Views:
A+
A-
হিজরি নববর্ষ উপলক্ষে অভিনন্দন বিনিময়ের বিধান
আল্হামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন, ওয়াসসালাতু ওয়াসসালামু 'আলা খাতামিল আম্বিয়াই ওয়াল-মুরসারীন।
সকল প্রশংসা বিশ্ব প্রতিপালক আল্লাহ তা'আলার জন্যে। সালাত ও সালাম শেষ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি।
অভিনন্দন বিনিময়ের কিছু উপলক্ষ :
১. পারস্পরিক স্বাভাবিক অভিনন্দন। যা একে অপরকে নতুন কোন নিয়ামত অর্জন বা মুসিবত থেকে মুক্তির প্রাক্কালে দিয়ে থাকে। উদ্দেশ্য আল্লাহর শুকরিয়া জ্ঞাপন এবং একজন মুসলিম ভাইকে আনন্দিত ও উৎসাহিত করা। এটা কোন দিনক্ষণ বা মাস, বৎসরের আগমন-প্রস্থানের সাথে সম্পৃক্ত নয়। যেমন, বিবাহ, নতুন সন্তান লাভ, পরীক্ষায় কৃতকার্য, চাকুরি লাভ করা ইত্যাদি উপলক্ষে অভিনন্দন প্রদান।
এরূপ অভিনন্দন আদান-প্রদানে শরীর কোন সমস্যা নেই এটি একটি মানবিক স্বভাবগত বিষয়, বরং আশা করা যায় এতে অভিনন্দন প্রদানকারী ছাওয়াব পাবেন। কারণ তিনি একজন মুসলিম ভাইকে প্রফুল্ল করলেন। আনন্দিত করলেন। যাতে সে উৎসাহ বোধ করবে। শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহ রহ. এর মতে। মুবাহ কাজ ভাল নিয়তে সম্পর্কিত হলে কল্যাণ মূলক কর্ম হিসেবে বিবেচিত হয়। আর মন্দ নিয়তে সম্পাদন করলে মন্দ কর্মের ভিতর গণ্য হয়।
২. নির্দিষ্ট সময় যেমন ঈদ, বৎসর, মাস, দিন উপলক্ষে অভিনন্দন আদান-প্রদান এর বিধান সম্পর্কে বিশ্লেষণ প্রয়োজন। ঈদ-ঈদুল আযহা, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে অভিনন্দন প্রসঙ্গে নতুন করে বলার কিছু নেই। এটি জায়েয মর্মে মোটামুটি সকলের নিকটই পরিষ্কার। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সাহাবিদের আমলদ্বারা প্রমাণিত। নববর্ষ : যেমন হিজরি নববর্ষ উপলক্ষে অভিনন্দন। মাস : যেমন রমজান মাস উপলক্ষে অভিনন্দন। এর একটি ভিত্তি আছে এবং এ প্রসঙ্গে মতানৈক্যের দিকটিও সকলের নিকট প্রসিদ্ধ।
আর বিভিন্ন দিবস যেমন নবিজির জন্ম দিবস, ইসরা, মি'রাজ দিবস ইত্যাদি উপলক্ষে অভিনন্দন বিনিময়। এর বিধান স্পষ্ট-সকলেই জানে- অর্থাৎ বিদয়াত। কারণ বিদয়াত পন্থীদের রীতি-নীতির সাথে এর একটি সূত্রিতা রয়েছে। প্রথমটি ব্যতীত বর্ণিত অভিনন্দন সমূহের কোনটি সম্পর্কেই নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবিদের কারো থেকে কোন প্রমাণ নেই। অথচ তাঁদের যুগে এ উপলক্ষে ও কার্য কারণগুলো বিদ্যমান ছিল এবং অভিনন্দন প্রচলনের কোন প্রতিবন্ধকতা ছিল না। তা সত্ত্বেও তাঁরা তা করেন নি, না নবিজি নিজে না তাঁর কোন সাহাবি। বরং তাঁরা অভিনন্দন বিনিময়কে শুধুমাত্র দুই ঈদ পর্যন্ত সীমিত রেখেছেন।
• বিজ্ঞ ঊলামায়ে কেরাম থেকে নববর্ষের শুরুতে পারস্পরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা বিনিময়ের বিধান সম্পর্কে দু'ধরনের মত পাওয়া যায়।
এক. বৈধ এবং এটি মানুষের স্বভাবগত একটি বিষয়। প্রখ্যাত মনীষী শায়খ মুহাম্মদ বিন উসাইমীন র. ও এ মতের সমর্থক। তিনি বলেছেন।
আমার মতে নববর্ষের শুরুতে অভিনন্দন ও মোবারক বাদ প্রদানে শরীয়ী কোন সমস্যা নেই। তবে বিষয়টি (পূর্ব থেকে) অনুমোদিত এমন নয়। একথার অর্থ হচ্ছে আমরা লোকদের এরূপ বলব না যে, এ উপলক্ষে তোমাদের একে অপরকে অভিনন্দন জানানো সুন্নত। তবে হ্যাঁ তারা যদি এরূপ করে তাহলে এতে কোন সমস্যা নেই। এখন যদি কেউ কাউকে অভিনন্দন করে তাহলে তার উপচিত হবে তাঁর জন্যে আল্লাহ তা'আলার নিকট প্রার্থনা করা যে এ বৎসরটি যেন তার জন্যে কল্যাণ ও বরকতের বৎসর হয়। আর মানুষ অভিনন্দন কামনা করে। এ মাস আলা সম্পর্কে আমি এতটুকুই জানি এবং আমার অভিমত ও তাই। অভিনন্দন মানুষের স্বভাবগত ব্যাপার, কোন ইবাদত সম্পর্কীয় বিষয় নয়।
لقاء الباب المفتوح (লিকাউল বাবিল মাফতুহ)
এ বিষয়ে শায়খ র. এর আরো বক্তব্য আছে (اللقاء الشهري/ লিকায়ে শাহরী/ মাসিক সাক্ষাতকারে) তিনি বলেছেন : যদি কেউ তোমাকে অভিনন্দন-মুবারকবাদ জানায় তাহলে তুমিও তাকে অভিনন্দিত করবে। কিন্তু তুমি আরম্ভ করবে না। এবং প্রথমে কাউকে অভিনন্দন জানাবে না। এ মাসআলাতে এটিই সঠিক।
যদি তোমাকে কেউ বলে, নববর্ষ উপলক্ষে তোমাকে অভিনন্দন বা শুভ নববর্ষ ইত্যাদি তাহলে উত্তরে তুমি বলবে। আল্লাহ তাআলা তোমার জন্য কল্যাণ করুন। এ বৎসরকে তোমার জন্যে কল্যাণ ও বরকতময় করুন। কিন্তু তুমি প্রথমে লোকদের অভিনন্দন দেয়া শুরু করবে না। কারণ সালাফে সালেহীনদের কেউ এরূপ অভিনন্দন আদান-প্রদান করেছেন বলে আমার জানা নেই। বরং সকলের জানা থাকা ভাল, যে পূর্ববর্তী মনীষীগণ মহররম কে বৎসরের শুরু হিসাবে ওমর রা. এর খেলাফত কাল থেকে গণ্য করা শুরু করেছেন।
আল-জিয়াউল লামে'য়/ الضياء اللامع গ্রন্থের ৭০২ পৃষ্ঠায় বলেছেন
নববর্ষের আগমন উপলক্ষে উৎসব করা বা অভিনন্দন বিনিময়ের প্রচলন ঘটানো সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত নয়। কেউ কেউ এ অভিনন্দন বিনিময় কর্মকে যারা বৈধ বলে মত দিয়েছেন তাদের মধ্যে শাফেয়ি মাজহাবের মুতাআখখিরীনদের মধ্য হতে ইমাম কামভেলী /القمولى এবং ইমাম সুয়ূতী আর হাম্বলীদের মধ্য হতে ইমাম আবুল হাসান মাকদেসীর নাম উল্লেখ করেছেন। কলেবর বৃদ্ধির আশংকায় আমি এর বিস্তারিত বর্ণনায় গেলাম না।
দুই. এটি একেবারেই নিষিদ্ধ আর এ মতটিই হচ্ছে অগ্রাধিকার যোগ্য মত। যারা এ মতামত ব্যক্ত করেছে তাঁদের অন্যতম হচ্ছেন সুনান খ্যাত গবেষক শায়খ সালেহ আল ফাউযান। নববর্ষ উপলক্ষে অভিনন্দন বিনিময় সম্পর্কে তাঁকে প্রশ্ন করা হলে তিনি উত্তরে বলেছেন : এ কর্মের কোন শরয়ী ভিত্তি আছে বলে আমাদের জানা নেই। হিজরি তারিখের প্রবর্তনের উদ্দেশ্য ও এ ছিল না যে, শুরু বর্ষকে লোকেরা এটি উপলক্ষ বানাবে। একে অপরকে অভিনন্দন জানাবে। বিভিন্ন উপায়ে উদযাপন করবে, উৎসব করবে, আলোচনা করবে। বরং হিজরি বৎসর ও তারিখ প্রবর্তনের মূল উদ্দেশ্য ছিল تميز العقود তথা বিভিন্ন দাপ্তারিক কাজে শৃঙ্খলা রক্ষার্থে চুক্তি ও সম্পাদন যোগ্য বিষয়াবলীর একটি থেকে অপরটিকে পৃথক করে সামঞ্জস্য বিধান। যেমনটি করেছিলেন হযরত ওমর রা. তাঁর রাজত্বকালে যখন ইসলামি খেলাফতের পরিধি অনেক বিস্তৃত হয়ে গিয়ে ছিল, তাঁর নিকট বিভিন্ন স্টেট থেকে সময় তারিখ উল্লেখ বিহীন অনেক চিঠিপত্র আসতে লাগল, তখন প্রত্যেক চিঠিকে আলাদা আলাদা ভাবে চিহ্নিত করা এবং লেখার তারিখ ও সময় সম্পর্কে অবহিত হয়ে কাজে শৃঙ্খলা ও গত আনার জন্যে চিঠিতে তারিখ লাগানোর প্রয়োজনীয়তা দেখা দিল। ওমর রা. সাহাবাদের সাথে পরামর্শ করলেন সাহাবারা হিজরতের বৎসরকে হিজরি তারিখের সূচনা করে নতুন গণনা শুরু করার পরামর্শ দিলেন এবং তৎকালীন বিদ্যমান থাকা মীলাদী (ঈসায়ী) তারিখকে বাদ দিয়ে হিজরতকে প্রথম ধরে হিজরি সনের প্রবর্তন করলেন। যাতে যুক্তি ও লেখার সময় জানা থাকে এবং কাজ সুশৃঙ্খল ও গতিশীল হয়। এটিই ছিল হিজরি সন প্রবর্তনের মূল কারণ। এটিকে একটি উপলক্ষ বানিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠান-উৎসব উদযাপন করে বিদয়াতের রাস্তা ত্বরান্বিত করার উদ্দেশ্যে এর প্রবর্তন হয়নি।
প্রশ্ন : যদি আমাকে কোন ব্যক্তি বলে : كل عام وأنتم بخير অর্থাৎ সারা বৎসর তুমি সুখ-শান্তিকে অতিবাহিত কর। এ জাতীয় বাক্য এসব দিবসে কি বৈধ?
উত্তর : না, এসব অনুমোদিত নয়। এগুলো জায়েযও নেই।
দেখুন: الإجابات المهمة فى المشاكل الملحة আল ইজাবাতুল মুহিম্মাহ ফিল মাশাকিলিল মুলিম্মাহ। পৃ: ২২৯
এ বিষয়ে গভীর ভাবে চিন্তাশীল ব্যক্তি "অভিনন্দন নিষিদ্ধ" মর্মে বক্তব্যকে সমর্থন যোগ্য বলে বিবেচনা করবেন বলে আমাদের বিশ্বাস। এর কারণ অনেক। কিছু নিম্নে প্রদত্ব হল।
(১) এ অভিনন্দন কর্মটি বৎসরের এমন একটি দিনে সম্পাদিত হবে যা প্রতি বৎসর বার বার ফিরে আসবে। ফলে একে অন্যান্য উদযাপন যোগ্য দিনের সাথে গণ্য করা হবে অথচ আমাদেরকে ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহা ব্যতীত অন্য কোন ঈদ উদযাপন করতে নিষেধ করা হয়েছে। এ দিকটির বিবেচনায় নববর্ষে অভিনন্দন মুবারকবাদ বিনিময়কে নিষেধ করা হবে।
(২) এটি ইয়াহুদী-নাসারাদের সাদৃশ্যাবলম্বন। অথচ আমাদেরকে তাদের বিরোধিতা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইয়াহুদীরা হিব্রু (Hebrwe) বর্ষের শুরুতে যা (تسري) তাশরী নামক মাসে শুরু হয়, একে অপরকে অভিনন্দন জানায়। শুভেচ্ছা বিনিময় করে। তাশরী (تسري) হচ্ছে ইয়াহুদীদের প্রথম মাস। শনিবারের ন্যায় এদিনও যাবতীয় কাজ-কর্ম হারাম আর নাসারা (খৃষ্টান) রা ঈসায়ী বর্ষের শুরুতে পরস্পর অভিনন্দন আদান প্রদান ও শুভেচ্ছা বিনিময় করে।
(৩) এর মাধ্যমে অগ্নিপূজক এবং আরব্য মুশরিকদের সাদৃশ্যাবলম্বন এবং তারেদ অনুকরণ করা হয়। অগ্নিপূজকরা নওরোজ তথা তাদের শুরু বর্ষে অভিনন্দন বিনিময় করত। নওরোজ অর্থ হচ্ছে-নতুন দিন। আর জাহেলী যুগের আরবরা মুহররম মাসের প্রথমদিনে নিজ রাজাদেরকে মুবারকবাদ জানাত। আল্লামা কাযভীনী র. স্বীয় কিতাবু আজায়েবুল মাখলুকাত
এমনিটিই বর্ণনা করেছেন। দেখুন : الأعياد وأثرها على المسلمين আল আ'ইয়াদ ওয়া আছরুহা আলাল মুসলিমীন। ড. সুলাইমান আল সুহাইমী
(৪) হিজরি নববর্ষ উপলক্ষে অভিনন্দনকে বৈধতা প্রদান করা প্রকারান্তরে এ জাতীয় অনেক দিবস উপলক্ষে অভিনন্দন বিনিময়ের রাস্তা সম্পূর্ণরূপে খুলে দেয়া। যেমন শিক্ষা বর্ষের সূচনা উপলক্ষে অভিনন্দন আদান-প্রদান, স্বাধীনতা দিবস, জাতীয় দিবস অনুরূপ অনেক দিবস যা নববর্ষ উপলক্ষে অভিনন্দন জায়েয মর্মে মত প্রদান কারীরাও বলেনি। বরং এসকল দিবসে অভিনন্দন বৈধ হওয়ার দাবি নববর্ষে অভিনন্দন বৈধ হওয়ার চেয়েও জোরালো কেননা নবী কারীম ও সাহাবাদের যুগে এসব দিবসে অভিনন্দন প্রচলনের কার্যকারণ অনুপস্থিত ছিল আর নববর্ষ উপলক্ষে ছিল বিদ্যমান।
(৫) অভিনন্দনকে বৈধ বলে রায় দেয়ার অর্থই হচ্ছে তাতে অনেক ব্যাপকতা ও সুযোগ প্রদান করা। যার কারণে মোবাইল ফোনে চিঠির আদান প্রদান, ভিউ কার্ডের আদান-প্রদান যদিও তারা একে অভিনন্দন বার্তা বলে থাকে। বেড়ে যাবে এ উপলক্ষে পত্রিকাগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র বের করবে, মিডিয়া তথা স্যাটেলাইট চ্যানেল, টেলিভিশন, ইন্টারনেট ইত্যাদিতেও বিশেষ আয়োজন করা হবে। বরং এক পর্যায়ে এসে অভিনন্দন জানানোর জন্যে ভ্রমণ করা হবে। এ উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠান উদযাপন করা হবে এবং সরকারী ছুটি ঘোষণা করা হবে এটি কোন অলীক কাহিনি নয় বরং বিশ্বের কোন কোন রাষ্ট্রে ইতোমধ্যে এসব শুরু হয়ে গিয়েছে। এখন মানুষ যদি এসব করে অভ্যস্ত হয়ে যায় এবং এগুলো তাদের স্বভাবে পরিণত হয় তাহলে যারা এসকল (বাড়াবাড়ী পূর্ণ) কাজ করে আর নিষেধ করতে পারবে না। সুতরাং অভিনন্দনের রাস্তা বন্ধ করাই সংগত।
(৬) হিজরি নববর্ষ উপলক্ষে অভিনন্দন আদান-প্রদানের মূলত কোন অর্থ নেই। কারণ অভিনন্দনের মূল অর্থতো হচ্ছে নতুন কোন নিয়ামত অর্জিত হওয়া বা কোন ক্ষতিকর জিনিসকে প্রতিহত করতে পারা এবং আনন্দ প্রকাশ স্বরূপ অভিনন্দন বিনিময় করা। এখন প্রশ্ন হচ্ছে একটি হিজরি বর্ষ শেষ হওয়ার মাধ্যমে কী নিয়ামত অর্জিত হল? বরং অধিক যুক্তিযুক্ত ও সংগত হচ্ছে, একটি বৎসর জীবন থেকে চলে গেল। বয়স কমে গেল মৃত্যু ঘনিয়ে আসল এসব নিয়ে চিন্তা করা এবং শিক্ষা গ্রহণ করা।
আরো বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে বিদায়ি বর্ষের মাধ্যমে মুসলমানরা একে অপরকে অভিনন্দন জানায় অথচ তাদের শত্রু তাদের ভূমি দখল করে নিয়েছে। তাদের ভাইদের হত্যা করেছে। তাদের সম্পদ লুণ্ঠন করেছে। তখন তারা নিজেদের কি দিয়ে অভিনন্দিত করবে?
এসব দিক বিবেচনা করা আমরা বলব, অভিনন্দন- মুবারকবাদ নববর্ষ উপলক্ষে নিষিদ্ধ হওয়ারই দাবি রাখে এবং এটিই সঠিক যুক্তি সংগত। যদি কেউ আপনাকে এ উপলক্ষে অভিনন্দন জানায় আপনার উচিত হবে তাকে বুঝানো ও নসিহত করা। কারণ পাল্টা অভিনন্দন জানানো এবং প্রকার এর বৈধতাকে স্বীকার করে না।
সালামের আদান-প্রদানের উপর একে তুলনা করা যায় না। তুলনা করা হলে, এটি হবে একটি অসংলগ্ন কাজ।
তবে বিষয়টি যেহেতু ইজতেহাদী তাই খুব কঠোর ভাবে প্রত্যাখ্যান ও নিন্দা করা ঠিক হবে না। ইজতেহাদী মাসআলা-মাসায়েলের ক্ষেত্রে কোন ইনকার নেই।
والله أعلم وصلى الله على نبينا محمد وعلى آله وصحبه وسلم.
লেখক : শায়খ আলাভী বিন আব্দুল কাদির সাক্কাফ
الشيخ علوي بن عبدالقادر السقاف
অনুবাদক : ইকবাল হোসাইন মাসুম
ترجمة: إقبال حسين معصوم
সম্পাদনা : নুমান আবুল বাশার
مراجعة: نعمان ابو البشر
সূত্র : ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব
المكتب التعاوني للدعوة وتوعية الجاليات بالربوة بمدينة الرياض
আল্হামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন, ওয়াসসালাতু ওয়াসসালামু 'আলা খাতামিল আম্বিয়াই ওয়াল-মুরসারীন।
সকল প্রশংসা বিশ্ব প্রতিপালক আল্লাহ তা'আলার জন্যে। সালাত ও সালাম শেষ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি।
১. পারস্পরিক স্বাভাবিক অভিনন্দন। যা একে অপরকে নতুন কোন নিয়ামত অর্জন বা মুসিবত থেকে মুক্তির প্রাক্কালে দিয়ে থাকে। উদ্দেশ্য আল্লাহর শুকরিয়া জ্ঞাপন এবং একজন মুসলিম ভাইকে আনন্দিত ও উৎসাহিত করা। এটা কোন দিনক্ষণ বা মাস, বৎসরের আগমন-প্রস্থানের সাথে সম্পৃক্ত নয়। যেমন, বিবাহ, নতুন সন্তান লাভ, পরীক্ষায় কৃতকার্য, চাকুরি লাভ করা ইত্যাদি উপলক্ষে অভিনন্দন প্রদান।
এরূপ অভিনন্দন আদান-প্রদানে শরীর কোন সমস্যা নেই এটি একটি মানবিক স্বভাবগত বিষয়, বরং আশা করা যায় এতে অভিনন্দন প্রদানকারী ছাওয়াব পাবেন। কারণ তিনি একজন মুসলিম ভাইকে প্রফুল্ল করলেন। আনন্দিত করলেন। যাতে সে উৎসাহ বোধ করবে। শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহ রহ. এর মতে। মুবাহ কাজ ভাল নিয়তে সম্পর্কিত হলে কল্যাণ মূলক কর্ম হিসেবে বিবেচিত হয়। আর মন্দ নিয়তে সম্পাদন করলে মন্দ কর্মের ভিতর গণ্য হয়।
২. নির্দিষ্ট সময় যেমন ঈদ, বৎসর, মাস, দিন উপলক্ষে অভিনন্দন আদান-প্রদান এর বিধান সম্পর্কে বিশ্লেষণ প্রয়োজন। ঈদ-ঈদুল আযহা, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে অভিনন্দন প্রসঙ্গে নতুন করে বলার কিছু নেই। এটি জায়েয মর্মে মোটামুটি সকলের নিকটই পরিষ্কার। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সাহাবিদের আমলদ্বারা প্রমাণিত। নববর্ষ : যেমন হিজরি নববর্ষ উপলক্ষে অভিনন্দন। মাস : যেমন রমজান মাস উপলক্ষে অভিনন্দন। এর একটি ভিত্তি আছে এবং এ প্রসঙ্গে মতানৈক্যের দিকটিও সকলের নিকট প্রসিদ্ধ।
আর বিভিন্ন দিবস যেমন নবিজির জন্ম দিবস, ইসরা, মি'রাজ দিবস ইত্যাদি উপলক্ষে অভিনন্দন বিনিময়। এর বিধান স্পষ্ট-সকলেই জানে- অর্থাৎ বিদয়াত। কারণ বিদয়াত পন্থীদের রীতি-নীতির সাথে এর একটি সূত্রিতা রয়েছে। প্রথমটি ব্যতীত বর্ণিত অভিনন্দন সমূহের কোনটি সম্পর্কেই নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবিদের কারো থেকে কোন প্রমাণ নেই। অথচ তাঁদের যুগে এ উপলক্ষে ও কার্য কারণগুলো বিদ্যমান ছিল এবং অভিনন্দন প্রচলনের কোন প্রতিবন্ধকতা ছিল না। তা সত্ত্বেও তাঁরা তা করেন নি, না নবিজি নিজে না তাঁর কোন সাহাবি। বরং তাঁরা অভিনন্দন বিনিময়কে শুধুমাত্র দুই ঈদ পর্যন্ত সীমিত রেখেছেন।
• বিজ্ঞ ঊলামায়ে কেরাম থেকে নববর্ষের শুরুতে পারস্পরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা বিনিময়ের বিধান সম্পর্কে দু'ধরনের মত পাওয়া যায়।
এক. বৈধ এবং এটি মানুষের স্বভাবগত একটি বিষয়। প্রখ্যাত মনীষী শায়খ মুহাম্মদ বিন উসাইমীন র. ও এ মতের সমর্থক। তিনি বলেছেন।
আমার মতে নববর্ষের শুরুতে অভিনন্দন ও মোবারক বাদ প্রদানে শরীয়ী কোন সমস্যা নেই। তবে বিষয়টি (পূর্ব থেকে) অনুমোদিত এমন নয়। একথার অর্থ হচ্ছে আমরা লোকদের এরূপ বলব না যে, এ উপলক্ষে তোমাদের একে অপরকে অভিনন্দন জানানো সুন্নত। তবে হ্যাঁ তারা যদি এরূপ করে তাহলে এতে কোন সমস্যা নেই। এখন যদি কেউ কাউকে অভিনন্দন করে তাহলে তার উপচিত হবে তাঁর জন্যে আল্লাহ তা'আলার নিকট প্রার্থনা করা যে এ বৎসরটি যেন তার জন্যে কল্যাণ ও বরকতের বৎসর হয়। আর মানুষ অভিনন্দন কামনা করে। এ মাস আলা সম্পর্কে আমি এতটুকুই জানি এবং আমার অভিমত ও তাই। অভিনন্দন মানুষের স্বভাবগত ব্যাপার, কোন ইবাদত সম্পর্কীয় বিষয় নয়।
لقاء الباب المفتوح (লিকাউল বাবিল মাফতুহ)
এ বিষয়ে শায়খ র. এর আরো বক্তব্য আছে (اللقاء الشهري/ লিকায়ে শাহরী/ মাসিক সাক্ষাতকারে) তিনি বলেছেন : যদি কেউ তোমাকে অভিনন্দন-মুবারকবাদ জানায় তাহলে তুমিও তাকে অভিনন্দিত করবে। কিন্তু তুমি আরম্ভ করবে না। এবং প্রথমে কাউকে অভিনন্দন জানাবে না। এ মাসআলাতে এটিই সঠিক।
যদি তোমাকে কেউ বলে, নববর্ষ উপলক্ষে তোমাকে অভিনন্দন বা শুভ নববর্ষ ইত্যাদি তাহলে উত্তরে তুমি বলবে। আল্লাহ তাআলা তোমার জন্য কল্যাণ করুন। এ বৎসরকে তোমার জন্যে কল্যাণ ও বরকতময় করুন। কিন্তু তুমি প্রথমে লোকদের অভিনন্দন দেয়া শুরু করবে না। কারণ সালাফে সালেহীনদের কেউ এরূপ অভিনন্দন আদান-প্রদান করেছেন বলে আমার জানা নেই। বরং সকলের জানা থাকা ভাল, যে পূর্ববর্তী মনীষীগণ মহররম কে বৎসরের শুরু হিসাবে ওমর রা. এর খেলাফত কাল থেকে গণ্য করা শুরু করেছেন।
আল-জিয়াউল লামে'য়/ الضياء اللامع গ্রন্থের ৭০২ পৃষ্ঠায় বলেছেন
নববর্ষের আগমন উপলক্ষে উৎসব করা বা অভিনন্দন বিনিময়ের প্রচলন ঘটানো সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত নয়। কেউ কেউ এ অভিনন্দন বিনিময় কর্মকে যারা বৈধ বলে মত দিয়েছেন তাদের মধ্যে শাফেয়ি মাজহাবের মুতাআখখিরীনদের মধ্য হতে ইমাম কামভেলী /القمولى এবং ইমাম সুয়ূতী আর হাম্বলীদের মধ্য হতে ইমাম আবুল হাসান মাকদেসীর নাম উল্লেখ করেছেন। কলেবর বৃদ্ধির আশংকায় আমি এর বিস্তারিত বর্ণনায় গেলাম না।
দুই. এটি একেবারেই নিষিদ্ধ আর এ মতটিই হচ্ছে অগ্রাধিকার যোগ্য মত। যারা এ মতামত ব্যক্ত করেছে তাঁদের অন্যতম হচ্ছেন সুনান খ্যাত গবেষক শায়খ সালেহ আল ফাউযান। নববর্ষ উপলক্ষে অভিনন্দন বিনিময় সম্পর্কে তাঁকে প্রশ্ন করা হলে তিনি উত্তরে বলেছেন : এ কর্মের কোন শরয়ী ভিত্তি আছে বলে আমাদের জানা নেই। হিজরি তারিখের প্রবর্তনের উদ্দেশ্য ও এ ছিল না যে, শুরু বর্ষকে লোকেরা এটি উপলক্ষ বানাবে। একে অপরকে অভিনন্দন জানাবে। বিভিন্ন উপায়ে উদযাপন করবে, উৎসব করবে, আলোচনা করবে। বরং হিজরি বৎসর ও তারিখ প্রবর্তনের মূল উদ্দেশ্য ছিল تميز العقود তথা বিভিন্ন দাপ্তারিক কাজে শৃঙ্খলা রক্ষার্থে চুক্তি ও সম্পাদন যোগ্য বিষয়াবলীর একটি থেকে অপরটিকে পৃথক করে সামঞ্জস্য বিধান। যেমনটি করেছিলেন হযরত ওমর রা. তাঁর রাজত্বকালে যখন ইসলামি খেলাফতের পরিধি অনেক বিস্তৃত হয়ে গিয়ে ছিল, তাঁর নিকট বিভিন্ন স্টেট থেকে সময় তারিখ উল্লেখ বিহীন অনেক চিঠিপত্র আসতে লাগল, তখন প্রত্যেক চিঠিকে আলাদা আলাদা ভাবে চিহ্নিত করা এবং লেখার তারিখ ও সময় সম্পর্কে অবহিত হয়ে কাজে শৃঙ্খলা ও গত আনার জন্যে চিঠিতে তারিখ লাগানোর প্রয়োজনীয়তা দেখা দিল। ওমর রা. সাহাবাদের সাথে পরামর্শ করলেন সাহাবারা হিজরতের বৎসরকে হিজরি তারিখের সূচনা করে নতুন গণনা শুরু করার পরামর্শ দিলেন এবং তৎকালীন বিদ্যমান থাকা মীলাদী (ঈসায়ী) তারিখকে বাদ দিয়ে হিজরতকে প্রথম ধরে হিজরি সনের প্রবর্তন করলেন। যাতে যুক্তি ও লেখার সময় জানা থাকে এবং কাজ সুশৃঙ্খল ও গতিশীল হয়। এটিই ছিল হিজরি সন প্রবর্তনের মূল কারণ। এটিকে একটি উপলক্ষ বানিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠান-উৎসব উদযাপন করে বিদয়াতের রাস্তা ত্বরান্বিত করার উদ্দেশ্যে এর প্রবর্তন হয়নি।
উত্তর : না, এসব অনুমোদিত নয়। এগুলো জায়েযও নেই।
দেখুন: الإجابات المهمة فى المشاكل الملحة আল ইজাবাতুল মুহিম্মাহ ফিল মাশাকিলিল মুলিম্মাহ। পৃ: ২২৯
এ বিষয়ে গভীর ভাবে চিন্তাশীল ব্যক্তি "অভিনন্দন নিষিদ্ধ" মর্মে বক্তব্যকে সমর্থন যোগ্য বলে বিবেচনা করবেন বলে আমাদের বিশ্বাস। এর কারণ অনেক। কিছু নিম্নে প্রদত্ব হল।
(১) এ অভিনন্দন কর্মটি বৎসরের এমন একটি দিনে সম্পাদিত হবে যা প্রতি বৎসর বার বার ফিরে আসবে। ফলে একে অন্যান্য উদযাপন যোগ্য দিনের সাথে গণ্য করা হবে অথচ আমাদেরকে ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহা ব্যতীত অন্য কোন ঈদ উদযাপন করতে নিষেধ করা হয়েছে। এ দিকটির বিবেচনায় নববর্ষে অভিনন্দন মুবারকবাদ বিনিময়কে নিষেধ করা হবে।
(২) এটি ইয়াহুদী-নাসারাদের সাদৃশ্যাবলম্বন। অথচ আমাদেরকে তাদের বিরোধিতা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইয়াহুদীরা হিব্রু (Hebrwe) বর্ষের শুরুতে যা (تسري) তাশরী নামক মাসে শুরু হয়, একে অপরকে অভিনন্দন জানায়। শুভেচ্ছা বিনিময় করে। তাশরী (تسري) হচ্ছে ইয়াহুদীদের প্রথম মাস। শনিবারের ন্যায় এদিনও যাবতীয় কাজ-কর্ম হারাম আর নাসারা (খৃষ্টান) রা ঈসায়ী বর্ষের শুরুতে পরস্পর অভিনন্দন আদান প্রদান ও শুভেচ্ছা বিনিময় করে।
(৩) এর মাধ্যমে অগ্নিপূজক এবং আরব্য মুশরিকদের সাদৃশ্যাবলম্বন এবং তারেদ অনুকরণ করা হয়। অগ্নিপূজকরা নওরোজ তথা তাদের শুরু বর্ষে অভিনন্দন বিনিময় করত। নওরোজ অর্থ হচ্ছে-নতুন দিন। আর জাহেলী যুগের আরবরা মুহররম মাসের প্রথমদিনে নিজ রাজাদেরকে মুবারকবাদ জানাত। আল্লামা কাযভীনী র. স্বীয় কিতাবু আজায়েবুল মাখলুকাত
এমনিটিই বর্ণনা করেছেন। দেখুন : الأعياد وأثرها على المسلمين আল আ'ইয়াদ ওয়া আছরুহা আলাল মুসলিমীন। ড. সুলাইমান আল সুহাইমী
(৪) হিজরি নববর্ষ উপলক্ষে অভিনন্দনকে বৈধতা প্রদান করা প্রকারান্তরে এ জাতীয় অনেক দিবস উপলক্ষে অভিনন্দন বিনিময়ের রাস্তা সম্পূর্ণরূপে খুলে দেয়া। যেমন শিক্ষা বর্ষের সূচনা উপলক্ষে অভিনন্দন আদান-প্রদান, স্বাধীনতা দিবস, জাতীয় দিবস অনুরূপ অনেক দিবস যা নববর্ষ উপলক্ষে অভিনন্দন জায়েয মর্মে মত প্রদান কারীরাও বলেনি। বরং এসকল দিবসে অভিনন্দন বৈধ হওয়ার দাবি নববর্ষে অভিনন্দন বৈধ হওয়ার চেয়েও জোরালো কেননা নবী কারীম ও সাহাবাদের যুগে এসব দিবসে অভিনন্দন প্রচলনের কার্যকারণ অনুপস্থিত ছিল আর নববর্ষ উপলক্ষে ছিল বিদ্যমান।
(৫) অভিনন্দনকে বৈধ বলে রায় দেয়ার অর্থই হচ্ছে তাতে অনেক ব্যাপকতা ও সুযোগ প্রদান করা। যার কারণে মোবাইল ফোনে চিঠির আদান প্রদান, ভিউ কার্ডের আদান-প্রদান যদিও তারা একে অভিনন্দন বার্তা বলে থাকে। বেড়ে যাবে এ উপলক্ষে পত্রিকাগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র বের করবে, মিডিয়া তথা স্যাটেলাইট চ্যানেল, টেলিভিশন, ইন্টারনেট ইত্যাদিতেও বিশেষ আয়োজন করা হবে। বরং এক পর্যায়ে এসে অভিনন্দন জানানোর জন্যে ভ্রমণ করা হবে। এ উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠান উদযাপন করা হবে এবং সরকারী ছুটি ঘোষণা করা হবে এটি কোন অলীক কাহিনি নয় বরং বিশ্বের কোন কোন রাষ্ট্রে ইতোমধ্যে এসব শুরু হয়ে গিয়েছে। এখন মানুষ যদি এসব করে অভ্যস্ত হয়ে যায় এবং এগুলো তাদের স্বভাবে পরিণত হয় তাহলে যারা এসকল (বাড়াবাড়ী পূর্ণ) কাজ করে আর নিষেধ করতে পারবে না। সুতরাং অভিনন্দনের রাস্তা বন্ধ করাই সংগত।
(৬) হিজরি নববর্ষ উপলক্ষে অভিনন্দন আদান-প্রদানের মূলত কোন অর্থ নেই। কারণ অভিনন্দনের মূল অর্থতো হচ্ছে নতুন কোন নিয়ামত অর্জিত হওয়া বা কোন ক্ষতিকর জিনিসকে প্রতিহত করতে পারা এবং আনন্দ প্রকাশ স্বরূপ অভিনন্দন বিনিময় করা। এখন প্রশ্ন হচ্ছে একটি হিজরি বর্ষ শেষ হওয়ার মাধ্যমে কী নিয়ামত অর্জিত হল? বরং অধিক যুক্তিযুক্ত ও সংগত হচ্ছে, একটি বৎসর জীবন থেকে চলে গেল। বয়স কমে গেল মৃত্যু ঘনিয়ে আসল এসব নিয়ে চিন্তা করা এবং শিক্ষা গ্রহণ করা।
আরো বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে বিদায়ি বর্ষের মাধ্যমে মুসলমানরা একে অপরকে অভিনন্দন জানায় অথচ তাদের শত্রু তাদের ভূমি দখল করে নিয়েছে। তাদের ভাইদের হত্যা করেছে। তাদের সম্পদ লুণ্ঠন করেছে। তখন তারা নিজেদের কি দিয়ে অভিনন্দিত করবে?
এসব দিক বিবেচনা করা আমরা বলব, অভিনন্দন- মুবারকবাদ নববর্ষ উপলক্ষে নিষিদ্ধ হওয়ারই দাবি রাখে এবং এটিই সঠিক যুক্তি সংগত। যদি কেউ আপনাকে এ উপলক্ষে অভিনন্দন জানায় আপনার উচিত হবে তাকে বুঝানো ও নসিহত করা। কারণ পাল্টা অভিনন্দন জানানো এবং প্রকার এর বৈধতাকে স্বীকার করে না।
সালামের আদান-প্রদানের উপর একে তুলনা করা যায় না। তুলনা করা হলে, এটি হবে একটি অসংলগ্ন কাজ।
তবে বিষয়টি যেহেতু ইজতেহাদী তাই খুব কঠোর ভাবে প্রত্যাখ্যান ও নিন্দা করা ঠিক হবে না। ইজতেহাদী মাসআলা-মাসায়েলের ক্ষেত্রে কোন ইনকার নেই।
والله أعلم وصلى الله على نبينا محمد وعلى آله وصحبه وسلم.
লেখক : শায়খ আলাভী বিন আব্দুল কাদির সাক্কাফ
الشيخ علوي بن عبدالقادر السقاف
অনুবাদক : ইকবাল হোসাইন মাসুম
ترجمة: إقبال حسين معصوم
সম্পাদনা : নুমান আবুল বাশার
مراجعة: نعمان ابو البشر
সূত্র : ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব
المكتب التعاوني للدعوة وتوعية الجاليات بالربوة بمدينة الرياض
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন