সালাম ও তার বিধি-বিধান
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি সমগ্র সৃষ্টিকুলের রব্ব। আর আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ক ইলাহ নেই তিনি একক তাঁর কোনো শরীক নেই এবং আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল। সালাত ও সালাম নাযিল হোক তার উপর তার পরিবার-পরিজন ও সকল সাহাবীর উপর।
হে পাঠক ভাইয়েরা! ‘আসসালামু আলাইকুম ওরাহ মাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু’ আল্লাহ তোমাদের দয়া করুক!
তোমরা অবশ্যই একটি কথা মনে রাখবে, মুসলিমদের মধ্যে সালামের প্রচার-প্রসার ইসলামের একটি মহান ঐতিহ্য ও বিশেষ সৌন্দর্য। আর সালাম পরস্পর সালাম বিনিময় করা একজন মুসলিমের উপর অপর মুসলিমের অধিকার ও দায়িত্ব। এ ছাড়াও সালাম বিনিময় করা ঈমানের জন্য আবশ্যকীয় বিষয়-মুসলিমদের মধ্যে পরস্পর মহব্বত ও ভালোবাসা- যা একজন মুসলিমকে জান্নাতে নিয়ে যায়, তা সৃষ্টির কারণ হয়। যেমন- আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
“তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা পরিপূর্ণ ঈমানদার হতে পারবে না। আর ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা পরিপূর্ণ ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা একে অপরকে ভালবাসবে না, আর আমি কি তোমাদেরকে এমন একটি জিনিস বাতলায়ে দেব যা করলে তোমরা পরস্পর পরস্পরকে ভালো বাসবে? এ কথার উত্তরে তিনি বলেন, তোমারা বেশি বেশি করে সালামকে প্রসার কর”। [বর্ণনায় মুসলিম]
‘আস-সালাম’ আল্লাহর সুন্দর নামসমূহ হতে একটি অন্যতম নাম এবং এটি জান্নাতের নামসমূহ হতে একটি জান্নাতের নাম। জান্নাতিরা জান্নাতে পরস্পরকে সালাম দ্বারা সম্বোধন করবেন এবং তাদের পরস্পরের শুভেচ্ছা বিনিময় হবে ‘সালাম’। মনে রাখবে, তুমি যখন একজন মুসলিম ভাইকে (السلام عليكم ورحمة الله وبركاته) বললে, এ কথার অর্থ হল, তুমি তোমার একজন মুসলিম ভাইয়ের জন্য শান্তি, সমৃদ্ধি, রহমত ও বরকতের জন্য দো‘আ করলে এবং তার জন্য যাবতীয় কল্যাণ কামনা করলে। সালামের আদান-প্রদান দ্বারা মুসলিমদের পারস্পরিক সম্পর্ক সুদৃঢ় ও শক্তিশালী হয় এবং পারস্পরিক মহব্বত বৃদ্ধি পায়। তাদের মধ্য হতে পারস্পরিক হিংসা বিদ্বেষ ও দুশমনি দূর হয়। সালামের মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে মিল-মহব্বত ও ভালোবাসার বীজ বপন করা হয়। সালাম ব্যাপক করা দ্বারা একজন মুসলিম বিনয়ী হয়; তার মধ্যে কোন প্রকার অহংকার থাকে না। সে কারো উপর বড়াই করে না। যে ব্যক্তি সালাম দেয়, সে ছোট বড়, ধনী দরিদ্র, সম্মানী অসম্মানী, চেনা অচেনা সবাইকে সালাম দেয়। ফলে তার মধ্যে কোন প্রকার অহংকার থাকতে পারে না। কিন্তু যে অহংকারী সে সবাইকে সালাম দেয় না এবং সবার সালামের উত্তর দেয় না। ইসলামে সালামের অর্থ হল, নিরাপত্তা ও শান্তি। অর্থাৎ, তুমি যখন কোন ব্যক্তিকে সালাম দিলে এবং সে তোমার সালামের উত্তর দিল, এর অর্থ হল, সে তোমার জিম্মাদারী ও নিরাপত্তার অন্তর্ভুক্ত হল। তুমি এখন তার কোন ক্ষতি করবে না এবং তাকে কোন বিপদে ঠেলে দেবে না। সালাম বিনিময় করা ও সালামের উত্তর দেয়া গুরুত্বপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও আমরা দেখি অধিকাংশ মানুষ সালাম দেয়া ও সালামের উত্তর দেয়ার বিষয়ে একেবারেই অমনোযোগী; সালাম বিনিময় করার ক্ষেত্রে তারা সম্পূর্ণ উদাসীন। এ সব দিক বিবেচনা করে, মুসলিম ভাইদের সালামের গুরুত্ব, ফযিলত ও সালামের বিধানগুলো স্মরণ করিয়ে দেয়া আমার দায়িত্ব। আমি আমার দায়িত্ব আদায়ের উপলব্ধি থেকে এ পুস্তিকাটিতে সালামের বিধান, ফযিলত ও গুরুত্বসহ বিভিন্ন দিক তুলে ধরছি; যাতে মুসলিম ভাইয়েরা এ দ্বারা উপকৃত হয়। এখানে যে সব বিষয়গুলো আলোচনা করা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে, সালামকে প্রচার-প্রসার করার নির্দেশ সম্বলিত হাদিস, সালাম দেয়ার নিয়ম, সালাম দেয়ার আদব, একাধিক বার দেখা হলে একাধিক বার সালাম দেয়া উত্তম হওয়া, ঘরে প্রবেশ করার সময় সালাম দেয়া মোস্তাহাব হওয়া, বাচ্চাদের সালাম দেয়ার প্রচলন, স্বামী তার স্ত্রীকে সালাম দেয়ার বিধান, নারীদের জন্য তার মুহরিম নিকট আত্মীয়কে সালাম দেয়া, কাফের ও অমুসলিমদের সালাম দেয়া হারাম হওয়া এবং তারা সালাম দিলে তার উত্তর দেয়ার নিয়ম, মজলিস থেকে উঠার সময় সালাম দেয়া মোস্তাহাব হওয়া, সাথীদের বিদায় দেয়ার সময় সালাম দেয়া মোস্তাহাব হওয়া, কারো ঘরে প্রবেশ করার পূর্বে অনুমতি চাওয়ার সময় সালামের প্রচলন ও সালাম দেয়ার নিয়ম, অনুমতি প্রার্থনাকারীকে যখন বলা হয়, তুমি কে? সে যেন বলে আমি অমুক, এ বিষয়ের উপর আলোচনা, যখন কোনো ব্যক্তি হাঁচি দিয়ে আলহামদুলিল্লাহ বলে, তার উত্তর দেয়া, কারো সাথে দেখা হলে, তার সাথে মুসাফাহা করা ও হাসি মুখে সাক্ষাত করা মুস্তাহাব হওয়া, সালাম দেয়া ও সালামের উত্তর দেয়ার বিধান সম্পর্কে আলোচনা, কোন সময় সালাম দেয়া মাকরূহ তার আলোচনা, কার সালামের উত্তর দিতে হবে, আর কার সালামের উত্তর দিতে হবে না তার বিধান, সালামের উপকারিতা ও ফলাফলের আলোচনা, সালামের সাথে সম্পৃক্ত বিধানগুলোকে কাব্য আকারে আলোচনা করা ইত্যাদি। আমি এ পুস্তিকাটিকে "تذكير الأنام بأحكام السلام" করে নাম রেখেছি। পুস্তিকাটিকে আল্লাহর কালাম, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ এর হাদিস ও ইসলামী শরিয়তের জ্ঞানে সমৃদ্ধ জ্ঞানী গুণী ও গবেষকদের কথা দ্বারা সাজানো হয়েছে। আল্লাহর নিকট আমাদের কামনা, আল্লাহ্ তা‘আলা যেন এ পুস্তিকা দ্বারা আমাদের সবাইকে উপকার পৌছায়। বিশেষ করে, যারা এ কিতাবটি সংকলন করেছেন, চাপিয়েছেন, যারা প্রচার করার জন্য চেষ্টা করেছেন এবং যারা শুনেছেন ও তদনুযায়ী আমল করেছেন। আল্লাহর নিকট আমাদের প্রার্থনা এই যে, আল্লাহ যেন, আমাদের এ রিসালাটিকে তার সন্তুষ্টির কারণ হিসেবে আখ্যায়িত করেন, আল্লাহর জান্নাত লাভে ধন্য হওয়ার উপকরণ বা মাধ্যম বানায়। তিনিই আমাদের বিধায়ক, তিনিই সর্বোত্তম অভিভাবক। আমাদের নিজেদের কোন ক্ষমতা বা শক্তি নাই। যাবতীয় শক্তি ও ক্ষমতা কেবলই আল্লাহর। আর সালাত ও সালাম নাযিল হোক আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ এর উপর, তার পরিবার পরিজনের উপর এবং তার সমগ্র সাহাবীদের উপর।
সংকলক
4/ 4/ 1411 হিজরী
সালাম হল, মুসলিম উম্মাহর অভিবাদন ও সম্ভাষণ। এ অভিবাদনের পূর্ণতা ও সম্পূর্ণতা হল-(السلام عليكم ورحمة الله وبركاته) - এ কথা বলা। আর সালামের উদ্দেশ্য হল, একজন মুসলিমের জন্য শান্তি, রহমত ও বরকতের জন্য দো‘আ করা।
সালাম আল্লাহর সুন্দর নামসমূহ হতে আল্লাহর একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম। সালাম ইসলামের সৌন্দর্য, একজন মুসলিম ভাইয়ের উপর অপর মুসলিম ভাইয়ের হক ও অধিকার। কারও সাথে সাক্ষাত হলে, তাকে চিনি বা না চিনি প্রথমে সালাম দেয়া সুন্নত। ছোট হোক বা বড় হোক, ধনি হোক গরীব হোক, সম্মানী হোক বা অসম্মানী হোক সবাইকে সালাম দেবে। সালামের মধ্যে একজন মুসলিমের বিনয় নিহিত; যে সালাম দেয় সে কারও সাথে অহংকার করে না। আর যে আগে সালাম দেয়, সে অহংকার হতে মুক্ত । আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম ব্যক্তি যে মানুষকে আগে সালাম দেয় । সবচেয়ে কৃপণ যে সালাম দিতে কার্পণ্য করে। সালামের প্রসার দ্বারা মুসলিমদের পরস্পরের মধ্যে মহব্বত ও ভালোবাসা সৃষ্টি হয়। আর মুসলিমদের মধ্যে পরস্পর মহব্বত ও ভালোবাসা ঈমানের অন্যতম দাবি; যা একজন মুসলিমকে জান্নাতে প্রবেশ করা এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তির কারণ হয়। যেমন- রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
“তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা পরিপূর্ণ ঈমানদার হবে না। আর ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা পরিপূর্ণ ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা একে অপরকে ভালবাসবে না, আমি কি তোমাদের এমন একটি জিনিস বাতলায়ে দেব, যা করলে তোমরা পরস্পর পরস্পরকে ভালো বাসবে? এ কথার উত্তরে তিনি বললেন, তোমারা বেশি বেশি করে সালামকে প্রসার কর। মুসলিম” ।
একজন মুসলিম যখন অপর মুসলিমকে সালাম দেবে, তখন তার জবাবে লোকটি তার মতই সালাম দ্বারা উত্তর দেবে অথবা তার চেয়ে উত্তম কথা দ্বারা সালামের উত্তর দেবে। তার উপর তার অপর ভাইয়ের সালামের উত্তর দেয়া ওয়াজিব। আল্লাহ্ তা‘আলা এ বিষয়ে বলেন,
“আর যখন তোমাদেরকে সালাম দেয়া হবে তখন তোমরা তার চেয়ে উত্তম সালাম দেবে। অথবা জবাবে তাই দেবে”। [সূরা নিসা, আয়াত: ৮৬]
এটি হল, মুসলিম উম্মাহর অভিবাদন ও সম্ভাষণ যা ইসলাম মুসলিম উম্মাহর জন্য নিয়ে এসেছে।
আল্লাহ্ তা‘আলা আরও বলেন,
আল্লাহর পক্ষ থেকে বরকতপূর্ণ ও পবিত্র অভিবাদনস্বরূপ। [সূরা নূর, আয়াত: ৬১]
কিন্তু ইয়াহূদী ও খৃষ্টানদের অভিবাদন মুসলিমদের অভিবাদনের চেয়ে ভিন্ন ও ব্যতিক্রম। ইয়াহূদীদের অভিবাদন হল, হাতের আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করা আর খৃষ্টানদের অভিবাদন হল, হাতের তালু দিয়ে ইশারা করা। আর আমাদেরকে খৃষ্টান ও ইয়াহূদীদের অনুকরণ ও তাদের সাদৃশ্য অবলম্বন করতে নিষেধ করা হয়েছে এবং সালাম দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
“যে ব্যক্তি অমুসলিমদের সাথে সাদৃশ্য রাখে, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়। তোমরা ইয়াহূদী ও খৃষ্টানদের সাথে সদৃশ অবলম্বন করো না। কারণ ইয়াহূদীদের অভিবাদন হল, আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করা আর খৃষ্টানদের অভিবাদন হল, হাতের তালু দিয়ে ইশারা করা” ।
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ আরও বলেন,
“তোমরা ইয়াহূদী ও খৃষ্টানদের প্রথমে সালাম দেবে না” ।
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ আরও বলেন,
“যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের লোকদের সাথে সদৃশ রাখে, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত ।”
আর আল্লাহ্ তা‘আলা নিজে সালাম; তার থেকেই সালাম। দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জগতে মুসলিম উম্মাহর অভিবাদন হল সালাম। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন,
“যেদিন তারা তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করবে সেদিন তাদের অভিবাদন হবে: ‘সালাম’। আর তিনি তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন সম্মানজনক প্রতিদান”। [সূরা আহযাব, আয়াত: ৪৪]
“তারা সেখানে শুনতে পাবে না কোন বেহুদা কথা, এবং না পাপের কথা; শুধু এই বাণী ছাড়া, সালাম, সালাম”। [সূরা ওয়াকেয়া, আয়াত: ২৫, ২৬]
জান্নাতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ও ফেরেশতারা মুমিনদের সালাম দেবেন। এ ছাড়া মুমিনরাও জান্নাতে একে অপরকে সালাম দেবে। অথচ সেখানে তারা যাবতীয় বিপদ-আপদ থেকে মুক্ত। কোনো এক কবি বলেন,
الدار دار سلامة وخطابهم فيها سلام
واسم ذي الغفران
“ঘরটি হল, শান্তির ঘর, তারপরও তাতে তাদের সম্ভাষণ হবে সালাম এবং মহা ক্ষমাশীল আল্লাহর নাম”।
হে মুসলিম ভাইয়েরা! যেহেতু ইসলাম হল, মহব্বত, ভালোবাসা, ভ্রাতৃত্ব, উত্তম পরিণতি, স্থায়ী শান্তি ও পরিপূর্ণ সম্মান লাভের দ্বীন, সেহেতু আমরা যারা মুসলিম তাদের জন্য ইসলামের শিক্ষাকে বাস্তবায়ন করা, ইসলামের বিধান অনুযায়ী আমল করা এবং ইসলামের প্রদর্শিত পথ ও নির্দেশনা অনুযায়ী জীবনকে পরিচালনা করা খুবই জরুরি। হে আল্লাহ ! তুমি নিজেই শান্তি, তোমার থেকেই শান্তি। হে প্রভু! তুমি আমাদের শান্তিতে বেঁচে থাকার তাওফিক দাও, যাবতীয় অপকর্ম ও অপরাধ থেকে আমাদের রক্ষা কর। আর সালাত ও সালাম নাযিল হোক আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ এর উপর, তার পরিবার-পরিজনের উপর এবং তার সমগ্র সাহাবীদের উপর ।
সালাম অধ্যায়
কুরআনের বাণী:
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন,
“হে মুমিনগণ, তোমরা নিজদের গৃহ ছাড়া অন্য কারও গৃহে প্রশে করো না, যতক্ষণ না তোমরা অনুমতি নেবে এবং গৃহবাসীদেরকে সালাম দেবে। এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর”। [সূরা নূর, আয়াত: ২৭]
আল্লাহ্ তা‘আলা আরও বলেন,
“তবে তোমরা যখন কোন ঘরে প্রবেশ করবে তখন তোমরা নিজদের উপর সালাম করবে, আল্লাহর পক্ষ থেকে বরকতপূর্ণ ও পবিত্র অভিবাদনস্বরূপ”। [সূরা নূর, আয়াত: ৬১]
আল্লাহ্ তা‘আলা আরও বলেন,
“আর যখন তোমাদেরকে সালাম দেয়া হবে তখন তোমরা তার চেয়ে উত্তম সালাম দেবে। অথবা জবাবে তাই দেবে”। [সূরা নিসা, আয়াত: ৮৬]
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন,
“তোমার কাছে কি ইবরাহীমের সম্মানিত মেহমানদের বৃত্তান্ত এসেছে? যখন তারা তার কাছে আসল এবং বলল, সালাম, উত্তরে সেও বলল, সালাম। এরা তো অপরিচিত লোক”। [সূরা জারিয়াত, আয়াত: ২৫, ২৬]
হাদিসের বাণী:
এক- আব্দুল্লাহ ইবন আমর ইবনুল ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
“এক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করল, হে আল্লাহর রাসূল! ইসলামে কোন আমলটি সর্ব উত্তম? উত্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বললেন, মানুষকে খানা খাওয়ানো এবং তুমি যাকে চিনো আর যাকে চিনো না সবাইকে সালাম দেয়া” । [বুখারি ও মুসলিম]।
দুই- আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
“আল্লাহ্ তা‘আলা আদম আ. কে সৃষ্টি করার পর বললেন, যাও! তুমি ঐ সব ফেরেশতার জামাত যারা বসে আছে তাদের সালাম দাও। তারা তোমাকে কি উত্তর দেয়, তা মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ কর। কারণ, তারা যা উত্তর দেবে তা হবে তোমার ও তোমার বংশধরদের সালাম। তখন আদম আ. গিয়ে ফেরেশতাদের বলল, السلام عليكم، অর্থাৎ ‘তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক’ এর উত্তরে তারা বলল, السلام عليك ورحمة الله ‘তোমার উপর শান্তি ও আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক’ তারা উত্তর দিতে গিয়ে আল্লাহর রহমত শব্দটিকে বাড়াল” । [বুখারি ও মুসলিম]
তিন- আবু উমারা-আল বারা ইব্ন আযেব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
“রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ আমাদের সাতটি বিষয়ে নির্দেশ দেন: রুগীকে দেখতে যাওয়া, জানাযার সালাতে অংশ গ্রহণ করা, হাঁচির উত্তর দেয়া, দুর্বলদের সাহায্য করা, অত্যাচারিত লোককে সহযোগিতা করা, সালামের প্রসার করা, শপথকারীকে মুক্ত করা” । বুখারি ও মুসলিম।
চার- আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
“তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা পরিপূর্ণ ঈমানদার হতে পারবে না। আর ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা পরিপূর্ণ ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা একে অপরকে ভালবাসবে না, আমি কি তোমাদেরকে এমন একটি জিনিস বাতলেয়ে দেব যা করলে, তোমরা পরস্পর পরস্পরকে ভালো বাসবে? তারপর তিনি বললেন, তোমারা বেশি বেশি করে সালামকে প্রসার কর” । [মুসলিম] ।
পাঁচ- আবু ইউসুফ আব্দুল্লাহ ইবন সালাম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
“আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, হে মানব সকল! তোমরা সালামের প্রসার কর, মানুষকে খানা খাওয়াও, আত্মীয়তা সম্পর্ক বজায় রাখ, আর মানুষ যখন ঘুমায়, তখন তুমি সালাত আদায় কর। তাহলে তুমি নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করবে। বর্ণনায় তিরমিযী । আর ইমাম তিরমিযী বলেন, হাদিসটি হাসান ও সহীহ।
ছয়- তুফাইল ইব্ন উবাই ইব্ন কা‘আব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত,
তিনি আব্দুল্লাহ ইব্ন ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ এর নিকট আসা যাওয়া করতেন। আর প্রায় সময় তাকে সাথে নিয়ে বাজারে যেতেন। তুফাইল বলেন, আমরা যখন বাজারে যেতাম আমি দেখতাম, আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ যত প্রকার ব্যবসায়ী, গরীব, মিসকিন ও টোকাইর নিকট দিয়ে অতিক্রম করত, সবাইকে সালাম দিত। একদিন আমি আব্দুল্লাহ ইব্ন ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ এর নিকট আসলে, তিনি আমাকে তার সাথে বাজারে যাওয়ার কথা বললে, আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি বাজারে গিয়ে কি করবেন? আপনিতো কোন দোকানে বসেন না, কোন সামগ্রী সম্পর্কে কাউকে জিজ্ঞাসা করেন না, কোন কিছু দাম-ধর করেন না এবং বাজারের কোন অনুষ্ঠানেও শরিক হন না। আমি আপনাকে বলি, আমাদের নিয়ে এখানে বসেন আমরা আলাপ করি। [কিন্তু আপনি তো তা করেন না] তখন তিনি আমাকে বললেন, “হে পেট ওয়ালা! (আবু তুফাইলের পেট বড় ছিল) আমি বাজারে গমন করি সালাম দেয়ার উদ্দেশ্যে। যার সাথে আমি সাক্ষাত পাই তাকেই সালাম দেই”। ইমাম মালেক মুয়াত্তাতে হাদিসটিকে বিশুদ্ধ সনদে বর্ণনা করেন।
যে সালাম দেবে, তার জন্য মোস্তাহাব হল, «السلام عليكم ورحمة الله وبركاته» বলা। অর্থাৎ, তোমাদের উপর শান্তি, আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক। এখানে বহুবচন অর্থাৎ, ‘তোমাদের’ শব্দ ব্যবহার করা সুন্নত। যদিও যাকে সালাম দেবে, সে একা বা একজন হয়। এটাই উত্তম। আর সালামের উত্তর দাতা বলবে, "وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته" অর্থাৎ, তোমাদের উপরও শান্তি, আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক। উত্তর দেয়ার সময় وعليكم... বলবে। এখানে و [ওয়াও] নিয়ে আসবে।
এক- ইমরান ইব্ন হুছাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
“এক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ এর নিকট এসে বলল, «السلام عليكم» রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ তার সালামের উত্তর দিলে লোকটি বসল। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলল “দশ”। তারপর অপর এক ব্যক্তি এসে বলল, السلام عليكم ورحمة الله রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ তার সালামের উত্তর দেয়ার পর লোকটি বসল। তার সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বললেন, “বিশ”। তারপর অপর এক ব্যক্তি এসে বলল, السلام عليكم ورحمة الله وبركاته، রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ তার সালামের উত্তর দিয়ে বলল, “ত্রিশ”। বর্ণনায় আবু-দাউদ ও তিরমিযী। ইমাম তিরমিযী হাদিসটিকে হাসান বলে আখ্যায়িত করেন।
দুই- আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা’ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
“রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ আমাকে বলেন, ‘এ হল, জিবরীল তোমাকে সালাম দিয়েছে’। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা’ বলেন, আমি বললাম, «وعليه السلام ورحمة الله وبركاته»। “তার উপর সালাম রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক”। [বুখারি ও মুসলিম] বুখারি ও মুসলিমের বিভিন্ন বর্ণনায় এ রকমই বর্ণিত। তবে কোন কোন বর্ণনায় "وبركاته" কে বাদ দেয়া হয়েছে। তবে উভয় বর্ণনাতে কোন অসুবিধা নাই। কারণ, নির্ভরযোগ্যদের বর্ধিত করণ গ্রহণযোগ্য।
তিন- আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
“রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ যখন কোনো বিষয়ে কথা বলতেন, তিনবার বলতেন, যাতে তার কথা স্পষ্ট হয়। আর যখন কোন কাওমের কাছে আসতেন, তাদের তিনি তিনবার সালাম দিতেন” । বর্ণনায় বুখারি।
(তিনবার সালাম দেওয়ার) বিষয়টি তখন প্রযোজ্য, যখন সে কাওমের লোক বেশী হয়।
চার- মিকদাদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ এর স্বীয় বর্ণনায় বর্ণিত, দীর্ঘ হাদিসটিতে তিনি বলেন,
“আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ এর জন্য তার দুধের ভাগটি তুলে রাখতাম। তিনি রাতে এসে এমনভাবে সালাম দিতেন, যাতে কোনো ঘুমন্ত ব্যক্তি ঘুম থেকে জাগত না, তবে যারা জাগ্রত তারা তার সালাম শুনতে পেত। একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ আমাদের মাঝে আসলেন এবং তিনি এসে যেভাবে সালাম দেয়ার সেভাবে সালাম দিল” । বর্ণনায় মুসলিম।
পাঁচ- আসমা বিনতে ইয়াযিদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা’ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
“একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ মসজিদের ভিতরে এক দল নারীর মজলিস দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। তিনি তাদের সালাম দিলেন এবং হাত দিয়ে ইশারা করলেন”। বর্ণনায় তিরমিযী । এবং তিনি বলেন, হাদিসটি হাসান।
এ হাদিসটির অর্থ, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ মুখে উচ্চারণ ও ইশারা দুটিই করেন। আবু-দাউদ এর বর্ণনা এ অর্থটি সমর্থন করে। কারণ, তাতে বলা হয়, "فسلم علينا" ‘তিনি আমাদের সালাম দেন’।
ছয়: আবু জুরাই আল হুজাইমী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
“আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ এর দরবারে এসে বললাম, عليك السلام يا رسول الله، ‘হে আল্লাহর রাসূল তোমার উপর সালাম’। তিনি বললেন, عليك السلام، বলবে না, কারণ, عليك السلام মৃত লোকের অভিবাদন” । বর্ণনায় তিরমিযী ও আবু-দাউদ; ইমাম তিরমিযী হাদিসটিকে হাসান ও সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন এবং পুরো হাদিস উল্লেখ করেন ।
এক- আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
আরোহী ব্যক্তি পায়ে হাটা ব্যক্তিকে সালাম দেবে আর পায়ে হাটা ব্যক্তি বসা ব্যক্তিকে সালাম দেবে। আর অল্প ব্যক্তি বেশি ব্যক্তিকে সালাম দেবে। বুখারি ও মুসলিম । বুখারির অপর এক বর্ণনায় বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন, والصغير على الكبير" ছোটরা বড়দেরকে সালাম দেবে।
দুই- আবু উমামা ছুদাই ইব্ন ‘আজলান আল বাহেলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
“আল্লাহর নিকট সর্ব উত্তম ব্যক্তি সে, যে মানুষকে আগেই সালাম দেয়”। বর্ণনায় আবু-দাউদ উত্তম সনদে।
ইমাম তিরমিযী আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,
“রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ কে জিজ্ঞাসা করা হল, হে আল্লাহর রাসূল! দুইজন ব্যক্তির মধ্যে যখন সাক্ষাত হবে, তখন কোন লোকটি প্রথমে সালাম দেবে? রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বললেন, ‘তাদের দুই জনের মধ্যে যে আল্লাহর অধিক কাছের লোক সে আগে সালাম দেবে’। ইমাম তিরমিযী বলেন, হাদিসটি হাসান সহীহ।
যার সাথে বার বার দেখা হয়, তাকে একাধিক বার সালাম দেয়া মোস্তাহাব। যেমন, একজন ব্যক্তি ঘরে প্রবেশ করল, তারপর ঘর থেকে বের হল। তারপর একই সময় আবার প্রবেশ করল। অথবা উভয়ের মাঝে গাছ বা অন্য কিছু আড়াল হল, তারপর আবার দেখা হল, তখন একজন অপর জনকে পুনরায় সালাম দেবে।
এক- সালাতে ত্রুটি-কারী সাহাবীর হাদিসে আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
“লোকটি আসল, অত:পর সে সালাত আদায় করল, তারপর সে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ এর দরবারে আসল এবং সালাম দিল, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ তার সালামের উত্তর দিলেন এবং বললেন, “তুমি যাও সালাত আদায় কর, কারণ, তুমি সালাত আদায় করনি”। তারপর লোকটি আবার আসল, এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ কে সালাম দিল। এভাবে লোকটি তিনবার আসা যাওয়া করল। [বুখারি ও মুসলিম ]
দুই- আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
“তোমরা যখন তোমার অপর ভাইয়ের সাথে সাক্ষাত করবে, তাকে সালাম দেবে। যদি তারা গাছ, দালান বা পাথরের আড়াল হয়, তারপর পুনরায় দেখা হয়, তাহলেও যেন তোমরা তাকে আবার সালাম দাও”। বর্ণনায় আবু-দাউদ ।
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন,
“তবে তোমরা যখন কোন ঘরে প্রবেশ করবে তখন তোমরা নিজদের উপর সালাম করবে, আল্লাহর পক্ষ থেকে বরকতপূর্ণ ও পবিত্র অভিবাদনস্বরূপ” । [সূরা নূর, আয়াত: ৬১]
এক- আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ আমাকে বলেন, হে বৎস! তুমি যখন তোমার পরিবারের নিকট প্রবেশ করবে, তখন তাদের সালাম দেবে। তা তোমার জন্য এবং তোমার পরিবারের জন্য বরকত বয়ে আনবে। বর্ণনায় তিরমিযী ; তিনি বলেন, হাদিসটি হাসান সহীহ।
আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, তিনি একদিন বাচ্চাদের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিল ও তিনি তাদের সালাম দিলেন এবং বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বাচ্চাদের সালাম দিতেন। [বুখারি ও মুসলিম ]
যখন কোন অপরিচিত নারীকে সালাম দেয়াতে ফিতনায় পতিত হওয়ার আশংকা না থাকে, তখন শর্ত সাপেক্ষে তাদের সালাম দেয়া বৈধ। প্রমাণ:
এক- সাহাল ইব্ন সায়াদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
আমাদের মধ্যে একজন নারী ছিল, অপর এক বর্ণনায় আমাদের মধ্যে একজন বৃদ্ধ নারী ছিল, সে সিলক (এক প্রকার শাক বা তরকারী) এর মূল তুলে এনে পাতিলে ঢালত এবং গমের দানা পিষে তার সাথে মিশ্রণ করত। আমরা যখন জুমার সালাত আদায় করে বাড়িতে ফিরতাম তাকে সালাম দিতাম এবং সে আমাদের সামনে তা পেশ করত। [বর্ণনায় বুখারি ]
দুই- উম্মে হানি ফাখেতা বিনতে আবু তালেব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা’ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
“আমি মক্কা বিজয়ের দিন রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ এর নিকট আসি, তখন তিনি গোসল করছিলেন, আর ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা’ একটি কাপড় দ্বারা তাকে আড়াল করে রাখেন। আমি তাকে সালাম দিলাম”... তিনি বাকী হাদিস বর্ণনা করেন। [মুসলিম ]
তিন- আসমা বিনতে ইয়াযিদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা’ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
“রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ আমাদের নারীদের একটি জামাতের উপর দিয়ে অতিক্রম করেন এবং তিনি আমাদের সালাম দেন”। বর্ণনায় আবু-দাউদ ও তিরমিযী । ইমাম তিরমিযী বলেন, হাদিসটি হাসান। উল্লেখিত শব্দ আবু-দাউদের।
আর তিরমিযীর শব্দ নিম্নরূপ:
“রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ একদিন মসজিদ দিয়ে যেতে ছিল, নারীদের একটি দল মসজিদে বসা ছিল। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ তাদের ইশারায় সালাম করেন”।
এক- আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
ইয়াহূদী ও খৃষ্টানদের সাথে দেখা হলে, প্রথমে তোমরা তাদের সালাম দ্বারা আরম্ভ করবে না। যখন রাস্তায় তোমাদের সাথে তাদের কারো সাক্ষাৎ হয়, তাদেরকে তোমরা রাস্তার সংকীর্ণ পথে হাটতে বাধ্য কর। বর্ণনায় মুসলিম ।
দুই- আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
“আহলে কিতাবগণ তোমাদের সালাম দিলে, তার উত্তরে তোমরা শুধু وعليكم ‘এবং তোমাদের উপর’ বলবে”। [বুখারি ও মুসলিম ]
উসামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
“একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ একটি মজলিসের নিকট দিয়ে অতিক্রম করছিল, যে মজলিসে মুসলিম, মুশরিক, মূর্তিপূজক ও ইয়াহুদীসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকেরা উপস্থিত ছিল, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ তাদের সালাম দেন”। [বুখারি ও মুসলিম ]
যখন মজলিস থেকে উঠে দাঁড়াবে; সাথী-সঙ্গীদের বিদায় জানাবে অথবা কোন সাথী থেকে আলাদা হবে, তখন তাদের সালাম দেয়া মোস্তাহাব।
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
“যখন তোমরা কোন মজলিসে গিয়ে পৌছবে, তখন সালাম দেবে। আর যখন তোমরা মজলিস শেষ করে মজলিস থেকে উঠে দাঁড়াবে, তখনও সালাম দেবে। প্রথম সালাম শেষের সালাম থেকে অধিক গুরুত্ব বহন করে না”। বর্ণনায় আবু-দাউদ ও তিরমিযী এবং ইমাম তিরমিযী বলেন, হাদিসটি হাসান।
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন,
“হে মুমিনগণ, তোমরা নিজদের গৃহ ছাড়া অন্য কারও গৃহে প্রশে করো না, যতক্ষণ না তোমরা অনুমতি নেবে এবং গৃহবাসীদেরকে সালাম দেবে। এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর”। [সূরা নূর, আয়াত: ২৭]
আল্লাহ্ তা‘আলা আরও বলেন,
“আর তোমাদের সন্তান-সন্ততি যখন প্রাপ্তবয়স্ক হয়, তখন তারাও যেন অনুমতি প্রার্থনা করে যেমনিভাবে তাদের অগ্রজরা অনুমতি প্রার্থনা করত”। [সূরা নূর, আয়াত: ৫৯]
এক- আবু মুসা আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
“অনুমতি চাওয়া তিনবার। তারপর যদি তোমাকে অনুমতি দেয়, প্রবেশ কর, অন্যথায় ফেরত চলে আসবে”। [বুখারি মুসলিম ]
দুই- সাহাল ইবন সাআদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
“অনুমতি চাওয়ার বিধান রাখা হয়েছে, চোখের কারণে”। [বুখারি ও মুসলিম ]
তিন: রিব‘য়ী ইবন হিরাশ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, বনী আমের গোত্রের এক লোক আমাকে হাদিস বর্ণনা করেন,
“একদিন সে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ এর নিকট ঘরে প্রবেশ করার অনুমতি চায়, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ ঘরে অবস্থান করছিল। লোকটি বলল, আমি কি প্রবেশ করব? তার কথা শোনে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ খাদেমকে ডেকে বলল, তুমি যাও এবং লোকটিকে অনুমতি চাওয়ার পদ্ধতি শেখাও। তুমি তাকে বল, আসসালামু আলাইকুম, আমি কি প্রবেশ করব? লোকটি এ কথা শোনে বলল, আসসালামু আলাইকুম, আমি কি প্রবেশ করব? তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ তাকে ঘরে প্রবেশ করার অনুমতি দিল এবং সে ঘরে প্রবেশ করল”। ইমাম আবু-দাউদ হাদিসটিকে সহীহ সনদে বর্ণনা করেন ।
চার- কালদা ইব্ন হাম্বল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
“আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ এর দরবারে এসে সালাম না দিয়ে তার নিকট প্রবেশ করলে, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ আমাকে বললেন, ফিরে যাও! এবং বল, আসসালামু আলাইকুম আমি কি প্রবেশ করব”? বর্ণনায় আবু-দাউদ ও তিরমিযী , ইমাম তিরমিযী বলেন, হাদিসটি হাসান।
অনুমতি প্রার্থনাকারীকে তুমি কে? বললে, যে নাম বা উপাধিতে মানুষ তাকে চেনে, সে নাম বা উপাধি উল্লেখ করে বলবে- আমি অমুক, শুধু ‘আমি’ ‘আমি’ বলা মাকরূহ।
এক- আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, মিরাজের প্রসিদ্ধ হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
“রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন, তারপর জিবরীল আ. আমাকে নিয়ে দুনিয়ার আসমানে আরোহণ করেন এবং দরজা খুলে দেয়ার অনুরোধ করেন, তখন তাকে জিজ্ঞাসা করা হল, তুমি কে? উত্তরে তিনি বললেন, আমি জিবরীল, তারপর জিজ্ঞাসা করা হল, তোমার সাথে কে? বলল, আমার সাথে মুহাম্মদ। তারপর তিনি দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও সব আসমানে আরোহণ করেন। প্রতিটি আসমানের দরজায় তাকে বলা হয়, তুমি কে? তখন তিনি বলেন, আমি জিবরীল”। [বুখারি ও মুসলিম ]
দুই- আবু যর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
“একরাত আমি ঘর থেকে বের হয়ে দেখতে পেলাম, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ চাদের আলোতে একা একা হাঁটছে। তারপর সে ঘুরে দাঁড়ালে আমাকে দেখতে পেল এবং বলল, লোকটি কে? আমি বললাম, আমি আবু যর”। [বুখারি ও মুসলিম ]
তিন- উম্মে হানি রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা’ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
“আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ এর দরবারে এসে দেখি, তিনি গোসল করছেন এবং ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ তাকে ডেকে রাখছেন। তারপর তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, কে সে? আমি বললাম: আমি উম্মে হানি”। [বুখারি ও মুসলিম ]
চার- জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
“আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ এর দরবারে আসি এবং তার দরজায় আওয়াজ করি। তিনি বললেন, লোকটি কে? আমি বললাম: আমি, এ কথা শোনে তিনি বললেন: আমি আমি! মনে হয় যেন, তিনি এ কথা বলাকে অপছন্দ করেন। [বুখারি মুসলিম ]
এক- আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
“আল্লাহ্ তা‘আলা হাঁচিকে পছন্দ করেন এবং হাইকে অপছন্দ করেন। যদি তোমাদের কেউ হাঁচি দেয় এবং আলহামদুলিল্লাহ বলে, তখন যে মুসলিম কথাটি শুনল, তার উপর ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলা ওয়াজিব। আর হাই, এটি শয়তানের পক্ষ থেকে হয়ে থাকে। যখন তোমাদের কোনো ব্যক্তির হাই আসে, সে যেন তার সাধ্যমত তাকে প্রতিহত করে। কারণ, তোমাদের মধ্যে যে কেউ হাই দেয়, তাকে নিয়ে শয়তান হাসা-হাসি করে। বুখারি ।
দুই- আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত,
“রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন, তোমাদের মধ্য হতে কেউ যখন হাঁচি দেয় সে যেন الحمد لله ‘সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য’ বলে। আর সাথের ভাই বা সঙ্গী বলবে, يرحمك الله ‘আল্লাহ তোমার উপর দয়া করুক’ আর যখন লোকটি يرحمك বলবে, তার উত্তরে বলবে, يهديكم الله ويصلح بالكم ‘আল্লাহ তোমাদের হেদায়েত দেন এবং তোমাদের অবস্থা সংশোধন করে দিক’। বুখারি
তিন- আবু মুসা আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
“আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, যখন কোন ব্যক্তি হাঁচি দিয়ে আল্লাহর প্রশংসা করে, তখন তোমরা তার উত্তর দাও। আর যদি লোকটি আল্লাহর প্রশংসা না করে, তাহলে তোমরা তার উত্তর দিও না”।বর্ণনায় মুসলিম।
চার- আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
“রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ এর দরবারে দুইজন লোক হাঁচি দিল, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ একজনের হাসির উত্তর দেন, অপর জনের হাসির উত্তর দেন নি। যার হাঁচির উত্তর দেয়নি সে বলে, অমুকের হাঁচির উত্তর দিলেন আর আমি হাঁচি দিয়েছি কিন্তু আমার হাঁচির উত্তর দেন নি? তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ তাকে বললেন, “সে লোকটি আলহামদুলিল্লাহ বলেছে। আর তুমি তা বলোনি”। [বুখারি ও মুসলিম ]
পাঁচ- আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
“রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ যখন হাঁচি দিতেন, সে তার হাতকে মুখের উপর রাখতেন অথবা কোন কাপড়কে মুখের উপর রাখতেন এবং তার আওয়াজকে ছোট করতেন বা নিম্ন স্বরে হাঁচি দিতেন। বর্ণনাকারী সন্দেহ করেন”। বর্ণনায় আবু-দাউদ ও তিরমিযী । ইমাম তিরমিযী হাদিসটিকে হাসান ও সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন।
ছয়- আবু মুসা আশয়ারি রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
“ইয়াহুদীরা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ এর দরবারে হাঁচি দিতেন, আর তারা আশা করত, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ তাদের জন্য يرحمكم الله বলবেন। কিন্তু তিনি বলতেন يهديكم الله ويصلح بالكم “আল্লাহ তোমাদেরকে হেদায়াত দান করুন এবং তোমাদের চরিত্রকে সংশোধন করে দিক”। বর্ণনায় আবু-দাউদ ও তিরমিযী। ইমাম তিরমিযী হাদিসটিকে হাসান ও সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন ।
সাত- আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন, তোমাদের কেউ যখন হাই তুলে, সে যেন তার হাতকে তার মুখের উপর রাখে। কারণ, অন্যথায় শয়তান প্রবেশ করে। বর্ণনায় মুসলিম ।
এক- আবু খাত্তাব ক্বাতাদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
“আমি আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’কে জিজ্ঞাসা করলাম, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ এর যুগে মুসাফাহা করার প্রচলন ছিল কিনা? উত্তরে তিনি বলেন, হ্যাঁ ছিল”। [বর্ণনায় বুখারি ]
দুই- আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
“রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ এর দরবারে ইয়ামনের অধিবাসীরা আসলে, তিনি সাহাবীদের বলেন, তোমাদের নিকট ইয়ামনিরা এসেছে। আর তারাই হল, সে সব লোক, যারা সর্ব প্রথম মুসাফাহার প্রচলন করেন”। বর্ণনায় আবু-দাউদ বিশুদ্ধ সনদে ।
তিন- বারা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
“যখন দুইজন মুসলিম একত্র হয় এবং একে অপরের সাথে মুসাফাহা করে। তারা উভয় বিচ্ছিন্ন হওয়ার পূর্বে আল্লাহ্ তা‘আলা তাদের ক্ষমা করে দেন”। বর্ণনায় আবু-দাউদ ।
চার- আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
“এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের কোন লোক তার অপর ভাই অথবা বন্ধুর সাথে সাক্ষাত করলে, সে কি তার সম্মানে মাথা নিচু করবে? রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বললেন, ‘না’। তারপর সে বলল, তাকে জড়িয়ে ধরবে কিনা এবং চুমু দিবে কিনা? রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বললেন, ‘না’। তারপর আবার জিজ্ঞাসা করা হল, তার হাত ধরে তার সাথে মুসাফাহা করবে কিনা? বললেন, ‘হ্যাঁ’।” বর্ণনায় তিরমিযী এবং তিনি বলেন, হাদিসটি হাসান সহীহ-বিশুদ্ধ।
পাঁচ- সাফওয়ান ইবনে ‘আস্সাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
“একজন ইয়াহূদী তার সাথীকে বলল, তুমি আমাকে নিয়ে এই নবী (মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকট নিয়ে যাও। তারা উভয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ এর নিকট আসেন এবং তাকে নয়টি নিদর্শন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। তারপর তারা দীর্ঘ হাদিসটি উল্লেখ করেন... তাতে বলা হয়, তারা উভয়ে তার হাত ও পায়ে চুমু দেন এবং তারা উভয়ে বলেন, আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি- নিশ্চয় আপনি আল্লাহর রাসূল। বর্ণনায় তিরমিযী ও অন্যান্যরা বিশুদ্ধ সনদে।
ছয়- আবদুল্লাহ ইবন ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা’ হতে একটি কিসসা বর্ণিত, তাতে তিনি বলেন,
“অত:পর আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ এর নিকটে গেলাম এবং তার হাতে চুমু দিলাম”। বর্ণনায় আবু-দাউদ ।
সাত- আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
“যখন যায়েদ ইব্ন হারেসা মদিনায় আগমন করল, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ আমার ঘরে ছিল। সে আমার বাড়ীতে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ এর নিকট এসে দরজায় আওয়াজ করল। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ তার দিকে উঠে দাঁড়ালেন, তারপর তার সাথে মু‘আনাকা-কোলাকুলি করলেন এবং তাকে চুমু দিলেন। বর্ণনায় তিরমিযী এবং তিনি বলেন, হাদিসটি হাসান।
আট-আবু যর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
“আমাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন, তোমরা কোন ভালো কাজকে তুচ্ছ মনে করবে না, যদিও তোমার কোন ভাইয়ের সাথে হাসি মুখে সাক্ষাত কর”। বর্ণনায় মুসলিম ।
নয়- আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
“রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ হাসান ইব্ন আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ কে চুমু দেন। তখন আকরা ইব্ন হাবেছ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ বলেন, আমার দশটি সন্তান আছে, অথচ আমি কোনো দিন কাউকে আদর করে চুমু দিইনি। তার কথা শুনে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বললেন, যে ব্যক্তি অন্যের প্রতি দয়া করে না, তার প্রতিও দয়া করা হবে না। [বুখারি ও মুসলিম ]
সালাম দেয়া সুন্নত:
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন,
“হে মুমিনগণ, তোমরা নিজদের গৃহ ছাড়া অন্য কারও গৃহে প্রশে করো না, যতক্ষণ না তোমরা অনুমতি নেবে এবং গৃহবাসীদেরকে সালাম দেবে”। [সূরা নূর, আয়াত: ২৭]
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
“তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা পরিপূর্ণ ঈমানদার হতে পারবে না। আর ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা পরিপূর্ণ ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি তোমরা একে অপরকে ভালবাসবে না, আমি কি তোমাদেরকে এমন একটি জিনিস বাতলে দেব, যা করলে তোমরা পরস্পর পরস্পরকে ভালো বাসবে? তারপর তিনি বললেন, তোমারা বেশি বেশি করে সালামকে প্রসার কর”। মুসলিম।
কোনো জামাতকে সালাম দেয়ার ক্ষেত্রে সালাম শব্দটি মারেফা (السلام) বা নাকিরা (سلام) উভয় প্রকারে ব্যবহার করা যাবে। কারণ, হাদিসে উভয় প্রকারের ব্যবহার প্রমাণিত আছে। আল্লামা ইবনুল বান্না রহ. বলেন, সম্ভাষণের সালাম নাকিরা হবে, আর বিদায়ী সালাম মারেফা হবে।
জামাতের মধ্য হতে যে কোনো একজনের সালাম দেয়া দ্বারা সুন্নত আদায় হয়ে যাবে। উত্তম হল জামাতের সবাইকে সালাম দেয়া। কারণ, হাদিসে বলা হয়েছে «أفشوا السلام بينكم» অর্থাৎ, তোমরা তোমাদের পরস্পরের মধ্যে সালামকে প্রসার কর।
আর যে সব ক্ষেত্রে সালাম দেয়া মাকরূহ, সে সব ক্ষেত্রগুলোকে আল্লামা গায্যি রহ. কাব্য আকারে উল্লেখ করেন। নিম্নে তার কাব্যগুলো উল্লেখ করা হল:
سلامك مكروه على من ستسمع
ومن بعد ما أبدي يسن ويشرع
مصل وتال ذاكر ومحدث
خطيب ومن يصغي إليهم ويسمع
مكرر فقه جالس لقضائه
ومن بحثوا في الفقه دعهم لينفعوا
مؤذن أيضًا مع مقيم مدرس
كذا الأجنبيات الفتيات أمنع
ولعاب شطرنج وشبه بخلقهم
ومن هو مع أهل له يتمتع
ودع كافرًا أيضًا وكاشف عورة
ومن هو في حال التغوط أشنع
ودع آكلا إلا إذا كنت جائعًا
وتعلم منه أنه ليس يمنع
كذلك أستاذ مغن مطير
فهذا ختام والزيادة تنفع
অর্থ: যাদের সালাম দেয়া মাকরূহ নিম্নে তাদের আলোচনা করা হল: এরা ছাড়া বাকী যাদের সাথে তোমার দেখা হবে, তাদের সালাম দেয়া সুন্নত ও বৈধ। সালাতরত ব্যক্তি, তিলাওয়াতকারী, যিকিরকারী, হাদিস পাঠদানকারী, খুতবাদানকারী এবং যারা খুতবা শুনায় মগ্ন [তাদের সালাম দেয়া মাকরূহ]। ফিকহ নিয়ে আলোচনাকারী, বিচারক যিনি বিচার কার্যে ব্যস্ত [তাকেও সালাম দেয়া মাকরূহ]। আর যারা ফিকহ নিয়ে গবেষণা করছে তাদেরও তোমরা সালাম দেয়া হতে বিরত থাক, যাতে তারা উপকৃত হয়। মুয়াজ্জিন, ইকামত দানকারি ও পাঠদানকারীদের সালাম দেয়া মাকরূহ। অনুরূপভাবে অপরিচিত যুবতী নারী, [যাদের সালাম দেয়াতে ফিতনার আশংকা থাকে] তাদের সালাম দেয়া কোন ক্রমেই উচিত নয়। যারা দাবা খেলায় মগ্ন তাদের ও তাদের মত লোকদের সালাম দেয়া মাকরূহ। আর যে ব্যক্তি তার স্ত্রীর সাথে খেল-তামাশায় মগ্ন [তাদের সালাম দেয়া যাবে না]। কাফের ও লেংটা লোককে সালাম দেবে না, পেশাব পায়খানায় লিপ্তদের সালাম দেয়া হতে বিরত থাকবে। অনুরূপভাবে খাওয়ায় ব্যস্ত [লোককে সালাম দেবে না], তবে যদি তুমি ক্ষুধার্ত হও এবং জান যে লোকটি তোমাকে ফিরিয়ে দেবে না। অনুরূপভাবে শিক্ষক যিনি লেকচার দেয়ায় ব্যস্ত। মনে রাখবে এ হল, শেষ ব্যক্তি বাকীদের সালাম দেয়াতে তুমি উপকার লাভ করবে।
সালামের উত্তর দেয়া ফরযে কিফায়াহ। যদি উপস্থিত লোক একজন হয়, তবে তাকেই সালামের উত্তর দিতে হবে। কারণ, আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন,
“আর যখন তোমাদেরকে সালাম দেয়া হবে, তখন তোমরা তার চেয়ে উত্তম সালাম দেবে। অথবা জবাবে তাই দেবে”। [সূরা নিসা, আয়াত: ৮৬]
আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে মারফু হাদিস বর্ণিত, তিনি বলেন,
“যখন কোন জামাত অতিক্রম করে, তখন তাদের থেকে যে কোন একজনের সালাম যথেষ্ট হবে এবং কোন মজলিস হতে যে কোন একজন সালামের উত্তর দিলে তা সকলের পক্ষ থেকে যথেষ্ট হবে”। আবু-দাউদ ।
সালাম দেয়ার পদ্ধতি:
যে ব্যক্তি আগে সালাম দেবে, তার জন্য মোস্তাহাব হল, সে বলবে- «السلام عليكم ورحمة الله وبركاته» সালাম দেয়ার ক্ষেত্রে বহুবচন শব্দ ব্যবহার করবে। যদিও উপস্থিত ব্যক্তি একজন হয়। আর সালামের উত্তর দাতা এ বলে উত্তর দেবে: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته، সালামের উত্তরে واو العطف উল্লেখ করবে। আর মনে রাখবে, সালাম দেয়ার সময় কেউ যদি السلام عليكم এবং উত্তর দেয়ার সময় শুধু وعليكم السلام. বলে, তাতে সালাম আদায় হয়ে যাবে। যখন কোনো একজন মুসলিমকে সালাম দেয়া হল, তারপর তার সাথে যতবার দেখা হবে, ততবার সালাম দেবে। কারণ, হাদিসে সালামকে প্রসার করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
“তোমরা সালামকে প্রসার কর”।
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
“যখন তোমরা তোমাদের কোন ভাইয়ের সাথে সাক্ষাত কর, তাকে সালাম দাও। যদি তোমাদের উভয়ের মাঝে কোন গাছ কিংবা পাথর বা দেয়াল বিচ্ছিন্নতা ঘটায়, তারপর আবার দেখা হয়, তাহলে আবারও সালাম দাও”।
মনে রাখবে, আগে সালাম দেয়া সুন্নত। কারণ, আবু উমামাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে হাদিস বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
“নিশ্চয় আল্লাহর নিকট উত্তম ব্যক্তি সে যে মানুষকে আগে সালাম দেয়”। বর্ণনায় আবু-দাউদ শক্তিশালী সনদে।
মজলিস থেকে ফিরে যাওয়ার সময়, সালাম দেয়া মোস্তাহাব। কারণ আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
“যখন তোমরা কোন মজলিসে গিয়ে পৌছবে তখন তুমি সালাম দেবে। আর যখন তুমি মজলিস শেষ করে মজলিস থেকে উঠে দাঁড়াবে, তখনও সালাম দেবে। প্রথম সালাম শেষের সালাম থেকে অধিক গুরুত্ব বহন করে না”। বর্ণনায় আবু-দাউদ ও তিরমিযী এবং ইমাম তিরমিযী বলেন, হাদিসটি হাসান।
বাচ্চাদের সালাম দেয়া মোস্তাহাব:
প্রমাণ:
অর্থ: আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, তিনি বাচ্চাদের নিকট দিয়ে অতিক্রম করেন এবং তাদের সালাম দেন এবং বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ অনুরূপ করতেন। বুখারি ও মুসলিম। আল্লাহ ভালো জানেন।
ছোটরা বড়দের সালাম দেবে, কম লোক বেশি লোককে সালাম দেবে এবং আরোহী ব্যক্তি পায়ে হাটা ব্যক্তিকে সালাম দেবে। কারণ, আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
“ছোটরা যেন বড়দের সালাম দেয়, পায়ে হাটা ব্যক্তি যেন বসা ব্যক্তিকে সালাম দেয় এবং কম সংখ্যক লোক যেন বেশি সংখ্যক লোককে সালাম দেয়”। বুখারি ও মুসলিম।
আর মুসলিমের বর্ণনায় বর্ণিত, “আরোহী ব্যক্তি পায়ে হাটা ব্যক্তিকে সালাম দেবে”।
যখন দুই সাক্ষাতকারী পরস্পর সালাম দেয় এবং পরস্পরের সালাম শুনতে পায়, তখন উভয়ের উপরই সালামের উত্তর দেয়া ওয়াজিব হয়ে যায়। আর যখন কোনো এক দল লোক কোনো বসা ব্যক্তি বা বসা লোকদের মজলিসে উপস্থিত হবে, তখন সে প্রথমে তাদের সালাম দেবে। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন, «والمار على القاعد» আর যখন কোনো ব্যক্তি দেয়ালের ওপাশ থেকে সালাম দেয়, তখন তার নিকট সালাম পৌছার পর, উত্তর দেয়া ওয়াজিব।
আর যখন কোনো ব্যক্তি দূর থেকে চিঠির মাধ্যমে অথবা দূতের মাধ্যমে কাউকে সালাম দেয়, তখন তার নিকট সালাম পৌছার পর সালামের উত্তর দেয়া ওয়াজিব। তবে মোস্তাহাব হল, দূতকেও সালাম দেয়া এবং এ কথা বলা, وعليك وعليه السلام তোমার উপর ও তার উপর সালাম। কারণ, হাদিসে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’কে একজন ব্যক্তি এসে বলল,
أبي يقرؤك السلام فقال: «عليك وعلى أبيك السلام».
“আমার পিতা আপনাকে সালাম দিয়েছে।” এ কথা শোনে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বললেন, “তোমার উপর এবং তোমার পিতার উপর সালাম” ।
ইমাম আহমদ ইবন হাম্বল রহ. কে বলা হল, অমুক আপনাকে সালাম দিয়েছে। তখন তিনি বললেন, ‘তোমার উপর ও তার উপর সালাম’।
যদি কোনো ব্যক্তি বধিরকে সালাম দেয়, তখন মুখে বলবে এবং হাতে ইশারা করবে। আর বোবা ব্যক্তির সালাম দেয়া ও উত্তর দেয়া উভয়টি ইশারা দ্বারা হবে। কারণ, তার ইশারা কথার স্থলাভিষিক্ত। আর নারীদের সালাম দেয়া পুরুষদের পরস্পরের সালামের মতই- কোনো পার্থক্য নাই।
একজন পুরুষ অপর পুরুষের সাথে মুসাফাহা করা মুস্তাহাব, অনুরূপভাবে একজন নারী অপর নারীর সাথে মুসাফাহা করা মুস্তাহাব।
প্রমাণ: আবু খাত্তাব, ক্বাতাদা রহেমাহুল্লাহ থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন,
“আমি আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ কে জিজ্ঞাসা করলাম রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ এর যুগে মুসাফাহা করার প্রচলন ছিল কিনা? উত্তরে তিনি বলেন, হ্যাঁ, ছিল”। বর্ণনায় বুখারি।
বারা ইব্ন আযেব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ এরশাদ করেন,
“যখন দুইজন মুসলিম একত্র হবে এবং একে অপরের সাথে মুসাফাহা করে তখন তারা উভয় বিচ্ছিন্ন হওয়ার পূর্বে আল্লাহ্ তা‘আলা তাদের উভয়কে ক্ষমা করে দেন”। বর্ণনায় আবু-দাউদ
যখন তুমি এমন কোনো একদল লোকের মজলিসে প্রবেশ করবে যেখানে ওলামাগণও উপস্থিত আছে, তখন প্রথমে তাদের সবাইকে সালাম দেবে, তারপর আলেমদের আলাদাভাবে সালাম দেবে; যাতে সাধারণ মানুষ ও আলেমদের মধ্যে পার্থক্য বুঝা যায়। অনুরূপভাবে যদি মজলিসে একজন আলেম থাকে তাকেও আলাদাভাবে সালাম দেবে।
সালাম দেয়ার সময় মাথা ঝুঁকানো সম্পূর্ণ অবৈধ, তবে কোলাকুলি করা বৈধ। প্রমাণ:
আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
“এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের মধ্য হতে কোন লোক তার অপর ভাই অথবা বন্ধুর সাথে সাক্ষাত করলে, সে কি তার সম্মানে মাথা নিচু করবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ না, তারপর সে বলল, তাকে জড়িয়ে ধরবে কিনা এবং চুমু দেবে কিনা? রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বললেন, না, তারপর আবার জিজ্ঞাসা করা হল, তার হাত ধরে তার সাথে মুসাফাহা করবে কিনা? বলল, হ্যাঁ”। বর্ণনায় তিরমিযী এবং তিনি বলেন, হাদিসটি হাসান সহীহ।
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
“যায়েদ ইব্ন হারেসা মদিনায় আগমন করল, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ আমার ঘরে ছিল, সে আমার বাড়ীতে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ এর নিকট এসে দরজায় আওয়াজ করল। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ তার দিকে উঠে দাঁড়াল, তারপর তার সাথে মু‘আনাকা করল এবং তাকে চুমু দিল”। বর্ণনায় তিরমিযী এবং তিনি বলেন, হাদিসটি হাসান।
আর যখন ঘরে প্রবেশ করবে, তখন সালাম দেয়া সুন্নত। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন,
“তবে তোমরা যখন কোন ঘরে প্রবেশ করবে তখন তোমরা নিজদের উপর সালাম করবে, আল্লাহর পক্ষ থেকে বরকতপূর্ণ ও পবিত্র অভিবাদনস্বরূপ”। [সূরা নূর, আয়াত: ৬১]
আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
“হে বৎস! তুমি যখন ঘরে প্রবেশ করবে, তখন সালাম দাও। তা তোমার জন্য ও তোমার পরিবার পরিজনের জন্য বরকত হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে”। বর্ণনায় তিরমিযী এবং তিনি বলেন, হাদিসটি হাসান।
আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
“যখন কোন ব্যক্তি ঘর থেকে বের হওয়ার সময় এ দো‘আ পাঠ করে, بسم الله توكلت على الله لا حول ولا قوة إلا بالله তাকে বলা হয়, তোমাকে হেদায়েত দেয়া হয়েছে, তোমাকে বাঁচানো হয়েছে। আর শয়তান তার থেকে দূর হয়ে যায়। বর্ণনায় তিরমিযী, তিনি হাদিসটিকে হাসান আখ্যায়িত করেন, নাসায়ী ও ইবনে হিব্বান; তার সহীহতে।
সূনানে আবু দাউদে আবু মালেক আল-আশআরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
“যখন কোন ব্যক্তি ঘরে প্রবেশ করে, সে যেন এ দো‘আ পাঠ করে।
“হে আল্লাহ! তোমার নিকট উত্তম বাসস্থান চাই এবং উত্তম বের হওয়া চাই। হে আল্লাহ! আমরা আল্লাহর নামে প্রবেশ করলাম এবং আল্লাহর নামে বের হলাম। হে আমাদের রব আমরা আল্লাহর উপর ভরসা করলাম”। তারপর সে তার পরিবার-পরিজনকে সালাম দেবে”।
যখন কোন ব্যক্তি হাঁচি দিয়ে আল্লাহর প্রশংসা করে, তার উত্তর দেয়া ফরযে কিফায়া। আর তার উত্তরে يرحمك الله বলা ফরযে আইন।
প্রমাণ:
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে মারফু হাদিস বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
“যদি তোমাদের কেউ হাঁচি দেয় এবং আলহামদু লিল্লাহ বলে, তখন যে মুসলিম কথাটি শুনল, তার উপর ওয়াজিব হল, সে يرحمك الله ‘ইয়ার হামুকাল্লাহ’ ‘আল্লাহ তোমাকে দয়া করুক’ বলবে”।
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে আরও বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
“যখন তোমাদের কেউ হাঁচি দেয়, তখন সে যেন সর্বাবস্থায় আলহামদু লিল্লাহ বলে, উত্তরে তার সাথী বা ভাই যেন বলে, يرحمك الله তারপর সে বলবে يهديكم الله ويصلح بالكم আল্লাহ তোমাদের হেদায়েত দান করুন এবং তোমাদের অবস্থাকে সংশোধন করে দিক”। আবু-দাউদ।
আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
“একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ এর দরবারে দুই লোক হাঁচি দিল, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ একজনের হাঁচির উত্তর দেন অপর জনের হাঁচির উত্তর দেন নি। যার হাঁচির উত্তর দেয়নি সে বলল, অমুকের হাঁচির উত্তর দিলেন আর আমি হাঁচি দিয়েছি, কিন্তু আমার হাঁচির উত্তর দেন নি। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ তাকে বললেন, সে লোকটি আলহামদু লিল্লাহ বলেছে। আর তুমি তা বলোনি”। [বুখারি ও মুসলিম]
যখন কোন ব্যক্তির হাই আসে, সাধ্য অনুযায়ী তা দমিয়ে রাখা ভালো। তারপরও যদি অক্ষম হয়, তাহলে হাত বা কাপড় ইত্যাদি দ্বারা মুখ ডেকে রাখবে।
প্রমাণ: আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
“তোমাদের কেউ যখন হাই তুলে, সে যেন তার হাতকে মুখের উপর রাখে। কারণ, তখন শয়তান তার মুখে প্রবেশ করতে থাকে। আর যখন কোন ব্যক্তি হাঁচি দেয়, সে যেন তার চেহারাকে ডেকে রাখে এবং আওয়াজ ছোট করে, যাতে অন্যদের কষ্ট না হয়”।
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত তিনি বলেন,
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ যখন হাঁচি দিতেন, তখন তিনি তার চেহারাকে হাত বা কাপড় দিয়ে ডেকে রাখতেন। হাদিসটি বিশুদ্ধ।
শারহে মানযুমাতুল আদাব কিতাবে এসেছে, আল্লামা ইবনে হুবাইরা রহ. বলেন, যখন কোনো মানুষ হাঁচি দেয়, তাতে তার শরীরের সুস্থতা প্রমাণিত হয়। তার হজম শক্তি ভাল হওয়া ও তার শক্তিশালী হওয়ার প্রমাণিত হয়। সুতরাং, তার জন্য উচিত, আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা। এ কারণেই রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ তাকে আল্লাহর প্রশংসা করার নির্দেশ দেন।
বুখারিতে বর্ণিত, “আল্লাহ তা‘আলা হাঁচিকে পছন্দ করেন এবং হাইকে অপছন্দ করেন।” কারণ, হাঁচি দেয়া মানুষের শরীরের সুস্থতা ও কর্মঠ হওয়াকে প্রমাণ করে। পক্ষান্তরে ‘হাই তোলা’ দেহ ভারী হওয়া, ঢিলে-ডালা হওয়া ও দুর্বল হওয়াকে প্রমাণ করে। ফলে তা মানুষকে অলসতার দিকে নিয়ে যায়। এ কারণেই হাইকে শয়তানের কর্ম বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। কারণ, শয়তান তাতে খুশি হয় এবং তার কারণেই শয়তান মানুষকে প্রবৃত্তির পূজা করার প্রতি ধাবিত করে। যখন কোনো ব্যক্তি দ্বিতীয়বার হাঁচি দেয়, তখনও তুমি তার হাঁচির উত্তর দাও। আর যদি চতুর্থ বার হাঁচি দেয়, তাহলে তার জন্য নিরাপত্তা বা রোগমুক্তির দো‘আ কর।
যখন কোনো ব্যক্তি ‘আত্মীয় হোক বা না হোক’ ঘরে প্রবেশ করতে চায়, তাকে অবশ্যই ঘরে প্রবেশের পূর্বে অনুমতি চাইতে হবে।
প্রমাণ: আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
হে মুমিনগণ, তোমরা নিজদের গৃহ ছাড়া অন্য কারও গৃহে প্রবেশ করো না, যতক্ষণ না তোমরা অনুমতি নেবে এবং গৃহবাসীদেরকে সালাম দেবে। [সূরা নূর, আয়াত: ২৭]
আবু মুসা আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
“অনুমতি চাওয়া তিনবার। যদি তোমাকে অনুমতি দেয়, তা হলে ভাল। অন্যথায় তুমি ফিরে যাও”। বুখারি ও মুসলিম।
কালদা ইব্ন হাম্বল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
“আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ এর দরবারে এসে সালাম না দিয়ে তার নিকট প্রবেশ করলে, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ আমাকে বললেন, ফিরে যাও! এবং বল, ‘আসসালামু আলাইকুম’ আমি কি প্রবেশ করব”? বর্ণনায় আবু-দাউদ এবং তিরমিযী, ইমাম তিরমিযী বলেন, হাদিসটি হাসান।
যখন কোন ব্যক্তি অন্য কোনো নামে তাকে না চিনে তখন যে নামে মানুষ তাকে চিনে সে নামে নিজের পরিচয় তুলে ধরাতে কোন অসুবিধা নাই। যদিও তাতে নিজেকে এক প্রকার প্রকাশ করা হয়ে থাকে। যেমন- সে তার উপাধি দ্বারা পরিচয় তুলে ধরল এবং বলল, আমি মুফতি অমুক, অথবা অমুক বিচারক অথবা শেখ অমুক ইত্যাদি বিনয় সম্বলিত শব্দ উল্লেখ করা। এতে কোনো ক্ষতি নাই। প্রমাণ:
উম্মে হানি রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, তার নাম ফাখেতা, কেউ কেউ বলেন, তার নাম ফাতেমা, আবার কেউ কেউ বলেন, তার নাম হিন্দ। তিনি বলেন,
“আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ এর দরবারে এসে দেখি তিনি গোসল করছেন এবং ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা’ তাকে ডেকে রাখছেন। তারপর তিনি জিজ্ঞাসা করে বলেন, কে সে? আমি বললাম, আমি উম্মে হানি। [বুখারি মুসলিম]
আবু যর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
“এক রাত আমি ঘর থেকে বের হয়ে দেখতে পেলাম, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ চাদের আলোতে একা একা হাঁটছে। কিছুক্ষণ পর সে ঘুরে দাঁড়ালে আমাকে দেখল এবং বলল, লোকটি কে? আমি বললাম, আমি আবু যর”। [বুখারি মুসলিম ]
এমন জামাতকে সালাম দেয়া মাকরূহ যারা ওজু-গোসল করছে, খাচ্ছে, যুদ্ধ করছে, কুরআন তিলাওয়াত বা যিকির করছে, তালবীয়া পাঠ করছে, হাদিস পড়াচ্ছে, ভাষণ দিচ্ছে, ওয়াজ করছে, ওয়াজ-নছীহত বা ভাষণ শুনছে, ফিকহের আলোচনা করছে, পাঠদান করছে, গবেষণা করছে, আযান দিচ্ছে, সালাত আদায় করছে, পেশাব-পায়খানায় লিপ্ত আছে, স্ত্রীর সাথে খেল-তামাশা করছে, বিচার কাজে লিপ্ত আছে ইত্যাদি। যদি কোনো ব্যক্তি এমন সময় সালাম দেয়, যখন সালাম দেয়া মাকরূহ, তার সালামের উত্তর দেয়া ওয়াজিব নয়। আল্লামা খালওয়াতী রহ. যাদের সালাম দেয়া মাকরূহ তাদের কথা কাব্য আকারে একত্র করে আলোচনা করেন। তিনি বলেন,
رد السلام واجب إلا على
من في الصلاة أو بأكل شغلاً
أو شرب أو قراءة أو أدعيه
أو ذكر أو في خطبة أو تلبية
أو في قضاء حاجة الإنسان
أو في إقامة أو الأذان
أو سلم الطفل أو السكران
أو شابة يخشى بها افتتان
أو فاسق أو ناعس أو نائم
أو حالة الجماع أو تحاكم
أو كان في الحمام أو مجنونًا
فهي اثنتان قبلها عشرونًا
“সালামের উত্তর দেয়া সবার উপর ওয়াজিব। তবে যে ব্যক্তি সালাত আদায়ে ব্যস্ত অথবা খাওয়া বা পান করায় ব্যস্ত তার জন্য সালামের উত্তর দেয়া ওয়াজিব নয়। অনুরূপভাবে দো‘আ, যিকির, খুতবা, তালবীয়া পাঠ, পায়খানা-পেশাবে লিপ্ত ব্যক্তির উপর সালামের উত্তর দেয়া ওয়াজিব নয়। আযান ইকামত দেয়া অবস্থায় সালামের উত্তর দেয়া ওয়াজিব নয়। বাচ্চাদের জন্য সালামের উত্তর দেয়া, মাতাল, যুবতী নারী যার সালামের উত্তর দেয়াতে ফিতনার আশংকা থাকে তার সালামের উত্তর ও ফাসেকের সালামের উত্তর দেয়া, ওয়াজিব নয়। তন্দ্রাচ্ছন্ন, ঘুমন্ত, স্ত্রীর সাথে সহবাস অবস্থায়, বিচার কার্য পরিচালনার সময় [সালামের উত্তর দেয়া ওয়াজিব নয়] অথবা যখন কোন ব্যক্তি গোসল খানায় থাকে বা মাতাল থাকে [তখনও সালামের উত্তর দেয়া ওয়াজিব নয়] এখানে দুটির কথা আলোচনা হল, এর পূর্বে বিশটি।
এখানে যতগুলো লোককে সালাম দেয়া মাকরূহ হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, অধিকাংশের বিষয়টি হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। আর যাদের বিষয়ে কোন হাদিস পাওয়া যায় না, তাদেরকে হাদিসের উপর ক্বিয়াস করে মাকরূহ বলা হয়েছে। যখন ওয়াজিব না থাকে, তখন মুস্তাহাব বা বৈধ হওয়া বাকী থাকে। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে উত্তর দেয়াও মাকরূহ হয়ে যায়। যেমন যে লোকটি পেশাব-পায়খানা বা স্ত্রীর সাথে লিপ্ত এ ধরনের ক্ষেত্রে সালামের উত্তর দেয়া মাকরূহ হয়ে যায় ।
এক- মনে রাখবে সালাম দেয়ার উপকারিতা অনেক। তার মধ্যে একটি উপকার, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ এর সুন্নত পালন করা।
দুই- যারা বলেন, প্রথমে সালাম দেয়া ওয়াজিব, তাদের কথা অনুযায়ী হারাম থেকে রেহাই পাওয়া। যদিও বিশুদ্ধ ও নির্ভরযোগ্য মত হল, সালাম দেয়া ওয়াজিব না হওয়া।
তিন- কৃপণতা থেকে মুক্ত হওয়া।
হাদিসে বর্ণিত, কৃপণ জান্নাতে আদনে প্রবেশ করবে না।
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
“কৃপণতার চেয়ে আর কোন ব্যাধি এত বেশি মারাত্মক? কৃপণ আল্লাহর নিকট ঘৃণিত, মানুষের নিকট ঘৃণিত, জান্নাত হতে বিতাড়িত, শয়তানের বন্ধু এবং জাহান্নামের নিকটে অবস্থানকারী। আর জান্নাত হল, দানশীলদের ঠিকানা” ।
চার- যে সব কারণগুলো মানুষকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে, সালাম একটি অন্যতম কারণ।
যেমন- আব্দুল্লাহ ইবন সালামের হাদিসে বর্ণিত। এ ছাড়াও সালাম জান্নাতে প্রবেশকে ওয়াজিব করে। যেমন-আবু সারাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ এর হাদিস; তিনি বলেন,
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ কে জিজ্ঞাস করা হল, হে আল্লাহর রাসূল! তুমি আমাকে এমন আমল বাতলেয়ে দাও, যা জান্নাতে প্রবেশকে ওয়াজিব করে। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বললেন, “মিষ্টি কথা, সালামের প্রসার এবং মানুষকে খানা খাওয়ানো। বর্ণনায় তাবরানী, ইবনে হিব্বান স্বীয় সহীহতে এবং হাকেম তার সহীহতে।
পাঁচ- সালামের প্রসার করা, মাগফিরাত ও ক্ষমা লাভ করার কারণ।
আল্লামা তাবরানী আবু সারহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বিশুদ্ধ সনদে হাদিস বর্ণনা করে বলেন,
“আমি বললাম হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে এমন আমল বাতলেয়ে দাও, যা আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বললেন, ক্ষমা লাভের কারণ হল, সালামের প্রসার ও সুন্দর কথা”।
ছয়. সালাম মুসলিম ভাইদের মধ্যে পরস্পর মহব্বত সৃষ্টি করে। যেমন উপরে উল্লেখিত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ এর হাদিস ও অন্যান্য হাদিসে বিষয়টি বর্ণিত( )। আর একটি কথা মনে রাখবে মহব্বতের শান অধিক মহান, তার মর্তবা অনেক বড়। আর ঊর্ধ্ব জগত ও নিম্ন জগতের ভিত্তিই হল, মহব্বত।
সমগ্র জগতের উত্থান-পতন, নড়-চড়, সবই মহব্বত থেকেই সৃষ্ট। এ কারণেই মহব্বতের গুরুত্ব সম্পর্কে বর্ণিত হাদিস অনেক। এ ছাড়াও মহব্বত ঈমানের ঝাণ্ডা হওয়াটা তার গুরুত্ব বুঝার জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ্ তা‘আলাই ইহসানের অভিভাবক।
সাত- সালাম দেয়া দ্বারা অপর মুসলিম ভাইয়ের অধিকার আদায় করা হয়।
যেমন- সহীহ মুসলিমে আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
“একজন মুসলিমের জন্য অপর মুসলিমের হক ছয়টি। জিজ্ঞাসা করা হল হে আল্লাহর রাসূল! সে গুলো কি? তিনি বললেন, তোমার সাথে সাক্ষাৎ হলে, সালাম দেবে। তোমাকে দাওয়াত দিলে, তাতে শরিক হবে, উপদেশ চাইলে, উপদেশ দেবে। হাঁচি দিয়ে আলহামদু লিল্লাহ বললে, তার উত্তর দেবে। অসুস্থ হলে, তাকে দেখতে যাবে এবং মারা গেলে, তার জানাযায় শরিক হবে”।
আট- আল্লাহর নিকট উত্তম ব্যক্তি হওয়া।
প্রমাণ: ইমাম আবু-দাউদ ও ইমাম তিরমিযী উভয় আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে হাদিস বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
“আল্লাহর নিকট সর্বাধিক উত্তম ব্যক্তি, যে মানুষকে আগে সালাম দেয়”।
তিরমিযীর শব্দ নিম্নরূপ:
জিজ্ঞাসা করা হল, হে আল্লাহর রাসূল! দুইজন লোক পরস্পর পরস্পরের সাথে সাক্ষাৎ হলে কে আগে সালাম দেবে? রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বললেন, “তাদের দুজনের মধ্যে যে আল্লাহর নিকট অধিক উত্তম”।
নয়- ফযিলত গ্রহণ করা।
প্রমাণ: ইমাম বাযযায ও ইবনে হিব্বান স্বীয় সহীহ কিতাবে জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে হাদিস বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ এরশাদ করে বলেন,
“আরোহী ব্যক্তি পায়ে হাটা ব্যক্তিকে সালাম দেবে, আর পায়ে হাটা ব্যক্তি বসে থাকা ব্যক্তিকে সালাম দেবে। আর উভয় ব্যক্তি যখন পায়ে হাটা হবে, তখন যে প্রথমে সালাম দেবে সেই উত্তম”।
আল্লামা তাবরানী কবীর গ্রন্থে এবং স্বীয় কিতাব আওসাতে সহীহ সনদে আগার হতে এবং তিনি মুযাইনা গোত্রের আগার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,
“রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ আমাকে একজন আনসারী লোক থেকে এক থলে খেজুর গ্রহণ করার নির্দেশ দেন। কিন্তু সে খেজুর দেয়ার ক্ষেত্রে আমার সাথে টালবাহানা করে। বিষয়টি আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’কে অবহিত করি। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’কে ডেকে বললেন, হে আবু বকর! তুমি প্রত্যুষে তার কাছে যাও এবং তার জন্য খেজুর সংগ্রহ কর। তারপর আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ আমাকে প্রতিশ্রুতি দিলেন ফজরের সালাতের পর মসজিদে উপস্থিত থাকার। পরদিন আমি তাকে সেখানেই পেলাম, যেখানে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। আমি তার সাথে হাটতে হাটতে দেখলাম, যখন তিনি কোনো লোককে অনেক দূর থেকে দেখতেন, তখনি তাকে সালাম দিতেন। আমাকে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ বললেন, তুমি কি দেখছ না? লোকেরা কিভাবে তোমার উপর ফযিলত লাভ করে ফেলছে, কেউ যেন তোমাকে আগে সালাম দিতে না পারে, সে দিকে লক্ষ রাখবে। তারপর থেকে যখন কোনো লোককে অনেক দূর থেকে দেখতাম, তখন তাকে আমরা অনেক দূর থেকে তার সালাম দেয়ার পূর্বেই সালাম দিয়ে দিতাম”।
দশ- আল্লাহর সালাম নামটি প্রচার করার ফযিলত লাভ এবং তা প্রচার করার মাধ্যমে বিশেষ মর্তবা অর্জন করা:
আল্লামা বাযযার ও তাবরানী উভয়ে শক্তিশালী সনদে আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ হতে বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
“সালাম আল্লাহ্ তা‘আলার নামসমূহ হতে একটি অন্যতম নাম। আল্লাহ্ তা‘আলা যমিনে এ নামটিকে ছেড়ে দিয়েছেন; তোমরা তোমাদের মধ্যে নামটির প্রসার ঘটাও। যখন কোনো মুসলিম ব্যক্তি কোনো সম্প্রদায়ের নিকট দিয়ে অতিক্রম করবে এবং তাদের সালাম দেবে, তাহলে তোমরা তার সালামের উত্তর দাও। তার জন্য ঐ সব লোকদের উপর একটি মর্তবা অবশ্যই থাকবে। কারণ, সে লোকদের সালামটি স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। যদি তারা তার সালামের উত্তর না দেয়, তার সালামের উত্তর এমন একজন দেবে, যে তাদের চেয়ে অধিক উত্তম”।
এগার: বিভিন্ন বিশুদ্ধ হাদিসে বর্ণিত নেকীসমূহ লাভে ধন্য হওয়া:
আবু-দাউদ, তিরমিযী, নাসায়ী এবং বাইহাকী ইমরান ইবন হুসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,
“এক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ এর দরবারে এসে বললেন, السلام عليكم، রাসূল তার সালামের উত্তর দিল। তারপর লোকটি বসে পড়ল। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বললেন, দশ [অর্থাৎ দশ নেকী]। কিছুক্ষণ পর অপর একজন লোক এসে বলল, السلام عليكم ورحمة الله، রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ তার সালামের উত্তর দিল এবং লোকটি বসে পড়ল। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বললেন, বিশ। তারপর আরও একজন লোক উপস্থিত হল এবং বলল, السلام عليكم ورحمة الله وبركاته، রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ তার সালামের উত্তর দিলে এবং লোকটি বসে পড়ল। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বললেন, ত্রিশ। ইমাম আবু-দাউদ হাদিসটিকে মারফু হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি আরও বৃদ্ধি করেন, তারপর আরও একজন লোক উপস্থিত হল, তখন সে বলল, السلام عليكم ورحمة الله وبركاته ومغفرته، রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বললেন, চল্লিশ।
অনুরূপভাবেই দেয়া হয়ে থাকে সালামের ফযিলত।
বার- নিরাপত্তা-শান্তি অর্জন করা:
যেমন- বারা ইবনে আযেব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ এর হাদিসে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
“তোমরা সালামকে প্রসার কর, নিরাপদ থাকবে”।
অর্থাৎ দুনিয়াতে তোমরা কৃপণতা ও গুনাহ হতে নিরাপদ থাকবে। অথবা তার চেয়েও ব্যাপক অর্থ: অর্থাৎ, দুনিয়াতে যাবতীয় সব ধরনের আপদ-বিপদ হতে নিরাপদ থাকবে। আর আখিরাতের ভয়াবহ বিপদ থেকে মুক্তি পাবে।
তের: সালামের সাথে জান্নাতে প্রবেশ করবে। অর্থাৎ নিরাপদে অথবা আল্লাহর নামের যিকিরের সাথে অথবা আল্লাহর নাম সালামের সাথে একত্র হয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
চৌদ্দ: সালাম তোমার অপর মুসলিম ভাইয়ের প্রতি খালেস ভালোবাসাকে জাগ্রত করে:
আল্লামা তাবরানী তাঁর আওসাত গ্রন্থে শাইবা আল-হাজাবী, তিনি তার চাচা থেকে মারফু হাদিস বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,
“তিনটি জিনিস তোমার জন্য তোমার মুসলিম ভাইয়ের মহব্বতকে খাটি করে। এক- তোমার সাথে সাক্ষাৎ হলে, সালাম দেবে। দুই- কোনো মজলিসে তাকে জায়গা করে দেবে। তিন- তার নিকট যে নামটি প্রিয়, সে নামে তাকে ডাকবে” ।
পনের: ইসলামের ফযিলত লাভ করা এবং সবার চেয়ে উত্তম হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করা:
যেমন, পূর্বে উল্লেখিত আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত হাদিস ।
ষোল- আমাদের পিতা আদম আ. এর সুন্নতকে পূনরুজ্জীবিত করা:
ইমাম বুখারি ও মুসলিম আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
“আল্লাহ্ তা‘আলা যখন আদম আ: কে সৃষ্টি করার পর তাকে নির্দেশ দেন, যাও ঐ সব ফেরেশতাদের সালাম দাও যারা বসে আছে। তারপর দেখ তারা তোমাকে কি উত্তর দেয়। তারা যে উত্তর দেবে তা হবে তোমার এবং তোমার সন্তানদের অভিবাদন ও সম্ভাষণ। তারপর তিনি ফেরেশতাদের নিকট গিয়ে বললেন, السلام عليكم، তার এ কথার উত্তরে তারা বলল, السلام عليك ورحمة الله তারা ورحمة الله শব্দটিকে বাড়াল”।
আল্লামা মুজাহিদ রহ. বলেন,
“আব্দুল্লাহ ইব্ন ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ আমার হাত চেপে ধরত, তারপর আমাকে নিয়ে সে বাজারে বের হত এবং বলত, বাজারে আমার কোন প্রয়োজন নাই, তবে আমি বাজারে বের হলাম যাতে বাজারের লোকদের সালাম দিতে পারি। আমরা একজনকে একবার সালাম দিতাম এবং দশটি করে নেকী কামাই করতাম। তিনি বলতেন, হে মুজাহিদ! সালাম আল্লাহর নামসমূহ হতে একটি নাম। যে ব্যক্তি বেশি বেশি সালাম দেয়, সে আল্লাহর যিকির বেশি করল”।
সতের: জান্নাতিদের সম্ভাষণের সাথে একাত্মতা:
কারণ, যারা জান্নাতে যাবে তাদের সম্ভাষণ হবে সালাম। যেমন, আল্লাহ্ তা‘আলা কুরআনে করীমে এরশাদ করেন।
“আর তাতে তাদের অভিবাদন হল ‘সালাম’। [সূরা ইউনুস, আয়াত: ১০]
আল্লাহ্ তা‘আলাই পুরস্কারের অভিভাবক।
এক- যখন তুমি তোমার কোনো ভাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ করবে, তখন তাকে আগে সালাম দেবে। কারণ, আল্লাহর দরবারে সর্ব উত্তম ব্যক্তি সে যে মানুষকে আগে সালাম দেয় ।
দুই- প্রতিটি মুসলিম ভাই তুমি চেন বা না চেন সবাইকে সালাম দেবে। কারণ, বুখারি, মুসলিমসহ বিভিন্ন হাদিসের কিতাবে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ আমাদের জানিয়ে দেন যে, এটি উত্তম আমলসমূহ হতে একটি অন্যতম আমল।
এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে শুধু চেনা-জানা থাকার কারণে সালাম দেয়াকে, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ কিয়ামতের আলামত হিসেবে আখ্যায়িত করেন ।
আব্দুল্লাহ ইবন ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ বাজারে বেচা-কেনার জন্য নয়, শুধু মানুষকে সালাম দেয়ার উদ্দেশ্যে যেতেন। বর্ণনায় ইমাম মালেক মুয়াত্তাতে বিশুদ্ধ সনদে।
যখন তোমার কোনো মুসলিম ভাই তোমাকে সালাম দেয়, তখন তুমি তাকে সমপরিমাণ কথা দ্বারা উত্তর দাও অথবা তার চেয়ে উত্তম কথা দ্বারা উত্তর দাও। আর তোমার উত্তর দেয়া যেন হয়, হাসি-খুশি ও হাস্যজ্জল চেহারার সাথে। আর তোমার উত্তর যেন সে শুনতে পায়। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ এটিকে সদকা বলে আখ্যায়িত করেছেন, তিনি বলেন,
তোমার ভাইয়ের সাথে মুচকি হাসি দিয়ে সাক্ষাৎ করা, সদকা ।
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ আরও বলেন,
“ঈমানের দিক দিয়ে পরিপূর্ণ মুমিন সে ব্যক্তি যে চরিত্রের দিক দিয়ে সুন্দর” ।
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ আরও বলেন,
“তোমারা কোন ভালো কাজকে খাট করে দেখ না, এমনকি তোমার ভাইয়ের সাথে হাসি মুখে সাক্ষাত করাকে” ।
চার- মনে রাখবে "أهلا وسهلا" ইত্যাদি শব্দ দ্বারা সালামের উত্তর দেয়া জায়েয নেই। তবে যদি সালাম দেয়া ও উত্তর দেয়ার পর এ শব্দগুলো বলে, তাতে কোনো ক্ষতি নেই।
পাঁচ- আর যখন তুমি কোন গাড়ীতে অথবা তোমার মধ্যে এবং তোমার অপর ভাইয়ের মাঝে কিছু দূরত্ব থাকে, অথবা কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকে, তাহলে তুমি মুখে সালাম দেবে এবং হাতে ইশারা দুটিই করবে। যাতে সে বুঝতে পারে, তুমি তাকে সালাম দিচ্ছ।
ছয়- যখন দল বড় হয় অথবা তোমার সালাম শোনা যায় না, তাহলে তুমি তিনবার সালাম দেবে।
সাত- যখন তুমি কারো সাথে সাক্ষাৎ করতে যাবে, তখন তার দরজার একেবারে সামনে দাঁড়াবে না। দরজার ডান পাশে অথবা বাম পাশে দাঁড়াবে। তারপর তুমি সালাম দেবে এবং অনুমতি চাইবে। যদি তোমাকে অনুমতি দেয় তবে তুমি প্রবেশ করবে, অন্যথায় ফেরত আসবে। তোমার ভাইয়ের বিষয়ে তোমার অন্তরে কোনো প্রকার সংকীর্ণতা যেন না থাকে।
আট- যখন তোমাকে জিজ্ঞাসা করে, তুমি কে? তখন তুমি তোমার নাম উল্লেখ করবে, শুধু ‘আমি’ বলে উত্তর দেবে না।
নয়- যখন কোনো ব্যক্তি তোমার নিকট তোমার কোনো ভাইয়ের পক্ষ হতে সালাম দেয়, তখন তার উত্তরে (عليك وعليه السلام ورحمة الله وبركاته). বলবে।
দশ- যদি কোনো ব্যক্তি ঘুমে থাকে, তখন সেখানে এমনভাবে সালাম দেবে, যাতে জাগ্রত লোকজন শুনতে পায় এবং ঘুমন্ত ব্যক্তির ঘুমের কোনো ক্ষতি না হয়।
এগার- সালাম দেয়ার সময় "عليك السلام" বলবে না। কারণ, এটি মৃত লোকদের সম্ভাষণ।
বার- আরোহী ব্যক্তি পায়ে হাটা ব্যক্তিকে সালাম দেবে। আর পায়ে হাটা ব্যক্তি বসে থাকা ব্যক্তিকে সালাম দেবে। ছোটরা বড়দেরকে সালাম দেবে। আর অল্প ব্যক্তি বেশি ব্যক্তিকে সালাম দেবে।
তের- যখন তুমি মসজিদে প্রবেশ করবে অথবা কোনো মজলিসে উপস্থিত হবে, তখন সালাম দাও। আর যখন তুমি মজলিস থেকে বের হবে, তখনও সালাম দাও। কারণ, প্রথমটি পরেরটি তুলনায় অধিক হক্বদার নয়।
যখন তোমার ও তোমার ভাইয়ের মাঝে গাছ, পাহাড়, দেয়াল ইত্যাদির কারণে দূরত্ব সৃষ্টি হয়, তারপর আবার সাক্ষাৎ হয়, তখন তাকে পুনরায় সালাম দেবে। কারণ, এটিই সুন্নত।
চৌদ্দ- ইয়াহূদী, খৃষ্টান ও কোনো কাফেরকে প্রথমে সালাম দেবে না। যদি তারা সালাম দেয়, তাদের সালামের উত্তরে ‘তুমি ও তোমার উপর’ শুধু এ কথা বলবে। আর তাদের তুমি সংকীর্ণ রাস্তায় হাঁটতে বাধ্য করবে।
পনের- এমন কোনো মজলিস হয় যেখানে মুসলিম ও অমুসলিম যেমন ইয়াহূদী খৃষ্টান ও মুশরিক সবাই আছে, তখন তাদের সালাম দেবে, তবে সালাম দ্বারা মুসলিমদের নিয়ত করবে।
ষোল- আর যখন ঘরে প্রবেশ করবে, তখন তুমি তোমার পরিবার পরিজনকে সালাম দেবে। এতে তুমি নিজেও বরকতময় হবে এবং তোমার পরিবারও বরকতময় হবে।
সতের- বাচ্চাদের সালাম দেবে। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বাচ্চাদের সালাম দিতেন।
আঠার- যখন একাধিক লোকের জামাত কোনো জামাতের নিকট দিয়ে অতিক্রম করে, তখন তাদের মধ্য হতে যে কোন একজন অতিক্রমকারীর সালাম অন্যদের জন্য যথেষ্ট হবে। অনুরূপভাবে যে কোনো একজনের উত্তর দেয়া অন্যদের জন্য যথেষ্ট হবে। আর বাকীদের জন্য উত্তর দেয়া জরুরি নয়, তবে সুন্নত হিসেবে অবশিষ্ট থাকবে।
উনিশ-যে ব্যক্তি সালাম দেয়ার পূর্বে কথা বলা শুরু করে, তুমি তার কথার উত্তর দেবে না।
বিশ- যখন কোনো ব্যক্তি বলে, অমুকের নিকট আমার সালাম পৌছিয়ে দাও, তাহলে তা আমানত, অবশ্যই তার নিকট পৌছাতে হবে। তবে যদি ভুলে যায় সেটা ভিন্ন কথা।
একুশ- যারা গুনাহে লিপ্ত গুনাহ থেকে ফিরে না আসা পর্যন্ত তাদের তাদের সালাম দেয়া যাবে না। তবে যদি তুমি মনে কর তোমার সালামের কারণে তার গুনাহ কমবে, গুনাহ থেকে ফিরে আসবে বা তুমি তাকে নসিহত করার ইচ্ছা কর, তখন সালাম দেবে।
বাইশ- পেশাব করা অবস্থায় সালামের উত্তর দেবে না।
তেইশ- হে মুসলিম ভাইয়েরা! একে অপরের সাথে দেখা সাক্ষাৎ হলে আমাদের সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন কথা থেকে তোমরা বেচে থাক। যেমন- গুড মর্নিং, সুপ্রভাত ইত্যাদি। মনে রাখবে, তোমার দ্বীন ও ভাষাকে অবলম্বন করা, তোমার জন্য সম্মান ও আত্ম-মর্যাদা। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর দ্বীনকে বাদ দিয়ে অন্য কিছুতে ইজ্জত তালাশ করবে, আল্লাহ তাকে অপমান-অপদস্থ করবেন।
হে মুসলিম ভাই! যে সব ইসলামী শিষ্টাচারসমূহ পালনের উপর আল্লাহ্ তা‘আলা তার বান্দাদের অধিক ও বড় ধরনের প্রতিদান দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তা থেকে একটি হল, মুসাফাহ করা। মুসাফাহা দ্বারা আল্লাহ তা’আল তার বান্দাদের গুনাহ সমূহ ক্ষমা করে দেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ এরশাদ করেন-
“যখন কোন মুমিন বান্দা তার অপর মুমিন ভাইয়ে সাথে সাক্ষাত হওয়ার পর তাকে সালাম দেয় এবং তার হাত ধরে তার সাথে মুসাফাহা করে, তখন তার গুনাহগুলো এমন ভাবে ঝরে পড়ে যেমনি-ভাবে গাছের পাতাসমূহ ঝরে পড়ে” ।
মুসাফাহার বিধানটি সর্ব প্রথম ইয়ামনের অধিবাসীরাই চালু করেন।
প্রমাণ: রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
“ইয়ামনের অধিবাসীদের আগমন ঘটেছে।” তারাই সর্বপ্রথম মুসাফাহার বিধান চালু করছে” ।
আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ কে জিজ্ঞাসা করা হল,
“রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ এর সাহাবীদের মধ্যে মুসাফাহার বিধান ছিল? তিনি বললেন, হ্যা ছিল” ।
হে মুসলিম ভাই! তোমরা মুসাফাহার সুন্নতটিকে গুরুত্ব সহকারে আমল করতে চেষ্টা করবে। কারণ, অধিকাংশ মানুষ বর্তমানে এ সুন্নত হতে বিমুখ। তুমি তোমার মুসলিম ভাইদের সাথে সাক্ষাত হলে মুসাফাহা কর। আর মুসাফাহা করার সময় তুমি হাসি-খুশি ও হাস্যোজ্জ্বল থাকবে। কারণ, হাসি মুখ ও খুশি থাকা তোমার অন্তরে তার প্রতি যে মহব্বত ও ভালোবাসা আছে তা প্রকাশ করে। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ তোমার অপর ভাইয়ের সাথে হাসি মুখে সাক্ষাত করাকে সদকা বলে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন,
“তোমার ভাইয়ের সাথে মুচকি হাসি দিয়ে সাক্ষাৎ করা, সদকা” ।
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ আরও বলেন,
“ঈমানের দিক দিয়ে পরিপূর্ণ মুমিন সে ব্যক্তি, যে চরিত্রের দিক দিয়ে সুন্দর” ।
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ এরশাদ করেন,
“যখন তোমার কোন ভাই সফর থেকে ফিরে আসে তখন তুমি তার সাথে কোলাকুলি কর” ।
তোমরা চুমু দেয়ার অভ্যাস পরিহার কর। কারণ, মুখ দিয়ে মুখে চুমু দেয়া একমাত্র স্বামীর জন্য তার স্ত্রীকে ছাড়া আর কারও জন্য জায়েয নেই। তবে বাচ্চাদেরকে আদর করে তাদের মুখে চুমু দেয়া তাদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করার জন্য জায়েয আছে। প্রমাণ:
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ এর সন্তানদের এক লোকের সামনে চুমু দেন। এ দৃশ্য দেখে লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি বাচ্চাদের চুমু দেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তখন লোকটি বলল, আমার দশটি বাচ্চা আছে, আমি তাদের কাউকে কোন দিনও আদর করে চুমু দেই নি। তার কথা শোনে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বললেন, “আল্লাহ যদি তোমার অন্তর থেকে দয়াকে ছিনিয়ে নিয়ে থাকেন, তবে আমি কিছুই করতে পারব না।”
হে মুসলিম ভাইয়েরা! তোমরা শুধু মুসাফাহা করবে আর কিছু নয়। কারণ, মুসাফাহা করাই সুন্নত। তোমরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ঈদের সময়ে তোমাদের ভাইদের সাথে মুসাফাহা করবে। আর যখন দেখবে তোমার কোন ভাই সফর থেকে ফিরে আসছে, তখন তার সাথে মু‘আনাকা-কোলাকুলি করবে।
পুরুষের জন্য সে সব নারীদের সাথে মুসাফাহা করা হারাম, যাদের সাথে দেখা দেয়া হারাম। যেমন, ফুফাতো বোন, খালাতো বোন, মামাতো বোন ইত্যাদি। এ বিষয়টি মা‘কাল ইব্ন ইয়াসার ও আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা এর হাদিসে আলোচনা করা হয়েছে। হাদিসটি ইমাম বুখারি ও ইমাম তিরমিযী বর্ণনা করেন-
“আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, না, আল্লাহর কসম করে বলছি, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ কোনো দিন কোনো মেয়ে লোকের হাত স্পর্শ করেন নি। তবে তিনি মহিলাদের কথা দ্বারা বাইয়াত করতেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা’ আরও বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ কখনো কোনো মেয়ে লোকের হাত স্পর্শ করেন নি। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ এর কবজি কখনো কোনো মেয়ে লোকের কবজির সাথে লাগে নি। তিনি যখন মহিলাদের থেকে প্রতিশ্রুতি নিতেন তখন বলতেন, আমি তোমাদের কথা দ্বারা বাইয়াত করে নিলাম”। বর্ণনায় বুখারি ও মুসলিম।
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
আমি নারীদের সাথে মুসাফাহা করব না, একজন নারীকে আমি যে কথা বলব, একশ নারীর জন্যও সে কথাই থাকবে। বর্ণনায় আহমদ, হাদিসটি বিশুদ্ধ।
মহান আল্লাহ যিনি আরশের অধিপতি তার নিকট আমাদের প্রার্থনা তিনি যেন, আমাদেরকে ও তোমাদেরকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করে যারা কথা শ্রবণ করে এবং সুন্দর কথার অনুসরণ করে। নিশ্চয় আল্লাহ্ তা‘আলা মহামান্য পরম করুণাময় ও দয়ালু।
নোট: এ পুস্তিকাটিতে যে সব বিষয়গুলো আলোচনা করা হয়েছে, সবই কুরআন ও হাদিস থেকে নেয়া হয়ে। কুরআনও হাদিসের বাহিলে কোন কিছু বলা হয়নি ।
হে আমার প্রাণ প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনেরা! তোমরা যারা আল্লাহর দ্বীন পালন করা ও হারাম থেকে বেঁচে থাকতে প্রবল আগ্রহী, আল্লাহ যা নিষেধ করেছেন, তা পরিহার করা এবং যা করার জন্য আদেশ দিয়েছেন তা পালন করার মাধ্যমে আল্লাহ সন্তুষ্টি তালাশে ঈর্ষান্বিত, তোমাদের সামনে কয়েকটি বিশুদ্ধ হাদিস পেশ করা হচ্ছে, যেগুলো খারাপ অভ্যাস যা অধিকাংশ মূর্খ ও অজ্ঞ লোকেরা করে থাকে তা হারাম হওয়ার বিষয়টিকে স্পষ্ট করে। আর তা হল, নারীরা পুরুষের সাথে এবং পরুষরা নারীদের সাথে করমর্দন করা এবং যাদের সাথে বিবাহ বৈধ তাদের সাথে করর্মদন করার মত খারাপ অভ্যাস।
বিশিষ্ট সাহাবী উমাইমা বিনতে রকিকা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা’ বলেন, যখন তার সঙ্গীনীরা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ এর হাতে এ বলে বাইয়াত করতে চান,
হে আল্লাহর রাসূল! আসুন আমরা আপনার হাতে মুসাফাহার মাধ্যমে বাইয়াত গ্রহণ করি, তখন তিনি বলেন, “আমি কোন নারীর সাথে করমর্দন করি না। একশ নারীর জন্য যে কথা একজন নারীর জন্যও আমার কথা একই।”
হাদিসের অন্যান্য সনদে বর্ণিত তারা বলেন, “হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের সাথে আপনি মুসাফাহা করবেন না? তখন তিনি তাদের বলেন, না আমি...।”
আয়েশা বিনতে সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা’ বলেন,
“রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বাইয়াত করার সময় কখনো কোন বেগানা নারীদের হাতকে স্পর্শ করেন নি। তিনি নারীদেরকে শুধুমাত্র কথার দ্বারা বাইয়াত করতেন। তিনি বলতেন, আমি তোমাদেরকে এ সব বিষয়ের উপর বাইয়াত করলাম” ।
আব্দুল্লাহ ইব্ন ‘আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা’ বলেন,
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বাইয়াত করার সময় নারীদের সাতে মুসাফাহা করতেন না ।
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ আরও বলেন,
“কোনো ব্যক্তির মাথায় লোহার করাত দিয়ে আঘাত করা, কোন নারীর হাত স্পর্শ করা যা তার জন্য হালাল নয়, তা হতে অধিক উত্তম” ।
কোনো অপরাধী তার অপরাধ থেকে ফিরে না আসা পর্যন্ত তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা বৈধ হওয়ার বিষয়টি হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। যেমন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ কা‘আব ইব্ন মালেক এবং তার সাথীদের সাথে পঞ্চাশ দিন পর্যন্ত সম্পর্ক ছিন্ন রাখেন, আল্লাহ তাদের তাওবা কবুল না করা পর্যন্ত রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ তাদের সাথে কোন কথা-বার্তা বলেন নি।
যয়নব বিনতে জাহাশ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা’, সুফিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা’ কে ইয়াহূদী বলে সম্বোধন করলে প্রায় দুই মাস পর্যন্ত রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেন। অনুরূপভাবে এক লোক বিনা প্রয়োজনে একাধিক ঘর নির্মাণ করলে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ সে ঘর ভেঙ্গে মাটির সাথে মিশিয়ে না দেয়া পর্যন্ত তার সাথে কোনো প্রকার কথা-বার্তা বলেন নি। এক লোক তার দেহকে যা‘ফরান দ্বারা রঙ করলে, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ তা ধুয়ে তার দাগ না উঠানো পর্যন্ত তার সাথে কথা-বার্তা পরিহার করেন।
এক লোককে রেশমের জুব্বা পরিধান করতে দেখে, তা খুলে ফেলে দেয়া পর্যন্ত তার সাথে কথা-বার্তা বলা ছেড়ে দেন।
এক লোককে স্বর্ণের আংটি পরিধান করতে দেখে, তা খুলে ফেলে দেয়া পর্যন্ত তার সাথে কথা-বার্তা বলা ছেড়ে দেন।
সূনানে আবু-দাউদ, তিরমিযী ও মুস্তাদরাকে হাকেমে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ এক ব্যক্তিকে দেখলেন, সে দুটি লাল কাপড় পরিধান করছে। এ কারণে তিনি তার সাথে কথা-বার্তা বলা ছেড়ে দেন।
অনুরূপভাবে সাহাবায়ে কেরাম এবং তাবেয়ীগণ যারা যাদের থেকে গুনাহ প্রকাশ পায়, যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের তাওবা কবুল না হত বা তাদের তাওবা প্রকাশ না পেত, ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের সাথে কথা-বার্তা বলা ছেড়ে দিতেন। আল্লামা ইবনু আব্দিল কাওয়ী রহ. বলতেন,
وهجران من أبدى المعاصي سنة
وقيل إذا يردعه أوجب واكد
وقيل على الإطلاق ما دام معلنا
ولاقه بوجه مكفهر معربد
অর্থ: যে ব্যক্তি প্রকাশ্যে অপরাধ করে, তার সাথে সম্পর্ক ছেড়ে দেয়া সুন্নত। কেউ কেউ বলেন, তা যদি তাকে গুনাহ থেকে বিরত রাখে তাহলে ওয়াজিব ও জরুরি। আবার কেউ কেউ বলেন, [ফিরে আসুক বা নাই আসুক] যতদিন পর্যন্ত সে অপরাধ প্রকাশ করবে, তাকে ছেড়ে দেবে। আর যখন তার সাথে দেখা হবে, তখন চেহারাকে ক্রোধান্বিত ও ক্ষুব্ধ করে রাখবে।
তিনি এখানে যে অপরাধী তার অপরাধকে প্রকাশ করে, তার সাথে কথা-বার্তা ছেড়ে দেয়া সুন্নত হওয়ার বিষয়ে কোনো ইখতেলাফ বা মতবিরোধ উল্লেখ করেন নি। তার সাথে কথাবার্তা ছেড়ে দেয়াতে সে গুনাহ থেকে ফিরে আসুক বা নাই আসুক তাতে কোনো অসুবিধা নেই। তবে ছেড়ে দেয়া ওয়াজিব কিনা? এ বিষয়ে ইমামদের মধ্যে একাধিক মতামত পরিলক্ষিত। কেউ কেউ বলেন, কোনো প্রকার শর্ত ছাড়াই তার সাথে কথা-বার্তা বলা ছেড়ে দিতে হবে। আবার কেউ কেউ বলেন, যদি তার সাথে কথা-বার্তা ছেড়ে দেয়া দ্বারা সে গুনাহ হতে ফিরে আসে তখন তার সাথে কথা-বার্তা ছেড়ে দেবে, অন্যথায় নয়।
হাফেয ইবনে হাজার রহ. ফাতহুল বারীতে বলেন, অধিকাংশের মতে ফাসেক ব্যক্তিকে সালাম দেয়া যাবে না এবং বিদ‘আতিকে সালাম দেয়া যাবে না।
ইমাম নববী রহ. বলেন, যদি সালাম দিতে বাধ্য হয়, যেমন- যদি সালাম না দেয়, তাহলে দুনিয়াবি অথবা দীনি কোনো ক্ষতির আশংকা করে, তখন সালাম দেবে। একই কথা আল্লামা ইবনুল আরাবী রহ. ও বলেন, তবে তিনি বলেন, সালাম দেয়ার সময় এ কথা নিয়ত করবে যে সালাম আল্লাহর নামসমূহ হতে একটি নাম। আল্লাহ্ তা‘আলা তোমার উপর পাহারাদার।
মুহাল্লাব রহ. বলেন, যারা অপরাধ করে তাদের সালাম না দেয়ার রীতি-নীতি চলমান পদ্ধতি। অনেক আহলে ইলমগণ বিদ‘আতিদের সম্পর্কে এ ধরনের সিদ্ধান্তই দিয়েছেন। এ ছাড়া অনেক হানাফী আলেমগণ, অপরাধী বলতে তাদের বুঝান, যারা মানবতা ও স্বাভাবিক সংস্কৃতি বিরোধী অপরাধ করে। যেমন, যে ব্যক্তি অধিক উপহাস করে, খেল-তামাশায় লিপ্ত থাকে, অশ্লীল কথা-বার্তা বলে, মেয়েদের দেখার জন্য রাস্তায় বসে থাকে ইত্যাদি।
আল্লামা ইব্ন রুশদ বর্ণনা করেন, ইমাম মালেক রহ. বলেন, প্রবৃত্তির পূজারীদের সালাম দেবে না। আল্লামা ইব্ন দাকীকুল ঈদ রহ. বলেন, তাদের সালাম না দেয়া, তাদের শিক্ষা দেয়ার উদ্দেশ্যেই হবে এবং তাদের থেকে দায়মুক্তির জন্য হবে।
ইমাম বুখারি রহ. স্বীয় সহীহে বলেন,
অধ্যায়: পরিত্যাগ করা
আর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ এর বাণী ‘কারো জন্য তার ভাইকে তিন দিনের বেশি সময় ছেড়ে দেয়া হালাল নয়’। এ কথা বলার পর, তিনি তিন দিনের বেশি ছেড়ে দেয়া হারাম হওয়া বিষয়ে তিনটি হাদিস বর্ণনা করেন। তারপর তিনি বলেন,
(অধ্যায়: যে অন্যায় করে, তাকে ছেড়ে দেওয়া বৈধ হওয়া প্রসঙ্গে)
আর কা‘ব ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ এর সাথে যুদ্ধ অংশ গ্রহণ করা হতে বিরত থাকেন তখন তিনি বলেন, পঞ্চাশ রাত পর্যন্ত রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ আমাদের সাথে কথা-বার্তা বলতে নিষেধ করেন।
তারপর ইমাম বুখারি অনুমতি চাওয়া অধ্যায়ে বলেন,
অধ্যায়: ‘যে ব্যক্তি অপরাধীকে সালাম দেয় না এবং তার তাওবা স্পষ্ট না হওয়া পর্যন্ত তার সালামের উত্তর দেয় না এবং কখন অপরাধীর তাওবা প্রকাশ পাবে?’।
আর আব্দুল্লাহ ইবন ‘আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা’ বলেন, মদ্যপানকারীকে তোমরা সালাম দেবে না। তারপর তিনি কা‘ব ইবন মালেক রহ. এর হাদিসের কিছু অংশ উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ আমাদের সাথে কথা বলতে নিষেধ করেন। আর আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ এর দরবারে আসতাম এবং তাকে সালাম দিতাম এবং মনে মনে চিন্তা করতাম আমার সালামের উত্তর নিতে গিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ এর ঠোট-দ্বয় নড়া-চড়া করল কিনা? এভাবে পঞ্চাশ রাত পূর্ণ হল।
আল্লামা তাবারী রহ. বলেন, অপরাধীদের সাথে কথা-বার্তা ছেড়ে দেয়া বিষয়ে কা‘ব ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’র হাদিসটি একটি মূলনীতি।
ইমাম বুখারি রহ. বিষয়টি খুব ভালোভাবে বিবৃত করেছেন। তিনি যেভাবে আলোচনা করেন, তাতে দুনিয়াবি বিষয়ে ছেড়ে দেয়া এবং দীনি বিষয়ে ছেড়ে দেয়া উভয়ের মাঝে পার্থক্য স্পষ্ট হয়। কারণ, তিনি এ আলোচনার প্রথম শিরোনামে দুনিয়াবি বিষয়ে ছেড়ে দেয়ার কথা উল্লেখ করেন। আর তা তিন দিনের বেশি হওয়া হারাম। তারপর তিনি দ্বিতীয় ও তৃতীয় শিরোনামে দীনি বিষয়ে ছেড়ে দেয়ার বিধান আলোচনা করেন। আর তা হল, অপরাধীদেরকে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য পরিত্যাগ করা, তাদের সাথে কথা-বার্তা ও উঠা-বসা ছেড়ে দেওয়া। আর এ কথা স্পষ্ট, সত্যিকার তাওবা ছাড়া তার জন্য নির্ধারিত কোনো সময় নেই ।
সালাম মুসাফাহা ও অনুমতি বিষয়ে আল্লাম ইবনে আব্দুল কাবীর কাব্যসমূহ:
وكن عالمًا إن السلام لسنة
وردك فرض ليس ندبًا باوطد
ويجزئ تسليم امرئ من جماعة
وردفتى منهم عن الكل يا عدي
وتسليم نزروالصغير وعابر
السبيل وركبان على الضد يد
وإن سلم المأمور بالرد منهم
فقد حصل المسنون إذ هو مبتد
وسلم إذا ما قمت من حضرة امرئ
وسلم إذا ما جئت بيتك تقتد
وافشاؤك التسليم يوجب محبة
من الناس مجهولاً ومعروفًا اقصد
وتعريفه لفظ السلام مجوز
وتنكيره أيضًا على نص أحمد
وقد قيل نكره وقيل تحية
كالميت والتوديع عرف كردد
وسنة استئذانه لدخوله
على غيره من أقربين وبعد
ثلاثًا ومكروه دخول لهاجم
ولا سما من سفرة وتبعد
ووقفته تلقاء باب وكوة
فإن لم يحب يمضي وإن يخف يزدد( )
وتحريك نعليه وإظهار حسه
لدخلته حتى لمنزله اشهد
وإن نظر الإنسان من شق بابه
بلا إذنه إن يفقأ عينيه لم يد( )
وسيان من درب ومن ملك ناظر
ومن كوة أو من جدار مشيد
ولو مع إمكان الدفاع بدونه
وفقد النسا أو كون محرم معتد
ولا تحذف الأعمى وقال أبو الوفا
بلى إن يكن يسمع ليحذف ويصدد
وكل قيام لا لوال وعالم
ووالده أو سيد كرهه أمهد
وصافح لمن تلقاه من كل مسلم
تناثر خطاياكم كما في المسند
وليس لغير الله حل سجودنا
ويكره تقبيل الثرى بتشدد
ويكره منك الانحناء مسلمًا
وتقبيل رأس المرء حل وفي اليد
وحل عناق للملاقي تدينا
ويكره تقبيل الفم افهم وقيد
ونزع يد ممن يصافح عاجلا
وأن يتناجى الجمع ما دون مفرد
وأن يجلس الإنسان عند محدث بسر
وقيل احضر وأن يأذن اقعد
ومرأى عجوز لم ترد وصفاحها
وخلوتها اكره لا تحيتها اشهد
وتشميتها واكره كلا الخصلتين للـ
شباب من الصنفين بعدي وأبعد
ويحرم رأي المرد مع شهوة فقط
وقيل ومع خوف وللكره جود
ويكره تسليم على متشاغل
بذكر وقرآن وقول محمد
خطيب وذي درس ومن يبحثون في
العلوم وذي وعظ لنفع الموحد
مكرر فقه والمؤذن بعده الـ
مصلى وذي طهر لفعل تعبد
ودع آكلا مع ذي التغوط ثم من
يقاتل للأعداء في حرب جحد( )
অর্থ: জেনে রাখ, সালাম দেয়া অবশ্যই সুন্নাত। আর সালামের উত্তর দেয়া ফরয, সুন্নত নয়। কোন জামাত হতে একজনে সালাম দেয়াই যথেষ্ট। তাদের মধ্য যে কোন একজনের উত্তর দেয়াও যথেষ্ট হে ভাই। কম, ছোট, পথচারী ও আরোহী ব্যক্তি তার বিপরীত লোককে সালাম দেবে। যাকে সালামের উত্তর দেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে, সে যদি সালাম দেয়, তখন সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে। যখন তুমি হবে শুরুতে সালামদাতা। যখন তুমি মানুষের মজলিস থেকে উঠবে তখন সালাম দেবে। আর যখন তুমি তোমার ঘরে প্রবেশ কর, তখনও সালাম দাও। সালামকে বেশি বেশি প্রসার করা দ্বারা পরিচিত ও অপরিচিত সব মানুষের মহব্বত লাভ করবে। সালামকে আলিফ-লামসহ দেয়া বৈধ আবার আলিফ-লাম ছাড়াও দেয়া জায়েয আছে ইমাম আহমদের বর্ণনা মতে। কেউ কেউ আলিফ-লাম ছাড়া সালাম দেয়াকে মৃত লোকের সালাম বলে আখ্যায়িত করেছেন। আর বিদায়ের সময় সালাম মা‘রেফা আলিফ-লাম বিশিষ্ট হবে; সালামের উত্তরের মত। আত্মীয়-স্বজন বা অন্য কারো ঘরে প্রবেশ করার পূর্বে অনুমতি নেয়ার উদ্দেশ্যে তিনবার সালাম দেয়া সুন্নত। সফর থেকে আগমনের পর বা কোন দূরের অবস্থান থেকে অনুমতি ছাড়া হঠাৎ করে কারো ঘরে প্রবেশ করা মাকরূহ। তুমি তাদের দরজা বা জানালার সামনে দাড়াবে যদি অনুমতি না দেয় তাহলে ফিরে আসবে, আর যদি অনুমতি পাওয়ার আশংকা থাকে তাহলে আবারও সালাম দেবে। পাদুকা নড়-চড় করা ও গলায় আওয়াজ করে, ঘরে প্রবেশ করা, আরও অধিক উত্তম। যদি কোনো ব্যক্তি দরজার ছিদ্র দিয়ে অনুমতি ছাড়া তাকায়, তখন যদি তার চোখে আঘাত করে, তাতে কোন দিয়্যত দিতে হবে না। .... শাসক, আলেম, পিতা, অভিভাবক ছাড়া কারও জন্য দাঁড়ানো মাকরূহ। কোন মুসলিমের সাথে তোমার সাক্ষাত হলে তার সাথে মুসাফাহা কর, তাতে তোমাদের গুনাহগুলো ঝরে পড়বে যেমনটি বর্ণিত; মুসনাদে। আল্লাহ ছাড়া কারো জন্য সেজদা করা হালাল নয়, আর মাটি চুম্বন করা কঠিনভাবে মাকরূহ। সালাম দেয়ার সময় মাথা ঝুঁকানো নিষিদ্ধ। কোন মানুষের মাথা ও হাতে চুমু দেয়া বৈধ। যার সাথে তোমার সাক্ষাত হবে তার সাথে কোলাকুলি করবে। তবে ভালোভাবে মনে রাখবে মুখে চুমু দেয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। যার সাথে মুসাফাহা করবে, তার থেকে দ্রুত হাত বের করে আনা এবং একজনকে বাদ দিয়ে অন্যরা কানাগুশা করা মাকরূহ। যে ব্যক্তি কোনো গোপন কথা বলছে, তার কাছে গিয়ে বসা মাকরূহ। কেউ কেউ বলেন, তুমি উপস্থিত হয়ে অনুমতি চাইবে, যখন অনুমতি দেবে তখন বসবে। কোন বুড়ো মহিলাকে দেখার বিষয়টি বর্ণিত হয়নি, আর তার সাথে মুসাফাহা করা, তার সাথে একান্ত হওয়া মাকরূহ। তবে তাদের সালাম ও হাঁচির উত্তর দেয়া মাকরূহ নয়। আর যদি যুবক হয় তখন এ দুটি কর্ম তাদের ক্ষেত্রেও মাকরূহ। কামাতুর অবস্থা কোন কিশোরের দিকে তাকানো হারাম। আর কেউ কেউ বলেন, আশংকা থাকা অবস্থায় তাদের দিকে তাকানো উচিত নয়। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর যিকিরে মশগুল, কুরআন তিলাওয়াতে ব্যস্ত, হাদিস অধ্যয়নে ব্যস্ত, তাকে সালাম দেয়া মাকরূহ। খতিব, পাঠদানকারী, গবেষণা কাজে লিপ্ত ও যারা মুসলিমদের উপকারার্থে ওয়াজ করছে এবং ফিকহ চর্চা করছে তাদের সালাম দেয়া মাকরূহ। মুয়াজ্জিন যে আযান দিচ্ছে, নামাযি ও ইবাদতের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় করছে, তাদের সালাম দেয়াও মাকরূহ। কাউকে খেতে দেখলে তাকে সালাম দেয়া যাবে না এবং পায়খানা-পেশাব খানায় লিপ্ত ব্যক্তিকে সালাম দেয়া যাবে না এবং যে ব্যক্তি যুদ্ধের ময়দানে কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে তাদের সালাম দেয়া যাবে না।
কবর বাসীদের সালাম দেয়া, তাদের জন্য রহমত ও মাগফিরাতের দো‘আ করা সুন্নত। যেমনটি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ হতে বর্ণিত।
এক-
“হে মুমিন মুসলিম কবর বাসী তোমাদের উপর সালাম বর্ষিত হোক। ইনশাআল্লাহ অচিরেই আমরা তোমাদের সাথে একত্র হব। তোমরা আমাদের অগ্রবর্তী আর আমরা তোমাদের অনুসারী। আমরা আল্লাহর নিকট আমাদের ও তোমাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! তুমি তাদের ক্ষমা কর এবং তাদের তুমি দয়া কর” ।
দুই- আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ রাতের শেষাংশে বাকী গোরস্থানের দিকে বের হতেন এবং বলতেন- “হে মুমিন সম্প্রদায়! তোমাদের উপর সালাম বর্ষিত হোক। তোমাদের যা প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে, তা তোমাদের জন্য দ্রুত করা হবে। আর আমরা অবশ্যই তোমাদের সাথে একত্র হব। হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমা কর! বাকীর অধিবাসীদের” ।
তিন- সুলাইমান ইব্ন বুরাইদাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, তিনি তার পিতা হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,
তারা যখন কবরস্থানের দিকে যেতেন, তাদেরকে এ দু'আ শিক্ষা দিতেন: তাদের কোনো বর্ণনাকারী বলতেন, আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ এর বর্ণনায় বর্ণিত, «السلام على أهل الديار» আর যুহাইর রহ. এর বর্ণনায় বর্ণিত,
হে মুমিন ও মুসলিম কবর বাসী তোমাদের উপর সালাম বর্ষিত হোক। ইনশা-আল্লাহ অচিরেই আমরা তোমাদের সাথে একত্র হব। আমরা আল্লাহর নিকট আমাদের ও তোমাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি ।
মাসআলা:
যখন কোন ব্যক্তি এমন একটি জামাতের পাশ দিয়ে অতিক্রম করে, যেখানে কাফের ও মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের লোক রয়েছে, তাদের সালাম দেয়ার বিধান কি?
উত্তর: তাদের সালাম দেবে এবং মুসলিমদের নিয়ত করবে। প্রমাণ:
উসামা ইব্ন যায়েদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
“রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ একটি মজলিসের পাশ দিয়ে অতিক্রম করেন, সেখানে মুসলিম, মুশরিক, মূর্তি-পূজারী ও ইয়াহুদূসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোক উপস্থিত ছিল। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ তাদের সালাম দেন” ।
‘তাযকীরুল আনাম বি আহকামীস সালাম’ এর তথ্যসূত্র:
1- রিয়াযুস সালেহীন মিন কালামে সাইয়্যেদুল মুরসালীন।
2- শাইখ মুহাম্মদ আস-সাফারিনির গিযাউল আলবাব শরহু মানযূমাতুল আদাব।
3- আল্লামা আব্দুল কাওয়ী এর মানযূমাতুল আদব।
4- শাইখ আব্দুল আযীয ইবন মুহাম্মদ আস-সালমান এর ইত্তেহাফুল মুসলিমিন বিমা তায়াসসারা মিন আহকামিদদ্বীন।
5- লেখকের সংকলন: বাহজাতুন নাযেরীন ফি-মা ইয়ুসলিহুদ দুনিয়া ওয়াদ দ্বীন।
6- শাইখ হামূদ ইবন আব্দুল্লাহ আত-তুয়াইজিরী এর তুহফাতুল ইখওয়ান বিমা জাআ ফিল মুয়ালাত ওয়াল মুয়াদাত ওয়াল হুব্বে ওয়াল বুগজে ওয়াল হিজরান।
7- ফাহাদ ইবন সারহান আল-জুহানীর লেখা- রিসালাতু ‘এফশা-উস সালাম ওয়াল মুসাফাহা’।
8- সংকলকের লিখা ‘কাযায়া তাহুম্মুল মারআ’
9- আবু হুজাইফা ইব্রাহীম ইবন মুহাম্মদ এর লিখা বই ‘আদাবুস সালাম’
ভূমিকা
সংকলক
ইসলামের অবিস্মরনীয় সম্ভাষণ
সালাম অধ্যায়
আল্লাম ইব্নু মের প্রচার-প্রসার করার নির্দেশ
সালাম দেয়ার পদ্ধতি
সালাম দেয়ার আদবসমূহ
বার সালাম দেয়া মোস্তাহাব হওয়া।
ঘরে প্রবেশ করে সালাম দেয়া মোস্তাহাব
বাচ্চাদের সালাম দেয়া সুন্নত
স্বামীর জন্য স্ত্রীকে সালাম দেয়ার বিধান
নারীদের জন্য তার আত্মীয়দের সালাম দেয়া
অমুসলিমদের সালাম দেয়া বিধান
মজলিস থেকে উঠার সময় সালাম দেয়ার বিধান।
স্বামী স্ত্রীকে সালাম দেয়ার বিধান
মহিলাদের জন্য তাদের আত্মীয়দের সালাম দেয়া
অমুসলিমদের সালাম দেয়া ও তাদের সালামের উত্তর দেয়ার বিধান
মজলিস থেকে উঠার সময় ও সাথীদের বিদায়ের সময় সালাম দেয়া মুস্তাহাব
অনুমতি চাওয়ার বিধান
দেখা হলে মুসাফাহা করার বিধান
সফর থেকে ফিরে আসলে কোলাকুলি করা মুস্তাহাব
সালামের বিধান
সালামের উত্তর দেয়ার বিধান
হাচির উত্তর দেয়ার বিধান
কার সালামের উত্তর দেয়া ওয়াজিব আর কার সালামের উত্তর দেয়া ওয়াজিব নয়
সালামের লাভ ও ফলাফল
সালামের আদবসমূহ
মুসাফাহ
অপরিচিত নারীদের সাথে মুসাফাহার বিধান
অপরাধীদের সাথে কথা-বার্তা ছেড়ে দেয়া
সালাম মুসাফাহা ও অনুমতি চাওয়া বিধান
আল্লামা ইব্ন আব্দুল কাবীর কাব্য সম্ভার
কবর বাসীদের সালাম দেয়া
তথ্য সূত্র
সূচীপত্র
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন