Views:
A+
A-
দ্বিতীয় স্তর : প্রতারণার বাহ্যিক রূপ
প্রথমত : কেনা-বেচার ক্ষেত্রে
দ্বিতীয়ত: বিবাহে প্রতারণা
তৃতীয়ত : অপরের জন্য কল্যাণ কামনা ও সততায় প্রতারণা
চতুর্থত : অধীনস্থদের ব্যাপারে প্রতারণা
তৃতীয়ত: পরীক্ষার ক্ষেত্রে প্রতারণা
তৃতীয় স্তর : প্রতারণার ক্ষতি
ইসলামের দৃষ্টিকোণে ঠকবাজি, প্রতারণা ও ওজনে কম দেওয়ার শাস্তি
ইসলামের দৃষ্টিকোণে ঠকবাজি, প্রতারণা ও ওজনে কম দেওয়ার শাস্তি
সমস্ত
প্রশংসা আল্লাহ তাআলার জন্য। অসংখ্য সালাত ও সালাম রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর, তার পরিবার-পরিজন ও সাহাবীগণের উপর।
আল্লাহ
তাআলা পবিত্র কুরআনে প্রতারণা ও প্রতারক, উভয়ের ব্যাপারে কঠোর নিন্দা
জ্ঞাপন করেছেন এবং তাদের জন্য অবধারিত ধ্বংসের ঘোষণা দিয়েছেন। এ সংক্রান্ত
স্পষ্ট বর্ণনা পাওয়া যায় পবিত্র কালামের এই আয়াতে :
“ধ্বংস তাদের জন্য, যারা মাপে কম দেয়। যারা মানুষের থেকে মেপে নেয়ার কালে পূর্ণ মাত্রায় গ্রহণ করে। আর যখন তাদের জন্য মাপে বা ওজন করে, তখন কম দেয়।”[১]
“ধ্বংস তাদের জন্য, যারা মাপে কম দেয়। যারা মানুষের থেকে মেপে নেয়ার কালে পূর্ণ মাত্রায় গ্রহণ করে। আর যখন তাদের জন্য মাপে বা ওজন করে, তখন কম দেয়।”[১]
এ
এক কঠিন ঘোষণা, যারা ঠগবাজি করে, মাপে ও ওজনে মানুষকে কম দেয় তাদের জন্য।
সুতরাং যারা পুরোটাই চুরি করে, আত্মসাৎ করে, এবং মানুষকে তাদের প্রাপ্য
বস্তুতে ঠকায়, তাদের কী কঠিন অবস্থা হবে তা সহজেই অনুমান করা যায়। মাপে ও
ওজনে কমপ্রদানকারীর তুলনায় এরা আল্লাহ তাআলার শাস্তির অধিক ভাগিদার, এতে
কোন সন্দেহের অবকাশ নেই।
আল্লাহর
নবী শুয়াইব আ. তার সম্প্রদায়কে মানুষকে তার প্রাপ্য বস্তুতে ঠকানো এবং
মাপে ও ওজনে কম প্রদানে সতর্ক করেছেন, যেমন আল্লাহ তাআলা তার সম্পর্কে
পবিত্র কুরআনে বর্ণনা করেছেন।
এমনিভাবে
আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতারণা থেকে
সতর্ক করেছেন এবং প্রতারকের ব্যাপারে কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন।
একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাবারের এক স্তুপের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। তিনি খাবারের স্তুপে হাত প্রবেশ করালেন, তার আঙুলগুলো ভিজে গেল। তাই তিনি বললেন, ‘হে খাবারওয়ালা, এটা কি ? সে বলল, হে আল্লাহর রাসূল, তাতে বৃষ্টির পানি পড়েছিল। তিনি বললেন, তুমি কি তা খাবারের উপরে রাখতে পারলে না, যাতে মানুষ তা দেখে ? যে প্রতারণা করে, সে আমার দলভুক্ত নয়।’ অন্য রেওয়ায়েতে আছে ‘যে আমাদের সাথে প্রতারণার আশ্রয় নেয়, সে আমাদের দলভুক্ত নয়’। অপর রেওয়ায়েতে আছে ‘সে আমাদের দলভুক্ত নয়, যে প্রতারণার আশ্রয় নেয়।’[২]
একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাবারের এক স্তুপের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। তিনি খাবারের স্তুপে হাত প্রবেশ করালেন, তার আঙুলগুলো ভিজে গেল। তাই তিনি বললেন, ‘হে খাবারওয়ালা, এটা কি ? সে বলল, হে আল্লাহর রাসূল, তাতে বৃষ্টির পানি পড়েছিল। তিনি বললেন, তুমি কি তা খাবারের উপরে রাখতে পারলে না, যাতে মানুষ তা দেখে ? যে প্রতারণা করে, সে আমার দলভুক্ত নয়।’ অন্য রেওয়ায়েতে আছে ‘যে আমাদের সাথে প্রতারণার আশ্রয় নেয়, সে আমাদের দলভুক্ত নয়’। অপর রেওয়ায়েতে আছে ‘সে আমাদের দলভুক্ত নয়, যে প্রতারণার আশ্রয় নেয়।’[২]
সুতরাং
রাসূলের উক্তি ‘আমাদের দলভুক্ত নয়’ প্রতারণার বিরুদ্ধে প্রমাণ হিসেবে
যথেষ্ট। প্রতারণা, প্রতারণার নোংরা এলাকায় পা বাড়ানো, তার ভয়াবহ
ঘেরাটোপে আটকে পড়া থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য এ উক্তিই আমাদেরকে সরল পথ
দেখাবে।
হে প্রিয় ভাই,
মানুষ যাতে স্বত:স্ফূর্তভাবেই প্রতারণা ও এ সংক্রান্ত যাবতীয় ক্ষেত্রে
নিজেকে বাঁচিয়ে চলে এবং এ ব্যাপারে মানুষের পরিবর্তে আল্লাহকেই পর্যবেক্ষক
হিসেবে গ্রহণ করে, তাই মানুষের সামনে আল্লাহ তাআলা কর্তৃক এই সতর্কবানী
উপস্থাপন করা আমাদের একান্ত কর্তব্য ও দায়িত্ব।
কোন কবি যথার্থই বলেছেন : আত্মার ভিতর থেকেই যদি কোন প্রতিরোধের উপায় না জেগে উঠে, তবে ব্যক্তি কখনোই বক্র পথ থেকে ফিরে আসে না।
প্রিয়
ভাই, আমি তোমার সামনে এ বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ একটি স্তরক্রম তুলে ধরছি।
ইসলামে প্রতারণার ব্যাপারে কঠোর ঘোষণা সম্পর্কে অবগত হওয়ার পর, আশা করি,
এটি তোমাকে তার বাহ্যিক রূপ বুঝতে সাহায্য করবে।
প্রখ্যাত হাদীস বিশারদ মুনাভী বলেন : প্রতারণা হচ্ছে ভালোর সাথে মন্দের মিশ্রণ ঘটানো।
অপর এক হাদীস ব্যাখ্যাকার ইবনে হাজর আল-হায়সামী বলেন : নিষিদ্ধ প্রতারণা হচ্ছে ক্রেতা ও বিক্রেতার ন্যায় পণ্যের কোন মালিক তার পন্যের এমন দোষ সম্পর্কে অবগতি লাভ করা যে, যদি তার গ্রাহক এ সম্পর্কে অবগত হয় তবে সে তা গ্রহণ করতে কোনভাবেই সম্মত হবে না।
কাফাভী বলেন : প্রতারণা হচ্ছে অন্তরের কালোত্ব, মুখমন্ডলের মলিনতা। এ কারণেই হিংসা ও বিদ্বেষকেও ‘প্রতারণা’ শব্দে বর্ণনা করা হয়।
অপর এক হাদীস ব্যাখ্যাকার ইবনে হাজর আল-হায়সামী বলেন : নিষিদ্ধ প্রতারণা হচ্ছে ক্রেতা ও বিক্রেতার ন্যায় পণ্যের কোন মালিক তার পন্যের এমন দোষ সম্পর্কে অবগতি লাভ করা যে, যদি তার গ্রাহক এ সম্পর্কে অবগত হয় তবে সে তা গ্রহণ করতে কোনভাবেই সম্মত হবে না।
কাফাভী বলেন : প্রতারণা হচ্ছে অন্তরের কালোত্ব, মুখমন্ডলের মলিনতা। এ কারণেই হিংসা ও বিদ্বেষকেও ‘প্রতারণা’ শব্দে বর্ণনা করা হয়।
দ্বিতীয় স্তর : প্রতারণার বাহ্যিক রূপ
আমাদের
বর্তমান সামাজিক অবস্থা, মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক এবং সর্বোপরি বস্তুগত ও
আধ্যাত্মিক লেনদেন বিবেচনা করলে এ বিষয়টি অত্যন্ত পরিস্কার হয়ে যায় যে,
আমরা নানাভাবে প্রতারণা দ্বারা আক্রান্ত হয়ে আছি। এর ভয়াল ছোবল আমাদেরকে
ধীরে ধীরে ঘিরে ফেলছে। আমরা কোনভাবেই এর আক্রমণ থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করতে
সক্ষম হচ্ছি না।
সমাজিক প্রতারণার যে কয়টি বাহ্যিক রূপ সচরাচর আমরা দেখতে পাই, নিম্নে সে সম্পর্কে সংক্ষিপ্তাকারে আলোচনার প্রয়াস পাব।
সমাজিক প্রতারণার যে কয়টি বাহ্যিক রূপ সচরাচর আমরা দেখতে পাই, নিম্নে সে সম্পর্কে সংক্ষিপ্তাকারে আলোচনার প্রয়াস পাব।
প্রথমত : কেনা-বেচার ক্ষেত্রে
মুসলমানদের
কেনা-বেচায়, তাদের বাজার ব্যবস্থায় প্রতারণা কি প্রকট রূপ ধারণ করেছে,
ধীরে ধীরে তা কতটা ভয়াবহ অবস্থায় উপনীত হচ্ছে, তা বলাই বাহুল্য।
প্রতারণার এক ভয়াবহ অবস্থার মাঝে আমরা বসবাস করছি। প্রতারণা দোষ ঢেকে
রাখার সমতুল্য গণ্য করা হচ্ছে। প্রতারণা বিভিন্নভাবে এ সমাজে এখন হাজির
হচ্ছে, কখনো স্বয়ং পণ্যে প্রতারণা করা হচ্ছে, কখনো তার শাখা-প্রশাখায়
কিংবা সংখ্যায়। আবার কখনো তার ওজনে, তার মৌলিক গুণাগুণে, অথবা তার উৎস
গোপন করে তাতে প্রতারণার আশ্রয় নেয়া হচ্ছে।
দ্বিতীয়ত: বিবাহে প্রতারণা
সামাজিক
মেল-বন্ধনের পবিত্র একটি অঙ্গ, বিবাহ-শাদিতেও আজকাল প্রতারণার আশ্রয়
নেয়া হচ্ছে। এ প্রতারণাগুলোর ধরন ও প্রক্রিয়া মানুষের খুবই নিম্নরুচির
প্রকাশ ঘটায়। অহরহ আমরা যে ঘটনার মুখোমুখি হচ্ছি, তা হচ্ছে, এক বোনকে
দেখিয়ে ভিন্ন বোনকে বিয়ে দিয়ে দেয়া হচ্ছে। ছেলে কিংবা মেয়ের
দোষ-ত্র“টি গোপন করে বিয়ে দিয়ে দেয়া হচ্ছে। একে মোটেই পাপ মনে করা হচ্ছে
না। পাত্রীকে দেখতে চাওয়া হলে পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে এমনভাবে প্রদর্শন
করা হচ্ছে, যা মোটেই কাম্য নয়। সাজসজ্জার বাহুল্য করে তার আসল রূপকে ঢেকে
রাখা হচ্ছে। ফলে বর প্রতারিত হচ্ছে। এগুলো সমাজের অনুষঙ্গে পরিণত হয়েছে,
অথচ মানুষ এর পাপের দিকটির কথা ভুলে যাচ্ছে বেমালুম।
তৃতীয়ত : অপরের জন্য কল্যাণ কামনা ও সততায় প্রতারণা
অপরের
জন্য কল্যাণ কামনায় প্রতারণার প্রক্রিয়া হচ্ছে, অপরের জন্য কিছু করতে
গিয়ে ইখলাস ও বিশুদ্ধ উদ্দেশ্য রাখা হয় না। তাতে দীনী ও দুনিয়াবী
বস্তুগত উদ্দেশ্য হাসিলের পায়তারা করা হয়। মুমিনদের মাঝে পারস্পরিক
ভ্রাতৃত্বের অবশ্যম্ভাবী দাবী হচ্ছে মুমিন তার অপর মুমিন ভাইয়ের জন্য কিছু
করতে গিয়ে নিজেকে পুরোপুরি উজাড় করে দিবে এবং তাতে পুরোপুরি বিশুদ্ধ
নিয়ত রাখবে। কারণ, মুমিনদের আকক্সক্ষা হচ্ছে কল্যাণের আকাক্সক্ষা, আর
মুনাফিকদের প্রবণতা হচ্ছে প্রতারণার প্রবণতা।
মুমিন
তার অপর মুমিন ভাইয়ের জন্য আয়না স্বরূপ, যখন তার মাঝে কোন প্রকার
ত্র“টির সন্ধান পাবে, তাকে দূর করবে, শুদ্ধ করে তুলবে তাকে। কল্যাণ কামনা
সম্পন্ন হবে মুমিনদের থেকে কষ্ট দূর করা, দীনের ক্ষেত্রে যে ব্যাপারে তারা
অজ্ঞ- যা তাদের জানা নেই, তা জানিয়ে দেয়া এবং কথা ও কাজের মাধ্যমে
তাদেরকে সহযোগিতা করার মাধ্যমে। তারা কল্যাণ সাধন করবে একে অপরের গোপন
বিষয়গুলো গোপন রাখার মাধ্যমে, পারস্পরিক ক্ষতি কাটিয়ে, একজন অপরজনের
উপকার সাধন করে। তারা একে অপরকে সৎকাজের আদেশ দিবে, অসৎকাজে বাধা প্রদান
করবে। নমনীয়তা, ইখলাস, দয়ার্দ্র আচরণ, বড়কে সম্মান ও ছোটর প্রতি
স্নেহশীলতা, উত্তম উপদেশের মাধ্যমে পস্পরে কল্যাণ সাধন, ইত্যাদি হবে তাদের
চলার ঐকান্তিক পাথেয়। তারা নিজেদের জন্য যা ভালোবাসে, অপরের জন্যও সে
কল্যাণ কামনা করবে। নিজেদের জন্য যা অপছন্দ করে, অপরের জন্য সে অকল্যাণ
অপছন্দ করবে।
হাফেয আবুল কাসিম তাবরানী বর্ণনা করেন :
জারীর বিন আব্দুল্লাহ আল-বাজালী রা. তার আযাদকৃত দাসকে তার জন্য একটি
ঘোড়া কিনে আনার আদেশ দিলেন। সে তার জন্য তিন শত দেরহামে একটি ঘোড়া কিনে
আনল। ঘোড়াটি আনার সময় সঙ্গে মালিককেও নিয়ে আসল, যাতে জারীর তার হাতে নগদ
মূল্য পরিশোধ করতে পারেন। জারীর ঘোড়ার মালিককে বলল, দেখ অপরের কল্যাণ
কামনায় মানুষ কতটা ঊর্ধ্বে উঠতে পারে, তিন শত দেরহামের তুলনায় তোমার
ঘোড়াটি অধিক উত্তম। সুতরাং তুমি কি চার শত দেরহামে তা বিক্রি করবে ? সে
বলল, হে আবু আব্দুল্লাহ, এটি আপনার ব্যাপার ! অত:পর তিনি বললেন, তোমার
ঘোড়াটি তো এর চেয়েও উত্তম, তুমি কি তা পাঁচ শত দেরহামে বিক্রি করবে ?
এভাবে তিনি শ শ করে মূল্য বাড়াতে লাগলেন, ঘোড়ার মালিকটিও এতে সন্তুষ্ট
হচ্ছিল। এক সময়ে ঘোড়াটির মূল্য দাড়ালো আটশো দেরহামে। তিনি সে দামেই তা
ক্রয় করে নিলেন। এ ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি উত্তর দিলেন :
প্রতিটি মুলসলমানের জন্য কল্যাণ চাওয়ার ব্যাপারে আমি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাতে বাইআত গ্রহণ করেছি।
চতুর্থত : অধীনস্থদের ব্যাপারে প্রতারণা
মা’কাল
বিন য়াসার আল-মুযানী রা. হতে বর্ণিত, তিনি মৃত্যু শয্যায় বর্ণনা করেন,
আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলছেন :
এমন কোন বান্দা নেই, যাকে আল্লাহ অধীনস্থদেরকে দায়িত্ব দিয়েছেন এবং সে মৃত্যু বরণ করেছে অধীনস্থদের ব্যাপারে প্রতারক অবস্থায়, আল্লাহ অবশ্যই তার উপরে জান্নাত হারাম করে দিবেন।[৩]
এমন কোন বান্দা নেই, যাকে আল্লাহ অধীনস্থদেরকে দায়িত্ব দিয়েছেন এবং সে মৃত্যু বরণ করেছে অধীনস্থদের ব্যাপারে প্রতারক অবস্থায়, আল্লাহ অবশ্যই তার উপরে জান্নাত হারাম করে দিবেন।[৩]
বুখারীর অপর বর্ণনায় এই শব্দে বর্ণিত হয়েছে যে,
এমন কোন মুসলমান নেই, যাকে আল্লাহ অধীনস্থদের দায়িত্ব দিয়েছেন অথচ সে তাদেরকে তার কল্যাণ কামনা দ্বারা আগলে রাখেনি, সে কখনোই জান্নাতের ঘ্রাণ পাবে না।
এমন কোন মুসলমান নেই, যাকে আল্লাহ অধীনস্থদের দায়িত্ব দিয়েছেন অথচ সে তাদেরকে তার কল্যাণ কামনা দ্বারা আগলে রাখেনি, সে কখনোই জান্নাতের ঘ্রাণ পাবে না।
সুতরাং
এ হচ্ছে এক কঠিন ঘোষণা, এই ঘোষণার আওতাধীন প্রত্যেক ঐ ব্যক্তি, যাকে
আল্লাহ অধীনস্থদের দায়িত্ব প্রদান করেছেন। হোক সে ছোট কিংবা বড়। পরিবারের
সদস্য থেকে রাষ্ট্রপতি, সকলে এর আওতায় পড়বে। অতএব, প্রত্যেকের কর্তব্য
হচ্ছে তার অধীনস্থদের প্রতি কল্যাণ কামনা করা, তাদের প্রতি সৎ থাকা,
তাদেরকে কল্যাণের পথে উপদেশ-নসীহত প্রদান করা এবং প্রতারণার আশ্রয় না
নেয়া।
সুতরাং
যে চাকুরীজীবী, তার জন্য আবশ্যক হচ্ছে চাকুরী ক্ষেত্রে সততা প্রদর্শন করা।
শরীয়ত মোতাবেক কোন প্রকার প্রতারণা ও ধোকা ব্যতীত বৈধ উপায়ে তার
দায়িত্ব পালন করে যাওয়া। সে মানুষের জন্য কাজ করবে ও তাদের উপকার সাধনে
কোন প্রকার কার্পণ্য করবে না। সে যেন সর্বদা এই ধারণা মনে বদ্ধমূল রাখে যে,
তাকে একদিন অবশ্যই আল্লাহর দরবারে হাজির হতে হবে, তার দায়-দায়িত্ব
আল্লাহ বুঝে নিবেন। আল্লাহ তাকে এ দায়িত্ব দিয়েছেন মুসলমানদের কল্যাণ
ধারা চির বহমান রাখার উদ্দেশ্যে। প্রতারণার জন্য নয়।
এমনিভাবে,
যে পিতা, তার দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে সে তার সন্তান-সন্ততিকে কল্যাণের
পথে ধাবিত করার ক্ষেত্রে সর্বদা প্রচেষ্টা চালাবে, তাদের শিক্ষা-দীক্ষা ও
তরবিয়তে কোন প্রকার ত্র“টি ও গাফলতি করবে না। বরং সর্বাত্মক চেষ্টা
চালিয়ে যাবে, যাতে সে নিজেকে ও সন্তানদেরকে জাহান্নামের সেই আগুন হতে
রক্ষা করতে পারে, যার জ্বালানী হবে মানুষ ও পাথর, যার পাহারায় থাকবে কঠিন
কঠোর ফেরেশতাগণ।
ইবনে কায়্যিম বলেন :
কত ব্যক্তি আছে, যে তার সন্তান ও কলিজার টুকরাকে দুনিয়া ও আখিরাতে অভাগা
করে তুলছে তার প্রতি অবহেলা ও তার শিক্ষা-দীক্ষা পরিত্যাগের মাধ্যমে। সে
ক্রমাগত তাকে তার প্রবৃত্তির অনুসরণে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। সে ভাবছে যে
তাকে সম্মান জানান হচ্ছে, অথচ প্রকারান্তরে সে তাকে অসম্মান করছে। তার
বদ্ধমূল ধারণা, সে তাকে করুণা করছে, অথচ সে তাকে যুলম করছে। এভাবে সে তার
সন্তানকে মানুষ করার সুযোগ হাত ছাড়া করছে, দুনিয়া ও আখিরাতে তাকে সুসভ্য
করার, মহত্ত্বম করার শুভ সময় হেলায় হারাচ্ছে। তুমি যদি সন্তানদের
উশৃংখলতার একটি নিরীক্ষা চালাও, দেখবে, তার অধিকাংশই পিতার কারণে ঘটে থাকে।
তৃতীয়ত: পরীক্ষার ক্ষেত্রে প্রতারণা
পরীক্ষায়
প্রতারণা ও জালিয়াতির অসংখ্য উপায় ও মাধ্যম ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে
প্রচলিত। দীনী পরিবেশের অনুপস্থিতি ও দুর্বলতাই এর প্রধানতম কারণ। ঈমানের
অনুপস্থিতি, আল্লাহকে হাজির না ভাবার কারণে তারা প্রতিনিয়ত প্রতারণা ও
জালিয়াতীর আশ্রয় নিচ্ছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে সাব্যস্ত আছে, তিনি বলেছেন :
‘যে আমাদের সাথে প্রতারণা করেছে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়’।
হাদীস বিশারদগণ বলেছেন, যে কোন কাজে-কর্মে প্রতারণা রাসূলের এ উক্তির আওতাভুক্ত। পরীক্ষায় প্রতারণার বিষয়টিও এর অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং যে কোন বিষয়েই ছাত্র-ছাত্রীরা প্রতারণা করতে পারবে না, এটি সম্পূর্ণরূপে হারাম বলে গণ্য হবে। এ হাদীসটি এবং সমঅর্থভুক্ত অন্যান্য হাদীস এ ব্যাপারে উত্তম দলীল।’
হাদীস বিশারদগণ বলেছেন, যে কোন কাজে-কর্মে প্রতারণা রাসূলের এ উক্তির আওতাভুক্ত। পরীক্ষায় প্রতারণার বিষয়টিও এর অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং যে কোন বিষয়েই ছাত্র-ছাত্রীরা প্রতারণা করতে পারবে না, এটি সম্পূর্ণরূপে হারাম বলে গণ্য হবে। এ হাদীসটি এবং সমঅর্থভুক্ত অন্যান্য হাদীস এ ব্যাপারে উত্তম দলীল।’
এ
হচ্ছে প্রতারণা ও ঠকবাজির কিছু প্রকাশ ক্ষেত্র ও বাহ্যিক রূপ। বলা যায়,
এটি হচ্ছে প্রতারণা ও জালিয়াতির নানাবিধ প্রকাশের ও বাহ্যিক রূপের
কিয়দংশ। আমরা একে বিশেষভাবে উল্লেখ করা যুুক্তিযুক্ত মনে করেছি, যাতে
মানুষ সতর্ক হয় এবং আসন্ন বিপদ হতে নিজেকে মুক্ত রাখতে সক্ষম হয়।
উল্লেখিত
কিংবা অনুল্লেখিত যে কোন প্রকার প্রতারণায় যে ব্যক্তি লিপ্ত হয়েছে, তার
প্রতি আমাদের করুণ আবেদন হল : হে আমার ভাই, তুমি আল্লাহকে ভয় কর, যাবতীয়
গোপন বিষয়ের অধিকারী সর্ববিষয়ে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষক আল্লাহর ব্যাপারে
সতর্ক হও, সাবধান হও। তার শাস্তি ও আযাবের কথা স্মরণ কর। এবং জেনে রাখ,
দুনিয়া খুবই ক্ষণস্থায়ী, ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিষয়ে পরকালে হিসাব নেয়া
হবে। ভাল বা মন্দ যত ক্ষুদ্রই হোক, পরিণতিতে তা প্রভাব রাখবে। আল্লাহ তাআলা
পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন :
‘যারা তাদের পশ্চাতে দুর্বল সন্তান-সন্ততি ছেড়ে গেছে, যাদের উপর তারা ভীত, তারা যেন ভয় করে। অতএব, তারা যেন আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করে এবং তারা যেন সোজা কথা বলে।’[৪]
‘যারা তাদের পশ্চাতে দুর্বল সন্তান-সন্ততি ছেড়ে গেছে, যাদের উপর তারা ভীত, তারা যেন ভয় করে। অতএব, তারা যেন আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করে এবং তারা যেন সোজা কথা বলে।’[৪]
যে এই আয়াতে গভীরভাবে চিন্তা করবে সে অবশ্যই তার সন্তানদের ব্যাপারে ভীত হবে এবং মন্দ কর্ম হতে বিরত থাকবে।
তৃতীয় স্তর : প্রতারণার ক্ষতি
প্রতারণার রয়েছে নানাবিধ ক্ষতি, তন্মধ্যে অন্যতম হচ্ছে :
১. প্রতারণা মানুষকে জাহান্নামের পথে ঠেলে দেয়, নিক্ষেপ করে তার ভয়াবহ ও স্থায়ী আগুনে।
২.
প্রতারণা ব্যক্তির আত্মিক নীচুতা ও মানসিক কলঙ্কের পরিচায়ক। সুতরাং চরম
নীচু মানসিকতার অধিকারীই কেবল তা করে থাকে, এবং স্থায়ী ধ্বংসে পতিত হয়।
৩. প্রতারক ক্রমে আল্লাহ ও মানুষ থেকে দূরে সরে যায়।
৪. প্রতারণা দুআ কবুলের পথ বন্ধ করে দেয়।
৫. তা সম্পদ ও বয়সের বরকত ধ্বংস করে দেয়।
৬. তা ঈমানের দুর্বলতা ও কমতির পরিচায়ক।
৭. অব্যাহত প্রতারণা ও জালিয়াতী প্রবণতার ফলে প্রতারক গোষ্ঠীর উপর যালিম ও কাফিরদেরকে চাপিয়ে দেয়া হয়।
ইবনে হাজার হায়সামী বলেন :
এ ধরণের মন্দ প্রবণতা অর্থাৎ প্রতারণার ফলে আল্লাহ তাদের উপর যালিমদেরকে
চাপিয়ে দেন, ফলে তারা তাদের ধন-সম্পদের ছিনতাইকারীতে পরিণত হয়। তাদের
সম্মান হানী করে। এমনকি কখনো কখনো তাদের উপর কাফিরদেরকে চাপিয়ে দেন, তারা
তাদেরকে বন্দী করে ফেলে, তাদেরকে দাসে পরিণত করে এবং তাদেরকে আক্রান্ত করে
সর্বাত্মক শাস্তি ও সীমাহীন লাঞ্ছনা।
মুসলমানদের
উপর কাফিরদের এই আধিপত্য, তাদেরকে বন্দী করা, দাসে পরিণত করা, আধুনিক
যুগের এ সকল সমস্যার অধিকাংশ ঘটছে, যখন ব্যবসায়ীরা নানাবিধ প্রতারণার
উদ্ভব ঘটিয়েছে, নানা উপায়ে মানুষকে তারা ঠকাচ্ছে, জালিয়াতী করে মানুষকে
সর্বস্বান্ত করছে। এ ব্যাপারে তারা আল্লাহ তাআলার ভয় শূন্য হয়ে গিয়েছে।
আল্লাহ আমাদেরকে এ থেকে হেফাযত করুন। আমীন।
সমাপ্ত
[১] সূরা মুতাফফিফীন : ১-৩
[২] ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
[৩] হাদিসটি বুখারী ও মুসলিম বর্ণনা করেছেন।
[৪] সূরা নিসা : ৯
_________________________________________________________________________________
تأليف : نور محمد نور بديع
লেখক: নূর মুহাম্মাদ নূর বদি
ترجمة : كوثر بن خالد
অনুবাদ: কাউসার বিন খালিদ
مراجعة : نعمان بن ابو البشر
সম্পাদনা : নুমান আবুল বাশার
সূত্র : ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব
المكتب التعاوني للدعوة وتوعية الجاليات بالربوة بمدينة الرياض
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন