সালাম ও তার বিধি-বিধান
ভূমিকা
الحمد لله رب العالمين وأشهد أن لا إله إلا الله وحده لا شريك له وأشهد أن محمدًا عبده ورسوله وعلى آله وأصحابه أجمعين،
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি সমগ্র সৃষ্টিকুলের রব্ব। আর আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ক ইলাহ নেই তিনি একক তাঁর কোনো শরীক নেই এবং আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল। সালাত ও সালাম নাযিল হোক তার উপর তার পরিবার-পরিজন ও সকল সাহাবীর উপর।
হে পাঠক ভাইয়েরা! ‘আসসালামু আলাইকুম ওরাহ মাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু’ আল্লাহ তোমাদের দয়া করুক!
তোমরা অবশ্যই একটি কথা মনে রাখবে, মুসলিমদের মধ্যে সালামের প্রচার-প্রসার ইসলামের একটি মহান ঐতিহ্য ও বিশেষ সৌন্দর্য। আর সালাম পরস্পর সালাম বিনিময় করা একজন মুসলিমের উপর অপর মুসলিমের অধিকার ও দায়িত্ব। এ ছাড়াও সালাম বিনিময় করা ঈমানের জন্য আবশ্যকীয় বিষয়-মুসলিমদের মধ্যে পরস্পর মহব্বত ও ভালোবাসা- যা একজন মুসলিমকে জান্নাতে নিয়ে যায়, তা সৃষ্টির কারণ হয়। যেমন- আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
«لا تدخلوا الجنة حتى تؤمنوا، ولا تؤمنوا حتى تحابوا، ألا أدلكم على شيء إذا فعلتموه تحاببتم؟ أفشوا السلام بينكم» رواه مسلم
“তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা পরিপূর্ণ ঈমানদার হতে পারবে না। আর ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা পরিপূর্ণ ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা একে অপরকে ভালবাসবে না, আর আমি কি তোমাদেরকে এমন একটি জিনিস বাতলায়ে দেব যা করলে তোমরা পরস্পর পরস্পরকে ভালো বাসবে? এ কথার উত্তরে তিনি বলেন, তোমারা বেশি বেশি করে সালামকে প্রসার কর”। [বর্ণনায় মুসলিম]
‘আস-সালাম’ আল্লাহর সুন্দর নামসমূহ হতে একটি অন্যতম নাম এবং এটি জান্নাতের নামসমূহ হতে একটি জান্নাতের নাম। জান্নাতিরা জান্নাতে পরস্পরকে সালাম দ্বারা সম্বোধন করবেন এবং তাদের পরস্পরের শুভেচ্ছা বিনিময় হবে ‘সালাম’। মনে রাখবে, তুমি যখন একজন মুসলিম ভাইকে (السلام عليكم ورحمة الله وبركاته) বললে, এ কথার অর্থ হল, তুমি তোমার একজন মুসলিম ভাইয়ের জন্য শান্তি, সমৃদ্ধি, রহমত ও বরকতের জন্য দো‘আ করলে এবং তার জন্য যাবতীয় কল্যাণ কামনা করলে। সালামের আদান-প্রদান দ্বারা মুসলিমদের পারস্পরিক সম্পর্ক সুদৃঢ় ও শক্তিশালী হয় এবং পারস্পরিক মহব্বত বৃদ্ধি পায়। তাদের মধ্য হতে পারস্পরিক হিংসা বিদ্বেষ ও দুশমনি দূর হয়। সালামের মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে মিল-মহব্বত ও ভালোবাসার বীজ বপন করা হয়। সালাম ব্যাপক করা দ্বারা একজন মুসলিম বিনয়ী হয়; তার মধ্যে কোন প্রকার অহংকার থাকে না। সে কারো উপর বড়াই করে না। যে ব্যক্তি সালাম দেয়, সে ছোট বড়, ধনী দরিদ্র, সম্মানী অসম্মানী, চেনা অচেনা সবাইকে সালাম দেয়। ফলে তার মধ্যে কোন প্রকার অহংকার থাকতে পারে না। কিন্তু যে অহংকারী সে সবাইকে সালাম দেয় না এবং সবার সালামের উত্তর দেয় না। ইসলামে সালামের অর্থ হল, নিরাপত্তা ও শান্তি। অর্থাৎ, তুমি যখন কোন ব্যক্তিকে সালাম দিলে এবং সে তোমার সালামের উত্তর দিল, এর অর্থ হল, সে তোমার জিম্মাদারী ও নিরাপত্তার অন্তর্ভুক্ত হল। তুমি এখন তার কোন ক্ষতি করবে না এবং তাকে কোন বিপদে ঠেলে দেবে না। সালাম বিনিময় করা ও সালামের উত্তর দেয়া গুরুত্বপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও আমরা দেখি অধিকাংশ মানুষ সালাম দেয়া ও সালামের উত্তর দেয়ার বিষয়ে একেবারেই অমনোযোগী; সালাম বিনিময় করার ক্ষেত্রে তারা সম্পূর্ণ উদাসীন। এ সব দিক বিবেচনা করে, মুসলিম ভাইদের সালামের গুরুত্ব, ফযিলত ও সালামের বিধানগুলো স্মরণ করিয়ে দেয়া আমার দায়িত্ব। আমি আমার দায়িত্ব আদায়ের উপলব্ধি থেকে এ পুস্তিকাটিতে সালামের বিধান, ফযিলত ও গুরুত্বসহ বিভিন্ন দিক তুলে ধরছি; যাতে মুসলিম ভাইয়েরা এ দ্বারা উপকৃত হয়। এখানে যে সব বিষয়গুলো আলোচনা করা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে, সালামকে প্রচার-প্রসার করার নির্দেশ সম্বলিত হাদিস, সালাম দেয়ার নিয়ম, সালাম দেয়ার আদব, একাধিক বার দেখা হলে একাধিক বার সালাম দেয়া উত্তম হওয়া, ঘরে প্রবেশ করার সময় সালাম দেয়া মোস্তাহাব হওয়া, বাচ্চাদের সালাম দেয়ার প্রচলন, স্বামী তার স্ত্রীকে সালাম দেয়ার বিধান, নারীদের জন্য তার মুহরিম নিকট আত্মীয়কে সালাম দেয়া, কাফের ও অমুসলিমদের সালাম দেয়া হারাম হওয়া এবং তারা সালাম দিলে তার উত্তর দেয়ার নিয়ম, মজলিস থেকে উঠার সময় সালাম দেয়া মোস্তাহাব হওয়া, সাথীদের বিদায় দেয়ার সময় সালাম দেয়া মোস্তাহাব হওয়া, কারো ঘরে প্রবেশ করার পূর্বে অনুমতি চাওয়ার সময় সালামের প্রচলন ও সালাম দেয়ার নিয়ম, অনুমতি প্রার্থনাকারীকে যখন বলা হয়, তুমি কে? সে যেন বলে আমি অমুক, এ বিষয়ের উপর আলোচনা, যখন কোনো ব্যক্তি হাঁচি দিয়ে আলহামদুলিল্লাহ বলে, তার উত্তর দেয়া, কারো সাথে দেখা হলে, তার সাথে মুসাফাহা করা ও হাসি মুখে সাক্ষাত করা মুস্তাহাব হওয়া, সালাম দেয়া ও সালামের উত্তর দেয়ার বিধান সম্পর্কে আলোচনা, কোন সময় সালাম দেয়া মাকরূহ তার আলোচনা, কার সালামের উত্তর দিতে হবে, আর কার সালামের উত্তর দিতে হবে না তার বিধান, সালামের উপকারিতা ও ফলাফলের আলোচনা, সালামের সাথে সম্পৃক্ত বিধানগুলোকে কাব্য আকারে আলোচনা করা ইত্যাদি। আমি এ পুস্তিকাটিকে "تذكير الأنام بأحكام السلام" করে নাম রেখেছি। পুস্তিকাটিকে আল্লাহর কালাম, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ এর হাদিস ও ইসলামী শরিয়তের জ্ঞানে সমৃদ্ধ জ্ঞানী গুণী ও গবেষকদের কথা দ্বারা সাজানো হয়েছে। আল্লাহর নিকট আমাদের কামনা, আল্লাহ্ তা‘আলা যেন এ পুস্তিকা দ্বারা আমাদের সবাইকে উপকার পৌছায়। বিশেষ করে, যারা এ কিতাবটি সংকলন করেছেন, চাপিয়েছেন, যারা প্রচার করার জন্য চেষ্টা করেছেন এবং যারা শুনেছেন ও তদনুযায়ী আমল করেছেন। আল্লাহর নিকট আমাদের প্রার্থনা এই যে, আল্লাহ যেন, আমাদের এ রিসালাটিকে তার সন্তুষ্টির কারণ হিসেবে আখ্যায়িত করেন, আল্লাহর জান্নাত লাভে ধন্য হওয়ার উপকরণ বা মাধ্যম বানায়। তিনিই আমাদের বিধায়ক, তিনিই সর্বোত্তম অভিভাবক। আমাদের নিজেদের কোন ক্ষমতা বা শক্তি নাই। যাবতীয় শক্তি ও ক্ষমতা কেবলই আল্লাহর। আর সালাত ও সালাম নাযিল হোক আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ এর উপর, তার পরিবার পরিজনের উপর এবং তার সমগ্র সাহাবীদের উপর।
সংকলক
4/ 4/ 1411 হিজরী