Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

See Our Articles In Different Styles... Grid View List View

সোমবার, ৪ নভেম্বর, ২০২৪

সিয়াম বিষয়ক নির্বাচিত ফাতওয়া (২য় পর্ব)

Views:

A+ A-

 সিয়াম বিষয়ক নির্বাচিত ফাতওয়া (২য় পর্ব)


১ম পর্ব | ২য় পর্ব | ৩য় পর্ব

কী ধরনের রোগ একজন রোযাদারের জন্য সাওম ভঙ্গ বৈধ করে?
ফাত্‌ওয়া নং - 12488
প্রশ্ন : কোন ধরনের রোগ রমযান মাসে একজন মানুষের জন্য সাওম ভঙ্গ বৈধ করে? যে কোনো রোগে, যদি তা অল্পও হয়, তবে কী সাওম ভঙ্গ করা জায়েয (বৈধ)?
উত্তর : সকল প্রশংসা আল্লাহ্‌র জন্য।
‘আলিমগণের অধিকাংশের মতে, যাঁদের মধ্যে রয়েছেন চার জন ইমাম (আবূ হানীফাহ্, মালিক, শাফি‘ঈ ও আহমাদ), একজন রোগীর জন্য রমযান মাসে সাওম ভঙ্গ করা জায়েয নয় যদি না তার রোগ তীব্র হয়।


আর তীব্র রোগের অর্থ হলো :
১.সাওমের কারণে যদি রোগ বেড়ে যায়।
২.সাওমের কারণে যদি আরোগ্য লাভে দেরি হয়।
৩.সাওমের কারণে যদি খুব বেশি কষ্ট হয় যদিও বা তার রোগ বেড়ে না যায় বা সুস্থতায় বিলম্ব না হয়।
৪.এর সাথে আলিমগণ আরও যোগ করেছেন এমন ব্যক্তিকে যার সিয়াম পালনের কারণে অসুস্থ বা রোগ হবার আশংকা আছে।

ইবনু ক্বুদামাহ-রাহিমাহুল্লাহ-‘আল-মুগনী’ (৪/৪০৩)-তে বলেছেন :
‘যে রোগ সাওম ভঙ্গ করা বৈধ করে তা হলো অত্যধিক রোগ যা সাওম পালনের কারণে বেড়ে যায় বা সে রোগ থেকে সুস্থতা লাভে দেরি হওয়ার আশংকা রয়েছে।’

ইমাম আহমাদকে বলা হল, “একজন রোগী কখন সাওম ভঙ্গ করতে পারে?”
তিনি বললেন, “যদি সে (সাওম পালন করতে) না পারে।”
তাঁকে বলা হলো : “যেমন জ্বর?”
তিনি বললেন, “কোন রোগ জ্বর থেকে কঠিনতর !...”
আর সঠিক মতটি হলো, যার সিয়ামের কারণে রোগের আশংকা আছে, যেমন-যে রোগী (তার রোগ) বেড়ে যাওয়ার ভয় করে তার জন্য সাওম ভঙ্গ করা বৈধ; কারণ সে রোগীর জন্যই সাওম ভঙ্গ করা বৈধ করা হয়েছে যার সিয়ামের কারণে নতুন করে রোগ হওয়ার, যেমন তা বেড়ে যাওয়ার বা বেশি সময় স্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা আছে, তাই নতুন করে রোগ হওয়া এর অর্থেই পড়ে।” (উদ্ধৃতির সমাপ্তি)

ইমাম আন-নাওয়াউয়ী ‘আল-মাজমূ’-তে (৬/২৬১) বলেছেন :
   “সাওম পালনে অক্ষম রোগী যার রোগের সুস্থতা আশা করা হয়, তার জন্য সাওম পালন বাধ্যতামূলক নয়....এই হুকুম প্রযোজ্য যদি সাওমের কারণে কষ্ট হয় আর এক্ষেত্রে এটি শর্ত নয় যে, তাকে এমন অবস্থায় পৌছাতে হবে যখন একেবারেই সাওম পালন সম্ভব নয়। বরং আমাদের অনেকে বলেছেন :
“সাওম ভঙ্গ করার ক্ষেত্রে শর্ত হলো সাওমের কারণে এমন কষ্ট হওয়া যা সহ্য করা কষ্টসাধ্য।” (উদ্ধৃতির সমাপ্তি)
‘আলিমদের মধ্যে কেউ কেউ বলেছেন, যে কোনো রোগীর জন্যই সাওম ভঙ্গ করা জায়েয, যদি সাওমের কারণে কষ্ট নাও হয়, আর এটি একটি বিরল মত। তাই অধিকাংশ ‘আলিমই তা প্রত্যাখ্যান করেছেন।

ইমাম আন-নাওয়াউয়ী বলেছেন:
   “হালকা রোগ যার কারণে বিশেষ কষ্ট হয় না, তার জন্য সাওম ভঙ্গ করা জায়েয নয়, এ ব্যাপারে আমাদের মধ্যে কোনো দ্বিমত নেই।” [আল-মাজমূ‘(৬/২৬১)]

শাইখ ইবনু ‘উসাইমীন বলেছেন :
   “যে রোগী সাওম পালনের কারণে প্রভাবিত (ক্ষতিগ্রস্ত) হয় না, যেমন-হালকা সর্দি, হালকা মাথা ব্যথা, দাঁতে ব্যথা ইত্যাদির ক্ষেত্রে সাওম ভঙ্গ করা হালাল নয়; যদিও ‘আলিমগণের কেউ কেউ বলেছেন তা তার জন্য হালাল এই আয়াতের ভিত্তিতে –
﴿وَمَن كَانَ مَرِيضًا أَوۡ عَلَىٰ سَفَرٖ فَعِدَّةٞ مِّنۡ أَيَّامٍ أُخَرَۗ﴾ [البقرة: ١٨٥] 
“আর যে কেউ অসুস্থ হবে অথবা সফরে থাকবে তবে অন্যান্য দিবসে সংখ্যা পূরণ করে নিবে।” [আল-বাকারাহ: ১৮৫]
তবে আমরা বলব -এই হুকুমটি একটি কারণের সাথে সম্পৃক্ত আর তা হলো, যাতে সাওম ভঙ্গ করা রোগীর জন্য বেশি আরামদায়ক হয়। যদি সে রোগী সাওমের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, তবে তার জন্য সাওম ভঙ্গ জায়েয নয় এবং তার উপর সাওম রাখা ওয়াজিব।” [আশ-শারহ আল-মুমতি‘ (৬/৩৫২)]
Islam Q & A

কেউ যদি তার যিম্মায় থাকা (ছুটে যাওয়া) সালাতের ও ফরয সাওমের সংখ্যা মনে করতে না পারে, তবে সে কী করবে?
ফাত্‌ওয়া নং - 72216
প্রশ্ন : যদি কোন মুসলিমের ছুটে যাওয়া সালাত ও সিয়ামের সংখ্যা মনে না থাকে, তবে সে কিভাবে তার কাযা করবে?
উত্তর : সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য।

প্রথমত:
ছুটে যাওয়া সালাতের ক্ষেত্রে তিনটি অবস্থা হতে পারে :

প্রথম অবস্থা :
ঘুম বা ভুলে যাওয়ার কারণে সালাত ছুটে যাওয়া। এ অবস্থায় তার উপর কাযা করা ওয়াজিব। এর দলীল রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী :
من نسي صلاة أو نام عنها فكفارتها أن يصليها إذا ذكرها رواه البخاري (572 ) ومسلم ( 684 ) – واللفظ له - .
“যে সালাত আদায় করতে ভুলে যায় বা সে সময় ঘুমিয়ে থাকায় তা ছুটে যায়, তার কাফফারাহ হলো সে যখনই তা মনে করবে তখনই (সাথে সাথে) সালাত আদায় করে নিবে।”
[বুখারী (৫৭২) ও মুসলিম (৬৮৪)। (শব্দ চয়ন) সহীহ মুসলিমের]
এবং সে তা ধারাবাহিকভাবে আদায় করবে যেমনটি তার উপর ফরয হয়েছে, প্রথমটি প্রথমে করবে। এর দলীল জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ এর হাদীস -
أن عمر بن الخطاب رضي الله عنه جاء يوم الخندق بعد ما غربت الشمس فجعل يسب كفار قريش قال : يا رسول الله ما كدت أصلي العصر حتى كادت الشمس تغرب ، قال النبي صلى الله عليه وسلم : والله ما صليتها ، فقمنا إلى بطحان فتوضأ للصلاة وتوضأنا لها فصلَّى العصر بعد ما غربت الشمس , ثم صلى بعدها المغرب . رواه البخاري ( 571 ) ومسلم ( 631 )
“উমার ইবনুল খাত্তাব-রাদিয়াল্লাহু-‘আনহু-খানদাকের যুদ্ধের দিন সূর্যাস্তের পর এসে ক্বুরাইশ কাফিরদের গালি দিতে লাগলেন, তিনি বললেন : “হে রাসূলুল্লাহ, আমি ‘আসরের সালাত আদায় করতে যেতে যেতে সূর্য ডুবে যেতে লাগল !” নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া-সাল্লাম বললেন : “আল্লাহর শপথ, আমিও এর (‘আসরের) সালাত আদায় করি নি।” এরপর আমরা বাত্বহান-এ দাঁড়ালাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া-সাল্লাম সালাতের জন্য ওযু করলেন, আমরাও সালাতের জন্য ওযু করলাম। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া-সাল্লাম সূর্য অস্ত যাওয়ার পর ‘আসরের সালাত আদায় করলেন, এরপর মাগরিব এর সালাত আদায় করলেন।” [বুখারী (৫৭১) ও মুসলিম (৬৩১)]

দ্বিতীয় অবস্থা:
এমন ‘উযরের কারণে সালাত ছুটে যাওয়া, যে সময় কোনো হুঁশ থাকে না, যেমন- কোমা। এ অবস্থার ক্ষেত্রে তার উপর থেকে সালাত (আদায়ের দায়িত্ব) উঠে যায় এবং তার উপর তা কাযা করা ওয়াজিব হয় না।
ফাতওয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটির ‘আলিমগণকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হয়েছিল :
আমার এক গাড়ির দুর্ঘটনা ঘটেছিল, ফলে তিন মাস হাসপাতালে শুয়ে ছিলাম, এ সময়ে আমার কোনো হুঁশ ছিল না। এ পুরো সময় আমি কোনো সালাত আদায় করি নি। আমার উপর থেকে কি তা (সালাত আদায়ের দায়িত্ব) উঠে যাবে নাকি পূর্বের সব (ছুটে যাওয়া) সালাত পুনরায় আদায় করব?
তাঁরা উত্তরে বললেন :
“উল্লেখিত সময়ের সালাত [কাযা আদায়ের দায়িত্ব] আপনার থেকে ছুটে যাবে; কারণ আপনার তখন কোনো হুঁশ ছিল না।”
তাঁদেরকে আরও প্রশ্ন করা হয়েছিল:
যদি কেউ এক মাস অজ্ঞান অবস্থায় থাকে আর এ পুরো মাস কোনো সালাত আদায় না করে, তবে সে কীভাবে ছুটে যাওয়া সালাত পুনরায় আদায় করবে?
তাঁরা উত্তরে বলেন:
“এ সময়ে যে সালাতসমূহ বাদ গিয়েছে তা কাযা করবে না, কারণ সে উল্লেখিত অবস্থায় পাগলের হুকুমের মধ্যে পড়ে। আর পাগল ব্যক্তির জন্য কলম উঠানো হয়েছে (অর্থাৎ তার উপর শারী‘আতের বিধি-বিধান প্রযোজ্য নয়)।” [ফাত্‌ওয়া আল-লাজ্‌নাহ আদ-দা’ইমাহ (৬/২১)]

তৃতীয় অবস্থা:
ইচ্ছাকৃতভাবে কোন ‘উযর (অজুহাত) ছাড়া সালাত ত্যাগ করা, আর তা কেবল দুই ক্ষেত্রেই হতে পারে:
এক:
সে যদি সালাতকে অস্বীকার করে, এর ফরয হওয়াকে মেনে না নেয়, তবে সে লোকের কুফরের ব্যাপারে কোনো দ্বিমত নেই। কারণ সে ইসলামের ভিতরে নেই। তাকে (আগে) ইসলামে প্রবেশ করতে হবে, এরপর এর আরকান ও ওয়াজিবসমূহ পালন করতে হবে। আর কাফির থাকা অবস্থায় যে সালাত ত্যাগ করেছে তার কাযা করা তার উপর ওয়াজিব নয়।
দুই:
সে যদি অবহেলা বা অলসতাবশত সালাত ত্যাগ করে, তবে তার কাযা শুদ্ধ হবে না। কারণ সে যখন তা ত্যাগ করেছিল, তখন তার কোন গ্রহণযোগ্য ‘উযর (অজুহাত) ছিল না। আর আল্লাহ সালাতকে সুনির্ধারিত, সুনির্দিষ্ট এক সময়ে ফরয করেছেন। আল্লাহ্ সুবহানুহূ ওয়া তা‘আলা বলেছেন :
﴿إِنَّ ٱلصَّلَوٰةَ كَانَتۡ عَلَى ٱلۡمُؤۡمِنِينَ كِتَٰبٗا مَّوۡقُوتٗا ١٠٣ ﴾ [النساء: ١٠٣] 
“নিশ্চয়ই নির্ধারিত সময়ে সালাত আদায় করা মু’মিনদের জন্য অবশ্য কর্তব্য।” [আন-নিসা: ১০৩]
অর্থাৎ এর সুনির্দিষ্ট সময় আছে। এর দলীল হলো রাসূলের সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাণী:
«مَنْ عَمِلَ عَمَلا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ» رواه البخاري (2697) ومسلم (1718)
“যে এমন কোন কাজ করে যা আমাদের (শারী‘আত এর) অন্তর্ভুক্ত নয়, তবে তা প্রত্যাখ্যাত।” [এটি বর্ণনা করেছেন আল-বুখারী (২৬৯৭) ও মুসলিম (১৭১৮)]
শাইখ ‘আব্দুল ‘আযীয ইবনু বায-রাহিমাহুল্লাহ-কে প্রশ্ন করা হয়েছিল :
আমি ২৪ বছর বয়সের আগে সালাত আদায় করি নি। এখন আমি প্রতি ফরয সালাত এর সাথে আরেকবার ফরয সালাত আদায় করি। আমার জন্য কি তা করা জায়েয (বৈধ)? আমি কি এভাবেই চালিয়ে যাব নাকি আমার উপর অন্য কোন করণীয় আছে?
তিনি বলেন :
“যে ইচ্ছাকৃতভাবে সালাত ত্যাগ করে, সঠিক মতানুসারে তার উপর কোনো কাযা নেই। বরং তাকে আল্লাহ তা‘আলার কাছে তাওবাহ করতে হবে; কারণ সালাত ইসলামের স্তম্ভ, তা ত্যাগ করা ভয়াবহ অপরাধসমূহের একটি। বরং ইচ্ছাকৃতভাবে তা (সালাত) ত্যাগ করা ‘বড় কুফর’ যা ‘আলিমগণের দুটি মতের মধ্যে সবচেয়ে সঠিকটি, কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে প্রমাণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন :
«العهد الذي بيننا وبينهم الصلاة فمن تركها فقد كفر »
“আমাদের ও তাদের (কাফেরদের) মাঝে চুক্তি হলো সালাত; তাই যে তা ত্যাগ করে, সে কাফের হয়ে গেলো।”
[ইমাম আহমাদ ও সুনানের সংকলকগণ সহীহ ইসনাদ সূত্রে বুরাইদাহ-রাদিয়াল্লাহু আনহু-হতে বর্ণনা করেছেন]
আর রাসূল-সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী :
«بين الرجل وبين الشرك والكفر ترك الصلاة »
“একজন ব্যক্তি এবং শিরক ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য হলো সালাত ত্যাগ করা।”
[ইমাম মুসলিম তাঁর সহীহ গ্রন্থে জাবির ইবনু ‘আব্দিল্লাহ-রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা-থেকে বর্ণনা করেছেন। সংশ্লিষ্ট অধ্যায়ে এ ব্যাপারে আরও অনেক হাদীস রয়েছে, যাতে এ ব্যাপারে ইঙ্গিত পাওয়া যায়]
এক্ষেত্রে ভাই আপনার উপর কর্তব্য হলো আল্লাহর নিকট সত্যিকার অর্থে তাওবাহ করা। আর তা হলো-(১) পূর্বে যা গত হয়েছে তার ব্যাপারে অনুতপ্ত হওয়া; (২) সালাত ত্যাগ একেবারে ছেড়ে দেয়া; এবং (৩) এ মর্মে দৃঢ় সংকল্প করা যে, এ কাজে আপনি আর কখনও ফিরে যাবেন না।
আর আপনাকে প্রতি সালাতের সাথে বা অন্য সালাতের সাথে কাযা করতে হবে না, বরং আপনাকে শুধু তাওবাহ করতে হবে। আর সকল প্রশংসা আল্লাহর। যে তাওবাহ করে আল্লাহ তার তাওবাহ কবুল করেন। আল্লাহ -সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা- বলেছেন:
﴿وَتُوبُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ ٣١ ﴾ [النور: ٣١]
“হে মু’মিনগণ তোমরা সবাই আল্লাহর নিকট তাওবাহ করো,যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।” [আন-নূর : ৩১]
আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«التائب من الذنب كمن لا ذنب له»
“পাপ থেকে তাওবাহকারী এমন ব্যক্তির ন্যায় যার কোন পাপই নেই।”[1]
তাই আপনাকে সত্যিকার অর্থে তাওবাহ করতে হবে, নিজের নাফসের সাথে হিসাব-নিকাশ করতে হবে, সঠিক সময়ে জামা‘আতের সাথে সালাত আদায়ের ব্যাপারে সদা-সচেষ্ট থাকতে হবে, আপনার দ্বারা যা যা হয়েছে সে ব্যাপারে আল্লাহর কাছে মাফ চাইতে হবে এবং বেশি বেশি ভাল কাজ করতে হবে। আর আপনাকে কল্যাণের সুসংবাদ জানাই, আল্লাহ-সুবহানাহূ ওয়া তা‘আলা -বলেছেন :
﴿ وَإِنِّي لَغَفَّارٞ لِّمَن تَابَ وَءَامَنَ وَعَمِلَ صَٰلِحٗا ثُمَّ ٱهۡتَدَىٰ ٨٢ ﴾ [طه: ٨٢] 
“আর যে তাওবাহ করে, ঈমান আনে, সৎকর্ম করে এবং হিদায়াতের পথ অবলম্বন করে, নিশ্চয়ই আমি তার প্রতি ক্ষমাশীল।” [ত্বাহা : ৮২]
সূরা আল-ফুরক্বান-এ শিরক, হত্যা, যিনা (ব্যভিচার) উল্লেখ করে আল্লাহ্ তা‘আলা বলেছেন :
﴿وَمَن يَفۡعَلۡ ذَٰلِكَ يَلۡقَ أَثَامٗا ٦٨ يُضَٰعَفۡ لَهُ ٱلۡعَذَابُ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ وَيَخۡلُدۡ فِيهِۦ مُهَانًا ٦٩ إِلَّا مَن تَابَ وَءَامَنَ وَعَمِلَ عَمَلٗا صَٰلِحٗا فَأُوْلَٰٓئِكَ يُبَدِّلُ ٱللَّهُ سَيِّ‍َٔاتِهِمۡ حَسَنَٰتٖۗ وَكَانَ ٱللَّهُ غَفُورٗا رَّحِيمٗا ٧٠ ﴾ [الفرقان: ٦٧-٦٩] 
“আর যে তা করল সে পাপ করল, ক্বিয়ামাতের দিন তার শাস্তি দ্বিগুণ করে দেয়া হবে এবং সে সেখানে অপমানিত অবস্থায় চিরকাল অবস্থান করবে, তবে সে ছাড়া যে তাওবাহ করেছে, ঈমান এনেছে এবং ভাল কাজ করেছে; আল্লাহ তাদের খারাপ কাজ সমূহকে ভাল কাজে পরিবর্তন করে দিবেন। আর নিশ্চয়ই আল্লাহ মহা ক্ষমাশীল, পরম দয়াময় ।” [আল-ফুরক্বান : ৬৯-৭০]
আমরা আল্লাহ’র কাছে চাই আমাদের ও আপনার জন্য তাওফীক্ব, বিশুদ্ধ তাওবাহ ও কল্যাণের পথে অবিচলতা।”
[মাজমূ‘ফাত্‌ওয়া আশ-শাইখ ইবন বায (১০/৩২৯,৩৩০)]

দ্বিতীয়ত :
আর সিয়াম কাযা করার ক্ষেত্রে, আপনার সিয়াম ত্যাগ করা যদি আপনার সালাত ত্যাগ করা অবস্থায় হয়, তবে আপনার উপর সে সব দিনের, যে সব দিনে আপনি সাওম ভঙ্গ করেছেন তার কাযা করা ওয়াজিব নয়, কারণ যে সালাত ত্যাগ করে, সে বড় কুফর সংঘটনকারী কাফির (যা মুসলিম মিল্লাত থেকে বের করে দেয়)যেমনটি পূর্বে উল্লেখিত হয়েছে। আর কোনো কাফির যদি ইসলাম কবুল করে, কুফর অবস্থায় সে যে ‘ইবাদাতগুলো ত্যাগ করেছিল, তা কাযা করা তার জন্য বাধ্যতামূলক নয়।
আর যদি আপনার সিয়াম ত্যাগ সালাত আদায় করা অবস্থায় হয়ে থাকে, তবে এক্ষেত্রে শুধু দুটো সম্ভাব্য ব্যাপারই ঘটতে পারে :
প্রথমত :
আপনি রাতে সিয়ামের নিয়্যাত করেন নি, বরং সাওম ভঙ্গের ব্যাপারে সংকল্পবদ্ধ ছিলেন। এক্ষেত্রে আপনার পক্ষ থেকে কাযা শুদ্ধ হবে না। কারণ আপনি কোন ‘উযর (গ্রহণযোগ্য অজুহাত) ছাড়া শারী‘আতে নির্ধারিত নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে করণীয় ‘ইবাদাত ত্যাগ করেছেন।
দ্বিতীয়ত :
আপনি সিয়াম শুরু করার পর সেই দিনে তা ভঙ্গ করেছেন। এক্ষেত্রে আপনার উপর কাযা করা ফরয। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন রমযান মাসে দিনের বেলায় (যৌন) মিলনকারী ব্যক্তিকে কাফফারাহ আদায় করার আদেশ দিলেন, তখন বললেন:
«صم يوماً مكانه» رواه أبو داود (2393) , وابن ماجه (1671) , وصححه الألباني في "إرواء الغليل" (940)
“তুমি সে দিনের পরিবর্তে একদিন সাওম পালন কর।”
[এটি বর্ণনা করেছেন আবূ-দাঊদ (২৩৯৩), ইবনু মাজাহ (১৬৭১) এবং আল-আলবানী “ইরওয়াউল গালীল”-এ (৯৪০)-একে সহীহ বলেছেন]
আর শাইখ ইবনু ‘উসাইমীনকে রমযান মাসে দিনের বেলা কোনো ‘উযর (সঙ্গতকারণ) ছাড়া সাওম ভঙ্গ করা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তিনি উত্তরে বলেন:
   “রমযান মাসে দিনের বেলা কোন ‘উযর ছাড়া সাওম ভঙ্গ করা সবচেয়ে বড় (কাবীরাহ) গুনাহসমূহের একটি, এ দ্বারা সে ব্যক্তি ফাসিক্ব হয়ে যাবে। তার উপর ওয়াজিব হবে আল্লাহর কাছে তাওবাহ করা, যেদিন সাওম ভঙ্গ করেছিল সেদিনের কাযা করা, অর্থাৎ সে যদি সাওম পালন শুরু করে দিনের মাঝে কোনো ‘উযর (অযুহাত) ছাড়া সাওম ভঙ্গ করেছে তার কাযা করতে হবে। কারণ যেহেতু সে সাওম শুরু করেছে, তার ব্যাপারে অঙ্গীকারাবদ্ধ ছিল এবং তা ফরয এই বিশ্বাসে তাতে প্রবেশ করেছে, তাই তার উপর এর কাযা করা বাধ্যতামূলক। নাযর (মান্নতের) এর ন্যায়।
আর যদি কোন ‘উযর ছাড়া ইচ্ছাকৃতভাবে শুরু থেকেই সাওম ত্যাগ করে, তবে অধিক শক্তিশালী মতানুসারে তাকে তার কাযা আদায় করতে হবে না, কারণ সে এর দ্বারা কোনো উপকার পাবে না। এটি এজন্য যে, তা তার থেকে কবুল করা হবে না। এক্ষেত্রে মূলনীতিটি হলো-সকল ‘ইবাদাত যা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্ধারিত, তা কোনো ‘উযর (গ্রহণযোগ্য কারণ) ছাড়া সেই নির্দিষ্ট সময় থেকে বিলম্বে করা হলে, তা তার থেকে কবুল করা হবে না। এর দলীল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী :
«مَنْ عَمِلَ عَمَلا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ» رواه البخاري (2697) ومسلم (1718)
“যে এমন কোন কাজ করে যা আমাদের (শারী‘আত এর) অন্তর্ভুক্ত নয়, তবে তা প্রত্যাখ্যাত।” [এটি বর্ণনা করেছেন আল-বুখারী (২৬৯৭) ও মুসলিম (১৭১৮)]
কারণ তা আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা লঙ্ঘন করার মধ্যে পড়ে আর আল্লাহ তা‘আলা নির্ধারিত সীমারেখা লঙ্ঘন করা যুলুম (অবিচার)। আর যালিম ব্যক্তির কাছ থেকে সেই যুলুম কবুল করা হবে না। আল্লাহ তা‘আলা  বলেন :
﴿وَمَن يَتَعَدَّ حُدُودَ ٱللَّهِ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلظَّٰلِمُونَ ٢٢٩ ﴾ [البقرة: ٢٢٩] 
“আর যারা আল্লাহ নির্ধারিত সীমারেখা লঙ্ঘন করে তারা হলো জালিম।” [আল-বাকারাহ: ২২৯]
আর এটি এজন্য যে, সে যদি এই ‘ইবাদাত নির্ধারিত সময় হবার আগে অর্থাৎ তা করার সময় শুরু হবার আগেই করত, তবে তা তার কাছ থেকে কবুল হত না। একই ভাবে সে যদি তা (সেই ‘ইবাদাতের) সময় শেষ হয়ে যাওয়ার পরে করে, তবে তাও তার কাছ থেকে কবুল হবে না যদি না সে মা‘যূর (অপারগ বা সঙ্গত কারণ বিশিষ্ট) হয়।”
[মাজমূ ‘ফাত্‌ওয়া আশ-শাইখ ইবন ‘উসাইমীন (১৯/প্রশ্ন নং ৪৫)]
আর তার উপর কর্তব্য হলো সকল পাপ কাজ থেকে (আল্লাহর কাছে) সত্যিকার অর্থে তাওবাহ করা [উপরে উল্লেখিত ইবনু বাযের ফাত্‌ওয়ায় তাওবাহর তিনটি শর্তসহ], ফরয কাজসমূহ সময়মত অব্যাহত রাখা, খারাপ কাজ ত্যাগ করা, বেশি বেশি নফল ও নৈকট্য লাভ হয় এমন কাজ করা।
আর আল্লাহই সবচেয়ে বেশি জানেন।
Islam Q & A

সিয়ামের আয়াতে উল্লেখিত ফিদয়াহ-এর পরিমাণ
ফাত্‌ওয়া নং- 49944
প্রশ্ন : সিয়ামের আয়াতে উল্লেখিত ফিদয়াহ-এর পরিমাণ কি?
উত্তর : সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য।

প্রথমত :
যে রমযান (মাস) পেল কিন্তু সিয়াম পালনে সক্ষম নয় অত্যন্ত বৃদ্ধ হওয়ার জন্য (অতি বার্ধক্যের কারণে) অথবা সে এমন রোগী যার সুস্থতা লাভের আশা করা যায় না, তার উপর সিয়াম পালন ফরয নয়, অক্ষমতার জন্য। সে সাওম ভঙ্গ করবে এবং প্রতিদিনের বদলে একজন মিসকীনকে খাওয়াবে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন :
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ كُتِبَ عَلَيۡكُمُ ٱلصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُونَ ١٨٣ أَيَّامٗا مَّعۡدُودَٰتٖۚ فَمَن كَانَ مِنكُم مَّرِيضًا أَوۡ عَلَىٰ سَفَرٖ فَعِدَّةٞ مِّنۡ أَيَّامٍ أُخَرَۚ وَعَلَى ٱلَّذِينَ يُطِيقُونَهُۥ فِدۡيَةٞ طَعَامُ مِسۡكِينٖۖ فَمَن تَطَوَّعَ خَيۡرٗا فَهُوَ خَيۡرٞ لَّهُۥۚ وَأَن تَصُومُواْ خَيۡرٞ لَّكُمۡ إِن كُنتُمۡ تَعۡلَمُونَ ١٨٤ ﴾ [البقرة: ١٨٣،  ١٨٤] 
“হে ঈমানদারগণ, তোমাদের উপর সিয়াম ফরয করা হয়েছে যেমনটি ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর যাতে তোমরা তাক্বওয়া অর্জন করতে পারো। নির্দিষ্ট কিছু দিনে। আর তোমাদের মধ্যে যে অসুস্থ বা সফরে আছে, সে যাতে অন্য দিনগুলোতে তা আদায় করে নেয়, আর (তোমাদের মধ্যে) যারা (তাতেও) অপারগ, তারা যেন ফিদয়াহ হিসেবে মিসকীনকে খাবার খাওয়ায়, আর যে নাফল কল্যাণ হিসেবে তা (ফিদয়াহ) বেশি করে আদায় করে, তবে তা তার জন্য উত্তম। আর তোমরা যদি সাওম রাখ তবে তা তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তা তোমরা জানতে।”
[আল বাকারাহ : ১৮৩-১৮৪]

আর আল-বুখারী (৪৫০৫) ইবনু ‘আব্বাস হতে বর্ণনা করেছেন যে তিনি বলেছেন :
   “এটি মানসূখ (রহিত) নয়, বরং তা অতি বৃদ্ধ পুরুষ ও নারীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যারা সাওম পালন করতে পারবে না, তারা প্রতিদিনের পরিবর্তে একজন মিসকীনকে খাওয়াবেন।”

ইবনু ক্বুদামাহ “আল-মুগনী”-তে (৪/৩৯৬) বলেছেন :
   “অতি বৃদ্ধ পুরুষ ও নারীর জন্য সাওম পালন যদি কঠিন ও অত্যন্ত কষ্টসাধ্য হয়, তবে তাঁরা সাওম ভঙ্গ করতে পারেন আর সেক্ষেত্রে প্রতিদিনের পরিবর্তে একজন মিসকীনকে খাওয়াবেন… তবে তিনি যদি (মিসকীন) খাওয়াতেও অক্ষম হন, তবে তার উপর কিছু (কোনো দায়িত্ব) বর্তায় না। কেননা,  
﴿ لَا يُكَلِّفُ ٱللَّهُ نَفۡسًا إِلَّا وُسۡعَهَاۚ ﴾ [البقرة: ٢٨٦] 
“আল্লাহ কারও উপর তার সাধ্যের অতিরিক্ত বোঝা চাপান না।” [আল-বাকারাহ: ২৮৬]
আর সে রোগী যার সুস্থতার আশা করা যায় না সেও সাওম ভঙ্গ করবে এবং প্রতিদিনের বদলে একজন মিসকীনকে খাওয়াবে। কারণ সে বৃদ্ধ লোকের পর্যায়ভুক্ত।”

আর “আল-মূসূ‘আহ আল-ফিক্বহিয়্যাহ”-তে (৫/১১৭) আছে :
“হানাফী, শাফি‘ঈ ও হাম্বলী (ফিক্বহী মাযহাবের) ‘আলিমগণ এ ব্যাপারে একমত পোষণ করেছেন যে, ফিদয়াহ তখনই আদায় করা যাবে, যখন বার্ধক্যের বা এমন রোগ যার সুস্থতার আশা করা যায় না। এর কারণে সাওম ভঙ্গ করা দিনগুলোর কাযা আদায়ের ব্যাপারে নিরাশ হয়ে যাবে। এর দলীল আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
﴿وَعَلَى ٱلَّذِينَ يُطِيقُونَهُۥ فِدۡيَةٞ طَعَامُ مِسۡكِينٖ﴾ [البقرة: ١٨٤] 
“আর যারা তাতে (সিয়াম পালনে) অক্ষম, তারা ফিদয়াহ হিসেবে মিসকীন খাওয়াবে।” [আল-বাকারাহ: ১৮৪] 
এর অর্থ যাদের উপর সিয়াম পালন কষ্টসাধ্য।”

শাইখ ইবনু ‘উসাইমীন “ফাত্‌ওয়া আস-সিয়াম”- এ (পৃঃ ১১১) বলেছেন :
“আমাদের জানা উচিত যে রোগী দুই প্রকার :

প্রথম প্রকার :
এমন রোগী যার সুস্থতার আশা করা যায়। যেমন-হঠাৎ হওয়া রোগ যার থেকে সুস্থতা আশা করা যায়। তার হুকুম হল যেমনটি আল্লাহ-তা‘আলা বলেছেন :
﴿فَمَن كَانَ مِنكُم مَّرِيضًا أَوۡ عَلَىٰ سَفَرٖ فَعِدَّةٞ مِّنۡ أَيَّامٍ أُخَرَ﴾
“আর তোমাদের মধ্যে যে অসুস্থ বা সফরে আছে, সে যাতে অন্য দিনগুলোতে তা আদায় করে নেয়।” [আল-বাকারাহ: ১৮৪]
সে (এরূপ রোগী) শুধু সুস্থতার আশা করবে, এরপর সাওম পালন করে ফেলবে। যদি এমন হয় যে তার রোগ থেকেই গেল এবং সুস্থ হওয়ার আগেই সে মারা গেল, তবে তার উপর কিছু বর্তায় না। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা তার উপর অন্য দিনগুলোতে কাযা ওয়াজিব করেছিলেন এবং তা পাওয়ার আগেই সে মারা গেছে। এক্ষেত্রে সে ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে রমযান আসার আগেই শা‘বান মাসে মারা গেল, তার পক্ষ থেকে কাযা করতে হবে না।

দ্বিতীয় প্রকার :
এমন রোগ যা স্থায়ী। যেমন-ক্যান্সারের রোগ-আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই-কিডনীর রোগ, ডায়াবেটিস বা এ ধরণের স্থায়ী রোগ (যা অসহনীয়) যা থেকে রোগী সুস্থতা আশা করে না, সে রোগী রমযান মাসে সাওম ভঙ্গ করবে এবং এবং প্রতিদিনের বদলে একজন মিসকীন খাওয়াবে ঠিক যেমন বৃদ্ধ পুরুষ ও নারী, যারা সিয়াম পালনে সক্ষম নয়, তারা সাওম ভঙ্গ করে এবং প্রতিদিনের বদলে একজন মিসকীন খাওয়ায়। কুরআন থেকে এর দলীল হল আল্লাহ তা‘আলার বাণী :
﴿وَعَلَى ٱلَّذِينَ يُطِيقُونَهُۥ فِدۡيَةٞ طَعَامُ مِسۡكِينٖ﴾ [البقرة: ١٨٤] 
“আর যারা তাতে (সিয়াম পালনে ) অক্ষম, তারা যেন ফিদয়াহ হিসেবে মিসকীন খাওয়ায়।” [আল-বাকারাহ: ১৮৪]

দ্বিতীয়ত :
আর ইত্ব‘আম-এর (খাওয়ানোর) পদ্ধতি হল প্রত্যেক মিসকীনকে অর্ধেক সা‘ (প্রায় ১.৫[2] কিলোগ্রাম) খাবার যেমন-চাল বা ইত্যাদি দেওয়া অথবা খাবার বানিয়ে মিসকীনদের ডেকে খাওয়ানো।

ইমাম বুখারী বলেছেন :
“আর বৃদ্ধ ব্যক্তির ক্ষেত্রে যিনি সাওম পালনে সক্ষম নন, যেমন আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বৃদ্ধ হওয়ার পর একবছর বা দুইবছর প্রতিদিনের পরিবর্তে একজন মিসকীনকে রুটি ও গোশত খাইয়েছেন এবং সাওম ভঙ্গ করেছেন।”

শাইখ ইবনু বাযকে একজন অতি বৃদ্ধা নারী সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছিল যিনি সাওম পালনে সক্ষম নন, তিনি কী করবেন?
তিনি উত্তরে বলেন: :
“তাকে প্রতিদিনের বদলে একজন মিসকীনকে আধা সা‘ খাবার খাওয়াতে হবে, তা সে দেশের খাদ্য দ্রব্য থেকে যেমন- খেজুর বা চাল বা এছাড়া অন্যান্য কিছু থেকে। ওজন হিসেবে এর পরিমাণ হল প্রায় দেড় (১.৫) কিলোগ্রাম। যেমনি নবীর একদল সাহাবী ফাত্‌ওয়া দিয়েছেন, যাঁদের মাঝে ইবনু ‘আব্বাসও (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) আছেন। আর যদি তিনি (অতি বৃদ্ধা নারী) দরিদ্র হন অর্থাৎ খাওয়াতে সক্ষম না হন, তবে তার উপর কিছু বর্তায় না, আর এই কাফফারাহ একজন (মিসকীন)-কে বা অনেকজনকে (মিসকীনদের) দেওয়া যেতে পারে মাসের শুরুতে বা এর মাঝে বা এর শেষে। আর আল্লাহই তাওফীক্বদাতা।” [মাজমূ‘ ফাত্‌ওয়া ইবন বায (১৫/২০৩)]

আর শাইখ ইবনু ‘উসাইমীন ফাত্‌ওয়া আস-সিয়াম’ (পৃঃ: ১১১)-এ বলেছেন :
“তাই চিরস্থায়ী রোগে আক্রান্ত রোগী, পুরুষ ও নারীদের মধ্যে যারা বয়স্ক, তারা যদি সাওম পালনে অক্ষম হয়, তবে তাদের উপর প্রতিদিনের পরিবর্তে একজন মিসকীন খাওয়ানো ওয়াজিব। ফকিরকে খাবার দিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে হোক বা মাসের দিনের সমান সংখ্যক ফকিরদের দাওয়াত করে খাওয়ানো খাওয়ানো হোক যেভাবে আনাস ইবনু মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু- বৃদ্ধ হওয়ার পর করতেন, তিনি এক মাসের পরিবর্তে ৩০ জন মিসকীনকে একত্রে দাওয়াত করে খাওয়াতেন।”

ফাতওয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটিকে (১১/১৬৪) প্রশ্ন করা হয়েছিল অক্ষম যেমন-বার্ধক্যের কারণে অক্ষম, বৃদ্ধ ব্যক্তি ও বৃদ্ধা নারী, এমন রোগী যার সুস্থতার আশা করা যায় না রমযান মাসে তার ইত্ব‘আম (মিসকীন খাওয়ানো) সম্পর্কে।
তাঁরা উত্তরে বলেন :
“যে বার্ধক্যের কারণে রমযানে সাওম পালনে অক্ষম যেমন-বৃদ্ধ ব্যক্তি ও বৃদ্ধা নারী অথবা সাওম পালন যার জন্য খুবই কষ্টসাধ্য, তার সাওম ভঙ্গের ব্যাপারে শিথিলতা আছে, তার জন্য প্রতিদিনের পরিবর্তে একজন মিসকীন খাওয়ানো ওয়াজিব, তা হল গম, খেজুর, চাল বা এজাতীয় খাবার যা সে নিজ পরিবারকে খাওয়ায় তার অর্ধেক সা‘ প্রদান করা। একইভাবে এমন অসুস্থ ব্যক্তিও, যিনি সাওম পালনে অক্ষম বা তা তার জন্য অত্যন্ত কষ্টসাধ্য বা তা থেকে সুস্থতা আশা করা যায় না-সেও তাই করবে।”
এর দলীল হল আল্লাহ তা‘আলার-বাণী :
﴿ لَا يُكَلِّفُ ٱللَّهُ نَفۡسًا إِلَّا وُسۡعَهَاۚ ﴾ [البقرة: ٢٨٦] 
“আল্লাহ কারও উপর তার সাধ্যের অতিরিক্ত বোঝা চাপান না।” [আল-বাকারাহ: ২৮৬]
এবং আরও রয়েছে তাঁর বাণী :
﴿وَمَا جَعَلَ عَلَيۡكُمۡ فِي ٱلدِّينِ مِنۡ حَرَجٖۚ ﴾ [الحج: ٧٨] 
“আর তিনি (আল্লাহ) দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের উপর কোন কাঠিন্য রাখেন নি।” [আল-হাজ্জ: ৭৮]
এবং তাঁর বাণী :
﴿وَعَلَى ٱلَّذِينَ يُطِيقُونَهُۥ فِدۡيَةٞ طَعَامُ مِسۡكِينٖ﴾ [البقرة: ١٨٤] 
“আর যারা তাতে (সিয়াম পালনে ) অক্ষম, তারা যেন ফিদয়াহ হিসেবে মিসকীন খাওয়ায়।” [আল-বাকারাহ: ১৮৪]
আর আল্লাহই সবচেয়ে বেশি ভালো জানেন।
Islam Q & A

তারাবীহ -এর সালাতের রাক্‌‘আত সংখ্যা
ফাত্‌ওয়া নং : 9036
প্রশ্ন : আমি প্রশ্নটি আগেও করেছিলাম। আশা করি এর উত্তর দিয়ে আমাকে উপকৃত করবেন কারণ আমি এর কোনো সন্তোষজনক জবাব পাই নি। প্রশ্নটি হলো তারাবীহ সম্পর্কে, তা কি ১১ রাক্‌‘আত নাকি ২০ রাক্‌‘আত? সুন্নাহ মতে তো তা ১১ রাক্‌‘আত । শাইখ আল-আলবানী –রহিমাহুল্লাহ –“আল-ক্বিয়াম ওয়া আত-তারাউয়ীহ”-বইতে বলেছেন (তা) ১১ রাক্‌‘আত । কেউ কেউ সেই মাসজিদে যায় যেখানে ১১ রাক্‌‘আত সালাত আদায় হয়, আবার অনেকে সেই মাসজিদে যায় যেখানে ২০ রাক্‌‘আত সালাত আদায় হয়। তাই এই মাসআলাটি এখানে যুক্তরাষ্ট্রে সংবেদনশীল হয়ে গেছে। যে ১১ রাক্‌‘আত সালাত আদায় করে সে ২০ রাক্‌‘আত সালাত আদায়কারীকে দোষারোপ করে; আবার এর বিপরীতটিও হয়। তাই (এই ব্যাপারটি নিয়ে) ফিতনাহ সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি আল-মাসজিদ আল-হারামেও ২০ রাক্‌‘আত সালাত আদায় করা হয়।
কেন আল-মাসজিদ আল-হারাম ও আল-মাসজিদ আন-নাবাউয়ীতে সুন্নাহ থেকে বিপরীত করা হয়? কেন তারা আল-মাসজিদ আল-হারাম ও আল-মাসজিদ আন-নাবাউয়ী-তে ২০ রাক্‌‘আত তারাউয়ীহ-এর সালাত আদায় করেন?

উত্তর : সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য।
আমরা মনে করি না যে ‘আলিমগণের মধ্যে ইজতিহাদী মাসআলাসমূহ নিয়ে একজন মুসলিমের এ ধরনের সংবেদনশীল আচরণ করা উচিত যা মুসলিমদের মাঝে বিভেদ ও ফিতনাহ সৃষ্টির কারণ হয়।

যে ব্যক্তি ইমামের সাথে ১০ রাক্‌‘আত আদায় করে উইতর (বিতর)-এর সালাতের অপেক্ষায় বসে থাকে এবং ইমামের সাথে তারাউয়ীহর সালাত পূর্ণ করে না, তার সম্পর্কিত মাস‘আলাহর ব্যাপারে বলতে গিয়ে শাইখ ইবনু ‘উসাইমীন রহিমাহুল্লাহ উল্লেখ করেন :
“এটি খুবই দুঃখজনক যে আমরা এই উন্মুক্ত ইসলামী উম্মাহর মধ্যে এমন একটি দল দেখি যারা ভিন্ন মতের সুযোগ আছে এমন ব্যাপার নিয়ে বিভেদের সৃষ্টি করে। এর ফলে তারা সেই ভিন্ন মতকে অন্তরসমূহের বিভেদের কারণ বানিয়ে দেয়। সাহাবীদের সময় থেকেই এই উম্মাতের মাঝে ভিন্ন মত ছিল, কিন্তু তা সত্ত্বেও তাঁদের অন্তরসমূহ ছিল ঐক্যবদ্ধ।
তাই ইসলামের ব্যাপারে একনিষ্ঠ সকলের উপর, বিশেষ করে যুবকদের উপর ওয়াজিব হলো ঐক্যবদ্ধ ও একত্রিত হওয়া; কারণ শত্রুরা তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে ওঁত পেতে আছে।”
[আশ-শারহ আল-মুমতি‘ (৪২২৫)]

আর এই মাসআলা এর ব্যাপারে দুটি দল বাড়াবাড়ি করেছে। প্রথম দলটি যারা ১১ রাক্‌‘আত এর বেশি পড়েছে তাদের বিরোধিতা করেছে আর তাদের কাজকে বিদ‘আত হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। আর দ্বিতীয় দলটি, শুধু ১১ রাক্‌‘আতই পড়ে ও এর মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকেছেন, তাদের বিরোধিতা করে বলেছে যে, তারা ইজমা‘ এর বিপরীতে গেছে।

চলুন আমরা শুনি সম্মানিত শাইখ ইবনু ‘উসাইমীন-রহিমাহুল্লাহ-এর উপদেশ যেখানে তিনি বলেছেন :
“আমরা এক্ষেত্রে বলব আমাদের উচিত না বেশি বাড়াবাড়ি বা অতিরিক্ত কম করা। কেউ কেউ সুন্নাহ্ -তে বর্ণিত সংখ্যা মানার ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করে এবং বলে: সুন্নাহ্ তে যে সংখ্যার বর্ণনা এসেছে তা থেকে বাড়ানো জায়েয নয়। সুতরাং যে তা (১১ রাক্‌‘আত) থেকে বাড়িয়ে পড়ে, সে তার কঠোর বিরোধিতা করে এবং বলে - সে পাপী, সীমালঙ্ঘনকারী।
আর এতে কোন সন্দেহ নেই যে এটি (এমন ধারনা) ভুল, সে কিভাবে পাপী, সীমালঙ্ঘনকারী হবে যেখানে নবী-(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে রাতের সালাত সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেছিলেন :
«مثنى مثنى»
 “(তা) দুই দুই ( রাক্‌‘আত ) করে।[3]”
তিনি কোন নির্দিষ্ট সংখ্যা বেঁধে দেন নি। আর এটি জানা কথা যে, যিনি রাতের সালাত সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিলেন তিনি তার (রাকা‘আতের) সংখ্যা জানতেন না; কারণ যিনি (সালাতের) পদ্ধতি জানেন না, তার রাক্‌‘আত সংখ্যা না জানারই কথা। আর তিনি রাসূলের সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সেবকও ছিলেন না যে আমরা এ কথা বলতে পারি যে, তিনি রাসূলের বাসার ভিতরে কি হচ্ছে তা জানতেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেহেতু সে ব্যক্তিকে রাক‘আত সংখ্যা নির্দিষ্ট না করে সালাতের পদ্ধতি বর্ণনা করেছেন, তাই এটি জানা গেল যে, এ ব্যাপারটিতে প্রশস্ততা আছে। সুতরাং, কেউ ১০০ রাক্‌‘আত সালাত আদায় করে ১ রাক্‌‘আত দিয়েও উইতর (বিতর) আদায় করতে পারে।
আর তাঁর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাণী :
«صلوا كما رأيتموني أصلي»
“তোমরা আমাকে যেভাবে সালাত আদায় করতে দেখলে সেভাবে সালাত আদায় কর।”[4]
এটি তাদের কাছেও সাধারণভাবে (সর্বক্ষেত্রে) প্রযোজ্য (হুকুম) নয়। আর এ কারণেই তারা একবার ৫ রাক্‌‘আত, আর একবার ৭ রাক্‌‘আত, অন্যবার ৯ রাক্‌‘আত দিয়ে উইতর (বিতর) আদায় করা ওয়াজিব মনে করে না। আর আমরা যদি একে (হাদীসকে) সাধারণভাবে প্রযোজ্য ধরে নেই তাহলে আমাদের এ কথা বলতে হবে যে একবার ৫ রাক্‌‘আত, আর একবার ৭ রাক্‌‘আত, অন্যবার ৯ রাক্‌‘আত দিয়ে ধরে ধরে ‘উইতর (বিতর) আদায় করা ওয়াজিব। বরং “তোমরা আমাকে যেভাবে সালাত আদায় করতে দেখলে সেভাবে সালাত আদায় কর”-এর দ্বারা বুঝানো হয়েছে সালাত আদায়ের পদ্ধতি, রাক্‌‘আত সংখ্যা নয় ; কেবল মাত্র যে নির্দিষ্ট রাক্‌‘আত সংখ্যার ব্যাপারে দলীল প্রমাণিত হয়েছে তা ব্যতীত।

আর যাই হোক, একজন মানুষের জন্য যাতে প্রশস্ততা আছে এমন কোন ব্যাপারে লোকদের উপর চাপ প্রয়োগ করা উচিত নয়। ব্যাপারটি এ পর্যন্ত গড়িয়েছে যে, আমরা দেখেছি যে কিছু ভাইয়েরা এ বিষয়টিতে বেশি জোর প্রয়োগ করে, তারা সেসব ইমামগণের উপর বিদ‘আতের অপবাদ দেয় যারা ১১ রাকা‘আতের বেশি আদায় করে এবং তারা মাসজিদ থেকে বের হয়ে আসে। এক্ষেত্রে তাদের সাওয়াব ছুটে যায়, এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- বলেছেন :
«من قام مع الإمام حتى ينصرف كُتب له قيام ليلة»
رواه الترمذي ( 806 ) وصححه الألباني في صحيح الترمذي ( 646 )
“যে ইমামের সাথে ইমাম (সালাত সমাপ্ত করে) চলে যাওয়া পর্যন্ত ক্বিয়াম করে, তার জন্য সম্পূর্ণ রাতের ক্বিয়াম (এর সাওয়াব) লিখা হবে।”
 [এটি বর্ণনা করেছেন আত-তিরমিযী (৮০৬) এবং আল-আলবানী ‘সহীহ্ আত-তিরমিযী’-তে (৬৪৬)-একে সহীহ্ আখ্যা দিয়েছেন]
আবার তারা অনেক সময় ১০ রাক্‌‘আত আদায় করে বসে থাকে ফলে কাতার ভঙ্গ হয়, আবার কখনও তারা কথা বলাবলি করে এবং মুসাল্লীদের সালাতে বিঘ্ন ঘটায়।
আমরা এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ পোষণ করি না যে তাঁরা ভাল চান এবং তাঁরা ইজতিহাদ করেছেন, কিন্তু সব মুজতাহিদ সঠিক মতে পৌঁছেন না।

আর দ্বিতীয় পক্ষটি হলো তাদের বিপরীত। তারা, যারা ১১ রাক্‌‘আত এর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে তাদের কঠোর বিরোধিতা করে এবং বলে: ‘তুমি ইজমা‘ থেকে বের হয়ে গেছ।’ আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন :
﴿ وَمَن يُشَاقِقِ ٱلرَّسُولَ مِنۢ بَعۡدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ ٱلۡهُدَىٰ وَيَتَّبِعۡ غَيۡرَ سَبِيلِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ نُوَلِّهِۦ مَا تَوَلَّىٰ وَنُصۡلِهِۦ جَهَنَّمَۖ وَسَآءَتۡ مَصِيرًا ١١٥ ﴾ [النساء: ١١٥] 
“আর যে তার কাছে সত্য প্রকাশিত হওয়ার পর রাসূলের বিরোধিতা করে এবং মু’মিনদের পথের বিপরীত পথ অনুসরণ করে আমি তাকে সেদিকে পরিচালিত করব যেদিকে সে অভিমুখী হয় এবং আমি তাকে প্রবেশ করাব জাহান্নামে আর তা কতই না খারাপ প্রত্যাবর্তন।” [আন-নিসা: ১১৫]
আর আপনার আগে যারা গত হয়েছে তারা ২৩ রাক্‌‘আত ছাড়া কোন কিছু জানতেন না। এরপর তারা এ মতের বিরোধীদের উপর কঠোরভাবে আক্রমন করে বসে। এটিও একটি ভুল।” [আশ-শারহ আল মুমতি‘ (৩/৭৩-৭৫)]
আর তারাউয়ীহর (তারাবীহর) সালাতে ৮ রাকা‘আতের বেশি পড়া জায়েয না হওয়ার মত পোষণকারীরা যে দলীল দিয়েছেন তা হলো, আবূ সালামাহ্ ইবনু ‘আবদির রাহমান এর হাদীস যাতে তিনি ‘আয়েশাহ্‌ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহাকে প্রশ্ন করেছিলেন :
«كيف كانت صلاة رسول الله صلى الله عليه وسلم في رمضان ؟ فقالت : ما كان يزيد في رمضان ولا في غيره على إحدى عشرة ركعة يصلي أربعا فلا تسل عن حسنهن وطولهن ثم يصلي أربعا فلا تسل عن حسنهن وطولهن ثم يصلي ثلاثا فقلت يا رسول الله أتنام قبل أن توتر قال يا عائشة إن عينيَّ تنامان ولا ينام قلبي»
رواه البخاري ( 1909 ) ومسلم ( 738 )
“রমযানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাত কেমন ছিল?” তিনি বললেন : “তিনি (রাসূলুল্লাহ) রমযানে বা এর বাইরে ১১ রাক‘আতের বেশি আদায় করতেন না, তিনি ৪ রাক্‌‘আত সালাত আদায় করতেন- এর সৌন্দর্য ও দৈর্ঘ্য সম্পর্কে প্রশ্ন করবেন না (অর্থাৎ তা এতই সুন্দর ও দীর্ঘ হত!), এরপর তিনি আরও ৪ রাক্‌‘আত সালাত  আদায় করতেন-এর সৌন্দর্য ও দৈর্ঘ্য সম্পর্কে প্রশ্ন করবেন না (অর্থাৎ তা এতই সুন্দর ও দীর্ঘ হত!), এরপর তিনি ৩ রাক্‌‘আত সালাত আদায় করতেন। আমি (‘আয়েশাহ) [উইতর (বিতর) এর আগে শুতে দেখে] বললাম :
“হে রাসূলুল্লাহ! আপনি কি উইতর (বিতর) এর আগে ঘুমিয়ে নিবেন?” তিনি (রাসলুল্লাহ) বললেন :    
“হে ‘আয়েশাহ্‌, আমার দুই চোখ তো ঘুমায় কিন্তু অন্তর ঘুমায় না।” [এটি বর্ণনা করেছেন আল-বুখারী (১৯০৯) ও মুসলিম (৭৩৮)]
তারা বলেন : এই হাদীস থেকে রমযানে ও এর বাইরে রাতের বেলা সালাতের (রাক্‌‘আত সংখ্যার) ব্যাপারে নিয়মিত থাকার নির্দেশনা পাওয়া যায়।
আর ‘আলিমগণ এ হাদীসকে তাঁর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-আচরণের (কাজের) দলীল হিসেবে পেশ করাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। কেননা (তাঁর) কাজ (আচরণ) থেকে ওয়াজিব হওয়ার নির্দেশনা পাওয়া যায় না।
আর রাতের সালাত যেমন ‘তারাউয়ীহ’ (তারাবীহ), যা কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যা দ্বারা নির্ধারিত নয়। এ ব্যাপারে (বর্ণিত) স্পষ্ট দলীলগুলোর একটি হলো, ইবনু ‘উমার এর হাদীস, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে রাতের সালাত সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন :
«صلاة الليل مثنى مثنى فإذا خشي أحدكم الصبح صلى ركعة واحدة توتر له ما قد صلَّى» . رواه البخاري ( 946 ) ومسلم ( 749 )
“রাতের সালাত দুই দুই (রাক্‌‘আত) করে, এরপর আপনাদের মধ্যে যে ভোর (ফাজর) হবার আশংকা করে তিনি যেন এক রাক্‌‘আত পড়ে নেন যা আদায় করা সালাতের উইতর (বিতর, সালাতের রাক‘আত সংখ্যাকে বেজোড় করা) হিসেবে গণ্য হবে।”
[এটি বর্ণনা করেছেন, আল-বুখারী (৯৪৬) ও মুসলিম (৭৪৯)]
বিভিন্ন গ্রহণযোগ্য (ফিক্বহী) মাযহাবসমূহের ‘আলিমগণের মতামতের দিকে দৃষ্টি দিলে পরিষ্কার হয় যে, এ ব্যাপারটিতে প্রশস্ততা আছে, আর ১১ রাক‘আত-এর বেশি পড়ায় কোনো দোষ নেই।

ইমাম আস-সারখাসী, যিনি হানাফী (ফিক্বহী) মাযহাবের ইমামগণের একজন, বলেছেন :
“আমাদের মতে উইতর (বিতর) ছাড়া তা (তারাউয়ীহ) ২০ রাক্‌‘আত।” [আল-মাবসূত (২/১৪৫)]

ইবনু ক্বুদামাহ বলেছেন :
“আবূ-‘আবদিল্লাহ (অর্থাৎ ইমাম আহমাদ) রাহিমাহুল্লাহ-এর কাছে পছন্দনীয় মতটি হলো, তা ২০ রাক্‌‘আত। আর ইমাম আস-সাউরী, ইমাম আবূ-হানীফা ও ইমাম আশ-শাফি‘ঈ-ও এ মত ব্যক্ত করেছেন। আর ইমাম মালিক বলেছেন: “তা (তারাউয়ীহ) ৩৬ রাক‘আত।” [আল-মুগনী (১/৪৫৭)]

ইমাম আন-নাওয়াউয়ী বলেছেন :
“আলিমগণের ইজমা‘ মতে তারাউয়ীহর সালাত সুন্নাহ। আর আমাদের মাযহাবে তা ১০ সালামে ২০ রাক‘আত। তা একাকী ও জামা‘আতের সাথে আদায় করা জায়েয।” [আল-মাজমূ‘ (৪/৩১)]
এগুলো হলো তারাউয়ীহর সালাতের রাক‘আতের সংখ্যার ব্যাপারে চার ইমামের মাযহাবসমূহ, তাঁদের সবাই ১১ রাক‘আতের বেশি পড়ার ব্যাপারে বলেছেন। যে কারণে তাঁরা ১১ রাক‘আতের বেশি পড়ার ব্যাপারে বলেছেন সম্ভবত তা হলো :
১.তারা দেখেছেন যে, আয়েশাহ্‌ (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা)-এর হাদীস নির্দিষ্ট কোন সংখ্যা নির্ধারণ করে না।
২.পূর্ববর্তী সাহাবী ও তাবি‘ঈগণের অনেকের কাছ থেকে (১১ রাক‘আতের) বেশি পড়ার বর্ণনা পাওয়া যায়। [আল-মুগনী (২/৬০৪) ও আল-মাজমূ‘(৪/৩২)]
৩.নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে ১১ রাক্‌‘আত সালাত আদায় করতেন তা এতটা দীর্ঘ করতেন যে তার পুরো রাতই লেগে যেত, এমনকি এক রাতে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- তারাউয়ীহর সালাতে তাঁর সাহাবীগণের সাথে যে সালাত আদায় করেছিলেন তা ফাজর (সুবহে সাদিক) উদিত হওয়ার অল্প কিছুক্ষণ আগে শেষ করেছিলেন, এমনকি সাহাবীগণ সাহূর (সেহেরী) ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা করেছিলেন। সাহাবীগণও (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুম) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিছনে সালাত আদায় করতে পছন্দ করতেন এবং তাঁরা তা দীর্ঘ মনে করতেন না। তাই ‘আলিমগণ এই মত ব্যক্ত করেছেন যে ইমাম যদি এভাবে সালাত দীর্ঘ করেন তবে তা মা’মূম তথা মুসল্লীদের জন্য কষ্টকর হয়ে যায় যা তাদেরকে (সালাত থেকে) বিমুখ করতে পারে, এমতাবস্থায় ইমাম ক্বিরা‘আত সংক্ষিপ্ত করে রাক্‌‘আত সংখ্যা বাড়াতে পারেন।
সার কথা হলো যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত পদ্ধতিতে ১১ রাক্‌‘আত সালাত পড়ে সে ভাল করল এবং সুন্নাহ পালন করল। আর যে ক্বিরা‘আত সংক্ষিপ্ত করে রাকাআতের সংখ্যা বাড়িয়ে দিয়েছে সেও ভাল করল। যে এই দুটি বিষয়ের যে কোনো একটি করল, তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই।

শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ বলেছেন :
“যে তারাউয়ীহর (তারাবীহর) সালাত আবূ হানীফাহ, আশ-শাফি‘ঈ ও আহমাদ-এর মাযহাব অনুসারে ২০ রাক্‌‘আত আদায় করল অথবা মালিক এর মাযহাব অনুসারে ৩৬ রাক্‌‘আত আদায় করল অথবা ১৩ বা ১১ রাক্‌‘আত আদায় করল সে ভাল করল, যেমনটি ইমাম আহমাদ মত পোষণ করেছেন এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট নির্দেশনা না থাকার কারণে। তাই রাক্‌‘আত সংখ্যা বেশি বা কম করা ক্বিয়াম দীর্ঘ বা সংক্ষিপ্ত করা অনুযায়ী হবে।” [আল-ইখতিয়ারাত (পৃষ্ঠাঃ ৬৪)]

আস-সুয়ূত্বী বলেছেন :
“রমযানে ক্বিয়াম করার আদেশ দিয়ে ও এর ব্যাপারে উৎসাহিত করে সহীহ ও হাসান হাদীসসমূহে যা বর্ণিত হয়েছে তাতে কোন সংখ্যা নির্দিষ্ট করা হয়নি। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছ থেকে এমনও প্রমাণিত হয় নি যে তিনি ২০ রাক্‌‘আত তারাউয়ীহ (তারাবীহ) পড়েছেন। বরং তিনি রাতের সালাত আদায় করেছেন যার (রাক্‘আতের) সংখ্যা উল্লেখিত হয় নি। এরপর তিনি ৪র্থ রাতে দেরি করলেন এই আশঙ্কায় যে তা (তারাউয়ীহর সালাত) তাঁদের উপর ফরয করে দেয়া হবে আর তাঁরা তা (পালন) করতে অসমর্থ হবেন।” ইবনু হাজার আল-হাইসামী বলেছেন: “নাবী-সাল্লাল্লাহু‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছ থেকে তারাউয়ীহর সালাত ২০ রাক্‌‘আত হওয়ার ব্যাপারে কোন সহীহ বর্ণনা পাওয়া যায় নি। আর এই ব্যাপারে যা বর্ণিত হয়েছে, “তিনি ২০ রাক্‌‘আত সালাত আদায় করতেন, তা অত্যন্ত দুর্বল।” [আল-মূসূ‘আহ আল-ফিক্বহিয়্যাহ (২৭/১৪২-১৪৫)]

আর এইসবের পর প্রশ্নকারী ভাই, আপনি তারাউয়ীহর (তারাবীহর) সালাত ২০ রাক্‌‘আত হওয়ার ব্যাপারে অবাক হবেন না। কারণ এর আগে ইমামগণ প্রজন্মের পর প্রজন্ম তা করেছেন। আর তাঁদের সবার মধ্যেই কল্যাণ আছে।
আর আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানেন।
Islam Q & A

আমরা কিভাবে লাইলাতুল ক্বাদ্‌র পালন করব এবং তা কোন দিন?
ফাত্‌ওয়া নং - 36832
প্রশ্ন : আমাদের লাইলাতুল ক্বাদ্‌র কিভাবে পালন করা উচিৎ? তা কি সালাত আদায় করার মাধ্যমে নাকি কুরআন তিলাওয়াহ, রাসূলের সীরাহ পাঠ, আদেশ উপদেশ দেওয়া/শোনা ও মাসজিদে অনুষ্ঠান উদযাপন করার মাধ্যমে পালন করতে হবে?
উত্তর : সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।

প্রথমত:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের শেষ দশদিন এমনভাবে সালাত আদায়, কুরআন তিলাওয়াহ ও দো‘আ পাঠের মাধ্যমে মনোনিবেশ করতেন যা অন্য সময়ে করতেন না। ‘আয়েশাহ্‌ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে ইমাম আল-বুখারী এবং মুসলিম বর্ণনা করেছেন যে (রমযানের) শেষ দশরাত্রি শুরু হলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে জাগতেন এবং তাঁর পরিবারবর্গকেও জাগাতেন এবং স্ত্রী-মিলন থেকে বিরত থাকতেন। আহমাদ এবং মুসলিম বর্ণনা করেছেন যে :
“তিনি শেষ দশদিন এমনভাবে মনোনিবেশ করতেন যা অন্য সময়ে করতেন না।”

দ্বিতীয়ত:
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লাইলাতুল ক্বাদরে ঈমান সহকারে ও প্রতিদানের আশায় রাত জেগে ‘ইবাদাত করতে উৎসাহিত করেছেন। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
«من قام ليلة القدر إيماناً واحتساباً غفر له ما تقدم من ذنبه»
“ঈমানের সাথে ও প্রতিদানের আশায় যে ব্যক্তি লাইলাতুল ক্বাদরে জেগে ক্বিয়াম করবে, তার অতীতের সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।” [সহীহ আল-বুখারী ও মুসলিম]
আর এই হাদীসে লাইলাতুল ক্বাদরে রাত জেগে ক্বিয়াম করার শারী‘আতসম্মত হওয়ার ব্যাপারে নির্দেশনা রয়েছে।

তৃতীয়ত:
লাইলাতুল ক্বাদরে সবচেয়ে ভালো দো‘আসমূহের মধ্যে একটি পাঠ করা যায় যা ‘আয়েশাহ্‌ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিক্ষা দিয়েছিলেন। আত-তিরমিযী এটি ‘আয়েশাহ্‌ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণনা করেছেন এবং একে সহীহ বলে চিহ্নিত করেছেন। তিনি বলেছেন :
আমি বললাম, “হে রাসূলুল্লাহ যদি আমি জানি কোন রাতে লাইলাতুল ক্বাদ্‌র তবে আমি সেই রাতে কি বলব?”
তিনি বললেন, বল:
«اللهم إنك عفو تحب العفو فاعف عني »
“আল্লাহুম্মা ইন্নাকা ‘আফুউউন তুহিব্বুল ‘আফওয়া ফা ‘ফুউ ‘আন্নী”
(হে আল্লাহ আপনি ক্ষমাশীল, ক্ষমাকে ভালোবাসেন, তাই আমাকে ক্ষমা করে দিন।)”[5]

চতুর্থত:
রমযানে লাইলাতুল ক্বাদরের রাত ঠিক কোনটি, এটি জানার জন্য বিশেষ সাক্ষ্য প্রমাণের প্রয়োজন আছে, কিন্তু শেষ দশদিনের বিজোড় রাতগুলো অন্যান্য রাতের চেয়ে বেশি সম্ভাবনাময় এবং সাতাশতম রাত (শেষ দশদিনের বিজোড় রাতগুলোর মধ্যে) লাইলাতুল ক্বাদ্‌র হওয়ার ব্যাপারে বেশি সম্ভাবনাময়। যেমনটি আমরা এ ব্যাপারে নির্দেশ করে এমন হাদীসগুলো উল্লেখ করেছি।

পঞ্চমত:
আর বিদ‘আত (দ্বীনের মধ্যে নতুন প্রবর্তিত বিষয়) কাজসমূহ, তা কখনই রমযান বা রমযানের বাইরে কোনো সময়েই জায়েয নয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে তিনি বলেছেন :
«من أحدث في أمرنا هذا ما ليس فيه فهو رد»
“যে আমাদের এই বিষয়ে (শারী‘আতে) নতুন কিছু প্রবর্তন করল যা এর অন্তর্ভুক্ত নয়, তা প্রত্যাখ্যাত।”[6]
অন্য এক বর্ণনায় আছে,
«من عمل عملاً ليس عليه أمرنا فهو رد»
“যে কোন কাজ করল যা আমাদের বিষয়ের (শারী‘আতের) অন্তর্ভুক্ত নয়, তা প্রত্যাখ্যাত।[7]”
আর রমযানের কিছু নির্দিষ্ট রাতে অনুষ্ঠান উদযাপনের ব্যাপারে কোন ভিত্তি আমাদের জানা নেই। সবচেয়ে ভালো পথ-নির্দেশনা হচ্ছে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দেখানো পথ এবং সবচেয়ে খারাপ বিষয় হচ্ছে (শারী‘আতে) নতুন প্রবর্তিত বিষয়সমূহ (বিদ‘আত)।
আর আল্লাহই তাওফীক্বদাতা।
গবেষণা ও ফাত্‌ওয়া ইস্যুকারী আল-লাজ্‌নাহ আদ-দা’ইমাহ (১০/৪১৩)
Islam Q & A

নির্দিষ্ট কোন রাতকে লাইলাতুল ক্বাদ্‌র হিসেবে নির্ধারণ করা কারো পক্ষে সম্ভব নয়
ফাত্‌ওয়া নং - 50693
প্রশ্ন : অন্য কোনো রাত্রিতে না আদায় করে শুধু মাত্র লাইলাতুল ক্বাদ্‌রের রাত্রিতে তাহাজ্জুদ এর সালাত আদায়ের ব্যাপারে বিধান কি?
উত্তর : সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য।

প্রথমত :
লাইলাতুল ক্বাদ্‌রের রাত্রিতে ‘ইবাদাত করার মহান ফযীলাত এর ব্যাপারে দলীল রয়েছে। আমাদের রাব্ব (সৃষ্টিকর্তা, মালিক, লালন-পালন ও পরিচালনাকারী) তাবারাকা ওয়া তা‘আলা বলেছেন :
﴿ لَيۡلَةُ ٱلۡقَدۡرِ خَيۡرٞ مِّنۡ أَلۡفِ شَهۡرٖ ٣ ﴾ [القدر: ٣] 
“এই রাতের ‘ইবাদাত হাজার রাতের চেয়ে উত্তম” [আল-ক্বাদ্‌র:৩]
এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
«مَنْ قَامَ لَيْلَةَ الْقَدْرِ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ»
رواه البخاري (1901) ومسلم (760 )
“যে ঈমান সহকারে ও প্রতিদানের আশায় লাইলাতুল ক্বাদ্‌রের রাত্রিতে ক্বিয়াম করবে তার অতীতের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।” (বুখারী, ১৯০১; মুসলিম: ৭৬০)
আল্লাহ-তা‘আলা বলেছেন :
﴿ إِنَّآ أَنزَلۡنَٰهُ فِي لَيۡلَةِ ٱلۡقَدۡرِ ١ وَمَآ أَدۡرَىٰكَ مَا لَيۡلَةُ ٱلۡقَدۡرِ ٢ لَيۡلَةُ ٱلۡقَدۡرِ خَيۡرٞ مِّنۡ أَلۡفِ شَهۡرٖ ٣ تَنَزَّلُ ٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ وَٱلرُّوحُ فِيهَا بِإِذۡنِ رَبِّهِم مِّن كُلِّ أَمۡرٖ ٤ سَلَٰمٌ هِيَ حَتَّىٰ مَطۡلَعِ ٱلۡفَجۡرِ ٥ ﴾ [القدر: ١- ٥] 
“১. নিশ্চয়ই আমি একে লাইলাতুল ক্বাদ্‌রে নাযিল করেছি।
২. এবং আপনি কি জানেন লাইলাতুল ক্বাদ্‌র কি?
৩. লাইলাতুল ক্বাদ্‌র হাজার মাস অপেক্ষা অধিক উত্তম।
৪. এতে ফেরেশতাগণ এবং রূহ (জিবরীল-’আলাইহি স সালাম) তাঁদের রাব্বের অনুমতিক্রমে অবতরণ করেন সকল সিদ্ধান্ত নিয়ে।
৫. শান্তিময় (বা নিরাপত্তাপূর্ণ) সেই রাত, ফাজ্‌রের সূচনা পর্যন্ত।”
[৯৭ আল-ক্বাদ্‌র : ১-৫]
আবূ হুরাইরাহ -রাদিয়াল্লাহু আনহু- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন যে তিনি বলেছেন :
«مَنْ قَامَ لَيْلَةَ الْقَدْرِ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ»
رواه البخاري (1901) ومسلم (760 )
“যে ঈমান সহকারে ও প্রতিদানের আশায় লাইলাতুল ক্বাদ্‌রের রাত্রিতে ক্বিয়াম করবে তার অতীতের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।” (বুখারী, ১৯০১; মুসলিম: ৭৬০)
এখানে “ঈমান সহকারে” এর অর্থ: এই রাতের মর্যাদা ও তাতে আমল করা, শারী‘আতসম্মত হওয়ার ব্যাপারে বিশ্বাস স্থাপন করা।
আর “প্রতিদানের আশায়” এর অর্থ: আল্লাহ তা‘আলার জন্য নিয়্যাতের ব্যাপারে ইখলাস (একনিষ্ঠতা) পোষণ করা।

দ্বিতীয়ত :
লাইলাতুল ক্বাদ্‌র নির্দিষ্ট কোন্‌ রাত তা নিয়ে ‘আলিমদের মাঝে এত ভিন্নমত রয়েছে যে তা ৪০-এরও বেশি মতামত পর্যন্ত পৌঁছেছে যেমনটি ‘ফাতহ আল-বারী’ তে উল্লেখিত হয়েছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে সঠিক মতটি হল তা রমযান-এর শেষ দশকের বিজোড় রাতের কোন একটি।
‘‘আয়েশাহ্‌ -রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা- থেকে বর্ণিত হয়েছে যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
«تَحَرَّوْا لَيْلَةَ الْقَدْرِ فِي الْوِتْرِ مِنْ الْعَشْرِ الأَوَاخِرِ مِنْ رَمَضَانَ» .
رواه البخاري ( 2017 ) – واللفظ له - ومسلم ( 1169 )
“লাইলাতুল ক্বাদ্‌র রমযান-এর শেষ দশকের বিজোড় রাতে অনুসন্ধান কর।”
[এটি বর্ণনা করেছেন আল-বুখারী (২০১৭) শব্দচয়ন তাঁর। আরও বর্ণনা করেছেন মুসলিম (১১৬৯)] 
আল-বুখারী এই হাদীসটিকে (রমযান এর) ‘শেষ দশকের বিজোড় রাতে লাইলাতুল ক্বাদ্‌র অনুসন্ধান’ নামক অধ্যায়ে অন্তর্ভুক্ত করেছেন।
এই রাতটি নির্দিষ্ট কোন দিনে তা অপ্রকাশিত রাখার পেছনে হিক্‌মাহ (রহস্য) হল মুসলিমদেরকে রমযান এর শেষ দশকের সবগুলো রাতেই ‘ইবাদাত, দো‘আ ও যিক্‌র করার ব্যাপারে তৎপর হতে সক্রিয় করানো। একই হিক্‌মাহ এর কারণে জুমু‘আহ এর দিনে ঠিক কোন সময়টিতে দো‘আ কবুল করা হয় তাও নির্দিষ্ট করে বলা হয় নি এবং আল্লাহ তা‘আলার সেই ৯৯ টি নামও নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি যে সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
( مَنْ أَحْصَاهَا دَخَلَ الْجَنَّةَ ) رواه البخاري (2736) ومسلم (2677)
“যে তা (৯৯ টি নাম) গণনা করবে, [অর্থাৎ (১) মুখস্ত করবে, (২) এর অর্থ বুঝবে, (৩) সে অনুযায়ী আমল করবে] সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” [এটি বর্ণনা করেছেন আল-বুখারী (২৭৩৬) ও মুসলিম (২৬৭৭)]
আল-হাফিয ইবনু হাজার -রাহিমাহুল্লাহ- বলেছেন : “তাঁর - অর্থাৎ ইমাম বুখারীর- বক্তব্য ‘অধ্যায় (বাব): রমযান এর শেষ দশকের বিজোড় রাতে লাইলাতুল ক্বাদ্‌র অনুসন্ধান’ এই পাঠ থেকে রমযান মাসেই যে লাইলাতুল ক্বাদ্‌র হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল এই ইঙ্গিত পাওয়া যায়; এরপর এর (রমযানের) শেষ দশকে এবং এরপর এর (শেষ দশকের) বিজোড় রাতগুলোর যে কোনো একটিতে। তবে সুনির্দিষ্ট কোনো রাতে নয়। এই সংক্রান্ত একাধিক বর্ণনা থেকে আমরা অনুরূপ ইঙ্গিত পাই।” [ফাত্‌হ আল-বারী (৪/২৬০)]
তিনি আরও বলেছেন :
“আলিমগণ বলেন, এই রাতটির নির্দিষ্ট তারিখ গোপন রাখার পেছনে হিক্‌মাহ হল মানুষ এটি পাওয়ার জন্য চেষ্টা সাধনা করবে। তবে নির্দিষ্ট তারিখ জানা থাকলে মানুষ শুধু সেই রাতেই ‘ইবাদাত সীমাবদ্ধ রাখত যেমনটি এর আগে ব্যাখ্যা করা হয়েছে জুমু‘আহ-র দিনের (দো‘আ কবুলের) সুনির্দিষ্ট সময়ের (অজানা থাকার) ব্যাপারে।” [ফাত্‌হ আল-বারী (৪/২৬৬)]

তৃতীয়ত :
এই মতের ভিত্তিতে কারো পক্ষে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব নয় কোন নির্দিষ্ট রাতটি ‘লাইলাতুল ক্বাদ্‌র’। বিশেষ করে যখন আমরা জানি যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটি কোন রাত তা সুনির্দিষ্টভাবে উম্মাতকে জানাতে চেয়েছিলেন কিন্তু পরে তিনি জানিয়েছেন যে, আল্লাহ –তা‘আলা-এই জ্ঞান উঠিয়ে নিয়েছেন।
‘উবাদাহ ইবনুস সামিত -রাদিয়াল্লাহু আনহু- থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘লাইলাতুল ক্বাদ্‌র’ এর ব্যাপারে খবর দিতে বের হলেন, (এ সময়) মুসলিমদের মধ্যে দু ব্যক্তি বিবাদে লিপ্ত হল। তিনি বললেন :
«إِنِّي خَرَجْتُ لأُخْبِرَكُمْ بِلَيْلَةِ الْقَدْرِ، وَإِنَّهُ تَلاحَى فُلانٌ وَفُلانٌ فَرُفِعَتْ، وَعَسَى أَنْ يَكُونَ خَيْرًا لَكُمْ، الْتَمِسُوهَا فِي السَّبْعِ وَالتِّسْعِ وَالْخَمْسِ». رواه البخاري ( 49 )
“আমি আপনাদেরকে ‘লাইলাতুল ক্বাদ্‌র’ এর ব্যাপারে খবর দিতে বের হয়েছিলাম কিন্তু অমুক এবং অমুক ব্যক্তি বিবাদে লিপ্ত হল, এরপর তা (সেই জ্ঞান) উঠিয়ে নেয়া হল, আশা করি তা আপনাদের জন্য বেশি ভাল হয়েছে, আপনারা তা সপ্তম (২৭ তম), নবম (২৯ম) এবং পঞ্চমে (২৫ম তারিখে) অনুসন্ধান করুন।”
[এটি বর্ণনা করেছেন আল-বুখারী (৪৯)] 
ফাতওয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটির ‘আলিমগণ বলেন,
“রমযান মাসে নির্দিষ্ট কোনো রাতকে লাইলাতুল ক্বাদ্‌র হিসেবে চিহ্নিত করার জন্য সুস্পষ্ট দালীলের প্রয়োজন। তবে অন্যান্য রাতের চেয়ে শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোর কোনো একটিতে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি আর (এর মধ্যে) সাতাশ তম রাতে হওয়ার সম্ভাবনাই সবচেয়ে বেশি; যার ইঙ্গিত পাওয়া যায় বিভিন্ন হাদীসসমূহে যা আমরা পূর্বে উল্লেখ করেছি।”
[ফাত্‌ওয়া আল-লাজ্‌নাহ আদ-দা’ইমাহ লিল বুহূস আল-‘‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা’ (১০/৪১৩)]
তাই নির্দিষ্ট কোনো রাতকে লাইলাতুল ক্বাদ্‌র হিসেবে চিহ্নিত করা একজন মুসলিমের জন্য উচিত নয়, কারণ এতে এমন ব্যাপারে দৃঢ় নিশ্চয়তা পোষণ করা হয়, যে ব্যাপারে দৃঢ় নিশ্চয়তা পোষণ করা সম্ভব নয়। আর এতে অনেক কল্যাণ ছুটে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। হতে পারে এটি ২১তম রাতে অথবা ২৩তম রাতে অথবা ২৯তম রাতে। তাই সে যদি শুধু ২৭তম রাতে ক্বিয়াম করে তবে তার থেকে অফুরন্ত কল্যাণ ছুটে যেতে পারে, আবার হতে পারে সে এই মুবারাক (বরকতময়) রাত হারিয়ে ফেলতে পারে।
সুতরাং একজন মুসলিমের উচিত গোটা রমযান জুড়েই আনুগত্য ও ‘ইবাদাতের কাজে সর্বোচ্চ সাধনা চালানো, আর শেষ দশকে সে ব্যাপারে বেশি তৎপর হওয়া। এটিই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আদর্শ।
‘আয়েশাহ্‌ -রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা- থেকে বর্ণিত যে তিনি বলেছেন :
«كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا دَخَلَ الْعَشْرُ شَدَّ مِئْزَرَهُ ، وَأَحْيَا لَيْلَهُ ، وَأَيْقَظَ أَهْلَهُ» .
رواه البخاري ( 2024 ) ومسلم ( 1174 )
“(রমযানের শেষ) দশ রাত্রি শুরু হলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোমর বেঁধে নামতেন, তিনি নিজে তাঁর রাত জাগতেন (‘ইবাদাত এর মাধ্যমে) এবং তাঁর পরিবারবর্গকে জাগাতেন (‘ইবাদাতের জন্য)।”
 [এটি বর্ণনা করেছেন আল-বুখারী (২০২৪) ও মুসলিম (১১৭৪)]
এবং আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানেন।
Islam Q&A

_________________________________________________________________________________

[1] ইবন মাজাহ: হাদীস নং ৪২৫০। [সম্পাদক]
[2] ১.০৪০
[3] বুখারী, হাদীস নং ৪৭২; মুসলিম, হাদীস নং ৭৪৯। [সম্পাদক]
[4] বুখারী, হাদীস নং ৬৩১।
[5] তিরমিযী, হাদীস নং ৩৫১৩। [সম্পাদক]
[6] বুখারী, হাদীস নং ২৬৯৭; মুসলিম, হাদীস নং ১৭১৮। তবে মুসলিমের বর্ণনায় রয়েছেما ليس منه [সম্পাদক]
[7] মুসলিম, হাদীস নং ১৭১৮। 






অনুবাদক : ইবতিসাম আযাদ আব্দুর রাহমান
সম্পাদক : আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
সূত্র : মাক্তাবা আস-সাবাত http://www.aththabat.com





কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন