Views:
A+
A-
এ বইটি সংকলনে যে সকল গ্রন্থের সাহায্য নেয়া হয়েছে
أهم المراجع لهذا الكتاب :
1- الرؤيا وما يتعلق بها – للشيخ عبد الله بن جار الله الجار الله
2- تفسير الأحلام - للإمام محمد بن سيرين رحمه الله
3- القواعد الحسنى في تأويل الرؤى – للشيخ عبد الله بن محمد السدحان
4- مقدمة ابن خلدون
5- إعلام الموقعين - للإمام ابن القيم رحمه الله
6- تيسير الكريم الرحمن في تفسير كلام المنان للشيخ عبد الرحمن السعدي – رحمه الله
২- স্বপ্ন সম্পর্কে কিছু কথা
৩- স্বপ্ন দেখলে করণীয়
৪- মিথ্যা স্বপ্নের কথা বলা অন্যায়
৫- ভাল স্বপ্ন আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে
৬- কয়েকটি ভাল স্বপ্নের উদাহরণ
৭- স্বপ্ন দেখলে যা করতে হবে
৮- খারাপ স্বপ্ন দেখলে কি করবে?
৯- কে স্বপ্নের ব্যাখ্যা দেবে?
১০- স্বপ্নের ব্যাখ্যা যেভাবে করা হয় তা-ই সংঘটিত হয়
১১- তাবীরের বিভিন্ন প্রকার
১২- কোরআনের আয়াত দিয়ে স্বপ্ন ব্যাখ্যা করার কয়েকটি দৃষ্টান্ত
১৩- হাদীস দিয়ে স্বপ্নের ব্যাখ্যার কয়েকটি দৃষ্টান্ত
১৪- বিপরীত অর্থ গ্রহণ নীতিতে স্বপ্ন ব্যাখ্যার দৃষ্টান্ত
১৫- কয়েকটি প্রসিদ্ধ স্বপ্ন ও তার ব্যাখ্যার বিবরণ
১৬- মৃত ব্যক্তিকে স্বপ্নে দেখা
১৭- স্বপ্নের ব্যাখ্যা সম্পর্কে ইমাম ইবনুল কায়্যিম রহ. এর কিছু বক্তব্য
১৮- ভাল স্বপ্নের বাস্তবায়ন দেরীতে হয়
১৯- শেষ কথা
ভূমিকাযার নিখুত সৃষ্টি কুশলতায় অস্তিত্ব লাভ করেছে এ বিশ্ব জাহান। যার অসীম কুদরতের অনুপম নিদর্শন চাঁদ-সুরুজ ও সিতারা-আসমান। যার করুণা স্নিগ্ধ লালন-প্রতিপালনে ধন্য সকল জড় উদ্ভিদ প্রাণ। সেই মহান রাব্বুল আলামীনের জন্যই আমার সকাল-সন্ধ্যার হামদ-সানা, আমার দিবস রজনীর স্তুতি-বন্দনা।
যার শুভাগমনে আঁধার ঘুচে মানবতার পূর্ব দিগন্তে এক নতুন সূর্যের উদয় হল। মানবতার মুক্তির জন্য মানুষেরই হাতে তায়েফের মাটি যার রক্তে রঞ্জিত হল; সেই নবী রাহমাতুল্লিল আলামীনের প্রতি আমার বিরহী আত্মার সালাত ও সালাম। মদীনা স্বপ্নে বিভোর আমার হৃদয়ের প্রেম-পয়গাম।
মানুষ স্বপ্ন দেখে। ভাল স্বপ্ন দেখে, বলে সুন্দর স্বপ্ন দেখেছি। দেখে খারাপ স্বপ্ন, বলে ভয়ানক এক স্বপ্ন দেখেছি। আবার কখনো বলে একটি বাজে স্বপ্ন দেখেছি।
আসলে স্বপ্ন কি? এ নিয়ে গবেষণা কম হয়নি, মানব সভ্যতার শুরু থেকে আজ পর্যন্ত। কেউ বলেছেন, এটা একটি মানসিক চাপ থেকে আসে। কেউ বলেছেন, শারীরিক বিভিন্ন ভারসাম্যের ব্যাঘাত ঘটলে এটা দেখা যায়, সে অনুযায়ী। কেউ বলেছেন, সারাদিন মনে যা কল্পনা করে তার প্রভাবে রাতে স্বপ্ন দেখে।
স্বপ্ন আধুনিক মনোবিজ্ঞানেরও একটি বিষয়।
আবার অনেকে স্বপ্ন না দেখেও বলে এটা আমার স্বপ্ন ছিল। অথবা আমার জীবনের স্বপ্ন এ রকম ছিল না। মানে, মনের আশা, পরিকল্পনা। তাই স্বপ্নের অর্থ এখানে রূপক।
আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে মানুষের জন্য পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা হিসাবে এসেছে ইসলাম। এই ইসলাম মানুষের স্বপ্নের ব্যাপারেও উদাসীন থাকেনি। স্বপ্ন সম্পর্কে তার একটি নিজস্ব বক্তব্য আছে। তার এ বক্তব্য কোনো দার্শনিক বা বিজ্ঞানীর বক্তব্যের সাথে মিলে যাবে, এমনটি জরুরী নয়। মিলে গেলেও কোনো দোষ নেই।
স্বপ্ন ও তার ব্যাখ্যা বিশেষজ্ঞ ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে সীরিন রহ. বলেছেন :
ইসলামে স্বপ্নের একটি গুরুত্ব আছে। নি:সন্দেহে এটা ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
এক চোখা বস্তুবাদীরা বলে থাকে, মানুষ যখন ঘুমায়, তখন তার মস্তিস্ক তার স্মৃতিগুলো নাড়াচাড়া করে। যাচাই-বাছাই করে, কিছু পুনর্বিন্যাস করে। তারপর স্মৃতির ফাইলে যত্ন করে রেখে দেয়। এই কাজটা সে করে মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন। মস্তিস্কের এই কাজ-কর্মই আমাদের কাছে ধরা দেয় স্বপ্ন হিসেবে।”
কথাটা শুনতে মন্দ নয়। তবে এটি স্বপ্নের একটি প্রকার মাত্র। বাকী দু প্রকার কি আপনাদের মস্তিস্কে ধরা পড়ে? ইসলাম তো বলে স্বপ্ন তিন প্রকার।
হাদীসে দেখা যায়, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজরের নামাজের পর মুসল্লীদের দিকে মুখ করে বসতেন। প্রায়ই জিজ্ঞেস করতেন, গত রাতে তোমাদের কেউ কি কোনো স্বপ্ন দেখেছ?
আল-কোরআনে নবী ইবরাহীম আলাইহিস সালামের স্বপ্ন, ইউসুফ আলাইহিস সালামের স্বপ্নের কথা উল্লেখ আছে। ইউসূফ আলাইহিস সালামের সময়ে মিশরের বাদশার স্বপ্ন, তাঁর জেলখানার সঙ্গীদের স্বপ্ন ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্বপ্ন নিয়ে তো আল কোরআনে বিস্তর আলোচনা হয়েছে।
মিশরের বাদশা তার সভাসদের স্বপ্ন বিশেষজ্ঞদেরকে নিজ স্বপ্ন সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিল। জানতে চেয়েছিল, সেই স্বপ্নের ব্যাখ্যা। তারা বলেছিল, এটা এলোমেলো অলীক স্বপ্ন। তারা এর ব্যাখ্যা দিতে পারল না।
নবী ইউসুফ আলাইহিস সালাম এর সুন্দর ব্যাখ্যা দিলেন। নিজের পক্ষ থেকে নয়। আল্লাহ তাআলার শিখানো ইলম থেকে। (সূরা ইউসূফের ৩৬ থেকে ৪৯ আয়াত দ্রষ্টব্য)
আমি বক্ষমান বইতে কোরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে স্বপ্ন ও তার ব্যাখ্যার কিছু মৌলিক ধারনা দেয়ার চেষ্টা করব। তবে কি স্বপ্ন দেখলে কি হয়, তা এখানে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হবে না । এটা নির্দিষ্ট করে আলোচনা করা সম্ভবও নয়। মানে এটা বাজারে প্রচলিত কোনো খাবনামা নয়। স্বপ্ন সম্পর্কে মৌলিক কিছু আলোচনা ও একটি ধারনা দেয়ার প্রয়াস মাত্র।
স্বপ্ন দ্রষ্টার অবস্থা ভেদে একই স্বপ্নের ব্যাখ্যা বিভিন্ন রকম হতে পারে।
স্বপ্ন তিন প্রকার:
এক. মনে মনে যা সারাদিন কল্পনা করে তার প্রভাবে ঘুমের মধ্যে ভাল-মন্দ কিছু দেখা। এগুলো আরবীতে আদগাছু আহলাম বা অলীক স্বপ্ন বলে।
দুই. শয়তানের কুমন্ত্রণা ও প্রভাবে স্বপ্ন দেখা। সাধারণত এ সকল স্বপ্ন ভীতিকর হয়ে থাকে।
তিন. আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে ইশারা, ইঙ্গিত হিসাবে স্বপ্ন দেখা।
বিষয়টি উপরে বর্ণিত হাদীসেও উল্লেখ হয়েছে।
আল্লাহ তাআলা আমাদের এ ক্ষুদ্র প্রচেষ্টাটুকু কবুল করুন। বইটিকে পাঠকদের কল্যাণে গ্রহণ করুন। আর আমরা আমাদের সকল পাওনা ও প্রাপ্তি তার কাছেই আশা করি। তিনি মুহসিনদের সৎকর্ম ব্যর্থ হতে দেন না।
এ হাদীস থেকে আমরা যা জানতে পারলাম:
এক. স্বপ্ন নবুওয়তের একটি অংশ। নবী ও রাসূলদের কাছে জিবরীল যেমন সরাসরি ওহী নিয়ে আসতেন, তেমনি স্বপ্নের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার নবী ও রাসূলদের কাছে প্রত্যাদেশ পাঠাতেন।
দুই. মুসলিম জীবনে স্বপ্ন শুধু একটি স্বপ্ন নয়। এটা হতে পারে মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে স্বপ্নদ্রষ্টার প্রতি একটি বার্তা।
তিন. আল মুবাশশিরাত অর্থ সুসংবাদ। সঠিক স্বপ্ন যা আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে হয়ে থাকে, তা স্বপ্ন দ্রষ্টার জন্য একটি সুসংবাদ।
হাদীসে এসেছে
অন্য একটি বর্ণনায় এসেছে, তোমাদের মধ্যে যে লোক যত বেশী সত্যবাদি হবে তার স্বপ্ন তত বেশী সত্যে পরিণত হবে।
এ হাদীস থেকে আমরা জানতে পারলাম :
এক. মুমিনের জীবনে স্বপ্ন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেয়ামত যত নিকটে আসবে ঈমানদারের স্বপ্ন তত বেশী সত্য হতে থাকবে।
দুই. ঈমানদারের জীবনে স্বপ্ন এত গুরুত্ব রাখে যে, তাকে নবুওয়তের ছিচল্লিশ ভাগের এক ভাগ বলা হয়েছে।
তিন. মানুষ যত বেশী সততা ও সত্যবাদিতার চর্চা করবে সে ততবেশী সত্য স্বপ্ন দেখতে পাবে।
চার. যদি কেউ চায় সে সত্য স্বপ্ন দেখেব, সে যেন সৎ, সততা ও সত্যবাদিতার সাথে জীবন যাপন করে।
হাদীসে এসেছে
এ হাদীস থেকে আমরা জানতে পারলাম :
এক. যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে স্বপ্নে দেখবে সে সত্যিকারভাবেই তাকে দেখেছে।
দুই. শয়তানের কুমন্ত্রণা ও প্রভাবে মানুষ স্বপ্ন দেখে থাকে। শয়তান মানুষকে বিভিন্ন স্বপ্ন দেখাতে পারে। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আকৃতি ধরে ধোকা দিতে পারে না।
তিন. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে স্বপ্নে দেখা একটি সৌভাগ্য। খুব কম ঈমানদারই আছেন, যারা এ সৌভাগ্যটি অর্জন করেছেন।
অন্য এক বর্ণনায় এসেছে,
এ স্বপ্নের কথা শুধু তাকে বলবে, যে তাকে ভালোবাসে।
আর যদি স্বপ্ন অপছন্দের হয়, তাহলে বুঝে নেবে এটা শয়তানের পক্ষ থেকে হয়েছে। তখন সে শয়তানের ক্ষতি থেকে আল্লাহ তাআলার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করবে আর এ স্বপ্নের কথা কারো কাছে বলবে না। কারণ খারাপ স্বপ্ন তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। (বর্ণনায় : বুখারী ও মুসলিম)
এ হাদীস থেকে আমরা জানতে পারলাম :
এক. যা কিছু ভাল স্বপ্ন, সেটা আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে হয়ে থাকে। আর খারাপ স্বপ্ন শয়তানের কুমন্ত্রণা ও প্রভাবের কারণে দেখে থাকে।
দুই. ভাল স্বপ্ন দেখলে এমন ব্যক্তির কাছে বলা যাবে, যে তাকে ভালোবাসে। যে ভালোবাসে না, এমন ব্যক্তির কাছে কোনো স্বপ্নের কথা বলা যাবে না। হতে পারে সে ভাল স্বপ্নটির একটি খারাপ ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়ে দেবে।
তিন. ভাল স্বপ্ন দেখলে আলহামদুলিল্লাহ বলে আল্লাহ তাআলার প্রশংসা করতে হবে।
চার. খারাপ স্বপ্ন দেখলে কারো কাছে বলা উচিত নয়।
পাঁচ. খারাপ স্বপ্ন দেখলে নিদ্রা থেকে জাগ্রত হওয়া মাত্র আল্লাহ তাআলার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে বলতে হবে আউযুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজীম।
হাদীসে এসেছে :
এ হাদীস থেকে আমরা জানতে পারলাম :
এক. ভাল স্বপ্ন আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে হয়ে থাকে।
দুই. খারাপ স্বপ্ন শয়তানের পক্ষ থেকে এসে থাকে।
তিন. খারাপ স্বপ্ন দেখলে সাথে সাথে তিনবার বাম দিকে থুথু ফেলে আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানের রাজীম বলতে হবে। তবে সত্যিকার থুথু ফেলবে না। মানে মুখ থেকে পানি নির্গত হবে না। শুধু আওয়াজ করবে। কেননা হাদীসে নাফাস শব্দ এসেছে। যার অর্থ এমন হাল্কা থুথু যাতে পানি বা শ্লেষ্মা নেই।
চার. এই আমলটা করলে খারাপ স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে না।
হাদীসে এসেছে
হাদীস থেকে আমরা শিখতে পারলাম :
এক. খারাপ স্বপ্ন দেখলে তিনবার বাম দিকে থুথু নিক্ষেপ করা ও তিনবার আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজীম বলা তারপর পার্শ্ব পরিবর্তন করে শোয়া সুন্নাত।
দুই. পার্শ্ব পরিবর্তন করা মানে হল, ডান কাতে শুয়ে থাকলে বাম দিকে ফিরবে। তেমনি বাম কাতে শুয়ে থাকলে ডানে ফিরবে।
হাদীস থেকে আমরা শিখতে পারলাম:
সবচয়ে বড় মিথ্যা হল তিনটি,
(ক) নিজের পিতা ব্যতীত অন্যকে পিতা বলে দাবী করা।
(খ) যে স্বপ্ন দেখেনি তা বানিয়ে বলা। অর্থ্যাৎ মিথ্যা স্বপ্ন বর্ণনা করা।
(গ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেননি, তা তার কথা বলে চালিয়ে দেয়া।
যারা মিথ্যা স্বপ্ন বর্ণনা করে আর মনে করে, এতে এমন কি ক্ষতি? তাদের জন্য এ হাদীস একটি সাবধান বাণী। এটাকে ছোট পাপ বলে দেখার কোনো অবকাশ নেই।
সব ধরনের মিথ্যা-ই অন্যায়। এমনকি হাসি ঠাট্টা করে মিথ্যা বলাও পাপ। তবে মিথ্যার মধ্যে এ তিনটি হল খুবই মারাত্মক।
যে পিতা নয় তাকে পিতা বলে লেখা বা ঘোষণা দেয়া এমন অন্যায় যার মাধ্যমে পরিবার প্রথা ও বংশের উপর আঘাত আসে। আর মাতা-পিতার অবদানকে অস্বীকার করা হয়।
কেউ মিথ্যা স্বপ্নের বর্ণনা দিলে তার ব্যাখ্যা করা উচিত নয়। আর যদি ব্যাখ্যা করা হয়, তাহলে তা সংঘটিত হয়ে যায়।
উদাহরণ :
এক ব্যক্তি ইমাম ইবনে সীরিন রহ. এর কাছে এসে বলল, আমি স্বপ্নে দেখলাম, আমার হাতে যেন একটি কাঁচের পেয়ালা। সেটি ভেঙ্গে গেল কিন্তু তার পানি রয়ে গেছে।
ইবনে সীরিন রহ. বললেন, তুমি কিন্তু এ রকম কোনো স্বপ্ন দেখোনি। লোকটি রাগ হয়ে বলল, সুবহানাল্লাহ! (আমি মিথ্যে বলিনি)
ইবনে সীরিন রহ. বললেন, যদি স্বপ্ন মিথ্যা হয়, তাহলে আমাকে দোষারোপ করতে পারবে না।
আর এ স্বপ্নের ব্যাখ্যা হল, তোমার স্ত্রী মারা যাবে আর পেটের বাচ্চাটি জীবিত থাকবে।
এ কথা শোনার পর লোকটি বলল, আল্লাহর কসম! আমি আসলে কোনো স্বপ্ন দেখিনি।
এর কিছুক্ষণ পর তার একটি সন্তান ভূমিষ্ট হয়েছে এবং তাতে আর স্ত্রী মারা গেছে।
(ইমাম জাহাবী রহ. প্রণীত সীয়ার আল-আলাম আন নুবালা)
আরেকটি উদাহরণ:
এক ব্যক্তি ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর কাছে এসে বলল, আমি স্বপ্নে দেখেছি, জমিন তরু-তাজা সবুজ হয়েছে। এরপর আবার শুকিয়ে গেছে। আবার সবুজ-তরুতাজা হয়েছে, আবার শুকিয়ে গেছে।
ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, এর ব্যাখা হল তুমি প্রথমে মুমিন থাকবে পরে কাফের হয়ে যাবে। আমার মুমিন হবে, এরপর আবার কাফের হয়ে যাবে আর কাফের অবস্থায় তুমি মৃত্যু বরণ করবে।
এ কথা শুনে লোকটি বলল, আসলে আমি এ রকম কোনো স্বপ্ন দেখিনি। ওমর বাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন :
যে বিষয়ে তুমি প্রশ্ন করেছিলে তার সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে।
তোমার বিষয়ে ফয়সালা হয়ে গেছে যেমন ফয়সালা হয়েছিল, ইউসূফ আলাইহিস সালামের সাথীর ব্যাপারে।
(মুসান্নাফ আব্দুর রাযযাক, বর্ণনার সনদ সহীহ)
তাই কখনো কাল্পনিক বা মিথ্যা স্বপ্ন বলা ও তার ব্যাখ্যা জানতে চাওয়া ঠিক নয়।
আর যদি স্বপ্নে খারাপ কিছু দেখে তাহলে শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করবে। ( বলবে, আউযুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজীম) এবং বাম দিকে তিনবার থুথু নিক্ষেপ করবে। আর কারো কাছে স্বপ্নের কথা বলবে না। মনে রাখবে এ স্বপ্ন তার ক্ষতি করতে পারবে না। (বর্ণনায় : বুখারী ও মুসলিম)
এ হাদীস থেকে আমরা জানতে পারলাম :
এক. ভাল স্বপ্ন আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে হয়ে থাকে।
দুই. খারাপ স্বপ্ন শয়তানের পক্ষ থেকে এসে থাকে।
তিন. খারাপ স্বপ্ন দেখলে সাথে সাথে তিনবার বাম দিকে থুথু ফেলে আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজীম বলতে হবে। তবে সত্যিকার থুথু ফেলবে না। মানে মুখ থেকে পানি নির্গত হবে না। শুধু আওয়ায করবে। কেননা হাদীসে নাফাস শব্দ এসেছে। যার অর্থ এমন হাল্কা থুথু যাতে পানি বা শ্লেষ্মা নেই।
চার. এই আমলটুকু করলে খারাপ স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে না।
পাঁচ. খারাপ স্বপ্ন দেখলে কারো কাছে তা বর্ণনা করবে না।
ছয়. ভাল স্বপ্ন দেখলে তার কাছেই বর্ণনা করবে যে তাকে ভালোবাসে। শত্রু ভাবাপন্ন বা হিংসুক ধরনের কারো কাছে ভাল স্বপ্নও বর্ণনা করতে নেই। কারণ, হতে পারে ভাল স্বপ্নটির একটি খারাপ ব্যাখ্যা সে শুনিয়ে দেবে। ফলে অস্থিরতা, দু:চিন্তা ও উদ্বেগ বেড়ে যাবে।
দেখুন ইউসুফ আলাইহিস সালাম স্বপ্ন দেখেছিলেন:
যখন ইউসুফ তার পিতাকে বলল, হে আমার পিতা, আমি দেখেছি এগারটি নক্ষত্র, সূর্য ও চাঁদকে, আমি দেখেছি তাদেরকে আমার প্রতি সিজদাবনত অবস্থায়।’সে বলল, হে আমার পুত্র, তুমি তোমার ভাইদের নিকট তোমার স্বপ্নের বর্ণনা দিও না, তাহলে তারা তোমার বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র করবে। নিশ্চয় শয়তান মানুষের প্রকাশ্য দুশমন।’(সূরা ইউসুফ, আয়াত ৪-৫)
এ আয়াতে আমরা দেখলাম ইউসুফ আলাইহিস সালাম স্বপ্ন দেখে তার পিতাকে বর্ণনা করলেন। আর পিতা আল্লাহ তাআলার নবী ইয়াকুব আলাইহিস সালাম তাকে স্বপ্নের কথা নিজ ভাইদের বলতে নিষেধ করলেন। কারণ, ভাইয়েরা তাকে ভালোবাসত না। বরং হিংসা করত।
যখন আল্লাহ তোমাকে স্বপ্নের মধ্যে তাদেরকে স্বল্প সংখ্যায় দেখিয়েছিলেন। আর তোমাকে যদি তিনি তাদেরকে বেশি সংখ্যায় দেখাতেন, তাহলে অবশ্যই তোমরা সাহসহারা হয়ে পড়তে এবং বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক করতে। কিন্তু আল্লাহ নিরাপত্তা দিয়েছেন। নিশ্চয় অন্তরে যা আছে তিনি সে সব বিষয়ে অবগত। (সূরা আনফাল : ৪৩)
বদর যুদ্ধের প্রাক্কালে আল্লাহ তাআলা তার রাসূলকে বিজয় লাভের সুন্দর স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। তাকে শত্রু বাহিনীর সংখ্যা অনেক কম করে দেখিয়েছেন। বেশি করে দেখালে তিনি হয়ত ভয় পেয়ে যেতেন।
তাই এটি একটি ভাল স্বপ্ন।
এভাবে আল্লাহ তাআলা স্বপ্নের মাধ্যমে তার নবী ও রাসূলদের কাছে ওহী প্রেরণ করতেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন :
অবশ্যই আল্লাহ তাঁর রাসূলকে স্বপ্নটি যথাযথভাবে সত্যে পরিণত করে দিয়েছেন। তোমরা ইনশাআল্লাহ নিরাপদে তোমাদের মাথা মুণ্ডন করে এবং চুল ছেঁটে নির্ভয়ে মসজিদুল হারামে অবশ্যই প্রবেশ করবে। অতঃপর আল্লাহ জেনেছেন যা তোমরা জানতে না। সুতরাং এ ছাড়াও তিনি দিলেন এক নিকটবর্তী বিজয়। (সূরা ফাতাহ : ২৭)
আয়াত থেকে আমরা জানতে পারলাম, আল্লাহ তাআলার তাঁর রাসূলকে মক্কা জয় করার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। আর সে স্বপ্ন আল্লাহ তাআলাই বাস্তবায়ন করেছিলেন।
এমনিভাবে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আল-কোরআনে মিশরের বাদশার স্বপ্ন বর্ণনা করেছেন। সে স্বপ্নের সুন্দর ব্যাখ্যা করেছিলেন, নবী ইউসুফ আলাইহিস সালাম। বিষয়টি আল কোরআনের সূরা ইউসুফের ৪৩ আয়াত থেকে ৫৫ আয়াত পর্যন্ত বর্ণিত হয়েছে এবং সেখানে সেই স্বপ্নের ব্যাখ্যাও দেয়া হয়েছে।
এর আগে সূরার ৩৬ আয়াত থেকে ৪২ আয়াত পর্যন্ত ইউসুফ আলাইহিস সালামের জেল জীবনের দুজন সাথীর স্বপ্ন ও ইউসুফ আলাইহিস সালাম কর্তৃক তার ব্যাখ্যা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
স্বপ্নের ব্যাখ্যা করা যে জ্ঞান-বিজ্ঞানের একটি বিষয় তা আল-কোরআনে নবী ইউসুফের ভাষায় বলা হয়েছে এভাবে:
হে আমার রব, আপনি আমাকে রাজত্ব দান করেছেন এবং স্বপ্নের ব্যাখ্যা শিখিয়েছেন। হে আসমানসমূহ ও যমীনের স্রষ্টা! দুনিয়া ও আখিরাতে আপনিই আমার অভিভাবক, আমাকে মুসলিম অবস্থায় মৃত্যু দিন এবং নেককারদের সাথে আমাকে যুক্ত করুন (সূরা ইউসুফ : ১০১)
এমনিভাবে সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে যায়েদ ইবনে আব্দে রাব্বিহী ও ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহুমা স্বপ্নে আজান দেখেছিলেন। আর তাদের স্বপ্নে দেখা আজান-কেই নামাজের বর্তমান আজান ও ইকামত হিসাবে আমরা দেখতে পাচ্ছি।
তাদের সুন্দর স্বপ্নগুলো এভাবেই ইসলামের নিদর্শন হিসাবে বাস্তবে রূপ লাভ করেছে অনন্তকালের জন্য।
আমাদের আরো মনে রাখতে হবে যে, ভালো ও সুন্দর স্বপ্নগুলো কখনো হুবহু বাস্তব রূপে দেখা যায় আবার কখনো রূপকভাবে ভিন্ন আকৃতিতে ।
যেমন আজান দেয়ার পদ্ধতি সংক্রান্ত স্বপ্ন হুবহু দেখানো হয়েছে। অপরদিকে ইউসুফ আলাইহিস সালামের স্বপ্নগুলো ভিন্ন আকৃতিতে রূপকভাবে দেখানো হয়েছে।
যদি কেউ ভাল স্বপ্ন দেখে তাহলে তার তিনটি কাজ করতে হবে :
এক. আল্লাহ তাআলার প্রশংসা স্বরূপ আল হামদুলিল্লাহ বলতে হবে।
দুই. এটা অন্যকে সুসংবাদ হিসাবে জানাবে।
তিন. স্বপ্ন সম্পর্কে এমন ব্যক্তিদেরকে জানাবে যারা তাকে ভালোবাসে।
হাদীসে এসেছে :
আর যদি অন্য স্বপ্ন দেখে যা সে পছন্দ করে না, তাহলে বুঝে নেবে এটা শয়তানের পক্ষ থেকে। তখন সে এ স্বপ্নের ক্ষতি থেকে আল্লাহ তাআলার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করবে। (আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজীম বলবে) এবং কাউকে এ স্বপ্নের কথা বলবে না। মনে রাখবে এ স্বপ্ন তাকে ক্ষতি করবে না। (সহীহ বুখারী)
স্বপ্ন ভাল হলে তা শুভাকাংখী ব্যতীত অন্য কারো কাছে বলা ঠিক নয়। এ কারণে ইয়াকুব আ. তার ছেলে ইউসূফ কে বলেছিলেন :
হে আমার বৎস! তোমার স্বপ্নের কথা তোমার ভাইদের কাছে বলো না। (সূরা ইউসুফ : ৫)
খারাপ স্বপ্ন দেখলে যা করতে হবে :
এক. এই খারাপ স্বপ্নের ক্ষতি ও অনিষ্ট থেকে আল্লাহ তাআলার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতে হবে। এভাবে সকল প্রকার ক্ষতি থেকে আল্লাহ তাআলার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা উচিত।
দুই. শয়তানের অনিষ্ট ও কুমন্ত্রণা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করতে হবে। এবং এর জন্য আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজীম পড়তে হবে। কারণ, খারাপ স্বপ্ন শয়তানের কুপ্রভাবে হয়ে থাকে।
তিন. বাঁ দিকে তিনবার থুথু নিক্ষেপ করতে হবে। এটা করতে হবে শয়তানের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ ও তার চক্রান্ত-কে অপমান করার জন্য ।
চার. যে কাতে ঘুমিয়ে খারাপ স্বপ্ন দেখেছে তা পরিবর্তন করে অন্য কাতে শুতে হবে। অবস্থাকে বদলে দেয়ার ইঙ্গিত স্বরূপ এটা করা হয়ে থাকে।
পাঁচ. খারাপ স্বপ্ন দেখলে কারো কাছে বলবে না। আর নিজেও এর ব্যাখ্যা করতে চেষ্টা করবে না।
হাদীসে এসেছে
হাদীস থেকে আমরা জানতে পারলাম :
এক. সাহাবীগণ কোনো স্বপ্ন দেখলে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে তার ব্যাখ্যা জানতে চাইতেন। তারা এভাবে কোনো স্বপ্নকে অযথা মনে না করে এর গুরুত্ব দিতেন।
দুই. খারাপ স্বপ্ন দেখলে তা কাউকে বলতে নেই।
তিন. খারাপ ও নেতিবাচক স্বপ্ন শয়তানের একটি কুমন্ত্রণা।
এমন ব্যক্তিই স্বপ্নের ব্যাখ্যা দেয়ার অধিকার রাখে, যে কোরআন ও হাদীসের জ্ঞান সম্পর্কে অভিজ্ঞ ও স্বপ্ন ব্যাখ্যার মূলনীতি সম্পর্কে ওয়াকেফহাল। সাথে সাথে তাকে মানব-দরদী ও সকলের প্রতি কল্যাণকামী মনোভাবের অধিকারী হতে হবে।
তাই তো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
শায়খ আব্দুর রহমান আস সাদী রহ. বলতেন, স্বপ্নের ব্যাখ্যা একটি শরয়ী বিদ্যা। এটা শিক্ষা করা, শিক্ষা দেয়া ও চর্চার করলে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে প্রতিদান পাওয়া যাবে। আর স্বপ্নের ব্যাখ্যা ফতোয়ার মর্যাদা রাখে।
তাইতো দেখি ইউসুফ আলাইহিস সালাম স্বপ্নের ব্যাখ্যাকে ফতোয়া বলে আখ্যায়িত করেছেন। যেমন তিনি তার জেল সঙ্গী দুজনেকে তাদের জানতে চাওয়া স্বপ্নের ব্যাখ্যা জানিয়ে বলেছিলেন :
তোমরা দুজনে যে বিষয়ে ফতোয়া চেয়েছিলে তার ফয়সালা হয়ে গেছে। (সূরা ইউসুফ, আয়াত ৪১)
হাদীসে আরো এসেছে -
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: ভাল স্বপ্ন দেখেছো। ইনশা আল্লাহ তোমার স্বামী তোমার কাছে সহীহ-সুস্থ অবস্থায় ফিরে আসবে আর তুমি একটি সুস্থ-সুন্দর সন্তান প্রসব করবে।
এভাবে সে দু বার বা তিনবার স্বপ্ন দেখেছে। আর প্রতিবারই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসেছে। তিনি প্রতিবার এরকম ব্যাখ্যাই দিয়েছেন। আর প্রতিবার সে রকমই বাস্তবায়িত হয়েছে।
একদিন মহিলা আগের মতই আসল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন অনুপস্থিত ছিলেন। সে স্বপ্ন দেখেই এসেছে।
আমি তাকে প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর বান্দী! তুমি রাসুলুল্লাহর নিকট কী জিজ্ঞেস করবে?
সে বলল, আমি একটি স্বপ্ন প্রায়ই দেখি। অতপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসি। তিনি সুন্দর ব্যাখ্যা দেন। সেটাই বাস্তবে পরিণত হয়।
আমি বললাম, তুমি আমাকে বল, কী স্বপ্ন দেখেছো? সে বলল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসুক, তারপর বলব।
আমি তাকে বারবার অনুরোধ করতে লাগলাম স্বপ্নটি বলার জন্য- যেমনটি আমার অভ্যাস। অবশেষে সে আমাকে স্বপ্নের কথা বলতে বাধ্য হল। আমি বললাম, আল্লাহর কসম! তোমার স্বপ্ন যদি সত্যি হয়, তাহলে তোমার স্বামী মারা যাবে। আর তুমি একটি অপূর্ণাঙ্গ বা অসুস্থ ছেলে প্রসব করবে।
তখন মহিলাটি বসে কাঁদতে লাগল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এসে বললেন: হে আয়েশা! এর কি হয়েছে?
তখন আমি পুরো ঘটনা ও স্বপ্ন সম্পর্কে আমার দেয়া ব্যাখ্যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জানালাম।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: হে আয়েশা এটা কী করলে? যখন কোনো মুসলমানের স্বপ্নের ব্যাখ্যা করবে তখন সুন্দর ও কল্যাণকর ব্যাখ্যা দেবে। মনে রাখবে স্বপ্নের যে ব্যাখ্যা দেয়া হয়, বাস্তবে তাই সংঘটিত হয়।
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন : আল্লাহ তাআলার কি ইচ্ছা জানি না। মহিলাটির স্বামী মারা গেল আর দেখলাম সে একটি অসুস্থ অপূর্ণাঙ্গ ছেলে প্রসব করল। (বর্ণনায় : দারামী। ইবনে হাজার রহ. হাদীসটিকে হাসান বলে অভিহিত করেছেন।)
হাদীস থেকে শিক্ষা ও মাসায়েল :
এক. স্বপ্ন বর্ণনা করার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। যাকে তাকে স্বপ্নের কথা বলা উচিত নয়।
দুই. সর্বদা আলেম, শুভাকাংখীর কাছে স্বপ্নের কথা বলবে। যে শুভাকাংখী নয় তার কাছে কোনো ধরনের স্বপ্নের কথা বলবে না।
তিন. স্বপ্ন একটি উড়ন্ত পায়ের মত। এ কথার অর্থ হল শূন্যে ঝুলিয়ে রাখা পা যেমন যে কোনো সময় মাটিতে রাখা যায় আবার নীচে আগুন থাকলে তাতেও রাখা যায়। স্বপ্ন এমনই, এর ব্যাখ্যা ভাল করা যায় আবার খারাপও করা যায়। যে ব্যাখ্যাই করা হোক, সেটিই সংঘটিত হবে।
চার. মদীনার এই মহিলাটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে স্বপ্নের ব্যাখ্যা জানতে আসতেন। স্বপ্নটি বাহ্যিক দৃষ্টিতে খারাপ হলেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভাল ও সুন্দর ব্যাখ্যা করে দিয়েছেন।
তাই স্বপ্ন দ্রষ্টার পরিচিতদের মধ্যে যিনি সবচেয়ে ভাল আলেম তার কাছে স্বপ্নের ব্যাখ্যা জানতে চাওয়া উচিত।
পাঁচ. প্রশ্ন হতে পারে, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা কেন এ ধরনের ব্যাখ্যা দিলেন? এর উত্তর হল :
(ক) এ মহিলার স্বপ্নের ব্যাখ্যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কীভাবে করেছেন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা তা জানতেন না। তাই তিনি নিজের পক্ষ থেকে ব্যাখ্যা করেছেন।
(খ) আয়েশা রা. স্বপ্নের বাহ্যিক দিক তাকিয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। ঘরের চৌকাঠ দ্বারা স্বামী বুঝেছেন। আর এক চোখ অন্ধ সন্তান দ্বারা অপূর্ণাঙ্গ সন্তান বুঝেছেন।
(গ) স্বপ্নের খারাপ বা অশুভ ব্যাখ্যা করা অনুচিত।স্বপ্ন ব্যাখ্যার এ মূলনীতির কথা আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা আগে থেকে জানতেন না। এ ঘটনার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে জানিয়েছেন। এবং তিনি জেনেছেন।
(ঘ) এ স্বপ্নের ব্যাখ্যা এভাবে করা যেত, যা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করতেন। তাহল: ঘরের চৌকাঠ ভেঙ্গে যাওয়ার অর্থ হল, ঘর প্রশস্ত হবে। প্রাচুর্য ও সচ্ছলতা আসবে। আর এক চোখ কানা সন্তানের অর্থ হল, সন্তানটি তার চোখ দিয়ে শুধু ভাল বিষয় দেখবে।
এটা হল দূরবর্তী ব্যাখ্যা। আর আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা করেছেন নিকটবর্তী ব্যাখ্যা।
ছয়. যার কাছে স্বপ্নের ব্যাখ্যা চাওয়া হবে, তিনি যদি জানেন, এর ব্যাখ্যা খারাপ তবে তিনি তা বলবেন না। যথাসম্ভব ভাল ব্যাখ্যা করে দেবেন। নয়তো চুপ থাকবেন। অথবা বলবেন, আল্লাহ ভাল জানেন।
সায়ীদ ইবনে মানসূর বর্ণনা করেন, আতা রহ. সব সময় বলতেন : স্বপ্নের ব্যাখ্যা যা দেয়া হয়, সেটাই সংঘটিত হয়। (ফাতহুল বারী)
প্রশ্ন হতে পারে তাহলে তাকদীরের ব্যাপারটা কি হবে?
উত্তর সোজা। তাকদীরে এভাবেই লেখা আছে যে, অমুক ব্যক্তি এভাবে ব্যাখ্যা করবে। আর তাই সংঘটিত হবে। কিন্তু আমাদের কর্তব্য হবে, কখনো খারাপ বা অশুভ ব্যাখ্যা না দেয়া। তাকদীরে কি আছে আমরা তা জানি না।
এ জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে কোনো মানুষের কাছে স্বপ্নের কথা বলতে নিষেধ করেছেন।
স্বপ্নের কথা শুধু তাকে বলা যাবে যে আলেম, বন্ধু, শুভাকাংখী ও কল্যাণকামী। এ ছাড়া অন্য কারো কাছে নয়।
আরেকটি ঘটনা :
এক মহিলা একটি দুগ্ধপোষ্য শিশুকে নিয়ে ইমাম ইবনে সীরিন রহ.-এর শিক্ষা মজলিসে আসল। এসে তিনি ইমামের ছাত্রদের কাছে জিজ্ঞেস করল, ইমাম সাহেব কোথায়? ইমাম সাহেবের একজন বোকা ছাত্র বলল, আপনি তার কাছে কেন এসেছেন?
মহিলাটি বলল, আমি এ ছেলেটির ব্যাপারে একটি স্বপ্ন দেখেছি, তার ব্যাখ্যা জানার জন্য এসেছি।
ছাত্রটি বলল, কি স্বপ্ন দেখেছেন? মহিলাটি বলল, আমি দেখেছি আমার এ ছেলেটি সাগর থেকে পানি পান করছে।
ছাত্রটি তাড়াতাড়ি ব্যাখ্যা দিল, বলল, তাহলে তো সে পেট ফুলে মারা যাবে।
তৎক্ষনাৎ শিশুটির পেট ফুলে উঠল। আর চিৎকার করে মারা গেল।
মহিলাটি কাঁদা শুরু করল। এরই মধ্যে ইমাম সাহেব এসে পড়লেন। ঘটনা শুনে তিনি বললেন: যদি তুমি স্বপ্নের ব্যাখ্যা না করে ছেড়ে দিতে তাহলে ছেলেটি এ দেশের সবচেয়ে বড় আলেম ও বিদ্যান হত।
সাগরের অর্থ শুধু পানের অযোগ্য নোনা পানিই নয়। সাগরের ব্যাখ্যা হল, মনি, মুক্তা, হীরা, প্রবাল।
কাজেই যিনি স্বপ্নের ব্যাখ্যা করবেন তিনি সব সময় ইতিবাচক ও কল্যাণকর ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করবেন।
(আল কাওয়ায়েদুল হুসনা ফী তাবীলির রুইয়া : শায়খ আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ আস সাদহান)
তাবীর মানে স্বপ্ন ব্যাখ্যা করা। যার মাধ্যমে স্বপ্নের ব্যাখ্যা করা হয় তার বিবেচনায় কয়েক প্রকার হয়ে থাকে।
ইমাম বগভী রহ. বলেন: স্বপ্ন ব্যাখ্যা করার দিক দিয়ে কয়েক প্রকার হতে পারে।
প্রথমত: আল কোরআনের আয়াত দিয়ে স্বপ্নের ব্যাখ্যা প্রদান করা।
দ্বিতীয়ত: হাদীসে রাসূল দিয়ে স্বপ্নের ব্যাখ্যা করা।
তৃতীয়ত: মানুষে মাঝে প্রচলিত বিভিন্ন প্রসিদ্ধ উক্তি দিয়ে স্বপ্নের ব্যাখ্যা করা।
চতুর্থত: কখনো বিপরীত অর্থ গ্রহণ নীতির আলোকে স্বপ্নের ব্যাখ্যা করা।
স্বপ্নে রশি দেখার অর্থ হল, ওয়াদা, অঙ্গীকার, প্রতিশ্রুতি।
এ ব্যাখ্যাটি আল কোরআনের নিম্নোক্ত আয়াত থেকে গ্রহণ করা হয়েছে।
তোমরা আল্লাহ তাআলার রশিকে শক্তভাবে ধারণ করো। (সূরা আলে ইমরান: ১০৩)
স্বপ্নে নৌকা বা জাহাজ দেখার ব্যাখ্যা হল মুক্তি পাওয়া।
এ অর্থটি আল কোরআনের এ আয়াত থেকে নেয়া হয়েছে।
আমি তাকে উদ্ধার করেছি এবং উদ্ধার করেছি জাহাজের আরোহীদের। (সূরা আল আনকাবুত : ১৫)
স্বপ্নে কাঠ দেখার ব্যাখ্যা হল, মুনাফেকী বা কপটতা। এ ব্যাখ্যাটি আল কোরআনের এ আয়াত থেকে নেয়া হয়েছে, যেখানে আল্লাহ তাআলা মুনাফিকদের সম্পর্কে বলেছেন :
যেন তারা দেয়ালে ঠেস দেয়া কাঠের মতই। (সূরা আল মুনাফিকুন: ৪)
পাথর স্বপ্ন দেখলে তার ব্যাখ্যা হবে অন্তরের কঠোরতা ও পাষন্ডতা।
এ ব্যাখ্যাটি আল কোরআনের এ আয়াত থেকে গ্রহণ করা হয়েছে, যেখানে আল্লাহ তাআলা বলেন:
অত:পর তোমাদের অন্তরগুলো কঠিন হয়ে গেল, যেন তা পাথরের মত কিংবা তার চেয়েও শক্ত। (সূরা আল বাকারা: ৭৪)
যদি স্বপ্নে রোগ-ব্যধি দেখা হয়, তাহলে তার ব্যাখ্যা হবে মুনাফিক। কারণ, আল্লাহ তাআলা মুনাফিকদের সম্পর্কে বলেছেন :
তাদের অন্তরে রয়েছে ব্যধি। (সূরা আল বাকারা, আয়াত ১০)
যদি স্বপ্নে গোশত খেতে দেখে তাহলে তার অর্থ হতে পারে গীবত বা পরনিন্দা। কেননা গীবত সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন:
তোমাদের কেউ কি পছন্দ করবে তার মৃত ভাইয়ের গোশত খাবে? (সূরা আল হুজুরাত: ১৩)
এই যে ব্যাখ্যার কথাগুলো বলা হল, এগুলো যে এমন হতেই হবে তা জরুরী নয়। আবার সকলের ব্যাপারে ব্যাখ্যা একটিই হবে, তাও ঠিক নয়। একজন রোগীর স্বপ্ন আর সুস্থ মানুষের স্বপ্নের ব্যাখ্যা এক রকম হবে না। যদিও স্বপ্ন এক রকম হয়। তেমনি একজন মুক্ত মানুষ ও একজন বন্দী মানুষের স্বপ্নের ব্যাখ্যা এক রকম হবে না। স্বপ্নের ব্যাখ্যায় যেমন স্বপ্ন দ্রষ্টার অবস্থা লক্ষ্য করা হবে তেমনি স্বপ্নে যা দেখেছে তার অবস্থাও দেখতে হবে। যেমন কেউ স্বপ্নে দড়ি বা রশি দেখল। একজন স্বপ্নে দেখল সে একটি মজবুত রশি পেয়েছে। যা ছেড়া যাচ্ছে না। আরেক জন দেখল, সে একটা রশি ধরেছে কিন্তু তা ছিল নরম। দুটো স্বপ্নের ব্যাখ্যার মধ্যে বিশাল পার্থক্য হবে।
এক ব্যক্তি ইমাম মুহাম্মাদ বিন সীরিন রহ. এর কাছে বলল, আমি স্বপ্ন দেখলাম যে আমি আজান দিচ্ছি। তিনি বললেন, এর ব্যাখ্যা হল, তুমি হজ করবে।
আরেক ব্যক্তি এসে বলল, আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, আমি আজান দিচ্ছি। তিনি বললেন, এর অর্থ হল, চুরির অপরাধে তোমার হাত কাটা যাবে।
লোকেরা জিজ্ঞেস করল, আপনি একই স্বপ্নের দু ধরনের ব্যাখ্যা করলেন?
তিনি বললেন, প্রথম লোকটি নেক আমল প্রিয়। সে ভাল কাজ করে থাকে। সে জন্য তার স্বপ্নের ব্যাখ্যা নেক আমল হতে পারে। আমি আল কোরআনের আয়াত -
তুমি মানুষের মাঝে হজের জন্য আজান তথা এলান দাও। (সূরা হজ্জ:২৭)
আর দ্বিতীয় ব্যক্তি হচ্ছে পাপাচারী। তাই তার স্বপ্নের ব্যাখা পাপের শাস্তিই মানায়। তাই আমি আল কোরআনের আয়াত
অত:পর এক মুয়াজ্জিন (ঘোষণা কারী) আজান (ঘোষণা) দিল, হে কাফেলা! তোমরা তো চোর। (সূরা ইউসুফ : ৭০)
স্বপ্নে কাক দেখার ব্যাখ্যা হল, পাপাচারী পুরুষ। কারণ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাকের নাম রেখেছেন ফাসেক। মানে, পাপী।
তেমনি ইঁদুর স্বপ্নে দেখার ব্যাখ্যা হল, পাপাচারী নারী। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইঁদুরের নাম রেখেছেন, ফাসেকা। মানে পাপাচারী মহিলা।
স্বপ্নে পাঁজর বা পাঁজরের হাড় দেখলে এর ব্যাখ্যা হবে, নারী। কারণ, নারীকে পাঁজরের হাড় দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে বলে হাদীসে এসেছে।
এমনিভাবে কাঁচের পান-পাত্র স্বপ্ন দেখার ব্যাখ্যা হল, নারী। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাঁচের পান-পাত্র-কে নারীর রূপক অর্থে ব্যবহার করেছেন। যেমন তিনি বলেছেন:
হে আনজাশা! আরে আস্তে চল, নয়তো কাঁচের পান-পাত্রগুলো ভেঙ্গে যাবে। (বর্ণনায় : মুসলিম)
এখানে কাঁচের পান-পাত্র বলতে তিনি সফর সঙ্গী মেয়েদের বুঝিয়েছেন। মানে তাড়াতাড়ি হাটলে মেয়েরা পিছনে পড়ে যাবে। তাই তাদের জন্য তিনি ধীরে ধীরে পথ চলতে বললেন।
কোনো ব্যক্তি স্বপ্নে ভীতিকর কিছু দেখল বা ভয় পেল। তার অবস্থার বিবেচনায় এর ব্যাখ্যা হতে পারে শান্তি ও নিরাপত্তা।
যেমন আল্লাহর তাআলার বাণী
তিনি তাদের ভয়-ভীতিকে শান্তি ও নিরাপত্তায় পরিবর্তন করে দেবেন। (সূরা আল নূর : ৫৫)
এমনিভাবে স্বপ্নে কান্না দেখলে এর ব্যাখ্যা হতে পারে আনন্দ। স্বপ্নে হাসতে দেখলে এর ব্যাখ্যা হতে পারে দু:খ-কষ্ট।
এ বিপরীত অর্থ গ্রহণ নীতি স্বপ্ন ব্যাখ্যা করার রহস্য হল, স্বপ্নের দায়িত্বশীল ফেরেশতা যখন স্বপ্নে ইঙ্গিত প্রদান করে তখন সে বিষয়টি উল্টো করে দেখায়। কারণ, নিদ্রা আর জাগ্রত অবস্থা একটা আরেকটার বিপরীত।
তাবীর বা স্বপ্ন ব্যাখ্যার ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে সীরিন রহ.- এর কাছে এক মহিলা আসল। তিনি তখন দুপুরের খাবার খাচ্ছিলেন। মহিলা বলল, হে আবু বকর! আমি একটি স্বপ্ন দেখেছি। ইবনে সীরিন রহ. বললেন, তুমি এক্ষুণি বলবে না আমাকে খেতে দেবে? মহিলা বলল, ঠিক আছে, আপনি খাওয়া শেষ করুন। খাওয়া শেষ করার পর তিনি মহিলাকে বললেন: এখন বল, তোমার দেখা স্বপ্ন। মহিলা বলল : আমি দেখলাম, আকাশের চন্দ্র সাতটি তারা (সূরাইয়া) র মধ্যে ঢুকে গেল। এরপর স্বপ্নের মধ্যে লোকেরা আমাকে বলল, ইবনে সীরিনের কাছে খবরটা তাড়াতাড়ি পৌঁছে দাও।
ইবনে সীরিন বললেন, ধিক! তোমাকে। কি দেখলে? আবার বল। এভাবে কয়েকবার তিনি বললেন। আর তিনি খুব অস্থির হয়ে গেলেন। তার চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেল। তার বোন তাকে জিজ্ঞেস করল, কি হয়েছে?
তিনি বললেন, এ মহিলাটি বলছে আমি সাত দিন পর মৃত্যু বরণ করব।
বর্ণনাকারী আসআছ বলেন : ঠিক সাত দিনের মাথায় আমরা ইমাম ইবনে সীরিন- রহ.-কে দাফন করলাম।
(আল কাওয়ায়েদুল হুসনা ফী তাবীলির রুইয়া : শায়খ আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ আস সাদহান)
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বপ্নের কথা শুনতে পছন্দ করতেন। তিনি একদিন জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের মধ্যে কেউ গত রাতে স্বপ্ন দেখেছ?
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন : আমি স্বপ্ন দেখেছি, আকাশ থেকে তিনটি চাঁদ আমার ঘরের মধ্যে পতিত হয়েছে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: তোমার স্বপ্ন যদি সত্যি হয়, তাহলে তোমার ঘরে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ তিন জন মানুষকে দাফন করা হবে।
এরপরে তো পর্যায়ক্রমে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু ও ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে তার ঘরে দাফন করা হয়েছে।
(আল কাওয়ায়েদুল হুসনা ফী তাবীলির রুইয়া : শায়খ আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ আস সাদহান। বর্ণনায় : মুস্তাদরাক হাকেম)
ইরাকের শাসক হাজ্জাজ বিন ইউসূফ একদিন স্বপ্নে দেখলেন, আকাশ থেকে বেহেশতের হুর সাদৃশ দুটো দাসী অবতীর্ণ হল। একজনকে তিনি ধরতে পারলেন অন্য জন আকাশে উঠে গেল।
স্বপ্ন দেখে তিনি খুব খুশী হলেন। এর ব্যাখ্যা জানার জন্য ইমাম ইবনে সীরিন-কে ডাকলেন।
ইবনে সীরিন রহ. বললেন: এর ব্যাখ্যা হল, দুটো বিদ্রোহ (ফিতনা) সংঘটিত হবে। আপনি একটির মোকাবেলা করবেন। অন্যটিকে আপনি পাবেন না। (হয়ত আপনার পরে আসবে)
পরে দেখা গেল হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফ, ইবনুল আসআছের বিদ্রোহ মোকাবেলা করলেন। আর ইবনুল মুলাহহাবের বিদ্রোহ তিনি দেখে যাননি।
কিভাবে এ ব্যাখ্যা দেয়া হল? এর রহস্য কী?
এ স্বপ্নে দুটো ইঙ্গিত ছিল। প্রথমটি দাসী আর দ্বিতীয়টি হল বেহেশতের হুর।
দুটো ইঙ্গিত পরস্পর বিরোধী। কারণ, হুর হল সুরক্ষিত। কিন্তু দাসী সুরক্ষিত নয়। অপর দিকে হুরের বিষয়টি দৃশ্যমান নয়, আর দাসীর বিষয়টি দৃশ্যমান। স্বপ্ন ব্যাখ্যার নিয়ম হল, এ রকম পরস্পর বিরোধী ইঙ্গিত দেখলে বাস্তব বা দৃশ্যমান ইঙ্গিত গ্রহণ করা হবে। এ বিবেচনায় এখানে দাসী দেখার বিষয়টি গ্রহণ করা হল আর হুরের বিষয়টি গ্রহণ করা হল না।
আর দাসী হল স্ত্রী নয়, এমন মেয়ে লোক। আর মেয়ে লোক হল ফিতনা-বিশৃংখলার উপকরণ। কেননা রাসূলুল্লা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: আমার চলে যাওয়ার পর আমার উম্মতের উপর সবচেয়ে ক্ষতিকর ফিতনা হিসাবে মেয়েদের রেখে গেলাম।
তাই ইমাম ইবনে সীরিন এ রকম ব্যাখ্যা করেছেন।
(আল কাওয়ায়েদুল হুসনা ফী তাবীলির রুইয়া : শায়খ আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ আস সাদহান)
এ ব্যক্তি ইমাম জাফর সাদিকের কাছে এসে বলল, আমি একটি স্বপ্ন দেখেছি। স্বপ্নটি হল, একটি কাঁচের পেয়ালা আছে আমার। আমি তা থেকে পানাহার করি। কিন্তু তার মধ্যে একটি পিঁপড়া দেখলাম। সেও তা থেকে খাবার খায়।
এর অর্থ কী?
ইমাম সাহেব বললেন, তোমার কি স্ত্রী আছে? সে বলল, হ্যাঁ। তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন, তোমার বাসায় কি কোনো পুরুষ কাজের লোক (দাস) আছে? সে বলল, হ্যাঁ আছে। তিনি বললেন, কাজের লোকটিকে বিদায় করে দাও। তাকে রাখায় তোমার কোনো কল্যাণ নেই।
লোকটি বাড়ী গিয়ে স্ত্রীকে স্বপ্ন ও তার ব্যাখ্যার কথা বলল। স্ত্রী বলল, এখন তোমার সিদ্ধান্ত কী?
লোকটি বলল, আমি দাসটিকে বিক্রি করে বিদায় করে দেব।
স্ত্রী বলল, যদি তাকে বিদায় করো তাহলে আমাকে তালাক দাও। লোকটি স্ত্রীকে তালাক দিল। স্ত্রী দাসটিকে কিনে নিল ও তাকে বিয়ে করল।
এ স্বপ্নের মধ্যে তিনটি বিষয়কে ইঙ্গিত হিসাবে ধরা হয়েছে। প্রথম হল, পুরুষ লোকটি। দ্বিতীয় হল, পেয়ালা। আর তৃতীয়টি হল, পিঁপড়া।
ইমাম জাফর সাদেক রহ. ব্যাখা করার আগে পুরুষ লোকটিকে জেনে নিলেন। আর এভাবেই কারো স্বপ্ন ব্যাখ্যা করার আগে তার সম্পর্কে জেনে নিতে হয়।
দ্বিতীয় ইঙ্গিত, কাঁচের পেয়ালা দ্বারা স্ত্রীকে বুঝায়। কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারীদের কাঁচের পাত্রের সাথে তুলনা করেছেন।
তার থেকে পানাহার করার অর্থ হল সহবাস। আর পিঁপড়া ও তার খাওয়ার অর্থ হল সে তার স্ত্রীতে অংশ গ্রহণ করে। পিঁপড়া দ্বারা দুর্বল সত্বা ও চোর বুঝায়। সে এমনভাবে খায়, কেউ দেখে না। এর মানে কাজের লোকটি পিঁপড়ার মত চুপিসারে তার স্ত্রীকে ভোগ করে।
(আল কাওয়ায়েদুল হুসনা ফী তাবীলির রুইয়া : শায়খ আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ আস সাদহান)
ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে সীরিন রহ. বলেন : যদি স্বপ্নে কেউ মৃত ব্যক্তিকে দেখে তাহলে তাকে যে অবস্থায় দেখবে সেটাই বাস্তব বলে ধরা হবে। তাকে যা বলতে শুনবে, সেটা সত্যি বলে ধরা হবে। কারণ, সে এমন জগতে অবস্থান করছে যেখানে সত্য ছাড়া আর কিছু নেই।
যদি কেউ মৃত ব্যক্তিকে ভাল পোশাক পরা অবস্থায় বা সুস্বাস্থের অধিকারী দেখে, তাহলে বুঝতে হবে সে ভাল অবস্থায় আছে। আর যদি জীর্ণ, শীর্ণ স্বাস্থ্য বা খারাপ পোশাকে দেখে তাহলে বুঝতে হবে, ভাল নেই। তার জন্য তখন বেশি করে মাগফিরাত কামনা ও দোআ-প্রার্থনা করতে হবে।
কয়েকটি উদাহরণ :
ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, বিদ্রোহীরা যখন উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু- এর বাসভবন ঘেরাও করল, তখন উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি গত রাতে স্বপ্ন দেখলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, উসমান আমাদের সাথে তুমি ইফতার করবে।
আর ঐ দিনই উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু শহীদ হলেন।
(আল কাওয়ায়েদুল হুসনা ফী তাবীলির রুইয়া : শায়খ আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ আস সাদহান)
আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, আবু মূসা আশ আশআরী রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আমি স্বপ্নে দেখলাম, আমি একটি পাহাড়ের কাছে গেলাম। দেখলাম, পাহাড়ের উপরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রয়েছেন ও পাশে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু তার হাত দিয়ে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর দিকে ইশারা করছেন।
আমি আবু মূসা রাদিয়াল্লাহু আনহুর এ স্বপ্নের কথা শুনে বললাম, ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজেউন। আল্লাহর শপথ! ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তো মারা যাবেন! আচ্ছা আপনি কি বিষয়টি ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে লিখে জানাবেন?
আবু মূসা রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আমি ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে তার জীবদ্দশায তার নিজের মৃত্যু সংবাদ জানাব, এটা কি করে হয়?
এর কয়েকদিন পরই স্বপ্নটা সত্যে পরিণত হল। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু শহীদ হয়ে গেলেন।
কারণ, মৃত্যু পরবর্তী সত্য জগত থেকে যা আসে, তা মিথ্যা হতে পারে না। সেখানে অন্য কোনো ব্যাখ্যা দেয়ার সুযোগ নেই।
(আল কাওয়ায়েদুল হুসনা ফী তাবীলির রুইয়া : শায়খ আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ আস সাদহান)
বাস্তব জীবনে ঘটবে এমন কিছু আকৃতি-প্রকৃতি আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার বান্দাদের দেখিয়ে থাকেন। এ দেখানোটা স্বপ্নে কখনো সরাসরি আবার কখনো ইঙ্গিত বা প্রতীকি বার্তায় হয়ে থাকে।
যেমন আমরা বলে থাকি, স্বপ্নে কাপড় বা জামা দেখার মানে হল দীন-ধর্ম। যদি কাপড় ভাল ও বড় দেখা হয়, তবে তা দীন-ধর্ম, তাকওয়া-পরহেজগারীর উন্নতি নির্দেশ করে। আর তা যদি মলিন, সংকীর্ণ, ছিড়া-ফাটা দেখা হয় তবে তা দীন-ধর্মের অবনতি বলে মনে করা হয়ে থাকে।
দীন -ধর্ম যেমন মানুষের আত্মাকে রক্ষা করে, পোশাক তেমনি মানুষের শরীর-স্বাস্থ্যকে হেফাজত করে। এ জন্য পোশাক আর ধর্ম একে অপরের ইঙ্গিত বহন করে।
স্বপ্নে আগুন দেখা মানে ফিতনা বা বিশৃঙ্খলা আর অরাজকতা নির্দেশ করে। কারণ আগুন দৃশ্যমান ধন-সম্পদ জ্বালিয়ে দেয় আর ফিতনা-অরাজকতা মানুষের অন্তর জ্বালায়। মানুষকে অস্থির করে তোলে।
নক্ষত্র বা তারকা স্বপ্নে দেখলে তার অর্থ হয় আলেম- উলামা, জ্ঞানী-গুণি। কারণ আলেম-উলামা ও জ্ঞানীরা মানুষকে পথ প্রদর্শন করে, আলো দেয়।
স্বপ্নে ইহুদী দেখার অর্থ হল দীন-ধর্মের বিষয়ে অবাধ্যতা আর খৃষ্টান দেখার অর্থ হল, দীন-ধর্মে বিদআত প্রবর্তন ও ধর্মীয় বিষয়ে পথভ্রষ্টতা।
স্বপ্নে লৌহ দেখার অর্থ হল, শক্তি।
আর দাড়ি-পাল্লা দেখার অর্থ হল, ন্যায়পরায়ণতা।
স্বপ্নে সাপ দেখার অর্থ হল, শত্রু ।
স্বপ্নে নীচে পড়ে যেতে দেখার অর্থ হল, অবনতি আর উর্দ্ধে উঠতে দেখার অর্থ হল, উন্নতি।
কোনো অসুস্থ ব্যক্তি যদি স্বপ্নে দেখে সে চুপচাপ ঘর থেকে বের হয়ে যাচ্ছে, তাহলে এর অর্থ হবে মৃত্যু। আর যদি সে স্বপ্ন দেখে কথা বলতে বলতে সে ঘর থেকে বের হয়ে যাচ্ছে, তাহলে এর অর্থ হবে জীবন ও সুস্থতা।
যদি কোনো ব্যক্তি স্বপ্ন দেখে যে, সে মৃত্যু বরণ করছে, তাহলে এর অর্থ হবে সে পাপাচার থেকে তওবা করবে। কেননা মৃত্যু মানে হল, আল্লাহর দিকে ফিরে যাওয়া। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন :
অত:পর তাদেরকে ফিরিয়ে নেয়া হবে তাদের সত্যিকার প্রভূ আল্লাহর কাছে। (সূরা আল আনআম : ৬২)
এখানে ফিরিয়ে নেয়া মানে মৃত্যু। আর তাওবা অর্থ ফিরে আসা।
ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু হাবেছ ইবনে সাআদ আত তাঈকে বিচারক হিসাবে নিয়োগ দিলেন। একদিন হাবেছ ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বললেন, হে আমীরুল মুমিনীন! আমি স্বপ্নে দেখলাম, চাঁদ আর সূর্য যুদ্ধ করছে। আর নক্ষত্রগুলো দু পক্ষে বিভক্ত হয়ে গেছে।
ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এ কথা শুনে জিজ্ঞেস করলেন, তখন তুমি কার পক্ষে ছিলে? চাঁদের পক্ষে না সূর্যের?
তিনি উত্তরে বললেন, আমি চাঁদের পক্ষে ছিলাম।
ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে বললেন, তাহলে আমি তোমার নিয়োগ প্রত্যাহার করে নিলাম। কারণ, তুমি একটি মুছে যাওয়া শক্তির পক্ষে ছিলে।
আল্লাহ তাআলা বলেন :
আর আমি রাত ও দিনকে করেছি দুটো নিদর্শন। অত:পর মুছে দিয়েছি রাতের নিদর্শন (চাঁদকে) আর দিনের নিদর্শন (সূর্য্য) কে করেছি আলোকময়। (সূরা আল ইসরা : আয়াত ১২)
আর তুমি একটি বিভ্রান্তিতে নিহত হবে। পরে দেখা গেল সত্যিই সে সিফফীনের যুদ্ধে সিরিয়াবাসীদের দলে থেকে নিহত হল।
(সুত্র : আল ইসাবাহ ফী তামীযিস সাহাবাহ : ইবনে হাজার রহ.)
স্বপ্নে বাগান দেখার অর্থ হল কাজ ও চাকুরী। আর বাগান পুড়ে যাওয়া দেখলে অর্থ হবে বেকারত্ব ও পতন।
যে স্বপ্নের ফলাফল ভাল তা বাস্তবায়নে দেরী হয়। আর যার ফলাফল খারাপ তার বাস্তবায়নে কোন দেরী হয় না।
দেখুন, ইউসুফ আলাইহিস সালাম স্বপ্নে দেখেছিলেন, চন্দ্র, সূর্য আর এগারটি নক্ষত্র তাকে সিজদা করেছে।
তার এ স্বপ্নটার বাস্তবায়ন অনেক বছর পর হয়েছে।
ইবেন সীরিন রহ. দরবারে একটি শিশুর মৃত্যুর কাহিনীতে আমরা দেখলাম, খারাপ স্বপ্নের বাস্তবায়ন তাড়াতাড়ি হয়ে গেল।
মক্কী জীবনে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবার স্বপ্ন দেখলেন, যে আবু জাহল জান্নাতে ঘোরা-ফিরা করছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভাবলেন, তাহলে আবু জাহল ইসলাম গ্রহণ করবে। কিন্তু করল না। মক্কা বিজয়ের পর যখন আবু জাহলের ছেলে ইকরামা ইসলাম গ্রহণ করলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, এটাই ছিল তার সেই স্বপ্নেরই বাস্তবায়ন।
(আল কাওয়ায়েদুল হুসনা ফী তাবীলির রুইয়া : শায়খ আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ আস সাদহান)
ইমাম মালেক রহ. কে প্রশ্ন করা হয়েছিল, সকলে কি স্বপ্নের তাবীর বা ব্যাখ্যা করবে?
তিনি বলেছিলেন, নবুওয়তের একটি বিষয় নিয়ে কি তামাশা করা যায়?
যে ব্যক্তি সঠিক ও সুন্দরভাবে স্বপ্নের ব্যাখ্যা দিতে জানবে, শুধু সে-ই ব্যাখ্যা দেবে। যদি স্বপ্নটা ভাল হয়, তাহলে বলে দেবে। আর যদি স্বপ্নটা খারাপ হয়, তাহলে ভাল ব্যাখ্যা দেবে। তা সম্ভব না হলে চুপ থাকবে।
(মুসান্নাফ ইবনু আবি শাইবা)
সৌদী আরবের প্রখ্যাত আলেম, ও আল-কোরআনের তাফসীরবিদ, শায়খ আব্দুর রহমান আস সাদী রহ. বলতেন : স্বপ্নের তাবীর বা ব্যাখ্যা উলূমুশ শরইয়্যার একটি বিষয়। এটি শিক্ষা করা ও শিক্ষা দান করার কারণে আল্লাহ তাআলা সওয়াব ও প্রতিদান দেবেন।
(তাইসীরুল কারীম আর রহমান ফী তাফসীরিল কালামিল মান্নান)
কোরআন ও সুন্নাহর দৃষ্টিকোণে স্বপ্ন ও তার ব্যাখ্যা
কোরআন ও সুন্নাহর দৃষ্টিকোণে স্বপ্ন ও তার ব্যাখ্যা
এ বইটি সংকলনে যে সকল গ্রন্থের সাহায্য নেয়া হয়েছে
أهم المراجع لهذا الكتاب :
1- الرؤيا وما يتعلق بها – للشيخ عبد الله بن جار الله الجار الله
2- تفسير الأحلام - للإمام محمد بن سيرين رحمه الله
3- القواعد الحسنى في تأويل الرؤى – للشيخ عبد الله بن محمد السدحان
4- مقدمة ابن خلدون
5- إعلام الموقعين - للإمام ابن القيم رحمه الله
6- تيسير الكريم الرحمن في تفسير كلام المنان للشيخ عبد الرحمن السعدي – رحمه الله
সূচীপত্র
১- ভূমিকা২- স্বপ্ন সম্পর্কে কিছু কথা
৩- স্বপ্ন দেখলে করণীয়
৪- মিথ্যা স্বপ্নের কথা বলা অন্যায়
৫- ভাল স্বপ্ন আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে
৬- কয়েকটি ভাল স্বপ্নের উদাহরণ
৭- স্বপ্ন দেখলে যা করতে হবে
৮- খারাপ স্বপ্ন দেখলে কি করবে?
৯- কে স্বপ্নের ব্যাখ্যা দেবে?
১০- স্বপ্নের ব্যাখ্যা যেভাবে করা হয় তা-ই সংঘটিত হয়
১১- তাবীরের বিভিন্ন প্রকার
১২- কোরআনের আয়াত দিয়ে স্বপ্ন ব্যাখ্যা করার কয়েকটি দৃষ্টান্ত
১৩- হাদীস দিয়ে স্বপ্নের ব্যাখ্যার কয়েকটি দৃষ্টান্ত
১৪- বিপরীত অর্থ গ্রহণ নীতিতে স্বপ্ন ব্যাখ্যার দৃষ্টান্ত
১৫- কয়েকটি প্রসিদ্ধ স্বপ্ন ও তার ব্যাখ্যার বিবরণ
১৬- মৃত ব্যক্তিকে স্বপ্নে দেখা
১৭- স্বপ্নের ব্যাখ্যা সম্পর্কে ইমাম ইবনুল কায়্যিম রহ. এর কিছু বক্তব্য
১৮- ভাল স্বপ্নের বাস্তবায়ন দেরীতে হয়
১৯- শেষ কথা
ভূমিকা
যার শুভাগমনে আঁধার ঘুচে মানবতার পূর্ব দিগন্তে এক নতুন সূর্যের উদয় হল। মানবতার মুক্তির জন্য মানুষেরই হাতে তায়েফের মাটি যার রক্তে রঞ্জিত হল; সেই নবী রাহমাতুল্লিল আলামীনের প্রতি আমার বিরহী আত্মার সালাত ও সালাম। মদীনা স্বপ্নে বিভোর আমার হৃদয়ের প্রেম-পয়গাম।
মানুষ স্বপ্ন দেখে। ভাল স্বপ্ন দেখে, বলে সুন্দর স্বপ্ন দেখেছি। দেখে খারাপ স্বপ্ন, বলে ভয়ানক এক স্বপ্ন দেখেছি। আবার কখনো বলে একটি বাজে স্বপ্ন দেখেছি।
আসলে স্বপ্ন কি? এ নিয়ে গবেষণা কম হয়নি, মানব সভ্যতার শুরু থেকে আজ পর্যন্ত। কেউ বলেছেন, এটা একটি মানসিক চাপ থেকে আসে। কেউ বলেছেন, শারীরিক বিভিন্ন ভারসাম্যের ব্যাঘাত ঘটলে এটা দেখা যায়, সে অনুযায়ী। কেউ বলেছেন, সারাদিন মনে যা কল্পনা করে তার প্রভাবে রাতে স্বপ্ন দেখে।
স্বপ্ন আধুনিক মনোবিজ্ঞানেরও একটি বিষয়।
আবার অনেকে স্বপ্ন না দেখেও বলে এটা আমার স্বপ্ন ছিল। অথবা আমার জীবনের স্বপ্ন এ রকম ছিল না। মানে, মনের আশা, পরিকল্পনা। তাই স্বপ্নের অর্থ এখানে রূপক।
আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে মানুষের জন্য পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা হিসাবে এসেছে ইসলাম। এই ইসলাম মানুষের স্বপ্নের ব্যাপারেও উদাসীন থাকেনি। স্বপ্ন সম্পর্কে তার একটি নিজস্ব বক্তব্য আছে। তার এ বক্তব্য কোনো দার্শনিক বা বিজ্ঞানীর বক্তব্যের সাথে মিলে যাবে, এমনটি জরুরী নয়। মিলে গেলেও কোনো দোষ নেই।
স্বপ্ন ও তার ব্যাখ্যা বিশেষজ্ঞ ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে সীরিন রহ. বলেছেন :
الرؤيا ثلاث : حديث النفس ، وتخويف الشيطان ، وبشرى من الله .
(رواه البخاري في التعبير)
স্বপ্ন তিন ধরনের হয়ে থাকে। মনের কল্পনা ও অভিজ্ঞতা। শয়তানের ভয় প্রদর্শন ও কুমন্ত্রণা ও আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে সুসংবাদ। (বর্ণনায় : বুখারী)ইসলামে স্বপ্নের একটি গুরুত্ব আছে। নি:সন্দেহে এটা ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
এক চোখা বস্তুবাদীরা বলে থাকে, মানুষ যখন ঘুমায়, তখন তার মস্তিস্ক তার স্মৃতিগুলো নাড়াচাড়া করে। যাচাই-বাছাই করে, কিছু পুনর্বিন্যাস করে। তারপর স্মৃতির ফাইলে যত্ন করে রেখে দেয়। এই কাজটা সে করে মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন। মস্তিস্কের এই কাজ-কর্মই আমাদের কাছে ধরা দেয় স্বপ্ন হিসেবে।”
কথাটা শুনতে মন্দ নয়। তবে এটি স্বপ্নের একটি প্রকার মাত্র। বাকী দু প্রকার কি আপনাদের মস্তিস্কে ধরা পড়ে? ইসলাম তো বলে স্বপ্ন তিন প্রকার।
হাদীসে দেখা যায়, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজরের নামাজের পর মুসল্লীদের দিকে মুখ করে বসতেন। প্রায়ই জিজ্ঞেস করতেন, গত রাতে তোমাদের কেউ কি কোনো স্বপ্ন দেখেছ?
আল-কোরআনে নবী ইবরাহীম আলাইহিস সালামের স্বপ্ন, ইউসুফ আলাইহিস সালামের স্বপ্নের কথা উল্লেখ আছে। ইউসূফ আলাইহিস সালামের সময়ে মিশরের বাদশার স্বপ্ন, তাঁর জেলখানার সঙ্গীদের স্বপ্ন ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্বপ্ন নিয়ে তো আল কোরআনে বিস্তর আলোচনা হয়েছে।
মিশরের বাদশা তার সভাসদের স্বপ্ন বিশেষজ্ঞদেরকে নিজ স্বপ্ন সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিল। জানতে চেয়েছিল, সেই স্বপ্নের ব্যাখ্যা। তারা বলেছিল, এটা এলোমেলো অলীক স্বপ্ন। তারা এর ব্যাখ্যা দিতে পারল না।
নবী ইউসুফ আলাইহিস সালাম এর সুন্দর ব্যাখ্যা দিলেন। নিজের পক্ষ থেকে নয়। আল্লাহ তাআলার শিখানো ইলম থেকে। (সূরা ইউসূফের ৩৬ থেকে ৪৯ আয়াত দ্রষ্টব্য)
আমি বক্ষমান বইতে কোরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে স্বপ্ন ও তার ব্যাখ্যার কিছু মৌলিক ধারনা দেয়ার চেষ্টা করব। তবে কি স্বপ্ন দেখলে কি হয়, তা এখানে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হবে না । এটা নির্দিষ্ট করে আলোচনা করা সম্ভবও নয়। মানে এটা বাজারে প্রচলিত কোনো খাবনামা নয়। স্বপ্ন সম্পর্কে মৌলিক কিছু আলোচনা ও একটি ধারনা দেয়ার প্রয়াস মাত্র।
স্বপ্ন দ্রষ্টার অবস্থা ভেদে একই স্বপ্নের ব্যাখ্যা বিভিন্ন রকম হতে পারে।
স্বপ্ন তিন প্রকার:
এক. মনে মনে যা সারাদিন কল্পনা করে তার প্রভাবে ঘুমের মধ্যে ভাল-মন্দ কিছু দেখা। এগুলো আরবীতে আদগাছু আহলাম বা অলীক স্বপ্ন বলে।
দুই. শয়তানের কুমন্ত্রণা ও প্রভাবে স্বপ্ন দেখা। সাধারণত এ সকল স্বপ্ন ভীতিকর হয়ে থাকে।
তিন. আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে ইশারা, ইঙ্গিত হিসাবে স্বপ্ন দেখা।
বিষয়টি উপরে বর্ণিত হাদীসেও উল্লেখ হয়েছে।
আল্লাহ তাআলা আমাদের এ ক্ষুদ্র প্রচেষ্টাটুকু কবুল করুন। বইটিকে পাঠকদের কল্যাণে গ্রহণ করুন। আর আমরা আমাদের সকল পাওনা ও প্রাপ্তি তার কাছেই আশা করি। তিনি মুহসিনদের সৎকর্ম ব্যর্থ হতে দেন না।
আব্দুল্লাহ শহীদ আ: রহমান
১৭ রজব ১৪৩১ হিজরী
৩০ জুন ২০১০ ইং
স্বপ্ন সম্পর্কে কিছু কথা
হাদীসে এসেছে :عن أبي هريرة رضي الله عنه قال: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: "لم يبق من النبوة إلا المبشرات" قالوا: وما المبشرات؟ قال: "الرؤيا الصالحة" رواه البخاري.
في كتاب التعبير (باب المبشرات).
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, নবুওয়তে আর কিছু অবশিষ্ট নেই, বাকী আছে কেবল মুবাশশিরাত (সুসংবাদ)। সাহাবীগণ প্রশ্ন করলেন, মুবাশশিরাত কী? তিনি বললেন: ভাল স্বপ্ন। (বর্ণনায় : সহীহ বুখারী)এ হাদীস থেকে আমরা যা জানতে পারলাম:
এক. স্বপ্ন নবুওয়তের একটি অংশ। নবী ও রাসূলদের কাছে জিবরীল যেমন সরাসরি ওহী নিয়ে আসতেন, তেমনি স্বপ্নের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার নবী ও রাসূলদের কাছে প্রত্যাদেশ পাঠাতেন।
দুই. মুসলিম জীবনে স্বপ্ন শুধু একটি স্বপ্ন নয়। এটা হতে পারে মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে স্বপ্নদ্রষ্টার প্রতি একটি বার্তা।
তিন. আল মুবাশশিরাত অর্থ সুসংবাদ। সঠিক স্বপ্ন যা আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে হয়ে থাকে, তা স্বপ্ন দ্রষ্টার জন্য একটি সুসংবাদ।
হাদীসে এসেছে
وعن أبي هريرة رضي الله عنه أن النبي صلى الله عليه وسلم قال: "إذا اقترب الزمان لم تكد رؤيا المؤمن تكذب، ورؤيا المؤمن جزء من ستة وأربعين جزءً من النبوة" متفق عليه،
وفي رواية: "أصدقكم رؤيا أصدقكم حديثاً".
الحديث رواه البخاري في التعبير (باب القيد في المنام) ومسلم في أول كتاب الرؤيا.
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, দিন যত যেতে থাকবে, কিয়ামত নিকটে হবে, মুমিনদের স্বপ্নগুলো তত মিথ্যা হতে দূরে থাকবে। ঈমানদারের স্বপ্ন হল নবুওয়তের ছিচল্লিশ ভাগের একভাগ। (বর্ণনায় : বুখারী ও মুসলিম)অন্য একটি বর্ণনায় এসেছে, তোমাদের মধ্যে যে লোক যত বেশী সত্যবাদি হবে তার স্বপ্ন তত বেশী সত্যে পরিণত হবে।
এ হাদীস থেকে আমরা জানতে পারলাম :
এক. মুমিনের জীবনে স্বপ্ন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেয়ামত যত নিকটে আসবে ঈমানদারের স্বপ্ন তত বেশী সত্য হতে থাকবে।
দুই. ঈমানদারের জীবনে স্বপ্ন এত গুরুত্ব রাখে যে, তাকে নবুওয়তের ছিচল্লিশ ভাগের এক ভাগ বলা হয়েছে।
তিন. মানুষ যত বেশী সততা ও সত্যবাদিতার চর্চা করবে সে ততবেশী সত্য স্বপ্ন দেখতে পাবে।
চার. যদি কেউ চায় সে সত্য স্বপ্ন দেখেব, সে যেন সৎ, সততা ও সত্যবাদিতার সাথে জীবন যাপন করে।
হাদীসে এসেছে
وعن أبي هريرة رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : من رآني في المنام فسيراني في اليقظة -أو كأنما رآني في اليقظة- لا يتمثل الشيطان بي" متفق عليه.
الحديث رواه البخاري في التعبير (باب من رأى النبي صلى الله عليه وسلم في المنام) ومسلم في الرؤيا (باب قول النبي صلى الله عليه وسلم من رآني في المنام فقد رآني).
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: যে নিদ্রার মধ্যে আমাকে দেখে সে যেন বাস্তবেই আমাকে দেখেছে। কারণ, শয়তান আমার আকৃতি ধারণ করতে পারে না। (বুখারী ও মুসলিম)এ হাদীস থেকে আমরা জানতে পারলাম :
এক. যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে স্বপ্নে দেখবে সে সত্যিকারভাবেই তাকে দেখেছে।
দুই. শয়তানের কুমন্ত্রণা ও প্রভাবে মানুষ স্বপ্ন দেখে থাকে। শয়তান মানুষকে বিভিন্ন স্বপ্ন দেখাতে পারে। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আকৃতি ধরে ধোকা দিতে পারে না।
তিন. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে স্বপ্নে দেখা একটি সৌভাগ্য। খুব কম ঈমানদারই আছেন, যারা এ সৌভাগ্যটি অর্জন করেছেন।
স্বপ্ন দেখলে করণীয়
হাদীসে এসেছেوعن أبي سعيد الخدري رضي الله عنه أنه سمع النبي صلى الله عليه وسلم يقول: "إذا رأى أحدكم رؤيا يحبها فإنما هي من الله تعالى فليحمد الله عليها وليحدث بها"،
وفي رواية: "فلا يحدث بها إلا من يحب، وإذا رأى غير ذلك مما يكره فإنما هي من الشيطان، فليستعذ من شرها ولا يذكرها لأحد، فإنها لا تضره" متفق عليه.
الحديث رواه البخاري في كتاب التعبير (باب الرؤيا الصالحة من الله) ومسلم في أول كتاب الرؤيا.
আবু সায়ীদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন: তোমাদের কেউ যদি এমন স্বপ্ন দেখে যা সে পছন্দ করে, তাহলে জানবে যে তা আল্লাহর পক্ষ থেকে দেখানো হয়েছে। তখন সে যেন আল্লাহ তাআলার প্রশংসা করে ও অন্যদের কাছে বর্ণনা করে।অন্য এক বর্ণনায় এসেছে,
এ স্বপ্নের কথা শুধু তাকে বলবে, যে তাকে ভালোবাসে।
আর যদি স্বপ্ন অপছন্দের হয়, তাহলে বুঝে নেবে এটা শয়তানের পক্ষ থেকে হয়েছে। তখন সে শয়তানের ক্ষতি থেকে আল্লাহ তাআলার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করবে আর এ স্বপ্নের কথা কারো কাছে বলবে না। কারণ খারাপ স্বপ্ন তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। (বর্ণনায় : বুখারী ও মুসলিম)
এ হাদীস থেকে আমরা জানতে পারলাম :
এক. যা কিছু ভাল স্বপ্ন, সেটা আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে হয়ে থাকে। আর খারাপ স্বপ্ন শয়তানের কুমন্ত্রণা ও প্রভাবের কারণে দেখে থাকে।
দুই. ভাল স্বপ্ন দেখলে এমন ব্যক্তির কাছে বলা যাবে, যে তাকে ভালোবাসে। যে ভালোবাসে না, এমন ব্যক্তির কাছে কোনো স্বপ্নের কথা বলা যাবে না। হতে পারে সে ভাল স্বপ্নটির একটি খারাপ ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়ে দেবে।
তিন. ভাল স্বপ্ন দেখলে আলহামদুলিল্লাহ বলে আল্লাহ তাআলার প্রশংসা করতে হবে।
চার. খারাপ স্বপ্ন দেখলে কারো কাছে বলা উচিত নয়।
পাঁচ. খারাপ স্বপ্ন দেখলে নিদ্রা থেকে জাগ্রত হওয়া মাত্র আল্লাহ তাআলার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে বলতে হবে আউযুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজীম।
হাদীসে এসেছে :
عن أبي قتادة رضي الله عنه قال: قال النبي صلى الله عليه وسلم "الرؤيا الصالحة" وفي رواية "الرؤيا الحسنة من الله والحلم من الشيطان، فمن رأى شيئاً يكرهه فلينفث عن شماله ثلاثاً وليتعوذ من الشيطان، فإنها لا تضره" متفق عليه.
رواه البخاري في التعبير (باب الرؤيا الصالحة جزء من ستة وأربعين جزءاً) وأبواب أخرى وبدء الخلق (باب صفة إبليس وجنوده) ومسلم في أول كتاب الرؤيا.
আবু কাতাদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: সুন্দর স্বপ্ন আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে হয়ে থাকে আর খারাপ স্বপ্ন শয়তানের পক্ষ থেকে। কেউ স্বপ্নে খারাপ কিছু দেখলে বাম পাশে তিনবার থুথু নিক্ষেপ করবে আর শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করবে। ( এভাবে বলবে, আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজীম) তাহলে এ স্বপ্ন তাকে ক্ষতি করতে পারবে না। (বর্ণনায় : বুখারী ও মুসলিম)এ হাদীস থেকে আমরা জানতে পারলাম :
এক. ভাল স্বপ্ন আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে হয়ে থাকে।
দুই. খারাপ স্বপ্ন শয়তানের পক্ষ থেকে এসে থাকে।
তিন. খারাপ স্বপ্ন দেখলে সাথে সাথে তিনবার বাম দিকে থুথু ফেলে আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানের রাজীম বলতে হবে। তবে সত্যিকার থুথু ফেলবে না। মানে মুখ থেকে পানি নির্গত হবে না। শুধু আওয়াজ করবে। কেননা হাদীসে নাফাস শব্দ এসেছে। যার অর্থ এমন হাল্কা থুথু যাতে পানি বা শ্লেষ্মা নেই।
চার. এই আমলটা করলে খারাপ স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে না।
হাদীসে এসেছে
عن جابر رضي الله عنه عن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: "إذا رأى أحدكم الرؤيا يكرهها فليبصق عن يساره ثلاثاً، وليستعذ بالله من الشيطان ثلاثاً، وليتحول عن جنبه الذي كان عليه" رواه مسلم.
في أول كتاب الرؤيا.
জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: যদি তোমাদের কেউ এমন স্বপ্ন দেখে যা সে পছন্দ করে না, তাহলে তিনবার বাম দিকে থুথু দেবে। আর তিন বার শয়তান থেকে আল্লাহ তাআলার কাছে আশ্রয় চাবে। (আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজীম বলবে) আর যে পার্শ্বে শুয়েছিল, তা পরিবর্তন করবে। (অর্থাৎ পার্শ্ব পরিবর্তন করে শুবে) (বর্ণনায় : মুসলিম)হাদীস থেকে আমরা শিখতে পারলাম :
এক. খারাপ স্বপ্ন দেখলে তিনবার বাম দিকে থুথু নিক্ষেপ করা ও তিনবার আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজীম বলা তারপর পার্শ্ব পরিবর্তন করে শোয়া সুন্নাত।
দুই. পার্শ্ব পরিবর্তন করা মানে হল, ডান কাতে শুয়ে থাকলে বাম দিকে ফিরবে। তেমনি বাম কাতে শুয়ে থাকলে ডানে ফিরবে।
মিথ্যা স্বপ্নের কথা বলা অন্যায়
হাদীসে এসেছেعن أبي الأسقع واثلة بن الأسقع رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: "إن من أعظم الفرى أن يدعي الرجل إلى غير أبيه أو يرى عينه ما لم تر، أو يقول على رسول الله صلى الله عليه وسلم ما لم يقل" . رواه البخاري.
رواه البخاري في المناقب (الأنبياء)، (باب نسبة اليمن إلى إسماعيل).
আবুল আছকা ওয়াসেলা ইবনুল আছকা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: সবচেয়ে বড় মিথ্যা হল, কোনো ব্যক্তি তার নিজের পিতা ব্যতীত অন্যের সন্তান বলে দাবী করা। যে স্বপ্ন সে দেখেনি তা বর্ণনা করা আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা বলেননি তা তাঁর ব্যপারে বলা। (বর্ণনায় : সহীহ বুখারী)হাদীস থেকে আমরা শিখতে পারলাম:
সবচয়ে বড় মিথ্যা হল তিনটি,
(ক) নিজের পিতা ব্যতীত অন্যকে পিতা বলে দাবী করা।
(খ) যে স্বপ্ন দেখেনি তা বানিয়ে বলা। অর্থ্যাৎ মিথ্যা স্বপ্ন বর্ণনা করা।
(গ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেননি, তা তার কথা বলে চালিয়ে দেয়া।
যারা মিথ্যা স্বপ্ন বর্ণনা করে আর মনে করে, এতে এমন কি ক্ষতি? তাদের জন্য এ হাদীস একটি সাবধান বাণী। এটাকে ছোট পাপ বলে দেখার কোনো অবকাশ নেই।
সব ধরনের মিথ্যা-ই অন্যায়। এমনকি হাসি ঠাট্টা করে মিথ্যা বলাও পাপ। তবে মিথ্যার মধ্যে এ তিনটি হল খুবই মারাত্মক।
যে পিতা নয় তাকে পিতা বলে লেখা বা ঘোষণা দেয়া এমন অন্যায় যার মাধ্যমে পরিবার প্রথা ও বংশের উপর আঘাত আসে। আর মাতা-পিতার অবদানকে অস্বীকার করা হয়।
কেউ মিথ্যা স্বপ্নের বর্ণনা দিলে তার ব্যাখ্যা করা উচিত নয়। আর যদি ব্যাখ্যা করা হয়, তাহলে তা সংঘটিত হয়ে যায়।
উদাহরণ :
এক ব্যক্তি ইমাম ইবনে সীরিন রহ. এর কাছে এসে বলল, আমি স্বপ্নে দেখলাম, আমার হাতে যেন একটি কাঁচের পেয়ালা। সেটি ভেঙ্গে গেল কিন্তু তার পানি রয়ে গেছে।
ইবনে সীরিন রহ. বললেন, তুমি কিন্তু এ রকম কোনো স্বপ্ন দেখোনি। লোকটি রাগ হয়ে বলল, সুবহানাল্লাহ! (আমি মিথ্যে বলিনি)
ইবনে সীরিন রহ. বললেন, যদি স্বপ্ন মিথ্যা হয়, তাহলে আমাকে দোষারোপ করতে পারবে না।
আর এ স্বপ্নের ব্যাখ্যা হল, তোমার স্ত্রী মারা যাবে আর পেটের বাচ্চাটি জীবিত থাকবে।
এ কথা শোনার পর লোকটি বলল, আল্লাহর কসম! আমি আসলে কোনো স্বপ্ন দেখিনি।
এর কিছুক্ষণ পর তার একটি সন্তান ভূমিষ্ট হয়েছে এবং তাতে আর স্ত্রী মারা গেছে।
(ইমাম জাহাবী রহ. প্রণীত সীয়ার আল-আলাম আন নুবালা)
আরেকটি উদাহরণ:
এক ব্যক্তি ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর কাছে এসে বলল, আমি স্বপ্নে দেখেছি, জমিন তরু-তাজা সবুজ হয়েছে। এরপর আবার শুকিয়ে গেছে। আবার সবুজ-তরুতাজা হয়েছে, আবার শুকিয়ে গেছে।
ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, এর ব্যাখা হল তুমি প্রথমে মুমিন থাকবে পরে কাফের হয়ে যাবে। আমার মুমিন হবে, এরপর আবার কাফের হয়ে যাবে আর কাফের অবস্থায় তুমি মৃত্যু বরণ করবে।
এ কথা শুনে লোকটি বলল, আসলে আমি এ রকম কোনো স্বপ্ন দেখিনি। ওমর বাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন :
যে বিষয়ে তুমি প্রশ্ন করেছিলে তার সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে।
তোমার বিষয়ে ফয়সালা হয়ে গেছে যেমন ফয়সালা হয়েছিল, ইউসূফ আলাইহিস সালামের সাথীর ব্যাপারে।
(মুসান্নাফ আব্দুর রাযযাক, বর্ণনার সনদ সহীহ)
তাই কখনো কাল্পনিক বা মিথ্যা স্বপ্ন বলা ও তার ব্যাখ্যা জানতে চাওয়া ঠিক নয়।
ভাল স্বপ্ন আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে
হাদীসে এসেছেعن أبي قتادة رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: "الرؤيا الصالحة من الله، والحلم من الشيطان، فإذا رأى أحدكم ما يحب فلا يحدث به إلا من يحب. وإذا رأى ما يكره فليتعوذ بالله من الشيطان، ولينفث عن شماله ثلاثاً، ولا يحدث بها أحداً فإنها لن تضره" متفق عليه.
আবু কাতাদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ভাল ও সুন্দর স্বপ্ন আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে হয়ে থাকে আর খারাপ স্বপ্ন শয়তানের পক্ষ থেকে। যদি কেউ ভাল স্বপ্ন দেখে তাহলে তা শুধু তাকেই বলবে যে তাকে ভালোবাসে। অন্য কাউকে বলবে না।আর যদি স্বপ্নে খারাপ কিছু দেখে তাহলে শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করবে। ( বলবে, আউযুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজীম) এবং বাম দিকে তিনবার থুথু নিক্ষেপ করবে। আর কারো কাছে স্বপ্নের কথা বলবে না। মনে রাখবে এ স্বপ্ন তার ক্ষতি করতে পারবে না। (বর্ণনায় : বুখারী ও মুসলিম)
এ হাদীস থেকে আমরা জানতে পারলাম :
এক. ভাল স্বপ্ন আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে হয়ে থাকে।
দুই. খারাপ স্বপ্ন শয়তানের পক্ষ থেকে এসে থাকে।
তিন. খারাপ স্বপ্ন দেখলে সাথে সাথে তিনবার বাম দিকে থুথু ফেলে আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজীম বলতে হবে। তবে সত্যিকার থুথু ফেলবে না। মানে মুখ থেকে পানি নির্গত হবে না। শুধু আওয়ায করবে। কেননা হাদীসে নাফাস শব্দ এসেছে। যার অর্থ এমন হাল্কা থুথু যাতে পানি বা শ্লেষ্মা নেই।
চার. এই আমলটুকু করলে খারাপ স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে না।
পাঁচ. খারাপ স্বপ্ন দেখলে কারো কাছে তা বর্ণনা করবে না।
ছয়. ভাল স্বপ্ন দেখলে তার কাছেই বর্ণনা করবে যে তাকে ভালোবাসে। শত্রু ভাবাপন্ন বা হিংসুক ধরনের কারো কাছে ভাল স্বপ্নও বর্ণনা করতে নেই। কারণ, হতে পারে ভাল স্বপ্নটির একটি খারাপ ব্যাখ্যা সে শুনিয়ে দেবে। ফলে অস্থিরতা, দু:চিন্তা ও উদ্বেগ বেড়ে যাবে।
দেখুন ইউসুফ আলাইহিস সালাম স্বপ্ন দেখেছিলেন:
যখন ইউসুফ তার পিতাকে বলল, হে আমার পিতা, আমি দেখেছি এগারটি নক্ষত্র, সূর্য ও চাঁদকে, আমি দেখেছি তাদেরকে আমার প্রতি সিজদাবনত অবস্থায়।’সে বলল, হে আমার পুত্র, তুমি তোমার ভাইদের নিকট তোমার স্বপ্নের বর্ণনা দিও না, তাহলে তারা তোমার বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র করবে। নিশ্চয় শয়তান মানুষের প্রকাশ্য দুশমন।’(সূরা ইউসুফ, আয়াত ৪-৫)
এ আয়াতে আমরা দেখলাম ইউসুফ আলাইহিস সালাম স্বপ্ন দেখে তার পিতাকে বর্ণনা করলেন। আর পিতা আল্লাহ তাআলার নবী ইয়াকুব আলাইহিস সালাম তাকে স্বপ্নের কথা নিজ ভাইদের বলতে নিষেধ করলেন। কারণ, ভাইয়েরা তাকে ভালোবাসত না। বরং হিংসা করত।
কয়েকটি ভাল স্বপ্নের উদাহরণ
আল্লাহ তাআলা বলেন:যখন আল্লাহ তোমাকে স্বপ্নের মধ্যে তাদেরকে স্বল্প সংখ্যায় দেখিয়েছিলেন। আর তোমাকে যদি তিনি তাদেরকে বেশি সংখ্যায় দেখাতেন, তাহলে অবশ্যই তোমরা সাহসহারা হয়ে পড়তে এবং বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক করতে। কিন্তু আল্লাহ নিরাপত্তা দিয়েছেন। নিশ্চয় অন্তরে যা আছে তিনি সে সব বিষয়ে অবগত। (সূরা আনফাল : ৪৩)
বদর যুদ্ধের প্রাক্কালে আল্লাহ তাআলা তার রাসূলকে বিজয় লাভের সুন্দর স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। তাকে শত্রু বাহিনীর সংখ্যা অনেক কম করে দেখিয়েছেন। বেশি করে দেখালে তিনি হয়ত ভয় পেয়ে যেতেন।
তাই এটি একটি ভাল স্বপ্ন।
এভাবে আল্লাহ তাআলা স্বপ্নের মাধ্যমে তার নবী ও রাসূলদের কাছে ওহী প্রেরণ করতেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন :
অবশ্যই আল্লাহ তাঁর রাসূলকে স্বপ্নটি যথাযথভাবে সত্যে পরিণত করে দিয়েছেন। তোমরা ইনশাআল্লাহ নিরাপদে তোমাদের মাথা মুণ্ডন করে এবং চুল ছেঁটে নির্ভয়ে মসজিদুল হারামে অবশ্যই প্রবেশ করবে। অতঃপর আল্লাহ জেনেছেন যা তোমরা জানতে না। সুতরাং এ ছাড়াও তিনি দিলেন এক নিকটবর্তী বিজয়। (সূরা ফাতাহ : ২৭)
আয়াত থেকে আমরা জানতে পারলাম, আল্লাহ তাআলার তাঁর রাসূলকে মক্কা জয় করার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। আর সে স্বপ্ন আল্লাহ তাআলাই বাস্তবায়ন করেছিলেন।
এমনিভাবে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আল-কোরআনে মিশরের বাদশার স্বপ্ন বর্ণনা করেছেন। সে স্বপ্নের সুন্দর ব্যাখ্যা করেছিলেন, নবী ইউসুফ আলাইহিস সালাম। বিষয়টি আল কোরআনের সূরা ইউসুফের ৪৩ আয়াত থেকে ৫৫ আয়াত পর্যন্ত বর্ণিত হয়েছে এবং সেখানে সেই স্বপ্নের ব্যাখ্যাও দেয়া হয়েছে।
এর আগে সূরার ৩৬ আয়াত থেকে ৪২ আয়াত পর্যন্ত ইউসুফ আলাইহিস সালামের জেল জীবনের দুজন সাথীর স্বপ্ন ও ইউসুফ আলাইহিস সালাম কর্তৃক তার ব্যাখ্যা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
স্বপ্নের ব্যাখ্যা করা যে জ্ঞান-বিজ্ঞানের একটি বিষয় তা আল-কোরআনে নবী ইউসুফের ভাষায় বলা হয়েছে এভাবে:
হে আমার রব, আপনি আমাকে রাজত্ব দান করেছেন এবং স্বপ্নের ব্যাখ্যা শিখিয়েছেন। হে আসমানসমূহ ও যমীনের স্রষ্টা! দুনিয়া ও আখিরাতে আপনিই আমার অভিভাবক, আমাকে মুসলিম অবস্থায় মৃত্যু দিন এবং নেককারদের সাথে আমাকে যুক্ত করুন (সূরা ইউসুফ : ১০১)
এমনিভাবে সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে যায়েদ ইবনে আব্দে রাব্বিহী ও ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহুমা স্বপ্নে আজান দেখেছিলেন। আর তাদের স্বপ্নে দেখা আজান-কেই নামাজের বর্তমান আজান ও ইকামত হিসাবে আমরা দেখতে পাচ্ছি।
তাদের সুন্দর স্বপ্নগুলো এভাবেই ইসলামের নিদর্শন হিসাবে বাস্তবে রূপ লাভ করেছে অনন্তকালের জন্য।
আমাদের আরো মনে রাখতে হবে যে, ভালো ও সুন্দর স্বপ্নগুলো কখনো হুবহু বাস্তব রূপে দেখা যায় আবার কখনো রূপকভাবে ভিন্ন আকৃতিতে ।
যেমন আজান দেয়ার পদ্ধতি সংক্রান্ত স্বপ্ন হুবহু দেখানো হয়েছে। অপরদিকে ইউসুফ আলাইহিস সালামের স্বপ্নগুলো ভিন্ন আকৃতিতে রূপকভাবে দেখানো হয়েছে।
স্বপ্ন দেখলে যা করতে হবে
যদি কেউ ভাল স্বপ্ন দেখে তাহলে তার তিনটি কাজ করতে হবে :
এক. আল্লাহ তাআলার প্রশংসা স্বরূপ আল হামদুলিল্লাহ বলতে হবে।
দুই. এটা অন্যকে সুসংবাদ হিসাবে জানাবে।
তিন. স্বপ্ন সম্পর্কে এমন ব্যক্তিদেরকে জানাবে যারা তাকে ভালোবাসে।
হাদীসে এসেছে :
عن أبي سعيد الخدري رضي الله عنه أنه سمع النبي صلى الله عليه وسلم يقول: "إذا رأى أحدكم رؤيا يحبها، فإنما هي من الله، فليحمد الله عليها، وليحدث بها، وإذا رأى غير ذلك مما يكره، فإنما هي من الشيطان، فليستعذ من شرها، ولا يذكرها لأحد فإنها لا تضره".
رواه البخاري في كتاب التعبير ، وروى مسلم من حديث أبي قتادة في كتاب الرؤيا وفيه : فإن رأى رؤيا حسنة فليبشر، ولا يخبر إلا من يحب.
আবু সায়ীদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু্ আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে শুনেছেন, যখন তোমাদের কেউ এমন স্বপ্ন দেখে যা তার ভাল লাগে, তাহলে সে বুঝে নেবে এটা আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে। তখন সে এ স্বপ্নের জন্য আল্লাহ তাআলার প্রশংসা করবে আর অন্যকে এ ব্যাপারে জানাবে। আর যদি অন্য স্বপ্ন দেখে যা সে পছন্দ করে না, তাহলে বুঝে নেবে এটা শয়তানের পক্ষ থেকে। তখন সে এ স্বপ্নের ক্ষতি থেকে আল্লাহ তাআলার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করবে। (আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজীম বলবে) এবং কাউকে এ স্বপ্নের কথা বলবে না। মনে রাখবে এ স্বপ্ন তাকে ক্ষতি করবে না। (সহীহ বুখারী)
স্বপ্ন ভাল হলে তা শুভাকাংখী ব্যতীত অন্য কারো কাছে বলা ঠিক নয়। এ কারণে ইয়াকুব আ. তার ছেলে ইউসূফ কে বলেছিলেন :
হে আমার বৎস! তোমার স্বপ্নের কথা তোমার ভাইদের কাছে বলো না। (সূরা ইউসুফ : ৫)
খারাপ স্বপ্ন দেখলে কি করবে?
হাদীসে এসেছেعن أبي قتادة رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: "الرؤيا الصالحة من الله، والحلم من الشيطان، فإذا رأى أحدكم ما يحب فلا يحدث به إلا من يحب. وإذا رأى ما يكره فليتعوذ بالله من الشيطان، ولينفث عن شماله ثلاثاً، ولا يحدث بها أحداً فإنها لن تضره" متفق عليه.
আবু কাতাদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ভাল ও সুন্দর স্বপ্ন আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে হয়ে থাকে আর খারাপ স্বপ্ন হয় শয়তানের পক্ষ থেকে। যদি কেউ ভাল স্বপ্ন দেখে, তাহলে তা শুধু তাকেই বলবে, যে তাকে ভালোবাসে। অন্য কাউকে বলবে না। আর কেউ যদি স্বপ্নে খারাপ কিছু দেখে, তা হলে শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করবে। (আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজীম বলবে) এবং বাম দিকে তিনবার থুথু নিক্ষেপ করবে। আর কারো কাছে স্বপ্নের কথা বলবে না। মনে রাখবে, এ স্বপ্ন তার কোনোই ক্ষতি করতে পারবে না। (বর্ণনায় : বুখারী ও মুসলিম)খারাপ স্বপ্ন দেখলে যা করতে হবে :
এক. এই খারাপ স্বপ্নের ক্ষতি ও অনিষ্ট থেকে আল্লাহ তাআলার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতে হবে। এভাবে সকল প্রকার ক্ষতি থেকে আল্লাহ তাআলার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা উচিত।
দুই. শয়তানের অনিষ্ট ও কুমন্ত্রণা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করতে হবে। এবং এর জন্য আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজীম পড়তে হবে। কারণ, খারাপ স্বপ্ন শয়তানের কুপ্রভাবে হয়ে থাকে।
তিন. বাঁ দিকে তিনবার থুথু নিক্ষেপ করতে হবে। এটা করতে হবে শয়তানের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ ও তার চক্রান্ত-কে অপমান করার জন্য ।
চার. যে কাতে ঘুমিয়ে খারাপ স্বপ্ন দেখেছে তা পরিবর্তন করে অন্য কাতে শুতে হবে। অবস্থাকে বদলে দেয়ার ইঙ্গিত স্বরূপ এটা করা হয়ে থাকে।
পাঁচ. খারাপ স্বপ্ন দেখলে কারো কাছে বলবে না। আর নিজেও এর ব্যাখ্যা করতে চেষ্টা করবে না।
হাদীসে এসেছে
جاء رجل إلى النبي صلى الله عليه وسلم فقال : يا رسول الله ! رأيت في المنام كأن رأسي قطع . قال : فضحك النبي صلى الله عليه وسلم وقال " إذا لعب الشيطان بأحدكم في منامه . فلا يحدث به الناس " . وفي رواية أبي بكر " إذا لعب بأحدكم " ولم يذكر الشيطان .
الراوي: جابر بن عبد الله. المحدث: مسلم - المصدر: صحيح مسلم - الصفحة أو الرقم: 2268
خلاصة حكم المحدث: صحيح
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এক ব্যক্তি এসে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি স্বপ্নে দেখেছি, আমার মাথা কেটে ফেলা হয়েছে। এ কথা শুনে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেসে ফেললেন। আর বললেন : ঘুমের মধ্যে শয়তান তোমাদের কারো সাথে যদি দুষ্টুমি করে, তবে তা মানুষের কাছে বলবে না। (বর্ণনায় : মুসলিম)হাদীস থেকে আমরা জানতে পারলাম :
এক. সাহাবীগণ কোনো স্বপ্ন দেখলে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে তার ব্যাখ্যা জানতে চাইতেন। তারা এভাবে কোনো স্বপ্নকে অযথা মনে না করে এর গুরুত্ব দিতেন।
দুই. খারাপ স্বপ্ন দেখলে তা কাউকে বলতে নেই।
তিন. খারাপ ও নেতিবাচক স্বপ্ন শয়তানের একটি কুমন্ত্রণা।
কে স্বপ্নের ব্যাখ্যা দেবে?
এমন ব্যক্তিই স্বপ্নের ব্যাখ্যা দেয়ার অধিকার রাখে, যে কোরআন ও হাদীসের জ্ঞান সম্পর্কে অভিজ্ঞ ও স্বপ্ন ব্যাখ্যার মূলনীতি সম্পর্কে ওয়াকেফহাল। সাথে সাথে তাকে মানব-দরদী ও সকলের প্রতি কল্যাণকামী মনোভাবের অধিকারী হতে হবে।
তাই তো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
إذا رأى أحدكم رؤيا فلا يحدث بها إلا ناصحا أو عالما
الراوي: أنس بن مالك المحدث: الألباني - المصدر: السلسلة الصحيحة - الصفحة أو الرقم: 120
خلاصة حكم المحدث: صحيح
তোমাদের কেউ স্বপ্ন দেখলে তা ন আলেম কিংবা কল্যাণকামী ব্যতীত কারো কাছে তা বর্ণনা করবে না। (বর্ণনায় : মুসতাদরাক, শায়খ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন)শায়খ আব্দুর রহমান আস সাদী রহ. বলতেন, স্বপ্নের ব্যাখ্যা একটি শরয়ী বিদ্যা। এটা শিক্ষা করা, শিক্ষা দেয়া ও চর্চার করলে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে প্রতিদান পাওয়া যাবে। আর স্বপ্নের ব্যাখ্যা ফতোয়ার মর্যাদা রাখে।
তাইতো দেখি ইউসুফ আলাইহিস সালাম স্বপ্নের ব্যাখ্যাকে ফতোয়া বলে আখ্যায়িত করেছেন। যেমন তিনি তার জেল সঙ্গী দুজনেকে তাদের জানতে চাওয়া স্বপ্নের ব্যাখ্যা জানিয়ে বলেছিলেন :
তোমরা দুজনে যে বিষয়ে ফতোয়া চেয়েছিলে তার ফয়সালা হয়ে গেছে। (সূরা ইউসুফ, আয়াত ৪১)
স্বপ্নের ব্যাখ্যা যেভাবে করা হয় তা-ই সংঘটিত হয়
হাদীসে এসেছেعن أنس رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: "إن الرؤيا تقع على ما تعبر، فإذا رأى أحدكم رؤيا فلا يحدث بها إلا ناصحاً أو عالماً.
المستدرك: (4/391) وقال صحيح الإسناد ولم يخرجاه، ووافقه الذهبي، وصححه أيضاً الألباني في سلسلة الأحاديث الصحيحة (120).
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: স্বপ্নের যেভাবে ব্যাখ্যা করা হয় সেভাবে তা বাস্তবায়িত হয়। যখন তোমাদের কেউ স্বপ্ন দেখবে তখন আলেম অথবা কল্যাণকামী ব্যতীত কারো কাছে তা বর্ণনা করবে না। (বর্ণনায় : মুসতাদরাক, শায়খ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন)أخرج أبو داود والترمذي وابن ماجه، عن أبي رزين العقيلي، عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: "الرؤيا على رجل طائر، ما لم تعبر، فإذا عبرت وقعت.
أخرجه أبو داود: (4/305) كتاب الأدب - باب ما جاء في الرؤيا - رقم (5020).
আবু দাউদ, তিরমিজী, ইবনে মাজাহ আবু রাযীন আল উকাইলী থেকে বর্ণনা করেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: স্বপ্ন হল, উড়ন্ত পা- এর মত। (যা ভাল ও খারাপ উভয়ের সম্ভাবনা রাখে) যতক্ষণ না তার ব্যাখ্যা করা হয়। যখন একটি ব্যাখ্যা দেয়া হয় তখন তা বাস্তবায়িত হয়।হাদীসে আরো এসেছে -
عن عائشة زوج النبي صلى الله عليه وسلم قالت كانت امرأة من أهل المدينة لها زوج تاجر يختلف، فكانت ترى رؤيا كلما غاب زوجها وقلما يغيب إلا تركها حاملاً، فتأتي رسول الله- صلى الله عليه وسلم - فتقول: إن زوجي خرج تاجراً فتركني حاملاً، فرأيت فيما يرى النائم أن سارية بيتي انكسرت، وأني ولدت غلاماً أعور، فقال رسول الله- صلى الله عليه وسلم - خير يرجع زوجك عليك، إن شاء الله تعالى صالحاً، وتلدين غلاماً براً - فكانت تراها مرتين أو ثلاثاً، كل ذلك تأتي رسول الله- صلى الله عليه وسلم- فيقول ذلك لها، فيرجع زوجها وتلد غلاماً، فجاءت يوما كما كانت تأتيه ورسول الله - صلى الله عليه وسلم - غائب، وقد رأت تلك الرؤيا فقلت لها: عم تسألين رسول الله - صلى الله عليه وسلم -يا أمة الله؟.
فقالت: رؤيا كنت أراها فآتي رسول الله - صلى الله عليه وسلم - فأسأله عنها، فيقول خيراً، فيكون كما قال، فقلت: فأخبريني ما هي؟ قالت حتى يأتي رسول الله - صلى الله عليه وسلم - فأعرضها عليه كما كنت أعرض، فوالله ما تركتها حتى أخبرتني، فقلت والله لئن صدقت رؤياك ليموتن زوجك وتلدين غلاماً فاجراً، فقعدت تبكي، فقال لها: ما لها يا عائشة؟ فأخبرته الخبر وما تأولت لها، فقال رسول الله - صلى الله عليه وسلم - مه يا عائشة إذا عبرتم للمسلم الرؤيا، فاعبروها على خير، فإن الرؤيا تكون على ما يعبرها صاحبها، فمات والله زوجها ولا أراها إلا ولدت غلاماً فاجراً .
الدارمي: (2/174) - رقم (2163) وحسنه ابن حجر في الفتح (12/450) بيد أن في إسناده محمد بن إسحاق وهو يدلس ولم يصرح بالتحديث.
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মদীনার অধিবাসী এক মহিলার স্বামী ছিল ব্যবসায়ী। ব্যবসায়িক কাজে বিভিন্ন দেশে আসা যাওয়া করত সে। যখনই তার স্বামী বিদেশে যেত তখনই সে নারী স্বপ্ন দেখত। আর তার স্বামী সর্বদা তাকে গর্ভবতী রেখে যেত। একদিন সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বলল, আমার স্বামী সফরে গেছে। আমি গর্ভবতী। আমি স্বপ্ন দেখলাম, আমার ঘরের চৌকাঠ ভেঙ্গে গেছে। আর আমি একটি এক চোখ কানা সন্তান প্রসব করেছি।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: ভাল স্বপ্ন দেখেছো। ইনশা আল্লাহ তোমার স্বামী তোমার কাছে সহীহ-সুস্থ অবস্থায় ফিরে আসবে আর তুমি একটি সুস্থ-সুন্দর সন্তান প্রসব করবে।
এভাবে সে দু বার বা তিনবার স্বপ্ন দেখেছে। আর প্রতিবারই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসেছে। তিনি প্রতিবার এরকম ব্যাখ্যাই দিয়েছেন। আর প্রতিবার সে রকমই বাস্তবায়িত হয়েছে।
একদিন মহিলা আগের মতই আসল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন অনুপস্থিত ছিলেন। সে স্বপ্ন দেখেই এসেছে।
আমি তাকে প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর বান্দী! তুমি রাসুলুল্লাহর নিকট কী জিজ্ঞেস করবে?
সে বলল, আমি একটি স্বপ্ন প্রায়ই দেখি। অতপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসি। তিনি সুন্দর ব্যাখ্যা দেন। সেটাই বাস্তবে পরিণত হয়।
আমি বললাম, তুমি আমাকে বল, কী স্বপ্ন দেখেছো? সে বলল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসুক, তারপর বলব।
আমি তাকে বারবার অনুরোধ করতে লাগলাম স্বপ্নটি বলার জন্য- যেমনটি আমার অভ্যাস। অবশেষে সে আমাকে স্বপ্নের কথা বলতে বাধ্য হল। আমি বললাম, আল্লাহর কসম! তোমার স্বপ্ন যদি সত্যি হয়, তাহলে তোমার স্বামী মারা যাবে। আর তুমি একটি অপূর্ণাঙ্গ বা অসুস্থ ছেলে প্রসব করবে।
তখন মহিলাটি বসে কাঁদতে লাগল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এসে বললেন: হে আয়েশা! এর কি হয়েছে?
তখন আমি পুরো ঘটনা ও স্বপ্ন সম্পর্কে আমার দেয়া ব্যাখ্যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জানালাম।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: হে আয়েশা এটা কী করলে? যখন কোনো মুসলমানের স্বপ্নের ব্যাখ্যা করবে তখন সুন্দর ও কল্যাণকর ব্যাখ্যা দেবে। মনে রাখবে স্বপ্নের যে ব্যাখ্যা দেয়া হয়, বাস্তবে তাই সংঘটিত হয়।
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন : আল্লাহ তাআলার কি ইচ্ছা জানি না। মহিলাটির স্বামী মারা গেল আর দেখলাম সে একটি অসুস্থ অপূর্ণাঙ্গ ছেলে প্রসব করল। (বর্ণনায় : দারামী। ইবনে হাজার রহ. হাদীসটিকে হাসান বলে অভিহিত করেছেন।)
হাদীস থেকে শিক্ষা ও মাসায়েল :
এক. স্বপ্ন বর্ণনা করার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। যাকে তাকে স্বপ্নের কথা বলা উচিত নয়।
দুই. সর্বদা আলেম, শুভাকাংখীর কাছে স্বপ্নের কথা বলবে। যে শুভাকাংখী নয় তার কাছে কোনো ধরনের স্বপ্নের কথা বলবে না।
তিন. স্বপ্ন একটি উড়ন্ত পায়ের মত। এ কথার অর্থ হল শূন্যে ঝুলিয়ে রাখা পা যেমন যে কোনো সময় মাটিতে রাখা যায় আবার নীচে আগুন থাকলে তাতেও রাখা যায়। স্বপ্ন এমনই, এর ব্যাখ্যা ভাল করা যায় আবার খারাপও করা যায়। যে ব্যাখ্যাই করা হোক, সেটিই সংঘটিত হবে।
চার. মদীনার এই মহিলাটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে স্বপ্নের ব্যাখ্যা জানতে আসতেন। স্বপ্নটি বাহ্যিক দৃষ্টিতে খারাপ হলেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভাল ও সুন্দর ব্যাখ্যা করে দিয়েছেন।
তাই স্বপ্ন দ্রষ্টার পরিচিতদের মধ্যে যিনি সবচেয়ে ভাল আলেম তার কাছে স্বপ্নের ব্যাখ্যা জানতে চাওয়া উচিত।
পাঁচ. প্রশ্ন হতে পারে, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা কেন এ ধরনের ব্যাখ্যা দিলেন? এর উত্তর হল :
(ক) এ মহিলার স্বপ্নের ব্যাখ্যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কীভাবে করেছেন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা তা জানতেন না। তাই তিনি নিজের পক্ষ থেকে ব্যাখ্যা করেছেন।
(খ) আয়েশা রা. স্বপ্নের বাহ্যিক দিক তাকিয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। ঘরের চৌকাঠ দ্বারা স্বামী বুঝেছেন। আর এক চোখ অন্ধ সন্তান দ্বারা অপূর্ণাঙ্গ সন্তান বুঝেছেন।
(গ) স্বপ্নের খারাপ বা অশুভ ব্যাখ্যা করা অনুচিত।স্বপ্ন ব্যাখ্যার এ মূলনীতির কথা আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা আগে থেকে জানতেন না। এ ঘটনার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে জানিয়েছেন। এবং তিনি জেনেছেন।
(ঘ) এ স্বপ্নের ব্যাখ্যা এভাবে করা যেত, যা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করতেন। তাহল: ঘরের চৌকাঠ ভেঙ্গে যাওয়ার অর্থ হল, ঘর প্রশস্ত হবে। প্রাচুর্য ও সচ্ছলতা আসবে। আর এক চোখ কানা সন্তানের অর্থ হল, সন্তানটি তার চোখ দিয়ে শুধু ভাল বিষয় দেখবে।
এটা হল দূরবর্তী ব্যাখ্যা। আর আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা করেছেন নিকটবর্তী ব্যাখ্যা।
ছয়. যার কাছে স্বপ্নের ব্যাখ্যা চাওয়া হবে, তিনি যদি জানেন, এর ব্যাখ্যা খারাপ তবে তিনি তা বলবেন না। যথাসম্ভব ভাল ব্যাখ্যা করে দেবেন। নয়তো চুপ থাকবেন। অথবা বলবেন, আল্লাহ ভাল জানেন।
সায়ীদ ইবনে মানসূর বর্ণনা করেন, আতা রহ. সব সময় বলতেন : স্বপ্নের ব্যাখ্যা যা দেয়া হয়, সেটাই সংঘটিত হয়। (ফাতহুল বারী)
প্রশ্ন হতে পারে তাহলে তাকদীরের ব্যাপারটা কি হবে?
উত্তর সোজা। তাকদীরে এভাবেই লেখা আছে যে, অমুক ব্যক্তি এভাবে ব্যাখ্যা করবে। আর তাই সংঘটিত হবে। কিন্তু আমাদের কর্তব্য হবে, কখনো খারাপ বা অশুভ ব্যাখ্যা না দেয়া। তাকদীরে কি আছে আমরা তা জানি না।
এ জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে কোনো মানুষের কাছে স্বপ্নের কথা বলতে নিষেধ করেছেন।
স্বপ্নের কথা শুধু তাকে বলা যাবে যে আলেম, বন্ধু, শুভাকাংখী ও কল্যাণকামী। এ ছাড়া অন্য কারো কাছে নয়।
আরেকটি ঘটনা :
এক মহিলা একটি দুগ্ধপোষ্য শিশুকে নিয়ে ইমাম ইবনে সীরিন রহ.-এর শিক্ষা মজলিসে আসল। এসে তিনি ইমামের ছাত্রদের কাছে জিজ্ঞেস করল, ইমাম সাহেব কোথায়? ইমাম সাহেবের একজন বোকা ছাত্র বলল, আপনি তার কাছে কেন এসেছেন?
মহিলাটি বলল, আমি এ ছেলেটির ব্যাপারে একটি স্বপ্ন দেখেছি, তার ব্যাখ্যা জানার জন্য এসেছি।
ছাত্রটি বলল, কি স্বপ্ন দেখেছেন? মহিলাটি বলল, আমি দেখেছি আমার এ ছেলেটি সাগর থেকে পানি পান করছে।
ছাত্রটি তাড়াতাড়ি ব্যাখ্যা দিল, বলল, তাহলে তো সে পেট ফুলে মারা যাবে।
তৎক্ষনাৎ শিশুটির পেট ফুলে উঠল। আর চিৎকার করে মারা গেল।
মহিলাটি কাঁদা শুরু করল। এরই মধ্যে ইমাম সাহেব এসে পড়লেন। ঘটনা শুনে তিনি বললেন: যদি তুমি স্বপ্নের ব্যাখ্যা না করে ছেড়ে দিতে তাহলে ছেলেটি এ দেশের সবচেয়ে বড় আলেম ও বিদ্যান হত।
সাগরের অর্থ শুধু পানের অযোগ্য নোনা পানিই নয়। সাগরের ব্যাখ্যা হল, মনি, মুক্তা, হীরা, প্রবাল।
কাজেই যিনি স্বপ্নের ব্যাখ্যা করবেন তিনি সব সময় ইতিবাচক ও কল্যাণকর ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করবেন।
(আল কাওয়ায়েদুল হুসনা ফী তাবীলির রুইয়া : শায়খ আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ আস সাদহান)
তাবীরের বিভিন্ন প্রকার
তাবীর মানে স্বপ্ন ব্যাখ্যা করা। যার মাধ্যমে স্বপ্নের ব্যাখ্যা করা হয় তার বিবেচনায় কয়েক প্রকার হয়ে থাকে।
ইমাম বগভী রহ. বলেন: স্বপ্ন ব্যাখ্যা করার দিক দিয়ে কয়েক প্রকার হতে পারে।
প্রথমত: আল কোরআনের আয়াত দিয়ে স্বপ্নের ব্যাখ্যা প্রদান করা।
দ্বিতীয়ত: হাদীসে রাসূল দিয়ে স্বপ্নের ব্যাখ্যা করা।
তৃতীয়ত: মানুষে মাঝে প্রচলিত বিভিন্ন প্রসিদ্ধ উক্তি দিয়ে স্বপ্নের ব্যাখ্যা করা।
চতুর্থত: কখনো বিপরীত অর্থ গ্রহণ নীতির আলোকে স্বপ্নের ব্যাখ্যা করা।
কোরআনের আয়াত দিয়ে স্বপ্ন ব্যাখ্যা করার কয়েকটি দৃষ্টান্ত
স্বপ্নে রশি দেখার অর্থ হল, ওয়াদা, অঙ্গীকার, প্রতিশ্রুতি।
এ ব্যাখ্যাটি আল কোরআনের নিম্নোক্ত আয়াত থেকে গ্রহণ করা হয়েছে।
তোমরা আল্লাহ তাআলার রশিকে শক্তভাবে ধারণ করো। (সূরা আলে ইমরান: ১০৩)
স্বপ্নে নৌকা বা জাহাজ দেখার ব্যাখ্যা হল মুক্তি পাওয়া।
এ অর্থটি আল কোরআনের এ আয়াত থেকে নেয়া হয়েছে।
আমি তাকে উদ্ধার করেছি এবং উদ্ধার করেছি জাহাজের আরোহীদের। (সূরা আল আনকাবুত : ১৫)
স্বপ্নে কাঠ দেখার ব্যাখ্যা হল, মুনাফেকী বা কপটতা। এ ব্যাখ্যাটি আল কোরআনের এ আয়াত থেকে নেয়া হয়েছে, যেখানে আল্লাহ তাআলা মুনাফিকদের সম্পর্কে বলেছেন :
যেন তারা দেয়ালে ঠেস দেয়া কাঠের মতই। (সূরা আল মুনাফিকুন: ৪)
পাথর স্বপ্ন দেখলে তার ব্যাখ্যা হবে অন্তরের কঠোরতা ও পাষন্ডতা।
এ ব্যাখ্যাটি আল কোরআনের এ আয়াত থেকে গ্রহণ করা হয়েছে, যেখানে আল্লাহ তাআলা বলেন:
অত:পর তোমাদের অন্তরগুলো কঠিন হয়ে গেল, যেন তা পাথরের মত কিংবা তার চেয়েও শক্ত। (সূরা আল বাকারা: ৭৪)
যদি স্বপ্নে রোগ-ব্যধি দেখা হয়, তাহলে তার ব্যাখ্যা হবে মুনাফিক। কারণ, আল্লাহ তাআলা মুনাফিকদের সম্পর্কে বলেছেন :
তাদের অন্তরে রয়েছে ব্যধি। (সূরা আল বাকারা, আয়াত ১০)
যদি স্বপ্নে গোশত খেতে দেখে তাহলে তার অর্থ হতে পারে গীবত বা পরনিন্দা। কেননা গীবত সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন:
তোমাদের কেউ কি পছন্দ করবে তার মৃত ভাইয়ের গোশত খাবে? (সূরা আল হুজুরাত: ১৩)
এই যে ব্যাখ্যার কথাগুলো বলা হল, এগুলো যে এমন হতেই হবে তা জরুরী নয়। আবার সকলের ব্যাপারে ব্যাখ্যা একটিই হবে, তাও ঠিক নয়। একজন রোগীর স্বপ্ন আর সুস্থ মানুষের স্বপ্নের ব্যাখ্যা এক রকম হবে না। যদিও স্বপ্ন এক রকম হয়। তেমনি একজন মুক্ত মানুষ ও একজন বন্দী মানুষের স্বপ্নের ব্যাখ্যা এক রকম হবে না। স্বপ্নের ব্যাখ্যায় যেমন স্বপ্ন দ্রষ্টার অবস্থা লক্ষ্য করা হবে তেমনি স্বপ্নে যা দেখেছে তার অবস্থাও দেখতে হবে। যেমন কেউ স্বপ্নে দড়ি বা রশি দেখল। একজন স্বপ্নে দেখল সে একটি মজবুত রশি পেয়েছে। যা ছেড়া যাচ্ছে না। আরেক জন দেখল, সে একটা রশি ধরেছে কিন্তু তা ছিল নরম। দুটো স্বপ্নের ব্যাখ্যার মধ্যে বিশাল পার্থক্য হবে।
এক ব্যক্তি ইমাম মুহাম্মাদ বিন সীরিন রহ. এর কাছে বলল, আমি স্বপ্ন দেখলাম যে আমি আজান দিচ্ছি। তিনি বললেন, এর ব্যাখ্যা হল, তুমি হজ করবে।
আরেক ব্যক্তি এসে বলল, আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, আমি আজান দিচ্ছি। তিনি বললেন, এর অর্থ হল, চুরির অপরাধে তোমার হাত কাটা যাবে।
লোকেরা জিজ্ঞেস করল, আপনি একই স্বপ্নের দু ধরনের ব্যাখ্যা করলেন?
তিনি বললেন, প্রথম লোকটি নেক আমল প্রিয়। সে ভাল কাজ করে থাকে। সে জন্য তার স্বপ্নের ব্যাখ্যা নেক আমল হতে পারে। আমি আল কোরআনের আয়াত -
তুমি মানুষের মাঝে হজের জন্য আজান তথা এলান দাও। (সূরা হজ্জ:২৭)
আর দ্বিতীয় ব্যক্তি হচ্ছে পাপাচারী। তাই তার স্বপ্নের ব্যাখা পাপের শাস্তিই মানায়। তাই আমি আল কোরআনের আয়াত
অত:পর এক মুয়াজ্জিন (ঘোষণা কারী) আজান (ঘোষণা) দিল, হে কাফেলা! তোমরা তো চোর। (সূরা ইউসুফ : ৭০)
হাদীস দিয়ে স্বপ্নের ব্যাখ্যার কয়েকটি দৃষ্টান্ত
স্বপ্নে কাক দেখার ব্যাখ্যা হল, পাপাচারী পুরুষ। কারণ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাকের নাম রেখেছেন ফাসেক। মানে, পাপী।
তেমনি ইঁদুর স্বপ্নে দেখার ব্যাখ্যা হল, পাপাচারী নারী। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইঁদুরের নাম রেখেছেন, ফাসেকা। মানে পাপাচারী মহিলা।
স্বপ্নে পাঁজর বা পাঁজরের হাড় দেখলে এর ব্যাখ্যা হবে, নারী। কারণ, নারীকে পাঁজরের হাড় দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে বলে হাদীসে এসেছে।
এমনিভাবে কাঁচের পান-পাত্র স্বপ্ন দেখার ব্যাখ্যা হল, নারী। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাঁচের পান-পাত্র-কে নারীর রূপক অর্থে ব্যবহার করেছেন। যেমন তিনি বলেছেন:
হে আনজাশা! আরে আস্তে চল, নয়তো কাঁচের পান-পাত্রগুলো ভেঙ্গে যাবে। (বর্ণনায় : মুসলিম)
এখানে কাঁচের পান-পাত্র বলতে তিনি সফর সঙ্গী মেয়েদের বুঝিয়েছেন। মানে তাড়াতাড়ি হাটলে মেয়েরা পিছনে পড়ে যাবে। তাই তাদের জন্য তিনি ধীরে ধীরে পথ চলতে বললেন।
বিপরীত অর্থ গ্রহণ নীতিতে স্বপ্ন ব্যাখ্যার দৃষ্টান্ত
কোনো ব্যক্তি স্বপ্নে ভীতিকর কিছু দেখল বা ভয় পেল। তার অবস্থার বিবেচনায় এর ব্যাখ্যা হতে পারে শান্তি ও নিরাপত্তা।
যেমন আল্লাহর তাআলার বাণী
তিনি তাদের ভয়-ভীতিকে শান্তি ও নিরাপত্তায় পরিবর্তন করে দেবেন। (সূরা আল নূর : ৫৫)
এমনিভাবে স্বপ্নে কান্না দেখলে এর ব্যাখ্যা হতে পারে আনন্দ। স্বপ্নে হাসতে দেখলে এর ব্যাখ্যা হতে পারে দু:খ-কষ্ট।
এ বিপরীত অর্থ গ্রহণ নীতি স্বপ্ন ব্যাখ্যা করার রহস্য হল, স্বপ্নের দায়িত্বশীল ফেরেশতা যখন স্বপ্নে ইঙ্গিত প্রদান করে তখন সে বিষয়টি উল্টো করে দেখায়। কারণ, নিদ্রা আর জাগ্রত অবস্থা একটা আরেকটার বিপরীত।
কয়েকটি প্রসিদ্ধ স্বপ্ন ও তার ব্যাখ্যার বিবরণ
তাবীর বা স্বপ্ন ব্যাখ্যার ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে সীরিন রহ.- এর কাছে এক মহিলা আসল। তিনি তখন দুপুরের খাবার খাচ্ছিলেন। মহিলা বলল, হে আবু বকর! আমি একটি স্বপ্ন দেখেছি। ইবনে সীরিন রহ. বললেন, তুমি এক্ষুণি বলবে না আমাকে খেতে দেবে? মহিলা বলল, ঠিক আছে, আপনি খাওয়া শেষ করুন। খাওয়া শেষ করার পর তিনি মহিলাকে বললেন: এখন বল, তোমার দেখা স্বপ্ন। মহিলা বলল : আমি দেখলাম, আকাশের চন্দ্র সাতটি তারা (সূরাইয়া) র মধ্যে ঢুকে গেল। এরপর স্বপ্নের মধ্যে লোকেরা আমাকে বলল, ইবনে সীরিনের কাছে খবরটা তাড়াতাড়ি পৌঁছে দাও।
ইবনে সীরিন বললেন, ধিক! তোমাকে। কি দেখলে? আবার বল। এভাবে কয়েকবার তিনি বললেন। আর তিনি খুব অস্থির হয়ে গেলেন। তার চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেল। তার বোন তাকে জিজ্ঞেস করল, কি হয়েছে?
তিনি বললেন, এ মহিলাটি বলছে আমি সাত দিন পর মৃত্যু বরণ করব।
বর্ণনাকারী আসআছ বলেন : ঠিক সাত দিনের মাথায় আমরা ইমাম ইবনে সীরিন- রহ.-কে দাফন করলাম।
(আল কাওয়ায়েদুল হুসনা ফী তাবীলির রুইয়া : শায়খ আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ আস সাদহান)
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বপ্নের কথা শুনতে পছন্দ করতেন। তিনি একদিন জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের মধ্যে কেউ গত রাতে স্বপ্ন দেখেছ?
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন : আমি স্বপ্ন দেখেছি, আকাশ থেকে তিনটি চাঁদ আমার ঘরের মধ্যে পতিত হয়েছে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: তোমার স্বপ্ন যদি সত্যি হয়, তাহলে তোমার ঘরে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ তিন জন মানুষকে দাফন করা হবে।
এরপরে তো পর্যায়ক্রমে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু ও ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে তার ঘরে দাফন করা হয়েছে।
(আল কাওয়ায়েদুল হুসনা ফী তাবীলির রুইয়া : শায়খ আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ আস সাদহান। বর্ণনায় : মুস্তাদরাক হাকেম)
ইরাকের শাসক হাজ্জাজ বিন ইউসূফ একদিন স্বপ্নে দেখলেন, আকাশ থেকে বেহেশতের হুর সাদৃশ দুটো দাসী অবতীর্ণ হল। একজনকে তিনি ধরতে পারলেন অন্য জন আকাশে উঠে গেল।
স্বপ্ন দেখে তিনি খুব খুশী হলেন। এর ব্যাখ্যা জানার জন্য ইমাম ইবনে সীরিন-কে ডাকলেন।
ইবনে সীরিন রহ. বললেন: এর ব্যাখ্যা হল, দুটো বিদ্রোহ (ফিতনা) সংঘটিত হবে। আপনি একটির মোকাবেলা করবেন। অন্যটিকে আপনি পাবেন না। (হয়ত আপনার পরে আসবে)
পরে দেখা গেল হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফ, ইবনুল আসআছের বিদ্রোহ মোকাবেলা করলেন। আর ইবনুল মুলাহহাবের বিদ্রোহ তিনি দেখে যাননি।
কিভাবে এ ব্যাখ্যা দেয়া হল? এর রহস্য কী?
এ স্বপ্নে দুটো ইঙ্গিত ছিল। প্রথমটি দাসী আর দ্বিতীয়টি হল বেহেশতের হুর।
দুটো ইঙ্গিত পরস্পর বিরোধী। কারণ, হুর হল সুরক্ষিত। কিন্তু দাসী সুরক্ষিত নয়। অপর দিকে হুরের বিষয়টি দৃশ্যমান নয়, আর দাসীর বিষয়টি দৃশ্যমান। স্বপ্ন ব্যাখ্যার নিয়ম হল, এ রকম পরস্পর বিরোধী ইঙ্গিত দেখলে বাস্তব বা দৃশ্যমান ইঙ্গিত গ্রহণ করা হবে। এ বিবেচনায় এখানে দাসী দেখার বিষয়টি গ্রহণ করা হল আর হুরের বিষয়টি গ্রহণ করা হল না।
আর দাসী হল স্ত্রী নয়, এমন মেয়ে লোক। আর মেয়ে লোক হল ফিতনা-বিশৃংখলার উপকরণ। কেননা রাসূলুল্লা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: আমার চলে যাওয়ার পর আমার উম্মতের উপর সবচেয়ে ক্ষতিকর ফিতনা হিসাবে মেয়েদের রেখে গেলাম।
তাই ইমাম ইবনে সীরিন এ রকম ব্যাখ্যা করেছেন।
(আল কাওয়ায়েদুল হুসনা ফী তাবীলির রুইয়া : শায়খ আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ আস সাদহান)
এ ব্যক্তি ইমাম জাফর সাদিকের কাছে এসে বলল, আমি একটি স্বপ্ন দেখেছি। স্বপ্নটি হল, একটি কাঁচের পেয়ালা আছে আমার। আমি তা থেকে পানাহার করি। কিন্তু তার মধ্যে একটি পিঁপড়া দেখলাম। সেও তা থেকে খাবার খায়।
এর অর্থ কী?
ইমাম সাহেব বললেন, তোমার কি স্ত্রী আছে? সে বলল, হ্যাঁ। তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন, তোমার বাসায় কি কোনো পুরুষ কাজের লোক (দাস) আছে? সে বলল, হ্যাঁ আছে। তিনি বললেন, কাজের লোকটিকে বিদায় করে দাও। তাকে রাখায় তোমার কোনো কল্যাণ নেই।
লোকটি বাড়ী গিয়ে স্ত্রীকে স্বপ্ন ও তার ব্যাখ্যার কথা বলল। স্ত্রী বলল, এখন তোমার সিদ্ধান্ত কী?
লোকটি বলল, আমি দাসটিকে বিক্রি করে বিদায় করে দেব।
স্ত্রী বলল, যদি তাকে বিদায় করো তাহলে আমাকে তালাক দাও। লোকটি স্ত্রীকে তালাক দিল। স্ত্রী দাসটিকে কিনে নিল ও তাকে বিয়ে করল।
এ স্বপ্নের মধ্যে তিনটি বিষয়কে ইঙ্গিত হিসাবে ধরা হয়েছে। প্রথম হল, পুরুষ লোকটি। দ্বিতীয় হল, পেয়ালা। আর তৃতীয়টি হল, পিঁপড়া।
ইমাম জাফর সাদেক রহ. ব্যাখা করার আগে পুরুষ লোকটিকে জেনে নিলেন। আর এভাবেই কারো স্বপ্ন ব্যাখ্যা করার আগে তার সম্পর্কে জেনে নিতে হয়।
দ্বিতীয় ইঙ্গিত, কাঁচের পেয়ালা দ্বারা স্ত্রীকে বুঝায়। কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারীদের কাঁচের পাত্রের সাথে তুলনা করেছেন।
তার থেকে পানাহার করার অর্থ হল সহবাস। আর পিঁপড়া ও তার খাওয়ার অর্থ হল সে তার স্ত্রীতে অংশ গ্রহণ করে। পিঁপড়া দ্বারা দুর্বল সত্বা ও চোর বুঝায়। সে এমনভাবে খায়, কেউ দেখে না। এর মানে কাজের লোকটি পিঁপড়ার মত চুপিসারে তার স্ত্রীকে ভোগ করে।
(আল কাওয়ায়েদুল হুসনা ফী তাবীলির রুইয়া : শায়খ আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ আস সাদহান)
মৃত ব্যক্তিকে স্বপ্নে দেখা
ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে সীরিন রহ. বলেন : যদি স্বপ্নে কেউ মৃত ব্যক্তিকে দেখে তাহলে তাকে যে অবস্থায় দেখবে সেটাই বাস্তব বলে ধরা হবে। তাকে যা বলতে শুনবে, সেটা সত্যি বলে ধরা হবে। কারণ, সে এমন জগতে অবস্থান করছে যেখানে সত্য ছাড়া আর কিছু নেই।
যদি কেউ মৃত ব্যক্তিকে ভাল পোশাক পরা অবস্থায় বা সুস্বাস্থের অধিকারী দেখে, তাহলে বুঝতে হবে সে ভাল অবস্থায় আছে। আর যদি জীর্ণ, শীর্ণ স্বাস্থ্য বা খারাপ পোশাকে দেখে তাহলে বুঝতে হবে, ভাল নেই। তার জন্য তখন বেশি করে মাগফিরাত কামনা ও দোআ-প্রার্থনা করতে হবে।
কয়েকটি উদাহরণ :
ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, বিদ্রোহীরা যখন উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু- এর বাসভবন ঘেরাও করল, তখন উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি গত রাতে স্বপ্ন দেখলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, উসমান আমাদের সাথে তুমি ইফতার করবে।
আর ঐ দিনই উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু শহীদ হলেন।
(আল কাওয়ায়েদুল হুসনা ফী তাবীলির রুইয়া : শায়খ আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ আস সাদহান)
আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, আবু মূসা আশ আশআরী রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আমি স্বপ্নে দেখলাম, আমি একটি পাহাড়ের কাছে গেলাম। দেখলাম, পাহাড়ের উপরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রয়েছেন ও পাশে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু তার হাত দিয়ে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর দিকে ইশারা করছেন।
আমি আবু মূসা রাদিয়াল্লাহু আনহুর এ স্বপ্নের কথা শুনে বললাম, ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজেউন। আল্লাহর শপথ! ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তো মারা যাবেন! আচ্ছা আপনি কি বিষয়টি ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে লিখে জানাবেন?
আবু মূসা রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আমি ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে তার জীবদ্দশায তার নিজের মৃত্যু সংবাদ জানাব, এটা কি করে হয়?
এর কয়েকদিন পরই স্বপ্নটা সত্যে পরিণত হল। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু শহীদ হয়ে গেলেন।
কারণ, মৃত্যু পরবর্তী সত্য জগত থেকে যা আসে, তা মিথ্যা হতে পারে না। সেখানে অন্য কোনো ব্যাখ্যা দেয়ার সুযোগ নেই।
(আল কাওয়ায়েদুল হুসনা ফী তাবীলির রুইয়া : শায়খ আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ আস সাদহান)
স্বপ্নের ব্যাখ্যা সম্পর্কে ইমাম ইবনুল কায়্যিম রহ. এর কিছু বক্তব্য
বাস্তব জীবনে ঘটবে এমন কিছু আকৃতি-প্রকৃতি আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার বান্দাদের দেখিয়ে থাকেন। এ দেখানোটা স্বপ্নে কখনো সরাসরি আবার কখনো ইঙ্গিত বা প্রতীকি বার্তায় হয়ে থাকে।
যেমন আমরা বলে থাকি, স্বপ্নে কাপড় বা জামা দেখার মানে হল দীন-ধর্ম। যদি কাপড় ভাল ও বড় দেখা হয়, তবে তা দীন-ধর্ম, তাকওয়া-পরহেজগারীর উন্নতি নির্দেশ করে। আর তা যদি মলিন, সংকীর্ণ, ছিড়া-ফাটা দেখা হয় তবে তা দীন-ধর্মের অবনতি বলে মনে করা হয়ে থাকে।
দীন -ধর্ম যেমন মানুষের আত্মাকে রক্ষা করে, পোশাক তেমনি মানুষের শরীর-স্বাস্থ্যকে হেফাজত করে। এ জন্য পোশাক আর ধর্ম একে অপরের ইঙ্গিত বহন করে।
স্বপ্নে আগুন দেখা মানে ফিতনা বা বিশৃঙ্খলা আর অরাজকতা নির্দেশ করে। কারণ আগুন দৃশ্যমান ধন-সম্পদ জ্বালিয়ে দেয় আর ফিতনা-অরাজকতা মানুষের অন্তর জ্বালায়। মানুষকে অস্থির করে তোলে।
নক্ষত্র বা তারকা স্বপ্নে দেখলে তার অর্থ হয় আলেম- উলামা, জ্ঞানী-গুণি। কারণ আলেম-উলামা ও জ্ঞানীরা মানুষকে পথ প্রদর্শন করে, আলো দেয়।
স্বপ্নে ইহুদী দেখার অর্থ হল দীন-ধর্মের বিষয়ে অবাধ্যতা আর খৃষ্টান দেখার অর্থ হল, দীন-ধর্মে বিদআত প্রবর্তন ও ধর্মীয় বিষয়ে পথভ্রষ্টতা।
স্বপ্নে লৌহ দেখার অর্থ হল, শক্তি।
আর দাড়ি-পাল্লা দেখার অর্থ হল, ন্যায়পরায়ণতা।
স্বপ্নে সাপ দেখার অর্থ হল, শত্রু ।
স্বপ্নে নীচে পড়ে যেতে দেখার অর্থ হল, অবনতি আর উর্দ্ধে উঠতে দেখার অর্থ হল, উন্নতি।
কোনো অসুস্থ ব্যক্তি যদি স্বপ্নে দেখে সে চুপচাপ ঘর থেকে বের হয়ে যাচ্ছে, তাহলে এর অর্থ হবে মৃত্যু। আর যদি সে স্বপ্ন দেখে কথা বলতে বলতে সে ঘর থেকে বের হয়ে যাচ্ছে, তাহলে এর অর্থ হবে জীবন ও সুস্থতা।
যদি কোনো ব্যক্তি স্বপ্ন দেখে যে, সে মৃত্যু বরণ করছে, তাহলে এর অর্থ হবে সে পাপাচার থেকে তওবা করবে। কেননা মৃত্যু মানে হল, আল্লাহর দিকে ফিরে যাওয়া। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন :
অত:পর তাদেরকে ফিরিয়ে নেয়া হবে তাদের সত্যিকার প্রভূ আল্লাহর কাছে। (সূরা আল আনআম : ৬২)
এখানে ফিরিয়ে নেয়া মানে মৃত্যু। আর তাওবা অর্থ ফিরে আসা।
ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু হাবেছ ইবনে সাআদ আত তাঈকে বিচারক হিসাবে নিয়োগ দিলেন। একদিন হাবেছ ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বললেন, হে আমীরুল মুমিনীন! আমি স্বপ্নে দেখলাম, চাঁদ আর সূর্য যুদ্ধ করছে। আর নক্ষত্রগুলো দু পক্ষে বিভক্ত হয়ে গেছে।
ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এ কথা শুনে জিজ্ঞেস করলেন, তখন তুমি কার পক্ষে ছিলে? চাঁদের পক্ষে না সূর্যের?
তিনি উত্তরে বললেন, আমি চাঁদের পক্ষে ছিলাম।
ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে বললেন, তাহলে আমি তোমার নিয়োগ প্রত্যাহার করে নিলাম। কারণ, তুমি একটি মুছে যাওয়া শক্তির পক্ষে ছিলে।
আল্লাহ তাআলা বলেন :
আর আমি রাত ও দিনকে করেছি দুটো নিদর্শন। অত:পর মুছে দিয়েছি রাতের নিদর্শন (চাঁদকে) আর দিনের নিদর্শন (সূর্য্য) কে করেছি আলোকময়। (সূরা আল ইসরা : আয়াত ১২)
আর তুমি একটি বিভ্রান্তিতে নিহত হবে। পরে দেখা গেল সত্যিই সে সিফফীনের যুদ্ধে সিরিয়াবাসীদের দলে থেকে নিহত হল।
(সুত্র : আল ইসাবাহ ফী তামীযিস সাহাবাহ : ইবনে হাজার রহ.)
স্বপ্নে বাগান দেখার অর্থ হল কাজ ও চাকুরী। আর বাগান পুড়ে যাওয়া দেখলে অর্থ হবে বেকারত্ব ও পতন।
ভাল স্বপ্নের বাস্তবায়ন দেরীতে হয়
যে স্বপ্নের ফলাফল ভাল তা বাস্তবায়নে দেরী হয়। আর যার ফলাফল খারাপ তার বাস্তবায়নে কোন দেরী হয় না।
দেখুন, ইউসুফ আলাইহিস সালাম স্বপ্নে দেখেছিলেন, চন্দ্র, সূর্য আর এগারটি নক্ষত্র তাকে সিজদা করেছে।
তার এ স্বপ্নটার বাস্তবায়ন অনেক বছর পর হয়েছে।
ইবেন সীরিন রহ. দরবারে একটি শিশুর মৃত্যুর কাহিনীতে আমরা দেখলাম, খারাপ স্বপ্নের বাস্তবায়ন তাড়াতাড়ি হয়ে গেল।
মক্কী জীবনে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবার স্বপ্ন দেখলেন, যে আবু জাহল জান্নাতে ঘোরা-ফিরা করছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভাবলেন, তাহলে আবু জাহল ইসলাম গ্রহণ করবে। কিন্তু করল না। মক্কা বিজয়ের পর যখন আবু জাহলের ছেলে ইকরামা ইসলাম গ্রহণ করলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, এটাই ছিল তার সেই স্বপ্নেরই বাস্তবায়ন।
(আল কাওয়ায়েদুল হুসনা ফী তাবীলির রুইয়া : শায়খ আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ আস সাদহান)
শেষ কথা
আমার এ বিষয়ে লেখার উদ্দেশ্য কিন্তু পাঠকদের-কে স্বপ্নের ব্যাখ্যা শিক্ষা দেয়া নয়। বরং দীনি সচেতনতা বৃদ্ধি করা। আর এটা যে উলূমে ইসলামিয়ার একটি বিষয় সে ব্যাপারে ধারনা দেয়া। আজ আমরা যারা ইসলামের জন্য নিবেদিত, তারাও যেন দিনে দিনে বস্তুবাদী আর ভোগবাদী হয়ে যাচ্ছি। যে বিষয়ে বাজারে চাহিদা নেই, মানুষ গুরুত্ব দেয় না -সে বিষয়গুলো যত ইসলামি সংস্কৃতির বিষয় হোক- তা আলোচনা করতে চাই না।ইমাম মালেক রহ. কে প্রশ্ন করা হয়েছিল, সকলে কি স্বপ্নের তাবীর বা ব্যাখ্যা করবে?
তিনি বলেছিলেন, নবুওয়তের একটি বিষয় নিয়ে কি তামাশা করা যায়?
যে ব্যক্তি সঠিক ও সুন্দরভাবে স্বপ্নের ব্যাখ্যা দিতে জানবে, শুধু সে-ই ব্যাখ্যা দেবে। যদি স্বপ্নটা ভাল হয়, তাহলে বলে দেবে। আর যদি স্বপ্নটা খারাপ হয়, তাহলে ভাল ব্যাখ্যা দেবে। তা সম্ভব না হলে চুপ থাকবে।
(মুসান্নাফ ইবনু আবি শাইবা)
সৌদী আরবের প্রখ্যাত আলেম, ও আল-কোরআনের তাফসীরবিদ, শায়খ আব্দুর রহমান আস সাদী রহ. বলতেন : স্বপ্নের তাবীর বা ব্যাখ্যা উলূমুশ শরইয়্যার একটি বিষয়। এটি শিক্ষা করা ও শিক্ষা দান করার কারণে আল্লাহ তাআলা সওয়াব ও প্রতিদান দেবেন।
(তাইসীরুল কারীম আর রহমান ফী তাফসীরিল কালামিল মান্নান)
সমাপ্ত
সংকলন: আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান
সম্পাদনা: ইকবাল হোছাইন মাছুম
সূত্র: ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন