Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

See Our Articles In Different Styles... Grid View List View

বুধবার, ১৬ মার্চ, ২০২২

এসো জান্নাতের পথে

Views:

A+ A-

এসো জান্নাতের পথে

 


এসো জান্নাতের পথে 

 

ভূমিকা

الحمد لله رب العالمين، والصلاة والسلام على أشرف الأنبياء والمرسلين، نبينا محمد وعلى آله وصحبه أجمعين.
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি সমগ্র জগতের প্রতিপালক। আর সালাত ও সালাম নাযিল হোক সমস্ত নবী ও রাসূলদের সরদার আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর এবং তার পরিবার-পরিজন ও তার সমস্ত সাহাবীদের উপর।
আল্লাহ তা‘আলা আমাকে যে সব আমল করা দ্বারা একজন মানুষ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারে বা জান্নাতী ব্যক্তিদের গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্যগুলো কি সে বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। 
এখানে প্রায় আটষট্টটি আমল উল্লেখ করা হয়েছে, যেগুলো একজন বান্দাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন এবং এ আমলগুলো জান্নাতীর গুণাবলীও বটে।

আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে তার ইবাদত ও গোলামীর জন্য সৃষ্টি করেছেন। যারা আল্লাহর ইবাদত করবে এবং একমাত্র তারই গোলামী করবে, তার সাথে কাউকে শরীক করবে না, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত। আর যারা আল্লাহর ইবাদত করবে না-গাইরুল্লাহর উপাসনা করবে এবং ইবাদতে আল্লাহর সাথে ইবাদতে কোনো কিছুকে শরীক করবে অথবা গাইরুল্লাহর গোলামী করবে, তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নাম। আল্লাহ তা‘আলা জান্নাত ও জাহান্নাম দুটিকেই সৃষ্টি করেছেন এবং উভয়টির জন্য রয়েছে অধিবাসী। আর যাকে জান্নাতের জন্য সৃষ্টি করেছেন, তার জন্য জান্নাতের দিকে অগ্রসর হওয়ার আমলগুলো সহজ করা হয়েছে, আর যাকে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছেন, তার জন্য জাহান্নামের আমলগুলো সুশোভিত করা হয়েছে।

তবে মনে রাখতে হবে, যে কোনো আমল কবুল হতে হলে তা একমাত্র আল্লাহর সন্তষ্টি অর্জনের লক্ষ্যেই করতে হবে এবং আমলে অবশ্যই ইখলাস থাকতে হবে। যদি আমলে ইখলাস না থাকে সে আমল আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য নয়। আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করে বলেন,
 ﴿ وَمَآ أُمِرُوٓاْ إِلَّا لِيَعۡبُدُواْ ٱللَّهَ مُخۡلِصِينَ لَهُ ٱلدِّينَ ٥ ﴾ [البينة: ٥] 
“আর তাদেরকে কেবল এই নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যে, তারা যেন আল্লাহর ইবাদত করে তারই জন্য দীনকে একনিষ্ঠ করে”। [সূরা আল-বায়্যিনাহ, আয়াত: ৫]
﴿فَمَن كَانَ يَرۡجُواْ لِقَآءَ رَبِّهِۦ فَلۡيَعۡمَلۡ عَمَلٗا صَٰلِحٗا وَلَا يُشۡرِكۡ بِعِبَادَةِ رَبِّهِۦٓ أَحَدَۢا ١١٠ ﴾ [الكهف: ١١٠]   
সুতরাং, যে তার রবের সাক্ষাৎ করে, সে যেন সৎকর্ম এবং তার রবের ইবাদাতে কাউকে শরীক না করে, [সূরা আল-কাহাফ, আয়াত: ১১০]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করে বলেন,
 «من عمل عملا و أشرك فيه غيري تركته و شركه»
“যে ব্যক্তি কোন একটি আমল করল, আর তাতে সে আমার সাথে কাউকে শরীক করল, আমি তাকে ও তার আমলকে প্রত্যাখ্যান করি।”

আর প্রতিটি আমল হতে হবে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আদর্শ অনুযায়ী। যদি কোনো আমল খুব সুন্দরভাবে করা হয় এবং তার মধ্যে ইখলাস থাকে এবং আমলে কাউকে শরীক করে নি কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদর্শ অনুযায়ী হয় নি এ আমলও আল্লাহর দরবারে গ্রহণযোগ্য নয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«من عمل عملا ليس عليه أمرنا فهو رد»
“যে ব্যক্তি কোন আমল করল, কিন্তু তাতে আমার আদর্শ বা নির্দেশনা উপেক্ষা করা হয়, তা প্রত্যাখ্যাত ও অগ্রহণযোগ্য”। নিম্নে আমরা যে সব করলে, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন হয় সর্বোপরি কাক্ষিত জান্নাত, আল্লাহর পক্ষ হতে মুমিনে মহামূল্যবান পাওনা তা লাভ হয়, আলোচনা করব। যাতে আমরা জান্নাতে লাভে ধন্য হতে পারি এবং জান্নাত লাভের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে পারি। আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে করীমে এরশাদ করে বলেন-
﴿وَسَارِعُوٓاْ إِلَىٰ مَغۡفِرَةٖ مِّن رَّبِّكُمۡ وَجَنَّةٍ عَرۡضُهَا ٱلسَّمَٰوَٰتُ وَٱلۡأَرۡضُ أُعِدَّتۡ لِلۡمُتَّقِينَ ١٣٣ ﴾ [ال عمران: ١٣٣] 
“আর তোমরা দ্রুত অগ্রসর হও তোমাদের রবের পক্ষ থেকে মাগফিরাত ও জান্নাতের দিকে, যার পরিধি আসমানসমূহ যমীনের সমান, যা মুত্তাকীদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে”।[1]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«أَلاَ إِنَّ سِلْعَةَ اللهِ غَالِيَةٌ، أَلاَ إِنَّ سِلْعَةَ اللهِ الجَنَّةُ»
“তোমরা মনে রাখবে, আল্লাহ তা‘আলা পণ্য মহা মূল্যবান। আর আল্লাহর পণ্য হল জান্নাত।”[2] আল্লাহ তা‘আলার মহা মূল্যবান পণ্য জান্নাত লাভের জন্য যে সব আমল করতে হবে, অথবা যে আমল করলে, আল্লাহ তা‘আলার মহা মূল্যবান পণ্য জান্নাত লাভ করা যাবে সে সব আমলগুলো আমরা নিম্নে আলোচনা করব। 
আল্লাহর দরবারে আমাদের কামনা তিনি যেন আমাদেরকে উল্লেখিত আমলগুলো করা এবং যে সব গুণাবলীর কথা আলোচনা করা হয়েছে সে সব গুণে গুণান্বিত হওয়ার তাওফীক দেন। নিশ্চয় তিনি আমাদের দো‘আ শ্রবণকারী ও গ্রহণকারী।

জাকের উল্লাহ আবুল খায়ের


জান্নাতে প্রবেশকারী ব্যক্তিদের গুণাবলী

এক- নরম দিল হওয়া
যাদের অন্তর নরম হবে, যারা খোশ মেজাজের অধিকারী হবে, সর্বদা আল্লাহ-ভীতু হয়, কারো কোনো ক্ষতিকারক নয়, ধৈর্যশীল ব্যক্তি, এমন লোক জান্নাতী হবে।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رضى الله عنه عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ: « يَدْخُلُ الْجَنَّةَ أَقْوَامٌ أَفْئِدَتُهُمْ مِثْلُ أَفْئِدَةِ الطَّيْرِ»
আবু হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “জান্নাতে প্রবেশ করবে এমন ব্যক্তি যাদের অন্তরসমূহ হবে পাখির অন্তরের ন্যায়[3]”।

দুই- দুর্বল অসহায় হওয়া:-
জান্নাতে গরীব-মিসকিন, ফকির, পরমুখাপেক্ষী, দুর্বল লোকদের সংখ্যাধিক্য হবে। পক্ষান্তরে যারা তাদের বিপরীত হবে, অর্থাৎ অহংকারী, দুশ্চরিত্র ও ঝগড়াটে ব্যক্তি জাহান্নামে প্রবেশ করবে।
عَنْ حَارِثَةَ بْنَ وَهْبٍ رضى الله عنه سَمِعَ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَال: «أَلَا أُخْبِرُكُمْ بِأَهْلِ الْجَنَّةِ؟ قَالُوا بَلَى قَالَ صلى الله عليه وسلم كُلُّ ضَعِيفٍ مُتَضَعِّفٍ لَوْ أَقْسَمَ عَلَى اللهُ لَأَبَرَّهُ ثُمَّ قَالَ أَلَا أُخْبِرُكُمْ بِأَهْلِ النَّارِ؟ قَالُوا بَلَى قَالَ كُلُّ عُتُلٍّ جَوَّاظٍ مُسْتَكْبِرٍ»
“হারেসা ইবন ওহাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন, তিনি বলেছেন: “আমি কি তোমাদেরকে জান্নাতি লোকদের গুণাবলীর কথা বলব না?” সাহাবাগণ বললেন: হ্যাঁ বলুন। তিনি বললেন: “প্রত্যেক দুর্বল, লোক চোখে হেয়, কিন্তু সে যদি কোন বিষয়ে আল্লাহর নামে কসম করে তাহলে আল্লাহ তার কসম পূর্ণ করবেন।” অতঃপর তিনি বললেন: আমি কি তোমাদেরকে জাহান্নামী লোকদের কথা বলব না? তারা বললেন: বলুন। তিনি বললেন: “প্রত্যেক ঝগড়াকারী, দুশ্চরিত্র, অহংকারী ব্যক্তি[4]।”

তিন- নম্র-ভদ্র ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে:-
নম্র-ভদ্র, মানুষের নিকট গ্রহণযোগ্য ও মানুষের কাছের লোক- যাকে মানুষ বিপদ আপদে কাছে পায়- এমন খোশ মেজাজ, পরিচিত ও ভাল লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে। এ ধরনের লোকের জন্য আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নামকে হারাম করে দিয়েছেন।
عَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ رضى الله عنه قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهُ صلى الله عليه وسلم قَالَ:«حُرِّمَ عَلَى النَّارِ كُلُّ هَيِّنٍ لَيِّنٍ سَهْلٍ قَرِيبٍ مِنْ النَّاسِ»
“ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “প্রত্যেক নরম দিল ভদ্র এবং মানুষের সাথে মিশুক লোকদের জন্য জাহান্নাম হারাম”। যাদের জন্য জাহান্নাম হারাম তারা অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে[5]।  

চার- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুসরণকারী জান্নাতে যাবে:-
যে ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুসরণ করবে, সে জান্নাতে যাবে। পক্ষান্তরে যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুসরণ করবে না সে জাহান্নামে যাবে। সুতরাং, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুসরণ করা দ্বারাই জান্নাতে প্রবেশ করা নিহিত। প্রমাণ-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رضى الله عنه أَنَّ رَسُولَ اللهُ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «كُلُّ أُمَّتِي يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ إِلَّا مَنْ أَبَى قَالُوا يَا رَسُولَ اللهُ وَمَنْ يَأْبَى قَالَ مَنْ أَطَاعَنِي دَخَلَ الْجَنَّةَ وَمَنْ عَصَانِي فَقَدْ أَبَى »
“আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- আমার সমস্ত উম্মত জান্নাতে যাবে তবে ঐ সমস্ত লোক ব্যতীত যারা অস্বীকার করে। সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করল হে আল্লাহর রাসূল! কে অস্বীকার করে? তিনি বললেন, যে ব্যক্তি আমার অনুসরণ করে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর যে আমার নাফরমানী করে সে অস্বীকার করে[6]।”

পাঁচ- দৈনিক বারো রাকাত সালাত আদায়কারী
আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে যে ব্যক্তি প্রতি দিন বারো রাকাআত সালাত (ফজরের পূর্বে দুই রাকাআত, যোহরের পূর্বে চার রাকাআত, পরে দুই রাকাআত, মাগরিবের পরে দুই রাকাআত, এশার পরে দুই রাকাআত সুন্নত) আদায় করে সে জান্নাতে যাবে। প্রমাণ:
عَنْ أُمِّ حَبِيبَةَ رضي الله عنها زَوْجِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم أَنَّهَا قَالَتْ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهُ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ: «مَا مِنْ عَبْدٍ مُسْلِمٍ يُصَلِّي لِلهِ كُلَّ يَوْمٍ ثِنْتَيْ عَشْرَةَ رَكْعَةً تَطَوُّعًا غَيْرَ فَرِيضَةٍ إِلَّا بَنَى اللهُ لَهُ بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ»
“রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রী উম্মে হাবীবা ˆরাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন- “যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে প্রতিদিন ফরয ব্যতীত বারো রাকাআত নফল সালাত আদায় করবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করবেন[7]।”

ছয়-আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষাকারী ব্যক্তি জান্নাতে যাবে
যে ব্যক্তি আল্লাহর ইবাদতে তার সাথে কাউকে শরীক করবে না, সালাত কায়েম করবে, যাকাত করবে এবং আত্মীয়তা সম্পর্ক বজায় রাখবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
عَنْ أَبِي أَيُّوبَ رضى الله عنه قَالَ جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ دُلَّنِي عَلَى عَمَلٍ أَعْمَلُهُ يُدْنِينِي مِنْ الْجَنَّةِ وَيُبَاعِدُنِي مِنْ النَّارِ قَالَ: «تَعْبُدُ اللهَ لَا تُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا وَتُقِيمُ الصَّلَاةَ وَتُؤْتِي الزَّكَاةَ وَتَصِلُ ذَا رَحِمِكَ فَلَمَّا أَدْبَرَ قَالَ رَسُولُ اللهُ صلى الله عليه وسلم إِنْ تَمَسَّكَ بِمَا أُمِرَ بِهِ دَخَلَ الْجَنَّةَ»
“আবূ আয়্যুব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বলল: হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে এমন কোনো আমলের কথা বলুন যা আমাকে জান্নাতের নিকটবর্তী এবং জাহান্নাম থেকে দূরে রাখবে। তিনি বললেন: আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাঁর সাথে কাউকে অংশীদার সাব্যস্ত করবে না। সালাত কায়েম কর, যাকাত আদায় কর, আর আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখ। যখন ঐ লোক ফিরে যেতে লাগল, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তাকে যা করতে বলা হল, যদি সে এর ওপর আমল করে তাহলে সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে[8]।

সাত-তাহাজ্জুদ আদায়কারী, রোজা পালনকারী ও অন্যকে খাদ্য দানকারী:
 মনে রাখবে, চরিত্রবান, তাহাজ্জুদগুজার, অধিক পরিমাণে নফল রোযা আদায়কারী ও অন্যকে খাদ্য দানকারী জান্নাতে যাবে। এ ধরনের লোকদের জন্য জান্নাতে বিশেষ ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। প্রমাণ-
عَنْ عَلِيٍّ رضى الله عنه قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «إِنَّ فِي الْجَنَّةِ لَغُرَفًا تُرَى ظُهُورُهَا مِنْ بُطُونِهَا وَبُطُونُهَا مِنْ ظُهُورِهَا فَقَامَ أَعْرَابِيٌّ فَقَالَ لِمَنْ هِيَ يَا رَسُولَ اللهُ؟ قَالَ هي لِمَنْ أَطَابَ الْكَلَامَ وَأَطْعَمَ الطَّعَامَ وَأَدَامَ الصِّيَامَ وَصَلَّى لِلهِ بِاللَّيْلِ وَالنَّاسُ نِيَامٌ»
“আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: জান্নাতে এমন কিছু ঘর আছে যার ভিতর থেকে বাহিরের সব কিছু দেখা যাবে। আবার বাহির থেকে ভিতরের সব কিছু দেখা যাবে। এক বেদুইন ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ! ঐ ঘর কার জন্য? তিনি বললেন: ঐ ব্যক্তির জন্য যে ভাল ও নরম কথা, বলে, অন্যকে আহার করায়, অধিক পরিমাণে নফল রোযা রাখে, আর যখন লোকেরা আরামে নিদ্রারত থাকে তখন উঠে সে সালাত আদায় করে[9]।”

আট:- ন্যায় পরায়ণ বাদশাহ জান্নাতে যাবে:-
ন্যায়পরায়ণ বাদশাহ, অপরের প্রতি অনুগ্রহকারী, নরম অন্তর, কারো নিকট কোন কিছু চায়না এমন ব্যক্তিও জান্নাতে যাবে।
عَنْ عِيَاضِ بْنِ حِمَارٍ الْمُجَاشِعِيِّ رضى الله عنه أَنَّ رَسُولَ اللهُ صلى الله عليه وسلم قال: «ذَاتَ يَوْمٍ فِي خُطْبَتِهِ وَأَهْلُ الْجَنَّةِ ثَلَاثَةٌ ذُو سُلْطَانٍ مُقْسِطٌ مُتَصَدِّقٌ مُوَفَّقٌ وَرَجُلٌ رَحِيمٌ رَقِيقُ الْقَلْبِ لِكُلِّ ذِي قُرْبَى وَمُسْلِمٍ وَعَفِيفٌ مُتَعَفِّفٌ ذُو عِيَالٍ»
“ইয়াদ্ব ইবন হিমার মাজাশে‘য়ী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: তিন প্রকারের লোক জান্নাতে যাবে। এক- ন্যায়পরায়ণ বাদশাহ, সত্যবাদী, নেক আমলকারী। দুই- ঐ ব্যক্তি যে প্রত্যেক আত্মীয়ের সাথে এবং প্রত্যেক মুসলমানের সাথে দয়া করে। তিন-ঐ ব্যক্তি যে লজ্জা স্থানকে সংরক্ষণ করে এবং বিনা প্রয়োজনে কারো নিকট কোন কিছু চায় না[10]।

যদি রাজা বাদশার ন্যায় বিচার করে, তাহলে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যদি অন্যায় করে, তাহলে তাদের জন্য জাহান্নাম অবধারিত। সুতরাং ক্ষমতাশীলদের প্রতি দাওয়াত থাকল, তারা যেন প্রজাদের প্রতি কোন প্রকার অন্যায়-অনাচার ও জুলুম অত্যাচার না করে।

আত্মীয় স্বজনদের সাথে ভালো ব্যবহার করা একটি মহৎ গুন। কিন্তু দুঃখের বিষয় বর্তমানে আমরা আত্মীয় স্বজনদের সাথে দুর্ব্যবহার করে থাকি। আত্মীয় স্বজনদের খোজ খবর নেই না।

মানুষের কাছে হাত না পাতা খুবই জরুরি। বর্তমানে দেখা যায় ভিক্ষা ভিত্তি একটি পেশা হয়ে দাড়িয়েছে। যাদের অভাব তারাও চায় আবার যাদের অভাব নাই তারাও চায়। কিন্তু তারপরও কিছু লোক আছে, যারা মানুষের কাছে হাত পাতে না। তারা লজ্জার কারণে ঘরে বসে কষ্ট করে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত। 

নয়- আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূল এবং দ্বীনের প্রতি সন্তুষ্টি জ্ঞাপন
আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনায় আনন্দ অনুভবকারী, ইসলামকে সন্তুষ্ট চিত্তে স্বীয় দ্বীন হিসেবে বিশ্বাসকারীও জান্নাতে যাবে।
عَنْ اَبِيْ سَعِيدٍ الْخُدْرِيَّ رضى الله عنه أَنَّ رَسُولَ اللهُ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «مَنْ قَالَ رَضِيتُ بِاللهُ رَبًّا وَبِالْإِسْلَامِ دِينًا وَبِمُحَمَّدٍ رَسُولًا وَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ»
“আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি বলে যে আল্লাহকে রব হিসেবে, ইসলামকে দ্বীন হিসেবে এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে নবী হিসেবে পেয়ে আমি সন্তুষ্ট। তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে[11]।

দশ:- দুই বা দুইয়ের অধিক কন্যাকে লালন-পালন করা:-
দুই বা দুইয়ের অধিক কন্যাকে লালন-পালন করে সু-শিক্ষা দানকারী এবং বালেগা হওয়ার পর তাদেরকে সু-পাত্রে পাত্রস্থকারী ব্যক্তিও জান্নাতি হবে। প্রমাণ-
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رضى الله عنه قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهُ صلى الله عليه وسلم: «مَنْ عَالَ جَارِيَتَيْنِ حَتَّى تَبْلُغَا جَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَنَا وَهُوَ وَضَمَّ أَصَابِعَهُ »
“আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি দুইজন কন্যাকে তাদের প্রাপ্তবয়স্কা হওয়া পর্যন্ত লালন-পালন করল, কিয়ামতের দিন আমি ও ঐ ব্যক্তি এক সাথে উপস্থিত হব। একথা বলে তিনি তাঁর দুই আঙ্গুলকে একত্রিত করে দেখালেন (যে এভাবে)[12]।

এগার- ওযুর পর দুই রাকাআত নফল সালাত (তাহিয়্যাতুল ওযু) রীতিমত আদায়কারীও জান্নাতি হবে।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رضى الله عنه قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم لِبِلَالٍ عِنْدَ صَلَاةِ الْغَدَاةِ «يَا بِلَالُ حَدِّثْنِي بِأَرْجَى عَمَلٍ عَمِلْتَهُ فِي الْإِسْلَامِ منفعة فاني فَإِنِّي سَمِعْتُ اللليلة خشف نَعْلَيْكَ بَيْنَ يَدَيَّ فِي الْجَنَّةِ » قَالَ بلال مَا عَمِلْتُ عَمَلًا أَرْجَى عِنْدِي منفعة من أَنِّي لَمْ أَتَطَهَّرْ طَهُورًا تَامًّا فِي سَاعَةِ مِنْ لَيْلٍ أَوْ نَهَارٍ إِلَّا صَلَّيْتُ بِذَلِكَ الطُّهُورِ مَا كُتِبَ لِي أَنْ أُصَلِّيَ
“আবু হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন ফজরের নামাযের পর বেলাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে জিজ্ঞেস করলেন, হে বেলাল! ইসলাম গ্রহণের পর তোমার এমন কি আমল আছে যার বিনিময়ে তুমি পুরস্কৃত হওয়ার আশা রাখ? কেননা আজ রাতে আমি জান্নাতে আমার সামনে তোমার চলার শব্দ পেয়েছি। বেলাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন: আমি এর চেয়ে অধিক কোন আমল তো দেখছি না যে, দিনে বা রাতে যখনই আমি ওযু করি তখনই যতটুকু আল্লাহ তাওফিক দেন ততটুকু নফল সালাত আমি আদায় করি[13]। অপর একটি হাদিসে বর্ণিত-
عن عقبة بن عامر رضى الله عنه قال كانت علينا رعاية الإبل فجاءت نوبتي فروحتها بعشي فأدركت رسول الله صلى الله عليه وسلم قائما يحدث الناس فأدركت من قوله « ما من مسلم يتوصأ فيحسن وضوءه ثم يقوم فيصلى ركعتين مقبل عليهما بقلبه و وجهه إلا وجبت له الجنة »
“উকবা ইবনে আমের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, আমাদের উপর দায়িত্ব ছিল উট চরাবার। যখন আমার পালা আসল তখন আমি এক বিকালে সেগুলো ছেড়ে আসলাম। তখন আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখলাম যে তিনি মানুষদের নিয়ে কথা বলছেন, তখন তার যে কথা আমি ধারণ করতে পেরেছি তার মধ্যে ছিল, “তোমাদের যে কেউ ওযু করল, আর সে তার ওযু সুন্দর করে সম্পন্ন করে, তারপর দুই রাকাত তাহিয়্যাতুল অজুর দুই রাকাত সালাত ভালোভাবে আদায় করল, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে[14]।”

বার- যে নারীর মধ্যে হাদিস বর্ণিত পাঁচটি গুণ পাওয়া যাবে:-
এক-যে নারী সময় মত যথাযথ সালাত আদায় করে। দুই- যে নারী তার স্বামীর অনুগত স্ত্রী হয়। তিন- যে নারী রমযান মাসের রোজা পালন করে। চার-যে নারী তার লজ্জা-স্থানের হেফাজত করে। সে জান্নাতের যে কোন দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে।
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رضى الله عنه قال: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : «إِذَا صَلَّتِ الْمَرْأَةُ خَمْسَهَا ، وَصَامَتْ شَهْرَهَا ، وَحَصَنَتْ فَرْجَهَا ، وَأَطَاعَتْ بَعْلَهَا قِيْلَ لَهَا اَدْخُلِيْ الْجَنَّةَ مِنْ أَيِّ أَبْوَابِ الْجَنَّةِ شِئْتِ»
“আবু হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে মহিলা পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করে, রমযান মাসে রোযা রাখে, স্বীয় লজ্জা-স্থান সংরক্ষণ করে, স্বীয় স্বামীর অনুগত থাকে, কিয়ামতের দিন তাকে বলা হবে যে, জান্নাতের যে দরজা দিয়ে খুশি তুমি জান্নাতে প্রবেশ কর[15]।

তের- শহীদ, নবজাত শিশু ও জীবন্ত প্রোথিত সন্তান:-
আম্বিয়া, শহীদ, মৃত্যুবরণকারী ঈমানদারদের নবজাতক শিশু এবং জীবন্ত প্রোথিত সন্তান (জাহিলিয়াতের যুগে যা করা হত) তারা জান্নাতি হবে।
حَسْنَاءُ بِنْتُ مُعَاوِيَةَ رضي الله عنها قَالَتْ حَدَّثَنَا عَمِّي قَالَ قُلْتُ لِلنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم مَنْ فِي الْجَنَّةِ؟ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم :«وَالشَّهِيدُ فِي الْجَنَّةِ وَالْمَوْلُودُ فِي الْجَنَّةِ وَالْوَئِيدُ فِي الْجَنَّةِ»
“হাসনা বিনতে মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমাকে আমার চাচা এ হাদিস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করেছি যে, কোন ধরনের লোকেরা জান্নাতি হবে? তিনি বললেন: শহীদরা জান্নাতি। মৃত্যুবরণকারী নবজাতক শিশু জান্নাতি। (জাহিলিয়াতের যুগে) জীবন্ত প্রোথিত শিশু জান্নাতি[16]।”

চৌদ্দ-আল্লাহর পথের সৈনিক:
আল্লাহর পথে জিহাদকারী জান্নাতি হবে। আল্লাহর পথে জিহাদ করতে গিয়ে শহীদ হলে, সে অবশ্যই জান্নাতি। প্রমাণ-
عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ رضى الله عنه عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ:«مَنْ قَاتَلَ فِي سَبِيلِ اللهُ مِنْ رَجُلٍ مُسْلِمٍ فُوَاقَ نَاقَةٍ وَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ »
“মু‘আয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে ততক্ষণ পর্যন্ত জিহাদ করেছে যতক্ষণ কোনো উটের দুধ দোহন করতে সময় লাগে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব[17]।

পনের- মুত্তাকী এবং চরিত্রবান লোক:
মুত্তাকী এবং চরিত্রবান লোক জান্নাতে যাবে। অধিকাংশ মানুষকে তার তাকওয়া ও সুন্দর চরিত্র জান্নাতে প্রবেশ করাবে। আর অধিকাংশ মানুষকে তার মুখ ও লজ্জা-স্থান জাহান্নামে প্রবেশ করাবে।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رضى الله عنه قَالَ سُئِلَ رَسُولُ اللهُ صلى الله عليه وسلم عَنْ أَكْثَرِ مَا يُدْخِلُ النَّاسَ الْجَنَّةَ فَقَالَ: «تَقْوَى اللهُ وَحُسْنُ الْخُلُقِ وَسُئِلَ عَنْ أَكْثَرِ مَا يُدْخِلُ النَّاسَ النَّارَ فَقَالَ الْفَمُ وَالْفَرْجُ »
“আবু হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হল কোন আমলের কারণে সর্বাধিক লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে? তিনি বললেন: তাকওয়া (আল্লাহ ভীতি) ও উত্তম চরিত্র[18]।

ষোল- ইয়াতীমের লালন-পালন:-
ইয়াতীমের লালন পালনকারী জান্নাতি হবে। শুধু তাই না ইয়াতিমের লালন-পালনকারী জান্নাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে থাকবে। তাই আমাদের উচিত ইয়াতিমকে সাহায্য করা।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رضى الله عنه قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهُ صلى الله عليه وسلم«كَافِلُ الْيَتِيمِ لَهُ أَوْ لِغَيْرِهِ أَنَا وَهُوَ كَهَاتَيْنِ فِي الْجَنَّةِ وَأَشَارَ مَالِكٌ بِالسَّبَّابَةِ وَالْوُسْطَى »
“আবু হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ইয়াতীমের লালন পালনকারী-ইয়াতীম তার আত্মীয় হোক আর অনাত্মীয়- ও আমি জান্নাতে এ দুই আঙ্গুলের ন্যায় এ বলে তিনি তাঁর দুই আঙ্গুলকে একত্রিত করে দেখালেন যে এভাবে এক সাথে থাকব। (হাদিসের বর্ণনাকারী) ইমাম মালেক (রহঃ) শাহাদাত ও মধ্যমাঙ্গুলির প্রতি ইশারা করে দেখিয়েছেন[19]।
عَنْ سهل رضى الله عنه قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهُ صلى الله عليه وسلم: «أنا وكَافِلُ الْيَتِيمِ في الجنة هكذا ِ وَأَشَارَ بِالسَّبَّابَةِ وَالْوُسْطَى و فرج بينهما شيئا »
সাহাল রাদিয়াল্লাহ তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি এবং ইয়াতিমকে লালন-পালনকারী ব্যক্তি জান্নাতে কাছাকাছি থাকব। এবং তার শাহাদাত অঙ্গুলি এবং মধ্যমা আঙ্গুলীদ্বয় একত্রিত করে ইঙ্গিত করলেন এবং দুইয়ের মাঝে একটু ফাঁক করলেন[20]।

সতের- হজ্জে মাবরুরের বিনিময় জান্নাত:
হজ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। আল্লাহ তা‘আলা হজের বিনিময় জান্নাতের ঘোষণা দিয়েছেন। যার হজ্জ কবুল হবে সে অবশ্যই জান্নাতি হবে।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رضى الله عنه قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهُ صلى الله عليه وسلم: «الْعُمْرَةُ إِلَى الْعُمْرَةِ كَفَّارَةٌ لِمَا بَيْنَهُمَا وَالْحَجُّ الْمَبْرُورُ لَيْسَ لَهُ جَزَاءٌ إِلَّا الْجَنَّةُ »
“আবু হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন; রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “এক ওমরা থেকে অপর ওমরার মাঝে যে পাপ করা হয়, পরবর্তী ওমরা তার জন্য কাফফারা। আর কবুল হজ্জের একমাত্র প্রতিদান হল জান্নাত[21]।”

আঠারো- মসজিদ নির্মাণ করা:
মসজিদ নির্মাণকারী জান্নাতি হবে, যে ব্যক্তি মসজিদ নির্মাণ করবে, আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করবেন। প্রমাণ-
عَنْ عُثْمَانَ بْنَ عَفَّانَ رضى الله عنه قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللهُ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ «مَنْ بَنَى مَسْجِدًا لِلهِ بَنَى اللهُ لَهُ فِي الْجَنَّةِ مِثْلَهُ»
“ওসমান ইবন আফ্ফান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি তিনি বলেন: যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে একটি মসজিদ বানাবে আল্লাহ তার জন্য অনুরূপ একটি ঘর জান্নাতে নির্মাণ করবেন[22]।

উনিশ- লজ্জা-স্থান ও জিহ্বার হেফাজত করা:
লজ্জা-স্থান ও জিহ্বা সংরক্ষণকারী জান্নাতি হবে। লজ্জা-স্থান ও জিহ্বার হেফাজত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ দুটির কারণেই একজন মানুষের যাবতীয় বিপদ ও সব মুসিবত।
عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ رضى الله عنه قَالَ قَالَ رَسُولِ اللهُ صلى الله عليه وسلم : «مَنْ يَضْمَنْ لِي مَا بَيْنَ لَحْيَيْهِ وَمَا بَيْنَ رِجْلَيْهِ أَضْمَنْ لَهُ الْجَنَّةَ»
“সাহাল ইবন সা‘দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি তার দাড়ি ও গোঁফের মধ্যবর্তী স্থান (মুখ) এবং তার উভয় পায়ের মধ্যবর্তী স্থান (লজ্জা স্থান) সংরক্ষণের জিম্মা গ্রহণ করবে আমি তার জন্য জান্নাতের জিম্মা গ্রহণ করব[23]।

বিশ- প্রতিবেশীর সাতে ভালো ব্যবহার করা:
প্রতিবেশীকে কষ্ট-দাতা জাহান্নামী হবে আর প্রতিবেশীর প্রতি উত্তম আচরণকারী জান্নাতি হবে। যারা জান্নাতে যেতে চায় তারা যেন তার কোন প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رضى الله عنه قَالَ قَالَ رَجُلٌ يَا رَسُولَ اللهُ إِنَّ فُلَانَةَ تَصُوْمُ النَّهَارَ وَتَقُوْمُ اللَّيْلَ وَتُؤْذِي جِيرَانَهَا بِلِسَانِهَا قَالَ «هِيَ فِي النَّارِ» قَالُوْا يَا رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم فُلَانَةٌ تُصَلِّيْ الْمَكْتُوْبَةَ وَتَصَدَّقَ بِالْأَثْوَارِ مِنْ الْأَقِطِ وَلَا تُؤْذِي جِيرَانَهَا قَالَ « هِيَ فِي الْجَنَّةِ »
“আবু হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! অমুক মহিলা দিনে রোযা রাখে, রাতে তাহাজ্জুদ সালাত পড়ে, কিন্তু সে তার প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়। রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: সে জাহান্নামী। অতঃপর সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করল যে, অন্য এক মহিলা শুধু ফরয সালাত আদায় করে, আর পনিরের এক টুকরা করে তা দান করে। কিন্তু সে তার প্রতিবেশীকে কোন কষ্ট দেয় না। তিনি বললেন: সে জান্নাতি[24]।

সুতরাং, যারা মানুষকে কষ্ট দেয় তাদের নফল ইবাদত কোন কাজে আসবে না। তাদের সালাত ও সাওম তাদেরকে জাহান্নামের আগুন হতে বাচাতে পারবে না। জাহান্নামের আগুন থেকে বাচতে হলে এবং জান্নাতে প্রবেশ করতে হলে, তাকে অবশ্যই মানুষকে কষ্ট দেয়া ছাড়তে হবে।

একুশ- আল্লাহর নিরানব্বই নাম মুখস্থ ও হেফাজত করা:
আল্লাহর নিরানব্বই নাম মুখস্থ-কারী জান্নাতি হবে। অর্থাৎ আল্লাহর নামসমূহ জানা এবং নামসমূহের উপর যথাযথ ঈমান আনা এবং বাস্তব জীবনে নিজের মধ্যে আল্লাহর নামের বাস্তবায়ন ঘটানো। যে ব্যক্তি আল্লাহর নিরানব্বইটি নামের যথার্থটা রক্ষা করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولَ اللهُ صلى الله عليه وسلم«إِنَّ لِلهِ تِسْعَةً وَتِسْعِينَ اسْمًا مِائَةً إِلَّا وَاحِدًا مَنْ أَحْصَاهَا دَخَلَ الْجَنَّةَ »
“আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আল্লাহর এক কম একশত অর্থাৎ: নিরানব্বই নাম আছে, যে ব্যক্তি তা মুখস্থ করবে সে জান্নাতে যাবে[25]।

বাইশ- কুরআনের হেফাজত ও হেফজ করা:
কুরআনের সংরক্ষণকারী জান্নাতে যাবে। যারা কুরআন পড়ে আল্লাহ তা‘আলা তাদের জান্নাতের উচ্চ মর্যাদা দান করবে।
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ رضى الله عنه قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهُ صلى الله عليه وسلم «يُقَالُ لِصَاحِبِ الْقُرْآنِ إِذَا دَخَلَ الْجَنَّةَ اقْرَأْ وَاصْعَدْ فَيَقْرَأُ وَيَصْعَدُ بِكُلِّ آيَةٍ دَرَجَةً حَتَّى يَقْرَأَ آخِرَ شَيْءٍ مَعَهُ»
আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: কুরআন সংরক্ষণকারী যখন জান্নাতে যাবে তখন তাকে বলা হবে কুরআন পাঠ করতে থাক এবং এক এক স্তর করে আরোহণ করতে থাক। তখন সে প্রত্যেক আয়াত পাঠের মাধ্যমে একেক স্তর করে আরোহণ করবে। এমনকি তার সংরক্ষিত (মুখস্থ কৃত) সর্বশেষ আয়াত পাঠ করে সে তার নির্দিষ্ট স্থানে আরোহণ করবে এবং সেটাই তার ঠিকানা হবে[26]।

তেইশ- সালাম বিনিময় করা:
বেশি বেশি সালাম বিনিময়কারী জান্নাতি হবে। সালাম মুসলিমদের গুরুত্বপূর্ণ সম্ভাষণ। সালামের দ্বারা মানুষের মধ্যে মহব্বত বৃদ্ধি পায় সু-সম্পর্ক ঘড়ে উঠে এবং সালাম জান্নাতে প্রবেশের কারণ হয়ে থাকে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের বেশি বেশি করে সালাম দেয়ার তাওফিক দান করুন। প্রমাণ-
عَنْ عَبْدِ اللهُ بْنِ عَمْرٍو رضى الله عنه قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهُ صلى الله عليه وسلم: «اعْبُدُوا الرَّحْمَنَ وَأَطْعِمُوا الطَّعَامَ وَأَفْشُوا السَّلَامَ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ بِسَلَامٍ »
“আবদুল্লাহ ইবন সালাম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: হে মানব মণ্ডলী সালাম বিনিময় কর। মানুষকে আহার করাও, যখন মানুষ ঘুমন্ত থাকে তখন সালাত পড়। তাহলে নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করবে[27]।
অপর হাদিস, আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
 «لا تدخلون الجنة حتى تؤمنوا، ولا تؤمنوا حتى تحابوا، أوَلا أدلّكم على شيء إذا فعلتموه تحاببتم؟ أفشوا السلام بينكم»
“তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি ঈমানদার না হবে, আর ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা ঈমানদার হবে না যতক্ষণ না তোমরা একে অপরকে ভালো না বাসবে। আর আমি কি তোমাদের এমন একটি জিনিস বাতিয়ে দেব, যা করলে তোমরা একে অপরকে ভালবাসবে? তোমরা তোমাদের নিজেদের মধ্যে সালামের প্রসার কর”।[28]

চব্বিশ- কোনো রুগীকে দেখতে যাওয়া:
 রুগীকে দেখাশোনা করা এবং কোনো রুগীর খোজ খবর নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো রুগী দেখতে যাওয়া ব্যক্তিকে জান্নাতের সু-সংবাদ দেন। প্রমাণ-
عَنْ ثَوْبَانَ رضى الله عنه مَوْلَى رَسُولِ اللهُ صلى الله عليه وسلم قَال قَال رَسُولُ اللهُ صلى الله عليه وسلم«عَائِدُ الْمَرِيضِ فِي مَخْرَفَةِ الْجَنَّةِ حَتَّى يَرْجِعَ »
“সাওবান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, রুগীর দেখাশোনাকারী যতক্ষণ পর্যন্ত ঘরে ফিরে না আসে, ততক্ষণ পর্যন্ত সে জান্নাতের বাগানে থাকে[29]।

পঁচিশ- দ্বীনি ইলম শিক্ষালাভকারী:
আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে দ্বীনের জ্ঞান অন্বেষণ উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হয়ে, কেউ পথিমধ্যে মারা গেলে, আল্লাহ তা‘আলা তাকে জান্নাত দান করবে। প্রমাণ-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رضى الله عنه اَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ « مَنْ سَلَكَ طَرِيقًا يَلْتَمِسُ فِيهِ عِلْمًا سَهَّلَ اللهُ لَهُ بِهِ طَرِيقًا إِلَى الْجَنَّةِ »
“আবু হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি দ্বীনি ইলম অর্জনের জন্য পথ চলে আল্লাহ্‌ তার জন্য জান্নাতের পথ সহজ করে দেন[30]।

ছাব্বিশ-ওজুর পর কালিমায়ে শাহাদাত পড়া:
ভালো করে ওযু করার পর যে ব্যক্তি কালিমায়ে শাহাদাত পাঠ করবে, সে জান্নাতের আটটি দরজার মধ্য হতে যে কোন দরজা দিয়েই জান্নাতে প্রবেশ করবে। প্রমাণ-
عَنْ عُمَرَ بْنِ الخَطَّبِ رضي الله عنهما قَالَ قَالَ رَسُوْلُ الله: «مَا مِنْكُمْ مِنْ أَحَدٍ يَتَوَضَّأُ فَيُبْلِغُ أَوْ فَيُسْبِغُ الْوَضُوءَ ثُمَّ يَقُولُ أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُ اللهُ وَرَسُولُهُ إِلَّا فُتِحَتْ لَهُ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ الثَّمَانِيَةُ يَدْخُلُ مِنْ أَيِّهَا شَاءَ » (رواه مسلم)
অর্থ, ওমর ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি ভালো করে ওযু করে এবং ওযুর পর এ দুআ পড়ে, اَشْهَدُ أَنْ لَّا اِلَهَ اِلَّا اللهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ অর্থ, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন কোন সত্য ইলাহ নাই এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা এবং রাসূল। তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেয়া হবে। সে তখন যেটি দিয়ে খুশি সেটি দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে।[31]

সাতাশ- সকাল-সন্ধ্যা সায়্যেদুল ইস্তেগফার পাঠ করা:
যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যা সাইয়্যেদুল ইস্তেগফার পাঠ করবে এবং সেদিন বা রাতে মারা জাবে আল্লাহ তা‘আলা তাকে জান্নাত দান করবে। প্রমাণ-
عَنْ شَدَّادِ بْنِ أَوْسٍ رضى الله عنه قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «سَيِّدُ الِاسْتِغْفَارِ أَنْ تَقُولَ اللهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ قَالَ وَمَنْ قَالَهَا مِنْ النَّهَارِ مُوقِنًا بِهَا فَمَاتَ مِنْ يَوْمِهِ قَبْلَ أَنْ يُمْسِيَ فَهُوَ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ وَمَنْ قَالَهَا مِنْ اللَّيْلِ وَهُوَ مُوقِنٌ بِهَا فَمَاتَ قَبْلَ أَنْ يُصْبِحَ فَهُوَ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ»
“সাদ্দাদ ইবন আওস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: সায়্যেদুল ইস্তেগফার হল “আল্লাহুম্মা আন্তা রাব্বী লা ইলাহা ইল্লা আন্তা খালাক্বতানী, ওয়া আনা ‘আবদুকা ওয়া আনা ‘আলা ‘আহদিকা, ওয়া ওয়া‘দিকা মাস্তাতু‘তু, আ‘উজুবিকা মিন সাররি মা সানা‘তু, আবুউলাকা বিনি‘মাতিকা ‘আলাইয়্যা, আবুউ বিজানবী, ফাগফিরলী ফাইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজুনুবা ইল্লা আন্তা।

“হে আল্লাহ! তুমি আমার প্রভু, তুমি ব্যতীত ইবাদতের যোগ্য আর কোন উপাস্য নেই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ। আর আমি হচ্ছি তোমার বান্দা, আর আমি আমার সাধ্যমত তোমার প্রতিশ্রুতিতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্টটা থেকে তোমার আশ্রয় কামনা করছি। আমার প্রতি তোমার নেয়ামতের স্বীকৃতি প্রদান করছি। আর আমি আমার গুনাহ খাতা স্বীকার করছি। অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা কর, নিশ্চয় তুমি ব্যতীত গুনাহ মাফকারী আর কেউ নেই। যে ব্যক্তি দৃঢ়বিশ্বাসসহ এ দো‘আ দিনের বেলা পাঠ করে, আর সন্ধার পূর্বে মৃত্যুবরণ করে সে জান্নাতি। আর যে ব্যক্তি রাতের বেলা একীনসহ এ দু’আ পাঠ করে এবং সকাল হওয়ার পূর্বে মৃত্যুবরণ করে সেও জান্নাতি[32]।

আটাশ- অন্ধ ব্যক্তি যে ধৈর্য তার অন্ধত্বের উপর ধৈর্য ধারণ করে:
যার চোখ অন্ধ হয়ে গেল, আর সে তাতে ধৈর্যধারণ করল, তাকে আল্লাহ তা‘আলা তার অন্ধত্বের বিনিময়ে জান্নাত দান করবে। প্রমাণ-
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ  قَالَ سَمِعْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ «إِنَّ اللهَ قَالَ إِذَا ابْتَلَيْتُ عَبْدِي بِحَبِيبَتَيْهِ فَصَبَرَ عَوَّضْتُهُ مِنْهُمَا الْجَنَّةَ »
“আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি তিনি বলেন: আল্লাহ বলেন: আমি যখন আমার কোনো প্রিয় বান্দাকে তার দুটি প্রিয় অঙ্গ (চোখ দ্বারা) পরীক্ষা করি, আর সে তাতে ধৈর্যধারণ করে তখন এর বিনিময়ে আমি তাকে জান্নাত দান করি[33]।

উনত্রিশ- পিতা-মাতার হক আদায় ও তাদের খেদমত করা:
পিতা-মাতার হক ও তাদের খেদমত করা খুবই জরুরী। আল্লাহ তা‘আলা তার নিজের হক আদায়ের পরেই পিতা-মাতার হককে বান্দার উপর ফরয করে দিয়েছেন। পিতা-মাতার হক আদায় করা দ্বারা একজন বান্দা জান্নাতে লাভ করবে এবং সে জান্নাতের দরজাসমূহ হতে যে কোন দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে। প্রমাণ-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رضى الله عنه عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ «رَغِمَ أَنْفُهُ رَغِمَ أَنْفُهُ رَغِمَ أَنْفُهُ مَنْ أَدْرَكَ أَبَوَيْهِ عِنْدَ الْكِبَرِ أَحَدَهُمَا أَوْ كِلَيْهِمَا فَلَمْ يَدْخُلْ الْجَنَّةَ »
“আবু হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন তিনি বলেন: ঐ ব্যক্তির নাক ধুলায় ধু-লুণ্ঠিত হোক, ঐ ব্যক্তির নাক ধুলায় ধু-লুণ্ঠিত হোক, ঐ ব্যক্তির নাক ধুলায় ধু-লুণ্ঠিত হোক, যে তার পিতা-মাতাকে বৃদ্ধ বয়সে পেল তাদের কোন একজনকে বা উভয়কে অথচ তাদের সন্তুষ্টি অর্জন করে জান্নাত লাভ করতে পারল না[34]।
অপর হাদিসে বর্ণিত-
قال أبو الدرداء سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول :« الوالد أوسط أبواب الجنةفإن شئت فأضع ذلك الباب أو احفظه »
আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, পিতা-মাতা হচ্ছে, জান্নাতের দরজা সমূহের মধ্যম দরজা। অতএব, তুমি ইচ্ছা করলে সেই দরজা নষ্ট কর বা সংরক্ষণ কর[35]।

ত্রিশ-কষ্টদায়ক বস্তু রাস্তা থেকে দূর করা:
যে ব্যক্তি মুসলমানদের চলাচলের পথ থেকে কোন কষ্টদায়ক বস্তু দূর করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। প্রমাণ-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رضى الله عنه أَنَّ رَسُولَ اللهُ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «إِنَّ الشَّجَرَةَ كَانَتْ تُؤْذِي الْمُسْلِمِينَ فَجَاءَ رَجُلٌ فَقَطَعَهَا فَدَخَلَ الْجَنَّةَ »
“আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: একটি গাছ মুসলমানদেরকে কষ্ট দিতেছিল। তখন একব্যক্তি এসে তা কেটে দিল। এর বিনিময়ে সে জান্নাত লাভ করল[36]।

একত্রিশ- রুগী ব্যক্তি স্বীয় রোগের উপর ধৈর্যধারণ করা:
রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যক্তি যখন রোগের কষ্টের উপর ধৈর্য ধারণ করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। পক্ষান্তরে যে অধৈর্য হবে, সে এমন সাওয়াব এ বিনিময়ের অধিকারী হবে না। প্রমাণ-
عَطَاءُ بْنُ أَبِي رَبَاحٍ رضى الله عنه قَالَ قَالَ لِي ابْنُ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَلَا أُرِيكَ امْرَأَةً مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ؟ قُلْتُ بَلَى، قَالَ هَذِهِ الْمَرْأَةُ السَّوْدَاءُ أَتَتْ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَتْ إِنِّي أُصْرَعُ وَإِنِّي أَتَكَشَّفُ فَادْعُ اللهَ لِي، قَالَ «إِنْ شِئْتِ صَبَرْتِ وَلَكِ الْجَنَّةُ، وَإِنْ شِئْتِ دَعَوْتُ اللهَ أَنْ يُعَافِيَكِ » فَقَالَتْ أَصْبِرُ فَقَالَتْ إِنِّي أَتَكَشَّفُ، فَادْعُ اللهَ لِي أَنْ لَا أَتَكَشَّفَ، فَدَعَا لَهَا
“আতা ইবন রাবাহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আমাকে বলেছেন: আমি কি তোমাকে একজন জান্নাতি নারী দেখাব না? আমি বললাম কেন নয়। তিনি এক মহিলার প্রতি ইঙ্গিত করে বললেন: গতকাল যে মহিলাটি, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বলল: যে আমি মৃগী রুগী, আর এ রাগে আক্রান্ত হলে আমার সতর খুলে যায়। তাই আপনি কি আমার জন্য আল্লাহর নিকট দো‘আ করবেন যেন আল্লাহ আমাকে সুস্থ করেন? তিনি বললেন: যদি তুমি চাও তাহলে ধৈর্য ধর আর এর বিনিময়ে তুমি জান্নাত লাভ করবে। আর যদি তুমি চাও তাহলে আমি তোমার জন্য দো‘আ করি। তিনি তোমাকে সুস্থ করে দিবেন তখন ঐ মহিলা বলল: আমি ধৈর্য ধারণ করব। কিন্তু সাথে এ আবেদনও করছি যে এ রোগে আক্রান্ত হলে আমার সতর খুলে যায়। আপনি আমার জন্য দো‘আ করুন হাতে আহার সতর না খুলে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জন্য এ দো‘আ করলেন[37]।

বত্রিশ- নবী, শহীদ, সিদ্দীক ও নবজাত শিশু:
নবী, শহীদ, সিদ্দীক, মৃত্যুবরণকারী নবজাতক শিশু, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে মুসলিম ভাইয়ের সাথে সাক্ষাতকারী জান্নাতি হবে।

তেত্রিশ- স্বামীর ভক্ত, অধিক সন্তান জন্মদানে কষ্ট সহ্যকারী এবং স্বামীর নির্যাতনে ধৈর্য-ধারণকারিণী:
স্বীয় স্বামীর ভক্ত, অধিক সন্তান জন্মদানে কষ্ট সহ্যকারী এবং স্বামীর নির্যাতনে ধৈর্য-ধারণকারিণী মহিলা জান্নাতি হবে।
عَنْ كَعْبِ بْنِ عُجْرَةَ رضى الله عنه قال: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : «أَلَا أُخْبِرُكُمْ بِرِجَالِكُمْ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ؟ النَّبِيُّ فِيْ الْجَنَّةِ، وَالصِّدِّيْقُ فِيْ الْجَنَّةِ ، وَالشَّهِيْدُ فِيْ الْجَنَّةِ ، وَالرَّجُلُ يَزُوْرُ أَخَاهُ فِيْ اللهِ فِيْ جَانِبِ الْمُصِرِّ فِيْ الْجَنَّةِ . أَلَا أُخْبِرُكُمْ بِنِسِائِكُمْ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ؟ اَلْوَلُوْدُ الْوَدُوْدُ الَّتِيْ إِذَا ظَلَمَتْ هِيْ أَوْ ظُلِمَتْ قَالَتْ : هَذِهِ يَدِيْ فِيْ يَدِكَ ، لَا أَذُوْقُ غَمَضًا حَتَّى تَرْضى»
“কা‘ব ইবন ওজরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আমি কি জান্নাতি পুরুষদের কথা তোমাদেরকে বলব না? নবী, শহীদ, সিদ্দীক, মৃত্যুবরণকারী নবজাতক শিশু, দূর থেকে স্বীয় মুসলিম ভাইকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে দেখতে আসে এমন ব্যক্তি জান্নাতি। (তিনি আরও বলেন) আমি কি তোমাদেরকে জান্নাতি মহিলাদের ব্যাপারে অবগত করাব না? স্বীয় স্বামী ভক্ত, অধিক সন্তান প্রসবে ধৈর্য-ধারণকারী, ঐ পবিত্রা নারী যে তার স্বামীর অত্যাচারে ধৈর্যধারণ করে বলে যে, আমার হাত তোমার হাতে, আমি ততক্ষণ পর্যন্ত ক্ষান্ত হবো না যতক্ষণ না তুমি আমার প্রতি সন্তুষ্ট হও[38]।

চৌত্রিশ- হারাম হালালের উপর বিশ্বাসকারী:
 শরীয়তে হালাল-কৃত বিষয়সমূহকে হালাল এবং হারাম-কৃত বিষয়সমূহকে হারাম বলে জানা এবং সে অনুযায়ী আমলকারীও জান্নাতি হবে।
عَنْ جَابِرٍ رضى الله عنه أَنَّ رَجُلًا سَأَلَ رَسُولَ اللهُ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ أَرَأَيْتَ إِذَا صَلَّيْتُ الصَّلَوَاتِ الْمَكْتُوبَاتِ وَصُمْتُ رَمَضَانَ وَأَحْلَلْتُ الْحَلَالَ وَحَرَّمْتُ الْحَرَامَ وَلَمْ أَزِدْ عَلَى ذَلِكَ شَيْئًا أَأَدْخُلُ الْجَنَّةَ قَالَ « نَعَمْ »
“জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করল ইয়া রাসূলুল্লাহ! যদি আমি ফরয সালাত আদায় করি। রমযানে সিয়াম পালন করি শরীয়তে হালাল-কৃত বিষয়সমূহকে হালাল বলে জানি এবং শরীয়তে হারাম-কৃত বিষয়সমূহকে হারাম বলে জানি। আর এর চেয়ে অধিক আর কোন কিছু না করি। তাহলে আমি জান্নাত পাব? তিনি বললেন: হ্যাঁ[39]।

পঁয়ত্রিশ- বাচ্চাদের মৃত্যুর উপর ধৈর্য ধারণকারিণী:
যে কোন বিপদে ধৈর্য ধারণ করার কোন বিকল্প নাই। তবে, কিছু কিছু বিপদ এমন আছে, যেগুলোর উপর ধৈর্য ধারণ করা খুবই কষ্টকর ও কঠিন। যে কারো বাচ্চা মারা যাওয়া। তারপরও যে ব্যক্তি এ ধরনের বিপদে ধৈর্য ধারণ করবে, তার জন্য রয়েছে, জান্নাত। যে ব্যক্তি দুইজন অপ্রাপ্ত বয়স্ক বাচ্চার মৃত্যুতে ধৈর্যধারণ করবে, আল্লাহ তা‘আলা তাকে জান্নাত দান করবে। প্রমাণ-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رضى الله عنه أَنَّ رَسُولَ اللهُ صلى الله عليه وسلم قَال: «لِنِسْوَةٍ مِنْ الْأَنْصَارِ لَا يَمُوتُ لِإِحْدَاكُنَّ ثَلَاثَةٌ مِنْ الْوَلَدِ فَتَحْتَسِبَهُ إِلَّا دَخَلَتْ الْجَنَّةَ فَقَالَتْ امْرَأَةٌ مِنْهُنَّ أَوْ اثْنَيْنِ يَا رَسُولَ اللهُ قَالَ أَوْ اثْنَيْنِ»
“আবু হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদল আনসারী মহিলাকে লক্ষ্য করে বললেন: তোমাদের মধ্যে যার তিনটি সন্তান মৃত্যুবরণ করে আর সে তাতে সাওয়াবের আশা নিয়ে ধৈর্যধারণ করে সে জান্নাতি হবে। তাদের মধ্যে এক মহিলা জিজ্ঞেস করল, ইয়া রাসূলুল্লাহ! যদি দুইজন মৃত্যুবরণ করে? তিনি বললেন: দুইজন মৃত্যুবরণ করলেও[40]।

ছত্রিশ- প্রত্যেক ফরয নামাযের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করা:
যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরয নামাযের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে, তার জান্নাতে প্রবেশে একমাত্র মৃত্যু ছাড়া আর কোনো বাধা থাকবে না। প্রমাণ-
عَنْ اَبِيْ اُمَامَةَ رضى الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «مَنْ قَرَاءَ آيَةَ الْكَرْسِيِّ دُبُرَ كُلِّ صَلَاةٍ مَكْتُوْبَةٍ لَمْ يَمْنَعْهُ مِنْ دُخُوْلِ الْجَنَّةِ اِلَّا اَنْ يَّمُوْتَ »
“আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরয নামাযের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে তার জন্য মৃত্যু ব্যতীত জান্নাতে যাওয়ার ব্যাপারে আর কোন বাধা নেই[41]।

সাতত্রিশ- “লা-হাওলা ওলা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ” বেশি বেশি করে পাঠ করা:
“লা-হাওলা ওলা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ” জান্নাতের খাজানাসমূহের একটি খাজানাহ। সুতরাং, আমাদের উচিত বেশি বেশি করে, “লা-হাওলা ওলা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ” পাঠ করা। প্রমাণ-
عَنْ أَبِي ذَرٍّ رضى الله عنه قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهُ صلى الله عليه وسلم: «أَلَا أَدُلُّكَ عَلَى كَنْزٍ مِنْ كُنُوزِ الْجَنَّةِ؟  قُلْتُ بَلَى يَا رَسُولَ اللهُ قَالَ لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللهُ »
“আবু যার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আমি কি তোমাদেরকে জান্নাতের খনি সম্পর্কে অবগত করাব না। আমি বললাম: ইয়া রাসূলুল্লাহ! অবশ্যই অবগত করাবেন, তিনি বললেন: লা-হাওলা ওলা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ (বলা)[42]।

আটত্রিশ- যে ব্যক্তি “সুবহানাল্লাহিল আযীম ওয়া বিহামদিহী” বেশি বেশি করে পাঠ করবে, তার জন্য জান্নাতে একটি খেজুর গাছ লাগানো হবে। 
প্রমাণ-
عَنْ جَابِرٍ بن عبد الله رضى الله عنه قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «مَنْ قَالَ سُبْحَانَ اللهُ الْعَظِيمِ وَبِحَمْدِهِ غُرِسَتْ لَهُ نَخْلَةٌ فِي الْجَنَّةِ »
“জাবের ইবন আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি “সুবহানাল্লাহিল আযীম ওয়া বিহামদিহি” (বড়ত্বের অধিকারী আল্লাহ তাঁর প্রশংসার সাথে পবিত্রতা বর্ণনা করছি) এ দো‘আ পাঠ করে, তার জন্য জান্নাতে একটি খেজুর গাছ লাগানো হয়[43]।

ঊনচল্লিশ-অন্যায়ভাবে নিহত ব্যক্তি:
 অন্যায়ভাবে বা নির্যাতিত হয়ে যদি কোন ব্যক্তি নিহত হয়, তাকে আল্লাহ তা‘আলা জান্নাত দান করবে। যেমন- কোন ব্যক্তি তার সম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে অন্যায়ভাবে নিহত হল, তাকেও জান্নাত দান করা হবে। প্রমাণ-
عَنْ عَبْدِ اللهُ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ رضى الله عنه أَنَّ رَسُولَ اللهُ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «مَنْ قُتِلَ دُونَ مَالِهِ مَظْلُومًا فَلَهُ الْجَنَّةُ »
“আবদুল্লাহ ইবন আমর ইবন আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি তার সম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে অন্যায়ভাবে নিহত হল সে জান্নাতি[44]।”

চল্লিশ- অনিচ্ছাকৃত গর্ভপাত হওয়াতে ধৈর্য-ধারণকারী মহিলা:
যে নারী অনিচ্ছাকৃত ও অকালে গর্ভপাত হওয়াতে ধৈর্য ধারণ করে, সে মহিলা জান্নাতে প্রবেশ করবে। কিয়ামতের দিন বাচ্চাটি তার মাকে টেনে জান্নাতে নিয়ে যাবে। প্রমাণ-
عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ رضى الله عنه عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ! إِنَّ السِّقْطَ لَيَجُرُّ أُمَّهُ بِسَرَرِهِ إِلَى الْجَنَّةِ إِذَا احْتَسَبَتْهُ »
“মু‘আয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন: ঐ সত্ত্বার কসম! যার হাতে আমার প্রাণ। অনিচ্ছাকৃত গর্ভপাতের মাধ্যমে ভূমিষ্ঠ হওয়া বাচ্চা, তার মায়ের নাভী ধরে টেনে টেনে জান্নাতে নিয়ে যাবে। তবে এ শর্তে যে ঐ মহিলা সওয়াবের আশায় তাতে ধৈর্যধারণ করেছিল[45]।

একচল্লিশ- ন্যায় বিচারকারী বিচারক জান্নাতে প্রবেশ করবে:
ন্যায় বিচার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মানবতার জন্য এটি একটি অনিবার্য ও বিকল্পহীন। যারা ন্যায় বিচার করবে, তারা দুনিয়া আখেরাতের উভয় জাহানের সফলতা ও কামিয়াবি অর্জন করবে। ন্যায় বিচারকারী বিচারকগণ জান্নাতে যাবে, পক্ষান্তরে যারা অন্যায় বিচার করে তারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে। প্রমাণ-
عَنْ بُرَيْدَةَ رضى الله عنه، قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : « قَاضِيَانِ فِيْ النَّارِ وَقَاضٍ فِيْ الْجَنَّةِ . قَاضٍ عَرَفَ الْحَقَّ فَقَضَى بِهِ فَهُوَ فِيْ الْجَنَّةِ، وَقَاضٍ عَرَفَ الْحَقَّ فَجَارَ مُتَعَمِّدًا اَوْ قَضَى بِغَيْرِ عِلْمٍ فَهُمَا فِيْ النَّارِ»
“বুরাইদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: দুইপ্রকারের বিচারক জাহান্নামী হবে। আর এক প্রকার জান্নাতি হবে। ঐ বিচারক যে সত্যকে বুঝেছে এবং ঐ অনুযায়ী বিচার করেছে সে জান্নাতি হবে। আর যে বিচারক সত্যকে বুঝেছে এবং জেনে বুঝে অন্যায়ভাবে বিচার করেছে এবং ঐ বিচারক যে, কোন যাচাই বাচাই ব্যতীত বিচার করেছে সেও জাহান্নামী হবে[46]।

বিয়াল্লিশ-অপর ভাইয়ের ইজ্জত রক্ষা করা:
প্রতিটি মুসলিমের দায়িত্ব হল, তার অপর ভাইয়ের সম্মান হানীর ব্যাপারে সতর্ক থাকা, যাতে কোনোক্রমেই অপর মুসলিম ভাইয়ের ইজ্জত সম্মানের উপর আঘাত না আসে। যে ব্যক্তি কোনো মুসলিম ভাইয়ের অনপুস্থিতিতে তার ইজ্জত রক্ষার ব্যাপারে ভূমিকা পালন করল, সে জান্নাতি হবে।
عَنْ أَسْمَاءَ بِنْتِ يَزِيدَ رضي الله عنها قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: « مَنْ ذَبَّ عَنْ لَحْمِ أَخِيهِ بِالْغِيبَةِ كَانَ حَقًّا عَلَى اللهُ أَنْ يُعْتِقَهُ مِنْ النَّارِ»
“আসমা বিনতে ইয়াযিদˆ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের অনুপস্থিতিতে তার অপমান থেকে তাকে রক্ষা করল তার ব্যাপারে আল্লাহর দায়িত্ব হল যে তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করা[47]।”

তেতাল্লিশ- ভিক্ষা না করা এবং মানুষের কাছে হাত না পাতা:
যে ব্যক্তি কারো নিকট কখনও হাত পাতে না, সে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে। ভিক্ষা বৃত্তি একটি ঘৃণিত ও নিম্নমানের পেশা। একে বারে বাধ্য না হলে কারোই এ পেশা অবলম্বন করা উচিত নয়। প্রমাণ-
عَنْ ثَوْبَانَ رضى الله عنه قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهُ صلى الله عليه وسلم:« مَنْ يَكْفُلُ لِي أَنْ لَا يَسْأَلَ النَّاسَ شَيْئًا وَأَتَكَفَّلُ لَهُ بِالْجَنَّةِ »
“সাওবান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি আমাকে এ বিষয়ে জিম্মাদারি দিবে যে, সে কারো নিকট কখনো হাত পাতবে না আমি তার জন্য জান্নাতের জিম্মাদার হব[48]।

চুয়াল্লিশ- রাগকে নিয়ন্ত্রণ করা:
রাগ দমনকারী ব্যক্তি জান্নাতি হবে। রাগী ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যদি জান্নাতে প্রবেশ করতে হয়, তাহলে তাকে অবশ্যই রাগ দমন করতে হবে। প্রমাণ-
عَنْ اَبِيْ الدَّرْدَاءِ رضى الله عنه قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: « لَا تَغْضَبْ وَلَكَ الْجَنَّةَ »
“আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: তুমি রাগ কর না তোমার জন্য জান্নাত[49]।

পঁয়তাল্লিশ- ঠাণ্ডার সময়ের দুই ওয়াক্ত সালাত আদায়কারী:
 আসর ও ফজরের সালাত নিয়মিত জামা‘আতের সাথে আদায়কারী ব্যক্তি জান্নাতি হবে। প্রমাণ-
عَنْ أَبِي بَكْرٍ بْنِ اَبِيْ مُوْسَى الْاَشْعَرِيِّ رضى الله عنه عَنْ أَبِيهِ أَنَّ رَسُولَ اللهُ صلى الله عليه وسلم قَالَ: « مَنْ صَلَّى الْبَرْدَيْنِ دَخَلَ الْجَنَّةَ » 
“আবু বকর ইবন আবূ মূসা আল-আশআরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি দুইটি ঠাণ্ডার সালাত (আসর ও ফজর) আদায় করে সে জান্নাতি হবে[50]।

ছেচল্লিশ- যোহরের সালাতের পূর্বে চার রাকা’আত সালাত আদায় করা:
যে ব্যক্তি যোহরের পূর্বে চার রাকা’আত সুন্নাত নিয়মিত আদায় করে সে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে।
عَنْ أُمِّ حَبِيبَةَ رضي الله عنها قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللهُ صلى الله عليه وسلم: «مَنْ صَلَّى قَبْلَ الظُّهْرِ أَرْبَعًا وَبَعْدَهَا أَرْبَعًا حَرَّمَهُ اللهُ عَلَى النَّارِ»
“উম্মে হাবীবা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি যোহরের পূর্বে চার রাকাআত সালাত ও তার পরে চার রাকাআত (নিয়মিত) আদায় করে তার ওপর আল্লাহ জাহান্নাম হারাম করেছেন[51]।”

সাতচল্লিশ- প্রথম তাকবীর-তাকবীরে তাহরীমা-র সাথে একাধারে চল্লিশ দিন জামাতে সালাত আদায় করা:
একাধারে চল্লিশ দিন পর্যন্ত প্রথম তাকবীর সহ পাঁচ ওয়াক্ত সালাত জামা‘আতের সাথে আদায়কারী জান্নাতি হবে।
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رضى الله عنه قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهُ صلى الله عليه وسلم: «مَنْ صَلَّى لِلهِ أَرْبَعِينَ يَوْمًا فِي جَمَاعَةٍ يُدْرِكُ التَّكْبِيرَةَ الْأُولَى كُتِبَتْ لَهُ بَرَاءَتَانِ بَرَاءَةٌ مِنْ النَّارِ وَبَرَاءَةٌ مِنْ النِّفَاقِ»
“আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি চল্লিশ দিন পর্যন্ত পাঁচ ওয়াক্ত সালাত তাকবীরে উলার সাথে জামা‘আতের সাথে আদায় করে তার জন্য দুইটি মুক্তি লেখা হয়। একটি জাহান্নাম থেকে আর অপরটি মুনাফেকি থেকে[52]।

আটচল্লিশ-সাত শ্রেণীর মানুষ জান্নাতে যাবে:
নিম্নোক্ত সাত ব্যক্তি জান্নাতি হবে: (১) ন্যায় বিচারক, (২) যৌবনকালে ইবাদত-কারী, (৩) মসজিদের সাথে অন্তরের সম্পর্ক স্থাপনকারী, (৪) আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে অপরের সাথে সম্পর্ক স্থাপনকারী, (৫) আল্লাহর ভয়ে একান্তে ক্রন্দন-কারী, (৬) আল্লাহর ভয়ে সুন্দরী নারীর খারাপ প্রলোভনকে ত্যাগকারী, (৭) গোপনে আল্লাহর পথে দানকারী। প্রমাণ-
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ رضى الله عنه أَنَّ رَسُولَ اللهُ صلى الله عليه وسلم قَالَ: « سَبْعَةٌ يُظِلُّهُمْ اللهُ فِي ظِلِّهِ يَوْمَ لَا ظِلَّ إِلَّا ظِلُّهُ إِمَامٌ عَادِلٌ وَشَابٌّ نَشَأَ بِعِبَادَةِ اللهُ وَرَجُلٌ كَانَ قَلْبُهُ مُعَلَّقًا بِالْمَسْجِدِ إِذَا خَرَجَ مِنْهُ حَتَّى يَعُودَ إِلَيْهِ وَرَجُلَانِ تَحَابَّا فِي اللهُ فَاجْتَمَعَا عَلَى ذَلِكَ وَتَفَرَّقَا وَرَجُلٌ ذَكَرَ اللهَ خَالِيًا فَفَاضَتْ عَيْنَاهُ وَرَجُلٌ دَعَتْهُ امْرَأَةٌ ذَاتُ حَسَبٍ وَجَمَالٍ فَقَالَ إِنِّي أَخَافُ اللهَ وَرَجُلٌ تَصَدَّقَ بِصَدَقَةٍ فَأَخْفَاهَا حَتَّى لَا تَعْلَمَ شِمَالُهُ مَا تُنْفِقُ يَمِينُهُ»
“আবু সাঈদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: সাত প্রকার লোককে আল্লাহ তাঁর আরশের ছায়ার নীচে ছায়া দিবেন। ন্যায় বিচারক বাদশা, আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন যুবক, ঐ ব্যক্তি যার অন্তর একবার মসজিদ থেকে বের হয়ে আসার পর আবার মসজিদে যাওয়ার জন্য উদগ্রীব থাকে, যে দুইজন ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যেই একে অপরকে ভালবাসে এবং এ উদ্দেশ্যে একে অপর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়। ঐ ব্যক্তি যে একা একা আল্লাহর স্মরণে অশ্রু প্রবাহিত করে, ঐ ব্যক্তি যাকে কোন উচ্চ বংশের মহিলা ব্যভিচারের জন্য আহ্বান করল আর সে তার উত্তরে বলল: আমি আল্লাহকে ভয় করি। ঐ ব্যক্তি যে এমনভাবে দান করে যে তার বাম হাত জানে না যে তার ডান হাত কি দান করছে[53]।

ঊনপঞ্চাশ- ক্ষমা করে দেয়া:
 যারা নিজের ক্রোধকে হজম করে, ক্ষমতা থাকা স্বত্বেও মানুষের কাছ থেকে প্রতিশোধ না নিয়ে তাদের ক্ষমা করে দেয়, তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে। প্রমাণ-
عَنْ مُعَاذٍ رضى الله عنه قَالَ قَالَ أَنَّ رَسُولَ اللهُ صلى الله عليه وسلم: «مَنْ كَتَمَ غَيْظًا وَهُوَ قَادِرٌ عَلَى أَنْ يُنْفِذَهُ دَعَاهُ اللهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى عَلَى رُءُوسِ الْخَلَائِقِ حَتَّى يُخَيِّرَهُ مِنْ الْحُورِ الْعِينِ يُزَوِّجُهُ مِنْهَا مَاشَاءَ»
“মু‘আয রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি প্রতিশোধ নিতে পরিপূর্ণভাবে সক্ষম ছিল, কিন্তু সে প্রতিশোধ না নিয়ে রাগকে দমন করল, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে সমস্ত সৃষ্টি জীবের সামনে উপস্থিত করে, তাকে হুরে ‘ঈন (ডাগর নয়না জান্নাতী স্ত্রী) বাছাই করার স্বাধীনতা দিবেন, তাদের মধ্যে যাকে খুশি তাকে সে বিয়ে করবে[54]।

পঞ্চাশ- অহংকার, খিয়ানত, ঋণ থেকে মুক্ত হওয়া:
যারা মৃত্যুর পূর্বে অহংকার, খিয়ানত, ঋণ থেকে মুক্ত হবে, তারা মৃত্যুর পর জান্নাতে প্রবেশ করবে। প্রমাণ-
عَنْ ثَوْبَانَ رضى الله عنه قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهُ صلى الله عليه وسلم: «مَنْ مَاتَ وَهُوَ بَرِيءٌ مِنْ ثَلَاثٍ: الْكِبْرِ وَالْغُلُولِ وَالدَّيْنِ دَخَلَ الْجَنَّةَ »
অর্থ, সাওবান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি অহংকার, খিয়ানত, ঋণ থেকে মুক্ত থাকে সে জান্নাতি হবে[55]।

একান্ন- আযানের উত্তর দেয়া ও আযানের পর দু‘আ পড়া:
যে ব্যক্তি মুয়াজ্জিনের সাথে আযানের বাক্যগুলো বলবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে ব্যক্তি আযানের পর দু’আ পড়বে, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে।
عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ رضى الله عنه قَالَ كُنَّا مَعَ رَسُولِ اللهُ صلى الله عليه وسلم فَقَامَ بِلَالٌ يُنَادِي فَلَمَّا سَكَتَ قَالَ رَسُولُ اللهُ صلى الله عليه وسلم: «مَنْ قَالَ مِثْلَ هَذَا يَقِينًا دَخَلَ الْجَنَّةَ»
“আবু হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: আমরা একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে ছিলাম, তখন বেলাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু দাঁড়িয়ে আযান দিলেন যখন সে আযান শেষ করল তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: যে ব্যক্তি বিশ্বাস সহ মুয়াজ্জিনের ন্যায় বলবে সে জান্নাতি হবে[56]।
عَنْ سَعْدِ بْنِ أَبِي وَقَّاصٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ ، عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ: «مَنْ قَالَ حِينَ يَسْمَعُ الْمُؤَذِّنَ أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ، رَضِيتُ بِاللهِ رَبًّا وَبِمُحَمَّدٍ رَسُولًا، وَبِالْإِسْلَامِ دِينًا، غُفِرَ لَهُ ذَنْبُهُ»
সায়াদ ইবন আবি ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আযানের পর হাদিসে বর্ণিত দু’আটি পড়বে তার সব গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে[57]।
عن أبي سعيد الخدري رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم، «من قال مَنْ قَالَ حِينَ يَسْمَعُ الْمُؤَذِّنَ أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ، رَضِيتُ بِاللهِ رَبًّا وَبِمُحَمَّدٍ رَسُولًا، وَبِالْإِسْلَامِ دِينًا، وجبت له الجنة »   
আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি এ দু’আটি পড়বে জান্নাত তার জন্যে ওয়াজিব হয়ে যাবে[58]।

বায়ান্ন- আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা:
যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে, আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। প্রমাণ-
أخبرني سعيد بن المسيب أن أبا هريرة رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قال سمعت رسول الله صلى الله عليه و سلم يقول: «مثل المجاهد في سبيل الله والله أعلم بمن يجاهد في سبيله كمثل الصائم و توكل الله للمجاهد في سبيله بأن يتوفاه أن يدخله الجنة أو يرجعه سالما مع أجر أو غنيمة »
অর্থ, সাঈদ ইবনে মুসাইয়্যেব বর্ণনা করেন, আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেছেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আল্লাহর পথে জিহাদ-কারীর উপমা হচ্ছে, দিবসে রোযা পালনকারী এবং রাত্রি জেগে ইবাদত-কারী ব্যক্তির ন্যায়। আর কে আল্লাহর পথে জিহাদ করে, তা তিনি সম্যক অবগত আছেন। আল্লাহ তা‘আলা তার পথে জিহাদকারী ব্যক্তির এ দায়িত্ব নিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা তার পথে জিহাদকারী ব্যক্তির এই দায়িত্ব নিয়েছেন যে, হয় তাকে শাহাদাৎ দানের নিরাপদে তাকে গাজীর বেশে ফিরিয়ে আনবেন[59]।

তিপ্পান্ন-আল্লাহর সুন্দরতম নামসমূহ জানা ও তার যথার্থ বাস্তবায়ন করা:
যে ব্যক্তি আল্লাহর নিরানব্বইটি নাম সংরক্ষণ করবে এবং তার যথাযথ বাস্তবায়ন করবে, সে জান্নাতের অধিবাসী হবে।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِنَّ لِلَّهِ تِسْعَةً وَتِسْعِينَ اسْمًا مِائَةً إِلَّا وَاحِدًا، مَنْ أَحْصَاهَا دَخَلَ الجَنَّةَ»
অর্থ, আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহর নিরানব্বইটি নাম রয়েছে, যে ব্যক্তি সে গুলো জেনে তা বাস্তবায়ন করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে[60]।

চুয়ান্ন- কবীরা গুনাহ বর্জন করা:
যে ব্যক্তি কবীরা গুনাহ হতে বেচে থাকে আল্লাহ তা‘আলা তাকে জান্নাত দান করবে । প্রমাণ-
أن أبا رهم السمعى حدثهم أن أيوب الأنصاري رضي الله عنه حدثه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: «من جاء يعبد الله لا يشرك به شيئا، ويقيم الصلاة، ويؤتي الزكاة، ويجتنب الكبائر كان له الجنة، فسألوه عن الكبائر، فقال الإشراك بالله، وقتل النفس المسلمة، والفرار يوم الزحف.»
অর্থ, আবু রহম আস-সাময়ী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবু আইয়ুব আল আনসারী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাকে বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর নিকট এমনভাবে গমন করবে, সে একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করেছে, তার সাথে কাউকে শরীক করে নি, তারই ইবাদত করছে, সালাত আদায় করছে, যাকাত আদায় করছে, রমজানের রোজা রাখছে এবং কবীরা গুণাহ হতে বিরত থাকছে, তার জন্য রয়েছে জান্নাত। সাহাবীরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, কবীরা গুনাহ কি? তিনি উত্তর দিলেন, আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে শরীক করা, অন্যায়ভাবে কোন মুসলিমকে হত্যা করা এবং যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন করা[61]।”

পঞ্চান্ন- যথাসময়ে সালাত আদায় করা:
যথা সময়ে সালাত আদায়, মাতা-পিতার সেবা ও আল্লাহর রাহে জিহাদ করা একজন মুসলিমকে জান্নাতের নিকটবর্তী করে দেয়। প্রমাণ-
عن عبدالله بن مسعود رضي الله عنه، قال قلت يا نبي الله أي الأعمال أقرب إلى الجنة؟ قال: «الصلاة على مواقيتها» قلت و ما ذا نبي الله؟ قال: «برالوالدين »قلت و ما ذا يا نبي الله؟ قال: « الجهاد في سبيل الله »
আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বললাম হে আল্লাহর রাসূল কোন আমল জান্নাতের অতি নিকটবর্তী করে দেয়? তিনি বললেন, সময়মত সালাত আদায় করা, আমি বললাম তারপর কোনটি? তিনি বললেন, মাতা-পিতার খেদমত করা, জিজ্ঞাসা করলাম তারপর কোনটি? তিনি বললেন, আল্লাহর রাহে জিহাদ করা[62]।

ছাপ্পান্ন- অধিকহারে সিয়াম পালন করা:
জান্নাতের একটি দরজার নাম রাইয়ান সে দরজা দিয়ে, কেবল রোজাদার ব্যক্তিই প্রবেশ করবে। প্রমাণ-
عَنْ سَهْلٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: « إِنَّ فِي الجَنَّةِ بَابًا يُقَالُ لَهُ الرَّيَّانُ، يَدْخُلُ مِنْهُ الصَّائِمُونَ يَوْمَ القِيَامَةِ، لاَ يَدْخُلُ مِنْهُ أَحَدٌ غَيْرُهُمْ، يُقَالُ: أَيْنَ الصَّائِمُونَ؟ فَيَقُومُونَ لاَ يَدْخُلُ مِنْهُ أَحَدٌ غَيْرُهُمْ، فَإِذَا دَخَلُوا أُغْلِقَ فَلَمْ يَدْخُلْ مِنْهُ أَحَدٌ »
অর্থ, সাহাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন নিশ্চয় জান্নাতে রাইয়ান নামক একটি দরজা রয়েছে, যা দিয়ে রোজাদাররাই কেবল প্রবেশ করবেন। রোজাদার ব্যতীত অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। ঘোষণা দেয়া হবে, রোজাদাররা কোথায়? তখন তারা দণ্ডায়মান হবে। অতঃপর যখন তারা রাইয়ান নামক দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে, তখন তা বন্ধ করে দেয়া হবে। তারপর আর কেউ প্রবেশ করতে পারবে না[63]।

সাতান্ন- আপন লোকের কষ্টের উপর ধৈর্য ধারণ করা:
 যে ব্যক্তি তার প্রিয় মানুষের কষ্টের উপর ধৈর্য ধারণ করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। প্রমাণ-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: « يَقُولُ اللَّهُ تَعَالَى: مَا لِعَبْدِي المُؤْمِنِ عِنْدِي جَزَاءٌ، إِذَا قَبَضْتُ صَفِيَّهُ مِنْ أَهْلِ الدُّنْيَا ثُمَّ احْتَسَبَهُ، إِلَّا الجَنَّةُ "»
অর্থ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমার কোন মুমিন বান্দাহর প্রিয় ব্যক্তিকে যখন দুনিয়া থেকে তুলে নিই অতঃপর সে তার বিরহে ধৈর্য ধারণ করে, তখন এর প্রতিদানে সে জান্নাত পায়[64]।

আটান্ন- বেশি বেশি করে সূরা ইখলাস তিলাওয়াত করা:
যে ব্যক্তি বেশি বেশি করে সূরা ইখলাস পড়বে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে। প্রমাণ-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: أَقْبَلْتُ مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَسَمِعَ رَجُلاً يَقْرَأُ: قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ اللَّهُ الصَّمَدُ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «وَجَبَتْ». قُلْتُ: مَا وَجَبَتْ؟ قَالَ: « الجَنَّةُ. »
“উবাইদ ইবন হুনাইন বলেন, আমি আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে বের হলাম অতঃপর তিনি এক ব্যক্তিকে সূরা ইখলাস পাঠরত অবস্থায় দেখে বললেন, ওয়াজাবাত (ওয়াজিব হয়ে গিয়েছে) অতঃপর আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, কি ওয়াজিব হয়েছে ইয়া রাসূলুল্লাহ? উত্তরে বললেন, জান্নাত[65]।

ঊনষাট- সেজদার আয়াত তিলাওয়াত করার সাথে সাথে সিজদায় অবনত হওয়া:
কুরআন তিলাওয়াতের সেজদা আদায় করা দ্বারা একজন মুসলিম জান্নাতে প্রবেশ করবে। প্রমাণ-
عن أبي هريرة رضي الله عنه، قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «إذا قرأ ابن آدم السجدة فسجد اعتزل الشيطان يبكي يقول يا ويله و في رواية أبي كريب يا ويلى أمر ابن آدم بالسجود فسجد فله الجنة و أمرت بالسجود فأبيت فلي النار».
অর্থ, আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মানুষ যখন সিজদা আদায় করে তখন শয়তান কেঁদে কেঁদে দূরে চলে যায় এবং বলে, হায় আফসোস! আদম সন্তানকে সেজদার আদেশ করা হল, সে সিজদা করে জান্নাত পাবে, আর আমি সিজদা অস্বীকার করায় আমার জন্য জাহান্নাম[66]।

ষাট- ঋণের ক্ষেত্রে অসচ্ছল ব্যক্তিকে অবকাশ দেয়া অপারগকে ক্ষমা করে দেয়া:
ঋণ আদায় ও পরিশোধ করার ক্ষেত্রে সহজ করে দেয়া। প্রমাণ- হুজাইফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«إِنَّ رَجُلًا كَانَ فِيمَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ، أَتَاهُ المَلَكُ لِيَقْبِضَ رُوحَهُ، فَقِيلَ لَهُ: هَلْ عَمِلْتَ مِنْ خَيْرٍ؟ قَالَ: مَا أَعْلَمُ، قِيلَ لَهُ: انْظُرْ، قَالَ: مَا أَعْلَمُ شَيْئًا غَيْرَ أَنِّي كُنْتُ أُبَايِعُ النَّاسَ فِي الدُّنْيَا وَأُجَازِيهِمْ، فَأُنْظِرُ المُوسِرَ، وَأَتَجَاوَزُ عَنِ المُعْسِرِ، فَأَدْخَلَهُ اللَّهُ الجَنَّةَ»
তোমাদের পূর্বে একজন ব্যক্তি ছিল, মালাকুল মাউত তার রূহ কবজ করতে আসলে তাকে জিজ্ঞাসা করা হল, তুমি কোন ভালো কাজ করেছ? উত্তরে লোকটি বলল, আমার জানা নাই। তাকে পুনরায় বলা হল, একটু ভেবে দেখ, কোন ভালো কাজের কথা মনে পড়ে কিনা? তখন সে বলল, কোন কিছুই আমার মনে পড়ছে না, তবে দুনিয়াতে আমি মানুষদের সাথে বাণিজ্য করতাম এবং তাদেরকে ঋণ দিতাম। অতঃপর সচ্ছল ব্যক্তিকে অবকাশ দিতাম এবং অপারগকে ক্ষমা করে দিতাম। আল্লাহ তা‘আলা এই ব্যক্তিকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন[67]।

একষট্টি- পিতা-মাতার খেদমত করা:
যে ব্যক্তি পিতা-মাতার সেবা করবে, সে জান্নাতের যে কোন দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করবে। প্রমাণ-
عَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ رضي الله عنه، أَنَّ رَجُلاً أَتَاهُ فَقَالَ: إِنَّ لِيَ امْرَأَةً وَإِنَّ أُمِّي تَأْمُرُنِي بِطَلاَقِهَا، قَالَ أَبُو الدَّرْدَاءِ رضي الله عنه: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: « الوَالِدُ أَوْسَطُ أَبْوَابِ الجَنَّةِ، فَإِنْ شِئْتَ فَأَضِعْ ذَلِكَ البَابَ أَوْ احْفَظْهُ »
অর্থ, আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পিতা-মাতা হচ্ছে, জান্নাতের দরজা সমূহের মধ্যম দরজা। অতএব তুমি ইচ্ছা করলে, সেই দরজা নষ্ট কর বা সংরক্ষণ কর[68]।

বাষট্টি- তিন বার করে জান্নাত চাওয়া এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি কামনা করা:
যে ব্যক্তি দিনে কম পক্ষে তিনবার করে জান্নাত চাইবে এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাইবে, নি:সন্দেহে আল্লাহ তা‘আলা তাকে জান্নাত দেবে। প্রমাণ-
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رضي الله عنه،  قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: « مَنْ سَأَلَ الْجَنَّةَ، ثَلَاثَ مَرَّاتٍ، قَالَتِ الْجَنَّةُ: اللَّهُمَّ أَدْخِلْهُ الْجَنَّةَ، وَمَنِ اسْتَجَارَ مِنَ النَّارِ، ثَلَاثَ مَرَّاتٍ، قَالَتِ النَّارُ: «اللَّهُمَّ أَجِرْهُ مِنَ النَّارِ»
অর্থ, আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি দিনে তিনবার জান্নাত কামনা করে, জান্নাত তার জন্য এ বলে, প্রার্থনা করে, হে আল্লাহ! আপনি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করান’ এবং যে তিনবার জাহান্নাম থেকে পানাহ চায় জাহান্নাম তার জন্য এ বলে, দু’আ করে, হে আল্লাহ! আপ তাকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করুণ[69]।

তেষট্টি- স্ত্রীর জন্য স্বীয় স্বামীকে সন্তুষ্ট রাখা-
যে স্ত্রী তার স্বামীকে সন্তুষ্ট রেখে মারা যাবে, সে জান্নাতে যাবে। এ জন্য স্ত্রীর উচিত হল, আমরণ তার স্বামীর আনুগত্য করা। প্রমাণ-
عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ رضي الله عنها، قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَيُّمَا امْرَأَةٍ مَاتَتْ وَزَوْجُهَا عَنْهَا رَاضٍ دَخَلَتِ الجَنَّةَ.»
“উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোন মহিলা যদি স্বামীকে সন্তুষ্ট রেখে মারা যায় সে জান্নাতে প্রবেশ করবে[70]।

চৌষট্টি- ওযু করার পর দু’আ পড়া:
যে ব্যক্তি ওযু করার পর নিম্নোক্ত দু’আ পাঠ করবে, তার জন্য জান্নাতের সবগুলো দরজা খুলে দেয়া হবে এবং সে যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করতে পারবে। প্রমাণ-
عن عمر الخطاب رضي الله عنه، عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: «ما منكم من أحد يتوضأ فيبلغ الوضوء ثم يقول أشهد أن لا إله إلا الله و أن محمدا عبد الله و رسوله إلا فتحت له أبواب الجنة يدخل من أيها شاء. » رواه مسلم
ওমর ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ যদি ওযু করে আর ওযুকে সুন্দরভাবে করে, তারপর এ দু’আটি পাঠ করে, তাহলে তার জন্যে জান্নাতের আটটি দরজাই খুলে দেয়া হবে, সে যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করতে পারবে[71]।

পঁয়ষট্টি-উত্তম চরিত্রে চরিত্রবান হওয়া:
উত্তম চরিত্রে চরিত্রবান হওয়া এমন একটি আমল, যা মানুষকে অধিক পরিমাণে জান্নাতে প্রবেশ করায়। তাই আমাদের সবার উচিত আমরা যাতে উত্তম চরিত্রে চরিত্রবান হতে পারি। প্রমাণ-
عن أبي هريرة رضي الله عنه، قال سئل رسول الله صلى الله عليه وسلم عن أكثر ما يدخل الناس الجنة فقال: «تقوى الله وحسن الخلق » وسئل عن أكثر ما يدخل الناس النار فقال« الفم والفرج. »
অর্থ, আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করা হল, কোন জিনিসটি মানুষকে সব চেয়ে বেশি জান্নাতে প্রবেশ করাবে? উত্তরে তিনি বললেন, আল্লাহর ভয় ও উত্তম চরিত্র। তারপর তাকে জিজ্ঞাসা করা হল, কোন জিনিসটি মানুষকে সব চেয়ে বেশি জাহান্নামে প্রবেশ করাবে? উত্তরে তিনি বললেন, মানুষের জিহ্বা ও লজ্জা-স্থান[72]।

ছষট্টি- মৃত্যুর সময় সর্বশেষ কালিমা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলা:
যে ব্যক্তি মৃত্যুর সময় উল্লেখিত কালিমা পাঠ করিবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করিবে। যে ব্যক্তি তার জীবদ্দশায় সব সময় কালিমার উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে, আল্লাহ তা‘আলা তার মৃত্যুর সময় তাকে কালিমা পড়ার তাওফিক দেবে। পক্ষান্তরে কালিমার সাথে যার কোন সম্পর্ক থাকবে না, তার থেকে মৃত্যুর সময় কালিমা পড়া বা ঈমান নিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নেয়া খুবই দূরহ ব্যাপার। আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুন। প্রমাণ-
عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ رضي الله عنه ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ كَانَ آخِرُ كَلَامِهِ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ دَخَلَ الْجَنَّةَ»
অর্থ, মু‘আয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যার সর্বশেষ কালিমা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ হবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে[73]।

সাতষট্টি- সকাল-সন্ধ্যা নিয়মিত মসজিদে গমন করা:
যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যা নিয়মিত মসজিদে যাতায়াত করবে, আল্লাহ তা‘আলা তাকে জান্নাতে মেহমানদারি করবে। প্রমাণ-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رضي الله عنه ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ غَدَا إِلَى المَسْجِدِ وَرَاحَ، أَعَدَّ اللَّهُ لَهُ نُزُلَهُ مِنَ الجَنَّةِ كُلَّمَا غَدَا أَوْ رَاحَ»
অর্থ, আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি সকাল সন্ধ্যা নিয়মিত মসজিদে গমন করবে, আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতে তার জন্য মেহমানদারির ব্যবস্থা করবে[74]।

আটষট্টি- সিয়াম পালন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করা:
যে ব্যক্তি সিয়াম পালন অবস্থায় শেষ নি:শাস ত্যাগ করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জান্নাতের সু-সংবাদ দেন। প্রমাণ-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رضي الله عنه ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ  قال: « من ختم له بصيام يوم دخل الجنة »
অর্থ, আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি সিয়াম পালন অবস্থায় মৃত্যু বরণ করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে[75]।

উপরে আমরা যে সব আমলগুলোর কথা আলোচনা করা হল, এগুলো ছাড়াও আরও অনেক আমল আছে, যেগুলো  আমাদের জান্নাত লাভের পাথেয় হবে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের জান্নাত লাভের জন্য দুনিয়াতে ভালো ভালো আমলগুলো করা তাওফীক দিন। আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে করীমে এরশাদ করে বলেন-
﴿ ۞وَسَارِعُوٓاْ إِلَىٰ مَغۡفِرَةٖ مِّن رَّبِّكُمۡ وَجَنَّةٍ عَرۡضُهَا ٱلسَّمَٰوَٰتُ وَٱلۡأَرۡضُ أُعِدَّتۡ لِلۡمُتَّقِينَ ١٣٣ ﴾ [ال عمران: ١٣٣] 
আর তোমরা দ্রুত অগ্রসর হও তোমাদের রবের পক্ষ থেকে মাগফিরাত ও জান্নাতের দিকে, যার পরিধি আসমানসমূহ ও যমীনের সমান, যা মুত্তাকীদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে[76]।

আয়াতে আল্লাহ মানুষকে জান্নাতের দিকে দ্রুত অগ্রসর হওয়ার নির্দেশ দেন এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমা লাভের প্রতি অগ্রসর হওয়ার নির্দেশ দেন। কারণ, জান্নাত লাভ করতে হলে, আল্লাহর মাগফিরাত খুবই জরুরী। আল্লাহর ক্ষমা ছাড়া কেউ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।

হে আল্লাহ তুমি আমাদের উল্লেখি আমলগুলো করার তাওফীক দান কর, যাতে আমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারি। আমীন
وصلى الله على نبينا محمد، وعلى آله وصحبه وسلم.

তথ্যসূত্র:

[1] সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৩৩
[2] বর্ণনায় তিরমিযি, হাদিস নং ২৪৫০
[3] মুসলিম, জান্নাত ও তার নেয়ামত সমূহের বর্ণনা অধ্যায়, হাদীস নং ২৮৪০।
[4] মুসলিম, হাদীস নং ২৮৫৩।
[5] আহমদ, ১/৪১৫। হাদীস নং ৩৯৩৮।
[6] বুখারি, কুরআন ও সূন্নাহকে আকড়ে ধরা বিষয় আলোচনা অধ্যায়। হাদীস নং ৭২৮০।  
[7] মুসলিম, মুসাফিরদের সালাত আদায় করা অধ্যায়। হাদীস নং ৭২৮।
[8] মুসলিম কিতাবুল ঈমান, পরিচ্ছেদ: যে ঈমান একজন মুমিনকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। হাদীস নং ১৩।
[9] তিরমিযি, জান্নাতের আলোচনা। পরিচ্ছেদ: জান্নাতের কামরাসমূহের বৈশিষ্ট্য; ২/২০৫১, হাদীস নং ১৯৮৪।
[10] মুসলিম, কিতাবুল জান্নাহ, পরিচ্ছেদ: জান্নাতী ও জাহান্নামীদের গুনাগুণের বিষয়ে আলোচনা, হাদীস নং ২৮৬৫।
[11] আবু দাউদ, বিতির অধ্যায়, পরিচ্ছেদ ইস্তেগফার বিষয়ে আলোচনা, ১/১৩৫৩, হাদীস নং ১৫২৯।
[12] মুসলিম, কিতাবুল বির ওয়াস-সিলা, কন্যা সন্তানের প্রতি দয়া করা বিষয়ে আলোচনা, হাদীস নং ২৬৩১।
[13] বুখারি ও মুসলিম, দেখুন সংক্ষিপ্ত মুসলিম, হাদিস নং- ১৬৮২।
[14] মুসলিম, হাদিস: ১৪৪
[15] ইবনে হিব্বান, সহীহ জামে আসসগীর ১ম খণ্ড হাদিস নং-৬৭৩
[16] আবু দাউদ, কিতাবুল জিহাদ, হাদিস নং- ২/২২০০
[17] তিরমিযি, জিহাদের ফযিলত অধ্যায়, হাদিস নং-২/১৩৫৩
[18] তিরমিযি, কিতাবুল বির ওয়াসসিলা, পরিচ্ছেদ: উত্তম চরিত্র বিষয়ে আলোচনা।
[19] মুসলিম, জুহুদ অধ্যায়,
[20] বুখারি, হাদিস: ৪৯৯৮
[21] বুখারি ও মুসলিম, ওমরা অধ্যায়।
[22] মুসলিম, যুহ্‌দ অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: মসজিদ নির্মানের ফযিলত বিষয়ে আলোচনা।
[23] বুখারী, হাদিস: ৬৪৭৪
[24] আহমদ, হাদিস নং-১৩৬।
[25] বুখারি মুসলিম আল লু লু ওয়াল মারজান, ২য় খণ্ড হাদিস নং-১৭১৪
[26] ইবনে মাযাহ, কিতাবুল আদাব, পরিচ্ছেদ, কুরআন তিলাওয়াতের সাওয়াব বিষয়ে আলোচনা: ২/৩০৪৭
[27] তিরমিযি, কিয়ামতের আলোচনা, অনুচ্ছেদ নং-১০/২০১৩৯
[28] মুসলিম, কিতাবুল ঈমান, পরিচ্ছেদ : জান্নাতে মুমিন ছাড়া আর কেউ প্রবেশ করবে না, হাদিস নং ৫৪।
[29] মুসলিম, কিতাবুল বির, পরিচ্ছেদ, অসুস্থদের দেখতে যাওয়া বিষয়ে আলোচনা।
[30] মুসলিম কিতাবুজ যিকর, পরিচ্ছেদ, কুরআন তিলাওয়াতের জন্য একত্র হওয়া বিষয়ে আলোচনা।
[31] মুসলিম কিতাবুত তাহারাহ, পরিচ্ছেদ: ওজুর পর দু’আ বিষয়ে আলোচনা।
[32] বুখারি, হাদিস নং-২০৭১০।
[33] বুখারি কিতাবুল মারাদ্ব, পরিচ্ছেদ: যার চোখ নষ্ট তার ফযিলত সম্পর্কে আলোচনা।
[34] মুসলিম, কিতাবুল বির ওয়াসিলা, পরিচ্ছেদ: মাতা-পিতার খেদমতকে প্রাধান্য দেয়া বিষয়ে আলোচনা। 
[35] সুনানে তিরমিযি, হাদিস: ১৯০০
[36] মুসলিম, কিতাবুল বির ওয়াসসিলা, পরিচ্ছেদ: রাস্তা হতে কষ্টদায় বস্তু সরানো বিষয়ে আলোচনা।
[37] বুখারী, কিতাবুল মারদ্বা।
[38] তাবরানী আল জামে, আল্লামা আলবানীর জামে আসসগীর, হাদিস নং-২৬০১
[39] মুসলিম কিতাবুল ঈমান, পরিচ্ছেদ: যারা জান্নাতে প্রবেশ করবেন, তাদের বিষয়ে আলোচনা।
[40] মুসলিম, কিতাবুল বির ওয়াসিলা, পরিচ্ছেদ: যার কোন বাচ্চা মারা যাওয়ার পর তার উপর সাওয়াবের আশা করে, সে বিষয়ে আলোচনা।
[41] নাসায়ী, ইবনে হিব্বান, ত্বাবরানী, আল্লামা আলবানী রহ. এর সিলসিলাতুল আহাদিস আস-সহীহা খণ্ড দুই হাদিস নং-৯৭২
[42] ইবনে মাজাহ, সুনান ইবনে মাজাহ লি আলবানী খণ্ড ২য়, হাদীস নং-৩০৮৩
[43] তিরমিযি, আল্লামা আলবানী রহ. এর সহীহ আল জামে আত-তিরমিযি, ৩য় খণ্ড, হাদিস নং-২৭৫৭
[44] নাসায়ী, খুন করা হারাম হওয়া অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: যে ব্যক্তি সম্পদ রক্ষার্থে মারা যায় সে বিষয়ে আলোচনা: ৩/৩৮০৮।
[45] ইবনে মাজাহ, কিতাবুল জানায়েয, হাদিস: ১/১৩০৫
[46] হাকেম, আল্লামা আলবানী রহ. এর সহীহ আল জামে আসসগীর ৩ম খণ্ড, হাদিস নং ৪১৭৮
[47] আহমদ, আল্লামা আলবানী রহ. এর সহীহ আল জামে আসসগীর ৫ম খণ্ড, হাদিস নং ৬১১৬
[48] আবু দাউদ কিতাবুয-যাকাত, হাদিস ১/১৪৪৬।
[49] তাবরানী, সহীহ আল জামে, আসসগীর লিল আলবানী, খণ্ড ৬ষ্ঠ হাদিস নং-৭২৫১।
[50] মুসলিম, কিতাবুল বির ওয়াসিলা, পরিচ্ছেদ: eve dRjy mvjvwZm myewn Iqvj Avmi
[51] তিরমিযি, সালাত অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: ১/৩১৫
[52] তিরমিযি, সালাত অধ্যায়, পরিচেছদ: প্রথম তাকবীরে সালাত আদায়ের ফযিলত সম্পর্কে আলোচনা, হাদিস নং ১/২০০
[53] তিরমিযি, যুহদ অধ্যায়, পরিচেছদ: আল্লাহর জন্য মহব্বত করার প্রতিদান, হাদিস নং ২/১৯৪৯
[54] আহমদ, আল্লামা আলবানী রহ. এর সহীহ আল জামে আসসগীর ৫ম খণ্ড, হাদিস নং ৬৩৯৪।
[55] তিরমিযি, হাদিস নং ২/১২৭৮
[56] নাসায়ী, কিতাবুল আযান, পরিচ্ছেদ আযানের সাওয়াব, হাদিস: ১/৬৫০
[57] মুসলিম, হাদিস: ৮৭৭
[58] মুসলিম, হাদিস: ৪৯৮৭
[59] সহীহ আল-বুখারী: ২৬৩৫
[60] বুখারি, হাদিস: ২৭৩৬
[61] মুস্তাদরাকে হাকিম, হাদিস: ২৯৪৩
[62] সহীহ মুসলিম, হাদিস: ২৬৩
[63] সহীহ আল-বুখারী: ১৮৯৬
[64] বুখারী, হাদিস: ৬৪২৪ ও মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ৯৩৯৩
[65] সূনানে তিরমিযি, হাদিস: ২৮৯৭
[66] সহীহ মুসলিম, হাদিস: ২৫৪
[67] সহীহ আল-বুখারী, হাদিস: ৩৪৫১
[68] সুনানে তিরমিযি: ১৯০০
[69] সুনানে ইবনে মাজা, হাদিস: ৪৩৪০
[70] সুনানে তিরমিযি, হাদিস: ১১৬১
[71] সহীহ মুসলিম, হাদিস: ৫৭৬
[72] সূনানে তিরমিযি, হাদিস: ২০৭১
[73] সহীহ আবু দাউদ, হাদিস: ৩১১৬
[74] সহীহ বুখারী, হাদিস: ৬৬২
[75] সহীহ আল জামে, হাদিস: ৬২২৪; শেখ আলবানী রহ. হাদিসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন।
[76] সূরা আল-ইমরান, আয়াত: ১৩৩
_________________________________________________________________________________


 সংকলন : জাকের উল্লাহ আবুল খায়ের
সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
সূত্র : ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন