Views:
A+
A-
কুরআন তিলাওয়াতের ফযীলত
আজ আমরা এমন বিষয়ে আলোচনা করব যা আমাদের কল্যাণের গ্যারান্টি দেয়। যা আমাদেরকে রক্ষা করে যাবতীয় ফিতনা থেকে। এতে আছে অতীত-ভবিষ্যতের সংবাদ আর বর্তমানের জীবন-দিশা। এ কোনো হেলাখেলার বিষয় নয়; চূড়ান্ত ও অলঙ্ঘনীয় বিধান। ঔদ্ধত্য দেখিয়ে যে একে পরিহার করবে আল্লাহ তা‘আলা তাকে ধ্বংস করে দেবেন। যে এ ছাড়া অন্য কোথাও জীবনের পাথেয় খুঁজবে আল্লাহ তাকে পথভ্রষ্ট করবেন। এটি আল্লাহর সুদৃঢ় রজ্জু। আল্লাহ তা‘আলার প্রজ্ঞাময় আলোচনা। এটি সরল পথ। এটি থাকলে প্রবৃত্তি মানুষকে সুপথহারা করতে পারে না। এর শব্দোচ্চারণে কারও কষ্ট অনুভূত হয় না। আলিমরা কখনো এর তিলাওয়াত থেকে পরিতুষ্ট হন না। এটি পুরাতন হলেও বাতিল হয় না। এর বিস্ময় ও অলৌকিত্ব কখনো ফুরায় না। যে এ থেকে বলে সে সত্যবাদী। যে এর নির্দেশনা মতো চলে সে প্রতিদান প্রাপ্ত হয়। যে একে দিয়ে বিচার করে সে ইনসাফ করে। যে এর দিকে আহ্বান জানায় সে সুপথের দিকেই ডাকে।
হ্যা, আমি বলছি পবিত্র কুরআনের কথা।
আল্লাহ তা‘আলার মহা প্রজ্ঞাময় বাণীর কথা। আমাদের কর্তব্য এ কুরআন শিক্ষা করা। নিয়মিত এর তিলাওয়াত করা। এ কুরআন নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করা। আমাদের দায়িত্ব নিজ সন্তানদের কুরআন শিক্ষা দেয়া এবং তাদেরকে এর তিলাওয়াত ও ভালোবাসায় অভ্যস্ত হিসেবে গড়ে তোলা।
যাতে এর সাথে তাদের হৃদ্যিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং এর সঙ্গে তাদের মনোসংযোগ ঘটে। এতে করে তাদের চরিত্র হবে পবিত্র ও অপঙ্কিল। তাদের আত্মা ও হৃদয় হবে পরিশুদ্ধ। তারা হবে কুরআনের ধারক ও বাহক। কারণ, একটি শিশু যখন কুরআনের শিক্ষার মধ্য দিয়ে বড় হয়, সে জানতে পারে নামাজে কী পড়ছে। আর শিশুকালে কুরআনের হাফেয হওয়া বড় হয়ে হাফেয
হওয়ার চেয়ে উত্তম। এতে করে তার স্মরণও থাকে ভালো। সে কখনো এ কুরআন ভুলে না।
কারণ, শৈশবে কুরআন শিক্ষা করলে তা তার হৃদয়ে শিলালিপির মতো অঙ্কিত হয়ে যায়।
আমাদের উচিত, আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করা এবং কুরআনের প্রতি গুরুত্ব দেয়া।
আল্লাহ তা‘আলা কালামে মাজিদে ইরশাদ করেন,
ﺇِﻥَّ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳَﺘْﻠُﻮﻥَ ﻛِﺘَﺎﺏَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺃَﻗَﺎﻣُﻮﺍ ﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓَ ﻭَﺃَﻧْﻔَﻘُﻮﺍ ﻣِﻤَّﺎ ﺭَﺯَﻗْﻨَﺎﻫُﻢْ ﺳِﺮًّﺍ ﻭَﻋَﻠَﺎﻧِﻴَﺔً ﻳَﺮْﺟُﻮﻥَ ﺗِﺠَﺎﺭَﺓً ﻟَﻦْ ﺗَﺒُﻮﺭَ ( 29 ) ﻟِﻴُﻮَﻓِّﻴَﻬُﻢْ ﺃُﺟُﻮﺭَﻫُﻢْ ﻭَﻳَﺰِﻳﺪَﻫُﻢْ ﻣِﻦْ ﻓَﻀْﻠِﻪِ ﺇِﻧَّﻪُ ﻏَﻔُﻮﺭٌ ﺷَﻜُﻮﺭٌ ( 30 )
‘নিশ্চয় যারা আল্লাহর কিতাব অধ্যয়ন করে,
সালাত কায়েম করে এবং আল্লাহ যে রিযক দিয়েছেন তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারা এমন ব্যবসার আশা করতে পারে যা কখনো ধ্বংস হবে না। যাতে তিনি তাদেরকে তাদের পূর্ণ প্রতিফল দান করেন এবং নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে আরো বাড়িয়ে দেন। নিশ্চয় তিনি অতি মাশীল,
মহাগুণগ্রাহী।’ [1]
আল্লাহ তা‘আলা আরও ইরশাদ করেন,
ﻭَﺭَﺗِّﻞِ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁَﻥَ ﺗَﺮْﺗِﻴﻠًﺎ ( 4 )
‘আর স্পষ্টভাবে ধীরে ধীরে কুরআন আবৃত্তি কর।’[2]
আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র ইরশাদ করেন,
ﻣِﻦْ ﺃَﻫْﻞِ ﺍﻟْﻜِﺘَﺎﺏِ ﺃُﻣَّﺔٌ ﻗَﺎﺋِﻤَﺔٌ ﻳَﺘْﻠُﻮﻥَ ﺁَﻳَﺎﺕِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺁَﻧَﺎﺀَ ﺍﻟﻠَّﻴْﻞِ ﻭَﻫُﻢْ ﻳَﺴْﺠُﺪُﻭﻥَ
‘আহলে কিতাবের মধ্যে একদল ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। তারা রাতের বেলায় আল্লাহর আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করে এবং তারা সিজদা করে।’[3]
আরও ইরশাদ হয়েছে,
ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳَﺬْﻛُﺮُﻭﻥَ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻗِﻴَﺎﻣًﺎ ﻭَﻗُﻌُﻮﺩًﺍ ﻭَﻋَﻠَﻰ ﺟُﻨُﻮﺑِﻬِﻢْ
‘যারা আল্লাহকে স্মরণ করে দাঁড়িয়ে, বসে ও কাত হয়ে।’[4]
আরও ইরশাদ হয়েছে,
ﺃَﻡْ ﻣَﻦْ ﻫُﻮَ ﻗَﺎﻧِﺖٌ ﺁَﻧَﺎﺀَ ﺍﻟﻠَّﻴْﻞِ ﺳَﺎﺟِﺪًﺍ ﻭَﻗَﺎﺋِﻤًﺎ ﻳَﺤْﺬَﺭُ ﺍﻟْﺂَﺧِﺮَﺓَ ﻭَﻳَﺮْﺟُﻮ ﺭَﺣْﻤَﺔَ ﺭَﺑِّﻪِ
‘যে ব্যক্তি রাতের প্রহরে সিদজাবনত হয়ে ও দাঁড়িয়ে আনুগত্য প্রকাশ করে, আখিরাতকে ভয় করে এবং তার রব-এর রহমত প্রত্যাশা করে (সে কি তার সমান যে এরূপ করে না)।’[5]
উসমান বিন আফফান রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
ﺧَﻴْﺮُﻛُﻢْ ﻣَﻦْ ﺗَﻌَﻠَّﻢَ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥَ ﻭَﻋَﻠَّﻤَﻪُ
‘তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি সর্বোত্তম যে কুরআন শেখে এবং (অপরকে) শেখায়।[6]
আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
ﺍﻟْﻤَﺎﻫِﺮُ ﺑِﺎﻟْﻘُﺮْﺁﻥِ ﻣَﻊَ ﺍﻟﺴَّﻔَﺮَﺓِ ﺍﻟْﻜِﺮَﺍﻡِ ﺍﻟْﺒَﺮَﺭَﺓِ ﻭَﺍﻟَّﺬِﻯ ﻳَﻘْﺮَﺃُ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥَ ﻭَﻳَﺘَﺘَﻌْﺘَﻊُ ﻓِﻴﻪِ ﻭَﻫُﻮَ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺷَﺎﻕٌّ ﻟَﻪُ ﺃَﺟْﺮَﺍﻥِ .
‘কুরআন পাঠে যে অভিজ্ঞ ব্যক্তি কুরআন তিলাওয়াত করে সে সম্মানিত রাসূল ও
পুণ্যত্মা ব্যক্তিদের সঙ্গে থাকবে। আর যে ব্যক্তি তোতলাতে তোতলাতে সক্লেশে কুরআন তিলাওয়াত করবে তার জন্য দ্বিগুণ নেকী লেখা হবে।’[7]
আবু উমামা বাহেলী রা. থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি,
তিনি বলেন,
ﺍﻗْﺮَﺀُﻭﺍ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥَ ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﻳَﺄْﺗِﻰ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ ﺷَﻔِﻴﻌًﺎ ﻷَﺻْﺤَﺎﺑِﻪِ
‘তোমরা কুরআন তিলাওয়াত করো। কেননা তা কিয়ামতের দিন তিলাওয়াতকারীর জন্য সুপারিশকারীরূপে আবির্ভুত হবে।’[8]
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
ﻣَﺎ ﺍﺟْﺘَﻤَﻊَ ﻗَﻮْﻡٌ ﻓِﻰ ﺑَﻴْﺖٍ ﻣِﻦْ ﺑُﻴُﻮﺕِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟَﻰ ﻳَﺘْﻠُﻮﻥَ ﻛِﺘَﺎﺏَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﻳَﺘَﺪَﺍﺭَﺳُﻮﻧَﻪُ ﺑَﻴْﻨَﻬُﻢْ ﺇِﻻَّ ﻧَﺰَﻟَﺖْ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢُ ﺍﻟﺴَّﻜِﻴﻨَﺔُ ﻭَﻏَﺸِﻴَﺘْﻬُﻢُ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﺔُ ﻭَﺣَﻔَّﺘْﻬُﻢُ ﺍﻟْﻤَﻼَﺋِﻜَﺔُ ﻭَﺫَﻛَﺮَﻫُﻢُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻓِﻴﻤَﻦْ ﻋِﻨْﺪَﻩُ .
‘যখন কোনো দল আল্লাহর কোনো ঘরে (মসজিদে) একত্রিত হয়ে কুরআন তিলাওয়াত করে এবং একে অপরকে তা থেকে শিক্ষা দেয়, তাদের ওপর সকীনা নাজিল হয়, রহমত তাদের আচ্ছন্ন করে ফেলে, ফেরেশতারা তাদের বেষ্টন করে নেয় এবং আল্লাহ তা‘আলা তাঁর কাছে যারা আছেন তাদের কাছে এদের আলোচনা করেন।’[9]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও ইরশাদ করেন,
ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻰ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ ﻋَﻦِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻰِّ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﻗَﺎﻝَ « ﻳَﺠِﻰﺀُ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥُ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ ﻓَﻴَﻘُﻮﻝُ ﻳَﺎ ﺭَﺏِّ ﺣَﻠِّﻪِ ﻓَﻴُﻠْﺒَﺲُ ﺗَﺎﺝَ ﺍﻟْﻜَﺮَﺍﻣَﺔِ ﺛُﻢَّ ﻳَﻘُﻮﻝُ ﻳَﺎ ﺭَﺏِّ ﺯِﺩْﻩُ ﻓَﻴُﻠْﺒَﺲُ ﺣُﻠَّﺔَ ﺍﻟْﻜَﺮَﺍﻣَﺔِ ﺛُﻢَّ ﻳَﻘُﻮﻝُ ﻳَﺎ ﺭَﺏِّ ﺍﺭْﺽَ ﻋَﻨْﻪُ ﻓَﻴَﺮْﺿَﻰ ﻋَﻨْﻪُ ﻓَﻴُﻘَﺎﻝُ ﻟَﻪُ ﺍﻗْﺮَﺃْ ﻭَﺍﺭْﻕَ ﻭَﺗُﺰَﺍﺩُ ﺑِﻜُﻞِّ ﺁﻳَﺔٍ ﺣَﺴَﻨَﺔً » . ﻗَﺎﻝَ ﺃَﺑُﻮ ﻋِﻴﺴَﻰ ﻫَﺬَﺍ ﺣَﺪِﻳﺚٌ ﺣَﺴَﻦٌ ﺻَﺤِﻴﺢٌ .
‘কিয়ামতের দিন কুরআন আবির্ভূত হয়ে বলবে,
হে রব, (তিলাওয়াতকারীকে) আপনি সুসজ্জিত করুন। তখন তাকে সম্মানের মুকুট পরানো হবে। তারপর বলবে, হে রব, আপনি আরও বৃদ্ধি করুন। তখন তাকে সম্মানের পোশাক পরানো হবে। অতপর বলবে, হে রব,
আপনি তার ব্যাপারে সন্তুষ্ট হয়ে যান। তখন আল্লাহ তা‘আলা তার ওপর সন্তুষ্ট হয়ে যাবেন। তারপর বলবে, তুমি পড় এবং ওপরে উঠো। এভাবে প্রত্যেক আয়াতের বিনিময়ে তার মর্যাদা বৃদ্ধি করা হবে।’[10]
এই হলো কুরআন তিলাওয়াতের কিছু ফযীলত এবং তিলাওয়াতকারীর নেকীর কিছু বিবরণ। এটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অন্যতম অসিয়ত। আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসিয়ত করে বলেন,
ﺃُﻭﺻِﻴﻚَ ﺑِﺘَﻘْﻮَﻯ ﺍﻟﻠﻪِ ، ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﺭَﺃْﺱُ ﻛُﻞِّ ﺷَﻲْﺀٍ ، ﻭَﻋَﻠَﻴْﻚَ ﺑِﺎﻟْﺠِﻬَﺎﺩِ ، ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﺭَﻫْﺒَﺎﻧِﻴَّﺔُ ﺍﻹِِﺳْﻼَﻡِ ، ﻭَﻋَﻠَﻴْﻚَ ﺑِﺬِﻛْﺮِ ﺍﻟﻠﻪِ ﻭَﺗِﻼَﻭَﺓِ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥِ ، ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﺭَﻭْﺣُﻚَ ﻓِﻲ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﺀِ ، ﻭَﺫِﻛْﺮُﻙَ ﻓِﻲ ﺍﻷَﺭْﺽِ .
‘আমি তোমাকে আল্লাহ-ভীতির উপদেশ দিচ্ছি, কারণ তা প্রত্যেক বস্তুর মূল। তোমার জন্য জিহাদে অংশ নেয়াও আবশ্যক, কারণ তা ইসলামের বৈরাগ্য। তোমার জন্য আরও জরুরি আল্লাহ তা‘আলার যিকির ও কুরআন তিলাওয়াত করা, কারণ তা আসমানে তোমার সুবাস এবং জমিনে তোমার আলোচনা।’[11]
কুরআন তিলাওয়াতের আদব
কুরআন কিন্তু যেনতেন কোনো গ্রন্থ না।
এটি পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ। অতএব এটাকে আমরা অন্য দশটি বইয়ের মতো পড়তে পারি না। এটি পাঠ করার আগে-পিছে কিছু আদবের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। নইলে তা আমাদের জন্য নেকীর পরিবর্তে পাপই বয়ে আনবে। কুরআন পড়তে গিয়ে তাই বেশ কিছু আদবের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। চলুন এবার আমরা সেসব আদব সম্পর্কে জেনে নেই।
প্রথম আদব : নিয়ত শুদ্ধ করা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিয়ামতের দিন তিন শ্রেণীর লোকের ওপর আগুনের শাস্তি কঠোর করা হবে বলে জানিয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন ক্বারী।
আর কুরআন তিলাওয়াতকারী ক্বারী সাহেবকে আগুনের কঠিন শাস্তি দেয়া হবে এ কারণে যে তিনি ইখলাসের সাথে কুরআন তিলাওয়াত করতেন না। অনুরূপভাবে কিয়ামতের দিন প্রথম যে তিন শ্রেণীর লোককে তীব্র অগ্নিযাতনায় নিক্ষেপ করা হবে তাদের মধ্যেও একজন এই ক্বারী। আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
ﺇﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﺗَﺒَﺎﺭَﻙَ ﻭَﺗَﻌَﺎﻟَﻰ ﺇِﺫَﺍ ﻛَﺎﻥَ ﻳَﻮْﻡُ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ ﻳَﻨْﺰِﻝُ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟْﻌِﺒَﺎﺩِ ﻟِﻴَﻘْﻀِﻰَ ﺑَﻴْﻨَﻬُﻢْ ﻭَﻛُﻞُّ ﺃُﻣَّﺔٍ ﺟَﺎﺛِﻴَﺔٌ ﻓَﺄَﻭَّﻝُ ﻣَﻦْ ﻳَﺪْﻋُﻮ ﺑِﻪِ ﺭَﺟُﻞٌ ﺟَﻤَﻊَ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥَ ﻭَﺭَﺟُﻞٌ ﻗُﺘِﻞَ ﻓِﻰ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺭَﺟُﻞٌ ﻛَﺜِﻴﺮُ ﺍﻟْﻤَﺎﻝِ ﻓَﻴَﻘُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻟِﻠْﻘَﺎﺭِﺉِ ﺃَﻟَﻢْ ﺃُﻋَﻠِّﻤْﻚَ ﻣَﺎ ﺃَﻧْﺰَﻟْﺖُ ﻋَﻠَﻰ ﺭَﺳُﻮﻟِﻰ ﻗَﺎﻝَ ﺑَﻠَﻰ ﻳَﺎ ﺭَﺏِّ . ﻗَﺎﻝَ ﻓَﻤَﺎﺫَﺍ ﻋَﻤِﻠْﺖَ ﻓِﻴﻤَﺎ ﻋُﻠِّﻤْﺖَ ﻗَﺎﻝَ ﻛُﻨْﺖُ ﺃَﻗُﻮﻡُ ﺑِﻪِ ﺁﻧَﺎﺀَ ﺍﻟﻠَّﻴْﻞِ ﻭَﺁﻧَﺎﺀَ ﺍﻟﻨَّﻬَﺎﺭِ . ﻓَﻴَﻘُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻟَﻪُ ﻛَﺬَﺑْﺖَ ﻭَﺗَﻘُﻮﻝُ ﻟَﻪُ ﺍﻟْﻤَﻼَﺋِﻜَﺔُ ﻛَﺬَﺑْﺖَ ﻭَﻳَﻘُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻟَﻪُ ﺑَﻞْ ﺃَﺭَﺩْﺕَ ﺃَﻥْ ﻳُﻘَﺎﻝَ ﺇِﻥَّ ﻓُﻼَﻧًﺎ ﻗَﺎﺭِﺉٌ ﻓَﻘَﺪْ ﻗِﻴﻞَ ﺫَﺍﻙَ .
‘যখন কিয়ামতের দিন হবে, আল্লাহ তাবারাকা ওয়াতা‘আলা তাঁর বান্দাদের বিচারের উদ্দেশে আবির্ভূত হবেন। তখন প্রতিটি জাতি ভয়ে নতজানু হয়ে পড়বে।
বান্দাদের মধ্যে প্রথমে ডাকা হবে কুরআনের বাহক, আল্লাহর পথে শহীদ ও সম্পদশালী ব্যক্তিকে। ক্বারীর উদ্দেশে
আল্লাহ বলবেন, আমি কি তোমাকে তা শিখায়নি যা আমার রাসূলের ওপর নাজিল করেছিলাম? বলবে, জি, হে আমার রব।
আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, সুতরাং তুমি যা শিখেছো তার কী আমল করেছো? সে বলবে,
আমি দিন-রাতের নানা প্রহরে নামাজে এ কুরআন তিলাওয়াত করেছি। আল্লাহ বলবেন,
তুমি মিথ্যা বলেছো। ফেরেশতারাও তার উদ্দেশে বলবে, তুমি মিথ্যা বলেছো। তাকে লক্ষ্য করে আল্লাহ বলবেন, বরং তোমার অভিপ্রায় ছিল লোকেরা তোমাকে ক্বারী বলে ডাকবে। আর তা তো তোমাকে বলা হয়েছেই। ফলে তুমি দুনিয়াতেই তোমার প্রতিদান পেয়ে গেছো। তুমি দুনিয়াতেই তোমার প্রতিদান পেয়ে গেছো।’[12]
(হাদীসের পরের অংশে রয়েছে, এরপর
তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
আল্লাহ তা‘আলা আমাদের হেফাজত করুন।)
অতএব কুরআন তিলাওয়াত করার আগে প্রথম আমাদের নিয়তকে বিশুদ্ধ করতে হবে।
দ্বিতীয় আদব : পবিত্র হয়ে অযু অবস্থায় কুরআন তিলাওয়াত করা। অযু ছাড়াও কুরআন পড়া যাবে; কিন্তু তা অযু অবস্থায় পড়ার সমান হতে পারে না।
তৃতীয় আদব : তিলাওয়াতের আগে মিসওয়াক করা। আলী রা. থেকে বর্ণিত একটি সহীহ হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
ﻋَﻦْ ﻋَﻠِﻲِّ ﺑْﻦِ ﺃَﺑِﻲ ﻃَﺎﻟِﺐٍ ، ﻗَﺎﻝَ : ﺇِﻥَّ ﺃَﻓْﻮَﺍﻫَﻜُﻢْ ﻃُﺮُﻕٌ ﻟِﻠْﻘُﺮْﺁﻥِ ، ﻓَﻄَﻴِّﺒُﻮﻫَﺎ ﺑِﺎﻟﺴِّﻮَﺍﻙِ .
‘তোমাদের মুখগুলো কুরআনের পথ। তাই সেগুলোকে মিসওয়াক দ্বারা সুরভিত করো।’[13]
তিনি আরও ইরশাদ করেন,
ﺇِﻥَّ ﺍﻟْﻌَﺒْﺪَ ﺇِﺫَﺍ ﻗَﺎﻡَ ﻳُﺼَﻠِّﻰ ﺃَﺗَﺎﻩُ ﺍﻟْﻤَﻠَﻚُ ﻓَﻘَﺎﻡَ ﺧَﻠْﻔَﻪُ ﻳَﺴْﺘَﻤِﻊُ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥَ ﻭَﻳَﺪْﻧُﻮ ، ﻓَﻼَ ﻳَﺰَﺍﻝُ ﻳَﺴْﺘَﻤِﻊُ ﻭَﻳَﺪْﻧُﻮ ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﻀَﻊَ ﻓَﺎﻩُ ﻋَﻠَﻰ ﻓِﻴﻪِ ، ﻓَﻼَ ﻳَﻘْﺮَﺃُ ﺁﻳَﺔً ﺇِﻻَّ ﻛَﺎﻧَﺖْ ﻓِﻰ ﺟَﻮْﻑِ ﺍﻟْﻤَﻠَﻚِ .
‘যখন কোনো বান্দা নামাজে দাঁড়ায়, তখন ফেরেশতা আগমন করেন এবং তার পেছনে দাঁড়িয়ে যান। তিনি মনোযোগসহ তিলাওয়াত শোনেন আর এগিয়ে আসেন।
এভাবে সে পড়তে থাকে আর তিনি এগোতে থাকেন। এমনকি তিনি তাঁর মুখ স্থাপন করেন ওই তিলাওয়াতকারীর মুখের ওপর। সে একটি আয়াত তিলাওয়াত করে তা ফেরেশতার পেটে প্রবেশ করে।’[14]
অতএব তিলাওয়াতকারীর উচিৎ মিসওয়াক করে তিলাওয়াত করা যাতে ফেরেশতা তার মুখের গন্ধে কষ্ট না পান।
চতুর্থ আদব : তিলাওয়াতের শুরুতে আউযুবিল্লাহ পড়া। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
ﻓَﺈِﺫَﺍ ﻗَﺮَﺃْﺕَ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁَﻥَ ﻓَﺎﺳْﺘَﻌِﺬْ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺸَّﻴْﻄَﺎﻥِ ﺍﻟﺮَّﺟِﻴﻢِ ( 98 )
‘সুতরাং যখন তুমি কুরআন পড়বে তখন আল্লাহর কাছে বিতাড়িত শয়তান হতে পানাহ চাও।’[15]
আয়াতের অর্থ কুরআন পড়ার শুরুতে। কতিপয় বিজ্ঞ আলিম বলেন, এ আয়াতের দাবী অনুযায়ী কুরআন তিলাওয়াতের সূচনায়
‘তাআউউয’ (আউযুবিল্লাহ) পড়া ওয়াজিব।
অবশ্য আলিমদের সর্বসম্মত মত হলো এটি মুস্তাহাব।
পঞ্চম আদব : বিসমিল্লাহ পড়া।
তিলাওয়াতকারীর উচিত সূরা তাওবা ছাড়া সকল সূরার শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়া।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত যে তিনি এক সূরা শেষ করে বিসমিল্লাহ বলে আরেক সূরা শুরু করতেন। কেবল সূরা আনফাল শেষ করে তাওবা শুরু করার সময় বিসমিল্লাহ পড়তেন না।
ষষ্ঠ আদব : তারতীলের সঙ্গে কুরআন পড়া।
কারণ আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
ﻭَﺭَﺗِّﻞِ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁَﻥَ ﺗَﺮْﺗِﻴﻠًﺎ ( 4 )
তোমরা তারতীলের সঙ্গে কুরআন তিলাওয়াত কর।’[16]
ﻋَﻦْ ﺑَﻌْﺾِ ﺃَﺯْﻭَﺍﺝِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ؛ ﺃَﻧَّﻬَﺎ ﺳُﺌِﻠَﺖْ ﻋَﻦْ ﻗِﺮَﺍﺀَﺓِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ؟ ﻓَﻘَﺎﻟَﺖْ : ﺇﻧَّﻜُﻢْ ﻻَ ﺗَﺴْﺘَﻄِﻴﻌُﻮﻧَﻬَﺎ ، ﻓَﻘِﻴﻞَ ﻟَﻬَﺎ : ﺃَﺧْﺒِﺮِﻳﻨَﺎ ﺑِﻬَﺎ ، ﻓَﻘَﺮَﺃَﺕْ ﻗِﺮَﺍﺀَﺓً ﺗَﺮَﺳَّﻠَﺖْ ﻓِﻴﻬَﺎ .
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এক স্ত্রীকে তাঁর তিলাওয়াতের ধরন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, তোমরা সেভাবে পড়তে পারবে না। বলা হলো, আপনি আমাদের তা কেমন বলুন। তখন তিনি একটি কিরআত পড়লেন। তিনি স্পষ্টভাবে ধীরে ধীরে পড়লেন।[17]
ﻋَﻦْ ﻗَﺘَﺎﺩَﺓَ ﻗَﺎﻝَ ﺳُﺌِﻞَ ﺃَﻧَﺲٌ ﻛَﻴْﻒَ ﻛَﺎﻧَﺖْ ﻗِﺮَﺍﺀَﺓُ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻛَﺎﻧَﺖْ ﻣَﺪًّﺍ ﺛُﻢَّ ﻗَﺮَﺃَ ﺑِﺴْﻢِ ﺍﻟﻠﻪِ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﻦِ ﺍﻟﺮَّﺣِﻴﻢِ ﻳَﻤُﺪُّ ﺑِﺒِﺴْﻢِ ﺍﻟﻠﻪِ ﻭَﻳَﻤُﺪُّ ﺑِﺎﻟﺮَّﺣْﻤَﻦِ ﻭَﻳَﻤُﺪُّ ﺑِﺎﻟﺮَّﺣِﻴﻢِ .
কাতাদা রা. থেকে বর্ণিত, আনাস রা. কে একবার জিজ্ঞেস করা হলো, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তিলাওয়াত কেমন ছিলো? তিনি বলেন,
তিনি টেনে টেনে (মদসহ) পড়তেন। এরপর তিনি পড়ে শোনান, ﺑﺴﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺍﻟﺮﺣﻴﻢ এ আয়াতে তিনি ﺍﻟﻠﻪ শব্দ টেনে পড়েন, ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ শব্দ টেনে পড়েন এবং ﺍﻟﺮﺣﻴﻢ শব্দ টেনে পড়েন।[18]
ইবন মাসউদ রা. কে এক ব্যক্তি বলল,
ﺇِﻧِّﻰ ﻷَﻗْﺮَﺃُ ﺍﻟْﻤُﻔَﺼَّﻞَ ﻓِﻰ ﺭَﻛْﻌَﺔٍ . ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻋَﺒْﺪُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻫَﺬًّﺍ ﻛَﻬَﺬِّ ﺍﻟﺸِّﻌْﺮِ ﺇِﻥَّ ﺃَﻗْﻮَﺍﻣًﺎ ﻳَﻘْﺮَﺀُﻭﻥَ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥَ ﻻَ ﻳُﺠَﺎﻭِﺯُ ﺗَﺮَﺍﻗِﻴَﻬُﻢْ ﻭَﻟَﻜِﻦْ ﺇِﺫَﺍ ﻭَﻗَﻊَ ﻓِﻰ ﺍﻟْﻘَﻠْﺐِ ﻓَﺮَﺳَﺦَ ﻓِﻴﻪِ ﻧَﻔَﻊَ
আমি এক রাক‘আতে ‘মুফাসসালে’র একটি সূরা পড়ি। আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ বললেন,
কাব্যের মতো স্বচ্ছন্দে!? (তিনি তার পড়ার দ্রুতগতির কথা ভেবে বিস্মিত হলেন।)
নিশ্চয় একটি সম্প্রদায় কুরআন তিলাওয়াত করে অথচ সে তিলাওয়াত তাদের কণ্ঠাস্থি অতিক্রম করে না। কিন্তু তা যখন অন্তরে পতিত হয় এবং তাতে গেঁথে যায়, তখন তা উপকারে আসে।[19]
অন্য বর্ণনায় রয়েছে ইবন মাসঊদ রা. বলেন,
ﻻَ ﺗَﻨْﺜُﺮُﻭﻩُ ﻧَﺜْﺮَ ﺍﻟﺪَّﻗْﻞ ﻭَﻻَ ﺗَﻬُﺬُّﻭﻩُ ﻛَﻬَﺬِّ ﺍﻟﺸِّﻌْﺮِ ، ﻗِﻔُﻮﺍ ﻋِﻨْﺪَ ﻋَﺠَﺎﺋِﺒِﻪِ ، ﻭَﺣَﺮِّﻛُﻮﺍ ﺑِﻪِ ﺍﻟْﻘُﻠُﻮﺏَ ، ﻭَﻻَ ﻳَﻜُﻮﻥُ ﻫَﻢُّ ﺃَﺣَﺪِﻛُﻢْ ﺁﺧِﺮَ ﺍﻟﺴُّﻮﺭَﺓِ .
‘তোমরা একে (কুরআন) নষ্ট খেজুরের মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ো না কিংবা কবিতার মতো গতিময় ছন্দেও পড়ো না। বরং এর যেখানে বিস্ময়ের কথা আছে সেখানে থামো এবং তা দিয়ে হৃদয়কে আন্দোলিত করো। আর সূরার সমাপ্তিতে পৌঁছা যেন তোমাদের কারো লক্ষ্য না হয়।’[20]
বলাবাহুল্য, তারতীলের সঙ্গে তিলাওয়াত করা কুরআন নিয়ে চিন্তা করা এবং তার দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক।
সপ্তম আদব : সুন্দর করে মনের মাধুরী মিশিয়ে কুরআন পড়া।
ﻋَﻦِ ﺍﻟْﺒَﺮَﺍﺀِ ﻗَﺎﻝَ : ﺳَﻤِﻌْﺖُ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲَّ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳَﻘْﺮَﺃُ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻌِﺸَﺎﺀِ } ﻭَﺍﻟﺘِّﻴﻦِ ﻭَﺍﻟﺰَّﻳْﺘُﻮﻥِ { ﻓَﻤَﺎ ﺳَﻤِﻌْﺖُ ﺃَﺣَﺪًﺍ ﺃَﺣْﺴَﻦَ ﺻَﻮْﺗًﺎ ، ﺃَﻭْ ﻗِﺮَﺍﺀَﺓً ﻣِﻨْﻪُ .
বারা’ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে শুনেছি, তিনি এশার নামাজে সূরা তীন পড়েছেন। আমি তার চেয়ে সুন্দর কণ্ঠে আর কাউকে তিলাওয়াত করতে শুনিনি।’[21]
ﻋَﻦِ ﺍﻟْﺒَﺮَﺍﺀِ ﺑْﻦِ ﻋَﺎﺯِﺏٍ ، ﻗَﺎﻝَ : ﺳَﻤِﻌْﺖُ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳَﻘُﻮﻝُ : ﺣَﺴِّﻨُﻮﺍ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥَ ﺑِﺄَﺻْﻮَﺍﺗِﻜُﻢْ ، ﻓَﺈِﻥَّ ﺍﻟﺼَّﻮْﺕَ ﺍﻟْﺤَﺴَﻦَ ﻳَﺰِﻳﺪُ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥَ ﺣُﺴْﻨًﺎ
বারা’ বিন আযেব থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি তিনি ইরশাদ করেন, ‘তোমরা নিজ কণ্ঠ দ্বারা কুরআনকে সৌন্দর্য দান করো। কারণ সুরেলা কণ্ঠ কুরআনের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।’[22]
অপর বর্ণনায় তিনি বলেন,
ﺇِﻥَّ ﺣُﺴْﻦَ ﺍﻟﺼَّﻮْﺕِ ﺯِﻳﻨَﺔُ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥِ .
‘নিশ্চয় সুকণ্ঠ কুরআনের সৌন্দর্য।’[23]
উল্লেখিত উভয় হাদীসই বিশুদ্ধ। উল্লেখ্য যে, সুকণ্ঠ দিয়ে তিলাওয়াতের মধ্যে রয়েছে একে সৌন্দর্য দান, শ্রীবৃদ্ধিকরণ ও নতুনত্ব আনয়ন।
অষ্টম আদব : সুরারোপ করে কুরআন তিলাওয়াত করা। এটি সুন্দর করে কুরআন তেলাওয়াতেরই অংশবিশেষ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
ﻟَﻴْﺲَ ﻣِﻨَّﺎ ﻣَﻦْ ﻟَﻢْ ﻳَﺘَﻐَﻦَّ ﺑِﺎﻟْﻘُﺮْﺁﻥِ
‘সে আমার উম্মত নয় যে সুরসহযোগে কুরআন পড়ে না।’[24]
অন্যত্র তিনি ইরশাদ করেন,
ﻣَﺎ ﺃَﺫِﻥَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻟِﺸَﻰْﺀٍ ﻣَﺎ ﺃَﺫِﻥَ ﻟِﻨَﺒِﻰٍّ ﺣَﺴَﻦِ ﺍﻟﺼَّﻮْﺕِ ﻳَﺘَﻐَﻨَّﻰ ﺑِﺎﻟْﻘُﺮْﺁﻥِ ﻳَﺠْﻬَﺮُ ﺑِﻪِ .
‘আল্লাহ তা‘আলা কোনো নবীকে এতটুকু সুর দিয়ে পড়ার অনুমতি দেননি যতোটা দিয়েছেন নবীকে কুরআন তিলাওয়াতে সুরারোপ করার অনুমতি, যা তিনি সরবে পড়েন।’[25]
অতএব বুঝা গেল সুর দিয়ে কুরআন তিলাওয়াত করা কুরআন তিলাওয়াতের আদবের অন্তর্ভুক্ত এবং তা মুস্তাহাব।
নবম আদব : উচ্চারণে জোর দিয়ে পড়া।
অর্থাৎ তিলাওয়াতকারী পুরুষ হলে মেয়েদের মতো কণ্ঠ মোলায়েম করে পড়বে না। তদ্রুপ তিলাওয়াতকারী নারী হলে পুরুষের মতো করে উচ্চস্বরে পড়বে না।
প্রত্যেকে নিজের স্বাভাবিক স্বরে কুরআন পড়বে। আল্লাহ তা‘আলার পবিত্র গ্রন্থ আবৃত্তি করতে গিয়ে কেউ কারও নকল করবে না।
দশম আদব : আয়াত শেষে ওয়াকফ করা।
কুরআন শরীফ তিলাওয়াতের আরেকটি আদব হলো, আয়াতের সমাপ্তিস্থলে ওয়াকফ করা।
যদিও তা অর্থগত দিক থেকে পরবর্তী আয়াতের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, ‘তিনি এক আয়াত এক আয়াত করে কেটে কেটে পড়তেন। ﺍﻟْﺤَﻤْﺪُ ﻟِﻠَّﻪِ ﺭَﺏِّ ﺍﻟْﻌَﺎﻟَﻤِﻴﻦَ বলে ওয়াকফ করতেন। তারপর ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﻦِ ﺍﻟﺮَّﺣِﻴﻢِ বলে ওয়াকফ করতেন। [26] (এভাবে তিনি তিলাওয়াত করতেন।)
উম্মে সালামা রা. কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তিলাওয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘তিনি এক আয়াত এক আয়াত করে টুকরো টুকরো করে পড়তেন : [27]
ﺑِﺴْﻢِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﻦِ ﺍﻟﺮَّﺣِﻴﻢِ ( 1 ) ﺍﻟْﺤَﻤْﺪُ ﻟِﻠَّﻪِ ﺭَﺏِّ ﺍﻟْﻌَﺎﻟَﻤِﻴﻦَ ( 2 )
একাদশ আদব : একজন আরেকজনের ওপর গলা চড়িয়ে তিলাওয়াত না করা। কারণ এভাবে স্বর উঁচু করার মধ্য দিয়ে অন্যকে কষ্ট দেয়া হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
ﺃَﻻَ ﺇِﻥَّ ﻛُﻠَّﻜُﻢْ ﻣُﻨَﺎﺝٍ ﺭَﺑَّﻪُ ﻓَﻼَ ﻳُﺆْﺫِﻳَﻦَّ ﺑَﻌْﻀُﻜُﻢْ ﺑَﻌْﻀًﺎ ﻭَﻻَ ﻳَﺮْﻓَﻊْ ﺑَﻌْﻀُﻜُﻢْ ﻋَﻠَﻰ ﺑَﻌْﺾٍ ﻓِﻰ ﺍﻟْﻘِﺮَﺍﺀَﺓِ .
‘মনে রেখো, তোমরা সবাই আপন রবের সঙ্গে সঙ্গোপনে কথা বলছো। অতএব একে অপরকে কষ্ট দেবে না। একজন অপরের ওপর গলা চড়িয়ে তিলাওয়াত করবে না।’[28]
দ্বাদশ আদব : রাতে ঘুম পেলে বা ঝিমুলি এলে তিলাওয়াত থেকে বিরত থাকা। আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
ﺇِﺫَﺍ ﻗَﺎﻡَ ﺃَﺣَﺪُﻛُﻢْ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻠَّﻴْﻞِ ﻓَﺎﺳْﺘَﻌْﺠَﻢَ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥُ ﻋَﻠَﻰ ﻟِﺴَﺎﻧِﻪِ ﻓَﻠَﻢْ ﻳَﺪْﺭِ ﻣَﺎ ﻳَﻘُﻮﻝُ ﻓَﻠْﻴَﻀْﻄَﺠِﻊْ .
‘যখন তোমাদের কেউ রাতে নামাজ পড়ে,
ফলে তার জিহ্বায় কুরআন এমনভাবে জড়িয়ে আসে যে সে কী পড়ছে তা টের না পায়,
তাহলে সে যেন শুয়ে পড়ে।’[29]
অর্থাৎ তার উচিত এমতাবস্থায় নামাজ না পড়ে বিছানায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়া। যাতে তার মুখে কুরআন ও অন্য কোনো শব্দের মিশ্রণ না ঘটে এবং কুরআনের আয়াত এলোমেলো হয়ে না যায়।
ত্রয়োদশ আদব : ফযীলতপূর্ণ সূরাগুলো ভালোভাবে শিক্ষা করা এবং সেগুলো বেশি বেশি তিলাওয়াত করা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
ﺃَﻳَﻌْﺠِﺰُ ﺃَﺣَﺪُﻛُﻢْ ﺃَﻥْ ﻳَﻘْﺮَﺃَ ﻓِﻰ ﻟَﻴْﻠَﺔٍ ﺛُﻠُﺚَ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥِ . ﻗَﺎﻟُﻮﺍ : ﻭَﻛَﻴْﻒَ ﻳَﻘْﺮَﺃُ ﺛُﻠُﺚَ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥِ ﻗَﺎﻝَ : ( ﻗُﻞْ ﻫُﻮَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺃَﺣَﺪٌ ) ﻳَﻌْﺪِﻝُ ﺛُﻠُﺚَ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥِ .
‘তোমাদের কেউ কি রাত্রিকালে কুরআনের এক তৃতীয়াংশ তিলাওয়াতে অক্ষম? তারা বললেন, কুরআনের এক তৃতীয়াংশ কিভাবে পড়া পড়বে! তিনি বললেন, ﻗُﻞْ ﻫُﻮَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺃَﺣَﺪٌ (সূরা ইখলাস) কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমতুল্য।’[30]
ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻰ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ ﻗَﺎﻝَ ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - « ﺍﺣْﺸِﺪُﻭﺍ ﻓَﺈِﻧِّﻰ ﺳَﺄَﻗْﺮَﺃُ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﺛُﻠُﺚَ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥِ » . ﻓَﺤَﺸَﺪَ ﻣَﻦْ ﺣَﺸَﺪَ ﺛُﻢَّ ﺧَﺮَﺝَ ﻧَﺒِﻰُّ ﺍﻟﻠَّﻪِ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﻓَﻘَﺮَﺃَ ( ﻗُﻞْ ﻫُﻮَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺃَﺣَﺪٌ ) ﺛُﻢَّ ﺩَﺧَﻞَ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺑَﻌْﻀُﻨَﺎ ﻟِﺒَﻌْﺾٍ ﺇِﻧِّﻰ ﺃُﺭَﻯ ﻫَﺬَﺍ ﺧَﺒَﺮٌ ﺟَﺎﺀَﻩُ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﺀِ ﻓَﺬَﺍﻙَ ﺍﻟَّﺬِﻯ ﺃَﺩْﺧَﻠَﻪُ . ﺛُﻢَّ ﺧَﺮَﺝَ ﻧَﺒِﻰُّ ﺍﻟﻠَّﻪِ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﻓَﻘَﺎﻝَ « ﺇِﻧِّﻰ ﻗُﻠْﺖُ ﻟَﻜُﻢْ ﺳَﺄَﻗْﺮَﺃُ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﺛُﻠُﺚَ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥِ ﺃَﻻَ ﺇِﻧَّﻬَﺎ ﺗَﻌْﺪِﻝُ ﺛُﻠُﺚَ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥِ » .
আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমরা (লোকজনকে) একত্রিত করো। আমি তোমাদের সামনে কুরআনের এক তৃতীয়াংশ তিলাওয়াত করবো। ফলে সাহাবীদের মধ্যে যারা ছিলেন সমবেত হলেন। অতপর তিনি তাঁদের সামনে ﻗُﻞْ ﻫُﻮَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺃَﺣَﺪٌ (সূরা ইখলাস)
পড়লেন। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে প্রবেশ করলেন। তখন আমরা একে অপরকে বলতে লাগলাম, এটা বোধ হয় আসমান থেকে আসা কোনো খবর, যা সংগ্রহ করতে তিনি ভেতরে প্রবেশ করেন। এক্ষণে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবার বের হলেন। এবং বললেন, আমি তোমাদের বলেছি, তোমাদের সামনে কুরআনের এক তৃতীয়াংশ তিলাওয়াত করবো। শুনে রাখো, সেটি কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান।’[31]
অতএব যেসব সূরা ও আয়াত সম্পর্কে অধিক ফযীলত ও বেশি নেকীর কথা বর্ণিত হয়েছে এবং যেগুলো ভালোভাবে শেখা ও বেশি বেশি পড়া দরকার তার মধ্যে রয়েছে,
শুক্রবার ফজর নামাজে সূরা আলিফ-লাম-সিজদাহ পড়া, ঘুমানোর আগে সূরা মুলক এবং ফরজ নামাজের পর সূরা নাস, সূরা ফালাক ও আয়াতুল কুরসী পড়া।
চতুর্দশ আদব : রুকূ ও সিজদায় তিলাওয়াত না করা। সহীহ হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﺇِﻧَّﻪُ ﻟَﻢْ ﻳَﺒْﻖَ ﻣِﻦْ ﻣُﺒَﺸِّﺮَﺍﺕِ ﺍﻟﻨُّﺒُﻮَّﺓِ ﺇِﻻَّ ﺍﻟﺮُّﺅْﻳَﺎ ﺍﻟﺼَّﺎﻟِﺤَﺔُ ﻳَﺮَﺍﻫَﺎ ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻢُ ﺃَﻭْ ﺗُﺮَﻯ ﻟَﻪُ ﺃَﻻَ ﻭَﺇِﻧِّﻰ ﻧُﻬِﻴﺖُ ﺃَﻥْ ﺃَﻗْﺮَﺃَ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥَ ﺭَﺍﻛِﻌًﺎ ﺃَﻭْ ﺳَﺎﺟِﺪًﺍ ﻓَﺄَﻣَّﺎ ﺍﻟﺮُّﻛُﻮﻉُ ﻓَﻌَﻈِّﻤُﻮﺍ ﻓِﻴﻪِ ﺍﻟﺮَّﺏَّ ﻋَﺰَّ ﻭَﺟَﻞَّ ﻭَﺃَﻣَّﺎ ﺍﻟﺴُّﺠُﻮﺩُ ﻓَﺎﺟْﺘَﻬِﺪُﻭﺍ ﻓِﻰ ﺍﻟﺪُّﻋَﺎﺀِ ﻓَﻘَﻤِﻦٌ ﺃَﻥْ ﻳُﺴْﺘَﺠَﺎﺏَ ﻟَﻜُﻢْ .
‘হে লোকসকল, নবুওয়াতের সুসংবাদের মধ্যে কেবল সুন্দর স্বপ্নগুলোই অবশিষ্ট আছে, যা একজন মুসলমান দেখে বা তাকে দেখানো হয়। জেনো রাখো, আমাকে রুকূ ও সিজদায় কুরআন পড়তে নিষেধ করা হয়েছে। রুকূতে রবের বড়ত্ব ও মহত্ব বর্ণনা করবে ( ﺳﺒﺤﺎﻥ ﺭﺑﻲ ﺍﻟﻌﻈﻴﻢ পড়বে) আর সিজদায় বেশি বেশি দু‘আয় সচেষ্ট হবে। তবে তা কবূলের অধিক যোগ্য বিবেচিত হবে।’[32]
এর হিকমত বা রহস্য বর্ণনা করতে গিয়ে শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়া রহ. বলেন, ‘রুকূ ও সিজদা নতি প্রকাশের জায়গা। তাই নতি প্রকাশের স্থানে কুরআন না পড়া শ্রেয়।
হ্যা, রুকু সিজদায় গিয়ে আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসা করবে।
পঞ্চদশ আদব : ধৈর্য্য নিয়ে কুরআন তিলাওয়াত করা। যিনি অনায়াসে কুরআন পড়তে পারেন না তিনি আটকে আটকে ধৈর্যসহ পড়বেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
ﺍﻟْﻤَﺎﻫِﺮُ ﺑِﺎﻟْﻘُﺮْﺁﻥِ ﻣَﻊَ ﺍﻟﺴَّﻔَﺮَﺓِ ﺍﻟْﻜِﺮَﺍﻡِ ﺍﻟْﺒَﺮَﺭَﺓِ ﻭَﺍﻟَّﺬِﻯ ﻳَﻘْﺮَﺃُ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥَ ﻭَﻳَﺘَﺘَﻌْﺘَﻊُ ﻓِﻴﻪِ ﻭَﻫُﻮَ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺷَﺎﻕٌّ ﻟَﻪُ ﺃَﺟْﺮَﺍﻥِ .
‘কুরআন পাঠে যে অভিজ্ঞ ব্যক্তি কুরআন তিলাওয়াত করে সে সম্মানিত রাসূল ও
পুণ্যত্মা ব্যক্তিদের সঙ্গে থাকবে। আর যে ব্যক্তি তোতলাতে তোতলাতে সক্লেশে কুরআন তিলাওয়াত করবে তার জন্য দ্বিগুণ নেকী লেখা হবে।’[33]
অতএব কেউ যদি এই কষ্টের ওপর ধৈর্য ধরেন এবং ভালোভাবে শেখা অব্যাহত রাখেন তাহলে নিশ্চিত তিনি বিশাল প্রতিদান লাভ করবেন ইনশাআল্লাহ।
ষষ্ঠদশ আদব : কুরআন তিলাওয়াতের আরেকটি আদব হলো, তিলাওয়াতের সময় ক্রন্দন করা। আল্লাহ তা‘আলা তিলাওয়াতের সময় ক্রন্দনরতদের প্রশংসা করে বলেন,
ﻭَﻳَﺨِﺮُّﻭﻥَ ﻟِﻠْﺄَﺫْﻗَﺎﻥِ ﻳَﺒْﻜُﻮﻥَ ﻭَﻳَﺰِﻳﺪُﻫُﻢْ ﺧُﺸُﻮﻋًﺎ ( 109 )
‘আর তারা কাঁদতে কাঁদতে লুটিয়ে পড়ে এবং এটা তাদের বিনয় বৃদ্ধি করে’।[34]
আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন,
ﺍﻗْﺮَﺃْ ﻋَﻠَﻲَّ ﻗُﻠْﺖُ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺁﻗْﺮَﺃُ ﻋَﻠَﻴْﻚَ ﻭَﻋَﻠَﻴْﻚَ ﺃُﻧْﺰِﻝَ ﻗَﺎﻝَ ﻧَﻌَﻢْ ﻓَﻘَﺮَﺃْﺕُ ﺳُﻮﺭَﺓَ ﺍﻟﻨِّﺴَﺎﺀِ ﺣَﺘَّﻰ ﺃَﺗَﻴْﺖُ ﺇِﻟَﻰ ﻫَﺬِﻩِ ﺍﻵﻳَﺔِ } ﻓَﻜَﻴْﻒَ ﺇِﺫَﺍ ﺟِﺌْﻨَﺎ ﻣِﻦْ ﻛُﻞِّ ﺃُﻣَّﺔٍ ﺑِﺸَﻬِﻴﺪٍ ﻭَﺟِﺌْﻨَﺎ ﺑِﻚَ ﻋَﻠَﻰ ﻫَﺆُﻻَﺀِ ﺷَﻬِﻴﺪًﺍ { ﻗَﺎﻝَ ﺣَﺴْﺒُﻚَ ﺍﻵﻥَ ﻓَﺎﻟْﺘَﻔَﺖُّ ﺇِﻟَﻴْﻪِ ﻓَﺈِﺫَﺍ ﻋَﻴْﻨَﺎﻩُ ﺗَﺬْﺭِﻓَﺎﻥِ
‘আমাকে তুমি তিলাওয়াত করে শুনাও।’
বললাম, আমি আপনাকে তিলাওয়াত শোনাব অথচ আপনার ওপরই এটি অবতীর্ণ হয়েছে?
তিনি বললেন, ‘আমি অন্যের তিলাওয়াত শুনতে পছন্দ করি’। অতপর আমি তাঁকে সূরা নিসা পড়ে শুনাতে লাগলাম। যখন আমি- ﻓَﻜَﻴْﻒَ ﺇِﺫَﺍ ﺟِﺌْﻨَﺎ ﻣِﻦْ ﻛُﻞِّ ﺃُﻣَّﺔٍ ﺑِﺸَﻬِﻴﺪٍ ﻭَﺟِﺌْﻨَﺎ ﺑِﻚَ ﻋَﻠَﻰ ﻫَﺆُﻟَﺎﺀِ ﺷَﻬِﻴﺪًﺍ
(অতএব কেমন হবে যখন আমি প্রত্যেক উম্মত থেকে একজন সাক্ষী উপস্থিত করব এবং তোমাকে উপস্থিত করব তাদের উপর সাক্ষীরূপে? আয়াত : ৪১)-এ পৌঁছলাম, তিনি বললেন, ব্যস, যথেষ্ট হয়েছে। তখন আমি তাঁর দিকে তাকিয়ে দেখলাম তাঁর চোখ থেকে অঝোর ধারায় অশ্রু প্রবাহিত হচ্ছে।’[35]
আরেক সাহাবী বলেন,
ﺃَﺗَﻴْﺖُ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲَّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ، ﻭَﻫُﻮَ ﻳُﺼَﻠِّﻲ ، ﻭَﻟِﺠَﻮْﻓِﻪِ ﺃَﺯِﻳﺰٌ ﻛَﺄَﺯِﻳﺰِ ﺍﻟْﻤِﺮْﺟَﻞِ ﻳَﻌْﻨِﻲ ﻳُﺒْﻜِﻲ .
‘একদা আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এলাম।
তিনি নামাজ পড়ছিলেন আর তাঁর চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরছিল।’[36]
উমর ইবন খাত্তাব রা. একদিন সূরা ইউসুফ তিলাওয়াত করছিলেন। যখন তিনি নিচের আয়াতে পৌঁছেন, তাঁর দুইগণ্ড বেয়ে অশ্রুর ধারা বইতে শুরু করে। আয়াতটি ছিলো-
ﻗَﺎﻝَ ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﺃَﺷْﻜُﻮ ﺑَﺜِّﻲ ﻭَﺣُﺰْﻧِﻲ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺃَﻋْﻠَﻢُ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻣَﺎ ﻟَﺎ ﺗَﻌْﻠَﻤُﻮﻥَ ( 86 )
‘সে বলল, ‘আমি আল্লাহর কাছেই আমার দুঃখ বেদনার অভিযোগ জানাচ্ছি। আর আল্লাহর প থেকে আমি যা জানি, তোমরা তা জান না’।[37]
কাসিম একদা আয়িশা রা.-এর কাছ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। তিনি দেখেন আয়িশা রা. নিচের আয়াতটি বারবার আবৃত্তি করছেন আর কেঁদে কেঁদে দু‘আ করছেন।
আয়াতটি হলো-
ﻓَﻤَﻦَّ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻨَﺎ ﻭَﻭَﻗَﺎﻧَﺎ ﻋَﺬَﺍﺏَ ﺍﻟﺴَّﻤُﻮﻡِ ( 27 )
‘অতঃপর আল্লাহ আমাদের প্রতি দয়া করেছেন এবং আগুনের আযাব থেকে আমাদেরকে রক্ষা করেছেন।’[38]
আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রা. যখন নিচের আয়াত তিলাওয়াত করেন, ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করেন -
ﻭَﺟَﺎﺀَﺕْ ﺳَﻜْﺮَﺓُ ﺍﻟْﻤَﻮْﺕِ ﺑِﺎﻟْﺤَﻖِّ ﺫَﻟِﻚَ ﻣَﺎ ﻛُﻨْﺖَ ﻣِﻨْﻪُ ﺗَﺤِﻴﺪُ ( 19 )
‘আর মৃত্যুর যন্ত্রণা যথাযথই আসবে। যা থেকে তুমি পলায়ন করতে চাইতে’।[39]
আবদুল্লাহ ইবন উমর রা. যখন নিচের আয়াতটি পড়তেন, তখনই তিনি কান্নাকাটি করতেন-
ﻭَﺇِﻥْ ﺗُﺒْﺪُﻭﺍ ﻣَﺎ ﻓِﻲ ﺃَﻧْﻔُﺴِﻜُﻢْ ﺃَﻭْ ﺗُﺨْﻔُﻮﻩُ ﻳُﺤَﺎﺳِﺒْﻜُﻢْ ﺑِﻪِ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻓَﻴَﻐْﻔِﺮُ ﻟِﻤَﻦْ ﻳَﺸَﺎﺀُ ﻭَﻳُﻌَﺬِّﺏُ ﻣَﻦْ ﻳَﺸَﺎﺀُ ﻭَﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻰ ﻛُﻞِّ ﺷَﻲْﺀٍ ﻗَﺪِﻳﺮٌ ( 284 )
‘আর তোমরা যদি প্রকাশ কর যা তোমাদের অন্তরে রয়েছে অথবা গোপন কর, আল্লাহ সে বিষয়ে তোমাদের হিসাব নেবেন’।[40]
তাছাড়া আমরা আবূ বকর সিদ্দিক রা.-এর কথা জানি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাতের পর যখন খলীফা নির্বাচনের প্রসঙ্গ এলো, তখন আয়িশা রা. তাঁর সম্পর্কে বলেন,
ﺇِﻧَّﻪُ ﺭَﺟُﻞٌ ﺭَﻗِﻴﻖٌ ﻛَﺜِﻴﺮُ ﺍﻟْﺒُﻜَﺎﺀِ ﺣِﻴﻦَ ﻳَﻘْﺮَﺃُ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥَ
‘তিনি অত্যন্ত কোমল হৃদয়ের অধিকারী,
নামাজে কুরআন তিলাওয়াত করতে গিয়ে তিনি খুব বেশি কাঁদেন।’[41]
কুরআন তিলাওয়াতের সময় কান্নাকাটি করা এবং চোখে পানি আসা বিনয় ও ঈমানের লক্ষণ, যদি কান্নাটি আসে অন্তর থেকে। কান্না কিন্তু কয়েক প্রকারের হয়ে থাকে : বিনয় ও নম্রতার কান্না, ভীতি ও আতঙ্কের কান্না, ভালোবাসা ও অনুরাগের কান্না, খুশি ও আনন্দের কান্না এবং দুঃখ ও বেদনার কান্না। মনে রাখতে হবে, কুরআন তিলাওয়াতের সময় কেবল বিনয় ও নম্রতার কান্নাই কাম্য; কপট তথা কৃত্রিম বা লোক দেখানোর কান্না নয়। আর বিনয়ের কান্না সেটিই যা মানুষের মনে আনন্দের সঞ্চার করে। যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
ﺇِﻥَّ ﻣِﻦْ ﺃَﺣْﺴَﻦِ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ ﺻَﻮْﺗًﺎ ﺑِﺎﻟْﻘُﺮْﺁﻥِ ، ﺍﻟَّﺬِﻱ ﺇِﺫَﺍ ﺳَﻤِﻌْﺘُﻤُﻮﻩُ ﻳَﻘْﺮَﺃُ ، ﺣَﺴِﺒْﺘُﻤُﻮﻩُ ﻳَﺨْﺸَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪَ . ) ﻗﺎﻝ ﺍﻟﺸﻴﺦ ﺍﻷﻟﺒﺎﻧﻲ : ﺻﺤﻴﺢ (
‘কুরআন তিলাওয়াতের সর্বোত্তম কণ্ঠ সে ব্যক্তির, যার তিলাওয়াত কেউ শুনলে মনে হয় সে কাঁদছে।’[42]
তবে কান্নার ভান করা দুই ধরনের। একটি প্রশংসনীয় আরেকটি নিন্দনীয়। প্রশংসনীয় কান্না হলো, যে কান্নার ভান করার দ্বারা হৃদয় বিগলিত হয়, মনে আল্লাহর ভয় সৃষ্টি হয় আর সঙ্গে সঙ্গে তা হয় রিয়া ও লৌকিকতা মুক্ত। যেমন, উমর রা. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কান্নার কথা বলেছিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আবূ বকর রা. কে বদরের কয়েদিদের ব্যাপারে কাঁদতে দেখে তিনি বলেন,
ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺃَﺧْﺒِﺮْﻧِﻰ ﻣِﻦْ ﺃَﻯِّ ﺷَﻰْﺀٍ ﺗَﺒْﻜِﻰ ﺃَﻧْﺖَ ﻭَﺻَﺎﺣِﺒُﻚَ ﻓَﺈِﻥْ ﻭَﺟَﺪْﺕُ ﺑُﻜَﺎﺀً ﺑَﻜَﻴْﺖُ ﻭَﺇِﻥْ ﻟَﻢْ ﺃَﺟِﺪْ ﺑُﻜَﺎﺀً ﺗَﺒَﺎﻛَﻴْﺖُ ﻟِﺒُﻜَﺎﺋِﻜُﻤَﺎ
‘হে আল্লাহর রাসূল, আপনি আমাকে অবহিত করুন কোন জিনিসের কারণে আপনি ও আপনার সাথী কাঁদছেন? সম্ভব হলে আমি কাঁদবো, নয়তো আপনাদের দুজনের অনুকরণে কান্নার ভান করবো।’[43]
দেখুন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিন্তু তাঁর এ কথা অপছন্দও করেননি। তেমনি অনেক পূর্বসুরী বুযুর্গ বলতেন, আল্লাহর ভয়ে তোমরা কাঁদো যদি কাঁদতে না পারো তাহলে কান্নার ভান করো। পক্ষান্তরে নিন্দনীয় কান্না হলো,
যে কান্নার উদ্দেশ্য মানুষের প্রশংসা বা সুনাম কুড়ানো। এটি মুনাফেকদের কান্না।
আমাদের খেয়াল রাখতে হবে, কুরআন তিলাওয়াতের সময় যেন আমাদের অন্তর ডানে-বামে ছোটাছুটি না করে।
মনোযোগসহ নিবিষ্ট চিত্তে কুরআন তিলাওয়াত করতে হবে।
সপ্তদশ আদব : কুরআন তিলাওয়াতের আরেকটি আদব হলো এর মর্ম নিয়ে চিন্তা করা। সাধারণভাবে বলতে গেলে এটিই আসলে তিলাওয়াতের সবচে গুরুত্বপূর্ণ আদব।
তিলাওয়াতের সময় চিন্তা-গবেষণা করাই এর প্রকৃত সুফল বয়ে আনে। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
ﻛِﺘَﺎﺏٌ ﺃَﻧْﺰَﻟْﻨَﺎﻩُ ﺇِﻟَﻴْﻚَ ﻣُﺒَﺎﺭَﻙٌ ﻟِﻴَﺪَّﺑَّﺮُﻭﺍ ﺁَﻳَﺎﺗِﻪِ ﻭَﻟِﻴَﺘَﺬَﻛَّﺮَ ﺃُﻭﻟُﻮ ﺍﻟْﺄَﻟْﺒَﺎﺏِ ( 29 )
‘আমি তোমার প্রতি নাযিল করেছি এক বরকতময় কিতাব, যাতে তারা এর আয়াতসমূহ নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করে এবং যাতে বুদ্ধিমানগণ উপদেশ গ্রহণ করে’।[44]
অতএব কুরআন থেকে সে-ই উপকৃত হতে পারবে যে আল্লাহ তা‘আলার মহান বাণী নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করবে। আল্লাহ তা‘আলার বড়ত্ব ও মহিমার কথা মনের পর্দায় ভেসে তুলবে। কুরআন তাকে কী বলছে তা বুঝার চেষ্টা করবে। এবং এ কথা মনে রাখবে যে সে এটি বুঝার জন্য এবং তদনুযায়ী আমল করার জন্য তিলাওয়াত করছে। তাই কেউ যদি মুখে কুরআন পড়ে আর মন পড়ে থাকে তার অন্য কোথাও, তবে সে তিলাওয়াতের কাঙ্ক্ষিত ফায়দা অর্জন করতে পারবে না। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
ﺃَﻓَﻠَﺎ ﻳَﺘَﺪَﺑَّﺮُﻭﻥَ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁَﻥَ ﺃَﻡْ ﻋَﻠَﻰ ﻗُﻠُﻮﺏٍ ﺃَﻗْﻔَﺎﻟُﻬَﺎ ( 24 )
‘তবে কি তারা কুরআন নিয়ে গভীর চিন্তা-
ভাবনা করে না? নাকি তাদের অন্তরসমূহে তালা রয়েছে?’[45]
ﻋَﻦْ ﺣُﺬَﻳْﻔَﺔَ ، ﻗَﺎﻝَ : ﺻَﻠَّﻴْﺖُ ﻣَﻊَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻟَﻴْﻠَﺔً ، ﻓَﺎﻓْﺘَﺘَﺢَ ﺍﻟْﺒَﻘَﺮَﺓَ ، ﻓَﻘَﺮَﺃَ ﻓَﻘُﻠْﺖُ : ﻳَﺮْﻛَﻊُ ﻋِﻨْﺪَ ﺍﻟْﻤِﺎﺋَﺔَ ﻓَﻤَﻀَﻰ ، ﻓَﻘُﻠْﺖُ : ﻳَﺮْﻛَﻊُ ﻋِﻨْﺪَ ﺍﻟْﻤِﺎﺋَﺘَﻴْﻦِ ﻓَﻤَﻀَﻰ ، ﻓَﻘُﻠْﺖُ : ﻳُﺼَﻠِّﻲ ﺑِﻬَﺎ ﻓِﻲ ﺭَﻛْﻌَﺔٍ ، ﻓَﻤَﻀَﻰ ، ﻓَﺎﻓْﺘَﺘَﺢَ ﺍﻟﻨِّﺴَﺎﺀَ ﻓَﻘَﺮَﺃَﻫَﺎ ﺛُﻢَّ ﺍﻓْﺘَﺘَﺢَ ﺁﻝَ ﻋِﻤْﺮَﺍﻥَ ﻓَﻘَﺮَﺃَﻫَﺎ ، ﻳُﻘْﺮَﺃُ ﻣُﺘَﺮَﺳِّﻼً ﺇِﺫَﺍ ﻣَﺮَّ ﺑِﺂﻳَﺔٍ ﻓِﻴﻬَﺎ ﺗَﺴْﺒِﻴﺢٌ ﺳَﺒَّﺢَ ، ﻭَﺇِﺫَﺍ ﻣَﺮَّ ﺑِﺴُﺆَﺍﻝٍ ﺳَﺄَﻝَ ، ﻭَﺇِﺫَﺍ ﻣَﺮَّ ﺏِ ﺗَﻌَﻮُّﺫٍ ﺗَﻌَﻮَّﺫَ ، ﺛُﻢَّ ﺭَﻛَﻊَ
‘হুযাইফা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
একরাতে আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পেছনে নামাজ পড়লাম।
তিনি বাকারা শুরু করলেন। আমি মনে মনে বললাম, তিনি একশত আয়াত পড়ে রুকূ করবেন।
অবশ্য তিনি পড়েই চললেন। মনে মনে বললাম, তিনি দুইশত আয়াত পড়ে রুকূ করবেন। কিন্তু তিনি পড়েই চললেন। মনে মনে বললাম, তিনি হয়তো এ সূরা দিয়েই একরাত পড়বেন। এরপরও তিনি পড়েই চললেন। (বাকারা শেষ করে) নিসা শুরু করলেন। নিসা পড়ে তিনি আলে-ইমরান শুরু করে তাও শেষ করলেন। তিনি মন্থর গতিতে পড়ছিলেন। তাসবীহ সম্বলিত কোনো আয়াত পড়লে তাসবীহ পড়েন।
প্রার্থনা সম্বলিত কোনো আয়াত পড়লে প্রার্থনা করেন। শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা সম্বলিত কোনো আয়াত পড়লে শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করেন।
তারপর তিনি রুকূতে যান।’[46]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে খারেজী সম্প্রদায় সম্পর্কে জানিয়েছেন, তারা কুরআন তিলাওয়াত করবে কিন্তু তা তাদের গলা অতিক্রম করবে না। [47] অন্যত্র তিনি ইরশাদ করেন,
ﻻَ ﻳَﻔْﻘَﻪُ ﻣَﻦْ ﻗَﺮَﺃَ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥَ ﻓِﻰ ﺃَﻗَﻞَّ ﻣِﻦْ ﺛَﻼَﺙٍ .
‘তিনদিনের কম সময়ে যে কুরআন খতম করবে,
সে কুরআন বুঝবে না।’[48]
ﻣﺎﻟﻚ ﻋﻦ ﻳﺤﻴﻰ ﺑﻦ ﺳﻌﻴﺪ ﺃﻧﻪ ﻗﺎﻝ ﻛﻨﺖ ﺃﻧﺎ ﻭﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﻳﺤﻴﻰ ﺑﻦ ﺣﺒﺎﻥ ﺟﺎﻟﺴﻴﻦ ﻓﺪﻋﺎ ﻣﺤﻤﺪ ﺭﺟﻼ ﻓﻘﺎﻝ ﺃﺧﺒﺮﻧﻲ ﺑﺎﻟﺬﻱ ﺳﻤﻌﺖ ﻣﻦ ﺃﺑﻴﻚ ﻓﻘﺎﻝ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﺃﺧﺒﺮﻧﻲ ﺃﺑﻲ : ﺃﻧﻪ ﺃﺗﻰ ﺯﻳﺪ ﺑﻦ ﺛﺎﺑﺖ ﻓﻘﺎﻝ ﻟﻪ ﻛﻴﻒ ﺗﺮﻯ ﻓﻲ ﻗﺮﺍﺀﺓ ﺍﻟﻘﺮﺁﻥ ﻓﻲ ﺳﺒﻊ ﻓﻘﺎﻝ ﺯﻳﺪ ﺣﺴﻦ ﻭﻷﻥ ﺃﻗﺮﺃﻩ ﻓﻲ ﻧﺼﻒ ﺃﻭ ﻋﺸﺮ ﺃﺣﺐ ﺇﻟﻰ ﻭﺳﻠﻨﻲ ﻟﻢ ﺫﺍﻙ ﻗﺎﻝ ﻓﺈﻧﻲ ﺃﺳﺄﻟﻚ ﻗﺎﻝ ﺯﻳﺪ ﻟﻜﻲ ﺃﺗﺪﺑﺮﻩ ﻭﺃﻗﻒ ﻋﻠﻴﻪ
........যায়েদ বিন সাবেতকে একজন জিজ্ঞেস করলেন, সাত দিনে কুরআন খতম করাটাকে আপনি কোন দৃষ্টিতে দেখেন?
তিনি বললেন, এটা ভালো। অবশ্য আমি এটাকে পনের দিনে বা দশ দিনে খতম করাই পছন্দ করি। আমাকে জিজ্ঞেস করো, তা কেন? তিনি বললেন, আমি আপনাকে জিজ্ঞেস করছি। যায়েদ বললেন, যাতে আমি তার স্থানে স্থানে চিন্তা করি এবং থামি।’[49]
প্রিয় পাঠক-পাঠিকাবৃন্দ, আমাদের কুরআন নিয়ে চিন্তা করতে হবে কেবল আমলের জন্য :
ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﻦِ ﻗَﺎﻝَ : ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻣَﻦْ ﻛَﺎﻥَ ﻳُﻘْﺮِﺋُﻨَﺎ ﻣِﻦْ ﺃَﺻْﺤَﺎﺏِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ، ﺃَﻧَّﻬُﻢْ ﻛَﺎﻧُﻮﺍ ﻳَﻘْﺘَﺮِﺋُﻮﻥَ ﻣِﻦْ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻋَﺸْﺮَ ﺁﻳَﺎﺕٍ ، ﻓَﻼَ ﻳَﺄْﺧُﺬُﻭﻥَ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻌَﺸْﺮِ ﺍﻷُﺧْﺮَﻯ ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﻌْﻠَﻤُﻮﺍ ﻣَﺎ ﻓِﻲ ﻫَﺬِﻩِ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻌِﻠْﻢِ ﻭَﺍﻟْﻌَﻤَﻞِ ، ﻗَﺎﻟُﻮﺍ : ﻓَﻌَﻠِﻤْﻨَﺎ ﺍﻟْﻌِﻠْﻢَ ﻭَﺍﻟْﻌَﻤَﻞَ .
‘আবূ আবদুর রহমান রহ. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যেসব সাহাবী রা. আমাদের কুরআন পড়িয়েছেন তারা বলেছেন, তাঁরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে দশ আয়াত শিখতেন।
তারপর আরও দশ আয়াত ততক্ষণ শিখতেন না যাবৎ তাঁরা এ কয়টি আয়াতে কী এলেম আছে আর কী আমল আছে, তা না জানতেন।
তাঁরা বলেন, সুতরাং আমরা এলেম শিখেছি এবং আমল শিখেছি।’[50]
অষ্টদশ আদব : উচ্চরব ও নিরবের মাঝামাঝি স্বরে কুরআন তিলাওয়াত করা। সরবে কুরআন তিলাওয়াত সম্পর্কে অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে। যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
ﻣَﺎ ﺃَﺫِﻥَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻟِﺸَﻰْﺀٍ ﻣَﺎ ﺃَﺫِﻥَ ﻟِﻨَﺒِﻰٍّ ﺣَﺴَﻦِ ﺍﻟﺼَّﻮْﺕِ ﻳَﺘَﻐَﻨَّﻰ ﺑِﺎﻟْﻘُﺮْﺁﻥِ ﻳَﺠْﻬَﺮُ ﺑِﻪِ .
‘আল্লাহ তা‘আলা কোনো নবীকে এতটুকু সুর দিয়ে পড়ার অনুমতি দেননি যতোটা দিয়েছেন নবীকে কুরআন তিলাওয়াতে সুরারোপ করার অনুমতি, যা তিনি সরবে পড়েন।’[51]
অনুরূপ তিনি ইরশাদ করেছেন,
ﺍﻟْﺠَﺎﻫِﺮُ ﺑِﺎﻟْﻘُﺮْﺁﻥِ ﻛَﺎﻟْﺠَﺎﻫِﺮِ ﺑِﺎﻟﺼَّﺪَﻗَﺔِ ﻭَﺍﻟْﻤُﺴِﺮُّ ﺑِﺎﻟْﻘُﺮْﺁﻥِ ﻛَﺎﻟْﻤُﺴِﺮِّ ﺑِﺎﻟﺼَّﺪَﻗَﺔِ .
‘সরবে কুরআন তিলাওয়াত প্রকাশ্য সদকাকারীর ন্যায় এবং নিরবে কুরআন তিলাওয়াত গোপনে সদকাকারীর ন্যায়।’[52]
প্রথম হাদীসে সরবে আর দ্বিতীয় হাদীসে নিরবে পড়ার ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। আমরা তাহলে কীভাবে সিদ্ধান্তে আসবো? হ্যা,
উভয় হাদীসের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে ইমাম নববী রহ. বলেন, যেখানে রিয়া, ঘুমন্ত ব্যক্তির ঘুম ভাঙ্গানো বা নামাজরত ব্যক্তি কষ্ট পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে সেখানে
নিরবে পড়া উত্তম। কারণ, নামাজী ব্যক্তির পাশে সরবে তিলাওয়াত করলে তার পড়ায় বিঘ্ন ঘটবে। তাছাড়া তিলাওয়াতেও ব্যাঘাত ঘটবে। সুতরাং এ ক্ষেত্রে নিরবে পড়াই শ্রেয়। এছাড়া অন্য সময় সরবে পড়া উত্তম। কারণ, এতে স্বর উঁচু করা, কষ্ট ও চেষ্টা ব্যয় করার অতিরিক্ত শ্রম দিতে হয়।
তদুপরি সরবে তিলাওয়াত পাঠক হৃদয়কে জাগ্রত করে। তার চিন্তাকে কুরআনের প্রতি নিবিষ্ট এবং কর্ণকে এর দিকে উৎকর্ণ করে। এর ফলে পাঠক বেশি লাভবান হন। এভাবে তা বেশি আত্মস্থ হওয়া,
শয়তানকে বিতাড়ন করা, ঘুম তাড়ানো ও উদ্যম সৃষ্টিতে অধিক সহায়ক।[53]
আবূ বকর রা. নিরবে কুরআন তিলাওয়াত করতেন আর উমর করতেন সরবে। উমর রা. কে সরবে পড়ার কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘সরবে পড়ে আমি শয়তানকে বিতাড়ন করি এবং ঝিমুনি তাড়াই। অতপর আবূ বকর রা. কে নির্দেশ দেয়া হলো আওয়াজ একটু বাড়াতে আর উমর রা. কে নির্দেশ দেয়া হলো আওয়াজ একটু কমাতে। [54]
আরেকটি কথা, ধরুন আপনি কুরআন তিলাওয়াত করছেন। কিছুক্ষণ সরবে পড়ার পর একটু ক্লান্ত হয়ে গেলেন। এবার একটু আওয়াজ কমিয়ে পড়তে লাগলেন। তারপর যখন ক্লান্তি কেটে গেল তো আবার সরবে পড়া শুরু করলেন। আমাদের অনেকেরই হয়তো এমন হয় ঠিক না? জেনে রাখুন, এতে কোনো সমস্যা নেই।
ঊনবিংশ আদব : তিলাওয়াতের সময় সিজদার আয়াত এলে সিজদা দেয়া। সিজদার নিয়ম হলো, তাকবীর দিয়ে সিজদায় চলে যাওয়া।
বিংশ আদব : যথাসম্ভব আদবসহ বসা। বসা,
দাঁড়ানো, চলমান ও হেলান দেয়া-
সর্বাবস্থায় তিলাওয়াত করার অনুমতি রয়েছে। কারণ আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন,
ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳَﺬْﻛُﺮُﻭﻥَ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻗِﻴَﺎﻣًﺎ ﻭَﻗُﻌُﻮﺩًﺍ ﻭَﻋَﻠَﻰ ﺟُﻨُﻮﺑِﻬِﻢْ ﻭَﻳَﺘَﻔَﻜَّﺮُﻭﻥَ ﻓِﻲ ﺧَﻠْﻖِ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﻭَﺍﺕِ ﻭَﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﺭَﺑَّﻨَﺎ ﻣَﺎ ﺧَﻠَﻘْﺖَ ﻫَﺬَﺍ ﺑَﺎﻃِﻠًﺎ ﺳُﺒْﺤَﺎﻧَﻚَ ﻓَﻘِﻨَﺎ ﻋَﺬَﺍﺏَ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ ( 191 )
‘যারা আল্লাহকে স্মরণ করে দাঁড়িয়ে, বসে ও কাত হয়ে এবং আসমানসমূহ ও যমীনের সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা করে’।[55]
তবে উদাহরণ স্বরূপ বিনয়ের সঙ্গে বসে পড়া হেলান দিয়ে পড়ার চেয়ে উত্তম। জায়েযের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে কোনোটাতেই সমস্যা নেই। কিন্তু উত্তমের কথা বিবেচনা করলে বিনয় ও নম্রতার সঙ্গে বসে পড়াই শ্রেয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজর নামাজের পর কিবলামুখী হয়ে চারজানু হয়ে বসে সূর্যোদয় পর্যন্ত আল্লাহ তা‘আলার জিকির করতেন।
একবিংশ আদব : কুরআন তিলাওয়াতের আরেকটি আদব হলো তিনদিনের কম সময়ে খতম না করা। কেননা আগেই উল্লেখ করেছি যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
ﻻَ ﻳَﻔْﻘَﻪُ ﻣَﻦْ ﻗَﺮَﺃَ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥَ ﻓِﻰ ﺃَﻗَﻞَّ ﻣِﻦْ ﺛَﻼَﺙٍ .
‘তিনদিনের কম সময়ে যে কুরআন খতম করবে,
সে কুরআন বুঝবে না।’[56]
কুরআন সম্পর্কে উদাসীনতা এবং এর ভয়াবহ পরিণাম
অধিকাংশ মানুষই আজ কুরআন শিক্ষা থেকে উদাসীন। বড়রা ব্যস্ত দুনিয়া আর দুনিয়াদারি নিয়ে। ছোটরা ব্যস্ত স্কুলের রুটিন নিয়েঅ যেখানে কুরআন শিক্ষার জন্য পর্যাপ্ত সময় দেয়া হয় না। যথাযথ যত্নও নেয়া হয় না। শিক্ষকরাও তাদের প্রতি কাম্য দায়িত্ব পালন করেন না। আর তাদের অবশিষ্ট সময় অপচয় হয় রাস্তা -ঘাটে খেলাধুলার পেছনে। ফলে তারা কুরআন সম্পর্কে অজ্ঞ হয়ে বেড়ে উঠছে। তাই দেখা যায় বড় বড় ডিগ্রি নিয়ে বড় হচ্ছে অথচ শুদ্ধভাবে আল্লাহর কিতাবের একটি আয়াতও পড়তে পারে না। এজন্যই দেখা যায় গ্রামাঞ্চলের অনেক মসজিদেই এখনো শুদ্ধ তিলাওয়াত করতে পারে এমন ইমাম পাওয়া যায় না। আর এসবের প্রধান কারণ সন্তানদের কুরআন শিক্ষার ব্যাপারে পিতাদের অবহেলা। এদিকটিকে তাদের যথাযথ গুরুত্ব না দেয়া। তারা জানেন না তাদের সন্তান কুরআন পড়তে পারে কি-না।
এমনি আজ অধিকাংশ মুসলমানই কুরআনকে ছেড়েই দিয়েছেন। দেখুন আল্লাহর নবী এদের সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলার কাছে কীভাবে অভিযোগ করছেন-
ﻭَﻗَﺎﻝَ ﺍﻟﺮَّﺳُﻮﻝُ ﻳَﺎ ﺭَﺏِّ ﺇِﻥَّ ﻗَﻮْﻣِﻲ ﺍﺗَّﺨَﺬُﻭﺍ ﻫَﺬَﺍ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁَﻥَ ﻣَﻬْﺠُﻮﺭًﺍ ( 30 )
‘আর রাসূল বলবে, ‘হে আমার রব, নিশ্চয় আমার কওম এ কুরআনকে পরিত্যাজ্য গণ্য করেছে।’[57]
ইবন কাসির রহ. বলেন, কুরআন নিয়ে চিন্তা-ভাবনা না করা, কুরআন বুঝতে চেষ্টা না করাও কুরআন পরিত্যাগ করার মধ্যে গণ্য।
কুরআনের আমল ছেড়ে দেয়া, এর নির্দেশ পালন না করা এবং নিষেধ উপেক্ষা করাও তা পরিত্যাগ করার মধ্যে গণ্য। এবং কুরআন ছেড়ে অন্য কথা-কাব্যে, অনর্থক বাক্যালাপ ও গান-বাজনায় ডুবে থাকাও পরিত্যাগ করার মধ্যে গণ্য।
ভালো ক্বারীর কাছে গিয়ে কুরআন শিখতে হবে
আমাদের সবার জন্য জরুরি, এমন শিক্ষকের কাছে পবিত্র কুরআন শিক্ষা করা যিনি বিশুদ্ধভাবে কুরআন পড়তে জানেন। অতএব যিনি নিজে কুরআন শিখবেন বা আপন সন্তানাদিকে শেখাবেন তার কর্তব্য হলো একজন ভালো ক্বারী সাহেবের শরণাপন্ন হওয়া। যাতে বিশুদ্ধভাবে এবং সুন্দর পদ্ধতিতে কুরআন শেখা যায়। মনে রাখতে হবে যে আল্লাহ তা‘আলার পবিত্র কালাম সবচে বেশি গুরুত্ব ও যত্নের দাবিদার।
ইদানীং অনেককেই দেখা যায় আরবী পড়ান। অথচ তিনি নিজেও শুদ্ধভাবে আরবী পড়তে জানেন না। মহিলাদের মধ্যে এ প্রবণতা বেশি দেখা যায়।
মদ-গুন্না কিছুই জানা নেই, মাসআলা-মাসায়েল জানা নেই। অথচ দিব্যি কুরআনের
ওস্তাদি করে যাচ্ছেন। আপনার সন্তানকে এদের হাতে তুলে দেবেন না। যদি বাংলা-ইংরেজি শেখার জন্য ভালো মাস্টারের দরকার হয়, তাহলে আল্লাহর কিতাবের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শেখার জন্য তো আরও ভালো ওস্তাদের প্রয়োজন। দুনিয়ার শিক্ষার বেলায় গুরুত্ব দেই অথচ আখিরাতের শিক্ষার বেলায় অবহেলা করি- এটা তো ঈমানের দাবি হতে পারে না। যে আল্লাহ আমাদের জ্ঞান-বিজ্ঞান শেখার মতো বুদ্ধি ও মেধা দিলেন তাঁর কিতাব পড়ার ব্যাপারে এমন অবহেলা কি চরম অকৃতজ্ঞতার পরিচায়ক নয়? আমাদের চিন্তা করা উচিৎ, তিনি যদি আমাকে বা আমার সন্তানকে পাগল বানিয়ে দেন তাহলে কী অবস্থা হবে? (আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন)
আমাদের স্কুলগুলোতে নামকাওয়াস্তে একজন করে আরবী শিক্ষক রাখা হয় ঠিক;
কিন্তু আরবী বিষয়কে করা হয় চরম অবহেলা।
সাধারণ শিক্ষার টিচার নিয়োগ,
নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের ট্রেনিংয়ের জন্য রাষ্ট্র কত ব্যবস্থা আর উদ্যোগ নেয়।
অথচ কুরআন শিক্ষা ও কুরআনের শিক্ষা নিয়ে আমাদের সরকার বা স্কুল কর্তৃপক্ষের যেন কোনো মাথা ব্যাথাই নেই। বৃটিশ আমল থেকে যেনতেন একজন ধর্মীয় শিক্ষক রাখার নিয়ম চলে আসছে, তা রক্ষা হলেই চলে। স্কুলে এই আরবী শিক্ষককে কোনো দামই দেয়া হয় না। তাঁর পরামর্শ ও পরিকল্পনার প্রতি ভ্রুক্ষেপই করা হয় না।
ব্যস, বার্ষিক মিলাদ-মাহফিলের সময় শুধু তাঁকে সামনে এগিয়ে দেয়া হয়।
সত্যি কথা বলতে কী, কুরআন ও কুরআনের শিক্ষার প্রতি এই ঔদাসীন্যের কারণেই সমাজে শিক্ষিতের হার বাড়ছে ঠিক; কিন্তু নীতিবান ও আদর্শ দেশ প্রেমিকের সংখ্যা বাড়ছে না। সমাজের প্রতি শাখায়, প্রতিটি পরিবারে শিক্ষিত সন্তানদের নিয়েও বিপদে দিন গুজরান করছেন অসহায় অভিভাবকরা। আল্লাহ মাফ করুন, আমরা অভিভাবকদের বুঝতে হবে কুরআনের প্রতি আমাদের অনাদরের কারণেই আমাদের ছেলেমেয়েরা মানুষ হচ্ছে না।
প্রতিটি মুসলিম সরকারের আমাদের কাছে আবেদন, তারা যেন প্রতিটি শিশুর জন্য কুরআনের শিক্ষা বাধ্যতামূলক করেন।
প্রতিটি শিশুকে কুরআনের আলোয় বেড়ে ওঠার সুযোগ করে দেন। প্রতিটি গ্রামে গ্রামে এবং মসজিদে মসজিদে কুরআন শিক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
কুরআনের প্রতি যত্নবান হওয়া এবং কুরআন নিয়ে চিন্তা-গবেষণার আহ্বান
আলহামদুলিল্লাহ আমরা যারা কুরআন শিখেছি, যারা কুরআন পড়তে পারি, তাদের উচিত কুরআনের প্রতি যত্নবান হওয়া।
মনোযোগসহ বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করা। বিনয় ও আদবের সাথে চিন্তা-গবেষণার মানসিকতা নিয়ে তিলাওয়াত করা। আমরা নিশ্চয় জানি কী বিপুল সওয়াব এ তিলাওয়াতে! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
ﻣﻦ ﻗﺮﺃ ﺣﺮﻓﺎ ﻣﻦ ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻠﻪ ﺑﻪ ﺣﺴﻨﺔ ﻭﺍﻟﺤﺴﻨﺔ ﺑﻌﺸﺮ ﺃﻣﺜﺎﻟﻬﺎ ﻻ ﺃﻗﻮﻝ ﺁﻟﻢ ﺣﺮﻑ ﻭﻟﻜﻦ ﺃﻟﻒ ﺣﺮﻑ ﻭﻻﻡ ﺣﺮﻑ ﻭﻣﻴﻢ ﺣﺮﻑ
‘যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাব থেকে একটি আয়াত পড়বে, তার জন্য একটি নেকী লেখা হবে। আর নেকীটিকে করা হবে দশগুণ। আমি বলছি না ﺍﻟﻢ একটি হরফ। বরং ‘আলিফ’ একটি হরফ, ‘লাম’ একটি হরফ এবং ‘মীম’ একটি হরফ।’[58]
সুবহানাল্লাহ!
আল্লামা ইবনুল কায়্যিম রহ. বলেন,
‘আল্লাহর বাণী (কুরআন) নিয়ে চিন্তা করুন।
আপনি এমন এক বাদশাহকে পাবেন, সবই যার রাজত্ব এবং যাবতীয় প্রশংসাও তাঁর।
প্রতিটি বিষয়ের গুরুদায়িত্ব তাঁর হাতে।
তিনি তাঁর বান্দাদের উপদেশ দেন। যাতে তাদের সমৃদ্ধি ও সৌভাগ্য নিহিত তাদেরকে তার সন্ধান দেন। তাদেরকে এ কাজে উদ্বুদ্ধ করেন। তাদেরকে সতর্ক করেন সেসব কাজ থেকে যাতে তাদের ধ্বংস ও অকল্যাণ রয়েছে। তিনি তাদের কাছে যাবতীয় গুণাবলি ও নামসহ নিজের পরিচয় তুলে ধরেন। কুরআন স্মরণ করিয়ে দেয় আমাদের ওপর আল্লাহর নেয়ামতসমূহের কথা। আমাদের দায়িত্ব ও জীবনের লক্ষ্যের কথা। আমাদের জন্য নেক কাজের পুরস্কার স্বরূপ যেসব নেয়ামত বেহেশতে রেখেছেন তার কথা। অবাধ্য হলে যেসব শাস্তি রেখেছেন তার কথা। তাঁর বন্ধুদের সুপরিণাম ও শত্রুদের কুপরিণতি সম্পর্কে কুরআন আমাদের সংবাদ দেয়। কুরআন আমাদের জন্য উপমা পেশ করে। দলিল ও ইতিহাস তুলে ধরে। আমাদেরকে শান্তির ঠিকানার দিকে আহ্বান জানায় এবং এর গুণাবলি ও উপকারিতা মনে করিয়ে দেয়। সতর্ক করে শাস্তির ঠিকানা ও তার আজাব থেকে।
তাঁর বান্দাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে নিজের দৈন্যতা ও অসহায়ত্বের করুণ চিত্র। বোধে আঘাত করে উপলব্ধিতে আনে তাঁর অনুগ্রহ ছাড়া এক মুহূর্তও আমরা চলতে পারব না। অতএব কুরআন পাঠের মধ্য দিয়ে আমাদের অন্তর যখন দেখবে যে তিনি এমন রাজা, যিনি মহাপরাক্রমশালী, দয়ালু,
দাতা ও চিরসুন্দর, তখন সে আর তাঁকে ভুলে থাকতে পারবে না। তাঁর নির্দেশ অমান্য করতে পারবে না।’ [59]
সুতরাং কুরআন আল্লাহকে স্মরণ করিয়ে দেয়। বান্দাকে আল্লাহর নৈকট্যশীল করে।
তাই মুসলমানদের উচিত ভালোভাবে কুরআন শিক্ষা করা এবং বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করা। কুরআনে রয়েছে আলো,
আরোগ্য, রহমত, সুবাস, হিদায়াত, আল্লাহর যিকির এবং তাঁর প্রমাণ। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সবাইকে তাঁর পবিত্র কালাম বেশি বেশি পড়ার এবং তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করার তাওফীক দান করুন। আমীন।
১. সূরা ফাতির : ২৯-৩০।
২. সূরা আল-মুযামমিল : ৪।
৩. সূরা আলে ইমরান : ১১৩।
৪. সূরা আলে ইমরান : ১৯১।
৫. সূরা আয-যুমার : ৯।
৬. বুখারী : ৫০২৭।
৭. বুখারী : ৪৯৩৭; মুসলিম : ১৮৯৮।
৮. মুসলিম : ১৯১০ ।
৯. মুসলিম : ৭০২৮; আবূ দাউদ : ১৪৫৭।
১০. তিরমিযী : ৩১৬৪; শুয়াবুল ঈমান : ১৮৪১। (( ﺻﺤﺤﻪ ﺍﻷﻟﺒﺎﻧﻲ ﻓﻲ ﺍﻟﺼﺤﻴﺤﺔ
১১. মুসনাদ আহমদ।
১২. তিরমিযী : ২৩৮২; সহীহ ইবন হিব্বান : ৪০৮।
১৩. ইবন মাজা : ২৯১, শায়খ আলবানী হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন।
১৪. বাইহাকী, সুনান আল-কুবরা : ১৬৫।
১৫. সূরা আন-নাহল : ৯৮।
১৬. সূরা আল-মুযাম্মিল : ৪।
১৭. আবদুর রাযযাক, মুসান্নাফ : ৮৮২৬।
১৮. বুখারী : ৫০৪৬।
১৯. মুসলিম : ১৯৪৫; বাইহাকী, সুনান আল-কুবরা : ৪৮৭৫।
২০. ইবন আবি শাইবা, মুসান্নাফ : ৮৭৩৩।
২১. বুখারী : ৭৫৪৬; মুসলিম : ১০৬৭।
২২. দারেমী, সুনান : ৩৫০১; শুয়াবুল ঈমান : ১৯৫৫।
২৩. ইবনুল জা’দ, মুসনাদ : ৩৪৫৬।
২৪. বুখারী : ৭৫২৭; আবূ দাউদ : ১৪৭১।
২৫. আবূ দাউদ, সুনান : ১৪৭৫; নাসায়ী, সুনান : ১০১৭।
২৬. বুখারী : ৫০৪৬।
২৭. মুসনাদ আহমদ : ২৬৬২৫।
২৮. আবূ দাউদ : ১৩৩৪।
২৯. মুসলিম : ১৮৭২; মুসনাদ আহমদ : ৮২১৪।
৩০. মুসলিম : ১৯২২; বুখারী : ৫০১৫।
৩১. মুসলিম : ১৯২৪; তিরমিযী : ৩১৪৬।
৩২. মুসলিম : ১১০২; নাসায়ী : ১০৪৫।
৩৩. বুখারী : ৪৯৩৭; মুসলিম : ১৮৯৮।
৩৪. সূরা বনী ইসরাঈল : ১০৯।
৩৫. বুখারী : ৫০৫০; মুসলিম : ১৯০৩।
৩৬. নাসায়ী : ১২১৪।
৩৭. সূরা ইউসুফ : ৮৬।
৩৮. সূরা আত-তূর : ২৭।
৩৯. সূরা ক্বফ : ১৯।
৪০. সূরা আল-বাকারা : ২৮৪।
৪১. সহীহ ইবন খুযাইমা : ৮৯৯।
৪২. ইবন মাজা : ১৩৩৯।
৪৩. মুসলিম : ৪৬৮৭।
৪৪. সূরা সোয়াদ : ২৯।
৪৫. সূরা মুহাম্মদ : ২৪।
৪৬. নাসায়ী : ১৩৮১; মুসলিম : ১৮৫০।
৪৭. বুখারী : ৩৬১০।
৪৮. আবূ দাউদ : ১৩৯৬।
৪৯. মুয়াত্তা মালেক : ৪৭২।
৫০. মুসনাদ আহমদ : ২৩৫৬৯; আবদুর রাযযাক, মুসান্নাফ : ৩০৫৪৯।
২৫. আবূ দাউদ, সুনান : ১৪৭৫; নাসায়ী, সুনান : ১০১৭।
৫২. আবূ দাউদ : ১৩৩৫; মুসনাদ আহমদ : ১৮৩৬৮।
৫৩. আল-ইতকান : ১/২৯৯।
৫৪. আবদুর রাযযাক, মুসান্নাফ : ৪২১০।
৫৫. সূরা আলে-ইমরান : ১৯১।
৫৬. আবূ দাউদ : ১৩৯৬।
৫৭. সূরা আল-ফুরকান : ৩০।
৫৮. তিরমিযী : ২৯১০।
৫৯. আল-ইতকান ফি উলুমিল কুরআন : ৪২৪২।
_________________________________________________________________________________
লেখক: আলী হাসান তৈয়ব
সম্পাদনা : মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী
সূত্র : ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব
আরো পড়ুনঃ কুরআন তিলাওয়াতের ফজিলত
আরো পড়ুনঃ কুরআন শিক্ষা: বিধান, পদ্ধতি ও ফযীলত
আরো পড়ুনঃ কুরআনের কয়েকটি বিশেষ সূরা ও আয়াতের ফজীলত
আরো পড়ুনঃ পবিত্র কুরআন পড়ার ফযীলতের হাদিস সমুহ
আরো পড়ুনঃ
পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না কিন্তু।
আজ আমরা এমন বিষয়ে আলোচনা করব যা আমাদের কল্যাণের গ্যারান্টি দেয়। যা আমাদেরকে রক্ষা করে যাবতীয় ফিতনা থেকে। এতে আছে অতীত-ভবিষ্যতের সংবাদ আর বর্তমানের জীবন-দিশা। এ কোনো হেলাখেলার বিষয় নয়; চূড়ান্ত ও অলঙ্ঘনীয় বিধান। ঔদ্ধত্য দেখিয়ে যে একে পরিহার করবে আল্লাহ তা‘আলা তাকে ধ্বংস করে দেবেন। যে এ ছাড়া অন্য কোথাও জীবনের পাথেয় খুঁজবে আল্লাহ তাকে পথভ্রষ্ট করবেন। এটি আল্লাহর সুদৃঢ় রজ্জু। আল্লাহ তা‘আলার প্রজ্ঞাময় আলোচনা। এটি সরল পথ। এটি থাকলে প্রবৃত্তি মানুষকে সুপথহারা করতে পারে না। এর শব্দোচ্চারণে কারও কষ্ট অনুভূত হয় না। আলিমরা কখনো এর তিলাওয়াত থেকে পরিতুষ্ট হন না। এটি পুরাতন হলেও বাতিল হয় না। এর বিস্ময় ও অলৌকিত্ব কখনো ফুরায় না। যে এ থেকে বলে সে সত্যবাদী। যে এর নির্দেশনা মতো চলে সে প্রতিদান প্রাপ্ত হয়। যে একে দিয়ে বিচার করে সে ইনসাফ করে। যে এর দিকে আহ্বান জানায় সে সুপথের দিকেই ডাকে।
হ্যা, আমি বলছি পবিত্র কুরআনের কথা।
আল্লাহ তা‘আলার মহা প্রজ্ঞাময় বাণীর কথা। আমাদের কর্তব্য এ কুরআন শিক্ষা করা। নিয়মিত এর তিলাওয়াত করা। এ কুরআন নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করা। আমাদের দায়িত্ব নিজ সন্তানদের কুরআন শিক্ষা দেয়া এবং তাদেরকে এর তিলাওয়াত ও ভালোবাসায় অভ্যস্ত হিসেবে গড়ে তোলা।
যাতে এর সাথে তাদের হৃদ্যিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং এর সঙ্গে তাদের মনোসংযোগ ঘটে। এতে করে তাদের চরিত্র হবে পবিত্র ও অপঙ্কিল। তাদের আত্মা ও হৃদয় হবে পরিশুদ্ধ। তারা হবে কুরআনের ধারক ও বাহক। কারণ, একটি শিশু যখন কুরআনের শিক্ষার মধ্য দিয়ে বড় হয়, সে জানতে পারে নামাজে কী পড়ছে। আর শিশুকালে কুরআনের হাফেয হওয়া বড় হয়ে হাফেয
হওয়ার চেয়ে উত্তম। এতে করে তার স্মরণও থাকে ভালো। সে কখনো এ কুরআন ভুলে না।
কারণ, শৈশবে কুরআন শিক্ষা করলে তা তার হৃদয়ে শিলালিপির মতো অঙ্কিত হয়ে যায়।
আমাদের উচিত, আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করা এবং কুরআনের প্রতি গুরুত্ব দেয়া।
আল্লাহ তা‘আলা কালামে মাজিদে ইরশাদ করেন,
ﺇِﻥَّ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳَﺘْﻠُﻮﻥَ ﻛِﺘَﺎﺏَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺃَﻗَﺎﻣُﻮﺍ ﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓَ ﻭَﺃَﻧْﻔَﻘُﻮﺍ ﻣِﻤَّﺎ ﺭَﺯَﻗْﻨَﺎﻫُﻢْ ﺳِﺮًّﺍ ﻭَﻋَﻠَﺎﻧِﻴَﺔً ﻳَﺮْﺟُﻮﻥَ ﺗِﺠَﺎﺭَﺓً ﻟَﻦْ ﺗَﺒُﻮﺭَ ( 29 ) ﻟِﻴُﻮَﻓِّﻴَﻬُﻢْ ﺃُﺟُﻮﺭَﻫُﻢْ ﻭَﻳَﺰِﻳﺪَﻫُﻢْ ﻣِﻦْ ﻓَﻀْﻠِﻪِ ﺇِﻧَّﻪُ ﻏَﻔُﻮﺭٌ ﺷَﻜُﻮﺭٌ ( 30 )
‘নিশ্চয় যারা আল্লাহর কিতাব অধ্যয়ন করে,
সালাত কায়েম করে এবং আল্লাহ যে রিযক দিয়েছেন তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারা এমন ব্যবসার আশা করতে পারে যা কখনো ধ্বংস হবে না। যাতে তিনি তাদেরকে তাদের পূর্ণ প্রতিফল দান করেন এবং নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে আরো বাড়িয়ে দেন। নিশ্চয় তিনি অতি মাশীল,
মহাগুণগ্রাহী।’ [1]
আল্লাহ তা‘আলা আরও ইরশাদ করেন,
ﻭَﺭَﺗِّﻞِ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁَﻥَ ﺗَﺮْﺗِﻴﻠًﺎ ( 4 )
‘আর স্পষ্টভাবে ধীরে ধীরে কুরআন আবৃত্তি কর।’[2]
আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র ইরশাদ করেন,
ﻣِﻦْ ﺃَﻫْﻞِ ﺍﻟْﻜِﺘَﺎﺏِ ﺃُﻣَّﺔٌ ﻗَﺎﺋِﻤَﺔٌ ﻳَﺘْﻠُﻮﻥَ ﺁَﻳَﺎﺕِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺁَﻧَﺎﺀَ ﺍﻟﻠَّﻴْﻞِ ﻭَﻫُﻢْ ﻳَﺴْﺠُﺪُﻭﻥَ
‘আহলে কিতাবের মধ্যে একদল ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। তারা রাতের বেলায় আল্লাহর আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করে এবং তারা সিজদা করে।’[3]
আরও ইরশাদ হয়েছে,
ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳَﺬْﻛُﺮُﻭﻥَ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻗِﻴَﺎﻣًﺎ ﻭَﻗُﻌُﻮﺩًﺍ ﻭَﻋَﻠَﻰ ﺟُﻨُﻮﺑِﻬِﻢْ
‘যারা আল্লাহকে স্মরণ করে দাঁড়িয়ে, বসে ও কাত হয়ে।’[4]
আরও ইরশাদ হয়েছে,
ﺃَﻡْ ﻣَﻦْ ﻫُﻮَ ﻗَﺎﻧِﺖٌ ﺁَﻧَﺎﺀَ ﺍﻟﻠَّﻴْﻞِ ﺳَﺎﺟِﺪًﺍ ﻭَﻗَﺎﺋِﻤًﺎ ﻳَﺤْﺬَﺭُ ﺍﻟْﺂَﺧِﺮَﺓَ ﻭَﻳَﺮْﺟُﻮ ﺭَﺣْﻤَﺔَ ﺭَﺑِّﻪِ
‘যে ব্যক্তি রাতের প্রহরে সিদজাবনত হয়ে ও দাঁড়িয়ে আনুগত্য প্রকাশ করে, আখিরাতকে ভয় করে এবং তার রব-এর রহমত প্রত্যাশা করে (সে কি তার সমান যে এরূপ করে না)।’[5]
উসমান বিন আফফান রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
ﺧَﻴْﺮُﻛُﻢْ ﻣَﻦْ ﺗَﻌَﻠَّﻢَ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥَ ﻭَﻋَﻠَّﻤَﻪُ
‘তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি সর্বোত্তম যে কুরআন শেখে এবং (অপরকে) শেখায়।[6]
আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
ﺍﻟْﻤَﺎﻫِﺮُ ﺑِﺎﻟْﻘُﺮْﺁﻥِ ﻣَﻊَ ﺍﻟﺴَّﻔَﺮَﺓِ ﺍﻟْﻜِﺮَﺍﻡِ ﺍﻟْﺒَﺮَﺭَﺓِ ﻭَﺍﻟَّﺬِﻯ ﻳَﻘْﺮَﺃُ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥَ ﻭَﻳَﺘَﺘَﻌْﺘَﻊُ ﻓِﻴﻪِ ﻭَﻫُﻮَ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺷَﺎﻕٌّ ﻟَﻪُ ﺃَﺟْﺮَﺍﻥِ .
‘কুরআন পাঠে যে অভিজ্ঞ ব্যক্তি কুরআন তিলাওয়াত করে সে সম্মানিত রাসূল ও
পুণ্যত্মা ব্যক্তিদের সঙ্গে থাকবে। আর যে ব্যক্তি তোতলাতে তোতলাতে সক্লেশে কুরআন তিলাওয়াত করবে তার জন্য দ্বিগুণ নেকী লেখা হবে।’[7]
আবু উমামা বাহেলী রা. থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি,
তিনি বলেন,
ﺍﻗْﺮَﺀُﻭﺍ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥَ ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﻳَﺄْﺗِﻰ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ ﺷَﻔِﻴﻌًﺎ ﻷَﺻْﺤَﺎﺑِﻪِ
‘তোমরা কুরআন তিলাওয়াত করো। কেননা তা কিয়ামতের দিন তিলাওয়াতকারীর জন্য সুপারিশকারীরূপে আবির্ভুত হবে।’[8]
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
ﻣَﺎ ﺍﺟْﺘَﻤَﻊَ ﻗَﻮْﻡٌ ﻓِﻰ ﺑَﻴْﺖٍ ﻣِﻦْ ﺑُﻴُﻮﺕِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟَﻰ ﻳَﺘْﻠُﻮﻥَ ﻛِﺘَﺎﺏَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﻳَﺘَﺪَﺍﺭَﺳُﻮﻧَﻪُ ﺑَﻴْﻨَﻬُﻢْ ﺇِﻻَّ ﻧَﺰَﻟَﺖْ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢُ ﺍﻟﺴَّﻜِﻴﻨَﺔُ ﻭَﻏَﺸِﻴَﺘْﻬُﻢُ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﺔُ ﻭَﺣَﻔَّﺘْﻬُﻢُ ﺍﻟْﻤَﻼَﺋِﻜَﺔُ ﻭَﺫَﻛَﺮَﻫُﻢُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻓِﻴﻤَﻦْ ﻋِﻨْﺪَﻩُ .
‘যখন কোনো দল আল্লাহর কোনো ঘরে (মসজিদে) একত্রিত হয়ে কুরআন তিলাওয়াত করে এবং একে অপরকে তা থেকে শিক্ষা দেয়, তাদের ওপর সকীনা নাজিল হয়, রহমত তাদের আচ্ছন্ন করে ফেলে, ফেরেশতারা তাদের বেষ্টন করে নেয় এবং আল্লাহ তা‘আলা তাঁর কাছে যারা আছেন তাদের কাছে এদের আলোচনা করেন।’[9]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও ইরশাদ করেন,
ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻰ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ ﻋَﻦِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻰِّ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﻗَﺎﻝَ « ﻳَﺠِﻰﺀُ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥُ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ ﻓَﻴَﻘُﻮﻝُ ﻳَﺎ ﺭَﺏِّ ﺣَﻠِّﻪِ ﻓَﻴُﻠْﺒَﺲُ ﺗَﺎﺝَ ﺍﻟْﻜَﺮَﺍﻣَﺔِ ﺛُﻢَّ ﻳَﻘُﻮﻝُ ﻳَﺎ ﺭَﺏِّ ﺯِﺩْﻩُ ﻓَﻴُﻠْﺒَﺲُ ﺣُﻠَّﺔَ ﺍﻟْﻜَﺮَﺍﻣَﺔِ ﺛُﻢَّ ﻳَﻘُﻮﻝُ ﻳَﺎ ﺭَﺏِّ ﺍﺭْﺽَ ﻋَﻨْﻪُ ﻓَﻴَﺮْﺿَﻰ ﻋَﻨْﻪُ ﻓَﻴُﻘَﺎﻝُ ﻟَﻪُ ﺍﻗْﺮَﺃْ ﻭَﺍﺭْﻕَ ﻭَﺗُﺰَﺍﺩُ ﺑِﻜُﻞِّ ﺁﻳَﺔٍ ﺣَﺴَﻨَﺔً » . ﻗَﺎﻝَ ﺃَﺑُﻮ ﻋِﻴﺴَﻰ ﻫَﺬَﺍ ﺣَﺪِﻳﺚٌ ﺣَﺴَﻦٌ ﺻَﺤِﻴﺢٌ .
‘কিয়ামতের দিন কুরআন আবির্ভূত হয়ে বলবে,
হে রব, (তিলাওয়াতকারীকে) আপনি সুসজ্জিত করুন। তখন তাকে সম্মানের মুকুট পরানো হবে। তারপর বলবে, হে রব, আপনি আরও বৃদ্ধি করুন। তখন তাকে সম্মানের পোশাক পরানো হবে। অতপর বলবে, হে রব,
আপনি তার ব্যাপারে সন্তুষ্ট হয়ে যান। তখন আল্লাহ তা‘আলা তার ওপর সন্তুষ্ট হয়ে যাবেন। তারপর বলবে, তুমি পড় এবং ওপরে উঠো। এভাবে প্রত্যেক আয়াতের বিনিময়ে তার মর্যাদা বৃদ্ধি করা হবে।’[10]
এই হলো কুরআন তিলাওয়াতের কিছু ফযীলত এবং তিলাওয়াতকারীর নেকীর কিছু বিবরণ। এটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অন্যতম অসিয়ত। আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসিয়ত করে বলেন,
ﺃُﻭﺻِﻴﻚَ ﺑِﺘَﻘْﻮَﻯ ﺍﻟﻠﻪِ ، ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﺭَﺃْﺱُ ﻛُﻞِّ ﺷَﻲْﺀٍ ، ﻭَﻋَﻠَﻴْﻚَ ﺑِﺎﻟْﺠِﻬَﺎﺩِ ، ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﺭَﻫْﺒَﺎﻧِﻴَّﺔُ ﺍﻹِِﺳْﻼَﻡِ ، ﻭَﻋَﻠَﻴْﻚَ ﺑِﺬِﻛْﺮِ ﺍﻟﻠﻪِ ﻭَﺗِﻼَﻭَﺓِ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥِ ، ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﺭَﻭْﺣُﻚَ ﻓِﻲ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﺀِ ، ﻭَﺫِﻛْﺮُﻙَ ﻓِﻲ ﺍﻷَﺭْﺽِ .
‘আমি তোমাকে আল্লাহ-ভীতির উপদেশ দিচ্ছি, কারণ তা প্রত্যেক বস্তুর মূল। তোমার জন্য জিহাদে অংশ নেয়াও আবশ্যক, কারণ তা ইসলামের বৈরাগ্য। তোমার জন্য আরও জরুরি আল্লাহ তা‘আলার যিকির ও কুরআন তিলাওয়াত করা, কারণ তা আসমানে তোমার সুবাস এবং জমিনে তোমার আলোচনা।’[11]
কুরআন কিন্তু যেনতেন কোনো গ্রন্থ না।
এটি পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ। অতএব এটাকে আমরা অন্য দশটি বইয়ের মতো পড়তে পারি না। এটি পাঠ করার আগে-পিছে কিছু আদবের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। নইলে তা আমাদের জন্য নেকীর পরিবর্তে পাপই বয়ে আনবে। কুরআন পড়তে গিয়ে তাই বেশ কিছু আদবের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। চলুন এবার আমরা সেসব আদব সম্পর্কে জেনে নেই।
প্রথম আদব : নিয়ত শুদ্ধ করা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিয়ামতের দিন তিন শ্রেণীর লোকের ওপর আগুনের শাস্তি কঠোর করা হবে বলে জানিয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন ক্বারী।
আর কুরআন তিলাওয়াতকারী ক্বারী সাহেবকে আগুনের কঠিন শাস্তি দেয়া হবে এ কারণে যে তিনি ইখলাসের সাথে কুরআন তিলাওয়াত করতেন না। অনুরূপভাবে কিয়ামতের দিন প্রথম যে তিন শ্রেণীর লোককে তীব্র অগ্নিযাতনায় নিক্ষেপ করা হবে তাদের মধ্যেও একজন এই ক্বারী। আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
ﺇﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﺗَﺒَﺎﺭَﻙَ ﻭَﺗَﻌَﺎﻟَﻰ ﺇِﺫَﺍ ﻛَﺎﻥَ ﻳَﻮْﻡُ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ ﻳَﻨْﺰِﻝُ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟْﻌِﺒَﺎﺩِ ﻟِﻴَﻘْﻀِﻰَ ﺑَﻴْﻨَﻬُﻢْ ﻭَﻛُﻞُّ ﺃُﻣَّﺔٍ ﺟَﺎﺛِﻴَﺔٌ ﻓَﺄَﻭَّﻝُ ﻣَﻦْ ﻳَﺪْﻋُﻮ ﺑِﻪِ ﺭَﺟُﻞٌ ﺟَﻤَﻊَ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥَ ﻭَﺭَﺟُﻞٌ ﻗُﺘِﻞَ ﻓِﻰ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺭَﺟُﻞٌ ﻛَﺜِﻴﺮُ ﺍﻟْﻤَﺎﻝِ ﻓَﻴَﻘُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻟِﻠْﻘَﺎﺭِﺉِ ﺃَﻟَﻢْ ﺃُﻋَﻠِّﻤْﻚَ ﻣَﺎ ﺃَﻧْﺰَﻟْﺖُ ﻋَﻠَﻰ ﺭَﺳُﻮﻟِﻰ ﻗَﺎﻝَ ﺑَﻠَﻰ ﻳَﺎ ﺭَﺏِّ . ﻗَﺎﻝَ ﻓَﻤَﺎﺫَﺍ ﻋَﻤِﻠْﺖَ ﻓِﻴﻤَﺎ ﻋُﻠِّﻤْﺖَ ﻗَﺎﻝَ ﻛُﻨْﺖُ ﺃَﻗُﻮﻡُ ﺑِﻪِ ﺁﻧَﺎﺀَ ﺍﻟﻠَّﻴْﻞِ ﻭَﺁﻧَﺎﺀَ ﺍﻟﻨَّﻬَﺎﺭِ . ﻓَﻴَﻘُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻟَﻪُ ﻛَﺬَﺑْﺖَ ﻭَﺗَﻘُﻮﻝُ ﻟَﻪُ ﺍﻟْﻤَﻼَﺋِﻜَﺔُ ﻛَﺬَﺑْﺖَ ﻭَﻳَﻘُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻟَﻪُ ﺑَﻞْ ﺃَﺭَﺩْﺕَ ﺃَﻥْ ﻳُﻘَﺎﻝَ ﺇِﻥَّ ﻓُﻼَﻧًﺎ ﻗَﺎﺭِﺉٌ ﻓَﻘَﺪْ ﻗِﻴﻞَ ﺫَﺍﻙَ .
‘যখন কিয়ামতের দিন হবে, আল্লাহ তাবারাকা ওয়াতা‘আলা তাঁর বান্দাদের বিচারের উদ্দেশে আবির্ভূত হবেন। তখন প্রতিটি জাতি ভয়ে নতজানু হয়ে পড়বে।
বান্দাদের মধ্যে প্রথমে ডাকা হবে কুরআনের বাহক, আল্লাহর পথে শহীদ ও সম্পদশালী ব্যক্তিকে। ক্বারীর উদ্দেশে
আল্লাহ বলবেন, আমি কি তোমাকে তা শিখায়নি যা আমার রাসূলের ওপর নাজিল করেছিলাম? বলবে, জি, হে আমার রব।
আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, সুতরাং তুমি যা শিখেছো তার কী আমল করেছো? সে বলবে,
আমি দিন-রাতের নানা প্রহরে নামাজে এ কুরআন তিলাওয়াত করেছি। আল্লাহ বলবেন,
তুমি মিথ্যা বলেছো। ফেরেশতারাও তার উদ্দেশে বলবে, তুমি মিথ্যা বলেছো। তাকে লক্ষ্য করে আল্লাহ বলবেন, বরং তোমার অভিপ্রায় ছিল লোকেরা তোমাকে ক্বারী বলে ডাকবে। আর তা তো তোমাকে বলা হয়েছেই। ফলে তুমি দুনিয়াতেই তোমার প্রতিদান পেয়ে গেছো। তুমি দুনিয়াতেই তোমার প্রতিদান পেয়ে গেছো।’[12]
(হাদীসের পরের অংশে রয়েছে, এরপর
তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
আল্লাহ তা‘আলা আমাদের হেফাজত করুন।)
অতএব কুরআন তিলাওয়াত করার আগে প্রথম আমাদের নিয়তকে বিশুদ্ধ করতে হবে।
দ্বিতীয় আদব : পবিত্র হয়ে অযু অবস্থায় কুরআন তিলাওয়াত করা। অযু ছাড়াও কুরআন পড়া যাবে; কিন্তু তা অযু অবস্থায় পড়ার সমান হতে পারে না।
তৃতীয় আদব : তিলাওয়াতের আগে মিসওয়াক করা। আলী রা. থেকে বর্ণিত একটি সহীহ হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
ﻋَﻦْ ﻋَﻠِﻲِّ ﺑْﻦِ ﺃَﺑِﻲ ﻃَﺎﻟِﺐٍ ، ﻗَﺎﻝَ : ﺇِﻥَّ ﺃَﻓْﻮَﺍﻫَﻜُﻢْ ﻃُﺮُﻕٌ ﻟِﻠْﻘُﺮْﺁﻥِ ، ﻓَﻄَﻴِّﺒُﻮﻫَﺎ ﺑِﺎﻟﺴِّﻮَﺍﻙِ .
‘তোমাদের মুখগুলো কুরআনের পথ। তাই সেগুলোকে মিসওয়াক দ্বারা সুরভিত করো।’[13]
তিনি আরও ইরশাদ করেন,
ﺇِﻥَّ ﺍﻟْﻌَﺒْﺪَ ﺇِﺫَﺍ ﻗَﺎﻡَ ﻳُﺼَﻠِّﻰ ﺃَﺗَﺎﻩُ ﺍﻟْﻤَﻠَﻚُ ﻓَﻘَﺎﻡَ ﺧَﻠْﻔَﻪُ ﻳَﺴْﺘَﻤِﻊُ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥَ ﻭَﻳَﺪْﻧُﻮ ، ﻓَﻼَ ﻳَﺰَﺍﻝُ ﻳَﺴْﺘَﻤِﻊُ ﻭَﻳَﺪْﻧُﻮ ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﻀَﻊَ ﻓَﺎﻩُ ﻋَﻠَﻰ ﻓِﻴﻪِ ، ﻓَﻼَ ﻳَﻘْﺮَﺃُ ﺁﻳَﺔً ﺇِﻻَّ ﻛَﺎﻧَﺖْ ﻓِﻰ ﺟَﻮْﻑِ ﺍﻟْﻤَﻠَﻚِ .
‘যখন কোনো বান্দা নামাজে দাঁড়ায়, তখন ফেরেশতা আগমন করেন এবং তার পেছনে দাঁড়িয়ে যান। তিনি মনোযোগসহ তিলাওয়াত শোনেন আর এগিয়ে আসেন।
এভাবে সে পড়তে থাকে আর তিনি এগোতে থাকেন। এমনকি তিনি তাঁর মুখ স্থাপন করেন ওই তিলাওয়াতকারীর মুখের ওপর। সে একটি আয়াত তিলাওয়াত করে তা ফেরেশতার পেটে প্রবেশ করে।’[14]
অতএব তিলাওয়াতকারীর উচিৎ মিসওয়াক করে তিলাওয়াত করা যাতে ফেরেশতা তার মুখের গন্ধে কষ্ট না পান।
চতুর্থ আদব : তিলাওয়াতের শুরুতে আউযুবিল্লাহ পড়া। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
ﻓَﺈِﺫَﺍ ﻗَﺮَﺃْﺕَ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁَﻥَ ﻓَﺎﺳْﺘَﻌِﺬْ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺸَّﻴْﻄَﺎﻥِ ﺍﻟﺮَّﺟِﻴﻢِ ( 98 )
‘সুতরাং যখন তুমি কুরআন পড়বে তখন আল্লাহর কাছে বিতাড়িত শয়তান হতে পানাহ চাও।’[15]
আয়াতের অর্থ কুরআন পড়ার শুরুতে। কতিপয় বিজ্ঞ আলিম বলেন, এ আয়াতের দাবী অনুযায়ী কুরআন তিলাওয়াতের সূচনায়
‘তাআউউয’ (আউযুবিল্লাহ) পড়া ওয়াজিব।
অবশ্য আলিমদের সর্বসম্মত মত হলো এটি মুস্তাহাব।
পঞ্চম আদব : বিসমিল্লাহ পড়া।
তিলাওয়াতকারীর উচিত সূরা তাওবা ছাড়া সকল সূরার শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়া।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত যে তিনি এক সূরা শেষ করে বিসমিল্লাহ বলে আরেক সূরা শুরু করতেন। কেবল সূরা আনফাল শেষ করে তাওবা শুরু করার সময় বিসমিল্লাহ পড়তেন না।
ষষ্ঠ আদব : তারতীলের সঙ্গে কুরআন পড়া।
কারণ আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
ﻭَﺭَﺗِّﻞِ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁَﻥَ ﺗَﺮْﺗِﻴﻠًﺎ ( 4 )
তোমরা তারতীলের সঙ্গে কুরআন তিলাওয়াত কর।’[16]
ﻋَﻦْ ﺑَﻌْﺾِ ﺃَﺯْﻭَﺍﺝِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ؛ ﺃَﻧَّﻬَﺎ ﺳُﺌِﻠَﺖْ ﻋَﻦْ ﻗِﺮَﺍﺀَﺓِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ؟ ﻓَﻘَﺎﻟَﺖْ : ﺇﻧَّﻜُﻢْ ﻻَ ﺗَﺴْﺘَﻄِﻴﻌُﻮﻧَﻬَﺎ ، ﻓَﻘِﻴﻞَ ﻟَﻬَﺎ : ﺃَﺧْﺒِﺮِﻳﻨَﺎ ﺑِﻬَﺎ ، ﻓَﻘَﺮَﺃَﺕْ ﻗِﺮَﺍﺀَﺓً ﺗَﺮَﺳَّﻠَﺖْ ﻓِﻴﻬَﺎ .
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এক স্ত্রীকে তাঁর তিলাওয়াতের ধরন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, তোমরা সেভাবে পড়তে পারবে না। বলা হলো, আপনি আমাদের তা কেমন বলুন। তখন তিনি একটি কিরআত পড়লেন। তিনি স্পষ্টভাবে ধীরে ধীরে পড়লেন।[17]
ﻋَﻦْ ﻗَﺘَﺎﺩَﺓَ ﻗَﺎﻝَ ﺳُﺌِﻞَ ﺃَﻧَﺲٌ ﻛَﻴْﻒَ ﻛَﺎﻧَﺖْ ﻗِﺮَﺍﺀَﺓُ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻛَﺎﻧَﺖْ ﻣَﺪًّﺍ ﺛُﻢَّ ﻗَﺮَﺃَ ﺑِﺴْﻢِ ﺍﻟﻠﻪِ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﻦِ ﺍﻟﺮَّﺣِﻴﻢِ ﻳَﻤُﺪُّ ﺑِﺒِﺴْﻢِ ﺍﻟﻠﻪِ ﻭَﻳَﻤُﺪُّ ﺑِﺎﻟﺮَّﺣْﻤَﻦِ ﻭَﻳَﻤُﺪُّ ﺑِﺎﻟﺮَّﺣِﻴﻢِ .
কাতাদা রা. থেকে বর্ণিত, আনাস রা. কে একবার জিজ্ঞেস করা হলো, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তিলাওয়াত কেমন ছিলো? তিনি বলেন,
তিনি টেনে টেনে (মদসহ) পড়তেন। এরপর তিনি পড়ে শোনান, ﺑﺴﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺍﻟﺮﺣﻴﻢ এ আয়াতে তিনি ﺍﻟﻠﻪ শব্দ টেনে পড়েন, ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ শব্দ টেনে পড়েন এবং ﺍﻟﺮﺣﻴﻢ শব্দ টেনে পড়েন।[18]
ইবন মাসউদ রা. কে এক ব্যক্তি বলল,
ﺇِﻧِّﻰ ﻷَﻗْﺮَﺃُ ﺍﻟْﻤُﻔَﺼَّﻞَ ﻓِﻰ ﺭَﻛْﻌَﺔٍ . ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻋَﺒْﺪُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻫَﺬًّﺍ ﻛَﻬَﺬِّ ﺍﻟﺸِّﻌْﺮِ ﺇِﻥَّ ﺃَﻗْﻮَﺍﻣًﺎ ﻳَﻘْﺮَﺀُﻭﻥَ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥَ ﻻَ ﻳُﺠَﺎﻭِﺯُ ﺗَﺮَﺍﻗِﻴَﻬُﻢْ ﻭَﻟَﻜِﻦْ ﺇِﺫَﺍ ﻭَﻗَﻊَ ﻓِﻰ ﺍﻟْﻘَﻠْﺐِ ﻓَﺮَﺳَﺦَ ﻓِﻴﻪِ ﻧَﻔَﻊَ
আমি এক রাক‘আতে ‘মুফাসসালে’র একটি সূরা পড়ি। আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ বললেন,
কাব্যের মতো স্বচ্ছন্দে!? (তিনি তার পড়ার দ্রুতগতির কথা ভেবে বিস্মিত হলেন।)
নিশ্চয় একটি সম্প্রদায় কুরআন তিলাওয়াত করে অথচ সে তিলাওয়াত তাদের কণ্ঠাস্থি অতিক্রম করে না। কিন্তু তা যখন অন্তরে পতিত হয় এবং তাতে গেঁথে যায়, তখন তা উপকারে আসে।[19]
অন্য বর্ণনায় রয়েছে ইবন মাসঊদ রা. বলেন,
ﻻَ ﺗَﻨْﺜُﺮُﻭﻩُ ﻧَﺜْﺮَ ﺍﻟﺪَّﻗْﻞ ﻭَﻻَ ﺗَﻬُﺬُّﻭﻩُ ﻛَﻬَﺬِّ ﺍﻟﺸِّﻌْﺮِ ، ﻗِﻔُﻮﺍ ﻋِﻨْﺪَ ﻋَﺠَﺎﺋِﺒِﻪِ ، ﻭَﺣَﺮِّﻛُﻮﺍ ﺑِﻪِ ﺍﻟْﻘُﻠُﻮﺏَ ، ﻭَﻻَ ﻳَﻜُﻮﻥُ ﻫَﻢُّ ﺃَﺣَﺪِﻛُﻢْ ﺁﺧِﺮَ ﺍﻟﺴُّﻮﺭَﺓِ .
‘তোমরা একে (কুরআন) নষ্ট খেজুরের মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ো না কিংবা কবিতার মতো গতিময় ছন্দেও পড়ো না। বরং এর যেখানে বিস্ময়ের কথা আছে সেখানে থামো এবং তা দিয়ে হৃদয়কে আন্দোলিত করো। আর সূরার সমাপ্তিতে পৌঁছা যেন তোমাদের কারো লক্ষ্য না হয়।’[20]
বলাবাহুল্য, তারতীলের সঙ্গে তিলাওয়াত করা কুরআন নিয়ে চিন্তা করা এবং তার দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক।
সপ্তম আদব : সুন্দর করে মনের মাধুরী মিশিয়ে কুরআন পড়া।
ﻋَﻦِ ﺍﻟْﺒَﺮَﺍﺀِ ﻗَﺎﻝَ : ﺳَﻤِﻌْﺖُ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲَّ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳَﻘْﺮَﺃُ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻌِﺸَﺎﺀِ } ﻭَﺍﻟﺘِّﻴﻦِ ﻭَﺍﻟﺰَّﻳْﺘُﻮﻥِ { ﻓَﻤَﺎ ﺳَﻤِﻌْﺖُ ﺃَﺣَﺪًﺍ ﺃَﺣْﺴَﻦَ ﺻَﻮْﺗًﺎ ، ﺃَﻭْ ﻗِﺮَﺍﺀَﺓً ﻣِﻨْﻪُ .
বারা’ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে শুনেছি, তিনি এশার নামাজে সূরা তীন পড়েছেন। আমি তার চেয়ে সুন্দর কণ্ঠে আর কাউকে তিলাওয়াত করতে শুনিনি।’[21]
ﻋَﻦِ ﺍﻟْﺒَﺮَﺍﺀِ ﺑْﻦِ ﻋَﺎﺯِﺏٍ ، ﻗَﺎﻝَ : ﺳَﻤِﻌْﺖُ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳَﻘُﻮﻝُ : ﺣَﺴِّﻨُﻮﺍ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥَ ﺑِﺄَﺻْﻮَﺍﺗِﻜُﻢْ ، ﻓَﺈِﻥَّ ﺍﻟﺼَّﻮْﺕَ ﺍﻟْﺤَﺴَﻦَ ﻳَﺰِﻳﺪُ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥَ ﺣُﺴْﻨًﺎ
বারা’ বিন আযেব থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি তিনি ইরশাদ করেন, ‘তোমরা নিজ কণ্ঠ দ্বারা কুরআনকে সৌন্দর্য দান করো। কারণ সুরেলা কণ্ঠ কুরআনের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।’[22]
অপর বর্ণনায় তিনি বলেন,
ﺇِﻥَّ ﺣُﺴْﻦَ ﺍﻟﺼَّﻮْﺕِ ﺯِﻳﻨَﺔُ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥِ .
‘নিশ্চয় সুকণ্ঠ কুরআনের সৌন্দর্য।’[23]
উল্লেখিত উভয় হাদীসই বিশুদ্ধ। উল্লেখ্য যে, সুকণ্ঠ দিয়ে তিলাওয়াতের মধ্যে রয়েছে একে সৌন্দর্য দান, শ্রীবৃদ্ধিকরণ ও নতুনত্ব আনয়ন।
অষ্টম আদব : সুরারোপ করে কুরআন তিলাওয়াত করা। এটি সুন্দর করে কুরআন তেলাওয়াতেরই অংশবিশেষ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
ﻟَﻴْﺲَ ﻣِﻨَّﺎ ﻣَﻦْ ﻟَﻢْ ﻳَﺘَﻐَﻦَّ ﺑِﺎﻟْﻘُﺮْﺁﻥِ
‘সে আমার উম্মত নয় যে সুরসহযোগে কুরআন পড়ে না।’[24]
অন্যত্র তিনি ইরশাদ করেন,
ﻣَﺎ ﺃَﺫِﻥَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻟِﺸَﻰْﺀٍ ﻣَﺎ ﺃَﺫِﻥَ ﻟِﻨَﺒِﻰٍّ ﺣَﺴَﻦِ ﺍﻟﺼَّﻮْﺕِ ﻳَﺘَﻐَﻨَّﻰ ﺑِﺎﻟْﻘُﺮْﺁﻥِ ﻳَﺠْﻬَﺮُ ﺑِﻪِ .
‘আল্লাহ তা‘আলা কোনো নবীকে এতটুকু সুর দিয়ে পড়ার অনুমতি দেননি যতোটা দিয়েছেন নবীকে কুরআন তিলাওয়াতে সুরারোপ করার অনুমতি, যা তিনি সরবে পড়েন।’[25]
অতএব বুঝা গেল সুর দিয়ে কুরআন তিলাওয়াত করা কুরআন তিলাওয়াতের আদবের অন্তর্ভুক্ত এবং তা মুস্তাহাব।
নবম আদব : উচ্চারণে জোর দিয়ে পড়া।
অর্থাৎ তিলাওয়াতকারী পুরুষ হলে মেয়েদের মতো কণ্ঠ মোলায়েম করে পড়বে না। তদ্রুপ তিলাওয়াতকারী নারী হলে পুরুষের মতো করে উচ্চস্বরে পড়বে না।
প্রত্যেকে নিজের স্বাভাবিক স্বরে কুরআন পড়বে। আল্লাহ তা‘আলার পবিত্র গ্রন্থ আবৃত্তি করতে গিয়ে কেউ কারও নকল করবে না।
দশম আদব : আয়াত শেষে ওয়াকফ করা।
কুরআন শরীফ তিলাওয়াতের আরেকটি আদব হলো, আয়াতের সমাপ্তিস্থলে ওয়াকফ করা।
যদিও তা অর্থগত দিক থেকে পরবর্তী আয়াতের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, ‘তিনি এক আয়াত এক আয়াত করে কেটে কেটে পড়তেন। ﺍﻟْﺤَﻤْﺪُ ﻟِﻠَّﻪِ ﺭَﺏِّ ﺍﻟْﻌَﺎﻟَﻤِﻴﻦَ বলে ওয়াকফ করতেন। তারপর ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﻦِ ﺍﻟﺮَّﺣِﻴﻢِ বলে ওয়াকফ করতেন। [26] (এভাবে তিনি তিলাওয়াত করতেন।)
উম্মে সালামা রা. কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তিলাওয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘তিনি এক আয়াত এক আয়াত করে টুকরো টুকরো করে পড়তেন : [27]
ﺑِﺴْﻢِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﻦِ ﺍﻟﺮَّﺣِﻴﻢِ ( 1 ) ﺍﻟْﺤَﻤْﺪُ ﻟِﻠَّﻪِ ﺭَﺏِّ ﺍﻟْﻌَﺎﻟَﻤِﻴﻦَ ( 2 )
একাদশ আদব : একজন আরেকজনের ওপর গলা চড়িয়ে তিলাওয়াত না করা। কারণ এভাবে স্বর উঁচু করার মধ্য দিয়ে অন্যকে কষ্ট দেয়া হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
ﺃَﻻَ ﺇِﻥَّ ﻛُﻠَّﻜُﻢْ ﻣُﻨَﺎﺝٍ ﺭَﺑَّﻪُ ﻓَﻼَ ﻳُﺆْﺫِﻳَﻦَّ ﺑَﻌْﻀُﻜُﻢْ ﺑَﻌْﻀًﺎ ﻭَﻻَ ﻳَﺮْﻓَﻊْ ﺑَﻌْﻀُﻜُﻢْ ﻋَﻠَﻰ ﺑَﻌْﺾٍ ﻓِﻰ ﺍﻟْﻘِﺮَﺍﺀَﺓِ .
‘মনে রেখো, তোমরা সবাই আপন রবের সঙ্গে সঙ্গোপনে কথা বলছো। অতএব একে অপরকে কষ্ট দেবে না। একজন অপরের ওপর গলা চড়িয়ে তিলাওয়াত করবে না।’[28]
দ্বাদশ আদব : রাতে ঘুম পেলে বা ঝিমুলি এলে তিলাওয়াত থেকে বিরত থাকা। আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
ﺇِﺫَﺍ ﻗَﺎﻡَ ﺃَﺣَﺪُﻛُﻢْ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻠَّﻴْﻞِ ﻓَﺎﺳْﺘَﻌْﺠَﻢَ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥُ ﻋَﻠَﻰ ﻟِﺴَﺎﻧِﻪِ ﻓَﻠَﻢْ ﻳَﺪْﺭِ ﻣَﺎ ﻳَﻘُﻮﻝُ ﻓَﻠْﻴَﻀْﻄَﺠِﻊْ .
‘যখন তোমাদের কেউ রাতে নামাজ পড়ে,
ফলে তার জিহ্বায় কুরআন এমনভাবে জড়িয়ে আসে যে সে কী পড়ছে তা টের না পায়,
তাহলে সে যেন শুয়ে পড়ে।’[29]
অর্থাৎ তার উচিত এমতাবস্থায় নামাজ না পড়ে বিছানায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়া। যাতে তার মুখে কুরআন ও অন্য কোনো শব্দের মিশ্রণ না ঘটে এবং কুরআনের আয়াত এলোমেলো হয়ে না যায়।
ত্রয়োদশ আদব : ফযীলতপূর্ণ সূরাগুলো ভালোভাবে শিক্ষা করা এবং সেগুলো বেশি বেশি তিলাওয়াত করা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
ﺃَﻳَﻌْﺠِﺰُ ﺃَﺣَﺪُﻛُﻢْ ﺃَﻥْ ﻳَﻘْﺮَﺃَ ﻓِﻰ ﻟَﻴْﻠَﺔٍ ﺛُﻠُﺚَ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥِ . ﻗَﺎﻟُﻮﺍ : ﻭَﻛَﻴْﻒَ ﻳَﻘْﺮَﺃُ ﺛُﻠُﺚَ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥِ ﻗَﺎﻝَ : ( ﻗُﻞْ ﻫُﻮَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺃَﺣَﺪٌ ) ﻳَﻌْﺪِﻝُ ﺛُﻠُﺚَ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥِ .
‘তোমাদের কেউ কি রাত্রিকালে কুরআনের এক তৃতীয়াংশ তিলাওয়াতে অক্ষম? তারা বললেন, কুরআনের এক তৃতীয়াংশ কিভাবে পড়া পড়বে! তিনি বললেন, ﻗُﻞْ ﻫُﻮَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺃَﺣَﺪٌ (সূরা ইখলাস) কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমতুল্য।’[30]
ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻰ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ ﻗَﺎﻝَ ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - « ﺍﺣْﺸِﺪُﻭﺍ ﻓَﺈِﻧِّﻰ ﺳَﺄَﻗْﺮَﺃُ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﺛُﻠُﺚَ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥِ » . ﻓَﺤَﺸَﺪَ ﻣَﻦْ ﺣَﺸَﺪَ ﺛُﻢَّ ﺧَﺮَﺝَ ﻧَﺒِﻰُّ ﺍﻟﻠَّﻪِ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﻓَﻘَﺮَﺃَ ( ﻗُﻞْ ﻫُﻮَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺃَﺣَﺪٌ ) ﺛُﻢَّ ﺩَﺧَﻞَ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺑَﻌْﻀُﻨَﺎ ﻟِﺒَﻌْﺾٍ ﺇِﻧِّﻰ ﺃُﺭَﻯ ﻫَﺬَﺍ ﺧَﺒَﺮٌ ﺟَﺎﺀَﻩُ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﺀِ ﻓَﺬَﺍﻙَ ﺍﻟَّﺬِﻯ ﺃَﺩْﺧَﻠَﻪُ . ﺛُﻢَّ ﺧَﺮَﺝَ ﻧَﺒِﻰُّ ﺍﻟﻠَّﻪِ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﻓَﻘَﺎﻝَ « ﺇِﻧِّﻰ ﻗُﻠْﺖُ ﻟَﻜُﻢْ ﺳَﺄَﻗْﺮَﺃُ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﺛُﻠُﺚَ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥِ ﺃَﻻَ ﺇِﻧَّﻬَﺎ ﺗَﻌْﺪِﻝُ ﺛُﻠُﺚَ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥِ » .
আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমরা (লোকজনকে) একত্রিত করো। আমি তোমাদের সামনে কুরআনের এক তৃতীয়াংশ তিলাওয়াত করবো। ফলে সাহাবীদের মধ্যে যারা ছিলেন সমবেত হলেন। অতপর তিনি তাঁদের সামনে ﻗُﻞْ ﻫُﻮَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺃَﺣَﺪٌ (সূরা ইখলাস)
পড়লেন। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে প্রবেশ করলেন। তখন আমরা একে অপরকে বলতে লাগলাম, এটা বোধ হয় আসমান থেকে আসা কোনো খবর, যা সংগ্রহ করতে তিনি ভেতরে প্রবেশ করেন। এক্ষণে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবার বের হলেন। এবং বললেন, আমি তোমাদের বলেছি, তোমাদের সামনে কুরআনের এক তৃতীয়াংশ তিলাওয়াত করবো। শুনে রাখো, সেটি কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান।’[31]
অতএব যেসব সূরা ও আয়াত সম্পর্কে অধিক ফযীলত ও বেশি নেকীর কথা বর্ণিত হয়েছে এবং যেগুলো ভালোভাবে শেখা ও বেশি বেশি পড়া দরকার তার মধ্যে রয়েছে,
শুক্রবার ফজর নামাজে সূরা আলিফ-লাম-সিজদাহ পড়া, ঘুমানোর আগে সূরা মুলক এবং ফরজ নামাজের পর সূরা নাস, সূরা ফালাক ও আয়াতুল কুরসী পড়া।
চতুর্দশ আদব : রুকূ ও সিজদায় তিলাওয়াত না করা। সহীহ হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﺇِﻧَّﻪُ ﻟَﻢْ ﻳَﺒْﻖَ ﻣِﻦْ ﻣُﺒَﺸِّﺮَﺍﺕِ ﺍﻟﻨُّﺒُﻮَّﺓِ ﺇِﻻَّ ﺍﻟﺮُّﺅْﻳَﺎ ﺍﻟﺼَّﺎﻟِﺤَﺔُ ﻳَﺮَﺍﻫَﺎ ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻢُ ﺃَﻭْ ﺗُﺮَﻯ ﻟَﻪُ ﺃَﻻَ ﻭَﺇِﻧِّﻰ ﻧُﻬِﻴﺖُ ﺃَﻥْ ﺃَﻗْﺮَﺃَ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥَ ﺭَﺍﻛِﻌًﺎ ﺃَﻭْ ﺳَﺎﺟِﺪًﺍ ﻓَﺄَﻣَّﺎ ﺍﻟﺮُّﻛُﻮﻉُ ﻓَﻌَﻈِّﻤُﻮﺍ ﻓِﻴﻪِ ﺍﻟﺮَّﺏَّ ﻋَﺰَّ ﻭَﺟَﻞَّ ﻭَﺃَﻣَّﺎ ﺍﻟﺴُّﺠُﻮﺩُ ﻓَﺎﺟْﺘَﻬِﺪُﻭﺍ ﻓِﻰ ﺍﻟﺪُّﻋَﺎﺀِ ﻓَﻘَﻤِﻦٌ ﺃَﻥْ ﻳُﺴْﺘَﺠَﺎﺏَ ﻟَﻜُﻢْ .
‘হে লোকসকল, নবুওয়াতের সুসংবাদের মধ্যে কেবল সুন্দর স্বপ্নগুলোই অবশিষ্ট আছে, যা একজন মুসলমান দেখে বা তাকে দেখানো হয়। জেনো রাখো, আমাকে রুকূ ও সিজদায় কুরআন পড়তে নিষেধ করা হয়েছে। রুকূতে রবের বড়ত্ব ও মহত্ব বর্ণনা করবে ( ﺳﺒﺤﺎﻥ ﺭﺑﻲ ﺍﻟﻌﻈﻴﻢ পড়বে) আর সিজদায় বেশি বেশি দু‘আয় সচেষ্ট হবে। তবে তা কবূলের অধিক যোগ্য বিবেচিত হবে।’[32]
এর হিকমত বা রহস্য বর্ণনা করতে গিয়ে শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়া রহ. বলেন, ‘রুকূ ও সিজদা নতি প্রকাশের জায়গা। তাই নতি প্রকাশের স্থানে কুরআন না পড়া শ্রেয়।
হ্যা, রুকু সিজদায় গিয়ে আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসা করবে।
পঞ্চদশ আদব : ধৈর্য্য নিয়ে কুরআন তিলাওয়াত করা। যিনি অনায়াসে কুরআন পড়তে পারেন না তিনি আটকে আটকে ধৈর্যসহ পড়বেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
ﺍﻟْﻤَﺎﻫِﺮُ ﺑِﺎﻟْﻘُﺮْﺁﻥِ ﻣَﻊَ ﺍﻟﺴَّﻔَﺮَﺓِ ﺍﻟْﻜِﺮَﺍﻡِ ﺍﻟْﺒَﺮَﺭَﺓِ ﻭَﺍﻟَّﺬِﻯ ﻳَﻘْﺮَﺃُ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥَ ﻭَﻳَﺘَﺘَﻌْﺘَﻊُ ﻓِﻴﻪِ ﻭَﻫُﻮَ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺷَﺎﻕٌّ ﻟَﻪُ ﺃَﺟْﺮَﺍﻥِ .
‘কুরআন পাঠে যে অভিজ্ঞ ব্যক্তি কুরআন তিলাওয়াত করে সে সম্মানিত রাসূল ও
পুণ্যত্মা ব্যক্তিদের সঙ্গে থাকবে। আর যে ব্যক্তি তোতলাতে তোতলাতে সক্লেশে কুরআন তিলাওয়াত করবে তার জন্য দ্বিগুণ নেকী লেখা হবে।’[33]
অতএব কেউ যদি এই কষ্টের ওপর ধৈর্য ধরেন এবং ভালোভাবে শেখা অব্যাহত রাখেন তাহলে নিশ্চিত তিনি বিশাল প্রতিদান লাভ করবেন ইনশাআল্লাহ।
ষষ্ঠদশ আদব : কুরআন তিলাওয়াতের আরেকটি আদব হলো, তিলাওয়াতের সময় ক্রন্দন করা। আল্লাহ তা‘আলা তিলাওয়াতের সময় ক্রন্দনরতদের প্রশংসা করে বলেন,
ﻭَﻳَﺨِﺮُّﻭﻥَ ﻟِﻠْﺄَﺫْﻗَﺎﻥِ ﻳَﺒْﻜُﻮﻥَ ﻭَﻳَﺰِﻳﺪُﻫُﻢْ ﺧُﺸُﻮﻋًﺎ ( 109 )
‘আর তারা কাঁদতে কাঁদতে লুটিয়ে পড়ে এবং এটা তাদের বিনয় বৃদ্ধি করে’।[34]
আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন,
ﺍﻗْﺮَﺃْ ﻋَﻠَﻲَّ ﻗُﻠْﺖُ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺁﻗْﺮَﺃُ ﻋَﻠَﻴْﻚَ ﻭَﻋَﻠَﻴْﻚَ ﺃُﻧْﺰِﻝَ ﻗَﺎﻝَ ﻧَﻌَﻢْ ﻓَﻘَﺮَﺃْﺕُ ﺳُﻮﺭَﺓَ ﺍﻟﻨِّﺴَﺎﺀِ ﺣَﺘَّﻰ ﺃَﺗَﻴْﺖُ ﺇِﻟَﻰ ﻫَﺬِﻩِ ﺍﻵﻳَﺔِ } ﻓَﻜَﻴْﻒَ ﺇِﺫَﺍ ﺟِﺌْﻨَﺎ ﻣِﻦْ ﻛُﻞِّ ﺃُﻣَّﺔٍ ﺑِﺸَﻬِﻴﺪٍ ﻭَﺟِﺌْﻨَﺎ ﺑِﻚَ ﻋَﻠَﻰ ﻫَﺆُﻻَﺀِ ﺷَﻬِﻴﺪًﺍ { ﻗَﺎﻝَ ﺣَﺴْﺒُﻚَ ﺍﻵﻥَ ﻓَﺎﻟْﺘَﻔَﺖُّ ﺇِﻟَﻴْﻪِ ﻓَﺈِﺫَﺍ ﻋَﻴْﻨَﺎﻩُ ﺗَﺬْﺭِﻓَﺎﻥِ
‘আমাকে তুমি তিলাওয়াত করে শুনাও।’
বললাম, আমি আপনাকে তিলাওয়াত শোনাব অথচ আপনার ওপরই এটি অবতীর্ণ হয়েছে?
তিনি বললেন, ‘আমি অন্যের তিলাওয়াত শুনতে পছন্দ করি’। অতপর আমি তাঁকে সূরা নিসা পড়ে শুনাতে লাগলাম। যখন আমি- ﻓَﻜَﻴْﻒَ ﺇِﺫَﺍ ﺟِﺌْﻨَﺎ ﻣِﻦْ ﻛُﻞِّ ﺃُﻣَّﺔٍ ﺑِﺸَﻬِﻴﺪٍ ﻭَﺟِﺌْﻨَﺎ ﺑِﻚَ ﻋَﻠَﻰ ﻫَﺆُﻟَﺎﺀِ ﺷَﻬِﻴﺪًﺍ
(অতএব কেমন হবে যখন আমি প্রত্যেক উম্মত থেকে একজন সাক্ষী উপস্থিত করব এবং তোমাকে উপস্থিত করব তাদের উপর সাক্ষীরূপে? আয়াত : ৪১)-এ পৌঁছলাম, তিনি বললেন, ব্যস, যথেষ্ট হয়েছে। তখন আমি তাঁর দিকে তাকিয়ে দেখলাম তাঁর চোখ থেকে অঝোর ধারায় অশ্রু প্রবাহিত হচ্ছে।’[35]
আরেক সাহাবী বলেন,
ﺃَﺗَﻴْﺖُ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲَّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ، ﻭَﻫُﻮَ ﻳُﺼَﻠِّﻲ ، ﻭَﻟِﺠَﻮْﻓِﻪِ ﺃَﺯِﻳﺰٌ ﻛَﺄَﺯِﻳﺰِ ﺍﻟْﻤِﺮْﺟَﻞِ ﻳَﻌْﻨِﻲ ﻳُﺒْﻜِﻲ .
‘একদা আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এলাম।
তিনি নামাজ পড়ছিলেন আর তাঁর চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরছিল।’[36]
উমর ইবন খাত্তাব রা. একদিন সূরা ইউসুফ তিলাওয়াত করছিলেন। যখন তিনি নিচের আয়াতে পৌঁছেন, তাঁর দুইগণ্ড বেয়ে অশ্রুর ধারা বইতে শুরু করে। আয়াতটি ছিলো-
ﻗَﺎﻝَ ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﺃَﺷْﻜُﻮ ﺑَﺜِّﻲ ﻭَﺣُﺰْﻧِﻲ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺃَﻋْﻠَﻢُ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻣَﺎ ﻟَﺎ ﺗَﻌْﻠَﻤُﻮﻥَ ( 86 )
‘সে বলল, ‘আমি আল্লাহর কাছেই আমার দুঃখ বেদনার অভিযোগ জানাচ্ছি। আর আল্লাহর প থেকে আমি যা জানি, তোমরা তা জান না’।[37]
কাসিম একদা আয়িশা রা.-এর কাছ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। তিনি দেখেন আয়িশা রা. নিচের আয়াতটি বারবার আবৃত্তি করছেন আর কেঁদে কেঁদে দু‘আ করছেন।
আয়াতটি হলো-
ﻓَﻤَﻦَّ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻨَﺎ ﻭَﻭَﻗَﺎﻧَﺎ ﻋَﺬَﺍﺏَ ﺍﻟﺴَّﻤُﻮﻡِ ( 27 )
‘অতঃপর আল্লাহ আমাদের প্রতি দয়া করেছেন এবং আগুনের আযাব থেকে আমাদেরকে রক্ষা করেছেন।’[38]
আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রা. যখন নিচের আয়াত তিলাওয়াত করেন, ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করেন -
ﻭَﺟَﺎﺀَﺕْ ﺳَﻜْﺮَﺓُ ﺍﻟْﻤَﻮْﺕِ ﺑِﺎﻟْﺤَﻖِّ ﺫَﻟِﻚَ ﻣَﺎ ﻛُﻨْﺖَ ﻣِﻨْﻪُ ﺗَﺤِﻴﺪُ ( 19 )
‘আর মৃত্যুর যন্ত্রণা যথাযথই আসবে। যা থেকে তুমি পলায়ন করতে চাইতে’।[39]
আবদুল্লাহ ইবন উমর রা. যখন নিচের আয়াতটি পড়তেন, তখনই তিনি কান্নাকাটি করতেন-
ﻭَﺇِﻥْ ﺗُﺒْﺪُﻭﺍ ﻣَﺎ ﻓِﻲ ﺃَﻧْﻔُﺴِﻜُﻢْ ﺃَﻭْ ﺗُﺨْﻔُﻮﻩُ ﻳُﺤَﺎﺳِﺒْﻜُﻢْ ﺑِﻪِ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻓَﻴَﻐْﻔِﺮُ ﻟِﻤَﻦْ ﻳَﺸَﺎﺀُ ﻭَﻳُﻌَﺬِّﺏُ ﻣَﻦْ ﻳَﺸَﺎﺀُ ﻭَﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻰ ﻛُﻞِّ ﺷَﻲْﺀٍ ﻗَﺪِﻳﺮٌ ( 284 )
‘আর তোমরা যদি প্রকাশ কর যা তোমাদের অন্তরে রয়েছে অথবা গোপন কর, আল্লাহ সে বিষয়ে তোমাদের হিসাব নেবেন’।[40]
তাছাড়া আমরা আবূ বকর সিদ্দিক রা.-এর কথা জানি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাতের পর যখন খলীফা নির্বাচনের প্রসঙ্গ এলো, তখন আয়িশা রা. তাঁর সম্পর্কে বলেন,
ﺇِﻧَّﻪُ ﺭَﺟُﻞٌ ﺭَﻗِﻴﻖٌ ﻛَﺜِﻴﺮُ ﺍﻟْﺒُﻜَﺎﺀِ ﺣِﻴﻦَ ﻳَﻘْﺮَﺃُ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥَ
‘তিনি অত্যন্ত কোমল হৃদয়ের অধিকারী,
নামাজে কুরআন তিলাওয়াত করতে গিয়ে তিনি খুব বেশি কাঁদেন।’[41]
কুরআন তিলাওয়াতের সময় কান্নাকাটি করা এবং চোখে পানি আসা বিনয় ও ঈমানের লক্ষণ, যদি কান্নাটি আসে অন্তর থেকে। কান্না কিন্তু কয়েক প্রকারের হয়ে থাকে : বিনয় ও নম্রতার কান্না, ভীতি ও আতঙ্কের কান্না, ভালোবাসা ও অনুরাগের কান্না, খুশি ও আনন্দের কান্না এবং দুঃখ ও বেদনার কান্না। মনে রাখতে হবে, কুরআন তিলাওয়াতের সময় কেবল বিনয় ও নম্রতার কান্নাই কাম্য; কপট তথা কৃত্রিম বা লোক দেখানোর কান্না নয়। আর বিনয়ের কান্না সেটিই যা মানুষের মনে আনন্দের সঞ্চার করে। যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
ﺇِﻥَّ ﻣِﻦْ ﺃَﺣْﺴَﻦِ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ ﺻَﻮْﺗًﺎ ﺑِﺎﻟْﻘُﺮْﺁﻥِ ، ﺍﻟَّﺬِﻱ ﺇِﺫَﺍ ﺳَﻤِﻌْﺘُﻤُﻮﻩُ ﻳَﻘْﺮَﺃُ ، ﺣَﺴِﺒْﺘُﻤُﻮﻩُ ﻳَﺨْﺸَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪَ . ) ﻗﺎﻝ ﺍﻟﺸﻴﺦ ﺍﻷﻟﺒﺎﻧﻲ : ﺻﺤﻴﺢ (
‘কুরআন তিলাওয়াতের সর্বোত্তম কণ্ঠ সে ব্যক্তির, যার তিলাওয়াত কেউ শুনলে মনে হয় সে কাঁদছে।’[42]
তবে কান্নার ভান করা দুই ধরনের। একটি প্রশংসনীয় আরেকটি নিন্দনীয়। প্রশংসনীয় কান্না হলো, যে কান্নার ভান করার দ্বারা হৃদয় বিগলিত হয়, মনে আল্লাহর ভয় সৃষ্টি হয় আর সঙ্গে সঙ্গে তা হয় রিয়া ও লৌকিকতা মুক্ত। যেমন, উমর রা. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কান্নার কথা বলেছিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আবূ বকর রা. কে বদরের কয়েদিদের ব্যাপারে কাঁদতে দেখে তিনি বলেন,
ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺃَﺧْﺒِﺮْﻧِﻰ ﻣِﻦْ ﺃَﻯِّ ﺷَﻰْﺀٍ ﺗَﺒْﻜِﻰ ﺃَﻧْﺖَ ﻭَﺻَﺎﺣِﺒُﻚَ ﻓَﺈِﻥْ ﻭَﺟَﺪْﺕُ ﺑُﻜَﺎﺀً ﺑَﻜَﻴْﺖُ ﻭَﺇِﻥْ ﻟَﻢْ ﺃَﺟِﺪْ ﺑُﻜَﺎﺀً ﺗَﺒَﺎﻛَﻴْﺖُ ﻟِﺒُﻜَﺎﺋِﻜُﻤَﺎ
‘হে আল্লাহর রাসূল, আপনি আমাকে অবহিত করুন কোন জিনিসের কারণে আপনি ও আপনার সাথী কাঁদছেন? সম্ভব হলে আমি কাঁদবো, নয়তো আপনাদের দুজনের অনুকরণে কান্নার ভান করবো।’[43]
দেখুন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিন্তু তাঁর এ কথা অপছন্দও করেননি। তেমনি অনেক পূর্বসুরী বুযুর্গ বলতেন, আল্লাহর ভয়ে তোমরা কাঁদো যদি কাঁদতে না পারো তাহলে কান্নার ভান করো। পক্ষান্তরে নিন্দনীয় কান্না হলো,
যে কান্নার উদ্দেশ্য মানুষের প্রশংসা বা সুনাম কুড়ানো। এটি মুনাফেকদের কান্না।
আমাদের খেয়াল রাখতে হবে, কুরআন তিলাওয়াতের সময় যেন আমাদের অন্তর ডানে-বামে ছোটাছুটি না করে।
মনোযোগসহ নিবিষ্ট চিত্তে কুরআন তিলাওয়াত করতে হবে।
সপ্তদশ আদব : কুরআন তিলাওয়াতের আরেকটি আদব হলো এর মর্ম নিয়ে চিন্তা করা। সাধারণভাবে বলতে গেলে এটিই আসলে তিলাওয়াতের সবচে গুরুত্বপূর্ণ আদব।
তিলাওয়াতের সময় চিন্তা-গবেষণা করাই এর প্রকৃত সুফল বয়ে আনে। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
ﻛِﺘَﺎﺏٌ ﺃَﻧْﺰَﻟْﻨَﺎﻩُ ﺇِﻟَﻴْﻚَ ﻣُﺒَﺎﺭَﻙٌ ﻟِﻴَﺪَّﺑَّﺮُﻭﺍ ﺁَﻳَﺎﺗِﻪِ ﻭَﻟِﻴَﺘَﺬَﻛَّﺮَ ﺃُﻭﻟُﻮ ﺍﻟْﺄَﻟْﺒَﺎﺏِ ( 29 )
‘আমি তোমার প্রতি নাযিল করেছি এক বরকতময় কিতাব, যাতে তারা এর আয়াতসমূহ নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করে এবং যাতে বুদ্ধিমানগণ উপদেশ গ্রহণ করে’।[44]
অতএব কুরআন থেকে সে-ই উপকৃত হতে পারবে যে আল্লাহ তা‘আলার মহান বাণী নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করবে। আল্লাহ তা‘আলার বড়ত্ব ও মহিমার কথা মনের পর্দায় ভেসে তুলবে। কুরআন তাকে কী বলছে তা বুঝার চেষ্টা করবে। এবং এ কথা মনে রাখবে যে সে এটি বুঝার জন্য এবং তদনুযায়ী আমল করার জন্য তিলাওয়াত করছে। তাই কেউ যদি মুখে কুরআন পড়ে আর মন পড়ে থাকে তার অন্য কোথাও, তবে সে তিলাওয়াতের কাঙ্ক্ষিত ফায়দা অর্জন করতে পারবে না। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
ﺃَﻓَﻠَﺎ ﻳَﺘَﺪَﺑَّﺮُﻭﻥَ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁَﻥَ ﺃَﻡْ ﻋَﻠَﻰ ﻗُﻠُﻮﺏٍ ﺃَﻗْﻔَﺎﻟُﻬَﺎ ( 24 )
‘তবে কি তারা কুরআন নিয়ে গভীর চিন্তা-
ভাবনা করে না? নাকি তাদের অন্তরসমূহে তালা রয়েছে?’[45]
ﻋَﻦْ ﺣُﺬَﻳْﻔَﺔَ ، ﻗَﺎﻝَ : ﺻَﻠَّﻴْﺖُ ﻣَﻊَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻟَﻴْﻠَﺔً ، ﻓَﺎﻓْﺘَﺘَﺢَ ﺍﻟْﺒَﻘَﺮَﺓَ ، ﻓَﻘَﺮَﺃَ ﻓَﻘُﻠْﺖُ : ﻳَﺮْﻛَﻊُ ﻋِﻨْﺪَ ﺍﻟْﻤِﺎﺋَﺔَ ﻓَﻤَﻀَﻰ ، ﻓَﻘُﻠْﺖُ : ﻳَﺮْﻛَﻊُ ﻋِﻨْﺪَ ﺍﻟْﻤِﺎﺋَﺘَﻴْﻦِ ﻓَﻤَﻀَﻰ ، ﻓَﻘُﻠْﺖُ : ﻳُﺼَﻠِّﻲ ﺑِﻬَﺎ ﻓِﻲ ﺭَﻛْﻌَﺔٍ ، ﻓَﻤَﻀَﻰ ، ﻓَﺎﻓْﺘَﺘَﺢَ ﺍﻟﻨِّﺴَﺎﺀَ ﻓَﻘَﺮَﺃَﻫَﺎ ﺛُﻢَّ ﺍﻓْﺘَﺘَﺢَ ﺁﻝَ ﻋِﻤْﺮَﺍﻥَ ﻓَﻘَﺮَﺃَﻫَﺎ ، ﻳُﻘْﺮَﺃُ ﻣُﺘَﺮَﺳِّﻼً ﺇِﺫَﺍ ﻣَﺮَّ ﺑِﺂﻳَﺔٍ ﻓِﻴﻬَﺎ ﺗَﺴْﺒِﻴﺢٌ ﺳَﺒَّﺢَ ، ﻭَﺇِﺫَﺍ ﻣَﺮَّ ﺑِﺴُﺆَﺍﻝٍ ﺳَﺄَﻝَ ، ﻭَﺇِﺫَﺍ ﻣَﺮَّ ﺏِ ﺗَﻌَﻮُّﺫٍ ﺗَﻌَﻮَّﺫَ ، ﺛُﻢَّ ﺭَﻛَﻊَ
‘হুযাইফা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
একরাতে আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পেছনে নামাজ পড়লাম।
তিনি বাকারা শুরু করলেন। আমি মনে মনে বললাম, তিনি একশত আয়াত পড়ে রুকূ করবেন।
অবশ্য তিনি পড়েই চললেন। মনে মনে বললাম, তিনি দুইশত আয়াত পড়ে রুকূ করবেন। কিন্তু তিনি পড়েই চললেন। মনে মনে বললাম, তিনি হয়তো এ সূরা দিয়েই একরাত পড়বেন। এরপরও তিনি পড়েই চললেন। (বাকারা শেষ করে) নিসা শুরু করলেন। নিসা পড়ে তিনি আলে-ইমরান শুরু করে তাও শেষ করলেন। তিনি মন্থর গতিতে পড়ছিলেন। তাসবীহ সম্বলিত কোনো আয়াত পড়লে তাসবীহ পড়েন।
প্রার্থনা সম্বলিত কোনো আয়াত পড়লে প্রার্থনা করেন। শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা সম্বলিত কোনো আয়াত পড়লে শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করেন।
তারপর তিনি রুকূতে যান।’[46]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে খারেজী সম্প্রদায় সম্পর্কে জানিয়েছেন, তারা কুরআন তিলাওয়াত করবে কিন্তু তা তাদের গলা অতিক্রম করবে না। [47] অন্যত্র তিনি ইরশাদ করেন,
ﻻَ ﻳَﻔْﻘَﻪُ ﻣَﻦْ ﻗَﺮَﺃَ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥَ ﻓِﻰ ﺃَﻗَﻞَّ ﻣِﻦْ ﺛَﻼَﺙٍ .
‘তিনদিনের কম সময়ে যে কুরআন খতম করবে,
সে কুরআন বুঝবে না।’[48]
ﻣﺎﻟﻚ ﻋﻦ ﻳﺤﻴﻰ ﺑﻦ ﺳﻌﻴﺪ ﺃﻧﻪ ﻗﺎﻝ ﻛﻨﺖ ﺃﻧﺎ ﻭﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﻳﺤﻴﻰ ﺑﻦ ﺣﺒﺎﻥ ﺟﺎﻟﺴﻴﻦ ﻓﺪﻋﺎ ﻣﺤﻤﺪ ﺭﺟﻼ ﻓﻘﺎﻝ ﺃﺧﺒﺮﻧﻲ ﺑﺎﻟﺬﻱ ﺳﻤﻌﺖ ﻣﻦ ﺃﺑﻴﻚ ﻓﻘﺎﻝ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﺃﺧﺒﺮﻧﻲ ﺃﺑﻲ : ﺃﻧﻪ ﺃﺗﻰ ﺯﻳﺪ ﺑﻦ ﺛﺎﺑﺖ ﻓﻘﺎﻝ ﻟﻪ ﻛﻴﻒ ﺗﺮﻯ ﻓﻲ ﻗﺮﺍﺀﺓ ﺍﻟﻘﺮﺁﻥ ﻓﻲ ﺳﺒﻊ ﻓﻘﺎﻝ ﺯﻳﺪ ﺣﺴﻦ ﻭﻷﻥ ﺃﻗﺮﺃﻩ ﻓﻲ ﻧﺼﻒ ﺃﻭ ﻋﺸﺮ ﺃﺣﺐ ﺇﻟﻰ ﻭﺳﻠﻨﻲ ﻟﻢ ﺫﺍﻙ ﻗﺎﻝ ﻓﺈﻧﻲ ﺃﺳﺄﻟﻚ ﻗﺎﻝ ﺯﻳﺪ ﻟﻜﻲ ﺃﺗﺪﺑﺮﻩ ﻭﺃﻗﻒ ﻋﻠﻴﻪ
........যায়েদ বিন সাবেতকে একজন জিজ্ঞেস করলেন, সাত দিনে কুরআন খতম করাটাকে আপনি কোন দৃষ্টিতে দেখেন?
তিনি বললেন, এটা ভালো। অবশ্য আমি এটাকে পনের দিনে বা দশ দিনে খতম করাই পছন্দ করি। আমাকে জিজ্ঞেস করো, তা কেন? তিনি বললেন, আমি আপনাকে জিজ্ঞেস করছি। যায়েদ বললেন, যাতে আমি তার স্থানে স্থানে চিন্তা করি এবং থামি।’[49]
প্রিয় পাঠক-পাঠিকাবৃন্দ, আমাদের কুরআন নিয়ে চিন্তা করতে হবে কেবল আমলের জন্য :
ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﻦِ ﻗَﺎﻝَ : ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻣَﻦْ ﻛَﺎﻥَ ﻳُﻘْﺮِﺋُﻨَﺎ ﻣِﻦْ ﺃَﺻْﺤَﺎﺏِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ، ﺃَﻧَّﻬُﻢْ ﻛَﺎﻧُﻮﺍ ﻳَﻘْﺘَﺮِﺋُﻮﻥَ ﻣِﻦْ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻋَﺸْﺮَ ﺁﻳَﺎﺕٍ ، ﻓَﻼَ ﻳَﺄْﺧُﺬُﻭﻥَ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻌَﺸْﺮِ ﺍﻷُﺧْﺮَﻯ ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﻌْﻠَﻤُﻮﺍ ﻣَﺎ ﻓِﻲ ﻫَﺬِﻩِ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻌِﻠْﻢِ ﻭَﺍﻟْﻌَﻤَﻞِ ، ﻗَﺎﻟُﻮﺍ : ﻓَﻌَﻠِﻤْﻨَﺎ ﺍﻟْﻌِﻠْﻢَ ﻭَﺍﻟْﻌَﻤَﻞَ .
‘আবূ আবদুর রহমান রহ. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যেসব সাহাবী রা. আমাদের কুরআন পড়িয়েছেন তারা বলেছেন, তাঁরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে দশ আয়াত শিখতেন।
তারপর আরও দশ আয়াত ততক্ষণ শিখতেন না যাবৎ তাঁরা এ কয়টি আয়াতে কী এলেম আছে আর কী আমল আছে, তা না জানতেন।
তাঁরা বলেন, সুতরাং আমরা এলেম শিখেছি এবং আমল শিখেছি।’[50]
অষ্টদশ আদব : উচ্চরব ও নিরবের মাঝামাঝি স্বরে কুরআন তিলাওয়াত করা। সরবে কুরআন তিলাওয়াত সম্পর্কে অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে। যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
ﻣَﺎ ﺃَﺫِﻥَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻟِﺸَﻰْﺀٍ ﻣَﺎ ﺃَﺫِﻥَ ﻟِﻨَﺒِﻰٍّ ﺣَﺴَﻦِ ﺍﻟﺼَّﻮْﺕِ ﻳَﺘَﻐَﻨَّﻰ ﺑِﺎﻟْﻘُﺮْﺁﻥِ ﻳَﺠْﻬَﺮُ ﺑِﻪِ .
‘আল্লাহ তা‘আলা কোনো নবীকে এতটুকু সুর দিয়ে পড়ার অনুমতি দেননি যতোটা দিয়েছেন নবীকে কুরআন তিলাওয়াতে সুরারোপ করার অনুমতি, যা তিনি সরবে পড়েন।’[51]
অনুরূপ তিনি ইরশাদ করেছেন,
ﺍﻟْﺠَﺎﻫِﺮُ ﺑِﺎﻟْﻘُﺮْﺁﻥِ ﻛَﺎﻟْﺠَﺎﻫِﺮِ ﺑِﺎﻟﺼَّﺪَﻗَﺔِ ﻭَﺍﻟْﻤُﺴِﺮُّ ﺑِﺎﻟْﻘُﺮْﺁﻥِ ﻛَﺎﻟْﻤُﺴِﺮِّ ﺑِﺎﻟﺼَّﺪَﻗَﺔِ .
‘সরবে কুরআন তিলাওয়াত প্রকাশ্য সদকাকারীর ন্যায় এবং নিরবে কুরআন তিলাওয়াত গোপনে সদকাকারীর ন্যায়।’[52]
প্রথম হাদীসে সরবে আর দ্বিতীয় হাদীসে নিরবে পড়ার ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। আমরা তাহলে কীভাবে সিদ্ধান্তে আসবো? হ্যা,
উভয় হাদীসের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে ইমাম নববী রহ. বলেন, যেখানে রিয়া, ঘুমন্ত ব্যক্তির ঘুম ভাঙ্গানো বা নামাজরত ব্যক্তি কষ্ট পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে সেখানে
নিরবে পড়া উত্তম। কারণ, নামাজী ব্যক্তির পাশে সরবে তিলাওয়াত করলে তার পড়ায় বিঘ্ন ঘটবে। তাছাড়া তিলাওয়াতেও ব্যাঘাত ঘটবে। সুতরাং এ ক্ষেত্রে নিরবে পড়াই শ্রেয়। এছাড়া অন্য সময় সরবে পড়া উত্তম। কারণ, এতে স্বর উঁচু করা, কষ্ট ও চেষ্টা ব্যয় করার অতিরিক্ত শ্রম দিতে হয়।
তদুপরি সরবে তিলাওয়াত পাঠক হৃদয়কে জাগ্রত করে। তার চিন্তাকে কুরআনের প্রতি নিবিষ্ট এবং কর্ণকে এর দিকে উৎকর্ণ করে। এর ফলে পাঠক বেশি লাভবান হন। এভাবে তা বেশি আত্মস্থ হওয়া,
শয়তানকে বিতাড়ন করা, ঘুম তাড়ানো ও উদ্যম সৃষ্টিতে অধিক সহায়ক।[53]
আবূ বকর রা. নিরবে কুরআন তিলাওয়াত করতেন আর উমর করতেন সরবে। উমর রা. কে সরবে পড়ার কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘সরবে পড়ে আমি শয়তানকে বিতাড়ন করি এবং ঝিমুনি তাড়াই। অতপর আবূ বকর রা. কে নির্দেশ দেয়া হলো আওয়াজ একটু বাড়াতে আর উমর রা. কে নির্দেশ দেয়া হলো আওয়াজ একটু কমাতে। [54]
আরেকটি কথা, ধরুন আপনি কুরআন তিলাওয়াত করছেন। কিছুক্ষণ সরবে পড়ার পর একটু ক্লান্ত হয়ে গেলেন। এবার একটু আওয়াজ কমিয়ে পড়তে লাগলেন। তারপর যখন ক্লান্তি কেটে গেল তো আবার সরবে পড়া শুরু করলেন। আমাদের অনেকেরই হয়তো এমন হয় ঠিক না? জেনে রাখুন, এতে কোনো সমস্যা নেই।
ঊনবিংশ আদব : তিলাওয়াতের সময় সিজদার আয়াত এলে সিজদা দেয়া। সিজদার নিয়ম হলো, তাকবীর দিয়ে সিজদায় চলে যাওয়া।
বিংশ আদব : যথাসম্ভব আদবসহ বসা। বসা,
দাঁড়ানো, চলমান ও হেলান দেয়া-
সর্বাবস্থায় তিলাওয়াত করার অনুমতি রয়েছে। কারণ আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন,
ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳَﺬْﻛُﺮُﻭﻥَ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻗِﻴَﺎﻣًﺎ ﻭَﻗُﻌُﻮﺩًﺍ ﻭَﻋَﻠَﻰ ﺟُﻨُﻮﺑِﻬِﻢْ ﻭَﻳَﺘَﻔَﻜَّﺮُﻭﻥَ ﻓِﻲ ﺧَﻠْﻖِ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﻭَﺍﺕِ ﻭَﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﺭَﺑَّﻨَﺎ ﻣَﺎ ﺧَﻠَﻘْﺖَ ﻫَﺬَﺍ ﺑَﺎﻃِﻠًﺎ ﺳُﺒْﺤَﺎﻧَﻚَ ﻓَﻘِﻨَﺎ ﻋَﺬَﺍﺏَ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ ( 191 )
‘যারা আল্লাহকে স্মরণ করে দাঁড়িয়ে, বসে ও কাত হয়ে এবং আসমানসমূহ ও যমীনের সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা করে’।[55]
তবে উদাহরণ স্বরূপ বিনয়ের সঙ্গে বসে পড়া হেলান দিয়ে পড়ার চেয়ে উত্তম। জায়েযের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে কোনোটাতেই সমস্যা নেই। কিন্তু উত্তমের কথা বিবেচনা করলে বিনয় ও নম্রতার সঙ্গে বসে পড়াই শ্রেয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজর নামাজের পর কিবলামুখী হয়ে চারজানু হয়ে বসে সূর্যোদয় পর্যন্ত আল্লাহ তা‘আলার জিকির করতেন।
একবিংশ আদব : কুরআন তিলাওয়াতের আরেকটি আদব হলো তিনদিনের কম সময়ে খতম না করা। কেননা আগেই উল্লেখ করেছি যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
ﻻَ ﻳَﻔْﻘَﻪُ ﻣَﻦْ ﻗَﺮَﺃَ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥَ ﻓِﻰ ﺃَﻗَﻞَّ ﻣِﻦْ ﺛَﻼَﺙٍ .
‘তিনদিনের কম সময়ে যে কুরআন খতম করবে,
সে কুরআন বুঝবে না।’[56]
কুরআন সম্পর্কে উদাসীনতা এবং এর ভয়াবহ পরিণাম
অধিকাংশ মানুষই আজ কুরআন শিক্ষা থেকে উদাসীন। বড়রা ব্যস্ত দুনিয়া আর দুনিয়াদারি নিয়ে। ছোটরা ব্যস্ত স্কুলের রুটিন নিয়েঅ যেখানে কুরআন শিক্ষার জন্য পর্যাপ্ত সময় দেয়া হয় না। যথাযথ যত্নও নেয়া হয় না। শিক্ষকরাও তাদের প্রতি কাম্য দায়িত্ব পালন করেন না। আর তাদের অবশিষ্ট সময় অপচয় হয় রাস্তা -ঘাটে খেলাধুলার পেছনে। ফলে তারা কুরআন সম্পর্কে অজ্ঞ হয়ে বেড়ে উঠছে। তাই দেখা যায় বড় বড় ডিগ্রি নিয়ে বড় হচ্ছে অথচ শুদ্ধভাবে আল্লাহর কিতাবের একটি আয়াতও পড়তে পারে না। এজন্যই দেখা যায় গ্রামাঞ্চলের অনেক মসজিদেই এখনো শুদ্ধ তিলাওয়াত করতে পারে এমন ইমাম পাওয়া যায় না। আর এসবের প্রধান কারণ সন্তানদের কুরআন শিক্ষার ব্যাপারে পিতাদের অবহেলা। এদিকটিকে তাদের যথাযথ গুরুত্ব না দেয়া। তারা জানেন না তাদের সন্তান কুরআন পড়তে পারে কি-না।
এমনি আজ অধিকাংশ মুসলমানই কুরআনকে ছেড়েই দিয়েছেন। দেখুন আল্লাহর নবী এদের সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলার কাছে কীভাবে অভিযোগ করছেন-
ﻭَﻗَﺎﻝَ ﺍﻟﺮَّﺳُﻮﻝُ ﻳَﺎ ﺭَﺏِّ ﺇِﻥَّ ﻗَﻮْﻣِﻲ ﺍﺗَّﺨَﺬُﻭﺍ ﻫَﺬَﺍ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁَﻥَ ﻣَﻬْﺠُﻮﺭًﺍ ( 30 )
‘আর রাসূল বলবে, ‘হে আমার রব, নিশ্চয় আমার কওম এ কুরআনকে পরিত্যাজ্য গণ্য করেছে।’[57]
ইবন কাসির রহ. বলেন, কুরআন নিয়ে চিন্তা-ভাবনা না করা, কুরআন বুঝতে চেষ্টা না করাও কুরআন পরিত্যাগ করার মধ্যে গণ্য।
কুরআনের আমল ছেড়ে দেয়া, এর নির্দেশ পালন না করা এবং নিষেধ উপেক্ষা করাও তা পরিত্যাগ করার মধ্যে গণ্য। এবং কুরআন ছেড়ে অন্য কথা-কাব্যে, অনর্থক বাক্যালাপ ও গান-বাজনায় ডুবে থাকাও পরিত্যাগ করার মধ্যে গণ্য।
ভালো ক্বারীর কাছে গিয়ে কুরআন শিখতে হবে
আমাদের সবার জন্য জরুরি, এমন শিক্ষকের কাছে পবিত্র কুরআন শিক্ষা করা যিনি বিশুদ্ধভাবে কুরআন পড়তে জানেন। অতএব যিনি নিজে কুরআন শিখবেন বা আপন সন্তানাদিকে শেখাবেন তার কর্তব্য হলো একজন ভালো ক্বারী সাহেবের শরণাপন্ন হওয়া। যাতে বিশুদ্ধভাবে এবং সুন্দর পদ্ধতিতে কুরআন শেখা যায়। মনে রাখতে হবে যে আল্লাহ তা‘আলার পবিত্র কালাম সবচে বেশি গুরুত্ব ও যত্নের দাবিদার।
ইদানীং অনেককেই দেখা যায় আরবী পড়ান। অথচ তিনি নিজেও শুদ্ধভাবে আরবী পড়তে জানেন না। মহিলাদের মধ্যে এ প্রবণতা বেশি দেখা যায়।
মদ-গুন্না কিছুই জানা নেই, মাসআলা-মাসায়েল জানা নেই। অথচ দিব্যি কুরআনের
ওস্তাদি করে যাচ্ছেন। আপনার সন্তানকে এদের হাতে তুলে দেবেন না। যদি বাংলা-ইংরেজি শেখার জন্য ভালো মাস্টারের দরকার হয়, তাহলে আল্লাহর কিতাবের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শেখার জন্য তো আরও ভালো ওস্তাদের প্রয়োজন। দুনিয়ার শিক্ষার বেলায় গুরুত্ব দেই অথচ আখিরাতের শিক্ষার বেলায় অবহেলা করি- এটা তো ঈমানের দাবি হতে পারে না। যে আল্লাহ আমাদের জ্ঞান-বিজ্ঞান শেখার মতো বুদ্ধি ও মেধা দিলেন তাঁর কিতাব পড়ার ব্যাপারে এমন অবহেলা কি চরম অকৃতজ্ঞতার পরিচায়ক নয়? আমাদের চিন্তা করা উচিৎ, তিনি যদি আমাকে বা আমার সন্তানকে পাগল বানিয়ে দেন তাহলে কী অবস্থা হবে? (আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন)
আমাদের স্কুলগুলোতে নামকাওয়াস্তে একজন করে আরবী শিক্ষক রাখা হয় ঠিক;
কিন্তু আরবী বিষয়কে করা হয় চরম অবহেলা।
নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের ট্রেনিংয়ের জন্য রাষ্ট্র কত ব্যবস্থা আর উদ্যোগ নেয়।
অথচ কুরআন শিক্ষা ও কুরআনের শিক্ষা নিয়ে আমাদের সরকার বা স্কুল কর্তৃপক্ষের যেন কোনো মাথা ব্যাথাই নেই। বৃটিশ আমল থেকে যেনতেন একজন ধর্মীয় শিক্ষক রাখার নিয়ম চলে আসছে, তা রক্ষা হলেই চলে। স্কুলে এই আরবী শিক্ষককে কোনো দামই দেয়া হয় না। তাঁর পরামর্শ ও পরিকল্পনার প্রতি ভ্রুক্ষেপই করা হয় না।
ব্যস, বার্ষিক মিলাদ-মাহফিলের সময় শুধু তাঁকে সামনে এগিয়ে দেয়া হয়।
সত্যি কথা বলতে কী, কুরআন ও কুরআনের শিক্ষার প্রতি এই ঔদাসীন্যের কারণেই সমাজে শিক্ষিতের হার বাড়ছে ঠিক; কিন্তু নীতিবান ও আদর্শ দেশ প্রেমিকের সংখ্যা বাড়ছে না। সমাজের প্রতি শাখায়, প্রতিটি পরিবারে শিক্ষিত সন্তানদের নিয়েও বিপদে দিন গুজরান করছেন অসহায় অভিভাবকরা। আল্লাহ মাফ করুন, আমরা অভিভাবকদের বুঝতে হবে কুরআনের প্রতি আমাদের অনাদরের কারণেই আমাদের ছেলেমেয়েরা মানুষ হচ্ছে না।
প্রতিটি মুসলিম সরকারের আমাদের কাছে আবেদন, তারা যেন প্রতিটি শিশুর জন্য কুরআনের শিক্ষা বাধ্যতামূলক করেন।
প্রতিটি শিশুকে কুরআনের আলোয় বেড়ে ওঠার সুযোগ করে দেন। প্রতিটি গ্রামে গ্রামে এবং মসজিদে মসজিদে কুরআন শিক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
কুরআনের প্রতি যত্নবান হওয়া এবং কুরআন নিয়ে চিন্তা-গবেষণার আহ্বান
আলহামদুলিল্লাহ আমরা যারা কুরআন শিখেছি, যারা কুরআন পড়তে পারি, তাদের উচিত কুরআনের প্রতি যত্নবান হওয়া।
মনোযোগসহ বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করা। বিনয় ও আদবের সাথে চিন্তা-গবেষণার মানসিকতা নিয়ে তিলাওয়াত করা। আমরা নিশ্চয় জানি কী বিপুল সওয়াব এ তিলাওয়াতে! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
ﻣﻦ ﻗﺮﺃ ﺣﺮﻓﺎ ﻣﻦ ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻠﻪ ﺑﻪ ﺣﺴﻨﺔ ﻭﺍﻟﺤﺴﻨﺔ ﺑﻌﺸﺮ ﺃﻣﺜﺎﻟﻬﺎ ﻻ ﺃﻗﻮﻝ ﺁﻟﻢ ﺣﺮﻑ ﻭﻟﻜﻦ ﺃﻟﻒ ﺣﺮﻑ ﻭﻻﻡ ﺣﺮﻑ ﻭﻣﻴﻢ ﺣﺮﻑ
‘যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাব থেকে একটি আয়াত পড়বে, তার জন্য একটি নেকী লেখা হবে। আর নেকীটিকে করা হবে দশগুণ। আমি বলছি না ﺍﻟﻢ একটি হরফ। বরং ‘আলিফ’ একটি হরফ, ‘লাম’ একটি হরফ এবং ‘মীম’ একটি হরফ।’[58]
সুবহানাল্লাহ!
আল্লামা ইবনুল কায়্যিম রহ. বলেন,
‘আল্লাহর বাণী (কুরআন) নিয়ে চিন্তা করুন।
আপনি এমন এক বাদশাহকে পাবেন, সবই যার রাজত্ব এবং যাবতীয় প্রশংসাও তাঁর।
প্রতিটি বিষয়ের গুরুদায়িত্ব তাঁর হাতে।
তিনি তাঁর বান্দাদের উপদেশ দেন। যাতে তাদের সমৃদ্ধি ও সৌভাগ্য নিহিত তাদেরকে তার সন্ধান দেন। তাদেরকে এ কাজে উদ্বুদ্ধ করেন। তাদেরকে সতর্ক করেন সেসব কাজ থেকে যাতে তাদের ধ্বংস ও অকল্যাণ রয়েছে। তিনি তাদের কাছে যাবতীয় গুণাবলি ও নামসহ নিজের পরিচয় তুলে ধরেন। কুরআন স্মরণ করিয়ে দেয় আমাদের ওপর আল্লাহর নেয়ামতসমূহের কথা। আমাদের দায়িত্ব ও জীবনের লক্ষ্যের কথা। আমাদের জন্য নেক কাজের পুরস্কার স্বরূপ যেসব নেয়ামত বেহেশতে রেখেছেন তার কথা। অবাধ্য হলে যেসব শাস্তি রেখেছেন তার কথা। তাঁর বন্ধুদের সুপরিণাম ও শত্রুদের কুপরিণতি সম্পর্কে কুরআন আমাদের সংবাদ দেয়। কুরআন আমাদের জন্য উপমা পেশ করে। দলিল ও ইতিহাস তুলে ধরে। আমাদেরকে শান্তির ঠিকানার দিকে আহ্বান জানায় এবং এর গুণাবলি ও উপকারিতা মনে করিয়ে দেয়। সতর্ক করে শাস্তির ঠিকানা ও তার আজাব থেকে।
তাঁর বান্দাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে নিজের দৈন্যতা ও অসহায়ত্বের করুণ চিত্র। বোধে আঘাত করে উপলব্ধিতে আনে তাঁর অনুগ্রহ ছাড়া এক মুহূর্তও আমরা চলতে পারব না। অতএব কুরআন পাঠের মধ্য দিয়ে আমাদের অন্তর যখন দেখবে যে তিনি এমন রাজা, যিনি মহাপরাক্রমশালী, দয়ালু,
দাতা ও চিরসুন্দর, তখন সে আর তাঁকে ভুলে থাকতে পারবে না। তাঁর নির্দেশ অমান্য করতে পারবে না।’ [59]
সুতরাং কুরআন আল্লাহকে স্মরণ করিয়ে দেয়। বান্দাকে আল্লাহর নৈকট্যশীল করে।
তাই মুসলমানদের উচিত ভালোভাবে কুরআন শিক্ষা করা এবং বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করা। কুরআনে রয়েছে আলো,
আরোগ্য, রহমত, সুবাস, হিদায়াত, আল্লাহর যিকির এবং তাঁর প্রমাণ। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সবাইকে তাঁর পবিত্র কালাম বেশি বেশি পড়ার এবং তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করার তাওফীক দান করুন। আমীন।
১. সূরা ফাতির : ২৯-৩০।
২. সূরা আল-মুযামমিল : ৪।
৩. সূরা আলে ইমরান : ১১৩।
৪. সূরা আলে ইমরান : ১৯১।
৫. সূরা আয-যুমার : ৯।
৬. বুখারী : ৫০২৭।
৭. বুখারী : ৪৯৩৭; মুসলিম : ১৮৯৮।
৮. মুসলিম : ১৯১০ ।
৯. মুসলিম : ৭০২৮; আবূ দাউদ : ১৪৫৭।
১০. তিরমিযী : ৩১৬৪; শুয়াবুল ঈমান : ১৮৪১। (( ﺻﺤﺤﻪ ﺍﻷﻟﺒﺎﻧﻲ ﻓﻲ ﺍﻟﺼﺤﻴﺤﺔ
১১. মুসনাদ আহমদ।
১২. তিরমিযী : ২৩৮২; সহীহ ইবন হিব্বান : ৪০৮।
১৩. ইবন মাজা : ২৯১, শায়খ আলবানী হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন।
১৪. বাইহাকী, সুনান আল-কুবরা : ১৬৫।
১৫. সূরা আন-নাহল : ৯৮।
১৬. সূরা আল-মুযাম্মিল : ৪।
১৭. আবদুর রাযযাক, মুসান্নাফ : ৮৮২৬।
১৮. বুখারী : ৫০৪৬।
১৯. মুসলিম : ১৯৪৫; বাইহাকী, সুনান আল-কুবরা : ৪৮৭৫।
২০. ইবন আবি শাইবা, মুসান্নাফ : ৮৭৩৩।
২১. বুখারী : ৭৫৪৬; মুসলিম : ১০৬৭।
২২. দারেমী, সুনান : ৩৫০১; শুয়াবুল ঈমান : ১৯৫৫।
২৩. ইবনুল জা’দ, মুসনাদ : ৩৪৫৬।
২৪. বুখারী : ৭৫২৭; আবূ দাউদ : ১৪৭১।
২৫. আবূ দাউদ, সুনান : ১৪৭৫; নাসায়ী, সুনান : ১০১৭।
২৬. বুখারী : ৫০৪৬।
২৭. মুসনাদ আহমদ : ২৬৬২৫।
২৮. আবূ দাউদ : ১৩৩৪।
২৯. মুসলিম : ১৮৭২; মুসনাদ আহমদ : ৮২১৪।
৩০. মুসলিম : ১৯২২; বুখারী : ৫০১৫।
৩১. মুসলিম : ১৯২৪; তিরমিযী : ৩১৪৬।
৩২. মুসলিম : ১১০২; নাসায়ী : ১০৪৫।
৩৩. বুখারী : ৪৯৩৭; মুসলিম : ১৮৯৮।
৩৪. সূরা বনী ইসরাঈল : ১০৯।
৩৫. বুখারী : ৫০৫০; মুসলিম : ১৯০৩।
৩৬. নাসায়ী : ১২১৪।
৩৭. সূরা ইউসুফ : ৮৬।
৩৮. সূরা আত-তূর : ২৭।
৩৯. সূরা ক্বফ : ১৯।
৪০. সূরা আল-বাকারা : ২৮৪।
৪১. সহীহ ইবন খুযাইমা : ৮৯৯।
৪২. ইবন মাজা : ১৩৩৯।
৪৩. মুসলিম : ৪৬৮৭।
৪৪. সূরা সোয়াদ : ২৯।
৪৫. সূরা মুহাম্মদ : ২৪।
৪৬. নাসায়ী : ১৩৮১; মুসলিম : ১৮৫০।
৪৭. বুখারী : ৩৬১০।
৪৮. আবূ দাউদ : ১৩৯৬।
৪৯. মুয়াত্তা মালেক : ৪৭২।
৫০. মুসনাদ আহমদ : ২৩৫৬৯; আবদুর রাযযাক, মুসান্নাফ : ৩০৫৪৯।
২৫. আবূ দাউদ, সুনান : ১৪৭৫; নাসায়ী, সুনান : ১০১৭।
৫২. আবূ দাউদ : ১৩৩৫; মুসনাদ আহমদ : ১৮৩৬৮।
৫৩. আল-ইতকান : ১/২৯৯।
৫৪. আবদুর রাযযাক, মুসান্নাফ : ৪২১০।
৫৫. সূরা আলে-ইমরান : ১৯১।
৫৬. আবূ দাউদ : ১৩৯৬।
৫৭. সূরা আল-ফুরকান : ৩০।
৫৮. তিরমিযী : ২৯১০।
৫৯. আল-ইতকান ফি উলুমিল কুরআন : ৪২৪২।
_________________________________________________________________________________
লেখক: আলী হাসান তৈয়ব
সম্পাদনা : মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী
সূত্র : ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব
আরো পড়ুনঃ কুরআন তিলাওয়াতের ফজিলত
আরো পড়ুনঃ কুরআন শিক্ষা: বিধান, পদ্ধতি ও ফযীলত
আরো পড়ুনঃ কুরআনের কয়েকটি বিশেষ সূরা ও আয়াতের ফজীলত
আরো পড়ুনঃ পবিত্র কুরআন পড়ার ফযীলতের হাদিস সমুহ
আরো পড়ুনঃ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন