Views:
A+
A-
আভিধানিক অর্থ :-স্বরণ করা, মনে করা, উল্লেখ করা, বর্ণনা করা।
পারিভাষিক অর্থ :-শরীয়তের আলোকে জিকির বলা হয়, মুখে বা অন্তরে আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা এবং প্রশংসা করা, পবিত্র কুরআন পাঠ করা, আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করা, তার আদেশ-নিষেধ পালন করা, তার প্রদত্ত নেয়ামত ও সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা।
ইমাম নববী রহ. বলেন :- জিকির কেবল তাসবীহ, তাহলীল, তাহমীদ ও তাকবীর ইত্যাদিতে সীমাবদ্ধ নয়, বরং আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আনুগত্যের সাথে প্রত্যেক আমলকারীই জিকিরকারী হিসেবে বিবেচিত। আল্লাহ তাআলার জিকির এমন এক মজবুত রজ্জু যা সৃষ্টিকে স্রষ্টার সাথে সম্পৃক্ত করে। তাঁর সান্নিধ্য লাভের পথ সুগম করে। মানুষকে উত্তম আদর্শের উপর প্রতিষ্ঠিত করে। সরল ও সঠিক পথের উপর অবিচল রাখে। এ-কারণে আল্লাহ তাআলা মুসলিম ব্যক্তিকে দিবা-রাত্রে গোপনে-প্রকাশ্যে জিকির করার আদেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন :—
আল্লাহ তাআলা আরো বলেন :—
ইবনুল
আরবী রহ. বলেন :— এ এক বড় অধ্যায় যেখানে জ্ঞানীরা হয়রান দিশেহারা হয়ে
পড়েছে। কারণ, এর রয়েছে অনেক উপকারিতা, ইমাম ইবনুল কাইয়ুম রহ. স্বরচিত الوابل الصيب من الكلم الطيب গ্রন্থে সত্তুরের অধিক উপকার উল্লেখ করেছেন। নিম্নে কয়েকটির বিবরণ দেয়া হল।
১- ইহকাল ও পরকালে অন্তরে প্রশান্তি ও স্থিরতা লাভ:
আল্লাহ তাআলা বলেন :—
২- আল্লাহর জিকির সবচেয়ে বড় ও সর্বোত্তম ইবাদত:
কেননা আল্লাহ তাআলাকে স্মরণ করা হচ্ছে ইবাদতের আসল লক্ষ্য। আল্লাহ তাআলা বলেন :
আল্লাহ তাআলা আরো বলেন:
আবুদ্দারদা রা. থেকে বর্ণিত: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন :-
৩- আল্লাহর জিকিরকারী, তাঁর নিদর্শনাবলী থেকে শিক্ষা লাভকারী:
তারাই বিবেক-বুদ্ধিসম্পন্ন। আল্লাহ তাআলা বলেন :—
৪- আল্লাহর জিকির সুরক্ষিত দুর্গ:
বান্দা এ-দ্বারা শয়তান থেকে রক্ষা পায়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন : ইয়াহইয়া বিন জাকারিয়া সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইসরাঈল-তনয়দেরকে বলেছেন :—
৫- জিকির মানুষের ইহকাল ও পরকালের মর্যাদা বৃদ্ধি করে :
আবু হুরাইরা রা: থেকে বর্ণিত তিনি বলেন :-
৬- জিকিরের কারণে ইহকাল ও পরকালে জীবিকা বৃদ্ধি পায় :
আল্লাহ তাআলা নূহ আ. এর কথা বিবৃত করে বলেন :—
উল্লেখ্য যে, ইস্তিগফার জিকিরের বিশেষ প্রকার হিসেবে বিবেচিত।
জিকির অন্তর দ্বারা হতে পারে, জিহ্বা দ্বারা হতে পারে, বা এক সঙ্গে উভয়টা দ্বারাও হতে পারে। এর বিভিন্ন প্রকার রয়েছে, নিচে কিছু উল্লেখ করা হল :-
১. কুরআনে করিম পাঠ করা :
এ হচ্ছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর নাজিলকৃত আল্লাহ তাআলার কালাম। আল্লাহর কালাম বিধায় সাধারণ জিকির-আজকারের চেয়ে কোরআন পাঠ করা উত্তম। আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ রা: থেকে বর্ণিত : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন :-
২. মৌখিক জিকির :
যেমন তাসবীহ, তাহলীল, তাহমীদ ও তাকবীর ইত্যাদি পড়া, যা কুরআন ও সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত।
৩. প্রার্থনা :
এটা বিশেষ জিকির, কেননা এ-দ্বারা আল্লাহ তাআলার নৈকট্য লাভ হয়, ইহকাল ও পরকালের প্রয়োজন পূরণ হয়।
৪. ইস্তিগফার করা :
আল্লাহ তাআলা নূহ আ.-এর কথা বিবৃত করে বলেন :-
৫. অন্তর দিয়ে আল্লাহ তাআলার সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা করা:
এটা অন্যতম বড় জিকির। আল্লাহ তাআলা বলেন :-
৬. রকমারি ইবাদতের অনুশীলন করা :
যেমন সালাত কায়েম, জাকাত প্রদান, পিতা-মাতার সাথে অমায়িক আচরণ, আত্মীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখা, জ্ঞানার্জন ও অপরকে শিক্ষাদান-ইত্যাদি। কেননা, সৎকর্মের আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহকে স্মরণ করা। আল্লাহ তাআলা বলেন :—
জিকির দু ভাগে বিভক্ত :—
১. সাধারণ জিকির :
যার কোন নির্দিষ্ট সময় বা স্থান নেই। বিশেষ কিছু সময় বা স্থান ব্যতীত যে কোন সময়ে বা স্থানে এ সব জিকির করার অবকাশ আছে।
২. বিশেষ জিকির :
যা বিশেষ সময়, অবস্থা ও পাত্র অনুসারে করা হয়। নিচে এমন কিছু সময়, অবস্থা ও স্থানের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেয়া হল যার সাথে বিশেষ বিশেষ জিকিরের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
• সকাল-বিকাল : এর সময় হচ্ছে ফজর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত, আছরের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত।
• ঘুমানো ও ঘুম থেকে উঠার সময়।
• ঘরে প্রবেশের সময়।
• মসজিদে প্রবেশ ও মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময়।
• অসুস্থতার সময়।
• বিপদাপদ ও পেরেশানীর সময়।
• সফরের সময়।
• বৃষ্টি বর্ষণের সময়।
১. সাধারণ জিকির :
সামুরা বিন জুনদব থেকে বর্ণিত : তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন :
২. সকাল-বিকালের জিকির :
আবু হুরাইরা থেকে বর্ণিত : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন :-
৩. বিপদের মুহূর্তে জিকির :
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিপদের সময় বলতেন :-
মোদ্দা কথা, বর্ণিত ফজিলত ও প্রতিশ্রুত পুরস্কার হাসিল করার অভীষ্ট লক্ষ্যে উল্লেখিত ও অনুল্লেখিত প্রয়োজনীয় জিকিরসমূহ মুখস্থ করে নিয়মিত পড়া প্রত্যেক মুসলমানের উচিত।
জিকির
পারিভাষিক অর্থ :-শরীয়তের আলোকে জিকির বলা হয়, মুখে বা অন্তরে আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা এবং প্রশংসা করা, পবিত্র কুরআন পাঠ করা, আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করা, তার আদেশ-নিষেধ পালন করা, তার প্রদত্ত নেয়ামত ও সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা।
ইমাম নববী রহ. বলেন :- জিকির কেবল তাসবীহ, তাহলীল, তাহমীদ ও তাকবীর ইত্যাদিতে সীমাবদ্ধ নয়, বরং আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আনুগত্যের সাথে প্রত্যেক আমলকারীই জিকিরকারী হিসেবে বিবেচিত। আল্লাহ তাআলার জিকির এমন এক মজবুত রজ্জু যা সৃষ্টিকে স্রষ্টার সাথে সম্পৃক্ত করে। তাঁর সান্নিধ্য লাভের পথ সুগম করে। মানুষকে উত্তম আদর্শের উপর প্রতিষ্ঠিত করে। সরল ও সঠিক পথের উপর অবিচল রাখে। এ-কারণে আল্লাহ তাআলা মুসলিম ব্যক্তিকে দিবা-রাত্রে গোপনে-প্রকাশ্যে জিকির করার আদেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন :—
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا اذْكُرُوا اللَّهَ ذِكْرًا كَثِيرًا ﴿41﴾ وَسَبِّحُوهُ بُكْرَةً وَأَصِيلًا ﴿42﴾ (الأحزاب)
মুমিনগণ তোমরা আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ কর। এবং সকাল বিকাল আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা কর। [সূরা আহযাব ৪১,৪২]আল্লাহ তাআলা আরো বলেন :—
وَاذْكُرْ
رَبَّكَ فِي نَفْسِكَ تَضَرُّعًا وَخِيفَةً وَدُونَ الْجَهْرِ مِنَ
الْقَوْلِ بِالْغُدُوِّ وَالْآَصَالِ وَلَا تَكُنْ مِنَ الْغَافِلِينَ
﴿205﴾ الأعراف
তোমরা
প্রতিপালককে মনে মনে সবিনয় ও সশংকচিত্তে অনুচ্চস্বরে প্রত্যুষে ও
সন্ধ্যায় স্মরণ করবে এবং তুমি উদাসীন হবে না। [সূরা আরাফ ২০৫]
জিকিরের ফজিলত ও উপকারিতা
১- ইহকাল ও পরকালে অন্তরে প্রশান্তি ও স্থিরতা লাভ:
আল্লাহ তাআলা বলেন :—
الَّذِينَ آَمَنُوا وَتَطْمَئِنُّ قُلُوبُهُمْ بِذِكْرِ اللَّهِ أَلَا بِذِكْرِ اللَّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ. الرعد:28
যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর স্মরণে যাদের চিত্ত প্রশান্ত হয় ; জেনে রাখ, আল্লাহর স্মরণেই চিত্ত প্রশান্ত হয়। (সূরা রাদ : ২৮) ২- আল্লাহর জিকির সবচেয়ে বড় ও সর্বোত্তম ইবাদত:
কেননা আল্লাহ তাআলাকে স্মরণ করা হচ্ছে ইবাদতের আসল লক্ষ্য। আল্লাহ তাআলা বলেন :
وَلَذِكْرُ اللَّهِ أَكْبَرُ وَاللَّهُ يَعْلَمُ مَا تَصْنَعُونَ ﴿45﴾ العنكبوت
আর আল্লাহর স্মরণই তো সর্বশ্রেষ্ঠ। তোমরা যা কর আল্লাহ তা জানেন। [সূরা আনকাবুত ৪৫]আল্লাহ তাআলা আরো বলেন:
وَالذَّاكِرِينَ اللَّهَ كَثِيرًا وَالذَّاكِرَاتِ أَعَدَّ اللَّهُ لَهُمْ مَغْفِرَةً وَأَجْرًا عَظِيمًا ﴿35﴾ (الأحزاب)
এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও অধিক স্মরণকারী নারী - এদের জন্য আল্লাহ রেখেছেন ক্ষমা ও মহা প্রতিদান। [সূরা আহযাব ৩৫]আবুদ্দারদা রা. থেকে বর্ণিত: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন :-
ألا
أنبئكم بخير أعمالكم، وأزكاها عند مليككم، وأرفعها في درجاتكم، وخير لكم من
إعطاء الذهب والورق، ومن أن تلقوا عدوكم فتضربوا أعناقهم ويضربوا أعناقكم ،
قالوا بلى يا رسول الله، قال: ذكر الله. (رواه الترمذى:3299)
আমি
কি তোমাদেরকে এমন এক আমল সম্পর্কে অবহিত করব না, যা তোমাদের অধিপতির নিকট
সবচেয়ে উত্তম ও পবিত্র, এবং তোমাদের মর্যাদা অধিক বৃদ্ধিকারী, এবং তোমাদের
জন্য স্বর্ণ-রূপা দান করা ও দুশমনের মুখোমুখি হয়ে তোমরা তাদের গর্দানে বা
তারা তোমাদের গর্দানে আঘাত করার চেয়ে উত্তম ? তারা বলল :হ্যাঁ ইয়া
রাসূলুল্লাহ ! তিনি বললেন :-জিকরুল্লাহ (আল্লাহর জিকির বা স্মরণ)।
(তিরমিজি:৩২৯৯)৩- আল্লাহর জিকিরকারী, তাঁর নিদর্শনাবলী থেকে শিক্ষা লাভকারী:
তারাই বিবেক-বুদ্ধিসম্পন্ন। আল্লাহ তাআলা বলেন :—
إِنَّ
فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلَافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ
لَآَيَاتٍ لِأُولِي الْأَلْبَابِ ﴿190﴾ الَّذِينَ يَذْكُرُونَ اللَّهَ
قِيَامًا وَقُعُودًا وَعَلَى جُنُوبِهِمْ ﴿191﴾ آل عمران
আকাশমণ্ডল
ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে, দিবস ও রাত্রির পরিবর্তনে নিদর্শনাবলী রয়েছে
বোধশক্তি সম্পন্ন লোকের জন্য, যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে আল্লাহর স্মরণ
করে ... [সূরা আলে -ইমরান ১৯০- ১৯১]৪- আল্লাহর জিকির সুরক্ষিত দুর্গ:
বান্দা এ-দ্বারা শয়তান থেকে রক্ষা পায়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন : ইয়াহইয়া বিন জাকারিয়া সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইসরাঈল-তনয়দেরকে বলেছেন :—
وآمركم
أن تذكروا الله، فإن مثل ذلك مثل رجل خرج العدو في أثره سراعا، حتى إذا
أتى على حصن حصين فأحرز نفسه منهم، كذلك العبد لا يحرز نفسه من الشيطان إلا
بذكر الله .(رواه أحمد في مسنده:2790)
এবং
আমি তোমাদেরকে আল্লাহর জিকিরের আদেশ দিচ্ছি, কারণ এর তুলনা এমন এক
ব্যক্তির ন্যায় যার পিছনে দুশমন দৌড়ে তাড়া করে ফিরছে, সে সুরক্ষিত
দুর্গে প্রবেশ করে নিজকে রক্ষা করেছে। অনুরূপ, বান্দা আল্লাহর জিকিরের
মাধ্যমে শয়তান থেকে সুরক্ষা পায়। (আহমদ:২৭৯০)৫- জিকির মানুষের ইহকাল ও পরকালের মর্যাদা বৃদ্ধি করে :
আবু হুরাইরা রা: থেকে বর্ণিত তিনি বলেন :-
كان
رسول الله صلى الله عليه وسلم يسير في طريق مكة، فمر على جبل يقال له
جمدان، فقال: سيروا – هذا جمدان- سبق المفردون قال: وما المفردون، يا رسول
الله ؟ قال: الذاكرين الله كثيرا والذاكرات . رواه مسلم في صحيحه:4834
মক্কার
একটি রাস্তায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাঁটছিলেন।
জুমদান নামক পাহাড় অতিক্রম করার সময় বললেন: তোমরা চল,-এটা
জুমদান-মুফাররাদুন অর্থাৎ একক গুণে গুণান্বিতরা এগিয়ে গেছে তিনি জিজ্ঞেস
করলেন :ইয়া রাসূলুল্লাহ মুফাররদূন অর্থাৎ একক গুণে গুণান্বিত কারা ?
জওয়াবে তিনি বললেন :-আল্লাহকে বেশি করে স্মরণকারী নারী-পুরুষ।
(মুসলিম:৪৮৩৪) ৬- জিকিরের কারণে ইহকাল ও পরকালে জীবিকা বৃদ্ধি পায় :
আল্লাহ তাআলা নূহ আ. এর কথা বিবৃত করে বলেন :—
فَقُلْتُ
اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ إِنَّهُ كَانَ غَفَّارًا ﴿10﴾ يُرْسِلِ
السَّمَاءَ عَلَيْكُمْ مِدْرَارًا ﴿11﴾ وَيُمْدِدْكُمْ بِأَمْوَالٍ
وَبَنِينَ وَيَجْعَلْ لَكُمْ جَنَّاتٍ وَيَجْعَلْ لَكُمْ أَنْهَارًا ﴿12﴾
نوح
বলেছি,
তোমাদের প্রতিপালকের ক্ষমা প্রার্থনা কর, তিনি তো মহা ক্ষমাশীল। [১০] তিনি
তোমাদের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাত করবেন। [১১] তিনি তোমাদেরকে সমৃদ্ধ করবেন
ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে এবং তোমাদের জন্য স্থাপন করবেন উদ্যান ও
প্রবাহিত করবেন নদী-নালা। [১২] [সূরা নূহ]উল্লেখ্য যে, ইস্তিগফার জিকিরের বিশেষ প্রকার হিসেবে বিবেচিত।
জিকিরের প্রকারভেদ
জিকির অন্তর দ্বারা হতে পারে, জিহ্বা দ্বারা হতে পারে, বা এক সঙ্গে উভয়টা দ্বারাও হতে পারে। এর বিভিন্ন প্রকার রয়েছে, নিচে কিছু উল্লেখ করা হল :-
১. কুরআনে করিম পাঠ করা :
এ হচ্ছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর নাজিলকৃত আল্লাহ তাআলার কালাম। আল্লাহর কালাম বিধায় সাধারণ জিকির-আজকারের চেয়ে কোরআন পাঠ করা উত্তম। আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ রা: থেকে বর্ণিত : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন :-
من قرأ
حرفا من كتاب الله فله به حسنة، والحسنة بعشر أمثالها، لا أقول (ألم) حرف،
ولكن ألف حرف، ولام حرف، وميم حرف. ( رواه الترمذي:2735)
যে
কিতাবুল্লাহর একটি অক্ষর পড়ল তার জন্য এর বিনিময়ে একটি নেকি অবধারিত।
এবং তাকে একটি নেকির দশ গুণ ছাওয়াব প্রদান করা হবে। আমি বলছি না আলিফ লাম
মীম একটি অক্ষর বরং আলিফ একটি অক্ষর, এবং লাম একটি অক্ষর, এবং মীম একটি
অক্ষর। (তিরমিজি:২৭৩৫) ২. মৌখিক জিকির :
যেমন তাসবীহ, তাহলীল, তাহমীদ ও তাকবীর ইত্যাদি পড়া, যা কুরআন ও সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত।
৩. প্রার্থনা :
এটা বিশেষ জিকির, কেননা এ-দ্বারা আল্লাহ তাআলার নৈকট্য লাভ হয়, ইহকাল ও পরকালের প্রয়োজন পূরণ হয়।
৪. ইস্তিগফার করা :
আল্লাহ তাআলা নূহ আ.-এর কথা বিবৃত করে বলেন :-
فَقُلْتُ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ إِنَّهُ كَانَ غَفَّارًا ﴿10﴾ نوح
বলেছি, তোমাদের প্রতিপালকের ক্ষমা প্রার্থনা কর, তিনি তো মহা ক্ষমাশীল। [সূরা নূহ ১০]৫. অন্তর দিয়ে আল্লাহ তাআলার সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা করা:
এটা অন্যতম বড় জিকির। আল্লাহ তাআলা বলেন :-
إِنَّ
فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلَافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ
لَآَيَاتٍ لِأُولِي الْأَلْبَابِ ﴿190﴾ الَّذِينَ يَذْكُرُونَ اللَّهَ
قِيَامًا وَقُعُودًا وَعَلَى جُنُوبِهِمْ وَيَتَفَكَّرُونَ فِي خَلْقِ
السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ رَبَّنَا مَا خَلَقْتَ هَذَا بَاطِلًا
سُبْحَانَكَ فَقِنَا عَذَابَ النَّارِ ﴿191﴾
আকাশমণ্ডল
ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে, দিবস ও রাত্রির পরিবর্তনে নিদর্শনা বলী রয়েছে
বোধশক্তি সম্পন্ন লোকদের জন্য, যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে আল্লাহর স্মরণ
করে এবং আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর সৃষ্টি সম্বন্ধে চিন্তা করে ও বলে হে আমদের
প্রতিপালক ! তুমি এগুলো নিরর্থক সৃষ্টি করনি, তুমি পবিত্র, তুমি আমাদেরকে
অগ্নি-শাস্তি হতে রক্ষা কর। [সূরা আলে ইমরান১৯০,১৯১] ৬. রকমারি ইবাদতের অনুশীলন করা :
যেমন সালাত কায়েম, জাকাত প্রদান, পিতা-মাতার সাথে অমায়িক আচরণ, আত্মীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখা, জ্ঞানার্জন ও অপরকে শিক্ষাদান-ইত্যাদি। কেননা, সৎকর্মের আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহকে স্মরণ করা। আল্লাহ তাআলা বলেন :—
َأَقِمِ الصَّلَاةَ لِذِكْرِي ﴿14﴾ طه
এবং আমার স্মরণার্থে সালাত কায়েম কর। [সূরা তা-হা ১৪]
জিকিরের সময়সূচি
জিকির দু ভাগে বিভক্ত :—
১. সাধারণ জিকির :
যার কোন নির্দিষ্ট সময় বা স্থান নেই। বিশেষ কিছু সময় বা স্থান ব্যতীত যে কোন সময়ে বা স্থানে এ সব জিকির করার অবকাশ আছে।
২. বিশেষ জিকির :
যা বিশেষ সময়, অবস্থা ও পাত্র অনুসারে করা হয়। নিচে এমন কিছু সময়, অবস্থা ও স্থানের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেয়া হল যার সাথে বিশেষ বিশেষ জিকিরের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
• সকাল-বিকাল : এর সময় হচ্ছে ফজর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত, আছরের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত।
• ঘুমানো ও ঘুম থেকে উঠার সময়।
• ঘরে প্রবেশের সময়।
• মসজিদে প্রবেশ ও মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময়।
• অসুস্থতার সময়।
• বিপদাপদ ও পেরেশানীর সময়।
• সফরের সময়।
• বৃষ্টি বর্ষণের সময়।
জিকিরের কতিপয় নমুনা
১. সাধারণ জিকির :
সামুরা বিন জুনদব থেকে বর্ণিত : তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন :
أحب الكلام إلى الله أربع: سبحان الله، والحمد لله، ولا إله إلا الله، والله أكبر، لا يضرك بأيهن بدأت (رواه مسلم:3985)
আল্লাহর
নিকট সবচেয়ে প্রিয় কথা চারটি : সুবহানাল্লাহ, আলহাম্দু লিল্লাহ, লা
ইলাহা ইল্লাল্লাহ এবং আল্লাহু আকবর, যে কোন একটি দ্বারাই আরম্ভব করা যেতে
পারে। (মুসলিম:৩৯৮৫)২. সকাল-বিকালের জিকির :
আবু হুরাইরা থেকে বর্ণিত : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন :-
من قال
حين يصبح وحين يمسي: سبحان الله وبحمده مائة مرة، لم يأت أحد يوم القيامة
بأفضل مما جاء به إلا أحد قال مثل ما قال أو زاد عليه . رواه مسلم في
صحيحه:4858
যে
সকাল এবং বিকালে সুবহানাল্লাহ ওয়া বিহামদিহী একশত বার বলবে, যে এ-রকম বা
এর অতিরিক্ত বলবে, কিয়ামত দিবসে এর চেয়ে উত্তম কেউ কিছু আনয়ন করতে পারবে
না। (সহীহ মুসলিম:৪৮৫৮) ৩. বিপদের মুহূর্তে জিকির :
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিপদের সময় বলতেন :-
لا إله
إلا الله العظيم الحليم، لا إله إلا الله رب العرش العظيم، لا إله إلا
الله رب السموات ورب الأرض ورب العرش الكريم (رواه مسلم:4909)
আল্লাহ
ব্যতীত কোন ইলাহ নেই, যিনি সুমহান, সহিষ্ণুবান, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ
নেই যিনি মহান আরশের রব, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই যিনি আকাশসমূহের রব,
এবং ভূমির রব এবং সম্মানিত আরশের রব। (সহীহ মুসলিম:৪৯০৯) মোদ্দা কথা, বর্ণিত ফজিলত ও প্রতিশ্রুত পুরস্কার হাসিল করার অভীষ্ট লক্ষ্যে উল্লেখিত ও অনুল্লেখিত প্রয়োজনীয় জিকিরসমূহ মুখস্থ করে নিয়মিত পড়া প্রত্যেক মুসলমানের উচিত।
অনুবাদক : নুমান বিন আবুল বাশার
সম্পাদক : আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান
সূত্র : ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন