Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

See Our Articles In Different Styles... Grid View List View

শনিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

মীলাদুন্নবী উদযাপন এবং এতে অংশগ্রহণ না করার কারণে পরিবারের যারা তিরস্কার করে, তাদের সাথে আচরণ করার পদ্ধতি

Views:

A+ A-

 মীলাদুন্নবী উদযাপন এবং এতে অংশগ্রহণ না করার কারণে পরিবারের যারা তিরস্কার করে, তাদের সাথে আচরণ করার পদ্ধতি



মীলাদুন্নবী উদযাপন এবং এতে অংশগ্রহণ না করার কারণে পরিবারের যারা তিরস্কার করে, তাদের সাথে আচরণ করার পদ্ধতি

প্রশ্ন: আমি মীলাদুন্নবী উদযাপন করি না, পরিবারের অন্যান্য সদস্য তা উদযাপন করে, তারা বলে : আমার ইসলাম নতুন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মহব্বত করি না, এ বিষয়ে আমার জন্য কোন উপদেশ আছে কি ?

উত্তর: আল-হামদুলিল্লাহ

প্রথমত :

প্রিয় ভাই, মীলাদুন্নবী ত্যাগ করে তুমি খুব ভাল কাজ করেছ, এটা মানুষের নিকট বহুল প্রচলিত একটি বিদআত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ করার কারণে যারা তোমাকে অপবাদ দেয়, ইসলামের আদর্শের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার কারণে যারা তোমাকে তিরস্কার করে, তাদের প্রতি তুমি ভ্রুক্ষেপ কর না আল্লাহ তা‘আলা এমন কোন রাসূল প্রেরণ করেননি তার কওমের নিকট, যার সাথে তার কওম উপহাস করেনি, যারা তার বিবেক ও দ্বীনের উপর অপবাদ আরোপ করেনি আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
كَذَلِكَ مَا أَتَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِهِمْ مِنْ رَسُولٍ إِلَّا قَالُوا سَاحِرٌ أَوْ مَجْنُونٌ
"এভাবে তাদের পূর্ববর্তীদের মধ্য থেকে যে রাসূলই এসেছে, তারা বলেছে, 'এ তো একজন যাদুকর অথবা উন্মাদ'।" সূরা যারিয়াত : (৫২) 
এসব নবী-রাসূলগণ তোমার আদর্শ, তাদের সুন্নত পালন করার তোমার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, তোমাকে যে কষ্ট স্পর্শ করে তার জন্য তুমি ধৈর্য ধারণ কর, আর তোমার রবের নিকট তার সাওয়াবের আশা কর


দ্বিতীয়ত :

তোমার জন্য উপদেশ : 

তাদের সাথে ঝগড়া ও বাদানুবাদ থেকে তুমি বিরত থাক, হ্যাঁ যদি তাদের মধ্যে কাউকে বুদ্ধিমান দেখ, যে শ্রবণ করবে ও উপকৃত হবে, তাহলে তাদেরকে তুমি বাছাই কর এবং মীলাদুন্নবীর বাস্তবতা, হুকুম ও মীলাদুন্নবীর সাথে সাংঘর্ষিক দলিল সম্পর্কে তাদেরকে অবহিত কর। তাদের নিকট তুমি ইত্তেবার ফজিলত ও বিদআতের অনিষ্ট বর্ণনা কর। এদের সাথে তোমার আলোচনা ও এদেরকে তোমার উপদেশ প্রদান ফলপ্রসূ হবে, ইনশাআল্লাহ।

১. তারা যেখানে শেষ করে, আমরা সেখান থেকেই আরম্ভ করব। যেমন তারা তোমাকে বলেছে : "তোমার ইসলাম নতুন"। আমরা বলব : কে পুরনো (আসল) দ্বীন ও ইসলামের অনুসরণ করে : মীলাদুন্নবী পালনকারী, না মীলাদুন্নবী ত্যাগকারী ? বিবেকী ও ইনসাফ পন্থী প্রত্যেকের নিকট এর সঠিক উত্তর একটি : মীলাদুন্নবী ত্যাগকারীই আসল ও পুরনো দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত। সাহাবায়ে কেরাম, তাদের অনুসারী তাবেঈ ও তাবেঈদের অনুসারী এবং তাদের পরে মিসরের উবাইদি যুগের আগ পর্যন্ত কেউ এ মীলাদুন্নবী পালন করেনি। এ ঈদের প্রচলন হয়েছে তাদের থেকে, অতএব কে নতুন ইসলামের অনুসারী ?!

২. আমরা দেখব রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অধিক মহব্বতকারী কারা : সাহাবায়ে কেরাম, না তাদের পরবর্তী লোকজন ? একজন বিবেকী ও ইনসাফ পূর্ণ ব্যক্তির নিকট অবশ্যই এর সঠিক উত্তর, সাহাবায়ে কেরাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অধিক মহব্বতকারী তারা মীলাদুন্নবী পালন করেছে, না ত্যাগ করেছে ?! অতএব এরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মহব্বতের ময়দানে কিভাবে তাদের প্রতিযোগী বা সমকক্ষ হিসেবে গণ্য হবে ?!

৩. আমরা জিজ্ঞাসা করব : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মহব্বতের অর্থ কী ? প্রত্যেক বিবেকী ও বুদ্ধিমানের নিকট এর উত্তর : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ অনুসরণ ও তার পথে চলা এসব মীলাদুন্নবী পালনকারীরা যদি তাদের নবীর আদর্শ আঁকড়ে ধরত এবং তাকে অনুসরণ করার পথ বেছে নিত, তাহলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মহব্বতকারী ও তার আনুগত্যকারী সাহাবায়ে কেরামের জন্য যা যথেষ্ট ছিল, এদের জন্যও তাই যথেষ্ট হতো। তারা অবশ্যই জানত যে, পূর্ববর্তী লোকদের অনুসরণের মধ্যেই সকল কল্যাণ, আর পরবর্তী লোকদের অনুসরণে রয়েছে সকল অকল্যাণ
কাদি আয়াদ -রাহিমাহুল্লাহ- বলেন : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মহব্বতের আলামত অধ্যায়ে :
"জেনে রেখ, যে ব্যক্তি কোন জিনিসকে মহব্বত করে, সে তাকে প্রাধান্য দেয় এবং তার অনুসরণকে অগ্রাধিকার দেয়, অন্যথায় তার মহব্বত সঠিক নয়, সে শুধু দাবিদার। অতএব সে ব্যক্তিই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সত্যিকার মহব্বতের ধারক, যার উপর মহব্বতের নিদর্শন প্রকাশ পায় যার মধ্যে প্রধান হচ্ছে : তার অনুসরণ করা, তার সুন্নত পালন করা, তার কথা ও কর্ম মেনে চলা, তার নির্দেশ বাস্তবায়ন করা, তার নিষেধ থেকে বিরত থাকা এবং স্বচ্ছলতা-অস্বচ্ছলতা, চঞ্চলতা-স্থবিরতা সব ক্ষেত্রেই তার আদব ও শিষ্টাচার অনুশীলন করা আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
قُلْ إِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَحِيمٌ
'বল, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাসো, তাহলে আমার অনুসরণ কর, আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন।' সূরা আলে-ইমরান : (৩১) 
আর তার বিধানকে প্রাধান্য দেয়া, তার আনুগত্যকে রিপু ও প্রবৃত্তির আনুগত্যের উপর অগ্রাধিকার দেয়া আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
وَالَّذِينَ تَبَوَّأُوا الدَّارَ وَالْإِيمَانَ مِنْ قَبْلِهِمْ يُحِبُّونَ مَنْ هَاجَرَ إِلَيْهِمْ وَلا يَجِدُونَ فِي صُدُورِهِمْ حَاجَةً مِمَّا أُوتُوا وَيُؤْثِرُونَ عَلَى أَنْفُسِهِمْ وَلَوْ كَانَ بِهِمْ خَصَاصَةٌ وَمَنْ يُوقَ شُحَّ نَفْسِهِ فَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ
'আর মুহাজিরদের আগমনের পূর্বে যারা মদিনাকে নিবাস হিসেবে গ্রহণ করেছিল এবং ঈমান এনেছিল (তাদের জন্যও এ সম্পদে অংশ রয়েছে), আর যারা তাদের কাছে হিজরত করে এসেছে তাদেরকে ভালবাসে। আর মুহাজিরদেরকে যা প্রদান করা হয়েছে তার জন্য এরা তাদের অন্তরে কোন ঈর্ষা অনুভব করে না। এবং নিজেদের অভাব থাকা সত্ত্বেও নিজেদের ওপর তাদেরকে অগ্রাধিকার দেয়।' সূরা হাশর : (৯) 
আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য বান্দার অসন্তুষ্ট পরোয়া না করাও এর অন্তর্ভুক্ত
অতএব যার মধ্যে এসব গুণাগুণ বিদ্যমান সেই আল্লাহ ও তার রাসূলকে প্রকৃত পক্ষে মহব্বত করে, আর যার মধ্যে এসব গুণ পুরোপুরি বিদ্যমান নেই, তার মহব্বত অসম্পূর্ণ, যদিও সে এ মহব্বত থেকে একেবারে বাদ যাবে না।" "আশ-শিফা বি তারিফি হুকুল মুস্তাফা" : (২/২৪-২৫)

৪. আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্ম তারিখ দেখব, এর নির্দিষ্ট তারিখ জানার চেষ্টা করব, আদৌ কেউ তা নির্দিষ্ট করতে পেরেছে ? অতঃপর দেখব তার মৃত্যু তারিখ, তা নির্দিষ্ট না-অনির্দিষ্ট ?
নিশ্চয় প্রত্যেক বিবেকী ও ইনসাফ পূর্ণ লোকের নিকট এর সঠিক উত্তর এই যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জন্ম তারিখ নির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি, পক্ষান্তরে তার মৃত্যু তারিখ নির্দিষ্টভাবে প্রমাণিত
আমরা যদি সিরাতের বিভিন্ন গ্রন্থ দেখি, তাহলে জানতে পারি যে, তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্ম তারিখ সম্পর্কে বিভিন্ন অভিমত পেশ করেছেন, যেমন :
১. রবিউল আউয়াল মাসের দ্বিতীয় তারিখ সোমবার
২. রবিউল আউয়াল মাসের আট তারিখ
৩. রবিউল আউয়াল মাসের দশ তারিখ
৪. রবিউল আউয়াল মাসের বারো তারিখ
৫. জুবায়ের ইবন বাক্কার বলেছেন : তিনি জন্ম গ্রহণ করেছেন রমযানে
যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মের সাথে দ্বীনি কোন বিষয় জড়িত থাকত, তাহলে অবশ্যই সাহাবায়ে কেরাম এর নির্দিষ্ট তারিখ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতেন, অথবা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই এর নির্দিষ্ট তারিখ জানিয়ে দিতেন, কিন্তু এর কিছুই হয়নি
পক্ষান্তরে তার মৃত্যু : এ ব্যাপারে সকলে একমত যে, তিনি এগারো হিজরির বারো রবিউল আউয়াল সোমবার মারা যান।
বেদ্বীনএরপর দেখব এ বিদআতিরা কখন মীলাদুন্নবী পালন করে ? নিশ্চয় তারা তার মৃত্যু তারিখে মীলাদুন্নবী পালন করে, জন্মের তারিখে নয় ! উবাইদিরা এর উপরই অটল ছিল, যারা নিজেদের বংশ পরিবর্তন করে নাম রেখেছিল "ফাতেমি", ফাতেমা -রাদিআল্লাহু আনহা-র সাথে সম্পৃক্ত করে। তারা নিজেদের দাবি অনুসারে বাতেনি হিসেবে পরিচিত ছিল তারা এ তারিখটি খুব আনন্দের সাথে গ্রহণ করে, তারা ছিল বেদ্বীন ও মুরতাদ, তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যু দিবসে আনন্দ করার মানসে এ উৎসব রচনা করে তারা এতে বিভিন্ন মাহফিলের আয়োজন করে নিজেদের আনন্দ প্রকাশ করে। এর আড়ালে তারা কতক সরল মুসলমানকে ধোঁকা দিতে সক্ষম হয়, তারা বলে এসব অনুষ্ঠানে যারা তাদের অনুসরণ করবে, তারা প্রকৃত পক্ষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মহব্বত করে এভাবেই তারা তাদের দুষ্কর্ম ও ষড়যন্ত্রে সফলতা লাভ করে। তারা আরও কৃতকার্য হয় মহব্বতের অর্থ বিকৃত করার ক্ষেত্রে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মহব্বত তারা মীলাদুন্নবীর কবিতা আবৃতি, রুটি ও মিষ্টি বণ্টনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখে, এতে তারা নাচ-গানের ব্যবস্থা করে, নারী-পুরুষের সংমিশ্রণ ঘটায়, বাদ্যযন্ত্র, বেহায়াপনা ও অশ্লীলতা তো রয়েছেই, উপরন্তু এসব মজলিসে বিদআতি ওসিলা এবং শিরকি কালিমা পাঠ ও আবৃত্তি করা হয়

তৃতীয়ত : 

প্রশ্নকারী ভাই, তুমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্যের উপর ধৈর্যধারণ কর, বিরোধীদের সংখ্যাধিক্যের কারণে ধোঁকায় পতিত হয়ো না, তোমাকে ইলম অর্জন করার উপদেশ দিচ্ছি এবং মানুষের উপকারী বস্তুতে আত্মনিয়োগ করার পরামর্শ দিচ্ছি। এ কারণে তুমি পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ো না, তারা অন্যদের অনুসরণ করে, যারা মীলাদুন্নবীর বৈধতার ফতোয়া দেয়, বরং এটাকে মুস্তাহাব বলে ! তুমি নম্র-ভাবে তাদের প্রতিবাদ কর এবং সুন্দর কথা-কর্ম ও আদর্শ প্রকাশ কর, আর তাদেরকে তুমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্যের প্রভাব দেখাও তোমার চরিত্র ও ইবাদাতের মধ্যে। আল্লাহর নিকট তোমার জন্য তাওফিক প্রার্থনা করছি। আর আল্লাহ্‌ই ভাল জানেন।


সমাপ্ত

মুফতী: শাইখ মুহাম্মদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ
অনুবাদক: সানাউল্লাহ নজির আহমদ
সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
সূত্র: ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব








কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন