Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

See Our Articles In Different Styles... Grid View List View

শনিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১৮

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর সালাত (দরূদ) পড়ার অর্থ, ফযিলত, পদ্ধতি ও স্থানসমূহ

Views:

A+ A-

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর সালাত (দরূদ) পড়ার অর্থ, ফযিলত, পদ্ধতি ও স্থানসমূহ




ভূমিকা


ﺇِﻥَّ ﺍﻟْﺤَﻤْﺪُ ﻟﻠﻪِ ، ﻧَﺤْﻤَﺪُﻩُ ﻭَﻧَﺴْﺘَﻌِﻴْﻨُﻪُ ﻭَﻧَﺴْﺘَﻐْﻔِﺮُﻩُ ، ﻭَﻧَﻌُـﻮْﺫُ ﺑِﺎﻟﻠﻪِ ﻣِﻦْ ﺷُﺮُﻭْﺭِ ﺃَﻧْﻔُﺴِﻨَﺎ ، ﻭَﻣِﻦْ ﺳَﻴِّﺌَﺎﺕِ ﺃَﻋْﻤَﺎﻟِﻨَﺎ ، ﻣَﻦْ ﻳَّﻬْﺪِﻩِ ﺍﻟﻠﻪُ ﻓَﻼَ ﻣُﻀِﻞَّ ﻟَﻪُ ، ﻭَﻣَﻦْ ﻳُّﻀْﻠِﻞِ ﺍﻟﻠﻪُ ﻓَﻼَ ﻫَﺎﺩِﻱَ ﻟَﻪُ ، ﻭَﺃَﺷْﻬَﺪُ ﺃَﻥْ ﻻَّ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻻَّ ﺍﻟﻠﻪُ ﻭَﺣْﺪَﻩُ ﻻَ ﺷَﺮِﻳْﻚَ ﻟَﻪُ ، ﻭَﺃَﺷْﻬَﺪُ ﺃَﻥَّ ﻣُﺤَﻤَّﺪًﺍ ﻋَﺒْﺪُﻩُ ﻭَﺭَﺳُﻮْﻟُﻪُ


নিশ্চয়ই যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার জন্য। আমরা তারই প্রশংসা করি, তার কাছে সাহায্য চাই, তার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করি। আল্লাহর নিকট আমরা আমাদের প্রবৃত্তির অনিষ্টতা ও আমাদের কর্মসমূহের মন্দ পরিণতি থেকে আশ্রয় কামনা করি। আল্লাহ যাকে হেদায়েত দেন, তাকে গোমরাহ করার কেউ নেই। আর যাকে গোমরাহ করেন তাকে হেদায়েত দেওয়ার কেউ নেই। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্যিকার ইলাহ নেই, তিনি একক, তার কোনো শরিক নেই। আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। সালাত ও সালাম নাযিল হোক তার উপর, তার পরিবার-পরিজন ও তার সাহাবীদের উপর এবং যারা কিয়ামত অবধি এহসানের সাথে তাদের অনুসরণ করেন তাদের উপর।


জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান বস্তু হল সময়। সময় কারো জন্য অপেক্ষা করে না।
সময়ের সমুদ্র খুব দ্রুত বয়ে যায়। কোথাও থেমে যায়না কিংবা কারও অপেক্ষা করে না। এটি সময়ের মেহেরবানী যে, সে অনবরত চলতে থাকে এবং আমাদেরকে জীবনের দুঃখ-দুর্দশা ও মুসিবত সহ্য করার উপযোগী করে তুলে। সৌভাগ্যবান ব্যক্তি সে যে সময়কে কাজে লাগাতে পারে। আবহমান সময় মনের দুঃখের উৎকৃষ্ট উপশম। যদি সময় থেমে যায় তাহলে মনে হয় পৃথিবীতে মানুষ বেঁচে থাকা অসম্ভব হবে। আর প্রত্যেক মানুষ দুঃখের স্বরূপ ও বিষণ্ণতার ভাস্কর্য মনে হবে।
আমরা যারা হাদিস অধ্যয়ন করি, পড়ি বা লিখি তারা, অবশ্যই নবীকুল শিরোমণি,
মুত্তাকীদের ইমাম, সারা জাহানের জন্য রহমত, পাপীদের জন্য আল্লাহর অনুমতিক্রমে
শাফা‘আতকারী এবং সত্য পথের প্রদর্শক মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুবারক নাম মুখ দিয়ে বার বার উচ্চারণ করে থাকি। সত্যবাদী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের এক সাথী উবাই ইবনু কা‘ব রাদিয়াল্লাহু আনহুকে কতই না সত্য কথা বলেছেন যে, হে কা‘ব! যদি তুমি তোমার সম্পূর্ণ সময় আমার উপর দরূদ পড়ার জন্য ব্যয় করে দাও তাহলে তোমার দুনিয়া ও আখিরাতের দুশ্চিন্তা ও দুঃখের জন্য তা যথেষ্ট হবে। [1]
আল্লাহ তা‘আলা কুরআনুল কারীমে স্বীয় কালাম সম্পর্কে বলেন,


﴿ۗٞ ﻗُﻞۡ ﻫُﻮَ ﻟِﻠَّﺬِﻳﻦَ ﺀَﺍﻣَﻨُﻮﺍْ ﻫُﺪٗﻯ ﻭَﺷِﻔَﺎٓﺀٞۚ ٤٤ ﴾ ‏[ ﻓﺼﻠﺖ : ٤٤ ‏]


“হে মুহাম্মদ! আপনি বলে দিন। ঈমানদারদের জন্য এই কুরআন হিদায়েত ও শিফা”। [2]


এই একই কথা নির্দ্বিধায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীসের ব্যাপারেও বলা যেতে পারে যে,
ঈমানদারদের জন্য তা হল হিদায়েত ও শিফা। আল্লাহর নবীর উপর দরূদ পড়ার নির্দেশ তো আল্লাহ নিজেই দিয়েছেন। সুতরাং, নবীর উপর দরূদ পড়ার অর্থই আল্লাহর আদেশের বাস্তবায়ন ও হুকুম পালন করা। আর নিঃসন্দেহে বলা যায় আল্লাহর আদেশ নিষেধ মানা ও তার বাস্তবায়নই হল হিদায়েত। আল্লাহর কুরআন যেমন মানব জাতির জন্য শিফা, অনুরূপভাবে আল্লাহর রাসূলের হাদিসও মানব জাতির জন্য শিফা। এ বিষয়ে অনেক উল্লেখযোগ্য ঘটনা রয়েছে। যেমন-
ইমাম রমাদী রাহিমাহুল্লাহ রাহিমাহুল্লাহ সম্পর্কে “তারীখে বাগদাদ” নামক গ্রন্থে লিখিত আছে: যখন তিনি অসুস্থ হয়ে পড়তেন তখন বলতেন: আমাকে হাদিস পড়ে শুনাও কেননা তাতে রয়েছে শিফা। পাক ভারত উপমহাদেশে শাহ ওয়ালী উল্লাহ রাহিমাহুল্লাহ এর পরিবারের ধর্মীয় অবদানের কথা কার অজানা?। তাঁর পিতা শাহ আব্দুর রহীম রাহিমাহুল্লাহ বলতেন: দ্বীনি খেদমতের যা সৌভাগ্য আমি অর্জন করেছি তা সব একমাত্র দরূদ শরীফের বরকতেই করেছি।

আল্লামা সাখাবী রাহিমাহুল্লাহ

‘আল কাউলুল বদী’ গ্রন্থে অনেক মুহাদ্দিসের স্বপ্ন বর্ণনা করেছেন। যার দ্বারা প্রতিয়মান হয়, তাদের সবাইকে শুধুমাত্র এ কারণেই ক্ষমা করা হয়েছে যে তাঁরা হাদিস লেখার সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামের সাথে সাথে দরূদ পড়তেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ পড়ার গুরুত্ব ও ফযীলত যে কত অপরিসীম তা আমরা চিন্তাই করতে পারি না। আমরা বিভিন্নভাবে আমাদের সময়কে অপচয় করে থাকি। যদি আমরা সময়কে অপচয় করে আল্লাহর নবীর উপর দরূদ পড়তে থাকি, তা আমাদের একদিন কাজে লাগবে।


এ বিষয়ে আমাদের জ্ঞানের অভাব খুবই প্রকট। তবে এটি যেমনটা চিন্তনীয় বিষয় তার চেয়েও অধিক দুশ্চিন্তার বিষয় হল, আমাদের অজ্ঞতার কারণে আমাদের সমাজে দরূদের নামে বিভিন্ন ধরনের কু-সংস্কার, বিদ‘আত, বানোয়াট ও উদ্ভট কথা-বার্তার প্রচলন। অনেকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি অতি ভক্তি প্রদর্শন করে এবং তাকে অধিক সম্মান দেখাতে গিয়ে তার সম্পর্কে এমন উদ্ভট কথা-বার্তা বলে থাকে, যা তার জন্য কখনোই প্রযোজ্য নয়। তিনি যে একজন আল্লাহর সৃষ্টি বা মাখলুক তাকে সে মর্যাদায় না রেখে অতি উৎসাহী কিছু লোক তাকে আল্লাহর মর্যাদায় পৌঁছে দেন। ফলে দেখা যায়, দরূদের নামে রাসূল সম্পর্কে এমন কিছু কথা রাসূলের শানে বলা হয়ে থাকে যা যথারীতি শির্কের পর্যায়ে পৌঁছে যায়। এ জন্য দরূদ শরীফ সম্পর্কে কুরআন ও সূন্নাহের সঠিক ও বিশুদ্ধ দিক নির্দেশনা কি তা জানা থাকা খুবই জরুরী। এ বইটিতে দরূদ পড়ার ফযিলত, গুরুত্ব, দরূদ পাঠের নিয়ম ও দরূদের শব্দসমূহ কি তা কুরআন ও হাদিসের আলোকে আলোচনা করা হয়েছে।


রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবরের জীবন


এখানে একটি বিষয় জেনে থাকা খুবই জরুরী যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পর তার জীবন সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের কথা সমাজে প্রচলিত রয়েছে। মূলত তার জীবন সম্পর্কে অস্পষ্টতা থাকার কারণ হল, এ সম্পর্কে হাদিস ও কুরআনে আসা নির্দেশনা সম্পর্কে সু-স্পষ্ট জ্ঞান না থাকা এবং এ বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা হাদিস কুরআনে উল্লেখ না করা। তবে এ ক্ষেত্রে হাদিসে বা কুরআনে যতটুকু বর্ণনা পাওয়া যায়, তার উপর ঈমান আনা ও বিশ্বাস করাই একজন মুমিনের কাজ। সহীহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়,



রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের কবর থেকে সালাম দাতার উত্তর দিয়ে থাকেন। কবরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শোনা এবং উত্তর প্রদান কিভাবে? এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এ ব্যাপারে এ কথা স্মরণ রাখা দরকার যে, ইহজীবন হিসেবে যেভাবে অন্য মানুষের উপর মৃত্যু আসে সেভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপরও মৃত্যু এসেছে। কুরআন মজীদের কয়েকটি স্থানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য ‘মৃত্যু’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,


﴿ ﺇِﻧَّﻚَ ﻣَﻴِّﺖٞ ﻭَﺇِﻧَّﻬُﻢ ﻣَّﻴِّﺘُﻮﻥَ ٣٠ ﴾ ‏[ ﺍﻟﺰﻣﺮ : ٣٠ ‏]

“হে মুহাম্মদ! আপনিও মৃত্যু বরণ করবেন এবং তারাও (কাফের-মুশরিকরাও) মৃত্যু বরণ করবে”। [3] সূরা আলে ইমরানে আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেছেন,

﴿ ﻭَﻣَﺎ ﻣُﺤَﻤَّﺪٌ ﺇِﻟَّﺎ ﺭَﺳُﻮﻝٞ ﻗَﺪۡ ﺧَﻠَﺖۡ ﻣِﻦ ﻗَﺒۡﻠِﻪِ ﭐﻟﺮُّﺳُﻞُۚ ﺃَﻓَﺈِﻳْﻦ ﻣَّﺎﺕَ ﺃَﻭۡ ﻗُﺘِﻞَ ﭐﻧﻘَﻠَﺒۡﺘُﻢۡ ﻋَﻠَﻰٰٓ ﺃَﻋۡﻘَٰﺒِﻜُﻢۡۚ ﻭَﻣَﻦ ﻳَﻨﻘَﻠِﺐۡ ﻋَﻠَﻰٰ ﻋَﻘِﺒَﻴۡﻪِ ﻓَﻠَﻦ ﻳَﻀُﺮَّ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﺷَﻴۡٔٗﺎۗ ﻭَﺳَﻴَﺠۡﺰِﻱ ﭐﻟﻠَّﻪُ ﭐﻟﺸَّٰﻜِﺮِﻳﻦَ ١٤٤ ﴾ ‏[ ﺍﻝ ﻋﻤﺮﺍﻥ : ١٤٤ ‏]


“আর মুহাম্মদ রাসূল ছাড়া আর কিছু নয়, তাঁর আগেও অনেক রাসূল চলে গেছেন। তা হলে কি তিনি যদি মারা যান কিংবা নিহত হন, তবে তোমরা পশ্চাদপসরণ করবে?


বস্তুত: কেউ যদি পশ্চাদপসরণ করে, তবে তাতে আল্লাহর কিছুই ক্ষতি হবে না। আর যারা কৃতজ্ঞ আল্লাহ তাদের ছাওয়াব দান করবেন”। [4] সূরা আম্বিয়াতে আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেছেন,


﴿ ﻭَﻣَﺎ ﺟَﻌَﻠۡﻨَﺎ ﻟِﺒَﺸَﺮٖ ﻣِّﻦ ﻗَﺒۡﻠِﻚَ ﭐﻟۡﺨُﻠۡﺪَۖ ﺃَﻓَﺈِﻳْﻦ ﻣِّﺖَّ ﻓَﻬُﻢُ ﭐﻟۡﺨَٰﻠِﺪُﻭﻥَ ٣٤ ﴾ ‏[ ﺍﻻﻧﺒﻴﺎﺀ : ٣٤ ‏]


‘আপনার পূর্বেও আমি কোনো মানুষকে অনন্ত জীবন দান করিনি। সুতরাং আপনার মৃত্যু হলে তারা কি চিরজীবী হবে? [5]


রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পর আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন:


‏« ﻣَﻦْ ﻛَﺎﻥَ ﻳَﻌْﺒُﺪُ ﻣُﺤَﻤَّﺪﺍً ﻓَﺈِﻥَّ ﻣُﺤَﻤَّﺪﺍً ﻗَﺪْ ﻣَﺎﺕَ ‏»

‘তোমাদের মধ্যে যে কেউ মুহাম্মদের ইবাদত করত তারা যেন জেনে রাখে, তিনি মারা গেছেন।’ [6]
কাজেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পর তাকে গোসল দেওয়া হয়েছে, কাফন পরানো হয়েছে,


জানাযার সালাত আদায় করা হয়েছে এবং কয়েক মন মাটির নীচে কবরে দাফন করা হয়েছে। সুতরাং, এটা একেবারেই নিঃসন্দেহ বলা যায় যে, ইহকালীন জীবন হিসেবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মারা গেছেন। তবে তাঁর বরযখী জীবন, সকল নবী-রাসূল, শহীদ, অলি এবং নেককার লোকদের চেয়ে অনেক অনেক পরিপূর্ণ। বরযখী জীবন সম্পর্কে জেনে রাখা উচিত, এই জীবনটি মৃত্যুর পূর্বে পৃথিবীর জীবনের মতও নয় এবং কিয়ামতের পরের জীবনের মতও নয়। আসলে সেই জীবনের বাস্তবতা কি? তা আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না। তাই আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন,

﴿ﻭَﻟَﺎ ﺗَﻘُﻮﻟُﻮﺍْ ﻟِﻤَﻦ ﻳُﻘۡﺘَﻞُ ﻓِﻲ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﭐﻟﻠَّﻪِ ﺃَﻣۡﻮَٰﺕُۢ ۚ ﺑَﻞۡ ﺃَﺣۡﻴَﺎٓﺀٞ ﻭَﻟَٰﻜِﻦ ﻟَّﺎ ﺗَﺸۡﻌُﺮُﻭﻥَ ١٥٤﴾ ‏[ ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ : ١٥٤ ‏]

“আর যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয় তাঁদের মৃত বলও না। বরং তারা জীবিত কিন্তু তোমরা তা বুঝ না”। [7] যেহেতু আল্লাহ তা‘আলা বরযখী জীবন সম্পর্কে অকাট্যভাবে ঘোষণা করে দিলেন যে,

বরযখী জীবনের ধরণ সম্পর্কে তোমাদের কোনো বোধ নেই, সেহেতু এ ব্যাপারে আমাদের জন্যেও যুক্তির ঘোড়া দৌড়ানো

কোনো ক্রমেই উচিত নয়। এরূপ যুক্তি পেশ করা মোটেও ঠিক হবে না যে, যখন সালামও শুনেন এবং তার উত্তরও দিয়ে থাকেন তাহলে সেই জীবন দুনিয়াবি জীবন থেকে ভিন্ন হবে কেন? অথবা যখন তিনি সালাম শুনেন তাহলে অন্য কথা-বার্তা শুনবেন না কেন? ইত্যাদি। আসলে আমাদের ঈমানের চাহিদা হল, যা কিছু আমাদেরকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তাকে কোনো রকম কমবেশ না করে সম্পূর্ণভাবে মেনে নেওয়া।


যে ব্যাপারে চুপ থেকেছেন সে ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেওয়ার পরিবর্তে চুপ থাকা। এটাই হল স্বীয় দ্বীন-ঈমান বাঁচানোর নিরাপদ উপায়। অন্যথায় আমরা যদি আমাদের জ্ঞানের বাইরে এবং আল্লাহ ও তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে বিষয়ে কোনো দিক নির্দেশনা দেননি সে বিষয়ে মাথা ঘামাই তা হলে আমরা পথভ্রষ্টদের অন্তর্ভুক্ত হব। যারা আল্লাহ ও তার রাসূল যে সব বিষয়গুলো স্পষ্ট করেননি সে সব বিষয়গুলো সম্পর্কে না জেনে মন্তব্য করেন তাদের আল্লাহ তা‘আলা কঠিন হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,


﴿ﻭَﻟَﺎ ﺗَﻘۡﻒُ ﻣَﺎ ﻟَﻴۡﺲَ ﻟَﻚَ ﺑِﻪِۦ ﻋِﻠۡﻢٌۚ ﺇِﻥَّ ﭐﻟﺴَّﻤۡﻊَ ﻭَﭐﻟۡﺒَﺼَﺮَ ﻭَﭐﻟۡﻔُﺆَﺍﺩَ ﻛُﻞُّ ﺃُﻭْﻟَٰٓﺌِﻚَ ﻛَﺎﻥَ ﻋَﻨۡﻪُ ﻣَﺴُۡٔﻮﻟٗﺎ ٣٦﴾ ‏[ ﺍﻻﺳﺮﺍﺀ : ٣٦ ‏]


“আর যে বিষয়ে তোমার জানা নেই তার অনুসরণ করো না। নিশ্চয় কান, চোখ ও অন্তঃকরণ-এদের প্রতিটির ব্যাপারে সে জিজ্ঞাসিত হবে”। [8]


এছাড়াও আল্লাহ রাসূলের নির্দেশিত বিষয়সমূহের প্রতি হুবহু ঈমান না এনে তার ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ খুঁজে বেড়ায় এবং যুক্তির ঘোড়া দোড়ায় তাদের বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ﻓَﺄَﻣَّﺎ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻓِﻲ ﻗُﻠُﻮﺑِﻬِﻢۡ ﺯَﻳۡﻎٞ ﻓَﻴَﺘَّﺒِﻌُﻮﻥَ ﻣَﺎ ﺗَﺸَٰﺒَﻪَ ﻣِﻨۡﻪُ ﭐﺑۡﺘِﻐَﺎٓﺀَ ﭐﻟۡﻔِﺘۡﻨَﺔِ ﻭَﭐﺑۡﺘِﻐَﺎٓﺀَ ﺗَﺄۡﻭِﻳﻠِﻪِۦۖ ﻭَﻣَﺎ ﻳَﻌۡﻠَﻢُ ﺗَﺄۡﻭِﻳﻠَﻪُۥٓ ﺇِﻟَّﺎ ﭐﻟﻠَّﻪُۗ ﻭَﭐﻟﺮَّٰﺳِﺨُﻮﻥَ ﻓِﻲ ﭐﻟۡﻌِﻠۡﻢِ ﻳَﻘُﻮﻟُﻮﻥَ ﺀَﺍﻣَﻨَّﺎ ﺑِﻪِۦ ﻛُﻞّٞ ﻣِّﻦۡ ﻋِﻨﺪِ ﺭَﺑِّﻨَﺎۗ ﻭَﻣَﺎ ﻳَﺬَّﻛَّﺮُ ﺇِﻟَّﺎٓ ﺃُﻭْﻟُﻮﺍْ ﭐﻟۡﺄَﻟۡﺒَٰﺐِ ٧ ﴾ ‏[ ﺍﻝ ﻋﻤﺮﺍﻥ : ٧ ‏]

“ফলে যাদের অন্তরে রয়েছে সত্য-বিমুখ প্রবণতা, তারা ফিতনার উদ্দেশ্যে এবং ভুল ব্যাখ্যার অনুসন্ধানে মুতাশাবিহ আয়াতগুলোর পেছনে লেগে থাকে। অথচ আল্লাহ ছাড়া কেউ এর ব্যাখ্যা জানে না। আর যারা জ্ঞানে পরিপক্ব, তারা বলে, আমরা এ গুলোর প্রতি ঈমান আনলাম, সবগুলো আমাদের রবের পক্ষ থেকে। আর বিবেক সম্পন্নরাই উপদেশ গ্রহণ করে”। [9]
একটি বাতিল আকীদা-বিশ্বাস ও তার খণ্ডন: বিভিন্ন হাদীসে বিভিন্ন ভাষায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথা বলেছেন,

‏« ﺇِﻥَّ ﻟِﻠَّﻪِ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﻣَﻠَﺎﺋِﻜَﺔً ﺳَﻴَّﺎﺣِﻴﻦَ، ﻳُﺒَﻠِّﻐُﻮﻧِﻲ ﻣِﻦْ ﺃُﻣَّﺘِﻲ ﺍﻟﺴَّﻠَﺎﻡَ ‏»


“আল্লাহ তা‘আলা কিছু মালাইকাহ তথা ফেরেশতাদের দায়িত্ব দিয়েছেন যে, তারা যেন পৃথিবীতে ঘুরে বেড়ায় এবং যারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ-সালাম পাঠ করে,
তাদের দরূদ ও সালাম তাঁর কাছে পৌঁছায়”।
[10]


এই হাদীসের পরিষ্কার অর্থ হল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বদা কবর শরীফে উপস্থিত থাকেন। আর সর্বস্থানে উপস্থিত ও সর্বদর্শী হন না। বাস্তবে যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বস্থানে উপস্থিত ও সর্বদর্শী হতেন তাহলে ফেরেশতা নির্ধারণ করে তাঁর কাছে দরূদ-সালাম পৌঁছানোর কি প্রয়োজন ছিল? কোনো কোন হাদীসে স্পষ্টভাবে এ কথাও পাওয়া যায় যে, ফেরেশতাগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এটাও বলে দেন যে, এই দরূদ-সালাম প্রেরণ করেছেন অমুকের ছেলে অমুক। এর দ্বারা এ কথাও স্পষ্ট হয়ে যায় যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলেমুল গায়েব ছিলেন না। কারণ, যদি তিনি গায়েব জানতেন তাহলে


ফেরেশতাদের বলতে হত না দরূদ ও সালাম প্রেরণকারী কে?।
হাদিস দ্বারা প্রমাণিত নয় এরূপ দরূদ ও সালাম
এমনিতেই বর্তমানে দ্বীনে ইসলামে বিদ‘আতের সংযোগ দৈনন্দিন জীবনের নিয়মে পরিণত হয়েছে। কিন্তু বিশেষভাবে যিকির-আযকার ও দো‘আ অযীফার বেলায় মানুষের মনগড়া এবং সূন্নাহ বিরুদ্ধ অনেক বস্তু সংযোগ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে মাসনূন দো‘আ ও যিকির যেন ভুলে যাওয়া অধ্যায় হয়ে গেছে। অনেক মনগড়া ও গায়রে মাসনূন দরূদ-সালাম সমাজে প্রচলিত হয়ে পড়েছে। যেমন- দরূদে তাজ, দরূদে তুনাজ্জীনা, দরূদে হাজারী, দরূদে নারীয়া ইত্যাদি। এগুলোর মধ্যে প্রত্যেকটির পড়ার নিয়ম ও সময় ভিন্ন ভিন্ন বলা হয়েছে। আবার এগুলোর অনেক উপকারের কথাও বিভিন্ন বই পুস্তকে লিপিবদ্ধ আছে। উল্লেখিত বিভিন্ন নামে লিখিত এ সকল দরূদসমূহের একটিরও কোনো শব্দ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত নয়। কাজেই এগুলো পড়ার নিয়ম এবং এগুলোর উপকারের কথা বাতিল হবে বৈকি।


শরীয়তে মনগড়া ও গায়রে মাসনূন কাজের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিসগুলো প্র্রত্যেক মুসলিমের দৃষ্টিতে থাকা উচিত, যেন এই সংক্ষিপ্ত ও অতি মূল্যবান জীবনে ব্যয় কৃত সময়, সম্পদ এবং অন্যান্য যোগ্যতা কিয়ামতের দিন ধ্বংস না হয়ে যায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

‏« ﻣَﻦْ ﻋَﻤِﻞَ ﻋَﻤَﻠًﺎ ﻟَﻴْﺲَ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺃَﻣْﺮُﻧَﺎ ﻓَﻬُﻮَ ﺭَﺩٌّ ‏» ‏( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ﻭﻣﺴﻠﻢ ‏) ؛


‘যে ব্যক্তি দ্বীনের মধ্যে এমন কোনো কাজ করেছে যার ভিত্তি শরীয়তে নেই, সেই কাজ প্ররিত্যজ্য।[11] অর্থাৎ, আল্লাহর কাছে এই কাজের কোনো ছাওয়াব পাওয়া যাবে না। অন্য এক হাদীসে তিনি বলেছেন,


“প্রত্যেক বিদ‘আত গোমরাহী আর প্রত্যেক গোমরাহীর ঠিকানা হল জাহান্নাম।” [12]


এ ব্যাপারে বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত ঘটনাটি খুবই শিক্ষণীয় হবে বলে মনে করি। ঘটনাটি এরূপ যে,


" ﺟﺎﺀ ﺛﻼﺛﺔ ﺭﻫﻂ ﺇﻟﻰ ﺑﻴﻮﺕ ﺃﺯﻭﺍﺝ ﺍﻟﻨﺒﻲ ‏( ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ‏) ﻳﺴﺄﻟﻮﻥ ﻋﻦ ﻋﺒﺎﺩﺓ ﺍﻟﻨﺒﻲ ‏( ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ‏) ، ﻓﻠﻤﺎ ﺃﺧﺒﺮﻭﺍ ﻛﺄﻧﻬﻢ ﺗﻘﺎﻟﻮﻫﺎ، ﻓﻘﺎﻟﻮﺍ : ﻭﺃﻳﻦ ﻧﺤﻦ ﻣﻦ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ‏( ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ‏) ؟ ﻗﺪ ﻏﻔﺮ ﻟﻪ ﻣﺎ ﺗﻘﺪﻡ ﻣﻦ ﺫﻧﺒﻪ ﻭﻣﺎ ﺗﺄﺧﺮ . ﻓﻘﺎﻝ ﺃﺣﺪﻫﻢ : ﺃﻣﺎ ﺃﻧﺎ، ﻓﺄﻧﺎ ﺃﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻴﻞ ﺃﺑﺪﺍ، ﻭﻗﺎﻝ ﺁﺧﺮ : ﺃﺻﻮﻡ ﺍﻟﺪﻫﺮ ﻭﻻ ﺃﻓﻄﺮ . ﻭﻗﺎﻝ ﺁﺧﺮ : ﺃﻧﺎ ﺃﻋﺘﺰﻝ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ ﻓﻼ ﺃﺗﺰﻭﺝ ﺃﺑﺪﺍ ! ﻓﺠﺎﺀ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ‏( ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ‏) ﺇﻟﻴﻬﻢ، ﻓﻘﺎﻝ : ﺃﻧﺘﻢ ﺍﻟﺬﻳﻦ ﻗﻠﺘﻢ ﻛﺬﺍ ﻭﻛﺬﺍ؟ ﺃﻣﺎ ﻭﺍﻟﻠﻪ ﺇﻧﻲ ﻷﺧﺸﺎﻛﻢ ﻟﻠﻪ، ﻭﺃﺗﻘﺎﻛﻢ ﻟﻪ، ﻭﻟﻜﻨﻲ ﺃﺻﻮﻡ ﻭﺃﻓﻄﺮ، ﻭﺃﺻﻠﻲ ﻭﺃﺭﻗﺪ، ﻭﺃﺗﺰﻭﺝ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ، ﻓﻤﻦ ﺭﻏﺐ ﻋﻦ ﺳﻨﺘﻲ ﻓﻠﻴﺲ ﻣﻨﻲ ".

ﺃﺧﺮﺟﻪ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ‏( 3 / 411 ‏) ﻭﺍﻟﺒﻴﻬﻘﻲ ‏( 7 / 77 ‏)


তিন ব্যক্তি নবী পত্নীগণের কাছে আসলেন এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইবাদাতের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলেন। যখন তাদের বলা হল, তখন

তারা সেটা কম মনে করল। তারপর তারা বলল, কোথায় আমরা আর কোথায় রাসূল? তাঁর তো পূর্বের ও পরের সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে। তারপর তাদের থেকে একজন বলল, আমি এখন থেকে সারা রাত সালাত পড়ব এবং মোটেও বিশ্রাম নেব না। দ্বিতীয় ব্যক্তি বলল, আমি এখন থেকে সব সময় ছিয়াম পালন করব আর কখনো ছাড়ব না। তৃতীয় ব্যক্তি কলল, আমি কখনো বিয়ে করব না। নারীদের থেকে অনেক দূরে থাকব। যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ
বিষয়ে জানতে পারলেন তখন তিনি বললেন, আল্লাহর শপথ! আমি তোমাদের মধ্যে সব চেয়ে বেশী আল্লাহকে ভয় করি, সব চেয়ে বেশী পরহেজগার, আমি রাত্রে সালাতও পড়ি আবার ঘুমাইও, ছিয়ামও পালন করি আবার ছেড়েও দেই এবং আমি মহিলাদের বিয়েও করি। সুতরাং মনে রেখ, যে ব্যক্তি আমার সুন্নাহ থেকে মুখ ফিরাবে তার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। [13]
পাঠকবৃন্দ! একটু চিন্তা করুন। উল্লেখিত হাদীসে তিন ব্যক্তি তাদের ধারণা মতে নেক কাজ করা এবং বেশী ছাওয়াব অর্জনের উদ্দেশ্যে এরূপ ইচ্ছা করেছিলেন। কিন্তু তাদের নিয়ম নিজেদের বানানো এবং সূন্নাহ বিরূদ্ধ ছিল বিধায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের কথার উপর অত্যন্ত অসন্তুষ্টি প্রকাশ করলেন। দরূদ ও সালামের ব্যাপারেও সমান কথা হবে।


মনগড়া ও সুন্নাহ বিরূদ্ধ দরূদ ও সালামের জন্য সব রকমের মেহনত, প্রচেষ্টা অকেজো ও উপকারশূন্য। বরং খুব বেশী সম্ভব যে হয়ত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অসন্তুষ্টি এবং রাগের বড় কারণ হবে। সুতরাং, আপনারা সে দরূদ পাঠ করুন যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত। মনে রাখবেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র মুখ থেকে বের হওয়া একটি শব্দ পৃথিবীর সকল ওলী বুজর্গ এবং সৎলোকদের বানানো কালাম অপেক্ষা অনেক অনেক মূল্যবান ও শ্রেষ্ঠ হবে।


আমি এ রিসালাটিতে দরূদ শরীফের মাসায়েল লেখার সময় হাদিসগুলো নির্বাচনের ক্ষেত্রে সহীহ এবং হাসান এর মাপকাঠি স্থিতিশীল রাখার জন্য আপ্রাণ
চেষ্টা করেছি। এরপরও যদি কারও নজরে কোনো দুর্বল হাদিস ধরা পড়ে তাহলে আমাকে জানানোর অনুরোধ রইল।


ﺭَﺑَّﻨَﺎﺗَﻘَﺒَّﻞْ ﻣِﻨَّﺎ ﺇِﻧَّﻚَ ﺃَﻧْﺖَ ﺍﻟﺴَّﻤِﻴْﻊُ ﺍﻟْﻌَﻠِﻴْﻢُ ﻭَﺗُﺐْ ﻋَﻠَﻴْﻨَﺎَ ﺇِﻧَّﻚَ ﺃَﻧْﺖَ ﺍﻟﺘَّﻮﺍﺏُ ﺍﻟﺮَّﺣِﻴْﻢُ


সালাত {দরূদ} এর অর্থ ও ব্যাখ্যা


কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা ঈমানদারদের স্বীয় রাসূলের উপর দরূদ পড়ার নির্দেশ দেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ ﺇِﻥَّ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﻭَﻣَﻠَٰٓﺌِﻜَﺘَﻪُۥ ﻳُﺼَﻠُّﻮﻥَ ﻋَﻠَﻰ ﭐﻟﻨَّﺒِﻲِّۚ ﻳَٰٓﺄَﻳُّﻬَﺎ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺀَﺍﻣَﻨُﻮﺍْ ﺻَﻠُّﻮﺍْ ﻋَﻠَﻴۡﻪِ ﻭَﺳَﻠِّﻤُﻮﺍْ ﺗَﺴۡﻠِﻴﻤًﺎ ٥٦ ﴾ ‏[ ﺍﻻﺣﺰﺍﺏ : ٥٦ ‏]


“আল্লাহ তা‘আলা নবীর উপর সালাত পেশ
করেন। আর তাঁর মালাক তথা ফেরেশতাগণ নবীর জন্য আল্লাহর কাছে সালাত পেশ
করেন। অতএব হে ঈমানদার লোকেরা! তোমরাও নবীর উপর সালাত ও সালাম প্রেরণ কর”। [14]


ﺍﻟﻠﻬُــــــــــــﻢَّ ﺻَﻞِّ ﻋَﻠَﻰ ﻣُﺤَﻤَّـﺪٍ ﻭَﻋَﻠَﻰ ﺁﻝِ ﻣُﺤَﻤَّـﺪٍ ﻛَﻤَـﺎ ﺻَﻠَّﻴْﺖَ ﻋَﻠَﻰ ﺇِﺑْﺮَﺍﻫِﻴْـﻢَ ﻭَﻋَﻠَﻰ ﺁﻝِ ﺇِﺑْﺮَﺍﻫِﻴْـﻢَ ﺇِﻧَّﻚَ ﺣَﻤِﻴْـﺪٌ ﻣَﺠِﻴْـﺪٌ . ﺍﻟﻠﻬُــــــــــــﻢَّ ﺑﺎَﺭِﻙْ ﻋَﻠَﻰ ﻣُﺤَﻤَّـﺪٍ ﻭَﻋَﻠَﻰ ﺁﻝِ ﻣُﺤَﻤَّـﺪٍ ﻛَﻤَـﺎ ﺑﺎَﺭَﻛْﺖَ ﻋَﻠَﻰ ﺇِﺑْﺮَﺍﻫِﻴْـﻢَ ﻭَﻋَﻠَﻰ ﺁﻝِ ﺇِﺑْﺮَﺍﻫِﻴْـﻢَ ﺇِﻧَّﻚَ ﺣَﻤِﻴْـﺪٌ ﻣَﺠِﻴْـﺪٌ .


আবুল আলীয়া রহ. বলেন, ‘আল্লাহর সালাত তার নবীর উপর’ এ কথাটির অর্থ, ফেরেশতাদের নিকট নবীর প্রশংসা করা। আর নবীর উপর ‘ফেরেশতাদের সালাত’ এ কথাটির অর্থ, নবীর জন্য দো‘আ করা। ইবনে আব্বাস রা. বলেন, ফেরেশতারা আল্লাহর নবীর উপর সালাত পড়ে এ কথাটির অর্থ হল, তারা বরকতের জন্য দো‘আ করে। ইমাম তিরমিযি রহ. সুফিয়ান সাওরী সহ বিভিন্ন আহলে ইলম থেকে বর্ণনা নকল করেন, তারা বলেন, ‘সালাতুর রব’ এ কথার অর্থ, রহমত, আর ‘সালাতুল মালায়েকা’ এ কথার অর্থ, ক্ষমা চাওয়া।


এ আয়াত দ্বারা উদ্দেশ্য হল, আল্লাহ তার স্বীয় বান্দাদেরকে উর্ধ্ব জগতে তার প্রিয় বান্দা ও নবীর যে কত বড় মর্যাদা তা জানিয়ে দেওয়া- আল্লাহ তা‘আলা নিজেই তার নিকটতম ফেরেশতাদের নিকট তার প্রশংসা করেন এবং ফেরেশতারা তার জন্য রহমতের দো‘আ করতে থাকে। তারপর আল্লাহ তা‘আলা জমীনের অধিবাসীদের নির্দেশ দেন তারাও যেন, তার নবীর উপর সালাত ও সালাম পড়ে। যাতে আসমান ও জমীন উভয় জগতের অধিবাসী আল্লাহর নবীর উপর সালাত ও সালাম পেশ করার বিষয়ে একত্র হয়।
কারও কারও মতে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর আল্লাহ তা‘আলার সালাত পাঠের অর্থ হল, রহমত অবতীর্ণ করা। আর ফেরেশতাগণ ও মুসলিমদের সালাত পাঠের অর্থ হল, তাঁর জন্য আল্লাহর কাছে রহমতের দো‘আ করা [15] । এ মতের সপক্ষে তারা দলীল হিসেবে নিম্নোক্ত হাদীসটি পেশ করে থাকেন:

ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻰ ﻫٌﺮَﻳْﺮَﺓَ ﺭَﺿِﻰ ﺍﻟﻠﻪٌ ﻋَﻨْﻪُ ﺃَﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗَﺎﻝَ ﺍﻟْﻤَﻼَﺋِﻜَﺔُ ﺗُﺼَﻠَّﻰ ﻋَﻠَﻰ ﺃَﺣَﺪِﻛُﻢْ ﻣَﺎ ﺩَﺍﻡَ ﻓِﻰ ﻣُﺼَﻼَّﻩُ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﺻَﻠَّﻰ ﻓِﻴْﻪِ ﻣَﺎﻟَﻢْ ﻳُﺤْﺪِﺙْ ، ﺗَﻘُﻮﻝُ : ﺍﻟﻠَّﻬَﻢَّ ﺍﻏْﻔِﺮْ ﻟَﻪُ ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺍﺭْﺣَﻤْﻪُ . ‏( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻯ ﻓﻰ ﺻﺤﻴﺤﻪ ، ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﺼﻼﺓ ، ﺑﺎﺏ ﺍﻟﺤﺪﺙ ﻓﻰ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ (


আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,


রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের মধ্য থেকে কোনো ব্যক্তি তার ছালাতের স্থানে যতক্ষণ বসে থাকবে ততক্ষণ তার ওযু না ভাঙ্গা পর্যন্ত মালাকরা অর্থাৎ ফেরেশতারা তার উপর সালাত পড়তে থাকে। তারা বলে, হে আল্লাহ! তাকে ক্ষমা করে দাও, হে আল্লাহ তার প্রতি দয়া কর।
[16]


তাছাড়া অন্য হাদীসেও এসেছে,

ﻋَﻦْ ﻋَﺎﺋِﺸَﺔَ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨْﻬَﺎ ﻗَﺎﻟَﺖْ : ﻗﺎﻝ ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : ) ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠﻪَ ﻭَﻣَﻼَﺋِﻜَﺘَﻪُ ﻳُﺼَﻠُّﻮﻥَ ﻋَﻠَﻰ ﻣَﻴَﺎﻣِﻦِ ﺍﻟﺼُّﻔُﻮﻑِ . ‏( ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺑﻮﺩﺍﻭﺩ، ﺻﺤﻴﺢ ﺳﻨﻦ ﺃﺑﻰ ﺩﺍﺅﺩ ﻟﻸﻟﺒﺎﻧﻰ، ﺍﻟﺠﺰﺀ ﺍﻷﻭﻝ .(


আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,


রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা


এবং তাঁর মালাকগণ কাতারের ডান পাশের লোকদের উপর সালাত প্রেরণ করেন। [17]


[তবে যারা এ মতের বিরোধিতা করেন, তাঁরা বলেন, কুরআন ও হাদীসের বিভিন্ন স্থানে ‘সালাত’ অর্থ ‘দো‘আ’ এসেছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু এর রাসূলের উপর আল্লাহর পক্ষ থেকে ‘সালাত’ এর অর্থ রহমত বা দো‘আ করা নয়। বরং আল্লাহ কর্তৃক তার কাছে যারা আছেন তাদের কাছে তার নবীকে সম্মান ও সুনামের সাথে উল্লেখ করা[18] । (সম্পাদক)]


নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ পড়ার বিধান


নবীর উপর দরূদ পড়ার বিধান-হুকুম সম্পর্কে আলেমদের একাধিক মত রয়েছে-

এক. কাযী আয়াদ্ব রহ. ও ইবনে আব্দুল বার রহ. বলেন, জীবনে একবার দরূদ পড়া ওয়াজিব। চাই তা সালাতের মধ্যে হোক অথবা সালাতের বাইরে হোক। যেমন-তাওহীদের কালিমা জীবনে একবার বলা ওয়াজিব।

দুই. বেশি বেশি করে দরূদ পড়া ওয়াজিব। যত বেশি পড়তে পারে ততই সাওয়াব হবে। তাতে সংখ্যা নির্ধারণ করার কোনো প্রয়োজন নেই।

তিন. যখন আল্লাহর রাসূলের নাম উল্লেখ করা হয়, তখন তার উপর দরূদ পড়া ওয়াজিব।

চার. শুধু মাত্র সালাতের শেষ বৈঠকে দরূদ পড়া ওয়াজিব।

পাঁচ. দরূদ পড়া মুস্তাহাব, ওয়াজিব নয়। এ বিষয়ে উল্লিখিত মতামত ছাড়াও আরও বিভিন্ন মতামত রয়েছে। এ সংক্ষিপ্ত বইতে সবগুলো একত্র করার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না।


সকল নবীদের উপর দরূদ পাঠ করা


দরূদ শুধু নবীদের জন্য খাস। নবী ছাড়া আর কারো জন্য দরূদ পড়ার কোনো বিধান নেই। সুতরাং শুধু নবীদের জন্যই দরূদ পাঠ করা উচিত। নবী ছাড়া অন্য মুসলিমদের জন্য দো‘আ ইস্তেগফার করাই ইসলামী শরীয়তের বিধান।


ﻋَﻦْ ﺍﺑﻦِ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ ﺭَﺿِﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨْﻬُﻤَﺎ ﺃَﻧَّﻪُ ﻗَﺎﻝَ : ﻻَ ﺗُﺼَﻠُّﻮْﺍ ﺻَﻼَﺓً ﻋَﻠَﻰ ﺃَﺣَﺪٍ ﺇِﻻَّ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻨَّﺒِﻰِّ ﻭَﻟَﻜِﻦْ ﻳُﺪْﻋَﻰ ﻟِﻠْﻤﺴْﻠِﻤِﻴْﻦَ ﻭَﺍﻟﻤُﺴْﻠِﻤَﺎﺕِ ﺑِﺎﻻﺳْﺘِﻐْﻔَﺎﺭِ . ‏( ﺻﺤﻴﺢ ، ﺭﻭﺍﻩ ﺇﺳﻤﺎﻋﻴﻞ ﺍﻟﻘﺎﺿﻰ ﻓﻰ ﻓﻀﻞ ﺍﻟﺼَّﻼﺓِ ﻋَﻠﻰ ﺍﻟﻨﺒﻰ ﻓﻀﻞ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻨﺒﻲ ‏) .


ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, নবী ব্যতীত অন্য কারও জন্য দরূদ পাঠ করো
না। তবে মুসলিম নর-নারীর জন্য ইস্তেগফারের মাধ্যমে দো‘আ করা যেতে পারে। [19]


রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ শরীফ পড়ার লাভ ও ফযীলত


এক- একবার দরূদ পাঠ করলে আল্লাহ তা‘আলা দশবার দরূদ পাঠ করেন, দশটি গুণাহ্ ক্ষমা করেন এবং দশটি মর্যাদা বৃদ্ধি করেন। প্রমাণ-


ﻋَﻦْ ﺃَﻧَﺲٍ ﺭَﺿِﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ﻗَﺎﻝَ : ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : ﻣَﻦْ ﺻَﻠَّﻰ ﻋَﻠَﻰَّ ﺻَﻼَﺓً ﻭَﺍﺣِﺪَﺓً ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻋَﺸْﺮَ ﺻَﻠَﻮَﺍﺕٍ ﻭَﺣُﻄَّﺖْ ﻋَﻨْﻪُ ﻋَﺸْﺮُ ﺧَﻄِﻴْﺌَﺎﺕٍ ﻭَﺭُﻓِﻌَﺖْ ﻟَﻪُ ﻋَﺸَﺮُ ﺩَﺭَﺟَﺎﺕٍ .‏( ﺻﺤﻴﺢ ، ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﻨﺴﺎﺋﻰ ، ﺻﺤﻴﺢ ﺳﻨﻦ ﺍﻟﻨﺴﺎﺋﻰ ﻟﻸﻟﺒﺎﻧﻰ ﺍﻟﺠﺰﺀ ﺍﻷﻭﻝ (


আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,


রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরূদ পড়বে, আল্লাহ তা‘আলা তার উপর দশবার দরূদ পাঠ করবেন, তার দশটি গুণাহ্ ক্ষমা করবেন, আর তার দশটি মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন। [20]

দুই- বেশী বেশী দরূদ পাঠ করা কিয়ামতের দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নৈকট্য লাভের কারণ:


ﻋَﻦْ ﺍﺑﻦِ ﻣَﺴْﻌُﻮﺩٍ ﺭَﺿِﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ﻗَﺎﻝَ : ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : ﺃَﻭْﻟَﻰ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ ﺑِﻰ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ ﺃَﻛْﺜَﺮﻫُﻢْ ﻋَﻠَﻰَّ ﺻَﻼَﺓً . ‏( ﺻﺤﻴﺢ ، ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻯ ، ﻣﺸﻜﺎﺓ ﺍﻟﻤﺼﺎﺑﻴﺢ ﺗﺤﻘﻴﻖ ﺍﻷﻟﺒﺎﻧﻰ ﺍﻟﺠﺰﺀ ﺍﻷﻭﻝ (

ইবনু মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কিয়ামতের দিন সবচেয়ে বেশী আমার নিকটতম হবে সেই ব্যক্তি, যে আমার উপর বেশী বেশী দরূদ পড়ে। [21]

তিন- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ পাঠ করা এবং তাঁর জন্য জান্নাতে উত্তম মর্যাদা প্রার্থনা করা কিয়ামতের দিন তাঁর সুপারিশে ধন্য হওয়ার বড় কারণ।

ﻋَﻦْ ﻋَﺒْﺪِﺍﻟﻠﻪِ ﺑْﻦِ ﻋَﻤْﺮٍﻭ ﺭَﺿِﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨْﻬُﻤَﺎ ﻗَﺎﻝَ : ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : ﻣَﻦْ ﺻَﻠَّﻰ ﻋَﻠَﻰَّ ﺃَﻭْﺳَﺄَﻝَ ﻟِﻲَ ﺍﻟْﻮَﺳِﻴْﻠَﺔَ ﺣَﻘَّﺖْ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺷَﻔَﺎﻋَﺘِﻲ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ . ‏( ﺻﺤﻴﺢ، ﺭﻭﺍﻩ ﺇﺳﻤﺎﻋﻴﻞ ﺍﻟﻘﺎﺿِﻲ ﻓﻲ ﻓﻀﻞ ﺍﻟﺼﻼﺓِ ﻋَﻠﻰ ﺍﻟﻨﺒﻰ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ، ﻓﻀﻞ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻨﺒﻰ ﻟﻸﻟﺒﺎﻧﻰ . (

আব্দুল্লাহ ইবন ‘আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার উপর দরূদ পড়বে অথবা আমার জন্য উসীলা (জান্নাতে উচ্চ মর্যাদা)-র দো‘আ করবে তার জন্য আমি কিয়ামতের দিন অবশ্যই সুপারিশ করব।[22]

চার- দরূদ শরীফ গুনাহ ক্ষমা হওয়া এবং সকল দুঃখ-কষ্ট ও বিষন্নতা থেকে মুক্তি অর্জনের উপায়:

ﻋَﻦْ ﺃُﺑَﻰِّ ﺑْﻦِ ﻛَﻌْﺐٍ ﺭَﺿِﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ﻗَﺎﻝَ : ﻗُﻠْﺖُ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ! ﺇِﻧِّﻰ ﺃُﻛْﺜِﺮُ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓَ ﻋَﻠَﻴْﻚَ ﻓَﻜَﻢْ ﺃَﺟْﻌَﻞُ ﻟَﻚَ ﻣِﻦْ ﺻَﻼَﺗِﻲ ؟ ﻗَﺎﻝَ : ﻣَﺎ ﺷِﺌﺖَ . ﻗُﻠْﺖُ : ﺍﻟﺮُّﺑْﻊَ . ﻗَﺎﻝَ : ﻣَﺎﺷِﺌْﺖَ ، ﻓَﺈِﻥْ ﺯِﺩْﺕَ ﻓَﻬُﻮَ ﺧَﻴْﺮٌ ﻟَﻚَ . ﻓَﺎﻟﺜُّﻠُﺜَﻴْﻦِ . ﻗَﺎﻝَ : ﻣَﺎﺷِﺌْﺖَ ﻓَﺈِﻥْ ﺯِﺩْﺕَ ﻓَﻬُﻮَ ﺧَﻴْﺮٌﻟَﻚَ . ﻗُﻠْﺖُ : ﺃَﺟْﻌَﻞُ ﻟَﻚَ ﺻَﻼَﺗِﻲ ﻛُﻠَّﻬَﺎ . ﻗَﺎﻝَ : ﺇِﺫَﺍً ﺗُﻜْﻔَﻰ ﻫَﻤُّﻚَ ﻭَﻳُﻐْﻔَﺮُ ﻟَﻚَ ﺫَﻧْﺒُﻚَ . ‏( ﺣﺴﻦ ، ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ ، ﺻﺤﻴﺢ ﺳﻨﻦ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻯ ﻟﻸﻟﺒﺎﻧﻰ ﺍﻟﺠﺰﺀ ﺍﻟﺜﺎﻧﻰ (

“উবাই ইবনু কা’ব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,

আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি আপনার উপর বেশী বেশী দরূদ পাঠ করি। আমি কত সময় দরূদ পড়ব? তিনি বললেন: যত তোমার মন চায়। আমি বললাম, চতুর্থাংশ?

তিনি বললেন: যত মন চায়। তবে আরও বাড়ালে তা তোমার জন্য কল্যাণকর হবে। আমি বললাম, দুই তৃতীয়াংশ? তিনি বললেন: যত মন চায়। তবে আরও বাড়ালে তা তোমার জন্য কল্যাণকর হবে। আমি বললাম, আমি আপনার জন্য পুরো সময়েই দরূদ পড়ব। তিনি বললেন: তাহলে তোমার দুশ্চিন্তা দূর হবে এবং তোমার পাপ ক্ষমা হবে। [23]

পাঁচ - রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য দরূদ পাঠকারীর উপর আল্লাহ তা‘আলা দরূদ পাঠ করেন আর তাঁকে সালামদাতার উপর শান্তি বর্ষণ করেন।

ﻋَﻦْ ﻋَﺒْﺪِﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﻦِ ﺑْﻦِ ﻋَﻮﻑٍ ﺭَﺿِﻲ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ﻗَﺎﻝَ : ﺧَﺮَﺝَ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺣَﺘّﻲ ﺩَﺧَﻞَ ﻧَﺨْﻼً ﻓَﺴَﺠَﺪَ ﻓَﺄَﻃَﺎﻝَ ﺍﻟﺴُّﺠُﻮْﺩَ ﺣَﺘَّﻰ ﺧَﺸِﻴْﺖُ ﺃَﻥْ ﻳَﻜُﻮْﻥَ ﺍﻟﻠﻪُ ﻗَﺪْ ﺗَﻮَﻓَّﺎﻩُ ، ﻗَﺎﻝَ : ﻓَﺠِﺌْﺖُ ﺃَﻧْﻈُﺮُ ﻓَﺮَﻓَﻊَ ﺭَﺃْﺳَﻪُ ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﻣَﺎﻟَﻚَ؟ ﻓَﺬَﻛَﺮْﺕُ ﻟَﻪُ ﺫَﻟِﻚَ . ﻗَﺎﻝَ : ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﺇِﻥَّ ﺟِﺒْﺮِﻳْﻞَ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺍﻟﺴَّﻼَﻡُ ﻗَﺎﻝَ ﻟِﻰ : ﺃَﻻَ ﺃُﺑَﺸِّﺮُﻙَ ﺃَﻥَّ ﺍﻟﻠﻪَ ﻋَﺰَّﻭَﺟَﻞَّ ﻳَﻘُﻮْﻝُ ﻟَﻚَ ﻣَﻦْ ﺻَﻠَّﻰ ﻋَﻠَﻴْﻚَ ﺻَﻼَﺓً ﺻَﻠَّﻴْﺖُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﻣَﻦْ ﺳَﻠَّﻢَ ﻋَﻠَﻴْﻚَ ﺳَﻠَّﻤْﺖُ ﻋَﻠَﻴْﻪ . ‏( ﺻﺤﻴﺢ ، ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺣﻤﺪ ، ﻓﻀﻞ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻨﺒﻰ ﻟﻸﻟﺒﺎﻧﻰ (

“আব্দুর রহমান ইবন ‘আওফ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হয়ে এক খেজুর বাগানে প্রবেশ করলেন। অতঃপর দীর্ঘক্ষণ

সেজদা করলেন। এমন কি আমাদের ভয় হল তাঁর কোনো মৃত্যু হয়ে গেল নাকি। আমি তাঁকে দেখতে আসলাম তখন তিনি মাথা উঠালেন এবং বললেন: তোমার কি হল? আমি তাঁকে আমাদের ভয়ের কথা ব্যক্ত করলাম।

তারপর তিনি বললেন: জিবরীল আলাইহিস সালাম আমাকে বললেন: আমি কি আপনাকে এই সু-সংবাদ দেব না যে, আল্লাহ তা‘আলা বলছেন: “যে ব্যক্তি আপনার উপর দরূপ পাঠ করবে, আমি তার উপর দরূদ পাঠ করব। আর যে ব্যক্তি আপনাকে সালাম করবে আমি তার উপর শান্তি নাযিল করব”। [24]

ছয়- সকাল-বিকাল দশবার করে দরূদ পড়া,

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুপারিশ অর্জনের বড় কারণ।

ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻰ ﺍﻟﺪَّﺭْﺩﺍﺀِ ﺭﺿِﻲ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ﻗَﺎﻝَ : ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : ﻣَﻦْ ﺻَﻠَّﻲ ﻋَﻠَﻲَّ ﺣِﻴْﻦَ ﻳُﺼْﺒِﺢُ ﻋَﺸْﺮًﺍ ﻭَﺣِﻴْﻦَ ﻳُﻤْﺴِﻲ ﻋَﺸْﺮًﺍ ﺃَﺩْﺭَﻛَﺘْﻪُ ﺷَﻔَﺎﻋَﺘِﻲ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ . ‏( ﺣﺴﻦ ، ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﻄﺒﺮﺍﻧﻲ ، ﺻﺤﻴﺢ ﺍﻟﺠﺎﻣﻊ ﺍﻟﺼﻐﻴﺮ ﻟﻸﻟﺒﺎﻧﻰ (

“আবুদ দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার উপর সকালে দশ বার দরূদ পড়বে এবং সন্ধ্যায় দশবার দরূদ পড়বে, সে ব্যক্তি কিয়ামতের দিন আমার সুপারিশ লাভে ধন্য হবে। [25]

নয়- দরূদ পাঠ করা দো‘আ কবুল হওয়ার কারণ।

দো‘আ করা আগে ও পরে দরূদ পাঠ করা দ্বারা দো‘আ কবুল হয়। আর যদি দরূদ পাঠ করা না হয়, তাহলে দো‘আ কবুল হয় না।

ﻋَﻦْ ﻋَﺒْﺪِﺍﻟﻠﻪِ ﺑْﻦِ ﻣَﺴْﻌُﻮْﺩٍ ﺭَﺿِﻲ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ﻗَﺎﻝَ : ﻛُﻨْﺖُ ﺃُﺻَﻠّﻲ ﻭَﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻭَﺃَﺑُﻮْ ﺑَﻜْﺮٍ ﻭَﻋُﻤَﺮُ ﺭَﺿِﻲ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨْﻬُﻤَﺎ ﻣَﻌَﻪُ ، ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﺟَﻠَﺴْﺖُ ﺑَﺪَﺃْﺕُ ﺑِﺎﻟﺜَّﻨَﺎﺀِ ﻋَﻠَﻲ ﺍﻟﻠﻪِ ﺛُﻢَّ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓِ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻨَّﺒِﻰِّ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺛُﻢَّ ﺩَﻋَﻮْﺕُ ﻟِﻨَﻔْﺴِﻲ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻰُّ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : ﺳَﻞْ ﺗُﻌْﻄَﻪْ ، ﺳَﻞْ ﺗُﻌْﻄَﻪْ . ‏( ﺣﺴﻦ ، ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ ، ﺻﺤﻴﺢ ﺳﻨﻦ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻯ ﻟﻸﻟﺒﺎﻧﻰ ﺍﻟﺠﺰﺀ ﺍﻷﻭﻝ (

“আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি সালাত আদায় করছিলাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং আবুবকর রাদিয়াল্লাহু আনহু ও উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁর সাথে ছিলেন। যখন আমি বসলাম তখন প্রথমে আল্লাহর প্রশংসা তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ পাঠ করলাম। অতঃপর নিজের জন্য দো‘আ করলাম। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তুমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা কর,

তোমাকে অবশ্যই দেওয়া হবে। তুমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা কর তোমাকে অবশ্যই দেওয়া হবে। [26]

নয়- দরূদ পাঠকারীকে আল্লাহ তা‘আলা দশবার স্মরণ করেন।

যে ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একবার দরূদ পাঠ করে আল্লাহ তা‘আলা তার উপর দশবার দরূদ পাঠ করেন।

ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻰ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ ﺭَﺿِﻲ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ﺃَﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗَﺎﻝ : ﻣَﻦْ ﺻَﻠَّﻲ ﻋَﻠَﻲَّ ﻭَﺍﺣِﺪَﺓً ﺻَﻠَّﻲ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻋَﺸْﺮًﺍ . ‏( ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ ، ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻨﺒﻰ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ (

“আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরূদ পড়বে আল্লাহ তা‘আলা তার প্রতি দশবার দরূদ পাঠ করেন। [27]

দশ- একবার দরূদ পাঠকারীর উপর আল্লাহ তা‘আলা দশবার দরূদ পাঠ করেন। আর একবার সালামকারীর উপর দশটি শান্তি বর্ষণ করেন। প্রমাণ:

ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻰ ﻃَﻠْﺤَﺔَ ﺭَﺿِﻲ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ﺃﻥَّﻩ ﻗﺎﻝ ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ , ﺟَﺎﺀ ﺫَﺍﺕَ ﻳَﻮْﻡٍ ﻭَﺍﻟْﺒُﺸْﺮَﻯ ﻓِﻲ ﻭَﺟْﻬِﻪِ ﻓَﻘُﻠْﻨَﺎ ﺇِﻧَّﺎ ﻟَﻨَﺮَﻯ ﺍﻟﺒُﺸْﺮَﻯ ﻓِﻰ ﻭَﺟْﻬِﻚَ ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﺇِﻧَّﻪُ ﺃَﺗَﺎﻧِﻰ ﺍﻟْﻤَﻠَﻚُ ﺟِﺒْﺮِﻳْﻞُ ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﻳَﺎ ﻣُﺤَﻤَّﺪُ ﺇِﻥَّ ﺭَﺑَّﻚَ ﻳَﻘُﻮْﻝُ ﺃَﻣَﺎ ﻳُﺮَﺿِﻴْﻚَ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺃَﻧَّﻪُ ﻻَﻳُﺼَﻠِّﻲ ﻋَﻠَﻴْﻚَ ﺃَﺣَﺪٌ ﺇِﻻَّ ﺻَﻠَّﻴْﺖُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻋَﺸْﺮًﺍ , ﻭَﻻَ ﻳُﺴَﻠِّﻢْ ﻋَﻠَﻴْﻚَ ﺃَﺣَﺪٌ ﺇِﻻَّ ﺳَﻠَّﻤْﺖُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻋَﺸْﺮًﺍ . ‏( ﺣﺴﻦ ، ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﻨﺴﺎﺋﻲ ، ﺻﺤﻴﺢ ﺳﻨﻦ ﺍﻟﻨﺴﺎﺋﻰ ﻟﻸﻟﺒﺎﻧﻰ ﺍﻟﺠﺰﺀ ﺍﻷﻭﻝ (

“আবু তালহা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আগমন করলেন। তখন তাঁর চেহারা আনন্দে উজ্জ্বল ছিল। আমরা বললাম, আমরা আপনার চেহারাতে আনন্দের নিদর্শন দেখছি। তখন তিনি বললেন, আমার কাছে জিবরীল আলাইহিস সালাম এসে এ

কথার সুসংবাদ দিয়েছেন যে, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, আপনি কি এতে সন্তুষ্ট নন, যে ব্যক্তি আপনার উপর দরূদ পড়বে আমি তার উপর দশবার দরূদ পাঠ করব। আর যে ব্যক্তি আপনাকে একবার সালাম করবে আমি তার উপর দশটি শান্তি বর্ষণ করব। [28]

এগার- একবার দরূদ পাঠ করলে আমল নামায় দশটি পূণ্য লেখা হয়।

ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ ﺭَﺿِﻲ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ﻗَﺎﻝَ : ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : ﻣَﻦْ ﺻَﻠَّﻲ ﻋَﻠَﻲَّ ﻣَﺮَّﺓً ﻭَﺍﺣِﺪَﺓً ﻛَﺘَﺐَ ﺍﻟﻠﻪُ ﻟَﻪُ ﻋَﺸْﺮَ ﺣَﺴَﻨَﺎﺕٍ . ‏( ﺭَﻭَﺍﻩُ ﺇِﺳْﻤَﺎﻋِﻴْﻞُ ﺍﻟْﻘَﺎﺿِﻲُّ ﻓِﻲ ﻓَﻀْﻞِ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓِ ﻋَﻠَﻲ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ (

“আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরূদ পড়ে আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য দশটি ছাওয়াব লিখে দেন।” [29]

বারো- যতক্ষণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ পাঠ করা হয়, ততক্ষণ ফেরেশতারা তার জন্য রহমতের দো‘আ করতে থাকেন।

ﻋَﻦْ ﻋَﺎﻣِﺮِ ﺑْﻦِ ﺭَﺑِﻴْﻌَﺔَ ﺭَﺿِﻲ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ﻗَﺎﻝ : ﺳَﻤِﻌْﺖُ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲَّ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳَﻘُﻮْﻝُ : ﻣَﺎ ﻣِﻦْ ﻋَﺒْﺪٍ ﻳُﺼَﻠِّﻲ ﻋَﻠَﻲَّ ﺇِﻻَّ ﺻَﻠَّﺖْ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺍﻟْﻤَﻼَﺋِﻜَﺔُ ﻣَﺎ ﺻَﻠَّﻲ ﻋَﻠَﻲَّ ﻓَﻠْﻴُﻘِﻞَّ ﺃَﻭْ ﻟَﻴُﻜْﺜِﺮْ . ) ﺭَﻭَﺍﻩُ ﺇِﺳْﻤَﺎﻋِﻴْﻞ ﺍﻟْﻘَﺎﺿِﻲ ﻓِﻰ ﻓَﻀْﻞِ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓِ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ (

“আমের ইবনু রাবী‘আহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোনো ব্যক্তি যখন আমার উপর দরূদ পাঠ করে, তখন সে যতক্ষণ পড়তে থাকবে ততক্ষণ ফিরিশতারা তার জন্য রহমতের দো‘আ করতে থাকে, অতএব কম বেশ পড়া তার ইচ্ছাধীন ব্যাপার। [30]

আব্দুল্লাহ মাসউদ হতে একটি মারফু হাদিসে বর্ণিত, তিনি বলেন,

" ﺇﻥ ﺃﻭﻟﻰ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﺑﻲ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﻘﻴﺎﻣﺔ ﺃﻛﺜﺮﻫﻢ ﻋﻠﻲ ﺻﻼﺓ ." ﻭﺣﺴﻨﻪ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ ﻭﺻﺤﺤﻪ ﺍﺑﻦ ﺣﺒﺎﻥ

“কিয়ামতের দিন সর্বাধিক উত্তম ব্যক্তি সে হবে যে আমার উপর অধিক পরিমাণে দরূদ পড়বে। তিরমিযী হাদিসটি হাসান বলেছেন এবং ইবনে হিব্বান সহীহ বলেছেন”। [31]

তেরো : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাম দাতার সালামের উত্তর দান করেন।

ﻋَﻦْ ﺃِﺑِﻲ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ ﺭَﺿِﻲ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : ﻣَﺎ ﻣِﻦْ ﺃَﺣَﺪٍ ﻳُﺴَﻠِّﻢُ ﻋَﻠَﻲَّ ﺇِﻻَّ ﺭَﺩَّ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻲَّ ﺭُﻭْﺣِﻲ ﺣَﺘَّﻲ ﺃَﺭُﺩَّ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺍﻟﺴَّﻼَﻡَ . ‏( ﺣﺴﻦ ، ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺑﻮﺩﺍﻭﺩ ، ﻓﻀﻞ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻨﺒﻰ ﻟﻸﻟﺒﺎﻧﻰ ‏)

“আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবী

সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন কোনো ব্যক্তি আমাকে সালাম করে তখন আল্লাহ তা‘আলা আমার রূহ ফিরিয়ে দেন এবং আমি তার সালামের উত্তর দেই।” [32]

বিঃ দ্রঃ- বিভিন্ন হাদীসে দরূদ পাঠের প্রতিদান ভিন্ন ধরণের বর্ণিত আছে। তা বাস্তবে পাঠকারীর ইখলাস, ঈমান ও পরহেজগারী এবং নিয়তের উপর নির্ভরশীল।
যার এখলাস যত বেশি হবে, সে সাওয়াব ও তত বেশি পাবে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ শরীফ পাঠ করার গুরুত্ব

এক. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম শোনে দরূদ পড়া:

কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম শুনে যে ব্যক্তি দরূদ পড়ে না তার জন্য তিনি বদ-দো‘আ করেছেন। প্রমাণ:

ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻰ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ ﺭَﺿِﻲ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ﻗَﺎﻝَ : ﻗَﺎﻝَ : ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : ﺭَﻏِﻢَ ﺃَﻧْﻒُ ﺭَﺟُﻞٍ ﺫَﻛََﺮْﺕُ ﻋِﻨْﺪَﻩُ ﻓَﻠَﻢْ ﻳُﺼَﻞِّ ﻋَﻠَﻲَّ ﻭَﺭَﻏِﻢَ ﺃَﻧْﻒُ ﺭَﺟُﻞٍ ﺩَﺧَﻞَ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥُ ﺛُﻢَّ ﺍﻧْﺴَﻠَﺦَ ﻗَﺒْﻞَ ﺃَﻥْ ﻳُﻐْﻔَﺮَ ﻟَﻪُ ، ﻭَﺭَﻏِﻢَ ﺃَﻧْﻒُ ﺭَﺟُﻞٍ ﺃَﺩْﺭَﻙَ ﻋِﻨْﺪَﻩُ ﺃَﺑْﻮَﺍﻩُ ﺍﻟْﻜِﺒَﺮَ ﻓَﻠَﻢْ ﻳُﺪْﺧِﻼَﻩُ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔَ . ‏( ﺻﺤﻴﺢ ، ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ ، ﺻﺤﻴﺢ ﺳﻨﻦ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻯ ﻟﻸﻟﺒﺎﻧﻰ ﺍﻟﺠﺰﺀ ﺍﻟﺜﺎﻟﺚ . (

“আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সেই ব্যক্তি লাঞ্ছিত হোক যার কাছে আমার নাম নেওয়া হল কিন্তু সে আমার উপর দরূদ পড়ল না। সে ব্যক্তি লাঞ্ছিত হোক যার কাছে রমযান মাস আসল কিন্তু সে নিজের পাপ ক্ষমা করাতে পারল
না। আর সে ব্যক্তিও লাঞ্চিত হোক যে পিতা-মাতাকে বৃদ্ধাবস্থায় পেল, কিন্তু তারা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাতে পারল না। [33]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম শোনার পর দরূদ না পড়লে তাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বদ-দোআ করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম শুনে যে ব্যক্তি দরূদ পড়ে না তার জন্য জিবরীল আলাইহিস সালাম বদ-দো‘আ করেছেন আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমীন বলেছেন।

ﻋَﻦْ ﻛَﻌْﺐِ ﺑْﻦِ ﻋُﺠْﺮَﺓَ ﺭَﺿِﻲ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ﻗَﺎﻝَ : ﻗَﺎﻝَ : ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : ﺃُﺣْﻀُﺮُﻭْﺍ ﺍﻟْﻤِﻨْﺒَﺮَ، ﻓَﺤَﻀَﺮْﻧَﺎ ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﺍﺭْﺗَﻘَﻰ ﺍﻟﺪَّﺭَﺟَﺔَ ﻗَﺎﻝَ : ﺁﻣِﻴْﻦَ ، ﺛُﻢَّ ﺍﺭْﺗَﻘَﻲ ﺍﻟﺪَّﺭﺟَﺔَ ﺍﻟﺜَّﺎﻧِﻴَﺔَ ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﺁﻣِﻴْﻦَ ، ﺛُﻢَّ ﺍﺭْﺗَﻘَﻲ ﺍﻟﺪَّﺭَﺟَﺔَ ﺍﻟﺜَّﺎﻟِﺜَﺔَ ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﺁﻣِﻴْﻦَ ، ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﻓَﺮَﻍَ ﻧَﺰَﻝَ ﻋَﻦْ ﺍﻟْﻤِﻨْﺒَﺮِ ﻗَﺎﻝَ : ﻓَﻘُﻠْﻨَﺎ ﻟَﻪُ : ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮْﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻟَﻘَﺪْ ﺳَﻤِﻌْﻨَﺎ ﻣِﻨْﻚَ ﺍﻟْﻴَﻮْﻡَ ﺷَﻴْﺌُﺎ ﻣَﺎ ﻛُﻨَّﺎ ﻧَﺴْﻤَﻌُﻪُ . ﻗَﺎﻝَ : ﺇِﻥَّ ﺟِﺒْﺮِﻳْﻞَ ﻋَﺮَﺽَ ﻟِﻲ ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﺑَﻌُﺪَ ﻣَﻦْ ﺃَﺩْﺭَﻙَ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﻓَﻠَﻢْ ﻳُﻐْﻔَﺮْ ﻟَﻪُ ، ﻓَﻘُﻠْﺖُ : ﺁﻣِﻴْﻦَ ، ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﺭَﻗِﻴْﺖُ ﺍﻟﺜَّﺎﻟِﺜَﺔَ ﻗَﺎﻝَ : ﺑَﻌُﺪَ ﻣَﻦْ ﺃَﺩْﺭَﻙَ ﺃَﺑَﻮَﻳْﻪِ ﺍﻟْﻜِﺒَﺮَﺃَﻭْ ﺃَﺣَﺪَﻫُﻤَﺎ ﻓَﻠَﻢْ ﻳُﺪَﺧِﻼَﻩَ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔَ . ﻓَﻘُﻠْﺖُ : ﺁﻣِﻴْﻦَ . ‏( ﺻﺤﻴﺢ ، ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺤﺎﻛﻢ ، ﻓﻀﻞ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻨﺒﻰ ﻟﻸﻟﺒﺎﻧﻰ ‏)

“কা‘ব ইবনু উজরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা মিম্বরের কাছে একত্রিত হও। আমরা উপস্থিত হলাম। যখন তিনি
মিম্বরের প্রথম স্তরে চড়লেন তখন বললেন, হে আল্লাহ কবুল করুন। তারপর যখন দ্বিতীয় স্তরে চড়লেন তখনও বললেন, হে আল্লাহ কবুল করুন। তারপর তৃতীয় স্তরে চড়ে আবারও বললেন, হে আল্লাহ কবুল করুন। খুতবা শেষে যখন মিম্বর থেকে অবতরণ করলেন, তখন আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আজ আমরা আপনার থেকে এমন কিছু শুনলাম যা এর পূর্বে আর কখনও শুনিনি। তখন তিনি বললেন, আমার কাছে জিবরীল আলাইহিস সালাম এসে বলল, যে ব্যক্তি রমযান পেয়েও তাকে ক্ষমা করা হল না সে বঞ্চিত হোক। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহ কবুল করুন। যখন দ্বিতীয় স্তরে চড়লাম তখন তিনি বললেন, যার কাছে আপনার নাম উল্লেখ করা হল কিন্তু সে আপনার উপর দরূদ পড়ল না, সেও বঞ্চিত হোক। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহ কবুল করুন। যখন তৃতীয় স্তরে চড়লাম, তখন তিনি বললেন, যে পিতা-মাতাকে অথবা তাদের কোনো একজনকে বৃদ্ধাবস্থায় পেয়েও তারা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাতে পারল না সেও বঞ্চিত হোক। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহ কবুল করুন। [34]

দুই. যে ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ পড়ে না সে প্রকৃত

কৃপণ:

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর যে দরূদ পড়ে না তাকে তিনি কৃপণ বলে আখ্যায়িত করেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম শোনার পর সাথে সাথে তার উপর দরূদ পড়তে হবে। প্রমাণ:

ﻋﻦْ ﻋَﻠِﻲِّ ﺭَﺿِﻲ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ﻗَﺎﻝَ : ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : ﺍﻟْﺒَﺨِﻴْﻞُ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻣَﻦْ ﺫُﻛِﺮْﺕُ ﻋِﻨْﺪَﻩُ ﻓَﻠَﻢْ ﻳُﺼَﻞِّ ﻋَﻠَﻲَّ . ‏( ﺻﺤﻴﺢ ، ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ ، ﺻﺤﻴﺢ ﺳﻨﻦ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻯ ﺍﻟﺠﺰﺀ ﺍﻟﺜﺎﻟﺚ ‏)

“আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সেই ব্যক্তি প্রকৃত কৃপণ, যার কাছে আমার নাম নেওয়া হল কিন্তু সে আমার উপর দরূদ পড়ল না। [35]

ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﺫﺭ ﺭَﺿِﻲ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ﺃَﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗَﺎﻝَ : ﺇِﻥَّ ﺃَﺑْﺨَﻞَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ ﻣَﻦْ ﺫُﻛِﺮْﺕُ ﻋِﻨْﺪَﻩُ ﻓَﻠَﻢْ ﻳُﺼَﻞِّ ﻋَﻠَﻲَّ . ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺳﻤﺎﻋﻴﻞ ﺍﻟﻘﺎﺿﻲ ﻓﻲ ﻓﻀﻞ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ، ﻓﻀﻞ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻨﺒﻰ ﻟﻸﻟﺒﺎﻧﻰ ‏)

“আবু যার রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সেই ব্যক্তি বড় কৃপণ, যার কাছে আমার নাম নেওয়া হল, কিন্তু সে আমার উপর দরূদ পড়ল না। [36]

ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﺫﺭ - ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ - ﻗﺎﻝ : ‏« ﺧﺮﺟﺖ ﺫﺍﺕ ﻳﻮﻡ ﻓﺄَﺗَﻴﺘْﺖُ ﺭﺳﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺁﻟﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﻗﺎﻝ : ‏« ﺃﻻ ﺃﺧﺒﺮﻛﻢ ﺑﺄﺑﺨﻞ ﺍﻟﻨﺎﺱ؟ ‏» ﻗﺎﻟﻮﺍ : ‏« ﺑﻠﻰ ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ‏» . ﻗﺎﻝ : ‏« ﻣَﻦْ ﺫُﻛِﺮْﺕُ ﻋِﻨْﺪَﻩُ ﻓَﻠَﻢْ ﻳُﺼَﻞّ ﻋَﻠَﻲَّ ﻓَﺬّﻟِﻚَ ﺃﺑﺨَﻞُ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ ‏» ‏( ﺻﺤﻴﺢ ﺭﻭﺍﻩ ﺍﺑﻦ ﺃﺑﻲ ﻋﺎﺻﻢ ﻓﻲ ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﺼﻼﺓ ‏) .

“আবু যর রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ঘর থেকে বের হয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে আসলে, তিনি আমাকে বলেন, আমি কি তোমাদের সত্যিকার কৃপণ ব্যক্তি কে সে সম্পর্কে বলে দেব? সাহাবীরা বললেন, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন, সেই সত্যিকার কৃপণ যার সামনে আমার নাম আলোচনা করা হল, অথচ সে আমার উপর দরূদ পাঠ করল না।

তিন. দরূদ না পড়া অনুতাপের কারণ হয়:

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ পাঠ না করা কিয়ামতের দিন অনুতাপের কারণ হবে। প্রমাণ:

ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ ﺭَﺿِﻲ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ﻗَﺎﻝَ : ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : ﻣَﺎ ﻗَﻌَﺪَ ﻗَﻮْﻡٌ ﻣَﻘْﻌَﺪًﺍ ﻟَﻢْ ﻳَﺬْﻛُﺮُﻭْﺍ ﻓِﻴْﻪِ ﺍﻟﻠﻪَ ﻋَﺰَّ ﻭَﺟَﻞَّ ﻭَﻳُﺼﻠُّﻮﺍ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻨَّﺒﻲِّ ﺇِﻻَّ ﻛَﺎﻥَ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﺣَﺴْﺮَﺓً ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ ﻭَﺇِﻥْ ﺩَﺧَﻠُﻮْﺍ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔَ ﻟﻠﺜَّﻮَﺍﺏِ . ‏( ﺻﺤﻴﺢ ، ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺣﻤﺪ ﻭﺍﺑﻦ ﺣﺒﺎﻥ ﻭﺍﻟﺤﺎﻛﻢ ﻭﺍﻟﺨﻄﻴﺐ، ﺳﻠﺴﻠﺔ ﺍﻷﺣﺎﺩﻳﺚ ﺍﻟﺼﺤﻴﺤﺔ ﻟﻸﻟﺒﺎﻧﻰ ﺍﻟﺠﺰﺀ ﺍﻷﻭﻝ (

“আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে মজলিসে লোকেরা আল্লাহর যিকির করে না এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ পড়ে না,
সেই মজলিস কিয়ামতের দিন তাদের জন্য অনুতাপের কারণ হবে। যদিও নেক আমলের কারণে জান্নাতে চলে যায়। [37]
যখন কোথাও মজলিস বা অনুষ্ঠান হবে, তখন তাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ পড়া ও আল্লাহর যিকির করা খুবই জরুরী। অন্যথায় তা আমাদের জন্য অনুতাপ ও পরিতাপের কারণ হবে।

চার. দরূদ পাঠ করা জান্নাতের পথকে সুগম করে:

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ পাঠ না করা জান্নাত থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণ হবে। প্রমাণ:


ﻋَﻦْ ﺍﺑْﻦِ ﻋَﺒّﺎﺱٍ ﺭَﺿِﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋَﻨْﻪُ ﻗَﺎﻝَ : ﻗَﺎﻝَ : ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : ﻣَﻦْ ﻧَﺴِﻲَ ﺍﻟﺼَّﻼﺓَ ﻋَﻠَﻲَّ ﺧَﻄِﻰﺀَ ﻃَﺮِﻳْﻖَ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔِ .
) ﺻﺤﻴﺢ ، ﺭﻭﺍﻩ ﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﻪ ، ﺻﺤﻴﺢ ﺳﻨﻦ ﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﺔ ﺍﻟﺠﺰﺀ ﺍﻷﻭﻝ .(

“আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার উপর দরূদ পড়া ভুলে যাবে সে জান্নাতের রাস্তা ভুলে যাবে। [38]

পাঁচ. দরূদ দো‘আ কবুল হওয়ার পূর্ব শর্ত:


যে দো‘আর পূর্বে দরূদ পড়া হয় না সেই দো‘আ
আল্লাহর দরবারে কবুল হয় না। দো‘আ করার পূর্বে অবশ্যই দুরূদ পড়তে হবে।


ﻋَﻦْ ﺍَﻧﺲِ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ﻗَﺎﻝَ : ﻗَﺎﻝَ : ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : ﻛُﻞُّ ﺩُﻋَﺎﺀٍ ﻣَﺤْﺠُﻮْﺏٌ ﺣَﺘَّﻰ ﻳُﺼَﻠّﻰ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻨَّﺒِﻰِّ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ . ‏( ﺣﺴﻦ ، ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﻄﺒﺮﺍﻧﻰ ، ﺳﻠﺴﻠﺔ ﺍﻷﺣﺎﺩﻳﺚ ﺍﻟﺼﺤﻴﺤﺔ ﻟﻸﻟﺒﺎﻧﻰ ﺍﻟﺠﺰﺀ ﺍﻟﺨﺎﻣﺲ (

“আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যতক্ষণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ পড়া হবে না ততক্ষণ দো‘আ কবুল করা হয় না। [39]

দরূদ শরীফের মাসনূন শব্দসমূহ

আমাদের দেশে নবী সা. এর উপর দরূদ পড়ার বিভিন্ন শব্দ পাওয়া যার অধিকাংশই হাদিস দ্বারা প্রমাণিত বা স্বীকৃত কোনো দরূদ নয়। এগুলো সবই মনগড়া, বানানো ও জাল হাদিসের বৃত্তিতে আমাদের কাছে পৌছেছে। সুতরাং, এ সব মনগড়া, বানানো ও জাল দরূদ থেকে বিরত থাকতে হবে এবং বিশুদ্ধ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত দরূদের অনুসরণ করতে হবে। নিম্নে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত দরূদের শব্দগুলো দেওয়া হল-


(১)
ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﺣُﻤَﻴْﺪٍ ﺍﻟﺴَّﺎﻋِﺪِﻱ ﺭَﺿِﻲ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ﺃَﻧَّﻬُﻢْ ﻗَﺎﻟُﻮْﺍ : ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮْﻝَ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻛَﻴْﻒَ ﻧُﺼَﻠّﻲ ﻋَﻠَﻴْﻚَ؟ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮْﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : ﻗُﻮْﻟُﻮﺍ : ﺍﻟﻠَّﻬُﻢ ﺻَﻞِّ ﻋَﻠﻰ ﻣُﺤَﻤَّﺪٍ ﻭَﺃَﺯْﻭَﺍﺟِﻪِ ﻭﺫُﺭِّﻳَﺘِﻪِ ﻛَﻤَﺎ ﺻَﻠَّﻴْﺖَ ﻋَﻠَﻰ ﺁﻝِ ﺇِﺑْﺮَﺍﻫِﻴْﻢَ ﻭَﺑَﺎﺭِﻙْ ﻋَﻠَﻰ ﻣَﺤَﻤَّﺪٍ ﻭَﺃَﺯْﻭَﺍﺟِﻪِ ﻭَﺫﺭِّﻳَﺘِﻪِ ﻛَﻤَﺎ ﺑَﺎﺭَﻛْﺖَ ﻋَﻠَﻰ ﺁﻝَ ﺇِﺑْﺮَﺍﻫِﻴْﻢَ ﺇِﻧَّﻚَ ﺣَﻤِﻴْﺪٌ ﻣَﺠِﻴْﺪٌ . ‏( ﺻﺤﻴﺢ ، ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ، ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻷﻧﺒﻴﺎﺀ ، ﺑﺎﺏ ﻗﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻭﺍﺗﺨﺬ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﺑﺮﺍﻫﻴﻢ ﺧﻠﻴﻼ ( .

“আবু হুমাইদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ছাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন: ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার উপর দরূদ পড়ব কিভাবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তোমরা বল

‘আল্লাহুম্মা ছাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আযওয়াজিহী ওয়া যুররিয়্যাতিহী কামা ছাল্লাইতা ‘আলা আলি ইবরাহীমা, ওয়া বারিক ‘আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আযওয়াজিহী ওয়া যুররিয়্যাতিহী কামা বারাকতা ‘আলা আলি ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম্মাজীদ’।
অর্থাৎ, হে আল্লাহ! মুহাম্মদ এবং তাঁর পত্নীগণ ও সন্তানদের প্রতি এমনভাবে দরূদ পাঠ কর যেমনভাবে করেছ ইব্রাহীমের পরিবার-পরিজনের উপর। হে আল্লাহ! মুহাম্মদ এবং তাঁর পত্নীগণ ও সন্তানদের প্রতি এমনভাবে বরকত অবতীর্ণ কর যেমনভাবে করেছ ইব্রাহীমের পরিবার-পরিজনের উপর। নিশ্চয় তুমি মহান এবং সুপ্রশংসিত।[40]


(২)

ﻋَﻦْ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﻦِ ﺑْﻦِ ﺃَﺑِﻲ ﻟَﻴْﻠَﻰ ﺭَﺿِﻲ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ﻗَﺎﻝَ : ﻟَﻘِﻴَﻨِﻲ ﻛَﻌْﺐُ ﺑْﻦُ ﻋُﺠْﺮَﺓَ ﺭَﺿِﻲ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻴْﻪُ ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﺃَﻻَ ﺃُﻫْﺪِﻱ ﻟَﻚَ ﻫَﺪِﻳَّﺔً ﺳَﻤِﻌْﺘُﻬﺎ ﻣِﻦْ ﺍﻟﻨّﺒﻰ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ؟ ﻓَﻘُﻠْﺖُ ﺑَﻠَﻰ ﻓَﺄَﻫْﺪِﻫَﺎ ﻟِﻲ ! ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﺳَﺄَﻟْﻨَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﻛَﻴْﻒَ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓُ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﺃَﻫْﻞِ ﺍﻟْﺒَﻴْﺖِ ﻓَﺈِﻥَّ ﺍﻟﻠﻪَ ﻗَﺪْ ﻋَﻠَّﻤَﻨَﺎ ﻛَﻴْﻒَ ﻧُﺴَﻠِّﻢُ ﻋَﻠَﻴْﻚَ ؟ ﻗُﻮﻟُﻮْﺍ : ﺍﻟﻠﻬُﻢَّ ﺻَﻞِّ ﻋَﻠَﻰ ﻣُﺤَﻤَّﺪٍ ﻭَﻋَﻠَﻰ ﺁﻝِ ﻣُﺤَﻤَّﺪٍ ﻛَﻤَﺎ ﺻَﻠَّﻴْﺖَ ﺇِﺑْﺮَﺍﻫِﻴْﻢَ ﻭَﻋَﻠَﻰ ﺁﻝِ ﺇِﺑْﺮَﺍﻫِﻴْﻢَ ﺇِﻧَّﻚَ ﺣَﻤِﻴْﺪٌ ﻣَﺠِﻴْﺪٌ , ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺑَﺎﺭِﻙْ ﻋَﻠَﻰ ﻣُﺤَﻤَّﺪٍ ﻭَﻋَﻠَﻰ ﺁﻝِ ﻣُﺤَﻤَّﺪٍ ﻛَﻤَﺎ ﺑَﺎﺭَﻛْﺖَ ﻋَﻠَﻰ ﺇِﺑْﺮَﺍﻫِﻴْﻢَ ﻭَﻋَﻠَﻰ ﺁﻝِ ﺇِﺑْﺮَﺍﻫِﻴْﻢَ ﺇِﻧَّﻚَ ﺣَﻤِﻴْﺪٌ ﻣَﺠِﻴْﺪٌ . ‏( ﺻﺤﻴﺢ ، ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻷﻧﺒﻴﺎﺀ ، ﺑﺎﺏ ﻗﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻭﺍﺗﺨﺬ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﺑﺮﺍﻫﻴﻢ ﺧﻠﻴﻼ (.

“আব্দুর রহমান ইবনু আবি লায়লা
রাহিমাহুল্লাহ বলেন, আমার সাথে কা‘ব ইবনু উজরার সাক্ষাৎ হল, তিনি বললেন: আমি কি সেই হাদিয়াটুকু তোমার কাছে পৌঁছাব না যা আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি? আমি বললাম, অবশ্যই আপনি আমাকে সেই হাদিয়া দেন। তারপর বললেন: আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি এবং আহলে বাইতের উপর কিভাবে সালাত তথা দরূদ পাঠ করব?
কেননা আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে আপনাকে কিভাবে সালাম জানাব তা বলে দিয়েছেন। তিনি বললেন: তোমরা বল:
‘আল্লাহুম্মা ছাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিন ওয়া ‘আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা ছাল্লাইতা ‘আলা ইবরাহীমা ওয়া ‘আলা আলি ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম্মাজীদ। ‘আল্লাহুম্মা বারিক ‘আলা মুহাম্মাদিন ওয়া ‘আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা কারাকতা ‘আলা ইবরাহীমা ওয়া ‘আলা আলি ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম্মাজীদ।

অর্থাৎ, হে আল্লাহ! মুহাম্মদ এবং তাঁর পরিবার-পরিজনদের উপর এমনভাবে দরূদ পাঠ কর যেমনভাবে করেছ ইব্রাহীম ও তাঁর পরিবার-পরিজনের উপর, নিশ্চয় তুমি মহান এবং প্রশংসিত। হে আল্লাহ! মুহাম্মদ এবং তাঁর পরিবার-পরিজনদের উপর এমনভাবে বরকত দাও যেমনভাবে দিয়েছ ইব্রাহীম ও তাঁর পরিবার-পরিজনের উপর। নিশ্চয় তুমি মহান এবং প্রশংসিত।[41]

(৩)

ﻋَﻦْ ﻋُﻘْﺒَﺔَ ﺑْﻦِ ﻋَﻤْﺮٍﻭ ﺭَﺿِﻲ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ﺃَﺗَﻲ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺭَﺟُﻞٌ ﺣَﺘّﻰ ﺟَﻠَﺲَ ﺑَﻴْﻦَ ﻳَﺪَﻳْﻪِ , ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺃَﻣَّﺎ ﺍﻟﺴَّﻼَﻡُ ﻋَﻠَﻴْﻚَ ﻓَﻘَﺪْ ﻋَﺮَﻓَﻨَﺎﻩُ , ﻭَﺃَﻣَّﺎ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓُ ﻓَﺄَﺧْﺒِﺮْﻧَﺎ ﺑِﻬَﺎ ﻛَﻴْﻒَ ﻧُﺼَﻠِّﻰ ﻋَﻠَﻴْﻚَ؟ ﻓَﺼَﻤَﺖَ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺣَﺘَّﻰ ﻭَﺩَﺩْﻧَﺎ ﺃَﻥَّ ﺍﻟﺮَّﺟُﻞَ ﺍﻟَّﺬِﻯ ﺳَﺄَﻟَﻪُ ﻟَﻢْ ﻳَﺴْﺄَﻟْﻪُ . ﺛُﻢَّ ﻗَﺎﻝَ : ﺇِﺫَﺍ ﺻَﻠَّﻴْﺘُﻢْ ﻋَﻠَﻲ ﻓَﻘُﻮْﻟُﻮﺍ : ﺍﻟﻠﻬُﻢَّ ﺻَﻞِّ ﻋَﻠَﻰ ﻣُﺤَﻤَّﺪٍ ﺍﻟﻨَﺒﻰّ ﺍﻷُﻣِﻲِّ ﻭَﻋَﻠَﻰ ﺁﻝِ ﻣُﺤَﻤَّﺪٍ ﻛَﻤَﺎ ﺻَﻠَّﻴْﺖَ ﻋَﻠَﻰ ﺇِﺑْﺮَﺍﻫِﻴْﻢَ ﻭَﻋَﻠَﻰ ﺁﻝِ ﺇِﺑْﺮَﺍﻫِﻴْﻢَ ﺇِﻧَّﻚَ ﺣَﻤِﻴْﺪٌ ﻣَﺠِﻴْﺪٌ . ‏( ﺣﺴﻦ ، ﺭﻭﺍﻩ ﺇﺳﻤﺎﻋﻴﻞ ﺍﻟﻘﺎﺿﻲ ﻓﻲ ﻓﻀﻞ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻋﻠﻲ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ، ﻓﻀﻞ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻨﺒﻰ ﻟﻸﻟﺒﺎﻧﻰ .(

“উকবা ইবনু আমের রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে এসে বসল এবং বলল: ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনাকে কিভাবে সালাম জানাব তা আমরা জানি। তবে আপনার উপর কিভাবে সালাত তথা দরূদ পাঠ করব? তা আমাদের বলে দিন। তখন তিনি চুপ থাকলেন এমনকি আমরা ভাবলাম যদি প্রশ্নকারী প্রশ্ন না করত তাহলে অনেক ভাল হত। তারপর তিনি বললেন: তোমরা আমার উপর সালাত পাঠ করার জন্য বল:

‘আল্লাহুম্মা ছাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিনিন্নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি ওয়া ‘আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা ছাল্লাইতা ‘আলা ইবরাহীমা ওয়া ‘আলা আলি ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম্মাজীদ।
অর্থাৎ, হে আল্লাহ! নিরক্ষর নবী মুহাম্মদ এবং তাঁর পরিবার-পরিজনদের উপর এমনভাবে দরূদ পাঠ কর যেমনভাবে করেছ ইব্রাহীম ও তাঁর পরিবার-পরিজনের উপর নিশ্চয় তুমি মহান এবং প্রশংসিত।[42]


(৪)
ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲِ ﻣَﺴْﻌُﻮْﺩٍ ﺍﻷَﻧْﺼﺎﺭِﻱِّ ﺭَﺿِﻲ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ﺃَﻧَّﻪُ ﻗَﺎﻝَ : ﺃَﺗَﺎﻧَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﻟﻠﻪِ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓِﻲ ﻣَﺠْﻠِﺲِ ﺳَﻌْﺪِ ﺑْﻦِ ﻋُﺒَﺎﺩَﺓَ ﺭَﺿِﻲ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻟَﻪُ ﺑَﺸِﻴْﺮُ ﺑْﻦُ ﺳَﻌْﺪٍ : ﺃَﻣَﺮَﻧَﺎ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﺰَّ ﻭَﺟَﻞَّ ﺃَﻥْ ﻧُﺼَﻠِّﻲَ ﻋَﻠَﻴْﻚَ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓَﻜَﻴْﻒَ ﻧُﺼَﻠِّﻲ ﻋَﻠَﻴْﻚَ؟ ﻓَﺴَﻜَﺖَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺣَﺘَّﻰ ﺗَﻤَﻨَّﻴْﻨَﺎ ﺃَﻧَّﻪُ ﻟَﻢْ ﻳَﺴْﺄَﻟْﻪُ ﺛُﻢَّ ﻗَﺎﻝَ : ﻗُﻮْﻟُﻮْﺍ : ﺍﻟَّﻠﻬُﻢَّ ﺻَﻞِّ ﻋَﻠَﻰ ﻣُﺤَﻤَّﺪٍ ﻭَﻋَﻠَﻰ ﺁﻝِ ﻣُﺤَﻤَّﺪٍ ﻛَﻤَﺎ ﺻَﻠَّﻴْﺖَ ﻋَﻠَﻰ ﺁﻝ ﺇِﺑْﺮَﺍﻫِﻴْﻢَ ﻭَﺑَﺎﺭِﻙْ ﻋَﻠَﻰ ﻣُﺤَﻤَّﺪٍ ﻭَﻋَﻠَﻰ ﺁﻝِ ﻣُﺤَﻤَّﺪٍ ﻛَﻤَﺎ ﺑَﺎﺭَﻛْﺖَ ﻋَﻠَﻰ ﺁﻝِ ﺇِﺑْﺮَﺍﻫِﻴْﻢَ ﻓَﻲ ﺍﻟْﻌَﺎﻟَﻤِﻴْﻦَ ﺇِﻧَّﻚَ ﺣَﻤِﻴْﺪٌ ﻣَﺠِﻴْﺪٌ ﻭَﺍﻟﺴَّﻼَﻡُ ﻛَﻤَﺎ ﻋَﻠَﻤﺘﻢْ . ‏] ﺻﺤﻴﺢ ، ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ ، ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﺼﻼﺓ ، ﺑﺎﺏ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻨﺒﻰ ﺑﻌﺪ ﺍﻟﺘﺸﻬﺪ .[


“আবু মাসউদ আনসারী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা সা‘দ ইবনু উবাদার মজলিসে আমাদের কাছে আসলেন। তখন বশীর ইবনু সা‘দ তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন: ইয়া রাসুলাল্লাহ! আল্লাহ তা‘আলা আমাদের আদেশ দিয়েছেন যেন আমরা আপনার উপর দরূদ পড়ি। আমরা কিভাবে আপনার উপর সালাত তথা দরূদ পাঠ করব?
তখন তিনি চুপ থাকলেন এমনকি আমরা ভাবলাম যদি প্রশ্নকারী প্রশ্ন না করত তাহলে অনেক ভাল হত। তারপর তিনি বললেন: তোমরা বল: ‘আল্লাহুম্মা ছাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিন ওয়া ‘আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা ছাল্লাইতা ‘আলা আলি ইবরাহীমা, ওয়া বারিক ‘আলা মুহাম্মাদিন ওয়া ‘আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা বারাকতা ‘আলা আলি ইবরাহীমা ফিল আলামীনা ইন্নাকা হামীদুম্মাজীদ’।
অর্থাৎ, হে আল্লাহ! মুহাম্মদ এবং তাঁর পরিবার-পরিজনদের উপর এমনভাবে দরূদ পাঠ কর যেমনভাবে করেছ ইব্রাহীম ও তাঁর পরিবার-পরিজনের উপর। আর মুহাম্মদ এবং তাঁর পরিবার-পরিজনদের উপর এমনভাবে বরকত দাও যেমনভাবে পৃথিবীতে দিয়েছ ইব্রাহীম ও তাঁর পরিবার-পরিজনের উপর। নিশ্চয় তুমি মহান এবং প্রশংসিত।[43]



(৫)
ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﺳَﻌِﻴْﺪٍ ﺍﻟْﺨُﺪْﺭِﻱِّ ﺭَﺿِﻲ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ﻗَﺎﻝَ : ﻗُﻠْﻨَﺎ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻫﺬَﺍ ﺍﻟﺘَّﺴْﻠِﻴْﻢُ ﻓَﻜَﻴْﻒَ ﻧُﺼَﻠِّﻲ ﻋَﻠَﻴْﻚَ؟ ﻗَﺎﻝَ : ﻗُﻮْﻟُﻮْﺍ : ﺍﻟَّﻠﻬُﻢَّ ﺻَﻞِّ ﻋَﻠَﻰ ﻣُﺤَﻤَّﺪٍ ﻋَﺒْﺪِﻙَ ﻭَﺭَﺳُﻮْﻟِﻚَ ﻛَﻤَﺎ ﺻَﻠَّﻴْﺖَ ﻋَﻠَﻲ ﺁﻝِ ﺇِﺑْﺮَﺍﻫِﻴْﻢَ ﻭَﺑَﺎﺭِﻙْ ﻋَﻠَﻰ ﻣُﺤَﻤَّﺪٍ ﻭَﻋَﻠَﻲ ﺁﻝِ ﻣُﺤَﻤَّﺪٍ ﻛَﻤَﺎ ﺑَﺎﺭَﻛْﺖَ ﻋَﻠﻰ ﺇِﺑْﺮَﺍﻫِﻴْﻢَ . ‏( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ، ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﺘﻔﺴﻴﺮ ، ﺑﺎﺏ ﻗﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﺇﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﻣﻼﺋﻜﺘﻪ ﻳﺼﻠﻮﻥ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻨﺒﻰ .(


“আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমরা বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! সালাম তো আমাদের জানা আছে। তবে আমরা কিভাবে আপনার উপর সালাত তথা দরূদ পাঠ করব?
তখন তিনি বললেন: তোমরা বল: ‘আল্লাহুম্মা ছাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিন আব্দিকা ওয়া রাসুলিকা, কামা ছাল্লাইতা ‘আলা আলি ইবরাহীমা, ওয়া বারিক ‘আলা মুহাম্মাদিন ওয়া ‘আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা বারাকতা ‘আলা ইবরাহীমা’।
অর্থাৎ হে আল্লাহ! তোমার বান্দা এবং রাসূল মুহাম্মদ এর উপর এমনভাবে দরূদ পাঠ কর যেমনভাবে করেছ ইব্রাহীমের পরিবার-পরিজনের উপর। আর মুহাম্মদ এবং তাঁর পরিবার-পরিজনদের উপর এমনভাবে বরকত দাও যেমনভাবে দিয়েছ ইব্রাহীম এর উপর।
[44]


(৬)

ﻋَﻦْ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﻦِ ﺑْﻦِ ﺃَﺑِﻲ ﻟَﻴْﻠَﻰ ﺭَﺿِﻲ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ﻗَﺎﻝَ : ﻟَﻘِﻴَﻨِﻲ ﻛَﻌْﺐُ ﺑْﻦُ ﻋُﺠْﺮَﺓَ ﺭَﺿِﻲ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻴْﻪُ ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﺃَﻻَ ﺃُﻫْﺪِﻱ ﻟَﻚَ ﻫَﺪِﻳَّﺔً ؟ ﺧﺮﺝ ﻋﻠﻴﻨﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻘﻠﻨﺎ ﻗﺪ ﻋﺮﻓﻨﺎ ﻛﻴﻒ ﻧﺴﻠﻢ ﻋﻠﻴﻚ ﻓﻜﻴﻒ ﻧﺼﻠﻲ ﻋﻠﻴﻚ ؟ ﻗﺎﻝ : ﻗُﻮﻟُﻮْﺍ : ﺍﻟﻠﻬُﻢَّ ﺻَﻞِّ ﻋَﻠَﻰ ﻣُﺤَﻤَّﺪٍ ﻭَﻋَﻠَﻰ ﺁﻝِ ﻣُﺤَﻤَّﺪٍ ﻛَﻤَﺎ ﺻَﻠَّﻴْﺖَ َﻋَﻠَﻰ ﺁﻝِ ﺇِﺑْﺮَﺍﻫِﻴْﻢَ ﺇِﻧَّﻚَ ﺣَﻤِﻴْﺪٌ ﻣَﺠِﻴْﺪٌ , ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺑَﺎﺭِﻙْ ﻋَﻠَﻰ ﻣُﺤَﻤَّﺪٍ ﻭَﻋَﻠَﻰ ﺁﻝِ ﻣُﺤَﻤَّﺪٍ ﻛَﻤَﺎ ﺑَﺎﺭَﻛْﺖَ ﻋَﻠَﻰ ﺁﻝِ ﺇِﺑْﺮَﺍﻫِﻴْﻢَ ﺇِﻧَّﻚَ ﺣَﻤِﻴْﺪٌ ﻣَﺠِﻴْﺪٌ . ‏( ﺻﺤﻴﺢ ، ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ ، ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﺼﻼﺓ ، ﺑﺎﺏ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻨﺒﻰ ﺑﻌﺪ ﺍﻟﺘﺸﻬﺪ .(

“আব্দুর রহমান ইবনু আবি লায়লা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমার সাথে কা‘ব ইবনু উজরার সাক্ষাত হল, তিনি বললেন: আমি কি তোমাকে একটি হাদিয়া দেব না?


নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে আসলেন। আমরা তাঁকে জিজ্ঞেস করলামঃ আপনাকে কিভাবে সালাম জানাব তা আমরা জানি। তবে আপনার উপর কিভাবে সালাত তথা দরূদ পাঠ করব? তিনি বললেন: তোমরা বল: ‘আল্লাহুম্মা ছাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিন ওয়া ‘আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা ছাল্লাইতা ‘আলা আলি ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম্মাজীদ।

‘আল্লাহুম্মা বারিক ‘আলা মুহাম্মাদিন ওয়া ‘আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা বারাকতা ‘আলা আলি ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম্মাজীদ’।
অর্থাৎ হে আল্লাহ! মুহাম্মদ এবং তাঁর পরিবার-পরিজনদের উপর এমনভাবে দরূদ পাঠ কর যেমনভাবে করেছ ইব্রাহীমের পরিবার-পরিজনের উপর নিশ্চয় তুমি মহান এবং প্রশংসিত। হে আল্লাহ! মুহাম্মদ এবং তাঁর পরিবার-পরিজনদের উপর এমনভাবে বরকত দাও যেমনভাবে দিয়েছ ইব্রাহীমের পরিবার-পরিজনের উপর। নিশ্চয় তুমি মহান এবং প্রশংসিত।[45]



(৭)
ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﺳَﻌِﻴْﺪٍ ﺍﻟْﺨُﺪْﺭِﻱِّ ﺭَﺿِﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ﻗَﺎﻝَ : ﻗُﻠْﻨَﺎ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺍﻟﺴَّﻼَﻡُ ﻋَﻠَﻴْﻚَ ﻗَﺪْ ﻋَﺮَﻓْﻨَﺎﻩُ ﻓَﻜَﻴْﻒَ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓُ ﻋَﻠَﻴْﻚَ؟ ﻗَﺎﻝَ : ﻗُﻮْﻟُﻮﺍ : ﺍﻟَّﻠﻬُﻢَّ ﺻَﻞِّ ﻋَﻠَﻰ ﻣُﺤَﻤَّﺪٍ ﻋَﺒْﺪِﻙَ ﻭَﺭَﺳُﻮْﻟِﻚَ ﻛَﻤَﺎ ﺻَﻠَّﻴْﺖَ ﻋَﻠَﻰ ﺇِﺑْﺮَﺍﻫِﻴْﻢَ ﻭَ ﺑَﺎﺭِﻙْ ﻋَﻠَﻰ ﻣُﺤَﻤَّﺪٍ ﻭَﺁﻝِ ﻣُﺤَﻤَّﺪٍ ﻛَﻤَﺎ ﺑَﺎﺭَﻛْﺖَ ﻋَﻠِﻰ ﺇِﺑْﺮَﺍﻫِﻴْﻢَ . ‏( ﺻﺤﻴﺢ ، ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﻨﺴﺎﺋﻲ ، ﺻﺤﻴﺢ ﺳﻨﻦ ﺍﻟﻨﺴﺎﺋﻰ ﺍﻟﺠﺰﺀ ﺍﻷﻭﻝ .(

আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমরা বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! সালাম তো আমাদের জানা আছে। তবে আমরা কিভাবে আপনার উপর সালাত তথা দরূদ পাঠ করব?
তখন তিনি বললেন: তোমরা বল: ‘আল্লাহুম্মা ছাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিন আব্দিকা ওয়া রাসুলিকা, কামা ছাল্লাইতা ‘আলা ইবরাহীমা, ওয়া বারিক ‘আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আলি মুহাম্মাদিন কামা বারাকতা ‘আলা ইবরাহীমা’।


অর্থাৎ হে আল্লাহ! তোমার বান্দা ও রাসূল মুহাম্মদ এর উপর এমনভাবে দরূদ পাঠ কর যেমনভাবে করেছ ইব্রাহীম এর উপর। আর মুহাম্মদ এবং তাঁর পরিবার-পরিজনদের উপর এমনভাবে বরকত দাও যেমনভাবে দিয়েছ ইব্রাহীম এর উপর। [46]



(৮)
ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﺳَﻌِﻴْﺪٍ ﺍﻟﺨُﺪْﺭِﻱِّ ﻗَﺎﻝَ : ﻗُﻠْﻨَﺎ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻫَﺬَﺍ ﺍﻟﺴَّﻼَﻡُ ﻋَﻠَﻴْﻚَ ﻗَﺪْ ﻋَﺮَﻓْﻨَﺎﻩُ ﻓَﻜَﻴْﻒ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓُ ؟ ﻗَﺎﻝَ : ﻗُﻮْﻟُﻮْﺍ : ﺍﻟَّﻠَﻬُﻢَّ ﺻَﻞِّ ﻋَﻠَﻰ ﻣُﺤَﻤَّﺪٍ ﻋَﺒْﺪِﻙَ ﻭَﺭَﺳُﻮْﻟِﻚَ ﻛَﻤَﺎ ﺻَﻠَّﻴْﺖَ ﻋَﻠَﻰ ﺇِﺑْﺮَﺍﻫِﻴْﻢَ ﻭَﺑَﺎﺭِﻙْ ﻋَﻠَﻰ ﻣُﺤَﻤَّﺪٍ ﻭَﻋَﻠَﻰ ﺁﻝِ ﻣُﺤَﻤَّﺪٍ ﻛَﻤَﺎ ﺑَﺎﺭَﻛْﺖَ ﻋَﻠَﻰ ﺇِﺑْﺮَﺍﻫِﻴْﻢَ . ‏( ﺻﺤﻴﺢ ، ﺭﻭﺍﻩ ﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﺔ ، ﺻﺤﻴﺢ ﺳﻨﻦ ﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﺔ ﺍﻟﺠﺰﺀﺍﻷﻭﻝ .(

“আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমরা বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! সালাম তো আমাদের জানা আছে। তবে আমরা কিভাবে আপনার উপর সালাত তথা দরূদ পাঠ করব?
তখন তিনি বললেন: তোমরা বল: ‘আল্লাহুম্মা ছাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিন আব্দিকা ওয়া রাসুলিকা, কামা ছাল্লাইতা ‘আলা ইবরাহীমা, ওয়া বারিক ‘আলা মুহাম্মাদিন ওয়া ‘আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা বারাকতা ‘আলা ইবরাহীমা’।

হে আল্লাহ! তোমার বান্দা ও রাসূল মুহাম্মদ এর উপর এমনভাবে দরূদ পাঠ কর যেমনভাবে করেছ ইব্রাহীম এর উপর। আর মুহাম্মদ এবং তাঁর পরিবার-পরিজনদের উপর এমনভাবে বরকত দাও যেমনভাবে দিয়েছ ইব্রাহীম এর উপর। [47]


(৯)
ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﺣُﻤَﻴْﺪٍ ﺍﻟﺴَّﺎﻋِﺪِﻱِّ ﺭَﺿِﻲ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ﺃَﻧَّﻬُﻢْ ﻗَﺎﻟُﻮْﺍ : ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺃُﻣِﺮْﻧَﺎ ﺑِﺎﻟﺼَّﻼَﺓِ ﻋَﻠَﻴْﻚَ ﻓَﻜَﻴْﻒَ ﻧُﺼَﻠِّﻲ ﻋَﻠَﻴْﻚَ ؟ ﻓﻘﺎﻝ : ﻗُﻮْﻟُﻮﺍ : ﺍﻟَّﻠﻬُﻢَّ ﺻَﻞِّ ﻋَﻠَﻰ ﻣُﺤَﻤَّﺪٍ ﻭَﺃَﺯْﻭَﺍﺟِﻪِ ﻭَﺫُﺭِّﻳَﺘِﻪِ ﻛَﻤَﺎ ﺻَﻠَّﻴْﺖَ ﻋَﻠَﻰ ﺇِﺑْﺮَﺍﻫِﻴْﻢَ ﻭَﺑَﺎﺭِﻙْ ﻋَﻠَﻰ ﻣُﺤَﻤَّﺪٍ ﻭَﺃَﺯْﻭَﺍﺟِﻪِ ﻭَﺫُﺭِّﻳَﺘِﻪِ ﻛَﻤَﺎ ﺑَﺎﺭَﻛْﺖَ ﻋَﻠَﻰ ﺇِﺑْﺮَﺍﻫِﻴْﻢَ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻌَﺎﻟَﻤِﻴْﻦَ , ﺇِﻧَّﻚَ ﺣَﻤِﻴْﺪٌ ﻣَﺠِﻴْﺪٌ . ‏( ﺻﺤﻴﺢ ، ﺭﻭﺍﻩ ﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﺔ ، ﺻﺤﻴﺢ ﺳﻨﻦ ﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﺔ ﺍﻟﺠﺰﺀ ﺍﻷﻭﻝ (

“আবু হুমাইদ সা‘য়েদী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ছাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন: ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদেরকে আপনার উপর দরূদ পড়ার আদশ দেওয়া হয়েছে। আমরা কিভাবে আপনার উপর দরূদ পড়ব? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তোমরা বল:
‘আল্লাহুম্মা ছাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আযওয়াজিহী ওয়া যুররিয়্যাতিহী কামা ছাল্লাইতা ‘আলা ইবরাহীমা ওয়া বারিক ‘আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আযওয়াজিহী ওয়া যুররিয়্যাতিহী কামা বারাকতা ‘আলা ইবরাহীমা ফিল আলামীনা ইন্নাকা হামীদুম্মাজীদ’।

অর্থাৎ হে আল্লাহ! মুহাম্মদ এবং তাঁর পত্নীগণ ও সন্তানদের প্রতি এমনভাবে দরূদ পাঠ কর যেমনভাবে করেছ ইব্রাহীমের উপর। হে আল্লাহ! মুহাম্মদ এবং তাঁর পত্নীগণ ও সন্তানদের প্রতি এমনভাবে বরকত অবতীর্ণ কর যেমনভাবে করেছ ইব্রাহীমের পরিবার-পরিজনের উপর। নিশ্চয় তুমি মহান এবং প্রশংসিত।[48]



(১০)
ﻋَﻦْ ﺯَﻳْﺪِ ﺑْﻦِ ﺧَﺎﺭِﺟَﺔَ ﺭَﺿِﻲ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ﻗَﺎﻝَ : ﺃَﻧَﺎ ﺳَﺄَﻟْﺖُ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﺻَﻠُّﻮْﺍ ﻋَﻠَﻲَّ ﻭَﺍﺟْﺘَﻬِﺪُﻭْﺍ ﻓِﻲ ﺍﻟﺪُّﻋَﺂﺀِ ﻭَﻗُﻮْﻟُﻮْﺍ : ﺍﻟَّﻠﻬُﻢَّ ﺻَﻞِّ ﻋَﻠَﻰ ﻣُﺤَﻤَّﺪٍ ﻭَﻋَﻠَﻰ ﺁﻝِ ﻣُﺤَﻤَّﺪٍ . ‏( ﺻﺤﻴﺢ ، ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﻨﺴﺎﺋﻲ ، ﺻﺤﻴﺢ ﺳﻨﻦ ﺍﻟﻨﺴﺎﺋﻰ ﺍﻟﺠﺰﺀ ﺍﻷﻭﻝ ‏) .

“যায়েদ ইবনু খারিজাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলাম। তখন তিনি বললেন: তোমরা আমার উপর দরূদ পড় এবং অনেক বেশী চেষ্টা করে দো‘আ’ কর। এভাবে বল: ‘আল্লাহুম্মা ছাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিন ওয়া ‘আলা আলি মুহাম্মাদিন’।


অর্থাৎ, হে আল্লাহ! মুহাম্মদ এবং তাঁর পরিবার-পরিজনদের উপর রহমত বর্ষণ কর। [49]



(১১)
ﻋَﻦْ ﻣُﻮْﺳَﻰ ﺑْﻦِ ﻃَﻠْﺤَﺔَ ﺭَﺿِﻲ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ﻗَﺎﻝ : ﺃَﺧْﺒَﺮَﻧِﻲ ﺯَﻳْﺪُ ﺑْﻦُ ﺧَﺎﺭِﺟَﺔَ ﻗَﺎﻝَ : ﻗُﻠْﺖُ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗَﺪْ ﻋَﻠِﻤْﻨَﺎ ﻛَﻴْﻒَ ﻧُﺴَﻠِّﻢُ ﻋَﻠَﻴْﻚَ ﻓَﻜَﻴْﻒَ ﻧُﺼَﻠِّﻲ ﻋَﻠَﻴْﻚَ ؟ ﻗَﺎﻝَ ﺻَﻠُّﻮْﺍ ﻋَﻠَﻲَّ ﻭَﻗُﻮْﻟُﻮْﺍ : ﺍﻟَّﻠﻬُﻢَّ ﺑَﺎﺭِﻙْ ﻋَﻠَﻰ ﻣُﺤَﻤَّﺪٍ ﻭَﻋَﻠَﻰ ﺁﻝِ ﻣُﺤَﻤَّﺪٍ ﻛَﻤَﺎ ﺑَﺎﺭَﻛْﺖَ ﻋَﻠَﻰ ﺇِﺑْﺮَﺍﻫِﻴْﻢَ ﻭَﺁﻝِ ﺇِﺑْﺮَﺍﻫِﻴْﻢَ ﺇِﻧَّﻚَ ﺣَﻤِﻴْﺪٌ ﻣَﺠِﻴْﺪٌ . ‏( ﺻﺤﻴﺢ ، ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺣﻤﺪ ، ﻓﻀﻞ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻨﺒﻰ ﻟﻸﻟﺒﺎﻧﻰ (

“মুসা ইবনু ত্বালহা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, যায়েদ ইবনু খারিজাহ আমাকে বললেন যে,
তিনি বলেছেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনাকে কিভাবে সালাম করব তা আমারা জানি। তবে আপনার উপর সালাত তথা দরূদ কিভাবে পাঠ করব? তখন তিনি বললেন: তোমরা আমার উপর দরূদ পাঠ করতঃ বল: ‘আল্লাহুম্মা বারিক ‘আলা মুহাম্মাদিন ওয়া ‘আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা বারাকতা ‘আলা ইবরাহীমা ওয়া আলি ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম্মাজীদ’।
অর্থাৎ হে আল্লাহ! মুহাম্মদ এবং তাঁর পরিবার-পরিজনদের উপর এমনভাবে বরকত দাও যেমনভাবে দিয়েছ ইব্রাহীম ও তাঁর পরিবার-পরিজনের উপর। নিশ্চয় তুমি মহান এবং প্রশংসিত।[50]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর সালাম পাঠ করা

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর সালাম প্রেরণের জন্য মাসনূন শব্দ হল নিম্নরূপ।

ﻋَﻦْ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠﻪِ ﺑْﻦِ ﻣَﺴْﻌٌﻮْﺩِ ﺭَﺿِﻲ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ﻗَﺎﻝَ : ﺍﻟْﺘَﻔَﺖَ ﺇِﻟَﻴْﻨَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠﻪَ ﻫُﻮَ ﺍﻟﺴَّﻼَﻡُ , ﻓَﺈِﺫَﺍ ﺻَﻠَّﻰ ﺃَﺣَﺪُﻛُﻢْ ﻓَﻠْﻴَﻘُﻞْ : ﺍﻟﺘَّﺤِﻴَّﺎﺕُ ﻟﻠﻪِ ﻭَﺍﻟﺼَّﻠﻮَﺍﺕُ ﻭَﺍﻟﻄَّﻴِّﺒَﺎﺕُ ﺍﻟﺴّﻼَﻡُ ﻋَﻠَﻴْﻚَ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﻭَﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﻭَﺑَﺮَﻛَﺎ ﺗُﻪُ , ﺍﻟﺴّﻼَﻡُ ﻋَﻠَﻴْﻨَﺎ ﻭَﻋَﻠَﻰ ﻋَﺒَﺎﺩِ ﺍﻟﻠﻪِ ﺍﻟﺼَّﺎﻟَﺤِﻴْﻦَ ، ﻓَﺈِﻧَّﻜُﻢْ ﺇِﺫَﺍ ﻗُﻠْﺘٌﻤٌﻮْﻫَﺎ ﺃَﺻَﺎﺑَﺖْ ﻛَﻞَ ﻋَﺒْﺪٍ ﺻَﺎﻟِﺢٍ ﻓِﻲ ﺍﻟﺴَّﻤَﺂﺀِ ﻭَﺍﻷﺭْﺽِ , ﺃَﺷْﻬَﺪُ ﺃَﻥْ ﻻَّ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻻَّ ﺍﻟﻠﻪُ ﻭَﺃَﺷْﻬَﺪُ ﺃَﻥَّ ﻣُﺤَﻤَّﺪًﺍ ﻋَﺒْﺪُﻩُ ﻭَﺭَﺳُﻮْﻟُﻪُ . ‏( ﺻﺤﻴﺢ ، ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ، ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﺼﻼﺓ ، ﺑﺎﺏ ﺍﻟﺘﺸﻬﺪ ﻓﻰ ﺍﻵﺧﺮﺓ ‏) .

“আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের দিকে তাকিয়ে বললেন: আল্লাহই হলেন ‘সালাম’। অতএব তোমরা যখন সালাত আদায় করবে তখন বলবে-‘আতাতহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াচ্ছালাওয়াতু ওয়াত্ত্বাইয়িবাতু আসসালামু আলাইকা আইয়ুহান্নাবিইয়ু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু, আসসালামু


‘আলাইনা ওয়া ‘আলা ইবাদিল্লাহিচ্ছালিহীন’ -এরূপ বললে আসমান ও জমিনের প্রত্যেক নেককার ব্যক্তি তা প্রাপ্ত হবে। তারপর বলবে
‘আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আব্দুহু ওয়া রাসুলুহু’। [51]


মাসআলা: উল্লেখিত হাদিসসমূহে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ পড়া ও তার সালাম প্রেরণ করার প্রদ্ধতি ও শব্দসমূহ বর্ণনা করে দেওয়া হয়েছে। যেহেতু দরূদ পাঠ করা এটি একটি ইবাদত তাই এ বিষয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শেখানো প্রদ্ধতি ও শব্দগুলোর অনুসরণ করাই বাঞ্চনীয়। এর বাইরে কোনো প্রদ্ধতি বা শব্দ গ্রহণযোগ্য নয়। আমাদের দেশে দরূদে তুনাজ্জিনা,
দরূদে মুকাদ্দাস, দরূদে তাজ, দুরূদে লাকী এবং দরূদে আকবার ইত্যাদির যে প্রচলন রয়েছে সে সব দুরূদের শব্দগুলো সূন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত নয়। সুতরাং, এগুলো পরিতাজ্য। সুন্নাতের অনুসরণ করাই ইসলামের অনুসারীদের জন্য একান্ত জরুরী।


দরূদ শরীফ পড়ার স্থানসমুহ


এক- সালাতের শেষাংশে দরূদ পাঠ করা:

সালাত শেষ করার পূর্বে দরূদ পাঠ করা সূন্নাত। প্রমাণ:

ﻋَﻦْ ﻓُﻀَﺎﻟَﺔَ ﺑْﻦِ ﻋُﺒَﻴْﺪٍ ﺭَﺿِﻲ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ﻗَﺎﻝَ : ﺳَﻤِﻊَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺭَﺟُﻼً ﻳَﺪْﻋُﻮﻓِﻰ ﺻَﻼَﺗِﻪِ ﻓَﻠَﻢْ ﻳُﺼَﻞِّ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ . ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : ﻋَﺠَّﻞَ ﻫَﺬَﺍ ﺛُﻢَّ ﺩَﻋَﺎﻩُ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻟَﻪُ ﺃَﻭْ ﻟِﻐَﻴْﺮِﻩِ ﺇِﺫَﺍ ﺻَﻠّﻰ ﺃَﺣَﺪُﻛُﻢْ ﻓَﻠْﻴَﺒْﺪَﺃْ ﺑِﺘَﺤْﻤِﻴْﺪِ ﺍﻟﻠﻪِ ﻭﺍﻟﺜَّﻨَﺂﺀِ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺛُﻢَّ ﻟَﻴُﺼَﻞِّ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺛُﻢَّ ﻟَﻴَﺪْﻉُ ﺑَﻌْﺪُ ﻣَﺎ ﺷَﺎﺀَ . ‏( ﺻﺤﻴﺢ ، ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻯ ، ﺻﺤﻴﺢ ﺳﻨﻦ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻯ ﺍﻟﺠﺰﺀ ﺍﻟﺜﺎﻟﺚ ‏) .

“ফুদ্বালাহ ইবনু উবাইদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে ছালাতে দো‘আ করতে শুনলেন। লোকটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ পাঠ করল না। তখন তিনি বললেন, এই লোকটি তাড়া-
হুড়া করল। তারপর তাকে ডেকে বললেন, যখন তোমাদের কেউ সালাত পড়বে তখন প্রথম আল্লাহর প্রশংসা করবে তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ পড়বে। অতঃপর যা ইচ্ছা দো‘আ করবে।
[52]

দুই. জানাযার সালাতে দরূদ পড়া
জানাযার ছালাতে (নামায) দ্বিতীয় তাকবীরের পর দরূদ পাঠ করা সুন্নাত।


প্রমাণ-
ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﺃُﻣَﺎﻣَﺔَ ﺑْﻦِ ﺳَﻬْﻞٍ ﺭَﺿِﻲ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ﺃَﻧَّﻪُ ﺃَﺧْﺒَﺮَﻩُ ﺭَﺟُﻞٌ ﻣِﻦْ ﺃَﺻْﺤَﺎﺏِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺃَﻥَّ ﺍﻟﺴُّﻨَّﺔَ ﻓِﻲ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓِ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﺠَﻨَﺎﺯَﺓِ ﺃَﻥْ ﻳُﻜَﺒِّﺮَ ﺍﻹِﻣَﺎﻡُ ﺛُﻢَّ ﻳَﻘْﺮَﺃْ ﺑِﻔَﺎﺗِﺤَﺔِ ﺍﻟْﻜِﺘَﺎﺏِ ﺑَﻌْﺪَ ﺍﻟﺘَّﻜْﺒِﻴْﺮَﺓِ ﺍﻷُﻭْﻟَﻰ ﺳِﺮًّﺍ ﻓِﻲ ﻧَﻔْﺴِﻪِ ﺛُﻢَّ ﻳُﺼَﻠِّﻲ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻭَﻳُﺨَﻠِّﺺ ﺍﻟﺪُّﻋَﺎﺀَ ﻟِﻠْﺠَﻨَﺎﺯَﺓِ ﻓِﻲ ﺍﻟﺘَّﻜْﺒِﻴْﺮَﺍﺕِ ﻭَﻻَ ﻳَﻘْﺮَﺃُ ﻓِﻲ ﺷَﺌْﻲٍ ﻣِﻨْﻬُﻦَّ ﺛُﻢَّ ﻳُﺴَﻠِّﻢْ ﺳِﺮَّﺍً ﻓِﻲ ﻧَﻔْﺴِﻪِ . ‏( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺸﺎﻓﻌﻲ ، ﻣﺴﻨﺪ ﺍﻟﺸﺎﻓﻌﻰ ﺍﻟﺒﺎﺏ ﺍﻟﺜﺎﻟﺚ ﻭﺍﻟﻌﺸﺮﻭﻥ ﻓﻰ ﺻﻼﺓ ﺍﻟﺠﻨﺎﺋﺰ (

“আবু উমামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, তাঁকে একজন ছাহাবী বলেছেন, জানাযার ছালাতে (নামায) সূন্নাত হল, প্রথমে ইমাম তাকবীর বলবে। প্রথম তাকবীরের পর চুপে চুপে সূরা ফাতিহা পাঠ করবে, তারপর (দ্বিতীয়) তাকবীর (এর পর) দরূদ পাঠ করবে এবং (তৃতীয় তাকবীরের পর) মৃতের জন্য বিশেষভাবে দো‘আ করবে। কুরআন পাঠ করবে না। তারপর (চতুর্থ তাকবীরের পর) চুপে চুপে সালাম দিবে। [53]


তিন. আযান শুনার পর দো‘আ পড়ার পূর্বে দরূদ পাঠ করা সূন্নাত:

ﻋَﻦْ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠﻪِ ﺑْﻦِ ﻋَﻤْﺮٍﻭ ﺑْﻦِ ﺍﻟْﻌَﺎﺹِ ﺭَﺿِﻲ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨْﻬُﻤَﺎ ﺃَﻧَّﻪُ ﺳَﻤِﻊَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲَّ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳَﻘُﻮْﻝُ : ﺇِﺫَﺍ ﺳَﻤِﻌْﺘُﻢُ ﺍﻟْﻤُﺆَﺫِّﻥَ ﻓَﻘُﻮْﻟُﻮْﺍ ﻣِﺜْﻞَ ﻣَﺎ ﻳَﻘُﻮْﻝُ ﺛُﻢَّ ﺻَﻠُّﻮْﺍ ﻋَﻠَﻰَّ ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﻣَﻦْ ﺻَﻠَّﻰ ﻋَﻠّﻲَّ ﺻَﻼَﺓً ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺑِﻬَﺎ ﻋَﺸْﺮﺍً , ﺛُﻢَّ ﺳَﻠُﻮْﺍ ﺍﻟﻠﻪَ ﻟِﻲ ﺍﻟْﻮَﺳِﻴْﻠَﺔَ ﻓَﺈِﻧَّﻬَﺎ ﻣَﻨْﺰِﻟَﺔٌ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔِ ﻻَ ﺗَﻨْﺒَﻐِﻲ ﺇِﻻَّ ﻟِﻌَﺒْﺪٍ ﻣِﻦْ ﻋِﺒَﺎﺩِ ﺍﻟﻠﻪِ ﻭَﺃَﺭْﺟُﻮْ ﺃَﻥْ ﺃَﻛُﻮْﻥَ ﺃَﻧَﺎ ﻫُﻮَ ﻓَﻤَﻦْ ﺳَﺄَﻝَ ﺍﻟﻠﻪَ ﻟِﻲ ﺍﻟْﻮَﺳِﻴْﻠَﺔَ ﺣَﻠَّﺖْ ﻟَﻪُ ﺍﻟﺸَّﻔَﺎﻋَﺔُ . ‏( ﺻﺤﻴﺢ ، ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ ، ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﺑﺎﺏ ﺍﻟﻘﻮﻝ ﻣﺜﻞ ﻗﻮﻝ ﺍﻟﻤﺆﺫﻥ .(

“আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনুল ‘আস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, যখন তোমরা মুআয্যিনের আযান শুনবে তখন তার মত বল। তারপর আমার উপর দরূদ পড়। কেননা যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরূদ পড়বে আল্লাহ তা‘আলা তার উপর দশবার দরূদ পাঠ করবেন। তারপর তোমরা আল্লাহর কাছে আমার জন্য উসীলার দো‘আ করবে। কারণ উসীলা হল জান্নাতে একটি উচ্চতর মর্যাদা, যা আল্লাহর বান্দাদের মধ্য থেকে শুধু একজনই প্রাপ্ত হবে। আমি আশা করি আমিই হব সেই ব্যক্তি। অতএব যে ব্যক্তি আমার জন্য আল্লাহর কাছে উসীলার দো‘আ করবে

সে আমার সুপারিশ প্রাপ্ত হবে। [54]


চার. সর্বাবস্থায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ পড়া ইসলামের নির্দেশ:

প্রত্যেক ঈমানদারের প্রতি সর্বাবস্থায় ও সর্বস্থানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ পাঠের নির্দেশ রয়েছে।

ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ ﺭَﺿِﻲ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ﻗَﺎﻝَ : ﻗَﺎﻝ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : ﻻَ ﺗَﺘَّﺨِﺬُﻭْﺍ ﻗَﺒْﺮِﻱ ﻋِﻴْﺪﺍً ﻭَﻻَ ﺗَﺠْﻌَﻠُﻮْﺍ ﺑُﻴُﻮْﺗَﻜُﻢْ ﻗُﺒُﻮْﺭﺍً ﻭَﺣَﻴْﺜُﻤَﺎ ﻛُﻨْﺘُﻢْ ﻓَﺼَﻠُّﻮْﺍ ﻋَﻠَﻲَّ ﻓَﺈِﻥَّ ﺻَﻼَﺗَﻜُﻢْ ﺗَﺒْﻠُﻐُﻨِﻲ . ‏( ﺻﺤﻴﺢ ، ﺭﻭﺍﻩ ﺃَﺣﻤﺪ ، ﻓﻀﻞ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻨﺒﻰ ﻟﻸﻟﺒﺎﻧﻰ ‏) .

“আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা আমার কবরকে ঈদে (মিলনমেলায়) পরিণত করো না। আর তোমরা তোমাদের ঘরকে কবরে পরিণত করনা। তোমরা যেখানেই থাকনা কেন আমার উপর দরূদ পড়। কারণ তোমাদের দরূদ আমার কাছে পৌঁছে যায়। [55]


ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﺑَﻜْﺮٍ ﺍﻟﺼِّﺪِّﻳْﻖِ ﺭَﺿِﻲ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ﻗَﺎﻝَ : ﻗﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : ﺃَﻛْﺜِﺮُﻭْﺍ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓَ ﻋَﻠَﻲَّ ﻓَﺈِﻥَّ ﺍﻟﻠﻪَ ﻭَﻛَّﻞَ ﺑِﻲ ﻣَﻠَﻜﺎً ﻋِﻨْﺪَ ﻗَﺒْﺮِﻱ ﻓَﺈِﺫَﺍ ﺻَﻠَّﻲ ﻋَﻠَﻲَّ ﺭَﺟُﻞٌ ﻣِﻦْ ﺃُﻣَّﺘِﻲ ﻗَﺎﻝَ ﻟِﻲ ﺫَﻟِﻚ ﺍﻟْﻤَﻠَﻚُ : ﻳَﺎ ﻣُﺤَﻤَّﺪَ ﺇِﻥَّ ﻓُﻼَﻥَ ﺍﺑْﻦَ ﻓُﻼَﻥٍ ﺻَﻠَّﻲ ﻋَﻠَﻴْﻚَ ﺍﻟﺴَّﺎﻋَﺔَ . ‏( ﺣﺴﻦ ، ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺪﻳﻠﻤﻲ ، ﺳﻠﺴﻠﺔ ﺍﻷﺣﺎﺩﻳﺚ ﺍﻟﺼﺤﻴﺤﺔ ﻟﻸﻟﺒﺎﻧﻰ ، ﺍﻟﺠﺰﺀ ﺍﻷﻭﻝ (

“আবু বকর ছিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা আমার উপর বেশী বেশী দরূদ পড়। কারণ আল্লাহ তা‘আলা আমার কবরের কাছে একজন মালাক (ফেরেশতা) নির্ধারণ করে রেখেছেন। যখন আমার উম্মতের কোনো ব্যক্তি আমার উপর দরূদ পাঠ করে তখন সে মালাক আমাকে বলে, হে মুহাম্মদ! অমুকের ছেলে অমুক এই মুহুর্তে আপনার উপর দরূদ পাঠ করেছে।[56]

ﻋَﻦْ ﺍﺑْﻦِ ﻣَﺴْﻌُﻮْﺩٍ ﺭَﺿِﻲ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ﻗﺎﻝَ : ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : ﺇِﻥَّ ﻟﻠﻪِ ﻣَﻼَﺋِﻜَﺔً ﺳَﻴَّﺎﺣِﻴْﻦَ ﻓِﻲ ﺍﻷَﺭْﺽِ ﻳُﺒَﻠِّﻐُﻮْﻧِﻲ ﻣِﻦْ ﺃُﻣَّﺘِﻲ ﺍﻟﺴَّﻼَﻡَ . ‏( ﺻﺤﻴﺢ ، ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﻨﺴﺎﺋﻲ ، ﺻﺤﻴﺢ ﺳﻨﻦ ﺍﻟﻨﺴﺎﺋﻰ ﺍﻟﺠﺰﺀ ﺍﻷﻭﻝ (


“আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহর কতিপয় ফেরেশতা রয়েছেন যারা বিশ্বে ঘুরে বেড়ায়। তারা আমার উম্মতের পক্ষ থেকে আমার কাছে সালাম পৌঁছিয়ে দেন।
[57]


পাঁচ. জুমার দিন বেশি বেশি করে দরূদ পড়া:

জুমার দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর বেশী বেশী দরূদ পাঠ করার নির্দেশনা রয়েছে:


ﻋَﻦْ ﺍَﺑِﻲْ ﻣَﺴْﻌُﻮْﺩٍ ﺍﻷَﻧْﺼَﺎﺭِﻱِّ ﺭَﺿِﻲ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ﻗَﺎﻝَ : ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : ﺃَﻛْﺜِﺮُﻭْﺍ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓَ ﻋَﻠَﻲَّ ﻓِﻲ ﻳُﻮْﻡِ ﺍﻟْﺠُﻤْﻌَﺔِ ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﻟَﻴْﺲَ ﻳُﺼَﻞِّ ﻋَﻠَﻲِّ ﺃَﺣَﺪٌ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﺠُﻤْﻌَﺔِ ﺇِﻻَّ ﻋُﺮِﺿَﺖْ ﻋَﻠَﻲَّ ﺻَﻼّﺗُﻪُ . ‏( ﺻﺤﻴﺢ ، ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺤﺎﻛﻢ ﻭﺍﻟﺒﻴﻬﻘﻲ ، ﺻﺤﻴﺢ ﺍﻟﺠﺎﻣﻊ ﺍﻟﺼﻐﻴﺮ ﺍﻟﺠﺰﺀ ﺍﻷﻭﻝ .(

“আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জুমার দিন আমার উপর বেশী বেশী দরূদ পড়, কারণ যে ব্যক্তি জুমার দিন আমার উপর দরূদ পড়বে তার দরূদ আমার কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। [58]

ﻋَﻦْ ﺃَﻭْﺱِ ﺑْﻦِ ﺃَﻭْﺱِ ﺭَﺿِﻲ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ﻗَﺎﻝَ : ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : ﺇِﻥَّ ﻣِﻦْ ﺃَﻓْﻀَﻞِ ﺃَﻳَّﺎﻣِﻜُﻢْ ﻳَﻮْﻡِ ﺍﻟْﺠُﻤْﻌَﺔِ ﻓِﻴْﻪِ ﺧُﻠِﻖَ ﺁﺩَﻡُ , ﻭَﻓِﻴْﻪِ ﻗُﺒِﺾَ , ﻭَﻓِﻴْﻪِ ﺍﻟْﻨَﻔْﺨَﺔُ , ﻭَﻓِﻴْﻪِ ﺍﻟْﺼَّﻌْﻘَﺔُ , ﻓَﺄَﻛْﺜِﺮُﻭْﺍ ﻋَﻠَﻲَّ ﻣِﻦ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓِ ﻓِﻴْﻪِ ﻓَﺈِﻥَّ ﺻَﻼَﺗَﻜُﻢْ ﻣَﻌْﺮَﻭْﺿَﺔٌ ﻋَﻠَﻲَّ . ﻗَﺎﻝَ ﻗَﺎﻟُﻮْﺍ : ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮْﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﻭَﻛَﻴْﻒَ ﺗُﻌْﺮَﺽُ ﺻَﻼَﺗُﻨَﺎ ﻋَﻠَﻴْﻚَ ﻭَﻗَﺪْ ﺃَﺭَﻣْﺖَ ؟ ﻳَﻘﻮُﻟُﻮْﻥَ ﺑِﻠَﻴْﺖَ ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠﻪَ ﻋَﺰَّ ﻭَﺟَﻞَّ ﺣَﺮَّﻡَ ﻋَﻠَﻲ ﺍﻷَﺭْﺽِ ﺃَﺟْﺴَﺎﺩَ ﺍﻷَﻧْﺒِﻴَﺎﺀِ . ‏( ﺻﺤﻴﺢ ، ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺑﻮﺩﺍﺅﺩ ، ﺻﺤﻴﺢ ﺳﻨﻦ ﺃﺑﻮﺩﺍﺅﺩ ، ﺍﻟﺠﺰﺀ ﺍﻷﻭﻝ (


“আউস ইবনু আউস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সর্বোত্তম দিন হল, জুমার দিন। এই দিনে আদম আলাইহিস সালাম কে সৃষ্টি করা হয়েছে। এই দিনেই তাঁর রূহ কবজ করা হয়েছে, এই দিনেই শিংগায় ফুঁক দেওয়া হবে এবং এই দিনেই লোকেরা বেহুশ হবে। অতএব তোমরা এই দিনে আমার উপর বেশী বেশী দরূদ পাঠ কর। কারণ তোমাদের দরূদ আমার কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। ছাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! আপনার কাছে আমাদের দরূদ কিভাবে পৌঁছানো হবে? আপনি তো মাটিতে মিশে যাবেন। তখন তিনি বললেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা জমিনের উপর নবীদের শরীর খাওয়া করা হারাম করেছেন।[59]

ছয়. দো‘আর সময় দরূদ পড়া:


দো‘আ ও মুনাজাত করার সময় আল্লাহর প্রশংসাবাদের পর দরূদ পড়ার আদেশ রয়েছে।

ﻋَﻦْ ﻓُﻀَﺎﻟَﺔَ ﺑْﻦِ ﻋُﺒَﻴْﺪٍ ﻗَﺎﻝَ : ﺑَﻴْﻦَ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗَﺎﻋِﺪٌ ﺇِﺫْ ﺩَﺧَﻞَ ﺭَﺟَﻞٌ ﻓَﺼَﻠَّﻰ ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺍﻏْﻔِﺮْ ﻟِﻲْ ﻭَﺍﺭْﺣَﻤْﻨِﻲ . ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : ﻋَﺠَّﻠْﺖَ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟْﻤُﺼَﻠِّﻲ ، ﺇِﺫَﺍ ﺻَﻠَّﻴْﺖَ ﻓَﻘَﻌَﺪْﺕَ ﻓَﺎﺣْﻤَﺪِ ﺍﻟﻠﻪَ ﺑِﻤَﺎ ﻫُﻮَ ﺃَﻫْﻠُﻪُ ﻭَﺻَﻞِّ ﻋَﻠَﻲَّ ﺛُﻢَّ ﺍﺩْﻋُﻪْ ، ﻗَﺎﻝَ : ﺛُﻢَّ ﺻَﻠَّﻰ ﺭَﺟَﻞٌ ﺁﺧَﺮٌ ﺑَﻌْﺪَ ﺫﻟِﻚَ ﻓَﺤَﻤِﺪَ ﺍﻟﻠﻪَ ﻭَﺻَﻠَّﻲ ﻋَﻠَﻲ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ . ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟْﻤُﺼَﻠَّﻲ ﺃﺩْﻉُ ﺗُﺠَﺐْ . ‏( ﺻﺤﻴﺢ ، ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻯ ، ﺻﺤﻴﺢ ﺳﻨﻦ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻯ ﺍﻟﺠﺰﺀ ﺍﻷﻭﻝ ( .


“ফুদ্বালাহ ইবনু উবাইদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসেছিলেন এমতাবস্থায় এক ব্যক্তি প্রবেশ করে সালাত আদায় করল তথায় সে বলল, হে আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করা এবং দয়া কর। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে সালাত আদায়কারী! তুমি তাড়াহুড়া করে ফেলেছো। যখন তুমি সালাত আদায় করতে গিয়ে বসবে তখন আল্লাহর যথাযোগ্য প্রশংসা করবে তারপর আমার উপর দরূদ পড়বে তারপর দো‘আ করবে। ফুদ্বালা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, তারপর আর এক লোক সালাত আদায় করল। সে আল্লাহর প্রশংসা করল এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ পড়ল। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: হে সালাত আদায়কারী! তুমি দো‘আ কর তোমার দো‘আ
কবুল করা হবে। [60]


সাত. গুনাহ ক্ষমা প্রাপ্তির জন্য দরূদ পড়া সূন্নাত:

দরূদ শরীফ গুনাহ ক্ষমা হওয়া এবং সকল দুঃখ-কষ্ট ও বিষন্নতা থেকে মুক্তি অর্জনের উপায়।

ﻋَﻦْ ﺃُﺑَﻰِّ ﺑْﻦِ ﻛَﻌْﺐٍ ﺭَﺿِﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ﻗَﺎﻝَ : ﻗُﻠْﺖُ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ! ﺇِﻧِّﻰ ﺃُﻛْﺜِﺮُ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓَ ﻋَﻠَﻴْﻚَ ﻓَﻜَﻢْ ﺃَﺟْﻌَﻞُ ﻟَﻚَ ﻣِﻦْ ﺻَﻼَﺗِﻲ ؟ ﻗَﺎﻝَ : ﻣَﺎ ﺷِﺌﺖَ . ﻗُﻠْﺖُ : ﺍﻟﺮُّﺑْﻊَ . ﻗَﺎﻝَ : ﻣَﺎﺷِﺌْﺖَ ، ﻓَﺈِﻥْ ﺯِﺩْﺕَ ﻓَﻬُﻮَ ﺧَﻴْﺮٌ ﻟَﻚَ . ﻓَﺎﻟﺜُّﻠُﺜَﻴْﻦِ . ﻗَﺎﻝَ : ﻣَﺎﺷِﺌْﺖَ ﻓَﺈِﻥْ ﺯِﺩْﺕَ ﻓَﻬُﻮَ ﺧَﻴْﺮٌﻟَﻚَ . ﻗُﻠْﺖُ : ﺃَﺟْﻌَﻞُ ﻟَﻚَ ﺻَﻼَﺗِﻲ ﻛُﻠَّﻬَﺎ . ﻗَﺎﻝَ : ﺇِﺫَﺍً ﺗُﻜْﻔَﻰ ﻫَﻤُّﻚَ ﻭَﻳُﻐْﻔَﺮُ ﻟَﻚَ ﺫَﻧْﺒُﻚَ . ‏( ﺣﺴﻦ ، ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ ، ﺻﺤﻴﺢ ﺳﻨﻦ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻯ ﻟﻸﻟﺒﺎﻧﻰ ﺍﻟﺠﺰﺀ ﺍﻟﺜﺎﻧﻰ (

“উবাই ইবনু কা‘ব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি আপনার উপর বেশী বেশী দরূদ পাঠ করি। আমি কত দরূদ পড়ব? তিনি বললেন, যত তোমার মন চায়। আমি বললাম, চতুর্থাংশ?


তিনি বললেন: যত মন চায়। তবে আরও বাড়ালে তা তোমার জন্য কল্যাণকর হবে। আমি বললাম- দুই তৃতীয়াংশ? তিনি বললেন: যত মন চায়। তবে আরও বাড়ালে তা তোমার জন্য কল্যাণকর হবে। আমি বললাম- আমি আপনার জন্য পুরা সময়েই দরূদ পড়ব। তিনি বললেন: তাহলে তোমার দুশ্চিন্তা দূর হবে এবং তোমার পাপ ক্ষমা হবে। [61]

আট. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম শুনা, পড়া কিংবা লেখার সময় দরূদ পড়া সুন্নাত।

ﻋَﻦْ ﻋَﻠِﻲٍّ ﺭَﺿِﻲ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ﻗَﺎﻝَ : ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : ﺍﻟْﺒَﺨِﻴْﻞُ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻣَﻦْ ﺫُﻛِﺮْﺕُ ﻋَﻨْﺪَﻩُ ﻓَﻠَﻢْ ﻳُﺼَﻞِّ ﻋَﻠَﻲَّ . ‏( ﺻﺤﻴﺢ ، ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ ، ﺻﺤﻴﺢ ﺳﻨﻦ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻯ ﻟﻸﻟﺒﺎﻧﻰ ﺍﻟﺠﺰﺀ ﺍﻟﺜﺎﻟﺚ (

“আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সেই ব্যক্তি কৃপণ, যার কাছে আমার নাম নেওয়া হল কিন্তু সে আমার উপর দরূদ পড়ল না। [62]


নয়. মসজিদে প্রবেশের সময় দরূদ পড়া:

মসজিদে প্রবেশ করা ও মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর সালাম প্রেরণ করা সূন্নাত। প্রমাণ:


ﻋَﻦْ ﻓَﺎﻃِﻤَﺔَ ﺭَﺿِﻲ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨْﻬَﺎ ﺑِﻨْﺖِ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗَﺎﻟَﺖْ : ﻛَﺎﻥَ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺇِﺫَﺍ ﺩَﺧَﻞَ ﺍﻟْﻤَﺴْﺠِﺪَ ﻳَﻘُﻮْﻝُ : ﺑِﺴْﻢِ ﺍﻟﻠﻪِ ﻭَﺍﻟﺴَّﻼَﻡِ ﻋَﻠَﻲ ﺭَﺳُﻮْﻝِ ﺍﻟﻠﻪِ ، ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺍﻏْﻔِﺮْ ﻟِﻲ ﺫُﻧُﻮْﺑِﻲ ، ﻭَﺍﻓْﺘَﺢْ ﻟِﻲ ﺃَﺑْﻮَﺍﺏَ ﺭَﺣْﻤَﺘِﻚَ ، ﻭَﺇِﺫﺍﺧَﺮَﺝَ ﻗَﺎﻝَ : ﺑِﺴْﻢِ ﺍﻟﻠﻪِ ﻭَﺍﻟﺴَّﻼَﻡُ ﻋَﻠَﻲ ﺭَﺳُﻮْﻝِ ﺍﻟﻠﻪِ ، ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺍﻏْﻔِﺮْ ﻟِﻲ ﺫُﻧُﻮْﺑِﻲ ﻭَﺍﻓْﺘَﺢْ ﻟِﻲ ﺍَﺑْﻮَﺍﺏَ ﻓَﻀْﻠِﻚَ . ‏( ﺻﺤﻴﺢ ، ﺭﻭﺍﻩ ﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﻪ ، ﺻﺤﻴﺢ ﺳﻨﻦ ﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﺔ ﻟﻸﻟﺒﺎﻧﻰ ﺍﻟﺠﺰﺀ ﺍﻷﻭﻝ (

“ফাতেমা বিনতু মুহাম্মদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মসজিদে প্রবেশ করতেন তখন বলতেন: ‘বিসমিল্লাহি ওয়াসসালামু

‘আলা রাসূলিল্লাহি আল্লাহুম্মাগফিরলী যুনুবী ওয়াফতাহলী আবওয়াবা রাহমাতিকা’


অর্থাৎ, আল্লাহর নামে আমি মসজিদে প্রবেশ করছি, আল্লাহর রাসূলের উপর শান্তি হোক, হে আল্লাহ! আমার গুনাহ ক্ষমা কর এবং আমার জন্য আপনার রহমতের দরজা খোলে দাও।
আর যখন মসজিদ থেকে বের হতেন তখন বলতেন: ‘বিসমিল্লাহি ওয়াস্সালামু আলা রাসূলিল্লাহি আল্লাহুম্মাগফিরলী যুনুবী ওয়াফতাহলী আবওয়াবা ফাদলিকা’



অর্থাৎ, আল্লাহর নামে আমি মসজিদ থেকে বের হচ্ছি, আল্লাহর রাসূলের উপর শান্তি হোক, হে আল্লাহ! আমার গুনাহ ক্ষমা কর এবং আমার জন্য আপনার করুণার দরজা খোলে দাও। [63]



দশ. সালাতের শেষাংশে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ পড়া:

সালাত শেষে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর সালাম পৌঁছানো সুন্নাত। প্রমাণ:


ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﺳَﻌِﻴْﺪٍ ﺍﻟْﺨُﺪْﺭِﻱِّ ﺭَﺿِﻲ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ﻗَﺎﻝَ : ﻛَﺎﻥَ ﺇِﺫَﺍ ﺳَﻠَّﻢَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓِ ﻗَﺎﻝَ ﺛَﻼَﺙَ ﻣَﺮَّﺍﺕٍ : ﺳُﺒْﺤَﺎﻥَ ﺭَﺑِّﻚَ ﺭَﺏِّ ﺍﻟْﻌِﺰَّﺓِ ﻋَﻤَّﺎ ﻳَﺼِﻔُﻮْﻥَ ، ﻭَﺳَﻼَﻡٌ ﻋَﻠَﻲ ﺍﻟْﻤُﺮْﺳَﻠِﻴْﻦَ ، ﻭَﺍﻟْﺤَﻤْﺪُ ﻟﻠﻪِ ﺭَﺏِّ ﺍﻟْﻌَﺎﻟَﻤِﻴْﻦَ . ‏( ﺣﺴﻦ ، ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺑﻮﻳﻌﻠﻲ ، ﻋﺪﺓ ﺍﻟﺤﺼﻦ ﺍﻟﺤﺼﻴﻦ ( ،


“আবু সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,


নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাত থেকে সালাম ফিরাতেন তখন তিনবার বলতেন: সুবহানা রাব্বিকা রাব্বিল ইযযাতি আম্মা ইয়াছিফুন, ওয়া সালামুন আলাল মুরসালীন, ওয়াল হামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন। অর্থাৎ, হে আল্লাহ! লোকেরা যা বলে তা থেকে তুমি পবিত্র এবং মর্যাদা পূর্ণ, সকল নবীদের উপর সালাম ও শান্তি হোক, আর সকল প্রশংসা সারা বিশ্বের প্রতিপালক মহান আল্লাহর জন্য।
[64]


এগার. প্রতিটি মজলিশে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরূদ পাঠ করা সূন্নাত:

প্রত্যেক মজলিসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ পাঠ করা সুন্নাত। প্রমাণ:

ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ ﺭَﺿِﻲ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ﻗَﺎﻝَ : ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : ﻣَﺎ ﺟَﻠَﺲَ ﻗَﻮْﻡٌ ﻣَﺠْﻠِﺴًﺎ ﻟَﻢْ ﻳَﺬْﻛُﺮُﻭْﺍ ﺍﻟﻠﻪَ ﻓِﻴْﻪِ , ﻭَﻟَﻢْ ﻳُﺼَﻠُّﻮْﺍ ﻋَﻠَﻲ ﻧَﺒِﻴِّﻬِﻢْ ﺇِﻻَّ ﻛَﺎﻥَ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﺗِﺮَﺓً ﻓَﺈِﻥْ ﺷَﺎﺀَ ﻋَﺬَّﺑَﻬُﻢْ ﻭَﺇِﻥْ ﺷَﺎﺀَ ﻏَﻔَﺮَ ﻟَﻬُﻢْ . ‏( ﺻﺤﻴﺢ ، ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ ، ﺻﺤﻴﺢ ﺳﻨﻦ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻯ ﻟﻸﻟﺒﺎﻧﻰ ﺍﻟﺠﺰﺀ ﺍﻟﺜﺎﻟﺚ (

“আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, কোনো সম্প্রদায় যদি কোনো মজলিসে বসে এবং তাতে আল্লাহর স্মরণ করে না এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ পড়ে না, তাহলে সেই মজলিস তাদের জন্য অনুতাপের কারণ হবে। অতএব তিনি চাইলে তাদের শাস্তি দিবেন কিংবা তাদের ক্ষমা করে দিবেন।
[65]


বারো. সকাল-সন্ধা দরূদ পাঠ করা:

প্রত্যেক সকাল-সন্ধ্যায় দরূদ পাঠ করা সূন্নাত। প্রমাণ:

ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﺍﻟﺪَّﺭْﺩَﺍﺀِ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ﻗَﺎﻝَ : ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : ﻣَﻦْ ﺻَﻠَّﻰ ﻋَﻠَﻲَّ ﺣَﻴْﻦَ ﻳُﺼْﺒِﺢُ ﻋَﺸْﺮًﺍ ﻭَﺣِﻴْﻦَ ﻳُﻤْﺴِﻲ ﻋَﺸْﺮًﺍ ﺃَﺩْﺭَﻛَﺘْﻪُ ﺷَﻔَﺎﻋَﺘِﻲ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ . ‏( ﺣﺴﻦ ، ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﻄﺒﺮﺍﻧﻲ ، ﺻﺤﻴﺢ ﺍﻟﺠﺎﻣﻊ ﺍﻟﺼﻐﻴﺮ ﻟﻸﻟﺒﺎﻧﻰ (

“আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি সকালে দশ বার দরূদ পড়বে এবং সন্ধ্যায় দশবার দরূদ পড়বে সে কিয়ামতের দিন আমার সুপারিশ লাভে ধন্য হবে। [66]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ পড়ার লাভ ও উপকারিতা
আল্লাহর নবীর উপর দরূদ পড়ার লাভ ও ফযিলত সম্পর্কে অসংখ্য হাদিস বর্ণিত, যাতে যারা বেশি বেশি করে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরূদ পড়ে তাদের অবস্থান ও মান মর্যদা তুলে ধরা হয়েছে।
নিম্নে আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ পড়ার কয়েকটি লাভ ও উপকারিতা আলোচনা করছি।


এক. আল্লাহর নির্দেশ বাস্তবায়ন করা:

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ পড়া মানে, আল্লাহর নির্দেশ বাস্তবায়ন করা। কারণ আল্লাহ নিজেই তার নবীর উপর দরূদ পড়ার নির্দেশ দেন এবং তিনি নিজেও তার উপর দরূদ পড়েন। যদিও আল্লাহর দরূদ পড়া আর আমাদের দরূদ পড়ার অর্থ এক নয়। আমাদের দরূদ পড়ার অর্থ হল, তার জন্য দো‘আ করা। আর আল্লাহর দরূদ পড়ার অর্থ হল তার প্রশংসা করা।
অনুরূপভাবে রাসূলের উপর দরূদ পড়ার মাধ্যমে ফেরেশতাদের সাথেও একাত্মতা পোষণ ও তাদের অনুকরণ করা হয়। কারণ তারাও আল্লাহর নবীর উপর দরূদ পড়েন।


আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ ﺇِﻥَّ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﻭَﻣَﻠَٰٓﺌِﻜَﺘَﻪُۥ ﻳُﺼَﻠُّﻮﻥَ ﻋَﻠَﻰ ﭐﻟﻨَّﺒِﻲِّۚ ﻳَٰٓﺄَﻳُّﻬَﺎ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺀَﺍﻣَﻨُﻮﺍْ ﺻَﻠُّﻮﺍْ ﻋَﻠَﻴۡﻪِ ﻭَﺳَﻠِّﻤُﻮﺍْ ﺗَﺴۡﻠِﻴﻤًﺎ ٥٦ ﴾ ‏[ ﺍﻻﺣﺰﺍﺏ : ٥٦ ‏]

“আল্লাহ তা‘আলা নবীর উপর দরূদ পাঠ করেন। আর তাঁর মালাক তথা ফেরেশতাগণ নবীর জন্য আল্লাহর কাছে রহমতের দো‘আ করেন। অতএব, হে ঈমানদার লোকেরা! তোমরাও নবীর উপর সালাত ও সালাম প্রেরণ কর”। [67]


দুই. আল্লাহ তা‘আলা দরূদ পাঠকারীর উপর দরূদ পড়েন:

আল্লাহর নবীর উপর কেউ একবার দরূদ পড়লে আল্লাহ ও তার ফেরেশতারা তার দশবার দরূদ পড়ে। যতক্ষণ পর্যন্ত লোকটি দরূদ পড়তে থাকে ফেরেশতারাও তার উপর দরূদ পড়তে থাকে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

‏« ﻣَﻦْ ﺻَﻠَّﻰ ﻋَﻠَﻲَّ ﺻَﻠَﺎﺓً ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺑِﻬَﺎ ﻋَﺸْﺮًﺍ ‏» ‏( ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ ‏) .

“যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরূদ পাঠ করে আল্লাহ তা‘আলা তার উপর দশবার দরূদ পাঠ করে। [68]

ﻭﻋَﻦْ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠﻪِ ﺑْﻦِ ﺃَﺑِﻲ ﻃَﻠْﺤَﺔَ ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻴﻪِ - ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ - ﺃَﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺁﻟﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﺟَﺎﺀَ ﺫَﺍﺕَ ﻳَﻮْﻡٍ ﻭَﺍﻟْﺒُﺸْﺮَﻯ ﻓِﻲ ﻭَﺟْﻬِﻪِ ﻓَﻘُﻠْﻨَﺎ : ﺇِﻧَّﺎ ﻟَﻨَﺮَﻯ ﺍﻟْﺒُﺸْﺮَﻯ ﻓِﻲ ﻭَﺟْﻬِﻚَ؟ ﻓَﻘَﺎﻝَ : ‏« ﺇِﻧَّﻪُ ﺃَﺗَﺎﻧِﻲ ﺍﻟْﻤَﻠَﻚُ ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﻳَﺎ ﻣُﺤَﻤَّﺪُ ﺇِﻥَّ ﺭَﺑَّﻚَ ﻳَﻘُﻮﻝُ : ﺃَﻣَﺎ ﻳُﺮْﺿِﻴﻚَ ﺃَﻧَّﻪُ ﻟَﺎ ﻳُﺼَﻠِّﻲ ﻋَﻠَﻴْﻚَ ﺃَﺣَﺪٌ ﺇِﻟَّﺎ ﺻَﻠَّﻴْﺖُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻋَﺸْﺮًﺍ، ﻭَﻟَﺎ ﻳُﺴَﻠِّﻢُ ﻋَﻠَﻴْﻚَ ﺃَﺣَﺪٌ ﺇِﻟَّﺎ ﺳَﻠَّﻤْﺖُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻋَﺸْﺮًﺍ ‏» . ‏( ﺻﺤﻴﺢ ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﻨﺴﺎﺋﻲ ﻭﻏﻴﺮﻩ ‏) .

“আব্দুল্লাহ ইবন আবি তালহা রা. তার পিতা থেকে বর্ণনা করে বলেন, একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মধ্যে উপস্থিত হলেন, আমরা তাঁর চেহারায় খুশির ভাব দেখতে পেলাম, আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা আপনার চেহারার মধ্যে আনন্দ দেখতে পাচ্ছি। তিনি বললেন, আমার নিকট ফেরেশতা এসে বললেন, হে মুহাম্মদ তোমার রব বলেন, তুমি কি এতে খুশি নও যে, যদি কোনো ব্যক্তি তোমার উপর একবার দরূদ পড়ে আমি তার উপর দশবার দরূদ পড়ি এবং যদি কেউ একবার সালাম দেয়, আমি তাকে দশবার সালাম দেই?” [69]

ﻭﻋﻦ ﺃﻧﺲ - ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ - ﻗﺎﻝ : ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺁﻟﻪ ﻭﺳﻠﻢ :- ‏« ﺃَﻛْﺜِﺮُﻭﺍ ﺍﻟﺼﻼﺓَ ﻋَﻠﻲَّ ﻳﻮَْﻡَ ﺍﻟﺠﻤﻌَﺔ؛ ﻓﺈﻧﻪ ﺃﺗﺎﻧﻲ ﺟِﺒﺮﻳﻞُ ﺁﻧﻔًﺎ ﻋﻦ ﺭﺑِّﻪ - ﻋﺰ ﻭﺟﻞ - ﻓﻘﺎﻝ : ‏« ﻣَﺎ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻷﺭﺽِ ﻣِﻦ ﻣُﺴﻠﻢٍ ﻳُﺼَﻠِّﻲ ﻋﻠﻴﻚَ ﻣﺮَّﺓً ﻭﺍﺣﺪﺓً ﺇﻻ ﺻﻠﻴﺖُ ﺃﻧﺎ ﻭﻣﻼﺋﻜَﺘﻲ ﻋﻠﻴﻪِ ﻋﺸﺮًﺍ ‏» ‏( ﺣﺴﻦ ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﻄﺒﺮﺍﻧﻲ ‏)

“আনাস রা. হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, জুমার দিন তোমরা আমার উপর বেশি বেশি করে সালাত পড়। কারণ, জিবরীল আ. আমার নিকট এখনি তার রবের নিকট থেকে এ বাণী নিয়ে এসেছে যে, “জমিনের উপর কোনো মুসলিম যদি আমার উপর একবার দরূদ পড়ে আমি এবং আমার ফেরেশতারা তার উপর দশবার দরূদ পড়ি”। [70]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন,

‏« ﻣَﺎ ﻣِﻦْ ﻣُﺴْﻠِﻢٍ ﻳُﺼَﻠِّﻲ ﻋَﻠَﻲَّ ﺇِﻟَّﺎ ﺻَﻠَّﺖْ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺍﻟْﻤَﻠَﺎﺋِﻜَﺔُ ﻣَﺎ ﺻَﻠَّﻰ ﻋَﻠَﻲَّ؛ ﻓَﻠْﻴُﻘِﻞَّ ﺍﻟْﻌَﺒْﺪُ ﻣِﻦْ ﺫَﻟِﻚَ ﺃَﻭْ ﻟِﻴُﻜْﺜِﺮْ ‏» . ‏( ﺣﺴﻦ ﺭﻭﺍﻩ ﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﻪ ‏)

“কোনো মুসলিম আমার উপর দরূদ পড়া মাত্রই ফেরেস্তারা তার উপর সমপরিমাণ দরূদ পড়ে। সুতরাং, একজন মুসলিম যেন দরূদ পড়ে এবং বেশি করে দরূদ পড়ে। [71]


তিন- গুনাহসমূহ ক্ষমা করেন:

যে ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর একবার দরূদ পড়ে, আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য দশটি নেকি লিপিবদ্ধ করেন, দশটি গুনাহ ক্ষমা করেন এবং দশটি দরজা বুলন্দ করেন।

ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﻃَﻠْﺤَﺔَ ﺍﻟْﺄَﻧْﺼَﺎﺭِﻱِّ - ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ - ﻗَﺎﻝَ : ﺃَﺻْﺒَﺢَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺁﻟﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﻳَﻮْﻣًﺎ ﻃَﻴِّﺐَ ﺍﻟﻨَّﻔْﺲِ ﻳُﺮَﻯ ﻓِﻲ ﻭَﺟْﻬِﻪِ ﺍﻟْﺒِﺸْﺮُ، ﻗَﺎﻟُﻮﺍ : ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪ، ﺃَﺻْﺒَﺤْﺖَ ﺍﻟْﻴَﻮْﻡَ ﻃَﻴِّﺐَ ﺍﻟﻨَّﻔْﺲِ ﻳُﺮَﻯ ﻓِﻲ ﻭَﺟْﻬِﻚَ ﺍﻟْﺒِﺸْﺮُ؟ ﻗَﺎﻝَ : ‏« ﺃَﺟَﻞْ ﺃَﺗَﺎﻧِﻲ ﺁﺕٍ ﻣِﻦْ ﺭَﺑِّﻲ - ﻋﺰ ﻭﺟﻞ - ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﻣَﻦْ ﺻَﻠَّﻰ ﻋَﻠَﻴْﻚَ ﻣِﻦْ ﺃُﻣَّﺘِﻚَ ﺻَﻠَﺎﺓً ﻛَﺘَﺐَ ﺍﻟﻠﻪُ ﻟَﻪُ ﻋَﺸْﺮَ ﺣَﺴَﻨَﺎﺕٍ، ﻭَﻣَﺤَﺎ ﻋَﻨْﻪُ ﻋَﺸْﺮَ ﺳَﻴِّﺌَﺎﺕٍ، ﻭَﺭَﻓَﻊَ ﻟَﻪُ ﻋَﺸْﺮَ ﺩَﺭَﺟَﺎﺕٍ، ﻭَﺭَﺩَّ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻣِﺜْﻠَﻬَﺎ ‏» . ‏( ﺻﺤﻴﺢ ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺣﻤﺪ ﻭﺍﻟﻨﺴﺎﺋﻲ ‏)

“আবু তালহা আল আনসারী রা. হতে বর্ণিত তিনি বলেন, একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন সকালে আমাদের মধ্যে উপস্থিত হলে, আমরা তার চেহারার মধ্যে খুশি দেখতে পেলাম, আমরা বললাম হে আল্লাহর রাসূল! আমরা আপনার চেহারার মধ্যে আনন্দ দেখতে পাচ্ছি। তিনি বললেন, আমার নিকট আমার রবের পক্ষ হতে একজন ফেরেশতা এসে বলল, যদি তোমার উম্মতের কোনো ব্যক্তি তোমার উপর একবার দরূদ পড়ে আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য দশটি নেকী লিপিবদ্ধ করেন, দশটি গুনাহ ক্ষমা করেন, দশটি মর্যাদা বৃদ্ধি করেন এবং তার জন্য সমপরিমাণ রহমত প্রেরণ করেন। [72]

চার. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে দরূদ পাঠকারীর আলোচনা:


রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ পড়াতে রাসূলের সামনে তোমার নাম উল্লেখ করার সৌভাগ্য লাভ হয়। একজন মানুষের জন্য এর চেয়ে বড় পাওনা আর কি হতে পারে যে তার নাম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আলোচনা হয়। প্রমাণ:

ﻓﻌﻦ ﺍﺑﻦ ﻣﺴﻌﻮﺩ - ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ - ﻋﻦ ﺍﻟﻨﺒﻲ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺁﻟﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﻗﺎﻝ : ‏« ﺇِﻥَّ ﻟِﻠَّﻪِ ﻣَﻠَﺎﺋِﻜَﺔً ﺳَﻴَّﺎﺣِﻴﻦَ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﻳُﺒَﻠِّﻐُﻮﻧِﻲ ﻣِﻦْ ﺃُﻣَّﺘِﻲ ﺍﻟﺴَّﻠَﺎﻡَ ‏» ‏( ﺻﺤﻴﺢ ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﻨﺴﺎﺋﻲ ﻭﺍﺑﻦ ﺣﺒﺎﻥ ‏)

“আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহর কতিপয় ফেরেশতা রয়েছেন যারা বিশ্বে ঘুরে বেড়ায়। তারা আমার উম্মতের পক্ষ থেকে আমার কাছে সালাম পৌঁছিয়ে দেন।
[73]

ﻭﻋﻦ ﺍﻟﺤﺴﻦ ﺑﻦ ﻋﻠﻲ - ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﻤﺎ - ﺃﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺁﻟﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﻗﺎﻝ : ‏« ﺣَﻴْﺜُﻤَﺎ ﻛُﻨْﺘُﻢْ ﻓَﺼَﻠُّﻮﺍ ﻋَﻠَﻲَّ، ﻓَﺈِﻥَّ ﺻَﻼﺗَﻜُﻢْ ﺗَﺒْﻠُﻐُﻨِﻲ ‏» . ‏( ﺻﺤﻴﺢ ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﻄﺒﺮﺍﻧﻲ ‏) .

“হাসান ইবন আলী রা. বলেন, তোমরা যেখানেই থাক, আমার উপর দরূদ পাঠ কর, কারণ, তোমাদের সালাত আমার নিকট পৌছানো হয়। [74]

পাঁচ- রাসূলের উত্তর পাওয়ার সৌভাগ্য লাভ:

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ পড়া দ্বারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ হতে দরূদ এবং সালামের উত্তর পাওয়ার সৌভাগ্য লাভ হয়। প্রমাণ:

ﻓﻌﻦ ﺃﺑﻲ ﻫﺮﻳﺮﺓ - ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ - ﻋﻦ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺁﻟﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﻗﺎﻝ : ‏« ﻣَﺎ ﻣِﻦْ ﺃَﺣَﺪٍ ﻳُﺴَﻠِّﻢُ ﻋَﻠَﻲَّ ﺇِﻟَّﺎ ﺭَﺩَّ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻲَّ ﺭُﻭﺣِﻲ ﺣَﺘَّﻰ ﺃَﺭُﺩَّ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺍﻟﺴَّﻠَﺎﻡَ ‏» ‏( ﺣﺴﻦ ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺣﻤﺪ ﻭﺃﺑﻮ ﺩﺍﻭﺩ ‏)

“আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে কোনো মুসলিম আমার উপর সালাম দেয়, আল্লাহ তা‘আলা আমার রূহকে শরীরে ফিরিয়ে দেয় যাতে আমি তার সালামের উত্তর দিতে পারি। [75]

ছয়- রাসূলের ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়:


ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﺃﻣﺎﻣﺔ - ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ - ﻗﺎﻝ : ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺁﻟﻪ ﻭﺳﻠﻢ :- ‏« ﺃﻛﺜِﺮُﻭﺍ ﻋﻠَﻲَّ ﻣِﻦ ﺍﻟﺼﻼﺓِ ﻓﻲ ﻛﻞِّ ﻳﻮﻡِ ﺟﻤﻌﺔ؛ ﻓﺈﻥ ﺻﻼﺓَ ﺃﻣَّﺘﻲ ﺗُﻌﺮَﺽُ ﻋﻠﻲَّ ﻓﻲ ﻛﻞِّ ﻳﻮﻡِ ﺟﻤﻌﺔ؛ ﻓﻤَﻦ ﻛﺎﻥَ ﺃﻛﺜﺮَﻫﻢ ﻋﻠﻲَّ ﺻﻼﺓً ﻛﺎﻥَ ﺃﻗﺮﺑَﻬُﻢ ﻣﻨِّﻲ ﻣﻨﺰِﻟﺔً ‏» ‏( ﺣﺴﻦ ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﻴﻬﻘﻲ ‏)

“আবু উমামা রা. হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমার প্রতি জুমায় আমার উপর দরূদ বেশি করে পড়, কারণ, আমার উম্মতের দরূদ পাঠ প্রতি জুমায় আমার নিকট পেশ করা হয়, যে ব্যক্তি বেশি দরূদ পাঠকারী হয়ে থাকে, যে মর্যাদার দিক দিয়ে আমার বেশি নিকটে হয়ে থাকে।[76]

ﻭﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻣﺴﻌﻮﺩ - ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ - ﻗﺎﻝ : ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺁﻟﻪ ﻭﺳﻠﻢ :- ‏« ﺃَﻭْﻟَﻰ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ ﺑِﻲ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ ﺃَﻛْﺜَﺮُﻫُﻢْ ﻋَﻠَﻲَّ ﺻَﻠَﺎﺓً ‏» . ‏( ﺣﺴﻦ ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ ‏) .

“ইবনে মাসউদ রা. হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মানুষের মধ্যে সে ব্যক্তি কিয়ামতের দিন উত্তম হবে, যে আমার উপর বেশি বেশি দরূদ পড়ে। [77]

হাদিসে উত্তম বলতে মানুষের সবচেয়ে কাছের লোক এবং যারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুপারিশ লাভে ধন্য তাদরে বুঝানো হয়েছে। যারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর বেশি বেশি দরূদ পাঠ করেন তারাই রাসূলের অনুকরণ করেন এবং তাদের অন্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ভালোবাসা থাকে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ﻗُﻞۡ ﺇِﻥ ﻛُﻨﺘُﻢۡ ﺗُﺤِﺒُّﻮﻥَ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﻓَﭑﺗَّﺒِﻌُﻮﻧِﻲ ﻳُﺤۡﺒِﺒۡﻜُﻢُ ﭐﻟﻠَّﻪُ ﻭَﻳَﻐۡﻔِﺮۡ ﻟَﻜُﻢۡ ﺫُﻧُﻮﺑَﻜُﻢۡۚ ﻭَﭐﻟﻠَّﻪُ ﻏَﻔُﻮﺭٞ ﺭَّﺣِﻴﻢٞ ٣١ ﴾ ‏[ ﺍﻝ ﻋﻤﺮﺍﻥ : ٣١ ‏]

“বল, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাস, তাহলে আমার অনুসরণ কর, আল্লাহ তোমাদেরকে ভালোবাসবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। [78]


সাত. গুনাহ মাপ হয়:

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ পাঠ গুনাহ মাপের কারণ হয় এবং দুনিয়া ও আখেরাতের যাবতীয় সমস্যা সমাধানের জন্য তা যথেষ্ট হয়। প্রমাণ:

ﻋﻦ ﺃُﺑَﻲِّ ﺑْﻦِ ﻛَﻌْﺐٍ - ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ - ﻗﺎﻝ : ﻛَﺎﻥَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺁﻟﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﺇِﺫَﺍ ﺫَﻫَﺐَ ﺛُﻠُﺜَﺎ ﺍﻟﻠَّﻴْﻞِ ﻗَﺎﻡَ ﻓَﻘَﺎﻝَ : ‏« ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﺍﺫْﻛُﺮُﻭﺍ ﺍﻟﻠﻪَ، ﺍﺫْﻛُﺮُﻭﺍ ﺍﻟﻠﻪَ، ﺟَﺎﺀَﺕْ ﺍﻟﺮَّﺍﺟِﻔَﺔُ ﺗَﺘْﺒَﻌُﻬَﺎ ﺍﻟﺮَّﺍﺩِﻓَﺔُ، ﺟَﺎﺀَ ﺍﻟْﻤَﻮْﺕُ ﺑِﻤَﺎ ﻓِﻴﻪِ، ﺟَﺎﺀَ ﺍﻟْﻤَﻮْﺕُ ﺑِﻤَﺎ ﻓِﻴﻪِ ‏» .
ﻗُﻠْﺖُ : ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ، ﺇِﻧِّﻲ ﺃُﻛْﺜِﺮُ ﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓَ ﻋَﻠَﻴْﻚَ، ﻓَﻜَﻢْ ﺃَﺟْﻌَﻞُ ﻟَﻚَ ﻣِﻦْ ﺻَﻠَﺎﺗِﻲ؟ﻓَﻘَﺎﻝَ : ‏« ﻣَﺎ ﺷِﺌْﺖَ ‏» . ﻗُﻠْﺖُ : ﺍﻟﺮُّﺑُﻊَ؟ ﻗَﺎﻝَ : ‏« ﻣَﺎ ﺷِﺌْﺖَ، ﻓَﺈِﻥْ ﺯِﺩْﺕَ ﻓَﻬُﻮَ ﺧَﻴْﺮٌ ﻟَﻚَ ‏» . ﻗُﻠْﺖُ : ﺍﻟﻨِّﺼْﻒَ؟ ﻗَﺎﻝَ : ‏« ﻣَﺎ ﺷِﺌْﺖَ، ﻓَﺈِﻥْ ﺯِﺩْﺕَ ﻓَﻬُﻮَ ﺧَﻴْﺮٌ ﻟَﻚَ ‏» . ﻗُﻠْﺖُ : ﻓَﺎﻟﺜُّﻠُﺜَﻴْﻦِ؟ ﻗَﺎﻝَ : ‏« ﻣَﺎ ﺷِﺌْﺖَ، ﻓَﺈِﻥْ ﺯِﺩْﺕَ ﻓَﻬُﻮَ ﺧَﻴْﺮٌ ﻟَﻚَ ‏» . ﻗُﻠْﺖُ : ﺃَﺟْﻌَﻞُ ﻟَﻚَ ﺻَﻠَﺎﺗِﻲ ﻛُﻠَّﻬَﺎ؟ ﻗَﺎﻝَ : ‏« ﺇِﺫًﺍ ﺗُﻜْﻔَﻰ ﻫَﻤَّﻚَ ﻭَﻳُﻐْﻔَﺮُ ﻟَﻚَ ﺫَﻧْﺒُﻚَ ‏» . ‏( ﺣﺴﻦ ﺻﺤﻴﺢ ﺭﻭﺍﻩ ﻭﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ ‏)

“উবাই ইবন কা‘ব রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাতের দুই তৃতীয়াংশ অতিবাহিত হওয়ার পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুম থেকে উঠে যেতেন। অতঃপর তিনি বলতেন, হে মানুষেরা! তোমরা আল্লাহর যিকির কর, তোমরা আল্লাহর যিকির কর, রাজেফা তো প্রায় এসেই গেছে তারপরই রাদেফা আসবে। মৃত্যু তার আনুষাঙ্গিক বিষয়গুলো নিয়ে উপস্থিত, মৃত্যু তার আনুষাঙ্গিক বিষয়গুলো নিয়ে উপস্থিত। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনার উপর বেশি বেশি করে সালাত প্রেরণ করতে চাই। আমি আপনার উপর কতবার সালাত প্রেরণ করব? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি যা পার, আমি বললাম, আমার সমূদয় দো‘আর চার ভাগের এক ভাগ? তিনি বললেন, তুমি যা পার, তবে যদি তুমি বাড়াও তাহলে তা তোমার জন্য উত্তম। আমি বললাম, তাহলে কি আমি আমার সমূদয় দো‘আর অর্ধেক আপনার জন্য সালাত প্রেরণে নিয়োজিত করব? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি যা পার, তবে যদি তুমি বাড়াও তাহলে তা তোমার জন্য উত্তম। আমি বললাম, তাহলে কি আমি আমার সমূদয় দো‘আর তিনভাগের একভাগ আপনার জন্য সালাত পাঠে ব্যয় করব? তিনি বললেন, তুমি যা পার, তবে যদি তুমি বাড়াও তাহলে তা তোমার জন্য উত্তম। আমি বললাম, আমি আমার সমূদয় দো‘আই কি আপনার জন্য সালাত প্রেরণে কাটিয়ে দেব। তিনি বললেন, তাহলে তা তোমাকে দুশ্চিন্তা করবে এবং তোমার গুনাহসমূহ মুচে দেবে। [79]


আট: শাফাআত লাভের কারণ হয়:

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ পাঠ করা তার শাফাআত লাভের কারণ হয়। প্রমাণ:

ﻓﻌﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﻋﻤﺮﻭ - ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ - ﻗﺎﻝ : ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺁﻟﻪ ﻭﺳﻠﻢ :- ‏« ﻣَﻦْ ﺻَﻠَّﻰ ﻋﻠﻲَّ ﺃﻭ ﺳﺄﻝَ ﻟِﻲَ ﺍﻟﻮﺳﻴﻠﺔَ ﺣﻘَّﺖْ ﻋﻠﻴﻪِ ﺷﻔَﺎﻋَﺘﻲ ﻳَﻮﻡَ ﺍﻟﻘِﻴَﺎﻣَﺔ ‏» ‏( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺠﻬﻀﻤﻲ ﻓﻲ ﻓﻀﻞ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻨﺒﻲ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺁﻟﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﻭﺻﺤﺤﻪ ﺍﻷﻟﺒﺎﻧﻲ ‏)

“আব্দুল্লাহ ইবন ‘আমর রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, যে ব্যক্তি আমার উপর দরূদ পড়ে অথবা আমার জন্য আল্লাহর নিকট ওসিলা চায়, কিয়ামতের দিন তার জন্য আমার সুপারিশ অবধারিত হবে। [80]


নয়. দো‘আ কবুল হয়:

দো‘আ করার পূর্বে দুরূদ পড়া হলে, তাতে তার দো‘আ কবুল হয়। উমামাহ রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ পড়া না হলে, কোনো দো‘আই কবুল করা হয় না।
হাদিসের ব্যাখ্যায় আল্লামা মুনাবী রহ. বলেন, ‏( ﻛﻞُّ ﺩﻋﺎﺀٌ ﻣﺤﺠﻮﺏٌ ‏) কথাটির অর্থ, দো‘আ কবুল করা হয় না। অর্থাৎ, যে দো‘আর সাথে দুরূদ পড়া হয় না, সে দো‘আ আল্লাহর নিকট পৌছানো হয় না। কারণ, দুরূদ পাঠ করা দো‘আ কবুল হওয়ার মাধ্যম।


ﻭﻋﻦ ﻋﻠﻲ - ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ - ﻗﺎﻝ : ‏« ﻛﻞ ﺩﻋﺎﺀ ﻣﺤﺠﻮﺏ ﺣﺘﻰ ﻳﺼﻠﻰ ﻋﻠﻰ ﻣﺤﻤﺪ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺁﻟﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ‏» . ‏( ﺻﺤﻴﺢ ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﻄﺒﺮﺍﻧﻲ ﻣﻮﻗﻮﻓًﺎ ‏) .


“আলী রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, সব দো‘আই বিরত রাখা হয়ে থাকে, যতক্ষণ পর্যন্ত না রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ পড়া না হয়। [81]
অন্য বর্ণনায় বর্ণিত,


ﻭﻋَﻦْ ﺳَﻌِﻴﺪِ ﺑْﻦِ ﺍﻟْﻤُﺴَﻴَّﺐِ ﻋَﻦْ ﻋُﻤَﺮَ ﺑْﻦِ ﺍﻟْﺨَﻄَّﺎﺏِ - ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ - ﻗَﺎﻝَ : ‏« ﺇِﻥَّ ﺍﻟﺪُّﻋَﺎﺀَ ﻣَﻮْﻗُﻮﻑٌ ﺑَﻴْﻦَ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﺀِ ﻭَﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﻟَﺎ ﻳَﺼْﻌَﺪُ ﻣِﻨْﻪُ ﺷَﻲْﺀٌ ﺣَﺘَّﻰ ﺗُﺼَﻠِّﻲَ ﻋَﻠَﻰ ﻧَﺒِﻴِّﻚَ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺁﻟﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ‏» ‏( ﺻﺤﻴﺢ ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ ‏)

সাঈদ ইবনে মুসাইয়্যেব রহ. ওমর ইবন খাত্তাব রা. হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল সা. বলেন, দো‘আ আসমান ও জমিনের মাঝে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে, তোমাদের নবীর উপর দো‘আ পড়া ছাড়া কোনো দো‘আই আসমান পর্যন্ত আরোহন করে না। [82]


দশ. মজলিস বরকত পূর্ণ হয়:

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ পড়া মুজলিস সুঘ্রাণ হওয়া ও কিয়ামতের দিন অনুতাপ মুক্ত হওয়ার কারণ হয়। যে মজলিসে আল্লাহর যিকির করা হয় না, তার প্রশংসা করা না হয় এবং তার নবীর উপর দরূদ পড়া করা না হয়, এ ধরনের মজলিস দূর্গন্ধময় হয়ে থাকে। আর যে মজলিসে দুরূদ পড়া হয় সে মজলিস দূর্গন্ধযুক্ত হওয়া থেকে মুক্ত হয়।

এগারো. কৃপণ বলে আখ্যায়িত করা হতে পরিত্রাণ লাভ:

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম উচ্চারণ করার সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ পাঠ করা, তার নামের সাথে কৃপণ শব্দটি যোগ করা হতে মুক্তি লাভ করে এবং বান্দা অন্তরের কাঠিন্য হতে মুক্তি লাভ করে।


বারো. জান্নাতের পথ সুগম করে:

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ পাঠ করা দরূদ পাঠকারীকে জান্নাতের দিকে পথ দেখায় আর যে দরূদ পাঠ করে না তাকে জান্নাতের পথ হতে বিচ্যুত করে।


তেরো. উত্তম প্রশংসা অর্জন:

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ পাঠকারীর সু-প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলা আসমানবাসী ও জমীন বাসীর মাঝে স্থায়ীভাবে ধরে রাখেন। কারণ, একজন মুসল্লি আল্লাহর নিকট এ বিষয়টিই কামনা করেন যে, আল্লাহ তা‘আলা যেন, আল্লাহর রাসূলের মান, মর্যাদা ও সম্মান সর্বদা অবশিষ্ট রাখেন। সুতরাং তার বিনিময় ও তার অনুরূপই হবে। ফলে দরূদ পাঠ কারীর জন্য আল্লাহ তা‘আলা একই বিনিময় (তার মান-মর্যাদা ও সম্মান অক্ষুন্ন রাখা) দান করবেন।


চৌদ্দ. বরকত লাভের কারণ:

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ পাঠ করা দরূদ পাঠকারীর আমল, হায়াত ও যাবতীয় কর্মে বরকতের কারণ হয়। কারণ, দরূদ পাঠকারী আল্লাহর রাসূল তার পরিবার পরিজন ও সাহাবীদের জন্য দো‘আ করে থাকেন। আর এ দো‘আ অবশ্যই কবুল হবে। আর যখন কোনো বান্দা অপরের জন্য দো‘আ করে আল্লাহ তা‘আলা তাকেও অনুরূপ বিনিময় দান করেন।


পনেরো. আল্লাহর রহমত লাভ:

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ পড়া আল্লাহর রহমত লাভের কারণ হয়:


যেমন আল্লামা ইবনুল কাইয়েম রহ. বলেন, সালাতের এক অর্থ হল, রহমত। ফলে যে ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরূদ পাঠ করবে সে অবশ্যই আল্লাহর রহমত লাভে ধন্য হবে। অথবা সালাত পাঠের আবশ্যকীয় ও অনিবার্য ফল হল, আল্লাহর রহমত লাভ করা। সুতরাং একজন দরূদ পাঠকারী যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর বেশি বেশি করে দরূদ পাঠ করবে তখন সে আল্লাহর পক্ষ হতে রহমতের ভাগি হবে।


ষোলো. রাসূলের মহব্বত স্থায়ী হওয়া, বৃদ্ধি পাওয়া ও দ্বিগুণ হওয়া:

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ পাঠ করা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি স্থায়ী মহব্বত, মহব্বত বৃদ্ধি ও দ্বিগুণ হওয়ার কারণ:

আর এটি হল ঈমানের দৃঢ় বন্ধন; এটি ছাড়া কখনোই একজন ঈমানদারের ঈমান পূর্ণতা লাভ করে না এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মহব্বত ছাড়াও ঈমানের পূর্ণতা সম্ভব নয়। কোনো বান্দা যখন তার মাহবুবের আলোচনা বেশি বেশি করে তখন তার অন্তরে তার উপস্থিতি স্থায়ী হয়। তার সৌন্দর্য ও গুণাগুণগুলো তার সামনে বার বার ভেসে উঠে। তার প্রতি তার ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়, তার প্রতি তার আগ্রহ ও শওক বাড়তে থাকে এবং তার অন্তরে সেই কেবল স্থান করে নেয়। আর যখন কোনো মানুষ তার মাহবুবের আলোচনা থেকে বিরত থাকে, তার সৌন্দর্যগুলোকে অবলোকন না করে তখন মাহবুবের প্রতি তার ভালোবাসা লোপ পায়। যখন কোনো মানুষ কাউকে ভালোবাসে তখন মাহবুবের দর্শন, তার সৌন্দর্যের আলোচনা ও তার গুণাগুণ ছাড়া কোনো কিছুই তার চক্ষুকে শীতল করতে পারে না, কোনো কিছুই তার অন্তরকে শান্ত করতে পারে না। সে তার মাহবুবের আলোচনা শুনতে ও তার দর্শন লাভ করতে সব সময় ব্যাকুল থাকে।


সতেরো. রাসূলের উপর দরূদ পড়া দ্বারা রাসূলের মহব্বহত লাভে বান্দা ধন্য হয়:

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ পাঠ করা, তার মহব্বতের কারণ:
দরূদ পাঠকারীর অন্তরে যেমনিভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি মহব্বত বাড়ে অনুরূপভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মহব্বত লাভেরও কারণ হয়ে থাকে।


আঠারো. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ পাঠ করা বান্দার হিদায়েতের কারণ হয় এবং তার আত্মার জীবন লাভ হয়:

কারণ, যখন কোনো বান্দা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর বেশি বেশি দরূদ পড়ে এবং তার আলোচনা করে, তখন তার অন্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মহব্বত বৃদ্ধি পায়। তখন তার অন্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদেশ নিষেধ পালনে তার অন্তরে কোনো সংকোচ থাকে না এবং তার আনীত শরীয়তের প্রতি তার মধ্যে কোনো প্রকার অনীহা ও অনাগ্রহ তার মধ্যে অবশিষ্ট থাকে না বরং তার অন্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনীত শরীয়ত তার অন্তরে প্রগাড়ভাবে স্থান করে নেয় এবং অন্তরে তা বসে যায়। সে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ হতে হিদায়াত, কামিয়াবী ও বিভিন্ন ধরনের ইলম সংগ্রহ করতে থাকে। যখন অন্তরের মধ্যে শক্তি বৃদ্ধি পায়, আল্লাহর মারেফত হাসিল হয় এবং দূরদর্শিতা অর্জন হতে থাকে, তখন তার উপর সালাত পাঠ আরও বৃদ্ধি পায় এবং তার রূহানী শক্তি প্রবল হয়।


ঊনিশ. রাসূলের হক আদায় করা:

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ পাঠ তার কিছুটা হলেও তার হক আদায় করা।


বিশ. আল্লাহর যিকিরকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়:

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ পাঠ আল্লাহর যিকির ও শুকরিয়া আদায়কে অন্তর্ভুক্ত করে এবং তার বান্দার উপর তার অনুগ্রহসমূহ জানার সুযোগ করে দেয়। একজন দরূদ পাঠকারী যখন তার উপর দরূদ পড়ে তার দরূদের মধ্যে আল্লাহর যিকির থাকে, আল্লাহর রাসূলের আলোচনা থাকে, তার জন্য উত্তম বিনিময় চাওয়া হয়ে থাকে।
লেখার সময় পূরো দরূদ লেখার পরিবর্তে সা./স. ইত্যাদি সংক্ষিপ্ত শব্দ দ্বারা দরূদ লেখার বিধান
আমাদের উচিত হল, আমরা যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরূদ পড়ব তখন পুরো দরূদ পড়ব এবং যখন তার নামের শেষে দরূদ লিখব তখনও দরূদ শরিফ পুরোপুরি খিলব। কোনো প্রকার সংকেত বা কোনো অসমাপ্ত শব্দ ব্যবহার করব না।
শাইখ আব্দুল আযীয ইবন বায রহ. বলেন, ...আমরা জানি যেমনিভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ সালাতের তাশাহুদের পর, খুতবার সময়, দো‘আ ইস্তেগফারের সময়, আজানের পর, মসজিদে প্রবেশে ও বাহির হওয়ার সময় অনুরূপভাবে কোনো কিতাব, প্রবন্ধ, রিসালা ও লেখনি লেখার সময় ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম লিখার সময় পুরো দরূদ লেখা সূন্নাত। আর দরূদটি পরিপূর্ণ লিখতে হবে, যাতে আল্লাহর আদেশের পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন হয় এবং একজন পাঠক যখন তা পাঠ করে সে বুঝতে পারে যে এখানে দরূদ পড়া হয়েছে। সংক্ষিপ্তাকারে যেমন- (সা.) ‏( ﺹ ‏) ﺃﻭ ‏( ﺻﻠﻌﻢ ‏) ইত্যাদি লেখা কোনোক্রমেই উচিত নয়। অনেককে এভাবে লেখতে দেখা যায়, এটি আল্লাহ তা‘আলার বাণী- } ﺻَﻠُّﻮﺍ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭﺳَﻠِّﻤُﻮﺍ ﺗَﺴْﻠِﻴﻤﺎً { ‏( ﺍﻷﺣﺰﺍﺏ 56: ‏) . এর পরিপন্থী। এছাড়াও এ দ্বারা দরূদ পড়ার উদ্দেশ্য পূরণ হয় না এবং দরূদ পড়ার যে সব লাভের কথা কুরআন ও হাদিসে বর্ণিত তা হতে বঞ্চিত হয়। আবার অনেক সময় দেখা যায় একজন পাঠক সংকেত দ্বারা কি উদ্দেশ্য তা বুঝতে পারে না এবং সজাগ থাকে না। এ কারণেই আহলে ইলম সংকেত দিয়ে দরূদ শরীফ লেখাকে অপছন্দ করেন।
দেখুন মাজমুয়ায়ে ফতওয়ায়ে ইবন বায, পৃ: ৩৯৭-৩৯৯/২


দরূদ সম্পর্কীয় দুর্বল হাদিসসমূহ

ﻋَﻦْ ﺃَﻧَﺲٍ ﺭَﺿِﻲ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ﻗَﺎﻝَ : ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : ﻣَﻦْ ﺻَﻠَّﻲ ﻋَﻠَﻲَّ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﺠُﻤْﻌَﺔِ ﺛَﻤَﺎﻧِﻴْﻦَ ﻣَﺮَّﺓً ﻏَﻔَﺮَ ﺍﻟﻠﻪُ ﻟَﻪُ ﺫَﻧُﻮْﺏ َﺛَﻤَﺎﻧِﻴْﻦَ ﻋَﺎﻣًﺎ , ﻓَﻘِﻴْﻞَ ﻟَﻪُ : ﻛَﻴْﻒَ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓُ ﻋَﻠَﻴْﻚَ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ؟ ﻗَﺎﻝَ : ﺗَﻘُﻮْﻝُ : ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺻﻞِّ ﻋَﻠَﻲ ﻣُﺤَﻤَّﺪٍ ﻭَﻧَﺒِﻴِّﻚَ ﻭَﺭَﺳُﻮْﻟِﻚَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺍﻷُﻣِّﻲِّ ﻭَﺗَﻌْﻘِﺪُ ﻭَﺍﺣِﺪًﺍ . ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺨﻄﻴﺐ

দুই- আনস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি জুমার দিন আমার উপর আশিবার দরূদ পাঠ করবে আল্লাহ তা‘আলা তার আশি বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন”। তখন তাঁকে জিজ্ঞেস করা হল, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার উপর দরূদ কিভাবে পাঠ করা হবে? বললেন: বল -“আল্লাহুম্মা ছাল্লি আলা মুহাম্মাদিন ওয়া নাবীয়্যিকা ওয়া রাসূলিকান নবীয়্যিল উম্মিয়্যি”।

ফায়েদা: এই হাদিসটি জাল। বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন -সিলসিলা যয়ীফাহঃ ১/ হা/নং ২১৫।

ﻋَﻦْ ﻳُﻮْﻧُﺲَ ﻣَﻮْﻟَﻲ ﺑَﻨِﻲ ﻫَﺎﺷِﻢٍ ﻗَﺎﻝَ : ﻗُﻠْﺖُ ﻟِﻌَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠﻪِ ﺑْﻦِ ﻋُﻤَﺮَ ﺃَﻭْ ﺍﺑْﻦِ ﻋُﻤَﺮَ ﻛَﻴْﻒَ ﺍﻟﺼَّﻼَﻩُ ﻋَﻠَﻲ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ؟ ﻗَﺎﻝَ : ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺍﺟْﻌَﻞْ ﺻَﻠَﻮَﺍﺗِﻚَ ﻭَﺑَﺮَﻛَﺎﺗِﻚَ ﻭَﺭَﺣْﻤَﺘِﻚَ ﻋَﻠَﻲ ﺳَﻴِّﺪِ ﺍﻟْﻤُﺮْﺳَﻠِﻴْﻦَ ﻭَﺇِﻣَﺎﻡِ ﺍﻟْﻤُﺘَّﻘِﻴْﻦَ ﻭَﺧَﺎﺗِﻢِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻴِّﻴْﻦَ ﻣُﺤَﻤَّﺪٍ ﻋَﺒْﺪِﻙَ ﻭَﺭَﺳُﻮْﻟِﻚَ ﻭَﺇِﻣَﺎﻡِ ﺍﻟْﺨَﻴْﺮِ ﻭَﻗَﺎﺋِﺪِ ﺍﻟﺨﻴﺮ ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺍﺑْﻌَﺜَﻪُ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ ﻣَﻘَﺎﻣًﺎ ﻣَﺤْﻤُﻮُْﺩًﺍ ﻳَﻐْﺒِﻄْﻪُ ﺍﻷَﻭَّﻟُﻮْﻥَ ﻭَﺍﻵﺧِﺮُﻭْﻥَ ﻭَﺻَﻞِّ ﻋَﻠَﻲ ﻣُﺤَﻤَّﺪٍ ﻭَﻋَﻠَﻲ ﺁﻝِ ﻣُﺤَﻤَّﺪٍ ﻛَﻤَﺎ ﺻَﻠَّﻴْﺖَ ﻋَﻠَﻲ ﺇِﺑْﺮَﺍﻫِﻴْﻢَ ﻭَﻋَﻠَﻲ ﺁﻝِ ﺇِﺑْﺮَﺍﻫِﻴْﻢَ . ﺭﻭﺍﻩ ﺇﺳﻤﺎﻋﻴﻞ ﺍﻟﻘﺎﺿﻲ ﻓﻲ ﻓﻀﻞ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ

দুই- হাসেম গোত্রের আযাদকৃত দাস ইউনুস


বলেন, আমি আব্দুল্লাহ ইবনু উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে জিজ্ঞেস করলাম,


নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ পড়ার নিয়ম কি? তিনি বললেন:
“আল্লাহুম্মাজ‘আল ছালাওয়াতিকা ওয়া বারাকাতিকা ওয়া রাহমাতিকা আলা সাইয়িদিল মুসলিমীনা ওয়া ইমামিল মুত্তাকীনা ওয়া খাতামিন্নাবিয়্যীনা মুহাম্মাদিন আব্দিকা ওয়া রাসুলিকা ওয়া ইমামিল খাইরি ওয়া কায়িদিল খাইরি,
আল্লাহুম্মাবআ’ছহু ইয়াউমাল কিয়ামাতি মাকামান মাহমূদান ইয়াগবিতুহুল আউওয়ালূনা ওয়াল আখিরুনা, ওয়া ছাল্লি
আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা ছাল্লাইতা আলা ইবরাহীমা ওয়া আলা আলি ইবরাহীম”।


ফায়েদা: এই হাদিসটি দুর্বল। বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন, ‘ফদ্বলুচ্ছালাত আলান্নাবী’ হা/নং ৬১।


ﻣَﻦْ ﺻَﻠَّﻲ ﻋَﻠَﻲَّ ﻣَﺮَّﺓً ﻟَﻢْ ﻳَﺒْﻖِ ﻣِﻦْ ﺫُﻧُﻮْﺑِﻪِ ﺫَﺭَّﺓٌ .


তিন- “যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরূদ পাঠ করবে তার কোনো গুনাহ থাকবে না”।


ফায়েদা: এই হাদিসটি জাল। বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন, কাশফুল খাফা, হা/নং ২৫১৬।

ﻣَﻦْ ﺣَﺞَّ ﺣَﺠَّﺔَ ﺍﻹِﺳْﻼَﻡِ ﻭَﺯَﺍﺭَ ﻗَﺒْﺮِﻱ ﻭَﻏَﺰَﺍ ﻏَﺰْﻭَﺓً ﻭَﺻَﻞَّ ﻋَﻠَﻲَّ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻤُﻘَﺪِﺱِ ﻟَﻢْ ﻳَﺴْﺄَﻟْﻪُ ﺍﻟﻠﻪُ ﻓِﻴْﻤَﺎ ﺍﻓْﺘِﺮَﺽَ ﻋَﻠَﻴْﻪِ .

চার- যে ব্যক্তি ইসলামের হজ্জ আদায় করে আর আমার কবর যিয়ারাত করে আর যুদ্ধ করে এবং বাইতুলমুকাদ্দাসে আমার উপর দরূদ পড়েছে তাকে আল্লাহ তা‘আলা ফরয বিধানাবলি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবেন না।

ফায়েদা: এই হাদিসটি যয়ীফ। বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন- ফদ্বলুচ্ছালাতি আলান্নাবিয়্যি: শায়খ আলবানী, হা/নং ৬১।

ﺍﻟﺼَّﻼَﺓُ ﻋَﻠَﻲ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺃَﻓْﻀَﻞُ ﻣِﻦْ ﻋِﺘْﻖِ ﺍﻟﺮِّﻗَﺎﺏِ . ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺘﻴﻤﻲ

পাঁচ “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ পড়া দাস মুক্ত করার চেয়ে উত্তম।

ফায়েদা: এই হাদিসটি জাল। বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন, আল মাকাছিদুল হাছানাহঃ হা/নং ৩৬০।

ﻋَﻦْ ﺳَﻬْﻞٍ ﺑْﻦِ ﺳَﻌْﺪٍ ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻴْﻪِ ﻋَﻦْ ﺟَﺪِّﻩِ ﺃَﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗَﺎﻝَ : ﻻَﻭُﺿُﻮْﺀَ ﻟِﻤَﻦْ ﻟﻢ ﻳُﺼَﻞِّ ﻋَﻠَﻲ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ . ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﻄﺒﺮﺍﻧﻲ

ছয়- সাহাল ইবনু সাআ’দ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ পড়েনি তার ওযু হবেনা। -তাবরানী।

ফায়েদা: এই হাদিসটি যয়ীফ তথা দুর্বল। বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন: যয়ীফুল জামিউসসাগীর, আলবানী, ২/ হা/নং ৬৩৩১।

ﻛُﻞُّ ﺍﻷَﻋْﻤَﺎﻝِ ﻓِﻴْﻬَﺎ ﺍﻟْﻤَﻘْﺒُﻮْﻝُ ﻭَﺍﻟْﻤَﺮْﺩُﻭْﺩُ ﺇِﻻَّ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓُ ﻋَﻠَﻲَّ ﻓَﺈِﻧَّﻬَﺎ ﻣَﻘْﺒُﻮْﻟَﺔٌ ﻏَﻴْﺮَﻣَﺮْﺩُﻭْﺩَﺓٍ

সাত- সকল আমলের কিছু গ্রহণযোগ্য হয় আর কিছু অগ্রহণযোগ্য। কিন্তু আমার জন্য পঠিত দরূদ কখনো অগ্রাহ্য হয়না। বরং সর্বদা গৃহিত হয়।

ফায়েদা: এই হাদিসটি যয়ীফ। বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন: আলফাওয়ায়িদুল মাজমূ‘আঃ হা/নং ১০৩১।


রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মহব্বত লাভ করা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সূন্নাতের অনুসরণ তার আদেশ নিষেধসমূহের বাস্তবায়ন দ্বারাই হয়ে থাকে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ ﻗُﻞۡ ﺇِﻥ ﻛُﻨﺘُﻢۡ ﺗُﺤِﺒُّﻮﻥَ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﻓَﭑﺗَّﺒِﻌُﻮﻧِﻲ ﻳُﺤۡﺒِﺒۡﻜُﻢُ ﭐﻟﻠَّﻪُ ﻭَﻳَﻐۡﻔِﺮۡ ﻟَﻜُﻢۡ ﺫُﻧُﻮﺑَﻜُﻢۡۚ ﻭَﭐﻟﻠَّﻪُ ﻏَﻔُﻮﺭٞ ﺭَّﺣِﻴﻢٞ ٣١ ﻗُﻞۡ ﺃَﻃِﻴﻌُﻮﺍْ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﻭَﭐﻟﺮَّﺳُﻮﻝَۖ ﻓَﺈِﻥ ﺗَﻮَﻟَّﻮۡﺍْ ﻓَﺈِﻥَّ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﻟَﺎ ﻳُﺤِﺐُّ ﭐﻟۡﻜَٰﻔِﺮِﻳﻦَ ٣٢ ﴾ ‏[ ﺍﻝ ﻋﻤﺮﺍﻥ : ٣١، ٣٢ ‏]

বল, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাস, তাহলে আমার অনুসরণ কর, আল্লাহ তোমাদেরকে ভালোবাসবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু, বল, তোমরা আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য কর। তারপর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে নিশ্চয় আল্লাহ কাফিরদেরকে ভালোবাসেন না। [83]

এ আয়াত দ্বারা বুঝা যায়, যে ব্যক্তি আল্লাহকে মহবব্বত করে বলে দাবী করে অথচ সে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শের অনুসরণ করে না, সে অবশ্যই স্বীয় দাবীতে মিথ্যুক। তাকে অবশ্যই যাবতীয় কর্মে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সূন্নাতের অনুসরণ করতে হবে। যেমন, বিশুদ্ধ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

‏« ﻣَﻦْ ﻋَﻤِﻞَ ﻋَﻤَﻠًﺎ ﻟَﻴْﺲَ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺃَﻣْﺮُﻧَﺎ ﻓَﻬُﻮَ ﺭَﺩٌّ ‏» ‏( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ﻭﻣﺴﻠﻢ ‏)

‘যে ব্যক্তি দ্বীনের মধ্যে এমন কোনো কাজ করেছে যার ভিত্তি শরীয়তে নেই, সেই কাজ পরিত্যাজ্য’। [84] (বুখারী, মুসলিম)

এ কারণেই আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

ﻗُﻞۡ ﺇِﻥ ﻛُﻨﺘُﻢۡ ﺗُﺤِﺒُّﻮﻥَ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﻓَﭑﺗَّﺒِﻌُﻮﻧِﻲ ﻳُﺤۡﺒِﺒۡﻜُﻢُ ﭐﻟﻠَّﻪُ

অর্থাৎ, তোমাদের জন্য তাকে মহব্বত করার চেয়েও বড় জিনিষটি লাভ হবে। আর তা হল, তিনি তোমাদের মহব্বত করবেন। আর এটি অবশ্যই প্রথমটি হতে উত্তম। হাসান বাসরী রহ. ও অন্যান্য সালফে সালেহীনগণ বলেন, অনেক মানুষ দাবী করে আমরা আল্লাহ তা‘আলাকে ভালোবাসী। আল্লাহ তা‘আলা তাদের এ আয়াতের মাধ্যমে যাচাই করেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

ﻗُﻞۡ ﺇِﻥ ﻛُﻨﺘُﻢۡ ﺗُﺤِﺒُّﻮﻥَ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﻓَﭑﺗَّﺒِﻌُﻮﻧِﻲ ﻳُﺤۡﺒِﺒۡﻜُﻢُ ﭐﻟﻠَّﻪُ

তারপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

ﻭَﻳَﻐۡﻔِﺮۡ ﻟَﻜُﻢۡ ﺫُﻧُﻮﺑَﻜُﻢۡۚ ﻭَﭐﻟﻠَّﻪُ ﻏَﻔُﻮﺭٞ ﺭَّﺣِﻴﻢٞ

অর্থাৎ, তোমরা যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ করবে, তখন তোমাদের জন্য আল্লাহর আয়াতে ঘোষিত পুরস্কার লাভ হবে। তারপর আল্লাহ তা‘আলা সবাইকে সম্বোধন করে বলেন,

ﻗُﻞۡ ﺃَﻃِﻴﻌُﻮﺍْ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﻭَﭐﻟﺮَّﺳُﻮﻝَۖ ﻓَﺈِﻥ ﺗَﻮَﻟَّﻮۡﺍْ ﺃﻱ : ﺧﺎﻟﻔﻮﺍ ﻋﻦ ﺃﻣﺮﻩ
ﻓَﺈِﻥَّ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﻟَﺎ ﻳُﺤِﺐُّ ﭐﻟۡﻜَٰﻔِﺮِﻳﻦَ


আয়াত দ্বারা বুঝা যায়, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শের বিরোধিতা করা কুফর। আর যারা কুফরি করে তাদের আল্লাহ তা‘আলা মহব্বত করেন না। যদিও সে এ দাবী করে যে, সে আল্লাহকে মহব্বত করে এবং তার নৈকট্য লাভ করে। কিন্তু রাসূল সা. এর ইত্তেবা ছাড়া সে মুমিন হতে পারবে না। রাসূল জ্বীন ও মানুষ উভয় সম্প্রদায়ের প্রতি প্রেরিত রাসূল তার সবার উপর তার ইত্তেবা করা ফরয। এমন কি যদি কোনো নবী বা রাসূল ও বড় কোনো মনীষীও তার যুগে আগমন করত তাহলে তার উপর রাসূলে উপর ঈমান আনা, তার ইত্তেবা করা ও তার আনীত দ্বীনের অনুসরণ করা ওয়াজিব হত।


[1] তিরমিযী: ২৪৫৭।
[2] সূরা ফুসসিলাত, আয়াত: ৪৪
[3] সূরা ঝুমার, আয়াত: ৩০
[4] আলে ইমরান: ১৪৪
[5] সুরা আম্বিয়া: ৩৪
[6] বুখারি, হাদিস: ৩৪৬৭
[7] সূরা বাকারা, আয়াত: ১৫৪
[8] সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ৩৬
[9] সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৭
[10] আহমদ, হাদিস: ৩৬৬৬, নাসায়ী, হাদিস: ৩/৩৪ দারিমী ইত্যাদি
[11] বুখারী: ২৫৫০, মুসলিম: ১৭১৮
[12] ইবনু মাজাহ: ৪১
[13] বুখারি: ৪১১/৩, মুসলিম: ১২৯/৪
[14] সূরা আহযাব, আয়াত: ৫৬
[15] তবে ইবনুল কাইয়্যেম তার জালাউল আফহাম গ্রন্থে এ মতটিকে শক্তভাবে খণ্ডন করেন।
[16] বুখারী, হাদিস: ৬৫৯
[17] আবুদাউদ, হাদিস: ৬৭৬ ইবনে মাজাহ: ১০০৫। (অন্য শব্দে হাসান)
[18] বিস্তারিত দেখুন, ইবনুল কাইয়্যেমের লেখা গ্রন্থ জালাউল আফহাম। [সম্পাদক]
[19] ইসমাঈল আল্ কাযী, হাদিস: ৭৫, (সহীহ)
[20] নাসায়ী, হাদিস: ১২৩০ । (সহীহ)
[21] তিরমিযী, হাদিস: ৯২৩. । সহীহ
[22] ইসমাঈল আল-কাযী, হাদিস: ৫০ (সহীহ)
[23] তিরমিযী, হাদিস: ১৯৯৯।(হাদিসটি
হাসান)
[24] আহমদ, হাদিস: ৭ (সহীহ)
[25] ত্বাবরানী, হাদিস: ৬২৩৩ (হাদিসটি
হাসান)
[26] তিরমিযী, হাদিস: ৪৮৬ (হাসান)
[27] মুসলিম, হাদিস: ৪০৮
[28] নাসায়ী, হাদিস: ১২১৬ (হাসান)
[29] ইসমাঈল আলকাযী। (হাদিসটি সহীহ)
[30] ইবনু মাজাহ।
[31] ইবনু হিব্বান, হাদিস: ৯১১, তিরমিযি: ৪৮৪
[32] আবুদাউদ, হাদিস: ৬ (হাসান)
[33] তিরমিযী: হাদিস: ২৮১০ (সহীহ)
[34] হাকিম: হাদিস- ১৯ । (সহীহ)
[35] তিরমিযী, ২৮১১ । (সহীহ)
[36] ঈসমাঈল আল- কাযী: ৩৭ । (সহীহ)
[37] আহমদ, ইবনু হিব্বান, হাকিম, খতীব ৭৬ । (হাদিসটি সহীহ)
[38] ইবনু মাজাহ: ৭৪০ । (হাদিসটি সহীহ)
[39] ত্বাবরানী: ২০৩৫। (হাসান)
[40] বুখারী, হাদিস: ৩৩৬৯
[41] বুখারী, হাদিস: ৩৩৭০।
[42] ইসমাঈল কাযী, হাদিস: ৫৯ (হাসান)
[43] মুসলিম, হাদিস: ৪০৫।
[44] বুখারী, হাদিস: ৪৭৯৮
[45] মুসলিম, হাদিস: ৪০৬ ।
[46] নাসায়ী, হাদিস: ১২২৬।(সহীহ)
[47] ইবনু মাজাহ, হাদিস: ৭৩৬ । (সহীহ)
[48] ইবনু মাজাহ, হাদিস: ৭৩৮ । (সহীহ)
[49] নাসায়ী, হাদিস: ১২২৫ (সহীহ)
[50] মুসনাদু আহমদ, হাদিস: ৬৮। (সহীহ)
[51] বুখারী, হাদিস: ৮৩১
[52] তিরমিযী, হাদিস: ২৭৬৭ । (সহীহ)
[53] শাফেয়ী, হাদিস: ৫৮১ । (সহীহ)
[54] মুসলিম, হাদিস: ৩৮৪।
[55] আহমদ, হাদিস: ২০ (সহীহ)
[56] দায়লামী, হাদিস: ১২১৫ । (হাসান)
[57] নাসায়ী, ১২৮২। (সহীহ)
[58] হাকেম, বায়হাকী, হাদিস: ১২১৯। (সহীহ)
[59] আবুদাউদ, হাদিস: ৯২৫ । (সহীহ)
[60] তিরমিযী, হাদিস: ২৭৬৫ (সহীহ)
[61] তিরমিযী, হাদিস: ১৯৯৯
[62] তিরমিযী, হাদিস: ২৮১১ (সহীহ)
[63] ইবনু মাজাহ, ৬২৫ । (সহীহ)
[64] আবু ইয়া‘লা, হাদিস: ২১৩ (হাসান)
[65] তিরমিযী, হাদিস: ২৬৯১। (সহীহ)
[66] ত্বাবরানী, হাদিস: ৬২৩৩ (হাসান)
[67] সূরা আহযাব, আয়াত: ৫৬
[68] মুসলিম, হাদিস: ৩৮৪।
[69] নাসাঈ, হাদীস : ১২৮৩।
[70] তাবরানী, হাদিস: ৫৬৭৪
[71] ইবনু মাযা, হাদিস: ৯০৭
[72] আহমদ, হাদিস: ১৬৩৫২
[73] নাসায়ী, হাদিস: ইবনে হিব্বান (সহীহ)
[74] তাবরানী, হাদিস: সহীহ
[75] আহমদ ও আবু দাউদ: ২০৪১ হাদিসটি হাসান
[76] বাইহাকী, হাদিস: ৫৯৯৫
[77] তিরমিযি, হাদিস:
[78] সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৩১
[79] বর্ণনায় তিরমিযি, হাদিস: ২৪৫৭, তিনি বলেন হাদিসটি হাসান ও সহীহ।
[80] আল্লামা জাহদামী হাদিসটি বর্ণনা করেন এবং আল্লামা আলবানী হাদিসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন।
[81] তাবরানী মওকুফ সনদে হাদিসটি বর্ণনা করেন। হাদিসটি বিশুদ্ধ।
[82] (বর্ণনায় তিরমিযি, হাদিস নং ৪৮৬, হাদিসটি সহীহ)
[83] সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৩১, ৩২
[84] বুখারী: ২৫৫০, মুসলিম: ১৭১৮
_________________________________________________________________________________


সংকলক: জাকেরুল্লাহ আবুল খায়ের
সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
সূত্র: ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব


আরও পড়ুনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি দরূদ ও সালাম পেশ করার আদেশ, তার মাহাত্ম্য ও শব্দাবলী
আরও পড়ুনঃ মদিনায় গমনকারীদের মারফতে রাসূলের জন্য সালাম পাঠানোর বিধান
আরও পড়ুনঃ মীলাদুন্নবী উপলক্ষে মিলিয়ন মিলিয়ন দরূদ জমা করার বিদ‘আত প্রসঙ্গ
পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না কিন্তু।






কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন