Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

See Our Articles In Different Styles... Grid View List View

শনিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১৮

প্রতিবেশীর হক

Views:

A+ A-




ভূমিকা


ﺇِﻥَّ ﺍﻟْﺤَﻤْﺪُ ﻟﻠﻪِ ، ﻧَﺤْﻤَﺪُﻩُ ﻭَﻧَﺴْﺘَﻌِﻴْﻨُﻪُ ﻭَﻧَﺴْﺘَﻐْﻔِﺮُﻩُ ، ﻭَﻧَﻌُـﻮْﺫُ ﺑِﺎﻟﻠﻪِ ﻣِﻦْ ﺷُﺮُﻭْﺭِ ﺃَﻧْﻔُﺴِﻨَﺎ ، ﻭَﻣِﻦْ ﺳَﻴِّﺌَﺎﺕِ ﺃَﻋْﻤَﺎﻟِﻨَﺎ ، ﻣَﻦْ ﻳَّﻬْﺪِﻩِ ﺍﻟﻠﻪُ ﻓَﻼَ ﻣُﻀِﻞَّ ﻟَﻪُ ، ﻭَﻣَﻦْ ﻳُّﻀْﻠِﻞِ ﺍﻟﻠﻪُ ﻓَﻼَ ﻫَﺎﺩِﻱَ ﻟَﻪُ ، ﻭَﺃَﺷْﻬَﺪُ ﺃَﻥْ ﻻَّ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻻَّ ﺍﻟﻠﻪُ ﻭَﺣْﺪَﻩُ ﻻَ ﺷَﺮِﻳْﻚَ ﻟَﻪُ ، ﻭَﺃَﺷْﻬَﺪُ ﺃَﻥَّ ﻣُﺤَﻤَّﺪًﺍ ﻋَﺒْﺪُﻩُ ﻭَﺭَﺳُﻮْﻟُﻪُ

নিশ্চয়ই যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার জন্য। আমরা তারই প্রশংসা করি, তার কাছে সাহায্য চাই, তার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করি। আল্লাহর নিকট আমরা আমাদের প্রবৃত্তির অনিষ্টতা ও আমাদের কর্মসমূহের খারাপ পরিণতি থেকে আশ্রয় কামনা করি। আল্লাহ যাকে হেদায়েত দেন, তাকে গোমরাহ করার কেউ নাই। আর যাকে গোমরাহ করেন তাকে হেদায়েত দেয়ারও কেউ নাই। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্যিকার ইলাহ নেই, তিনি একক, তার কোনো শরিক নাই। আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। সালাত ও সালাম নাযিল হোক তার উপর, তার পরিবার-পরিজন ও তার সাহাবীদের উপর এবং যারা কিয়ামত অবধি এহসানের সাথে তাদের অনুসরণ করেন তাদের উপর।
অতঃপর,



প্রতিবেশীর হক বা অধিকার সম্পর্কে সজাগ হওয়া অত্যন্ত জরুরী। ইসলাম প্রতিবেশীর হককে খুবই গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করেছেন। কিন্তু অধিকাংশ মানুষই বর্তমানে প্রতিবেশীর হক ও অধিকার সম্পর্কে বে-খবর। প্রতিবেশীর হক সম্পর্কে আমাদের উদাসীনতার উপলব্ধি থেকে মানুষকে এ বিষয়ে সচেতন ও সজাগ করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি। তাই প্রতিবেশীর হক, প্রতিবেশী কারা,
প্রতিবেশীদের বিষয়ে ইসলাম কি বলে,

ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়ে এ প্রবন্ধে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি প্রবন্ধটি পড়ে একজন পাঠক উপকৃত হবেন এবং প্রতিবেশীর হক ও অধিকার সম্পর্কে জানতে পারবেন।

সংকলক

জাকের উল্লাহ আবুল খায়ের

প্রতিবেশী কে?

প্রতিবেশী শব্দটি একটি ব্যাপক শব্দ। প্রতিবেশী বলতে মুসলিম, কাফের, নেক বান্দা, ফাসেক, বন্ধু, শত্রু, পরদেশী,

স্বদেশী, উপকারী, ক্ষতি সাধনকারী,

আত্মীয়, অনাত্মীয়, নিকটতম বা তুলনামূলক একটু দূরের প্রতিবেশী সবাই অন্তর্ভুক্ত। অনেকেই মনে করে প্রতিবেশী বলতে শুধু ঘরের পাশের প্রতিবেশী বুঝানো হয়ে থাকে। বিষয়টি এমন নয়, যে শুধুমাত্র ঘরের পাশের প্রতিবেশীকেই প্রতিবেশী বলা হবে আর কাউকে নয়। বরং প্রতিবেশী বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। যেমন-

কর্মক্ষেত্রে এক সাথে কাজ করলে সে আমার একজন প্রতিবেশী, ছাত্র জীবনে যাদের সাথে পড়া লেখা উঠাবসা করি সেও আমার প্রতিবেশী, আমার জমিনের সাথে যদি কারোও জমি থাকে সে আমার জমিনের প্রতিবেশী, পাশের দোকানদার সে আমার দোকানের প্রতিবেশী, এক সাথে বাজারে গেলে সে আমার বাজারের প্রতিবেশী, এমনকি যদি আমি কোনো গাড়ি বা বিমানে একজন ভাইয়ের সাথে একসাথে বসি সেও আমার কিছু সময়ের জন্য একজন প্রতিবেশী। এ বিষয়ে রয়েছে হাদিসে ব্যাপক দিক নির্দেশনা। যেমন,


ﺟَﺎﺑِﺮِ ﺑْﻦِ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻗَﺎﻝَ، ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ :

‏« ﺍﻟْﺠِﻴﺮَﺍﻥُ ﺛَﻠَﺎﺛَﺔٌ، ﺟَﺎﺭٌ ﻟَﻪُ ﺣَﻖٌ ﻭَﺍﺣِﺪٌ، ﻭَﻫُﻮَ ﺃَﺩْﻧَﻰ ﺍﻟﺠﻴﺮﺍﻥ ﺣﻘﺎً . ﺟﺎﺭ ﻟَﻪُ ﺣَﻘَّﺎﻥِ، ﻭَﺟَﺎﺭٌ ﻟَﻪُ ﺛَﻠَﺎﺛَﺔُ ﺣُﻘُﻮﻕٍ ﻭَﻫُﻮَ ﺃﻓﻀﻞ ﺍﻟﺠﻴﺮﺍﻥ ﺣﻘﺎً، ﻓﺄﻣﺎ ﺍﻟﺠﺎﺭ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻟَﻪُ ﺣَﻖٌّ ﻭَﺍﺣِﺪٌ ﻓَﺠَﺎﺭٌ ﻣُﺸْﺮِﻙٌ ﻟَﺎ ﺭﺣﻢ ﻟﻪ، ﻟﻪ ﺣﻖ ﺍﻟﺠﻮﺍﺭ، ﻭﺃﻣﺎ ﺍﻟﺠﺎﺭ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻟَﻪُ ﺣَﻘَّﺎﻥِ ﻓَﺠَﺎﺭٌ ﻣُﺴْﻠِﻢٌ ﻟَﻪُ ﺣَﻖُّ ﺍﻟْﺈِﺳْﻠَﺎﻡِ، ﻭَﺣَﻖُّ ﺍﻟْﺠِﻮَﺍﺭِ، ﻭَﺃَﻣَّﺎ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻟَﻪُ ﺛَﻠَﺎﺛَﺔُ ﺣُﻘُﻮﻕٍ ﻓَﺠَﺎﺭٌ ﻣُﺴْﻠِﻢٌ ﺫُﻭ ﺭَﺣِﻢٍ ﻟَﻪُ ﺣَﻖُّ ﺍﻟﺠﻮﺍﺭ، ﻭﺣﻖ ﺍﻹﺳﻼﻡ، ﻭﺣﻖ ﺍﻟﺮﺣﻢ ‏» .

“জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “প্রতিবেশী সাধারণত তিন শ্রেণীর হয়ে থাকে। ১. যার এক দিক থেকে হক। সে হকের দিক দিয়ে সর্ব কনিষ্ঠ। ২. যার দুই দিক থেকে হক হয়ে থাকে। ৩. যার তিন দিক থেকে হক হয়ে থাকে, এ হল, সর্বোত্তম প্রতিবেশী। যার এক দিক থেকে হক সে হল,
অনাত্মীয় বিধর্মী প্রতিবেশী। এ ব্যক্তির হক শুধু প্রতিবেশী হওয়ার ভিত্তিতে আত্মীয়তার ভিত্তিতে নয়। আর যার হক দুই দিক দিয়ে, সে হল, মুসলিম প্রতিবেশী, যার সাথে আত্মীয়তার কোনও সম্পর্ক নেই। এ ব্যক্তির হক প্রতিবেশী এবং মুসলিম হওয়ার দিক থেকে। আর যার হক তিন দিক থেকে, সে হল, মুসলিম আত্মীয় প্রতিবেশী। এ ব্যক্তির হক প্রতিবেশী হিসেবে, মুসলিম হিসেবে এবং ও আত্মীয় হওয়ার দিক থেকে”।[1]
সাধারণত পাশের ঘরের লোককে প্রতিবেশী বলা হয়ে থাকে। তবে পাশের ঘর বলতে কি বুঝায় এ বিষয়ে বিভিন্ন আলেমদের মধ্যে একাধিক ব্যাখ্যা পরিলক্ষিত। আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, যে তোমার আওয়াজ শুনতে পায়, সে তোমার প্রতিবেশী। আবার কেউ কেউ বলেন, যে তোমার সাথে এক মসজিদে ফজরের সালাত আদায় করে সে তোমার প্রতিবেশী।
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা প্রতিবেশীর ব্যাখ্যায় বলেন, “তোমার ঘরের চার পাশের ৪০টি ঘরের অধিবাসীরা তোমার প্রতিবেশী”। [2]
ইমাম শাফেয়ী ও ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহ. মতে প্রতিবেশী হল, তোমার ঘরের চার পাশ থেকে চল্লিশটি ঘরের অধিবাসী।
আবার কেউ কেউ বলেন, প্রতিবেশীর নির্ধারিত কোনো সংজ্ঞা নাই। বিষয়টি সামাজিক ও পারিভাষিক অবস্থার উপর নির্ভর করে। সমাজ যাদের প্রতিবেশী বলে তারাই প্রতিবেশী এবং পরিভাষায় যাদের প্রতিবেশী বলে তারাই প্রতিবেশী।
তবে প্রত্যেক শ্রেণীই যেহেতু প্রতিবেশী তাই প্রত্যেকের হকের প্রতি যত্নবান হওয়া তাদের গুরুত্ব দেওয়া খুবই জরুরি।


পবিত্র কুরআনে প্রতিবেশীর হক
প্রতিবেশীরা মানবসমাজের একটি
অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। ফলে ইসলামে


প্রতিবেশীর হককে অনেক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আল্লাহর ইবাদত ও তার সাথে কাউকে শরিক না করা-এই বিধানের সাথে প্রতিবেশীর বিষয়টিও আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনে উল্লেখ করেছেন। একই আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের হক বিষয়ে আলোচনা করেছেন তার মধ্যে রয়েছে মাতা-পিতার হক, আত্মীয় স্বজনের হক, এতীমের হক ইত্যাদি। এসব গুরুত্বপূর্ণ হকের সাথে প্রতিবেশীর হককে উল্লেখ করা থেকেই বোঝা যায়,
প্রতিবেশীর হককে আল্লাহ তা‘আলা কতটা গুরুত্ব দিয়েছেন এবং তা রক্ষা করা আমাদের জন্য কতটা জরুরি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,


﴿ﻭَﺑِﭑﻟۡﻮَٰﻟِﺪَﻳۡﻦِ ﺇِﺣۡﺴَٰﻨٗﺎ ﻭَﺑِﺬِﻱ ﭐﻟۡﻘُﺮۡﺑَﻰٰ ﻭَﭐﻟۡﻴَﺘَٰﻤَﻰٰ ﻭَﭐﻟۡﻤَﺴَٰﻜِﻴﻦِ
ﻭَﭐﻟۡﺠَﺎﺭِ ﺫِﻱ ﭐﻟۡﻘُﺮۡﺑَﻰٰ ﻭَﭐﻟۡﺠَﺎﺭِ ﭐﻟۡﺠُﻨُﺐِ ﻭَﭐﻟﺼَّﺎﺣِﺐِ ﺑِﭑﻟۡﺠَﻨۢﺐِ
ﻭَﭐﺑۡﻦِ ﭐﻟﺴَّﺒِﻴﻞِ ﻭَﻣَﺎ ﻣَﻠَﻜَﺖۡ ﺃَﻳۡﻤَٰﻨُﻜُﻢۡۗ ٣٦ ﴾ ‏[ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ : ٣٦ ‏]


“এবং পিতা-মাতার প্রতি ইহসান, আত্মীয়-
স্বজন, এতীম, অভাবগ্রস্ত, নিকট-প্রতিবেশী,
দূর-প্রতিবেশী, সঙ্গী-সাথী, মুসাফির ও তোমাদের দাস-দাসীদের সাথে ভালো ব্যবহার কর”।[3]
হাদিসে প্রতিবেশীর হক বিষয়ে গুরুত্ব প্রদান
এক- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি


ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
ﻋَﻦْ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠﻪِ، ﺃَﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻗَﺎﻝَ : ‏« ﻣَﺎ ﺯَﺍﻝَ ﺟِﺒْﺮِﻳﻞُ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻳُﻮﺻِﻴﻨِﻲ ﺑِﺎﻟْﺠَﺎﺭِ، ﺣَﺘَّﻰ ﻇَﻨَﻨْﺖُ ﺃَﻧَّﻪُ ﺳَﻴُﻮَﺭِّﺛُﻪُ - ﺃَﻭْ ﻗَﺎﻝَ : ﺧَﺸِﻴﺖُ ﺃَﻥْ ﻳُﻮَﺭِّﺛَﻪُ - ‏»


“জিবরীল আলাইহিস সালাম আমাকে
প্রতিবেশীর হকের ব্যাপারে এত বেশি
তাকিদ করেছেন যে, আমার কাছে মনে
হয়েছে প্রতিবেশীকে মিরাসের অংশীদার
বানিয়ে দেওয়া হবে”।[4]

হাদিসে প্রতিবেশীকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আজকাল এ বিষয়ে
আমাদের মাঝে চরম অবহেলা পরিলক্ষিত
হয়। বিশেষ করে শহরের মানুষের মাঝে।
বছরের পর বছর পার হয় পাশের বাড়ির
কারো সাথে কোনও কথা হয় না, খোঁজ খবর
নেওয়া হয় না, একজন লোক মারা গেলে পাশের ফ্লাটের লোকের কোনো খবর নাই।
বরং বিভিন্নভাবে প্রতিবেশীকে কষ্ট
দেওয়া হয়। অথচ প্রতিবেশীর সাথে সদাচরণ
ও তাকে কষ্ট না দেওয়াকে ঈমানের সাথে
যুক্ত করা হয়েছে।


দুই- প্রতিবেশীকে কষ্ট দিতে আল্লাহর রাসূল নিষেধ করেন এবং তার সাথে ভালো ব্যবহার করার নির্দেশ দেন। হাদিস-

ﻭﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﺷﺮﻳﺢ ـ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻲ ﻋﻨﻪ ـ ﻗﺎﻝ : ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : ‏« ﻣﻦ ﻛﺎﻥ ﻳﺆﻣﻦ ﺑﺎﻟﻠﻪ ﻭﺍﻟﻴﻮﻡ ﺍﻵﺧﺮ ﻓﻼﻳﺆﺫ ﺟﺎﺭﻩ ‏»

আবু শুরাই রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে আল্লাহ ও
আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন
প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়”।[5]




তিন. আরেক হাদিসে রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন,

« ﻓﻠﻴﺤﺴﻦ ﺇﻟﻰ ﺟﺎﺭﻩ ‏»

“সে যেন প্রতিবেশীর সাথে সদাচরণ করে”।
[6]

চার- প্রতিবেশীরা হকের ক্ষেত্রে সবাই সমান নয়। যারা সম্পর্কের দিক দিয়ে যত বেশি নিকটে তাদের অধিকার বা হক বেশি। আর যদি প্রতিবেশী সম্পর্কের দিক দিয়ে সমান হয় এবং একজন কাছে এবং অপর জন দূরে হয় তবে কাছের প্রতিবেশীর অধিকার বা হক বেশি দূরের প্রতিবেশীর তুলনা। এ বিষয়ে হাদিস-

ﺭﻭﻯ ﺍﻹﻣﺎﻡ ﺃﺣﻤﺪ ﻋَﻦْ ﻋَﺎﺋِﺸَﺔَ : ﺃَﻧَّﻬَﺎ ﺳَﺄَﻟَﺖْ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻓَﻘَﺎﻟَﺖْ : ﺇِﻥَّ ﻟِﻲ ﺟَﺎﺭَﻳْﻦِ ﻓَﺈِﻟَﻰ ﺃَﻳِّﻬِﻤَﺎ ﺃُﻫْﺪِﻱ؟ ﻗَﺎﻝَ :
‏« ﺇِﻟَﻰ ﺃَﻗْﺮَﺑِﻬِﻤَﺎ ﻣِﻨْﻚَ ﺑَﺎﺑًﺎ ‏» ﻭَﺭَﻭَﺍﻩُ ﺍﻟْﺒُﺨَﺎﺭِﻱُّ ﻣِﻦْ ﺣَﺪِﻳﺚِ ﺷُﻌْﺒَﺔَ ﺑِﻪِ .


আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, “আমার দুই জন প্রতিবেশী আছে, তাদের কাকে আমি হাদিয়া দেব? রাসূল বললেন, যে তোমার দরজার কাছের প্রতিবেশী তাকে তুমি হাদিয়া দেবে”।[7]




পাঁচ- তোমাদের মধ্যে সে উত্তম প্রতিবেশী বা সে উত্তম সাথী যে তার প্রতিবেশী ও সাথীদের নিকট উত্তম। যেমন হাদিস-

ﻋَﻦْ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺑْﻦِ ﻋَﻤْﺮِﻭ ﺑْﻦِ ﺍﻟْﻌَﺎﺹِ ﻋَﻦِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺃَﻧَّﻪُ ﻗَﺎﻝَ : ‏« ﺧَﻴْﺮُ ﺍﻟْﺄَﺻْﺤَﺎﺏِ ﻋِﻨْﺪَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺧَﻴْﺮُﻫُﻢْ ﻟِﺼَﺎﺣِﺒِﻪِ ﻭﺧﻴﺮ ﺍﻟﺠﻴﺮﺍﻥ ﻋﻨﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺧﻴﺮﻫﻢ ﻟﺠﺎﺭﻩ ‏» ‏( ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺣﻤﺪ ﻭﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ ‏)

আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে স্বীয় সাথীর নিকট উত্তম সেই আল্লাহর নিকট সর্ব উত্তম সাথী এবং যে স্বীয় প্রতিবেশীর দৃষ্টিতে ভালো প্রতিবেশী, সেই আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম প্রতিবেশী”।[8]



ছয়- অপর এক বর্ণনায় এসেছে,

ﻋَﻦْ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺑْﻦِ ﻣَﺴْﻌُﻮﺩٍ ﻗَﺎﻝَ ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺟُﻞٌ ﻟِﺮَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻛَﻴْﻒَ ﻟِﻲ ﺃَﻥْ ﺃَﻋْﻠَﻢَ ﺇِﺫَﺍ ﺃَﺣْﺴَﻨْﺖُ ﻭَﺇِﺫَﺍ ﺃَﺳَﺄْﺕُ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ‏« ﺇِﺫَﺍ ﺳَﻤِﻌْﺖَ ﺟِﻴﺮَﺍﻧَﻚَ ﻳَﻘُﻮﻟُﻮﻥَ ﻗَﺪْ ﺃَﺣْﺴَﻨْﺖَ ﻓَﻘَﺪْ ﺃَﺣْﺴَﻨْﺖَ ﻭَﺇِﺫَﺍ ﺳَﻤِﻌْﺘَﻬُﻢْ ﻳَﻘُﻮﻟُﻮﻥَ ﻗَﺪْ ﺃَﺳَﺄْﺕَ ﻓَﻘَﺪْ ﺃَﺳَﺄْﺕَ ، ‏»

“আবদুল্লাহ ইবন মাস‘উদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, এক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করেন, আমি ভালো করলাম না খারাপ করলাম এ বিষয়টি নিশ্চিতভাবে আমার নিজের সম্পর্কে কীভাবে জানতে পারব? উত্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “যখন শোন, তোমার প্রতিবেশী তোমাকে বলে, তুমি ভালো করছ, তাহলে তুমি ভালো করছ, আর যখন শোন, তোমার প্রতিবেশী বলে, তুমি খারাপ করছ, তাহলে তুমি খারাপ করছ”।[9]


সাত- প্রতিবেশী কষ্ট না দেওয়া এবং তাদের সাতে ভালো ব্যবহার করা ঈমানের সাথে সম্পর্ক। এ বিষয়ে হাদিস-

ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻫﺮﻳﺮﺓ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻗﺎﻝ : ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ : ‏« ﻣﻦ ﻛﺎﻥ ﻳﺆﻣﻦ ﺑﺎﻟﻠﻪ ﻭﺍﻟﻴﻮﻡ ﺍﻵﺧﺮ ﻓﻼ ﻳﺆﺫ ﺟﺎﺭﻩ، ﻭﻣﻦ ﻛﺎﻥ ﻳﺆﻣﻦ ﺑﺎﻟﻠﻪ ﻭﺍﻟﻴﻮﻡ ﺍﻷﺧﺮ ﻓﻠﻴﻜﺮﻡ ﺿﻴﻔﻪ، ﻭﻣﻦ ﻛﺎﻥ ﻳﺆﻣﻦ ﺑﺎﻟﻠﻪ ﻭﺍﻟﻴﻮﻡ ﺍﻵﺧﺮ ﻓﻠﻴﻘﻞ ﺧﻴﺮًﺍ ﺃﻭ ﻟﻴﺼﻤﺖ ‏»

“আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের

প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন প্রতিবেশীকে
কষ্ট না দেয়। যে আল্লাহ ও আখিরাতের
প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন মেহমানের সম্মান করে, যে আল্লাহ ও আখিরাতের
প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন ভালো কথা বলে অথবা চুপ থাকে”।



আট- অপর একটি হাদিসে এসেছে-

ﻭﻗﺎﻝ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ : ‏« ﻭﺍﻟﻠﻪ ﻻ ﻳﺆﻣﻦ، ﻭﺍﻟﻠﻪ ﻻ ﻳﺆﻣﻦ، ﻭﺍﻟﻠﻪ ﻻ ﻳﺆﻣﻦ ‏» ، ﻗﻴﻞ : ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ! ﺧﺎﺏ ﻭﺧﺴﺮ، ﻣﻦ ﻫﺬﺍ؟ ﻗﺎﻝ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ : ‏« ﻣﻦ ﻻ ﻳﺄﻣﻦ ﺟﺎﺭﻩ ﺑﻮﺍﺋﻘﻪ ‏» ،

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহর শপথ সে মুমিন নয়! আল্লাহর শপথ সে মুমিন নয়!!
আল্লাহর শপথ সে মুমিন নয়!!! সাহাবীরা জিজ্ঞেস করলেন, কে সেই বঞ্চিত ও ক্ষতিগ্রস্ত লোক হে আল্লাহর রাসূল?
রাসূ্লুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে ব্যক্তির অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ নয়”।[10]
হাদিসে প্রতিবেশীর হকের অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তাকে যাতে কোনো প্রকার কষ্ট দেওয়া না হয় এবং তার যাতে কোনো ক্ষতি করা না হয় সে ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।



নয়- দশগুণ বেশি গুনাহ; প্রতিবেশীর হক আদায় করা যেমন জরুরি প্রতিবেশীকে কষ্ট দেওয়া বা তার হক নষ্ট করা তেমনি মস্ত বড় গুনাহ। একই অন্যায় প্রতিবেশীর ক্ষেত্রে করলে অন্যের তুলনায় দশ গুণ বেশি গুনাহ বা বড় অন্যায় বলে গণ্য হয়।

ﻓﻘﺪ ﺛﺒﺖ ﻋﻨﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺃﻧﻪ ﻗﺎﻝ : ‏« ﻣﺎ ﺗﻘﻮﻟﻮﻥ ﻓﻲ ﺍﻟﺰﻧﺎ؟ ‏» ﻗﺎﻟﻮﺍ : ﺣﺮﺍﻡ، ﺣﺮﻣﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺭﺳﻮﻟﻪ، ﻗﺎﻝ : ‏« ﻷﻥ ﻳﺰﻧﻲ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﺑﻌﺸﺮ ﻧﺴﻮﺓ ﺃﻳﺴﺮ ﻣﻦ ﺃﻥ ﻳﺰﻧﻲ ﺑﺎﻣﺮﺃﺓ ﺟﺎﺭﻩ، ﻣﺎ ﺗﻘﻮﻟﻮﻥ ﻓﻲ ﺍﻟﺴﺮﻗﺔ؟ » ﻗﺎﻟﻮﺍ : ﺣﺮﺍﻡ، ﺣﺮﻣﻬﺎ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺭﺳﻮﻟﻪ، ﻗﺎﻝ : ‏« ﻷﻥ ﻳﺴﺮﻕ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﻣﻦ ﻋﺸﺮﺓ ﺃﺑﻴﺎﺕ ﺃﻳﺴﺮ ﻣﻦ ﺃﻥ ﻳﺴﺮﻕ ﻣﻦ ﺑﻴﺖ ﺟﺎﺭﻩ، ﻭﻣﻦ ﺃﻏﻠﻖ ﺑﺎﺑﻪ ﻣﻦ ﺟﺎﺭﻩ ﻣﺨﺎﻓﺔ ﻋﻠﻰ ﺃﻫﻠﻪ ﺃﻭ ﻣﺎﻟﻪ ﻓﻠﻴﺲ ﺍﻟﺠﺎﺭ ﺑﻤﺆﻣﻦ ‏» .

“মিকদাদ ইবনুল আসওয়াদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাহাবীগণকে যিনা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। তারা বলল, তাতো হারাম। আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তা হারাম ঘোষণা করেছেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কোনও ব্যক্তি দশজন নারীর সাথে যিনা করলে যে গুনাহ প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে যিনা করা তার চেয়েও বেশি ও মারাত্মক গুনাহ। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে চুরি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। তারা বলল, তাতো হারাম। আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তা হারাম ঘোষণা করেছেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,



দশ বাড়িতে চুরি করা যত বড় অন্যায় প্রতিবেশীর বাড়িতে চুরি করা এর চেয়েও বড় অন্যায়”।[11]

দশ- দুই নারীর দৃষ্টান্ত; কে জান্নাতি?


প্রতিবেশীর সাথে মন্দ আচরণ, ব্যক্তির সব আমল বরবাদ করে দেয়। তাকে নিয়ে ফেলে জাহান্নামে। যেমনটি হাদিস দ্বারা প্রমাণিত-

ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ، ﻗَﺎﻝَ : ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺟُﻞٌ : ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ، ﺇِﻥَّ ﻓُﻠَﺎﻧَﺔَ ﻳُﺬْﻛَﺮُ ﻣِﻦْ ﻛَﺜْﺮَﺓِ ﺻَﻠَﺎﺗِﻬَﺎ، ﻭَﺻِﻴَﺎﻣِﻬَﺎ، ﻭَﺻَﺪَﻗَﺘِﻬَﺎ، ﻏَﻴْﺮَ ﺃَﻧَّﻬَﺎ ﺗُﺆْﺫِﻱ ﺟِﻴﺮَﺍﻧَﻬَﺎ ﺑِﻠِﺴَﺎﻧِﻬَﺎ، ﻗَﺎﻝَ : ‏« ﻫِﻲَ ﻓِﻲ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ ‏» ، ﻗَﺎﻝَ : ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ، ﻓَﺈِﻥَّ ﻓُﻠَﺎﻧَﺔَ ﻳُﺬْﻛَﺮُ ﻣِﻦْ ﻗِﻠَّﺔِ ﺻِﻴَﺎﻣِﻬَﺎ، ﻭَﺻَﺪَﻗَﺘِﻬَﺎ، ﻭَﺻَﻠَﺎﺗِﻬَﺎ، ﻭَﺇِﻧَّﻬَﺎ ﺗَﺼَﺪَّﻕُ ﺑِﺎﻟْﺄَﺛْﻮَﺍﺭِ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺄَﻗِﻂِ، ﻭَﻟَﺎ ﺗُﺆْﺫِﻱ ﺟِﻴﺮَﺍﻧَﻬَﺎ ﺑِﻠِﺴَﺎﻧِﻬَﺎ، ﻗَﺎﻝَ : ‏« ﻫِﻲَ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔِ ‏»


“আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলল,
এক নারীর ব্যাপারে প্রসিদ্ধ, সে বেশি বেশি (নফল) নামায পড়ে, রোযা রাখে, দুই হাতে দান করে। কিন্তু জবানের দ্বারা স্বীয় প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয় (তার অবস্থা কি হবে?)। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “সে জাহান্নামে যাবে”। আরেক নারী বেশি (নফল) নামাযও পড়ে না, খুব বেশি রোযাও রাখে না আবার তেমন দান সদকাও করে না;


সামান্য দু-এক টুকরা পনির দান করে। তবে সে জবানের দ্বারা প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয় না (এই নারীর ব্যাপারে কি বলেন?)। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “সে জান্নাতি”।[12]

ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻫﺮﻳﺮﺓ ـ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻲ ﻋﻨﻪ ـ ﻗﺎﻝ : ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : ‏« ﻭﺍﻟﻠﻪ ﻻﻳﺆﻣﻦ ﻭﺍﻟﻠﻪ ﻻﻳﺆﻣﻦ ﻭﺍﻟﻠﻪ ﻻﻳﺆﻣﻦ، ﻗﻴﻞ ﻣﻦ ﻳﺎﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ؟ ﻗﺎﻝ : ﺍﻟﺬﻱ ﻻﻳﺄﻣﻦ ﺟﺎﺭﻩ ﺑﻮﺍﺋﻘﻪ
‏»


“আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহর শপথ সে মুমিন নয়!

আল্লাহর শপথ সে মুমিন নয়!! আল্লাহর শপথ সে মুমিন নয়!!! সাহাবীরা জিজ্ঞেস করলেন, কে সেই বঞ্চিত ও ক্ষতিগ্রস্ত লোক হে আল্লাহর রাসূল? রাসূ্লুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে ব্যক্তির অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ নয়”।
[13]



প্রতিবেশীর হক কি?

প্রতিবেশীর হক কি তা আমাদের জানা থাকা খুবই জরুরি। হক জানা থাকলে, তা আমরা কিভাবে বাস্তবায়ন করব? নিম্নে আমরা কুরআন ও হাদিসের আলোকে প্রতিবেশীর হকগুলো আলোচনা করব।


এক- প্রতিবেশীর কষ্ট দূর করা:

এটি প্রতিবেশীর হকসমূহের অন্যতম। সাধারণত কাউকে কষ্ট দেওয়া এমনিতেই হারাম। কিন্তু কোনো প্রতিবেশীকে কষ্ট দেওয়া এটি আরও জঘন্যতম অপরাধ ও বেশি হারাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়ার ব্যাপারে আরও বেশি সতর্ক করে দিয়েছেন। তিনি বিভিন্নভাবে প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। যেমন, তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

‏« ﻭﺍﻟﻠﻪ ﻻ ﻳﺆﻣﻦ، ﻭﺍﻟﻠﻪ ﻻ ﻳﺆﻣﻦ، ﻭﺍﻟﻠﻪ ﻻ ﻳﺆﻣﻦ ‏» . ﻗﻴﻞ : ﻣَﻦْ ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ؟ ﻗﺎﻝ : ‏« ﻣَﻦ ﻻ ﻳﺄﻣﻦ ﺟﺎﺭﻩ ﺑﻮﺍﺋﻘﻪ ‏» .

““আল্লাহর শপথ সে মুমিন নয়! আল্লাহর শপথ সে মুমিন নয়!! আল্লাহর শপথ সে মুমিন নয়!!!
সাহাবীরা জিজ্ঞেস করলেন, কে সেই লোক হে আল্লাহর রাসূল? রাসূ্লুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,

যে ব্যক্তির অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ নয়”।[14]
অনুরূপভাবে মহিলার হাদিস, যে সালাত আদায় করে, রোযা রাখে, কিন্তু তার মুখ খুব ধারালো। সে তার প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়। আল্লাহ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সম্পর্কে বলেন,

‏« ﻻ ﺧﻴﺮ ﻓﻴﻬﺎ، ﻫﻲ ﻓﻲ ﺍﻟﻨﺎﺭ ‏»

“তার মধ্যে কোনো কল্যাণ নাই। সে জাহান্নামী”।[15]


দুই- প্রতিবেশীর কষ্ট সহ্য করা:

এটি একটি উন্নত চরিত্র ও বড় মাপের আখলাক। কারণ, কাউকে কষ্ট দেওয়া হতে বিরত থাকার মানুষ অনেক পাওয়া যাবে। তবে অপরের নির্যাতন বা কারো কষ্ট সহ্য করার মত মানসিকতার মানুষ খুব কম পাওয়া যাবে। এ জন্য এটি একটি উন্নত গুণ এবং বিশেষ বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ﭐﺩۡﻓَﻊۡ ﺑِﭑﻟَّﺘِﻲ ﻫِﻲَ ﺃَﺣۡﺴَﻦُ ﭐﻟﺴَّﻴِّﺌَﺔَۚ ﻧَﺤۡﻦُ ﺃَﻋۡﻠَﻢُ ﺑِﻤَﺎ ﻳَﺼِﻔُﻮﻥَ ٩٦
﴾ ‏[ ﺍﻟﻤﺆﻣﻨﻮﻥ : ٩٦ ‏]

“যা উত্তম তা দিয়ে মন্দ প্রতিহত কর; তারা যা বলে আমি তা সম্পর্কে অধিক জ্ঞানী”।
[16]


আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,

﴿ﻭَﻟَﻤَﻦ ﺻَﺒَﺮَ ﻭَﻏَﻔَﺮَ ﺇِﻥَّ ﺫَٰﻟِﻚَ ﻟَﻤِﻦۡ ﻋَﺰۡﻡِ ﭐﻟۡﺄُﻣُﻮﺭِ ٤٣ ﴾ ‏[ ﺍﻟﺸﻮﺭﻯ : ٤٣ ‏]

“আর যে ধৈর্যধারণ করে এবং ক্ষমা করে, তা নিশ্চয় দৃঢ়সংকল্পেরই কাজ”।[17]
হাসান বসরী রহ. বলেন,

ﻟﻴﺲ ﺣُﺴْﻦُ ﺍﻟﺠﻮﺍﺭ ﻛﻒّ ﺍﻷﺫﻯ، ﺣﺴﻦ ﺍﻟﺠﻮﺍﺭ ﺍﻟﺼﺒﺮ ﻋﻠﻰ ﺍﻷﺫﻯ

প্রতিবেশীর সাথে ভালো ব্যবহার তাকে কষ্ট দেওয়া হতে বিরত থাকা নয়, তার কষ্ট সহ্য করাই হল তার সাথে ভালো ব্যবহার।

ﻭﻓﻲ ﻣﺴﻨﺪ ﺍﻹﻣﺎﻡ ﺃﺣﻤﺪ ﺭﺣﻤﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﺫﺭ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻗﺎﻝ : ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : ‏« ﺇﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﺰ ﻭﺟﻞ ﻳﺤﺐ ﺛﻼﺛﺔ، ﻭﻳﺒﻐﺾ ﺛﻼﺛﺔ ‏» ، ﻭﺫﻛﺮ ﻓﻲ ﺍﻟﺜﻼﺛﺔ ﺍﻟﺬﻳﻦ ﻳﺤﺒﻬﻢ :
‏« ﺭﺟﻞ ﻛﺎﻥ ﻟﻪ ﺟﺎﺭ ﺳﻮﺀ ﻳﺆﺫﻳﻪ ﻓﻴﺼﺒﺮ ﻋﻠﻰ ﺃﺫﺍﻩ ﺣﺘﻰ ﻳﻜﻔﻴﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﺇﻳﺎﻩ ﺑﺤﻴﺎﺓ ﺃﻭ ﻣﻮﺕ ‏» .

মুসনাদে আহমদে আবু যর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তা‘আলা তিন ব্যক্তিকে ভালোবাসেন এবং তিন ব্যক্তিকে অপছন্দ করেন। তাদের মধ্যে এক ব্যক্তি সে যার একজন মন্দ প্রতিবেশী ছিল যে তাকে সব সময় কষ্ট দিত এবং তার কষ্টের উপর লোকটি ধৈর্য ধরছিল যতদিন পর্যন্ত আল্লাহ তা‘আলা তাদের মধ্যে জীবন মৃত্যুর ফায়সালা না করেন”। [18]

আবু হানিফা রহ.-এর একটি ঘটনা:
ইমাম আবু হানিফা রহ. সম্পর্কে একটি ঘটনা বর্ণিত, তার একজন প্রতিবেশী ছিল, যে তাকে প্রতিদিন তার চলার পথে কষ্ট দিত। ইমাম আবু হানিফা রহ. প্রতিদিন কষ্টদায়ক বস্তু পথ থেকে দূর করত এবং তার কষ্টের উপর ধৈর্য ধারণ করত। একদিন তিনি ঘর থেকে বের হলেন, কিন্তু নির্ধারিত কোনো কষ্টদায়ক বস্তু পথের মধ্যে দেখতে পেলেন না। তিনি লোক জনের নিকট তার প্রতিবেশীর খোঁজ খবর নিলেন। তখন সবাই তাকে জানালো যে লোকটি একটি ঘটনা ঘটিয়েছে, যার কারণে তাকে পুলিশ ধরে নিয়ে জেল খানায় প্রেরণ করেছে। এ কথা শোনে আবু হানিফা রহ. থানায় গিয়ে সুপারিশ করে, তাকে জেল খানা থেকে মুক্ত করে নিয়ে আসেন। কিন্তু লোকটি জানতো না যে, কে তার জন্য সুপারিশ করল?। জেল খানা থেকে বের হয়ে সে মানুষের কাছে জিজ্ঞাসা করল, কে আমার জন্য সুপারিশ করল। মানুষ তাকে বলল, তোমার প্রতিবেশী তোমার জন্য থানায় গিয়ে সুপারিশ করেছে। লোকটি বলল, কোন প্রতিবেশী? সবাই বলল, আবু হানিফা। তারপর সে তাকে কষ্ট দেয়ার কারণে লজ্জিত হল এবং কষ্ট দেওয়া হতে বিরত থাকল।


একজন মন্দ প্রতিবেশীর ঘটনা:

প্রতিবেশীর সাথে মানুষের সম্পর্ক সামান্য সময়ের নয়; বরং সকাল-সন্ধ্যা, রাত-দিন, মাস ও বছরের বা সারা জীবনের। এ প্রতিবেশী যদি মন্দ হয় তাহলে ভোগান্তির আর শেষ থাকে না। তেমনি এক মন্দ প্রতিবেশীর ঘটনা হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে।

ﻋﻦ ﺃَﺑِﻲ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻗَﺎﻝَ ﺟَﺎﺀَ ﺭَﺟُﻞٌ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳَﺸْﻜُﻮ ﺟَﺎﺭَﻩُ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺍﺫْﻫَﺐْ ﻓَﺎﺻْﺒِﺮْ ﻓَﺄَﺗَﺎﻩُ ﻣَﺮَّﺗَﻴْﻦِ ﺃَﻭْ ﺛَﻠَﺎﺛًﺎ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺍﺫْﻫَﺐْ ﻓَﺎﻃْﺮَﺡْ ﻣَﺘَﺎﻋَﻚَ ﻓِﻲ ﺍﻟﻄَّﺮِﻳﻖِ ﻓَﻄَﺮَﺡَ ﻣَﺘَﺎﻋَﻪُ ﻓِﻲ ﺍﻟﻄَّﺮِﻳﻖِ ﻓَﺠَﻌَﻞَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﻳَﺴْﺄَﻟُﻮﻧَﻪُ ﻓَﻴُﺨْﺒِﺮُﻫُﻢْ ﺧَﺒَﺮَﻩُ ﻓَﺠَﻌَﻞَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﻳَﻠْﻌَﻨُﻮﻧَﻪُ ﻓَﻌَﻞَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺑِﻪِ ﻭَﻓَﻌَﻞَ ﻭَﻓَﻌَﻞَ ﻓَﺠَﺎﺀَ ﺇِﻟَﻴْﻪِ ﺟَﺎﺭُﻩُ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻟَﻪُ ﺍﺭْﺟِﻊْ ﻟَﺎ ﺗَﺮَﻯ ﻣِﻨِّﻲ ﺷَﻴْﺌًﺎ ﺗَﻜْﺮَﻫُﻪُ

“আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে তার প্রতিবেশীর ব্যাপারে অভিযোগ করল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তুমি যাও, ছবর কর। এভাবে সে দুই বার অথবা তিনবার আসার পর পরের বারে নবীজী তাকে বললেন, তোমার বাড়ির আসবাবপত্র রাস্তায় নিয়ে রাখ। সাহাবী তাই করলেন। মানুষ সেখান দিয়ে যাচ্ছিল এবং এর কারণ জিজ্ঞেস করছিল আর লোকটি প্রতিবেশীর অত্যাচারের ঘটনা তাদেরকে জানাচ্ছিল। লোকেরা ঐ লোকটিকে অভিশাপ দিচ্ছিল, আর বলছিল আল্লাহ তার সাথে এমন এমন করুন, কারণ সে এমন এমন কাজ করেছে। এটা দেখে ঐ লোকের প্রতিবেশী লোকটির কাছে এসে বলল, আমি আর এমনটি করব না (প্রতিবেশীকে কষ্ট দিব না।)।”।[19]


তিন- প্রতিবেশীর দোষ ঢেকে রাখা ও ইজ্জত সম্মান বজায় রাখা:

পাশাপাশি থাকার কারণে একে অপরের ভালো মন্দ কিছু জানাজানি হয়ই। গোপন করতে চাইলেও অনেক কিছু গোপন করা যায় না। প্রতিবেশীর এ সকল বিষয় পরস্পরের জন্য আমানত। নিজের দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণেই একে অপরের দোষ ঢেকে রাখা জরুরি। আমি যদি তার দোষ প্রকাশ করে দিই তাহলে সেও আমার দোষ প্রকাশ করে দিবে। আর আমি যদি তার দোষ ঢেকে রাখি তাহলে সেও আমার দোষ গোপন রাখবে। আমাকে তো কারও মন্দ আমলের জবাব দিতে হবে না। প্রত্যেকেই তার নিজের আমলের জবাব দিবে। প্রত্যেকেই তার আমল অনুযায়ী প্রতিদান পাবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ﻣَّﻦۡ ﻋَﻤِﻞَ ﺻَٰﻠِﺤٗﺎ ﻓَﻠِﻨَﻔۡﺴِﻪِۦۖ ﻭَﻣَﻦۡ ﺃَﺳَﺎٓﺀَ ﻓَﻌَﻠَﻴۡﻬَﺎۗ ٤٦ ﴾ ‏[ ﻓﺼﻠﺖ : ٤٦ ‏]

“যে ব্যক্তি নেক আমল করে, তা তার কল্যাণের জন্যই করে, আর যে খারাপ কর্ম করে, তার পরিণতি তার উপরই বর্তাবে”।[20]
আমি যদি আমার প্রতিবেশীর দোষ গোপন করি, এর বদৌলতে আল্লাহও আমার এমন দোষ গোপন রাখবেন, যা প্রতিবেশীও জানে না। হাদিসে এসেছে,


‏« ﻣَﻦْ ﺳَﺘَﺮَ ﺃَﺧَﺎﻩُ ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻢَ ﺳَﺘَﺮَﻩُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻓِﻲ ﺍﻟﺪُّﻧْﻴَﺎ ﻭَﺍﻟْﺂﺧِﺮَﺓِ ... ‏»

“যে তার মুসলিম ভাইয়ের দোষ ঢেকে রাখে , আল্লাহও দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষ ঢেকে রাখবেন...”।[21]


চার- প্রতিবেশীর খোঁজ খবর রাখা:

আমরা শুধু নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত থাকলে চলবে না। আমি নিজে ভালো ভালো খেলাম অথচ আমার প্রতিবেশী না খেয়ে রইল এটি কোনো ঈমানদারের গুণ হতে পারে না। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

« ﻣﺎ ﺁﻣﻦ ﺑﻲ ﻣﻦ ﺑﺎﺕ ﺷﺒﻌﺎﻧًﺎ ﻭﺟﺎﺭﻩ ﺟﺎﺋﻊ ﺇﻟﻰ ﺟﻨﺒﻪ ﻭﻫﻮ ﻳﻌﻠﻢ ‏»

“ঐ ব্যক্তি মুমিন নয় যে পেট পুরে খায় অথচ সে জানে যে তার পাশের প্রতিবেশী না খেয়ে আছে”।[22]

এখানে একটি বিষয় লক্ষণীয়, অনেক প্রতিবেশীই এমন আছে, যাদের দেখে বোঝার উপায় নেই যে, তারা অভাবে দিন কাটাচ্ছে। তারা কখনোই মানুষের কাছে হাত পাতে না তারা কখনো কেনা কিছু চাইবেও না। কুরআনে এদের সম্পর্কে বলা হয়েছে-

﴿ ﻳَﺤۡﺴَﺒُﻬُﻢُ ﭐﻟۡﺠَﺎﻫِﻞُ ﺃَﻏۡﻨِﻴَﺎٓﺀَ ﻣِﻦَ ﭐﻟﺘَّﻌَﻔُّﻒِ ﺗَﻌۡﺮِﻓُﻬُﻢ ﺑِﺴِﻴﻤَٰﻬُﻢۡ ﻟَﺎ ﻳَﺴَۡٔﻠُﻮﻥَ ﭐﻟﻨَّﺎﺱَ ﺇِﻟۡﺤَﺎﻓٗﺎۗ ٢٧٣ ﴾ ‏[ ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ : ٢٧٣ ‏]

“না চাওয়ার কারণে অনবগত ব্যক্তি তাদেরকে অভাব মুক্ত মনে করে। তুমি তাদেরকে চিনতে পারবে তাদের চিহ্ন দ্বারা। তারা মানুষের কাছে নাছোড় হয়ে চায় না”।[23]
কুরআনের অপর একটি আয়াতে এদেরকে ‘মাহরূম’ বলা হয়েছে, আল্লাহ তা’য়ালা বলেন,


﴿ ﻭَﻓِﻲٓ ﺃَﻣۡﻮَٰﻟِﻬِﻢۡ ﺣَﻖّٞ ﻟِّﻠﺴَّﺎٓﺋِﻞِ ﻭَﭐﻟۡﻤَﺤۡﺮُﻭﻡِ ١٩ ﴾ ‏[ ﺍﻟﺬﺍﺭﻳﺎﺕ : ١٩ ‏]

(অর্থ) “এবং তাদের সম্পদে রয়েছে অভাবগ্রস্ত ও মাহরূমের (বঞ্চিতের) হক”।[24]

এ ক্ষেত্রে আমাদের কর্তব্য, নিজে থেকে তাদের খোঁজ খবর রাখা এবং দেওয়ার ক্ষেত্রে এমন পন্থা অবলম্বন করা যাতে সে লজ্জা না পায়। এ জন্যই তো যাকাত দেওয়ার ক্ষেত্রে এটা বলে দেওয়া জরুরি নয় যে, আমি তোমাকে যাকাত দিচ্ছি; বরং ব্যক্তি যাকাতের যোগ্য কি না এটুকু জেনে নেওয়াই যথেষ্ট।


পাঁচ- প্রতিবেশীর সহযোগিতায় এগিয়ে আসা:

আর আমি প্রতিবেশীর প্রয়োজন পুরা করব তাহলে আল্লাহ আমার প্রয়োজন মিটিয়ে দিবেন এবং আমার সহায় হবেন। হাদিস শরীফে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

‏« ﻣَﻦْ ﻛَﺎﻥَ ﻓِﻲ ﺣَﺎﺟَﺔِ ﺃَﺧِﻴﻪِ، ﻛَﺎﻥَ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﺰَّ ﻭَﺟَﻞَّ ﻓِﻲ ﺣَﺎﺟَﺘِﻪِ، ‏»

“যে তার ভাইয়ের প্রয়োজন পুরা করে আল্লাহ তার প্রয়োজন পুরা করেন”।[25]

ছয়- অসুস্থ হলে দেখতে যাওয়া:

প্রতিবেশী অসুস্থ তাকে দেখতে যাওয়া এটি একটি অন্যতম হক। তার চিকিৎসার খোজ খবর নেয়া ও তার সেবা করা খুবই জরুরি।

ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ ﻗَﺎﻝَ : ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ :

‏« ﻣَﻦْ ﻋَﺎﺩَ ﻣَﺮِﻳﻀًﺎ ﺃَﻭْ ﺯَﺍﺭَ ﺃَﺧًﺎ ﻟَﻪُ ﻓِﻲ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻧَﺎﺩَﺍﻩُ ﻣُﻨَﺎﺩٍ ﺃَﻥْ ﻃِﺒْﺖَ ﻭَﻃَﺎﺏَ ﻣَﻤْﺸَﺎﻙَ ﻭَﺗَﺒَﻮَّﺃْﺕَ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺠَﻨَّﺔِ ﻣَﻨْﺰِﻟًﺎ ‏»

“আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোনো অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাবে, অথবা তার কোনো ভাইকে আল্লাহর জন্য দেখতে যাবে, আসমান থেকে একজন ফেরেশতা আহ্বান করে বলতে থাকে, তুমি সৌভাগ্যবান, তোমার হাটা কল্যাণকর এবং তুমি জান্নাতে তোমার অবস্থান করে নিলে”।
[26]


সাত- প্রতিবেশীর সাথে সদাচরণ করা:

প্রতিবেশীরা আমাদের জীবনের আবশ্যকীয় অনুষঙ্গ। তাদের সাথে আমার আচরণ সুন্দর হবে তা কি বলে বোঝাতে হয়? আর আমি যদি মুমিন হই তাহলে তো তা আমার ঈমানের দাবি। আবু শুরাইহ্ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
আমার দুই কান শ্রবণ করেছে এবং আমার দুই চক্ষু প্রত্যক্ষ করেছে যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,

‏« ﻣﻦ ﻛﺎﻥ ﻳﺆﻣﻦ ﺑﺎﻟﻠﻪ ﻭﺍﻟﻴﻮﻡ ﺍﻵﺧﺮ ﻓﻠﻴﻜﺮﻡ ﺟﺎﺭﻩ ‏»

যে আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখে এবং আখিরাতে বিশ্বাস রাখে সে যেন স্বীয় প্রতিবেশীকে সম্মান করে।

সহীহ মুসলিমের বর্ণনায় আছে

‏« ﻓﻠﻴﺤﺴﻦ ﺇﻟﻲ ﺟﺎﺭﻩ ‏»

“সে যেন স্বীয় প্রতিবেশীর সাথে সদাচরণ করে”।[27]

আট-হাদিয়া আদান-প্রদান করা:

প্রতিবেশীদের পরস্পরের সুসম্পর্ক বৃদ্ধির ক্ষেত্রে হাদিয়ার আদান-প্রদান খুবই কার্যকর পন্থা। এর মাধ্যমে হৃদ্যতা সৃষ্টি হয় ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধন মজবুত হয়। যেমন হাদিস-

ﻋﻦ ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ، ﻋَﻦِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻳَﻘُﻮﻝُ :
‏« ﺗَﻬَﺎﺩُﻭﺍ ﺗَﺤَﺎﺑُّﻮﺍ ‏» ‏[ ﻗﺎﻝ ﺍﻟﺸﻴﺦ ﺍﻷﻟﺒﺎﻧﻲ ‏] : ﺣﺴﻦ

“আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা হাদিয়া আদান-প্রদান কর। এর মাধ্যমে তোমাদের মাঝে হৃদ্যতা সৃষ্টি হবে”।[28]

ﻭﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻫﺮﻳﺮﺓ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻗﺎﻝ : ﻛﺎﻥ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻳﻘﻮﻝ : ‏« ﻳﺎ ﻧﺴﺎﺀ ﺍﻟﻤﺴﻠﻤﺎﺕ، ﻻ ﺗﺤﻘﺮﻥ ﺟﺎﺭﺓ ﻟﺠﺎﺭﺗﻬﺎ ﻭﻟﻮ ﻓﺮﺳﻦ ﺷﺎﺓ ‏» .

আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে অন্য হাদিসে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারীদেরকে এ বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করে বলেছেন, “হে মুসলিম নারীগণ! তোমাদের কেউ যেন প্রতিবেশীকে হাদিয়া দিতে সংকোচ বোধ না করে। যদিও তা বকরীর খুরের মত একটি নগণ্য বস্তুও হয়”।[29]

সুতরাং প্রতিবেশী নারীরাও নিজেদের মাঝে হাদিয়া আদান-প্রদান করবেন। যদিও তা একেবারে নগণ্য বস্তু হয়ে থাকে। যা কোনো উপকারে আসবে না।

ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ ﻋَﻦْ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗَﺎﻝَ : ‏« ﺗَﻬَﺎﺩَﻭْﺍ ﻓَﺈِﻥَّ ﺍﻟْﻬَﺪِﻳَّﺔَ ﺗُﺬْﻫِﺐُ ﻭَﺣَﺮَ ﺍﻟﺼَّﺪْﺭِ ﻭَﻟَﺎ ﺗَﺤْﻘِﺮَﻥَّ ﺟَﺎﺭَﺓٌ ﻟِﺠَﺎﺭَﺗِﻬَﺎ ﻭَﻟَﻮْ ﺷِﻖَّ ﻓِﺮْﺳِﻦِ ﺷَﺎﺓٍ ‏»

আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “তোমরা হাদিয়া আদান প্রদান কর, কারণ, তা মানুষের অন্তরের ক্ষোভকে দূর করে। একজন প্রতিবেশী অপর প্রতিবেশীকে হাদিয়া দিতে সংকোচ করবে না। যদিও তা বকরীর খুরের অর্ধেক অংশ হয়ে থাকে”।[30]
আমাদের মনিষীরা প্রতিবেশীদের খোজ খবর নিতেন এবং তাদের প্রয়োজন পূরণে চেষ্টা করতেন। রাসূল সা. এর সাহাবীদের অবস্থা এমন ছিলেন, তারা তাদের প্রতিবেশীকে কোনো কিছু হাদিয়া পাঠাতেন, আবার সে প্রতিবেশী অপর প্রতিবেশীর নিকট আবারও হাদিয়া পাঠাতেন। এভাবে বস্তুটি ঘুরে ঘুরে আবার প্রথম ঘরে ফিরে আসত।


নয়-খাবারে প্রতিবেশীকে শরীক করা:

এক প্রতিবেশী আরেক প্রতিবেশীকে হাদিয়া দেওয়ার বিষয়টি এত গুরুত্বপূর্ণ যে,
সামান্য জিনিস হাদিয়া দিতেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের উদ্বুদ্ধ করেছেন। এক হাদিসে আছে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু যর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বলেন,

« ﻳﺎ ﺃﺑﺎ ﺫﺭ ! ﺇﺫﺍ ﻃﺒﺨﺖ ﻣﺮﻗﺔ ﻓﺄﻛﺜﺮ ﻣﺎﺀﻫﺎ، ﻭﺗﻌﺎﻫﺪ ﺟﻴﺮﺍﻧﻚ ‏»

“হে আবু যর, তুমি ঝোল (তরকারি) রান্না করলে তার পানি বাড়িয়ে দিও এবং তোমার প্রতিবেশীকে তাতে শরিক করো”।
[31]

ﻭﻋﻦ ﻋﺎﺋﺸﺔ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﺎ ﻗﺎﻟﺖ : ﻗﻠﺖ ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ! ﺇﻥ ﻟﻲ ﺟﺎﺭﺗﻴﻦ، ﻓﺈﻟﻰ ﺃﻳﻬﻤﺎ ﺃﻫﺪﻱ؟ ﻗﺎﻝ : ‏« ﺇﻟﻰ ﺃﻗﺮﺑﻬﻤﺎ ﻣﻨﻚ ﺑﺎﺑًﺎ ‏» ،

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, “আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলাম-আমার দুই প্রতিবেশী। এদের কাকে হাদিয়া দিব?
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে তোমার ঘরের দরজার বেশি নিকটবর্তী”।
আমার বাসায় ভালো কিছু রান্না হলে প্রতিবেশীকে না জানালেও রান্নার ঘ্রাণ তো তাকে জানিয়ে দেয়; পাশের বাড়িতে ভালো কিছু রান্না হচ্ছে। বড়দের কথা বাদ দিলাম, ঘ্রাণ পেয়ে ছোটদের মনে তো আগ্রহ জাগবে তা খাওয়ার। সুতরাং তাদের দিকে লক্ষ্য রেখে ঝোল বাড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে হোক বা নিজে একটু কম খাওয়ার মাধ্যমে হোক সামান্য কিছু যদি পাঠিয়ে দিই তাহলে ঐ ছোট্ট শিশুর মনের ইচ্ছা যেমন পুরা করা হবে তেমনি আল্লাহও খুশি হবেন। যা আমার রিযিকে বরকতের কারণ হবে ইনশাআল্লাহ। যে খাদেম খানা তৈরি করল তাকেও খানায় শরিক করার কথা হাদিসে এসেছে। কারণ এ খাবার প্রস্তুত করতে গিয়ে সে এর ধোঁয়া যেমন সহ্য করেছে তেমনি এর সুঘ্রাণও তার নাকে ও মনে লেগেছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন,


‏« ﺇِﺫَﺍ ﺃَﺗَﻰ ﺃَﺣَﺪَﻛُﻢْ ﺧَﺎﺩِﻣُﻪُ ﺑِﻄَﻌَﺎﻣِﻪِ ﻓَﺈِﻥْ ﻟَﻢْ ﻳُﺠْﻠِﺴْﻪُ ﻣَﻌَﻪُ ﻓَﻠْﻴُﻨَﺎﻭِﻟْﻪُ ﻟُﻘْﻤَﺔً ﺃَﻭْ ﻟُﻘْﻤَﺘَﻴْﻦِ ﺃَﻭْ ﺃَﻛْﻠَﺔً ﺃَﻭْ ﺃَﻛْﻠَﺘَﻴْﻦِ ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﻭَﻟِﻲَ ﺣَﺮَّﻩُ ﻭَﻋِﻠَﺎﺟَﻪُ ‏» ﺃَﺧْﺮَﺟَﺎﻩُ،

“তোমাদের খাদেম যখন তোমাদের জন্য খানা প্রস্তুত করে নিয়ে আসে তখন তাকে যদি সাথে বসিয়ে খাওয়াতে না-ও পার তাকে দু এক লোকমা হলেও দাও। (সামান্য কিছু দিয়ে হলেও তাকে এই খানায় শরিক কর) কারণ, সে-ই তো এই খানা প্রস্তুত করার কষ্ট ও আগুনের তাপ সহ্য করেছে”।[32]
মুসলিমের বর্ণনায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,


‏« ﻓَﻠْﻴُﻘْﻌِﺪْﻩُ ﻣَﻌَﻪُ ﻓَﻠْﻴَﺄْﻛُﻞْ، ﻓَﺈِﻥْ ﻛَﺎﻥَ ﺍﻟﻄَّﻌَﺎﻡُ ﻣَﺸْﻔُﻮﻫًﺎ ﻗَﻠِﻴﻠًﺎ، ﻓَﻠْﻴَﻀَﻊْ ﻓِﻲ ﻳَﺪِﻩِ ﺃَﻛْﻠَﺔً ﺃَﻭْ ﺃَﻛْﻠَﺘَﻴْﻦِ ‏»

“খাদেমকে তোমরা তোমাদের সাথে বসতে দেবে, যাতে সেও তোমাদের সাথে খায়, যদি খাওয়ার কম হয়, তাহলে তোমরা তার হাতে এক লুকমা বা দুই লুকমা খাওয়ার তুলে দেবে”।[33]
ইমাম আহমদ রহ. মিকদাদ ইবনে মা‘দি কারাব রাদিয়াল্লাহু আনহু হাদিস বর্ণনা করে বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

‏« ﻣﺎ ﺃَﻃْﻌَﻤْﺖَ ﻧَﻔْﺴَﻚَ ﻓَﻬُﻮَ ﻟَﻚَ ﺻَﺪَﻗَﺔٌ، ﻭَﻣَﺎ ﺃَﻃْﻌَﻤْﺖَ ﻭﻟﺪﻙ ﻓﻬﻮ ﻟﻚ ﺻﺪﻗﺔ، ﻭﻣﺎ ﺃﻃﻌﻤﺖ ﺯﻭﻭﺟﺘﻚ ﻓَﻬُﻮَ ﻟَﻚَ ﺻَﺪَﻗَﺔٌ، ﻭَﻣَﺎ ﺃَﻃْﻌَﻤْﺖَ ﺧَﺎﺩِﻣَﻚَ ﻓَﻬُﻮَ ﻟﻚ ﺻﺪﻗﺔ ‏» ﻭﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﻨﺴﺎﺋﻲ ﻭﺇﺳﻨﺎﺩﻩ ﺻﺤﻴﺢ .

“যা তুমি নিজে খেলে, তা তোমার জন্য সদকা, তোমার সন্তানকে যা খাওয়ালে তা তোমার জন্য সদকা, তোমার স্ত্রীকে যা খাওয়ালে তা তোমার জন্য সদকা আর তোমার খাদেমকে যা খাওয়ালে তা তোমার জন্য সদকা”।[34]
এখানে আরেকটি বিষয় লক্ষণীয়, ভালো কিছু রান্না হলে মাঝে মধ্যে কাজের বুয়ার সন্তানদের জন্য কিছু দেওয়া উচিত। অনেক সময় খাবার বেঁচে যায়। হতে পারে আমার ঘরের এ বেঁচে যাওয়া খাবারই কাজের বুয়ার সন্তানদের জন্য হবে ‘ঈদের খাবার’। আর আশা করা যায় এর বিনিময়ে আল্লাহ আমার জন্য জান্নাতের মেহমানদারির ফয়সালা করবেন।



দশ- প্রতিবেশীর প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দেওয়া:

অনেক সময় এমন হয়, প্রতিবেশীর প্রয়োজনে কিছু ছাড় দিতে হয়। কিংবা নিজের কিছু ক্ষতি স্বীকার করলে প্রতিবেশীর অনেক বড় উপকার হয় বা সে অনেক বড় সমস্যা থেকে বেঁচে যায়। সে ক্ষেত্রে প্রতিবেশীর উপকারের জন্য নিজের কিছু ক্ষতি মেনে নেওয়া ও উদারতা দেখানো একজন মুসলিমের বিশেষ গুণ। তেমনি একটি বিষয় হাদিস শরীফে উদ্ধৃত হয়েছে, যা মুমিনকে এ বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করে। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

« ﻻ ﻳﻤﻨﻊ ﺟﺎﺭ ﺟﺎﺭﻩ ﺃﻥ ﻳﻐﺮﺯ ﺧﺸﺒﺔ ﻓﻲ ﺟﺪﺍﺭﻩ ‏» ﺛﻢ ﻳﻘﻮﻝ ﺃﺑﻮ ﻫﺮﻳﺮﺓ : ﻣﺎﻟﻲ ﺃﺭﺍﻛﻢ ﻋﻨﻬﺎ ﻣﻌﺮﺿﻴﻦ ! ﻭﺍﻟﻠﻪ ﻷﺭﻣﻴﻦ ﺑﻬﺎ ﺑﻴﻦ ﺃﻛﺘﺎﻓﻜﻢ . ﻣﺘﻔﻖ ﻋﻠﻴﻪ

“কোনও প্রতিবেশী যেন অপর প্রতিবেশীকে তার দেয়ালে কাঠ স্থাপন করতে বাধা না দেয়, তারপর আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, কি ব্যাপার আমি তোমাদের এটা থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকতে দেখছি, আল্লাহর শপথ, অবশ্যই আমি তা তোমাদের ঘাঁড়ে নিক্ষেপ করব”।[35]

আরেক হাদিসে এসেছে,

« ﻣَﻦْ ﻛَﺎﻥَ ﻓِﻲ ﺣَﺎﺟَﺔِ ﺃَﺧِﻴﻪِ، ﻛَﺎﻥَ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﺰَّ ﻭَﺟَﻞَّ ﻓِﻲ ﺣَﺎﺟَﺘِﻪِ ‏»

“যে তার (মুসলিম) ভাইয়ের প্রয়োজন পূরণ করে স্বয়ং আল্লাহ তার প্রয়োজন পুরা করেন”।[36]


এগার- নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস আদান-প্রদান করা:

আমাদের প্রায় সকলেরই সূরা মাউন মুখস্থ আছে। ‘মাউন’ অর্থ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস। দৈনন্দিন জীবনে আমাদের ছোট খাট অনেক জিনিসেরই প্রয়োজন হয়। কোনও বস্তু হয়তো সামান্য, কিন্তু তার প্রয়োজন নিত্য। যেমন লবণ। খুবই সামান্য জিনিস,
কিন্তু তা ছাড়া আমাদের চলে না। কখনও এমনও হয় দশ টাকার লবণ কেনার জন্য বিশ টাকা রিক্সা ভাড়া খরচ করতে হবে বা এখন এমন সময় যে তা পাওয়া যাবে না। অথচ লবণ না হলে চলবেই না। তখন আমরা পাশের বাড়ি বা প্রতিবেশীর দ্বারস্থ হই। এমন সময় এ সাধারণ বস্তুটি যদি কেউ না দেয় তাহলে নিশ্চয়ই অনেক কষ্ট হয়ে যাবে। কোনও প্রতিবেশী যদি এমন হয় তাহলে তাকে ধিক শত ধিক। আল্লাহও তাকে ভর্ৎসনা দিয়েছেন। সূরা মাউনে আল্লাহ বলেছেন,

﴿ ﻓَﻮَﻳۡﻞٞ ﻟِّﻠۡﻤُﺼَﻠِّﻴﻦَ ٤ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻫُﻢۡ ﻋَﻦ ﺻَﻠَﺎﺗِﻬِﻢۡ ﺳَﺎﻫُﻮﻥَ ٥ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻫُﻢۡ ﻳُﺮَﺍٓﺀُﻭﻥَ ٦ ﻭَﻳَﻤۡﻨَﻌُﻮﻥَ ﭐﻟۡﻤَﺎﻋُﻮﻥَ ٧ ﴾ ‏[ ﺍﻟﻤﺎﻋﻮﻥ : ٤، ٨ ‏]

“সুতরাং দুর্ভোগ সেই সালাত আদায়কারীদের, যারা তাদের সালাত সম্বন্ধে উদাসীন, যারা লোক দেখানোর জন্য তা করে, এবং গৃহস্থালির প্রয়োজনীয় ছোট-খাট সাহায্যদানে বিরত থাকে”।[37]


বার- প্রতিবেশীর সালামের উত্তর দেয়া:

সালামের উত্তর দেওয়া যদিও একজন মুসলিমের হক। কিন্তু একজন প্রতিবেশীর সালামের উত্তর দেওয়া অধিক গুরুত্বপূর্ণ। সালাম বিনিময়ের মাধ্যমে পরস্পরের মধ্যে মহব্বত সৃষ্টি হয়। দুই জনের মধ্যে দূরত্ব দূর হয়। শুধু সালামের উত্তর দেয়ার অপেক্ষায় না থেকে সালাম দেওয়া আরও অধিক সাওয়াব।


তের- প্রতিবেশীকে উপদেশ দেয়া:

একজন প্রতিবেশীর গুরুত্বপূর্ণ হক হল, তাকে ভালো কাজের আদেশ দেওয়া এবং মন্দ ও খারাপ কর্ম হতে বিরত রাখতে চেষ্টা করা। তাকে সালাতের দাওয়াত দেয়া, রোজার দাওয়াত দেয়া, মসজিদে যাওয়ার সময় তাকে ডেকে নিয়ে যাওয়া। অন্যথায় সে যদি সালাত আদায় না করে, দ্বীনের উপর না চলে, কিয়ামতের দিন সে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করবে। সে বলবে, একসাথে থাকতাম কিন্তু আমাকে ভালোকাজের আদেশ দেয়নি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

‏« ﺃَﻭَّﻝُ ﺧَﺼْﻤَﻴْﻦِ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ ﺟَﺎﺭَﺍﻥِ ‏» ،

“কিয়ামতের দিন সর্ব প্রথম বাদী বিবাদী হবে দুই প্রতিবেশী”।[38]
সবচেয়ে বড় অভিযোগ তোমার বিরুদ্ধে দাড় করাবে, তা হল, তুমি তাকে দ্বীনের ব্যাপারে কোনো নসিহত করোনি। তোমার গলা চেপে ধরে বলবে, হে আমার রব, লোকটি আমাকে দেখছে আমি সালাত আদায় করিনি, কিন্তু সালাত আদায় করতে বলেননি। হে আমার রব, আমাকে বিভিন্ন খারাপ কর্মে লিপ্ত হতে দেখছে কিন্তু আমাকে খারাপ কর্ম হতে বিরত থাকতে উপদেশ দেয়নি। আমাকে আমার পরিবারের মধ্যে নষ্ট দেখছিল কিন্তু সে আমাকে কোনো উপদেশ দেয়নি...ইত্যাদি।
হে আমার মুসলিম ভাই! তুমি তোমার ক্ষমতা দায়িত্ব অনুযায়ী প্রতিবেশীদের উপদেশ দাও। যাতে আল্লাহর দরবারে তোমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করতে না পারে।


প্রতিবেশীর আরও হক
আর প্রতিবেশীর খোঁজ খবর রাখা,
বিপদে আপদে এগিয়ে যাওয়া, অসুস্থ হলে তাকে দেখতে যাওয়া, একে অপরের সুখ-
দুঃখের শরিক হওয়া, হাদিয়া আদান প্রদান করা, সেবা শুশ্রূষা করা, প্রতিবেশীর কেউ মারা গেলে সান্ত্বনা দেওয়া, কাফন দাফনে শরিক হওয়া, একে অপরের প্রয়োজনকে গুরুত্ব দেওয়া, প্রতিবেশীর প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দেওয়া,
প্রতিবেশীর কষ্টের কারণ হয় এমন সব ধরনের কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকা, অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেওয়া, ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা করে দেওয়া, চলাচলের রাস্তায় কোনো কষ্টদায়ক কোনো বস্তু ফেলে না রাখা, রাস্তা বন্ধ না করা, ছাদ থেকে তাদের গোপনীয় বিষয় না দেখা, দোষ-ত্রুটি ঢেকে রাখা, তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করা, চোখের হেফাজত করা, তাদের খাদেম বা চাকর-বাকর ইত্যাদির প্রতি কু-দৃষ্টি না দেওয়া এবং দুনিয়াও আখিরাতের যাবতীয় কল্যাণ বিষয়ে তাদের উপদেশ দেয়া।


ﻭﻣﻦ ﺣﺪﻳﺚ ﻣﻌﺎﺫ ﺑﻦ ﺟﺒﻞ ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺴﻼﻡ : ﻗﺎﻟﻮﺍ : ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ! ﻣﺎ ﺣﻖ ﺍﻟﺠﺎﺭ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺠﺎﺭ؟ ﻗﺎﻝ : ‏« ﺇﻥ ﺍﺳﺘﻘﺮﺿﻚ ﺃﻗﺮﺿﺘﻪ، ﻭﺇﻥ ﺍﺳﺘﻌﺎﻧﻚ ﺃﻋﻨﺘﻪ، ﻭﺇﻥ ﻣﺮﺽ ﻋﺪﺗﻪ، ﻭﺇﻥ ﺍﺣﺘﺎﺝ ﺃﻋﻄﻴﺘﻪ، ﻭﺇﻥ ﺍﻓﺘﻘﺮ ﻋﺪﺕ ﻋﻠﻴﻪ، ﻭﺇﻥ ﺃﺻﺎﺑﻪ ﺧﻴﺮ ﻫﻨﻴﺘﻪ، ﻭﺇﻥ ﺃﺻﺎﺑﺘﻪ ﻣﺼﻴﺒﺔ ﻋﺰﻳﺘﻪ، ﻭﺇﺫﺍ ﻣﺎﺕ ﺍﺗﺒﻌﺖ ﺟﻨﺎﺯﺗﻪ، ﻭﻻ ﺗﺴﺘﻄﻴﻞ ﻋﻠﻴﻪ ﺑﺎﻟﺒﻨﺎﺀ ﻓﺘﺤﺠﺐ ﻋﻨﻪ ﺍﻟﺮﻳﺢ ﺇﻻ ﺑﺈﺫﻧﻪ، ﻭﻻ ﺗﺆﺫﻳﻪ ﺑﺮﻳﺢ ﻗﺪﺭﻙ ﺇﻻ ﺃﻥ ﺗﻐﺮﻑ ﻟﻪ، ﻭﺇﻥ ﺍﺷﺘﺮﻳﺖ ﻓﺎﻛﻬﺔ ﻓﺄﻫﺪِ ﻟﻪ، ﻭﺇﻥ ﻟﻢ ﺗﻔﻌﻞ ﻓﺄﺩﺧﻠﻬﺎ ﺳﺮًّﺍ ﻭﻻ ﺗﺨﺮﺝ ﺑﻬﺎ ﻭﻟﺪﻙ ﻟﻴﻐﻴﻆ ﺑﻬﺎ ﻭﻟﺪﻩ . ‏»

মু‘আয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, সাহাবীরা জিজ্ঞাসা করলেন, একজন প্রতিবেশীর উপর তার অপর প্রতিবেশীর হক কি? রাসূল বললেন, যদি ঋণ চায় ঋণ দেবে, সহযোগিতা চাইলে সাহায্য করবে, অসুস্থ হলে দেখতে যাবে, অভাবে পড়লে অভাব দূর করবে, তার সুখে সুখী হবে, তার দুঃখে দুখী হবে, মারা গেলে জানাযায় শরিক হবে, প্রতিবেশীর বাড়ীর হাওয়া বাতাস বন্ধ করবে না, ফল কিনলে, তার বাড়ীতে হাদিয়া দেবে অন্যথায় লুকিয়ে রাখবে, তোমাদের ছেলেরা হাতে ফল নিয়ে তাদের ছেলেদের দেখাবে না, যাতে তাদের মনে কষ্ট যায়।
প্রতিবেশীর যত হক উপরে উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলো তো প্রতিবেশী মুসলিম হোক অমুসলিম হোক সবারই হক, সবার ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য। আর প্রতিবেশী যদি মুসলিম হয় বা মুসলিম ও আত্মীয় উভয়টিই হয় তাহলে এসকল হকের সাথে মুসলিম ও আত্মীয় হিসেবে যত হক আছে সবই তাদের প্রাপ্য। এ বিষয়টিও স্মরণ রাখা জরুরি।



দরিদ্র প্রতিবেশীর হক:

আর প্রতিবেশী যদি দরিদ্র হয় তাহলে এ বিষয়ে তার হক আরও বেশি। কারণ দরিদ্রকে খানা খাওয়ানো যেমন অনেক সওয়াবের কাজ তেমনি দরিদ্রকে খানা না-খাওয়ানো জাহান্নামে যাওয়ার একটি বড় কারণ। কুরআন মজীদে ‘ছাকার’ নামক জাহান্নামে যাওয়ার কারণ হিসেবে নামায না পড়ার বিষয়টির সাথে সাথে দরিদ্রকে খানা না খাওয়ানোও গুরুত্ব সহকারে উল্লেখিত হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ ﻣَﺎ ﺳَﻠَﻜَﻜُﻢۡ ﻓِﻲ ﺳَﻘَﺮَ ٤٢ ﻗَﺎﻟُﻮﺍْ ﻟَﻢۡ ﻧَﻚُ ﻣِﻦَ ﭐﻟۡﻤُﺼَﻠِّﻴﻦَ ٤٣ ﻭَﻟَﻢۡ ﻧَﻚُ ﻧُﻄۡﻌِﻢُ ﭐﻟۡﻤِﺴۡﻜِﻴﻦَ ٤٤ ﴾ ‏[ ﺍﻟﻤﺪﺛﺮ : ٤٢، ٤٤ ‏]

(জাহান্নামীকে জিজ্ঞেস করা হবে) (অর্থ) “কোন বিষয়টি তোমাদেরকে ‘ছাকার’
নামক জাহান্নামে ঠেলে দিয়েছে? (তারা উত্তরে বলবে) আমরা নামায পড়তাম না এবং দরিদ্রকে খানা খাওয়াতাম না”।[39]


আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

‏« ﻣﺎ ﺁﻣﻦ ﺑﻲ ﻣﻦ ﺑﺎﺕ ﺷﺒﻌﺎﻥ ﻭﺟﺎﺭﻩ ﺟﺎﺋﻊ ﺇﻟﻰ ﺟﻨﺒﻪ ﻭﻫﻮ ﻳﻌﻠﻢ ﺑﻪ ‏»

“ঐ ব্যক্তি মুমিন নয় যে পেট পুরে খায় অথচ তার পাশের প্রতিবেশী না খেয়ে থাকে এবং সে তার সম্পর্কে জানে”।[40]
অপর একটি হাদিসে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

‏« ﺍﻟﺼَّﺪَﻗَﺔُ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﻤِﺴْﻜِﻴﻦِ ﺻَﺪَﻗَﺔٌ، ﻭَﻋَﻠَﻰ ﺫِﻱ ﺍﻟﺮَّﺣِﻢِ ﺻﺪﻗﺔ ﻭﺻﻠﺔ ‏» ‏( ﺃﺧﺮﺟﻪ ﺍﻟﻨﺴﺎﺋﻲ ﺣﺪﻳﺚ ﺳﻠﻤﺎﻥ ﺑﻦ ﻋﺎﻣﺮ ‏) .

“মিসকিনকে দান করা সদকা, আর আত্মীয় স্বজনকে দান করা সদকা ও আত্মীয়তা সম্পর্ক বজায় রাখা”।[41]
নিকটতম প্রতিবেশীকে অগ্রাধিকার দেওয়া যদিও সে বিধর্মী হয়:

প্রতিবেশীর মধ্যে যেমন আছে নিকট প্রতিবেশী, নিকটতম প্রতিবেশী ও তুলনামূলক একটু দূরের প্রতিবেশী তেমনি আছে মুসলিম ও বিধর্মী। এখন কাকে হাদিয়া দিব বা কাকে আগে দিব?


ﺭﻭﻯ ﺍﻹﻣﺎﻡ ﺃﺣﻤﺪ ﻋَﻦْ ﻋَﺎﺋِﺸَﺔَ : ﺃَﻧَّﻬَﺎ ﺳَﺄَﻟَﺖْ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻓَﻘَﺎﻟَﺖْ : ﺇِﻥَّ ﻟِﻲ ﺟَﺎﺭَﻳْﻦِ ﻓَﺈِﻟَﻰ ﺃَﻳِّﻬِﻤَﺎ ﺃُﻫْﺪِﻱ؟ ﻗَﺎﻝَ :
‏« ﺇِﻟَﻰ ﺃَﻗْﺮَﺑِﻬِﻤَﺎ ﻣِﻨْﻚَ ﺑَﺎﺑًﺎ ‏» ﻭَﺭَﻭَﺍﻩُ ﺍﻟْﺒُﺨَﺎﺭِﻱُّ ﻣِﻦْ ﺣَﺪِﻳﺚِ ﺷُﻌْﺒَﺔَ ﺑِﻪِ .


আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, “আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলাম-আমার দুই প্রতিবেশী। এদের কাকে হাদিয়া দিব?
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে তোমার বেশি নিকটবর্তী”।


অমুসলিম প্রতিবেশীর হক:

ইসলাম মুসলিম প্রতিবেশীর ব্যাপারে যেভাবে গুরুত্ব দিয়েছেন, অনুরূপভাবে অমুসলিম প্রতিবেশীর ব্যাপারেও এভাবে গুরুত্ব দিয়েছেন। অমুসলিম হওয়ার কারণে,
তার প্রতি কোনো প্রকার বৈষম্য ইসলাম দেখাননি। সুতরাং, প্রতিবেশীর যেভাবে অধিকার ও হক রয়েছে, অমুসলিম প্রতিবেশীরও অনুরূপ হক ও অধিকার রয়েছে।

ﻋَﻦْ ﻣُﺠَﺎﻫِﺪٍ ﻗَﺎﻝَ : ﻛُﻨْﺖُ ﻋِﻨْﺪَ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺑْﻦِ ﻋَﻤْﺮٍﻭ - ﻭَﻏُﻠَﺎﻣُﻪُ ﻳَﺴْﻠُﺦُ ﺷَﺎﺓً - ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﻳَﺎ ﻏُﻠَﺎﻡُ، ﺇِﺫَﺍ ﻓَﺮَﻏْﺖَ ﻓَﺎﺑْﺪَﺃْ ﺑِﺠَﺎﺭِﻧَﺎ ﺍﻟْﻴَﻬُﻮﺩِﻱِّ، ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺭَﺟُﻞٌ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻘَﻮْﻡِ : ﺍﻟْﻴَﻬُﻮﺩِﻱُّ ﺃَﺻْﻠَﺤَﻚَ ﺍﻟﻠَّﻪُ؟ ﻗَﺎﻝَ : ﺇِﻧِّﻲ ﺳَﻤِﻌْﺖُ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲَّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻳُﻮﺻِﻲ ﺑِﺎﻟْﺠَﺎﺭِ، ﺣَﺘَّﻰ ﺧَﺸِﻴﻨَﺎ ﺃَﻭْ ﺭُﺋِﻴﻨَﺎ ﺃَﻧَّﻪُ ﺳَﻴُﻮَﺭِّﺛُﻪُ ‏[ ﻗﺎﻝ ﺍﻟﺸﻴﺦ ﺍﻷﻟﺒﺎﻧﻲ ‏] : ﺻﺤﻴﺢ

মুজাহিদ রহ. বলেন, “একবার আমি আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর কাছে ছিলাম। তার গোলাম একটি বকরীর চামড়া ছাড়াচ্ছিল। তখন তিনি বললেন,
তোমার এ কাজ শেষ হলে সর্বপ্রথম আমাদের ইহুদী প্রতিবেশীকে দিবে। তখন এক ব্যক্তি বলল, আল্লাহ আপনার এসলাহ করুন। আপনি ইহুদীকে আগে দিতে বলছেন! তখন তিনি বললেন, (হাঁ) আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রতিবেশীর হকের বিষয়টি এত বেশি গুরুত্ব দিয়ে বলতে শুনেছি যে, আমাদের আশংকা হয়েছে বা মনে হয়েছে, প্রতিবেশীকে মিরাসের হকদার বানিয়ে দেওয়া হবে”।[42]
জমিনের প্রতিবেশী: হককে শুফ্আ

এটি প্রতিবেশীর গুরুত্বপূর্ণ একটি হক। নিজের জমি বা বাড়ি যদি কেউ বিক্রি করতে চায়, তাহলে সে ব্যাপারে পার্শ্ববর্তী প্রতিবেশীর হক সবচেয়ে বেশি। অর্থাৎ, তাকে আগে জানাতে হবে যে, আমি আমার বাড়ি বা জমি বিক্রি করতে চাই, তুমি তা কিনবে কি না। যদি সে কিনতে না চায় তাহলে অন্যের কাছে বিক্রি করা যাবে। তাকে না জানিয়ে কারো কাছে বিক্রি করা যাবে না। করলে সে দাবি করতে পারবে যে, আমি এই জমি ক্রয় করব। এটা তার হক। কারণ, হতে পারে এ জমিটি তার প্রয়োজন বা এমন ব্যক্তি তা ক্রয় করল যার কারণে সে অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে ইত্যাদি। আর একেই শরীয়তের পরিভাষায় ‘হককে শুফ্আ’ বলে।

হাদিস শরীফে প্রতিবেশীর এ হকটিকে অনেক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

‏« ﻣَﻦْ ﻛَﺎﻧَﺖْ ﻟَﻪُ ﺃَﺭْﺽٌ ﻓَﺄَﺭَﺍﺩَ ﺑَﻴْﻌَﻬَﺎ، ﻓَﻠْﻴَﻌْﺮِﺿْﻬَﺎ ﻋَﻠَﻰ ﺟَﺎﺭِﻩِ ‏»

“যদি কেউ তার জমি বিক্রি করতে চায় তাহলে সে যেন তার প্রতিবেশীকে জানায় ও তার নিকট প্রস্তাব করে”।[43]

আরেক হাদিসে ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

‏« ﺍﻟْﺠَﺎﺭُ ﺃَﺣَﻖُّ ﺑِﺸُﻔْﻌَﺔِ ﺟَﺎﺭِﻩِ، ﻳَﻨْﺘَﻈِﺮُ ﺑِﻬَﺎ ﺇِﻥْ ﻛَﺎﻥَ ﻏَﺎﺋِﺒًﺎ، ﺇِﺫَﺍ ﻛَﺎﻥَ ﻃَﺮِﻳﻘُﻬُﻤَﺎ ﻭَﺍﺣِﺪًﺍ ‏»

“শুফ্আ’-র বিষয়ে প্রতিবেশীর হক সবচেয়ে বেশি। প্রতিবেশী উপস্থিত না থাকলেও তার অপেক্ষা করতে হবে। এটা তখন যখন তাদের উভয়ের চলাচলের পথ এক হয়”।[44]
এ ধরনের আরও অনেক হাদিসে হককে শুফ্আর বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে।
মন্দ প্রতিবেশী থেকে আল্লাহর নিকট পানাহ চাওয়া:
মন্দ প্রতিবেশী থেকে আমরা আল্লাহর কাছে পানাহ চাই। কারণ একজন মন্দ প্রতিবেশী সাধারণ জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করবে বা আমাকেও মন্দের দিকে নিয়ে যাবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,


‏« ﺗَﻌَﻮَّﺫُﻭﺍ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ، ﻣِﻦْ ﺟَﺎﺭِ ﺍﻟﺴَّﻮْﺀِ ﻓِﻲ ﺩَﺍﺭِ ﺍﻟْﻤُﻘَﺎﻡِ، ﻓَﺈِﻥَّ ﺟَﺎﺭَ ﺍﻟْﺒَﺎﺩِﻳَﺔِ ﻳَﺘَﺤَﻮَّﻝُ ﻋَﻨْﻚَ ‏»

“তোমরা অবস্থানস্থলের মন্দ প্রতিবেশী থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাও; কারণ মরু অঞ্চলের অস্থায়ী প্রতিবেশী পরিবর্তিত হয় (কিন্তু অবস্থানস্থলের প্রতিবেশী সেরূপ নয়)”।[45]


আমি হব না মন্দ প্রতিবেশী:
আমি কারো জন্য মন্দ প্রতিবেশী হব না। যেমনি ভাবে আমি চাই না যে, আমার প্রতিবেশীটি মন্দ হোক তেমনিভাবে আমাকেও ভাবতে হবে, আমিও যেন আমার প্রতিবেশীর কষ্টের কারণ না হই। নাফে ইবনে আব্দুল হারিস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

‏« ﻣِﻦْ ﺳَﻌَﺎﺩَﺓِ ﺍﻟْﻤَﺮْﺀِ ﺍﻟْﺠَﺎﺭُ ﺍﻟﺼَّﺎﻟِﺢُ، ﻭَﺍﻟْﻤَﺮْﻛَﺐُ ﺍﻟْﻬَﻨِﻲﺀُ، ﻭَﺍﻟْﻤَﺴْﻜَﻦُ ﺍﻟْﻮَﺍﺳِﻊُ ‏»

“উত্তম প্রতিবেশী, আরাম দায়ক বাহন এবং প্রসস্ত ঘর ব্যক্তির সৌভাগ্যের কারণ”।[46]


আখিরাতের প্রথম বাদী-বিবাদী:

প্রতিবেশীর হক নষ্ট করা বা তাকে কষ্ট দেওয়া অনেক বড় অন্যায়। কখনো দুনিয়াতেই এর সাজা পেতে হয় আর আখিরাতের পাকড়াও তো আছেই। আমার অর্থবল বা জনবল আছে বলে আমি প্রতিবেশীর হক নষ্ট করে পার পেয়ে যাব এমনটি নয়। হাঁ, দুনিয়ার আদালত থেকে হয়ত পার পেয়ে যাব, কিন্তু আখিরাতের আদালত থেকে আমাকে কে বাঁচাবে? উকবা ইবনে আমের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

‏« ﺃَﻭَّﻝُ ﺧَﺼْﻤَﻴْﻦِ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ ﺟَﺎﺭَﺍﻥِ ‏»

“কিয়ামতের দিন প্রথম বাদী-বিবাদী হবে দুই প্রতিবেশী”।[47]
একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করবে, তুমি আমার হক নষ্ট করেছ। আজ তুমি আমার হক পরিশোধ করবে। সেদিন কেউ ফাঁকি দিতে পারবে না, কেউ ন্যায় বিচার হতে বঞ্চিত হবে না। আল্লাহ তা‘আলা সেদিন উভয়ের মাঝে ফায়সালা করবেন।


প্রতিবেশীকে কষ্ট দিব না:

প্রতিবেশীকে কষ্ট দেওয়ার বিষয়টিকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈমানের দুর্বলতা বলে চিহ্নিত করেছেন। কোনও ব্যক্তি মুমিন আবার প্রতিবেশীকে কষ্টও দেয় তা ভাবা যায় না।
প্রতিবেশী কষ্ট দিলে কি করব?

হতে পারে আমার প্রতিবেশী আমাকে কষ্ট দেয় তাই বলে কি আমিও প্রতিবেশীকে কষ্ট দিব? তা হতে পারে না। মুমিন তো সর্বদা ভালো আচরণ করে। মুমিনের গুণ তো

ﺃﺣﺴﻦ ﺇﻟﻰ ﻣﻦ ﺃﺳﺎﺀ ﺇﻟﻴﻚ

“তোমার সাথে যে মন্দ আচরণ করে তুমি তার সাথে ভালো আচরণ কর।’
সে তো কুরআনের ঐ আয়াত শুনেছে, যাতে আল্লাহ বলেন,

﴿ ﻭَﻟَﻤَﻦ ﺻَﺒَﺮَ ﻭَﻏَﻔَﺮَ ﺇِﻥَّ ﺫَٰﻟِﻚَ ﻟَﻤِﻦۡ ﻋَﺰۡﻡِ ﭐﻟۡﺄُﻣُﻮﺭِ ٤٣ ﴾ ‏[ ﺍﻟﺸﻮﺭﻯ : ٤٣ ‏]

“প্রকৃতপক্ষে যে সবর অবলম্বন করে ও ক্ষমা প্রদর্শন করে, এটাতো বড় হিম্মতের কাজ”।
[48]

হাদিসে এসেছে, আল্লাহ তিন ব্যক্তিকে পছন্দ করেন, তাদের একজন ঐ ব্যক্তি,

ﻭَﺍﻟﺮَّﺟُﻞُ ﻳَﻜُﻮﻥُ ﻟَﻪُ ﺍﻟْﺠَﺎﺭُ ﻳُﺆْﺫِﻳﻪِ ﺟِﻮَﺍﺭُﻩُ، ﻓَﻴَﺼْﺒِﺮُ ﻋَﻠَﻰ ﺃَﺫَﺍﻩُ ﺣَﺘَّﻰ ﻳُﻔَﺮِّﻕَ ﺑَﻴْﻨَﻬُﻤَﺎ ﻣَﻮْﺕٌ ﺃَﻭْ ﻇَﻌْﻦٌ

“যার একজন মন্দ প্রতিবেশী রয়েছে, সে তাকে কষ্ট দেয়। তখন ঐ ব্যক্তি ছবর করে এবং আল্লাহর ছাওয়াবের আশা রাখে। একপর্যায়ে ঐ প্রতিবেশীর ইন্তেকাল বা চলে যাওয়ার মাধ্যমে আল্লাহ তাকে মুক্তি দেন”।[49]

প্রতিবেশীর জমির আইল ঠেলা:

অনেক সময় এমন হয় যে দুই প্রতিবেশী তাদের বাড়ির সীমানা নিয়ে বিবাদে জড়িয়ে পড়ে। যে প্রতিবেশীর শক্তি বেশি সে জোরপূর্বক নিজের সীমানা বাড়িয়ে নেয়। এটা বসতবাড়ির ক্ষেত্রে যেমন হয় ফসলের জমির প্রতিবেশীর সাথে আরও বেশি হয়। যাকে বলে ‘আইল ঠেলা’। সামান্য জমিন ঠেলে সে নিজের ঘাড়ে জাহান্নাম টেনে আনল। যতটুকু জমিন সে জবরদস্তি বাড়িয়ে নিলো সে নিজেকে তার চেয়ে সাতগুণ বেশি জাহান্নামের দিকে ঠেলে নিলো। হাদিস শরীফে এসেছে,

‏« ﻣَﻦْ ﺃﺧَﺬَ ﺷِﺒْﺮًﺍ ﻣِﻦَ ﺍﻷَﺭْﺽِ ﻇُﻠْﻤًﺎ، ﻃُﻮِّﻗَﻪُ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ ﺇِﻟَﻰ ﺳَﺒْﻊِ ﺃَﺭَﺿِﻴﻦَ ‏»

“যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে এক বিঘত জমি দখল করল, কিয়ামতের দিন ঐ জমির সাত তবক পরিমাণ তার গলায় বেড়ি আকারে পরিয়ে দেওয়া হবে”।[50]

আল্লাহ আমাদের প্রতিবেশীর হকের ব্যাপারে সচেতন হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমীন।


[1] তাফসীরে ইবনে কাসীর, সুরা নিসার ৩৬ নং আয়াতের তাফসীর দেখুন।
[2] দেখুন: উমদাতুল কারী, ওসিয়ত অধ্যায়.
[3] সূরা নিসা, আয়াত: ৩৬
[4] সহীহ বুখারী, হাদিস: ৬০১৫; সহীহ মুসলিম, হাদিস: ২৬২৫
[5] সহীহ মুসলিম, হাদীস: ১৮৫; সহীহ বুখারী, হাদিস: ৬০১৮
[6] সহীহ মুসলিম, হাদীস: ১৮৩
[7] বর্ণনায় আহমদ, হাদিস, ২৫৪৬২; অনুরূপ বুখারী, হাদীস নং ২২৫৯।
[8] সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদিস: ২৫৩৯; শুআবুল ঈমান বায়হাকী, হাদিস: ৯৫৪১; মুসনাদে আহমদ হাদিস: ৬৫৬৬
[9] আহমদ, হাদিস: ৩৮০৮; ইবনু মাজাহ, হাদিস: ৪২২৩
[10] সহীহ বুখারী, হাদীস ৬০১৬
[11] মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২৩৮৫৪; আল-আদাবুল মুফরাদ,হাদীস ১০৩; শুআবুল ঈমান বায়হাকী, হাদীস: ৯৫৫২
[12] মুসনাদে আহমাদ, হাদীস: ৯৬৭৫; আল-আদাবুল মুফরাদ, বুখারী, হাদীস: ১১৯
[13] সহীহ বুখারী, হাদীস ৬০১৬
[14] সহীহ বুখারী, হাদীস ৬০১৬
[15] পূর্বে তাখরীজ গত হয়েছে।
[16] সূরা আল-মুমিনুন, আয়াত: ৯৬
[17] সূরা আশ-শুরা, আয়াত: ৪৩
[18] বাইহাকী সুনানুল কুবরা, হাদিস: ১৮৫০১
[19] আল-মুসতাদরাক, হাকেম, হাদীস: ৭৩০৩;
আল-মু‘জামুল কাবীর, তবারানী, হাদীস: ৩৫৬;
সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস: ৫২০; বাইহাকী শুয়াবুল ঈমান, হাদিস: ৯১০০
[20] সূরা ফুসসিলাত, আয়াত: ৪৬
[21] সহীহ মুসলিম, হাদিস: ২৫৮০; আবু দাউদ, হাদিস: ৪৯৪৬; ইবনু মাযা, হাদিস: ২২৫
[22] মুসনাদে আবু ইয়ালা, হাদিস ২৬৯৯; আল আদাবুল মুফরাদ, হাদিস ১১২
[23] সূরা বাকারা, আয়াত: ২৭৩
[24] সূরা যারিয়াত, আয়াত: ১৯
[25] সহীহ বুখারী, হাদিস: ২৪৪২; সহীহ মুসলিম,
হাদিস: ২৫৮০; আবু দাউদ, হাদিস: ৪৮৯৩; তিরমিযি, হাদিস: ১৪২৬
[26] তিরমিযি, হাদিস: ২০০৮
[27] সহীহ বুখারী, হাদিস ৬০১৮; সহীহ মুসলিম,
হাদিস ৪৮
[28] আল আদাবুল মুফরাদ, বুখারী হাদিস: ৫৯৪ আল্লামা আলবানী হাদিসটিকে হাসান বলে আখ্যায়িত করেন।
[29] সহীহ বুখারী, হাদিস: ৬০১৭
[30] তিরমিযি, হাদিস: ২১৩০
[31] সহীহ মুসলিম,হাদিস ২৬২৫
[32] সহীহ বুখারী, হাদিস ৫৪৬০
[33] মুসলিম, হাদিস: ১৬৬৩; আবু দাউদ, হাদিস: ৩৮৪৬
[34] বুখারি, আদাবুল মুফরাদ, হাদিস: ১৯৫, ৯২; নাসায়ী, হাদিস: ৯১৮৫
[35] সহীহ বুখারী, হাদিস: ২৪৬৩; সহীহ মুসলিম,
হাদিস: ১৬০৯
[36] সহীহ মুসলিম, হাদিস: ২৫৮০
[37] সূরা মাউন, আয়াত: ৪-৭
[38] মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ১৭৩৭২ হাদিসটি হাসান।
[39] সূরা মুদ্দাছ্ছির, আয়াত: ৪২-৪৪)
[40] মুসনাদে আবু ইয়ালা, হাদিস: ২৬৯৯; ইমাম বুখারির আল-আদাবুল মুফরাদ, হাদিস: ১২৮
[41] তাবরানী, হাদিস: ৪৭২৩
[42] আল আদাবুল মুফরাদ, বুখারী, হাদিস: ১২৮;
শরহু মুশকিলিল আছার, তহাবী, হাদিস: ২৭৯২
[43] সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ২৪৯৩
[44] সুনানে ইবনে মাজাহ, হা. ২৪৯৪; জামে তিরমিযী, হা. ১৩৬৯
[45] সুনানে কুবরা, হাদিস: ৫৫০২; শুআবুল ঈমান, বায়হাকী, হাদিস: ৯১০৬
[46] মুসনাদে আহমাদ, হাদিস ১৫৩৭২; আল আদাবুল মুফরাদ, বুখারী, হাদিস: ১১৬
[47] মুসনাদে আহমাদ, হাদিস ১৭৩৭২;
আলমুজামুল কাবীর, তবারানী, হাদিস: ৮৩৬
[48] (সূরা শূরা : ৪৩)
[49] মুসনাদে আহমদ, হাদিস ২১৩৪০; আল মুসতাদরাক, হাকেম খ. ২ পৃ. ৮৯; শুআবুল ঈমান,
বায়হাকী, হাদিস ৯১০২
[50] সহীহ মুসলিম, হাদিস ১৬১১; বুখারি,
হাদিস: ৩১৯৮
_________________________________________________________________________________


সংকলন: জাকেরুল্লাহ আবুল খায়ের
সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
সূত্র: ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব


আরও পড়ুনঃ মুসলিমের হক
আরও পড়ুনঃ সন্তানের হক
আরও পড়ুনঃ স্বামী-স্ত্রীর অধিকার
আরও পড়ুনঃ স্ত্রীর উপর স্বামীর অধিকার
আরও পড়ুনঃ ইসলামে নারীর যৌন অধিকার
আরও পড়ুনঃ ইসলামে নারীর অধিকার
আরও পড়ুনঃ নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় ইসলাম
আরও পড়ুনঃ ইসলামে শ্রমিকের অধিকার
আরও পড়ুনঃ পথের হক
আরও পড়ুনঃ মুসলমানের আদব বা শিষ্টাচার
আরও পড়ুনঃ রহমানের বান্দাদের গুণাবলী
আরও পড়ুনঃ মুসলমানের চারিত্রিক গুণাবলী


পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না কিন্তু।




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন