Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

See Our Articles In Different Styles... Grid View List View

শনিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

তাবিজ ও তাবিজ জাতীয় বস্তুর ব্যবহার

Views:

A+ A-

 তাবিজ ও তাবিজ জাতীয় বস্তুর ব্যবহার



তাবিজ ও তাবিজ জাতীয় বস্তুর ব্যবহার

এ শিরোনামের অধীন চারটি বিষয় আলোচনা করব: 
ইসলামের দৃষ্টিতে তাবিজ
কুরআন-হাদিসের তাবিজ
তাবিজ ঝুলানো কোন প্রকার শিরক
চিকিৎসা পদ্ধতিশরয়ী ঝাড়-ফুঁক ও তাবিজের পার্থক্য


ইসলামের দৃষ্টিতে তাবিজ

ইমরান বিন হুসাইন রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক ব্যক্তির হাতে তামা/ স্বর্ণের আংটি দেখে বললেন,
«وَيْحَكَ مَا هَذِهِ ؟ " قَالَمِنَ الْوَاهِنَةِ، قَالَ: " أَمَا إِنَّهَا لَا تَزِيدُكَ إِلَّا وَهْنًا، انْبِذْهَا عَنْكَ، فَإِنَّكَ لَوْ مِتَّ وَهِيَ عَلَيْكَ مَا أَفْلَحْتَ أَبَدًا»
ধ্বংস তোমারএটা কীসে বলল: অহেনার[1] অংশ তিনি বললেন: মনে রেখ, এটা তোমার দুর্বলতা ব্যতীত কিছু বৃদ্ধি করবে না, এটা তোমার থেকে ছুড়ে মার, কারণ তুমি যদি মারা যাও আর এটা তোমার উপর থাকেতুমি কখনো সফল হবে না[2]

উকবা বিন আমের রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনআমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি:
«مَنْ تَعَلَّقَ تَمِيمَةً، فَلَا أَتَمَّ اللَّهُ لَهُ، وَمَنْ تَعَلَّقَ وَدَعَةً، فَلَا وَدَعَ اللَّهُ لَهُ»
যে তামিমাহ[3] ঝুলালোআল্লাহ তাকে পূর্ণতা দেবেন নাআর যে শঙ্খ ঝুলালো আল্লাহ তাকে নিরাপত্তা দিবেন না[4]

উকবা বিন আমের আল-জোহানি রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনএকদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে একদল লোক উপস্থিত হল তাদের নয়জনকে তিনি বায়আত করলেন একজনকে করলেন না। তারা বললহে আল্লাহর রাসূল! নয়জনকে বায়আত করলেনআর তাকে ত্যাগ করলেনতিনি বললেন:
«إِنَّ عَلَيْهِ تَمِيمَةً "، فَأَدْخَلَ يَدَهُ فَقَطَعَهَا، فَبَايَعَهُ، وَقَالَ: " مَنْ عَلَّقَ تَمِيمَةً فَقَدْ أَشْرَكَ »
তার উপর তাবিজ রয়েছেতিনি স্বীয় হাত বের করে তা ছিঁড়ে ফেললেনঅতঃপর তাকে বায়আত করলেনএবং বললেন যে তাবিজ ঝুলালো সে শিরক করল[5]
একদা হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু আনহু জনৈক ব্যক্তির হাতে জ্বরের তাগা দেখে কেটে ফেললেন অতঃপর তিনি তিলাওয়াত করেন:
﴿ وَمَا يُؤۡمِنُ أَكۡثَرُهُم بِٱللَّهِ إِلَّا وَهُم مُّشۡرِكُونَ ١٠٦ ﴾ [يوسف: ١٠٥] 
তাদের অধিকাংশ আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেতবে শিরক করা অবস্থায়[6] 
এ ঘটনা প্রমাণ করে তাগা ব্যবহার করা শিরক
আবু বশির আনসারি একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সফর সঙ্গী ছিলেন তিনি জনৈক ব্যক্তিকে নির্দেশ দিয়ে পাঠালেন, -মানুষেরা তখন ঘুমের বিছানায় ছিল-,
  «أَنْ لَا يَبْقَيَنَّ فِي رَقَبَةِ بَعِيرٍ قِلَادَةٌ مِنْ وَتَرٍ أَوْ قِلَادَةٌ إِلَّا قُطِعَتْ»
কোনো উটের গলায় সুতার মালা (ধনুকের ছিলা) বা কোনো প্রকার মালা রাখা যাবে নাঅবশ্যই কেটে ফেলা হবে[7] 
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উটের গলার সুতা ও মালা কেটে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেনযেন তাবিজ ঝুলানোর উপায় অবশিষ্ট না থাকে
আবু ওয়াহহাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«وَارْتَبِطُوا الْخَيْلَ، وَامْسَحُوا بِنَوَاصِيهَا وَأَكْفَالِهَا، وَقَلِّدُوهَا وَلَا تُقَلِّدُوهَا الْأَوْتَارَ»
তোমরা ঘোড়া বেঁধে রাখতার মাথায় ও ঘাড়ে হাত বুলাও এবং তাকে লাগাম পরাও, তবে সুতা/ মালা পরিয়ো না[8]
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহুর স্ত্রী জয়নব থেকে বর্ণিততিনি বলেন: একদা আব্দুল্লাহ বাড়িতে এসে আমার গলায় তাগা দেখতে পান। তিনি বলেনএটা কীআমি বললামএটা পড়া তাগা, এতে ঝাড়-ফুঁক করা হয়েছে। তিনি তা কেটে ফেললেন এবং বললেনআব্দুল্লাহর পরিবার শিরক থেকে মুক্ত। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি:
«إِنَّ الرُّقَى وَالتَّمَائِمَ وَالتِّوَلَةَ شِرْكٌ»
ঝাড়-ফুঁক,[9] তাবিজ ও তিওয়ালাহ[10] নিঃসন্দেহে শিরক[11]
এসব দলিল বলেরোগ-ব্যাধি দূর বা প্রতিরোধ করার জন্য মানুষ বা জীব-জন্তুর শরীরেকিংবা ক্ষেত-খামারে তাবিজতাগাকড়ি ও সুতা ইত্যাদি ব্যবহার করা শিরক কারণতামিমাহ ও তামিমাহ জাতীয় বস্তুর উপর নিষেধাজ্ঞার হাদিসগুলো ব্যাপকতাই সবধরণের তাবিজ শিরক কুরআনগায়রে কুরআন কোনো বিভেদ নেই

দ্বিতীয়ত যেসব দলিলে তাবিজের উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, তাতে কুরআন-হাদিসের তাবিজ বৈধ বলা হয়নি, যেমন শিরক মুক্ত ঝাড়-ফুঁক বৈধ বলা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«اعْرِضُوا عَلَيَّ رُقَاكُمْ لَا بَأْسَ بِالرُّقَى مَا لَمْ يَكُنْ فِيهِ شِرْكٌ»
তোমাদের ঝাড়-ফুঁক আমার কাছে পেশ করঝাড়-ফুঁকে কোনো সমস্যা নেই, যদি তাতে শিরক না থাকে[12]
এ হাদিসে যেরূপ কুরআনুল কারিমের তাবিজকে পৃথকভাবে বৈধ বলা হয়নি, যেমন শিরক মুক্ত ঝাড়-ফুককে বৈধ বলা হয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাহাবিদের জীবনে তাবিজের কোনো প্রমাণ নেই হাদিসের পাঠকমাত্র দেখবেদোয়া ও যিকর সংক্রান্ত সকল হাদিসের ভাষা হচ্ছে, ‘যে ইহা বলবে’, অথবা ‘যে ইহা পড়বে’ ইত্যাদিএকটি হাদিসেও নেই যে ইহা লিখে রাখবে’, অথবা ‘যে ইহা ঝুলাবে ইবনে আরাবি বলেন: “কুরআন ঝুলানো সুন্নত নয়কুরআন পাঠ করা সুন্নত

ইব্রাহিম নখয়ি রহবলেন, “আব্দুল্লাহ বিন মাসউদের সাথীগণ কুরআন  গায়রে কুরআন সর্বপ্রকার তাবিজ অপছন্দ করতেনযেমন আলকামাআসওয়াদআবু ওয়ায়েলমাসরুক ও রাবি বিন খায়সাম প্রমুখ তাবেয়িগণ[13]

শিরক ও পাপের পথ বন্ধ করার স্বার্থে সকল তাবিজের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা জরুরি কুরআনের তাবিজ শিরকী তাবিজের পথ উন্মুক্ত করে আদর্শ মনীষীগণ তাবিজ অপছন্দ করতেন, অথচ তাদের যুগ ছিল বিদআত ও শিরক মুক্ত, ওহী ও ঈমানের নিকটবর্তী আমাদের যুগ মূর্খতা ও বিদআত সয়লাবের যুগ, এতে তাবিজ বৈধ বলার অর্থ উম্মতকে শিরকের দিকে ঢেলে দেওয়া। দ্বিতীয়ত তাবিজে ব্যবহৃত কুরআন নাপাক বস্তু বা স্থানের সম্মুখীন হয়বিশেষত বাচ্চাদের গলার তাবিজযা থেকে কুরআনকে পবিত্র রাখা জরুরি

তাবিজ ব্যবহারকারীরা সাধারণত কুরআন-হাদিসের ঝাড়-ফুঁক করে নাতাবিজকেই যথেষ্ট ভাবে তাদের অন্তর তাবিজের সাথে ঝুলন্ত থাকেযদিও তারা স্বীকার করে নাতবে তাবিজ খুললে তার সত্যতা প্রকাশ পায়কারো চেহারা বিবর্ণ হয়কারো শরীরে কাঁপুনি উঠে যদি তাদের অন্তর আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত থাকত ও তাতে পূর্ণ বিশ্বাসী হতকখনো তারা মন এমন বস্তুর দিকে ধাবিত হত নাযার সম্পর্ক কুরআন-হাদিসের সাথে নেই বস্তুত তাবিজ ব্যবহার করে তারা কুরআনের সাথে নয়, বরং কাগজ  জড় বস্তুর সাথে সম্পৃক্ত হয়

তাবিজ একটি জড়-বস্তুতার সাথে রোগ-মুক্তির কোনো সম্পর্ক নেই তাবিজকে রোগ মুক্তির উপায় সাব্যস্ত করার জন্য অবশ্যই দলিল প্রয়োজনতার পক্ষে কোনো শরীয় দলিল নেই কারো রোগ-ব্যাধি হলে শরয়ী ঝাড়-ফুঁক করা সুন্নতযেমন জিবরীল আলাইহিস সালাম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে করেছেননবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাহাবীদের করেছেন এটাই বৈধ  শরীয়ত অনুমোদিত পন্থা

বৈধ ঝাড়-ফুঁকের বিনিময় গ্রহণ করা বৈধযদি তার দ্বারা আরোগ্য লাভ হয় এবং সুন্নত মোতাবেক ঝাড়-ফুঁক করা হয়যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণ বিনিময় গ্রহণ করেছেনকিন্তু আমাদের সমাজের একশ্রেণীর আলেম তাবিজ দেন ও আরোগ্য লাভের পূর্বে বিনিময় গ্রহণ করেন তারাও দলিল হিসেবে বুখারি শরীফের হাদিসটি পেশ করেনঅথচ সেখানে স্পষ্ট আছে সাহাবিগণ তাবিজ দেননিবরং সূরা ফাতিহা পাঠ করেছেন এবং আরোগ্য লাভ করার পর বিনিময় গ্রহণ করেছেনআগে নয় অতএব  হাদিসকে তাবিজ দেয়া  তার বিনিময় গ্রহণ করার দলিল হিসেবে পেশ করা অপব্যাখ্যা ব্যতীত কিছু নয়


কুরআন-হাদিসের তাবিজ

কুরআন-হাদিসের তাবিজ সম্পর্কে আলেমগণ দ্বিমত পোষণ করেছেন। পূর্বোক্ত দলিলের ভিত্তিতে একদল আলেম বলেনকুরআন-গায়রে কুরআন সর্বপ্রকার তাবিজ শিরক কতক আলেম বলেনকুরআন-হাদিসের তাবিজ বৈধ তারা দলিল হিসেবে আব্দুল্লাহ বিন আমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর ব্যক্তিগত আমল পেশ করেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনতোমাদের কেউ যখন ঘুমে ঘাবড়ে যায়তার বলা উচিত:
«أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ مِنْ غَضَبِهِ وَعِقَابِهِ وَشَرِّ عِبَادِهِ وَمِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِينِ وَأَنْ يَحْضُرُونِ، فَإِنَّهَا لَنْ تَضُرَّهُ»
আল্লাহর পরিপূর্ণ বাণীসমূহ দ্বারা আশ্রয় প্রার্থনা করছিতাঁর গজব ও শাস্তি থেকে, তাঁর বান্দাদের অনিষ্ট থেকে এবং শয়তানসমূহের কুমন্ত্রণা ও তাদের উপস্থিতি থেকে[14] 
ইমাম তিরমিযি রহবলেন: “হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবি আব্দুল্লাহ ইবনে আমর সম্পর্কে আছেতিনি তার সাবালক বাচ্চাদের দোয়াটি শিক্ষা দিতেনআর যারা সাবালিগ হয়নি কাগজে লিখে তাদের গলায় দোয়াটি ঝুলিয়ে দিতেন[15]
ইমাম আবু দাউদ রহ. বলেন, “আব্দুল্লাহ বিন আমের বর্ণিত হাদিসের সনদ মুহাদ্দিসদের নিকট বিশুদ্ধ নয় বিশুদ্ধ মানলেও এটা তার ব্যক্তিগত আমল, অসংখ্য সাহাবির বিপরীত তার ব্যক্তিগত আমল দলিল যোগ্য নয় 
ইমাম শাওকানি রহ. বলেন: এ হাদিসের সনদে মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক রয়েছে, তার সম্পর্কে মুহাদ্দিসদের অভিযোগ প্রসিদ্ধ 
আলবানি রহ. বলেন, হাদিসের শেষাংশ: আব্দুল্লাহর ঘটনা ব্যতীত অবশিষ্টাংশ সহি[16] 
অতএব আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু নিজের নাবালিগ বাচ্চাদের গলায় দোয়াটি লিখে ঝুলাতেন কথাটি সঠিক নয়।


তাবিজ কোন প্রকার শিরক

উক্ত আলোচনার পর তাবিজ ত্যাগ করার জন্য কারো ফতোয়ার প্রয়োজন হয় নাতাবিজ ব্যবহার করা ছোট-শিরকনা বড় শিরক কুরআনুল কারিমের তাবিজ ব্যবহার করা কারো নিকট শিরককারো নিকট শিরক নয়কুরআন ব্যতীত অন্যান্য তাবিজ সবার নিকট শিরক যারা বলেন কুরআনের তাবিজ শিরক নয়তাদের নিকট তাবিজ ত্যাগ করার কারণে কেউ গুনাগার হবে নাকিন্তু যারা শিরক বলেনযদি তাদের ফতোয়া ঠিক হয়তাহলে তাবিজ ব্যবহারকারীর পরিণতি কী হবে!?
অতএব তাবিজে কোনো কল্যাণ নেই বর্তমান মুসলিমদের শরীরে যেতাবিজ-কবচ, মাদুলি-কড়িশামুক-ঝিনুকপ্রাণীর হাড়গাছের ছালতামা-লোহা-সুতা-রাবার-তাগা ও অন্যান্য ধাতব বস্তু দেখা যায়আবার কখনো জীব-জন্তুর শরীরেঘরের খুঁটি ও গাছের ডালেমাটির ভিতর ও বিছানার নিচে এসব বস্তু পুঁতে রাখতে দেখা যায়তার অধিকাংশ বৈধতাবিজের পথে মুসলিম সমাজে প্রবেশ করেছেসন্দেহ নেই ইতিহাস থেকে জানা যায়মাদুলিতাবিজ ও তাগা ইত্যাদি কতক অমুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় প্রতীক ছিল আল্লাহ মুসলিম সমাজকে এসব বস্তু থেকে পবিত্র করুন


চিকিৎসা পদ্ধতিশরয়ী ঝাড়-ফুঁক ও তাবিজের পার্থক্য

আল্লাহ তাআলা রোগ নাযিল করেছেন, রোগের সাথে ওষুধও নাযিল করেছেন।  আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু  থেকে বর্ণিতরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«مَا أَنْزَلَ اللَّهُ دَاءً إِلَّا أَنْزَلَ لَهُ شِفَاءً »
আল্লাহ কোনো রোগ নাযিল করেননিতবে অবশ্যই তার জন্য আরোগ্য নাযিল করেছেন[17] 
জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিতনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«لِكُلِّ دَاءٍ دَوَاءٌ فَإِذَا أُصِيبَ دَوَاءُ الدَّاءِ بَرَأَ بِإِذْنِ اللَّهِ »
“প্রত্যেক রোগের জন্য ওষুধ রয়েছে, যখন রোগের সাথে ওষুধের মিল হয়, আল্লাহর ইচ্ছায় আরোগ্য লাভ হয়”[18] 
ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«إِنَّ اللَّهَ لَمْ يُنْزِلْ دَاءً إِلا أَنَزَلَ مَعَهُ دَوَاءٌ، جَهِلَهُ مَنْ جَهِلَهُ، وَعَلِمَهُ مَنْ عَلِمَهُ»
নিশ্চয় আল্লাহ কোনো রোগ নাযিল করেননিতবে অবশ্যই তার সাথে ওষুধ নাযিল করেছেনযে জানতে পারেনি সে জানেনিআর যে জানতে পেরেছে সে জেনেছে[19]
উসামাহ ইবনে শারিক বলেনগ্রামের লোকেরা জিজ্ঞাসা করলহে আল্লাহর রাসূলআমরা চিকিৎসা গ্রহণ করব নাতিনি বললেন:
«نَعَمْ يَا عِبَادَ اللَّهِ، تَدَاوَوْا، فَإِنَّ اللَّهَ لَمْ يَضَعْ دَاءً إِلَّا وَضَعَ لَهُ شِفَاءً، أَوْ قَالَدَوَاءً، إِلَّا دَاءً وَاحِدًا، قَالُوايَا رَسُولَ اللَّهِ، وَمَا هُوَ؟ قَالَالْهَرَمُ»
অবশ্যই হে আল্লাহর বান্দাগণতোমরা চিকিৎসা গ্রহণ করকারণ আল্লাহ কোনো রোগ রাখেননিতবে অবশ্যই তার জন্য নিরাময় রেখেছেনঅথবা বলেছেনওষুধ রেখেছেনতবে একটি রোগ ব্যতীততারা বললহে আল্লাহর রাসূলসে রোগটি কীতিনি বললেনবার্ধক্য[20]
অবশ্য কোনো হারাম বস্তুতে আল্লাহ্ তার বান্দাদের জন্য আরোগ্য রাখেননি। উম্মে সালামাহ বলেন, আমার এক মেয়ে অসুস্থ হয়েছিল, আমি একটি পাত্রে তার জন্য ‘নাবিজ’[21] তেরি করলাম, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে প্রবেশ করলেন, তখন পাতিলটি উতরাতে ছিল, তিনি বললেন: এটা কী? উম্মে সালামাহ উত্তর দিলেন: আমার মেয়েটা অসুস্থ, আমি তার জন্য ইহা তৈরি করছি। তিনি বললেন:
«إِنَّ اللَّهَ لَمْ يَجْعَلْ شِفَاءَكُمْ فِي حَرَامٍ»
“নিশ্চয় আল্লাহ হারাম বস্তুতে তোমাদের আরোগ্য রাখেননি”।[22] 
অতএব আল্লাহ তা‘আলা রোগের জন্য আরোগ্য রেখেছেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই, তবে আরোগ্য লাভের জন্য অবশ্যই হালাল বস্তু ও বৈধ পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে।

বৈধ চিকিৎসা দুপ্রকার:

. কুরআনুল কারিম বা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিস দ্বারা প্রমাণিত বিভিন্ন বস্তুর গুণাগুণের ভিত্তিতে চিকিৎসা করা; অনুরূপ কুরআন বা হাদিসের দোয়া দ্বারা ঝাড়-ফুঁক করা, এ জাতীয় তদবিরকে নববী চিকিৎসা ও শরয়ী ঝাড়-ফুঁক বলা হয়; যার বর্ণনা হাদিসের কিতাবে রয়েছে। এ জাতীয় চিকিৎসা দ্বারা আল্লাহর ইচ্ছায় বান্দা আরোগ্য লাভ করে।
. জেনারেল চিকিৎসা তথা বস্তুর গুণাগুণ ও তার প্রভাবের উপর পরিচালিত গবেষণার ভিত্তিতে চিকিৎসা করা। বস্তুর প্রভাব স্পষ্ট ও উপলব্ধি করা যায়যেমন কেমিক্যাল দ্বারা তৈরি ওষুধের প্রভাব এ জাতীয় চিকিৎসা ইসলামের দৃষ্টিতে বৈধ কারণএ চিকিৎসা গ্রহণ করার অর্থ আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়াতিনি এতে কিছু গুণাগুণ রেখেছেনযখন ইচ্ছা তা বাতিল করতে পারেনযেমন ইব্রাহিম আলাইহিস সালামের জন্য প্রজ্বলিত অগ্নির দাহন ক্রিয়া বাতিল করেছিলেন
পক্ষান্তরে তাবিজ-কবচ ও অন্যান্য জড়-বস্তু শরীরে ঝুলানোর ফলে কোনো প্রভাব পরিলক্ষিত হয় নাগবেষণার দ্বারা তার ক্রিয়া প্রমাণিত হয়নি এবং কুরআন-হাদিসে তার স্বীকৃতি নেই যেমন ভাত খেলে খিদে নিবারণ হয়কিন্তু পেটের উপর ভাত রেখে খিদে নিবারণের আশা করা মিথ্যা শরয়ী ঝাড়-ফুঁক ও ওষুধের চিকিৎসা ভাত খাওয়ার ন্যায়আর তাবিজের চিকিৎসা পেটের উপর ভাত রেখে খিদে নিবারণের চেষ্টা করার ন্যায়
তাবিজ-কবচ ও এ জাতীয় জড়-বস্তুকে আল্লাহ তাআলা রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্তির উপায় করেননিআবার তার উপকারিতা মানুষের অভিজ্ঞতায় প্রমাণিত নয় বাহ্যিকভাবে তার প্রভাব দেখা যায় নাঅনুভবও করা যায় না তাই অনেকে বলেনএসব বস্তুর ওপর ভরসা করার অর্থ মুশরিকদের ন্যায় মৃত ব্যক্তি ও মূর্তির ওপর ভরসা করাযা শুনে না-দেখে না, উপকার বা অপকারের ক্ষমতা রাখে নাঅথচ তারা ভাবে এগুলো তাদের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবেঅথবা তাদের থেকে অকল্যাণ প্রতিহত করবে

সমাপ্ত




[1] অহেনা অর্থ এক প্রকার হাড়যার অংশ বিশেষ তাবিজে ব্যবহার করা হয়
[2] মুসনাদে আহমদ: (১৯৫৪৯), নাসায়ী: (৯/৩৪৯), ইবনে মাজাহ: (৩৫৩১), ইবনে হিব্বান: (৬২২২), হাদিসটি সহিহ্।
[3] তামিমার সংজ্ঞা: রোগ-ব্যাধি থেকে আরোগ্য লাভ অথবা বদ-নজর প্রতিরোধ অথবা সম্ভাব্য কোনো অনিষ্ট দূর করার জন্য শরীরে ঝুলানো বস্তুকে তামিমাহ বলা হয়, হোক সেটা কড়ি, অথবা লাকড়ি, অথবা তাগা, অথবা কাগজ কিংবা কোনো বস্তু। ইসলাম পূর্বযুগে বদ-নজর থেকে সুরক্ষা এবং গৃহ-পালিত পশু-পাখী ও দুষ্ট প্রাণীকে বশ করার জন্য, কখনো আত্মরক্ষার জন্য মুশরিকরা তামিমাহ গলায় বা শরীরের কোনো অংশে ঝুলাত। তাদের বিশ্বাস ছিল, তাকদির প্রতিরোধ ও অনাগত অনিষ্ট দূর করার ক্ষমতা রাখে তামিমাহ তারা কখনো তামিমাহ দ্বারা গায়রুল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করত, যা ছিল সরাসরি শিরক ও তাওহীদ পরিপন্থী। ইসলাম তার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
[4] আহমদ: (১৬৯৫১)হাকেম: (৪/২১২), মুসনাদে আবি ইয়ালা আল-মুসিলি: (১৭৫৯) 
[5] সহি মুসনাদে আহমদ: (১৬৯৬৯), সহি হাদিস সমগ্র : (৪৯২), হাকেম
[6] ইউসুফ: (১০৬তাফসিরে ইবনে কাসির
[7] বুখারি: (৩০০৫), মুসলিম: (২১১৮)
[8] সুনানে নাসায়ী সুগরা: (৩৫৬৫), মুসনাদে আহমদ: (১৮৫৫২)
[9] রুকা অর্থ নিষিদ্ধ ঝাড়-ফুঁকআউনুল মাবুদ, হাদিস নং: (৩২৭২)
[10] আসমায়ি বলেন: তিওয়ালাহ: একপ্রকার যাদু, স্বামীর নিকট স্ত্রীকে প্রিয় করার জন্য যার ব্যবহার করা হয়। মোল্লা আলি কারি বলেন: ‘তিওয়ালাহ’ একপ্রকার যাদু, অথবা যাদুর মন্ত্র পাঠ করা তাগা, অথবা কাগজ, তাতে মহব্বত সৃষ্টির মন্ত্র পাঠ করা হয়। আউনুল মাবুদ, হাদিস নং: (৩২৭২)
[11] আবু দাউদ: (৩৮৮৩), আহমদ: (৩৬০৪), ইবনে হিব্বান: (৬০৯০)ইবনে মাজাহ: (৩৫৩০), সহি হাদিস সমগ্র: (১৩১)
[12] মুসলিম : (২২০২)ইবনে হিব্বান: (৬০৯৪)
[13] ফতহুল মজিদ
[14] আহমদ : (১৬১৩৭), তিরমিযি : (৩৫২৮), আবু দাউদ: (৩৮৯৩)
[15] তিরমিযি: (৩৫২৮)আহমদ(৬৬৫৭) এ হাদিস সহি হলে সাবালিগ বাচ্চা কিংবা বড়দের গলায় তাবিজ ঝুলানো বৈধ প্রমাণ হয় না, শুধু বাচ্চাদের ক্ষেত্রে বৈধ বলা যায় তাও যারা দোয়া পড়তে পারে না।
[16] সহি তিরমিযি: (৩৫২৮), সহি হাদিস সমগ্র: (১/৫২৯), আত-তালিক আলা-মুসনাদি আহমদ: (১১/২৯৬), ‘আন-নাহজুজ সাদিদ’ লিদ-দুসারি: (১১১)
[17] বুখারি: (৫৬৭৮),
[18] মুসলিম: (২২০৬)
[19] সহি ইবনে হিব্বান: (১৩/৪২৭)
[20] তিরমিযি: (২০৩৮)
[21] আঙ্গুরের রস দ্বারা তৈরি নেশা জাতীয় পানীয়।
[22] সহি ইবনে হিব্বান: (১৩৯১), আস-সুনানুস সাগির লিল-বায়হাকি: (৪৩২৪), হাকিম: (৪/৪০৭)
____________________________________________________________________________________________________________


সংকলন: সানাউল্লাহ নজির আহমদ
সূত্র: ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন