Views:
A+
A-
সূচীপত্র
ভূমিকা
কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে জামা‘আতে সালাত আদায় (১ম পর্ব)
সূচীপত্র
ক্রম শিরোনাম
১ অবতরণিকা
২ জামা‘আতে সালাত আদায়ের অর্থ
৩ জামা‘আতে সালাত আদায়ের বিধান
৪ জামা‘আতে সালাত আদায়ের ফায়েদাসমূহ
৫ জামা‘আতে সালাত আদায়ের ফযীলত
৭ জামা‘আতে সালাত আদায় করতে যাওয়ার নিয়ম-কানূন
৮ জামা‘আত সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ মাসায়েল
৯ যে যে কারণে জামা‘আতে সালাত পড়া ছাড়া যায়
সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্যে যিনি আমাদেরকে
নিখাদ তাওহীদের দিশা এবং সুন্নাত ও বিদ‘আতের পার্থক্যজ্ঞান দিয়েছেন। অসংখ্য সালাত
ও সালাম তাঁর জন্যে যিনি আমাদেরকে তা-কিয়ামত সফল জীবন অতিবাহনের পথ বাতলিয়েছেন।
তাঁর পরিবারবর্গ ও সাহাবীদের প্রতিও রইল অসংখ্য সালাম।
প্রতিনিয়ত মসজিদে গমনকারী প্রতিটি ধর্মপ্রাণ মুসলিমই
মসজিদের এই করুণ মুসল্লীশূন্যতা অবলোকন করে কমবেশি মর্মব্যাথা অনুভব না করে পারেন
না। আমি ও তাদেরই একজন। এ মহাগুরুত্বপূর্ণ মুসলিম জাতির বাহ্যিক নিদর্শনের প্রতি
চরম অবহেলা থেকে উত্তরণের জন্য যে কোনো সঠিক পন্থা অনুসন্ধান করা নিজস্ব ধর্মীয়
কর্তব্য বলে জ্ঞান করি। তাই প্রথমতঃ সবাইকে মৌখিকভাবে জামা‘আতে উপস্থিতির প্রতি
উৎসাহ প্রদান ও তা থেকে পিছিয়ে থাকার ভয়ঙ্করতা বুঝাতে সচেষ্ট হই, কিন্তু তাতে
আশানুরূপ কোনো ফল পাওয়া যায় নি। ভাবলাম হয়তো বা কেউ মনোযোগ দিয়ে শুনছেন না অথবা তা
দীর্ঘক্ষণ ক্রিয়াশীল থাকার জন্য যথাযোগ্য কোনো প্রকল্প এখনো হাতে নেওয়া হয় নি। তাই লেখালেখিকে দ্বিতীয় মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করি, অথচ আমি এ ক্ষেত্রে নবাগত।
কতটুকু সফলকাম হতে পারবো তা আল্লাহ মালুম। তবুও প্রয়োজনের খাতিরে ভুল-ত্রুটির
প্রচুর সম্ভাবনা পশ্চাতে রেখে ক্ষুদ্র কলম খানা হস্তে ধারণের দুঃসাহসিকতা
দেখাচ্ছি। সফলতা তো একমাত্র আল্লাহ তা‘আলারই হাতে। তবে ‘নিয়্যাতের ওপরই সকল কর্মের
ফলাফল নির্ভরশীল’ রাসূল মুখনিঃসৃত এ মহান বাণীই আমার দীর্ঘ পথসঙ্গী।
অত্যন্ত আনন্দের বিষয় হচ্ছে এই যে, এ পুস্তিকাটিতে রাসূলুল্লাহ @ সম্পৃক্ত যতগুলো
হাদীস উল্লিখিত হয়েছে সাধ্যমত এর বিশুদ্ধতার প্রতি সযত্ন দায়িত্বশীল দৃষ্টি রাখা
হয়েছে। এ ব্যাপারে নিদেনপক্ষে সর্বজন শ্রদ্ধেয় প্রখ্যাত হাদীস বিশারদ আল্লামা
নাসেরুদ্দীন আল্বানী রহ.-এর হাদীস শুদ্ধাশুদ্ধনির্ণয়ন নীতি গ্রহণ করা হয়েছে।
এতদসত্ত্বেও সকল যোগ্য গবেষকদের পুনর্বিবেচনার সুবিধার্থে প্রতিটি হাদীসের সাথে
তার প্রাপ্তিস্থাননির্দেশ সংযোজন করা হয়েছে। তবুও সম্পূর্ণরূপে নিরেট নির্ভুল
হওয়ার জোর দাবি করার ধৃষ্টতা দেখাচ্ছি না।
শব্দ ও ভাষাগত প্রচুর ভুল-ভ্রান্তি বিজ্ঞ পাঠকবর্গের
চক্ষুগোচরে আসা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে ভুল গুরুসামান্য যতটুকুই হোক না কেন
লেখকের দৃষ্টিগোচর করলে চরম কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ থাকবো। যে কোনো কল্যাণকর পরামর্শ
দিয়ে দাওয়াতী স্পৃহাকে আরো বর্ধিত করণে সর্বসাধারণের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি।
আল্লাহ তা‘আলা সবার সহায় হোন।
এ পুস্তিকা প্রকাশে যে কোনো জনের যে কোনো ধরণের
সহযোগিতার জন্য সমুচিত কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনে এতটুকুও কোতাহী করছি না। ইহপরকালে আল্লাহ
তা‘আলা প্রত্যেককে আকাঙ্ক্ষাতীত কামিয়াব করুন তাই হচ্ছে আমার সর্বোচ্চ প্রত্যাশা।
আমীন সুম্মা আমীন ইয়া রাব্বাল আলামীন।
সর্বশেষে জনাব শাইখ আব্দুল হামীদ ফায়যী সাহেবের প্রতি
অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করে পারছিনে। যিনি অনেক ব্যস্ততার মাঝেও আমার আবেদনক্রমে
পান্ডুলিপিটি আদ্যপান্ত অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে দেখেছেন এবং তাঁর অতীব মূল্যবান
মতামত ব্যক্ত করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা তাকে এর উত্তম প্রতিদান দিন এবং তাঁর জ্ঞান
আরো বাড়িয়ে দিন এ আশা রেখে এখানেই শেষ করলাম।
লেখক
জামা‘আতে সালাত আদায়ের অর্থ
“সালাত” শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে দো‘আ।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿وَصَلِّ عَلَيۡهِمۡۖ إِنَّ صَلَوٰتَكَ سَكَنٞ لَّهُمۡ﴾ [التوبة: ١٠٣]
“আর তুমি তাদের জন্য দো‘আ করো। নিশ্চয় তোমার দো‘আ তাদের
জন্য শান্তি স্বরূপ”। [সূরা
আত-তাওবাহ, আয়াত: ১০৩]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا
دُعِيَ أَحَدُكُمْ فَلْيُجِبْ، فَإِنْ كَانَ صَائِماً فَلْيُصَلِّ، وَإِنْ كَانَ
مُفْطِراً فَلْيَطْعَمْ».
“তোমাদের কাউকে খাবারের দাওয়াত দেওয়া হলে সে
যেন উক্ত দাওয়াতে উপস্থিত হয়। অতঃপর সে যদি
সাওম পালনকারী হয়ে থাকে তাহলে সে যেন মেজবানের জন্য বরকত, কল্যাণ ও
মাগফিরাতের দো‘আ করে। আর যদি সে সাওম
পালনকারী না হয়ে থাকে তাহলে সে যেন উক্ত খাবার গ্রহণ করে”।[1]
কারোর ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলার
“সালাত” মানে ফিরিশতাগণের নিকট তার ভূয়সী প্রশংসা করা। আর ফিরিশতাগণের পক্ষ থেকে
কারোর জন্য “সালাত” মানে তার জন্য মহান আল্লাহ তা‘আলার নিকট দো‘আ করা।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿إِنَّ ٱللَّهَ وَمَلَٰٓئِكَتَهُۥ يُصَلُّونَ عَلَى ٱلنَّبِيِّۚ يَٰٓأَيُّهَا
ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ صَلُّواْ عَلَيۡهِ وَسَلِّمُواْ تَسۡلِيمًا ٥٦﴾ [الاحزاب: ٥٦]
“নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা ফিরিশতাগণের নিকট নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রশংসা করেন এবং তাঁর ফিরিশতাগণ নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য দো‘আ করেন। অতএব, হে মুমিনগণ তোমরাও তাঁর
জন্য দো‘আ করো এবং তাঁর ওপর সালাম পাঠাও”। [সূরা
আল-আহযাব, আয়াত: ৫৬]
শরী‘আতের পরিভাষায় “সালাত” বলতে এমন এক ইবাদাতকে
বুঝানো হয় যা হবে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি ও তাঁর সাওয়াবের আশায় এবং যাতে
রয়েছে বিশেষ কিছু কথা ও কাজ যার শুরু তাকবীর দিয়ে এবং শেষ সালাম দিয়ে। যা আমাদের
নিকট সালাত নামেই অধিক পরিচিত।
উক্ত সালাতকে সালাত এ জন্যই বলা হয় কারণ, তাতে উভয় প্রকারেরই দো‘আ রয়েছে। তার
একটি হচ্ছে আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে কোনো ফায়েদা হাসিল কিংবা কোনো ক্ষতি ও লোকসান
অথবা বিপদ থেকে রক্ষা তথা যে কোনো প্রয়োজন পূরণের দো‘আ। যাকে
সরাসরি প্রার্থনা তথা চাওয়া-পাওয়ার
দো‘আই বলা হয়। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে ইবাদাতের দো‘আ তথা ক্বিয়াম, কিরাত, রুকু’
ও সাজদাহ’র মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলার নিকট সাওয়াবের আশা করা। যার মূল লক্ষ্যও আল্লাহ
তা‘আলার মাগফিরাতই হয়ে থাকে।
“জামা‘আত” শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে কোনো
জিনিসের আধিক্য। তেমনিভাবে কিছু সংখ্যক মানুষ কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে কোথাও একত্রিত
হওয়াকেও “জামা‘আত” বলে আখ্যায়িত করা হয়।
শরী‘আতের পরিভাষায় “জামা‘আত” বলতে সালাত আদায়ের
উদ্দেশ্যে দু’ (ইমাম ও মুক্তাদি) বা ততোধিক ব্যক্তির মসজিদ অথবা সেরূপ কোনো জায়গায়
একই সময়ে একত্রিত হওয়াকে বুঝানো হয়।
জামা‘আতে সালাত আদায়ের বিধান
মূলতঃ সালাত এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ রুকন যার
মাহাত্ম্য কুরআন ও হাদীসে বিষদভাবে আলোচিত হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা কুরআন মাজীদে
সালাত প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে বার বার তাগিদ দিয়েছেন। এমনকি তিনি প্রতি বেলা সালাত জামা‘আতের
সাথে আদায় করার ব্যাপারেও পূর্ণ যত্নবান হতে নির্দেশ দিয়েছেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿حَٰفِظُواْ عَلَى ٱلصَّلَوَٰتِ وَٱلصَّلَوٰةِ ٱلۡوُسۡطَىٰ وَقُومُواْ
لِلَّهِ قَٰنِتِينَ ٢٣٨﴾ [البقرة: ٢٣٨]
“তোমরা সালাতের
প্রতি যত্নবান হও বিশেষ করে আসরের সালাতের প্রতি এবং তোমরা কায়মনোবাক্যে আল্লাহ
তা‘আলার জন্য দণ্ডায়মান হও”। [সূরা
আল-বাকারা, আয়াত: ২৩৮]
উক্ত আয়াতে
আল্লাহ তা‘আলা সালাতের প্রতি যত্নবান হতে আদেশ করেছেন। আর যে ব্যক্তি জামা‘আতের সাথে
সালাত আদায় করে না সে সালাতের প্রতি কতটুকু যত্নবান তা সহজেই অনুধাবন করা যায়।
তেমনিভাবে তিনি সালাত আদায়ের প্রতি অবহেলা প্রদর্শনকে
মুনাফিকী বলে আখ্যায়িত করেছেন।
আল্লাহ তা‘আলা
মুনাফিকদের চরিত্র বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন:
﴿إِنَّ ٱلۡمُنَٰفِقِينَ يُخَٰدِعُونَ ٱللَّهَ وَهُوَ خَٰدِعُهُمۡ وَإِذَا
قَامُوٓاْ إِلَى ٱلصَّلَوٰةِ قَامُواْ كُسَالَىٰ يُرَآءُونَ ٱلنَّاسَ وَلَا يَذۡكُرُونَ
ٱللَّهَ إِلَّا قَلِيلٗا ١٤٢ مُّذَبۡذَبِينَ بَيۡنَ ذَٰلِكَ لَآ إِلَىٰ هَٰٓؤُلَآءِ
وَلَآ إِلَىٰ هَٰٓؤُلَآءِۚ وَمَن يُضۡلِلِ ٱللَّهُ فَلَن تَجِدَ لَهُۥ سَبِيلٗا ١٤٣﴾ [النساء: ١٤٢، ١٤٣]
“মুনাফিকরা আল্লাহ তা‘আলাকে ধোকা দেয়। আল্লাহ তা‘আলা উহার প্রতিদান
দিবেন। তারা অলস মনে সালাত আদায় করতে দাঁড়ায় লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে। তারা আল্লাহকে
কমই স্মরণ করে। তারা সর্বদা দ্বিধা-দ্বন্দ্বে নিমজ্জিত থাকে। না এদিক না ওদিক।
যাকে আল্লাহ তা‘আলা পথভ্রষ্ট করেন আপনি কখনো
তাকে সুপথ দেখাতে পারেন না”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৪২-১৪৩]
দৈনিক পাঁচ বেলা সালাত জামা‘আতে পড়া প্রতিটি সক্ষম ও
সাবালক পুরুষের ওপরই ওয়াজিব। চাই সে সফরে থাকুক অথবা নিজ এলাকায়।
$ আল্লাহ তা‘আলা
বলেন:
﴿وَأَقِيمُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتُواْ ٱلزَّكَوٰةَ وَٱرۡكَعُواْ مَعَ ٱلرَّٰكِعِينَ
٤٣ ﴾ [البقرة: ٤٣]
“তোমরা সালাত প্রতিষ্ঠা করো, যাকাত আদায় করো এবং রুকুকারীদের সাথে
রুকু করো। অর্থাৎ সালাত আদায়কারীদের সাথে সালাত আদায় করো”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ৪৩]
উক্ত আয়াত জামা‘আতে সালাত আদায়
করা ওয়াজিব হওয়ার ব্যাপারে সুস্পষ্ট। কারণ, আয়াতের শেষাংশ থেকে সালাত প্রতিষ্ঠাই
যদি উদ্দেশ্য হয়ে থাকে তাহলে তা আয়াতের প্রথমাংশের সাথে প্রকাশ্য সামঞ্জস্যহীনই
মনে হয়। কেননা, আয়াতের প্রথমাংশে সালাত প্রতিষ্ঠার আদেশ
রয়েছে। তাই আয়াতের শেষাংশে তা পুনরুল্লেখের আর কোনো প্রয়োজন থাকে না। তাই বলতে হবে,
আয়াতের শেষাংশে জামা‘আতে সালাত আদায়েরই আদেশ দেওয়া হয়েছে।
$ আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
﴿ وَإِذَا كُنتَ فِيهِمۡ فَأَقَمۡتَ لَهُمُ ٱلصَّلَوٰةَ فَلۡتَقُمۡ طَآئِفَةٞ
مِّنۡهُم مَّعَكَ وَلۡيَأۡخُذُوٓاْ أَسۡلِحَتَهُمۡۖ فَإِذَا سَجَدُواْ فَلۡيَكُونُواْ
مِن وَرَآئِكُمۡ وَلۡتَأۡتِ طَآئِفَةٌ أُخۡرَىٰ لَمۡ يُصَلُّواْ فَلۡيُصَلُّواْ مَعَكَ
وَلۡيَأۡخُذُواْ حِذۡرَهُمۡ وَأَسۡلِحَتَهُمۡۗ ﴾ [النساء: ١٠٢]
“যখন আপনি তাদেরকে নিয়ে সালাত আদায় করতে যান
তখন তাদের এক দল যেন অস্ত্রসহ আপনার সাথে সালাত আদায় করতে দাঁড়ায়। অতঃপর তারা সাজদাহ
সম্পন্ন করে যেন আপনার পেছনে চলে আসে। ইতোমধ্যে দ্বিতীয় দলটি যারা পূর্বে সালাত
পড়ে নি আপনার সাথে যেন সালাত পড়ে নেয়। তবে তারা যেন সতর্কতা ও অস্ত্রধারণাবস্থায়
থাকে”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১০২]
উক্ত আয়াতে যুদ্ধাবস্থায় জামা‘আতে সালাত আদায়ের
পদ্ধতি শেখানো হচ্ছে। যদি পরিবেশ শান্ত থাকাবস্থায় জামা‘আতে সালাত আদায়ের ব্যাপারে
কোনো ছাড় থাকতো তথা তা সুন্নাত কিংবা মুস্তাহাব হতো তা হলে যুদ্ধাবস্থায় রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীগণকে জামা‘আতে সালাত আদায়ের পদ্ধতি
শেখানোর কোনো প্রয়োজনই অনুভূত হতো না। বরং তারা উক্ত ছাড় পাওয়ার বেশি উপযুক্ত
ছিলো। যখন তা হয় নি তখন আমাদেরকে বুঝতেই হবে,
জামা‘আতে সালাত আদায় করা নিহায়েত গুরুত্বপূর্ণ ওয়াজিব। তাই ওযর
ছাড়া কারোর জন্য ঘরে সালাত পড়া জায়িয নয়।
তেমনিভাবে উক্ত আয়াতে উভয় দলকেই জামা‘আতে সালাত আদায়
করতে আদেশ করা হয়েছে। যদি কেউ কেউ জামা‘আতে সালাত পড়লে অন্যদের পক্ষ থেকে উক্ত
দায়িত্ব আদায় হয়ে যেতো তাহলে উভয় দলকেই এমন এক কঠিন পরিস্থিতিতে জামা‘আতে সালাত
আদায় করতে আদেশ করা হতো না। তাই জামা‘আতে সালাত পড়া প্রতিটি ব্যক্তির ওপরই ওয়াজিব।
চাই সে সফরে থাকুক অথবা নিজ এলাকায়।
$ আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
﴿يَوۡمَ يُكۡشَفُ عَن سَاقٖ وَيُدۡعَوۡنَ إِلَى ٱلسُّجُودِ فَلَا يَسۡتَطِيعُونَ
٤٢ خَٰشِعَةً أَبۡصَٰرُهُمۡ تَرۡهَقُهُمۡ ذِلَّةٞۖ وَقَدۡ كَانُواْ يُدۡعَوۡنَ إِلَى
ٱلسُّجُودِ وَهُمۡ سَٰلِمُونَ ٤٣﴾ [القلم: ٤٢، ٤٣]
“স্মরণ করো সে দিনের কথা যে দিন জঙ্ঘা (হাঁটুর নিম্নাংশ) উন্মোচিত
করা হবে এবং তাদেরকে আহ্বান করা হবে সাজদাহ করার জন্য তখন তারা তা করতে সক্ষম হবে
না। তাদের দৃষ্টি থাকবে তখন অবনত এবং লাঞ্ছনা তাদেরকে আচ্ছন্ন করে রাখবে অথচ যখন
তারা নিরাপদ ছিলো তখন তাদেরকে সাজদাহ করার জন্য আহ্বান করা হয়েছিলো। (কিন্তু তারা
তখন সে আহ্বানে সাড়া দেয় নি)”। [সূরা আল-ক্বালাম, আয়াত:
৪২-৪৩]
আল্লামা ইবরাহীম তাইমী রহ. উক্ত আয়াতের তাফসীরে বলেন:
তাদেরকে আযান ও ইক্বামতের মাধ্যমে ফরয সালাতগুলো জামা‘আতে আদায়ের জন্য ডাকা হতো।
বিশিষ্ট তাবঈ আল্লামা সা‘য়ীদ ইবন মুসাইয়িব রহ.
বলেন: তারা “হাইয়া ‘আলাস-সালাহ, হাইয়া ‘আলাল-ফালাহ” শুনতো অথচ তারা সুস্থ থাকা সত্ত্বেও মসজিদে গিয়ে জামা‘আতে
সালাত আদায় করতো না।
কা‘ব আল-আহবার রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: আল্লাহর কসম!
উক্ত আয়াতটি জামা‘আতে সালাত না পড়া লোকদের সম্পর্কেই নাযিল হয়েছে।
উক্ত আয়াতে আহ্বানে সাড়া দেওয়া মানে মুআয্যিনের আযানে
সাড়া দিয়ে মসজিদে এসে জামা‘আতে সালাত পড়া। যা নিম্নোক্ত হাদীস থেকেই বুঝা যায়।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে আরো বর্ণিত তিনি
বলেন:
«أَنَّ
رَجُلاً أَعْمَى قَالَ: يَارَسُوْلَ اللهِ! لَيْسَ لِيْ قَائِدٌ يُلاَئِمُنِيْ
إِلَى الْـمَسْجِدِ فَهَلْ لِيْ رُخْصَةٌ أَنْ أُصَلِّيَ فِيْ بَيْتِيْ؟ فَقَالَ
لَـهُ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:
هَلْ تَسْمَعُ النِّدَاءَ بِالصَّلاَةِ؟ قَاْلَ: نَعَمْ، قَاْلَ: فَاَجِبْ».
“জনৈক
অন্ধ সাহাবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বললেন: আমাকে মসজিদে
নিয়ে আসার মতো কোনো লোক নেই। তাই আমাকে ঘরে সালাত আদায় করতে অনুমতি দিবেন কি? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে
বললেন: তুমি কি আযান শুনতে পাও? সে বললো: জি হাঁ! তিনি
বললেন: তাহলে তোমাকে মুআয্যিনের ডাকে সাড়া দিয়ে মসজিদে এসে সালাত আদায় করতে হবে”।[2]
উক্ত হাদীসে মুআয্যিনের ডাকে সাড়া দেওয়া মানে যদি
শুধু সালাত পড়াই হতো চাই তা যেখানেই পড়া হোক না কেন তা হলে রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত সাহাবীকে তার ঘরে সালাত আদায়ের অনুমতি চাওয়ার
পর আর তাকে আযান শুনার প্রশ্ন ও মুআয্যিনের ডাকে সাড়া দেওয়ার আদেশই করতেন না। কারণ, সে তো ঘরে সালাত আদায়ের অনুমতিই
চাচ্ছিলো।
এ ছাড়াও
নিম্নোক্ত হাদীসটি আলোচ্য বিষয়ে আরো অত্যন্ত সুস্পষ্ট বক্তব্যই প্রদান করে।
আব্দুল্লাহ
ইবন উম্মু মাকতুম রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে
জিজ্ঞাসা করলেন: হে আল্লাহর রাসূল! আমি তো অন্ধ এবং আমার ঘরও মসজিদ থেকে অনেকখানি
দূরে অবস্থিত। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, মদীনা তো একটি
সাপ-বিচ্চু ও হিংস্র প্রাণীর এলাকা। আবার অনেক সময় আমাকে মসজিদে নিয়ে আসার মতো
কোনো লোকও পাওয়া যায় না। তাই কি আমি এমন পরিস্থিতিতে ঘরে সালাত আদায়ের অনুমতি পেতে
পারি? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তুমি কি
আযান শুনতে পাও? অন্য বর্ণনায় রয়েছে, তুমি কি “হাইয়া ‘আলাস-সালাহ, হাইয়া ‘আলাল-ফালাহ”
শুনতে পাও? তিনি বললেন: জি হাঁ! তখন নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন:
«لاَ
أَجِدُ لَكَ رُخْصَةً».
যখন এক জন
অন্ধ ব্যক্তি ঘরে সালাত আদায়ের অনুমতি পাচ্ছে না তাহলে এক জন চক্ষুষ্মান ব্যক্তি
কীভাবে ঘরে সালাত আদায়ের অনুমতি পেতে পারে?!
এতেই বুঝা গেলো, জামা‘আতে সালাত আদায়
করা প্রতিটি ব্যক্তির ওপর নিহায়েত গুরুত্বপূর্ণ ওয়াজিব। তাই ওযর ছাড়া কারোর জন্য
ঘরে সালাত পড়া কোনোভাবেই সঠিক নয়।
আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামও কিন্তু জামা‘আতে সালাত আদায়ের ব্যাপারে কম তাগিদ দেন নি; বরং তিনি
যারা জামা‘আতে উপস্থিত হচ্ছে না তাদের ঘর-বাড়ী জ্বালিয়ে দেওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ
করেছেন।
$ আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনিবলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لَقَدْ هَمَمْتُ أَنْ
آمُرَ بِالصّلاَةِ فَتُقَامَ، ثُمَّ آمُرَرَجُلاً فَيُصَلِّيَ بِالنَّاسِ ثُمَّ
أَنْطَلِقَ مَعِيْ بِرِجَالٍ مَعَهُمْ حُزَمٌ مِنْ حَطَبٍ إِلَىْ قَوْمٍ
لاَيَشْهَدُوْنَ الصَّلاَةَ فَأُحَرِّقَ عَلَيْهِمْ بُيُوْتَهُمْ بِالنَّارِ».
“আমার ইচ্ছে হয় কাউকে সালাত পড়ানোর
দায়িত্ব দিয়ে লাকড়ির বোঝাসহ কিছু সংখ্যক লোক নিয়ে তাদের পিছু নেই যারা জামা‘আতে
উপস্থিত হয় না এবং তাদের ঘর-বাড়ী জ্বালিয়ে দেই”।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম জামা‘আতে সালাত ত্যাগকারীদের ঘর-বাড়ী জ্বালিয়ে দেওয়ার মতো এতো বড়ো
জঘন্য কাজ করার ইচ্ছা কখনোই পোষণ করতেন না যদি না জামা‘আতে সালাত পড়া একান্ত
গুরুত্বপূর্ণ ওয়াজিব হতো। আর যদি কেউ কেউ জামা‘আতে সালাত পড়লে অন্যদের পক্ষ থেকে
উক্ত দায়িত্ব আদায় হয়ে যেতো তাহলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও
তাঁর কিছু সাহাবীগণ জামা‘আতে সালাত আদায় করলেই অন্যদের
পক্ষ থেকে উক্ত দায়িত্ব আদায় হয়ে যেতো।
যে ব্যক্তি শরঈ অজুহাত ছাড়াই ঘরে সালাত পড়লো তার
সালাত আদায় বা কবুল হবে না।
$ আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ
سَمِعَ الـمُنَادِىَ بِالصَّلاَةِ فَلَمْ يَمْنَعْهُ مِنِ اتِّبَاعِهِ عُذْرٌ لَمْ
تُقْبَلْ مِنْهُ الصَّلاَةُ الَّتِيْ صَلَّى، قِيْلَ: وَمَا الْعُذْرُ يَا
رَسُوْلَ اللهِ؟ قَالَ: خَوْفٌ أَوْ مَرَضٌ».
“যে ব্যক্তি মুয়ায্যিনের আযান শুনেও মসজিদে না গিয়ে ঘরে
সালাত পড়লো অথচ তার নিকট মসজিদে উপস্থিত না হওয়ার শরঈ কোনো ওযর নেই তাহলে তার
আদায়কৃত সালাত আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না। সাহাবারা বললেন: হে আল্লাহর রাসূল!
আপনি ওযর বলতে কী ধরণের ওযর বুঝাতে চাচ্ছেন?
তিনি বললেন: ভয় অথবা রোগ”।[4]
উক্ত হাদীসটিতে কবুল ও ওযরের ব্যাখ্যা চাওয়া ছাড়া তার
বাকী অংশটুকু শুদ্ধ।
আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে
আরো বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ سَمِعَ النِّدَاءَ ثُمَّ لَمْ يُجِبْ مِنْ غَيْرِ
عُذْرٍ فَلاَ صَلاَةَ لَهُ».
উক্ত হাদীসদ্বয়ে জামা‘আতে সালাত না পড়লে সালাত কবুল বা শুদ্ধই হবে না বলতে
কমপক্ষে জামা‘আতে সালাত পড়া ওয়াজিব হওয়াকেই বুঝানো হচ্ছে।
কোনো জায়গায়
সালাতের সময় হলে এবং সেখানে তিন বা তিনের অধিক ব্যক্তি একত্রিত থাকলে তাদেরকে
অবশ্যই উক্ত সালাত জামা‘আতে আদায় করতে হবে। এটিই হচ্ছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের একান্ত আদেশ। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের আদেশ সাধারণত ওয়াজিব হওয়াকেই বুঝায়।
$ আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا
كَانُوْا ثَلاَثَةً فَلْيَؤُمُّهُمْ أَحَدُهُمْ، وَأَحَقُّهُمْ بِالْإِمَامَةِ
أَقْرَؤُهُمْ».
“যখন
তারা তিনজন কোথাও একত্রিত হয় তখন তাদের কোনো এক জন যেন সালাতের ইমামতি করে। তবে
ইমামতির উপযুক্ত তাদের মধ্যে যে কুরআন সম্পর্কে বেশি জানে”।[6]
মালিক ইবন হুওয়াইরিস
রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একদা আমার বংশের আরো কিছু
মানুষসহ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট উপস্থিত হলাম। আমরা তাঁর নিকট
বিশ রাত্রি অবস্থান করলাম। তিনি ছিলেন অত্যন্ত দয়ালু প্রকৃতির। যখন তিনি আমাদের
মধ্যে বাড়ি ফেরার আকর্ষণ অনুভব করলেন তখন তিনি আমাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন:
«ارْجِعُوْا
فَكُوْنُوْا فِيْهِمْ، وَعَلِّمُوْهُمْ، وَصَلُّوْا، فَإِذَا حَضَرَتِ الصَّلاَةُ
فَلْيُؤَذِّنْ لَكُمْ أَحَدُكُمْ، وَلْيَؤُمُّكُمْ أَكْبَرُكُمْ».
“তোমরা
বাড়ি ফিরে যাও। নিজ স্ত্রী-সন্তান ও পরিবারবর্গের মাঝে অবস্থান করো। তাদেরকে শিক্ষা
দাও এবং সালাত পড়ো। সালাতের সময় হলে তোমাদেরই কেউ আযান দিবে এবং তোমাদের মাঝে যে
বয়স্ক সেই ইমামতি করবে”।[7]
কোনো এলাকায়
তিন বা তিনের অধিক ব্যক্তি অবস্থান করা সত্ত্বেও তারা যদি আযান-ইক্বামত দিয়ে জামা‘আতে
সালাত আদায় না করে তাহলে শয়তান তাদের ওপর ভালোভাবে জেঁকে বসবে।
$ আবুদ্দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি তিনি বলেন:
«مَا مِنْ
ثَلاَثَةٍ فِي قَرْيَةٍ لاَ يُؤَذَّنُ وَلاَ تُقَامُ فِيهِمُ الصَّلاَةُ إِلاَّ
اسْتَحْوَذَ عَلَيْهِمُ الشَّيْطَانُ فَعَلَيْكَ بِالْجَمَاعَةِ فَإِنَّ الذِّئْبَ
يَأْكُلُ الْقَاصِيَةَ».
“কোনো
গ্রাম বা এলাকায় যদি তিনজন মানুষ থাকে অথচ সেখানে আযান-ইক্বামত দিয়ে ফরয সালাত
আদায় করা হলো না তা হলে তাদের ওপর শয়তান জেঁকে বসবে। তাই তুমি জামা‘আতে সালাত
পড়বে। কারণ, নেকড়ে
বাঘ তো একমাত্র দলছুট ছাগলটিকেই খেয়ে ফেলে”।[8]
উক্ত হাদীসে জামা‘আতে
সালাত আদায়ের আদেশ করা হয়েছে যা জামা‘আতে সালাত পড়া ওয়াজিব হওয়াই প্রমাণ করে।
কোনো মসজিদে
অবস্থানরত অবস্থায় যে কোনো সালাতের আযান দেওয়া হলে তা জামা‘আতে আদায় না করে সেখান
থেকে বের হয়ে যাওয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ বিরোধী।
$ আবুশ-শাসা রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
আমরা একদা আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু এর সাথে মসজিদে বসা ছিলাম। এমতাবস্থায়
মুআয্যিন আযান দিলে জনৈক ব্যক্তি বসা থেকে দাঁড়িয়ে সোজা হাঁটতে শুরু করলো। আবু
হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু তার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকলেন। ইতোঃমধ্যে সে মসজিদ
থেকে একেবারেই বের হয়ে গেলো। তখন আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন:
«أَمَّا هَذَا فَقَدْ عَصَى أَبَا الْقَاسِمِ صَلَّى اللهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ».
উক্ত হাদীসে আবু
হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু আযানের পর জামা‘আতে সালাত না পড়ে মসজিদ থেকে বের হওয়া
ব্যক্তিকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একান্ত অবাধ্য বলে
আখ্যায়িত করেন। যদি সালাত জামা‘আতে পড়া না পড়ার ব্যাপারে লোকটির স্বেচ্ছাচারিতার
কোনো সুযোগ থাকতো তাহলে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে জামা‘আতে সালাত না পড়ে
মসজিদ থেকে বের হওয়ার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একান্ত
অবাধ্য বলে আখ্যায়িত করতেন না। অতএব, বুঝা গেলো জামা‘আতে সালাত পড়া ওয়াজিব।
এমনকি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ জাতীয় মানুষকে মুনাফিক বলেও আখ্যায়িত করেছেন। আর
শরী‘আতের দৃষ্টিতে সাধারণত কোনো সুন্নাত বা মুস্তাহাব কাজ ছাড়া কিংবা কোনো মাকরূহ
কাজ করার দরুন কাউকে মুনাফিক বলা হয় না; বরং তা বলা হয় কোনো ফরয-ওয়াজিব ছাড়লে অথবা
কোনো হারাম কাজ করলে। অতএব বুঝা গেলো জামা‘আতে সালাত পড়া ওয়াজিব।
উসমান
রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ أَدْرَكَهُ الأَذَانُ فِيْ الْـمَسْجِدِ ثُمَّ
خَرَجَ لَمْ يَخْرُجْ لِحَاجَةٍ وَهُوَ لاَ يُرِيدُ الرَّجْعَةَ فَهُوَ مُنَافِقٌ».
“কেউ
মসজিদে অবস্থানরত অবস্থায় যদি কোনো সালাতের আযান হয়ে যায় অথচ সে কোনো প্রয়োজন
ছাড়াই মসজিদ থেকে বের হয়ে গেলো এবং তার দ্বিতীবার মসজিদে ফিরে আসারও ইচ্ছে নেই
তাহলে সে মুনাফিক”।[10]
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো ওযর ছাড়া সালাত আদায়কারীদের সারির পেছনে একা
দাঁড়িয়ে জামা‘আতে সালাত পড়ুয়া ব্যক্তির সালাত বাতিল বলে আখ্যায়িত করে তাকে উক্ত
সালাতটুকু দ্বিতীয়বার পড়ার আদেশ করেন। তাহলে বিনা ওযরে ঘরে সালাত পড়ুয়া ব্যক্তির
সালাতটুকু কীভাবে শুদ্ধ হতে পারে?! তা একেবারে অশুদ্ধ না হলেও কমপক্ষে জামা‘আতে সালাত পড়া তো ওয়াজিব বলতে
হবে।
$ আলী ইবন শাইবান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা জনৈক ব্যক্তিকে সালাত আদায়কারীদের সারির
পেছনে একা সালাত আদায় করতে দেখে সেখানে দাঁড়িয়ে গেলেন। যখন লোকটি সালাতটুকু শেষ
করলো তখন তিনি তাকে বললেন:
«اسْتَقْبِلْ
صَلاَتَكَ فَلاَ صَلاَةَ لِرَجُلٍ فَرْدٍ خَلْفَ الصَّفِّ».
“তুমি
তোমার সালাতটুকু আবার পড়ো। কারণ, সালাত আদায়কারীদের সারির পেছনে একা সালাত পড়ুয়ার সালাতটুকু শুদ্ধ হয়
না”।[11]
যে ব্যক্তি শরঈ কোনো অজুহাত ছাড়াই ঘরে সালাত পড়লো
সে মুনাফিক। আর শরী‘আতের দৃষ্টিতে সাধারণত কোনো সুন্নাত বা মুস্তাহাব কাজ ছাড়া
কিংবা কোনো মাকরূহ কাজ করার দরুন কাউকে মুনাফিক বলা হয় না। বরং তা বলা হয় কোনো
ফরয-ওয়াজিব ছাড়লে অথবা কোনো হারাম কাজ করলে। অতএব বুঝা গেলো জামা‘আতে সালাত পড়া ওয়াজিব।
$ আব্দুল্লাহ ইবন মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«لَقَدْ رَأَيْتُنَا وَمَا يَتَخَلَّفُ عَنِ الصَّلاَةُ
إِلاَّ مُنَافِقٌ عُلِمَ نِفَاقُهُ أَوْ مَرِيْضٌ، إِنْ كَاْنَ الْـمَرِيْضُ
لَيَمْشِىْ بَيْنَ رَجُلَيْنِ حَتَّى يَأْتِيَ الصَّلاَةَ، وَقَاْلَ: إِنَّ
رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَّمَنَا سُنَنَ الْـهُدَى
وَإِنَّ مِنْ سُنَنِ الْهُدَى الصَّلاَةُ فِي الْـمَسْجِدِ الَّذِيْ يُؤَذَّنُ
فِيْهِ».
“আমাদের মধ্যে নিশ্চিত মুনাফিক ও রুগ্ন ব্যক্তি
ছাড়া কেউই জামা‘আতে উপস্থিত হওয়া থেকে বিরত থাকতো না। এমনকি আমরা দেখতাম রুগ্ন ব্যক্তি
ও দু’ব্যক্তির কাঁধে ভর দিয়ে জামা‘আতে উপস্থিত হতো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে সঠিক পথের দিশা দিয়েছেন। আর জামা‘আতে সালাত আদায়ের নির্দেশ সঠিক
পথের দিশা বৈ কি”?
আব্দুল্লাহ ইবন মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু আরো বলেন:
«حُطُّ عَنْهُ بِهَا سَيِّئَةً، وَلَقَدْ رَأَيْتُنَا وَمَا
يَتَخَلَّفُ عَنْهَا إِلاَّ مُنَافِقٌ مَعْلُوْمُ النِّفَاقِ، وَلَقَدْ كَاْنَ الرَّجُلُ
يُؤْتَى بِهِ يُهَادَي بَيْنَ الرَّجُلَيْنِ حَتَّى يُقَامَ فِي الصَّفِّ».
“যার ইচ্ছে হয় পরকালে আল্লাহর সাথে মুসলিম রূপে
সাক্ষাৎ দিতে সে যেন জামা‘আতে সালাত আদায় করতে সযত্ন হয়। আল্লাহ তা‘আলা নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সঠিক পথের দিশা দিয়েছেন। আর জামা‘আতে সালাত পড়া
তারই অন্তর্ভুক্ত। তোমরা যদি ঘরে সালাত পড়ুয়া অলসের ন্যায় ঘরে সালাত পড়ো তা হলে
নিশ্চিতভাবে তোমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামপ্রদর্শিত সঠিক পথ থেকে সরে
পড়লে। আর তখনই তোমরা পথভ্রষ্ট হবে। যে কেউ সুন্দরভাবে পবিত্রতার্জন করে মসজিদগামী
হয় আল্লাহ তা‘আলা তাকে প্রতি কদমের বদৌলতে একটি করে পুণ্য দিবেন ও একটি করে
মর্যাদা উন্নীত করবেন এবং একটি করে গুনাহ মুছে দিবেন। তিনি বলেন: আমাদের মধ্যে
নিশ্চিত মুনাফিক ছাড়া কেউ জামা‘আতে উপস্থিত হওয়া থেকে বিরত থাকতো না। এমনকি কেউ
কেউ দু’জনের কাঁধে ভর দিয়েও জামা‘আতে উপস্থিত হতো”।[12]
উক্ত হাদীসে কেউ পরকালে আল্লাহ তা‘আলার সাথে
মুসলিম রূপে সাক্ষাৎ দিতে হলে তাকে জামা‘আতে সালাত আদায়ের ব্যাপারে সযত্ন হতে বলা
হয়েছে এবং তাতে ঘরে সালাত আদায়কারীকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের আদর্শ ও তাঁর আনীত শরী‘আত বিরোধী বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। উক্ত আদর্শ
বলতে এমন আদর্শকে বুঝানো হয় নি যা ইচ্ছে করলে ছাড়াও যায়; বরং এমন আদর্শকে বুঝানো
হয়েছে যা ছাড়লে পথভ্রষ্ট ও মুনাফিক রূপে আখ্যায়িত হতে হয়। অতএব বুঝা গেলো জামা‘আতে
সালাত পড়া প্রতিটি মুমিন ব্যক্তির ওপর ওয়াজিব ও ফরয।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামইরশাদ করেন:
«إِنَّ لِلْمُنَافِقِيْنَ عَلاَمَاتٍ يُعْرَفُوْنَ
بِهَا، تَحِيَّتُهُمْ لَعْنَةٌ، وَطَعَامُهُمْ نُهْبَةٌ، وَغَنِيْمَتُهُمْ
غُلُوْلٌ، وَلاَ يَقْرَبُوْنَ الْـمَسَاجِدَ إِلاَّ هَجْراً، وَلاَ يَأْتُوْنَ
الصَّلاَةَ إِلاَّ دَبْــراً مُسْتَكْبِرِيْنَ، لاَ يَأْلَفُوْنَ وَلاَ
يُؤْلَفُوْنَ، خُشُبٌ بِاللَّيْلِ، صُخُبٌ بِالنَّهَارِ ».
“মুনাফিকদের এমন কিছু আলামত রয়েছে যা দিয়ে তাদেরকে সহজেই চেনা যায়।
সেগুলো হলো: তাদের সম্ভাষণই হচ্ছে অভিসম্পাত। তাদের খাবারই হচ্ছে কোথাও থেকে লুট
করা বস্তু। তাদের
যুদ্ধলব্ধ সম্পদই হচ্ছে তা বন্টনের পূবেই চুরি করা বস্তু। তারা মসজিদের ধারেকাছেও যায় না। সালাতে কখনো আসলেও তারা অহঙ্কারী ভাব নিয়ে
দেরিতে আসে। তারা কারোর সাথে গভীরভাবে মিশতে চায় না এবং তাদের সাথেও গভীরভাবে মিশা
যায় না। রাতে তারা কাষ্ঠখন্ড স্বরূপ নিঃসাড় নিঃশব্দ। দিনে সরব”।[13]
আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«كُنَّا إِذَا فَقَدْنَا الرَّجُلَ فِيْ صَلاَةِ
الْعِشَاءِ وَصَلاَةِ الْفَجْرِ أَسَأْنَا بِهِ الظَّنَّ».
“আমরা যখন কাউকে ইশা ও ফজরের সালাতে মসজিদে না দেখতাম তখন তার
সম্পর্কে খারাপ ধারণা করতাম তথা তাকে মুনাফিক ভাবতাম”।[14]
এমনকি লাগাতার জামা‘আতে সালাত না পড়া ব্যক্তির
অন্তরকে সীল-গালা করা তথা তার অন্তরের ওপর মোহর মেরে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়েছে।
আর শরী‘আতে সাধারণত কোনো ফরয-ওয়াজিব ছাড়া ব্যতীত কাউকে এ ধরণের হুমকি দেওয়া হয় না।
$ আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস ও আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু
আনহুমা থেকে বর্ণিত তারা বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা মিম্বারের
উপর বসে বলেন:
«لَيَنْتَهِيَنَّ أَقْوَامٌ عَنْ وَدْعِهِمُ
الْجَمَاعَاتِ أَوْ لَيَخْتِمَنَّ اللهُ عَلَى قُلُوْبِهِمْ ثُمَّ لَيَكُوْنَنَّ
مِنَ الْغَافِلِيْنَ».
“কয়েকটি সম্প্রদায় যেন জামা‘আতে সালাত
পরিত্যাগ করা থেকে অবশ্যই ফিরে আসে তা না হলে আল্লাহ তা‘আলা তাদের হৃদয়ের ওপর মোহর
মেরে দিবেন। অতঃপর তারা নিশ্চিত গাফিল তথা ধর্ম বিমুখ হয়েই জীবন যাপন করতে বাধ্য
হবে”।[15]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জামা‘আতে
সালাত আদায়ের ব্যাপারে সাহাবাগণের খবরদারি করতেন। আর কোনো ব্যাপারে কারোর খবরদারি
করা সেটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তথা অবশ্য করণীয় ওয়াজিব হওয়াকেই বুঝায়।
$ উবাই ইবন কা‘ব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নিয়ে ফজরের সালাত আদায়
করলেন। অতঃপর তিনি আমাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন: “অমুক উপস্থিত আছে কি? সাহাবীগণ বললেন: না। তিনি আবারো জিজ্ঞাসা করলেন: “অমুক উপস্থিত আছে কি?
সাহাবীগণ বললেন: না। তখন তিনি বললেন:
«إِنَّ هَاتَيْنِ الصَّلَاتَيْنِ أَثْقَلُ الصَّلَوَاتِ
عَلَى الْـمُنَافِقِينَ وَلَوْ تَعْلَمُونَ مَا فِيهِمَا لَأَتَيْتُمُوهُمَا
وَلَوْ حَبْوًا عَلَى الرُّكَبِ وَإِنَّ الصَّفَّ الْأَوَّلَ عَلَى مِثْلِ صَفِّ
الْـمَلَائِكَةِ وَلَوْ عَلِمْتُمْ مَا فَضِيْلَتُهُ لَابْتَدَرْتُمُوهُ وَإِنَّ
صَلَاةَ الرَّجُلِ مَعَ الرَّجُلِ أَزْكَى مِنْ صَلَاتِهِ وَحْدَهُ وَصَلَاتُهُ
مَعَ الرَّجُلَيْنِ أَزْكَى مِنْ صَلَاتِهِ مَعَ الرَّجُلِ وَمَا كَثُرَ فَهُوَ
أَحَبُّ إِلَى اللَّهِ تَعَالَى».
“এ দু’টি সালাত তথা ইশা ও ফজরের সালাত জামা‘আতের
সাথে আদায় করা সত্যিই মুনাফিকদের জন্য খুবই কষ্টকর। তোমরা যদি জানতে তা জামা‘আতের সাথে
আদায়ে কী পরিমাণ সাওয়াব রয়েছে তাহলে তোমরা তা আদায়ের জন্য হামাগুড়ি দিয়ে হলেও
মসজিদে উপস্থিত হতে। সালাত আদায়কারীদের প্রথম সারি ফিরিশতাগণের সারির ন্যায়। তোমরা
যদি জানতে প্রথম সারিতে সালাত আদায়ের কি ফযীলত রয়েছে তা হলে তোমরা খুব দ্রুত
সেখানে অবস্থান করতে। একা সালাত আদায়ের চাইতে দু’জন মিলে জামা‘আতে পড়া অনেক ভালো।
আবার একজনকে নিয়ে জামা‘আতে সালাত আদায়ের চাইতে দু’জনকে নিয়ে জামা‘আতে সালাত আদায়
করা আরো অনেক ভালো। জামা‘আতে সালাত আদায়কারীদের সংখ্যা যতোই বেশি হবে ততোই তা
আল্লাহ তা‘আলার নিকট বেশি পছন্দনীয়”।[16]
$ জামা‘আতে সালাত আদায়ের ব্যাপারে সাহাবায়ে কিরামের
ঐকমত্য রয়েছে যা নিম্নের বাণীগুলো থেকে বুঝা যায়।
আব্দুল্লাহ ইবন মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু এর বাণী
যা উপরে উল্লিখিত হয়েছে।
আব্দুল্লাহ ইবন মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে আরো বর্ণিত
তিনি বলেন:
«مَنْ سَمِعَ الْـمُنَادِيَ فَلَمْ يُجِبْ مِنْ غَيْرِ
عُذْرٍ فَلاَ صَلاَةَ لَهُ».
“যে ব্যক্তি মুআয্যিনের আযান শুনেও মসজিদে
উপস্থিত হয় নি অথচ তার কোনো ওযরই ছিলো না তা হলে তার সালাতই হবে না”।[17]
আবু মূসা আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«مَنْ سَمِعَ الْـمُنَادِيَ فَلَمْ يُجِبْ بِغَيْرِ
عُذْرٍ فَلاَ صَلاَةَ لَهُ».
“যে
ব্যক্তি মুআয্যিনের আযান শুনেও মসজিদে উপস্থিত হয় নি অথচ তার কোনো ওযরই ছিলো না তা
হলে তার সালাতই হবে না”।[18]
আলী
রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«لاَ صَلاَةَ لِجَارِ الْـمَسْجِدِ إِلاَّ فِـيْ الْـمَسْجِدِ، قِيْلَ :
وَمَنْ جَارُ الـْمَسْجِدِ؟ قَالَ : مَنْ
سَمِعَ الـْمُنَادِيَ».
“মসজিদের
প্রতিবেশীর সালাত মসজিদ ছাড়া আর কোথাও হবে না। তাঁকে বলা হলো: মসজিদের প্রতিবেশী কে? তিনি বললেন: যে ব্যক্তি মুআয্যিনের আযান
শুনে”।
তিনি আরো বলেন:
«مَنْ سَمِعَ النِّدَاءَ
مِنْ جِيْرَانِ الْـمَسْجِدِ فَلَمْ يُجِبْ وَهُوَ صَحِيْحٌ مِنْ غَيْرِ عُذْرٍ
فَلاَ صَلاَةَ لَهُ».
“মসজিদের
কোনো প্রতিবেশী আযান শুনে মসজিদে উপস্থিত হয়ে জামা‘আতে সালাত আদায় না করলে অথচ সে সুস্থ-সবল
এবং তার কোনো ওযর নেই তা হলে তার সালাতই হবে না”।
তিনি আরো বলেন:
«مَنْ سَمِعَ النِّدَاءَ فَلَمْ يَأْتِهِ لَمْ تُجَاوِزْ
صَلاَتُهُ رَأْسَهُ إِلاَّ مِنْ عُذْرٍ».
“যে ব্যক্তি
আযান শুনেও মসজিদে জামা‘আতে সালাত আদায় করতে আসেনি তার সালাতটুকু তার নিজ মাথাই অতিক্রম
করবে না। আকাশ পর্যন্ত পৌঁছা তো অনেক দূরের কথা। তবে এ ব্যাপারে তার কোনো ওযর থাকলে
তা ভিন্ন”।
আবু হুরায়রা
রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন:
«لأَنْ تَمْتَلِئَ أُذُنا ابْنِ آدَمَ رَصَاصاً
مُذَاباً خَيْرٌ لَهُ مِنْ أَنْ يَسْمَعَ الْـمُنَادِيَ ثُمَّ لاَ يُجِيْبُهُ».
“আদম সন্তানের
উভয় কান গলানো সিসা দিয়ে ভর্তি থাকা তার জন্য অনেক ভালো মুআয্যিনের আযান শুনে মসজিদে
উপস্থিত হয়ে জামা‘আতে সালাত না পড়ার চাইতে”।
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু
আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন,
«مَنْ سَمِعَ الـُمنَادِىَ فَلَمْ يُجِبْ مِنْ غَيْرِ عُذْرٍ،
لَمْ يَجِدْ خَيْراً وَلَمْ يُرَدْ بِهِ».
“যে ব্যক্তি
মুআয্যিনের আযান শুনেও মসজিদে উপস্থিত হয় নি অথচ তার কোনো ওযরই ছিলো না তা হলে সে কল্যাণপ্রাপ্ত
নয় অথবা তার সাথে কোনো কল্যাণ করার ইচ্ছেই করা হয় নি”।
আব্দুল্লাহ ইবন
আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন,
«مَنْ سَمِعَ الْـمُنَادِيَ فَلَمْ يُجِبْ مِنْ غَيْرِ
عُذْرٍ فَلاَ صَلاَةَ لَهُ».
“যে ব্যক্তি
মুআয্যিনের আযান শুনেও মসজিদে উপস্থিত হয় নি অথচ তার কোনো ওযরই ছিলো না তা হলে তার
সালাতই হবে না”।[19]
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিযুক্ত মক্কার গভর্ণর আত্তাব ইবন আসীদ
রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি একদা মক্কাবাসীদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেন:
«وَاللهِ
لاَ يَبْلُغُنِيْ أَنَّ أَحَداً مِنْكُمْ تَخَلَّفَ عَنِ الصَّلاَةِ فِيْ الْـمَسْجِدِ
مَعَ الْـجَمَاعَةِ إِلاَّ ضَرَبْتُ عُنُقَهُ».
উমার
রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«مَا
بَالُ أَقْوَامٍ يَتَخَلَّفُوْنَ عَنِ الصَّلاَةِ فَيَتَخَلَّفُ لِتَخَلُّفِهِمْ
آخَرُوْنَ لأَنْ يَحْضُرُوْا الصَّلاَةَ أَوْ لأَبْعَثَنَّ عَلَيْهِمْ مَنْ
يُجَافِيْ رِقَابَهُمْ».
“তাদের
কী হলো! যারা জামা‘আতে সালাত পড়ছে না এবং তাদেরকে দেখে অন্যরাও জামা‘আতে উপস্থিত
হচ্ছে না। তারা যেন জামা‘আতে সালাত আদায়ের জন্য উপস্থিত হয় তা না হলে আমি তাদের
নিকট এমন লোক পাঠাবো যারা তাদের গর্দান উড়িয়ে দিবে”।[21]
এ ছাড়া অন্য
কোনো সাহাবী এদের বিপরীত মত পোষণ করেন নি। অতএব, বুঝা গেলো এ ব্যাপারে তাদের সবার
ঐকমত্য রয়েছে।
হাসান বাসরী রহ.
বলেন:
«إِنْ
مَنَعَتْهُ أُمُّهُ عَنِ الْعِشَاءِ فِيْ الْـجَمَاعَةِ شَفَقَةً لَمْ يُطِعْهَا».
“কারোর
মা যদি সন্তানের ওপর দয়া করে তাকে ইশার সালাত জামা‘আতে পড়তে নিষেধ করে তা হলে সে
তাঁর আনুগত্য করবে না। কারণ, গুনাহ’র কাজে মাতা-পিতার আনুগত্য করতে হয় না”।[22]
আরো যাঁরা জামা‘আতে
সালাত পড়া ওয়াজিব বলেছেন তারা হলেন,
আত্বা ইবন আবী রাবাহ, ইমাম আহমদ,
ইমাম শাফেঈ, আওযাঈ, খাত্ত্বাবী, ইবন খুযাইমাহ, ইমাম বুখারী, ইবন হিব্বান, আবু সাউর, ইবন হাযম, ইমাম
দাউদ আয-যাহেরী, ইবন ক্বুদামাহ, আল্লামা
আলাউদ্দীন আস-সামারক্বান্দী, আবু বাকার আল-কাসানী,
ইবনুল্-মুনযির, ইবরাহীম আন-নাখা‘য়ী ও
ইমাম ইবন আব্দিল-বার প্রমুখ।
আর একটি
ব্যাপার হচ্ছে, যে জামা‘আতে
সালাত আদায় করা থেকে পিছিয়ে থাকে সে পরবর্তীতে সম্পূর্ণরূপে সালাতই ছেড়ে দেয়।
তাই প্রতিটি
মুসলিমের একান্ত কর্তব্য হবে, জামা‘আতে সালাত আদায়ের ব্যাপারে আরো বেশী যত্নবান হওয়া এবং নিজ
ছেলে-সন্তান, পরিবারবর্গ, আত্মীয়-স্বজন,
পাড়া-প্রতিবেশী এমনকি সকল মুসলিম ভাইদেরকে এ ব্যাপারে উৎসাহিত
করা। আর তখনই আমরা মুনাফিকী থেকে মুক্তি পাবো।
জামা‘আতে সালাত আদায়ের ফায়েদাসমূহ
জামা‘আতে সালাত আদায়ের অনেকগুলো ফায়েদা রয়েছে যার কিয়দংশ
নিম্নরূপ:
১. আল্লাহ তা‘আলা নিজ দয়ায় এ উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য সময়ে সময়ে পরস্পর
একত্রিত হওয়ার কিছু বিশেষ সুযোগ ও সুব্যবস্থা রেখেছেন। যেন তারা একে অপরের খবরাখবর
নিতে পারে। প্রয়োজনে একে অপরের সাহায্য-সহযোগিতা করতে পারে। যাতে করে ধীরে ধীরে
তাদের পরস্পরের সম্পর্কের বিশেষ উন্নতি ঘটে এবং একে অপরকে কথায় ও কাজে আল্লাহ
তা‘আলার নাযিলকৃত বিধানের দিকে আহ্বান করার প্রচুর সুযোগ পায়। আর এ জাতীয় পরস্পর
একত্রিত হওয়ার সুযোগ কখনো হয় দৈনিক। যেমন, দৈনিক পাঁচ বেলা সালাত মসজিদে গিয়ে জামা‘আতের
সাথে আদায় করা। আবার কখনো তা হয় সাপ্তাহিক। যেমন, জুমাবার মসজিদে গিয়ে সবার একত্রে
জুমু‘আর সালাত আদায় করা। আবার কখনো তা হয় বাৎসরিক ও আঞ্চলিক। যেমন, এক অঞ্চলের
সবাই বিশেষ উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে নিজেদের নির্দিষ্ট ঈদগাহে একত্রিত হয়ে দু’ ঈদের
সালাত আদায় করা। আবার কখনো তা হয় বাৎসরিক ও আন্তর্জাতিক। যেমন: বিভিন্ন মুসলিম
রাষ্ট্র থেকে সচ্ছল মুসলিমদের বৎসরে একবার হজ্জের উদ্দেশ্যে আরাফার ময়দানে একত্রিত
হওয়া।
২. জামা‘আতে
সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মুসলিমদের নিজ নিজ মহল্লার মসজিদে পরস্পর একত্রিত হওয়া
বিশেষ সাওয়াবের কাজও বটে।
৩. জামা‘আতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে
মুসলিমদের নিজ নিজ মহল্লার মসজিদে পরস্পর একত্রিত হওয়ার মাধ্যমে মুসলিম সমাজের
প্রতিটি লোক একে অপরের অবস্থা সম্যকরূপে জানতে পারে। এতে করে সমাজের রুগ্ন ব্যক্তিদের
শুশ্রূষা করার এক বিরাট সুযোগ পাওয়া যায় এবং সমাজের মৃত ব্যক্তিদের দাফন-কাফন করাও
সহজে সম্ভবপর হয়। তেমনিভাবে এরই মাধ্যমে সমাজের গরীব-দুঃখীদের প্রয়োজনীয়
সাহায্য-সহযোগিতাও করা যায়। আর এতে করে মুসলিমদের পরস্পরের মাঝে গভীর ভালোবাসা
জন্ম নেয়।
৪. জামা‘আতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মুসলিমদের নিজ নিজ মহল্লার মসজিদে পরস্পর
একত্রিত হওয়ার মাধ্যমে নিজের সকল আত্মীয়-স্বজনকেও সহজে চেনা সম্ভবপর হয়। তেমনিভাবে
এলাকায় নবাগত যে কোনো মুসাফির ব্যাক্তিকেও সহজে চেনা যায়। আর এতে করে একের পক্ষ
থেকে অন্যের পাওনা ন্যায্য অধিকারটুকু সহজে আদায় করার বিশেষ সুবর্ণ সুযোগও পাওয়া
যায়।
৫. জামা‘আতে
সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মুসলিমদের নিজ নিজ মহল্লার মসজিদে পরস্পর একত্রিত হওয়ার
মাধ্যমে ইসলামের একটি বিশেষ নিদর্শন তথা জামা‘আতে সালাত পড়া বিশেষভাবে প্রতিফলিত
হয়। কারণ, সমাজের প্রতিটি ব্যক্তি যদি নিজ
নিজ ঘরে সালাত পড়ে তা হলে উক্ত সমাজে সালাত পড়া হয়েছে কি না বলা মুশকিল।
৬. জামা‘আতে
সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মুসলিমদের নিজ নিজ মহল্লার মসজিদে পরস্পর একত্রিত হওয়ার
মাধ্যমে কাফির ও মুনাফিকদের সামনে মুসলিমদের দাপট, শক্তি ও পরাক্রমশালিতা বিশেষভাবে ফুটে উঠে। তাতে করে
কাফির ও মুনাফিকরা মানসিকভাবে পর্যুদস্ত হয়।
৭. জামা‘আতে
সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মুসলিমদের নিজ নিজ মহল্লার মসজিদে পরস্পর একত্রিত হওয়ার
মাধ্যমে মূর্খ ব্যক্তিরা আলিমদের কাছ থেকে ধর্ম সম্পর্কে অনেক কিছুই জানার সুযোগ
পায়। এমনকি তারা বিশেষ করে সালাতের বিধি-বিধানগুলো ভালোভাবে রপ্ত করারও সুযোগ পায়।
৮. জামা‘আতে
সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মুসলিমদের নিজ নিজ মহল্লার মসজিদে পরস্পর একত্রিত হওয়ার
মাধ্যমে জামা‘আতে সালাত আদায়ের জন্য মসজিদে উপস্থিত হয় না এমন ব্যক্তিদেরকে
চিহ্নিত করে তাদেরকে জামা‘আতে সালাত আদায়ের জন্য বিশেষভাবে উপদেশ দেওয়া যেতে পারে।
৯. জামা‘আতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মুসলিমদের নিজ নিজ মহল্লার মসজিদে পরস্পর
একত্রিত হওয়ার মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহ্কে বার বার ঐক্য ও ঐকমত্যের বিশেষ প্রশিক্ষণ
দেওয়া হয়। যাতে করে তারা একই ইমামের নেতৃত্বে জামা‘আতে সালাত আদায়ের প্রশিক্ষণের
মাধ্যমে নিজ রাষ্ট্রের কর্ণধারের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্য টিকিয়ে রাখার প্রশিক্ষণ পায়।
১০. জামা‘আতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মুসলিমদের নিজ নিজ
মহল্লার মসজিদে পরস্পর একত্রিত হওয়ার মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহ্কে বার বার নিজ
কুপ্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। যাতে করে তারা একই ইমামের
পুঙ্খানুপুঙ্খ আনুগত্যের মাধ্যমে নিজ কু-প্রবৃত্তি দমনের বিশেষ সুযোগ পায়।
১১. জামা‘আতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মুসলিমদের নিজ নিজ
মহল্লার মসজিদে পরস্পর একত্রিত হয়ে সারিবদ্ধভাবে সালাত আদায়ের মাধ্যমে মুসলিম
উম্মাহ্কে বার বার সুদৃঢ় প্রাচীরের মতো সারিবদ্ধভাবে জিহাদ করার বিশেষ প্রশিক্ষণ
দেওয়া হয়।
আল্লাহ তা‘আলা জিহাদ সম্পর্কে বলেন:
﴿إِنَّ ٱللَّهَ يُحِبُّ ٱلَّذِينَ يُقَٰتِلُونَ فِي سَبِيلِهِۦ صَفّٗا
كَأَنَّهُم بُنۡيَٰنٞ مَّرۡصُوصٞ ٤﴾ [الصف: ٤]
“নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা সুদৃঢ় প্রাচীরের মতো
সারিবদ্ধভাবে তাঁর পথে যুদ্ধকারীদের ভালোবাসেন”। [সূরা সাফ্ফ, আয়াত: ৪]
১২. জামা‘আতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মুসলিমদের নিজ নিজ
মহল্লার মসজিদে পরস্পর একত্রিত হয়ে ধনী গরীবের সাথে, আমীর মা’মূরের সাথে, শাসক
শাসিতের সাথে, বড়ো ছোটর সাথে সারিবদ্ধভাবে সালাত আদায়ের
মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহ্কে বার বার নিজেদের মধ্যকার সামাজিক অবস্থানের দৃশ্যমান
বিস্তর পার্থক্য ভুলে গিয়ে মুসলিম উম্মাহ’র সবাই যে একই সমান এমন মানসিকতা পোষণের
বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। যাতে করে মুসলিমদের পরস্পরের মাঝে গভীর ভালোবাসা জন্ম
নেয়। আর এ জন্যই তো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বদা সাহাবায়ে
কিরামগণকে সালাতে একান্তভাবে সারিবদ্ধ হয়ে সালাত আদায়ের আদেশ করতেন।
আবু মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জামা‘আতে সালাতের জন্য দাঁড়ানোর সময় আমাদের কাঁধ
স্পর্শ করে বলতেন:
«اِسْتَوُوْا، وَلاَ تَخْتَلِفُوْا فَتَخْتَلِفَ
قُلُوْبُكُمْ».
“তোমরা সারিবদ্ধভাবে সোজা হয়ে দাঁড়াও।
এলোমেলোভাবে দাঁড়িও না তাহলে তোমাদের অন্তরগুলোও এলোমেলো হয়ে যাবে”।[23]
১৩. জামা‘আতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মুসলিমদের নিজ নিজ
মহল্লার মসজিদে পরস্পর একত্রিত হওয়ার মাধ্যমে সমাজের গরীব-দুঃখী ও অসুস্থদের
খবরাখবর নিয়ে তাদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা যায় এবং সমাজের ধর্মবিমুখদেরকে ধর্মের
ওপর উঠিয়ে আনার জন্য যথাযোগ্য ব্যবস্থাও গ্রহণ করা যায়।
১৪. জামা‘আতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মুসলিমদের নিজ নিজ
মহল্লার মসজিদে পরস্পর একত্রিত হওয়ার মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবায়ে কিরামের যুগের শিক্ষা পদ্ধতি সম্পর্কে কিছুটা হলেও
ধারণা পাওয়া যায়। কারণ, সে
যুগে সাহাবায়ে কেরাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পেছনে জামা‘আতে
সালাত আদায়ের সুবাদেই তারা ধর্ম সম্পর্কে প্রয়োজনীয় জ্ঞান শেখার সুযোগ পেতো।
১৫. একান্ত সাওয়াবের আশায় জামা‘আতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে
মুসলিমদের নিজ নিজ মহল্লার মসজিদে পরস্পর একত্রিত হওয়া মুসলিম উম্মাহ’র ওপর আল্লাহ
তা‘আলার পক্ষ থেকে ধারাবাহিক বরকত নাযিল হওয়ার একটি বিরাট মাধ্যমও বটে।
১৬. জামা‘আতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মুসলিমদের নিজ নিজ
মহল্লার মসজিদে পরস্পর একত্রিত হওয়ার মাধ্যমে
সমাজের নিরলস ইবাদতকারীদের মধ্যে আল্লাহ তা‘আলার ইবাদতের প্রতি অদম্য উৎসাহ-উদ্দীপনা
দেখে অলসদের মাঝেও নতুন করে ইবাদতের ইচ্ছা ও স্পৃহা জন্ম নেয়।
১৭. জামা‘আতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মুসলিমদের নিজ নিজ
মহল্লার মসজিদে পরস্পর একত্রিত হওয়ার মাধ্যমে সালাত ছাড়া আরো অন্যান্য ইবাদতের
মাধ্যমে বহুগুণ সাওয়াবও অর্জন করা যায়।
১৮. জামা‘আতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মুসলিমদের নিজ নিজ
মহল্লার মসজিদে পরস্পর একত্রিত হওয়ার মাধ্যমে কথা ও কাজে আল্লাহ তা‘আলার দিকে
মানুষকে আহ্বান করা যায়।
১৯. জামা‘আতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট সময়ে মুসলিমদের
নিজ নিজ মহল্লার মসজিদে পরস্পর একত্রিত হওয়ার মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহ্কে সময়ের
প্রতি গুরুত্ব দেওয়ার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
জামা‘আতে সালাত আদায়ের ফযীলত
জামা‘আতে সালাত পড়া ওয়াজিব হওয়ার পাশাপাশি তাতে
অনেকগুলো ফযীলতও রয়েছে। যা নিম্নরূপ:
১. একা সালাত আদায়ের চাইতে জামা‘আতে সালাত পড়ায় সাতাশ গুণ বেশি সাওয়াব রয়েছে।
আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«صَلاَةُ الْـجَمَاعَةِ أَفْضَلُ مِنْ صَلاَةِ الْفَذِّ
بِسَبْعٍ وَعِشْرِيْنَ دَرَجَةً».
কোনো কোনো হাদীসে আবার পঁচিশ গুণ সাওয়াবের কথাও
বলা হয়েছে।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«صَلاَةٌ مَعَ الْإِمَامِ أَفْضَلُ مِنْ خَمْسٍ
وَعِشْرِيْنَ صَلاَةً يُصَلِّيْهَا وَحْدَهُ».
কেউ কেউ উভয় হাদীসের মধ্যে এভাবে সমন্বয় সাধন
করেন যে, পঁচিশ গুণের হাদীসে শুধু একা
ও জামা‘আতে সালাত আদায়ের মধ্যকার সাওয়াবের ব্যবধানটুকুই উল্লিখিত হয়েছে। আর সাতাশ
গুণের হাদীসে একা সালাতের সাওয়াব এবং উভয় সালাতের মধ্যকার সাওয়াবের ব্যবধানটুকু
একত্রেই উল্লিখিত হয়েছে।
আল্লামা ইমাম নাওয়াওয়ী রহ. উভয় হাদীসের মধ্যে
নিম্নে বর্ণিত তিনভাবেই সমন্বয় সাধন করেন:
ক. উভয় হাদীসের মধ্যে কোনো ধরণের বৈপরীত্য নেই। কারণ, কম সংখ্যা তো বেশি সংখ্যার বিপরীত
নয়। বরং কম সংখ্যা বেশি সংখ্যার মধ্যে অবশ্যই রয়েছে।
খ. হয়তো বা রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বপ্রথম কমের কথা জেনেই তা নিজ উম্মতকে জানিয়ে
দিয়েছেন অতঃপর তাঁকে আবার বেশির কথাই জানানো হলো।
গ. হয়তো বা জামা‘আতে সালাত
পড়ুয়া মুসল্লীদের অবস্থার পরিবর্তন তথা সালাতে তাদের ধীরস্থীরতা ও আন্তরিকতা, মুসল্লীদের
আধিক্য ও তাদের মর্যাদা এমনকি স্থানের মর্যাদার পার্থক্যের কারণে সাওয়াবেরও
পার্থক্য হয়।
জামা‘আতে সালাত পড়া অত্যন্ত সাওয়াবের বিষয় হওয়া
তা ওয়াজিব না হওয়া বুঝায় না। কারণ,
শরী‘আতে ফরয কিংবা ওয়াজিব কাজ আদায়েরও বিশেষ সাওয়াব রয়েছে। তবে
কেউ কোনো ফরয সালাত একা পড়লেও তার সালাতটুকু অবশ্যই আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু সে
ইচ্ছাকৃত ওয়াজিব ছাড়ার দরুন অবশ্যই গুনাহ্গার হবে। আর তাতে অন্তত পঁচিশ সাওয়াবের
ঘাটতি তো আছেই। তবে কেউ শরী‘আত সম্মত কোনো ওযরের কারণে জামা‘আতে উপস্থিত না হতে
পারলে আল্লাহ তা‘আলা তাকে জামা‘আতে সালাত আদায়ের সাওয়াব অবশ্যই দিবেন।
আবু মূসা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا مَرِضَ الْعَبْدُ أَوْ سَافَرَ كُتِبَ لَهُ
مِثْلُ مَا كَانَ يَعْمَلُ مُقِيْماً صَحِيْحاً».
“যখন আল্লাহ তা‘আলার কোনো বান্দা অসুস্থ কিংবা
সফররত অবস্থায় থাকে তখন তার জন্য তার সুস্থ কিংবা মুক্বিম থাকাবস্থার সকল আমলের
সমপরিমাণ সাওয়াব তার আমলনামায় লেখা হয়”।[26]
২. আল্লাহ তা‘আলা জামা‘আতে সালাত পড়ুয়াদেরকে শয়তানের হাত
থেকে রক্ষা করেন।
আবুদ্দারদা
রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি তিনি বলেন:
«مَا مِنْ
ثَلاَثَةٍ فِي قَرْيَةٍ لاَ يُؤَذَّنُ وَلاَ تُقَامُ فِيهِمُ الصَّلاَةُ إِلاَّ
اسْتَحْوَذَ عَلَيْهِمُ الشَّيْطَانُ فَعَلَيْكَ بِالْجَمَاعَةِ فَإِنَّ الذِّئْبَ
يَأْكُلُ الْقَاصِيَةَ».
“কোনো গ্রাম বা এলাকায় যদি তিন জন মানুষ থাকে
অথচ সেখানে আযান-ইক্বামত দিয়ে ফরয সালাত আদায় করা হলো না তাহলে তাদের ওপর শয়তান
জেঁকে বসবে। তাই তুমি জামা‘আতে সালাত পড়বে। কারণ, নেকড়ে বাঘ তো একমাত্র দলছুট্ ছাগলটিকেই খেয়ে ফেলে”।[27]
৩. জামা‘আতে সালাত আদায়কারীদের উপস্থিতি যতোই বাড়বে ততোই সাওয়াব বেশি পাওয়া
যাবে।
উবাই ইবন কা‘ব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নিয়ে ফজরের সালাত আদায়
করলেন। অতঃপর তিনি আমাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন: “অমুক উপস্থিত আছে কি? সাহাবীগণ বললেন: না। তিনি আবারো জিজ্ঞাসা করলেন: “অমুক উপস্থিত আছে কি? সাহাবীগণ বললেন: না। তখন তিনি বললেন:
«إِنَّ هَاتَيْنِ الصَّلَاتَيْنِ أَثْقَلُ الصَّلَوَاتِ
عَلَى الْـمُنَافِقِينَ وَلَوْ تَعْلَمُونَ مَا فِيهِمَا لَأَتَيْتُمُوهُمَا
وَلَوْ حَبْوًا عَلَى الرُّكَبِ وَإِنَّ الصَّفَّ الْأَوَّلَ عَلَى مِثْلِ صَفِّ
الْـمَلَائِكَةِ وَلَوْ عَلِمْتُمْ مَا فَضِيْلَتُهُ لَابْتَدَرْتُمُوهُ وَإِنَّ
صَلَاةَ الرَّجُلِ مَعَ الرَّجُلِ أَزْكَى مِنْ صَلَاتِهِ وَحْدَهُ وَصَلَاتُهُ
مَعَ الرَّجُلَيْنِ أَزْكَى مِنْ صَلَاتِهِ مَعَ الرَّجُلِ وَمَا كَثُرَ فَهُوَ
أَحَبُّ إِلَى اللَّهِ تَعَالَى».
“এ দু’টি সালাত তথা ইশা ও ফজরের সালাত জামা‘আতের
সাথে আদায় করা সত্যিই মুনাফিকদের জন্য খুবই কষ্টকর। তোমরা যদি জানতে তা জামা‘আতের সাথে
আদায়ে কি পরিমাণ সাওয়াব রয়েছে তা হলে তোমরা তা আদায়ের জন্য হামাগুড়ি দিয়ে হলেও
মসজিদে উপস্থিত হতে। সালাত আদায়কারীদের প্রথম সারি ফিরিশতাদের সারির ন্যায়। তোমরা
যদি জানতে প্রথম সারিতে সালাত আদায়ের কি ফযীলত রয়েছে তা হলে তোমরা খুব দ্রুত
সেখানে অবস্থান করতে। একা সালাত আদায়ের চাইতে দু’জন মিলে জামা‘আতে পড়া অনেক ভালো।
আবার একজনকে নিয়ে জামা‘আতে সালাত আদায়ের চাইতে দু’জনকে নিয়ে জামা‘আতে সালাত আদায়
করা আরো অনেক ভালো। জামা‘আতে সালাত আদায়কারীদের সংখ্যা যতোই বেশি হবে ততোই তা
আল্লাহ তা‘আলার নিকট বেশি পছন্দনীয়”।[28]
৪. চল্লিশ দিন একান্ত নিষ্ঠা ও প্রথম তাকবীরের সাথে জামা‘আতে সালাত পড়লে
দু’টি মুক্তির সার্টিফিকেট পাওয়া যায়।
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ صَلَّى لِلَّهِ أَرْبَعِينَ يَوْمًا فِي
جَمَاعَةٍ يُدْرِكُ التَّكْبِيرَةَ الْأُولَى كُتِبَتْ لَهُ بَرَاءَتَانِ :
بَرَاءَةٌ مِنْ النَّارِ وَبَرَاءَةٌ مِنْ النِّفَاقِ».
“যে ব্যক্তি একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার
সন্তুষ্টির জন্য চল্লিশ দিন যাবৎ প্রথম তাকবীর সহ জামা‘আতে সালাত আদায় করবে তার
জন্য দু’টি মুক্তির সার্টিফিকেট লেখা হবে। একটি জাহান্নাম থেকে মুক্তির। আর আরেকটি
মুনাফিকী থেকে মুক্তির”।[29]
৫. ফজরের সালাত জামা‘আতের সাথে আদায় করলে আল্লাহ তা‘আলার
বিশেষ নিরাপত্তা পাওয়া যায়।
জুন্দাব ইবন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ صَلَّى صَلَاةَ الصُّبْحِ فَهُوَ فِي ذِمَّةِ
اللَّهِ فَلَا يَطْلُبَنَّكُمُ اللهُ مِنْ ذِمَّتِهِ بِشَيْءٍ فَإِنَّهُ مَنْ
يَطْلُبْهُ مِنْ ذِمَّتِهِ بِشَيْءٍ يُدْرِكْهُ ثُمَّ يَكُبَّهُ عَلَى وَجْهِهِ
فِي نَارِ جَهَنَّمَ».
“যে ব্যক্তি ফজরের সালাত (জামা‘আতের সাথে)
আদায় করলো সে আল্লাহ তা‘আলার বিশেষ নিরাপত্তায় চলে গেলো। তাই কেউ যেন আল্লাহ
তা‘আলার নিরাপত্তাধীন কোনো কিছুর নিরাপত্তা বিঘ্নিত না করে। কারণ, যে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলার
নিরাপত্তাধীন কোনো কিছুর নিরাপত্তা বিঘ্নিত করবে তাকে তিনি পাকড়াও করবেন। অতঃপর
তাকে চেহারা নীচু করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন”।[30]
হাদীসটির কোনো কোনো বর্ণনায় জামা‘আতের সাথে কথাটি
উল্লিখিত হয়েছে।
৬. ফজরের সালাত জামা‘আতে আদায় করে সূর্য উঠা পর্যন্ত বসে বসে আল্লাহ তা‘আলার
যিকির করলে অতঃপর দু’ রাকাত সালাত পড়লে একটি পূর্ণ হজ ও একটি পূর্ণ উমরার সাওয়াব
পাওয়া যায়।
আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ صَلَّى الْغَدَاةَ فِي جَمَاعَةٍ ثُمَّ قَعَدَ
يَذْكُرُ اللَّهَ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ ثُمَّ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ كَانَتْ
لَهُ كَأَجْرِ حَجَّةٍ وَعُمْرَةٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ: تَامَّةٍ تَامَّةٍ تَامَّةٍ».
“যে ব্যক্তি
ফজরের সালাত জামা‘আতে আদায় করে সূর্য উঠা পর্যন্ত বসে বসে আল্লাহ তা‘আলার যিকির
করে অতঃপর দু’ রাকাত সালাত পড়ে তাকে একটি হজ ও একটি উমরার সাওয়াব দেওয়া হবে।
বর্ণনাকারী বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: একটি
পরিপূর্ণ হজ ও একটি পরিপূর্ণ উমরাহ’র সাওয়াব। একটি পরিপূর্ণ হজ ও একটি পরিপূর্ণ উমরাহ’র
সাওয়াব। একটি পরিপূর্ণ হজ ও একটি পরিপূর্ণ উমরাহ’র সাওয়াব”।[31]
৭. ইশা ও ফজরের সালাত অথবা শুধু ফজরের সালাত জামা‘আতে পড়লে পুরো রাত্রি নফল সালাত
আদায় করার সাওয়াব পাওয়া যায়।
উসমান ইবন আফফান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ صَلَّى الْعِشَاءَ فِي جَمَاعَةٍ فَكَأَنَّمَا
قَامَ نِصْفَ اللَّيْلِ وَمَنْ صَلَّى الصُّبْحَ فِيْ جَمَاعَةٍ فَكَأَنَّمَا
صَلَّى اللَّيْلَ كُلَّهُ».
“যে ব্যক্তি ইশার সালাত জামা‘আতে আদায় করলো
সে যেন অর্ধ রাত পর্যন্ত নফল সালাত পড়লো। আর যে ব্যক্তি ফজরের সালাত জামা‘আতে আদায়
করলো সে যেন পুরো রাত নফল সালাত পড়লো”।[32]
উক্ত হাদীস থেকে মুহাদ্দিসীনদের কেউ কেউ এ কথা
বুঝেছেন যে, শুধুমাত্র
ফজরের সালাত জামা‘আতে আদায় করলেই পুরো রাত নফল সালাত আদায়ের সাওয়াব পাওয়া যায়। যা
দেওয়া আল্লাহ তা‘আলার জন্য অসম্ভব কিছু নয়। কারণ, তিনি
হচ্ছেন পরম করুণাময় অত্যন্ত দয়ালু। যিনি অল্প কাজে মানুষকে অনেক বেশি প্রতিদান
দিয়ে থাকেন।
আবার কেউ কেউ উক্ত হাদীস থেকে এ কথা বুঝেছেন যে, ইশা ও ফজর উভয় সালাত জামা‘আতে আদায়
করলেই কেবল পুরো রাত নফল সালাত আদায়ের সাওয়াব পাওয়া যায়। শুধুমাত্র ফজরের সালাত জামা‘আতে
আদায় করলেই নয়। এ ব্যাপরে নিম্নোক্ত বর্ণনাটি একেবারেই সুস্পষ্ট।
উসমান ইবন আফ্ফান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ صَلَّى الْعِشَاءَ فِىْ جَمَاعَةٍ كَانَ
كَقِيَامِ نِصْفِ لَيْلَةٍ وَمَنْ صَلَّى الْعِشَاءَ وَالْفَجْرَ فِىْ جَمَاعَةٍ
كَانَ كَقِيَامِ لَيْلَةٍ».
“যে ব্যক্তি ইশার সালাত জামা‘আতে আদায় করলো সে
যেন অর্ধ রাত পর্যন্ত নফল সালাত পড়লো। আর যে ব্যক্তি ইশা ও ফজরের সালাত জামা‘আতে আদায়
করলো সে যেন পুরো রাত নফল সালাত পড়লো”।[33]
৮. দিন ও রাতের ফিরিশতাগণ আসর ও ফজরের সালাত চলাকালীন সময়
সবাই একত্রিত হোন।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«يَتَعَاقَبُونَ فِيكُمْ مَلَائِكَةٌ بِاللَّيْلِ
وَمَلَائِكَةٌ بِالنَّهَارِ وَيَجْتَمِعُونَ فِي صَلَاةِ الْفَجْرِ وَصَلَاةِ
الْعَصْرِ ثُمَّ يَعْرُجُ الَّذِينَ بَاتُوا فِيكُمْ فَيَسْأَلُهُمْ رَبُّهُمْ
وَهُوَ أَعْلَمُ بِهِمْ كَيْفَ تَرَكْتُمْ عِبَادِي فَيَقُولُونَ تَرَكْنَاهُمْ
وَهُمْ يُصَلُّونَ وَأَتَيْنَاهُمْ وَهُمْ يُصَلُّونَ».
“দিন ও রাতের ফিরিশতাগণ পর্যায়ক্রমে অবতীর্ণ
হয়ে ফজর ও আসরের সময় তোমাদের মাঝে একত্রিত হোন। অতঃপর যারা তোমাদের মাঝে রাত্রি
যাপন করেছেন তারা আকাশে উঠে গেলে তাদের প্রভু তাদেরকে জিজ্ঞাসা করেন অথচ তিনি তাদের
সম্পর্কে সব চাইতে বেশি জানেন। তবুও তিনি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করেন, তোমরা আমার বান্দাহ্দেরকে কি অবস্থায়
রেখে আসলে? তারা বলেন, আমরা তাদেরকে সালাতরত অবস্থায় রেখে
আসলাম যেমনিভাবে আমরা তাদের নিকট গিয়েছিলাম সালাতরত অবস্থায়”।[34]
আসর ও ফজরের সালাত যথা সময়ে আদায় করলে পরকালে
মহান আল্লাহ তা‘আলার দর্শন মিলবে।
জারীর ইবন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা
আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট বসা ছিলাম। হঠাৎ তিনি পূর্ণিমার
চন্দ্রের দিকে তাকিয়ে বললেন:
«لَبُوا عَلَى صَلَاةٍ قَبْلَ طُلُوعِ الشَّمْسِ وَقَبْلَ
غُرُوبِهَا يَعْنِي الْعَصْرَ وَالْفَجْرَ ثُمَّ قَـرَاَ جَـرِيرٌ : {وَسَبِّحْ بِحَمْدِ
رَبِّكَ قَبْلَ طُلُوعِ الشَّمْسِ وَقَبْلَ الغُرُوبِ}».
“তোমরা নিশ্চয় তোমাদের প্রভুকে
দেখতে পাবে যেমনিভাবে তোমরা দেখতে পাও এ পূর্ণিমার চন্দ্র। তা দেখতে তোমাদেরকে কোনো
ধরণের ভিড় জমাতে হবে না। অতএব, তোমরা যদি সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের আগের দু’ বেলা সালাত
তথা ফজর ও আসরের সালাত যথা সময়ে পড়তে পারো তা হলে তোমরা তা অবশ্যই পড়বে। আর তা হলেই
তোমরা আল্লাহ তা‘আলার দর্শন লাভে ধন্য হবে। অতঃপর জারীর রাদিয়াল্লাহু আনহু উক্ত আয়াতটি
তিলাওয়াত করেন। যার অর্থ- “আর তুমি তোমার রবের সপ্রশংস পবিত্রতা ঘোষণা করো সূর্যোদয়
ও সূর্যাস্তের আগে”।
আসর ও ফজরের সালাত যথা সময়ে আদায় করলে পরকালে জাহান্নাম
থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
উমারাহ ইবন রুআইবাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لَنْ يَلِجَ النَّارَ أَحَدٌ صَلَّى قَبْلَ طُلُوعِ
الشَّمْسِ وَقَبْلَ غُرُوبِهَا يَعْنِي الْفَجْرَ وَالْعَصْرَ».
“এমন কেউ জাহান্নামে প্রবেশ করবে না যিনি
সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের আগের দু’ বেলা সালাত তথা ফজর ও আসরের সালাত যথা সময়ে আদায়
করলো”।[35]
আসর ও ফজরের সালাত যথা সময়ে আদায় করলে পরকালে
জান্নাত পাওয়া যাবে।
উমারাহ ইবন রুআইবাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে আরো
বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ صَلَّى الْبَرْدَيْنِ دَخَلَ الْـجَنَّةَ».
“যে ব্যক্তি ঠাণ্ডার সময়ের দু’ বেলা সালাত
তথা ফজর ও আসরের সালাত যথা সময়ে আদায় করলো সে ব্যক্তি অচিরেই জান্নাতে প্রবেশ করবে”।[36]
ঠিক এরই বিপরীতে যে ব্যক্তি আসরের সালাত যথা সময়ে
আদায় করলো না তার সকল আমল পন্ড হয়ে যাবে। এমনকি সে এমন এক ক্ষতির সম্মুখীন হবে যেন
তার কাছ থেকে তার সকল পরিবারবর্গ ও ধনসম্পদ ছিনিয়ে নেওয়া হলো।
বুরাইদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ تَرَكَ صَلَاةَ الْعَصْرِ فَقَدْ حَبِطَ عَمَلُهُ».
আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«الَّذِي تَفُوتُهُ صَلَاةُ الْعَصْرِ فَكَأَنَّمَا
وُتِرَ أَهْلَهُ وَمَالَهُ».
৯. আল্লাহ তা‘আলা মুসলিমদের জামা‘আতে সালাত পড়া দেখে বিস্মিত হোন।
কারণ, তিনি তা অত্যন্ত ভালোবাসেন।
আর স্বভাবতই কেউ কোনো জিনিসকে বেশি ভালোবাসলে এবং তা সুন্দরভাবে বাস্তবায়িত হতে
দেখলে তাতে সে অধিক আনন্দিত ও বিস্মিত হয়। তবে কোনো জিনিস নিয়ে আল্লাহ তা‘আলার
বিস্মিত হওয়া তা তাঁর মতোই একান্ত অতুলনীয়।
আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِنَّ اللهُ لَيَعْجَبُ مِنْ الصَّلَاةِ فِي الْـجَمِيعِ».
১০. জামা‘আতে সালাত আদায়ের জন্য অপেক্ষমান থাকলে ততক্ষণ নফল
সালাত আদায়ের সাওয়াব পাওয়া যায়।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لَا يَزَالُ الْعَبْدُ فِي صَلَاةٍ مَا كَانَ فِي
مُصَلَّاهُ يَنْتَظِرُ الصَّلَاةَ وَتَقُولُ الْـمَلَائِكَةُ : اللَّهُمَّ اغْفِرْ
لَهُ اللَّهُمَّ ارْحَمْهُ حَتَّى يَنْصَرِفَ أَوْ يُحْدِثَ قُلْتُ : مَا يُحْدِثُ
؟ قَالَ: يَفْسُو اَوْ يَضْرِطُ».
“যে কোনো ব্যক্তিকে সালাতরত বলে ধরে নেওয়া হয়
যতক্ষণ সে সালাতের জায়গায় বসে সালাতেরই অপেক্ষায় থাকে। আর ফিরিশতাগণ তার জন্য এ
বলে দো‘আ করেন- হে আল্লাহ! আপনি একে ক্ষমা করে দিন। হে আল্লাহ! আপনি একে দয়া করুন।
যতক্ষণ না সে উক্ত জায়গা থেকে সরে যায় অথবা অযু ভঙ্গ হয় এমন কিছু ঘটায়। বর্ণনাকারী
হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি বললাম: অযু ভঙ্গ হয় এমন কিছু ঘটানো
মানে? তিনি বললেন: যেমন, বায়ু ত্যাগ
করা”।[40]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে অন্য আরেকটি
বর্ণনায় বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«فَإِذَا دَخَلَ الْـمَسْجِدَ كَانَ فِيْ الصَّلاَةِ
مَا كَانَتِ الصَّلاَةُ هِيَ تَحْبِسُهُ، وَالْـمَلَائِكَةُ يُصَلُّونَ عَلَى
أَحَدِكُمْ مَا دَامَ فِي مَجْلِسِهِ الَّذِي صَلَّى فِيهِ يَقُولُونَ :
اللَّهُمَّ ارْحَمْهُ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ اللَّهُمَّ تُبْ عَلَيْهِ مَا لَمْ
يُؤْذِ فِيهِ مَا لَمْ يُحْدِثْ فِيهِ».
“আর যখন সে মসজিদে প্রবেশ করে তখন তাকে সালাতরত
বলেই ধরে নেওয়া হয় যখন একমাত্র সালাতই তাকে সেখানে আটকে রাখলো। এমনকি ফিরিশতাগণ
তোমাদের কারোর জন্য যতক্ষণ সে সালাত শেষে সালাতের জায়গায় বসে যিকির করতে থাকে এ
বলে দো‘আ করেন- হে আল্লাহ! আপনি একে দয়া করুন। হে আল্লাহ! আপনি একে ক্ষমা করে দিন।
হে আল্লাহ! আপনি এর তাওবা কবুল করুন। যতক্ষণ না সে মানুষ ও ফিরিশতাগণ কষ্ট পায় এবং
অযু ভঙ্গ হয় এমন কিছু ঘটায়”।
১১. জামা‘আতে সালাত আদায়ের জন্য
অপেক্ষমান থাকলে অথবা সালাত শেষে সালাতের জায়গায় বসে থাকলেও ফিরিশতাগণের দো‘আ
পাওয়া যায়।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لَا يَزَالُ الْعَبْدُ فِي صَلَاةٍ مَا كَانَ فِي
مُصَلَّاهُ يَنْتَظِرُ الصَّلَاةَ وَتَقُولُ الْـمَلَائِكَةُ : اللَّهُمَّ اغْفِرْ
لَهُ اللَّهُمَّ ارْحَمْهُ حَتَّى يَنْصَرِفَ أَوْ يُحْدِثَ قُلْتُ: مَا يُحْدِثُ؟
قَالَ: يَفْسُو اَوْ يَضْرِطُ».
“যে কোনো ব্যক্তিকে সালাতরত বলে ধরে নেওয়া হয়
যতক্ষণ সে সালাতের জায়গায় বসে সালাতেরই অপেক্ষায় থাকে। আর ফিরিশতাগণ তার জন্য এ
বলে দো‘আ করেন: হে আল্লাহ! আপনি একে ক্ষমা করে দিন। হে আল্লাহ! আপনি একে দয়া করুন।
যতক্ষণ না সে উক্ত জায়গা থেকে সরে যায় অথবা অযু ভঙ্গ হয় এমন কিছু ঘটায়। বর্ণনাকারী
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: আমি বললাম: অযু ভঙ্গ হয় এমন কিছু ঘটানো মানে? তিনি বললেন: যেমন, বায়ু ত্যাগ করা”।[41]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে অন্য আরেকটি
বর্ণনায় বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«فَإِذَا دَخَلَ الْـمَسْجِدَ كَانَ فِيْ الصَّلاَةِ
مَا كَانَتِ الصَّلاَةُ هِيَ تَحْبِسُهُ، وَالْـمَلَائِكَةُ يُصَلُّونَ عَلَى
أَحَدِكُمْ مَا دَامَ فِي مَجْلِسِهِ الَّذِي صَلَّى فِيهِ يَقُولُونَ :
اللَّهُمَّ ارْحَمْهُ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ اللَّهُمَّ تُبْ عَلَيْهِ مَا لَمْ
يُؤْذِ فِيهِ مَا لَمْ يُحْدِثْ فِيهِ».
“আর যখন সে মসজিদে প্রবেশ করে তখন তাকে সালাতরত
বলেই ধরে নেওয়া হয় যখন একমাত্র সালাতই তাকে সেখানে আটকে রাখলো। এমনকি ফিরিশতাগণ
তোমাদের কারোর জন্য যতক্ষণ সে সালাত শেষে সালাতের জায়গায় বসে থাকে এ বলে দো‘আ করেন-
হে আল্লাহ! আপনি একে দয়া করুন। হে আল্লাহ! আপনি একে ক্ষমা করে দিন। হে আল্লাহ!
আপনি এর তাওবা কবুল করুন। যতক্ষণ না সে মানুষ ও ফিরিশতাগণ কষ্ট পায় এবং অযু ভঙ্গ
হয় এমন কিছু ঘটায়”।
১২. জামা‘আতের প্রথম সারিতে অথবা যে কোনো সারির ডান দিকে
সালাত পড়ায় কিংবা জামা‘আতে একে অপরের সাথে মিলে মিলে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানোয়
অনেকগুলো ফযীলত রয়েছে। যা নিম্নরূপ:
ক. জামা‘আতের প্রথম সারি সম্মানিত
ফিরিশতাগণের সারির সাথে তুলনীয়।
উবাই ইবন কা‘ব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«وَإِنَّ الصَّفَّ الْأَوَّلَ عَلَى مِثْلِ صَفِّ الْـمَلَائِكَةِ
وَلَوْ عَلِمْتُمْ مَا فَضِيْلَتُهُ لَابْتَدَرْتُمُوهُ
“সালাত আদায়কারীদের প্রথম সারি ফিরিশতাগণের
সারির ন্যায়। তোমরা যদি জানতে প্রথম সারিতে সালাত আদায়ের কী ফযীলত রয়েছে তাহলে
তোমরা খুব দ্রুত সেখানে অবস্থান করতে।[42]
জাবির ইবন সামুরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«أَلَا تَصُفُّونَ كَمَا تَصُفُّ الْـمَلَائِكَةُ
عِنْدَ رَبِّهَا ؟! فَقُلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ : وَكَيْفَ تَصُفُّ الْـمَلَائِكَةُ
عِنْدَ رَبِّهَا ؟ قَالَ : يُتِمُّونَ الصُّفُوفَ الْأُوَلَ وَيَتَرَاصُّونَ فِي
الصَّفِّ».
“তোমরা কি সারিবদ্ধ হবে না যেমনিভাবে
সারিবদ্ধ হোন ফিরিশতাগণ তাদের প্রভুর নিকটে। আমরা বললাম: হে আল্লাহর রাসূল!
ফিরিশতাগণ কি ভাবে তাদের প্রভুর নিকট সারিবদ্ধ হোন? তিনি বললেন: তারা প্রথম সারিগুলো পুরো করে নেন এবং
সারিতে সোজা হয়ে একে অপরের সাথে লেগে লেগে দাঁড়ান”।[43]
খ. প্রথম সারিতে সালাত পড়ায় এতো বেশি সাওয়াব রয়েছে তা যদি সবাই জানতে পারতো
তাহলে তাতে জায়গা পাওয়ার জন্য লটারি দেওয়া ছাড়া আর কোনো গত্যন্তর থাকতো না।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لَوْ يَعْلَمُ النَّاسُ مَا فِي النِّدَاءِ وَالصَّفِّ
الْأَوَّلِ ثُمَّ لَمْ يَجِدُوا إِلَّا أَنْ يَسْتَهِمُوْا عَلَيْهِ لَاسْتَهَمُوا
وَلَوْ يَعْلَمُونَ مَا فِي التَّهْجِيرِ لَاسْتَبَقُوا إِلَيْهِ وَلَوْ
يَعْلَمُونَ مَا فِي الْعَتَمَةِ وَالصُّبْحِ لَأَتَوْهُمَا وَلَوْ حَبْوًا».
“আযান ও প্রথম সারিতে সালাত পড়ায় এতো বেশি
সাওয়াব রয়েছে তা যদি মানুষ জানতে পারতো অতঃপর তা পাওয়ার জন্য লটারি দেওয়া ছাড়া আর
কোনো গত্যন্তর না থাকতো তাহলে তারা তা পাওয়ার জন্য অবশ্যই লটারি দেওয়ারই আয়োজন
করতো। আর যদি তারা জানতো তড়িঘড়ি সালাত আদায় করতে আসায় কি সাওয়াব রয়েছে তাহলে তারা
তা পড়ার জন্য দ্রুত মসজিদের দিকে ছুটে আসতো। আর যদি তারা জানতো ইশা ও ফজরের সালাত জামা‘আতে
পড়ায় কি সাওয়াব রয়েছে তাহলে তারা তা পড়ার জন্য হামাগুড়ি দিয়ে হলেও মসজিদে উপস্থিত
হতো”।[44]
গ. জামা‘আতের প্রথম সারি সর্বোত্তম সারি।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«خَيْرُ صُفُوفِ الرِّجَالِ أَوَّلُهَا وَشَرُّهَا آخِرُهَا وَخَيْرُ
صُفُوفِ النِّسَاءِ آخِرُهَا وَشَرُّهَا أَوَّلُهَا».
“পুরুষদের সর্বোত্তম
সারি হচ্ছে তাদের সর্বপ্রথম সারি। আর তাদের সর্বনিকৃষ্ট সারি হচ্ছে তাদের সর্বশেষ সারি।
তেমনিভাবে মহিলাদের সর্বোত্তম সারি হচ্ছে তাদের সর্বশেষ সারি। আর তাদের সর্বনিকৃষ্ট
সারি হচ্ছে তাদের সর্বপ্রথম সারি”।
ঘ. আল্লাহ তা‘আলা নিজ ফিরিশতাগণের নিকট জামা‘আতের
প্রথম সারিগুলোতে সালাত পড়ুয়াদের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং তাঁর ফিরিশতাগণও তাদের জন্য
আল্লাহ তা‘আলার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা ও দো‘আ করেন। তবে এ ক্ষেত্রে প্রথম সারির সালাত
পড়ুয়াদের ভাগটুকু একটু বড়ো।
আবু উমামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى
الصَّفِّ الْأَوَّلِ، قَالُـوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ! وَعَلَى الثَّانِيْ؟ قَالَ:
إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى الصَّفِّ الْأَوَّلِ، قَالُوا:
يَا رَسُولَ اللَّهِ! وَعَلَى الثَّانِيْ؟ قَالَ: وَعَلَى الثَّانِيْ».
“নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা নিজ ফিরিশতাগণের নিকট
প্রথম সারিতে সালাত পড়ুয়াদের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং তাঁর ফিরিশতাগণও তাদের জন্য
আল্লাহ তা‘আলার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা ও দো‘আ করেন। সাহাবীগণ বললেন: হে আল্লাহর
রাসূল! দ্বিতীয় সারির সালাত পড়ুয়াদের মর্যাদাও কি একই রকম? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেন: নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা নিজ ফিরিশতাগণের নিকট প্রথম সারিতে সালাত
পড়ুয়াদের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং তাঁর ফিরিশতাগণও তাদের জন্য আল্লাহ তা‘আলার নিকট
ক্ষমা প্রার্থনা ও দো‘আ করেন। সাহাবীগণ বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! দ্বিতীয় সারির
সালাত পড়ুয়াদের মর্যাদাও কি একই রকম? রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: হ্যাঁ। দ্বিতীয় সারির সালাত পড়ুয়াদের
মর্যাদাও একই রকম।[45]
বারা ইবন আযিব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى
الصَّفِّ الْأَوَّلِ أَوْ الصُّفُوفِ الْاُولَى».
“নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা নিজ ফিরিশতাগণের নিকট
প্রথম সারি কিংবা প্রথম সারিগুলোতে সালাত পড়ুয়াদের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং তাঁর
ফিরিশতাগণও তাদের জন্য আল্লাহ তা‘আলার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা ও দো‘আ করেন”।[46]
বারা ইবন আযিব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে আরো বর্ণিত
তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى
الصُّفُوفِ الْـمُتَقَدِّمَةِ».
“নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা নিজ ফিরিশতাগণের নিকট
আগের সারিগুলোতে সালাত পড়ুয়াদের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং তাঁর ফিরিশতাগণও তাদের
জন্য আল্লাহ তা‘আলার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা ও দো‘আ করেন”।[47]
ঙ. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামপ্রথম সারিতে সালাত
পড়ুয়াদের জন্য আল্লাহ তা‘আলার নিকট তিন তিন বার ক্ষমা প্রার্থনা ও দো‘আ করেন। আর
দ্বিতীয় সারিতে সালাত পড়ুয়াদের জন্য শুধুমাত্র এক বার।
ইরবায ইবন সারিয়াহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে আরো
বর্ণিত তিনি বলেন:
«كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
يُصَلِّي عَلَى الصَّفِّ الْأَوَّلِ ثَلَاثًا وَعَلَى الثَّانِي وَاحِدَةً».
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
প্রথম সারিতে সালাত পড়ুয়াদের জন্য আল্লাহ তা‘আলার নিকট তিন তিন বার ক্ষমা
প্রার্থনা ও দো‘আ করতেন। আর দ্বিতীয় সারিতে সালাত পড়ুয়াদের জন্য শুধুমাত্র এক বার”।[48]
অন্য বর্ণনায় রয়েছে,
«كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
يَسْتَغْفِرُ لِلصَّفِّ الْـمُقَدَّمِ ثَلاَثًا وَلِلثَّانِىْ مَرَّةً».
“রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথম সারিতে সালাত পড়ুয়াদের জন্য আল্লাহ তা‘আলার
নিকট তিন তিন বার ক্ষমা প্রার্থনা করতেন। আর দ্বিতীয় সারিতে সালাত পড়ুয়াদের জন্য শুধুমাত্র এক বার”।[49]
চ. আল্লাহ তা‘আলা নিজ ফিরিশতাগণের নিকট জামা‘আতের সারিগুলোতে একে অপরের সাথে
মিলে মিলে দাঁড়ানো লোকদের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং তাঁর ফিরিশতাগণও তাদের জন্য
আল্লাহ তা‘আলার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা ও দো‘আ করেন।
আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى
الَّذِينَ يَصِلُونَ الصُّفُوفَ وَمَنْ سَدَّ فُرْجَةً رَفَعَهُ اللَّهُ بِهَا
دَرَجَةً».
“নিশ্চয় আল্লাহ
তা‘আলা নিজ ফিরিশতাগণের নিকট জামা‘আতের সারিগুলোতে একে অপরের সাথে মিলে মিলে
দাঁড়ানো লোকদের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং তাঁর ফিরিশতাগণও তাদের জন্য আল্লাহ তা‘আলার
নিকট ক্ষমা প্রার্থনা ও দো‘আ করেন। আর কেউ সারিগুলোর কোনো খালিস্থান পূরণ করলে
আল্লাহ তা‘আলা তার সম্মান আরো বাড়িয়ে দেন”।[50]
ছ. জামা‘আতের সারিগুলোতে একে অপরের
সাথে মিলে মিলে দাঁড়ালে আল্লাহ তা‘আলা তার সাথে তাঁর বিশেষ সুসম্পর্ক রক্ষা করবেন।
আর দূরে দূরে দাঁড়ালে আল্লাহ তা‘আলা তার সাথে তাঁর বিশেষ সুসম্পর্ক ছিন্ন করবেন।
আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«وَمَنْ وَصَلَ صَفًّا وَصَلَهُ اللهُ وَمَنْ قَطَعَ
صَفًّا قَطَعَهُ الله».
“জামা‘আতের সারিগুলোতে একে অপরের সাথে মিলে
মিলে দাঁড়ালে আল্লাহ তা‘আলা তার সাথে তাঁর বিশেষ সুসম্পর্ক রক্ষা করবেন। আর দূরে
দূরে দাঁড়ালে আল্লাহ তা‘আলা তার সাথে তাঁর বিশেষ সুসম্পর্ক ছিন্ন করবেন”।[51]
১৩. কারোর “আমীন” বলা ফিরিশতাগণের “আমীন” বলার সাথে মিলে
গেলে আল্লাহ তা‘আলা তার পূর্বেকার সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন এবং তাকে ভালোবাসবেন।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا أَمَّنَ الْإِمَامُ
فَأَمِّنُوا فَإِنَّهُ مَنْ وَافَقَ تَأْمِينُهُ تَأْمِينَ الْـمَلَائِكَةِ غُفِرَ
لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ».
“যখন ইমাম সাহেব “আমীন” বলবেন তখন তোমরাও “আমীন”
বলবে। কারণ, যার “আমীন”
বলা ফিরিশতাগণের “আমীন” বলার সাথে মিলে যাবে তার পূর্বেকার সকল গুনাহ ক্ষমা করে
দেওয়া হবে”।[52]
অন্য বর্ণনায় রয়েছে,
«إِذَا قَالَ الْإِمَامُ {غَيْرِ المَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلاَ الضَّالِّينَ} فَقُولُوا
آمِينَ فَإِنَّهُ مَنْ وَافَقَ قَوْلُهُ قَوْلَ الْـمَلَائِكَةِ غُفِرَ لَهُ مَا
تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ».
“যখন ইমাম সাহেব غَيْرِ المَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلاَ الضَّالِّينَ বলবেন তখন তোমরা “আমীন” বলবে। কারণ, যার “আমীন” বলা
ফিরিশতাগণের “আমীন” বলার সাথে মিলে যাবে তার পূর্বেকার সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া
হবে।[53]
আবু মূসা আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের উদ্দেশ্যে খুৎবা দিয়ে
তিনি আমাদেরকে সালাত ও সুন্নাত শিক্ষা দিয়েছেন তিনি তাঁর খুৎবায় বলেন:
«إِذَا صَلَّيْتُمْ فَأَقِيمُوا
صُفُوفَكُمْ ثُمَّ لْيَؤُمَّكُمْ أَحَدُكُمْ فَإِذَا كَبَّرَ فَكَبِّـرُوا وَإِذَا
قَالَ : {غَيْرِ المَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلاَ
الضَّالِّينَ} فَقُولُوا آمِينَ يُجِبْكُمْ الله».
“যখন তোমরা সালাত আদায় করতে যাবে তখন তোমরা
সালাতের সারিগুলো সোজা করে নিবে অতঃপর তোমাদের মধ্যকার যে কোনো একজন ইমামতি করবেন।
যখন তিনি “আল্লাহু আকবার” বলবেন তখন তোমরাও “আল্লাহু আকবার” বলবে। আর যখন তিনিغَيْرِ المَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلاَ الضَّالِّينَ বলবেন তখন তোমরা “আমীন” বলবে। তাহলে আল্লাহ তা‘আলা
তোমাদেরকে ভালোবাসবেন।[54]
জামা‘আতে সালাত আদায় করতে যাওয়ার ফযীলত
জামা‘আতে সালাত আদায় করতে যাওয়া একটি মহান
ইবাদাত। যার অনেকগুলো ফযীলত হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। যার কিয়দংশ নিম্নরূপ:
১. সর্বদা মসজিদে গিয়ে জামা‘আতে নামাজ
পড়তে ব্যাকুল ব্যক্তি কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলার আর্শের নিচে ছায়া পাবে:
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«سَبْعَةٌ يُظِلُّهُمْ اللهُ تَعَالَى فِيْ ظِلِّهِ
يَوْمَ لاَ ظِلَّ إِلاَّ ظِلُّهُ : إِمَامٌ عَدْلٌ، وَشَابٌّ نَشَأَ فِيْ
عِبَادَةِ اللهِ، وَرَجُلٌ قَلْبُهُ مُعَلَّقٌ فِيْ الـْمَسَاجِدِ، وَرَجُلاَنِ
تَحَابَّا فِيْ اللهِ اجْتَمَعَا عَلَيْهِ وَتَفَرَّقَا عَلَيْهِ، وَرَجُلٌ
دَعَتْهُ امْرَأَةٌ ذَاتُ مَنْصِبٍ وَجَمَالٍ فَقَالَ: إِنِّيْ أَخَافُ اللهَ،
وَرَجُلٌ تَصَدَّقَ بِصَدَقَةٍ فَأَخْفَاهَا حَتَّى لاَ تَعْلَمَ شِمَالُهُ مَا
تُنْفِقُ يَمِيْنُهُ، وَرَجُلٌ ذَكَرَ اللهَ خَالِيًا فَفَاضَتْ عَيْنَاهُ».
“সাত শ্রেণির লোককে আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের
দিন আর্শের নিচে ছায়া দিবেন যে দিন আর কোনো ছায়া থাকবে না। প্রথম শ্রেণি হচ্ছে এমন
রাষ্ট্রপতি যিনি সর্বদা ইন্সাফের ওপরই প্রতিষ্ঠিত। দ্বিতীয় শ্রেণি হচ্ছে এমন যুবক
যে ছোট থেকেই আল্লাহ তা‘আলার ইবাদাতের ওপর বেড়ে উঠেছে। তৃতীয় শ্রেণি হচ্ছে এমন
ব্যক্তি যার অন্তর সর্বদা মসজিদের সাথেই লাগানো। চতুর্থ শ্রেণি হচ্ছে এমন দু’
ব্যক্তি যারা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্যই একে অপরকে ভালোবেসেছে।
আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্যই তারা পরস্পর একত্রিত হয় এবং তাঁরই সন্তুষ্টির
জন্য তারা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়। পঞ্চম শ্রেণি হচ্ছে এমন পুরুষ যাকে কোনো
প্রভাবশালী সুন্দরী মহিলা ব্যভিচারের জন্য ডাকছে অথচ সে বলছেঃ আমি তা করতে পারবো
না। নিশ্চয় আমি আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় পাচ্ছি। ষষ্ট শ্রেণি হচ্ছে এমন ব্যক্তি যে এরূপ
লুক্কায়িতভাবে সাদাকা করেছে যে, তার বাম হাত জানছে না তার ডান কি সাদাকা করছে। সপ্তম শ্রেণি হচ্ছে এমন
ব্যক্তি যে একাকীভাবে আল্লাহ তা‘আলার কথা স্মরণ করে দু’ চোখের পানি প্রবাহিত করছে”।[55]
অন্য বর্ণনায় রয়েছে,
«وَرَجُلٌ مُعَلَّقٌ بِالْـمَسْجِدِ إِذَا خَرَجَ
مِنْهُ حَتَّى يَعُودَ اِلَيْهِ».
“তৃতীয় শ্রেণি হচ্ছে এমন ব্যক্তি যার অন্তর
সর্বদা মসজিদের সাথেই লাগানো থাকে যখন সে মসজিদ থেকে বের হয় যতক্ষণ না সে মসজিদে
ফিরে আসে”।
মসজিদের সাথে অন্তর লেগে থাকা মানে মসজিদকে অধিক
ভালোবাসা এবং তাতে জামা‘আতে সালাত আদায়ের প্রতি অধিক নিষ্ঠাবান হওয়া। এর মানে
দুনিয়ার সকল কাজ বাদ দিয়ে মসজিদে সর্বদা বসে থাকা নয়।
২. জামা‘আতে সালাত আদায়ের জন্য মসজিদে যাওয়া
মসজিদগামী ব্যক্তির
মর্যাদা বৃদ্ধি, গুনাহ মাফ ও অধিক সাওয়াব লাভের একটি বিশেষ মাধ্যম।
আব্দুল্লাহ ইবন মাসঊদ
রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন:
«وَمَا مِنْ رَجُلٍ يَتَطَهَّرُ فَيُحْسِنُ الطُّهُوْرَ
ثُمَّ يَعْمَدُ إِلَى مَسْجِدٍ مِنْ هَذِهِ الـْمَسَاجِدِ إِلاَّ كَتَبَ اللهُ لَهُ
بِكُلِّ خُطْوَةٍ يَخْطُوْهَا حَسَنَةً وَيَرْفَعَهُ بِهَا دَرَجَةً، وَيَحُطُّ عَنْهُ
بِهَا سَيِّئَةً».
“যে কেউ
সুন্দরভাবে পবিত্রতার্জন করে মসজিদগামী হয় আল্লাহ তা‘আলা তাকে প্রতি কদমের বদৌলতে
একটি করে পুণ্য দিবেন ও একটি করে তার মর্যাদা উন্নীত করবেন এবং একটি করে তার গুনাহ
মুছে দিবেন”।[56]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«وَذلِكَ أنَّ أحَدَكُمْ إِذَا تَوَضَّأَ فَأَحْسَنَ
الْوُضُوءَ ثُمَّ أَتَى الـمَسْجِدَ لاَ يُرِيدُ إلاَّ الصَلاَة لَمْ يَخْطُ
خَطْوَةً إلاَّ رَفَعَهُ الله بِهَا دَرَجَةً وَحَطَّ عَنْهُ بِهَا خَطِيئَةً».
“আর তা এ ভাবে যে, তোমাদের কেউ যদি ভালোভাবে অযু করে
শুধুমাত্র সালাতের উদ্দেশ্যেই মসজিদে আসে তা হলে আল্লাহ তা‘আলা তাকে তার প্রতি
কদমের বদৌলতে একটি করে মর্যাদা উন্নীত করবেন এবং একটি করে গুনাহ মুছে দিবেন”।[57]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে আরো বর্ণিত
তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ تَطَهَّرَ فِي بَيْتِهِ ثُمَّ مَشَى إِلَى بَيْتٍ
مِنْ بُيُوتِ اللَّهِ لِيَقْضِيَ فَرِيضَةً مِنْ فَرَائِضِ اللَّهِ كَانَتْ
خَطْوَتَاهُ إِحْدَاهُمَا تَحُطُّ خَطِيئَةً وَالْاُخْرَى تَرْفَعُ دَرَجَةً».
“যে ব্যক্তি
নিজ ঘরে পবিত্রতার্জন করে কোনো ফরয সালাত আদায়ের জন্য মসজিদে গেলো তার প্রতি দু’
কদমের একটি এক একটি করে তার গুনাহ মুছে দিবে আর অপরটি এক একটি করে তার মর্যাদা
বাড়িয়ে দিবে”।[58]
“আমি তোমাদেরকে এমন কিছু আমলের সংবাদ দেবো কি? যা সম্পাদন করলে আল্লাহ তা‘আলা
তোমাদের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন ও মর্যাদা বাড়িয়ে দিবেন। সাহাবীগণ বললেন: হাঁ,
হে আল্লাহর রাসুল! উত্তরে তিনি বললেন: কষ্টের সময় অযুর অঙ্গগুলো
ভালভাবে ধৌত করবে, মসজিদের
প্রতি অধিক পদক্ষেপণ করবে এবং এক সালাত শেষে অন্য সালাতের জন্য অপেক্ষায় থাকবে।
পরিশেষে তিনি বলেন: এগুলো যেন একটি প্রতিরক্ষা বাহিনীরই
কাজ। এগুলো যেন একটি প্রতিরক্ষা বাহিনীরই কাজ”।[59]
৩. জামা‘আতে সালাত আদায়ের জন্য মসজিদে গেলে
যেমনিভাবে মসজিদগামী ব্যক্তির মসজিদে যাওয়ার প্রতিটি কদম তার আমলনামায় লেখা হবে
তেমনিভাবে তার মসজিদ থেকে ঘরে ফেরার প্রতিটি কদমও তার আমলনামায় লেখা হবে।
উবাই ইবন কা‘ব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
জনৈক ব্যক্তি যার বাড়ি ছিলো মসজিদ থেকে সব চাইতে বেশি দূরে অথচ তার কোনো জামা‘আতের
সালাতই কখনো হাত ছাড়া হতো না। তাকে বলা হলো অথবা আমিই তাকে একদা বললাম: তুমি যদি
একটি গাধা কিনে নিতে তা হলে রাতের অন্ধকারে এবং দিনের প্রখর তাপে তাতে চড়ে মসজিদে
আসতে পারতে। উত্তরে সে বললো: আমি চাই না যে আমার ঘরটি মসজিদের পাশেই হোক। বরং আমি
চাই যে, আমার মসজিদে আসা-যাওয়ার প্রতিটি কদম আমার
আমলনামায় লিখা হোক। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন:
«قَدْ جَمَعَ اللَّهُ لَكَ ذَلِكَ كُلَّهُ».
অন্য বর্ণনায় রয়েছে,
«إِنَّ لَكَ مَا احْتَسَبْتَ».
“তুমি সাওয়াবের আশায় যতগুলো কদম ফেলেছো তার
সাওয়াব অবশ্যই পাবে”।
আবু মূসা আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِنَّ أَعْظَمَ النَّاسِ أَجْرًا فِي الصَّلَاةِ
أَبْعَدُهُمْ إِلَيْهَا مَمْشًى فَأَبْعَدُهُمْ وَالَّذِي يَنْتَظِرُ الصَّلَاةَ
حَتَّى يُصَلِّيَهَا مَعَ الْإِمَامِ أَعْظَمُ أَجْرًا مِنْ الَّذِي يُصَلِّيهَا
ثُمَّ يَنَامُ».
“সে ব্যক্তিই জামা‘আতে সালাত আদায়ের সাওয়াব
সব চাইতে বেশি পাবে যাকে জামা‘আতের সালাতে উপস্থিত হওয়ার জন্য সব চাইতে বেশি দূরের
পথ পাড়ি দিতে হয়। অতঃপর যাকে আরো দূরের পথ পাড়ি দিতে হয় তার সাওয়াব আরো বেশি। আর
যে ব্যক্তি ইমামের সাথে জামা‘আতে সালাত আদায়ের অপেক্ষায় থাকে তার সাওয়াব অনেক বেশি
ওর চাইতে যে ঘরে একাকী সালাত পড়েই ঘুমিয়ে পড়ে”।[61]
জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
একদা মসজিদের আশপাশের এলাকাগুলো খালি হয়ে গিয়েছিলো। তখন সালিমাহ গোত্রের লোকেরা
মসজিদের পাশেই স্থানান্তরের চিন্তা-ভাবনা করছিলো। উক্ত ব্যাপারটি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কর্ণগোচর হলে তিনি তাদেরকে বললেন:
«إِنَّهُ بَلَغَنِي أَنَّكُمْ تُرِيدُونَ أَنْ
تَنْتَقِلُوا قُرْبَ الْـمَسْجِدِ قَالُوا نَعَمْ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَدْ
أَرَدْنَا ذَلِكَ فَقَالَ يَا بَنِي سَلِمَةَ دِيَارَكُمْ تُكْتَبْ آثَارُكُمْ
دِيَارَكُمْ تُكْتَبْ آثَارُكُمْ».
“আমার কাছে খবর এসেছে তোমরা না কি মসজিদের
আশপাশেই স্থানান্তর হতে চাচ্ছো? তারা বললো: জি হ্যাঁ। হে আল্লাহর রাসূল আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমরা তাই
চাচ্ছিলাম। তখন তিনি বললেন: হে সালিমাহ গোত্রের লোকেরা! তোমরা নিজ স্থানেই অবস্থান
করো। সেখান থেকে কোথাও স্থানান্ততির হয়ো না। তোমাদের প্রতিটি কদমই তোমাদের
আমলনামায় লেখা হবে। তোমরা নিজ স্থানেই অবস্থান করো। সেখান থেকে কোথাও স্থানান্তরিত
হয়ো না। তোমাদের প্রতিটি কদমই তোমাদের আমলনামায় লেখা হবে”।[62]
৪. ভালোভাবে অযু করে জামা‘আতে সালাত আদায়ের
উদ্দেশ্যে মসজিদে গেলে মসজিদগামী ব্যক্তির সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়:
উসমান ইবন আফ্ফান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ تَوَضَّأَ لِلصَّلَاةِ فَأَسْبَغَ الْوُضُوءَ،
ثُمَّ مَشَى إِلَى الصَّلَاةِ الْـمَكْتُوبَةِ فَصَلَّاهَا مَعَ النَّاسِ أَوْ
مَعَ الْـجَمَاعَةِ أَوْ فِي الْـمَسْجِدِ غَفَرَ اللهُ لَهُ ذُنُوبَهُ».
“যে ব্যক্তি ভালোভাবে অযু করে ফরয সালাত
আদায়ের উদ্দেশ্যে মসজিদে গিয়ে মানুষের সাথে অথবা জামা‘আতে অথবা মসজিদে সালাত আদায়
করলো আল্লাহ তা‘আলা তার সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন”।[63]
৫. যে ব্যক্তি জামা‘আতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে
সকাল-সন্ধ্যা মসজিদে আসা-যাওয়া করে আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য জান্নাতে সকাল ও
সন্ধ্যায় এক বিশেষ আপ্যায়নের ব্যবস্থা করবেন:
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ غَدَا إِلَى الْـمَسْجِدِ أَوْ رَاحَ أَعَدَّ الله
لَهُ فِي الْـجَنَّةِ نُزُلًا كُلَّمَا غَدَا أَوْ رَاحَ».
“যে ব্যক্তি জামা‘আতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে
সকাল-সন্ধ্যায় মসজিদে আসা-যাওয়া করলো আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য জান্নাতে সকাল ও
সন্ধ্যা বেলায় এক বিশেষ আপ্যায়নের ব্যবস্থা করবেন”।[64]
৬. ভালোভাবে অযু করে জামা‘আতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মসজিদে গেলে জামা‘আত
না পেলেও জামা‘আতের সাওয়াব অবশ্যই পাওয়া যাবে:
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ تَوَضَّأَ فَأَحْسَنَ وُضُوْءَهُ ثُمَّ رَاحَ
فَوَجَدَ النَّاسَ قَدْ صَلَّوْا أَعْطَاهُ الله جَلَّ وَعَزَّ مِثْلَ أَجْرِ مَنْ
صَلَّاهَا وَحَضَرَهَا لَا يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ أَجْرِهِمْ شَيْئًا».
“যে ব্যক্তি ভালোভাবে অযু করে মসজিদে গেলো
অতঃপর দেখলো মানুষ সালাত পড়ে ফেলেছে তখন আল্লাহ তা‘আলা তাকে সালাত পড়ুয়াদের ন্যায় জামা‘আতের
সাওয়াব দিয়ে দিবেন। এমনকি তাদের সাওয়াবে একটুও ঘাটতি করা হবে না”।[65]
৭. কেউ নিজ ঘরে অযু করে জামা‘আতে সালাত আদায়ের
উদ্দেশ্যে মসজিদে গেলে তাকে সালাতরত বলেই গণ্য করা হবে যতক্ষণ না সে আবার নিজ ঘরে
ফিরে আসে:
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا تَوَضَّأَ أَحَدُكُمْ فِيْ بَيْتِهِ ثُمَّ أَتَى
الْـمَسْجِدَ كَانَ فِيْ صَلاَةٍ حَتَّى يَرْجِعَ فَلاَ يَقُلْ هَكَذَا :
وَشَبَّكَ بَيْنَ أَصَابِعِهِ».
“যখন তোমাদের কেউ নিজ ঘরে অযু করে মসজিদের
দিকে রওয়ানা করে তখন তাকে সালাতরত বলেই গণ্য করা হয় যতক্ষণ না সে আবার ঘরে ফিরে
আসে। সুতরাং সে যেন হাতের আঙ্গুলগুলোকে একটির মধ্যে আরেকটি ঢুকিয়ে না দেয়”।[66]
৮. কেউ নিজ ঘর থেকে পবিত্রতার্জন করে জামা‘আতে
সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মসজিদে গেলে তাকে একজন ইহরামরত হাজীর সাওয়াব দেওয়া হবে:
আবু উমামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ خَرَجَ مِنْ بَيْتِهِ مُتَطَهِّرًا إِلَى صَلَاةٍ
مَكْتُوبَةٍ فَأَجْرُهُ كَأَجْرِ الْحَاجِّ الْـمُحْرِمِ».
“যে ব্যক্তি নিজ ঘর থেকে পবিত্রতার্জন করে
কোনো ফরয সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে বের হয় তার সাওয়াব হবে একজন ইহ্রামরত হাজীর ন্যায়”।[67]
৯. জামা‘আতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে নিজ ঘর থেকে বের
হওয়া ব্যক্তি সর্বদা আল্লাহ তা‘আলার জিম্মায় থাকেন:
আবু উমামাহ বাহিলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«ثَلَاثَةٌ كُلُّهُمْ ضَامِنٌ عَلَى اللَّهِ عَزَّ
وَجَلَّ رَجُلٌ خَرَجَ غَازِيًا فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَهُوَ ضَامِنٌ عَلَى اللَّهِ
حَتَّى يَتَوَفَّاهُ فَيُدْخِلَهُ الْـجَنَّةَ أَوْ يَرُدَّهُ بِمَا نَالَ مِنْ
أَجْرٍ وَغَنِيمَةٍ وَرَجُلٌ رَاحَ إِلَى الْـمَسْجِدِ فَهُوَ ضَامِنٌ عَلَى
اللَّهِ حَتَّى يَتَوَفَّاهُ فَيُدْخِلَهُ الْـجَنَّةَ أَوْ يَرُدَّهُ بِمَا نَالَ
مِنْ أَجْرٍ وَغَنِيمَةٍ وَرَجُلٌ دَخَلَ بَيْتَهُ بِسَلَامٍ فَهُوَ ضَامِنٌ عَلَى
اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ».
“তিন জাতীয় ব্যক্তির দায়-দায়িত্ব আল্লাহ
তা‘আলা সরাসরি নিজ হাতেই নিয়ে থাকেন। তার মধ্যে একজন হচ্ছে যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে
যুদ্ধের জন্য বের হয় সে আল্লাহ তা‘আলার জিম্মায় থাকে যতক্ষণ না তার মৃত্যু হয়
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করান অথবা তাকে সাওয়াব ও যুদ্ধলব্ধ মাল
সহ ঘরে ফিরিয়ে দেন। আর দ্বিতীয় জন হচ্ছে যে ব্যক্তি (জামা‘আতে সালাত আদায়ের
উদ্দেশ্যে) মসজিদের দিকে বের হয় সেও আল্লাহ তা‘আলার জিম্মায় থাকে যতক্ষণ না তার
মৃত্যু হয় অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করান অথবা তাকে সাওয়াব ও লাভ
সহ ঘরে ফিরিয়ে দেন। আর তৃতীয় জন হচ্ছে যে ব্যক্তি সালাম দিয়ে ঘরে প্রবেশ করে অথবা
ফিতনার ভয়ে ঘরের বাইরে না গিয়ে একান্ত নিজ ঘরেই সর্বদা অবস্থান করে ইবাদাতে নিমগ্ন
থাকে সেও আল্লাহ তা‘আলার জিম্মায় থাকে”।[68]
১০. জামা‘আতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মসজিদের
দিকে পায়ে হেঁটে যাওয়ার আমলটুকু দ্রুত লেখা ও আকাশের দিকে নিয়ে যাওয়া নিয়ে আল্লাহ
তা‘আলার নিকটবর্তী ফিরিশতাগণ পরস্পর প্রতিযোগিতা করে, উহার মর্যাদা ও ফযীলত নিয়ে পরস্পর
কথোপকথন করে এবং তা নিয়ে তারা মানুষের সাথে ঈর্ষা করে:
আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«أَتَانِي اللَّيْلَةَ رَبِّيْ تَبَارَكَ وَتَعَالَى
فِيْ أَحْسَنِ صُوْرَةٍ، قَالَ: أَحْسَبُهُ قَالَ: فِيْ الْـمَنَامِ، فَقَالَ يَا
مُحَمَّدُ! هَلْ تَدْرِي فِيْـمَ يَخْتَصِـمُ الْـمَلَأُ الْأَعْلَى؟ قَالَ:
قُلْتُ: لَا، قَالَ: فَوَضَعَ يَدَهُ بَيْـنَ كَتِفَـيَّ، حَتَّى وَجَدْتُ
بَـرْدَهَا بَيْنَ ثَدْيَيَّ أَوْ قَالَ: فِي نَحْــرِيْ، فَعَلِمْتُ مَا فِـيْ
السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ قَالَ: يَا مُحَمَّدُ! هَلْ تَدْرِي فِيْمَ
يَخْتَصِمُ الْـمَلَأُ الْأَعْلَى؟ قُلْتُ: نَعَمْ، قَالَ: فِيْ الْكَفَّارَاتِ،
وَالْكَفَّارَاتُ: الْـمُكْثُ فِي الْمَسَاجِدِ بَعْدَ
الصَّلَوَاتِ، وَالْـمَشْيُ عَلَى الْأَقْدَامِ إِلَى الْجَمَاعَاتِ، وَإِسْبَاغُ
الْوُضُوءِ فِيْ الْـمَكَارِهِ، وَمَنْ فَعَلَ ذَلِكَ عَاشَ بِخَيْرٍ وَمَاتَ
بِخَيْرٍ وَكَانَ مِنْ خَطِيئَتِهِ كَيَوْمَ وَلَدَتْهُ اُمُّهُ».
“আমার রব এক সুন্দর অবয়বে গত রাত্রিতে আমার
নিকট আসলেন। বর্ণনাকারী বলেন: আমার ধারণা,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তা ছিলো
একান্ত স্বপ্ন যোগে। অতঃপর আমার প্রভু বললেন: হে মুহাম্মাদ! তুমি কি জানো? কি নিয়ে আমার নিকটবর্তী সম্মানিত ফিরিশতাগণ প্রতিযোগিতা, আলোচনা ও ঈর্ষা করে। আমি বললাম: না। আমি জানি না। তখন তিনি নিজ হাতখানা
আমার দু’ কাঁধের মাঝখানে তথা পিঠে রাখলেন। এমনকি আমি উহার ঠান্ডাটুকু আমার বুকেও
অনুভব করলাম। অতঃপর আমি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের সব কিছুই জানতে পারলাম। তখন আমার
প্রভু বললেন: হে মুহাম্মাদ! তুমি কি জানো? কি নিয়ে আমার
নিকটবর্তী সম্মানিত ফিরিশতাগণ প্রতিযোগিতা, আলোচনা ও
ঈর্ষা করে। আমি বললাম: হ্যাঁ। আমি এখন তা জানি। বর্ণনাকারী বলেন: তিনি বললেন:
কাফ্ফারা তথা ব্যক্তির গুনাহ্গুলো মুছে দেওয়ার বিষয় সমূহ নিয়ে। কাফ্ফারার বিষয়গুলো
হলো: ফরয সালাতগুলো শেষ হওয়ার পর মসজিদে কিছুক্ষণ অবস্থান করা, জামা‘আতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মসজিদের দিকে পায়ে হেঁটে যাওয়া এবং
অযুর সময় পানি পৌঁছানো কষ্টকর এমন অঙ্গগুলো ভালোভাবে ধৌত করা। যে ব্যক্তি এ
কাজগুলো ভালোভাবে সম্পাদন করলো সে তার জীবদ্দশায় কল্যাণকর জীবন যাপন করবে এবং তার
মৃত্যুও হবে কল্যাণকর। তদুপরি সে তার পাপ সমূহ থেকে এমনিভাবে মুক্ত হবে যেন সে আজ
নিজ মায়ের গর্ভ থেকে নিষ্পাপ ভূমিষ্ঠ হলো”।[69]
১১. জামা‘আতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মসজিদগামী
হওয়া দুনিয়া ও আখিরাতের সমূহ কল্যাণ প্রাপ্তির এক বিশেষ মাধ্যম।
উপরোক্ত হাদীসটি এর বিশেষ প্রমাণ। যাতে বলা হয়েছে,
«وَمَنْ فَعَلَ ذَلِكَ عَاشَ بِخَيْرٍ وَمَاتَ بِخَيْرٍ».
“যে ব্যক্তি এ কাজগুলো ভালোভাবে সম্পাদন করলো
সে তার জীবদ্দশায় কল্যাণকর জীবন যাপন করবে এবং তার মৃত্যুও হবে কল্যাণকর”।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿مَنۡ عَمِلَ صَٰلِحٗا مِّن ذَكَرٍ أَوۡ أُنثَىٰ وَهُوَ مُؤۡمِنٞ فَلَنُحۡيِيَنَّهُۥ
حَيَوٰةٗ طَيِّبَةٗۖ وَلَنَجۡزِيَنَّهُمۡ أَجۡرَهُم بِأَحۡسَنِ مَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ
٩٧ ﴾ [النحل: ٩٧]
“যে কোনো পুরুষ ও নারী ঈমানদার অবস্থায় সৎ
কাজ করে তাকে আমি নিশ্চয় পবিত্র ও আনন্দময় জীবন দান করবো এমনকি তাদেরকে দেবো তাদের
কর্মের শ্রেষ্ঠ প্রতিদান”। [সূরা আন-নাহল, আয়াত: ৯৭]
১২. নিজ ঘরে অযু করে জামা‘আতে সালাত আদায়ের
উদ্দেশ্যে মসজিদে আগমনকারীকে আল্লাহ তা‘আলা বিশেষভাবে সম্মানিত করেন:
সালমান ফার্সী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ تَوَضَّأَ فِيْ بَيْتِهِ فَأَحْسَنَ الْوُضُوْءَ
ثُمَّ أَتَى الْـمَسْجِدَ فَهُوَ زَائِرُ اللهِ، وَحَقٌّ عَلَى الْـمَزُوْرِ أَنْ
يُكْرِمَ الزَّائِرَ ».
“যে ব্যক্তি নিজ ঘরে ভালোভাবে অযু করে (জামা‘আতে
সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে) মসজিদে আসে সে আল্লাহ তা‘আলার একান্ত সাক্ষাৎ পিয়াসি। আর
যার সাক্ষাৎ কামনা করা হচ্ছে তার দায়িত্ব হবে তার একান্ত সাক্ষাৎ পিয়াসির সম্মান
করা”।[70]
উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«الْـمَسَاجِدُ بُيُوتُ اللهِ فِي الأَرْضِ، وَحَقٌّ
عَلَى الْمَزُورِ أَنْ يُكْرِمَ زَائِرَهُ».
“মসজিদগুলো পৃথিবীতে আল্লাহর ঘর। আর যার
সাক্ষাৎ কামনা করা হচ্ছে তার দায়িত্ব হবে তার একান্ত সাক্ষাৎ পিয়াসির সম্মান করা”।[71]
১৩. জামা‘আতে সালাত আদায়ের
উদ্দেশ্যে কেউ ভালোভাবে অযু করে মসজিদে গেলে আল্লাহ তা‘আলা তাকে দেখে অত্যন্ত খুশি
হোন যেমনিভাবে দীর্ঘ দিন অনুপস্থিত ব্যক্তিকে দেখে তার পরিবার খুশি হয়:
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لاَ يَتَوَضَّأُ أَحَدُكُمْ فَيُحْسِنُ وُضُوْءَهُ
وَيُسْبِغُهُ ثُمَّ يَأْتِيْ الـْمَسْجِدَ لاَ يُرِيْدُ إِلاَّ الصَّلاَةَ فِيْهِ
إِلاَّ تَبَشْبَشَ اللهُ إِلَيْهِ كَمَا يَتَبَشْبَشُ أَهْلُ الْغَائِبِ
بِطَلْعَتِهِ».
“কেউ সুন্দরভাবে পরিপূর্ণ অযু করে জামা‘আতে
সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মসজিদে আসলে আল্লাহ তা‘আলা তাকে দেখে অত্যন্ত খুশি হোন
যেমনিভাবে দীর্ঘ দিন অনুপস্থিত ব্যক্তিকে দেখে তার পরিবার খুশি হয়”।[72]
১৪. জামা‘আতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে অন্ধকারে
মসজিদের দিকে রওয়ানা করলে কিয়ামতের দিন প্রয়োজনের সময় পরিপূর্ণ আলোর সন্ধান মিলবে:
বুরাইদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«بَشِّرْ الْـمَشَّائِينَ فِي الظُّلَمِ إِلَى الْـمَسَاجِدِ
بِالنُّورِ التَّامِّ يَوْمَ الْقِيَامَةِ».
অন্ধকারে মসজিদগামী ব্যক্তিদেরকে কিয়ামতের দিন পরিপূর্ণ
আলোর সুসংবাদ দাও”।
লেখক: মোস্তাফিজুর রহমান ইবন আব্দুল আযীয আল-মাদানী
সম্পাদনা: ড. মোহাম্মাদ মানজুরে ইলাহী
সূত্র: ইসলামহাউজ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন