Views:
A+
A-
মুহাররম মাসের সাওম পালনের ফযীলত
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাওম পালন করা ও না করার বর্ণনা
নফল সাওম পালনের ব্যাপারে মেহমানের হক
নফল সাওমে শরীরের হক
সারা বছর সাওম পালন করা
সাওম পালনের ব্যাপারে পরিবার পরিজনের হক
একদিন সাওম পালন করা একদিন ছেড়ে দেওয়া
দাউদ আলাইহিস সালামের সাওম
সাওমে বীয বা প্রতিমাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে সাওম পালন করা
সাওম পালনকারী কারো দাওয়াতে সাড়া দেওয়া
সাওম পালনকারীকে খাবারের জন্য ডাকলে সে যেন বলে, আমি সাওম পালনকারী
কারো সাথে দেখা করতে গেলে নফল সাওম ভঙ্গ না করা
সাওম পালনকারীকে ইফতার করানোর সাওয়াব
মাসের শেষ ভাগে সাওম পালন
জুমু‘আর দিনে সাওম পালন
সাওম পালনের ব্যাপারে কোনো দিন কি নির্দিষ্ট করা যায়?
শাওয়াল মাসে ছয়টি সাওম পালন
যিলহজ মাসের সাওম পালন
‘আরাফাহ দিবসে সাওম পালন
ঈদের দিনে সাওম পালন
কুরবানীর দিনে সাওম পালন
আইয়ামুত তাশরিকে সাওম পালন
আশুরার দিনে সাওম পালন
সোমবার ও বৃহস্পতিবার সাওম পালন
রমযানে ‘উমরা পালনের ফযীলত
সহীহ হাদীসের আলোকে সাওম বিশ্বকোষ (২য় পর্ব)
১ম পর্ব | ২য় পর্ব | ৩য় পর্ব
শা‘বান মাসের সাওম
‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ " يَصُومُ حَتَّى نَقُولَ: لاَ يُفْطِرُ، وَيُفْطِرُ حَتَّى نَقُولَ: لاَ يَصُومُ، فَمَا رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اسْتَكْمَلَ صِيَامَ شَهْرٍ إِلَّا رَمَضَانَ، وَمَا رَأَيْتُهُ أَكْثَرَ صِيَامًا مِنْهُ فِي شَعْبَانَ»
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একাধারে (এত বেশি) সাওম পালন করতেন যে, আমরা বলাবলি করতাম, তিনি আর সাওম পরিত্যাগ করবেন না। (আবার কখনো এত বেশি) সাওম পালন না করা অবস্থায় একাধারে কাটাতেন যে, আমরা বলাবলি করতাম, তিনি আর (নফল) সাওম পালন করবেন না। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রমযান ব্যতীত কোনো পুরা মাসের সাওম পালন করতে দেখি নি এবং শা’বান মাসের চেয়ে কোনো মাসে বেশি (নফল) সাওম পালন করতে দেখি নি”।[164]
‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«لَمْ يَكُنِ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَصُومُ شَهْرًا أَكْثَرَ مِنْ شَعْبَانَ، فَإِنَّهُ كَانَ يَصُومُ شَعْبَانَ كُلَّهُ وَكَانَ يَقُولُ: خُذُوا مِنَ العَمَلِ مَا تُطِيقُونَ، فَإِنَّ اللَّهَ لاَ يَمَلُّ حَتَّى تَمَلُّوا، وَأَحَبُّ الصَّلاَةِ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا دُووِمَ عَلَيْهِ وَإِنْ قَلَّتْ، وَكَانَ إِذَا صَلَّى صَلاَةً دَاوَمَ عَلَيْهَا»
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শা‘বান মাসের চেয়ে বেশি (নফল) সাওম কোনো মাসে পালন করতেন না। তিনি (প্রায়) পুরা শা’বান মাসই সাওম পালন করতেন এবং বলতেন, তোমাদের সাধ্যে যতটুকু সাধ্য আছে ততটুকু (নফল) আমল কর। কারণ, তোমরা (আমল করতে করতে) ক্লান্ত হয়ে না পড়া পর্যন্ত আল্লাহ তা‘আলা (সওয়াব দান) বন্ধ করেন না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে সর্বাপেক্ষা প্রিয় সালাতই ছিল তাই যা যথাযথ নিয়মে সর্বদা আদায় করা হত। যদিও তা পরিমাণে কম হো এবং তিনি যখন কোনো (নফল) সালাত আদায় করতেন পরবর্তীতে তা অব্যাহত রাখতেন”।[165]
মুহাররম মাসের সাওম পালনের ফযীলত
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«أَفْضَلُ الصِّيَامِ، بَعْدَ رَمَضَانَ، شَهْرُ اللهِ الْمُحَرَّمُ، وَأَفْضَلُ الصَّلَاةِ، بَعْدَ الْفَرِيضَةِ، صَلَاةُ اللَّيْلِ»
“রমযানের সিয়ামের পর সর্বোত্তম সাওম হচ্ছে আল্লাহর মাস মুহাররমের সাওম এবং ফরয সালাতের পর সর্বোত্তম সালাত হচ্ছে রাতের সালাত”।[166]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«سُئِلَ: أَيُّ الصَّلَاةِ أَفْضَلُ بَعْدَ الْمَكْتُوبَةِ؟ وَأَيُّ الصِّيَامِ أَفْضَلُ بَعْدَ شَهْرِ رَمَضَانَ؟ فَقَالَ: أَفْضَلُ الصَّلَاةِ، بَعْدَ الصَّلَاةِ الْمَكْتُوبَةِ، الصَّلَاةُ فِي جَوْفِ اللَّيْلِ، وَأَفْضَلُ الصِّيَامِ بَعْدَ شَهْرِ رَمَضَانَ، صِيَامُ شَهْرِ اللهِ الْمُحَرَّمِ»
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে জিজ্ঞাসা করা হলো, ফরয সালাতসমূহের পর কোনো সালাত এবং রমযান মাসের সিয়ামের পর কোনো সাওম সর্বোত্তম? বললেন, ফরয সালাতসমূহের পর গভীর রাতের সালাত সর্বোত্তম এবং রমযান মাসের সিয়ামের পর আল্লাহর মাস মুহাররমের সাওম সর্বোত্তম”।[167]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাওম পালন করা ও না করার বর্ণনা
ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«مَا صَامَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ شَهْرًا كَامِلًا قَطُّ غَيْرَ رَمَضَانَ، وَيَصُومُ حَتَّى يَقُولَ القَائِلُ: لاَ وَاللَّهِ لاَ يُفْطِرُ، وَيُفْطِرُ حَتَّى يَقُولَ القَائِلُ: لاَ وَاللَّهِ لاَ يَصُومُ»
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান ব্যতীত কোনো মাসে পুরা মাসের সাওম পালন করেন নাই। তিনি এমনভাবে (নফল) সাওম পালন করতেন যে, কেউ বলতে চাইলে বলতে পারতো, আল্লাহর কসম! তিনি আর সাওম পালন পরিত্যাগ করবেন না। আবার এমনভাবে (নফল) সাওম ছেড়ে দিতেন যে, কেউ বলতে চাইলে বলতে পারতো আল্লাহর কসম! তিনি আর সাওম পালন করবেন না”।[168]
হুমাইদ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বলতে শুনেছেন,
«كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُفْطِرُ مِنَ الشَّهْرِ حَتَّى نَظُنَّ أَنْ لاَ يَصُومَ مِنْهُ، وَيَصُومُ حَتَّى نَظُنَّ أَنْ لاَ يُفْطِرَ مِنْهُ شَيْئًا، وَكَانَ لاَ تَشَاءُ تَرَاهُ مِنَ اللَّيْلِ مُصَلِّيًا إِلَّا رَأَيْتَهُ، وَلاَ نَائِمًا إِلَّا رَأَيْتَهُ وَقَالَ سُلَيْمَانُ، عَنْ حُمَيْدٍ، أَنَّهُ سَأَلَ أَنَسًا فِي الصَّوْمِ»
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো মাসে এভাবে সাওম ছেড়ে দিতেন যে, আমরা মনে করতাম, তিনি এ মাসে আর সাওম পালন করবেন না। আবার কোনো মাসে এভাবে সাওম পালন করতেন যে, আমরা মনে করতাম তিনি এ মাসে আর সাওম ছাড়বেন না। আর তুমি যদি তাঁকে রাতে সালাত আদায়রত অবস্থায় দেখতে চাইতে তবে তা দেখতে পেতে, আবার যদি তুমি তাঁকে ঘুমন্ত দেখতে চাইতে তবে তাও দেখতে পেতে। সুলায়মান রহ. হুমায়দ রহ. সূত্রে বলেন যে, তিনি আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে সাওম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছেন।”[169]
হুমাইদ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নফল সাওমের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন,
«مَا كُنْتُ أُحِبُّ أَنْ أَرَاهُ مِنَ الشَّهْرِ صَائِمًا إِلَّا رَأَيْتُهُ، وَلاَ مُفْطِرًا إِلَّا رَأَيْتُهُ، وَلاَ مِنَ اللَّيْلِ قَائِمًا إِلَّا رَأَيْتُهُ، وَلاَ نَائِمًا إِلَّا رَأَيْتُهُ، وَلاَ مَسِسْتُ خَزَّةً وَلاَ حَرِيرَةً، أَلْيَنَ مِنْ كَفِّ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَلاَ شَمِمْتُ مِسْكَةً، وَلاَ عَبِيرَةً أَطْيَبَ رَائِحَةً مِنْ رَائِحَةِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ»
“যে কোনো মাসে আমি তাঁকে সাওম পালনরত অবস্থায় দেখতে চেয়েছি, তাঁকে সে অবস্থায় দেখেছি, আবার তাঁকে সাওম পালন না করা অবস্থায় দেখতে চাইলে তাও দেখতে পেয়েছি। রাতে যদি তাঁকে সালাত আদায়রত অবস্থায় দেখতে চেয়েছি, তা প্রত্যক্ষ করেছি। আবার ঘুমন্ত দেখতে চাইলে তাও দেখতে পেয়েছি। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাত মোবারক থেকে নরম কোনো পশমী বা রেশমী কাপড় স্পর্শ করি নি। আর আমি তাঁর (শরীরের) ঘ্রাণ থেকে অধিক সুগন্ধযুক্ত কোনো মিশক বা আম্বর পাই নি”।[170]
আব্দুল্লাহ ইবন শাকীক রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«سَأَلْتُ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا، عَنْ صَوْمِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَتْ: كَانَ يَصُومُ حَتَّى نَقُولَ: قَدْ صَامَ، قَدْ صَامَ، وَيُفْطِرُ حَتَّى نَقُولَ: قَدْ أَفْطَرَ، قَدْ أَفْطَرَ، قَالَتْ: وَمَا رَأَيْتُهُ صَامَ شَهْرًا كَامِلًا، مُنْذُ قَدِمَ الْمَدِينَةَ، إِلَّا أَنْ يَكُونَ رَمَضَانَ»
“আমি ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার কাছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাওম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, তিনি সাওম পালন করতেন, এমনকি আমরা বলতাম তিনি সাওম পালন করেই যাবেন। আবার তিনি ইফতার অবস্থায় থাকতেন এমনকি আমরা বলাবলি করতাম, তিনি সাওম ভঙ্গ করেই চলেছেন (আর সাওম পালন করবেন না)। তিনি (আরও) বলেন, মদীনায় তাশরীফ নেওয়া পর্যন্ত আমি তাঁকে রমযান ব্যতীত পূর্ণ মাস সাওম পালন করতে দেখি নি।”[171]
‘আব্দুল্লাহ ইবন শাকীক রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«قُلْتُ لِعَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا: هَلْ كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَصُومُ شَهْرًا مَعْلُومًا سِوَى رَمَضَانَ؟ قَالَتْ: وَاللهِ، إِنْ صَامَ شَهْرًا مَعْلُومًا سِوَى رَمَضَانَ، حَتَّى مَضَى لِوَجْهِهِ، وَلَا أَفْطَرَهُ حَتَّى يُصِيبَ مِنْهُ»
“আমি ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার কাছে জিজ্ঞাসা করলাম, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান ব্যতীত অন্য কোনো সময়ে পূর্ণ মাস সাওম পালন করেছেন কি? তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! রমযান ব্যতীত অন্য সময়ে তিনি পূর্ণ মাস সাওম পালন করেন নি, এমনকি তিনি ইন্তেকাল করেছেন। আবার পুরো মাসও সাওম ভঙ্গকারী হতেন না, বরং তা থেকে কিছু না কিছু সাওম পালন করতেন।”[172]
নফল সাওম পালনের ব্যাপারে মেহমানের হক
‘আব্দুল্লাহ ইবন ‘আমর ইবনুল ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«دَخَلَ عَلَيَّ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَذَكَرَ الحَدِيثَ يَعْنِي إِنَّ لِزَوْرِكَ عَلَيْكَ حَقًّا، وَإِنَّ لِزَوْجِكَ عَلَيْكَ حَقًّا، فَقُلْتُ: وَمَا صَوْمُ دَاوُدَ؟ قَالَ: نِصْفُ الدَّهْرِ»
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে এলেন। এরপর তিনি (‘আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) হাদীসটি বর্ণনা করেন অর্থাৎ তোমার ওপর মেহমানের হক আছে, তোমার ওপর তোমার স্ত্রীর হক আছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, সাওমে দাউদ আলাইহিস সালাম কী? তিনি বললেন, ‘অর্ধেক বছর’-এর সাওম পালন করা”।[173]
নফল সাওমে শরীরের হক
‘আব্দুল্লাহ ইবন ‘আমর ইবনুল ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«قَالَ لِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَا عَبْدَ اللَّهِ، أَلَمْ أُخْبَرْ أَنَّكَ تَصُومُ النَّهَارَ، وَتَقُومُ اللَّيْلَ؟»، فَقُلْتُ: بَلَى يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ: «فَلاَ تَفْعَلْ صُمْ وَأَفْطِرْ، وَقُمْ وَنَمْ، فَإِنَّ لِجَسَدِكَ عَلَيْكَ حَقًّا، وَإِنَّ لِعَيْنِكَ عَلَيْكَ حَقًّا، وَإِنَّ لِزَوْجِكَ عَلَيْكَ حَقًّا، وَإِنَّ لِزَوْرِكَ عَلَيْكَ حَقًّا، وَإِنَّ بِحَسْبِكَ أَنْ تَصُومَ كُلَّ شَهْرٍ ثَلاَثَةَ أَيَّامٍ، فَإِنَّ لَكَ بِكُلِّ حَسَنَةٍ عَشْرَ أَمْثَالِهَا، فَإِنَّ ذَلِكَ صِيَامُ الدَّهْرِ كُلِّهِ، فَشَدَّدْتُ، فَشُدِّدَ عَلَيَّ قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي أَجِدُ قُوَّةً قَالَ: فَصُمْ صِيَامَ نَبِيِّ اللَّهِ دَاوُدَ عَلَيْهِ السَّلاَمُ، وَلاَ تَزِدْ عَلَيْهِ»، قُلْتُ: وَمَا كَانَ صِيَامُ نَبِيِّ اللَّهِ دَاوُدَ عَلَيْهِ السَّلاَمُ؟ قَالَ: نِصْفَ الدَّهْرِ، فَكَانَ عَبْدُ اللَّهِ يَقُولُ بَعْدَ مَا كَبِرَ: يَا لَيْتَنِي قَبِلْتُ رُخْصَةَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ»
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, হে আব্দুল্লাহ! আমি এ সংবাদ পেয়েছি যে, তুমি প্রতিদিন সাওম পালন কর এবং সারা রাত সালাত আদায় করে থাক। আমি বললাম, ঠিক (শুনেছেন) ইয়া রাসূলুল্লাহ! তিনি বললেন, এরূপ করবে না (বরং মাঝে মাঝে) সাওম পালন কর আবার সাওম ছেড়েও দাও। (রাতে) সালাত আদায় কর আবার ঘুমাও। কেননা তোমার ওপর তোমার শরীরের হক আছে, তোমার চোখের হক রয়েছে, তোমার ওপর তোমার স্ত্রীর হক আছে, তোমার মেহমানের হক আছে। তোমার জন্য যথেষ্ট যে, তুমি প্রত্যেক মাসে তিন দিন সাওম পালন করবে। কেননা নেক আমলের পরিবর্তে তোমার জন্য রয়েছে দশগুণ নেকী। এভাবে সারা বছরের সাওম হয়ে যায়। আমি বললাম আমি এর চেয়েও কঠোর ‘আমল করতে সক্ষম। তখন আমাকে আরও কঠিন আমলের অনুমতি দেওয়া হলো। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি আরো বেশি শক্তি রাখি। তিনি বললেন, তবে আল্লাহর নবী দাঊদ আলাইহিস সালামের সাওম পালন কর, এর থেকে বেশি করতে যেয়ো না। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, আল্লাহর নবী দাঊদ আলাইহিস সালামের সাওম কেমন? তিনি বললেন, অর্ধেক বছর। বর্ণনাকারী বলেন, ‘আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বৃদ্ধ বয়সে বলতেন, আহা! আমি যদি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রদত্ত রুখসত (সহজতর বিধান) কবুল করে নিতাম!”[174]
সারা বছর সাওম পালন করা
‘আব্দুল্লাহ ইবন ‘আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে (সনদসহ) বর্ণিত, তিনি বলেন,
«عَنِ الزُّهْرِيِّ، قَالَ: أَخْبَرَنِي سَعِيدُ بْنُ المُسَيِّبِ، وَأَبُو سَلَمَةَ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عَمْرٍو، قَالَ: أُخْبِرَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَنِّي أَقُولُ: وَاللَّهِ لَأَصُومَنَّ النَّهَارَ، وَلَأَقُومَنَّ اللَّيْلَ مَا عِشْتُ، فَقُلْتُ لَهُ: قَدْ قُلْتُهُ بِأَبِي أَنْتَ وَأُمِّي قَالَ: «فَإِنَّكَ لاَ تَسْتَطِيعُ ذَلِكَ، فَصُمْ وَأَفْطِرْ، وَقُمْ وَنَمْ، وَصُمْ مِنَ الشَّهْرِ ثَلاَثَةَ أَيَّامٍ، فَإِنَّ الحَسَنَةَ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا، وَذَلِكَ مِثْلُ صِيَامِ الدَّهْرِ، قُلْتُ: إِنِّي أُطِيقُ أَفْضَلَ مِنْ ذَلِكَ، قَالَ: «فَصُمْ يَوْمًا وَأَفْطِرْ يَوْمَيْنِ، قُلْتُ: إِنِّي أُطِيقُ أَفْضَلَ مِنْ ذَلِكَ، قَالَ: فَصُمْ يَوْمًا وَأَفْطِرْ يَوْمًا، فَذَلِكَ صِيَامُ دَاوُدَ عَلَيْهِ السَّلاَمُ، وَهُوَ أَفْضَلُ الصِّيَامِ، فَقُلْتُ: إِنِّي أُطِيقُ أَفْضَلَ مِنْ ذَلِكَ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ لاَ أَفْضَلَ مِنْ ذَلِكَ»
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আমার সম্পর্কে এ কথা পৌছে যায় যে, আমি বলেছি, আল্লাহর কসম, আমি যতদিন বেঁচে থাকব ততদিন সাওম পালন করব এবং রাতভর সালাত আদায় করব। তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করায় আমি বললাম, আপনার ওপর আমার পিতা-মাতা কুরবান হোক! আমি একথা বলেছি। তিনি বললেন, তুমি তো এরূপ করতে সক্ষম হবে না। বরং তুমি সাওম পালন কর ও ছেড়েও দাও, (রাতে) সালাত আদায় কর ও নিদ্রা যাও। তুমি মাসে তিন দিন করে সাওম পালন কর। কারণ নেক কাজের ফল তার দশ গুন, এভাবেই সারা বছরের সাওম পালন হয়ে যাবে। আমি বললাম, আমি এর থেকে বেশি করার সামর্থ্য রাখি। তিনি বললেন, তাহলে একদিন সাওম পালন কর এবং দু’দিন ছেড়ে দাও। আমি বললাম আমি এর থেকে বেশি করার সামর্থ্য রাখি। তিনি বললেন, তাহলে একদিন সাওম পালন কর এবং একদিন ছেড়ে দাও। এটা হলো দাঊদ আলাইহিস সালামের সাওম এবং এই হলো সর্বোত্তম (সাওম)। আমি বললাম, আমি এর চেয়ে বেশি করার সামর্থ্য রাখি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এর চেয়ে উত্তম সাওম (রাখার পদ্ধতি) আর নেই”।[175]
আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«جَاءَ ثَلاَثَةُ رَهْطٍ إِلَى بُيُوتِ أَزْوَاجِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَسْأَلُونَ عَنْ عِبَادَةِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَلَمَّا أُخْبِرُوا كَأَنَّهُمْ تَقَالُّوهَا، فَقَالُوا: وَأَيْنَ نَحْنُ مِنَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ قَدْ غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ وَمَا تَأَخَّرَ، قَالَ أَحَدُهُمْ: أَمَّا أَنَا فَإِنِّي أُصَلِّي اللَّيْلَ أَبَدًا، وَقَالَ آخَرُ: أَنَا أَصُومُ الدَّهْرَ وَلاَ أُفْطِرُ، وَقَالَ آخَرُ: أَنَا أَعْتَزِلُ النِّسَاءَ فَلاَ أَتَزَوَّجُ أَبَدًا، فَجَاءَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَيْهِمْ، فَقَالَ: «أَنْتُمُ الَّذِينَ قُلْتُمْ كَذَا وَكَذَا، أَمَا وَاللَّهِ إِنِّي لَأَخْشَاكُمْ لِلَّهِ وَأَتْقَاكُمْ لَهُ، لَكِنِّي أَصُومُ وَأُفْطِرُ، وَأُصَلِّي وَأَرْقُدُ، وَأَتَزَوَّجُ النِّسَاءَ، فَمَنْ رَغِبَ عَنْ سُنَّتِي فَلَيْسَ مِنِّي»
“তিন জনের একটি দল রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইবাদত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার জন্য রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিবিগণের গৃহে আগমন করলো। যখন তাঁদেরকে এ সম্পর্কে অবহিত করা হলো, তখন তারা এ ইবাদতের পরিমাণ যেন কম মনে করল এবং বলল, আমরা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সমকক্ষ থেকে পারি না। কারণ, তার আগে ও পরের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়েছে। এমন সময় তাদের মধ্য থেকে একজন বলল, আমি সারা জীবন রাতে সালাত আদায় করতে থাকব। অপর একজন বলল, আমি সারা বছর সাওম পালন করব এবং কখনও বিরতি দিব না। অপরজন বলল, আমি নারী বিবর্জিত থাকব, কখনও শাদী করব না। এরপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের নিকট এলেন এবং বললেন, “তোমরা ঐ সকল ব্যক্তি যারা এরূপ কথাবার্তা বলেছ? আল্লাহর কসম! আমি আল্লাহকে তোমাদের চেয়ে বেশি ভয় করি এবং তোমাদের চেয়ে তাঁর প্রতি আমি বেশ আনুগত্যশীল অথচ আমি সাওম পালন করি, আবার সাওম থেকে বিরতও থাকি। সালাত আদায় করি এবং ঘুমাই ও বিয়ে-শাদী করি। সুতরাং যারা আমার সুন্নাতের প্রতি বিরাগ ভাব পোষণ করবে, তারা আমার দলভুক্ত নয়”।[176]
আবু আইয়্যুব আনসারী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ صَامَ رَمَضَانَ ثُمَّ أَتْبَعَهُ سِتًّا مِنْ شَوَّالٍ، كَانَ كَصِيَامِ الدَّهْرِ»
আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«كَانَ أَبُو طَلْحَةَ لاَ يَصُومُ عَلَى عَهْدِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ أَجْلِ الغَزْوِ، فَلَمَّا قُبِضَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمْ أَرَهُ مُفْطِرًا إِلَّا يَوْمَ فِطْرٍ أَوْ أَضْحَى»
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনকালে আবু তালহা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু জিহাদের কারেণে সাওম পালন করতেন না। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইন্তেকালের পর ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা ব্যতীত তাকে কখনো সাওম ছেড়ে দিতে দেখি নি।”[178]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে,
«شَهْرُ الصَّبْرِ، وَثَلَاثَةُ أَيَّامٍ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ صَوْمُ الدَّهْرِ»
“ধৈর্যের মাস হলো রমযান মাস। আর প্রত্যেক মাসে তিন দিন সাওম পালন করা সারা বছর সাওম পালন করার সমতুল্য”।[179]
সাওম পালনের ব্যাপারে পরিবার পরিজনের হক
‘আব্দুল্লাহ ইবন ‘আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত,
«بَلَغَ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَنِّي أَسْرُدُ الصَّوْمَ، وَأُصَلِّي اللَّيْلَ، فَإِمَّا أَرْسَلَ إِلَيَّ وَإِمَّا لَقِيتُهُ، فَقَالَ: أَلَمْ أُخْبَرْ أَنَّكَ تَصُومُ وَلاَ تُفْطِرُ، وَتُصَلِّي؟ فَصُمْ وَأَفْطِرْ، وَقُمْ وَنَمْ، فَإِنَّ لِعَيْنِكَ عَلَيْكَ حَظًّا، وَإِنَّ لِنَفْسِكَ وَأَهْلِكَ عَلَيْكَ حَظًّا، قَالَ: إِنِّي لَأَقْوَى لِذَلِكَ، قَالَ: فَصُمْ صِيَامَ دَاوُدَ عَلَيْهِ السَّلاَمُ» قَالَ: وَكَيْفَ؟ قَالَ: كَانَ يَصُومُ يَوْمًا وَيُفْطِرُ يَوْمًا، وَلاَ يَفِرُّ إِذَا لاَقَى، قَالَ: مَنْ لِي بِهَذِهِ يَا نَبِيَّ اللَّهِ؟- قَالَ عَطَاءٌ: لاَ أَدْرِي كَيْفَ ذَكَرَ صِيَامَ الأَبَدِ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لاَ صَامَ مَنْ صَامَ الأَبَدَ مَرَّتَيْنِ»
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এ সংবাদ পৌছে যে, আমি একটানা সাওম পালন করি এবং রাতভর সালাত আদায় করি। এরপর হয়ত তিনি আমার কাছে লোক পাঠালেন অথবা আমি তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলাম। তিনি বললেন, আমি কি এ কথা ঠিক শুনি নাই যে, তুমি সাওম পালন করতে থাক আর ছাড় না এবং তুমি (রাতভর) সালাত আদায় করতে থাক আর ঘুমাও না? (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন), তুমি সাওম পালন কর এবং মাঝে মাঝে তা ছেড়েও দাও। রাতে সালাত আদায় কর এবং নিদ্রাও যাও। কেননা তোমার ওপর তোমার চোখের হক রয়েছে এবং তোমার নিজের শরীরের ও তোমার পরিবারের হক তোমার ওপর আছে। ‘আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, আমি এর চেয়ে বেশি শক্তি রাখি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাহলে তুমি দাঊদ আলাইহিস সালামের সাওম পালন কর। বর্ণনাকারী বলেন, ‘আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, তা কীভাবে? তিনি বললেন, দাঊদ আলাইহিস সালাম একদিন সাওম পালন করতেন, একদিন ছেড়ে দিতেন এবং তিনি (শত্রুর) সম্মুখীন হলে পলায়ন করতেন না। ‘আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, হে আল্লাহর নবী, আমাকে এ শক্তি কে যোগাবে? বর্ণনাকারী ‘আতা রহ. বলেন, (এ হাদীসে) কীভাবে সব সময়ের সিয়ামের প্রসঙ্গ আসে সে কথাটুকু আমার মনে নেই (অবশ্য) এতটুকু মনে আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’বার এ কথাটি বলেছেন, “সব সময়ের সাওম কোনো সাওম নয়”।[180]
একদিন সাওম পালন করা একদিন ছেড়ে দেওয়া
‘আব্দুল্লাহ ইবন ‘আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«صُمْ مِنَ الشَّهْرِ ثَلاَثَةَ أَيَّامٍ، قَالَ: أُطِيقُ أَكْثَرَ مِنْ ذَلِكَ، فَمَا زَالَ حَتَّى قَالَ: صُمْ يَوْمًا وَأَفْطِرْ يَوْمًا فَقَالَ: اقْرَإِ القُرْآنَ فِي كُلِّ شَهْرٍ، قَالَ: إِنِّي أُطِيقُ أَكْثَرَ فَمَا زَالَ، حَتَّى قَالَ: فِي ثَلاَثٍ»
“তুমি প্রতি মাসে তিন দিন সাওম পালন কর। ‘আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, আমি এর চাইতে বেশি করার শক্তি রাখি। এভাবে তিনি বৃদ্ধির আবেদন করতে লাগলেন যে, অবশেষে রাসূলুল্লাহ বললেন, একদিন সাওম পালন কর এবং একদিন ছেড়ে দাও এবং আরও বললেন, প্রতি মাসে (এক খতম) কুরআন পাঠ কর। তিনি বললেন আমি এর চেয়ে বেশি শক্তি রাখি। এভাবে বলতে লাগলেন, অবশেষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাহলে তিন দিনে (পাঠ কর)”।[181]
দাউদ আলাইহিস সালামের সাওম
‘আব্দুল্লাহ ইবন ‘আমর ইবনুল ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন,
«إِنَّكَ لَتَصُومُ الدَّهْرَ، وَتَقُومُ اللَّيْلَ؟، فَقُلْتُ: نَعَمْ، قَالَ: «إِنَّكَ إِذَا فَعَلْتَ ذَلِكَ هَجَمَتْ لَهُ العَيْنُ، وَنَفِهَتْ لَهُ النَّفْسُ، لاَ صَامَ مَنْ صَامَ الدَّهْرَ، صَوْمُ ثَلاَثَةِ أَيَّامٍ صَوْمُ الدَّهْرِ كُلِّهِ، قُلْتُ: فَإِنِّي أُطِيقُ أَكْثَرَ مِنْ ذَلِكَ، قَالَ: فَصُمْ صَوْمَ دَاوُدَ عَلَيْهِ السَّلاَمُ، كَانَ يَصُومُ يَوْمًا وَيُفْطِرُ يَوْمًا، وَلاَ يَفِرُّ إِذَا لاَقَى»
“তুমি কি সব সময় সাওম পালন কর এবং রাতভর সালাত আদায় করে থাক? আমি বললাম, জী হ্যাঁ। তিনি বললেন, তুমি এরূপ করলে চোখ বসে যাবে এবং শরীর দুর্বল হয়ে পড়বে। যে সারা বছর সাওম পালন করে সে যেন সাওম পালন করে না। মাসে তিন দিন করে সাওম পালন করা সারা বছর সাওম পালনের সমতূল্য। আমি বললাম, আমি এর চেয়ে বেশি করার সামর্থ্য রাখি। তিনি বললেন, তাহলে তুমি দাউদ আলাইহিস সালামের সাওম পালন কর, তিনি একদিন সাওম পালন করতেন আর একদিন ছেড়ে দিতেন এবং যখন শত্রুর সম্মুখীন থেকেন তখন পলায়ন করতেন না”।[182]
«عَنْ أَبِي قِلاَبَةَ، قَالَ: أَخْبَرَنِي أَبُو المَلِيحِ، قَالَ: دَخَلْتُ مَعَ أَبِيكَ عَلَى عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو، فَحَدَّثَنَا: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذُكِرَ لَهُ صَوْمِي، فَدَخَلَ عَلَيَّ، فَأَلْقَيْتُ لَهُ وِسَادَةً مِنْ أَدَمٍ حَشْوُهَا لِيفٌ، فَجَلَسَ عَلَى الأَرْضِ، وَصَارَتِ الوِسَادَةُ بَيْنِي وَبَيْنَهُ، فَقَالَ: أَمَا يَكْفِيكَ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ ثَلاَثَةُ أَيَّامٍ؟ قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، قَالَ: خَمْسًا، قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، قَالَ: سَبْعًا، قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، قَالَ: تِسْعًا، قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، قَالَ: إِحْدَى عَشْرَةَ، ثُمَّ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لاَ صَوْمَ فَوْقَ صَوْمِ دَاوُدَ عَلَيْهِ السَّلاَمُ شَطْرَ الدَّهَرِ، صُمْ يَوْمًا، وَأَفْطِرْ يَوْمًا»
‘আব্দুল্লাহ ইবন ‘আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আমার সাওমের আলোচনা করায় তিনি আমার এখানে আগমন করেন। আমি তাঁর জন্য খেজুরের ছালে পরিপূর্ণ চামড়ার বালিশ (হেলান দিয়ে বসার জন্য) পেশ করলাম। তিনি মাটিতে বসে পড়লেন। বালিশটি তাঁর ও আমার মাঝে পড়ে থাকল। তিনি বললেন, প্রতি মাসে তুমি তিন দিন সাওম রাখলে হয় না? ‘আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! (আরো)। তিনি বললেন সাতদিন। আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! (আরো)। তিনি বললেন, নয় দিন। আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! (আরো)। তিনি বললেন, এগারো দিন। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, দাঊদ আলাইহিস সালামের সাওমের চেয়ে উত্তম সাওম আর হয় না। অর্ধেক বছর, একদিন সাওম পালন কর ও একদিন ছেড়ে দাও”।[183]
সাওমে বীয বা প্রতিমাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে সাওম পালন করা
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«أَوْصَانِي خَلِيلِي صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِثَلاَثٍ: صِيَامِ ثَلاَثَةِ أَيَّامٍ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ، وَرَكْعَتَيِ الضُّحَى، وَأَنْ أُوتِرَ قَبْلَ أَنْ أَنَامَ»
“আমার বন্ধু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে তিনটি বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন, প্রতি মাসে তিন দিন করে সাওম পালন করা এবং দু’রাক‘আত সালাতুদ-দোহা এবং ঘুমানোর পূর্বে বিতর সালাত আদায় করা”।[184]
عَنْ عَائِشَة زَوْج النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَكَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَصُومُ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ؟» قَالَتْ: «نَعَمْ»، فَقُلْتُ لَهَا: «مِنْ أَيِّ أَيَّامِ الشَّهْرِ كَانَ يَصُومُ؟» قَالَتْ: «لَمْ يَكُنْ يُبَالِي مِنْ أَيِّ أَيَّامِ الشَّهْرِ يَصُومُ»
এক তাবে‘ঈ বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রী ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার কাছে জানতে চাইলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি প্রতি মাসে তিন দিন সাওম পালন করতেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমি পূনরায় তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, মাসের কোনো কোনো দিন তিনি সাওম পালন করতেন? ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বললেন, তিনি মাসের যে কোনো দিন সাওম পালন করতে দ্বিধা করতেন না।[185]
সাওম পালনকারী কারো দাওয়াতে সাড়া দেওয়া
عَنْ ابْن عُمَر كَانَ إِذَا دُعِيَ ذَهَبَ إِلَى الدَّاعِي , فَإِنْ كَانَ صَائِمًا , دَعَا بِالْبَرَكَةِ , ثُمَّ انْصَرَفَ , وَإِنْ كَانَ مُفْطِرًا جَلَسَ فَأَكَلَ.
قَالَ نَافِعٌ: قَالَ ابْنُ عُمَرَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " إذا دعيتم إلى كراع فأجيبوا»
ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কেউ দাওয়াত দিলে তিনি সেখানে যেতেন। সাওম পালনকারী হলে সেখানে গিয়ে বরকতের দো‘আ করে ফিরে আসতেন আর সাওম পালনকারী না হলে বসতেন এবং খেতেন।
নাফি‘ রহ. বলেন, ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যখন তোমাদের বকরীর পায়া খাওয়ার জন্যও দাওয়াত দেওয়া হয় তবুও তোমরা তাতে সাড়া দিও”।[186]
জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«إِذَا دُعِيَ أَحَدُكُمْ إِلَى طَعَامٍ، فَلْيُجِبْ، فَإِنْ شَاءَ طَعِمَ، وَإِنْ شَاءَ تَرَكَ، وَلَمْ يَذْكُرِ ابْنُ الْمُثَنَّى: إِلَى طَعَامٍ»
“যখন তোমাদের কাউকে খাওয়ার জন্য দাওয়াত দেওয়া হয়, তখন সে যেন দাওয়াতে সাড়া দেয়। তারপর ইচ্ছা করলে আহার করবে, না হয় না করবে। ইবন মুসান্না রহ. তার বর্ণনায় পানাহারের দিকে কথাটি উল্লেখ করেন নি।”[187]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«إِذَا دُعِيَ أَحَدُكُمْ، فَلْيُجِبْ، فَإِنْ كَانَ صَائِمًا، فَلْيُصَلِّ، وَإِنْ كَانَ مُفْطِرًا، فَلْيَطْعَمْ»
“যখন তোমাদের কাউকে দাওয়াত দেওয়া হয় সে যেন তাতে সাড়া দেয়। যদি সে সাওম পালনকারী হয় তাহলে সে (ওখানে গিয়ে) দো‘আ ও সালাতরত থাকবে। আর যদি সাওম পালনকারী না হয় তাহলে সে আহার করবে।”[188]
সাওম পালনকারীকে খাবারের জন্য ডাকলে সে যেন বলে, আমি সাওম পালনকারী
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«إِذَا دُعِيَ أَحَدُكُمْ إِلَى طَعَامٍ، وَهُوَ صَائِمٌ، فَلْيَقُلْ: إِنِّي صَائِمٌ»
“তোমাদের সাওমরত কোনো ব্যক্তিকে যদি খানা খাওয়ার জন্য আহ্বান করা হয়, তবে তার বলা উচিতৎ আমি সাওম পালনকারী”।[189]
কারো সাথে দেখা করতে গেলে নফল সাওম ভঙ্গ না করা
আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«دَخَلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، عَلَى أُمِّ سُلَيْمٍ، فَأَتَتْهُ بِتَمْرٍ وَسَمْنٍ، قَالَ: أَعِيدُوا سَمْنَكُمْ فِي سِقَائِهِ، وَتَمْرَكُمْ فِي وِعَائِهِ، فَإِنِّي صَائِمٌ ثُمَّ قَامَ إِلَى نَاحِيَةٍ مِنَ البَيْتِ، فَصَلَّى غَيْرَ المَكْتُوبَةِ، فَدَعَا لِأُمِّ سُلَيْمٍ وَأَهْلِ بَيْتِهَا، فَقَالَتْ أُمُّ سُلَيْمٍ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنَّ لِي خُوَيْصَّةً، قَالَ: مَا هِيَ؟ قَالَتْ: خَادِمُكَ أَنَسٌ، فَمَا تَرَكَ خَيْرَ آخِرَةٍ وَلاَ دُنْيَا إِلَّا دَعَا لِي بِهِ، قَالَ: اللَّهُمَّ ارْزُقْهُ مَالًا وَوَلَدًا، وَبَارِكْ لَهُ فِيهِ، فَإِنِّي لَمِنْ أَكْثَرِ الأَنْصَارِ مَالًا، وَحَدَّثَتْنِي ابْنَتِي أُمَيْنَةُ: أَنَّهُ دُفِنَ لِصُلْبِي مَقْدَمَ حَجَّاجٍ البَصْرَةَ بِضْعٌ وَعِشْرُونَ وَمِائَةٌ، حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي مَرْيَمَ، أَخْبَرَنَا يَحْيَى بْنُ أَيُّوبَ، قَالَ: حَدَّثَنِي حُمَيْدٌ، سَمِعَ أَنَسًا رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ»
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আমার মাতা) উম্মে সুলাইম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার ঘরে আগমান করলেন। তিনি তাঁর সামনে খেজুর ও ঘি পেশ করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের ঘি মশকে এবং খেজুর তার বরতনে রেখে দাও। কারণ আমি সাওম পালনকারী। এরপর তিনি ঘরের এক পাশে গিয়ে নফল সালাত আদায় করলেন এবং উম্মে সুলাইম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা ও তাঁর পরিজনের জন্য দো‘আ করলেন। উম্মে সুলাইম আরয করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার একটি ছোট ছেলে আছে। তিনি বললেন, কে সে? উম্মে সুলাইম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বললেন, আপনার খাদেম আনাস। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার জন্য দুনিয়া ও আখেরাতের যাবতীয় কল্যাণের দো‘আ করলেন। তিনি বললেন, হে আল্লাহ! তুমি তাকে মাল ও সন্তান-সন্ততি দান কর এবং তাকে বরকত দাও। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি আনসারগণের মধ্যে অধিক সম্পদশালীদের একজন এবং আমার কন্যা আমাকে জানিয়েছে যে, হাজ্জাজ (ইবন ইউসুফ) এর বসরায় আগমনের পূর্ব পর্যন্ত একশত বিশের অধিক আমার সন্তান মারা গেছে।
ইবন আবু মারইয়াম রহ. হুমায়দ রহ. আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীস বর্ণনা করতে শুনেছেন।”[190]
সাওম পালনকারীকে ইফতার করানোর সাওয়াব
যায়েদ ইবন খালিদ আল-জুহানী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ فَطَّرَ صَائِمًا كَانَ لَهُ مِثْلُ أَجْرِهِمْ، مِنْ غَيْرِ أَنْ يَنْقُصَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْئًا»
“কেউ যদি কোনো সাওম পালনকারীকে ইফতার করায় তবে তার জন্যও অনুরূপ (সিয়ামের) সাওয়াব হবে। কিন্তু এতে সাওম পালনকারীর সাওয়াবে কোনো ঘাটতি হবে না”।[191]
মাসের শেষ ভাগে সাওম পালন
‘ইমরান ইবন হুসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত,
عَنْ عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَنَّهُ سَأَلَهُ أَوْ سَأَلَ رَجُلًا وَعِمْرَانُ يَسْمَعُ، فَقَالَ: يَا أَبَا فُلاَنٍ، أَمَا صُمْتَ سَرَرَ هَذَا الشَّهْرِ؟ قَالَ: أَظُنُّهُ قَالَ: يَعْنِي رَمَضَانَ، قَالَ الرَّجُلُ: لاَ يَا رَسُولَ اللَّهِ، قَالَ: فَإِذَا أَفْطَرْتَ فَصُمْ يَوْمَيْنِ، لَمْ يَقُلِ الصَّلْتُ: أَظُنُّهُ يَعْنِي رَمَضَانَ، قَالَ أَبُو عَبْدِ اللَّهِ: وَقَالَ ثَابِتٌ: عَنْ مُطَرِّفٍ، عَنْ عِمْرَانَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مِنْ سَرَرِ شَعْبَانَ»
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে অথবা (বর্ণনাকারী বলেন) অন্য এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করেন এবং ‘ইমরান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তা শুনেছিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে অমুকের পিতা! তুমি কি এ মাসের শেষ ভাগে সাওম পালন কর নি? (বর্ণনাকারী) বলেন, আমার মনে হয় (আমার ওস্তাদ) বলেছেন, অর্থাৎ রমযান। লোকটি উত্তর দিল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! না। তিনি বললেন, যখন সাওম পালন শেষ করবে তখন দু’দিন সাওম পালন করে নিবে। আমার মনে হয় সালত রহ. রমযান শব্দটি বর্ণনা করেন নি। সাবিত রহ. ‘ইমরান সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শা‘বানের শেষভাগে বলে উল্লেখ করেছেন। আবু ‘আব্দুল্লাহ বুখারী রহ. বলেন, শা’বান শব্দটি অধিকতর সহীহ।”[192]
জুমু‘আর দিনে সাওম পালন
মুহাম্মদ ইবন ‘আব্বাদ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি জাবির ইবন ‘আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমাকে জিজ্ঞাসা করলাম যে,
«نَهَى النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ صَوْمِ يَوْمِ الجُمُعَةِ؟ قَالَ: نَعَمْ، زَادَ غَيْرُ أَبِي عَاصِمٍ، يَعْنِي: أَنْ يَنْفَرِدَ بِصَوْمٍ»
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি জুমু‘আর দিনে (নফল) সাওম পালন করতে নিষেধ করেছেন? উত্তরে তিনি বললেন, হ্যাঁ। আবু ‘আসিম রহ. ব্যতীত অন্যেরা অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন যে, পৃথকভাবে জুমু‘আর দিনের সাওম পালনকে নিষেধ করেছেন।”[193]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে,
«لاَ يَصُومَنَّ أَحَدُكُمْ يَوْمَ الجُمُعَةِ، إِلَّا يَوْمًا قَبْلَهُ أَوْ بَعْدَهُ»
“তোমাদের কেউ যেন শুধু জুমু‘আর দিনে সাওম পালন না করে; কিন্তু তার আগে একদিন বা পরের দিন (যদি পালন করে তবে জুমু‘আর দিনে পালন করা যায়)”।[194]
জুয়াইরিয়া বিনতে হারিস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، دَخَلَ عَلَيْهَا يَوْمَ الجُمُعَةِ وَهِيَ صَائِمَةٌ، فَقَالَ: أَصُمْتِ أَمْسِ؟ قَالَتْ: لاَ، قَالَ: تُرِيدِينَ أَنْ تَصُومِي غَدًا؟ قَالَتْ: لاَ، قَالَ: فَأَفْطِرِي، وَقَالَ حَمَّادُ بْنُ الجَعْدِ: سَمِعَ قَتَادَةَ، حَدَّثَنِي أَبُو أَيُّوبَ، أَنَّ جُوَيْرِيَةَ، حَدَّثَتْهُ: فَأَمَرَهَا فَأَفْطَرَتْ»
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমু‘আর দিনে তাঁর নিকট প্রবেশ করেন তখন তিনি (জুযাইরিয়া) সাওম পালনরত ছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি গতকাল সাওম পালন করেছিলে? তিনি বললেন, না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি আগামীকাল সাওম পালনের ইচ্ছা রাখ? তিনি বললেন, না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাহলে সাওম ভেঙ্গে ফেল। হাম্মাদ ইবনুল জা‘দ রহ. স্বীয় সূত্রে জুয়াইরিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে আদেশ দেন এবং তিনি সাওম ভঙ্গ করেন”।[195]
সাওম পালনের ব্যাপারে কোনো দিন কি নির্দিষ্ট করা যায়?
‘আলকামা রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«قُلْتُ لِعَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا: هَلْ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَخْتَصُّ مِنَ الأَيَّامِ شَيْئًا؟ قَالَتْ: لاَ، كَانَ عَمَلُهُ دِيمَةً، وَأَيُّكُمْ يُطِيقُ مَا كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُطِيقُ»
“আমি ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে জিজ্ঞাসা করলাম যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি কোনো দিন কোনো কাজের জন্য নির্দিষ্ট করে নিতেন? উত্তরে তিনি বলেলেন, না; বরং তাঁর ‘আমল স্থায়ী হতো এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে সব ‘আমল করার শক্তি সামর্থ্য রাখতেন তোমাদের মধ্যে কে আছে যে সে সবের সামর্থ্য রাখে?”[196]
শাওয়াল মাসে ছয়টি সাওম পালন
আবু আইয়্যুব আল-আনসারী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ صَامَ رَمَضَانَ ثُمَّ أَتْبَعَهُ سِتًّا مِنْ شَوَّالٍ، كَانَ كَصِيَامِ الدَّهْرِ»
যিলহজ মাসের সাওম পালন
‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«مَا رَأَيْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَائِمًا فِي الْعَشْرِ قَطُّ»
“আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে (যিলহজ্জের) দশম তারিখে কখনও সাওম পালন করতে দেখি নি।”[198]
‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত যে,
«أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمْ يَصُمِ الْعَشْرَ»
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (যিলহজ্জের) দশ তারিখে সাওম পালন করেন নি”।[199]
ইবন ‘আববাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«مَا مِنْ أَيَّامٍ الْعَمَلُ الصَّالِحُ فِيهَا أَحَبُّ إِلَى اللَّهِ مِنْ هَذِهِ الْأَيَّامِ» يَعْنِي أَيَّامَ الْعَشْرِ، قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ، وَلَا الْجِهَادُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ؟ قَالَ: وَلَا الْجِهَادُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ، إِلَّا رَجُلٌ خَرَجَ بِنَفْسِهِ وَمَالِهِ، فَلَمْ يَرْجِعْ مِنْ ذَلِكَ بِشَيْءٍ»
“আল্লাহ তা‘আলার নিকট দিনসমুহের মধ্যে যিলহজ মাসের প্রথম দশ দিনের ‘আমল অধিক প্রিয়। সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করাও কি ঐরূপ উত্তম আমল নয়? তিনি বলেন না, আল্লাহ রাস্তায় জিহাদ করাও নয়। অবশ্য যে ব্যক্তি স্বীয় জানমালসহ রাস্তায় বের হওয়ার পর আর প্রত্যাবর্তন করে না, তার ব্যাপারটি স্বতন্ত্র”।[200]
‘আরাফাহ দিবসে সাওম পালন
উম্মুল ফাদল বিনতে হারিস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা সূত্রে বর্ণনা করেন যে,
«أَنَّ نَاسًا تَمَارَوْا عِنْدَهَا يَوْمَ عَرَفَةَ فِي صَوْمِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ بَعْضُهُمْ: هُوَ صَائِمٌ، وَقَالَ بَعْضُهُمْ: لَيْسَ بِصَائِمٍ، فَأَرْسَلَتْ إِلَيْهِ بِقَدَحِ لَبَنٍ وَهُوَ وَاقِفٌ عَلَى بَعِيرِهِ، فَشَرِبَهُ»
“কিছুসংখ্যক লোক ‘আরাফাতের দিনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাওম পালন সম্পর্কে তাঁর কাছে সন্দেহ প্রকাশ করে। তাদের কেউ বলল, তিনি সাওম পালন করেছেন। আর কেউ বলল, না, তিনি করেন নি। এতে উম্মুল ফাদল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এক পেয়ালা দুধ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট পাঠিয়ে দিলেন এবং তিনি তা পান করে নিলেন। এ সময় তিনি উঠের পিঠে (‘আরাফাতে) উকূফ অবস্থায় ছিলেন।”[201]
মায়মূনা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত যে, তিনি বললেন,
«إِنَّ النَّاسَ شَكُّوا فِي صِيَامِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ عَرَفَةَ، فَأَرْسَلَتْ إِلَيْهِ مَيْمُونَةُ بِحِلَابِ اللَّبَنِ، وَهُوَ وَاقِفٌ فِي الْمَوْقِفِ، فَشَرِبَ مِنْهُ وَالنَّاسُ يَنْظُرُونَ إِلَيْهِ»
“কিছু সংখ্যক লোক ‘আরাফাতের দিনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাওম পালন সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করলে তিনি স্বল্প পরিমাণ দুধ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট পাঠিয়ে দিলে তিনি তা পান করলেন ও লোকেরা তা প্রত্যক্ষ করছিল। তখন তিনি (‘আরাফাতে) অবস্থান স্থলে উকূফ করছিলেন”।[202]
আবু কাতাদা আল-আনসারী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত,
»أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سُئِلَ عَنْ صَوْمِهِ؟ قَالَ: فَغَضِبَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ عُمَرُ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ: رَضِينَا بِاللهِ رَبًّا، وَبِالْإِسْلَامِ دِينًا، وَبِمُحَمَّدٍ رَسُولًا، وَبِبَيْعَتِنَا بَيْعَةً. قَالَ: فَسُئِلَ عَنْ صِيَامِ الدَّهْرِ؟ فَقَالَ: لَا صَامَ وَلَا أَفْطَرَ أَوْ مَا صَامَ وَمَا أَفْطَرَ قَالَ: فَسُئِلَ عَنْ صَوْمِ يَوْمَيْنِ وَإِفْطَارِ يَوْمٍ؟ قَالَ: وَمَنْ يُطِيقُ ذَلِكَ» قَالَ: وَسُئِلَ عَنْ صَوْمِ يَوْمٍ، وَإِفْطَارِ يَوْمَيْنِ؟ قَالَ: لَيْتَ أَنَّ اللهَ قَوَّانَا لِذَلِكَ» قَالَ: وَسُئِلَ عَنْ صَوْمِ يَوْمٍ، وَإِفْطَارِ يَوْمٍ؟ قَالَ: ذَاكَ صَوْمُ أَخِي دَاوُدَ - عَلَيْهِ السَّلَام قَالَ: وَسُئِلَ عَنْ صَوْمِ يَوْمِ الِاثْنَيْنِ؟ قَالَ: «ذَاكَ يَوْمٌ وُلِدْتُ فِيهِ، وَيَوْمٌ بُعِثْتُ أَوْ أُنْزِلَ عَلَيَّ فِيهِ قَالَ: فَقَالَ: صَوْمُ ثَلَاثَةٍ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ، وَرَمَضَانَ إِلَى رَمَضَانَ، صَوْمُ الدَّهْرِ قَالَ: وَسُئِلَ عَنْ صَوْمِ يَوْمِ عَرَفَةَ؟ فَقَالَ: يُكَفِّرُ السَّنَةَ الْمَاضِيَةَ وَالْبَاقِيَةَ قَالَ: وَسُئِلَ عَنْ صَوْمِ يَوْمِ عَاشُورَاءَ؟ فَقَالَ: يُكَفِّرُ السَّنَةَ الْمَاضِيَةَ وَفِي هَذَا الْحَدِيثِ مِنْ رِوَايَةِ شُعْبَةَ قَالَ: وَسُئِلَ عَنْ صَوْمِ يَوْمِ الِاثْنَيْنِ وَالْخَمِيسِ؟ فَسَكَتْنَا عَنْ ذِكْرِ الْخَمِيسِ لَمَّا نُرَاهُ وَهْمًا»
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাওম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো। এতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্তুষ্ট হলেন। তখন উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, আমরা আল্লাহর ওপর (আমাদের) রব হিসেবে, ইসলামের ওপর (আমাদের) দীন হিসেবে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর (আমাদের) রাসূল হিসেবে এবং আমাদের কৃত বায়‘আতের ওপর আমরা সন্তুষ্ট। অতঃপর সারা বছর সাওম পালন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো। তিনি বললেন, সে ব্যক্তি সাওম পালন করে নি, ইফতারও করে নি বা সে ব্যক্তি সাওম পালন করে নি এবং সাওমহীনও থাকে নি। অতঃপর একাধারে দুই দিন সাওম পালন করা ও এক দিন সাওম পালন না করা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো। তিনি বললেন এভাবে সাওম পালনের সামর্থ্য কার আছে? অতঃপর একদিন সাওম পালন ও দু দিন সাওম ত্যাগ করা সস্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো। তিনি বললেন, আল্লাহ যেন আমাদের এরূপ সাওম পালনের সামর্থ্য দান করেন। অতঃপর একদিন সাওম পালন করা ও একদিন না করা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো। তিনি বললেন, তা আমার ভাই দাঊদ আলাইহিস সালামের সাওম। অতঃপর সোমবারের সাওম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, এই দিন আমি জন্মগ্রহণ করেছি এবং এই দিনই আমি নবুওয়াত প্রাপ্ত হয়েছি বা আমার ওপর (কুরআন) নাযিল করা হয়েছে। আরও বললেন, প্রতি মাসে তিন দিন এবং গোটা রমযান মাস সাওম পালন করাই হলো সারা বছর সাওম পালনের সমতুল্য। অতঃপর ‘আরাফাহ দিবসের সাওম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, তাতে পূর্ববর্তী বছর ও পরবর্তী বছরের শুনাহের কাফফারা হয়ে যাবে। অতঃপর ‘আশুরার সাওম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, তাতে বিগত বছরের গুনাহের কাফফারা হয়ে যাবে। এই হাদীসে শু‘বা রহ.-এর বর্ণনায় আরও আছে, অতঃপর সোমবার ও বৃহস্প্রতিবারের সাওম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো। কিন্তু আমাদের মতে বৃহস্পতিবারের কথা ভুলবশত বর্ণিত হয়েছে, তাই আমরা তার উল্লেখ থেকে বিরত থাকলাম।”[203]
ঈদের দিনে সাওম পালন
বনু আযহারের আযাদকৃত গোলাম আবু ‘উবায়দ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«شَهِدْتُ العِيدَ مَعَ عُمَرَ بْنِ الخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، فَقَالَ: «هَذَانِ يَوْمَانِ نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ صِيَامِهِمَا: يَوْمُ فِطْرِكُمْ مِنْ صِيَامِكُمْ، وَاليَوْمُ الآخَرُ تَأْكُلُونَ فِيهِ مِنْ نُسُكِكُمْ»
“আমি একবার ঈদে উমার ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর সঙ্গে ছিলাম, তখন তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দুই দিনে সাওম পালন করতে নিষেধ করেছেন। (ঈদুল ফিতরের দিন) যে দিন তোমরা তোমাদের সাওম ছেড়ে দাও। আরেক দিন, যেদিন তোমরা তোমাদের কুরবানীর গোশত খাও।”[204]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَى عَنْ صِيَامِ يَوْمَيْنِ يَوْمِ الْأَضْحَى، وَيَوْمِ الْفِطْرِ»
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’দিন সাওম পালন করতে নিষেধ করেছেন। এক হলো কুরবানীর দিন আর দ্বিতীয় হলো ঈদুল ফিতরের দিন।”[205]
কাযাআ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«سَمِعْتُ مِنْهُ حَدِيثًا فَأَعْجَبَنِي، فَقُلْتُ لَهُ: آنْتَ سَمِعْتَ هَذَا مِنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ قَالَ: فَأَقُولُ عَلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا لَمْ أَسْمَعْ؟ قَالَ: سَمِعْتُهُ يَقُولُ: لَا يَصْلُحُ الصِّيَامُ فِي يَوْمَيْنِ: يَوْمِ الْأَضْحَى وَيَوْمِ الْفِطْرِ، مِنْ رَمَضَانَ»
“আমি আবু সা‘ঈদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে একটি হাদীস শ্রবণ করেছি। হাদীসটি আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। তখন আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আপনি এ হাদীস শুনেছেন কি? তিনি বললেন, যে কথা আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনি নি এমন কথা তাঁর দিকে সম্বোধন করে আমি বলতে পারি কি? আমি শুনেছি তিনি বলেছেন, দু’দিন সাওম পালন করা শুদ্ধ নয়, ঈদুল আযহার দিন এবং ঈদুল ফিতরের দিন।”[206]
আবু সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত,
«أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَى عَنْ صِيَامِ يَوْمَيْنِ، يَوْمِ الْفِطْرِ، وَيَوْمِ النَّحْرِ»
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’দিন অর্থাৎ ঈদুল ফিতরের দিন এবং কুরবানীর দিন সাওম পালন করতে নিষেধ করেছেন।”[207]
যিয়াদ ইবন জুবায়র রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«جَاءَ رَجُلٌ إِلَى ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا، فَقَالَ: إِنِّي نَذَرْتُ أَنْ أَصُومَ يَوْمًا، فَوَافَقَ يَوْمَ أَضْحَى أَوْ فِطْرٍ، فَقَالَ ابْنُ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا: أَمَرَ اللهُ تَعَالَى بِوَفَاءِ النَّذْرِ، وَنَهَى رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ صَوْمِ هَذَا الْيَوْمِ»
“এক ব্যক্তি ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর নিকট এসে বললেন, আমি এক দিন সাওম পালন করার মানত করেছিলাম। ঘটনাক্রমে তা ঈদুল আযহা বা ঈদুল ফিতরের দিন হয়ে গেছে। তখন তিনি বললেন, আল্লাহ তা‘আলা মানত পূর্ণ করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দিন সাওম পালন করতে নিষেধ করেছেন।”[208]
‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«نَهَى رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ صَوْمَيْنِ: يَوْمِ الْفِطْرِ، وَيَوْمِ الْأَضْحَى»
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহা -এ দু’দিন সাওম পালন করতে নিষেধ করেছেন।”[209]
আবু সা‘ঈদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«نَهَى النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ صَوْمِ يَوْمِ الفِطْرِ وَالنَّحْرِ، وَعَنِ الصَّمَّاءِ، وَأَنْ يَحْتَبِيَ الرَّجُلُ فِي ثَوْبٍ وَاحِدٍ، وَعَنْ صَلاَةٍ بَعْدَ الصُّبْحِ وَالعَصْرِ»
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতরের দিন এবং কুরবানীর ঈদের দিন সাওম পালন করা থেকে, ‘সাম্মা’ ধরনের কাপড় পরিধান করতে, এক কাপড় পরিধানরত অবস্থায় দুই হাঁটু তুলে নিতম্বের উপর বসতে (কেননা এতে সতর প্রকাশ পাওয়ার আশংকা রয়েছে) এবং ফজর ও ‘আসরের পরে সালাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন।”[210]
কুরবানীর দিনে সাওম পালন
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«يُنْهَى عَنْ صِيَامَيْنِ، وَبَيْعَتَيْنِ: الفِطْرِ وَالنَّحْرِ، وَالمُلاَمَسَةِ وَالمُنَابَذَةِ»
“দু’দিনের সাওম ও দু’প্রকারের ক্রয়-বিক্রয় নিষেধ করা হয়েছে, ঈদুল ফিতর ও কুরবানীর (দিনের) সাওম এবং মুলামাসা (পণ্য স্পর্শ করলেই ক্রয় বাধ্য হয়ে যাওয়া)ও মুনাবাযা (ক্রেতার প্রতি নিক্ষেপ করলেই ক্রয় বাধ্য হওয়া) পদ্ধতিতে ক্রয়-বিক্রয় থেকে নিষেধ করা হয়েছে”।[211]
যিয়াদ ইবন জুবাইর রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«جَاءَ رَجُلٌ إِلَى ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، فَقَالَ: رَجُلٌ نَذَرَ أَنْ يَصُومَ يَوْمًا، قَالَ: أَظُنُّهُ قَالَ: الِاثْنَيْنِ، فَوَافَقَ ذَلِكَ يَوْمَ عِيدٍ، فَقَالَ ابْنُ عُمَرَ: أَمَرَ اللَّهُ بِوَفَاءِ النَّذْرِ وَنَهَى النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ صَوْمِ هَذَا اليَوْمِ»
“এক ব্যক্তি এসে ‘আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বলল যে, এক ব্যক্তি কোনো এক দিনের সাওম পালন করার মানত করেছে, আমার মনে হয় সে সোমবারের কথা বলেছিল। ঘটনাক্রমে ঐ দিন ঈদের দিন পড়ে যায়। ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, আল্লাহ তা‘আলা মানত পুরা করার নির্দেশ দিয়েছেন আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ (ঈদের) দিনে সাওম পালন করতে নিষেধ করেছেন।”[212]
আবু সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে (সনদসহ) বর্ণিত, যিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে বারোটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন, তিনি বলেন,
«حَدَّثَنَا عَبْدُ المَلِكِ بْنُ عُمَيْرٍ، قَالَ: سَمِعْتُ قَزَعَةَ قَالَ: سَمِعْتُ أَبَا سَعِيدٍ الخُدْرِيَّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: وَكَانَ غَزَا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثِنْتَيْ عَشْرَةَ غَزْوَةً قَالَ: سَمِعْتُ أَرْبَعًا مِنَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَأَعْجَبْنَنِي، قَالَ: لاَ تُسَافِرِ المَرْأَةُ مَسِيرَةَ يَوْمَيْنِ إِلَّا وَمَعَهَا زَوْجُهَا أَوْ ذُو مَحْرَمٍ، وَلاَ صَوْمَ فِي يَوْمَيْنِ: الفِطْرِ وَالأَضْحَى، وَلاَ صَلاَةَ بَعْدَ الصُّبْحِ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ، وَلاَ بَعْدَ العَصْرِ حَتَّى تَغْرُبَ، وَلاَ تُشَدُّ الرِّحَالُ إِلَّا إِلَى ثَلاَثَةِ مَسَاجِدَ: مَسْجِدِ الحَرَامِ، وَمَسْجِدِ الأَقْصَى، وَمَسْجِدِي هَذَا»
“আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে চারটি কথা শুনেছি, যা আমার খুব ভাল লেগেছে। তিনি বলেছেন, স্বামী অথবা মাহরাম (যার সঙ্গে বিবাহ নিষিদ্ধ) পুরুষ ছাড়া কোনো নারী যেন দুই দিনের দূরত্বের সফর না করে। ঈদুল ফিতর ও কুরবানীর দিনে সাওম নেই। ফজরের সালাতের পরে সূর্যোদয় এবং ‘আসরের সালাতের পরে সূর্যাস্ত পর্যন্ত কোনো সালাত নেই। মসজিদে হারাম, মসজিদে আকসা ও আমার এই মসজিদ ব্যতীত অন্য কোনো মসজিদের উদ্দেশ্যে কেউ যেন সফর না করে।”[213]
আইয়ামুত তাশরিকে সাওম পালন
হিশাম রহ. তার পিতার থেকে বর্ণনা করেন যে,
«كَانَتْ عَائِشَةُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا تَصُومُ أَيَّامَ التَّشْرِيقِ بِمِنًى، وَكَانَ أَبُوهَا يَصُومُهَا»
“আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা আইয়ামুত তাশরিকে মিনায় সাওম পালন করতেন, তার পিতাও সে দিন গুলোতে সাওম পালন করতেন”। [214]
‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ও ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তাঁরা উভয়ে বলেন,
«لَمْ يُرَخَّصْ فِي أَيَّامِ التَّشْرِيقِ أَنْ يُصَمْنَ، إِلَّا لِمَنْ لَمْ يَجِدِ الهَدْيَ»
“যাঁর নিকট কুরবানীর পশু নেই তিনি ছাড়া অন্য কারও জন্য আইয়্যামে তাশরীকে সাওম পালন করার অনুমতি দেওয়া হয় নি”।[215]
ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«الصِّيَامُ لِمَنْ تَمَتَّعَ بِالعُمْرَةِ إِلَى الحَجِّ إِلَى يَوْمِ عَرَفَةَ، فَإِنْ لَمْ يَجِدْ هَدْيًا وَلَمْ يَصُمْ، صَامَ أَيَّامَ مِنًى»
“যে ব্যক্তি একই সঙ্গে হজ ও ‘উমরা পালনের সুযোগ লাভ করলো সে ‘আরাফাত দিবস পর্যন্ত সাওম পালন করবে। সে যদি কুরবানী না করতে পারে এবং সাওমও পালন না করে থাকে তবে মিনার দিনগুলোতে সাওম পালন করবে”।[216]
নুবাইশা আল-হুযালী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«أَيَّامُ التَّشْرِيقِ أَيَّامُ أَكْلٍ وَشُرْبٍ»
কা‘ব ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন,
أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَعَثَهُ وَأَوْسَ بْنَ الْحَدَثَانِ أَيَّامَ التَّشْرِيقِ، فَنَادَى «أَنَّهُ لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ إِلَّا مُؤْمِنٌ وَأَيَّامُ مِنًى أَيَّامُ أَكْلٍ وَشُرْبٍ»
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে এবং আউস ইবন হাদসান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমাকে আইয়্যামে তাশরীকের সময় পাঠালেন এবং বলে দিলেন তোমরা ঘোষণা করে দাও যে, মুমিনগণই জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং আইয়্যামে মিনা (আইয়্যামে তাশরীক) পানাহার করবার দিন।”[218]
আশুরার দিনে সাওম পালন
‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«كَانَتْ قُرَيْشٌ تَصُومُ عَاشُورَاءَ فِي الْجَاهِلِيَّةِ، وَكَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَصُومُهُ، فَلَمَّا هَاجَرَ إِلَى الْمَدِينَةِ، صَامَهُ وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ، فَلَمَّا فُرِضَ شَهْرُ رَمَضَانَ قَالَ: «مَنْ شَاءَ صَامَهُ وَمَنْ شَاءَ تَرَكَهُ»
“জাহেলী যুগে কুরাইশের লোকেরা ‘আশুরার দিন সাওম পালন করতো। রমযানের সাওম ফরয হওয়ার পূর্বে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং মুসলিমগণ এ দিন সাওম রাখতেন। অতঃপর মদীনায় হিজরত করার পরার পর যখন রমযানের সাওম ফরয হলো তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “যে চায় ঐ দিনের সাওম রাখতে পারে আর যে চায় নাও রাখতে পারে।”[219]
‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«أَنَّ يَوْمَ عَاشُورَاءَ كَانَ يُصَامُ فِي الْجَاهِلِيَّةِ، فَلَمَّا جَاءَ الْإِسْلَامُ مَنْ شَاءَ صَامَهُ وَمَنْ شَاءَ تَرَكَهُ»
“রমযানের সাওম ফরয হওয়ার পূর্বে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আশুরার দিনে সাওম পালন করার নির্দেশ দিতেন। যখন রমযানের সাওম ফরয করা হলো তখন যার ইচ্ছা সে আশুরার দিনে সাওম পালন করতো আর যার ইচ্ছা সে তা ছেড়ে দিতো”।[220]
‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَأْمُرُ بِصِيَامِهِ قَبْلَ أَنْ يُفْرَضَ رَمَضَانُ، فَلَمَّا فُرِضَ رَمَضَانُ، كَانَ مَنْ شَاءَ صَامَ يَوْمَ عَاشُورَاءَ وَمَنْ شَاءَ أَفْطَرَ»
“কুরায়শরা জাহিলী যুগে ‘আশুরার দিন সাওম পালন করত। রমযানের সাওম ফরয হওয়ার পূর্বে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও এদিন সাওম পালন করার নির্দেশ দিতেন। রমযানের সাওম ফরয হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “যার ইচ্ছা, সে এদিন সাওম পালন করবে, আর যার ইচ্ছা সে তা ছেড়ে দেবে”।[221]
‘আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে (সনদসহ) বর্ণিত,
«عَنْ نَافِعٍ، أَخْبَرَنِي عَبْدُ اللهِ بْنُ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا، أَنَّ أَهْلَ الْجَاهِلِيَّةِ كَانُوا يَصُومُونَ يَوْمَ عَاشُورَاءَ، وَأَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَامَهُ، وَالْمُسْلِمُونَ قَبْلَ أَنْ يُفْتَرَضَ رَمَضَانُ، فَلَمَّا افْتُرِضَ رَمَضَانُ، قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ عَاشُورَاءَ يَوْمٌ مِنْ أَيَّامِ اللهِ، فَمَنْ شَاءَ صَامَهُ وَمَنْ شَاءَ تَرَكَهُ»
“জাহেলী যুগে লোকেরা আশুরার দিন সাওম রাখতো। রমযানের সাওম ফরয হওয়ার পূর্বে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং মুসলিমগণ এ দিন সাওম রাখতেন। অতঃপর যখন রমযানের সাওম ফরয হলো, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহর দিনগুলোর মধ্যে ‘আশুরাও একটি দিন। কাজেই যে চায় ঐ দিনের সাওম রাখতে পারে আর যে চায় নাও রাখতে পারে।”[222]
ইবন ‘উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত,
«أَنَّهُ ذُكِرَ عِنْدَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمُ عَاشُورَاءَ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «كَانَ يَوْمًا يَصُومُهُ أَهْلُ الْجَاهِلِيَّةِ، فَمَنْ أَحَبَّ مِنْكُمْ أَنْ يَصُومَهُ فَلْيَصُمْهُ، وَمَنْ كَرِهَ فَلْيَدَعْهُ»
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে ‘আশুরা সর্ম্পকে কথা উঠলো। তিনি বললেন, “জাহেলী যুগের লোকেরা ঐ দিন সাওম রাখতো। সুতরাং এখন তোমাদের কেউ যদি ঐ দিন সাওম রাখা পছন্দ করে তাহলে সে ঐ দিন সাওম রাখতে পারে। আর অপছন্দ করলে সে নাও রাখতে পারে”।[223]
নাফে‘ বলেন, ‘আব্দুল্লাহ ‘উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তার কাছে বর্ণনা করেছেন, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ‘আশুরার দিন বলতে শুনেছেন,
«إِنَّ هَذَا يَوْمٌ كَانَ يَصُومُهُ أَهْلُ الْجَاهِلِيَّةِ، فَمَنْ أَحَبَّ أَنْ يَصُومَهُ فَلْيَصُمْهُ، وَمَنْ أَحَبَّ أَنْ يَتْرُكَهُ فَلْيَتْرُكْهُ» وَكَانَ عَبْدُ اللهِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ لَا يَصُومُهُ، إِلَّا أَنْ يُوَافِقَ صِيَامَهُ "
“আজকের এ দিনে জাহেলী যুগের লোকেরা সাওম রাখতো। সুতরাং যে ব্যক্তি এ দিনের সাওম রাখা পছন্দ করে সে যেন (এ দিনে) সাওম রাখে। আর যে ব্যক্তি অপছন্দ করে সে যেন এ দিনের সাওম থেকে বিরত থাকে। আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ঐ দিন সাওম রাখলো না। কিন্তু যেসব দিনে তিনি সাওম রাখার অভ্যস্ত ছিলেন এর কোনো একদিন ‘আশুরা হলে তিনি সেদিনও সাওম রাখতেন”।[224]
‘আব্দুর রহমান ইবন ইয়াযীদ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«دَخَلَ الْأَشْعَثُ بْنُ قَيْسٍ عَلَى عَبْدِ اللهِ، وَهُوَ يَتَغَدَّى فَقَالَ: يَا أَبَا مُحَمَّدٍ ادْنُ إِلَى الْغَدَاءِ، فَقَالَ: أَوَلَيْسَ الْيَوْمُ يَوْمَ عَاشُورَاءَ؟ قَالَ: وَهَلْ تَدْرِي مَا يَوْمُ عَاشُورَاءَ؟ قَالَ: وَمَا هُوَ؟ قَالَ: إِنَّمَا هُوَ يَوْمٌ كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَصُومُهُ قَبْلَ أَنْ يَنْزِلَ شَهْرُ رَمَضَانَ، فَلَمَّا نَزَلَ شَهْرُ رَمَضَانَ تُرِكَ» وقَالَ أَبُو كُرَيْبٍ تَرَكَهُ».
“আশ‘আস ইবন কায়স রহ. আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর নিকট গেলেন, তখন তিনি দুপুরের খাবার খাচ্ছিলেন। তিনি বললেন, হে আবু মুহাম্মদ! তুমি খাবার জন্য কাছে এসো। তিনি বললেন, আজ কি ‘আশুরার দিন নয়? তিনি বললেন, তুমি কি জানো ‘আশুরা দিবস কী? আশ‘আস রহ. বললেন, সে আবার কী? তিনি বললেন, রমযানের সাওম ফরয হওয়ার পূর্বে এ দিনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওম পালন করতেন। যখন রমযানের সাওম ফরয হলো তখন তা ছেড়ে দেওয়া হলো”।[225]
কায়স ইবন সাকান রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«أَنَّ الْأَشْعَثَ بْنَ قَيْسٍ، دَخَلَ عَلَى عَبْدِ اللهِ يَوْمَ عَاشُورَاءَ، وَهُوَ يَأْكُلُ، فَقَالَ: يَا أَبَا مُحَمَّدٍ ادْنُ فَكُلْ، قَالَ: إِنِّي صَائِمٌ، قَالَ: كُنَّا نَصُومُهُ ثُمَّ تُرِكَ»
“আশুরার দিন আশ‘আস ইবন কায়স রহ. আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর কাছে আসলেন। এ সময় তিনি আহার করছিলেন। তিনি আশ‘আসকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আবু মুহাম্মদ! নিকটে এসো, খানা খাও। তিনি বললেন, আমি তো সাওম পালন করছি। এ কথা শুনে ‘আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, আমরা এ সাওম পালন করতাম। পরে তা ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।”[226]
‘আলকামা রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«دَخَلَ الْأَشْعَثُ بْنُ قَيْسٍ عَلَى ابْنِ مَسْعُودٍ وَهُوَ يَأْكُلُ يَوْمَ عَاشُورَاءَ فَقَالَ: يَا أَبَا عَبْدِ الرَّحْمَنِ، إِنَّ الْيَوْمَ يَوْمُ عَاشُورَاءَ فَقَالَ: قَدْ كَانَ يُصَامُ قَبْلَ أَنْ يَنْزِلَ رَمَضَانُ، فَلَمَّا نَزَلَ رَمَضَانُ، تُرِكَ، فَإِنْ كُنْتَ مُفْطِرًا فَاطْعَمْ»
“আশ‘আস ইবন কায়স রহ. ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর নিকট গেলেন। সেটা ‘আশুরার দিন ছিল। তখন তিনি খানা খাচ্ছিলেন। এ দেখে আশ‘আস রহ. বললেন, হে ‘আব্দুর রহমানের পিতা! আজ তো ‘আশুরার দিন। তিনি বললেন, রমযানের সাওম ফরয হওয়ার পূর্বে এ দিনে সাওম পালন”।[227]
জাবির ইবন সামুরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَأْمُرُنَا بِصِيَامِ يَوْمِ عَاشُورَاءَ، وَيَحُثُّنَا عَلَيْهِ، وَيَتَعَاهَدُنَا عِنْدَهُ، فَلَمَّا فُرِضَ رَمَضَانُ، لَمْ يَأْمُرْنَا، وَلَمْ يَنْهَنَا وَلَمْ يَتَعَاهَدْنَا عِنْدَهُ»
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আশুরার দিন আমাদেরকে সাওম পালনের নির্দেশ দিতেন। তিনি এ ব্যাপারে আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করতেন এবং এ বিষয়ে তিনি আমাদের খোঁজ-খবর নিতেন। কিন্তু যখন রমযানের সাওম ফরয হলো, তখন তিনি আমাদেরকে আদেশও করেন নি, বাধ্যও করেন নি এবং কোনো খোঁজ-খবর আর নেন নি।”[228]
হুমাইদ ইবন ‘আব্দুর রহমান রহ. থেকে (সনদসহ) বর্ণিত,
«عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، أَخْبَرَنِي حُمَيْدُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، أَنَّهُ سَمِعَ مُعَاوِيَةَ بْنَ أَبِي سُفْيَانَ، خَطِيبًا بِالْمَدِينَةِ يَعْنِي فِي قَدْمَةٍ قَدِمَهَا خَطَبَهُمْ يَوْمَ عَاشُورَاءَ، فَقَالَ: أَيْنَ عُلَمَاؤُكُمْ؟ يَا أَهْلَ الْمَدِينَةِ، سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: لِهَذَا الْيَوْمِ هَذَا يَوْمُ عَاشُورَاءَ، وَلَمْ يَكْتُبِ اللهُ عَلَيْكُمْ صِيَامَهُ، وَأَنَا صَائِمٌ، فَمَنْ أَحَبَّ مِنْكُمْ أَنْ يَصُومَ فَلْيَصُمْ، وَمَنْ أَحَبَّ أَنْ يُفْطِرَ فَلْيُفْطِرْ»
“তিনি একদিন মু‘আবিয়া ইবন আবু সুফিয়ান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে মদীনায় খুতবায় বলতে শুনলেন অর্থাৎ যখন মদীনায় এসেছিলেন তখন ‘আশুরার দিবসে তিনি তাদের উদ্দেশ্যে খুতবা দিয়েছিলেন। তাতে তিনি বলেছিলেন, হে মদীনাবাসী! তোমাদের ‘আলেমগণ কোথায়? আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এ দিন সম্পর্কে বলতে শুনেছি যে, এ হলো ‘আশুরা দিবস। তোমাদের ওপর এ দিনের সাওম ফরয করেন নি। তবে আমি সাওম পালন করছি। তাই তোমাদের মধ্যে যে সাওম পালন করতে পছন্দ করে, সে পালন করবে আর যে পছন্দ করে নি সে করবে না।”[229]
ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«قَدِمَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَدِينَةَ، فَوَجَدَ الْيَهُودَ يَصُومُونَ يَوْمَ عَاشُورَاءَ فَسُئِلُوا عَنْ ذَلِكَ؟ فَقَالُوا: هَذَا الْيَوْمُ الَّذِي أَظْهَرَ اللهُ فِيهِ مُوسَى، وَبَنِي إِسْرَائِيلَ عَلَى فِرْعَوْنَ، فَنَحْنُ نَصُومُهُ تَعْظِيمًا لَهُ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: نَحْنُ أَوْلَى بِمُوسَى مِنْكُمْ فَأَمَرَ بِصَوْمِهِ»
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (হিজরত করে) মদীনায় এলেন এবং তিনি ইয়াহূদীদেরকে ‘আশুরার দিন সাওম পালন করতে দেখতে পেলেন। এরপর তাদেরকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করার পর তারা বলল, এ সে দিন যে দিন আল্লাহ মূসা আলাইহিস সালাম ও বনী ইসরাঈলকে ফির‘আউনের ওপর বিজয়ী করেছিলেন। তাঁর সম্মানার্থে আমরা সাওম পালন করে থাকি। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “আমরা তোমাদের চেয়েও মূসা আলাইহিস সালামের অধিক নিকটবর্তী। অতঃপর তিনি এ দিনে সাওম পালন করার নির্দেশ দিলেন”।[230]
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَدِمَ الْمَدِينَةَ فَوَجَدَ الْيَهُودَ صِيَامًا، يَوْمَ عَاشُورَاءَ، فَقَالَ لَهُمْ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا هَذَا الْيَوْمُ الَّذِي تَصُومُونَهُ؟» فَقَالُوا: هَذَا يَوْمٌ عَظِيمٌ، أَنْجَى اللهُ فِيهِ مُوسَى وَقَوْمَهُ، وَغَرَّقَ فِرْعَوْنَ وَقَوْمَهُ، فَصَامَهُ مُوسَى شُكْرًا، فَنَحْنُ نَصُومُهُ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «فَنَحْنُ أَحَقُّ وَأَوْلَى بِمُوسَى مِنْكُمْ فَصَامَهُ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ»
ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় হিজরত করে ইয়াহূদীদেরকে ‘আশুরার দিন সাওম পালনরত দেখতে পেলেন। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা কোনো দিনের সাওম পালন করছ? তারা বলল, এ মহান দিন আল্লাহ মুসা আলাইহিস সালাম ও তাঁর সম্প্রদায়কে মুক্তি দিয়েছেন এবং ফির‘আউন ও তার জাতিকে ডুবিয়ে দিয়েছেন। এরপর মুসা আলাইহিস সালাম কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার লক্ষ্যে এ দিনে সাওম পালন করেছেন। তাই আমরাও এ দিনে সাওম পালন করছি। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “আমরা তো তোমাদের থেকে মূসা আলাইহিস সালামের অধিক নিকটবর্তী এবং হকদার। অতপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওম পালন করলেন এবং সাওম পালন করার জন্য সকলকে নির্দেশ দিলেন”।[231]
আবু মূসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«كَانَ يَوْمُ عَاشُورَاءَ يَوْمًا تُعَظِّمُهُ الْيَهُودُ، وَتَتَّخِذُهُ عِيدًا، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: صُومُوهُ أَنْتُمْ»
“ইয়াহূদী সম্প্রদায় ‘আশুরা দিবসের সম্মান প্রদর্শন করতো এবং তারা এ দিনকে ঈদ বলে গণ্য করতো। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা এ দিনে সাওম পালন কর”।[232]
আবু মূসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«كَانَ أَهْلُ خَيْبَرَ يَصُومُونَ يَوْمَ عَاشُورَاءَ، يَتَّخِذُونَهُ عِيدًا وَيُلْبِسُونَ نِسَاءَهُمْ فِيهِ حُلِيَّهُمْ وَشَارَتَهُمْ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «فَصُومُوهُ أَنْتُمْ»
“খায়বারের ইয়াহূদীরা ‘আশুরার দিন সাওম পালন করত, তারা এ দিনকে ঈদরূপে বরণ করত এবং তারা তাদের মহিলাদেরকে অলঙ্কার ও উত্তম পোশাকে সুসজ্জিত করত। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা এ দিনে সাওম পালন কর”।[233]
‘উবায়দুল্লাহ ইবন আবু ইয়াযীদ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমাকে শুনেছেন,
«وَسُئِلَ عَنْ صِيَامِ يَوْمِ عَاشُورَاءَ فَقَالَ: مَا عَلِمْتُ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَامَ يَوْمًا يَطْلُبُ فَضْلَهُ عَلَى الْأَيَّامِ إِلَّا هَذَا الْيَوْمَ وَلَا شَهْرًا إِلَّا هَذَا الشَّهْرَ يَعْنِي رَمَضَانَ».
“ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমাকে ‘আশুরার দিনে সাওম পালন করা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করার পর তিনি বললেন, এ দিন ব্যতীত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো দিনকে অন্য দিনের তূলনায় উত্তম মনে করে সেদিনে সাওম পালন করেছেন বলে আমার জানা নেই। অনুরূপভাবে রমযান ব্যতীত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো মাসকে অন্য মাসের তুলনায় শ্রেষ্ঠ মনে করে সাওম পালন করেছেন বলেও আমার জানা নেই।”[234]
হাকাম ইবন ‘আরাজ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«انْتَهَيْتُ إِلَى ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا، وَهُوَ مُتَوَسِّدٌ رِدَاءَهُ فِي زَمْزَمَ، فَقُلْتُ لَهُ: أَخْبِرْنِي عَنْ صَوْمِ عَاشُورَاءَ، فَقَالَ: إِذَا رَأَيْتَ هِلَالَ الْمُحَرَّمِ فَاعْدُدْ، وَأَصْبِحْ يَوْمَ التَّاسِعِ صَائِمًا، قُلْتُ: هَكَذَا كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَصُومُهُ قَالَ: نَعَمْ»
“আমি ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমার কাছে পৌঁছলাম। এ সময় তিনি যমযমের কাছে চাদর বিছানো অবস্থায় বসা ছিলেন। তখন আমি তাঁকে বললাম! আমাকে ‘আশুরা দিবসের সাওম পালন সম্পর্কে সংবাদ দিন। উত্তরে তিনি বললেন, মুহাররম মাসের চাঁদ দেখার পর তুমি এর তারিখগুলো গুণে রাখবে। এরপর নবম তারিখে সাওম অবস্থায় তোমার যেন ভোর হয়। তখন আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি সেদিন সাওম পালন করেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, করেছেন”।[235]
‘আব্দুল্লাহ ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«حِينَ صَامَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ عَاشُورَاءَ وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ قَالُوا: يَا رَسُولَ اللهِ إِنَّهُ يَوْمٌ تُعَظِّمُهُ الْيَهُودُ وَالنَّصَارَى فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: فَإِذَا كَانَ الْعَامُ الْمُقْبِلُ إِنْ شَاءَ اللهُ صُمْنَا الْيَوْمَ التَّاسِعَ قَالَ: فَلَمْ يَأْتِ الْعَامُ الْمُقْبِلُ، حَتَّى تُوُفِّيَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ»
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ‘আশুরার দিন সাওম পালন করেন এবং লোকদেরকে সাওম পালনের নির্দেশ দেন তখন সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! ইয়াহূদী এবং নাসারা এ দিনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে থাকে। এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ইনশাআল্লাহ আগামী বছর আমরা নবম তারিখেও সাওম পালন করব। বর্ণনাকারী বলেন, এখনো আগামী বছর আসে নি, এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যু হয়ে যায়।”[236]
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَئِنْ بَقِيتُ إِلَى قَابِلٍ لَأَصُومَنَّ التَّاسِعَ» وَفِي رِوَايَةِ أَبِي بَكْرٍ: قَالَ: يَعْنِي يَوْمَ عَاشُورَاءَ
‘আব্দুল্লাহ ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আমি যদি আগামী বছর বেচে থাকি তবে মুহাররমের নবম তারিখেও সাওম পালন করব”। আবু বকর রহ. বলেন, নবম তারিখই হচ্ছে ‘আশুরার দিন।[237]
সালামা ইবন আকও‘য়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«بَعَثَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَجُلًا مِنْ أَسْلَمَ يَوْمَ عَاشُورَاءَ، فَأَمَرَهُ أَنْ يُؤَذِّنَ فِي النَّاسِ: «مَنْ كَانَ لَمْ يَصُمْ، فَلْيَصُمْ وَمَنْ كَانَ أَكَلَ، فَلْيُتِمَّ صِيَامَهُ إِلَى اللَّيْلِ»
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আশুরার দিন আসলাম গোত্রের এক ব্যক্তিকে নির্দেশ দিয়ে পাঠালেন, সে যেন লোকদের মধ্যে এ কথা ঘোষণা করে যে যে সাওম পালন করেনি, সে যেন সাওম পালন করে এবং যে আহার করেছে, সে যেন রাত পর্যন্ত তার সাওম স্পর্শ করে”।[238]
রুবায়্যি‘ বিনত মু‘য়াওয়ায ইবন ‘আফরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«أَرْسَلَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ غَدَاةَ عَاشُورَاءَ إِلَى قُرَى الْأَنْصَارِ، الَّتِي حَوْلَ الْمَدِينَةِ: مَنْ كَانَ أَصْبَحَ صَائِمًا، فَلْيُتِمَّ صَوْمَهُ، وَمَنْ كَانَ أَصْبَحَ مُفْطِرًا، فَلْيُتِمَّ بَقِيَّةَ يَوْمِهِ فَكُنَّا، بَعْدَ ذَلِكَ نَصُومُهُ، وَنُصَوِّمُ صِبْيَانَنَا الصِّغَارَ مِنْهُمْ إِنْ شَاءَ اللهُ، وَنَذْهَبُ إِلَى الْمَسْجِدِ، فَنَجْعَلُ لَهُمُ اللُّعْبَةَ مِنَ الْعِهْنِ، فَإِذَا بَكَى أَحَدُهُمْ عَلَى الطَّعَامِ أَعْطَيْنَاهَا إِيَّاهُ عِنْدَ الْإِفْطَارِ»
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আশুরার দিন ভোরে এক ব্যক্তিকে মদীনার পার্শবর্তী আনসারী সাহাবীদের জনপদে এ নির্দেশ দিয়ে পাঠালেন, সে যেন এ ঘোষণা করে দেয় যে, সাওমরত অবস্থায় যার ভোর হয়েছে, সে যেন তার দিনকে পূর্ণ করে। আর যার ইফতার অবস্থায় ভোর হয়েছে, সে যেন তার দিনের অবশিষ্ট অংশ পানাহার থেকে বিরত অবস্থায় পূর্ণ করে। এরপর আমরা এ দিন সাওম পালন করতাম এবং আমাদের ছোট ছোট সন্তানদেরকেও আল্লাহ চাহে তো সাওম পালনে অভ্যস্ত করে তুলতাম। আমরা তাদেরকে মসজিদে নিয়ে যেতাম এবং তাদের জন্য পশমের খেলনা বানিয়ে দিতাম। যখন তারা খাওয়ার জন্য কাঁদত, তখন আমরা তাদেরকে সে খেলনা প্রদান করতাম। এমনি করে ইফতারের সময় হয়ে যেত।”[239]
সোমবার ও বৃহস্পতিবার সাওম পালন
আবু কাতাদা আল-আনসারী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত,
«أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سُئِلَ عَنْ صَوْمِ الِاثْنَيْنِ؟ فَقَالَ: فِيهِ وُلِدْتُ وَفِيهِ أُنْزِلَ عَلَيَّ»
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে সোমবারের সাওম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ঐ দিন আমার জন্ম হয়েছে এবং ঐ দিন আমার ওপর (কুরআন) নাযিল হয়েছে”।[240]
‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَتَحَرَّى صَوْمَ الاِثْنَيْنِ وَالخَمِيسِ».
কেউ স্বাভাবিক সাওমের সাথে অন্য কিছু যেমন চুপ থাকা ইত্যাদি মিশ্রিত করে
ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«بَيْنَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَخْطُبُ، إِذَا هُوَ بِرَجُلٍ قَائِمٍ، فَسَأَلَ عَنْهُ فَقَالُوا: أَبُو إِسْرَائِيلَ، نَذَرَ أَنْ يَقُومَ وَلاَ يَقْعُدَ، وَلاَ يَسْتَظِلَّ، وَلاَ يَتَكَلَّمَ، وَيَصُومَ. فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مُرْهُ فَلْيَتَكَلَّمْ وَلْيَسْتَظِلَّ وَلْيَقْعُدْ، وَلْيُتِمَّ صَوْمَهُ، قَالَ عَبْدُ الوَهَّابِ، حَدَّثَنَا أَيُّوبُ، عَنْ عِكْرِمَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ»
“একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবা প্রদান করছিলেন। এক ব্যক্তিকে দাঁড়ানো দেখে তার সম্পর্কে লোকদের কাছে জিজ্ঞাসা করলেন। লোকেরা বলল যে, এ লোকটির নাম আবু ইসরাঈল। সে মানত করেছে যে, দাঁড়িয়ে থাকবে, বসবে না, ছায়াতে যাবে না, কারও সঙ্গে কথা বলবে না এবং সাওম পালন করবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, লোকটিকে বলে দাও সে যেন কথা বলে, ছায়াতে যায়, বসে এবং তার সাওম সমাপ্ত করে। ‘আব্দুল ওয়াহহাব, আইউব ও ‘ইকরামা রহ. এর সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অত্র হাদীস বর্ণনা করেছেন।”[242]
রমযানে ‘উমরা পালনের ফযীলত
ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«أَرَادَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْحَجَّ فَقَالَتْ: امْرَأَةٌ لِزَوْجِهَا أَحِجَّنِي مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى جَمَلِكَ، فَقَالَ: مَا عِنْدِي مَا أُحِجُّكِ عَلَيْهِ، قَالَتْ: أَحِجَّنِي عَلَى جَمَلِكَ فُلَانٍ، قَالَ: ذَاكَ حَبِيسٌ فِي سَبِيلِ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ، فَأَتَى رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: إِنَّ امْرَأَتِي تَقْرَأُ عَلَيْكَ السَّلَامَ وَرَحْمَةَ اللَّهِ، وَإِنَّهَا سَأَلَتْنِي الْحَجَّ مَعَكَ، قَالَتْ: أَحِجَّنِي مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقُلْتُ: مَا عِنْدِي مَا أُحِجُّكِ عَلَيْهِ، فَقَالَتْ أَحِجَّنِي عَلَى جَمَلِكَ فُلَانٍ، فَقُلْتُ: ذَاكَ حَبِيسٌ فِي سَبِيلِ اللَّهِ، فَقَالَ: أَمَا إِنَّكَ لَوْ أَحْجَجْتَهَا عَلَيْهِ كَانَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ؟ قَالَ: وَإِنَّهَا أَمَرَتْنِي أَنْ أَسْأَلَكَ مَا يَعْدِلُ حَجَّةً مَعَكَ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَقْرِئْهَا السَّلَامَ وَرَحْمَةَ اللَّهِ وَبَرَكَاتِهِ، وَأَخْبِرْهَا أَنَّهَا تَعْدِلُ حَجَّةً مَعِي يَعْنِي عُمْرَةً فِي رَمَضَانَ»
“রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজের (বিদায় হজ) ইচ্ছা পোষণ করলে জনৈকা মহিলা (উম্মে মা‘কাল) তার স্বামীকেবলেন, আমাকে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমার নিকট এমন কোনো উট নেই, যার দ্বারা আমি তোমাকে হজে গমনের ব্যবস্থা করতে পারি।তখন সে স্ত্রীলোক বলেন, আমাকে আপনার অমুক উটের দ্বারা হজে প্রেরণের ব্যবস্থা করুন।জবাবে তিনি (স্বামী) বললেন, এটা (উক্ত উট) তো আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের জন্য আবদ্ধ। তখন উক্ত ব্যক্তি (স্বামী) রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে উপস্থিত হয়ে বলেন, আমার স্ত্রী আপনাকে সালাম বলেছেন। আর তিনি আমার নিকট আপনার সাথে হজে যাওয়ার জন্য বায়না ধরেছেন এবং বলেছেন, আমাকে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে হজে গমনের ব্যবস্থা করে দিন। তখন আমি তাকে বলছি, আমার নিকট এমন কিছু নেই, যার দ্বারা আমি তোমাকে হজে পাঠাতে পারি। তখন সে বলেছে, আমাকে আপনার অমুক উষ্ট্রযোগেহজে প্রেরণ করুন। তখন আমি তাকে বলি, এ উট তো আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের জন্য আবদ্ধ অর্থাৎ নির্ধারিত। এতদশ্রবণে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমার পক্ষ থেকে তাকে সালাম দেবে এবং বলবে, রমযানে উমরা পালন আমার সাথে হজের সওয়াবের সমতুল্য হবে।”[243]
লেখক: আব্দুল্লাহ আল মামুন আল-আযহারী
عبد الله المأمون الأزهري
সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
مراجعة: د/ أبو بكر محمد زكريا
উৎস: ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন