Views:
A+
A-
কুরআনে কারীম ও সহীহ সুন্নাহর আলোকে গুনাহ্ মাফের আমল
নবুয়্যাতের প্রদীপ থেকে
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« ﻗَﺎﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺳُﺒْﺤَﺎﻧَﻪُ ﻭَﺗَﻌَﺎﻟَﻰ : ﻣَﻦْ ﻋَﻠِﻢَ ﺃَﻧِّﻲ ﺫُﻭ ﻗُﺪْﺭَﺓٍ ﻋَﻠَﻰ ﻣَﻐْﻔِﺮَﺓِ ﺍﻟﺬُّﻧُﻮﺏِ، ﻏَﻔَﺮْﺕُ ﻟَﻪُ ﻭَﻻ ﺃُﺑَﺎﻟِﻲ ﻣَﺎ ﻟَﻢْ ﻳُﺸْﺮِﻙْ ﺑِﻲ ﺷَﻴْﺌًﺎ » . ( ﺻﺤﻴﺢ ﺍﻟﺠﺎﻣﻊ ﺍﻟﺼﻐﻴﺮ ﻭ ﺯﻳﺎﺩﺗﻪ : 4206 ).
“আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন: যে ব্যক্তি বিশ্বাস করে যে, আমিই গুনাহ মাফ করার ক্ষমতাবান, তাকে আমি ক্ষমা করে দেই এবং যতক্ষণ সে আমার সাথে কোনো কিছুকে শরীক না করে, ততক্ষণ (তাকে ক্ষমা করার ব্যাপারে) আমি কোনো কিছুর পরওয়া করি না।” [সহীহুল জামে‘ আস-সাগীর ওয়া যিয়াদাতুহু: ৪২০৬]।
আল-কুরআনুল কারীম ও পবিত্র সহীহ সুন্নাহ’র আলোকে গুনাহ্ মাফের আমল
ﺑﺴﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺍﻟﺮﺣﻴﻢ ভূমিকা
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য; আমরা তাঁর প্রশংসা করি, তাঁর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করি এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি; আর আমাদের নফসের জন্য ক্ষতিকর এমন সকল খারাপি এবং আমাদের সকল প্রকার মন্দ আমল থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই। আল্লাহ যাকে পথ প্রদর্শন করেন, কেউ তাকে পথভ্রষ্ট করতে পারে না; আর তিনি যাকে পথহারা করেন, কেউ তাকে পথ দেখাতে পারবে না। আর আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তিনি একক, তাঁর কোনো শরীক নেই এবং আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল। অতঃপর:
বান্দা অপরাধ থেকে মুক্ত নয়; সুতরাং এই ত্রুটি থেকে কোনো আদম সন্তানই মুক্ত নয়। আর নিষ্পাপ শুধু সেই, যাকে আল্লাহ তা‘আলা পাপমুক্ত করেছেন। আর মানুষ শক্তি ও সামর্থ্যের ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে; এটাই অমোঘ মূলনীতি। আর যে ব্যক্তি নিজকে নিয়ে পর্যালোচনা করবে, সে তাকে এই ধরনের ত্রুটিতে ভরপুর পাবে; সুতরাং যখন তাকে তাওফীক (শক্তি-সামর্থ্য) দেওয়া হবে, তখন তার উপর ধ্বংসাত্মক আক্রমণের ভয়ে সে এর থেকে সতর্ক ও সচেতন হবে এবং আল্লাহর পথ থেকে ভিন্ন পথে চলার কারণে সে ব্যথা অনুভব করবে। অতঃপর যখন সে ব্যথা ও কষ্ট অনুভব করবে, তখন সে মুক্তির আশায় গুনাহের অভ্যাস ছেড়ে দিয়ে দ্রুত আল্লাহর দিকে ফিরে আসবে। আর তখন সে গুনাহ মাফের দরজা উন্মুক্ত অবস্থায় পাবে, যার দুই পাল্লায় লেখা থাকবে:
﴿ ۞ ﻗُﻞۡ ﻳَٰﻌِﺒَﺎﺩِﻱَ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺃَﺳۡﺮَﻓُﻮﺍْ ﻋَﻠَﻰٰٓ ﺃَﻧﻔُﺴِﻬِﻢۡ ﻟَﺎ ﺗَﻘۡﻨَﻄُﻮﺍْ ﻣِﻦ ﺭَّﺣۡﻤَﺔِ ﭐﻟﻠَّﻪِۚ ﺇِﻥَّ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﻳَﻐۡﻔِﺮُ ﭐﻟﺬُّﻧُﻮﺏَ ﺟَﻤِﻴﻌًﺎۚ ﺇِﻧَّﻪُۥ ﻫُﻮَ ﭐﻟۡﻐَﻔُﻮﺭُ ﭐﻟﺮَّﺣِﻴﻢُ ٥٣ ﴾ [ ﺍﻟﺰﻣﺮ : ٥٣ ]
“বলুন, ‘হে আমার বান্দাগণ! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ---আল্লাহ্র অনুগ্রহ হতে নিরাশ হয়ো না; নিশ্চয় আল্লাহ্ সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”[1]
পাপ মোচন দু’ভাবে হয়:
প্রথমত: মুছে ফেলা বা নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া; যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« ﻭَﺃَﺗْﺒِﻊِ ﺍﻟﺴَّﻴِّﺌَﺔَ ﺍﻟْﺤَﺴَﻨَﺔَ ﺗَﻤْﺤُﻬَﺎ » . ( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ ) .
“আর তুমি অসৎ কাজ করলে সাথে সাথেই সৎকাজ কর, তাহলে ভালো কাজ মন্দ কাজকে নিশ্চিহ্ন করে দেবে।”[2] আর এটা হল ক্ষমার পর্যায়।
দ্বিতীয়ত: পরিবর্তন করে দেওয়া; যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿ ﺇِﻟَّﺎ ﻣَﻦ ﺗَﺎﺏَ ﻭَﺀَﺍﻣَﻦَ ﻭَﻋَﻤِﻞَ ﻋَﻤَﻠٗﺎ ﺻَٰﻠِﺤٗﺎ ﻓَﺄُﻭْﻟَٰٓﺌِﻚَ ﻳُﺒَﺪِّﻝُ ﭐﻟﻠَّﻪُ ﺳَﻴَِّٔﺎﺗِﻬِﻢۡ ﺣَﺴَﻨَٰﺖٖۗ ﻭَﻛَﺎﻥَ ﭐﻟﻠَّﻪُ ﻏَﻔُﻮﺭٗﺍ ﺭَّﺣِﻴﻤٗﺎ ٧٠﴾ [ ﺍﻟﻔﺮﻗﺎﻥ : ٧٠ ]
“তবে যে তাওবা করে, ঈমান আনে ও সৎকাজ করে, ফলে আল্লাহ্ তাদের গুণাহসমূহ নেক দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন। আর আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”[3] আর এটা হল ‘মাগফিরাত’ তথা গুনাহ মাফের পর্যায়। আর যে ব্যক্তি (গুনাহ মাফের) দু’টি পর্যায় নিয়ে চিন্তাভাবনা করবে, সে সূক্ষ্ম পার্থক্য উপলব্ধি করতে পারবে; কারণ, মাগফিরাতের মধ্যে ক্ষমার উপর অতিরিক্ত ইহসান ও দয়ার ব্যাপার রয়েছে; আর এ দু’টিই উত্তম ও শুভসংবাদ।
জেনে রাখুন, এই দীন কত উদার! আর তার নিয়মনীতি কত সহজ! তার প্রতিটি শ্লোগানই হল উচ্চতা, শ্রেষ্ঠত্ব, পবিত্রতা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নির্ভর; আর তার প্রত্যেকটি অর্পিত দায়িত্বপূর্ণ কাজ, শাস্তিবিধান, নির্দেশ এবং ধমক বা তিরস্কারের মূল লক্ষ্য হল পবিত্র ও পরিশুদ্ধ ব্যক্তি তৈরি করা। আল-কুরআনের ভাষায়:
﴿ ﻳَٰٓﺄَﻳُّﻬَﺎ ﭐﻟﻨَّﺎﺱُ ﭐﻋۡﺒُﺪُﻭﺍْ ﺭَﺑَّﻜُﻢُ ﭐﻟَّﺬِﻱ ﺧَﻠَﻘَﻜُﻢۡ ﻭَﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻣِﻦ ﻗَﺒۡﻠِﻜُﻢۡ ﻟَﻌَﻠَّﻜُﻢۡ ﺗَﺘَّﻘُﻮﻥَ ٢١ ﴾ [ ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ : ٢١ ]
“হে মানুষ! তোমরা তোমাদের সেই রবের ‘ইবাদাত কর, যিনি তোমাদেরকে এবং তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাকওয়ার অধিকারী হও।”[4]
নিশ্চয় এই শ্লোগান এবং শরী‘য়ত কর্তৃক নির্ধারিত এই দায়িত্ব ও কর্তব্যসমূহ মানুষের দুর্বলতা ও অক্ষমতা সম্পর্কে অচেতন নয়, তার শক্তি ও সামর্থ্যের সীমানা অতিক্রম করে না, তার স্বভাবকে অবজ্ঞা করে না এবং তার মনের অনেক অনেক আগ্রহ ও উদ্দীপনা সম্পর্কে অজ্ঞ নয়।
আর সেই কারণেই অর্পিত কাজের দায়িত্ব ও শক্তি-সামর্থ্যের মধ্যে, ঠেলে দেওয়া ও টেনে ধরার মধ্যে, উৎসাহিত করা ও হুমকি প্রদানের মধ্যে, নির্দেশ ও তিরস্কারের মধ্যে এবং অপরাধের ক্ষেত্রে প্রচণ্ড আকারে শাস্তির ভয় প্রদর্শন ও ক্ষমার ক্ষেত্রে সুদূরপ্রসারি আশা পোষণ করার মধ্যে এক চমৎকার ভারসাম্য রয়েছে।
এই দীন মানব আত্মাকে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহ অভিমুখী এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাতের অনুসরণ করাতে যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। ... এর পরেও সেখানে রয়েছে আল্লাহ তা‘আলার অবারিত রহমত ... যা ভুল-ত্রুটির মত ঘাটতি পূরণ করবে ... সীমাবদ্ধতার ব্যাপারে সহানুভূতিশীল হবে ... তাওবা কবুল করবে ... গুনাহ ক্ষমা করবে ... পাপরাশি ধুয়ে-মুছে সাফ করে দিবে ... এবং প্রত্যাবর্তনকারীদের সামনে তাদের বাসস্থান ও আঙ্গিনা জান্নাতের দিকে দরজা উন্মুক্ত করে দিবে।
দ্বীনের কাণ্ডারী আলেম দ্বিতীয় শাইখুল ইসলাম ইবনু কায়্যিম আল-জাওযিয়্যাহ রহ. বলেন:
ﻭﺃﻗﺪِﻡْ ﻭﻻ ﺗﻘْﻨَﻊْ ﺑﻌَﻴْﺶٍ ﻣُﻨَﻐَّﺺٍ ﻓﻤﺎ ﻓﺎﺯَ ﺑﺎﻟﻠﺬﺍﺕِ ﻣَﻦ ﻟﻴﺲ ﻳﻘﺪﻡُ
(পদক্ষেপ নাও এবং অস্বস্তিকর জীবনে তুমি সন্তুষ্ট হয়ো না;
কারণ, আনন্দ-ফুর্তির দ্বারা সে ব্যক্তি সফল হবে না, যে (তাওবার পথে) অগ্রসর হবে না।
ﻭﺇﻥ ﺿﺎﻗﺖِ ﺍﻟﺪﻧﻴﺎ ﻋﻠﻴﻚَ ﺑﺄﺳﺮِﻫﺎ ﻭﻟﻢ ﻳﻚُ ﻓﻴﻬﺎ ﻣﻨﺰﻝٌ ﻟﻚَ ﻳُﻌﻠَﻢُ
(যদিও দুনিয়ার তাবৎ কর্মকাণ্ডের কারণে তোমার উপর দুনিয়া সঙ্কুচিত হয়ে গেছে এবং জানা মতে তোমার জন্য তাতে কোনো বাসস্থানও নেই)।
ﻓﺤﻲَّ ﻋﻠﻰ ﺟﻨﺎﺕِ ﻋﺪْﻥٍ ﻓﺈﻧَّﻬﺎ ﻣﻨﺎﺯﻟﻚَ ﺍﻷﻭﻟﻰ ﻭﻓﻴﻬﺎ ﺍﻟﻤﺨﻴَّﻢُ
(সুতরাং তুমি শ্বাশ্বত বাসস্থান জান্নাতের দিকে আস; কেননা, তা তোমার প্রথম বাসস্থান এবং তাতে রয়েছে তাঁবু গাড়ার স্থান)।
ﻭﻟﻜﻨﻨﺎ ﺳَﺒْﻲُ ﺍﻟﻌﺪﻭِّ ﻓﻬﻞ ﺗﺮﻯ ﻧﻌﻮﺩُ ﺇﻟﻰ ﺃﻭﻃﺎﻧِﻨﺎ ﻭﻧﺴﻠَّﻢُ
(কিন্তু আমারা হলাম শত্রুর হাতে বন্দী; কেননা, তুমি কি মনে কর— আমরা আমাদের নিজ আবাসভূমিতে ফিরে যাব এবং তা সঠিক বলে মেনে নেব)।
ﻭﻗﺪ ﺯﻋﻤﻮﺍ ﺃﻥ ﺍﻟﻐﺮﻳﺐَ ﺇﺫﺍ ﻧﺄﻯ ﻭﺷﻄَّﺖْ ﺑﻪ ﺃﻭﻃﺎﻧُﻪ ﻓﻬﻮ ﻣﻐﺮﻡ
(আর তারা ধারণা করে যে, প্রবাসী ব্যক্তি যখন দূরে চলে যায় এবং তার কারণে তার মাতৃভূমি খান খান হয়, তখন সে তার প্রতি আকর্ষণ অনুভব করে)।
ﻭﺃﻱُّ ﺍﻏﺘﺮﺍﺏٍ ﻓﻮﻕ ﻏﺮﺑَﺘِﻨﺎ ﺍﻟﺘﻲ ﻟﻬﺎ ﺃﺿﺤﺖِ ﺍﻷﻋﺪﺍﺀُ ﻓﻴﻨﺎ ﺗَﺤَﻜَّﻢُ
(আমাদের প্রবাসজীবনের উপর আর কোনো প্রবাসজীবন কী আছে? যেখানে আমাদের উপর কর্তৃত্ব হয়ে যায় শত্রুগণের)। আমরা যে বিষয় অধ্যয়ন করছি, তা হল আল-কুরআনের একগুচ্ছ সুস্পষ্ট আয়াত এবং নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কতগুলো বিশুদ্ধ হাদিস যেগুলো আমি একত্রিত করেছি; অতঃপর আমি তা লিপিবদ্ধ করেছি, যার সবকটিই একই অর্থের অন্তর্ভুক্ত; আর তা হল এমন আমল, যার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত হয়েছে গুনাহ মাফ আর পাপরাশি মোচনের।
আমি এ আলোচনাটি সাজিয়েছি কয়েকটি অধ্যায়ে, যাতে পাঠক সহজেই তার বিষয়বস্তু সম্পর্কে অনুধাবন করতে পারে এবং আমি তার নাম দিয়েছি:
« ﻣﻜﻔﺮﺍﺕ ﺍﻟﺬﻧﻮﺏ ﻓﻲ ﺿﻮﺀ ﺍﻟﻘﺮﺁﻥ ﺍﻟﻜﺮﻳﻢ ﻭ ﺍﻟﺴﻨﺔ ﺍﻟﺼﺤﻴﺤﺔ ﺍﻟﻤﻄﻬﺮﺓ » (আল-কুরআনুল কারীম ও পবিত্র সহীহ সুন্নাহ’র আলোকে গুনাহ্ মাফের আমল) এখন দেখুন আমরা কিন্তু আমাদের সেই ওয়াদাকৃত বিষয়টি উপস্থাপনের কাজ শুরু করতে যাচ্ছি এবং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার নিকট আশা করছি যে, তিনি তার দ্বারা আমাদেরকে উপকৃত করবেন; তিনি হলেন খুবই নিকটতম, আবেদন-নিবেদন কবুলকারী, তিনি ব্যতীত উপাসনার যোগ্য আর কোনো ইলাহ্ নেই, আমি তাঁর উপরই ভরসা করি এবং তাঁর কাছেই তাওবা করি। আর সরল পথ আল্লাহর কাছেই পৌঁছায়। লেখক: আবূ উসামা সালীম ইবন ‘ঈদ আল-হেলালী জামাদিউল উলা, ১৪০৮ হিজরী, আম্মান, জর্দান। * * *
১. ঈমানের অধ্যায়
১. ১. ইসলাম:
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার নিকট গ্রহণযোগ্য মূলনীতি ও জীবনবিধান হল ইসলাম; কারণ, তা হল প্রধান বিষয়; সুতরাং যে ব্যক্তি ইসলাম ভিন্ন অন্য কোনো পথ অনুসরণ করে চলবে, সেই ব্যক্তি ধ্বংসপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿ ﺇِﻥَّ ﭐﻟﺪِّﻳﻦَ ﻋِﻨﺪَ ﭐﻟﻠَّﻪِ ﭐﻟۡﺈِﺳۡﻠَٰﻢُۗ ﴾ [ ﺍﻝ ﻋﻤﺮﺍﻥ : ١٩ ]
“নিশ্চয় ইসলামই আল্লাহর নিকট একমাত্র দ্বীন।”[5]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেছেন:
﴿ ﻭَﻣَﻦ ﻳَﺒۡﺘَﻎِ ﻏَﻴۡﺮَ ﭐﻟۡﺈِﺳۡﻠَٰﻢِ ﺩِﻳﻨٗﺎ ﻓَﻠَﻦ ﻳُﻘۡﺒَﻞَ ﻣِﻨۡﻪُ ﻭَﻫُﻮَ ﻓِﻲ ﭐﻟۡﺄٓﺧِﺮَﺓِ ﻣِﻦَ ﭐﻟۡﺨَٰﺴِﺮِﻳﻦَ ٨٥ ﴾ [ ﺍﻝ ﻋﻤﺮﺍﻥ : ٨٥ ]
“আর কেউ ইসলাম ব্যতীত অন্য কোনো দ্বীন গ্রহণ করতে চাইলে তা কখনো তার পক্ষ থেকে কবুল করা হবে না এবং সে হবে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত।”[6] কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা হলেন ন্যায়পরায়ণ ও দয়াবান, তিনি তাঁর বান্দাদের জন্য কুফরীকে পছন্দ করেন না; তাই তারা যখন কুফরী করা থেকে বিরত থাকবে, তখন তিনি তাদেরকে (তার প্রিয় বান্দা হিসেবে) গ্রহণ করে নিবেন এবং তাদেরকে ক্ষমা করে দিবেন; কেননা, তিনি হলেন ক্ষমাশীল ও দয়াবান। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ ﻗُﻞ ﻟِّﻠَّﺬِﻳﻦَ ﻛَﻔَﺮُﻭٓﺍْ ﺇِﻥ ﻳَﻨﺘَﻬُﻮﺍْ ﻳُﻐۡﻔَﺮۡ ﻟَﻬُﻢ ﻣَّﺎ ﻗَﺪۡ ﺳَﻠَﻒَ ﻭَﺇِﻥ ﻳَﻌُﻮﺩُﻭﺍْ ﻓَﻘَﺪۡ ﻣَﻀَﺖۡ ﺳُﻨَّﺖُ ﭐﻟۡﺄَﻭَّﻟِﻴﻦَ ٣٨ ﻭَﻗَٰﺘِﻠُﻮﻫُﻢۡ ﺣَﺘَّﻰٰ ﻟَﺎ ﺗَﻜُﻮﻥَ ﻓِﺘۡﻨَﺔٞ ﻭَﻳَﻜُﻮﻥَ ﭐﻟﺪِّﻳﻦُ ﻛُﻠُّﻪُۥ ﻟِﻠَّﻪِۚ ﻓَﺈِﻥِ ﭐﻧﺘَﻬَﻮۡﺍْ ﻓَﺈِﻥَّ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﺑِﻤَﺎ ﻳَﻌۡﻤَﻠُﻮﻥَ ﺑَﺼِﻴﺮٞ ٣٩ ﴾ [ ﺍﻻﻧﻔﺎﻝ : ٣٨، ٣٩ ]
“যারা কুফরী করে তাদেরকে বলুন, ‘যদি তারা বিরত হয়, তবে যা আগে হয়ে গেছে আল্লাহ্ তা ক্ষমা করবেন; কিন্তু তারা যদি অন্যায়ের পুনরাবৃত্তি করে, তবে পূর্ববর্তীদের রীতি তো গত হয়েছেই। আর তোমরা তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে থাকবে যতক্ষণ না ফেৎনা দুর হয় এবং দ্বীন পূর্ণরূপে আল্লাহ্র জন্য হয়ে যায়; তারপর যদি তারা বিরত হয়, তবে তারা যা করে আল্লাহ্ তো তার সম্যক দ্রষ্টা।”[7]
আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« ﺇﺫﺍ ﺃَﺳْﻠَﻢَ ﺍﻟْﻌَﺒْﺪُ، ﻓَﺤَﺴُﻦَ ﺇِﺳْﻼَﻣُﻪُ، ﻛَﺘَﺐَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻟﻪ ﻛﻞ ﺣﺴﻨﺔ ﻛﺎﻥ ﺃَﺯْﻟَﻔَﻬَﺎ، ﻭَﻣُﺤِﻴَﺖْ ﻋَﻨْﻪُ ﻛُﻞُّ ﺳَﻴِّﺌَﺔٍ ﻛَﺎﻥَ ﺃَﺯْﻟَﻔَﻬَﺎ، ﺛُﻢَّ ﻛﺎﻥ ﺑﻌﺪ ﺫﻟﻚ ﺍﻟْﻘِﺼَﺎﺹُ ، ﺍﻟْﺤَﺴَﻨَﺔُ ﺑِﻌَﺸْﺮ ﺃَﻣْﺜَﺎﻟِﻬَﺎ ﺇﻟﻰ ﺳَﺒْﻌِﻤِﺎﺋَﺔِ ﺿِﻌْﻒٍ ، ﻭَﺍﻟﺴَّﻴِّﺌَﺔُ ﺑِﻤِﺜْﻠِﻬَﺎ ، ﺇِﻻَّ ﺃَﻥْ ﻳَﺘَﺠَﺎﻭَﺯَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻬَﺎ » . ( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ﻭ ﺍﻟﻨﺴﺎﺋﻲ ) .
“বান্দা যখন ইসলাম গ্রহণ করে এবং তার ইসলাম গ্রহণ উত্তমভাবে হয়, তখন আল্লাহ তা‘আলা তার আগের সকল ভাল কাজকে ভাল কাজ বলে গণ্য করেন এবং তার আগের সকল গুনাহ্ ক্ষমা করে দেওয়া হয়; অতঃপর শুরু হয় প্রতিদান; একটি সৎ কাজের বিনিময়ে দশ গুণ থেকে সাতশত গুণ পর্যন্ত সাওয়াব দেওয়া হয়; আর একটি মন্দ কাজের বিনিময়ে তার সমপরিমাণ মন্দ প্রতিফল; তবে আল্লাহ যদি মাফ করে দেন, তাহলে ভিন্ন কথা।”[8]
নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই বাণী একটি অতিরিক্ত হুকুম (বিধান) সাব্যস্ত করল, যা আল্লাহর পক্ষ থেকে এক বিশেষ অনুগ্রহ ও দয়া হিসেবে প্রমাণিত; তা হল ইসলাম পূর্ব সময়ের সকল ভাল কাজকে ভাল কাজ বলে গণ্য করে নেওয়া[9]; আর অনুরূপভাবে তা হয়ে যাবে মহান আল্লাহর অপার দান এবং মহান রব কর্তৃক প্রদত্ত পুরস্কার।
অতএব, ঐ সত্তার নামে শপথ করে বলছি, যাঁর হাতে আমার জীবন! এই মহান অনুগ্রহ ও অবদান থেকে আত্মভোলা ব্যক্তি ছাড়া আর কেউ উদাসীন থাকতে পারে না, যাকে শয়তান দখল করে নিয়েছে, ফলে সে তার রবকে ভুলে গেছে। আল-কুরআনের ভাষায়:
﴿ ﻭَﻗَﺎﻟُﻮﺍْ ﻟَﻮۡ ﻛُﻨَّﺎ ﻧَﺴۡﻤَﻊُ ﺃَﻭۡ ﻧَﻌۡﻘِﻞُ ﻣَﺎ ﻛُﻨَّﺎ ﻓِﻲٓ ﺃَﺻۡﺤَٰﺐِ ﭐﻟﺴَّﻌِﻴﺮِ ١٠ ﻓَﭑﻋۡﺘَﺮَﻓُﻮﺍْ ﺑِﺬَﻧۢﺒِﻬِﻢۡ ﻓَﺴُﺤۡﻘٗﺎ ﻟِّﺄَﺻۡﺤَٰﺐِ ﭐﻟﺴَّﻌِﻴﺮِ ١١ ﺇِﻥَّ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳَﺨۡﺸَﻮۡﻥَ ﺭَﺑَّﻬُﻢ ﺑِﭑﻟۡﻐَﻴۡﺐِ ﻟَﻬُﻢ ﻣَّﻐۡﻔِﺮَﺓٞ ﻭَﺃَﺟۡﺮٞ ﻛَﺒِﻴﺮٞ ١٢ ﻭَﺃَﺳِﺮُّﻭﺍْ ﻗَﻮۡﻟَﻜُﻢۡ ﺃَﻭِ ﭐﺟۡﻬَﺮُﻭﺍْ ﺑِﻪِۦٓۖ ﺇِﻧَّﻪُۥ ﻋَﻠِﻴﻢُۢ ﺑِﺬَﺍﺕِ ﭐﻟﺼُّﺪُﻭﺭِ ١٣ ﺃَﻟَﺎ ﻳَﻌۡﻠَﻢُ ﻣَﻦۡ ﺧَﻠَﻖَ ﻭَﻫُﻮَ ﭐﻟﻠَّﻄِﻴﻒُ ﭐﻟۡﺨَﺒِﻴﺮُ ١٤ ﴾ [ ﺍﻟﻤﻠﻚ : ١٠، ١٤ ]
“আর তারা বলবে, যদি আমরা শুনতাম অথবা বিবেক-বুদ্ধি প্রয়োগ করতাম, তাহলে আমরা জ্বলন্ত আগুনের অধিবাসী হতাম না। অতঃপর তারা তাদের অপরাধ স্বীকার করবে। সুতরাং ধ্বংস জ্বলন্ত আগুনের অধিবাসীদের জন্য! নিশ্চয় যারা গায়েব অবস্থায় তাদের রবকে ভয় করে, তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও মহাপুরস্কার। আর তোমরা তোমাদের কথা গোপনেই বল অথবা প্রকাশ্যে বল, তিনি তো অন্তরসমূহে যা আছে তা সম্পর্কে সম্যক অবগত। যিনি সৃষ্টি করেছেন, তিনি কি জানেন না? অথচ তিনি সূক্ষ্মদর্শী, সম্যক অবহিত।”[10]
হে সন্দেহের মরুভূমিতে দিশেহারা মানব জাতি! ঐ আল্লাহর দিকে পালিয়ে আস, সবকিছু যাঁর রহমত ও জ্ঞানের পরিধিভুক্ত। হে বিচ্ছিন্ন প্রবৃত্তির মরীচিকায় উত্তেজিত কামনাবিভোর জাতি! মহান রব ও নিরবিচ্ছিন্ন ছায়ার দিকে ছুটে আস। হে লোকসকল! এ মাহান সংবাদটি নিয়ে মুহূর্তকাল চিন্তা, গবেষণা ও বিচার-বিশ্লেষণ কর। আবদুর রাহমান ইবন শুমাসাহ আল-মাহরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
« ﺣَﻀَﺮْﻧَﺎ ﻋَﻤْﺮَﻭ ﺑﻦَ ﺍﻟﻌَﺎﺹِ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻭَﻫُﻮَ ﻓﻲ ﺳِﻴَﺎﻗَﺔِ ﺍﻟْﻤَﻮْﺕِ ، ﻓَﺒَﻜَﻰ ﻃَﻮِﻳﻼً ، ﻭَﺣَﻮَّﻝَ ﻭَﺟْﻬَﻪُ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﺠِﺪَﺍﺭِ ، ﻓَﺠَﻌَﻞَ ﺍﺑْﻨُﻪُ ﻳَﻘُﻮﻝُ : ﻳَﺎ ﺃﺑَﺘَﺎﻩُ ، ﺃﻣَﺎ ﺑَﺸَّﺮَﻙَ ﺭﺳﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺑﻜَﺬَﺍ ؟ ﺃﻣَﺎ ﺑَﺸَّﺮَﻙَ ﺭﺳﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺑِﻜَﺬَﺍ ؟ ﻗَﺎﻝَ : ﻓَﺄﻗْﺒَﻞَ ﺑِﻮَﺟْﻬِﻪِ ، ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﺇﻥَّ ﺃﻓْﻀَﻞَ ﻣَﺎ ﻧُﻌِﺪُّ ﺷَﻬَﺎﺩَﺓُ ﺃﻥْ ﻻ ﺇﻟﻪَ ﺇِﻻَّ ﺍﻟﻠﻪ ، ﻭَﺃﻥَّ ﻣُﺤَﻤَّﺪﺍً ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪِ ، ﺇﻧِّﻲ ﻗَﺪْ ﻛُﻨْﺖُ ﻋَﻠَﻰ ﺃﻃْﺒَﺎﻕٍ ﺛَﻼَﺙٍ : ﻟَﻘَﺪْ ﺭَﺃﻳْﺘُﻨِﻲ ﻭَﻣَﺎ ﺃﺣَﺪٌ ﺃﺷَﺪُّ ﺑُﻐﻀﺎً ﻟﺮﺳﻮﻝِ ﺍﻟﻠﻪ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﻣِﻨِّﻲ ، ﻭَﻻَ ﺃﺣَﺐَّ ﺇﻟﻲَّ ﻣِﻦْ ﺃﻥْ ﺃﻛُﻮﻥَ ﻗﺪِ ﺍﺳْﺘَﻤﻜﻨﺖُ ﻣِﻨْﻪُ ﻓَﻘَﺘَﻠْﺘُﻪ ، ﻓَﻠَﻮْ ﻣُﺖُّ ﻋَﻠَﻰ ﺗﻠﻚَ ﺍﻟﺤَﺎﻝِ ﻟَﻜُﻨْﺖُ ﻣِﻦْ ﺃﻫْﻞِ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ . ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﺟَﻌَﻞَ ﺍﻟﻠﻪُ ﺍﻹﺳﻼﻡَ ﻓﻲ ﻗَﻠْﺒِﻲ ﺃﺗَﻴْﺖُ ﺍﻟﻨﺒﻲَّ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ، ﻓﻘُﻠْﺖُ : ﺍﺑﺴُﻂْ ﻳَﻤِﻴﻨَﻚَ ﻓَﻸُﺑَﺎﻳِﻌُﻚ ، ﻓَﺒَﺴَﻂَ ﻳَﻤِﻴﻨَﻪُ . ﻗَﺎﻝَ : ﻓَﻘَﺒَﻀْﺖُ ﻳَﺪِﻱ ، ﻓَﻘَﺎﻝَ : « ﻣَﺎ ﻟَﻚَ ﻳَﺎ ﻋَﻤْﺮُﻭ ؟ » . ﻗﻠﺖُ : ﺃﺭﺩﺕُ ﺃﻥْ ﺃﺷْﺘَﺮِﻁَ . ﻗَﺎﻝَ : « ﺗَﺸْﺘَﺮِﻁ ﻣَﺎﺫﺍ ؟ » ﻗُﻠْﺖُ : ﺃﻥْ ﻳُﻐْﻔَﺮَ ﻟِﻲ ، ﻗَﺎﻝَ : « ﺃﻣَﺎ ﻋَﻠِﻤْﺖَ ﺃﻥ ﺍﻹﺳﻼﻡَ ﻳَﻬْﺪِﻡُ ﻣَﺎ ﻛَﺎﻥَ ﻗَﺒْﻠَﻪُ ، ﻭَﺃﻥ ﺍﻟﻬِﺠْﺮَﺓَ ﺗَﻬْﺪِﻡُ ﻣَﺎ ﻛَﺎﻥَ ﻗَﺒﻠَﻬَﺎ ، ﻭَﺃﻥَّ ﺍﻟﺤَﺞَّ ﻳَﻬْﺪِﻡُ ﻣَﺎ ﻛَﺎﻥَ ﻗَﺒْﻠَﻪُ ؟ » . ﻭَﻣَﺎ ﻛَﺎﻥَ ﺃﺣﺪٌ ﺃﺣَﺐَّ ﺇﻟﻲَّ ﻣِﻦْ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ، ﻭَﻻَ ﺃﺟَﻞَّ ﻓﻲ ﻋَﻴﻨﻲ ﻣِﻨْﻪُ ﻭَﻣَﺎ ﻛُﻨْﺖُ ﺃُﻃﻴﻖُ ﺃﻥ ﺃﻣﻸ ﻋَﻴﻨﻲ ﻣِﻨْﻪُ ؛ ﺇﺟﻼﻻً ﻟَﻪُ ، ﻭﻟﻮ ﺳﺌﻠﺖ ﺃﻥ ﺃﺻﻔﻪ ﻣَﺎ ﺃﻃﻘﺖ ، ﻷﻧﻲ ﻟَﻢْ ﺃﻛﻦ ﺃﻣﻸ ﻋﻴﻨﻲ ﻣِﻨْﻪُ ، ﻭﻟﻮ ﻣُﺖُّ ﻋَﻠَﻰ ﺗِﻠْﻚَ ﺍﻟﺤﺎﻝِ ﻟَﺮﺟَﻮْﺕُ ﺃﻥ ﺃﻛُﻮﻥَ ﻣِﻦْ ﺃﻫْﻞِ ﺍﻟﺠَﻨَّﺔِ . ﺛُﻢَّ ﻭَﻟِﻴﻨَﺎ ﺃﺷْﻴَﺎﺀَ ﻣَﺎ ﺃﺩْﺭِﻱ ﻣَﺎ ﺣَﺎﻟِﻲ ﻓِﻴﻬَﺎ ؟ ﻓَﺈﺫَﺍ ﺃﻧَﺎ ﻣُﺖُّ ﻓَﻼَ ﺗَﺼﺤَﺒَﻨِّﻲ ﻧَﺎﺋِﺤَﺔٌ ﻭَﻻَ ﻧَﺎﺭٌ ، ﻓَﺈﺫﺍ ﺩَﻓَﻨْﺘُﻤُﻮﻧِﻲ ، ﻓَﺸُﻨُّﻮﺍ ﻋَﻠﻲَّ ﺍﻟﺘُّﺮﺍﺏَ ﺷَﻨّﺎً ، ﺛُﻢَّ ﺃﻗِﻴﻤُﻮﺍ ﺣَﻮْﻝَ ﻗَﺒْﺮِﻱ ﻗَﺪْﺭَ ﻣَﺎ ﺗُﻨْﺤَﺮُ ﺟَﺰﻭﺭٌ ، ﻭَﻳُﻘْﺴَﻢُ ﻟَﺤْﻤُﻬَﺎ ، ﺣَﺘَّﻰ ﺃَﺳْﺘَﺄﻧِﺲَ ﺑِﻜُﻢْ ، ﻭَﺃﻧْﻈُﺮَ ﻣَﺎ ﺃُﺭَﺍﺟﻊُ ﺑِﻪِ ﺭﺳُﻞَ ﺭَﺑّﻲ » . ( ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ ) .
“আমরা ‘আমর ইবন ‘আসের নিকট হাযির হলাম, তখন তিনি ছিলেন মুমূর্ষাবস্থায়— মৃত্যুযন্ত্রনায় কাতর; তারপর তিনি বহুক্ষণ ধরে কাঁদলেন এবং তার চেহারা দেয়ালের দিকে ফিরিয়ে নেন। এ অবস্থা দেখে তার পুত্র তাকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলেন: হে আব্বাজান! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি আপনাকে এরূপ সুসংবাদ শোনান নি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি আপনাকে অমুক সুসংবাদ শোনান নি? বর্ণনাকারী বলেন: তারপর তিনি মুখ ফেরালেন এবং বললেন: আমাদের সর্বোত্তম পুঁজি হল এই কথার সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো সত্য ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল। বস্তুত আমি জীবনে তিন তিনটি পর্যায়[11] অতিক্রম করেছি: আমার জীবনের এমন একটি পর্যায়ও ছিল, যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেয়ে আর কারও প্রতি আমার এতো বেশি কঠোর বিদ্বেষ ও শত্রুতা ছিল না; আওতায় পেলে তাঁকে হত্যা করে ফেলার চাইতে বেশি প্রিয় আমার নিকট আর কিছু ছিল না; সুতরাং ঐ অবস্থায় যদি আমার মৃত্যু হয়ে যেত, তাহলে আমি নিশ্চিত জাহান্নামের অধিবাসী হয়ে যেতাম। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা যখন আমার অন্তরে ইসলামের মনোভাব ও আকর্ষণ তৈরি করে দিলেন, তখন আমি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আসলাম এবং তারপর বললাম: আপনার ডান হাত বাড়িয়ে দিন, আমি আপনার নিকট (আনুগত্যের) বাই‘আত গ্রহণ করতে চাই; তখন তিনি তাঁর ডানহাত প্রসারিত করে দিলেন। তিনি (‘আমর ইবন ‘আস রা.) বললেন: এবার আমি হাত গুটিয়ে নিলাম। তিনি বললেন: হে ‘আমর! তোমার কী হয়েছে? জবাবে আমি বললাম: আমি শর্ত করতে চাই। তিনি বললেন: তুমি কী শর্ত করতে চাও? জবাবে আমি বললাম: আমাকে যেন ক্ষমা করে দেওয়া হয়; এবার তিনি বললেন: “তোমার কি জানা নেই যে, ইসলাম ইসলাম-পূর্ব জীবনের সকল গুনাহ মিটিয়ে দেয়? আর হিজরত হিজরত-পূর্ব জীবনের সকল গুনাহ ধ্বংস করে দেয়? আর হাজ্জ হাজ্জ-পূর্ব জীবনের সকল গুনাহ ধ্বংস করে দেয়?” (যাই হউক, এরপর আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট বাই‘আত গ্রহণ করলাম)। আর তখন আমার নিকট রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেয়ে অধিক প্রিয় আর কেউ রইল না; আমার চোখে তাঁর চেয়ে অধিক মর্যাদাবানও আর কেউ থাকল না এবং তাঁর অপরিসীম মর্যাদা ও গাম্ভীর্যের দরুন আমি চোখভরে তাঁর প্রতি তাকাতে পর্যন্ত পারতাম না। ফলে আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের আকার-প্রকৃতি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তার বর্ণনা দিতে আমি অক্ষম হবো, কারণ আমি তাঁর প্রতি পূর্ণ চোখে তাকাতাম না। এই অবস্থায় যদি আমার মৃত্যু হয়ে যেতো, তাহলে আমি জান্নাতবাসীদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার নিশ্চিত আশা ছিল। এরপর আমাদেরকে অনেক যিম্মদারী বা দায়-দায়িত্ব মাথায় নিতে হলো; জানি না, সেসব ব্যাপারে আমার অবস্থা কী হবে? যাই হউক, আমার যখন মৃত্যু হবে, তখন আমার জানাযায় যেন কোনো বিলাপকারিনী ও আগুনের সংশ্রব না থাকে। আর তোমরা যখন আমাকে দাফন করবে, তখন আমার কবরে অল্প অল্প করে মাটি ফেলবে; অতঃপর আমার কবরের চারপাশে এ পরিমাণ সময় অবস্থান করবে, যে সময়ের মধ্যে একটি উট যবাই করে তার গোশত বণ্টন করা যায়; যাতে আমি তোমাদের ভালবাসা ও সান্নিধ্য লাভ করতে পারি এবং আমার রবের পাঠানো ফিরিশ্তাদের সাথে কি ধরনের বাক-বিনিময় হয়, তা জেনে নিতে পারি।”[12]
১. ২. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য ও অনুসরণ করা:
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা‘আলা একের পর এক ধারাবাহিকভাবে তাঁর রাসূলদেরকে প্রেরণ করেছেন, যাতে তাঁরা পথহারা মানুষদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে নিয়ে যেতে পারেন। আর আল্লাহ তা‘আলা তাঁদের অনুসরণ করাকে বাধ্যতামূলক করে দিয়েছেন। আল-কুরআনের ভাষায়: ﴿ ﻭَﻣَﺎٓ ﺃَﺭۡﺳَﻠۡﻨَﺎ ﻣِﻦ ﺭَّﺳُﻮﻝٍ ﺇِﻟَّﺎ ﻟِﻴُﻄَﺎﻉَ ﺑِﺈِﺫۡﻥِ ﭐﻟﻠَّﻪِۚ ﴾ [ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ : ٦٤ ]
“আল্লাহর অনুমতিক্রমে কেবলমাত্র আনুগত্য করার জন্যই আমরা রাসূলদের প্রেরণ করেছি।”[13] আর নবী-রাসূল প্রেরণের ধারাবহিকতায় নবীদের মাঝ থেকে আমাদের জন্য বরাদ্ধ হয়েছেন মুহাম্মাদ ইবন আবদিল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম, যেমনিভাবে উম্মাতগণের মধ্য থেকে আমরা হলাম তাঁর ভাগের উম্মাত; এই জন্য তাঁর আনুগত্য করা ছাড়া আর কোনো আনুগত্যই শুদ্ধ হবে না। আর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য করার বাধ্যবাধকতার ব্যাপারে আল-কুরআনুল কারীম অনেকভাবে বক্তব্য পেশ করেছে, যেগুলোকে সুস্পষ্ট আয়াত বলে গণ্য করা হয়:
(ক) রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ঈমান আনার আবশ্যকতা নিয়ে বর্ণিত আয়াত: আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿ ﻓََٔﺎﻣِﻨُﻮﺍْ ﺑِﭑﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺭَﺳُﻮﻟِﻪِ ﭐﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﭐﻟۡﺄُﻣِّﻲِّ ﭐﻟَّﺬِﻱ ﻳُﺆۡﻣِﻦُ ﺑِﭑﻟﻠَّﻪِ ﻭَﻛَﻠِﻤَٰﺘِﻪِۦ ﻭَﭐﺗَّﺒِﻌُﻮﻩُ ﻟَﻌَﻠَّﻜُﻢۡ ﺗَﻬۡﺘَﺪُﻭﻥَ ١٥٨ ﴾ [ ﺍﻻﻋﺮﺍﻑ : ١٥٨ ]
“কাজেই তোমরা ঈমান আন আল্লাহর প্রতি ও তাঁর রাসূল উম্মী নবীর প্রতি, যিনি আল্লাহ্ ও তাঁর বাণীসমূহে ঈমান রাখেন। আর তোমরা তার অনুসরণ কর, যাতে তোমরা হিদায়াতপ্রাপ্ত হও।”[14] আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনার বিষয়টির সাথে সংযুক্ত করে দেওয়া হয়েছে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য ও অনুসরণ করার বিষয়টিকে; সুতরাং জানা গেল যে, ব্যক্তির সকল অবস্থায় এই শর্তটি পূরণ করা আবশ্যক।
(খ) যে আয়াত প্রমাণ করে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য করা মানে আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্য করা; কেননা, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য করা ছাড়া আল্লাহর আনুগত্য হয় না:
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿ ﻣَّﻦ ﻳُﻄِﻊِ ﭐﻟﺮَّﺳُﻮﻝَ ﻓَﻘَﺪۡ ﺃَﻃَﺎﻉَ ﭐﻟﻠَّﻪَۖ ﴾ [ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ : ٨٠ ]
“কেউ রাসূলের আনুগত্য করলে সে তো আল্লাহরই আনুগত্য করল।”[15]
(গ) যে আয়াতে আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্য করার নির্দেশের সাথে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য করার বিষয়টিকে সংযুক্ত করে দেওয়া হয়েছে:
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿ ﻳَٰٓﺄَﻳُّﻬَﺎ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺀَﺍﻣَﻨُﻮٓﺍْ ﺃَﻃِﻴﻌُﻮﺍْ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﻭَﺃَﻃِﻴﻌُﻮﺍْ ﭐﻟﺮَّﺳُﻮﻝَ ﻭَﺃُﻭْﻟِﻲ ﭐﻟۡﺄَﻣۡﺮِ ﻣِﻨﻜُﻢۡۖ ﴾ [ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ : ٥٩ ]
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর, রাসূলের আনুগত্য কর, আরও আনুগত্য কর তোমাদের মধ্যকার ক্ষমতাশীলদের।”[16]
(ঘ) যেসব আয়াতে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য করার বিষয়টিকে আল্লাহর বন্দাগণের জন্য তাঁর রহমত পাওয়ার উপলক্ষ্য বানিয়ে দেওয়া হয়েছে:
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿ ﻭَﺃَﻃِﻴﻌُﻮﺍْ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﻭَﭐﻟﺮَّﺳُﻮﻝَ ﻟَﻌَﻠَّﻜُﻢۡ ﺗُﺮۡﺣَﻤُﻮﻥَ ١٣٢ ﴾ [ ﺍﻝ ﻋﻤﺮﺍﻥ : ١٣٢ ]
“আর তোমরা আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য কর, যাতে তোমরা কৃপা লাভ করতে পার।”[17] আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেছেন:
﴿ ﻭَﺃَﻃِﻴﻌُﻮﺍْ ﭐﻟﺮَّﺳُﻮﻝَ ﻟَﻌَﻠَّﻜُﻢۡ ﺗُﺮۡﺣَﻤُﻮﻥَ ٥٦ ﴾ [ ﺍﻟﻨﻮﺭ : ٥٦ ]
“আর তোমরা রাসূলের আনুগত্য কর, যাতে তোমাদের উপর রহম করা হয়।”[18]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ ﻭَﻳُﻄِﻴﻌُﻮﻥَ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﻭَﺭَﺳُﻮﻟَﻪُۥٓۚ ﺃُﻭْﻟَٰٓﺌِﻚَ ﺳَﻴَﺮۡﺣَﻤُﻬُﻢُ ﭐﻟﻠَّﻪُۗ ﴾ [ ﺍﻟﺘﻮﺑﺔ : ٧١ ]
“আর তারা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে; তারাই, যাদেরকে আল্লাহ্ অচিরেই দয়া করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ্ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।”[19]
(ঙ) যে আয়াত হেদায়াতের বিষয়টিকে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য করার শর্তের সাথে সংযুক্ত করেছে:
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿ ﻗُﻞۡ ﺃَﻃِﻴﻌُﻮﺍْ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﻭَﺃَﻃِﻴﻌُﻮﺍْ ﭐﻟﺮَّﺳُﻮﻝَۖ ﻓَﺈِﻥ ﺗَﻮَﻟَّﻮۡﺍْ ﻓَﺈِﻧَّﻤَﺎ ﻋَﻠَﻴۡﻪِ ﻣَﺎ ﺣُﻤِّﻞَ ﻭَﻋَﻠَﻴۡﻜُﻢ ﻣَّﺎ ﺣُﻤِّﻠۡﺘُﻢۡۖ ﻭَﺇِﻥ ﺗُﻄِﻴﻌُﻮﻩُ ﺗَﻬۡﺘَﺪُﻭﺍْۚ ﻭَﻣَﺎ ﻋَﻠَﻰ ﭐﻟﺮَّﺳُﻮﻝِ ﺇِﻟَّﺎ ﭐﻟۡﺒَﻠَٰﻎُ ﭐﻟۡﻤُﺒِﻴﻦُ ٥٤ ﴾ [ ﺍﻟﻨﻮﺭ : ٥٤ ]
“বলুন, ‘তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রাসূলের আনুগত্য কর।’ তারপর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে তার উপর অর্পিত দায়িত্বের জন্য তিনিই দায়ী এবং তোমাদের উপর অর্পিত দায়িত্বের জন্য তোমরাই দায়ী; আর তোমরা তার আনুগত্য করলে সৎপথ পাবে, মূলত: রাসূলের দায়িত্ব শুধু স্পষ্টভাবে পৌঁছে দেওয়া।”[20] আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্যের বিষয়টি তখনই প্রকৃত রূপে ফুটে উঠবে, যখন মুসলিম ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহকে হুবহু প্রাধান্য দিবে; কেননা, সে নিশ্চিতভাবে জানে যে, আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ মানব জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত (তার জন্ম থেকে কবরে মাটি চাপা দেওয়া পর্যন্ত) ছোট ও বড় সকল বিষয়কে নিখুঁতভাবে বর্ণনা করেছে।
সুতরাং যে ব্যক্তি এই কাজটি করবে, সে যেন গুনাহ্ মাফ ও পাপ মোচনের সুসংবাদ গ্রহণ করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿ ﻗُﻞۡ ﺇِﻥ ﻛُﻨﺘُﻢۡ ﺗُﺤِﺒُّﻮﻥَ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﻓَﭑﺗَّﺒِﻌُﻮﻧِﻲ ﻳُﺤۡﺒِﺒۡﻜُﻢُ ﭐﻟﻠَّﻪُ ﻭَﻳَﻐۡﻔِﺮۡ ﻟَﻜُﻢۡ ﺫُﻧُﻮﺑَﻜُﻢۡۚ ﻭَﭐﻟﻠَّﻪُ ﻏَﻔُﻮﺭٞ ﺭَّﺣِﻴﻢٞ ٣١ ﴾ [ ﺍﻝ ﻋﻤﺮﺍﻥ : ٣١ ]
“বলুন, ‘তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাস, তবে আমাকে অনুসরণ কর, আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করবেন। আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”[21]
আর যখন একদল জিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে শুনতে পায় এবং জানতে পারে যে, তাঁর অনুসরণ করা গুনাহ্ মাফের উপায়, তখন তারা তাদের সম্প্রদায়ের নিকট ভয় প্রদর্শনকারী হিসেবে ফিরে যায়। আল-কুরআনের ভাষায়:
﴿ ﻳَٰﻘَﻮۡﻣَﻨَﺎٓ ﺃَﺟِﻴﺒُﻮﺍْ ﺩَﺍﻋِﻲَ ﭐﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺀَﺍﻣِﻨُﻮﺍْ ﺑِﻪِۦ ﻳَﻐۡﻔِﺮۡ ﻟَﻜُﻢ ﻣِّﻦ ﺫُﻧُﻮﺑِﻜُﻢۡ ﻭَﻳُﺠِﺮۡﻛُﻢ ﻣِّﻦۡ ﻋَﺬَﺍﺏٍ ﺃَﻟِﻴﻢٖ ٣١ ﴾ [ ﺍﻻﺣﻘﺎﻑ : ٣١ ]
“হে আমাদের সম্প্রদায়! আল্লাহর দিকে আহ্বানকারীর প্রতি সাড়া দাও এবং তাঁর উপর ঈমান আন, তিনি তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করবেন এবং যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি হতে তোমাদেরকে রক্ষা করবেন।”[22]
আর এই জন্যই খাঁটি মুমিনদেরকে দেখা যায়— তারা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ করার মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলার কাছে প্রার্থনা ও মিনতি করে, যাতে তিনি তাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেন, পাপসমূহ মোচন করে দেন এবং সর্বোত্তমভাবে মৃত্যু তথা জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটান; আল-কুরআনের ভাষায়:
﴿ ﺭَّﺑَّﻨَﺎٓ ﺇِﻧَّﻨَﺎ ﺳَﻤِﻌۡﻨَﺎ ﻣُﻨَﺎﺩِﻳٗﺎ ﻳُﻨَﺎﺩِﻱ ﻟِﻠۡﺈِﻳﻤَٰﻦِ ﺃَﻥۡ ﺀَﺍﻣِﻨُﻮﺍْ ﺑِﺮَﺑِّﻜُﻢۡ ﻓََٔﺎﻣَﻨَّﺎۚ ﺭَﺑَّﻨَﺎ ﻓَﭑﻏۡﻔِﺮۡ ﻟَﻨَﺎ ﺫُﻧُﻮﺑَﻨَﺎ ﻭَﻛَﻔِّﺮۡ ﻋَﻨَّﺎ ﺳَﻴَِّٔﺎﺗِﻨَﺎ ﻭَﺗَﻮَﻓَّﻨَﺎ ﻣَﻊَ ﭐﻟۡﺄَﺑۡﺮَﺍﺭِ ١٩٣ ﴾ [ ﺍﻝ ﻋﻤﺮﺍﻥ : ١٩٣ ]
“হে আমাদের রব! আমরা এক আহ্বায়ককে ঈমানের দিকে আহ্বান করতে শুনেছি, ‘তোমরা তোমাদের রবের উপর ঈমান আন।’ কাজেই আমরা ঈমান এনেছি। হে আমাদের রব! আপনি আমাদের পাপরাশি ক্ষমা করুন, আমাদের মন্দ কাজগুলো দূরীভূত করুন এবং আমাদেরকে সৎকর্মপরায়ণদের সহগামী করে মৃত্যু দিন।”[23]
আর এই ধরনের অসীলা করাটা শরী‘য়তসম্মত অসীলার এক প্রকার; কেননা, সে সৎকাজ দ্বারা অসীলা করেছে। অতএব, হে আমাদের রব! তোমার নবীর প্রতি আমাদের ভালবাসা এবং কথায় ও কাজে তাঁর সুন্নাতের অনুসরণ করার কারণে আপনি আমাদের অন্তরকে আপনার দীনের উপর অটল রাখুন; আর আপনি এক মুহূর্তের জন্যেও আমাদেরকে আমাদের নিজেদের দায়িত্বে ছেড়ে দিবেন না; আর আপনি আমাদেরকে ক্ষমা করুন, আমাদের প্রতি দয়া করুন, আপনিই আমাদের অভিভাবক। অতএব কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য করুন। * * *
২. চরিত্রের অধ্যায় ২. ১. বিশুদ্ধ তাওবা[24]:
হে মুক্তির পথের পথিক বান্দা! জেনে রাখুন, তাওবা হলো ইসলামের মূলনীতিসমূহের অন্যতম একটি; আর তা হলো মহাশক্তিধর মালিকের নিকট নিশ্চিত অবস্থানের দিকে ভ্রমণকারীদের প্রথম মানযিল এবং পরকালের দিকে অভিযাত্রীদের দীর্ঘ পথের সূচনা। তা সত্ত্বেও এটা যেমনিভাবে সূচনা, ঠিক অনুরূপভাবে এটা মাঝামাঝি ও শেষও বটে; সুতরাং তা থেকে কোনো নৈতিকতা সম্পন্ন বান্দা বিচ্ছিন্ন হতে পারে না এবং মৃত্যু পর্যন্ত সে তা অব্যাহত রাখবে। আর তাওবার সূচনা হল এমনভাবে লজ্জিত বা অনুশোচনা করা, যা এ দৃঢ়তা, সঠিক ইচ্ছাশক্তি ও প্রকৃত জ্ঞানবোধ জন্ম দিবে যে, পাপরাশি হলো বান্দা ও তার প্রতিপালকের মাঝখানে পর্দা বা অন্তরায়; কেননা, তা অন্তরের ময়লা বা কালিমা; সুতরাং সে দ্রুত মুক্তি ও শান্তির দিকে চলবে; আর আল্লাহর দিকে ফিরে যাওয়া ছাড়া তাঁর থেকে মুক্তির কোনো উপায় নেই; আর যে ব্যক্তি তার রবের নিকট আশ্রয় নেয়, সে এমন আশ্রয়ে চলে যায়, যেখানে সে ক্ষতিগ্রস্ত হবে না এবং কখনও সে ফিরে আসবে না শূন্য হাতে। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿ ﻳَٰٓﺄَﻳُّﻬَﺎ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺀَﺍﻣَﻨُﻮﺍْ ﺗُﻮﺑُﻮٓﺍْ ﺇِﻟَﻰ ﭐﻟﻠَّﻪِ ﺗَﻮۡﺑَﺔٗ ﻧَّﺼُﻮﺣًﺎ ﻋَﺴَﻰٰ ﺭَﺑُّﻜُﻢۡ ﺃَﻥ ﻳُﻜَﻔِّﺮَ ﻋَﻨﻜُﻢۡ ﺳَﻴَِّٔﺎﺗِﻜُﻢۡ ﴾ [ ﺍﻟﺘﺤﺮﻳﻢ : ٨ ]
“হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা কর---বিশুদ্ধ তাওবা; সম্ভবত তোমাদের রব তোমাদের পাপসমূহ মোচন করে দেবেন।”[25] আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« ﺍﻟﺘَّﺎﺋِﺐُ ﻣِﻦْ ﺍﻟﺬَّﻧْﺐِ ﻛَﻤَﻦْ ﻟَﺎ ﺫَﻧْﺐَ ﻟَﻪُ » . ( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﻪ ) .
“গুনাহ্ থেকে তাওবাকারী ব্যক্তি ঐ ব্যক্তির মত, যার কোনো গুনাহ্ নেই।”[26] অতএব, হে আমার ভাই! তাওবা ও তোমার মাঝে প্রতিবন্ধকতার দেয়াল রচিত হওয়ার পূর্বেই তুমি তাওবার কাজটি দ্রুত সম্পন্ন কর; কারণ, কোনো ব্যক্তিই জানে না যে, আল্লাহ তার সাথে কেমন আচরণ করবেন।
জনৈক কবির কবিতা:
ﻗَﺪِّﻡْ ﻟِﻨَﻔْﺴِﻚَ ﺗَﻮْﺑَﺔً ﻣَﺮْﺟُﻮَّﺓً ﻗَﺒْﻞَ ﺍﻟﻤَﻤَﺎﺕِ ﻭَﻗَﺒْﻞَ ﺣَﺒْﺲِ ﺍﻷَﻟْﺴُﻦِ
(তুমি তোমার নিজের জন্য প্রত্যাশিত তাওবা পেশ কর মৃত্যুর পূর্বে এবং কথা বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগেই)।
ﺑﺎﺩِﺭ ﺑﻬﺎ ﻏَﻠﻖَ ﺍﻟﻨّﻔﻮﺱ ﻓﺈﻧَّﻬﺎ ﺫُﺧﺮٌ ﻭﻏُﻨﻢ ﻟﻠﻤُﻨﻴﺐ ﺍﻟﻤﺤﺴِﻦِ
(সুযোগ নষ্ট হয়ে যাওয়ার আগেই তুমি তা সম্পন্ন কর; কারণ, তা হল তাওবাকারী সৎকর্মশীল ব্যক্তির জন্য সঞ্চিত ধন ও গনীমত)।
২. ২. উদারতা[27] প্রদর্শন:
ইসলামের প্রত্যেকটি আদেশ ও নিষেধের মধ্যে সূক্ষ্ম ও স্থূলভাবে উদারতার বিষয়টি সুস্পষ্ট; সুতরাং বাস্তবেই নতুনভাবে সেটার পুনরুত্থান ঘটেছে ইসলামের মূলবস্তুতে এবং তার প্রত্যেকটি কর্মপদ্ধতি, নিয়মনীতি ও শাসনব্যবস্থার মধ্যে। ইসলামের মধ্যে উদারতার বিষয়টি স্বর্ণের এমন প্রলেপের মত নয় যে, মানুষ কোনো মরুভূমির মরীচিকায় ঝাঁপিয়ে পড়বে, পিপাসা কাতর ব্যক্তি তাকে পানি মনে করবে, কিন্তু যখন সে সেটার কাছে আসে, তখন দেখে সেটা আসলে কিছুই নয়। উদারতা মানে বদান্যতা ও দানশীলতার মাধ্যমে মনের তৃপ্তি, স্বচ্ছতা ও দীনদারীর দ্বারা হৃদয়ে আনন্দ উপভোগ করা, সহজ ও সরল করার মাধ্যমে নম্রতা প্রদর্শন করা, আনন্দময় ও সুসংবাদ নিয়ে হাস্যোজ্জ্বল চেহারা প্রদর্শন, কোনো প্রকার অপদস্থতা ছাড়াই মুমিনগণের প্রতি বিনয় প্রদর্শন, কোনো প্রকার ধোকা ও প্রতারণা ছাড়াই লেনদেনে ছাড় প্রদান, কোনো প্রকার খাতির ও তোষামোদ ছাড়াই আল্লাহর দিকে আহ্বান করার ক্ষেত্রে সহজ পন্থা অবলম্বন, কোনো প্রকার দ্বিধাদ্বন্দ্ব ও গড়িমসি ছাড়াই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার দীনের আনুগত্য করা। বস্তুত উদারতা হচ্ছে ইসলামের দরজা, নৈতিক চরিত্রের উচ্চ সোপান এবং ঈমানের সর্বোত্তম বস্তু।
এটাই হলো সে উদারতা, যা পাপরাশিকে ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে দেয়; আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿ ﻭَﻟَﺎ ﻳَﺄۡﺗَﻞِ ﺃُﻭْﻟُﻮﺍْ ﭐﻟۡﻔَﻀۡﻞِ ﻣِﻨﻜُﻢۡ ﻭَﭐﻟﺴَّﻌَﺔِ ﺃَﻥ ﻳُﺆۡﺗُﻮٓﺍْ ﺃُﻭْﻟِﻲ ﭐﻟۡﻘُﺮۡﺑَﻰٰ ﻭَﭐﻟۡﻤَﺴَٰﻜِﻴﻦَ ﻭَﭐﻟۡﻤُﻬَٰﺠِﺮِﻳﻦَ ﻓِﻲ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﭐﻟﻠَّﻪِۖ ﻭَﻟۡﻴَﻌۡﻔُﻮﺍْ ﻭَﻟۡﻴَﺼۡﻔَﺤُﻮٓﺍْۗ ﺃَﻟَﺎ ﺗُﺤِﺒُّﻮﻥَ ﺃَﻥ ﻳَﻐۡﻔِﺮَ ﭐﻟﻠَّﻪُ ﻟَﻜُﻢۡۚ ﻭَﭐﻟﻠَّﻪُ ﻏَﻔُﻮﺭٞ ﺭَّﺣِﻴﻢٌ ٢٢ ﴾ [ ﺍﻟﻨﻮﺭ : ٢٢ ]
“আর তোমাদের মধ্যে যারা ঐশ্বর্য ও প্রাচুর্যের অধিকারী, তারা যেন শপথ গ্রহণ না করে যে, তারা আত্মীয়-স্বজন, অভাবগ্রস্তকে ও আল্লাহর রাস্তায় হিজরতকারীদেরকে কিছুই দেবে না; তারা যেন ওদেরকে ক্ষমা করে এবং ওদের দোষ-ত্রুটি উপেক্ষা করে। তোমরা কি চাও না যে, আল্লাহ্ তোমাদেরকে ক্ষমা করুন? আর আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”[28] আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« ﺗَﻠَﻘَّﺖِ ﺍﻟْﻤَﻼﺋِﻜَﺔُ ﺭُﻭْﺡَ ﺭَﺟُﻞٍ ﻣِﻤَّﻦْ ﻛَﺎﻥَ ﻗَﺒْﻠَﻜُﻢْ ، ﻗَﺎﻟُﻮﺍ ﻟَﻪُ : ﻋَﻤِﻠْﺖَ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺨَﻴْﺮِ ﺷَﻴْﺌًﺎ ؟ ﻗَﺎﻝَ : ﻻ ، ﻗَﺎﻟُﻮﺍ : ﺗَﺬَﻛَّﺮْ ، ﻗَﺎﻝَ : ﻛُﻨْﺖُ ﺃُﺩَﺍﻳِﻦُ ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ ، ﻓَﺂﻣُﺮُ ﻓِﺘْﻴَﺎﻧِﻲ ﺃَﻥْ ﻳُﻨْﻈِﺮُﻭﺍ ﺍﻟْﻤُﻮﺳِﺮَ ، ﻭَﻳَﺘَﺠَﺎﻭَﺯُﻭﺍ ﻋَﻦِ ﺍﻟْﻤُﻌْﺴِﺮِ ، ﻗَﺎﻝَ ﻗَﺎﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪُ : ﺗَﺠَﺎﻭَﺯُﻭﺍ ﻋَﻨْﻪُ » . ( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ﻭ ﻣﺴﻠﻢ ) .
“তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মাতের এক ব্যক্তির রূহের সাথে ফিরিশ্তাগণ সাক্ষাৎ করে (অর্থাৎ তার মৃত্যুকালে) জিজ্ঞাসা করলেন: তুমি (বিশেষ) কোনো সৎকাজ করেছ কি? সে বলল: না, তারা বললেন: স্মরণ করে দেখ; সে বলল: আমি মানুষের সাথে লেনদেন করতাম; তারপর অসচ্ছল ব্যক্তিদের অবকাশ দিতে ও সচ্ছল ব্যক্তিদের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন করতে আমি আমার লোকদেরকে নির্দেশ দিতাম। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: এরপর মহান আল্লাহ তা‘আলা বললেন: “তাকে দায়মুক্ত করে দাও।”[29]
২. ৩. মন্দকাজের পরে ভালকাজ করা:
মানুষ প্রবৃত্তি ও লোভ-লালসার কাছে দুর্বল; সুতরাং বান্দা যখন কোনো অন্যায় ও অপরাধ করে ফেলে, তখন সে যেন দ্রুত তার মোকাবিলায় একটি ভাল কাজ করে ফেলে; যেমন— কর্কশ ব্যবহারের মোকাবিলা করবে কোমল ব্যবহার দ্বারা, ক্রোধের মোকাবিলা করবে সংযম প্রদর্শন করার দ্বারা এবং এভাবে করে প্রতিটি মন্দের মোকাবিলায় ভালো অভ্যাস গড়ে তুলবে এবং সমস্যার সমাধান করবে; আর এটাই সবচেয়ে লাগসই পদ্ধতি কিন্তু এটা হওয়া এমন শর্ত নয় যে প্রয়োজনে তার অন্যথা করা যাবে না; কারণ, রোগের চিকিৎসা করা হয় তার বিপরীত বস্তুর দ্বারা; আর প্রতিটি অপরাধই অন্তরকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করে ফেলে, যা তার বিপরীতে ভালকাজের মত নূর বা আলো ছাড়া দূর করতে পারে না। আর যে ব্যক্তি এ অবস্থানের অনুসন্ধান করবে, সে দেখবে যে সবচেয়ে সুন্দর ও দ্রুত কার্যকরী পন্থা হলো পুরাতন গুনাহের জন্য নতুন করে ভালকাজ করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ ﺇِﻥَّ ﭐﻟۡﺤَﺴَﻨَٰﺖِ ﻳُﺬۡﻫِﺒۡﻦَ ﭐﻟﺴَّﻴَِّٔﺎﺕِۚ ﺫَٰﻟِﻚَ ﺫِﻛۡﺮَﻯٰ ﻟِﻠﺬَّٰﻛِﺮِﻳﻦَ ١١٤ ﴾ [ ﻫﻮﺩ : ١١٤ ]
“নিশ্চয় সৎকাজ অসৎকাজকে মিটিয়ে দেয়। উপদেশ গ্রহণকারীদের জন্য এটা এক উপদেশ।”[30] আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« ﺍﺗَّﻖِ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﺣَﻴْﺚُ ﻣَﺎ ﻛُﻨْﺖَ ، ﻭَﺃَﺗْﺒِﻊِ ﺍﻟﺴَّﻴِّﺌَﺔَ ﺍﻟْﺤَﺴَﻨَﺔَ ﺗَﻤْﺤُﻬَﺎ ، ﻭَﺧَﺎﻟِﻖِ ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ ﺑِﺨُﻠُﻖٍ ﺣَﺴَﻦٍ » . ( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ ) .
“তুমি যেখানেই থাক, আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর এবং অসৎকাজ করলে সাথে সাথেই সৎকাজ কর, তাহলে ভাল কাজ মন্দ কাজকে নিশ্চিহ্ন করে দেবে; আর মানুষের সাথে উত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে মেলামেশা কর।”[31]
২. ৪. সালাম দেওয়া ও উত্তম কথা বলা:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« ﺇﻥ ﻣﻦ ﻣﻮﺟﺒﺎﺕ ﺍﻟﻤﻐﻔﺮﺓ ﺑﺬﻝ ﺍﻟﺴﻼﻡ ﻭﺣﺴﻦ ﺍﻟﻜﻼﻡ » .
“ক্ষমা নিশ্চিতকরণের অন্যতম উপায় হলো সালাম বিনিময় করা এবং উত্তম কথা বলা।”[32]
২. ৫. মুসাফাহা বা করমর্দন:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« ﻣَﺎ ﻣِﻦْ ﻣُﺴْﻠِﻤَﻴْﻦِ ﻳَﻠْﺘَﻘِﻴَﺎﻥِ ﻓَﻴَﺘَﺼَﺎﻓَﺤَﺎﻥِ ﺇِﻟَّﺎ ﻏُﻔِﺮَ ﻟَﻬُﻤَﺎ ﻗَﺒْﻞَ ﺃَﻥْ ﻳَﻔْﺘَﺮِﻗَﺎ » . ( ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺑﻮ ﺩﺍﻭﺩ ﻭ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ ﻭ ﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﻪ ) .
“দুই মুসলিমের যখন সাক্ষাৎ হয় এবং তারা পরস্পর মুসাফাহা করে, তখন তাদের বিচ্ছিন্ন হওয়ার আগেই আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে ক্ষমা করে দেন।”[33]
২. ৬. জীব-জন্তুর প্রতি দয়া ও কোমল আচরণ করা:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« ﺑَﻴْﻨَﻤَﺎ ﺭَﺟُﻞٌ ﻳَﻤْﺸِﻲ ﺑِﻄَﺮِﻳﻖٍ ، ﺇِﺫْ ﺍﺷْﺘَﺪَّ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺍﻟْﻌَﻄَﺶُ ، ﻓَﻮَﺟَﺪَ ﺑِﺌْﺮًﺍ ، ﻓَﻨَﺰَﻝَ ﻓِﻴﻬَﺎ ﻓَﺸَﺮِﺏَ ، ﺛُﻢَّ ﺧَﺮَﺝَ ، ﻓَﺈِﺫَﺍ ﻛَﻠْﺐٌ ﻳَﻠْﻬَﺚُ ﻳَﺄْﻛُﻞُ ﺍﻟﺜَّﺮَﻯ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻌَﻄَﺶِ ، ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺍﻟﺮَّﺟُﻞُ : ﻟَﻘَﺪْ ﺑَﻠَﻎَ ﻫَﺬَﺍ ﺍﻟْﻜَﻠْﺐَ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻌَﻄَﺶِ ﻣِﺜْﻞُ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﺑَﻠَﻎَ ﻣِﻨِّﻲْ ، ﻓَﻨَﺰَﻝَ ﺍﻟْﺒِﺌْﺮَ ، ﻓَﻤَﻸَ ﺧُﻔَّﻪُ ، ﺛُﻢَّ ﺃَﻣْﺴَﻜَﻪُ ﺑِﻔِﻴﻪِ ﺣَﺘَّﻰ ﺭَﻗِﻲَ ، ﻓَﺴَﻘَﻰ ﺍﻟْﻜَﻠْﺐَ ، ﻓَﺸَﻜَﺮَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻟَﻪُ ، ﻓَﻐَﻔَﺮَ ﻟَﻪُ ، ﻓَﻘَﺎﻟُﻮﺍ : ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ، ﺇِﻥَّ ﻟَﻨَﺎ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺒَﻬَﺎﺋِﻢِ ﻷَﺟْﺮًﺍ ؟ ﻓَﻘَﺎﻝَ : « ﻓِﻲ ﻛُﻞِّ ﺫَﺍﺕِ ﻛَﺒِﺪٍ ﺭَﻃْﺒَﺔٍ ﺃَﺟْﺮٌ » . ( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ﻭ ﻣﺴﻠﻢ ﻭ ﺃﺑﻮ ﺩﺍﻭﺩ ﻭ ﺃﺣﻤﺪ ) .
“একদা এক ব্যক্তি পথে হেঁটে যাচ্ছিল, এক পর্যায়ে তার তীব্র পিপাসা লাগে; তারপর সে একটি কূপ পেয়ে গেল, তারপর সে তাতে অবতরণ করল এবং পানি পান করল; অতঃপর সে উঠে এলো; হঠাৎ করে দেখল, একটি কুকুর হাপাচ্ছে, পিপাসায় কাতর হয়ে কাদ চাটছে; অতঃপর লোকটি বলল: এ কুকুরটি পিপাসায় সেরূপ কষ্ট পাচ্ছে, যেরূপ কষ্ট আমার হয়েছিল। অতঃপর সে কূপে অবতরণ করল এবং তার মোজার মধ্যে পানি ভরল, তারপর তা মুখ দিয়ে তা (কামড়িয়ে) ধরে উপরে উঠে এলো। তারপর সে কুকুরটিকে পানি পান করাল। তারপর আল্লাহ তাকে তার প্রতিদান দিলেন এবং তাকে ক্ষমা করে দিলেন। সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেন: হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম! জীব-জন্তুর জন্যও কি আমাদের পুরস্কার আছে? জবাবে তিনি বললেন: হ্যাঁ, প্রত্যেক সতেজ হৃদয়ের (সাথে ভালো ব্যবহারের) জন্যে পুরস্কারের ব্যবস্থা রয়েছে।”[34] এই হলো জীবজন্তুর প্রতি দয়া ও কোমল ব্যবহারের ব্যাপারে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাতের কতিপয় দৃষ্টিভঙ্গি। আর এই বর্ণনার মধ্যে কতিপয় ইউরোপীয় কাফিরদের দ্বারা প্রভাবিত জ্ঞানপাপীদের জন্য সত্য সুন্দর ও সুস্পষ্ট বক্তব্য রয়েছে যে, ইসলাম এসব ইউরোপীয় কাফিরদের অনেক আগেই জীবজন্তুর প্রতি দয়া ও কোমল আচরণের নিয়মকানুন প্রণয়ন করেছে, যা তারা মুসলিমগণের কাছ থেকে শিক্ষা লাভ করেছে, তাতে ব্যাপক প্রসার করেছে এবং তাকে বিধিবদ্ধ করেছে, এমনকি ঐসব জ্ঞানপাপীরা ধারণা করে নিয়েছে যে, তা ইউরোপীয়দের বিশেষ বৈশিষ্ট্য। এই ইসলামী মূলনীতির মূলবস্তু হলো দয়া, সহানুভূতি, সেগুলোর উপর সাধ্যের বাইরে বোঝা চাপিয়ে না দেওয়া এবং সেগুলোকে খেল ও তামাশার উদ্দেশ্য হিসেবে গ্রহণ না করা। কিন্তু যেসব কাফির জীবজন্তুর প্রতি দয়া করার নীতিতে বিশ্বাসী এবং এই উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সংগঠন ও সংস্থা গড়ে তুলেছে, তাদের নিকট জীবজন্তুর প্রতি দয়া করার বিষয়টি এমন নিম্ন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে, তারা তাকে মানুষের উপর মর্যাদা দিয়ে ফেলেছে। আর তাদের কোনো কোন দেশে তারা বিষয়টিকে খেল-তামাশার বস্তু হিসেবে গ্রহণ করেছে; উদাহরণস্বরূপ সাবেক মুসলিম স্পেন বর্তমান খ্রিষ্টান স্পেন রাজ্যে বিস্তৃত বলদ বা ষাড়ের মধ্যকার লড়াইয়ের কথা বলা যায় (!)।
২. ৭. কবীরা গুনাহ্ ও ধ্বংসাত্মক অপরাধ থেকে বিরত থাকা: আল্লাহ আপনার প্রতি রহম করুন, জেনে রাখবেন যে, পরিপূর্ণ মুমিনগণ যাবতীয় কবীরা গুনাহ্ ও অশ্লীল কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকে। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿ ﻭَﻟِﻠَّﻪِ ﻣَﺎ ﻓِﻲ ﭐﻟﺴَّﻤَٰﻮَٰﺕِ ﻭَﻣَﺎ ﻓِﻲ ﭐﻟۡﺄَﺭۡﺽِ ﻟِﻴَﺠۡﺰِﻱَ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺃَﺳَٰٓـُٔﻮﺍْ ﺑِﻤَﺎ ﻋَﻤِﻠُﻮﺍْ ﻭَﻳَﺠۡﺰِﻱَ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺃَﺣۡﺴَﻨُﻮﺍْ ﺑِﭑﻟۡﺤُﺴۡﻨَﻰ ٣١ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳَﺠۡﺘَﻨِﺒُﻮﻥَ ﻛَﺒَٰٓﺌِﺮَ ﭐﻟۡﺈِﺛۡﻢِ ﻭَﭐﻟۡﻔَﻮَٰﺣِﺶَ ﺇِﻟَّﺎ ﭐﻟﻠَّﻤَﻢَۚ ﺇِﻥَّ ﺭَﺑَّﻚَ ﻭَٰﺳِﻊُ ﭐﻟۡﻤَﻐۡﻔِﺮَﺓِۚ ﻫُﻮَ ﺃَﻋۡﻠَﻢُ ﺑِﻜُﻢۡ ﺇِﺫۡ ﺃَﻧﺸَﺄَﻛُﻢ ﻣِّﻦَ ﭐﻟۡﺄَﺭۡﺽِ ﻭَﺇِﺫۡ ﺃَﻧﺘُﻢۡ ﺃَﺟِﻨَّﺔٞ ﻓِﻲ ﺑُﻄُﻮﻥِ ﺃُﻣَّﻬَٰﺘِﻜُﻢۡۖ ﻓَﻠَﺎ ﺗُﺰَﻛُّﻮٓﺍْ ﺃَﻧﻔُﺴَﻜُﻢۡۖ ﻫُﻮَ ﺃَﻋۡﻠَﻢُ ﺑِﻤَﻦِ ﭐﺗَّﻘَﻰٰٓ ٣٢ ﴾ [ ﺍﻟﻨﺠﻢ : ٣١، ٣٢ ] “আর আসমানসমূহে যা কিছু আছে ও যমীনে যা কিছু আছে তা আল্লাহরই। যাতে তিনি তাদের কাজের প্রতিফল দিতে পারেন, যারা মন্দ কাজ করে এবং তাদেরকে তিনি উত্তম পুরস্কার দিতে পারেন, যারা সৎকাজ করে; যারা বিরত থাকে গুরুতর পাপ ও অশ্লীল কাজ থেকে, ছোটখাট অপরাধ ব্যতীত। নিশ্চয় আপনার রবের ক্ষমা অপরিসীম; তিনি তোমাদের সম্পর্কে সম্যক অবগত---যখন তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছিলেন মাটি হতে এবং যখন তোমরা মাতৃগর্ভে ভ্রূণরূপে ছিলে। অতএব তোমরা আত্মপ্রশংসা করো না, তিনিই সম্যক জানেন তার সম্পর্কে, যে তাকওয়া অবলম্বন করেছে।”[35]
কিন্তু বান্দা অপরাধে জড়িয়ে যাওয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করতে সমর্থ হয় না; আর এ জন্যেই আল্লাহ তা‘আলা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং তাঁর প্রতিশ্রুতি সত্য; সুতরাং তিনি বলেছেন আর তার বাণী সত্য:
﴿ ﺇِﻥ ﺗَﺠۡﺘَﻨِﺒُﻮﺍْ ﻛَﺒَﺎٓﺋِﺮَ ﻣَﺎ ﺗُﻨۡﻬَﻮۡﻥَ ﻋَﻨۡﻪُ ﻧُﻜَﻔِّﺮۡ ﻋَﻨﻜُﻢۡ ﺳَﻴَِّٔﺎﺗِﻜُﻢۡ ﻭَﻧُﺪۡﺧِﻠۡﻜُﻢ ﻣُّﺪۡﺧَﻠٗﺎ ﻛَﺮِﻳﻤٗﺎ ٣١ ﴾ [ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ : ٣١ ]
“তোমাদেরকে যা নিষেধ করা হয়েছে, তার মধ্যে যা কবীরা গোনাহ্ তা থেকে বিরত থাকলে আমরা তোমাদের ছোট পাপগুলো ক্ষমা করব এবং তোমাদেরকে সম্মানজনক স্থানে প্রবেশ করাব।”[36] এখানে উদ্দেশ্য হলো পাপ মোচন ও গুনাহ্ ক্ষমার বর্ণনা করা, যখন কবীরা গুনাহসমূহ থেকে বিরত থাকা হয় .... আর এখানে এটাই হলো আল্লাহ তা‘আলার ওয়াদা এবং মুমিনদের জন্য তাঁর পক্ষ থেকে সুসংবাদ।
২. ৮. বিপদ-মুসিবত:
মনের বেদনা, শরীরের অসুস্থতা, প্রিয়জনকে হারানো এবং সম্পদের ক্ষয়-ক্ষতি থেকে কোনো ব্যক্তিই নিরাপদ নয়। আর এর থেকে মুক্ত নয় সৎকর্মশীল ও অসৎকর্মশীল ব্যক্তি এবং মুমিন ও কাফির কেউই; কিন্তু মুমিন ব্যক্তি এই বিপদ-মুসিবতগুলোকে সন্তুষ্ট চিত্তে গ্রহণ করে; এমন চিত্ত যা তার চালিকা শক্তিকে আল্লাহর হাতে ন্যস্ত করেছে। কারণ, সে নিশ্চিত জ্ঞানে জানে যে, সে যে বিপদে আক্রান্ত হয়েছে, তা তাকে ছেড়ে যেতো না, আর যে বিপদ তাকে পায় নি তা তার উপর আপতিত হবে না। আর এই বিপদগুলো মুমিন বান্দাকে তার পাপরাশি থেকে এমনভাবে পবিত্র করে দেয়, যেমনিভাবে সাদা কাপড়কে পানি, বরফ ও শিশির দ্বারা ধৌত করা হয়; ফলে সে বালা-মুসিবত থেকে ঐ দিনের মত (পাপমুক্ত হয়ে) বের হয়, যেদিন তার মা তাকে নিষ্পাপ অবস্থায় প্রসব করেছে। আর এই অপরাধের বিষয়টি মানুষের জন্য একটি অপরিহার্য বিষয়; কেননা, আল্লাহর বান্দাদের প্রতি তাঁর রহমতের ব্যাপারটি হল— তিনি তাদেরকে একের পর এক বিপদ-মুসিবতের প্রতিশ্রুতি দেন যাতে তিনি তাদেরকে পরিশুদ্ধ ও পবিত্র করেন; আর তাদের থেকে শয়তানের কুমন্ত্রণা দূর করেন, তাদের হৃদয়সমূহ দৃঢ় রাখেন এবং এর মাধ্যমে তাদের পা-সমূহ সুস্থির রাখেন। এই বিপদ-মুসিবতগুলো আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে তাঁর বান্দাদের প্রতি সন্তুষ্টি ও ভালবাসার প্রমাণস্বরূপ; কারণ, আল্লাহ তা‘আলা যখন কোনো বান্দাকে ভালবাসেন, তখন তিনি তাকে বিপদ-মুসিবত দ্বারা পরীক্ষা করেন; আর যখনই ব্যক্তির ঈমান ও বিশ্বাস মজবুত ও শক্তিশালী হবে, তখনই তার পরীক্ষা কঠিন থেকে কঠিনতর হবে; সুতরাং এই অবস্থায় যে সন্তুষ্ট থাকবে, তারা জন্য রয়েছে (আল্লাহর) সন্তুষ্টি; আর যে অধৈর্য হবে, তার জন্য রয়েছে (আল্লাহর) অসন্তুষ্টি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« ﺃَﺷَﺪُّ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ ﺑَﻼﺀً ﺍﻷَﻧْﺒِﻴَﺎﺀُ ، ﺛُﻢَّ ﺍﻷَﻣْﺜَﻞُ ﻓَﺎﻷَﻣْﺜَﻞُ ، ﻳُﺒْﺘَﻠَﻰ ﺍﻟﺮَّﺟُﻞُ ﻋَﻠَﻰ ﺣَﺴَﺐِ ﺩِﻳﻨِﻪِ ، ﻓَﺈِﻥْ ﻛَﺎﻥَ ﻓِﻲ ﺩِﻳﻨِﻪِ ﺻُﻠْﺒًﺎ ﺍﺷْﺘَﺪَّ ﺑَﻼﺅُﻩُ ، ﻭَﺇِﻥْ ﻛَﺎﻥَ ﻓِﻲ ﺩِﻳﻨِﻪِ ﺭِﻗَّﺔٍ ﺍﺑْﺘُﻠِﻲَ ﻋَﻠَﻰ ﺣَﺴَﺐِ ﺩِﻳﻨِﻪِ ، ﻓَﻤَﺎ ﻳَﺒْﺮَﺡُ ﺍﻟْﺒَﻠَﺎﺀُ ﺑِﺎﻟْﻌَﺒْﺪِ ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﺘْﺮُﻛَﻪُ ﻳَﻤْﺸِﻲ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﻣَﺎ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻣِﻦْ ﺧَﻄِﻴﺌَﺔٍ » . ( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ ﻭ ﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﻪ ) .
“মানুষের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন মুসিবতের শিকার হয়েছেন নবীগণ; অতঃপর ক্রমানুসারে পরবর্তী ধাপের সৎব্যক্তিগণ, ব্যক্তি পরীক্ষা বা কষ্টের সম্মুখীন হবে তার দীনদারী অনুসারে; সুতরাং সে যদি তার দীনের ব্যাপারে দৃঢ়তার সাথে অটল থাকে, তাহলে তার বিপদ-আপদও কঠোর থেকে কঠোরতর হবে; আর যদি সে তার দীনের ব্যাপারে আপোষকামী হয়, তাহলে সে পরীক্ষা বা কষ্টের সম্মুখীন হবে তার দীনদারী অনুসারে; সুতরাং বান্দা বালা-মুসিবতে আক্রান্ত হতেই থাকবে যতক্ষণ না তা তাকে যমীনের উপরে গুনাহ বিহীন অবস্থায় চলাফেরা করাতে পারবে।”[37] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:
« ﺇِﺫَﺍ ﺍﺑْﺘَﻠَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺍﻟْﻌَﺒْﺪَ ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻢَ ﺑِﺒَﻠَﺎﺀٍ ﻓِﻲ ﺟَﺴَﺪِﻩِ ﻗَﺎﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪُ : ﺍﻛْﺘُﺐْ ﻟَﻪُ ﺻَﺎﻟِﺢَ ﻋَﻤَﻠِﻪِ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻛَﺎﻥَ ﻳَﻌْﻤَﻠُﻪُ ، ﻓَﺈِﻥْ ﺷَﻔَﺎﻩُ ﻏَﺴَﻠَﻪُ ﻭَﻃَﻬَّﺮَﻩُ ، ﻭَﺇِﻥْ ﻗَﺒَﻀَﻪُ ﻏَﻔَﺮَ ﻟَﻪُ ﻭَﺭَﺣِﻤَﻪُ » . ( ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺣﻤﺪ ) .
“যখন আল্লাহ তা‘আলা কোনো মুসলিম বান্দাকে তার শারীরিক দুঃখ-কষ্ট বা রোগ-ব্যাধির দ্বারা পরীক্ষা করেন, তখন আল্লাহ বলেন: তার সৎকাজগুলো লিখ, যে কাজগুলো সে (সুস্থ অবস্থায়) করত; অতঃপর তিনি যদি তাকে রোগমুক্ত করেন, তাহলে তিনি (রহমতের পানি দ্বারা) ধুয়ে মুছে তাকে পবিত্র করে দেন; আর যদি তাকে মৃত্যুর মাধ্যমে উঠিয়ে নেন, তাহলে তিনি তাকে ক্ষমা করে দেন এবং তার প্রতি রহম করেন।”[38]
আবূ শা‘ছা আস-সান‘আনী থেকে বর্ণিত: তিনি একদা দামেস্কের একটি মাসজিদে গমন করেন এবং এক পর্যায়ে সন্ধ্যায় ভ্রমণ করতে লাগলেন, অতঃপর তার সাথে সাক্ষাৎ হয়ে গেল সাদ্দাদ ইবন আউস ও আস-সুনাবেহী’র। অতঃপর আমি (আবূ শা‘ছা আস-সানা‘আনী) বললাম: আল্লাহ তোমাদের প্রতি রহম করুন, তোমরা কোথায় যাওয়ার পরিকল্পনা করেছ? জবাবে তারা বলল: আমরা সেখানে আমাদের এক অসুস্থ ভাইকে দেখতে যাচ্ছি; অতঃপর আমিও তাদের সাথে চললাম, তারপর তারা ঐ ব্যক্তির নিকট উপস্থিত হয়ে বলল: তোমার সকাল কেমন কেটেছে? জবাবে সে বলল: আমার সকাল নেয়ামতের উপর কেটেছে। অতঃপর তাকে উদ্দেশ্য করে সাদ্দাদ ইবন আউস বললেন: আমি তোমাকে গুনাহ মাফ ও পাপ মোচনের সুসংবাদ দিচ্ছি; কারণ, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি:
« ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻋَﺰَّ ﻭَﺟَﻞَّ ﻳَﻘُﻮﻝُ : ﺇِﻧِّﻲ ﺇِﺫَﺍ ﺍﺑْﺘَﻠَﻴْﺖُ ﻋَﺒْﺪًﺍ ﻣِﻦْ ﻋِﺒَﺎﺩِﻱ ﻣُﺆْﻣِﻨًﺎ ﻓَﺤَﻤِﺪَﻧِﻲ ﻋَﻠَﻰ ﻣَﺎ ﺍﺑْﺘَﻠَﻴْﺘُﻪُ ، ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﻳَﻘُﻮﻡُ ﻣِﻦْ ﻣَﻀْﺠَﻌِﻪِ ﺫَﻟِﻚَ ﻛَﻴَﻮْﻡِ ﻭَﻟَﺪَﺗْﻪُ ﺃُﻣُّﻪُ ﻣِﻦْ ﺍﻟْﺨَﻄَﺎﻳَﺎ ، ﻭَﻳَﻘُﻮﻝُ ﺍﻟﺮَّﺏُّ ﻋَﺰَّ ﻭَﺟَﻞَّ : ﺃَﻧَﺎ ﻗَﻴَّﺪْﺕُ ﻋَﺒْﺪِﻱ ﻭَﺍﺑْﺘَﻠَﻴْﺘُﻪُ ، ﻭَﺃَﺟْﺮُﻭﺍ ﻟَﻪُ ﻛَﻤَﺎ ﻛُﻨْﺘُﻢْ ﺗُﺠْﺮُﻭﻥَ ﻟَﻪُ ﻭَﻫُﻮَ ﺻَﺤِﻴﺢٌ » . ( ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺣﻤﺪ ) .
“নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমি যখন আমার বান্দাগণের মধ্য থেকে কোনো মুমিন বান্দাকে কোনো বিপদ-মুসিবত দ্বারা পরীক্ষা করি, অতঃপর সে আমার দুঃখ-কষ্টের পরীক্ষা করা অবস্থায় আমার প্রশংসা করে, তখন সে তার শয্যা থেকে ঐ দিনের মত নিষ্পাপ অবস্থায় উঠবে, যেদিন তার মা তাকে নিষ্পাপ অবস্থায় প্রসব করেছে; আর মহান রব বলবেন: আমি আমার বান্দাকে আটক করেছি এবং তাকে দুঃখ-কষ্ট দ্বারা পরীক্ষা করেছি, তোমরা তার জন্য সাওয়াব লিখবে, যেমনিভাবে তোমরা তার সুস্থ অবস্থায় তার জন্য সাওয়াব লিখতে।”[39] * * *
৩. পবিত্রতার অধ্যায়
৩. ১. অযু:
‘উসমান ইবন ‘আফ্ফান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« ﻣَﻦْ ﺗَﻮَﺿَّﺄَ ﻓَﺄَﺣْﺴَﻦَ ﺍﻟْﻮُﺿُﻮﺀَ ، ﺧَﺮَﺟَﺖْ ﺧَﻄَﺎﻳَﺎﻩُ ﻣِﻦْ ﺟَﺴَﺪِﻩِ ، ﺣَﺘَّﻰ ﺗَﺨْﺮُﺝَ ﻣِﻦْ ﺗَﺤْﺖِ ﺃَﻇْﻔَﺎﺭِﻩِ » . ( ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ ) .
“যে ব্যক্তি অযু করে এবং খুব সুন্দর করে অযু করে, সেই ব্যক্তির শরীর থেকে তার গুনাহসমূহ বের হয়ে যায়, এমনকি তার নখের নীচ থেকেও গুনাহ বের হয়ে যায়।”[40]
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« ﺇِﺫَﺍ ﺗَﻮَﺿَّﺄَ ﺍﻟْﻌَﺒْﺪُ ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻢُ ﺃَﻭِ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻦُ ﻓَﻐَﺴَﻞَ ﻭَﺟْﻬَﻪُ ،ﺧَﺮَﺝَ ﻣِﻦْ ﻭَﺟْﻬِﻪِ ﻛُﻞُّ ﺧَﻄِﻴﺌَﺔٍ ﻧَﻈَﺮَ ﺇِﻟَﻴْﻬَﺎ ﺑِﻌَﻴْﻨَﻴْﻪِ ﻣَﻊَ ﺍﻟْﻤَﺎﺀِ ، ﺃَﻭْ ﻣَﻊَ ﺁﺧِﺮِ ﻗَﻄْﺮِ ﺍﻟْﻤَﺎﺀِ ، ﻓَﺈِﺫَﺍ ﻏَﺴَﻞَ ﻳَﺪَﻳْﻪِ ﺧَﺮَﺝَ ﻣِﻦْ ﻳَﺪَﻳْﻪِ ﻛُﻞُّ ﺧَﻄِﻴﺌَﺔٍ ﻛَﺎﻥَ ﺑَﻄَﺸَﺘْﻬَﺎ ﻳَﺪَﺍﻩُ ﻣَﻊَ ﺍﻟْﻤَﺎﺀِ ، ﺃَﻭْ ﻣَﻊَ ﺁﺧِﺮِ ﻗَﻄْﺮِ ﺍﻟْﻤَﺎﺀِ ، ﻓَﺈِﺫَﺍ ﻏَﺴَﻞَ ﺭِﺟْﻠَﻴْﻪِ ﺧَﺮَﺟَﺖْ ﻛُﻞُّ ﺧَﻄِﻴﺌَﺔٍ ﻣَﺸَﺘْﻬَﺎ ﺭِﺟْﻼَﻩُ ﻣَﻊَ ﺍﻟْﻤَﺎﺀِ ، ﺃَﻭْ ﻣَﻊَ ﺁﺧِﺮِ ﻗَﻄْﺮِ ﺍﻟْﻤَﺎﺀِ ، ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﺨْﺮُﺝَ ﻧَﻘِﻴًّﺎ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺬُّﻧُﻮﺏِ » . ( ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ ) .
“যখন মুসলিম বা মুমিন বান্দা অযু করে এবং তার মুখমণ্ডল ধুয়ে ফেলে, তখন পানির সাথে বা পানির শেষ বিন্দুটির সাথে তার চেহারা থেকে সমস্ত গুনাহ বের হয়ে যায়, যেগুলোর দিকে সে তার চোখ দু’টির সাহায্যে দৃষ্টিপাত করেছিল। তারপর যখন সে তার হাত দু’টি ধুয়ে ফেলে, তখন পানির সাথে বা পানির শেষ বিন্দুটির সাথে তার হাত দু’টি থেকে সমস্ত গুনাহ বের হয়ে যায়, যা তার হাত দু’টি ধরেছিল। এরপর যখন সে তার পা দু’টি ধুয়ে ফেলে, তখন পানির সাথে বা পানির শেষ বিন্দুটির সাথে (তার পা দু’টি থেকে) সমস্ত গুনাহ বের হয়ে যায়, যার দিকে তার পা দু’টি এগিয়ে গিয়েছিল, এমনকি সে গুনাহ থেকে সম্পূর্ণ পাক-পবিত্র হয়ে যায়।”[41]
হে মুসলিম ভাই! জেনে রাখুন, এই মহান ফযীলত শুধু ঐ ব্যক্তিই অর্জন করতে পারবে, যে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশ ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বর্ণনা অনুযায়ী অযু করবে এবং নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের অযুর পদ্ধতি প্রয়োগ করবে; আর নিম্নে তার প্রমাণ পেশ করা হল—
১. পূর্বোল্লিখিত ‘উসমান ইবন ‘আফ্ফান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত হাদিসের মধ্যে একটি শর্ত উল্লেখ করা হয়েছে, আর তা হলো অযুকে সুন্দর করা; আর এই শর্তটি অন্য আরও কয়েকটি হাদিসের মধ্যে বর্ণিত হয়েছে; যেমন—
(ক) আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত হাদিস, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« ﻣَﻦْ ﺗَﻮَﺿَّﺄَ ﻓَﺄَﺣْﺴَﻦَ ﺍﻟْﻮُﺿُﻮﺀَ ، ﺛُﻢَّ ﺭَﺍﺡَ ﻓَﻮَﺟَﺪَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ ﻗَﺪْ ﺻَﻠَّﻮْﺍ ، ﺃَﻋْﻄَﺎﻩُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻣِﺜْﻞَ ﺃَﺟْﺮِ ﻣَﻦْ ﺻَﻼﻫَﺎ ، ﻭَﺣَﻀَﺮَﻫَﺎ ﻻ ﻳَﻨْﻘُﺺُ ﺫَﻟِﻚَ ﻣِﻦْ ﺃَﺟْﺮِﻫِﻢْ ﺷَﻴْﺌًﺎ » . ( ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺑﻮ ﺩﺍﻭﺩ ﻭ ﺍﻟﻨﺴﺎﺋﻲ ) .
“যে ব্যক্তি অযু করে এবং খুব ভালভাবে ও সুন্দর করে অযু করে, অতঃপর (মাসজিদের উদ্দেশ্যে) বের হয় এবং জনগণকে এমন অবস্থায় পায় যে তারা সালাত আদায় করে ফেলেছে, আল্লাহ তা‘আলা তাকে ঐ ব্যক্তির মত প্রতিদান দিবেন, যে সালাত আদায় করেছে ও জামা‘য়াতে হাযির হয়েছে, অথচ তাদের সাওয়াব থেকে কিছুই কমতি বা ঘাটতি হবে না।”[42]
(খ) ‘উকবা ইবন ‘আমের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত হাদিস, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« ﻣَﻦْ ﺗَﻮَﺿَّﺄَ ﻓَﺄَﺣْﺴَﻦَ ﺍﻟْﻮُﺿُﻮﺀَ ، ﺛُﻢَّ ﺻَﻠَّﻰ ﺭَﻛْﻌَﺘَﻴْﻦِ ﻳُﻘْﺒِﻞُ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻤَﺎ ﺑِﻘَﻠْﺒِﻪِ ﻭَﻭَﺟْﻬِﻪِ ، ﻭَﺟَﺒَﺖْ ﻟَﻪُ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔُ » . ( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﻨﺴﺎﺋﻲ ) .
“যে ব্যক্তি অযু করে এবং খুব ভালভাবে ও সুন্দর করে অযু করে, অতঃপর আন্তরিকতা ও মনোযোগ সহকারে দুই রাকা‘আত সালাত আদায় করে, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়।”[43] আর যায়েদ ইবন খালিদ আল-জুহানী, আবদুল্লাহ ইবন ওমর ও অন্যান্য সাহাবী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম প্রমুখ কর্তৃক বর্ণিত হাদিসের মধ্যেও এই বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে।
২. আর এই সুন্দর করার বিষয়টি আল্লাহর নির্দেশের যথাযথ অনুসরণ ব্যতীত কিছুতেই সম্ভব নয়; যেমনটি একাধিক সহীহ হাদিসের মধ্যে ব্যাখ্যাসহ বর্ণিত হয়েছে; তন্মধ্যে অন্যতম একটি হাদিস আবূ আইয়ুব আনসারী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি:
« ﻣَﻦْ ﺗَﻮَﺿَّﺄَ ﻛَﻤَﺎ ﺃُﻣِﺮَ ﻭَﺻَﻠَّﻰ ﻛَﻤَﺎ ﺃُﻣِﺮَ ﻏُﻔِﺮَ ﻟَﻪُ ﻣَﺎ ﺗَﻘَﺪَّﻡَ ﻣِﻦْ ﻋَﻤَﻞٍ ( ﻭ ﻓﻲ ﺭﻭﺍﻳﺔ : ﺫَﻧْﺒِﻪِ ) » . ( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﻨﺴﺎﺋﻲ ﻭ ﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﻪ ) .
“যে ব্যক্তি অযু করল যেমনভাবে অযু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং সালাত আদায় করল যেমনভাবে সালাত আদায় করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তার পূর্বের কৃতকর্মের সাথে সংশ্লিষ্ট গুনাহ্ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।”[44]
৩. আর একাধিক হাদিসের মধ্যে আল্লাহর নির্দেশের সর্বোৎকৃষ্ট বিবরণ ও সর্বোত্তম ব্যাখ্যা দিয়েছেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম; তন্মধ্যে অন্যতম একটি হাদিস ‘উসমান ইবন ‘আফ্ফান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত; তিনি (নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অযুর পানি নিয়ে আসার জন্য (তাঁকে) ডাকলেন, তারপর তিনি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের অযুর পদ্ধতি বর্ণনা করলেন; অতঃপর তিনি বললেন: রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদিসের শেষ অংশে বলেছেন:
« ﻣَﻦْ ﺗَﻮَﺿَّﺄَ ﻧَﺤْﻮَ ﻭُﺿُﻮﺋِﻰ ﻫَﺬَﺍ ﺛُﻢَّ ﺻَﻠَّﻰ ﺭَﻛْﻌَﺘَﻴْﻦِ ﻻَ ﻳُﺤَﺪِّﺙُ ﻓِﻴﻬِﻤَﺎ ﻧَﻔْﺴَﻪُ ﻏُﻔِﺮَ ﻟَﻪُ ﻣَﺎ ﺗَﻘَﺪَّﻡَ ﻣِﻦْ ﺫَﻧْﺒِﻪِ » . ( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ﻭ ﻣﺴﻠﻢ ) .
“যে ব্যক্তি আমার এ অযূর ন্যায় অযূ করে দুই রাকা‘য়াত সালাত করবে এবং তার মধ্যে কোনো বাজে খেয়াল মনে আনবে না, তার অতীতের সব গুনাহ্ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।”[45] * * *
৪. সালাতের অধ্যায়
৪. ১. আযান:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« ﺇِﻥَّ ﺍﻟْﻤُﺆَﺫِّﻥَ ﻳُﻐْﻔَﺮُ ﻟَﻪُ ﻣَﺪَﻯ ﺻَﻮْﺗِﻪِ، ﻭَﻳُﺼَﺪِّﻗُﻪُ ﻛُﻞُّ ﺭَﻃْﺐٍ ﻭَﻳَﺎﺑِﺲٍ ﺳَﻤِﻊَ ﺻَﻮْﺗﻪ، ﻭَﺍﻟﺸَّﺎﻫِﺪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻟَﻪُ ﺧَﻤْﺲَ ﻭَﻋِﺸْﺮِﻳﻦَ ﺩَﺭَﺟَﺔً » .
“মুয়াযযিনকে তার কণ্ঠস্বর পৌঁছার প্রান্তদেশ পর্যন্ত ক্ষমা করে দেওয়া হবে এবং তার পক্ষে সাক্ষ্য ও সমর্থন দিবে তার আওয়াজ শুনা প্রত্যেকটি সজীব ও নির্জীব বস্তু; যারা তার ডাকে সাড়া দিয়ে সালাতে আসবে তার জন্য থাকবে তাদের উপরে পঁচিশটি মর্যাদা।”[46] : ৪. ২. সালাত:
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন:
« ﺃَﺭَﺃَﻳْﺘُﻢْ ﻟَﻮْ ﺃَﻥَّ ﻧَﻬَﺮًﺍ ﺑِﺒَﺎﺏِ ﺃَﺣَﺪِﻛُﻢْ ﻳَﻐْﺘَﺴِﻞُ ﻓِﻴﻪِ ﻛُﻞَّ ﻳَﻮْﻡٍ ﺧَﻤْﺴًﺎ ، ﻣَﺎ ﺗَﻘُﻮﻝُ ﺫﻟِﻚَ ﻳُﺒْﻘِﻲ ﻣِﻦْ ﺩَﺭَﻧِﻪِ ؟ » ﻗﺎﻟُﻮﺍ : ﻻَ ﻳُﺒْﻘِﻲ ﻣِﻦْ ﺩَﺭَﻧِﻪِ ﺷَﻴْﺌًﺎ . ﻗَﺎﻝَ : « ﻓَﺬﻟِﻚَ ﻣِﺜْﻞُ ﺍﻟﺼَّﻠَﻮﺍﺕِ ﺍﻟْﺨَﻤْﺲِ ﻳَﻤْﺤُﻮ ﺍﻟﻠﻪُ ﺑِﻪِ ﺍﻟْﺨَﻄَﺎﻳَﺎ » . ( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ﻭ ﻣﺴﻠﻢ ) .
“তোমরা কি মনে কর— যাদি তোমাদের কারো দরজায় একটি প্রবাহিত নদী থাকে এবং সে তাতে দৈনিক পাঁচবার গোসল করে, তাহলে তোমার মতে কি এই গোসল তার শরীরে কোনো ময়লা অবশিষ্ট রাখবে? জবাবে সাহাবীগণ বললেন: না, তার শরীরে কোনো ময়লা থাকবে না; তখন তিনি বললেন: ‘এটাই হলো পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের দৃষ্টান্ত— এর মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা (সালাত আদায়কারীর) গুনাহসমূহ মুছে ফেলেন।”[47]
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে আরও বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« ﺍﻟﺼَّﻠﻮَﺍﺕُ ﺍﻟْﺨَﻤْﺲُ ، ﻭَﺍﻟْﺠُﻤُﻌَﺔُ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟْﺠُﻤُﻌَﺔِ ﻛَﻔَّﺎﺭَﺓٌ ﻟِﻤَﺎ ﺑَﻴْﻨَﻬُﻦَّ ﻣَﺎ ﻟَﻢْ ﺗُﻐْﺶَ ﺍﻟْﻜَﺒَﺎﺋِﺮُ » . ( ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ ﻭ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ ) .
“পাঁচ ওয়াক্ত সালাত এবং এক জুমু‘আর সালাত থেকে অপর জুমু‘আর সালাত সেসব গুনাহের জন্য কাফ্ফারা হয়, যা এর মধ্যবর্তী সময়ে হয়ে থাকে, যে পর্যন্ত না কবীরা গুনাহ্ করা হয়।”[48]
৪. ৩. এক মা‘বুদ (আল্লাহ) এর উদ্দেশ্যে সাজদা করা:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই বাস্তব বিষয়টিকে জোরালোভাবে তুলে ধরেছেন বিভিন্ন প্রকার শব্দ চয়নে; তন্মধ্যে সাজদার ফযীলতের বর্ণনাটি অন্যতম; রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« ﻳَﺎ ﺃَﺑَﺎ ﻓَﺎﻃِﻤَﺔَ ! ﺃَﻛْﺜِﺮْ ﻣِﻦْ ﺍﻟﺴُّﺠُﻮﺩِ ، ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﻟَﻴْﺲَ ﻣِﻦْ ﻣُﺴْﻠِﻢٍ ﻳَﺴْﺠُﺪُ ﻟِﻠَّﻪِ ﺗَﺒَﺎﺭَﻙَ ﻭَﺗَﻌَﺎﻟَﻰ ﺳَﺠْﺪَﺓً ﺇِﻟَّﺎ ﺭَﻓَﻌَﻪُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺗَﺒَﺎﺭَﻙَ ﻭَﺗَﻌَﺎﻟَﻰ ﺑِﻬَﺎ ﺩَﺭَﺟَﺔً [ ﻓِﻲ ﺍﻟﺠَﻨﺔِ ﻭ ﺣﻂ ﻋﻨﻪ ﺑﻬﺎ ﺧﻄﻴﺌﺔٌ ] » . ( ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺣﻤﺪ ﻭ ﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﻪ ) .
“হে আবূ ফাতিমা! বেশি বেশি সাজদা কর; কারণ, যে কোনো মুসলিম ব্যক্তি আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা‘আলার উদ্দেশ্যে সাজদা করলে আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা‘আলার তার বিনিময়ে জান্নাতে তার মর্যাদা উন্নত করেন এবং তার বিনিময়ে তার গুনাহ্ মাফ করেন।”[49]
৪. ৪. জামা‘য়াতে সালাত আদায় করার জন্য আল্লাহর ঘরসমূহের উদ্দেশ্যে পথ চলা: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« ﺻَﻼﺓُ ﺍﻟﺮَّﺟُﻞِ ﻓِﻲ ﺟَﻤَﺎﻋَﺔٍ ﺗُﻀَﻌَّﻒُ ﻋَﻠَﻰ ﺻَﻼﺗِﻪِ ﻓِﻲ ﺑَﻴْﺘِﻪِ ﻭَﻓِﻲ ﺳُﻮﻗِﻪِ ﺧَﻤْﺴﺎً ﻭَﻋِﺸْﺮِﻳﻦَ ﺿِﻌْﻔﺎً , ﻭَﺫَﻟِﻚَ : ﺃَﻧَّﻪُ ﺇﺫَﺍ ﺗَﻮَﺿَّﺄَ , ﻓَﺄَﺣْﺴَﻦَ ﺍﻟْﻮُﺿُﻮﺀَ . ﺛُﻢَّ ﺧَﺮَﺝَ ﺇﻟَﻰ ﺍﻟْﻤَﺴْﺠِﺪِ ﻻ ﻳُﺨْﺮِﺟُﻪُ ﺇﻻ ﺍﻟﺼَّﻼﺓُ ﻟَﻢْ ﻳَﺨْﻂُ ﺧَﻄْﻮَﺓً ﺇﻻ ﺭُﻓِﻌَﺖْ ﻟَﻪُ ﺑِﻬَﺎ ﺩَﺭَﺟَﺔٌ , ﻭَﺣُﻂَّ ﻋَﻨْﻪُ ﺧَﻄِﻴﺌَﺔٌ . ﻓَﺈِﺫَﺍ ﺻَﻠَّﻰ ﻟَﻢْ ﺗَﺰَﻝْ ﺍﻟْﻤَﻼﺋِﻜَﺔُ ﺗُﺼَﻠِّﻲ ﻋَﻠَﻴْﻪِ , ﻣَﺎ ﺩَﺍﻡَ ﻓِﻲ ﻣُﺼَﻼﻩُ : ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺻَﻞِّ ﻋَﻠَﻴْﻪِ , ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺍﻏْﻔِﺮْ ﻟَﻪُ , ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺍﺭْﺣَﻤْﻪُ , ﻭَﻻ ﻳَﺰَﺍﻝُ ﻓِﻲ ﺻَﻼﺓٍ ﻣَﺎ ﺍﻧْﺘَﻈَﺮَ ﺍﻟﺼَّﻼﺓَ » . ( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ﻭ ﻣﺴﻠﻢ ) .
“পুরুষ ব্যক্তির জামা‘য়াতে সালাত আদায় করার সাওয়াব তার ঘরে ও বাজারে আদায় করা সালাত অপেক্ষা পঁচিশ গুণ বেশি; কারণ, যখন সে ভালভাবে অযু করে এবং শুধু সালাত আদায় করার উদ্দেশ্যেই মাসজিদের দিকে বের হয়, তখন তার প্রতিটি পদক্ষেপের বিনিময়ে একটি করে মর্যাদা বৃদ্ধি পায় এবং তার একটি করে গুনাহ্ মাফ হয়ে যায়। আর যখন সে সালাত আদায় করে, তখন ফিরিশ্তাগণ তার জন্য ততক্ষণ দো‘আ করতে থাকে যতক্ষণ সে তার সালাত আদায়ের স্থানে অবস্থান করে— তাঁরা বলে: “হে আল্লাহ! আপনি তার উপর রহমত করুন; হে আল্লাহ! তাকে ক্ষমা করে দিন; হে আল্লাহ! তার প্রতি দয়া করুন। আর যতক্ষণ সে সালাতের অপেক্ষায় থাকবে, ততক্ষণ সে সালাতের মাঝেই থাকে।”[50]
৪. ৫. ‘আমীন’ বলা:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই মহান ফযীলতের বিষয়টি ভিন্নভাবে জোর দিয়েছেন; যেমন তিনি ইমামের কণ্ঠের সাথে কণ্ঠ মিলেয়ে ‘আমীন’ বলার ফযীলত নিয়ে স্পষ্ট বক্তব্য দিয়েছেন; কারণ, তা জামা‘য়াতে সালাত আদায়ের সময় এক গুরুত্বপূর্ণ ইসলামী দৃশ্য ও ভাবধারার আবহ তৈরি করে; যা দীনের বলিষ্ঠ ঘোষণা ও বিশেষ শ্লোগান প্রকাশের বিষয়টিকে অন্তর্ভুক্ত করে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« ﺇِﺫَﺍ ﻗَﺎﻝَ ﺍﻟْﺈِﻣَﺎﻡُ ﴿ ﻏَﻴْﺮِ ﺍﻟْﻤَﻐْﻀُﻮﺏِ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﻭَﻟَﺎ ﺍﻟﻀَّﺎﻟِّﻴﻦَ ﴾ , ﻓَﻘُﻮﻟُﻮﺍ ﺁﻣِﻴﻦَ , ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﻣَﻦْ ﻭَﺍﻓَﻖَ ﻗَﻮْﻟُﻪُ ﻗَﻮْﻝَ ﺍﻟْﻤَﻠَﺎﺋِﻜَﺔِ , ﻏُﻔِﺮَ ﻟَﻪُ ﻣَﺎ ﺗَﻘَﺪَّﻡَ ﻣِﻦْ ﺫَﻧْﺒِﻪِ » . ( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ﻭ ﻣﺴﻠﻢ ) .
“ইমাম যখন ﴿ ﻏَﻴْﺮِ ﺍﻟْﻤَﻐْﻀُﻮﺏِ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﻭَﻟَﺎ ﺍﻟﻀَّﺎﻟِّﻴﻦَ ﴾ বলবে, তখন তোমরা ‘আমীন’ বলবে; কারণ, যার কথা (আমীন বলা) ফিরিশ্তাদের কথার (আমীন বলার) সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে যাবে, তার বিগত দিনের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।”[51]
অতএব, হে আমার ঈমানী ভাই! এসব সালাতের জন্য আগ্রহী হউন, যখনই তার জন্য আহ্বান করা হবে; কেননা, তা হলো হেদায়েতের পথ ও তাকওয়ার নিদর্শন। শরী‘য়ত সম্মত ওযর ব্যতীত বিনা কারণে এই সালাত আদায়ে অলসতা করার ব্যাপারে সাবধান ও সতর্ক হউন; কেননা, জামা‘য়াতে সালাত আদায় করা মুসলিম জনগোষ্ঠী’র উপর ফরয। আর সুসংবাদ গ্রহণ করুন কিয়ামতের দিনে পরিপূর্ণ নূরের এবং দুনিয়াতে গুনাহসমূহের ক্ষমা ও পাপরাশি মোচনের।
কিন্তু হে মুসল্লী সম্প্রদায়! জেনে রাখবেন যে, উল্লেখিত এই ফযীলতের অধিকারী শুধু সে ব্যক্তিই হবে, যে ব্যক্তি সালাত আদায় করে এমনভাবে যে— সে তার জন্য সুন্দরভাবে অযু করল, পরিপূর্ণভাবে তা (সালাত) আদায় করল এবং জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহ তা‘আলার উদ্দেশ্যে এমনভাবে বিনয় ও নম্রতা প্রকাশ করল, যেভাবে করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে; আর এই বিষয়টি পরিষ্কারভাবে বর্ণিত হয়েছে আবূ আইয়ুব আনসারী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত হাদিসে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« ﻣَﻦْ ﺗَﻮَﺿَّﺄَ ﻛَﻤَﺎ ﺃُﻣِﺮَ , ﻭَﺻَﻠَّﻰ ﻛَﻤَﺎ ﺃُﻣِﺮَ , ﻏُﻔِﺮَ ﻟَﻪُ ﻣَﺎ ﺗَﻘَﺪَّﻡَ ﻣِﻦْ ﺫَﻧْﺒِﻪِ ) » . ( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﻨﺴﺎﺋﻲ ﻭ ﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﻪ ) .
“যে ব্যক্তি অযু করল যেমনভাবে অযু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং সালাত আদায় করল যেমনভাবে সালাত আদায় করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তার পূর্বের গুনাহ্ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।”[52] আর এই জন্য প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তির উচিৎ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সালাতের ধরন ও পদ্ধতির দিকে মনোযোগ দেওয়া; আর যিনি এই ব্যাপারে সমস্যার সম্মুখীন হবেন, তিনি যেন জ্ঞানী ব্যক্তিদের দ্বারস্থ হয়ে মনোযোগ দিয়ে কথা শুনা ও সর্বোত্তম কথাটি অনুসরণ করার আগ্রহ নিয়ে তাদেরকে সেই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেন।
৪. ৬. জুমু‘আ’র সালাত:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« ﻣَﻦْ ﺗَﻮَﺿَّﺄَ ﻓَﺄَﺣْﺴَﻦَ ﺍﻟْﻮُﺿُﻮﺀَ ﺛُﻢَّ ﺃَﺗَﻰ ﺍﻟْﺠُﻤُﻌَﺔَ ﻓَﺎﺳْﺘَﻤَﻊَ ﻭَﺃَﻧْﺼَﺖَ ﻏُﻔِﺮَ ﻟَﻪُ ﻣَﺎ ﺑَﻴْﻨَﻪُ ﻭَﺑَﻴْﻦَ ﺍﻟْﺠُﻤُﻌَﺔِ ﻭَﺯِﻳَﺎﺩَﺓُ ﺛَﻼَﺛَﺔِ ﺃَﻳَّﺎﻡٍ ﻭَﻣَﻦْ ﻣَﺲَّ ﺍﻟْﺤَﺼَﻰ ﻓَﻘَﺪْ ﻟَﻐَﺎ » . ( ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ ﻭ ﺍﺑﻮ ﺩﺍﻭﺩ ﻭ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ ﻭ ﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﻪ ) .
“যে ব্যক্তি অযু করে এবং খুব ভালভাবে ও সুন্দর করে অযু করে, অতঃপর জুমু‘আর সালাতে উপস্থিত হয়; তারপর মনোযোগ দিয়ে (খুতবা) শুনে ও নীরব থাকে, তার দুই জুমু‘আর মধ্যবর্তী সাত দিন ও অতিরিক্ত আরও তিন দিন মোট দশ দিনের গুনাহ্ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। আর যে ব্যক্তি পাথর বা কঙ্কর স্পর্শ করল, সে অনর্থক কাজ করল।”[53]
৪. ৭. কিয়ামুল লাইল (রাতের বেলায় নফল ইবাদত):
আখেরাতের সন্ধানে ব্যস্ত সচেষ্ট মুমিনগণ রাতের বেলায় খুব কমই ঘুমান; কারণ, তারা রাতের বেলায় নফল ইবাদতে তৎপর থাকেন; ফলে তাদের চেহারা হয়ে যায় উজ্জ্বল এবং অন্তর হয়ে যায় পবিত্র। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ ﺇِﻥَّ ﭐﻟۡﻤُﺘَّﻘِﻴﻦَ ﻓِﻲ ﺟَﻨَّٰﺖٖ ﻭَﻋُﻴُﻮﻥٍ ١٥ ﺀَﺍﺧِﺬِﻳﻦَ ﻣَﺎٓ ﺀَﺍﺗَﻯٰﻬُﻢۡ ﺭَﺑُّﻬُﻢۡۚ ﺇِﻧَّﻬُﻢۡ ﻛَﺎﻧُﻮﺍْ ﻗَﺒۡﻞَ ﺫَٰﻟِﻚَ ﻣُﺤۡﺴِﻨِﻴﻦَ ١٦ ﻛَﺎﻧُﻮﺍْ ﻗَﻠِﻴﻠٗﺎ ﻣِّﻦَ ﭐﻟَّﻴۡﻞِ ﻣَﺎ ﻳَﻬۡﺠَﻌُﻮﻥَ ١٧ ﻭَﺑِﭑﻟۡﺄَﺳۡﺤَﺎﺭِ ﻫُﻢۡ ﻳَﺴۡﺘَﻐۡﻔِﺮُﻭﻥَ ١٨ ﴾ [ ﺍﻟﺬﺍﺭﻳﺎﺕ : ١٥، ١٨ ]
“নিশ্চয় মুত্তাকীরা থাকবে জান্নাতসমূহে ও ঝর্ণাধারায়, গ্রহণ করবে তা যা তাদের রব তাদেরকে দিবেন; নিশ্চয় ইতোপূর্বে তারা ছিল সৎকর্মশীল, তারা রাতের সামান্য অংশই অতিবাহিত করত নিদ্রায়, আর রাতের শেষ প্রহরে তারা ক্ষমা প্রার্থনা করত।”[54]
আর ‘কিয়ামুল লাইল’ তথা রাতের বেলায় নফল ইবাদতের ফযীলত এবং মুসলিম ব্যক্তির আচার-আচরণ ও তার ভবিষ্যৎ জীবনের উপর তার প্রভাব প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﺑِﻘِﻴَﺎﻡِ ﺍﻟﻠَّﻴْﻞِ ، ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﺩَﺃْﺏُ ﺍﻟﺼَّﺎﻟِﺤِﻴﻦَ ﻗَﺒْﻠَﻜُﻢْ ، ﻭَﻗُﺮْﺑَﺔٌ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪِ ، ﻭَﻣَﻨْﻬَﺎﺓٌ ﻋَﻦِ ﺍﻹِﺛْﻢِ ، ﻭَﺗَﻜْﻔِﻴﺮٌ ﻟِﻠﺴَّﻴِّﺌَﺎﺕِ ، ﻭَﻣَﻄْﺮَﺩَﺓٌ ﻟِﻠﺪَّﺍﺀِ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺠَﺴَﺪِ » . ( ﺃﺧﺮﺟﻪ ﺍﻟﺤﺎﻛﻢ ﻭ ﺍﻟﺒﻴﻬﻘﻲ ) .
“তোমাদের কর্তব্য হলো রাত জেগে নফল ইবাদত করা; কারণ, তা তোমাদের পূর্ববর্তী সৎব্যক্তিগণের স্বভাব ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায়; আর পাপকাজ থেকে বিরত রাখে, গুনাহসমূহ মোচন করে এবং শরীর থেকে রোগ-ব্যাধি দূর করে।”[55]
৪. ৮. রমযান মাসে কিয়ামুল লাইল বা রাত জেগে নফল ইবাদত:
রমযান মাস আল্লাহর মুবারক মাস, গোটা মাসটিই আল্লাহর নৈকট্য লাভের ক্ষেত্র; কারণ, তার দিনের বেলায় হলো সাওম পালন এবং রাতের বেলায় হলো নফল ইবাদত; আর ঐ ব্যক্তির জন্য ধ্বংস, যে রমযান মাস পেল, অথচ তার গুনাহ মাফ হলো না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈমানের সাথে ও সাওয়াবের আশায় এ মাসে রাত জেগে নফল ইবাদত করার জন্য উৎসাহিত করেছেন; কেননা, তিনি বলেছেন:
ﻣَﻦْ ﻗَﺎﻡَ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﺇﻳﻤَﺎﻧًﺎ ﻭَﺍﺣْﺘِﺴَﺎﺑًﺎ ﻏُﻔِﺮَ ﻟَﻪُ ﻣَﺎ ﺗَﻘَﺪَّﻡَ ﻣِﻦْ ﺫَﻧْﺒِﻪِ » . ( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ﻭ ﻣﺴﻠﻢ ) .
“যে ব্যক্তি রমযানের রাতে ঈমানসহ সাওয়াবের আশায় রাত জেগে ইবাদত করে, তার পূর্বের গুনাহ্ মাফ করে দেওয়া হয়।”[56] তিনি আরও বলেন:
« ﻣَﻦْ ﻳَﻘُﻢْ ﻟَﻴْﻠَﺔَ ﺍﻟْﻘَﺪْﺭِ ﺇﻳﻤَﺎﻧًﺎ ﻭَﺍﺣْﺘِﺴَﺎﺑًﺎ ﻏُﻔِﺮَ ﻟَﻪُ ﻣَﺎ ﺗَﻘَﺪَّﻡَ ﻣِﻦْ ﺫَﻧْﺒِﻪِ » . ( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ﻭ ﻣﺴﻠﻢ ) .
“যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সাওয়াবের আশায় কদরের রজনীতে ইবাদতের মধ্য দিয়ে রাত্রি জাগরণ করবে, তার অতীতের গুনাহ্ মাফ করে দেওয়া হবে।”[57]
৪. ৯. সালাতুত তাসবীহ:
আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আব্বাস ইবন আবদিল মুত্তালিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে উদ্দেশ্য করে বলেন:
« ﻳﺎ ﻋﺒﺎﺱُ ، ﻳﺎ ﻋﻤَّﺎﻩُ ، ﺃﻻ ﺃُﻋﻄﻴﻚَ ، ﺃﻻ ﺃﻣﻨَﺤُﻚَ ، ﺃﻻ ﺃُﺧْﺒِﺮُﻙَ ، ﺃَﻻ ﺃﻓﻌﻞُ ﺑﻚَ ﻋﺸﺮَ ﺧِﺼﺎﻝ؟ ﺇِﺫﺍ ﺃﻧﺖَ ﻓﻌﻠﺖَ ﺫﻟﻚ ﻏَﻔَﺮَ ﺍﻟﻠﻪُ ﻟﻚَ ﺫَﻧﺒَﻚَ : ﺃَﻭَّﻟَﻪُ ﻭﺁﺧِﺮَﻩُ ، ﻗﺪﻳﻤَﻪ ﻭﺣﺪﻳﺜَﻪ، ﺧﻄﺄَﻩ ﻭﻋﻤْﺪَﻩ ، ﺻﻐﻴﺮَﻩ ﻭﻛﺒﻴﺮَﻩ ، ﺳِﺮَّﻩ ﻭﻋﻼﻧﻴﺘَﻪ ؟ ﻋﺸﺮُ ﺧﺼﺎﻝ : ﺃﻥ ﺗُﺼﻠِّﻲ ﺃﺭﺑﻊ ﺭﻛﻌﺎﺕ ، ﺗﻘﺮﺃُ ﻓﻲ ﻛﻞِّ ﺭﻛﻌﺔ ﻓﺎﺗﺤﺔَ ﺍﻟﻜﺘﺎﺏ ، ﻭﺳﻮﺭﺓ ، ﻓﺈﺫﺍ ﻓﺮﻏﺖَ ﻣﻦ ﺍﻟﻘﺮﺍﺀﺓِ ﻓﻲ ﺃﻭَّﻝِ ﺭﻛﻌﺔ ﻭﺃﻧﺖَ ﻗﺎﺋﻢ ، ﻗﻠﺖَ : ﺳﺒﺤﺎﻥَ ﺍﻟﻠﻪ ، ﻭﺍﻟﺤﻤﺪُ ﻟﻠﻪ ، ﻭﻻ ﺇِﻟﻪ ﺇِﻻ ﺍﻟﻠﻪ ، ﻭﺍﻟﻠﻪُ ﺃﻛﺒﺮ - ﺧﻤﺲَ ﻋَﺸْﺮَﺓَ ﻣﺮﺓ - ﺛﻢ ﺗﺮﻛﻊُ ﻓﺘﻘﻮﻟُﻬﺎ ﻭﺃﻧﺖَ ﺭﺍﻛﻊ ﻋﺸﺮﺍ ، ﺛﻢ ﺗَﺮﻓَﻊُ ﺭﺃْﺳﻚ ﻣﻦ ﺍﻟﺮﻛﻮﻉِ ﻓﺘﻘﻮﻟﻬﺎ ﻋﺸﺮﺍ ، ﺛﻢ ﺗﻬﻮﻱ ﺳﺎﺟﺪﺍ ﻓﺘﻘﻮﻟُﻬﺎ ﻭﺃﻧﺖَ ﺳﺎﺟﺪ ﻋﺸﺮﺍ ، ﺛﻢ ﺗﺮﻓﻊُ ﺭﺃﺳَﻚَ ﻣﻦ ﺍﻟﺴﺠﻮﺩ ﻓﺘﻘﻮﻟُﻬﺎ ﻋﺸﺮﺍ ، ﺛﻢ ﺗﺴﺠﺪُ ﻓﺘﻘﻮﻟﻬﺎ ﻋﺸﺮﺍ ، ﺛﻢ ﺗﺮﻓﻊ ﺭﺃْﺳﻚ ﻓﺘﻘﻮﻟُﻬﺎ ﻋﺸﺮﺍ ، ﻓﺬﻟﻚ ﺧﻤﺲ ﻭﺳﺒﻌﻮﻥ ﻓﻲ ﻛﻞ ﺭﻛﻌﺔ ، ﺗﻔﻌﻞُ ﺫﻟﻚ ﻓﻲ ﺃﺭﺑﻊ ﺭﻛﻌﺎﺕ . ﺇﻥ ﺍﺳﺘﻄﻌﺖَ ﺃﻥ ﺗُﺼَﻠِّﻴَﻬﺎ ﻓﻲ ﻛﻞِّ ﻳﻮﻡ ﻣﺮﺓ ﻓﺎﻓﻌﻞْ ، ﻓﺈﻥ ﻟﻢ ﺗﻔﻌﻞْ ﻓﻔﻲ ﻛﻞِّ ﺟﻤﻌﺔ ، ﻓﺈﻥ ﻟﻢ ﺗَﻔْﻌَﻞ ﻓﻔﻲ ﻛﻞِّ ﺷﻬﺮ ﻣَﺮَّﺓ ، ﻓﺈﻥ ﻟﻢ ﺗﻔﻌﻞْ ﻓﻔﻲ ﻛﻞِّ ﺳَﻨَﺔ ﻣَﺮَّﺓ ، ﻓﺈِﻥ ﻟﻢ ﺗﻔﻌﻞْ ﻓﻔﻲ ﻛُﻞِّ ﻋﻤﺮِﻙَ ﻣَﺮَّﺓ » . ( ﺃﺧﺮﺟﻪ ﺃﺑﻮ ﺩﺍﻭﺩ ﻭ ﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﻪ ﻭ ﺍﻟﺒﻴﻬﻘﻲ ) .
“হে আব্বাস! হে চাচাজান! আমি কি আপনাকে দেব না? আমি কি আপনাকে দান করব না? আমি কি আপনাকে সংবাদ দেব না? আমি কি আপনার সাথে দশটি কাজ করব না? (অর্থাৎ আমি কি আপনাকে দশটি তাসবীহ শিক্ষা দেব না?) যখন আপনি তা আমল করবেন, তখন আল্লাহ তা‘আলা আপনার আগের, পরের, পুরাতন, নতুন, অনিচ্ছাকৃত, ইচ্ছাকৃত, ছোট (সগীরা), বড় (কবীরা), অপ্রকাশ্য ও প্রকাশ্য সকল প্রকারের গুনাহ্ ক্ষমা করে দিবেন। আর সেই দশটি কাজ হল: আপনি চার রাকা‘য়াত সালাত আদায় করবেন এবং প্রত্যেক রাকা‘য়াতে সূরা ফাতিহা পাঠ করবেন এবং এর সাথে অন্য যে কোনো একটি সূরা পাঠ করবেন; অতঃপর যখন প্রথম রাকা‘য়াতে কিরায়াত সম্পন্ন করে অবসর হবেন, তখন ঐ দাঁড়ানো অবস্থায় আপনি পনের বার পড়বেন: « ﺳﺒﺤﺎﻥَ ﺍﻟﻠﻪ ، ﻭﺍﻟﺤﻤﺪُ ﻟﻠﻪ ، ﻭﻻ ﺇِﻟﻪ ﺇِﻻ ﺍﻟﻠﻪ ، ﻭﺍﻟﻠﻪُ ﺃﻛﺒﺮ » (আমি আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি, সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, আল্লাহ ছাড়া ইবাদতের যোগ্য কোনো সত্য মা‘বুদ নেই এবং আল্লাহ মহান)। অতঃপর রুকূ করবেন এবং রুকূ অবস্থায় উক্ত তাসবীহটি দশবার পাঠ করবেন। অতঃপর রুকূ থেকে আপনার মাথা উঠাবেন এবং (দাঁড়ানো অবস্থায়) উক্ত তাসবীহটি দশবার পাঠ করবেন। অতঃপর সাজদায় অবনত হবেন এবং সাজদা অবস্থায় উক্ত তাসবীহটি দশবার পাঠ করবেন। অতঃপর সাজদা থেকে আপনার মাথা উঠাবেন এবং (বসা অবস্থায়) উক্ত তাসবীহটি দশবার পাঠ করবেন। অতঃপর আবার সাজদায় অবনত হবেন এবং উক্ত তাসবীহটি দশবার পাঠ করবেন। অতঃপর সাজদা থেকে আপনার মাথা উঠাবেন এবং (দাঁড়ানো অবস্থায়) উক্ত তাসবীহটি দশবার পাঠ করবেন। সুতরাং এভাবে প্রত্যেক রাকা‘য়াতে তা পঁচাত্তর বার হবে; আপনি চার রাকা‘য়াতের প্রত্যেক রাকা‘য়াতের মধ্যেই এরূপ করবেন। যদি আপনি প্রত্যেক দিন একবার এরূপ সালাত আদায় করতে সক্ষম হন, তাহলে তা করবেন; আর যদি তা না পারেন, তাহলে প্রত্যেক সপ্তাহে একবার আদায় করবেন; আর যদি তা-ও না পারেন, তাহলে প্রত্যেক মাসে একবার আদায় করবেন; আর যদি তা-ও না পারেন, তাহলে প্রত্যেক বছরে একবার আদায় করবেন; আর যদি তা-ও না পারেন, তাহলে আপনার জীবনে কমপক্ষে একবার আদায় করবেন।”[58] হাফেয ইবনু নাসির উদ্দিন আদ-দামেস্কী ছন্দ আকারে বলেন:
ﺇﺫﺍ ﺃﺭﺍﺩﺕ ﺍﻟﺜﻮﺍﺏ ﺑﺎﻟﺘﺮﺟﻴﺢ ﺻﻞِّ ﻟﻠﻪ ﺳﺒﺤﺔ ﺍﻟﺘﺴﺒﻴﺢ
(যখন তুমি সাওয়াবের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিতে চাও
তাহলে আল্লাহর উদ্দেশ্যে সালাতুত তাসবীহ আদায় কর)।
ﺇﻥ ﻓﻴﻬﺎ ﺭﻏﺎﺋﺒﺎً ﻭ ﺃﺟﻮﺭﺍً ﻭ ﺩﻭﺍﺀ ﻟﻜﻞ ﻗﻠﺐ ﺟﺮﻳﺢ
(নিশ্চয় তাতে রয়েছে উৎসাহ-উদ্দীপনা ও সাওয়াবের সমাহার, আর প্রত্যেক ক্ষত-বিক্ষত অন্তরের জন্য ব্যবস্থা আছে চিকিৎসার)।
ﻓﺘﻘﺮﺏ ﺑﻔﻌﻠﻬﺎ ﺗﻌﻂ ﻧﻴﻼً ﻭ ﺛﻮﺍﺑﺎً ﻳﺠﻞُّ ﻋﻦ ﺍﻟﺘﺼﺮﻳﺢ
(সুতরাং তুমি তা আদায় করলে তোমাকে দেওয়া হবে পুরস্কার আরও দেওয়া হবে সাওয়াব, যা স্পষ্ট করে বলা থেকে উপরে)।
ﻻ ﺗﺪﻋﻬﺎ ﻓﺈﻥ ﻓﻴﻬﺎ ﺣﺪﻳﺜﺎً ﻣﻦ ﻭﺟﻮﻩ ﻣﻘﺎﺭﺑﺎً ﻟﻠﺼﺤﻴﺢ
(তুমি তা ছেড়ে দিও না; কেননা, তার ব্যাপারে হাদিস রয়েছে বিভিন্নভাবে, যা বিশুদ্ধ হাদিসের কাছাকাছি পর্যায়ের)।
ﻓﺘﻤﺴﻚ ﺑﺴﻨَّﺔ ﻛﻴﻒ ﺟﺎﺀﺕ ﻋﻦ ﺛﻘﺎﺕ ﻋﻦ ﺍﻟﺤﺒﻴﺐ ﺍﻟﻤﻠﻴﺢ
(সুতরাং তুমি সুন্নাহকে আকড়িয়ে ধর যেভাবে তা এসেছে নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীগণের মাধ্যমে প্রিয় হাবীব থেকে)—
ﺃﺣﻤﺪ ﺍﻟﻤﺼﻄﻔﻰ ﺭﺳﻮﻝ ﺃﻣﻴﻦ ﻭ ﻣﻄﺎﻉ ﻭ ﺳﻴﺪ ﻭ ﺭﺟﻴﺢ
(আহমাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে, যিনি বিশ্বস্ত রাসূল, অনুসরণীয়-অনুকরণীয়, নেতা এবং প্রধান ব্যক্তিত্ব);
ﺃﻓﻀﻞ ﺍﻟﺨﻠﻖ ﺭﺗﺒﺔ ﻭ ﻣﺤﻼً ﻭ ﻣﻘﺎﻻ ﻣﻌﺠﺰﺍً ﻟﻠﻔﺼﻴﺢ
(সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি মর্যাদা ও অবস্থানগত দিক থেকে, আর যিনি কথাবার্তায় অসম্ভব রকম বিশুদ্ধভাষী)।
ﻓﺼﻼﺓ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﺘﺮﻯ ﻋﻠﻴﻪ ﻣﻊ ﻛﻞ ﺳﻼﻡ ﻣﺪﻳﺢ ﺑﻤﺪﻳﺢ
(অতএব, অনবরত আল্লাহর সালাত বর্ষিত হউক তাঁর উপর, সাথে প্রশংসা বিজড়িত সকল প্রকার সালাম ও গুণগান)।
ﻣﺎ ﺗﻮﺍﻟﻰ ﺍﻟﺼﺒﺎﺡ ﻣﻊ ﺟﻨﺢ ﻟﻴﻞ ﻭ ﺗﻮﺍﺭﻯ ﻣﻐﻴﺐ ﻓﻲ ﺿﺮﻳﺢ
(যতদিন প্রভাত হবে রাতের অন্ধকারের সাথে আর কবরে অদৃশ্য হবে কোনো প্রাণী)।
৪. ১০. পবিত্র মাসজিদে আকসায় সালাত আদায় করা: মাসজিদে আকসা ঐসব মাসজিদের অন্তর্ভুক্ত, যেগুলোর দিকে ইবাদত করার জন্য ভ্রমণ করা যায়; কারণ, আল্লাহ তা‘আলা তাকে অনেক বেশি মর্যাদা দিয়েছেন, এর মর্যাদা সম্পর্কে আপনার জেনে রাখা দরকার যে, তাতে সালাত আদায় করলে গুনাহ্-খাতা মাফ হয় এবং পাপরাশি মোচন হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
.« ﺇﻥَّ ﺳُﻠَﻴْﻤَﺎﻥَ ﺑْﻦَ ﺩَﺍﻭُﺩ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻤَﺎ ﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓُ ﻭَﺍﻟﺴَّﻠَﺎﻡُ ﻟَﻤَّﺎ ﺑَﻨَﻰ ﺑَﻴْﺖَ ﺍﻟْﻤَﻘْﺪِﺱِ ﺳَﺄَﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻋَﺰَّ ﻭَﺟَﻞَّ ﺧِﻠَﺎﻟًﺎ ﺛَﻠَﺎﺛًﺎ : ﺳَﺄَﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﺗَﻌَﺎﻟَﻰ ﺣُﻜْﻤًﺎ ﻳُﺼَﺎﺩِﻑُ ﺣُﻜْﻤَﻪُ ﻓَﺄُﻭﺗِﻴَﻪُ ، ﻭَﺳَﺄَﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻋَﺰَّ ﻭَﺟَﻞَّ ﻣُﻠْﻜًﺎ ﻟَﺎ ﻳَﻨْﺒَﻐِﻲ ﻟِﺄَﺣَﺪٍ ﻣِﻦْ ﺑَﻌْﺪِﻩِ ﻓَﺄُﻭﺗِﻴَﻪُ ، ﻭَﺳَﺄَﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻋَﺰَّ ﻭَﺟَﻞَّ ﺣِﻴﻦَ ﻓَﺮَﺍﻏِﻪِ ﻣِﻦْ ﺑِﻨَﺎﺀِ ﺍﻟْﻤَﺴْﺠِﺪِ ﺃَﻥْ ﻟَﺎ ﻳَﺄْﺗِﻴَﻪُ ﺃَﺣَﺪٌ ﻟَﺎ ﻳَﻨْﻬَﺰُﻩُ ﺇﻟَّﺎ ﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓُ ﻓِﻴﻪِ ﺃَﻥْ ﻳُﺨْﺮِﺟَﻪُ ﻣِﻦْ ﺧَﻄِﻴﺌَﺘِﻪِ ﻛَﻴَﻮْﻡِ ﻭَﻟَﺪَﺗْﻪُ ﺃُﻣُّﻪُ . ﻭﻧﺤﻦُ ﻧَﺮْﺟُﻮ ﺃﻥْ ﻳَﻜُﻮْﻥَ ﺍﻟﻠﻪُ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻗَﺪْ ﺃﻋﻄﺎﻩُ ﺫَﻟِﻚَ » . ( ﺃﺧﺮﺟﻪ ﺍﻟﻨﺴﺎﺋﻲ ﻭ ﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﻪ ﻭ ﺃﺣﻤﺪ ﻭ ﺍﻟﺤﺎﻛﻢ ) .
“দাঊদ ‘আলাইহিস সালামের পুত্র সুলাইমান ‘আলাইহিস সালাম যখন বাইতুল মুকাদ্দাস নির্মাণ করলেন, তখন তিনি আল্লাহ তা‘আলার নিকট তিনটি জিনিস চাইলেন: তিনি আল্লাহ তা‘আলার নিকট এমন প্রজ্ঞা চাইলেন, যা তাঁর শাসন পরিচালনার উপযুক্ত হয়; তাঁকে তা দেওয়া হল। আর তিনি আল্লাহ তা‘আলার নিকট এমন এক রাজ্য চাইলেন, যা তাঁর পর আর কারও জন্যই প্রযোজ্য হবে না; অতঃপর তাঁকে তাও দেওয়া হল। আর তিনি যখন মাসজিদের নির্মাণ কাজ শেষ করলেন, তখন তিনি আল্লাহ তা‘আলার নিকট প্রার্থনা করলেন যে, কোনো ব্যক্তি তাতে শুধু সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে আসলে তিনি যেন তাকে তার গুনাহ থেকে ঐ দিনের মত মুক্ত করে দেন, যেদিন তার মা তাকে নিষ্পাপ অবস্থায় প্রসব করেছে। আর আমরা আশা করি যে, আল্লাহ তাঁকে এটাও দিয়েছিলেন।”[59] আর এই বরকতময় মাসজিদটি আজ অভিশপ্ত ইয়াহূদীদের পদতলে কাঁদছে, যারা মুসলিমগণ কর্তৃক তাদের দীন থেকে গাফলতির সুযোগে ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে ফিলিস্তিনের একটি অংশসহ মাসজিদটিকে দখল করে নিয়েছে। হায়! তারা কাঁদার অভিনয় করছে ... বরং তোমরা কাঁদ এমন এক হারানো রাজ্যে যাকে উদ্ধার বা হেফাজত করার মত পুরুষ লোক নেই। হে আল্লাহ! আপনি তার জন্য সুস্পষ্ট বিজয়ের ব্যবস্থা করুন এবং খুব নিকটবর্তী সময়ের মধ্যে সাহায্য-সহযোগিতার ব্যবস্থা করুন ... আর সেই দিন মুমিনগণ ঐ আল্লাহর সাহায্য নিয়ে আনন্দে উৎফুল্ল হবে, যিনি কোনো সম্প্রদায়ের অবস্থা পরিবর্তন করেন না ততক্ষণ পর্যন্ত, যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থা নিজেরা পরিবর্তন করে। * * *
৫. জিহাদের অধ্যায়
আল্লাহর পথে জিহাদ করা প্রত্যেক মুসলিমের উপর ফরযে আইন, হয় অন্তর দিয়ে নতুবা বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে, অথবা সম্পদ দিয়ে অথবা শক্তি প্রয়োগ করে; সুতরাং প্রত্যেক মুসলিমের উপর তার শক্তি, ক্ষমতা ও অবস্থান অনুযায়ী উল্লেখিত যে কোনো প্রকার পদ্ধতি অবলম্বনে জিহাদ করা আবশ্যক। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: ﴿ ﺑَﻞِ ﭐﻟۡﺈِﻧﺴَٰﻦُ ﻋَﻠَﻰٰ ﻧَﻔۡﺴِﻪِۦ ﺑَﺼِﻴﺮَﺓٞ ١٤ ﻭَﻟَﻮۡ ﺃَﻟۡﻘَﻰٰ ﻣَﻌَﺎﺫِﻳﺮَﻩُۥ ١٥ ﴾ [ ﺍﻟﻘﻴﺎﻣﺔ : ١٤، ١٥ ] “বরং মানুষ নিজের সম্পর্কে সম্যক অবগত, যদিও সে নানা অজুহাতের অবতারণা করে।”[60]
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা জানিয়ে দিয়েছেন যে, তিনি: ﴿ ﭐﺷۡﺘَﺮَﻯٰ ﻣِﻦَ ﭐﻟۡﻤُﺆۡﻣِﻨِﻴﻦَ ﺃَﻧﻔُﺴَﻬُﻢۡ ﻭَﺃَﻣۡﻮَٰﻟَﻬُﻢ ﴾ [ ﺍﻟﺘﻮﺑﺔ : ١١١ ]
“নিশ্চয় তিনি মুমিনদের কাছ থেকে তাদের জীবন ও সম্পদ কিনে নিয়েছেন।”[61]
আর তাদেরকে তার বিনিময় দিয়েছেন এই বলে:
﴿ ﺑِﺄَﻥَّ ﻟَﻬُﻢُ ﭐﻟۡﺠَﻨَّﺔَۚ ﴾ [ ﺍﻟﺘﻮﺑﺔ : ١١١ ]
“(এর বিনিময়ে) তাদের জন্য আছে জান্নাত।”[62]
আর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা এই চুক্তি ও প্রতিশ্রুতি গচ্ছিত রেখেছেন তাঁর নাযিলকৃত শ্রেষ্ঠ কিতাবসমূহে; আল-কুআনের ভাষায়:
﴿ ﻭَﻋۡﺪًﺍ ﻋَﻠَﻴۡﻪِ ﺣَﻘّٗﺎ ﻓِﻲ ﭐﻟﺘَّﻮۡﺭَﻯٰﺔِ ﻭَﭐﻟۡﺈِﻧﺠِﻴﻞِ ﻭَﭐﻟۡﻘُﺮۡﺀَﺍﻥِۚ ﴾ [ ﺍﻟﺘﻮﺑﺔ : ١١١ ]
“তাওরাত, ইঞ্জীল ও কুরআনে এ সম্পর্কে তাদের হক ওয়াদা রয়েছে।”[63]
আর তিনি সেই প্রতিশ্রুতির ব্যাপারে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন এবং তাদেরকে সুসংবাদ দিয়েছেন এই বলে:
﴿ ﻭَﻣَﻦۡ ﺃَﻭۡﻓَﻰٰ ﺑِﻌَﻬۡﺪِﻩِۦ ﻣِﻦَ ﭐﻟﻠَّﻪِۚ ﻓَﭑﺳۡﺘَﺒۡﺸِﺮُﻭﺍْ ﺑِﺒَﻴۡﻌِﻜُﻢُ ﭐﻟَّﺬِﻱ ﺑَﺎﻳَﻌۡﺘُﻢ ﺑِﻪِۦۚ ﻭَﺫَٰﻟِﻚَ ﻫُﻮَ ﭐﻟۡﻔَﻮۡﺯُ ﭐﻟۡﻌَﻈِﻴﻢُ ١١١ ﴾ [ ﺍﻟﺘﻮﺑﺔ : ١١١ ]
“আর নিজ প্রতিজ্ঞা পালনে আল্লাহ্র চেয়ে শ্রেষ্ঠতর কে আছে? সুতরাং তোমরা যে সওদা করেছ, সে সওদার জন্য আনন্দিত হও। আর সেটাই তো মহাসাফল্য।”[64]
সুতরাং যে চুক্তি সম্পাদনকারী ব্যক্তি তার রবের সাথে এ ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি সম্পাদন করেছে, সে যেন চিন্তাভাবনা করে— তার ঝুঁকি কত বড় এবং তার প্রতিদান কত মহান! কারণ, আল্লাহ তা‘আলা হলেন স্বয়ং ক্রেতা এবং মূল্য হচ্ছে নি‘য়ামতপূর্ণ জান্নাত ও স্থায়ী সাফল্য; আর যাঁর হাত দিয়ে এই চুক্তির প্রচলন তিনি হলেন সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল এবং ফিরিশতা ও মানবগোষ্ঠীর মধ্যে সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তি; আর এই পণ্য, যার মূল্য এত বেশি, তা অবশ্যই কোনো মহৎ ও গুরুত্বপূর্ণ বস্তুর জন্যই নির্ধারণ করা হয়েছে। আর যখন দাবিদারের সংখ্যা বেশি হয়ে গেলো, তখন তাদেরকে তাদের দাবির স্বপক্ষে দলীল-প্রমাণ প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আহ্বান করা হলো; কারণ, মানুষকে যদি তাদের দাবি অনুযায়ীই (বিশুদ্ধতা যাচাই না করে) দেওয়া হত, তাহলে আকাশ, যমীন ও তার মধ্যবর্তী স্থানে চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হত। আর যখন সাক্ষী-প্রমাণসহ বিভিন্ন রকম দাবিদারের আত্মপ্রকাশ ঘটলো, তখন তাদেরকে বলা হলো একটি মাত্র প্রমাণ ছাড়া কোনো দলীল-প্রমাণ ও দাবি-দাওয়া প্রতিষ্ঠিত ও সাব্যস্ত হবে না; আর সেই প্রমাণটি হলো আল-কুরআনের ভাষায়:
﴿ ﻗُﻞۡ ﺇِﻥ ﻛُﻨﺘُﻢۡ ﺗُﺤِﺒُّﻮﻥَ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﻓَﭑﺗَّﺒِﻌُﻮﻧِﻲ ﻳُﺤۡﺒِﺒۡﻜُﻢُ ﭐﻟﻠَّﻪُ ﻭَﻳَﻐۡﻔِﺮۡ ﻟَﻜُﻢۡ ﺫُﻧُﻮﺑَﻜُﻢۡۚ ﻭَﭐﻟﻠَّﻪُ ﻏَﻔُﻮﺭٞ ﺭَّﺣِﻴﻢٞ ٣١ ﴾ [ ﺍﻝ ﻋﻤﺮﺍﻥ : ٣١ ]
“বলুন, ‘তোমরা যদি আল্লাহকে ভালবাস, তবে আমাকে অনুসরণ কর, আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করবেন। আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”[65] ফলে সৃষ্টির অনেকেই পিছনে পড়ে গেলো, কেবল যারা কথায়, কাজে, দিক নির্দেশনায় ও নৈতিক চরিত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ করেছে তারাই অবশিষ্ট থেকে গেলো; আল-কুরআনের ভাষায়:
﴿ ﻓَﺴَﻮۡﻑَ ﻳَﺄۡﺗِﻲ ﭐﻟﻠَّﻪُ ﺑِﻘَﻮۡﻡٖ ﻳُﺤِﺒُّﻬُﻢۡ ﻭَﻳُﺤِﺒُّﻮﻧَﻪُۥٓ ﺃَﺫِﻟَّﺔٍ ﻋَﻠَﻰ ﭐﻟۡﻤُﺆۡﻣِﻨِﻴﻦَ ﺃَﻋِﺰَّﺓٍ ﻋَﻠَﻰ ﭐﻟۡﻜَٰﻔِﺮِﻳﻦَ ﴾ [ ﺍﻟﻤﺎﺋﺪﺓ : ٥٤ ]
“অতঃপর নিশ্চয় আল্লাহ এমন এক সম্প্রদায় আনবেন যাদেরকে তিনি ভালবাসবেন এবং যারা তাঁকে ভালবাসবে; তারা মুমিনদের প্রতি কোমল ও কাফেরদের প্রতি কঠোর হবে।”[66] আর তখনই তাদের কাছে (সে আনুগত্য ও অনুসরণের) দীলল-প্রমাণসমূহের যথার্থতা তলব করা হলো, এবং বলা হলো: পরিশুদ্ধিতা ব্যতীত সাক্ষ্য প্রমাণের যথার্থতা সাব্যস্ত হবে না— আল-কুরআনের ভাষায়:
﴿ ﻳُﺠَٰﻬِﺪُﻭﻥَ ﻓِﻲ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﭐﻟﻠَّﻪِ ﻭَﻟَﺎ ﻳَﺨَﺎﻓُﻮﻥَ ﻟَﻮۡﻣَﺔَ ﻟَﺎٓﺋِﻢٖۚ ﴾ [ ﺍﻟﻤﺎﺋﺪﺓ : ٥٤ ]
“তারা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে এবং কোনো নিন্দুকের নিন্দার ভয় করবে না।”[67] আর তখনই মুজাহিদগণ দাঁড়িয়ে গেলো (জিহাদের মাধ্যমে নিজেদের দ্বারা রাসূলের আনুগত্যের দাবীর যথার্থতা প্রমাণের জন্য), অতঃপর তাদেরকে বলা হলো: নিশ্চয় মুমিনগণের জীবন ও সম্পদের মালিকানা তাদের নয়, সুতরাং তোমরা চুক্তির দাবি অনুযায়ী তা হস্তান্তর কর; কারণ পারস্পরিক ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি মোতাবেক উভয় পক্ষ থেকে বিনিময় হস্তান্তর করা আবশ্যক। অতঃপর ব্যবসায়ীগণ যখন ক্রেতার মহত্ব এবং বিনিময় মূল্যের কদর (মর্যাদা) উপলব্ধি করলো, তখন তারা বুঝতে পারলো যে, এ পণ্যের এমন কদর ও মর্যাদা রয়েছে, যা অন্য কোনো পণ্যের নেই; ফলে তারা তাকে স্বল্প মূল্যে, মাত্র কয়েক দিরহামের বিনিময়ে বিক্রি করাটাকে স্পষ্ট ক্ষতি ও নিকৃষ্ট মানের প্রতারণার অন্তর্ভুক্ত বলে মনে করলো; কারণ যে এ ধরণের (স্পল্প মূল্যে বিক্রির) কাজ করবে, সে এমন এক মানুষ, যে নিজেকে বোকা বানিয়েছে এবং তার রবের মর্যাদাকে হালকা মনে করেছে। তাই তারা যার (আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা‘আলার) সাথে বিনিময় চুক্তি করেছে, (যেখানে ক্রেতা হলেন স্বয়ং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা‘আলা) তার সাথে সন্তোষ ও স্বেচ্ছায় এমন সন্তুষ্টির চুক্তি সম্পাদন করেছে যাতে কোনো খেয়ার (চুক্তি বহাল রাখা বা না রাখার স্বাধীনতা) রাখেনি; আর তারা বলে: আমরা আপনার সাথে কৃত চুক্তি ভঙ্গ করব না এবং আপনার নিকট চুক্তি ভঙ্গ করার আবেদনও করব না; অতঃপর যখন চুক্তি পরিপূর্ণ হয়ে গেলো এবং তারা বিক্রিত মাল হস্তান্তর করে দিল (জান ও মাল), তখনই তাদেরকে বলা হলো: তোমরা ওঠো! তোমাদেরকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে। আল-কুরআনের ভাষায়:
﴿ ﻓَﭑﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻫَﺎﺟَﺮُﻭﺍْ ﻭَﺃُﺧۡﺮِﺟُﻮﺍْ ﻣِﻦ ﺩِﻳَٰﺮِﻫِﻢۡ ﻭَﺃُﻭﺫُﻭﺍْ ﻓِﻲ ﺳَﺒِﻴﻠِﻲ ﻭَﻗَٰﺘَﻠُﻮﺍْ ﻭَﻗُﺘِﻠُﻮﺍْ ﻟَﺄُﻛَﻔِّﺮَﻥَّ ﻋَﻨۡﻬُﻢۡ ﺳَﻴَِّٔﺎﺗِﻬِﻢۡ ﻭَﻟَﺄُﺩۡﺧِﻠَﻨَّﻬُﻢۡ ﺟَﻨَّٰﺖٖ ﺗَﺠۡﺮِﻱ ﻣِﻦ ﺗَﺤۡﺘِﻬَﺎ ﭐﻟۡﺄَﻧۡﻬَٰﺮُ ﺛَﻮَﺍﺑٗﺎ ﻣِّﻦۡ ﻋِﻨﺪِ ﭐﻟﻠَّﻪِۚ ﻭَﭐﻟﻠَّﻪُ ﻋِﻨﺪَﻩُۥ ﺣُﺴۡﻦُ ﭐﻟﺜَّﻮَﺍﺏِ ١٩٥ ﴾ [ ﺍﻝ ﻋﻤﺮﺍﻥ : ١٩٥ ]
“কাজেই যারা হিজরত করেছে, নিজ ঘর থেকে উৎখাত হয়েছে, আমার পথে নির্যাতিত হয়েছে এবং যুদ্ধ করেছে ও নিহত হয়েছে, আমি তাদের পাপ কাজগুলো অবশ্যই দূর করব এবং অবশ্যই তাদেরকে প্রবেশ করাব জান্নাতে, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত। এটা আল্লাহর কাছ থেকে পুরস্কার; আর উত্তম পুরস্কার আল্লাহরই কাছে রয়েছে।”[68] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« ﺍﻟْﻘَﺘْﻞُ ﻓِﻰ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻳُﻜَﻔِّﺮُ ﻛُﻞَّ ﺷَﻰْﺀٍ ﺇِﻻَّ ﺍﻟﺪَّﻳْﻦَ » . ( ﺃﺧﺮﺟﻪ ﻣﺴﻠﻢ ) .
“আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হওয়া ঋণ ছাড়া সব কিছু মাফ করিয়ে দেয়।”[69]
আবূ কাতাদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
« ﺃﻥَّ ﺭَﺟُﻼً ﻗَﺎﻡَ ، ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ، ﺃَﺭَﺃَﻳْﺖَ ﺇِﻥْ ﻗُﺘِﻠْﺖُ ﻓِﻲ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺗُﻜَﻔَّﺮُ ﻋَﻨِّﻲ ﺧَﻄَﺎﻳَﺎﻱَ ؟ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻟَﻪُ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : « ﻧَﻌَﻢْ ، ﺇِﻥْ ﻗُﺘِﻠْﺖَ ﻓِﻲ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺃَﻧْﺖَ ﺻَﺎﺑِﺮٌ ﻣُﺤْﺘَﺴِﺐٌ ﻣُﻘْﺒِﻞٌ ﻏَﻴْﺮُ ﻣُﺪْﺑِﺮٍ » . ﺛُﻢَّ ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : « ﻛَﻴْﻒَ ﻗُﻠْﺖَ » . ﻗَﺎﻝَ : ﺃَﺭَﺃَﻳْﺖَ ﺇِﻥْ ﻗُﺘِﻠْﺖُ ﻓِﻲ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ، ﺃﺗُﻜَﻔَّﺮُ ﻋَﻨِّﻲ ﺧَﻄَﺎﻳَﺎﻱَ ؟ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : « ﻧَﻌَﻢْ ، ﻭَﺃَﻧْﺖَ ﺻَﺎﺑِﺮٌ ﻣُﺤْﺘَﺴِﺐٌ ﻣُﻘْﺒِﻞٌ ﻏَﻴْﺮُ ﻣُﺪْﺑِﺮٍ ، ﺇِﻻ ﺍﻟﺪَّﻳْﻦَ , ﻓَﺈِﻥَّ ﺟِﺒْﺮِﻳﻞَ ﻗَﺎﻝَ ﻟِﻲ ﺫَﻟِﻚَ » . ( ﺃﺧﺮﺟﻪ ﻣﺴﻠﻢ ) .
“এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল: হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপিন কি মনে করেন যে, আমি যদি আল্লাহর পথে নিহত (শহীদ) হই, তাহলে আমার সকল পাপ মোচন হয়ে যাবে? তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে লক্ষ্য করে বললেন: হ্যাঁ, যদি তুমি ধৈর্যশীল, সাওয়াবের আশায় আশান্বিত হয়ে পৃষ্ঠ প্রদর্শন না করে শত্রুর মুখোমুখি অবস্থায় নিহত হও। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তুমি কি বললে? তখন সে ব্যক্তি (আবার) বলল: আপিন কি মনে করেন যে, আমি যদি আল্লাহর পথে নিহত হই, তাহলে আমার সকল পাপের কাফ্ফারা হয়ে যাবে? তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: হ্যাঁ, যদি তুমি ধৈর্যশীল, সাওয়াবের আশায় আশান্বিত হয়ে পৃষ্ঠ প্রদর্শন না করে শত্রুর মুখোমুখি অবস্থায় নিহত হও; তবে ঋণের বিষয়টি আলাদা। কেননা, জিবরাঈল আ. আমাকে একথা বলেছেন।”[70] আল্লাহর পথের আহ্বানকারী, আল্লাহর সম্মানিত ঘর জান্নাতের দিকে আহ্বানকারী উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন আত্মা এবং সুউচ্চ সাহসী মনগুলোকে নাড়িয়ে দিয়েছে,
ﻓﺤﻴﻬﻼً ﺇﻥ ﻛﻨﺖ ﺫﺍ ﻫﻤﺔ ﻓﻘﺪ ﺣﺪﺍ ﺑﻚ ﺣﺎﺩﻱ ﺍﻟﺸﻮﻕ ﻓﺎﻃﻮ ﺍﻟﻤﺮﺍﺣﻼ
সুতরাং এগিয়ে এস যদি তুমি সত্যিকার সাহসী দৃঢ় মনোবলের অধিকারী হয়ে থাক, কারণ আবেগ মিশ্রিত গানে তোমাকে গায়ক গান গেয়ে ডাক দিয়ে যাচ্ছে সুতরাং তুমি দ্রুত পর্যায়গুলো অতিক্রম করে আস হে ঈমানদার ভাই তোমার আত্মাকে সে জন্য তৈরী কর:
ﻗﺪ ﻫﻴﺆﻭﻙ ﻷﻣﺮ ﻟﻮ ﻓﻄﻨﺖ ﻟﻪ ﻓﺄﺭﺑﺄ ﺑﻨﻔﺴﻚ ﺃﻥ ﺗﺮﻋﻰ ﻣﻊ ﺍﻟﻬﻤﻞ
তোমাকে এমন এক মহৎ কাজের জন্য তৈরী করা হয়েছে যদি তুমি তার জন্য সাবধান হতে.. সুতরাং তুমি তোমার আত্মাকে অধো-বুদ্ধিহীনদের কাতারে চারণ করতে দেওয়া থেকে উপরে উঠিয়ে রাখ। আর জেনে রাখবেন যে, আল্লাহ তা‘আলার পণ্য খুব দামী এবং তার মূল্য হলো জীবন ও সম্পদ তার মালিকের জন্য ব্যয় করা, যা তিনি মুমিনগণের কাছ থেকে ক্রয় করে নিয়েছেন। আর আল্লাহর কসম! এটা এমন দুর্বল বা কম দামী পণ্য নয় যে, নিঃস্ব কাপুরুষ ব্যক্তিগণ তার দাম করতে পারে এবং তা বিক্রয়ের অযোগ্য পণ্যও নয় যে, কোনো তুচ্ছ হতদরিদ্র ব্যক্তি তা ক্রয় করে ফেলবে। ইচ্ছুক ক্রেতাদের জন্য প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে এই পণ্য বাজারে উঠানো হয়েছে, আর (ক্রেতাসকলের পক্ষ থেকে) বলা হয়েছে: আরো বেশি আছে কি? আর তার প্রতিপালক গ্রীবাস্থিত ধমনীর বিনিময় ছাড়া আর অন্য কোনো দামে তা বিক্রি করতে রাজি নন। * * *
৬.রমযান
৬. ১. রমযান মাসে সাওম পালন:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:
« ﻣَﻦْ ﺻَﺎﻡَ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﺇِﻳﻤَﺎﻧًﺎ ﻭَﺍﺣْﺘِﺴَﺎﺑًﺎ ﻏُﻔِﺮَ ﻟَﻪُ ﻣَﺎ ﺗَﻘَﺪَّﻡَ ﻣِﻦْ ﺫَﻧْﺒِﻪِ » . ( ﺃﺧﺮﺟﻪ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ﻭ ﻣﺴﻠﻢ ﻭ ﺃﺑﻮ ﺩﺍﻭﺩ ﻭ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ ﻭ ﺍﻟﻨﺴﺎﺋﻲ ﻭ ﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﻪ ) .
“যে ব্যক্তি রমযান মাসে ঈমানের সাথে সাওয়াবের আশায় সাওম পালন করবে, তার অতীতের গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। ।”[71]
৬. ২. ‘আরাফা ও আশুরার দিনে সাওম পালন:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« ﺛَﻼَﺙٌ ﻣِﻦْ ﻛُﻞِّ ﺷَﻬْﺮٍ ﻭَﺭَﻣَﻀَﺎﻥُ ﺇِﻟَﻰ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﻓَﻬَﺬَﺍ ﺻِﻴَﺎﻡُ ﺍﻟﺪَّﻫْﺮِ ﻛُﻠِّﻪِ ، ﺻِﻴَﺎﻡُ ﻳَﻮْﻡِ ﻋَﺮَﻓَﺔَ ﺃَﺣْﺘَﺴِﺐُ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺃَﻥْ ﻳُﻜَﻔِّﺮَ ﺍﻟﺴَّﻨَﺔَ ﺍﻟَّﺘِﻰ ﻗَﺒْﻠَﻪُ ﻭَﺍﻟﺴَّﻨَﺔَ ﺍﻟَّﺘِﻰ ﺑَﻌْﺪَﻩُ ، ﻭَﺻِﻴَﺎﻡُ ﻳَﻮْﻡِ ﻋَﺎﺷُﻮﺭَﺍﺀَ ﺃَﺣْﺘَﺴِﺐُ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺃَﻥْ ﻳُﻜَﻔِّﺮَ ﺍﻟﺴَّﻨَﺔَ ﺍﻟَّﺘِﻰ ﻗَﺒْﻠَﻪُ » . ( ﺃﺧﺮﺟﻪ ﻣﺴﻠﻢ ) .
“প্রত্যেক মাসে তিনদিন সাওম পালন করা এবং এক রমযানের সাওম পরের রমযান পর্যন্ত— এটাই হলো সারা বছরের সাওম পালন। আরাফার দিনের সাওমের ব্যাপারে আমি আল্লাহ তা‘আলার কাছে আশি করি যে, তা পূর্বের এক বছরের এবং পরের এক বছরের গুনাহ মুছে দেবে। আর ‘আশুরার দিনের সাওমের ব্যাপারে আমি আল্লাহ তা‘আলার কাছে আশি করি যে, তা পূর্বের এক বছরের গুনাহ মুছে দেবে ।”[72] * * *
৭. হাজ্জের অধ্যায়
৭. ১. হাজ্জ ও ওমরা:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« ﺗَﺎﺑِﻌُﻮﺍ ﺑَﻴْﻦَ ﺍﻟْﺤَﺞِّ ﻭَﺍﻟْﻌُﻤْﺮَﺓِ ، ﻓَﺈِﻧَّﻬُﻤَﺎ ﻳَﻨْﻔِﻴَﺎﻥِ ﺍﻟْﻔَﻘْﺮَ ﻭَﺍﻟﺬُّﻧُﻮﺏَ ، ﻛَﻤَﺎ ﻳَﻨْﻔِﻲ ﺍﻟْﻜِﻴﺮُ ﺧَﺒَﺚَ ﺍﻟْﺤَﺪِﻳﺪِ » . ( ﺃﺧﺮﺟﻪ ﺍﻟﻨﺴﺎﺋﻲ ﻭ ﺍﻟﻄﺒﺮﺍﻧﻲ ) .
“তোমরা হাজ্জ ও ওমরা উভয়টি বিলম্ব না করে পরপর সম্পাদন কর; কারণ, এই দু’টি দারিদ্র ও পাপরাশিকে এমনভাবে দূর করে, যেভাবে হাপর লোহা’র ময়লা দূর করে।”[73] আর এই মহান ফযীলতের বিষয়টি অপর এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভাষায় আরও বিস্তারিতভাবে এসেছে, তিনি বলেছেন:
« ﺃﻣﺎ ﺧﺮﻭﺟﻚ ﻣﻦ ﺑﻴﺘﻚ ﺗﺆﻡ ﺍﻟﺒﻴﺖ ﺍﻟﺤﺮﺍﻡ ، ﻓﺈﻥ ﻟﻚ ﺑﻜﻞ ﻭﻃﺄﺓ ﺗﻄﺆﻫﺎ ﺭﺍﺣﻠﺘﻚ ﻳﻜﺘﺐ ﺍﻟﻠﻪ ﻟﻚ ﺑﻬﺎ ﺣﺴﻨﺔ ، ﻭﻳﻤﺤﻮ ﻋﻨﻚ ﺑﻬﺎ ﺳﻴﺌﺔ . ﻭﺃﻣﺎ ﻭﻗﻮﻓﻚ ﺑﻌﺮﻓﺔ ﻓﺈﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﺰ ﻭﺟﻞ ﻳﻨﺰﻝ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﺴﻤﺎﺀ ﺍﻟﺪﻧﻴﺎ ، ﻓﻴﺒﺎﻫﻰ ﺑﻬﻢ ﺍﻟﻤﻼﺋﻜﺔ، ﻓﻴﻘﻮﻝ : ﻫﺆﻻﺀ ﻋﺒﺎﺩﻯ ﺟﺎﺀﻭﻧﻰ ﺷُﻌْﺜًﺎ ﻏُﺒْﺮًﺍ ﻣﻦ ﻛﻞ ﻓﺞ ﻋﻤﻴﻖ ، ﻳﺮﺟﻮﻥ ﺭﺣﻤﺘﻰ ﻭﻳﺨﺎﻓﻮﻥ ﻋﺬﺍﺑﻰ ﻭﻟﻢ ﻳﺮﻭﻧﻰ ، ﻓﻜﻴﻒ ﻟﻮ ﺭﺃﻭﻧﻰ ؟ ﻓﻠﻮ ﻛﺎﻥ ﻋﻠﻴﻚ ﻣﺜﻞ ﺭﻣﻞ ﻋﺎﻟﺞ ﺃﻭ ﻣﺜﻞ ﺃﻳﺎﻡ ﺍﻟﺪﻧﻴﺎ ﺃﻭ ﻣﺜﻞ ﻗﻄﺮ ﺍﻟﺴﻤﺎﺀ ﺫﻧﻮﺑﺎ ، ﻏﺴﻠﻬﺎ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻚ . ﻭﺃﻣﺎ ﺭﻣﻴﻚ ﺍﻟﺠﻤﺎﺭ ﻓﺈﻧﻪ ﻣﺬﺧﻮﺭ ﻟﻚ . ﻭﺃﻣﺎ ﺣﻠﻘﻚ ﺭﺃﺳﻚ ﻓﺈﻥ ﻟﻚ ﺑﻜﻞ ﺷﻌﺮﺓ ﺗﺴﻘﻂ ﺣﺴﻨﺔ ، ﻓﺈﺫﺍ ﻃﻔﺖ ﺑﺎﻟﺒﻴﺖ ﺧﺮﺟﺖ ﻣﻦ ﺫﻧﻮﺑﻚ ﻛﻴﻮﻡ ﻭﻟﺪﺗﻚ ﺃﻣﻚ » . ( ﺃﺧﺮﺟﻪ ﺍﻟﻄﺒﺮﺍﻧﻲ ) .
“আর তোমার ঘর থেকে সম্মানিত ঘর কা‘বা’র উদ্দেশ্যে তোমার বের হওয়া মানেই তোমার জন্য তোমার বাহনের প্রতিটি পদক্ষেপের বিনিময়ে একটি করে সাওয়াব লেখা হয় এবং তোমার একটি করে পাপ মোচন হয়। আর তুমি যখন ‘আরাফাতের ময়দানে অবস্থান কর, তখন আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন, তারপর তিনি তাদেরকে নিয়ে ফিরিশতাদের সাথে গর্ব করেন এবং বলেন: আমার বান্দাগণ আমার কাছে আউলা কেশে ধূলিমলিন অবস্থায় দূর-দূরান্তের পথ অতিক্রম করে এসেছে আমার রহমতের আশায় এবং আমার শাস্তির ভয়ে, অথচ তারা আমাকে দেখেনি; সুতরাং তারা যদি আমাকে দেখত, তাহলে কেমন জানি হত? অতএব, যদি তোমার অপরাধ বালির স্তুপের মত হয় অথবা দুনিয়ার দিনসমূহের সমান হয় অথবা বৃষ্টির ফোটা পরিমাণ হয়, তবে তিনি তোমার সেই অপরাধ ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করে দিবেন। আর তোমার কঙ্কর নিক্ষেপ তোমার জন্য (সাওয়াব হিসেবে) সঞ্চিত থাকবে। আর তোমার মাথা মুণ্ডনের ফলে তোমার জন্য (মাটিতে) পতিত প্রতিটি চুলের বিনিময়ে একটি করে সাওয়াবের ব্যবস্থা থাকবে। অতঃপর তুমি যখন বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করবে, তখন তুমি তোমার গুনাহসমূহ থেকে ঐ দিনের মত পবিত্র হয়ে বেরিয়ে আসবে, যেদিন তোমার মা তোমাকে (নিষ্পাপ অবস্থায়) প্রসব করেছে।”[74] * * *
৮. যাকাতের অধ্যায়
৮. ১. সাদকা করা: আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿ ﺇِﻥ ﺗُﺒۡﺪُﻭﺍْ ﭐﻟﺼَّﺪَﻗَٰﺖِ ﻓَﻨِﻌِﻤَّﺎ ﻫِﻲَۖ ﻭَﺇِﻥ ﺗُﺨۡﻔُﻮﻫَﺎ ﻭَﺗُﺆۡﺗُﻮﻫَﺎ ﭐﻟۡﻔُﻘَﺮَﺍٓﺀَ ﻓَﻬُﻮَ ﺧَﻴۡﺮٞ ﻟَّﻜُﻢۡۚ ﻭَﻳُﻜَﻔِّﺮُ ﻋَﻨﻜُﻢ ﻣِّﻦ ﺳَﻴَِّٔﺎﺗِﻜُﻢۡۗ ﻭَﭐﻟﻠَّﻪُ ﺑِﻤَﺎ ﺗَﻌۡﻤَﻠُﻮﻥَ ﺧَﺒِﻴﺮٞ ٢٧١ ﴾ [ ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ : ٢٧١ ]
“তোমরা যদি প্রকাশ্যে দান কর, তবে তা ভাল; আর যদি গোপনে কর এবং অভাবগ্রস্তকে দাও, তা তোমাদের জন্য আরো ভাল; এবং এতে তিনি তোমাদের জন্য কিছু পাপ মোচন করবেন। আর তোমরা যে আমল কর আল্লাহ্ সে সম্পর্কে সম্মক অবহিত।”[75]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ ﺇِﻥ ﺗُﻘۡﺮِﺿُﻮﺍْ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﻗَﺮۡﺿًﺎ ﺣَﺴَﻨٗﺎ ﻳُﻀَٰﻌِﻔۡﻪُ ﻟَﻜُﻢۡ ﻭَﻳَﻐۡﻔِﺮۡ ﻟَﻜُﻢۡۚ ﻭَﭐﻟﻠَّﻪُ ﺷَﻜُﻮﺭٌ ﺣَﻠِﻴﻢٌ ١٧ ﴾ [ ﺍﻟﺘﻐﺎﺑﻦ : ١٧ ]
“যদি তোমরা আল্লাহকে উত্তম ঋণ দান কর, তাহলে তিনি তোমাদের জন্য তা বহু গুণ বৃদ্ধি করবেন এবং তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। আর আল্লাহ্ গুণগ্রাহী, পরম সহিষ্ণু।”[76] * * *
৯. ইসলাম নির্ধারিত শাস্তির অধ্যায়
৯. ১. শরী‘য়ত কর্তৃক নির্ধারিত শাস্তি প্রয়োগ:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« ﺃﻳﻤﺎ ﻋﺒﺪ ﺃﺻﺎﺏ ﺷﻴﺌﺎ ﻣﻤﺎ ﻧﻬﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ , ﺛﻢ ﺃﻗﻴﻢ ﻋﻠﻴﻪ ﺣﺪﻩ , ﻛُﻔِّﺮ ﻋﻨﻪ ﺫﻟﻚ ﺍﻟﺬﻧﺐُ » . ( ﺃﺧﺮﺟﻪ ﺍﻟﺤﺎﻛﻢ ﻭ ﺍﻟﺪﺍﺭﻣﻲ ﻭ ﺃﺣﻤﺪ ) .
“যে কোনো বান্দা আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক নিষিদ্ধ করা হয়েছে এমন কোনো অপরাধের সাথে জড়িত হয়ে যায়, অতঃপর তার উপর শরী‘য়ত কর্তৃক নির্ধারিত শাস্তি প্রয়োগ করা হয়, এর ফলে তার অপরাধ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।”[77] * * *
১০. যিকিরের অধ্যায়
১০. ১. আল্লাহর যিকির করা:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« ﻣَﺎ ﻣِﻦْ ﻗَﻮْﻡٍ ﺍﺟْﺘَﻤَﻌُﻮﺍ ﻳَﺬْﻛُﺮُﻭﻥَ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻟَﺎ ﻳُﺮِﻳﺪُﻭﻥَ ﺑِﺬَﻟِﻚَ ﺇِﻟَّﺎ ﻭَﺟْﻬَﻪُ ﺇِﻟَّﺎ ﻧَﺎﺩَﺍﻫُﻢْ ﻣُﻨَﺎﺩٍ ﻣِﻦْ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﺀِ : ﺃَﻥْ ﻗُﻮﻣُﻮﺍ ﻣَﻐْﻔُﻮﺭًﺍ ﻟَﻜُﻢْ ﻗَﺪْ ﺑُﺪِّﻟَﺖْ ﺳَﻴِّﺌَﺎﺗُﻜُﻢْ ﺣَﺴَﻨَﺎﺕٍ » . ( ﺃﺧﺮﺟﻪ ﺃﺣﻤﺪ ) .
“যে কোনো সম্প্রদায় একত্রিত হয়ে আল্লাহর যিকির করবে এবং এর দ্বারা তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য হয় তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন, সেই সম্প্রদায়কে আসামানের কোনো এক ঘোষণাকারী ডেকে বলবে: তোমরা এমন অবস্থায় দাঁড়িয়ে যাও যে, তোমাদেরকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে এবং তোমাদের গুনাহসমূহকে পরিবর্তন করে সাওয়াবে পরিণত করা হয়েছে।”[78]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:
« ﺇِﻥَّ ﺳُﺒْﺤَﺎﻥَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺍﻟْﺤَﻤْﺪُ ﻟِﻠَّﻪِ ﻭَﻟَﺎ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻟَّﺎ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻭَﺍﻟﻠَّﻪُ ﺃَﻛْﺒَﺮُ ﺗَﻨْﻔُﺾُ ﺍﻟْﺨَﻄَﺎﻳَﺎ ﻛَﻤَﺎ ﺗَﻨْﻔُﺾُ ﺍﻟﺸَّﺠَﺮَﺓُ ﻭَﺭَﻗَﻬَﺎ » . ( ﺃﺧﺮﺟﻪ ﺃﺣﻤﺪ ﻭﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻯ ﻓﻰ ﺍﻷﺩﺏ ﺍﻟﻤﻔﺮﺩ ) .
“নিশ্চয় « ﺳُﺒْﺤَﺎﻥَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺍﻟْﺤَﻤْﺪُ ﻟِﻠَّﻪِ ﻭَﻟَﺎ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻟَّﺎ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻭَﺍﻟﻠَّﻪُ ﺃَﻛْﺒَﺮُ » (আল্লাহরই পবিত্রতা ঘোষণা করছি এবং সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য; আর আল্লাহ ছাড়া উপাসনার যোগ্য কোনো সত্য মা‘বুদ নেই; আর আল্লাহ মহান) — এর যিকির গুনাহসমূহকে এমনভাবে ঝেড়ে ফেলে দেয়, যেমনিভাবে গাছ তার পাতাসমূহকে ঝেড়ে ফেলে।”[79]
১০. ২. মাজলিসের কাফ্ফারা:
যখন মুসলিমগণের মধ্য থেকে কোনো একটি দল বা গোষ্ঠী একত্রিত হবে, তখন তাদের উপর আবশ্যকীয় কর্তব্য হল— তারা আল্লাহ তা‘আলার বেঁধে দেওয়া সীমারেখার মধ্যে থেকে তাদের মাজলিস পরিচালনা করবে এবং কোনো রকম সীমালংঘন করবে না, যেমন: খেল-তামাসা, গীবত তথা তাদের ভাইয়ের গোশ্ত দংশন, তাদের গোপনীয় বিষয় প্রকাশ এবং তাদের ভুল-ত্রুটি ও অপরাধের সমালোচনা ইত্যাদি তাদের আলোচনার বিষয় না হওয়া। বরং তাদের জন্য ওয়াজিব হল— সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করার ব্যাপারে পরস্পরকে সহযোগিতা করা, মানুষের মাঝে সংশোধন ও সংস্কারমূলক কাজ করা এবং আল্লাহ তা‘আলার কিতাব ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ নিয়ে শিক্ষামূলক আলোচনা করা। সুতরাং যে মুসলিমের লক্ষ্য হবে আল্লাহ ও পরকাল, এমন প্রত্যেক মুসলিমের কর্তব্য হল— তার দ্বারা অনুষ্ঠিত প্রত্যেক মাজলিসে এই বিষয়ে সতর্ক করা এবং আল্লাহর যিকির ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি সালাত ও সালাম পেশ করার ব্যাপারে কোনো রকম অমনোযোগী না হওয়া; নতুবা কিয়ামতের দিনে তার উপর নিঃসঙ্গতা, দুঃখ-কষ্ট ও অপমানজনক অবস্থা চেপে বসবে, যদিও সে জান্নাতে প্রবেশ করে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« ﻣَﺎ ﻣِﻦْ ﻗَﻮْﻡٍ ﺟَﻠَﺴُﻮﺍ ﻣَﺠْﻠِﺴًﺎ ﻟَﻢْ ﻳَﺬْﻛُﺮُﻭﺍ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻓِﻴﻪِ ﺇِﻟَّﺎ ﺭَﺃَﻭْﻩُ ﺣَﺴْﺮَﺓً ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ » . ( ﺃﺧﺮﺟﻪ ﺃﺣﻤﺪ ) .
“যে কোনো সম্প্রদায় কোনো মাজলিসে বসল, অথচ তারা সেখানে আল্লাহর যিকির করল না, কিয়ামতের দিন তারা তাকে দুঃখ-কষ্ট হিসেবে দেখবে।”[80] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:
« ﻣَﺎ ﻗَﻌَﺪَ ﻗَﻮْﻡٌ ﻣَﻘْﻌَﺪًﺍ ﻟَﻢْ ﻳَﺬْﻛُﺮُﻭﺍ ﺍَﻟﻠَّﻪَ ﻓﻴﻪِ , ﻭَﻟَﻢْ ﻳُﺼَﻠُّﻮﺍ ﻋَﻠَﻰ ﺍَﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺇِﻟَّﺎ ﻛَﺎﻥَ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﺣَﺴْﺮَﺓً ﻳَﻮْﻡَ ﺍَﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ , ﻭَﺇِﻥْ ﺩَﺧَﻠُﻮﺍ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔَ » . ( ﺃﺧﺮﺟﻪ ﺃﺣﻤﺪ ﻭ ﺍﻟﺤﺎﻛﻢ ) .
“কোন সম্প্রদায় কোনো আসর বা মাজলিসে বসল, অথচ তারা সেখানে আল্লাহর যিকির করল না এবং নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দুরূদ পাঠ করল না, কিয়ামতের দিনে তাদের উপর দুঃখ-কষ্ট চেপে বসবে, যদিও তারা জান্নাতে প্রবেশ করে।”[81] কিন্তু ভুলে যাওয়াটাই মানবজাতির জন্য বিপদজনক এবং তাদের প্রয়োজনীয় বস্তুর ঘাটতির কারণ। সুতরাং যখন মুসলিম ব্যক্তি মাজলিসে তার আবশ্যকীয় কর্তব্য পালনে ব্যর্থ বা অক্ষম হবে, তখন সেখান থেকে উঠে আসার পূর্বে সে যেন মাজলিসের কাফ্ফারা আদায় করতে ভুলে না যায়, যেমনটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিক্ষা দিয়েছেন, তিনি বলেন:
« ﻣﻦ ﻗﺎﻝ : ﺳﺒﺤﺎﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺑﺤﻤﺪﻩ ﺳﺒﺤﺎﻧﻚ ﺍﻟﻠﻬﻢ ﻭﺑﺤﻤﺪﻙ ﺃﺷﻬﺪ ﺃﻥ ﻻ ﺇﻟﻪ ﺇﻻ ﺃﻧﺖ ﺃﺳﺘﻐﻔﺮﻙ ﻭﺃﺗﻮﺏ ﺇﻟﻴﻚ ، ﻓﻘﺎﻟﻬﺎ ﻓﻲ ﻣﺠﻠﺲ ﺫﻛﺮ ﻛﺎﻧﺖ ﻛﺎﻟﻄﺎﺑﻊ ﻳﻄﺒﻊ ﻋﻠﻴﻪ ، ﻭﻣﻦ ﻗﺎﻟﻬﺎ ﻓﻲ ﻣﺠﻠﺲ ﻟﻐﻮ ﻛﺎﻧﺖ ﻛﻔﺎﺭﺓ ﻟﻪ » . ( ﺃﺧﺮﺟﻪ ﺍﻟﺤﺎﻛﻢ ﻭ ﺍﻟﻄﺒﺮﺍﻧﻲ ) .
“যে ব্যক্তি যিকিরের মাজলিসে বলে: « ﺳﺒﺤﺎﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺑﺤﻤﺪﻩ ﺳﺒﺤﺎﻧﻚ ﺍﻟﻠﻬﻢ ﻭﺑﺤﻤﺪﻙ ﺃﺷﻬﺪ ﺃﻥ ﻻ ﺇﻟﻪ ﺇﻻ ﺃﻧﺖ ﺃﺳﺘﻐﻔﺮﻙ ﻭﺃﺗﻮﺏ ﺇﻟﻴﻚ » (আল্লাহরই পবিত্রতা ঘোষণা করছি এবং তাঁর প্রশংসা করছি; হে আল্লাহ! আপনারই পবিত্রতা ঘোষণা করছি এবং আপনার প্রশংসা করছি। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ (মা‘বুদ) নেই, আমি আপনার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তাওবা করছি), তখন তা হবে মোহরাঙ্কিত বস্তুর মত (টিকসই); আর যে ব্যক্তি তা অর্থহীন মাজলিসে বলবে, তখন তা তার জন্য কাফ্ফারা হয়ে যাবে।”[82] * * *
উপসংহার
“আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে উত্তম পুরষ্কার (জান্নাত) ও বাড়তি (আল্লাহর দীদার) প্রদান করুন” হে আল্লাহর বান্দা, হে মুসলিম ভাই! জেনে রাখুন যে, আল-কুরআনের এসব আয়াত ও নবীর হাদীসে পাপরাশি ক্ষমার সাথে সংশ্লিষ্ট আমলের ব্যাপারে ব্যাপক উৎসাহ দিয়েছে, কিন্তু বান্দার জন্য উচিৎ হলো তার উপর নির্ভরশীল হয়ে বসে না থাকা। এমন যেন না হয় যে গুনাহ ও মন্দ কাজে জড়িয়ে যাওয়ার ব্যাপারে নিজের নফসের লাগামকে ছেড়ে দেবে এবং এই বাজে ধারণা করবে যে, সে গুনাহ করলেও যখনই এ জাতীয় আমল করবে তখনই তা তার সকল গুনাহ মাফের নিশ্চয়তা বিধান করবে। নিশ্চয়ই এ ধরনের কল্পনা চরম মূর্খতা ও বোকামির বহিঃপ্রকাশ; কারণ, হে প্রতারিত ব্যক্তি! তুমি কিভাবে জানতে পারবে যে, আল্লাহ তা‘আলা তোমার আমল কবুল করেছেন এবং তোমার গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন? আল্লাহ সুবহানহু ওয়া তা‘আলা বলেন:
﴿ ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﻳَﺘَﻘَﺒَّﻞُ ﭐﻟﻠَّﻪُ ﻣِﻦَ ﭐﻟۡﻤُﺘَّﻘِﻴﻦَ ٢٧ ﴾ [ ﺍﻟﻤﺎﺋﺪﺓ : ٢٧ ]
“আল্লাহ তো কেবল মুত্তাকীদের পক্ষ হতে কবুল করেন।”[83] ঐসব মুত্তাকী বান্দগণ সৎকাজ করে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করার ব্যাপারে যথাসাধ্য চেষ্টা করে এবং পাপকাজ থেকে বিরত থাকে, আর সাথে সাথে এই আশঙ্কাও করে যে, তাদের আমলসমূহ বাতিল করে দিয়ে তাদের কাছে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয় কিনা এবং তাদের মুখের উপর ছুড়ে মারা হয় কিনা:
﴿ ﺇِﻥَّ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻫُﻢ ﻣِّﻦۡ ﺧَﺸۡﻴَﺔِ ﺭَﺑِّﻬِﻢ ﻣُّﺸۡﻔِﻘُﻮﻥَ ٥٧ ﻭَﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻫُﻢ ﺑَِٔﺎﻳَٰﺖِ ﺭَﺑِّﻬِﻢۡ ﻳُﺆۡﻣِﻨُﻮﻥَ ٥٨ ﻭَﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻫُﻢ ﺑِﺮَﺑِّﻬِﻢۡ ﻟَﺎ ﻳُﺸۡﺮِﻛُﻮﻥَ ٥٩ ﻭَﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳُﺆۡﺗُﻮﻥَ ﻣَﺎٓ ﺀَﺍﺗَﻮﺍْ ﻭَّﻗُﻠُﻮﺑُﻬُﻢۡ ﻭَﺟِﻠَﺔٌ ﺃَﻧَّﻬُﻢۡ ﺇِﻟَﻰٰ ﺭَﺑِّﻬِﻢۡ ﺭَٰﺟِﻌُﻮﻥَ ٦٠ ﴾ [ ﺍﻟﻤﺆﻣﻨﻮﻥ : ٥٧، ٦٠ ]
“নিশ্চয় যারা তাদের রব-এর ভয়ে সন্ত্রস্ত, আর যারা তাদের রব-এর নিদর্শনাবলীতে ঈমান আনে, আর যারা তাদের রব-এর সাথে শির্ক করে না, আর যারা যা দেওয়ার তা দেয় ভীত-কম্পিত হৃদয়ে, এজন্য যে তারা তাদের রব-এর কাছে প্রত্যাবর্তনকারী।”[84] হ্যাঁ, এরাই হলেন সত্যিকার মুমিন।[85]
আর এই মহান অর্থের দিকেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘উসমান ইবন ‘আফ্ফান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত হাদিসে ইঙ্গিত করেছেন, যাতে তিনি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের অযুর পদ্ধতি বর্ণনা করেছেন; অতঃপর তিনি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন:
« ﻣَﻦْ ﺗَﻮَﺿَّﺄَ ﻣِﺜْﻞَ ﻫَﺬَﺍ ﺍﻟْﻮُﺿُﻮﺀِ , ﺛُﻢَّ ﺃَﺗَﻰ ﺍﻟْﻤَﺴْﺠِﺪَ , ﻓَﺮَﻛَﻊَ ﺭَﻛْﻌَﺘَﻴْﻦِ , ﺛﻢ ﺟﻠﺲ , ﻏُﻔِﺮَ ﻟَﻪُ ﻣَﺎ ﺗَﻘَﺪَّﻡَ ﻣِﻦْ ﺫَﻧْﺒِﻪِ , ﻗَﺎﻝَ ﻭَﻗَﺎﻝَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ : « ﻟَﺎ ﺗَﻐْﺘَﺮُّﻭﺍ » . ( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ) .
“যে ব্যক্তি এই অযূর ন্যায় অযূ করবে, অতঃপর মাসজিদে এসে দুই রাকা‘য়াত সালাত করবে, তার অতীতের সব গুনাহ্ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। তিনি বললেন: নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন যে, তোমরা ধোঁকায় পড়ো না।”[86] হে আমার ভাই! আপনি আরও জেনে রাখবেন যে, যেসব অপরাধ জনগণের হক বা অধিকারের সাথে সংশ্লিষ্ট, এসব আয়াত ও হাদিস তা অন্তর্ভুক্ত করে না; বরং ওয়াজিব হলো ঐ হক বা অধিকার তার মালিকের নিকট ফিরেয়ে দেওয়া; তার দলীল হলো ঐ হাদিস, যা শহীদের ঋণ ব্যতীত সকল গুনাহ্ মাফের কথা বর্ণনা করে।[87] সুতরাং হে আমার ভাই! সতর্ক ও সাবধান হও— আল্লাহ তোমাকে তাঁর পক্ষ থেকে প্রাণশক্তির মাধ্যমে সাহায্য করবেন। আর জেনে রাখবে যে, শয়তানের পথ অনেকগুলো এবং তার পাতানো ফাঁদগুলো অনেক বড়; সুতরাং এই দরজা দিয়ে সে তোমার কাছে অনুপ্রবেশ করবে— সে ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করবে।
« ﺳﺒﺤﺎﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺑﺤﻤﺪﻩ ﺳﺒﺤﺎﻧﻚ ﺍﻟﻠﻬﻢ ﻭﺑﺤﻤﺪﻙ ﺃﺷﻬﺪ ﺃﻥ ﻻ ﺇﻟﻪ ﺇﻻ ﺃﻧﺖ ﺃﺳﺘﻐﻔﺮﻙ ﻭﺃﺗﻮﺏ ﺇﻟﻴﻚ » .
(আল্লাহরই পবিত্রতা ঘোষণা করছি এবং তাঁর প্রশংসা করছি; হে আল্লাহ! আপনারই পবিত্রতা ঘোষণা করছি এবং আপনার প্রশংসা করছি। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ (মা‘বুদ) নেই, আমি আপনার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তাওবা করছি)। * * *
বিষয়সমূহের সূচীপত্র
বিষয়সমূহ
* নবুয়্যাতের প্রদীপ থেকে
* ভূমিকা
* পাপ মোচনকারী আমল
১. ঈমানের অধ্যায়
১. ১. ইসলাম
১. ২. রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ
২. চরিত্রের অধ্যায়
২. ১. বিশুদ্ধ তাওবা
২. ২. উদারতা প্রদর্শন
২. ৩. মন্দকাজের পরে ভালকাজ করা
২. ৪. সালাম দেওয়া ও উত্তম কথা বলা
২. ৫. মুসাফাহা বা করমর্দন
২. ৬. জীব-জন্তুর প্রতি দয়া ও কোমল আচরণ করা
২. ৭. কবীরা গুনাহ্ ও ধ্বংসাত্মক অপরাধ থেকে বিরত থাকা
২. ৮. বিপদ-মুসিবত
৩. পবিত্রতার অধ্যায়
৩. ১. অযু
৪. সালাতের অধ্যায়
৪. ১. আযান
৪. ২. সালাত
৪. ৩. এক মা‘বুদের উদ্দেশ্যে সাজদা করা
৪. ৪. জামা‘য়াতে সালাত আদায় করার জন্য আল্লাহর ঘরসমূহের উদ্দেশ্যে পথ চলা
৪. ৫. আমীন বলা
৪. ৬. জুমু‘আ’র সালাত
৪. ৭. কিয়ামুল লাইল (রাতের বেলায় নফল ইবাদত)
৪. ৮. রমযান মাসে কিয়ামুল লাইল বা রাত জেগে নফল ইবাদত
৪. ৯. সালাতুত্ তাসবীহ
৪. ১০. পবিত্র মাসজিদে আকসায় সালাত আদায় করা
৫. জিহাদের অধ্যায়
৫. ১. আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হওয়া
৬. সাওমের অধ্যায়
৬. ১. রমযান মাসে সাওম পালন
৬. ২. ‘আরাফা ও আশুরার দিনে সাওম পালন
৭. হাজ্জের অধ্যায়
৭. ১. হাজ্জ ও ওমরা
৮. যাকাতের অধ্যায়
৮. ১. সাদকা করা
৯. ইসলাম নির্ধারিত শাস্তির অধ্যায়
৯. ১. শরী‘য়ত নির্ধারিত শাস্তি প্রয়োগ
১০. যিকিরের অধ্যায়
১০. ১. আল্লাহর যিকির করা
১০. ২. মাজলিসের কাফ্ফারা * উপসংহার * বিষয়সমূহের সূচীপত্র * * * _______________________________________________________________________________________
[1] সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৫৩
[2] তিরমিযী, হাদিস নং- ১৯৮৭, তিনি হাদিসটিকে হাসান-সহীহ বলেছেন।
[3] সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ৭০
[4] সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২১
[5] সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৯
[6] সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৮৫
[7] সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ৩৮ - ৩৯
[8] ইমাম বুখারী রহ. হাদিসটি ‘তা‘লিকাত’ এর মধ্যে বর্ণনা করেছেন: (১/৯৭— ফতহুল বারী); তবে « ﻛَﺘَﺐَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻟﻪ ﻛﻞ ﺣﺴﻨﺔ ﻛﺎﻥ ﺃَﺯْﻟَﻔَﻬَﺎ » (আল্লাহ তা‘আলা তার আগের সকল ভাল কাজকে ভাল কাজ বলে গণ্য করেন)— এই কথাটি তার বর্ণনার মধ্যে নেই। আর ইমাম নাসায়ী রহ. হাদিসটি সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন এবং তাঁর বর্ণনায় তিনি « ﻛَﺘَﺐَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻟﻪ ﻛﻞ ﺣﺴﻨﺔ ﻛﺎﻥ ﺃَﺯْﻟَﻔَﻬَﺎ »— এই কথাটি অন্তর্ভুক্ত করেছেন। হাফেয ইবনু হাজার ‘আসকালানী তাঁর ‘ফতহুল বারী’ (১/৯৯) নামক গ্রন্থে বলেন: “ইমাম বুখারী রহ. এর বর্ণনা যা বাদ গিয়েছে, তা বাকি সকল বর্ণনার মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে; আর তা হল ইসলাম গ্রহণ করার পূর্বে করা সকল ভাল কাজকে ভাল কাজ বলে গ্রহণ করার বিষয়টি।”
[9] দেখুন: আমার প্রবন্ধ ‘মুবতিলাতুল আ‘মাল’ ( ﻣﺒﻄﻼﺕ ﺍﻷﻋﻤﺎﻝ ), মাসআলা (প্রশ্ন) নং- ১; তাতে এই বিধান প্রসঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে; যা দারু ইবনিল কায়্যিম— দাম্মাম থেকে প্রকাশিত।
[10] সূরা আল-মুলক, আয়াত: ১০ - ১৪
[11] অর্থাৎ তিনটি পর্যায় মানে তিনটি অবস্থা অতিক্রম করেছি; যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ ﻟَﺘَﺮۡﻛَﺒُﻦَّ ﻃَﺒَﻘًﺎ ﻋَﻦ ﻃَﺒَﻖٖ ١٩ ﴾ [ ﺍﻻﻧﺸﻘﺎﻕ : ١٩ ]
“অবশ্যই তোমরা এক স্তর থেকে অন্য স্তরে আরোহণ করবে।” - (সূরা আল-ইনশিকাক, আয়াত: ১৯)।
[12] মুসলিম, হাদিস নং- ৩৩৬
[13] সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৬৪
[14] সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৫৮
[15] সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৮০
[16] সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৫৯
[17] সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৩২
[18] সূরা আন-নূর, আয়াত: ৫৬
[19] সূরা আত-তাওবা, আয়াত: ৭১
[20] সূরা আন-নূর, আয়াত: ৫৪
[21] সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৩১
[22] সূরা আল-আহকাফ, আয়াত: ৩১
[23] সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৯৩
[24] দেখুন: আমার প্রবন্ধ" ﺍﻟﺘﻮﺑﺔ ﺍﻟﻨﺼﻮﺡ ﻓﻲ ﺿﻮﺀ ﺍﻟﻘﺮﺁﻥ ﺍﻟﻜﺮﻳﻢ ﻭ ﺍﻷﺣﺎﺩﻳﺚ ﺍﻟﺼﺤﻴﺤﺔ " (আল-কুরআনুল কারীম ও সহীহ হাদিসের আলোকে খাঁটি তাওবা); তাতে অনুসন্ধানী ও অতিরিক্ত জানতে আগ্রহী ব্যক্তির জন্য কাম্যবস্তু ও কাঙ্খিত বিষয়ের নির্দেশনা রয়েছে।
[25] সূরা আত-তাহরীম আয়াত: ৮
[26] ইবনু মাজাহ, হাদিস নং- ৪২৫০ এবং অন্যান্য মুহাদ্দিসগণ হাদিসটি আবদুল্লাহ আবন মাস‘উদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন। আমি বলি: হাদিসটি হাসান পর্যায়ের।
[27] দেখুন: আমার প্রবন্ধ" ﺍﻟﺴﻤﺎﺣﺔ ﻓﻲ ﺿﻮﺀ ﺍﻟﻘﺮﺁﻥ ﺍﻟﻜﺮﻳﻢ ﻭ ﺍﻟﺴﻨﺔ ﺍﻟﻤﻄﻬﺮﺓ " (আল-কুরআনুল কারীম ও পবিত্র সুন্নাহ’র আলোকে উদারতা); তাতে আরও বিস্তারিত ও অতিরিক্ত বিবরণ রয়েছে।
[28] সূরা আন-নূর, আয়াত: ২২
[29] বুখারী, হাদিস নং- ১৯৭১; মুসলিম, হাদিস নং- ৪০৭৬ আমি বলি: হাদিসটি হাসান পর্যায়ের।
[30] সূরা হুদ, আয়াত: ১১৪
[31] তিরমিযী, হাদিস নং- ১৯৮৭; হাদিসটি অন্যান্য হাদিসের সমর্থনের কারণে সহীহ, যেমনটি আমি ‘তাখরীজু আহাদিসিল অসিয়্যাতিস সুগরা’ ( ﺗﺨﺮﻳﺞ ﺃﺣﺎﺩﻳﺚ ﺍﻟﻮﺻﻴﺔ ﺍﻟﺼﻐﺮﻯ ) নামক গ্রন্থে বর্ণনা করেছি, হাদিস নং- ৩ আমি বলি: হাদিসটি হাসান পর্যায়ের।
[32] খারায়েতী, ‘মাকারিমুল আখলাক’ ( ﻣﻜﺎﺭﻡ ﺍﻷﺧﻼﻕ ): পৃ. ২৩; আর একই সনদে হাদিসটি বর্ণনা করেন আল-কাদা‘য়ী, ‘মুসানদু শিহাব’ ( ﻣﺴﻨﺪ ﺍﻟﺸﻬﺎﺏ ), হাদিস নং- ১১৪০, তিনি বলেন: আমাদের নিকট হাদিস বর্ণনা করেছেন সালেহ ইবন আহমাদ ইবন হাম্বল, তিনি বলেন: আমাদের নিকট হাদিস বর্ণনা করেছেন আমার পিতা, তিনি বলেন: আমাদেরকে ইবনুল আশজা‘য়ী একখানা কিতাব দিয়েছেন, যাতে সুফিয়ান থেকে বর্ণিত হাদিস বর্ণিত আছে, তিনি মিকদাম ইবন শুরাইহ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি তার পিতা থেকে— তার পিতা তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি বললাম: হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম! কোন আমল আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে? তখন তিনি বললেন: অতঃপর তিনি উপরিউক্ত হাদিসটি উল্লেখ করেন। আর হাদিসটি সহীহ; আরও দেখুন: ‘সিলসিলাতুল আহাদিসিস সহীহাহ’ ( ﺳﻠﺴﻠﺔ ﺍﻷﺣﺎﺩﻳﺚ ﺍﻟﺼﺤﻴﺤﺔ ), হাদিস নং- ১০৩৫
[33] আবূ দাউদ, হাদিস নং- ৫২১২; তিরিমিযী, হাদিস নং- ২৭২৭; ইবনু মাজাহ, হাদিস নং- ৩৭০৩; আহমদ, হাদিস নং- ৪/২৮৯ ও ৩০৩ এবং তাঁরা ভিন্ন আরও অনেকে হাদিসটি বারা ইবন ‘আযেব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন। আর হাদিসের সনদটি দুর্বল; কেননা, সনদের মধ্যে আবূ ইসহাক নামে ‘মুদাল্লিস’ বর্ণনাকারী রয়েছে। তবে এই হাদিসের সমর্থনে আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে হাদিস বর্ণিত আছে, যা ইমাম আহমাদ রহ. ‘হাসান’ সনদে বর্ণনা করেছেন, হাদিস নং- ৩/১৪২; মোটকথা অন্য হাদিসের সমর্থনের কারণে হাদিসটি সহীহ, আল্লাহ তা‘আলাই সব চেয়ে ভাল জানেন।
[34] বুখারী, হাদিস নং- ৫৬৬৩; মুসলিম, হাদিস নং- ৫৯৯৬; আবূ দাউদ, হাদিস নং- ২৫৫০; আহমদ, হাদিস নং- ২/৩৭৫ ও ৫১৭ এবং তাঁরা ভিন্ন আরও অনেকে হাদিসটি আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন।
[35] সূরা আন-নাজম, আয়াত: ৩১ - ৩২
[36] সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৩১
[37] তিরমিযী, হাদিস নং- ২৩৯৮; ইবনু মাজাহ, হাদিস নং- ৪০২৩; দারেমী: ২/৩২০; ইবনু হিব্বান: (২৯৮ ও ২৯৯— মাওয়ারিদ); হাকেম: (১/৪০ ও ৪১); আহমাদ: (১/১৭২, ১৭৪, ১৮০ ও ১৮৫) এবং অন্যান্য মুহাদ্দিস প্রমুখ হাদিসটি দু’টি সনদে সা‘য়াদ ইবন আবি ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে ‘মারফু’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। আমি বলি: হাদিসটি সহীহ এবং এর সমর্থনে আরও একটি হাদিস বর্ণিত আছে, যা ইবনু মাজাহ: (৪০২৪), হাকেম: (৪/৩০৭) এবং অন্যান্য মুহাদ্দিস প্রমুখ আবূ সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন; হাকেম রহ. বলেন: ইমাম মুসলিম রহ. এর শর্তে হাদিসটি সহীহ এবং ইমাম যাহাবী রহ.ও হাদিসটিকে সহীহ বলেন; আমি বলি: হাদিসটি সহীহ, তাঁর উভয়ে যেমনটি বলেছেন।
[38] আহমাদ: (৩/১৪৮, ২৩৮, ২৫৮); তিনি হাদিসটি হাম্মাদ ইবন সালামা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি সিনান ইবন রবি‘আ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন। আমি বলি: এই সনদটি হাসান পর্যায়ের— ইনশাআল্লাহ; কেননা, সিনান ইবন রবি‘আ সত্যবাদী।
[39] আহমাদ: (৪/১২৩); আমি বলি: এই সনদটি হাসান পর্যায়ের।
[40] মুসলিম, হাদিস নং- ৬০১
[41] মুসলিম, হাদিস নং- ৬০০
[42] আবূ দাউদ, হাদিস নং- ৫৬৪; নাসায়ী, হাদিস নং- ৮৫৬; আর হাদিসটি সহীহ।
[43] নাসায়ী, হাদিস নং- ১৫১; হাদিসটি সহীহ।
[44] নাসায়ী: (১/৯০ - ৯১); ইবনু মাজাহ, হাদিস নং- ১৩৯৬; ইবনু হিব্বান, হাদিস নং- ১০৩৯ এবং আরও অন্যান্য মুহাদ্দিস প্রমুখ হাদিসটি বর্ণনা করেছেন; আমি বলি: হাদিসটি ‘হাসান’ পর্যায়ের ইনশাআল্লাহ।
[45] বুখারী, হাদিস নং- ১৫৮ ও ১৬২; মুসলিম, হাদিস নং- ৫৬১
[46] হাদিসটি সহীহ, যা আবূ হুরায়রা, বারা ইবন ‘আযেব ও আবদুল্লাহ ইবন ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম থেকে বর্ণিত হয়েছে। * আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত হাদিসটির কয়েকটি সনদ রয়েছে: প্রথমত: শু‘বা রহ. মূসা ইবন আবি ‘উসমান রহ. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: আমি আবূ ইয়াহইয়াকে তাঁর (আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ) থেকে হাদিস বর্ণনা করতে শুনেছি। — [ আহমাদ: (২/৪২৯ ও ৪৫৮); ইবনু হিব্বান: (১৬৬৪); আবূ দাউদ আত-তায়ালাসী: (১/৭৯ — ‘মিনহাতুল মা‘বুদ’); বায়হাকী: (১/৩৯৭) এবং আরও অনেকে]। আমি বলি: এই সনদটি দুর্বল, মূসা ইবন আবি ‘উসমান আল-কুফী হলেন ‘মাকবুল’ (গ্রহণযোগ্য) বর্ণনাকারী; আর আবূ ইয়াহইয়া হলেন সাম‘আন আল-সলামী আল-কুফী এবং তিনিও ‘মাকবুল’ (গ্রহণযোগ্য) বর্ণনাকারী। দ্বিতীয়ত: শু‘বা রহ. মূসা ইবন আবি ‘উসমান রহ. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: আমি আবূ ‘উসমানকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন: আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বলতে শুনেছি এবং তিনি হাদিসের বাকি অংশ উল্লেখ করলেন। — [ আহমাদ: (১/৪১১) ]। আমি বলি: এই সনদটি দুর্বল; কারণ, মূসা ইবন আবি ‘উসমান হলেন আত-তুব্বান, তিনি তার পিতা থেকে হাদিসটি বর্ণনা করেন এবং তিনি প্রথম তথা মূসা ইবন আবি ‘উসমান আল-কুফী নন; কেননা, ইবনু আবি হাতেম তাদের মধ্যে পার্থক্য করেছেন এবং হাফেয ইবনু হাজার ‘আসকালানী তা স্বীকার করেছেন, সুতরাং তাদের কথাটি গ্রহণযোগ্য কথা। আর আবূ ‘উসমান হলেন ‘ইমরান আত-তুব্বান; আর মন বলে যে, তিনি সত্যবাদী-বিশ্বস্ত— আর আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানেন। তৃতীয়ত: মা‘মার-এর সনদে হাদিসটি বর্ণিত হয়েছে, তিনি মানসুর থেকে বর্ণনা করেনে, তিনি ‘ইবাদ ইবন উনাইস থেকে বর্ণনা করেন এবং তিনি তাঁর (আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ) থেকে হাদিস বর্ণনা করেন।— [ আহমাদ: (২/২৬৬) ]। আমি বলি: এই সনদটিন মধ্যে দুর্বলতা রয়েছে। চতুর্থত: মুজাহিদ রহ. এর সনদেও হাদিসটি তাঁর (আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ) থেকে হাদিস বর্ণিত হয়েছে।— [ বায়হাকী: (২/৪৩১) ]। পঞ্চমত: আবূ সালেহ রহ. এর সনদেও হাদিসটি তাঁর (আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ) থেকে হাদিস বর্ণিত হয়েছে।— [ বায়হাকী: (২/৪৩১) ]। সুতরাং এসব সনদের সামগ্রিক বিবেচনায় আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত হাদিসটি ‘হাসান’ পর্যায়ের ইনশাল্লাহ। * আর বারা ইবন ‘আযেব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত হাদিসটি ইমাম আহমাদ রহ. (৪/২৮৪) মু‘আয ইবন হিশাম রহ. এর সনদে বর্ণনা করেছেন, তিনি তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি কাতাদা রহ. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি আবূ ইসহাক আল-কুফী রহ. থেকে বর্ণনা করেন এবং তিনি তাঁর (বারা ইবন ‘আযেব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বর্ণনা করেন। আমি বলি: এই সনদটিন মধ্যে দুর্বলতা রয়েছে। * আর আবদুল্লাহ ইবন ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা কর্তৃক বর্ণিত হাদিসটি ইমাম বায়হাকী রহ. (১/৪২৩) আ‘মাশ রহ. এর সনদে মুজাহিদ রহ. থেকে বর্ণনা করেন। আমি বলি: এই সনদটি সহীহ এবং এই কারণে হাদিসটি সহীহ বলে গণ্য।
[47] বুখারী, হাদিস নং- ৫০৫; মুসলিম, হাদিস নং- ১৫৫৪
[48] মুসলিম, হাদিস নং- ৫৭২; তিরমিযী, হাদিস নং- ২১৪
[49] ইমাম আহমাদ রহ. হাদিসটি বর্ণনা করেছেন এবং হাদিসের শব্দগুলো তাঁর: (৩/৪২৮); ইবনু সা‘য়াদ, ‘আত-ত্ববাকাত আল-কুবরা’: (৭/৫০৮)। ইবনু লাহি‘য়াহ’র সনদে হাদিসটি বর্ণিত, তিনি বলেন: আমাদের নিকট হারেস ইবন ইয়াযিদ তার উস্তাদ কাছীর আল-আ‘রাজ আস-সাদাফী থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন: আমি আবূ ফাতিমাকে (তিনি যুল ফাওয়ারী বলে পরিচিত) বলতে শুনেছি যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন এবং তিনি হাদিসটি উল্লেখ করনে। আমি বলি: এই সনদের বর্ণনাকারীগণ বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য; কেননা, ইবনু লাহি‘য়াহ হাদিস বর্ণনার বিষয়টি ‘হাদ্দাসানা’ স্পষ্ট করে বলেছেন; আর তার নিকট থেকে বর্ণনাকারী ইবনু সা‘য়াদ হলেন আবূ আবদির রহমান আল-মুকরী’, যিনি আবদুল্লাহ গ্রুপের অন্যতম একজন, তার থেকে যাদের বর্ণিত বর্ণনাসমূহ বিশুদ্ধ বলে স্বীকৃত। তবে কাছীর ইবন কুলাইব মিসরী অপরিচিত, যেমনটি ইমাম যাহাবী রহ. বলেছেন। আর হাদিসটি কাছীর ইবন মুর্রাহ-এর বর্ণনার কারণে ‘মাহফুয’, যেমনটি হাফেয ইবনু হাজার ‘আসকালানী রহ. ‘আত-তাহযীব’ গ্রন্থের মধ্যে বলেছেন। হাদিসটি ইমাম ইবনু মাজাহ রহ. বর্ণনা করেছেন, হাদিস নং- ১৪২২ এবং ইমাম নাসায়ী রহ. ‘আল-কুবরা’ নামক গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন: (৯/২৪০ — “তুহফাতুল আশরাফ”); তাঁরা তাঁর থেকে দু’টি সনদে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। আমি বলি: কাছীর ইবন মুর্রাহ আল-হাদরামী বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী; সুতরাং হাদিসটি সহীহ (আল-হামদুলিল্লাহ)। তাছাড়া হাদিসটির সমর্থনে সাওবান, আবূ দারদা ও ‘উবাদাতা ইবন সামিত রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম থেকে সহীহ হাদিস বর্ণিত হয়েছে।
[50] বুখারী, হাদিস নং- ৬২০ এবং হাদিসের শব্দগুলো ইমাম বুখারী রহ. এর; মুসলিম, হাদিস নং- ১৫৩৮ এবং তাঁরা উভয়ে হাদিসটি আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন।
[51] বুখারী, হাদিস নং- ৭৪৯ এবং হাদিসের শব্দগুলো ইমাম বুখারী রহ. এর; মুসলিম, হাদিস নং- ৯৪৭ এবং তাঁরা উভয়ে হাদিসটি আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন।
[52] নাসায়ী: (১/৯০ - ৯১); ইবনু মাজাহ, হাদিস নং- ১৩৯৬; ইবনু হিব্বান, হাদিস নং- ১০৩৯
[53] মুসলিম, হাদিস নং- ২০২৫; আবূ দাউদ, হাদিস নং- ৩৪৩; তিরিমযী, হাদিস নং- ৪৯৮; ইবনু মাজাহ, হাদিস নং- ১০৯০ এবং অন্যান্য মুহাদ্দিস প্রমুখ হাদিসটি আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন। আর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী: « ﻭَﺯِﻳَﺎﺩَﺓُ ﺛَﻼَﺛَﺔِ ﺃَﻳَّﺎﻡٍ » -এর অর্থ: সৎকাজের প্রতিদান হল তার দশ গুণ; সুতরাং এক জুমু‘আ থেকে আরেক জুমু‘আ পর্যন্ত হল সাত দিন এবং তার সাথে অতিরিক্ত তিন দিন মিলে মোট দশ দিন, আর আল্লাহ তা‘আলা যাকে ইচ্ছা তাঁর অনুগ্রহ দান করেন।
[54] সূরা আয-যারিয়াত, আয়াত: ১৫ - ১৮
[55] হাকেম (১/৩০৮), বায়হাকী (২/৫০২) ও অন্যান্য মুহাদ্দিস প্রমুখ হাদিসটি আবূ উমামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন। আমি বলি: হাদিসটির সনদের মধ্যে সামান্য দুর্বলতা রয়েছে, তবে হাদিসটি ‘হাসান’ পর্যায়ের, যেমনটি ব্যাখ্যা করেছেন আমাদের শাইখ আলবানী রহ., দেখুন: ইরওয়াউল গালীল ( ﺇﺭﻭﺍﺀ ﺍﻟﻐﻠﻴﻞ ): ৪৫২ আর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী: « ﻭَﺯِﻳَﺎﺩَﺓُ ﺛَﻼَﺛَﺔِ ﺃَﻳَّﺎﻡٍ » -এর অর্থ: সৎকাজের প্রতিদান হল তার দশ গুণ; সুতরাং এক জুমু‘আ থেকে আরেক জুমু‘আ পর্যন্ত হল সাত দিন এবং তার সাথে অতিরিক্ত তিন দিন মিলে মোট দশ দিন, আর আল্লাহ তা‘আলা যাকে ইচ্ছা তাঁর অনুগ্রহ দান করেন।
[56] বুখারী, হাদিস নং- ৩৭ ও ১৯০৫; মুসলিম, হাদিস নং- ১৮১৫; ইমাম বুখারী, মুসলিম রহ. ও অন্যান্য মুহাদ্দিস প্রমুখ হাদিসটি আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন।
[57] বুখারী, হাদিস নং- ৩৫; মুসলিম, হাদিস নং- ১৮১৮ এবং তাঁরা উভয়ে হাদিসটি আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন।
[58] আবূ দাউদ: (হাদিস নং- ১২৯৮); ইবনু মাজাহ: (হাদিস নং- ১৩৮৭); ইবনু খুযাইমা: (হাদিস নং- ১২১৬); ত্ববারানী, ‘আল-কাবীর’: (১১/২৪৩ - ২৪৪); হাকেম: (১/৩১৮); বায়হাকী: (৩/৫১ - ৫২) এবং অন্যান্য মুহাদ্দিস প্রমুখ হাদিসটি আবদুর রাহমান ইবন বিশর ইবন হেকামের সনদে বর্ণনা করেন, তিনি আবূ শো‘আইব মূসা ইবন আবদিল আযীয আল-কানবারী থেকে বর্ণনা করেন, তিনি হেকামা ইবন আব্বান থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বর্ণনা করেন ‘ইকরামা থেকে, তিনি বর্ণনা করেন আবদুল্লাহ ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে। আমি বলি: এই হাদিসটির সনদের মধ্যে কোন সমস্যা নেই ইনশাআল্লাহ। কোন সমস্যা নেই ইনশাআল্লাহ। আর আবদুল্লাহ ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহুমা থেকে বর্ণিত এই হাদিসের আরও কয়েকটি সনদ রয়েছে, কিন্তু এসব সনদে তিনি তুষ্ট নন। আর হাদিস শাস্ত্রের ইমামগণের উক্তিগুলো প্রথম সনদটি উৎকৃষ্ট হওয়ার ব্যাপারে সমর্থন ও সহযোগিতা করে— ১. ইমাম আবূ দাউদ রহ. বলেন: “সালাতুত তাসবীহ-এর ব্যাপারে সবচেয়ে বিশুদ্ধ হাদিস হল আবদুল্লাহ ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু’র এই হাদিসটি।” — যেমন দেখুন: ‘আল-লায়ালিল মাসনু‘আ’ ( ﺍﻟﻶﻟﻲﺀ ﺍﻟﻤﺼﻨﻮﻋﺔ ): ২/২৯; ‘আত-তারগীব ওয়াত তারহীব’ ( ﺍﻟﺘﺮﻏﻴﺐ ﻭ ﺍﻟﺘﺮﻫﻴﺐ ): ১/৪৬৮
২. আল-মুনযিরী বলেন: “এই হাদিসটি অনকেগুলো সনদে এবং এক দল সাহাবী থেকে বর্ণিত হয়েছে, যার দৃষ্টান্ত হলো ‘ইকরামা রা. কর্তৃক বর্ণিত এই হাদিসটি এবং এক দল মুহাদ্দিস হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন: হাফেয আবূ বকর আল-আজুররী, আমাদের শাইখ আবূ মুহাম্মাদ আবদুর রাহীম আল-মিসরী ও হাফেয আবূল হাসান আল-মুকাদ্দেসী রহ.।” — [‘আত-তারগীব ওয়াত তারহীব’ ( ﺍﻟﺘﺮﻏﻴﺐ ﻭ ﺍﻟﺘﺮﻫﻴﺐ ): ১/৪৬৮; আরও দেখুন: ‘মুখতাসারু সুনানি আবি দাউদ’ ( ﻣﺨﺘﺼﺮ ﺳﻨﻦ ﺃﺑﻲ ﺩﺍﻭﺩ ): ২/৮৯ আর যাবীদী রহ. বলেন: “এই হাদিসটি সহীহ, গরীব এবং সনদ ও মতন উৎকৃষ্ট।” —[ ইতহাফুস সাদাত আল-মুত্তাকীন’ ( ﺇﺗﺤﺎﻑ ﺍﻟﺴﺎﺩﺓ ﺍﻟﻤﺘﻘﻴﻦ ): ৩/৪৭৩ ]। হাদিসটির সমর্থনে একদল সহাবী থেকে হাদিস বর্ণিত হয়েছে; যেমন— ‘আব্বাস ইবন আবদিল মুত্তালিব রা., ফদল ইবন আব্বাস রা., আবদুল্লাহ ইবন ওমর রা., আলী রা., জা‘ফর ইবন আবি তালিব রা. ও উম্মু সালমা রা. প্রমুখ; যদিও হাদিসের সনদগুলো সমালোচনা থেকে মুক্ত নয়, তবে কিছু সনদ সুসংগঠিত; সুতরাং যেসব সনদ প্রমাণের জন্য যথাযথ, তা আবদুল্লাহ ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু থেকে বর্ণিত হাদিসের সমর্থনে শক্তিশালী ভূমিকা রাখে; আর এ জন্যই ‘সালাতুত তাসবীহ’ বিষয়ক হাদিসটি ‘সহীহ লি-গাইরিহী’। আর আল্লাহই সবচেয়ে বেশি জানেন। আর হাফেযগণ এই বিষয়ে স্বতন্ত্রভাবে খণ্ড খণ্ড পুস্তক লিখেছেন। আমি বলি: কোনো কোনো ব্যক্তি এই সালাতের মধ্যে ব্যাপক কিছু সৃষ্টি করেছে, তারা এর সাথে এমন কিছু নতুন বিষয়ের সংজোযন করেছে, যার কোনো শরী‘য়তসম্মত ভিত্তি নেই; যেমন—
১. এই সালাতকে পবিত্র রমযান মাসের সাথে সুনির্দিষ্ট করা, বরং তাদের কেউ কেউ দৃঢ়তার সাথে এই সালাতকে রমযানের সাতাইশতম রাতের সাথে সুনির্দিষ্ট করে দেয় (!)।
২. জামা‘য়াতবদ্ধভাবে ‘সালাতুত তাসবীহ’ আদায় করা।
৩. একদিনে একাধিক বার ‘সালাতুত তাসবীহ’ আদায় করা। সুতরাং হে মুসলিম জনগোষ্ঠী! আপনারা নিজেদের উপর দয়া করুন; সুতরাং (সুন্নাহ’র) অনুসরণ করুন, নতুন পন্থা উদ্ভাবন করবেন না; কারণ, পুরাতন নির্দেশনাই আপনাদের জন্য যথেষ্ট।
[59] নাসায়ী: (২/৩৪); ইবনু মাজাহ: (১৪০৮); আহমাদ: (২/১৭৬); ইবনু হিব্বান: (৬৩৮৬); হাকেম: (২/৪৩৪); তাঁরা হাদিসটি আবদুল্লাহ ইবন ‘আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণনা করেছেন। আমি বলি: হাদিসটি সহীহ।
[60] সূরা আল-কিয়ামাহ, আয়াত: ১৪ - ১৫
[61] সূরা আত-তাওবা, আয়াত: ১১১
[62] সূরা আত-তাওবা, আয়াত: ১১১
[63] সূরা আত-তাওবা, আয়াত: ১১১
[64] সূরা আত-তাওবা, আয়াত: ১১১
[65] সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৩১
[66] সূরা আল-মায়িদা, আয়াত: ৫৪
[67] সূরা আল-মায়িদা, আয়াত: ৫৪
[68] সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৯৫
[69] ইমাম মুসলিম রহ. হাদিসটি আবদুল্লাহ ইবন ‘আমর ইবনিল ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণনা করেছেন, হাদিস নং- ৪৯৯২
[70] মুসলিম, হাদিস নং- ৪৯৮৮
[71] বুখারী, হাদিস নং- ৩৮; মুসলিম, হাদিস নং- ১৮১৭; আবূ দাউদ, হাদিস নং- ১৩৭২; তিরমিযী, হাদিস নং- ৬৮৩; নাসায়ী, হাদিস নং- ২২০৩; ইবনু মাজাহ, হাদিস নং- ১৩২৬; তাঁরা হাদিসটি আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন।
[72] ইমাম মুসলিম রহ. হাদিসটি আবূ কাতাদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন, হাদিস নং- ২৮০৩
[73] নাসায়ী, হাদিস নং- ২৬৩০; ত্ববারানী, আল-কাবীর, হাদিস নং- ১১১৯৬ এবং অন্যান্য মুহাদ্দিস প্রমুখ হাদিসটি সাহল ইবন হাম্মাদ আবূ ‘উত্তাব আদ-দাল্লালের সনদে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন: আমাদের কাছে ‘আযরা ইবন সাবিত হাদিসটি বর্ণনা করেছেন, তিনি ‘আমর ইবন দিনার রহ. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: আবদুল্লাহ ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: তারপর হাদিসের বক্তব্য উল্লেখ করেছেন। আমি বলি: এই সনদটি সহীহ এবং তার বর্ণনাকারীগণ বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য। আর এই হাদিসের সমর্থনে আবদুল্লাহ ইবন ওমর, আবদুল্লাহ ইবন মাস‘উদ ও জাবির ইবন আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম প্রমুখ হাদিস বর্ণনা করেছেন।
[74] ত্ববারানী, আল-কাবীর ( ﺍﻟﻜﺒﻴﺮ ), হাদিস নং- ১৩৫৬৬; আল-বায্যার, ‘কাশফুল আসতার’ ( ﻛﺸﻒ ﺍﻷﺳﺘﺎﺭ ), হাদিস নং- ১০৮২; আবদুর রাযযাক, আল-মুসান্নাফ ( ﺍﻟﻤﺼﻨﻒ ), হাদিস নং- ৮৮৩০; তাঁরা সকলেই মুজাহিদ রহ. এর সনদে আদুল্লাহ ইবন ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন আমি বলি: হাদিসটি সহীহ। আর এই হাদিসের সমর্থনে বায্যার রহ. আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন, হাদিস নং- ১০৮৩; তবে তার মধ্যে দুর্বলতা রয়েছে।
[75] সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৭১
[76] সূরা আত-তাগাবুন, আয়াত: ১৭
[77] হাকেম: (৪/৩৮৮); দারেমী: (২/১৮২); আহমাদ: (৫/২১৪ ও ২১৫); আমি বলি: হাদিসের সনদটি হাসান; কেননা, বর্ণনাকারী উসামা ইবন যায়েদ আল-লাইসী’র ব্যাপারে সামান্য কথা থাকলেও তাতে ক্ষতি নেই; তাছাড়া এই হাদিসটির সমর্থনে ‘সহীহাইন’ ও অন্যান্য গ্রন্থের মধ্য বহু হাদিস বর্ণিত আছে।
[78] আহমাদ: (৩/১৪২); তিনি বলেন: আমাদের কাছে হাদিস বর্ণনা করেছেন মুহাম্মাদ ইবন বকর, তিনি বলেন: আমাদেরকে সংবাদ দিয়েছেন মাইমুন আল-মারায়ী, তিনি বলেন: আমাদের কাছে হাদিস বর্ণনা করেছেন মাইমুন ইবন সিয়াহ, তিনি আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। আমি বলি: এই সনদটি ‘হাসান’ পর্যায়ের ইনশাআল্লাহ; আর মাইমুন ইবন মূসা আল-মারায়ী ‘মুদাল্লিস’ পর্যায়ের বর্ণনাকারী, তবে তিনি বর্ণনার মাধ্যমে তা স্পষ্ট করে দিতেন।
[79] আহমাদ: (৩/১৫২); বুখারী, আল-আদাবুল মুফরাদ: (৬৩৪); তাঁরা হাদিসটি ত্বরিক আবদুল ওয়ারিসের সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন আমাদের কাছে হাদিস বর্ণনা করেছেন সিনান, তিনি বলেন: আমাদের কাছে হাদিস বর্ণনা করেছেন আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু। আমি বলি: এই সনদটি ‘হাসান’ পর্যায়ের; কারণ, সিনান ইবন রবী‘য়া সত্যবাদী, নম্র।
[80] আহমাদ রহ. হাদিসটি আবদুল্লাহ ইবন ‘আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন: (২/১২৪) । আমি বলি: হাদিসের সনদটি সহীহ। আর তার সমর্থনে জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে হাদিস বর্ণিত আছে, যা আত-তায়ালসী রহ. বর্ণনা করেছেন: (১৫৭৬) এবং তার সনদটিও সহীহ।
[81] আহমাদ: (২/৪৬৩); ইবনু হিব্বান: (২৩২২— মাওয়ারিদ); হাকেম: (১/৪৯২) ও অন্যান্য মুহাদ্দিস প্রমুখ হাদিসটি আ‘মাশের সনদে বর্ণনা করেছেন, তিনি বর্ণনা করেন আবূ সালেহ থেকে, তিনি আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে ‘মারফু‘’ হিসেবে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। আমি বলি: হাদিসের সনদটি সহীহ।
[82] হাকেম: (১/৫৩৭); ত্ববারানী, আল-কাবীর ( ﺍﻟﻜﺒﻴﺮ ), হাদিস নং- ১৫৮৬ ও ১৫৮৭; তাঁরা হাদিসটি নাফে‘ ইবন জুবায়ের ইবন মুত‘য়েমের সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি তাঁর পিতা জুবায়ের ইবন মুত‘য়েম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে ‘মারফু‘’ হিসেবে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। হাকেম রহ. বলেন: হাদিসটি ইমাম মুসলিম রহ. এর শর্তে সহীহ। আর একই মত ব্যক্ত করেছেন ইমাম যাহাবী রহ. এবং আমাদের শাইখ আলবানী রহ. তাঁর ‘সিলসিলাতুল আহাদিসিস্ সাহীহা’ ( ﺳﻠﺴﻠﺔ ﺍﻷﺣﺎﺩﻳﺚ ﺍﻟﺼﺤﻴﺤﺔ ) নামক গ্রন্থের মধ্যে, হাদিস নং- ৮১; আর তাঁরা যা বলেছেন, বিষয়টি তাই। আর ত্ববারানী’র দ্বিতীয় জায়গার বর্ণনায় অতিরিক্ত কথা আছে: « ﻳﻘﻮﻟﻬﺎ ﺛﻼﺙ ﻣﺮﺍﺕ » (তিনি তা তিনবার বলেন)। আমাদের শাইখ বলেন: হাইছামী রহ. তার ব্যাপারে কোন মন্তব্য করেননি এবং তা (সনদটি) উৎকৃষ্ট নয়; কারণ, তার সনদের মধ্যে খালিদ ইবন ইয়াযিদ আল-‘আমরী নামে একজন বর্ণনাকারী রয়েছে, যাকে আবূ হাতিম ও ইয়াহইয়া মিথ্যাবাদী বলেছেন; আর ইবনু হিব্বান বলেন: সে নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীদের থেকে ‘মাউযু’ হাদিস বর্ণনা করত। সুতরাং এটা অতিরিক্ত, এর দিকে দৃষ্টি দেয়ার দরকার নেই। আমি বলি: এটা শাইখের পক্ষ থেকে অনিচ্ছাকৃত ভুল (আল্লাহ তাকে হিফাজত করুন); কেননা, হাইছামী রহ. দুই জায়গায় ঐ বিষয়ে ইঙ্গিত করেছেন, যে বিষয়ে শাইখ অত্যন্ত কঠিন কথা বলেছেন (আল্লাহ তাকে হিফাজত করুন); তিনি ‘আল-মাজমা‘ ( ﺍﻟﻤﺠﻤﻊ ) এর মধ্যে বলেছেন (১০/১৪২): “ত্ববারনী রহ. তা বর্ণনা করেছেন এবং তার সনদে খালিদ ইবন ইয়াযিদ আল-‘আমরী নামে একজন বর্ণনাকারী রয়েছেন, যিনি দুর্বল।” আর তিনি ‘আল-মাজমা‘ ( ﺍﻟﻤﺠﻤﻊ ) এর (১০/৪২৩) মধ্যে সহীহ ও দুর্বল— দু’টি বর্ণনা উল্লেখ করার পর বলেছেন: “ত্ববারানী রহ. সবগুলো বর্ণনাই বর্ণনা করেছেন এবং প্রথম বর্ণনার বর্ণনাকারীগণ হলেন সহীহ হাদিসের বর্ণনাকারী।” অতঃপর তিনি যিকির সংক্রান্ত হাদিসের সনদগুলো অগ্রাধিকার দেয়ার বিষয়ে ইঙ্গিত করেছেন। আর এর দ্বারা স্পষ্ট হয়ে গেল যে, হাইছামী রহ. এই বর্ণার ব্যাপারে নিরব থাকেননি, বরং আমাদের শাইখ কর্তৃক উক্ত বর্ণনাকে দুর্বল বলার পূর্বেই তিনি তাকে দুর্বল বলে আখ্যায়িত করেছেন— সুন্নাতে নববী’র খেদমতের কারণে আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে সাহায্য করুন।
[83] সূরা আল-মায়িদা, আয়াত: ২৭
[84] সূরা আল-মু’মিনুন, আয়াত: ৫৭ - ৬০
[85] এই বিষয়টি আমি আমার ‘মুবতিলাতুল আ‘মাল’ ( ﻣﺒﻄﻼﺕ ﺍﻷﻋﻤﺎﻝ ) নামক পুস্তিকার মধ্যে ‘খাওফুস সালফিস সালিহ রহ. মিন আন তাহবাতা আ‘মালুহুম ওয়াহুম লা ইয়াশ‘উরুন’ ( ﺧﻮﻑ ﺍﻟﺴَّﻠﻒ ﺍﻟﺼﺎﻟﺢ ـ ﺭﺣﻤﻬﻢ ﺍﻟﻠﻪ ـ ﻣﻦ ﺃﻥ ﺗﺤﺒﻂ ﺃﻋﻤﺎﻟﻬﻢ ﻭ ﻫﻢ ﻻ ﻳﺸﻌﺮﻭﻥ ) [পূর্ববর্তী সৎ বান্দগণের আশংকা যে, তাদের অজান্তেই তাদের আমলসমূহ নষ্ট হয়ে যাবে] নামক শিরোনামে অন্তর্ভুক্ত করেছি; প্রকাশক: দারু ইবনিল কায়্যিম, দাম্মাম।
[86] বুখারী, হাদিস নং- ৬০৬৯
[87] মুসলিম, হাদিস নং- ৪৯৮৮ ও ৪৯৯২ _________________________________________________________________________________
শাইখ সালীম ইবন ‘ঈদ আল-হিলালী
অনুবাদক: মোঃ আমিনুল ইসলাম
সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
সূত্র: ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব
আরও পড়ুনঃ কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে তাওবা ও পাপ মোচনকারী কিছু আমল
আরও পড়ুনঃ আল্লাহর নৈকট্য লাভের অনন্য উপায়: তাওবা
আরও পড়ুনঃ আমি তাওবা করতে চাই কিন্তু !
আরও পড়ুনঃ তাওবার ফজিলত
আরও পড়ুনঃ তওবার বিবরণ
আরও পড়ুনঃ তওবা : কেন ও কিভাবে
আরও পড়ুনঃ সাইয়েদুল ইসতিগফার দু’আটি জানা আছে কি? এতে রয়েছে জান্নাতের ঘোষণা! (ভিডিও সহ)
আরও পড়ুনঃ ক্ষমাপ্রার্থনা করার আদেশ ও তার মাহাত্ম্য
আরও পড়ুনঃ আল্লাহর দয়ার আশা রাখা
আরও পড়ুনঃ যিনা-ব্যভিচারকারী পুরুষ অথবা নারী কি তাওবার পর বিবাহ করতে পারে?
আরও পড়ুনঃ যে ব্যক্তি কোন মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েছেন তার জন্য কি তওবা আছে?
পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না কিন্তু।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« ﻗَﺎﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺳُﺒْﺤَﺎﻧَﻪُ ﻭَﺗَﻌَﺎﻟَﻰ : ﻣَﻦْ ﻋَﻠِﻢَ ﺃَﻧِّﻲ ﺫُﻭ ﻗُﺪْﺭَﺓٍ ﻋَﻠَﻰ ﻣَﻐْﻔِﺮَﺓِ ﺍﻟﺬُّﻧُﻮﺏِ، ﻏَﻔَﺮْﺕُ ﻟَﻪُ ﻭَﻻ ﺃُﺑَﺎﻟِﻲ ﻣَﺎ ﻟَﻢْ ﻳُﺸْﺮِﻙْ ﺑِﻲ ﺷَﻴْﺌًﺎ » . ( ﺻﺤﻴﺢ ﺍﻟﺠﺎﻣﻊ ﺍﻟﺼﻐﻴﺮ ﻭ ﺯﻳﺎﺩﺗﻪ : 4206 ).
“আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন: যে ব্যক্তি বিশ্বাস করে যে, আমিই গুনাহ মাফ করার ক্ষমতাবান, তাকে আমি ক্ষমা করে দেই এবং যতক্ষণ সে আমার সাথে কোনো কিছুকে শরীক না করে, ততক্ষণ (তাকে ক্ষমা করার ব্যাপারে) আমি কোনো কিছুর পরওয়া করি না।” [সহীহুল জামে‘ আস-সাগীর ওয়া যিয়াদাতুহু: ৪২০৬]।
আল-কুরআনুল কারীম ও পবিত্র সহীহ সুন্নাহ’র আলোকে গুনাহ্ মাফের আমল
ﺑﺴﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺍﻟﺮﺣﻴﻢ ভূমিকা
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য; আমরা তাঁর প্রশংসা করি, তাঁর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করি এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি; আর আমাদের নফসের জন্য ক্ষতিকর এমন সকল খারাপি এবং আমাদের সকল প্রকার মন্দ আমল থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই। আল্লাহ যাকে পথ প্রদর্শন করেন, কেউ তাকে পথভ্রষ্ট করতে পারে না; আর তিনি যাকে পথহারা করেন, কেউ তাকে পথ দেখাতে পারবে না। আর আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তিনি একক, তাঁর কোনো শরীক নেই এবং আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল। অতঃপর:
বান্দা অপরাধ থেকে মুক্ত নয়; সুতরাং এই ত্রুটি থেকে কোনো আদম সন্তানই মুক্ত নয়। আর নিষ্পাপ শুধু সেই, যাকে আল্লাহ তা‘আলা পাপমুক্ত করেছেন। আর মানুষ শক্তি ও সামর্থ্যের ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে; এটাই অমোঘ মূলনীতি। আর যে ব্যক্তি নিজকে নিয়ে পর্যালোচনা করবে, সে তাকে এই ধরনের ত্রুটিতে ভরপুর পাবে; সুতরাং যখন তাকে তাওফীক (শক্তি-সামর্থ্য) দেওয়া হবে, তখন তার উপর ধ্বংসাত্মক আক্রমণের ভয়ে সে এর থেকে সতর্ক ও সচেতন হবে এবং আল্লাহর পথ থেকে ভিন্ন পথে চলার কারণে সে ব্যথা অনুভব করবে। অতঃপর যখন সে ব্যথা ও কষ্ট অনুভব করবে, তখন সে মুক্তির আশায় গুনাহের অভ্যাস ছেড়ে দিয়ে দ্রুত আল্লাহর দিকে ফিরে আসবে। আর তখন সে গুনাহ মাফের দরজা উন্মুক্ত অবস্থায় পাবে, যার দুই পাল্লায় লেখা থাকবে:
﴿ ۞ ﻗُﻞۡ ﻳَٰﻌِﺒَﺎﺩِﻱَ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺃَﺳۡﺮَﻓُﻮﺍْ ﻋَﻠَﻰٰٓ ﺃَﻧﻔُﺴِﻬِﻢۡ ﻟَﺎ ﺗَﻘۡﻨَﻄُﻮﺍْ ﻣِﻦ ﺭَّﺣۡﻤَﺔِ ﭐﻟﻠَّﻪِۚ ﺇِﻥَّ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﻳَﻐۡﻔِﺮُ ﭐﻟﺬُّﻧُﻮﺏَ ﺟَﻤِﻴﻌًﺎۚ ﺇِﻧَّﻪُۥ ﻫُﻮَ ﭐﻟۡﻐَﻔُﻮﺭُ ﭐﻟﺮَّﺣِﻴﻢُ ٥٣ ﴾ [ ﺍﻟﺰﻣﺮ : ٥٣ ]
“বলুন, ‘হে আমার বান্দাগণ! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ---আল্লাহ্র অনুগ্রহ হতে নিরাশ হয়ো না; নিশ্চয় আল্লাহ্ সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”[1]
« ﻭَﺃَﺗْﺒِﻊِ ﺍﻟﺴَّﻴِّﺌَﺔَ ﺍﻟْﺤَﺴَﻨَﺔَ ﺗَﻤْﺤُﻬَﺎ » . ( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ ) .
“আর তুমি অসৎ কাজ করলে সাথে সাথেই সৎকাজ কর, তাহলে ভালো কাজ মন্দ কাজকে নিশ্চিহ্ন করে দেবে।”[2] আর এটা হল ক্ষমার পর্যায়।
দ্বিতীয়ত: পরিবর্তন করে দেওয়া; যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿ ﺇِﻟَّﺎ ﻣَﻦ ﺗَﺎﺏَ ﻭَﺀَﺍﻣَﻦَ ﻭَﻋَﻤِﻞَ ﻋَﻤَﻠٗﺎ ﺻَٰﻠِﺤٗﺎ ﻓَﺄُﻭْﻟَٰٓﺌِﻚَ ﻳُﺒَﺪِّﻝُ ﭐﻟﻠَّﻪُ ﺳَﻴَِّٔﺎﺗِﻬِﻢۡ ﺣَﺴَﻨَٰﺖٖۗ ﻭَﻛَﺎﻥَ ﭐﻟﻠَّﻪُ ﻏَﻔُﻮﺭٗﺍ ﺭَّﺣِﻴﻤٗﺎ ٧٠﴾ [ ﺍﻟﻔﺮﻗﺎﻥ : ٧٠ ]
“তবে যে তাওবা করে, ঈমান আনে ও সৎকাজ করে, ফলে আল্লাহ্ তাদের গুণাহসমূহ নেক দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন। আর আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”[3] আর এটা হল ‘মাগফিরাত’ তথা গুনাহ মাফের পর্যায়। আর যে ব্যক্তি (গুনাহ মাফের) দু’টি পর্যায় নিয়ে চিন্তাভাবনা করবে, সে সূক্ষ্ম পার্থক্য উপলব্ধি করতে পারবে; কারণ, মাগফিরাতের মধ্যে ক্ষমার উপর অতিরিক্ত ইহসান ও দয়ার ব্যাপার রয়েছে; আর এ দু’টিই উত্তম ও শুভসংবাদ।
জেনে রাখুন, এই দীন কত উদার! আর তার নিয়মনীতি কত সহজ! তার প্রতিটি শ্লোগানই হল উচ্চতা, শ্রেষ্ঠত্ব, পবিত্রতা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নির্ভর; আর তার প্রত্যেকটি অর্পিত দায়িত্বপূর্ণ কাজ, শাস্তিবিধান, নির্দেশ এবং ধমক বা তিরস্কারের মূল লক্ষ্য হল পবিত্র ও পরিশুদ্ধ ব্যক্তি তৈরি করা। আল-কুরআনের ভাষায়:
﴿ ﻳَٰٓﺄَﻳُّﻬَﺎ ﭐﻟﻨَّﺎﺱُ ﭐﻋۡﺒُﺪُﻭﺍْ ﺭَﺑَّﻜُﻢُ ﭐﻟَّﺬِﻱ ﺧَﻠَﻘَﻜُﻢۡ ﻭَﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻣِﻦ ﻗَﺒۡﻠِﻜُﻢۡ ﻟَﻌَﻠَّﻜُﻢۡ ﺗَﺘَّﻘُﻮﻥَ ٢١ ﴾ [ ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ : ٢١ ]
“হে মানুষ! তোমরা তোমাদের সেই রবের ‘ইবাদাত কর, যিনি তোমাদেরকে এবং তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাকওয়ার অধিকারী হও।”[4]
ﻭﺃﻗﺪِﻡْ ﻭﻻ ﺗﻘْﻨَﻊْ ﺑﻌَﻴْﺶٍ ﻣُﻨَﻐَّﺺٍ ﻓﻤﺎ ﻓﺎﺯَ ﺑﺎﻟﻠﺬﺍﺕِ ﻣَﻦ ﻟﻴﺲ ﻳﻘﺪﻡُ
(পদক্ষেপ নাও এবং অস্বস্তিকর জীবনে তুমি সন্তুষ্ট হয়ো না;
কারণ, আনন্দ-ফুর্তির দ্বারা সে ব্যক্তি সফল হবে না, যে (তাওবার পথে) অগ্রসর হবে না।
ﻭﺇﻥ ﺿﺎﻗﺖِ ﺍﻟﺪﻧﻴﺎ ﻋﻠﻴﻚَ ﺑﺄﺳﺮِﻫﺎ ﻭﻟﻢ ﻳﻚُ ﻓﻴﻬﺎ ﻣﻨﺰﻝٌ ﻟﻚَ ﻳُﻌﻠَﻢُ
(যদিও দুনিয়ার তাবৎ কর্মকাণ্ডের কারণে তোমার উপর দুনিয়া সঙ্কুচিত হয়ে গেছে এবং জানা মতে তোমার জন্য তাতে কোনো বাসস্থানও নেই)।
ﻓﺤﻲَّ ﻋﻠﻰ ﺟﻨﺎﺕِ ﻋﺪْﻥٍ ﻓﺈﻧَّﻬﺎ ﻣﻨﺎﺯﻟﻚَ ﺍﻷﻭﻟﻰ ﻭﻓﻴﻬﺎ ﺍﻟﻤﺨﻴَّﻢُ
(সুতরাং তুমি শ্বাশ্বত বাসস্থান জান্নাতের দিকে আস; কেননা, তা তোমার প্রথম বাসস্থান এবং তাতে রয়েছে তাঁবু গাড়ার স্থান)।
ﻭﻟﻜﻨﻨﺎ ﺳَﺒْﻲُ ﺍﻟﻌﺪﻭِّ ﻓﻬﻞ ﺗﺮﻯ ﻧﻌﻮﺩُ ﺇﻟﻰ ﺃﻭﻃﺎﻧِﻨﺎ ﻭﻧﺴﻠَّﻢُ
(কিন্তু আমারা হলাম শত্রুর হাতে বন্দী; কেননা, তুমি কি মনে কর— আমরা আমাদের নিজ আবাসভূমিতে ফিরে যাব এবং তা সঠিক বলে মেনে নেব)।
ﻭﻗﺪ ﺯﻋﻤﻮﺍ ﺃﻥ ﺍﻟﻐﺮﻳﺐَ ﺇﺫﺍ ﻧﺄﻯ ﻭﺷﻄَّﺖْ ﺑﻪ ﺃﻭﻃﺎﻧُﻪ ﻓﻬﻮ ﻣﻐﺮﻡ
(আর তারা ধারণা করে যে, প্রবাসী ব্যক্তি যখন দূরে চলে যায় এবং তার কারণে তার মাতৃভূমি খান খান হয়, তখন সে তার প্রতি আকর্ষণ অনুভব করে)।
ﻭﺃﻱُّ ﺍﻏﺘﺮﺍﺏٍ ﻓﻮﻕ ﻏﺮﺑَﺘِﻨﺎ ﺍﻟﺘﻲ ﻟﻬﺎ ﺃﺿﺤﺖِ ﺍﻷﻋﺪﺍﺀُ ﻓﻴﻨﺎ ﺗَﺤَﻜَّﻢُ
(আমাদের প্রবাসজীবনের উপর আর কোনো প্রবাসজীবন কী আছে? যেখানে আমাদের উপর কর্তৃত্ব হয়ে যায় শত্রুগণের)। আমরা যে বিষয় অধ্যয়ন করছি, তা হল আল-কুরআনের একগুচ্ছ সুস্পষ্ট আয়াত এবং নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কতগুলো বিশুদ্ধ হাদিস যেগুলো আমি একত্রিত করেছি; অতঃপর আমি তা লিপিবদ্ধ করেছি, যার সবকটিই একই অর্থের অন্তর্ভুক্ত; আর তা হল এমন আমল, যার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত হয়েছে গুনাহ মাফ আর পাপরাশি মোচনের।
আমি এ আলোচনাটি সাজিয়েছি কয়েকটি অধ্যায়ে, যাতে পাঠক সহজেই তার বিষয়বস্তু সম্পর্কে অনুধাবন করতে পারে এবং আমি তার নাম দিয়েছি:
« ﻣﻜﻔﺮﺍﺕ ﺍﻟﺬﻧﻮﺏ ﻓﻲ ﺿﻮﺀ ﺍﻟﻘﺮﺁﻥ ﺍﻟﻜﺮﻳﻢ ﻭ ﺍﻟﺴﻨﺔ ﺍﻟﺼﺤﻴﺤﺔ ﺍﻟﻤﻄﻬﺮﺓ » (আল-কুরআনুল কারীম ও পবিত্র সহীহ সুন্নাহ’র আলোকে গুনাহ্ মাফের আমল) এখন দেখুন আমরা কিন্তু আমাদের সেই ওয়াদাকৃত বিষয়টি উপস্থাপনের কাজ শুরু করতে যাচ্ছি এবং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার নিকট আশা করছি যে, তিনি তার দ্বারা আমাদেরকে উপকৃত করবেন; তিনি হলেন খুবই নিকটতম, আবেদন-নিবেদন কবুলকারী, তিনি ব্যতীত উপাসনার যোগ্য আর কোনো ইলাহ্ নেই, আমি তাঁর উপরই ভরসা করি এবং তাঁর কাছেই তাওবা করি। আর সরল পথ আল্লাহর কাছেই পৌঁছায়। লেখক: আবূ উসামা সালীম ইবন ‘ঈদ আল-হেলালী জামাদিউল উলা, ১৪০৮ হিজরী, আম্মান, জর্দান। * * *
১. ঈমানের অধ্যায়
১. ১. ইসলাম:
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার নিকট গ্রহণযোগ্য মূলনীতি ও জীবনবিধান হল ইসলাম; কারণ, তা হল প্রধান বিষয়; সুতরাং যে ব্যক্তি ইসলাম ভিন্ন অন্য কোনো পথ অনুসরণ করে চলবে, সেই ব্যক্তি ধ্বংসপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿ ﺇِﻥَّ ﭐﻟﺪِّﻳﻦَ ﻋِﻨﺪَ ﭐﻟﻠَّﻪِ ﭐﻟۡﺈِﺳۡﻠَٰﻢُۗ ﴾ [ ﺍﻝ ﻋﻤﺮﺍﻥ : ١٩ ]
“নিশ্চয় ইসলামই আল্লাহর নিকট একমাত্র দ্বীন।”[5]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেছেন:
﴿ ﻭَﻣَﻦ ﻳَﺒۡﺘَﻎِ ﻏَﻴۡﺮَ ﭐﻟۡﺈِﺳۡﻠَٰﻢِ ﺩِﻳﻨٗﺎ ﻓَﻠَﻦ ﻳُﻘۡﺒَﻞَ ﻣِﻨۡﻪُ ﻭَﻫُﻮَ ﻓِﻲ ﭐﻟۡﺄٓﺧِﺮَﺓِ ﻣِﻦَ ﭐﻟۡﺨَٰﺴِﺮِﻳﻦَ ٨٥ ﴾ [ ﺍﻝ ﻋﻤﺮﺍﻥ : ٨٥ ]
“আর কেউ ইসলাম ব্যতীত অন্য কোনো দ্বীন গ্রহণ করতে চাইলে তা কখনো তার পক্ষ থেকে কবুল করা হবে না এবং সে হবে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত।”[6] কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা হলেন ন্যায়পরায়ণ ও দয়াবান, তিনি তাঁর বান্দাদের জন্য কুফরীকে পছন্দ করেন না; তাই তারা যখন কুফরী করা থেকে বিরত থাকবে, তখন তিনি তাদেরকে (তার প্রিয় বান্দা হিসেবে) গ্রহণ করে নিবেন এবং তাদেরকে ক্ষমা করে দিবেন; কেননা, তিনি হলেন ক্ষমাশীল ও দয়াবান। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ ﻗُﻞ ﻟِّﻠَّﺬِﻳﻦَ ﻛَﻔَﺮُﻭٓﺍْ ﺇِﻥ ﻳَﻨﺘَﻬُﻮﺍْ ﻳُﻐۡﻔَﺮۡ ﻟَﻬُﻢ ﻣَّﺎ ﻗَﺪۡ ﺳَﻠَﻒَ ﻭَﺇِﻥ ﻳَﻌُﻮﺩُﻭﺍْ ﻓَﻘَﺪۡ ﻣَﻀَﺖۡ ﺳُﻨَّﺖُ ﭐﻟۡﺄَﻭَّﻟِﻴﻦَ ٣٨ ﻭَﻗَٰﺘِﻠُﻮﻫُﻢۡ ﺣَﺘَّﻰٰ ﻟَﺎ ﺗَﻜُﻮﻥَ ﻓِﺘۡﻨَﺔٞ ﻭَﻳَﻜُﻮﻥَ ﭐﻟﺪِّﻳﻦُ ﻛُﻠُّﻪُۥ ﻟِﻠَّﻪِۚ ﻓَﺈِﻥِ ﭐﻧﺘَﻬَﻮۡﺍْ ﻓَﺈِﻥَّ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﺑِﻤَﺎ ﻳَﻌۡﻤَﻠُﻮﻥَ ﺑَﺼِﻴﺮٞ ٣٩ ﴾ [ ﺍﻻﻧﻔﺎﻝ : ٣٨، ٣٩ ]
“যারা কুফরী করে তাদেরকে বলুন, ‘যদি তারা বিরত হয়, তবে যা আগে হয়ে গেছে আল্লাহ্ তা ক্ষমা করবেন; কিন্তু তারা যদি অন্যায়ের পুনরাবৃত্তি করে, তবে পূর্ববর্তীদের রীতি তো গত হয়েছেই। আর তোমরা তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে থাকবে যতক্ষণ না ফেৎনা দুর হয় এবং দ্বীন পূর্ণরূপে আল্লাহ্র জন্য হয়ে যায়; তারপর যদি তারা বিরত হয়, তবে তারা যা করে আল্লাহ্ তো তার সম্যক দ্রষ্টা।”[7]
আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« ﺇﺫﺍ ﺃَﺳْﻠَﻢَ ﺍﻟْﻌَﺒْﺪُ، ﻓَﺤَﺴُﻦَ ﺇِﺳْﻼَﻣُﻪُ، ﻛَﺘَﺐَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻟﻪ ﻛﻞ ﺣﺴﻨﺔ ﻛﺎﻥ ﺃَﺯْﻟَﻔَﻬَﺎ، ﻭَﻣُﺤِﻴَﺖْ ﻋَﻨْﻪُ ﻛُﻞُّ ﺳَﻴِّﺌَﺔٍ ﻛَﺎﻥَ ﺃَﺯْﻟَﻔَﻬَﺎ، ﺛُﻢَّ ﻛﺎﻥ ﺑﻌﺪ ﺫﻟﻚ ﺍﻟْﻘِﺼَﺎﺹُ ، ﺍﻟْﺤَﺴَﻨَﺔُ ﺑِﻌَﺸْﺮ ﺃَﻣْﺜَﺎﻟِﻬَﺎ ﺇﻟﻰ ﺳَﺒْﻌِﻤِﺎﺋَﺔِ ﺿِﻌْﻒٍ ، ﻭَﺍﻟﺴَّﻴِّﺌَﺔُ ﺑِﻤِﺜْﻠِﻬَﺎ ، ﺇِﻻَّ ﺃَﻥْ ﻳَﺘَﺠَﺎﻭَﺯَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻬَﺎ » . ( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ﻭ ﺍﻟﻨﺴﺎﺋﻲ ) .
“বান্দা যখন ইসলাম গ্রহণ করে এবং তার ইসলাম গ্রহণ উত্তমভাবে হয়, তখন আল্লাহ তা‘আলা তার আগের সকল ভাল কাজকে ভাল কাজ বলে গণ্য করেন এবং তার আগের সকল গুনাহ্ ক্ষমা করে দেওয়া হয়; অতঃপর শুরু হয় প্রতিদান; একটি সৎ কাজের বিনিময়ে দশ গুণ থেকে সাতশত গুণ পর্যন্ত সাওয়াব দেওয়া হয়; আর একটি মন্দ কাজের বিনিময়ে তার সমপরিমাণ মন্দ প্রতিফল; তবে আল্লাহ যদি মাফ করে দেন, তাহলে ভিন্ন কথা।”[8]
নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই বাণী একটি অতিরিক্ত হুকুম (বিধান) সাব্যস্ত করল, যা আল্লাহর পক্ষ থেকে এক বিশেষ অনুগ্রহ ও দয়া হিসেবে প্রমাণিত; তা হল ইসলাম পূর্ব সময়ের সকল ভাল কাজকে ভাল কাজ বলে গণ্য করে নেওয়া[9]; আর অনুরূপভাবে তা হয়ে যাবে মহান আল্লাহর অপার দান এবং মহান রব কর্তৃক প্রদত্ত পুরস্কার।
অতএব, ঐ সত্তার নামে শপথ করে বলছি, যাঁর হাতে আমার জীবন! এই মহান অনুগ্রহ ও অবদান থেকে আত্মভোলা ব্যক্তি ছাড়া আর কেউ উদাসীন থাকতে পারে না, যাকে শয়তান দখল করে নিয়েছে, ফলে সে তার রবকে ভুলে গেছে। আল-কুরআনের ভাষায়:
﴿ ﻭَﻗَﺎﻟُﻮﺍْ ﻟَﻮۡ ﻛُﻨَّﺎ ﻧَﺴۡﻤَﻊُ ﺃَﻭۡ ﻧَﻌۡﻘِﻞُ ﻣَﺎ ﻛُﻨَّﺎ ﻓِﻲٓ ﺃَﺻۡﺤَٰﺐِ ﭐﻟﺴَّﻌِﻴﺮِ ١٠ ﻓَﭑﻋۡﺘَﺮَﻓُﻮﺍْ ﺑِﺬَﻧۢﺒِﻬِﻢۡ ﻓَﺴُﺤۡﻘٗﺎ ﻟِّﺄَﺻۡﺤَٰﺐِ ﭐﻟﺴَّﻌِﻴﺮِ ١١ ﺇِﻥَّ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳَﺨۡﺸَﻮۡﻥَ ﺭَﺑَّﻬُﻢ ﺑِﭑﻟۡﻐَﻴۡﺐِ ﻟَﻬُﻢ ﻣَّﻐۡﻔِﺮَﺓٞ ﻭَﺃَﺟۡﺮٞ ﻛَﺒِﻴﺮٞ ١٢ ﻭَﺃَﺳِﺮُّﻭﺍْ ﻗَﻮۡﻟَﻜُﻢۡ ﺃَﻭِ ﭐﺟۡﻬَﺮُﻭﺍْ ﺑِﻪِۦٓۖ ﺇِﻧَّﻪُۥ ﻋَﻠِﻴﻢُۢ ﺑِﺬَﺍﺕِ ﭐﻟﺼُّﺪُﻭﺭِ ١٣ ﺃَﻟَﺎ ﻳَﻌۡﻠَﻢُ ﻣَﻦۡ ﺧَﻠَﻖَ ﻭَﻫُﻮَ ﭐﻟﻠَّﻄِﻴﻒُ ﭐﻟۡﺨَﺒِﻴﺮُ ١٤ ﴾ [ ﺍﻟﻤﻠﻚ : ١٠، ١٤ ]
“আর তারা বলবে, যদি আমরা শুনতাম অথবা বিবেক-বুদ্ধি প্রয়োগ করতাম, তাহলে আমরা জ্বলন্ত আগুনের অধিবাসী হতাম না। অতঃপর তারা তাদের অপরাধ স্বীকার করবে। সুতরাং ধ্বংস জ্বলন্ত আগুনের অধিবাসীদের জন্য! নিশ্চয় যারা গায়েব অবস্থায় তাদের রবকে ভয় করে, তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও মহাপুরস্কার। আর তোমরা তোমাদের কথা গোপনেই বল অথবা প্রকাশ্যে বল, তিনি তো অন্তরসমূহে যা আছে তা সম্পর্কে সম্যক অবগত। যিনি সৃষ্টি করেছেন, তিনি কি জানেন না? অথচ তিনি সূক্ষ্মদর্শী, সম্যক অবহিত।”[10]
হে সন্দেহের মরুভূমিতে দিশেহারা মানব জাতি! ঐ আল্লাহর দিকে পালিয়ে আস, সবকিছু যাঁর রহমত ও জ্ঞানের পরিধিভুক্ত। হে বিচ্ছিন্ন প্রবৃত্তির মরীচিকায় উত্তেজিত কামনাবিভোর জাতি! মহান রব ও নিরবিচ্ছিন্ন ছায়ার দিকে ছুটে আস। হে লোকসকল! এ মাহান সংবাদটি নিয়ে মুহূর্তকাল চিন্তা, গবেষণা ও বিচার-বিশ্লেষণ কর। আবদুর রাহমান ইবন শুমাসাহ আল-মাহরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
« ﺣَﻀَﺮْﻧَﺎ ﻋَﻤْﺮَﻭ ﺑﻦَ ﺍﻟﻌَﺎﺹِ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻭَﻫُﻮَ ﻓﻲ ﺳِﻴَﺎﻗَﺔِ ﺍﻟْﻤَﻮْﺕِ ، ﻓَﺒَﻜَﻰ ﻃَﻮِﻳﻼً ، ﻭَﺣَﻮَّﻝَ ﻭَﺟْﻬَﻪُ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﺠِﺪَﺍﺭِ ، ﻓَﺠَﻌَﻞَ ﺍﺑْﻨُﻪُ ﻳَﻘُﻮﻝُ : ﻳَﺎ ﺃﺑَﺘَﺎﻩُ ، ﺃﻣَﺎ ﺑَﺸَّﺮَﻙَ ﺭﺳﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺑﻜَﺬَﺍ ؟ ﺃﻣَﺎ ﺑَﺸَّﺮَﻙَ ﺭﺳﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺑِﻜَﺬَﺍ ؟ ﻗَﺎﻝَ : ﻓَﺄﻗْﺒَﻞَ ﺑِﻮَﺟْﻬِﻪِ ، ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﺇﻥَّ ﺃﻓْﻀَﻞَ ﻣَﺎ ﻧُﻌِﺪُّ ﺷَﻬَﺎﺩَﺓُ ﺃﻥْ ﻻ ﺇﻟﻪَ ﺇِﻻَّ ﺍﻟﻠﻪ ، ﻭَﺃﻥَّ ﻣُﺤَﻤَّﺪﺍً ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪِ ، ﺇﻧِّﻲ ﻗَﺪْ ﻛُﻨْﺖُ ﻋَﻠَﻰ ﺃﻃْﺒَﺎﻕٍ ﺛَﻼَﺙٍ : ﻟَﻘَﺪْ ﺭَﺃﻳْﺘُﻨِﻲ ﻭَﻣَﺎ ﺃﺣَﺪٌ ﺃﺷَﺪُّ ﺑُﻐﻀﺎً ﻟﺮﺳﻮﻝِ ﺍﻟﻠﻪ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﻣِﻨِّﻲ ، ﻭَﻻَ ﺃﺣَﺐَّ ﺇﻟﻲَّ ﻣِﻦْ ﺃﻥْ ﺃﻛُﻮﻥَ ﻗﺪِ ﺍﺳْﺘَﻤﻜﻨﺖُ ﻣِﻨْﻪُ ﻓَﻘَﺘَﻠْﺘُﻪ ، ﻓَﻠَﻮْ ﻣُﺖُّ ﻋَﻠَﻰ ﺗﻠﻚَ ﺍﻟﺤَﺎﻝِ ﻟَﻜُﻨْﺖُ ﻣِﻦْ ﺃﻫْﻞِ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ . ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﺟَﻌَﻞَ ﺍﻟﻠﻪُ ﺍﻹﺳﻼﻡَ ﻓﻲ ﻗَﻠْﺒِﻲ ﺃﺗَﻴْﺖُ ﺍﻟﻨﺒﻲَّ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ، ﻓﻘُﻠْﺖُ : ﺍﺑﺴُﻂْ ﻳَﻤِﻴﻨَﻚَ ﻓَﻸُﺑَﺎﻳِﻌُﻚ ، ﻓَﺒَﺴَﻂَ ﻳَﻤِﻴﻨَﻪُ . ﻗَﺎﻝَ : ﻓَﻘَﺒَﻀْﺖُ ﻳَﺪِﻱ ، ﻓَﻘَﺎﻝَ : « ﻣَﺎ ﻟَﻚَ ﻳَﺎ ﻋَﻤْﺮُﻭ ؟ » . ﻗﻠﺖُ : ﺃﺭﺩﺕُ ﺃﻥْ ﺃﺷْﺘَﺮِﻁَ . ﻗَﺎﻝَ : « ﺗَﺸْﺘَﺮِﻁ ﻣَﺎﺫﺍ ؟ » ﻗُﻠْﺖُ : ﺃﻥْ ﻳُﻐْﻔَﺮَ ﻟِﻲ ، ﻗَﺎﻝَ : « ﺃﻣَﺎ ﻋَﻠِﻤْﺖَ ﺃﻥ ﺍﻹﺳﻼﻡَ ﻳَﻬْﺪِﻡُ ﻣَﺎ ﻛَﺎﻥَ ﻗَﺒْﻠَﻪُ ، ﻭَﺃﻥ ﺍﻟﻬِﺠْﺮَﺓَ ﺗَﻬْﺪِﻡُ ﻣَﺎ ﻛَﺎﻥَ ﻗَﺒﻠَﻬَﺎ ، ﻭَﺃﻥَّ ﺍﻟﺤَﺞَّ ﻳَﻬْﺪِﻡُ ﻣَﺎ ﻛَﺎﻥَ ﻗَﺒْﻠَﻪُ ؟ » . ﻭَﻣَﺎ ﻛَﺎﻥَ ﺃﺣﺪٌ ﺃﺣَﺐَّ ﺇﻟﻲَّ ﻣِﻦْ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ، ﻭَﻻَ ﺃﺟَﻞَّ ﻓﻲ ﻋَﻴﻨﻲ ﻣِﻨْﻪُ ﻭَﻣَﺎ ﻛُﻨْﺖُ ﺃُﻃﻴﻖُ ﺃﻥ ﺃﻣﻸ ﻋَﻴﻨﻲ ﻣِﻨْﻪُ ؛ ﺇﺟﻼﻻً ﻟَﻪُ ، ﻭﻟﻮ ﺳﺌﻠﺖ ﺃﻥ ﺃﺻﻔﻪ ﻣَﺎ ﺃﻃﻘﺖ ، ﻷﻧﻲ ﻟَﻢْ ﺃﻛﻦ ﺃﻣﻸ ﻋﻴﻨﻲ ﻣِﻨْﻪُ ، ﻭﻟﻮ ﻣُﺖُّ ﻋَﻠَﻰ ﺗِﻠْﻚَ ﺍﻟﺤﺎﻝِ ﻟَﺮﺟَﻮْﺕُ ﺃﻥ ﺃﻛُﻮﻥَ ﻣِﻦْ ﺃﻫْﻞِ ﺍﻟﺠَﻨَّﺔِ . ﺛُﻢَّ ﻭَﻟِﻴﻨَﺎ ﺃﺷْﻴَﺎﺀَ ﻣَﺎ ﺃﺩْﺭِﻱ ﻣَﺎ ﺣَﺎﻟِﻲ ﻓِﻴﻬَﺎ ؟ ﻓَﺈﺫَﺍ ﺃﻧَﺎ ﻣُﺖُّ ﻓَﻼَ ﺗَﺼﺤَﺒَﻨِّﻲ ﻧَﺎﺋِﺤَﺔٌ ﻭَﻻَ ﻧَﺎﺭٌ ، ﻓَﺈﺫﺍ ﺩَﻓَﻨْﺘُﻤُﻮﻧِﻲ ، ﻓَﺸُﻨُّﻮﺍ ﻋَﻠﻲَّ ﺍﻟﺘُّﺮﺍﺏَ ﺷَﻨّﺎً ، ﺛُﻢَّ ﺃﻗِﻴﻤُﻮﺍ ﺣَﻮْﻝَ ﻗَﺒْﺮِﻱ ﻗَﺪْﺭَ ﻣَﺎ ﺗُﻨْﺤَﺮُ ﺟَﺰﻭﺭٌ ، ﻭَﻳُﻘْﺴَﻢُ ﻟَﺤْﻤُﻬَﺎ ، ﺣَﺘَّﻰ ﺃَﺳْﺘَﺄﻧِﺲَ ﺑِﻜُﻢْ ، ﻭَﺃﻧْﻈُﺮَ ﻣَﺎ ﺃُﺭَﺍﺟﻊُ ﺑِﻪِ ﺭﺳُﻞَ ﺭَﺑّﻲ » . ( ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ ) .
“আমরা ‘আমর ইবন ‘আসের নিকট হাযির হলাম, তখন তিনি ছিলেন মুমূর্ষাবস্থায়— মৃত্যুযন্ত্রনায় কাতর; তারপর তিনি বহুক্ষণ ধরে কাঁদলেন এবং তার চেহারা দেয়ালের দিকে ফিরিয়ে নেন। এ অবস্থা দেখে তার পুত্র তাকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলেন: হে আব্বাজান! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি আপনাকে এরূপ সুসংবাদ শোনান নি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি আপনাকে অমুক সুসংবাদ শোনান নি? বর্ণনাকারী বলেন: তারপর তিনি মুখ ফেরালেন এবং বললেন: আমাদের সর্বোত্তম পুঁজি হল এই কথার সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো সত্য ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল। বস্তুত আমি জীবনে তিন তিনটি পর্যায়[11] অতিক্রম করেছি: আমার জীবনের এমন একটি পর্যায়ও ছিল, যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেয়ে আর কারও প্রতি আমার এতো বেশি কঠোর বিদ্বেষ ও শত্রুতা ছিল না; আওতায় পেলে তাঁকে হত্যা করে ফেলার চাইতে বেশি প্রিয় আমার নিকট আর কিছু ছিল না; সুতরাং ঐ অবস্থায় যদি আমার মৃত্যু হয়ে যেত, তাহলে আমি নিশ্চিত জাহান্নামের অধিবাসী হয়ে যেতাম। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা যখন আমার অন্তরে ইসলামের মনোভাব ও আকর্ষণ তৈরি করে দিলেন, তখন আমি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আসলাম এবং তারপর বললাম: আপনার ডান হাত বাড়িয়ে দিন, আমি আপনার নিকট (আনুগত্যের) বাই‘আত গ্রহণ করতে চাই; তখন তিনি তাঁর ডানহাত প্রসারিত করে দিলেন। তিনি (‘আমর ইবন ‘আস রা.) বললেন: এবার আমি হাত গুটিয়ে নিলাম। তিনি বললেন: হে ‘আমর! তোমার কী হয়েছে? জবাবে আমি বললাম: আমি শর্ত করতে চাই। তিনি বললেন: তুমি কী শর্ত করতে চাও? জবাবে আমি বললাম: আমাকে যেন ক্ষমা করে দেওয়া হয়; এবার তিনি বললেন: “তোমার কি জানা নেই যে, ইসলাম ইসলাম-পূর্ব জীবনের সকল গুনাহ মিটিয়ে দেয়? আর হিজরত হিজরত-পূর্ব জীবনের সকল গুনাহ ধ্বংস করে দেয়? আর হাজ্জ হাজ্জ-পূর্ব জীবনের সকল গুনাহ ধ্বংস করে দেয়?” (যাই হউক, এরপর আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট বাই‘আত গ্রহণ করলাম)। আর তখন আমার নিকট রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেয়ে অধিক প্রিয় আর কেউ রইল না; আমার চোখে তাঁর চেয়ে অধিক মর্যাদাবানও আর কেউ থাকল না এবং তাঁর অপরিসীম মর্যাদা ও গাম্ভীর্যের দরুন আমি চোখভরে তাঁর প্রতি তাকাতে পর্যন্ত পারতাম না। ফলে আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের আকার-প্রকৃতি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তার বর্ণনা দিতে আমি অক্ষম হবো, কারণ আমি তাঁর প্রতি পূর্ণ চোখে তাকাতাম না। এই অবস্থায় যদি আমার মৃত্যু হয়ে যেতো, তাহলে আমি জান্নাতবাসীদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার নিশ্চিত আশা ছিল। এরপর আমাদেরকে অনেক যিম্মদারী বা দায়-দায়িত্ব মাথায় নিতে হলো; জানি না, সেসব ব্যাপারে আমার অবস্থা কী হবে? যাই হউক, আমার যখন মৃত্যু হবে, তখন আমার জানাযায় যেন কোনো বিলাপকারিনী ও আগুনের সংশ্রব না থাকে। আর তোমরা যখন আমাকে দাফন করবে, তখন আমার কবরে অল্প অল্প করে মাটি ফেলবে; অতঃপর আমার কবরের চারপাশে এ পরিমাণ সময় অবস্থান করবে, যে সময়ের মধ্যে একটি উট যবাই করে তার গোশত বণ্টন করা যায়; যাতে আমি তোমাদের ভালবাসা ও সান্নিধ্য লাভ করতে পারি এবং আমার রবের পাঠানো ফিরিশ্তাদের সাথে কি ধরনের বাক-বিনিময় হয়, তা জেনে নিতে পারি।”[12]
১. ২. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য ও অনুসরণ করা:
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা‘আলা একের পর এক ধারাবাহিকভাবে তাঁর রাসূলদেরকে প্রেরণ করেছেন, যাতে তাঁরা পথহারা মানুষদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে নিয়ে যেতে পারেন। আর আল্লাহ তা‘আলা তাঁদের অনুসরণ করাকে বাধ্যতামূলক করে দিয়েছেন। আল-কুরআনের ভাষায়: ﴿ ﻭَﻣَﺎٓ ﺃَﺭۡﺳَﻠۡﻨَﺎ ﻣِﻦ ﺭَّﺳُﻮﻝٍ ﺇِﻟَّﺎ ﻟِﻴُﻄَﺎﻉَ ﺑِﺈِﺫۡﻥِ ﭐﻟﻠَّﻪِۚ ﴾ [ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ : ٦٤ ]
“আল্লাহর অনুমতিক্রমে কেবলমাত্র আনুগত্য করার জন্যই আমরা রাসূলদের প্রেরণ করেছি।”[13] আর নবী-রাসূল প্রেরণের ধারাবহিকতায় নবীদের মাঝ থেকে আমাদের জন্য বরাদ্ধ হয়েছেন মুহাম্মাদ ইবন আবদিল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম, যেমনিভাবে উম্মাতগণের মধ্য থেকে আমরা হলাম তাঁর ভাগের উম্মাত; এই জন্য তাঁর আনুগত্য করা ছাড়া আর কোনো আনুগত্যই শুদ্ধ হবে না। আর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য করার বাধ্যবাধকতার ব্যাপারে আল-কুরআনুল কারীম অনেকভাবে বক্তব্য পেশ করেছে, যেগুলোকে সুস্পষ্ট আয়াত বলে গণ্য করা হয়:
(ক) রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ঈমান আনার আবশ্যকতা নিয়ে বর্ণিত আয়াত: আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿ ﻓََٔﺎﻣِﻨُﻮﺍْ ﺑِﭑﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺭَﺳُﻮﻟِﻪِ ﭐﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﭐﻟۡﺄُﻣِّﻲِّ ﭐﻟَّﺬِﻱ ﻳُﺆۡﻣِﻦُ ﺑِﭑﻟﻠَّﻪِ ﻭَﻛَﻠِﻤَٰﺘِﻪِۦ ﻭَﭐﺗَّﺒِﻌُﻮﻩُ ﻟَﻌَﻠَّﻜُﻢۡ ﺗَﻬۡﺘَﺪُﻭﻥَ ١٥٨ ﴾ [ ﺍﻻﻋﺮﺍﻑ : ١٥٨ ]
“কাজেই তোমরা ঈমান আন আল্লাহর প্রতি ও তাঁর রাসূল উম্মী নবীর প্রতি, যিনি আল্লাহ্ ও তাঁর বাণীসমূহে ঈমান রাখেন। আর তোমরা তার অনুসরণ কর, যাতে তোমরা হিদায়াতপ্রাপ্ত হও।”[14] আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনার বিষয়টির সাথে সংযুক্ত করে দেওয়া হয়েছে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য ও অনুসরণ করার বিষয়টিকে; সুতরাং জানা গেল যে, ব্যক্তির সকল অবস্থায় এই শর্তটি পূরণ করা আবশ্যক।
(খ) যে আয়াত প্রমাণ করে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য করা মানে আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্য করা; কেননা, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য করা ছাড়া আল্লাহর আনুগত্য হয় না:
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿ ﻣَّﻦ ﻳُﻄِﻊِ ﭐﻟﺮَّﺳُﻮﻝَ ﻓَﻘَﺪۡ ﺃَﻃَﺎﻉَ ﭐﻟﻠَّﻪَۖ ﴾ [ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ : ٨٠ ]
“কেউ রাসূলের আনুগত্য করলে সে তো আল্লাহরই আনুগত্য করল।”[15]
(গ) যে আয়াতে আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্য করার নির্দেশের সাথে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য করার বিষয়টিকে সংযুক্ত করে দেওয়া হয়েছে:
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿ ﻳَٰٓﺄَﻳُّﻬَﺎ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺀَﺍﻣَﻨُﻮٓﺍْ ﺃَﻃِﻴﻌُﻮﺍْ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﻭَﺃَﻃِﻴﻌُﻮﺍْ ﭐﻟﺮَّﺳُﻮﻝَ ﻭَﺃُﻭْﻟِﻲ ﭐﻟۡﺄَﻣۡﺮِ ﻣِﻨﻜُﻢۡۖ ﴾ [ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ : ٥٩ ]
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর, রাসূলের আনুগত্য কর, আরও আনুগত্য কর তোমাদের মধ্যকার ক্ষমতাশীলদের।”[16]
(ঘ) যেসব আয়াতে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য করার বিষয়টিকে আল্লাহর বন্দাগণের জন্য তাঁর রহমত পাওয়ার উপলক্ষ্য বানিয়ে দেওয়া হয়েছে:
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿ ﻭَﺃَﻃِﻴﻌُﻮﺍْ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﻭَﭐﻟﺮَّﺳُﻮﻝَ ﻟَﻌَﻠَّﻜُﻢۡ ﺗُﺮۡﺣَﻤُﻮﻥَ ١٣٢ ﴾ [ ﺍﻝ ﻋﻤﺮﺍﻥ : ١٣٢ ]
“আর তোমরা আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য কর, যাতে তোমরা কৃপা লাভ করতে পার।”[17] আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেছেন:
﴿ ﻭَﺃَﻃِﻴﻌُﻮﺍْ ﭐﻟﺮَّﺳُﻮﻝَ ﻟَﻌَﻠَّﻜُﻢۡ ﺗُﺮۡﺣَﻤُﻮﻥَ ٥٦ ﴾ [ ﺍﻟﻨﻮﺭ : ٥٦ ]
“আর তোমরা রাসূলের আনুগত্য কর, যাতে তোমাদের উপর রহম করা হয়।”[18]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ ﻭَﻳُﻄِﻴﻌُﻮﻥَ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﻭَﺭَﺳُﻮﻟَﻪُۥٓۚ ﺃُﻭْﻟَٰٓﺌِﻚَ ﺳَﻴَﺮۡﺣَﻤُﻬُﻢُ ﭐﻟﻠَّﻪُۗ ﴾ [ ﺍﻟﺘﻮﺑﺔ : ٧١ ]
“আর তারা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে; তারাই, যাদেরকে আল্লাহ্ অচিরেই দয়া করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ্ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।”[19]
(ঙ) যে আয়াত হেদায়াতের বিষয়টিকে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য করার শর্তের সাথে সংযুক্ত করেছে:
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿ ﻗُﻞۡ ﺃَﻃِﻴﻌُﻮﺍْ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﻭَﺃَﻃِﻴﻌُﻮﺍْ ﭐﻟﺮَّﺳُﻮﻝَۖ ﻓَﺈِﻥ ﺗَﻮَﻟَّﻮۡﺍْ ﻓَﺈِﻧَّﻤَﺎ ﻋَﻠَﻴۡﻪِ ﻣَﺎ ﺣُﻤِّﻞَ ﻭَﻋَﻠَﻴۡﻜُﻢ ﻣَّﺎ ﺣُﻤِّﻠۡﺘُﻢۡۖ ﻭَﺇِﻥ ﺗُﻄِﻴﻌُﻮﻩُ ﺗَﻬۡﺘَﺪُﻭﺍْۚ ﻭَﻣَﺎ ﻋَﻠَﻰ ﭐﻟﺮَّﺳُﻮﻝِ ﺇِﻟَّﺎ ﭐﻟۡﺒَﻠَٰﻎُ ﭐﻟۡﻤُﺒِﻴﻦُ ٥٤ ﴾ [ ﺍﻟﻨﻮﺭ : ٥٤ ]
“বলুন, ‘তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রাসূলের আনুগত্য কর।’ তারপর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে তার উপর অর্পিত দায়িত্বের জন্য তিনিই দায়ী এবং তোমাদের উপর অর্পিত দায়িত্বের জন্য তোমরাই দায়ী; আর তোমরা তার আনুগত্য করলে সৎপথ পাবে, মূলত: রাসূলের দায়িত্ব শুধু স্পষ্টভাবে পৌঁছে দেওয়া।”[20] আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্যের বিষয়টি তখনই প্রকৃত রূপে ফুটে উঠবে, যখন মুসলিম ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহকে হুবহু প্রাধান্য দিবে; কেননা, সে নিশ্চিতভাবে জানে যে, আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ মানব জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত (তার জন্ম থেকে কবরে মাটি চাপা দেওয়া পর্যন্ত) ছোট ও বড় সকল বিষয়কে নিখুঁতভাবে বর্ণনা করেছে।
সুতরাং যে ব্যক্তি এই কাজটি করবে, সে যেন গুনাহ্ মাফ ও পাপ মোচনের সুসংবাদ গ্রহণ করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿ ﻗُﻞۡ ﺇِﻥ ﻛُﻨﺘُﻢۡ ﺗُﺤِﺒُّﻮﻥَ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﻓَﭑﺗَّﺒِﻌُﻮﻧِﻲ ﻳُﺤۡﺒِﺒۡﻜُﻢُ ﭐﻟﻠَّﻪُ ﻭَﻳَﻐۡﻔِﺮۡ ﻟَﻜُﻢۡ ﺫُﻧُﻮﺑَﻜُﻢۡۚ ﻭَﭐﻟﻠَّﻪُ ﻏَﻔُﻮﺭٞ ﺭَّﺣِﻴﻢٞ ٣١ ﴾ [ ﺍﻝ ﻋﻤﺮﺍﻥ : ٣١ ]
“বলুন, ‘তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাস, তবে আমাকে অনুসরণ কর, আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করবেন। আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”[21]
আর যখন একদল জিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে শুনতে পায় এবং জানতে পারে যে, তাঁর অনুসরণ করা গুনাহ্ মাফের উপায়, তখন তারা তাদের সম্প্রদায়ের নিকট ভয় প্রদর্শনকারী হিসেবে ফিরে যায়। আল-কুরআনের ভাষায়:
﴿ ﻳَٰﻘَﻮۡﻣَﻨَﺎٓ ﺃَﺟِﻴﺒُﻮﺍْ ﺩَﺍﻋِﻲَ ﭐﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺀَﺍﻣِﻨُﻮﺍْ ﺑِﻪِۦ ﻳَﻐۡﻔِﺮۡ ﻟَﻜُﻢ ﻣِّﻦ ﺫُﻧُﻮﺑِﻜُﻢۡ ﻭَﻳُﺠِﺮۡﻛُﻢ ﻣِّﻦۡ ﻋَﺬَﺍﺏٍ ﺃَﻟِﻴﻢٖ ٣١ ﴾ [ ﺍﻻﺣﻘﺎﻑ : ٣١ ]
“হে আমাদের সম্প্রদায়! আল্লাহর দিকে আহ্বানকারীর প্রতি সাড়া দাও এবং তাঁর উপর ঈমান আন, তিনি তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করবেন এবং যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি হতে তোমাদেরকে রক্ষা করবেন।”[22]
আর এই জন্যই খাঁটি মুমিনদেরকে দেখা যায়— তারা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ করার মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলার কাছে প্রার্থনা ও মিনতি করে, যাতে তিনি তাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেন, পাপসমূহ মোচন করে দেন এবং সর্বোত্তমভাবে মৃত্যু তথা জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটান; আল-কুরআনের ভাষায়:
﴿ ﺭَّﺑَّﻨَﺎٓ ﺇِﻧَّﻨَﺎ ﺳَﻤِﻌۡﻨَﺎ ﻣُﻨَﺎﺩِﻳٗﺎ ﻳُﻨَﺎﺩِﻱ ﻟِﻠۡﺈِﻳﻤَٰﻦِ ﺃَﻥۡ ﺀَﺍﻣِﻨُﻮﺍْ ﺑِﺮَﺑِّﻜُﻢۡ ﻓََٔﺎﻣَﻨَّﺎۚ ﺭَﺑَّﻨَﺎ ﻓَﭑﻏۡﻔِﺮۡ ﻟَﻨَﺎ ﺫُﻧُﻮﺑَﻨَﺎ ﻭَﻛَﻔِّﺮۡ ﻋَﻨَّﺎ ﺳَﻴَِّٔﺎﺗِﻨَﺎ ﻭَﺗَﻮَﻓَّﻨَﺎ ﻣَﻊَ ﭐﻟۡﺄَﺑۡﺮَﺍﺭِ ١٩٣ ﴾ [ ﺍﻝ ﻋﻤﺮﺍﻥ : ١٩٣ ]
“হে আমাদের রব! আমরা এক আহ্বায়ককে ঈমানের দিকে আহ্বান করতে শুনেছি, ‘তোমরা তোমাদের রবের উপর ঈমান আন।’ কাজেই আমরা ঈমান এনেছি। হে আমাদের রব! আপনি আমাদের পাপরাশি ক্ষমা করুন, আমাদের মন্দ কাজগুলো দূরীভূত করুন এবং আমাদেরকে সৎকর্মপরায়ণদের সহগামী করে মৃত্যু দিন।”[23]
আর এই ধরনের অসীলা করাটা শরী‘য়তসম্মত অসীলার এক প্রকার; কেননা, সে সৎকাজ দ্বারা অসীলা করেছে। অতএব, হে আমাদের রব! তোমার নবীর প্রতি আমাদের ভালবাসা এবং কথায় ও কাজে তাঁর সুন্নাতের অনুসরণ করার কারণে আপনি আমাদের অন্তরকে আপনার দীনের উপর অটল রাখুন; আর আপনি এক মুহূর্তের জন্যেও আমাদেরকে আমাদের নিজেদের দায়িত্বে ছেড়ে দিবেন না; আর আপনি আমাদেরকে ক্ষমা করুন, আমাদের প্রতি দয়া করুন, আপনিই আমাদের অভিভাবক। অতএব কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য করুন। * * *
২. চরিত্রের অধ্যায় ২. ১. বিশুদ্ধ তাওবা[24]:
হে মুক্তির পথের পথিক বান্দা! জেনে রাখুন, তাওবা হলো ইসলামের মূলনীতিসমূহের অন্যতম একটি; আর তা হলো মহাশক্তিধর মালিকের নিকট নিশ্চিত অবস্থানের দিকে ভ্রমণকারীদের প্রথম মানযিল এবং পরকালের দিকে অভিযাত্রীদের দীর্ঘ পথের সূচনা। তা সত্ত্বেও এটা যেমনিভাবে সূচনা, ঠিক অনুরূপভাবে এটা মাঝামাঝি ও শেষও বটে; সুতরাং তা থেকে কোনো নৈতিকতা সম্পন্ন বান্দা বিচ্ছিন্ন হতে পারে না এবং মৃত্যু পর্যন্ত সে তা অব্যাহত রাখবে। আর তাওবার সূচনা হল এমনভাবে লজ্জিত বা অনুশোচনা করা, যা এ দৃঢ়তা, সঠিক ইচ্ছাশক্তি ও প্রকৃত জ্ঞানবোধ জন্ম দিবে যে, পাপরাশি হলো বান্দা ও তার প্রতিপালকের মাঝখানে পর্দা বা অন্তরায়; কেননা, তা অন্তরের ময়লা বা কালিমা; সুতরাং সে দ্রুত মুক্তি ও শান্তির দিকে চলবে; আর আল্লাহর দিকে ফিরে যাওয়া ছাড়া তাঁর থেকে মুক্তির কোনো উপায় নেই; আর যে ব্যক্তি তার রবের নিকট আশ্রয় নেয়, সে এমন আশ্রয়ে চলে যায়, যেখানে সে ক্ষতিগ্রস্ত হবে না এবং কখনও সে ফিরে আসবে না শূন্য হাতে। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿ ﻳَٰٓﺄَﻳُّﻬَﺎ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺀَﺍﻣَﻨُﻮﺍْ ﺗُﻮﺑُﻮٓﺍْ ﺇِﻟَﻰ ﭐﻟﻠَّﻪِ ﺗَﻮۡﺑَﺔٗ ﻧَّﺼُﻮﺣًﺎ ﻋَﺴَﻰٰ ﺭَﺑُّﻜُﻢۡ ﺃَﻥ ﻳُﻜَﻔِّﺮَ ﻋَﻨﻜُﻢۡ ﺳَﻴَِّٔﺎﺗِﻜُﻢۡ ﴾ [ ﺍﻟﺘﺤﺮﻳﻢ : ٨ ]
“হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা কর---বিশুদ্ধ তাওবা; সম্ভবত তোমাদের রব তোমাদের পাপসমূহ মোচন করে দেবেন।”[25] আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« ﺍﻟﺘَّﺎﺋِﺐُ ﻣِﻦْ ﺍﻟﺬَّﻧْﺐِ ﻛَﻤَﻦْ ﻟَﺎ ﺫَﻧْﺐَ ﻟَﻪُ » . ( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﻪ ) .
“গুনাহ্ থেকে তাওবাকারী ব্যক্তি ঐ ব্যক্তির মত, যার কোনো গুনাহ্ নেই।”[26] অতএব, হে আমার ভাই! তাওবা ও তোমার মাঝে প্রতিবন্ধকতার দেয়াল রচিত হওয়ার পূর্বেই তুমি তাওবার কাজটি দ্রুত সম্পন্ন কর; কারণ, কোনো ব্যক্তিই জানে না যে, আল্লাহ তার সাথে কেমন আচরণ করবেন।
জনৈক কবির কবিতা:
ﻗَﺪِّﻡْ ﻟِﻨَﻔْﺴِﻚَ ﺗَﻮْﺑَﺔً ﻣَﺮْﺟُﻮَّﺓً ﻗَﺒْﻞَ ﺍﻟﻤَﻤَﺎﺕِ ﻭَﻗَﺒْﻞَ ﺣَﺒْﺲِ ﺍﻷَﻟْﺴُﻦِ
(তুমি তোমার নিজের জন্য প্রত্যাশিত তাওবা পেশ কর মৃত্যুর পূর্বে এবং কথা বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগেই)।
ﺑﺎﺩِﺭ ﺑﻬﺎ ﻏَﻠﻖَ ﺍﻟﻨّﻔﻮﺱ ﻓﺈﻧَّﻬﺎ ﺫُﺧﺮٌ ﻭﻏُﻨﻢ ﻟﻠﻤُﻨﻴﺐ ﺍﻟﻤﺤﺴِﻦِ
(সুযোগ নষ্ট হয়ে যাওয়ার আগেই তুমি তা সম্পন্ন কর; কারণ, তা হল তাওবাকারী সৎকর্মশীল ব্যক্তির জন্য সঞ্চিত ধন ও গনীমত)।
২. ২. উদারতা[27] প্রদর্শন:
ইসলামের প্রত্যেকটি আদেশ ও নিষেধের মধ্যে সূক্ষ্ম ও স্থূলভাবে উদারতার বিষয়টি সুস্পষ্ট; সুতরাং বাস্তবেই নতুনভাবে সেটার পুনরুত্থান ঘটেছে ইসলামের মূলবস্তুতে এবং তার প্রত্যেকটি কর্মপদ্ধতি, নিয়মনীতি ও শাসনব্যবস্থার মধ্যে। ইসলামের মধ্যে উদারতার বিষয়টি স্বর্ণের এমন প্রলেপের মত নয় যে, মানুষ কোনো মরুভূমির মরীচিকায় ঝাঁপিয়ে পড়বে, পিপাসা কাতর ব্যক্তি তাকে পানি মনে করবে, কিন্তু যখন সে সেটার কাছে আসে, তখন দেখে সেটা আসলে কিছুই নয়। উদারতা মানে বদান্যতা ও দানশীলতার মাধ্যমে মনের তৃপ্তি, স্বচ্ছতা ও দীনদারীর দ্বারা হৃদয়ে আনন্দ উপভোগ করা, সহজ ও সরল করার মাধ্যমে নম্রতা প্রদর্শন করা, আনন্দময় ও সুসংবাদ নিয়ে হাস্যোজ্জ্বল চেহারা প্রদর্শন, কোনো প্রকার অপদস্থতা ছাড়াই মুমিনগণের প্রতি বিনয় প্রদর্শন, কোনো প্রকার ধোকা ও প্রতারণা ছাড়াই লেনদেনে ছাড় প্রদান, কোনো প্রকার খাতির ও তোষামোদ ছাড়াই আল্লাহর দিকে আহ্বান করার ক্ষেত্রে সহজ পন্থা অবলম্বন, কোনো প্রকার দ্বিধাদ্বন্দ্ব ও গড়িমসি ছাড়াই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার দীনের আনুগত্য করা। বস্তুত উদারতা হচ্ছে ইসলামের দরজা, নৈতিক চরিত্রের উচ্চ সোপান এবং ঈমানের সর্বোত্তম বস্তু।
এটাই হলো সে উদারতা, যা পাপরাশিকে ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে দেয়; আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿ ﻭَﻟَﺎ ﻳَﺄۡﺗَﻞِ ﺃُﻭْﻟُﻮﺍْ ﭐﻟۡﻔَﻀۡﻞِ ﻣِﻨﻜُﻢۡ ﻭَﭐﻟﺴَّﻌَﺔِ ﺃَﻥ ﻳُﺆۡﺗُﻮٓﺍْ ﺃُﻭْﻟِﻲ ﭐﻟۡﻘُﺮۡﺑَﻰٰ ﻭَﭐﻟۡﻤَﺴَٰﻜِﻴﻦَ ﻭَﭐﻟۡﻤُﻬَٰﺠِﺮِﻳﻦَ ﻓِﻲ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﭐﻟﻠَّﻪِۖ ﻭَﻟۡﻴَﻌۡﻔُﻮﺍْ ﻭَﻟۡﻴَﺼۡﻔَﺤُﻮٓﺍْۗ ﺃَﻟَﺎ ﺗُﺤِﺒُّﻮﻥَ ﺃَﻥ ﻳَﻐۡﻔِﺮَ ﭐﻟﻠَّﻪُ ﻟَﻜُﻢۡۚ ﻭَﭐﻟﻠَّﻪُ ﻏَﻔُﻮﺭٞ ﺭَّﺣِﻴﻢٌ ٢٢ ﴾ [ ﺍﻟﻨﻮﺭ : ٢٢ ]
“আর তোমাদের মধ্যে যারা ঐশ্বর্য ও প্রাচুর্যের অধিকারী, তারা যেন শপথ গ্রহণ না করে যে, তারা আত্মীয়-স্বজন, অভাবগ্রস্তকে ও আল্লাহর রাস্তায় হিজরতকারীদেরকে কিছুই দেবে না; তারা যেন ওদেরকে ক্ষমা করে এবং ওদের দোষ-ত্রুটি উপেক্ষা করে। তোমরা কি চাও না যে, আল্লাহ্ তোমাদেরকে ক্ষমা করুন? আর আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”[28] আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« ﺗَﻠَﻘَّﺖِ ﺍﻟْﻤَﻼﺋِﻜَﺔُ ﺭُﻭْﺡَ ﺭَﺟُﻞٍ ﻣِﻤَّﻦْ ﻛَﺎﻥَ ﻗَﺒْﻠَﻜُﻢْ ، ﻗَﺎﻟُﻮﺍ ﻟَﻪُ : ﻋَﻤِﻠْﺖَ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺨَﻴْﺮِ ﺷَﻴْﺌًﺎ ؟ ﻗَﺎﻝَ : ﻻ ، ﻗَﺎﻟُﻮﺍ : ﺗَﺬَﻛَّﺮْ ، ﻗَﺎﻝَ : ﻛُﻨْﺖُ ﺃُﺩَﺍﻳِﻦُ ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ ، ﻓَﺂﻣُﺮُ ﻓِﺘْﻴَﺎﻧِﻲ ﺃَﻥْ ﻳُﻨْﻈِﺮُﻭﺍ ﺍﻟْﻤُﻮﺳِﺮَ ، ﻭَﻳَﺘَﺠَﺎﻭَﺯُﻭﺍ ﻋَﻦِ ﺍﻟْﻤُﻌْﺴِﺮِ ، ﻗَﺎﻝَ ﻗَﺎﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪُ : ﺗَﺠَﺎﻭَﺯُﻭﺍ ﻋَﻨْﻪُ » . ( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ﻭ ﻣﺴﻠﻢ ) .
“তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মাতের এক ব্যক্তির রূহের সাথে ফিরিশ্তাগণ সাক্ষাৎ করে (অর্থাৎ তার মৃত্যুকালে) জিজ্ঞাসা করলেন: তুমি (বিশেষ) কোনো সৎকাজ করেছ কি? সে বলল: না, তারা বললেন: স্মরণ করে দেখ; সে বলল: আমি মানুষের সাথে লেনদেন করতাম; তারপর অসচ্ছল ব্যক্তিদের অবকাশ দিতে ও সচ্ছল ব্যক্তিদের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন করতে আমি আমার লোকদেরকে নির্দেশ দিতাম। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: এরপর মহান আল্লাহ তা‘আলা বললেন: “তাকে দায়মুক্ত করে দাও।”[29]
২. ৩. মন্দকাজের পরে ভালকাজ করা:
মানুষ প্রবৃত্তি ও লোভ-লালসার কাছে দুর্বল; সুতরাং বান্দা যখন কোনো অন্যায় ও অপরাধ করে ফেলে, তখন সে যেন দ্রুত তার মোকাবিলায় একটি ভাল কাজ করে ফেলে; যেমন— কর্কশ ব্যবহারের মোকাবিলা করবে কোমল ব্যবহার দ্বারা, ক্রোধের মোকাবিলা করবে সংযম প্রদর্শন করার দ্বারা এবং এভাবে করে প্রতিটি মন্দের মোকাবিলায় ভালো অভ্যাস গড়ে তুলবে এবং সমস্যার সমাধান করবে; আর এটাই সবচেয়ে লাগসই পদ্ধতি কিন্তু এটা হওয়া এমন শর্ত নয় যে প্রয়োজনে তার অন্যথা করা যাবে না; কারণ, রোগের চিকিৎসা করা হয় তার বিপরীত বস্তুর দ্বারা; আর প্রতিটি অপরাধই অন্তরকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করে ফেলে, যা তার বিপরীতে ভালকাজের মত নূর বা আলো ছাড়া দূর করতে পারে না। আর যে ব্যক্তি এ অবস্থানের অনুসন্ধান করবে, সে দেখবে যে সবচেয়ে সুন্দর ও দ্রুত কার্যকরী পন্থা হলো পুরাতন গুনাহের জন্য নতুন করে ভালকাজ করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ ﺇِﻥَّ ﭐﻟۡﺤَﺴَﻨَٰﺖِ ﻳُﺬۡﻫِﺒۡﻦَ ﭐﻟﺴَّﻴَِّٔﺎﺕِۚ ﺫَٰﻟِﻚَ ﺫِﻛۡﺮَﻯٰ ﻟِﻠﺬَّٰﻛِﺮِﻳﻦَ ١١٤ ﴾ [ ﻫﻮﺩ : ١١٤ ]
“নিশ্চয় সৎকাজ অসৎকাজকে মিটিয়ে দেয়। উপদেশ গ্রহণকারীদের জন্য এটা এক উপদেশ।”[30] আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« ﺍﺗَّﻖِ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﺣَﻴْﺚُ ﻣَﺎ ﻛُﻨْﺖَ ، ﻭَﺃَﺗْﺒِﻊِ ﺍﻟﺴَّﻴِّﺌَﺔَ ﺍﻟْﺤَﺴَﻨَﺔَ ﺗَﻤْﺤُﻬَﺎ ، ﻭَﺧَﺎﻟِﻖِ ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ ﺑِﺨُﻠُﻖٍ ﺣَﺴَﻦٍ » . ( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ ) .
“তুমি যেখানেই থাক, আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর এবং অসৎকাজ করলে সাথে সাথেই সৎকাজ কর, তাহলে ভাল কাজ মন্দ কাজকে নিশ্চিহ্ন করে দেবে; আর মানুষের সাথে উত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে মেলামেশা কর।”[31]
২. ৪. সালাম দেওয়া ও উত্তম কথা বলা:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« ﺇﻥ ﻣﻦ ﻣﻮﺟﺒﺎﺕ ﺍﻟﻤﻐﻔﺮﺓ ﺑﺬﻝ ﺍﻟﺴﻼﻡ ﻭﺣﺴﻦ ﺍﻟﻜﻼﻡ » .
“ক্ষমা নিশ্চিতকরণের অন্যতম উপায় হলো সালাম বিনিময় করা এবং উত্তম কথা বলা।”[32]
২. ৫. মুসাফাহা বা করমর্দন:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« ﻣَﺎ ﻣِﻦْ ﻣُﺴْﻠِﻤَﻴْﻦِ ﻳَﻠْﺘَﻘِﻴَﺎﻥِ ﻓَﻴَﺘَﺼَﺎﻓَﺤَﺎﻥِ ﺇِﻟَّﺎ ﻏُﻔِﺮَ ﻟَﻬُﻤَﺎ ﻗَﺒْﻞَ ﺃَﻥْ ﻳَﻔْﺘَﺮِﻗَﺎ » . ( ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺑﻮ ﺩﺍﻭﺩ ﻭ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ ﻭ ﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﻪ ) .
“দুই মুসলিমের যখন সাক্ষাৎ হয় এবং তারা পরস্পর মুসাফাহা করে, তখন তাদের বিচ্ছিন্ন হওয়ার আগেই আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে ক্ষমা করে দেন।”[33]
২. ৬. জীব-জন্তুর প্রতি দয়া ও কোমল আচরণ করা:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« ﺑَﻴْﻨَﻤَﺎ ﺭَﺟُﻞٌ ﻳَﻤْﺸِﻲ ﺑِﻄَﺮِﻳﻖٍ ، ﺇِﺫْ ﺍﺷْﺘَﺪَّ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺍﻟْﻌَﻄَﺶُ ، ﻓَﻮَﺟَﺪَ ﺑِﺌْﺮًﺍ ، ﻓَﻨَﺰَﻝَ ﻓِﻴﻬَﺎ ﻓَﺸَﺮِﺏَ ، ﺛُﻢَّ ﺧَﺮَﺝَ ، ﻓَﺈِﺫَﺍ ﻛَﻠْﺐٌ ﻳَﻠْﻬَﺚُ ﻳَﺄْﻛُﻞُ ﺍﻟﺜَّﺮَﻯ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻌَﻄَﺶِ ، ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺍﻟﺮَّﺟُﻞُ : ﻟَﻘَﺪْ ﺑَﻠَﻎَ ﻫَﺬَﺍ ﺍﻟْﻜَﻠْﺐَ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻌَﻄَﺶِ ﻣِﺜْﻞُ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﺑَﻠَﻎَ ﻣِﻨِّﻲْ ، ﻓَﻨَﺰَﻝَ ﺍﻟْﺒِﺌْﺮَ ، ﻓَﻤَﻸَ ﺧُﻔَّﻪُ ، ﺛُﻢَّ ﺃَﻣْﺴَﻜَﻪُ ﺑِﻔِﻴﻪِ ﺣَﺘَّﻰ ﺭَﻗِﻲَ ، ﻓَﺴَﻘَﻰ ﺍﻟْﻜَﻠْﺐَ ، ﻓَﺸَﻜَﺮَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻟَﻪُ ، ﻓَﻐَﻔَﺮَ ﻟَﻪُ ، ﻓَﻘَﺎﻟُﻮﺍ : ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ، ﺇِﻥَّ ﻟَﻨَﺎ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺒَﻬَﺎﺋِﻢِ ﻷَﺟْﺮًﺍ ؟ ﻓَﻘَﺎﻝَ : « ﻓِﻲ ﻛُﻞِّ ﺫَﺍﺕِ ﻛَﺒِﺪٍ ﺭَﻃْﺒَﺔٍ ﺃَﺟْﺮٌ » . ( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ﻭ ﻣﺴﻠﻢ ﻭ ﺃﺑﻮ ﺩﺍﻭﺩ ﻭ ﺃﺣﻤﺪ ) .
“একদা এক ব্যক্তি পথে হেঁটে যাচ্ছিল, এক পর্যায়ে তার তীব্র পিপাসা লাগে; তারপর সে একটি কূপ পেয়ে গেল, তারপর সে তাতে অবতরণ করল এবং পানি পান করল; অতঃপর সে উঠে এলো; হঠাৎ করে দেখল, একটি কুকুর হাপাচ্ছে, পিপাসায় কাতর হয়ে কাদ চাটছে; অতঃপর লোকটি বলল: এ কুকুরটি পিপাসায় সেরূপ কষ্ট পাচ্ছে, যেরূপ কষ্ট আমার হয়েছিল। অতঃপর সে কূপে অবতরণ করল এবং তার মোজার মধ্যে পানি ভরল, তারপর তা মুখ দিয়ে তা (কামড়িয়ে) ধরে উপরে উঠে এলো। তারপর সে কুকুরটিকে পানি পান করাল। তারপর আল্লাহ তাকে তার প্রতিদান দিলেন এবং তাকে ক্ষমা করে দিলেন। সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেন: হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম! জীব-জন্তুর জন্যও কি আমাদের পুরস্কার আছে? জবাবে তিনি বললেন: হ্যাঁ, প্রত্যেক সতেজ হৃদয়ের (সাথে ভালো ব্যবহারের) জন্যে পুরস্কারের ব্যবস্থা রয়েছে।”[34] এই হলো জীবজন্তুর প্রতি দয়া ও কোমল ব্যবহারের ব্যাপারে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাতের কতিপয় দৃষ্টিভঙ্গি। আর এই বর্ণনার মধ্যে কতিপয় ইউরোপীয় কাফিরদের দ্বারা প্রভাবিত জ্ঞানপাপীদের জন্য সত্য সুন্দর ও সুস্পষ্ট বক্তব্য রয়েছে যে, ইসলাম এসব ইউরোপীয় কাফিরদের অনেক আগেই জীবজন্তুর প্রতি দয়া ও কোমল আচরণের নিয়মকানুন প্রণয়ন করেছে, যা তারা মুসলিমগণের কাছ থেকে শিক্ষা লাভ করেছে, তাতে ব্যাপক প্রসার করেছে এবং তাকে বিধিবদ্ধ করেছে, এমনকি ঐসব জ্ঞানপাপীরা ধারণা করে নিয়েছে যে, তা ইউরোপীয়দের বিশেষ বৈশিষ্ট্য। এই ইসলামী মূলনীতির মূলবস্তু হলো দয়া, সহানুভূতি, সেগুলোর উপর সাধ্যের বাইরে বোঝা চাপিয়ে না দেওয়া এবং সেগুলোকে খেল ও তামাশার উদ্দেশ্য হিসেবে গ্রহণ না করা। কিন্তু যেসব কাফির জীবজন্তুর প্রতি দয়া করার নীতিতে বিশ্বাসী এবং এই উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সংগঠন ও সংস্থা গড়ে তুলেছে, তাদের নিকট জীবজন্তুর প্রতি দয়া করার বিষয়টি এমন নিম্ন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে, তারা তাকে মানুষের উপর মর্যাদা দিয়ে ফেলেছে। আর তাদের কোনো কোন দেশে তারা বিষয়টিকে খেল-তামাশার বস্তু হিসেবে গ্রহণ করেছে; উদাহরণস্বরূপ সাবেক মুসলিম স্পেন বর্তমান খ্রিষ্টান স্পেন রাজ্যে বিস্তৃত বলদ বা ষাড়ের মধ্যকার লড়াইয়ের কথা বলা যায় (!)।
২. ৭. কবীরা গুনাহ্ ও ধ্বংসাত্মক অপরাধ থেকে বিরত থাকা: আল্লাহ আপনার প্রতি রহম করুন, জেনে রাখবেন যে, পরিপূর্ণ মুমিনগণ যাবতীয় কবীরা গুনাহ্ ও অশ্লীল কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকে। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿ ﻭَﻟِﻠَّﻪِ ﻣَﺎ ﻓِﻲ ﭐﻟﺴَّﻤَٰﻮَٰﺕِ ﻭَﻣَﺎ ﻓِﻲ ﭐﻟۡﺄَﺭۡﺽِ ﻟِﻴَﺠۡﺰِﻱَ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺃَﺳَٰٓـُٔﻮﺍْ ﺑِﻤَﺎ ﻋَﻤِﻠُﻮﺍْ ﻭَﻳَﺠۡﺰِﻱَ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺃَﺣۡﺴَﻨُﻮﺍْ ﺑِﭑﻟۡﺤُﺴۡﻨَﻰ ٣١ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳَﺠۡﺘَﻨِﺒُﻮﻥَ ﻛَﺒَٰٓﺌِﺮَ ﭐﻟۡﺈِﺛۡﻢِ ﻭَﭐﻟۡﻔَﻮَٰﺣِﺶَ ﺇِﻟَّﺎ ﭐﻟﻠَّﻤَﻢَۚ ﺇِﻥَّ ﺭَﺑَّﻚَ ﻭَٰﺳِﻊُ ﭐﻟۡﻤَﻐۡﻔِﺮَﺓِۚ ﻫُﻮَ ﺃَﻋۡﻠَﻢُ ﺑِﻜُﻢۡ ﺇِﺫۡ ﺃَﻧﺸَﺄَﻛُﻢ ﻣِّﻦَ ﭐﻟۡﺄَﺭۡﺽِ ﻭَﺇِﺫۡ ﺃَﻧﺘُﻢۡ ﺃَﺟِﻨَّﺔٞ ﻓِﻲ ﺑُﻄُﻮﻥِ ﺃُﻣَّﻬَٰﺘِﻜُﻢۡۖ ﻓَﻠَﺎ ﺗُﺰَﻛُّﻮٓﺍْ ﺃَﻧﻔُﺴَﻜُﻢۡۖ ﻫُﻮَ ﺃَﻋۡﻠَﻢُ ﺑِﻤَﻦِ ﭐﺗَّﻘَﻰٰٓ ٣٢ ﴾ [ ﺍﻟﻨﺠﻢ : ٣١، ٣٢ ] “আর আসমানসমূহে যা কিছু আছে ও যমীনে যা কিছু আছে তা আল্লাহরই। যাতে তিনি তাদের কাজের প্রতিফল দিতে পারেন, যারা মন্দ কাজ করে এবং তাদেরকে তিনি উত্তম পুরস্কার দিতে পারেন, যারা সৎকাজ করে; যারা বিরত থাকে গুরুতর পাপ ও অশ্লীল কাজ থেকে, ছোটখাট অপরাধ ব্যতীত। নিশ্চয় আপনার রবের ক্ষমা অপরিসীম; তিনি তোমাদের সম্পর্কে সম্যক অবগত---যখন তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছিলেন মাটি হতে এবং যখন তোমরা মাতৃগর্ভে ভ্রূণরূপে ছিলে। অতএব তোমরা আত্মপ্রশংসা করো না, তিনিই সম্যক জানেন তার সম্পর্কে, যে তাকওয়া অবলম্বন করেছে।”[35]
কিন্তু বান্দা অপরাধে জড়িয়ে যাওয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করতে সমর্থ হয় না; আর এ জন্যেই আল্লাহ তা‘আলা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং তাঁর প্রতিশ্রুতি সত্য; সুতরাং তিনি বলেছেন আর তার বাণী সত্য:
﴿ ﺇِﻥ ﺗَﺠۡﺘَﻨِﺒُﻮﺍْ ﻛَﺒَﺎٓﺋِﺮَ ﻣَﺎ ﺗُﻨۡﻬَﻮۡﻥَ ﻋَﻨۡﻪُ ﻧُﻜَﻔِّﺮۡ ﻋَﻨﻜُﻢۡ ﺳَﻴَِّٔﺎﺗِﻜُﻢۡ ﻭَﻧُﺪۡﺧِﻠۡﻜُﻢ ﻣُّﺪۡﺧَﻠٗﺎ ﻛَﺮِﻳﻤٗﺎ ٣١ ﴾ [ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ : ٣١ ]
“তোমাদেরকে যা নিষেধ করা হয়েছে, তার মধ্যে যা কবীরা গোনাহ্ তা থেকে বিরত থাকলে আমরা তোমাদের ছোট পাপগুলো ক্ষমা করব এবং তোমাদেরকে সম্মানজনক স্থানে প্রবেশ করাব।”[36] এখানে উদ্দেশ্য হলো পাপ মোচন ও গুনাহ্ ক্ষমার বর্ণনা করা, যখন কবীরা গুনাহসমূহ থেকে বিরত থাকা হয় .... আর এখানে এটাই হলো আল্লাহ তা‘আলার ওয়াদা এবং মুমিনদের জন্য তাঁর পক্ষ থেকে সুসংবাদ।
২. ৮. বিপদ-মুসিবত:
মনের বেদনা, শরীরের অসুস্থতা, প্রিয়জনকে হারানো এবং সম্পদের ক্ষয়-ক্ষতি থেকে কোনো ব্যক্তিই নিরাপদ নয়। আর এর থেকে মুক্ত নয় সৎকর্মশীল ও অসৎকর্মশীল ব্যক্তি এবং মুমিন ও কাফির কেউই; কিন্তু মুমিন ব্যক্তি এই বিপদ-মুসিবতগুলোকে সন্তুষ্ট চিত্তে গ্রহণ করে; এমন চিত্ত যা তার চালিকা শক্তিকে আল্লাহর হাতে ন্যস্ত করেছে। কারণ, সে নিশ্চিত জ্ঞানে জানে যে, সে যে বিপদে আক্রান্ত হয়েছে, তা তাকে ছেড়ে যেতো না, আর যে বিপদ তাকে পায় নি তা তার উপর আপতিত হবে না। আর এই বিপদগুলো মুমিন বান্দাকে তার পাপরাশি থেকে এমনভাবে পবিত্র করে দেয়, যেমনিভাবে সাদা কাপড়কে পানি, বরফ ও শিশির দ্বারা ধৌত করা হয়; ফলে সে বালা-মুসিবত থেকে ঐ দিনের মত (পাপমুক্ত হয়ে) বের হয়, যেদিন তার মা তাকে নিষ্পাপ অবস্থায় প্রসব করেছে। আর এই অপরাধের বিষয়টি মানুষের জন্য একটি অপরিহার্য বিষয়; কেননা, আল্লাহর বান্দাদের প্রতি তাঁর রহমতের ব্যাপারটি হল— তিনি তাদেরকে একের পর এক বিপদ-মুসিবতের প্রতিশ্রুতি দেন যাতে তিনি তাদেরকে পরিশুদ্ধ ও পবিত্র করেন; আর তাদের থেকে শয়তানের কুমন্ত্রণা দূর করেন, তাদের হৃদয়সমূহ দৃঢ় রাখেন এবং এর মাধ্যমে তাদের পা-সমূহ সুস্থির রাখেন। এই বিপদ-মুসিবতগুলো আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে তাঁর বান্দাদের প্রতি সন্তুষ্টি ও ভালবাসার প্রমাণস্বরূপ; কারণ, আল্লাহ তা‘আলা যখন কোনো বান্দাকে ভালবাসেন, তখন তিনি তাকে বিপদ-মুসিবত দ্বারা পরীক্ষা করেন; আর যখনই ব্যক্তির ঈমান ও বিশ্বাস মজবুত ও শক্তিশালী হবে, তখনই তার পরীক্ষা কঠিন থেকে কঠিনতর হবে; সুতরাং এই অবস্থায় যে সন্তুষ্ট থাকবে, তারা জন্য রয়েছে (আল্লাহর) সন্তুষ্টি; আর যে অধৈর্য হবে, তার জন্য রয়েছে (আল্লাহর) অসন্তুষ্টি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« ﺃَﺷَﺪُّ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ ﺑَﻼﺀً ﺍﻷَﻧْﺒِﻴَﺎﺀُ ، ﺛُﻢَّ ﺍﻷَﻣْﺜَﻞُ ﻓَﺎﻷَﻣْﺜَﻞُ ، ﻳُﺒْﺘَﻠَﻰ ﺍﻟﺮَّﺟُﻞُ ﻋَﻠَﻰ ﺣَﺴَﺐِ ﺩِﻳﻨِﻪِ ، ﻓَﺈِﻥْ ﻛَﺎﻥَ ﻓِﻲ ﺩِﻳﻨِﻪِ ﺻُﻠْﺒًﺎ ﺍﺷْﺘَﺪَّ ﺑَﻼﺅُﻩُ ، ﻭَﺇِﻥْ ﻛَﺎﻥَ ﻓِﻲ ﺩِﻳﻨِﻪِ ﺭِﻗَّﺔٍ ﺍﺑْﺘُﻠِﻲَ ﻋَﻠَﻰ ﺣَﺴَﺐِ ﺩِﻳﻨِﻪِ ، ﻓَﻤَﺎ ﻳَﺒْﺮَﺡُ ﺍﻟْﺒَﻠَﺎﺀُ ﺑِﺎﻟْﻌَﺒْﺪِ ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﺘْﺮُﻛَﻪُ ﻳَﻤْﺸِﻲ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﻣَﺎ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻣِﻦْ ﺧَﻄِﻴﺌَﺔٍ » . ( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ ﻭ ﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﻪ ) .
“মানুষের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন মুসিবতের শিকার হয়েছেন নবীগণ; অতঃপর ক্রমানুসারে পরবর্তী ধাপের সৎব্যক্তিগণ, ব্যক্তি পরীক্ষা বা কষ্টের সম্মুখীন হবে তার দীনদারী অনুসারে; সুতরাং সে যদি তার দীনের ব্যাপারে দৃঢ়তার সাথে অটল থাকে, তাহলে তার বিপদ-আপদও কঠোর থেকে কঠোরতর হবে; আর যদি সে তার দীনের ব্যাপারে আপোষকামী হয়, তাহলে সে পরীক্ষা বা কষ্টের সম্মুখীন হবে তার দীনদারী অনুসারে; সুতরাং বান্দা বালা-মুসিবতে আক্রান্ত হতেই থাকবে যতক্ষণ না তা তাকে যমীনের উপরে গুনাহ বিহীন অবস্থায় চলাফেরা করাতে পারবে।”[37] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:
« ﺇِﺫَﺍ ﺍﺑْﺘَﻠَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺍﻟْﻌَﺒْﺪَ ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻢَ ﺑِﺒَﻠَﺎﺀٍ ﻓِﻲ ﺟَﺴَﺪِﻩِ ﻗَﺎﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪُ : ﺍﻛْﺘُﺐْ ﻟَﻪُ ﺻَﺎﻟِﺢَ ﻋَﻤَﻠِﻪِ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻛَﺎﻥَ ﻳَﻌْﻤَﻠُﻪُ ، ﻓَﺈِﻥْ ﺷَﻔَﺎﻩُ ﻏَﺴَﻠَﻪُ ﻭَﻃَﻬَّﺮَﻩُ ، ﻭَﺇِﻥْ ﻗَﺒَﻀَﻪُ ﻏَﻔَﺮَ ﻟَﻪُ ﻭَﺭَﺣِﻤَﻪُ » . ( ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺣﻤﺪ ) .
“যখন আল্লাহ তা‘আলা কোনো মুসলিম বান্দাকে তার শারীরিক দুঃখ-কষ্ট বা রোগ-ব্যাধির দ্বারা পরীক্ষা করেন, তখন আল্লাহ বলেন: তার সৎকাজগুলো লিখ, যে কাজগুলো সে (সুস্থ অবস্থায়) করত; অতঃপর তিনি যদি তাকে রোগমুক্ত করেন, তাহলে তিনি (রহমতের পানি দ্বারা) ধুয়ে মুছে তাকে পবিত্র করে দেন; আর যদি তাকে মৃত্যুর মাধ্যমে উঠিয়ে নেন, তাহলে তিনি তাকে ক্ষমা করে দেন এবং তার প্রতি রহম করেন।”[38]
আবূ শা‘ছা আস-সান‘আনী থেকে বর্ণিত: তিনি একদা দামেস্কের একটি মাসজিদে গমন করেন এবং এক পর্যায়ে সন্ধ্যায় ভ্রমণ করতে লাগলেন, অতঃপর তার সাথে সাক্ষাৎ হয়ে গেল সাদ্দাদ ইবন আউস ও আস-সুনাবেহী’র। অতঃপর আমি (আবূ শা‘ছা আস-সানা‘আনী) বললাম: আল্লাহ তোমাদের প্রতি রহম করুন, তোমরা কোথায় যাওয়ার পরিকল্পনা করেছ? জবাবে তারা বলল: আমরা সেখানে আমাদের এক অসুস্থ ভাইকে দেখতে যাচ্ছি; অতঃপর আমিও তাদের সাথে চললাম, তারপর তারা ঐ ব্যক্তির নিকট উপস্থিত হয়ে বলল: তোমার সকাল কেমন কেটেছে? জবাবে সে বলল: আমার সকাল নেয়ামতের উপর কেটেছে। অতঃপর তাকে উদ্দেশ্য করে সাদ্দাদ ইবন আউস বললেন: আমি তোমাকে গুনাহ মাফ ও পাপ মোচনের সুসংবাদ দিচ্ছি; কারণ, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি:
« ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻋَﺰَّ ﻭَﺟَﻞَّ ﻳَﻘُﻮﻝُ : ﺇِﻧِّﻲ ﺇِﺫَﺍ ﺍﺑْﺘَﻠَﻴْﺖُ ﻋَﺒْﺪًﺍ ﻣِﻦْ ﻋِﺒَﺎﺩِﻱ ﻣُﺆْﻣِﻨًﺎ ﻓَﺤَﻤِﺪَﻧِﻲ ﻋَﻠَﻰ ﻣَﺎ ﺍﺑْﺘَﻠَﻴْﺘُﻪُ ، ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﻳَﻘُﻮﻡُ ﻣِﻦْ ﻣَﻀْﺠَﻌِﻪِ ﺫَﻟِﻚَ ﻛَﻴَﻮْﻡِ ﻭَﻟَﺪَﺗْﻪُ ﺃُﻣُّﻪُ ﻣِﻦْ ﺍﻟْﺨَﻄَﺎﻳَﺎ ، ﻭَﻳَﻘُﻮﻝُ ﺍﻟﺮَّﺏُّ ﻋَﺰَّ ﻭَﺟَﻞَّ : ﺃَﻧَﺎ ﻗَﻴَّﺪْﺕُ ﻋَﺒْﺪِﻱ ﻭَﺍﺑْﺘَﻠَﻴْﺘُﻪُ ، ﻭَﺃَﺟْﺮُﻭﺍ ﻟَﻪُ ﻛَﻤَﺎ ﻛُﻨْﺘُﻢْ ﺗُﺠْﺮُﻭﻥَ ﻟَﻪُ ﻭَﻫُﻮَ ﺻَﺤِﻴﺢٌ » . ( ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺣﻤﺪ ) .
“নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমি যখন আমার বান্দাগণের মধ্য থেকে কোনো মুমিন বান্দাকে কোনো বিপদ-মুসিবত দ্বারা পরীক্ষা করি, অতঃপর সে আমার দুঃখ-কষ্টের পরীক্ষা করা অবস্থায় আমার প্রশংসা করে, তখন সে তার শয্যা থেকে ঐ দিনের মত নিষ্পাপ অবস্থায় উঠবে, যেদিন তার মা তাকে নিষ্পাপ অবস্থায় প্রসব করেছে; আর মহান রব বলবেন: আমি আমার বান্দাকে আটক করেছি এবং তাকে দুঃখ-কষ্ট দ্বারা পরীক্ষা করেছি, তোমরা তার জন্য সাওয়াব লিখবে, যেমনিভাবে তোমরা তার সুস্থ অবস্থায় তার জন্য সাওয়াব লিখতে।”[39] * * *
৩. পবিত্রতার অধ্যায়
৩. ১. অযু:
‘উসমান ইবন ‘আফ্ফান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« ﻣَﻦْ ﺗَﻮَﺿَّﺄَ ﻓَﺄَﺣْﺴَﻦَ ﺍﻟْﻮُﺿُﻮﺀَ ، ﺧَﺮَﺟَﺖْ ﺧَﻄَﺎﻳَﺎﻩُ ﻣِﻦْ ﺟَﺴَﺪِﻩِ ، ﺣَﺘَّﻰ ﺗَﺨْﺮُﺝَ ﻣِﻦْ ﺗَﺤْﺖِ ﺃَﻇْﻔَﺎﺭِﻩِ » . ( ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ ) .
“যে ব্যক্তি অযু করে এবং খুব সুন্দর করে অযু করে, সেই ব্যক্তির শরীর থেকে তার গুনাহসমূহ বের হয়ে যায়, এমনকি তার নখের নীচ থেকেও গুনাহ বের হয়ে যায়।”[40]
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« ﺇِﺫَﺍ ﺗَﻮَﺿَّﺄَ ﺍﻟْﻌَﺒْﺪُ ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻢُ ﺃَﻭِ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻦُ ﻓَﻐَﺴَﻞَ ﻭَﺟْﻬَﻪُ ،ﺧَﺮَﺝَ ﻣِﻦْ ﻭَﺟْﻬِﻪِ ﻛُﻞُّ ﺧَﻄِﻴﺌَﺔٍ ﻧَﻈَﺮَ ﺇِﻟَﻴْﻬَﺎ ﺑِﻌَﻴْﻨَﻴْﻪِ ﻣَﻊَ ﺍﻟْﻤَﺎﺀِ ، ﺃَﻭْ ﻣَﻊَ ﺁﺧِﺮِ ﻗَﻄْﺮِ ﺍﻟْﻤَﺎﺀِ ، ﻓَﺈِﺫَﺍ ﻏَﺴَﻞَ ﻳَﺪَﻳْﻪِ ﺧَﺮَﺝَ ﻣِﻦْ ﻳَﺪَﻳْﻪِ ﻛُﻞُّ ﺧَﻄِﻴﺌَﺔٍ ﻛَﺎﻥَ ﺑَﻄَﺸَﺘْﻬَﺎ ﻳَﺪَﺍﻩُ ﻣَﻊَ ﺍﻟْﻤَﺎﺀِ ، ﺃَﻭْ ﻣَﻊَ ﺁﺧِﺮِ ﻗَﻄْﺮِ ﺍﻟْﻤَﺎﺀِ ، ﻓَﺈِﺫَﺍ ﻏَﺴَﻞَ ﺭِﺟْﻠَﻴْﻪِ ﺧَﺮَﺟَﺖْ ﻛُﻞُّ ﺧَﻄِﻴﺌَﺔٍ ﻣَﺸَﺘْﻬَﺎ ﺭِﺟْﻼَﻩُ ﻣَﻊَ ﺍﻟْﻤَﺎﺀِ ، ﺃَﻭْ ﻣَﻊَ ﺁﺧِﺮِ ﻗَﻄْﺮِ ﺍﻟْﻤَﺎﺀِ ، ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﺨْﺮُﺝَ ﻧَﻘِﻴًّﺎ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺬُّﻧُﻮﺏِ » . ( ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ ) .
“যখন মুসলিম বা মুমিন বান্দা অযু করে এবং তার মুখমণ্ডল ধুয়ে ফেলে, তখন পানির সাথে বা পানির শেষ বিন্দুটির সাথে তার চেহারা থেকে সমস্ত গুনাহ বের হয়ে যায়, যেগুলোর দিকে সে তার চোখ দু’টির সাহায্যে দৃষ্টিপাত করেছিল। তারপর যখন সে তার হাত দু’টি ধুয়ে ফেলে, তখন পানির সাথে বা পানির শেষ বিন্দুটির সাথে তার হাত দু’টি থেকে সমস্ত গুনাহ বের হয়ে যায়, যা তার হাত দু’টি ধরেছিল। এরপর যখন সে তার পা দু’টি ধুয়ে ফেলে, তখন পানির সাথে বা পানির শেষ বিন্দুটির সাথে (তার পা দু’টি থেকে) সমস্ত গুনাহ বের হয়ে যায়, যার দিকে তার পা দু’টি এগিয়ে গিয়েছিল, এমনকি সে গুনাহ থেকে সম্পূর্ণ পাক-পবিত্র হয়ে যায়।”[41]
হে মুসলিম ভাই! জেনে রাখুন, এই মহান ফযীলত শুধু ঐ ব্যক্তিই অর্জন করতে পারবে, যে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশ ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বর্ণনা অনুযায়ী অযু করবে এবং নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের অযুর পদ্ধতি প্রয়োগ করবে; আর নিম্নে তার প্রমাণ পেশ করা হল—
১. পূর্বোল্লিখিত ‘উসমান ইবন ‘আফ্ফান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত হাদিসের মধ্যে একটি শর্ত উল্লেখ করা হয়েছে, আর তা হলো অযুকে সুন্দর করা; আর এই শর্তটি অন্য আরও কয়েকটি হাদিসের মধ্যে বর্ণিত হয়েছে; যেমন—
(ক) আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত হাদিস, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« ﻣَﻦْ ﺗَﻮَﺿَّﺄَ ﻓَﺄَﺣْﺴَﻦَ ﺍﻟْﻮُﺿُﻮﺀَ ، ﺛُﻢَّ ﺭَﺍﺡَ ﻓَﻮَﺟَﺪَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ ﻗَﺪْ ﺻَﻠَّﻮْﺍ ، ﺃَﻋْﻄَﺎﻩُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻣِﺜْﻞَ ﺃَﺟْﺮِ ﻣَﻦْ ﺻَﻼﻫَﺎ ، ﻭَﺣَﻀَﺮَﻫَﺎ ﻻ ﻳَﻨْﻘُﺺُ ﺫَﻟِﻚَ ﻣِﻦْ ﺃَﺟْﺮِﻫِﻢْ ﺷَﻴْﺌًﺎ » . ( ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺑﻮ ﺩﺍﻭﺩ ﻭ ﺍﻟﻨﺴﺎﺋﻲ ) .
“যে ব্যক্তি অযু করে এবং খুব ভালভাবে ও সুন্দর করে অযু করে, অতঃপর (মাসজিদের উদ্দেশ্যে) বের হয় এবং জনগণকে এমন অবস্থায় পায় যে তারা সালাত আদায় করে ফেলেছে, আল্লাহ তা‘আলা তাকে ঐ ব্যক্তির মত প্রতিদান দিবেন, যে সালাত আদায় করেছে ও জামা‘য়াতে হাযির হয়েছে, অথচ তাদের সাওয়াব থেকে কিছুই কমতি বা ঘাটতি হবে না।”[42]
(খ) ‘উকবা ইবন ‘আমের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত হাদিস, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« ﻣَﻦْ ﺗَﻮَﺿَّﺄَ ﻓَﺄَﺣْﺴَﻦَ ﺍﻟْﻮُﺿُﻮﺀَ ، ﺛُﻢَّ ﺻَﻠَّﻰ ﺭَﻛْﻌَﺘَﻴْﻦِ ﻳُﻘْﺒِﻞُ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻤَﺎ ﺑِﻘَﻠْﺒِﻪِ ﻭَﻭَﺟْﻬِﻪِ ، ﻭَﺟَﺒَﺖْ ﻟَﻪُ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔُ » . ( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﻨﺴﺎﺋﻲ ) .
“যে ব্যক্তি অযু করে এবং খুব ভালভাবে ও সুন্দর করে অযু করে, অতঃপর আন্তরিকতা ও মনোযোগ সহকারে দুই রাকা‘আত সালাত আদায় করে, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়।”[43] আর যায়েদ ইবন খালিদ আল-জুহানী, আবদুল্লাহ ইবন ওমর ও অন্যান্য সাহাবী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম প্রমুখ কর্তৃক বর্ণিত হাদিসের মধ্যেও এই বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে।
২. আর এই সুন্দর করার বিষয়টি আল্লাহর নির্দেশের যথাযথ অনুসরণ ব্যতীত কিছুতেই সম্ভব নয়; যেমনটি একাধিক সহীহ হাদিসের মধ্যে ব্যাখ্যাসহ বর্ণিত হয়েছে; তন্মধ্যে অন্যতম একটি হাদিস আবূ আইয়ুব আনসারী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি:
« ﻣَﻦْ ﺗَﻮَﺿَّﺄَ ﻛَﻤَﺎ ﺃُﻣِﺮَ ﻭَﺻَﻠَّﻰ ﻛَﻤَﺎ ﺃُﻣِﺮَ ﻏُﻔِﺮَ ﻟَﻪُ ﻣَﺎ ﺗَﻘَﺪَّﻡَ ﻣِﻦْ ﻋَﻤَﻞٍ ( ﻭ ﻓﻲ ﺭﻭﺍﻳﺔ : ﺫَﻧْﺒِﻪِ ) » . ( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﻨﺴﺎﺋﻲ ﻭ ﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﻪ ) .
“যে ব্যক্তি অযু করল যেমনভাবে অযু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং সালাত আদায় করল যেমনভাবে সালাত আদায় করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তার পূর্বের কৃতকর্মের সাথে সংশ্লিষ্ট গুনাহ্ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।”[44]
৩. আর একাধিক হাদিসের মধ্যে আল্লাহর নির্দেশের সর্বোৎকৃষ্ট বিবরণ ও সর্বোত্তম ব্যাখ্যা দিয়েছেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম; তন্মধ্যে অন্যতম একটি হাদিস ‘উসমান ইবন ‘আফ্ফান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত; তিনি (নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অযুর পানি নিয়ে আসার জন্য (তাঁকে) ডাকলেন, তারপর তিনি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের অযুর পদ্ধতি বর্ণনা করলেন; অতঃপর তিনি বললেন: রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদিসের শেষ অংশে বলেছেন:
« ﻣَﻦْ ﺗَﻮَﺿَّﺄَ ﻧَﺤْﻮَ ﻭُﺿُﻮﺋِﻰ ﻫَﺬَﺍ ﺛُﻢَّ ﺻَﻠَّﻰ ﺭَﻛْﻌَﺘَﻴْﻦِ ﻻَ ﻳُﺤَﺪِّﺙُ ﻓِﻴﻬِﻤَﺎ ﻧَﻔْﺴَﻪُ ﻏُﻔِﺮَ ﻟَﻪُ ﻣَﺎ ﺗَﻘَﺪَّﻡَ ﻣِﻦْ ﺫَﻧْﺒِﻪِ » . ( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ﻭ ﻣﺴﻠﻢ ) .
“যে ব্যক্তি আমার এ অযূর ন্যায় অযূ করে দুই রাকা‘য়াত সালাত করবে এবং তার মধ্যে কোনো বাজে খেয়াল মনে আনবে না, তার অতীতের সব গুনাহ্ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।”[45] * * *
৪. সালাতের অধ্যায়
৪. ১. আযান:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« ﺇِﻥَّ ﺍﻟْﻤُﺆَﺫِّﻥَ ﻳُﻐْﻔَﺮُ ﻟَﻪُ ﻣَﺪَﻯ ﺻَﻮْﺗِﻪِ، ﻭَﻳُﺼَﺪِّﻗُﻪُ ﻛُﻞُّ ﺭَﻃْﺐٍ ﻭَﻳَﺎﺑِﺲٍ ﺳَﻤِﻊَ ﺻَﻮْﺗﻪ، ﻭَﺍﻟﺸَّﺎﻫِﺪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻟَﻪُ ﺧَﻤْﺲَ ﻭَﻋِﺸْﺮِﻳﻦَ ﺩَﺭَﺟَﺔً » .
“মুয়াযযিনকে তার কণ্ঠস্বর পৌঁছার প্রান্তদেশ পর্যন্ত ক্ষমা করে দেওয়া হবে এবং তার পক্ষে সাক্ষ্য ও সমর্থন দিবে তার আওয়াজ শুনা প্রত্যেকটি সজীব ও নির্জীব বস্তু; যারা তার ডাকে সাড়া দিয়ে সালাতে আসবে তার জন্য থাকবে তাদের উপরে পঁচিশটি মর্যাদা।”[46] : ৪. ২. সালাত:
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন:
« ﺃَﺭَﺃَﻳْﺘُﻢْ ﻟَﻮْ ﺃَﻥَّ ﻧَﻬَﺮًﺍ ﺑِﺒَﺎﺏِ ﺃَﺣَﺪِﻛُﻢْ ﻳَﻐْﺘَﺴِﻞُ ﻓِﻴﻪِ ﻛُﻞَّ ﻳَﻮْﻡٍ ﺧَﻤْﺴًﺎ ، ﻣَﺎ ﺗَﻘُﻮﻝُ ﺫﻟِﻚَ ﻳُﺒْﻘِﻲ ﻣِﻦْ ﺩَﺭَﻧِﻪِ ؟ » ﻗﺎﻟُﻮﺍ : ﻻَ ﻳُﺒْﻘِﻲ ﻣِﻦْ ﺩَﺭَﻧِﻪِ ﺷَﻴْﺌًﺎ . ﻗَﺎﻝَ : « ﻓَﺬﻟِﻚَ ﻣِﺜْﻞُ ﺍﻟﺼَّﻠَﻮﺍﺕِ ﺍﻟْﺨَﻤْﺲِ ﻳَﻤْﺤُﻮ ﺍﻟﻠﻪُ ﺑِﻪِ ﺍﻟْﺨَﻄَﺎﻳَﺎ » . ( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ﻭ ﻣﺴﻠﻢ ) .
“তোমরা কি মনে কর— যাদি তোমাদের কারো দরজায় একটি প্রবাহিত নদী থাকে এবং সে তাতে দৈনিক পাঁচবার গোসল করে, তাহলে তোমার মতে কি এই গোসল তার শরীরে কোনো ময়লা অবশিষ্ট রাখবে? জবাবে সাহাবীগণ বললেন: না, তার শরীরে কোনো ময়লা থাকবে না; তখন তিনি বললেন: ‘এটাই হলো পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের দৃষ্টান্ত— এর মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা (সালাত আদায়কারীর) গুনাহসমূহ মুছে ফেলেন।”[47]
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে আরও বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« ﺍﻟﺼَّﻠﻮَﺍﺕُ ﺍﻟْﺨَﻤْﺲُ ، ﻭَﺍﻟْﺠُﻤُﻌَﺔُ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟْﺠُﻤُﻌَﺔِ ﻛَﻔَّﺎﺭَﺓٌ ﻟِﻤَﺎ ﺑَﻴْﻨَﻬُﻦَّ ﻣَﺎ ﻟَﻢْ ﺗُﻐْﺶَ ﺍﻟْﻜَﺒَﺎﺋِﺮُ » . ( ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ ﻭ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ ) .
“পাঁচ ওয়াক্ত সালাত এবং এক জুমু‘আর সালাত থেকে অপর জুমু‘আর সালাত সেসব গুনাহের জন্য কাফ্ফারা হয়, যা এর মধ্যবর্তী সময়ে হয়ে থাকে, যে পর্যন্ত না কবীরা গুনাহ্ করা হয়।”[48]
৪. ৩. এক মা‘বুদ (আল্লাহ) এর উদ্দেশ্যে সাজদা করা:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই বাস্তব বিষয়টিকে জোরালোভাবে তুলে ধরেছেন বিভিন্ন প্রকার শব্দ চয়নে; তন্মধ্যে সাজদার ফযীলতের বর্ণনাটি অন্যতম; রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« ﻳَﺎ ﺃَﺑَﺎ ﻓَﺎﻃِﻤَﺔَ ! ﺃَﻛْﺜِﺮْ ﻣِﻦْ ﺍﻟﺴُّﺠُﻮﺩِ ، ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﻟَﻴْﺲَ ﻣِﻦْ ﻣُﺴْﻠِﻢٍ ﻳَﺴْﺠُﺪُ ﻟِﻠَّﻪِ ﺗَﺒَﺎﺭَﻙَ ﻭَﺗَﻌَﺎﻟَﻰ ﺳَﺠْﺪَﺓً ﺇِﻟَّﺎ ﺭَﻓَﻌَﻪُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺗَﺒَﺎﺭَﻙَ ﻭَﺗَﻌَﺎﻟَﻰ ﺑِﻬَﺎ ﺩَﺭَﺟَﺔً [ ﻓِﻲ ﺍﻟﺠَﻨﺔِ ﻭ ﺣﻂ ﻋﻨﻪ ﺑﻬﺎ ﺧﻄﻴﺌﺔٌ ] » . ( ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺣﻤﺪ ﻭ ﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﻪ ) .
“হে আবূ ফাতিমা! বেশি বেশি সাজদা কর; কারণ, যে কোনো মুসলিম ব্যক্তি আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা‘আলার উদ্দেশ্যে সাজদা করলে আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা‘আলার তার বিনিময়ে জান্নাতে তার মর্যাদা উন্নত করেন এবং তার বিনিময়ে তার গুনাহ্ মাফ করেন।”[49]
৪. ৪. জামা‘য়াতে সালাত আদায় করার জন্য আল্লাহর ঘরসমূহের উদ্দেশ্যে পথ চলা: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« ﺻَﻼﺓُ ﺍﻟﺮَّﺟُﻞِ ﻓِﻲ ﺟَﻤَﺎﻋَﺔٍ ﺗُﻀَﻌَّﻒُ ﻋَﻠَﻰ ﺻَﻼﺗِﻪِ ﻓِﻲ ﺑَﻴْﺘِﻪِ ﻭَﻓِﻲ ﺳُﻮﻗِﻪِ ﺧَﻤْﺴﺎً ﻭَﻋِﺸْﺮِﻳﻦَ ﺿِﻌْﻔﺎً , ﻭَﺫَﻟِﻚَ : ﺃَﻧَّﻪُ ﺇﺫَﺍ ﺗَﻮَﺿَّﺄَ , ﻓَﺄَﺣْﺴَﻦَ ﺍﻟْﻮُﺿُﻮﺀَ . ﺛُﻢَّ ﺧَﺮَﺝَ ﺇﻟَﻰ ﺍﻟْﻤَﺴْﺠِﺪِ ﻻ ﻳُﺨْﺮِﺟُﻪُ ﺇﻻ ﺍﻟﺼَّﻼﺓُ ﻟَﻢْ ﻳَﺨْﻂُ ﺧَﻄْﻮَﺓً ﺇﻻ ﺭُﻓِﻌَﺖْ ﻟَﻪُ ﺑِﻬَﺎ ﺩَﺭَﺟَﺔٌ , ﻭَﺣُﻂَّ ﻋَﻨْﻪُ ﺧَﻄِﻴﺌَﺔٌ . ﻓَﺈِﺫَﺍ ﺻَﻠَّﻰ ﻟَﻢْ ﺗَﺰَﻝْ ﺍﻟْﻤَﻼﺋِﻜَﺔُ ﺗُﺼَﻠِّﻲ ﻋَﻠَﻴْﻪِ , ﻣَﺎ ﺩَﺍﻡَ ﻓِﻲ ﻣُﺼَﻼﻩُ : ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺻَﻞِّ ﻋَﻠَﻴْﻪِ , ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺍﻏْﻔِﺮْ ﻟَﻪُ , ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺍﺭْﺣَﻤْﻪُ , ﻭَﻻ ﻳَﺰَﺍﻝُ ﻓِﻲ ﺻَﻼﺓٍ ﻣَﺎ ﺍﻧْﺘَﻈَﺮَ ﺍﻟﺼَّﻼﺓَ » . ( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ﻭ ﻣﺴﻠﻢ ) .
“পুরুষ ব্যক্তির জামা‘য়াতে সালাত আদায় করার সাওয়াব তার ঘরে ও বাজারে আদায় করা সালাত অপেক্ষা পঁচিশ গুণ বেশি; কারণ, যখন সে ভালভাবে অযু করে এবং শুধু সালাত আদায় করার উদ্দেশ্যেই মাসজিদের দিকে বের হয়, তখন তার প্রতিটি পদক্ষেপের বিনিময়ে একটি করে মর্যাদা বৃদ্ধি পায় এবং তার একটি করে গুনাহ্ মাফ হয়ে যায়। আর যখন সে সালাত আদায় করে, তখন ফিরিশ্তাগণ তার জন্য ততক্ষণ দো‘আ করতে থাকে যতক্ষণ সে তার সালাত আদায়ের স্থানে অবস্থান করে— তাঁরা বলে: “হে আল্লাহ! আপনি তার উপর রহমত করুন; হে আল্লাহ! তাকে ক্ষমা করে দিন; হে আল্লাহ! তার প্রতি দয়া করুন। আর যতক্ষণ সে সালাতের অপেক্ষায় থাকবে, ততক্ষণ সে সালাতের মাঝেই থাকে।”[50]
৪. ৫. ‘আমীন’ বলা:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই মহান ফযীলতের বিষয়টি ভিন্নভাবে জোর দিয়েছেন; যেমন তিনি ইমামের কণ্ঠের সাথে কণ্ঠ মিলেয়ে ‘আমীন’ বলার ফযীলত নিয়ে স্পষ্ট বক্তব্য দিয়েছেন; কারণ, তা জামা‘য়াতে সালাত আদায়ের সময় এক গুরুত্বপূর্ণ ইসলামী দৃশ্য ও ভাবধারার আবহ তৈরি করে; যা দীনের বলিষ্ঠ ঘোষণা ও বিশেষ শ্লোগান প্রকাশের বিষয়টিকে অন্তর্ভুক্ত করে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« ﺇِﺫَﺍ ﻗَﺎﻝَ ﺍﻟْﺈِﻣَﺎﻡُ ﴿ ﻏَﻴْﺮِ ﺍﻟْﻤَﻐْﻀُﻮﺏِ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﻭَﻟَﺎ ﺍﻟﻀَّﺎﻟِّﻴﻦَ ﴾ , ﻓَﻘُﻮﻟُﻮﺍ ﺁﻣِﻴﻦَ , ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﻣَﻦْ ﻭَﺍﻓَﻖَ ﻗَﻮْﻟُﻪُ ﻗَﻮْﻝَ ﺍﻟْﻤَﻠَﺎﺋِﻜَﺔِ , ﻏُﻔِﺮَ ﻟَﻪُ ﻣَﺎ ﺗَﻘَﺪَّﻡَ ﻣِﻦْ ﺫَﻧْﺒِﻪِ » . ( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ﻭ ﻣﺴﻠﻢ ) .
“ইমাম যখন ﴿ ﻏَﻴْﺮِ ﺍﻟْﻤَﻐْﻀُﻮﺏِ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﻭَﻟَﺎ ﺍﻟﻀَّﺎﻟِّﻴﻦَ ﴾ বলবে, তখন তোমরা ‘আমীন’ বলবে; কারণ, যার কথা (আমীন বলা) ফিরিশ্তাদের কথার (আমীন বলার) সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে যাবে, তার বিগত দিনের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।”[51]
অতএব, হে আমার ঈমানী ভাই! এসব সালাতের জন্য আগ্রহী হউন, যখনই তার জন্য আহ্বান করা হবে; কেননা, তা হলো হেদায়েতের পথ ও তাকওয়ার নিদর্শন। শরী‘য়ত সম্মত ওযর ব্যতীত বিনা কারণে এই সালাত আদায়ে অলসতা করার ব্যাপারে সাবধান ও সতর্ক হউন; কেননা, জামা‘য়াতে সালাত আদায় করা মুসলিম জনগোষ্ঠী’র উপর ফরয। আর সুসংবাদ গ্রহণ করুন কিয়ামতের দিনে পরিপূর্ণ নূরের এবং দুনিয়াতে গুনাহসমূহের ক্ষমা ও পাপরাশি মোচনের।
কিন্তু হে মুসল্লী সম্প্রদায়! জেনে রাখবেন যে, উল্লেখিত এই ফযীলতের অধিকারী শুধু সে ব্যক্তিই হবে, যে ব্যক্তি সালাত আদায় করে এমনভাবে যে— সে তার জন্য সুন্দরভাবে অযু করল, পরিপূর্ণভাবে তা (সালাত) আদায় করল এবং জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহ তা‘আলার উদ্দেশ্যে এমনভাবে বিনয় ও নম্রতা প্রকাশ করল, যেভাবে করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে; আর এই বিষয়টি পরিষ্কারভাবে বর্ণিত হয়েছে আবূ আইয়ুব আনসারী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত হাদিসে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« ﻣَﻦْ ﺗَﻮَﺿَّﺄَ ﻛَﻤَﺎ ﺃُﻣِﺮَ , ﻭَﺻَﻠَّﻰ ﻛَﻤَﺎ ﺃُﻣِﺮَ , ﻏُﻔِﺮَ ﻟَﻪُ ﻣَﺎ ﺗَﻘَﺪَّﻡَ ﻣِﻦْ ﺫَﻧْﺒِﻪِ ) » . ( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﻨﺴﺎﺋﻲ ﻭ ﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﻪ ) .
“যে ব্যক্তি অযু করল যেমনভাবে অযু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং সালাত আদায় করল যেমনভাবে সালাত আদায় করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তার পূর্বের গুনাহ্ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।”[52] আর এই জন্য প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তির উচিৎ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সালাতের ধরন ও পদ্ধতির দিকে মনোযোগ দেওয়া; আর যিনি এই ব্যাপারে সমস্যার সম্মুখীন হবেন, তিনি যেন জ্ঞানী ব্যক্তিদের দ্বারস্থ হয়ে মনোযোগ দিয়ে কথা শুনা ও সর্বোত্তম কথাটি অনুসরণ করার আগ্রহ নিয়ে তাদেরকে সেই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেন।
৪. ৬. জুমু‘আ’র সালাত:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« ﻣَﻦْ ﺗَﻮَﺿَّﺄَ ﻓَﺄَﺣْﺴَﻦَ ﺍﻟْﻮُﺿُﻮﺀَ ﺛُﻢَّ ﺃَﺗَﻰ ﺍﻟْﺠُﻤُﻌَﺔَ ﻓَﺎﺳْﺘَﻤَﻊَ ﻭَﺃَﻧْﺼَﺖَ ﻏُﻔِﺮَ ﻟَﻪُ ﻣَﺎ ﺑَﻴْﻨَﻪُ ﻭَﺑَﻴْﻦَ ﺍﻟْﺠُﻤُﻌَﺔِ ﻭَﺯِﻳَﺎﺩَﺓُ ﺛَﻼَﺛَﺔِ ﺃَﻳَّﺎﻡٍ ﻭَﻣَﻦْ ﻣَﺲَّ ﺍﻟْﺤَﺼَﻰ ﻓَﻘَﺪْ ﻟَﻐَﺎ » . ( ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ ﻭ ﺍﺑﻮ ﺩﺍﻭﺩ ﻭ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ ﻭ ﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﻪ ) .
“যে ব্যক্তি অযু করে এবং খুব ভালভাবে ও সুন্দর করে অযু করে, অতঃপর জুমু‘আর সালাতে উপস্থিত হয়; তারপর মনোযোগ দিয়ে (খুতবা) শুনে ও নীরব থাকে, তার দুই জুমু‘আর মধ্যবর্তী সাত দিন ও অতিরিক্ত আরও তিন দিন মোট দশ দিনের গুনাহ্ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। আর যে ব্যক্তি পাথর বা কঙ্কর স্পর্শ করল, সে অনর্থক কাজ করল।”[53]
৪. ৭. কিয়ামুল লাইল (রাতের বেলায় নফল ইবাদত):
আখেরাতের সন্ধানে ব্যস্ত সচেষ্ট মুমিনগণ রাতের বেলায় খুব কমই ঘুমান; কারণ, তারা রাতের বেলায় নফল ইবাদতে তৎপর থাকেন; ফলে তাদের চেহারা হয়ে যায় উজ্জ্বল এবং অন্তর হয়ে যায় পবিত্র। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ ﺇِﻥَّ ﭐﻟۡﻤُﺘَّﻘِﻴﻦَ ﻓِﻲ ﺟَﻨَّٰﺖٖ ﻭَﻋُﻴُﻮﻥٍ ١٥ ﺀَﺍﺧِﺬِﻳﻦَ ﻣَﺎٓ ﺀَﺍﺗَﻯٰﻬُﻢۡ ﺭَﺑُّﻬُﻢۡۚ ﺇِﻧَّﻬُﻢۡ ﻛَﺎﻧُﻮﺍْ ﻗَﺒۡﻞَ ﺫَٰﻟِﻚَ ﻣُﺤۡﺴِﻨِﻴﻦَ ١٦ ﻛَﺎﻧُﻮﺍْ ﻗَﻠِﻴﻠٗﺎ ﻣِّﻦَ ﭐﻟَّﻴۡﻞِ ﻣَﺎ ﻳَﻬۡﺠَﻌُﻮﻥَ ١٧ ﻭَﺑِﭑﻟۡﺄَﺳۡﺤَﺎﺭِ ﻫُﻢۡ ﻳَﺴۡﺘَﻐۡﻔِﺮُﻭﻥَ ١٨ ﴾ [ ﺍﻟﺬﺍﺭﻳﺎﺕ : ١٥، ١٨ ]
“নিশ্চয় মুত্তাকীরা থাকবে জান্নাতসমূহে ও ঝর্ণাধারায়, গ্রহণ করবে তা যা তাদের রব তাদেরকে দিবেন; নিশ্চয় ইতোপূর্বে তারা ছিল সৎকর্মশীল, তারা রাতের সামান্য অংশই অতিবাহিত করত নিদ্রায়, আর রাতের শেষ প্রহরে তারা ক্ষমা প্রার্থনা করত।”[54]
আর ‘কিয়ামুল লাইল’ তথা রাতের বেলায় নফল ইবাদতের ফযীলত এবং মুসলিম ব্যক্তির আচার-আচরণ ও তার ভবিষ্যৎ জীবনের উপর তার প্রভাব প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﺑِﻘِﻴَﺎﻡِ ﺍﻟﻠَّﻴْﻞِ ، ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﺩَﺃْﺏُ ﺍﻟﺼَّﺎﻟِﺤِﻴﻦَ ﻗَﺒْﻠَﻜُﻢْ ، ﻭَﻗُﺮْﺑَﺔٌ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪِ ، ﻭَﻣَﻨْﻬَﺎﺓٌ ﻋَﻦِ ﺍﻹِﺛْﻢِ ، ﻭَﺗَﻜْﻔِﻴﺮٌ ﻟِﻠﺴَّﻴِّﺌَﺎﺕِ ، ﻭَﻣَﻄْﺮَﺩَﺓٌ ﻟِﻠﺪَّﺍﺀِ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺠَﺴَﺪِ » . ( ﺃﺧﺮﺟﻪ ﺍﻟﺤﺎﻛﻢ ﻭ ﺍﻟﺒﻴﻬﻘﻲ ) .
“তোমাদের কর্তব্য হলো রাত জেগে নফল ইবাদত করা; কারণ, তা তোমাদের পূর্ববর্তী সৎব্যক্তিগণের স্বভাব ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায়; আর পাপকাজ থেকে বিরত রাখে, গুনাহসমূহ মোচন করে এবং শরীর থেকে রোগ-ব্যাধি দূর করে।”[55]
৪. ৮. রমযান মাসে কিয়ামুল লাইল বা রাত জেগে নফল ইবাদত:
রমযান মাস আল্লাহর মুবারক মাস, গোটা মাসটিই আল্লাহর নৈকট্য লাভের ক্ষেত্র; কারণ, তার দিনের বেলায় হলো সাওম পালন এবং রাতের বেলায় হলো নফল ইবাদত; আর ঐ ব্যক্তির জন্য ধ্বংস, যে রমযান মাস পেল, অথচ তার গুনাহ মাফ হলো না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈমানের সাথে ও সাওয়াবের আশায় এ মাসে রাত জেগে নফল ইবাদত করার জন্য উৎসাহিত করেছেন; কেননা, তিনি বলেছেন:
ﻣَﻦْ ﻗَﺎﻡَ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﺇﻳﻤَﺎﻧًﺎ ﻭَﺍﺣْﺘِﺴَﺎﺑًﺎ ﻏُﻔِﺮَ ﻟَﻪُ ﻣَﺎ ﺗَﻘَﺪَّﻡَ ﻣِﻦْ ﺫَﻧْﺒِﻪِ » . ( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ﻭ ﻣﺴﻠﻢ ) .
“যে ব্যক্তি রমযানের রাতে ঈমানসহ সাওয়াবের আশায় রাত জেগে ইবাদত করে, তার পূর্বের গুনাহ্ মাফ করে দেওয়া হয়।”[56] তিনি আরও বলেন:
« ﻣَﻦْ ﻳَﻘُﻢْ ﻟَﻴْﻠَﺔَ ﺍﻟْﻘَﺪْﺭِ ﺇﻳﻤَﺎﻧًﺎ ﻭَﺍﺣْﺘِﺴَﺎﺑًﺎ ﻏُﻔِﺮَ ﻟَﻪُ ﻣَﺎ ﺗَﻘَﺪَّﻡَ ﻣِﻦْ ﺫَﻧْﺒِﻪِ » . ( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ﻭ ﻣﺴﻠﻢ ) .
“যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সাওয়াবের আশায় কদরের রজনীতে ইবাদতের মধ্য দিয়ে রাত্রি জাগরণ করবে, তার অতীতের গুনাহ্ মাফ করে দেওয়া হবে।”[57]
৪. ৯. সালাতুত তাসবীহ:
আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আব্বাস ইবন আবদিল মুত্তালিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে উদ্দেশ্য করে বলেন:
« ﻳﺎ ﻋﺒﺎﺱُ ، ﻳﺎ ﻋﻤَّﺎﻩُ ، ﺃﻻ ﺃُﻋﻄﻴﻚَ ، ﺃﻻ ﺃﻣﻨَﺤُﻚَ ، ﺃﻻ ﺃُﺧْﺒِﺮُﻙَ ، ﺃَﻻ ﺃﻓﻌﻞُ ﺑﻚَ ﻋﺸﺮَ ﺧِﺼﺎﻝ؟ ﺇِﺫﺍ ﺃﻧﺖَ ﻓﻌﻠﺖَ ﺫﻟﻚ ﻏَﻔَﺮَ ﺍﻟﻠﻪُ ﻟﻚَ ﺫَﻧﺒَﻚَ : ﺃَﻭَّﻟَﻪُ ﻭﺁﺧِﺮَﻩُ ، ﻗﺪﻳﻤَﻪ ﻭﺣﺪﻳﺜَﻪ، ﺧﻄﺄَﻩ ﻭﻋﻤْﺪَﻩ ، ﺻﻐﻴﺮَﻩ ﻭﻛﺒﻴﺮَﻩ ، ﺳِﺮَّﻩ ﻭﻋﻼﻧﻴﺘَﻪ ؟ ﻋﺸﺮُ ﺧﺼﺎﻝ : ﺃﻥ ﺗُﺼﻠِّﻲ ﺃﺭﺑﻊ ﺭﻛﻌﺎﺕ ، ﺗﻘﺮﺃُ ﻓﻲ ﻛﻞِّ ﺭﻛﻌﺔ ﻓﺎﺗﺤﺔَ ﺍﻟﻜﺘﺎﺏ ، ﻭﺳﻮﺭﺓ ، ﻓﺈﺫﺍ ﻓﺮﻏﺖَ ﻣﻦ ﺍﻟﻘﺮﺍﺀﺓِ ﻓﻲ ﺃﻭَّﻝِ ﺭﻛﻌﺔ ﻭﺃﻧﺖَ ﻗﺎﺋﻢ ، ﻗﻠﺖَ : ﺳﺒﺤﺎﻥَ ﺍﻟﻠﻪ ، ﻭﺍﻟﺤﻤﺪُ ﻟﻠﻪ ، ﻭﻻ ﺇِﻟﻪ ﺇِﻻ ﺍﻟﻠﻪ ، ﻭﺍﻟﻠﻪُ ﺃﻛﺒﺮ - ﺧﻤﺲَ ﻋَﺸْﺮَﺓَ ﻣﺮﺓ - ﺛﻢ ﺗﺮﻛﻊُ ﻓﺘﻘﻮﻟُﻬﺎ ﻭﺃﻧﺖَ ﺭﺍﻛﻊ ﻋﺸﺮﺍ ، ﺛﻢ ﺗَﺮﻓَﻊُ ﺭﺃْﺳﻚ ﻣﻦ ﺍﻟﺮﻛﻮﻉِ ﻓﺘﻘﻮﻟﻬﺎ ﻋﺸﺮﺍ ، ﺛﻢ ﺗﻬﻮﻱ ﺳﺎﺟﺪﺍ ﻓﺘﻘﻮﻟُﻬﺎ ﻭﺃﻧﺖَ ﺳﺎﺟﺪ ﻋﺸﺮﺍ ، ﺛﻢ ﺗﺮﻓﻊُ ﺭﺃﺳَﻚَ ﻣﻦ ﺍﻟﺴﺠﻮﺩ ﻓﺘﻘﻮﻟُﻬﺎ ﻋﺸﺮﺍ ، ﺛﻢ ﺗﺴﺠﺪُ ﻓﺘﻘﻮﻟﻬﺎ ﻋﺸﺮﺍ ، ﺛﻢ ﺗﺮﻓﻊ ﺭﺃْﺳﻚ ﻓﺘﻘﻮﻟُﻬﺎ ﻋﺸﺮﺍ ، ﻓﺬﻟﻚ ﺧﻤﺲ ﻭﺳﺒﻌﻮﻥ ﻓﻲ ﻛﻞ ﺭﻛﻌﺔ ، ﺗﻔﻌﻞُ ﺫﻟﻚ ﻓﻲ ﺃﺭﺑﻊ ﺭﻛﻌﺎﺕ . ﺇﻥ ﺍﺳﺘﻄﻌﺖَ ﺃﻥ ﺗُﺼَﻠِّﻴَﻬﺎ ﻓﻲ ﻛﻞِّ ﻳﻮﻡ ﻣﺮﺓ ﻓﺎﻓﻌﻞْ ، ﻓﺈﻥ ﻟﻢ ﺗﻔﻌﻞْ ﻓﻔﻲ ﻛﻞِّ ﺟﻤﻌﺔ ، ﻓﺈﻥ ﻟﻢ ﺗَﻔْﻌَﻞ ﻓﻔﻲ ﻛﻞِّ ﺷﻬﺮ ﻣَﺮَّﺓ ، ﻓﺈﻥ ﻟﻢ ﺗﻔﻌﻞْ ﻓﻔﻲ ﻛﻞِّ ﺳَﻨَﺔ ﻣَﺮَّﺓ ، ﻓﺈِﻥ ﻟﻢ ﺗﻔﻌﻞْ ﻓﻔﻲ ﻛُﻞِّ ﻋﻤﺮِﻙَ ﻣَﺮَّﺓ » . ( ﺃﺧﺮﺟﻪ ﺃﺑﻮ ﺩﺍﻭﺩ ﻭ ﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﻪ ﻭ ﺍﻟﺒﻴﻬﻘﻲ ) .
“হে আব্বাস! হে চাচাজান! আমি কি আপনাকে দেব না? আমি কি আপনাকে দান করব না? আমি কি আপনাকে সংবাদ দেব না? আমি কি আপনার সাথে দশটি কাজ করব না? (অর্থাৎ আমি কি আপনাকে দশটি তাসবীহ শিক্ষা দেব না?) যখন আপনি তা আমল করবেন, তখন আল্লাহ তা‘আলা আপনার আগের, পরের, পুরাতন, নতুন, অনিচ্ছাকৃত, ইচ্ছাকৃত, ছোট (সগীরা), বড় (কবীরা), অপ্রকাশ্য ও প্রকাশ্য সকল প্রকারের গুনাহ্ ক্ষমা করে দিবেন। আর সেই দশটি কাজ হল: আপনি চার রাকা‘য়াত সালাত আদায় করবেন এবং প্রত্যেক রাকা‘য়াতে সূরা ফাতিহা পাঠ করবেন এবং এর সাথে অন্য যে কোনো একটি সূরা পাঠ করবেন; অতঃপর যখন প্রথম রাকা‘য়াতে কিরায়াত সম্পন্ন করে অবসর হবেন, তখন ঐ দাঁড়ানো অবস্থায় আপনি পনের বার পড়বেন: « ﺳﺒﺤﺎﻥَ ﺍﻟﻠﻪ ، ﻭﺍﻟﺤﻤﺪُ ﻟﻠﻪ ، ﻭﻻ ﺇِﻟﻪ ﺇِﻻ ﺍﻟﻠﻪ ، ﻭﺍﻟﻠﻪُ ﺃﻛﺒﺮ » (আমি আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি, সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, আল্লাহ ছাড়া ইবাদতের যোগ্য কোনো সত্য মা‘বুদ নেই এবং আল্লাহ মহান)। অতঃপর রুকূ করবেন এবং রুকূ অবস্থায় উক্ত তাসবীহটি দশবার পাঠ করবেন। অতঃপর রুকূ থেকে আপনার মাথা উঠাবেন এবং (দাঁড়ানো অবস্থায়) উক্ত তাসবীহটি দশবার পাঠ করবেন। অতঃপর সাজদায় অবনত হবেন এবং সাজদা অবস্থায় উক্ত তাসবীহটি দশবার পাঠ করবেন। অতঃপর সাজদা থেকে আপনার মাথা উঠাবেন এবং (বসা অবস্থায়) উক্ত তাসবীহটি দশবার পাঠ করবেন। অতঃপর আবার সাজদায় অবনত হবেন এবং উক্ত তাসবীহটি দশবার পাঠ করবেন। অতঃপর সাজদা থেকে আপনার মাথা উঠাবেন এবং (দাঁড়ানো অবস্থায়) উক্ত তাসবীহটি দশবার পাঠ করবেন। সুতরাং এভাবে প্রত্যেক রাকা‘য়াতে তা পঁচাত্তর বার হবে; আপনি চার রাকা‘য়াতের প্রত্যেক রাকা‘য়াতের মধ্যেই এরূপ করবেন। যদি আপনি প্রত্যেক দিন একবার এরূপ সালাত আদায় করতে সক্ষম হন, তাহলে তা করবেন; আর যদি তা না পারেন, তাহলে প্রত্যেক সপ্তাহে একবার আদায় করবেন; আর যদি তা-ও না পারেন, তাহলে প্রত্যেক মাসে একবার আদায় করবেন; আর যদি তা-ও না পারেন, তাহলে প্রত্যেক বছরে একবার আদায় করবেন; আর যদি তা-ও না পারেন, তাহলে আপনার জীবনে কমপক্ষে একবার আদায় করবেন।”[58] হাফেয ইবনু নাসির উদ্দিন আদ-দামেস্কী ছন্দ আকারে বলেন:
ﺇﺫﺍ ﺃﺭﺍﺩﺕ ﺍﻟﺜﻮﺍﺏ ﺑﺎﻟﺘﺮﺟﻴﺢ ﺻﻞِّ ﻟﻠﻪ ﺳﺒﺤﺔ ﺍﻟﺘﺴﺒﻴﺢ
(যখন তুমি সাওয়াবের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিতে চাও
তাহলে আল্লাহর উদ্দেশ্যে সালাতুত তাসবীহ আদায় কর)।
ﺇﻥ ﻓﻴﻬﺎ ﺭﻏﺎﺋﺒﺎً ﻭ ﺃﺟﻮﺭﺍً ﻭ ﺩﻭﺍﺀ ﻟﻜﻞ ﻗﻠﺐ ﺟﺮﻳﺢ
(নিশ্চয় তাতে রয়েছে উৎসাহ-উদ্দীপনা ও সাওয়াবের সমাহার, আর প্রত্যেক ক্ষত-বিক্ষত অন্তরের জন্য ব্যবস্থা আছে চিকিৎসার)।
ﻓﺘﻘﺮﺏ ﺑﻔﻌﻠﻬﺎ ﺗﻌﻂ ﻧﻴﻼً ﻭ ﺛﻮﺍﺑﺎً ﻳﺠﻞُّ ﻋﻦ ﺍﻟﺘﺼﺮﻳﺢ
(সুতরাং তুমি তা আদায় করলে তোমাকে দেওয়া হবে পুরস্কার আরও দেওয়া হবে সাওয়াব, যা স্পষ্ট করে বলা থেকে উপরে)।
ﻻ ﺗﺪﻋﻬﺎ ﻓﺈﻥ ﻓﻴﻬﺎ ﺣﺪﻳﺜﺎً ﻣﻦ ﻭﺟﻮﻩ ﻣﻘﺎﺭﺑﺎً ﻟﻠﺼﺤﻴﺢ
(তুমি তা ছেড়ে দিও না; কেননা, তার ব্যাপারে হাদিস রয়েছে বিভিন্নভাবে, যা বিশুদ্ধ হাদিসের কাছাকাছি পর্যায়ের)।
ﻓﺘﻤﺴﻚ ﺑﺴﻨَّﺔ ﻛﻴﻒ ﺟﺎﺀﺕ ﻋﻦ ﺛﻘﺎﺕ ﻋﻦ ﺍﻟﺤﺒﻴﺐ ﺍﻟﻤﻠﻴﺢ
(সুতরাং তুমি সুন্নাহকে আকড়িয়ে ধর যেভাবে তা এসেছে নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীগণের মাধ্যমে প্রিয় হাবীব থেকে)—
ﺃﺣﻤﺪ ﺍﻟﻤﺼﻄﻔﻰ ﺭﺳﻮﻝ ﺃﻣﻴﻦ ﻭ ﻣﻄﺎﻉ ﻭ ﺳﻴﺪ ﻭ ﺭﺟﻴﺢ
(আহমাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে, যিনি বিশ্বস্ত রাসূল, অনুসরণীয়-অনুকরণীয়, নেতা এবং প্রধান ব্যক্তিত্ব);
ﺃﻓﻀﻞ ﺍﻟﺨﻠﻖ ﺭﺗﺒﺔ ﻭ ﻣﺤﻼً ﻭ ﻣﻘﺎﻻ ﻣﻌﺠﺰﺍً ﻟﻠﻔﺼﻴﺢ
(সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি মর্যাদা ও অবস্থানগত দিক থেকে, আর যিনি কথাবার্তায় অসম্ভব রকম বিশুদ্ধভাষী)।
ﻓﺼﻼﺓ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﺘﺮﻯ ﻋﻠﻴﻪ ﻣﻊ ﻛﻞ ﺳﻼﻡ ﻣﺪﻳﺢ ﺑﻤﺪﻳﺢ
(অতএব, অনবরত আল্লাহর সালাত বর্ষিত হউক তাঁর উপর, সাথে প্রশংসা বিজড়িত সকল প্রকার সালাম ও গুণগান)।
ﻣﺎ ﺗﻮﺍﻟﻰ ﺍﻟﺼﺒﺎﺡ ﻣﻊ ﺟﻨﺢ ﻟﻴﻞ ﻭ ﺗﻮﺍﺭﻯ ﻣﻐﻴﺐ ﻓﻲ ﺿﺮﻳﺢ
(যতদিন প্রভাত হবে রাতের অন্ধকারের সাথে আর কবরে অদৃশ্য হবে কোনো প্রাণী)।
৪. ১০. পবিত্র মাসজিদে আকসায় সালাত আদায় করা: মাসজিদে আকসা ঐসব মাসজিদের অন্তর্ভুক্ত, যেগুলোর দিকে ইবাদত করার জন্য ভ্রমণ করা যায়; কারণ, আল্লাহ তা‘আলা তাকে অনেক বেশি মর্যাদা দিয়েছেন, এর মর্যাদা সম্পর্কে আপনার জেনে রাখা দরকার যে, তাতে সালাত আদায় করলে গুনাহ্-খাতা মাফ হয় এবং পাপরাশি মোচন হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
.« ﺇﻥَّ ﺳُﻠَﻴْﻤَﺎﻥَ ﺑْﻦَ ﺩَﺍﻭُﺩ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻤَﺎ ﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓُ ﻭَﺍﻟﺴَّﻠَﺎﻡُ ﻟَﻤَّﺎ ﺑَﻨَﻰ ﺑَﻴْﺖَ ﺍﻟْﻤَﻘْﺪِﺱِ ﺳَﺄَﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻋَﺰَّ ﻭَﺟَﻞَّ ﺧِﻠَﺎﻟًﺎ ﺛَﻠَﺎﺛًﺎ : ﺳَﺄَﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﺗَﻌَﺎﻟَﻰ ﺣُﻜْﻤًﺎ ﻳُﺼَﺎﺩِﻑُ ﺣُﻜْﻤَﻪُ ﻓَﺄُﻭﺗِﻴَﻪُ ، ﻭَﺳَﺄَﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻋَﺰَّ ﻭَﺟَﻞَّ ﻣُﻠْﻜًﺎ ﻟَﺎ ﻳَﻨْﺒَﻐِﻲ ﻟِﺄَﺣَﺪٍ ﻣِﻦْ ﺑَﻌْﺪِﻩِ ﻓَﺄُﻭﺗِﻴَﻪُ ، ﻭَﺳَﺄَﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻋَﺰَّ ﻭَﺟَﻞَّ ﺣِﻴﻦَ ﻓَﺮَﺍﻏِﻪِ ﻣِﻦْ ﺑِﻨَﺎﺀِ ﺍﻟْﻤَﺴْﺠِﺪِ ﺃَﻥْ ﻟَﺎ ﻳَﺄْﺗِﻴَﻪُ ﺃَﺣَﺪٌ ﻟَﺎ ﻳَﻨْﻬَﺰُﻩُ ﺇﻟَّﺎ ﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓُ ﻓِﻴﻪِ ﺃَﻥْ ﻳُﺨْﺮِﺟَﻪُ ﻣِﻦْ ﺧَﻄِﻴﺌَﺘِﻪِ ﻛَﻴَﻮْﻡِ ﻭَﻟَﺪَﺗْﻪُ ﺃُﻣُّﻪُ . ﻭﻧﺤﻦُ ﻧَﺮْﺟُﻮ ﺃﻥْ ﻳَﻜُﻮْﻥَ ﺍﻟﻠﻪُ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻗَﺪْ ﺃﻋﻄﺎﻩُ ﺫَﻟِﻚَ » . ( ﺃﺧﺮﺟﻪ ﺍﻟﻨﺴﺎﺋﻲ ﻭ ﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﻪ ﻭ ﺃﺣﻤﺪ ﻭ ﺍﻟﺤﺎﻛﻢ ) .
“দাঊদ ‘আলাইহিস সালামের পুত্র সুলাইমান ‘আলাইহিস সালাম যখন বাইতুল মুকাদ্দাস নির্মাণ করলেন, তখন তিনি আল্লাহ তা‘আলার নিকট তিনটি জিনিস চাইলেন: তিনি আল্লাহ তা‘আলার নিকট এমন প্রজ্ঞা চাইলেন, যা তাঁর শাসন পরিচালনার উপযুক্ত হয়; তাঁকে তা দেওয়া হল। আর তিনি আল্লাহ তা‘আলার নিকট এমন এক রাজ্য চাইলেন, যা তাঁর পর আর কারও জন্যই প্রযোজ্য হবে না; অতঃপর তাঁকে তাও দেওয়া হল। আর তিনি যখন মাসজিদের নির্মাণ কাজ শেষ করলেন, তখন তিনি আল্লাহ তা‘আলার নিকট প্রার্থনা করলেন যে, কোনো ব্যক্তি তাতে শুধু সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে আসলে তিনি যেন তাকে তার গুনাহ থেকে ঐ দিনের মত মুক্ত করে দেন, যেদিন তার মা তাকে নিষ্পাপ অবস্থায় প্রসব করেছে। আর আমরা আশা করি যে, আল্লাহ তাঁকে এটাও দিয়েছিলেন।”[59] আর এই বরকতময় মাসজিদটি আজ অভিশপ্ত ইয়াহূদীদের পদতলে কাঁদছে, যারা মুসলিমগণ কর্তৃক তাদের দীন থেকে গাফলতির সুযোগে ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে ফিলিস্তিনের একটি অংশসহ মাসজিদটিকে দখল করে নিয়েছে। হায়! তারা কাঁদার অভিনয় করছে ... বরং তোমরা কাঁদ এমন এক হারানো রাজ্যে যাকে উদ্ধার বা হেফাজত করার মত পুরুষ লোক নেই। হে আল্লাহ! আপনি তার জন্য সুস্পষ্ট বিজয়ের ব্যবস্থা করুন এবং খুব নিকটবর্তী সময়ের মধ্যে সাহায্য-সহযোগিতার ব্যবস্থা করুন ... আর সেই দিন মুমিনগণ ঐ আল্লাহর সাহায্য নিয়ে আনন্দে উৎফুল্ল হবে, যিনি কোনো সম্প্রদায়ের অবস্থা পরিবর্তন করেন না ততক্ষণ পর্যন্ত, যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থা নিজেরা পরিবর্তন করে। * * *
৫. জিহাদের অধ্যায়
আল্লাহর পথে জিহাদ করা প্রত্যেক মুসলিমের উপর ফরযে আইন, হয় অন্তর দিয়ে নতুবা বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে, অথবা সম্পদ দিয়ে অথবা শক্তি প্রয়োগ করে; সুতরাং প্রত্যেক মুসলিমের উপর তার শক্তি, ক্ষমতা ও অবস্থান অনুযায়ী উল্লেখিত যে কোনো প্রকার পদ্ধতি অবলম্বনে জিহাদ করা আবশ্যক। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: ﴿ ﺑَﻞِ ﭐﻟۡﺈِﻧﺴَٰﻦُ ﻋَﻠَﻰٰ ﻧَﻔۡﺴِﻪِۦ ﺑَﺼِﻴﺮَﺓٞ ١٤ ﻭَﻟَﻮۡ ﺃَﻟۡﻘَﻰٰ ﻣَﻌَﺎﺫِﻳﺮَﻩُۥ ١٥ ﴾ [ ﺍﻟﻘﻴﺎﻣﺔ : ١٤، ١٥ ] “বরং মানুষ নিজের সম্পর্কে সম্যক অবগত, যদিও সে নানা অজুহাতের অবতারণা করে।”[60]
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা জানিয়ে দিয়েছেন যে, তিনি: ﴿ ﭐﺷۡﺘَﺮَﻯٰ ﻣِﻦَ ﭐﻟۡﻤُﺆۡﻣِﻨِﻴﻦَ ﺃَﻧﻔُﺴَﻬُﻢۡ ﻭَﺃَﻣۡﻮَٰﻟَﻬُﻢ ﴾ [ ﺍﻟﺘﻮﺑﺔ : ١١١ ]
“নিশ্চয় তিনি মুমিনদের কাছ থেকে তাদের জীবন ও সম্পদ কিনে নিয়েছেন।”[61]
আর তাদেরকে তার বিনিময় দিয়েছেন এই বলে:
﴿ ﺑِﺄَﻥَّ ﻟَﻬُﻢُ ﭐﻟۡﺠَﻨَّﺔَۚ ﴾ [ ﺍﻟﺘﻮﺑﺔ : ١١١ ]
“(এর বিনিময়ে) তাদের জন্য আছে জান্নাত।”[62]
আর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা এই চুক্তি ও প্রতিশ্রুতি গচ্ছিত রেখেছেন তাঁর নাযিলকৃত শ্রেষ্ঠ কিতাবসমূহে; আল-কুআনের ভাষায়:
﴿ ﻭَﻋۡﺪًﺍ ﻋَﻠَﻴۡﻪِ ﺣَﻘّٗﺎ ﻓِﻲ ﭐﻟﺘَّﻮۡﺭَﻯٰﺔِ ﻭَﭐﻟۡﺈِﻧﺠِﻴﻞِ ﻭَﭐﻟۡﻘُﺮۡﺀَﺍﻥِۚ ﴾ [ ﺍﻟﺘﻮﺑﺔ : ١١١ ]
“তাওরাত, ইঞ্জীল ও কুরআনে এ সম্পর্কে তাদের হক ওয়াদা রয়েছে।”[63]
আর তিনি সেই প্রতিশ্রুতির ব্যাপারে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন এবং তাদেরকে সুসংবাদ দিয়েছেন এই বলে:
﴿ ﻭَﻣَﻦۡ ﺃَﻭۡﻓَﻰٰ ﺑِﻌَﻬۡﺪِﻩِۦ ﻣِﻦَ ﭐﻟﻠَّﻪِۚ ﻓَﭑﺳۡﺘَﺒۡﺸِﺮُﻭﺍْ ﺑِﺒَﻴۡﻌِﻜُﻢُ ﭐﻟَّﺬِﻱ ﺑَﺎﻳَﻌۡﺘُﻢ ﺑِﻪِۦۚ ﻭَﺫَٰﻟِﻚَ ﻫُﻮَ ﭐﻟۡﻔَﻮۡﺯُ ﭐﻟۡﻌَﻈِﻴﻢُ ١١١ ﴾ [ ﺍﻟﺘﻮﺑﺔ : ١١١ ]
“আর নিজ প্রতিজ্ঞা পালনে আল্লাহ্র চেয়ে শ্রেষ্ঠতর কে আছে? সুতরাং তোমরা যে সওদা করেছ, সে সওদার জন্য আনন্দিত হও। আর সেটাই তো মহাসাফল্য।”[64]
সুতরাং যে চুক্তি সম্পাদনকারী ব্যক্তি তার রবের সাথে এ ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি সম্পাদন করেছে, সে যেন চিন্তাভাবনা করে— তার ঝুঁকি কত বড় এবং তার প্রতিদান কত মহান! কারণ, আল্লাহ তা‘আলা হলেন স্বয়ং ক্রেতা এবং মূল্য হচ্ছে নি‘য়ামতপূর্ণ জান্নাত ও স্থায়ী সাফল্য; আর যাঁর হাত দিয়ে এই চুক্তির প্রচলন তিনি হলেন সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল এবং ফিরিশতা ও মানবগোষ্ঠীর মধ্যে সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তি; আর এই পণ্য, যার মূল্য এত বেশি, তা অবশ্যই কোনো মহৎ ও গুরুত্বপূর্ণ বস্তুর জন্যই নির্ধারণ করা হয়েছে। আর যখন দাবিদারের সংখ্যা বেশি হয়ে গেলো, তখন তাদেরকে তাদের দাবির স্বপক্ষে দলীল-প্রমাণ প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আহ্বান করা হলো; কারণ, মানুষকে যদি তাদের দাবি অনুযায়ীই (বিশুদ্ধতা যাচাই না করে) দেওয়া হত, তাহলে আকাশ, যমীন ও তার মধ্যবর্তী স্থানে চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হত। আর যখন সাক্ষী-প্রমাণসহ বিভিন্ন রকম দাবিদারের আত্মপ্রকাশ ঘটলো, তখন তাদেরকে বলা হলো একটি মাত্র প্রমাণ ছাড়া কোনো দলীল-প্রমাণ ও দাবি-দাওয়া প্রতিষ্ঠিত ও সাব্যস্ত হবে না; আর সেই প্রমাণটি হলো আল-কুরআনের ভাষায়:
﴿ ﻗُﻞۡ ﺇِﻥ ﻛُﻨﺘُﻢۡ ﺗُﺤِﺒُّﻮﻥَ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﻓَﭑﺗَّﺒِﻌُﻮﻧِﻲ ﻳُﺤۡﺒِﺒۡﻜُﻢُ ﭐﻟﻠَّﻪُ ﻭَﻳَﻐۡﻔِﺮۡ ﻟَﻜُﻢۡ ﺫُﻧُﻮﺑَﻜُﻢۡۚ ﻭَﭐﻟﻠَّﻪُ ﻏَﻔُﻮﺭٞ ﺭَّﺣِﻴﻢٞ ٣١ ﴾ [ ﺍﻝ ﻋﻤﺮﺍﻥ : ٣١ ]
“বলুন, ‘তোমরা যদি আল্লাহকে ভালবাস, তবে আমাকে অনুসরণ কর, আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করবেন। আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”[65] ফলে সৃষ্টির অনেকেই পিছনে পড়ে গেলো, কেবল যারা কথায়, কাজে, দিক নির্দেশনায় ও নৈতিক চরিত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ করেছে তারাই অবশিষ্ট থেকে গেলো; আল-কুরআনের ভাষায়:
﴿ ﻓَﺴَﻮۡﻑَ ﻳَﺄۡﺗِﻲ ﭐﻟﻠَّﻪُ ﺑِﻘَﻮۡﻡٖ ﻳُﺤِﺒُّﻬُﻢۡ ﻭَﻳُﺤِﺒُّﻮﻧَﻪُۥٓ ﺃَﺫِﻟَّﺔٍ ﻋَﻠَﻰ ﭐﻟۡﻤُﺆۡﻣِﻨِﻴﻦَ ﺃَﻋِﺰَّﺓٍ ﻋَﻠَﻰ ﭐﻟۡﻜَٰﻔِﺮِﻳﻦَ ﴾ [ ﺍﻟﻤﺎﺋﺪﺓ : ٥٤ ]
“অতঃপর নিশ্চয় আল্লাহ এমন এক সম্প্রদায় আনবেন যাদেরকে তিনি ভালবাসবেন এবং যারা তাঁকে ভালবাসবে; তারা মুমিনদের প্রতি কোমল ও কাফেরদের প্রতি কঠোর হবে।”[66] আর তখনই তাদের কাছে (সে আনুগত্য ও অনুসরণের) দীলল-প্রমাণসমূহের যথার্থতা তলব করা হলো, এবং বলা হলো: পরিশুদ্ধিতা ব্যতীত সাক্ষ্য প্রমাণের যথার্থতা সাব্যস্ত হবে না— আল-কুরআনের ভাষায়:
﴿ ﻳُﺠَٰﻬِﺪُﻭﻥَ ﻓِﻲ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﭐﻟﻠَّﻪِ ﻭَﻟَﺎ ﻳَﺨَﺎﻓُﻮﻥَ ﻟَﻮۡﻣَﺔَ ﻟَﺎٓﺋِﻢٖۚ ﴾ [ ﺍﻟﻤﺎﺋﺪﺓ : ٥٤ ]
“তারা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে এবং কোনো নিন্দুকের নিন্দার ভয় করবে না।”[67] আর তখনই মুজাহিদগণ দাঁড়িয়ে গেলো (জিহাদের মাধ্যমে নিজেদের দ্বারা রাসূলের আনুগত্যের দাবীর যথার্থতা প্রমাণের জন্য), অতঃপর তাদেরকে বলা হলো: নিশ্চয় মুমিনগণের জীবন ও সম্পদের মালিকানা তাদের নয়, সুতরাং তোমরা চুক্তির দাবি অনুযায়ী তা হস্তান্তর কর; কারণ পারস্পরিক ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি মোতাবেক উভয় পক্ষ থেকে বিনিময় হস্তান্তর করা আবশ্যক। অতঃপর ব্যবসায়ীগণ যখন ক্রেতার মহত্ব এবং বিনিময় মূল্যের কদর (মর্যাদা) উপলব্ধি করলো, তখন তারা বুঝতে পারলো যে, এ পণ্যের এমন কদর ও মর্যাদা রয়েছে, যা অন্য কোনো পণ্যের নেই; ফলে তারা তাকে স্বল্প মূল্যে, মাত্র কয়েক দিরহামের বিনিময়ে বিক্রি করাটাকে স্পষ্ট ক্ষতি ও নিকৃষ্ট মানের প্রতারণার অন্তর্ভুক্ত বলে মনে করলো; কারণ যে এ ধরণের (স্পল্প মূল্যে বিক্রির) কাজ করবে, সে এমন এক মানুষ, যে নিজেকে বোকা বানিয়েছে এবং তার রবের মর্যাদাকে হালকা মনে করেছে। তাই তারা যার (আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা‘আলার) সাথে বিনিময় চুক্তি করেছে, (যেখানে ক্রেতা হলেন স্বয়ং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা‘আলা) তার সাথে সন্তোষ ও স্বেচ্ছায় এমন সন্তুষ্টির চুক্তি সম্পাদন করেছে যাতে কোনো খেয়ার (চুক্তি বহাল রাখা বা না রাখার স্বাধীনতা) রাখেনি; আর তারা বলে: আমরা আপনার সাথে কৃত চুক্তি ভঙ্গ করব না এবং আপনার নিকট চুক্তি ভঙ্গ করার আবেদনও করব না; অতঃপর যখন চুক্তি পরিপূর্ণ হয়ে গেলো এবং তারা বিক্রিত মাল হস্তান্তর করে দিল (জান ও মাল), তখনই তাদেরকে বলা হলো: তোমরা ওঠো! তোমাদেরকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে। আল-কুরআনের ভাষায়:
﴿ ﻓَﭑﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻫَﺎﺟَﺮُﻭﺍْ ﻭَﺃُﺧۡﺮِﺟُﻮﺍْ ﻣِﻦ ﺩِﻳَٰﺮِﻫِﻢۡ ﻭَﺃُﻭﺫُﻭﺍْ ﻓِﻲ ﺳَﺒِﻴﻠِﻲ ﻭَﻗَٰﺘَﻠُﻮﺍْ ﻭَﻗُﺘِﻠُﻮﺍْ ﻟَﺄُﻛَﻔِّﺮَﻥَّ ﻋَﻨۡﻬُﻢۡ ﺳَﻴَِّٔﺎﺗِﻬِﻢۡ ﻭَﻟَﺄُﺩۡﺧِﻠَﻨَّﻬُﻢۡ ﺟَﻨَّٰﺖٖ ﺗَﺠۡﺮِﻱ ﻣِﻦ ﺗَﺤۡﺘِﻬَﺎ ﭐﻟۡﺄَﻧۡﻬَٰﺮُ ﺛَﻮَﺍﺑٗﺎ ﻣِّﻦۡ ﻋِﻨﺪِ ﭐﻟﻠَّﻪِۚ ﻭَﭐﻟﻠَّﻪُ ﻋِﻨﺪَﻩُۥ ﺣُﺴۡﻦُ ﭐﻟﺜَّﻮَﺍﺏِ ١٩٥ ﴾ [ ﺍﻝ ﻋﻤﺮﺍﻥ : ١٩٥ ]
“কাজেই যারা হিজরত করেছে, নিজ ঘর থেকে উৎখাত হয়েছে, আমার পথে নির্যাতিত হয়েছে এবং যুদ্ধ করেছে ও নিহত হয়েছে, আমি তাদের পাপ কাজগুলো অবশ্যই দূর করব এবং অবশ্যই তাদেরকে প্রবেশ করাব জান্নাতে, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত। এটা আল্লাহর কাছ থেকে পুরস্কার; আর উত্তম পুরস্কার আল্লাহরই কাছে রয়েছে।”[68] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« ﺍﻟْﻘَﺘْﻞُ ﻓِﻰ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻳُﻜَﻔِّﺮُ ﻛُﻞَّ ﺷَﻰْﺀٍ ﺇِﻻَّ ﺍﻟﺪَّﻳْﻦَ » . ( ﺃﺧﺮﺟﻪ ﻣﺴﻠﻢ ) .
“আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হওয়া ঋণ ছাড়া সব কিছু মাফ করিয়ে দেয়।”[69]
আবূ কাতাদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
« ﺃﻥَّ ﺭَﺟُﻼً ﻗَﺎﻡَ ، ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ، ﺃَﺭَﺃَﻳْﺖَ ﺇِﻥْ ﻗُﺘِﻠْﺖُ ﻓِﻲ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺗُﻜَﻔَّﺮُ ﻋَﻨِّﻲ ﺧَﻄَﺎﻳَﺎﻱَ ؟ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻟَﻪُ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : « ﻧَﻌَﻢْ ، ﺇِﻥْ ﻗُﺘِﻠْﺖَ ﻓِﻲ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺃَﻧْﺖَ ﺻَﺎﺑِﺮٌ ﻣُﺤْﺘَﺴِﺐٌ ﻣُﻘْﺒِﻞٌ ﻏَﻴْﺮُ ﻣُﺪْﺑِﺮٍ » . ﺛُﻢَّ ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : « ﻛَﻴْﻒَ ﻗُﻠْﺖَ » . ﻗَﺎﻝَ : ﺃَﺭَﺃَﻳْﺖَ ﺇِﻥْ ﻗُﺘِﻠْﺖُ ﻓِﻲ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ، ﺃﺗُﻜَﻔَّﺮُ ﻋَﻨِّﻲ ﺧَﻄَﺎﻳَﺎﻱَ ؟ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : « ﻧَﻌَﻢْ ، ﻭَﺃَﻧْﺖَ ﺻَﺎﺑِﺮٌ ﻣُﺤْﺘَﺴِﺐٌ ﻣُﻘْﺒِﻞٌ ﻏَﻴْﺮُ ﻣُﺪْﺑِﺮٍ ، ﺇِﻻ ﺍﻟﺪَّﻳْﻦَ , ﻓَﺈِﻥَّ ﺟِﺒْﺮِﻳﻞَ ﻗَﺎﻝَ ﻟِﻲ ﺫَﻟِﻚَ » . ( ﺃﺧﺮﺟﻪ ﻣﺴﻠﻢ ) .
“এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল: হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপিন কি মনে করেন যে, আমি যদি আল্লাহর পথে নিহত (শহীদ) হই, তাহলে আমার সকল পাপ মোচন হয়ে যাবে? তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে লক্ষ্য করে বললেন: হ্যাঁ, যদি তুমি ধৈর্যশীল, সাওয়াবের আশায় আশান্বিত হয়ে পৃষ্ঠ প্রদর্শন না করে শত্রুর মুখোমুখি অবস্থায় নিহত হও। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তুমি কি বললে? তখন সে ব্যক্তি (আবার) বলল: আপিন কি মনে করেন যে, আমি যদি আল্লাহর পথে নিহত হই, তাহলে আমার সকল পাপের কাফ্ফারা হয়ে যাবে? তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: হ্যাঁ, যদি তুমি ধৈর্যশীল, সাওয়াবের আশায় আশান্বিত হয়ে পৃষ্ঠ প্রদর্শন না করে শত্রুর মুখোমুখি অবস্থায় নিহত হও; তবে ঋণের বিষয়টি আলাদা। কেননা, জিবরাঈল আ. আমাকে একথা বলেছেন।”[70] আল্লাহর পথের আহ্বানকারী, আল্লাহর সম্মানিত ঘর জান্নাতের দিকে আহ্বানকারী উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন আত্মা এবং সুউচ্চ সাহসী মনগুলোকে নাড়িয়ে দিয়েছে,
ﻓﺤﻴﻬﻼً ﺇﻥ ﻛﻨﺖ ﺫﺍ ﻫﻤﺔ ﻓﻘﺪ ﺣﺪﺍ ﺑﻚ ﺣﺎﺩﻱ ﺍﻟﺸﻮﻕ ﻓﺎﻃﻮ ﺍﻟﻤﺮﺍﺣﻼ
সুতরাং এগিয়ে এস যদি তুমি সত্যিকার সাহসী দৃঢ় মনোবলের অধিকারী হয়ে থাক, কারণ আবেগ মিশ্রিত গানে তোমাকে গায়ক গান গেয়ে ডাক দিয়ে যাচ্ছে সুতরাং তুমি দ্রুত পর্যায়গুলো অতিক্রম করে আস হে ঈমানদার ভাই তোমার আত্মাকে সে জন্য তৈরী কর:
ﻗﺪ ﻫﻴﺆﻭﻙ ﻷﻣﺮ ﻟﻮ ﻓﻄﻨﺖ ﻟﻪ ﻓﺄﺭﺑﺄ ﺑﻨﻔﺴﻚ ﺃﻥ ﺗﺮﻋﻰ ﻣﻊ ﺍﻟﻬﻤﻞ
তোমাকে এমন এক মহৎ কাজের জন্য তৈরী করা হয়েছে যদি তুমি তার জন্য সাবধান হতে.. সুতরাং তুমি তোমার আত্মাকে অধো-বুদ্ধিহীনদের কাতারে চারণ করতে দেওয়া থেকে উপরে উঠিয়ে রাখ। আর জেনে রাখবেন যে, আল্লাহ তা‘আলার পণ্য খুব দামী এবং তার মূল্য হলো জীবন ও সম্পদ তার মালিকের জন্য ব্যয় করা, যা তিনি মুমিনগণের কাছ থেকে ক্রয় করে নিয়েছেন। আর আল্লাহর কসম! এটা এমন দুর্বল বা কম দামী পণ্য নয় যে, নিঃস্ব কাপুরুষ ব্যক্তিগণ তার দাম করতে পারে এবং তা বিক্রয়ের অযোগ্য পণ্যও নয় যে, কোনো তুচ্ছ হতদরিদ্র ব্যক্তি তা ক্রয় করে ফেলবে। ইচ্ছুক ক্রেতাদের জন্য প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে এই পণ্য বাজারে উঠানো হয়েছে, আর (ক্রেতাসকলের পক্ষ থেকে) বলা হয়েছে: আরো বেশি আছে কি? আর তার প্রতিপালক গ্রীবাস্থিত ধমনীর বিনিময় ছাড়া আর অন্য কোনো দামে তা বিক্রি করতে রাজি নন। * * *
৬.রমযান
৬. ১. রমযান মাসে সাওম পালন:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:
« ﻣَﻦْ ﺻَﺎﻡَ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﺇِﻳﻤَﺎﻧًﺎ ﻭَﺍﺣْﺘِﺴَﺎﺑًﺎ ﻏُﻔِﺮَ ﻟَﻪُ ﻣَﺎ ﺗَﻘَﺪَّﻡَ ﻣِﻦْ ﺫَﻧْﺒِﻪِ » . ( ﺃﺧﺮﺟﻪ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ﻭ ﻣﺴﻠﻢ ﻭ ﺃﺑﻮ ﺩﺍﻭﺩ ﻭ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ ﻭ ﺍﻟﻨﺴﺎﺋﻲ ﻭ ﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﻪ ) .
“যে ব্যক্তি রমযান মাসে ঈমানের সাথে সাওয়াবের আশায় সাওম পালন করবে, তার অতীতের গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। ।”[71]
৬. ২. ‘আরাফা ও আশুরার দিনে সাওম পালন:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« ﺛَﻼَﺙٌ ﻣِﻦْ ﻛُﻞِّ ﺷَﻬْﺮٍ ﻭَﺭَﻣَﻀَﺎﻥُ ﺇِﻟَﻰ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﻓَﻬَﺬَﺍ ﺻِﻴَﺎﻡُ ﺍﻟﺪَّﻫْﺮِ ﻛُﻠِّﻪِ ، ﺻِﻴَﺎﻡُ ﻳَﻮْﻡِ ﻋَﺮَﻓَﺔَ ﺃَﺣْﺘَﺴِﺐُ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺃَﻥْ ﻳُﻜَﻔِّﺮَ ﺍﻟﺴَّﻨَﺔَ ﺍﻟَّﺘِﻰ ﻗَﺒْﻠَﻪُ ﻭَﺍﻟﺴَّﻨَﺔَ ﺍﻟَّﺘِﻰ ﺑَﻌْﺪَﻩُ ، ﻭَﺻِﻴَﺎﻡُ ﻳَﻮْﻡِ ﻋَﺎﺷُﻮﺭَﺍﺀَ ﺃَﺣْﺘَﺴِﺐُ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺃَﻥْ ﻳُﻜَﻔِّﺮَ ﺍﻟﺴَّﻨَﺔَ ﺍﻟَّﺘِﻰ ﻗَﺒْﻠَﻪُ » . ( ﺃﺧﺮﺟﻪ ﻣﺴﻠﻢ ) .
“প্রত্যেক মাসে তিনদিন সাওম পালন করা এবং এক রমযানের সাওম পরের রমযান পর্যন্ত— এটাই হলো সারা বছরের সাওম পালন। আরাফার দিনের সাওমের ব্যাপারে আমি আল্লাহ তা‘আলার কাছে আশি করি যে, তা পূর্বের এক বছরের এবং পরের এক বছরের গুনাহ মুছে দেবে। আর ‘আশুরার দিনের সাওমের ব্যাপারে আমি আল্লাহ তা‘আলার কাছে আশি করি যে, তা পূর্বের এক বছরের গুনাহ মুছে দেবে ।”[72] * * *
৭. হাজ্জের অধ্যায়
৭. ১. হাজ্জ ও ওমরা:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« ﺗَﺎﺑِﻌُﻮﺍ ﺑَﻴْﻦَ ﺍﻟْﺤَﺞِّ ﻭَﺍﻟْﻌُﻤْﺮَﺓِ ، ﻓَﺈِﻧَّﻬُﻤَﺎ ﻳَﻨْﻔِﻴَﺎﻥِ ﺍﻟْﻔَﻘْﺮَ ﻭَﺍﻟﺬُّﻧُﻮﺏَ ، ﻛَﻤَﺎ ﻳَﻨْﻔِﻲ ﺍﻟْﻜِﻴﺮُ ﺧَﺒَﺚَ ﺍﻟْﺤَﺪِﻳﺪِ » . ( ﺃﺧﺮﺟﻪ ﺍﻟﻨﺴﺎﺋﻲ ﻭ ﺍﻟﻄﺒﺮﺍﻧﻲ ) .
“তোমরা হাজ্জ ও ওমরা উভয়টি বিলম্ব না করে পরপর সম্পাদন কর; কারণ, এই দু’টি দারিদ্র ও পাপরাশিকে এমনভাবে দূর করে, যেভাবে হাপর লোহা’র ময়লা দূর করে।”[73] আর এই মহান ফযীলতের বিষয়টি অপর এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভাষায় আরও বিস্তারিতভাবে এসেছে, তিনি বলেছেন:
« ﺃﻣﺎ ﺧﺮﻭﺟﻚ ﻣﻦ ﺑﻴﺘﻚ ﺗﺆﻡ ﺍﻟﺒﻴﺖ ﺍﻟﺤﺮﺍﻡ ، ﻓﺈﻥ ﻟﻚ ﺑﻜﻞ ﻭﻃﺄﺓ ﺗﻄﺆﻫﺎ ﺭﺍﺣﻠﺘﻚ ﻳﻜﺘﺐ ﺍﻟﻠﻪ ﻟﻚ ﺑﻬﺎ ﺣﺴﻨﺔ ، ﻭﻳﻤﺤﻮ ﻋﻨﻚ ﺑﻬﺎ ﺳﻴﺌﺔ . ﻭﺃﻣﺎ ﻭﻗﻮﻓﻚ ﺑﻌﺮﻓﺔ ﻓﺈﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﺰ ﻭﺟﻞ ﻳﻨﺰﻝ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﺴﻤﺎﺀ ﺍﻟﺪﻧﻴﺎ ، ﻓﻴﺒﺎﻫﻰ ﺑﻬﻢ ﺍﻟﻤﻼﺋﻜﺔ، ﻓﻴﻘﻮﻝ : ﻫﺆﻻﺀ ﻋﺒﺎﺩﻯ ﺟﺎﺀﻭﻧﻰ ﺷُﻌْﺜًﺎ ﻏُﺒْﺮًﺍ ﻣﻦ ﻛﻞ ﻓﺞ ﻋﻤﻴﻖ ، ﻳﺮﺟﻮﻥ ﺭﺣﻤﺘﻰ ﻭﻳﺨﺎﻓﻮﻥ ﻋﺬﺍﺑﻰ ﻭﻟﻢ ﻳﺮﻭﻧﻰ ، ﻓﻜﻴﻒ ﻟﻮ ﺭﺃﻭﻧﻰ ؟ ﻓﻠﻮ ﻛﺎﻥ ﻋﻠﻴﻚ ﻣﺜﻞ ﺭﻣﻞ ﻋﺎﻟﺞ ﺃﻭ ﻣﺜﻞ ﺃﻳﺎﻡ ﺍﻟﺪﻧﻴﺎ ﺃﻭ ﻣﺜﻞ ﻗﻄﺮ ﺍﻟﺴﻤﺎﺀ ﺫﻧﻮﺑﺎ ، ﻏﺴﻠﻬﺎ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻚ . ﻭﺃﻣﺎ ﺭﻣﻴﻚ ﺍﻟﺠﻤﺎﺭ ﻓﺈﻧﻪ ﻣﺬﺧﻮﺭ ﻟﻚ . ﻭﺃﻣﺎ ﺣﻠﻘﻚ ﺭﺃﺳﻚ ﻓﺈﻥ ﻟﻚ ﺑﻜﻞ ﺷﻌﺮﺓ ﺗﺴﻘﻂ ﺣﺴﻨﺔ ، ﻓﺈﺫﺍ ﻃﻔﺖ ﺑﺎﻟﺒﻴﺖ ﺧﺮﺟﺖ ﻣﻦ ﺫﻧﻮﺑﻚ ﻛﻴﻮﻡ ﻭﻟﺪﺗﻚ ﺃﻣﻚ » . ( ﺃﺧﺮﺟﻪ ﺍﻟﻄﺒﺮﺍﻧﻲ ) .
“আর তোমার ঘর থেকে সম্মানিত ঘর কা‘বা’র উদ্দেশ্যে তোমার বের হওয়া মানেই তোমার জন্য তোমার বাহনের প্রতিটি পদক্ষেপের বিনিময়ে একটি করে সাওয়াব লেখা হয় এবং তোমার একটি করে পাপ মোচন হয়। আর তুমি যখন ‘আরাফাতের ময়দানে অবস্থান কর, তখন আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন, তারপর তিনি তাদেরকে নিয়ে ফিরিশতাদের সাথে গর্ব করেন এবং বলেন: আমার বান্দাগণ আমার কাছে আউলা কেশে ধূলিমলিন অবস্থায় দূর-দূরান্তের পথ অতিক্রম করে এসেছে আমার রহমতের আশায় এবং আমার শাস্তির ভয়ে, অথচ তারা আমাকে দেখেনি; সুতরাং তারা যদি আমাকে দেখত, তাহলে কেমন জানি হত? অতএব, যদি তোমার অপরাধ বালির স্তুপের মত হয় অথবা দুনিয়ার দিনসমূহের সমান হয় অথবা বৃষ্টির ফোটা পরিমাণ হয়, তবে তিনি তোমার সেই অপরাধ ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করে দিবেন। আর তোমার কঙ্কর নিক্ষেপ তোমার জন্য (সাওয়াব হিসেবে) সঞ্চিত থাকবে। আর তোমার মাথা মুণ্ডনের ফলে তোমার জন্য (মাটিতে) পতিত প্রতিটি চুলের বিনিময়ে একটি করে সাওয়াবের ব্যবস্থা থাকবে। অতঃপর তুমি যখন বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করবে, তখন তুমি তোমার গুনাহসমূহ থেকে ঐ দিনের মত পবিত্র হয়ে বেরিয়ে আসবে, যেদিন তোমার মা তোমাকে (নিষ্পাপ অবস্থায়) প্রসব করেছে।”[74] * * *
৮. যাকাতের অধ্যায়
৮. ১. সাদকা করা: আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿ ﺇِﻥ ﺗُﺒۡﺪُﻭﺍْ ﭐﻟﺼَّﺪَﻗَٰﺖِ ﻓَﻨِﻌِﻤَّﺎ ﻫِﻲَۖ ﻭَﺇِﻥ ﺗُﺨۡﻔُﻮﻫَﺎ ﻭَﺗُﺆۡﺗُﻮﻫَﺎ ﭐﻟۡﻔُﻘَﺮَﺍٓﺀَ ﻓَﻬُﻮَ ﺧَﻴۡﺮٞ ﻟَّﻜُﻢۡۚ ﻭَﻳُﻜَﻔِّﺮُ ﻋَﻨﻜُﻢ ﻣِّﻦ ﺳَﻴَِّٔﺎﺗِﻜُﻢۡۗ ﻭَﭐﻟﻠَّﻪُ ﺑِﻤَﺎ ﺗَﻌۡﻤَﻠُﻮﻥَ ﺧَﺒِﻴﺮٞ ٢٧١ ﴾ [ ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ : ٢٧١ ]
“তোমরা যদি প্রকাশ্যে দান কর, তবে তা ভাল; আর যদি গোপনে কর এবং অভাবগ্রস্তকে দাও, তা তোমাদের জন্য আরো ভাল; এবং এতে তিনি তোমাদের জন্য কিছু পাপ মোচন করবেন। আর তোমরা যে আমল কর আল্লাহ্ সে সম্পর্কে সম্মক অবহিত।”[75]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ ﺇِﻥ ﺗُﻘۡﺮِﺿُﻮﺍْ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﻗَﺮۡﺿًﺎ ﺣَﺴَﻨٗﺎ ﻳُﻀَٰﻌِﻔۡﻪُ ﻟَﻜُﻢۡ ﻭَﻳَﻐۡﻔِﺮۡ ﻟَﻜُﻢۡۚ ﻭَﭐﻟﻠَّﻪُ ﺷَﻜُﻮﺭٌ ﺣَﻠِﻴﻢٌ ١٧ ﴾ [ ﺍﻟﺘﻐﺎﺑﻦ : ١٧ ]
“যদি তোমরা আল্লাহকে উত্তম ঋণ দান কর, তাহলে তিনি তোমাদের জন্য তা বহু গুণ বৃদ্ধি করবেন এবং তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। আর আল্লাহ্ গুণগ্রাহী, পরম সহিষ্ণু।”[76] * * *
৯. ইসলাম নির্ধারিত শাস্তির অধ্যায়
৯. ১. শরী‘য়ত কর্তৃক নির্ধারিত শাস্তি প্রয়োগ:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« ﺃﻳﻤﺎ ﻋﺒﺪ ﺃﺻﺎﺏ ﺷﻴﺌﺎ ﻣﻤﺎ ﻧﻬﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ , ﺛﻢ ﺃﻗﻴﻢ ﻋﻠﻴﻪ ﺣﺪﻩ , ﻛُﻔِّﺮ ﻋﻨﻪ ﺫﻟﻚ ﺍﻟﺬﻧﺐُ » . ( ﺃﺧﺮﺟﻪ ﺍﻟﺤﺎﻛﻢ ﻭ ﺍﻟﺪﺍﺭﻣﻲ ﻭ ﺃﺣﻤﺪ ) .
“যে কোনো বান্দা আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক নিষিদ্ধ করা হয়েছে এমন কোনো অপরাধের সাথে জড়িত হয়ে যায়, অতঃপর তার উপর শরী‘য়ত কর্তৃক নির্ধারিত শাস্তি প্রয়োগ করা হয়, এর ফলে তার অপরাধ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।”[77] * * *
১০. যিকিরের অধ্যায়
১০. ১. আল্লাহর যিকির করা:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« ﻣَﺎ ﻣِﻦْ ﻗَﻮْﻡٍ ﺍﺟْﺘَﻤَﻌُﻮﺍ ﻳَﺬْﻛُﺮُﻭﻥَ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻟَﺎ ﻳُﺮِﻳﺪُﻭﻥَ ﺑِﺬَﻟِﻚَ ﺇِﻟَّﺎ ﻭَﺟْﻬَﻪُ ﺇِﻟَّﺎ ﻧَﺎﺩَﺍﻫُﻢْ ﻣُﻨَﺎﺩٍ ﻣِﻦْ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﺀِ : ﺃَﻥْ ﻗُﻮﻣُﻮﺍ ﻣَﻐْﻔُﻮﺭًﺍ ﻟَﻜُﻢْ ﻗَﺪْ ﺑُﺪِّﻟَﺖْ ﺳَﻴِّﺌَﺎﺗُﻜُﻢْ ﺣَﺴَﻨَﺎﺕٍ » . ( ﺃﺧﺮﺟﻪ ﺃﺣﻤﺪ ) .
“যে কোনো সম্প্রদায় একত্রিত হয়ে আল্লাহর যিকির করবে এবং এর দ্বারা তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য হয় তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন, সেই সম্প্রদায়কে আসামানের কোনো এক ঘোষণাকারী ডেকে বলবে: তোমরা এমন অবস্থায় দাঁড়িয়ে যাও যে, তোমাদেরকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে এবং তোমাদের গুনাহসমূহকে পরিবর্তন করে সাওয়াবে পরিণত করা হয়েছে।”[78]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:
« ﺇِﻥَّ ﺳُﺒْﺤَﺎﻥَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺍﻟْﺤَﻤْﺪُ ﻟِﻠَّﻪِ ﻭَﻟَﺎ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻟَّﺎ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻭَﺍﻟﻠَّﻪُ ﺃَﻛْﺒَﺮُ ﺗَﻨْﻔُﺾُ ﺍﻟْﺨَﻄَﺎﻳَﺎ ﻛَﻤَﺎ ﺗَﻨْﻔُﺾُ ﺍﻟﺸَّﺠَﺮَﺓُ ﻭَﺭَﻗَﻬَﺎ » . ( ﺃﺧﺮﺟﻪ ﺃﺣﻤﺪ ﻭﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻯ ﻓﻰ ﺍﻷﺩﺏ ﺍﻟﻤﻔﺮﺩ ) .
“নিশ্চয় « ﺳُﺒْﺤَﺎﻥَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺍﻟْﺤَﻤْﺪُ ﻟِﻠَّﻪِ ﻭَﻟَﺎ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻟَّﺎ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻭَﺍﻟﻠَّﻪُ ﺃَﻛْﺒَﺮُ » (আল্লাহরই পবিত্রতা ঘোষণা করছি এবং সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য; আর আল্লাহ ছাড়া উপাসনার যোগ্য কোনো সত্য মা‘বুদ নেই; আর আল্লাহ মহান) — এর যিকির গুনাহসমূহকে এমনভাবে ঝেড়ে ফেলে দেয়, যেমনিভাবে গাছ তার পাতাসমূহকে ঝেড়ে ফেলে।”[79]
১০. ২. মাজলিসের কাফ্ফারা:
যখন মুসলিমগণের মধ্য থেকে কোনো একটি দল বা গোষ্ঠী একত্রিত হবে, তখন তাদের উপর আবশ্যকীয় কর্তব্য হল— তারা আল্লাহ তা‘আলার বেঁধে দেওয়া সীমারেখার মধ্যে থেকে তাদের মাজলিস পরিচালনা করবে এবং কোনো রকম সীমালংঘন করবে না, যেমন: খেল-তামাসা, গীবত তথা তাদের ভাইয়ের গোশ্ত দংশন, তাদের গোপনীয় বিষয় প্রকাশ এবং তাদের ভুল-ত্রুটি ও অপরাধের সমালোচনা ইত্যাদি তাদের আলোচনার বিষয় না হওয়া। বরং তাদের জন্য ওয়াজিব হল— সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করার ব্যাপারে পরস্পরকে সহযোগিতা করা, মানুষের মাঝে সংশোধন ও সংস্কারমূলক কাজ করা এবং আল্লাহ তা‘আলার কিতাব ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ নিয়ে শিক্ষামূলক আলোচনা করা। সুতরাং যে মুসলিমের লক্ষ্য হবে আল্লাহ ও পরকাল, এমন প্রত্যেক মুসলিমের কর্তব্য হল— তার দ্বারা অনুষ্ঠিত প্রত্যেক মাজলিসে এই বিষয়ে সতর্ক করা এবং আল্লাহর যিকির ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি সালাত ও সালাম পেশ করার ব্যাপারে কোনো রকম অমনোযোগী না হওয়া; নতুবা কিয়ামতের দিনে তার উপর নিঃসঙ্গতা, দুঃখ-কষ্ট ও অপমানজনক অবস্থা চেপে বসবে, যদিও সে জান্নাতে প্রবেশ করে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« ﻣَﺎ ﻣِﻦْ ﻗَﻮْﻡٍ ﺟَﻠَﺴُﻮﺍ ﻣَﺠْﻠِﺴًﺎ ﻟَﻢْ ﻳَﺬْﻛُﺮُﻭﺍ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻓِﻴﻪِ ﺇِﻟَّﺎ ﺭَﺃَﻭْﻩُ ﺣَﺴْﺮَﺓً ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ » . ( ﺃﺧﺮﺟﻪ ﺃﺣﻤﺪ ) .
“যে কোনো সম্প্রদায় কোনো মাজলিসে বসল, অথচ তারা সেখানে আল্লাহর যিকির করল না, কিয়ামতের দিন তারা তাকে দুঃখ-কষ্ট হিসেবে দেখবে।”[80] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:
« ﻣَﺎ ﻗَﻌَﺪَ ﻗَﻮْﻡٌ ﻣَﻘْﻌَﺪًﺍ ﻟَﻢْ ﻳَﺬْﻛُﺮُﻭﺍ ﺍَﻟﻠَّﻪَ ﻓﻴﻪِ , ﻭَﻟَﻢْ ﻳُﺼَﻠُّﻮﺍ ﻋَﻠَﻰ ﺍَﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺇِﻟَّﺎ ﻛَﺎﻥَ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﺣَﺴْﺮَﺓً ﻳَﻮْﻡَ ﺍَﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ , ﻭَﺇِﻥْ ﺩَﺧَﻠُﻮﺍ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔَ » . ( ﺃﺧﺮﺟﻪ ﺃﺣﻤﺪ ﻭ ﺍﻟﺤﺎﻛﻢ ) .
“কোন সম্প্রদায় কোনো আসর বা মাজলিসে বসল, অথচ তারা সেখানে আল্লাহর যিকির করল না এবং নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দুরূদ পাঠ করল না, কিয়ামতের দিনে তাদের উপর দুঃখ-কষ্ট চেপে বসবে, যদিও তারা জান্নাতে প্রবেশ করে।”[81] কিন্তু ভুলে যাওয়াটাই মানবজাতির জন্য বিপদজনক এবং তাদের প্রয়োজনীয় বস্তুর ঘাটতির কারণ। সুতরাং যখন মুসলিম ব্যক্তি মাজলিসে তার আবশ্যকীয় কর্তব্য পালনে ব্যর্থ বা অক্ষম হবে, তখন সেখান থেকে উঠে আসার পূর্বে সে যেন মাজলিসের কাফ্ফারা আদায় করতে ভুলে না যায়, যেমনটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিক্ষা দিয়েছেন, তিনি বলেন:
« ﻣﻦ ﻗﺎﻝ : ﺳﺒﺤﺎﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺑﺤﻤﺪﻩ ﺳﺒﺤﺎﻧﻚ ﺍﻟﻠﻬﻢ ﻭﺑﺤﻤﺪﻙ ﺃﺷﻬﺪ ﺃﻥ ﻻ ﺇﻟﻪ ﺇﻻ ﺃﻧﺖ ﺃﺳﺘﻐﻔﺮﻙ ﻭﺃﺗﻮﺏ ﺇﻟﻴﻚ ، ﻓﻘﺎﻟﻬﺎ ﻓﻲ ﻣﺠﻠﺲ ﺫﻛﺮ ﻛﺎﻧﺖ ﻛﺎﻟﻄﺎﺑﻊ ﻳﻄﺒﻊ ﻋﻠﻴﻪ ، ﻭﻣﻦ ﻗﺎﻟﻬﺎ ﻓﻲ ﻣﺠﻠﺲ ﻟﻐﻮ ﻛﺎﻧﺖ ﻛﻔﺎﺭﺓ ﻟﻪ » . ( ﺃﺧﺮﺟﻪ ﺍﻟﺤﺎﻛﻢ ﻭ ﺍﻟﻄﺒﺮﺍﻧﻲ ) .
“যে ব্যক্তি যিকিরের মাজলিসে বলে: « ﺳﺒﺤﺎﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺑﺤﻤﺪﻩ ﺳﺒﺤﺎﻧﻚ ﺍﻟﻠﻬﻢ ﻭﺑﺤﻤﺪﻙ ﺃﺷﻬﺪ ﺃﻥ ﻻ ﺇﻟﻪ ﺇﻻ ﺃﻧﺖ ﺃﺳﺘﻐﻔﺮﻙ ﻭﺃﺗﻮﺏ ﺇﻟﻴﻚ » (আল্লাহরই পবিত্রতা ঘোষণা করছি এবং তাঁর প্রশংসা করছি; হে আল্লাহ! আপনারই পবিত্রতা ঘোষণা করছি এবং আপনার প্রশংসা করছি। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ (মা‘বুদ) নেই, আমি আপনার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তাওবা করছি), তখন তা হবে মোহরাঙ্কিত বস্তুর মত (টিকসই); আর যে ব্যক্তি তা অর্থহীন মাজলিসে বলবে, তখন তা তার জন্য কাফ্ফারা হয়ে যাবে।”[82] * * *
“আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে উত্তম পুরষ্কার (জান্নাত) ও বাড়তি (আল্লাহর দীদার) প্রদান করুন” হে আল্লাহর বান্দা, হে মুসলিম ভাই! জেনে রাখুন যে, আল-কুরআনের এসব আয়াত ও নবীর হাদীসে পাপরাশি ক্ষমার সাথে সংশ্লিষ্ট আমলের ব্যাপারে ব্যাপক উৎসাহ দিয়েছে, কিন্তু বান্দার জন্য উচিৎ হলো তার উপর নির্ভরশীল হয়ে বসে না থাকা। এমন যেন না হয় যে গুনাহ ও মন্দ কাজে জড়িয়ে যাওয়ার ব্যাপারে নিজের নফসের লাগামকে ছেড়ে দেবে এবং এই বাজে ধারণা করবে যে, সে গুনাহ করলেও যখনই এ জাতীয় আমল করবে তখনই তা তার সকল গুনাহ মাফের নিশ্চয়তা বিধান করবে। নিশ্চয়ই এ ধরনের কল্পনা চরম মূর্খতা ও বোকামির বহিঃপ্রকাশ; কারণ, হে প্রতারিত ব্যক্তি! তুমি কিভাবে জানতে পারবে যে, আল্লাহ তা‘আলা তোমার আমল কবুল করেছেন এবং তোমার গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন? আল্লাহ সুবহানহু ওয়া তা‘আলা বলেন:
﴿ ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﻳَﺘَﻘَﺒَّﻞُ ﭐﻟﻠَّﻪُ ﻣِﻦَ ﭐﻟۡﻤُﺘَّﻘِﻴﻦَ ٢٧ ﴾ [ ﺍﻟﻤﺎﺋﺪﺓ : ٢٧ ]
“আল্লাহ তো কেবল মুত্তাকীদের পক্ষ হতে কবুল করেন।”[83] ঐসব মুত্তাকী বান্দগণ সৎকাজ করে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করার ব্যাপারে যথাসাধ্য চেষ্টা করে এবং পাপকাজ থেকে বিরত থাকে, আর সাথে সাথে এই আশঙ্কাও করে যে, তাদের আমলসমূহ বাতিল করে দিয়ে তাদের কাছে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয় কিনা এবং তাদের মুখের উপর ছুড়ে মারা হয় কিনা:
﴿ ﺇِﻥَّ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻫُﻢ ﻣِّﻦۡ ﺧَﺸۡﻴَﺔِ ﺭَﺑِّﻬِﻢ ﻣُّﺸۡﻔِﻘُﻮﻥَ ٥٧ ﻭَﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻫُﻢ ﺑَِٔﺎﻳَٰﺖِ ﺭَﺑِّﻬِﻢۡ ﻳُﺆۡﻣِﻨُﻮﻥَ ٥٨ ﻭَﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻫُﻢ ﺑِﺮَﺑِّﻬِﻢۡ ﻟَﺎ ﻳُﺸۡﺮِﻛُﻮﻥَ ٥٩ ﻭَﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳُﺆۡﺗُﻮﻥَ ﻣَﺎٓ ﺀَﺍﺗَﻮﺍْ ﻭَّﻗُﻠُﻮﺑُﻬُﻢۡ ﻭَﺟِﻠَﺔٌ ﺃَﻧَّﻬُﻢۡ ﺇِﻟَﻰٰ ﺭَﺑِّﻬِﻢۡ ﺭَٰﺟِﻌُﻮﻥَ ٦٠ ﴾ [ ﺍﻟﻤﺆﻣﻨﻮﻥ : ٥٧، ٦٠ ]
“নিশ্চয় যারা তাদের রব-এর ভয়ে সন্ত্রস্ত, আর যারা তাদের রব-এর নিদর্শনাবলীতে ঈমান আনে, আর যারা তাদের রব-এর সাথে শির্ক করে না, আর যারা যা দেওয়ার তা দেয় ভীত-কম্পিত হৃদয়ে, এজন্য যে তারা তাদের রব-এর কাছে প্রত্যাবর্তনকারী।”[84] হ্যাঁ, এরাই হলেন সত্যিকার মুমিন।[85]
আর এই মহান অর্থের দিকেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘উসমান ইবন ‘আফ্ফান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত হাদিসে ইঙ্গিত করেছেন, যাতে তিনি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের অযুর পদ্ধতি বর্ণনা করেছেন; অতঃপর তিনি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন:
« ﻣَﻦْ ﺗَﻮَﺿَّﺄَ ﻣِﺜْﻞَ ﻫَﺬَﺍ ﺍﻟْﻮُﺿُﻮﺀِ , ﺛُﻢَّ ﺃَﺗَﻰ ﺍﻟْﻤَﺴْﺠِﺪَ , ﻓَﺮَﻛَﻊَ ﺭَﻛْﻌَﺘَﻴْﻦِ , ﺛﻢ ﺟﻠﺲ , ﻏُﻔِﺮَ ﻟَﻪُ ﻣَﺎ ﺗَﻘَﺪَّﻡَ ﻣِﻦْ ﺫَﻧْﺒِﻪِ , ﻗَﺎﻝَ ﻭَﻗَﺎﻝَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ : « ﻟَﺎ ﺗَﻐْﺘَﺮُّﻭﺍ » . ( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ) .
“যে ব্যক্তি এই অযূর ন্যায় অযূ করবে, অতঃপর মাসজিদে এসে দুই রাকা‘য়াত সালাত করবে, তার অতীতের সব গুনাহ্ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। তিনি বললেন: নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন যে, তোমরা ধোঁকায় পড়ো না।”[86] হে আমার ভাই! আপনি আরও জেনে রাখবেন যে, যেসব অপরাধ জনগণের হক বা অধিকারের সাথে সংশ্লিষ্ট, এসব আয়াত ও হাদিস তা অন্তর্ভুক্ত করে না; বরং ওয়াজিব হলো ঐ হক বা অধিকার তার মালিকের নিকট ফিরেয়ে দেওয়া; তার দলীল হলো ঐ হাদিস, যা শহীদের ঋণ ব্যতীত সকল গুনাহ্ মাফের কথা বর্ণনা করে।[87] সুতরাং হে আমার ভাই! সতর্ক ও সাবধান হও— আল্লাহ তোমাকে তাঁর পক্ষ থেকে প্রাণশক্তির মাধ্যমে সাহায্য করবেন। আর জেনে রাখবে যে, শয়তানের পথ অনেকগুলো এবং তার পাতানো ফাঁদগুলো অনেক বড়; সুতরাং এই দরজা দিয়ে সে তোমার কাছে অনুপ্রবেশ করবে— সে ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করবে।
« ﺳﺒﺤﺎﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺑﺤﻤﺪﻩ ﺳﺒﺤﺎﻧﻚ ﺍﻟﻠﻬﻢ ﻭﺑﺤﻤﺪﻙ ﺃﺷﻬﺪ ﺃﻥ ﻻ ﺇﻟﻪ ﺇﻻ ﺃﻧﺖ ﺃﺳﺘﻐﻔﺮﻙ ﻭﺃﺗﻮﺏ ﺇﻟﻴﻚ » .
(আল্লাহরই পবিত্রতা ঘোষণা করছি এবং তাঁর প্রশংসা করছি; হে আল্লাহ! আপনারই পবিত্রতা ঘোষণা করছি এবং আপনার প্রশংসা করছি। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ (মা‘বুদ) নেই, আমি আপনার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তাওবা করছি)। * * *
বিষয়সমূহের সূচীপত্র
বিষয়সমূহ
* নবুয়্যাতের প্রদীপ থেকে
* ভূমিকা
* পাপ মোচনকারী আমল
১. ঈমানের অধ্যায়
১. ১. ইসলাম
১. ২. রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ
২. চরিত্রের অধ্যায়
২. ১. বিশুদ্ধ তাওবা
২. ২. উদারতা প্রদর্শন
২. ৩. মন্দকাজের পরে ভালকাজ করা
২. ৪. সালাম দেওয়া ও উত্তম কথা বলা
২. ৫. মুসাফাহা বা করমর্দন
২. ৬. জীব-জন্তুর প্রতি দয়া ও কোমল আচরণ করা
২. ৭. কবীরা গুনাহ্ ও ধ্বংসাত্মক অপরাধ থেকে বিরত থাকা
২. ৮. বিপদ-মুসিবত
৩. পবিত্রতার অধ্যায়
৩. ১. অযু
৪. সালাতের অধ্যায়
৪. ১. আযান
৪. ২. সালাত
৪. ৩. এক মা‘বুদের উদ্দেশ্যে সাজদা করা
৪. ৪. জামা‘য়াতে সালাত আদায় করার জন্য আল্লাহর ঘরসমূহের উদ্দেশ্যে পথ চলা
৪. ৫. আমীন বলা
৪. ৬. জুমু‘আ’র সালাত
৪. ৭. কিয়ামুল লাইল (রাতের বেলায় নফল ইবাদত)
৪. ৮. রমযান মাসে কিয়ামুল লাইল বা রাত জেগে নফল ইবাদত
৪. ৯. সালাতুত্ তাসবীহ
৪. ১০. পবিত্র মাসজিদে আকসায় সালাত আদায় করা
৫. জিহাদের অধ্যায়
৫. ১. আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হওয়া
৬. সাওমের অধ্যায়
৬. ১. রমযান মাসে সাওম পালন
৬. ২. ‘আরাফা ও আশুরার দিনে সাওম পালন
৭. হাজ্জের অধ্যায়
৭. ১. হাজ্জ ও ওমরা
৮. যাকাতের অধ্যায়
৮. ১. সাদকা করা
৯. ইসলাম নির্ধারিত শাস্তির অধ্যায়
৯. ১. শরী‘য়ত নির্ধারিত শাস্তি প্রয়োগ
১০. যিকিরের অধ্যায়
১০. ১. আল্লাহর যিকির করা
১০. ২. মাজলিসের কাফ্ফারা * উপসংহার * বিষয়সমূহের সূচীপত্র * * * _______________________________________________________________________________________
[1] সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৫৩
[2] তিরমিযী, হাদিস নং- ১৯৮৭, তিনি হাদিসটিকে হাসান-সহীহ বলেছেন।
[3] সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ৭০
[4] সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২১
[5] সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৯
[6] সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৮৫
[7] সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ৩৮ - ৩৯
[8] ইমাম বুখারী রহ. হাদিসটি ‘তা‘লিকাত’ এর মধ্যে বর্ণনা করেছেন: (১/৯৭— ফতহুল বারী); তবে « ﻛَﺘَﺐَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻟﻪ ﻛﻞ ﺣﺴﻨﺔ ﻛﺎﻥ ﺃَﺯْﻟَﻔَﻬَﺎ » (আল্লাহ তা‘আলা তার আগের সকল ভাল কাজকে ভাল কাজ বলে গণ্য করেন)— এই কথাটি তার বর্ণনার মধ্যে নেই। আর ইমাম নাসায়ী রহ. হাদিসটি সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন এবং তাঁর বর্ণনায় তিনি « ﻛَﺘَﺐَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻟﻪ ﻛﻞ ﺣﺴﻨﺔ ﻛﺎﻥ ﺃَﺯْﻟَﻔَﻬَﺎ »— এই কথাটি অন্তর্ভুক্ত করেছেন। হাফেয ইবনু হাজার ‘আসকালানী তাঁর ‘ফতহুল বারী’ (১/৯৯) নামক গ্রন্থে বলেন: “ইমাম বুখারী রহ. এর বর্ণনা যা বাদ গিয়েছে, তা বাকি সকল বর্ণনার মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে; আর তা হল ইসলাম গ্রহণ করার পূর্বে করা সকল ভাল কাজকে ভাল কাজ বলে গ্রহণ করার বিষয়টি।”
[9] দেখুন: আমার প্রবন্ধ ‘মুবতিলাতুল আ‘মাল’ ( ﻣﺒﻄﻼﺕ ﺍﻷﻋﻤﺎﻝ ), মাসআলা (প্রশ্ন) নং- ১; তাতে এই বিধান প্রসঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে; যা দারু ইবনিল কায়্যিম— দাম্মাম থেকে প্রকাশিত।
[10] সূরা আল-মুলক, আয়াত: ১০ - ১৪
[11] অর্থাৎ তিনটি পর্যায় মানে তিনটি অবস্থা অতিক্রম করেছি; যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ ﻟَﺘَﺮۡﻛَﺒُﻦَّ ﻃَﺒَﻘًﺎ ﻋَﻦ ﻃَﺒَﻖٖ ١٩ ﴾ [ ﺍﻻﻧﺸﻘﺎﻕ : ١٩ ]
“অবশ্যই তোমরা এক স্তর থেকে অন্য স্তরে আরোহণ করবে।” - (সূরা আল-ইনশিকাক, আয়াত: ১৯)।
[12] মুসলিম, হাদিস নং- ৩৩৬
[13] সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৬৪
[14] সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৫৮
[15] সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৮০
[16] সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৫৯
[17] সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৩২
[18] সূরা আন-নূর, আয়াত: ৫৬
[19] সূরা আত-তাওবা, আয়াত: ৭১
[20] সূরা আন-নূর, আয়াত: ৫৪
[21] সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৩১
[22] সূরা আল-আহকাফ, আয়াত: ৩১
[23] সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৯৩
[24] দেখুন: আমার প্রবন্ধ" ﺍﻟﺘﻮﺑﺔ ﺍﻟﻨﺼﻮﺡ ﻓﻲ ﺿﻮﺀ ﺍﻟﻘﺮﺁﻥ ﺍﻟﻜﺮﻳﻢ ﻭ ﺍﻷﺣﺎﺩﻳﺚ ﺍﻟﺼﺤﻴﺤﺔ " (আল-কুরআনুল কারীম ও সহীহ হাদিসের আলোকে খাঁটি তাওবা); তাতে অনুসন্ধানী ও অতিরিক্ত জানতে আগ্রহী ব্যক্তির জন্য কাম্যবস্তু ও কাঙ্খিত বিষয়ের নির্দেশনা রয়েছে।
[25] সূরা আত-তাহরীম আয়াত: ৮
[26] ইবনু মাজাহ, হাদিস নং- ৪২৫০ এবং অন্যান্য মুহাদ্দিসগণ হাদিসটি আবদুল্লাহ আবন মাস‘উদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন। আমি বলি: হাদিসটি হাসান পর্যায়ের।
[27] দেখুন: আমার প্রবন্ধ" ﺍﻟﺴﻤﺎﺣﺔ ﻓﻲ ﺿﻮﺀ ﺍﻟﻘﺮﺁﻥ ﺍﻟﻜﺮﻳﻢ ﻭ ﺍﻟﺴﻨﺔ ﺍﻟﻤﻄﻬﺮﺓ " (আল-কুরআনুল কারীম ও পবিত্র সুন্নাহ’র আলোকে উদারতা); তাতে আরও বিস্তারিত ও অতিরিক্ত বিবরণ রয়েছে।
[28] সূরা আন-নূর, আয়াত: ২২
[29] বুখারী, হাদিস নং- ১৯৭১; মুসলিম, হাদিস নং- ৪০৭৬ আমি বলি: হাদিসটি হাসান পর্যায়ের।
[30] সূরা হুদ, আয়াত: ১১৪
[31] তিরমিযী, হাদিস নং- ১৯৮৭; হাদিসটি অন্যান্য হাদিসের সমর্থনের কারণে সহীহ, যেমনটি আমি ‘তাখরীজু আহাদিসিল অসিয়্যাতিস সুগরা’ ( ﺗﺨﺮﻳﺞ ﺃﺣﺎﺩﻳﺚ ﺍﻟﻮﺻﻴﺔ ﺍﻟﺼﻐﺮﻯ ) নামক গ্রন্থে বর্ণনা করেছি, হাদিস নং- ৩ আমি বলি: হাদিসটি হাসান পর্যায়ের।
[32] খারায়েতী, ‘মাকারিমুল আখলাক’ ( ﻣﻜﺎﺭﻡ ﺍﻷﺧﻼﻕ ): পৃ. ২৩; আর একই সনদে হাদিসটি বর্ণনা করেন আল-কাদা‘য়ী, ‘মুসানদু শিহাব’ ( ﻣﺴﻨﺪ ﺍﻟﺸﻬﺎﺏ ), হাদিস নং- ১১৪০, তিনি বলেন: আমাদের নিকট হাদিস বর্ণনা করেছেন সালেহ ইবন আহমাদ ইবন হাম্বল, তিনি বলেন: আমাদের নিকট হাদিস বর্ণনা করেছেন আমার পিতা, তিনি বলেন: আমাদেরকে ইবনুল আশজা‘য়ী একখানা কিতাব দিয়েছেন, যাতে সুফিয়ান থেকে বর্ণিত হাদিস বর্ণিত আছে, তিনি মিকদাম ইবন শুরাইহ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি তার পিতা থেকে— তার পিতা তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি বললাম: হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম! কোন আমল আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে? তখন তিনি বললেন: অতঃপর তিনি উপরিউক্ত হাদিসটি উল্লেখ করেন। আর হাদিসটি সহীহ; আরও দেখুন: ‘সিলসিলাতুল আহাদিসিস সহীহাহ’ ( ﺳﻠﺴﻠﺔ ﺍﻷﺣﺎﺩﻳﺚ ﺍﻟﺼﺤﻴﺤﺔ ), হাদিস নং- ১০৩৫
[33] আবূ দাউদ, হাদিস নং- ৫২১২; তিরিমিযী, হাদিস নং- ২৭২৭; ইবনু মাজাহ, হাদিস নং- ৩৭০৩; আহমদ, হাদিস নং- ৪/২৮৯ ও ৩০৩ এবং তাঁরা ভিন্ন আরও অনেকে হাদিসটি বারা ইবন ‘আযেব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন। আর হাদিসের সনদটি দুর্বল; কেননা, সনদের মধ্যে আবূ ইসহাক নামে ‘মুদাল্লিস’ বর্ণনাকারী রয়েছে। তবে এই হাদিসের সমর্থনে আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে হাদিস বর্ণিত আছে, যা ইমাম আহমাদ রহ. ‘হাসান’ সনদে বর্ণনা করেছেন, হাদিস নং- ৩/১৪২; মোটকথা অন্য হাদিসের সমর্থনের কারণে হাদিসটি সহীহ, আল্লাহ তা‘আলাই সব চেয়ে ভাল জানেন।
[34] বুখারী, হাদিস নং- ৫৬৬৩; মুসলিম, হাদিস নং- ৫৯৯৬; আবূ দাউদ, হাদিস নং- ২৫৫০; আহমদ, হাদিস নং- ২/৩৭৫ ও ৫১৭ এবং তাঁরা ভিন্ন আরও অনেকে হাদিসটি আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন।
[35] সূরা আন-নাজম, আয়াত: ৩১ - ৩২
[36] সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৩১
[37] তিরমিযী, হাদিস নং- ২৩৯৮; ইবনু মাজাহ, হাদিস নং- ৪০২৩; দারেমী: ২/৩২০; ইবনু হিব্বান: (২৯৮ ও ২৯৯— মাওয়ারিদ); হাকেম: (১/৪০ ও ৪১); আহমাদ: (১/১৭২, ১৭৪, ১৮০ ও ১৮৫) এবং অন্যান্য মুহাদ্দিস প্রমুখ হাদিসটি দু’টি সনদে সা‘য়াদ ইবন আবি ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে ‘মারফু’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। আমি বলি: হাদিসটি সহীহ এবং এর সমর্থনে আরও একটি হাদিস বর্ণিত আছে, যা ইবনু মাজাহ: (৪০২৪), হাকেম: (৪/৩০৭) এবং অন্যান্য মুহাদ্দিস প্রমুখ আবূ সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন; হাকেম রহ. বলেন: ইমাম মুসলিম রহ. এর শর্তে হাদিসটি সহীহ এবং ইমাম যাহাবী রহ.ও হাদিসটিকে সহীহ বলেন; আমি বলি: হাদিসটি সহীহ, তাঁর উভয়ে যেমনটি বলেছেন।
[38] আহমাদ: (৩/১৪৮, ২৩৮, ২৫৮); তিনি হাদিসটি হাম্মাদ ইবন সালামা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি সিনান ইবন রবি‘আ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন। আমি বলি: এই সনদটি হাসান পর্যায়ের— ইনশাআল্লাহ; কেননা, সিনান ইবন রবি‘আ সত্যবাদী।
[39] আহমাদ: (৪/১২৩); আমি বলি: এই সনদটি হাসান পর্যায়ের।
[40] মুসলিম, হাদিস নং- ৬০১
[41] মুসলিম, হাদিস নং- ৬০০
[42] আবূ দাউদ, হাদিস নং- ৫৬৪; নাসায়ী, হাদিস নং- ৮৫৬; আর হাদিসটি সহীহ।
[43] নাসায়ী, হাদিস নং- ১৫১; হাদিসটি সহীহ।
[44] নাসায়ী: (১/৯০ - ৯১); ইবনু মাজাহ, হাদিস নং- ১৩৯৬; ইবনু হিব্বান, হাদিস নং- ১০৩৯ এবং আরও অন্যান্য মুহাদ্দিস প্রমুখ হাদিসটি বর্ণনা করেছেন; আমি বলি: হাদিসটি ‘হাসান’ পর্যায়ের ইনশাআল্লাহ।
[45] বুখারী, হাদিস নং- ১৫৮ ও ১৬২; মুসলিম, হাদিস নং- ৫৬১
[46] হাদিসটি সহীহ, যা আবূ হুরায়রা, বারা ইবন ‘আযেব ও আবদুল্লাহ ইবন ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম থেকে বর্ণিত হয়েছে। * আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত হাদিসটির কয়েকটি সনদ রয়েছে: প্রথমত: শু‘বা রহ. মূসা ইবন আবি ‘উসমান রহ. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: আমি আবূ ইয়াহইয়াকে তাঁর (আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ) থেকে হাদিস বর্ণনা করতে শুনেছি। — [ আহমাদ: (২/৪২৯ ও ৪৫৮); ইবনু হিব্বান: (১৬৬৪); আবূ দাউদ আত-তায়ালাসী: (১/৭৯ — ‘মিনহাতুল মা‘বুদ’); বায়হাকী: (১/৩৯৭) এবং আরও অনেকে]। আমি বলি: এই সনদটি দুর্বল, মূসা ইবন আবি ‘উসমান আল-কুফী হলেন ‘মাকবুল’ (গ্রহণযোগ্য) বর্ণনাকারী; আর আবূ ইয়াহইয়া হলেন সাম‘আন আল-সলামী আল-কুফী এবং তিনিও ‘মাকবুল’ (গ্রহণযোগ্য) বর্ণনাকারী। দ্বিতীয়ত: শু‘বা রহ. মূসা ইবন আবি ‘উসমান রহ. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: আমি আবূ ‘উসমানকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন: আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বলতে শুনেছি এবং তিনি হাদিসের বাকি অংশ উল্লেখ করলেন। — [ আহমাদ: (১/৪১১) ]। আমি বলি: এই সনদটি দুর্বল; কারণ, মূসা ইবন আবি ‘উসমান হলেন আত-তুব্বান, তিনি তার পিতা থেকে হাদিসটি বর্ণনা করেন এবং তিনি প্রথম তথা মূসা ইবন আবি ‘উসমান আল-কুফী নন; কেননা, ইবনু আবি হাতেম তাদের মধ্যে পার্থক্য করেছেন এবং হাফেয ইবনু হাজার ‘আসকালানী তা স্বীকার করেছেন, সুতরাং তাদের কথাটি গ্রহণযোগ্য কথা। আর আবূ ‘উসমান হলেন ‘ইমরান আত-তুব্বান; আর মন বলে যে, তিনি সত্যবাদী-বিশ্বস্ত— আর আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানেন। তৃতীয়ত: মা‘মার-এর সনদে হাদিসটি বর্ণিত হয়েছে, তিনি মানসুর থেকে বর্ণনা করেনে, তিনি ‘ইবাদ ইবন উনাইস থেকে বর্ণনা করেন এবং তিনি তাঁর (আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ) থেকে হাদিস বর্ণনা করেন।— [ আহমাদ: (২/২৬৬) ]। আমি বলি: এই সনদটিন মধ্যে দুর্বলতা রয়েছে। চতুর্থত: মুজাহিদ রহ. এর সনদেও হাদিসটি তাঁর (আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ) থেকে হাদিস বর্ণিত হয়েছে।— [ বায়হাকী: (২/৪৩১) ]। পঞ্চমত: আবূ সালেহ রহ. এর সনদেও হাদিসটি তাঁর (আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ) থেকে হাদিস বর্ণিত হয়েছে।— [ বায়হাকী: (২/৪৩১) ]। সুতরাং এসব সনদের সামগ্রিক বিবেচনায় আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত হাদিসটি ‘হাসান’ পর্যায়ের ইনশাল্লাহ। * আর বারা ইবন ‘আযেব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত হাদিসটি ইমাম আহমাদ রহ. (৪/২৮৪) মু‘আয ইবন হিশাম রহ. এর সনদে বর্ণনা করেছেন, তিনি তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি কাতাদা রহ. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি আবূ ইসহাক আল-কুফী রহ. থেকে বর্ণনা করেন এবং তিনি তাঁর (বারা ইবন ‘আযেব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বর্ণনা করেন। আমি বলি: এই সনদটিন মধ্যে দুর্বলতা রয়েছে। * আর আবদুল্লাহ ইবন ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা কর্তৃক বর্ণিত হাদিসটি ইমাম বায়হাকী রহ. (১/৪২৩) আ‘মাশ রহ. এর সনদে মুজাহিদ রহ. থেকে বর্ণনা করেন। আমি বলি: এই সনদটি সহীহ এবং এই কারণে হাদিসটি সহীহ বলে গণ্য।
[47] বুখারী, হাদিস নং- ৫০৫; মুসলিম, হাদিস নং- ১৫৫৪
[48] মুসলিম, হাদিস নং- ৫৭২; তিরমিযী, হাদিস নং- ২১৪
[49] ইমাম আহমাদ রহ. হাদিসটি বর্ণনা করেছেন এবং হাদিসের শব্দগুলো তাঁর: (৩/৪২৮); ইবনু সা‘য়াদ, ‘আত-ত্ববাকাত আল-কুবরা’: (৭/৫০৮)। ইবনু লাহি‘য়াহ’র সনদে হাদিসটি বর্ণিত, তিনি বলেন: আমাদের নিকট হারেস ইবন ইয়াযিদ তার উস্তাদ কাছীর আল-আ‘রাজ আস-সাদাফী থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন: আমি আবূ ফাতিমাকে (তিনি যুল ফাওয়ারী বলে পরিচিত) বলতে শুনেছি যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন এবং তিনি হাদিসটি উল্লেখ করনে। আমি বলি: এই সনদের বর্ণনাকারীগণ বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য; কেননা, ইবনু লাহি‘য়াহ হাদিস বর্ণনার বিষয়টি ‘হাদ্দাসানা’ স্পষ্ট করে বলেছেন; আর তার নিকট থেকে বর্ণনাকারী ইবনু সা‘য়াদ হলেন আবূ আবদির রহমান আল-মুকরী’, যিনি আবদুল্লাহ গ্রুপের অন্যতম একজন, তার থেকে যাদের বর্ণিত বর্ণনাসমূহ বিশুদ্ধ বলে স্বীকৃত। তবে কাছীর ইবন কুলাইব মিসরী অপরিচিত, যেমনটি ইমাম যাহাবী রহ. বলেছেন। আর হাদিসটি কাছীর ইবন মুর্রাহ-এর বর্ণনার কারণে ‘মাহফুয’, যেমনটি হাফেয ইবনু হাজার ‘আসকালানী রহ. ‘আত-তাহযীব’ গ্রন্থের মধ্যে বলেছেন। হাদিসটি ইমাম ইবনু মাজাহ রহ. বর্ণনা করেছেন, হাদিস নং- ১৪২২ এবং ইমাম নাসায়ী রহ. ‘আল-কুবরা’ নামক গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন: (৯/২৪০ — “তুহফাতুল আশরাফ”); তাঁরা তাঁর থেকে দু’টি সনদে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। আমি বলি: কাছীর ইবন মুর্রাহ আল-হাদরামী বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী; সুতরাং হাদিসটি সহীহ (আল-হামদুলিল্লাহ)। তাছাড়া হাদিসটির সমর্থনে সাওবান, আবূ দারদা ও ‘উবাদাতা ইবন সামিত রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম থেকে সহীহ হাদিস বর্ণিত হয়েছে।
[50] বুখারী, হাদিস নং- ৬২০ এবং হাদিসের শব্দগুলো ইমাম বুখারী রহ. এর; মুসলিম, হাদিস নং- ১৫৩৮ এবং তাঁরা উভয়ে হাদিসটি আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন।
[51] বুখারী, হাদিস নং- ৭৪৯ এবং হাদিসের শব্দগুলো ইমাম বুখারী রহ. এর; মুসলিম, হাদিস নং- ৯৪৭ এবং তাঁরা উভয়ে হাদিসটি আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন।
[52] নাসায়ী: (১/৯০ - ৯১); ইবনু মাজাহ, হাদিস নং- ১৩৯৬; ইবনু হিব্বান, হাদিস নং- ১০৩৯
[53] মুসলিম, হাদিস নং- ২০২৫; আবূ দাউদ, হাদিস নং- ৩৪৩; তিরিমযী, হাদিস নং- ৪৯৮; ইবনু মাজাহ, হাদিস নং- ১০৯০ এবং অন্যান্য মুহাদ্দিস প্রমুখ হাদিসটি আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন। আর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী: « ﻭَﺯِﻳَﺎﺩَﺓُ ﺛَﻼَﺛَﺔِ ﺃَﻳَّﺎﻡٍ » -এর অর্থ: সৎকাজের প্রতিদান হল তার দশ গুণ; সুতরাং এক জুমু‘আ থেকে আরেক জুমু‘আ পর্যন্ত হল সাত দিন এবং তার সাথে অতিরিক্ত তিন দিন মিলে মোট দশ দিন, আর আল্লাহ তা‘আলা যাকে ইচ্ছা তাঁর অনুগ্রহ দান করেন।
[54] সূরা আয-যারিয়াত, আয়াত: ১৫ - ১৮
[55] হাকেম (১/৩০৮), বায়হাকী (২/৫০২) ও অন্যান্য মুহাদ্দিস প্রমুখ হাদিসটি আবূ উমামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন। আমি বলি: হাদিসটির সনদের মধ্যে সামান্য দুর্বলতা রয়েছে, তবে হাদিসটি ‘হাসান’ পর্যায়ের, যেমনটি ব্যাখ্যা করেছেন আমাদের শাইখ আলবানী রহ., দেখুন: ইরওয়াউল গালীল ( ﺇﺭﻭﺍﺀ ﺍﻟﻐﻠﻴﻞ ): ৪৫২ আর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী: « ﻭَﺯِﻳَﺎﺩَﺓُ ﺛَﻼَﺛَﺔِ ﺃَﻳَّﺎﻡٍ » -এর অর্থ: সৎকাজের প্রতিদান হল তার দশ গুণ; সুতরাং এক জুমু‘আ থেকে আরেক জুমু‘আ পর্যন্ত হল সাত দিন এবং তার সাথে অতিরিক্ত তিন দিন মিলে মোট দশ দিন, আর আল্লাহ তা‘আলা যাকে ইচ্ছা তাঁর অনুগ্রহ দান করেন।
[56] বুখারী, হাদিস নং- ৩৭ ও ১৯০৫; মুসলিম, হাদিস নং- ১৮১৫; ইমাম বুখারী, মুসলিম রহ. ও অন্যান্য মুহাদ্দিস প্রমুখ হাদিসটি আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন।
[57] বুখারী, হাদিস নং- ৩৫; মুসলিম, হাদিস নং- ১৮১৮ এবং তাঁরা উভয়ে হাদিসটি আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন।
[58] আবূ দাউদ: (হাদিস নং- ১২৯৮); ইবনু মাজাহ: (হাদিস নং- ১৩৮৭); ইবনু খুযাইমা: (হাদিস নং- ১২১৬); ত্ববারানী, ‘আল-কাবীর’: (১১/২৪৩ - ২৪৪); হাকেম: (১/৩১৮); বায়হাকী: (৩/৫১ - ৫২) এবং অন্যান্য মুহাদ্দিস প্রমুখ হাদিসটি আবদুর রাহমান ইবন বিশর ইবন হেকামের সনদে বর্ণনা করেন, তিনি আবূ শো‘আইব মূসা ইবন আবদিল আযীয আল-কানবারী থেকে বর্ণনা করেন, তিনি হেকামা ইবন আব্বান থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বর্ণনা করেন ‘ইকরামা থেকে, তিনি বর্ণনা করেন আবদুল্লাহ ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে। আমি বলি: এই হাদিসটির সনদের মধ্যে কোন সমস্যা নেই ইনশাআল্লাহ। কোন সমস্যা নেই ইনশাআল্লাহ। আর আবদুল্লাহ ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহুমা থেকে বর্ণিত এই হাদিসের আরও কয়েকটি সনদ রয়েছে, কিন্তু এসব সনদে তিনি তুষ্ট নন। আর হাদিস শাস্ত্রের ইমামগণের উক্তিগুলো প্রথম সনদটি উৎকৃষ্ট হওয়ার ব্যাপারে সমর্থন ও সহযোগিতা করে— ১. ইমাম আবূ দাউদ রহ. বলেন: “সালাতুত তাসবীহ-এর ব্যাপারে সবচেয়ে বিশুদ্ধ হাদিস হল আবদুল্লাহ ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু’র এই হাদিসটি।” — যেমন দেখুন: ‘আল-লায়ালিল মাসনু‘আ’ ( ﺍﻟﻶﻟﻲﺀ ﺍﻟﻤﺼﻨﻮﻋﺔ ): ২/২৯; ‘আত-তারগীব ওয়াত তারহীব’ ( ﺍﻟﺘﺮﻏﻴﺐ ﻭ ﺍﻟﺘﺮﻫﻴﺐ ): ১/৪৬৮
২. আল-মুনযিরী বলেন: “এই হাদিসটি অনকেগুলো সনদে এবং এক দল সাহাবী থেকে বর্ণিত হয়েছে, যার দৃষ্টান্ত হলো ‘ইকরামা রা. কর্তৃক বর্ণিত এই হাদিসটি এবং এক দল মুহাদ্দিস হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন: হাফেয আবূ বকর আল-আজুররী, আমাদের শাইখ আবূ মুহাম্মাদ আবদুর রাহীম আল-মিসরী ও হাফেয আবূল হাসান আল-মুকাদ্দেসী রহ.।” — [‘আত-তারগীব ওয়াত তারহীব’ ( ﺍﻟﺘﺮﻏﻴﺐ ﻭ ﺍﻟﺘﺮﻫﻴﺐ ): ১/৪৬৮; আরও দেখুন: ‘মুখতাসারু সুনানি আবি দাউদ’ ( ﻣﺨﺘﺼﺮ ﺳﻨﻦ ﺃﺑﻲ ﺩﺍﻭﺩ ): ২/৮৯ আর যাবীদী রহ. বলেন: “এই হাদিসটি সহীহ, গরীব এবং সনদ ও মতন উৎকৃষ্ট।” —[ ইতহাফুস সাদাত আল-মুত্তাকীন’ ( ﺇﺗﺤﺎﻑ ﺍﻟﺴﺎﺩﺓ ﺍﻟﻤﺘﻘﻴﻦ ): ৩/৪৭৩ ]। হাদিসটির সমর্থনে একদল সহাবী থেকে হাদিস বর্ণিত হয়েছে; যেমন— ‘আব্বাস ইবন আবদিল মুত্তালিব রা., ফদল ইবন আব্বাস রা., আবদুল্লাহ ইবন ওমর রা., আলী রা., জা‘ফর ইবন আবি তালিব রা. ও উম্মু সালমা রা. প্রমুখ; যদিও হাদিসের সনদগুলো সমালোচনা থেকে মুক্ত নয়, তবে কিছু সনদ সুসংগঠিত; সুতরাং যেসব সনদ প্রমাণের জন্য যথাযথ, তা আবদুল্লাহ ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু থেকে বর্ণিত হাদিসের সমর্থনে শক্তিশালী ভূমিকা রাখে; আর এ জন্যই ‘সালাতুত তাসবীহ’ বিষয়ক হাদিসটি ‘সহীহ লি-গাইরিহী’। আর আল্লাহই সবচেয়ে বেশি জানেন। আর হাফেযগণ এই বিষয়ে স্বতন্ত্রভাবে খণ্ড খণ্ড পুস্তক লিখেছেন। আমি বলি: কোনো কোনো ব্যক্তি এই সালাতের মধ্যে ব্যাপক কিছু সৃষ্টি করেছে, তারা এর সাথে এমন কিছু নতুন বিষয়ের সংজোযন করেছে, যার কোনো শরী‘য়তসম্মত ভিত্তি নেই; যেমন—
১. এই সালাতকে পবিত্র রমযান মাসের সাথে সুনির্দিষ্ট করা, বরং তাদের কেউ কেউ দৃঢ়তার সাথে এই সালাতকে রমযানের সাতাইশতম রাতের সাথে সুনির্দিষ্ট করে দেয় (!)।
২. জামা‘য়াতবদ্ধভাবে ‘সালাতুত তাসবীহ’ আদায় করা।
৩. একদিনে একাধিক বার ‘সালাতুত তাসবীহ’ আদায় করা। সুতরাং হে মুসলিম জনগোষ্ঠী! আপনারা নিজেদের উপর দয়া করুন; সুতরাং (সুন্নাহ’র) অনুসরণ করুন, নতুন পন্থা উদ্ভাবন করবেন না; কারণ, পুরাতন নির্দেশনাই আপনাদের জন্য যথেষ্ট।
[59] নাসায়ী: (২/৩৪); ইবনু মাজাহ: (১৪০৮); আহমাদ: (২/১৭৬); ইবনু হিব্বান: (৬৩৮৬); হাকেম: (২/৪৩৪); তাঁরা হাদিসটি আবদুল্লাহ ইবন ‘আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণনা করেছেন। আমি বলি: হাদিসটি সহীহ।
[60] সূরা আল-কিয়ামাহ, আয়াত: ১৪ - ১৫
[61] সূরা আত-তাওবা, আয়াত: ১১১
[62] সূরা আত-তাওবা, আয়াত: ১১১
[63] সূরা আত-তাওবা, আয়াত: ১১১
[64] সূরা আত-তাওবা, আয়াত: ১১১
[65] সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৩১
[66] সূরা আল-মায়িদা, আয়াত: ৫৪
[67] সূরা আল-মায়িদা, আয়াত: ৫৪
[68] সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৯৫
[69] ইমাম মুসলিম রহ. হাদিসটি আবদুল্লাহ ইবন ‘আমর ইবনিল ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণনা করেছেন, হাদিস নং- ৪৯৯২
[70] মুসলিম, হাদিস নং- ৪৯৮৮
[71] বুখারী, হাদিস নং- ৩৮; মুসলিম, হাদিস নং- ১৮১৭; আবূ দাউদ, হাদিস নং- ১৩৭২; তিরমিযী, হাদিস নং- ৬৮৩; নাসায়ী, হাদিস নং- ২২০৩; ইবনু মাজাহ, হাদিস নং- ১৩২৬; তাঁরা হাদিসটি আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন।
[72] ইমাম মুসলিম রহ. হাদিসটি আবূ কাতাদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন, হাদিস নং- ২৮০৩
[73] নাসায়ী, হাদিস নং- ২৬৩০; ত্ববারানী, আল-কাবীর, হাদিস নং- ১১১৯৬ এবং অন্যান্য মুহাদ্দিস প্রমুখ হাদিসটি সাহল ইবন হাম্মাদ আবূ ‘উত্তাব আদ-দাল্লালের সনদে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন: আমাদের কাছে ‘আযরা ইবন সাবিত হাদিসটি বর্ণনা করেছেন, তিনি ‘আমর ইবন দিনার রহ. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: আবদুল্লাহ ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: তারপর হাদিসের বক্তব্য উল্লেখ করেছেন। আমি বলি: এই সনদটি সহীহ এবং তার বর্ণনাকারীগণ বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য। আর এই হাদিসের সমর্থনে আবদুল্লাহ ইবন ওমর, আবদুল্লাহ ইবন মাস‘উদ ও জাবির ইবন আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম প্রমুখ হাদিস বর্ণনা করেছেন।
[74] ত্ববারানী, আল-কাবীর ( ﺍﻟﻜﺒﻴﺮ ), হাদিস নং- ১৩৫৬৬; আল-বায্যার, ‘কাশফুল আসতার’ ( ﻛﺸﻒ ﺍﻷﺳﺘﺎﺭ ), হাদিস নং- ১০৮২; আবদুর রাযযাক, আল-মুসান্নাফ ( ﺍﻟﻤﺼﻨﻒ ), হাদিস নং- ৮৮৩০; তাঁরা সকলেই মুজাহিদ রহ. এর সনদে আদুল্লাহ ইবন ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন আমি বলি: হাদিসটি সহীহ। আর এই হাদিসের সমর্থনে বায্যার রহ. আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন, হাদিস নং- ১০৮৩; তবে তার মধ্যে দুর্বলতা রয়েছে।
[75] সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৭১
[76] সূরা আত-তাগাবুন, আয়াত: ১৭
[77] হাকেম: (৪/৩৮৮); দারেমী: (২/১৮২); আহমাদ: (৫/২১৪ ও ২১৫); আমি বলি: হাদিসের সনদটি হাসান; কেননা, বর্ণনাকারী উসামা ইবন যায়েদ আল-লাইসী’র ব্যাপারে সামান্য কথা থাকলেও তাতে ক্ষতি নেই; তাছাড়া এই হাদিসটির সমর্থনে ‘সহীহাইন’ ও অন্যান্য গ্রন্থের মধ্য বহু হাদিস বর্ণিত আছে।
[78] আহমাদ: (৩/১৪২); তিনি বলেন: আমাদের কাছে হাদিস বর্ণনা করেছেন মুহাম্মাদ ইবন বকর, তিনি বলেন: আমাদেরকে সংবাদ দিয়েছেন মাইমুন আল-মারায়ী, তিনি বলেন: আমাদের কাছে হাদিস বর্ণনা করেছেন মাইমুন ইবন সিয়াহ, তিনি আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। আমি বলি: এই সনদটি ‘হাসান’ পর্যায়ের ইনশাআল্লাহ; আর মাইমুন ইবন মূসা আল-মারায়ী ‘মুদাল্লিস’ পর্যায়ের বর্ণনাকারী, তবে তিনি বর্ণনার মাধ্যমে তা স্পষ্ট করে দিতেন।
[79] আহমাদ: (৩/১৫২); বুখারী, আল-আদাবুল মুফরাদ: (৬৩৪); তাঁরা হাদিসটি ত্বরিক আবদুল ওয়ারিসের সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন আমাদের কাছে হাদিস বর্ণনা করেছেন সিনান, তিনি বলেন: আমাদের কাছে হাদিস বর্ণনা করেছেন আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু। আমি বলি: এই সনদটি ‘হাসান’ পর্যায়ের; কারণ, সিনান ইবন রবী‘য়া সত্যবাদী, নম্র।
[80] আহমাদ রহ. হাদিসটি আবদুল্লাহ ইবন ‘আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন: (২/১২৪) । আমি বলি: হাদিসের সনদটি সহীহ। আর তার সমর্থনে জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে হাদিস বর্ণিত আছে, যা আত-তায়ালসী রহ. বর্ণনা করেছেন: (১৫৭৬) এবং তার সনদটিও সহীহ।
[81] আহমাদ: (২/৪৬৩); ইবনু হিব্বান: (২৩২২— মাওয়ারিদ); হাকেম: (১/৪৯২) ও অন্যান্য মুহাদ্দিস প্রমুখ হাদিসটি আ‘মাশের সনদে বর্ণনা করেছেন, তিনি বর্ণনা করেন আবূ সালেহ থেকে, তিনি আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে ‘মারফু‘’ হিসেবে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। আমি বলি: হাদিসের সনদটি সহীহ।
[82] হাকেম: (১/৫৩৭); ত্ববারানী, আল-কাবীর ( ﺍﻟﻜﺒﻴﺮ ), হাদিস নং- ১৫৮৬ ও ১৫৮৭; তাঁরা হাদিসটি নাফে‘ ইবন জুবায়ের ইবন মুত‘য়েমের সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি তাঁর পিতা জুবায়ের ইবন মুত‘য়েম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে ‘মারফু‘’ হিসেবে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। হাকেম রহ. বলেন: হাদিসটি ইমাম মুসলিম রহ. এর শর্তে সহীহ। আর একই মত ব্যক্ত করেছেন ইমাম যাহাবী রহ. এবং আমাদের শাইখ আলবানী রহ. তাঁর ‘সিলসিলাতুল আহাদিসিস্ সাহীহা’ ( ﺳﻠﺴﻠﺔ ﺍﻷﺣﺎﺩﻳﺚ ﺍﻟﺼﺤﻴﺤﺔ ) নামক গ্রন্থের মধ্যে, হাদিস নং- ৮১; আর তাঁরা যা বলেছেন, বিষয়টি তাই। আর ত্ববারানী’র দ্বিতীয় জায়গার বর্ণনায় অতিরিক্ত কথা আছে: « ﻳﻘﻮﻟﻬﺎ ﺛﻼﺙ ﻣﺮﺍﺕ » (তিনি তা তিনবার বলেন)। আমাদের শাইখ বলেন: হাইছামী রহ. তার ব্যাপারে কোন মন্তব্য করেননি এবং তা (সনদটি) উৎকৃষ্ট নয়; কারণ, তার সনদের মধ্যে খালিদ ইবন ইয়াযিদ আল-‘আমরী নামে একজন বর্ণনাকারী রয়েছে, যাকে আবূ হাতিম ও ইয়াহইয়া মিথ্যাবাদী বলেছেন; আর ইবনু হিব্বান বলেন: সে নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীদের থেকে ‘মাউযু’ হাদিস বর্ণনা করত। সুতরাং এটা অতিরিক্ত, এর দিকে দৃষ্টি দেয়ার দরকার নেই। আমি বলি: এটা শাইখের পক্ষ থেকে অনিচ্ছাকৃত ভুল (আল্লাহ তাকে হিফাজত করুন); কেননা, হাইছামী রহ. দুই জায়গায় ঐ বিষয়ে ইঙ্গিত করেছেন, যে বিষয়ে শাইখ অত্যন্ত কঠিন কথা বলেছেন (আল্লাহ তাকে হিফাজত করুন); তিনি ‘আল-মাজমা‘ ( ﺍﻟﻤﺠﻤﻊ ) এর মধ্যে বলেছেন (১০/১৪২): “ত্ববারনী রহ. তা বর্ণনা করেছেন এবং তার সনদে খালিদ ইবন ইয়াযিদ আল-‘আমরী নামে একজন বর্ণনাকারী রয়েছেন, যিনি দুর্বল।” আর তিনি ‘আল-মাজমা‘ ( ﺍﻟﻤﺠﻤﻊ ) এর (১০/৪২৩) মধ্যে সহীহ ও দুর্বল— দু’টি বর্ণনা উল্লেখ করার পর বলেছেন: “ত্ববারানী রহ. সবগুলো বর্ণনাই বর্ণনা করেছেন এবং প্রথম বর্ণনার বর্ণনাকারীগণ হলেন সহীহ হাদিসের বর্ণনাকারী।” অতঃপর তিনি যিকির সংক্রান্ত হাদিসের সনদগুলো অগ্রাধিকার দেয়ার বিষয়ে ইঙ্গিত করেছেন। আর এর দ্বারা স্পষ্ট হয়ে গেল যে, হাইছামী রহ. এই বর্ণার ব্যাপারে নিরব থাকেননি, বরং আমাদের শাইখ কর্তৃক উক্ত বর্ণনাকে দুর্বল বলার পূর্বেই তিনি তাকে দুর্বল বলে আখ্যায়িত করেছেন— সুন্নাতে নববী’র খেদমতের কারণে আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে সাহায্য করুন।
[83] সূরা আল-মায়িদা, আয়াত: ২৭
[84] সূরা আল-মু’মিনুন, আয়াত: ৫৭ - ৬০
[85] এই বিষয়টি আমি আমার ‘মুবতিলাতুল আ‘মাল’ ( ﻣﺒﻄﻼﺕ ﺍﻷﻋﻤﺎﻝ ) নামক পুস্তিকার মধ্যে ‘খাওফুস সালফিস সালিহ রহ. মিন আন তাহবাতা আ‘মালুহুম ওয়াহুম লা ইয়াশ‘উরুন’ ( ﺧﻮﻑ ﺍﻟﺴَّﻠﻒ ﺍﻟﺼﺎﻟﺢ ـ ﺭﺣﻤﻬﻢ ﺍﻟﻠﻪ ـ ﻣﻦ ﺃﻥ ﺗﺤﺒﻂ ﺃﻋﻤﺎﻟﻬﻢ ﻭ ﻫﻢ ﻻ ﻳﺸﻌﺮﻭﻥ ) [পূর্ববর্তী সৎ বান্দগণের আশংকা যে, তাদের অজান্তেই তাদের আমলসমূহ নষ্ট হয়ে যাবে] নামক শিরোনামে অন্তর্ভুক্ত করেছি; প্রকাশক: দারু ইবনিল কায়্যিম, দাম্মাম।
[86] বুখারী, হাদিস নং- ৬০৬৯
[87] মুসলিম, হাদিস নং- ৪৯৮৮ ও ৪৯৯২ _________________________________________________________________________________
শাইখ সালীম ইবন ‘ঈদ আল-হিলালী
অনুবাদক: মোঃ আমিনুল ইসলাম
সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
সূত্র: ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব
আরও পড়ুনঃ কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে তাওবা ও পাপ মোচনকারী কিছু আমল
আরও পড়ুনঃ আল্লাহর নৈকট্য লাভের অনন্য উপায়: তাওবা
আরও পড়ুনঃ আমি তাওবা করতে চাই কিন্তু !
আরও পড়ুনঃ তাওবার ফজিলত
আরও পড়ুনঃ তওবার বিবরণ
আরও পড়ুনঃ তওবা : কেন ও কিভাবে
আরও পড়ুনঃ সাইয়েদুল ইসতিগফার দু’আটি জানা আছে কি? এতে রয়েছে জান্নাতের ঘোষণা! (ভিডিও সহ)
আরও পড়ুনঃ ক্ষমাপ্রার্থনা করার আদেশ ও তার মাহাত্ম্য
আরও পড়ুনঃ আল্লাহর দয়ার আশা রাখা
আরও পড়ুনঃ যিনা-ব্যভিচারকারী পুরুষ অথবা নারী কি তাওবার পর বিবাহ করতে পারে?
আরও পড়ুনঃ যে ব্যক্তি কোন মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েছেন তার জন্য কি তওবা আছে?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন