Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

See Our Articles In Different Styles... Grid View List View

রবিবার, ৭ অক্টোবর, ২০১৮

মেহমানের মেহমানদারি

Views:

A+ A-
মেহমানের মেহমানদারি


সূচীপত্র

ক্রম শিরোনাম
১ ভূমিকা
২ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মেহমানদারি
৩ ইবরাহীম আলাইহিস সালামের মেহমানদারি
৪ আরবদের মেহমানদারি
৫ সাহাবীদের মেহমানদারি
৬ মেহমানের জন্য করণীয় আদাব
৭ মেজবানের করণীয়
৮ মেহমানদের সাথে যেসব আচরণ করা উচিৎ

ভূমিকা

ﺇِﻥَّ ﺍﻟْﺤَﻤْﺪُ ﻟﻠﻪِ، ﻧَﺤْﻤَﺪُﻩُ ﻭَﻧَﺴْﺘَﻌِﻴْﻨُﻪُ ﻭَﻧَﺴْﺘَﻐْﻔِﺮُﻩُ، ﻭَﻧَﻌُـﻮْﺫُ ﺑِﺎﻟﻠﻪِ ﻣِﻦْ ﺷُﺮُﻭْﺭِ ﺃَﻧْﻔُﺴِﻨَﺎ، ﻭَﻣِﻦْ ﺳَﻴِّﺌَﺎﺕِ ﺃَﻋْﻤَﺎﻟِﻨَﺎ، ﻣَﻦْ ﻳَّﻬْﺪِﻩِ ﺍﻟﻠﻪُ ﻓَﻼَ ﻣُﻀِﻞَّ ﻟَﻪُ، ﻭَﻣَﻦْ ﻳُّﻀْﻠِﻞِ ﺍﻟﻠﻪُ ﻓَﻼَ ﻫَﺎﺩِﻱَ ﻟَﻪُ، ﻭَﺃَﺷْﻬَﺪُ ﺃَﻥْ ﻻَّ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻻَّ ﺍﻟﻠﻪُ ﻭَﺣْﺪَﻩُ ﻻَ ﺷَﺮِﻳْﻚَ ﻟَﻪُ، ﻭَﺃَﺷْﻬَﺪُ ﺃَﻥَّ ﻣُﺤَﻤَّﺪًﺍ ﻋَﺒْﺪُﻩُ ﻭَﺭَﺳُﻮْﻟُﻪُ
নিশ্চয় যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার জন্য। আমরা তাঁরই প্রশংসা করি, তাঁর কাছে সাহায্য চাই, তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করি। আল্লাহর নিকট আমরা আমাদের প্রবৃত্তির অনিষ্টতা ও আমাদের কর্মসমূহের অকল্যাণ থেকে আশ্রয় কামনা করি। আল্লাহ যাকে হিদায়াত দেন, তাকে গোমরাহ করার কেউ নেই। আর যাকে গোমরাহ করেন তাকে হিদায়াত দেওয়ারও কেউ নেই। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্যিকার ইলাহ নেই, তিনি একক, তার কোনো শরীক নেই। আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। সালাত ও সালাম নাযিল হোক তাঁর ওপর, তার পরিবার-পরিজন ও তার সাহাবীদের ওপর এবং যারা কিয়ামত অবধি যথার্থভাবে তাদের অনুসরণ করেন তাদের ওপর।
মেহমানদারি করা ইসলামের একটি গুরুত্ব পূর্ণ আমল। ইসলাম উম্মতে মুসলিমাকে মেহমানদারি করা ও মেহমানের সম্মান রক্ষা করার বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। মেহমানের মেহমানদারি করা, মেহমানের করণীয়, মেজবানের করণীয় ও মেহমানদারির গুরুত্ব সম্পর্কে এ প্রবন্ধে আলোচনা করা হয়েছে।
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মেহমানদারি

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন সর্বাধিক দয়ালু, দানশীল ও আতিথেয়তায় প্রসিদ্ধ । তিনি কোনো কিছুই তার নিজের জন্য ধরে রাখতেন না, যা কিছু তার নিকট আসত, তার সবই তিনি সাথে সাথে দান করে দিতেন এবং সাথীদের মধ্যে বণ্টন করে দিতেন । রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খাদেম আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু যিনি দশ বছর যাবত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে নিয়োজিত ছিলেন, তিনি তাঁর দানশীলতা ও দয়াদ্রতার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন,

« ﻣﺎ ﺳﺌﻞ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻋﻠﻰ ﺍﻹﺳﻼﻡ ﺷﻴﺌًﺎ ﺇﻻ ﺃﻋﻄﺎﻩ، ﻗﺎﻝ : ﻓﺠﺎﺀﻩ ﺭﺟﻞ ﻓﺄﻋﻄﺎﻩ ﻏﻨﻤًﺎ ﺑﻴﻦ ﺟﺒﻠﻴﻦ ﻓﺮﺟﻊ ﺇﻟﻰ ﻗﻮﻣﻪ ﻓﻘﺎﻝ : ﻳﺎ ﻗﻮﻣﻲ ﺃﺳﻠﻤﻮﺍ ﻓﺈﻥ ﻣﺤﻤﺪًﺍ ﻳﻌﻄﻲ ﻋﻄﺎﺀً ﻻ ﻳﺨﺸﻰ ﺍﻟﻔﺎﻗﺔ ‏»
“ইসলামের যুগে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট কোনো কিছু চাওয়া হলে তিনি কখনোই না বলেন নি। যখন কোনো কিছু চাইতেন তা তিনি সাথে সাথে দিয়ে দিতেন। একবার এক ব্যক্তি এসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট চাইলে তিনি তাকে দুই পাহাড়ের মধ্যবর্তী ছাগলগুলো তাকে দিয়ে দেন। লোকটি তার সম্প্রদায়ের লোকদের নিকট গিয়ে বলল, হে আমার সম্প্রদায়ের লোকরা! তোমরা ইসলাম গ্রহণ কর। কারণ, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষকে এত বেশি দান করেন, তিনি অভাবকে ভয় করেন না” ।[1]




অপর একটি বর্ণনায় বর্ণিত, আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
‏« ﻛَﺎﻥَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻟَﺎ ﻳَﺪَّﺧِﺮُ ﺷَﻴْﺌًﺎ ﻟِﻐَﺪٍ ‏»

“আল্লাহর রাসূল কোনো কিছুই আগামী দিনের জন্য জমা করে রাখতেন না” । [2]

আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
‏« ﻛﺎﻥ ﺃﺟﻮﺩ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﺑﺎﻟﺨﻴﺮ، ﻭﺃﺟﻮﺩ ﻣﺎ ﻳﻜﻮﻥ ﻓﻰ ﺷﻬﺮ ﺭﻣﻀﺎﻥ، ﻭﻛﺎﻥ ﺇﺫﺍ ﻟﻘﻴﻪ ﺟﺒﺮﻳﻞ ﺃﺟﻮﺩ ﺑﺎﻟﺨﻴﺮ ﻣﻦ ﺍﻟﺮﻳﺢ ﺍﻟﻤﺮﺳﻠﺔ ‏» .

“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন মানুষের মাঝে সর্বাধিক দানশীল। আর রমযান মাসে তিনি সবচেয়ে বেশি দান করতেন। যখন জিবরীল ‘আলাইহিস সালাম তাঁর সাথে সাক্ষাত করত, তখন তিনি প্রবল বাতাসের চেয়েও বেশি দানশীল হতেন” ।[3]

যাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
‏« ﻣﺎﺳﺌﻞ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺷﻴﺌﺎ ﻗﻂ ﻓﻘﺎﻝ : ﻻ ‏»

“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট কোনো কিছু চাওয়া হলে, তিনি কখনো না করেন নি” ।[4]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সবচেয়ে প্রিয়তমা স্ত্রী
খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহার উক্তি আল্লাহর রাসূলের আতিথেয়তা সম্পর্কে যথেষ্ট। তিনি সকল উম্মতের মধ্যে সর্বপ্রথম ঈমান আনয়নকারী, জগতের শ্রেষ্ঠতম চারজন রমণীর অন্যতম। যিনি তার সকল ধনসম্পদের পাহাড় রাসূলের কদমে হাযির করে দেন। রাসূলের সব ছেলেমেয়ে তার গর্ভে জন্মলাভ করেন। তিনি ২৫ বছর উম্মুল মুমিনীন হিসেবে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লামের সান্নিধ্য লাভে ধন্য হন। অহী লাভের পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অস্থিরতায় তিনি সান্তনা দেন এবং বলেন, ﻛﻼّ ﻭﺍﻟﻠﻪِ ﻣﺎ ﻳُﺨﺰِﻳﻚ ﺍﻟﻠﻪ ﺍَﺑَﺪَ َ “আল্লাহর শপথ তিনি আপনাকে কখনই অপমান ও অপদস্থ করবেন না” ।[5]
তার কারণ হিসেবে তিনি আল্লাহর রাসূলের কয়েকটি বিশেষ গুণের কথা উল্লেখ করেন। তার মধ্যে অন্যতম গুণ হলো, ﻭﺗﻘﺮﻯ ﺍﻟﻀﻴﻒُ “আপনি অতিথির সেবা করেন” ।[6]
কা‘বা শরীফ মক্কায় অবস্থিত বিধায় হাজার হাজার বছর থেকে কা‘বা কেন্দ্রিক
বিভিন্ন এলাকা ও জনপদ থেকে তীর্থযাত্রীরা ভিড় জমাতো। কুরাইশ পৌত্তলিকেরা বিদেশীদের জীবন সম্পদ লুণ্ঠনের উৎসব করত বিশেষ করে হজ মৌসুমে। যদিও জাতিগত ভাবে আরবরা অতিথিপরায়ণ কিন্তু অসৎদের আর মূল্যবোধের বালাই থাকে না। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাল্যকাল থেকে অসহায় বিদেশী ও অতিথিদের সহায় সম্পদ লুণ্ঠনের দৃশ্য দেখে আসছিলেন। তাদের যুলুম নির্যাতন ও লন্ঠনের দৃশ্য দেখে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। তিনি তাদের স্রোতের বিপরীতে গিয়ে অসহায় মযলুম নির্যাতিত মানুষের পক্ষে দাঁড়ান, তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসেন।
দেশ থেকে অশান্তি দূর করা, বিদেশী মেহমানদের জান-মাল রক্ষা করা, গরীব-দুঃখীকে সাহায্য
করা, দুর্বলদেরকে যালিমদের হাত থেকে রক্ষা করা এবং আমরা বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে সম্প্রীতি স্থাপনের চেষ্টায় তিনি ছিলেন বদ্ধ পরিকর। একজন স্ত্রীর মন্তব্য তার স্বীয়
স্বামীর ব্যাপারে খুবই প্রণিধানযোগ্য। কারণ, সুখে-দুঃখে, দিনে-রাতে সকালে-বিকেলে, রাগ-বিরাগ সর্বাবস্থায় নিবিড়ভাবে স্বামীকে দেখার সুযোগ তিনিই লাভ করেন। তারপরও সবার প্রশংসার চেয়ে খাদিজার উক্তি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আর যদি স্ত্রীও হন অতীব বিচক্ষণ, সচেতন ও জ্ঞান ও প্রজ্ঞাসম্পন্ন তবে তো কথাই নেই। এ ছাড়াও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অন্যান্য সাহাবীদের বাণীও প্রণিধানযোগ্য।
মেহমানদারির সম্পর্কে ঈমানের সাথে। এ কারণেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দয়া ও অনুগ্রহের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল মেহমানদের মেহমানদারি করা। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
‏« ﻣَﻦْ ﻛَﺎﻥَ ﻳُﺆْﻣِﻦُ ﺑِﺎﻟﻠﻪِ ﻭَﺍﻟْﻴَﻮْﻡِ ﺍﻟْﺂﺧِﺮِ، ﻓَﻠَﺎ ﻳُﺆْﺫِ ﺟَﺎﺭَﻩُ، ﻣَﻦْ ﻛَﺎﻥَ ﻳُﺆْﻣِﻦُ ﺑِﺎﻟﻠﻪِ ﻭَﺍﻟْﻴَﻮْﻡِ ﺍﻟْﺂﺧِﺮِ، ﻓَﻠْﻴُﻜْﺮِﻡْ ﺿَﻴْﻔَﻪُ، ﻣَﻦْ ﻛَﺎﻥَ ﻳُﺆْﻣِﻦُ ﺑِﺎﻟﻠﻪِ ﻭَﺍﻟْﻴَﻮْﻡِ ﺍﻟْﺂﺧِﺮِ، ﻓَﻠْﻴَﻘُﻞْ ﺧَﻴْﺮًﺍ ﺃَﻭْ ﻟِﻴَﺼْﻤُﺖْ ‏»
“যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি ও আখিরাত দিবসের প্রতি বিশ্বাস করে, সে যেন প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়, যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি ও আখিরাত দিবসের প্রতি বিশ্বাস করে, সে যেন মেহমানের মেহমানদারি করে এবং যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি ও আখিরাত দিবসের প্রতি বিশ্বাস করে, সে যেন ভালো কথা বলে অথবা চুপ থাকে” । [7]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন,

‏« ﻻ ﺗﺰﺍﻝ ﺍﻟﻤﻼﺋﻜﺔ ﺗﺼﻠﻰ ﻋﻠﻰ ﺃﺣﺪﻛﻢ ﻣﺎ ﺩﺍﻣﺖ ﻣﺎﺋﺪﺗﻪ ﻣﻮﺿﻮﻋﺔ ﺑﻴﻦ ﻳﺪﻳﻪ ﺣﺘﻰ ﻳﺮﻓﻊ ‏» .

“মেহমানের সামনে যতক্ষণ দস্তরখান বিছানো থাকে, তা না উঠানো পর্যন্ত ফিরিশতারা তোমাদের ওপর রহমত বর্ষণ করতে থাকে”। [8]
বর্তমানে আমরা মেহমানদের মেহমানদারী করতে চাইনা। মেহমানকে আমরা ভয় পাই, ঝামেলা মনে করি। অথচ একজন সত্যিকার মুসলিমের নিকট মেহমানদারি করা খুব প্রিয় এবং সম্মানজনক কাজ। মেহমানদারি করার বিষয়টি একজন মুসলিমের ঈমানের সাথে সম্পর্কিত। এটা একজন মুমিনের ঈমানের পরিপূর্ণতাকে বহন করে। মেহমানের মেহমানদারি করা এবং তাদের সম্মান করা পূর্বের নবী রাসূলদের মধ্যেও ছিল। ইবরাহীম ‘আলাইহিস সালামের যুগ থেকে এর ধারাবাহিকতা শুরু হয়।
ইবরাহীম আলাইহিস সালামের মেহমানদারি


ইবরাহীম আলাইহিস সালাম স্বীয় মেহমানের মেহমানদারিতে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। আল্লাহ তা‘আলা তার ঘটনা বর্ণনা করার সময় তার মেহমানদারির বিষয় প্রসংশনীয় ভাবে উল্লেখ করেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ﻫَﻞۡ ﺃَﺗَﻯٰﻚَ ﺣَﺪِﻳﺚُ ﺿَﻴۡﻒِ ﺇِﺑۡﺮَٰﻫِﻴﻢَ ﭐﻟۡﻤُﻜۡﺮَﻣِﻴﻦَ ٢٤ ﺇِﺫۡ ﺩَﺧَﻠُﻮﺍْ ﻋَﻠَﻴۡﻪِ ﻓَﻘَﺎﻟُﻮﺍْ ﺳَﻠَٰﻤٗﺎۖ ﻗَﺎﻝَ ﺳَﻠَٰﻢٞ ﻗَﻮۡﻡٞ ﻣُّﻨﻜَﺮُﻭﻥَ ٢٥ ﻓَﺮَﺍﻍَ ﺇِﻟَﻰٰٓ ﺃَﻫۡﻠِﻪِۦ ﻓَﺠَﺎٓﺀَ ﺑِﻌِﺠۡﻞٖ ﺳَﻤِﻴﻦٖ ٢٦ ﻓَﻘَﺮَّﺑَﻪُۥٓ ﺇِﻟَﻴۡﻬِﻢۡ ﻗَﺎﻝَ ﺃَﻟَﺎ ﺗَﺄۡﻛُﻠُﻮﻥَ ٢٧﴾ ‏[ ﺍﻟﺬﺍﺭﻳﺎﺕ : ٢٤، ٢٧ ‏]
“তোমার কাছে কি ইবরাহীমের সম্মানিত মেহমানদের বৃত্তান্ত এসেছে? যখন তারা তার কাছে আসল এবং বলল, ‘সালাম’, উত্তরে সেও বলল, ‘সালাম’। এরা তো অপরিচিত লোক। অতঃপর সে দ্রুত চুপিসারে নিজ পরিবারবর্গের কাছে গেল এবং একটি মোটা-তাজা গো-বাছুর (ভাজি করে) নিয়ে আসল। অতঃপর সে তা তাদের সামনে পেশ করল এবং বলল, ‘তোমরা কি খাবে না”? [সূরা আয-যারিয়াত, আয়াত: ২৪-২৭]
ইবরাহীম আলাইহিস সালাম সর্বপ্রথম মেহমানদারির নিয়ম চালু করেন। যেমন, হাদীসে এসেছে:
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

‏« ﻛَﺎﻥَ ﺃَﻭَّﻝَ ﻣَﻦْ ﺿَﻴَّﻒَ ﺍﻟﻀَّﻴْﻒَ ﺇِﺑْﺮَﺍﻫِﻴﻢُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺍﻟﺴَّﻠَﺎﻡُ ‏»

“সর্বপ্রথম মেহমানদারির প্রচলন করেন ইবরাহীম আলাইহিস সালাম” । [9]

লুত আলাইহিস সালাম তার মেহমানদের সম্মান রক্ষার ব্যাপারে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করে বলেন,

﴿ ﻓَﭑﺗَّﻘُﻮﺍْ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﻭَﻟَﺎ ﺗُﺨۡﺰُﻭﻥِ ﻓِﻲ ﺿَﻴۡﻔِﻲٓۖ ﺃَﻟَﻴۡﺲَ ﻣِﻨﻜُﻢۡ ﺭَﺟُﻞٞ ﺭَّﺷِﻴﺪٞ ٧٨ ‏[ ﻫﻮﺩ : ٧٨ ‏]
“সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার মেহমানদের ব্যাপারে তোমরা আমাকে অপমানিত করো না। তোমাদের মধ্যে কি কোনো সুবোধ ব্যক্তি নেই”? ।
মেহমানের সম্মান রক্ষা করাও মেহমানদারির অন্তর্ভুক্ত। এ ব্যাপারেও অধিক সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। যাতে আমাদের দ্বারা মেহমানরা কোনো প্রকার অপমান অপদস্থ ও লাঞ্ছনার স্বীকার না হয়।



আরবদের মেহমানদারি

দয়া ও মেহমানদারি তাদের একটি বিশেষ গুণ। এ ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে রীতিমত প্রতিযোগিতা মনোভাব লক্ষ্য করা যেত। এ গুণের ওপর তারা এত গর্ব করতো যে, আরবের অর্ধেক মানুষই কবি হয়ে গিয়েছিল। এ ব্যাপারে তারা তাদের নিজেদের এবং পরস্পরের প্রশংসা করত। কখনো এমন হত যে, প্রচণ্ড শীত এবং অভাবের সময়ও হয়তো কারো বাড়ীতে মেহমান এলো। সেই সময় গৃহ স্বামীর কাছে একটা মাত্র উটই ছিল সহায়-সম্বল। গৃহস্বামী মেহমানদারি করতে গিয়ে সেই উটটিই যবেহ করে দিতো।[10]

এক লোক হাতেমকে জিজ্ঞাসা করল, আরবের মধ্যে তোমার চেয়েও দানশীল কোনো লোক আছে কি? উত্তরে হাতেম বলল, সমগ্র আরববাসী আমার চেয়ে আরও অধিক দানশীল। তারপর তিনি একটি ঘটনা বললেন, এক রাতে আমি একজন এতিম যুবকের বাড়িতে মেহমান হলাম। তার একশটি বকরী ছিল। সে তা থেকে একটি আমার জন্য যবেহ করে নিয়ে আসল। যখন সে বকরীর মগজ আমার সামনে আনল, আমি বললাম, মগজটি খুবই সু-স্বাদু। তারপর সে আমার সামনে একটি করে পেশ করতে লাগল। যতক্ষণ পর্যন্ত আমি যথেষ্ট না বললাম ততক্ষণ পর্যন্ত সে বার বার মগজ আনতে লাগল। সকালে আমরা ঘুম থেকে উঠে দেখি সে একশটি ছাগল সবগুলো যবেহ করে ফেলছে। এখন তার আর কিছুই নেই। আমি তাকে বললাম, তুমি এ সব কি করলে? সে বলল, আমি যদি সব কিছুই কুরবানি করি, তারপরও তার শুকর আদায় করে শেষ করতে পারব না। হাতেম বলল, তারপর আমি তাকে আমার ভালো ভালো উষ্টি থেকে একশটি উষ্টি তাকে দিয়ে দেই।[11]

সাহাবীদের মেহমানদারি
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীরা মেহমানদারিতে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। কিয়ামত অবধি তাদের মেহমানদারির দৃষ্টান্ত কেউ উপস্থাপন করতে পারবে না। তারা শুধু মেহমানদারিই করেন নি, একজন ভাই তার অপর ভাইয়ের জন্য জীবনকে উৎসর্গ কোনো প্রকার কুণ্ঠাবোধ করেন নি। সহীহ বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত হাদীসটি তাদের মেহমানদারির একটি উৎকৃষ্ট প্রমাণ।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
‏« ﺃﻥ ﺭﺟﻼ ﺃﺗﻰ ﺍﻟﻨﺒﻰ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓﺒﻌﺚ ﺇﻟﻰ ﻧﺴﺎﺋﻪ، ﻓﻘﻠﻦ : ﻣﺎ ﻋﻨﺪﻧﺎ ﺇﻻ ﺍﻟﻤﺎﺀ ، ﻓﻘﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : ﻣﻦ ﻳﻀﻢ ‏( ﺃﻭ ﻳﻀﻴﻒ ‏) ﻫﺬﺍ ؟ ﻓﻘﺎﻝ ﺭﺟﻞ ﻣﻦ ﺍﻷﻧﺼﺎﺭ : ﺃﻧﺎ ، ﻓﺎﻧﻄﻠﻖ ﺑﻪ ﺇﻟﻰ ﺇﻣﺮﺃﺗﻪ ﻓﻘﺎﻝ : ﺃﻛﺮﻣﻰ ﺿﻴﻒ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓﻘﺎﻟﺖ : ﻣﺎ ﻋﻨﺪﻧﺎ ﺇﻻ ﻗﻮﺕ ﺍﻟﺼﺒﻴﺎﻥ، ﻓﻘﺎﻝ : ﻫﻴﺊ ﻃﻌﺎﻣﻚ، ﻓﺄﺻﻠﺤﺖ ﺳﺮﺍﺟﻬﺎ، ﻭﻧﻮﻣﺖ ﺻﺒﻴﺎﻧﻬﺎ، ﺛﻢ ﻗﺎﻣﺖ ﻛﺄﻧﻬﺎ ﺗﺼﻠﺢ ﺳﺮﺍﺟﻬﺎ ﻓﺄﻃﻔﺄﺗﻪ، ﻭﺟﻌﻼ ﻳﺮﻳﺎﻧﻪ ﺃﻧﻬﻤﺎ ﻳﺄﻛﻼﻥ، ﻭﺑﺎﺗﺎ ﻃﺎﻭﻳﻴﻦ ﻓﻠﻤﺎ ﺃﺻﺒﺢ ﻏﺪﺍ ﺇﻟﻰ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓﻘﺎﻝ : ﻟﻘﺪ ﻋﺠﺐ ﺍﻟﻠﻪ ﻣﻦ ﺻﻨﻴﻌﻜﻤﺎ ﺑﻀﻴﻔﻜﻤﺎ ﺍﻟﻠﻴﻠﺔ، ﻭﺃﻧﺰﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﴿ﻭَﻳُﺆۡﺛِﺮُﻭﻥَ ﻋَﻠَﻰٰٓ ﺃَﻧﻔُﺴِﻬِﻢۡ ﻭَﻟَﻮۡ ﻛَﺎﻥَ ﺑِﻬِﻢۡ ﺧَﺼَﺎﺻَﺔٞۚ ﻭَﻣَﻦ ﻳُﻮﻕَ ﺷُﺢَّ ﻧَﻔۡﺴِﻪِۦ ﻓَﺄُﻭْﻟَٰٓﺌِﻚَ ﻫُﻢُ ﭐﻟۡﻤُﻔۡﻠِﺤُﻮﻥَ﴾ ‏[ ﺍﻟﺤﺸﺮ : ٩ ‏] ‏» .
“এক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে আসলে আল্লাহর রাসূল তার স্ত্রীদের নিকট তার আগমনের খবর পাঠালে, তারা বললেন, আমাদের নিকট শুধু পানি ছাড়া আর কিছুই নেই। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের উদ্দেশ্যে বললেন, তোমরা কে আছ লোকটিকে সাথে নিয়ে যাবে বা মেহমানদারি করবে? তখন একজন আনসারী সাহাবী বলল, আমি প্রস্তুত। সাহাবী লোকটিকে বাড়ীতে নিয়ে স্ত্রীকে বলল, আল্লাহর রাসূলের মেহমানের মেহমানদারি কর। স্ত্রী বলল, আমাদের ঘরে কেবল বাচ্চাদের খাওয়ার ছাড়া আর কোনো খাওয়ার নেই । সাহাবী বলল, তুমি খাওয়ার প্রস্তুত কর। স্ত্রী বাতি জ্বালাল এবং বাচ্চাদের ঘুম বানিয়ে দিল। তারা বাতি নিভিয়ে দিয়ে ঠিক করার ভান করল এবং তারা দুইজন খাওয়ারের অভিনয় করল, যাতে মেহমান মনে করে তারাও খাচ্ছে। তারা দুইজন না খেয়ে রাত যাপন করল। সকাল বেলা যখন তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে উপস্থিত হলো, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বললেন, গত রাতে তোমরা দুইজন মেহমানের সাথে যে ব্যবহার দেখিয়েছ, তাতে আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের দুই জনের কর্মে খুশি হয়ে গেছেন। অতঃপর এ আয়াত নাযিল করেন,

﴿ﻭَﻳُﺆۡﺛِﺮُﻭﻥَ ﻋَﻠَﻰٰٓ ﺃَﻧﻔُﺴِﻬِﻢۡ ﻭَﻟَﻮۡ ﻛَﺎﻥَ ﺑِﻬِﻢۡ ﺧَﺼَﺎﺻَﺔٞۚ ﻭَﻣَﻦ ﻳُﻮﻕَ ﺷُﺢَّ ﻧَﻔۡﺴِﻪِۦ ﻓَﺄُﻭْﻟَٰٓﺌِﻚَ ﻫُﻢُ ﭐﻟۡﻤُﻔۡﻠِﺤُﻮﻥَ﴾ ‏[ ﺍﻟﺤﺸﺮ : ٩ ‏]
“এবং অভাব থাকা সত্ত্বেও নিজেদের ওপর অন্যদের অগ্রাধিকার দেয়। যাদের মনের কার্পণ্য থেকে রক্ষা করা হয়েছে, তারাই সফলকাম” [সূরা আল-হাশর, আয়াত: ৯] [12]
মুহাম্মাদ ইবন সীরিন রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
‏« ﻛَﺎﻥَ ﺃَﻫْﻞُ ﺍﻟﺼُّﻔَّﺔِ ﺇِﺫَﺍ ﺃَﻣْﺴَﻮُﺍ ﺍﻧْﻄَﻠَﻖَ ﺍﻟﺮَّﺟُﻞُ ﺑِﺎﻟﺮَّﺟُﻞِ، ﻭَﺍﻟﺮَّﺟُﻞُ ﺑِﺎﻟﺮَّﺟُﻠَﻴْﻦِ، ﻭَﺍﻟﺮَّﺟُﻞُ ﺑِﺎﻟْﺨَﻤْﺴَﺔِ، ﻓَﺄَﻣَّﺎ ﺳَﻌْﺪُ ﺑْﻦُ ﻋُﺒَﺎﺩَﺓَ ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﻛَﺎﻥَ ﻳَﻨْﻄَﻠِﻖُ ﺑِﺜَﻤَﺎﻧِﻴﻦَ ﻛُﻞَّ ﻟَﻴْﻠَﺔٍ ‏»

“যখন রাত হত, সুফ্ফাবাসীদের মেহমানদারি করার উদ্দেশ্যে সাহাবীগণ বাড়ি নিয়ে যেত। কেউ দু’জন কেউ তিনজন আবার কেউ
পাঁচজন সাতজন করে নিয়ে যেত। আর সা‘আদ ইবন উবাদাহ প্রতি রাতে আশিজন লোককে মেহমানদারির উদ্দেশ্যে বাড়ি নিয়ে যেত”।[13]
শাকীক আল-বালখী রহ. বলেন, আমার নিকট মেহমানের চেয়ে অধিক প্রিয় আর কোনো কিছুই নেই । কারণ, তার ব্যয়ের ভার আল্লাহর ওপর আর প্রশংসা আমার।
আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমার নিকট আমার ভাইদেরকে ভালো খাওয়ারের দস্তরখানে একত্র করা কোনো গোলামকে মুক্ত করা হতেও উত্তম। সাহাবীগণ আরও বলতেন, খাওয়ারের উদ্দেশ্যে একত্র হওয়া উত্তম চরিত্র।

আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন,

‏« ﺃَﺣَﺐُّ ﺍﻟﻄَّﻌَﺎﻡِ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻋَﺰَّ ﻭَﺟَﻞَّ ﻣَﺎ ﻛَﺜُﺮَﺕْ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺍﻟْﺄَﻳْﺪِﻱ ‏»

“সবচেয়ে প্রিয় খাবার আল্লাহর নিকট ঐ খাবার যে খাবারে হাতের সংখ্যা বেশি”।[14]
মনে রাখবে, খাবার দ্বারা উদ্দেশ্য শুধু খাওয়া বা পেট ভরা নয়। বরং উদ্দেশ্য হলো খাবারের দস্তরখানে একাধিক মানুষ একত্র হওয়া দ্বারা তাদের পরস্পরের মধ্যে মহব্বত ও ভালোবাসা লাভ হওয়া। যেমন, ইসলামী শরী‘য়াহ পাঁচ ওয়াক্ত সালাত মসজিদে গিয়ে আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং জামা‘আতে সালাত আদায়কে অধিক সাওয়াব বলে ঘোষণা দিয়েছেন, যাতে পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা ও মহব্বত সৃষ্টি হয়। সুতরাং খাবারের মজলিস বা অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়া দ্বারাও একে অপরের থেকে ইসলামী শিষ্টাচারগুলো জানা ও অবলোকন সুযোগ হয় এবং একে অপর সম্পর্কে জানার, দেখা সাক্ষাতের সুযোগ হয়।

মেহমানের জন্য করণীয় আদাব:
এক- কারো বাড়িতে মেহমান হলে খাওয়ার সময়কে বেছে নেবে না। কারণ, এতে মানুষের কষ্ট হয়। তারা তো তার জন্য খাবার পাক করে রেখে দেয় নি, তবে যদি আগের থেকে জানা থাকে তাবে তাতে কোনো অসুবিধা নেই। সুতরাং এমনভাবে মেহমান হবে, যাতে তারা তার জন্য রানা করে খাওয়ারের ব্যবস্থা করতে পারে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ﻳَٰٓﺄَﻳُّﻬَﺎ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺀَﺍﻣَﻨُﻮﺍْ ﻟَﺎ ﺗَﺪۡﺧُﻠُﻮﺍْ ﺑُﻴُﻮﺕَ ﭐﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺇِﻟَّﺎٓ ﺃَﻥ ﻳُﺆۡﺫَﻥَ ﻟَﻜُﻢۡ ﺇِﻟَﻰٰ ﻃَﻌَﺎﻡٍ ﻏَﻴۡﺮَ ﻧَٰﻈِﺮِﻳﻦَ ﺇِﻧَﻯٰﻪُ ﻭَﻟَٰﻜِﻦۡ ﺇِﺫَﺍ ﺩُﻋِﻴﺘُﻢۡ ﻓَﭑﺩۡﺧُﻠُﻮﺍْ ﻓَﺈِﺫَﺍ ﻃَﻌِﻤۡﺘُﻢۡ ﻓَﭑﻧﺘَﺸِﺮُﻭﺍْ ﻭَﻟَﺎ ﻣُﺴۡﺘَٔۡﻨِﺴِﻴﻦَ ﻟِﺤَﺪِﻳﺚٍۚ ٥٣﴾ ‏[ ﺍﻻﺣﺰﺍﺏ : ٥٣ ‏]
“হে মুমিনগণ, তোমরা নবীর ঘরসমূহে প্রবেশ করো না; অবশ্য যদি তোমাদেরকে খাবারের অনুমতি দেওয়া হয় তাহলে (প্রবেশ কর) খাবারের প্রস্তুতির জন্য অপেক্ষা না করে। আর যখন তোমাদেরকে ডাকা হবে তখন তোমরা প্রবেশ কর এবং খাবার শেষ হলে চলে যাও আর কথাবার্তায় লিপ্ত হয়ো না”।
[সূরা ‌আল-আহযাব, আয়াত: ৫৩]


দুই- কারো বাড়িতে মেহমান হলে, তাদের অবস্থার প্রতি সুক্ষ্ম দৃষ্টি রাখবে। তারা যদি কোনো কিছু খেতে বলে, তখন যদি সত্যিকার অর্থে খেতে বলছে নাকি লজ্জায় খেতে বলছে, তা বুঝার চেষ্টা করবে। যদি লজ্জায় বলে, তখন খাবে না বরং খাওয়া থেকে বিরত থাকবে।

তিন- নির্দিষ্ট কোনো খাদ্যের চাহিদা প্রকাশ করবে না। তারা যা ব্যবস্থা করবে, তাই খেয়ে আসবে। যদি দু’টি খাদ্যের যে কোনো একটি পছন্দ করতে বলে তখন যেটি সহজ সেটি গ্রহণ করবে। দাওয়াতে গিয়ে খাওয়াটাকেই বড় মনে করবে না। আল্লাহর রাসূলের সুন্নত পালন করার নিয়ত করবে।

চার- খাওয়ার জন্য কোনো খাওয়ার সামনে পেশ করলে, তাকে তুচ্ছ করবে না। সীমিত খাওয়ার গ্রহণ করবে অধিক পরিমাণে খাবে না।

পাঁচ- বাড়ি ওয়ালার নিকট কোনো কিছু চাইবে না। প্রয়োজন হলে কিবলা সম্পর্কে এবং পোশাবখানা ও পায়খানা সম্পর্কে জানতে চাইবে।

ছয়- ভালো জায়গায় বসার চেষ্টা করবে না, বরং বাড়ী ওয়ালা যেখানে বসতে বলে সেখানে বসে যাবে। তার ব্যবস্থার বাইবে যাবে না।

সাত- খুব বিনয় ও নম্র-ভদ্র হয়ে থাকবে। বাড়ীর লোকের অসুবিধা হয় এমন কোনো কাজ করবে না এবং তাকে বিপাকে ফেলবে না। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ধরনের কর্ম থেকে নিষেধ করেছেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন,

‏« ﻻ ﻳﺤﻞ ﻟﻤﺴﻠﻢ ، ﺃﻥ ﻳﻘﻴﻢ ﻋﻨﺪ ﺃﺧﻴﻪ ﺣﺘﻰ ﻳﺆﺛﻤﻪ ‏( ﺃﻯ ﻳﺤﺮﺟﻪ ‏) ﻗﺎﻟﻮﺍ : ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ! ﻭﻛﻴﻒ ﻳﺆﺛﻤﻪ ؟ ﻗﺎﻝ : ﻳﻘﻴﻢ ﻋﻨﺪﻩ ﻭﻻ ﺷﺊ ﻟﻪ ﻳﻘﺮﺑﻪ ﺑﻪ ‏» .
“কোনো মুসলিম ভাইয়ের জন্য এটা হালাল নয় যে, সে তার অপর ভাইয়ের নিকট অবস্থান করবে এবং তাকে বিপাকে ফেলবে। সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসূল, তাকে কীভাবে বিপাকে ফেলবে? তিনি বললেন, “তার নিকট অবস্থান করতে থাকবে অথচ তার ঘরে তাকে মেহমানদারি করার মত কিছুই নেই” । [15]

আট- রান্না ঘর বা খাওয়ার যেখানে তৈরি করে, সেখানে গিয়ে ঘুর ঘুর করবে না। খাওয়ার দিক তাকাবে না এবং বাড়ির বেগানা মেয়েদের প্রতি দেখবে না। মাথাকে অবনত রাখবে এবং চোখের হেফাযত করবে।

নয়- যদি কোনো খারাপ কর্ম বা কু-সংস্কার পরিলক্ষিত হয়, সম্ভব হলে তা বিনয়ের সাথে সংশোধন করবে। অন্যথায় মুখে বলে চলে আসবে। বাড়াবাড়ি করবে না।

দশ- খাওয়ার পর বাড়ী ওয়ালার জন্য দো‘আ করবে। আমাদের মনীষীরা দো‘আ করতেন। তারা বলতেন,
‏« ﺍﻟﻠﻬﻢ ﺇﻥ ﻛﺎﻥ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﻄﻌﺎﻡ ﺣﻼﻻ ﻓﻮﺳﻊ ﻋﻠﻰ ﺻﺎﺣﺒﻪ ﻭﺃﺟﺰﻩ ﺧﻴﺮﺍ، ﻭﺇﻥ ﻛﺎﻥ ﺣﺮﺍﻣﺎ ﺃﻭ ﺷﺒﻬﺔ ﻓﺎﻏﻔﺮ ﻟﻰ ﻭﻟﻪ ﻭﺍﺭﺽ ﻋﻦ ﺃﺻﺤﺎﺏ ﺍﻟﺘﺒﻌﺎﺕ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﻘﻴﺎﻣﺔ ﺑﺮﺣﻤﺘﻚ ﻳﺎ ﺃﺭﺣﻢ ﺍﻟﺮﺍﺣﻤﻴﻦ ‏» .
“হে আল্লাহ যদি এ খাদ্যগুলো হালাল হয়ে থাকে, তাহলে তার আরও প্রশস্ত করে দাও এবং তাকে তুমি উত্তম বিনিময় দান কর, আর যদি হারাম বা সন্দেহযুক্ত হয়, তাহলে তুমি আমাকে এবং তাকে ক্ষমা করে দাও। কিয়ামতের দিন তুমি অনুসারী সাথীদের প্রতি সন্তুষ্ট হও। আমরা তোমার নিকট তোমার রহমত কামনা করি। হে পরম দয়ালু মেহেরবান”।
এগার- যার বাড়িতে দাওয়াত খেতে গেলে তার জন্য বিশেষ দো‘আ করবে এবং বলবে,
‏« ﺃﻛﻞ ﻃﻌﺎﻣﻚ ﺍﻷﺑﺮﺍﺭ ﻭﺃﻓﻄﺮ ﻋﻨﺪﻛﻢ ﺍﻟﺼﺎﺋﻤﻮﻥ ﻭﺻﻠﺖ ﻋﻠﻴﻜﻢ ﺍﻟﻤﻼﺋﻜﺔ ﺍﻻﺧﻴﺎﺭ ، ﻭﺫﻛﺮﻛﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻴﻤﻦ ﻋﻨﺪﻩ ‏» .

“তোমার খাবার নেককার বান্দারা খেয়েছে, তোমার নিকট সাওম পালনকারীগণ ইফতার করেছে, আল্লাহর পছন্দনীয় ফিরিশতারা তোমার জন্য রহমত কামনা করছে এবং আল্লাহ তা‘আলা তাঁর কাছের ফিরিশতাদের মধ্যে তোমার আলোচনা করেছে”।
বার- কারো বাড়িতে প্রতিদিন মেহমান হবে না। অনেক দিন পর পর মেহমান হবে, তাতে মহব্বত বাড়বে। কারণ, আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

« ﺯﺭ ﻏﺒﺎ ﺗﺰﺩﺩ ﺣُﺒﺎ ‏»

“কিছু দিন পর পর দেখতে আস, তাতে মহব্বত বাড়বে” । [16]
তের- কারো বাড়িতে তিন দিনের বেশি অবস্থান করবে না ।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

‏« ﺍﻟﻀِّﻴَﺎﻓَﺔُ ﺛَﻠَﺎﺛَﺔُ ﺃَﻳَّﺎﻡٍ، ﻓَﻤَﺎ ﺯَﺍﺩَ ﻓَﻬُﻮَ ﺻَﺪَﻗَﺔٌ ‏»

“মেহমানদারি তিন দিন। তিন দিনের বেশি মেহমানদারি করা সদকা” । [17]
মেজবানের করণীয়:

সত্যিকার মুসলিম যখন মেহমান আসে তাতে কোনো প্রকার বিরক্ত হয় না এবং মন খারাপ করে না, বরং সে খুশি হয় এবং মেহমানের সম্মান ও ইজ্জত রক্ষা করে। কারণ, সে জানে মেহমান তার হকই গ্রহণ করবে। মনে রাখবে মেহমানের মেহমানদারি করা ওয়াজিব। মেহমানদারি করা মানবতার দাবি, মেহমান দেখে নাক ছিটকাবে না, খুশি হবে।
লোকমান হাকিম বলেন, চারটি বস্তু থেকে কারোরই অনীহা থাকা উচিৎ নয়, যদিও সে আমীর বা ভদ্রলোক হোক:

১. পিতার সম্মানে জায়গা ছেড়ে দেওয়া।

২. মেহমানের মেহমানদারি করা।

৩. স্বীয় বাহনের পরিচর্যা করা।

৪. আলিমের খেদমত করা।

মেহমানদের সাথে যেসব আচরণ করা উচিৎ:
এক- খুব তাড়াতাড়ি খাওয়ারের ব্যবস্থা করা। কারণ,
এটি মেহমানের সম্মান করা। হাতেম আল-আসাম রহ. বলেন, “তাড়াহুড়া করা শয়তানের কাজ, তবে পাঁচটি কাজে তাড়াহুড়া করা বৈধ:
১. মেহমানের মেহমানদারি করা।

২. মৃত ব্যক্তির দাফন কাফন।

৩. কুমারী মেয়েকে বিবাহ দেওয়া।

৪. ঋণ পরিশোধ করা এবং

৫. গুনাহ থেকে তাওবা করা” ।[18]
দুই- যখন কোনো মেহমান আসে তুমি তার সামনে খানা সাধ্য অনুযায়ী ভালো খাবার পেশ করবে। তাকে এ কথা জিজ্ঞাসা করবে না যে, আপনি খানা খাবেন? আপনার জন্য খানা আনব কিনা? খানা পাকাবো কিনা? ইত্যাদি। আর যখন কোনো মেহমান বলে, না আমি খাবো না, শুধু তার এ কথা বলা দ্বারা মেহমানদারি করা হতে বিরত থাকা কৃপণতারই আলামত। যেমন, সুফিয়ান সাওরী রহ. বলেন, “যখন তোমার কোনো ভাই তোমার বাড়িতে মেহমান হয়, তাকে তুমি এ কথা বলবে না। তুমি খানা খাবে? অথবা তোমার জন্য কি খানা নিয়ে আসব? তুমি খানা পেশ কর, যদি খায় ভালো অন্যথায় তুলে নাও”।

তিন- দস্তরখানে খাবার পরিবেশন করতে কার্পণ্য করবে না। কোনো খাবারকে গোপন করবে না। সব খাবারই মেহমানের সামনে তুলে ধরবে। অনেক মানুষ এমন আছে তারা মেহমানকে ভালো ভালো খাওয়ার দেয় না। নিজেরা ভালো ভালো খায়। ইমাম গাজ্জালি রহ. দস্তরখানের আদব ও খাওয়ার নিয়ম বর্ণনা সম্পর্কে বলেন, যখন মেহমানদারি করবে, তখন প্রথমে ফল-ফ্রুটকে সামনে দেবে। কারণ, প্রথমে ফল খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকার। তারপর গোশত খাবে। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে করীমে প্রথমে ফলের কথা উল্লেখ করেছেন তারপর গোশতের কথা উল্লেখ করছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ﻭَﻓَٰﻜِﻬَﺔٖ ﻣِّﻤَّﺎ ﻳَﺘَﺨَﻴَّﺮُﻭﻥَ ٢٠ ﻭَﻟَﺤۡﻢِ ﻃَﻴۡﺮٖ ﻣِّﻤَّﺎ ﻳَﺸۡﺘَﻬُﻮﻥَ ٢١﴾ ‏[ ﺍﻟﻮﺍﻗﻌﺔ : ٢٠، ٢١ ‏]

“আর (ঘোরাফেরা করবে) তাদের পছন্দমত ফল নিয়ে। আর পাখির গোশত নিয়ে, যা তারা কামনা করবে”। [সূরা আল-ওয়াকিয়া, আয়াত: ২০-২১]

চার- মেহমানের খাওয়া শেষ না হতে দস্তরখান উঠাবে না। মেহমানের সাথে একসাথে খানা শেষ করবে। অন্যথায় লজ্জায় মেহমান খেতে চাইবে না।
পাঁচ- এক সাথে খেতে বসলে মেহমানের আগেই খাওয়া শেষ করে চলে যাবে না। কারণ, এতে মেহমান পেট ভরে খেতে সংকোচ বোধ করবে। এ জন্য তার সাথে শরীক থাকবে বা বসে গল্প করবে।

ছয়- মেহমানের সাথে সাথে সুন্দর সুন্দর কথা বলবে। যাতে তার অন্তরে খুশি থাকে। মেহমানকে রেখে তার অনুমতি ছাড়া ঘুমবে না। তার উপস্থিতিতে নিজের কপালকে দোষারোপ করবে না।

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

‏« ﺍﻟﻜﻠﻤﺔ ﺍﻟﻄﻴﺒﺔ ﺻﺪﻗﺔ ‏»

“সুন্দর কথা সদকা স্বরূপ” ।[19]
ইমাম আওযায়ী রহ. কে জিজ্ঞাসা করা হলো, মেহমানের সম্মান কী? তিনি বললেন, “হাসি মুখ ও সুন্দর কথা”।

সাত- মেহমানকে বাড়ীর দরজা থেকে সম্ভাষণ জানানো এবং বিদায়ের সময় বাড়ীর দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসা।

আট- মেহমানের সাথে হাসি মুখে সাক্ষাত করা: আবু যর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

« ﻭﺗﺒﺴﻤﻚ ﻓﻲ ﻭﺟﻪ ﺃﺧﻴﻚ ﺻﺪﻗﺔ ‏»

“তোমার ভাইয়ে সাথে মুচকি হাসি দিয়ে সাক্ষাত করা দান করার সাওয়াব” । [20]
নয়- মেহমানের সাথে মুসাফাহা করা: বারা ইবন আযেব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
‏« ﻣَﺎ ﻣِﻦْ ﻣُﺴْﻠِﻤَﻴْﻦِ ﻳَﻠْﺘَﻘِﻴَﺎﻥِ ﻓَﻴَﺘَﺼَﺎﻓَﺤَﺎﻥِ ﺇِﻟَّﺎ ﻏُﻔِﺮَ ﻟَﻬُﻤَﺎ ﻗَﺒْﻞَ ﺃَﻥْ ﻳَﻔْﺘَﺮِﻗَﺎ ‏»
“যখন দুই মুসলিম ভাইয়ের মাঝে দেখা হয় এবং একে অপরের সাথে মুসাফাহা করে, তাদের উভয়ের পৃথক হওয়ার পূর্বে আল্লাহ তা‘আলা তাদের ক্ষমা করে দেন” । [21]
আল্লাহ তা‘আলা আমাদের মেহমানের মেহমানদারি করার তাওফীক দিন। আমীন ।
মে হমানদারি করা ইসলামের একটি গুরুত্ব পূর্ণ আমল। ইসলাম উম্মতে মুসলিমাকে মেহমানদারি করা ও মেহমানের সম্মান রক্ষা করার বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। মেহমানের মেহমানদারি করা, মেহমানের করণীয়, মেজবানের করণীয় ও মেহমানদারির গুরুত্ব সম্পর্কে এ গ্রন্থে আলোচনা করা হয়েছে।

[1] সহীহ সহীহ মুসলিম, কিতাবুল ফাযায়েল, হাদীস নং ২৩১৫ ।
[2] তিরমিযী, হাদীস নং ২৩৬২ । আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন।
[3] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৩০৮ ।
[4] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬০৩৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৩১১ ।
[5] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩, ৪৯৫৭, ৪৯৫৩, ৩৩৯২ ।
[6] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩, ৪৯৫৭, ৪৯৫৩, ৩৩৯২ ।
[7] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৪৭৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৭ ।
[8] তাবরানী, মুজামুল আওসাত, হাদীস নং ৪৭২৯ ।
[9] ইবন আবিদ দুনিয়ার মেহমানের মেহমানদারি: হাদীস নং ৫; মুয়াত্তা ইমাম মালেক সাঈদ ইবনুল মুসাইয়েব থেকে: ৯২২/২; বাইহাকি শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং ৯১৭০ ।
[10] রাহীকুল মাখতুম: পৃ. ৫৮ ।
[11] ইবন আবিদ দুনিয়ার মেহমানের মেহমানদারি: হাদীস নং ২৫ ।
[12] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৭৯৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২০৫৪।
[13] ইবন আবিদ দুনিয়ার মেহমানের মেহমানদারি, হাদীস নং ২০ ।
[14] ইবন আবিদ দুনিয়ার মেহমানের মেহমানদারি, হাদীস নং ৪৯্
[15] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৩৫৩/৩
[16] ইবন আবিদ দুনিয়া, হাদীস নং ১৫৬, ১০৪।
[17] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৬৮৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২২১৫; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩৪৪৭ ।
[18] দেখুন, ইবন হাব্বানের রাওজাতুল উকালা, পৃ. ১১৭ ।
[19] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৭০৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০০৯ ।
[20] সহীহ বুখারী, আদাবুল মুফরাদ, হাদীস নং ৮৯১ । আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন।
[21] আবু দাউদ, হাদীস নং ৫২১২; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩৭০৩; তিরমিযী, হাদীস নং ২৭২৭। আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন।
____________________________________________________________________________________________________________________
লেখক: জাকেরুল্লাহ আবুল খায়ের
সম্পাদনা: ড. মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী
সূত্র: ইসলামহাউজ


পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না কিন্তু।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন