Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

See Our Articles In Different Styles... Grid View List View

বুধবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৮

আমাদের শেষ পরিণতি যেন ভাল হয়

Views:

A+ A-





আমাদের শেষ পরিণতি যেন ভাল হয়



শেষ পরিণতি বলতে যা বুঝায় তা হল, মানুষ মৃত্যুর পূর্বে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যা অ
ছন্দ করেন তা থেকে দূরে থাকবে, সকল পাপাচার থেকে তাওবা করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে তার আনুগত্যে আত্ননিয়োগ করবে ও সৎ কাজ করতে অগ্রণী হবে। এবং এ ভাল অবস্থায় তার ইন্তেকাল হবে। এমন হলেই বলা হবে তার শেষ পরিণতি ভাল হয়েছে। ভাল পরিনতি সম্পর্কে এ কথা হাদিসে এসেছে,


ﻋﻦ ﺃﻧﺲ ﺑﻦ ﻣﺎﻟﻚ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻗﺎﻝ : ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : ‏( ﺇﺫﺍ ﺃﺭﺍﺩ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻌﺒﺪﻩ ﺧﻴﺮﺍ ﺍﺳﺘﻌﻤﻠﻪ ‏) ﻗﺎﻟﻮﺍ : ﻛﻴﻒ ﻳﺴﺘﻌﻤﻠﻪ؟ ﻗﺎﻝ : ‏( ﻳﻮﻓﻘﻪ ﻟﻌﻤﻞ ﺻﺎﻟﺢ ﻗﺒﻞ ﻣﻮﺗﻪ ‏) ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺣﻤﺪ
(১২০৩৬)


সাহাবী আনাস ইবনে মালেক রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : 'যখন আল্লাহ কোন মানুষের কল্যাণ করতে চান তখন তাকে সুযোগ করে দেন।" সাহাবাগন জিজ্ঞেস করলেন, তিনি কিভাবে সুযোগ করে দেন ? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: 'মৃত্যুর পূর্বে তাকে সৎকাজ করার সামর্থ দান করেন।'[১]।


শেষ পরিণতি ভাল হওয়ার কিছু আলামত রয়েছে। কিছু আলামত এমন যা মৃত্যুকালে মুমিন ব্যক্তি নিজে অনুভব করে, মানুষের কাছে প্রকাশ পায় না, আর কিছু আছে যা মানুষের কাছে প্রকাশিত হয়।



যে আলামতগুলো বান্দা নিজে মৃত্যুকালে উপলদ্ধি করে তা হল : মুত্যুকালে আল্লাহর সন্তুষ্টির সংবাদ, তাঁর অনুগ্রহ, যার সুসংবাদ ফিরিশ্তারা নিয়ে আসে। যেমন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন :


ﺇِﻥَّ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻗَﺎﻟُﻮﺍ ﺭَﺑُّﻨَﺎ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺛُﻢَّ ﺍﺳْﺘَﻘَﺎﻣُﻮﺍ ﺗَﺘَﻨَﺰَّﻝُ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢُ ﺍﻟْﻤَﻠَﺎﺋِﻜَﺔُ ﺃَﻟَّﺎ ﺗَﺨَﺎﻓُﻮﺍ ﻭَﻟَﺎ ﺗَﺤْﺰَﻧُﻮﺍ ﻭَﺃَﺑْﺸِﺮُﻭﺍ ﺑِﺎﻟْﺠَﻨَّﺔِ ﺍﻟَّﺘِﻲ ﻛُﻨْﺘُﻢْ ﺗُﻮﻋَﺪُﻭﻥَ . ﻧَﺤْﻦُ ﺃَﻭْﻟِﻴَﺎﺅُﻛُﻢْ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺤَﻴَﺎﺓِ ﺍﻟﺪُّﻧْﻴَﺎ ﻭَﻓِﻲ ﺍﻟْﺂَﺧِﺮَﺓِ ﻭَﻟَﻜُﻢْ ﻓِﻴﻬَﺎ ﻣَﺎ ﺗَﺸْﺘَﻬِﻲ ﺃَﻧْﻔُﺴُﻜُﻢْ ﻭَﻟَﻜُﻢْ ﻓِﻴﻬَﺎ ﻣَﺎ ﺗَﺪَّﻋُﻮﻥَ . ﻧُﺰُﻟًﺎ ﻣِﻦْ ﻏَﻔُﻮﺭٍ ﺭَﺣِﻴﻢٍ ﴿ ﻓﺼﻠﺖ :৩০- ৩২ ﴾


'যারা বলে, আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ, অত:পর অবিচল থাকে, তাদের নিকট অবতীর্ন হয় ফিরিশ্তা এবং বলে, 'তোমরা ভীত হয়োনা, চিন্তিত হয়োনা, এবং তোমাদেরকে যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল তার জন্য আনন্দিত হও। 'আমরাই তোমাদের বন্ধু দুনিয়ার জীবনে এবং আখিরাতে। সেখানে তোমাদের জন্য রয়েছে যা কিছু তোমাদের মন চায় এবং সেখানে তোমাদের জন্য রয়েছে যা কিছু তোমরা আদেশ কর।' এটা ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু আল্লাহর পক্ষ থেকে আপ্যায়ন।'[২]


ফিরিশ্তারা এ সুসংবাদ যেমন মৃত্যুকালে দেয় তেমনি কবরে অবস্থানকালে দেয় এবং কবর থেকে পুনরুত্থানের সময়ও দেবে। হাদিসে এর বর্ণনা এসেছে,


ﻋﻦ ﻋﺎﺋﺸﺔ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﺎ ﻗﺎﻟﺖ : ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : ‏( ﻣﻦ ﺃﺣﺐ ﻟﻘﺎﺀ ﺍﻟﻠﻪ ﺃﺣﺐ ﺍﻟﻠﻪ ﻟﻘﺎﺋﻪ، ﻭﻣﻦ ﻛﺮﻩ ﻟﻘﺎﺀ ﺍﻟﻠﻪ ﻛﺮﻩ ﺍﻟﻠﻪ ﻟﻘﺎﺋﻪ ‏) ﻓﻘﻠﺖ ﻳﺎ ﻧﺒﻲ ﺍﻟﻠﻪ : ﺃﻛﺮﺍﻫﻴﺔ ﺍﻟﻤﻮﺕ ؟ ﻓﻜﻠﻨﺎ ﻧﻜﺮﻩ ﺍﻟﻤﻮﺕ ! ﻓﻘﺎﻝ : ‏( ﻟﻴﺲ ﻛﺬﻟﻚ، ﻭﻟﻜﻦ ﺍﻟﻤﺆﻣﻦ ﺇﺫﺍ ﺑﺸﺮ ﺑﺮﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺭﺿﻮﺍﻧﻪ ﻭﺟﻨﺘﻪ ﺃﺣﺐ ﻟﻘﺎﺀ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﺄﺣﺐ ﺍﻟﻠﻪ ﻟﻘﺎﺋﻪ، ﻭﺇﻥ ﺍﻟﻜﺎﻓﺮ ﺇﺫﺍ ﺑﺸﺮ ﺑﻌﺬﺍﺏ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺳﺨﻄﻪ ﻛﺮﻩ ﻟﻘﺎﺀ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻜﺮﻩ ﺍﻟﻠﻪ ﻟﻘﺎﺋﻪ . ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ (২৬৮৪)


আয়েশা রা. বলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন : 'যে আল্লাহর সাথে সাক্ষাতকে ভালবাসে আল্লাহও তার সাথে সাক্ষাত করাকে ভালবাসেন। আর যে আল্লাহর সাথে সাক্ষাতকে অপছন্দ করে আল্লাহ তার সাথে সাক্ষাতকে অপছন্দ করেন।" আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে নবী ! সাক্ষাতকে অপছন্দ করার অর্থ কি মৃত্যুকে অপছন্দ করা? আমরাতো সকলেই মৃত্যুকে অপছন্দ করে থাকি! তিনি বললেন : 'ব্যাপারটা আসলে এমন নয়। বিষয়টা হল, মুমিন ব্যক্তিকে যখন আল্লাহর রহমত, তার সন্তুষ্টি ও জান্নাতের সুসংবাদ দেয়া হয় তখন সে আল্লাহর সাথে সাক্ষাতকে ভালবাসতে থাকে। ফলে আল্লাহ তাআলা তার সাথে সাক্ষাতকে ভালবাসেন। আর যখন আল্লাহর অবাধ্য মানুষকে আল্লাহর শাস্তি ও তার ক্রোধের খবর দেয়া হয় তখন সে আল্লাহর সাক্ষাতকে অপছন্দ করে। ফলে আল্লাহও তার সাক্ষাতকে অপছন্দ করেন।'[৩]


এ হাদিসে মৃত্যুকে পছন্দ আর অপছন্দ করার যে কথা বলা হয়েছে তা হল মৃত্যু যখন উপস্থিত হয়ে যায় ও তাওবার দরজা বন্ধ হয়ে যায় তখনকার সময়। মৃত্যু উপস্থিত হলে মুমিন ব্যক্তি সুসংবাদ পেয়ে মৃত্যুকে ভালবাসে আর আল্লাহর অবাধ্য ব্যক্তি তখন মৃত্যুকে ঘৃণা করে।


আল্লাহর সাথে সাক্ষাতকে ভালবাসার প্রমাণ হল পরকালকে সর্বদা পার্থিব জীবনের উপর প্রাধান্য দেবে। দুনিয়াতে চিরদিন অবস্থান করার আশা করবে না বরং পরকালীন জীবনের জন্য সৎকর্মের মাধ্যমে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকবে।


আর আল্লাহর সাথে সাক্ষাতকে অপছন্দ করার বিষয়টি হল ঠিক এর বিপরীত। অর্থাৎ তারা দুনিয়ার জীবনকে পরকালের উপর প্রাধান্য দেয় এবং পরকালের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করে না। এদের তিরস্কার করে আল্লাহ বলেন,


ﺇِﻥَّ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻟَﺎ ﻳَﺮْﺟُﻮﻥَ ﻟِﻘَﺎﺀَﻧَﺎ ﻭَﺭَﺿُﻮﺍ ﺑِﺎﻟْﺤَﻴَﺎﺓِ ﺍﻟﺪُّﻧْﻴَﺎ ﻭَﺍﻃْﻤَﺄَﻧُّﻮﺍ ﺑِﻬَﺎ ... ﴿ﻳﻮﻧﺲ : ৭ ﴾


'নিশ্চয়ই যারা আমার সাক্ষাতের আশা পোষণ করে না এবং পার্থিব জীবনেই সন্তুষ্ট এবং এতে পরিতৃপ্ত থাকে . . .।'[৪]

আর মৃত্যুকালে ভাল পরিণতির যে সকল আলামত মানুষের কাছে প্রকাশিত হয় তার সংখ্যা অনেক। কয়েকটি নিম্নে আলোচনা করা হল :



(১) নেক আমল করা অবস্থায় মৃত্যু বরণ করা।


রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :


ﻣﻦ ﻗﺎﻝ ﻻ ﺇﻟﻪ ﺇﻻ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﺑﺘﻐﺎﺀ ﻭﺟﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﺧﺘﻢ ﻟﻪ ﺑﻬﺎ ﺩﺧﻞ ﺍﻟﺠﻨﺔ، ﻭﻣﻦ ﺻﺎﻡ ﻳﻮﻣﺎ ﺍﺑﺘﻐﺎﺀ ﻭﺟﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﺧﺘﻢ ﻟﻪ ﺑﻬﺎ ﺩﺧﻞ ﺍﻟﺠﻨﺔ، ﻭﻣﻦ ﺗﺼﺪﻕ ﺑﺼﺪﻗﺔ ﺧﺘﻢ ﻟﻪ ﺑﻬﺎ ﺩﺧﻞ ﺍﻟﺠﻨﺔ . ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺣﻤﺪ (২৩৩২৪)


'যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য বলবে, 'আল্লাহ ব্যতিত কোন উপাস্য নেই' এবং এ কথার সাথে তার জীবন শেষ হবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। যে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সওম পালন করবে এবং এ কাজের সাথে তার জীবন শেষ হবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। যে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য ছদকাহ করবে এবং এর সাথে তার জীবন শেষ হবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।'[৫]


(২) মৃত্যৃকালে কালেমার স্বাক্ষ্য দেয়া।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,



ﻣﻦ ﻛﺎﻥ ﺁﺧﺮ ﻛﻼﻣﻪ ﻻ ﺇﻟﻪ ﺇﻻ ﺍﻟﻠﻪ ﺩﺧﻞ ﺍﻟﺠﻨﺔ . ﺃﺧﺮﺟﻪ ﺍﻟﺤﺎﻛﻢ
(১২৯৯)



'যার শেষ কথা হবে 'আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই' সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।'[৬]


(৩) আল্লাহর পথে সীমান্ত পাহাড়ারত অবস্থায় মৃত্যু বরণ করা।


রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,



ﺭﺑﺎﻁ ﻳﻮﻡ ﻭﻟﻴﻠﺔ ﺧﻴﺮ ﻣﻦ ﺻﻴﺎﻡ ﺷﻬﺮ ﻭﻗﻴﺎﻣﻪ، ﻭﺇﻥ ﻣﺎﺕ ﺟﺮﻯ ﻋﻠﻴﻪ ﻋﻤﻠﻪ ﺍﻟﺬﻱ ﻛﺎﻥ ﻳﻌﻤﻠﻪ، ﻭﺃﺟﺮﻱ ﻋﻠﻴﻪ ﺭﺯﻗـﻪ، ﻭﺃﻣﻦ ﺍﻟﻔﺘﺎﻥ . ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ (১৯১৩)



'আল্লাহর পথে একদিন ও এক রাত সীমান্ত পাহাড়া দেয়া এক মাস ধরে সিয়াম পালন ও একমাস ধরে রাতে সালাত আদায়ের চেয়ে বেশী কল্যাণকর। যদি এ অবস্থায় সে মৃত্যু বরণ করে তাহলে যে কাজ সে করে যাচিছল মৃত্যুর পরও তা তার জন্য অব্যাহত থাকবে, তার রিজিক জারী থাকবে, কবর-হাশরের ফিৎনা থেকে সে নিরাপদ থাকবে।'[৭]


(৪) কপালে ঘাম নিয়ে মৃত্যু বরণ করা।


মৃত্যুর সময় মৃত্যু ব্যক্তির কপালে ঘাম দেখা দিলে বুঝতে হবে তার শেষ পরিণতি ভাল হয়েছে। যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,


ﻣﻮﺕ ﺍﻟﻤﺆﻣﻦ ﺑﻌﺮﻕ ﺍﻟﺠﺒﻴﻦ . ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﻨﺴﺎﺋﻲ (১৮২৯) ﻭﺻﺤﺤﻪ ﺍﻷﻟﺒﺎﻧﻲ .


'ঈমানদারের মৃত্যু হল কপালের ঘামের সাথে।'[৮]
অর্থাৎ যে মুমিন ব্যক্তির মৃত্যুকালে কপালে ঘাম দেখা যাবে ধরে নেয়া হবে তার ভাল মৃত্যু হয়েছে।



(৫) শুক্রবার দিনে অথবা রাতে মৃত্যু বরণ করা।



রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,


ﻣﺎ ﻣﻦ ﻣﺴﻠﻢ ﻳﻤﻮﺕ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ﺃﻭ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ﺇﻻ ﻭﻗـﺎﻩ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﺘﻨﺔ ﺍﻟﻘﺒﺮ . ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ (১০৭৪) ﻭﺻﺤﺤﻪ ﺍﻷﻟﺒﺎﻧﻲ .


'যে মুসলিম শুক্রবার দিবসে অথবা রাতে ইন্তেকাল করবে আল্লাহ তাআলা তাকে কবরের আজাব থেকে রেহাই দেবেন।'[৯]
শুক্রবার রাত বলতে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতকে বুঝানো হয়ে থাকে।



(৬) এমনভাবে মৃত্যুবরণ করা যাকে শহীদি মৃত্যু হিসেবে গণ্য করা হয় :
এ রকম মৃত্যু কয়েক প্রকারে হয়ে থাকে যা নিম্নে তুলে ধরা হল:


(ক) আল্লাহর পথে যুদ্ধে নিহত হওয়া, প্লেগ মহামারীতে মৃত্যু বরণ করা, পেটের পীড়া বা কলেরা ডায়রিয়াতে মৃত্যু বরণ করা, পানিতে ডুবে মৃত্যু বরণ করা, কিছু চাপা পড়ে মৃত্যু বরণ করা। এদের সকলের মৃত্যু শহীদি মৃত্যু বলে গণ্য করা হয়।
প্রমাণ হল রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদীস :


ﻣﺎ ﺗﻌﺪﻭﻥ ﺍﻟﺸﻬﻴﺪ ﻓﻴﻜﻢ ؟ ﻗﺎﻟﻮﺍ : ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ، ﻣﻦ ﻗﺘﻞ ﻓﻲ ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻬﻮ ﺷﻬﻴﺪ، ﻗﺎﻝ : ﺇﻥ ﺷﻬﺪﺍﺀ ﺃﻣﺘﻲ ﺇﺫﺍ ﻟﻘﻠﻴﻞ، ﻗﺎﻟﻮﺍ : ﻓﻤﻦ ﻫﻢ ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ؟ ﻗﺎﻝ : ﻣﻦ ﻗﺘﻞ ﻓﻲ ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻬﻮ ﺷﻬﻴﺪ، ﻭﻣﻦ ﻣﺎﺕ ﻓﻲ ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻬﻮ ﺷﻬﻴﺪ، ﻭﻣﻦ ﻣﺎﺕ ﻓﻲ ﺍﻟﻄﺎﻋﻮﻥ ﻓﻬﻮ ﺷﻬﻴﺪ، ﻭﻣﻦ ﻣﺎﺕ ﻓﻲ ﺍﻟﺒﻄﻦ ﻓﻬﻮ ﺷﻬﻴﺪ، ﻭﺍﻟﻐﺮﻳﻖ ﺷﻬﻴﺪ . ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ (৪৯৪১)
তিনি জিজ্ঞেস করলেন, 'তোমরা কাদের শহীদ বলে গণ্য কর?' সাহাবাগন উত্তর দিলেন, হে রাসূল ! যারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে নিহত হন তাদের শহীদ বলে গণ্য করা হয়। এ কথা শুনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন : 'তাহলে তো আমার উম্মতের মধ্যে শহীদদের সংখ্যা অত্যন্ত কম হবে।" সাহাবাগণ বললেন, হে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাহলে শহীদ কারা ? তিনি বললেন: 'যে আল্লাহর পথে যুদ্ধে নিহত হয় সে শহীদ। যে আল্লাহর পথে যুদ্ধে (স্বাভাবিক ভাবে) মারা যায় সে শহীদ। যে প্লেগ মহামারীতে মারা যায় সে শহীদ। যে পেটের অশুখে মারা যায় সে শহীদ। যে ডুবে মারা যায় সে শহীদ।'[১০]
অন্য হাদিসে এসেছে,



ﺍﻟﺸﻬﺪﺍﺀ ﺧﻤﺴﺔ : ﺍﻟﻤﻄﻌﻮﻥ، ﺍﻟﻤﺒﻄﻮﻥ، ﺍﻟﻐﺮﻕ، ﻭﺻﺎﺣﺐ ﺍﻟﻬﺪﻡ، ﻭﺍﻟﺸﻬﻴﺪ ﻓﻲ ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﻠﻪ . ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ (৬৫৩)


'শহীদ পাঁচ প্রকার : প্লেগে মৃত্যু বরণকারী, পেটের পীড়ায় মৃত্যু বরণকারী, ডুবে মৃত্যু বরণকারী, চাপা পড়ে মৃত্যু বরণকারী ও আল্লাহর পথে যুদ্ধে মৃত্যু বরণকারী।'[১১]


(খ) সন্তান প্রসবের কারণে মৃত্যু বরণ করা। এটা শুধু মেয়েদের জন্য।


রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শহীদ এর বর্ণনা করে বলেছেন,


ﻭﺍﻟﻤﺮﺃﺓ ﺍﻟﺘﻲ ﻳﻘﺘﻠﻬﺎ ﻭﻟﺪﻫﺎ ﺟﻤﻌﺎ ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺣﻤﺪ (২২৬৮৪)


'এবং যে মহিলাকে তার সন্তান হত্যা করেছে।'[১২]



উলামায়ে কেরাম বলেছেন এ হাদিসের অর্থ হল যে মহিলা সন্তান গর্ভ ধারণ অবস্থায় ইন্তেকাল করেছে সে শহীদ বলে গণ্য। আরেক হাদিসে এসেছে,



ﻭﺍﻟﻨﻔﺴﺎﺀ ﺷﻬﺎﺩﺓ . ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺣﻤﺪ (৮০৯২)


এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় সন্তান প্রসবের পর প্রসবজনিত জটিলতায় ইন্তেকাল করলে শহীদ হিসেবে গণ্য হবে।



(গ) অগ্নি দগ্ধ বা প্যারালাইসিস হয়ে মৃত্যু বরণকারী শহীদ।
যার প্রমাণ,


ﺃﻧﻪ ... ﻋﺪﺩ ﺃﺻﻨﺎﻓﺎ ﻣﻦ ﺍﻟﺸﻬﺪﺍﺀ ﻓﺬﻛﺮ ﻣﻨﻬﻢ ﺍﻟﺤﺮﻕ، ﻭﺻﺎﺣﺐ ﺫﺍﺕ ﺍﻟﺠﻨﺐ . ﺭﻭﺍﻩ ﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﻪ (২৮০৩)


এক সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কয়েক প্রকার শহীদ হিসাব করেছেন, তার ভেতর অগ্নিদগ্ধ এবং প্যারালাইসিস রোগীও রয়েছে।[১৪]



(গ) নিজেকে বা নিজের পরিবারের কাউকে অথবা নিজের সম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে নিহত হওয়া।



রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,


ﻣﻦ ﻗﺘﻞ ﺩﻭﻥ ﻣﺎﻟﻪ ﻓﻬﻮ ﺷﻬﻴﺪ، ﻭﻣﻦ ﻗﺘﻞ ﺩﻭﻥ ﺃﻫﻠﻪ ﻓﻬﻮ ﺷﻬﻴﺪ، ﻭﻣﻦ ﻗﺘﻞ ﺩﻭﻥ ﺩﻳﻨﻪ ﻓﻬﻮ ﺷﻬﻴﺪ، ﻭﻣﻦ ﻗﺘﻞ ﺩﻭﻥ ﺩﻣﻪ ﻓﻬﻮ ﺷﻬﻴﺪ . ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺑﻮ ﺩﺍﻭﺩ (৪৭৭২) ، ﻭﺻﺤﺤﻪ ﺍﻷﻟﺒﺎﻧﻲ .


'যে নিজের সম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে নিহত হয় সে শহীদ। যে নিজের পরিবার-পরিজন রক্ষা করতে যেয়ে নিহত হয় সে শহীদ। যে নিজের ধর্মের জন্য নিহত হয় সে শহীদ। যে নিজের রক্তের জন্য নিহত হয় সে শহীদ।'[১৫]
একটি কথা মনে রাখা দরকার, তা হল যে বর্ণিত অবস্থা সমূহের কোন অবস্থায় মৃত্যু বরণ করবে তার ব্যাপারে এ কথা নিশ্চিতভাবে বলা ঠিক হবে না যে, সে জান্নাতে প্রবেশ করেছে। বরং তার ব্যাপারে আমরা সুসংবাদ গ্রহণ করতে পারি। এমনিভাবে যদি কোন মুসলিম এ সকল আলামতের কোন একটি না নিয়ে মৃত্যু বরণ করে তার ব্যাপারে বলা যাবে না যে লোকটি আসলে ভাল নয়। কে জান্নাত বাসী হয়েছে আর কার মৃত্যু খারাপ হয়েছে ইত্যাদি গায়েব বা অদৃশ্যের খবর। আর কোন মানুষই গায়েবের খবর রাখে না।



শেষ পরিণতি ভাল করার কিছু উপায়



এক. আল্লাহর আনুগত্য ও তাকওয়া অবলম্বন করা :
আল্লাহর আনুগত্য ও তাকওয়ার মুল হল সর্ব ক্ষেত্রে আল্লাহর তাওহীদ তথা একাত্ববাদ প্রতিষ্ঠা। এটা হল; সকল প্রকার ফরজ ওয়াজিব আদায়, সব ধরণের পাপাচার থেকে সাবধান থাকা, অবিলম্বে তাওবা করা ও সকল প্রকার ছোট-বড় শিরক থেকে মুক্ত থাকা।



দুই. বাহ্যিক ও আধ্যাতিক অবস্থা উন্নত করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করা:
প্রথমে নিজেকে সংশোধন করার জন্য দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করতে হবে। যে নিজেকে সংশোধন করার জন্য চেষ্টা করবে আল্লাহ তার নীতি অনুযায়ী তাকে সংশোধনের সামর্থ দান করবেন। এর জন্যে প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য সকল ব্যাপারে তাকওয়া অবলম্বন করা অর্থাৎ আল্লাহকে ভয় এবং আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আদর্শ অনুসরণ করা। এটাই মুক্তির পথ। আল্লাহ তাআলা বলেন :


ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁَﻣَﻨُﻮﺍ ﺍﺗَّﻘُﻮﺍ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﺣَﻖَّ ﺗُﻘَﺎﺗِﻪِ ﻭَﻟَﺎ ﺗَﻤُﻮﺗُﻦَّ ﺇِﻟَّﺎ ﻭَﺃَﻧْﺘُﻢْ ﻣُﺴْﻠِﻤُﻮﻥَ ﴿ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ : ১০২﴾


'হে মুমিনগন! তোমরা আল্লাহকে যথার্থভাবে ভয় কর এবং তোমরা মুসলিম না হয়ে মৃত্যুবরণ করোনা।'[১৬]
আল্লাহ আরো বলেন,


ﻭَﺍﻋْﺒُﺪْ ﺭَﺑَّﻚَ ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﺄْﺗِﻴَﻚَ ﺍﻟْﻴَﻘِﻴﻦُ ﴿ﺍﻟﺤﺠﺮ : ৯৯ ﴾


'তোমার মৃত্যু উপস্থিত হওয়া পর্যন্ত তুমি তোমার প্রতিপালকের এবাদত কর।'[১৭]
ঈমানদার ব্যক্তির কর্তব্য হল সর্বদা পাপ থেকে সাবধান থাকবে। কবীরা গুনাহকে বলা হয় মুবিকাত বা ধ্বংসকারী। আর অব্যাহত ছগীরা গুনাহ কবীরা গুনাহতে পরিণত হয়ে থাকে। বার বার ছগীরা করলে অন্তরে জং ধরে যায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,


ﺇﻳﺎﻛﻢ ﻭﻣﺤﻘﺮﺍﺕ ﺍﻟﺬﻧﻮﺏ، ﻓﺈﻧﻤﺎ ﻣﺜﻞ ﻣﺤﻘﺮﺍﺕ ﺍﻟﺬﻧﻮﺏ ﻛﻘﻮﻡ ﻧﺰﻟﻮﺍ ﺑﻄﻦ ﻭﺍﺩ، ﻓﺠﺎﺀ ﺫﺍ ﺑﻌﻮﺩ، ﻭﺟﺎﺀ ﺫﺍ ﺑﻌﻮﺩ، ﺣﺘﻰ ﺃﻧﻀﺠﻮﺍ ﺧﺒﺰﺗﻬﻢ، ﻭﺇﻥ ﻣﺤﻘﺮﺍﺕ ﺍﻟﺬﻧﻮﺏ ﻣﺘﻰ ﻳﺆﺧﺬ ﺑﻬﺎ ﺻﺎﺣﺒﻬﺎ ﺗﻬﻠﻜﻪ . ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺣﻤﺪ (২২৮০৮) ﻭﺻﺤﺤﻪ ﺍﻷﻟﺒﺎﻧﻲ ﻓﻲ ﺍﻟﺠﺎﻣﻊ .


'তোমরা ছোট ছোট গুনাহ থেকে সাবধান থাকবে। ছোট গুনাহে লিপ্ত হয়ে পড়ার দৃষ্টান্ত হল সেই পর্যটক দলের মত যারা একটি উপত্যকায় অবস্থান করল। অত:পর একজন একজন করে তাদের জ্বালানী কাঠগুলো অল্প অল্প করে জালিয়ে তাপ নিতে থাকল, পরিনতিতে তাদের রুটি তৈরী করার জন্য কিছুই অবশিষ্ট রইল না।'[১৮]
কখনো কোন ধরণের পাপকে ছোট ভাবা ঠিক নয়। প্রখ্যাত সাহাবী আনাস রা. বলেন,


ﺇﻧﻜﻢ ﻟﺘﻌﻤﻠﻮﻥ ﺃﻋﻤﺎﻻ ﻫﻲ ﺃﺩﻕ ﻓﻲ ﺃﻋﻴﻨﻜﻢ ﻣﻦ ﺍﻟﺸﻌﺮ، ﺇﻥ ﻛﻨﺎ ﻟﻨﻌﺪﻫﺎ ﻋﻠﻰ ﻋﻬﺪ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻣﻦ ﺍﻟﻤﻮﺑﻘﺎﺕ . ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ (৬৪৯২)


'তোমরা অনেক কাজকে নিজেদের চোখে চুলের চেয়েও ছোট দেখ অথচ তা আমরা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগে ধ্বংসাত্নক কাজ মনে করতাম।'[১৯]
তিন. আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে সর্বদা কান্নাকাটি কওে তার কাছে ঈমান ও তাকওয়ার উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার তাওফীক প্রার্থনা করা। তিনি যেন তার সন্তুষ্টির সাথে মৃত্যুর তাওফীক দেন।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রায়ই এ দোয়া করতেন,



ﻳﺎ ﻣﻘﻠﺐ ﺍﻟﻘﻠﻮﺏ ﺛﺒﺖ ﻗﻠﺒﻲ ﻋﻠﻰ ﺩﻳﻨﻚ . ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ (২১৪০) ،
ﻭﺻﺤﺤﻪ، ﻭﺻﺤﺤﻪ ﺍﻷﻟﺒﺎﻧﻲ ﻓﻲ ﺻﺤﻴﺢ ﺍﻟﺠﺎﻣﻊ (৭৯৮৮)



'হে অন্তর পরিবর্তনকারী! আমার অন্তরকে আপনার দ্বীনের উপর অটল রাখেন।'[২০]


ইউসূফ (আ:) দোয়া করতেন :



ﺗَﻮَﻓَّﻨِﻲ ﻣُﺴْﻠِﻤًﺎ ﻭَﺃَﻟْﺤِﻘْﻨِﻲ ﺑِﺎﻟﺼَّﺎﻟِﺤِﻴﻦَ ﴿ﻳﻮﺳﻒ : ১০১﴾


'তুমি আমাকে মুসলিম হিসাবে মৃত্যু দাও এবং সৎকর্মপরায়নদের অন্তর্ভূক্ত কর।'[২১]



চার. আল্লাহর যিকিরে মশগুল থাকা


যে ব্যক্তি আল্লাহর স্মরণে লিপ্ত থাকে ও সকল কাজ-কর্ম আল্লাহর স্মরণের সাথে সম্পন্ন হবে তার শেষ পরিণতি শুভ হবে। যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :
ﻣﻦ ﻛﺎﻥ ﺁﺧﺮ ﻛﻼﻣﻪ ﻻ ﺇﻟﻪ ﺇﻻ ﺍﻟﻠﻪ ﺩﺧﻞ ﺍﻟﺠﻨﺔ . ﺃﺧﺮﺟﻪ ﺍﻟﺤﺎﻛﻢ
(১২৯৯) ، ﻭﺻﺤﺤﻪ، ﻭﺻﺤﺤﻪ ﺍﻷﻟﺒﺎﻧﻲ ﻓﻲ ﺻﺤﻴﺢ ﺍﻟﺠﺎﻣﻊ
(৬৪৭৯)



'যার শেষ কথা হবে 'আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই' সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।'[২২]



খারাপ পরিণতিতে মৃত্যু



খারাপ পরিণতির মৃত্যু হল আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের আদেশ-নিষেধ থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকা অবস্থায় মৃত্যু বরণ করা। এমতাবস্থায় সে আল্লাহ তাআলার অসন্তুষ্টি নিয়ে তার কাছে হাজিরা দিতে রওয়ানা দেয়। কত বড় দুর্ভাগ্য সেই ব্যক্তির যে বিভিন্ন পাপাচারে লিপ্ত থাকাকালীন সময়ে আল্লাহর কাছে উপস্থিত হওয়ার জন্য যাত্রা করে। মানুষের দুনিয়ার জীবনটা একটা মূল্যবান সম্পদ। যদি সে এ সম্পদকে কাজে লাগিয়ে আখিরাতের জন্য ভাল ব্যবসা করতে পারে এবং সেটা যদি লাভজনক হয় তবে তার উভয় জীবন সফল। আর যদি এর ব্যতিক্রম হয় তবে সে এমনভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হল যা আর কখনো পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হবে না। এটাই হল খারাপ পরিণতির মৃত্যু।
বুদ্ধিমান সেই ব্যক্তি যে আমৃত্যু তাকওয়া ও আল্লাহর এবাদত-বন্দেগীর মধ্যে সময় কাটিয়েছে।
এমন অনেক মানুষ দেখা যায় যারা সাড়া জীবন আল্লাহর এবাদত-বন্দেগীতে সময় কাটিয়েছে, সকল পাপাচার থেকে মুক্ত থেকেছে কিন্তু মৃত্যুর পুর্বে সে তার এ অবস্থা থেকে ফিরে গিয়েছে। যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,


ﻭﺇﻥ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﻟﻴﻌﻤﻞ ﺑﻌﻤﻞ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﺣﺘﻰ ﻣﺎ ﻳﻜﻮﻥ ﺑﻴﻨﻪ ﻭﺑﻴﻨﻬﺎ ﺇﻻ ﺫﺭﺍﻉ ﻓﻴﺴﺒﻖ ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﻜﺘﺎﺏ ، ﻓﻴﻌﻤﻞ ﺑﻌﻤﻞ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﻨﺎﺭ ﻓﻴﺪﺧﻠﻬﺎ . ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ (৩৩৩২) ، ﻭﻣﺴﻠﻢ(২৬৪৩)


'এক ব্যক্তি সাড়া জীবন জান্নাতের আমল করেছে। জান্নাত ও তার মধ্যে দূরত্ব ছিল মাত্র এক হাত। এমন সময় তার তাকদীর চলে আসল, সে জাহান্নামের কাজ করে বসল, ফলে সে জাহান্নামের অধিবাসী হয়ে গেল।'[২৩]
এর একটা দৃষ্টান্ত অন্য হাদিসে এসেছে এভাবে,


ﻋﻦ ﺳﻬﻞ ﺑﻦ ﺳﻌﺪ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﺃﻥ ﺭﺟﻼ ﻣﻦ ﺍﻟﻤﺴﻠﻤﻴﻦ ﻓﻲ ﺇﺣﺪﻯ ﺍﻟﻤﻌﺎﺭﻙ ﻣﻊ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺃﺑﻠﻰ ﺑﻼﺀ ﺷﺪﻳﺪﺍ، ﻓﺄﻋﺠﺐ ﺍﻟﺼﺤﺎﺑﺔ ﺑﺬﻟﻚ، ﻭﻗﺎﻟﻮﺍ : ﻣﺎ ﺃﺟﺰﺃ ﻣﻨﺎ ﺍﻟﻴﻮﻡ ﻛﻤﺎ ﺃﺟﺰﺃ ﻓﻼﻥ، ﻓﻘﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : ‏( ﺃﻣﺎ ﺃﻧﻪ ﻣﻦ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﻨﺎﺭ ‏) ﻓﻘﺎﻝ ﺑﻌﺾ ﺍﻟﺼﺤﺎﺑﺔ : ﺃﻳﻨﺎ ﻣﻦ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﺇﻥ ﻛﺎﻥ ﻫﺬﺍ ﻣﻦ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﻨﺎﺭ؟ ﻓﻘﺎﻝ ﺭﺟﻞ ﻣﻦ ﺍﻟﻘﻮﻡ : ﺃﻧﺎ ﺻﺎﺣﺒﻪ، ﺳﺄﻧﻈﺮ ﻣﺎﺫﺍ ﻳﻔﻌﻞ، ﻓﺘﺒﻌﻪ، ﻗﺎﻝ ﻓﺠﺮﺡ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﺟﺮﺣﺎ ﺷﺪﻳﺪﺍ ﻓﺎﺳﺘﻌﺠﻞ ﺍﻟﻤﻮﺕ، ﻓﻮﺿﻊ ﺳﻴﻔﻪ ﻓﻲ ﺍﻷﺭﺽ ﻭﺫﺑﺎﺑﻪ ﺑﻴﻦ ﺛﺪﻳـﻴﻪ، ﺛﻢ ﺗﺤﺎﻣﻞ ﻋﻠﻰ ﻧﻔﺴﻪ ﻓﻘﺘﻞ ﻧﻔﺴﻪ، ﻓﺮﺟﻊ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﺇﻟﻰ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓﻘﺎﻝ : ﺃﺷﻬﺪ ﺃﻧﻚ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ، ﻗﺎﻝ : ﻭﻣﺎ ﺫﺍﻙ ؟ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﺍﻟﺬﻱ ﺫﻛﺮﺕ ﺁﻧﻔﺎ ﺃﻧﻪ ﻣﻦ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﻨﺎﺭ، ﻓﺄﻋﻈﻢ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﺫﻟﻚ،ﻓﻘﻠﺖ ﺃﻧﺎ ﻟﻜﻢ ﺑﻪ،ﻓﺨﺮﺟﺖ ﻓﻲ ﻃﻠﺒﻪ، ﺣﺘﻰ ﺟﺮﺡ ﺟﺮﺣﺎ ﺷﺪﻳﺪﺍ ﻓﺎﺳﺘﻌﺠﻞ ﺍﻟﻤﻮﺕ، ﻓﻮﺿﻊ ﻧﺼﻞ ﺳﻴﻔﻪ ﺑﺎﻷﺭﺽ ﻭﺫﺑﺎﺑﻪ ﺑﻴﻦ ﺛﺪﻳـﻴﻪ، ﺛﻢ ﺗﺤﺎﻣﻞ ﻋﻠﻰ ﻧﻔﺴﻪ ﻓﻘﺘﻞ ﻧﻔﺴﻪ،ﻓﻘﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : ‏( ﺇﻥ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﻟﻴﻌﻤﻞ ﻋﻤﻞ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﻓﻴﻤﺎ ﻳﺒﺪﻭ ﻟﻠﻨﺎﺱ ﻭﻫﻮ ﻣﻦ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﻨﺎﺭ، ﻭﺇﻥ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﻟﻴﻌﻤﻞ ﻋﻤﻞ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﻨﺎﺭ ﻓﻴﻤﺎ ﻳﺒﺪﻭ ﻟﻠﻨﺎﺱ ﻭﻫﻮ ﻣﻦ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﻭﻓﻲ ﺑﻌﺾ ﺍﻟﺮﻭﺍﻳﺎﺕ ﺯﻳﺎﺩﺓ : ‏( ﻭﺇﻧﻤﺎ ﺍﻷﻋﻤﺎﻝ ﺑﺎﻟﺨﻮﺍﺗﻴﻢ ‏) . ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ (৬১২৮)
সাহাবী সাহাল বিন সাআদ বলেন, রাসূলুল্লাহর উপস্থিতিতে একবার এক যুদ্ধে দেখলাম এক ব্যক্তি অত্যন্ত বীরত্ব ও বে-পরোয়াভাবে শত্রু বাহিনীর উপর আক্রমন করছে ও তাতে নিজেও প্রচন্ডভাবে আহত হচ্ছে। তার বীরত্ব ও ত্যাগে সাহাবায়ে কেরাম মুগ্ধ হয়ে বললেন, আমাদের কারো পুরস্কার কি এ ব্যক্তির পুরস্কারের মত হবে ? এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: 'কিন্তু সে তো জাহান্নামী।' এ কথা শুনে অনেক সাহাবী বললেন, এই ব্যক্তি যদি জাহান্নামী হয় তা হলে জান্নাতে যাবে কে? দলের মধ্য থেকে এক ব্যক্তি বলল, আমি তার সাথে থাকব, দেখব সে কি করে? সে কথা মত তার সাথে থাকল। দেখা গেল সে খুব মারাত্মক ভাবে আহত হল। ধৈর্য ধারণ করে নিজেকে আর সামলাতে পারল না। নিজের তরবারী মাটিতে পুঁতে তার অগ্রভাগ নিজের পেটে ঢুকিয়ে আত্মহত্যা করল। সাহাবী এ ঘটনা প্রত্যক্ষ করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে এসে বলল ইয়া রাসূলাল্লাহ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আপনিই সত্যিকার রাসূল। তিনি বললেন সে কি? সাহাবী বললেন- কিছু আগে আপনি যে ব্যক্তির কথা বললেন যে সে জাহান্নামী ঠিকই সে জাহান্নামী। সাহাবারা বিস্ময় প্রকাশ করল। তখন তিনি বললেন আমি তোমাদেরকে এর কারণ বলছি। তারপর তিনি সংঘটিত ঘটনাটি সবিস্তারে বললেন তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন 'কোন কোন মানুষ জান্নাতের আমল করে মানুষ তা দেখে মনে করে সে জান্নাতী, অথচ সে জাহান্নামী। এমনিভাবে কোন কোন মানুষ জাহান্নামের আমল করে, মানুষ মনে করে সে জাহান্নামী, অথচ সে জান্নাতী।" কোন কোন বর্ণনায় এ বাক্যটি ও এসেছে তিনি বলেছেন: 'আমল (কর্ম) গ্রহণযোগ্য হবে শেষ পরিণতির বিচারে।'[২৪]



সাহাল বিন আস-সায়েদি বলেছেন,


ﻧﻈﺮ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺇﻟﻰ ﺭﺟﻞ ﻳﻘﺎﺗﻞ ﺍﻟﻤﺸﺮﻛﻴﻦ، ﻭﻛﺎﻥ ﻣﻦ ﺃﻋﻈﻢ ﺍﻟﻤﺴﻠﻤﻴﻦ ﻏﻨﺎﺀ ﻋﻨﻬﻢ، ﻓﻘﺎﻝ ﻣﻦ ﺃﺣﺐ ﺃﻥ ﻳﻨﻈﺮ ﺇﻟﻰ ﺭﺟﻞ ﻣﻦ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﻨﺎﺭ ﻓﻠﻴﻨﻈﺮ ﺇﻟﻰ ﻫﺬﺍ، ﻓﺘﺒﻌﻪ ﺭﺟﻞ ﻓﻠﻢ ﻳﺰﻝ ﻋﻠﻰ ﺫﻟﻚ، ﺣﺘﻰ ﺟﺮﺡ ﻓﺎﺳﺘﻌﺠﻞ ﺍﻟﻤﻮﺕ ﻓﻘﺎﻝ ﺑﺬﺑﺎﺑﺔ ﺳﻴﻔﻪ ﻓﻮﺿﻌﻪ ﺑﻴﻦ ﺛﺪﻳﻴﻪ ﻓﺘﺤﺎﻣﻞ ﻋﻠﻴﻪ ﺣﺘﻰ ﺧﺮﺝ ﻣﻦ ﺑﻴﻦ ﻛﺘﻔﻴﻪ، ﻓﻘﺎﻝ ﺍﻟﻨﺒﻲ ... ‏( ﺇﻥ ﺍﻟﻌﺒﺪ ﻟﻴﻌﻤﻞ ﻓﻴﻤﺎ ﻳﺮﻯ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻋﻤﻞ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﻭﺇﻧﻪ ﻟﻤﻦ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﻨﺎﺭ، ﻭﻳﻌﻤﻞ ﻓﻴﻤﺎ ﻳﺮﻯ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻋﻤﻞ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﻨﺎﺭ ﻭﻫﻮ ﻣﻦ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﻭﺇﻧﻤﺎ ﺍﻷﻋﻤﺎﻝ ﺑﺨﻮﺍﺗﻴﻤﻬﺎ ).


রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, কাফেরদের সাথে যুদ্ধেরত এক ব্যক্তির দিকে তাকালেন-যে লোকটি অন্যান্য মুসলমানদের তুলনায় ঐশ্বর্যবান ছিল-অত:পর বললেন, যে জাহান্নামি দেখতে চাও, সে একে দেখে নাও। একথা শুনে একজন লোক শেষ পযর্ন্ত তার পিছু নিচ্ছিল, সে লক্ষ্য করল, লোকটি আহত হল, আর দ্রুত সেচ্ছায় মৃত্যু বরণ করল। অর্থাৎ তলোয়ারের অগ্রভাগ বক্ষমাঝে বিদ্ধ করে, তার উপর ভর দিয়ে মাটিতে ওপুর হয়ে পড়ল, আর তলোয়ার তার দু'কাধের মধ্য দিয়ে পিষ্ঠবেধ করে বের হয়ে আসল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহর কতক বান্দা এমন আমল করে, মানুষ যা দেখে বাহ্যত মনে করে, সে জান্নাতবাসী, অথচ সে জাহান্নামী। আবার কতক বান্দা এমন আমল করে, মানুষ যা দেখে বাহ্যত মনে করে, সে জাহান্নামী। অথচ সে জান্নাতী। তবে নিশ্চিত, শেষ পরিণতির ভিত্তিতেই সকল আমল বিবেচ্য ও বিচার্য হয়।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ঐ সকল মুমিনদের প্রশংসা করেছেন যারা আল্লাহকে ভয় করার সাথে সাথে সুন্দরভাবে নেক আমল করে থাকে। তিনি বলেন :


ﺇِﻥَّ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻫُﻢْ ﻣِﻦْ ﺧَﺸْﻴَﺔِ ﺭَﺑِّﻬِﻢْ ﻣُﺸْﻔِﻘُﻮﻥَ . ﻭَﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻫُﻢْ ﺑِﺂَﻳَﺎﺕِ ﺭَﺑِّﻬِﻢْ ﻳُﺆْﻣِﻨُﻮﻥَ . ﻭَﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻫُﻢْ ﺑِﺮَﺑِّﻬِﻢْ ﻟَﺎ ﻳُﺸْﺮِﻛُﻮﻥَ . ﻭَﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳُﺆْﺗُﻮﻥَ ﻣَﺎ ﺁَﺗَﻮْﺍ ﻭَﻗُﻠُﻮﺑُﻬُﻢْ ﻭَﺟِﻠَﺔٌ ﺃَﻧَّﻬُﻢْ ﺇِﻟَﻰ ﺭَﺑِّﻬِﻢْ ﺭَﺍﺟِﻌُﻮﻥَ . ﺃُﻭﻟَﺌِﻚَ ﻳُﺴَﺎﺭِﻋُﻮﻥَ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺨَﻴْﺮَﺍﺕِ ﻭَﻫُﻢْ ﻟَﻬَﺎ ﺳَﺎﺑِﻘُﻮﻥَ ﴿ﺍﻟﻤﺆﻣﻨﻮﻥ : ৫৭-৬১ ﴾



'নিশ্চয় যারা তাদের প্রতিপালকের ভয়ে সন্ত্রস্ত, যারা তাদের প্রতিপালকের নিদর্শনাবলীতে ঈমান আনে, যারা তাদের প্রতিপালকের সাথে শরীক করে না, এবং যারা তাদের প্রতিপালকের নিকট প্রত্যাবর্তন করবে এই বিশ্বাসে তাদের যা দান করবার তা দান করে ভীত-কম্পিত হৃদয়ে। তারাই দ্রুত সম্পাদন করে কল্যাণকর কাজ এবং তারা তাতে অগ্রগামী।[২৫]
যখন কোন ব্যক্তির মৃত্যু উপস্থিত হয় তার জন্য উচিত হবে আল্লাহর কাছে ক্ষমা পাবে এ আশা পোষণ করা। যেমন রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,



ﻻ ﻳﻤﻮﺗﻦ ﺃﺣﺪﻛﻢ ﺇﻻ ﻭﻫﻮ ﻳﺤﺴﻦ ﺍﻟﻈﻦ ﺑﺎﻟﻠﻪ ﻋﺰ ﻭﺟﻞ . ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ(২৮৭৭)


'আল্লাহর প্রতি ভাল ধারণা না নিয়ে তোমাদের মধ্যে কেহ যেন মৃত্যু বরণ না করে।'[২৬]
অনেক মানুষ এমন আছেন যারা আল্লাহর সীমাহীন দয়া ও ক্ষমা লাভের আশায় পাপ করতে থাকেন, তা থেকে ফিরে আসা যে প্রয়োজন তা অনুধাবন করতে চান না। এটা এক ধরনের মুর্খতা। আল্লাহ তাআলা বলেন :



ﻧَﺒِّﺊْ ﻋِﺒَﺎﺩِﻱ ﺃَﻧِّﻲ ﺃَﻧَﺎ ﺍﻟْﻐَﻔُﻮﺭُ ﺍﻟﺮَّﺣِﻴﻢُ . ﻭَﺃَﻥَّ ﻋَﺬَﺍﺑِﻲ ﻫُﻮَ ﺍﻟْﻌَﺬَﺍﺏُ ﺍﻟْﺄَﻟِﻴﻢُ . ﴿ﺍﻟﺤﺠﺮ :৫০ ﴾



'আমার বান্দাদের বলে দাও যে, আমি তো পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু, এবং আমার শাস্তি- সে অতি মর্মন্তুদ শাস্তি ![২৭]
তিনি আরো বলেন,



ﺣﻢ . ﺗَﻨْﺰِﻳﻞُ ﺍﻟْﻜِﺘَﺎﺏِ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺍﻟْﻌَﺰِﻳﺰِ ﺍﻟْﻌَﻠِﻴﻢِ . ﻏَﺎﻓِﺮِ ﺍﻟﺬَّﻧْﺐِ ﻭَﻗَﺎﺑِﻞِ ﺍﻟﺘَّﻮْﺏِ ﺷَﺪِﻳﺪِ ﺍﻟْﻌِﻘَﺎﺏِ ﺫِﻱ ﺍﻟﻄَّﻮْﻝِ ﻟَﺎ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻟَّﺎ ﻫُﻮَ ﺇِﻟَﻴْﻪِ ﺍﻟْﻤَﺼِﻴﺮُ ﴿ﺍﻟﻐﺎﻓﺮ : ১-৩ ﴾


'হা-মীম এ কিতাব অবতীর্ণ হয়েছে পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞ আল্লাহর নিকট হতে- যিনি পাপ ক্ষমা করেন, তাওবা কবুল করেন, যিনি শাস্তি দানে কঠোর শক্তিশালী।[২৮]
অতএব আল্লাহ শুধু ক্ষমাশীল এ ধারনার ভিত্তিতে নিজের আমলগুলো দেখলে হবে না বরং তিনি যে কাঠোর শাস্তিদাতা এটা সর্বদা মনে রাখতে হবে।
শেষ পরিণতি খারাপ হওয়ার কারণসমূহ



প্রথমত : তাওবা করতে দেরী করা


আসলে তো সকল প্রকার পাপ থেকে তওবা করা মানুষের জন্য ওয়াজিব। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন :


ﻭَﺗُﻮﺑُﻮﺍ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺟَﻤِﻴﻌًﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨُﻮﻥَ ﻟَﻌَﻠَّﻜُﻢْ ﺗُﻔْﻠِﺤُﻮﻥَ . ﴿ﺍﻟﻨﻮﺭ : ৩১ ﴾


'হে মুমিনগন! তোমরা সকলে আল্লাহর নিকট তাওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।'[২৯] রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দিনের মধ্যে একশ বার তাওবা করতেন, অথচ তার পূর্বাপর সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে। যেমন তিনি বলেছেন :


ﻳﺎ ﺃﻳﻬﺎ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﺗﻮﺑﻮﺍ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﻠﻪ، ﻓﺈﻧﻲ ﺃﺗﻮﺏ ﻓﻲ ﺍﻟﻴﻮﻡ ﺇﻟﻴﻪ ﻣﺎﺋﺔ ﻣﺮﺓ . ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ (২৭০২)


'হে মানব সকল ! তোমরা আল্লাহর কাছে তওবা কর। আমিতো দিনের মধ্যে একশত বার আল্লাহর কাছে তওবা কওে থাকি।'[৩০] নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন,

ﺃﻥ ﺍﻟﺘﺎﺋﺐ ﻣﻦ ﺍﻟﺬﻧﺐ ﻛﻤﻦ ﻻ ﺫﻧﺐ ﻟـﻪ ﺭﻭﺍﻩ ﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﻪ (৪২৫০) ،
ﻭﺣﺴﻨﻪ ﺍﻷﻟﺒﺎﻧﻲ ﻓﻲ ﺻﺤﻴﺢ ﺍﻟﺠﺎﻣﻊ (৩০০৮)



'পাপ থেকে তাওবা কারী এমন ব্যক্তির মত যে কোন পাপ করেনি।'[৩১]
তওবা করতে গড়িমসি করা ইবলীস শয়তানের বড় একটা ধোকা। সে মানুষকে বলতে থাকে, 'এত তাড়াহুড়ো করার কি দরকার! তোমার আরো কত সময় পড়ে আছে। তুমি মাত্র যুবক। মনে কর তুমি কম করে হলেও ষাট বছর বেঁচে থাকবে। শেষ জীবনে খাটি তওবা করে নিবে। তখন খূব বেশী করে এবাদত-বন্দেগী করে পিছনের গুলো পুষিয়ে নিবে। এখন তুমি যুবক। জীবনটাকে একটু মনের মত উপভোগ করে নাও!'
এ কারণে অনেক উলামায়ে কেরাম বলেছেন, 'তওবা করতে গড়িমসি করা থেকে সাবধান থাকবে। 'এখনতো সময় আছে-'অতিসত্বর করে নিব, এইতো করে নিচ্ছি' এজাতীয় ভবিষ্যত অর্থবহ শব্দ অর্থাৎ 'সাওফা' হতে ওলামায়ে কেরাম সতর্ক করে বলেছেন, কারণ, এটাই ইবলিসের সবচে' বড় চেলা। কেননা এটা হল ইবলীস শয়তানের সবচেয়ে বড় চক্রান্ত।



দ্বিতীয়ত : দীর্ঘ জীবনের প্রত্যাশা


তওবা বিলম্বিত হওয়ার একটি কারন হল এই আশা করা যে আমি তো আরো অনেকদিন বেঁচে থাকব। সাধারণত শয়তানের কু-মন্ত্রণায় এমনটি হয়ে থাকে। এ ধারণায় মানুষ আখিরাতকে ভুলে যায় ভুলে যায় মৃত্যুর কথাও। যদিও কখনো কখনো মৃত্যুর কথা মনে পড়ে তবে তা বেশীক্ষন থাকে না। মানুষ যখন আখিরাতের চেয়ে পার্থিব জীবনকে অগ্রাধিকার দেয় তখন সে দুনিয়াবী চিন্তা-ভাবনায় অধিক সময় ব্যয় করে। হাদিসে এসেছে,


ﻗﺎﻝ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﻋﻤﺮ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﻤﺎ : ﺃﺧﺬ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺑﻤﻨﻜﺒﻲّ ﻓﻘﺎﻝ : ‏( ﻛﻦ ﻓﻲ ﺍﻟﺪﻧﻴﺎ ﻛﺄﻧﻚ ﻏﺮﻳﺐ ﺃﻭ ﻋﺎﺑﺮ ﺳﺒﻴﻞ ‏) ﻭﻛﺎﻥ ﺍﺑﻦ ﻋﻤﺮ ﻳﻘﻮﻝ : ﺇﺫﺍ ﺃﻣﺴﻴﺖ ﻓﻼ ﺗﻨﻨﻈﺮ ﺍﻟﺼﺒﺎﺡ، ﻭﺇﺫﺍ ﺃﺻﺒﺤﺖ ﻓﻼ ﺗﻨﺘﻈﺮ ﺍﻟﻤﺴﺎﺀ، ﻭﺧﺬ ﻣﻦ ﺻﺤﺘﻚ ﻟﻤﺮﺿﻚ، ﻭﻣﻦ ﺣﻴﺎﺗﻚ ﻟﻤﻮﺗﻚ . ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ (৬৪১৬)



সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে উমার বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার কাঁধ ধরে বললেন : 'দুনিয়াতে তুমি এমনভাবে বসবাস করবে যে তুমি একজন অপরিচিত লোক অথবা পথিক।" ইবনু উমার রা. সর্বদা বলতেন, যখন তুমি রাতে উপনীত হও তখন ভোর হওয়ার অপেক্ষা করবে না। যখন সকালে উঠবে তখন বিকালের অপেক্ষা করবে না। অসুস্থতার জন্য সুস্থ অবস্থায় কিছু করে নাও, মৃত্যুর জন্য জীবন থাকতে কিছু করে নাও।'[৩২]



কিভাবে প্রতিকার করা যায় এ ব্যধির ?



'আমার জীবন দীর্ঘ ' ধারণার এ ব্যাধির প্রতিকার করা যায় মৃত্যুর কথা স্মরণ করে, কবর জেয়ারত করে, মৃত্যু ব্যক্তিকে গোসল দিয়ে, জানাযাতে শরীক হয়ে, অসুস্থ মানুষের সেবা করে ও নেককার বা সৎলোকের সাথে বেশী করে দেখা-সাক্ষাত করে। এ সকল বিষয় অন্তরকে জাগ্রত করে, ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তা করতে উদ্বুদ্ধ করে।



মৃত্যুর স্মরণ : এটা মানুষকে দুনিয়া বিমুখ করে আখিরাতমুখী হতে সাহায্য করে। নেক আমল বা সৎকর্মে আত্ন-নিয়োগ করতে প্রেরণা যোগায়। হজরত আবু হুরায় রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :
ﺃﻛﺜﺮﻭﺍ ﺫﻛﺮ ﻫﺎﺫﻡ ﺍﻟﻠﺬﺍﺕ . ‏( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ (২৩০৭) ، ﻭﺻﺤﺤﻪ ﺍﻷﻟﺒﺎﻧﻲ ﻓﻲ ﺻﺤﻴﺢ ﺍﻟﺠﺎﻣﻊ (১২১০)
'তোমরা মৃত্যুকে স্মরণ কর।"[৩৩]



মানুষ যখন মৃত্যু ব্যক্তির কথা চিন্তা করবে দেখতে পাবে এ মানুষটা তো আমার মত শক্তিশালী ছিল, সম্পদশালী ছিল ও আদেশ নিষেধের মালিক ছিল। কিন্তু আজ তার শরীর পোকায় ধরেছে, হাড্ডিগুলো গোশ্তশুন্য হয়ে পড়েছে। যখন আমার এ অবস্থাই হবে তখন এর জন্য তৈরী হয়ে যাওয়া উচিত। এমন কাজ-কর্ম করা উচিত যা মৃত্যুর পরও কাজে আসবে।



কবর জেয়ারত : এটা মনের জন্য একটা মুল্যবান ওয়াজ বা উপদশে। মানুষ অনুভব করবে কবর একটা অন্ধকারাচ্ছন্ন স্থান। এখানে এসে মানুষের সকল পথ থেমে যায়। প্রবেশ করে অন্ধকার গর্তে। আর কখনো বের হতে পারবে না। তার সম্পদগুলো বন্টন হয়ে যাবে। নিজ স্ত্রী অন্যের সাথে বিবাহে যাবে। কিছুদিন পর সকলে তাকে ভুলে যাবে। এমনি ভাবে কবর যিয়ারতের মাধ্যমে সে মুল্যবান নছীহত অর্জন করবে। তাই তো নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:



ﻛﻨﺖ ﻧﻬﻴﺘﻜﻢ ﻋﻦ ﺯﻳﺎﺭﺓ ﺍﻟﻘﺒﻮﺭ، ﺛﻢ ﺑﺪﺍ ﻟﻲ ﺃﻧﻬﺎ ﺗﺮﻕ ﺍﻟﻘﻠﺐ، ﻭﺗﺪﻣﻊ ﺍﻟﻌﻴﻦ، ﻭﺗﺬﻛﺮ ﺍﻵﺧﺮﺓ، ﻭﻻ ﺗﻘﻮﻟﻮﺍ ﻫﺠﺮﺍ . ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺣﻤﺪ (১৩৪৮৭)
ﻭﺻﺤﺤﻪ ﺍﻷﻟﺒﺎﻧﻲ ﻓﻲ ﺻﺤﻴﺢ ﺍﻟﺠﺎﻣﻊ (৪৫৮৪)


'আমি তোমাদের কবর জেয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম। অবশ্য পরে আমার কাছে স্পষ্ট হল যে, কবর জেয়ারত মানুষের হৃদয়কে বিগলিত করে, চোখের পানি প্রবাহিত করে, পরকালকে স্মরণ করিয়ে দেয়। তবে শোক বা বেদনা প্রকাশ করতে সেখানে কিছু বলবে না।'[৩৪]
মৃত্যু ব্যক্তিকে গোসল দেয়া ও দাফন কাফনে শরীক হওয়া : এ সকল কাজ করতে গিয়ে চিন্তা করবে যে, এ ব্যক্তি যখন জীবিত ছিল তখন তার গায়ে মানুষ হাত লাগাতে বা তার শরীর ওলট-পালট করতে সাহস পায়নি, তার অনুমতি ছাড়া কাছে ঘেঁষতে কেহ সাহস করেনি কিন্তু আজ সে একটা পাথরের মত হয়ে গেছে। যে গোছল করায় সে তাকে ইচ্ছে মত নাড়া-চারা করছে। এখানে তার কিছই বলার নেই।
নেককার ও সৎ মানুষের সাথে দেখা সাক্ষাত করা : সৎ ও নেককার মানুষের সঙ্গ লাভ হৃদয়কে জাগ্রত করে, মনকে তরতাজা রাখে, সাহস ও হিম্মত বৃদ্ধি করে, মনোবল বেড়ে যায়। যখন দেখবে সৎমানুষটি এবাদত-বন্দেগীতে অগ্রগামী, আল্লাহর সন্তুষ্টি ছাড়া তার কোন উদ্দেশ্য নেই, জান্নাত লাভ করা ব্যতিত কার কোন লক্ষ্য নেই তখন সে এর দ্বারা প্রভাবিত হবে। পাপাচার ত্যাগ করে ভাল হয়ে যাবে।
তাই তো আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার নবীকেও সৎসঙ্গ অবলম্বন করার দিকে নির্দেশনা দিয়েছেন। বলেছেন,



ﻭَﺍﺻْﺒِﺮْ ﻧَﻔْﺴَﻚَ ﻣَﻊَ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳَﺪْﻋُﻮﻥَ ﺭَﺑَّﻬُﻢْ ﺑِﺎﻟْﻐَﺪَﺍﺓِ ﻭَﺍﻟْﻌَﺸِﻲِّ ﻳُﺮِﻳﺪُﻭﻥَ ﻭَﺟْﻬَﻪُ ﻭَﻟَﺎ ﺗَﻌْﺪُ ﻋَﻴْﻨَﺎﻙَ ﻋَﻨْﻬُﻢْ ﺗُﺮِﻳﺪُ ﺯِﻳﻨَﺔَ ﺍﻟْﺤَﻴَﺎﺓِ ﺍﻟﺪُّﻧْﻴَﺎ ﻭَﻟَﺎ ﺗُﻄِﻊْ ﻣَﻦْ ﺃَﻏْﻔَﻠْﻨَﺎ ﻗَﻠْﺒَﻪُ ﻋَﻦْ ﺫِﻛْﺮِﻧَﺎ ﻭَﺍﺗَّﺒَﻊَ ﻫَﻮَﺍﻩُ ﻭَﻛَﺎﻥَ ﺃَﻣْﺮُﻩُ ﻓُﺮُﻃًﺎ ﴿ﺍﻟﻜﻬﻒ : ২৮ ﴾



'তুমি নিজেকে ধৈর্য সহকারে রাখবে তাদের সংসর্গে যারা সকাল ও সন্ধ্যায় আহবান করে তাদের প্রতিপালককে তাদের সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে এবং পার্থিব জীবনের শোভা কামনা করে তাদের থেকে তোমার দৃষ্টি ফিরিয়ে নিও না। তুমি তাদের আনুগত্য করবে না-যার চিত্তকে আমি আমার স্মরণে অমনোযোগী করে দিয়েিেছ, যে তার খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করে ও যার কার্যকলাপ সীমা অতিক্রম করে।'[৩৫]
তৃতীয়ত পাপকে পছন্দ করা ও তাতে অভ্যস্ত হয়ে পড়া :
মানুষ যদি কোন পাপকে পছন্দ করে নেয় তখন তা থেকে সে তওবা করে না। শয়তান এ পাপের মাধ্যমে তার উপর ক্ষমতা চালায়। শেষে তাকে কূফর পর্যন্ত পৌছে দেয়। পাপকে পাপ জেনে করা আর তাকে পছন্দ করা এক বিষয় নয়। এ ধরণের মানুষ যখন মৃত্যুর দুয়ারে হাজির হয় তখন তাকে বলে দিয়েও তার শেষ কথা হিসাবে কালেমা উচ্চারণ করানো যায় না। বরং তখন তারা অন্য কথা বলে। এ রকম অনেক ঘটনা রয়েছে।
যেমন এক ব্যক্তি বাজারে দালালী করত। মৃত্যুকালে তাকে বলা হল আপনি বলুন 'লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ'। সে বলতে থাকল, সাড়ে চার! সাড়ে চার!!



আরেক জন ব্যক্তিকে মৃত্যুকালে বলা হল আপনি লা-ইলাহা ইল্লাহ বলুন। সে তখন তার প্রেমিকাকে স্মরণ করে কবিতা বলা শুরু করল।


ﻛﻴﻒ ﺍﻟﻄﺮﻳﻖ ﺇﻟﻰ ﺣﻤﺎﻡ ﻣﻨﺠﺎﺏ
ﻳﺎﺭﺏ ﻗﺎﺋﻠﺔ ﻳﻮﻡ ﻭﻗﺪ ﺗﻌﺒﺖ



আরেক ব্যক্তিকে এমনিভাবে মৃত্যুকালে কালেমার তালকীন করা হল। সে গান গাইতে শুরু করল।



এ ধরনের বহু ঘটনা সমাজের লোকেরা প্রত্যক্ষ করেছে। অনেক লোক এমনও দেখা গেছে যারা পাপ কাজ করা অবস্থায় মৃত্যুর দরজায় পৌছে গেছে।
সবচেয়ে ভয়ংকর পাপ যা পাপীকে ধ্বংস করে :
বাতিল আকীদা-বিশ্বাস ও ইসলাম সম্পর্কে অন্তরের কলুষতা হল সবচেয়ে ভয়ংকর গুনাহ। যেমন শরিয়তের কোন বিধি-বিধানের ব্যাপারে বিরূপ মন্তব্য করা বা মনে করা এটা ভাল নয়, সময়পোযোগী নয় ইত্যাদি। এমনি আল্লাহ সম্পর্কে খারাপ ধারণা রাখা, শিরক করা, মুনাফিকি, লোক দেখানোর জন্য এবাদত-বন্দেগী করা, হিংসা, বিদ্বেষ রাখা ইত্যাদি।



আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কোরআন কারীমে এমন অনেক আমলের উদাহরণ দিয়েছেন যার আমলকারী কোন প্রতিদান পায় না। তার নিয়্যত খারাপ হওয়ার কারণে অথবা পাপাচার বেশী বা মারাত্নক হওয়ার কারণে। এগুলো এমন কাজ যা নেক কর্মকে নিস্ফল করে দেয়, ব্যর্থ করে দেয়। যেমন তিনি বলেন :


ﺃَﻳَﻮَﺩُّ ﺃَﺣَﺪُﻛُﻢْ ﺃَﻥْ ﺗَﻜُﻮﻥَ ﻟَﻪُ ﺟَﻨَّﺔٌ ﻣِﻦْ ﻧَﺨِﻴﻞٍ ﻭَﺃَﻋْﻨَﺎﺏٍ ﺗَﺠْﺮِﻱ ﻣِﻦْ ﺗَﺤْﺘِﻬَﺎ ﺍﻟْﺄَﻧْﻬَﺎﺭُ ﻟَﻪُ ﻓِﻴﻬَﺎ ﻣِﻦْ ﻛُﻞِّ ﺍﻟﺜَّﻤَﺮَﺍﺕِ ﻭَﺃَﺻَﺎﺑَﻪُ ﺍﻟْﻜِﺒَﺮُ ﻭَﻟَﻪُ ﺫُﺭِّﻳَّﺔٌ ﺿُﻌَﻔَﺎﺀُ ﻓَﺄَﺻَﺎﺑَﻬَﺎ ﺇِﻋْﺼَﺎﺭٌ ﻓِﻴﻪِ ﻧَﺎﺭٌ ﻓَﺎﺣْﺘَﺮَﻗَﺖْ ﻛَﺬَﻟِﻚَ ﻳُﺒَﻴِّﻦُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻟَﻜُﻢُ ﺍﻟْﺂَﻳَﺎﺕِ ﻟَﻌَﻠَّﻜُﻢْ ﺗَﺘَﻔَﻜَّﺮُﻭﻥَ ﴿ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ : ২৬৬﴾


'তোমাদের কেহ কি চায় যে, তার খেজুর ও আঙ্গুরের একটি বাগান থাকে যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত এবং যাতে সর্বপ্রকার ফল-মুল আছে, যখন সে ব্যক্তি বার্ধক্যে উপনীত হয় এবং তার সন্তান-সন্ততি দুর্বল, অত:পর তার উপর এক অগ্নিক্ষরা ঘূর্ণিঝড় আপতিত হয় ও তা জ্বলে যায় ? এভাবে আল্লাহ তার নিদর্শন তোমাদের জন্য সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেন যাতে তোমরা অনুধাবন করতে পার।'[৩৬]
এমনিভাবে মানুষের পাওনা আদায়, তাদের উপর জুলুম অত্যাচার ও তাদের অধিকার ক্ষুন্ন করা হয়ে থাকলে তার প্রতিকার করতে হবে। মানুষের অধিকার সম্পর্কিত পাপ আল্লাহ ক্ষমা করবেন না। যতক্ষন না তার যথাযথ সুরাহা করে মিমাংসা করা হয়, ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়, অথবা দাবী ছাড়িয়ে নেয়া হয় বা ক্ষমা মনজুর করিয়ে নেয়া হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানিয়েছেন,



ﺃﻥ ﻧﻔﺲ ﺍﻟﻤﺆﻣﻦ ﻣﻌﻠﻘﺔ ﺑﺪﻳﻨﻪ ﺣﺘﻰ ﻳﻘﻀﻰ ﻋﻨﻪ . ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ (১০৭৮) ، ﻭﺻﺤﺤﻪ ﺍﻷﻟﺒﺎﻧﻲ ﻓﻲ ﺻﺤﻴﺢ ﺍﻟﺠﺎﻣﻊ (৬৭৭৯)


মানুষের রুহ, ঋনের কারণে ফেসে থাকে, যতক্ষণ পর্যন্ত তার পক্ষ হতে আদায় না করা হয়।[৩৭]




হাফেজ ইবনে রজব রহ. বলেছেন : 'পাপাচার, আল্লাহর অবাধ্যতা ও কু-প্রবৃত্তির অনুসরণ মৃত্যুকালে মানুষকে অপদস্ত করে। সাথে সাথে শয়তানও তাকে লাঞ্জিত করে। ঈমানের দুর্বলতার কারণে সে তখন দু লাঞ্জনার শিকার হয়ে খারাপ মৃত্যুর দিকে চলে যায়। আল্লাহ বলেন :


ﻭَﻛَﺎﻥَ ﺍﻟﺸَّﻴْﻄَﺎﻥُ ﻟِﻠْﺈِﻧْﺴَﺎﻥِ ﺧَﺬُﻭﻟًﺎ ﴿ﺍﻟﻔﺮﻗﺎﻥ : ২৯ ﴾


'শয়তানতো মানুষের জন্য মহা লাঞ্জনার কারণ।'[৩৮]
খারাপ মৃত্যু (যার থেকে আমরা আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাচ্ছি) তে ঐ ব্যক্তি পতিত হয় না আল্লাহর সাথে যার গোপন ও প্রকাশ্য আচরণ সুন্দও ও মার্জিত, যে কথা ও কাজে সত্যবাদী। ঐ ব্যক্তিই খারাপ মৃত্যুর মুখোমুখি হয় যার ভিতরের অবস্থা আকীদা-বিশ্বাসের দিক দিয়ে খারাপ হয়ে গেছে, কাজ-কর্মে বাহিরের দিকটা নষ্ট হয়ে গেছে আর পাপাচারে লিপ্ত হওয়ার ব্যাপারে বে-পরোয়া হয়ে গেছে।



চতুর্থত: আত্নহত্যা : আত্নহত্যা শেষ পরিণতি বা খারাপ মৃত্যুর একটি কারণ।
যখন কোন মুসলিম বিপদে পতিত হয় ও তাতে ধৈর্য্য ধারণ করে আল্লাহর কাছে এর জন্য উত্তম প্রতিদানের আশা করে তখন সে তার পক্ষ থেকে পুরস্কার প্রাপ্ত হয়। কিন্তু যদি সে মনে করে আমার জীবন সংকীর্ণ হয়ে গেছে মৃত্যু ছাড়া এ বিপদ থেকে কোন ভাবে উদ্ধার হওয়ার সম্ভাবনা নেই তখনই সে পাপ করে বসল। আর নিজেকে হত্যা করে সে পাপ বাস্তবায়ন করে সে আল্লাহর গজবে পতিত হল। হাদিসে এসেছে,


ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻫﺮﻳﺮﺓ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : ﺍﻟﺬﻱ ﻳﺨﻨﻖ ﻧﻔﺴﻪ ﻳﺨﻨﻘﻬﺎ ﻓﻲ ﺍﻟﻨﺎﺭ، ﻭﺍﻟﺬﻱ ﻳﻄﻌﻦ ﻧﻔﺴﻪ ﻳﻄﻌﻨﻬﺎ ﻓﻲ ﺍﻟﻨﺎﺭ . ﺭﻭﺍ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ (১৩৬৫).


আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : 'যে ব্যক্তি নিজেকে ফাঁস দিল সে জাহান্নামে অবিরাম নিজেকে ফাঁস দিতে থাকবে। আর যে নিজেকে ছুড়িকাঘাত করে হত্যা করল সে অবিরাম সিজেকে জাহান্নামে ছুড়িকাঘাত করতে থাকবে।'[৩৯] হাদিসে আরো এসেছে,


ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻫﺮﻳﺮﺓ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻗﺎﻝ : ﺷﻬﺪ ﺭﺟﻞ ﻣﻊ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺧﻴﺒﺮ ﻓﻘﺎﻝ ﺑﺮﺟﻞ ﻣﻤﻦ ﻳﺪﻋﻲ ﺑﺎﻹﺳﻼﻡ : ﻫﺬﺍ ﻣﻦ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﻨﺎﺭ . ﻓﻠﻤﺎ ﺣﻀﺮ ﺍﻟﻘﺘﺎﻝ ﻗﺎﺗﻞ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﻗﺘﺎﻻ ﺷﺪﻳﺪﺍ ﻓﺄﺻﺎﺑﺘﻪ ﺟﺮﺍﺣﺔ، ﻓﻘﻴﻞ ﻟﻪ : ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ، ﺍﻟﺬﻱ ﻗﻠﺖ ﺁﻧﻔﺎ ﺇﻧﻪ ﻣﻦ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﻨﺎﺭ، ﻓﺈﻧﻪ ﻗﺪ ﻗﺎﺗﻞ ﺍﻟﻴﻮﻡ ﻗﺘﺎﻻ ﺷﺪﻳﺪﺍ، ﻭﻗﺪ ﻣﺎﺕ، ﻓﻘﺎﻝ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : ﺇﻟﻰ ﺍﻟﻨﺎﺭ، ﻓﻜﺎﺩ ﺑﻌﺾ ﺍﻟﻤﺴﻠﻤﻴﻦ ﺃﻥ ﻳﺮﺗﺎﺏ، ﻓﺒﻴﻨﻤﺎ ﻫﻢ ﻋﻠﻰ ﺫﻟﻚ ﺇﺫ ﻗﻴﻞ ﻟﻪ : ﺇﻧﻪ ﻟﻢ ﻳﻤﺖ ﻭﻟﻜﻦ ﺑﻪ ﺟﺮﺍﺣﺔ ﺷﺪﻳﺪﺓ، ﻓﻠﻤﺎ ﻛﺎﻥ ﻣﻦ ﺍﻟﻠﻴﻞ ﻟﻢ ﻳﺼﺒﺮ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺠﺮﺍﺡ ﻓﻘﺘﻞ ﻧﻔﺴﻪ، ﻓﺄﺧﺒﺮ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓﻘﺎﻝ : ﺍﻟﻠﻪ ﺃﻛﺒﺮ، ﺃﺷﻬﺪ ﺃﻧﻲ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺭﺳﻮﻟﻪ . ﺛﻢ ﺃﻣﺮ ﺑﻼﻻ ﻓﻨﺎﺩﻯ ﻓﻲ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﺃﻧﻪ ﻟﻦ ﻳﺪﺧﻞ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﺇﻻ ﻧﻔﺲ ﻣﺴﻠﻤﺔ، ﻭﺇﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﻟﻴﺆﻳﺪ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﺪﻳﻦ ﺑﺎﻟﺮﺟﻞ ﺍﻟﻔﺎﺟﺮ . ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ (৩০৬২). ﻭﻣﺴﻠﻢ (১১১).
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, খায়বার যুদ্ধে রাসুলুল্লাহর সাথে এক ব্যক্তি যুদ্ধে অংশ নিতে আসল। যে নিজেকে মুসলিম বলে দাবী করত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার ব্যাপারে বললেন : 'লোকটি জাহান্নামী।" যখন সে যুদ্ধে অংশ নিয়ে যুদ্ধ শুরু করল ও অত্যন্ত বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করে গুরুতরভাবে আহত হল, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলা হল হে রাসূল ! আপনি কিছুক্ষন পূর্বে যাকে জাহান্নামী হওয়ার খবর দিয়েছিলেন সে তো আজ বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করে নিহত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: 'সে জাহান্নামী।' কিছু মুসলমান আল্লাহর রাসূলের এ কথায় কেমন যে সন্দেহ করতে লাগল। ইতিমধ্যে খবর আসল আসলে সে যুদ্ধক্ষেত্রে নিহত হয়নি, বরং যুদ্ধক্ষেত্রে মারাত্নকভাবে আহত হয়েছিল। রাতে সে বেদনায় ধৈর্য্য ধারণ করতে না পেরে আত্নহত্যা করেছে। এ খবর যখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলা হল তখন তিনি বললেন: 'আল্লাহু আকবার, আমি স্বাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি আল্লাহর বান্দা ও রাসূল।" অত:পর তিনি বেলাল রা. কে বললেন, তুমি ঘোষণা দিয়ে দাও যে, মুসলিম আত্না ব্যতিত কেহ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। আর নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা এ দ্বীনে ইসলামকে দুরাচার ব্যক্তির দ্বারাও সাহায্য করে থাকেন।'[৪০]
প্রিয় ভাইয়েরা !


এসকল বিষয় চিন্তা-ভাবনা করলে এটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে যে, যেখানেই আমরা থাকিনা কেন, যে অবস্থায় আমরা অবস্থান করিনা কেন সকল অবৈধ আকীদা-বিশ্বাস, মতাদর্শ, কথা-বার্তা থেকে সম্পূর্ন দুরত্ব বজায় রাখা, সর্বদা নিজের হৃদয়, মুখ ও যাবতীয় অঙ্গ-প্রতঙ্গ আল্লাহর স্মরণে নিয়োজিত রাখা, আল্লাহর আদেশ-নির্দেশ পালনে যত্নবান হওয়া। আমরা যদি দুনিয়ার এ জীবনে দ্বীনে ইসলাম পালনের ব্যাপারে হতভাগ্য হয়ে পড়ি তাহলে এর ক্ষতিপুরণ কখনো সম্ভব হবে না। চিরকাল এ ব্যর্থতা বহন করতে হবে।
হে আল্লাহ! আপনি আমাদের শেষ পরিণতি ভাল কাজের মাধ্যমে সমাপ্ত করে দেন, জীবনের শেষ দিনগুলো যেন আমাদের ভাল দিনগুলোর মধ্যে গণ্য হয়, আপনার সাথে সাক্ষাতের দিনটাই যেন আমাদের সবচেয়ে আনন্দঘন দিন হয়।



_________________________________________________________________________________



[১] আহমদ : ১২০৩৬
[২] সূরা হা-মীম- সাজদাহ : ৩০-৩২
[৩] মুসলিম : ২৬৮৪
[৪] সূরা ইউনূস : ৭
[৫] আহমদ : ২৩৩২৪
[৬] হাকেম : ১২৯৯
[৭] মুসলিম : ১৯১৩
[৮] নাসায়ী : ১৮২৯
[৯] তিরমিজী : ১০৭৪
[১০] মুসলিম : ৪৯৪১।
[১১] বোখারি : ৬৫৩।
[১২] আহমদ : ২২৬৮৪।
[১৩] আহমাদ : ৮০৯২।
[১৪] ইবনে মাজাহ : ২৮০৩।
[১৫] আবু দাউদ : ৪৭৭২।
[১৬] সূরা নিসা : ১০২।
[১৭] সূরা আল-হিজর : ৯৯।
[১৮] আহমদ : ২২৮০৮।
[১৯] বোখারি : ৬৪৯২।
[২০] তিরমিজি : ২১৪০। সহিহ আল-জামে : ৭৯৮৮।
[২১] সূরা ইউসূফ : ১০১
[২২] সহিহ আল-হাকেম : ১২৯৯। সহিহ আল-জামে : ৬৪৭৯।
[২৩] বোখারি : ৩৩৩২। মুসলিম : ২৬৪৩।
[২৪] বোখারি : ৬১২৮।
[২৫] সূরা আল-মুমিনূন : ৫৭-৬১।
[২৬] মুসলিম : ২৮৭৭।
[২৭] সূরা আল-হিজর : ৪৯-৫০।
[২৮] সূরা আল-গাফির : ১-৩।
[২৯] সূরা নূর : ৩১।
[৩০] মুসলিম : ২৭০২।
[৩১] ইবনু মাজাহ : ৪২৫০। সহিহ আল-জামে : ৩০০৮।
[৩২] বোখারি : ৬৪১৬।
[৩৩] তিরমিজি : ২৩০৭। সহিহ আল-জামে : ১২১০।
[৩৪] আহমদ : ১৩৪৮৭। সহিহ আল-জামে : ৪৫৮৪।
[৩৫] সূরা আল-কাহাফ : ২৮।
[৩৬] সুরা বাকারা : ২৬৬।
[৩৭] তিরমিজি : ১০৭৮। সহিহ আল-জামে : ৬৭৭৯।
[৩৮] সূরা আল-ফুরকান : ২৯।
[৩৯] বোখারি : ১৩৬৫।
[৪০] বোখারি : ৩০৬২। মুসলিম : ১১১।
_________________________________________________________________________________




লেখক: শামছুল হক ছিদ্দিক/ নোমান আবুল বাশার / আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান
ﺗﺄﻟﻴﻒ : ﻣﺤﻤﺪ ﺷﻤﺲ ﺍﻟﺤﻖ ﺻﺪﻳﻖ - ﻧﻌﻤﺎﻥ ﺑﻦ ﺃﺑﻮ ﺍﻟﺒﺸﺮ - ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺷﻬﻴﺪ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ
সম্পাদনা: সামছুল হক ছিদ্দিক/ কাউছার বিন খালেদ
ﻣﺮﺍﺟﻌﺔ : ﺷﻤﺲ ﺍﻟﺤﻖ ﺻﺪﻳﻖ - ﻛﻮﺛﺮ ﺑﻦ ﺧﺎﻟﺪ
সূত্র: ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব



আরও পড়ুনঃ ভাল মৃত্যুর উপায়
আরও পড়ুনঃ নেক আমলের প্রতি উৎসাহ প্রদান
আরও পড়ুনঃ আল্লাহর নিকট অধিক পছন্দনীয় আমলসমূহ
আরও পড়ুনঃ কল্যাণকর কাজে উদ্বুদ্ধকারী কতিপয় হাদীস
আরও পড়ুনঃ তাকওয়ার উপকারিতা
আরও পড়ুনঃ আল্লাহ ও তাঁর আযাবকে ভয় করা
আরও পড়ুনঃ কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে তাওবা ও পাপ মোচনকারী কিছু আমল
আরও পড়ুনঃ জিকির
আরও পড়ুনঃ জান্নাতে প্রবেশের চাবী সমূহ



পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না কিন্তু।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন