Views:
A+
A-
তওবার বিবরণ
তওবার বিবরণ
উলামা সম্প্রদায়ের উক্তি এই যে, প্রত্যেক পাপ থেকে তওবা করা (চিরতরে প্রত্যাবর্তন করা) ওয়াজেব
(অবশ্য-কর্তব্য)। যদি গোনাহর সম্পর্ক আল্লাহর (অবাধ্যতার) সঙ্গে থাকে এবং কোন
মানুষের অধিকারের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক না থাকে, তাহলে এ ধরনের
তওবা কবুলের জন্য তিনটি শর্ত রয়েছে।
১। পাপ সম্পূর্ণরূপে বর্জন করতে হবে।
২। পাপে লিপ্ত হওয়ার জন্য অনুতপ্ত ও লজ্জিত হতে হবে।
৩। ঐ পাপ আগামীতে দ্বিতীয়বার না করার দৃঢ় সঙ্কল্প করতে হবে।
সুতরাং যদি এর মধ্যে একটি শর্তও লুপ্ত হয়, তাহলে সেই তওবা বিশুদ্ধ হবে না।
১। পাপ সম্পূর্ণরূপে বর্জন করতে হবে।
২। পাপে লিপ্ত হওয়ার জন্য অনুতপ্ত ও লজ্জিত হতে হবে।
৩। ঐ পাপ আগামীতে দ্বিতীয়বার না করার দৃঢ় সঙ্কল্প করতে হবে।
সুতরাং যদি এর মধ্যে একটি শর্তও লুপ্ত হয়, তাহলে সেই তওবা বিশুদ্ধ হবে না।
পক্ষান্তরে যদি সেই পাপ মানুষের
অধিকার সম্পর্কিত হয়, তাহলে তা গ্রহণীয় হওয়ার জন্য চারটি
শর্ত আছে। উপরোক্ত তিনটি এবং চতুর্থ শর্ত হল, হকদারদের হক
ফিরিয়ে দিতে হবে। যদি অবৈধ পন্থায় কারো মাল বা অন্য কিছু নিয়ে থাকে,
তাহলে তা ফিরিয়ে দিতে হবে। আর যদি কারো উপর মিথ্যা অপবাদ দেয় অথবা অনুরূপ
কোনো দোষ করে থাকে, তাহলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছে শাস্তি
নিতে নিজেকে পেশ করতে হবে অথবা তার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে। যদি কারো গীবত করে
থাকে, তাহলে তার কাছে তা বৈধ করে নেবে।
সমস্ত পাপ থেকে তওবাহ করা
ওয়াজেব। আংশিক পাপ থেকে তওবাহ করলে সেই তওবাহ হকপন্থী আলেমগণের নিকট গ্রহণযোগ্য
বিবেচিত হবে এবং অবশিষ্ট পাপ রয়ে যাবে। তওবা ওয়াজেব হওয়ার ব্যাপারে কুরআন ও হাদীসে
প্রচুর প্রমাণ রয়েছে এবং এ ব্যাপারে উম্মতের ঐকমত্যও বিদ্যমান।
আল্লাহ তা‘আলা
বলেছেন,
﴿ وَتُوبُوٓاْ إِلَى
ٱللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ ﴾ [النور: ٣١]
অর্থাৎ “হে ঈমানদারগণ! তোমরা সকলে আল্লাহর কাছে তওবা
(প্রত্যাবর্তন) কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।” (সূরা নূর ৩১ আয়াত)
﴿ وَأَنِ ٱسۡتَغۡفِرُواْ رَبَّكُمۡ ثُمَّ تُوبُوٓاْ إِلَيۡهِ ﴾ [هود: ٣]
অর্থাৎ “তোমরা নিজেদের
প্রতিপালকের নিকট (পাপের জন্য) ক্ষমা প্রার্থনা কর, অতঃপর
তাঁর কাছে তওবা (প্রত্যাবর্তন) কর।” (সূরা হূদ ৩ আয়াত)
তিনি আরো বলেছেন,
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ
ءَامَنُواْ تُوبُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ تَوۡبَةٗ نَّصُوحًا ﴾ [التحريم: ٨]
অর্থাৎ “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর নিকট তওবা কর বিশুদ্ধ তওবা।” (সূরা তাহরীম ৮ আয়াত)
হাদীসসমূহ:
হাদীসসমূহ:
1/14 وعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي
الله عنه، قَالَ : سمعْتُ رسولَ الله ﷺ، يقول: «والله إنِّي لأَسْتَغْفِرُ الله
وأَتُوبُ إِلَيْه في اليَوْمِ أَكْثَرَ مِنْ سَبْعِينَ مَرَّةً». رواه البخاري .
১/১৪। আবূ হুরাইরাহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, ‘‘আল্লাহর কসম! আমি
প্রত্যহ ৭০ বারের অধিক আল্লাহর নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা ও তওবা করি।’’[1]
2/15 عَنِ
الأَغَرِّ بنِ يَسَارٍ الْمُزَنِيِّ رضي
الله عنه، قَالَ : قَالَ رَسُول الله ﷺ: « يَا أَيُّهَا النَّاسُ، تُوبُوا إِلى اللهِ واسْتَغْفِرُوهُ، فَإنِّي
أتُوبُ في اليَومِ مِئَةَ مَرَّةٍ». رواه مسلم .
২/১৫। আগার্র ইবনে ইয়াসার
মুযানী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘হে
লোক সকল! তোমরা আল্লাহর সমীপে তওবা কর ও তাঁর নিকট ক্ষমা চাও! কেননা,
আমি প্রতিদিন ১০০ বার করে তওবাহ
করে থাকি।’’[2]
3/16
وَعَنْ أَبِي حَمزَةَ أَنَسِ بنِ مَالكٍ الأنصَارِيِّ رضي
الله عنه خَادِمِ رَسُولِ
الله ﷺ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ الله ﷺ: «لَلهُ أفْرَحُ بِتَوْبَةِ عَبْدِهِ
مِنْ أَحَدِكُمْ سَقَطَ عَلَى بَعِيرهِ وقد أضلَّهُ في أرضٍ فَلاةٍ».مُتَّفَقٌ
عليه
وفي رواية
لمُسْلمٍ: «للهُ أَشَدُّ فَرَحاً بِتَوبَةِ عَبْدِهِ حِينَ يتوبُ إِلَيْهِ مِنْ
أَحَدِكُمْ كَانَ عَلَى رَاحِلَتهِ بأرضٍ فَلاةٍ، فَانْفَلَتَتْ مِنْهُ
وَعَلَيْهَا طَعَامُهُ وَشَرَابهُ فأَيِسَ مِنْهَا، فَأَتى شَجَرَةً فاضطَجَعَ في
ظِلِّهَا وقد أيِسَ مِنْ رَاحلَتهِ، فَبَينَما هُوَ كَذَلِكَ إِذْ هُوَ بِها
قائِمَةً عِندَهُ، فَأَخَذَ بِخِطامِهَا، ثُمَّ قَالَ مِنْ شِدَّةِ الفَرَحِ: اَللهم أنْتَ عَبدِي وأنا رَبُّكَ ! أَخْطَأَ مِنْ
شِدَّةِ الفَرَحِ».
৩/১৬। আল্লাহর রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খাদেম, আবূ হামযাহ আনাস ইবন
মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় বান্দার তওবা করার
জন্য ঐ ব্যক্তি অপেক্ষা বেশী আনন্দিত হন, যে তার উট জঙ্গলে
হারিয়ে ফেলার পর পুনরায় ফিরে পায়।’’(বুখারী ৬৩০৯, মুসলিম
২৭৪৭, আহমাদ ১২৮১৫)
মুসলিমের অন্য বর্ণনায় এইভাবে
এসেছে যে, ‘‘নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তাঁর
বান্দার তওবায় যখন সে তওবা করে তোমাদের
সেই ব্যক্তির চেয়ে বেশী খুশী হন, যে তার বাহনের উপর চড়ে কোনো
মরুভূমি বা জনহীন প্রান্তর অতিক্রমকালে বাহনটি তার নিকট থেকে পালিয়ে যায়। আর খাদ্য
ও পানীয় সব ওর পিঠের উপর থাকে। অতঃপর বহু খোঁজাখুঁজির পর নিরাশ হয়ে সে একটি গাছের
ছায়ায় ঘুমিয়ে পড়ে। ইতোমধ্যে বাহনটি হঠাৎ তার সম্মুখে দাঁড়িয়ে যায়। সে তার লাগাম
ধরে খুশীর চোটে বলে ওঠে, ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার দাস, আর আমি তোমার প্রভু!’ সীমাহীন খুশীর কারণে
সে ভুল করে ফেলে।’’
4/17 وعَنْ أَبِي موسَى عبدِ اللهِ بنِ قَيسٍ الأشْعريِّ رضي الله عنه، عن النَّبيّ ﷺ، قَالَ: «إنَّ
الله تَعَالَى يَبْسُطُ يَدَهُ بالليلِ لِيَتُوبَ مُسِيءُ النَّهَارِ، ويَبْسُطُ
يَدَهُ بالنَّهَارِ لِيَتُوبَ مُسِيءُ اللَّيلِ، حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ مِنْ
مَغْرِبِها». رواه مسلم .
৪/১৭। আবূ মূসা আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু
‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘নিশ্চয়
আল্লাহ তা‘আলা নিজ হাত রাতে প্রসারিত করেন; যেন
দিনে পাপকারী (রাতে) তওবা করে। এবং দিনে তাঁর হাত প্রসারিত করেন; যেন
রাতে পাপকারী (দিনে) তওবাহ করে। যে পর্যন্ত
পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয় না হবে, সে পর্যন্ত এই রীতি চালু
থাকবে।’’[3]
5/18 وعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي
الله عنه، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «مَنْ
تَابَ قَبْلَ أنْ تَطْلُعَ الشَّمْسُ مِنْ مَغْرِبِها تَابَ اللهُ عَلَيهِ». رواه مسلم .
৫/১৮। আবূ হুরাইরাহ
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি পশ্চিম দিক থেকে
সূর্যোদয় হওয়ার পূর্বে তওবা করবে, আল্লাহ তার তওবা গ্রহণ
করবেন।’’[4]
6/19وعَنْ أَبِي
عبد الرحمان عبد الله بنِ عُمَرَ بنِ الخطابِ رضيَ اللهُ عنهما، عن النَّبي ﷺ،
قَالَ: «إِنَّ الله - عز وجل - يَقْبَلُ تَوبَةَ العَبْدِ مَا لَمْ يُغَرْغِرْ».
رواه الترمذي، وَقالَ: «حديث حسن».
৬/১৯। আবু আব্দুর রহমান
আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, “নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা বান্দার
তওবাহ সে পর্যন্ত কবুল করবেন, যে পর্যন্ত তার প্রাণ কণ্ঠাগত
না হয়।”[5]
7/20 وعن زِرِّ بن حُبَيْشٍ، قَالَ : أَتَيْتُ صَفْوَانَ بْنَ
عَسَّالٍ رضي الله عنه
أسْألُهُ عَن الْمَسْحِ عَلَى الخُفَّيْنِ، فَقالَ : ما جاءَ بكَ يَا
زِرُّ ؟ فقُلْتُ : ابتِغَاء العِلْمِ، فقالَ : إنَّ المَلائكَةَ تَضَعُ
أجْنِحَتَهَا لطَالبِ العِلْمِ رِضًى بِمَا يطْلُبُ . فقلتُ : إنَّهُ قَدْ حَكَّ
في صَدْري المَسْحُ عَلَى الخُفَّينِ بَعْدَ الغَائِطِ والبَولِ، وكُنْتَ امْرَءاً
مِنْ أَصْحَابِ النَّبيِّ ﷺ فَجئتُ أَسْأَلُكَ هَلْ سَمِعْتَهُ يَذكُرُ في ذلِكَ
شَيئاً ؟ قَالَ : نَعَمْ، كَانَ يَأْمُرُنا إِذَا كُنَّا سَفراً - أَوْ
مُسَافِرينَ - أنْ لا نَنْزعَ خِفَافَنَا ثَلاثَةَ أَيَّامٍ وَلَيالِيهنَّ إلاَّ
مِنْ جَنَابَةٍ، لكنْ مِنْ غَائطٍ وَبَولٍ ونَوْمٍ . فقُلْتُ : هَلْ سَمِعْتَهُ
يَذْكرُ في الهَوَى شَيئاً ؟ قَالَ : نَعَمْ، كُنّا مَعَ رسولِ اللهِ ﷺ في سَفَرٍ،
فبَيْنَا نَحْنُ عِندَهُ إِذْ نَادَاه أَعرابيٌّ بصَوْتٍ لَهُ جَهْوَرِيٍّ : يَا
مُحَمَّدُ، فأجابهُ رسولُ الله ﷺ نَحْواً مِنْ صَوْتِه: «هَاؤُمْ»فقُلْتُ
لَهُ : وَيْحَكَ ! اغْضُضْ مِنْ صَوتِكَ فَإِنَّكَ عِنْدَ النَّبي ﷺ، وَقَدْ
نُهِيتَ عَنْ هذَا ! فقالَ : والله لاَ أغْضُضُ . قَالَ الأعرَابيُّ : المَرْءُ
يُحبُّ القَوْمَ وَلَمَّا يلْحَقْ بِهِمْ ؟ قَالَ النَّبيُّ ﷺ
«المَرْءُ
مَعَ مَنْ أَحَبَّ يَومَ القِيَامَةِ» فَمَا زَالَ يُحَدِّثُنَا حَتَّى ذَكَرَ بَاباً مِنَ المَغْرِبِ
مَسيرَةُ عَرْضِهِ أَوْ يَسِيرُ الرَّاكبُ في عَرْضِهِ أرْبَعينَ أَوْ سَبعينَ عاماً»
قَالَ سُفْيانُ أَحدُ الرُّواةِ : قِبَلَ الشَّامِ، خَلَقَهُ الله تَعَالَى يَوْمَ خَلَقَ السَّمَاواتِ والأَرْضَ
مَفْتوحاً للتَّوْبَةِ لا يُغْلَقُ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ مِنْهُ. رواه
الترمذي وغيره، وَقالَ: «حديث حسن صحيح».
৭/২০। যির্র ইবনে হুবাইশ বলেন
যে, আমি মোজার উপর মাসাহ করার মাসআলা জিজ্ঞাসা করার জন্য
সাফওয়ান ইবনে আস্সালের নিকট গেলাম। তিনি বললেন, ‘হে যির্র!
তোমার আগমনের উদ্দেশ্য কি?’ আমি বললাম, ‘জ্ঞান
অন্বেষণ।’ তিনি বললেন, ‘নিশ্চয়
ফিরিশতামণ্ডলী ঐ অন্বেষণের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে বিদ্যার্থীর জন্য নিজেদের ডানা
বিছিয়ে দেন।’
অতঃপর আমি বললাম, ‘পেশাব-পায়খানার পর মোজার উপর মাসাহ করার ব্যাপারে আমার মনে
সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে। যেহেতু আপনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর একজন
সাহাবী, তাই আপনার নিকট জানতে এলাম যে, আপনি
এ ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কিছু আলোচনা করতে শুনেছেন কি না?’ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ! যখন আমরা বিদেশ সফরে
বের হতাম, তখন তিনি আমাদেরকে (সফরে) তিনদিন ও তিন রাত মোজা
না খোলার আদেশ দিতেন (অর্থাৎ আমরা যেন এই সময়সীমা পর্যন্ত মাসাহ করতে থাকি), কিন্তু বড় অপবিত্রতা (সঙ্গম, বীর্যপাত
ইত্যাদি) হেতু অপবিত্র হলে (মোজা খুলতে হবে)। কিন্তু পেশাব-পায়খানা ও ঘুম থেকে
উঠলে নয়। (এ সবের পর রীতিমত মাসাহ করা জায়েয)।’ আমি বললাম, ‘আপনি কি তাঁকে ভালবাসা সম্পর্কে কিছু আলোচনা করতে শুনেছেন?’ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ। আমরা রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে সফরে ছিলাম। আমরা তাঁর সঙ্গে বসেছিলাম, এমন সময় এক বেদুঈন অতি উঁচু গলায় ডাক দিল, ‘‘হে
মুহাম্মাদ!’’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও
তাকে উঁচু আওয়াজে জবাব দিলেন, ‘‘এখানে এস!’’ আমি
তাকে বললাম, ‘‘আরে তুমি নিজের আওয়াজ নীচু কর! কেননা, তুমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আছ। তাঁর নিকট
এ রকম উঁচু গলায় কথা বলা তোমার (বরং সকলের) জন্য নিষিদ্ধ।’’ সে
(বেদুঈন) বলল, ‘‘আল্লাহর কসম! আমি তো আস্তে কথা বলবই না।’’ বেদুঈন বলল, ‘‘কোন ব্যক্তি কিছু লোককে
ভালবাসে; কিন্তু সে তাদের (মর্যাদায়) পৌঁছতে পারেনি? (এ ব্যাপারে আপনার মন্তব্য কী?)।’’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যুত্তরে বললেন, ‘‘মানুষ কিয়ামতের দিন ঐ লোকদের সঙ্গে থাকবে, যাদেরকে
সে ভালবাসবে।’’ পুনরায় তিনি আমাদের সাথে কথাবার্তা বলতে
থাকলেন। এমনকি তিনি পশ্চিম দিকের একটি দরজার কথা উল্লেখ করলেন, যার
প্রস্থের দূরত্ব ৪০ কিংবা ৭০ বছরের পথ অথবা তিনি বললেন, ওর
প্রস্থে একজন আরোহী ৪০ কিম্বা ৭০ বছর চলতে থাকবে। (সুফইয়ান
এই হাদীসের একজন বর্ণনাকারী বলেন যে, এই দরজা সিরিয়ার দিকে
অবস্থিত।) আল্লাহ তা‘আলা এই দরজাটি আসমান-যমীন সৃষ্টি
করার দিন সৃষ্টি করেছেন এবং সেই সময় থেকে তা তওবার জন্য খোলা রয়েছে। পশ্চিমদিক
থেকে সূর্য না উঠা পর্যন্ত এটা বন্ধ হবে না।’[6]
8/21 وعَنْ أَبِي سَعيد سَعْدِ بنِ مالكِ بنِ سِنَانٍ الخدريِّ رضي الله عنه : أنّ نَبِيَّ الله ﷺ، قَالَ: «كَانَ فِيمَنْ كَانَ قَبْلَكمْ رَجُلٌ
قَتَلَ تِسْعَةً وتِسْعينَ نَفْساً، فَسَأَلَ عَنْ أعْلَمِ أَهْلِ الأرضِ، فَدُلَّ
عَلَى رَاهِبٍ، فَأَتَاهُ . فقال : إنَّهُ قَتَلَ تِسعَةً وتِسْعِينَ نَفْساً
فَهَلْ لَهُ مِنْ تَوبَةٍ ؟ فقالَ : لا، فَقَتَلهُ فَكَمَّلَ بهِ مئَةً، ثُمَّ
سَأَلَ عَنْ أَعْلَمِ أَهْلِ الأَرضِ، فَدُلَّ عَلَى رَجُلٍ عَالِمٍ . فقَالَ :
إِنَّهُ قَتَلَ مِئَةَ نَفْسٍ فَهَلْ لَهُ مِنْ تَوْبَةٍ ؟ فقالَ : نَعَمْ، ومَنْ
يَحُولُ بَيْنَهُ وبَيْنَ التَّوْبَةِ ؟ انْطَلِقْ إِلى أرضِ كَذَا وكَذَا فإِنَّ
بِهَا أُناساً يَعْبُدُونَ الله تَعَالَى فاعْبُدِ الله مَعَهُمْ، ولاَ تَرْجِعْ
إِلى أَرْضِكَ فَإِنَّهَا أرضُ سُوءٍ، فانْطَلَقَ حَتَّى إِذَا نَصَفَ الطَّرِيقَ
أَتَاهُ الْمَوْتُ، فاخْتَصَمَتْ فِيهِ مَلائِكَةُ الرَّحْمَةِ ومَلائِكَةُ
العَذَابِ . فَقَالتْ مَلائِكَةُ الرَّحْمَةِ : جَاءَ تَائِباً، مُقْبِلاً
بِقَلبِهِ إِلى اللهِ تَعَالَى، وقالتْ مَلائِكَةُ العَذَابِ : إنَّهُ لمْ
يَعْمَلْ خَيراً قَطُّ، فَأَتَاهُمْ مَلَكٌ في صورَةِ آدَمِيٍّ فَجَعَلُوهُ
بَيْنَهُمْ - أيْ حَكَماً - فقالَ : قِيسُوا ما بينَ الأرضَينِ فَإلَى أيّتهما
كَانَ أدنَى فَهُوَ لَهُ . فَقَاسُوا فَوَجَدُوهُ أدْنى إِلى الأرْضِ التي أرَادَ،
فَقَبَضَتْهُ مَلائِكَةُ الرَّحمةِ».مُتَّفَقٌ عليه. وفي رواية في الصحيح: «فَكَانَ
إلى القَريَةِ الصَّالِحَةِ أقْرَبَ بِشِبْرٍ فَجُعِلَ مِنْ أهلِهَا».وفي
رواية في الصحيح: «فَأَوحَى الله تَعَالَى إِلى هذِهِ أَنْ تَبَاعَدِي، وإِلَى
هذِهِ أَنْ تَقَرَّبِي، وقَالَ : قِيسُوا مَا بيْنَهُما، فَوَجَدُوهُ إِلى هذِهِ
أَقْرَبَ بِشِبْرٍ فَغُفِرَ لَهُ».وفي رواية: «فَنَأى بصَدْرِهِ نَحْوَهَا».
৮/২১। আবূ সাঈদ সা‘দ ইবন মালেক
ইবন সিনান খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমাদের
পূর্বে (বনী ইস্রাইলের যুগে) একটি লোক ছিল; যে ৯৯টি মানুষকে
হত্যা করেছিল। অতঃপর লোকদেরকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় আলেম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল। তাকে
একটি খ্রিষ্টান সন্নাসীর কথা বলা হল। সে তার কাছে এসে বলল, ‘সে
৯৯ জন মানুষকে হত্যা করেছে। এখন কি তার তওবার কোন সুযোগ আছে?’ সে
বলল, ‘না।’ সুতরাং সে (ক্রোধান্বিত
হয়ে) তাকেও হত্যা করে একশত পূরণ করে দিল। পুনরায় সে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আলেম
সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল। এবারও তাকে এক আলেমের খোঁজ দেওয়া হল। সে তার নিকট এসে বলল
যে, সে একশত মানুষ খুন করেছে। সুতরাং তার কি তওবার কোন সুযোগ
আছে? সে বলল, ‘হ্যাঁ আছে! তার ও তওবার
মধ্যে কে বাধা সৃষ্টি করবে? তুমি অমুক দেশে চলে যাও। সেখানে
কিছু এমন লোক আছে যারা আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করে। তুমিও
তাদের সাথে আল্লাহর ইবাদত কর। আর তোমার নিজ দেশে ফিরে যেও না। কেননা,
ও দেশ পাপের দেশ।’ সুতরাং সে ব্যক্তি ঐ দেশ অভিমুখে
যেতে আরম্ভ করল। যখন সে মধ্য রাস্তায় পৌঁছল, তখন তার মৃত্যু
এসে গেল। (তার দেহ-পিঞ্জর থেকে আত্মা বের করার জন্য) রহমত ও আযাবের উভয় প্রকার
ফিরিশ্তা উপস্থিত হলেন। ফিরিশ্তাদের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক আরম্ভ হল। রহমতের
ফিরিশ্তাগণ বললেন, ‘এই ব্যক্তি তওবা করে এসেছিল এবং পূর্ণ
আন্তরিকতার সাথে আল্লাহর দিকে তার আগমন ঘটেছে।’ আর আযাবের
ফিরিশ্তারা বললেন, ‘এ এখনো ভাল কাজ করেনি (এই জন্য সে
শাস্তির উপযুক্ত)।’ এমতাবস্থায় একজন ফিরিশ্তা মানুষের রূপ
ধারণ করে উপস্থিত হলেন। ফিরিশ্তাগণ তাঁকে সালিস মানলেন। তিনি ফায়সালা দিলেন যে, ‘তোমরা দু’ দেশের দূরত্ব মেপে দেখ। (অর্থাৎ
এ যে এলাকা থেকে এসেছে সেখান থেকে এই স্থানের দূরত্ব এবং যে দেশে যাচ্ছিল তার
দূরত্ব) এই দুয়ের মধ্যে সে যার দিকে বেশী নিকটবর্তী হবে, সে
তারই অন্তর্ভুক্ত হবে।’ অতএব তাঁরা দূরত্ব মাপলেন এবং যে
দেশে সে যাওয়ার ইচ্ছা করেছিল, সেই (ভালো) দেশকে বেশী
নিকটবর্তী পেলেন। সুতরাং রহমতের ফিরিশতাগণ তার জান কবয করলেন।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
সহীহতে আর একটি বর্ণনায় এরূপ
আছে যে, ‘‘পরিমাপে ঐ ব্যক্তিকে সৎশীল লোকদের দেশের দিকে এক
বিঘত বেশী নিকটবর্তী পাওয়া গেল। সুতরাং তাকে ঐ সৎশীল ব্যক্তিদের দেশবাসী বলে গণ্য
করা হল।’’
সহীহতে আরো একটি বর্ণনায় এইরূপ
এসেছে যে, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা ঐ দেশকে
(যেখান থেকে সে আসছিল তাকে) আদেশ করলেন যে, তুমি দূরে সরে
যাও এবং এই সৎশীলদের দেশকে আদেশ করলেন যে, তুমি নিকটবর্তী
হয়ে যাও। অতঃপর বললেন, ‘তোমরা এ দু’য়ের
দূরত্ব মাপ।’ সুতরাং তাকে সৎশীলদের দেশের দিকে এক বিঘত বেশী
নিকটবর্তী পেলেন। যার ফলে তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হল।’’
9/22
وَعَن عَبدِ اللهِ بنِ كَعبِ بنِ مالكٍ، وَكَانَ قَائِدَ كَعبٍ رضي الله عنه مِنْ
بَنِيهِ حِينَ عمِيَ، قَالَ : سَمِعتُ كَعْبَ بنَ مالكٍ رضي
الله عنه يُحَدِّثُ
بحَديثهِ حينَ تَخلَّفَ عن رسولِ اللهِ ﷺ في غَزْوَةِ تَبُوكَ. قَالَ كعبٌ : لَمْ
أتَخَلَّفْ عَنْ رسولِ الله ﷺ في غَزْوَةٍ غزاها قط إلا في غزوة تَبُوكَ، غَيْرَ
أنّي قَدْ تَخَلَّفْتُ في غَزْوَةِ بَدْرٍ، ولَمْ يُعَاتَبْ أَحَدٌ تَخَلَّفَ
عَنْهُ ؛ إِنَّمَا خَرَجَ رسولُ الله ﷺ والمُسْلِمُونَ يُريدُونَ عِيرَ قُرَيْشٍ
حَتَّى جَمَعَ الله تَعَالَى بَيْنَهُمْ وبَيْنَ عَدُوِّهمْ عَلَى غَيْر ميعادٍ .
ولَقَدْ شَهِدْتُ مَعَ رسولِ الله ﷺ لَيلَةَ العَقَبَةِ حينَ تَوَاثَقْنَا عَلَى
الإِسْلامِ، وما أُحِبُّ أنَّ لي بِهَا مَشْهَدَ بَدْرٍ، وإنْ كَانَتْ بدرٌ
أذْكَرَ في النَّاسِ مِنْهَا. وكانَ مِنْ خَبَري حينَ تَخَلَّفْتُ عَنْ رسولِ
اللهِ ﷺ في غَزْوَةِ تَبُوكَ أنِّي لم أكُنْ قَطُّ أَقْوى ولا أَيْسَرَ مِنِّي
حِينَ تَخَلَّفْتُ عنْهُ في تِلكَ الغَزْوَةِ، وَالله ما جَمَعْتُ قَبْلَهَا
رَاحِلَتَيْنِ قَطُّ حَتَّى جَمَعْتُهُمَا في تِلْكَ الغَزْوَةِ وَلَمْ يَكُنْ
رسولُ الله ﷺ يُريدُ غَزْوَةً إلاَّ وَرَّى بِغَيرِها حَتَّى كَانَتْ تلْكَ
الغَزْوَةُ، فَغَزَاها رسولُ الله ﷺ في حَرٍّ شَديدٍ، واسْتَقْبَلَ سَفَراً
بَعِيداً وَمَفَازاً، وَاستَقْبَلَ عَدَداً كَثِيراً، فَجَلَّى للْمُسْلِمينَ
أمْرَهُمْ ليتَأهَّبُوا أُهْبَةَ غَزْوِهمْ فأَخْبرَهُمْ بوَجْهِهِمُ الَّذِي
يُريدُ، والمُسلِمونَ مَعَ رسولِ الله كثيرٌ وَلاَ يَجْمَعُهُمْ كِتَابٌ حَافِظٌ (
يُريدُ بذلِكَ الدّيوَانَ) قَالَ كَعْبٌ : فَقَلَّ رَجُلٌ يُريدُ أنْ يَتَغَيَّبَ
إلاَّ ظَنَّ أنَّ ذلِكَ سيخْفَى بِهِ ما لَمْ يَنْزِلْ فِيهِ وَحْيٌ مِنَ الله،
وَغَزا رَسُول الله ﷺ تِلْكَ الغَزوَةَ حِينَ طَابَت الثِّمَارُ وَالظِّلالُ،
فَأنَا إلَيْهَا أصْعَرُ، فَتَجَهَّزَ رسولُ الله ﷺ وَالمُسْلِمُونَ مَعَهُ
وطَفِقْتُ أغْدُو لكَيْ أتَجَهَّزَ مَعَهُ، فأرْجِعُ وَلَمْ أقْضِ شَيْئاً،
وأقُولُ في نفسي : أنَا قَادرٌ عَلَى ذلِكَ إِذَا أَرَدْتُ، فَلَمْ يَزَلْ
يَتَمادى بي حَتَّى اسْتَمَرَّ بالنَّاسِ الْجِدُّ، فأصْبَحَ رسولُ الله ﷺ غَادياً
والمُسْلِمُونَ مَعَهُ وَلَمْ أقْضِ مِنْ جِهَازي شَيْئاً، ثُمَّ غَدَوْتُ
فَرَجَعْتُ وَلَمْ أقْضِ شَيئاً، فَلَمْ يَزَلْ يَتَمَادَى بي حَتَّى أسْرَعُوا
وتَفَارَطَ الغَزْوُ، فَهَمَمْتُ أنْ أرْتَحِلَ فَأُدْرِكَهُمْ، فَيَا لَيْتَني
فَعَلْتُ، ثُمَّ لم يُقَدَّرْ ذلِكَ لي، فَطَفِقْتُ إذَا خَرَجْتُ في النَّاسِ
بَعْدَ خُرُوجِ رَسُولِ اللهِ ﷺ يَحْزُنُنِي أنِّي لا أرَى لي أُسْوَةً، إلاّ
رَجُلاً مَغْمُوصَاً عَلَيْهِ في النِّفَاقِ، أوْ رَجُلاً مِمَّنْ عَذَرَ اللهُ
تَعَالَى مِنَ الضُّعَفَاءِ، وَلَمْ يَذْكُرْنِي رَسُولُ اللهِ ﷺ حَتَّى بَلَغَ
تَبُوكَ، فَقَالَ وَهُوَ جَالِسٌ في القَوْمِ بِتَبُوكَ: «ما فَعَلَ كَعْبُ بْنُ
مَالِكٍ ؟» فَقَالَ رَجُلٌ مِنْ بَنِي سَلِمَةَ : يا رَسُولَ اللهِ،
حَبَسَهُ بُرْدَاهُ والنَّظَرُ في عِطْفَيْهِ. فَقَالَ لَهُ مُعَاذُ بْنُ جَبَلٍ رضي الله عنه : بِئْسَ مَا قُلْتَ ! واللهِ يا رَسُولَ اللهِ مَا عَلِمْنَا عَلَيْهِ
إلاَّ خَيْرَاً، فَسَكَتَ رَسُولُ اللهِ ﷺ . فَبَيْنَا هُوَ عَلى ذَلِكَ رَأى
رَجُلاً مُبْيِضاً يَزُولُ بِهِ السَّرَابُ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «كُنْ
أَبَا خَيْثَمَةَ»، فَإذَا هُوَ أبُو خَيْثَمَةَ الأنْصَارِيُّ وَهُوَ الَّذِي
تَصَدَّقَ بِصَاعِ التَّمْرِ حِيْنَ لَمَزَهُ المُنَافِقُونَ .قَالَ كَعْبٌ :
فَلَمَّا بَلَغَنِي أنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ قَدْ تَوَجَّهَ قَافِلاً مِنْ تَبُوكَ حَضَرَنِي
بَثِّي، فَطَفِقْتُ أتَذَكَّرُ الكَذِبَ وأقُولُ : بِمَ أخْرُجُ مِنْ سَخَطِهِ
غَدَاً ؟ وأسْتَعِيْنُ عَلى ذَلِكَ بِكُلِّ ذِي رأْيٍ مِنْ أهْلِي، فَلَمَّا
قِيْلَ : إنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ قّدْ أظَلَّ قَادِمَاً، زَاحَ عَنّي البَاطِلُ
حَتَّى عَرَفْتُ أَنِّي لَنْ أَنْجُوَ مِنْهُ بِشَيءٍ أَبَداً، فَأجْمَعْتُ
صدْقَهُ وأَصْبَحَ رَسُولُ الله ﷺ قَادِماً، وَكَانَ إِذَا قَدِمَ مِنْ سَفَرٍ
بَدَأَ بِالمَسْجِدِ فَرَكَعَ فِيهِ رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ جَلَسَ لِلنَّاسِ،
فَلَمَّا فَعَلَ ذلِكَ جَاءهُ المُخَلَّفُونَ يَعْتَذِرونَ إِلَيْه ويَحْلِفُونَ
لَهُ، وَكَانُوا بِضْعاً وَثَمانينَ رَجُلاً، فَقَبِلَ مِنْهُمْ عَلانِيَتَهُمْ
وَبَايَعَهُمْ واسْتَغْفَرَ لَهُمْ وَوَكَلَ سَرَائِرَهُمْ إِلى الله تَعَالَى،
حَتَّى جِئْتُ، فَلَمَّا سَلَّمْتُ تَبَسَّمَ تَبَسُّمَ المُغْضَبِ. ثُمَّ قَالَ: «تَعَالَ»،
فَجِئْتُ أمْشي حَتَّى جَلَسْتُ بَيْنَ يَدَيْهِ، فقالَ لي: «مَا خَلَّفَكَ ؟
ألَمْ تَكُنْ قَدِ ابْتَعْتَ ظَهْرَكَ ؟»قَالَ : قُلْتُ : يَا رسولَ الله،
إنّي والله لَوْ جَلَسْتُ عِنْدَ غَيْرِكَ مِنْ أهْلِ الدُّنْيَا لَرَأيتُ أنِّي
سَأخْرُجُ مِنْ سَخَطِهِ بِعُذْرٍ ؛ لقَدْ أُعْطِيتُ جَدَلاً، ولَكِنِّي والله
لَقَدْ عَلِمْتُ لَئِنْ حَدَّثْتُكَ اليوم حَدِيثَ كَذبٍ تَرْضَى به عنِّي
لَيُوشِكَنَّ الله أن يُسْخِطَكَ عَلَيَّ، وإنْ حَدَّثْتُكَ حَدِيثَ صِدقٍ تَجِدُ
عَلَيَّ فِيهِ إنّي لأَرْجُو فِيهِ عُقْبَى الله - عز وجل -، والله ما كَانَ لي
مِنْ عُذْرٍ، واللهِ مَا كُنْتُ قَطُّ أَقْوَى وَلاَ أَيْسَرَ مِنِّي حِينَ
تَخَلَّفْتُ عَنْكَ . قَالَ : فقالَ رسولُ الله ﷺ «أمَّا هَذَا فقَدْ صَدَقَ،
فَقُمْ حَتَّى يَقْضِيَ اللهُ فيكَ» وَسَارَ رِجَالٌ مِنْ بَنِي سَلِمَة فاتَّبَعُوني فَقالُوا لِي :
واللهِ مَا عَلِمْنَاكَ أذْنَبْتَ ذَنْباً قَبْلَ هذَا لَقَدْ عَجَزْتَ في أنْ لا
تَكونَ اعتَذَرْتَ إِلَى رَسُول الله ﷺ بما اعْتَذَرَ إليهِ المُخَلَّفُونَ،
فَقَدْ كَانَ كَافِيكَ ذَنْبَكَ اسْتِغْفَارُ رَسُولِ الله ﷺ لَكَ . قَالَ :
فَوالله ما زَالُوا يُؤَنِّبُونَنِي حَتَّى أَرَدْتُّ أَنْ أرْجعَ إِلَى رسولِ
الله ﷺ فأُكَذِّبَ نَفْسِي، ثُمَّ قُلْتُ لَهُمْ : هَلْ لَقِيَ هذَا مَعِيَ مِنْ
أَحَدٍ ؟ قَالُوا : نَعَمْ، لَقِيَهُ مَعَكَ رَجُلانِ قَالاَ مِثْلَ مَا قُلْتَ،
وَقيلَ لَهُمَا مِثْلَ مَا قيلَ لَكَ، قَالَ : قُلْتُ : مَنْ هُما ؟ قَالُوا :
مُرَارَةُ بْنُ الرَّبيع الْعَمْرِيُّ، وهِلاَلُ ابنُ أُمَيَّةَ الوَاقِفِيُّ ؟
قَالَ : فَذَكَرُوا لِي رَجُلَينِ صَالِحَينِ قَدْ شَهِدَا بَدْراً فيهِما
أُسْوَةٌ، قَالَ : فَمَضَيْتُ حِينَ ذَكَرُوهُما لِي . ونَهَى رَسُول الله ﷺ عَنْ
كَلامِنا أيُّهَا الثَّلاثَةُ مِنْ بَيْنِ مَنْ تَخَلَّفَ عَنْهُ، فاجْتَنَبَنَا
النَّاسُ - أوْ قَالَ : تَغَيَّرُوا لَنَا - حَتَّى تَنَكَّرَتْ لي في نَفْسي
الأَرْض، فَمَا هِيَ بالأرْضِ الَّتي أعْرِفُ، فَلَبِثْنَا عَلَى ذلِكَ خَمْسِينَ
لَيْلَةً . فَأمّا صَاحِبَايَ فَاسْتَكَانا وقَعَدَا في بُيُوتِهِمَا يَبْكيَان .
وأمَّا أنَا فَكُنْتُ أشَبَّ الْقَومِ وأجْلَدَهُمْ فَكُنْتُ أخْرُجُ فَأشْهَدُ
الصَّلاَةَ مَعَ المُسْلِمِينَ، وأطُوفُ في الأَسْوَاقِ وَلا يُكَلِّمُنِي أَحَدٌ،
وَآتِي رسولَ الله ﷺ فأُسَلِّمُ عَلَيْهِ وَهُوَ في مَجْلِسِهِ بَعْدَ الصَّلاةِ،
فَأَقُولُ في نَفسِي : هَلْ حَرَّكَ شَفَتَيْه برَدِّ السَّلام أَمْ لاَ ؟ ثُمَّ
أُصَلِّي قَريباً مِنْهُ وَأُسَارِقُهُ النَّظَرَ، فَإِذَا أقْبَلْتُ عَلَى
صَلاتِي نَظَرَ إلَيَّ وَإِذَا الْتَفَتُّ نَحْوَهُ أعْرَضَ عَنِّي، حَتَّى إِذَا
طَال ذلِكَ عَلَيَّ مِنْ جَفْوَةِ المُسْلِمينَ مَشَيْتُ حَتَّى تَسَوَّرْتُ
جِدارَ حائِط أبي قَتَادَةَ وَهُوَ ابْنُ عَمِّي وأَحَبُّ النَّاس إِلَيَّ،
فَسَلَّمْتُ عَلَيهِ فَوَاللهِ مَا رَدَّ عَليَّ السَّلامَ، فَقُلْتُ لَهُ : يَا
أَبَا قَتَادَةَ، أنْشُدُكَ بالله هَلْ تَعْلَمُنِي أُحِبُّ الله وَرَسُولَهُ ﷺ ؟
فَسَكَتَ، فَعُدْتُ فَنَاشَدْتُهُ فَسَكَتَ، فَعُدْتُ فَنَاشَدْتُهُ، فَقَالَ :
اللهُ ورَسُولُهُ أَعْلَمُ. فَفَاضَتْ عَيْنَايَ، وَتَوَلَّيْتُ حَتَّى
تَسَوَّرْتُ الجِدَارَ، فَبَيْنَا أَنَا أمْشِي في سُوقِ الْمَدِينة إِذَا
نَبَطِيٌّ مِنْ نَبَطِ أهْلِ الشَّام مِمّنْ قَدِمَ بالطَّعَامِ يَبيعُهُ
بِالمَدِينَةِ يَقُولُ : مَنْ يَدُلُّ عَلَى كَعْبِ بْنِ مَالِكٍ ؟ فَطَفِقَ
النَّاسُ يُشِيرُونَ لَهُ إلَيَّ حَتَّى جَاءنِي فَدَفَعَ إِلَيَّ كِتَاباً مِنْ مَلِكِ
غَسَّانَ، وَكُنْتُ كَاتباً . فَقَرَأْتُهُ فإِذَا فِيهِ : أَمَّا بَعْدُ،
فإِنَّهُ قَدْ بَلَغَنا أنَّ صَاحِبَكَ قَدْ جَفَاكَ وَلَمْ يَجْعَلْكَ اللهُ
بدَارِ هَوانٍ وَلاَ مَضْيَعَةٍ، فَالْحَقْ بنَا نُوَاسِكَ، فَقُلْتُ حِينَ
قَرَأْتُهَا : وَهَذِهِ أَيضاً مِنَ البَلاءِ، فَتَيَمَّمْتُ بهَا التَّنُّورَ
فَسَجَرْتُهَا، حَتَّى إِذَا مَضَتْ أَرْبَعُونَ مِنَ الْخَمْسينَ وَاسْتَلْبَثَ
الْوَحْيُ إِذَا رسولُ رسولِ الله ﷺ يَأتِيني، فَقالَ : إنَّ رسولَ الله ﷺ
يَأمُرُكَ أنْ تَعْتَزِلَ امْرَأتَكَ، فَقُلْتُ : أُطَلِّقُهَا أمْ مَاذَا أفْعَلُ
؟ فَقالَ : لاَ، بَلِ اعْتَزِلْهَا فَلاَ تَقْرَبَنَّهَا، وَأَرْسَلَ إِلَى
صَاحِبَيَّ بِمِثْلِ ذلِكَ . فَقُلْتُ لامْرَأتِي : الْحَقِي بِأهْلِكِ فَكُوني
عِنْدَهُمْ حَتَّى يَقْضِيَ اللهُ في هَذَا الأمْرِ. فَجَاءتِ امْرَأةُ هِلاَلِ
بْنِ أُمَيَّةَ رسولَ الله ﷺ فَقَالَتْ لَهُ : يَا رَسُولَ الله، إنَّ هِلاَلَ
بْنَ أمَيَّةَ شَيْخٌ ضَائِعٌ لَيْسَ لَهُ خَادِمٌ، فَهَلْ تَكْرَهُ أنْ أخْدُمَهُ
؟ قَالَ: «لاَ، وَلَكِنْ لاَ يَقْرَبَنَّكِ»فَقَالَتْ : إِنَّهُ واللهِ ما
بِهِ مِنْ حَرَكَةٍ إِلَى شَيْءٍ، وَوَالله مَا زَالَ يَبْكِي مُنْذُ كَانَ مِنْ
أمْرِهِ مَا كَانَ إِلَى يَومِهِ هَذَا . فَقَالَ لي بَعْضُ أهْلِي : لَو
اسْتَأْذَنْتَ رسولَ الله ﷺ في امْرَأَتِكَ فَقَدْ أَذِن لاِمْرَأةِ هلاَل بْنِ
أمَيَّةَ أنْ تَخْدُمَهُ ؟ فَقُلْتُ : لاَ أسْتَأذِنُ فيها رسولَ الله ﷺ، وَمَا
يُدْرِيني مَاذَا يقُول رسولُ الله ﷺ إِذَا اسْتَأْذَنْتُهُ، وَأَنَا رَجُلٌ شَابٌ
! فَلَبِثْتُ بِذَلِكَ عَشْرَ لَيَالٍ فَكَمُلَ لَنا خَمْسُونَ لَيْلَةً مِنْ
حِينَ نُهِيَ عَنْ كَلاَمِنا، ثُمَّ صَلَّيْتُ صَلاَةَ الْفَجْرِ صَبَاحَ
خَمْسِينَ لَيْلَةً عَلَى ظَهْرِ بَيْتٍ مِنْ بُيُوتِنَا، فَبَيْنَا أَنَا جَالِسٌ
عَلَى الْحالِ الَّتي ذَكَرَ الله تَعَالَى مِنَّا، قَدْ ضَاقَتْ عَلَيَّ نَفْسي
وَضَاقَتْ عَلَيَّ الأرْضُ بِمَا رَحُبَتْ، سَمِعْتُ صَوْتَ صَارِخٍ أوفَى عَلَى
سَلْعٍ يَقُولُ بِأعْلَى صَوتِهِ : يَا كَعْبَ بْنَ مَالِكٍ أبْشِرْ، فَخَرَرْتُ
سَاجِداً، وَعَرَفْتُ أنَّهُ قَدْ جَاءَ فَرَجٌ . فآذَنَ رسولُ الله ﷺ النَّاسَ
بِتَوْبَةِ الله - عز وجل - عَلَيْنَا حِينَ صَلَّى صَلاةَ الفَجْر فَذَهَبَ
النَّاسُ يُبَشِّرُونَنَا، فَذَهَبَ قِبَلَ صَاحِبَيَّ مُبَشِّرونَ وَرَكَضَ
رَجُلٌ إِلَيَّ فَرَساً وَسَعَى سَاعٍ مِنْ أسْلَمَ قِبَلِي، وَأَوْفَى عَلَى
الْجَبَلِ، فَكانَ الصَّوْتُ أسْرَعَ مِنَ الفَرَسِ، فَلَمَّا جَاءني الَّذِي
سَمِعْتُ صَوْتَهُ يُبَشِّرُني نَزَعْتُ لَهُ ثَوْبَيَّ فَكَسَوْتُهُمَا إيَّاهُ
بِبشارته، وَاللهِ مَا أمْلِكُ غَيْرَهُمَا يَوْمَئِذٍ، وَاسْتَعَرْتُ ثَوْبَيْنِ
فَلَبسْتُهُما، وَانْطَلَقْتُ أتَأمَّمُ رسولَ الله ﷺ يَتَلَقَّاني النَّاسُ
فَوْجاً فَوْجاً يُهنِّئونَني بالتَّوْبَةِ وَيَقُولُونَ لِي : لِتَهْنِكَ
تَوْبَةُ الله عَلَيْكَ . حَتَّى دَخَلْتُ الْمَسْجِدَ فَإِذَا رسولُ الله ﷺ
جَالِسٌ حَوْلَه النَّاسُ، فَقَامَ طَلْحَةُ بْنُ عُبَيْدِ اللهِ رضي الله عنه يُهَرْوِلُ
حَتَّى صَافَحَني وَهَنَّأَنِي، والله مَا قَامَ رَجُلٌ مِنَ المُهَاجِرينَ
غَيرُهُ - فَكَانَ كَعْبٌ لاَ يَنْسَاهَا لِطَلْحَةَ - . قَالَ كَعْبٌ : فَلَمَّا
سَلَّمْتُ عَلَى رَسُولِ الله ﷺ قَالَ وَهُوَ يَبْرُقُ وَجْهُهُ مِنَ السُّرُور: «أبْشِرْ
بِخَيْرِ يَومٍ مَرَّ عَلَيْكَ مُذْ وَلَدَتْكَ أُمُّكَ»فَقُلْتُ : أمِنْ
عِنْدِكَ يَا رَسُول الله أَمْ مِنْ عِندِ الله ؟ قَالَ: «لاَ، بَلْ مِنْ
عِنْدِ الله - عز وجل»، وَكَانَ رسولُ الله ﷺ إِذَا سُرَّ اسْتَنَارَ وَجْهُهُ
حَتَّى كَأَنَّ وَجْهَهُ قِطْعَةُ قَمَرٍ وَكُنَّا نَعْرِفُ ذلِكَ مِنْهُ،
فَلَمَّا جَلَسْتُ بَيْنَ يَدَيْهِ قُلْتُ: يَا رسولَ الله، إنَّ مِنْ تَوْبَتِي
أنْ أنْخَلِعَ مِنْ مَالِي صَدَقَةً إِلَى اللهِ وَإِلَى رَسُولهِ . فَقَالَ رسولُ
الله ﷺ: «أمْسِكَ عَلَيْكَ بَعْضَ مَالِكَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكَ».فقلتُ :
إِنِّي أُمْسِكُ سَهْمِي الَّذِي بِخَيبَر . وَقُلْتُ: يَا رسولَ الله، إنَّ الله
تَعَالَى إِنَّمَا أنْجَانِي بالصِّدْقِ، وإنَّ مِنْ تَوْبَتِي أنْ لا أُحَدِّثَ
إلاَّ صِدْقاً مَا بَقِيتُ، فوَالله مَا عَلِمْتُ أَحَداً مِنَ المُسْلِمينَ
أبْلاهُ الله تَعَالَى في صِدْقِ الحَدِيثِ مُنْذُ ذَكَرْتُ ذلِكَ لِرسولِ الله ﷺ
أحْسَنَ مِمَّا أبْلانِي الله تَعَالَى، واللهِ مَا تَعَمَّدْتُ كِذْبَةً مُنْذُ
قُلْتُ ذلِكَ لِرسولِ الله ﷺ إِلَى يَومِيَ هَذَا، وإنِّي لأرْجُو أنْ يَحْفَظَنِي
الله تَعَالَى فيما بَقِيَ، قَالَ : فأَنْزَلَ الله تَعَالَى : ﴿ لَّقَد تَّابَ
ٱللَّهُ عَلَى ٱلنَّبِيِّ وَٱلۡمُهَٰجِرِينَ وَٱلۡأَنصَارِ ٱلَّذِينَ ٱتَّبَعُوهُ فِي
سَاعَةِ ٱلۡعُسۡرَةِ ﴾ حَتَّى بَلَغَ : ﴿ إِنَّهُۥ بِهِمۡ
رَءُوفٞ رَّحِيمٞ ١١٧ وَعَلَى ٱلثَّلَٰثَةِ ٱلَّذِينَ خُلِّفُواْ حَتَّىٰٓ إِذَا ضَاقَتۡ
عَلَيۡهِمُ ٱلۡأَرۡضُ بِمَا رَحُبَتۡ ﴾ حَتَّى بَلَغَ : ﴿ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَ
وَكُونُواْ مَعَ ٱلصَّٰدِقِينَ ﴾ [التوبة: ١١٧، ١١٩] قَالَ كَعْبٌ : واللهِ ما أنْعَمَ الله عَليَّ
مِنْ نعمةٍ قَطُّ بَعْدَ إذْ هَدَاني اللهُ للإِسْلامِ أَعْظَمَ في نَفْسِي مِنْ
صِدقِي رسولَ الله ﷺ أنْ لا أكونَ كَذَبْتُهُ، فَأَهْلِكَ كما هَلَكَ الَّذينَ
كَذَبُوا ؛ إنَّ الله تَعَالَى قَالَ للَّذِينَ كَذَبُوا حِينَ أنْزَلَ الوَحْيَ
شَرَّ مَا قَالَ لأَحَدٍ، فقال الله تَعَالَى : ﴿ سَيَحۡلِفُونَ بِٱللَّهِ لَكُمۡ إِذَا
ٱنقَلَبۡتُمۡ إِلَيۡهِمۡ لِتُعۡرِضُواْ عَنۡهُمۡۖ فَأَعۡرِضُواْ عَنۡهُمۡۖ إِنَّهُمۡ
رِجۡسٞۖ وَمَأۡوَىٰهُمۡ جَهَنَّمُ جَزَآءَۢ بِمَا كَانُواْ يَكۡسِبُونَ ٩٥ يَحۡلِفُونَ
لَكُمۡ لِتَرۡضَوۡاْ عَنۡهُمۡۖ فَإِن تَرۡضَوۡاْ عَنۡهُمۡ فَإِنَّ ٱللَّهَ لَا يَرۡضَىٰ
عَنِ ٱلۡقَوۡمِ ٱلۡفَٰسِقِينَ ٩٦ ﴾ [التوبة: ٩٥، ٩٦] قَالَ كَعْبٌ :
كُنّا خُلّفْنَا أيُّهَا الثَّلاَثَةُ عَنْ أمْرِ أُولئكَ الذينَ قَبِلَ مِنْهُمْ
رسولُ الله ﷺ حِينَ حَلَفُوا لَهُ فَبَايَعَهُمْ وَاسْتَغْفَرَ لَهُمْ وَأَرْجَأَ
رَسُولُ الله ﷺ أمْرَنَا حَتَّى قَضَى الله تَعَالَى فِيهِ بذِلكَ . قَالَ الله
تَعَالَى: ﴿ وَعَلَى ٱلثَّلَٰثَةِ
ٱلَّذِينَ خُلِّفُواْ ﴾ وَليْسَ الَّذِي ذَكَرَ مِمَّا
خُلِّفْنَا تَخلُّفُنَا عن الغَزْو، وإنَّمَا هُوَ تَخْلِيفُهُ إيّانا وإرْجَاؤُهُ
أمْرَنَا عَمَّنْ حَلَفَ لَهُ واعْتَذَرَ إِلَيْهِ فقبِلَ مِنْهُ. مُتَّفَقٌ عليه .
وفي رواية :
أنَّ النَّبيّ ﷺ خَرَجَ في غَزْوَةِ تَبْوكَ يَومَ الخَميسِ وكانَ يُحِبُّ أنْ
يخْرُجَ يومَ الخمِيس . وفي رواية : وكانَ لاَ يقْدمُ مِنْ سَفَرٍ إلاَّ نَهَاراً
في الضُّحَى، فإِذَا قَدِمَ بَدَأَ بالمَسْجِدِ فَصَلَّى فِيهِ رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ
جَلَسَ فِيهِ.
৯/২২। কা‘ব
ইবনে মালেকের পুত্র আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিত, এই আব্দুল্লাহ
কা‘ব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-এর
ছেলেদের মধ্যে তাঁর পরিচালক ছিলেন, যখন তিনি অন্ধ হয়ে যান।
তিনি (আব্দুল্লাহ) বলেন, আমি (আমার পিতা) কা‘ব
ইবনে মালেককে ঐ ঘটনা বর্ণনা করতে শুনেছি, যখন তিনি তাবূকের
যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিছনে থেকে যান। তিনি বলেন, ‘আমি তাবূক যুদ্ধ ছাড়া যে যুদ্ধই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেছেন তাতে কখনোই তাঁর পিছনে থাকিনি। অবশ্য বদরের যুদ্ধ থেকে
আমি পিছনে রয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু বদরের যুদ্ধে যে অংশগ্রহণ করেনি, তাকে
ভৎর্সনা করা হয়নি। আসল ব্যাপার ছিল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও
মুসলিমগণ কুরাইশের কাফেলার পশ্চাদ্ধাবনে বের হয়েছিলেন। (শুরুতে যুদ্ধের নিয়ত ছিল
না।) পরিশেষে আল্লাহ তা‘আলা তাঁদেরকে ও তাঁদের শত্রুকে
(পূর্বঘোষিত) ওয়াদা ছাড়াই একত্রিত করেছিলেন। আমি আক্বাবার রাতে (মিনায়)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে উপস্থিত ছিলাম,
যখন আমরা ইসলামের উপর প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছিলাম। আক্বাবার রাত অপেক্ষা আমার
নিকটে বদরের উপস্থিতি বেশী প্রিয় ছিল না। যদিও বদর (অভিযান) লোক মাঝে ওর চাইতে
বেশী প্রসিদ্ধ। (কা‘ব বলেন,) আর আমার
তাবূকের যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিছনে থাকার ঘটনা
এরূপ যে, এই যুদ্ধ হতে পিছনে থাকার সময় আমি যতটা সমর্থ ও
সচ্ছল ছিলাম অন্য কোন সময় ছিলাম না। আল্লাহর কসম! এর পূর্বে আমার নিকট কখনো দু’টি সওয়ারী (বাহন) একত্রিত হয়নি। কিন্তু এই (যুদ্ধের) সময়ে একই
সঙ্গে দু’টি সওয়ারী আমার নিকট মওজুদ ছিল। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিয়ম ছিল, যখন তিনি কোন
যুদ্ধে বের হওয়ার ইচ্ছা করতেন, তখন ‘তাওরিয়া’ করতেন (অর্থাৎ সফরের গন্তব্যস্থলের নাম গোপন রেখে সাধারণ অন্য
স্থানের নাম নিতেন, যাতে শত্রুরা টের না পায়)। এই যুদ্ধ
এইভাবে চলে এল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভীষণ গরমে এই যুদ্ধে
বের হলেন এবং দূরবর্তী সফর ও দীর্ঘ মরুভূমির সম্মুখীন হলেন। আর বহু সংখ্যক শত্রুরও
সম্মুখীন হলেন। এই জন্য তিনি মুসলিমদের সামনে বিষয়টি স্পষ্ট করে দিলেন; যাতে তাঁরা সেই অনুযায়ী যথোচিত প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। ফলে তিনি
সেই দিকও বলে দিলেন, যেদিকে যাবার ইচ্ছা করেছেন। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে অনেক মুসলিম ছিলেন এবং তাদের কাছে কোন
হাজিরা বহি ছিল না, যাতে তাদের নামসমূহ লেখা হবে। এই জন্য যে
ব্যক্তি (যুদ্ধে) অনুপস্থিত থাকত সে এই ধারণাই করত যে, আল্লাহর
অহী অবতীর্ণ ছাড়া তার অনুপস্থিতির কথা গুপ্ত থাকবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই যুদ্ধ ফল পাকার মৌসুমে করেছিলেন এবং সে সময় (গাছের) ছায়াও
উৎকৃষ্ট (ও প্রিয়) ছিল, আর আমার টানও ছিল সেই ফল ও ছায়ার
দিকে। সুতরাং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও মুসলিমরা (যুদ্ধের
জন্য) প্রস্তুতি নিলেন। আর (আমার এই অবস্থা ছিল যে,) আমি
সকালে আসতাম, যেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে আমিও (যুদ্ধের) প্রস্তুতি নিই। কিন্তু কোন ফায়সালা না করেই
আমি (বাড়ী) ফিরে আসতাম এবং মনে মনে বলতাম যে, আমি যখনই ইচ্ছা
করব, যুদ্ধে শামিল হয়ে যাব। কেননা, আমি
এর ক্ষমতা রাখি। আমার এই গড়িমসি অবস্থা অব্যাহত রইল এবং লোকেরা জিহাদের আয়োজনে
প্রবৃত্ত থাকলেন।
অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও মুসলিমরা একদিন সকালে জিহাদে বেরিয়ে পড়লেন এবং আমি প্রস্তুতির
ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্তেই উপনীত হতে পারলাম না। আমি আবার সকালে এলাম এবং বিনা
সিদ্ধান্তেই (বাড়ী) ফিরে গেলাম। সুতরাং আমার এই অবস্থা অব্যাহত থেকে গেল। ওদিকে
মুসলিম সেনারা দ্রুতগতিতে আগে বাড়তে থাকল এবং যুদ্ধের ব্যাপারও ক্রমশঃ এগুতে লাগল।
আমি ইচ্ছা করলাম যে, আমিও সফরে রওয়ানা হয়ে তাদের সঙ্গ পেয়ে
নিই। হায়! যদি আমি তাই করতাম (তাহলে কতই না ভাল হত)। কিন্তু এটা আমার ভাগ্যে হয়ে
উঠল না। এদিকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চলে যাওয়ার পর যখনই
আমি লোকের মাঝে আসতাম, তখন এ জন্যই দুঃখিত ও চিন্তিত হতাম যে, এখন (মদীনায়) আমার সামনে কোন আদর্শ আছে তো কেবলমাত্র মুনাফিক
কিংবা এত দুর্বল ব্যক্তিরা যাদেরকে আল্লাহ ক্ষমার্হ বা অপারগ বলে গণ্য করেছেন।
সম্পূর্ণ রাস্তা রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে স্মরণ করলেন না। তাবূক পৌঁছে যখন তিনি লোকের
মাঝে বসেছিলেন, তখন আমাকে স্মরণ করলেন এবং বললেন, ‘‘কা‘ব ইবন মালেকের কী হয়েছে?’’
বানু সালেমাহ (গোত্রের) একটি লোক বলে উঠল, ‘‘হে
আল্লাহর রাসূল! তার দুই চাদর এবং দুই পার্শ্ব দর্শন (অর্থাৎ ধন ও তার অহঙ্কার)
তাকে আটকে দিয়েছে।’’ (এ কথা শুনে) মু‘আয ইবন জাবাল
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ‘‘বাজে কথা
বললে তুমি। আল্লাহর কসম, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা তার
ব্যাপারে ভাল ছাড়া অন্য কিছু জানি না।’’ রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম নীরব থাকলেন।
এসব কথাবার্তা চলছিল এমতাবস্থায়
তিনি একটি লোককে সাদা পোশাক পরে (মরুভূমির) মরীচিকা ভেদ করে আসতে দেখলেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তুমি
যেন আবূ খাইসামাহ হও।’’ (দেখা গেল,) সত্যিকারে
তিনি আবূ খাইসামাহ আনসারীই ছিলেন। আর তিনি সেই ব্যক্তি ছিলেন, যিনি
একবার আড়াই কিলো খেজুর সদকাহ করেছিলেন বলে মুনাফিকরা (তা অল্প মনে করে) তাঁকে
বিদ্রূপ করেছিল।’
কা‘ব বলেন, ‘অতঃপর যখন আমি সংবাদ পেলাম যে, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাবূক থেকে ফিরার সফর শুরু করে দিয়েছেন, তখন আমার মনে কঠিন দুশ্চিন্তা এসে উপস্থিত হল এবং মিথ্যা অজুহাত
পেশ করার চিন্তা করতে লাগলাম এবং মনে মনে বলতে লাগলাম যে, আগামী
কাল যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফিরবেন, সে সময়
আমি তাঁর রোষানল থেকে বাঁচব কি উপায়ে? আর এ ব্যাপারে আমি
পরিবারের প্রত্যেক বুদ্ধিমান মানুষের সহযোগিতা চাইতে লাগলাম। অতঃপর যখন বলা হল যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আগমন একদম
নিকটবর্তী, তখন আমার অন্তর থেকে বাতিল (পরিকল্পনা) দূর হয়ে
গেল। এমনকি আমি বুঝতে পারলাম যে, মিথ্যা বলে আমি কখনই বাঁচতে
পারব না। সুতরাং আমি সত্য বলার দৃঢ় সঙ্কল্প করে নিলাম। এদিকে রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকালে (মদীনায়) পদার্পণ করলেন। তাঁর অভ্যাস ছিল, যখন তিনি সফর থেকে (বাড়ি) ফিরতেন, তখন
সর্বপ্রথম তিনি মসজিদে দু’ রাকআত নামায পড়তেন। তারপর (সফরের
বিশেষ বিশেষ খবর শোনাবার জন্য) লোকেদের জন্য বসতেন। সুতরাং এই সফর থেকে ফিরেও যখন
পূর্ববৎ কাজ করলেন, তখন মুনাফেকরা এসে তাঁর নিকট ওজর-আপত্তি
পেশ করতে লাগল এবং কসম খেতে আরম্ভ করল। এরা সংখ্যায় আশি জনের কিছু বেশী ছিল। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বাহ্যিক ওজর গ্রহণ করে নিলেন,
তাদের বায়আত নিলেন, তাদের জন্য (আল্লাহর কাছে) ক্ষমা
প্রার্থনা করলেন এবং তাদের গোপনীয় অবস্থা আল্লাহকে সঁপে দিলেন। অবশেষে আমিও তাঁর
খিদমতে হাজির হলাম। অতঃপর যখন আমি তাঁকে সালাম দিলাম, তখন
তিনি রাগান্বিত ব্যক্তির হাসির মত মুচকি হাসলেন। অতঃপর তিনি বললেন,
‘‘সামনে এসো!’’ আমি তাঁর সামনে এসে বসে পড়লাম। তিনি
আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘‘তুমি কেন জিহাদ থেকে পিছনে রয়ে গেলে? তুমি কি বাহন ক্রয় করনি?’’ আমি বললাম, ‘‘হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর কসম! আমি যদি আপনি ছাড়া দুনিয়ার
অন্য কোন লোকের কাছে বসতাম, তাহলে নিশ্চিতভাবে কোন মিথ্যা
ওজর পেশ করে তার অসন্তুষ্টি থেকে বেঁচে যেতাম। বাকচাতুর্য (বা তর্ক-বিতর্ক করা)র
অভিজ্ঞতা আমার যথেষ্ট রয়েছে। কিন্তু আল্লাহর কসম! আমি জানি যে, যদি
আজ আপনার সামনে মিথ্যা বলি, যাতে আপনি আমার প্রতি সন্তুষ্ট
হয়ে যাবেন, তাহলে অতি সত্বর আল্লাহ তা’আলা
(অহী দ্বারা সংবাদ দিয়ে) আপনাকে আমার উপর অসন্তুষ্ট করে দেবেন। পক্ষান্তরে আমি যদি
আপনাকে সত্য কথা বলি, তাহলে আপনি আমার উপর অসন্তুষ্ট হবেন।
কিন্তু আমি আল্লাহর নিকট এর সুফলের আশা রাখি। (সেহেতু আমি সত্য কথা বলছি যে,) আল্লাহর কসম! (আপনার সাথে জিহাদে যাওয়ার ব্যাপারে) আমার কোন
অসুবিধা ছিল না। আল্লাহর কসম! আপনার সাথ ছেড়ে পিছনে থাকার সময় আমি যতটা সমর্থ ও
সচ্ছল ছিলাম ততটা কখনো ছিলাম না।’’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘এই লোকটি নিশ্চিতভাবে সত্য কথা
বলেছে। বেশ, তুমি এখান থেকে চলে যাও, যে
পর্যন্ত তোমার ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা কোন ফায়সালা না করবেন।’’
আমার পিছনে পিছনে বনু সালেমাহ
(গোত্রের) কিছু লোক এল এবং আমাকে বলল যে, ‘‘আল্লাহর কসম!
আমরা অবগত নই যে, তুমি এর পূর্বে কোন পাপ করেছ। অন্যান্য
পিছনে থেকে যাওয়া লোকেদের ওজর পেশ করার মত তুমিও কোন ওজর পেশ করলে না কেন? তোমার পাপ মোচনের জন্য এটাই যথেষ্ট ছিল যে, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমার জন্য (আল্লাহর নিকট) ক্ষমা প্রার্থনা করতেন।’’ কা‘ব বলেন, ‘আল্লাহর
কসম! লোকেরা আমাকে আমার সত্য কথা বলার জন্য তিরস্কার করতে থাকল। পরিশেষে আমার
ইচ্ছা হল যে, আমি দ্বিতীয়বার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে গিয়ে প্রথম কথা অস্বীকার করি (এবং কোন মিথ্যা ওজর পেশ
করে দিই।) আবার আমি তাদেরকে বললাম, ‘‘আমার এ ঘটনা কি অন্য
কারো সাথে ঘটেছে?’’ তাঁরা বললেন, ‘‘হ্যাঁ।
তোমার মত আরো দু’জন সমস্যায় পড়েছে। (রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটে) তারাও সেই কথা বলেছে, যা তুমি
বলেছ এবং তাদেরকে সেই কথাই বলা হয়েছে, যা তোমাকে বলা হয়েছে।’’ আমি তাদেরকে বললাম, ‘‘তারা দু’জন কে?’’ তারা বলল, ‘‘মুরারাহ
ইবনে রাবী‘ আমরী ও হিলাল ইবনে উমাইয়্যাহ ওয়াক্বেফী।’’ এই দু’জন যাঁদের কথা তারা আমার কাছে বর্ণনা করল, তাঁরা
সৎলোক ছিলেন এবং বদর যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন; তাঁদের মধ্যে
আমার জন্য আদর্শ ছিল। যখন তারা সে দু’জন ব্যক্তির কথা বলল, তখন আমি আমার পূর্বেকার অবস্থার (সত্যের) উপর অনড় থেকে গেলাম
(এবং আমার কিংকর্তব্যবিমূঢ়তা দূরীভূত হল। যাতে আমি তাদের ভৎর্সনার কারণে পতিত
হয়েছিলাম)। (এরপর) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদেরকে পিছনে
অবস্থানকারীদের মধ্যে আমাদের তিনজনের সাথে কথাবার্তা বলতে নিষেধ করে দিলেন।’
কা‘ব
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, ‘লোকেরা
আমাদের থেকে পৃথক হয়ে গেল।’ অথবা বললেন, ‘লোকেরা
আমাদের জন্য পরিবর্তন হয়ে গেল। পরিশেষে পৃথিবী আমার জন্য আমার অন্তরে অপরিচিত মনে
হতে লাগল। যেন এটা সেই পৃথিবী নয়, যা আমার পরিচিত ছিল।
এইভাবে আমরা ৫০টি রাত কাটালাম। আমার দুই সাথীরা তো নরম হয়ে ঘরের মধ্যে কান্নাকাটি
আরম্ভ করে দিলেন। কিন্তু আমি দলের মধ্যে সবচেয়ে যুবক ও বলিষ্ঠ ছিলাম। ফলে আমি ঘর
থেকে বের হয়ে মুসলিমদের সাথে নামাযে হাজির হতাম এবং বাজারসমূহে ঘোরাফেরা করতাম।
কিন্তু কেউ আমার সঙ্গে কথা বলত না। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর খিদমতে হাজির হতাম এবং তিনি যখন নামাযের পর বসতেন, তখন
তাঁকে সালাম দিতাম, আর আমি মনে মনে বলতাম যে, তিনি
আমার সালামের জওয়াবে ঠোঁট নড়াচ্ছেন কি না? তারপর আমি তাঁর
নিকটেই নামায পড়তাম এবং আড়চোখে তাঁকে দেখতাম। (দেখতাম,) যখন
আমি নামাযে মনোযোগী হচ্ছি, তখন তিনি আমার দিকে তাকাচ্ছেন
এবং যখন আমি তাঁর দিকে দৃষ্টি ফিরাচ্ছি, তখন তিনি আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন!
অবশেষে যখন আমার সাথে মুসলিমদের
বিমুখতা দীর্ঘ হয়ে গেল, তখন একদিন আমি আবূ ক্বাতাদাহ
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-এর বাগানে দেওয়াল
ডিঙিয়ে (তাতে প্রবেশ করলাম।) সে (আবূ ক্বাতাদাহ) আমার চাচাতো ভাই এবং আমার
সর্বাধিক প্রিয় লোক ছিল। আমি তাকে সালাম দিলাম। কিন্তু আল্লাহর কসম! সে আমাকে
সালামের জওয়াব দিল না। আমি তাকে বললাম, ‘‘হে আবূ ক্বতাদাহ!
আমি তোমাকে আল্লাহর কসম দিয়ে জিজ্ঞাসা করছি, তুমি কি জান যে, আমি আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে
ভালবাসি?’’ সে নিরুত্তর থাকল। আমি দ্বিতীয়বার কসম দিয়ে
জিজ্ঞাসা করলাম। এবারেও সে চুপ থাকল। আমি তৃতীয়বার কসম দিয়ে প্রশ্নের পুনরাবৃত্তি
করলে সে বলল, ‘‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই বেশী জানেন।’’ এ কথা শুনে আমার চক্ষুদ্বয় থেকে অশ্রু বইতে লাগল এবং যেভাবে
গিয়েছিলাম, আমি সেইভাবেই দেওয়াল ডিঙিয়ে ফিরে এলাম।
এরই মধ্যে একদিন মদীনার বাজারে
হাঁটছিলাম। এমন সময় শাম দেশের কৃষকদের মধ্যে একজন কৃষককে---যে মদীনায় খাদ্যদ্রব্য
বিক্রি করতে এসেছিল---বলতে শুনলাম, কে আমাকে কা‘ব ইবন মালেককে দেখিয়ে দেবে? লোকেরা আমার
দিকে ইঙ্গিত করতে লাগল। ফলে সে ব্যক্তি আমার নিকটে এসে আমাকে ‘গাস্সান’-এর বাদশার একখানি পত্র দিল। আমি লিখা-পড়া জানতাম তাই আমি
পত্রখানি পড়লাম। পত্রে লিখা ছিলঃ-
‘--- অতঃপর আমরা এই সংবাদ পেয়েছি যে, আপনার সঙ্গী (মুহাম্মাদ) আপনার প্রতি দুর্ব্যবহার করেছে। আল্লাহ
আপনাকে লাঞ্ছিত ও বঞ্চিত অবস্থায় থাকার জন্য সৃষ্টি করেননি। আপনি আমাদের কাছে চলে
আসুন; আমরা আপনার প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন করব। পত্র পড়ে
আমি বললাম, ‘‘এটাও অন্য এক বালা (পরীক্ষা)।’’ সুতরাং
আমি ওটাকে চুলোয় ফেলে জ্বালিয়ে দিলাম। অতঃপর যখন ৫০ দিনের মধ্যে ৪০ দিন গত হয়ে গেল
এবং অহী আসা বন্ধ ছিল এই অবস্থায় আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর একজন দূত আমার নিকট এসে বলল, ‘‘রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাকে তোমার স্ত্রী থেকে পৃথক থাকার আদেশ
দিচ্ছেন!’’ আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘‘আমি
কি তাকে তালাক দেব, না কী করব?’’ সে
বলল, ‘‘তালাক নয় বরং তার নিকট থেকে আলাদা থাকবে, মোটেই ওর নিকটবর্তী হবে না।’’ আমার দুই
সাথীর নিকটেও এই বার্তা পৌঁছে দিলেন। আমি আমার স্ত্রীকে বললাম, ‘‘তুমি
পিত্রালয়ে চলে যাও এবং সেখানে অবস্থান কর---যে পর্যন্ত আল্লাহ তা‘আলা
এ ব্যাপারে কোন ফায়সালা না করেন।’’ (আমার সাথীদ্বয়ের মধ্যে
একজন সাথী) হিলাল ইবন উমাইয়ার স্ত্রী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বলল, ‘‘ইয়া রসূলাল্লাহ! হিলাল ইবন
উমাইয়াহ খুবই বৃদ্ধ মানুষ, তার কোন খাদেমও নেই,
সেহেতু আমি যদি তার খিদমত করি, তবে আপনি কি এটা
অপছন্দ করবেন?’’ তিনি বললেন, ‘‘না, (অর্থাৎ তুমি তার খিদমত করতে পার।) কিন্তু সে যেন তোমার (মিলন
উদ্দেশ্যে) নিকটবর্তী না হয়।’’ (হিলালের স্ত্রী) বলল, ‘‘আল্লাহর কসম! (দুঃখের কারণে এ ব্যাপারে) তার কোন সক্রিয়তা নেই।
আল্লাহর কসম! যখন থেকে এ ব্যাপার ঘটেছে তখন থেকে আজ পর্যন্ত সে সর্বদা কাঁদছে।’’
(কা‘ব
বলেন,) ‘আমাকে আমার পরিবারের কিছু লোক বলল যে,
‘‘তুমিও যদি নিজ স্ত্রীর ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর নিকট অনুমতি চাইতে, (তাহলে তা তোমার পক্ষে ভাল
হত।) তিনি হিলাল ইবন উমাইয়ার স্ত্রীকে তো তার খিদমত করার অনুমতি দিয়ে দিয়েছেন।’’ আমি বললাম, ‘‘এ ব্যাপারে আমি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট অনুমতি চাইব না। জানি না, যখন
আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটে অনুমতি চাইব, তখন তিনি কী বলবেন। কারণ, আমি তো যুবক
মানুষ।’’
এভাবে আরও দশদিন কেটে গেল। যখন
থেকে লোকদেরকে আমাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে নিষেধ করা হয়েছে, তখন
থেকে এ পর্যন্ত আমাদের পঞ্চাশ রাত পূর্ণ হয়ে গেল। আমি পঞ্চাশতম রাতে আমাদের এক
ঘরের ছাদের উপর ফজরের নামায পড়লাম। নামায পড়ার পর আমি এমন অবস্থায় বসে আছি যার
বর্ণনা আল্লাহ তা‘আলা আমাদের ব্যাপারে দিয়েছেন- আমার জীবন
আমার জন্য দুর্বিষহ হয়ে পড়েছিল এবং পৃথিবী প্রশস্ত হওয়া সত্ত্বেও আমার প্রতি
সংকীর্ণ হয়ে উঠেছিল---এমন সময় আমি এক চিৎকারকারীর আওয়ায শুনতে পেলাম,
সে সাল‘আ পাহাড়ের উপর চড়ে উচ্চৈঃস্বরে বলছে, ‘‘হে কা‘ব ইবনে মালেক! তুমি সুসংবাদ নাও!’’ আমি তখন
(খুশীতে শুকরিয়ার) সিজদায় পড়ে গেলাম এবং বুঝতে পারলাম যে, (আল্লাহর
পক্ষ থেকে) মুক্তি এসেছে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের নামায পড়ার পর লোকদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন যে,
আল্লাহ আয্যা অজাল্ল্ আমাদের তওবা কবূল করে নিয়েছেন। সুতরাং লোকেরা
আমাদেরকে সুসংবাদ দেওয়ার জন্য আসতে আরম্ভ করল। এক ব্যক্তি আমার দিকে অতি দ্রুত
গতিতে ঘোড়া ছুটিয়ে এল। সে ছিল আসলাম (গোত্রের) এক ব্যক্তি। আমার দিকে সে দৌড়ে এল
এবং পাহাড়ের উপর চড়ে (আওয়াজ দিল)। তার আওয়াজ ঘোড়ার চেয়েও দ্রুতগামী ছিল। সুতরাং
যখন সে আমার কাছে এল, যার সুসংবাদের আওয়াজ আমি শুনেছিলাম, তখন আমি তার সুসংবাদ দানের বিনিময়ে আমার দেহ থেকে দু’খানি বস্ত্র খুলে তাকে পরিয়ে দিলাম। আল্লাহর কসম! সে সময় আমার
কাছে এ দু’টি ছাড়া আর কিছু ছিল না। আর আমি নিজে দু’খানি কাপড় অস্থায়ীভাবে ধার নিয়ে পরিধান করলাম এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। পথে লোকেরা দলে দলে
আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আমাকে মুবারকবাদ জানাতে
লাগল এবং বলতে লাগল, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা
তোমার তওবা কবুল করেছেন, তাই তোমাকে ধন্যবাদ।’’
অতঃপর আমি মসজিদে প্রবেশ করলাম। (দেখলাম,) রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসে আছেন এবং তাঁর চারপাশে লোকজন আছে। ত্বালহা
ইবনে উবাইদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু উঠে ছুটে এসে আমার
সঙ্গে মুসাফাহা করলেন এবং আমাকে মুবারকবাদ দিলেন। আল্লাহর কসম! মুহাজিরদের মধ্যে
তিনি ছাড়া আর কেউ উঠলেন না।’ সুতরাং কা‘ব
ত্বালহা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-এর এই
ব্যবহার কখনো ভুলতেন না। কা‘ব বলেন, ‘যখন
আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সালাম জানালাম, তখন
তিনি তাঁর খুশীময় উজ্জ্বল চেহারা নিয়ে আমাকে বললেন, ‘‘তোমার
মা তোমাকে যখন প্রসব করেছে, তখন থেকে তোমার জীবনের বিগত
সর্বাধিক শুভদিনের তুমি সুসংবাদ নাও!’’ আমি বললাম, ‘‘হে আল্লাহর রাসূল! এই শুভসংবাদ আপনার পক্ষ থেকে,
না কি আল্লাহর পক্ষ থেকে?’’ তিনি বললেন,
‘‘না, বরং আল্লাহর পক্ষ থেকে।’’
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন খুশি হতেন, তখন তাঁর চেহারা উজ্জ্বল হয়ে যেত, মনে হত
যেন তা একফালি চাঁদ এবং এতে আমরা তাঁর এ (খুশী হওয়ার) কথা বুঝতে পারতাম। অতঃপর যখন
আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে বসলাম, তখন
আমি বললাম, ‘‘হে আল্লাহর রাসূল! আমার তওবা কবুল হওয়ার দরুন
আমি আমার সমস্ত মাল আল্লাহ ও তাঁর রসুলের রাস্তায় সাদকাহ করে দিচ্ছি।’’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি কিছু মাল নিজের জন্য
রাখ, তোমার জন্য তা উত্তম হবে।’’ আমি
বললাম, ‘‘যাই হোক! আমি আমার খায়বারের (প্রাপ্ত) অংশ রেখে
নিচ্ছি।’’ আর আমি এ কথাও বললাম যে, ‘‘হে
আল্লাহর রাসূল! নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা আমাকে সত্যবাদিতার কারণে
(এই বিপদ থেকে) উদ্ধার করলেন। আর এটাও আমার তওবার দাবী যে, যতদিন
আমি বেঁচে থাকব, সর্বদা সত্য কথাই বলব।’’ সুতরাং
আল্লাহর কসম! যখন থেকে আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে সত্য
কথা বলার প্রতিজ্ঞা করলাম আমি জানি না যে, আল্লাহ তা‘আলা কোন মুসলিমকে সত্য কথার বলার প্রতিদান স্বরূপ উৎকৃষ্ট
পুরস্কার দিয়েছেন। আল্লাহর কসম! আমি যেদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এ কথা বলেছি, সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত আমি
মিথ্যা কথা বলার ইচ্ছা করিনি। আর আশা করি যে, বাকী জীবনেও
আল্লাহ তা‘আলা আমাকে এ থেকে নিরাপদ রাখবেন।’
কা‘ব বলেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা (আমাদের ব্যাপারে আয়াত)
অবতীর্ণ করেছেন, (যার অর্থ), ‘‘আল্লাহ
ক্ষমা করলেন নবীকে এবং মুহাজির ও আনসারদেরকে যারা সংকট মুহূর্তে নবীর অনুগামী
হয়েছিল, এমন কি যখন তাদের মধ্যকার এক দলের অন্তর বাঁকা হওয়ার
উপক্রম হয়েছিল, তারপর আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করলেন।
নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাদের প্রতি বড় স্নেহশীল, পরম করুণাময়। আর
ঐ তিন ব্যক্তিকেও ক্ষমা করলেন, যাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত
গ্রহণ স্থগিত রাখা হয়েছিল; পরিশেষে পৃথিবী প্রশস্ত হওয়া
সত্ত্বেও তাদের প্রতি সংকীর্ণ হয়ে উঠেছিল এবং তাদের জীবন তাদের জন্য দুর্বিষহ হয়ে
পড়েছিল আর তারা উপলব্ধি করেছিল যে, আল্লাহ ছাড়া আল্লাহর
পাকড়াও হতে বাঁচার অন্য কোন আশ্রয়স্থল নেই। পরে তিনি তাদের প্রতি অনুগ্রহপরায়ণ
হলেন, যাতে তারা তওবা করে। নিশ্চয় আল্লাহই হচ্ছেন তওবা
গ্রহণকারী, পরম করুণাময়। হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর
এবং সত্যবাদীদের সঙ্গী হও।’’ (সূরাহ তাওবাহ ১১৭-১১৯ আয়াত)
কা‘ব ইবন
মালেক বলেন, ‘আল্লাহ আমাকে ইসলামের জন্য হিদায়াত করার পর
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সত্য কথা বলা অপেক্ষা বড় পুরস্কার
আমার জীবনে আল্লাহ আমাকে দান করেননি। ভাগ্যে আমি তাঁকে মিথ্যা কথা বলিনি। নচেৎ
তাদের মত আমিও ধ্বংস হয়ে যেতাম, যারা মিথ্যা বলেছিল। আল্লাহ
তা‘আলা যখন অহী অবতীর্ণ করলেন, তখন
নিকৃষ্টভাবে মিথ্যুকদের নিন্দা করলেন। সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা
তাদের ব্যাপারে বললেন, ‘‘যখন তোমরা তাদের কাছে ফিরে যাবে, তারা তখন অচিরেই তোমাদের সামনে শপথ করে বলবে, যেন
তোমরা তাদেরকে উপেক্ষা কর; অতএব তোমরা তাদেরকে উপেক্ষা কর; তারা হচ্ছে অতিশয় ঘৃণ্য, আর তাদের ঠিকানা
হচ্ছে জাহান্নাম, তা হল তাদের কৃতকর্মের প্রতিফল। তারা এ
জন্য শপথ করবে যেন তোমরা তাদের প্রতি রাজী হয়ে যাও, অনন্তর
যদি তোমরা তাদের প্রতি রাজী হয়ে যাও, তবে আল্লাহ তো এমন
দুষ্কর্মকারী লোকদের প্রতি রাজী হবেন না।’’ (ঐ ৯৫-৯৬ আয়াত)
কা‘ব
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, ‘হে তিনজন!
আমাদের সম্পর্কে সিদ্ধান্ত পিছিয়ে রাখা হয়েছিল তাদের থেকে যাদের মিথ্যা কসম
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (অজান্তে) গ্রহণ করলেন,
তাদের বায়‘আত নিলেন এবং তাদের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করলেন। আর রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের ব্যাপারটা পিছিয়ে দিলেন। পরিশেষে মহান
আল্লাহ সে ব্যাপারে ফায়সালা দিলেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘‘আর ঐ
তিন ব্যক্তিকেও ক্ষমা করলেন, যাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ
পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল।’’ পিছনে রাখার যে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে
তার অর্থ যুদ্ধ থেকে আমাদের পিছনে থাকা নয়। বরং (এর অর্থ) আমাদের ব্যাপারটাকে ঐ
লোকদের ব্যাপার থেকে পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল, যারা তাঁর কাছে
শপথ করেছিল এবং ওযর পেশ করেছিল। ফলে তিনি তা কবূল করে নিয়েছিলেন।’[8]
আর একটি বর্ণনায় আছে, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাবূকের যুদ্ধে বৃহস্পতিবার
বের হয়েছিলেন। আর তিনি বৃহস্পতিবার সফরে বের হওয়া পছন্দ করতেন। অন্য এক বর্ণনায়
আছে, তিনি সফর থেকে কেবল দিনে চাশ্তের (সূর্য একটু উপরে
উঠার) সময় আসতেন এবং এসে সর্বপ্রথম মসজিদে প্রবেশ করে দু’রাকাত
নামায পড়তেন অতঃপর সেখানেই বসে যেতেন (এবং লোকের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলার পর
বাসায় যেতেন।)’
10/23 وَعَنْ
أَبِي نُجَيد عِمْرَانَ بنِ الحُصَيْنِ الخُزَاعِيِّ رضي الله عنهما : أنَّ
امْرَأةً مِنْ جُهَيْنَةَ أتَتْ رسولَ الله ﷺ وَهِيَ حُبْلَى مِنَ الزِّنَى،
فقالتْ : يَا رسولَ الله، أصَبْتُ حَدّاً فَأَقِمْهُ عَلَيَّ، فَدَعَا نَبيُّ الله
ﷺ وَليَّها، فقالَ: «أَحْسِنْ إِلَيْهَا، فإذا وَضَعَتْ فَأْتِني»فَفَعَلَ
فَأَمَرَ بهَا نبيُّ الله ﷺ، فَشُدَّتْ عَلَيْهَا ثِيَابُهَا، ثُمَّ أَمَرَ بِهَا
فَرُجِمَتْ، ثُمَّ صَلَّى عَلَيْهَا. فقالَ لَهُ عُمَرُ: تُصَلِّي عَلَيْهَا يَا
رَسُول الله وَقَدْ زَنَتْ ؟ قَالَ: «لَقَدْ تَابَتْ تَوْبَةً لَوْ قُسِمَتْ
بَيْنَ سَبْعِينَ مِنْ أهْلِ المَدِينَةِ لَوَسِعَتْهُمْ، وَهَلْ وَجَدْتَ أَفضَلَ
مِنْ أنْ جَادَتْ بنفْسِها لله - عز وجل - ؟» رواه مسلم .
১০/২৩। আবূ নুজাইদ ইমরান
ইবনে হুসাইন খুযা‘য়ী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত যে, জুহাইনা গোত্রের এক নারী আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমতে হাজির হল। সে অবৈধ
মিলনে গর্ভবতী ছিল। সে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি দণ্ডনীয়
অপরাধ করে ফেলেছি তাই আপনি আমাকে শাস্তি দিন!’ সুতরাং
আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার আত্মীয়কে ডেকে বললেন, ‘‘তুমি একে নিজের কাছে যত্ন সহকারে রাখ এবং সন্তান প্রসবের পর
একে আমার নিকট নিয়ে এসো।’’ সুতরাং সে তাই করল (অর্থাৎ
প্রসবের পর তাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে নিয়ে এল)। আল্লাহর
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার
কাপড় তার (শরীরের) উপর মজবুত করে বেঁধে দেওয়ার আদেশ দিলেন। অতঃপর তাকে পাথর ছুঁড়ে
মেরে ফেলার আদেশ দিলেন। অতঃপর তিনি তার জানাযার নামায পড়লেন। উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁকে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনি
এই মেয়ের জানাযার নামায পড়লেন, অথচ সে ব্যভিচার করেছিল?’ তিনি বললেন, ‘‘(উমার! তুমি জান না যে,) এই স্ত্রী লোকটি এমন বিশুদ্ধ তওবা করেছে, যদি
তা মদীনার ৭০টি লোকের মধ্যে বণ্টন করা হত তা তাদের জন্য যথেষ্ট হত। এর চেয়ে কি
তুমি কোন উত্তম কাজ পেয়েছ যে, সে আল্লাহর জন্য নিজের প্রাণকে
কুরবান করে দিল?’’[9]
11/24
وَعَنِ ابنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ الله عنهما أنَّ رَسُولَ الله ﷺ، قَالَ: «لَوْ أنَّ
لابنِ آدَمَ وَادِياً مِنْ ذَهَبٍ أحَبَّ أنْ يكُونَ لَهُ وَادِيانِ، وَلَنْ
يَمْلأَ فَاهُ إلاَّ التُّرَابُ، وَيَتْوبُ اللهُ عَلَى مَنْ تَابَ» مُتَّفَقٌ عليه
১১/২৪। ইবনে আব্বাস
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, আল্লাহর
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যদি আদম
সন্তানের সোনার একটি উপত্যকা হয়, তবুও সে চাইবে যে, তার কাছে দুটি উপত্যকা হোক। (কবরের) মাটিই একমাত্র তার মুখ পূর্ণ
করতে পারবে। আর যে তওবা করে, আল্লাহ তওবা গ্রহণ করেন।’’[10]
12/25 عَنْ
أَبِي هُرَيرَةَ رضي
الله عنه أنَّ رسولَ الله
ﷺ، قَالَ: «يَضْحَكُ اللهُ سُبْحَانَهُ وَتَعَالَى إِلَى رَجُلَيْنِ يقْتلُ
أَحَدهُمَا الآخَرَ يَدْخُلانِ الجَنَّةَ، يُقَاتِلُ هَذَا في سَبيلِ اللهِ
فَيُقْتَلُ، ثُمَّ يتُوبُ اللهُ عَلَى القَاتلِ فَيُسْلِم فَيُسْتَشْهَدُ».مُتَّفَقٌ
عليه
১২/২৫। আবূ হুরাইরাহ
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, আল্লাহর
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘আল্লাহ সুবহানাহু
অতা‘আলা ঐ দু’টি লোককে দেখে হাসেন, যাদের মধ্যে একজন অপরজনকে হত্যা করে এবং দু’জনই
জান্নাতে প্রবেশ করবে। নিহত ব্যক্তিকে আল্লাহর পথে যুদ্ধ করা অবস্থায় (কোন কাফের
কর্তৃক) হত্যা করে দেওয়া হল। পরে আল্লাহ তা‘আলা হত্যাকারী
কাফেরকে তওবা করার তাওফীক প্রদান করেন। ফলে সে ইসলাম গ্রহণ করে আল্লাহর
রাস্তায় শহীদ হয়ে যায়।’’[11]
[8] সহীহুল বুখারী ২৭৫৮, ২৯৪৭, ২৯৪৮, ২৯৪৯, ২৯৫০, ৩০৮৮, ৩৫৫৬, ৩৮৮৯, ৩৯৫১, ৪৪১৮, ৪৬৭৩, মুসলিম ২৭৬৯, তিরমিযী ৩১০২, নাসায়ী ৩৮২৪, ৩৮২৫, ৩৮২৬, আবূ দাউদ ২২০২, ৩৩১৭, ৩৩১৭, ৩৩২১, ৪৬০০, আহমাদ ১৫৩৪৩, ১৫৩৫৪, ২৬৬২৯, ২৬৬৩৪, ২৬৬৩৭
[9] মুসলিম ১৬৯৬,
তিরমিযী ১৪৩৫, নাসায়ী
১৯৫৭, আবূ দাউদ ৪৪৪০,
ইবনু মাজাহ ২৫৫৫, আহমাদ
১৯৩৬০, ১৯৪০২,
দারেমী ২৩২৫
[11] সহীহুল বুখারী-২৮২৬, মুসলিম ১৮৯০, নাসায়ী ৩১৬৫, ৩১৬৬, ইবনু মাজাহ ১৯১, আহমাদ ৭২৮২, ২৭৪৪৬, ৯৬৫৭, ১০২৫৮, মুওয়াত্তা মালিক ১০০০
____________________________________________________________________________________________________________
সংকলন : ইমাম মুহিউদ্দীন আবু যাকারিয়া ইয়াহইয়া ইবন শরফ আন-নাওয়াবী রহ.
হাদীসের শুদ্ধাশুদ্ধি নির্ণয় : শাইখ মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আলবানী রহ.
অনুবাদক : বিশিষ্ট আলেমবর্গ
অনুবাদ সম্পাদনা : আব্দুল হামীদ ফাইযী
সূত্র : ইসলামহাউজ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন