Views:
A+
A-
জান্নাতী রমণী (২য় পর্ব)
জান্নাতী রমণীর পর্দার বিবরণঃ
ইসলামী শরীয়ত নারীর ইজ্জত-আবরু হেফাযতের দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। তার মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বকে সমুন্নত ও সুউচ্চ করেছে। নারীর পোষাক এবং সৌন্দর্যের ক্ষেত্রে যে সমস্ত শর্তারোপ করা হয়েছে তা শুধু তাকে সংরক্ষণ করার জন্যই, সৌন্দর্যের প্রকাশের মাধ্যমে যে বিপর্যয় সৃষ্টি হবে তার সকল পথ বন্ধ করার জন্য। এটা নারীর ¯^vaxbZv‡K ক্ষুন্ন করা নয়; বরং তাকে লোলুপ দৃষ্টির ছোবল থেকে রক্ষা করা এবং তার পবিত্রতা ও সৌন্দর্যের মানকে সংরক্ষিত করা। সেই সাথে মহান স্রষ্টা আল্লাহর নির্দেশ মান্য করতঃ তাঁর রেযামন্দী লাভ করে জান্নাতের অধিকারী হওয়া।
ইসলামী পর্দার মর্যাদা:
পর্দা আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূল মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এর আনুগত্য। কেননা তাঁদের আনুগত্য প্রতিটি নর-নারীর উপর ফরয করা হয়েছে।
আল্লাহ্ তা’আলা নারীদেরকে পর্দার নির্দেশ দিয়ে এরশাদ করেন:
]وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ
مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلا
مَا ظَهَرَ مِنْهَا[
“ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন সাধারণত: প্রকাশমান স্থান ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে।” (সূরা নূর- ৩১)
তিনি আরো বলেন:
]وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا
تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى[
“তোমরা গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করবে- মূর্খতা যুগের অনুরূপ (বেপর্দা হয়ে) নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না।” (সূরা আহযাব- ৩৩)
আল্লাহ্ আরো বলেন,
]وَإِذَا سَأَلْتُمُوهُنَّ مَتَاعًا
فَاسْأَلُوهُنَّ مِنْ وَرَاءِ حِجَابٍ ذَلِكُمْ أَطْهَرُ لِقُلُوبِكُمْ
وَقُلُوبِهِنَّ[
“তোমরা তাঁর পত্নীগণের নিকট থেকে কোন কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের জন্য এবং তাঁদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ।” (সূরা আহযাব- ৫৩)
আল্লাহ্ আরো বলেন,
]يَاأَيُّهَا النَّبِيُّ قُلْ لأَزْوَاجِكَ
وَبَنَاتِكَ وَنِسَاءِ الْمُؤْمِنِينَ يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِنْ جَلابِيبِهِنَّ
ذَلِكَ أَدْنَى أَنْ يُعْرَفْنَ فَلا يُؤْذَيْنَ[
“হে নবী! আপনি আপনার পত্নীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না।” (সূরা আহযাব- ৫৯)
রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) বলেন:
অর্থাৎ- তাকে ঢেকে রাখতে হবে।
الْمَرْأَةُ عَوْرَةٌ
“নারী গোপন বস্তু।”[50] অর্থাৎ- তাকে ঢেকে রাখতে হবে।
পর্দা নারীর পবিত্রতা: আল্লাহ্ তা’আলা বলেন, “হে নবী! আপনি আপনার পত্নীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না।” (সূরা আহযাব- ৫৯) নারী নিজেকে ঢেকে রাখবে। এতে সে পূত-পবিত্রা সংরক্ষিতা থাকবে, আর তবেই তাকে কষ্ট দেয়া হবে না, ফাসেক বা খারাপ লোকেরা তাকে উত্যক্ত করতে সুযোগ পাবে না। এখানে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, নারীর সৌন্দর্য অপরের কাছে প্রকাশ হলেই তাকে কষ্ট, ফিৎনা ও অকল্যাণের সম্মুখিন হতে হয়।
পর্দা নির্মলতা: আল্লাহ্ বলেন, “তোমরা তাঁর পত্নীগণের নিকট থেকে কোন কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের জন্য এবং তাঁদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ।” (সূরা আহযাব- ৫৩)
এ আয়াতে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর স্ত্রীদের নিকট থেকে কোন কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইতে বলা হয়েছে; অথচ তাঁরা হচ্ছেন মুমিনদের সম্মানিত মাতা, পৃথিবীর তাবৎ নারীর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সবচাইতে অধিক পূত-পবিত্র। তাদের চাইতে অধিক পবিত্র এমন কোন নারী আছে কি যারা পর্দা না করে বলবে যে আমাদের অন্তর ঠিক আছে? আর অযৌক্তিক কথা বলবে ‘মনের পর্দা বড় পর্দা’?
এই আয়াতে পর্দাকে ঈমানদার নারী-পুরুষের হৃদয়ের পবিত্রতার কারণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কেননা চক্ষু যখন অবলকণ করে; হৃদয় তখন কামনা করে। আর এজন্যই দৃষ্টিপাত না করাটা হৃদয়ের পরিশুদ্ধতার কারণ এবং ফিৎনা থেকে বেঁচে থাকার সুস্পষ্ট মাধ্যম। কেননা পর্দার মাধ্যমে দুর্বল অন্তরের মানুষদের কুপ্রবৃত্তিকে বিনষ্ট করে দেয়া হয়। আল্লাহ্ বলেন,
] إِنْ اتَّقَيْتُنَّ فَلَا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ
فَيَطْمَعَ الَّذِي فِي قَلْبِهِ مَرَضٌ[
“যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় করে থাক, তবে পরপুরুষের সাথে নম্র ও আকর্ষনীয় ভঙ্গিতে কথা বলবে না। এতে দুবর্ল হৃদয়ের লোকদের অন্তরে লালচ (কুবাসনা) সৃষ্টি হবে।” (সূরা আহযাব- ৩২)
পর্দা নারীর আবরণ: রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: “নিশ্চয় আল্লাহ্ লজ্জাশীল গোপনকারী। তিনি লজ্জা ও গোপনীয়তা পসন্দ করেন।” (নাসাঈ) তিনি আরো বলেন: “যে নারী নিজ গৃহ ব্যতীত অন্যের গৃহে গিয়ে ¯^xq পোষক খুলবে, সে আল্লাহ্ ও তার মাঝের পর্দা ছিঁড়ে ফেলবে।”[51]
পর্দা হল ঈমান: আল্লাহ্ তা’আলা ঈমানদার নারী ব্যতীত কাউকে পর্দার নির্দেশ দেন নি। এজন্যই তিনি বলেছেন: “আপনি মুমিন নারীদেরকে বলুন!...”।
একদা বনূ তামীম গোত্রের কতিপয় নারী উম্মুল মুমেনীন আয়েশা (রা:) এর নিকট আগমণ করে, তাদের পরিধানে ছিল খুবই পাতলা পোষাক। তা দেখে আয়েশা (রাঃ) বললেন, ‘তোমরা যদি মুমেনা হয়ে থাক, তবে এটা ঈমানদার নারীর পোষাক নয়।’
পর্দা আত্মসম্ভ্রম: আত্মসম্ভ্রমবোধ সম্পন্ন পুরুষের জন্যও পর্দা মানানসই, যে পুরুষ নিজ স্ত্রী ও কন্যাদের প্রতি পরদৃষ্টির লোলুপতায় মর্যাদাবোধে আঘাত প্রাপ্ত হয়। জাহেলী যুগে এবং ইসলামের মধ্যেও অনেক যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে নারীর মর্যাদা ও সম্ভ্রম রক্ষার জন্য। আলী (রা:) বলেন, “আমি শুনলাম তোমাদের নারীরা অনারব কাফের পুরুষদের সাথে বাজারে গিয়ে ভিড় জমায়? তোমাদের মধ্যে আত্মসম্ভ্রম বোধ নেই? যার মধ্যে আত্মসম্ভ্রম বোধ নেই, তার মধ্যে কোন কল্যাণ নেই।”
বেপর্দার পরিণতি
পর্দাহীনতা আল্লাহ্-রাসূলের নাফরমানী: যে ব্যক্তি আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের বিরোধিতা করবে সে তো নিজেরই ক্ষতি করবে। আল্লাহ্র কোনই ক্ষতি হবে না। রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
]كُلُّ أُمَّتِي يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ
إِلا مَنْ أَبَى قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَنْ يَأْبَى قَالَ مَنْ
أَطَاعَنِي دَخَلَ الْجَنَّةَ وَمَنْ عَصَانِي فَقَدْ أَبَى
“আমার উম্মতের সবাই জান্নাতে প্রবেশ করবে। তবে সে লোক নয় যে (জান্নাতে যেতে) অস্বীকার করে। তাঁরা প্রশ্ন করলেন, কে অস্বীকার করে? তিনি বললেন, যে আমার আনুগত্য করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে; আর যে আমার নাফরমানী করবে সেই জান্নাতে যেতে অস্বীকার করে।”[52]
পর্দাহীনতা অভিশাপ: রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “শেষ যুগে অচিরেই আমার উম্মতের মধ্যে এমন কিছু নারী হবে, যারা কাপড় পরেও উলঙ্গ থাকবে। তাদের মাথা হবে উটের কুঁজের মত। তোমরা তাদেরকে অভিশাপ কর। কেননা তারা অভিশপ্ত।”[53]
বেপর্দা জাহান্নামীদের কাজ: আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
]صِنْفَانِ مِنْ أَهْلِ النَّارِ لَمْ
أَرَهُمَا قَوْمٌ مَعَهُمْ سِيَاطٌ كَأَذْنَابِ الْبَقَرِ يَضْرِبُونَ بِهَا
النَّاسَ وَنِسَاءٌ كَاسِيَاتٌ عَارِيَاتٌ...[
“জাহান্নামবাসী দু’টি দল রয়েছে। যাদেরকে আমি এখনও দেখিনি। একদল এমন লোক যাদের হাতে গরুর লেজের মত লাঠি থাকবে যা দিয়ে তারা লোকদেরকে প্রহার করবে। আর অন্য দল এমন নারী যারা পোষাক পরেও উলঙ্গ থাকে...।”[54]
বেপর্দা ইবলীসের সুন্নাত: আদমের সাথে ইবলীসের ঘটনাই আমাদের সামনে ইবলিসের ষড়যন্ত্র উম্মোচন করে দেয়; সে কিরূপ আগ্রহী ছিল লজ্জাস্থান প্রকাশ হওয়া ও পর্দা উম্মোচন করার জন্য। বেপর্দা হচ্ছে শয়তানের মূল লক্ষ্য। আল্লাহ্ বলেন,
]يَابَنِي آدَمَ لَا يَفْتِنَنَّكُمْ
الشَّيْطَانُ كَمَا أَخْرَجَ أَبَوَيْكُمْ مِنْ الْجَنَّةِ يَنزِعُ عَنْهُمَا
لِبَاسَهُمَا لِيُرِيَهُمَا سَوْآتِهِمَا[
“হে আদম সন্তান! শয়তান যেন তোমাদেরকে বিভ্রান্ত করতে না পারে; যেমন সে তোমাদের পিতা-মাতাকে জান্নাত থেকে বের করে দিয়েছে এমতাবস্থায় যে তাদের থেকে তাদের পোষাক খুলিয়ে দিয়েছে। যাতে করে তাদের লজ্জাস্থান প্রকাশ হয়ে পড়ে।” (সূরা আ’রাফ- ২৭)
সুতরাং ইবলিসই হল, বেপর্দা ও লজ্জাহীনতার আহ্বানকারী। আর সেই হল আধুনিক ‘নারী মুক্তি’ নামে আন্দোলনের সবচেয়ে বড় নেতা।
বেপর্দা ইহুদী নীতি: মুসলিম জাতির নৈতিকতা ধ্বংসের ব্যাপারে ইহুদীদের ষড়যন্ত্র কারো কাছে গোপন নয়। বিশেষ করে নারীর ফিৎনার মাধ্যমে। কেননা নারীর সাথে পুরুষের অবাধ মেলামেশা জাতির নৈতিকতা ধ্বংসের প্রধান অস্ত্র। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
]اتَّقُوا الدُّنْيَا وَاتَّقُوا
النِّسَاءَ فَإِنَّ أَوَّلَ فِتْنَةِ بَنِي إِسْرَائِيلَ كَانَتْ فِي النِّسَاءِ[
“তোমরা দুনিয়া এবং নারী থেকে বেঁচে থাক। কেননা বনী ইসরাঈলের মধ্যে সর্বপ্রথম ফিৎনা ঘটেছিল নারীর মাধ্যমে।”[55]
বেপর্দা ঘৃণিত জাহেলী রীতি: আল্লাহ্ বলেন, “তোমরা গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করবে- মূর্খতা যুগের অনুরূপ (বেপর্দা হয়ে) নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না।” (সূরা আহযাব- ৩৩)
এ আয়াতে বেপর্দাকে অন্ধকার যুগের বর্বরদের রীতি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আর নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জাহেলী যুগের সবধরণের রীতি-নীতিকে পদদলিত করেছেন। তিনি বলেন: “মূর্খ যুগের সব বিষয় আমার দু’পায়ের নীচে।”[56]
বেপর্দা চারিত্রিক পদস্খলনের অন্যতম মাধ্যম: কেননা এর মাধ্যমে নারী পুরুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ফলে তাদের চরিত্র ধ্বংস হয়। বিশেষ করে যুব সমাজ। কেননা বেপর্দা তাদের অন্তরে কুচিন্তার উদ্রেক করে; ফলে তারা ধাবিত হয় অশ্লীলতার দিকে।
বেপর্দার কারণে নারী হয় সস্তা সামগ্রী। যার বাস্তব প্রমাণ হল বর্তমান প্রচার মাধ্যম। ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্য-সামগ্রী বাজারজাত করার ক্ষেত্রে নারীকেই ব্যবহার করে থাকে।
বেপর্দার কারণেই বর্তমানে অধিকাংশ ক্ষেত্রে নানা ধরণের দূরারোগ্য ব্যাধির সৃষ্টি হয়েছে। যেমন- এইডস্...। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
]لَمْ تَظْهَرِ الْفَاحِشَةُ فِي قَوْمٍ
قَطُّ حَتَّى يُعْلِنُوا بِهَا إِلا فَشَا فِيهِمُ الطَّاعُونُ وَالأَوْجَاعُ
الَّتِي لَمْ تَكُنْ مَضَتْ فِي أَسْلافِهِمِ الَّذِينَ مَضَوْا[
“কোন জাতির মধ্যে যখনই অশ্লীলতার প্রকাশ ঘটবে, তখনই তাদের মধ্যে মহামারী, দুর্ভিক্ষ.. প্রভৃতি ব্যাপক আকার ধারণ করবে; যা তাদের পূর্ববর্তীদের মধ্যে ছিল না।”[57]
বেপর্দা চোখের ব্যভিচারের পথকে সুগম করে। রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “চোখের ব্যভিচার হচ্ছে দৃষ্টিপাত করা।”[58] নি:সন্দেহে দৃষ্টি অবনত রাখার আনুগত্যকে লংঘণ করার কারণেই পৃথিবীতে ফিৎনা-ফাসাদের সূত্রপাত হয়েছে; যা আনুবিক বোমা ও ভূমিকম্পের চাইতে বেশী ক্ষতি করে থাকে মানুষের চরিত্রকে। আল্লাহ্ বলেন,
]وَإِذَا أَرَدْنَا أَنْ نُهْلِكَ
قَرْيَةً أَمَرْنَا مُتْرَفِيهَا فَفَسَقُوا فِيهَا فَحَقَّ عَلَيْهَا الْقَوْلُ
فَدَمَّرْنَاهَا تَدْمِيرًا[
“যখন আমি কোন জনপদকে ধ্বংস করার ইচ্ছা করি তখন তার অবস্থাসম্পন্ন লোকদেরকে উদ্বুদ্ধ করি, অত:পর তারা পাপাচারে মেতে উঠে। ফলে তাদের উপর দন্ড ন্যায়ত: অবধারিত হয়ে পড়ে এবং তখন আমি তাদেরকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে থাকি।” (সূরা বানী ইসরাঈল- ১৬)
শরীয়ত সম্মত পর্দার শর্ত সমূহ
1)
নারী তার সমস্ত শরীর ঢেকে দেবে। আল্লাহ বলেন, “ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন সাধারণত: প্রকাশমান স্থান ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে।” (সূরা নূর- ৩১)
আল্লাহ আরো বলেন, “হে নবী! আপনি আপনার পত্নীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না।” (সূরা আহযাব- ৫৯)
2)
পর্দার পোষাকটি যেন নিজেই সৌন্দর্যমন্ডিত না হয়। যাতে ঐ পোষাকের সৌন্দর্য ঢাকার জন্য আরেকটি পর্দার প্রয়োজন পড়ে। সুতরাং পর্দার উপর নকশা ও কারুকার্য খচিত থাকলে বা ঝলমলে পাথর বসানো ও রঙ্গিন হলে সে কাপড় পরিধান করবে না।
3)
পর্দার কাপড় মোটা হবে। এমন পাতলা যেন না হয় যাতে কাপড়ের অভ্যন্তর থেকেও দেহ বা দেহের কান্তি দৃশ্যমান হয়। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলে দিয়েছেন, “যে সব মেয়েলোক কাপড় পরেও ন্যাংটা, পুরুষদের প্রতি আকৃষ্ট এবং পুরুষদেরও নিজেদের প্রতি আকৃষ্টকারীনী, তারা জাহান্নামী। তারা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না এবং জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না।”[59]
একটি বিয়ের কনে আয়েশা (রাঃ) এর কাছে উপস্থিত হল। তার পরিধানে ছিল খুবই স্বচ্ছ পাতলা কাপড়। তখন তিনি বললেন, ‘যে ব্যক্তি এ ধরণের পোষাক পরিধান করে, সে সূরা আন-নূরে বিধৃত বিধানের প্রতি ঈমান আনেনি।’
4)
পর্দার পোষাক প্রশস্ত ঢিলা-ঢালা হবে। আঁটসাট বা সংকীর্ণ হবে না, যার দরুন দেহের উচ্চ-নীচ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সবই বাইরে দৃশ্যমান হয়ে উঠে, যদিও তা স্বচ্ছ বা পাতলা নয়। উসামা বিন যায়েদ (রাঃ) বলেন, দেহ্ইয়া কালবী নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে একটি কিবতী (মিছরের তৈরী) মোটা কাপড় উপহার দিয়েছিল। তিনি উহা আমাকে পরিধান করার জন্য প্রদান করলেন। আমি বাড়িতে গিয়ে আমার স্ত্রীকে পরতে দিলাম। নবীজী আমাকে বললেন, কি ব্যাপার তুমি কিবতী কাপড়টি পরিধান কর না? আমি বললাম, আমার স্ত্রীকে উহা পরিয়ে দিয়েছি। তখন রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেন, তাকে আদেশ কর সে যেন ওটার নীচে অন্য একটি কাপড় পরিধান করে নেয়। কেননা আমার আশংকা হচ্ছে ঐ কাপড়ে তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রকাশ হয়ে পড়বে।” (আহমাদ, আলবানী হাদীছটিকে হাসান বলেন।)
5)
আতর সুবাশ মিশ্রিত হবে না। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
]أَيُّمَا امْرَأَةٍ اسْتَعْطَرَتْ
فَمَرَّتْ عَلَى قَوْمٍ لِيَجِدُوا مِنْ رِيحِهَا فَهِيَ زَانِيَةٌ[
“যে নারী সুগন্ধি মেখে ঘর থেকে বের হয়, অতঃপর মানুষের সম্মুখ দিয়ে হেঁটে চলে- যাতে করে তারা তার সুবাশ অনুভব করে, তবে সেই নারী ব্যভিচারী।”[60]
6)
কাফের নারীদের পোষাকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হবে না। ইসলাম কাফেরদের সাথে সাদৃশ্য করতে নিষেধ করেছে। ইসলামের নির্দেশ হচ্ছে কাফেরদের বিরোধিতা করা। রাসূলে কারীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
مَنْ تَشَبَّهَ
بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ
Òযে লোক অপর জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভূক্ত গণ্য হবে।” (আবু দাউদ)
7)
পুরুষের জন্য নির্দিষ্ট পোষাক মেয়েরা পরবে না। আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন,
]لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمُتَشَبِّهِينَ مِنَ الرِّجَالِ بِالنِّسَاءِ
وَالْمُتَشَبِّهَاتِ مِنَ النِّسَاءِ بِالرِّجَالِ[
রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অভিশাপ করেছেন এমন পুরুষকে যে নারীর সাথে সাদৃশ্য সৃষ্টিকারী পোষাক পরিধান করে, এবং অভিশাপ করেছেন সেই নারীকে যে পুরুষের সাথে সাদৃশ্য সৃষ্টিকারী পোষাক পরিধান করে। (বুখারী)
8)
উক্ত পোষাক যেন মানুষের মাঝে প্রসিদ্ধ হওয়ার উদ্দেশ্যে না হয়। দুনিয়ার সৌন্দর্যে মানুষের মাঝে গর্ব করার উদ্দেশ্যে অতি উচ্চ মূল্যের পোষাক পরিধান করাই হচ্ছে প্রসিদ্ধির পোষাক। রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
]مَنْ لَبِسَ ثَوْبَ شُهْرَةٍ
أَلْبَسَهُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ثَوْبًا ثُمَّ تُلَهَّبُ فِيهِ النَّارُ[
“যে ব্যক্তি প্রসিদ্ধ হওয়ার জন্য বিশেষ কোন পোষাক পরিধান করবে, ক্বিয়ামত দিবসে আল্লাহ তাকে অনুরূপ পোষাক পরিধান করাবেন, অতঃপর তাতে জাহান্নামের আগুন প্রজ্জলিত করা হবে।”[61]
একজন নও মুসলিম নারীর দৃষ্টিতে ইসলামী পর্দা:
‘খাওলা’ নাম্নী একজন জাপানী নারী ২৫/১০/১৯৯৩ তারিখে সঊদী আরবের আল কাসীম বুরাইদা শহরের ইসলামী সেন্টারে এসে ইসলাম গ্রহণ ও পর্দা সম্পর্কে তাঁর অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। তা থেকে সংক্ষেপে কিছু কথা এখানে উল্লেখ করা হল।
তিনি ফ্রান্সে অবস্থানকালে ইসলাম গ্রহণ করেন। তারপর থেকে ইসলামী জীবনযাত্রা অব্যাহত রাখেন। তিনি বলেন, ইসলাম গ্রহণ করার পর পর্দার মধ্যে আমি খুবই আনন্দ ও গৌরব করতে লাগলাম। কেননা পর্দা শুধু আল্লাহ্র আনুগত্যের প্রতীকই নয়; উপরন্ত তা মুসলিম নারীদের মাঝে আন্তরিকতার বাঁধন। পর্দার মাধ্যমে আমি নিজেকে অত্যন্ত ভদ্র ও সম্মানিত মনে করি।
তিনি বলেন, অনেক নারী এমন পোশাক পরেন যাতে তাদের স্তন ও wbZ‡¤^i আকৃতি পরিস্কার ফুটে উঠে। ইসলাম গ্রহণের আগেও আমি এধরণের পোশাক দেখলে A¯^w¯— বোধ করতাম। আমার মনে হত এমন কিছু অঙ্গ প্রদর্শন করা হচ্ছে যা মূলত: ঢেকে রাখা উচিত, বের করা উচিত নয়। একজন মেয়ের মনে যদি এসকল পোশাক এধরণের অস্তিত্ববোধ এনে দেয় তাহলে একজন পুরুষ এ পোষাক পরা মেয়েদের দেখলে কিভাবে প্রভাবিত হবেন তা সহজেই অনুমান করা যায়।
তিনি বলেন, আপনি যদি কোন কিছু লুকিয়ে রাখেন তাহেল তার মূল্য বেড়ে যায়। এমনকি অন্য নারীর চোখেও তা অধিকতর আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। পর্দানশীন বোনদের কাঁধ ও গলা অপূর্ব সুন্দর দেখায়, কারণ তা সাধারণত: আবৃত থাকে। যখন কোন মানুষ লজ্জার অনুভূতি হারিয়ে নগ্ন হয়ে রাস্তাঘাটে চলতে থাকে, প্রকাশ্য জনসমক্ষে পেশাব, পায়খানা ও যৌনতা করতে থাকে, তখন সে পশুর সমান হয়ে যায়, তাকে আর কোনভাবেই পশু থেকে পৃথক করা যায় না। আমার ধারণা, লজ্জার অনুভূতি থেকেই মানব সভ্যতার শুরু।
অনেকে প্রশ্ন করতে পারে, পুরুষকে উত্তেজিত না করার উদ্দেশ্যে নারীর সমস্ত শরীর ঢেকে রাখাটা বাড়াবাড়ি এবং অতি-সতর্কতা। একজন পুরুষ কি শুধুমাত্র যৌন আগ্রহ নিয়েই একজন নারীর দিকে তাকায়? একথা ঠিক যে সব পুরুষই প্রথমেই যৌন অনুভূতি নিয়ে নারীকে দেখে না। তবে নারীকে দেখার পর তার পোশাক ও আচরণ থেকে পুরুষের মনে যে যৌন আগ্রহ সৃষ্টি হয় তা প্রতিরোধ করা তার জন্য খুবই কষ্টকর। এধরণের আবেগ নিয়ন্ত্রণে পুরুষরা বিশেষভাবে দুর্বল। বর্তমান বিশ্বের ধর্ষণ ও যৌন অত্যাচারের পরিমাণ দেখলেই আমরা একথা বুঝতে পারব। নারী-পুরুষের সম্মতিমূলক ব্যভিচার বৈধ করার পরও পশ্চাত্যে জোরপূর্বক ধর্ষণ ও যৌন অত্যাচারের ঘটনা ধারণাতীতভাবে বেড়ে চলছে।
কেবলমাত্র পুরুষদের প্রতি মানবিক আবেদন জানিয়ে এবং তাদেরকে আত্মনিয়ন্ত্রণের আহ্বান জানিয়ে আমরা ধর্ষণ ও যৌন অত্যাচার বন্ধ করতে পারব না। হিজাব বা ইসলামী পর্দা ছাড়া এগুলো রোধের কোন উপায় নেই। একজন পুরুষ নারীর পরিধানের মিনি-স্কার্টের অর্থ এরূপ মনে করতে পারেন: “তুমি চাইলে আমাকে পেতে পার।” অপরদিকে ইসলামী হিজাব পরিস্কারভাবে জানিয়ে দেয়: ‘আমি তোমার জন্য নিষিদ্ধ।’
যারা বেপর্দা হয়ে চলতে ভালবাসেন এবং সেটাকেই সভ্যতা মনে করেন, তাদেরকে আমি প্রশ্ন করব: আপনি কি একজন নুডিস্ট ঘঁফরংঃ বা নগ্নবাদী? আপনি কি নগ্ন হয়ে চলাফেরা করেন? যদি আপনি নুডিস্ট না হন তাহলে বলুন, যদি কোন নুডিস্ট আপনাকে জিজ্ঞেস করেন: ‘কেন আপনি আপনার স্তন ও নিতম্ব ঢেকে রাখেন, অথচ মুখ ও হাতের ন্যায় স্তন ও wbZ¤^I তো শরীরের ¯^vfvweK অংশ?’ তাহলে আপনি কি বলবেন? এ প্রশ্নের উত্তরে আপনি যা বলবেন, আপনার প্রশ্নের উত্তরে আমি ঠিক সেকথাই বলব। আপনি যেমন শরীরের ¯^vfvweK অংশ হওয়া সত্বেও স্তন ও wbZ¤^‡K গোপনীয় অঙ্গ বলে মনে করেন, আমরা মুসলিম নারীর সমস্ত শরীরকে গোপনীয় অঙ্গ বলে মনে করি, কারণ মহান স্রষ্টা আল্লাহ্ এভাবেই আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন। আর এজন্যই আমরা নিকটাত্মীয় (মাহরাম) ছাড়া অন্যান্য পুরুষদের থেকে সম্পূর্ণ শরীর আবৃত করে রাখি।’][62]
¯^vgx‡`i জন্য
উপদেশঃ
এতক্ষণ আমরা মুমেন রমণীদেরকে সেই সত্য ও সঠিক পথের সন্ধান দিতে চেয়েছি যা আল্লাহ সুবহানাহু ¯^xq গ্রন্থ আল কুরআনে প্রণয়ন করেছেন এবং তাঁর রাসূল মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজের জীবনীতে বাস্তবায়ন করেছেন। কিন্তু একথার অর্থ এটা নয় যে, পুরুষগণ শুধুমাত্র নারীদের উপর কর্তৃত্ব করেই চলবে। আর কর্তৃত্বের পাওয়ার দেখিয়ে সামান্য অযুহাতে (পান থেকে চুন খসলেই) স্ত্রীর উপর যুলম-নির্যাতন করবে। উল্লেখিত নির্দেশাবলী নারী পালন করতে অক্ষম হলে তার উপর অত্যাচার-নিপড়নের ষ্টিম রোলার উঠে আসবে। কেননা স্ত্রীদের সাথে সাদাচরণ করাও পুরুষের উপর আবশ্যক। মহান আল্লাহ্ সে দিকে ইঙ্গিত করে এরশাদ করেনঃ
]وَعَاشِرُوهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ[
“আর তোমরা তাদের (স্ত্রীদের) সাথে সদ্ভাবে বসবাস কর।” (সূরা নিসা- ১৯)
আল্লাহ আরো বলেন,
]وَلَهُنَّ مِثْلُ الَّذِي عَلَيْهِنَّ
بِالْمَعْرُوفِ وَلِلرِّجَالِ عَلَيْهِنَّ دَرَجَةٌ[
“আর নারীদের উপর তাদের যেরূপ অধিকার আছে নারীদেরও তদানুরূপ ন্যায় সঙ্গত অধিকার আছে এবং তাদের উপর পুরুষদের শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে।” (সূরা বাকারা- ২২৮)
সুতরাং প্রত্যেক পুরুষের উপর অবশ্য কর্তব্য হচ্ছে স্ত্রীর অধিকার সমূহ যথাযথভাবে আদায় করা। অবশ্য এই অধিকার প্রদানের পরও নারীদের থেকে কোন কোন সময় বক্রতা লক্ষ্য করা যায়। কোন অবস্থাতেই তাদেরকে পুরাপুরিভাবে বশে আনা সম্ভব নয়। এজন্য পুরুষকে ধৈর্যশীল হতে হবে। তাদেরকে সর্বদা সদুপদেশ প্রদান করতে হবে। তাই রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
]اسْتَوْصُوا بِالنِّسَاءِ فَإِنَّ
الْمَرْأَةَ خُلِقَتْ مِنْ ضِلَعٍ وَإِنَّ أَعْوَجَ شَيْءٍ فِي الضِّلَعِ
أَعْلَاهُ فَإِنْ ذَهَبْتَ تُقِيمُهُ كَسَرْتَهُ وَإِنْ تَرَكْتَهُ لَمْ يَزَلْ
أَعْوَجَ فَاسْتَوْصُوا بِالنِّسَاءِ[
“তোমরা নারীদেরকে সদুপদেশ দাও। কেননা নারীকে পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর পাঁজরের হাড়ের মধ্যে সবচেয়ে বাঁকা হচ্ছে উপরের অংশ। উহা যদি সোজা করতে যাও তবে ভেঙ্গে দিবে, আর যদি ছেড়ে দাও তো বাঁকাই থাকবে। অতএব তোমরা নারীদেরকে সর্বদা সদুপদেশ প্রদান কর।” (বুখারী ও মুসলিম)
অন্য বর্ণনায় রয়েছে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
]إِنَّ الْمَرْأَةَ خُلِقَتْ مِنْ
ضِلَعٍ لَنْ تَسْتَقِيمَ لَكَ عَلَى طَرِيقَةٍ فَإِنِ اسْتَمْتَعْتَ بِهَا
اسْتَمْتَعْتَ بِهَا وَبِهَا عِوَجٌ وَإِنْ ذَهَبْتَ تُقِيمُهَا كَسَرْتَهَا
وَكَسْرُهَا طَلَاقُهَا[
“নারীকে সৃষ্টি করা হয়েছে পাঁজরের হাড় থেকে। তোমার পছন্দমত পথে সে কখনই সোজা হয়ে চলবে না। তুমি যদি তার থেকে উপকৃত হতে চাও তো এই বক্র অবস্থাতেই উপকৃত হও। কিন্তু এই বক্রতা সোজা করতে গেলে তাকে ভেঙ্গে দিবে। আর ভেঙ্গে দেয়া মানেই তাকে তালাক প্রদান করা।” (মুসলিম)
নারীদের মধ্যে কোন কোন ক্ষেত্রে বক্রতা থাকলেই যে তাকে প্রত্যাখ্যান করতে হবে এমন নয়; বরং তার মধ্যে অনেক ভাল গুণও আছে। কোন বিষয় হয়তো আপনি অপছন্দ করছেন কিন্তু তাতেই রয়েছে আপনার জন্য প্রভূত কল্যাণ যা আপনি জানেনই না। এজন্যই আল্লাহ্ তা’আলা বলেন,
]وَعَاشِرُوهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ فَإِنْ
كَرِهْتُمُوهُنَّ فَعَسَى أَنْ تَكْرَهُوا شَيْئًا وَيَجْعَلَ اللَّهُ فِيهِ
خَيْرًا كَثِيرًا[
“আর তোমরা তাদের (স্ত্রীদের) সাথে সদ্ভাবে বসবাস কর। যদি তাদেরকে অপসন্দ কর, তবে মনে রেখো তোমরা হয়তো কোন বিষয়কে অপসন্দ করবে; অথচ আল্লাহ্ তাতেই প্রভূত কল্যাণ রেখেছেন।” (সূরা নিসা- ১৯)
আল্লাহ্ আরো বলেন,
]وَعَسى أَنْ تَكْرَهُوا شَيْئًا وَهُوَ
خَيْرٌ لَكُمْ وَعَسَى أَنْ تُحِبُّوا شَيْئًا وَهُوَ شَرٌّ لَكُمْ[
“তোমরা হয়তো কোন বিষয়কে অপছন্দ কর, অথচ উহা তোমাদের জন্য কল্যাণজনক। আর কোন বিষয়কে তোমরা পছন্দ কর; অথচ তা তোমাদের জন্য অকল্যাণজনক।” (সূরা বাকারা- ২১৬)
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
]لا يَفْرَكْ مُؤْمِنٌ مُؤْمِنَةً إِنْ
كَرِهَ مِنْهَا خُلُقًا رَضِيَ مِنْهَا آخَرَ[
“কোন মুমিন পুরুষ যেন কোন মুমিন স্ত্রীকে ঘৃণা না করে। কেননা সে হয়তো তার কোন চরিত্রকে অপছন্দ করে কিন্তু অন্য চরিত্রকে অবশ্যই পছন্দ করবে।” (মুসলিম)
অতএব স্ত্রীর নিকট থেকে কোন বিরোধিতা বা অপছন্দনীয় বিষয় প্রকাশ পেলে দ্রুত তাকে উপদেশ দিবে নসীহত করবে। আল্লাহর কথা স্মরণ করাবে, তাঁর শাস্তির ভয় দেখাবে। তার আবধ্যতা ও গোঁড়ামীর পরিণতি যে ভয়াবহ সে সম্পর্কে সতর্ক করবে।
কিন্তু এরপরও যদি স্ত্রীর মধ্যে অবাধ্যতা, হঠকারিতা ও অসৎ চরিত্র লক্ষ্য করা যায়, তবে তার বিরুদ্ধে শাস্তি মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রেও সীমারেখা রয়েছে যা লঙ্ঘন করা থেকে সাবধান থাকতে হবে। পবিত্র কুরআনে এবং সুন্নাতে নববীতে এর একটি সীমারেখা নির্ধারণ করা হয়েছেঃ
মহান আল্লাহ্ এরশাদ করেন,
]وَاللاَّتِي تَخَافُونَ نُشُوزَهُنَّ
فَعِظُوهُنَّ وَاهْجُرُوهُنَّ فِي الْمَضَاجِعِ وَاضْرِبُوهُنَّ فَإِنْ
أَطَعْنَكُمْ فَلا تَبْغُوا عَلَيْهِنَّ سَبِيلا إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيًّا
كَبِيرًا[
“আর যাদের মধ্যে অবাধ্যতার আশংকা কর তাদের সদুপদেশ দাও, তাদের শয্যা ত্যাগ কর এবং প্রহার কর। যদি তাতে তারা বাধ্য হয়ে যায়, তবে তাদের জন্য অন্য কোন পথ অনুসন্ধান করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সবার উপর শ্রেষ্ঠ।” (সূরা নিসা- ৩৪)
এই আয়াতে অবাধ্য স্ত্রীকে সংশোধন করার জন্য যে নীতিমালা প্রদান করা হয়েছে তা নিম্নরূপঃ
প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছেঃ তাকে উপদেশ প্রদান করা।
দ্বিতীয় পদক্ষেপঃ তাকে বিছানায় পরিত্যাগ করা।
তৃতীয় পদক্ষেপঃ প্রহার করা।
উপদেশঃ উপদেশ সম্পর্কে পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে যে, তাকে ভদ্র ও নম্রভাবে বুঝাতে হবে, বিরোধীতা ও হঠকারিতার পরিণাম সম্পর্কে জ্ঞান দান করতে হবে। ¯^vgx যে সত্য সত্যই স্ত্রীর কল্যাণকামী এ বিষয়টি যেন তার কাছে প্রকাশ পায় এমন ভাষা ব্যবহার করতে হবে। রাগতঃ ভাষায় কর্কষ কন্ঠের কথা কখনো উপদেশ হতে পারে না। কারণ নম্র ব্যবহারের দ্বারা যে কাজ আদায় করা সম্ভব হয় রূঢ় ও কর্কষ ব্যবহারে তা সম্ভব হয় না। এজন্য আল্লাহ তা’আলা ফেরাউনকে হেদায়াত করার জন্য যখন মূসা ও হারূন (আঃ)কে প্রেরণ করলেন, তখন তাদেরকে উপদেশ দিলেন, তারা যেন তার সাথে রূঢ় আচরণ না করে। নির্দেশ দিলেন,
]اذْهَبَا إِلَى فِرْعَوْنَ إِنَّهُ
طَغَى، فَقُولا لَهُ قَوْلا لَيِّنًا لَعَلَّهُ يَتَذَكَّرُ أَوْ يَخْشَى[
“তোমরা উভয়ে ফেরাউনের কাছে যাও নিশ্চয় সে সীমালঙ্ঘন করেছে। অতঃপর তাকে নম্র ভাষায় নসীহত কর। হয়তো সে উপদেশ গ্রহণ করবে অথবা আল্লাহকে ভয় করবে।” (সূরা ত্বা-হা- ৪৩-৪৪)
প্রত্যেক ¯^vgxi মনে রাখা উচিত যে, স্ত্রীর দুর্ব্যবহার ও অবাধ্যতার ক্ষেত্রে আপনি নিজেকে মূসা (আঃ)এর চাইতে শ্রেষ্ট মনে করবেন না এবং স্ত্রীকে ফেরাউনের চাইতে নিকৃষ্ট মনে করবেন না। অতএব স্ত্রীকে সংশোধন করার জন্য কখনই কঠিন ও শক্ত ভাষা ব্যবহার করে উপদেশ দেয়ার চেষ্টা করবেন না। কেননা অন্যায়কে অন্যায় দিয়ে প্রতিহত করা যায় না।
আয়েশা (রাঃ) বর্ণিত হাদীছে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরশাদ করেন,
]إِنَّ الرِّفْقَ لاَّ يَكُونُ فِي
شَيْءٍ إِلاَّ زَانَهُ وَلاَ يُنْزَعُ مِنْ شَيْءٍ إِلاَّ شَانَهُ[
“যে কোন বিষয়ে নম্রতা Aej¤^b
করা হলে তা সুন্দর হয়। আর কোন ক্ষেত্রে নম্রতা না থাকলে তা অসুন্দর ও নিকৃষ্ট হয়।” (মুসলিম)
অতএব স্ত্রী সংশোধন হোক, ফিরে আসুক সঠিক পথে এটা আন্তরিকভাবে চাইলে সেভাবেই ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। প্রেম-ভালবাসা মিশ্রিত শব্দ এবং দয়া-মায়া ও দরদমাখা বাক্যাবলী চয়ন করে তাকে সদুপদেশ দিবে। এবং সেই সাথে তার সংশোধনের জন্য আল্লাহর কাছে দু’আ করবে। আশা করা যায় সেই স্ত্রী সঠিক পথে ফিরে আসবে, সেই সাথে সংসারে ফিরে আসবে ¯^Mx©q পরিবেশ। দাম্পত্য জীবন ভরে উঠবে আনন্দ সুখ ও কল্যাণের আশির্বাদে।
কিন্তু তাতে যদি কাজ না হয়, নরম কথায় যদি চিড়া না ভিজে তবে, মহান আল্লাহ্ নির্দেশিত দ্বিতীয় পন্থা Aej¤^b করবে। আর তা হচ্ছেঃ
বিছানায়
পরিত্যাগ করাঃ একই বিছানায় তার থেকে আলাদাভাবে শয়ন করা। এমন কথা নয় যে, তাকে ঘরের বাইরে রাখা বা অন্য ঘরে রাখা বা পিতা-মাতার বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আয়াতে নির্দেশিত বিছানায় পরিত্যাগ করার ব্যাখ্যায় এরশাদ করেন,
]وَلا
تَهْجُرْ إِلا فِي الْبَيْتِ[
“তাকে নিজ ঘরের মধ্যেই আলাদা করে রাখবে।” (বুখারী, অনুচ্ছেদ শিরোনাম ‘নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর নিজ স্ত্রীদেরকে পরিত্যাগ করা’। আবু দাউদ, অধ্যায়ঃ বিবাহ হা/১৮৩০।
‘বিছানায় আলাদা করে রাখা’র অর্থ সম্পর্কে আবদুল্লাহ্ বিন আব্বাস (রাঃ) বলেন, তার সাথে তার বিছানাতেই শুইবে কিন্তু তার সাথে সহবাস করবে না। তার দিকে পিঠ ঘুরিয়ে শয়ন করবে। অন্য বর্ণনা মতে ইবনু আব্বাস বলেন, ‘তার সাথে কথা বলবে না।’ (তাফসীর ইবনু কাছীর সূরা নিসার ৩৪ নং আয়াতের তাফসীর)
ইমাম কুরতুবী এই পদক্ষেপের উপকারিতা সম্পর্কে বলেন, ¯^vgxi প্রতি যদি স্ত্রীর ভালবাসা থাকে তাহলে এ অবস্থা তার কাছে খুবই অসহনীয় ও কষ্টকর হবে, ফলে সে সংশোধন হবে। কিন্তু ভালবাসায় ত্রুটি থাকলে বা মনে ঘৃণা থাকলে নিজ অবাধ্যতার উপর সে অটল থাকবে- সংশোধনের পথে অগ্রসর হবে না।’ (তাফসীরে কুরতুবী সূরা নিসার ৩৪ নং আয়াতের তাফসীর)
সংশোধনের এই দ্বিতীয় নীতি ফলপ্রসু না হলে তৃতীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। আর তা হচ্ছেঃ
প্রহার করাঃ এটি হচ্ছে সর্বশেষ পদক্ষেপ। আল্লাহ্ বলেন, وَاضْرِبُوهُنَّ ‘এবং তাদেরকে প্রহার করবে।’ এর তাফসীরে হাফেয ইবনু কাছীর (রহঃ) বলেন, ‘যদি উপদেশ প্রদান ও আলাদা রাখার পরও কোন কাজ না হয়, স্ত্রীগণ সংশোধনের পথে ফিরে না আসে, তবে হালকা করে তাদেরকে প্রহার করবে।
জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বিদায় হজ্জের ঐতিহাসিক ভাষনে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
]...فَاتَّقُوا اللَّهَ فِي النِّسَاءِ فَإِنَّكُمْ
أَخَذْتُمُوهُنَّ بِأَمَانِ اللَّهِ وَاسْتَحْلَلْتُمْ فُرُوجَهُنَّ بِكَلِمَةِ
اللَّهِ وَلَكُمْ عَلَيْهِنَّ أَنْ لا يُوطِئْنَ فُرُشَكُمْ أَحَدًا تَكْرَهُونَهُ
فَإِنْ فَعَلْنَ ذَلِكَ فَاضْرِبُوهُنَّ ضَرْبًا غَيْرَ مُبَرِّحٍ وَلَهُنَّ
عَلَيْكُمْ رِزْقُهُنَّ وَكِسْوَتُهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ[
“তোমরা স্ত্রীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর। কেননা আল্লাহর আমানতে তোমরা তাদেরকে গ্রহণ করেছে। আল্লাহর বাণী সাক্ষী রেখে তোমরা তাদের সাথে সহবাস করা বৈধ করেছো। তাদের উপর তোমাদের অধিকার হচ্ছে, তারা তোমাদের গৃহে এমন লোককে প্রবেশ করতে দিবে না যাকে তোমরা পছন্দ কর না। কিন্তু তারা যদি নির্দেশ লঙ্ঘন করে এরূপ করে ফেলে তবে, তাদেরকে প্রহার কর। কিন্তু প্রহার যেন কঠিন ও কষ্টদায়ক না হয়। তোমাদের উপর তাদের অধিকার হচ্ছে, তোমরা সঠিকভাবে নিয়ম মাফিক তাদের খানা-পিনা ও কাপড়ের ব্যবস্থা করবে।” (ছহীহ মুসলিম, অধ্যায়ঃ হজ্জ, হা/২১৩৭)
হাসান বাছরী এই প্রহারের ব্যাখ্যায় বলেন, প্রহার যেন এমন না হয় যার কারণে শরীরে কোন চিহ্ন দেখা যায় বা শরীর ফুলে-ফুটে যায়।
আত্বা বলেন, ইবনু আব্বাসকে প্রশ্ন করা হল, উক্ত প্রহার কিরূপ হবে? তিনি বললেন, ‘মেসওয়াক বা অনুরূপ বস্তু দ্বারা প্রহার হতে হবে।’ (তাফসীরে কুরতুবী)
অন্য হাদীছে প্রহারের ক্ষেত্রে হালকাভাবে হলেও মুখমন্ডলে প্রহার করতে নিষেধ করা হয়েছে।
হাকীম বিন মুআবিয়া আল কুশাইরী তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
] وَلا تَضْرِبِ الْوَجْهَ وَلا تُقَبِّحْ[
একটি সতর্কতাঃ শায়খ মুহাম্মাদ বিন ইবরাহীম আল হামাদ বলেন, ইসলাম যখন স্ত্রীকে প্রহারের অনুমতি দিয়েছে, তখন এ কথা স্মরণ রাখতে হবে যে, প্রহারের উদ্দেশ্য যেন নিছক স্ত্রীকে কষ্ট ও শাস্তি দেয়া, প্রতিশোধ নেয়া না হয়। স্ত্রীকে লাঞ্ছিত করে জোর-জবরদস্তি সংসার করতে বাধ্য করা যেন না হয়।
বরং এই পদক্ষেপ তো তখনই গ্রহণ করবে যখন একান্ত প্রয়োজন দেখা দিবে। আর তা হল, তাকে আদব দেয়া ও সংশোধন করা। এজন্য সেখানে থাকবে মুরব্বী ও শিক্ষকের মত মায়া-মমতা। সেখানে নিষ্ঠুরতা ও কঠোরতা থাকবে না। এখানে প্রবৃত্তির কোন স্থান নেই যে মনে চাইলেই যখন তখন তাকে মারপিট করবে অপমানিত করবে। এজন্য স্ত্রীকে প্রহারের ক্ষেত্রে কতগুলো শর্ত নির্ধারন করা হয়েছে। তা হচ্ছে নিম্নরূপঃ
ক) স্ত্রীকে উপদেশ প্রদান করার পর এবং তাকে বিছানায় আলাদা রাখার পরও সে যদি নিজ হঠকারিতায় অটল থাকে, তবে প্রহারের পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
খ) শাস্তি যেন অপরাধের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। যেখানে সদুপদেশ দিলে কাজ হবে সেখানে যেন বিছানায় আলাদা না করা হয়। অথবা বিছানায় আলাদা করার পদক্ষেপ গ্রহণ না করেই যেন মারপিটের দিকে অগ্রসর না হয়। কেননা অপরাধের চাইতে অধিক শাস্তি প্রদান করলে তা হবে অন্যায়।
গ) মনের মধ্যে এই নিয়ত রাখবে যে, এই পদক্ষেপ গ্রহণ করার উদ্দেশ্য হচ্ছে সমস্যার সামাধান করা, তাকে সংশোধন করা ও শিক্ষা দেয়া, সৎপথে ফিরে আসা। এছাড়া অন্য কিছু নয়। তাই উত্তম পন্থায় হাল্কাভাবে প্রহারের চেষ্টা করবে। ছোট-খাট চড়-থাপ্পড় বা মেসওয়াক দ্বারা আঘাত করলে সেই উদ্দেশ্য হাসিল হয়ে যাবে।
ঘ) প্রহারের ক্ষেত্রে স্পর্শ কাতর স্থান সমূহ থেকে সতর্ক থাকবে। যেমন মাথা, পেট, মুখমন্ডল প্রভৃতি।
ঙ) হাড্ডি ভেঙ্গে দিবে না, কোন অঙ্গ নষ্ট করবে না, রক্তাক্ত করবে না এবং একস্থানে বারবার প্রহার করবে না।
চ) যদি সংশোধন হয়ে যায় বা অবাধ্যতা পরিত্যাগ করে, তবে কথায় কাজে দোষারোপ করবে না বা অন্যায় শাস্তি দেয়ার চেষ্টা করবে না।[64]
মনে রাখবেন, আপনার স্ত্রী আপনার জীবন সঙ্গী, আপনার সুখ-দুঃখের সাথী, আপনার বিছানার পার্টনার, আপনার গোপন-প্রকাশ্য সকল বিষয় সম্পর্কে সে জানে। তার সংস্পর্শ ছাড়া আপনি অচল, তার প্রীতি-ভালবাসা ছাড়া আপনার জীবন বিষাদময়। সুতরাং শয়তানের প্ররচনায় কোন অন্যায় করে বসলে কিভাবে আপনি তাকে নির্দয়ের মত প্রহার করবেন? আবার রাত আসলেই তার উষ্ণ পরশে সুখ অনুভবের চেষ্টা করবেন? এজন্যই সর্বশ্রেষ্ট শিক্ষক মহানবী মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
]إِلامَ يَجْلِدُ أَحَدُكُمُ
امْرَأَتَهُ جَلْدَ الْأَمَةِ وَلَعَلَّهُ يُضَاجِعُهَا مِنْ آخِرِ يَوْمِهِ [
“কিভাবে তোমাদের মধ্যে একজন নিজ স্ত্রীকে ক্রীতদাসীর মত বেত্রাঘাত করে; অথচ দিনের শেষে (রাতে) তার সাথেই সহবাসে লিপ্ত হয়?” (বুখারী ও মুসলিম)
যারা বিনা কারণে স্ত্রীলোকদের মারধোর করে তাদের সম্পর্কে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “এধরণের লোক তোমাদের মধ্যে কখনো ভাল লোক বলে গণ্য হতে পারে না।” (আবু দাউদ হা/১৮৩৪)
স্বামীর উপর স্ত্রীর কপিতয় অধিকারঃ
যেমন করে স্বামী নিজ স্ত্রীর নিকট থেকে আশা করে যে সে তার যাবতীয় অধিকার সমূহ আদায় করে দিবে, তার খেদমত আঞ্জাম দিবে, অনুরূপ স্বামীর উপরও আবশ্যক হচ্ছে স্ত্রীর অধিকার সমূহ আদায় করা। তার নিকট থেকে সঠিক খেদমত পেতে চাইলে তার যাবতীয় উপকরণের ব্যবস্থা করে দেয়া। সেই সাথে স্ত্রীর কষ্ট হোক তার মানসিক যন্ত্রনার কারণ হোক এমন কোন আচরণ থেকে দূরে থাকা।
হাকীম বিন মুআবিয়া আল কুশাইরী বর্ণনা করেন তাঁর পিতা থেকে। তিনি বলেন, আমি একদা প্রশ্ন করলাম হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের উপর আমাদের স্ত্রীদের অধিকার কি? তিনি বললেন,
]أَنْ تُطْعِمَهَا إِذَا طَعِمْتَ
وَتَكْسُوَهَا إِذَا اكْتَسَيْتَ وَلا تَضْرِبِ الْوَجْهَ وَلا تُقَبِّحْ وَلا
تَهْجُرْ إِلا فِي الْبَيْتِ[
“তুমি যখন পানাহার করবে তাকেও পানাহার করাবে। তুমি পোশাক পরলে তাকেও পোশাক পরাবে। কখনো তার মুখমন্ডলে প্রহার করবে। আর নিজ গৃহের মধ্যে ছাড়া অন্য কোথাও তাকে পৃথক করবে না।”[65]
মুসনাদে আহমাদের বর্ণনায় বলা হয়েছেঃ وَلَا تُقَبِّحْ “তাকে গাল-মন্দ করবে না।” (মুসনাদে আহমাদ হা/১৯১৬২)
কাজেই স্ত্রীর ভরণ-পোষণের ব্যাপারে ঔদাসিন্য বা উপেক্ষা দেখান কোন মুসলমানের পক্ষেই জায়েয নয়। হাদীছে বলা হয়েছেঃ
]كَفَى بِالْمَرْءِ إِثْمًا أَنْ
يُضَيِّعَ مَنْ يَقُوتُ[
“একজন লোকের গুনাহগার হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, যাদের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব তার উপর অর্পিত, তাদের প্রতি সে ব্যাপারে চরম উপেক্ষা দেখাবে।” (আবু দাউদ, হা/১৪৪২)
আবদুল্লাহ বিন আমর বিন আছ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেন,
]يَا عَبْدَاللَّهِ أَلَمْ أُخْبَرْ
أَنَّكَ تَصُومُ النَّهَارَ وَتَقُومُ اللَّيْلَ فَقُلْتُ بَلَى يَا رَسُولَ
اللَّهِ قَالَ فَلا تَفْعَلْ صُمْ وَأَفْطِرْ وَقُمْ وَنَمْ فَإِنَّ لِجَسَدِكَ
عَلَيْكَ حَقًّا وَإِنَّ لِعَيْنِكَ عَلَيْكَ حَقًّا وَإِنَّ لِزَوْجِكَ عَلَيْكَ
حَقًّا[
“হে আবদুল্লাহ! আমি সংবাদ পেয়েছি যে, তুমি নাকি দিনে রোযা রাখ আর রাতে নফল নামায আদায় কর? একথা ঠিক কি?
আমি বললামঃ হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল!
তিনি বললেন, এরূপ করো না। কখনো রোযা রাখবে কখনো ছাড়বে। কখনো ঘুমাবে কখনো নামায আদায় করবে। কেননা তোমার উপর তোমার শরীরের হক রয়েছে। তোমার উপর তোমার চোখের হক রয়েছে। তোমার উপর তোমার স্ত্রীর হক রয়েছে।” (বুখারী, অধ্যায়ঃ ছিয়াম হা/১৮৩৯।)
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
]مَنْ كَانَتْ لَهُ امْرَأَتَانِ
فَمَالَ إِلَى إِحْدَاهُمَا جَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَشِقُّهُ مَائِلٌ[
“কারো যদি দু’জন স্ত্রী থাকে আর সে একজনকে ছেড়ে দ্বিতীয় জনের দিকেই বেশী গুরুত্বারোপ করে ও ধাবিত হয়, তবে সে ক্বিয়ামত দিবসে এমন অবস্থায় উঠবে যে তার শরীরের এক দিক থাকবে লটকানো।”[66]
নারী-পুরুষকে নছীহত (কবিতা)
ওগো মাতা ওগো খালা ওগো আমার বোন
তোমাদের কথা কিছু শোন দিয়া মন।
যেই নারী পাঞ্জে গানা নামায পড়িবে
আর রামাযানের রোযা কভু না ছাড়িবে।
আর নিজ ইজ্জতের রাখিবে খেয়াল
¯^vgx সেবা করে যাবে বাঁচে যত কাল।
তার জন্য জান্নাতের দ্বার খোলা হবে
সেই দ্বার দিয়ে ইচ্ছা, জান্নাত চলে যাবে।
আরো কিছু শোন ওগো ভালবাসা বোন
পুরুষের জন্য নারী অমূল্য রতন।
দুনিয়াতে যত ধন পুরুষের আছে
সব থেকে মূল্যবান নারী তার কাছে।
কিন্তু সেই নারী বটে নেক হওয়া চায়
ইহ-পরকালে তবে হবে সুখময়।
দুনিয়াতে জাহান্নাম বদ নারী যার
ইহ পরকাল তার হবে ছারখার।
কষা জুতা পরে চলা যত কষ্টকর
তার থেকে বেশী কষ্ট বদ নারী যার।
শোনরে স্ত্রী-জাতী, কোরআনের ফরমান
পুরুষে হাকিম কইল, রহিম রহমান।
কেননা পুরুষ জাতী, বহু কষ্ট করে
আহার ও পোশাক তোমায় দেয় জড়ো করে।
এহেন পুরুষ তুমি রাজি যে রাখিলে
মরিয়ে জান্নাতে যাবে হাদীছেতে বলে।
শোনরে পুরুষ জাতী, কোরআনে ফরমান
তোমাদের নারী যদি হয় নাফারমান।
বুঝাইয়া দেখ তারে নানান প্রকারে
না বুঝিলে বিছানাতে দেহ জুদা করে।
এ দুই উপায়ে যদি ঠিক নাহি হয়
আদরের মার তবে কিছু মারা চায়।
অযথা মারিলে মার, আল্লাহ নারাজ হইবে
ক্বিয়ামতের কোটে আল্লাহ্ হিসাব কষিবে।
মিয়া বিবি মিলে মিশে চালাবে সংসার
নইলে ইহ-পরকাল হবে ছারখার।
(সৌজন্যেঃ মাওলানা মোহাম্মাদ হোসাইন সালাফী রহঃ)
সমাপ্ত
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জন্য যার অশেষ অনুগ্রহে নেককর্ম সমূহ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়।
তথ্য সূত্রঃ
এ বইটি প্রস্তুত ও সজ্জিত করতে যে সমস্ত গ্রন্থ থেকে সহযোগিতা নেয়া হয়েছেঃ
1)
কিভাবে আপনি নেক স্ত্রী হবেন? (আরবী) প্রকাশনাঃ দার ইবনুল মোবারক। আল খোবার, সঊদী আরব। (মূল সহযোগিতা এই বই থেকেই নেয়া হয়েছে।)
2)
ইসলাম ¯^xK…Z অধিকার।
(আরবী) শায়খ ইবনু ঊছাইমীন।
3)
জান্নাতী আওরত, (উর্দ্দু) আনসার যুবাইর মুহাম্মাদী, মাকতাবা বায়তুস্ সালাম। রিয়াদ।
4)
দাম্পত্য জীবন। (বাংলা) শায়খ আবদুল হামীদ ফায়যী, আল মাজমা’ সঊদী আরব।
5)
¯^vgx-¯¿x‡K ২০টি
নছীহত (আরবী ক্যাসেট) শায়খ ইবনু জুবাইলান।
6)
ইসলামে হালাল হারামের বিধান, (বাংলা) ইউসুফ কারযাভী, অনুবাদঃ মাওলানা আবদুর রহীম।
7)
ইসলামে নারীর মর্যাদা, (আরবী) শায়খ মুহাম্মাদ বিন ইবরাহীম আল হামাদ, প্রকাশনাঃ আল বাদীআ’ রিয়াদ ইসলামী দাওয়া সেন্টার।
8)
তাফসীর ইবনু কাছীর (সিডি প্রোগ্রাম)
9)
তাফসীর কুরতুবী (সিডি প্রোগ্রাম)
10)
কুরআন-সুন্নাহর আলোকে
¯^vgx-¯¿xi অধিকার, (আরবী)
শায়খ হাশেম বিন হামেদ রিফাঈ। প্রকাশকঃ মাকতাবা ইবনুল জাওযী, সঊদী আরব।
11)
আল মুন্তাখাব মিন
আ’লামুন্নেসা, (আরবী) শায়খ আব্বাস মুহাম্মাদ
ইউসুফ, প্রকাশনাঃ দারুল বায়ান, কুয়েত।
12)
নারীর পর্দা, (আরবী) প্রকাশনাঃ দারুল কাসেম, রিয়াদ।
[১] . সূরা আহযাব- ৩৬
[২] . বুখারী, অধ্যায়ঃ কুরআন-সুন্নাহ্ আঁকড়ে ধরা। হা/৬৭৩৭।
[৩] . বুখারী, অধ্যায়ঃ যাকাত হা/১৩২৯। মুসলিম, অধ্যায়ঃ সদ্ব্যবহার ও আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা, হা/৪৭৬৩।
[৪] . আহমাদ হা/২২৮৬৬।
[৫] . তিরমিযী, অধ্যায়ঃ দিয়াত হা/১৩৪১। নাসাঈ, অধ্যায়ঃ রক্ত হারাম প্রসঙ্গে হা/৪০২৭। আবু দাঊদ, অধ্যায়ঃ সুন্নাত, হা/৪১৪২।
[৬] . বুখারী, অধ্যায়ঃ আদব, হা/ ৫৫১৪। মুসলিম, অধ্যায়ঃ সদ্ব্যবহার ও আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা, হা/৪৬২১।
[৭] . সূরা নিসা- ৩৪
[৮] . ইবনু মাজাহ্ অধ্যায়ঃ বিবাহ হা/ ১৮৪৩। শায়খ আলবানী হাদীছটিকে ছহীহ বলেন, দ্রঃ ছহীহুল জামে- হা/ ৫২৯৫
[৯] . সূরা নিসা- ৩৪
[১০] . মাজমু' ফাতাওয়া- ৩২/২৭৫।
[১১] . মুসলিম, অধ্যায়ঃ দুগ্ধপান, হা/২৬৬৮
[১২] . বুখারী, অধ্যায়ঃ বিবাহ, হা/ ৪৭০০। ও মুসলিম, অধ্যায়ঃ দুগ্ধপান, হা/ ২৬৬১।
[১৩] . হাকেম প্রমুখ, শায়খ আলবানী হাদীছটিকে ছহীহ বলেন, দ্রঃ (ছহীহুল জামে হা/৮৮৭)
[১৪] . দারাকুতনী, আলবানী হাদীছটিকে হাসান বলেছেন- ছহীহুল জামে' হা/২৩২৮)
[১৫] . ইবনু কাছীর ১/৭৪৩
[১৬] . মুসনাদে আহমাদ হা/১৫৭৩ ইবনু হিব্বান, শায়খ আলবানী হাদীছটিকে ছহীহ বলেন, দ্রঃ (ছহীহুল জামে হা/৬৬০)
[১৭] . ত্ববরানী, শায়খ আলবানী হাদীছটিকে ছহীহ বলেন, দ্রঃ (সিলসিলা ছহীহা- হা/২৮৭।)
[১৮] . ছহীহ সুনান নাসাঈ অধ্যায়ঃ বিবাহ, হা/ ৩১৭৯।
[১৯] . আবু দাউদ, অধ্যায়ঃ যাকাত, হা/১৪১৭।
[২০] . আহমাদ হা/১৮২৩৩, নাসাঈ, হাদীছ ছহীহ্, দ্রঃ আদাবুয যাফাফ- আলবানী পৃঃ ২৮৫)
[২১] . তিরমিযী, অধ্যায়ঃ দুগ্ধপান, হা/১০৮১, ইবনে মাজাহ, অধ্যায়ঃ বিবাহ, হা/১৮৪৪।
[২২] . মুসনাদে আহমাদ হা/১৫৭৩। ইবনু হিব্বান, ছহীহুল জামে হা/৬৬০
[২৩] . ঘটনাটি ইবনু আব্দে রাব্বেহী আন্দালুসী কর্তৃক প্রণীত 'ত্ববায়েউন্ নেসা' গ্রন্থে পৃঃ ৪৪-৪৬ দ্রষ্টব্য।
[২৪] . মুসলিম, অধ্যায় দু'ঈদের নামায, হা/ ১৪৬৭
[২৫] . ছহীহ্ তিরমিযী, অধ্যায়ঃ ছালাত, হা/৩২৮।
[২৬]
. তিরমিযী, অধ্যায়ঃ দুগ্ধপান, হা/ ১০৯৪ ইবনু মাজাহ, বিবাহ, হা/২০০৪। শায়খ
আলবানী হাদীছটিকে ছহীহ বলেন, দ্রঃ ছহীহুল জামে হা/৭১৯২।
[২৭] . নাসাঈ, সিলসিলা ছহীহা- হা/২৮৯
[২৮]
. আবদুল্লাহ্ বিন আব্বাস (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, বুখারী, অধ্যায়, বিবাহ্
হা/৪৭৯৮। মুসলিম, অধ্যায়ঃ চন্দ্রগ্রহণের নামায, হা/১৫১২।
[২৯] . তিরমিযী, অধ্যায়ঃ তালাক ও লি'আন হা/১১০৭ আবু দাঊদ, ইবনু মাজাহ। ছহীহুল জামে হা/২৭০৬
[৩০] . বুখারী, অধ্যায়ঃ বিবাহ, হা/ ৪৭৯৩
[৩১] . সূরা রূম- ২১
[৩২] . বুখারী, অধ্যায়ঃ ওহীর সূচনা, হা/ ২৯৯৮। ছহীহ্ মুসলিম, অধ্যায়ঃ বিবাহ হা/ ২৫৯৪।
[৩৩] . তিরমিযী, অধ্যায়ঃ দুগ্ধপান, হা/১০৮০।
[৩৪] . মুসলিম, বিবাহ, অধ্যায়ঃ হা/২৫৯৫
[৩৫] . আহমাদ হা/২৬৩০১, হাদীছটি শায়খ আলবানী ছহীহ্ বলেছেন, দ্রঃ (আদাবুয্ যাফাফ পৃঃ ১৪৪)
[৩৬] . মুসলিম, অধ্যায়ঃ বিবাহ, হা/২৫৯৮।
[৩৭] . মুসলিম, অধ্যায়ঃ বিবাহ, হা/২৫৯৭।
[৩৮] . তিরমিযী, আবু দাউদ, ইবনু মাজাহ্, মুসনাদ আহমাদ, ছহীহ্ আল জামে হা/ ২৭০৮ ছহীহ তারগীব তারহীব ১৬৪-১৬৬
[৩৯] . র্ইউয়াউল গালীল হা/২০০৪, ছহীহ তারগীব ও তারহীব হা/ ৯৩১, ছহীহুল জামে হা/ ৭৬৪৮ হাদীছটির মূল ছহীহ্ বুখারীতে রয়েছে।
[৪০] . সূরা আহযাব- ৩৩
[৪১] . তাফসীর ইবনু কাছীর- ৩/৭৬৮
[৪২] . আহমাদ, হাকেম, শায়খ আলবানী হাদীছটিকে ছহীহ্ বলেন, দ্রঃ (ছহীহুল জামে হা/ ৭৫২০)
[৪৩] . তিরমিযী, অধ্যায়ঃ যুহ্দ, হা/২৩৩ (আয়েশা রাঃ) থেকে হাদীছটি বর্ণিত।
[৪৪] . ছহীহ মুসলিম হা/ ২১৮২
[৪৫] . ত্ববরানী ফিল কাবীর, ছহীহুল জামে হা/ ৫২৫৯
[৪৬] . বুখারী, অধ্যায়ঃ দু'আ, হা/৫৮৪৩।
[৪৭] . আ'লামুন্নেসা ১/৭৪, ত্বাবায়েউন্নেসা পৃঃ ২৮
[৪৮]
. ইসমাঈল (আঃ) এর স্ত্রীর সাথে ইবরাহীম (আঃ) এর আচরণ সম্পর্কে আমরা সকলেই
অবগত আছি। ছহীহ বুখারীতে বর্ণিত হয়েছে, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) বলেন, একদা ইবরাহীম (আঃ) তাঁর পরিবারকে দেখার জন্য মক্কা আগমণ
করলেন। এসে ইসমাঈলকে বাড়ীত না পেয়ে তার স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলেন, তাদের জীবন
ধারণ সম্পর্কে? সে বলল, আমরা খুবই খারাপ অবস্থায় আছি। আমরা সংকীর্ণতা ও
কঠিন অবস্থায় জীবন-যাপন করছি। তিনি বললেন, তোমার স্বামী এলে তাকে আমার
সালাম দিবে এবং বলবে ঘরের দরজার চৌকাঠ পরিবর্তন করতে। ইসমাঈল (আঃ) ফিরে এসে
বললেন, মনে হচ্ছে কেউ এসেছিল? স্ত্রী বলল, এরকম একজন বৃদ্ধ এসেছিলেন। উনি
আমাদের জীবন-যাপন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে আমি বলেছি আমরা কষ্ট ও দুঃখে
দিনাতিপাত করছি। ইসমাঈল বললেন, উনি কিছু বলেছেন? সে বলল, হ্যাঁ, আপনাকে
সালাম পৌঁছাতে বলেছেন এবং বলেছেন আপনার ঘরের দরজার চৌকাঠ পরিবর্তন করতে।
তিনি বললেন, বৃদ্ধ লোকটি আমার পিতা ছিলেন। তিনি আমার ঘরের দরজার চৌকাঠ
পরিবর্তন করতে বলেছেন, অর্থাৎ তোমাকে তালাক দিতে বলেছেন। তুমি তোমার
পরিবারের কাছে চলে যাও। তিনি তাকে তালাক দিয়ে দিলেন।
কিছু
দিন পর ইসমাঈল অন্য একটি বিবাহ করলেন। অতঃপর ইবরাহীম (আঃ) পূনরায় একদিন
তাদের বাড়ীতে বেড়াতে এলেন। সেদিনও ইসমাঈলকে পেলেন না। তার স্ত্রীর কাছে
জিজ্ঞেস করলে স্ত্রী বলল, রোজগারের জন্য বাইরে গেছেন। ইবরাহীম জিজ্ঞেস
করলেন, তোমরা কেমন আছো? তোমাদের কেমন দিন যাচ্ছে? মহিলা বলল, আমরা খুব ভাল
আছি। সে আল্লাহর প্রশংসা করল। তিনি বললেন, তোমার স্বামী এলে তাকে আমার
সালাম দিবে এবং বলবে ঘরের দরজার চৌকাঠ ঠিক রাখতে। ইসমাঈল ফিরে এসে প্রশ্ন
করলেন, কেউ এসেছিল কি? স্ত্রী বলল, একজন সম্মানিত বৃদ্ধ ব্যক্তি এসেছিলেন।
একথা বলে সে তাঁর প্রশংসা করল। তিনি আমাদের অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে
আমি বলেছি আমরা কল্যাণের মাঝে আছি। ইসমাঈল প্রশ্ন করলেন, তিনি কি কোন
নির্দেশ দিয়েছেন? সে বলল, উনি আপনাকে সালাম দিয়েছেন এবং আদেশ দিয়েছেন আপনার
ঘরের দরজার চৌকাঠ ঠিক রাখতে। তিনি বললেন, তিনি ছিলেন আমার পিতা। আর ঘরের
দরজার চৌকাঠ হচ্ছে, তুমি। তিনি নির্দেশ দিয়েছেন যেন তোমাকে আমি বিছিন্ন না
করি।" (ছহীহ বুখারী, অধ্যায়ঃ নবীদের সম্পর্কে হাদীছ, হা/৩১১৩।)
[৪৯] . বুখারী, অধ্যায়ঃ বিবাহ, হা/৪৭৪৭।
[৫০] . তিরমিযী, অধ্যায়ঃ দুগ্ধপান, হা/১০৯৩।
[৫১] . তিরমিযী, আবু দাউদ, ইবনু মাজাহ্, মুসনাদ আহমাদ, ছহীহ্ আল জামে হা/ ২৭০৮ ছহীহ তারগীব তারহীব ১৬৪-১৬৬।
[৫২] . বুখারী, অধ্যায়ঃ কুরআন-সুন্নাহ্ আঁকড়ে ধরা। হা/৬৭৩৭।
[৫৩] . আহমাদ হা/৬৭৮৬।
[৫৪] . মুসলিম, অধ্যায়ঃ পোশাক ও সৌন্দর্য, হা/৩৯৭১।
[৫৫] . মুসলিম, অধ্যায়ঃ যিকির, দু'আ.., হা/৪৯২৫।
[৫৬] . মুসলিম, অধ্যায়ঃ হজ্জ, হা/২১৩৭।
[৫৭] . ইবনু মাজাহ্, অধ্যায়ঃ ফিতান, হা/৪০০৯।
[৫৮] . বুখারী, অধ্যায়ঃ অনুমতি প্রার্থনা হা/৫৭৭৪। মুসলিম, অধ্যায়ঃ তকদীর হা/ ৪৮০১।
[৫৯] . মুসলিম, অধ্যায়ঃ পোশাক ও সৌন্দর্য, হা/৩৯৭১।
[৬০] . তিরমিযী, নাসাঈ, আবু দাউদ, ছহীহুল জামে হা/২৭০১।
[৬১] . আবু দাউদ, ইবনু মাজাহ্, ছহীহুল জামে হা/ ২৫২৬
[৬২] . খন্দকার অ ন ম আবদুল্লাহ্ জাহাঙ্গীর অনুদিত শাইখ বিন বায (র:) প্রণীত 'ইসলামী হিজাব বা পর্দা' পুস্তক থেকে সংকলিত।
[৬৩] . আবু দাউদ, অধ্যায়ঃ বিবাহ হা/১৮৩০।
[৬৪]
. প্রহারের বিষয়টি পাঠ করার পর প্রগতিবাদী, নারী স্বাধীনতার মিথ্যা
দাবীদার ইসলাম বিদ্বেষী পশ্চাত্যের গোলামরা চেঁচামেচী করতে পারে যে,
স্ত্রীর গায়ে হাত তুলবে? তাকে প্রহার করবে? এটা ইসলামের মধ্যে নারীদের
অবমাননা, অমর্যাদা ও তাদের স্বাধীনতা খর্ব করার দলীল। আমি তাদের বোধদয়ের
জন্য তাদেরই প্রভুদের দেশ আমেরিকা-ইউরোপের কিছু হাল-চিত্র তুলে ধরতে চাই-
যারা কিনা নারী স্বাধীনতার নামে নরীদেরকে নিজেদের ভোগের সামগ্রীতে পরিণত
করেছে।
-
আমেরিকার টাইমস পত্রিকা তথ্য প্রকাশ করেছে যে, আমেরিকাতে প্রতি বছর ৬০
লক্ষ্য নারী স্বামীদের পক্ষ থেকে নির্যাতনের স্বীকার হয়ে থাকে। এদের মধ্যে ২
থেকে ৪ হাজার নারী অতিরিক্ত প্রহারের কারণেই মৃত্যু বরণ করে। পুলিশ
বিভাগের লোকেরা স্বামী-স্ত্রীর পারিবারিক কোন্দল ও যুলম-নির্যাতনের ঘটনার
বিবরণ শোনার জন্য তাদের দুই তৃতীয়াংশ সময় ব্যয় করে থাকে।
-১৯৮৭
সালের একটি গবেষণার পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ৭৯% শতাংশ লোক স্ত্রীদেরকে
নানাভাবে প্রহার করে থাকে। দক্ষিণ কারোলিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনস্তাত্বিক
বিভাগের প্রফেসর ডঃ জোন পেরের উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের মাঝে এ
গবেষণাটি চলিয়েছিলেন।
- জাপানে তালাকের দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে প্রহার করা।
- ১৯৮০ সালে ব্রাজিলের শুধুমাত্র সাওবালো নামক একটি শহরে ৭৭২ জন নারীকে তাদের স্বামীগণ হত্যা করে।
-
কানাডার সমাজ কল্যাণ বিষয়ক গবেষণায় দেখা গেছে সেখানকার এক চতুর্থাংশ নারী
তথা প্রায় ৮ মিলিয়ন নারী প্রতিবছর লাঞ্ছনা-নির্যাতনের স্বীকার হয়ে থাকে।
- প্রতি ৮ সেকেন্ডে আমেরিকাতে একজন নারী লাঞ্ছনার স্বীকার হয়।
- জার্মানীতে প্রতি বছর ১ লক্ষ নারী প্রহারের স্বীকার হয়। এবং ফ্রান্সে ২ মিলিয়ন।
-
প্যারিসে রাতের বেলায় সাহায্যের জন্য ৬০ শতাংশ টেলিফোন নারীদের পক্ষ থেকে
পুলিশের কাছে এসে থাকে। (শায়খ মুহাম্মাদ বিন ইবরাহীম প্রণীত 'ইসলামে নারীর
মর্যাদা' পৃঃ ২১-২৬)
[৬৫] . আবু দাঊদ, অধ্যায়ঃ বিবাহ হা/১৮৩০। শায়খ আলবানী হাদীছটিকে ছহীহ বলেন, দ্রঃ ইরউয়াউল গালীল ৭/৯৮।
[৬৬] . আবু দাউদ, বিবাহ অধ্যায় হা/১৮২১, তিরমিযী, বিবাহ অধ্যায় হা/১০৬০। আলাবানী হাদীছটিকে ছহীহ বলেন ইরওয়াউল গালীল ৭/৮০।
_______________________________________________________________________________
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন