Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

See Our Articles In Different Styles... Grid View List View

সোমবার, ২১ অক্টোবর, ২০২৪

প্লাস্টিক সার্জারি করার হুকুম

Views:

A+ A-

প্লাস্টিক সার্জারি করার হুকুম 



المكتب التعاوني للدعوة وتوعية الجاليات بالربوة بمدينة الرياض

প্রশ্ন: আমি আমার নাকে প্লাস্টিক সার্জারি সম্পন্ন করতে চাই। এটা কি হারাম হবে? আমি নাক নিয়ে মানসিক যাতনায় কালাতিপাত করি, আমার জীবনের উপরও এর নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। চিকিৎসক বলেছেন আমার অপারেশন করা জরুরি। 

উত্তর:
আলহামদু লিল্লাহ । 

প্লাস্টিক সার্জারি দু’ভাগে ভাগ করা যায়: 
১. প্রয়োজনীয় সার্জারি 
অর্থাৎ এমন অপারেশন যা কোনো ত্রুটি সারাতে চলানো হয়, যেমন অসুস্থতা থেকে উদ্ভূত ত্রুটি, উদাহরণ হিসেবে বলা যায় ট্রাফিক এক্সিডেন্ট অথবা আগুনে পুড়ে গেলে কোনো ত্রুটির উন্মেষ, ইত্যাদি। অথবা কোনো জন্মগত ত্রুটি সারাতে চালিত অপারেশন, যেমন অতিরিক্ত অঙ্গুলি ফেলা দেওয়া, অথবা অকেজো অঙ্গুলি ফেলে দেওয়ার জন্য অপারেশন ইত্যাদি
এ প্রকৃতির অপারেশন অনুমোদিত। হাদিস থেকে এ ধরনের অপারেশনের পক্ষে সমর্থন পাওয়া যায়। উপরন্তু যে ব্যক্তি এ ধরনের অপারেশন করতে চায় আল্লাহর সৃষ্টি পরিবর্তন করা তার উদ্দেশ্য নয়।
(ক) আরফাজাহ ইবনে আসআদ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে জাহিলিয়াতের যুগে আল কুলাব যুদ্ধে তার নাক কেটে যায়। ফলে তিনি রূপা দিয়ে তৈরি একটি নাক ব্যবহার করেন। তবে তা ময়লাবিদ্ধ হয়ে যায়। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে স্বর্ণের তৈরি একটি নাসিকা ব্যবহার করতে বলেন। [ তিরমিযি: ১৭৭০; আবু দাউদ,৪২৩২; নাসায়ি,৫১৬১. শায়খ আলবানি ইরওয়াউল গালীল গ্রন্থে (৮২৪) হাদিসটি হাসান বলেছেন। 
(খ) বর্ণনায় এসেছে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাযিঃ) বলেন: আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে লানত করতে শুনেছি অই নারীকে যে তার আইব্রু উৎপাটন করে এবং যে তার দাঁতকে যন্ত্র দিয়ে ঘর্ষণ করে মসৃণ বানায় কেবল সৌন্দর্যের জন্য। আর এভাবে আল্লাহর সৃষ্টিকে পরিবর্তন করে।[ বুখারি ও মুসলিম]  
ইমাম নববি রা. বলেন: ‘যারা তাদের দাঁত যন্ত্র দিয়ে মসৃণ করে’ এর অর্থ যারা এরূপ করে সৌন্দর্যের উদ্দেশে এবং বয়স কম বলে প্রতিভাত হওয়ার জন্য। এর দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে সৌন্দর্যবর্ধনের উদ্দেশে যদি প্লাস্টিক সার্জারি করা হয় তাহলে তা হারাম বলে বিবেচিত হবে। তবে যদি চিকিৎসার প্রয়োজনে হয়, অথবা দাঁতের কোনো ত্রুটি সারার প্রয়োজনে হয় তবে তা বৈধ বলে গণ্য হবে । এতে দোষের কিছু নেই। 


২- দ্বিতীয় প্রকারের প্লাস্টিক সার্জারি হল যা কেবল সৌন্দর্যের জন্য করা হয়। 
অর্থাৎ যা কেবল দ্রষ্টার নজরে সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেওয়ার উদ্দেশে করা হয়, যেমন নাসিকা অপারেশন করে ছোটকায় করা, অথবা স্তনে অপারেশন চালিয়ে ছোট বা বড় করা। চেহারা চামড়া টানটান করার উদ্দেশে অপারেশন করা ইত্যাদি।
এ ধরনের সার্জারি বিশেষ কোনো প্রয়োজনের জন্য হয় না। এ ধরনের সার্জারির উদ্দেশ্য বরং আল্লাহর সৃষ্টিকে পরিবর্তন করে দেওয়া। মানুষের খেয়াল খুশি মত আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে তামাশা করা। এ ধরনের অপারেশন এ কারণেই হারাম। কারণ এতে আল্লাহর সৃষ্টিকে পরিবর্তন করে দেওয়া হয়। ইরশাদ হয়েছে:    
১১৭. আল্লাহ ছাড়া তারা শুধু নারীমূর্তিকে ডাকে এবং কেবল অবাধ্য শয়তানকে ডাকে।
১১৮. আল্লাহ তাকে লানত করেছেন, এবং সে বলেছে আমি অবশ্যই তোমার বান্দাদের এক নির্দিষ্ট অংশকে ( অনুসারী হিসেবে ) গ্রহণ করব। 
১১৯. আর অবশ্যই আমি তাদেরকে পথভ্রষ্ট করব, মিথ্যা আশ্বাস দেব এবং অবশ্যই তাদেরকে আদেশ দেব, ফলে তারা পশুর কান ছিদ্র করবে এবং অবশ্যই তাদেরকে আদেশ করব, ফলে অবশ্যই তরা আল্লাহর সৃষ্টি বিকৃত করবে। আর যারা আল্লাহর পরিবর্তে শয়তানকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করে, তারা তো স্পষ্টই ক্ষতিগ্রস্ত হল। 
[সূরা নিসা: ১১৭-১১৯] 
শয়তানই মানুষকে আল্লাহর সৃষ্টিতে পরিবর্তন সাধনের নির্দেশ দেয়। 
দেখুন : শায়খ মুহাম্মদ আল মুখতার আশশিনকিতি, আহকাম আল জিরাহা আত্তিব্বিইয়াহ

শায়খ মুহাম্মদ সালেহ আল উসাইমিন রা. কে প্লাস্টিক সার্জারি করা এবং এ বিষয়ক জ্ঞানে শিক্ষিত হওয়ার হুকুম কি এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। উত্তরে তিনি বলেছিলেন:
প্লাস্টিক সার্জারি দু’ প্রকার:
১- এক্সিডেন্ট ইত্যাদি জনিত ত্রুটি সারার উদ্দেশে কৃত সার্জারি। এ জাতীয় নার্সারিতে কোনো অপরাধ নেই; কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুদ্ধে নাসিকা-কর্তিত ব্যক্তিকে অনুমতি দিয়েছেন স্বর্ণের তৈরি নাসিকা পরিধান করার জন্য।
২- ত্রুটি সারার জন্য নয় বরং কেবল সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য অপ্রয়োজনীয়ভাবে সার্জারি করা। এটা হারাম এবং অনুমতিরুদ্ধ; কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আইভ্রূ উৎপাটনকারী নারীকে লানত করেছেন। তিনি তাদেরকেও লানত করেছেন যারা চুলের প্রসারণকে কর্তন করে, যাদের চুলের প্রসারণকে কর্তন করা হয়, যারা উলকি আঁকে এবং যাদের জন্য উলকি আঁকা হয়। কেননা এ ধরনের কাজ কেবলই সৌন্দর্য বৃদ্ধির উদ্দেশেই করা হয়ে থাকে। কোনো ত্রুটি দূর করার উদ্দেশে করা হয় না।
মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রদের মধ্য যারা প্লাস্টিক সার্জারি নিয়ে পড়াশোনা করে তাদের ব্যাপারে বলা যায় যে, এ বিদ্যা শেখায় কোনো অপরাধ নেই। তবে তাদেরকে অবশ্যই হারাম প্রকৃতির সার্জারি থেকে বিরত থাকতে হবে। উপরন্তু যারা হারামজাতীয় প্লাস্টিক সার্জারি করতে আসবে তাদেরকে সে এ বিষয়ে বোঝাবে, বলবে যে এটা হারাম। একজন ডাক্তারের মুখে যখন কোনো ব্যক্তি এ ধরনের উপদেশ শুনবে এটা তার উপর অধিক প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা যায়। 
আল পাতাইয়া আল ইসলামিয়া, ৪,৪১২.
উপসংহারে বলব, যদি নাকে কোনো ত্রুটি থাকে তবে সে ত্রুটি সারার জন্য প্লাস্টিক সার্জারি করা চলে। আর যদি কোনো ত্রুটি না থাকে বরং কেবল সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য করা হয় তবে তা হারাম হবে। শরীয়তে এ ব্যাপারে অনুমোদন নেই। 

সমাপ্ত

মুফতী : মুহাম্মাদ সালেহ আল মুনাজ্জিদ

http://www.islamqa.com


 ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব
সূত্র : www.islamqa.info




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন