Views:
A+
A-
মোবাইল ফোনে কথা বলার নিয়ম
মসজিদে এতেকাফ অবস্থায় মোবাইল ব্যবহার না করাই ভালো
মসজিদের ছাদে মোবাইলের টাওয়ার বসানো জায়েয নয়
মোবাইলে আগে সালাম দিবে কে?
বাচ্চাদের কান্না থামানোর জন্য নাজায়েয রিংটোন বাজানো মারাক অন্যায়
মোবাইলে কোরআন তিলাওয়াত রেকর্ড করা
ম্যাসেজের মাধ্যমে ছবি প্রেরণ
মোবাইল দ্বারা ছবি তোলা বা ভিডিও করা
ভুল ব্যালেন্স : শরিয়তের দৃষ্টিতে
দ্বিতীয় অধ্যায়
সমাপ্ত
মোবাইল ফোন ব্যবহার: বৈধতার সীমা কতটুকু?
লেখকের কথা
মোবাইল
ফোনকে কেন্দ্র করে একটি বই লিখার ইচ্ছা বহুদিন থেকেই আমার ছিল। এই বই
প্রকাশের মাধ্যমে সে ইচ্ছা পূরণ হতে যাচ্ছে। তাই মহান আল্লাহর দরবারে জানাই
লাখো-কোটি শুকরিয়া।
যুগে
যুগে বিজ্ঞানীগণ যত নতুন নতুন জিনিস আবিষ্কার করেছেন হক্বানী উলামায়ে
কেরাম নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমে কোরআন-হাদিস মন্থন করে সেসব ক্ষেত্রে
শরিয়তের দৃষ্টিভঙ্গি ও তৎসম্পর্কিত যাবতীয় মাসআলা-মাসায়েল অত্যন্ত সুন্দর ও
সুষ্ঠুভাবে লিপিবদ্ধ করে গেছেন। ভবিষ্যতেও যত নতুন জিনিস আবিষ্কার হবে
উলামায়ে কেরাম কোরআন ও সুন্নাহের আলোকে তার সঠিক সমাধান পেশ করে যাবেন,
ইনশাআল্লাহ।
বর্তমান
বিশ্বে যেসব নতুন আবিষ্কার অতি দ্রুত শহর-বন্দর ও গ্রাম-গঞ্জের আনাচে
কানাচে ছড়িয়ে পড়েছে তন্মধ্যে মোবাইল ফোন একটি উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার।
ধনী-গরীব, পুরুষ-মহিলা, যুবক-বৃদ্ধ- সকলের হাতেই এখন মোবাইল ফোন শোভা পায়।
ক্ষুদ্র এই যন্ত্রটি আবিষ্কারের ফলে একদিকে যেমন সুযোগ-সুবিধার বিশাল দ্বার
উন্মুক্ত হয়েছে তেমনি মোবাইলের মাধ্যমে মহামূল্যবান সময় নষ্টসহ নানাবিধ
গুনাহের কাজে জড়িয়ে পড়ারও সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে মারাত্মকভাবে। অনেকে মোবাইলকে
প্রয়োজনের চেয়ে অপ্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার করছে বেশি। আবার অনেকে ব্যবহার
করছে অন্যায় কাজে।
টেলিভিশন,
সিনেমা ইত্যাদি দেখা গুনাহের কাজ- একথা সবার জানা থাকার কারণে উচুঁ
পর্যায়ের দীনদার লোকেরা তো বটেই, অসংখ্য সাধারণ দীনদার লোকেরাও অন্তত
লোক-লজ্জার ভয়ে হলেও এসব থেকে দূরে থাকত। কিন্তু মোবাইল ফোন আবিষ্কারের পর
উহার বৈধতার সুযোগ নিয়ে অনেক লোক তাকে 'জায়েয ও বৈধ ব্যবহারের পাশাপাশি
নানাবিধ অবৈধ ও গুনাহের কাজে' ব্যবহার করছে। যেমন, গান শোনা, ছবি তোলা, ছবি
দেখা, ভিডিও করা ইত্যাদি। মোবাইলের মাধ্যমে এসব গুনাহের কাজ ইচ্ছা করলে
লোকচক্ষুর অন্তরালেও করা সম্ভব বিধায় এসবের পরিমাণ ও মাত্রা দ্রুতগতিতে
বৃদ্ধি পাচ্ছে। উপরন্তু মোবাইল ও তার বিভিন্ন বিষয়ের শরয়ি বিধান সম্পর্কে
না জানার কারণে অসংখ্য লোক বুঝতেই পারছে না যে, মোবাইল দ্বারা কিভাবে তাদের
গুনাহ হয়ে যাচ্ছে। বুঝতে পারছে না, মোবাইল ব্যবহারের কোন্ কোন্ ক্ষেত্রে
অহরহ তাদের ভুল-ত্রুটি সংঘটিত হচ্ছে।
মোবাইল ফোন ব্যবহার: বৈধতার সিমা কতটুকু?-
এই বইখানা আমি এজন্য লিখেছি, যাতে পাঠকবৃন্দ বুঝতে পারেন, মোবাইল নামক এই
বৈধ যন্ত্রটির বৈধতারও একটি সিমা আছে। যতক্ষণ এই সিমার ভিতর থেকে তা
ব্যবহার করা হবে ততক্ষণই তা আমাদের জন্য কল্যাণ ও মঙ্গল বয়ে আনবে। কিন্তু
যখনই সিমা অতিক্রম করা হবে- তখনই তা আমাদের জন্য কল্যাণের না হয়ে অকল্যাণের
বস্তু হিসেবে পরিগণিত হবে। যার অনিবার্য ফল হিসেবে আমাদের জন্য বরাদ্দ
হবে- ফেতনা-ফাসাদ, অশান্তি ও পেরেশানি। সেই সাথে পরকালীন কঠিন শাস্তি তো
আছেই!
পূর্ববর্তী
বইগুলোতে এই বইয়ের এলানে এর নাম দেওয়া হয়েছিল মোবাইল ফোন : বৈধতার সিমা
কতুটুক? কিন্তু পরে বড়দের সাথে পরামর্শ করে উক্ত নামটির মধ্যে সামান্য
পরিবর্তন করে বর্তমান নামটি রাখা হয়েছে।
আমি
এই গ্রন্থে মোবাইল সংক্রান্ত ৩টি ঘটনা ও প্রয়োজনীয় মাসায়েলগুলো খুব সহজ
ভাষায় লিপিবদ্ধ করে কয়েকজন মুফতী সাহেবকে দেখিয়েছি। তাদের পরামর্শ নিয়েছি।
চেষ্টা করেছি, এই বইটি যেন মোবাইল ফোন বিষয়ক একটি পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থের রূপ
লাভ করে। এক্ষেত্রে মাসিক আল কাউসারসহ বেশকিছু পত্র-পত্রিকা আমার যথেষ্ট
উপকারে এসেছে। সত্যি বলতে কি, এসব পত্র-পত্রিকার সহায়তা না নিলে এই বইয়ের
সমাপ্তি হয়তো আরো অনেক পরে হতো।
মোবাইল
সংক্রান্ত আরও কয়েকটি শিক্ষণীয় ঘটনা এই বইয়ে লিপিবদ্ধ করার ইচ্ছা ছিল।
কিন্তু স্থান সংকুলান না হওয়ায় সেই ইচ্ছার বাস্তবায়ন সম্ভব হলো না। তবে এসব
ঘটনা পরবর্তী বই আদর্শ যুবক-যুবতী-২-এর মধ্যে অবশ্যই লিখব, ইনশাআল্লাহ।
একই কারণে অর্থাৎ জায়গার অভাবে পাঠকের মতামতও মাত্র এক পৃষ্ঠায় দেওয়া হলো।
আশা করি পাঠকবৃন্দ এ বিষয়টিকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
বই
প্রকাশের ক্ষেত্রে আমাকে যারা নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন তাদের মধ্যে মুফতী
শফীউল্লাহ, মুফতী হুযাইফা, মুফতী জহিরুল ইসলাম ও মাস্টার আব্দুল হালীমের
নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। দোয়া করি, আল্লাহ তাআলা তাদের সবাইকে জান্নাতুল
ফিরদাউসের আ'লা মাকাম নসীব করুন এবং এই বইকে লেখক, প্রকাশক ও সম্পাদকসহ
সকলের নাজাতের ওসিলা হিসেবে কবুল করুন। আমীন।
দোয়াপ্রার্থী
মুহাম্মদ মুফীজুল ইসলাম
...........................................................................................................................
সূচির পাতা
প্রথম অধ্যায়
মোবাইল ফোন ও বর্তমান সমাজ : আমাদের করণীয়
মোবাইল ফোন ও নামাজ
নামাজরত অবস্থায় রিং বেজে উঠলে কী করবেন?
দু'হাত ব্যবহার ব্যতীত রিং বন্ধ করা সম্ভব না হলে...
রিং বন্ধ করতে সিজদা থেকে উঠা যাবে কি?
একই নামাজে কতবার রিং বন্ধ করা যাবে?
স্ক্রীনে প্রাণীর ছবি সেভ করা মোবাইল সামনে রেখে নামাজ পড়া
মোবাইল ফোন ও মসজিদ
মসজিদে প্রবেশের পূর্বেই কি মোবাইল/রিংটোন বন্ধ করা জরুরি?
মসজিদের ভিতর মোবাইলে ভাইব্রেশন দিয়ে রাখা উচিত হবে কি?
মসজিদে একজনের মোবাইলে রিং বেজে উঠলে অন্যরা কী করবে?
মসজিদের ভিতর মোবাইলে দুনিয়াবি কথাবার্তা বলা যাবে কি?
মসজিদে এতেকাফ অবস্থায় মোবাইল ব্যবহার না করাই ভালো
মসজিদের ছাদে মোবাইলের টাওয়ার বসানো জায়েয নয়
মসজিদের বিদ্যুৎ দ্বারা মোবাইল চার্জ করা যাবে কি?
মসজিদে অবস্থানরত এতেকাফকারীর মোবাইল দ্বারা ব্যবসা করা
মোবাইল ফোন ও সালাম
আগে হ্যালো নাকি সালাম?
মোবাইলে আগে সালাম দিবে কে?
উভয়ের সালাম এক সাথে হয়ে গেল করণীয় কি?
বারবার ফোন করার প্রয়োজন হলে প্রতিবারই সালাম দেওয়া সুন্নত
ম্যাসেজের মাধ্যমে সালাম : জবাব দিবেন যেভাবে
মোবাইলে গাইরে মাহরাম মহিলাদেরকে সালাম দেওয়া জায়েয হবে কি?
মোবাইলে কাউকে সালাম পৌঁছানোর জন্য বলা
মোবাইলে কি শুধু ছোটরা বড়দেরকে সালাম দিবে?
না জেনে মোবাইলে অমুসলমানকে সালাম দিলে গুনাহ হবে কি?
মোবাইল ফোন ও রিংটোন
রিংটোন হিসেবে আজানের ব্যবহার নাজায়েয
রিংটোন হিসেবে গান ও মিউজিক কখনোই ব্যবহার করবেন না
রিংটোন হিসেবে সালামের ব্যবহার নাজায়েয নয়
বাচ্চাদের কান্না থামানোর জন্য রিংটোন বাজানো মারাত্মক অন্যায়
মোবাইল ফোন ও মিসড্কল
অযথা মিসড্কল দিয়ে কাউকে বিরক্ত করা জায়েয নেই
কখন মিসড্কল দেওয়া জায়েয?
মোবাইল ফোন ও ওয়েলকাম টিউন
ওয়েলকাম টিউন হিসেবে গানের ব্যবহার শক্ত গুনাহ
ওয়েলকাম টিউন হিসেবে তিলাওয়াতের ব্যবহারও জায়েয নয়
মোবাইল ফোন ও ফ্লেক্সিলোড
ফ্লেক্সিলোড করে ফ্লেক্সিকৃত অর্থের চেয়ে বেশি গ্রহণ করা জায়েয
ফ্লেক্সিলোড করার সময় টাকা অন্যত্র চলে গেলে...
অজ্ঞাত স্থান থেকে ফ্লেক্সি এসে গেলে কী করবেন?
ভুল ফ্লেক্সিকারীর দেওয়া ছাড় গ্রহণ করা যাবে কি?
মোবাইল ফোন ও জাকাত
ব্যালেন্সে অবস্থিত টাকার জাকাত দিতে হবে কি?
সিকিউরিটি ডিপোজিটের জাকাত দিতে হবে
ফ্লেক্সি ব্যবসায়ীদের জমাকৃত টাকার জাকাত
মোবাইল ফোনের ক্রয়-বিক্রয়
ক্যামেরাযুক্ত মোবাইলের ক্রয়-বিক্রয় নাজায়েয নয়, তবে...
চুরি ও ছিনতাইকৃত মোবাইল সেট ক্রয় করা জায়েয নেই
সাধারণ সেট নামিদামি কোম্পানির নামে চালানোও নাজায়েয
মোবাইল ফোন : বিবিধ
তালিবে ইল্মদের হাতে মোবাইল!
মোবাইলে কোরআন তিলাওয়াত রেকর্ড করা
মোবাইলে লিখিত কোরআন রেকর্ড করা
মোবাইল স্ক্রীনে ছবি সেভ করে রাখা/
মোবাইল স্ক্রীনে আয়াত, জিকির বা এগুলোর ক্যালিগ্রাফী সেভ করা
ম্যাসেজের মাধ্যমে ছবি প্রেরণ
মোবাইল দ্বারা ছবি তোলা বা ভিডিও করা
নির্ধারিত সময়ে খরচের শর্তে বোনাস ঘোষণা ও তার হুকুম
সর্বোচ্চ এসএমএসকারীকে পুরস্কার প্রদান
ইনকামিং কলের উপর প্রাপ্ত বোনাস বৈধ
ডাউনলোড ব্যবসা কি জায়েয?
কল রিসিভের সুবিধা দিয়ে বিনিময় নেওয়া
কল রিসিভের আগের সময়ের বিল নেওয়া জায়েয নয়
ভুল নাম্বারে কল চলে গেলে বিল দেবে কে?
পরবর্তী মিনিটের ১/২ সেকেণ্ড হলেও পুরো মিনিটের বিল নেওয়া জায়েয
মোবাইল কার্ড নির্ধারিত মূল্য থেকে কম-বেশিতে বিক্রয় করা জায়েয হবে কি?
ভুল ব্যালেন্স : শরিয়তের দৃষ্টিতে
নির্ধারিত বিলের চেয়ে বেশি বিল করলে...
ইন্টারনেটে মোবাইল সার্চ করার হুকুম
মেমোরী কার্ড ও ডাটা ক্যাবল ক্রয়-বিক্রয় জায়েয
পণ্যসামগ্রীর দোকান থেকে প্রাপ্ত ছাড় গ্রহণ করা জায়েয
বোনাস টকটাইম ব্যবহার করা বৈধ
মোবাইল ফোনে ভিডিও গেমস্
মোবাইল থেকে গান শুনা বা মোবাইল দিয়ে ছবি তোলা
মোবাইলে ক্রিকেট, ফুটবল ইত্যাদি খেলা দেখা
বিনা অনুমতিতে কারো কথা মোবাইলে রেকর্ড করা যাবে কি?
মোবাইল থেকে দীনি আলোচনা শুনা
কোনো স্টেশনে মোবাইল চার্জ করা
মোবাইল ফোনে বিয়ে
মোবাইল ফোনে বন্ধুত্ব
পাওনাদারের তাগাদা থেকে বাঁচার জন্য মোবাইল বন্ধ রাখা জায়েয নয়
উলামায়ে কেরামের হাতে ক্যামেরাযুক্ত মোবাইল
মোবাইল ফোনে তালাক
ক্যামেরাযুক্ত মোবাইল : পাশ্চাত্যের যড়যন্ত্র
ক্লাস চলাকালে মোবাইলে কথা বলা
মহিলা কর্তৃক মোবাইল রিসিভ করা
অটো রিসিভ করে রাখা জায়েয আছে কি?
গভীর রাতে কল করা
দুষ্টুমী করেও মোবাইলে কাউকে হুমকি দেওয়া নাজায়েয
অহেতুক অন্যের মোবাইল টিপাটিপি করা জায়েয নেই
একই সাথে কতবার রিং দেওয়া যাবে?
কেউ ক্যামেরাযুক্ত সেট উপহার দিলে...
মোবাইল যেন ফ্যাশন না হয়!
বিনা অজুতে কোরআন শরিফ রেকর্ডকৃত মোবাইল স্পর্শ করা
মানুষের সামনে স্ত্রীর সাথে কথা বলা
মোবাইলে রোগীর খোঁজ-খবর লওয়া বা বুযুর্গদের কাছে দোয়া চাওয়া
বারবার সিম পরিবর্তন অপছন্দনীয়
মোবাইল কোম্পানির বোনাস অফার!
মোবাইল ফোনে কথা বলার নিয়ম
মোবাইলে কথা বলার সময় প্রথমে যা করতে হবে
সতর্কতা সত্ত্বেও ভুল নম্বরে কল চলে গেলে
যদি আপনার কাছে কারো কল ভুলে চলে আসে
মোবাইলে কথা বলার সময় ২য় পর্যায়ে যা করতে হবে
মোবাইলে কথা বলার সময় ৩য় পর্যায়ে যা করতে হবে
মোবাইলে কথা বলার সময় ৪র্থ পর্যায়ে যা করতে হবে
মোবাইলে কথা বলার সময় ৫ম পর্যায়ে যা করতে হবে
মোবাইলে কথা বলার সময় সবশেষে যা করতে হবে
মোবাইল ফোনে কথা বলার আরো কিছু প্রাসঙ্গিক নিয়ম
সালামের জবাব শেষ হওয়ার পূর্বে লাইন কেটে দিবেন না
বড়দের সাথে কথা বলার সময় আগে ফোন রাখবেন না
ভদ্রতার সুযোগ না নেওয়াই ভদ্রতার পরিচয়!
কাউকে ডেকে দেওয়ার জন্য যেভাবে বলা উচিত
যদি অন্য সময় ফোন করতে বলে
ভুলে চাপ পড়ে আপনার মোবাইলে কল চলে এলে
উলামায়ে কেরামের সাথে যেভাবে কথা বলবেন
জামাতের সময় কল করবেন না
ফজরের জামাত শেষ হতেই কল না করা উচিত
যথাসময়ে কল করুন
আমাদের যেন এমন ভুল কখনো না হয়
সব প্রয়োজন মোবাইলে সারার চেষ্টা করা উচিত নয়
যানবাহনে যেভাবে কথা বলবেন
ফ্রী অফার পেলে অপ্রয়োজনীয় কথা বলা যাবে কি?
রিং কেটে দিলে কী করবেন?
মোবাইল ফোন : কিছু জরুরি পরামর্শ
দ্বিতীয় অধ্যায় : শিক্ষণীয় ঘটনাবলী
হায় মোবাইল ফোন!
বন্ধুত্ব নষ্ট হলো
স্বপ্নের সংসার!
...........................................................................................................................
জরুরি জ্ঞাতব্য
এই
বইয়ে বর্ণিত বেশিরভাগ মাসআলায় বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য কিতাবাদির উদ্ধৃতি
উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলো মূলতঃ কোরআন, হাদিস ও ফিক্হের ওইসব নীতিমালার
উদ্ধৃতি যার আলোকে এই সমাধানগুলো পেশ করা হয়েছে। কেননা উল্লেখিত প্রাচীন
কিতাবাদিতে স্পষ্টভাবে মোবাইল ফোনের কথা যে থাকবে না তা বলাই বাহুল্য।
...........................................................................................................................
মূল বই শুরু
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
প্রথম অধ্যায়
মোবাইল ফোন ও বর্তমান সমাজ : আমাদের করণীয়
মোবাইল
ফোন আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের এক অনন্য উপহার যা মানুষের জীবনকে করেছে আরো
গতিময়। যে কাজের জন্য আগে এক সপ্তাহ সময় লাগতো সেই কাজ এখন মোবাইলের
মাধ্যমে মহূর্তের মধ্যে হয়ে যাচ্ছে। বলতে গেলে, পৃথিবীকে এখন আমাদের হাতের
মুঠোয় এনে দিয়েছে- মোবাইল ফোন। তাই মোবাইল ফোন আমাদের বন্ধু। আমাদের জীবন
চলার সহায়ক। কিন্তু একথা সত্য যে, মোবাইল ফোন আমাদের বন্ধু হলেও এর কিছু
অপব্যবহারের ফলে এটি আজ কারো কারো জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে
তরুণ-তরুণী ও ছাত্র-ছাত্রীরা এর করুণ শিকার। তাদের জন্য মোবাইল ফোনকে অনেক
ক্ষেত্রে অভিশাপই বলা যায়। কেননা আধুনিক এই ক্ষুদ্র যন্ত্রটি তাদের সমস্ত
সময়কে গ্রাস করে নিয়েছে। ঘরে, বাইরে, ক্লাসে ও হলে সব জায়গায় তাদের ফোন আর
ফোন। মোবাইল ফোনের কল্যাণে (?) তারা অনেকেই যথাসময়ে ক্লাসে উপস্থিত হতে
পারে না। পারে না ঠিকমত ঘুমোতেও। কোম্পানির অফার পেয়ে রাত জেগে জেগে তারা
প্রিয়জনদের (?) সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলে। ফলে একদিকে যেমন তাদের নৈতিক
অবক্ষয় ও চারিত্রিক অধঃপতন ঘটছে, ঠিক তেমনি দৈনন্দিন জরুরি কাজেও ব্যাঘাত
ঘটছে চরমভাবে!!
প্রত্যেক
পিতা-মাতা অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে স্বীয় সন্তানের ভালো লেখাপড়া আশা
করেন। তারা স্বপ্ন দেখেন, তাদের ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়া শিখে অনেক বড় হবে,
মানুষের মতো মানুষ হবে। এজন্য সিমাহীন কষ্ট ও নিদারুণ ত্যাগ স্বীকার করেন
তারা। কিন্তু তাদের সেই স্বপ্নকে ভেঙ্গেচুরে নিঃশেষ করে দেয়- মোবাইল ফোন।
মোবাইল
ফোন একজন শিক্ষার্থীকে শিক্ষার উজ্জ্বল আলো থেকে বঞ্চিত করে মূর্খতার ঘোর
অন্ধকারে নিয়ে যায়। নিভিয়ে দেয় তার আশার প্রদীপ। ধ্বংস করে দেয় তার
মূল্যবান জীবন। উইপোকা যেমন ধীরে ধীরে কাঠ খেয়ে ফেলে তেমনি মোবাইল ফোন একটি
মেধাবী শিক্ষার্থীকে কুড়ে কুড়ে খায়। ফলে একসময় মোবাইল পাগল শিক্ষার্থীটি
হয়ে যায় একটি জীবন্ত লাশ!
আজকাল
উঠতি বয়সের ছেলে-মেয়েদের হাতে-হাতে মোবাইল ফোন দেখা যায়। কার চাইতে কে কত
দামী ও উন্নত সেট ব্যবহার করতে পারে- এ নিয়ে অঘোষিত প্রতিযোগিতা চলছে
নিয়মিত! নিত্য নতুন ডিজাইন ও কোয়ালিটির পিছনে যুবক-যুবতী ভাই-বোনেরা কত
টাকা যে নষ্ট করছে তার কোনো ইয়ত্তা নেই!!
মোবাইল
ফোনের এই ভয়াবহ ক্ষতি থেকে ছাত্র, যুবক ও তরুণ সমাজকে বাঁচানোর জন্য
আমাদের অনেক কিছু করণীয় আছে। বিশেষ করে সরকার ও অভিভাবক শ্রেণীর
দায়-দায়িত্ব অনেক বেশি। প্রতিটি সচেতন অভিভাবককে সর্বদা খেয়াল রাখতে হবে,
আমার স্কুল-কলেজ ও মাদরাসা পড়ুয়া প্রিয় সন্তানটির মোবাইল ফোন ব্যবহারের আদৌ
প্রয়োজন আছে কিনা, প্রয়োজন থাকলে সে মোবাইল ফোনের অপব্যবহার করছে কিনা?
সেই সাথে মনে রাখতে হবে, শয়তান সর্বদা মানুষের পিছনে লেগে আছে। তাই মানুষ
ভালো'র পরিবর্তে খারাপের দিকেই সহজে ধাবিত হয়। তাছাড়া কম বুদ্ধির কারণে হোক
বা সঙ্গ দোষের কারণে হোক, কিশোর ও তরুণ বয়সে মানুষের নৈতিক অবক্ষয় বেশি
হয়ে থাকে।
প্রিয়
পাঠক-পাঠিকা! বিশ্বাস করুন, মোবাইল কোম্পানি ও মোবাইল সেট নির্মাতাদের কথা
আজ আমার ভাবতেও কষ্ট হয়! কেন কষ্ট হয়, তা আপনাদেরও অজানা নয়। আমার মনে হয়,
আমার মতো অবস্থা প্রতিটি সচেতন মানুষেরই হয়। মোবাইল কোম্পানি ও সেট
নির্মাতাদের অবস্থা দেখে অনুধাবন করা যায়, তারা যেন আজ অশ্লীলতা ছড়ানোর
ভূমিকায় পাল্লা দিয়ে লেগেছে। তাদের নির্লজ্জ অর্থলিপ্সার কাছে সমাজের নৈতিক
চরিত্রকে বলি দেওয়া হচ্ছে। তাই আজ সঙ্গত কারণেই অপরাধ প্রবণতা বেড়েই
চলেছে। ধর্ষণ, সন্ত্রাস, হাইজ্যাক ইত্যাদি আজ নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা।
সংবাদপত্রের পাতায় এসব খবর নিয়মিতই আমাদের দেখতে হয়।
এ
অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য সকলকে আন্তরিকতার সাথে এগিয়ে আসতে হবে।
প্রতিটি অভিভাবককে সচেতন হতে হবে। ব্যক্তিগতভাবে প্রত্যেককে আল্লাহ তাআলার
হুকুম ও নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নতকে পরিপূর্ণরূপে
গ্রহণ করতে হবে। ক্যামেরা ও ভিডিও সেট আমদানী সরকারীভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে।
সেই সাথে গভীর রাতে মোবাইল ফোন কোম্পানিসমূহ হ্রাসকৃত কলরেটের যেসব অফার
দিয়ে থাকে তাও আইন করে বন্ধ করতে হবে। কারণ এ সময় অনেক ছাত্র-ছাত্রী ও
তরুণ-তরুণী সন্ধ্যা ও রাতের পড়ালেখায় মনোযোগ না দিয়ে রাত জেগে অপ্রয়োজনীয় ও
অনৈতিক ফোনালাপেই ব্যস্ত থাকে। এতে পড়ালেখা ও স্বাভাবিক কাজকর্মে মারাত্মক
ব্যাঘাত ঘটে। তাছাড়া রাত ১২টা থেকে সকাল ৭ টা বা ৯টা পর্যন্ত সময়টা কথা
বলার জন্য এমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ সময় নয় যে, এ সময় কলরেট হ্রাস করা খুবই
উপকারী মনে হতে পারে। বরং সময়টা হচ্ছে শান্তিতে ঘুমানো এবং ইবাদত-বন্দেগি ও
কোরআন তিলাওয়াত করার উপযুক্ত সময়। মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোর এসময়ে কলরেট
হ্রাস করার উদ্দেশ্য কি তাহলে আমাদের আরামের ঘুম নষ্ট করা এবং
ইবাদত-বন্দেগি থেকে বিরত রাখা? অবস্থাদৃষ্টে তো তাই মনে হয়! সে যা-ই হোক
মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো যাতে এ সময়ে কলরেটের সুযোগ না দিয়ে অন্য সময় দেয়
সেদিকেও সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে। তাছাড়া মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারের
ক্ষেত্রে কোনো গ্রাহক যাতে পর্ণো সাইটে প্রবেশ করতে না পারে সে ব্যবস্থা
নিশ্চিত করার জন্য মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোকে সরকার কর্তৃক বাধ্য করতে হবে।
স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি ও মাদরাসার কর্তৃপক্ষবৃন্দ ছাত্র-ছাত্রীদের
বৃহত্তর স্বার্থের কথা বিবেচনায় নিয়ে ব্যক্তিগতভাবে তাদেরকে মোবাইল ফোন
ব্যবহার করতে না দিয়ে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ছাত্র-ছাত্রীরা যাতে সহজে
পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনদের সাথে যোগাযোগ করতে পারে, সে ব্যবস্থা চালু
করতে পারেন। অভিভাবকগণও নিজ নিজ সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে
একান্ত প্রয়োজন ছাড়া তাদেরকে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে দিবেন না। একান্ত
প্রয়োজনে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে দিলেও সবসময় খেয়াল রাখবেন, আপনার প্রিয়
সন্তান পড়ালেখা নষ্ট করে মোবাইল ফোনের অপব্যবহার করছে কিনা? এক কথায় বলতে
গেলে বলতে হয়, আজকে যোগাযোগের চরম উৎকর্ষতা ও ব্যস্ততার দিনে মোবাইল ফোনের
ব্যবহারকে যেমন বাদ দেওয়া যাবে না, তেমনি এর যত্রতত্র ব্যবহার হচ্ছে কিনা
সেদিকটিও খেয়াল রাখতে হবে। আমরা প্রত্যেকে যার যার অবস্থান থেকে যদি এ
ব্যাপারে সতর্ক থাকি, তাহলে হয়তো মোবাইলের অনেক ক্ষতি থেকে ব্যক্তি, সমাজ ও
দেশকে বাঁচানো সম্ভব হবে। আল্লাহ পাক আমাদের তাওফিক দিন। আমীন।
মোবাইল ফোন ও নামাজ
নামাজরত অবস্থায় রিং বেজে উঠলে কী করবেন?
নামাজ
ভঙ্গের যেসব কারণ আছে তন্মধ্যে একটি হলো- আমলে কাসীর। আমলে কাসীর বলা হয়,
নামাজি ব্যক্তির এমন কোনো কাজে লিপ্ত হয়ে যাওয়া যা অন্য কেউ দেখলে মনে করবে
সে নামাজে নেই। আর নামাজি ব্যক্তির প্রতি অন্য ব্যক্তির এরূপ ধারণা তখনই
সৃষ্টি হয় যখন সে দু'হাত ব্যবহার করে কোনো কাজ করে। এক হাত নামাজে ব্যস্ত
রেখে অন্য হাত দিয়ে কাজ করলে এমন ধারণা মোটেও সৃষ্টি হয় না। এ কারণেই
ফিকাহবিদগণ নামাজের মধ্যে প্রয়োজনে একহাত ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছেন।
তারা বলেছেন- নামাজরত অবস্থায় টুপি উঠানো, জামার হাতা নামানো, সিজদার
স্থানের কঙ্কর সরানো, শরীর চুলকানো এবং এ জাতীয় অন্যান্য কাজ করার জন্য এক
হাত ব্যবহার করা যাবে। কোনো অবস্থাতেই দু'হাত ব্যবহার করা যাবে না।
উপরোক্ত
আলোচনার প্রেক্ষিতে একথা বলা যায় যে, নামাজের মধ্যে রিং বেজে উঠলে দু'হাত
ব্যবহার না করে এক হাতের সাহায্যে মোবাইল পকেটে রেখেই যে কোনো বাটন চেপে
রিং বন্ধ করে দিবেন। আর পকেট থেকে মোবাইল বের করার প্রয়োজন হলেও একহাত
দ্বারাই করবেন। মোবাইল বের করে পকেটের কাছে রেখে, না দেখে দ্রুত বন্ধ করে
আবার পকেটে রেখে দিবেন। মনে রাখবেন, একহাত দ্বারা মোবাইল বন্ধ করতে গিয়ে
মোবাইল পকেট থেকে বের করে দেখে দেখে বন্ধ করা যাবে না। কারণ দেখে দেখে বন্ধ
করা অবস্থায় কেউ নামাজি ব্যক্তিকে দেখলে সে নামাজে আছে বলে মনে করবে না।
ফলে তা আমলে কাসীরের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাওয়ায় নামাজ ভেঙ্গে যাবে। [খুলাসাতুল
ফাতওয়া, খণ্ড : ১ পৃষ্ঠা : ১২৯ # ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া, খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা :
১০৫ # শরহে নববী, খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ২০৫ # রদ্দুল মুহতার, খণ্ড : ১,
পৃষ্ঠা : ৬২৪, ২৬৪, ২৬৫ # আল বাহর্রু রায়েক, খণ্ড : ২, পৃষ্ঠা : ১১-১২ #
ফাতাওয়ায়ে তাতারখানিয়া, খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ৫৬৪ # শরহুল মুনিয়াহ, পৃষ্ঠা :
৪৪৩] র
দু'হাত ব্যবহার ব্যতীত রিং বন্ধ করা সম্ভব না হলে...
যদি
কখনো এমন অবস্থা হয় যে, দু'হাত ব্যবহার ব্যতীত মোবাইল বন্ধ করা সম্ভব
হচ্ছে না তখন আপনি কী করবেন? তখন কি নিজের নামাজ নষ্ট করে মোবাইল বন্ধ
করবেন? নাকি মুসল্লিদের নামাজে বিঘ্নতা ঘটলেও নিজের নামাজকে রক্ষার জন্য
রিং বন্ধ করা থেকে বিরত থাকবেন?
নামাজে
খুশু-খুযু তথা একাগ্রতার গুরুত্ব অনেক বেশি। এজন্যেই ফিকাহ্বিদগণ নামাজরত
অবস্থায় প্রস্রাব-পায়খানার বেগ হলে এবং এর দ্বারা খুশু-খুযু বিঘ্নিত হলে
নামাজি ব্যক্তিকে নামাজ ছেড়ে দেওয়ার অনুমতি দিয়েছেন। শুধু অনুমতিই দেননি
বরং এ অবস্থায় নামাজ ছেড়ে দেওয়াকে তারা উত্তম বলে আখ্যায়িত করেছেন। কেউ কেউ
আবার ওয়াজিব পর্যন্ত বলেছেন।
নামাজের
মধ্যে রিং বেজে উঠলে যার মোবাইল তার নামাজেই কেবল বিঘ্নতা ঘটে না বরং
আশেপাশের অন্যান্য মুসল্লিদের নামাজেও বিঘ্নতা ঘটে। সুতরাং এক্ষেত্রে একহাত
দ্বারা রিং বন্ধ করা সম্ভব না হলে নামাজ ছেড়ে দিয়ে অবশ্যই রিং বন্ধ করবেন।
এরূপ করা শুধু জায়েযই নয়, কর্তব্যও বটে। আর রিংটোন যদি গান বা মিউজিকের হয়
(আল্লাহ আমাদের এ থেকে হেফাজত করুন) তবে তো এর খারাবী আরো বেশি। মোটকথা,
নামাজের যে কোনো অবস্থায় আমলে কালীল বা অল্প কাজের দ্বারা রিং বন্ধ করা
সম্ভব না হলে নামাজ ছেড়ে দিয়ে রিং বন্ধ করবেন এবং মাসবুকের ন্যায় আবার নতুন
করে জামাতে শরিক হবেন। [তাহতাবী আলাল মারাকী, পৃষ্ঠা : ১৯৮ # ফাতাওয়ায়ে
হিন্দিয়া, খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ১০৭ # আল বাহর্রু রায়েক, খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা :
২৮৭ # রদ্দুল মুহতার, খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ৬৫৪-৬৫৫] র
রিং বন্ধ করতে সিজদা থেকে উঠা যাবে কি?
জামাতে
নামাজ পড়ার সময় সিজদারত অবস্থায় রিং বেজে উঠলে কেউ কেউ সিজদা থেকে উঠে
বসার প্রায় কাছাকাছি গিয়ে পকেট থেকে মোবাইল বের করে রিং বন্ধ করে থাকে। অথচ
তখনো ইমাম মুসল্লি সকলেই সিজদাতেই থাকে। এভাবে রিং বন্ধ করার দ্বারা তিন
তাসবীহ পরিমাণ সময় ব্যয় না হলেও নামাজ ভেঙ্গে যাবে। কারণ যেখানে দুই হাতের
ব্যবহারকেই নামাজ ভঙ্গের কারণ বলা হয়েছে সেখানে গোটা দেহকে নামাজের অবস্থা
থেকে সরিয়ে নিয়ে আসা নিঃসন্দেহে নামাজ ভঙ্গের কারণ হবে। তাছাড়া এ অবস্থায়
কেউ তাকে দেখলে সে নামাজে নেই বলেই মনে করবে। যা আমলে কাসীরের অন্তর্ভুক্ত।
আর একথা পূর্বেই আলোচিত হয়েছে যে, আমলে কাসীর নামাজ ভঙ্গের অন্যতম কারণ।
[আল বাহর্রু রায়েক, খণ্ড : ২, পৃষ্ঠা : ১১-১২ # খুলাসাতুল ফাতওয়া, খণ্ড : ১
পৃষ্ঠা : ১২৯ # ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া, খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ১০৫ # শরহে নববী,
খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ২০৫ # রদ্দুল মুহতার, খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ৬২৪, ২৬৪,
২৬৫] র
একই নামাজে কতবার রিং বন্ধ করা যাবে?
অনেক
সময় দেখা যায়, নামাজরত অবস্থায় একবার রিংটোন বন্ধ করার পর আবার বাজতে
থাকে। এমনকি দ্বিতীয়বার বন্ধ করার পর তৃতীয়বারও বাজতে থাকে। কোনো কোনো সময়
এই সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পায়। প্রশ্ন হলো, নামাজে থেকে এভাবে কতবার রিংটোন
বন্ধ করা যাবে?
হ্যাঁ,
অনেক মোবাইল ব্যবহারকারীকেই এই সমস্যায় পড়তে দেখা যায়। এক্ষেত্রে শরিয়তের
বিধান হলো, তিনবার বিশুদ্ধভাবে 'সুবহানা রাব্বিয়াল আযীম' বা 'সুবহানা
রাব্বিয়াল আলা' বলা যায় এ পরিমাণ সময়ের ভিতর দুইবার পর্যন্ত উপরে বর্ণিত
নিয়মে রিংটোন বন্ধ করা যাবে। দুইবারের বেশি বন্ধ করা যাবে না। যদি কেউ
দুইবারের বেশি বন্ধ করে তবে তার নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে।
তবে
একবার বা দুইবার বন্ধ করার পর তিন তাসবীহ পরিমাণ বিলম্বে আবার রিং বেজে
উঠলে তখন বন্ধ করা যাবে এবং এতে নামাজও নষ্ট হবে না। মোটকথা তিন তাসবীহ বলা
যায় এতটুকু সময়ের মধ্যে তিনবার রিং বন্ধের জন্য (দুই হাত তো নয়ই) একহাতও
ব্যবহার করা যাবে না। কেউ করলে তার নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে। [খুলাসাতুল
ফাতওয়া, খণ্ড : ১ পৃষ্ঠা : ১২৯ # রদ্দুল মুহতার, খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ৬২৫ #
আহসানুল ফাতাওয়া, খণ্ড : ৩, পৃষ্ঠা : ৪১৮-৪১৯]
স্ক্রীনে প্রাণীর ছবি সেভ করা মোবাইল সামনে রেখে নামাজ পড়া
কেউ
যদি স্ক্রীনে প্রাণীর ছবি সেভ করা মোবাইল সামনে রেখে নামাজ পড়ে তাহলে তার
নামাজ শুদ্ধ হবে কিনা তা একটু ব্যাখ্যা সাপেক্ষ বিষয়। কারণ সেভ করা প্রাণীর
ছবিটি দু'ধরনের হতে পারে।
১.
অতি ছোট আকারের ছবি যা মাটিতে রাখা অবস্থায় দাঁড়িয়ে স্পষ্ট দেখা যায় না।
নাক, কান, চোখ, কপাল ইত্যাদি পৃথকভাবে বুঝা যায় না। এ ধরনের ছবি সম্বলিত
মোবাইল সেট সামনে রেখে নামাজ আদায় করলে নামাজের কোনো ক্ষতি হবে না। তবে ছবি
তোলা ও সেভ করে রাখার গুনাহ অবশ্যই হবে। যা নামাজ শুদ্ধ-অশুদ্ধ হওয়ার সাথে
সম্পর্কিত কোনো বিষয় নয়।
২.
ছবিটি যদি বড় হয় এবং মাটিতে রাখা অবস্থায় দাঁড়িয়ে স্পষ্ট দেখা যায় অথবা
অস্পষ্ট দেখা গেলেও কল আসার কারণে কিংবা অন্য কোনো কারণে স্ক্রীনে আলো
জ্বলে উঠার দরুণ ছবিটি স্পষ্ট হয়ে উঠে তবে নামাজ মাকরূহে তাহরীমি হবে।
হ্যাঁ, পূর্ণ নামাজে যে কোনোভাবে একবারও যদি অস্পষ্ট ছবিটি স্পষ্ট না হয়ে
উঠে তাহলে নামাজের কোনো ক্ষতি হবে না। [ইমদাদুল ফাতওয়া, খণ্ড : ৪ পৃষ্ঠা :
১৬৭ ফতোয়ায়ে শামী, খণ্ড : ৯, পৃষ্ঠা : ৫২০ # ফতহুল কাদীর, খণ্ড : ১,
পৃষ্ঠা : ৪২৭ # আল বাহর্রু রায়েক, খণ্ড : ২, পৃষ্ঠা : ৪৮-৫০ # ফতোয়ায়ে
হিন্দিয়া, খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ১০৭]
মোবাইল ফোন ও মসজিদ
মসজিদে প্রবেশের পূর্বেই কি মোবাইল/রিংটোন বন্ধ করা জরুরি?
নামাজ
অন্যান্য ইবাদত থেকে একটু ভিন্নতর ইবাদত। এই ইবাদত হলো সরাসরি মহান
আল্লাহর সাথে কথা বলার এক চমৎকার মাধ্যম। এ কারণেই নামাজ অবস্থায় একাগ্রতা ও
খুশু-খুযুর প্রতি যেরূপ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে অন্য কোনো ইবাদতের বেলায়
তেমনটি করা হয়নি। যেমন, পবিত্র কোরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন,
قَدْ أَفْلَحَ الْمُؤْمِنُونَ ﴿১﴾ الَّذِينَ هُمْ فِي صَلَاتِهِمْ خَاشِعُونَ ﴿২﴾ ( المؤمنون : ১-২)
ঐসব ঈমানদার সফলতা লাভ করেছে, যারা স্বীয় নামাজে একাগ্রচিত্ত ও বিনয়-নম্র। (সূরা মুমিনুন: ১-২)
অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন,
অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন,
فَوَيْلٌ لِلْمُصَلِّينَ ﴿৪﴾ الَّذِينَ هُمْ عَنْ صَلَاتِهِمْ سَاهُونَ ﴿৫﴾ الَّذِينَ هُمْ يُرَاءُونَ ﴿৬﴾ ( الماعون :৪-৬)
যেসব নামাজি স্বীয় নামাজের ব্যাপারে অমনোযোগী এবং লোক দেখানো নামাজ পড়ে তাদের ধ্বংস অনিবার্য। (সূরা মাঊন: ৪-৬)
হাদিস শরিফে নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
যারা
খুশু-খুযু অর্থাৎ আল্লাহর ভয় অন্তরে ধারণ করে একাগ্রচিত্তে বিনয়ের সাথে
নামাজ আদায় করে তাদের জন্য আকাশের দরজা খুলে যায় এবং নামাজির জন্য আল্লাহর
দরবারে সুপারিশ করে।
মোটকথা
নামাজের খুশু-খুযুর প্রতি সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। তাই প্রতিটি
মুসলির জন্য মসজিদে প্রবেশের আগেই মোবাইল একেবারে বন্ধ না করলেও রিংটোন
বন্ধ করে দেওয়া আবশ্যক। কারণ, মসজিদের ভিতর রিংটোন বেজে উঠলে শুধু স্বীয়
একাগ্রতাই নষ্ট হবে না, অন্য নামাজিদের একাগ্রতাও নষ্ট হবে। [মাসিক আল
কাউসার, মে'০৮ সংখ্যা, পৃষ্ঠা : ১৮]
মসজিদের ভিতর মোবাইলে ভাইব্রেশন দিয়ে রাখা উচিত হবে কি?
মসজিদের
ভিতর মোবাইলে ভাইব্রেশন দিয়ে রাখাও ঠিক নয়। কারণ এতে অন্যের ক্ষতি না হলেও
নিজের খুশু-খুযু তথা মনোযোগ নষ্ট হয়। তাছাড়া অনেক সময় দেখা যায়, কোনো কোনো
মোবাইলের ভাইব্রেশনের ক্ষীণ আওয়াজ পাশ্ববর্তী লোকদের কানেও পৌঁছে। তদুপরি
ভাইব্রেশন চলাকালে মোবাইলটি যদি কোনোভাবে অন্যের গা স্পর্শ করে তবে তো কোনো
কথাই নেই। তখন তো অবশ্যই উভয়ের মনোযোগ নষ্ট হবে। তাই মোবাইল নিয়ে মসজিদে
প্রবেশের ক্ষেত্রে সবচেয়ে উত্তম পদ্ধতি হলো, হয়তো মোবাইল একেবারে বন্ধ করে
দেয়া নয়তো আওয়াজ সাইলেন্ট করে রাখা। যাতে নামাজ শেষ করার পর বুঝা যায়, কে
কল করেছে। [মাসিক আল কাউসার, মে'০৮ সংখ্যা, পৃষ্ঠা : ১৮]
মসজিদে একজনের মোবাইলে রিং বেজে উঠলে অন্যরা কী করবে?
পূর্বে
বলা হয়েছে, মসজিদের ভিতর যেন রিংটোন না বাজে এবং কারো নামাজে কোনোরূপ
বিঘ্নতা সৃষ্টি না হয় সেজন্য প্রত্যেকের উচিত মসজিদে প্রবেশের পূর্বেই
মোবাইল বন্ধ করা এবং এ ব্যাপারে যথেষ্ট সতর্ক থাকা। কিন্তু এ বিষয়ে পূর্ণ
সতর্কতা বজায় রাখা সত্ত্বেও কোনো কোনো সময় ভুলবশতঃ মোবাইল বন্ধ না করার
কারণে তাতে রিং বেজে উঠে। আর এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তাই এক্ষেত্রে
অন্যান্য মুসল্লিদের উচিত হলো, নামাজ শেষে তাকে এভাবে বুঝিয়ে দেওয়া যে-
'ভাই! মসজিদে ঢুকার পূর্বে অনুগ্রহপূর্বক খেয়াল করে মোবাইলটা বন্ধ করে আসলে
ভালো হয়'। এরূপ বলাই নিয়ম। এভাবে বলাই সুন্নত ও ভদ্রতা। মসজিদের ভিতরে
একজন মুসলমানকে সতর্ক করার জন্য এর চেয়ে বেশি বলার কোনো প্রয়োজন নেই।
কিন্তু আশ্চর্যের কথা হলো, কারো দ্বারা এমন ভুল ঘটে গেলে মসজিদে অধিকাংশ
সময় এমনকিছু আপত্তিকর কথা বলা হয় যা সত্যিই দুঃখজনক ও অনাকাক্মিখত। অথচ মনে
রাখা দরকার, অন্যায় বা অসৎ কাজের প্রতিকারও অবশ্যই ন্যায়সঙ্গতভাবে হতে
হবে। অন্যথায় লাভের চেয়ে ক্ষতিই হবে বেশি।
আচ্ছা
বলুন তো, সতর্ক থাকা সত্ত্বেও ভুলক্রমে কোনো কোনো সময় মোবাইল বন্ধ না
করাটা কি অন্যায়? আমি মনে করি, এটা মোটেও অন্যায় নয়। কেননা ভুল করা বা ভুলে
যাওয়া মানুষের স্বভাব। আর যদি ধরেও নিই যে, এটা অন্যায় তাই বলে কি
অন্যায়ের প্রতিকার এভাবে করা যাবে যদ্বারা আরো বড় অন্যায় হয়ে যাওয়া
সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়? চিন্তা করে দেখুন তো, মসজিদের ভিতর নামাজের মাঝে যে
লোকটির মোবাইল বেজে উঠে, যার অসতর্কতার বিষয়টি হঠাৎ মুসল্লিদের কাছে প্রকাশ
পেয়ে যায়, লজ্জায় ও অনুশোচনায় তো এমনিতেই তিনি সংকোচিত হয়ে যান, নামাজ
শেষে তার দিকে কে কী ভাবে তাকাবে, কে কী বলবে- এই চিন্তায়ই তো তার মনটা ছোট
হয়ে আসে; এর উপর কোনো ভদ্রলোক যদি গোটা মসজিদ কাঁপিয়ে চিৎকার করে তাকে ধমক
দিতে শুরু করেন, তাহলে ওই লোকটির অবস্থা কী দাঁড়াবে তা সহজেই অনুমান করা
যায়। ভেবে দেখা দরকার, সম্পূর্ণ অনিচ্ছাকৃতভাবে, হঠাৎ অসতর্কতার কারণে কোনো
মুসলমানের প্রতি এমন আচরণ অমানবিক ও দুঃখজনক নয় কি? নবীজি সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি আমাদেরকে এ শিক্ষাই দিয়ে গেছেন? না, মোটেই নয়। তিনি
আমাদেরকে এমনটি কখনো শিক্ষা দেননি। বরং তিনি এরূপ ক্ষেত্রে এমন উত্তম ও
কালজয়ী শিক্ষা দিয়ে গেছেন যা চিরদিন অমর -অক্ষয় হয়ে থাকবে। যেমন হাদিস
শরিফে আছে-
একদিন
এক গ্রাম্য লোক মসজিদের ভিতর নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের
সামনে পেশাব করতে শুরু করল। এমতাবস্থায় বারণ করার জন্য উপস্থিত সাহাবায়ে
কেরাম দৌড়ে ছুটলেন। কিন্তু নবীজি তাদেরকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, তাকে তার কাজ
শেষ করতে দাও। যখন পেশাব করা শেষ হলো নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দিলেন। বললেন, এটা নামাজের জায়গা।
ইবাদত-বন্দেগীর জায়গা, পেশাবের জায়গা নয়। অবশেষে মসজিদের যে জায়গায় সে
পেশাব করেছে তা পবিত্র করে নেওয়ার জন্য সাহাবিদের নির্দেশ দিলেন।
মোটকথা অসতর্কতার দরুণ মসজিদের ভিতর কারো মোবাইলে রিং বেজে উঠলে আশেপাশের মুসল্লিদের করণীয় হলো,
প্রথমত:
ধৈর্যধারণ করা এবং পরে সঠিক মাসআলা জানা থাকলে সুযোগমতো সুন্দরভাবে তার
সম্মানের প্রতি লক্ষ্য রেখে (কোনো আলেমের বরাত দিয়ে) মাসআলা বলে দেওয়া। তা
না করে তাৎক্ষণিকভাবে হৈ চৈ করে বকাঝকা শুরু করে দেওয়া কোনোভাবেই ঠিক নয়,
শরিয়তও এমন কাজ সমর্থন করে না। কেননা এভাবে হৈ চৈ করার দ্বারা একদিকে যেমন
মসজিদের আদব চরমভাবে লঙ্ঘিত হয়, তেমনি একজন মুসলমানকেও অন্যায়ভাবে কষ্ট
দেওয়া হয়। তাই সবাইকে এরূপ অন্যায় থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। আল্লাহ
আমাদের তাওফিক দান করুন। আমীন।
মসজিদের ভিতর মোবাইলে দুনিয়াবী কথাবার্তা বলা যাবে কি?
মসজিদ
আল্লাহর ঘর। পৃথিবীর সর্বোৎকৃষ্ট জায়গা। নামাজ, তিলাওয়াত, জিকির, তালীম
প্রভৃতি ইবাদতের জন্যই মসজিদের সৃষ্টি। এখানে অন্য ইবাদতকারীর ক্ষতি করে
বৈধ কথাবার্তা বলাও নাজায়েয। তাই মসজিদে অবস্থানকালে সরাসরি কিংবা মোবাইলে
অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা না বলাই উচিত। মসজিদকে দুনিয়াবী কথাবার্তা ও
কাজকর্মের স্থান বানানো অথবা এ উদ্দেশ্যে মসজিদে একত্রিত হওয়া মারাত্মক
পাপ। কারো মতে মাকরূহে তাহরীমি, কারো মতে হারাম। অবশ্য ইবাদতের উদ্দেশ্যে
এসে অন্য ইবাদতকারীর ক্ষতি না করে সরাসরি বা মোবাইলে ভালো-মন্দ জিজ্ঞেস করা
বা প্রয়োজনীয় কোনো কথা বলা দোষণীয় নয়। [ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া, খণ্ড : ৫,
পৃষ্ঠা : ৩২১ # আপ কি মাসায়িল আউর উনকা হল, খণ্ড : ২ পৃষ্ঠা : ১১৩ #
ফতোয়ায়ে শামী, খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ৬৬২ # এলামুস সাজিদ, পৃষ্ঠা : ৩২৬ # আল
মুহাল্লা, খণ্ড : ৩, পৃষ্ঠা : ১৬০ # শরহুল মুনইয়া, পৃষ্ঠা : ৬১০ # আল মাসনূ
ফী মাআরিফাতিল হাদীসিল মাওজু, পৃষ্ঠা : ৯২ # ফতহুল বারী, খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা
: ৬৫৩]
মসজিদে এতেকাফ অবস্থায় মোবাইল ব্যবহার না করাই ভালো
দুনিয়ার
সমস্ত ঝামেলা থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহর ইবাদতে নিমগ্ন থেকে তার প্রিয়পাত্র
হওয়ার উদ্দেশ্যেই ইতিকাফ করা হয়। তাই ইতিকাফকারীর জন্য পূর্ণ সময় অর্থাৎ
খানাপিনা, ঘুম ও ইস্তেঞ্জার সময়টুকু বাদ দিয়ে বাকী সময় নামাজ, জিকির,
তিলাওয়াত ইত্যাদি ইবাদতে মশগুল থাকাই কাম্য। সুতরাং খুব বেশি প্রয়োজন না
হলে এতেকাফ অবস্থায় মোবাইল ব্যবহার না করাই ভাল। তবে একান্ত ঠেকায় পড়ে
প্রয়োজনীয় কথা বলার জন্য মোবাইল যদি ব্যবহার করতেই হয় তাহলে খুব ভালো করে
খেয়াল রাখতে হবে যাতে অন্য কোনো মুসল্লি বা ইবাদতকারীর ক্ষতি না হয়। মোটকথা
এতেকাফ অবস্থায় মোবাইলে প্রয়োজনীয় কথাবার্তা বলার অবকাশ আছে। [আল বাহর্রু
রায়েক, খণ্ড : ২, পৃষ্ঠা : ৩০৪ ফাতাওয়া তাতারখানিয়া, খণ্ড : ২, পৃষ্ঠা :
৪১২]
মসজিদের ছাদে মোবাইলের টাওয়ার বসানো জায়েয নয়
মোবাইল
কোম্পানিগুলো তাদের নিজ নিজ টাওয়ার স্থাপনের জন্য বিল্ডিংয়ের ছাদ ভাড়া
নিয়ে থাকে। অনেক সময় তারা মসজিদ কমিটিকেও মসজিদের ছাদ ভাড়া দেওয়ার প্রস্তাব
দেয়। এখন জানার বিষয় হলো, টাওয়ার স্থাপনের জন্য মসজিদের ছাদ ভাড়া দেওয়ার
অনুমতি আছে কি-না?
এ
ব্যাপারে শরিয়তের ফয়সালা হলো, টাওয়ার স্থাপনের জন্য মসজিদের ছাদ ভাড়া
দেওয়া জায়েয নয় এবং কোনো কোম্পানি কর্তৃক মসজিদের ছাদে মোবাইল টাওয়ার
স্থাপনও জায়েয নয়। কেননা, মসজিদ আল্লাহর ঘর। এর যথাযথ সম্মান করা প্রতিটি
মুসলমানের ঈমানী দায়িত্ব। সবচেয়ে বড় কথা হলো, কোনো স্থানে মসজিদ হয়ে গেলে
তার উপর নিচ সম্পূর্ণটাই মসজিদে পরিগণিত হয়ে যায়। মসজিদের ছাদও যেহেতু
মসজিদের অংশবিশেষ তাই তা ভাড়া দেওয়া শরিয়তসম্মত নয়। [আল বাহর্রু রায়েক,
খণ্ড : ৫, পৃষ্ঠা : ২৫০ ফাতাওয়া খানিয়া, খণ্ড : ৩, পৃষ্ঠা : ২৯৩ আল
মুহীতুল বুরহানী, খণ্ড : ৯, পৃষ্ঠা : ১২৭ রদ্দুল মুহতার, খণ্ড : ৪ পৃষ্ঠা
: ৩৫৮ ফাতাওয়া হিন্দিয়া : খণ্ড : ২ পৃষ্ঠা : ৪৫৫]
মসজিদের বিদ্যুৎ দ্বারা মোবাইল চার্জ করা যাবে কি ?
মসজিদের
বিদ্যুৎ মসজিদের প্রয়োজন ও ইবাদতের সময় ছাড়া অন্য সময় বা অন্য ক্ষেত্রে
ব্যবহার করা জায়েয নেই। তাই মসজিদের বিদ্যুৎ দিয়ে মোবাইল চার্জ না করাই
ভালো। তবে একান্ত অপারগ হয়ে মোবাইল চার্জ করতে হলে চার্জ করার পর কিছু টাকা
মসজিদ ফাণ্ডে জমা করে দেওয়া আবশ্যক। এই হুকুম মুকীম (স্থানীয় লোক) ও
মুসাফির উভয়ের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। [ফাতাওয়ায়ে শামী : খণ্ড : ৯, পৃষ্ঠা
: ৫৬৭ ফাতাওয়া হিন্দিয়া, খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ১১০]
মসজিদে অবস্থানরত এতেকাফকারীর মোবাইল দ্বারা ব্যবসা করা
মসজিদে
এতেকাফ অবস্থায় মোবাইলের সাহায্যে ব্যবসায়িক লেনদেন করা জায়েয আছে।
অনুরূপভাবে এতেকাফকারীর কাছ থেকে তার ম্যানেজার বা কর্মচারী ব্যবসায়িক কোনো
বিষয়ে পরামর্শ বা সম্মতি নেওয়াতেও কোনো অসুবিধা নেই। তবে এতেকাফে বসে
মসজিদের মধ্যে এ ধরনের দুনিয়াবী লেনদেন না করাই উত্তম। [বাহরুর রায়েক, খণ্ড
: ২, পৃষ্ঠা : ৩০৩]
মোবাইল ফোন ও সালাম
আগে হ্যালো নাকি সালাম?
শরিয়তের
বিধান হলো, পরস্পর কথা বলার সময় আগে সালাম দিয়ে কথা শুরু করা। তাই
মোবাইলেও কথা বলার সময় আগে হ্যালো না বলে সালাম দিয়ে তারপর কথা বলা শুরু
করতে হবে। হ্যালো বা অন্য কোনো শব্দ দিয়ে কথা শুরু করলে নিঃসন্দেহে তা
সুন্নত পরিপন্থি কাজ হবে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে যাবতীয় কাজ নবীজি
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নত অনুযায়ী পালন করার তাওফিক দান
করুন। আমীন। [তিরমিযি শরিফ, খণ্ড : ২, পৃষ্ঠা : ৯৯ ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া,
খণ্ড : ৫, পৃষ্ঠা : ৩২৫ আহসানুল ফাতাওয়া, খণ্ড : ৯, পৃষ্ঠা : ২১
আদ্দুররুল মুখতার, খণ্ড : ৫, পৃষ্ঠা : ২৬৬]
মোবাইলে আগে সালাম দিবে কে?
'আস্সালামু
কাব্লাল কালাম'- অর্থাৎ সালাম হবে কথার পূর্বে- এই নিয়মের ভিত্তিতে
মোবাইলে কথা বলার সময় যিনি আগে কথা বলবেন তিনিই সালাম দিবেন।
মোবাইলে
কথা বলার ক্ষেত্রে সাধারণত দেখা যায়, যিনি ফোন রিসিভ করেন তিনিই আগে কথা
বলে থাকেন। কারণ রিসিভ করার পর কথা না বললে অনেক সময় রিসিভ হয়েছে কি না তা
বুঝা যায় না। অতএব রিসিভকারী যেহেতু আগে কথা বলে থাকেন তাই তিনিই প্রথমে
সালাম দিবেন।
অবশ্য
কখনো রিসিভকারী যদি রিসিভ করে কথা না বলেন কিংবা কথা বললেও কোনো কারণে কল
প্রদানকারী তা শুনতে না পায় তখন কল প্রদানকারীই আগে কথা বলে থাকেন।
এমতাবস্থায় কল দানকারী যেহেতু আগে কথা বলছেন তাই কথা শুরুর আগে তিনিই
প্রথমে সালাম দিবেন। এখানে একটি বিষয় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, নিয়মানুযায়ী
প্রথমে যে-ই সালাম প্রদান করুক না কেন, অপরজনকে কিন্তু অবশ্যই সালামের
উত্তর দিতে হবে। নচেৎ তিনি গুনাহের ভাগী হবেন। কেননা সালাম দেওয়া সুন্নত
হলেও উত্তর দেওয়া ওয়াজিব। [তিরমিযি, খণ্ড : ২, পৃষ্ঠা : ৯৯]
উভয়ের সালাম এক সাথে হলে করণীয় কি?
অনেক
সময় দেখা যায়, রিসিভকারী এবং কলকারী একই সাথে সালাম দেয়। এক্ষেত্রে শরয়ি
বিধান হলো, উভয়কেই সালামের জবাব দিতে হবে। কিন্তু উভয়ের সালাম যদি একত্রে
না হয়ে সামান্য আগে পরে হয় তাহলে পরে সালাম দানকারীকে পুনরায় উত্তর দিতে
হবে। যদি সে পুনরায় উত্তর না দেয় তাহলে অর্থের দিক দিয়ে তার সালামটি প্রথম
ব্যক্তির সালামের জবাব হয়ে যাবে এবং এর দ্বারা জবাব প্রদানের ওয়াজিব আদায়
হয়ে যাবে। কিন্তু শব্দের দিক থেকে সুন্নত তরিকায় জবাব আদায় হবে না। কারণ
তার এ জবাবটি ইচ্ছাকৃতভাবে হয়নি। অথচ কোরআনে কারীমে বলা হয়েছে-
وَإِذَا حُيِّيتُمْ بِتَحِيَّةٍ فَحَيُّوا بِأَحْسَنَ مِنْهَا أَوْ رُدُّوهَا إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ حَسِيبًا ﴿৮৬﴾ (النساء:৮৬)
আর
যখন তোমাদেরকে সালাম দেওয়া হয় তখন তোমরা তার চেয়ে উত্তম পন্থায় (অর্থাৎ
একটু বাড়িয়ে) সালামের জবাব দাও অথবা সালামদাতার সালামের মতোই জবাব দাও।
(সূরা নিসা: ৮৬)।
উক্ত
আয়াতে নতুন করে ইচ্ছাকৃতভাবে সালামের জবাব প্রদানের প্রতি ইঙ্গিত প্রদান
করা হয়েছে। [শরহুল মুহায্যাব, খণ্ড : ৪, পৃষ্ঠা : ৪৬৩ রদ্দুল মুহতার,
খণ্ড : ৬, পৃষ্ঠা : ৪৯৬ ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া, খণ্ড : ৫, পৃষ্ঠা : ৩২৫
তাফসীরে রুহুল মাআনী, খণ্ড : ৩, পৃষ্ঠা : ১০২ ]
বারবার ফোন করার প্রয়োজন হলে প্রতিবারই সালাম দেওয়া সুন্নত
হাদিস শরিফে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালামের ব্যাপারে অত্যধিক গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তিনি বলেছেন-
"কেউ
যদি তার মুসলমান ভাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ করে তাহলে যেন তাকে সালাম দেয়। অতঃপর
যদি কোনো গাছ বা পাথর (অল্প সময়ের জন্য হলেও) দু'জনের মাঝে আড়াল সৃষ্টি
করার পর পুনরায় তাদের সাক্ষাৎ হয় তাহলে যেন আবার সালাম দেয়।"
এ হাদিস দ্বারা বুঝা গেল, কেউ যদি কারো সাথে বারবার সাক্ষাৎ করে তাহলে প্রতিবারই সালাম দিয়ে কথাবার্তা শুরু করা সুন্নত।
মোবাইলে
কথাবার্তা বলাটা যেহেতু অনেকটা সাক্ষাতে কথাবার্তা বলার মতোই তাই যতবার
কথাবার্তা বলবে ততবারই পরস্পর সালাম বিনিময় করা সুন্নত। [মাসায়েলে মোবাইল,
পৃষ্ঠা : ৩৭]
ম্যাসেজের মাধ্যমে সালাম : জবাব দিবেন যেভাবে
অনেক
সময় দেখা যায়, মোবাইলে যেসব ম্যাসেজ পাঠানো হয় তাতে সালাম জানানো হয়।
অর্থাৎ ম্যাসেজের শুরুতে সালাম লিখে তারপর অন্যান্য কথা লিখা হয়।
এমতাবস্থায় সালামের জবাব কিভাবে দিবেন? মুখে দিবেন, নাকি সালামের উত্তর
লিখে ফিরতি ম্যাসেজ পাঠাবেন?
ম্যাসেজের
মধ্যে লিখিত সালাম চিঠির মধ্যে লিখিত সালামের মতোই। অর্থাৎ উভয় প্রকার
সালামের হুকুম একই। যেমনিভাবে চিঠিতে লিখিত সালামের জবাব মুখে বা জবাবী
চিঠিতে লিখে দেওয়া যায় অনুরূপভাবে ম্যাসেজে লিখিত সালামের জবাবও মুখে বা
ফিরতি ম্যাসেজের মাধ্যমে দেওয়া যায়। মোটকথা মুখে কিংবা লিখে যে কোনোভাবে
উত্তর দিলেই ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে। তবে উত্তম হলো, সাথে সাথে মুখে উত্তর
দিয়ে দেওয়া। কারণ, এমনও হতে পারে যে, ফিরতি ম্যাসেজ পাঠানোর সময় পেল না
কিংবা ভুলে গেল। তখন তো ওয়াজিব আদায় না করার গুনাহ ঘাড়ে বর্তাবে। মহান
আল্লাহ আমাদের সবাইকে শরিয়তের ছোট বড় সকল হুকুম পরিপূর্ণরূপে আদায় করার
তাওফিক দান করুন। আমীন। [সূরা নিসা, আয়াত : ৮৬ আল ফিকহুল হানাফী, খণ্ড :
৫, পৃষ্ঠা : ৪০৮]
মোবাইলে গাইরে মাহরাম মহিলাদেরকে সালাম দেওয়া জায়েয হবে কি?
যদি
ফেতনার আশঙ্কা না থাকে তাহলে পর্দায় থেকে গাইরে মাহরাম মহিলাদের সাথে কথা
বলা এবং কথা শুরুর আগে সালাম দেওয়া জায়েয। আর নিয়ম যেহেতু যিনি আগে কথা
শুরু করবেন তিনিই প্রথমে সালাম দিবেন তাই যে আগে কথা বলবে সেই সালাম দিবে।
অর্থাৎ মহিলা আগে কথা বললে সে আগে সালাম দিবে আর পুরুষ আগে কথা বললে সে আগে
সালাম দিবে। [তিরমিযি, খণ্ড : ২, পৃষ্ঠা : ৯৯]
মোবাইলে কাউকে সালাম পৌঁছানোর জন্য বলা
মোবাইলে
কথা বলার সময় একজন অপরজনকে বলল, অমুকের নিকট আমার সালাম পৌঁছে দিবেন।
এমতাবস্থায় সে যদি সালাম পৌঁছানোর দায়িত্ব গ্রহণ করে তাহলে তার জন্য সালাম
পৌঁছানো ওয়াজিব। যদি সে না পৌঁছায় তাহলে গুনাহগার হবে। আর যদি সালাম
পৌঁছানোর ব্যাপারে কোনোভাবে সে অক্ষমতা প্রকাশ করে কিংবা চুপ থাকে তাহলে
তার উপর সালাম পৌঁছানো ওয়াজিব নয়। এই নিয়ম শুধু মোবাইলে কথাবার্তা বলার
ক্ষেত্রেই নয়, সরাসরি কথা বলার সময়ও একই নিয়ম প্রযোজ্য। অর্থাৎ দায়িত্ব
নিলে সালাম অবশ্যই পৌঁছাতে হবে, আর দায়িত্ব না নিলে পৌঁছানো জরুরি নয়।
[মোবাইল ফোনের শরয়ি আহকাম, পৃষ্ঠা : ২৯-৩০]
মোবাইলে কি শুধু ছোটরা বড়দেরকে সালাম দিবে?
অনেক
সময় দেখা যায়, কোনো বড় ও সম্মানী ব্যক্তির কাছে কল করার পর তিনি রিসিভ করে
সালাম দিলে তার সালামের জবাব না দিয়ে তাকে পুনরায় কলদানকারী সালাম দেয়।
এটা ভুল নিয়ম। সঠিক নিয়ম হলো, বড় ও সম্মানী ব্যক্তি কল রিসিভ করে সালাম
দিলে অপর প্রান্ত থেকে কলদানকারী শুধু উত্তর দিবে। পাল্টা সালাম দিবে না।
মনে রাখতে হবে, এরূপ পরিস্থিতিতে ছোট-বড় বলে কোনো কথা নেই। এখানে বরং
বিবেচ্য বিষয় হলো, যিনি আগে কথা শুরু করবেন তিনিই আগে সালাম দিবেন। আর এক
পক্ষ থেকে সালাম দেওয়ার পর অপর পক্ষ থেকে শুধু উত্তর দিবেন। পুনরায় সালাম
দিবেন না।
এক্ষেত্রে
কোনো কোনো সময় এমনও অবস্থা হয় যে, উভয় পক্ষ থেকে শুধু সালামই দেওয়া হয়,
উত্তর দেয় না কেউই। যা নিয়মের খেলাফ ও গুনাহের কাজ। [তিরমিযি শরিফ, খণ্ড :
২, পৃষ্ঠা : ৯৯]
না জেনে মোবাইলে অমুসলমানকে সালাম দিলে গুনাহ হবে কি?
কল
রিসিভ করার সময় যদি রিসিভকারী জানতে না পারে যে, কলদানকারী মুসলমান না
অমুসলমান এবং সে না জেনেই অমুসলমান কলকারীকে সালাম দিয়ে দেয় তাহলে তাতে
কোনো গুনাহ হবে না। কারণ জেনেশুনে অমুসলমানকে সালাম দেওয়া নিষেধ। ভুলে বা
অনিচ্ছাকৃতভাবে দিয়ে ফেললে গুনাহ হয় না। [আল ইমদাদ স্মারক' ০৮, পৃষ্ঠা :
১৮২]
মোবাইল ফোন ও রিংটোন
রিংটোন হিসেবে আজানের ব্যবহার নাজায়েয
আজকাল
অনেককে রিংটোন হিসেবে আজান, কোরআন তিলাওয়াত, জিকির ইত্যাদি ব্যবহার করতে
দেখা যায়। দীনদার ও ধার্মিক শ্রেণীর লোকদের দ্বারাই এ কাজটি সাধারণত বেশি
হয়। আমার মনে হয়, তারা এ কাজটি এ ধারণায় করে থাকেন যে- অন্যেরা যখন গান,
বাজনা ইত্যাদিকে রিংটোন হিসেবে ব্যবহার করে, আমরাও তাদের মোকাবেলায় আজান,
কোরআন তিলাওয়াত ইত্যাদি ভালো জিনিসকে রিংটোন হিসেবে ব্যবহার করব। যাতে
মোবাইল ফোনের রিংটোনের ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও গান-বাদ্যের পরিমাণ হ্রাস পায়!
এসব
লোকের নিয়ত ভালো। এমন সুন্দর নিয়তের কারণে তারা ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য।
কিন্তু যেহেতু বেশ কয়েকটি কারণে শরয়ি দৃষ্টিকোণ থেকে রিংটোন হিসেবে এগুলোর
ব্যবহার জায়েয নেই তাই এসব থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। নিম্নে আজান
ইত্যাদি রিংটোন হিসেবে ব্যবহার নাজায়েয হওয়ার কারণগুলো তুলে ধরা হলো।
(ক)
আজান আল্লাহ তাআলার একত্ববাদ, বড়ত্ব ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের রিসালাতের সাক্ষ্য সম্বলিত কিছু বাক্যের সমষ্টি যা ইসলামি
শরিয়তের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিআর বা প্রতীক। অনুরূপভাবে পবিত্র কোরআনের আয়াত
ও আল্লাহ তাআলার নামের জিকির যে কত মর্যাদাপূর্ণ বিষয় তাও বলার অপেক্ষা
রাখে না।
এদিকে
মোবাইলে রিং আসার অর্থ হলো, আপনাকে একথা অবহিত করা যে, কেউ আপনার সাথে কথা
বলতে চায়। এখন 'কেউ আপনার সাথে কথা বলতে চায়' এই খবরটুকু দেওয়ার জন্য কি
মহান আল্লাহর বড়ত্ব সম্বলিত আজান ও মহামর্যাদাপূর্ণ কোরআনের আয়াত বা জিকির
ব্যবহার করা সমীচীন? এসব আওয়াজকে এই উদ্দেশ্যে ব্যবহার করাটা পবিত্র
শব্দসমূহকে অবমাননা ও অপাত্রে ব্যবহার করার শামিল নয় কি ?
কোনো
বিক্রেতা যদি ক্রেতাকে আকৃষ্ট করার জন্য জোরে জোরে সুবহানাল্লাহ বলে কিংবা
কোনো পাহারাদার যদি জোরে জোরে জিকির করার মাধ্যমে নিজের জাগ্রত থাকার
বিষয়টি লোকজনকে অবহিত করে তাহলে ফিকাহবিদগণ একেও পবিত্র শব্দসমূহের
অপব্যবহার বলে আখ্যা দিয়েছেন। এবার আপনারাই চিন্তা করে দেখুন, এসব ক্ষেত্রে
যদি জিকিরের ব্যবহার 'পবিত্র শব্দসমূহের অপব্যবহার' হয়ে থাকে তাহলে
'মোবাইলে কল এসেছে'- এ খবর দেওয়ার জন্য কোরআন তিলাওয়াত, আজান ইত্যাদির
ব্যবহার কেমন হবে?
(খ)
মোবাইল নিয়ে বাথরুমে প্রবেশ করার পর রিং আসলে অপবিত্র স্থানে পবিত্র
তিলাওয়াত, আজান, জিকির ইত্যাদি বেজে উঠবে। এতে এগুলোর পবিত্রতা কত
মারাত্মকভাবে ক্ষুন্ন হয় তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
(গ)
রিংটোন হিসেবে কোরআন তিলাওয়াত ব্যবহার করলে অনেক সময় এমন হওয়া স্বাভাবিক
যে, কে কল করেছে তা দেখা ও কল রিসিভ করার ব্যস্ততার দরুণ তিলাওয়াতের প্রতি
ভ্রুক্ষেপ করার সুযোগ হয় না। অথচ আদব হলো, কোরআন তিলাওয়াত চলতে থাকলে কাজ
বন্ধ করে মনোযোগ দিয়ে তিলাওয়াত শ্রবণ করা।
(ঘ)
কারো মোবাইলে রিং আসলে সে যেহেতু রিসিভের জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে এবং রিসিভ
করাই তার মূল উদ্দেশ্য থাকে তাই আয়াতের যে কোনো স্থানেই তিলাওয়াত চলতে থাকে
সেদিকে খেয়াল না করে রিসিভ করে ফেলে। ফলে অনেক সময় উচ্চারিত অংশের
বিবেচনায় আয়াতের অর্থ বিকৃত হয়ে যায়। আর পবিত্র কোরআনের অর্থ বিকৃতি যে কত
বড় গুনাহের কাজ তা বলাই বাহুল্য!
মোটকথা
বহু কারণেই আজান, জিকির, তিলাওয়াত ইত্যাদিকে রিংটোন হিসেবে ব্যবহার করা
থেকে বিরত থাকা জরুরি। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন। আমীন।
[আল
আশবাহ ওয়ান্ নাযায়ের, পৃষ্ঠা : ৩৫ আল কাফী, খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ৩৭৬
ফাতাওয়ায়ে আলমগীরি, খণ্ড : ৫, পৃষ্ঠা : ৩১৫ আত্ তিবইয়ান ফি আদাবি
হামালাতিল কোরআন, পৃষ্ঠা : ৪৬ রদ্দুল মুহতার, খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ৫১৮]
রিংটোন হিসেবে গান ও মিউজিক কখনোই ব্যবহার করবেন না
ইসলামি
শরিয়তে গানবাদ্য করা, শুনা নাজায়েয ও হারাম। বাজনা-মিউজিক ইত্যাদি গানের
সাথে শুনা কবীরা গুনাহ। গান ছাড়া পৃথকভাবে শুনাও গুনাহ। তাই যে কোনো ধরনের
গান-বাজনা, মিউজিক টোন ইত্যাদি মোবাইলের রিংটোন হিসেবে ব্যবহার করা নাজায়েয
ও গুনাহের কাজ। তাছাড়া এখানে আরেকটি বিষয় লক্ষ্যণীয়, মিউজিক বা গান রিংটোন
হিসেবে ব্যবহার করলে নিজে শুনার গুনাহ তো আছেই, সেই সাথে যেখানে রিংটোন
বেজে উঠে সেখানকার আশেপাশের লোকদেরকে গান-বাদ্য শুনানোর গুনাহও হয়। তদুপরি
এমন রিংটোন মসজিদে বেজে ওঠলে মসজিদের পবিত্রতা ক্ষুন্ন হয়। অথচ অনেক ভাইকে
দেখা যায়, তারা মোবাইলের রিংটোন হিসেবে গানের টোন, মিউজিক ইত্যাদি ব্যবহার
করে থাকেন। কেউ কেউ আবার মোবাইল কোম্পানি, কম্পিউটার বা অন্য মোবাইল থেকে
পছন্দের গান, মিউজিক ইত্যাদি নিজের মোবাইলে ডাউনলোড করে তাকে রিংটোন হিসেবে
ব্যবহার করেন।
আশ্চর্যের
কথা হলো, ওদের ভাবসাব দেখে মনে হয়, এসব অন্যায় ও শরিয়ত বিরোধী কাজ করতে
পেরে তারা বেশ খুশি! হায়রে মুসলমান! তোমরা যদি এই অন্যায়ের অপকারিতা ও
ক্ষতি সম্পর্কে জানতে এবং তা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা ভাবনা করতে তাহলে কখনো
এহেন গর্হিত কাজ করতে সাহস পেতে না। আল্লাহ আমাদের সবাইকে রিংটোন হিসেবে
গানের টোন, মিউজিক ইত্যাদি ব্যবহার করা থেকে হেফাজত করুন। আমীন।
[সূরা
লোকমান, আয়াত : ৬ বোখারি শরিফ, খণ্ড : ২, পৃষ্ঠা : ৮৩৭ তিরমিযি শরিফ,
খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ২৪১ সুনানে ইবনে মাজাহ, পৃষ্ঠা : ৩০০ আত্ তারগীব
ওয়াত্ তারহীব, খণ্ড : ৪, পৃষ্ঠা : ১৮৪ শামী, খণ্ড : ৯, পৃষ্ঠা : ৫৬৬
আল গিনা ফিল ইসলাম, পৃষ্ঠা : ৮৭ ফতহুল কাদীর, খণ্ড : ৬, পৃষ্ঠা : ৪৮২]
রিংটোন হিসেবে সালামের ব্যবহার নাজায়েয নয়
কারো
মোবাইলে কল আসলে তা মোবাইলধারীকে অবহিত করার জন্য যে আওয়াজটি বেজে উঠে তা
আমাদের সবার কাছে 'রিংটোন' হিসেবে পরিচিত। অনেকে স্বীয় মোবাইলে সালাম
ডাউনলোড বা রেকর্ড করার পর তাকে রিংটোন হিসেবে ব্যবহার করে। এরূপ করায় শরয়ি
দৃষ্টিকোণ থেকে কোনো সমস্যা নেই। অর্থাৎ সালামকে রিংটোন হিসেবে ব্যবহার
করা জায়েয। কেননা সালামের দুটি দিক রয়েছে। একটি হলো, সালামকে অপরের জন্য
দোয়া বা অভিবাদন হিসেবে ব্যবহার করা; আর অপরটি হলো, কারো ঘরে প্রবেশের
অনুমতি প্রার্থনার জন্য ব্যবহার করা। মোবাইলের রিংটোনও এ দ্বিতীয় প্রকারের
সাথে কিছুটা মিলে যায় বিধায় রিংটোন হিসেবে সালামের ব্যবহার নাজায়েয নয়।
[মোবাইল ফোনের শরয়ি আহকাম, পৃষ্ঠা : ২৯]
বাচ্চাদের কান্না থামানোর জন্য নাজায়েয রিংটোন বাজানো মারাক অন্যায়
অনেক
মা-বোনকে দেখা যায় তারা বাচ্চাদের কান্না থামানোর জন্য মোবাইলে গানের
রিংটোন বাজিয়ে থাকেন। আমার ধারণা, এর মারাত্মক পরিণতি ও গুনাহের বিষয়টি
অজানা থাকার কারণেই তারা এমনটি করে থাকেন। তারা হয়তো মনে করেন, বাচ্চাদের
তো শরিয়তের বিধি-নিষেধ পালন করা জরুরি নয়! অথচ তারা জানেন না যে, শরিয়তের
হুকুম আহকাম বাচ্চাদের জন্য পালন করা জরুরি না হলেও বড়দের জন্য এটা জায়েয
নেই যে, তারা বাচ্চাদের দ্বারা শরিয়ত বিরোধী কোনো কাজ করাবেন। যেমন,
ফেকাহবিদগণ বলেছেন, বয়স্ক ব্যক্তিরা যদি ছোটদেরকে পশ্চিম দিকে ফিরিয়ে
প্রস্রাব করায় তাহলে এর দ্বারা বাচ্চাদের কোনো গুনাহ হবে না ঠিকই, কিন্তু
বয়স্করা অবশ্যই গুনাহগার হবেন। অনুরূপভাবে কোনো ছোট বাচ্চার ছবি উঠালে
বাচ্চাটির কোনো গুনাহ না হলেও যিনি ছবি উঠালেন তার নিশ্চয়ই গুনাহ হবে।
এমনিভাবে বাচ্চাদেরকে গানের বাজনা শুনানোর একই হুকুম। অর্থাৎ যিনি শুনাবেন
তিনি গুনাহগার হবেন।
এখানে
আরেকটি লক্ষণীয় বিষয় হলো, যে গান-বাজনায় অন্তর গাফেল হয়, হৃদয়ে মুনাফেকী
সৃষ্টি হয়, মন শক্ত হয়ে যায়, আল্লাহর ভয় লোপ পায় সে গান-বাজনা কী করে আমরা
আমাদের কলিজার টুকরা বাচ্চাদের কান্না থামানোর জন্য ব্যবহার করছি? আমরা কি
একটি বারও খেয়াল করে দেখেছি যে, এই গান-বাদ্য শুনানোর দ্বারা কোমলমতি
বাচ্চাদের অন্তরে আমরা পাপ-প্রবণতার বীজ বপন করছি? অথচ আমরা ইচ্ছা করলে
কান্না থামানোর জন্য অন্য কোনো পদ্ধতি যেমন পশু-পাখির টোন, রেকর্ডকৃত
হামদ-নাত ইত্যাদি শুনাতে পারি।
আসলে
আমাদের মধ্যে আজ পাপ ও পাপের ভয়াবহ পরিণতির উপলব্ধি অনেকাংশে কমে গেছে।
যার ফলে অনেক সময় আমাদের মধ্যে এ চিন্তাটুকুও আসে না যে, আমরা যা করছি তাতে
শরিয়তের দৃষ্টিতে কোনো পাপ নেই তো? তাতে আল্লাহ তাআলা নারাজ হবেন না তো?
মুসলমান হিসেবে এই কাজটি আমাদের জন্য অশোভনীয় নয় তো? ইত্যাদি। আল্লাহ পাক
আমাদের সবাইকে গুনাহের মারাত্মক পরিণতি ও কঠিন শাস্তির কথা চিন্তা করে
যাবতীয় গুনাহ থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। [মোবাইল ফোনের শরয়ি আহকাম,
পৃষ্ঠা : ৫২]
মোবাইল ফোন ও মিসড্কল
অযথা মিসড্কল দিয়ে কাউকে বিরক্ত করা জায়েয নেই
বিনা
প্রয়োজনে কাউকে মিস্ডকল দেওয়া গুনাহ ও নাজায়েয। কেননা বিনা প্রয়োজনে
মিস্ডকল দেওয়ার দ্বারা যাকে মিস্ডকল দেওয়া হচ্ছে তাকে বিরক্ত করা হয়। তার
একাগ্রতায় ব্যাঘাত ঘটানো হয়। তার খাওয়া-দাওয়া, আরাম-নিদ্রা মারাত্মকভাবে
ব্যাহত হয়। অথচ হাদিস শরিফে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
'প্রকৃত মুসলমান সেই ব্যক্তি যার হাত ও মুখের অনিষ্ট থেকে অপর মুসলমান নিরাপদ থাকে'।
তদুপরি
অযথা মিস্ডকল দিলে কোনো কারণ ছাড়াই মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যস্ত রাখা হয়। ফলে
প্রয়োজনীয় কথার জন্য অনেকের সংযোগ পেতে কষ্ট হয়। এভাবে মিস্ডকল দিয়ে
নেটওয়ার্ক ব্যস্ত রাখাও জায়েয নেই। কেননা এতে কোম্পানির কোনো লাভ নেই। বরং
ক্ষতি আর ক্ষতি। মিস্ডকলকে নিরুৎসাহিত করার জন্য কিছুদিন আগে এক মোবাইল
কোম্পানি 'ভালো জিনিস বিনষ্টকারী পোকা'র সাথে মিস্ডকলকারীকে তুলনা করে
একটি বিজ্ঞাপনচিত্র পত্রিকায় দিয়েছিল। যা মিস্ডকল দেওয়ার ক্ষতির বিষয়টি
উত্তমভাবে ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিল। মোটকথা যেহেতু মিস্ডকল দিয়ে কাউকে
বিরক্ত করা, অপর মুসলমান ভাইকে কষ্ট দেওয়ার শামিল এবং এরদ্বারা মোবাইল
কোম্পানিরও ক্ষতি হয় তাই যখন তখন যেখানে সেখানে মিস্ড কল দেওয়া থেকে বিরত
থাকা একান্ত জরুরি।
মিস্ডকল
দেওয়া ভদ্রতা পরিপন্থী ছোট মন-মানসিকতার পরিচায়কও বটে। মিস্ডকল দেওয়ার
দ্বারা নিজের মান-মর্যাদা ক্ষুন্ন হয়। ইচ্ছে করেই নিজকে অপরের চোখে হেয়
প্রতিপন্ন করা হয়। যা শরিয়তের দৃষ্টিতে অপছন্দনীয়। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
'অন্যের চোখে নিজেকে হেয় প্রতিপন্ন করা কোনো মুমিনের উচিত নয়'।
এটা
কেমন কথা যে, প্রয়োজন হলো একজনের আর টাকা খরচ হবে আরেক জনের। যার প্রয়োজন
সেই কল করবে- এই তো ইনসাফের কথা! আর যদি প্রয়োজন না থাকে তাহলে অহেতুক তাকে
বিরক্ত করব কেন? কেন তার কাজ-কর্ম ও মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটাব? মনে রাখবেন,
বয়োজ্যেষ্ঠ, আলেম, বুযুর্গ, সম্মানী ও মুরুব্বীশ্রেণীর লোকদেরকে মিস্ডকল
দেওয়া আদবের খেলাফ এবং অধীনস্থ ও ছোটদেরকে মিসড্কল দেওয়া আত্মমর্যাদার
পরিপন্থি।
মিস্ডকল
দেওয়ার ক্ষেত্রে একটি লক্ষণীয় বিষয় হলো, আমরা অনেক সময় নিজে কথা বলি,
মোবাইল কোম্পানির দেওয়া অফার ও সুযোগ গ্রহণ করে কিন্তু অপরকে মিসড্কল দিয়ে
কল ব্যাক করতে বাধ্য করি স্বাভাবিক সময়ে; যখন মিনিট প্রতি দুই/আড়াই টাকা
খরচ হয়! চিন্তা করে দেখুন তো, এটা ভদ্রতা ও ইনসাফের কোন্ পর্যায়ে পড়ে!!
আল্লাহ তাআলা এ ধরনের মন-মানসিকতার লোকদেরকে সঠিক বুঝ দান করুন। আমীন।
[সহিহ বোখারি তিরিমিজি ইবনে মাজাহ বাইহাকী তরজমানুস্ সুন্নাহ,
খণ্ড : ২, পৃষ্ঠা : ২৪৪ মাসিক আল কাউসার, এপ্রিল, ২০০৮ সংখ্যা, পৃষ্ঠা :
২৫]
কখন মিসড্কল দেওয়া জায়েয?
পূর্বে
বলা হয়েছে যে, অযথা মিস্ডকল দিয়ে কাউকে পেরেশান বা বিরক্ত করা জায়েয নেই।
এতে বুঝা গেল, প্রয়োজন হলে মিস্ডকল দেওয়া জায়েয ও বৈধ। যেমন, কেউ কারো
প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে পূর্বেই বলে রেখেছে যে, তুমি কল করে টাকা খরচ করো
না। প্রয়োজন হলে মিস্ডকল দিও। আমি ব্যাক করব। অথবা বলল যে, তুমি তৈরী হলে
কিংবা অমুক স্থানে পৌঁছলে কিংবা অমুক জিনিস পেলে কিংবা অমুক ব্যক্তি আসলে
আমাকে মিস্ডকল দিও। অথবা কারো মোবাইলে রিং এসেছে, কিন্তু নামাজ বা অন্য
কোনো বিশেষ কারণে মোবাইল রিসিভ করা তার পক্ষে তৎক্ষনাৎ সম্ভব হয়নি। পরে
নামাজ ও ব্যস্ততা থেকে অবসর হয়ে সে কলকারীকে এ কথা জানানোর জন্য মিস্ডকল
দিল যে, আমি এখন অবসর, আপনি পুনরায় কল করতে পারেন। এসব ক্ষেত্রে মিস্ডকল
দেওয়ার দ্বারা কিছুটা উপকার পাওয়া যায়। মোটকথা, কারো কোনো ক্ষতি বা
বিরক্তির কারণ না হলে মিস্ডকল দেওয়ায় কোনো অসুবিধা নেই। [মাসিক আল কাউসার,
এপ্রিল, ২০০৮ সংখ্যা, পৃষ্ঠা : ২৫]
মোবাইল ফোন ও ওয়েলকাম টিউন
ওয়েলকাম টিউন হিসেবে গানের ব্যবহার শক্ত গুনাহ
আমরা
সবাই জানি যে, কারো কাছে ডায়াল করার পর তার মোবাইলে রিং হচ্ছে কি না তা
বুঝানোর জন্য ডায়ালকারীর মোবাইলে একটি টোন বা আওয়াজ ক্ষণকাল অন্তর অন্তর
প্রায় ৩০ সেকেণ্ড সময় পর্যন্ত বাজতে থাকে। এই টোন বা আওয়াজকে ওয়েলকাম টিউন
বলে। কেউ কেউ এই টোনের পরিবর্তে গান বা মিউজিক ডাউনলোড করে। ফলে যে কেউ তার
কাছে ডায়াল করে সে-ই ডাউনলোডকৃত গান বা মিউজিক শুনতে পায়।
যেহেতু
ওয়েলকাম টিউনে গান বা মিউজিক ডাউনলোড করলে এই নম্বরের সাথে যোগাযোগকারী
সকলকেই বাধ্য হয়ে গান বা মিউজিক শুনতে হয় এবং এতে অপরকে গান বা মিউজিক
শুনানো তথা গুনাহের কাজে বাধ্য করার গুনাহ হয় তাই এটিও নাজায়েয। অবশ্য
ওয়েলকাম টিউন হিসেবে যিনি তার মোবাইলে গান সেট করে রেখেছেন যদি তার সাথে
কথাবার্তা বলা অন্য কোনো লোকের জন্য জরুরি হয়ে পড়ে তাহলে ঐ ব্যক্তি অপারগ
হয়ে গান শুনার কারণে গুনাহগার হবেন না।
এরূপ
পরিস্থিতিতে একটি কাজ এই করা যেতে পারে যে, ডায়াল করার পর যখনই গানের
আওয়াজ কানে ভেসে আসবে তখনই কান থেকে মোবাইল সরিয়ে সামনে নিয়ে আসবে এবং যখনই
বুঝা যাবে যে, মোবাইল রিসিভ করা হয়েছে তখনই পুনরায় মোবাইল কানের কাছে নিয়ে
যাবে। এ কাজটি অবশ্য ঐসব মোবাইল সেট দিয়েই সম্ভব যেগুলোর স্ক্রীনে রিসিভ
করার পর থেকে কথা শেষ হওয়া পর্যন্ত সময় প্রদর্শিত হয়।
আল্লাহ
আমাদেরকে সব ধরনের গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন। আমীন। [সূরা
লোকমান, আয়াত : ৬ বোখারি শরিফ, খণ্ড : ২, পৃষ্ঠা : ৮৩৭ ফতহুল কাদীর,
খণ্ড : ৬, পৃষ্ঠা : ৪৮২]
ওয়েলকাম টিউন হিসেবে তিলাওয়াতের ব্যবহারও জায়েয নয়
গান,
মিউজিক ইত্যাদির ব্যবহার নাজায়েয হওয়ার কারণে অনেকেই ওয়েলকাম টিউন হিসেবে
কোরআন তিলাওয়াত, আজান ইত্যাদি ডাউনলোড করে থাকে। এবং এক্ষেত্রে তাদের
উদ্দেশ্যও ভালো থাকে। তারা মনে করে, এরূপ করার ফলে ডায়ালকারী লোকেরা কিছু
সময়ের জন্য হলেও কোরআনে কারিমের তিলাওয়াত শুনল, আজানের সুমধুর ধ্বনিতে
তাদের হৃদয়-মন পরিতৃপ্ত হলো। কিন্তু আপাতদৃষ্টিতে এরূপ করা ভালো মনে হলেও
এর বেশ কয়েকটি খারাপ দিক রয়েছে। যার একটিই এ থেকে বিরত থাকার জন্য যথেষ্ট।
যেমন-
১.
পবিত্র কোরআন মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ তাআলার কালাম। তাঁর এই কালামকে
একমাত্র তাঁর সন্তুষ্টির জন্যই পড়া ও শুনার বিধান রয়েছে। এ উদ্দেশ্য ছাড়া
অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ব্যবহার নিঃসন্দেহে কোরআনুল কারিমের শান ও মর্যাদার
পরিপন্থী।
২.
যার কাছে কল করা হলো তার সাথে সংযোগ সৃষ্টি হয়েছে কিনা তা বুঝার জন্যই
ওয়েলকাম টোন ব্যবহৃত হয়। আচ্ছা আপনারাই বলুন তো, আল্লাহর মহান কালামকে কি
এই কাজে ব্যবহার করা উচিত? এই কাজে তিলাওয়াতের ব্যবহার কি অপাত্রে পবিত্র
কোরআনের ব্যবহার নয়? অনুরূপভাবে শরিয়তের বড় এক নিদর্শন- আজানকে এই কাজে
ব্যবহার করা কি সমীচীন? এ কি আজানের মর্যাদাকে ক্ষুন্ন করা নয়?
৩.
যিনি ফোন করেন তিনিই ওয়েলকাম টোন শুনেন, যিনি রিসিভ করেন তিনি শুনেন না।
ফলে এমন হওয়া অস্বাভাবিক নয় যে, রিসিভকারী তেলাওয়াতের এমন স্থানে রিসিভ করে
বসবেন যেখানে থেমে গেলে আয়াতের অর্থই বদলে যায়। যেমন, পবিত্র কোরআনের একটি
আয়াতে আছে- 'লা তাক্বরাবুস্ সালাতা ওয়া আনতুম সুকারা' যার অর্থ হলো,
তোমরা নামাজের ধারে কাছেও যেও না যে অবস্থায় তোমরা মাতাল থাক। এখানে 'লা
তাক্বরাবুস্ সালাতা' অর্থ- তোমরা নামাজের ধারে কাছেও যেও না, আর 'ওয়া
আনতুম সুকারা' অর্থ- যে অবস্থায় তোমরা মাতাল থাক। এখন 'লা তাক্বরাবুস্
সালাতা' বলার সাথে সাথে যদি মোবাইল রিসিভ করা হয় তাহলে আয়াতের অর্থের মধ্যে
কেমন বিকৃতি ঘটে তা আপনারাই একটু চিন্তা করে দেখুন। অনুরূপভাবে ওয়েলকাম
টিউন্স হিসেবে আজান চলাকালে কেউ যদি 'লা ইলাহা' পর্যন্ত উচ্চারিত হওয়ার পর
ফোন রিসিভ করে ফেলে তাহলে অর্থ দাঁড়ায়- 'কোনো মাবুদ নেই'। যা অর্থের
মারাত্মক বিকৃতি। এ সমস্যার কারণেও কোরআন তিলাওয়াত ও আজানকে ওয়েলকাম টিউন
হিসেবে ব্যবহার করা জায়েয নেই।
৪.
ব্যস্ততার সময় ফোনে কথা বললে কানে তিলাওয়াতের ধ্বনি আসলেও তা মনোযোগ
সহকারে শোনা হয় না। অথচ পবিত্র কোরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেন- যখন
কোরআন পড়া হয় তখন তোমরা মনোযোগ সহকারে শোনো ও চুপ থাকো। মোটকথা এক্ষেত্রে
তিলাওয়াতের হক আদায় করা সম্ভব হয় না বিধায় ওয়েলকাম টিউন হিসেবে তিলাওয়াতের
ব্যবহার জায়েয নয়। [আলাতে জাদীদাহ কি শরয়ি আহকাম, পৃষ্ঠা : ১৭১ আত্
তিবইয়ান ফি আদাবি হামালাতিল কোরআন, পৃষ্ঠা : ৪৬ আলমগীরি খণ্ড : ৫, পৃষ্ঠা
: ৩১৫ রদ্দুল মুহতার, খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ৫১৮ হককুত্ তিলাওয়াহ,
পৃষ্ঠা : ৪০১ আল মুগনী, খণ্ড : ৪, পৃষ্ঠা : ৪৮২]
মোবাইল ফোন ও ফ্লেক্সিলোড
ফ্লেক্সিলোড করে ফ্লেক্সিকৃত অর্থের চেয়ে বেশি গ্রহণ করা জায়েয
ফ্লেক্সিলোড
করে ফ্লেক্সিকৃত অর্থের চেয়ে বেশি টাকা গ্রহণ করা ব্যবসায়ীর জন্য জায়েয।
এরূপ করা সুদ নয়। কেননা এটা মূলত কম টাকার বিনিময়ে বেশি টাকা গ্রহণ নয়। বরং
এটা হচ্ছে, নির্ধারিত অঙ্কের আউটগোয়িং সেবা যা বিক্রয়যোগ্য। তাই এটা
নির্ধারিত অঙ্কের বেশিতে লেনদেন করা সুদ নয়। কিন্তু কোম্পানির পক্ষ থেকে
লোডকারী ব্যবসায়ীকে যেহেতু নির্ধারিত হারে কমিশন দেওয়া হয় এবং গ্রাহক থেকে এ
বাবদ কোনো টাকা লওয়া কোম্পানি কর্তৃক নিষিদ্ধ তাই ব্যবসায়ীর জন্য
ফ্লেক্সিকৃত অর্থের চেয়ে বেশি লওয়া উচিত নয়। [ফতহুল কাদীর, খণ্ড : ৬,
পৃষ্ঠা : ১৫৯ তাকমিলাতু ফাতহুল মুলহিম, খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ৪০০]
ফ্লেক্সিলোড করার সময় টাকা অন্যত্র চলে গেলে...
ফ্লেক্সিলোড
করার সময় পূর্ণ সতর্কতার সাথে নম্বর টিপতে হয়। কেননা নম্বর টিপতে ভুল করলে
ফ্লেক্সিকৃত টাকা ভুল নম্বরে চলে যায়। ফলে অনেক সময় দোকানী ও গ্রাহকের
মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এমনকি কোনো কোনো সময় তা মারাত্মক ঝগড়ায় রূপ নেয়। যা
অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রত্যাশিত।
যাহোক,
ভুলক্রমে যদি ফ্লেক্সিকৃত টাকা অন্য মোবাইলে চলেই যায় তাহলে এর ক্ষতিপূরণ
কে দিবে? দোকানী, না গ্রাহক? এক্ষেত্রে শরিয়তের ফয়সালা হলো, যিনি ভুল
করেছেন তিনিই ক্ষতির এই দায়ভার বহন করবেন।
সাধারণত
দেখা যায়, ফ্লেক্সিলোডকারী ব্যবসায়ীরা গ্রাহকের নম্বরটি নির্দিষ্ট একটি
খাতায় নিজের হাতে নোট করে নেয়। কোনো কোনো সময় গ্রাহককে দিয়েও লিখায়। যদি
ব্যবসায়ী লিখে তাহলে গ্রাহকের জন্য স্বীয় নম্বরের সাথে খাতায় লিখিত
নম্বরটিকে মিলিয়ে নেওয়া কর্তব্য। এরপর ব্যবসায়ী যদি খাতায় নোটকৃত নম্বর
টিপতে গিয়ে ভুল করে এবং টাকা অন্য মোবাইলে চলে যায় তাহলে এই ক্ষতির দায়ভার
তাকেই বহন করতে হবে। এ বাবদ গ্রাহক থেকে কিছুই নিতে পারবে না। হ্যাঁ,
গ্রাহক যদি স্বেচ্ছায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে কিছু দিতে চায় তবে ব্যবসায়ী তা নিতে
পারবে।
আর
যদি নম্বর বলার সময়ই গ্রাহক ভুল করে থাকে অথবা নিজ হাতে ভুল নম্বর লিখে
এবং দোকানী সে নম্বরেই ফ্লেক্সি করে তবে এ ভুলের ক্ষতিপূরণ গ্রাহককে বহন
করতে হবে। অবশ্য দোকানী তার খাতায় ভুল নম্বর নোট করেছে একথা প্রমাণিত হলে এ
ভুলের দায়-দায়িত্ব দোকানীর, গ্রাহকের নয়। [মাসিক আল কাউসার, এপ্রিল '০৮
সংখ্যা, পৃষ্ঠা : ২৬]
অজ্ঞাত স্থান থেকে ফ্লেক্সি এসে গেলে কী করবেন ?
যদি
কখনো অজানা নম্বর থেকে মোবাইলে টাকা চলে আসে তাহলে প্রথমে তাকে নিশ্চিত
হতে হবে যে, তার কোনো পরিচিত মানুষ তার মোবাইলে টাকা পাঠিয়েছে কিনা কিংবা
এটা মোবাইল কোম্পানির বোনাস কিনা? যদি তা না হয় তাহলে এই টাকা ব্যবহার করা
তার জন্য জায়েয হবে না। এমতাবস্থায় এ টাকা মূল মালিকের কাছে পাঠিয়ে দেওয়ার
সর্বাত্মক চেষ্টা চালাতে হবে। সাধারণত দেখা যায়, যে নম্বর থেকে টাকা এসেছে
সে নম্বরধারী ব্যক্তি কল করে থাকে। এমনটি হলে তো মূল মালিকের সন্ধান মিলেই
গেল!
আর
যদি এমন না হয় তাহলে সে স্বীয় মোবাইল অপারেটরের সাথে যোগাযোগ করে অথবা
অন্য কোনো উপায়ে টাকা পাঠাতে চেষ্টা করবে। যদি এই চেষ্টায় সে সফল হয় এবং এ
বাবদ তার কিছু টাকা খরচ হয় তাহলে খরচ পরিমাণ টাকা রেখে বাকী টাকা পাঠালেই
চলবে। আর যদি এক্ষেত্রেও সে কামিয়াব না হয় অর্থাৎ মূল মালিকের কাছে
কোনোভাবেই টাকা ফেরত পাঠানো সম্ভব না হয় তাহলে সে ঐ পরিমাণ টাকা উক্ত
ব্যক্তির নামে কোনো গরীব-মিসকীনকে দান করে দিবে। অবশ্য পরে যদি টাকার মালিক
পাওয়া যায় তাহলে তাকে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে টাকা দান করার কথা জানাবে। যদি সে
মেনে নেয় তবে তো ভালো। অন্যথায় সে পরিমাণ টাকা তাকে ফেরত দিতে হবে। [আল
বাহর্রু রায়েক, খণ্ড : ৫, পৃষ্ঠা : ১৫২, ২৫৭ ফাতাওয়া তাতারখানিয়া, খণ্ড :
৫, পৃষ্ঠা : ৫৮৫ বাদায়েউস সানায়ে, খণ্ড : ৫, পৃষ্ঠা : ২৯৮]
ভুল ফ্লেক্সিকারীর দেওয়া ছাড় গ্রহণ করা যাবে কি?
কারো
নম্বরে ভুলক্রমে ফ্লেক্সিলোডের টাকা চলে গেলে দোকানী যদি তাকে কিছু ছাড়
দিয়ে বাকীটা পাঠাতে বলে, যেমন ৩০০ টাকা ভুলে অন্য নম্বরে চলে গিয়ে থাকলে
যার নম্বরে টাকা চলে গেল তাকে ফোন করে দোকানী বলল, ভাই! তুমি ২০ টাকা রেখে
বাকী ২৮০ টাকা আমার মোবাইলে পাঠিয়ে দাও তাহলে ঐ ব্যক্তির জন্য এ ছাড় গ্রহণ
করা জায়েয হবে কি?
হ্যাঁ,
এ ছাড় যদি সে স্বেচ্ছায় খুশি হয়ে দেয় তবে তা নেওয়া জায়েয। কিন্তু ছাড় না
দিলে বাকী টাকাও পাঠাবে না এ আশঙ্কা করে যদি ছাড় দিতে চায় তবে তা গ্রহণ করা
যাবে না। তাই ছাড়টা খুশি হয়ে সন্তুষ্টচিত্তে দিচ্ছে কিনা তা যে কোনো
উপায়েই হোক, যাচাই করে নেওয়া একান্ত প্রয়োজন। [আল বাহর্রু রায়েক, খণ্ড :
৩, পৃষ্ঠা : ১৫৪ আদ্দুররুল মুখতার, খণ্ড : ৪, পৃষ্ঠা : ২৮০]
মোবাইল ফোন ও জাকাত
ব্যালেন্সে অবস্থিত টাকার জাকাত দিতে হবে কি ?
জাকাত
হলো ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম একটি। যা অত্যাবশ্যকীয় ও সম্পূর্ণ
নিশ্চিত একটি বিধান। জাকাত দরিদ্রদের অধিকার, সম্পদশালীদের কোনো অনুদান নয়।
আল্লাহ তাআলা স্বীয় অনুগ্রহে নিজ বান্দাদের মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছা সম্পদ
দিয়েছেন এবং এই সম্পদের সামান্য অংশ গরীব-দুঃখীদের জন্য নির্ধারিত করে
রেখেছেন। মানুষ যখন জাকাত আদায় করে তখন তার অবশিষ্ট সম্পদ নির্মল ও পবিত্র
হয়ে যায়। পক্ষান্তরে কেউ যদি জাকাত না দেয় তাহলে তার সমুদয় সম্পদ অপবিত্র ও
বরকতহীন হয়ে যায়। তদুপরি যারা জাকাত আদায় করবে না পরকালে তাদের জন্য রয়েছে
কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَالَّذِينَ يَكْنِزُونَ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ وَلَا يُنْفِقُونَهَا فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَبَشِّرْهُمْ بِعَذَابٍ أَلِيمٍ ﴿৩৪﴾ يَوْمَ
يُحْمَى عَلَيْهَا فِي نَارِ جَهَنَّمَ فَتُكْوَى بِهَا جِبَاهُهُمْ
وَجُنُوبُهُمْ وَظُهُورُهُمْ هَذَا مَا كَنَزْتُمْ لِأَنْفُسِكُمْ
فَذُوقُوا مَا كُنْتُمْ تَكْنِزُونَ ﴿৩৫﴾ ( التوبة : ৩৪-৩৫)
যারা
স্বর্ণ ও রৌপ্য পুঞ্জিভূত করে রাখে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না, (হে
নবী!) তাদেরকে আপনি কঠিন শাস্তির সুসংবাদ শুনিয়ে দিন। (সেদিন তাদের অবস্থা
কেমন হবে) যেদিন জাহান্নামের আগুনে সেই স্বর্ণ রৌপ্যকে উত্তপ্ত করে ঐগুলো
দ্বারা তাদের ললাট, পার্শ্ব ও পৃষ্ঠদেশে দাগ দেওয়া হবে এবং বলা হবে এ হলো ঐ
জিনিস যা তোমরা নিজেদের জন্য পুঞ্জীভূত করে রেখেছিলে। অতএব এখন তোমরা
পুঞ্জীভূত করার শাস্তি আস্বাদন করো। [সূরা তাওবা: ৩৪-৩৫]
প্রাপ্ত
বয়স্ক, সুস্থ মস্তিস্কসম্পন্ন কোনো মুসলমান নর-নারীর যদি নিসাব পরিমাণ মাল
এক বছর তার মালিকানায় থাকে তাহলে তার উপর জাকাত ফরজ হবে। অর্থাৎ যেদিন সে
নিসাব পরিমাণ মালের মালিক হবে, এক বছর অতিবাহিত হওয়ার পর ঠিক সেদিন যদি সে
নিসাব পরিমাণ মালের মালিক থাকে (মাঝখান দিয়ে কমবেশি হওয়া ধর্তব্য নয়) তাহলে
তার জাকাত আদায় করা ফরজ হবে। এখন প্রশ্ন হলো, যেদিন তার উপর জাকাত ফরজ হলো
সেদিন যদি তার প্রি-পেইড মোবাইলের ব্যালেন্সে টাকা থাকে তাহলে ঐ টাকার
জাকাত দিতে হবে কি না?
ব্যালেন্সে
অবস্থিত টাকা মূলত টাকা নয়। বরং এটি হচ্ছে ঐ টাকার সমপরিমাণ আউটগোয়িং
সেবা। আর ব্যালেন্সে অবস্থিত টাকা যেহেতু মূলত টাকা নয় বরং ক্রয়কৃত একটি
সেবাপণ্য যা ব্যবহারের উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছে; তাই অন্যান্য ব্যবহৃত
সম্পদের ন্যায় ব্যালেন্সে অবস্থিত সম্পদেরও জাকাত দিতে হবে না। [ফাতাওয়া
তাতারখানিয়া, খণ্ড : ২, পৃষ্ঠা : ২৪৫ ফাতাওয়া হিন্দিয়া, খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা
: ১৭২ হেদায়া, খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ১৮৬]
সিকিউরিটি ডিপোজিটেরও জাকাত দিতে হবে
যেসব
লোক পোস্ট-পেইড তথা বিল অগ্রিম পরিশোধ করে মোবাইল ব্যবহার করেন তাদের বিল
যদি নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে বেশি হয়ে যায় তখন কোম্পানির পক্ষ থেকে সংযোগ
বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। কিন্তু মোবাইল কোম্পানির কাছে অতিরিক্ত টাকা
সিকিউরিটি হিসেবে জমা রাখলে নির্ধারিত পরিমাণ বিলের সুযোগ থাকে। এক্ষেত্রে
বিলের পরিমাণ সাধারণ বিলের চেয়ে বেশি হলেও কোম্পানির পক্ষ থেকে সংযোগ
বিচ্ছিন্ন করা হয় না। কোম্পানির কাছে সিকিউরিটি হিসেবে জমাকৃত এই টাকাকে
সিকিউরিটি ডিপোজিট বলা হয়।
সিকিউরিটি
ডিপোজিটের এ টাকা জাকাতযোগ্য সম্পদ। নিসাবের মালিকের জন্য অবশ্যই এর জাকাত
দিতে হবে। কেননা ইচ্ছা করলেই এ টাকা ক্যাশ করা যায়। মোটকথা সিকিউরিটি
ডিপোজিটের টাকা যেহেতু অন্যান্য জমাকৃত টাকার মতোই তাই অন্যান্য টাকার সাথে
মিলিয়ে এই টাকারও জাকাত দিতে হবে। [ফাতাওয়া হিন্দিয়া, খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা :
১৭৪ আল বাহর্রু রায়েক, খণ্ড : ২, পৃষ্ঠা : ২০২, ২০৬]
ফ্লেক্সি ব্যবসায়ীদের জমাকৃত টাকার জাকাত
ফ্লেক্সি
ব্যবসায়ীরা প্রথমে কোম্পানির নির্দিষ্ট জায়গায় টাকা জমা দেয়। তারপর এ
জমাকৃত টাকা থেকে ধীরে ধীরে গ্রাহকের নিকট ফ্লেক্সি বিক্রি করে। এখন এ টাকা
তাদের হাতে ক্যাশ হওয়ার আগেই যদি জাকাতের বর্ষ পূর্ণ হয়ে যায় তাহলে এ
জমাকৃত টাকার জাকাত দিতে হবে। যদি কিছু টাকা হাতে ক্যাশ হয় আর কিছু টাকা
কোম্পানির কাছে জমা থেকে যায় তাহলেও জমাকৃত টাকার জাকাত দিতে হবে। আর যে
টাকা হাতে এসে গেছে সে টাকার জাকাত তো অন্যান্য টাকার সাথে মিলিয়ে হার মত
দিতেই হবে। উল্লেখ্য যে, কোম্পানির কাছে জমাকৃত টাকার ফ্লেক্সি বিক্রি করে
যে লাভ হবে তার জাকাত এখন দিতে হবে না। কারণ সে লাভ তো এখনো হয়নি। মোটকথা
কোম্পানির কাছে জমাকৃত টাকা নিজের কাছে রক্ষিত টাকার মতোই। নিসাবের মালিক
কোনো ব্যবসায়ীর এক বছর পূর্ণ হলেই সে টাকার উপর জাকাত ফরজ হবে। [মাসিক আল
কাউসার, মে ২০০৮ সংখ্যা, পৃষ্ঠা : ১৭-১৮]
মোবাইল ফোনের ক্রয়-বিক্রয়
ক্যামেরাযুক্ত মোবাইলের ক্রয়-বিক্রয় নাজায়েয নয়, তবে...
ক্রয়-বিক্রয়ের
ক্ষেত্রে শরিয়তের একটি নিয়ম হলো, যেসব জিনিস সবসময় কিংবা বেশির ভাগ সময়
গুনাহের কাজেই ব্যবহার করা হয় এবং যা দ্বারা গুনাহের কাজ ছাড়া অন্য কোনো
ভালো বা জায়েয কাজ করা সম্ভব হয় না তা ক্রয়-বিক্রয় হারাম ও নাজায়েয।
ইসলামি
শরিয়তে কোনো প্রাণীর ছবি তোলা বা অঙ্কন করা হারাম ও নাজায়েয। কিন্তু কোনো
প্রাকৃতিক দৃশ্য বা প্রাণহীন বস্তু যেমন- পাহাড়-নদী, গাছপালা, তরুলতা,
আকাশ-সমুদ্র ইত্যাদির ছবি তোলা বা অঙ্কন করা হারাম বা নাজায়েয নয়।
ক্যামেরাযুক্ত
মোবাইল দ্বারা যেহেতু নিষ্প্রাণ বস্তু ও প্রাকৃতিক দৃশ্যের স্থির ছবিও
উঠানো যায় তাই তার ক্রয়-বিক্রয় নাজায়েয নয়। তবে তাকে নাজায়েয কাজে ব্যবহার
করাকেই না জায়েয বলা হবে। অর্থাৎ এর দ্বারা কোনো প্রাণীর ছবি উঠানোকেই
নাজায়েয বলা হবে।
ক্যামেরাযুক্ত
মোবাইল ক্রয়ের ক্ষেত্রে আমার (লেখকের) পরামর্শ হলো, প্রাণীর ছবি না উঠালেও
খুব বেশি প্রয়োজন না হলে এ ধরনের মোবাইল সেট ক্রয় থেকে বিরত থাকাই ভালো।
কারণ, হাতের কাছে গুনাহের সরঞ্জমাদি থাকলে গুনাহ হয়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক।
কেননা নফ্স কিছুক্ষণের জন্য সাধু সাজলেও সুযোগ পেলে গুনাহ করে ফেলতে পারে।
যখন তখন ফিরে যেতে পারে আপন স্বভাবে। এজন্যেই নবী ইউসুফ আলাইহিস সালাম
বলেছিলেন,
وَمَا أُبَرِّئُ نَفْسِي إِنَّ النَّفْسَ لَأَمَّارَةٌ بِالسُّوءِ إِلَّا مَا رَحِمَ رَبِّي إِنَّ رَبِّي غَفُورٌ رَحِيمٌ ﴿৫৩﴾ ( يوسف : ৫৩)
আমি
আমার নফ্সকে নির্দোষ মনে করি না। কারণ নফ্স অধিক পরিমাণে খারাপ কাজের
নির্দেশপ্রদানকারী, তবে আমার রব যাকে রহম করেন, নিশ্চয় আমার রব অধিক
ক্ষমাশীল, অতীব দয়ালু [সূরা ইউসুফ, আয়াত ৫৩]
তাছাড়া
শয়তান তো আমাদের প্রকাশ্য শত্রু। পাপ কাজ করানোর জন্য সর্বদাই সে মানুষের
পিছনে লেগে থাকে। তাই আজ হয়তো আপনার দৃঢ় একিন আছে যে, আপনি কখনোই প্রাণীর
ছবি তুলবেন না। কিন্তু ক্যামেরাযুক্ত মোবাইল হাতে থাকলে শয়তান হয়তো এক সময়
সুযোগ পেয়ে আপনার অন্তরে একথার ওয়াস্ওয়াসা ঢেলে দিতে পারে যে, আরে!
দু'একবার ছবি তুললে এমন কি পাপ হবে! দু'একবারের গুনাহ তো আল্লাহও ক্ষমা
করেন!! তাছাড়া তাওবার দরজা তো খোলাই আছে ! তাই এখন একটু ছবি তুলে নাও। পরে
আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে নিও।
অথবা
বাসায় ক্যামেরাযুক্ত মোবাইল থাকলে আপনি হয়তো প্রাণীর কোনো ছবি তুললেন না,
কিন্তু আপনার পরিবারের দুর্বল ঈমানওয়ালা কাউকে দিয়ে শয়তান হয়তো প্রাণীর ছবি
তোলাতে পারে।
প্রিয়
পাঠক-পাঠিকা! উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা আমি যেকথাটি বুঝাতে চাচ্ছি তাহলো-
যেহেতু গুনাহের উপকরণ না থাকলে গুনাহের সম্ভাবনাও কম থাকে তাই ক্যামেরা সেট
মোবাইল- যা দিয়ে যে কোনো সময় ছবি তোলা যায়, গান শোনা যায়- তা ক্রয় করা বা
নিজের কাছে রাখা থেকে বিরত থাকাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
তাই
আবারো বলছি, একান্ত ঠেকা না হলে, ক্যামেরা ও ভিডিও সুবিধাযুক্ত মোবাইল সেট
ক্রয় না করাই শ্রেয় এবং অধিক তাকওয়ার বিষয়। আল্লাহ আমাদের সবাইকে বুঝার ও
আমল করার তাওফিক দান করুন। আমীন। [ইমদাদুল ফাতওয়া, খণ্ড : ৪ পৃষ্ঠা : ২৪৯ #
আল আশবাহ ওয়ান্ নাযায়ের, পৃষ্ঠা : ৫৩ জাওয়াহিরুল ফিক্হ, খণ্ড : ২,
পৃষ্ঠা : ৪৪৬ বুহুস ফি কাযায়া ফিকহিয়্যাহ, খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ৩৫৯ আল
বাহর্রু রায়েক, খণ্ড : ৮, পৃষ্ঠা : ২০২ আদ্দুররুল মুহতার, খণ্ড : ৬,
পৃষ্ঠা : ৩৯১] র
চুরি ও ছিনতাইকৃত মোবাইল সেট ক্রয় করা জায়েয নেই
আজকাল
মোবাইল ফোনের ব্যবহার অত্যধিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে মোবাইল সেট চুরি ও
ছিনতাইয়ের ঘটনা অহরহ ঘটছে। এখন কোনো চোর বা ছিনতাইকারী বা তাদের কোনো লোক
যদি এ ধরনের মোবাইল সেট বিক্রি করে তাহলে অন্যের জন্য জেনেশুনে
ইচ্ছাকৃতভাবে তা ক্রয় করা জায়েয হবে না। অনুরূপভাবে কারো মোবাইল যদি হারিয়ে
যায় এবং অন্য কেউ পেয়ে তা বিক্রি করে তাহলে তাও জেনেশুনে ক্রয় করা জায়েয
হবে না। [আপ কা মাসায়েল আউর উন কা হল, খণ্ড : ২ পৃষ্ঠা : ১১৩]
সাধারণ সেট নামীদামী কোম্পানির নামে চালানোও নাজায়েয
অনেক
সময় দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফা লাভের উদ্দেশ্যে সাধারণ ও কমদামী
মোবাইল সেট নামীদামী কোম্পানি যেমন নকিয়া, স্যামসং ইত্যাদির লেভেল লাগিয়ে
বেশি দামে বিক্রি করে। এভাবে এক কোম্পানির মাল অন্য কোম্পানির লেভেল দিয়ে
বিক্রি করা হারাম ও নাজায়েয। কারণ এরদ্বারা মানুষকে ধোকা দেওয়া হয় এবং
অন্যায়ভাবে অন্যের মাল হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। আল্লাহ আমাদেরকে এ থেকে হেফাজত
করুন। আমীন। [মুসলিম শরিফ, খণ্ড : ২ পৃষ্ঠা : ২]
মোবাইল ফোন : বিবিধ
তালিবে ইল্মদের হাতে মোবাইল!
তালিবে
ইল্ম তথা ছাত্রদের কাছে মোবাইল রাখা মোটেও উচিত নয়। কেননা তাদের কাছে
মোবাইল রাখার দ্বারা যতটা না লাভ হয়, তার চেয়ে ক্ষতি হয় কয়েকশ গুণ বেশি।
তাই তো এক মনীষী বলেছেন- "তালেবে ইল্মের কাছে মোবাইল থাকার অর্থই হলো, তার
তলবের মাদ্দা ও জ্ঞানার্জনের আগ্রহ খতম হয়ে যাওয়া এবং ধীরে ধীরে ধ্বংস ও
বরবাদির পথে এগিয়ে যাওয়া। সুতরাং ছাত্ররাই এবার সিদ্ধান্ত নিক্ তারা কি
জ্ঞানার্জনের স্পৃহা নিঃশেষ করে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাবে? নাকি
জ্ঞানার্জনের স্পৃহা বাকী রেখে প্রকৃত আলেম হওয়ার চেষ্টা করবে?"
লক্ষ
লক্ষ মানুষ আজ বিশেষ কোনো প্রয়োজন ছাড়াই কেবল ফ্যাশন হিসেবে মোবাইল
ব্যবহার করে অর্থের চেয়ে অধিক মূল্যবান জিনিস 'সময়' অপচয়ে লিপ্ত। আক্ষেপের
বিষয় হলো, আমাদের তালেবে ইল্ম ভাইয়েরাও এই মহামারি থেকে নিরাপদ নয়। আজকাল
তাদের অনেকের হাতেই মোবাইল ফোন দেখা যায়। কেউ গোপনে রাখে, কেউ প্রকাশ্যে
ব্যবহার করে। অথচ আমার বুঝে আসে না যে, ইল্ম চর্চার প্রতি গভীর মনোনিবেশের
সাথে 'মোবাইল চর্চা' একত্র হয় কীভাবে? তদুপরি এটা নিশ্চিত যে, তালেবে
ইল্মের জন্য এই 'বস্তুটা' প্রয়োজনের আওতায় পড়ে না। বরং এটা তাদের জন্য
একটা অতিরিক্ত জিনিস। তাই এর পেছনে পড়ার মানে একথার সাক্ষ্য দেওয়া যে, আমি
তালেবে ইল্ম নই।
তাই
তালেবে ইল্মরা যদি নিজেদের কল্যাণ চায়, তাহলে তাদেরকে সর্বপ্রথম মোবাইল
পরিত্যাগ করতে হবে। পাশাপাশি সর্বপ্রকার ব্যস্ততা ও প্রতিবন্ধকতা থেকে
সম্পূর্ণ মুক্ত হয়ে একাগ্রতার সাথে ইল্ম চর্চায় নিমগ্ন হতে হবে। এছাড়া
দীনের সঠিক বুঝ ও ইল্মি ময়দানে পাকা-পোক্ত হওয়ার আশা করা যায় না।
মোবাইলে কোরআন তিলাওয়াত রেকর্ড করা
লিখিত
কোরআনের ন্যায় কোরআন তিলাওয়াতও ডাউনলোড কিংবা রেকর্ড করা জায়েয। এতে কোনো
সমস্যা নেই। এর হুকুম অন্যান্য রেকর্ডারের মতোই। তবে যখন তিলাওয়াত অন করা
হবে তখন খুব মনোযোগ সহকারে তিলাওয়াত শুনতে হবে। এমন যেন কখনোই না হয়,
একদিকে তিলাওয়াত চলছে আর অপর দিকে সে অন্য কাজে ব্যস্ত। কেননা এরূপ করা
তিলাওয়াতের আদব পরিপন্থী কাজ। [মাসিক আল কাউসার, এপ্রিল, ২০০৮ সংখ্যা,
পৃষ্ঠা : ২৪]
মোবাইলে লিখিত কোরআন রেকর্ড করা
অনেকে
লিখিত কোরআন শরিফ বা তার অংশবিশেষ ডাউনলোড করে মেমোরিতে সংরক্ষণ করে রাখে।
এমনিভাবে কেউ কেউ আবার হাদিস বা হাদিসের টুকরোও স্বীয় মোবাইলে সেভ করে
রাখে। এরূপ করা জায়েয। তবে যখন তা স্ক্রীনে আনা হয় তখন খুব ভালো করে সতর্ক
থাকতে হবে যাতে কোরআন বা হাদিসের সাথে কোনো ধরনের বেআদবী না হয়। যেমন, এ
অবস্থায় বাথরুম বা কোনো নাপাক স্থানে যাওয়া। উল্লেখ্য যে, কোরআন শরিফ
স্ত্রীনে কিংবা মেমোরীতে থাকা অবস্থায় বিনা অজুতে মোবাইল ধরা বা স্পর্শ করা
যাবে। [ফাতাওয়া শামী, খণ্ড : ৯, পৃষ্ঠা : ৫১৯ মাসিক আল কাউসার, এপ্রিল,
২০০৮ সংখ্যা, পৃষ্ঠা : ২৪]
মোবাইল স্ক্রীনে ছবি সেভ করা
মোবাইলের
যে অংশে নম্বর, নাম, লেখা ইত্যাদি দেখা যায় তাকে মোবাইল স্ক্রীন বা
ডিসপ্লে ইউনিট বলে। অনেককে দেখা যায় মোবাইল স্ক্রীনে নিজের ছবি, বাচ্চাদের
ছবি, বন্ধু-বান্ধবদের ছবি, প্রিয়জনদের ছবি বা অন্য কোনো প্রাণীর ছবি সেভ
করে রাখে। এরূপ করা সম্পূর্ণ নাজায়েয। কারণ শরয়ি ওজর ছাড়া কোনো মানুষ বা
প্রাণীর ছবি উঠানো যেমন গুনাহ তেমনি সেভ করে রাখাও গুনাহ ও নাজায়েয।
মোবাইল
স্ক্রীনে ছবি সেভ করে রাখার আরেকটি খারাবি এই যে, এর দ্বারা ছবির
প্রদর্শনী হয় এবং ছবি খুলে রাখা হয়। যা রহমতের ফেরেশতা আগমনের ক্ষেত্রে
অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। হাদিস শরিফে আছে,
ঐ ঘরে রহমতের ফেরেশ্তা প্রবেশ করে না যেখানে কুকুর বা প্রাণীর ছবি থাকে।
আর
স্ক্রীনের ছবিটি যদি কোনো মহিলার হয় তবে তো গুনাহের পরিমাণ আরো অনেক বেশি
হবে। কেননা এক্ষেত্রে গাইরে মাহরামদের জন্য ছবিটি দেখা এবং অন্যদের দেখানোর
ভিন্ন গুনাহ হবে। মোটকথা মোবাইল স্ক্রীনে কোনো অবস্থাতেই মানুষ বা অন্য
কোনো প্রাণীর ছবি সেভ করে রাখা যাবে না। [বোখারি শরিফ, খণ্ড : ২, পৃষ্ঠা :
৮৮০ মুসলিম শরিফ খণ্ড : ২, পৃষ্ঠা : ২০০ ফাতাওয়া হিন্দিয়া, খণ্ড : ৫,
পৃষ্ঠা : ৩৫৯ আল বাহর্রু রায়েক, খণ্ড : ৬, পৃষ্ঠা : ১৭২ শামী, খণ্ড :
৯, পৃষ্ঠা : ৫১৯ আল মাদখাল ইবনুল হাজ, খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ২৭৩ বাদায়েউস
সানায়ে, খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ৩০৪]
মোবাইল স্ক্রীনে আয়াত, জিকির বা এগুলোর ক্যালিগ্রাফী সেভ করা
মোবাইল
স্ক্রীনে পবিত্র কোরআনের আয়াত, আল্লাহ তাআলার নাম, জিকির বা এগুলোর
ক্যালিওগ্রাফী সেভ করে রাখা ঠিক নয়। কেননা ক্ষেত্রবিশেষে এসব মর্যাদাপূর্ণ
জিনিসের সাথে বেয়াদবি হয়ে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে। তাছাড়া সাধারণত দেখা
যায়, মোবাইল খুব একটা সম্মানের সাথে ব্যবহার করা হয় না। বরং অধিক ব্যবহারের
ফলে যত্রতত্র রাখা হয়। অনেক সময় ফ্লোরে, নীচে কিংবা বসার স্থানে রাখা হয়।
চার্জের প্রয়োজনেও কোনো কোনো সময় নীচে রাখতে হয়। তদুপরি মোবাইল ব্যবহারকারী
মোবাইল নিয়ে বাথরুমে যায়, পায়জামা বা প্যান্টের পকেটে রাখে। মোটকথা,
যেহেতু স্ক্রীনে দৃশ্যমান অবস্থায় এসব সম্মানিত বস্তুর সম্মান বজায় রাখা
পুরোপুরি সম্ভব হয়ে ওঠে না, তাই মোবাইল স্ক্রীনে এগুলো সেভ করে রাখা উচিত
নয়। [ফাতাওয়া হিন্দিয়া, খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ৫০ শামী, খণ্ড : ৯, পৃষ্ঠা :
৫১৯]
ম্যাসেজের মাধ্যমে ছবি প্রেরণ
ম্যাসেজের
মাধ্যমে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দৃশ্য, ফুল, ফল বা অন্যান্য বস্তুর ছবি পাঠাতে
কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু মানুষ বা অন্য কোনো প্রাণীর ছবি পাঠানো জায়েয
নেই। কেননা এক্ষেত্রে প্রয়োজন ছাড়া ছবির ব্যবহার হচ্ছে। আর ছবিটি যদি কোনো
গাইরে মাহরাম মহিলার হয় তবে তো পর্দার হুকুম লঙ্ঘন করার গুনাহ হবে। সাধারণত
দেখা যায়, এ ধরনের ছবি যার কাছে পাঠানো হচ্ছে সে তো দেখেই, সেই সাথে
আশেপাশের অন্যান্য পুরুষও দেখে। এতে ব্যাপকভাবে পর্দা লঙ্ঘনের গুনাহ হয়।
তাই এ থেকে বিরত থাকা অত্যন্ত জরুরি। [সহীহ মুসলিম, খণ্ড : ২, পৃষ্ঠা : ২০০
আল মাদখাল, খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ২৭৩]
মোবাইল দ্বারা ছবি তোলা বা ভিডিও করা
মোবাইল
দ্বারা কোনো মানুষ বা প্রাণীর ছবি উঠানো এবং তা সংরক্ষণ করে রাখা সম্পূর্ণ
নাজায়েয ও হারাম। অনুরূপভাবে মোবাইলের সাহায্যে ভিডিও করাও হারাম ও
নাজায়েয। মুফতী শফী রহ. বলেন, কলমের সাহায্যে যেমন জীব-জন্তুর ছবি আঁকা
জায়েয নেই অনুরূপভাবে কোনো মেশিনের সাহায্যেও ছবি তৈরি করা বা প্রেসে ছাপা
জায়েয নেই। [তাসভীর কি শরয়ি আহকাম, পৃষ্ঠা : ৬১ শামী, খণ্ড : ৯, পৃষ্ঠা :
৫১৯ উমদাতুল ক্বারী, খণ্ড : ১২, পৃষ্ঠা : ৩৯]
নির্ধারিত সময়ে খরচের শর্তে বোনাস ঘোষণা ও তার হুকুম
বর্তমানে
মাঝে মাঝে প্রায় সব ক'টা মোবাইল কোম্পানি নির্ধারিত পরিমাণ টাকা রিচার্জ
করলে এর উপর একটা আকর্ষণীয় বোনাস টক টাইমের অফার দেয়। তবে এক্ষেত্রে তারা
অনেক সময় শর্ত জুড়ে দেয় যে, এতদিনের মধ্যে এই বোনাস টকটাইম খরচ করতে হবে।
এখন প্রশ্ন হলো, মোবাইল কোম্পানিগুলোর এধরনের বোনাস ঘোষণা করা এবং গ্রাহক
কর্তৃক এরূপ বোনাস প্রাপ্তির উদ্দেশ্যে রিচার্জ করার হুকুম কি?
আসলে
মোবাইল কোম্পানিগুলো গ্রাহককে স্বল্প সময়ে অধিক মোবাইল ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ
করে বেশি মুনাফা লাভের জন্য এ ধরনের অফার দিয়ে থাকে। এটা মূলত গ্রাহকদেরকে
প্রলোভন দেখানো ছাড়া আর কিছুই নয়। যেহেতু মোবাইল কোম্পানিগুলোর শর্ত থাকে,
নির্ধারিত মেয়াদের ভিতর বোনাস টকটাইম খরচ করতে হবে, অন্যথায় বোনাসের সুযোগ
হারাতে হবে। ফলে গ্রাহকরা বাধ্য হয়ে প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে কথা বলে এই বোনাস
টকটাইম শেষ করে। এতে নিঃসন্দেহে গ্রাহকের সময়ের অপচয় ও অর্থের অপব্যয় হয়।
এছাড়া অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা এবং অধিকমাত্রায় কথা বলার খারাবি তো আছেই।
ব্যবসার এমন পলিসি শরিয়ত পছন্দ করে না। তাই মোবাইল কোম্পানিগুলোকে এ ধরনের
অফার দেওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। হ্যাঁ, বোনাস যদি দিতেই চায় তবে তা খরচের
জন্য পর্যাপ্ত সময়ও দিতে হবে। যাতে ব্যবহারকারীরা অপ্রয়োজনীয় খরচে বাধ্য না
হয়।
এবার
রইল গ্রাহকদের বিষয়টি। এ ব্যাপারে শরিয়তের দৃষ্টিভঙ্গি হলো, যে গ্রাহক এই
অফার গ্রহণ করে প্রয়োজনীয় কাজেই খরচ করবে, অপ্রয়োজনীয় কথা বলবে না বা বলতে
বাধ্য হবে না তার জন্য এ অফার গ্রহণ করা জায়েয। কিন্তু এ অফার গ্রহণ করার
কারণে যদি অপ্রয়োজনীয় কল করতে হয় কিংবা অহেতুক লম্বা আলাপ জুড়তে হয় তাহলে
সময় ও অর্থ অপচয়ের গুনাহ হবে। তাই এমন গ্রাহকের জন্য এই অফার বর্জন করা
জরুরি। [সহায়তায়, মোবাইল ও সাক্ষাৎ : আদাব ও মাসায়েল- মুফতি মুহাম্মাদ
আব্দুল মালেক]
সর্বোচ্চ এসএমএসকারীকে পুরস্কার প্রদান
অনেক
সময় দেখা যায়, নির্ধারিত মেয়াদের ভিতর সর্বোচ্চ এসএমএসকরীকে কোনো কোনো
মোবাইল কোম্পানি পুরস্কৃত করে থাকে। এই পুরস্কার ঐ ব্যক্তির জন্য গ্রহণ করা
জায়েয যে প্রয়োজনে এসএমএস করে থাকে। কিন্তু কেউ যদি পুরস্কার লাভের আশায়
বিনা প্রয়োজনে এসএমএস করে থাকে এবং পুরস্কারও পেয়ে যায় তাহলে এমন ব্যক্তির
জন্য ঐ পুরস্কার গ্রহণ করা ঠিক হবে না। [সূত্র : বুহুস ফি কাযায়া ফিকহিয়্যা
মুআছারা, ২/২২৯ কারযাবী ২/৪২০]
ইনকামিং কলের উপর প্রাপ্ত বোনাস বৈধ
বাংলালিংক,
টেলিটক ইত্যাদি কোম্পানি ইনকামিং কলের উপর বোনাস দিয়ে থাকে। গ্রাহকদের
জন্য এই বোনাস গ্রহণ করা বৈধ। ইনকামিং কলে রিসিভকারীর যদিও কোনো খরচ হয় না
তথাপি বোনাস গ্রহণ করতে কোনো অসুবিধা নেই। কেননা এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট
মোবাইল কোম্পানি আন্ত:সংযোগ ফী বাবদ অন্য কোম্পানি থেকে বিল পেয়ে থাকে।
মূলত সেটির বৃদ্ধির লক্ষ্যেই কোনো কোনো মোবাইল কোম্পানি এমন সুবিধা দিয়ে
থাকে। তাছাড়া কোনো কোম্পানি যদি তার গ্রাহকদেরকে কোনো শর্ত বা কারণ ছাড়াই
কোনো টকটাইম ফ্রী দেয় তবে সেটিও গ্রহণ করা জায়েয। এটা গ্রাহকদের জন্য বাড়তি
সুবিধা বলে বিবেচিত হবে। [সূত্র : বুহুস ফি কাযায়া ফিকহিয়্যা মুআছারা,
২/২২৯ কারযাবী ২/৪২০]
ডাউনলোড ব্যবসা কি জায়েয ?
বর্তমানে
এমন অনেক ব্যবসায়ী আছেন যারা কম্পিউটারের সাহায্যে মোবাইলের মধ্যে বিভিন্ন
প্রকার প্রাণীর ছবি, রিংটোন, মিউজিক, গান, ভিডিও ইত্যাদি ডাউনলোড করেন এবং
এ বাবদ কাস্টমারদের থেকে নির্ধারিত হারে টাকা নেন। এই ডাউনলোড ব্যবসা
নাজায়েয এবং এ ধরনের ডাউনলোড থেকে উপার্জিত অর্থও হালাল নয়। কারণ এসব জিনিস
ডাউনলোড করার দ্বারা নিজের তো গুনাহ হয়ই, উপরন্তু অপরের নিকট গুনাহের
উপকরণ সরবরাহ করা হয়। তবে কোনো বৈধ চিত্র, জায়েয রিংটোন, বাজনাবিহীন গজল
ইত্যাদি ডাউন লোড করা জায়েয এবং এ থেকে উপার্জিত অর্থও হালাল। [সহিহ
বোখারি, খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ২৯৮ সহিহ মুসলিম, পৃষ্ঠা : ২১৯ শরহে নববী,
খণ্ড : ২, পৃষ্ঠা : ২৯ আল বাহর্রু রায়েক, খণ্ড : ৮, পৃষ্ঠা : ১৯ আদ্
র্দুরুল মুখতার, খণ্ড : ৬, পৃষ্ঠা : ৫৫]
কল রিসিভের সুবিধা দিয়ে বিনিময় নেওয়া
যাদের
মোবাইল নেই বা থাকলেও টিএণ্ডটি ইনকামিং নেই; বিদেশ বা অন্য কোথাও থেকে
দোকানীর মোবাইলে তাদের কোনো কল আসলে সে গ্রাহক থেকে কিছু টাকা নিয়ে থাকে।
অথচ এ বাবদ দোকানীর এক টাকাও খরচ হয় না। এ টাকা নেওয়া কি দোকানীর জন্য
জায়েয? হ্যাঁ, এ টাকা নেওয়া দোকানীর জন্য জায়েয ও বৈধ। কেননা এখানে দোকানীর
কোনো খরচ বাহ্যত না দেখা গেলেও তার মোবাইল সেট ও লাইন ব্যবহার হচ্ছে। সেই
সাথে তার ব্যয় হচ্ছে সময়ও। তাই সে এগুলোর ন্যায্য বিনিময় নিতেই পারে। এ
সেবা ফ্রি দিতে দোকানী বাধ্য নয়। যদি দেয় তবে তা ভিন্ন কথা। [মাসিক আল
কাউসার, এপ্রিল ২০০৮ সংখ্যা, পৃষ্ঠা : ২২]
কল রিসিভের আগের সময়ের বিল নেওয়া জায়েয নয়
সাধারণত
দেখা যায়, ডায়াল করার প্রায় ১০/১৫ সেকেণ্ড বা তারও বেশি সময় পরে অপর
প্রান্ত থেকে মোবাইল রিসিভ করা হয় এবং রিসিভ করার পর থেকেই সময় গণনার হিসাব
শুরু হয়। কিন্তু কোনো কোনো মোবাইল কোম্পানির বেলায় এর ব্যতিক্রম নিয়মও
পরিলক্ষিত হয়। অর্থাৎ এসব মোবাইল কোম্পানির মিনিট গণনার হিসাব রিসিভ করার
পর থেকে শুরু না হয়ে ডায়াল করার পর থেকেই শুরু হয়ে যায়। ফলে রিসিভ করার আগে
যে সময়টুকু অতিবাহিত হয়, মোবাইল ব্যবসায়ীরা গ্রাহক থেকে তার বিলও আদায়
করে। অথচ কল রিসিভের আগের সময়ের বিল নেওয়া জায়েয নয়। কেননা এক্ষেত্রে
গ্রাহকের সাথে চুক্তি হলো, কল রিসিভ করার পর থেকে যত মিনিটের কথা হবে তার
বিল নিবে।
উল্লেখ্য
যে, বর্তমানে আমাদের দেশে ডায়াল করার পর থেকেই সময় গণনার এই নিয়মটি
শুধুমাত্র সিটিসেল মোবাইল কোম্পানির ক্ষেত্রেই দেখা যায়। ফলে বাড়তি সুবিধা
পাওয়ার জন্য অনেক মোবাইল ব্যবসায়ী তাদের দোকানে সিটিসেল সিম ব্যবহার করে
থাকেন। তাই সিটিসেল সিম দিয়ে বৈধভাবে ব্যবসা করতে চাইলে হয়তো মোবাইল
ব্যবসায়ী নিজেই কল করবেন এবং অপর প্রান্ত থেকে রিসিভ করার পর সঙ্গে সঙ্গে
সময় দেখে নিয়ে গ্রাহকের হাতে মোবাইল হস্তান্তর করবেন। অথবা তিনি পৃথক
মিনিটমাইণ্ডার রাখবেন যদ্বারা রিসিভ করার সময় থেকে মিনিটের হিসাব করা হবে।
অথবা কল ডিউরেশন অপশন থেকেও শেষ কলের মোট সময় জেনে নেওয়া যেতে পারে। [সূরা
নিসা : ২৯ মাসিক আল কাউসার, এপ্রিল ২০০৮ সংখ্যা, পৃষ্ঠা : ২২]
ভুল নাম্বারে কল চলে গেলে বিল দেবে কে?
মোবাইলে
যে নাম্বারে ফোন করা হয় সে নাম্বারেই যায়। সঠিক নাম্বারে রিং করার পরও ভুল
নাম্বারে চলে যাওয়ার কোনো অবকাশ নেই। তাই ভুল নাম্বারে চলে গেলে বুঝতে হবে
নিশ্চয়ই ভুল নাম্বারে ডায়াল করা হয়েছে। এখন এ ভুল দোকানীর যেমন হতে পারে
তেমনি গ্রাহকেরও হতে পারে। দোকানীর ভুল এ হতে পারে যে, সে হয়তো নাম্বার
টিপার সময় একটির পরিবর্তে অন্যটি টিপেছে। অথবা এমনও হতে পারে যে, গ্রাহকের
মুখ থেকে শুনে দোকানী তার খাতায় নম্বর লিখার সময়ই ভুল লিখেছে। ফলে সেখান
থেকে দেখে দেখে নম্বর টিপে ডায়াল করার কারণে তা ভুল নাম্বারে চলে গেছে। আর
গ্রাহকের ভুল এ হতে পারে যে, সে নাম্বার বলার সময় ভুল বলেছে।
যাহোক
এ ক্ষেত্রে সমাধান হলো, ভুল যার দায় তার। সুতরাং দোকানীর ভুল হলে এই ভুলের
ক্ষতি তারই। তাই সে গ্রাহক থেকে এ বাবদ কোনো বিল নিতে পারবে না। তবে ভুল
যদি গ্রাহকের হয়ে থাকে তবে তার ক্ষতিপূরণ তাকেই দিতেই হবে। [মাসিক আল
কাউসার, এপ্রিল ২০০৮ সংখ্যা, পৃষ্ঠা : ২২]
পরবর্তী মিনিটের ১/২ সেকেণ্ড হলেও পুরো মিনিটের বিল নেওয়া জায়েয
ফোন
দোকানীরা সাধারণত মোবাইল কোম্পানি কর্তৃক ঘোষিত পাল্স সুবিধা গ্রাহকদেরকে
দেয় না। তারা দ্বিতীয় বা তৃতীয় মিনিট শুরু হলেই পুরো মিনিটের বিল নেয়।
যেমন কোনো গ্রাহক তার প্রয়োজনীয় কথা শেষ করার পর দেখল, এক মিনিট এক সেকেণ্ড
হয়েছে বা দুই মিনিট এক সেকেণ্ড হয়েছে। এমতাবস্থায় দোকানীরা ঐ গ্রাহক থেকে
দেড় বা আড়াই মিনিটের বিল না নিয়ে পুরো দুই বা তিন মিনিটের বিল নেয়। পাল্স
সুবিধা না দিয়ে এভাবে পুরো মিনিটের বিল নেওয়া দোকানীদের জন্য জায়েয। কেননা,
ফোন ব্যবসায়ীদের জন্য মোবাইল কোম্পানি কর্তৃক ঘোষিত পাল্স সুবিধা
গ্রাহকদের দেওয়া জরুরি নয়। তবে উত্তম হলো, পাল্স সুবিধা দেওয়া। হ্যাঁ, যদি
সে পাল্স সুবিধা দিতে না-ই চায় তাহলে উত্তম হলো, সবার চোখে পড়ে এমন কোনো
জায়গায় একটু বড় অক্ষর দিয়ে একথা লিখে রাখা যে, এখানে পরবর্তী মিনিটের এক
সেকেণ্ড হলেও পুরো মিনিটের বিল নেওয়া হয়। এরূপ লিখে রাখার ফলে গ্রাহক সময়ের
প্রতি খেয়াল রেখে কথা বলবে। তথাপি ১/২ সেকেণ্ড বেশি হয়ে গেলে সেজন্য পুরো
মিনিটের বিল দেওয়া-নেওয়া নিয়ে কোনো প্রকার কথা কাটাকাটিও হবে না। [মাসিক আল
কাউসার, এপ্রিল ২০০৮ সংখ্যা, পৃষ্ঠা : ২২]
মোবাইল কার্ড নির্ধারিত মূল্য থেকে কম-বেশিতে বিক্রয় করা জায়েয হবে কি?
বর্তমানে
দেখা যায় কিছু কিছু ব্যবসায়ী নির্ধারিত মূল্য থেকে ২/৪টাকা বেশিতে মোবাইল
কার্ড (স্ক্র্যাচকার্ড) বিক্রি করেন। যেমন, ৫০ টাকার কার্ড ৫২ বা ৫৪ টাকায়
বিক্রি করেন। আবার কেউ কেউ নির্ধারিত মূল্য থেকে কিছু কমও রাখেন। যেমন ৩০০
টাকার কার্ড ২৯০ টাকায় দিয়ে দেন। প্রশ্ন হলো, এরূপ করা কি জায়েয ? এটা কি
সুদ হবে ?
হ্যাঁ,
এভাবে কম-বেশিতে মোবাইল কার্ড বিক্রি করা জায়েয। তাছাড়া এটা সুদও নয়।
কেননা মোবাইল কার্ডের গায়ে যে মূল্য লিখা থাকে সেটা মূলত একটি নির্ধারিত
পরিমাণ আউটগোয়িং সেবা তথা টেলিযোগাযোগ সুবিধার প্রতিনিধিত্ব করে। অন্যান্য
সেবার মত এটিও একটি সেবা যা বিক্রয়যোগ্য। সুতরাং কার্ডের গায়ের দাম যেহেতু
টাকা নয় তাই তা কম বেশিতে বিক্রি করা সুদও নয়।
তবে
এখানে একটি লক্ষণীয় বিষয় হলো, কোনো কোম্পানি থেকে কোনো পণ্য বা সেবার
মূল্য নির্ধারিত করে দিলে ঐ নির্ধারিত মূল্যেই বিক্রি করা উচিত। কম-বেশি
করা ঠিক নয়। কেননা এতে বাজারে বিরূপ প্রভাব পড়ে এবং বাজারের স্বাভাবিক গতি
ব্যাহত হয়। [ফাতহুল কাদীর, খণ্ড : ৬, পৃষ্ঠা : ১৫৯ তাকমিলাতু ফাতহিল
মুলহিম, খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ৪০০]
ভুল ব্যালেন্স : শরিয়তের দৃষ্টিতে
কোনো
কোনো সময় দেখা যায়, ভুল কমাণ্ড দেওয়ার কারণে বা কম্পিউটারের ত্রুটিজনিত
অন্য কোনো কারণে কারো কারো মোবাইলে ভুল ব্যালেন্স দৃষ্টিগোচর হয়। যেমন,
ব্যালেন্সে টাকা কম থাকা সত্ত্বেও বেশি দেখায় কিংবা ব্যালেন্সে টাকা না
থাকলে ব্যালেন্স উঠে থাকে। কোনো কোনো সময় তো এমনও হয় যে, ব্যালেন্সে কোনো
টাকা দেখা যায় না ঠিকই, কিন্তু অন্যের কাছে কল যায় এবং দীর্ঘক্ষণ কথাও বলা
যায়।
উপরে
বর্ণিত সুযোগ গ্রহণ করা কারো জন্য জায়েয নয়। অর্থাৎ নিজের জমা টাকার বেশি
খরচ করা কিংবা ব্যালেন্সে কোনো টাকা না থাকা সত্ত্বেও মোবাইল ব্যবহার করে
টাকা খরচ করা জায়েয নয়। কেউ যদি এরূপ করে থাকে তাহলে তাকে কাস্টমার কেয়ারে
ফোন করে কিংবা সরাসরি হাজির হয়ে একথা অবহিত করতে হবে। বলতে হবে, আমি এত
মিনিট অতিরিক্ত কথা বলেছি। এর বিল পরিশোধের জন্য আমার করণীয় কি বলে দিন।
অতঃপর তারা যেভাবে বলবে সেভাবে টাকা পরিশোধ করতে হবে। আর এই টাকা পরিশোধের
মাধ্যমেই দায় মুক্ত হওয়া যাবে। মনে রাখতে হবে, যেহেতু কোম্পানির কাছে
ব্যবহৃত কলের টাকা পৌঁছানো সম্ভব তাই এই টাকা সদকা করে দেওয়া যথেষ্ট নয়।
[আল বাহরুর রায়েক, খণ্ড : ৮, পৃষ্ঠা : ১০৯ খুলাসাতুল ফাতাওয়া, খণ্ড : ৪,
পৃষ্ঠা : ২৭২ আদ্দুররুল মুখতার, খণ্ড : ৬, পৃষ্ঠা : ১৭৯]
নির্ধারিত বিলের চেয়ে বেশি বিল করলে...
কল
করা কিংবা যে কোনো সেবা প্রদানের জন্য মোবাইল কোম্পানি থেকে যে পরিমাণ
চার্জ ঘোষণা করা হয় সে পরিমাণ চার্জই করতে হবে। এর বেশি করতে পারবে না।
কোনো কোম্পানির জন্য ঘোষিত চার্জের চেয়ে বেশি চার্জ করা বা পোস্ট-পেইডে
বেশি বিল করা জায়েয নয়। বেশি চার্জ করলে কাস্টমার কেয়ারে জানাতে হবে।
কোম্পানি কর্তৃপক্ষ এ ভুল জানতে পারলে তা অবশ্যই শোধরে নিতে হবে। যদি শোধরে
না নেয় অর্থাৎ কোনো না কোনোভাবে যদি গ্রাহককে তার অতিরিক্ত চার্জ পরিমাণ
সেবা প্রদান না করে তাহলে মোবাইল কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে এবং এজন্য তারা
গুনাহগার হবে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন,
يَا
أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا لَا تَأْكُلُوا أَمْوَالَكُمْ بَيْنَكُمْ
بِالْبَاطِلِ إِلَّا أَنْ تَكُونَ تِجَارَةً عَنْ تَرَاضٍ مِنْكُمْ ﴿২৯﴾ ( النساء : ২৯)
হে
ঈমানদারগণ! তোমরা পরস্পর সম্মতিক্রমে যে ব্যবসা কর তা ব্যতীত অন্যকোনো
উপায়ে অন্যায়ভাবে অন্যের মাল আত্মসাৎ করো না। [সূরা নিসা : ২৯]
ইন্টারনেটে মোবাইল সার্চ করার হুকুম
ইন্টারনেট
হলো বিশ্বব্যাপী কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং-এর বিস্তৃত পদ্ধতি। ইন্টারনেটের
সুবাদে সমস্ত বিশ্বের কম্পিউটারগুলো এক অভিন্ন সুতোয় গাঁথা হয়ে গেছে।
কম্পিউটারের কী বোর্ডে আঙুলের সামান্য স্পর্শেই বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে
তথ্য ছুটে যাচ্ছে অন্য প্রান্তে। আবার অন্য প্রান্ত থেকে তথ্য আসছে এ
প্রান্তে। ইন্টারনেটের কাজের পরিধির যেমন কোনো শেষ নেই, তেমনি এর
বৈশিষ্ট্যেরও সিমানা নির্ধারিত নেই। তাই ইন্টারনেট কী করছে এই প্রশ্নের
উত্তর দেওয়া তো সহজ কিন্তু ইন্টারনেট কী করছে না এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া
সহজ নয়। কারণ ইন্টারনেট কম্পিউটার সংক্রান্ত সবকিছুই করছে নিমেষের মধ্যে।
মোটকথা, ইন্টারনেট হলো তথ্যের এক বিশাল জগত। এখানে যেমন নাজায়েয বস্তু এবং
দুনিয়ার সকল অশ্লীল জিনিস আছে তেমনি ভালো ও দীনি বিষয়ে জানারও অনেক কিছু
আছে। তাই ইন্টারনেটের উপর ব্যাপকভাবে কোনো হুকুম আরোপ করা যাবে না। বরং এর
হুকুম হবে ব্যবহারকারী হিসেবে। ব্যবহারকারী যদি এ থেকে নাজায়েয ও অবৈধ
জিনিস সার্চ করে- চাই তা কম্পিউটারের মাধ্যমে হউক বা মোবাইলের মাধ্যমে হউক-
তবে তা গুনাহ হবে। আর ব্যবহারকারী যদি বৈধ ও জায়েয বস্তু সার্চ করে তবে তা
জায়েয হবে। [বুহুস ফী কাযায়া ফিকহিয়্যাহ মুআসারা, খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ৩৫৯
রদ্দুল মুহতার, খণ্ড : ৬, পৃষ্ঠা : ৩৫০]
মেমোরী কার্ড ও ডাটা ক্যাবল ক্রয়-বিক্রয় জায়েয
যেহেতু
মেমোরী কার্ড এবং ডাটা ক্যাবলের ব্যবহার ক্ষেত্র নাজায়েয হওয়া সুনির্দিষ্ট
নয় তাই এগুলোর ক্রয়-বিক্রয়ও নাজায়েয নয়। কেননা, নিয়ম হলো কোনো জিনিসের
ব্যবহার ক্ষেত্র নাজায়েয হওয়া সুনির্দিষ্ট না হলে তা ক্রয়-বিক্রয়ও নাজায়েয
হয় না। মেমোরী কার্ডে কোরআনু কারিমের তিলাওয়াত, হামদ, নাত, গজল, প্রাকৃতিক
দৃশ্য, প্রাণহীন বস্তুর ছবি ইত্যাদি সংরক্ষণ করা যেতে পারে। আর ডাটা
ক্যাবলের মাধ্যমে কম্পিউটার থেকে এ ধরনের জায়েয বস্তু সরবরাহ করা যেতে
পারে। এ হলো মেমোরী কার্ড ও ডাটা ক্যাবল ব্যবহারের বৈধ ক্ষেত্র। আবার এ
দুটি বস্তুর সাহায্যে গান, ছবি ইত্যাদি নাজায়েয জিনিসও সংরক্ষণ করা যায়। আর
এ হলো এগুলো ব্যবহারের অবৈধ ক্ষেত্র। মোটকথা এ দুটি বস্তু জায়েয কাজেও
ব্যবহার করা সম্ভব বিধায় মৌলিকভাবে এগুলোর ক্রয়-বিক্রয়ও নাজায়েয নয়। তবে
একথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, নাজায়েয কিছু আদান প্রদান বা সংরক্ষণের জন্য
এসব বস্তুর ব্যবহার সম্পূর্ণরূপে নাজায়েয। [জাওয়াহিরুল ফিকহ্, খণ্ড : ২,
পৃষ্ঠা : ৪৪৬ বুহুস ফী কাযায়া ফিকহিয়্যাহ, খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ৩৫৯
রদ্দুল মুহতার, খণ্ড : ৬, পৃষ্ঠা : ৩৯১] র
পণ্যসামগ্রীর দোকান থেকে প্রাপ্ত ছাড় গ্রহণ করা জায়েয
আজকাল
দেখা যায়, কোনো কোনো পণ্যসামগ্রীর দোকানে গ্রামীণ বা বাংলালিংক সিম
ব্যবহারকারীদের জন্য পুরো মূল্যের উপর ডিসকাউন্ট দেওয়া হয়। যেমন, 'পেগাসাস
সুজ কোম্পানি'র শোরুম থেকে কোনো জুতো ক্রয় করলে গ্রামীণ সিম ব্যবহারকারীদের
জন্য পুরো মূল্যের উপর ১০% 'থ্যাংকইউ ডিসকাউন্ট' দেয়। তা এভাবে যে, ক্রেতা
দোকান থেকে নির্দিষ্ট নাম্বারে ম্যাসেজ পাঠালে কোম্পানি থেকে একটি ফিরতি
ম্যাসেজ আসে। সেই ম্যাসেজ দোকানীকে দেখালে সে ১০% মূল্য ছাড় দেয়। এভাবে ৫০০
টাকার জুতো ৪৫০ টাকায় পাওয়া যায়। আর ১০০০ টাকার জুতো পাওয়া যায় ৯০০ টাকায়।
শরিয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে এই ছাড় গ্রহণ করতে কোনো অসুবিধা নেই। এই ছাড় গ্রহণ
করা জায়েয। এটি সুদ নয়। ক্রেতার জন্য এই মূল্যছাড় বিক্রেতার পক্ষ থেকে
দেওয়া হচ্ছে বলে ধর্তব্য হবে। আর বিক্রেতার জন্য স্বেচ্ছায়
স্বতঃস্ফূর্তভাবে নির্ধারিত মূল্য হতে কিছু ছাড় দেওয়া শুধু জায়েযই নয়,
পছন্দনীয়ও বটে। [মাসিক আল কাউসার, জুলাই, ২০০৮ সংখ্যা, পৃষ্ঠা : ৮]
বোনাস টকটাইম ব্যবহার করা বৈধ
মোবাইল
কোম্পানিগুলো বিভিন্ন সময় বিভিন্ন উপায়ে গ্রাহকদেরকে বোনাস টকটাইম দিয়ে
থাকে। যেমন, ২৯৯ টাকা দিয়ে একটি একটেল সিম কিনলে ৩০০ টাকার বোনাস টকটাইম
দেওয়া হয়। এমনিভাবে বাংলালিংক বা ওয়ারিদ সিম কিনলে সমমূল্যের বোনাস টকটাইম
দেওয়া হয়। বিভিন্ন সময়ে মোবাইল কোম্পানিগুলোর দেওয়া এই বোনাস টকটাইম
ব্যবহার করা জায়েয। কেননা এটা মূলত এক ধরনের মূল্য হ্রাসের ঘোষণা। এখানে
সিম ও ঘোষিত বোনাস উভয়টি বিক্রিত পণ্য।
অনুরূপভাবে
মাঝে মধ্যে কোনো কোনো কোম্পানি নির্দিষ্ট পরিমাণ রিচার্জের উপরেও
নির্দিষ্ট পরিমাণ বোনাস টকটাইম দিয়ে থাকে। কেউ কেউ আবার স্ক্র্যাচকার্ড
কিনলেও বোনাস টকটাইম দেয়। এই বোনাস টকটাইমও ব্যবহার করা বৈধ। এতেও সুদের
কিছু নেই। ৩০০ টাকার স্ক্র্যাচকার্ডের উপর ১০% টকটাইমসহ ব্যালেন্সে ৩৩০
টাকা জমা হয়। এখানে একথা বলার সুযোগ নেই যে, ৩০০ টাকার পরিবর্তে ৩৩০ টাকা
নেওয়া হচ্ছে। বরং এখানে যা হচ্ছে তা হলো, ৩০০ টাকার পরিবর্তে ৩৩০ টাকা
সমমূল্যের টকটাইম ক্রয় করা হচ্ছে। যাতে সুদ কিংবা নাজায়েজের কিছু নেই।
তবে
উল্লেখিত মাসআলায় একথাটি খুব ভালো করে মনে রাখতে হবে যে, বোনাস পাওয়ার
আশায় অপ্রয়োজনীয় কল করা কিংবা প্রয়োজন ছাড়া কল করে সময়ের অপচয় করা কোনো
অবস্থাতেই জায়েয হবে না। [হেদায়া, খণ্ড : ৩, পৃষ্ঠা : ৭৫ রদ্দুল মুহতার,
খণ্ড : ৫, পৃষ্ঠা : ১৮-১৯ ফাতহুল কাদীর, খণ্ড : ৬, পৃষ্ঠা : ১৪২]
মোবাইল ফোনে ভিডিও গেমস্
আজকাল
প্রায় সব মোবাইলেই ভিডিও গেমস্ খেলার প্রোগ্রাম থাকে। এসব গেমসের বিভিন্ন
ধরন আছে। যথা :- ক) এমন ভিডিও গেমস যেগুলোতে কোনো জীবজন্তুর ছবি থাকে না।
যেমন, বিমান, হুণ্ডা, হেলিকপ্টার, রকেট, নৌযান, সাবমেরিন, গাড়ী, জাহাজ,
চন্দ্র, গ্রহ, নক্ষত্র ইত্যাদি। এসব প্রাণহীন বস্তু দিয়ে বিভিন্ন রকমের
খেলা হয়। অথবা জীবজন্তু হলেও খুব ছোট কিংবা অস্পষ্ট হওয়ার কারণে নাক, কান,
চোখ, মুখ ইত্যাদি বুঝা যায় যায় না, বরং এগুলোকে কেবল নকশার মতো মনে হয়।
নিম্নোক্ত শর্ত সাপেক্ষে বিনোদন ও মানসিক প্রশান্তি লাভের উদ্দেশ্যে এসব
জিনিস বা অস্পষ্ট প্রাণী দিয়ে তৈরিকৃত ভিডিও গেমস খেলা জায়েয আছে। শর্তগুলো
হলো :
১.
তাতে জুয়া থাকতে পারবে না। ২. নামাজ নষ্ট হতে পারবে না। ৩. বান্দার হক
নষ্ট হতে পারবে না। ৪. লেখাপড়া ও জরুরি কাজে কোনো ধরনের বিরূপ প্রভাব পড়তে
পারবে না। ৫. খেলায় একেবারে বিভোর হওয়া যাবে না।
এসব শর্তের কোনো একটি শর্ত অনুপস্থিত থাকলেও ভিডিও গেমস খেলা জায়েয হবে না।
খ)
এমন ভিডিও গেমস যেগুলোতে জীব-জন্তুর ছবি স্পষ্ট থাকে। ছবির কারণে এসব গেমস
খেলা এমনিতেই জায়েয নেই। তদুপরি উপরের শর্তাবলীও যদি সেখানে অনুপস্থিত
থাকে তবে তো কোনো কথাই নেই। [মাহমুদিয়া, খণ্ড : ১৭, পৃষ্ঠা : ৩১৮ এমদাদুল
মুফতী, পৃষ্ঠা : ৮৩০]
মোবাইল থেকে গান শুনা বা মোবাইল দিয়ে ছবি তোলা
গান
বাজনা সর্বাবস্থায় নাজায়েয ও হারাম। চাই তা সরাসরি শুনা হউক, কিংবা অন্য
কোনো মাধ্যমে শুনা হউক। যেমন, মোবাইল, রেডিও, টেলিভিশন, টেপ-রেকর্ডার
ইত্যাদি। গানের অপকারিতা সম্পর্কে বিশিষ্ট সাহাবি আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ
রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, মানুষের অন্তরে গান কপটতা সৃষ্টি করে যেমন পানি
ক্ষেতকে উর্বর করে। অনুরূপভাবে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া মোবাইল কিংবা অন্য কোনো
উপায়ে কোনো প্রাণীর ছবি তোলাও নাজায়েয ও হারাম। আল্লাহ আমাদের সবাইকে
গান-বাদ্য, ছবি দেখা ও ছবি দেখা তোলাসহ যাবতীয় গোনাহের কাজ থেকে হেফাজত
করুন। আমীন। [আবু দাউদ শরিফ কুরতবী, খণ্ড : ৭, পৃষ্ঠা : ২১ ফতোয়ায়ে
শামী, খণ্ড : ৯, পৃষ্ঠা : ৫৬৬ ফতোয়ায়ে মাহমুদিয়া, খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ১২৬
মাসাইলে মোবাইল, পৃষ্ঠা : ১৮]
মোবাইলে ক্রিকেট, ফুটবল ইত্যাদি খেলা দেখা
প্রচলিত
খেলাধূলার মধ্যে ক্রিকেট, ফুটবল, ভলিবল প্রতিটি খেলাই শরিয়তের দৃষ্টিতে
হারাম ও নাজায়েয। তাই এসব খেলা সরাসরি দেখা যেমন হারাম তেমনি মোবাইল,
টেলিভিশন ইত্যাদিতে দেখাও হারাম।
প্রচলিত
খেলাধূলাগুলো নাজায়েয হওয়ার কারণ হলো, এসব খেলার মধ্যে শরিয়তের দৃষ্টিতে
অনেক নাজায়েয দিক রয়েছে। তবে নাজায়েয দিকগুলো বর্জন করে যদি এসব খেলাধূলা
করা যায় তবে তা জায়েয আছে। নাজায়েয দিকগুলো হলো-
১.
হার-জিতের উদ্দেশ্যে খেলা যাবে না। বরং খেলতে হবে একমাত্র শরীর চর্চা ও
মানসিক প্রশান্তি অর্জনের জন্য। তাছাড়া জয়ী পক্ষকে যদি পরাজিত পক্ষ হতে
কোনো অর্থ-সম্পদ দেওয়ার শর্ত থাকে তাহলে তা জুয়ার অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। আর
জুয়া হলো জঘন্য গুনাহ ও হারাম।
২. শরয়ি সতরের সিমারেখা লঙ্ঘন করা যাবে না। উল্লেখ্য যে, পুরুষের সতর হলো, নাভী রেখে হাঁটুর নীচ পর্যন্ত।
৩. নামাজ, জামাআত বা শরিয়তের অন্য কোনো বিধি-বিধান পালনে কোনো প্রকার ত্রুটি হতে পারবে না।
মোটকথা
উল্লেখিত শর্তগুলো পাওয়া গেলে এগুলো খেলাতে কোনো অসুবিধা নেই। বিশেষতঃ এসব
খেলার দ্বারা শারীরিক ব্যায়ামও হয়। আর শরীর-স্বাস্থ্য ঠিক রাখার ব্যাপারে
শরিয়তের পক্ষ থেকেও নির্দেশ রয়েছে।
তবে
মনে রাখতে হবে, উপরে বর্ণিত শর্ত সাপেক্ষে ক্রিকেট, ফুটবল ইত্যাদি খেলা
জায়েয হলেও এসব খেলা দেখা জায়েয নেই। চাই সরাসরি হোক, চাই মোবাইল বা
টেলিভিশনে হোক। কেননা এর দ্বারা নামাজ ইত্যাদিতে গাফলতী আসে। তদুপরি খেলা
চলাকালে অনেক নাজায়েয ছবি ও বিজ্ঞাপন দেওয়া হয় যা থেকে দৃষ্টি ফেরানো অনেক
মুশকিল। [এমদাদুল ফতোয়া, খণ্ড : ৪, পৃষ্ঠা : ২৫৭ ফাতাওয়ায়ে রাহমানিয়া,
খণ্ড : ২, পৃষ্ঠা : ৪২৩ মাআরিফুল কোরআন, খণ্ড : ৭, পৃষ্ঠা : ২৩ ]
বিনা অনুমতিতে কারো কথা মোবাইলে রেকর্ড করা যাবে কি?
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, সিম মজলিশের কথা আমানত। কারো কথা
রেকর্ড করার ফলে যেহেতু এই আমানত সংরক্ষিত থাকে না বরং তা অন্যদের কাছে
পৌঁছার সমূহ সম্ভাবনা থাকে তাই বিনা অনুমতিতে কারো কথা রেকর্ড করা জায়েয
নেই। উল্লেখ্য যে, রেকর্ডকৃত কথাগুলো যদি কারো গোপন কথা হয় তাহলে তা আরো
মারাত্মক অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। হ্যাঁ, যদি আগে থেকেই কারো কথা রেকর্ড
করার ব্যাপারে স্পষ্ট বা মৌন অনুমতি থাকে তাহলে তা রেকর্ড সিস্টেম মোবাইল,
টেপ রেকর্ডার বা অন্য কোনো উপায়ে রেকর্ড করাতে কোনো দোষ নেই। অনুরূপভাবে
যদি কারো বেলায় এমন হয় যে, তার কাছ থেকে ঋণ নেওয়ার পর ঋণগ্রহীতা তার সামনে
ঋণের কথা স্বীকার করে কিন্তু অন্যের সামনে স্বীকার করে না, তাহলে তার
স্বীকারোক্তি গোপনে হলেও রেকর্ড করা জায়েয আছে। [তিরমিজি শরিফ, খণ্ড : ১,
পৃষ্ঠা : ১৭]
মোবাইল থেকে দীনি আলোচনা শুনা
মোবাইল
দ্বারা দীনি আলোচনা, হামদ, নাত ইত্যাদি শুনা জায়েয। তবে শর্ত হলো, তাতে
কোনো প্রাণীর স্থিরচিত্র বা চলচিত্র থাকতে পারবে না। [মাসাইলে মোবাইল :
পৃষ্ঠা : ২১]
কোনো স্টেশনে মোবাইল চার্জ করা
যদি
কোনো ব্যক্তি কাউকে বিদায় দেওয়ার জন্য কিংবা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে
এয়ারপোর্ট, রেলস্টেশন, বাসস্টেশন ইত্যাদি স্থানে যায় এবং সেখানে তার মোবাইল
চার্জ দেওয়ার প্রয়োজন দেখা দেয় তাহলে তার জন্য ঐ স্টেশনের বিদ্যুৎ দ্বারা
মোবাইল চার্জ দেওয়াতে কোনো অসুবিধা নেই। কেননা স্টেশনে যেসব চার্জ-পয়েন্ট
থাকে, তা থেকে উপকৃত হওয়ার সাধারণ অনুমতি সকলের জন্যেই থাকে। [দুররুল
মুখতার, খণ্ড : ১০, পৃষ্ঠা : ১৩]
মোবাইল ফোনে বিয়ে
আমাদের
দেশের অনেককেই বিভিন্ন কারণে স্বদেশের সীমানা পেরিয়ে ভিন্ দেশে পাড়ি
জমাতে হয়। যাপন করতে হয় প্রবাসী জীবন। এসব প্রবাসীদের সমস্যার অন্ত নেই।
ঝামেলারও শেষ নেই। প্রবাসের অসংখ্য সমস্যার মধ্যে বিয়ের বিষয়টি অন্যতম।
কেননা কর্মব্যস্ততা, পড়াশুনা, আসা-যাওয়ার ব্যয়ভার, বিমানের টিকেট করার
জটিলতা ইত্যাদি কারণে পাত্র ও পাত্রীপক্ষ মিলে বিয়ে ঠিকঠাক করলেই
তাৎক্ষণিকভাবে দেশে এসে বিয়ে সম্পন্ন করা তাদের পক্ষে অনেক সময় সম্ভব হয়ে
ওঠে না। অথচ বিয়ে তাদের করতেই হবে। তাছাড়া পছন্দমত পাত্র-পাত্রী তো চাইলেই
পাওয়া যায় না! প্রবাসীদের এসব সমস্যা বিবেচনা করেই অতি সম্প্রতি মোবাইল ফোন
বা টেলিফোনে বিয়ের প্রচলন হয়েছে।
মোবাইল
বা টেলিফোনে বিয়ের ক্ষেত্রে সাধারণত দেখা যায়, বিয়ে ঠিকঠাক হলে নির্ধারিত
দিনে পাত্র-পাত্রী উভয়পক্ষের অভিভাবক, বর-কনে ও উকিল-সাক্ষীরা দু'দেশের
দু'টি ফোনের পাশে জড়ো হন। তারপর ফোনে একপক্ষ ঈজাব তথা বিয়ের প্রস্তাব দিলে
অপর পক্ষ কবুল তথা প্রস্তাব গ্রহণ করেন এবং উভয় দিকের সাক্ষীরা তা শুনেন।
এভাবেই বিয়ে সম্পন্ন হয়।
আপাতদৃষ্টিতে
টেলিফোনে বিয়েকে অনেক সহজ ও সুবিধাজনক মনে হয়। বিদেশ থেকে আসা যাওয়ার খরচ
বাঁচে। বাঁচে সময়ও। তাছাড়া নানা ঝামেলাও এড়ানো যায়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে
টেলিফোনে বিয়েতে কিছু সুবিধার পাশাপাশি বেশকিছু অসুবিধাও রয়েছে। যেমন আইন
অনুসারে সঙ্গে সঙ্গে বিয়েটি রেজেস্ট্রি করা যায় না। কারণ রেজেস্ট্রির জন্য
বর-কনে উভয়কে রেজেস্ট্রি বইয়ে স্বাক্ষর করতে হয়। পাত্র-পাত্রীর
অনুপস্থিতিতে স্বাক্ষরের অভাবে দ্রুত রেজিস্ট্রি করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। ফলে
বহুমুখী সমস্যার আশঙ্কা তীব্র হয়ে উঠে। যেমন, কোনো কারণে যে কোনো পক্ষের
বিয়ে অস্বীকার, সাক্ষীদের পক্ষে অপর পক্ষকে সনাক্ত করতে না পারা,
স্বামী-স্ত্রীর দীর্ঘদিন দেখা-সাক্ষাৎ না হওয়ায় দাম্পত্য-কলহ প্রভৃতি।
তবে এসব সমস্যার চাইতে বড় কথা হলো,
ইসলামের দৃষ্টিতে ফোনের মাধ্যমে বিবাহ শুদ্ধ হয় না। কারণ ইসলামি শরিয়তের
বিধান অনুযায়ী বিয়ে সঠিক ও শুদ্ধ হওয়ার জন্য বর-কনে অথবা তাদের উকিলকে
বিবাহের মজলিশে সশরীরে উপস্থিত থাকতে হবে। সেই সাথে সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত
থাকতে হবে দুজন পুরুষ কিংবা একজন পুরুষ ও দু'জন মহিলাকে। সহজ কথায়, বিবাহ
সহিহ হওয়ার জন্য বিবাহের মজলিশে উভয়পক্ষ ও সাক্ষীদের উপস্থিতি শর্ত। ফোনে
বিয়ের ক্ষেত্রে যেহেতু এসব শর্ত পাওয়া যায় না তাই ফোনের মাধ্যমে বিবাহ
শুদ্ধ হয় না।
অবশ্য ফোনে
বিবাহ শুদ্ধ হওয়ার একটি বিকল্প পদ্ধতি আছে। তাহলো, পাত্র বা পাত্রী নিজের
পক্ষ থেকে ফোনের মাধ্যমে কোনো আপনজন বা অন্য কোনো লোককে উকিল বানাবে। উক্ত
উকিল, দু'জন সাক্ষীর সামনে প্রস্তাব পেশ করবেন। তখন অপরপক্ষ (পাত্র বা
পাত্রী বা তাদের উকিল) কবুল তথা প্রস্তাব গ্রহণ করবেন। এতে বিবাহ হয়ে যাবে।
কারণ এখানে উভয়পক্ষ (অর্থাৎ বর বা বরের উকিল এবং কনে বা কনের উকিল) ও
সাক্ষীগণের উপস্থিতি একই মজলিশে পাওয়া গেছে। [জাদীদ ফেকহী মাসায়িল,
খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ২৪৮ ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া, খণ্ড : ১১, পৃষ্ঠা : ১৬৩
ফাতাওয়ায়ে নিজামিয়া, খণ্ড : ২, পৃষ্ঠা : ২০৭]
মোবাইল ফোনে বন্ধুত্ব করা
মোবাইল
কোম্পানিগুলো প্রায়ই নিজ নিজ গ্রাহকদের কাছে বিভিন্ন প্রকার ম্যাসেজ
পাঠায়। মাঝে মধ্যে দেখা যায়, কোনো কোনো মোবাইল কোম্পানি গ্রাহকদের কাছে এমন
ম্যাসেজ পাঠায় যাতে একটি বিশেষ নম্বর দিয়ে একথা বলা থাকে যে, নতুন বন্ধু
নির্বাচনের জন্য উক্ত নাম্বারে ডায়াল করুন।
এই
নাম্বারে ডায়াল করে পুরুষ-মহিলার সাথে বন্ধুত্ব করা যায়। কিন্তু এভাবে
বন্ধুত্ব করা উচিত নয়। কেননা কাউকে না দেখে শুধু কথা শুনে বন্ধুত্ব করলে এর
পরিণতি ভালো না হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে। এমনও হতে পারে যে, বন্ধুত্ব
করার জন্য কোনো একজন মিথ্যা পরিচয় দিল এবং পরবর্তীতে সে-ই তার নানাবিধ
ক্ষতি বা ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়াল। আর মেয়েদের সাথে তো এভাবে কথা বলে সময়
নষ্ট করা, বন্ধুত্ব করা নাজায়েয, হারাম ও মারাত্মক গুনাহের কাজ। তাই
প্রতিটি মুসলমানকে এ গর্হিত কাজ থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। [মাসাইলে
মোবাইল, পৃষ্ঠা : ৩৫]
পাওনাদারের তাগাদা থেকে বাঁচার জন্য মোবাইল বন্ধ রাখা জায়েয নয়
সক্ষম
হওয়া সত্ত্বেও ঋণ পরিশোধে টালবাহানা করা জুলুম ও মারাত্মক অন্যায়। এই
টালবাহানা যে কোনো উপায়েই করা হোক না কেন সবই নাজায়েয। যেমন, দেই-দিচ্ছি
বলে অনর্থক পাওনাদারকে ঘুরানো, তারিখ দিয়ে ঐ তারিখমত টাকা দিতে না পারলে
আগেই তাকে না জানানো অথবা সে যেন যোগাযোগ করতে না পারে সেজন্য মোবাইল বন্ধ
করে রাখা কিংবা মোবাইল খোলা রেখে শুধু পাওনাদারের নাম্বারের সাথে সম্পর্ক
ছিন্ন করে রাখা বা সিম পরির্বতন করে ফেলা ইত্যাদি। হ্যাঁ, ঋণগ্রহীতা যদি
সময়মতো ঋণ পরিশোধে অসমর্থ হয় তাহলে তার উচিত হলো, নিজেই পাওনাদারের সাথে
যোগাযোগ করে অত্যন্ত বিনয়ের সাথে সময় বাড়িয়ে নেওয়া। যদি পরবর্তী তারিখেও ঋণ
পরিশোধে সে অপারগ হয় তাহলে আবারও নিজ থেকেই যোগাযোগ করে সময় নেওয়া। যাতে
পাওনাদার বিন্দুমাত্র পেরেশান না হয় এবং সে যেন ঋণের টাকা প্রাপ্তির
ব্যাপারে পূর্ণ আশ্বস্ত থাকে। মোটকথা, দেনাদার যদি নির্ধারিত সময়ে ঋণ আদায়ে
অপারগ হয়, তাহলে তাকে পাওনাদের সাথে এমন আচরণ করতে হবে যাতে সে কোনো
প্রকার কষ্ট না পায় এবং তার মনে টাকা প্রাপ্তির ব্যাপারে কোনো সন্দেহ না
জন্মে। [মুসলিম শরিফ, খণ্ড : ২, পৃষ্ঠা : ১৮ তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম,
খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ৫০৮ মুসনাদে আহমদ, খণ্ড : ২, পৃষ্ঠা : ১৮ আউনুল
মা'বুদ, খণ্ড : ২, পৃষ্ঠা : ১২৯]
উলামায়ে কেরামের হাতে ক্যামেরাযুক্ত মোবাইল
ক্যামেরাযুক্ত
মোবাইলে কথা বলা হারাম নয় বরং তার অপব্যবহারই হারাম। কিন্তু যেহেতু
ক্যামেরাযুক্ত মোবাইলের অপব্যবহারই বেশি হয়ে থাকে তাই বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ
তথা উলামায়ে কেরাম, মসজিদের ইমাম, তাবলীগের আমীর, হাফেজ ও তালিবে ইল্মদের
জন্য এ ধরনের মোবাইল ব্যবহার না করাই উচিত। কেননা সাধারণ মানুষ তাদেরকে
অনুসরণীয় মনে করে এবং বিভিন্ন বিষয়ে তাদেরকে লক্ষ্য করে। তাই কোনো আলেম বা
উচুঁ পর্যায়ের দীনদার লোকদের হাতে যদি ক্যামেরাযুক্ত মোবাইল সেট থাকে, যদিও
তিনি ভুলেও ক্যামেরা অপশনে যান না, তথাপি সাধারণ জনগণ বিভ্রান্তির শিকার
হবে। তারা মনে করবে, ক্যামেরাযুক্ত মোবাইল ব্যবহারে কোনো অসুবিধা নেই।
কেননা আলেমদেরকেই ক্যামেরাযুক্ত মোবাইল ব্যবহার করতে দেখেছি।
প্রথমেই
বলা হয়েছে ক্যামেরাযুক্ত মোবাইলের সঠিক ব্যবহারে কোনো 'অসুবিধা' নেই।
অসুবিধা হলো এর অপব্যবহারে। কিন্তু এমন কোনো সাধারণ মানুষ হয়তো খুঁজেই
পাওয়া যাবে না, যিনি ক্যামেরাযুক্ত মোবাইল ব্যবহার করেন অথচ এর অপব্যবহার
অর্থাৎ এর দ্বারা কখনোই তিনি ছবি তুলেননি কিংবা ভিডিও করেননি। মোটকথা,
সাধারণ মানুষের হাতে ক্যামেরাযুক্ত মোবাইল গেলে তার অপব্যবহারই যেহেতু হয়ে
থাকে তাই কোনো আলেম বা দীনদার লোকের জন্য এ ধরনের মোবাইল ব্যবহার করে
সাধারণ লোককে তা কিনতে উৎসাহ না যোগানোই উচিত। বস্তুতঃ ক্যামেরাহীন মোবাইল
ব্যবহার করাটাই তাদের জন্য সম্মানের বিষয়!
ইমাম
মালেক রহ. বলতেন, আলেম ততক্ষণ পর্যন্ত প্রকৃত আলেম হতে পারেন না, যতক্ষণ
না তিনি এমন সব আমলের পাবন্দি করেন যা সাধারণ মানুষ করে না এবং যা না করলে
কোনো গুনাহ হয় না। [উসূলুল ইফতা, পৃষ্ঠা : ১৬৭]
মোবাইল ফোনে তালাক
যদি
কোনো ব্যক্তি তার স্ত্রীকে মোবাইলে তালাক দেয় এবং পরে সে এ কথা স্বীকারও
করে যে, আমিই তালাক দিয়েছি, অন্য কেউ নয়, তাহলে তার স্ত্রীর উপর তালাক পতিত
হবে। [ফাতাওয়ায়ে শামী, খণ্ড : ৪, পৃষ্ঠা : ৪৫৬]
ক্যামেরাযুক্ত মোবাইল : পাশ্চাত্যের যড়যন্ত্র
ক্যামেরাযুক্ত
মোবাইল পাশ্চাত্যের যড়যন্ত্র বৈ কিছুই নয়। সেদিন দীনদার লোকদের হাতে
ক্যামেরাযুক্ত মোবাইল দেখে দারুণ আফসোস করে এক গ্রন্থকার বলেছিলেন, হায়!
বিজ্ঞান আমাদের কোথায় নিয়ে যাচ্ছে ? পাশ্চাত্যের বিজ্ঞানীরা কত
সুপরিকল্পিতভাবে আমাদেরকে গুনাহের দিকে ঠেলে দিচ্ছে!! বিশ্বব্যাপী
আন্তর্জাতিক যড়যন্ত্র চলছে- মুসলমানদের ঈমান হরণের ষড়যন্ত্র, আমল থেকে
বিচ্যুত করার ষড়যন্ত্র। সু-কৌশলে গুনাহের সামগ্রী তুলে দেওয়া হচ্ছে
মুসলমানদের হাতে। কিন্তু হায়! আমরা যদি তাদের সুগভীর ষড়যন্ত্র বুঝতে
পারতাম!!
ফটো
তোলাকে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হারাম বলে ঘোষণা করেছেন।
অথচ আজকাল মুসলমানদের হাতে হাতে ক্যামেরা, ভিডিও। নবীর আদরের উম্মতেরা ফটো
তোলার যন্ত্র নিয়ে সর্বক্ষণ ঘুরে বেড়াচ্ছে! ক্যামেরা এখন মুসলমানদের পকেটে
পকেটে, হাতে হাতে এবং এটা যে একটা মারাত্মক গুনাহের সরঞ্জাম সে খবরও তাদের
নেই!!
আরো
বড় পরিতাপের বিষয় হলো, আজকাল মুসলমানরা যখন মোবাইল ক্রয় করার জন্য
মার্কেটে যায় তখন তাদের প্রথম পছন্দই থাকে- ক্যামেরা সেট মোবাইল! হায়রে
মুসলমান! এ-ই তোমার পছন্দ ! ধিক! শত ধিক!! তোমার পছন্দের উপর!!!
ক্লাস চলাকালে মোবাইলে কথা বলা
মোবাইলে
কথা বলা সরাসরি কথা বলার মতোই। তাই শিক্ষকদের উচিত ক্লাস করা অবস্থায়
মোবাইল বন্ধ রাখা। যাতে ক্লাসের কোনো ক্ষতি না হয় এবং ছাত্রদের হক নষ্ট না
হয়। আল্লাহ মাফ করুন, আমি এমন অনেক শিক্ষক দেখেছি, যারা ক্লাস চলা অবস্থায়
রিং এলে মোবাইল রিসিভ করে দীর্ঘক্ষণ কথা বলতে থাকেন। তারা একটু চিন্তাও করে
দেখেন না যে, এর দ্বারা ছাত্রদের হক নষ্ট হচ্ছে এবং অর্পিত দায়িত্ব পালনে
ত্রুটি হচ্ছে। অথচ আমাদের আকাবিরদের জীবনী তালাশ করলে দেখা যায়, ক্লাস
চলাকালে তাদের কোনো মেহমান আসলে খুব প্রয়োজন হলে অল্প সময়ে কথা সেরে নিতেন
এবং এভাবে গোটা মাসে মেহমানদের সাথে কতটুকু কথা বললেন তা হিসেব করতেন।
হিসেব করার পর যদি দেখা যেত, সব মিলিয়ে অর্ধ দিনের কম হয়েছে তাহলে অর্ধ
দিনের বেতন নিতেন না। আর যদি অর্ধ দিন বা তার চেয়ে বেশি হতো তাহলে পূর্ণ
একদিনের বেতন নিতেন না। সুবহানাল্লাহ! তাঁরা কত উঁচু পর্যায়ের পরহেজগার
ছিলেন!! আল্লাহ আমাদেরকেও তাদের মতো তাকওয়া-পরহেজগারী নসীব করুন। আমীন।
যাহোক,
এবার পূর্বের কথায় ফিরে আসি। বলছিলাম, ক্লাস চলাকালে মোবাইলে কারো সাথে
কথা না বলাই শ্রেয়। আর যদি খুব বেশি প্রয়োজনে একান্ত অপারগ হয়ে বলতেই হয়,
তাহলে যথাসম্ভব অল্প সময়ে কথা শেষ করে নিতে হবে। এ ব্যাপারে হিফ্জ বিভাগের
শিক্ষকদেরকে আরো বেশি সতর্ক হওয়া চাই। যখন ছাত্ররা পড়া শুনাবে তখন তারা
অন্যের সাথে মোবাইলে কিংবা সরাসরি কথা বলা থেকে বিরত থাকবেন। কেননা পবিত্র
কোরআন তিলাওয়াতের সময় চুপ থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। [আল ইমদাদ স্মারক,
২০০৮, পৃষ্ঠা : ১৮১]
মহিলা কর্তৃক মোবাইল রিসিভ করা
বিনা
প্রয়োজনে গাইরে মাহরাম পুরুষদের সাথে মহিলাদের কথা বলা জায়েয নেই। তাই ঘরে
কোনো পুরুষ লোক থাকা অবস্থায় মোবাইলে ফোন আসলে মহিলারা রিসিভ করতে পারবে
না। তবে হ্যাঁ, ঘরে কোনো পুরুষ না থাকলে কিংবা অন্য কোনো বিশেষ প্রয়োজনে
মহিলাদের জন্য মোবাইল রিসিভ করায় এবং অনর্থক দীর্ঘ কথা পরিহার করে সংক্ষেপে
প্রয়োজনীয় কথাবার্তা বলায় কোনো দোষ নেই। তবে খেয়াল রাখতে হবে, কথা যেন
অবশ্যই নরম ও মধুর স্বরে না হয়। [ফতোয়ায়ে শামী, খণ্ড : ৯, পৃষ্ঠা : ৫৩০]
অটো রিসিভ করে রাখা জায়েয আছে কি?
বিনা
প্রয়োজনে মোবাইলের মধ্যে অটো রিসিভ করে রাখা ঠিক নয়। কারণ অটো রিসিভ করে
রাখার ফলে কারো রিং ভুলক্রমে যদি এই নাম্বারে চলে আসে তাহলে সাথে সাথে তা
রিসিভ হয়ে তার টাকা কাটা যাবে। যা 'অযথা অন্যের ক্ষতি করা'র মধ্যে শামিল
হওয়ার কারণে নিষিদ্ধ। তবে হ্যাঁ, কেউ যদি বারবার মিসড্কল দিয়ে বিরক্ত করে
অথচ তার সাথে মিসড্কল দেওয়ার ব্যাপারে কোনো চুক্তি হয়নি (অর্থাৎ তাকে বলা
হয়নি যে, তোমার প্রয়োজন হলে আমাকে মিসড্কল দিবে, আমিই কলব্যাক করে তোমার
সাথে কথা বলব) তাহলে তার মিসড্কলের বিড়ম্বনা থেকে বাঁচার জন্য স্বীয়
মোবাইলে অটো রিসিভ করে রাখা বা তার মিসড্কল ধরা জায়েয আছে। [দুররুল
মুখতার, খণ্ড : ২, পৃষ্ঠা : ৩৩৬]
গভীর রাতে কল করা
বর্তমানে
মোবাইল কোম্পানিগুলো যত অফার দিচ্ছে তার অধিকাংশই শুরু হয় রাত বারটা থেকে।
এ সুযোগকে কাজে লাগানোর জন্য কেউ কেউ রাত বারটার পর কিংবা আরো গভীর রাতে
পরিচিতজনদের কাছে ফোন করে থাকে। অথচ আশ্চর্যের কথা হলো, পয়সা বাঁচানোর
তাগিদে একটি বারও সে ভেবে দেখে না যে, আমি যার কাছে কল করছি তিনি হয়তো এখন
বিশ্রাম নিচ্ছেন। অফার চলাকালে কল দেওয়ার দ্বারা আমার কয়টা পয়সা বাঁচবে
ঠিকই, কিন্তু তার তো আরামের নিদ্রা ভঙ্গ হলো! পূর্ব পরিচিতি কিংবা অধিক
ঘনিষ্ঠতার কারণে তিনি হয়তো কিছু বলবেন না, কিন্তু তাই বলে একজন মানুষকে
এভাবে কষ্ট দেওয়া কি উচিত?
আল্লামা
মুফতি মুহাম্মদ শফি রহ. লিখেছেন, খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া কারো নামাজ, ঘুম
বা জরুরি কাজের সময় ফোন করা জায়েয নেই। কারণ এভাবে ফোন করার মাধ্যমে তাকে
ঐরূপ কষ্টই দেওয়া হয় যেমন কষ্ট দেওয়া হয়, অনুমতি ছাড়া কারো ঘরে প্রবেশ ও
তার স্বাধীনতা বিনষ্টকরণের মাধ্যমে।
মোটকথা,
মোবাইল কোম্পানিগুলোর অফার গ্রহণ করতে গিয়ে এভাবে যখন তখন ফোন করে মানুষকে
কষ্ট দেওয়া অবশ্যই পরিহার যোগ্য। তাছাড়া ইশার নামাজের পর দুনিয়াবি
কথাবার্তা বলাও শরিয়ত পছন্দ করে না। যেমন সাহাবি আবু বারযা রা. বলেন, নবী
কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইশার নামাজের পূর্বে ঘুমানো এবং
ঈশার নামাজের পর (দুনিয়াবি) কথাবার্তা বলা অপছন্দ করতেন।
তবে
যদি কারো নিশ্চিত জানা থাকে যে, আমি যার কাছে কল করছি তিনি এখন জাগ্রত
আছেন এবং তার সাথে এসময় কথা বললে কোনো অসুবিধা হবে না তাহলে তার কাছে কল
করাতে কোনো দোষ নেই। অনুরূপভাবে কোনো কথা যদি এমন জরুরি হয় যা এখনই বলা
দরকার তবে তাও বলাতে কোনো অসুবিধা নেই। [মাআরিফুল কোরআন, খণ্ড : ৬, পৃষ্ঠা :
৩৯৪ তিরমিযি শরিফ, খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ৪২]
দুষ্টমী করেও মোবাইলে কাউকে হুমকি দেওয়া নাজায়েয
আজকাল
আমাদের সমাজের কারো কারো মধ্যে একটি প্রবণতা লক্ষ্য করা যায় যে, তারা
দুষ্টুমি করে অন্যকে মোবাইলে হুমকি দেয় কিংবা নানান কথা বলে ভয় দেখায়।
অবশ্য পরবর্তীতৈ এই ভয় কোনো না কোনোভাবে কাটিয়ে দেওয়া হয় বা সে নিজেই
অনুমান করে বুঝে নেয় যে, এটা দুষ্টুমী করে বলা হয়েছে। কিন্তু এখানে লক্ষণীয়
বিষয় হলো, কিছু সময়ের জন্য হলেও তো একজন মুসলমানকে অহেতুক পেরেশান ও ভীত
সন্ত্রস্ত রাখা হলো। তাকে ঠেলে দেওয়া হলো চিন্তা ও উদ্বেগের অথৈ সাগরে!
বিঘ্ন ঘটানো হলো তার স্বাভাবিক জীবন যাত্রায়। ক্ষতি করা হলো তার প্রয়োজনীয়
কাজের। তাছাড়া অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, তার আহার নিদ্রা পর্যন্ত বন্ধ হয়ে
যায়।
যেহেতু
কোনো মুসলমানকে অযথা কষ্ট দেওয়া জায়েয নেই, তাই দুষ্টুমী করে অল্প সময়ের
জন্য হলেও কাউকে হুমকি দিয়ে বা ভয় দেখিয়ে পেরেশান করা জায়েয নয়। এটা
মারাত্মক গুনাহের কাজ।
হাদিস শরিফে আছে,
একবার
কিছুসংখ্যক সাহাবায়ে কেরাম নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের
সাথে সফর করছিলেন। পথিমধ্যে কোনো জায়গায় বিশ্রামের সময় সফরসঙ্গীদের একজন
ঘুমিয়ে পড়লেন। অতঃপর অপর এক সাহাবি ঘুমন্ত সাহাবির সাথে রাখা রশি আনতে গেলে
তিনি ঘাবড়ে গেলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বললেন, কোনো মুসলমানের জন্য অপর মুসলমানকে ভয় দেখানো জায়েয নেই। [মিশকাত,
পৃষ্ঠা : ৩০]
অহেতুক অন্যের মোবাইল টিপাটিপি করা জায়েয নেই
অনেক
আল্লাহর বান্দাকে দেখা যায়, তারা অন্যের মোবাইল হাতে নিয়ে টিপাটিপি শুরু
করে দেয়। ফলে অনেক সময় মোবাইলের বিভিন্ন প্রোগ্রাম উলট পালট হয়ে যায়। যেমন,
রিংটোন বন্ধ হয়ে ভাইব্রেশন চালু, সময় ও তারিখ পবিবর্তন, ফোন বুক উধাও!
ইত্যাদি। এই পরিবর্তনের ফলে মোবাইলের মালিককে অনেক ক্ষেত্রে দারুণ পেরেশানি
ভোগ করতে হয়। কোনো কোনো সময় তো মারাত্মক ক্ষতিরও সম্মুখীন হতে হয়। কেননা,
না জেনে উল্টাপাল্টা টিপাটিপির ফলে মোবাইল যদি নষ্ট হয়ে যায় তবে তো তার
আর্থিক ক্ষতি হলো। আর যদি মোবাইলের ফোনবুক বা সেখান থেকে কোনো জরুরি
নাম্বার ডিলেট হয়ে যায় এবং এ কারণে সে কারো সাথে সময়মতো যোগাযোগ করতে না
পারে তাহলে এর দ্বারা একদিকে যেমন তাকে পেরেশানিতে পড়তে হয় তেমনি অন্যদিকে
তার নানাবিধ ক্ষতিও হতে পারে।
অনেক
সময় দেখা যায়, কেউ কেউ খেয়ালী করে মোবাইল সেট লুকিয়ে রাখে। ফলে সে অনর্থক
হয়রানির শিকার হয়। অথচ অনর্থক কাউকে পেরেশান করতে হাদিস শরিফে নিষেধাজ্ঞা
এসেছে। এক হাদিসে নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
"তোমাদের কেউ যেন খেলাচ্ছলে দুষ্টুমী করে আপন ভাইয়ের লাঠি না নেয়। যদি কেউ
নিয়ে থাকে তবে সে যেন তা ফিরিয়ে দেয়।" মোটকথা, মুসলমানকে অহেতুক কষ্ট দেওয়া
বা তাকে পেরেশান করা জায়েয নেই। তাই তার কষ্ট বা পেরেশানি হয়, এমন সব কাজ
থেকে আমাদের সবাইকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। [তিরমিযি, খণ্ড : ২, পৃষ্ঠা :
৩৯]
একই সাথে কতবার রিং দেওয়া যাবে?
অনেক
সময় দেখা যায়, অন্য প্রান্ত থেকে রিসিভ না করলে ফোনকারী একের পর এক রিং
দিতেই থাকে। এভাবে ক্রমাগত রিং দেওয়া মোটেও উচিত নয়। আসলে তারা নিয়ম জানেন
না বলেই এমনটি করে থাকে। নিয়ম হলো, তিনবার পর্যন্ত রিং দিয়ে ক্ষান্ত হয়ে
যাওয়া। তাও এভাবে যে, একবার পূর্ণ রিং দেওয়ার পর যখন অপর প্রান্ত থেকে
রিসিভ হলো না তখন দ্বিতীয় বার রিং দেওয়ার পূর্বে একটু চিন্তা করে নেওয়া যে,
এখন জামাতের সময় নয় তো ? অথবা এটা তার আরাম বা জরুরি কোনো কাজের সময় নয় তো
? যদি উত্তর 'হ্যাঁ' হয় তাহলে তখন আর রিং না করা। আর যদি উত্তর 'না' হয়
তাহলে ২/৪ মিনিট বিরতি দিয়ে আবার রিং করা। যাতে তিনি নামাজে থাকলে বা অন্য
কোনো বিশেষ জরুরি কাজে থাকলে এ সময়ের মধ্যে তা থেকে ফারেগ হয়ে ফোন রিসিভ
করতে পারেন। এভাবে দ্বিতীয়বারেও ফোন রিসিভ না করলে খানিক বিরতি দিয়ে তৃতীয়
বার রিং করা। হ্যাঁ, তৃতীয় বার রিং করার পরেও যদি মোবাইল রিসিভ না হয়,
তাহলে বুঝতে হবে তিনি মোবাইল থেকে দূরে আছেন অথবা এমন অবস্থায় আছেন; যে
অবস্থায় মোবাইল রিসিভ করা সম্ভব নয়। তাই তৃতীয়বারের পর আর রিং না করা। আসলে
এ বিষয়টি 'অনুমতি' নেওয়ার মতো। কারো ঘরে ঢুকার সময় তিনবার অনুমতি চাওয়ার
পরও যদি অনুমতি না পাওয়া যায় তখন যেমন ফিরে আসার বিধান, তেমনি মোবাইলে রিং
দেওয়ার ক্ষেত্রেও তিনবার পর্যন্ত রিং দিয়ে তখন আর রিং না দেওয়া চাই। অবশ্য
একান্ত জরুরি হলে ভিন্ন কথা। [ফাতহুল বারী, খণ্ড : ১১, পৃষ্ঠা : ৩৩]
কেউ ক্যামেরাযুক্ত সেট উপহার দিলে...
পূর্বে
বলা হয়েছে যে, ক্যামেরা সেট ব্যবহার করা যদিও নাজায়েয নয়, কিন্তু যেহেতু এ
জাতীয় সেট হাতে থাকলে এর দ্বারা গুনাহ সংঘটিত হয়ে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা
থাকে তাই সবাইকে বিশেষ করে আলেম সমাজ ও উচুঁ তবকার দীনদার লোকদেরকে এ ধরনের
সেট ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা খুবই প্রয়োজন।
অনেক
দীনদার লোককে যদি প্রশ্ন করা হয়, ভাই! আপনার হাতে ক্যামেরা সেট?! তখন তিনি
এই বলে জবাব দেন- 'জনাব! এই সেট তো আমি কিনিনি। এটি আমার ভাই বা মামা
বিদেশ থেকে পাঠিয়েছেন'। একথা বলার দ্বারা তিনি একথাই বুঝাতে চান যে, যেহেতু
এই সেট তিনি নিজে ক্রয় করেননি তাই তার জন্য এটা ব্যবহার করাতে তেমন কোনো
অসুবিধা নেই! অনেকে আবার প্রিয়জনের মন রক্ষার্থেও তার গিফ্ট করা ক্যামেরা
সেট ব্যবহার করে থাকেন। আচ্ছা বলুন তো, গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা বড়, নাকি
ভাই-বন্ধু ও প্রিয়জনের মন রক্ষা করা বড়?!
প্রিয়
পাঠক! আপনি যদি গুনাহ থেকে বেঁচে থাকাকে বড় মনে করেন এবং সেই সাথে এটাও
চান যে, আপনার দেখাদেখি অন্য কেউ যেন গুনাহের মধ্যে না লিপ্ত হয় তাহলে আমি
মনে করি, আপনার জন্য উচিত হবে, এই সেট বাজারে বিক্রি করে ক্যামেরাবিহীন সেট
ক্রয় করা। আল্লাহ আমাকে ও আপনাকে তাওফিক দান করুন। আমীন।
মোবাইল যেন ফ্যাশন না হয়!
ফ্যাশন
হলো সময়ের রঙিন রূপ। তাই সময় বদলানোর সাথে সাথে ফ্যাশনও বদলায়। আজকাল
অনেকে মোবাইল ব্যবহার করে ফ্যাশন হিসেবে। যারা এরূপ করে তারা নিজেরাও জানে
যে, তাদের মোবাইলের কোনো প্রয়োজন নেই। তবু তাদের মনের একান্ত বাসনা, হাতে
একটি সুন্দর মোবাইল শোভা পাক! তাই তারা দামী দামী মোবাইল সেট হাতে নিয়ে
ঘুরে বেড়ায়। যেগুলোর মূল্য পাঁচ হাজার থেকে পঁচিশ হাজার টাকা। অথচ বাস্তব
সত্য হলো, গোটা মাসে তারা ১০ টাকার কাজের কথাও বলে না! মনে রাখবেন, এভাবে
মানুষকে দেখানোর জন্য এবং নিজের বড়ত্ব জাহের করার জন্য কোনো পয়সা খরচ করা
জায়েয নেই। মুমিনের জান-মালের মালিক মহা পরাক্রমশালী আল্লাহ। সুতরাং
এগুলোকে তার মর্জি মোতাবেক ব্যবহার করতে হবে। তবেই তিনি খুশি হবেন, রাজি
হবেন এবং এর বিনিময়ে আমাদেরকে দান করবেন অফুরন্ত নেয়ামতের স্থান- জান্নাত।
আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর রাজি-খুশির উদ্দেশ্যে যাবতীয় কাজ সম্পাদন করার তাওফিক
দান করুন। আমীন
বিনা অজুতে কোরআন শরিফ রেকর্ডকৃত মোবাইল স্পর্শ করা
বিনা
অজুতে কোরআন শরিফ রেকর্ডকৃত মোবাইল স্পর্শ করা জায়েয আছে। এটা মানুষের
ব্রেইণে (স্মৃতিতে) সংরক্ষিত কোরআনের মতো। কোরআন শরিফ মুখস্থকারীর ব্রেইণ
যেমন বিনা অজুতে ধরা যায়, ছোঁয়া যায়, স্পর্শ করা যায় ঠিক তেমনি বিনা অজুতে
কোরআন শরিফ রেকর্ডকৃত মোবাইলও স্পর্শ করা জায়েয আছে। অবশ্য কোরআন শরিফের
কোনো আয়াত যদি মোবাইল স্ক্রীনে প্রদর্শিত অবস্থায় থাকে তাহলে বিনা অজুতে ঐ
আয়াতকে স্পর্শ করা জায়েয হবে না। [ইমদাদুল ফাতওয়া, খণ্ড : ৪, পৃষ্ঠা : ২৪৫]
মানুষের সামনে স্ত্রীর সাথে কথা বলা
স্ত্রীর
সাথে কথা বলার ক্ষেত্রে নিরিবিলি স্থান বেছে নেওয়াই উত্তম। কেননা
এক্ষেত্রে অনেক সময় এমন কথাও মুখে এসে যায় যা স্বামী-স্ত্রীর একান্ত গোপন
কথা। আর হাদিস শরিফে স্বামী-স্ত্রীর গোপন কথা অপরকে শোনানোর ব্যাপারে
নিষেধাজ্ঞা এসেছে। এক হাদিসে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেন, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলার নিকট সর্বাধিক ঘৃণিত ঐ ব্যক্তি যে তার
স্ত্রীর নিকট গমন করে এবং স্ত্রীও স্বামীর নিকট গমন করে অতঃপর সে স্ত্রীর
গোপন বিষয় প্রকাশ করে দেয়।
হ্যাঁ,
যদি জরুরি কোনো কথা হয় কিংবা এমন কোনো কথা হয় যা স্বামী-স্ত্রীর গোপনীয়
কোনো কথা নয়, তাহলে তা অন্যের সামনে বলাতে কোনো দোষ নেই। [মিশকাত শরিফঃ ২৭৬
পৃষ্ঠা]
মোবাইলে রোগীর খোঁজ-খবর লওয়া বা বুযুর্গদের কাছে দোয়া চাওয়া
মোবাইল
অনেক কঠিন কাজ সহজ করেছে- একথা যেমন সত্য তেমনি সবকাজ মোবাইলে হয় না একথাও
সত্য। কেননা অনেক কাজ এমন আছে যা স্বয়ং উপস্থিত হয়ে করতে হয় বা করলে অনেক
বেশি সাওয়াব পাওয়া যায়। যেমন, মোবাইলের মাধ্যমে রোগীর খোঁজ-খবর নেওয়ায়
সাওয়াব আছে বটে, তবে সরাসরি হাজির হয়ে খোঁজ-খবর নিলে যে পরিমাণ সাওয়াব
পাওয়া যাবে শুধু মোবাইলের দ্বারা নিশ্চয়ই তা পাওয়া যাবে না। অনুরূপভাবে
বুযুর্গদের কাছ থেকে দোয়া নেওয়ার ক্ষেত্রেও মোবাইলের সুযোগকে গ্রহণ করা হয়।
যা কখনোই সাক্ষাতের বরাবর হতে পারে না। তাই যেসব ক্ষেত্রে সাক্ষাতের ভিন্ন
ফজিলত আছে, মোবাইলের সুবিধা পেয়ে অলসতা করে তা হাতছাড়া করা মোটেও উচিত নয়।
বরং এসব ক্ষেত্রে একটু কষ্ট করে হলেও অধিক সাওয়াব লাভের জন্য স্বয়ং
উপস্থিত হওয়া বাঞ্ছনীয়। অবশ্য প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সরাসরি উপস্থিত
হওয়া সম্ভব না হলে সেক্ষেত্রে মোবাইলের মাধ্যমেই কাজ চালিয়ে নিতে হবে।
কেননা কোনো কাজ একেবারে না হওয়ার চেয়ে কিছুটা হওয়া অনেক ভালো।
বারবার সিম পরিবর্তন অপছন্দনীয়
আজকাল
একাধিক সিম ব্যবহার একটি মারাত্মক ব্যাধি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ব্যাধির ফলে
একদিকে যেমন অন্যদেরকে সিমাহীন বিরক্তি ও নানাবিধ ভোগান্তির শিকার হতে
হচ্ছে তেমনি একাধিক সিম ব্যবহারকারীদেরকেও দিতে হচ্ছে বিভিন্ন রকম খেসারত।
যারা
একাধিক সিম ব্যবহার করেন তাদেরকে প্রায় সময় অনেক জরুরি প্রয়োজনেও খোঁজ
করে পাওয়া যায় না। এতে বারবার কল করতে গিয়ে কলকারীকে প্রচুর সময় ব্যয় করার
পাশাপাশি অনেক পেরেশান হতে হয়। তাছাড়া অনেক সময় এমনও হয় যে, প্রয়োজনটা মূলত
যার কাছে কল করা হয়েছে তার, কিন্তু কল করে সময়মতো তাকে না পাওয়ার কারণে
তার বিরাট ক্ষতি হয়ে যায়। যার জন্য পরবর্তীর্তে তাকে অনেক আফসোস করতে হয়।
একাধিক
সিম ব্যবহারকারীরা সাধারণত বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানির সুযোগ গ্রহণ করার
জন্যই এরূপ করে থাকে। অথচ তারা জানে না যে, এজন্য অন্যদেরকে কী পরিমাণ
হয়রানী ও কষ্ট পোহাতে হয়! তাই একাধিক সিম ব্যবহার করা ঠিক নয়। হ্যাঁ, কেউ
যদি একান্ত করতেই চায়, তাহলে সে যেন একাধিক সেটও ব্যবহার করে। অথবা পরিচিত
মহলে তার সবগুলো নাম্বার দিয়ে রাখে। সেই সাথে এও জানিয়ে রাখে যে, এতটা থেকে
এতটা পর্যন্ত আমার অমুক সিম চালু থাকে। মোটকথা একাধিক সিম
ব্যবহারকারীদেরকে একথা খুব ভালো করে খেয়াল রাখতে হবে যে, একাধিক সিম
ব্যবহার করার কারণে অন্যদের যেন কোনোভাবেই কোনো প্রকার কষ্ট না হয়।
মোবাইল কোম্পানির বোনাস অফার!
মোবাইল
কোম্পানিগুলো বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রকার বোনাস অফার দিয়ে থাকে। যেমন,
সর্বাধিক এসএমএস করলে বা এই পরিমাণ টাকা খরচ করলে গোল্ডেন কয়েন পাওয়া যাবে
বা সিঙ্গাপুর ভ্রমণ করা যাবে ইত্যাদি। এক্ষেত্রে শরিয়তের দৃষ্টিভঙ্গি হলো,
কোনো কোম্পানি বোনাস অফার দিয়ে যদি বাস্তবিকই তা দিয়ে থাকে তাহলে গ্রাহকের
জন্য তা নেওয়া জায়েয। কেননা এ বোনাসটি মূলত কোম্পানির পক্ষ থেকে উপহার
স্বরূপ। অবশ্য যদি কোনো কোম্পানি মানুষকে শুধু লোভ দেখানোর জন্য বড় বড় অফার
দেয় এবং বাস্তবে তা না দেয় কিংবা নানা কৌশল করে তা এড়িয়ে যায়, তাহলে তা
হবে ধোঁকা ও প্রতারণার শামিল। এক হাদিসে নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যারা ধোঁকা দেয় তারা আমার দলভুক্ত নয়।
মোবাইল ফোনে কথা বলার নিয়ম
মোবাইলে কথা বলার সময় প্রথমে যা করতে হবে
কারো
কাছে মোবাইল করার সময় সর্বপ্রথম আপনাকে যে বিষয়টির প্রতি সবিশেষ খেয়াল
রাখতে হবে তাহলো খুব সতর্কতার সাথে বাটন টিপা, যাতে ভুল নম্বরে টিপ না পড়ে।
এতদ্সত্ত্বেও কল ঢুকানোর জন্য সেণ্ড বাটন টিপার পূর্বে আরেকবার নম্বরগুলো
চেক করে নেওয়া। এমন যেন না হয়, আপনার অসতর্কতার দরুণ কারো প্রয়োজনীয় ঘুম
নষ্ট হলো, কোনো অসুস্থ-রোগী কষ্ট পেল কিংবা অযথাই কেউ বিরক্ত হলো।
সতর্কতা সত্ত্বেও ভুল নম্বরে কল চলে গেলে
সতর্কতা
সত্ত্বেও নম্বর টিপতে ভুল হয়ে গেলে এবং অন্য নম্বরে কল চলে গেলে অবশ্যই
সঙ্গে সঙ্গে ক্ষমা চেয়ে নিবেন। বলবেন, ভাই! দুঃখিত। ভুলবশতঃ আপনার কাছে কল
চলে গেছে। কিছু মনে করবেন না।
যদি আপনার কাছে কারো কল ভুল চলে আসে
ভুলবশতঃ
কারো কল যদি আপনার মোবাইলে চলে আসে তাহলে বিরক্ত না হয়ে ভদ্রতার সাথে
সুন্দরভাবে ভুলের বিষয়টি তাকে জানিয়ে দিবেন। এবং এভাবে জানিয়ে দেওয়াটাই হবে
আপনার জন্য উত্তম আখলাকের পরিচায়ক। আর যদি কলকারী ব্যক্তি ভুলে কল করার
জন্য আপনার নিকট দুঃখ প্রকাশ করে এবং বলে যে- 'ভাই! ভুলবশতঃ আপনার কাছে কল
চলে গেছে। কিছু মনে করবেন না' তখন আপনারও উচিত তাকে এমন কথা বলা যদ্বারা
তার মন খুশি হয়ে যায় এবং ভুলে কল অন্যত্র চলে যাওয়ার কারণে তার মনে 'অন্যকে
অযথা বিরক্ত করার জন্য যে অনুশোচনা' সৃষ্টি হয়েছে তা একেবারেই পরিস্কার
হয়ে যায়। মনে রাখবেন, মানুষকে আপনি যতভাবে যতবেশি শান্তি ও আরাম পৌঁছাতে
পারবেন, যতবেশি তাকে খুশি করতে পারবেন, মানুষের স্রষ্টা মহান আল্লাহ আপনার
উপর ততবেশি খুশি হবেন এবং ততবেশি সাওয়াব আপনাকে দান করবেন।
অবশ্য
কারো ব্যাপারে যদি জানতে পারেন যে, আপনাকে বিরক্ত ও হয়রানি করার জন্য
ইচ্ছে করেই অযথা সে রং নম্বরের পিছনে পড়েছে তবে যে কোনোভাবে এ অন্যায় কাজ
থেকে তাকে বিরত রাখার চেষ্টা করা শুধু জায়েযই নয়, উচিতও বটে!
মোবাইলে কথা বলার সময় ২য় পর্যায়ে যা করতে হবে
মোবাইলে
কথা বলার সময় সঠিক নম্বরে কল ঢুকানোর পর দ্বিতীয় যে কাজটি আপনাকে করতে হবে
তাহলো, সালাম আদান-প্রদান পর্ব সেরে স্পষ্টভাবে নিজের পরিচয় দেওয়া।
পরিচয়
প্রদানের ক্ষেত্রে সর্বদা কেবল নাম বলাই যথেষ্ট নয়। বরং যেভাবে পরিচয় দিলে
রিসিভকারী সহজেই চিনতে পারবেন সেভাবেই পরিচয় দেওয়া। যেমন অনেক সময় নিজের
নাম না বলে পিতার পরিচয় দিলে রিসিভকারী সহজেই চিনতে পারেন। আবার অনেক সময়
ছেলের পরিচয় দিলেও চিনতে সহজ হয়। মোটকথা যেভাবে রিসিভকারী অতি সহজে কলকারীর
পরিচয় পেয়ে যায় সেভাবেই পরিচয় দেওয়া উচিত। এক্ষেত্রে কোনো ধরনের
ছল-চাতুরীর আশ্রয় নেওয়া অত্যন্ত নিন্দনীয়। নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম পরিচয় প্রদানের ক্ষেত্রে অস্পষ্টতাকে খুবই অপছন্দ করতেন। যেমন
এক হাদিসে সাহাবি জাবের রা. বলেন, একদা আমি আমার পিতার ঋণ সংক্রান্ত বিষয়ে
আলোচনা করার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে
হাজির হয়ে দরজায় নক করলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই ওয়া সাল্লাম
জিজ্ঞেস করলেন, কে? আমি বললাম- 'আমি'। এতদশ্রবণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন- আমি আমি!!
'আমি
আমি' বলার সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া াল্লামের ভাবখানা এমন
ছিল যে, আমার (পরিচয়ে প্রদানের ক্ষেত্রে) শুধু 'আমি' বলা তিনি অপছন্দ
করেছেন। [বোখারি, মুসলিম, মিশকাত, খণ্ড : ২, পৃষ্ঠা : ৪০০]
বর্ণিত
হাদিসে 'আমি' বলার মাধ্যমে সাক্ষাৎপ্রার্থীর পরিচয় সুস্পষ্ট হয়নি বিধায়
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুধু 'আমি' বলাকে অপছন্দ
করেছেন। এবং এর মাধ্যমে তিনি এদিকে ইঙ্গিত করেছেন যে, পরিচয় প্রদানের
ক্ষেত্রে কোনো অস্পষ্টতা থাকা উচিত নয়। তাই যিনি ফোন করবেন তার দায়িত্ব
হলো, নিজের সুস্পষ্ট পরিচয় দেওয়া।
পরিচয়
না দিয়ে কিংবা অস্পষ্ট পরিচয় দিয়ে কথা বলা শুরু করলেও অনেক সময়
রিসিভকারীকে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। যেমন, ধরুন কেউ অন্য কারো মোবাইল
থেকে ফোন করল। এক্ষেত্রে কখনো দেখা যায়, যার মোবাইল থেকে ফোন করা হলো, তার
নম্বর ওই ব্যক্তির মোবাইলে সেভ করা থাকে। এমতাবস্থায় ফোনকারী যদি নিজের
সুস্পষ্ট পরিচয় না দেন এবং রিসিভকারী ব্যক্তি যার মোবাইল থেকে কল আসল তাকে
মনে করে কথা বলতে শুরু করেন তাহলে নিশ্চয়ই তিনি ভুল প্রকাশ পাওয়ার পর
বিব্রতবোধ করবেন। এখানে যিনি ফোন করেছেন তিনি যদি সালাম পর্ব শেষ করে
প্রথমেই পরিচয় পর্বের কাজটা সুন্দরভাবে সেরে নিতেন তাহলে হয়তো এ অবস্থার
সৃষ্টি হতো না।
মোবাইলে কথা বলার সময় ৩য় পর্যায়ে যা করতে হবে
মোবাইলে
কথা বলার সময় তৃতীয় পর্যায়ে আপনাকে যে কাজটি করতে হবে তাহলো, রিসিভকারী
আপনার উদ্দিষ্ট ব্যক্তি কিনা তা যে কোনো উপায়ে নিশ্চিতভাবে জেনে নিতে হবে।
কণ্ঠস্বর শুনে চিনতে অসুবিধা হলে প্রয়োজনে জিজ্ঞেস করে হলেও জেনে নিয়ে
নিশ্চিত হতে হবে যে, তিনিই আপনার উদ্দিষ্ট ব্যক্তি। অন্যথায় এমনও হতে পারে
যে, আপনি রিসিভকারীকে উদ্দিষ্ট ব্যক্তি মনে করে কথা বলতে শুরু করলেন অথচ
পরে দেখা গেল সে অন্য ব্যক্তি। ফলে রিসিভকারী যেমন বিব্রত হয় তেমনি পরে
ফোনকারীকেও লজ্জিত হতে হয়।
মোবাইলে কথা বলার সময় ৪র্থ পর্যায়ে যা করতে হবে
সালাম
আদান প্রদান, সুস্পস্ট পরিচয় দান ও উদ্দিষ্ট ব্যক্তি সম্পর্কে নিশ্চিত
হওয়ার পর চতুর্থ পর্যায়ে আপনাকে যা করতে হবে তাহলো, লম্বা কথা বলার প্রয়োজন
হলে সেজন্য আনুমানিক যে পরিমাণ সময় লাগতে পারে তা উল্লেখ করে রিসিভকারী
থেকে তার অনুমতি নিয়ে নেওয়া। যেমন, উদাহরণস্বরূপ এভাবে বলা যেতে পারে যে,
ভাই! আমি আপনার সাথে ৪/৫ মিনিট কথা বলতে চাই। এখন আপনার সুযোগ হবে কি ?
যদি
রিসিভকারী সুযোগ দেয় তবেই বলতে হবে। অন্যথায় তিনি কখন অবসর হবেন তা জেনে
নিয়ে সেই সময় কল করতে হবে। এটাই হলো ভদ্রতা। এটাই হলো কথা বলার
গুরুত্বপূর্ণ আদব।
পাকিস্তানের
শরয়ি আদালতের সাবেক প্রধান বিচারপতি এবং বর্তমান বিশ্বের খ্যাতনামা আলেম
আল্লামা তাক্বী উসমানী দামাত বারাকাতুহুম বলেন, আমার পিতা আল্লামা মুফতি
শফি সাহেব রহ. বলতেন- বর্তমানে মানুষকে কষ্ট দেওয়ার একটি যন্ত্র আবিষ্কার
হয়েছে। যার নাম ফোন। এটি এমন এক যন্ত্র যার মাধ্যমে অন্যকে যত ইচ্ছা কষ্ট
দেওয়া যায়। যেমন কেউ কারো কাছে ফোন করে দীর্ঘ আলাপ জুড়ে দিল। অথচ সে একবারও
খেয়াল করল না যে, আমি যার কাছে ফোন করলাম সে এখন কোনো জরুরি কাজে ব্যস্ত
নেই তো? তার এখন লম্বা কথা বলার মতো সময় আছে তো ?
এই
মনীষী তার অমরগ্রন্থ তাফসীরে মারেফুল কোরআনে আরো বলেন, ফোন করার আদবসমূহের
মধ্যে এটিও একটি আদব যে, কারো সাথে যদি লম্বা কথা বলতে হয় তাহলে তার কাছে
বলে নেওয়া উচিত যে, আমার একটু দীর্ঘ আলাপ আছে। এতে আনুমানিক এত মিনিট সময়
লাগতে পারে। যদি আপনি এখন অবসর থাকেন তাহলে এখনই বলব। আর যদি এখন ব্যস্ত
থাকেন তাহলে একটি সময় বলে দিন তখন কথা বলে নিব। আল্লামা মুফতি তাক্বী সাহেব
বলেন, আব্বাজান এ আদবসমূহ লিখে এর উপর আমলও করে গেছেন। [দুসরু কো তাকলীফ
মত্ জিয়ে, পৃষ্ঠা : ৩৭]
মোটকথা,
প্রতিটি ফোনকারীকে একথা ভালো করে খেয়াল রাখা অত্যন্ত জরুরি যে, আমি যার
সাথে এখন কথা বলব তার ব্যস্ততার পরিমান কতুটুক? বিশেষ করে বড় ও মহান
ব্যক্তিদের সাথে কথা বলার সময় এ বিষয়ের প্রতি বেশি লক্ষ্য রাখা দরকার। কারণ
ব্যক্তি যত বড় তার সময় তত মূল্যবান। আর তাদের মূল্যবান সময় অনেকে নষ্ট
করলেও আখলাক তথা উন্নত চরিত্রের কারণে তারা তা প্রকাশ করেন না। কিন্তু আমরা
অনেকেই নির্বুদ্ধিতার কারণে এটাকে সুযোগ মনে করি। শুধু তা-ই নয়, অনেককে তো
এ নিয়ে গর্ব করে বলতে দেখা যায় যে- আমি অমুকের সাথে প্রায়ই লম্বা লম্বা
কথা বলি!
আফসোস!
তারা যদি আসল ব্যাপারটা বুঝত!! সেই সাথে তারা যদি একথাটিও অনুধাবন করতে
পারত যে, বড়দের সময় নষ্ট করা মানে গোটা জাতিকে ক্ষতিগ্রস্থ করা। আল্লাহ
তাআলা আমাদের সবাইকে বুঝার তাওফিক দান করুন। আমীন।
মোবাইলে কথা বলার সময় ৫ম পর্যায়ে যা করতে হবে
মোবাইলে
কথা বলার সময় ৫ম পর্যায়ে যা করতে হবে তাহলো, যে উদ্দেশ্যে আপনি ফোন করেছেন
তা সাজিয়ে গুছিয়ে মধ্যম আওয়াজে স্পষ্ট করে বলা। আপনার আওয়াজ যেন অবশ্যই
কর্কশ বা এত উঁচু না হয় যদ্বারা রিসিভকারীর কষ্ট বা বিরক্তির উদ্রেক হয়।
আবার এত আস্তেও যেন না হয় যে, কথা বুঝাই কষ্টকর হয়। বরং আপনার কথা হবে,
ভদ্রতা ও শালীনতার সাথে হাসিমুখে, হৃদয়গ্রাহী ভঙ্গিতে।
পাল্সের
সুবিধা নেওয়ার জন্য বা এক মিনিটের মধ্যে সব কথা শেষ করার জন্য অনেকে
মোবাইলে এত দ্রুত কথা বলেন যে, অনেক সময় কিছুই বুঝা যায় না। কিংবা বুঝা
গেলেও ভুল বুঝা হয়। এর ফলে ফোন করার উদ্দেশ্যই কেবল বিফলে যায় না, অনেক
ক্ষেত্রে ফোনকারী বা রিসিভকারী অথবা কখনো কখনো উভয়কেই নানাবিধ ক্ষতির
সম্মুখীন হতে হয়। যা অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুঃখজনক।
উম্মুল
মুমিনীন আয়েশা রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
তোমাদের মতো একসাথে মিলিয়ে কথা বলতেন না। বরং তিনি কথা বলতেন- স্পষ্ট করে,
পৃথক পৃথকভাবে। ফলে উপস্থিত যে কেউ তার কথা সহজেই মুখস্থ করে নিতে পারত।
[শামায়েলে তিরমিজি : ১৮]
সাহাবি
আনাস রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (অনেক সময়)
কথাকে তিনবার বলতেন। যেন শ্রোতারা কথাটি ভালোভাবে বুঝে নিতে পারে।
সংখ্যায়
কম হলেও কিছু সংখ্যক লোক এমন আছে যাদের মুখ থেকে দু'একটি বাক্য শুনার সাথে
সাথে তাদের অবশিষ্ট জরুরি কথাটুকু শুনার আগ্রহও আর বাকী থাকে না।
পক্ষান্তরে কিছু লোক এমনও পাওয়া যায় যাদের বিনয়-নম্রতা, বলার ভঙ্গি, শব্দ ও
বাক্যের ব্যবহার এতই সুন্দর ও চিত্তাকর্ষক হয় যে, তাদের সাথে কথা বললে মন
খুশি হয়ে যায় এবং আরো বেশি কথা বলতে মনে ইচ্ছা জাগে। এমন লোক পেলে তাদের
কাছ থেকে শিখে নেওয়া দরকার যে, কথা কীভাবে বলতে হয়!
মোবাইলে কথা বলার সময় সবশেষে যা করতে হবে
মোবাইলে
কথা বলা শেষ হওয়ার পর সবশেষে আপনাকে যা করতে হবে তাহলো, সালাম দিয়ে কথা
সমাপ্ত করা। এক্ষেত্রে যিনি ফোন করেছেন তিনিই সালাম দিবেন। এটাই নিয়ম। তবে
রিসিভকারী যদি আগে সালাম দিয়ে দেয় তবে ফোনকারী শুধু উত্তর দিবেন। তাকে আর
পুনরায় সালাম দেওয়ার প্রয়োজন নেই।
উল্লেখ্য
যে, কথা শেষ হয়ে যাওয়ার পর সালামের পূর্বে ফোনকারী বা রিসিভকারী যদি
শুকরিয়া আদায় বা দোয়া হিসেবে আল্লাহ হাফেয, জাযাকাল্লাহ, ধন্যবাদ ইত্যাদি
বলে তাহলে তাতে দোষের কিছুই নেই। মোটকথা, সর্বশেষ বাক্য সালাম হতে হবে।
অনেকে শুধু উপরোক্ত বাক্যগুলোর যে কোনো একটি দিয়েই কথা শেষ করেন; সালাম
বলেন না, এটা ঠিক নয়।
মোবাইল ফোনে কথা বলার আরো কিছু নিয়ম
সালামের জবাব শেষ হওয়ার পূর্বে লাইন কেটে দিবেন না
অনেককে
দেখা যায়, মোবাইলে কথা বলার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কথা শেষ হওয়ার পর সালাম
শুনে বা সালাম দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে লাইন কেটে দেয়। এরূপ করা মোটেও উচিত নয়।
কেননা এতে সালাম দাতাকে সালামের উত্তর শুনিয়ে দেওয়া যায় না। অথচ সালাম
দাতাকে সালামের উত্তর শুনিয়ে দেওয়া জরুরি।
আমার
মনে হয়, কেউ কেউ 'মিনিট শেষ হয়ে গিয়ে এখনই নতুন মিনিট শুরু হয়ে যাবে'-
মোবাইল স্ত্রীনে এ অবস্থা প্রত্যক্ষ করে এমনটি করে থাকেন। অর্থাৎ সালামের
জবাব না শুনে বা না দিয়েই লাইন কেটে দেন। কিন্তু মনে রাখবেন, শরিয়তের কোনো
নির্দেশ পালন বা একটি সুন্নত আদায়ের প্রতিদান দুনিয়াবী এ সামান্য ক্ষতির
চেয়ে হাজার হাজার গুণ বেশি লাভের। আমার বিশ্বাস, সালামের জবাব শুনিয়ে দেওয়া
জরুরি- এই বিধান পালন করার নিয়তে কেউ যদি দুনিয়ার সামান্য ক্ষতি মেনে নেয়
তাহলে দয়াময় মহান আল্লাহ তাকে দুনিয়াতেই এর বিনিময়ে অনেক বেশি জাযা দিবেন।
আর আখেরাতে তো এর অফুরন্ত সাওয়াব থাকবেই। আল্লাহ আমাদেরকে বুঝার তাওফিক দান
করুন। আমীন।
বড়দের সাথে কথা বলার সময় আগে ফোন রাখবেন না
বড়
ও সম্মানিত ব্যক্তিদের সাথে কথা বলার সময় আপনি কখনোই আগে লাইন কেটে দিবেন
না। কেননা এরূপ করা ভদ্রতা ও আদবের পরিপন্থী। এটা যেন এমন হলো যে, আপনি এবং
কোনো সম্মানিত ব্যক্তি কথা বলার জন্য কোথাও একত্রিত হলেন অতঃপর প্রয়োজনীয়
কথা শেষ হয়ে গেলে আপনি তাকে সেখানে রেখেই আগে উঠে চলে গেলেন।
ভদ্রতার সুযোগ না নেওয়াই ভদ্রতার পরিচয়!
অনেক
সময় দেখা যায়, কেউ কোনো সম্মানিত ব্যক্তির কাছে ফোন করল। কিন্তু তাকে পেল
না। পরে এ সম্মানিত ব্যক্তি যখন তার মোবাইলে মিসড্কল দেখতে পেলেন বা অন্য
কোনো ভাবে বুঝতে পারলেন যে, কেউ তাকে ফোন করেছিল তখন তিনি সাধারণত ভদ্রতার
খাতিরেই কলব্যাক করে থাকেন। এক্ষেত্রে প্রথম ফোনকারীর উচিত ছিল লাইন কেটে
দিয়ে পুনরায় ফোন করা। ভদ্রতার সুযোগ নিয়ে সম্মানিত ব্যক্তি বা বড়দের 'ব্যাক
করা কল' রিসিভ করা ঠিক নয়। অবশ্য কারো সাথে বন্ধুত্ব বা সম্পর্ক থাকলে
ভিন্ন কথা।
কাউকে ডেকে দেওয়ার জন্য যেভাবে বলা উচিত
কাউকে
ডেকে দিতে বলার জন্য খুবই নম্রতা ও ভদ্রতার সাথে সুন্দরভাবে অনুরোধ করা
উচিত। যেমন, এভাবে বলা যেতে পারে যে, ভাই! অমুকের সাথে আমার একটু কথা ছিল।
যদি আপনার হাতে সময় থাকে তাহলে মেহেরবানী করে তাকে একটু ডেকে দিলে খুব ভালো
হতো।
ডেকে
দিতে বলার জন্য এমনভাবে বলা উচিত নয় যদ্বারা হুকুম বুঝা যায়। এমনভাবে
ভদ্রভাবে বলার পরও কেউ যদি কোনো অসুবিধার কারণে ডেকে দিতে অপারগতা প্রকাশ
করে তবে সেজন্য মনক্ষুন্ন হওয়া বা ডেকে দিতে পীড়াপীড়ি করাও ঠিক নয়। বরং
এমতাবস্থায় রিসিভকারীর কাছে খবরটা বলে দিলেই ভালো হয়। এতে হয়তো তার জন্য
সুবিধা হবে। তিনি সময়মতো সুযোগ করে খবরটা বলে দিবেন। হ্যাঁ, বিশেষ কোনো
অসুবিধা না থাকলে রিসিভকারী যদি একটু কষ্ট করে ফোনকারীর কাঙ্ক্ষিত লোকটিকে
ডেকে দেন তাহলে অবশ্যই তিনি সাওয়াবের অধিকারী হবেন। অবশ্য এক্ষেত্রে অবহেলা
করে বিনা কারণে ডেকে না দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যা সাধারণত বিভিন্ন
অফিস-বয় বা পি,এ'রা করে থাকে। তবে এখনই ডেকে দিতে রিসিভকারীর কোনো
গ্রহণযোগ্য অসুবিধা থাকলে ফোনকারীকে ধমক না দিয়ে সুন্দরভাষায় পরবর্তীতে ফোন
করার জন্য বলে দিবেন।
অনেক
সময় ফোনকারী 'অমুক ব্যক্তির সাথে আমার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে'- একথা বলে
রিসিভকারীকে দিয়ে উদ্দিষ্ট ব্যক্তিকে ডেকে আনতে বাধ্য করেন। মনে রাখবেন,
এরূপ করাও অন্যায় ও গুনাহের কাজ। মোটকথা, এক্ষেত্রে কাউকে কষ্ট দেওয়া যেমন
উচিত নয়, তেমনি অবহেলা করাও ঠিক নয়। তাই উভয়পক্ষের জন্যই নিজ নিজ
দায়িত্ববোধে উজ্জীবিত হওয়া এবং দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট হওয়া জরুরি। এতে উভয়ের
কষ্টই লাঘব হবে।
যদি অন্য সময় ফোন করতে বলে
কাউকে
কখনো ফোন করলে কোনো অসুবিধার কারণে ফোনকারীর সাথে রিসিভকারীর কথা না-বলার
পূর্ণ এখতিয়ার আছে। কেননা কোনো ওজর থাকলে সাক্ষাৎপ্রার্থীকে ফিরিয়ে দেওয়ার
অনুমতি শরিয়ত দিয়েছে। সেই সাথে অনুমতি না পেলে সাক্ষাৎপ্রার্থীকেও ফিরে
যাওয়ার নির্দেশও দিয়েছে। সুতরাং কাউকে যদি পরে ফোন করতে বলা হয় তাহলে এটা
তার অন্যায় হবে না। তাই এক্ষেত্রে ফোনকারীর উচিত হলো, তার প্রতি কোনোরূপ
খারাপ ধারণা পোষণ না করে পরে সুযোগ মতো ফোন করা। চাই সে যত সাধারণ লোকই হোক
না কেন।
অবশ্য
কোনো ওজর না থাকা অবস্থায় কোনো মুসলমান যদি আপনার সাথে কথা বলতে চায় তাহলে
তাকে কথা বলার সুযোগ দেওয়া আপনার কর্তব্য। শুধু তাই নয়, ওজরবিহীন অবস্থায়
ফোনকারী ব্যক্তি আপনার সাথে কথা বলার অধিকারও রাখে। তাই বিনা কারণে তার
সাথে কথা না বলা বা পরে ফোন করতে বলা অনুচিত কাজ।
ভুলে চাপ পড়ে আপনার মোবাইলে কল চলে এলে
অনেক
সময় দেখা যায়, মোবাইল রিসিভ করলে অন্য প্রান্ত থেকে কেউ কোনো কথা বলে না।
এভাবে ১০/১৫ সেকেণ্ড অতিবাহিত হয়ে গেলে বুঝবেন, ইচ্ছাকৃতভাবে এ কলটি করা
হয়নি। বরং বেখেয়ালে চাপ পড়ে কল হয়ে গেছে। তাই মোবাইলের মালিককে আর্থিক
ক্ষতি থেকে বাঁচানোর জন্য তাড়াতাড়ি লাইন কেটে দিবেন। এটাই হলো নিয়ম, এটাই
হলো নৈতিক দায়িত্ব।
এসব
ক্ষেত্রে অনেককে দেখা যায়, রিসিভ করে চুপচাপ বসে থাকে! দুই/চার/দশ মিনিট
চলে গেলেও লাইন কাটে না। কিছুদিন আগে এক ভাই বড় গর্ব করে আমার কাছে বললেন,
এক ব্যক্তি গতরাত দশটায় আমার কাছে ফোন করে। কিন্তু কোনো কথা বলে না। আমি
লাইন কেটে না দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। শেষ রাতে উঠে দেখি, এখনও লাইন চালু আছে! আমি
দুষ্টুমি করে তখনও লাইন কাটিনি। অতঃপর ২৪ ঘন্টা অতিবাহিত হওয়ার পর সকাল
১০টায় আমি লাইন কেটে দেই !!
প্রিয় পাঠক-পাঠিকা!
বলুনতো, এটা কোন্ ধরনের নৈতিকতা আর কোন্ ধরনের মানবতা? পোস্ট পেইড সংযোগ
হওয়ার কারণে ঐ ব্যক্তি হয়তো সেদিন ব্যাপারটি বুঝতে পারেনি। কিন্তু মাস
শেষে তার বিল যখন ৮/১০ গুণ বেশি আসবে তখন তার অবস্থাটা কী দাঁড়াবে!! অথচ
রিসিভকারী ব্যক্তি ইচ্ছে করলেই তাকে এ মারাত্মক ক্ষতি থেকে বাঁচাতে পারত।
মনে রাখবেন, ইচ্ছা করে কোনো মুসলমানের ক্ষতি করা জায়েয নেই। তাই এ ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকা সবার জন্য জরুরি।
উলামায়ে কেরামের সাথে যেভাবে কথা বলবেন
নবী-রাসূলগণের
পর ভূপৃষ্ঠে বিচরণকারী সমস্ত মানুষের মধ্যে সব চাইতে মর্যাদাবান ও
সম্মানিত মানুষ হলেন উলামায়ে কেরাম। একজন আলেম ও একজন গাইরে আলেম অর্থাৎ
যিনি আলেম নন তাদের দু'জনের মধ্যে মর্যাদার ব্যবধান কত বেশি তা স্বয়ং নবীজি
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলে গেছেন। তিনি বলেছেন- আলেমের মর্যাদা
আবেদের উপর এত বেশি যেমন পূর্নিমা রাত্রিতে চন্দ্রের মর্যাদা অন্যসকল
নক্ষত্রে উপর। একটু চিন্তা করে দেখুন, আবেদ তথা ইবাদতকারী আল্লাহওয়ালা
ব্যক্তির চেয়ে একজন আলেমের মর্যাদা যদি এত বেশি হয় তাহলে সাধারণ মানুষ-
যারা ইবাদত-বন্দেগী করে না বা করলেও ততটা করে না- তাদের চেয়ে একজন আলেমের
মর্যাদা ও সম্মান কত বেশি হবে?! কিন্তু এতদ্সত্ত্বেও আমরা অনেক সময় সরাসরি
বা মোবাইল ফোনে উলামায়ে কেরামের সঙ্গে কথা বলার সময় তাঁদের উঁচু মর্যাদা ও
সম্মানের প্রতি খেয়াল রাখি না। বরং বন্ধু-বান্ধবদের সাথে যেভাবে কথা বলি
তাঁদের সঙ্গেও সেভাবে কথা বলি।
অনেক
সময় উলামাদের সামনে হাত নেড়ে কথা বলি, নিজের কথাকে তাদের কথার উপর
প্রাধান্য দিতে চেষ্টা করি। এমনকি মাঝে মধ্যে এত জোরে কথা বলি যে, আমাদের
কথার আওয়াজে তাঁদের কথা চাপা পড়ে যায়। মনে রাখবেন, এভাবে কথা বলা আদব
পরিপন্থী এবং আমাদের জন্য বিরাট বড় ক্ষতির কারণ। পবিত্র কোরআনের সূরা
হুজুরাতের ২নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন-
يَا
أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا لَا تَرْفَعُوا أَصْوَاتَكُمْ فَوْقَ صَوْتِ
النَّبِيِّ وَلَا تَجْهَرُوا لَهُ بِالْقَوْلِ كَجَهْرِ بَعْضِكُمْ
لِبَعْضٍ أَنْ تَحْبَطَ أَعْمَالُكُمْ وَأَنْتُمْ لَا تَشْعُرُونَ ﴿২﴾ ( الحجرات : ২)
"হে
ঈমানদানরগণ! তোমরা নবীর কণ্ঠ-স্বরের উপর তোমাদের কষ্ঠস্বর উঁচু করো না এবং
একে অপরের সাথে যেভাবে উঁচুস্বরে কথা বল তাঁর সাথে সেরূপ উঁচুস্বরে কথা
বলো না। এতে তোমাদের আমল নিষ্ফল হয়ে যাবে অথচ তোমরা টেরও পাবে না।"
এ
আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে মুফতি শফী সাহেব রহ. মাআরেফুল কোরআনে বলেন,
খোদাভীরু আলেমগণ যেহেতু নবীগণের উত্তরসূরি তাই তাঁদের মজলিসে উঁচুস্বরে কথা
বলাও উক্ত নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়ে। তাই তাঁদের সাথে এত উঁচুস্বরে কথা বলবে
না যাতে তাঁদের আওয়াজ চাপা পড়ে যায়। [মাআরিফুল কোরআন : ৮/১০১]
মোটকথা,
উলামায়ে কেরামের সাথে কথা বলার সময় বিনয়-নম্রতা ও ভদ্রতার সাথে এমনভাবে
কথা বলতে হবে যাতে তাদের সুমহান মর্যাদা এতটুকু ম্লান না হয়। চাই মোবাইলে
হউক চাই সরাসরি হউক।
জামাতের সময় কল করবেন না
অনেক
সময় আমরা বেখেয়ালে জামাতের সময় কল করে থাকি। অথচ এমনটি করা ঠিক নয়। কারণ
হতে পারে মোবাইল বন্ধ করতে সে ভুলে গেছে। আর আমি কল করে তাকে বিব্রতকর
অবস্থায় ফেলে দিলাম এবং তাকেসহ সব মুসলিদের নামাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি করলাম।
নষ্ট করে দিলাম তাদের খুশু-খুজু!
বড়
আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, ইমাম সাহেবদের মোবাইলেও অনেক সময় কল আসতে দেখা
যায়। অথচ যিনি কল করেছেন তার তো জানা থাকার কথা যে, তিনি একজন ইমাম।
এতদ্সত্ত্বেও ঠিক নামাজের জামাতের সময় তার নম্বরে তিনি কিভাবে কল দিলেন?
আসলে ব্যাপার হলো, অধিকাংশ সময়ই আমরা ভেবে দেখি না যে, এখন আমি যার কাছে কল
করতে যাচ্ছি, তিনি এখন কী অবস্থায় থাকতে পারেন। সত্যি বলতে কি, যদি আমরা
কল করার পূর্বে এ বিষয়টি একটু খেয়াল করতাম তাহলে কারো কোনো সমস্যা হতো না।
ফজরের জামাত শেষ হতেই কল না করা উচিত
বিভিন্ন
মোবাইল কোম্পানির অফার পেয়ে অনেকে ফজরের জামাত শেষ হতে না হতেই কল করতে
ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তারা মনে করেন, আমাদের নামাজ যেমন শেষ হয়ে গেছে তেমনি
সবার নামাজই শেষ হয়ে গেছে। অথচ এমনটি না হওয়াই স্বাভাবিক। কেননা সময়ের
পার্থক্যের কারণে বিভিন্ন জেলায় ফজরের জামাত এক সঙ্গে শুরু হয় না, বরং
পাঁচ/দশ মিনিট এদিক সেদিক হয়। তাছাড়া ক্বেরাত ছোট বড় তিলাওয়াত করার কারণেও
সব মসজিদের নামাজ এক সঙ্গেও শেষ হয় না। উপরন্ত ফজরের নামাজ আদায় করে অনেকেই
তাসবীহ-তাহলীল পাঠ করেন। তাই আমাদের উচিত হলো, ফজরের নামাজের পরপরই কল না
করে অন্ততঃ পনের বিশ মিনিট পর কল করা। যাতে কারো কোনো সমস্যা হওয়ার
সম্ভাবনা না থাকে। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে আমল করার তাওফিক দিন। আমীন।
যথাসময়ে কল করুন
যারা
সময়-সচেতন তাদের প্রত্যেকেরই বিশেষ বিশেষ কাজের জন্য সময় নির্ধারিত থাকে।
যেমন ঘুমের সময়, আরামের সময়, খাবারের সময়, নামাজের সময় ইত্যাদি। এছাড়া খুব
বেশি ব্যস্ত মানুষ তাদের অনেকেরই ফোনে কথা বলার একটি নির্ধারিত সময় থাকে।
তাই এমন ব্যক্তিদের সাথে কথা বলতে হলে অবশ্যই তাদের 'ফোনে কথা বলার
নির্ধারিত সময়' জেনে নেওয়া উচিত। অথবা কোন্ সময় কথা বলতে তাদের সুবিধা হবে
তা জেনে সেই সময় ফোন করা উচিত। এমন যেন না হয় যে, আমি আমার সময়মতো ফোন
করলাম অথচ তাদের ঘুম, আরাম, নামাজ বা জরুরি কাজে ব্যাঘাত ঘটল।
আমাদের যেন এমন ভুল কখনো না হয়
আমরা
প্রায় সময় একটি মারাত্মক ভুল করে থাকি। তাহলো, ফোন রিসিভ করার পর ফোনকারী
যখন জিজ্ঞেস করেন, অমুক ব্যক্তি আছেন? তখন কেউ কেউ এতটুকু শুনেই তড়িঘড়ি করে
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে খবর দিয়ে বসেন যে, আপনার ফোন এসেছে। এমনকি অনেক সময়
ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলেন কিংবা খানা খাওয়া অবস্থায় তার হাতে মোবাইল তুলে দেন।
অথচ অনেক সময় ফোনকারীর উদ্দেশ্য থাকে তার উপস্থিতি জানা বা কারো মাধ্যমে
তার কাছে কোনো সংবাদ পৌঁছানো। এরূপ করার ফলাফল এই দাঁড়ায় যে, অনর্থক সে
দু'জন লোককে কষ্ট দিল।
মোটকথা,
ফোনকারী যখন জিজ্ঞেস করেন, অমুক আছেন কিনা? তখন তার কাছ থেকে রিসিভকারীর
একথা জেনে নেওয়া উচিত যে, তাকে ডাকতে হবে নাকি অন্য কিছু করতে হবে ?
সব প্রয়োজন মোবাইলে সারার চেষ্টা করা উচিত নয়
বর্তমানে
মোবাইল ফোন সহজলভ্য হওয়ার কারণে আমরা এখন সব কাজই মোবাইলে সারার চেষ্টা
করি। অথচ মোবাইল ফোনকে যে কোনো প্রয়োজনেই প্রথম এবং একমাত্র মাধ্যম হিসেবে
বিবেচনা করা উচিত নয়। বরং যেসব কাজ পত্রের মাধ্যমে করা সম্ভব সেগুলো পত্রের
মাধ্যমেই সারা উচিত। কেননা ফোনে এমন কিছু বিষয়ের মুখোমুখি হতে হয়
চিঠি-পত্রের মাধ্যম অবলম্বন করলে সেগুলো থেকে সহজেই বাঁচা যায়। যেমন মনে
করুন, আপনি যাকে ফোন করলেন তিনি হয়তো কোনো পেরেশানিতে আছেন। যার কারণে এখন
তিনি কারো সাথে কথা বলতে প্রস্তুত নন। অথবা তিনি এখন হয়তো খাবার খাচ্ছেন
কিংবা তিলাওয়াত করছেন বা বিশ্রাম নিচ্ছেন; যে অবস্থায় আপনি সরাসরি গেলেও
হয়তোবা তিনি আপনাকে সময় দিতেন না বা অন্তত কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর তার চলমান
কাজ থেকে ফারেগ হয়ে সময় দিতেন। কিন্তু ফোন করার কারণে তাকে তৎক্ষণাৎ ওই
অবস্থায়ই আপনাকে সময় দিতে হয় এবং কথা বলতে হয়। পক্ষান্তরে ফোন না করে যদি
চিঠি দেওয়া হতো তাহলে তিনি প্রয়োজনীয় কাজ থেকে ফারেগ হয়ে ধীর-সুস্থে চিন্তা
ভাবনা করে তার সুযোগমতো পত্র পড়ার এবং তার উত্তর দেওয়ার সুযোগ পেতেন। তাই
খুব বেশি প্রয়োজন না হলে ফোনের কাজ পত্রের মাধ্যমে করা উচিত।
অবশ্য
কেউ কেউ আবার চিঠির উত্তর লেখার ঝামেলা এড়াতে ফোনেই কথা বলা পছন্দ করেন।
তাই তাদের কাছে চিঠি না লিখে ফোনেই কাজ সেরে নেওয়া উচিত।
যানবাহনে যেভাবে কথা বলবেন
অনেককে
দেখা যায়, বাস, ট্রেন, লঞ্চ ইত্যাদি যানবাহনে বসে কল রিসিভ করে এত জোরে
কথা বলতে থাকেন যে, আশেপাশের লোকজনের তাতে কষ্ট হয়। অন্যের অসুবিধার দিকে
খেয়াল না করে এভাবে কথা বলা মোটেও উচিত নয়। বরং যানবাহনে বসে ফোনে কথা বলতে
হলে এতটা নীচু আওয়াজে শালীনতা বজায় রেখে কথা বলা উচিত যাতে অন্য কোনো
যাত্রীর কোনোরূপ অসুবিধা না হয় এবং তারা কোনো ধরনের বিব্রতবোধ না করেন।
প্রসঙ্গক্রমে
এখানে একটি জরুরি কথা বলে রাখা দরকার যে, অনেক সময় অনেক চালককে গাড়ী
চালানো অবস্থায় অন্যের সাথে মোবাইলে কথা বলতে দেখা যায়। এসময় বাধ্য হয়েই
তাকে এক হাতে মোবাইল ও অন্য হাতে গাড়ি চালানোর কাজ করতে হয়। যা অত্যন্ত
ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। তাই এ ধরনের কাজ থেকে চালকদেরকে অবশ্যই বিরত থাকা দরকার।
হ্যাঁ, যদি একান্ত প্রয়োজনে কোনো কথা মোবাইলে বলতেই হয় তাহলে রাস্তার পাশে
কোনো নিরাপদ স্থানে গাড়ি থামিয়ে বলা উচিত।
ফ্রী অফার পেলে অপ্রয়োজনীয় কথা বলা যাবে কি?
ফ্রী
বা কম রেটে কথা বলার অফার পেলে অনেকের মাঝে দীর্ঘ সময় নিয়ে কথা বলার
প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। আর সে সুযোগে অনেক অপ্রয়োজনীয় কথাও এসে যায়। অথচ
খুব ভালোভাবে স্মরণ রাখা দরকার, মানুষের প্রতিটি কথারও হিসেব হবে। দুই
কাঁধের দুই ফেরেশ্তা- কিরামান কাতেবীন- কিন্তু আমাদের আমলনামায় সবকিছুই
লিপিবদ্ধ করছেন! তাই আমাদের উচিত মেপে মেপে কেবল প্রয়োজনীয় কথাগুলোই বলা।
এক
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিনা
প্রয়োজনে কোনো কথা বলতেন না। বোখারি শরিফে বর্ণিত অপর এক হাদিসে নবীজি
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন- "যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলা ও পরকালের
উপর বিশ্বাস রাখে সে যেন ভালো কথা বলে অথবা চুপ থাকে"। সত্যি বলতে কি,
প্রিয় নবীজির এই হিদায়াতকে কেউ যদি অনুসরণ করে চলতে থাকে তবে সে নিজেই
অপ্রয়োজনীয় কথা বলা থেকে বাঁচতে পারবে। আল্লাহ আমাদেরকে যাবতীয় অনর্থক ও
অপ্রয়োজনীয় কথা থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন। আমীন।
রিং কেটে দিলে কী করবেন?
কাউকে
কখনো ফোন করলে যদি দেখা যায় যে, সে রিসিভ করছে না এবং ফোনকারীরও ধারণা হয়
যে, সে রিংটোনের আওয়াজ শুনেও হয়তো কোনো ব্যস্ততার কারণে ইচ্ছাকৃতভাবেই
রিসিভ করছে না বা করতে পারছে না তখন বারবার কল করে তাকে বিরক্ত না করে পরে
অন্য সময়ে তা সেরে নেওয়া উচিত।
মোবাইল ফোন : কিছু জরুরি পরামর্শ
১. চার্জ দেওয়ার পূর্বে মোবাইল বন্ধ করে নিন। এতে অল্প সময়ে বেশি চার্জ হবে এবং ব্যাটারীও ভালো সার্ভিস দিবে।
২.
বারবার সিম পরিবর্তন করবেন না। একান্ত যদি পরিবর্তন করতেই হয় তাহলে আগে
মোবাইল বন্ধ করুন। তারপর সিম পরিবর্তন করুন। অন্যথায় আপনার সেটের ক্ষতি হতে
পারে।
৩.
নিয়মিত মোবাইলের যত্ন নিন। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন এবং পরিচ্ছন্নতার অংশ
হিসেবে মোবাইল কভার ব্যবহার করুন। এতে মোবাইল ধূলোবালি থেকে হেফাজতে থাকবে
এবং দীর্ঘদিন এর বাহ্যিক সৌন্দর্য অবশিষ্ট থাকবে।
৪.
কল বা ফ্লেক্সিলোড করার সময় অত্যন্ত সতর্কতার সাথে বাটন চাপুন। অন্যথায়
আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি নানাবিধ পেরেশানির সম্মুখীন হতে পারেন।
৫. পানি হলো মোবাইলের প্রধান শত্রু। তাই কোনোভাবেই যেন মোবাইলের ভিতর পানি না ঢুকে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখুন।
৬. নদীপথে ভ্রমনের সময় খুব খেয়াল রাখুন যাতে হাত থেকে মোবাইল সেট পানিতে পড়ে না যায়।
৭. দীর্ঘ ও দূরের সফরে চার্জার নিতে ভুলবেন না। এর জন্য সফরের সামানার তালিকায় আজই চার্জারকে অন্তর্ভুক্ত করে নিন।
৮.
প্রতিটি ঔষধের প্যাকেটে লিখা থাকে- সকল প্রকার ঔষধ শিশুদের নাগালের বাইরে
রাখুন। আজ থেকে এই কথাটি একটু বাড়িয়ে মনে রাখুন- সকল প্রকার ঔষধ ও মোবাইল
শিশুদের নাগালের বাইরে রাখুন।
৯.
গেমস্ খেলার জন্যও বাচ্চাদের হাতে মোবাইল দিবেন না। কারণ গেম্সের নেশা
পেয়ে বসলে ওদের পড়াশুনার ক্ষতি হতে পারে। তাছাড়া ওদের উল্টা-পাল্টা চাপে
একদিকে যেমন সেটিং উলট-পালট হয়ে যেতে পারে তেমনি মোবাইল লক হয়ে ভোগান্তিরও
শিকার হতে পারেন। অনুরূপভাবে আপনি নিজেও গেমস খেলা থেকে বিরত থাকুন। কেননা
গেম্স খেললে মোবাইলের ক্ষতি হয় এবং সময়েরও অপচয় হয়।
১০.
মোবাইল অটো লক করে রাখুন। অন্যথায় যে কোনো সময় নিজের অজান্তে চাপ পড়ে
আপনার ব্যালেন্স শূন্য হয়ে যেতে পারে। অথবা মাস শেষে মাত্রাতিরিক্ত বিল
আসতে পারে যা আগের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি।
১১.
আপনার মোবাইলে সেভ করা জরুরি নাম্বারগুলো টেলিফোন ইনডেক্স বা আলাদা কোনো
ডাইরীতে তুলে রাখুন। যাতে কোনোভাবে মোবাইল হাতছাড়া হয়ে গেলে পেরেশান হতে না
হয়।
১২. আপনার মোবাইলের পাক কোড ও পিন কোড সযত্নে লিখে রাখুন। যাতে সিম ব্লক হয়ে গেলে বিপদে পড়তে না হয়।
১৩.
মোবাইলে কোনো সমস্যা হলে ভুলেও অপরিচিত মেকারের নিকট যাবেন না। যদি নিজের
পরিচিত মেকার না থাকে তবে খোঁজ নিয়ে অন্তত নিকটাত্মীয়দের পরিচিত কোনো
মেকারের কাছে যান। যদি তাও সম্ভব না হয় তাহলে মেকারের কাছে মোবাইলসহ নিজেই
উপস্থিত হোন এবং কাজের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত খেয়াল রাখুন। যাতে আপনার কোনো
দামী পার্স পরিবর্তন বা চুরি না হয়।
১৪.
মোবাইল ব্যবহারের পূর্বে জরুরি অপশনগুলো ভালোভাবে জেনে নিন। না জেনে কিংবা
না বুঝে এলোপাতাড়ি টিপাটিপি করবেন না। অন্যথায় জটিল সমস্যায় নিপতিত হয়ে
পেরেশান হতে পারেন।
১৫.
কোম্পানির কোনো ম্যাসেজ পেয়ে তা না বুঝেই তাদের দেওয়া কোনো নাম্বার টিপতে
শুরু করবেন না। কারণ এতে আপনার অযথা বেশি পয়সা খরচ হয়ে যেতে পারে।
১৬. রাস্তা পারাপারের সময় মোবাইলে কথা বলা থেকে বিরত থাকুন। অন্যথায় আল্লাহ না করুন, যে কোনো সময় দুর্ঘটনার সম্মুখীন হতে পারেন।
১৭.
বৃষ্টির মৌসুমে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় স্মরণ করে এক টুকরো পলিথিন সাথে
নিয়ে বের হোন। যাতে বৃষ্টির পানি থেকে আপনার সেটটি রক্ষা পায়।
১৮.
ভ্রমণের সময় দামী সেট ব্যবহার না করাই ভালো। কারণ দামী সেট দেখলে
ছিনতাইকারীদের লোভ বেড়ে যায়। যা আপনার জান ও মালের ক্ষতির কারণ হতে পারে।
১৯.
বাজারে-বন্দরে তথা লোকদের ভীড়ের মাঝে মোবাইলে কথা বলে তা পকেটে রাখার পর
মোবাইল সেটের প্রতি খুব খেয়াল রাখুন এবং যথেষ্ট সতর্ক থাকুন। কারণ এ সময়
আপনার একটু অমনোযোগিতার ফলে আপনার প্রিয় সেটটি হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে।
২০.
যদি কখনো আপনার মোবাইল চুরি কিংবা ছিনতাই হয়ে যায় তাহলে কাল বিলম্ব না করে
সাথে সাথে আপনার আই,এম,ই,আই নাম্বারটি আপনার মোবাইল ফোনের সার্ভিস
প্রোভাইডারকে জানিয়ে দিন। তখন সার্ভিস প্রোভাইডার আপনার হাতছাড়া হয়ে যাওয়া
মোবাইল ফোন সেটটির আই,এম,ই,আই নাম্বারটি বদলে দিবে। ফলে এই সেটের কার্যক্রম
একেবারে বন্ধ হয়ে যাবে। পরবর্তীতে একমাত্র ফ্যাক্টরী সেটিং ছাড়া উক্ত
মোবাইল ফোন কোনোক্রমেই কার্যকর করা যাবে না। তখন মোবাইল চোর এই সেটটিকে
শিশুদের খেলনা হিসেবে ব্যবহার করা ছাড়া আর কোনো কাজে লাগাতে পারবে না।
সত্যি বলতে কি, যদি এই পদ্ধতি সবাই অবলম্বন করত তাহলে দেখা যেত, গোটা দেশে একটিও মোবাইল ছিনতাই বা চুরির ঘটনা ঘটছে না।
উল্লেখ্য
যে, উপরের পদ্ধতি অবলম্বন করার ক্ষেত্রে একটু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
কারণ ফোন সেটটি যদি পরবর্তীতে আপনার হাতে কোনোভাবে এসেও যায়- তখন আপনিও
কিন্তু উক্ত অকার্যকর সেটটিকে আগের মতো কার্যক্ষম করতে পারবেন না।
সুতরাং
আপনি যদি নিশ্চিত হয়ে থাকেন- আপনার মোবাইল সেটটি একেবারেই হারিয়ে গেছে এবং
সেটা পাওয়ার আর কোনো সম্ভাবনা নেই তখনই আপনি উক্ত পদ্ধতি অবলম্বন করুন।
অন্যথায় নয়।
আর হ্যাঁ, আপনার সেটের আই,এম,ই,আই নাম্বার জানার জন্য আপনাকে আপনার ফোন সেট থেকে চাপতে হবে- *#০৬#।
২১.
মোবাইলে কথা বলার সময় লাইন কেটে গেলে অনেকে সেটের উপর বিরক্ত হয়ে উহাকে
দু'একটি চড়-থাপ্পড় লাগায়। কেউ কেউ আবার অধিক উত্তেজিত হয়ে মোবাইল সেট
মাটিতে ছুড়ে মারে। অথচ তারা ভেবে দেখেন না যে, এই সমস্যা সেটের অভ্যন্তরীণ
সমস্যার কারণে যেমন হতে পারে তেমনি অন্য কারণেও হতে পারে। আসলে বেশির ভাগ
ক্ষেত্রে নেটওয়ার্কজনিত সমস্যার কারণেই লাইন কেটে যায়। তাই সেটের উপর
বিরক্ত হয়ে তার সাথে এমন আচরণ করা মোটেই ঠিক নয়।
২২.
অনেক ড্রাইভারকে গাড়ী চালানোর সময় মোবাইলে কথা বলতে দেখা যায়। এরূপ করা
কখনোই উচিত নয়। কারণ মোবাইলে কথা বলতে গিয়ে সামান্য অন্যমনস্ক হলেই
মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাছাড়া মোবাইলে কথা বলার সময় একহাতে গাড়ী
চালাতে হয়। যা যে কোনো সময় ভয়াবহ দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
২৩.
কখনো মোবাইল সেটে পানি ঢুকে গেলে সাথে সাথে মোবাইল অফ করে পানি বের করে
নিন। অন্যথায় শর্ট সার্কিট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যদি বেশি পানি ঢুকে
যায় তাহলে নিজে নিজে যতটুকু সম্ভব পানি বের করে খুব দ্রুত পরিচিত কোনো
মেকারের কাছে নিয়ে যান। যাতে সে ফ্যানারের সাহায্যে তাপ দিয়ে ভিতরের পানি
শুকিয়ে ফেলতে পারে। আর হ্যাঁ, পানি বের না করা পর্যন্ত মোবাইল সেট অবশ্যই
অন করবেন না।
২৪.
এক কোম্পানির মোবাইল সেটে কখনোই অন্য কোম্পানির যন্ত্রাংশ ব্যবহার করবেন
না। বিশেষ করে চার্জার ও ব্যাটারী ব্যবহারের ক্ষেত্রে এই বিষয়টি মেনে চলা
একান্ত প্রয়োজন। অন্যথায় আপনার সেটটি চিরদিনের জন্য অকার্যকর হয়ে যেতে
পারে।
২৫.
আকাশে ঘন ঘন বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে এমন দুর্যোগপূর্ণ সময়ে মোবাইল ব্যবহার করা
খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। সুতরাং নিতান্ত প্রয়োজন না হলে এই সময় কল করা কিংবা কল
রিসিভ করার কাজটি এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।
২৬.
রিফুয়েলিং স্টেশনে প্রবেশের পর আপনার মোবাইল বন্ধ করে নিন। বিশেষ করে যখন
গাড়িতে রিফুয়েলিং হয় সেই সময় তার কাছাকাছি অবস্থান করে ফোন রিসিভ করা বা
বার্তা প্রেরণ করা উচিত নয়। এতে আপনার হ্যাণ্ডসেটের সার্কিটে জ্বালানী
তেলের বাষ্প প্রবেশ করে সেটাকে সাময়িক বা একেবারে অকার্যকর করে ফেলতে পারে।
২৭.
প্রচণ্ড উত্তাপযুক্ত এলাকায় (বয়লার, ইটের ভাটা ইত্যাদিতে) মোবাইল ফোন
ব্যবহার করবেন না। সর্বদা লক্ষ্য রাখবেন, আপনার মোবাইল সেটে যেন কোনোপ্রকার
উত্তাপ না লাগে। কারণ, বেশিরভাগ জায়গা প্লাস্টিকের আবরণে মোড়া আপনার
মোবাইল সেটটিতে আগুনের স্পর্শ লাগলে সেটা অকার্যকর হয়ে যেতে পারে।
২৮.
রাস্তায় চলতে চলতে ফোন রিসিভ করলে ছিনতাইকারীদের থেকে খুব সতর্ক থাকতে
হবে। কেননা ছিনতাইকারীরা আপনার অসতর্কতার সুযোগে ফোন সেটটি ছিনিয়ে নিতে
পারে।
২৯.
ফোন সেট কোনো কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হলে কোনো অবস্থাতেই নিজে নিজে খোলার
চেষ্টা করবেন না। বরং একজন ভালো ও পরিচিত সার্ভিস ইঞ্জিনিয়ারের শরণাপন্ন
হবেন।
৩০.
মোবাইল সেট কখনও বামদিকের বুক পকেটে রাখবেন না। কারণ এতে আপনার হার্ট
ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। আমেরিকার মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের এক পরিসংখ্যানে
দেখা গেছে, দীর্ঘদিন এভাবে ফোন ব্যবহার করার ফলে হার্ট ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার
সম্ভাবনা শতকরা ৩০ ভাগ বা ক্ষেত্রবিশেষে তার চেয়েও বেশি।
৩১.
ফোন রিসিভ করার সময় মোবাইল সেটকে কানের কাছে ঠেসে ধরবেন না। বরং মোবাইলের
এয়ার ফোন অংশটিকে কান থেকে কিছুটা দূরে রাখার চেষ্টা করবেন। যদি কথা
পরিস্কার শুনতে না পান তাহলে সেটার বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। এই অবস্থায়
প্রয়োজনে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে উক্ত কারণটি অনুসন্ধান করুন। অতঃপর তা ঠিক
করে আবার ফোন করুন।
৩২.
হাসপাতাল বা ক্লিনিকে প্রবেশের সময় অবশ্যই আপনার মোবাইল বন্ধ করে নিন।
কারণ, মোবাইলের তীক্ষ্ন রিং মুমূর্ষু রোগীদের ক্ষতির কারণ হতে পারে।
দ্বিতীয় অধ্যায়
শিক্ষণীয় ঘটনাবলী
হায়, মোবাইল ফোন!
ত্বহা
নামের একটি ছোট্ট ছেলে। বয়স ১৫ কি ১৬ হবে। দেখতে বেশ সুন্দর। ছাত্র হিসাবে
খুবই ভালো। পড়ালেখায় একনিষ্ঠ। আচার-ব্যবহারও তুলনাহীন। তার সুমধুর ব্যবহার
ও ঈর্ষণীয় আচার-আচরণ সবাইকে মুগ্ধ করে। আকর্ষণ করে চুম্বুকের মতো। এক
কথায়- ত্বহার মতো ছেলে বর্তমান সময়ে খুব কমই পাওয়া যায়!
ক্লাস
নাইনের ছাত্র ত্বহা। মেধাশক্তি প্রখর ও পড়াশুনায় মনোযোগী হওয়ায় ক্লাসের
প্রথম স্থানটি বরাবরই দখল করে আসছে সে। তার হাতের লেখাও বেশ চমৎকার। কণ্ঠও
ভালো। তাই স্কুলের শিক্ষকসহ সকলেরই সর্বাধিক প্রিয়পাত্র সে। শিক্ষকগণ তাকে
নিজ সন্তানের মতোই আদর করেন। সেই সাথে কিভাবে তার পড়াশুনার অগ্রগতি হবে সে
ব্যাপারেও চিন্তা-ফিকির করেন।
একদিন
স্কুলের প্রধান শিক্ষক ত্বহার পিতাকে অফিসকক্ষে ডেকে খুব সমাদর করলেন।
আন্তরিকভাবে আপ্যায়ন করলেন। তারপর বললেন, জনাব! আল্লাহর রহমতে আপনার ছেলের
মেধাশক্তি খুবই প্রখর। পড়ালেখার প্রতি তার মনোযোগও প্রশংসনীয়। আমরা আশাবাদী
যে, এস,এস,সি পরীক্ষায় ত্বহা বেশ ভালো ফলাফল করতে পারবে। পারবে কাঙ্ক্ষিখত
সাফল্য অর্জন করতে। কিন্তু সমস্যা হলো, আমাদের এই গ্রামের স্কুলে ওর মেধার
বিকাশ পূর্ণরূপে ঘটছে না। কেননা এখানে শহরের নামকরা মানসম্পন্ন স্কুলগুলোর
ন্যায় পরিকল্পিত ব্যবস্থাপনা ও সুযোগ-সুবিধা নেই। নেই আধুনিক প্রযুক্তির
উন্নতমানের সরঞ্জমাদিও। সুতরাং ত্বহাকে যদি ঢাকার কোনো মানসম্মত স্কুলে
ভর্তি করে দেন তাহলে আমাদের বিশ্বাস, এস,এস, সি পরীক্ষায় নিশ্চয়ই সে
গোল্ডেন এ+ পাবে। আর হ্যাঁ, আমাদের স্কুল ছেড়ে ত্বহার চলে যাওয়াটা যদিও
আমাদের জন্য বেদনাদায়ক তবুও তার মঙ্গলের জন্য এ বেদনাটুকু আমরা সইব। কারণ,
অনেক সময় বৃহৎ স্বার্থের জন্য ক্ষুদ্রতর স্বার্থকে বিসর্জন দিতে হয়। এবার
বলুন, এ ব্যাপারে আপনার মতামত কি?
ত্বহার
আব্বা বললেন, এমন একটি ইচ্ছা আমারও ছিল। ভেবেছিলাম, ওকে ঢাকায় ভর্তি করে
দেব। কিন্তু আপনারা কষ্ট পাবেন মনে করে তা আর হয়নি। যাহোক, এখন যেহেতু
আপনারাই আমাকে প্রস্তাব দিচ্ছেন, তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ত্বহাকে আমি ঢাকায়
ভর্তি করার ব্যবস্থা করব। দোয়া করবেন, আল্লাহ যেন আমাদের সবার আশা পূর্ণ
করেন।
কয়েক
দিন পর ঢাকার একটি নামকরা স্কুলে ত্বহাকে ভর্তি করা হলো। ভর্তির ব্যাপারে
স্কুলের প্রধান শিক্ষক ফরিদ উদ্দীন সাহেব বেশ সহযোগিতা করলেন। এমনকি তিনি
নিজে ত্বহার আব্বাকে সাথে নিয়ে বেশ পরিশ্রম করে একটি ভালো হোস্টেলে তার
থাকার ব্যবস্থা করলেন। তারপর নিজের পক্ষ থেকে তাকে ৫০০ টাকা দিয়ে অনেক
বুঝিয়ে সুঝিয়ে ত্বহার পিতাকে নিয়ে আপন কর্মস্থলে ফিরে এলেন।
ত্বহা
এতদিন বাড়ি থেকে যেয়ে-এসে ক্লাস করেছে। তাই হোস্টেলে তার মন টিকতে চাইল
না। বাড়ী আসার জন্য সে ছটফট করতে লাগল। কিন্তু একমাস পূর্ণ না হলে বাড়ী
যাওয়ার বিধান নেই বিধায় বাধ্য হয়ে তাকে একমাস শেষ হওয়ার অপেক্ষায় থাকতে
হলো।
মাস
শেষ হতেই ছুটি নিয়ে বাড়িতে চলে এল ত্বহা। মায়ের নিকট খুলে বলল মনের
অবস্থা। মা ভাবলেন, ত্বহা আমাদের ছেড়ে দূরে গিয়ে কোথাও দীর্ঘদিন থাকেনি।
তাছাড়া হাতে মোবাইল না থাকায় সময়মতো আমাদের সাথে যোগাযোগও করতে পারিনি।
এজন্যে তার বেশি খারাপ লেগেছে। যদি তার হাতে একটি মোবাইল ফোন থাকত এবং
আমাদের সাথে প্রয়োজনের সময় বা মন খারাপ থাকা অবস্থায় কথা বলতে পারত তাহলে
নিশ্চয়ই এতটা খারাপ লাগত না। নাহ্ যেভাবেই হোক ওর জন্য একটি মোবাইলের
ব্যবস্থা করতে হবে।
ছেলের
হাতে মোবাইল তুলে দিতে ত্বহার আব্বা মোটেই রাজী ছিলেন না। তার বক্তব্য
হলো, মোবাইল নামক এই যন্ত্রটি যে কোনো সময় ছেলে-মেয়েদেরকে বিপদগামী করতে
পারে। পারে তাদের জীবনকে ধ্বংস করে দিতে। হ্যাঁ, পিতা-মাতার সাথে প্রয়োজনীয়
কথা বলার জন্য তো ফোনের দোকানই আছে।
কিন্তু
ত্বহার আম্মা নাছোড়বান্দা। তিনি ছেলের হাতে মোবাইল তুলে দেওয়ার স্বপক্ষে
বেশ কয়েকটি যুক্তি দাড় করলেন। তার বড় যুক্তি হলো, ছাত্ররা চাইলেই
ফোন-ফ্যাক্সের দোকানে গিয়ে ফোন করতে পারে না। কেননা তাদেরকে স্কুলের রুটিন
মোতাবেক চলতে হয়। তাছাড়া ক্লাস চলাকালে তো বাইরে যাওয়ার প্রশ্নই উঠে না!
স্ত্রীর পীড়াপীড়িতে অবশেষে একটি মোবাইল কিনে আনতে বাধ্য হলেন ত্বহার পিতা।
স্কুলে
যাওয়ার সময় ত্বহার আম্মা ত্বহার হাতে মোবাইল সেটটি তুলে দিলেন। বললেন। নাও
বাবা! যখনই মন খারাপ লাগবে তখনই সুযোগ করে আমদের সাথে কথা বলবে। দেখবে,
সাথে সাথে তোমার মন ভালো হয়ে গেছে।
ত্বহা মোবাইল ফোন পেয়ে খুব খুশি হলো। মনে মনে বলল, যাক এবার তাহলে নির্ভাবনায় পড়াশুনা করতে পারব!
ত্বহা চলে এল স্কুলে। কাটতে লাগল সময়।
একদিন
বিকাল বেলা। ত্বহা তার সহপাঠিদের সঙ্গে হাঁটতে বের হয়েছে। সবুজ দুর্বা
ঘাসের উপর বসে তারা শেষ বিকেলের নির্মল হাওয়া উপভোগ করছে। এমন সময় হঠাৎ
ত্বহার মোবাইলে রিং বেজে উঠল। ত্বহা মোবাইল রিসিভ করার জন্য পকেটে হাত দেয়
এবং ভাবে, নিশ্চয়ই মা কিংবা বাবা ফোন করেছেস। কারণ, তার নম্বর এ দু'জন ছাড়া
আর কেউ জানে না।
ত্বহা পকেট থেকে মোবাইল বের করে। চোখের সামনে মোবাইল এনে দেখে, এটা তার বাড়ীর নম্বর নয়, অপরিচিত নম্বর!
খানিক
চিন্তা করে ত্বহা। ভাবে, কার হতে পারে এই নম্বরটি? যে রিং করল সে কীভাবে
পেল আমার নম্বর? আমি তো কাউকে আমার নম্বর দেইনি ? রিসিভ করব ? নাকি করব না ?
অপরিচিত
নম্বর দেখে ত্বহা যখন এসব কথা ভাবছিল, ঠিক তখনই পাশের এক সহপাঠি বলে ওঠল,
আরে! দেরী করছিস্ কেন? রিসিভ করে দেখ্ না- কে ফোন করেছে এবং কী বলতে চায়!
ত্বহা রিসিভ করল।
হ্যলো! কে ? কাকে চান ? ত্বহার প্রশ্ন।
আমি মুনালিসা। আপনাকেই চাই। অপরপ্রান্ত থেকে কোমল কন্ঠে একটি মেয়ে উত্তর দিল।
অপ্রত্যাশিত মেয়ে কণ্ঠ শ্রবণে অনেকটা অপ্রস্তুত হয়ে গেল ত্বহা। অবশেষে অল্পক্ষণ চুপ থাকার পর আস্তে করে লাইন কেটে দিল সে।
কিরে ত্বহা ! কে, কী বলল? কিছু না বলে মোবাইল রেখে দিলি যে? বলল ত্বহার এক সহপাঠি।
আর বলিস্ না। কোত্থেকে যেন এক মেয়ে ফোন করেছে! বলে কি- আপনাকেই চাই! আমি তাকে চিনিনা, জানিনা, সে আমাকে চাবে কেন বল্তো?
যা
বললি তা যদি সত্যি হয় তাহলে তো লাইনটা কেটে দেওয়া ঠিক হয়নি। কথা বলে
দেখ্তি সে কী বলে। হয়তো কোনো প্রয়োজনে ফোন করেছিল। বলল, ত্বহার আরেক
সহপাঠি।
ঠিক আছে। যদি আবার ফোন করে তাহলে কথা বলে দেখব কী বলে! এখন চল্ হোস্টেলে যাই। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এল প্রায়।
মাগরিবের নামাজের পর। ত্বহা ক্লাসের পড়া মুখস্থ করছে। এমন সময় মেয়েটি আবার ফোন দিল।
পড়ার
সময় ডিস্টার্ব ত্বহার একেবারে অসহ্য। তাই কে রিং দিয়েছে তা না দেখেই
মোবাইলটি বন্ধ করে ড্রয়ারে রেখে দিল ত্বহা। সেই সাথে বিরক্তির সুরে বিড়বিড়
করে কি যেন বলল।
পড়া
শেষ করে ত্বহা মোবাইল অন করল। অন করার মাত্রই আবার এল মেয়েটির ফোন। ত্বহার
বুঝতে বাকি রইল না যে, মেয়েটি এতক্ষণ ধরে কল ঢুকানোর চেষ্টা করছে।
বিরক্ত হলেও ত্বহা রাগ সামলে নিয়ে মোবাইল রিসিভ করল।
ত্বহার শান্ত কন্ঠের কৌতুহলী প্রশ্ন- কে?
প্রশ্নের জবাব অপর প্রান্ত থেকে পাওয়া গেল না। যা পাওয়া গেল তা হলো- মোবাইল রিসিভ করতে এতো দেরী হলো কেন?
ত্বহা মনে মনে বলল - বাবারে কী দাপট ! রিং দিয়ে আমাকে ডিস্টার্ব করছে, আবার উল্টো আমাকে শাসাচ্ছে!! এ যে, "চুরির উপর সীনাজুরী"।
এদিকে ত্বহার কথা বলতে দেরী দেখে মেয়েটি আবার প্রশ্ন করল, কী ব্যাপার? কথা বলছেন না কেন?
আপনি কে? আপনার পরিচয়টা দিলে ভালো হতো। বলল ত্বহা।
মেয়েটি এবার যাদুমাখা কণ্ঠে তার পরিচয় দিল। সেই সাথে এও বলল, আমি আপনার সাথে বন্ধুত্ব করতে চাই, যদি আপনি রাজী থাকেন।
ত্বহা প্রথমে একটু ইতস্ততঃ করল। কিন্তু ক্ষণিক পরেই শয়তানের ধোঁকায় পড়ে মেয়েটির সাথে বন্ধুত্ব গড়তে রাজী হয়ে গেল।
'মুনালিসা' নামটা যেমন শ্রুতিমধুর, কথাও তেমন যাদুময়। তাই তার ফাঁদে আটকাতে খুব বেশি একটা সময় নিল না ত্বহার!
অল্প
কয়েকদিনেই ত্বহা মুনালিসার প্রেমের জালে আবদ্ধ হয়ে গেল। ভুলে গেল তার
ঢাকায় আসার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। হারিয়ে ফেলল ভালো মন্দ অনুধাবন করার শক্তি!
হায়রে মোবাইল! হায়রে নারী!! এভাবেই কি তোমরা মানুষকে কর বিপদগামী?!
যাহোক,
এরপর থেকে প্রতিদিন প্রায় ৭/৮ বার ত্বহার সঙ্গে মুনালিসার কথা হতে থাকে।
সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে তাদের প্রেমও চলতে থাকে অবিরাম গতিতে। এভাবে কেটে
যায় কয়েকটি মাস। এক পর্যায়ে ঘনিয়ে আসে এস,এস,সি পরীক্ষা। কিন্তু এখন আর
ত্বহার মাথায় পরীক্ষার কোনো চিন্তা নেই! নেই ভালো ফলাফল করার অদম্য আগ্রহও।
এখন তার গোটা হৃদয় আচ্ছন্ন করে আছে শুধু একটি নাম- মুনালিসা। তার
চিন্তা-চেতনায় এখন মুনালিসা ব্যতীত অন্য কিছুর স্থান নেই!!
প্রথম
প্রথম মুনালিসাই ত্বহার কাছে ফোন করত। কিন্তু এখন? এখন মুনালিসার ফোনের
অপেক্ষা করে না ত্বহা। নিজেই ফোন করে মুনালিসার কাছে। ফলে বাড়ি থেকে খরচের
জন্য যে টাকা দেওয়া হয় তার সিংহভাগই খরচ হয়ে যায় মোবাইলের পিছনে। অনেক সময়
এমনও হয় যে, ত্বহা নাস্তা খাওয়ার জন্য হোটেলে গেল। এমন সময় মুনালিসা
মিসড্কল দিল। তখন ত্বহা নাস্তা না খেয়ে ঐ টাকা মোবাইলে রিচার্জ করে
মুনালিসার সঙ্গে কথা বলে। আর এটাকেই সে নাস্তা খাওয়ার চেয়ে বেশি তৃপ্তিদায়ক
মনে করে!!
পরীক্ষার
আর মাত্র এক মাস বাকি। সকল ছাত্র-ছাত্রী পড়াশুনায় ব্যস্ত। আর ত্বহা ব্যস্ত
মোবাইল প্রেমালাপে! পরীক্ষা উপলক্ষ্যে হোস্টেলে গভীর রাত পর্যন্ত ছাত্ররা
জেগে পড়ালেখা করে। ত্বহাও তাদের সঙ্গে জেগে থাকে। তবে পড়ার জন্য নয়। রাত
বারটার পর মুনালিসার সঙ্গে কথা বলার জন্য!
রাত
জেগে কথা বলতে বলতে ত্বহার স্বাস্থ্য নষ্ট হয়ে যায়। সেই সাথে সে আক্রান্ত
হয় কয়েকটি গোপন রোগে। কিন্তু একথা তার কাছের বন্ধুরা ছাড়া আর কেউ জানল না।
আসল রহস্য পিতা-মাতা ও শিক্ষকগণসহ অন্যদের কাছে গোপনই রয়ে গেল! তারা ভাবল,
ত্বহা পড়াশুনায় একনিষ্ঠ। অন্যদের চেয়ে একটু বেশিই পড়াশুনা করে সে! তাই
অত্যধিক পড়াশুনার চাপে তার স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে গেছে। পরীক্ষার পর আবার ঠিক
হয়ে যাবে।
আজ
এস, এস, সি পরীক্ষা শুরু। ত্বহা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করল। তবে তার এ
অংশগ্রহণ মূলত লোকদেখানো নিয়ম পালন ছাড়া আর কিছুই ছিল না। কেননা পরীক্ষা
দিতে হবে, ভালো রিজাল্ট করতে হবে- মুনালিসার সাথে সম্পর্ক গাঢ় হওয়ার পর
থেকে এ ধরনের চিন্তা-ভাবনা নিয়ে একদিনও সে পড়তে বসেনি বা বসতে পারেনি!
ত্বহার
যত চিন্তা, তা কেবল মুনালিসাকে নিয়ে। পরীক্ষার প্রতি তার বিন্দুমাত্রও
ভ্রুক্ষেপ নেই! অথচ পিতা-মাতা ও শিক্ষকগণ বুকভারা আশা নিয়ে তাকিয়ে আছে এই
ত্বহার দিকে। তাঁদের চেষ্টা, আশা, স্বপ্ন সবই কি তাহলে বিফলে যাবে? ত্বহা
কি পারবে তাদের আশা পূরণ করতে ? পারবে কি তাদের মুখে হাসি ফুটাতে? তাদের
সুনাম অক্ষুন্ন রাখতে ? কীভাবে পারবে ? ত্বহা তো এখন হাবুডুবু খাচ্ছে
মুনালিসার প্রেম সাগরে!!
পরীক্ষা
শেষ হলো। কিছুদিন পর প্রকাশিত হলো পরীক্ষার ফলাফল। ফল যা হওয়ার তাই হলো।
দেখা গেল, ত্বহার এ প্লাস পাওয়া তো দূরের কথা, সবগুলো বিষয়ে পাসও করতে
পারেনি!! আর যেগুলোতে পাস করেছে তাও কোনো রকম টেনেটুনে!!!
প্রিয়
পাঠক! দেখলেন তো! মোবাইল ফোনের কারণে মেধাবী ও বুদ্ধিমান ছাত্র ত্বহার
পড়াশুনায় কেমন ধস নেমে এলো! কিরূপ অবনতি হলো তার জীবনের!! কিভাবে নষ্ট হলো
তার শরীর-স্বাস্থ্য!!! আচ্ছা এর জন্য দায়ী কে ? মোবাইল ফোন ? ত্বহার
অভিভাবক ? নাকি ত্বহার লাগামহীন মোবাইল ব্যবহার ?
হ্যাঁ,
মোবাইল ফোন ও অভিভাবকের পাশাপাশি লাগামহীন মোবাইল ব্যবহারের কারণেই ত্বহার
আজ এই করুণ পরিণতি। তবে এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি দায়ী হলেন ত্বহার মা। কেননা
তিনি যদি ত্বহার হাতে মোবাইল না তুলে দিতেন তাহলে হয়তো ত্বহার ঘটনা আজ
অন্যভাবে লেখা হতো। হয়তোবা পত্র-পত্রিকায় ত্বহার নাম আসত- মেধাতালিকায়
স্থান পাওয়া ছাত্র হিসেবে!
কিন্তু
আজ? হ্যাঁ আজ আর ত্বহাকে কেউ ভালোবাসে না। না পিতা-মাতা, না শিক্ষকবৃন্দ,
না অন্য কেউ!! সকলেই তাকে অবজ্ঞার দৃষ্টিতে দেখে। তার দিকে তাকায় একটু
বাঁকা নজরে!
আসলে
মোবাইলের খারাবি থেকে বাঁচার জন্য মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের যেমন তার
অবৈধ ব্যবহারের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে, তেমনি অভিভাবকদেরও উচিত
ছেলে-মেয়েদের হাতে মোবাইল না দেওয়া কিংবা একান্ত অপারগতায় দিলেও নিশ্চিন্তে
বসে না থাকা। বরং তাদের দায়িত্ব হলো, অতি প্রয়োজনে ছেলে-মেয়েদের হাতে
মোবাইল দেওয়ার পর তাদের প্রতি খেয়াল রাখা যে, তারা কী করে, কার সাথে কথা
বলে এবং মোবাইল ব্যবহারের পর তার মানসিক ও চারিত্রিক কোনো পরিবর্তন হয়েছে
কি না। আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর হুকুম মেনে মোবাইলের যাবতীয় অবৈধ ব্যবহার থেকে
দূরে থাকার তাওফিক দান করুন। আমীন।
নষ্ট হলো বন্ধুত্ব
শেফালী
ও শারমীন। দুই বান্ধবী। খুবই ঘনিষ্ট। পরস্পর দেখা না করে, কথা না বলে
একদিনও থাকতে পারেনা। তাই স্কুল জীবন থেকে শুরু করে কর্মজীবনেও ওরা একসঙ্গে
আছে। একই কোম্পানিতে চাকরি করে। ভিন্ন দুটি কোম্পানিতে আরো উচুঁমানের
চাকরি দু'জনই পেয়েছিল। কিন্তু একত্রে থাকার বাসনায় সেই চাকুরীতে না গিয়ে
একই কোম্পানিতে চাকুরী নেয়। ওদের আশা, দুই বান্ধবী আজীবন একই সাথে থাকবে।
বিয়ে করলেও একই গ্রামে করবে! যেন প্রতিদিনই দু'জনের দেখা হয়, কথাবার্তা হয়
!!
কিছুদিন
পর মাসউদ নামের এক ছেলের সঙ্গে মোবাইলে পরিচয় হয় শারমীনের। তারপর তাদের
মাঝে প্রায়ই কথা হয়। এভাবে কথা বলতে বলতে ধীরে ধীরে তা প্রেমের রূপ ধারণ
করে। একজন আরেক জনকে ভালোবাসতে থাকে গভীর থেকে গভীরভাবে। স্বপ্ন দেখতে থাকে
ঘর বাঁধার।
প্রেমের
সম্পর্ক গড়ে উঠার পর শারমীনের সঙ্গে মাসউদের প্রতিদিনই কথা হয়। একদিন কথা
না বলতে পারলে তাদের ভালো লাগে না। এমনকি রাতে বিছানায় গিয়ে ঘুমও আসে না!
হঠাৎ
একদিন শারমীনের মোবাইল ফোনটা নষ্ট হয়ে যায়। চিন্তায় পড়ে যায় শারমীন।
কেননা, মাসউদের সাথে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যমই হলো এই মোবাইল ফোন। মোবাইল
ফোন ছাড়া মাসউদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব নয়। কারণ মাসউদ ইটালী প্রবাসী।
অন্তত পাঁচ বছর আগে দেশে ফিরার কোনো চিন্তা-ভাবনা তার নেই।
শারমীনকে চিন্তামগ্ন দেখে শেফালী জিজ্ঞেস করল- কিরে! কী হয়েছে? এভাবে মুখ ভার করে বসে আছিস কেন? কোনো অসুখ-বিসুখ হয়নি তো?
না। অসুখ-বিসুখ কিছু নয়। মনটা খারাপ অন্য কারণে!
কী সেই কারণ সেটা জানার অধিকার কি আমার আছে ?
র্তো জানার অধিকার না থাকলে কার থাকবে বল্। তুই আর মাসউদ ছাড়া এই পৃথিবীতে আমার কে-ই বা আছে!
ঠিক আছে। এত প্যাচাঁল না পেরে এখন বল্ কী হয়েছে?
গতকাল
মোবাইল ফোনটা নষ্ট হয়ে গেছে। তাই মাসউদের সাথে আমার কথাবার্তা একদম বন্ধ।
আমার হাতে এখন টাকাও নেই যে, আজই আরেকটা মোবাইল কিনতে পারব। আজই বলি কেন,
আগামী একমাসের মধ্যেও মোবাইল কেনা সম্ভব হবে না। কারণ আজ মাত্র এপ্রিল
মাসের চার তারিখ। আগামী মাস শুরু না হলে টাকা পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
তাছাড়া এখন তো তোর কাছেও টাকা নেই। সেকথা তো গতকাল তুই আমাকে বলেছিস।
একটুকু
বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে শারমীন। তারপর আবার বলতে থাকে- জানিস শেফালী !
ফোনটা নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে গতরাত আমার ভালো ঘুমও হয়নি। গোটা রাত কেবল
এপাশ-ওপাশ করেছি। প্রথম প্রথম তোর সাথে কথা না বললে আমার যে অবস্থা হতো, আজ
রাতে আমার সে অবস্থাই হয়েছিল। তাই এখন এখানে বসে মনে মনে ভাবছিলাম, কিভাবে
মাসউদের সাথে কথা বলব? কিভাবে তার সাথে যোগাযোগ করব। বেশ হতাশ কণ্ঠে
কথাগুলো বলল শারমীন।
ও
সেই কথা! তা আমাকে আগে জানাস্নি কেন ? যাহোক চিন্তার কোনো কারণ নেই। এখন
থেকে মাসউদের সাথে আমার মোবাইল দিয়ে কথা বলিস্। তাকে বলে দিস্- যখনই মনে
চায় সে যেন আমার মোবাইলে ফোন করে। বান্ধবীকে আশ্বাস দিয়ে বলল শেফালী।
এরপর
থেকে শেফালীর মোবাইল দিয়ে মাসউদের সঙ্গে কথা বলে শারমীন। মাসউদও শেফালীর
মোবাইলে রিং দিয়ে শারমীনকে ডেকে দিতে বলে। এভাবে কথাবার্তা চলে দশ বার দিন।
যেহেতু
মাসউদ শেফালীর মোবাইলে ফোন করে সেহেতু মাঝে মাঝে শেফালীর সাথেও কথা হয়
মাসউদের। এভাবে আস্তে আস্তে শেফালীর সঙ্গেও সখ্যতা গড়ে উঠে ওর। আগে মাসউদের
ফোন আসলে রিসিভ না করেই শারমীনের হাতে মোবাইল তুলে দিত শেফালী। কিন্তু এখন
রিসিভই শুধু করে না, কয়েক মিনিট কথা বলে তারপর শারমীনকে মোবাইল দেয়।
শারমীন
এ বিষয়টিকে সহজভাবে মেনে নেয়নি বা নিতে পারেনি। তার বক্তব্য হলো, মাসউদ
আমার! একান্তই আমার!! অতএব শেফালী ওর সাথে মিঠে মিঠে আলাপ করবে কেন ? কেন
সে আমার অধিকারে হস্তক্ষেপ করবে?
একদিন শারমীন মাসউদকে বলল- তুমি শেফালীর সঙ্গে কথা বলতে পারবে না। তুমি আমার। শুধুই আমার। তুমি আর কারো হতে পারো না!
জবাবে
মাসউদ শারমীনকে বুঝাতে চেষ্টা করল। বলল- শারমীন! শেফালী হয়তো মোবাইল রিসিভ
করে ভদ্রতার খাতিরেই আমার সাথে দু'চারটা কথা বলে। আমিও সেই ভদ্রতাবশতই তার
কথার জবাব দেই। এতে তুমি মনে কিছু নিও না। বিশ্বাস করো, আমি তোমার আছি,
তোমার হয়েই আজীবন থাকব!
কিন্তু
এসব কথা শারমীনের কর্ণে প্রবেশ করে না। সে শেফালীকে সন্দেহের চোখে দেখতে
থাকে। এতে ধীরে ধীরে দুই বান্ধবীর মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়। এমনকি এক
পর্যায়ে একজন আরেকজনকে প্রতিপক্ষ ভাবতে থাকে। ফলে মাসউদকে কেন্দ্র করে
উভয়ের মধ্যে প্রায়ই বিরাট ঝগড়া হয়। তর্ক-বিতর্ক হয়। কথা কাটাকাটি হয়!
এভাবে
বেশ কিছুদিন চলার পর দুই বান্ধবীর সম্পর্ক একদম নষ্ট হয়ে যায়। শেষ হয়ে যায়
হৃদয়ের সব টান। শত্রুতে পরিণত হয় দু'জন দু'জনার। শুধু তাই নয়, কয়েকদিন পর
শারমীন কোম্পানির চাকুরী ছেড়ে দিয়ে অন্য একটি প্রাইভেট ফার্মে চাকরি নেয় !
এরপর
থেকে শারমীন ও শেফালীর কোনো যোগাযোগ নেই। আজ আট বছর পার হয়ে গেল। কে,
কিভাবে আছে, কোথায় আছে- কিছুই তাদের জানা নেই। আর জানার প্রয়োজনও তারা বোধ
করেনি। যেন দু'জন দু'জগতের বাসিন্দা!!
প্রিয়
পাঠক! শুনলেন তো মোবাইল প্রেমের কারণে দুই বান্ধবীর মধুর সম্পর্ক কিভাবে
নষ্ট হয়ে গেল। কিভাবে তাদের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হলো। কিভাবে একে অপর থেকে
শুধু মনের দিক থেকেই নয়, শারীরিক ভাবেও পৃথক হয়ে গেল!
মুহতারাম
পাঠক-পাঠিকা! এখানে তো শুধু সম্পর্ক নষ্ট হয়েছে। অনেক সময় এমনও হয় যে,
জীবনটাই নষ্ট হয়ে যায়। প্রেমের জ্বালা সহ্য করতে না পেরে অনেক ছেলে-মেয়ে
আত্মহত্যাও করে। একটু চিন্তা করে বলুন তো! যে প্রেম- বন্ধু বান্ধবের মাঝে
বিরোধ সৃষ্টি করে, যে প্রেম মহামূল্যবান জীবন ধ্বংস করে, যে প্রেম
আত্মহত্যা করতে উদ্ধুদ্ধ করে- সে প্রেম কি কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ
করতে পারে? না, পারে না, কখনোই না। চোখের সামনে এসব লোমহর্ষক ঘটনা দেখেও,
পত্র-পত্রিকা ও বই-পুস্তকে এত শিক্ষণীয় ঘটনা পাঠ করেও, এত ওয়াজ-নসিহত ও
উপদেশের পরেও যেসব ছেলে মেয়ে প্রেম করে- তাদের ব্যাপারে নির্দ্বিধায় বলা
যায়, তাদের জ্ঞানের কমতি আছে, বুদ্ধির অভাব আছে। অথবা বলা যায়, তাদের
চেতনাশক্তি ও বুদ্ধি-বিবেক লোপ পেয়েছে!!
তাই
সবশেষে আবারও বলি, ভয়ঙ্কর এ পথে কেউ পা বাড়াবেন না। কারণ এ পথ দেখতে বড়
মসৃন মনে হলেও বাস্তবে তা ভয়াবহ কণ্টকাকীর্ণ। দোয়া করি, আল্লাহ তাআলা যেন
আমাদের সবাইকে অবৈধ প্রেম-ভালোবাসার কবল থেকে হেফাজত করেন। আমীন।
স্বপ্নের সংসার!
ইসলাম
শান্তির ধর্ম। ইসলামের সকল বিধানই মানুষের জন্য চির কল্যাণকর। যে কেউ
ইসলামের বিধান অনুযায়ী জীবন যাপন করবে, নিঃসন্দেহে সে সুখের সন্ধান পাবে।
লাভ করবে সুখ-সমৃদ্ধ শান্তিময় জীবন। পক্ষান্তরে কেউ যদি নিজের মনমত চলে,
ইসলামি বিধি-বিধানকে লঙ্ঘন করে অবলীলায়, তার জীবনে নেমে আসে চরম অশান্তি;
উন্মুক্ত হয় বিপদ-মসিবত ও জ্বালা-যন্ত্রণার দ্বার!
প্রিয়
পাঠক-পাঠিকা! আমি এখন এমনই একটি সত্য ঘটনা আপনাদের শোনাব। ঘটনাটি ২০০৭
খৃস্টাব্দের। ঘটেছে জামালপুর জেলায়। আমার বিশ্বাস, শিক্ষণীয় এই ঘটনাটি
আপনাদের বিবেককে নাড়া দিবে। চিন্তার জগতে আলোড়ন সৃষ্টি করবে। ফলে একদিকে
যেমন মনের ভেতর বিবাহপূর্ব প্রেম-ভালোবাসার প্রতি সিমাহীন ঘৃণা সৃষ্টি হবে
ঠিক তেমনি ইসলামি বিধি-বিধান পালনের প্রতিও সৃষ্টি হবে আগ্রহ-স্পৃহা।
নুসরাত
জাহান। জ্ঞান-গরিমায় অনন্যা। ষোড়শী রূপসী কন্যা। উচ্চতায় ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি।
ডাগরচক্ষু বিশিষ্ট নুসরাতের ঘনকালো কেশদাম কোমর ছাড়িয়ে হাঁটু ছুঁই ছুঁই
করে। হালকা-পাতলা গড়নের নুসরাতকে দেখলে মনে হয় যেন ডানাকাটা পরী! ওর
রূপ-লাবণ্য শুধু ছেলেদেরকেই আকর্ষণ করে না মেয়েরাও তার দিকে তাকিয়ে থাকে
মুগ্ধ দৃষ্টিতে। নুসরাতের অমায়িক ব্যবহার ও ভদ্র আচার-আচরণ তার সৌন্দর্যকে
আরো একধাপ বাড়িয়ে দেয়। মোটকথা শুধু রূপেই নয়, গুণেও সে অন্যদের চেয়ে
অনেকদূর এগিয়ে। পড়াশুনা ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় ওর নাম থাকে সকলের শীর্ষে।
তাই অনেক মেয়েই ঈর্ষা করে আফসোসের স্বরে বলে- আহা! যদি নুসরাতের মতো হতে
পারতাম!
ধার্মিক
পরিবারের মেয়ে নুসরাত। কলেজে আসা-যাওয়া করে বোরকা পরিধান করে। সেই সাথে সব
সময় চেষ্টা করে শরিয়তের বিধি-বিধান মেনে চলতে। যার ফলে রূপে-গুণে অনন্যা
হওয়া সত্ত্বেও কোনো ছেলের 'প্রেম' নামক পাতানো ফাঁদে কখনো পা দেয়নি। অবশ্য এ
পর্যন্ত ওর কাছে প্রেম-প্রস্তাব যে আসেনি তা নয়। তবে যখনই তার কাছে কোনো
ছেলে কোনোভাবে প্রেমের অফার দিয়েছে তখনই সে ঘৃণাভরে তা প্রত্যাখ্যান করেছে।
বলে দিয়েছে- বিয়ের পূর্বে কারো সাথেই আমি প্রেম করব না। কাউকেই ভালোবাসব
না। এ আমার প্রতিজ্ঞা, এ আমার ওয়াদা! কেননা ইসলামি শরিয়তে তা জায়েয নেই।
তবে বিয়ের পর আমি আমার স্বামীর সঙ্গে প্রেম করব! তাকে ভালোবাসব হৃদয়-মন
উজাড় করে। তাকেই বিলিয়ে দেব আমার আপন সত্ত্বা। ফলে তখনকার প্রেমই হবে আমার
সত্যিকার প্রেম, তখনকার ভালোবাসাই হবে আমার পবিত্র ভালোবাসা। এতে
সুখ-শান্তি আর আনন্দে ভরে ওঠবে আমাদের দাম্পত্য জীবন!!
নুসরাতের
ছিল একটি নিজস্ব মোবাইল। কিন্তু মোবাইল নামক এই ছোট্ট যন্ত্রটিই যে এক সময়
কাল হয়ে দাড়াবে, ওর জীবনে চরম ধ্বংস ডেকে আনবে সেকথা কে জানত? একদিন তার
মোবাইলে হঠাৎ রিং বেজে ওঠে। অপরিচিত নম্বর। ফলে খানিক ইতস্ততঃ করলেও অবশেষে
রিসিভ করে। সঙ্গে সঙ্গে অপর প্রান্ত থেকে একটি ছেলেকণ্ঠ শোনা যায়। সে বলে-
আমি মুনীর। সময় থাকলে আপনার সাথে কিছু কথা বলতে চাই!
আমার সাথে আপনার কী কথা থাকতে পারে তা আমার জানা নেই। তবে আপনি যেহেতু বলতে চাচ্ছেন বলুন। ভদ্রতা রক্ষার খাতিরে বলল নুসরাত।
কথা
বলার অনুমতি পেয়ে মুনীর খুব খুশি হয়। সে বেশ কিছুক্ষণ প্রাণভরে কথা বলে
নুসরাতের সাথে! কথাবার্তার এক পর্যায়ে নুসরাতের রূপ-লাবণ্য আর দৈহিক
সৌন্দর্যের ভূয়সী প্রশংসা করে মুনীর। সেই সঙ্গে মধুমাখা সাহিত্যের নিপুণ
ছোঁয়ায় ওর নানাবিধ গুণের প্রশংসা করতেও ভুলে যায়নি !
ছোটবেলা
থেকে অনেকে অনেকভাবে নুসরাতের রূপ-গুণের প্রসংশা করে আসছে। কিন্তু ওর
নিশ্চিত বিশ্বাস, মুনীরের মতো এত সুন্দর, এত প্রাঞ্জল ও সাবলীলভাবে তার
রূপ-সৌন্দর্যের বর্ণনা আর কেউ দেয়নি বা দিতে পারেনি। উপরন্তু মুনীরের
মোলায়েম সুমধুর কণ্ঠ তাকে আরো বেশি কাবু করে ফেলে। ভাবে সে- ছেলেদের কথাও
কি এত সুন্দর হয়! হয়কি তাদের কণ্ঠ এতটা হৃদয়গ্রাহী! এতটা আকর্ষণীয়!! সবাই
বলে আমার কণ্ঠ ভালো। অথচ এখন দেখছি, আমার চেয়ে মুনীরের কণ্ঠ কয়েকগুণ বেশি
ভালো!!
মুনীর
যখন মোবাইলে নানা প্রসঙ্গ নিয়ে নুসরাতের সাথে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলছিল
তখনই ওর মনে এসব কথা বারবার ঘুরপাক খাচ্ছিল। এসব চিন্তা করতে করতে নুসরাত
এক পর্যায়ে মুনীরের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে। সে ভুলে যায় তার পূর্বের সেই
ওয়াদার কথা! ভুলে যায় ইসলামি বিধি-বিধান, কঠিন গুনাহ ও কঠোর শাস্তির কথা!!
ভুলে যায় তার বংশ-ঐতিহ্যের কথা। ফলে সেদিনই মুনীরের সাথে ওর বন্ধুত্বের ভিত
রচিত হয়। যা কয়েক মাসের মধ্যে বন্ধুত্বের সীমা ছাড়িয়ে 'প্রেম' পর্যন্ত
গিয়ে পৌঁছে!!
এরপর
থেকে মুনীরের সাথে নুসরাতের চলতে থাকে প্রেম-প্রেম খেলা! ওরা বাসিন্দা হয়ে
যায় প্রেম-নগরীর!! শয়তানের প্ররোচনায় দু'জনই এগিয়ে যায় বহুদূর।
বিরতিহীনভাবে চলতে থাকে ওদের প্রেমের গাড়ী!!!
এভাবে
দীর্ঘদিনে প্রেমনগরীর দীর্ঘপথ অতিক্রমের পর হঠাৎ একদিন নুসরাতের হুঁশ ফিরে
আসে। ফিরে আসে তার আসল চেতনা। তার মনে আবার জাগ্রত হয়- আরে! বিবাহপূর্ব
প্রেম-ভালোবাসা তো ইসলাম নিষিদ্ধ করেছে। ইসলাম বলেছে- বিনা প্রয়োজনে কোনো
গাইরে মাহরাম পুরুষের সাথে কথা বলা, খোশগল্প করা অবৈধ ও অন্যায় কাজ। তাহলে
আমি যে মুনীরের সাথে মোবাইলে দিন-রাত অহরহ কথা বলছি সেটাও তো অন্যায় হচ্ছে।
কবীরা গুনাহ হচ্ছে। তাহলে এখন কী করা যায়? যদি আমি গুনাহের দিকে তাকাই তবে
তো মুনীরকে ভুলে যেতে হবে। অথচ মুনীরকে ভুলা আমার পক্ষে একেবারেই অসম্ভব।
মুনীর ছাড়া আমার জীবন অর্থহীন, বেকার! মুনীরকে ছাড়া আমার পক্ষে একদিনও
বেঁচে থাকা সম্ভব নয়!! তাহলে এখন উপায়?
নুসরাত
স্বীয় করণীয় সম্পর্কে ভাবতে থাকে। তবে বেশিক্ষণ তাকে ভাবতে হলো না। কেননা
ভাবনার জগতে কিছুদূর এগুনোর পর চিরশত্রু শয়তান তাকে গুনাহের ধারা অব্যাহত
রাখার সুন্দর একটি যুক্তি (?) শিখিয়ে দিল। বলে- বিয়ের পূর্বে মুনীরের সাথে
কথা বলতে যখন এতই তোমার ভয়, তাহলে মোবাইলে তার সাথে বিয়েটা সেরে নিলেই হয়!
তবেই তো হারাম, অবৈধ, নাজায়েয ইত্যাদির কোনো প্রশ্ন আসবে না।
শয়তানের
এই বুদ্ধিটি নুসরাতের বেশ মনপুত হয়। কারণ এই পদ্ধতি অবলম্বন করলে সাপও
মরবে লাঠিও ভাঙ্গবে না। অর্থাৎ গুনাহও হবে না, মুনীরও হারাবে না!!
শয়তানের
শিখানো বুদ্ধি মতো কাজ করে নুসরাত। প্রথমে সে অনেক কষ্টের মাধ্যমে ভাবীকে
হাত করে বাপ-মাকে রাজী করায়। তারপর মোবাইলে বিয়ে করে মুনীরকে। অথচ কে এই
মুনীর? কী তার পরিচয়? কে তার পিতা? কোথায় তার বাড়ি? কী তার ঠিকানা? ইত্যাদি
কিছুই সে ভালোভাবে জানল না। জানার প্রয়োজনও বোধ করল না। এমনকি মুনীরকে
দেখারও প্রয়োজন বোধ করল না একটিবার। শুধু মোবাইলের মাধ্যমেই যতটুকু জানার
জেনে নিল। এটাকেই সে বিশ্বাস করল এবং পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনকে বিশ্বাস
করতে বাধ্য করল। অর্থাৎ ওরা এসব বিষয়ে প্রশ্ন তুললে নুসরাত ও তার ভাবী এত
শক্তভাবে মুনীরের সাফাই গাইল যে, অভিভাবকরা ওদের কথাকেই সঠিক বলে ধরে নিল।
তারা ভাবল, ছোটবেলা থেকে নুসরাতকে যেমন দেখে এসেছি, তাতে ধারণা করা যায়, সে
কোনোদিন এমন কাজ করবে না, যদ্বারা তাদের লজ্জিত হতে হবে!
এখানে
নুসরাতের অভিভাবকদের যে মারাত্মক ভুলটি হয়েছে তা হলো, তারা নুসরাতের উপর
মাত্রাতিরিক্ত আস্থা ও বিশ্বাস প্রদর্শন করেছে। ফলে তার মতামতকেই তারা
প্রাধান্য দিয়ে বিবাহের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ মোবাইলেই সমাধা করে
ফেলেছে। অথচ মোবাইলের এই বিবাহ কী পদ্ধতিতে হয়েছে এবং শরয়ি দৃষ্টিকোণ থেকে
তা কতটুকু সহিহ্ হয়েছে তাও আলোচনার দাবী রাখে! সে যাহোক, আমি বলছিলাম
অভিভাবকদের ভুলের কথা। অভিভাকরা নুসরাতের উপর আস্থা থাকার কারণে সরেজমিনে
গিয়ে ছেলের খোঁজ খবর নেয়নি। অথচ তাদের জানা উচিত ছিল যে, সৃষ্টিগতভাবেই
মেয়েদের আকল-বুদ্ধি কম থাকে। তাদের জ্ঞানে থাকে অপরিপক্কতা। ফলে পুরুষদের
মতো দূরদর্শী চিন্তা-ভাবনা করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। তাছাড়া মেয়েরা
অনেকক্ষেত্রেই আবেগতাড়িত হয়ে কাজ করে। ফলে ফলাফল যা হওয়ার তাই হয়।
যাহোক
নুসরাত এবার মুনীরের সাথে স্বামী-স্ত্রীসুলভ কথাবার্তা বলে এবং তার
কথাবার্তার পরিমাণ পূর্বের তুলনায় কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়। দিনরাত মিলিয়ে
প্রত্যহ ১০/১৫ বার কথা হয় মুনীরের সাথে। সে মুনীরকে 'জান' বলে সম্বোধন করে।
মুনীরও তাকে 'জান' বলে ডাকে। কিন্তু মুনীরের এই 'জান' বলা যে শুধুই অভিনয়,
তা কখনো বুঝার চেষ্টা করেনি নুসরাত!
মোবাইলে
টাকা না থাকলে এবং মুনীরের ফোন আসতে বিলম্ব হলে প্রচণ্ড অস্থির হয়ে ওঠে
নুসরাত। নিজ রুমে গিয়ে কান্না শুরু করে দেয় হাউমাউ করে। প্রতিদিন ভোরে
মুনীরের ফোনেই তার ঘুম ভাঙ্গে। যেহেতু নুসরাত সত্যিকারের স্বামী হিসেবেই
মুনীরকে জানে, তাই সে কোথাও যাওয়া কিংবা কোনো কাজ করার পূর্বে মুনীরের নিকট
ফোন করে অনুমতি নেয়!
নুসরাতের
এসব কর্মকাণ্ড দেখে ওর বান্ধবীরা বলে- আহা! নুসরাত কত স্বামীভক্ত! কত
পতিপ্রাণা!! বর্তমান যুগে এমন স্ত্রী লাখেও একটা মিলে না। আসলে স্ত্রী হলে
এমনই হওয়া উচিত!
মুনীরের
সাথে কথা বলে, মুনীরকে নিয়ে কল্পনা করে বেশ সুখেই কেটে যাচ্ছিল নুসরাতের
দিনকাল। সে মুনীরকে নিয়ে এত বেশি ভাবত যে, কোন্দিন কত মিনিট সে মুনীরের
সাথে কথা বলেছে তাও ডাইরীতে লিখে রেখেছে। শুধু তাই নয় মুনীরের যেসব কথা তার
বেশি ভালো লেগেছে সেসব কথা সে ডাইরীতে তুলে রেখেছে। যাতে বাসর রাতে এসব
লেখা উপহার হিসেবে মুনীরকে দিতে পারে!
একদিন
সকাল বেলা। মুনীরকে নিয়ে ভাবছে নুসরাত। ঠিক এমন সময় মুনীরের মোবাইল থেকে
কল আসে নুসরাতের মোবাইলে। নুসরাত বেশ খুশিমনে মোবাইল রিসিভ করে। কিন্তু
একি! এযে মুনীর নয়! এযে মেয়েকণ্ঠ! ক্ষণিকের জন্য নুসরত কিছুটা অপ্রস্তুত
হয়ে যায়। পরে স্বাভাবিক হয়ে জিজ্ঞেস করে-
কে ?
উত্তর
এল- "আমি মিশু। মুনীরের একমাত্র প্রিয় মানুষ। প্রাণের মানুষ!! আজ থেকে
তুমি মুনীরকে জনমের মতো ভুলে যাও। আর কোনোদিন ওর কাছে ফোন করো না। ও আমার।
শুধুই আমার। আর হ্যাঁ, একটা কথা ভালো করে জেনে রেখো, মুনীর এতদিন তোমার
সাথে প্রেমের মিথ্যে অভিনয় করেছে। তোমাকে সে ধোঁকা দিয়েছে। সে তোমাকে
মোটেও ভালোবাসে না। সে যাকে ভালোবাসে- সে হলাম আমি। মুনীরের হৃদয় একমাত্র
আমি ছাড়া আর কেউ জয় করতে পারেনি। পারবেও না। আমি মুনীরকে গভীরভাবে
ভালোবাসি। আমাদের এ ভালোবাসা একদিন দু'দিনের নয়, বহুদিনের; সেই ছোটকাল
থেকে। তোমার অবগতির জন্য আরো জানাচ্ছি যে, মুনীরের সাথে আমার দৈহিক
সম্পর্কও স্থাপিত হয়েছে। আমার এসব কথা তোমার হয়তো বিশ্বাস হবে না। বিশ্বাস
না হলেও করার কিছুই নেই। তবে আমি জানি, আমি যা বলেছি সত্য বলেছি। একটুও
মিথ্যে বলিনি। মুনীর আর আমি এক গ্রামের বাসিন্দা। সুতরাং ওকে আমার চেয়ে
তোমার বেশি না চেনারই কথা। তাই বলছি, এখনও সময় আছে, মুনীরকে ভুলে যাও।
অন্যথায় ঠকবে।"
জবাবে
নুসরাত বলল- "তুমি মিথ্যে বলছ। মুনীর কখনো তোমার হতে পারে না। মুনীর আমার।
শুধুই আমার। সে অন্য কারো হওয়ার প্রশ্নই ওঠেনা। আমি জানি, মুনীর আমার সাথে
প্রতারণা করবে না। অতএব তোমার কথা আমি মোটেও বিশ্বাস করি না।" এ বলে
নুসরাত লাইন কেটে দিল।
মিশুকে
এসব কথা খুব কঠিন গলায় বললেও নুসরাতের বুকে পানি নেই! ভিতরে শুরু হয়েছে
চরম অস্থিরতা। এমনকি মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার উপক্রম! এতদ্সত্ত্বেও নুসরাত
একটু স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করল এবং মোবাইল হাতে নিয়ে মুনীরের কাছে ফোন
করে সবকিছু খুলে বলল।
সবশুনে মুনীর বলল- নুসরাত! কারো কথায় তুমি কান দিও না। আমি তোমার আছি। তোমার হয়েই থাকব।
এরপর
পুরো একমাস নুসরাতের কাছে একটি কলও দেয়নি মুনীর। শুধু তাই নয়, নুসরাত যেন
কল দিতে না পারে, সেজন্য সে সিম খুলে রেখে দিয়েছে। ফলে নুসরাত দুঃখ-কষ্ট ও
পেরেশানিতে পাগলের মতো হয়ে গেছে! নাওয়া খাওয়া ভুলে গেছে! চোখ থেকে বিদায়
নিয়েছে রাতের ঘুম!!
একমাস
পর যখন মুনীর আবার ফোন করে এতদিন ফোন না করার কারণ হিসেবে মিথ্যে অজুহাত
পেশ করল, তখন নুসরাত তা নির্দ্বিধায় বিশ্বাস করল এবং তার আত্মায় পুনরায়
পানি এল। সে প্রাণভরে নিঃশ্বাস নিল এবং ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে এল। সেদিন
থেকে ওদের কথাবার্তা আগের মতোই চলতে লাগল।
এ
ঘটনা যখন নুসরাতের বান্ধবীরা শুনল তখন তারা বলল, যে ছেলে তোমাকে বিয়ে করে
অন্য মেয়ের সাথেও সম্পর্ক গড়তে পারে এবং দীর্ঘ একমাস পর্যন্ত তোমার সাথে
কথা না বলে থাকতে পারে, কেন তুমি আবার তাকে প্রশ্রয় দিলে? কেন তুমি তার কথা
বিশ্বাস করলে? আমাদের মনে হচ্ছে, সে একটা ভণ্ড, প্রতারক। সে তোমার সাথে
প্রেম নয়, প্রেমের অভিনয় করছে। তোমার জীবনকে ধ্বংস করার উপায় খুঁজছে। সে
তোমাকে নিশ্চিত ধোঁকা দিচ্ছে। অতএব তোমার মঙ্গল এতেই যে, তুমি তাকে ভুলে
যাও। কোনোদিন তার কাছে ফোন করো না এবং সে ফোন করলেও তুমি রিসিভ করো না।
কিন্তু
নুসরাতের সাফ উত্তর- মুনীর কোনোদিন আমাকে ধোঁকা দিবে না। সে আমার সাথে
প্রতারণা করতে পারে না। কেননা সে আমার, আমি তার। আমরা দু'জন দু'জনার। ওকে
ছাড়া আমি যেমন বাঁচব না, আমার বিশ্বাস, সেও আমাকে ছাড়া বাঁচবে না।
এরপর
পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন সবাই মিলে নুসরাতকে বুঝাল। সবাই মুনীরকে ভুলে
যেতে বলল। কিন্তু নুসরাত কারো কথায়ই কর্ণপাত করল না। বরং আগের মতোই সে
মুনীরের সাথে কথাবার্তা ও যোগাযোগ রক্ষা করে চলতে লাগল।
২০০৭
সালের ডিসেম্বর মাসের ২৯ তারিখ। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা। নুসরাত ফোন দিল
মুনীরকে। ফোন রিসিভ করার পর নুসরাত কিছুটা অভিমানের সুরে বলল, মুনীর! তুমি
জানি কেমন হয়ে যাচ্ছ!! এখন তুমি আগের মতো আমাকে ভালোবাস না। আগের মতো
সাজিয়ে গুছিয়ে সুন্দর করে কথা বল না। আচ্ছা শুনি! এমন করছ কেন তুমি ? প্রিয়
জান্! তুমি কি জানো না, তুমি এমন করলে আমি বাঁচব না!!
জবাবে
মুনীর যা বলল তা শুনার জন্য কোনোদিন প্রস্তুত ছিল না নুসরাত। মুনীর বলল,
তোমার বাঁচার প্রয়োজন নেই। বিশ্বাস করো, আমি তোমার সাথে প্রেম করিনি।
তোমাকে একদিনের জন্যও আমি মন থেকে ভালোবাসিনি। এতদিন আমি তোমার সাথে শুধুই
অভিনয় করেছিলাম। দেখতে চেয়েছিলাম, তুমি শেষ পর্যন্ত কোথায় যাও! তোমার প্রেম
ও ভালোবাসার সফর কোথায় গিয়ে ক্ষ্যান্ত হয়!! শোনো নুসরাত! আজ আমি আমার
অভিনয় শেষ করলাম!! আর মোবাইলের মাধ্যমে তোমার আমার যে বিয়ে হয়েছে সেটি যদি
সত্যিকার অর্থেই বিয়ে হয়ে থাকে, তাহলে এখনই তোমাকে তিন তালাক দিলাম! সুতরাং
আজ থেকে তোমার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। তুমি আমাকে চিরদিনের জন্য ভুলে
যাও। এতটুকু বলে মোবাইল বন্ধ করে দিল মুনীর!!!
মুনীরের
মুখ থেকে এসব কথা শুনে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে নুসরাত। মরার মতো পড়ে থাকে
কিছুক্ষণ। পরে যখন জ্ঞান ফিরে, তখন সে পাগলের মতো জান জান বলে চিৎকার করতে
থাকে। কিন্তু তার এ চিৎকার বাতাসের সাথে মিলিয়ে যায়। মুনীরকে কিছুই করার
থাকল না তার কিংবা তার অভিভাবকদের। কেননা তাদের কাছে মুনীরের ফোন নম্বর
ছাড়া আর কিছুই ছিল না। একবার অবশ্য নুসরাতের পিতা মুনীরের একটি ঠিকানা
সংরক্ষণ করে রেখেছিলেন। কিন্তু পরে খোঁজ নিয়ে দেখা গেল, সেই ঠিকানায় মুনীর
নামের কোনো ছেলের অস্তিত্ব নেই!
প্রিয়
পাঠক-পাঠিকা! ঠিকানাবিহীন মুনীরকে কোথায় খুঁজে পাবে নুসরাত ? কীভাবে করবে
তার সাথে পুনঃ যোগাযোগ ? মুনীরের বিরহ বেদনায় নুসরাত আজ মৃতপ্রায়! স্যালাইন
আর ঔষধপত্রের মাধ্যমে জ্বলে আছে তার নিভু নিভু জীবন প্রদীপ! কখন তা
একেবারে নিভে যায় কে জানে ?
সময়
হারিয়ে নুসরাত তার ভুল বুঝেছে। তাই সে এখন আক্ষেপ করে বারবার বলছে, আহা!
কতই না ভালো হতো যদি ইসলামের বিধি-বিধান পুরোপুরি মেনে চলতাম। অবৈধ প্রেমে
না জড়াতাম। স্বীয় প্রতিজ্ঞায় অটল থাকতাম। হায়! কতই না মঙ্গল হতো, যদি আমি
মুনীর নামক মহা-প্রতারকের ফাঁদে পা না দিতাম। হায় আফসোস!! বান্ধবী ও
আত্মীয়-স্বজনরা যখন বলেছিল, অন্তত তখনও যদি মুনীরকে ভুলে যেতাম!!!
মুহতারাম
পাঠকবৃন্দ! হয়তো নুসরাতের জীবন প্রদীপ চিরতরে নিভেই গিয়েছে! কেননা এ ঘটনা
লিখে পাঠানোর পর একদিনও সে ফোন করে জানতে চায়নি যে, তার এ হৃদয়বিদারক
ঘটনাটা হৃদয় গলে সিরিজে ছাপা হয়েছে কিনা? বা কখন কোন্ খণ্ডে ছাপা হবে?
যাহোক আমাদের এখন তার জন্য দোয়া করা ছাড়া আর কিছুই করার নেই। হে আল্লাহ!
তুমি তাকে ক্ষমা করো। আর তার এ ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে গোটা পৃথিবীর
মেয়েদেরকে বিবাহপূর্ব প্রেম-ভালোবাসা থেকে বিরত থাকার তাওফিক দাও। আমীন।
সমাপ্ত
লেখক: মুফীজুল ইসলাম আব্দুল আযীয
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান
উৎস: ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব
উৎস: ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন