Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

See Our Articles In Different Styles... Grid View List View

বুধবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৮

জান্নাতের প্রতি আগ্রহী ও জাহান্নাম থেকে পলায়নকারীর জন্য বিশেষ উপদেশ

Views:

A+ A-

জান্নাতের প্রতি আগ্রহী ও জাহান্নাম থেকে পলায়নকারীর জন্য বিশেষ উপদেশ



জাহান্নাম ধ্বংসের ঘর



বান্দার ইহকালীন ও পরকালীন সফলতা অর্জন ও কৃতকার্য হওয়ার নিদর্শন হচ্ছে, তার অন্তকরণ আখেরাতের স্মরন, পরকালের ভাবনায় সঞ্জীবিত ও সিক্ত হয়ে যাওয়া। যেমন আল্লাহ তাআলা তার নৈকট্য-প্রাপ্ত বান্দা তথা অলি-আউলিয়াদের প্রশংসা করে বলেন :





ﺇِﻧَّﺎ ﺃَﺧْﻠَﺼْﻨَﺎﻫُﻢْ ﺑِﺨَﺎﻟِﺼَﺔٍ ﺫِﻛْﺮَﻯ ﺍﻟﺪَّﺍﺭِ ﴿ﺹ :৪৬ ﴾



"আমি তাদেরকে এক বিশেষগুন তথা পরকালের স্মরণ দ্বারা স্বাতন্ত্র প্রদান করেছি।"[১] অর্থাৎ পরকালীন জীবনের সুখ-দুঃখের ভাবনা।
পক্ষান্তরে পরকাল বিস্মৃতি ও আখেরাত ভুলে যাওয়া বান্দার ভাগ্যহীন হওয়ার আলামত। আল্লাহ তাআলা বলেন :


ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺍﺗَّﺨَﺬُﻭﺍ ﺩِﻳﻨَﻬُﻢْ ﻟَﻬْﻮًﺍ ﻭَﻟَﻌِﺒًﺎ ﻭَﻏَﺮَّﺗْﻬُﻢُ ﺍﻟْﺤَﻴَﺎﺓُ ﺍﻟﺪُّﻧْﻴَﺎ ﻓَﺎﻟْﻴَﻮْﻡَ ﻧَﻨْﺴَﺎﻫُﻢْ ﻛَﻤَﺎ ﻧَﺴُﻮﺍ ﻟِﻘَﺎﺀَ ﻳَﻮْﻣِﻬِﻢْ ﻫَﺬَﺍ ﻭَﻣَﺎ ﻛَﺎﻧُﻮﺍ ﺑِﺂَﻳَﺎﺗِﻨَﺎ ﻳَﺠْﺤَﺪُﻭﻥَ ﴿ﺍﻷﻋﺮﺍﻑ:৫১ ﴾


"তারা স্বীয় ধর্মকে তামাশা ও খেলা বানিয়ে নিয়েছিল এবং পার্থিব জীবন তাদেরকে ধোকায় ফেলে রেখেছিল। অতএব আমি আজকে তাদের ভুলে যাব, যেমন তারা এ দিনের সাক্ষ্যাৎ ভুলে গিয়েছিল, (আরেকটি কারণ) যেহেতু তারা আয়াতসমূহকে মিথ্যারোপ করত।"[২]
আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ, খাস রহমত; আমাদের অন্তরে পরকালের ভাবনা, আখেরাতের ফিকির উদয়-বৃদ্ধির জন্য হাজারো আলামত, প্রচুর নিদর্শন বিদ্যামান রেখেছেন এ পার্থিব জগতে। আল্লাহ তাআলা বলেন :



ﺃَﻓَﺮَﺃَﻳْﺘُﻢُ ﺍﻟﻨَّﺎﺭَ ﺍﻟَّﺘِﻲ ﺗُﻮﺭُﻭﻥَ . ﺃَﺃَﻧْﺘُﻢْ ﺃَﻧْﺸَﺄْﺗُﻢْ ﺷَﺠَﺮَﺗَﻬَﺎ ﺃَﻡْ ﻧَﺤْﻦُ ﺍﻟْﻤُﻨْﺸِﺌُﻮﻥَ . ﻧَﺤْﻦُ ﺟَﻌَﻠْﻨَﺎﻫَﺎ ﺗَﺬْﻛِﺮَﺓً ﻭَﻣَﺘَﺎﻋًﺎ ﻟِﻠْﻤُﻘْﻮِﻳﻦَ ﴿ﺍﻟﻮﺍﻗﻌﺔ :৭১-৭৩ ﴾


"তোমারা যে অগ্নি প্রজ্বলিত কর, সে সম্পর্কে ভেবে দেখেছ কি? তোমরা কি এর বৃক্ষ সৃষ্টি করেছ, না আমি সৃষ্টি করেছি? আমিই সে বৃক্ষকে করেছি স্মরনিকা এবং মরুবাসীদের জন্য সামগ্রী।"[৩] যদিও এ বৃক্ষ গরমের উপকরণ, রান্নার ইন্ধন, তথাপি আমাদেরকে আখেরাতের অগ্নি স্মরণ করিয়ে দেওয়ারও স্মরনিকা।


নিম্নোক্ত আয়াতের দ্বারা তিনি গ্রীষ্মের প্রচন্ড গরমকে জাহান্নমের অগ্নির সাথে তুলনা করে বিষয়টি আরো স্পষ্ট করে দিয়েছেন। এরশাদ হচ্ছে :


ﻭَﻗَﺎﻟُﻮﺍ ﻟَﺎ ﺗَﻨْﻔِﺮُﻭﺍ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺤَﺮِّ ﻗُﻞْ ﻧَﺎﺭُ ﺟَﻬَﻨَّﻢَ ﺃَﺷَﺪُّ ﺣَﺮًّﺍ ﻟَﻮْ ﻛَﺎﻧُﻮﺍ ﻳَﻔْﻘَﻬُﻮﻥَ ﴿ﺍﻟﺘﻮﺑﺔ :৮১ ﴾



"তারা বলেছে এই গরমের মধ্যে অভিযানে বের হয়ো না। বলে দাও উত্তাপে জাহান্নামের আগুন প্রচন্ডতম। যদি তাদের বিবেচনা শক্তি থাকত।"[৪]
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন :


ﺃﺑﺮﺩﻭﺍ ﺑﺎﻟﻈﻬﺮ ﻓﺈﻥ ﺷﺪﺓ ﺍﻟﺤﺮ ﻣﻦ ﻓﻴﺢ ﺟﻬﻨﻢ . ‏( ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ )


"তোমরা জোহরকে থান্ডা করে পড়, যেহেতু গরমের প্রচন্ডতা জাহান্নামের নিঃশ্বাস থেকে উৎসারিত।"[৫]


সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :


ﺍﺷﺘﻜﺖ ﺍﻟﻨﺎﺭ ﺇﻟﻰ ﺭﺑﻬﺎ ﻓﻘﺎﻟﺖ ﺭﺏ ﺃﻛﻞ ﺑﻌﻀﻲ ﺑﻌﻀﺎً ﻓﺄﺫﻥ ﻟﻪ ﺑﻨﻔﺴﻴﻦ ﻧﻔﺲ ﻓﻲ ﺍﻟﺸﺘﺎﺀ ﻭﻧﻔﺲ ﻓﻲ ﺍﻟﺼﻴﻒ ﻓﻬﻮ ﻣﺎ ﺗﺠﺪﻭﻥ ﻣﻦ ﺍﻟﺤﺮ ﻭﺃﺷﺪ ﻣﺎ ﺗﺠﺪﻭﻥ ﻣﻦ ﺍﻟﺰﻣﻬﺮﻳﺮ . ‏( ﻣﺘﻔﻖ ﻋﻠﻴﻪ )


"জাহান্নাম তার প্রভুর কাছে অভিযোগ করেছে, হে আমার রব! আমার এক অংশ অপর অংশকে খেয়ে নিচ্ছে; অতঃপর আল্লাহ তাকে দুটি নিঃশ্বাস ত্যাগ করার অনুমতি দেন। একটি গ্রীষ্মকালে অপরটি শীতকালে। তোমরা যে প্রচন্ড গরম ও কনকনে শীত অনুভব কর, তাই সে নিঃশ্বাস।"[৬]



রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিভিন্ন সময়ে সাহাবাদের ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ উপদেশ বাণী প্রদান করতেন, যার দ্বারা অন্তর বিগলিত হত, অশ্রুতে সিক্ত হয়ে যেত চক্ষুদ্বয়। এক বার তিনি নামাজ আদায় করে বলেন :


ﻗﺪ ﺃﺭﻳﺖ ﺍﻵﻥ ﻣﻨﺬ ﺻﻠﻴﺖ ﻟﻜﻢ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﻭﺍﻟﻨﺎﺭ ﻣﻤﺜﻠﻴﻦ ﻓﻲ ﻗﺒﻠﺔ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﺠﺪﺍﺭ ﻓﻠﻢ ﺃﺭ ﻛﺎﻟﻴﻮﻡ ﻓﻲ ﺍﻟﺨﻴﺮ ﻭﺍﻟﺸﺮ . ‏( ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ )


"এ মাত্রজ্জযখন আমি তোমাদের নিয়ে নামাজরত ছিলামজ্জ দেয়ালের পাশে প্রতিবিম্বের আকৃতিতে আমাকে জান্নাত-জাহান্নাম দর্শন করানো হয়েছে। আজকের মত আর কোন দিন এতো মঙ্গল-অমঙ্গল, নিষ্ট-অনিষ্ট চোখে দেখিনি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কথা শুনে সাহাবাগণ অবনত মস্তক হয়ে গেলেন, তাদের অন্তরে কান্নার ডেকুর উঠল। তারা কাঁদতে ছিলেন। অথচ তাকওয়া, ইমান, ইসলামের দাওয়াত, জিহাদ ও রাসূলকে নিরাপত্তা বিধানের ক্ষেত্রে তারা আমাদের চেয়ে অধিক অগ্রগামী ছিলেন।



কারণ, এটা ভয়ংকর মাখলূখ (জাহান্নাম) সম্পর্কে সতর্কবাণী ও সাবধানিকরণ আগাম বার্তা। কেমন হবে সেদিন, যে দিন সত্তুর হাজার লাগামসহ জামান্নাম উপস্থিত করা হবে। প্রতিটি লাগামের সাথে একজন করে ফেরেশতা থাকবে, তারা এটাকে টেনে-হেছড়ে হাজির করবে। এতো বেশী পরিমাণ শক্তিশালী ফেরেশতাদের নিযুক্তি দ্বারাই জাহান্নামের বিশালত্ব ও ভয়াবহতার ধারণা করা যায়। এরশাদ হচ্ছে :

ﻭَﺟِﻲﺀَ ﻳَﻮْﻣَﺌِﺬٍ ﺑِﺠَﻬَﻨَّﻢَ ﻳَﻮْﻣَﺌِﺬٍ ﻳَﺘَﺬَﻛَّﺮُ ﺍﻟْﺈِﻧْﺴَﺎﻥُ ﻭَﺃَﻧَّﻰ ﻟَﻪُ ﺍﻟﺬِّﻛْﺮَﻯ ﴿ﺍﻟﻔﺠﺮ :২৩ ﴾


"যে দিন জাহান্নামকে আনা হবে, সে দিন মানুষ স্মরণ করবে, কিন্তু এ স্মরণ তার কি কাজে আসবে?[৭]


আল্লাহর নিন্মোক্ত বাণী আমাদের কাছে আরো গভীর চিন্তার আবেদন জানায় :


ﺇِﻧَّﻬَﺎ ﺗَﺮْﻣِﻲ ﺑِﺸَﺮَﺭٍ ﻛَﺎﻟْﻘَﺼْﺮِ . ﻛَﺄَﻧَّﻪُ ﺟِﻤَﺎﻟَﺔٌ ﺻُﻔْﺮٌ ﴿ﺍﻟﻤﺪﺛﺮ :৩২-৩৩ ﴾


"এটা অট্রালিকা সাদৃশ বৃহৎ স্ফুলিঙ্গ নিক্ষেপ করবে, যেন সে পীতবন্য উষ্ট্রশ্রেনী।"[৮]



জাহান্নাম নিজ ক্রোধের কারণে ভিষণ হয়ে উঠবে, তার অংশগুলো খন্ড-বিখন্ড হয়ে যাওয়ার উপক্রম হবে। আরো ভয়ঙ্কর হয়ে যাবে মহান আল্লাহর গোস্বার ধরুন। এরশাদ হচ্ছে :

ﺇِﺫَﺍ ﺭَﺃَﺗْﻬُﻢْ ﻣِﻦْ ﻣَﻜَﺎﻥٍ ﺑَﻌِﻴﺪٍ ﺳَﻤِﻌُﻮﺍ ﻟَﻬَﺎ ﺗَﻐَﻴُّﻈًﺎ ﻭَﺯَﻓِﻴﺮًﺍ ﴿ﺍﻟﻔﺮﻗﺎﻥ :১২ ﴾

"অগ্নি যখন দূর থেকে তাদেরকে দেখবে, তখন তারা শুনতে পাবে তার গর্জন ও গুঙ্কার।"[৯]



বর্তমান সমাজে জাহান্নামের আলোচনা প্রাণহীন বে-রস বিষয় বস্তুর ন্যায় পরিত্যক্ত হয়ে আছে। যে কারণে জাহান্নামের নাম শুনে অন্তরসমূহে ভীতির সৃষ্টি হয় না, চক্ষুসমূহ অশ্রু বিসর্জন করে না। যা সর্বগ্রাসী আত্মীক অবক্ষয়ের করুন চিত্র। যেন জাহান্নাম সম্পর্কে আল্লাহর কোন সতর্কবাণী আমরা শোনিনি। অথবা আমাদের অন্তরসমূহ শুষ্ক, উষর ও কঠিন হয়ে গেছে!


ﺇﻧﺎ ﻟﻠﻪ ﻭﺇﻧﺎ ﺇﻟﻴﻪ ﺭﺍﺟﻌﻮﻥ


এরূপ কঠিন অন্তর-ই যে কোন ব্যক্তির হতভাগ্য হওয়ার বড় আলামত। এ ধরণের বধির, কল্যাণশুন্য অন্তরসমূহ বিগলিত করার জন্যই জাহান্নামের অগ্নি প্রস্তুত করা হয়েছে।


মহান আল্লাহ তাআলা ধ্বংস-অপমানের স্থান জাহান্নাম সম্পর্কে কঠিনভাবে সতর্ক করে বলেছেন :


ﻓَﺄَﻧْﺬَﺭْﺗُﻜُﻢْ ﻧَﺎﺭًﺍ ﺗَﻠَﻈَّﻰ ﴿ﺍﻟﻠﻴﻞ :১৪ ﴾



"অতএব আমি তোমাদেরকে প্রজ্বলিত অগ্নি সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছি।"[১০]


অন্যত্র এরশাদ হচ্ছে :



ﺇِﻧَّﻬَﺎﻟَﺈِﺣْﺪَﻯ ﺍﻟْﻜُﺒَﺮِ . ﻧَﺬِﻳﺮًﺍ ﻟِﻠْﺒَﺸَﺮِ ﴿ﺍﻟﻤﺪﺛﺮ :৩৫-৩৬ ﴾


"নিশ্চয় জাহান্নাম গুরুতর বিপদ সমুহের অন্যতম। মানুষের জন্য সতর্ককারী।"[১১]


আল্লাহর শপথ! জাহান্নাম থেকে ভয়ংকর কোন বস্তু নেই। খোদ আল্লাহ তাআলা এর প্রজ্বলন-দাহন, খাদ্য-পানীয়, বেড়ি, ফুটন্তপানি, পুজ এবং তাতে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা ও সেখানকার পোশাকের ভয়াবহতার বর্ণনা দিয়েছেন। যাতে মানবজাতি এ নিয়ে চিন্তা-ফিকির করার সুযোগ পায়জ্জএই তো জাহান্নাম! এর অভ্যন্তরে জাহান্নামিরা কাত-চিত হয়ে পল্টি খাচ্ছে, এর ময়দানে তাদেরকে টানা-হেচড়া করা হচ্ছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ও এর ভয়াবহতার বিষদ বর্ণনা দিয়েছেন। একদিন মেম্বারে দাঁড়িয়ে বার বার উচ্চারণ করেন :


ﺃﻧﺬﺭﺗﻜﻢ ﺍﻟﻨﺎﺭ ﺃﻧﺬﺭﺗﻜﻢ ﺍﻟﻨﺎﺭ ﺃﻧﺬﺭﺗﻜﻢ ﺍﻟﻨﺎﺭ .

"আমি তোমাদেরকে জাহান্নাম থেকে সতর্ক করছি। আমি তোমাদেরকে জাহান্নাম থেকে সতর্ক করছি। আমি তোমাদেরকে জাহান্নাম থেকে সতর্ক করছি।" সে দিন রাসূলের আওয়াজ পাশে অবস্থিত বাজারের লোকজনও শুনতে পেয়েছিল। অস্থিরতার ধরুন কাধের চাদর পর্যন্ত পড়ে গিয়েছিল। তিনি আরো বলতে ছিলেন :


ﻣﺎ ﺭﺃﻳﺖ ﻛﺎﺍﻟﻨﺎﺭ ﻧﺎﻡ ﻫﺎﺭﺑﻬﺎ , ﻭﻻ ﻛﺎﻟﺠﻨﺔ ﻧﺎﻡ ﻃﺎﻟﺒﻬﺎ . ‏( ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ )


"আমি জাহান্নামের মত ভয়ংকর কোন জিনিস দেখিনি, যার পলায়নকারীরা ঘুমন্ত। জান্নাতের মত লোভনীয় কোন জিনিস দেখিনি, যার সন্ধানকারীরা ঘুমন্ত।"[১২]
হে মানবজাতি! মনে রেখ, জাহান্নাম সম্পর্কে তোমার অনুসন্ধিৎসা, মূলত একটি ভীতিকর বস্তু সম্পর্কে-ই অনুসন্ধিৎসা। লক্ষ্য কর, যার সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :



ﺃﻭﻗﺪ ﻋﻠﻴﻬﺎ ﺃﻟﻒ ﻋﺎﻡ ﺣﺘﻰ ﺍﺑﻴﻀﺖ , ﺛﻢ ﺃﻭﻗﺪ ﻋﻠﻴﻬﺎ ﺃﻟﻒ ﻋﺎﻟﻢ ﺣﺘﻰ ﺍﺳﻮﺩﺕ , ﻓﻬﻲ ﺳﻮﺩﺍﺀ ﻣﻈﻠﻤﺔ ﻳﺤﻄﻢ ﺑﻌﻀﻬﺎ ﺑﻌﻀﺎ . ‏( ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ )


"যা দগ্ধ করা হয়েছে হাজার বছর, যার ফলে সে লাল হয়ে গেছে; পুনঃরায় দগ্ধ করা হয়েছে হাজার বৎসর, যার ফলে সে সাদা হয়ে গেছে; পুনঃরায় দগ্ধ করা হয়েছে হাজার বছর, যার ফলে সে কালো হয়ে গেছে। সে বিদঘুটে কালো; অন্ধকার; তার এক অংশ অপর অংশকে ভস্ব করে দিচ্ছে।"[১৩]


রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :

ﺟﺰﺀ ﻭﺍﺣﺪ ﻣﻦ ﺳﺒﻌﻴﻦ ﺟﺰﺀﺍ ﻣﻨﻬﺎ . ‏( ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ )


"আমাদের এ আগুন, জাহান্নামের সত্তর ভাগের এক ভাগ।"[১৪]


ﺇﻥ ﺃﻫﻮﻥ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﻨﺎﺭ ﻋﺬﺍﺑﺎ ﻣﻦ ﻛﺎﻥ ﻟﻪ ﻧﻌﻼﻥ ﻣﻦ ﻧﺎﺭ ﻳﻐﻠﻲ ﻣﻨﻬﻤﺎ ﺩﻣﺎﻏﻪ , ﻣﺎ ﻳﺮﻯ ﺃﻥ ﺃﺣﺪﺍ ﺃﺷﺪ ﻣﻨﻪ ﻋﺬﺍﺑﺎ ﻭﺇﻧﻪ ﻷﻫﻮﻧﻬﻢ ﻋﺬﺍﺑﺎ . ‏( ﻣﺴﻠﻢ )


"জাহান্নামের ভেতর সবচেয়ে হালকা শাস্তি হবে সে ব্য্যক্তির, যার দুটি আগুনের জুতো থাকবে, যার কারণে তার মস্তক টকবগ করবে, সে অন্য কাউকে তার চেয়ে বেশী শাস্তিভোগকারী মনে করবে না। অথচ সে-ই সবচেয়ে কম শাস্তিভোগকারী।[১৫]
জাহান্নমের সাতটি দরজা রয়েছে। সব কটি দরজা লোহার খুটি দ্বারা আটঁকে দিয়ে জাহান্নামিদের বন্ধি করে রাখা হবে। এরশাদ হচেছ :



ﺇِﻧَّﻬَﺎ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﻣُﺆْﺻَﺪَﺓٌ . ﻓِﻲ ﻋَﻤَﺪٍ ﻣُﻤَﺪَّﺩَﺓٍ ﴿ﺍﻟﻬﻤﺰﺓ :৯ ﴾


"নিশ্চয় তা' (জাহান্নাম) তাদের ওপর বন্ধ করে দেয়া হবে। লম্বা লম্বা খুঁটিসমূহে।"[১৬]
জাহান্নামের অনেক স্তর রয়েছে। ওপরের স্তর থেকে নিচের স্তরগুলো তুলনামূলক কঠিন ও ভয়াবহ। এরশাদ হচ্ছে:


ﺇِﻥَّ ﺍﻟْﻤُﻨَﺎﻓِﻘِﻴﻦَ ﻓِﻲ ﺍﻟﺪَّﺭْﻙِ ﺍﻟْﺄَﺳْﻔَﻞِ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ ﴿ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ :১৪৫ ﴾


"নিঃসন্দেহে মুনাফেকরা রয়েছে দোযখের সর্বনিন্ম স্তরে।"[১৭]
জাহান্নামের গভীরতার পরিমাণ সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :


ﻳﻠﻘﻰ ﺍﻟﺤﺠﺮ ﺍﻟﻌﻈﻴﻢ ﻣﻦ ﺷﻔﻴﺮﻫﺎ ﻓﻴﻬﻮﻱ ﻓﻴﻬﺎ ﺳﺒﻌﻴﻦ ﺳﻨﺔ ﻻ ﻳﺪﺭﻙ ﻗﻌﺮﻫﺎ . ‏( ﻣﺴﻠﻢ )


"তার মুখ থেকে একটি বিরাট পাথর নিক্ষেপ করা হবে, সত্তর বৎসর পর্যন্ত গভীরে যেতে থাকবে, তবুও তার গভীরতার নাগাল পাবে না।" যখন-ই কোন ব্যক্তিকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে, সে বলবে, আরো আছে কি? তবে নিশ্চিত আল্লাহ তাআলা নিজ ঘোষণা অনুযায়ী জাহান্নাম পূর্ণ করে দিবেন। আল্লাহ তাআলা বলেন :


ﻭَﺗَﻤَّﺖْ ﻛَﻠِﻤَﺔُ ﺭَﺑِّﻚَ ﻟَﺄَﻣْﻠَﺄَﻥَّ ﺟَﻬَﻨَّﻢَ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺠِﻨَّﺔِ ﻭَﺍﻟﻨَّﺎﺱِ ﺃَﺟْﻤَﻌِﻴﻦَ ﴿ﻫﻮﺩ:১১৯ ﴾


"আর তোমার রবের কথাই পূর্ণ হল : অবশ্যই আমি জাহান্নামকে পূর্ণ করব, জিন ও মাবনজাতি দ্বারা।"[১৮]
চরম শাস্তি দেয়ার লক্ষ্যে জাহান্নামিদের ভয়ংকর ও বিশাল আকৃতিতে জাহান্নামে প্রবেশ করানো হবে। এরশাদ হচ্ছে :


ﻓﻤﺎ ﺑﻴﻦ ﻣﻨﻜﺒﻲ ﺍﻟﻜﺎﻓﺮ ﻣﺴﻴﺮﺓ ﺛﻼﺛﺔ ﺃﻳﺎﻡ ﻟﻠﺮﺍﻛﺐ ﺍﻟﻤﺴﺮﻉ . ‏( ﻣﺘﻔﻖ ﻋﻠﻴﻪ )


"একজন কাফেরের দুকাঁধের মাঝখানের ব্যবধান হবে দ্রুতগামী অশ্বারোহী ব্যক্তির তিন দিন ভ্রমন পথের সমান।"[১৯]


ﻭﺇﻥ ﺿﺮﺳﻪ ﻣﺜﻞ ﺟﺒﻞ ﺃﺣﺪ , ﻭﻏﻠﻆ ﺟﻠﺪﻩ ﻣﺴﻴﺮﺓ ﺛﻼﺙ ﻟﻴﺎﻝ . ‏( ﻣﺴﻠﻢ )


"তার মাঢ়ির দাত হবে উহুদ পাহাড়ের সমান। তার চামড়ার ঘনত্বের প্রস্থ হবে তিন রাত ভ্রমন করার পথের সমান।"[২০]


ﻣﻘﻌﺪﻩ ﻛﻤﺎ ﺑﻴﻦ ﻣﻜﺔ ﻭ ﺍﻟﻤﺪﻳﻨﺔ . ‏( ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ )


"তার পাঁছা হবে মক্কা-মদিনার দূরত্বের সমান।"[২১]
জাহান্নাম খুবই খারাপ গন্তব্য, ঘৃণীত বাসস্থান। এতে খাদ্য হিসেবে থাকবে বিষাক্ত কন্টক আর যাক্কুম। যা মারাত্বক কদর্য ও যন্ত্রনাদায়ক। এর সৃষ্টিকর্তা, যিনি এর দ্বারা শাস্তি দেয়ার অঙ্গিকার করেছেন, তিনি নিজেই বলেছেন :


ﺇِﻥَّ ﺷَﺠَﺮَﺓَ ﺍﻟﺰَّﻗُّﻮﻡِ . ﻃَﻌَﺎﻡُ ﺍﻟْﺄَﺛِﻴﻢِ . ﻛَﺎﻟْﻤُﻬْﻞِ ﻳَﻐْﻠِﻲ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺒُﻄُﻮﻥِ . ﻛَﻐَﻠْﻲِ ﺍﻟْﺤَﻤِﻴﻢِ ﴿ﺍﻟﺪﺧﺎﻥ :৪৩-৪৬ ﴾


"নিশ্চয যাক্কুম বৃক্ষ, পাপীদের খাদ্য। গলিত তন্ত্রের মত পেটে ফুটতে থাকবে, যেমন ফুটে গরম পানি।"[২২]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,


ﻟﻮ ﺃﻥ ﻗﻄﺮﺓ ﻣﻦ ﺍﻟﺰﻗﻮﻡ ﻗﻄﺮﺕ ﻓﻲ ﺍﻟﺪﻧﻴﺎ ﻷﻓﺴﺪﺕ ﻋﻠﻰ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺪﻧﻴﺎ ﻣﻌﺎﻳﺸﻬﻢ ﺑﻤﻦ ﺗﻜﻮﻥ ﻃﻌﺎﻣﻪ . ‏( ﺃﺣﻤﺪ ﻭﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ ﻭﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﺔ )
"যদি যাক্কুমের এক ফোটা দুনিয়ায় টপকে পড়ত, তবে এতে বসবাসকারীদের জীবন-উপকরণ ধ্বংস হয়ে যেত। সে ব্যক্তির অবস্থা কেমন হবে, যার খাদ্য-ই হবে যাক্কুম"?[২৩]
তাতে পান করার জন্য আছে, গরম টগবগে পানি, পুঁজ, গীসলীন অর্থাৎ জাহান্নামীদের গাঁ ধোয়া পানি, পূঁজ ও বমি। এরশাদ হচ্ছে :


ﻭَﺧَﺎﺏَ ﻛُﻞُّ ﺟَﺒَّﺎﺭٍ ﻋَﻨِﻴﺪٍ . ﻣِﻦْ ﻭَﺭَﺍﺋِﻪِ ﺟَﻬَﻨَّﻢُ ﻭَﻳُﺴْﻘَﻰ ﻣِﻦْ ﻣَﺎﺀٍ ﺻَﺪِﻳﺪٍ . ﻳَﺘَﺠَﺮَّﻋُﻪُ ﻭَﻟَﺎ ﻳَﻜَﺎﺩُ ﻳُﺴِﻴﻐُﻪُ ﻭَﻳَﺄْﺗِﻴﻪِ ﺍﻟْﻤَﻮْﺕُ ﻣِﻦْ ﻛُﻞِّ ﻣَﻜَﺎﻥٍ ﻭَﻣَﺎ ﻫُﻮَ ﺑِﻤَﻴِّﺖٍ ﻭَﻣِﻦْ ﻭَﺭَﺍﺋِﻪِ ﻋَﺬَﺍﺏٌ ﻏَﻠِﻴﻆٌ ﴿ﺇﺑﺮﺍﻫﻴﻢ :১৫-১৭ ﴾


"এবং প্রত্যেক উদ্ধত স্বৈরাচারী ব্যর্থ-কাম হল। তাদের প্রত্যেকের পশ্চাতে রয়েছে জাহান্নাম এবং তাদের প্রত্যেককে পান করানো হবে গলিত পুঁজ। যা সে অতিকষ্টে গলধঃকরণ করবে এবং তা গলধঃকরণ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে। সর্বদিক থেকে তার কাছে আসবে মৃত্যু অথচ সে মরবে না। তার পশ্চাতেও রয়েছে কঠোর আযাব।"[২৪]


ﻭَﺇِﻥْ ﻳَﺴْﺘَﻐِﻴﺜُﻮﺍ ﻳُﻐَﺎﺛُﻮﺍ ﺑِﻤَﺎﺀٍ ﻛَﺎﻟْﻤُﻬْﻞِ ﻳَﺸْﻮِﻱ ﺍﻟْﻮُﺟُﻮﻩَ ﺑِﺌْﺲَ ﺍﻟﺸَّﺮَﺍﺏُ ﻭَﺳَﺎﺀَﺕْ ﻣُﺮْﺗَﻔَﻘًﺎ ﴿ ২৯ ﴾


"যদি তারা ফরিয়াদ জানায়, তবে তাদেরকে এমন পানি দ্বারা জবাব দেয়া হবে, যা পুঁজের ন্যায়, যা তাদের মুখ-মন্ডল জ্বালিয়ে দিবে।"[২৫]


তাদের পেটে ক্ষুধার সৃষ্টি করা হবে, অতঃপর যখন তারা খানার ফরিয়াদ করবে, যাক্কুম খেতে দেয়া হবে, যা বক্ষণের ফলে পেটের ভেতর গরম পানির ন্যায় উতলানো শুরু করবে। এরশাদ হচ্ছে :

ﻓﻴﺴﺘﻐﻴﺜﻮﻥ ﻳﻄﻠﺒﻮﻥ ﺍﻟﻤﺎﺀ، ﻓﻴﺴﻘﻮﻥ ﻣﺎﺀ ﺇﺫﺍ ﺃﺩﻧﻲ ﺇﻟﻴﻬﻢ ﺷﻮﻯ ﻭﺟﻮﻫﻬﻢ . ‏( ﺃﺣﻤﺪ ﻭﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ )


"অতঃপর তারা পানি চেয়ে ফরিয়াদ করবে, ফলে তাদেরকে এমন পানি দেয়া হবে, যা তাদের নিকটবর্তী করা হলে তাদের চেহারা জ্বলে যাবে।" আর যখন তা পান করবে, তখন তাদের নাড়ি-ভূড়ি খন্ড-বিখণ্ড হয়ে মলদ্বার দিয়ে বের হয়ে যাবে। এরশাদ হচ্ছে :


ﻭَﺳُﻘُﻮﺍ ﻣَﺎﺀً ﺣَﻤِﻴﻤًﺎ ﻓَﻘَﻄَّﻊَ ﺃَﻣْﻌَﺎﺀَﻫُﻢْ ﴿ﻣﺤﻤﺪ :১৫ ﴾



"এবং তাদেরকে পান করানো হবে ফুটন্ত পানি, যা তাদের নাড়ি-ভূঁড়ি ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে দিবে।"[২৬]


আল্লাহ তাআলা তাদের পোশাকের ব্যাপারে বলেছেন, আলকাতরার এমন পোষাক পরিধান করানো হবে, যা আগুনে টগবগ করতে থাকবে আর দাহ্য হতে থাকবে। এরশাদ হচ্ছে :



ﺳَﺮَﺍﺑِﻴﻠُﻬُﻢْ ﻣِﻦْ ﻗَﻄِﺮَﺍﻥٍ ﻭَﺗَﻐْﺸَﻰ ﻭُﺟُﻮﻫَﻬُﻢُ ﺍﻟﻨَّﺎﺭُ ﴿ﺇﺑﺮﺍﻫﻴﻢ :৫০ ﴾



"তাদের জামা হবে আলকাতরার এবং তাদের মুখ মন্ডল আগুন আচ্ছন্ন করে রাখবে।"[২৭]



আরো এরশাদ হচ্ছে :



ﻓَﺎﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻛَﻔَﺮُﻭﺍ ﻗُﻄِّﻌَﺖْ ﻟَﻬُﻢْ ﺛِﻴَﺎﺏٌ ﻣِﻦْ ﻧَﺎﺭٍ ﴿ﺍﻟﺤﺞ :১৯ ﴾


"যারা কুফরি করেছে, তাদের জন্য আগুনের পোষাক তৈরী করা হবে।"[২৮]
ইবরাহিম তামিমি রহ. এ আয়াত তেলাওয়াত করার সময় বলতেন :


ﺳﺒﺤﺎﻥ ﻣﻦ ﺧﻠﻖ ﻣﻦ ﺍﻟﻨﺎﺭ ﺛﻴﺎﺑﺎ .


"পবিত্র তিনি, যিনি আগুন দ্বারাও পোষাক তৈরি করেছেন।"[২৯]



জাহান্নামের শিকল ও বেড়ি সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে এরশাদ হচ্ছে :


ﺧُﺬُﻭﻩُ ﻓَﻐُﻠُّﻮﻩُ . ﺛُﻢَّ ﺍﻟْﺠَﺤِﻴﻢَ ﺻَﻠُّﻮﻩُ . ﺛُﻢَّ ﻓِﻲ ﺳِﻠْﺴِﻠَﺔٍ ﺫَﺭْﻋُﻬَﺎ ﺳَﺒْﻌُﻮﻥَ ﺫِﺭَﺍﻋًﺎ ﻓَﺎﺳْﻠُﻜُﻮﻩُ ﴿ﺍﻟﺪﺧﺎﻥ :৩০-৩২ ﴾


"ধর তাকে; এবং বেড়ি পড়িয়ে দাও তার গলায়; অতঃপর নিক্ষেপ কর তাকে জাহান্নামে; পুনরায় তাকে বেঁধে ফেল এমন শৃঙ্খলে, যার দৈর্ঘ সত্তর গজ লম্বা।"[৩০]



তাদের হাত গর্দানের সাথে বেঁধে দেয়া হবে এবং চেহারার ওপর দাঁড় করে টেনে-হেচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। এরশাদ হচ্ছে :


ﻳَﻮْﻡَ ﻳُﺴْﺤَﺒُﻮﻥَ ﻓِﻲ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ ﻋَﻠَﻰ ﻭُﺟُﻮﻫِﻬِﻢْ ﺫُﻭﻗُﻮﺍ ﻣَﺲَّ ﺳَﻘَﺮَ ﴿ﺍﻟﻘﻤﺮ :৪৮ ﴾


"যে দিন তাদের উপুড় করে টেনে নিয়ে যাওয়া হবে জাহান্নামের দিকে, (বলা হবে) জাহান্নামের যন্ত্রণা আস্বাদান কর।"[৩১]


কপাল-পা একসাথে বেঁধে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। এরশাদ হচ্ছে :

ﻓَﻴُﺆْﺧَﺬُ ﺑِﺎﻟﻨَّﻮَﺍﺻِﻲ ﻭَﺍﻟْﺄَﻗْﺪَﺍﻡِ ﴿ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ :৪১ ﴾


"অতঃপর তাদের পাকঁড়াও করা হবে কপাল (চুলের ঝুঁটি) ও পা ধরে।"[৩২]
এ কপাল মিথ্যুক, আল্লাহর জন্য সেজদা করেনি, তার বড়ত্বের সামনে অবনত হয়নি। এ পদযুগলও মিথ্যুক, সবসময় আল্লাহর অবাধ্যতায় চালিত হয়েছে।


জাহান্নামের আবহাওয়া বীষ; পানি টকবগে গরম; ছায়া ধুম্র কুঞ্জ; জাহান্নামের ধোঁয়া না-ঠান্ডা, না-সম্মানের। জাহান্নামিদের অবস্থা শোচনীয় পরাজয়ের, চুরান্ত অপমান জনক। তদুপরি তারা পাঁয়ে ভর করে পঞ্চাশ হাজার বৎসর দাঁড়িয়ে থাকবে। তারা ক্ষুধা-তৃষ্ণা নিবারণের জন্য এক মুঠো খাদ্য, সামান্য পানীয় পর্যন্ত পাবে না। তাদের গর্দান পিপাসায় ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হবে, ক্ষুধার তীব্রতায় কলিজায় দাহক্রিয়া আরাম্ভ হবে, অতঃপর এ হালতেই তাদের জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। এরশাদ হচ্ছে :


ﺗَﻠْﻔَﺢُ ﻭُﺟُﻮﻫَﻬُﻢُ ﺍﻟﻨَّﺎﺭُ ﻭَﻫُﻢْ ﻓِﻴﻬَﺎ ﻛَﺎﻟِﺤُﻮﻥَ ﴿ﺍﻟﻤﺆﻣﻨﻮﻥ :১০৪ ﴾



"আগুন তাদের মুখ মন্ডল দগ্ধ করবে এবং তারা সেখানে থাকবে বীভৎস চেহারায়।"[৩৩]


জাহান্নাম খুব-ই সংকীর্ন, বিপদ সঙ্কুল, ধ্বংসের স্থান, অন্ধকারে ভরপুর, সব সময় এতে আগুন প্রজ্বলিত থাকবে, জাহান্নামিরা সর্বদা এখানেই আবদ্ধ থাকবে। পাষাণ হৃদয়, কঠোর স্বভাব, কালো ও অন্ধকারে ঢাকা চেহারা বিশিষ্ট ফেরেশতাদের মাধ্যমে, ভয়ংকর পদ্ধতিতে তাদেরকে জাহান্নামের প্রবেশ দ্বারে অভ্যর্থনা দেয়া হবে। যাদের চেহারা দর্শন শাস্তির ওপর অতিরিক্ত শাস্তি হিসেবে গণ্য হবে। তারা কঠোর, করুণাহীন, আরো ব্যবহার করবে লৌহদণ্ড। তারা পিছন থেকে হাঁকিয়ে, ধমকিয়ে ধমকিয়ে জাহান্নামিদের নিয়ে যাবে জাহান্নামের দিকে, অতঃপর তার গভীর গর্তে নিক্ষেপ করবে। সেখানে তাদের সাপে দংশন করবে, জলন্ত পোষাক পরিধান করানো হবে, তাদের কোন ইচ্ছা-ই পূর্ণ হবে না, তাদের কেউ ত্রাণকর্তা থাকবে না। মাথা-পা একসাথে বাধাঁ হবে, পাপের কারণে চেহারা কালো হয়ে যাবে, তারা সর্বনাশ বলে চিৎকার করবে আর মৃত্যুকে আহবান করতে থাকবে। তাদের বলা হবে :


ﻟَﺎ ﺗَﺪْﻋُﻮﺍ ﺍﻟْﻴَﻮْﻡَ ﺛُﺒُﻮﺭًﺍ ﻭَﺍﺣِﺪًﺍ ﻭَﺍﺩْﻋُﻮﺍ ﺛُﺒُﻮﺭًﺍ ﻛَﺜِﻴﺮًﺍ ﴿ﺍﻟﻔﺮﻗﺎﻥ :১৪ ﴾



"আজ তোমরা এক মৃত্যুকে ডেক না, অনেক মৃত্যুকে ডাক।"[৩৪]



তখন তারা নিজ বিকৃত মস্তিস্কের কথা স্বীকার করবে, যে কারণে তারা আজ এ পরিস্থিতির সম্মুখিন হয়েছে। এরশাদ হচ্ছে :


ﻭَﻗَﺎﻟُﻮﺍ ﻟَﻮْ ﻛُﻨَّﺎ ﻧَﺴْﻤَﻊُ ﺃَﻭْ ﻧَﻌْﻘِﻞُ ﻣَﺎ ﻛُﻨَّﺎ ﻓِﻲ ﺃَﺻْﺤَﺎﺏِ ﺍﻟﺴَّﻌِﻴﺮِ ﴿ﺍﻟﻤﻠﻚ :১০ ﴾



"এবং তারা বলবে, যদি আমরা কর্নপাত করতাম অথবা বুদ্ধি খাটাতাম, তাহলে আমরা জাহান্নামী হতাম না।"[৩৫]



সব দিক থেকে জাহান্নাম তাদের বেষ্টন করে রাখবে। এরশাদ হচ্ছে :


ﻟَﻬُﻢْ ﻣِﻦْ ﺟَﻬَﻨَّﻢَ ﻣِﻬَﺎﺩٌ ﻭَﻣِﻦْ ﻓَﻮْﻗِﻬِﻢْ ﻏَﻮَﺍﺵٍ ﻭَﻛَﺬَﻟِﻚَ ﻧَﺠْﺰِﻱ ﺍﻟﻈَّﺎﻟِﻤِﻴﻦَ ﴿ﺍﻷﻋﺮﺍﻑ :৪১ ﴾


"তাদের নিচে থাকবে জাহান্নামের আগুনের বিছানা এবং ওপরে থাকবে চাদর। আমি এভাবেই অত্যাচারীদের প্রতিদান দেই।"[৩৬]


তারা যেখানে যাবে, তাদের সাথে বিছানা-চাদরও সেখানে যাবে। এরশাদ হচ্ছে :


ﺇِﻥَّ ﻋَﺬَﺍﺑَﻬَﺎ ﻛَﺎﻥَ ﻏَﺮَﺍﻣًﺎ ﴿ﺍﻟﻔﺮﻗﺎﻥ :৬৫ ﴾


"নিশ্চয় ওর শাস্তি তো আঁকড়ে থাকার জিনিস।"[৩৭]




আল্লাহ বলেন :




ﻭَﺇِﻥَّ ﺟَﻬَﻨَّﻢَ ﻟَﻤُﺤِﻴﻄَﺔٌ ﺑِﺎﻟْﻜَﺎﻓِﺮِﻳﻦَ ﴿ﺍﻟﺘﻮﺑﺔ :৪৯ ﴾



"নিশ্চয় জাহান্নাম কাফেরদের বেষ্টনকারী।"[৩৮]


কোথাও পালাবার জায়গা নেই। এরশাদ হচ্ছে :



"তাদের মাথার ওপর গরম পানি ঢালা হবে। যা দ্বারা, তাদের উদরে যা আছে তা এবং তাদের চর্ম বিগলিত করা হবে। আর তাদের থাকবে লোহার হাতুড়িসমূহ। যখনই তারা যন্ত্রনায় অতিষ্ঠ হয়ে জাহান্নাম থেকে বের হতে চাইবে, তখনই তাদেরকে তাতে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। (বলা হবে) দহনের শাস্তি আস্বাদন কর।"[৩৯]



আল্লাহ তাআলা বলেন :


ﻛُﻠَّﻤَﺎ ﻧَﻀِﺠَﺖْ ﺟُﻠُﻮﺩُﻫُﻢْ ﺑَﺪَّﻟْﻨَﺎﻫُﻢْ ﺟُﻠُﻮﺩًﺍ ﻏَﻴْﺮَﻫَﺎ ﻟِﻴَﺬُﻭﻗُﻮﺍ ﺍﻟْﻌَﺬَﺍﺏَ ﴿ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ :৫৬ ﴾



"যখন তাদের চামড়া জ্বলে যাবে, আমি অন্য চামড়া দিয়ে তা পালটে দেব। যেন তারা আযাব আস্বাদান করতে পারে।"[৪০]



অতঃপর বলবেন:




ﻓَﺬُﻭﻗُﻮﺍ ﻓَﻠَﻦْ ﻧَﺰِﻳﺪَﻛُﻢْ ﺇِﻟَّﺎ ﻋَﺬَﺍﺑًﺎ ﴿ﺍﻟﻨﺒﺄ :৩০ ﴾



"তোমরা শাস্তি আস্বাদান কর, আমি কেবল তোমাদের শাস্তির বৃদ্ধি ঘটাব।"[৪১]


তারা জাহান্নামের ফেরেশতাদের মাধ্যমে সাহায্য চাইবে। এরশাদ হচ্ছে :


ﻭَﻗَﺎﻝَ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻓِﻲ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ ﻟِﺨَﺰَﻧَﺔِ ﺟَﻬَﻨَّﻢَ ﺍﺩْﻋُﻮﺍ ﺭَﺑَّﻜُﻢْ ﻳُﺨَﻔِّﻒْ ﻋَﻨَّﺎ ﻳَﻮْﻣًﺎ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻌَﺬَﺍﺏِ . ﻗَﺎﻟُﻮﺍ ﺃَﻭَ ﻟَﻢْ ﺗَﻚُ ﺗَﺄْﺗِﻴﻜُﻢْ ﺭُﺳُﻠُﻜُﻢْ ﺑِﺎﻟْﺒَﻴِّﻨَﺎﺕِ ﻗَﺎﻟُﻮﺍ ﺑَﻠَﻰ ﻗَﺎﻟُﻮﺍ ﻓَﺎﺩْﻋُﻮﺍ ﻭَﻣَﺎ ﺩُﻋَﺎﺀُ ﺍﻟْﻜَﺎﻓِﺮِﻳﻦَ ﺇِﻟَّﺎ ﻓِﻲ ﺿَﻠَﺎﻝٍ ﴿ﻏﺎﻓﺮ :৪৯-৫০ ﴾


"আর যারা জাহান্নামে রয়েছে, তারা জাহান্নামের রক্ষিদের বলবে, তোমরা তোমাদের রবকে বল, তিনি যেন আমাদের থেকে এক দিনের আযাব হালকা করে দেন। রক্ষীরা বলবে : তোমাদের কাছে কি সুস্পষ্ট প্রমাণাদি নিয়ে তোমাদের রাসূলগণ আসেনি? তারা বলবে : অবশ্যই; তারা বলবে : তবে তোমরা-ই আহবান কর। বস্তুত কাফেরদের আহবান নিষ্ফল।"[৪২]


একটু চিন্তা করুন, সে জগতের মানুষের অবস্থা কেমন হতে পারে, যারা সর্বশেষ ও চুরান্ত সিদ্ধান্ত হিসেবে মৃত্যু কামনা করবে। এরশাদ হচ্ছে :


ﻭَﻧَﺎﺩَﻭْﺍ ﻳَﺎ ﻣَﺎﻟِﻚُ ﻟِﻴَﻘْﺾِ ﻋَﻠَﻴْﻨَﺎ ﺭَﺑُّﻚَ ﴿ﺍﻟﺰﺧﺮﻑ :৭৭ ﴾


"তারা (জাহান্নামের দায়িত্বে নিয়োজিত ফেরেশতাকে) ডেকে বলবে, হে মালেক, (বলুন) তোমার রব আমাদের কিস্সা খতম করে দিন।"[৪৩]



ইবনে আব্বাস রা. বলেন : এক হাজার বৎসর পর তাদের কথার উত্তর খুব কঠোর ও ঘৃণিত ভাষায় দেয়া হবে। এরশাদ হচ্ছে :


ﻗَﺎﻝَ ﺇِﻧَّﻜُﻢْ ﻣَﺎﻛِﺜُﻮﻥَ ﴿ﺍﻟﺰﺧﺮﻑ :৭৭ ﴾


"সে বলবে : নিশ্চয় তোমরা চিরকাল থাকবে।"[৪৪]



অতঃপর তারা আল্লাহর দরবারে স্বীয় আভিযোগ উত্থাপন করবে এবং বলবে :


ﺭَﺑَّﻨَﺎ ﻏَﻠَﺒَﺖْ ﻋَﻠَﻴْﻨَﺎ ﺷِﻘْﻮَﺗُﻨَﺎ ﻭَﻛُﻨَّﺎ ﻗَﻮْﻣًﺎ ﺿَﺎﻟِّﻴﻦَ . ﺭَﺑَّﻨَﺎ ﺃَﺧْﺮِﺟْﻨَﺎ ﻣِﻨْﻬَﺎ ﻓَﺈِﻥْ ﻋُﺪْﻧَﺎ ﻓَﺈِﻧَّﺎ ﻇَﺎﻟِﻤُﻮﻥَ ﴿ﺍﻟﻤﺆﻣﻨﻮﻥ :১০৬-১০৭ ﴾


"হে আমাদের রব, আমাদের অনিষ্ট আমাদেরকে পরাভূত করেছে। আমরা ছিলাম বিভ্রান্ত জাতি। হে আমাদের রব, এ থেকে আমাদেরকে উদ্ধার কর, আমরা যদি পুনরায় তা করি, তাবে আমরা নিশ্চিত অত্যাচারী।"[৪৫]


দুনিয়ার দ্বিগুন বয়স পরিমাণ চুপ থাকার পর আল্লাহ তাআলা বললেন :


ﻗَﺎﻝَ ﺍﺧْﺴَﺌُﻮﺍ ﻓِﻴﻬَﺎ ﻭَﻟَﺎ ﺗُﻜَﻠِّﻤُﻮﻥِ ﴿ﺍﻟﻤﺆﻣﻨﻮﻥ :১০৮ ﴾


"আল্লাহ বলবেন, তোমরা ধিকৃত অবস্থায় এখানেই পড়ে থাক, এবং আমার সাথে কোনো কথা বল না"[৪৬]


এ কথা শুনার পর নৈরাশ্য তাদের আচ্ছন্ন করে নিবে, তাদের হতাশা বেড়ে যাবে, রুদ্ধ হয়ে যাবে তাদের গলার আওয়াজ। শুধু বুকের ঢেকুর, চিৎকার, আর্তনাথ আর কান্নার শব্দ সর্বত্র ভেসে বেড়াবে। তবে সব চেয়ে বেশী দুঃখিত হবে জান্নাতের সর্বোচ্চ মর্যাদা আল্লাহর দীদার থেকে বঞ্চিত হয়ে। এরশাদ হচ্ছে :



ﻛَﻠَّﺎ ﺇِﻧَّﻬُﻢْ ﻋَﻦْ ﺭَﺑِّﻬِﻢْ ﻳَﻮْﻣَﺌِﺬٍ ﻟَﻤَﺤْﺠُﻮﺑُﻮﻥَ . ﺛُﻢَّ ﺇِﻧَّﻬُﻢْ ﻟَﺼَﺎﻟُﻮ ﺍﻟْﺠَﺤِﻴﻢِ ﴿ﺍﻟﻤﻄﻔﻔﻴﻦ :১৫-১৬ ﴾


"কখনো না, তারা সে দিন তাদের রব থেকে পর্দার আড়ালে থাকবে। অতঃপর তারা নিশ্চিত জাহান্নামে প্রবেশ করবে।"[৪৭]
যখন তারা চিন্তা করবে অল্প দিনের ভোগ-বিলাস আর প্রবৃত্তের জন্য এ দুঃখ-দুর্দশা, অপমান-গঞ্জনা; তখন তাদের আফসোসের অন্ত থাকবে না, বরং শাস্তির ওপর এটাও আরেকটি শাস্তি হিসেবে গণ্য হবে যে, আসমান-জমীন সমতুল্য জান্নাতের বিপরিতে সামান্য বিনিময়ে এ পরিস্থিতির সম্মুখিন হয়েছি। যে সামান্য দুনিয়া নিমিষেই শেষ হয়ে গেছে, যেন কখনো তার অস্তিত্ব ছিল না।


রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :

ﻳﺠﺎﺀ ﺑﺎﻟﻤﻮﺕ ﻛﺄﻧﻪ ﻛﺒﺶ ﺃﻣﻠﺢ ﻓﻴﻮﻗﻒ ﺑﻴﻦ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﻭﺍﻟﻨﺎﺭ , ﻓﻴﻘﺎﻝ : ﻳﺎ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﻫﻞ ﺗﻌﺮﻓﻮﻥ ﻫﺬﺍ؟ ﻓﻴﺸﺮﺋﺒﻮﻥ ﻭﻳﻨﻈﺮﻭﻥ , ﻭﻳﻘﻮﻟﻮﻥ : ﻧﻌﻢ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﻤﻮﺕ , ﻗﺎﻝ : ﻓﻴﺆﻣﺮ ﺑﻪ ﻓﻴﺬﺑﺢ . ﺛﻢ ﻳﻘﺎﻝ : ﻳﺎ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﺧﻠﻮﺩ ﻓﻼ ﻣﻮﺕ , ﻭﻳﺎ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﻨﺎﺭ ﺧﻠﻮﺩ ﻓﻼ ﻣﻮﺕ . ﺛﻢ ﻗﺮﺃ ﺍﻟﺮﺳﻮﻝ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ . ﻭَﺃَﻧْﺬِﺭْﻫُﻢْ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﺤَﺴْﺮَﺓِ ﺇِﺫْ ﻗُﻀِﻲَ ﺍﻟْﺄَﻣْﺮُ ﻭَﻫُﻢْ ﻓِﻲ ﻏَﻔْﻠَﺔٍ ﻭَﻫُﻢْ ﻟَﺎ ﻳُﺆْﻣِﻨُﻮﻥَ ﴿ﻣﺮﻳﻢ : ৩৯ ﴾


"কেয়ামতের দিন মৃত্যুকে কালো মেষ আকৃতিতে জান্নাত-জাহান্নামের মাঝখানে হাজির করা হবে। অতঃপর বলা হবে, হে জান্নাতবাসী, তোমরা একে চিন? তারা উঁকি দিয়ে তাকাবে এবং বলবে, হ্যাঁ, এ হলো মৃত্যু। এরপর তাকে জবাই করার নির্দেশ দেওয়া হবে। অতঃপর বলা হবে, হে জান্নাতবাসীগন, তোমরা চিরস্থায়ী, আর মুত্যু নেই। হে জাহান্নাম বাসীগণ, তোমরা চিরস্থায়ী, আর মৃত্যু নেই। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তেলাওয়াত করলেন : "তাদেরকে সতর্ক করে দাও পরিতাপের দিবস সম্বন্ধে, যখন সকল সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে; তারা অসাবধানতায় আছে, তারা ইমান আনছে না।"[৪৮] এ হলো জাহান্নাম ও জাহান্নামিদের অবস্থা।
আহ! সর্বনাশ সে ব্যক্তির, যে আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে শরীক করে :



যাদুকরের নিকট যায়, যাদু বিশ্বাস করে ও মৃত ব্যক্তির নিকট র্প্রাথনা করে। এরশাদ হচ্ছে :


ﺇِﻧَّﻪُ ﻣَﻦْ ﻳُﺸْﺮِﻙْ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ ﻓَﻘَﺪْ ﺣَﺮَّﻡَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔَ ﻭَﻣَﺄْﻭَﺍﻩُ ﺍﻟﻨَّﺎﺭُ ﴿ﺍﻟﻤﺎﺋﺪﺓ :৭২ ﴾


"নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শরিক করে, আল্লাহ তার ওপর জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন, তার ঠিকানা নরকাগ্নি।"[৪৯]



অন্যত্র এরশাদ হচ্ছে:



ﻭَﻟَﺎ ﺗَﺠْﻌَﻞْ ﻣَﻊَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺇِﻟَﻬًﺎ ﺁَﺧَﺮَ ﻓَﺘُﻠْﻘَﻰ ﻓِﻲ ﺟَﻬَﻨَّﻢَ ﻣَﻠُﻮﻣًﺎ ﻣَﺪْﺣُﻮﺭًﺍ ﴿ﺍﻹﺳﺮﺍﺀ :৩৯ ﴾



"আল্লাহর সাথে অন্য কোন উপাস্য স্থির কর না, তাহলে দোষী সাব্যস্ত ও বিতাড়িত হয়ে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে।"[৫০]
ধ্বংস সে ব্যক্তির জন্য, যে নামাজ পড়ে না। তারা কি জান্নাতিদের প্রশ্ন শ্রবন করেনি? যা জাহান্নামিদের লক্ষ্য করে করা হবে। এরশাদ হচ্ছে :



ﻣَﺎ ﺳَﻠَﻜَﻜُﻢْ ﻓِﻲ ﺳَﻘَﺮَ . ﻗَﺎﻟُﻮﺍ ﻟَﻢْ ﻧَﻚُ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻤُﺼَﻠِّﻴﻦَ ﴿ﺍﻟﻤﻌﺎﺭﺝ :৪২-৪৩ ﴾



"তোমাদেরকে জাহান্নামে কে হাজির করেছে? তারা বলবে আমরা নামাজ পড়তাম না।"[৫১]
ফজরের আজান হয়, মুসলমানগণ মুয়াজ্জিনের কণ্ঠে শ্রবন করে, "এশো নামাজের দিকে, এসো কল্যাণের দিকে" তার পরেও তারা ঘুম থেকে উঠে না, জামাতে শরিক হয় না, নামাজও পড়ে না! এভাবেই তারা আল্লাহ অবাধ্যতার মাধ্যমে দিনের শুরুটা আরম্ভ করে।



ধ্বংস তাদের জন্য যারা যাকাত আদায় করে না।



এরশাদ হচ্ছে :



ﻭَﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳَﻜْﻨِﺰُﻭﻥَ ﺍﻟﺬَّﻫَﺐَ ﻭَﺍﻟْﻔِﻀَّﺔَ ﻭَﻟَﺎ ﻳُﻨْﻔِﻘُﻮﻧَﻬَﺎ ﻓِﻲ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻓَﺒَﺸِّﺮْﻫُﻢْ ﺑِﻌَﺬَﺍﺏٍ ﺃَﻟِﻴﻢٍ . ﻳَﻮْﻡَ ﻳُﺤْﻤَﻰ ﻋَﻠَﻴْﻬَﺎ ﻓِﻲ ﻧَﺎﺭِ ﺟَﻬَﻨَّﻢَ ﻓَﺘُﻜْﻮَﻯ ﺑِﻬَﺎ ﺟِﺒَﺎﻫُﻬُﻢْ ﻭَﺟُﻨُﻮﺑُﻬُﻢْ ﻭَﻇُﻬُﻮﺭُﻫُﻢْ ﻫَﺬَﺍ ﻣَﺎ ﻛَﻨَﺰْﺗُﻢْ ﻟِﺄَﻧْﻔُﺴِﻜُﻢْ ﻓَﺬُﻭﻗُﻮﺍ ﻣَﺎ ﻛُﻨْﺘُﻢْ ﺗَﻜْﻨِﺰُﻭﻥَ ﴿ﺍﻟﺘﻮﺑﺔ :৩৪-৩৫ ﴾


"আর যারা স্বর্ণ ও রূপা জমা করে রাখে এবং তা ব্যয় করে না, তাদের কঠোর আযাবের সুসংবাদ শুনিয়ে দিন। সে দিন জাহান্নামের আগুনে তা উত্তপ্ত করা হবে এবং তা দিয়ে তাদের ললাট-পার্শ্ব-পৃষ্ঠ দগ্ধকরা হবে। (সে দিন বলা হবে) এটাই, যা তোমরা জমা করে ছিলে নিজেদের জন্য। সুতরাং যা তোমরা জমা করতে এখন তা-ই আস্বাদান কর।"[৫২] ধ্বংস তাদের জন্য, যারা লোক দেখানোর নিয়তে জেহাদ করে, ইলম শিক্ষা দেয়, দাওয়াত ও তাবলিগের কাজ করে এবং সাদকার ন্যায় নেক আমলসমূহ সম্পাদন করে। কিয়ামতের দিন চুরান্ত ফয়সালা শেষে তাদেরকে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। ধ্বংস তাদের জন্য, যারা অন্যায়ভাবে কোন মুসলমান হত্যা করে। এরশাদ হচ্ছে :


ﻭَﻣَﻦْ ﻳَﻘْﺘُﻞْ ﻣُﺆْﻣِﻨًﺎ ﻣُﺘَﻌَﻤِّﺪًﺍ ﻓَﺠَﺰَﺍﺅُﻩُ ﺟَﻬَﻨَّﻢُ ﺧَﺎﻟِﺪًﺍ ﻓِﻴﻬَﺎ ﻭَﻏَﻀِﺐَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﻟَﻌَﻨَﻪُ ﻭَﺃَﻋَﺪَّ ﻟَﻪُ ﻋَﺬَﺍﺑًﺎ ﻋَﻈِﻴﻤًﺎ ﴿ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ :৯৩ ﴾


"যে ব্যক্তি সেচ্ছায় কোন মুসলমান হত্যা করে, তার শাস্তি জাহান্নাম, তাতেই সে চির কাল থাকবে। আল্লাহ তার প্রতি ক্রুদ্ধ হয়েছেন, তাকে অভিসম্পাদ করেছেন এবং তার জন্য ভীষণ শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন।"[৫৩]



ধ্বংস তাদের জন্য, যারা সুদ খোর, ঘুষ খোর। কারণ, হারাম দ্বারা তৈরি গোস্তের স্থান জাহান্নাম।


এরশাদ হচ্ছে :


ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳَﺄْﻛُﻠُﻮﻥَ ﺍﻟﺮِّﺑَﺎ ﻟَﺎ ﻳَﻘُﻮﻣُﻮﻥَ ﺇِﻟَّﺎ ﻛَﻤَﺎ ﻳَﻘُﻮﻡُ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻳَﺘَﺨَﺒَّﻄُﻪُ ﺍﻟﺸَّﻴْﻄَﺎﻥُ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻤَﺲِّ ﺫَﻟِﻚَ ﺑِﺄَﻧَّﻬُﻢْ ﻗَﺎﻟُﻮﺍ ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﺍﻟْﺒَﻴْﻊُ ﻣِﺜْﻞُ ﺍﻟﺮِّﺑَﺎ ﻭَﺃَﺣَﻞَّ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺍﻟْﺒَﻴْﻊَ ﻭَﺣَﺮَّﻡَ ﺍﻟﺮِّﺑَﺎ ﻓَﻤَﻦْ ﺟَﺎﺀَﻩُ ﻣَﻮْﻋِﻈَﺔٌ ﻣِﻦْ ﺭَﺑِّﻪِ ﻓَﺎﻧْﺘَﻬَﻰ ﻓَﻠَﻪُ ﻣَﺎ ﺳَﻠَﻒَ ﻭَﺃَﻣْﺮُﻩُ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﻣَﻦْ ﻋَﺎﺩَ ﻓَﺄُﻭﻟَﺌِﻚَ ﺃَﺻْﺤَﺎﺏُ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ ﻫُﻢْ ﻓِﻴﻬَﺎ ﺧَﺎﻟِﺪُﻭﻥَ ﴿ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ :২৭৫ ﴾


"যারা সুদ খায়, তারা ঐ ব্যক্তির ন্যায় ব্যতীত দাঁড়াতে পারবে না, যাকে শয়তান আসর করে মোহাবিষ্ট করে দিয়েছে। এটা এ জন্য যে, তারা বলেছে বিকিকিনি তো সুদের মতই। অথচ আল্লাহ বিকিকিনি হালাল করেছেন আর সূদকে হারাম করেছেন। অতএব যার নিকট তার রবের পক্ষ থেকে উপদেশ এসেছে এবং সে বিরত থেকেছে, তার বিষয়টি আল্লাহর ওপর ন্যাস্ত। আর যারা পুনরায় সূদের কারবার করবে, তারাই দোযখবাসী, সেখানে তারা চিরকাল থাকবে।"[৫৪]



রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :


ﻭﻳﻞ ﻟﻤﻦ ﺧﺎﻥ ﻭﻏﻞ ﻣﺎﻻ ﻋﺎﻣﺎ . ‏( ﻣﺘﻔﻖ ﻋﻠﻴﻪ )



"ধ্বংস তার জন্য যে খেয়ানত করেছে এবং জনসাধারনের সম্পদ আত্মসাৎ করেছে।"


রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :


ﻭﻳﻞ ﻟﻤﻦ ﺍﻗﺘﻄﻊ ﺣﻖ ﺍﻣﺮﺉ ﻣﺴﻠﻢ ﺑﻴﻤﻴﻨﻪ ﻭﻟﻮ ﻗﻀﻴﺒﺎ ﻣﻦ ﺃﺭﺍﻙ ﻓﻘﺪ ﺃﻭﺟﻞ ﺍﻟﻠﻪ ﻟﻪ ﺍﻟﻨﺎﺭ . ‏( ﻣﺴﻠﻢ )


"ধ্বংস তার জন্য, যে কোন মুসলামনের হক মিথ্যা কসম দ্বারা নিয়ে নিল। যদিও তা আরাক গাছের ছোট ডাল তুল্য হয়, আল্লাহ তাআলা তার জন্য জাহান্নাম প্রজ্জলিত করে রেখেছেন। ধ্বংস তার জন্য, যে ইয়াতিমের ওপর জুলুম করে, তাকে সুষ্ঠু শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করে এবং তার সম্পদ ভক্ষণ করে। এরশাদ হচ্ছে :


ﺇِﻥَّ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳَﺄْﻛُﻠُﻮﻥَ ﺃَﻣْﻮَﺍﻝَ ﺍﻟْﻴَﺘَﺎﻣَﻰ ﻇُﻠْﻤًﺎ ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﻳَﺄْﻛُﻠُﻮﻥَ ﻓِﻲ ﺑُﻄُﻮﻧِﻬِﻢْ ﻧَﺎﺭًﺍ ﻭَﺳَﻴَﺼْﻠَﻮْﻥَ ﺳَﻌِﻴﺮًﺍ ﴿ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ :১০ ﴾


"যারা ইয়াতীমের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করে, তারা নিজদের পেটে আগুন ভর্তি করে, এবং তারা সত্তরই অগ্নিতে প্রবেশ করবে।"[৫৫]


ﺃﻻ ﺃﺧﺒﺮﻛﻢ ﺑﺄﻫﻞ ﺍﻟﻨﺎﺭ ﻛﻞ ﻋﺘﻞ ﺟﻮﺍﻅ ﻣﺴﺘﻜﺒﺮ . ‏( ﻣﺘﻔﻖ ﻋﻠﻴﻪ )



"আমি কি তোমাদের জাহান্নামীদের ব্যাপারে বলে দিব!? : প্রত্যেক বদমেজাজ, কৃপন, অহংকারী।"[৫৬]


রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :


ﻣﺎ ﺃﺳﻔﻞ ﻣﻦ ﺍﻟﻜﻌﺒﻴﻦ ﻣﻦ ﺍﻹﺯﺍﺭ ﻓﻔﻲ ﺍﻟﻨﺎﺭ . ‏( ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ )


"পরিধেয় কাপড় যতটুকু টাখনুর নিচে যাবে, টাখনুর ততটুকু স্থান জাহান্নামে থাকবে।"[৫৭]
ধ্বংস তার জন্য, যে মাতা-পিতার অবাধ্য, আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :


ﻻﻳﺪﺧﻞ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﻗﺎﻃﻊ ﺭﺣﻢ . ‏( ﻣﺘﻔﻖ ﻋﻠﻴﻪ )


"আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী জান্নাতে যাবে না।"[৫৮]


ধ্বংস তার জন্য, যে পরনিন্দা, দোষ চর্চা, মিথ্যাচার ও মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান করে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :


ﻭﻫﻞ ﻳﻜﺐ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻓﻲ ﺍﻟﻨﺎﺭ ﻋﻠﻰ ﻭﺟﻮﻫﻬﻢ ﺇﻻ ﺣﺼﺎﺋﺪ ﺃﻟﺴﻨﺘﻬﻢ . ‏( ﻣﺘﻔﻖ ﻋﻠﻴﻪ )


"মুখের পদস্খলন আর বিচ্যুতি-ই, মানুষকে উপুর হয়ে জাহান্নামে যেতে বাধ্য করবে।"[৫৯]


ধ্বংস তার জন্য, যে মাদকদ্রব্য সেবন করে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :


ﺇﻥ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻬﺪﺍ ﻟﻤﻦ ﺷﺮﺏ ﺍﻟﻤﺴﻜﺮﺍﺕ ﻟﻴﺴﻘﻴﻨﻪ ﻣﻦ ﻃﻴﻨﺔ ﺍﻟﺨﺒﺎﻝ . ﻗﺎﻟﻮﺍ ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ : ﻭﻣﺎ ﻃﻴﻨﺔ ﺍﻟﺨﺒﺎﻝ؟ ﻗﺎﻝ ﻗﺮﻕ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﻨﺎﺭ , ﺃﻭ ﻋﺼﺎﺭﺓ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﻨﺎﺭ . ‏( ﻣﺴﻠﻢ )


ধ্বংস তার জন্য, যে নিষিদ্ধ বস্তু থেকে দৃষ্টি সংযত করে না।



রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :



ﻓﺈﻥ ﺍﻟﻌﻴﻦ ﺗﺰﻧﻲ ﻭﺯﻧﺎ ﻫﺎ ﺍﻟﻨﻈﺮ . ‏( ﻣﺘﻔﻖ ﻋﻠﻴﻪ )



"চোখও যেনা করে, তার যেনা হল দৃষ্টি।"[৬১]


ধ্বংস সে নারীদের জন্য, যারা বস্ত্র পরিধান করেও বিবস্ত্র থাকে, অপরের প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং অপরকে নিজের প্রতি আকৃষ্ট করে।



ﻻﻳﺪﺧﻠﻦ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﻭﻻﻳﺠﺪﻥ ﺭﻳﺤﻬﺎ . ‏( ﻣﺴﻠﻢ )



"তারা জাহান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং তার ঘ্রাণও পাবে না।"[৬২]


হে বনি আদম! তোমার সামনে জাহান্নামের বর্ণনা তুলে ধরা হল, যা তুমি প্রতি বৎসর গ্রীষ্ম-শীতের নিঃশ্বাসের মাধ্যমে উপলব্দিও কর। আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন কর, আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন কর। আল্লাহর শপথ! এ দুনিয়ার পর জান্নাত-জাহান্নাম ভিন্ন অন্য কোন স্থান নেই। এরশাদ হচ্ছে :


ﻓَﻔِﺮُّﻭﺍ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺇِﻧِّﻲ ﻟَﻜُﻢْ ﻣِﻨْﻪُ ﻧَﺬِﻳﺮٌ ﻣُﺒِﻴﻦٌ ﴿ﺍﻟﺬﺍﺭﻳﺎﺕ :৫০ ﴾


"অতএব তোমরা আল্লাহর দিকে দৌঁড়ে যাও। আমি তার তরফ থেকে তোমাদের জন্য স্পষ্ট সতর্ককারী।"[৬৩]



অন্যত্র এরশাদ হচ্ছে :


ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁَﻣَﻨُﻮﺍ ﻗُﻮﺍ ﺃَﻧْﻔُﺴَﻜُﻢْ ﻭَﺃَﻫْﻠِﻴﻜُﻢْ ﻧَﺎﺭًﺍ ﻭَﻗُﻮﺩُﻫَﺎ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﻭَﺍﻟْﺤِﺠَﺎﺭَﺓُ ﻋَﻠَﻴْﻬَﺎ ﻣَﻠَﺎﺋِﻜَﺔٌ ﻏِﻠَﺎﻅٌ ﺷِﺪَﺍﺩٌ ﻟَﺎ ﻳَﻌْﺼُﻮﻥَ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻣَﺎ ﺃَﻣَﺮَﻫُﻢْ ﻭَﻳَﻔْﻌَﻠُﻮﻥَ ﻣَﺎ ﻳُﺆْﻣَﺮُﻭﻥَ ﴿ﺍﻟﺘﺤﺮﻳﻢ :৬ ﴾


"মুমিনগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং স্বীয় পরিবার-পরিজনকে সে অগ্নি থেকে রক্ষা কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ আর পাথর। যাতে নিয়োজিত আছে পাষান হৃদয়, কঠোর স্বভাবের ফেরেশতাগণ, তারা আল্লাহর নির্দেশের ব্যতিক্রম করে না, এবং তা-ই সম্পাদন করে, যা তাদের আদেশ করা হয়।"[৬৪]



হাসান বসরী রহ. বলেন :


ﻻﻳﺪﺧﻞ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﺇﻻ ﻣﻦ ﻳﺮﺟﻮﻫﺎ ﻭﻻ ﻳﺴﻠﻢ ﻣﻦ ﺍﻟﻨﺎﺭ ﺇﻻ ﻣﻦ ﻳﺨﺎﻓﻬﺎ .

"যে ব্যক্তি জান্নাতের আশা করে না, সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না এবং যে ব্যক্তি জাহান্নাম ভয় করে না, সে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে না।" অন্তরের ভেতর সত্যিকার ভয় থাকলে, অঙ্গ-প্রতঙ্গ থেকে খালেস আমল বেড়িয়ে আসে। যেমন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :


ﻣﻦ ﺧﺎﻑ ﺃﺩﻟﺞ ﻭﻣﻦ ﺃﺩﻟﺞ ﺑﻠﻎ ﺍﻟﻤﻨﺰﻝ . ‏( ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ )



"যার ভেতর ভয় ছিল সে প্রত্যুশে রওনা করেছে। আর যে প্রত্যুশে রওনা করেছে, সে অভিষ্ট লক্ষ্যেও পৌঁছেছে।"[৬৫] মুনাফিকদের স্বভাব হচ্ছে জাহান্নাম পশ্চাতে থাকলেও বিশ্বাস না করা, যতক্ষণ-না তার গহবরে তারা পতিত হয়। মূলত জাহান্নামের বর্ণনা নেককার লোকদের ঘুম হারাম করে দিয়েছে। বিস্বাদ করে দিয়েছে তাদের খাবার-দাবার।


রাসূল বলেছেন :



ﻭﺍﻟﻠﻪ ﻟﻮ ﺗﻌﻠﻤﻮﻥ ﻣﺎ ﺃﻋﻠﻢ ﻟﻀﺤﻜﺘﻢ ﻗﻠﻴﻼ , ﻭﻟﺒﻜﻴﺘﻢ ﻛﺜﻴﺮﺍ , ﻭﻣﺎ ﺗﻠﺬﺫﺗﻢ ﺑﺎﻟﻨﺴﺎﺀ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻔﺮﺵ , ﻭﻟﺨﺮﺟﺘﻢ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﺼﻌﺪﺍﺕ ﺗﺠﺄﺭﻭﻥ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ . ‏( ﺃﺣﻤﺪ ﻭﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ ﻭﺍﺑﻦ ﻣﺎ ﺟﻪ )



"আল্লাহর শপথ! আমি যা জানি যদি তোমরা তা জানতে, কম হাসতে বেশী কদঁতে। বিছানায় স্ত্রীদের সম্ভোগ করার বোধ হারিয়ে ফেলতে। আল্লাহর সন্ধানে পাঁহাড়ে এবং উঁচুস্থানসমূহে বের হয়ে যেতে।"[৬৬]

সুবহানাল্লাহ! আখেরাত বিষয়ে মানুষ কত উদাসীন! তার আলোচনা থেকে মানুষ কত গাফেল! এরশাদ হচ্ছে :


ﺍﻗْﺘَﺮَﺏَ ﻟِﻠﻨَّﺎﺱِ ﺣِﺴَﺎﺑُﻬُﻢْ ﻭَﻫُﻢْ ﻓِﻲ ﻏَﻔْﻠَﺔٍ ﻣُﻌْﺮِﺿُﻮﻥَ . ﻣَﺎ ﻳَﺄْﺗِﻴﻬِﻢْ ﻣِﻦْ ﺫِﻛْﺮٍ ﻣِﻦْ ﺭَﺑِّﻬِﻢْ ﻣُﺤْﺪَﺙٍ ﺇِﻟَّﺎ ﺍﺳْﺘَﻤَﻌُﻮﻩُ ﻭَﻫُﻢْ ﻳَﻠْﻌَﺒُﻮﻥَ . ﻟَﺎﻫِﻴَﺔً ﻗُﻠُﻮﺑُﻬُﻢْ ﴿ﺍﻟﺤﺞ :১-৩ ﴾



"মানুষের হিসাব-নিকাস অতি নিকটবর্তী, অথচ তারা বে-খবর, পশ্চাদমুখি। তাদের নিকট রবের পক্ষ থেকে যখন কোন উপদেশ আসে, তারা তা খেলার ছলে শ্রবন করে। তাদের অন্তরসমূহ তামাশায় মত্ত।"[৬৭]


হে বনি আদম! হিসাব অতি নিকটে, তবে কেন এ উদাসীনতা!? কেন হৃদয় কম্পিত হয় না!? অন্তরের মরিচিকা সবচেয়ে বিপদজনক, তার মহর মারাত্বক কঠিন। এখনো কি কর্ণপাত করার সময় হয়নি!? চোখে দেখার সময় হয়নি!? অন্তরসমূহের ভীত হওয়ার সময় হয়নি? অঙ্গ-প্রতঙ্গের সংযত হওয়ার সময় হয়নি!?


ﺃَﻟَﻢْ ﻳَﺄْﻥِ ﻟِﻠَّﺬِﻳﻦَ ﺁَﻣَﻨُﻮﺍ ﺃَﻥْ ﺗَﺨْﺸَﻊَ ﻗُﻠُﻮﺑُﻬُﻢْ ﻟِﺬِﻛْﺮِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﻣَﺎ ﻧَﺰَﻝَ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺤَﻖِّ ﴿ﺍﻟﺤﺪﻳﺪ :১৬ ﴾


"যারা ইমান এনেছে, তাদের অন্তর আল্লাহর স্মরণ এবং যে সত্য অবতীর্ণ হয়েছে, তার কারণে বিগলিত হওয়ার সময় এখনো আসেনি?[৬৮]


ভুলে গেলে বিপদ ঘটবে, আমাদের প্রত্যেককে জাহান্নামের ওপর দিয়ে যেতে হবে। তবে সে-ই ভাগ্যবান যে এর থেকে মুক্তি পাবে। এরশাদ হচ্ছে :



ﻭَﺇِﻥْ ﻣِﻨْﻜُﻢْ ﺇِﻟَّﺎ ﻭَﺍﺭِﺩُﻫَﺎ ﻛَﺎﻥَ ﻋَﻠَﻰ ﺭَﺑِّﻚَ ﺣَﺘْﻤًﺎ ﻣَﻘْﻀِﻴًّﺎ . ﺛُﻢَّ ﻧُﻨَﺠِّﻲ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺍﺗَّﻘَﻮْﺍ ﻭَﻧَﺬَﺭُ ﺍﻟﻈَّﺎﻟِﻤِﻴﻦَ ﻓِﻴﻬَﺎ ﺟِﺜِﻴًّﺎ ﴿ﻣﺮﻳﻢ :৭১-৭২ ﴾


"তেমাদের প্রত্যেকে-ই তথায় পৌছঁবে। এটা তোমার রবের চুরান্তফয়সালা। অতঃপর আমি মুত্তাকিদের নাজাত দেব এবং অত্যাচারীদের নতজানু হালতে সেখানে ছেড়ে দিব।"[৬৯]
হে বনি আদম! আর কতকাল গাফেল থাকবে!? আর কতদিন দুনিয়া সঞ্চয় করতে থাকবে!? আর কতদিন তার জন্য গর্ব করবে!? আল্লাহ তাআলা বলেন :


ﺃَﻟْﻬَﺎﻛُﻢُ ﺍﻟﺘَّﻜَﺎﺛُﺮُ . ﺣَﺘَّﻰ ﺯُﺭْﺗُﻢُ ﺍﻟْﻤَﻘَﺎﺑِﺮَ . ﻛَﻠَّﺎ ﺳَﻮْﻑَ ﺗَﻌْﻠَﻤُﻮﻥَ . ﺛُﻢَّ ﻛَﻠَّﺎ ﺳَﻮْﻑَ ﺗَﻌْﻠَﻤُﻮﻥَ . ﻛَﻠَّﺎ ﻟَﻮْ ﺗَﻌْﻠَﻤُﻮﻥَ ﻋِﻠْﻢَ ﺍﻟْﻴَﻘِﻴﻦِ . ﻟَﺘَﺮَﻭُﻥَّ ﺍﻟْﺠَﺤِﻴﻢَ . ﺛُﻢَّ ﻟَﺘَﺮَﻭُﻧَّﻬَﺎ ﻋَﻴْﻦَ ﺍﻟْﻴَﻘِﻴﻦِ . ﺛُﻢَّ ﻟَﺘُﺴْﺄَﻟُﻦَّ ﻳَﻮْﻣَﺌِﺬٍ ﻋَﻦِ ﺍﻟﻨَّﻌِﻴﻢِ ﴿ﺍﻟﺘﻜﺎﺛﺮ :১-৮ ﴾


"পরস্পর ধন-সম্পদের অহংকার তোমাদেরকে মোহাচ্ছন্ন করে রাখে। যতক্ষণ না তোমরা কবরসমূহে উপস্থিত হচ্ছ। এটা কখনো ঠিক নয়, শীঘ্রই তোমরা এটা জানতে পারবে। অতঃপর এটা কখনো ঠিক নয়, শীঘ্রই তোমরা জানতে পারবে। অতঃপর এটা কখনো ঠিন নয়, শীঘ্রই তোমরা এটা জানতে পারবে। সাবধান! যদি তোমরা নিশ্চিত জ্ঞান দ্বারা অবহিত হতে (তবে এমন কাজ করতে না)। তোমরা অবশ্যই জাহান্নাম দেখবে। অতঃপর তোমরা তা দিব্য-প্রতয়ে দেখবে। এর পর অবশ্যই সে দিন তোমরা নেয়ামত ম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।"[৭০]


সুভসংবাদ তাদের জন্য, যারা জাহান্নামকে ভয় করে এবং যে কাজ করলে জাহান্নামে যেতে হবে, তা থেকে বিরত থাকে। এরশাদ হচ্ছে :


ﻭَﻟِﻤَﻦْ ﺧَﺎﻑَ ﻣَﻘَﺎﻡَ ﺭَﺑِّﻪِ ﺟَﻨَّﺘَﺎﻥِ ﴿ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ :৪৬ ﴾



"যে ব্যক্তি তার রবের সামনে উপস্থিত হওয়াকে ভয় করে, তার জন্য রয়েছে দুটি জান্নাত।"[৭১]


আল্লাহ তাআলা বলেন :


ﺃُﻭﻟَﺌِﻚَ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳَﺪْﻋُﻮﻥَ ﻳَﺒْﺘَﻐُﻮﻥَ ﺇِﻟَﻰ ﺭَﺑِّﻬِﻢُ ﺍﻟْﻮَﺳِﻴﻠَﺔَ ﺃَﻳُّﻬُﻢْ ﺃَﻗْﺮَﺏُ ﻭَﻳَﺮْﺟُﻮﻥَ ﺭَﺣْﻤَﺘَﻪُ ﻭَﻳَﺨَﺎﻓُﻮﻥَ ﻋَﺬَﺍﺑَﻪُ ﺇِﻥَّ ﻋَﺬَﺍﺏَ ﺭَﺑِّﻚَ ﻛَﺎﻥَ ﻣَﺤْﺬُﻭﺭًﺍ ﴿ﺍﻹﺳﺮﺍﺀ :৫৭ ﴾



"যাদেরকে তারা আহবান করে, তারা নিজেরাই তো তাদের রবের নৈকট্য লাভের জন্য উপায় সন্ধান করে যে, তাদের মধ্যে কে কত নিকট হতে পারে। তারা তার রহমত আশা করে এবং তার শাস্তিকে ভয় করে। নিশ্চয় তোমার রবের শাস্তি ভয়াবহ।"[৭২]



হে আল্লাহ! আমাদের সকলকে মুত্তাকি বানিয়ে দাও এবং তোমার রহমতের ছায়াতলে আশ্রয় দান কর। হে আল্লাহ! আমাদের জাহান্নামের অতল গহবরে ছেড়ে দিও না, আমাদের ঘার ধরে পাঁকড়াও করো না। হে আল্লাহ! আমাদের তওবা কবুল করুন এবং আমাদের সুন্দর সমাপ্তি প্রদান করুন। এরশাদ হচ্ছে :


ﺭَﺑَّﻨَﺎ ﺍﺻْﺮِﻑْ ﻋَﻨَّﺎ ﻋَﺬَﺍﺏَ ﺟَﻬَﻨَّﻢَ ﺇِﻥَّ ﻋَﺬَﺍﺑَﻬَﺎ ﻛَﺎﻥَ ﻏَﺮَﺍﻣًﺎ . ﺇِﻧَّﻬَﺎ ﺳَﺎﺀَﺕْ ﻣُﺴْﺘَﻘَﺮًّﺍ ﻭَﻣُﻘَﺎﻣًﺎ ﴿ﺍﻟﻔﺮﻗﺎﻥ :৬৫-৬৬ ﴾


"হে আমাদের রব! আমাদের থেকে জাহান্নামের শাস্তি হটাও। নিশ্চয় এর শাস্তি তো আঁকড়ে থাকার জিনিস। এটা খুব খারাপ স্থান ও থাকার জায়গা।"[৭৩]



ﺭَﺑَّﻨَﺎ ﺇِﻧَّﻚَ ﻣَﻦْ ﺗُﺪْﺧِﻞِ ﺍﻟﻨَّﺎﺭَ ﻓَﻘَﺪْ ﺃَﺧْﺰَﻳْﺘَﻪُ ﻭَﻣَﺎ ﻟِﻠﻈَّﺎﻟِﻤِﻴﻦَ ﻣِﻦْ ﺃَﻧْﺼَﺎﺭٍ ﴿১৯২﴾


"হে আমাদের রব! তুমি যাকে দোযখে নিক্ষেপ করবে, তার নিশ্চিত অপমান হবে। জালেমাদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই।"[৭৪]


জান্নাত নেককারদের ঘর



এরশাদ হচ্ছে :


ﻓَﻠَﺎ ﺗَﻌْﻠَﻢُ ﻧَﻔْﺲٌ ﻣَﺎ ﺃُﺧْﻔِﻲَ ﻟَﻬُﻢْ ﻣِﻦْ ﻗُﺮَّﺓِ ﺃَﻋْﻴُﻦٍ ﺟَﺰَﺍﺀً ﺑِﻤَﺎ ﻛَﺎﻧُﻮﺍ ﻳَﻌْﻤَﻠُﻮﻥَ ﴿ ১৭ ﴾



"কেউ জানে না তাদের জন্য কি কি নয়নাভিরাম গোপন রাখা হয়েছে। তাদের কৃতকর্মের প্রতিদান স্বরূপ।"[৭৫]
হে মুসলমানগণ! এসো শান্তির রাজ্য-জান্নাতের আলোচনার মাধ্যমে আমাদের অন্তর উর্বর ও আন্দোলিত করি। হতে পারে তার আলোচনা ও স্মৃতিচারণ আমাদের অন্তরে জান্নাতের আগ্রহ সৃষ্টি করবে। যার ফলে আমরা সে সকল ভাগ্যবানদের অর্ন্তভূক্ত হতে পারব, যারা আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হলে ঘোষণা আসবে :



ﺍﺩْﺧُﻠُﻮﻫَﺎ ﺑِﺴَﻠَﺎﻡٍ ﺁَﻣِﻨِﻴﻦَ ﴿ﺍﻟﺤﺠﺮ :৪৬ ﴾



"এতে শান্তি ও নিরাপত্তার সাথে প্রবেশ কর।"[৭৬]



জান্নাত একমাত্র অভিষ্ঠ লক্ষ্য, কাঙ্খিত বস্তু। এর জন্য-ই আমাদের পূর্ব পুরুষগণ সব কিছু ত্যাগ করতে প্রস্তুত ছিলেন। আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্যের সর্ব শেষ নমুনা পেশ করতেন। তার দীনের জন্য উৎসর্গীত হতেন, তার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে শাহাদাত বরণ করতেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ জান্নাতের মাধ্যমেই বদরের ময়দানে মুসলিম সৈন্যদের ভেতর প্রেরণার সৃষ্টি করে ছিলেন, তিরস্কার করে ছিলেন তাদের মন্থরতাকে। লক্ষ্য করুন তার উদাত্ব আহ্বান :


ﻗﻮﻣﻮﺍ ﺇﻟﻰ ﺟﻨﺔ ﻋﺮﺿﻬﺎ ﺍﻟﺴﻤﻮﺍﺕ ﻭﺍﻷﺭﺽ . ‏( ﻣﺴﻠﻢ )


"সে জান্নাতের জন্য প্রস্তুত হও, যার ব্যপ্তি আসামান-জমীন সমতুল্য।"[৭৭]





তিনি কোন পদমর্যাদা কিংবা সম্পদের ওয়াদা করেননি, শুধু জান্নাতের ওয়াদা করেছেন। সে ওয়াদাই তাদের জন্য যতেষ্ট ছিল। তাদের বিশ্বাসের দৃঢ়তার ফলে জান্নাত চাক্ষুষ দেখার ন্যায় সামানে বিদ্যমান ছিল, তাদের সামনে দুনিয়া বিদ্যমান থাকা সত্বেও অর্থহীন ছিল। এমনও হয়েছে, কেউ কেউ হাতে রাখা খেজুর পর্যন্ত ফেলে দিয়ে বলে ছিল, এ গুলো খাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করাও অনাকাঙ্খিত দীর্ঘ হায়াত নিয়ে বেচে থাকা বৈ কি। আবার কেউ কেউ বর্শ্ব বিদ্ধ হয়েও আনন্দের আতিশয্যে বলেছিল, "কাবার রবের কসম, আমি সফল হয়েছি।" আর জাফর ইবনে আবিতালিবের বিষয়টি আরো আশ্চর্য। জান্নাত তার জীবন সঙ্গীর ন্যায় ছিল। লক্ষ্য করুন তার কবিতা, যা তিনি আবৃতি করেছিলেন মুতার যুদ্ধে, জায়েদ বিন হারেছের শাহাদাতের পর তিন হাজার মুসলিম সৈন্যের নেতৃত্ব দানকালে, যারা দুই লক্ষ খৃষ্টান সৈন্যের মোকাবেলায় অবতীর্ন হয়েছিল।


ﻳﺎ ﺣﺒﺬﺍ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﻭﺍﻗﺘﺮﺍﺑﻬﺎ ু ﻃﻴﺒﺔ ﻭﺑﺎﺭﺩ ﺷﺮﺍﺑﻬﺎ
ﻭﺍﻟﺮﻭﻡ ﺭﻭﻡ ﻗﺪ ﺩﻧﺎ ﻋﺬﺍﺑﻬﺎ ু ﻛﺎﻓﺮﺓ ﺑﻌﻴﺪﺓ ﺃﻧﺴﺎﺑﻬﺎ
ﻋﻠﻰ ﺇﻥ ﻻﻗﻴﺘﻬﺎ ﺿﺮﺍﺑﻬﺎ



স্বাগতম হে জান্নাত! যার আগমন- সুভলক্ষণ, যার পানীয় শীতল।
রোম তো রোম-ই যার শস্তি ঘনিয়েছে। কাফের, ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন তাদের বংশ।
যদি তাদের সাক্ষাত পাই।



এ কবিতা আবৃতি করেই তিনি শহিদ হন। আর দু'ডানায় ভর করে জান্নাতে উড়ে বেড়ান। তার পর আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা ইসলামের ঝান্ডা তুলে নেন। তিনিও কম যাননি। মৃত্যু অবধারিত দেখেও তিনি আবৃতি করেছিলেন।



ﺃﻗﺴﻤﺖ ﻳﺎ ﻧﻔﺲ ﻟﺘﻨﺰﻟﻨﻪ ু ﻃﺎﺋﻌﺔ ﺃﻭ ﻟﺘﻜﺮﻫﻨﻪ
ﺇﻥ ﺃﺟﻠﺐ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻭﺷﺪﻭﺍ ﺍﻟﺮﻧﺔ ু ﻣﺎﻟﻲ ﺃﺭﺍﻙ ﺗﻜﺮﻫﻴﻦ ﺍﻟﺠﻨﺔ
ﻗﺪ ﻃﺎﻝ ﻣﺎ ﻗﺪ ﻛﻨﺖ ﻣﻄﻤﺌﻨﺔ ু ﻫﻞ ﺃﻧﺖ ﺇﻻ ﻧﻄﻔﺔ ﻓﻲ ﺷﻨﺔ



শপথ হে নফস, অবশ্যই সেথায় অবতরণ করবে-
ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায়।



মানুষ জড়ো হয়েছে, ক্রন্দনের প্রস্তুতি নিয়েছে,
আমি কেন লক্ষ্য করছি, তুমি জান্নাত অপছন্দ করছ।
নিরাপদ কাটিয়েছ, তুমি দীর্ঘ সময়,
অথচ তুমি সংকীর্ন জায়গার বীর্য মাত্র।
এ কবিতা আবৃতি করে তিনিও পূর্বের ন্যায় পরপারে পারি চলে যান। আল্লাহ তাদের সকলের উপর সস্তুষ্ট হোন।



জান্নাতুল ফেরদাউসের মর্যাদা :
ফেরদাউস সে জান্নাতের নাম, যেখানে প্রত্যেক মানুষ তার কাঙ্খিত বস্তু লাভ করে ধন্য হবে। যার ভেতর প্রাসাদের উপর প্রাসাদ নির্মিত। যার কক্ষসমূহ নূরে শোভিত। তিনি পবিত্র যে এর এর পরিকল্পনা করেছেন, তিনি করুনাময় যে তা স্বহস্তে তৈরি করেছে। এটা রহমতের স্থান, সফলতার স্থান, এর রাজত্ব মহান, এর নেয়ামত স্থায়ী। এরশাদ হচ্ছে :



ﻓَﻤَﻦْ ﺯُﺣْﺰِﺡَ ﻋَﻦِ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ ﻭَﺃُﺩْﺧِﻞَ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔَ ﻓَﻘَﺪْ ﻓَﺎﺯَ ﴿ﺁﻝ ﻋﻤﺮﺍﻥ :১৮৫ ﴾


"যাকে দোযখ থেকে দুরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, সে-ই সফল।"[৭৮]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :


ﻟﻤﻮﺿﻊ ﺳﻮﻁ ﺃﺣﺪﻛﻢ ﻣﻦ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﺧﻴﺮ ﻣﻦ ﺍﻟﺪﻧﻴﺎ ﻭﻣﺎ ﻓﻴﻬﺎ . ‏( ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ )



"তোমাদের কারো চাবুক পরিমাণ জান্নাতের জায়গা দুনিয়া এবং তার ভেতর যা কিছু আছে তার চেয়ে উত্তম।"[৭৯] জান্নাতের নেয়ামতের মোকাবেলায় দুনিয়ার নেয়ামাতের কোন তুলনা হয় না। তবে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে তুলনা করেছেন, সেভাবে তুলনা করতে দোষ নেই। এরশাদ হচ্ছে :



ﻣﺜﻞ ﻣﺎ ﻳﺠﻌﻞ ﺃﺣﺪﻛﻢ ﺇﺻﺒﻌﻪ ﻓﻲ ﺍﻟﻴﻢ ﻓﻴﻠﻴﻨﻈﺮ ﺑﻢ ﻳﺮﺟﻊ . ‏( ﻣﺴﻠﻢ )



"যেমন, তোমাদের কারো আঙ্গুল সমুদ্রে রাখার মতই, অতঃপর দেখ কি পরিমাণ পানি আঙ্গুলে উঠে এসেছে।"[৮০] এবার চিন্তা কারুন, যে পরিমাণ পানি সমুদ্র থেকে আঙ্গুলের সাথে ওপরে উঠে এসেছে, সে পরিমাণ হচ্ছে ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার নেয়ামত। আর যে পরিমাণ পানি মহাসমুদ্রে অবশিষ্ট আছে, তা হচ্ছে জান্নাতের নেয়ামত।
জান্নাতের আলোচনা প্রকৃত পক্ষে আমাদের রেখে আসার বাড়ীর আলোচনা। এখান থেকেই ইবলিস আদম-হাওয়াকে বের করে দিয়েছে। হয়তো তার আলোচনা পুনারায় জান্নাতে ফিরে যাওয়ার পথ সুগম করবে।



ﻓﺤﻲ ﻋﻠﻰ ﺟﻨﺖ ﻋﺪﻥ ﻓﺈﻧﻬﺎ ু ﻣﻨﺎﺯﻟﻚ ﺍﻷﻭﻟﻰ ﻭﻓﻴﻬﺎ ﺍﻟﻤﺨﻴﻢ
ﻭﻟﻜﻨﻨﺎ ﺳﺒﻲ ﺍﻟﻌﺪﻭ ﻓﻬﻞ ﺗﺮﻯ ু ﻧﻌﻮﺩ ﺇﻟﻰ ﺃﻭﻃﺎﻧﻨﺎ ﻭﻧﺴﻠﻢ



অতএব, আসো তুমি জনবসতির উদ্যানে, কারণ ইহা
তোমার প্রথম গৃহ, এবং এতেই রয়েছে তাবু।
কিন্তু আমরা শত্রুর বন্ধী, আছে কি কোন পথ?
আমাদের বাড়িতে ফিরে যাব, আর নিরাপদ হয়ে যাব।
জান্নাতের বর্ণনা ব্যাপক ভাষাশৈলী ও ভাবগাম্ভির্যতাসহ কুরআন-সুন্নায় বিধৃত হয়েছে। যার রহস্য উদঘাটন করা, যার প্রকৃত অবস্থা উপলব্দি করা প্রায় অসম্ভব।
হাদীসে কুদসীতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : আল্লাহ তাআলা বলেছেন :



ﻗﺎﻝ ﺍﻟﻠﻪ : ﺗﻌﺎﻟﻰ : ﺃﻋﺪﺩﺕ ﻟﻌﺒﺎﺩﻱ ﺍﻟﺼﺎﻟﺤﻴﻦ ﻣﺎ ﻻ ﻋﻴﻦ ﺭﺃﺕ ﻭ ﻻ ﺃﺫﻥ ﺳﻤﻌﺖ ﻭ ﻻ ﺧﻄﺮ ﻋﻠﻰ ﻗﻠﺐ ﺑﺸﺮ , ﻭﺍﻗﺮﺅﻭﺍ ﺇﻥ ﺷﺌﺘﻢ ﻓَﻠَﺎ ﺗَﻌْﻠَﻢُ ﻧَﻔْﺲٌ ﻣَﺎ ﺃُﺧْﻔِﻲَ ﻟَﻬُﻢْ ﻣِﻦْ ﻗُﺮَّﺓِ ﺃَﻋْﻴُﻦٍ ﺟَﺰَﺍﺀً ﺑِﻤَﺎ ﻛَﺎﻧُﻮﺍ ﻳَﻌْﻤَﻠُﻮﻥَ ﴿ﺍﻟﺴﺠﺪﺓ - ১৭ ﴾ ( ﻣﺘﻔﻖ ﻋﻠﻴﻪ )


"আমি আমার নেককার বান্দাদের জন্য এমন জিনিস তৈরী করে রেখেছি, যা কোন চোখ দর্শন করেনি, কোন কর্ণ শ্রবন করেনি, এবং মানুষের অন্তরে যার কল্পনা পর্যন্ত হয়নি। দলিল স্বরূপ তোমরা তেলাওয়াত করতে পার। "কেউ জানে না, তাদের জন্য নয়নাভিরাম কি কি উহ্য রাখা হয়েছে, তাদেরই কর্মের প্রতিদান স্বরূপ।"[৮১][৮২]
জান্নাতের ময়দান খুব প্রসস্ত, তার প্রাসাদ খুব বড় ও বহুতল বিশিষ্ট। এর সৃষ্টিকারী স্বয়ং আল্লাহ তাআলা বলছেন :


ﻭَﺳَﺎﺭِﻋُﻮﺍ ﺇِﻟَﻰ ﻣَﻐْﻔِﺮَﺓٍ ﻣِﻦْ ﺭَﺑِّﻜُﻢْ ﻭَﺟَﻨَّﺔٍ ﻋَﺮْﺿُﻬَﺎ ﺍﻟﺴَّﻤَﻮَﺍﺕُ ﻭَﺍﻟْﺄَﺭْﺽُ ﺃُﻋِﺪَّﺕْ ﻟِﻠْﻤُﺘَّﻘِﻴﻦَ ﴿ﺁﻝ ﻋﻤﺮﺍﻥ :১৩৩ ﴾



"তোমরা তোমাদের রবের ক্ষমা এবং জান্নাতের পানে ছুটে যাও, যার সীমানা হচ্ছে আসমান-যমীন, যা তৈরী করা হয়েছে পরহেযগারদের জন্য।"[৮৩]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :



ﺇﻥ ﻓﻲ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﻟﺸﺠﺮﺓ ﻳﺴﻴﺮ ﺍﻟﺮﺍﻛﺐ ﺍﻟﺠﻠﻮﺩ ﺍﻟﻤﻀﻤﺮ ﺍﻟﺴﺮﻳﻊ ﻣﺎﺋﺔ ﺳﻨﺔ ﻣﺎ ﻳﻘﻄﻌﻬﺎ . ‏( ﻣﺘﻔﻖ ﻋﻠﻴﻪ )


"জান্নাতে একটি গাছ আছে, এক জন আশ্বারোহী সবল-দ্রুতগামী ঘোড়ায় চড়ে একশত বৎসর ভ্রমন করেও তা অতিক্রম করতে পারবে না।"[৮৪]
জান্নাতের বড় বড় আটটি দরজা রয়েছে, যার দুই খুঁটির মাঝখানে দূরত্বের পরিমাণ চল্লিশ বৎসর ভ্রমনের পথ।"[৮৫]
জান্নাতের ভেতর প্রাসাদের উপর প্রাসাদ নির্মিত। তার প্রসাদ সমূহ বিভিন্ন ধরনের মানিক্য খচিত, একসাথে ভেতর-বাহির দৃশ্যমান।[৮৬]
তার দেয়াল স্বর্ণ ও রূপার দ্বারা নির্মিত। তার প্লাষ্টার উন্নত মৃগনাভী, তার পাথর-কুচি প্রবাল ও মোতি এবং তার মাটি জাফরান।
তাতে রয়েছে মোতির অনেক তাবু। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :



ﺇﻥ ﻟﻠﻤﺆﻣﻦ ﻓﻲ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﻟﺨﻴﻤﺔ ﻣﻦ ﻟﺆﻟﺆﺓ ﻭﺍﺣﺪﺓ ﻣﺠﻮﻓﺔ ﻃﻮﻟﻬﺎ ﻓﻲ ﺍﻟﺴﻤﺎﺀ ﺳﺘﻮﻥ ﻣﻴﻼ , ﻟﻠﻤﺆﻣﻦ ﻓﻴﻬﺎ ﺃﻫﻠﻮﻥ , ﻳﻄﻮﻑ ﻋﻠﻴﻬﻢ ﺍﻟﻤﺆﻣﻦ ﻓﻼ ﻳﺮﻯ ﺑﻌﻀﻬﻢ ﺑﻌﻀﺎ . ‏( ﻣﺘﻔﻖ ﻋﻠﻴﻪ )



"মোমেনের জন্য জান্নাতের ভেতর পাথরের তৈরি বড় একটি তাবু রয়েছে, যার দৈর্ঘ আসমানের ভেতর ষাট মাইল। মোমেনের জন্য সেখানে পরিবার পরিজন থাকবে। মুমিন বান্দা তাদের চারপাশে ঘোরাফেরা করবে, তবে কেউ কাউকে দেখবে না।"[৮৭]


এরশাদ হচ্ছে :


ﻭَﺇِﺫَﺍ ﺭَﺃَﻳْﺖَ ﺛَﻢَّ ﺭَﺃَﻳْﺖَ ﻧَﻌِﻴﻤًﺎ ﻭَﻣُﻠْﻜًﺎ ﻛَﺒِﻴﺮًﺍ ﴿ﺍﻟﺪﻫﺮ :২০ ﴾


"যখন তুমি তা দেখবে, আবার যখন দেখবে, সেখানে নেয়ামতরাজী ও বিশাল রাজ্য লক্ষ্য করবে।"[৮৮]

এরশাদ হচ্ছে :

ﻓِﻴﻬَﺎ ﺃَﻧْﻬَﺎﺭٌ ﻣِﻦْ ﻣَﺎﺀٍ ﻏَﻴْﺮِ ﺁَﺳِﻦٍ ﻭَﺃَﻧْﻬَﺎﺭٌ ﻣِﻦْ ﻟَﺒَﻦٍ ﻟَﻢْ ﻳَﺘَﻐَﻴَّﺮْ ﻃَﻌْﻤُﻪُ ﻭَﺃَﻧْﻬَﺎﺭٌ ﻣِﻦْ ﺧَﻤْﺮٍ ﻟَﺬَّﺓٍ ﻟِﻠﺸَّﺎﺭِﺑِﻴﻦَ ﻭَﺃَﻧْﻬَﺎﺭٌ ﻣِﻦْ ﻋَﺴَﻞٍ ﻣُﺼَﻔًّﻰ ﻭَﻟَﻬُﻢْ ﻓِﻴﻬَﺎ ﻣِﻦْ ﻛُﻞِّ ﺍﻟﺜَّﻤَﺮَﺍﺕِ ﻭَﻣَﻐْﻔِﺮَﺓٌ ﻣِﻦْ ﺭَﺑِّﻬِﻢْ ﴿ﻣﺤﻤﺪ :১৫ ﴾



"তাতে রয়েছে দুর্ঘন্ধহীন পানির নহর; সুস্বাদু দুধের নহর; সুপেয় শরাবের নহর এবং পরিশোধিত মধুর নহর। সেখানে তাদের জন্য আরো রয়েছে, রকমারী ফল-মূল এবং তাদের রবের পক্ষ থেকে ক্ষমা।"[৮৯]
তার কুটির সমূহ বন্ধু-বান্ধবদের মিলন মেলা। তার বাগান পর্যটকদের প্রমোদ স্থান। তার ছাদ আল্লাহর আরশ।
তার প্রসাদসমূহ সুদৃঢ়, তার প্রদীপসমূহ আলোকোজ্জল, তার ভেতর রয়েছে চিকন-মোটা সব ধরনের রেশন আর আছে প্রচুর ফল-মূল, যা কোন দিন শেষ হবে না, যা ক্ষেতে কোন দিন নিষেধও করাও হবে না। এরশাদ হচ্ছে :



ﻳُﺤَﻠَّﻮْﻥَ ﻓِﻴﻬَﺎ ﻣِﻦْ ﺃَﺳَﺎﻭِﺭَ ﻣِﻦْ ﺫَﻫَﺐٍ ﻭَﻟُﺆْﻟُﺆًﺍ ﻭَﻟِﺒَﺎﺳُﻬُﻢْ ﻓِﻴﻬَﺎ ﺣَﺮِﻳﺮٌ ﴿ﺍﻟﺪﻫﺮ :২৩ ﴾



"সেখানে তাদেরকে স্বর্ণ ও মুতি দ্বারা তৈরি চুরি দিয়ে সজ্জিত করা হবে এবং সেখানে তাদের পোষাক হবে রেশমের।"[৯০]
সেখানে তারা নিজ নিজ আসনে হেলান দিয়ে বসবে, একে অপরের পালং মুখোমুখি থাকবে। পরস্পর আলাপ-আলোচনায় নিরত থাকবে। এরশাদ হচেছ :


ﻭَﺃَﻗْﺒَﻞَ ﺑَﻌْﻀُﻬُﻢْ ﻋَﻠَﻰ ﺑَﻌْﺾٍ ﻳَﺘَﺴَﺎﺀَﻟُﻮﻥَ . ﻗَﺎﻟُﻮﺍ ﺇِﻧَّﺎ ﻛُﻨَّﺎ ﻗَﺒْﻞُ ﻓِﻲ ﺃَﻫْﻠِﻨَﺎ ﻣُﺸْﻔِﻘِﻴﻦَ . ﻓَﻤَﻦَّ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻨَﺎ ﻭَﻭَﻗَﺎﻧَﺎ ﻋَﺬَﺍﺏَ ﺍﻟﺴَّﻤُﻮﻡِ . ﺇِﻧَّﺎ ﻛُﻨَّﺎ ﻣِﻦْ ﻗَﺒْﻞُ ﻧَﺪْﻋُﻮﻩُ ﺇِﻧَّﻪُ ﻫُﻮَ ﺍﻟْﺒَﺮُّ ﺍﻟﺮَّﺣِﻴﻢُ ﴿ﺍﻟﻄﻮﺭ :২৫-২৮ ﴾

"তারা পরস্পর জিজ্ঞাসাবাদ ও খবরাখবর নেয়ার জন্য একে অপরের মুখোমুখি হবে। তারা বলবে, ইতোপূর্বে আমরা নিজ পরিবারের মাঝে খুব শংকিত ছিলাম। আল্লাহ আমাদের দয়া করেছেন, তিনি আমাদেরকে বিষাক্ত আযাব থেকে নাজাত প্রদান করেছেন। এর আগেও আমরা তাকে আহ্বান করতাম। তিনি হিতাকাঙ্খি-দয়ালু।"[৯১]
তার ভেতর আরো আছে সুদীর্ঘ ছায়া, অনেক নেয়ামত, রুচিশীল ফল-ফলাদি, সুস্বাদু পাখির গোস্ত, তার পানাহার সব সময়ের জন্য উম্মুক্ত, কখনো শেষ হবে না। তার ছায়া কখনো নিঃশেষ হবে না। দীর্ঘ সময় তাতে আমোদ-প্রমোদ আয়োজন চলবে, তাতে ঘুম আসবে না, ঘুমের প্রয়োজনও হবে না। তার ফল মাখনের চেয়ে নরম, মধুর চেয়ে বেশী মিষ্টি। তার ফল হাতের নাগালে থাকবে, তার পানীয় সুস্বাদ্য, বৃক্ষরাজি অবনত, আনুগত্যশীল। এরশাদ হচ্ছে :


ﻭَﺫُﻟِّﻠَﺖْ ﻗُﻄُﻮﻓُﻬَﺎ ﺗَﺬْﻟِﻴﻠًﺎ ﴿ﺍﻟﺪﻫﺮ :১৪ ﴾


"তার ফলসমূহ খুব নাগালের করে দেয়া হয়েছে।"[৯২]
আশা করার সাথে সাথেই ফলসমূহ সম্মুখে ঝুঁকে যাবে। এরশাদ হচ্ছে :



ﻣُﺘَّﻜِﺌِﻴﻦَ ﻋَﻠَﻰ ﻓُﺮُﺵٍ ﺑَﻄَﺎﺋِﻨُﻬَﺎ ﻣِﻦْ ﺇِﺳْﺘَﺒْﺮَﻕٍ ﻭَﺟَﻨَﻰ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺘَﻴْﻦِ ﺩَﺍﻥٍ ﴿ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ :৫৪ ﴾



"রেশমের আস্তর বিশিষ্ট বিছানায় হেলান অবস্থায় থাকবে। উভয় উদ্যানের ফল অবনত থাকবে।"[৯৩]



ﻳﻌﻄﻰ ﺃﺣﺪﻫﻢ ﻗﻮﺓ ﻣﺎﺋﺔ ﺭﺟﻞ ﻓﻲ ﺍﻷﻛﻞ ﻭﺍﻟﺸﺮﺏ ﻭﺍﻟﺠﻤﺎﻉ . ‏( ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ )



"পানাহার ও সহবাসের ক্ষেত্রে প্রত্যেককে একশত ব্যক্তির শক্তি প্রদান করা হবে।"[৯৪]
পানাহার ক্ষুদা নিবারণ কিংবা তৃষ্ণা মিটানোর জন্য নয়, বরং স্বাদ আস্বাদন আর মস্তি করার জন্য। এরশাদ হচ্ছে :



ﺇِﻥَّ ﻟَﻚَ ﺃَﻟَّﺎ ﺗَﺠُﻮﻉَ ﻓِﻴﻬَﺎ ﻭَﻟَﺎ ﺗَﻌْﺮَﻯ . ﻭَﺃَﻧَّﻚَ ﻟَﺎ ﺗَﻈْﻤَﺄُ ﻓِﻴﻬَﺎ ﻭَﻟَﺎ ﺗَﻀْﺤَﻰ ﴿ﻃﻪ :১১৮-১১৯ ﴾



"তোমার জন্য; তুমি এতে ক্ষুদার্ধ হবে না এবং বস্ত্রহীনও হবে না। এবং তুমি এতে পিপাসার্থ হবে না, রৌদ্র কষ্টও পাবে না।"[৯৫] মুদ্দা কথা জান্নাতে কষ্টদায়ক কোন বস্তু বিদ্যমান থাকবে না।


ﻻﻳﺒﺼﻘﻮﻥ ﻭﻻ ﻳﺘﻤﺨﻄﻮﻥ ﻭﻻ ﻳﺘﻐﻮﻃﻮﻥ . ‏( ﻣﺘﻔﻖ ﻋﻴﻪ )



"তারা থুতু ফালাবে না, নাকের শ্লেশা ফালাবে না এবং পায়খানাও করবে না।"[৯৬]


ﺗﻜﻮﻥ ﺣﺎﺟﺔ ﺃﺣﺪﻫﻢ ﺟﺸﺎﺀ ﻛﺮﺷﺢ ﺍﻟﻤﺴﻚ . ‏( ﻣﺴﻠﻢ )


"তাদের কারো প্রয়োজন হবে শুধু ঢেকুর তোলার, মৃগ নাভী ছিটানোর ন্যায়।"[৯৭]


আল্লাহ মুত্তাকিদের আহ্বান করবেন, সম্মানিত মেহমানদের ন্যায় তারা সামনে অগ্রসর হবে এবং আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হবে। এরশাদ হচ্ছে :


ﻳَﺎ ﻋِﺒَﺎﺩِ ﻟَﺎ ﺧَﻮْﻑٌ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢُ ﺍﻟْﻴَﻮْﻡَ ﻭَﻟَﺎ ﺃَﻧْﺘُﻢْ ﺗَﺤْﺰَﻧُﻮﻥَ ﴿ﺍﻟﺰﺧﺮﻑ :৬৮ ﴾


"হে আমার বান্দাগণ, আজ তোমাদের কোন ভয় নাই এবং তোমরা চিন্তিতও হবে না।" [৯৮]


তারা দুনিয়ার ন্যায় সেখানেও তাদের নিজ নিজ বাড়ি-ঘর চিনবে। এরশাদ হচ্ছে :


ﻭَﻳُﺪْﺧِﻠُﻬُﻢُ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔَ ﻋَﺮَّﻓَﻬَﺎ ﻟَﻬُﻢْ ﴿ﻣﺤﻤﺪ :৬ ﴾


"অতঃপর তিনি তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার পরিচয় তিনি তাদেরকে ইতোপূর্বে দিয়েছেন।"[৯৯]
সম্মানিত ফেরেশতাগণ তাদেরকে নিরাপদ আগমন ও উত্তম গৃহের সুসংবাদ দিয়ে অর্ভ্যথনা জানাবে। এরশাদ হচ্ছে :


ﻭَﺳِﻴﻖَ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺍﺗَّﻘَﻮْﺍ ﺭَﺑَّﻬُﻢْ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔِ ﺯُﻣَﺮًﺍ ﺣَﺘَّﻰ ﺇِﺫَﺍ ﺟَﺎﺀُﻭﻫَﺎ ﻭَﻓُﺘِﺤَﺖْ ﺃَﺑْﻮَﺍﺑُﻬَﺎ ﻭَﻗَﺎﻝَ ﻟَﻬُﻢْ ﺧَﺰَﻧَﺘُﻬَﺎ ﺳَﻠَﺎﻡٌ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﻃِﺒْﺘُﻢْ ﻓَﺎﺩْﺧُﻠُﻮﻫَﺎ ﺧَﺎﻟِﺪِﻳﻦَ ﴿ﺍﻟﺰﻣﺮ :৭৩ ﴾


"যারা তাদের রবকে ভয় করেছে, তাদেরকে দলে দলে জান্নাতে নিয়ে যাওয়া হবে। অতঃপর যখন তারা তাতে আগমন করবে ও দরজাসমূহ খুলে দেয়া হবে, তখন তাদেরকে জান্নাতের রক্ষীরা বলবে : 'তোমাদের প্রতি সালাম, তোমরা সুখি, অতএব তোমরা এতে স্থায়ীভাবে প্রবেশ কর।"[১০০]


আর জান্নাতিরা বলবে :

ﻭَﻗَﺎﻟُﻮﺍ ﺍﻟْﺤَﻤْﺪُ ﻟِﻠَّﻪِ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻫَﺪَﺍﻧَﺎ ﻟِﻬَﺬَﺍ ﻭَﻣَﺎ ﻛُﻨَّﺎ ﻟِﻨَﻬْﺘَﺪِﻱَ ﻟَﻮْﻟَﺎ ﺃَﻥْ ﻫَﺪَﺍﻧَﺎ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻟَﻘَﺪْ ﺟَﺎﺀَﺕْ ﺭُﺳُﻞُ ﺭَﺑِّﻨَﺎ ﺑِﺎﻟْﺤَﻖِّ ﴿ﺍﻷﻋﺮﺍﻑ :৪৩ ﴾



"তারা বলবে : সমস্ত প্রসংশা সে আল্লাহর, যিনি আমাদেরকে এর জন্য পথ দেখিয়েছেন। যদি আল্লাহ আমাদের পথ না দেখাতেন, তবে আমরা পথ পেতাম না। আমাদের নিকট আমাদের রবের রাসূলগণ সত্য নিয়ে এসেছেন। এরশাদ হচ্ছে :


ﻭَﻧُﻮﺩُﻭﺍ ﺃَﻥْ ﺗِﻠْﻜُﻢُ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔُ ﺃُﻭﺭِﺛْﺘُﻤُﻮﻫَﺎ ﺑِﻤَﺎ ﻛُﻨْﺘُﻢْ ﺗَﻌْﻤَﻠُﻮﻥَ ﴿ﺍﻷﻋﺮﺍﻑ:৪৩ ﴾


"এবং ঘোষণা দেয়া হবে, এটাই তোমাদের জান্নাত, তোমরা এর মালিক হয়েছ, তোমরা যে আমল করতে, তার বিনিময়ে।"[১০১]



রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :


ﺃﻭﻝ ﺯﻣﺮﺓ ﻣﻨﻬﻢ ﻳﺪﺧﻠﻮﻥ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﻋﻠﻰ ﺻﻮﺭﺓ ﺍﻟﻘﻤﺮ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﺒﺪﺭ , ﺛﻢ ﺍﻟﺬﻳﻦ ﻳﻠﻮﻧﻬﻢ ﻋﻠﻰ ﺃﺷﺪ ﻛﻮﻛﺐ ﺩﺭﻱ . ‏( ﻣﺘﻔﻖ ﻋﻠﻴﻪ )


"জান্নাতে তাদের প্রথম দলটি প্রবেশ করবে, পূণির্মার রাতের চাদের ন্যায়। অতঃপর তাদের দ্বিতীয় দলটি যাবে উজ্জল নক্ষত্রের ন্যায়।"[১০২]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :



ﻳﺪﺧﻞ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﻋﻠﻰ ﺻﻮﺭﺓ ﺃﺑﻴﻬﻢ ﺁﺩﻡ , ﻃﻮﻝ ﺍﻟﻮﺍﺣﺪ ﻣﻨﻬﻢ ﺳﺘﻮﻥ ﺫﺭﺍﻋﺎ . ‏( ﻣﺘﻔﻖ ﻋﻠﻴﻪ )



"জান্নাতিরা জান্নাতে প্রবেশ করবে তাদের পিতা আদম আলাইহিস সালাম এর আকৃতিতে। তাদের প্রত্যেকের উচ্চতা হবে ষাট হাত।"[১০৩]



রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :


ﻻ ﺗﺒﺎﻏﺾ ﺑﻴﻨﻬﻢ ﻗﻠﻮﺑﻬﻢ ﻋﻠﻰ ﻗﻠﺐ ﻭﺍﺣﺪ . ‏( ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ )




"তাদের মাঝে পরস্পর কোন বিদ্বেষ থাকবে না, তাদের সবার অন্তর একটি অন্তরের ন্যায় থাকবে।"[১০৪]


এরশাদ হচ্ছে :


ﻭَﻧَﺰَﻋْﻨَﺎ ﻣَﺎ ﻓِﻲ ﺻُﺪُﻭﺭِﻫِﻢْ ﻣِﻦْ ﻏِﻞٍّ ﺇِﺧْﻮَﺍﻧًﺎ ﻋَﻠَﻰ ﺳُﺮُﺭٍ ﻣُﺘَﻘَﺎﺑِﻠِﻴﻦَ ﴿ﺍﻷﻋﺮﺍﻑ:৪৭ ﴾


"তাদের অন্তরে যে ব্যধি রয়েছে, আমি তা দূর করে দিব, তারা মুখোমুখি চেয়ারে উপবিষ্ট, সকলে ভাই-ভাই।"[১০৫] এরশাদ হচ্ছে :


ﺩَﻋْﻮَﺍﻫُﻢْ ﻓِﻴﻬَﺎ ﺳُﺒْﺤَﺎﻧَﻚَ ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﻭَﺗَﺤِﻴَّﺘُﻬُﻢْ ﻓِﻴﻬَﺎ ﺳَﻠَﺎﻡٌ ﴿ﻳﻮﻧﺲ :১০ ﴾


"সেখানে তাদের প্রার্থনা হল 'হে আল্লাহ! তোমার পবিত্রতা ঘোষণা করছি।' আর তাদের শুভেচ্ছা হচ্ছে 'সালাম'।[১০৬] একজন ঘোষণাকারী তাদের আহ্বান করে বলবে :


ﺇﻥ ﻟﻜﻢ ﺃﻥ ﺗﺤﻴﻮﺍ ﻓﻼ ﺗﻤﻮﺗﻮﺍ ﺃﺑﺪﺍ ﻭﺇﻥ ﻟﻜﻢ ﺃﻥ ﺗﺼﺤﻮﺍ ﻓﻼ ﺗﺴﻘﻤﻮﺍ ﺃﺑﺪﺍ ﻭﺇﻥ ﻟﻜﻢ ﺃﻥ ﺗﺸﺒﻮﺍ ﻓﻼ ﺗﻬﺮﻣﻮﺍ ﺃﺑﺪﺍ ﻭﺇﻥ ﻟﻜﻢ ﺃﻥ ﺗﻨﻌﻤﻮﺍ ﻓﻼ ﺗﺒﺄﺳﻮﺍ ﺃﺑﺪﺍ . ‏( ﻣﺴﻠﻢ )


"তোমরা এখানে চিরঞ্জিব কখনো মুত্যু বরণ করবে না। তোমরা এখানে চির সুস্থ, কখনো অসুস্থ হবে না। তোমরা এখানে চির যুবক, কখনো বৃদ্ধ হবে না। তোমরা এখানে আনন্দ-ফূর্তি কর, কখনো দুঃখিত হবে না।"[১০৭]


এরশাদ হচ্ছে :


ﻳُﻄَﺎﻑُ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﺑِﺼِﺤَﺎﻑٍ ﻣِﻦْ ﺫَﻫَﺐٍ ﻭَﺃَﻛْﻮَﺍﺏٍ ﻭَﻓِﻴﻬَﺎ ﻣَﺎ ﺗَﺸْﺘَﻬِﻴﻪِ ﺍﻟْﺄَﻧْﻔُﺲُ ﻭَﺗَﻠَﺬُّ ﺍﻟْﺄَﻋْﻴُﻦُ ﻭَﺃَﻧْﺘُﻢْ ﻓِﻴﻬَﺎ ﺧَﺎﻟِﺪُﻭﻥَ ﴿ﺍﻟﺰﺧﺮﻑ :৭১ ﴾


"স্বর্ণের প্লেট ও গ্লাসসহ তাদের চতুর্পাশে চক্কর দেয়া হবে। এবং তাতে আরো রয়েছে, যা মন চায় ও যার দ্বারা চোখ তৃপ্তি অনুভব করে, এবং তোমরা সেখানে সর্বদা থাকবে।"[১০৮]


এরশাদ হচ্ছে :


ﺗَﻌْﺮِﻑُ ﻓِﻲ ﻭُﺟُﻮﻫِﻬِﻢْ ﻧَﻀْﺮَﺓَ ﺍﻟﻨَّﻌِﻴﻢِ ﴿ﺍﻟﻤﻄﻔﻔﻴﻦ :২৪ ﴾


"তুমি তাদের চোখে নেয়ামতের প্রতিক্রিয়া চিনতে পারবে।"[১০৯]
এরশাদ হচ্ছে :

ﻭَﻳَﻄُﻮﻑُ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﻏِﻠْﻤَﺎﻥٌ ﻟَﻬُﻢْ ﻛَﺄَﻧَّﻬُﻢْ ﻟُﺆْﻟُﺆٌ ﻣَﻜْﻨُﻮﻥٌ ﴿ﺍﻟﻄﻮﺭ :২৪ ﴾



"কিশোররা তাদের আশ-পাশে চক্কর কাটবে। তারা দেখতে সুরক্ষিত মোতির ন্যায়।"[১১০]


এ হলো সেবকদের অবস্থা, আর যাদের সেবা করা হবে, তাদের অবস্থা কেমন হবে, বর্ণনার অপেক্ষা রাখে না। তারা জান্নাতের দীর্ঘ ছায়ার নিচে জমা হবে, সিল করা পানির বোতল পরস্পর আদান-প্রাদান করবে আর জান্নাতের ভেতর প্রবাহিত সুপেয় মদির পান করবে। তাদের উপর পরপর দয়া-কল্যাণ ও অনুগ্রহ বর্ষিত হবে। তাদের থেকে চিন্তা-পেরেশানি ও কষ্ট চিরতরে বিদায় নিবে। এরশাদ হচ্ছে :


ﻭَﻗَﺎﻟُﻮﺍ ﺍﻟْﺤَﻤْﺪُ ﻟِﻠَّﻪِ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﺃَﺫْﻫَﺐَ ﻋَﻨَّﺎ ﺍﻟْﺤَﺰَﻥَ ﺇِﻥَّ ﺭَﺑَّﻨَﺎ ﻟَﻐَﻔُﻮﺭٌ ﺷَﻜُﻮﺭٌ . ﺍﻟَّﺬِﻱ ﺃَﺣَﻠَّﻨَﺎ ﺩَﺍﺭَ ﺍﻟْﻤُﻘَﺎﻣَﺔِ ﻣِﻦْ ﻓَﻀْﻠِﻪِ ﻟَﺎ ﻳَﻤَﺴُّﻨَﺎ ﻓِﻴﻬَﺎ ﻧَﺼَﺐٌ ﻭَﻟَﺎ ﻳَﻤَﺴُّﻨَﺎ ﻓِﻴﻬَﺎ ﻟُﻐُﻮﺏٌ ﴿ﺍﻟﻔﺎﻃﺮ :৩৪-৩৫ ﴾


"এবং, তারা বলবে সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাদের দুঃখ দূর করেছেন। নিশ্চয় আমাদের রব ক্ষমাশীল, উত্তম বিনিময় প্রদানকারী। তিনি নিজ অনুগ্রহে আমাদের থাকার স্থান দিয়েছেন। যেখানে আমাদের কষ্ট স্পর্শ করবে না, ক্লান্তিও আমাদের কাছে ঘেসবে না।"[১১১]


এরশাদ হচ্ছে :


ﻟَﺎ ﻳَﺴْﻤَﻌُﻮﻥَ ﻓِﻴﻬَﺎ ﻟَﻐْﻮًﺍ ﻭَﻟَﺎ ﺗَﺄْﺛِﻴﻤًﺎ . ﺇِﻟَّﺎ ﻗِﻴﻠًﺎ ﺳَﻠَﺎﻣًﺎ ﺳَﻠَﺎﻣًﺎ ﴿ﺍﻟﻮﺍﻗﻌﺔ :২৬ ﴾


"তারা সেখানে বাহুল্য ও খারাপ কিছু শুনবে না, শুধু শুনবে সালাম, সলাম বাক্য।"[১১২]


প্রশান্তি-স্বস্তি, ভালবাসা ও নিরাপত্তার পরিবেশ তাদের বেষ্টন করে থাকবে। সেখানে তাদের নেককার পিতা-মাতা, স্ত্রী-সন্তান সবাইকে জমায়েত করা হবে। এরশাদ হচ্ছে :


ﺟَﻨَّﺎﺕُ ﻋَﺪْﻥٍ ﻳَﺪْﺧُﻠُﻮﻧَﻬَﺎ ﻭَﻣَﻦْ ﺻَﻠَﺢَ ﻣِﻦْ ﺁَﺑَﺎﺋِﻬِﻢْ ﻭَﺃَﺯْﻭَﺍﺟِﻬِﻢْ ﻭَﺫُﺭِّﻳَّﺎﺗِﻬِﻢْ ﴿ﺍﻟﺮﻋﺪ :২৩ ﴾


"বসবাসের জান্নাত, সেখানে তারা এবং তাদের সৎকর্মশীল পিতা-মাতা, স্বামী, সন্তানগণ প্রবেশ করবে।"[১১৩]



হে আল্লাহর বান্দা! তুমি এর চেয়ে উত্তম আর কি চাও!?


হ্যাঁ, এতো কিছুর পরও একটি নেয়ামত অবশিষ্ট আছে, যা মাজীদের দিন প্রদান করা হবে। যে দিন ঘোষণা দেয়া হবে :



ﻳﺎ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﺇﻥ ﺭﺑﻜﻢ ﻳﺴﺘﺰﻳﺮﻛﻢ ﻓﺤﻲ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺰﻳﺎﺭﺓ , ﻓﻴﻨﻬﻀﻮﻥ ﻟﻠﺰﻳﺎﺭﺓ ﻣﺒﺎﺩﺭﻳﻦ , ﻓﺈﺫﺍ ﺍﻹﺑﻞ ﺍﻟﻨﺠﺎﺋﺐ ﻗﺪ ﺃﻋﺪﺕ ﻟﻬﻢ ﺣﺘﻰ ﺇﺫﺍ ﺍﻧﺘﻬﻮﺍ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﻮﺍﺩﻱ ﺍﻷﻓﻴﺢ ﻧﺼﺐ ﻟﻬﻢ ﻣﻨﺎﺑﺮ ﻣﻦ ﻧﻮﺭ ﻭﻟﺆﻟﺆ ﻭﺯﺑﺮﺯﺟﺪ , ﻭﺟﻠﺴﻮﺍ ﻋﻠﻰ ﻛﺜﺒﺎﻥ ﺍﻟﻤﺴﻚ . ‏( ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ )


"হে জান্নাতবাসীগন! তোমাদের রব তোমাদের সাক্ষাত দিবে, তোমরা সাক্ষাতের জন্য প্রস্তুত হও, অতঃপর তারা প্রতিযোগিতামূলক সাক্ষাতের জন্য প্রস্তুত হবে। তারা দেখতে পাবে, তাদের নিয়ে যাওয়ার জন্য দ্রুতগামী ভাল জাতের উট প্রস্তুত রয়েছে। তারা ময়দানে পৌঁছলে নূর-মুতি ও মনি-মোক্তা দিয়ে নির্মিত মিম্ভার ও মৃগনাভির তৈরী ফোম প্রদান করা হবে। তারা নিজ নিজ পদ মোতাবেক আল্লাহর নিকট উপবিষ্ট হবে। এরশাদ হচ্ছে :



ﻫُﻢْ ﺩَﺭَﺟَﺎﺕٌ ﻋِﻨْﺪَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﴿ﺁﻝ ﻋﻤﺮﺍﻥ :১৬৩ ﴾



"আল্লাহর নিকট তারা পদ-মর্যাদা অনুপাতে অবস্থান করবে।"[১১৪]



কবি বলেন :



ﻭﺍﻟﺴﺎﺑﻘﻮﻥ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻫﻢ ﺍﻷﻟﻰ - ﻓﺎﺯﻭﺍ ﺑﺬﻟﻚ ﺍﻟﺴﺒﻖ ﺑﺎﻹﺣﺴﺎﻥ


যারা নামাজে অগ্রগামী, ইহসানের কারণে তারাই সে প্রতিযোগিতায় ধন্য হয়েছে।
এমতাবস্থায় একটি নূর প্রজ্বলিত হয়ে সমগ্র জান্নাত আলোকিত করে দিবে। তখন তারা মাথা উঁচু করে দেখতে পাবে, পবিত্র নামের অধিকারী, মহান আল্লাহ তাআলা ওপর থেকে আগমন করেছেন। তিনি বলবেন, হে জান্নাতবাসীগণ!



ﺳَﻠَﺎﻡٌ ﻗَﻮْﻟًﺎ ﻣِﻦْ ﺭَﺏٍّ ﺭَﺣِﻴﻢٍ ﴿ﻳﺲ :৫৮ ﴾



"করুনাময় রবের পক্ষ থেকে তোমাদের প্রতি সালাম।"[১১৫]
তাদের পক্ষ থেকে এ সালামের একমাত্র যথাযথ উত্তর হচ্ছে :



ﺍﻟﻠﻬﻢ ﺍﻧﺖ ﺍﻟﺴﻼﻡ ﻭﻣﻨﻚ ﺍﻟﺴﻼﻡ ﺗﺒﺎﺭﻛﺖ ﻳﺎ ﺫﺍ ﺍﻟﺠﻼﻝ ﻭﺍﻹﻛﺮﻡ



"হে আল্লাহ! তুমি-ই সালাম, শান্তি তোমার পক্ষ থেকে-ই, তুমি-ই মর্যাদার অধিপতি, হে সম্মান ও ইজ্জতের মালিক।"



অতঃপর আল্লাহ তাআলা তাদের জন্য বিকশিত হবেন ও তাদের উদ্দেশ্যে হাসবেন এবং বলবেন : হে জান্নাতীগণ, এর পর তারা সর্বপ্রথম শ্রবন করবে : আমার ঐ বান্দারা কোথায়, যারা আমাকে না দেখে আমার অনুকরণ করেছে? এটা হচ্ছে ইয়াওমুল মাজীদ, তারা আমার কাছে প্রার্থনা করুক। তখন তারা একবাক্যে বলবে : আমরা আপনার ওপর সন্তুষ্ট, আপনিও আমাদের ওপর সন্তুষ্ট হয়ে যান। তিনি বলবেন : হে জান্নাতবাসীগণ, যদি আমি তোমাদের উপর সন্তুষ্ট না হতাম, আমার জান্নাতে তোমাদের স্থান দিতাম না। তোমরা আমার কাছে চাও। তখন তারা একবাক্যে বলবে : আপনার চেহারার দর্শন দিন, আমরা তাতে দৃষ্টি দিব। অতঃপর আল্লাহ তাআলা পর্দাসমূহ উত্তোলন করবেন এবং তাদের জন্য বিকশিত হবেন। যার ফলে নূরের ঝলকে সকলে বেহুশ হয়ে যাবে। আল্লাহর পক্ষ থেকে যদি এ সিদ্ধান্ত না থাকত যে, তারা জ্বলবে না, তবে অবশ্যই তারা জ্বলে যেত। তাদের মধ্যে এমন কেউ থাকবে না যার মুখোমুখি আল্লাহ হবেন না। এমনকি তাদের কাউকে লক্ষ্য করে বলবেন : হে অমুক, তোমার কি স্মরণে পরে অমুক, অমুক দিনের কথা? এভাবে তার দুনিয়ার বিচ্যুতি ও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ সম্পর্কে অবহিত করবেন। আর সে বলবে : হে আমার রব, তুমি কি আমাকে মাফ করনি? তিনি বলবেন : অবশ্যই। আমার ক্ষমার কারণে-ই তুমি তোমার এ মঞ্জিলে পৌঁছতে সক্ষম হয়েছ। আহ! কত মধুর হবে সে দিন কর্ণসমূহের স্বাদ! কত চমৎকার হবে সে দিন চক্ষ্যুসমূহের শীতলতা! এরশাদ হচ্ছে :



ﻭُﺟُﻮﻩٌ ﻳَﻮْﻣَﺌِﺬٍ ﻧَﺎﺿِﺮَﺓٌ . ﺇِﻟَﻰ ﺭَﺑِّﻬَﺎ ﻧَﺎﻇِﺮَﺓٌ ﴿ﺍﻟﻘﻴﺎﻣﺔ :২২-২৩ ﴾



"সে দিন চেহারাসমূহ হবে উজ্জল। তার রবের দিকে চেয়ে থাকবে।"[১১৬]

হে মুমিনগণ!


ﻟِﻤِﺜْﻞِ ﻫَﺬَﺍ ﻓَﻠْﻴَﻌْﻤَﻞِ ﺍﻟْﻌَﺎﻣِﻠُﻮﻥَ ﴿ﺍﻟﻤﻄﻔﻔﻴﻦ :৬১ ﴾



"এমন সাফল্যের জন্য-ই, আমালকারীদের আমল করা উচিত।"[১১৭]



ﻭَﻓِﻲ ﺫَﻟِﻚَ ﻓَﻠْﻴَﺘَﻨَﺎﻓَﺲِ ﺍﻟْﻤُﺘَﻨَﺎﻓِﺴُﻮﻥَ ﴿ﺍﻟﻤﻄﻔﻔﻴﻦ :২৬ ﴾



"এতেই প্রতিযোগিদের প্রতিযোগিতা করা উচিত।"[১১৮]


ﺃﻻ ﺇﻥ ﺳﻠﻌﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻏﺎﻟﻴﺔ ﺇﻻ ﺇﻥ ﺳﻠﻌﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﺠﻨﺔ . ‏( ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ ﻭﺍﻟﺤﺎﻛﻢ )



"জেনে রেখ! আল্লাহর পণ্য খুব দাবি। জেনে রেখ! আল্লাহর পণ্য জান্নাত।"[১১৯]



ﻳﺎ ﺳﻠﻌﺔ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﻟﺴﺖ ﺭﺧﻴﺼﺔ ু ﺑﻞ ﺃﻧﺖ ﻏﺎﻟﻴﺔ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻜﺴﻼﻥ
ﻳﺎ ﺳﻠﻌﺔ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﻟﻴﺲ ﻳﻨﺎﻟﻬﺎ ু ﻓﻲ ﺍﻷﻟﻒ ﺇﻻ ﻭﺍﺣﺪ ﻻ ﺍﺛﻨﺎﻥ
ﻳﺎﺳﻠﻌﺔ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﻣﺎ ﺫﺍ ﻛﻔﺆﻫﺎ ু ﺇﻻ ﺃﻭﻟﻮ ﺍﻟﺘﻘﻮﻯ ﻗﺒﻞ ﺍﻟﻤﻮﺕ ﺫﻭ ﺇﻣﻜﺎﻥ
ﻟﻜﻨﻬﺎ ﺣﺠﺒﺖ ﺑﻜﻞ ﻛﺮﻳﻬﺔ ু ﻟﻴﺼﺪ ﻋﻨﻬﺎ ﺍﻟﻤﺒﻄﻞ ﺍﻟﻤﺘﻮﺍﻧﻲ
ﻭﺗﻨﺎﻟﻬﺎ ﺍﻟﻬﻤﻢ ﺍﻟﺘﻲ ﺗﺴﻤﻮ ু ﺇﻟﻰ ﺭﺏ ﺍﻟﻌﻼ ﺑﻤﺸﻴﺔ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ



হে রহমানের পণ্য তুমি সস্তা নও। বরং, তুমি অলসদের জন্য অসাধ্য।
হে রহমানের পণ্য, তোমাকে পাবে; হাজারে একজন, দুই জনও নয়।
হে রহমানের পণ্য, তোমার বিনিময় কি? মৃত্যুর আগে মুত্তাকী ব্যতীত।
তবে, তা আবৃত সবত্যাগ দিয়ে, যাতে অলস-অকর্মরা তা থেকে দূরে থাকে।
তার নাগাল পাবে অদম্য স্পৃহা, যা মহান আল্লাহ মুখি, আল্লাহর ইচ্ছায়।



জান্নাত ইমান ও তাকওয়া হিসেবে বিভিন্ন স্তরে বিভক্ত। এরশাদ হচেছ:


ﺍﻧْﻈُﺮْ ﻛَﻴْﻒَ ﻓَﻀَّﻠْﻨَﺎ ﺑَﻌْﻀَﻬُﻢْ ﻋَﻠَﻰ ﺑَﻌْﺾٍ ﻭَﻟَﻠْﺂَﺧِﺮَﺓُ ﺃَﻛْﺒَﺮُ ﺩَﺭَﺟَﺎﺕٍ ﻭَﺃَﻛْﺒَﺮُ ﺗَﻔْﻀِﻴﻠًﺎ ﴿ﺍﻹﺳﺮﺍﺀ :২১ ﴾


"দেখ কিভাবে আমি তাদের কতেককে কতেকের ওপর শ্রেষ্টত্ব দিয়েছি। তবে মর্তবা ও ফযীলতের দিক থেকে আখেরাত-ই শ্রেষ্ট।"[১২০]



সর্ব শেষ যে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে, তার ঘটনাটি নিম্নরূপ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :



ﺁﺧﺮ ﻣﻦ ﻳﺪﺧﻞ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﺭﺟﻞ ........ ﻓﻴﻘﻮﻝ ﺍ ﺃﻋﻄﻲ ﺃﺣﺪ ﻣﺜﻞ ﻣﺎ ﺃﻋﻄﻴﺖ . ‏( ﻣﺴﻠﻢ )



সর্ব শেষ যে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে, সে একজন পুরুষ। কখনো সে হাটবে, কখনো উপুড় হয়ে চলবে, কখনো আগুন তাকে ঝলসে দিবে। যখন এ পথ অতিক্রম করে সামনে চলে যাবে, তখন সে তার দিকে ফিরে বলবে : বরকতময় সে আল্লাহ, যিনি আমাকে তোমার থেকে মুক্তি দিয়েছে। আল্লাহ আমাকে এমন জিনিস দান করেছেন, যা আগে-পরের কাউকে তিনি দান করেননি। অতঃপর তার জন্য একটি বৃক্ষ উম্মুক্ত করা হবে। সে বলবে, হে আল্লাহ! এ বৃক্ষের কাছে নিয়ে যাও, যাতে এর ছায়াতলে আশ্রয় নিতে পারি, এর পানি পান করতে পারি। আল্লাহ বলবেন : হে বনি আদম, আমি যদি তোমাকে এটা প্রদান করি, তুমি নিশ্চয় আরেকটি প্রার্থনা করবে। সে বলবে : না, হে আমার রব। সে এর জন্য ওয়াদাও করবে। আল্লাহ বার বার তার অপরাগতা গ্রহণ করবেন। কারণ, সে এমন জিনিস দেখবে যার উপর তার ধৈর্যধারণ সম্ভব হবে না। অতঃপর আল্লাহ তার কাছে নিয়ে যাবেন, সে তার ছায়ায় আশ্রয় নিবে, তার পানি পান করবে। অতঃপর আগের চেয়ে উত্তম আরেকটি বৃক্ষ তার জন্য উম্মুক্ত করা হবে। তখন সে বলবে: হে আমার রব! এ বৃক্ষের কাছে নিয়ে যাও, এর ছায়াতলে আশ্রয় নিব, এর পানি পান করব। এ ছাড়া আর কিছু প্রার্থনা করব না। তখন আল্লাহ তাকে মনে করিয়ে দিবেন : হে বনি আদম, তুমি কি আমার সাথে ওয়াদা করনি যে, আর কিছু প্রার্থনা করবে না? এর কাছে যেতে দিলে তুমি আরো অন্য কিছু প্রার্থনা করবে। অতঃপর সে প্রার্থনা না করার ওয়াদা করবে। আল্লাহ তার অপরাগতা কবুল করবেন, কারণ সে এমন জিনিস দেখবে, যার ওপর তার ধৈর্যধারণ সম্ভব হবে না। অতঃপর তাকে সে গাছের নিকটবর্তী করা হবে। সে তার ছায়াতলে আশ্রয় নিবে, তার পানি পান করবে। অতঃপর জান্নাতের দরজার নিকট আরেকটি বৃক্ষ উম্মুক্ত করা করা হবে, যা আগের দু'বৃক্ষ থেকেও উত্তম। সে বলবে : হে আল্লাহ! এ বৃক্ষের নিকটবর্তী কর, আমি তার ছায়াতলে আশ্রয় নিব, তার পানি পান করব, আর কিছু প্রার্থনা করব না। তিনি বলবেন : হে বনি আদম, তুমি আর কিছু প্রার্থনা না করার ওয়াদা করনি? সে বলবে, হ্যাঁ, তবে, এটাই শেষ, আর কিছু চাইব না। আল্লাহ তার অপরাগতা কবুল করবেন। কারণ, সে এমন জিনিস দেখবে, যার ওপর ধৈর্যধারণ করা তার পক্ষে সম্ভব হবে না। আল্লাহ তার নিকটবর্তী করবেন। যখন তার নিকটবর্তী হবে, তখন সে জান্নাতবাসীদের আওয়াজ শুনতে পাবে। সে বলবে : হে আমার রব! আমাকে এতে প্রবেশ করাও। আল্লাহ বলবেন : হে বনি আদম, তোমার চাওয়া আর শেষ হবে না। তোমাকে দুনিয়া এবং এর সাথে দুনিয়ার সমতুল্য আরো প্রদান করব, এতে কি তুমি সন্তুষ্ট হবে? সে বলবে : হে আল্লাহ, তুমি দুজাহানের রব, তা সত্বেও তুমি আমার সাথে উপহাস করছ!? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ গঠনা বলতে বলতে হেসে দিলেন। সাহাবারা তাকে বলল : হে আল্লাহর রাসূল! কেন হাসছেন? তিনি বললেন : আল্লাহর হাসি থেকে আমার হাসি চলে এসেছে। যখন সে বলবে : আপনি দু'জাহানের মালিক হওয়া সত্বেও আমার সাথে উপহাস করছেন? তখন আল্লাহ বলবেন : আমি তোমার সাথে উপহাস করছি না; তবে কি, আমি যা-চাই তা-ই করতে পারি। আরো প্রার্থনা করার জন্য আল্লাহ তাকে বললেন : এটা চাও, ওটা চাও। যখন তার সব চাওয়া শেষ হয়ে যাবে। তখন আল্লাহ বলবেন : এ সব তোমাকে দেয়া হল এবং এর সাথে আরো দশগুন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : অতঃপর সে তার ঘরে প্রবেশ করবে এবং সাথে সাথে তার স্ত্রী হিসেবে দু'জন হুরও প্রবেশ করবে। তারা তাকে বলবে : সমস্ত প্রসংশা সে আল্লাহর, যিনি আপনাকে আমাদের জন্য জিবীত করেছেন এবং আমাদেরকে আপনার জন্য জিবীত করেছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : সে বলবে : আমাকে যা দেয়া হয়েছে, তার মত কাউকে দেয়া হয়নি।"[১২১]


হে মুসলিম ভাই! আল্লাহর আনুগত্যের জন্য হারাম ও নিষিদ্ধ বস্তু থেকে বিরত থাক, হে সৌভাগ্যবান ব্যক্তি! আল্লাহর কালাম থেকে সুসংবাদ নাও। এরশাদ হচ্ছে :


ﻭَﺃَﻣَّﺎ ﻣَﻦْ ﺧَﺎﻑَ ﻣَﻘَﺎﻡَ ﺭَﺑِّﻪِ ﻭَﻧَﻬَﻰ ﺍﻟﻨَّﻔْﺲَ ﻋَﻦِ ﺍﻟْﻬَﻮَﻯ . ﻓَﺈِﻥَّ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔَ ﻫِﻲَ ﺍﻟْﻤَﺄْﻭَﻯ ﴿ﺍﻟﻨﺎﺯﻋﺎﺕ :৪০-৪১ ﴾


"পক্ষান্তারে যে ব্যক্তি তার রবের সামনে দণ্ডায়মান হওয়াকে ভয় করেছে এবং খেয়াল খুশী থেকে নিজেকে নিবৃত্ত রেখেছে, তার ঠিকানা হবে জান্নাত।"[১২২]



নেশা ও মস্তিস্ক বিকৃতকারী হারাম বস্তু থেকে নিজকে হেফাজতকারী হে সৌভাগ্যবান ব্যক্তি। তুমি আল্লাহর কালাম থেকে সুসংবাদ নাও। এরশাদ হচ্ছে :


ﻳَﺘَﻨَﺎﺯَﻋُﻮﻥَ ﻓِﻴﻬَﺎ ﻛَﺄْﺳًﺎ ﻟَﺎ ﻟَﻐْﻮٌ ﻓِﻴﻬَﺎ ﻭَﻟَﺎ ﺗَﺄْﺛِﻴﻢٌ ﴿ﺍﻟﻄﻮﺭ :২৩ ﴾



"সেখানে তারা গ্লাস নিয়ে টানা-টানি করবে। সেখানে কোন বাহুল্য এবং গোনাহ নেই।"[১২৩]


নিজ লজ্জাস্থান হেফাজতকারী, বাজারের বিষিদ্ধ বস্তু, টেলিভিশন ও কুরুচিপূর্ণ ম্যাগাজিন থেকে দৃষ্টি অবনতকারী, হে আল্লাহর বান্দা! তোমার জন্য সুসংবাদ। সুভসংবাদ জান্নাতের : সেখানে হুর তোমার জন্য অপেক্ষা করছে। তারা সৎ চরিত্রের অধিকারী, বাহ্যিক-আভ্যন্তরিণ রূপে মণ্ডিত সুন্দরী নারী, তারা স্বামী ব্যতীত অন্য কারো দিকে তাকায় না। তারা শুধু স্বামীর অপেক্ষায় তাবুতে অবস্থান করছে। আল্লাহ তাআলা বিশেষভাবে তাদের সৃষ্টি করেছেন। তারা সমবয়সী, তাদের যৌবন নষ্ট হবে না, তাদের সৌন্দর্যে ভাটা পড়বে না। তারা চিরকুমারী। ইতোপূর্বে তাদের কেউ স্পর্শ করেনি। তারা মাসিক ঋতু ও ঘৃণীত বিষয় থেকে চির পবিত্র। তারা প্রবাল ও পদ্মারাগ সাদৃশ্য নারী, ঝিনুকের অভ্যন্তরে বিদ্যমান মুক্তার মত পরিস্কার। তারা আবৃত মুতির মত।


ﻛﻦ ﻣﺒﻐﻀﺎ ﻟﻠﺨﺎﺋﻨﺎﺕ ﻟﺤﺒﻬﺎ ু ﻓﺘﻌﻈﻰ ﺑﻬﺎ ﻣﻦ ﺩﻭﻧﻬﻦ ﻭﺗﻨﻌﻢ


তাদের মহব্বতে বাধা সৃষ্টিকারী নারীদের সাথে বিদ্বেষ পোষণ কর;

তবে, তুমি অন্যদের বিপরীতে তাদের নিয়ে ভাগ্যবান ও নেয়ামত প্রাপ্ত হতে পারবে।


তাদের কেউ যদি দুনিয়াতে উঁকি দিত, তবে মহাশুন্য নূরে ভরে যেত, তাদের ঘ্রাণে মৌ মৌ করত সারা পৃথিবী।


ﻭﻟﺨﻤﺎﺭﻫﺎ ﻋﻠﻰ ﺭﺃﺳﻬﺎ ﺧﻴﺮ ﻣﻦ ﺍﻟﺪﻧﻴﺎ ﻭﻣﺎ ﻓﻴﻬﺎ . ‏( ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ )


"তাদের মাথার উড়না দুনিয়া ও তার ভেতর বিদ্যমান সমস্ত জিনিস থেকে উত্তম।[১২৪]


ﻓﻴﺎ ﺧﺎﻃﺐ ﺍﻟﺤﺴﻨﺎﺀ ﺇﻥ ﻛﻨﺖ ﺭﺍﻏﺒﺎ ু ﻓﻬﺬﺍ ﺯﻣﺎﻥ ﺍﻟﻤﻬﺮ ﻓﻬﻮ ﺍﻟﻤﻘﺪﻡ

হে সুন্দরী নারীদের প্রত্যাশী, যদি তোমার আগ্রহ থাকে, তবে এটা হচ্ছে মহর আদায় করার সময়, এবং এটা অগ্রিম প্রদান করতে হয়।



গান বাদ্য থেকে বিরত থাক, হে ভাগ্যবান! তোমার জন্য সুসংবাদ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :

ﺇﻥ ﺃﺯﻭﺍﺝ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﻟﻴﻐﻨﻴﻦ ﺃﺯﻭﺍﺟﻬﻦ ﺑﺄﺣﺴﻦ ﺃﺻﻮﺍﺕ ﻣﺎ ﺳﻤﻌﻬﺎ ﺃﺣﺪ ﻗﻂ . ‏( ﺍﻟﻄﺒﺮﺍﻧﻲ )


জান্নাতবাসীদের স্ত্রীগণ এত সুন্দর আওয়াজে গান পরিবেশন করবে যা কেউ শুনেনি।[১২৫]


তাদের গান :

ﻧﺤﻦ ﺍﻟﺨﻴﺮﺍﺕ ﺍﻟﺤﺴﺎﻥ , ﺃﺯﻭﺍﺝ ﻗﻮﻡ ﻛﺮﺍﻡ . ﻳﻨﻈﺮﻥ ﻳﻘﺮﺓ ﺃﻋﻴﺎﻥ , ﻧﺤﻦ ﺍﻟﺨﺎﻟﺪﺍﺕ ﻓﻼ ﻳﻤﺘﻦ , ﻧﺤﻦ ﺍﻵﻣﻨﺎﺕ ﻓﻼ ﻳﺨﻔﻦ , ﻧﺤﻦ ﺍﻟﻤﻘﻴﻤﺎﺕ ﻓﻼ ﻳﻀﻌﻦ , ﻧﺤﻦ ﺍﻟﺨﻴﺮﺍﺕ ﺍﻟﺤﺴﺎﻥ . ‏( ﺻﺤﻴﺢ ﺍﻟﺠﺎﻣﻊ ﺍﻟﺼﻐﻴﺮ)

"আমরা সুন্দরী, কল্যাণ আর কল্যাণ। সম্মানীত ব্যক্তিদের স্ত্রী। তারা বড় বড় চোখ দিয়ে আনন্দ ভরে তাকাবে। আমরা চিরস্থায়ী, কখনো মৃত্যু বরণ করব না। আমরা নিরাপদ, কখনো ভীত হব না, আমরা চিরস্থায়ী, ধ্বংস হব না। আমরা কল্যাণ, আমরা সুন্দরী।"[১২৬]



ﻳﺎ ﺧﺎﻃﺐ ﺍﻟﺤﻮﺭ ﺍﻟﺤﺴﺎﻥ ﻭﻃﺎﻟﺒﺎ ু ﻟﻮ ﺻﺎﻟﻬﻦ ﺑﺠﻨﺔ ﺍﻟﺤﻴﻮﺍﻥ
ﻟﻮ ﻛﻨﺖ ﺗﺪﺭﻱ ﻣﻦ ﺧﻄﺒﺖ ﻭﻣﻦ ﻃﻠﺒﺖ ু ﺑﺬﻟﺖ ﻣﺎ ﺗﺤﻮﻱ ﻣﻦ ﺍﻷﺛﻤﺎﻥ
ﺃﻭ ﻣﺎ ﺳﻤﻌﺖ ﺳﻤﺎﻋﻬﻢ ﻓﻴﻬﺎ ﻏﻨﺎﺀ ু ﺍﻟﺤﻮﺭ ﺍﻷﺻﻮﺍﺕ ﻭﺍﻷﻟﺤﺎﻥ
ﻧﺰﻩ ﺳﻤﺎﻋﻚ ﺃﻥ ﺃﺭﺩﺕ ﺳﻤﺎﻉ ﺫﻳﺎﻙ ু ﺍﻟﻐﻨﺎﺀ ﻋﻦ ﻫﺬﻩ ﺍﻷﻟﺤﺎﻥ
ﻻ ﺗﺆﺛﺮ ﺍﻷﺩﻧﻰ ﻋﻠﻰ ﺍﻷﻋﻠﻰ ﻓﺘﺤﺮﻡ ু ﺫﺍ ﻭﺫﺍ , ﻳﺎ ﺫﻟﺔ ﺍﻟﺤﺮﻣﺎﻥ
ﺣﺐ ﺍﻟﻜﺘﺎﺏ ﻭﺣﺐ ﺃﻟﺤﺎﻥ ﺍﻟﻐﻨﺎ ু ﻓﻲ ﻗﻠﺐ ﻋﺒﺪ ﻟﻴﺲ ﻳﺠﺘﻤﻌﺎﻥ



হে সুন্দরী হুরদের প্রস্তাবকারী ও অন্বেষণকারী, তাদের মিলন হবে স্থায়ী জান্নাতে।
যাদের প্রস্তাব করছ, যাদের অন্বেষণ করছ, তাদের যদি জানতে, তবে তোমার মালিকানাধীন সব ব্যয় করে দেবে।
তুমি কি তাদের আওয়াজ শোননি, তাতে রয়েছে হুরদের গান, আয়াজ ও তরঙ্গ।
যদি তুমি তা শোনতে চাও, তবে এ সমস্ত গান থেকে তোমার কান পবিত্র কর।
উত্তমের ওপর অধমকে প্রাধান্য দিও না, তবে এ-থেকে ও-থেকে বঞ্চিত হবে। ছি! বঞ্চিত হওয়ার অপমান।
কুরআনের মহব্বত আর এ দুনিয়ার গানের মহব্বত এক অন্তরে জমা হতে পারে না।
বাজারী নিষিদ্ধ পণ্য থেকে নিজকে ও নিজ পরিবারকে বিরত রাখ, হে ভাগ্যবান ব্যক্তি, তোমার জন্য সুসংবাদ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :



ﺇﻥ ﻓﻲ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﺳﻮﻗﺎ ﻳﺄﺗﻴﻬﺎ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﻛﻞ ﺟﻤﻌﺔ , ﻓﻴﻬﺎ ﻛﺜﺒﺎﻥ ﺍﻟﻤﺴﻚ , ﻓﺘﻬﺐ ﺭﻳﺢ ﺍﻟﺸﻤﺎﻝ ﻓﺘﺤﺜﻮﺍ ﻓﻲ ﻭﺟﻮﻫﻬﻢ ﻭﺛﻴﺎﺑﻬﻢ ﻓﻴﺰﺩﺍﺩﻭﻥ ﺣﺴﻨﺎ ﻭﺟﻤﺎﻻ , ﻓﻴﻘﻮﻝ ﻟﻬﻢ ﺃﻫﻠﻮﻫﻢ : ﻭﺍﻟﻠﻪ ﻟﻘﺪ ﺃﺯﺩﺩﺗﻢ ﺑﻌﺪﻧﺎ ﺣﺴﻨﺎ ﻭﺟﻤﺎﻻ , ﻓﻴﻘﻮﻟﻮﻥ ﻭﺃﻧﺘﻢ ﻭﺍﻟﻠﻪ ﻟﻘﺪ ﺍﺯﺩﺩﺗﻢ ﺑﻌﺪﻧﺎ ﺟﺴﻨﺎ ﻭﺟﻤﺎﻻ . ‏( ﻣﺴﻠﻢ )


"জান্নাতের ভেতর একটি বাজার আছে, যেখানে জান্নাতিরা প্রতি জুমায় উপস্থিত হয়। সেখানে রয়েছে সুগন্ধির স্তুপ। উত্তরের বাতাস তাদের কাপড় আর চেহারায় পরশ দিয়ে বয়ে যাবে, যার ফলে তাদের সৌন্দর্য ও শ্রীর বৃদ্ধি ঘটবে। তাদের স্ত্রীগণ বলবে : আল্লাহর শপথ! আমাদের চোখের আড়ালে তোমাদের সৌর্ন্দয ও শ্রীর বৃদ্ধি ঘটেছে।"[১২৭]
হে আল্লাহর বান্দাগণ! জান্নাত অন্বেষণকারীগণ অন্যদের থেকে আলাদা। রাতে মানুষ যখন ঘুমায়, তারা তখন নামাজ পড়ে। মানুষ যখন দিনে পানাহার করে, তারা তখন রোযা রাখে। মানুষ যখন জমা করে, তারা তখন সদকা করে। মানুষ যখন ভীরুতা প্রদর্শন করে, তারা আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ করে। তারা-ই আল্লাহর প্রকৃত বান্দা! তারা আল্লাহর হুকুম যথাযথ পালন করছে, তার অঙ্গিকার রক্ষা করছে। তারা আল্লাহর ওপর ইমান রাখে, তার সাথে শিরক করে না। তারা আল্লাহর ভয়ে ভীত। আল্লাহর হুকুম মোতাবেক নামাজ কায়েম করে, যাকাত প্রদান করে, প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে সদকা করে। তারা সাধ্যমত এবাদত ও সৎ কর্ম সম্পাদন করে। তারা আল্লাহর ভয়ে কম্পিত থাকে। তারা কবীরা গুনাহ ও অশ্লীলতা থেকে বিরত থাকে। আল্লাহর স্মরণে তাদের অন্তর কেঁপে উঠে। কুরআনের তেলাওয়াত শোনে তাদের ইমান বৃদ্ধি পায়। তারা নিজ রব, আল্লাহর ওপর ভরসা করে, একান্তভাবে নামাজ আদায় করে, বেহুদা কথাবার্তা থেকে বিরত থাকে, যাকাত প্রদান করে। তারা নিজদের লজ্জাস্থান হেফাজত করে। তারা আমানত ও ওয়াদা রক্ষা করে। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পানাহার ত্যাগ করে ও জাগ্রত থাকে। তারা আখেরাতের সফরের জন্য পণ্য সংগ্রহ করে, আল্লাহর ভয়ে তাদের অশ্রু ঝড়ে। তাদের নির্জনতা উপদেশ স্বরূপ। অধিক তাওবার ফলে, তাদের গুনাহ মিটে গেছে। পবিত্র সে আল্লাহ যিনি তাদের মনোনিত করেছেন। তারা-ই সত্বিকারার্থে আল্লাহর বান্দা। তাদের ভেতর রয়েছে ইনসাফ প্রতিষ্ঠাকারী বাদশাহ, সংযমী যুবক, নিষ্ঠাবান শহীদ, ধনাঢ্য দানবীর, ধৈর্যশীল পরহেযগার, ছিন্নবস্ত্র পরিহিত সাধক, যাদেরকে সাধারণ মানুষ গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়। তারা যা শপথ করে, আল্লাহ তা পূরণ করেন। তাদের ভেতর রয়েছে একমাত্র আল্লাহর জন্য মহব্বতকারী, যে মহব্বত বংশগত আত্মীয়তার জন্য নয়, পার্থিব কোন স্বার্থের জন্যও নয়। তাদের ভেতর আছে হাফেজে কুরআন। তারা সত্যের পথে থেকেও ঝগড়া-বিবাদ থেকে দূরে অবস্থান করে। তারা হাসি-ঠাট্টার ছলে মিথ্যা বলে না। তারা উত্তম চরিত্রের অধিকারী, গোস্বা হজম করে, মানুষদের ক্ষমা করে। এরশাদ হচ্ছে :



ﻭَﺍﻟﻠَّﻪُ ﻳُﺤِﺐُّ ﺍﻟْﻤُﺤْﺴِﻨِﻴﻦَ ﴿ﺁﻝ ﻋﻤﺮﺍﻥ :১৩৪ ﴾


"আল্লাহ সৎ কর্মশীলদের ভাল বাসেন।"[১২৮]
তাদের ভেতর রয়েছে সে সব নারী, যারা আল্লাহর সমীপে আত্মসমর্পন করে, পরকালে বিশ্বাস রাখে; নেক কাজ, আনুগত্য, তওবা ও এবাদত করে; আল্লাহ যা হেফাজত করতে বলেছেন, লোকচক্ষুর অন্তরালেও তারা তা হেফাজত করে; তাদের ভেতর রয়েছে সে নারীও, যে অন্নহীনদের অন্ন দেয়, সালামের প্রসার করে, আত্মীযতার সম্পর্ক অটুট রাখে এবং রাতে নামাজ পড়ে, যখন মানুষ ঘুমায়; তাদের ভেতর আরো আছে সে নারী, যে আল্লাহর সামনে দণ্ডায়মান হওয়াকে ভয় করে, নিজকে কুপ্রবৃত্ত থেকে বিরত রাখে। তারা সকলেই আল্লাহর আনুগত্য ও তাকে অধিক স্মরণকারী নারী। এরশাদ হচ্ছে :


ﻣَﻦْ ﺧَﺸِﻲَ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﻦَ ﺑِﺎﻟْﻐَﻴْﺐِ ﻭَﺟَﺎﺀَ ﺑِﻘَﻠْﺐٍ ﻣُﻨِﻴﺐٍ ﴿ﻕ :৩৩ ﴾

"যে না দেখে দয়াময় আল্লাহকে ভয় করেছে ও বিনীত অন্তর নিয়ে উপস্থিত হয়েছে।"[১২৯]
আরো আছে সে চক্ষুধারী, যে আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করেছে, আল্লাহর রাস্তায় পাহারারত নিন্দ্রহীন রাত যাপন করেছে। তাদের ভেতর আরো আছে যে, উত্তম পদ্ধতিতে আল্লাহর দিকে আহবান করেছে, সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করেছে, সব সময় মানুষের জন্য কল্যাণ কামনা করে এবং আল্লাহর জন্য মানুষদের ভালোবাসে। তারাই জান্নাতী, ইমানদার, ধৈর্যশীল, সৎ কর্মশীল ও সংযমী।


অতএব, যে ব্যক্তি এ বিশাল জান্নাত কামনা করে, সে কি তার বিনিময়ে জান, মাল, সহায়-সম্পদ, কিংবা সামান্য সময়কে বেশী মনে করতে পারে? কখনও না। বরং কারো যদি হাজার প্রাণ থাকে, আর সে হাজার যুগ পায়, যার প্রতিটি যুগ দুনিয়ার সমান, তা সব কিছু যদি সে এ উদ্দেশ্যে ব্যয় করে দেয়, তাও কম হবে। কম না হওয়ার কারণ কি? যেখানে সমগ্র দুনিয়া-ই সামান্য। আর আমরা এ সামান্য থেকে সামান্যের মালিক।

আল্লাহর রাসূল বলেন:


ﻟﻮ ﺃﻥ ﺭﺟﻼ ﻳﺠﺮ ﻋﻠﻰ ﻭﺟﻬﻪ ﻣﻦ ﻳﻮﻡ ﻭﻟﺪ ﺇﻟﻰ ﻳﻮﻡ ﻳﻤﻮﺕ ﻫﺮﻣﺎ ﻓﻲ ﻃﺎﻋﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻟﺤﻘﺮﻩ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﻘﻴﺎﻣﺔ . ‏( ﺃﺣﻤﺪ )


"যদি কোন ব্যক্তি জন্ম থেকে বার্ধক্য অবস্থায় মৃত্যু পর্যন্ত আল্লাহর সেজদায় অতিবাহিত করে, কিয়ামতের দিন তাও সে খুব সামান্য জ্ঞান করবে।"[১৩০]
লক্ষ্য কর! কেউ প্রস্তুত আছ কি? তবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবাদের ন্যায় সমস্বরে উত্তর দাও : "ইনশা-আল্লাহ আমরা প্রস্তুত আছি।" আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে আহ্বানকারী আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :


ﻛﻞ ﺃﻣﺘﻲ ﻳﺪﺧﻠﻮﻥ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﺇﻻ ﻣﻦ ﺃﺑﻰ، ﻗﺎﻟﻮﺍ ﻣﻦ ﻳﺄﺑﻰ ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ؟ ﻗﺎﻝ ﻣﻦ ﺃﻃﺎﻋﻨﻲ ﺩﺧﻞ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﻭﻣﻦ ﻋﺼﺎﻧﻲ ﻓﻘﺪ ﺃﺑﻰ . ‏( ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ )


"আমার প্রত্যেক উম্মত জান্নাতে প্রবেশ করবে, তবে যে অস্বীকার করেছে। তারা বলল : কে অস্বীকার করবে, হে আল্লাহর রাসূল? বললেন : যে আমার অনুসরণ করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে; যে আমার অবাধ্য হবে, সে-ই অস্বীকার করল।"[১৩১]


এ হলো জান্নাত। এ হলো তা অর্জন করার পদ্ধতি। এ জান্নাতকে যে স্বপ্নের মত দুনিয়ার জীবনের বিনিময়ে বিক্রি করে দেয়, তার ন্যায় ধোকায় পতিত আর কে হতে পারে? আশ্চর্য! জান্নাতুল ফেরদাউস বিক্রি করে, ঘৃনীত দুনিয়ার বিনিময়ে! যে দুনিয়া সামান্য হাসালে, প্রচুর কাঁদায়। ক্ষণিকের আনন্দের বিনিময়ে দীর্ঘকাল দুঃখে ভোগায়। জান্নাতের বাড়ি-ঘরের বিনিময়ে সংকীর্ণ ও ক্ষণস্থায়ী দুনিয়া ক্রয় করার চেয়ে কঠিন বোকামী আর কি হতে পারে? শত আফসোস! যে দিন তুমি আল্লাহর নেককার বান্দাদের মর্যাদা প্রত্যক্ষ্য করবে, চক্ষূশীতলকারী হাজার হাজার নেয়ামত প্রত্যক্ষ করবে, সে দিন তোমার কি হবে? সে দিন তুমি বুঝতে পারবে, কি হারিয়েছ, আর কি কামিয়েছ।


ﻓﺴﺮ ﻓﻲ ﺍﻟﻄﺮﻳﻖ ﺍﻟﻤﺴﺘﻘﻴﻢ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﻌﻼ ু ﺇﻟﻰ ﺍﻟﺼﺪﻕ ﻭﺍﻹﺧﻼﺹ ﻭﺍﻟﺒﺮ ﻭﺍﻟﺘﻘﻰ
ﻭﺇﻳﺎﻙ ﻭﺍﻟﺪﻧﻴﺎ ﺍﻟﻐﺮﻭﺭﺓ ﺇﻧﻬﺎ ু ﻣﺘﺎﻉ ﻗﻠﻴﻞ ﻣﺎﻟﻬﺎ ﺃﺑﺪﺍ ﺑﻘﺎ
ﻭﺗﻠﻬﻴﻚ ﻋﻦ ﺟﻨﺎﺕ ﺧﻠﺪ ﻧﻌﻴﻤﻬﺎ ু ﻳﺪﻭﻡ ﻭﻳﺼﻔﻮ ﺣﺒﺬﺍ ﺫﺍﻙ ﻣﻠﺘﻘﻰ
ﻭﻓﻴﻬﺎ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﺮﺏ ﺍﻟﻜﺮﻳﻢ ﻭﻗﺮﺑﻪ ু ﻭﺭﺅﻳﺘﻪ ﺃﻛﺮﻡ ﺑﺬﻟﻚ ﻣﺮﺗﻘﻰ



তুমি সিরাতাল মুস্তাকীমে বিচরণ কর, অর্থাৎ সত্য, ইখলাস, কল্যাণ ও তাকওয়ার পথে।
খবরদার! ধোকার বস্তু দুনিয়া দ্বারা বিভ্রান্ত হয়ো না, এটা খুব সামান্য, যার নেই স্থায়ীত্ব।
সে তোমাকে স্থায়ী জান্নাত থেকে গাফেল করে দেবে, যার নেয়ামত স্থায়ী, পরিশুদ্ধ, কি চমৎকার! সে মিলন স্থান।
সেখানে সর্বদা আল্লাহর সন্তুষ্টি আর তার নৈকট্য বিদ্যমান থাকবে, তবে তার দর্শন-ই সব চেয়ে বেশী সম্মানের।


হায় আফসোস! আমরা ক্ষণস্থায়ী জীবন নিয়ে এতো ব্যস্ত, দুনিয়ার প্রতি এতো ধাবিত, যা দৃষ্টে মনে হয়, আমরা এখানের-ই স্থায়ী বাসিন্দা, কখনো শোনেনি সে জান্নাতের কথা, যা নেককার মুমিনদের জন্য তৈরি করা হয়েছে। কারণ, আমাদের আমল সামান্য, চেষ্টায় ত্রুটি, দুনিয়ার চাকচিক্য, প্রলাপ আর খেল তামাশায় বিভোর হয়ে আছি। ভুলে গেছি জান্নাত, হারিয়ে ফেলেছি তা অর্জনের আগ্রহ।

ﻓﻴﺎ ﺑﺎﺋﻌﺎ ﻫﺬﺍ ﺑﺒﺨﺲ ﻣﻌﺠﻞ - ﻛﺄﻧﻚ ﻻﺗﺪﺭﻱ ﺑﻠﻰ ﺳﻮﻑ ﺗﻌﻠﻢ
ﻓﺈﻥ ﻛﻨﺖ ﻻ ﺗﺪﺭﻱ ﻓﺘﻠﻚ ﻣﺼﻴﺒﺔ ু ﻭﺇﻥ ﻛﻨﺖ ﺗﺪﺭﻱ ﻓﻠﻤﺼﻴﺒﺔ ﺃﻋﻈﻢ


হে জান্নাত বিক্রিকারী, সামান্য বিনিময়ে; তুমি হয়তো এখনো জান না, তবে অচরইে জেনে যাবে।
যদি তুমি না জান তাও মুসিবত, আর যদি জান, তবে তা বড় মুসিবত।


আল্লাহকে ভয় কর, সামনে অগ্রসর হও, পরকালের প্রস্তুতি নাও, সৎ কাজ কর, আশা রাখ জান্নাতের। এরশাদ হচ্ছে :



ﻭَﺳَﺎﺭِﻋُﻮﺍ ﺇِﻟَﻰ ﻣَﻐْﻔِﺮَﺓٍ ﻣِﻦْ ﺭَﺑِّﻜُﻢْ ﻭَﺟَﻨَّﺔٍ ﻋَﺮْﺿُﻬَﺎ ﺍﻟﺴَّﻤَﻮَﺍﺕُ ﻭَﺍﻟْﺄَﺭْﺽُ ﺃُﻋِﺪَّﺕْ ﻟِﻠْﻤُﺘَّﻘِﻴﻦَ . ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳُﻨْﻔِﻘُﻮﻥَ ﻓِﻲ ﺍﻟﺴَّﺮَّﺍﺀِ ﻭَﺍﻟﻀَّﺮَّﺍﺀِ ﻭَﺍﻟْﻜَﺎﻇِﻤِﻴﻦَ ﺍﻟْﻐَﻴْﻆَ ﻭَﺍﻟْﻌَﺎﻓِﻴﻦَ ﻋَﻦِ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ ﻭَﺍﻟﻠَّﻪُ ﻳُﺤِﺐُّ ﺍﻟْﻤُﺤْﺴِﻨِﻴﻦَ . ﻭَﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺇِﺫَﺍ ﻓَﻌَﻠُﻮﺍ ﻓَﺎﺣِﺸَﺔً ﺃَﻭْ ﻇَﻠَﻤُﻮﺍ ﺃَﻧْﻔُﺴَﻬُﻢْ ﺫَﻛَﺮُﻭﺍ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻓَﺎﺳْﺘَﻐْﻔَﺮُﻭﺍ ﻟِﺬُﻧُﻮﺑِﻬِﻢْ ﻭَﻣَﻦْ ﻳَﻐْﻔِﺮُ ﺍﻟﺬُّﻧُﻮﺏَ ﺇِﻟَّﺎ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻭَﻟَﻢْ ﻳُﺼِﺮُّﻭﺍ ﻋَﻠَﻰ ﻣَﺎ ﻓَﻌَﻠُﻮﺍ ﻭَﻫُﻢْ ﻳَﻌْﻠَﻤُﻮﻥَ . ﺃُﻭﻟَﺌِﻚَ ﺟَﺰَﺍﺅُﻫُﻢْ ﻣَﻐْﻔِﺮَﺓٌ ﻣِﻦْ ﺭَﺑِّﻬِﻢْ ﻭَﺟَﻨَّﺎﺕٌ ﺗَﺠْﺮِﻱ ﻣِﻦْ ﺗَﺤْﺘِﻬَﺎ ﺍﻟْﺄَﻧْﻬَﺎﺭُ ﺧَﺎﻟِﺪِﻳﻦَ ﻓِﻴﻬَﺎ ﻭَﻧِﻌْﻢَ ﺃَﺟْﺮُ ﺍﻟْﻌَﺎﻣِﻠِﻴﻦَ ﴿ﺁﻝ ﻋﻤﺮﺍﻥ:১৩৩-১৩৬ ﴾



"তোমরা তোমাদের রবের ক্ষমা ও জান্নাতের দিকে ছুটে যাও। যার সীমানা ও প্রসস্ততা আসমান-জমিন। যা তৈরি করা হয়েছে মুত্তাকিনদের জন্য। যারা সুখে-দুঃখে সদকা করে, এবং যারা গোস্বা হজম করে, মানুষকে ক্ষমা করে; বস্তুত আল্লাহ সৎ কর্মশীলদের ভালোবাসেন। তারা যখন মন্দ কাজ করে অথবা নিজদের ওপর জুলুম করে, তখন তারা আল্লাকে স্মরণ করে, নিজ পাপের জন্য ক্ষমার প্রার্থনা করে; আল্লাহ ছাড়া কে তাদের পাপ ক্ষমা করবে? তারা জেনে-শোনে নিজের কৃত মন্দ কর্মে স্থীর থাকে না। তাদের প্রতিদান, তাদের রবের পক্ষ থেকে ক্ষমা ও জান্নাত; যার তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত হয় নরহসমূহ, সেখানে তারা অনন্তকাল থাকবে। কত চমৎকার! নেককার লোকদের প্রতিদান।"[১৩২]
হে আল্লাহ! আমরা তোমার সন্তুষ্টি আর জান্নাত চাই। তোমার গোস্বা আর জাহান্নাম থেকে পানাহ চাই। হে আল্লাহ! আমরা তোমার কাছে জান্নাত, জান্নাতি আমল এবং তার কথা ও কর্মের তওফিক চাই। হে আল্লাহ! আমরা তোমার কাছে জাহান্নাম, জাহান্নামী আমল এবং তার কথা ও কর্মে থেকে পানাহ চাই। হে আল্লাহ! চিরস্থায়ী ও চক্ষুশীতলকারী নেয়ামত চাই। হে আল্লাহ! তোমার চেহারায় দৃষ্টি দেয়ার স্বাদ আস্বাদন করতে চাই, তোমার সাক্ষাতের প্রেরণা চাই। হে আল্লাহ! তুমি কবুল কর। আমীন।



সমাপ্ত





_________________________________________________________________________________



[১] সাদ:৪৬
[২] আরাফ:৫১
[৩] ওয়াকেয়া:৭১-৭২
[৪] তওবা:৮১
[৫] বুখারী
[৬] বুখারী ও মুসলিম
[৭] ফাজর:২৩
[৮] মুরসালাত:৩২-৩৩
[৯] ফোরকান:১২
[১০] লাইল:১৪
[১১] মুদ্দাসিসর:৩৫-৩৬
[১২] তিরমিজী সহীহ
[১৩] তিরমিজী
[১৪] বুখারী-মুসলিম
[১৫] মুসীলম
[১৬] হুমাজাহ:৯
[১৭] নিসা:১৪৫
[১৮] হুদ:১১৯
[১৯] বুখারী
[২০] মুসলিম
[২১] তিরমিজী
[২২] দুখান:৩৫-৩৬
[২৩] আহমাদ, তিরমিজি, ইবনে মাজাহ
[২৪] ইব্রাহিম:১৫-১৭
[২৫] কাহাফ:২৯
[২৬] মুহাম্মদ:১৫
[২৭] ইব্রাহিম:৫০
[২৮] হজ:১৯
[২৯] হজ:১৯
[৩০] হা-ক্কাহ:৩২
[৩১] আল-কামার:৪৮
[৩২] রাহমান:৪১
[৩৩] মুমিনুন:১০৪
[৩৪] ফুরকান:১৪
[৩৫] মুলুক:১০
[৩৬] আরাফ:৪১
[৩৭] ফুরকান:৬৫
[৩৮] তওবা:৪৯
[৩৯] হজ:১৯-২২
[৪০] নিসা:৫৬
[৪১] নাবা:৩০
[৪২] গাফের:৪৯-৫০
[৪৩] যুখরুরফ:৭৭
[৪৪] যুখরুফ:৭৭
[৪৫] মুমনিুন:১০৬-১০৭
[৪৬] যুখরুফ:১০৮
[৪৭] মুতাফফিফীন:১৫
[৪৮] বুখারী-মুসলিম
[৪৯] মায়েদা:৭২
[৫০] ইসরা:৩৯
[৫১] মুদ্দাসসির:৪২-৪৩
[৫২] তওবা:৩৫
[৫৩] নিসা:৯৩
[৫৪] বাকারা:২৭৫
[৫৫] নিসা:১০
[৫৬] বুখারী-মুসলিম
[৫৭] বুখারী
[৫৮] বুখারী-মুসলিম
[৫৯] তিরমিজী
[৬০] মুসলিম
[৬১] বুখারী
[৬২] মুসলিম
[৬৩] জারিয়াত:৫০
[৬৪] তাহরীম:৬
[৬৫] তিরমিজী
[৬৬] আহমাদ, তিরমিজি, ইবনে মাজাহ
[৬৭] আম্বিয়া:১-২
[৬৮] হাদীদ:১৬
[৬৯] মারইয়াম:৭১-৭২
[৭০] তাকাসুর:১-৮
[৭১] রাহমান:৪৬
[৭২] ইসরা:৫৭
[৭৩] ফূরকান:৬৫-৬৬
[৭৪] আলে ইমরান:১৯২
[৭৫] সাজদাহ:১৭
[৭৬] হিজর:৪৬
[৭৭] মুসলিম
[৭৮] আলে ইমরান:১৮৫
[৭৯] বুখারী
[৮০] মুসলিম
[৮১] সাজদাহ:১৭
[৮২] বুখারী-মুসলিম
[৮৩] আলে ইমরান:১৩৩
[৮৪] বুখারী-মুসলিম
[৮৫] আহমাদ
[৮৬] সহীহ আল জামে
[৮৭] বুখারী-মুসলিম
[৮৮] দাহর:২০
[৮৯] মোহাম্মাদ:১৫
[৯০] হজ:২৩
[৯১] তুর:২৫-২৮
[৯২] দাহর:১৪
[৯৩] রাহমান:৪৫
[৯৪] তিরমিজী
[৯৫] ত্বহা:১১৮-১১৯
[৯৬] বুখারী-মুসলিম
[৯৭] মুসলিম
[৯৮] যুখরুফ:৬৮
[৯৯] মুহাম্মদ:৬
[১০০] জুমার:৭৩
[১০১] আরাফ:৪৩
[১০২] বুখারী-মুসলিম
[১০৩] বুখারী-মুসীরম
[১০৪] বুখারী
[১০৫] হিজর:৪৭
[১০৬] ইউনুস:১০
[১০৭] মুসলিম
[১০৮] যুখরূপ:৭১
[১০৯] মুতাফফিফীন:২৪
[১১০] তুর:২৪
[১১১] ফাতের:৩৪-৩৫
[১১২] ওয়াকেয়া:২৫-২৬
[১১৩] রাদ:২৩
[১১৪] আলে ইমরান:১৬৩
[১১৫] ইয়াসিন:৫৮
[১১৬] কিয়মাহ:২২ও২৩
[১১৭] সাফফাত:৬১
[১১৮] মুতাফফিফীন:২৬
[১১৯] তিরমিজী-হাকেম
[১২০] ইসরা:২১
[১২১] মুসলিম
[১২২] নাজেআত:৪০-৪১
[১২৩] তুর:২৩
[১২৪] বুখারী
[১২৫] তাবরানী
[১২৬] জামে সাগির
[১২৭] মুসলিম
[১২৮] আলে ইমরান:১৩৪
[১২৯] কাফ:৩৩
[১৩০] আহমাদ
[১৩১] বুখারী
[১৩২] আলে ইমরান:১৩৩-১৩৬
_________________________________________________________________________________



লেখক: রাশেদ বিন আব্দুর রহমান আয-যাহরানী
ﺗﺄﻟﻴﻒ : ﺭﺍﺷﺪ ﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺍﻟﺰﻫﺮﺍﻧﻲ
অনুবাদক: সানাউল্লাহ নজির আহমদ
ﺗﺮﺟﻤﺔ : ﺛﻨﺎﺅ ﺍﻟﻠﻪ ﻧﺬﻳﺮ ﺃﺣﻤﺪ
সূত্র: ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব
ﺍﻟﻤﻜﺘﺐ ﺍﻟﺘﻌﺎﻭﻧﻲ ﻟﻠﺪﻋﻮﺓ ﻭﺗﻮﻋﻴﺔ ﺍﻟﺠﺎﻟﻴﺎﺕ ﺑﺎﻟﺮﺑﻮﺓ ﺑﻤﺪﻳﻨﺔ ﺍﻟﺮﻳﺎﺽ




আরও পড়ুনঃ কুরআনের আলোকে জান্নাত ও জাহান্নাম
আরও পড়ুনঃ কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে জান্নাত ও জাহান্নাম
আরও পড়ুনঃ সহীহ সুন্নাহ’র আলোকে জান্নাতের বৈশিষ্ট্য (১ম পর্ব)
আরও পড়ুনঃ সহীহ সুন্নাহ’র আলোকে জান্নাতের বৈশিষ্ট্য (২য় পর্ব)
আরও পড়ুনঃ জান্নাতে কি হবে?
আরও পড়ুনঃ জান্নাতে নারীদের অবস্থা


পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না কিন্তু।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন