Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

See Our Articles In Different Styles... Grid View List View

বৃহস্পতিবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২১

অতি গুরুত্বপূর্ণ কতিপয় প্রশ্নোত্তর

Views:

A+ A-

 



অতি গুরুত্বপূর্ণ কতিপয় প্রশ্নোত্তর 
  
সূচিপত্র

ক্রম   বিষয়
1.     প্রথম প্রশ্ন: তাওহীদের সংজ্ঞা কী? তাওহীদ কত প্রকার?
2.     দ্বিতীয় প্রশ্ন: ঈমান ও ইসলাম কী? এ দু’টির সাধারণ মূলনীতি কী?
3.     তৃতীয় প্রশ্ন: আল্লাহর নামসমূহ ও সিফাতের সাথে ঈমানের আরকান কী কী?
4.     চতুর্থ প্রশ্ন: আল্লাহ সমস্ত সৃষ্টির ঊর্ধ্বে এবং তিনি ‘আরশে উপবিষ্ট এ ব্যাপারে আপনার মতামত কী?
5.    পঞ্চম প্রশ্ন: দুনিয়ার আসমানে (প্রথম আসমানে) আল্লাহর রহমত নাযিল হয় এবং তিনি নিজে আসেন এ সম্পর্কে আপনার ধারণা কী?
7.     সপ্তম প্রশ্ন: সাধারণভাবে ঈমান কী? ঈমান কি বাড়ে কমে?
8.     অষ্টম প্রশ্ন: সম্পূর্ণ ফাসিকের হুকুম কী?
9.     নবম প্রশ্ন: মুমিনদের স্তর কয়টি ও কী কী?
10.    দশম প্রশ্ন: বান্দার কাজসমূহের হুকুম কী?
11.    একাদশতম প্রশ্ন: শির্ক কী? শির্কের প্রকারভেদ কী কী?
12.     দ্বাদশতম প্রশ্ন: আল্লাহর প্রতি ঈমানের বিস্তারিত বিবরণ কী?
13.     ত্রয়োদশতম প্রশ্ন: নবীদের প্রতি ঈমানের বিস্তারিত ব্যাখ্যা কী ধরণের?
14.     চতুর্দশতম প্রশ্ন: কাদ্বা ও কাদর তথা তাকদীরের প্রতি ঈমানের স্তর কয়টি ও কী কী?
15.     পঞ্চদশতম প্রশ্ন: আখিরাত দিবসের প্রতি ঈমান বলতে কী বুঝায়? কোন কোন বিষয় এতে অন্তর্ভুক্ত করে?
16.     ষষ্ঠাদশতম প্রশ্ন: নিফাক কী? এর প্রকার ও আলামত কী কী?
17.     সপ্তদশতম প্রশ্ন: বিদ‘আত কী? বিদ‘আত কত প্রকার ও কী কী?
18.     অষ্টাদশতম প্রশ্ন: আপনার ওপর মুসলিমের হক (দায়িত্ব-কর্তব্য) কী?
19.     ঊনবিংশতম প্রশ্ন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণের প্রতি আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য কী?
20.     বিংশতম প্রশ্ন: ইমাম তথা উম্মতের ইমাম থাকার ব্যাপারে আপনার মতামত কী?

21.     একবিংশতম প্রশ্ন: সিরাতুল মুস্তাকীম কী? এর বৈশিষ্ট্য কী কী?
22.     দ্বাবিংশতম প্রশ্ন: কী কী গুণের কারণে মুসলিম ব্যক্তি কাফির ও নাস্তিক থেকে আলাদা হবে?
23.     প্রশ্ন: সহীহ ঈমানের কারণেই মানুষ দুনিয়া ও আখিরাতের সুখ-সৌভাগ্য লাভ করে। তাহলে অধিকাংশ মানুষ কেন দীন ও ঈমান থেকে বিমূখ?
24.      প্রশ্ন: এক ব্যক্তি বৃহৎ দীনের (ইসলামের) মূলনীতি সংক্ষেপে জানতে প্রশ্ন করেছেন।
25.     প্রশ্ন: ইবাদতের হাকীকত ও সারাংশ সর্বোচ্চ ভালোবাসা ও সর্বোচ্চ বিনয়ী হওয়া। উপরোক্ত দু’টি উসূলের ভিত্তিতে সৃষ্টিকুলের সাথে সম্পৃক্ত ভালোবাসা ও বিনয় যা ইবাদাতের স্তরে পৌঁছে না ও ইবাদাতের হাকীকতের মধ্যে পার্থক্য কী?



ভূমিকা

সমস্ত প্রশংসা সে মহান আল্লাহ তা‘আলার যার রয়েছে সুন্দর নামসমূহ, পরিপূর্ণ গুণাবলী ও অফুরন্ত নি‘আমতরাজি। দুরুদ ও সালাম পেশ করছি দীন, দুনিয়া ও আখিরাতের সংস্কারের নিমিত্তে প্রেরিত নবী মুহাম্মাদ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি।
অতঃপর, এটি একটি সংক্ষিপ্ত পুস্তিকা। এতে দীনের সে সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি ও ঈমানের উসূলসমূহ আলোচনা করা হয়েছে যা জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও অত্যাবশ্যকীয়। এগুলোকে আমি প্রশ্নোত্তর আকারে সাজিয়েছি, যাতে পাঠকের বুঝতে ও অনুধাবন করতে সহজ হয়। এ গুলোকে আমি শিক্ষা দেওয়া ও শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করেছি।


প্রথম প্রশ্ন: তাওহীদের সংজ্ঞা কী? তাওহীদ কত প্রকার?
উত্তর: তাওহীদের সব প্রকারের সমন্বিত পূর্ণাঙ্গ সংজ্ঞা হলো: পরিপূর্ণ গুণের সমন্বয়ে রবের একত্বতা সম্পর্কে বান্দার জ্ঞান, বিশ্বাস, স্বীকৃতি ও ঈমান এবং এতে রবকে একক হিসেবে মানা, এ বিশ্বাস স্থাপন করা যে, তাঁর কোনো শরীক নেই, তাঁর পূর্ণতায় কোনো উপমা নেই, তিনি সমস্ত বান্দার জন্য ইলাহ ও মা‘বুদ (ইবাদতের একমাত্র যোগ্য), অতঃপর সব ধরণের ইবাদাতের ক্ষেত্রে তাঁকে একক রাখা (কাউকে শরীক না করা)।
তাহলে উপরোক্ত সংজ্ঞায় তাওহীদের তিন প্রকারই শামিল করেছে। তা হলো:
প্রথমত: তাওহীদুর রুবুবিয়্যাত: রবকে একমাত্র সৃষ্টিকর্তা, রিযিকদাতা, পরিচালনাকারী ও লালন পালনকারী হিসেবে স্বীকার করা।
দ্বিতীয়ত: তাওহীদুল আসমা ওয়াস সিফাত: আল্লাহ নিজের জন্য যেসব নাম ও গুণাবলী সাব্যস্ত করেছেন বা তাঁর রাসূল মুহাম্মাদ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জন্য যেসব নাম ও গুণাবলী সাব্যস্ত করেছেন এবং কোনো সাদৃশ্য ও উপমা ব্যতীত, বিকৃতি ও পরিবর্তন ব্যতিরেকে যেসব গুণাবলী এগুলোর ওপর প্রমাণ করে সে গুলো আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করা।
তৃতীয়ত: তাওহীদুল ইবাদাত: সব ধরণের ইবাদাতের জন্য আল্লাহকে এক ও একক করা এবং তাঁর সাথে শির্ক না করে ইবাদতে একনিষ্ঠ থাকা। অতঃএব, তাওহীদের উপরোক্ত প্রকারসমূহ সম্পূর্ণরূপে ধারণ না করলে ও এ গুলোকে প্রতিষ্ঠা না করলে বান্দা মুয়াহহিদ তথা একত্ববাদী হতে পারবে না।

দ্বিতীয় প্রশ্ন: ঈমান ও ইসলাম কী? এ দু’টির সাধারণ মূলনীতি কী?
উত্তর: ঈমান হলো আল্লাহ ও তাঁর রাসূল রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা কিছু আদেশ করেছেন সেগুলোর ওপর দৃঢ় ঈমান স্থাপন করা এবং সে অনুযায়ী আমল করাকে বলে ইসলাম। একমাত্র আল্লাহর সমীপে আত্মসমর্পণ করা ও তাঁরই আনুগত্য স্বীকার করাকে ইসলাম বলে।
ঈমান ও ইসলামের সাধারণ মূলনীতি নিম্নোক্ত আয়াতে একত্রিত হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿قُولُوٓاْ ءَامَنَّا بِٱللَّهِ وَمَآ أُنزِلَ إِلَيۡنَا وَمَآ أُنزِلَ إِلَىٰٓ إِبۡرَٰهِ‍ۧمَ وَإِسۡمَٰعِيلَ وَإِسۡحَٰقَ وَيَعۡقُوبَ وَٱلۡأَسۡبَاطِ وَمَآ أُوتِيَ مُوسَىٰ وَعِيسَىٰ وَمَآ أُوتِيَ ٱلنَّبِيُّونَ مِن رَّبِّهِمۡ لَا نُفَرِّقُ بَيۡنَ أَحَدٖ مِّنۡهُمۡ وَنَحۡنُ لَهُۥ مُسۡلِمُونَ١٣٦﴾ [البقرة: ١٣٦] 
“তোমরা বল, ‘আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর ওপর এবং যা নাযিল করা হয়েছে আমাদের ওপর ও যা নাযিল করা হয়েছে ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকূব ও তাদের সন্তানদের ওপর, আর যা প্রদান করা হয়েছে মূসা ও ঈসাকে এবং যা প্রদান করা হয়েছে তাদের রবের পক্ষ থেকে নবীগণকে। আমরা তাদের কারো মধ্যে তারতম্য করি না। আর আমরা তাঁরই অনুগত”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৩৬]
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদীসে জিবরীলে ও অন্যান্য হাদীসে ঈমান ও ইসলামের ব্যাখ্যায় বলেছেন,
«الْإِيمَانُ أَنْ تُؤْمِنَ بِاللهِ، وَمَلَائِكَتِهِ، وَكُتُبِهِ، وَرُسُلِهِ، وَالْيَوْمِ الْآخِرِ، وَتُؤْمِنَ بِالْقَدَرِ خَيْرِهِ وَشَرِّهِ والْإِسْلَامُ أَنْ تَشْهَدَ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَتُقِيمَ الصَّلَاةَ، وَتُؤْتِيَ الزَّكَاةَ، وَتَصُومَ رَمَضَانَ، وَتَحُجَّ الْبَيْتَ».
“ঈমান হলো আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফিরিশতাদের প্রতি, তাঁর কিতাবসমূহের প্রতি, তাঁর রাসূলগণের প্রতি এবং আখিরাতের প্রতি ঈমান আনবে, আর তাকদিরের ভালো-মন্দের প্রতি ঈমান রাখবে। ইসলাম হলো, তুমি এ কথার সাক্ষ্য প্রদান করবে যে, আল্লাহ ব্যতীত কোনো (সত্য) ইলাহ নেই এবং নিশ্চয় মুহাম্মাদ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল, সালাত কায়েম করবে, যাকাত আদায় করবে, রমযানের সাওম পালন করবে এবং বাইতুল্লাহর হজ পালন করবে।”[1]
এ হাদীসে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈমানকে অন্তরের বিশ্বাস ও ইসলামকে শরী‘আতের বাহ্যিক আমলের দ্বারা ব্যাখ্যা করেছেন।

তৃতীয় প্রশ্ন: আল্লাহর নামসমূহ ও সিফাতের সাথে ঈমানের আরকান কী কী?
উত্তর: আসমাউল হুসনা তথা আল্লাহর সুন্দর নামসমূহের প্রতি ঈমান, এসব নামসমূহ থেকে নির্গত সিফাত তথা গুণসমূহের প্রতি ঈমান ও এসব নামের সিফাতের আহকাম ও এর সম্পৃক্ততার প্রতি ঈমান আনা। অতএব, আমরা ঈমান আনব যে, আল্লাহ আলীম তথা মহাজ্ঞানী, সব কিছুর ওপর তাঁর পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান রয়েছে। তিনি কাদীর তথা সর্বশক্তিমান, তিনি মহাশক্তির অধিকারী, সব কিছুর ওপর তাঁর শক্তি রয়েছে। আবার তিনি রাহীম তথা পরম দয়ালু, দয়াবান, প্রশস্ত দয়ার অধিকারী, যাকে ইচ্ছা তিনি দয়া করেন। এভাবে বাকী আসমাউল হুসনা তথা আল্লাহর সুন্দরতম নামসমূহ, সিফাতসমূহ ও এর থেকে নির্গত গুণসমূহের প্রতি ঈমান আনয়ন করা।

চতুর্থ প্রশ্ন: আল্লাহ সমস্ত সৃষ্টির ঊর্ধ্বে এবং তিনি ‘আরশে উপবিষ্ট এ ব্যাপারে আপনার মতামত কী?
উত্তর: আমরা জানি আমাদের রব মহান আল্লাহ সবদিক থেকে ঊর্ধ্বে ও উপরে। স্বত্বাগত দিক থেকে তিনি সবার ঊর্ধ্বে। ক্ষমতা ও গুণের দিক থেকেও সবার ঊর্ধ্বে। তিনি শক্তি ও পরাক্রমশালিতায়ও সবার ঊর্ধ্বে। তিনি সৃষ্টিকুল থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। তিনি আমাদেরকে যেভাবে বলেছেন সেভাবে তিনি ‘আরশে উপবিষ্ট আছেন। তাঁর উপবিষ্টটা আমাদের জ্ঞাত, কিন্তু উপবিষ্টের ধরণ আমাদের অজ্ঞাত। তিনি কুরআনে আমাদেরকে বলেছেন, তিনি ‘আরশে উপবিষ্ট, তবে কীভাবে উপবিষ্ট তা আমাদেরকে বলেন নি। এভাবেই আমরা আল্লাহর অন্যান্য সিফাতের ব্যাপারে বলব যে, তিনি সেগুলো সম্পর্কে আমাদেরকে সংবাদ দিয়েছেন, তবে সেগুলোর ধরণ সম্পর্কে তিনি কিছু বলেন নি। অতএব, আমাদের কর্তব্য হলো আল্লাহ তাঁর কিতাবে এবং তাঁর নবী মুহাম্মাদ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সম্পর্কে যা বলেছেন সেগুলোর প্রতি যেভাবে এসেছে সেভাবেই ঈমান আনব এবং এ সম্পর্কে বেশি বা কম কিছু করব না।  

পঞ্চম প্রশ্ন: দুনিয়ার আসমানে (প্রথম আসমানে) আল্লাহর রহমত নাযিল হয় এবং তিনি নিজে আসেন এ সম্পর্কে আপনার ধারণা কী?
উত্তর: আল্লাহ নিজের জন্য যেসব গুণ যেমন রহমত, সন্তুষ্টি, জমিনে অবতরণ করা, আগমন করা ইত্যাদি যা বর্ণনা করেছেন এবং তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সম্পর্কে যেসব গুণ বর্ণনা করেছেন যা সৃষ্টির সাথে কোনো উপমা ও সদৃশ হয় না সেগুলোর প্রতি আমরা ঈমান আনি ও দৃঢ় বিশ্বাস করি। তাঁর অনুরূপ কিছু নেই। আল্লাহর যাতের অনুরূপ কোনো যাত নেই। এমনিভাবে আল্লাহর সিফাত আছে যা অন্যের সিফাতের (গুণের) সদৃশ নয়। একথার প্রমাণ হলো, কুরআন ও হাদীসে যেসব গুণের বিস্তারিত বর্ণনা আছে, আল্লাহর যেসব গুণের প্রশংসা রয়েছে এবং যেসব গুণ সাধারণভাবে তাঁর সদৃশ, সমকক্ষ, সমতা ও অংশীদার মুক্ত সেগুলো সাব্যস্ত করা।

ষষ্ঠ প্রশ্ন: আল্লাহর কালাম ও কুরআনের ব্যাপারে আপনার মতামত কী?
উত্তর: আমরা বলব, আল-কুরআন আল্লাহর কালাম, এটি তাঁর পক্ষ থেকে নাযিলকৃত, এটি তাঁর সৃষ্টি নয় এবং তাঁর কাছেই ফিরে যাবে। এর শব্দ ও অর্থ স্বয়ং আল্লাহই কথা বলেছেন, তবে কুরআন আযালী (সর্বদা বিদ্যমান ছিলো এমন) নয়। আল্লাহর যখন ইচ্ছা তখন কথা বলেন ও বলবেন, তাঁর কথা নিঃশেষ হবার নয় এবং এর শেষ সীমাও নেই।


সপ্তম প্রশ্ন: সাধারণভাবে ঈমান কী? ঈমান কি বাড়ে কমে?
উত্তর: অন্তরের বিশ্বাসসমূহ ও কাজ, তদনুযায়ী অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কর্ম সম্পাদন এবং জিহ্বা তথা জবানের স্বীকৃতিকে ঈমান বলে। অতএব, দীনের উসূল ও ফুরু‘ (মৌলিক নীতি ও শাখা-প্রশাখা) সব কিছুই ঈমানের মধ্যে শামিল। ফলে বিশ্বাসের শক্তি, ভালো আমল ও উত্তম কথাবার্তার কম-বেশির কারণে ঈমান বাড়ে ও কমে।

অষ্টম প্রশ্ন: সম্পূর্ণ ফাসিকের হুকুম কী?
উত্তর: যে ব্যক্তি মুমিন ও তাওহীদে বিশ্বাসী কিন্তু বারবার গুনাহের কাজ করে সে ব্যক্তি মুমিন, যেহেতু তার ঈমান আছে, তবে সে ফাসিক। কেননা সে ঈমানের চাহিদা পূরণ করে নি, সে ব্যক্তি অপূর্ণাঙ্গ ঈমানদার। এ ধরণের লোকেরা ঈমানের কারণে আল্লাহর ওয়াদাকৃত নি‘আমতের অধিকারী হওয়ার যোগ্য আবার পাপের কারণে আল্লাহর শাস্তিরও প্রাপ্য। এতদসত্বেও সে ব্যক্তি জাহান্নামে চিরস্থায়ী হবে না। কেননা সাধারণত পূর্ণ ঈমান থাকলেই তা জাহান্নামে প্রবেশ করতে বারণ করে আর অপূর্ণ ঈমান হলে জাহান্নামে চিরস্থায়ী হতে বারণ করে।

নবম প্রশ্ন: মুমিনদের স্তর কয়টি ও কী কী?
উত্তর: মুমিনগণ তিন প্রকারের। একদল হলো সাবিকূনা ইলাল খাইরাত তথা কল্যাণকর কাজে অগ্রগামী। তারা হলো সেসব লোক যারা ফরয ও মুস্তাহাব যথাযথভাবে পালন করে এবং হারাম ও মাকরূহ থেকে বিরত থাকে। দ্বিতীয় দল হলো মুকতাসিদূন তথা মধ্যপন্থী। তারা হলো সেসব লোক যারা ফরয কাজসমূহ আদায় করেছেন আর হারাম বর্জন করেছেন। আর তৃতীয় দল হলো যালিমূনা লিআনফুসিহিম তথা নিজেদের ওপর যুলুমকারী। তারা সেসব লোক যারা ভালো ও মন্দ উভয় ধরণের কাজ করেছেন।

দশম প্রশ্ন: বান্দার কাজসমূহের হুকুম কী?
উত্তর: বান্দার ভালো-মন্দ সব কাজই আল্লাহর সৃষ্টির অন্তর্ভুক্ত এবং তাঁরই ইচ্ছায় ও ক্ষমতায় সম্পন্ন হয়ে থাকে; তবে বান্দা নিজেই এসব কাজের কর্তা। আল্লাহ কাউকে জবরদস্তি করেন না; যদিও সব কাজ তাঁরই ইচ্ছা ও শক্তিতে সংঘটিত হয়ে থাকে। এসব কাজ  মূলত বান্দার নিজেরই কর্ম। তারা এসব কাজের দ্বারা নিজেরাই প্রশংসিত বা নিন্দিত হয়, ভালো কাজে পুরস্কৃত হয় আর মন্দ কাজে শাস্তিপ্রাপ্ত হয়। বান্দার কাজসমূহ প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর সৃষ্টি। কেননা আল্লাহ এসব কাজ সৃষ্টি করেছেন এবং তিনিই তাদেরকে এসব কাজ করার ইচ্ছা ও সামর্থ্য প্রদান করেছেন। অতএব, এভাবেই যা কিছুই সংঘটিত হয় সেগুলো সম্পর্কে কুরআন ও সুন্নাহের দলীল অনুযায়ী আমরা বিশ্বাস করি এসব কিছু আল্লাহর সৃষ্টি ও ব্যক্তি, গুণাবলী ও কাজ সব কিছুর ওপরই তাঁর কুদরত রয়েছে। এমনিভাবে কুরআন ও সুন্নাহ অনুসারে আমরা আরো বিশ্বাস করি যে, ভালো-মন্দ কাজের মূল কর্তা বান্দা নিজেই। তারা তাদের কাজের ব্যাপারে স্বাধীন। তারা তাদের পছন্দানুযায়ী ভালো বা মন্দ যে কোনো কাজ করতে পারে। আল্লাহ শুধু তাদের সামর্থ্য ও ইচ্ছাশক্তির স্রষ্টা। আর এ দুটো (সামর্থ্য ও ইচ্ছাশক্তি) তাদের কাজ ও কথাবার্তা সংঘটিত হওয়ার উপায় মাত্র। আর বস্তুর পূর্ণ উপকরণ সৃষ্টিকারীই বস্তুটির (মুসাববাবের) স্রষ্টা। আল্লাহ তাদেরকে কাজ করানোর জন্য জবরদস্তি করা থেকে পুত:পবিত্র, সুমহান ও সর্বাধিক ন্যায়পরায়ণ।


একাদশতম প্রশ্ন: শির্ক কী? শির্কের প্রকারভেদ কী কী?
উত্তর: রুবুবিয়্যাতের[2] মধ্যে শির্ক দুই প্রকার। তা হলো: বান্দার এ বিশ্বাস যে, কিছু সৃষ্টি বা কিছু পরিচালনার মধ্যে আল্লাহর সাথে কেউ শরীক আছেন। আর দ্বিতীয় প্রকার হলো, ইবাদাতের মধ্যে শির্ক করা। এটা আবার দু ধরণের। বড় শির্ক ও ছোট শির্ক। বড় শির্ক হলো যে কোনো ধরণের ইবাদাত আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জন্য করা। যেমন, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে ডাকা বা কারো কাছে কিছু আশা করা বা কাউকে ভয় করা ইত্যাদি। এ ধরণের লোক দীনের গণ্ডি থেকে বের হয়ে যাবে এবং জাহান্নামে চিরস্থায়ী হবে। আর ছোট শির্ক হলো, যে কাজগুলো মানুষকে বড় শির্কের দিকে নিয়ে যায়। যেমন, আল্লাহ ছাড়া কারো নামে শপথ করা ও লোক দেখানো উদ্দেশ্যে ইবাদাত করা ইত্যাদি।

দ্বাদশতম প্রশ্ন: আল্লাহর প্রতি ঈমানের বিস্তারিত বিবরণ কী?
উত্তর: আমরা অন্তরের বিশ্বাস ও মৌখিক স্বীকৃতি দ্বারা স্বীকার করি যে, আল্লাহ ওয়াজিবুল উজূদ তথা সর্বদা তাঁর অস্তিত্ব থাকা অত্যাবশ্যকীয়, তিনি এক ও অদ্বিতীয়, তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন, সব পূর্ণ গুণাবলীতে, মর্যাদায়, বড়ত্বে, অহংকারে, শ্রেষ্ঠত্বে তিনি একক ও অদ্বিতীয়। সব গুণাবলীতে তাঁর রয়েছে পরিপূর্ণ পূর্ণতা যেখানে সৃষ্টিকুলের পক্ষে পৌঁছা অসম্ভব। তিনিই প্রথম, তাঁর আগে কিছু নেই, তিনিই শেষ, তাঁর পরে আর কিছু থাকবে না, তিনিই যাহির তথা সদাভাস্বর, দৃশ্যমান, তাঁর চেয়ে কোনো কিছুই স্পষ্ট নেই, তিনিই বাতিন তথা সবচেয়ে নিগূঢ় সত্তা, তাঁর চেয়ে কোনো কিছুই নিগূঢ় নেই। তিনি সর্বোচ্চ, সুউচ্চ, উচ্চ সত্তা, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন, উচ্চ পরাক্রমশালী, তিনি সব কিছু সম্পর্কে মহাজ্ঞানী, সব কিছু জানেন, সব কিছুর উপরে ক্ষমতাবান, সর্বশক্তিমান, সর্বশ্রোতা, ভাষার ভিন্নতা ও প্রয়োজনের নানা ধরণ সত্বেও সব কিছুর আওয়াজ শুনতে পান, তিনি সর্বদ্রষ্টা, সব কিছু দেখতে পান, তিনি মহাপ্রজ্ঞাবান, সৃষ্টি ও আইন প্রদানে মহাবিজ্ঞ, তিনি গুণে ও কর্মে সর্বপ্রশংসিত, তিনি মহিমায় ও বড়ত্বে মহাগৌরাবিত, তিনি দয়াবান, দয়ালু, তাঁর রহমত সব কিছুর উপর বিস্তৃত ও সকলেই তাঁর অনুগ্রহ ও দানপ্রাপ্ত, তিনি রাজাধিরাজ, সব রাজা ও রাজ্যের মালিক, তাঁর রয়েছে একচ্ছত্র মালিকানা, উর্ধ্বজগত ও নিম্নজগত সব কিছুই তার মালিকানাধীন ও তাঁর গোলাম, তাঁর রয়েছে একচ্ছত্র কর্তৃত্ব ও হস্তক্ষেপ, তিনি চিরঞ্জীব, তাঁর রয়েছে সব যাতী গুণাবলী সম্পন্ন পরিপূর্ণ জীবন, তিনি স্বয়ংস্থিতিশীল ও অবিনশ্বর, তিনি নিজে নিজেই প্রতিষ্ঠিত এবং অন্যকেও প্রতিষ্ঠা করেন, তিনি সব ধরণের কর্ম সম্পাদনকারী, তিনি যা ইচ্ছা তাই সম্পন্ন করেন, তিনি যা চান তা-ই সংঘটিত হয়, আর তিনি যা চান না তা সম্পন্ন হয় না, আমরা সাক্ষ্য দেই যে, তিনি আমাদের রব, সৃষ্টিকারী, উম্মেষকারী, রূপ দানকারী, যিনি সমস্ত সৃষ্টি সৃজন করেছেন, সৃষ্টিতে তিনি সুচারুতা ও দক্ষতা দেখিয়েছেন এবং উত্তমরূপে সৃষ্টি করেছেন। তিনি এমন আল্লাহ যিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তিনি একমাত্র উপাস্য, তিনি ব্যতীত কেউ ইবাদাত পাওয়ার যোগ্য নয়। অতএব, তিনি ব্যতীত কারো সম্মুখে শির নত করি না, একমাত্র মহাশক্তিশালী, মহাপরাক্রান্ত, মহাক্ষমাশীল আল্লাহ ব্যতীত কারো কাছে মাথা অবনত করি না, কিছু প্রার্থনা করি না, আমরা একমাত্র তাঁরই ইবাদাত করি এবং তাঁরই কাছে সাহায্য চাই, তাঁর কাছে প্রত্যাশা করি, তাঁকেই ভয় করি, তাঁর রহমত আশা করি, তাঁর আযাবকে ভয় করি, তিনি ব্যতীত আমাদের কোনো রব নেই। অতএব, তাঁরই কাছে আমাদের প্রার্থনা এবং তাঁকেই আমরা ডাকি। তিনি ব্যতীত আমাদের এমন কোনো ইলাহ নেই যার কাছে আমরা আশা করতে পারি। আমাদের দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ ও সংশোধনে তিনিই আমাদের একমাত্র অভিভাবক। তিনি উত্তম সাহায্যকারী এবং সমস্ত বিপদাপদ ও অকল্যাণ থেকে তিনিই একমাত্র প্রতিরোধকারী ও রক্ষাকারী।

ত্রয়োদশতম প্রশ্ন: নবীদের প্রতি ঈমানের বিস্তারিত ব্যাখ্যা কী ধরণের?
উত্তর: সংক্ষিপ্ত ও বিস্তারিতভাবে যেসব নবীদের নবুওয়ত ও রিসালাত সাব্যস্ত হয়েছে সে সব নবীদের প্রতি আমরা ঈমান আনয়ন করি এবং বিশ্বাস করি যে, আল্লাহ অহী ও রিসালাতের মাধ্যমে তাদেরকে নির্বাচিত করেছেন এবং তাঁর নিজের ও সৃষ্টির মাঝে তাঁর দীন ও শরী‘আত পৌঁছানোর জন্য তাদেরকে মাধ্যম হিসেবে নিয়োজিত করেছেন। তাদের আনিত বিষয়ের সত্যায়ন ও সঠিকতা প্রমাণের জন্য তিনি তাদেরকে মু‘জিযা দিয়ে সাহায্য করেছেন। তারা জ্ঞান-গরিমা ও আমলের দিক থেকে সবচেয়ে পূর্ণাঙ্গ ও পরিপূর্ণ সৃষ্টি, তারা সর্বাধিক সত্যবাদী, সবচেয়ে সৎ ব্যক্তি ও সর্বোচ্চ সচ্চরিত্রবান। আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে এমন সৎ গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্য দিয়ে নির্বাচিত করেছেন যা অন্যদের স্পর্শ করা সম্ভব নয়। আল্লাহ তাদেরকে সমস্ত অসচ্চরিত্র থেকে পবিত্র রেখেছেন। আল্লাহর পক্ষ থেকে তারা যে দাওয়াত পৌঁছেছেন সে ব্যাপারে মাসূম তথা নিষ্পাপ ও নিষ্কলঙ্ক ছিলেন। তারা তাদের দাওয়াত ও তাবলীগে সত্য ও সঠিকটাই প্রচার করেছেন। তাদের সকলের প্রতি ও তারা আল্লাহর পক্ষ থেকে যা নিয়ে এসেছেন সেগুলোর ওপর ঈমান আনা, তাদেরকে ভালোবাসা, সম্মান করা ও মর্যাদা প্রদান করা ফরয। আমরা আরও বিশ্বাস করি যে, এসব কাজ আমাদের নবী মুহাম্মাদ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যাপারে করা (তার প্রতি ও তার আনিত সব কিছুর ওপর ঈমান আনা, তাকে সম্মান করা ইত্যাদি) আরও অধিক গুরুত্বপূর্ণ ফরয। তাকে জানা, সাধ্যানুসারে তার আনিত শরী‘আত সংক্ষিপ্ত ও বিস্তারিতভাবে জানা, এসবের প্রতি ঈমান আনা ও সর্বদা অটুট থাকা ফরয। তার আনিত সকল বিষয়ে আনুগত্য করা, তার আদেশ মান্য করা ও নিষেধ থেকে বিরত থাকাও ফরয। আমরা আরও বিশ্বাস করি যে, তিনি খাতামুন নাবিয়্যীন তথা সর্বশেষ নবী, তার পরে আর কোনো নবী আসবেন না, তার শরী‘আত পূর্বের সব শরী‘আতকে রহিত করে দিয়েছে, তার শরী‘আত কিয়ামত পর্যন্ত অবশিষ্ট থাকবে। বান্দার ঈমান ততক্ষণ পূর্ণ হবে না যতক্ষণ সে বিশ্বাস করবে যে, মুহাম্মাদ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনিত সব কিছুই সত্য। আক্বলী (বিবেকপ্রসূ), ইন্দ্রিয় ও সব ধরণের দলীল প্রমাণ তার আনিত সত্যের বিপরীত প্রমাণ করতে পারবে না; বরং সঠিক বিবেক ও বাস্তব দৃশ্যমান বিষয়াদি তার সত্যতা ও সঠিকতার সাক্ষ্য প্রদান করে।

চতুর্দশতম প্রশ্ন: কাদ্বা ও কাদর তথা তাকদীরের প্রতি ঈমানের স্তর কয়টি ও কী কী?
উত্তর: তাকদীরের প্রতি ঈমানের স্তর চারটি। এ চারটি স্তরের সব কয়টির ওপর ঈমান না আনলে তার ঈমান পূর্ণ হবে না। সেগুলো হচ্ছে: আল্লাহ সব কিছু সম্পর্কে মহাজ্ঞানী একথার ওপর ঈমান আনা, তার ইলম সূক্ষ্ম ও স্পষ্ট সব কিছু সম্পর্কে সর্বব্যাপী, তিনি এসব কিছু লাওহি মাহফূযে লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন এবং সব কিছু তাঁর ইচ্ছা ও কুদরতে সংঘটিত হয়ে থাকে, তিনি যা ইচ্ছা করেন তা সংঘটিত হয়, আর তিনি যা চান না তা কখনও হয় না, এতদসত্বেও তিনি বান্দাকে কাজ করতে সক্ষমতা ও ইখতিয়ার দিয়েছেন, ফলে তারা তাদের পছন্দানুযায়ী ও ইচ্ছানুসারেই কাজ করে থাকে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿أَلَمۡ تَعۡلَمۡ أَنَّ ٱللَّهَ يَعۡلَمُ مَا فِي ٱلسَّمَآءِ وَٱلۡأَرۡضِۚ إِنَّ ذَٰلِكَ فِي كِتَٰب٧٠﴾ [الحج : ٧٠]
“তুমি কি জান না যে, আসমান ও জমিনে যা কিছু রয়েছে, আল্লাহ তা জানেন? নিশ্চয় তা একটি কিতাবে রয়েছে।” [সূরা আল-হাজ, আয়াত: ৭০]
﴿لِمَن شَآءَ مِنكُمۡ أَن يَسۡتَقِيمَ٢٨ وَمَا تَشَآءُونَ إِلَّآ أَن يَشَآءَ ٱللَّهُ رَبُّ ٱلۡعَٰلَمِينَ٢٩﴾ [التكوير: ٢٨،  ٢٩] 
“যে তোমাদের মধ্যে সরল পথে চলতে চায়, তার জন্য। আর তোমরা ইচ্ছা করতে পার না, যদি না সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহ ইচ্ছা করেন”। [সূরা আত-তাকওয়ীর, আয়াত: ২৮-২৯]

পঞ্চদশতম প্রশ্ন: আখিরাত দিবসের প্রতি ঈমান বলতে কী বুঝায়? কোন কোন বিষয় এতে অন্তর্ভুক্ত করে?
উত্তর: মৃত্যুর পরের জিন্দেগী সম্পর্কে কুরআন ও সুন্নাহে যা কিছু এসেছে তা সব কিছুই আখিরাতের দিবসের প্রতি ঈমান আনার অন্তর্ভুক্ত। যেমন, কবরের অবস্থা, বারযাখ, কবরে নি‘আমত ও শাস্তি, কিয়ামতের দিনের অবস্থা, এ দিনের হিসাব-নিকাশ, সাওয়াব, শাস্তি, সুহুফ, মীযান, শাফা‘আত, জান্নাত-জাহান্নামের অবস্থা ও এর বর্ণনা, জান্নাতী ও জাহান্নামীদের অবস্থা, আল্লাহ এ দুয়ের অধিবাসীদের জন্য যা তৈরি করে রেখেছেন এগুলোর প্রতি সংক্ষিপ্ত ও বিস্তারিতভাবে ঈমান আনয়ন করা আখিরাত দিবসের প্রতি ঈমান আনা বলে।

ষষ্ঠাদশতম প্রশ্ন: নিফাক কী? এর প্রকার ও আলামত কী কী?
উত্তর: ভালো প্রকাশ করা আর ভিতরে মন্দ গোপন রাখাকে নিফাক বলে। নিফাক দু’প্রকার। বড় নিফাক, আর তা হলো বিশ্বাসে নিফাক। এ ধরণের মুনাফিক চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে। এ প্রকারের মুনাফিকের সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿وَمِنَ ٱلنَّاسِ مَن يَقُولُ ءَامَنَّا بِٱللَّهِ وَبِٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِ وَمَا هُم بِمُؤۡمِنِينَ٨﴾ [البقرة: ٨]
“আর মানুষের মধ্যে কিছু এমন আছে, যারা বলে, ‘আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর প্রতি এবং শেষ দিনের প্রতি’, অথচ তারা মুমিন নয়।” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ৮]
এরা অন্তরে কুফুরী পোষণ করে আর মুখে ইসলাম প্রকাশ করে।
আর দ্বিতীয় প্রকার নিফাক হলো ছোট নিফাক, আর তা হলো মানুষের কাজে কর্মের নিফাক। যেমন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এদের সম্পর্কে বলেছেন,
«آيَةُ المُنَافِقِ ثَلاَثٌ: إِذَا حَدَّثَ كَذَبَ، وَإِذَا وَعَدَ أَخْلَفَ، وَإِذَا اؤْتُمِنَ خَانَ.
“মুনাফিকের আলামত তিনটি: যখন কথা বলে মিথ্যা বলে, যখন ওয়াদা করে ভঙ্গ করে এবং আমানত রাখা হলে খিয়ানত করে।”[3]
অতএব, বড় কুফুরী ও বড় নিফাকী ঈমান ও আমলের কোন উপকারে আসবে না। তবে ছোট কুফুরী ও ছোট নিফাকী ঈমানের সাথে একত্রিত হতে পারে, এ ক্ষেত্রে বান্দার মধ্যে ভালো-মন্দ দুটোই থাকবে এবং ভালো কাজের বিনিময়ে সাওয়াব পাবে আর মন্দ কাজের কারণে শাস্তি ভোগ করবে।

সপ্তদশতম প্রশ্ন: বিদ‘আত কী? বিদ‘আত কত প্রকার ও কী কী?
উত্তর: বিদ‘আত হলো সুন্নাতের বিপরীত কাজ। এটি দু’প্রকার। বিশ্বাসে বিদ‘আত। আর তা হলো আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যা বলেছেন তার বিপরীত বিশ্বাস স্থাপন করা। এটি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিম্নোক্ত হাদীসে উল্লেখ হয়েছে,
«وَسَتَفْتَرِقُ أُمَّتِي عَلَى ثَلَاثٍ وَسَبْعِينَ فرقةً كُلُّها فِي النَّارِ إلا وَاحِدَةً ، قَالُوا: ما هي يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: «هُوَ مَا أَنَا عَلَيْهِ الْيَوْمَ وَأَصْحَابِي».
“আর আমার উম্মতেরা তিয়াত্তর দলে বিভক্ত হবে। এদের একটি দল ছাড়া সব দলই হবে জাহান্নামী। সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! এরা কোন দল? তিনি বললেন: আজ আমি এবং আমার সাহাবীরা যার ওপর প্রতিষ্ঠিত।”[4]
অতএব, যে ব্যক্তি হাদীসে বর্ণিত গুণাবলী অনুযায়ী হবে সে ব্যক্তি শুধু সুন্নাহর অনুসারী, আর যে সুন্নাহর অনুসারী হবে না সে বিদ‘আতী। আর সব বিদ‘আতই গোমরাহী। তবে সুন্নাহ থেকে দূরে সরে যাওয়ার দূরত্ব অনুসারে বিদ‘আতের স্তরও কম বেশি হয়।
দ্বিতীয় প্রকার বিদ‘আত হলো আমলী তথা কাজে-কর্মে বিদ‘আত। আর তা হলো শরী‘আত প্রণেতা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যেসব ইবাদত করতে আদেশ করেছেন তা ব্যতীত অন্যসব ইবাদাত করা বা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেগুলো হারাম করেছেন সেগুলো হালাল করা। অতএব, যে ব্যক্তি শরী‘আত বহির্ভূত কোনো ইবাদাত করল বা শরী‘আত যা হারাম করে নি তা হারাম করল সে বিদ‘আত করল।

অষ্টাদশতম প্রশ্ন: আপনার ওপর মুসলিমের হক (দায়িত্ব-কর্তব্য) কী?
উত্তর: আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿إِنَّمَا ٱلۡمُؤۡمِنُونَ إِخۡوَةٞ﴾ [الحجرات: ١٠]
“নিশ্চয় মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই।” [সূরা আল-হুজুরাত, আয়াত: ১০]
এক মুসলিম অপর মুসলিমকে ভাই হিসেবে গ্রহণ করা ওয়াজিব। সে নিজের জন্য যা পছন্দ করে তার ভাইয়ের জন্যও তা-ই পছন্দ করবে এবং নিজের জন্য যা অপছন্দ করবে অন্যের জন্যও তা অপছন্দ করবে। সাধ্যমত তাদের জন্য কল্যাণকর কিছু করা, পরস্পর সংশোধনের চেষ্টা করা, নিজেদের মাঝে ভালোবাসা বন্ধন সৃষ্টি করা ও তাদেরকে সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠা রাখতে প্রচেষ্টা করা। এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। সুতরাং সে তার ওপর যুলুম করবে না, তাকে অপমান করবে না, তার ব্যাপারে মিথ্যা বলবে না, তাকে হেয় করবে না। যাদের ওপর তার দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে তাদের হক আদায় করবে। যেমন, পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধব ও অধীনস্থ কর্মচারীদের অধিকার আদায় করবে।  

ঊনবিংশতম প্রশ্ন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য কী? 
উত্তর: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি পূর্ণাঙ্গ ঈমান ও ভালোবাসার অন্যতম অংশ হলো তার সাহাবীগণকে তাদের মর্যাদা ও ইসলাম গ্রহণের অগ্রগামীতার স্তর অনুসারে ভালোবাসা, উম্মাতের সবার উর্ধ্বে তাদের মর্যাদার স্বীকৃতি দেওয়া। তাদের ভালোবাসা বৃদ্ধির জন্য আল্লাহর কাছে দো‘আ করা, তাদের মর্যাদা প্রচার করা ও তাদের মধ্যকার ভুল বুঝা-বুঝিকে এড়িয়ে চলা ও সমালোচনা থেকে বিরত থাকা। আমরা আরও বিশ্বাস করি যে, সমস্ত উত্তম আদর্শের সমন্বয়ে তারা সর্বোত্তম উম্মত, কল্যাণ ও ইসলাম গ্রহণের দিক থেকে তারা অগ্রগামী, সমস্ত অকল্যাণ ও অন্যায় কাজ থেকে তারা দূরে ছিলেন, তারা সকলেই ন্যায়পরায়ণ ও ইনসাফকারী ছিলেন এবং আল্লাহ তাদের ওপর সন্তুষ্ট। 

বিংশতম প্রশ্ন: ইমাম তথা উম্মতের ইমাম থাকার ব্যাপারে আপনার মতামত কী?
উত্তর: আমরা বিশ্বাস করি যে, উম্মতের ইমাম নির্ধারণ করা ফরযে কিফায়া। কেননা উম্মত ইমাম ছাড়া তাদের দীন ও দুনিয়ার কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব নয়। ইমাম তাদের শত্রুর আক্রমণ প্রতিহত করবেন এবং অপরাধীর অপরাধের হদ তথা শাস্তি কায়েম করবে। অন্যায় কাজ ব্যতীত সৎকাজে ইমামের আনুগত্য করা ছাড়া নেতার (ইমামের) নেতৃত্ব পরিপূর্ণ হয় না। ইমাম সৎ হোক বা অসৎ হোক তার সাথে জিহাদ করা, তাকে কল্যাণকর কাজে সহযোগিতা করা এবং অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকতে তাকে সদুপদেশ দেওয়া জনগণের দায়িত্ব।

একবিংশতম প্রশ্ন: সিরাতুল মুস্তাকীম কী? এর বৈশিষ্ট্য কী কী?
উত্তর: সিরাতুল মুস্তাকীম হলো ইলমে নাফে‘ তথা উপকারী ইলম ও সৎ আমল। আর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কুরআন ও হাদীসে যে ইলম এসেছে তা-ই ইলমে নাফে‘ তথা উপকারী ইলম। আর সৎ আমল হলো সহীহ আক্বীদা, ফরয ও নফল আদায়, নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকা, অর্থাৎ আল্লাহর হক ও বান্দার হক আদায়ের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্ট অর্জন করা। আর পরিপূর্ণ ইখলাস ও রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ ব্যতীত আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা সম্ভবপর হয় না। এ দু’টি মূলনীতির (ইখলাস ও রাসূলের অনুসরণ) উপরই দীনের সমস্ত কাজ পরিচালিত হয়। অতএব, যার ইখলাস চলে যাবে সে শির্কে পতিত হবে আর যার রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ থাকবে না সে বিদ‘আতে পতিত হবে।

দ্বাবিংশতম প্রশ্ন: কী কী গুণের কারণে মুসলিম ব্যক্তি কাফির ও নাস্তিক থেকে আলাদা হবে?  
উত্তর: এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও অতিদীর্ঘ একটি প্রশ্ন। মুমিন ও অমুসলিমের মধ্যকার পার্থক্যই সত্য ও মিথ্যা, সৌভাগ্যবান ও দুর্ভাগা নির্ধারিত হয়। জেনে রাখুন, প্রকৃত মুমিন সেই যিনি আল্লাহ প্রতি ঈমান আনে, কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত তাঁর নাম ও সিফাতসমূহ জেনে বুঝে যথাযথভাবে ঈমান আনে এবং এগুলো স্বীকার করে ও যা কিছু আল্লাহর নাম ও সিফাতের বিপরীত সেগুলো থেকে তাঁকে পবিত্র রাখে। এতে তার অন্তর ঈমান, ইলম, ইয়াকীন, প্রশান্তি ও আল্লাহর সাথে সম্পর্ক স্থাপনে ভরে যায়। ফলে সে একমাত্র আল্লাহর দিকে ঝুঁকে, তাঁর অনুগত হয়, তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে ইবাদত শরী‘আতসম্মত করেছেন ঠিক সেভাবেই সে একনিষ্ঠার সাথে সাওয়াবের আশায় ও আযাব থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ইবাদত-বন্দেগী করে। এতে সে অন্তরে, ভাষায় ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মাধ্যমে আল্লাহর অশেষ নি‘আমত ও দয়ার শুকরিয়া আদায় করে, সে সার্বক্ষণিক আল্লাহর যিকিরে (স্মরণে) মশগুল থাকে। তখন সে আল্লাহর স্মরণের চেয়ে বড় কোন নি‘আমত দেখতে পায় না, এর চেয়ে বড় সম্মান সে অনুভব করে না। একমাত্র আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন ও তাঁর স্মরণের তুলনায় তার কাছে দুনিয়ার ভোগ-বিলাস অতি তুচ্ছ ও নগন্য ব্যাপার মনে হয়। এতদ্বসত্ত্বেও সে দুনিয়ার জীবনের যথার্থ অংশ ভোগ করে, কাফির, নাস্তিক ও অসচেতনের মতো ঢালাও ভাবে দুনিয়ার ভোগ-বিলাসে মত্ত থাকে না। বরং এগুলোকে আল্লাহর হক ও বান্দার হক আদায়ের উপকরণ ও সহযোগিতা হিসাবে ব্যবহার করে। এধরণের আত্মসমালোচনা ও আকাঙ্ক্ষা তার ভোগকে পূর্ণতা দান করে, অন্তর প্রশান্ত হয় ও সুখ-বোধ হয় এবং তার পছন্দনীয় কিছু না পেলে তাতে দু:খিত ও চিন্তিত হয় না। আর এভাবে আল্লাহ তার মাঝে দুনিয়া ও আখিরাতের সুখ-সৌভাগ্য একত্রিত করে দেন। অন্যদিকে কাফির ও নাস্তিকরা মুমিনের সম্পূর্ণ বিপরীত। সে মহান রব আল্লাহকেই অস্বীকার করে যিনি তার অস্তিত্বের ও পরিপূর্ণতার প্রমাণে বিবেকপ্রসূত দলীল, কুরআন হাদীসের দলীল, অত্যাবশ্যকীয় বিজ্ঞান ও ইন্দ্রিয় বিজ্ঞানসম্মত অসংখ্য দলীল-প্রমাণ পেশ করেছেন; কিন্তু এসব প্রমাণাদির প্রতি সে ভ্রুক্ষেপ করে না। ফলে সে যখন আল্লাহর বিশ্বাস, স্বীকৃতি ও ইবাদাত বিমুখ হয় তখন সে প্রকৃতির পূজারীতে পরিণত হয়। তখন তার অন্তর চতুষ্পদ প্রাণীর অন্তরে পরিণত হয়। পার্থিব ভোগ-বিলাস, আমোদ-ফুর্তি ছাড়া তার আর কোনো উদ্দেশ্য থাকে না। তার অন্তর সর্বদা অশান্তিতে থাকে; বরং নিজের প্রিয় ও পছন্দনীয় জিনিস হারানোর ভয়ে শঙ্কিত, অন্যের ষড়যন্ত্র ও ক্ষতির আশঙ্কায় ভীত-সন্ত্রস্ত থাকে। তার আল্লাহর প্রতি ঈমান নেই যে, তিনি কেউ তার বিপদাপদ ও বালা-মুসিবত সহজকরণ ও দূরীকরণ করতে পারে। ফলে সে ঈমানের স্বাদ, আল্লাহর নৈকট্য মজা এবং ঈমানের দুনিয়া ও আখিরাতের ফলাফল থেকে বঞ্চিত থাকে। সে তার কর্মের সাওয়াব প্রত্যাশা করে না আবার অন্যায়েরও শাস্তির ভয় করে না; বরং তার ভয় ও প্রত্যাশা শুধু পার্থিব নগণ্য জিনিস অর্জন।
মুমিনের বৈশিষ্ট্য হলো সে জাতি বর্ণের ভেদাভেদ ভুলে কথা-বার্তা, কাজে-কর্মে ও নিয়তে সত্যের অনুসন্ধানী, সৃষ্টিকুলের প্রতি বিনয়ী, আল্লাহর বান্দাদের প্রতি হিতাকাঙ্ক্ষী। পক্ষান্তরে কাফির ও নাস্তিকদের বৈশিষ্ট্য হলো সত্য ও সৃষ্টিকুলের ব্যাপারে অহংকারী, আত্মকেন্দ্রিক ও কাউকে কোনো সদুপদেশ দেয় না। মুমিনের অন্তর ধোঁকাবাজি, প্রতারণা ও হিংসা-বিদ্বেষ থেকে মুক্ত। সে নিজের জন্য যা পছন্দ করে অন্যান্য মুসলিমের জন্য তা-ই পছন্দ করে এবং নিজের জন্য যা অপছন্দ করে অন্য মুসলিমের জন্যও তা অপছন্দ করে। সে সাধ্যমত অন্যের কল্যাণ সাধন করে, সৃষ্টিকুলের দুঃখ-কষ্ট নিজে বহন করে, কোনো ভাবেই অন্যের ওপর যুলুম করে না। পক্ষান্তরে, কাফির ব্যক্তির অন্তর প্রতিহিংসা, শত্রুতায় ভরপুর, পার্থিব স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্য ব্যতীত অন্যের জন্য কোনো উপকার ও কল্যাণ সাধন করে না, সুযোগ পেলেই সৃষ্টিকুলের ওপর যুলুম করতে দ্বিধাবোধ করে না, মানুষের বালা-মুসিবত সহ্য করার ক্ষেত্রে সে সবচেয়ে দুর্বলে পরিণত হয়। মুমিন সর্বদা সত্যবাদী ও উত্তম আচরণকারী। সহনশীলতা, শান্ত-শিষ্টতা, দয়া, ধৈর্যশীলতা, ওয়াদাপূরণ, সহজতা, নম্র স্বভাব ইত্যাদি মুমিনের গুণ। অন্যদিকে বিভ্রান্তি, অস্থিরতা, কঠোরতা, অধৈর্যতা, ভীরুতা, উদ্বিগ্নতা, মিথ্যাচারীতা, ওয়াদা খেলাফ ও দুশ্চরিত্র ইত্যাদি কাফিরের গুণ।  
মুসলিম আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে মাথা নত করে না। তার অন্তর ও মুখমণ্ডল তার রব ব্যতীত অন্যের কাছে অবনত হওয়া থেকে সর্বদা পবিত্র থাকে। তার বৈশিষ্ট্য হলো পবিত্রতা, শক্তিশালী, বীরত্ব, দানশীল ও পুরুষত্বতা। সে সবার জন্য শুধু উত্তম কিছুই পছন্দ করে। অন্যদিকে কাফির ও নাস্তিক এর বিপরীত। তার অন্তর সর্বদা সৃষ্টিকুলের ভয় ও প্রাপ্তির জন্য ব্যাকুল থাকে, সে নিজের স্বার্থেই তাদের জন্য ব্যয় করে, তার নেই কোনো পবিত্রতা, সচ্চরিত্রতা। শুধু গণগ্য উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য তার রয়েছে শক্তি ও বীরত্ব। তার পুরুষত্ব ও মানবতা নেই। ভালো বা মন্দ যাই হোক তা অর্জনে সে পরোয়া করে না। মুসলিম ব্যক্তি কোন বস্তু অর্জনের জন্য সেটির উপকারী উপকরণ সংগ্রহ করে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করে এবং তারই উপর নির্ভর করে সকল কাজে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করে আর আল্লাহ বান্দার কাজে সাহায্য করেন। অন্যদিকে কাফিরের কোনো তাওয়াক্কুল নেই, তার নিজের দুর্বলতার দিকে দৃষ্টিপাত ছাড়া তার কোনো দূরদৃষ্টি নেই, কখনো কখনো আল্লাহ তাকে সাহায্য করেন আবার কখনো তার উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সাহায্য না করে লাঞ্ছিত করেন। ফলে তার উদ্দেশ্য সফল করা হলে সে এটিকে তার ক্রমান্বয়ে করা কাজের সফলতা মনে করে।
মুমিন কোনো নি‘আমত প্রাপ্ত হলে এর শুকরিয়া আদায় করে, সে উপকারী কাজে তা অন্যের জন্য ব্যয় করে। এতে তার কাছে আরো কল্যাণ ও বরকত ফিরে আসে। অন্যদিকে অমুসলিমরা নি‘আমতদাতার থেকে অত্যন্ত নিকৃষ্ট পদ্ধতিতে, দাম্ভিকভাবে নি‘আমত লাভ করে, সে উপকারীর শুকরিয়া আদায় থেকে বিরত থাকে, নিজের হীন উদ্দেশ্য সাধনের জন্যই তা ব্যয় করে, অথচ তার এ সম্পদ খুব দ্রুত নিঃশেষ হয়ে যায় এবং অচিরেই তার থেকে চলে যায়। মুমিনের বিপদাপদ ও বালা-মুসিবত আসলে ধৈর্য ও সহনশীলতা, এর বিনিময় সাওয়াবের প্রত্যাশা এবং এ বিপদ দ্রুত চলে যাওয়ার আশায় তা মোকাবিলা করে। ফলে তার পছন্দনীয় যা কিছু হারায় বা অপছন্দনীয় যা কিছু অর্জন করে এর বিনিময়ে এর চেয়ে উত্তম ও অধিক সাওয়াব লাভ করে। অপরদিকে কাফিরের কোনো প্রিয় বস্তু হারিয়ে গেলে সে এটিকে উদ্বিগ্ন উৎকণ্ঠার কারণ মনে করে, এতে তার মুসিবত আরও বেড়ে যায় এবং তার প্রকাশ্য কষ্টের সাথে মনের কষ্টও একত্রিত হয়। কখনও কখনও সে ধৈর্যহারা হয়ে পরে এবং তার এ বিপদের কোনো প্রতিদানের আশা নেই। ফলে তার হতাশা ও দুঃশ্চিন্তা বেড়েই চলে। মুমিন সমস্ত নবী ও রাসূলের প্রতি ঈমান আনে, তাদেরকে সম্মান ও মর্যাদা প্রদান করে, সমস্ত সৃষ্টির উপরে তাদেরকে ভালোবাসে, তারা স্বীকার করে যে, কিয়ামতের দিনে তারা যেসব নি‘আমত ও প্রতিদান লাভ করবে তা তাদের অনুসরণ ও উপদেশের কারণেই এবং সেদিন সৃষ্টিকুল যে অকল্যাণ ও ক্ষতির সম্মুখীন হবে তা তাদের বিরোধিতা ও অনুসরণ না করার কারণে। নবী-রাসূলগণ সর্বোত্তম সৃষ্টি, বিশেষ করে নবীদের সর্দার ও সর্বশেষ নবী মুহাম্মাদ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বশ্রেষ্ঠ নবী, আল্লাহ তাকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমত স্বরূপ করেছেন এবং সব কল্যাণ, সংস্কার ও হিদায়াতের জন্য তাকে প্রেরণ করেছেন।
পক্ষান্তরে, কাফিররা মুমিনদের বিপরীত। তারা রাসূলদের শত্রুদেরকে সম্মান করে, তাদের মতামতকে সম্মান করে, তাদের পূর্বসূরিদের মতো তারাও নবীদের আনিত বিষয়গুলো নিয়ে উপহাস ও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে। তাদের নির্বুদ্ধিতা ও চারিত্রিক অধঃপতনের কারণে এসব কাজ করে থাকে। মুমিনগণ সাহাবী, মুসলিমদের ইমাম ও হিদায়াতের বাণী প্রচারক ইমামদেরকে ভালোবাসে; কিন্তু কাফির এর বিপরীত। মুমিন একমাত্র  আল্লাহর ইখলাসের কারণে সে সব কাজ শুধু আল্লাহর জন্যই করে এবং উত্তমরূপে আল্লাহর ইবাদত পালন করে; অন্যদিকে কাফিরের তুচ্ছ উদ্দেশ্য ব্যতীত তার কাজের কোনো লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নেই। মুমিন ইলমে নাফে‘ তথা উপকারী ইলম ও সহীহ ঈমান, আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য এগিয়ে আসা, আল্লাহর স্মরণ ও সৃষ্টিকুলের উপকার সাধন ইত্যাদির ব্যাপারে প্রশস্ত হৃদয়ের, উদার মনের। সব ধরণের নিকৃষ্ট গুণাবলী ও পঙ্কিলতা থেকে তার অন্তর পবিত্র। আর গাফিল কাফিরের মধ্যে অন্তর প্রশস্ততার কারণগুলো না থাকায় তারা এসব গুণাবলীর বিপরীত।

প্রশ্ন: উপরে বর্ণিত সহীহ ঈমানের সংক্ষিপ্ত আলোচনা দ্বারা যেহেতু বুঝা যায় যে, সহীহ ঈমানের কারণেই মানুষ দুনিয়া ও আখিরাতের সুখ-সৌভাগ্য লাভ করে, এর দ্বারা মানুষের বাহ্যিক, অভ্যন্তরীণ, আক্বীদা, আখলাক, আদব ইত্যাদি সংশোধন হয়, সঠিক ঈমানই সমস্ত মানুষকে কল্যাণ, সংশোধন ও দৃঢ় হিদায়েতের দিকে আহ্বান করে (উপরে যেভাবে বর্ণিত হয়েছে) তাহলে অধিকাংশ মানুষ কেন দীন ও ঈমান থেকে বিমুখ? কেন তারা দীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত এবং কেন তাদের কেউ কেউ দীনকে উপহাস করে? আসলে ব্যাপারটি কী এর বিপরীত হওয়া উচিত নয়? কেননা মানুষের তো বিবেক বুদ্ধি আছে, সে খারাপটি থেকে ভালোটি বেছে নিতে পারে, অকল্যাণ থেকে কল্যাণটি নির্বাচন করতে পারে ও ক্ষতিকর জিনিস থেকে উপকারী জিনিসটি বের করতে পারে।
উত্তর: প্রশ্ন আল্লাহ আল-কুরআনে উল্লেখ করেছেন এবং তিনি ঈমান আনার ও ঈমান না আনার কারণও উল্লেখ করেছেন। এ প্রশ্নের উত্তর উল্লেখ করলে অধিকাংশ মানুষের ঈমান না আনা ও সত্য বিমুখ হওয়াতে আশ্চর্য হবে না। আল্লাহ বহুসংখ্যক মানুষের দীন ইসলামের প্রতি ঈমান না আনার অনেক কারণ উল্লেখ করেছেন। তন্মধ্যে কিছু কারণ হলো, দীন ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞতা, ইসলামকে প্রকৃতভাবে না চেনা, এর সুউচ্চ শিক্ষা, মহান আদর্শ ও উপদেশ সম্পর্কে অজানা। এছাড়াও ইলমে নাফে‘ তথা উপকারী ইলম না জানার কারণে মানুষ প্রকৃত বাস্তবতা ও সুন্দর আখলাক পর্যন্ত পৌঁছতে বাধার সম্মুখীন। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿بَلۡ كَذَّبُواْ بِمَا لَمۡ يُحِيطُواْ بِعِلۡمِهِۦ وَلَمَّا يَأۡتِهِمۡ تَأۡوِيلُهُ٣٩﴾ [يونس : ٣٩]
‍“বরং তারা যে ব্যাপারে পূর্ণ জ্ঞান লাভ করে নি, তা তারা অস্বীকার করেছে এবং এখনও তার পরিণতি তাদের কাছে আসে নি”। [সূরা ইউনুস, আয়াত: ৩৯]
এ আয়াতে আল্লাহ আমাদেরকে বলেছেন যে, কাফিরদের মিথ্যাচার ও অস্বীকরের কারণ হলো তারা বিষয়টি সম্পর্কে অজ্ঞ ছিলো, তাদের অসম্পূর্ণ জ্ঞান বিষয়টি পুরোপুরিভাবে ব্যপ্ত করতে পারে নি, আর তখনও তাদের কাছে প্রতিশ্রুত আযাব আসে নি, যে আযাব আসলে বান্দা অত্যাবশ্যকীয়ভাবে সত্যের দিকে প্রত্যাবর্তন করে ও সত্যকে স্বীকার করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿وَلَٰكِنَّ أَكۡثَرَهُمۡ يَجۡهَلُونَ١١١﴾ [الانعام: ١١١]
“কিন্তু তাদের অধিকাংশই মূর্খ।” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১১১]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেছেন,
﴿وَلَٰكِنَّ أَكۡثَرَهُمۡ لَا يَعۡلَمُونَ٣٧﴾ [الانعام: ٣٧]
“কিন্তু তাদের অধিকাংশ জানে না।” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ৩৭]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেছেন,
﴿صُمُّۢ بُكۡمٌ عُمۡيٞ فَهُمۡ لَا يَرۡجِعُونَ١٨﴾ [البقرة: ١٨]
“তারা বধির-মূক-অন্ধ। তাই তারা ফিরে আসবে না।” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮]  
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেছেন,
﴿إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَأٓيَٰتٖ لِّقَوۡمٖ يَعۡقِلُونَ٢٤﴾ [الروم: ٢٤]      
“নিশ্চয় এর মধ্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে সে জাতির জন্য যারা অনুধাবন করে।” [সূরা আর-রূম, আয়াত: ২৪]
এ ছাড়াও এ ধরণের অনেক আয়াত আছে যা তাদের অজ্ঞতা কথা বলা হয়েছে। অজ্ঞতা হয়ত সামান্য বিষয় অজানার ভান হতে পারে। যেমন, রাসূলদের প্রতি মিথ্যা প্রতিপন্ন দাওয়াত বিমুখী অধিকাংশ মিথ্যাবাদীর অবস্থা, যারা তাদের নেতৃবর্গ ও বিশিষ্ট লোকদের অনুসরণ করে। তাদেরকে আযাব স্পর্শ করলে তারা বলবে,  
﴿رَبَّنَآ إِنَّآ أَطَعۡنَا سَادَتَنَا وَكُبَرَآءَنَا فَأَضَلُّونَا ٱلسَّبِيلَا۠٦﴾ [الاحزاب : ٦٧]      
“হে আমাদের রব, আমরা আমাদের নেতৃবর্গ ও বিশিষ্ট লোকদের আনুগত্য করেছিলাম, তখন তারা আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিল।” [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৬৭]
অথবা অজ্ঞতাটা যৌগিক বা জটিল অজ্ঞতা হতে পারে। এটি আবার দু’ধরণের। প্রথমত, তাদের কেউ তাদের বাপ-দাদার ধর্মে ছিলো এবং তাদের সাথে সে ধর্মের উপরই বড় হয়েছে। অতঃপর তাদের কাছে সত্য দীন এসেছে; কিন্তু সে দীনের প্রতি ভ্রুক্ষেপ করে নি। আর যদি সে দীনের ব্যাপারে দৃষ্টিপাত করেও তবে তা তার পূর্বের ধর্মের প্রতি সন্তুষ্ট ও তুষ্ট থেকে খুব স্বল্প পরিসরে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যভাবে দেখেছে এবং তার নিজের জাতির ব্যাপারে অন্ধভাবে পক্ষপাতিত্ব ও গোঁড়ামি করেছে। আর এরা হলো রাসূলদের মিথ্যাপ্রতিপন্নকারী অধিকাংশ কাফির যারা রাসূলদের দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করে বলেছিলো,
﴿وَكَذَٰلِكَ مَآ أَرۡسَلۡنَا مِن قَبۡلِكَ فِي قَرۡيَةٖ مِّن نَّذِيرٍ إِلَّا قَالَ مُتۡرَفُوهَآ إِنَّا وَجَدۡنَآ ءَابَآءَنَا عَلَىٰٓ أُمَّةٖ وَإِنَّا عَلَىٰٓ ءَاثَٰرِهِم مُّقۡتَدُونَ٢٣﴾ [الزخرف: ٢٣] 
“আর এভাবেই তোমাদের পূর্বে যখনই আমি কোন জনপদে সতর্ককারী পাঠিয়েছি, তখনই সেখানকার বিলাসপ্রিয়রা বলেছে, নিশ্চয় আমরা আমাদের পিতৃপুরুষদেরকে এক মতাদর্শের ওপর পেয়েছি এবং নিশ্চয় আমরা তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করব।” [সূরা আয-যুখরুফ, আয়াত: ২৩]
আর এটিই হচ্ছে অন্ধ অনুসরণ যার অনুসারীরা মনে করে যে, সে হকের ওপর প্রতিষ্ঠিত আছে, অথচ সে বাতিলের ওপর আছে। অধিকাংশ বস্তুবাদী নাস্তিকরা এ প্রকারের মিথ্যাবাদীদের অন্তর্ভুক্ত। কেননা গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার ক্ষেত্রে তারা পূর্ববর্তী নেতাদের অন্ধ অনুসরণ করে। যখন তারা কোনো মতামত ব্যক্ত করে তখন তারা তা এমনভাবে অনুসরণ করে যেন তা আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিলকৃত অহী। আবার যখন তারা ভুল কোন কিছু আবিষ্কার করে তখন তাদের পরবর্তীরাও তাদের সাথে একমত হলেও তাদের পথে চলে আর একমত না হলেও তাদের সে ভুল পথেই চলে। এ ধরণের লোকেরা অজ্ঞ লোকদের জন্য বড় ফিতনা।
যৌগিক অজ্ঞ লোকদের দ্বিতীয় প্রকার হলো কাফিরদের নেতা ও শীর্ষস্থানীয় নাস্তিকেরা যারা নিজেদেরকে প্রকৃতি ও মহাবিশ্বের সম্পর্কে খুব দক্ষ ও পাকা মনে করেন আর অন্যদেরকে অজ্ঞ মনে করেন। তারা তাদের জ্ঞানকে ক্ষুদ্র পরিধিতে আবদ্ধ করে রাখেন এবং রাসূলগণ ও তাদের অনুসারীদের উপর অহংকার করে। তারা ধারণা করে যে, মানুষের ইন্দ্রিয় জ্ঞান ও পরীক্ষা-নিরীক্ষাই জ্ঞানের সীমা, এর বাহিরে যে সব জ্ঞান রয়েছে সেগুলো যতই বিশুদ্ধ হোক তা তারা মিথ্যারোপ ও অস্বীকার করে। ফলে তারা মহাবিশ্বের মহাপ্রতিপালক রাব্বুল আলামীনকে অস্বীকার করে, তাঁর রাসূলগণকে মিথ্যারোপ করে এবং আল্লাহর প্রেরিত ও রাসূলদের আনিত গায়েবের বিষয়াদিকে মিথ্যাপ্রতিপন্ন করে ও অস্বীকার করে। এ শ্রেণীর লোকেরাই আল্লাহর নিম্নোক্ত বাণীর অধিক অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তা‘আলা তাদের সম্পর্কে বলেছেন,
﴿فَلَمَّا جَآءَتۡهُمۡ رُسُلُهُم بِٱلۡبَيِّنَٰتِ فَرِحُواْ بِمَا عِندَهُم مِّنَ ٱلۡعِلۡمِ وَحَاقَ بِهِم مَّا كَانُواْ بِهِۦ يَسۡتَهۡزِءُونَ٨٣﴾ [غافر: ٨٣]    
“তারপর তাদের কাছে যখন তাদের রাসূলগণ স্পষ্ট প্রমাণাদিসহ আসল তখন তারা তাদের নিজদের কাছে যে বিদ্যা ছিল তাতেই
Print Friendly and PDF

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন