শাবানের পনেরতম রজনী উদযাপনের বিধান
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে প্রদান করেছেন পূর্ণাঙ্গ একটি জীবন বিধান।
এরশাদ হচ্ছে :
আজ আমি তোমাদের দ্বীন পূর্ণ করে দিলাম। পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম আমার নেয়ামত ; তোমাদের জন্য ইসলাম ধর্ম মনোনীত ও পছন্দ করলাম। (সূরা মায়েদা : ৩)
অপর স্থানে এরশাদ হয়েছে :
তাদের কি আল্লাহর সমকক্ষ শরিক-দেবতা আছে ?—যারা তাদের জন্য আল্লাহকে পাশ কাটিয়ে এমন ধর্ম সিদ্ধ করেছে, যার অনুমতি তিনি প্রদান করেননি ?’ শুরা-২১।
হাদিসে এসেছে :
আয়েশা রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে আমাদের ধর্মে এমন কিছু আবিষ্কার করল, যা এতে নেই, তা পরিত্যক্ত। বোখারি, মুসলিম।
অপর হাদিসে এসেছে :
জাবের রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জুমার খুতবায় প্রায় বলতেন: সর্বোত্তম বাণী আল্লাহর কিতাব। সর্বোত্তম আদর্শ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আদর্শ। ধর্মের ভেতর নতুন আবিষ্কার ঘৃণিত ও নিন্দিত। প্রত্যেক বেদআত বিচ্যুতি ও গোমরাহি। মুসলিম।
আরো অনেক আয়াত, অসংখ্য হাদিস বিদ্যমান, যার মাধ্যমে প্রতীয়মান হয় : এ দ্বীন পরিপূর্ণ, তাতে সংযোজন-বিয়োজনের কোন সুযোগ নেই-সম্ভাবনা নেই। আল্লাহ এ উম্মতের ধর্ম পূর্ণ করে দিয়েছেন, প্রদান করেছেন সমূহ নেয়ামত। দ্বীন সম্পূর্ণ হওয়ার আগ পর্যন্ত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অন্তর্ধাম হয়নি। তিনি আল্লাহর প্রণয়নকৃত, মনোনীত সমস্ত আমল ও বিধি-নিষেধের সুস্পষ্ট বর্ণনা দিয়েছেন। বাণী ও কাজের মাধ্যমে পেশ করেছেন বাস্তব নমুনা। আরো বলেছেন : যে নতুন কোন বাণী বা আমল আবিষ্কার করে ইসলামের সাথে সম্পৃক্ত করবে, সংশ্লিষ্ট করবে তার আহকামের সাথে, সে আমল বা বাণী খোদ আবিষ্কারকের উপর নিক্ষিপ্ত হবে—যদিও তার নিয়ত ভাল হয়। সাহাবায়ে কেরাম রা. এবং ওলামায়ে ইসলাম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাণী যথার্থভাবে উপলব্ধি ও হৃদয়ংগম করেছেন। প্রত্যাখ্যান করেছেন-নিন্দাবাদ জানিয়েছেন নতুন আবিষ্কৃত আমল তথা বেদআতের প্রতি। ইবনে ওদ্দাহ, তরতুশি, ইবনে শামাদের মত যারা সুন্নত, বেদআতের উপর কিতাব প্রণয়ন করেছেন, তারাও বর্ণনা করেছেন এ বিষয়টি স্পষ্ট করে।
মানুষের আবিষ্কৃত একটি বেদআতের উদাহরণ : শাবান মাসের পনেরো তারিখের রাতে মাহফিলের আয়োজন করা, দিনের বেলায় রোজা রাখা। বাস্তবতা হল, এ ব্যাপারে নির্ভরযোগ্য কোন প্রমাণ নেই। তবে, এ রাতের ফজিলতের ব্যাপারে কয়েকটি দুর্বল হাদিসের উল্লেখ পাওয়া যায়, যা হাদিস নিরীক্ষার বিচারে গ্রহণযোগ্য নয় কোনভাবে। এ রাতে নামাজের ফজিলত সম্পর্কে বর্ণিত সব কটি হাদিস জাল, বানোয়াট। নিম্নে বিষয়টি নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনার প্রয়াস পাব।
শাম দেশের একদল আলেম শাবানের পনেরো তারিখের রাতের ফজিলত এবং এতে মাহফিলের আয়োজন করা, এবাদত করা ও পরদিন রোজা রাখার প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। তবে, অধিকাংশ ওলামায়ে কেরামের অভিমত : এ রাতে মাহফিল আয়োজন বেদআত। এ রাতের ফজিলতের ব্যাপারে বর্ণিত হাদিসগুলো খুবই দুর্বল ; তার মাঝে কিছু বানোয়াট ও জাল। এ প্রসঙ্গে হাফেজ ইবনে রজব লাতায়েফুল মাআরেফ কিতাবে, ও আরো অনেকে স্বীয় লিখনিতে বিস্তারিত লিখেছেন। স্মর্তব্য : অকাট্য ও প্রামাণ্য দলিল দ্বারা মূল বিষয়টি প্রামাণ্যতার স্তরে উপনীত হলে, আনুষঙ্গিক বিষয়-বস্তুর জন্য দুর্বল হাদিস বিবেচ্য, গ্রহণীয়। আলোচ্য শাবান মাসের পনেরো তারিখের ফজিলতের ব্যাপারে যেহেতু কোন প্রামাণ্য দলিল নেই, তাই এ রাতের নামাজ, দিনের রোজার ব্যাপারে বর্ণিত দুর্বল হাদিস বিবেচ্য, গ্রহণযোগ্য নয়। শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ রহ. এ মূল-নীতি লিপিবদ্ধ করেছেন।
আরেকটি বিষয় প্রণিধানযোগ্য : সকল ওলামায়ে কেরামের মতানৈক্য ও বিরোধপূর্ণ অমীমাংসিত বিষয়ে কোরআন হাদিসের শরণাপন্ন হওয়া আবশ্যক। কোরআন-হাদিস উভয়ের সম্মিলিত, কিংবা তার একটির প্রদানকৃত, সমর্থিত সিদ্ধান্ত-ই পালনীয়, অবশ্য-করণীয়। অন্যথায় পরিত্যাজ্য, পরিত্যক্ত। কোরআন হাদিস বহির্ভূত এবাদত বেদআত, অবৈধ। তার জন্য শ্রম ব্যয় করা, তার প্রতি আহ্বান করা নিষিদ্ধ।
পবিত্র কোরআনে এরশাদ হচ্ছে :
হে ইমানদারগণ ! তোমরা আল্লাহ এবং তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং যারা তোমাদের ভেতর কোরআন-হাদিসের জ্ঞানে জ্ঞানী, তাদের অনুসরণ কর। যদি তোমরা আল্লাহ এবং কেয়ামত-দিবস প্রকৃত অর্থে বিশ্বাস কর, প্রমাণ-স্বরূপ বিরোধপূর্ণ বিষয়গুলো অবশ্যই আল্লাহ এবং তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সিদ্ধান্তের উপর সোপর্দ কর। মঙ্গল এতেই, এটাই সুন্দর মীমাংসা। (নিসা:৫৯)
আরো বলেন :
তোমাদের বিরোধপূর্ণ বিষয়ের সুষ্ঠু মীমাংসা একমাত্র আল্লাহ তাআলার নিকট। (শুরা:১০)
আরো এরশাদ হয়েছে :
হে নবি, আপনি বলুন : তোমরা যদি আল্লাহকে মহব্বত কর, তাহলে আমার অনুসরণ কর, আল্লাহ তোমাদের মহব্বত করবেন, তোমাদের পাপ মোচন করবেন। আলে ইমরান : ৩১
আরো বলেন :
না, তোমার প্রভুর শপথ ! তারা ইমানদার নয়—যতক্ষণ পর্যন্ত বিরোধপূর্ণ বিষয়ে তারা আপনাকে মীমাংসাকারী স্থির না করবে। এবং আপনার ফয়সালা কোন ধরনের সংশয় বোধ না করে সন্তুষ্ট চিত্তে মেনে না নিবে, সর্বান্তকরনে। নিসা:৬৫
এ ব্যাপারে আরো হাদিস আছে, যা দ্বারা প্রতীয়মান হয় : বিরোধপূর্ণ বিষয়ে কোরআন-হাদিসের শরণাপন্ন হওয়া অবশ্য কর্তব্য ; এবং সে ফয়সালায় সন্তুষ্ট থাকা ইমানের পরিচায়ক। ইহজগৎ ও পরজগতের বিবেচনায় এতেই বান্দার মঙ্গল নিহিত।
হাফেজ ইবনে রজব রহ. স্বরচিত কিতাব ‘লাতায়েফুল মা‘আরেফ’-এ বিরোধপূর্ণ বিষয়গুলোর সুষ্ঠু মীমাংসার আলোচনায় বলেন : শাম দেশের কয়েকজন তাবেয়ী যেমন খালেদ ইবনে মাদান, মাকহুল, লুকমান ইবনে আমের এবং আরো অনেকে শাবানের পনেরো তারিখের রাতকে খুব গুরুত্ব দিতেন, এবং এতে যথাসাধ্য এবাদত করতেন। পরবর্তীতে, তাদের থেকেই মানুষ এ রাতকে সম্মান প্রদর্শন ও গুরুত্বারোপ করা শিখেছে। বলা হয় : এ ব্যাপারে তাদের কাছে কিছু ইসরাইলী বর্ণনা পৌঁছেছে। অর্থাৎ ইহুদি রেওয়ায়েত রয়েছে। ... তবে, এ আমল মক্কা-মদিনার অধিকাংশ আলেম প্রত্যাখ্যান করেছেন। যেমন আতা, ইবনে আবি মুলাইকা, আব্দুর রহমান ইবনে জায়েদ ইবনে আসলাম। মদিনার ফেকাহবিদ আলেম সমাজও বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছেন। ইমাম মালেক, তার অনুসারী এবং অন্যান্য আলেমদের মতও এটি। ইমাম আহমদ রহ. হতে শাবানের পনেরো তারিখ সম্পর্কে কোন অভিমত পাওয়া যায়নি। আলোচনার সমাপ্তিতে ইবনে রজব বলেন : শাবানের পনেরো তারিখে নামাজ পড়া—ইত্যাদির ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তার সাহাবাদের নিকট হতে কোন প্রমাণ নেই।
সুতরাং, বলা যায় : যে সমস্ত বিষয় শরিয়তের মানদণ্ডে প্রমাণিত-উন্নীত নয়, তা উদ্ভাবন করা কোন মুসলমানের জন্য বৈধ বা সিদ্ধ হতে পারে না, হোক-না তার সম্পাদন একক বা সম্মিলিতভাবে। প্রকাশ্য বা অপ্রকাশ্যভাবে। কারণ, সব-ধরনের আমল-ই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিুোক্ত বানীর নিষেধ ভুক্ত।
এরশাদ হচ্ছে :
যে এমন আমল সম্পাদন করল, যে আমলের নমুনা আমাদের আমলে নেই, তা পরিত্যক্ত। মুসলিম
ইমাম আবু বকর তরতুশি রহ. কিতাবুল হাওয়াদেস ওয়াল বিদা নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেন : ইবনে ওদ্দাহ হতে বর্ণিত, জায়েদ ইবনে আসলাম বলেছেন বিদগ্ধ ও গবেষক আলেম, এবং ফেকাহবিদদের কাউকে শাবানের পনেরো তারিখের প্রতি কোন প্রকার ভ্রক্ষেপ করতে দেখিনি। ভ্রক্ষেপ করতেন না তারা মাকহুলের হাদিসের প্রতিও। আবু মুলাইকাকে কেউ বলেছে, জিয়াদ আন-নামিরি বলে, শাবান মাসের পনেরো তারিখের সওয়াব লাইলাতুল কদরের সওয়াব-তুল্য। তিনি বলেন, আমি যদি তাকে এ কথা বলতে শুনি, আর আমার হাতে লাঠি থাকে, অবশ্যই তাকে শায়েস্তা করব। জিয়াদ একজন গল্পকার।
শাওকানি রহ. আল-ফাওয়ায়েদ আল-মাজমুআ- তে বলেন, একটি হাদিস আছে : হে আলি, যে ব্যক্তি শাবানের পনেরো তারিখে একশত রাকাত নামাজ পড়ে, প্রত্যেক রাকাতে সূরায়ে ফাতেহা এবং দশবার সূরায়ে এখলাস, আল্লাহ তার সমস্ত প্রয়োজন পুরো করবেন। ... হাদিসটি মওজু, বানোয়াট, জাল ; রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপর স্পষ্ট অপবাদ। এ হাদিসের সওয়াবের প্রতিশ্র“তির প্রতি দৃষ্টি দিলে যে কোন বিবেকবান বুঝতে পারবে, এটি বানোয়াট। এর বর্ণনাকারীরও পরিচয় পাওয়া যায়নি। এ হাদিসের আরো বর্ণনার সূত্র পাওয়া যায়, সবগুলো বানোয়াট। বর্ণনাকারীগণ পরিচয়হীন।
মুখতাসার নামক কিতাবে আছে, ইবনে হিব্বানে আলি রা. হতে একটি হাদিস আছে, যখন শাবান মাসের পনেরো তারিখ সমাগত হয়, তোমরা রাতে নামাজ পড়, দিনের বেলায় রোজা রাখ। হাদিসটি দুর্বল।
লাআ-লি নামক কিতাবে আছে, দশবার সূরা এখলাস দিয়ে একশত রাকাত নামাজ পড়ার হাদিসটি বানোয়াট। এর তিনটে সূত্রের অধিকাংশ বর্ণনাকারী অবিশ্বস্ত, দুর্বল, অপরিচিত। তদ্রুপ ত্রিশবার সূরায়ে এখলাস দিয়ে বার রাকাত কিংবা চৌদ্দ রাকাত নামাজ পড়ার হাদিসও বানোয়াট।
পরিতাপের বিষয়, এ সমস্ত হাদিসের কারণে ফুকাহায়ে কেরামের একটি দল ধোঁকায় পতিত হয়েছেন ; যেমন, ইমাম গাজ্জালি। তদ্রুপ মুফাসসিরিনদের এক দলও। এ রাতে নামাজের যে বিভিন্ন পদ্ধতি বর্ণিত হয়েছে, সবগুলোই পরিত্যাজ্য।
হাফেজ ইরাকি রহ. বলেন, শাবান মাসের পনেরো তারিখে নামাজের ব্যাপারে বর্ণিত হাদিস বানোয়াট, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপর মিথ্যারোপ।
ইমাম নববী রহ. মাজমুউ কিতাবে বলেন, রাগায়েব নামক সালাত অর্থাৎ রজবের প্রথম জুমায় মাগরিব এবং এশার মধ্যবর্তী সময়ে বার রাকাত নামাজ এবং শাবানের পনেরো তারিখে একশত রাকাত নামাজ, মূলত বেদআত, নিন্দনীয়, পরিত্যাজ্য। কুতুল কুলুব তদ্রুপ এহইয়া উলুমুদ্দিন-এ নামাজ দুটির উল্লেখ এবং এ ব্যাপারে বর্ণিত হাদিস দেখে কারো ধোঁকায় পড়া ঠিক হবে না। কারণ, সবগুলো-ই ভিত্তিহীন, অমূলক। এ ব্যাপারে যদি কেউ দু’চার পৃষ্ঠা লিখে থাকে, তা দেখেও বিভ্রান্ত হওয়া চলবে না। কারণ, এগুলো তাদের বিচ্যুতি।
আজ আমি তোমাদের দ্বীন পূর্ণ করে দিলাম। মায়েদা : ৩
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :
যে আমাদের ধর্মে নতুন কিছু আবিষ্কার করল, যা ইতিপূর্বে বিদ্যমান ছিল না, তা পরিত্যক্ত।
আবু হুরায়রা রা. হতে মুসলিম শরিফে বর্ণিত আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :
তোমরা অন্যান্য রাত বাদ দিয়ে বিশেষ করে জুমার রাতকে এবাদতের জন্য নির্দিষ্ট কর না। আবার অন্যান্য দিন বাদ দিয়ে বিশেষ করে এ দিন রোজা রেখ না। তবে, কারো যদি রোজা রাখার পরম্পরায় এ দিন চলে আসে, তবে আপত্তি নেই।
যদি কোন রাতকে এবাদতের জন্য বিশিষ্ট করা বৈধ হত, জুমার দিবসই ছিল শ্রেয়তর। কারণ, বিশুদ্ধ সনদে প্রাপ্ত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাদিস দ্বারা প্রমাণিত, জুমার দিবস, দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ দিবস। যখন এ রাতকেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবাদতের জন্য বিশিষ্ট করতে নিষেধ করেছেন, অন্য রাতের প্রশ্নই উঠে না। তবে, সহি ও বিশুদ্ধ দলিলের মাধ্যমে প্রমাণিত হলে ভিন্ন কথা।
যেহেতু কদরের রাত এবং রমজানের রাতে এবাদতের প্রতি অধিক গুরুত্বারোপ, নামাজ পড়া শরিয়ত সিদ্ধ ও যথার্থ, সেহেতু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বীয় উম্মতকে এ জন্য উৎসাহিত করেছেন, প্রেরণা দিয়েছেন। নিজেও সাধ্য-মত এবাদত করেছেন।
বোখারি, মুসলিমে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন :
যে ব্যক্তি রমজান মাসে ইমান ও সওয়াবের নিয়তে নামাজ পড়বে, আল্লাহ তার সমস্ত গুনাহ মাফ করে দিবেন। তিনি আরো বলেছেন, যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরে ইমান ও সওয়াবের নিয়তে নামাজ পড়বে আল্লাহ তার সমস্ত গুনাহ মাফ করে দিবেন।
যদি শাবানের পনেরো তারিখ রাত, রজব মাসের প্রথম জুমার রাত অথবা ইসরা ও মেরাজের রাতে কোন মাহফিল কিংবা সাধারণ নিয়মের বহির্ভূত কোন এবাদত করা বৈধ হত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতকে অবগত করে যেতেন, অথবা নিজে সম্পাদন করতেন। আর তিনি এর কিছু সম্পাদন করলে, অবশ্যই সাহাবায়ে কেরাম আমাদের পর্যন্ত পৌঁছে দিতেন, গোপন রাখতেন না। তারাই সর্বোত্তম উম্মত, মানব জাতির প্রতি সীমাহীন হিতাকাক্সক্ষী।
আমাদের কাছে স্পষ্ট : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে কিংবা তার সাহাবায়ে কেরাম হতে রজবের প্রথম জুমার রাত এবং শাবানের পনেরো তারিখের রাতের ফজিলতের ব্যাপারে কোন প্রমাণ নেই। সুতরাং, এ রাত উদযাপন ইসলামে এক নতুন আবিষ্কার। তদ্রুপ, এ রাতকে কোন এবাদতের জন্য বিশিষ্ট করা বেদআত। অনুরূপ, রজবের সাতাশ তারিখের রাত কতিপয় মানুষের ধারণা, এ রাতে ইসরা ও মেরাজ হয়েছে এবাদতের জন্য নির্দিষ্ট করা জায়েয নয়। এটি করা যেত, যদি ইসরা ও মেরাজের তারিখ নিশ্চিতরূপে জানা যেত। ওলামাদের সঠিক সিদ্ধান্ত হল এ রাতটি নিরূপিত হওয়ার ব্যাপারে সঠিক প্রমাণ মিলেনা। আর যারা বলে, সাতাশ তারিখ ইসরা ও মেরাজের রাত, তাদের কথা অমূলক, ভিত্তিহীন। সহিহ হাদিসে এর কোন সমর্থনও পাওয়া যায় না।
কবি বলেন :
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আদর্শানুযায়ী সম্পাদিত কর্মই সর্বোত্তম কর্ম। নতুন উদ্ভাবিত, আবিষ্কৃত কর্মই সবচে’ নিন্দিত।
আল্লাহ তাআলার নিকট প্রার্থনা, তিনি আমাদেরকে সুন্নতকে আঁকড়ে ধরে তার উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার তওফিক দান করুন। তওফিক দান করুন এর বিপরীত সব কিছু হতে নিরাপদ থাকার।আমিন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন