Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

See Our Articles In Different Styles... Grid View List View

রবিবার, ৭ অক্টোবর, ২০১৮

মা-বাবার মৃত্যুর পর তাদের জন্য করণীয় আমলসমূহ

Views:

A+ A-



মা-বাবার মৃত্যুর পর তাদের জন্য করণীয় আমলসমূহ


ﺇﻥ ﺍﻟﺤﻤﺪ ﻟﻠﻪ ﻭﺍﻟﺼﻼﺓ ﻭﺍﻟﺴﻼﻡ ﻋﻠﻰ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﻋﻠﻰ ﺁﻟﻪ ﻭﺻﺤﺒﻪ ﺃﺟﻤﻌﻴﻦ، ﺃﻣﺎ ﺑﻌﺪ :

মা-বাবা ছোট শব্দ, কিন্তু এ দুটি শব্দের সাথে কত যে আদর, স্নেহ, ভালবাসা রয়েছে তা পৃথিবীর কোন মাপযন্ত্র দিয়ে নির্ণয় করা যাবে না। মা-বাবা কত না কষ্ট করেছেন, না খেয়ে থেকেছেন, অনেক সময় ভাল পোষাকও পরিধান করতে পারেন নি, কত না সময় বসে থাকতেন সন্তানের অপেক্ষায়। সেই মা বাবা যাদের চলে গিয়েছেন, তারাই বুঝেন মা বাবা কত বড় সম্পদ। যেদিন থেকে মা বাবা দুনিয়া ছেড়ে চলে গেলেন সেদিন থেকে মনে হয় কী যেন হারিয়ে গেল,তখন বুক কেঁপে উঠে, চোখ থেকে বৃষ্টির মত পানি ঝরে, কী শান্তনাই বা তাদেরকে দেয়া যায়! সেই মা বাবা যাদের চলে গিয়েছে তারা কি মা-বাবার জন্য কিছুই করবে না?। এত কষ্ট করে আমাদের কে যে মা-বাবা লালন পালন করেছেন তাদের জন্য আমাদের কি কিছুই করার নেই? অবশ্যই আছে। আলোচ্য প্রবন্ধে কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে মৃত মা-বাবা জন্য কী ধরনের আমল করা যাবে এবং যে আমলের সওয়াব তাদের নিকট পৌছবে তা উল্লেখ করা হলো:

১. বেশী বেশী দু‘আ করা

মা-বাবা দুনিয়া থেকে চলে যাওয়ার পর সন্তান মা-বাবার জন্য বেশী বেশী দু‘আ করবে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে দু‘আ করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং কী দু‘আকরবো তাও শিক্ষা দিয়েছেন ।



আল-কুরআনে এসেছে,

﴿ ﺭَﺏِّ ﭐﺭۡﺣَﻤۡﻬُﻤَﺎ ﻛَﻤَﺎ ﺭَﺑَّﻴَﺎﻧِﻲ ﺻَﻐِﻴﺮٗﺍ ٢٤ ﴾ ‏[ ﺍﻻﺳﺮﺍﺀ : ٢٤ ]

‘‘হে আমার রব, তাদের উভয়ের প্রতি রহম কর, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন’’ [সূরা বানী ইসরাঈলঃ ২৪]

﴿ ﺭَﺑَّﻨَﺎ ﭐﻏۡﻔِﺮۡ ﻟِﻲ ﻭَﻟِﻮَٰﻟِﺪَﻱَّ ﻭَﻟِﻠۡﻤُﺆۡﻣِﻨِﻴﻦَ ﻳَﻮۡﻡَ ﻳَﻘُﻮﻡُ ﭐﻟۡﺤِﺴَﺎﺏُ ٤١﴾ ‏[ ﺍﺑﺮﺍﻫﻴﻢ : ٤١ ]

‘‘হে আমাদের রব, রোজ কিয়ামতে আমাকে, আমার পিতা-মাতা ও সকল মুমিনকে ক্ষমা করে দিন’’ [সুরা ইবরাহীম ঃ৪১]। এছাড়া আলস্নাহ রাববুল আলামীন পিতা-মাতার জন্য দূ‘আ করার বিশেষ নিয়ম শিক্ষা দিতে গিয়ে বলেনঃ

﴿ ﺭَّﺏِّ ﭐﻏۡﻔِﺮۡ ﻟِﻲ ﻭَﻟِﻮَٰﻟِﺪَﻱَّ ﻭَﻟِﻤَﻦ ﺩَﺧَﻞَ ﺑَﻴۡﺘِﻲَ ﻣُﺆۡﻣِﻨٗﺎ ﻭَﻟِﻠۡﻤُﺆۡﻣِﻨِﻴﻦَ ﻭَﭐﻟۡﻤُﺆۡﻣِﻨَٰﺖِۖ ﻭَﻟَﺎ ﺗَﺰِﺩِ ﭐﻟﻈَّٰﻠِﻤِﻴﻦَ ﺇِﻟَّﺎ ﺗَﺒَﺎﺭَۢﺍ ٢٨ ﴾ ‏[ ﻧﻮﺡ : ٢٨ ]
‘হে আমার রব! আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে, যে আমার ঘরে ঈমানদার হয়ে প্রবেশ করবে তাকে এবং মুমিন নারী-পুরুষকে ক্ষমা করুন এবং ধ্বংস ছাড়া আপনি যালিমদের আর কিছুই বাড়িয়ে দেবেন না ’[সূরা নুহ: ২৮] ।
মা-বাবা এমন সন্তান রেখে যাবেন যারা তাদের জন্য দোয়া করবে। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

« ﺇِﺫَﺍ ﻣَﺎﺕَ ﺍﻹِﻧْﺴَﺎﻥُ ﺍﻧْﻘَﻄَﻊَ ﻋَﻨْﻪُ ﻋَﻤَﻠُﻪُ ﺇِﻻَّ ﻣِﻦْ ﺛَﻼَﺛَﺔٍ ﺇِﻻَّ ﻣِﻦْ ﺻَﺪَﻗَﺔٍ ﺟَﺎﺭِﻳَﺔٍ ﺃَﻭْ ﻋِﻠْﻢٍ ﻳُﻨْﺘَﻔَﻊُ ﺑِﻪِ ﺃَﻭْ ﻭَﻟَﺪٍ ﺻَﺎﻟِﺢٍ ﻳَﺪْﻋُﻮ ﻟَﻪُ ».
অর্থ: মানুষ মৃত্যুবরণ করলে তার যাবতীয় আমল বন্ধ হয়ে যায়, তবে ৩ টি আমল বন্ধ হয় না-১. সদকায়ে জারিয়া ২. এমন জ্ঞান-যার দ্বারা উপকৃত হওয়া যায় ৩. এমন নেক সন্তান- যে তার জন্য দু‘আ করে [সহিহ মুসলিম: ৪৩১০]


মূলত: জানাযার নামায প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মৃত ব্যক্তির জন্য দু‘আ স্বরূপ।


২. দান-ছাদকাহ করা, বিশেষ করে সাদাকায়ে জারিয়াহ প্রদান করাঃ
মা-বাবা বেচে থাকতে দান-সাদকাহ করে যেতে পারেন নি বা বেচে থাকলে আরো দান-সদকাহ করতেন, সেজন্য তাদের পক্ষ থেকে সন্তান দান-সদকাহ করতে পারে। হাদীসে এসেছে,

ﻋَﻦْ ﻋَﺎﺋِﺸَﺔَ ﺃَﻥَّ ﺭَﺟُﻼً ﺃَﺗَﻰ ﺍﻟﻨَّﺒِﻰَّ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺇِﻥَّ ﺃُﻣِّﻰَ ﺍﻓْﺘُﻠِﺘَﺖْ ﻧَﻔْﺴَﻬَﺎ ﻭَﻟَﻢْ ﺗُﻮﺹِ ﻭَﺃَﻇُﻨُّﻬَﺎ ﻟَﻮْ ﺗَﻜَﻠَّﻤَﺖْ ﺗَﺼَﺪَّﻗَﺖْ ﺃَﻓَﻠَﻬَﺎ ﺃَﺟْﺮٌ ﺇِﻥْ ﺗَﺼَﺪَّﻗْﺖُ ﻋَﻨْﻬَﺎ ﻗَﺎﻝَ ‏« ﻧَﻌَﻢْ »

অর্থ: আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেনঃ ‘‘জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল আমার মা হঠাৎ মৃতু বরণ করেছেন। তাই কোন অছিয়ত করতে পারেন নি। আমার ধারণা তিনি যদি কথা বলার সুযোগ পেতেন তাহলে দান-ছাদকা করতেন। আমি তাঁর পক্ষ থেকে ছাদকা করলে তিনি কি এর ছাওয়াব পাবেন ? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন হ্যাঁ, অবশ্যই পাবেন।’’ [সহীহ মুসলিম:২৩৭৩]
তবে সবচেয়ে উত্তম হচ্ছে সাদাকায়ে জারিয়া বা প্রবাহমান ও চলমান সাদাকা প্রদান করা। যেমন পানির কুপ খনন করা, (নলকুপ বসানো, দ্বীনী মাদরাসা প্রতিষ্ঠা, কুরআন শিক্ষার জন্য মক্তব ও প্রতিষ্ঠান তৈরী করা, স্থায়ী জনকল্যাণমূলক কাজ করা। ইত্যাদি।

৩. মা-বাবার পক্ষ থেকে সিয়াম পালনঃ


মা-বাবা জীবিত থাকা অবস্থায় যদি তাদের কোন মানতের সিয়াম কাযা থাকে, সন্তান তাদের পক্ষ থেকে সিয়াম পালন করলে তাদের পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যাবে। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ

« ﻣَﻦْ ﻣَﺎﺕَ ﻭَﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺻِﻴَﺎﻡٌ ﺻَﺎﻡَ ﻋَﻨْﻪُ ﻭَﻟِﻴُّﻪُ »

অর্থ: ‘‘যে ব্যক্তি মৃত্যু বরণ করল এমতাবস্থায় যে তার উপর রোজা ওয়াজিব ছিল। তবে তার পক্ষ থেকে তার ওয়ারিসগণ রোজা রাখবে’’ [সহীহ বুখারী:১৯৫২]। অধিকাংশ আলেমগণ এ হাদীসটি শুধুমাত্র ওয়াজিব রোযা বা মানতের রোযার বিধান হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। তাদের পক্ষ থেকে নফল সিয়াম রাখার পক্ষে দলীল নাই।





৪. হজ্জ বা উমরাহ করাঃ

মা-বাবার পক্ষ থেকে হজ্জ বা উমরাহ করলে তা আদায় হবে এবং তারা উপকৃত হবে। ইবনে আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা হতে বর্ণিত হাদীসে এসেছে,

« ﺃَﻥَّ ﺍﻣْﺮَﺃَﺓً ﻣِﻦْ ﺟُﻬَﻴْﻨَﺔَ ﺟَﺎﺀَﺕْ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓَﻘَﺎﻟَﺖْ ﺇِﻥَّ ﺃُﻣِّﻲ ﻧَﺬَﺭَﺕْ ﺃَﻥْ ﺗَﺤُﺞَّ ﻓَﻠَﻢْ ﺗَﺤُﺞَّ ﺣَﺘَّﻰ ﻣَﺎﺗَﺖْ ﺃَﻓَﺄَﺣُﺞُّ ﻋَﻨْﻬَﺎ ﻗَﺎﻝَ ﻧَﻌَﻢْ ﺣُﺠِّﻲ ﻋَﻨْﻬَﺎ ﺃَﺭَﺃَﻳْﺖِ ﻟَﻮْ ﻛَﺎﻥَ ﻋَﻠَﻰ ﺃُﻣِّﻚِ ﺩَﻳْﻦٌ ﺃَﻛُﻨْﺖِ ﻗَﺎﺿِﻴَﺔً ﺍﻗْﻀُﻮﺍ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻓَﺎﻟﻠَّﻪُ ﺃَﺣَﻖُّ ﺑِﺎﻟْﻮَﻓَﺎﺀِ »

অর্থ: ‘‘ জুহাইনা গোত্রের একজন মহিলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আগমণ করে বলল, হে আল্লাহর রাসুল, আমার মা হজ্জ করার মানত করেছিলেন কিন্তু তিনি হজ্জ সম্পাদন না করেই মারা গেছেন। এখন আমি কি তার পক্ষ থেকে হজ্জ আদায় করতে পারি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তুমি তোমার মায়ের পক্ষ থেকে হজ্জ কর। তোমার কি ধারণা যদি তোমার মার উপর ঋণ থাকতো তবে কি তুমি তা পরিশোধ করতে না ? সুতরাং আল্লাহর জন্য তা আদায় কর। কেননা আল্লাহর দাবী পরিশোধ করার অধিক উপযোগী’’ [সহীহ বুখারী: ১৮৫২] । তবে মা-বাবার পক্ষ থেকে যে লোক হজ্জ বা ওমরাহ করতে চায় তার জন্য শর্ত হলো সে আগে নিজের হজ্জ-ওমরাহ করতে হবে।

৫. মা-বাবার পক্ষ থেকে কুরবানী করাঃ

মা-বাবার পক্ষ থেকে কুরবানী করলে তার ছাওয়াব দ্বারা তারা উপকৃত হবে। এ বিষয়ে হাদীসে এসেছে,

ﻋَﻦْ ﻋَﺎﺋِﺸَﺔَ ﺃَﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺃَﻣَﺮَ ﺑِﻜَﺒْﺶٍ ﺃَﻗْﺮَﻥَ ﻳَﻄَﺄُ ﻓِﻰ ﺳَﻮَﺍﺩٍ ﻭَﻳَﺒْﺮُﻙُ ﻓِﻰ ﺳَﻮَﺍﺩٍ ﻭَﻳَﻨْﻈُﺮُ ﻓِﻰ ﺳَﻮَﺍﺩٍ ﻓَﺄُﺗِﻰَ ﺑِﻪِ ﻟِﻴُﻀَﺤِّﻰَ ﺑِﻪِ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻟَﻬَﺎ ‏« ﻳَﺎ ﻋَﺎﺋِﺸَﺔُ ﻫَﻠُﻤِّﻰ ﺍﻟْﻤُﺪْﻳَﺔَ ‏» ﺛُﻢَّ ﻗَﺎﻝَ ‏« ﺍﺷْﺤَﺬِﻳﻬَﺎ ﺑِﺤَﺠَﺮٍ ‏» . ﻓَﻔَﻌَﻠَﺖْ ﺛُﻢَّ ﺃَﺧَﺬَﻫَﺎ ﻭَﺃَﺧَﺬَ ﺍﻟْﻜَﺒْﺶَ ﻓَﺄَﺿْﺠَﻌَﻪُ ﺛُﻢَّ ﺫَﺑَﺤَﻪُ ﺛُﻢَّ ﻗَﺎﻝَ ‏« ﺑِﺎﺳْﻢِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺗَﻘَﺒَّﻞْ ﻣِﻦْ ﻣُﺤَﻤَّﺪٍ ﻭَﺁﻝِ ﻣُﺤَﻤَّﺪٍ ﻭَﻣِﻦْ ﺃُﻣَّﺔِ ﻣُﺤَﻤَّﺪٍ ‏» . ﺛُﻢَّ ﺿَﺤَّﻰ ﺑِﻪِ .

অর্থ: আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন একটি শিংযুক্ত দুম্বা উপস্থিত করতে নির্দেশ দিলেন, যার পা কালো, চোখের চতুর্দিক কালো এবং পেট কালো। অতঃপর তা কুরবানীর জন্য আনা হলো। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বললেন, হে আয়েশা! ছুরি নিয়ে আস, তারপর বললেন, তুমি একটি পাথর নিয়ে তা দ্বারা এটাকে ধারালো কর। তিনি তাই করলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছুরি হাতে নিয়ে দুম্বাটিকে শুইয়ে দিলেন। পশুটি যবেহ্ করার সময় বললেন, বিসমিল্লাহ, হে আল্লাহ তুমি এটি মুহাম্মাদ, তাঁর বংশধর এবং সকল উম্মাতে মুহাম্মাদীর পক্ষ থেকে কবুল কর”। এভাবে তিনি তা দ্বারা কুরবানী করলেন।
[ সহীহ মুসলিম:৫২০৩] ।

৬. মা-বাবার ওসিয়ত পূর্ণ করা
মা-বাবা শরীয়াহসম্মত কোন ওসিয়ত করে গেলে তা পূর্ণ করা সন্তানদের উপর দায়িত্ব। রাশীদ ইবন সুয়াইদ আসসাকাফী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,

« ﻗُﻠْﺖُ : ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ، ﺇِﻥَّ ﺃُﻣِّﻲ ﺃَﻭْﺻَﺖْ ﺃَﻥْ ﻧُﻌْﺘِﻖُ ﻋَﻨْﻬَﺎ ﺭَﻗَﺒَﺔً ، ﻭَﻋِﻨْﺪِﻱ ﺟَﺎﺭِﻳَﺔٌ ﺳَﻮْﺩَﺍﺀُ ، ﻗَﺎﻝَ : ﺍﺩْﻉُ ﺑِﻬَﺎ ، ﻓَﺠَﺎﺀَﺕْ ، ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﻣَﻦْ ﺭَﺑُّﻚِ ؟ ﻗَﺎﻟَﺖِ : ﺍﻟﻠَّﻪُ ، ﻗَﺎﻝَ : ﻣَﻦْ ﺃَﻧَﺎ ؟ ﻗَﺎﻟَﺖْ : ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ، ﻗَﺎﻝَ : ﺃَﻋْﺘِﻘْﻬَﺎ ، ﻓَﺈِﻧَّﻬَﺎ ﻣُﺆْﻣِﻨَﺔٌ ».

অর্থ: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললাম হে আল্লাহর রাসুল, আমার মা একজন দাসমুক্ত করার জন্য ওসিয়ত করে গেছেন। আর আমার নিকট কালো একজন দাসী আছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে ডাকো, সে আসল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে প্রশ্ন করলেন, তোমার রব কে ? উত্তরে সে বলল, আমার রব আল্লাহ। আবার প্রশ্ন করলেন আমি কে ? উত্তরে সে বলল, আপনি আল্লাহর রাসুল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে মুক্ত করে দাও; কেন না সে মু’মিনা [সহীহ ইবন হিববান :১৮৯]

৭. মা-বাবার বন্ধুদের সম্মান করা

মা-বাবার বন্ধুদের সাথে ভাল ব্যবহার করা, সম্মান করা, তাদেরকে দেখতে যাওয়া,তাদেরকে হাদিয়া দেয়া। এ বিষয়ে হাদীসে উল্লেখ আছে,

ﻋَﻦْ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺑْﻦِ ﺩِﻳﻨَﺎﺭٍ ﻋَﻦْ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺑْﻦِ ﻋُﻤَﺮَ ﺃَﻥَّ ﺭَﺟُﻼً ﻣِﻦَ ﺍﻷَﻋْﺮَﺍﺏِ ﻟَﻘِﻴَﻪُ ﺑِﻄَﺮِﻳﻖِ ﻣَﻜَّﺔَ ﻓَﺴَﻠَّﻢَ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻋَﺒْﺪُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺣَﻤَﻠَﻪُ ﻋَﻠَﻰ ﺣِﻤَﺎﺭٍ ﻛَﺎﻥَ ﻳَﺮْﻛَﺒُﻪُ ﻭَﺃَﻋْﻄَﺎﻩُ ﻋِﻤَﺎﻣَﺔً ﻛَﺎﻧَﺖْ ﻋَﻠَﻰ ﺭَﺃْﺳِﻪِ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺍﺑْﻦُ ﺩِﻳﻨَﺎﺭٍ ﻓَﻘُﻠْﻨَﺎ ﻟَﻪُ ﺃَﺻْﻠَﺤَﻚَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺇِﻧَّﻬُﻢُ ﺍﻷَﻋْﺮَﺍﺏُ ﻭَﺇِﻧَّﻬُﻢْ ﻳَﺮْﺿَﻮْﻥَ ﺑِﺎﻟْﻴَﺴِﻴﺮِ . ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻋَﺒْﺪُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺇِﻥَّ ﺃَﺑَﺎ ﻫَﺬَﺍ ﻛَﺎﻥَ ﻭُﺩًّﺍ ﻟِﻌُﻤَﺮَ ﺑْﻦِ ﺍﻟْﺨَﻄَّﺎﺏِ ﻭَﺇِﻧِّﻰ ﺳَﻤِﻌْﺖُ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﻳَﻘُﻮﻝُ ‏« ﺇِﻥَّ ﺃَﺑَﺮَّ ﺍﻟْﺒِﺮِّ ﺻِﻠَﺔُ ﺍﻟْﻮَﻟَﺪِ ﺃَﻫْﻞَ ﻭُﺩِّ ﺃَﺑِﻴﻪِ ».

অর্থ: আব্দুল্লাহ ইবনে দীনার রাদিয়াল্লাহু আনহু আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, একবার মক্কার পথে চলার সময় আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু এর এক বেদুঈন এর সাথে দেখা হলে তিনি তাকে সালাম দিলেন এবং তাকে সে গাধায় চড়ালেন যে গাধায় আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহুমা উপবিষ্ট ছিলেন এবং তাঁর (আব্দুল্লাহ) মাথায় যে পাগড়িটি পরা ছিলো তা তাকে প্রদান করলেন। আব্দুল্লাহ ইবান দীনার রাহেমাহুল্লাহ বললেন, তখন আমরা আব্দুল্লাহকে বললাম: আল্লাহ তোমার মঙ্গল করুক! এরা গ্রাম্য মানুষ: সামান্য কিছু পেলেই এরা সন্তুষ্ট হয়ে যায়-(এতসব করার কি প্রয়োজন ছিলো?) উত্তরে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, তার পিতা, (আমার পিতা) উমার ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু এর বন্ধু ছিলেন। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি “পুত্রের জন্য পিতার বন্ধু-বান্ধবের সাথে ভাল ব্যবহার করা সবচেয়ে বড় সওয়াবের কাজ’’ [সহীহ মুসলিম:৬৬৭৭]।
মৃতদের বন্ধুদের সাথে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আমলও আমাদেরকে উৎসাহিত করে। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে,

« ﺇِﺫَﺍ ﺫَﺑَﺢَ ﺍﻟﺸَّﺎﺓَ ﻓَﻴَﻘُﻮﻝُ ‏« ﺃَﺭْﺳِﻠُﻮﺍ ﺑِﻬَﺎ ﺇِﻟَﻰ ﺃَﺻْﺪِﻗَﺎﺀِ ﺧَﺪِﻳﺠَﺔَ »

অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনই কোন বকরী যবেহ করতেন, তখনই তিনি বলতেন, এর কিছু অংশ খাদীজার বান্ধবীদের নিকট পাঠিয়ে দাও [সহীহ মুসলিম: ৬৪৩১]

৮. মা-বাবার আত্নীয়দের সাথে সম্পর্ক রাখা

সন্তান তার মা-বাবার আত্নীয়দের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখবে। আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

« ﻣَﻦْ ﺃَﺣَﺐَّ ﺃَﻥْ ﻳَﺼِﻞَ ﺃَﺑَﺎﻩُ ﻓِﻲ ﻗَﺒْﺮِﻩِ ، ﻓَﻠْﻴَﺼِﻞْ ﺇِﺧْﻮَﺍﻥَ ﺃَﺑِﻴﻪِ ﺑَﻌْﺪَﻩُ »

‘যে ব্যক্তি তার পিতার সাথে কবরে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে ভালবাসে, সে যেন পিতার মৃত্যুর পর তার ভাইদের সাথে সু-সম্পর্ক রাখে’ [সহীহ ইবন হিববান:৪৩২]

৯. ঋণ পরিশোধ করা

মা-বাবার কোন ঋণ থাকলে তা দ্রুত পরিশোধ করা সন্তানদের উপর বিশেষভাবে কর্তব্য। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঋণের পরিশোধ করার বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

« ﻧَﻔْﺲُ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻦِ ﻣُﻌَﻠَّﻘَﺔٌ ﺑِﺪَﻳْﻨِﻪً ﺣَﺘَّﻰ ﻳُﻘْﻀَﻰ ﻋَﻨْﻪُ ».

অর্থ: ‘‘মুমিন ব্যক্তির আত্মা তার ঋণের সাথে সম্পৃক্ত থেকে যায়; যতক্ষণ তা তা তার পক্ষ থেকে পরিশোধ করা হয়”। [সুনান ইবন মাজাহ:২৪১৩]
ঋণ পরিশোধ না করার কারণে জান্নাতের যাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যায়; এমনকি যদি আল্লাহর রাস্তায় শহীদও হয় । হাদীসে আরো এসেছে,

« ﻣَﺎ ﺩَﺧَﻞَ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔَ ﺣَﺘَّﻰ ﻳُﻘْﻀَﻰ ﺩَﻳْﻨُﻪُ »

অর্থ: যতক্ষণ পর্যন্ত বান্দার ঋণ পরিশোধ না করা হবে ততক্ষণ পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। [নাসায়ী ৭/৩১৪; তাবরানী ফিল কাবীর ১৯/২৪৮; মুস্তাদরাকে হাকিম ২/২৯]

১০. কাফফারা আদায় করা

মা-বাবার কোন শপথের কাফফারা,ভুলকৃত হত্যাসহ কোন কাফফারা বাকী থাকলে সন্তান তা পূরণ করবে। আল-কুরআনে বলা হয়েছে,

﴿ﻭَﻣَﻦ ﻗَﺘَﻞَ ﻣُﺆۡﻣِﻨًﺎ ﺧَﻄَٔٗﺎ ﻓَﺘَﺤۡﺮِﻳﺮُ ﺭَﻗَﺒَﺔٖ ﻣُّﺆۡﻣِﻨَﺔٖ ﻭَﺩِﻳَﺔٞ ﻣُّﺴَﻠَّﻤَﺔٌ ﺇِﻟَﻰٰٓ ﺃَﻫۡﻠِﻪِۦٓ ﺇِﻟَّﺂ ﺃَﻥ ﻳَﺼَّﺪَّﻗُﻮﺍْۚ ﴾ ‏[ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ : ٩٢ ‏]

অর্থ: যে ব্যক্তি ভুলক্রমে কোন মুমিনকে হত্যা করবে, তাহলে একজন মুমিন দাসকে মুক্ত করতে হবে এবং দিয়াত (রক্ত পণ দিতে হবে) যা হস্তান্তর করা হবে তার পরিজনদের কাছে। তবে তারা যদি সদাকা (ক্ষমা) করে দেয় (তাহলে সেটা ভিন্ন কথা)
[ সূরা আন-নিসা:৯২]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

« ﻣَﻦْ ﺣَﻠَﻒَ ﻋَﻠَﻰ ﻳَﻤِﻴﻦٍ ﻓَﺮَﺃَﻯ ﻏَﻴْﺮَﻫَﺎ ﺧَﻴْﺮًﺍ ﻣِﻨْﻬَﺎ ﻓَﻠْﻴَﺄْﺗِﻬَﺎ ﻭَﻟْﻴُﻜَﻔِّﺮْ ﻋَﻦْ ﻳَﻤِﻴﻨِﻪِ ».

অর্থ: ‘‘ যে ব্যক্তি কসম খেয়ে শপথ করার পর তার থেকে উত্তম কিছু করলেও তার কাফফারা অদায় করবে’’
[সহীহ মুসলিম: ৪৩৬০] ।

এ বিধান জীবিত ও মৃত সবার ক্ষেত্রে সমভাবে প্রযোজ্য। দুনিয়ার বুকে কেউ অন্যায় করলে তার কাফফারা দিতে হবে। অনুরূপভাবে কেউ অন্যায় করে মারা গেলে তার পরিবার-পরিজন মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কাফফারা প্রদান করবেন।

১১. ক্ষমা প্রার্থনা করাঃ

মা-বাবার জন্য আল্লাহর নিকট বেশী বেশী ক্ষমা প্রার্থনা করা গুরুত্বপূর্ণ আমল। সন্তান মা-বাবার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করায় আল্লাহ তা‘আলা তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। হাদীসে বলা হয়েছে,

« ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ ﻗَﺎﻝَ : ﺗُﺮْﻓَﻊُ ﻟِﻠْﻤَﻴِّﺖِ ﺑَﻌْﺪَ ﻣَﻮْﺗِﻪِ ﺩَﺭَﺟَﺘُﻪُ . ﻓَﻴَﻘُﻮﻝُ : ﺃَﻱْ ﺭَﺏِّ ، ﺃَﻱُّ ﺷَﻲْﺀٍ ﻫَﺬِﻩِ ؟ ﻓَﻴُﻘَﺎﻝُ : ﻭَﻟَﺪُﻙَ ﺍﺳْﺘَﻐْﻔَﺮَ ﻟَﻚَ »

অর্থ: আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, মৃত্যুর পর কোন বান্দাহর মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়। তখন সে বলে হে আমার রব, আমি তো এতো মর্যাদার আমল করিনি, কীভাবে এ আমল আসলো ? তখন বলা হবে, তোমার সন্তান তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করায় এ মর্যাদা তুমি পেয়েছো’’ [আল-আদাবুল মুফরাদ:৩৬]।
মা-বাবা দুনিয়া থেকে বিদায় নেয়ার পর তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করার বিষয়ে উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত হাদীসে এসেছে,

« ﻋَﻦْ ﻋُﺜْﻤَﺎﻥَ ، ﻗَﺎﻝَ : ﻭَﻗَﻒَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻋَﻠَﻰ ﻗَﺒْﺮِ ﺭَﺟُﻞٍ ﻭَﻫُﻮَ ﻳُﺪْﻓَﻦُ ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﻓَﺮَﻍَ ﻣِﻨْﻪُ ﻗَﺎﻝَ : ﺍﺳْﺘَﻐْﻔِﺮُﻭﺍ ﻷَﺧِﻴﻜُﻢْ ﻭَﺳَﻠُﻮﺍ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻟَﻪُ ﺑﺎﻟﺜَّﺒَﺎﺕِ ؛ ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﻳُﺴْﺄَﻝُ ﺍﻵﻥَ ».

অর্থ: উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন এক মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার পর তার কবরের পার্শ্বে দাঁড়ালেন এবং বললেন ‘‘তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং তার জন্য ঈমানের উপর অবিচলতা ও দৃঢ়তা কামনা কর, কেননা এখনই তাকে প্রশ্ন করা হবে’’ [মুসনাদুল বাজ্জার :৪৪৫]।
তাই সুন্নাত হচ্ছে, মৃত ব্যক্তিকে কবরে দেয়ার পর তার কবরের পার্শ্বে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে তার জন্য প্রশ্নোত্তর সহজ করে দেয়া, প্রশ্নোত্তর দিতে সমর্থ হওয়ার জন্য দো‘আ করা।

১২. মান্নত পূরণ করা

মা-বাবা কোন মান্নত করে গেলে সন্তান তার পক্ষ থেকে পূরণ করবে। ইবন আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে,

« ﺃَﻥَّ ﺍﻣْﺮَﺃَﺓً ﻧَﺬَﺭَﺕْ ﺃَﻥْ ﺗَﺼُﻮﻡَ ﺷَﻬْﺮًﺍ ﻓَﻤَﺎﺗَﺖْ ﻓَﺄَﺗَﻰ ﺃَﺧُﻮﻫَﺎ ﺍﻟﻨَّﺒِﻰَّ -ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﻓَﻘَﺎﻝَ : ‏« ﺻُﻢْ ﻋَﻨْﻬَﺎ ».

অর্থ: কোন মহিলা রোজা রাখার মান্নত করেছিল, কিন্তু সে তা পূরণ করার পূর্বেই মৃত্যুবরণ করল। এরপর তার ভাই এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আসলে তিনি বলরেন, তার পক্ষ থেকে সিয়াম পালন কর। [সহীহ ইবন হিববান:২৮০]

১৩. মা-বাবার ভাল কাজসমূহ জারী রাখা

মা-বাবা যেসব ভাল কাজ অর্থাৎ মসজিদ তৈরী করা, মাদরাসা তৈরী করা, দীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরীসহ যে কাজগুলো করে গিয়েছেন সন্তান হিসাবে তা যাতে অব্যাহত থাকে তার ব্যবস্থা করা। কেননা এসব ভাল কাজের সওয়াব তাদের আমলনামায় যুক্ত হতে থাকে। হাদীসে এসেছে,

« ﻣَﻦْ ﺩَﻝَّ ﻋَﻠَﻰ ﺧَﻴْﺮٍ ﻓَﻠَﻪُ ﻣِﺜْﻞُ ﺃَﺟْﺮِ ﻓَﺎﻋِﻠِﻪِ »

‘‘ভাল কাজের পথপ্রদর্শনকারী এ কাজ সম্পাদনকারীর অনুরূপ সাওয়াব পাবে’’। [সুনান আততিরমীযি : ২৬৭০]

« ﻣَﻦْ ﺳَﻦَّ ﻓِﻰ ﺍﻹِﺳْﻼَﻡِ ﺳُﻨَّﺔً ﺣَﺴَﻨَﺔً ﻓَﻠَﻪُ ﺃَﺟْﺮُﻫَﺎ ﻭَﺃَﺟْﺮُ ﻣَﻦْ ﻋَﻤِﻞَ ﺑِﻬَﺎ ﺑَﻌْﺪَﻩُ ﻣِﻦْ ﻏَﻴْﺮِ ﺃَﻥْ ﻳَﻨْﻘُﺺَ ﻣِﻦْ ﺃُﺟُﻮﺭِﻫِﻢْ ﺷَﻰْﺀٌ »

যে ব্যক্তির ইসলামের ভাল কাজ শুরু করল, সে এ কাজ সম্পাদনকারীর অনুরূপ সাওয়াব পাবে। অথচ তাদেও সওয়াব থেকে কোন কমতি হবে না’’ [সহীহ মুসলিম:২৩৯৮]।
১৪. কবর যিয়ারত করা

সন্তান তার মা-বাবার কবর যিয়ারত করবে। এর মাধ্যমে সন্তান এবং মা-বাবা উভয়ই উপকৃত হবে। এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

« ﻛُﻨْﺖُ ﻧَﻬَﻴْﺘُﻜُﻢْ ﻋَﻦْ ﺯِﻳَﺎﺭَﺓِ ﺍﻟْﻘُﺒُﻮﺭِ ﻓَﻘَﺪْ ﺃُﺫِﻥَ ﻟِﻤُﺤَﻤَّﺪٍ ﻓِﻰ ﺯِﻳَﺎﺭَﺓِ ﻗَﺒْﺮِ ﺃُﻣِّﻪِ ﻓَﺰُﻭﺭُﻭﻫَﺎ ﻓَﺈِﻧَّﻬَﺎ ﺗُﺬَﻛِّﺮُ ﺍﻵﺧِﺮَﺓَ »

অর্থ: আমি তোমাদেরকে কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম,অত:পর মুহাম্মাদের মায়ের কবর যিয়ারতের অনুমতি দেয়া হয়েছে। এখন তোমরা কবর যিয়রাত কর, কেননা তা আখেরাতকে স্মরণ করিয়ে দেয় [সুনান তিরমীযি :১০৫৪]।
যিয়রাত কর, কেননা তা আখেরাতকে স্মরণ করিয়ে দেয় [সুনান তিরমীযি :১০৫৪]।
কবর যিয়ারত কোন দিনকে নির্দিষ্ট করে করা যাবে না। কবর যিযারত করার সময় বলবে,

« ﺍﻟﺴَّﻼَﻡُ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﺃَﻫْﻞَ ﺍﻟﺪِّﻳَﺎﺭِ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨِﻴﻦَ ﻭَﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻤِﻴﻦَ ، ﻭَﺇِﻧَّﺎ ﺇِﻥْ ﺷَﺎﺀَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺑِﻜُﻢْ ﻻَﺣِﻘُﻮﻥَ ، ﻧَﺴْﺄَﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻟَﻨَﺎ ﻭَﻟَﻜُﻢُ ﺍﻟْﻌَﺎﻓِﻴَﺔَ ».

অর্থ: কবরবাসী মুমিন-মুসলিম আপনাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক । নিশ্চয় আমরা আপনাদের সাথে মিলিত হবো। আমরা আল্লাহর কাছে আপনাদের এবং আমাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি। [সুনান ইবন মাজাহ :১৫৪৭]
১৫. ওয়াদা করে গেলে তা বাস্তবায়ন করা

মা-বাবা কারো সাথে কোন ভাল কাজের ওয়াদা করে গেলে বা এমন ওয়াদা যা তারা বেচে থাকলে করে যেতেন, সন্তান যথাসম্ভব তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করবে। কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে,

﴿ﻭَﺃَﻭۡﻓُﻮﺍْ ﺑِﭑﻟۡﻌَﻬۡﺪِۖ ﺇِﻥَّ ﭐﻟۡﻌَﻬۡﺪَ ﻛَﺎﻥَ ﻣَﺴُۡٔﻮﻟٗﺎ ٣٤ ﴾ ‏[ ﺍﻻﺳﺮﺍﺀ : ٣٤ ‏]

অর্থ: আর তোমরা অঙ্গীকার পূর্ণ কর, নিশ্চয় অঙ্গীকার সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। [ সূরা বনী ইসরাঈল:৩৪]
১৬. কোন গুনাহের কাজ করে গেলে তা বন্ধ করা

মা-বাবা বেচে থাকতে কোন গুনাহের কাজের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকলে তা বন্ধ করবে বা শরীয়াহ সম্মতভাবে সংশোধন করে দিবে। কেননা আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

« ﻭَﻣَﻦْ ﺩَﻋَﺎ ﺇِﻟَﻰ ﺿَﻼَﻟَﺔٍ ﻛَﺎﻥَ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻣِﻦَ ﺍﻹِﺛْﻢِ ﻣِﺜْﻞُ ﺁﺛَﺎﻡِ ﻣَﻦْ ﺗَﺒِﻌَﻪُ ﻻَ ﻳَﻨْﻘُﺺُ ﺫَﻟِﻚَ ﻣِﻦْ ﺁﺛَﺎﻣِﻬِﻢْ ﺷَﻴْﺌًﺎ ».

এবং যে মানুষকে গুনাহের দিকে আহবান করবে, এ কাজ সম্পাদনকারীর অনুরূপ গুনাহ তার আমলনামায় যুক্ত হতে থাকবে। অথচ তাদের গুনাহ থেকে কোন কমতি হবে না’’ [সহীহ মুসলিম:৬৯৮০]।

১৭. মা-বাবার পক্ষ থেকে মাফ চাওয়া

মা-বাবা বেচে থাকতে কারো সাথে খারাপ আচরণ করে থাকলে বা কারো উপর যুলুম করে থাকলে বা কাওকে কষ্ট দিয়ে থাকলে মা-বাবার পক্ষ থেকে তার কাছ থেকে মাফ মাফ চেয়ে নিবে অথবা ক্ষতি পূরণ দিয়ে দিবে। কেননা হাদীসে এসেছে,

« ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ : ﺃَﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ، ﻗَﺎﻝَ : ﺃَﺗَﺪْﺭُﻭﻥَ ﻣَﻦِ ﺍﻟْﻤُﻔْﻠِﺲُ ؟ ﻗَﺎﻟُﻮﺍ : ﺍﻟْﻤُﻔْﻠِﺲُ ﻓِﻴﻨَﺎ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻣَﻦْ ﻻَ ﺩِﺭْﻫَﻢَ ﻟَﻪُ ، ﻭَﻻَ ﻣَﺘَﺎﻉَ ﻟَﻪُ ، ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ : ﺍﻟْﻤُﻔْﻠِﺲُ ﻣِﻦْ ﺃُﻣَّﺘِﻲ ﻳَﺄْﺗِﻲ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ ﺑِﺼَﻼَﺗِﻪِ ﻭَﺻِﻴَﺎﻣِﻪِ ﻭَﺯَﻛَﺎﺗِﻪِ ، ﻓَﻴَﺄْﺗِﻲ ﻭَﻗَﺪْ ﺷَﺘَﻢَ ﻫَﺬَﺍ ، ﻭَﺃَﻛَﻞَ ﻣَﺎﻝَ ﻫَﺬَﺍ ، ﻭَﺳَﻔَﻚَ ﺩَﻡَ ﻫَﺬَﺍ ﻭَﺿَﺮَﺏَ ﻫَﺬَﺍ ، ﻓَﻴَﻘْﻌُﺪُ ، ﻓَﻴُﻌْﻄَﻰ ﻫَﺬَﺍ ﻣِﻦْ ﺣَﺴَﻨَﺎﺗِﻪِ ، ﻭَﻫَﺬَﺍ ﻣِﻦْ ﺣَﺴَﻨَﺎﺗِﻪِ ، ﻓَﺈِﻥْ ﻓَﻨِﻴَﺖْ ﺣَﺴَﻨَﺎﺗُﻪُ ﻗَﺒْﻞَ ﺃَﻥْ ﻳُﻌْﻄِﻲَ ﻣَﺎ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺃُﺧِﺬَ ﻣِﻦْ ﺧَﻄَﺎﻳَﺎﻫُﻢْ ، ﻓَﻄُﺮِﺡَ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺛُﻢَّ ﻃُﺮِﺡَ ﻓِﻲ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ ».

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা কি জান নিঃস্ব ব্যক্তি কে? সাহাবীগণ বললেন, আমাদের মধ্যে যার সম্পদ নাই সে হলো গরীব লোক। তখন তিনি বললেন, আমার উম্মতের মধ্যে সে হলো গরীব যে, কিয়ামতের দিন নামায, রোযা ও যাকাত নিয়ে আসবে অথচ সে অমুককে গালি দিয়েছে, অমুককে অপবাদ দিয়েছে, অন্যায়ভাবে লোকের মাল খেয়েছে, সে লোকের রক্ত প্রবাহিত করেছে এবং কাউকে প্রহার করেছে। কাজেই এসব নির্যাতিত ব্যক্তিদেরকে সেদিন তার নেক আমল নামা দিয়ে দেয়া হবে। এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। [সুনান আততিরমিযি :২৪২৮]
সুতরাং এ ধরনের নিঃস্ব ব্যক্তিকে মুক্ত করার জন্য তার হকদারদের কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নেয়া সন্তানের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে।
অল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে মা বাবার জন্য আমলগুলো করার তাওফীক দিন। আমীন!

ﻭﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻰ ﻧﺒﻴﻨﺎ ﻣﺤﻤﺪ ﻭﻋﻠﻲ ﺍﻟﻪ ﻭﺃﺻﺤﺎﺑﻪ ﻭﻣﻦ ﺗﺒﻌﻬﻢ ﺑﺈﺣﺴﺎﻥ ﺇﻟﻰ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﺪﻳﻦ - ﻭﺃﺧﺮ ﺩﻋﻮﺍﻧﺎ ﺃﻥ ﺍﻟﺤﻤﺪ ﻟﻠﻪ ﺭﺏ ﺍﻟﻌﺎﻟﻤﻴﻦ


লেখক: হাবিবুল্লাহ মুহাম্মাদ ইকবাল
অনুবাদক: আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
সূত্র: ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব
আরও পড়ুনঃ মৃত-ব্যক্তির জন্য করণীয় কাজের মাসনূন পদ্ধতি
আরও পড়ুনঃ কুরআন তিলাওয়াত বা অন্যান্য ইবাদাতের সাওয়াব কি মৃত ব্যক্তির নিকট পৌঁছে?
আরও পড়ুনঃ মৃত ব্যক্তির জন্যে ইছালে ছাওয়াব: শরীয়তের দৃষ্টিভঙ্গি
আরও পড়ুনঃ বিভিন্ন প্রকরের “খতম” এর বিদ’আত
আরও পড়ুনঃ কবর, মাযার ও মৃত্যু সম্পর্কীত কতিপয় বিদ’আত
আরও পড়ুনঃ প্রশ্নঃ মৃতের বাড়ীতে কুরআনখানী অনুষ্ঠান করার বিধান কি?
পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না কিন্তু।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন