:
১- মিকাত যামানী বা সময়ের মিকাত। তা হলো হজের মাসসমূহ। অর্থাৎ শাওয়াল, যিলকদ ও যিলহজ মাস।
২- মিকাতে মাকানী বা স্থানের মিকাত। হজ বা উমরা পালনকারীকে ইহরামের নিয়ত ব্যতীত এ সব স্থান অতিক্রম করা হারাম। এগুলো পাঁচটি:
ক- যুলহুলাইফা: যুলহুলাইফা মদীনাবাসী ও মদীনার দিক থেকে আসা জল, স্থল বা আকাশসীমার হাজীদের মিকাত। এটি মক্কা থেকে ৪৩৫ কি.মি দূরে এবং মক্কা থেকে সবচেয়ে দূরবর্তী মিকাত। 
খ- আল-জুহফা: এটি সিরিয়া, মিসরসহ সে দিক থেকে আসা জল, স্থল বা আকাশসীমার হাজীদের মিকাত। এটি রাবেগ শহরের কাছে অবস্থিত মক্কা থেকে ১৮০ কি.মি দূরে অবস্থিত। বর্তমানে লোকেরা সেটার বদলে রাবেগ শহর থেকে ইহরাম বাঁধে।
গ- ইয়ালামলাম: এটি ইয়েমেন ও ইয়ামেনের দিক থেকে আসা জল, স্থল বা আকাশসীমার হাজীদের মিকাত। এটি মূলতঃ একটি উপত্যকা যা মক্কা থেকে ৯২ কি.মি দূরে অবস্থিত।
ঘ- কারনুল মানাযিল: এটি নাজদ, তায়েফ ও এদিক থেকে দিক থেকে আসা জল, স্থল বা আকাশসীমার হাজীদের মিকাত। বর্তমানে এর নাম ‘আস-সাইলুল কাবীর’। মক্কা থেকে ৭৫ কি.মি দূরে অবস্থিত। ওয়াদি মুহাররাম কারনুল মানাযিলের সবচেয়ে উঁচু স্থান।
ঙ- যাতু ইরক: এটি ইরাক, খোরাসান, নজদের মধ্য অঞ্চল ও উত্তরাঞ্চল ও এর ওপারের দেশবাসীদের দিক থেকে আসা জল, স্থল বা আকাশসীমার হাজীদের মিকাত। এটি একটি উপত্যকা। এটি ‘দরীবা’ নামে পরিচিত। এটি মক্কা থেকে প্রায় ১০০ কি.মি দূরে অবস্থিত। 
এসব মিকাত উপরোক্ত অঞ্চলে বসবাসকারী ও যারা এ দিক থেকে হজ ও উমরা আদায় করার জন্য অতিক্রম করবে তাদের মিকাত।
যাদের বাড়ি উপরোক্ত মিকাতের অভ্যন্তরে মক্কার দিকে, তাদের হজ ও উমরার মিকাত নিজের ঘর থেকে শুরু করতে হবে। তবে যাদের বাড়ি মক্কার মধ্যে তারা হারাম এলাকার বাড়ি থেকে বের হয়ে ‘হিল’ বা হালাল এলাকায় এসে উমরার নিয়ত করবে। আর হজের জন্য মক্কায় বসেই নিয়ত করবে।
যাদের পথ এসব মিকাতের পথে পড়ে না তারা তাদের মিকাতের সর্বাধিক কাছাকাছি ও সমান সীমায় পৌঁছলে সেখান থেকে ইহরাম বাঁধবে। চাই তারা বিমান বা গাড়ি বা নৌযান যেকোনো পথে আসুক।
ইহরাম ছাড়া এসব মিকাত অতিক্রম করা জায়েয নেই। কেউ ইহরাম ছাড়া এসব স্থান অতিক্রম করলে তাকে সেখানে ফিরে যেতে হবে এবং সেখান থেকে ইহরাম বাঁধতে হবে। আর যদি সেখানে ফিরে যাওয়া সম্ভব না হয় তাহলে যেখানে আছে সেখান থেকেই ইহরাম বাঁধবে এবং তাকে দম দিতে হবে। তার হজ ও উমরা সহীহ হবে। আর মিকাতের আগে থেকেই ইহরাম বাঁধলে মাকরূহসহ জায়েয হবে।

৭- কুরবানী ও আক্বীকা

কুরবানী
কুরবানী ও আইয়্যামে তাশরীকের (১১, ১২ ও ১৩ যিলহজ) দিনে কুরবানীর নিয়াতে উট, গরু ও ছাগল যবাই করা। এটি সুন্নাত।
কুরবানী যবেহ করার সময়:
ঈদুল আযহার দিনে ঈদের সালাতের পর থেকে আইয়্যামুত তাশরীক তথা ১১, ১২ ও ১৩ই যিলহজ পর্যন্ত কুরবানীর সময়।   
-  কুরবানীর গোশত তিনভাগ করে বিতরণ করা সুন্নাত। তিনভাগের একভাগ নিজে খাবে, একভাগ আত্মীয়-স্বজনকে হাদিয়া দিবে এবং একভাগ দান করবে।
-  কুরবানী করা অনেক ফযীলতপূর্ণ। কেননা এতে নিজের পরিবার পরিজনের জন্য প্রশস্ততা, গরিব মিসকিনের উপকারিতা ও তাদের অভাব পূরণ হয়।
-  কুরবানী ও হাদী উটের দ্বারা করলে কমপক্ষে পাঁচ বছর, গরুর দুই বছর বছর, ভেড়ার ছয় মাস ও ছাগলের এক বছর বয়স হতে হবে।
-  একটি ছাগল দ্বারা একজন কুরবানী দিতে পারবে। আর উট ও গরু দ্বারা সাতজন কুরবানী দিতে পারবে। তাছাড়া একটি ছাগল বা উট বা গরু দিয়ে নিজের ও পরিবারের পক্ষ থেকে কুরবানী দেওয়া জায়েয। তবে কুরবানীর পশু দোষ-ত্রুটি মুক্ত হতে হবে।
====

আক্বীকা
ভূমিষ্ঠ শিশুর পক্ষ থেকে যে পশু যবাই করা হয় তাই আক্বীকা। আক্বীকা করা সুন্নাত। পুত্র সন্তানের জন্য দু’টি ছাগল এবং কন্যা সন্তানের জন্য একটি ছাগল যবাই করতে হয়। জন্মের সপ্তম দিনে আক্বীকা করে নাম রাখতে হয় এবং মাথার চুল মুণ্ডানো ও চুলের সমপরিমাণ রৌপ্য দান করতে হয়। সপ্তম দিনে আক্বীকা করতে না পারলে জন্মের চৌদ্দতম দিনে আর সেদিনও না পারলে একুশতম দিনে আক্বীকা করবে। এদিনেও না করলে পরবর্তীতে যখন সম্ভব হয় তখন করে নিবে। আক্বীকার পশুর হাড় না ভাঙ্গা সুন্নাত। আক্বীকা মূলত নতুন সন্তান লাভ ও আগত সন্তান লাভে আল্লাহর নি‘আমতের শুকরিয়া আদায়।
====

জিহাদ

ক- জিহাদের পরিচিতি:
কাফিরদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধে সর্বাত্মক শক্তি ও প্রচেষ্টা ব্যয় করা।
খ- জিহাদ শরী‘আতসম্মত হওয়ার হিকতম:
জিহাদ ইসলামের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এবং সর্বোত্তম নফল ইবাদত। আল্লাহ তা‘আলা নিম্নোক্ত অনেক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে জিহাদ শরী‘আতসম্মত করেছেন:
১- আল্লাহর কালেমাকে বুলন্দ করতে এবং দীন পুরোটাই যাতে আল্লাহর জন্য হয়।
২- মানবজাতির সুখ-শান্তি ও তাদেরকে যুলুম-নির্যাতন ও অন্ধকার থেকে উদ্ধার করে আলোর পথে নিয়ে আসতে।
৩- পৃথিবীতে সত্যকে বাস্তবায়ন করে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে, বাতিলকে ধ্বংস করতে এবং যুলুম ও ফাসাদকে চিরতরে নিষেধ করতে।
৪- দীনকে প্রচার-প্রসার, মুসলিম উম্মাহকে রক্ষা এবং শত্রুর ষড়যন্ত্রের দাতভাঙ্গা জবাব দিতে ইত্যাদি কারণে আল্লাহ জিহাদ শরী‘আতসম্মত করেছেন।
গ- জিহাদের হুকুম:
জিহাদ ফরযে কিফায়া। যখন একদল লোক জিহাদ করবে এবং তারা এ কাজে তারা যথেষ্ট হলে অন্যদের থেকে এ হুকুম রহিত হয়ে যাবে। তবে নিম্নোক্ত অবস্থায় জিহাদ সকলের ওপর ফরয হয়ে যায়:
১- যুদ্ধের কাতারে চলে আসলে।
২- কারও দেশ শত্রু দ্বারা আক্রান্ত হলে। 
৩- ইমাম বা রাষ্ট্রপ্রধান যুদ্ধের জন্য আহ্বান করলে।
ঘ- জিহাদ ফযর হওয়ার শর্তাবলী:
ইসলাম, আকেল, বালিগ, পুরুষ, অসুস্থতা ও অক্ষমতা থেকে মুক্ত থাকা এবং জিহাদে যাওয়ার খরচ থাকা।
ঙ- জিহাদের প্রকারভেদ:
জিহাদ চার প্রকার। সেগুলো হচ্ছে:
১- নফসের জিহাদ: নফসের জিহাদ হলো দীন শিক্ষা করে সে অনুযায়ী আমল করে মানুষকে দীনের পথে দাওয়াত দেওয়া এবং এ কাজে কষ্ট-ক্লেশ ও যুলুম নির্যাতন আসলে ধৈর্য ধারণ করা।
২- শয়তানের বিরুদ্ধে জিহাদ: শয়তান বান্দাকে যেসব সন্দেহ-সংশয়, মনের প্রবৃত্তি ও ধোকায় ফেলে সেগুলোর বিরুদ্ধে জিহাদ করা।
৩- কাফির ও মুনাফিকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা: এ যুদ্ধ অন্তর, ভাষা, সম্পদ ও হাতে তথা শক্তির দ্বারা হয়।
৪- যালিম, বিদ‘আতী ও অন্যায়কারীর বিরুদ্ধে জিহাদ: উত্তম জিহাদ হচ্ছে সক্ষম হলে হাত তথা শক্তির দ্বারা প্রতিহত করা। শক্তির দ্বারা সক্ষম না হলে জিহ্বা তথা মুখের ভাষা দ্বারা প্রতিহত করা এবং এতেও অক্ষম হলে অন্তরের দ্বারা জিহাদ করা।
চ- শহীদের মর্যাদা:
আল্লাহর কাছে শহীদের সাতটি মর্যাদা রয়েছে। তা হলো: তার প্রথম ফোটা রক্ত জমিনে পড়ার সাথে সাথেই আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন, সে নিজের অবস্থান জান্নাতে দেখতে পায়, কবরের আযাব থেকে রক্ষা পায়, কিয়ামতের ভয়াবহতা থেকে নিরাপদ থাকে, ঈমানের স্বাদ আস্বাদন করে, তাকে ডাগর চক্ষু হুর বিবাহ করানো হবে এবং তার আত্মীয়-স্বজন থেকে সত্তরজনকে শাফা‘আত করতে পারবে।
ছ- যুদ্ধের আদবসমূহ: 
ইসলামে যুদ্ধের শিষ্টাচারসমূহের মধ্যে অন্যতম হলো ধোকাবাজি না করা, নারী ও শিশু যুদ্ধে লিপ্ত না হলে তাদেরকে হত্যা না করা, অহমিকা ও প্রতারণা থেকে দূরে থাকা, শত্রুর সাথে মিলিত হওয়ার আকাঙ্খা না করা, আল্লাহর কাছে বিজয় ও সাহায্যের প্রার্থনা করা। যেমন, এ দো‘আ পড়া,
«اللَّهُمَّ مُنْزِلَ الكِتَابِ، وَمُجْرِيَ السَّحَابِ، وَهَازِمَ الأَحْزَابِ، اهْزِمْهُمْ وَانْصُرْنَا عَلَيْهِمْ»
“হে আল্লাহ আল-কুরআন অবতরণকারী, মেঘমালা পরিচালনাকারী, শত্রুদলসমূহের পরাভূতকারী, আপনি শত্রুদের পরাভূত করে আমাদেরকে তাদের উপর জয়ী করুন।”[51]
যুদ্ধের ময়দান থেকে দু’অবস্থায় পশ্চাদপসরণ করা যাবে:
প্রথমত: যুদ্ধের কৌশল পরিবর্তন করতে।
দ্বিতীয়ত: নিজের দলের সাথে যোগ দিতে।
জ- যুদ্ধবন্দি:
১- নারী ও শিশুকে যুদ্ধদাস বানানো হবে।
২- যোদ্ধাপুরুষকে যুদ্ধের পরিচালক হয়ত মুক্ত করে দিবেন বা মুক্তিপণ নিয়ে মুক্ত করবেন বা হত্যা করবেন।
[যোদ্ধাদের প্রতি আমীরের কর্তব্য:]
যুদ্ধে পাঠানোর আগে ইমাম তার সৈন্যবাহিনীকে ভালোভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে নিবেন, নিরাশ, বিপদকালে ধোকাকারী ও গুজব রটনাকারীকে যুদ্ধে যেতে বারণ করবেন, অতিপ্রয়োজন ব্যতিত কাফিরের থেকে সাহায্য চাইবে না, যুদ্ধের রসদ সামগ্রী যোগাড় করে দিবেন, তিনি তার সৈন্যবাহিনীর ধীর-স্থিরভাবে চালাবেন, তাদের জন্য সুন্দর জায়গা নির্বাচন করবেন, সেনাবাহিনীকে ঝগড়া ফাসাদ ও গুনাহের কাজ থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দিবেন, তাদের মন মানসিকতা চাঙ্গা ও শক্তিশালী হয় এমন কথা বলবেন, তাদেরকে শহীদের মর্যাদার ফযীলত বর্ণনা করে উৎসাহিত করবেন, ধৈর্যের আদেশ দিবেন, সৈন্যবাহিনীকে কয়েকটি দলে ভাগ করবেন, তাদের জন্য মনিটর ও পাহারাদার নিযুক্ত করবেন, শত্রুর খোঁজ খবর নিতে গুপ্তচর পাঠাবেন, সৈন্যদের প্রয়োজন অনুসারে যাকে ইচ্ছা তিনি তাকে আনফাল তথা যুদ্ধে প্রাপ্ত সম্পদ বণ্টন করবেন এবং জিহাদের বিষয়ে দীন সম্পর্কে অভিজ্ঞ লোকদের সাথে পরামর্শ করবেন।
আমিরের প্রতি সেনাবাহিনীর দায়িত্ব ও কর্তব্য:
সৈন্যবাহিনীর ওপর ফরয হলো ইমাম তথা আমিরের আনুগত্য করা, তার সাথে ধৈর্যসহকারে থাকা, আমিরের অনুমতি ব্যতিত যুদ্ধ না করা; তবে হঠাৎ করে শত্রু আক্রমণ করলে তাদের দ্বারা ক্ষতির আশঙ্কা করলে সেক্ষেত্রে যুদ্ধ শুরু করা যাবে, শত্রুরা সন্ধি করতে চাইলে বা তারা হারাম মাসে থাকলে মুসলিমগণের উচিৎ তাদের সাথে চুক্তি করা।

দ্বিতীয় অধ্যয়: মু‘আমালাত তথা লেনদেন
Ø   বেচাকেনা এর বিধিবিধান ও শর্তাবলী।
Ø   রিবা তথা সুদ জাতি ও গোষ্ঠীর অর্থনীতির ধ্বংসের হাতিয়ার এবং রিবার বিধান।
Ø   ইজারা, এর বিধান ও শর্তাবলী।
Ø   ওয়াকফ, এর বিধান ও শর্তাবলী।
Ø   ওয়াসিয়্যাহ তথা অসিয়ত, এর বিধান ও শর্তাবলী।
====

দ্বিতীয় অধ্যয়: মু‘আমালাত তথা লেনদেন
১- বাই‘ তথা বেচাকেনা
ক- বাই‘ তথা বেচাকেনার পরিচিতি:
বাই‘  (البيع)শব্দটি  (باع)এর মাসদার। শাব্দিক অর্থ মালের বিনিময় মাল নেওয়া বা বিনিময় পরিশোধ করে তার বিনিময়ে বস্তু গ্রহণ করা।
পারিভাষিক অর্থে বেচাকেনা হলো, এমন আর্থিক লেনদেন যা নির্দিষ্ট বস্তু বা কোনো উপকারের স্থায়ী মালিকানা সাব্যস্ত করে। যা কোনো নৈকট্য অর্জনের উদ্দেশ্যে সংঘটিত হয় না।
বাই‘ তথা বেচাকেনার হুকুম:
বাই‘ তথা বেচাকেনা জায়েয হিসেবে শরী‘আতসম্মত। কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও কিয়াসের ভিত্তিতে এটা জায়েয হওয়া প্রমাণিত।
খ- বাই‘ তথা বেচাকেনা জায়েয হওয়ার হিকমত:
যেহেতু অর্থ, পণ্য ও বস্তু বিভিন্ন মানুষের কাছে ছড়িয়ে আছে। একজন মানুষ অন্যের কাছে যা আছে তার প্রতি মুখাপেক্ষী। আবার উক্ত ব্যক্তি যেহেতু বিনিময় পরিশোধ ছাড়া অন্যকে বস্তুটি দিবে না সেহেতু বেচাকেনা জায়েয করা হয়েছে। বেচাকেনা বৈধ হওয়ার দ্বারা মানুষ তার অভাব পূরণ করতে সক্ষম হয় এবং তার প্রয়োজনীয় জিনিস লাভ করতে পারে। এজন্যই আল্লাহ মানুষের এসব প্রয়োজন মিটাতে বেচাকেনা হালাল করেছেন।
বাই‘ তথা বেচাকেনার রুকনসমূহ:
বেচাকেনার রুকন হলো:
১- সিগাহ তথা বেচাকেনার শব্দ: ইজাব তথা বেচাকেনার প্রস্তাব ও কবুল তথা প্রস্তাবনা গ্রহণ করা।
২- ক্রেতা ও বিক্রেতা।
৩- বেচাকেনার বস্তু ও দাম।
সিগাহ তথা বেচাকেনার শব্দ:
ক্রেতা ও বিক্রেতার একজনের বেচাকেনার প্রস্তাব ও অন্যজনের গ্রহণ করার শব্দ বা যেসব শব্দ বেচাকেনার ওপর উভয়ের সন্তুষ্টি বুঝায় তাই বেচাকেনার শব্দ। যেমন বিক্রেতা বলল, আমি এ জিনিসটি এমন কিছুর বিনিময়ে আপনার কাছে বিক্রি করলাম বা আপনাকে দিলাম বা আপনাকে মালিক বানালাম ইত্যাদি। আর ক্রেতা তথা খরিদদার বলল, আমি জিনিসটি ক্রয় করলাম বা মালিক হলাম বা ক্রয় করলাম বা গ্রহণ করলাম বা এ জাতীয় কোনো শব্দ বলা।
কর্মবাচক ক্রিয়া দ্বারা বেচাকেনা বিশুদ্ধ হবে, চাই তা ক্রেতা-বিক্রেতা যে কোনো একই ব্যক্তির পক্ষ থেকে হোক কিংবা ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের পক্ষ থেকেই হোক।
টেলিফোনে বেচাকেনা:
টেলিফোনে কথা বলা বেচাকেনার বৈঠক হিসেবে ধর্তব্য। ফোনে কথা শেষ হওয়া মানে এ বৈঠক সমাপ্ত হওয়া। কেননা ‘উরফ তথা প্রচলিতভাবে ফোনে কথা শেষ মানে উভয়ের বেচাকেনা শেষ বলেই ফয়সালা করা হয়।
বেচাকেনা শুদ্ধ হওয়ার শর্তাবলী:
বেচাকেনা শুদ্ধ হওয়ার শর্ত সাতটি। সেগুলো হচ্ছে:
১- ক্রেতা ও বিক্রেতা বা তাদের স্থলাভিষিক্ত উভয়ের সন্তুষ্ট।
২- ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের বেচাকেনা জায়েয হওয়া অর্থাৎ উভয়ে স্বাধীন, মুকাল্লাফ তথা শরী‘আতের বিধানের উপযোগী হওয়া এবং জ্ঞানবান হওয়া।
৩- বিক্রয়ের জিনিসটির ব্যবহার বৈধ হওয়া। অতএব সেসব জিনিস বেচা-কেনা করা জায়েয নেই যেসব জিনিস ব্যবহারে কোনো উপকার নেই (অর্থাৎ বেহুদা জিনিস) বা যেসব জিনিস ব্যবহার করা হারাম, যেমন: মদ, শূকর ইত্যাদি অথবা যাতে এমন উপকার রয়েছে যা কেবল নিরুপায় হলেই ব্যবহার করা যায় যেমন মৃতপ্রাণি। 
৪- বেচাকেনার সময় বিক্রিত জিনিস বিক্রেতা বা তার পক্ষ থেকে বিক্রির জন্য অনুমোদিত ব্যক্তির মালিকানায় থাকা।
৫- বিক্রিত জিনিসটি সম্পর্কে জ্ঞান থাকা, তার গুণাগুণ জানা ও দেখার মাধ্যমে।
৬- বিক্রয়ের জিনিসের দাম নির্দিষ্ট থাকা।
৭- বিক্রয়ের জিনিসটি হস্তান্তরযোগ্য হওয়া। অতএব, পলাতক বা হাওয়ায় উড়ন্ত কোনো কিছু ইত্যাদি বেচাকেনা করা শুদ্ধ হবে না।
বেচাকেনার মধ্যে শর্ত প্রদানের বিধান:
বেচাকেনার মধ্যে শর্তাবলী দুভাগে বিভক্ত। প্রথম প্রকার সহীহ শর্ত, যাতে বেচাকেনা অত্যাবশ্যকীয় হয়ে যায়, আর দ্বিতীয় প্রকার ফাসিদ শর্ত, যাতে বেচাকেনা চুক্তি বাতিল হয়ে যায়। বেচাকেনার মধ্যে সহীহ শর্ত যেমন, মূল্য পুরোটাই বা সুনির্দিষ্ট অংশ বাকী রাখা বা সুনির্দিষ্ট বস্তু বন্ধক রাখা বা সুনির্দিষ্ট বস্তু গ্যারান্টি হিসেবে রাখা। কেননা এসব শর্ত বেচাকেনার সুবিধার্থেই করা হয়। অথবা বিক্রিত জিনিসের ক্ষেত্রে কোনো গুণাগুণ থাকা শর্ত করা। কারণ হাদীসে এসেছে,
«الْمُسْلِمُونَ عَلَى شُرُوطِهِمْ»
“মুসলিমের উচিৎ সন্ধির শর্তের উপর স্থির থাকা।”।[52]
অনুরূপভাবে ক্রেতা তার বিক্রিত জিনিসের ওপর নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিক্রেতার কাছে উপকারের শর্তারোপ করা সহীহ। যেমন, বসতঘরে একমাস থাকার শর্তারোপ করা।
আর ফাসিদ শর্ত, তা দু’প্রকার। তন্মধ্যে কিছু ফাসিদ শর্ত আছে যা মূল বেচাকেনাকেই বাতিল করে দেয়। যেমন, এক বেচাকেনার ওপর আরেকটি বেচাকেনার শর্ত জুড়ে দেওয়া, উদাহরণত: ক্রয়-বিক্রয়ের সাথে অগ্রিম হাওলাত দেওয়ার শর্ত কিংবা অন্য কিছু বিক্রি করার শর্ত, অথবা ইজারা দেওয়ার শর্ত অথবা ঋণ দেওয়ার শর্ত জুড়ে দেওয়া।
আবার কিছু শর্ত আছে যাতে বেচাকেনা বাতিল হয় না তবে শর্ত বাতিল হয়ে যায়। যেমন, কারও পক্ষ থেকে এমন শর্ত দেওয়া যে, বিক্রিত জিনিসের কোনো লোকসান তার ওপর বর্তাবে না বা ক্রয়-বিক্রয়ের জিনিস চালু রাখবে নতুবা সে তা ফেরত দিবে। অথবা জিনিসটিকে ক্রেতা বিক্রি করতে পারবে না বা দান করতে পারবে না। তবে এসব শর্ত যদি কোনো নির্দিষ্ট স্বার্থ সংরক্ষণ করে তখন সে শর্ত দেওয়া শুদ্ধ হবে।
নিষিদ্ধ বেচাকেনা:
যেসব জিনিস কল্যাণকর ও বরকতময় সেসব জিনিসে ইসলাম বেচাকেনা বৈধ করেছে। যেসব বেচাকেনার মধ্যে অস্পষ্টতা বা অজ্ঞতা বা ধোকা বা মানুষের জন্য ক্ষতিকর বা কারো ওপর আক্রমণের আশঙ্কা থাকে ইত্যাদি যা মানুষের মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষ, ঝগড়া ও মনোমালিন্য সৃষ্টি হয় সেসব বেচাকেনা ইসলাম হারাম করেছে। এসব বেচাকেনার মধ্যে অন্যতম:
১- আল-মুলামাসা: (ছোয়া-স্পর্শের বেচাকেনা)
যেমন কেউ কাউকে বলল, আপনি যে কাপড়টিই স্পর্শ করবেন তা এত টাকার বিনিময়ে আপনার। এ ধরনের বেচা-কেনা ফাসিদ। কেননা এতে অজ্ঞতা ও ধোকা রয়েছে।
২- বাই‘য়ুল মুনাবাযা: (নিক্ষেপ-ছোঁড়ার বেচা-কেনা)
যেমন, এভাবে বলা, যে কাপড়টি আপনি আমার দিকে ছুঁড়ে মারবেন তা এত টাকার বিনিময়ে আপনার। এ ধরণের বেচা-কেনাও ফাসিদ। কেননা এতে অজ্ঞতা ও ধোকা রয়েছে।
৩- বাই‘য়ুল হুসাত: (ঢিল ছোঁড়ার বেচাকেনা)
যেমন কেউ এভাবে বলা, আপনি এ কঙ্করটি নিক্ষেপ করুন, তা যে জিনিসটির ওপর পরবে তা এত টাকার বিনিময়ে আপনার। এ ধরণের বেচাকেনাও ফাসিদ। কেননা এতে অজ্ঞতা ও ধোকা রয়েছে।
৪- বাই‘য়ুন নাজশ: (দালালীর বেচাকেনা)
কেউ মূল্য বৃদ্ধির জন্য অন্যকে শোনানোতে কোনো জিনিসের দাম বলা অথচ সে জিনিসটি কিনবে না। এ ধরণের বেচাকেনা হারাম। কেননা এতে ক্রেতাকে ধোকা দেওয়া হয় এবং তাকে প্রতারিত করা হয়।
৫- বাই‘আতাইন ফী বাই‘আহ (এক বেচাকেনায় দু’টি বেচাকেনা থাকা)
যেমন কেউ বলল, আমি আপনার কাছে এ জিনিসটি বিক্রয় করলাম এ শর্তে যে আপনি আমার কাছ ঐ জিনিসটি বিক্রি করবেন বা আপনি আমার কাছ থেকে এ জিনিসটি ক্রয় করবেন। অথবা এভাবে বলা, এ জিনিসটি আপনার কাছে নগদ দশ টাকায় বা বাকীতে বিশ টাকায় বিক্রি করলাম এবং দু’টির একটি নির্দিষ্ট না করেই দুজনে আলাদা হয়ে যাওয়া। এ ধরণের বেচাকেনা সহীহ নয়; কেননা এ ধরণের বেচাকেনায় প্রথম অবস্থায় বিক্রিটি শর্তের সাথে ঝুলে থাকে, আর দ্বিতীয় অবস্থায় বেচাকেনার মূল্য স্থির হয় নি।
৬- শহরের লোক গ্রামের কারও বিক্রেতা হওয়া:
অর্থাৎ গ্রামের কেউ শহরে পণ্য নিয়ে আসার আগেই তার থেকে কম মূল্যে ক্রয় করে বেশি মূল্যে বিক্রি করা: দৈনিক বাজারদরের চেয়ে বেশি মূল্যে দালালদের বেচাকেনা।   
৭- একজনের বেচাকেনার ওপর আরেকজনের বেচাকেনা:
যেমন কেউ একটি জিনিস দশ টাকায় ক্রয় করতে চাইলে তাকে বলা যে, এটি আমার থেকে নয় টাকায় ক্রয় করতে পারবে।
৮- কোনো বস্তু হস্তগত করার আগেই তা আবার বিক্রি করা।
৯- বাই‘য়ুল ‘ঈনাহ:
যেমন কোনো বস্তু নির্দিষ্ট মেয়াদে বিক্রি করে অতঃপর তার থেকে নগদে অল্প দামে ক্রয় করা।
১০- জুমু‘আর সালাতের দ্বিতীয় আযান হলে যাদের ওপর জুমু‘আর সালাত আদায় করা ফরয তাদের বেচাকেনা।

২- রিবা তথা সুদ-এর বিধান, প্রকারভেদ
সুদমুক্ত অর্থব্যবস্থায় ইসলামের পদ্ধতিসমূহ

ক. রিবা তথা সুদের পরিচিতি:
الربا শব্দটি সাধারণত অতিরিক্ত ও বৃদ্ধি অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন, বলা হয়, ربا المال إذا زاد ونما সম্পদ যখন বৃদ্ধি পায় ও বাড়ে। আবার বলা হয়, أربى على الخمسين زاد পঞ্চাশের বেশি বেড়েছে। তবে সাধারণত সব ধরণের হারাম বেচাকেনাকে রিবা বা সুদ বলা হয়।
ফিকহবিদদের পরিভাষায়:
الزيادة في أشياء مخصوصة.
“নির্দিষ্ট কিছু জিনিসের মধ্যে অতিরিক্ত গ্রহণ করাকে রিবা বলা হয়”। 
অথবা
هو عقد على عوض مخصوص غير معلوم التماثل في معيار الشرع حالة العقد، أو مع تأخير في البدلين أو أحدهما.
“তা এমন এক বিশেষ বিনিময় চুক্তি; যা সংঘটিত হওয়ার সময় শরী‘আতের মাপকাঠি অনুযায়ী সমতা বিধান করা হয় নি। অথবা তা এমন এক বিশেষ বিনিময় চুক্তি; যাতে উভয় জিনিস বাকীতে বা একটি জিনিস বাকীতে বিনিময় করা হয়েছে”।
খ. সুদ হারাম হওয়ার তাৎপর্য:
নিম্নোক্ত অনেক কারণে ইসলাম সুদকে হারাম করেছে:
১- প্রচেষ্টা ও ফলাফলের মধ্যে সামঞ্জস্যতা না থাকা। কেননা সুদ বিনিয়োগকারী যা অর্জন করে ও লাভ করে তা কোনো প্রকার প্রচেষ্টা, পরিশ্রম ও কাজ না করেই পেয়ে থাকে এবং সে ব্যবসায় ক্ষতির ভাগও বহন করে না।
২- সুদ গ্রহীতারা কর্ম বিমুখ হওয়ার কারণে সমাজে অর্থনীতি ধ্বংস হওয়া এবং তারা অতিরিক্ত লাভের প্রত্যাশায় নিজেরা আরাম আয়েশ ও অলসতায় জীবন যাপন করবে এবং ঋণ গ্রহীতাদের ওপর আরো ঋণের বোঝা চাপিয়ে দিবে।
৩- মানুষের মধ্যে সাহায্য সহযোগিতা না থাকার কারণে সমাজে উন্নত চারিত্রিক গুণাবলী নিঃশেষ হয়ে যাবে। যা সমাজে আত্মত্যাগ, ভালোবাসা ও অন্যকে প্রধান্য দেওয়ার পরিবর্তে সমাজকে বিচ্ছিন্ন করে দিবে, মানুষের মাঝে আমিত্ব তথা অহংকার ও হিংসা-বিদ্বেষ ছড়িয়ে দিবে।
৪- সমাজকে উঁচু-নিচু দু’টি শ্রেণিতে বিভক্ত করে দিবে। এক শ্রেণি হবে তাদের সম্পদের দ্বারা সুবিধাভোগী ও নির্যাতনকারী শাসকগোষ্ঠি; অন্যদিকে আরেক শ্রেণি হবে নিতান্ত গরীব-মিসকীন ও দুর্বল, যাদের পরিশ্রম ও কষ্ট অন্যায়ভাবে অন্যরা ভোগ করবে।
গ. রিবা বা সুদের প্রকারভেদ:
আলেমদের কাছে রিবা বা সুদ দু’ধরণের। তা হলো:
১- রিবা নাসীয়া: ‘নাসীয়া’ শব্দের অর্থ বাকী ও বিলম্বের সুদ। সুদসহ ঋণ ফেরত দিতে বিলম্বের বিনিময়ে ঋণ ও ঋণের সুদের ওপর অতিরিক্ত সুদ গ্রহণ করা। একে সময়ের সাথে সংশ্লিষ্ট সুদ (রিবা বিল-আজাল) বলা হয়।
২- রিবা ফদল: শাব্দিক অর্থে ফদল (অতিরিক্ত) শব্দটি নকস (কমতি) এর বিপরীত।  
পারিভাষিক অর্থে, একই জাতীয় দু’টি জিনিসের মধ্যে একটির বিনিময়ে অতিরিক্ত নেওয়া। যেমন, স্বর্ণের পরিবর্তে সমপরিমাণ স্বর্ণ না নিয়ে অতিরিক্ত স্বর্ণ গ্রহণ করা, এমনিভাবে গমের পরিবর্তে অতিরিক্ত গম নেওয়া ইত্যাদি যেসব জিনিসে প্রচলিতভাবে সুদ হয়ে থাকে। একে বেচাকেনার সাথে সংশ্লিষ্ট সুদ (রিবা আল-বাই‘) বা গোপন সুদ (রিবা আল-খফী) ও বলা হয়।
-   শাফে‘ঈ মাযহাবের লোকেরা তৃতীয় আরেক প্রকারের সুদের কথা বলেছেন, তা হলো ‘হস্তগত করার সাথে সংশ্লিষ্ট সুদ’ (রিবা আল-ইয়াদ)। অর্থাৎ মূল্য ও বস্তু অথবা দু’টির যেকোনো একটি নগদ গ্রহণ না করে বিলম্বে গ্রহণ করা।
-   কেউ কেউ চতুর্থ আরেক প্রকারের সুদের কথা বলেছেন, তা হলো ঋণ সম্পৃক্ত সুদ (রিবা আল-কারদ্ব)। আর তা হলো, বেচাকেনার মধ্যে কোনো উপকারের শর্তারোপ করা।
-   তবে এসব (তৃতীয় ও চতুর্থ) প্রকার সুদ প্রকৃতপক্ষে আলেমদের বর্ণিত উপরোক্ত প্রকারভেদের বাইরে নয়। কেননা তারা যাকে ‘হস্তগত করার সাথে সংশ্লিষ্ট সুদ’ (রিবা আল-ইয়াদ) বা ‘ঋণ সম্পৃক্ত সুদ’ (রিবা আল-কারদ্ব) বলা হয়েছে তা উপরোক্ত দু’প্রকারের মধ্যেই অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব। 
-   আধুনিক অর্থনীতিবিদরা সুদকে ‘ক্ষয়িষ্ণু সুদ’ (ইসতিহলাকি) ও ‘উৎপাদনশীল বর্ধিষ্ণু সুদ’ (ইনতাজি) এই দু’ভাগে ভাগ করেছেন।
১- ‘ক্ষয়িষ্ণু সুদ’ (ইসতিহলাকি) হচ্ছে, খাদ্য-দ্রব্য ইত্যাদি নিত্য প্রয়োজনীয় ধ্বংসশীল খাদ্য-দ্রব্য ও ঔষধপত্র ইত্যাদি ক্রয় করতে নেওয়া ঋণের ওপর প্রদত্ত অতিরিক্ত সুদ।
২- ‘উৎপাদনশীল বর্ধিষ্ণু সুদ’ (ইনতাজি) হচ্ছে: উৎপাদন কাজে ঋণের ওপর নেওয়া অতিরিক্ত সুদ। যেমন, ফ্যাক্টরি বানানো বা চাষাবাদ বা ব্যবসায়িক কাজে ঋণ নেওয়া।
-   অর্থনীতিবিদরা সুদকে আরও দু’প্রকারে ভাগ করেছেন। তা হলো:
১- দ্বিগুণ সুদ (মুদ্বা‘আফ): যে লেনদেনে সুদের পরিমাণ অনেক বেশি।
২- সামান্য সুদ (বাসীত): যে লেনদেনে সুদের পরিমাণ অনেক কম থাকে।
ইসলাম সব ধরণের সুদের কারবার হারাম করেছে, চাই তা রিবাল ফদল বা রিবা নাসীয়া হোক, এতে সুদের পরিমাণ কম হোক বা বেশি হোক, ক্ষয়প্রাপ্ত খাদ্য-দ্রব্যে হোক বা উৎপদনশীল কাজে নিয়োজিত হোক। উপরোক্ত সব প্রকারের সুদ আল্লাহর নিম্নোক্ত আয়াতে হারামের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿وَأَحَلَّ ٱللَّهُ ٱلۡبَيۡعَ وَحَرَّمَ ٱلرِّبَوٰاْ﴾ [البقرة: ٢٧٥] 
“অথচ আল্লাহ বেচা-কেনা হালাল করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেন।” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৭৫]
ঘ. সুদমুক্ত অর্থব্যবস্থা প্রবর্তনে ইসলামের পদ্ধতিসমূহ:
সুদের লেনদের থেকে পরিত্রাণ পেতে ইসলাম বিকল্প কিছু পদ্ধতি প্রবর্তন করেছে। সেগুলো নিম্নরূপ:
১- ইসলাম মুদারাবা লেনদেন বৈধ করেছে: ইসলাম সুদবিহীন অর্থ ব্যবস্থা প্রচলনে মুদারাবা তথা অংশীদারিত্ব ব্যবসা জায়েয করেছে। এতে একজনের মূলধন থাকবে এবং অন্যজন ব্যবসায়ে কাজ করবে। আর এভাবে অর্জিত লভ্যাংশ উভয়ের মধ্যকার চুক্তি অনুসারে পাবে। তবে ব্যবসায়ে ক্ষতি হলে মূলধন বিনিয়োগকারীর ওপর বর্তাবে। আর শ্রমদাতার ওপর ক্ষতির ভাগ বর্তাবে না, যেহেতু তার কষ্ট ও শ্রম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই সে অর্থের ক্ষতির অংশীদার হবে না।
২- ইসলাম বাই‘য়ে সালাম তথা মূল্য নগদ পরিশোধ আর বস্তু বাকীতে বেচাকেনা বৈধ করেছে: অর্থাৎ কারো নগদ অর্থের বিশেষ প্রয়োজন দেখা দিলে সে উক্ত জিনিসের উৎপাদনের সময় আসার আগে উপযুক্ত মূল্য নির্ধারণ করে এবং ফিকহশাস্ত্রে বর্ণিত শর্তানুযায়ী বেচাকেনা করা বৈধ।
৩- ইসলাম বাকীতে বেচাকেনা বৈধ করেছে: নগদ বিক্রি মূল্যের চেয়ে বাকীতে বেশি মূল্যে বিক্রি করা জায়েয। মানুষের সুবিধার্থে এবং সুদের লেনদেন থেকে মুক্ত হতে ইসলাম এ বেচাকেনা বৈধ করেছে।
৪- ইসলাম কর্যে হাসানা তথা বিনা লাভে ঋণ প্রদানের জন্য নানা ধরনের সংস্থা হওয়াকে উৎসাহিত করেছে। ব্যক্তি বা সমষ্টি বা সরকারী বা বেসরকারী যেকোনো ধরণের সংস্থাকে এ ঋণের জন্য ইসলাম উৎসাহিত করেছে; যাতে উম্মাতের মধ্যে পরস্পর সামাজিক সহযোগিতা ও দায়ভার বাস্তবায়িত হয়।
৫- ইসলাম ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিকে, অভাবী ফকীরকে, বিপদগ্রস্ত পথিক প্রভৃতি অভাবী মানুষের প্রয়োজন মিটাতে, তাদের ক্ষতিপূরণ দিতে যাকাতের বিধান প্রচলন করেছে।
সমাজে ব্যক্তির প্রয়োজন মিটাতে ও মানুষের সম্মান সংরক্ষণে ইসলাম উপরোক্ত পদ্ধতিসমূহ খুলে দিয়েছে। এভাবে তার অভাব মিটাতে সে সুউচ্চ উদ্দেশ্য অর্জন করতে সক্ষম হয়, তার প্রয়োজনের সুরক্ষা হয়, কর্ম ও উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।
ব্যাংকের লাভ ও এর হুকুম:
ফায়েদা অর্থ লাভ, বহুবচনে ফাওয়ায়েদ। অর্থনীতিবিদদের মতে ব্যাংকের ফায়েদা বা লাভ মানে নগদ অর্থ। বস্তুত: ব্যাংক ও সমবায়ী বাক্সগুলো আমানত বা জমার অর্থ রাখার বিনিময়ে যে অতিরিক্ত অর্থ প্রদান করে বা ঋণ নিলে তার ওপর যে অতিরিক্ত টাকা গ্রহণ করে, তাই ব্যংকের দৃষ্টিতে লাভ হিসেবে তারা বর্ণনা করে থাকে।
এটা মূলত রিবা বা সুদ। বরং এটিই আসল সুদ, যদিও ব্যাংক একে লাভ বলে থাকে। নিঃসন্দেহে এ ধরণের লাভ কুরআন, সুন্নাহ ও ইজমা কর্তৃক হারাম সুদের অন্তর্ভুক্ত।
ঋণের বিনিময়ে উল্লিখিত অতিরিক্ত অর্থ গ্রহণ হারাম হওয়া সম্পর্কে আলেমদের ইজমা বর্ণিত আছে। তারা যেটাকে কর্জ বা ঋণ বলে থাকে তা আসলে সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি মুহাম্মাদ ইবন ইবরাহীম রহ.-এর মতে ঋণ নয়। কেননা কর্জের উদ্দেশ্য হলো ইহসান, হৃদ্যতা ও সহযোগিতা করা। অথচ এ ধরণের লেনদেন প্রকৃতপক্ষে নির্দিষ্ট মেয়াদে টাকার বেচাকেনা করা ও শর্তের ভিত্তিকে নির্দিষ্ট মেয়াদে লাভ করা। অতএব, বুঝা গেল ব্যাংক কর্জের বিনিময়ে বা জমাকৃত অর্থের বিনিময়ে যে অতিরিক্ত লাভ দেওয়া ও নেওয়া করে তাকে পুরোপুরি সুদই বলে। সুদ ও ব্যাংকের লাভ একটি অপরটির নাম মাত্র।

৩- ইজারা তথা ভাড়া

ক- ইজারা তথা ভাড়ার পরিচিতি:
নির্দিষ্ট মেয়াদে দু’জনের মধ্যে বৈধ উপকারের বিনিময় চুক্তি করা।
খ- ইজারার হুকুম:
ইজারা জায়েয। এটা দুপক্ষের মাঝে অত্যাবশ্যকীয় চুক্তি।
গ- ইজারা শরী‘আতসম্মত হওয়ার হিকমত:
ইজারা মূলত মানুষের মাঝে পরস্পর সুবিধা বিনিময়। শ্রমিকদের কাজের প্রয়োজন, থাকার জন্য ঘরের দরকার, মালামাল বহন, মানুষের আরোহণ ও সুবিধার জন্য পশু, গাড়ি ও যন্ত্রের দরকার। আর ইজারা তথা ভাড়ায় খাটানো বৈধ হওয়ায় মানুষের জন্য অনেক কিছু সহজ হয়েছে ও তারা তাদের প্রয়োজন মিটাতে সক্ষম হচ্ছে।
ঘ- ইজারার প্রকার:
ইজারা দু’প্রকার। তা হচ্ছে:
১- নির্দিষ্ট জিনিস ও আসবাবপত্র ভাড়া দেওয়া। যেমন, কেউ বলল, আমি আপনাকে এ ঘর বা গাড়িটি ভাড়া দিলাম।
২- কাজের ওপর ভাড়া দেওয়া। যেমন, কেউ দেয়াল নির্মাণ বা জমি চাষাবাদ ইত্যাদি করতে কোনো শ্রমিককে ভাড়া করল।
ঙ- ইজারার শর্তাবলী:
ইজারার শর্ত চারটি। তা হলো:
১- লেনদেনটি জায়েয হওয়া।
২- উপকারটি নির্দিষ্ট হওয়া। যেমন, ঘরে থাকা বা মানুষের খিদমত বা ইলম শিক্ষা দেওয়া ইত্যাদি।
৩- ভাড়া নির্ধারণ করা।
৪- উপকারটি বৈধ হওয়া। যেমন ঘরটি বসবাসের জন্য হওয়া। অতএব, কোনো হারাম উপকার সাধনে যেমন, যিনা, গান বাজনা, ঘরটি গীর্যার জন্য ভাড়া দেওয়া বা মদ বিক্রির জন্য ব্যবহার করা ইত্যাদি হারাম কাজের সুবিধার জন্য ভাড়া দেওয়া বৈধ নয়।

মাসআলা:
কেউ বিনা চুক্তিতে গাড়ি, বিমান, ট্রেন ও নৌকা ইত্যাদিতে আরোহণ করলে বা দর্জিকে কাপড় কাটতে বা সেলাই করতে দিলে বা কুলিকে দিয়ে বোঝা বহন করালে তার এসব কাজ জায়েয হবে এবং তাকে সেখানকার ‘উরফ তথা প্রচলিত নিয়মানুসারে ভাড়া প্রদান করতে হবে। কেননা ‘উরফ তথা প্রচলিত প্রথা এসব ব্যাপারে ও এ জাতীয় আরো অন্যান্য ব্যাপারে কথা বলে চুক্তি করার মতোই।
চ- ভাড়াকৃত জিনিসের শর্তাবলী:
ভাড়াকৃত নির্দিষ্ট জিনিসের মধ্যে শর্ত হচ্ছে সেটি ভালো করে দেখা ও এর গুণাবলী জানা, এর প্রদত্ত উপকারের ব্যাপারে চুক্তি করা, এর অংশের ওপর চুক্তি নয়, সেটা সমর্পন করতে সমর্থ হওয়া, বাস্তবেই তাতে উপকার থাকা এবং ভাড়াকৃত জিনিসটি ভাড়া প্রদানকারীর মালিকানাধীন থাকা বা তার ভাড়া দেওয়ার অনুমতি থাকা।
ছ- ইজারার আরো কিছু মাসয়ালা:
Ø   ওয়াকফকৃত জিনিসের ভাড়া দেওয়া জায়েয। ভাড়া প্রদানকারী মারা গেলে চুক্তিটি বাতিল না হয়ে পরবর্তী যিনি ওয়াকফের রক্ষণাবেক্ষণে আসবেন তার কাছে চুক্তিটি থাকবে এবং তিনি বাকী ভাড়া গ্রহণ করবেন।
Ø   যেসব জিনিস বেচাকেনা হারাম সেসব জিনিস ভাড়া দেওয়াও হারাম, তবে ওয়াকফ, স্বাধীন ব্যক্তিকে আযাদ ও উম্মে ওয়ালাদ তথা মালিকের কাছে যে দাসীর বাচ্চা হয়েছে এসব বাদে। কেননা এসব জিনিসে ভাড়া জায়েয।
Ø   ভাড়াকৃত জিনিসটি নষ্ট হয়ে গেলে এবং উপকার সাধন শেষ হয়ে গেলে ইজারা বাতিল হয়ে যাবে।
Ø   শিক্ষাদান, মসজিদ নির্মাণ ইত্যাদি কাজের বিনিময়ে ভাড়া (পারিশ্রমিক) নেওয়া জায়েয। আর হজের বিনিময়ে প্রয়োজন হলে পারিশ্রমিক নেওয়া জায়েয।
Ø   ইমাম, মুয়াযযিন বা কুরআন শিক্ষাদানকারী বাইতুল মাল থেকে পারিশ্রমিক গ্রহণ করলে অথবা নিঃশর্তভাবে তাদেরকে প্রদান করা হলে তাদের জন্য তা গ্রহণ করা বৈধ।
Ø   ভাড়াগ্রহণকারী অবহেলা ও সীমালঙ্ঘন না করলে ভাড়াকৃত জিনিস তার কাছে নষ্ট হলে এর কোনো জরিমানা দিতে হবে না।
Ø   চুক্তি করার দ্বারা ভাড়া দেওয়া ওয়াজিব হয়ে যায়, ভাড়াকৃত জিনিস ফেরত দেওয়ার সময় ভাড়াও জমা দেওয়া ওয়াজিব, তবে দুজনে বিলম্বে বা কিস্তিতে প্রদানে রাজি থাকলে তাও জায়েয। আর শ্রমিক তার কাজ শেষ করলে সে তার পারিশ্রমিকের অধিকারী হবে।

৪- ওয়াকফ

১- ওয়াকফের শাব্দিক ও পারিভাষিক পরিচিতি:
ওয়াকফের শাব্দিক অর্থ:
الوقف (ওয়াকফ) শব্দটিوقف  এর মাসদার। এর বহুবচন  أوقافযেমন বলা হয়, (وقف الشيء وأوقفه وحبسه وأحبسه وسبّله) কোনো কিছু ওয়াকফ করা, আটকে রাখা, উৎসর্গ করা। সবগুলোই একই অর্থে ব্যবহৃত হয়।
আর পারিভাষিক অর্থে, বস্তুর মূল স্বত্ব ধরে রেখে (মালিকানায় রেখে) এর উপকারিতা ও সুবিধা প্রদান করা। 
২- ওয়াকফ শরী‘আতসম্মত হওয়ার মূল দলীল:
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাত ও উম্মতের ইজমার দ্বারা ওয়াকফ শরী‘আতসম্মত হয়। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাত হলো, সহীহ বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত হাদীস,
«أن عمر قال: يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنِّي أَصَبْتُ أَرْضًا بِخَيْبَرَ لَمْ أُصِبْ مَالًا قَطُّ أَنْفَسَ عِنْدِي مِنْهُ، فَمَا تَأْمُرُ بِهِ؟ قَالَ: «إِنْ شِئْتَ حَبَسْتَ أَصْلَهَا، وَتَصَدَّقْتَ بِهَا» قَالَ: فَتَصَدَّقَ بِهَا عُمَرُ، أَنَّهُ لاَ يُبَاعُ وَلاَ يُوهَبُ وَلاَ يُورَثُ».  
“(উমার ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু খায়বারে কিছু জমি লাভ করেন। তিনি এ জমির ব্যাপারে পরামর্শের জন্য রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এলেন) এবং বললেন, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি খায়বারে এমন উৎকৃষ্ট কিছু জমি লাভ করেছি যা ইতোপূর্বে আর কখনো পাই নি। আপনি আমাকে এ ব্যাপারে কী আদেশ দেন? রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “তুমি ইচ্ছা করলে জমির মূল স্বত্ত্ব ওয়াকফে আবদ্ধ করতে এবং উৎপন্ন বস্তু সাদকা করতে পার।” বর্ণনাকারী ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন, উমার ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এ শর্তে তা সদকা (ওয়াকফ) করেন যে, তা বিক্রি করা যাবে না, তা দান করা যাবে না এবং কেউ এর উত্তরাধীকারী হবে না”।[53]
ফলে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর উৎপন্ন বস্তু অভাবগ্রস্ত, আত্মীয়-স্বজন, দাসমুক্তি, আল্লাহর রাস্তায়, মুসাফির ও মেহমানদের জন্য সদকা করে দেন। বর্ণনাকারী আরও বলেন, যিনি এর মুতাওয়াল্লী হবে তার জন্য সম্পদ সঞ্চয় না করে যথাবিহীত খাওয়া কোনো দোষের বিষয় নয়।
ওয়াকফ শুধু মুসলিমদের বৈশিষ্ট্য। জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণের যাদেরই সামর্থ ছিলো তারা সকলেই ওয়াকফ করেছেন।
উপরোক্ত আলোচনার দ্বারা এটি প্রমাণিত হয় যে, বর্তমানে মানুষ যা করে তা আসলে সাহাবীগণের কাজের বিপরীত। কেননা বর্তমানে মানুষ সাধারণত অসিয়ত করে থাকেন, ওয়াকফ করেন না।
৩- ওয়াকফ শরী‘আতসম্মত হওয়ার হিকমত:
১- আল্লাহ যাদেরকে ধন-সম্পদ দিয়ে প্রশস্ত করেছেন তাদের কল্যাণকর ও তাঁর আনুগত্যের কাজে কিছু দান করতে তিনি উৎসাহিত করেছেন যাতে তাদের সম্পদ তাদের মৃত্যুর পরেও এর মূলস্বত্ব অবশিষ্ট থেকেও এর ফায়েদা মানুষ ভোগ করতে পারে এবং তার জীবন শেষ হলেও এর সাওয়াব উক্ত ব্যক্তি পেতে পারে। হতে পারে তার মৃত্যুর পরে তার ওয়ারিশরা তার সম্পদ যথাযথ হিফাযত করবে না, ফলে তার আমল শেষ হয়ে যাবে এবং এতে তার পরিণাম দুর্দশাগ্রস্ত হবে। এসব সম্ভাবনা দূরীকরণে এবং কল্যাণকর কাজে অংশীদার হতে ইসলাম মানুষের জীবদ্দশায় ওয়াকফ করার পদ্ধতি শরী‘আতসম্মত করেছে। যাতে ওয়াকফকারী নিজে মরে যাওয়ার পরেও এসব ভালো কাজে সম্পৃক্ত থাকতে পারে, ফলে তিনি জীবদ্দশায় যেভাবে দান করতে চাইতেন মরনের পরেও সেভাবে সাওয়াব পাবেন।
২- মসজিদ, মাদ্রাসা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইত্যাদি কল্যাণকর কাজ এবং এসবের দেখভাল ও রক্ষণাবেক্ষণের মূল হলো ওয়াকফ করা। যুগে যুগে যেসব মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তার অধিকাংশ ওয়াকফের দ্বারাই হয়েছে। এমনকি মসজিদে ব্যবহৃত আসবাবপত্র, বিছানা, কার্পেট, পরিস্কার পরিচ্ছন্নের জিনিসপত্র ও মসজিদ রক্ষণাবেক্ষণে নিয়োজিত ব্যক্তিদের যাবতীয় খরচ এসব ওয়াকফের মাধ্যমেই হয়ে থাকে।
৪- ওয়াকফের শব্দাবলী:
ওয়াকফের স্পষ্ট কিছু শব্দ আছে, তা হলো:
(وقفت) আমি ওয়াকফ করলাম বা (حبست) আমি এর মূল মালিকানা আটকে ওয়াকফ রাখলাম বা (سبّلت) আমি আল্লাহর রাস্তায় ওয়াকফ করলাম। 
আর ওয়াকফের অস্পষ্ট ও ঈঙ্গিতপূর্ণ শব্দ হলো:
(تصدقت) আমি দান করলাম বা (حرّمت) আমি এটি আমার জন্য হারাম করলাম বা (أبدت) আমি মানুষের জন্য সারাজীবনের জন্য দান করলাম।
তবে অস্পষ্ট ও ঈঙ্গিতপূর্ণ শব্দে ওয়াকফ করলে নিচের তিনটি জিনিসের যে কোনো একটি পাওয়া যেতে হবে।
১- ওয়াকফের নিয়ত করা। কেউ এসব শব্দ বলে ওয়াকফের নিয়ত করলে ওয়াকফ হয়ে যাবে।
২- এসব অস্পষ্ট ও ঈঙ্গিতপূর্ণ শব্দ বলার সাথে স্পষ্ট শব্দ পাওয়া গেলে বা অন্য ঈঙ্গিতপূর্ণ শব্দ পাওয়া যায় তাহলেও ওয়াকফ হবে। যেমন, এভাবে বলা,
تصدقت بكذا صدقة موقوفة أو محبّسة أو مسبّلة أو مؤبدة أو محرمة.
“আমি এটি ওয়াকফ হিসেবে দান করলাম বা মূলস্বত্ব রেখে ওয়াকফ হিসেবে দান করলাম বা উৎসর্গ করলাম বা সারাজীবনের জন্য দান করলাম বা এটি আমার জন্য হারাম”।
৩- ওয়াকফের বস্তুটি নিম্নোক্ত শব্দাবলী দ্বারা বর্ণনা করা। যেমন, বলা
محرمة لا تباع ولا توهب.
ওয়াকফের বস্তুটি আমার জন্য হারাম, তা বিক্রি করা যাবে না, তা দান করা যাবে না।
শব্দ উচ্চারণের মাধ্যমে যেমন ওয়াকফ করা যায় তেমনি ব্যক্তির কাজের দ্বারাও ওয়াকফ করা যায়। যেমন কেউ নিজের জমিতে মসজিদ নির্মাণ করল এবং লোকজনকে তাতে সালাত আদায় করতে অনুমতি দিলো।
৫- ওয়াকফের প্রকারভেদ:
প্রথম থেকে ওয়াকফটি কাদের জন্য করা হয়েছে সে হিসেবে ওয়াকফ দু’প্রকার।
১- খাইরী তথা কল্যাণকর কাজে ওয়াকফ।
২- আহলী তথা পরিবার পরিজনের জন্য ওয়াকফ।
১- খাইরী তথা কল্যাণকর কাজে ওয়াকফ:
ওয়াকফকারী শুরু থেকেই জনকল্যাণকর কাজে বস্তুটি ওয়াকফ করল; যদিও তা নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য। এরপরে ওয়াকফটি নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের জন্য হবে। যেমন কেউ হাসপাতাল বা মাদ্রাসার জন্য জমি ওয়াকফ করল। অতঃপর পরবর্তীতে তা তার সন্তানদের জন্য হবে।
২- আহলী তথা পরিবার পরিজনের জন্য ওয়াকফ:
শুরুতে নিজের বা নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের নামে ওয়াকফ হবে। পরবর্তীতে তা জনকল্যাণ কাজে ওয়াকফ হবে। যেমন কেউ তার নিজের নামে ওয়াকফ করল, অতঃপর তা তার সন্তানদের হবে, অতঃপর তা জনকল্যাণ কাজে ওয়াকফ হবে।
৬- যেসব জিনিস ওয়াকফ করা যায়:
ওয়াকফের স্থান তথা যেসব জিনিস ওয়াকফ করা যায় তা হলো মূল্যবান স্থাবর সম্পত্তি যা ব্যক্তির মালিকানায় বর্তমান রয়েছে। যেমন, জমি, ঘর-বাড়ি ইত্যাদি অথবা স্থানান্তরযোগ্য জিনিস। যেমন, বই, কাপড়, অস্ত্র ইত্যাদি। কেননা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
وَأَمَّا خَالِدٌ: فَإِنَّكُمْ تَظْلِمُونَ خَالِدًا، قَدِ احْتَبَسَ أَدْرَاعَهُ وَأَعْتُدَهُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ.
“আর খালিদ ইবন ওয়ালীদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু, তার ওপর তোমরা অবিচার করছ। কেননা সে তার বর্ম এবং অন্যান্য সস্পদ আল্লাহর রাস্তায় ওয়াকফ করে দিয়েছে।”[54]
আলেমগণ একমত যে, মসজিদে মাদুর ও মোমবাতি ওয়াকফ করা নিন্দনীয় নয়।
পরিধানের জন্য গহনা ওয়াকফ করা ও ধার দেওয়া জায়েয। কেননা এগুলো উপকারী জিনিস। সুতরাং জায়গা জমির মতো এগুলোও ওয়াকফ করা যাবে।
৭- ওয়াকফকারীর শর্তসমূহ:
ওয়াকফকারীর মধ্যে কতিপয় শর্ত থাকতে হবে, নতুবা তার ওয়াকফ করা জায়েয হবে না। শর্তগুলো হচ্ছে:
১- ওয়াকফকারী দান করার যোগ্য হতে হবে। অতএব, জবরদখলকারী ও যার মালিকানা এখনও স্থির হয় নি এমন লোকদের পক্ষ থেকে ওয়াকফ করা জায়েয হবে না।
২- ওয়াকফকারী বিবেববান (জ্ঞানসম্পন্ন) হতে হবে। অতএব, পাগল ও বিকারগ্রস্ত ব্যক্তির ওয়াকফ শুদ্ধ হবে না।
৩- বালিগ তথা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া। অতএব, শিশুর ওয়াকফ শুদ্ধ হবে না, চাই সে ভালো-মন্দ পার্থক্যকারী হোক বা না হোক।
৪- বুদ্ধিমান হওয়া। অতএব, নির্বোধ বা দেউলিয়া বা অসচেতন লোক যাদের ওপর আইনি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে তাদের ওয়াকফ শুদ্ধ হবে না।
৮- ওয়াকফকৃত জিনিসের শর্তাবলী:
ওয়াকফকৃত জিনিসটির মধ্যে যাতে ওয়াকফ বাস্তবায়ন করা যায় সেজন্য ওয়াকফকৃত জিনিসের মধ্যে কিছু শর্ত রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে:
১- ওয়াকফকৃত জিনিসটির মূল্য থাকতে হবে। যেমন, জায়গা জমি ইত্যাদি।
২- ওয়াকফকৃত জিনিসটি নির্দিষ্ট পরিমাণ জ্ঞাত থাকা।
৩- ওয়াকফকৃত বস্তুটি ওয়াকফের সময় ওয়াকফকারীর মালিকানায় থাকা।
৪- ওয়াকফকৃত বস্তুটি সুনির্দিষ্ট হবে, এজমালী সম্পত্তি হবে না। অতএব, বহু মানুষের মালিকানাধীন কোনো বস্তুর একাংশ ওয়াকফ করা শুদ্ধ হবে না। 
৫- ওয়াকফকৃত জিনিসটিতে অন্যের অধিকার সম্পৃক্ত না থাকা।
৬- ওয়াকফকৃত বস্তুটি দ্বারা ‘উরফ তথা প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী উপকার গ্রহণ সক্ষম হওয়া।
৭- ওয়াকফকৃত জিনিসটিতে বৈধ উপকার থাকা।
৯- ওয়াকফকৃত বস্তু থেকে উপকার সাধনের পদ্ধতি:
নিম্নোক্ত পদ্ধতিতে ওয়াকফকৃত বস্তু থেকে উপকার অর্জন করা যায়:
ঘর-বাড়িতে বসবাস করে, আরোহণকারী পশু ও যানবাহনে আরোহণ করে, জীবজন্তুর পশম, দুধ, ডিম, লোম সংগ্রহ করে উপকার নেওয়া যায়।
১০- ওয়াকফ ও অসিয়তের মধ্যে পার্থক্য:
১- ওয়াকফ হলো মূলস্বত্ব নিজের রেখে বস্তুটির উপকার দান করা, অন্যদিকে অসিয়ত হলো দানের মাধ্যমে মৃত্যুর পরে বস্তুগত বা অবস্তুগত (উপকার) জিনিসের মালিক বানানো।
২- অধিকাংশ আলেমদের মতে, ওয়াকফ করলে তা বাস্তবায়ন অত্যাবশ্যকীয় হয়ে পড়ে এবং ওয়াকফ ফেরত নেওয়া যায় না। কেননা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বলেছেন, 
: «إِنْ شِئْتَ حَبَسْتَ أَصْلَهَا، وَتَصَدَّقْتَ بِهَا».
“তুমি ইচ্ছা করলে জমির মূল স্বত্ত্ব ওয়াকফে আবদ্ধ রেখে উৎপন্ন বস্তু সদকা করতে পার।”[55]
অন্যদিকে অসিয়ত করলে বাস্তবায়ন অত্যাবশ্যকীয় হলেও অসিয়তকারী তার অসিয়তের পুরোটাই বা আংশিক ফেরত নিতে পারবে।
৩- ওয়াকফকৃত বস্তুটি কারো মালিকানায় প্রবেশ করা থেকে বেরিয়ে যাবে, শুধু বস্তুটির উপকার যাদের জন্য ওয়াকফ করা হয়েছে তাদের জন্য নির্ধারিত হবে। পক্ষান্তরে, অসিয়াতের বস্তুটি যাদের জন্য অসিয়ত করা হয়েছে তাদের মালিকানায় যাবে বা এর উপকার অসিয়তকৃতদের জন্য নির্ধারিত হয়ে যাবে।
৪- ওয়াকফের উপকারের মালিকানা যাদের জন্য ওয়াকফ করা হয়েছে তারা ওয়াকফকারীর জীবদ্দশায়ই পাবে এবং তার মৃত্যুর পরেও ভোগ করবে। কিন্তু অসিয়তের মালিকানা অসিয়তকারীর মৃত্যুর পর ছাড়া ভোগ করতে পারবে না।
৫- ওয়াকফের সর্বোচ্চ সীমা নির্দিষ্ট নয়; পক্ষান্তরে অসিয়তের সর্বোচ্চ সীমা শরী‘আত কর্তৃক নির্ধারিত। আর তা হলো মোট সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশ। তবে ওয়ারিশের অনুমতি সাপেক্ষে এর বেশিও করা যায়।
৬- ওয়ারিশের জন্য ওয়াকফ করা জায়েয, কিন্তু ওয়ারিশের অনুমতি ব্যতীত ওয়ারিশের জন্য অসিয়ত করা জায়েয নেই।

৫- অসিয়ত

ক- অসিয়তের পরিচিতি:
অসিয়ত হলো কোনো ব্যক্তির মৃত্যুর পরে কোনো কিছু করা বা হওয়ার নির্দেশনা প্রদান। আমানত পৌঁছে দেওয়া, সম্পদ দান করা, কন্যা বিয়ে দেওয়া, মৃতব্যক্তিকে গোসল দেওয়া, তার জানাযা পড়ানো, মৃতব্যক্তির রেখে যাওয়া সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশ বন্টন করা ইত্যাদি অসিয়তের অন্তর্ভুক্ত।
খ- অসিয়ত শরী‘আতসম্মত হওয়ার মূলভিত্তি:
কুরআন, সুন্নাহ ও ইজমার দ্বারা অসিয়ত শরী‘আতসম্মত হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿كُتِبَ عَلَيۡكُمۡ إِذَا حَضَرَ أَحَدَكُمُ ٱلۡمَوۡتُ إِن تَرَكَ خَيۡرًا ٱلۡوَصِيَّةُ﴾ [البقرة: ١٨٠] 
“তোমাদের উপর ফরয করা হয়েছে যে, যখন তোমাদের কারো মৃত্যু উপস্থিত হবে, যদি সে কোনো সম্পদ রেখে যায়, তবে তা অসিয়ত করবে।” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮০]
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«مَا حَقُّ امْرِئٍ مُسْلِمٍ لَهُ شَيْءٌ يُوصِي فِيهِ، يَبِيتُ لَيْلَتَيْنِ إِلَّا وَوَصِيَّتُهُ مَكْتُوبَةٌ عِنْدَهُ». 
“কোনো মুসলিম ব্যক্তির উচিত নয় যে, তার অসিয়তযোগ্য কিছু রয়েছে আর সে দু’রাত কাটাবে অথচ তার কাছে তার অসিয়ত লিখিত থাকবে না।”[56]
গ- যেসব শব্দ দ্বারা অসিয়ত কার্যকর হবে:
১- মুখে বলার দ্বারা।
২- লেখার দ্বারা।
৩- স্পষ্ট বুঝা যায় এমন ইশারার দ্বারা।
প্রথমত: মুখে বলার দ্বারা:
আলেমদের মধ্যে মুখে স্পষ্ট বলার দ্বারা অসিয়ত কার্যকর হওয়াতে কোনো মতভেদ নেই। যেমন কেউ বলল, আমি অমুককে এ অসিয়ত করলাম। অথবা মুখে স্পষ্ট শব্দে না বলে এমন অস্পষ্ট শব্দে বলা যাতে ঈঙ্গিত বহন করে যে তিনি এ শব্দ দ্বারা অসিয়ত করেছেন। যেমন, কেউ কাউকে বলল,
“আমি আমার মৃত্যুর পরে অমুককে এটার মালিক বানালাম অথবা তোমরা সাক্ষ্য থাকো আমি অমুককে এ জিনিসের অসিয়ত করলাম ইত্যাদি”।
দ্বিতীয়ত: লিখিতভাবে অসিয়ত করা:
কেউ কথা বলতে অক্ষম হলে যেমন বোবা বা জিহ্বায় সমস্যা থাকলে তখন তার আক্বল (জ্ঞান) থাকলে এবং কখা উচ্চারণের সম্ভাবনা আর না থাকলে সে লিখিতভাবে অসিয়ত করলে তা কার্যকর হবে।
তৃতীয়ত: বুঝার মতো ইশারা দ্বারা:
বোবা বা জিহ্বায় সমস্যা থাকলে সে ব্যক্তি ইশারায় অসিয়ত করলে তার অসিয়ত কার্যকর হবে, তবে শর্ত হলো যার জিহ্বায় সমস্যা আছে তার চিরতরে কথা বলার সম্ভাবনা না থাকা।
ঘ- অসিয়তের হুকুম: 
অসিয়ত করা শরী‘আতসম্মত ও এটি শরী‘আতির আদিষ্ট বিষয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ شَهَٰدَةُ بَيۡنِكُمۡ إِذَا حَضَرَ أَحَدَكُمُ ٱلۡمَوۡتُ حِينَ ٱلۡوَصِيَّةِ ٱثۡنَانِ﴾ [المائ‍دة: ١٠٦]
“হে মুমিনগণ, যখন তোমাদের কারো নিকট মৃত্যু উপস্থিত হয়, তখন অসিয়তকালে তোমাদের মাঝে তোমাদের মধ্য থেকে দু’জন (ন্যায়পরায়ণ) ব্যক্তি সাক্ষী হবে।” [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ১০৬]
ঙ- অসিয়তের প্রকারভেদ:
১- ওয়াজিব অসিয়ত।
যার ওপর ঋণ, অন্যের হক, আমানত ও অঙ্গিকার রয়েছে তাকে এসব কিছু স্পষ্টভাবে লিখিত রাখা ওয়াজিব যাতে নগদ ও বাকী সব দেনা-পাওয়ানা নির্দিষ্ট করা থাকে। যার কাছে অন্যের আমানত ও অঙ্গিকার রয়েছে তা এমনভাবে স্পষ্ট থাকা যাতে অসিয়তকৃত ব্যক্তি ওয়ারিশদের সাথে স্পষ্টভাবে হস্তক্ষেপ করতে পারে।
২- সুন্নাত অসিয়ত:
এ ধরণের অসিয়ত করতে উৎসাহিত করা হয়েছে। অসিয়তকারী তার সম্পদের এক তৃতীয়াংশ ওয়ারিশ ব্যতীত অন্যদের জন্য অসিয়ত করবে। এ ধরণের কল্যাণকর ও জনহিতকর কাজে অসিয়ত করা মুস্তাহাব, চাই তা আত্মীয়-স্বজন বা অনাত্মীয় বা নির্দিষ্ট স্থান যেমন অমুক মসজিদ বা অনির্দিষ্ট স্থান যেমন মসজিদ, মাদ্রাসা, লাইব্রেরী, আশ্রয়কেন্দ্র, হাসপাতাল ইত্যাদি যাই হোক।
চ- অসিয়তের পরিমাণ:
মোট সম্পদের এক তৃতীয়াংশের বেশি অসিয়ত করা জায়েয নেই। কেননা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সা‘আদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বলেছেন,
«أُوصِي بِمَالِي كُلِّهِ؟ قَالَ: «لاَ» ، قُلْتُ: فَالشَّطْرُ، قَالَ: «لاَ» ، قُلْتُ: الثُّلُثُ، قَالَ: «فَالثُّلُثُ، وَالثُّلُثُ كَثِيرٌ».
“হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আমি কি আমার সমুদয় মালের অসিয়ত করে যাব? তিনি বললেন, না। আমি বললাম, তবে অর্ধেক? তিনি বললেন, না। আমি বললাম, তবে এক তৃতীয়াংশ। তিনি বললেন, আর এক তৃতীয়াংশও অনেক।”[57]
ওয়ারিশের জন্য অসিয়ত করা জায়েয নেই, এমনিভাবে ওয়ারিশ ছাড়া অন্যদের জন্য ওয়ারিশের অনুমতি ব্যতীত এক তৃতীয়াংশের বেশি অসিয়ত করাও জায়েয নেই।
ছ- যেসব কাজে অসিয়ত শুদ্ধ হবে:
১- ন্যায়-সঙ্গতভাবে অসিয়ত করতে হবে।
২- আল্লাহ তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমে যেভাবে অসিয়ত শরী‘আতসম্মত করেছেন অসিয়ত সেভাবে হতে হবে।
৩- অসিয়তকারী তার কাজে একনিষ্ঠ থাকতে হবে এবং অসিয়তের দ্বারা ভালো ও কল্যাণকর কাজের নিয়ত করবে।
জ- অসিয়তকারীর শর্তাবলী:
১- অসিয়তকারী দান করার যোগ্য হতে হবে।
২- সে অসিয়তকৃত বস্তুর মালিক হতে হবে।
৩- সে খুশী মনে ও স্বেচ্ছায় অসিয়ত করতে হবে।
ঝ- অসিয়তকৃত ব্যক্তি বা সংস্থার শর্তাবলী:
১- অসিয়তটি কল্যাণ ও বৈধ স্থানে হতে হবে।
২- অসিয়ত করার সময় যার জন্য অসিয়ত করবে তার বাস্তবে বা উহ্যভাবে অস্তিত্ব থাকতে হবে। অতএব, অস্তিত্বহীন কিছুর জন্য অসিয়ত করা শুদ্ধ নয়। কেবল জানা ব্যক্তি বা সংস্থার জন্যই অসিয়ত শুদ্ধ হবে।
৩- অসিয়তকৃত ব্যক্তি নির্দিষ্ট হওয়া।
৪- অসিয়তকৃত ব্যক্তি মালিকানার যোগ্য হওয়া বা মালিকানার অধিকারী হওয়া। 
৫- অসিয়তকৃত ব্যক্তি অসিয়তকারীর হত্যাকারী না হওয়া।
৬- অসিয়তকৃত ব্যক্তি অসিয়তকারীর ওয়ারিশ না হওয়া।
ঞ- অসিয়তকৃত বস্তুর শর্তাবলী:
১- অসিয়তকৃত বস্তুটি ওয়ারিশ হওয়ার যোগ্য সম্পদ হওয়া।
২- অসিয়তকৃত বস্তুটি শরী‘আতের মাপকাঠিতে মূল্যমান সম্পদ হওয়া।
৩- সম্পদটি মালিকানা হওয়ার যোগ্য হওয়া, যদিও অসিয়ত করার সময় তার অস্তিত্ব না থাকে।
৪- অসিয়তকৃত বস্তুটি অসিয়ত করার সময় অসিয়তকারীর মালিকানায় থাকা।
৫- অসিয়তকৃত বস্তুটি শর‘ঈ গুনাহ বা হারাম বস্তু না হওয়া।
ট- যেভাবে অসিয়ত সাব্যস্ত হবে:
সর্বসম্মতভাবে লিখিত আকারে অসিয়ত করা মুস্তাহাব। অসিয়তের শুরুতে বিসমিল্লাহ, আল্লাহর সানা ও হামদ লিখবে। অতঃপর, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর সালাত ও সালাম জানাবে। অতঃপর বিসমিল্লাহ, আল্লাহর হামদ ও রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর সালাত ও সালামের পরে লিখিত আকারে বা মৌখিকভাবে অসিয়তের সাক্ষ্যদ্বয়ের নাম ঘোষণা করবে।
ঠ- অসিয়তের ভারপ্রাপ্ত ব্যক্তি:
১- শাসকের পক্ষ থেকে ভারপ্রাপ্ত ব্যক্তি।
২- বিচারকের পক্ষ থেকে ভারপ্রাপ্ত ব্যক্তি।
৩- মুসলিমের পক্ষ থেকে নির্বাচিত কোনো ভারপ্রাপ্ত ব্যক্তি।
ড- অসিয়ত ভঙ্গের কারণসমূহ: 
১- স্পষ্ট বা ইশারায় অসিয়ত ফেরত নেওয়া।
২- শর্তযুক্ত অসিয়তে শর্ত পাওয়া না গেলে।
৩- অসিয়তের জন্য ব্যক্তির পরিত্যক্ত সম্পত্তি না থাকলে।
৪- অসিয়তকারী অসিয়ত করার যোগ্যতা হারিয়ে ফেললে।
৫- অসিয়তকারী মুরতাদ হয়ে গেলে কতিপয় আলেমের মতে অসিয়ত ভঙ্গ হয়ে যাবে।
৬- অসিয়তকৃত ব্যক্তি অসিয়ত ফেরত দিলে।
৭- অসিয়তকারীর আগে অসিয়তকৃত ব্যক্তি মারা গেলে।
৮- অসিয়তকৃত ব্যক্তি অসিয়তকারীকে হত্যা করলে।
৯- অসিয়তকৃত বস্তুটি ধ্বংস হয়ে গেলে বা তাতে অন্যের মালিকানা প্রকাশ পেলে।
১০- ওয়ারিশদের অনুমতি ব্যতীত কোনো ওয়ারিশকে অসিয়ত করলে অসিয়ত ভঙ্গ হয়ে যাবে।

তৃতীয় অধ্যয়: পরিবার সম্পর্কিত
বিবাহ, এর বিধান ও শর্তাবলী

তৃতীয় অধ্যয়: পরিবার সম্পর্কিত
বিবাহ

বিবাহ শরী‘আতসম্মত হওয়ার হিকমত:
বিবাহ ইসলামের একটি অন্যতম সুন্নাত। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিবাহ করতে উৎসাহিত করেছেন। তিনি বলেছেন,
«يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ، مَنِ اسْتَطَاعَ البَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ، فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ، وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ فَإِنَّهُ لَهُ وِجَاءٌ».
“হে যুব সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহ করার সামর্থ রাখে, তারা যেন বিবাহ করে। কেননা, বিবাহ তার দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং যৌনতাকে সংযমী করে। আর যাদের বিবাহ করার সামর্থ্য নেই, সে যেন সাওম পালন করে; কেননা, সাওম তার যৌনতাকে দমন করবে।”[58] (একদল বর্ণনাকারী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।)
বিবাহের হিকমতের মধ্যে:
১- পারিবারিক সম্পর্ক বজায়, পরস্পর ভালোবাসা বিনিময়, আত্মসংযম ও হারাম কাজ থেকে নিজেকে হিফাযত করতে বিবাহ একটি উত্তম মাধ্যম ও উপায়।
২- (হালালভাবে) বংশ পরিক্রমা ঠিক রেখে সন্তান জন্ম দেওয়া ও বংশ বিস্তারে বিবাহ একটি উত্তম পদ্ধতি। 
৩- নানা রোগ-ব্যাধিমুক্ত ও নিরাপদে মানুষের যৌন চাহিদা মিটাতে ও মনোবাসনা পূরণ করতে বিবাহ একটি সুন্দরতম পদ্ধতি।
৪- বিবাহের মাধ্যমে সন্তান লাভের দ্বারা পিতৃত্ব ও মাতৃত্বের স্বাদ ভোগ করা যায়।
৫- বিবাহে রয়েছে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের জন্য শান্তির আবাস, প্রশান্তি, শালীনতা ও সচ্চরিত্র।
বিবাহের শাব্দিক ও পারিভাষিক পরিচিতি:
বিবাহের শাব্দিক সংজ্ঞা:
নিকাহ তথা বিবাহের শাব্দিক অর্থ যৌন সঙ্গম, দু’টি জিনিস একত্রিত করা। কখনও কখনও নিকাহ বন্ধন বা চুক্তি অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন বলা হয়, (نكح فلانة) যখন কেউ বিয়ে করার দৃঢ় ইচ্ছা পোষণ করে ও বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। আবার বলা হয়, (نكح امرأته) সে তার স্ত্রীর সাথে যৌন সঙ্গম করল।
শরী‘আতের পরিভাষায় বিবাহ:
عقد يعتبر فيه لفظ إنكاح أو تزويج في الجملة والمعقود عليه منفعة الاستمتاع أو الازدواج أو المشاركة.
“নিকাহ হলো এমন একটি চুক্তি যাতে ‘বিবাহ দেওয়া বা বিবাহ করা’ ইত্যাদি শব্দের মাধ্যমে উপভোগ বা একত্রে থাকা বা পরস্পর অংশীদার হওয়া বুঝায়”।
বিবাহের হুকুম:
যাদের যৌন চাহিদা রয়েছে তবে যিনায় পতিত হওয়ার আশঙ্কা নেই তাদের জন্য বিয়ে করা সুন্নাত। আর যাদের যিনায় পতিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে তাদের জন্য বিয়ে করা ওয়াজিব। যাদের যৌন চাহিদা নেই যেমন, পুরুষত্বহীন ও বয়স্ক ইত্যাদি লোকের বিয়ে করা বৈধ। তবে প্রয়োজন না থাকলে যারা দারুল হরবে তথা যুদ্ধরত কাফির রাষ্ট্রে অবস্থান করেন তাদের জন্য বিয়ে করা হারাম।
বিবাহ সংঘটিত হওয়ার শব্দাবলী:
যে কোনো ভাষায় বিবাহ করা বা দেওয়া বুঝায় এমন সব শব্দে বিবাহ সংঘটিত হবে। যেমন বলা, (زوجت أو نكحت) আমি বিবাহ করলাম বা বিয়ে দিলাম। অথবা বলা, (قبلت هذا النكاح) আমি এ বিয়ে কবুল করলাম। অথবা (تزوجتها) আমি তাকে বিয়ে করলাম, বা (تزوجت) আমি বিয়ে করলাম, অথবা (رضيت) এ বিয়ে আমি রাজি আছি।
আরবী ভাষার শব্দ ব্যবহার করা মুস্তাহাব। তবে যারা আরবী ভাষা জানেন না তারা তাদের ভাষায় প্রস্তাবনা ও কবুল করলেই বিয়ে সংঘটিত হবে।
বিবাহের রুকনসমূহ:
বিয়ের রুকন দু’টি। তা হলো:
১- প্রস্তাব (الإيجاب): অলী তথা অভিভাবক অথবা যিনি তার স্থলাভিষিক্ত হবেন তার পক্ষ থেকে বিয়ে করার বা বিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া। যিনি আরবী ভালো পারেন তার (إنكاح أو تزويج) শব্দ দ্বারা প্রস্তাব দেওয়া উত্তম। কেননা এ শব্দদ্বয় কুরআনে এসেছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿فَٱنكِحُواْ مَا طَابَ لَكُم مِّنَ ٱلنِّسَآءِ ﴾ [النساء : ٣]
“তাহলে তোমরা বিয়ে কর নারীদের মধ্যে যাকে তোমাদের ভালো লাগে।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৩]
২- কবুল (القبول): স্বামী বা তার স্থলাভিষিক্ত থেকে বিয়ে কবুল করার শব্দ। যেমন বলা, (قبلت) আমি বিয়ে কবুল করলাম বা (رضيت هذا النكاح) এ বিয়ে আমি রাজি আছি বা শুধু কবুল করেছি বলা। ইজাব তথা প্রস্তাব কবুলের আগে হতে হবে, তবে কোনো আলামত থাকলে আগে কবুল বললেও হবে।
বিবাহের শর্তাবলী:
বিয়ের শর্ত চারটি। তা হচ্ছে:
১- স্বামী-স্ত্রী নির্ধারিত হওয়া।
২- স্বামী-স্ত্রী উভয়ের সম্মতি থাকা। অতএব, স্বামী-স্ত্রী কাউকে জোর করে বিয়ে দেওয়া জায়েয নেই। কুমারী ও অকুমারী উভয়ের অনুমতি নিবে। কুমারীর চুপ থাকা তার অনুমতি দেওয়া আর অকুমারীর মৌখিক সম্মতি নিতে হবে। পাগল ও নির্বোধের ক্ষেত্রে এটি শর্ত নয়।
৩- অভিভাবক: অভিভাবক পুরুষ, স্বাধীন, বালিগ (প্রাপ্তবয়স্ক), আকেল (জ্ঞানবান), বিচক্ষণ ও ন্যায়পরায়ণ হওয়া শর্ত। এছাড়া একই দীনের অনুসারী হওয়াও শর্ত। বিয়ের ক্ষেত্রে মেয়ের বাবা তার অভিভাবক হওয়ার সর্বাধিক যোগ্য, অতঃপর বাবার অসিয়তকৃত ব্যক্তি, অতঃপর তার দাদা, এভাবে উর্ধতন দাদারা, অতঃপর তার ছেলে ও নিম্নতম ছেলেরা, তার সহোদর ভাই, অতঃপর তার বৈমাত্রেয় ভাই, অতঃপর এসব ভাইয়ের ছেলেরা, অতঃপর, আপন চাচা, অতঃপর বৈমাত্রেয় চাচা, অতঃপর তাদের সন্তানেরা, অতঃপর বংশীয় নিকটাত্মীয়রা, অতঃপর দেশের বাদশাহ অভিভাবক হবেন।
৪- সাক্ষ্য: ন্যায়পরায়ণ, পুরুষ ও শরী‘আতের বিধান প্রযোজ্য (প্রাপ্তবয়স্ক) এমন দুজন সাক্ষ্যের সাক্ষী ছাড়া বিয়ে শুদ্ধ হবে না।
৫- স্বামী-স্ত্রী উভয়ে বিবাহ বন্ধনে শরী‘আতের নিষেধাজ্ঞামুক্ত থাকা (অর্থাৎ যাদের সাথে বিয়ে হারাম তাদের অন্তর্ভুক্ত না হওয়া)।
বিবাহে যেসব কাজ সুন্নাত ও যেসব কাজ হারাম:
Ø  যে ব্যক্তি দীনদারিতা, ভিনদেশীয়তা, কুমারী, সন্তান ও সৌন্দর্য্যের ব্যাপারে ন্যায়পরায়ণতা ও সমতা বজায় রাখতে পারবে না তার জন্য একটি বিয়ে করা সুন্নাত।
Ø  বিয়ের খিতবা তথা প্রস্তাব দেওয়া কন্যাকে সতর ব্যতীত অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ভালোভাবে দেখা মুস্তাহাব, যাতে তাকে বিয়ের প্রতি আগ্রহী করে তুলে, তবে নির্জনে দেখতে পারবে না। এমনিভাবে কনেও হবু বরকে ভালোভাবে দেখা মুস্তাহাব।
Ø  বিয়ের প্রস্তাবকারী বরের পক্ষে মেয়েকে দেখা সম্ভব না হলে সে একজন বিশ্বস্ত নারী পাঠাবে, তিনি ভালোভাবে দেখে তাকে মেয়ের গুণাবলী বর্ণনা করবে।
Ø  কেউ কোনো মেয়ের বিয়ের প্রস্তাব দিলে উক্ত প্রস্তাবকারী তার প্রস্তাব ফিরিয়ে নেওয়া বা তাকে দেখার অনুমতি না দেওয়া পর্যন্ত অন্য কেউ উক্ত মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া হারাম।
Ø  যেসব নারী তিন ত্বালাক ব্যতীত বায়েন ত্বালাকের ইদ্দত পালনরত তাদেরকে স্পষ্ট বা ইশারায় বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া বৈধ।
Ø  তবে রাজ‘ঈ তালাকের ইদ্দত পালনকারী নারীকে স্পষ্ট বা ইশারায় বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া হারাম।
Ø  জুম‘আর দিন (শুক্রবার) বিকেলে বিয়ে পড়ানো সুন্নাত। কেননা আসরের সালাতের পরের সময় দো‘আ কবুল হয় এবং সম্ভব হলে মসজিদে বিয়ে পড়ানো সুন্নাত।
====

চতুর্থ অধ্যয়: মুসলিম নারী সম্পর্কিত কতিপয় বিধি-বিধান
ভূমিকা:
শরী‘আতের বিধান প্রযোজ্যদের (মুকাল্লাফ) হিসেবে শরী‘আত প্রণেতার (আল্লাহ ও তার রাসূল) বিধি-বিধান তিন প্রকার। সেগুলো হলো:
১- শুধু পুরুষদের জন্য প্রযোজ্য।
২- শুধু নারীদের জন্য প্রযোজ্য।
৩- নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্য প্রযোজ্য।
এ অধ্যয়ে শুধু নারীদের জন্য প্রযোজ্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ মাসআলা (বিধান) আলোচনা করব । আর নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য প্রযোজ্য অধিকাংশ বিধি-বিধান ইতোপূর্বে উল্লিখিত তিনপ্রকারে আলোচনা করা হয়েছে।
নারীদের জন্য প্রযোজ্য বিধানগুলো নিচে আলোচনা করা হলো:

নারী সম্পর্কিত বিধি-বিধান
প্রথম মাসআলা:
বারুকার উপর মাসাহ করার হুকুম: প্রয়োজনে বারুকা পড়া জায়েয। কোনো নারীর মাথায় বারুকা পড়ার প্রয়োজন হলে সে তা পড়তে পরবে; কিন্তু সালাতের জন্য অযু করার সময় তাতে মাসাহ করবে না। কেননা এটি খিমার তথা ঘোমটা নয় এবং ঘোমটার অর্থেও নয়। তাকে সরাসরি আল্লাহর সৃষ্ট মাথা বা মাথার চুল মাসাহ করতে হবে।      
দ্বিতীয় মাসআলা:
নখ পালিশ: কিছু মহিলা ইচ্ছাকৃত নখ ও শরীরে পালিশ করেন যা তাদের চামড়ায় পানি পৌঁছতে বাঁধা দেয়। এ ধরণের কাজ করা না জায়েয। বরং পবিত্রতা অর্জনের শর্ত হলো অযুর সময় পানি অযুর অঙ্গে পৌঁছা।
তৃতীয় মাসআলা:
হায়েয: মহিলাদের যৌনাঙ্গ থেকে সুস্থ অবস্থায় প্রসব বা কুমারীত্বে নষ্ট হওয়ার কারণ ছাড়াই যে রক্ত বের হয় তা হলো হায়েয।
অনেক আলেমের মতে, মেয়েদের নয় বছর বয়স থেকে হায়েযের সময় শুরু হয়। এ বয়সের আগে কারো রক্ত দেখা দিলে তা হায়েযের রক্ত নয়; বরং তা কোনো রোগের কারণে হতে পারে। মেয়েদের মৃত্যু পর্যন্ত হায়েয চলতে পারে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে পঞ্চাশ বছর পর হায়েয শেষ হয়ে যায়।
হায়েযের রক্ত ছয় ধরণের। তা হলো, কালো, লালচে, হলুদ, কর্দমাক্ত, নীল ও ধূসর বর্ণের।
হায়েযের সর্বনিম্ন সময় একদিন ও একরাত। মধ্যম সময়সীমা হলো পাঁচ দিন আর সর্বোচ্চ সময়সীমা পনেরো দিন। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে মেয়েদের ছয় বা সাত দিন পর্যন্ত হায়েয হয়ে থাকে।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে দু’হায়েযের মধ্যবতী পবিত্ররতার সর্বনিম্ন সময়সীমা তেরো দিন। তবে এর বেশি বা কমও হতে পারে।
হায়েয অবস্থায় সালাত, সাওম, মসজিদে প্রবেশ, কুরআন খুলে তিলাওয়াত করা, কা‘বা তাওয়াফ করা ও সহবাস করা ইত্যাদি নিষেধ। এছাড়াও হায়েয প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার নিদর্শন।
চতুর্থ মাসআলা:
নিফাস: প্রসব বা অকাল প্রসবের (যদি গর্ভপাতে বাচ্চার অবয়ব স্পষ্ট হয়) কারণে স্ত্রীলিঙ্গ থেকে প্রবাহিত রক্তকে নিফাস বলে।
নিফাসের সময়সীমা: সাধারণত সর্বোচ্চ সময়সীমা চল্লিশ দিন, তবে এর নিম্ন সময়সীমা নেই। কেউ যমজ সন্তান প্রসব করলে প্রথম সন্তানের জন্মদিন থেকে নিফাসের সময়সীমা শুরু হবে।
হায়েয অবস্থায় যেসব কাজ নিষিদ্ধ যেমন, সাওম, সালাত ইত্যাদি নিফাস অবস্থায়ও নিষিদ্ধ।
পঞ্চম মাসআলা:
ইসতিহাযা তথা অসুস্থ নারীর বিধান: হায়েয বা নিফাসের সময় ব্যতীত মহিলাদের যে রক্ত প্রবাহিত হয় তাকে ইসতিহাযা বলে। অতএব, হায়েয ও নিফাসের সময়সীমার আগে বা পরে অথবা হায়েয হওয়ার আগের বয়সে অর্থাৎ নয় বছরের আগে যে রক্ত প্রবাহিত হয় তা সবই ইসতিহাযার রক্ত। ইসতিহাযাগ্রস্ত নারীর হুকুম হলো সে সর্বদা তারা সর্বদা ছোট অপবিত্র থাকেন, এ অবস্থা তাদেরকে সালাত, সাওম ও অন্যান্য কাজ করতে নিষেধ করে না।
ইসতিহাযাগ্র্রস্ত নারী প্রত্যেক সালাতের জন্য অযু করবে। তার স্বামী তার সাথে সহবাস করা জায়েয।
গর্ভাবস্থায় নারী যে রক্ত দেখে তাও ইসতিহাযা হিসেবে গণ্য হবে।
ষষ্ঠ মাসআলা:
নারীর শরীরের চুল মুণ্ডন করা নিষেধ, তবে বিশেষ প্রয়োজন হলে করতে পারবে। মহিলাদের ভ্রু-প্ল্যাক (ভ্রু উৎপাটন) করা, হাতে উলকি চিহ্ন দেওয়া[59], পরচুলা লাগানো, রেত দ্বারা দাত সূক্ষ্ম করা যাতে অল্প বয়স্ক ও দাতের সৌর্ন্দয প্রকাশ পায়। কেননা এ ধরণের কাজ যারা করে ও যারা করায় তাদের উভয়কে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লা‘নত করেছেন।[60] (বুখারী, মুসলিমসহ সাত কিতাবের গ্রন্থকারগণ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।)
নারীদের জন্য স্বামী ও অন্যান্য নারীদের মধ্যে অবস্থান ব্যতীত সুগন্ধি ব্যবহার করা হারাম।
সপ্তম মাসআলা:
নারীর আওরাত তথা সতর: পরপুরুষের সামনে নারীর পুরো শরীরই সতর, সুতরাং পরপুরুষের সামনে তার পুরো শরীর ঢেকে রাখা ফরয যেভাবে পরপুরুষের সাথে নির্জনে থাকা নাজায়েয।
মুহরিম ব্যতীত নারী সফর করবে না। আর মুহরিম হলো যাদের সাথে সর্বদা বিবাহ বন্ধন হারাম, তা বংশগত বা বৈবাহিক সম্পর্ক বা দুধ পানের কারণে হতে পারে।
সালাতে নারীরা তাদের চেহারা, হাতের তালু ও পা ব্যতীত সমস্ত শরীর ঢেকে রাখবে। পরপুরুষের উপস্থিতিতে তাদের সমস্ত শরীর ঢেকে রাখা ওয়াজিব। আর সাধারণত হাতের তালু ও পা ঢেকে রাখা মুস্তাহাব।
সতর রক্ষাকারী পোশাক ঢিলেঢালা ও ঘন হবে, পুরুষের পোশাকের সাদৃশ্য হবে না, এমন সাজ-সজ্জা হতে পারবে না যাতে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে, কাফিরদের জামা-কাপড়ের সাদৃশ্য হতে পারবে না এবং পোশাকটি সুনাম-খ্যাতির জন্যও হতে পারবে না।
অষ্টম মাসআলা:
নারীর সৌন্দর্য: নারীর কিছু হালাল সাজ-সজ্জা ও সৌন্দর্য আছে, আবার কিছু হারাম সাজ-সজ্জা ও সৌন্দর্য আছে। যেমন, নারীর জন্য সুগন্ধি, স্বর্ণ, রৌপ্য, রেশম ও কৃস্টালের জিনিস ব্যবহার করা জায়েয।
আর তাদের হারাম সাজ-সজ্জা ও সৌন্দর্য বলতে যা সুনাম-সুখ্যাতি ও লোক দেখানোর জন্য পরে থাকে যাতে মানুষ তার দিকে তাকিয়ে থাকে, এমন সুগন্ধি যার গন্ধ গায়রে মুহরিমের কাছে পৌঁছে।
নবম মাসআলা:
নারীর আওয়াজ: সাধারণত নারীর আওয়াজ আওরাত তথা পর্দার অন্তর্ভুক্ত নয়, তবে তাদের আওয়াজ যদি বেশি সংক্ষেপণ, নরম, মানুষকে ফিতনার আশঙ্কা ও এতে অতিরঞ্জিত হলে তা জায়েয নয়। নারীর গান করা হারাম। বর্তমান যুগে মানুষ নারীর গানে খুব আসক্ত। তারা এটাকে মানুষকে আকর্ষণ ও অর্থ উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে নিয়েছে। পুরুষের জন্য গান গাওয়া হারাম আর নারীর জন্য তা কঠোরভাবে হারাম। তবে শুধু নারীদের মধ্যে আনন্দ উৎসবে শরী‘আতসম্মত ও মিউজিক ছাড়া বৈধ শব্দের গান করা জায়েয।   
দশম মাসআলা:
নারীদের জন্য ছোট বাচ্চাদের ও তাদের স্বামীকে গোসল দেওয়া জায়েয। এমনিভাবে পুরুষের মতো তারাও জানাযায় অংশগ্রহণ করা জায়েয; তবে জানাযার সাথে তাদের চলা ও জানাযা বিদায় দেওয়া জায়েয নেই। তাদের কবর যিয়ারত করাও জায়েয নেই। তাদের বিলাপ, শোকগাঁথা, গালে চড় দেওয়া, জামা-কাপড় ছিড়ে ফেলা ও শরীরের চুল উৎপাটন করা নিষেধ। এসব কাজ জাহেলী যুগের কাজ এবং কবীরা গুনাহ। নারীর জন্য স্বামী ছাড়া অন্যের জন্য তিনদিনের বেশি শোক পালন করা জায়েয নেই, আর স্বামীর জন্য চারমাস দশদিন শোক পালন করা ওয়াজিব। এ সময় সে স্বামীর ঘরে বাস করবে এবং সৌন্দর্য ও সুগন্ধি পরিত্যাগ করবে। শোকের ইদ্দত পালনের সময় কোনো নির্দিষ্ট পোশাক নেই।
একাদশ মাসআলা:
নারীর অলংকার: নারীর জন্য বৈধ অলংকার যেমন সোনা, রুপা ও প্রচলিত অন্যান্য পরিধান করা জায়েয। তবে তাদেরকে এ ক্ষেত্রে অপচয় ও অহংকার পরিহার করতে হবে।
নারীর নিত্য ব্যবহৃত বা বিভিন্ন উৎসব উপলক্ষ্যে পরিহিত অলংকার সোনা-রূপায় যাকাত ওয়াজিব হবে না।
দ্বাদশ মাসআলা:
স্ত্রীর জন্য স্বামীর অনুমতি ব্যতীত তার সম্পদ থেকে প্রথা অনুযায়ী দান সদকা করা জায়েয, যদি তিনি এতে সম্মত থাকেন। স্বামী যাকাতের হকদার হলে স্ত্রী তার সম্পদের যাকাত স্বামীকে দিতে পারবে। স্বামী যদি কৃপণ হয় যে, স্ত্রীর প্রাপ্য ভরণ-পোষণ আদায় করতে কৃপণতা করে তাহলে স্ত্রীর জন্য স্বামীর অনুমতি ব্যতীত ন্যায়-সঙ্গতভাবে যতটুকু তার ও তার সন্তানের জন্য প্রয়োজন ততটুকু সম্পদ নেওয়া জায়েয।
ত্রয়োদশ মাসআলা:
গর্ভবতী ও দুগ্ধপানকারী নারীর সাওম পালনে নিজের ও তার সন্তানের অথবা দুজনের যেকোনো একজনের ক্ষতির আশঙ্কা করলে তাদের জন্য সাওম ভঙ্গ করা জায়েয। তারা উক্ত সাওমের কাযা আদায় করবে, ফিদিয়া দিতে হবে না। তবে তারা যদি শুধু তাদের সন্তানের ক্ষতির আশঙ্কা করে তাহলে উক্ত সাওমের কাযা ও ফিদিয়া উভয়টি আদায় করতে হবে। আর দুগ্ধদানকারী নারীর সন্তান যদি অন্য নারীর দুধ গ্রহণ করে এবং তারা যদি দুগ্ধদানকারী নারীকে ভাড়া করতে সক্ষম হয় অথবা উক্ত সন্তানের যদি সম্পদ থাকে তাহলে তারা দুগ্ধদানকারীকে ভাড়া করবে এবং নিজে সাওম ভঙ্গ করবে না। দুগ্ধদানকারী নারীর হুকুম সন্তানের মায়ের হুকুমের মতোই।
স্বামী উপস্থিত থাকলে তার অনুমতি ব্যতীত নারীর নফল সাওম পালন করা জায়েয নেই।
চতুর্দশ মাসআলা:
স্বামী তার স্ত্রীকে ফরয হজ পালনে বাধা দেওয়ার অধিকার নেই। স্ত্রী স্বামীর অনুমতি চাইলে তাকে অনুমতি দেওয়া এবং তার ফরয হজ পালনে সহযোগিতা করা স্বামীর জন্য ফরয। তবে নফল হজের ক্ষেত্রে স্বামী কোনো অসুবিধা দেখলে বা তার সন্তানের অসুবিধা দেখলে স্ত্রীকে নিষেধ করার অধিকার আছে।
পঞ্চদশ মাসআলা:
মহিলারা ইহরাম অবস্থায় তাদের স্বাভাবিক পোশাকই পরিধান করবে। তবে ইহরাম অবস্থায় নিম্নোক্ত বিষয় পরিহার করবে। তা হলো:
১- সুগন্ধিযুক্ত কাপড়।
২- হাতমোজা পরিধান করা।
৩- নিকাব পড়া।
৪- হলদে কাপড় পরিধান করা।
ষোড়শ মাসআলা:
হায়েয ও নিফাসগ্রস্তরা গোসল করে ইহরামের কাপড় পরিধান করবে, তবে তারা পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত বাইতুল্লাহর তাওয়াফ করবে না। 
সপ্তদশ মাসআলা:
হজে তালবিয়্যাহ শরী‘আতসম্মত। এতে পুরুষেরা উচ্চ আওয়াজে তালবিয়্যাহ বলবে আর নারীরা আস্তে আস্তে বলবে। নারীরা তাওয়াফ ও সা‘ঈর সময় রমল তথা হেলেদুলে চলবে না। দো‘আ পড়ার সময় উঁচু আওয়াজে দো‘আ পড়বে না। হাজরে আসওয়াদ ও অন্যান্য ভিড়ের স্থানে ভিড় করবে না।
অষ্টাদশ মাসআলা:
মাথা মুণ্ডানো ও চুল ছোট করা হজ ও উমরা একটি বিধান। তবে মহিলারা মাথা মুণ্ডানোর পরিবর্তে মাথার চুল ছোট করবে; কেননা তাদের জন্য মাথা মুণ্ডানো জায়েয নেই।
তারা চুলে বেণী করলে প্রত্যেক বেণী থেকে এক আঙ্গুলের মাথা পরিমাণ কেটে ছোট করবে, আর বেণী না করলে পুরো চুলের আগা থেকে এক আঙ্গুলের মাথা পরিমাণ ছোট করবে।
উনবিংশ মাসআলা:
নারীর জন্য কুরবানীর দিনে দ্রুত তাওয়াফে ইফাদা করা মুস্তাহাব; যদি তাদের হায়েয শুরু হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা মহিলাদের হায়েযের আশঙ্কায় কুরবানীর দিনেই তাদেরকে তাওয়াফে ইফাদা সেরে ফেলতে নির্দেশ দিতেন। হায়েযগ্রস্তরা মক্কা থেকে হায়েয অবস্থায় বের হলে তাওয়াফে ইফাদা আদায় করলে তাদের বিদায়ী তাওয়াফ নেই। 
বিশতম মাসআলা:
মুসলিম নারীকে অমুসলিম পুরুষের সাথে বিবাহ দেওয়া হারাম, চাই সে মুশরিক হোক বা সমাজতান্ত্রিক বা হিন্দু বা অন্য ধর্মের অনুসারী বা আহলে কিতাব; কেননা নারীর ওপর পুরুষের দায়িত্ব-কর্তৃত্ব রয়েছে এবং স্বামীর আনুগত্য করা স্ত্রীর ওপর ফরয। আর এটি অভিভাবকত্বের অর্থে। অথচ যে ব্যক্তি লা ইলাহা ইল্লাহ ও মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর সাক্ষ্য দেয় তার ওপর কোনো কাফির বা মুশরিকের কোনো অভিভাবকত্ব ও কর্তৃত্ব নেই।
একবিংশ মাসআলা:
ছোট শিশু বা নির্বোধ বালক বালিকার লালনপালন ও রক্ষণাবেক্ষেণকে হাদানা বা নার্সারি বলে।
ছোট শিশু বা নির্বোধ বালক বালিকার লালনপালন ও রক্ষণাবেক্ষেণ করা মায়ের দায়িত্ব। তিনি এ কাজ করতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে এ কাজে বাধ্য করা হবে। মায়ের অবর্তমানে এ কাজের অধিক হকদার সন্তানের নানী, অতঃপর মায়ের দিকের নিকটতম মায়েরা, অতঃপর বাবা, অতঃপর বাবার মায়েরা (দাদীরা), অতঃপর দাদা, অতঃপর দাদীরা, অতঃপর সহোদর বোনেরা, অতঃপর বৈপিত্রীয় বোনেরা, অতঃপর বৈমাত্রীয় বোনেরা, অতঃপর চাচারা, অতঃপর ফুফুরা, অতঃপর খালারা, অতঃপর চাচীরা, অতঃপর ভাইয়ের মেয়েরা, অতঃপর আপন চাচাতো বোনেরা, অতঃপর বৈমাত্রীয় চাচাতো বোনেরা, অতঃপর বৈপিত্রীয় চাচাতো বোনেরা, অতঃপর নিকটতম বংশীয় আত্মীয়-স্বজনরা অতঃপর রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়রা, অতঃপর দেশের দায়িত্বরত শাসকদের ওপর তার লালনপালনের দায়িত্ব বর্তাবে।
সন্তান লালনপালনের খরচাদি পিতাকে বহন করতে হবে। সন্তানের লালনপালনকারীর শর্ত হলো সে বালেগ তথা প্রাপ্ত বয়স্ক, জ্ঞানসম্পন্ন, শিক্ষাদীক্ষা প্রদানে সক্ষম, আমানতদার, সচ্চরিত্রবান, মুসলিম ও অবিবাহিতা হতে হবে। তিনি বিবাহিতা হলে তার ওপর থেকে লালনপালনের দায়িত্বভার রহিত হয়ে যাবে। শিশু সাত বছর বয়স হলে (বাবা-মা আলাদা হলে) তাকে বাবা ও মা যেকোন কারে সাথে থাকার ইখতিয়ার দেওয়া হবে। শিশু যার সাথে থাকতে পছন্দ করে তাকে তার সাথে থাকার সুযোগ দিতে হবে। মেয়ে শিশুর ক্ষেত্রে সাত বছর পরে বিবাহ দেওয়া পর্যন্ত বাবার সাথে থাকার অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
দ্বাবিংশ মাসআলা:    
চার মাযহাবের সকল আলেম একমত যে, পরপুরুষের সামনে নারীর সমস্ত শরীর ঢেকে রাখা ফরয। তাদের মধ্যে যারা চেহারা ও দুহাতের তালুকে নারীর সতরের অন্তর্ভুক্ত মনে করেন অথবা যারা এ অংশকে সতরের অন্তর্ভুক্ত মনে করেন না তারা সকলেই মনে করেন, বর্তমানে মানুষের মধ্যে ফিতনা ফাসাদ বেড়ে যাওয়ায়, দীনদারীতা কমে যাওয়ায় ও পরনারীর দিকে তাকানোর ক্ষেত্রে পরহেজগারিতা না থাকায় নারীর সমস্ত শরীরই পর্দার অন্তর্ভুক্ত ও সতর।
আমার জন্য যতটুকু সংকলন ও একত্রিত করা সম্ভব হয়েছে তা সংক্ষিপ্ত পরিসরে উপরে আলোচনা করেছি। সর্বশক্তিমান সুমহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি তিনি যেন এর দ্বারা আমাদেরকে উপকৃত করেন। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনই আমার এ কাজের একমাত্র উদ্দেশ্য। তিনিই সরল সঠিক পথের পথ প্রদর্শক।


ড. সালিহ ইবন গানিম আস-সাদলান
প্রফেসর, আল-ফিকহ বিভাগ, শারী‘আহ ফ্যাকল্টি
ইমাম মুহাম্মাদ ইবন সা‘উদ আল-ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রিয়াদ।


_______________________________________________________________________________________

[1] সহীহ বুখারী, আল-আত‘ঈমা, হাদীস নং ৫১১০; সহীহ মুসলিম, লিবাস ওয়ায-যিনা, হাদীস নং ২০৬৭; তিরমিযী, আশরিবা, হাদীস নং ১৮৭৮; নাসাঈ, আয-যিনা, হাদীস নং ৫৩০১; আবু দাউদ, আল-আশরিবা, হাদীস নং ৩৭২৩; ইবন মাজাহ, আশরিবা, হাদীস নং ৩৪১৪; আহমদ, ৫/৩৯৭; আদ-দারেমী, আল-আশরিবা, হাদীস নং ২১৩০।    
[2] সহীহ বুখারী, বাদউল খালক, হাদীস নং ৩১০৬; সহীহ মুসলিম, আল-আশরিবা, হাদীস নং ২০১২; তিরমিযী, আল-আত‘ঈমা, হাদীস নং ১৮১২; আবু দাউদ, আল-আশরিবা, হাদীস নং ৩৭৩১; আহমদ, ৩/৩০৬; মালেক, আল-জামে‘, হাদীস নং ১৭২৭। 
[3] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৪২; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৭৫।
[4] হাদীসের প্রথম অংশটুকু আবু দাউদ বর্ণনা করেছেন, হাদীস নং ৩০। আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। আর দ্বিতীয় অংশটুকু ইবন মাজাহ বর্ণনা করেছেন, হাদীস নং ৩০১। আলবানী রহ. হাদীসটিকে দ‘য়ীফ বলেছেন।  
[5] সহীহ মুসলিম, ত্ববহারাত, হাদীস নং ২৩৪; তিরমিযী, ত্বহারাত, হাদীস নং ৫৫; নাসাঈ, ত্বহারাত, হাদীস নং ১৪৮; ইবন মাজাহ, ত‌াহারাত ও এর সুন্নাতসমূহ, হাদীস নং ৪৭০; মুসনাদ আহমদ, ৪/১৫৩।  
[6] সহীহ বুখারী, অযু, হাদীস নং ১৩৬; সহীহ মুসলিম, ত্বহারাত, হাদীস নং ২৪৬; ইবন মাজাহ, যুহুদ, হাদীস নং ৪৩০৬; মুসনাদ আহমদ, ২/৪০০; মুয়াত্তা মালিক, হাদীস নং ৬০।   
[7] সুনান নাসাঈ, ত্বহারাত, হাদীস নং ১৪০; আবু দাউদ, ত্বহারাত, হাদীস নং ১৩৫।
[8] মযী হলো, স্বচ্ছ, পাতলা, পিচ্ছিল পানি, যা যৌন উত্তেজনার শুরুতে বের হয় কিন্তু চরম পুলক অনুভব হয় না, তীব্র বেগে বের হয় না ও বের হওয়ার পর কোনো ক্লান্তি আসে না। অনেক সময় এ পানি বের হওয়ার বিষয়টি অনুভব করা যায় না। -অনুবাদক।
[9] পেশাবের আগে পরে নির্গত রস। -অনুবাদক।
[10] সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ১০৩।
[11] তিরমিযী, ঈমান, হাদীস নং ২৬১৬। ইমাম তিরমিযী রহ. হাদীসটিকে হাসান সহীহ। আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। ইবন মাজাহ, আল-ফিতান, হাদীস নং ৩৯৭৩; মুসনাদ আহমদ, ৫/২৩১।
[12] সহীহ বুখারী, ঈমান, হাদীস নং ৮; সহীহ মুসলিম, ঈমান, হাদীস নং ১৬; তিরমিযী, ঈমান, হাদীস নং ২৬০৯; নাসাঈ, ঈমান ও এর শারায়ে‘, হাদীস নং ৫০০১; আহমদ, ২/৯৩।
[13] সহীহ বুখারী, সাওম, হাদীস নং ১৭৯২; সহীহ মুসলিম, ঈমান, হাদীস নং ১১; নাসাঈ, সিয়াম, হাদীস নং ২০৩০; আবু দাউদ, সালাত, হাদীস নং ৩৯১; আহমদ, ১/১৬২; মালিক, আন-নিদা লিসসালাত, হাদীস নং ৪২৫; দারেমী, সালাত, হাদীস নং ১৫৭৮।
[14] আবু দাউদ, সালাত, হাদীস নং ৪৯৪; আহমদ, ২/১৮৭। আলবানী হাদীসটিকে হাসান সহীহ বলেছেন। 
[15] সহীহ মুসলিম, ঈমান, হাদীস নং ৮২; তিরমিযী, ঈমান, হাদীস নং ২৬২০; আবু দাউদ, ইস-সুন্নাহ, হাদীস নং ৪৬৭৮; ইবন মাজাহ, ইকামতুস সালাহ ওয়াসসুন্নাতু ফিহা, হাদীস নং ১০৭৮; আহমদ, ৩/৩৭০; দারেমী, সালাত, হাদীস নং ১২৩৩।
[16] ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৮৯৭। আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। 
[17] তিরমিযী, সালাত, হাদীস নং ১৪৯; আবু দাউদ, সালাত, হাদীস নং ৩৯৩; আহমদ, ১/৩৩৩।
[18] তিরমিযী, সালাত, হাদীস নং ১৪৯; আবু দাউদ, সালাত, হাদীস নং ৩৯৩; আহমদ, ১/৩৩৩।  
[19] এটা চিনার উপায় হলো, সূর্য যখন ঢলে পড়ে তখন তার ছায়ার অতিরিক্ত অংশের দিকে তাকাবে, ছায়া যখন ব্যক্তির সমপরিমাণ হবে তখন যোহর সালাতের ওয়াক্ত শেষ হয়ে যাবে।   
[20] সহীহ মুসলিম, ফিতান ওয়াআশরাতস সা‘আ, হাদীস নং ২৯৩৭; তিরমিযী, ফিতান, হাদীস নং ২২৪০; আবু দাউদ, আল-মালাহিম, হাদীস নং ৪৩২১; ইবন মাজাহ, ফিতান, হাদীস নং ৪০৭৬; আহমদ, ৪/১৮২।
[21] ইবন মাজাহ, ইকামাতুস সালাহ ওয়াসসুন্নাতু ফিহা, হাদীস নং ৯৭২।
[22] আবু দাউদ, সালাত, হাদীস নং ৫৯১; আহমদ, ৬/৪০৫।
[23] সহীহ মুসলিম, সালাতুল মুসাফিরীন ওয়াকাসরিহা, হাদীস নং ৬৮৬; তিরমিযী, তাফসীরুল কুরআন, হাদীস নং ৩০৩৪; নাসাঈ, তাকসীরুস সালাহ ফিস সাফরী, হাদীস নং ১৪৩৩; আবু দাউদ, সালাত, হাদীস নং ১১৯৯; ইবন মাজাহ, ইকামাতুস সালাহ ওয়াসসুন্নাতু ফিহা, হাদীস নং ১০৬৫; আহমদ, ১/৩৬; দারেমী, সালাত, হাদীস নং ১৫০৫।
[24] ইবন মাজাহ, ত্বাহারাত ওয়াসুনানিহা, হাদীস নং ২৭৭; আহমদ, ৫/২৮২; দারেমী, ত্বাহারাত, হাদীস নং ৬৫৫।
[25] হাদীসের মূল নসটি এভাবে, [অনুবাদক] 
«يَنْزِلُ رَبُّنَا تَبَارَكَ وَتَعَالَى كُلَّ لَيْلَةٍ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا، حِينَ يَبْقَى ثُلُثُ اللَّيْلِ الْآخِرُ». 
“আমাদের রব প্রতি রাতের যখন রাতের শেষ তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকে তখন পৃথিবীর আসমানে অবতরণ করেন। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৪৯২; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৫৮) 
অথবা নসটি এভাবে হবে, [অনুবাদক]
«إِذَا مَضَى شَطْرُ اللَّيْلِ، أَوْ ثُلُثَاهُ، يَنْزِلُ اللهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا».
[26] সহীহ বুখারী, জুমু‘আ, হাদীস নং ১০৯৪; সহীহ মুসলিম, সালাতুল মুসাফিরীন ওয়াকাসরিহা, হাদীস নং ৭৫৮; তিরমিযী, সালাত, হাদীস নং ৪৪৬; আবু দাউদ, সালাত, হাদীস নং ১৩১৫; ইবন মাজাহ, ইকামাতুস সালাহ ওয়াসসুন্নাতু ফিহা, হাদীস নং ১৩৬৬; মুসনাদ আহমদ, ২/২৬৭; মালিক, নিদা লিসসালাহ, হাদীস নং ৪৯৬; সুনান দারেমী, সালাত, হাদীস নং ১৪৭৮।
[27] তিরমিযী, সালাত, হাদীস নং ৪৭৭; আহমদ, ৩/৩৬।
[28] সহীহ বুখারী, জুমু‘আ, হাদীস নং ১১১৪; সহীহ মুসলিম, সালাতুল মুসাফিরীন ওয়াকাসরিহা, হাদীস নং ৭১৪; তিরমিযী, সালাত, হাদীস নং ৩১৬; নাসাঈ, আল-মাসাজিদ, হাদীস নং ৭৩০; আবু দাউদ, সালাত, হাদীস নং ৪৬৭; ইবন মাজাহ, ইকামাতুস সালাহ ওয়াসসুন্নাতু ফিহা, হাদীস নং ১০১৩; আহমদ, ৫/৩১১; দারেমী, সালাত, হাদীস নং ১৩৯৩।
[29] সহীহ মুসলিম, সালাতুল মুসাফিরীন ওয়াকাসরিহা, হাদীস নং ৭২৫; তিরমিযী, সালাত, হাদীস নং ৪১৬; নাসাঈ, কিয়ামুল লাইল ওয়াতাতাও‘উন নাহারি, হাদীস নং ১৭৫৯; আহমদ, ৬/২৬৫।
[30] ইবন মাজাহ, ইকামাতুস সালাহ ওয়াসসুন্নাতু ফিহা, হাদীস নং ১০৬৪; আহমদ, ১/৩৭।
[31] সহীহ বুখারী, আহাদীসুল আম্বিয়া, হাদীস নং ৩১৯০; সহীহ মুসলিম, সালাত, হাদীস নং ৪০৬; তিরমিযী, সালাত, হাদীস নং ৪৮৩; নাসাঈ, আস-সাহু, হাদীস নং ১২৮৮; আবু দাউদ, সালাত, হাদীস নং ৯৭৬; ইবন মাজাহ, ইকামাতুস সালাহ ওয়াস-সুন্নাতু ফিহা, হাদীস নং ৯০৪; আহমদ, ৪/২৪৪; দারেমী, সালাত, হাদীস নং ১৩৪২।
[32] তিরমিযী, জানায়েয, হাদীস নং ১০২৪; নাসাঈ, জানায়েয, হাদীস নং ১৯৮৬; আহমদ, ৫/৪১২; আবূ দাউদ, হাদীস নং ৩২০১, আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।  ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১৪৯৮।
[33] মুসলিম, হাদীস নং ৯৬৩; তিরমিযী, জানায়েয, হাদীস নং ১০২৪; নাসাঈ, জানায়েয, হাদীস নং ১৯৮৬; আহমদ, ৫/৪১২;
[34] এ দো‘আর সূত্র লেখক উল্লেখ করেন নি, তবে দো‘আর প্রথম কিছু অংশ মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং ৬৫৮৯; সুনান বাইহাকী আল-কুবরা, হাদীস নং ৬৭৯৪ এ আছে। -অনুবাদক
[35] মুসলিম, ত্বহারাত, হাদীস নং ২৪৯; নাসাঈ, ত্বহারাত, হাদীস নং ১৫০; আবু দাউদ, জানায়েয, হাদীস নং ৩২৩৭; ইবন মাজাহ, যুহুদ, হাদীস নং ৪৩০৬; আহমদ, ২/৩০০; মালেক, ত্বহারাত, হাদীস নং ৬০।
[36] সহীহ মুসলিম, জানায়েয, হাদীস নং ৯১৮; তিরমিযী, জানায়েয, হাদীস নং ৯৭৭; আবু দাউদ, জানায়েয, হাদীস নং ৩১১৯; ইবন মাজাহ, মা জাআ ফিল জানায়েয, হাদীস নং ১৪৪৭; আহমদ, ৬/৩০৯; মালিক, জানায়েয, হাদীস নং ৫৫৮। 
[37] সহীহ বুখারী, ঈমান, হাদীস নং ৮; সহীহ মুসলিম, ঈমান, হাদীস নং ১৬; তিরমিযী, ঈমান, হাদীস নং ২৬০৯; নাসাঈ, ঈমান ও শারায়ে‘উহু, হাদীস নং ৫০০১; আহমদ, ২/৯৩।
[38] সহীহ বুখারী, সাওম, হাদীস নং ১৮০১; সহীহ মুসলিম, সিয়াম, হাদীস নং ১০৮০; নাসাঈ, সিয়াম, হাদীস নং ২১২০; আহমদ, ২/১৪৫; মালিক, সিয়াম, হাদীস নং ৬৩৪; দারেমী, সাওম, হাদীস নং ১৬৮৪।
[39] সহীহ মুসলিম।
[40] সহীহ মুসলিম।
[41] সহীহ বুখারী, ঈমান, হাদীস নং ৮; সহীহ মুসলিম, ঈমান, হাদীস নং ১৬; তিরমিযী, ঈমান, হাদীস নং ২৬০৯; নাসাঈ, ঈমান ওয়াশারায়ি‘উহু, হাদীস নং ৫০০১; আহমদ, ২/৯৩। 
[42] সহীহ বুখারী, বাদউল অহী, হাদীস নং ১; সহীহ মুসলিম, আল-ইমারাহ, হাদীস নং ১৯০৭; তিরমিযী, ফাদাইলুল জিহাদ, হাদীস নং ১৬৪৭; নাসাঈ, ত্বাহারাত, হাদীস নং ৭৫; আবু দাউদ, তালাক, হাদীস নং ২২০১; ইবন মাজাহ, যুহুদ, হাদীস নং ৪২২৭; আহমদ, ১/৪৩।
[43] আবু দাউদ, সাওম, হাদীস নং ২৩৫৮।
[44] মুসান্নাফ আব্দুর রাযযাক, হাদীস নং ৮০০৯; মুসান্নাফ ইবন আবু শাইবা, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৬৭৩।
[45] সহীহ বুখারী, ঈমান, হাদীস নং ৮; সহীহ মুসলিম, ঈমান, হাদীস নং ১৬; তিরমিযী, ঈমান, হাদীস নং ২৬০৯; নাসাঈ, ঈমান ওয়াশারায়ে‘উহু, হাদীস নং ৫০০১; আহমদ, ২/৯৩।
[46] নাসাঈ, মানাসিকুল হজ, হাদীস নং ২৬২০; আবু দাউদ, মানাসিক, হাদীস নং ১৭২১; ইবন মাজাহ, মানাসিক, হাদীস নং ২৮৮৬; আহমদ, ১/২৯১; দারেমী, মানাসিক, হাদীস নং ১৭৮৮।
[47] সহীহ বুখারী, হজ, হাদীস নং ১৫২১; সহীহ মুসলিম, হজ, হাদীস নং ১৩৫০; তিরমিযী, হজ, হাদীস নং ৮১১; নাসাঈ, মানাসিকুল হজ, হাদীস নং ২৬২৭; ইবন মাজাহ, মানাসিক, হাদীস নং ২৮৮৯; আহমদ, ২/৪১০; দারেমী, মানাসিক, হাদীস নং ১৭৯৬।
[48] ইমাম মুসলিম ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাজরে আসওয়াদ থেকে প্রথম তিন চক্কর রমল করেছেন এবং বাকী চারবার স্বাভাবিক হেঁটেছেন।
[49] সহীহ বুখারী, বাদউল অহী, হাদীস নং ১; সহীহ মুসলিম, আল-ইমারাহ, হাদীস নং ১৯০৭; তিরমিযী, ফাদাইলুল জিহাদ, হাদীস নং ১৬৪৭; নাসাঈ, ত্বাহারাত, হাদীস নং ৭৫; আবু দাউদ, ত্বলাক, হাদীস নং ২২০১; ইবন মাজাহ, যুহুদ, হাদীস নং ৪২২৭; আহমদ, ১/৪৩।
[50] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১২১৮।
[51] সহীহ বুখারী, কিতাবুল জিহাদ ওয়াসসাইর, হাদীস নং ২৯৬৬; সহীহ মুসলিম, কিতাবুল জিহাদ ওয়াস-সিয়ার, হাদীস নং ১৭৪২।
[52] আবু দাউদ, আকদিয়্যাহ, হাদীস নং ৩৫৯৪।
[53] সহীহ বুখারী, শুরুত, হাদীস নং ২৫৮৬; সহীহ মুসলিম, অসিয়্যাহ, হাদীস নং ১৬৩৩; তিরমিযী, আহকাম, হাদীস নং ১৩৭৫; নাসাঈ, আহবাস, হাদীস নং ৩৬০৪; আবু দাউদ, ওয়াসাইয়া, হাদীস নং ২৮৭৮; ইবন মাজাহ, আহকাম, হাদীস নং ২৩৯৬; মুসনাদ আহমদ, ২/৫৫।  
[54] সহীহ বুখারী, যাকাত, হাদীস নং ১৩৯৯; সহীহ মুসলিম, যাকাত, হাদীস নং ৯৮৩; তিরমিযী, মানাকিব, হাদীস নং ৩৭৬১; নাসাঈ, যাকাত, হাদীস নং ২৪৬৪; আবু দাউদ, যাকাত, হাদীস নং ১৬২৩; মুসনাদ আহমদ, ২/৩২৩।  
[55] সহীহ বুখারী, শুরুত, হাদীস নং ২৫৮৬; সহীহ মুসলিম, অসিয়্যাহ, হাদীস নং ১৬৩৩; তিরমিযী, আহকাম, হাদীস নং ১৩৭৫; নাসাঈ, আহবাস, হাদীস নং ৩৬০৪; আবু দাউদ, ওয়াসাইয়া, হাদীস নং ২৮৭৮; ইবন মাজাহ, আহকাম, হাদীস নং ২৩৯৬; মুসনাদ আহমদ, ২/৫৫।  
[56] সহীহ বুখারী, অসাইয়া, হাদীস নং ২৫৮৭; সহীহ মুসলিম, অসিয়ত, হাদীস নং ১৬২৭; তিরমিযী, জানায়েয, হাদীস নং ৯৭৪; নাসাঈ, অসাইয়া, হাদীস নং ৩৬১৬; আবু দাউদ, অসাইয়া, হাদীস নং ২৮৬২; ইবন মাজাহ, অসাইয়া, হাদীস নং ২৬৯৯; মুসনাদ আহমদ, ২/৮০; মুয়াত্তা মালিক, আকদিয়া, হাদীস নং ১৪৯২।   
[57] সহীহ বুখারী, অসাইয়া, হাদীস নং ২৫৯১; সহীহ মুসলিম, অসিয়ত, হাদীস নং ১৬২৮; তিরমিযী, অসাইয়া, হাদীস নং ২১১৬; নাসাঈ, অসাইয়া, হাদীস নং ৩৬২৮; আবু দাউদ, অসাইয়া, হাদীস নং ২৮৬৪; মুসনাদ আহমদ, ১/১৬৮; মুয়াত্তা মালিক, আকদিয়া, হাদীস নং ১৪৯৫; দারেমী, অসাইয়া, হাদীস নং ৩১৯৬।      
[58] সহীহ বুখারী, নিকাহ, হাদীস নং ৪৭৭৮; সহীহ মুসলিম, নিকাহ, হাদীস নং ১৪০০; তিরমিযী, নিকাহ, হাদীস নং ১০৮১ ; নাসাঈ, সাওম, হাদীস নং ২২৪০ ; আবু দাউদ, নিকাহ, হাদীস নং ২০৪৬ ; ইবন মাজাহ, নিকাহ, হাদীস নং ১৮৪৫ ; আহমদ, ১/৩৭৮ ; দারেমী, নিকাহ, হাদীস নং ২১৬৫।   
[59] শরীরে সুঁই দিয়ে ফুটা করে রক্ত প্রবাহিত করা অতঃপর খতস্থানে রঙিন কিছু দিয়ে ভরাট করা।  
[60] সহীহ মুসলিমে এসেছে, 
«لَعَنَ اللهُ الْوَاشِمَاتِ وَالْمُسْتَوْشِمَاتِ، وَالنَّامِصَاتِ وَالْمُتَنَمِّصَاتِ، وَالْمُتَفَلِّجَاتِ لِلْحُسْنِ الْمُغَيِّرَاتِ خَلْقَ اللهِ». 
“মানবদেহে চিত্র অঙ্কনকারিণী ও অঙ্কনপ্রার্থিণী নারী, কপাল ভুরুর চুল উৎপাটনকারিনা ও উৎপাটনকামী নারী এবং সৌন্দর্য সুষমা বৃদ্ধির মানসে দাঁতের মাঝে (সদৃশ্য) ফাঁক সৃষ্টিকারিনা, যারা আল্লাহর সৃষ্টিতে বিকৃতি সাধনকারিনী, এদেরকে আল্লাহ তা’আলা লা‘নত করেন। [অনুবাদক]
_________________________________________________________________________________


লেখক: ড. সালিহ ইবন গানিম আস-সাদলান
অনুবাদক: আব্দুল্লাহ আল মামুন আল-আযহারী
সম্পাদক: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া  
সূত্র: ইসলামহাউজ



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন