Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

See Our Articles In Different Styles... Grid View List View

বৃহস্পতিবার, ২৫ মে, ২০২৩

জামা‌‘আতের সাথে নামায আদায়

Views:

A+ A-

 জামা‌‘আতের সাথে নামায আদায়




অনুবাদকের কথা

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তাআলার জন্য যিনি আমাদেরকে হেদায়েতের পথে চলার তাওফীক দিয়েছেনতাঁর মেহেরবানী ব্যতীত হেদায়াত পাওয়া এবং তার উপর টিকে থাকা একটিও সম্ভব নয়। সালাত ও সালাম রাসূল সা. এর প্রতি যিনি আমাদেরকে জান্নাতের পথের সন্ধান দিয়েছেন। ইসলামের পাঁচটি রোকনের মধ্যে দ্বিতীয় রোকন হচ্ছে নামায। নামায পরিত্যাগকারী ইসলামের গন্ডী থেকে বেরিয়ে যায়তাই নামায নিয়মিত আদায় করা প্রত্যেক ঈমানদার ব্যক্তির উপর ফরয। পুরষদের ক্ষেত্রে জামাআতের সাথে নামায পড়া ওয়াজিবএ বিষয়টি ভালভাবে বুঝার জন্য এবং তার সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয় গুলো একত্রিত করে অসংখ্য দলীল প্রমাণের ভিত্তিতে একটি চমৎকার বই রচনা করেছেন সৌদী আরবের বিশিষ্ট আলেমেদ্বীন অসংখ্য পুস্তকের লেখক ড: সায়ীদ ইবন আলী ইবন ওয়াহাফ আল-ক্বাহতানী, বাংলা ভাষা ভাষী মুসলিম ভাই-বোনদের জন্য বইটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বলে মনে করে বইটি অনুবাদের কাজে হাত দিয়েছিঅনুবাদের কাজ সম্পন্ন করে আপনাদের হাতে বইটি তুলে দিতে পেরে সবার আগে মহান আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া আদায় করছিবইয়ের কলেবর অনেক বড় হয়ে যাবে এই আশংকায় পার্শ্ব টীকা সব অনুবাদ করা হয়নিকেবলমাত্র গুরুত্বপূর্ণ পার্শ্ব টীকাগুলোই অনুবাদ করা হয়েছেবইটি পড়ে আপনারা উপকৃত হবেন বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাসবইটি আপনাদের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য নানাভাবে যাদের সহযোগিতা পেয়েছি আল্লাহ তাআলা তাদের সবাইকে উত্তম প্রতিদান দান করুনপরিশেষে মানুষ ভুলের উর্ধে নয় আমি তাদেরই একজনতাই পুস্তিকাটি পড়ে আপনাদের নজরে যেকোন ত্রুটি পরিলক্ষিত হলে এবং আমাদেরকে জানালে আমরা তা সাদরে গ্রহণ করে পরবর্তী সংস্করণে সংশোধনের চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ। অবশেষে মহান রবের কাছে এই কামনা করছি যেতিনি যেন লেখকঅনুবাদকপাঠক সবাইকে তাঁর জান্নাতের জন্য কবুল করে নেনআমীনআমাদের প্রিয় নবীর উপর আল্লাহ তাআলা অফুরন্ত সালাত ও সালাম বর্ষণ করুন এবং তাঁর পরিবার বর্গের প্রতি এবং তার সকল সাহাবাদের প্রতি।
 ১২/৮/১৪২৬ হিঃ
মোহাম্মদ বায়েজীদ
২৬/৯/২০০৫ খৃঃ
রিয়াদসৌদী আরব 
                                                                   
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
ভূমিকা
নিশ্চয় প্রশংসা সব আল্লাহরই জন্য,  আমরা তাঁরই প্রশংসা করি এবং তাঁর কাছেই সাহায্য চাই এবং তাঁর কাছেই ক্ষমা প্রার্থনা করিআমাদের নিজেদের পক্ষ হতে সকল অনিষ্ট হতেআমাদের পাপ কাজ হতে তাঁর কাছে আশ্রয় চাইযাকে আল্লাহ তাআলা পথ দেখান তাকে কেহ গোমরা করতে পারে না আর যাকে তিনি পথ ভ্রষ্ট করেন তাকে কেহ হেদায়াত দিতে পারে নাআমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যেআল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য মাবুদ নাইতিনি একক তার কোন শরীক নাইআমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যেমুহাম্মদ তার বান্দাহ ও রাসূলআল্লাহ তাআলা তার উপর সালাত ও অপরিসিম শান্তি বর্ষন করুন এবং তার পরিবার পরিজনের প্রতি ও তার সাথীদের প্রতি এবং ক্বেয়ামাত পর্যন্ত যারা উত্তমভাবে তাদের অনুসরন করবেন তাদের প্রতি।
অতঃপর:-এটি হল জামাআতে নামায আদায় সংক্রান্ত একটি ছোট্ট পুস্তিকা; যাতে আমি বর্ণনা করেছি: জামাআতে নামাযের অর্থউহার হুকুমউহার উপকারিতাসমূহউহার ফযীলতউহার দিকে পথচলার ফযীলতউহার দিকে পথ চলার আদবসমূহদুইজন দ্বারা উহা সম্পাদন হওয়াএক রাকাআত পেলেই জামাআত পাওয়াইমামের সাথে প্রথম জামাআত ছুটে যাওয়া ব্যক্তির জন্য দ্বিতীয় জামাআত শরীয়ত সম্মতযে ব্যক্তি নামায পড়ে ফেলেছে সে যদি জামাআত পায় তবে তাদের সাথে পুনরায় নফল হিসাবে আদায় করবেমাসবুক ব্যক্তি ইমামকে যে অবস্থায় পাবে সে অবস্থায়ই নামাযে প্রবেশ করবে কিন্তু রুকু না পেলে উহা রাকাআত হিসাবে গণ্য হবে নাবাকী নামায ইমাম সালাম ফিরালে তখন আদায় করবে। প্রত্যেক মাসআলা আমি দলীল সহ উল্লেখ করেছিআমি আমাদের শায়েখ সম্মানিত ইমাম আব্দুল আযীয বন আব্দুল্লাহ ইবন বায (রাহ:) এর অনেক আলোচনা এবং বিভিন্ন মাসআলার ক্ষেত্রে তার অগ্রাধিকার প্রদান হতে অনেক উপকার লাভ করেছিআল্লাহ তাআলা শান্তিময় জান্নাতে তাকে সুউচ্চ মর্যাদা দান করুনআল্লাহ তাআলার কাছে কামনা করছি তিনি যেন এইকাজটুকু কবুল করেনবরকতময় করেনশুধুমাত্র তার জন্য একনিষ্ঠ করেন এবং আমাকে এর দ্বারা দুনিয়ার জীবনে ও মৃত্যুর পরে কল্যাণ দান করেন এবং যার কাছেই এটা পৌঁছবে তাকেও কল্যাণ দান করেননিশ্চয়ই তিনি উত্তম দানশীলপ্রত্যাশার মহান স্থলতিনিই আমাদের জন্য যথেষ্টতিনিই উত্তম ব্যবস্থাপকমহান আল্লাহ তাআলা ব্যতীত কারও কোন শক্তি ও ক্ষমতা নাইআল্লাহ তাআলা সালাত ও সালাম এবং বরকত দান করুন তার বান্দাহ ও রাসূল এবং তার সৃষ্টিকুলের মধ্যে সর্বোত্তম সৃষ্টি আমাদের নবী ও ইমাম এবং আমাদের আদর্শ মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহর সা. প্রতি এবং তাঁর পরিবারের উপর ও তাঁর সাহাবাদের উপর এবং যারা কেয়ামাত পর্যন্ত উত্তমভাবে তাদের অনুসরণ করবে তাদের উপর।
      লেখক
      ২৭/২/১৪২১হি:
                   

প্রথম পরিচ্ছেদ:-

(জামাআতে সালাত আদায়) এর শাব্দিক ও পারিভাষিক অর্থ:

১/ আচ্ছালাত এর শাব্দিক অর্থ: দুআ করাআল্লাহ তাআলা বলেন:
﴿وَصَلِّ عَلَيۡهِمۡۖ إِنَّ صَلَوٰتَكَ سَكَنٞ لَّهُمۡۗ وَٱللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ ١٠٣ ﴾ [التوبة: ١٠٣]
অর্থ: ‘‘তাদের জন্য দুআ কর নিঃসন্দেহে তোমার দুআ হচ্ছে তাদের জন্য শান্তির কারণ’’ (তাওবাহ-১০৩) এবং নবী সা. বলেছেন: (যখন তোমাদের কাউকে দাওয়াত দেয়া হয় তাহলে সে যেন দাওয়াত গ্রহণ করেআর যদি সে রোযাদার হয় তবে দুআ’ করবেআর যদি রোযাদার না হয় তবে সে খাবে)। (মুসলিম) অর্থাৎ সে বরকতকল্যাণ ও মাগফিরাতের দুআ করবে (আন্নেহায়াতু ফি গারিবিল হাদীস) আল্লাহর পক্ষ হতে সালাত হল উত্তম প্রশংসাফেরেশতাদের পক্ষ হতে দুআ করাআল্লাহ তাআলা বলেন:
﴿ إِنَّ ٱللَّهَ وَمَلَٰٓئِكَتَهُۥ يُصَلُّونَ عَلَى ٱلنَّبِيِّۚ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ صَلُّواْ عَلَيۡهِ وَسَلِّمُواْ تَسۡلِيمًا ٥٦ ﴾ [الاحزاب: ٥٦]
অর্থ: ‘‘আল্লাহ নবীর প্রতি অনুগ্রহ করেন এবং তার ফেরেশ্তারাও নবীর জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনা করেন। হে মুমিনগণ! তোমরাও তাঁর উপর দরূদ ও সালাম পেশ কর’’। (আলআহযাব-৫৬)
আবুল আলিয়া বলেন: (আল্লাহর সালাত হল ফেরেশতাদের নিকট তার প্রশংসা করাফেরেশতাদের সালাত হল দুআ করা)। ইমাম বুখারী তার তালীক্বাতে দৃঢ় শব্দে উল্লেখ করেছেন যেইবনে আববাস (রাঃ) বলেন ‘‘সালাত’’ পড়ে অর্থ হল তাদের জন্য বরকতের দুআ করো কারো মতে: আল্লাহর সালাত হল রহমত এবং ফেরেশতাদের সালাত হল ইস্তেগফার। প্রথম বক্তব্যটিই সঠিকসার কথা হচ্ছে: আল্লাহর পক্ষ হতে সালাত হল প্রশংসা করাআর সৃষ্টিকুলের যেমন: ফেরেশ্তামানুষ এবং জিনের পক্ষ হতে দন্ডায়মান হওয়ারুকু করাসিজদা করাদুআ করাইস্তেগফার করাতাসবীহ পড়া। পাখী ও বৃক্ষরাজীর পক্ষ হতে তাসবীহ পাঠ করা (লিসানুল আরব)।
২/শরীয়তের পরিভাষায় সালাত হল: আল্লাহর ইবাদাত করা যা অনেক বক্তব্য সম্বলিতবিশেষ কিছু নির্ধারিত কাজ যা তাকবীর দিয়ে শুরু হয় এবং সালাম দিয়ে শেষ হয়। সালাত নামকরণ করা হয়েছে এজন্য যেউহাতে দুআর অর্থ শামিল রয়েছে । (আলমুগনী ৩/৫)কেননা উহা ছিল সকল দুআর নামঅতঃপর নির্ধারিত দুআয় রূপান্তর করা হয়েছেঅথবা উহা দুআর একটি নামছিল অতঃপর ইসলামী শরীয়তে নামায হিসাবে রূপান্তর করা হয়েছে,  যেহেতু নামায ও দুআর মাঝে যোগসূত্র রয়েছে এ ব্যাপারে দুটো বিষয় কাছাকাছিশরীয়তে যদি সালাত বলাহয় তবে কেবল শরয়ী নামাযই বুঝানো হয়, (শারহুল উমদাহ) আর নামাযের মধ্যে দুইভাবে দুআ শামিল আছে:
কোন কিছু আবেদনের দুআ: এটাহল দুআরত ব্যক্তির এমন কিছু চাওয়া যাতে তার কল্যাণ আসবে এবং অনিষ্ট দূর হবে অথবা প্রকাশ হয়ে পড়বে এবং ঐ অবস্থায়ই আল্লাহ তাআলার কাছে নিজের প্রয়োজনের জন্য আবেদন করা।
ইবাদতের ক্ষেত্রে দুআ করা: অর্থাৎ নেক কাজের দ্বারা সাওয়াবের আবেদন করা: যেমন দন্ডায়মান হওয়ারুকু-সিজদাহ ইত্যাদি দ্বারা সাওয়াবের আশা করা। সুতরাং যে ব্যক্তি এসকল ইবাদাত করবে সে তার রবের কাছে দুআ করল এবং এমতাবস্থায় তাঁর কাছে ক্ষমা চাইবে। এসকল বিষয় দ্বারা এটা স্পষ্ট হল যেসম্পূর্ণ সালাত (নামায) হচ্ছে আবেদন মূলক দুআ এবং ইবাদাত মূলক দুকেননা নামায উভয়কেই শামিল করে। (ফাতহুল মাজীদ)।
৩/ জামাআতের শাব্দিক অর্থ: কোন কিছুর সমষ্টি ও আধিক্যআর আল্জামউ’ হল বিক্ষিপ্ত বিষয় সংকলন করাআর জামে’ মসজিদ হল যে মসজিদ তার পরিবারকে (এলাকাভুক্ত নামাযীদের) একত্রিত করে, ‘‘জামে’’’ শব্দটি মসজিদের বিশেষণকেননা উহা একত্রিত হওয়ার প্রতীক। এবং (বিশেষণ পদ ‘‘আলমাসজিদুল জামে’’’ এর পরিবর্তে) সম্বন্ধ পদ ‘‘মাসজিদুল জামে’’’ ব্যবহার করাও বৈধযেমন ব্যবহার করা হয় ‘‘আলহাক্কুল ইয়াকীন’’ এবং ‘‘হাক্কুল ইয়াকীন’’। এমতাবস্থায় অর্থ হবে‘‘আজকের/বর্তমান জামে মসজিদ’’ এবং ‘‘বিষয়টি সত্য হওয়া নিশ্চিত’’। উক্ত উভয় বাক্যে ‘‘আজকের / বর্তমান’’ এবং ‘‘বিষয়টি’’ উহ্য মেনে অর্থ করতে হবেকেননা বিষয়ের/জিনিসের সংযোজন তার নিজের সাথে করা বৈধ নয়। জামাআত হল: কিছু লোক যাদেরকে নির্দিষ্ট একটি উদ্দেশ্য একত্রিত করে। (লিসানুল আরব)।
৪/ শরীয়তের পরিভাষায় আল-জামাআত বলতে: নির্ধারিত কিছু মানুষকে বুঝান হয়। সর্বনিম্ন দুইজন অর্থাৎ ইমাম ও মুক্তাদী দ্বারা জামাআত সংঘটিত হবে: (বাদায়ে ওয়াচ্ছানায়ে ১/১৫৬) এবং সালাতুল জামাআহ এজন্য নামকরণ করা হয়েছে যেনির্দিষ্ট স্থানে ও সময়ে নির্ধারিত কাজের জন্য মুসল্লীগণ একত্রিত হনসুতরাং যদি কোন কারণ ব্যতীত উভয়ের অথবা একটির লংঘন করা হয় তবে তা সকল ইমামদের মতে নিষিদ্ধ। (হাশিয়াতু রওদুল মুরবি’ ২/২৫৫)।

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ:-

           জামাআতের সাথে নামায আদায়ের হুকুম:

মুকাল্লাফ বা শরীয়তের বিধান যার উপর প্রযোজ্য এমন পুরুষদের উপর জামাআতের সাথে পাঁচ ওয়াক্তের নামায আদায় করা ফরযে আইন সে মুক্বীম  (উপস্থিত) হোক বা সফর অবস্থায় থাকুকএক্ষেত্রে কুরআনে ও অনেক সহীহ হাদীসে ও আছারে (সাহবাদের বক্তব্য) অনেক স্পষ্ট দলীল  রয়েছে যার কিছু দলীল নিম্নে উল্লেখ করা হল:
১/ আল্লাহ তাআলা ভয়ের সময়েও জামাআতের সাথে  নামায পড়ার আদেশ করেছেন। তিনি বলেন:
﴿وَإِذَا كُنتَ فِيهِمۡ فَأَقَمۡتَ لَهُمُ ٱلصَّلَوٰةَ فَلۡتَقُمۡ طَآئِفَةٞ مِّنۡهُم مَّعَكَ وَلۡيَأۡخُذُوٓاْ أَسۡلِحَتَهُمۡۖ فَإِذَا سَجَدُواْ فَلۡيَكُونُواْ مِن وَرَآئِكُمۡ وَلۡتَأۡتِ طَآئِفَةٌ أُخۡرَىٰ لَمۡ يُصَلُّواْ فَلۡيُصَلُّواْ مَعَكَ وَلۡيَأۡخُذُواْ حِذۡرَهُمۡ وَأَسۡلِحَتَهُمۡۗ﴾ [النساء: ١٠٢] 
অর্থ: ‘‘যখন আপনি তাদের মাঝে থাকবেন ও নামাযের জন্য দাঁড়াবেনতখন তাদের একদল আপনার সাথে দাঁড়াবে এবং তাদের অস্ত্রগুলো সাথে নিবেঅতঃপর যখন সিজদাহ করবে তখন যেন আপনাদের পিছনে অপর দল থাকে আর অপর দল যারা নামায পড়েনি তারা এসে আপনার সাথে নামায পড়বে এবং সতর্ক হবে ও তাদের অস্ত্র সাথে নিবে)। (নিসা-১০২)
মহান আল্লাহ তাআলা প্রচন্ড ভয়ের সময় জামাআতের সাথে নামায আদায়ের আদেশ করেছেনঅতঃপর তিনি উক্ত নির্দেশ পুনরায় দ্বিতীয় দলের ক্ষেত্রেও করেছেন। জামাআতে নামায যদি সুন্নাত হত তাহলে ভয়ের ওজর জামাআত পরিত্যাগ করার ব্যাপারে সবচেয়ে উত্তম ওজর হিসাবে পরিগণিত হত অনুরূপ জামাআত যদি ফরযে কেফায়া হত তাহলে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা প্রথম দলের জামাআত দ্বারা দ্বিতীয় দল থেকে জামাআত রহিত করে দিতেন। সুতরাং এর দ্বারা বুঝা যায় যেজামাআতে নামায পড়া ফরযে আইন।
২/ আল্লাহ তাআলা নামাযীদের সাথে মিলে নামায আদায় করার আদেশ করেছেন। তিনি বলেন:
﴿وَأَقِيمُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتُواْ ٱلزَّكَوٰةَ وَٱرۡكَعُواْ مَعَ ٱلرَّٰكِعِينَ ٤٣ ﴾ [البقرة: ٤٣]
অর্থ: ‘‘তোমরা নামায কায়েম কর এবং যাকাত আদায় কর এবং রুকু কারীদের সাথে মিলে রুকু কর)। (আল্ বাক্বারাহ-৪৩)
উক্ত আয়াতে আল্লাহ তাআলা মুসল্লীদের সাথে মিলে নামায পড়ার আদেশ করেছেনআর আদেশ সূচক শব্দ ওয়াজিব সাব্যস্ত করে।
৩/ আল্লাহ তাআলা ঐ ব্যক্তিকে শাস্তি দিবেন যে ব্যক্তি মুয়াজ্জিন এর ডাকে সাড়া দেয়নি এবং জামাআতের সাথে নামায পড়েনিঅর্থাৎ ক্বেয়ামাতের দিন তাদের মাঝে ও সিজদার মাঝে প্রতিবন্ধক তৈরী করে দিবেন। আল্লাহ তাআলা বলেন:
﴿يَوۡمَ يُكۡشَفُ عَن سَاقٖ وَيُدۡعَوۡنَ إِلَى ٱلسُّجُودِ فَلَا يَسۡتَطِيعُونَ ٤٢ خَٰشِعَةً أَبۡصَٰرُهُمۡ تَرۡهَقُهُمۡ ذِلَّةٞۖ وَقَدۡ كَانُواْ يُدۡعَوۡنَ إِلَى ٱلسُّجُودِ وَهُمۡ سَٰلِمُونَ ٤٣﴾ [القلم: ٤٢،  ٤٣]
 অর্থ: ‘‘স্মরণ করসেই দিনের কথাযে দিন পায়ের পিন্ডলী (হাঁটুর নিম্নাংশ) উন্মোচন করা হবে এবং তাদেরকে আহবান করা হবে সিজদা করার জন্যেকিন্তু তারা তা করতে সক্ষম হবে না। তাদের দৃষ্টি অবনতহীনতা তাদেরকে আচ্ছন্ন করবে অথচ যখন তারা নিরাপদ ছিল তখন তো তাদেরকে আহবান করা হয়ে ছিল সিজদা করতে’’। (আল-ক্বালাম-৪২-৪৩)
আল্লাহ তাআলা ঐ ব্যক্তিকে শাস্তি দিবেন যে জামাআতের সাথে নামায আদায়ের জন্য আহবান কারীর ডাকে সাড়া দেয়নি এভাবে যেক্বেয়ামাতের দিন তার মাঝে ও সিজদাহর মাঝে প্রতিবন্ধক সৃষ্টি হবে।
আবু সায়ীদ খুদরী (রা:) হতে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি নবী r কে বলতে শুনেছি: (আমাদের প্রতিপালক তাঁর পায়ের পিন্ডলী উন্মুক্ত করে দিবেনঅতঃপর প্রত্যেক ঈমানদার নারী পুরুষ তাঁকে সিজদাহ করবেবাকি থাকবে তারা যারা দুনিয়াতে সুনাম ও লোক দেখাবার জন্য সিজদাহ করততারা তাঁকে সিজদাহ করতে যাবে কিন্তু তাদের পিঠ এক বরাবর হয়ে থাকবে) অর্থাৎ অবণত হতে সক্ষম হবে না।
   অন্য শব্দে রয়েছে: (অতঃপর পায়ের পিন্ডলী উম্মোচন করা হবে তখন যে ব্যক্তিই নিজ থেকে আল্লাহ তাআলাকে সিজদাহ করত তাকে আল্লাহ তাআলা সিজদাহ করার অনুমতি দিবেনআর যে ব্যক্তিই  আত্নরক্ষা ও লোক দেখানোর জন্য সিজদাহ করত আল্লাহ তাআলা তার পিঠ বরাবর করে দিবেনযখনই সিজদাহ করার ইচ্ছা করবে তখনই ঘাড় ভেঙ্গে পিছনে পড়ে যাবে)। বুখারী ও মুসলিম)
 আর এর মধ্যে রয়েছে মুনাফিকদের জন্য শাস্তি কেননা তাদের পিঠ কেয়ামাতের দিন বরাবর হয়ে যাবে: অর্থাৎ পিঠের মেরুদন্ডের হাড় পুরোটাই এক বরাবর হয়ে যাবেফলে তারা সিজদাহ করতে সক্ষম হবেনা। (আন্নেহায়াতু ফি গরীবিল হাদীস-৩/১১৪)
৪/ নবী সা. জামাআতের সাথে নামায পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। মালেক ইবনে হুয়াইরিস (রা:) হতে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি আমার সম্প্রদায়ের কিছু লোকের সাথে নবী সা. এর কাছে এসে বিশ রাত ছিলাম। -তিনি ছিলেন দয়াপরবশকোমল- যখনই আমাদের পরিবারের প্রতি আমাদের আকর্ষণ দেখতেন তখনই বলতেন: {তোমরা ফিরে যাও,  তাদের মাঝে থাকতাদেরকে শিক্ষা দাও এবং নামায পড় আর যখনই নামাযের সময় হয় তখনই তোমাদের একজন যেন আজান দেয় এবং তোমাদের মধ্যে যে সবচেয়ে বড় সে যেন ইমাম হয়}। (বুখারী ও মুসলিম)
উক্ত হাদীসে নবী সা. জামাআতের সাথে নামায পড়ার আদেশ করেছেনআর আদেশ সূচক শব্দ ওয়াজির সাব্যস্ত করে।
৫/ জামাআতে অনুপস্থিত ব্যক্তিদের বাড়ীঘর আগুনে জ্বালিয়ে দিতে  নবী সা. এর ইচ্ছা প্রকাশআবু হুরায়রাহ (রা:) হতে বর্ণিত (তিনি বলেন) রাসূল সা.  কোন নামাযে কিছু লোককে না দেখতে পেয়ে বললেন: (আমি অবশ্যই এই ইচ্ছা করেছি যেএক ব্যক্তিকে লোকদেরকে নিয়ে নামায পড়ার নির্দেশ দেইঅতঃপর ঐ সকল ব্যক্তিদের কাছে যাই যারা জামাআতে অনুপস্থিতঅতঃপর কাঠ দিয়ে তাদের বাড়ীঘর জ্বালিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেইযদি তাদের কেহ জানত যেসে মোটা হাড় পাবে তাহলে অবশ্যই সে জামাআতে উপস্থিত হত)। ইহা মুসলিমের শব্দআর বুখারীর শব্দ হল: (যাঁর হাতে আমার জীবন তাঁর শপথ আমি অবশ্য ইচ্ছা করেছি যেএক ব্যক্তিকে কাঠ সংগ্রহের নির্দেশ দেইঅতঃপর নামায পড়ার আদেশ করি এবং নামাযের জন্য আযান দেওয়া হয় এবং এক ব্যক্তিকে লোকদেরকে নিয়ে নামায আদায়ের আদেশ করিঅতঃপর (জামাআতে অনুপস্থিত) লোকদের কাছে যাই এবং তাদের উপর তাদের বাড়ীঘর জ্বালিয়ে দেইযাঁর হাতে আমার জীবন তাঁর শপথ যদি তাদের কেহ জানত যে,  নিশ্চয় সে গোশ্ত সমেত মোটা হাড় পাবে অথবা চমৎকার দুটি তীঁর পাবে তবে অবশ্যই এশার নামাযে সে উপস্থিত হত)।
মুসলিম এর আরেক শব্দে রয়েছে: (নিশ্চয় মুনাফিকদের জন্য সবচেয়ে কঠিন নামায হল এশা ও ফজরের নামাযযদি তারা জানত যেঐ দুই নামাযে কি পুরস্কার রয়েছেতাহলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও উভয় নামাযে আসতঅবশ্যই আমি চিন্তা করেছি যেনামায পড়ার নির্দেশ দেইঅতঃপর নামাযে দাঁড়িয়ে যাকএরপর এক ব্যক্তিকে লোকদেরকে নিয়ে নামায পড়ার আদেশ করি আর আমি এমন কিছু লোকদেরকে নিয়ে চলে যাই যাদের সাথে কাঠের অাঁটি রয়েছে,  ঐ সকল লোকদের নিকট যারা নামাযে হাজির হয়নিঅতঃপর আগুন দিয়ে তাদের বাড়ীঘর জ্বালিয়ে দেই)। (বুখারী ও মুসলিম) এই হাদীসও প্রমাণ করে যেনিশ্চয় জামাআতে নামায আদায় ফরযে আইন বা অবশ্য কর্তব্য। (শারহুন্ নববী আলা ছহীহ মুসলিম-৫/১৬১)
৬/ নবী সা. দুরে বাড়ী অন্ধ ব্যক্তির জন্য জামাআতে অনুপস্থিত থাকার অনুমতি দেননি। আবু হুরায়রাহ (রা:) হতে বর্ণিত তিনি বলেন: এক অন্ধ বক্তি নবী সা. এর নিকট এলেন অতঃপর বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! আমার কোন পথ প্রদর্শক নেই যে আমাকে মসজিদে নিয়ে যাবে তাই তিনি রাসূল সা. এর কাছে বাড়ীতে নামায পড়ার অনুমতি চাইলেনতিনি তাঁকে অনুমতি দিলেন এরপর যখন তিনি চলে যাচ্ছিলেনতাঁকে ডেকে বললেন: (তুমি কি আযানের ডাক শুনতে পাওতিনি  বলেন : হ্যাঁতিনি সা.  বললেন: (তাহলে সাড়া দাও)। (মুসলিম)
ইবনে উম্মে মাকতুম (রা:) হতে বর্ণিত তিনি নবী সা. এর কাছে আবেদন করে বলেন: হে আল্লাহর রাসূলআমি এক দৃষ্টিহীন ব্যক্তিদূরবর্তী স্থানে বাড়ীচলাচলের উপযোগী আমার কোন পথপ্রদর্শক নাইসুতরাং বাড়ীতে নামায পড়ার আমার কি অনুমতি আছেতিনি বললেন: (তুমি কি আযান শুনতে পাও?) তিনি বলেন: হ্যাঁতিনি সা. বললেন: (আমি তোমার জন্য কোন অনুমতি দেখছি না)। (আবুদাউদ) অন্য শব্দে রয়েছে যেতিনি বলেন: হে আল্লাহর রাসূলশহরে প্রচুর পরিমাণে বিষাক্ত পোকা-মাকড়হিংস্র জমত্ত রয়েছেঅতঃপর নবী সা. বলেন: (যদি তুমি হাইয়্যা আলাচ্ছালাহহাইয়্যা আলাল ফালাহ শুনতে পাও তাহলে দ্রূত অগ্রসর হও)। (আবুদাউদ)
এখানে নবী সা. স্পষ্ট করে বলেন যেআযান শুনতে পায় এমন মুসলিম ব্যক্তির জন্য নামাযে জামআত ত্যাগ করার কোন অনুমতি নাই। যদি একাকি নামায আদায় এবং জামাআতে নামায আদায়ের ব্যাপারে স্বাধীনতা থাকত তাহলে এই অন্ধ ব্যক্তি সবার চেয়ে বেশী হকদার হতকারণ তার মধ্যে ছয়টি ওজর বিদ্যমান ছিল: দৃষ্টিহীনদূরে বাড়ীশহরে প্রচুর হিংস্র যন্তু- জানোয়ারতার কোন উপযোগী চালক ছিলনাবয়স বেশীতাঁর ও মসজিদের মাঝে অনেক খেজুর গাছ ও অন্য গাছ ছিল।  (ইবনে ক্বাইয়্যম এর কিতাবুচ্ছালাত -৭৬)
৭/ নবী সা. বর্ণনা করেছেন: যে ব্যক্তি আযান শুনার পর মসজিদে আসলনা তার কোন নামায নাই। ইবনে আববাস (রা:) নবী সা. হতে বর্ণনা করেন তিনি সা. বলেছেন: (যে ব্যক্তি আযান শুনলঅতঃপর জামাআতে আসেনি ওজর ছাড়া তার কোন নামায নাই। (ইবনে মাজাহ)
এগুলো এটাই প্রমাণ করে যেজামাআতে নামায ফরজে আইনআমি আমাদের শায়েখ ইমাম আব্দুল আযীয বিন বাজ (রাহ:) কে বলতে শুনেছি: (তার কোন নামায নাই এর অর্থ হল: তার নামায পূর্ণ হবেনা বরং তার নামায অসম্পূর্ণ থাকবেতবে জামহুর ওলামাদের মতে নামায আদায় হয়ে যাবে)।
৮/ জামাআত পরিত্যাগ করা মুনাফিকদের আলামত এবং পথ ভ্রষ্টতার কারণকেননা আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা:) বলেন: (আমরা মনে করতাম যেমুনাফিক ব্যতীত কেহ জামাআতে অনুপস্থিত থাকেনা যার নেফাক ছিল বিদিতঅথবা অসুস্থ ব্যক্তি ব্যতীত কেহ জামাআতে অনুপস্থিত থাকেনাযদি অসুস্থ ব্যক্তি দুই জন মানুষের উপর ভর দিয়ে মসজিদে আসতে পারত তাহলে আসত। তিনি আরও বলেন: নবী সা. আমাদেরকে হেদায়াত পূর্ণ সুন্নাতের শিক্ষা দিয়েছেনআর হেদায়াতপূর্ণ সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত ছিল যে মসজিদে আযান দেয়া হয় সেই মসজিদে নামায আদায় করা।
অন্য এক বর্ণনায় রয়েছে: আব্দুল্লাহ (রা:) বলেন: (যে ব্যক্তি আনন্দিত হয় যেআগামী কাল সে আল্লাহ তাআলার সাথে মুসলিম হিসাবে সাক্ষাৎ করবে সে যেন সকল নামাযের প্রতি যত্নবান হয় এমন স্থানে যেখানে আযান দেওয়া হয়কেননা আল্লাহ তাআলা তোমাদের নবীর জন্য হেদায়াতের পথ সমূহ দেখিয়েছেনআর জামাআতে নামায আদায় হেদায়াতের পথ সমূহের অন্যতমতোমরা যদি তোমাদের বাড়ীতে নামায পড় যেমন ভাবে এই অনুপস্থিত ব্যক্তি তার বাড়ীতে নামায পড়ে তবে অবশ্যই তোমরা তোমাদের নবীর সুন্নাত বর্জনকারী হবেআর যদি তোমরা তোমাদের নবীর সুন্নাত ছেড়ে দাও তাহলে অবশ্যই তোমরা পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে। আবু দাউদের এক বর্ণনায় রয়েছে যদি তোমাদের নবীর সুন্নাত ছেড়ে দাও তাহলে তোমরা কুফরী করবেউত্তমভাবে পবিত্রতা অর্জন করে যে ব্যক্তি এসকল মসজিদ সমূহের একটিতে যাওয়ার ইচ্ছা করে তার প্রতি কদমের জন্য আল্লাহ তাআলা পূণ্য লিখে রাখেন এবং উহার দ্বারা তার মর্যাদা বৃদ্ধি করেন এবং তার থেকে একটি পাপ মোচন করেন। আমরা মনে করতাম মুনাফিক ব্যতীত কেহ জামাআতে অনুপস্থিত থাকে না যার নেফাক ছিল বিদিতএমনকি কোন কোন ব্যক্তিকে দুইপার্শ্বে দুই ব্যক্তির মাধ্যমে ধরে নিয়ে আসা হত  এবং কাতারে দাঁড় করিয়ে দেয়া হত)। (মুসলিম)
ইহা প্রমাণ করে যেজামাআতে অনুপস্থিত থাকা মুনাফিকের আলামাত যার নেফাক স্পষ্ট। মুস্তাহাব পরিত্যাগ করার কারণে বা মাকরুহ কাজ  করার কারণ মোনাফেকের আলামাত বলে আখ্যা দেয়া যায়না। সুবিদিত যেযে ব্যক্তি হাদীসে মুনাফেকের আলামাত অনুসন্ধান করবেসে পাবে যেফরয তরক করার কারণে কিংবা হারাম সম্পাদন করার কারণেই মুনাফেকের আলামাত বলে আখ্যা দেয়া হয়েছে। (ইবনে ক্বাইয়্যূমের কিতাবুচ্ছালাত-৭৭)।
উপরোক্ত আলোচনায় রয়েছে জামাআতে নামায পড়ার জোরদান এবং তাতে উপস্থিত হওয়আর ব্যাপারে কষ্ট সাধন। যদি অসুস্যহ বা অনুরূপ ব্যক্তির পক্ষে  জামাআতে উপস্থিত হওয়া সম্ভব হয় তাহলে তাতে উপস্থিত হওয়া তাদের জন্য মুস্তাহাব । (শারহুন নববী আলা ছহীহ মুসলিম-৫/১৬২) 
আবু হুরায়রাহ (রা:) নবী সা. হতে বর্ণনা করেন তিনি বলেছেন: (নিশ্চয় মুনাফিকদের কিছু আলামাত রয়েছে যার দ্বারা তাদেরকে চেনা যায়: তাদের অভিবাদন হচ্ছে অভিশাপতাদের খাবার হচ্ছে লুটের সম্পদতাদের গনীমতের সম্পদ হচ্ছে খেয়ানাততারা মসজিদে আসেনা বরং উহাকে পরিত্যাগ করেনামাযে সবার শেষে আসেতারা অহংকারীতারা কাউকে পছন্দ করেনাতাদেরকেও কেহ পছন্দ করেনাকাঠের মত রাতে নিদ্রামগ্ন থাকে নামায পড়েনাদিনের বেলা হৈচৈ-এ লিপ্ত থাকে) অন্য বর্ণনায় রয়েছে : ছুখুব: অর্থাৎ  কোলাহল করা। আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রা:) হতে বর্ণিত তিনি বলেন: (আমরা যখন এশা ও ফজরের নামাযে কোন ব্যক্তিকে পেতাম না তখন তার ব্যাপারে খারাপ ধারনা করতাম)। (ইবনে আবী শাইবা-১/৩৩২) অপর এক বর্ণনায় ইবনে ওমর (রা:) হতে বর্ণিত: (আমরা সকালের নামাযে কোন ব্যক্তিকে না পেলে তার সম্পর্কে খারাপ ধারনা করতাম)। (আল বায্যার -১/২২৮)
৯/ জামাআত পরিত্যাগকারীর অন্তর সীলমোহর করার ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছেকেননা ইবনে আববাস ও ইবনে ওমর (রা:) হতে বর্ণিত যেতারা উভয়ে নবী সা. কে বলতে শুনেছেন তিনি কাঠের মিম্মারে দাঁড়িয়ে বলেছেন: (অবশ্যই অনেক সম্প্রদায় জামাআত ত্যাগ করবে এবং অবশ্যই আল্লাহ তাআলা তাদের অন্তর সমূহে সীলমোহর করে দিবেনঅতঃপর তারা গাফিলদের অন্তর্ভুক্ত হবে)। (ইবনে মাজাহ)এই ভীতি প্রদর্শন কেবলমাত্র বড় ধরনের ওয়াজিব পরিত্যাগ কারীর ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে।
১০/ ঐ সম্প্রদায়ের উপর শয়তানের বিজয় লাভ যাদের মাঝে জামাআত প্রতিষ্ঠিত নাইকেননা আবু দারদাহ (রা:) হতে বর্ণিত হাদীসে রয়েছে তিনি বলেন: আমি রাসূল সা. কে বলতে শুনেছি তিনি বলেন: (যে কোন গ্রাম অথবা মরুভূমিতে যদি জামাআত প্রতিষ্ঠিত না হয় তবে শয়তান তাদের উপর বিজয় লাভ করেসুতরাং জামাআতে নামায পড়া আকড়ে ধরকেননা বাঘ দলছুট ছাগলকে খেয়ে ফেলে)। (আবুদাউদনাসায়ীআহমদহাকেম) নবী সা. এই সংবাদ দিয়েছেন যেজামাআত পরিত্যাগের কারণে শয়তান তাদের উপর বিজয় অর্জন করবেযে জামাআতের প্রতীক হল: আযান এবং নামাযের একামাততাই জামাআত যদি মুস্তাহাব হত তাহলে ব্যক্তি তা পালন করা বা ছেড়ে দেওয়ার ব্যাপারে স্বাধীন হত এবং জামাআত পরিত্যাগ কারী ও তার প্রতীক পরিত্যাগ কারীর উপর শয়তান বিজয় লাভ করতে পারত না। (ইবনে ক্বাইয়্যূমের কিতাবুচ্ছালাত-৮০)
১১/ আযানের পর মসজিদ হতে বের হওয়া হারাম যতক্ষণ না জামাআতের সাথে নামায আদায় করা হয়কেননা আবুশ্ শাছা (রা:) হতে বর্ণিত হাদীসে রয়েছে তিনি বলেন: আমরা আবু হুরায়রাহ (রা:) এর সাথে মসজিদে বসা ছিলামঅতঃপর মুয়ায্যিন আযান দিল এমতাবস্থায় এক ব্যক্তি মসজিদ থেকে বেরিয়ে চলতে লাগলআবু হুরায়রাহ (রা:) এর দৃষ্টি তাকে অনুসরণ করছিল এমনকি সে মসজিদ থেকে বের হয়ে গেলতখন আবু হুরায়রাহ (রা:) বললেন: (এই ব্যক্তিটি আবুল কাসেম সা. এর নাফরমানি করেছে)। (মুসলিম)
আযানের পরে মসজিদ থেকে বের হওয়ার কারণে আবু হুরায়রাহ (রা:) তাকে রাসূল সা. এর অমান্যকারী সাব্যস্ত করেলেনকেননা সে জামাআতের সাথে নামায আদায় করা পরিত্যাগ করেছে। (ইবনুল ক্বাইয়্যমের কিতাবুচ্ছালাত -৮১) ইমাম নববী (র:) বলেন: (এতে প্রমাণিত হয় যেআযানের পরে ওজর ব্যতীত মসজিদ থেকে বের হওয়া মাকরুহ যতক্ষণ না ফরজ নামায আদায় করা হয়। আল্লাহ তাআলা সবচেয়ে বেশী জ্ঞাত)। (শারহুন্ নববী আলা ছহীহ মুসলিম-৫/১৬৩)
(আযানের পরে মসজিদ থেকে বের হওয়ার ব্যাপারে) স্পষ্টভাবেই নিষেধাজ্ঞা এসেছেআবু হুরায়রাহ (রা:) হতে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সা. আমাদেরকে নির্দেশ করেছেন: (যখন তোমরা মসজিদে থাকঅতঃপর নামাযের জন্য আযান দেওয়া হয়তখন তোমাদের কেহ যেন নামায না পড়ে বের না হয়)। (আহমাদ-২/৫৩৮) এবং তাঁর থেকে আরও বর্ণিত আছে তিনি বলেন: রাসূল সা. বলেছেন: (এই মসজিদে যে ব্যক্তিই আযান শোনার পর প্রয়োজন ছাড়া বের হল অতঃপর ফিরে আসলনা সে মোনাফেক)। (ত্বাবরানী)
আমি আমাদের শায়েখ ইমাম আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহ:) কে বলতে শুনেছি যে, যে মসজিদে আযান দেওয়া হয় সেখান থেকে ওজর ব্যতীত বের হওয়া জায়েয নাইওজর বলতে যেমন: সে ওজু করার ইচ্ছায় অথবা অন্য মসজিদে নামায পড়ার ইচ্ছায় বের হল।
আমার বক্তব্য হল: তিরমিযী (রাহ:) বলেন: (এই আমলের উপর নবী সা. এর সাহাবাগণ এবং তাঁদের পরবর্তী ওলামায়ে কেরাম প্রতিষ্ঠিত ছিলেন যেআযানের পর ওজর ব্যতীত কেহ মসজিদ থেকে বের হবেনাঅথবা কেহ বিনা ওজুতে যদি থাকে অথবা জরুরী কোন প্রয়োজন পরে তাহলেই কেবল বের হবে অন্যথা নয়। (সুনানুত তিরমিযি) 
মোবারকপুরী (রহ:) উল্লেখ করেছেন: হাদীসটি এই প্রমাণ করে যেমসজিদে আযান হওয়ার পর জরুরী কারণ ব্যতীত সেখান থেকে বের হওয়া জায়েয নাইযেমন যে ব্যক্তি অপবিত্র ছিলঅথবা তার হাদাসে আসগর ঘটেছে অর্থাৎ ওজু নষ্ট হয়ে গেছেঅথবা যার নাক দিয়ে রক্ত পড়া শুরু হয়েছে বা যে মুত্রবদ্ধতায় আক্রান্ত ইত্যাদিঅনুরূপ যে ব্যক্তি অন্য মসজিদের ইমাম এবং যে ব্যক্তি উপরোক্ত ওজরের আওতাভুক্ত হবে সেও তার মতোই । (তুহফাতুল আহ্ওয়াজি-২/৬০৭)
১২/ নবী সা.-এর মসজিদে জামাআতের খোজ-খবর নেওয়া এই প্রমাণ করে যেজামাআতে নামায পড়া ওয়াজিবকেননা উবাই বিন কাব (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সা. একদিন আমাদেরকে নিয়ে ফজর নামায পড়ালেনঅতঃপর বললেন: (অমুককে দেখেছ?) তারা বললেন: নাতিনি বললেন: :(অমুক কে দেখেছ?) তারা বললেন: নাতিনি বললেন: (নিশ্চয় এই দুই নামায অর্থাৎ ফজর ও এশার নামায মোনাফিকদের উপর সবচেয়ে ভারী নামাযযদি তোমরা জানতে যে উভয় নামাযে কি রয়েছে তাহলে তোমরা অবশ্যই হাটুতে হামাগুড়ী দিয়ে হলেও আসতেনিশ্চয় প্রথম লাইন ফেরেশতাদের সমতুল্য লাইনযদি তোমরা উহার ফযীলত জানতে তাহলে অবশ্যই উহার দিকে ছুটে আসতেআর নিশ্চয় কোন ব্যক্তির অপর এক ব্যক্তির সাথে নামায একাকী ব্যক্তির নামায অপেক্ষা অধিকতর পবিত্র  এবং  কোন ব্যক্তির অপর দুই ব্যক্তির সাথে নামায অপর এক ব্যক্তির সাথে নামায অপেক্ষা অধিকতর পবিত্রআর যতই সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে তা আল্লাহ তাআলার কাছে অধিক প্রিয়)। (আবুদাউদনাসায়ী)
১৩/ জামাআত ওয়াজিব হওয়ার ব্যাপারে সাহাবাদের (রা:) ইজমাইমাম ইবনে ক্বাইয়্যম (রাহ:) জামাআতে নামায আদায় ওয়াজিব মর্মে সাহাবাদের ইজমা উল্লেখ করেছেন এবং সে ক্ষেত্রে তাঁদের স্পষ্ট বক্তব্য তুলে ধরেছেনতিনি বলেন: (এই হচ্ছে সাহাবাদের স্পষ্ট সহীহ-শুদ্ধপ্রসিদ্ধ তথা ব্যাপক বক্তব্য যা আপনি দেখতে পাচ্ছেন এবং একজন সাহাবী থেকেও তার (জামাআত ওয়াজিব) বিরোধিতা আসেনিএই মাস্আলার ক্ষেত্রে উপরোল্লিখিত আসারের প্রতিটিই এককভাবে স্বতন্ত্র দলীলসুতরাং পারস্পারিক সহায়তা এবং এতগুলো দলীল সমবেত হওয়ার পর কতটা শক্তিশালী হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। আল্লাহর কাছেই তাওফীক কামনা করছি )। (কিতাবুচ্ছালাত-৮১-৮২)
তিরমিযি (রাহ:) বলেন: (নবী সা. এর একাধিক সাহাবী হতে বর্ণিত  তাঁরা বলতেন: যে ব্যক্তি আযান শুনল অথচ তাতে সাড়া দিলনা তার জন্য কোন নামায নাই)। (সুনানুত্ তিরমিযি)
কিছু সংখ্যক আহলে ইল্ম (উলামা) বলেন: এ ব্যাপারে কঠিন ও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে এবং কারো জন্যই ওজর ব্যতীত জামাআত ত্যাগের অনুমতি দেওয়া হয়নি। (সুনানুত্ তিরমিযি-কিতাবুচ্ছালাত-২১৭)
মুজাহিদ বলেন: (ইবনে আববাস -রা:-কে এক ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল যেদিনের বেলা রোযা রাখে এবং রাতের বেলা রাত জেগে নামায পড়েকিন্তু জুমআহ ও জামাআতের নামাযে হাজির হয় নাতিনি বলেন: সে জাহান্নামী)। (সুনানুত্ তিরমিযি-কিতাবুচ্ছালাহ-২১৮)
তিরমিযি (রহ:) বলেন: (হাদীসের অর্থ হল: যে জুময়াহ ও জামাআতের নামাযে হাজির হয় না অপছন্দ করেযথাযথ গুরুত্ব দেয়না এবং অবহেলা করে)। (সুনানুত্ তিরমিযি-কিতাবুচ্ছালাত-১/৪২৪)

 তৃতীয় পরিচ্ছেদ: 
        
            জামাআতে নামাযের উপকারিতা:

 জামাআতে  নামাযের উপকারিতা অনেক এবং তার বিড়াট কল্যান রয়েছেতার রয়েছে বিভিন্নমূখী উপকারিতাযে কারণে ইসলামী শরীয়তে জামাআত ওয়াজিব করেছে। আর ইহা এই প্রমাণই করে যেহিকমাত বা প্রজ্ঞার দাবী হল জামাআতে নামায ফরজে আইন। যে সকল উপকারিতা ও হিকমতের জন্য জামাআতে নামায আদায়  করা শরীয়ত ওয়াজিব করেছে তন্মধ্যে কিছু নিম্নরূপ: 
১/ এই উম্মতের জন্য নির্দিষ্ট সময়ে সমবেত হওয়ার উত্তম বিধান আল্লাহ তাআলা নির্ধারণ করেছেনযেগুলোর কিছু হল দিন রাতের সাথে সংশ্লিষ্টযেমন পাঁচ ওয়াক্ত নামাযআর কিছু রয়েছে যা সপ্তাহের সাথে সংশ্লিষ্টআর তা হল জুময়ার নামাযআর কিছু রয়েছে যা বছরে বার বার হয়তা হল প্রত্যেক শহরের জন্য জামাআতের সাথে ঈদের নামাযআর কিছু রয়েছে যা বছরে একবার সার্বজনীন ভাবে পালিত হয়তা হল আরাফাতে অবস্থানযা পরস্পরের সম্পর্ক অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে (বিড়াট ভূমিকা পালন করে থাকে) এর মাঝে রয়েছে: অনুগ্রহসহানুভূতিতত্ত্বাবধান এবং অন্তরের পরিচ্ছন্নতাকথা ও কাজের মাধ্যমে আল্লাহর পথে আহবান।
২/ এই সমবেত হওয়ার মাধ্যমে সওয়াবের উদ্দেশ্যেআল্লাহর শাস্তির ভয়ে এবং তাঁর নিকট মজুদ নেয়ামাতরাজি পাওয়ার আশায় তাঁর ইবাদত করা।
৩/ পারস্পারিক ভালবাসা অর্থাৎ পরস্পর হৃদ্যতা পোষণ করাযাতেকরে পরস্পরের অবস্থা জানা যায়যেমন রোগীকে দেখতে যাওয়ামৃত ব্যক্তিকে বিদায় জানানোদু:খ-ভারাক্রান্ত ব্যক্তিদের সাহায্য করাঅভাবীদের সহায়তা দান করাকেননা মানুষের পরস্পরের দেখা সাক্ষাৎ করা ভালবাসা ও হৃদ্যতা অবধারিত করে দেয়।
৪/ পরিচিতি লাভ: কেননা মানুষ যখন পরস্পর মিলে নামায আদায় করে তখন তাদের মাঝে পরিচয় ঘটে এবং কখনও কখনও এই পরিচয় থেকে তাদের কোন কোন আত্নীয়ের পরিচয় মিলে এবং নৈকট্যের ভিত্তিতে সম্পর্ক গড়ে ওঠেকখনও প্রবাসী অপরিচিত লোকের পরিচয় পাওয়া যায় এবং মানুষ তার অধিকার আদায়ে সচেষ্ট হয়।
৫/ ইসলামের মহান নিদর্শন সমূহের অন্যতম নিদর্শন প্রদর্শন করাকেননা মানুষেরা সবাই যদি তাদের বাড়ীতে নামায পড়ে তাহলে এই পরিচয় পাওয়া যায় না যেসেখানে কোন নামায আছে।
৬/ মুসলিমদের মর্যাদা প্রকাশ করাকেননা তাঁরা যখন সমবেতভাবে মসজিদে প্রবেশ করবে এবং মসজিদ থেকে বের হবে তখন তা মুনাফিক ও কাফেরদেরকে ক্ষেপিয়ে তুলবে এবং তাদের সাথে সাদৃস্যপূর্ণ হওয়ার ক্ষেত্রে দূরত্ব সৃষ্টি হবেতাদের পথ চলার পন্থা থেকে দুরে অবস্থান করা হবে।
৭/ মূর্খকে শিক্ষাদানকেননা অনেক লোক জামাআতে নামাযের মাধ্যমে  শরীয়তের অনেক বিধান শিক্ষা লাভ করে থাকেপ্রকাশ্য ক্বেরাত শুনতে পায়উপকৃত হয়শিখতে পারে এবং সে নামাযের পরের জিকির বা দুআ গুলো শুনতে পায়তা মুখস্থ করেসে ইমামের ও তার পার্শ্বে ও সামনে যারা আছে তাদের অনুসরণ করে। এভাবে নামাযের বিধিবিধান শিখে এবং মূর্খ ব্যক্তি শিক্ষীত ব্যক্তির থেকে শিক্ষা লাভ করে।
৮/ জামাআতে অনুপস্থিত ব্যক্তিকে উৎসাহ দানতাকে পথ নির্দেশনা ও উপদেশ প্রদান করাঅধিকারের ব্যাপারে পরস্পর সদুপদেশ বা পরামর্শ দেওয়া এবং তার উপর ধৈর্য্য ধারন করা।
৯/ মুসলিম উম্মাহকে একতাবদ্ধ থাকার এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন না হওয়ার অনুশীলন করাকেননা উম্মাত (মুসলিম উম্মাহ) শাসনকর্তার আনুগত্যের ব্যাপারে একমতআর জামাআতের সাথে এই নামায হচ্ছে একটি ছোট্র প্রশাসনিক ব্যবস্থাকেননা তারা একজন ইমামের আনুগত্য করে তাকে পরিপুর্ণ অনুসরণ করেসুতরাং ইহা সাধারণ ভাবে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গী প্রতিষ্ঠা করে থাকে।
১০/ আত্ননিয়ন্ত্রনের প্রতি মানুষকে অভ্যস্ত করাকেননা যখন সে ইমামের পুংখানুপুংখ অনুসরণ করার অভ্যাস করেতার পূর্বে তাকবীর দেয়নাতার আগে কিছু করেনাতার থেকে খুব বেশী দেরীও করেনাতার একেবারে সাথে সাথেও করেনা বরং তাঁকে অনুসরণ করে সে আত্ননিয়ন্ত্রনের প্রতি অভ্যস্ত হয়ে যায়।
১১/ মুসলিম ব্যক্তির জিহাদের ময়দানে এক লাইনে দন্ডায়মান হওয়ার অনুভূতি জাগ্রত হয়যেমনটি আললাহ তায়ালা বলেছেন:
﴿ إِنَّ ٱللَّهَ يُحِبُّ ٱلَّذِينَ يُقَٰتِلُونَ فِي سَبِيلِهِۦ صَفّٗا كَأَنَّهُم بُنۡيَٰنٞ مَّرۡصُوصٞ ٤ ﴾ [الصف: ٤] 
 অর্থ: ‘‘যারা আল্লাহর পথে সংগ্রাম করে সারিবদ্ধভাবে সুদৃঢ় প্রাচীরের মতআল্লাহ তাদেরকে ভালবাসেন’’। (আছ-ছফ-৪)
সুতরাং এই ব্যক্তিরা যারা জিহাদের ময়দানে এক কাতারবন্দী হয়ে গেল নিঃসন্দেহে তারা যদি উহা পাঁচ ওয়াক্ত নামাযে অভ্যস্ত হয় তাহলে উহা জিহাদের ময়দানে তাদের জন্য  তাদের নেতার নেতৃত্ব অনুসরণ করার ওসীলা (মাধ্যম) হবেঅতএব তার আদেশের আগেও বাড়বেনা এবং পিছেও সরবে না।
১২/ মুসলিমদের সমানাধিকারের অনুভূতি এবং সামাজিক পার্থক্য ভেঙ্গে ফেলাকেননা তারা মসজিদে একত্রিত হয়: সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি সবচেয়ে দরিদ্র ব্যক্তির পার্শ্বেআমীর মামুরের (অধীনস্ত ব্যক্তির) পার্শ্বেশাসক শাসীতের পার্শ্বেছোট ব্যক্তি বড় ব্যক্তির সাথে দন্ডায়মান হয় ফলে মানুষ এই উপলব্ধি করে যেতারা সবাই এক সমানআর এমনি ভাবে সম্পৃতির সৃষ্টি হয়এজন্যই নবী সা. কাতার সমূহ সোজা করার আদেশ করেছেন এমনকি তিনি বলেন: (তোমরা পরস্পর মতভেদ করনাতা করলে তোমাদের অন্তর সমূহ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে)। (মুসলিম)
১৩/ ফকীর-মিসকীনদের অবস্থার খোজ খবর নেয়া এবং রোগীদের ও নামাযের ব্যাপারে অবহেলা কারীদের খোজ খবর নেয়াকেননা মানুষ যখন অপর মানুষকে দেখে যেসে অতি পুরাতন কাপড় পরিধান করছে এবং তার উপর ক্ষুধার চি‎‎‎হ্ণ ফুটে উঠেছে তখন তার প্রতি দয়া করেতাকে অনুগ্রহ করেআর যখন তাদের কেহ কেহ জামাআতে অনুপস্থিত থাকেতখন তারা জানতে পারে যেসে অসুস্থ ছিলঅথবা সে অপরাধী ছিল (জামাআতে অনুপস্থিত থাকার কারণে) এতে করে তাকে নছীহত করেএভাবে পুণ্য ও আল্লাহ ভীতির পথে পরস্পর সহযোগিতা সংঘটিত হয়ন্যায়ের সাথে পরস্পর সুপরামর্শ দেওয়া হয় এবং সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধের ক্ষেত্রে  পরস্পর সহায়তা দান অর্জন হয়।
১৪/ এই উম্মতের পরবর্তী ব্যক্তিদের সে বিষয়ের উপলব্ধি করাযার উপর উম্মতের প্রথম ব্যক্তিগণ প্রতিষ্ঠিত ছিলেনকেননা সাহাবাগণ রাসূল সা. এর অনুসরণ করতেন। সুতরাং ইমাম অনুভব করে যেসে রাসূল সা. এর স্থানে অবস্থান করছেমামুম (ইমামের পিছনে নামাযরত ব্যক্তি) অনুভব করে যেসে সাহাবাদের (রা:) স্থানে অবস্থান করছে এবং এই অনুভূতি উম্মতকে নবী সা. ও তাঁর সাহাবা (রা:) এর অনুসরণ করার প্রতি উৎসাহ প্রদান করে।
১৫/ আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে বরকত অবতীর্ণ হওয়ার উপায় লাভের আশায় মসজিদে মুসলিমদের সমবেত হওয়া।
১৬/ মুসলিমের কর্ম তৎপরতা বৃদ্ধি পায়আর তা এই ভাবে যে যখন সে  এবাদত বন্দেগীতে প্রাণবন্ত ব্যক্তিদের উৎসাহ উদ্যম দেখতে পায়আর এতে রয়েছে বিরাট উপকার।
১৭/ নেকী দ্বিগুন হয় এবং সাওয়াব বৃদ্ধি পায়।
১৮/ কথা ও কাজের দ্বারা আল্লাহ তাআলার পথে আহবান করাএছাড়াও অন্যান্য প্রচুর উপকারিতা রয়েছে। (হাশিয়াতুর রওদুল মুরবি’, আলএহকামমাজমু’ ফাতাওয়াশারহুল মুমতি’, সালাতুল জামাআহ)
১৯/ নির্দিষ্ট সময়ে মুসলিমদের সমবেত হওয়া তাদেরকে সময়ের প্রতি যত্নবান হওয়ার শিক্ষা দান করে।

চতুর্থ পরিচ্ছেদ:

          জামাআতে নামাযের ফযীলত:

 জামাআতে নামাযের অনেক ফযীলত রয়েছেনিম্নে তার থেকে কিছু উল্লেখ করা হল:
-জামাআতে নামায সাতাশ বার একাকী নামাযের সমানসুতরাং জামাআতের সাথে নামায আদায়কারীর একাকী নামায আদায়কারীর তুলনায় ২৭ গুন বেশি সাওয়াব লাভ করে। (নাইলুল আওতার-২/৩৪৭ছুবুলুচ্ছালাম-৩/৬৭) কেননা আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা:) থেকে বর্ণিত হাদীসে রয়েছেরাসূল সা. বলেন: (জামাআতে নামায একাকী নামায অপেক্ষা ২৭ গুন বেশী মর্যাদাপূর্ণ)। মুসলিমের শব্দ হল: (জামাআতে নামায একাকী নামায অপেক্ষা মর্যাদার দিক থেকে ২৭গুন উত্তম)। মুসলিমের অপর শব্দে রয়েছে: (ব্যক্তির জামাআতে নামায তার একাকী নামায অপেক্ষা ২৭ গুন বেশি)। (বুখারী ও মুসলিম) আবু সায়ীদ খুদরী (রা:) হতে বর্ণিত তিনি নবী সা. কে বলতে শুনেছেন: (জামাআতে নামাযের সাওয়াব একাকী নামায থেকে মর্যাদার দিক থেকে ২৫ গুন বৃদ্ধি করা হয়)। (বুখারী)
আবু হুরায়রাহ (রা:) হতে বর্ণিত নবী সা. হতে বর্ণনা করেন: (সবার সাথে নামায অর্থাৎ জামাআতের সাথে নামায কোন ব্যক্তির একাকী নামাযের তুলনায় ২৫ গুন বাড়িয়ে দেওয়া হয়)।
তিনি আরও বলেন: (রাতের ও দিনের ফেরেশ্তাগণ ফজর নামাযে একত্রিত হন)। আবু হুরায়রাহ (রা:) বলেন: (তোমরা ইচ্ছা করলে পড়) وَقُرۡءَانَ ٱلۡفَجۡرِۖ إِنَّ قُرۡءَانَ ٱلۡفَجۡرِ كَانَ مَشۡهُودٗا ٧٨ ﴾ [الاسراء: ٧٨]   অর্থ: ‘‘ফজরের তেলাওয়াত এবং নিশ্চয় ফজরের তেলাওয়াতে  পরিলক্ষিত হয়’’ অর্থাৎ ফেরেশতাগণ উপস্থিত থাকেন। 
অন্য এক বর্ণনায় রয়েছে: (২৫ অংশ বৃদ্ধি করা হয়)। (বুখারী ও মুসলিম)। (অংশ এবং মর্যাদার অর্থ একই: (শারহুনণববী আলা ছহীহ মুসলিম ৫/১৫৮)                                       
উক্ত উভয় ধরনের (২৫ গুন এবং ২৭ গুন মর্যাদা বিশিষ্ট) হাদীস সমূহের মাঝে এভাবে সামঞ্জস্য বা মিল করা হয়েছে যে২৫ গুনের হাদীসে যে মর্যাদা উল্লেখ করা হয়েছে তা হল ব্যক্তির একাকী নামায ও জামাআতে নামাযের মাঝে ব্যবধান ২৫ গুন বেশিআর ২৭ গুনের হাদীসে যে মর্যাদা উল্লেখ করা হয়েছে তা হল ব্যক্তির একাকী নামায ও তার জামাআতে নামায এবং উভয়ের মাঝের ফযীলতঅতএব উভয়ের সমষ্টি হয় ২৭। (ফাতাওয়া শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া-২৩/২২২)   ইমাম নববী (রাহ:) বলেন: উক্ত হাদীস সমূহের মাঝে তিন ভাবে সামঞ্জস্য বা মিল করা যায়ঃ
 প্রথমটি হল: উল্লিখিত বর্ণনা সমূহের মাঝে কোন বৈপরিত্য নাইকেননা অল্পের উল্লেখ দ্বারা বেশীকে অস্বীকার করা হয়না (অল্প বেশীর অন্তর্ভুক্ত) এবং উসূলবিদদের নিকট সংখ্যার অর্থ নেয়া অকার্যকর/অর্থহীন।
দ্বিতীয়ত: হয়তবা প্রথমে কম সংখ্যার সংবাদ (নবী সা. কে) দেয়া হয়েছিলঅতঃপর আল্লাহ তাআলা তাঁকে অতিরিক্ত ফযীলতের কথা জানালে তিনি তার সংবাদ দেন।
তৃতীয়ত: নামায ও নামাযীদের অবস্থা অনুসারে ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে অর্থাৎ নামাযের পূর্ণতা সঠিক ভাবে যত্ন নেয়া তাতে বিনম্রতা বজায় রাখাতা বড় জামাআতে আদায় করা এবং স্থানের মহত্ব ও মর্যাদা প্রভৃতি অনুসারে কারো জন্যে ২৫ গুন এবং কারো জন্যে ২৭ গুন হয়ে থাকে। এবং এগুলো হল নির্ভরযোগ্য উত্তর। (শারহুন্নববী আলা ছহীহ মুসলিম ৫/১৫৬-১৫৭)।
আমি আমাদের সম্মানিত শায়েখ ইমাম আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহ:) কে বলতে শুনেছি: (আর এই তারতম্য আল্লাহ তাআলাই ভাল জানেন অতিরিক্ত ফযীলতের বর্ণনাকম ফযীলতের বর্ণনার পূর্বে অবতীর্ণ হয়নিসুতরাং প্রথমে ২৫ এর সংবাদ দিয়েছেন অতঃপর ২৭ এর সংবাদ দিয়েছেন)।
যারা বলেন যেজামাআতে নামায ওয়াজিব নয় তারা এই সকল হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করেন যেআফযাল (বেশী উত্তম) শব্দটি মূল ফযীলতে উভয়ের অংশীদারিত্ব প্রমাণ করে (এতে প্রমাণিত হয় জামাআত ওয়াজিব নয়) আমি আমাদের ইমাম আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহ:) কে বলতে শুনেছি: (এই হাদীস গুলো জামাআতের ফযীলত প্রমাণ করেকিন্তু এই ফযীলত ওয়াজিব না হওয়া সাব্যস্ত করেনাঅতএব জামাআতে নামায ওয়াজিব এবং উত্তম। আর শ্রেষ্ঠত্ব এবং ওয়াজিব এর মাঝে কোন বৈপরিত্য নাই। এবং যে ব্যক্তি জামাআতের সাথে নামায পড়েনি অগ্রাধীকার যোগ্য মত অনুযায়ী তার নামায সহীহ তবে সে গুনাহগার)।
আর একাকী নামায আদায়কারী যে জামাআতের সাওয়াব থেকে বঞ্চিত তার ওজর গ্রহণ যোগ্য নয়সকল বিষয়ে আল্লাহ তাআলাই অধিক জ্ঞাত। তবে যদি তার অভ্যাস এমন হয় যেসে জামাআতে নামায পড়ে কিন্তু ওজরের কারণে জামাআতে নামায পড়তে পারেনি: যেমন অসুস্থ ব্যক্তি অথবা সফর রত বা আটকা পড়া ব্যক্তি এবং জামাআতে উপস্থিত হওয়া তার পক্ষে সম্ভব না হয়আর আল্লাহ তাআলাই জানেন যেব্যক্তির নিয়্যাত আছে যদি সে সক্ষম হত জামাআতে নামায পরিত্যাগ করত নাএই ব্যক্তির সাওয়াব পরিপূর্ণ হবেকেননা যে ব্যক্তি কোন কাজের ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিল এবং যতটুকু তার পক্ষে সম্ভব হয়েছে ততটুকুই পালন করেছেসে পরিপূর্ণ কর্মসম্পাদনকারীর স্থানেই অবস্থানকারী। (ফাতাওয়া শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া-২৩/২৩৬)কেননা আবু বুরদাহ (রা:) থেকে হাদীসে রয়েছে যা আবু মূসা (রা:) হতে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সা. বলেছেন: (যখন কোন বান্দাহ অসুস্থ হয় অথবা সফরে থাকে ঐ পরিমাণ সাওয়াব তার জন্য লেখা হয়মুকিম অবস্থায় সুস্থ থেকে সে যে পরিমাণ আমল করত)। (বুখারী)
-আল্লাহ তাআলা জামাআতের সাথে নামায আদায়ের বিনিময়ে শয়তান থেকে রক্ষা করেনকেননা মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা:) থেকে বর্ণিত হাদীসেরাসূল সা. বলেন: (নিশ্চয় শয়তান মানুষের জন্য বাঘ স্বরূপযেমন ছাগলের জন্য বাঘ রয়েছেসে দলছুট ছাগলকে এবং একাকী ছাগলকে খেয়ে ফেলেসাবধান! পরস্পর বিভক্ত হওয়া থেকেতোমরা জামাআতকে (আহলুচ্ছুন্নাহ ওয়াল জামাআত) আকড়ে ধর এবং জনসাধারনের সাথে থাক)। (আহমদ-৫/২৪৩) এবং আবু দারদা (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি রাসূল সা. কে বলতে শুনেছি তিনি বলেন: (কোন গ্রামে অথবা মরুভূুমিতে যদি তিন ব্যক্তি থাকে কিন্তু তাদের মাঝে নামায প্রতিষ্ঠিত না থাকে তাহলে শয়তান তাদের উপর বিজয় লাভ করেসুতরাং তোমরা জামাআত আকড়ে ধরকেননা বাঘ কেবল দূরে অবস্থান কারী ছাগলই খেয়ে থাকে)। (আবুদাউদনাসায়ী, আহমাদ)
- জামাআতের সাথে নামাযের ফযীলত বৃদ্ধি পায় মুসল্লীদের সংখ্যা বৃদ্ধি অনুযায়ীকেননা উবাই বিন কাব (রা:) থেকে বর্ণিত হাদীসে রয়েছে: (..আর নিশ্চয় কোন ব্যক্তির অপর ব্যক্তির সাথে নামায তার একাকী নামায অপেক্ষা অধিকতর পবিত্র এবং কোন ব্যক্তির অপর দুই ব্যক্তির সাথে নামায তার অপর এক ব্যক্তির সাথে নামায অপেক্ষা অধিকতর পবিত্রআর যতই সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে তা আল্লাহ তাআলার কাছে অধিক প্রিয়)। (সুনানে আবুদাউদনাসায়ীআহমদ) আর এ হাদীসটি অধিক সংখ্যক মানুষের সাথে নামায আদায়ের প্রতি উৎসাহ দেয়যদি অকল্যাণ থেকে নিরাপদ থাকা যায় এবং কোন ধরনের কল্যাণ ছুটে যাওয়ার আশংকা না থাকে ।
- জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও মোনাফিকি থেকে মুক্তি ঐ ব্যক্তির জন্য যে ৪০দিন তাকবীরে তাহরীমা সহ জামাআতের সাথে নামায আদায় করতে পারেকেননা আনাস (রা:) থেকে বর্ণিত হাদীসে রয়েছে তিনি বলেন: রাসূল সা. বলেছেন:
«مَنْ صَلَّى لِلَّهِ أَرْبَعِينَ يَوْمًا فِي جَمَاعَةٍ يُدْرِكُ التَّكْبِيرَةَ الأُولَى كُتِبَ لَهُ بَرَاءَتَانِ: بَرَاءَةٌ مِنَ النَّارِ، وَبَرَاءَةٌ مِنَ النِّفَاقِ»
অর্থ: (যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য ৪০ দিন জামাআতের সাথে নামায আদায় করল যাতে সে তাকবীরে উলা বা প্রথম তাকবীর পেয়েছে তার জন্য দুটি মুক্তি লেখা হয়: জাহান্নাম থেকে মুক্তি এবং নেফাক থেকে মুক্তি)। (তিরমিযি)
 এতে নামাযে এখলাছ বা একনিষ্ঠতার ফযীলত রয়েছেকেননা নবী সা. বলেছেন: (مَنْ صَلَّى لِلَّهِ) অর্থাৎ: (যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য নামায পড়ল) অর্থাৎ একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর জন্য, (بَرَاءَةٌ مِنَ النَّارِ،অর্থাৎ: জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও নিষ্কৃতি পাওয়া এবং তার জন্য লেখা হয়( وَبَرَاءَةٌ مِنَ النِّفَاقِ) অর্থাৎ: দুনিয়াতে মুনাফিকের কাজ করা হতে নিরাপদ থাকে এবং একনিষ্ঠ লোকদের কাজ করার তাওফীক দেওয়া হয় অর্থাৎ তাকে নেক্ কাজ করার তাওফীক দান করা হয়আর আখেরাতে মুনাফিককে যে শাস্তি দেওয়া হবে তা হতে তাকে নিরাপত্তা দেওয়া হয়তার জন্য এই সাক্ষী দেওয়া হয় যেসে মুনাফিক নয়অর্থাৎ মুনাফিকরা যখন নামায পড়ে তখন তারা অলসদের মত নামায পড়েআর এই ব্যক্তির অবস্থা তাদের বিপরীত। (তুহফাতুল আহওয়াজী ২/৪৫)
-যে ব্যক্তি জামাআতের সাথে ফজরের নামায আদায় করল সে সন্ধা পর্যন্ত আল্লাহ তাআলার দায়িত্বে ও নিরাপত্তায় থাকেকেননা জুনদুব ইবনে আব্দুল্লাহ (রা:) থেকে বর্ণিত হাদীসে রয়েছে তিনি বলেন: রাসূল সা. বলেছেন: (যে ব্যক্তি ফজরের নামায পড়ল সে আল্লাহ তাআলার দায়িত্বেসুতরাং তোমরা আল্লাহ তাআলার কাছে তাঁর যিম্মার কোন অংশ কামনা করনাকেননা যে ব্যক্তি তাঁর কাছে তাঁর যিম্মার কিছু অংশ কামনা করে তাঁকে কিছু অংশ দেওয়া হয়অতঃপর জাহান্নামের আগুনে  মাথা নীচু করে তাকে নিক্ষেপ করা হয়)। (মুসলিম-৬৫৮)
এতে নিশ্চিত (প্রমাণিত) হয় যেযে ব্যক্তি ফজরের নামায পড়ে সে আল্লাহ তাআলার নিরাপত্তায় থাকে এবং তার সান্নিধ্যে থাকেযেহেতু সে আল্লাহ তাআলার আশ্রয় চেয়েছেআর তাই আল্লাহ তাআলা তাকে আশ্রয় দিয়েছেনসুতরাং কারও উচিৎ নয় নিজেকে দু:খ বা কষ্টের সম্মুখীন করাআর যে ব্যক্তি এরূপ করবে আল্লাহ তাআলা তার কাছে স্বীয় হক/অধিকার তলব করবেনআর যার কাছে স্বীয় হক তলব করে বসবেন সে কোন পালানোর স্থান পাবেনা এবং কোন আশ্রয় স্থলও পাবেনা। এতে রয়েছে কঠোর ভীতি প্রদর্শন ঐ ব্যক্তির জন্য যে ব্যক্তি নামাযীদের বাধা দান করে এবং সুসংবাদ ঐ ব্যক্তির জন্য যে ফজরের নামাযে উপস্থিত হয়। কিছু কিছু হাদীস এমন এসেছে যাতে ফজরের নামায জামাআতের সাথে পড়ার কথা বিশেষ ভাবে উল্লেখ হয়েছে। (আত্তারগীব ওয়াত্তারহীব)
-যে ব্যক্তি জামাআতের সাথে ফজরের নামায আদায় করলঅতঃপর  সূর্যোদয় পর্যন্ত  বসে আল্লাহর জিকির (শরীয়ত সম্মত পন্থায়) করল তার জন্য রয়েছে হজ্ব এবং ওমরার সাওয়াবকেননা আনাস (রা:) হতে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সা. বলেছেন: (যে ব্যক্তি ফজরের নামায জামাআতের সাথে আদায় করলঅতঃপর সূর্যোদয় পর্যন্ত আল্লাহর জিকির করল এবং দুই রাকাআত নামায আদায় করল তার জন্য রয়েছে হজ্ব ও ওমরার সাওয়াব: পরিপুর্ণপরিপুর্ণপরিপুর্ণ)। (তিরমিযি-৫৮৬)
-এশা এবং ফজরের নামায জামাআতের সাথে আদায়ের জন্য রয়েছে মহা প্রতিদানকেননা উসমান বিন আফফান (রা:) হতে বর্ণিত হাদীসে রয়েছেতিনি বলেন: আমি রসূল সা. কে বলতে শুনেছি: (যে ব্যক্তি জামাআতের সাথে এশার নামায আদায় করল সে যেন অর্ধেক রাত জাগরন করলআর যে ব্যক্তি ফজরের নামায জামাআতের সাথে আদায় করল সে যেন গোটা রাত নামায পড়ল)। (মুসলিম-৬৫৬)
কারও কারও মতে: হাদীসের অর্থ হলযে ব্যক্তি ফজরের নামায জামাআতের সাথে আদায় করল এবং এশার নামাযও জামাআতের সাথে আদায় করল সে যেন পুরো রাত নামায পড়ল। আবু দাউদের শব্দ উক্ত অর্থের সমর্থন করে: (যে ব্যক্তি জামাআতের সাথে এশার নামায আদায় করলসে যেন অর্ধেক রাত জাগরণ করল এবং যে ব্যক্তি এশা ও ফজরের নামায জামাআতের সাথে আদায় করলসে যেন গোটা রাত জাগরণ করল)। (আবুদাউদতিরমিযি)। আর মুনযিরি এই বক্তব্য এখতিয়ার করেছেন অর্থাৎ এশা ও ফজরের নামায জামাআতের সাথে আদায় করার মধ্যেই রয়েছে পুরা রাত জাগরণের সাওয়াব। (তুহফাতুল আহওয়াজী-১/১৩আত্তারগীব ওয়াত্তারহীব-১/৩৪৩ )
   কারো কারো মতে: যে ব্যক্তি জামাআতের সাথে এশার নামায আদায় করল সে যেন অর্ধেক রাত জাগরণ করল এবং যে ব্যক্তি ফজরের নামায জামাআতের সাথে আদায় করল তার জন্য রয়েছে গোটা রাত জাগরণ করার/এবাদত করার ফযীলতআর এটা আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহ। ইমাম ইবনে খুযাইমাহ (রাহ:) উপরোক্ত বক্তব্যের সমর্থন করেছেনঅতঃপর বলেছেন: (এশা ও ফজরের নামায জামাআতের সাথে আদায় করার ফযীলতউহার বিবরণ হলফজরের নামায জামাআতের সাথে পড়া এশার নামায জামাআতের সাথে পড়া অপেক্ষা উত্তমফজরের নামায জামাআতের সাথে পড়ার ফযীলত এশার নামায জামাআতের সাথে পড়ার ফযীলত অপেক্ষা দ্বিগু বেশী)অতঃপর তিনি মুসলিম এর হাদীসের ন্যায় শব্দে হাদীস উল্লেখ করেছেন, (সহীহ ইবনে খুযাইমাহ-২/৩৬৫) আল্লাহ তাআলার অনুকম্পা প্রশস্ত/বিশাল। নবী সা. ফজরের নামায ও এশার নামাযের ব্যাপারে বলেছেন: (...যদি তারা জানত যে উভয় নামাযে কি রয়েছে তবে অবশ্যই তারা হামাগুড়ি দিয়ে হলেও হাজির হত)। (বুখারী-৬৪৪মুসলিম-৬৫১)
- রাত ও দিনের ফেরেশ্তাদের ফজর ও আছরের নামাযে অংশগ্রহণ করাকেননা আবু হুরায়রাহ (রা:) থেকে বর্ণিত হাদীসে রয়েছেরাসূল সা. বলেছেন: (তোমাদের মাঝে রাতের এবং দিনের ফেরেশ্তাগণ একদলের পর অপর দল আগমন করেণ এবং ফজরের ও আছরের নামাযে সমবেত হনঅতঃপর রাতে যারা তোমাদের মাঝে ছিল তাঁরা উর্ধোলোকে চলে যায়তারপর তাঁদের রব তাঁদেরকে জিজ্ঞাসা করেন অথচ তিনি তাদের ব্যাপারে অধিক জ্ঞাতআমার বান্দাদের কি অবস্থায় রেখে এসেছতাঁরা বলেন: তাদেরকে এ অবস্থায় রেখে এসেছি যেতারা নামায পড়তেছে এবং তাদের কাছে আমরা যখন এসেছি তখনও তারা নামায পড়তেছিল)। (বুখারী ও মুসলিম) ইমাম নববী (রহ:) বলেন: يتعاقبون  এর অর্থ হল: একদলের পর আরেক দল আগমন করেন এবং সেখান থেকেই সৈনিকদের আগমন করা এসেছেআর উহা হল একদল তাদের কওমের সুরক্ষিত সীমান্তে চলে যাবে অপর দল চলে আসবে। আর ফজর ও আছরের নামাযে তাঁদের সমবেত হওয়া হলআল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে তাঁর বান্দাদের প্রতি সহানুভূতির বহি:প্রকাশতাঁর পক্ষ হতে তাদের জন্য সম্মান প্রদান যেতিনি ফেরেশ্তাদেরকে বান্দাদের নিকট সমবেত হওয়া এবং তাদের থেকে পৃথক হওয়া তাদের আল্লাহর এবাদাত এবং তাঁর আনুগত্যের সময়ই নির্ধারন করেছেন। যাতে করে তাদের জন্য স্বাক্ষ্যদাতা হতে পারেনযে সকল উত্তম কাজে তাদেরকে যা করতে দেখেছেন সে ব্যাপারে)। (শারহুন্নববী আলা সহীহ মুসলিম- ৫/১৩৮)। তবে অধিক স্পষ্ট কথা এবং যা অধিকাংশের বক্তব্য তা এই যেএ সকল ফেরেশ্তাগণ হচ্ছেন কিতাব সংরক্ষণকারী।
কারো কারো মতে: এমনও হতে পারে যেতাঁরা সংরক্ষণকারীগণ ব্যতীত মানুষের মাঝে অবস্থান কারী ফেরেশ্তাদের মধ্য থেকে একদল। আল্লাহ তাআলাই অধিক জ্ঞাত। (শারহুন্নববী আলা সহীহ মুসলিম- ৫/১৩৮)
        জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমরা রাসূল সা. এর নিকট বসা ছিলামঅতঃপর তিনি পূর্ণীমার রাতে চাঁদের দিকে তাঁকালেন এবং বললেন: (নিশ্চয় তোমরা তোমাদের রবকে অচিরেই দেখতে পাবে যেমনভাবে এই চাঁদটা দেখতেছতাঁকে দেখতে তোমাদের কোন রকমের কষ্টক্লেশ বা ভীড়াভীড়ি করতে হবেনাআর যদি তোমাদের পক্ষে সম্ভব হয় সূর্যোদয়ের পুর্বে ও সূর্যাস্তের পুর্বে নামায আদায় করা তাহলে তাই কর) অর্থাৎ ফজর ও আছর নামাযঅতঃপর জারির (র:) তেলাওয়াত করলেন:
﴿فَٱصۡبِرۡ عَلَىٰ مَا يَقُولُونَ وَسَبِّحۡ بِحَمۡدِ رَبِّكَ قَبۡلَ طُلُوعِ ٱلشَّمۡسِ وَقَبۡلَ ٱلۡغُرُوبِ ٣٩ ﴾ [ق: ٣٩]
 অর্থ:‘‘এবং সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের পূর্বে আপনার পালন কর্তার স্বপ্রশংস পবিত্রতা ঘোষণা করুন’’। (ক্বাফ:৩৯) (বুখারী ও মুসলিম)। মহা ফযীলত প্রমাণিত হয় ঐ ব্যক্তির জন্য যে ব্যক্তি জামাআতের সাথে ফজর ও আছরের নামাযে যত্ন নেয়/নিয়মিত আদায় করেআবু বকর বিন আম্মারাহ বিন রুআইবাহ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেনতিনি বলেন: আমি রাসূল সা. কে বলতে শুনেছিতিনি বলেন: (যে ব্যক্তিই সূর্যোদয়ের পুর্বে ও সূর্যাস্তের পুর্বে নামায আদায় করবে সে কখনও জাহান্নামে প্রবেশ করবেনা) অর্থাৎ ফজর ও আছরের নামায। (মুসলিম)
 উক্ত সাহাবী (রা:) হতে আরও বর্ণিত: রাসূল সা. বলেছেন: (যে ব্যক্তি দুই শীতল সময়ের নামায পড়ল সে জান্নাতে প্রবেশ করবে)। (বুখারী ও মুসলিম) আর ঐ দুই নামায হল: ফজর ও আছরের নামায। আর প্রচন্ড ভীতি প্রদর্শণ এসেছে ঐ ব্যক্তির জন্য যে আছরের নামায ছেড়ে দেয় অথবা কাযা করেবুরায়দাহ (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি তার সাথীদেরকে কোন এক মেঘাচ্ছন্ন দিনে বলেন: তোমরা তাড়াতাড়ি আছরের নামাযে হাজির হবেকেননা নবী সা. বলেছেন: (যে ব্যক্তি আছরের নামায ছেড়ে দেয় তার আমল নষ্ট হয়ে যায়)। (বুখারী)
আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সা. বলেছেন: (যে ব্যক্তির আছরের নামায ছুটে যায় তার যেন পরিবার পরিজন ও সম্পদ তুলে নেয়া হয়/তার থেকে অপসারন করা হয়)। (বুখারী)
   ইমাম কুরতুবী (রা:) উল্লেখ করেন: ( وتر أهله وماله) শব্দটি পেশ দিয়ে বর্ণিত হয়েছে যার অর্থ হল: তার থেকে অপসারন করা হয়েছে এবং কব্জা করা হয়েছে এবং  (أهله وماله) যবর দিয়েও বর্ণিত হয়েছে যার অর্থ হল: ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। হাদীসের ব্যাখ্যায় কেউ কেউ বলেছেন: উপরোক্ত শাস্তি তার জন্য রয়েছে যে আছরের নামায নির্ধারিত সময়ে পড়ে না। এবং আরও বলা হয়েছে: উহা তার জন্য যে আছরের নামায সূর্য হলুদ রং ধারন করা পর্যন্ত দেরী করে। আরও বলা হয়েছে: আছরের নামায নির্দিষ্ট করে উল্লেখ করা হয়েছেকেননা উহাতে ফেরেশ্তাগণ উপস্থিত থাকেনআর এই বক্তব্য অনুযায়ী ফজরের নামাযও একই হুকুমে পড়ে।
আরও বলা হয়েছে: আছরের নামায নির্দিষ্ট করে উল্লেখ করা হয়েছেকেননা উহা এমন নামায যা মানুষের ব্যস্ততার সময়ে আসেআর এই বক্তব্যানুযায়ী ফজরের নামায উপরোক্ত হুকুমের জন্য অধিকতর উপযোগীকেননা উহা ঘুমের সময়ে আসে। আর রাসূল সা. এর বক্তব্য: (যে ব্যক্তি আছরের নামায ছেড়ে দেয় তার আমল ধ্বংস হয়ে যায়) উহা শুধু আছরের জন্য খাছ বা নির্দিষ্ট নয়বরং উহা আছর ব্যতীত অন্যান্য নামাযের ক্ষেত্রেও একই।
- আল্লাহ তাআলা জামাআতে নামায আদায়ের দ্বারা বিস্মিত হনকেননা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা জামাআতে নামায আদায় করাকে ভালবাসেনআব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি রাসূল সা. কে বলতে শুনেছি তিনি বলেন: (নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা আশ্চর্যান্বিত হন সমবেতভাবে নামায আদায় করলে)। (আহমাদ)
আর এই  বিস্মিত হওয়া আল্লাহ তাআলার জন্য যেমনটি শোভাপায় তেমনটিইতাতে তাঁর সৃষ্টিজগতের কারো সাথে কোন রকমের সাদৃশ্য নাইকেননা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলার বিস্মিত হওয়া তাঁর সৃষ্টিজগতের বিস্মিত হওয়ার মত নয়:
﴿لَيۡسَ كَمِثۡلِهِۦ شَيۡءٞۖ وَهُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡبَصِيرُ ١١ ﴾ [الشورى: ١١]
অর্থ: ‘‘কিছুই তাঁর অনুরূপ নয়তিনি সব শুনেনসব দেখেন’’। (আশ্শুরা-১১)
১০- জামাআতের সাথে নামাযের জন্য অপেক্ষমান ব্যক্তি নামাযের মধ্যেই থাকেন,  নামাযের পূর্বে ও পরে যতক্ষণ সে নামাযের স্থানে থাকে ততক্ষণই উপরোক্ত হুকুমের আওতায় থাকেকেননা আবু হুরায়রাহ (রা:) থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূল সা. বলেছেন: (বান্দাহ ততক্ষণ নামাযরত অবস্থায় থাকে যতক্ষণ পর্যন্ত সে নামাযের মুসল্লায় নামাযের জন্য অপেক্ষমান থাকে এবং ফেরেশ্তাগণ বলেন: হে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করুনহে আল্লাহ তার প্রতি দয়া করুনএ অবস্থা ততক্ষণ পর্যন্ত চলতে থাকে যে পর্যন্ত না সে চলে যায় বা কিছু ঘটায়)। আমি বললাম: সে কি ধরনের কাজ ঘটায়তিনি বললেন: (বায়ু নির্গত করে অথবা বাত কর্ম করে)। মুসলিম এর শব্দে রয়েছে : (ফেরেশ্তাগণ তোমাদের কারো উপর ততক্ষণ পর্যন্ত রহমতের দুআ করতে থাকেন যে পর্যন্ত সে ঐ বৈঠকে থাকে যেখানে সে নামায পড়েছিল এবং তাঁরা বলতে থাকেন: হে আল্লাহ তার প্রতি রহমত বর্ষণ করুন: হে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিন হে আল্লাহ তার তাওবাহ কবুল করুনযে পর্যন্তনা সে কষ্টদেয় যে পর্যন্তনা সে কিছু ঘটায় অর্থাৎ বায়ু নির্গত করে)। (বুখারী ও মুসলিম) এবং (কাউকে কষ্ট না দেয়) অর্থাৎ তার থেকে এমন কিছু সংঘটিত হওয়া যার দ্বারা আদম সন্তানেরা কিংবা ফেরেশ্তাগণ কষ্টপায়। আল্লাহ তাআলাই অধিক জ্ঞাত।
১১-ফেরেশ্তাগণ নামাযের পুর্বে ও পরে দুআ করতে থাকেন ঐ ব্যক্তির জন্য যে জামাআতের সাথে  নামায আদায় করে এবং ততক্ষণ পর্যন্ত এই অবস্থা চলতে থাকে যে পর্যন্ত সে নামাযের মুসল্লায় থাকে এবং নামাযের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেযে পর্যন্ত না সে কিছু ঘটায়  অথবা যে পর্যন্ত না সে কষ্ট দেয়কেননা আবু হুরায়রাহ (র:) থেকে হাদীস যাতে রয়েছে: (বান্দাহ ততক্ষণ নামাযরত অবস্থায় থাকে যতক্ষণ পর্যন্ত সে নামাযের মুসল্লায় নামাযের জন্য অপেক্ষমান থাকে এবং ফেরেশ্তাগণ বলেন: হে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করুনহে আল্লাহ তার প্রতি দয়া করুনএ অবস্থা ততক্ষণ পর্যন্ত চলতে থাকে যে পর্যন্ত না সে চলে যায় অথবা খারাপ কিছু না ঘটায়..)মুসলিম শরীফে রয়েছে: (ফেরেশ্তাগণ তোমাদের কারো উপর ততক্ষণ পর্যন্ত রহমতের দুআ করতে থাকেন যে পর্যন্ত সে ঐ বৈঠকে থাকে যেখানে সে নামায পড়েছিল এবং তারা বলতে থাকেন: হে আল্লাহ তার প্রতি রহমত বর্ষণ করুন: হে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেদিনহে আল্লাহ তার তাওবাহ কবুল করুনযে পর্যন্ত না সে কষ্টদেয় যে পর্যন্তনা সে কিছু ঘটায় অর্থাৎ বায়ু নির্গত করে)। (বুখারী ও মুসলিম) 
আমি আমাদের শায়েখ সম্মানিত ইমাম আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহ:) কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন: (ফেরেশ্তাগণ নামাযের মুসল্লায় তার জন্য দুআ করতে থাকেনমসজিদে নামাযের পূর্বে ও পরে যে পর্যন্ত সে নামাযের মুসল্লায় থাকে যে পর্যন্ত না সে কষ্টদেয় গীবতের দ্বারা অথবা পরনিন্দার দ্বারাঅথবা বাতিল বা অন্যায় কথার দ্বারা এবং যে পর্যন্ত না সে কিছু ঘটায় অর্থাৎ বায়ু নির্গত করে)
১২- প্রথম কাতারের ফযীলত এবং জামাআতে নামাযরত কাতারের ডান দিকের ফযীলতকাতারে মিলিত হয়ে দাড়ানোর ফযীলত। এ ক্ষেত্রে অনেক ফযীলত সাব্যস্ত হয়েছে তার থেকে নিম্নে কিছু উল্লেখ করা হল:
প্রথম ফযীলত: প্রথম সারির উপর লটারী এবং উহা ফেরেশ্তাদের সারির অনুরূপকেননা আবু হুরায়রাহ (র:) থেকে বর্ণিত রাসূল সা. বলেছেন: (যদি মানুষ জানত যে আযানের মধ্যে এবং প্রথম সারিতে কি রয়েছেঅতঃপর উহা লটারী ব্যতীত পাওয়া না যেত তাহলে অবশ্যই তারা  লটারী করত..)। (বুখারী ও মুসলিম) মুসলিমের এক বর্ণনায় রয়েছে: (যদি তোমরা জানতে অথবা তারা জানত প্রথম সারিতে কি রয়েছেতাহলে লটারী হত)। (মুসলিম)
    হাদীসে রয়েছে যেপ্রথম সারি ফেরেশ্তাদের সারির অনুরূপকেননা উবাই বিন কাব (রা:) এর হাদীসে রয়েছে,  তিনি নবী সা. থেকে বর্ণনা করেন, (...নিশ্চয় প্রথম সারি ফেরেশ্তাদের সারির অনুরূপযদি তোমরা জানতে উহাতে কি রয়েছে তবে অবশ্যই সেদিকে ধাবীত হতে-আল-হাদীস)। (সুনানে আবু দাউদ)
   শায়েখ আহমাদ আল্ বান্না নবী সা. এর বাণী: (ফেরেশ্তাদের সারির অনুরূপ...) এর ব্যাখ্যায় বলেন: (অর্থ: আল্লাহ তাআলার নৈকট্যলাভতার রহমত অবতীর্ণ হওয়া। আর এর থেকে যা অবহিত হওয়া যায় তা হল নিশ্চয় ফেরেশ্তাগণ আল্লাহ তাআলার ইবাদাতে সারিবদ্ধ হনএ ব্যাপারে জাবের (রা:) হতে স্পষ্ট বর্ণনা এসেছেতিনি বলেন: রাসূল সা. আমাদের উদ্দেশ্যে বের হয়ে আসলেনঅতঃপর বললেন: (তোমরা কি এমনভাবে সারিবদ্ধ হবে না যেভাবে ফেরেশ্তাগণ তাঁদের রবের নিকট সারিবদ্ধ হন?) আমরা বল্লাম হে আল্লাহর রাসূলফেরেশ্তাগণ কিভাবে তাঁদের রবের নিকট সারিবদ্ধ হনতিনি বললেন: (তাঁরা প্রথম সারি পরিপূর্ণ করেন এবং লাইনে চাপাচাপি করে দাঁড়াণ)। (মুসলিম)
দ্বিতীয় ফযীলত: প্রথম সারি সর্বোত্তম সারিকেননা আবু হুরায়রাহ (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সা. বলেছেন: (পুরুষদের উত্তম সারি হল প্রথম সারি এবং তাদের সবচেয়ে মন্দ সারি হচ্ছে সর্বশেষ সারিআর নারীদের সর্বোৎকৃষ্ট সারি হচ্ছে সর্বশেষ সারি এবং তাদের সবচেয়ে মন্দ সারি হচ্ছে প্রথম সারি)। (মুসলিম)
ইমাম নববী (রহ:) বলেন: (পুরুষদের সারির ব্যাপারে যে কথা তা সার্বজনীন অর্থাৎ সবসময়ের জন্যসুতরাং সর্বদাই পুরুষদের উত্তম সারি হল প্রথম সারি এবং তাদের সবচেয়ে মন্দ সারি হচ্ছে সর্বশেষ সারিপক্ষান্তরে হাদীসে নারীদের সারি দ্বারা উদ্দেশ্য হল ঐ সকল নারীদের সারি যারা পুরুষদের সাথে একত্রে নামায পড়েকিন্তু নারীরা পুরুষদের থেকে আলাদা হয়ে নামায পড়লে তাদের হুকুম পুরুষদের মতইতাদের সর্বোত্তম সারি হল প্রথম সারি এবং তাদের সবচেয়ে মন্দ সারি হচ্ছে সর্বশেষ সারিআর পুরুষ ও নারীর সবচেয়ে মন্দ সারি দ্বারা উদ্দেশ্য হল সবচেয়ে কম সাওয়াব ও সবচেয়ে কম ফযীলত পূর্ণ এবং শরীয়তের আদেশের সবচেয়ে দূরবর্তী এবং উত্তমের ব্যাপারে তার বিপরীত। আর নারীদের যারা পুরুষদের সাথে নামায পড়ে তাদের সর্বশেষ সারির ফযীলত প্রকৃতপক্ষে পুরুষদের সংমিশ্রণ হতে তাদের দূরে অবস্থানের কারণে এবং তাদের দেখা এবং  তাদের চলাফেরা দেখে ও তাদের কথা শুনে তাদের সাথে অন্তরের সম্পর্ক ইত্যাদি থেকে দূরে অবস্থানের কারণে আর তাদের প্রথম সারির তিরষ্কার উপরোক্ত অবস্থার বিপরীত হওয়ার জন্যআল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক জ্ঞাত)। (শারহুন্নববী আলা সহীহ মুসলিম-৪/৪০৩)
তৃতীয় ফযীলত: আল্লাহ তাআলা এবং ফেরেশ্তাগণ প্রথম কাতার সমূহের জন্য সালাত পড়েনপ্রথম লাইনের জন্য সবচেয়ে বেশী সালাত পড়া হয়কেননা আবু উমামাহ (রা:) থেকে হাদীস তিনি বলেন: রাসূল সা. বলেছেন: (নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা এবং তার ফেরেশ্তাগণ প্রথম সারির উপর সালাত পড়েন) তাঁরা বল্লেন: হে আল্লাহর রাসূলদ্বিতীয় সারির উপরতিনি বলেন: (নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা এবং তাঁর ফেরেশ্তাগন প্রথম সারির উপর দরূদ পড়েন) তাঁরা বল্লেন: হে আল্লাহর রাসূলদ্বিতীয় সারির উপরতিনি বলেন: (এবং দ্বিতীয় সারির উপরও)। (আহমাদ)
    আর আল্লাহ তাআলার সালাত হল: ফেরেশ্তাদের নিকট তাদের প্রশংসা করা আর ফেরেশ্তাদের ও নবী সা.  এবং সকল মানুষের সালাত হল: দুআ করা ও ক্ষমা চাওয়া।
   নোমান বিন বাশির (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি রাসূল সা. কে বলতে শুনেছি তিনি বলেন: (নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা এবং তার ফেরেশ্তাগণ প্রথম লাইনের উপর সালাত পড়েন অথবা প্রথম সারি সমূহের উপর সালাত পাঠ করেন)। (আহমাদ)
 বারা বিন আযেব (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি নবী সা. থেকে বর্ণনা করেন: তিনি বলতেন: (নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা এবং তার ফেরেশ্তাগণ প্রথম দিকের সারি সমূহের উপর সালাত পড়েন)। (নাসায়ীইবনে মাজাহ) 
চতুর্থ ফযীলত: নবী সা. প্রথম সারির উপর তিনবার সালাত পাঠ  করেছেন এবং দ্বিতীয় সারির উপর একবার সালাত পাঠ করেছেনকেননা ইরবায বিন ছারিয়াহ (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি রাসূল সা. থেকে বর্ণনা করেন: (তিনি প্রথম সারির উপর তিনবার সালাত পাঠ  করেছেন এবং দ্বিতীয় সারির উপর একবার  সালাত পাঠ করেছেন)। ইবনে মাজাহ এর শব্দ হল: (তিনি প্রথম সারির জন্য তিনবার ইস্তেগফার করতেন এবং দ্বিতীয় সারির জন্য একবার ইস্তেগফার করতেন)। (নাসায়ীইবনে মাজাহ)
৫ম ফযীলত: আল্লাহ তাআলা ও তার ফেরেশ্তাগণের সালাতকাতারের ডান দিকের লোকদের উপরকেননা আয়েশা (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সা. বলেছেন: (নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা এবং তাঁর ফেরেশ্তাগণ কাতারের ডান দিকের লোকদের উপর সালাত পড়েন)। (আবুদাউদইবনেমাযাহ) বারা বিন আযেব (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমরা যখন রাসূল সা. এর পিছনে নামায পড়তাম তখন আমরা তাঁর ডান দিকে থাকতে পছন্দ করতাম যাতে তিনি আমাদের দিকে ফিরে বসেনতিনি বলেন: অতঃপর আমি তাঁকে বলতে শুনেছি: (হে রব আমাকে ঐ দিনের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন যেদিন আপনি আপনার বান্দাহদেরকে পূনরায় উঠাবেন অথবা সমবেত করবেন)। (মুসলিম)
 ৬ষ্ঠ ফযীলত: যে ব্যক্তি কাতারের সাথে মিলে দাঁড়ায় অর্থাৎ কাতার পর্যন্ত পৌঁছে আল্লাহ তাআলা তার সাথে থাকেন এবং তার উপর আল্লাহ তাআলা এবং তাঁর ফেরেশ্তাগণ সালাত পড়েনকেননা আয়েশা (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সা. বলেছেন: (নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা এবং তাঁর ফেরেশ্গণ কাতারের সাথে যারা মিলিত হন তাদের উপর সালাত পড়েন এবং যে ব্যক্তি খালী স্থান পূরণ করেণ আল্লাহ তাআলা উহার বিনিময় তার মর্যাদা বাড়িয়ে দেন)। (ইবনে মাজাহআহমাদইবনে খুযাইমাহ)
   আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা:) থেকে বর্ণিত রাসূল সা. বলেছেন: (যে ব্যক্তি কাতারের সাথে মিলে দাঁড়ায় আল্লাহ তাআলা তার সাথে তাকে মিলান এবং যে ব্যক্তি কাতার থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে আল্লাহ তাআলা তাকে বিচ্ছিন্ন করেন)। (নাসায়ীআবুদাউদইবনে মাজাহ)
১৩-আল্লাহ তাআলার ক্ষমা করা ও ভালবাসা ঐ ব্যক্তিকে যার আমীন বলা ফেরেশ্তাদের আমীন বলার সাথে সম্মত হয়ে থাকেকেননা আবু হুরায়রাহ (রা:) থেকে বর্ণিতরাসূল সা. বলেছেন: (ইমাম যখন আমীন বলেন তখন তোমরা আমীন বলকেননা যার আমীন বলা ফেরেশ্তাদের আমীন বলার সাথে সম্মত হয়ে থাকে তার পিছনের গুনাহ সমূহ ক্ষমা করে দেয়া হয়)। (বুখারী ও মুসলিম) আবু মূসা আল্আশআরী (রা:) থেকে হাদীস যার একাংশে রয়েছেরাসূল সা. আমাদের উদ্দেশ্যে খুতবাহ দিলেন এবং আমাদের জন্য আমাদের সুন্নাত সমূহ বর্ণনা করলেনআমাদের নামায শিক্ষা দিলেনঅতঃপর বললেন: (যখন তোমরা নামায পড় তখন তোমাদের লাইন সোজা করএরপর তোমাদের কেহ ইমামতি করবেসে যখন তাকবীর বলবে তখন তোমরাও তাকবীর বলবে এবং যখন غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلا الضَّالِّينَ বলবে তখন তোমরা বলবে: আমীনআল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে ভালবাসবেন-আলহাদীস)। (মুসলিম)
 আল্লাহু আকবার কত বিড়াটইনা এই পুরস্কার: পিছনের গুনাহ সমূহ ক্ষমা করে দেয়াআল্লাহ তাআলার ভালবাসা ঐ ব্যক্তির জন্য যার আমীন বলা ফেরেশ্তাদের আমীন বলার সাথে সম্মত হয়ে থাকে!

পঞ্চম পরিচ্ছেদ:

   জামাআতের সাথে নামায আদায়ের উদ্দেশ্যে হেটে যাওয়ার ফযীলত:

জামাআতের  সাথে নামায আদায়ের উদ্দেশ্যে হেটে যাওয়া সবচেয়ে বড় আনুগত্যের অন্যতমএ ব্যাপারে অনেক মহৎ ফযীলতের প্রমাণ রয়েছেতারমধ্য থেকে নিম্নে কিছু উল্লেখ করা হল:
  - মসজিদে জামাআতের সাথে নামায আদায়ের জন্য যে ব্যক্তির প্রচন্ড ভালবাসা রয়েছে সে ব্যক্তি ক্বেয়ামাতের দিন আল্লাহ তাআলার ছায়াতলে থাকবেনকেননা আবু হুরায়রাহ (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি নবী r হতে বর্ণনা করেনতিনি বলেছেন: (সাত ব্যক্তিকে আল্লাহ তাআলা তাঁর ছায়াতলে আশ্রয় দিবেন এমন দিনে যেদিন তাঁর ছায়া ব্যতীত আর কোন ছায়া থাকবে না: ন্যায়পরায়ণ ইমামঐ যুবক যে আল্লাহ তাআলার ইবাদতে বেড়ে উঠেছেএমন ব্যক্তি যার অন্তর মসজিদের সাথে লেগে থাকে/ঝুলন্ত থাকেএমন দুই ব্যক্তি যারা আল্লাহ তাআলার জন্য পরস্পরকে ভালবাসে এবং তাঁর জন্য একত্রিত হয়আর তাঁর জন্যই পৃথক হয়এমন ব্যক্তি যাকে এমন এক মহিলা আহবান করে যে উচুবংশীয় ও সুন্দরীঅতঃপর সে বলে: আমি আল্লাহ তাআলাকে ভয় করিএমন ব্যক্তি যে এমন গোপনীয় ভাবে সদ্কাহ করে যেতার ডান হাত যা দান করে বাম হাত তা জানতে পারে নাএমন ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহ তাআলাকে স্মরণ করে অতঃপর তার চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে)। মুসলিমের শব্দে রয়েছে: (এমন ব্যক্তি যার অন্তর মসজিদ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর পুনরায় মসজিদে ফিরে আসা পর্যন্ত মসজিদের সাথে ঝুলন্ত থাকে/ লেগে থাকে অর্থাৎ সবসময় মসজিদের সাথেই থাকে)
  ইমাম নববী (রহ:) (এমন ব্যক্তি যার অন্তর মসজিদের সাথে লেগে থাকে/ঝুলন্ত থাকে) এর ব্যাখ্যায় বলেন: (এর অর্থ হল মসজিদকে তার প্রচন্ড ভালবাসামসজিদে জামাআতের সাথে নামায আদায়ের জন্য সার্বক্ষণিক সম্পর্ক রাখাএর অর্থ এই নয় যে,,সে সব সময় মসজিদে বসে থাকবে)। (শারহুন্নববী আলা সহীহ মুসলিম-৭/১২৬) আর হাফেজ ইবনে হাজার (রহ:) বলেন:  معلق في المساجد (মসজিদের সাথে সম্পৃক্ত) বুখারী ও মুসলিমে এভাবে এসেছেবাহ্যিক দৃষ্টিতে বুঝা যায় যেউহা তালীক্ব (সম্পর্ক) শব্দ হতে এসেছেতিনি যেন মসজিদের সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিকে ঝুলন্ত কোন কিছুর সাথে তুলনা করেছেনযেমন মোমবাতি কেননা ইঙ্গিত করা হয়েছে যেদীর্ঘ সময় তার অন্তর মসজিদের সাথে সম্পৃক্ত থাকে যদিও তার দেহ মসজিদের বাহিরে থাকে। জাওযাকির বর্ণনা এর প্রমাণ করে: (যেন তার অন্তর মসজিদে ঝুলন্ত) (মুআল্লাক শব্দটি) আলাক্বাহ থেকেও হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে: আর উহা হল প্রচন্ড ভালবাসা। আহমাদের বর্ণনা এর প্রমাণ করে: (মসজিদের সাথে সম্পৃক্ত)। (ফাতহুল বারী-২/১৪৫)
  - জামাআতের উদ্দেশ্যে মসজিদে হেটে যাওয়ার দ্বারা তার মর্যাদা বাড়িয়ে দেওয়া হয় এবং তার ত্রুটি বিচ্যুতি মিটিয়ে দেওয়া হয়অনেক পূণ্য লেখা হয়কেননা আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: (যেকোন ব্যক্তিই পবিত্র হয় এবং উত্তমভাবে পবিত্র হয়এরপর এই মসজিদসমূহের যেকোন মসজিদের উদ্দেশ্যে রওনা করেআল্লাহ তাআলা তার জন্য প্রত্যেক কদমে পূণ্য লিখে রাখেনঐ কদমের বিনিময় তার মর্যাদা বৃদ্ধি করেনউক্ত পথ চলার বিনিময়ে তার থেকে গুনাহ মিটিয়ে দেন...)। (মুসলিম-৬৫৪) আবু হুরায়রাহ (রা:) থেকে হাদীসযে হাদীস তিনি নবী সা. হতে বর্ণনা করেন এবং তাতে রয়েছে: (...উহা এজন্য যেতোমাদের কেহ যখন ওজু করে অতঃপর উত্তমভাবে ওজু করেএরপর মসজিদের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যায় এবং শুধু নামাযের জন্যই বের হয়সে এমনকোন পা সামনে রাখেনা যাতে তার মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয় না এবং তার দ্বারা তার ত্রুটি ক্ষমা করে দেয়া হয়...)। (বুখারী ও মুসলিম) এবং আবু হুরায়রাহ (রা:) থেকে বর্ণিত হাদীস তিনি বলেন:  রাসূল সা. বলেছেন: (যে ব্যক্তি তার বাড়ীতে ওজু করলঅতঃপর আল্লাহ তাআলার ঘর সমূহের যে কোন ঘরে চলে যায়আল্লাহ তাআলার ফরজ সমূহের মধ্যে একটি ফরজ আদায়ের জন্যতার একটি পদক্ষেপের মাধ্যমে তার ত্রুটি মিটিয়ে দেওয়া হয়আর অপরটি দ্বারা তার মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়)। (মুসলিম-৬৬৬)
ইমাম কুরতুবী (রহ:) বলেন: (আদ্দাওয়াদী বলেন: যদি তার গুনাহ থাকে তাহলে তা ক্ষমা করে দেওয়া হয়অন্যথায় উহার দ্বারা তার মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়। আমার বক্তব্য হল: ইহার দাবী হল যেএক পদক্ষেপ দ্বারা একটি মর্যাদা অর্জিত হয়হয় তার গুনাহ মাফ করা হয়না হয় তার মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়। আর কেউ কেউ বলেন: বরং এক কদমের দ্বারা তিনটি বিষয় অর্জিত হয়কেননা অন্য হাদীসে রয়েছে: (আল্লাহ তাআলা তার প্রত্যেক কদমের জন্য একটি পূণ্য লিখেনউহার দ্বারা একটি মর্যাদা বৃদ্ধি করেন এবং একটি গুনাহ ক্ষমা করে দেন) আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক জ্ঞাত।
  আমি আমাদের শায়েখ সম্মানিত ইমাম আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহ:) কে বলতে শুনেছিতিনি বলেন: (প্রত্যেক কদমে: উহার দ্বারা একটি মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়উহার দ্বারা একটি গুনাহ ক্ষমা করা হয় এবং তার জন্য একটি পূণ্য লিপিবদ্ধ করা হয় আর এই সর্বশেষ অতিরিক্ত হাছানাহ বা পূণ্য শব্দটি মুসলিম শরীফে ইবনে মাসউদ (র:) থেকে বর্ণিতআর যদি বর্ণনা সঠিক হয় যার একটি দ্বারা মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয় এবং অপরটি দ্বারা গুনাহ মাফ করা হয়তবে এই বর্ণনা ছিল প্রথম বর্ণনাঅতঃপর আল্লাহ তাআলা অতিরিক্ত মর্যাদা দ্বারা অনুগ্রহ করেছেন এবং প্রত্যেক কদমের জন্য তিনটি মর্যাদা সাব্যস্ত করেছেন: মর্যাদা বৃদ্ধি করেনগুনাহ মাফ করে দেন এবং পূণ্য লিখে রাখেন)।
  ৩-তার জন্য মসজিদ হতে বাড়ীতে হেটে যাওয়া লিখা হয়যেমনটি লিখা হয়েছে বাড়ী থেকে মসজিদে হেটে যাওয়াযদি সে সাওয়াবের আশা করেকেননা উবাই বিন কাব (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: এক ব্যক্তি ছিলআমার জানামতে মসজিদ হতে সবচেয়ে বেশী দুরের ব্যক্তি তার থেকে আর কেহ ছিলনাতার কোন নামাযে আসতে ভূল হতনাতিনি বলেন: তাকে বলা হল অথবা আমি তাকে বললাম: আপনি যদি একটি গাধা ক্রয় করতেন যাতে অন্ধকারের সময়ে এবং উত্তাপের সময়ে আরোহণ করতে পারতেনতিনি বললেন: আমি এতে আনন্দিত নই যে আমার বাড়ী মসজিদের নিকটে হবেআমি চাই যে মসজিদে হেটে যাওয়া  এবং মসজিদ থেকে পরিবারে ফিরে আসা আমার জন্য লিখা হোক অর্থাৎ হেটে চলার সাওয়াব আমার আমল নামায় লিখা হোকঅতঃপর রাসূল সা. বলেন: (আল্লাহ তাআলা তোমার জন্য উহা সবই জমা করেছেন)। অন্য এক শব্দে রয়েছে: (নিশ্চয় তোমার জন্য তাই রয়েছে যে সাওয়াবের আশা তুমি করেছ)। (মুসলিম)
ইমাম নববী (রহ:) বলেন: (উপরোক্ত হাদীসে সাওয়াব সাব্যস্ত হয় ফেরার সময়ে হাটার মধ্যেওযেমনটি সাব্যস্ত হয় যাওয়ার পথে হাটার মধ্যে)। (শারহুন্নববী আলা সহীহ মুসলিম-৫/১৭৪)
   আবু মূসা (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সা. বলেছেন: (নিশ্চয় মানুষের মাঝে নামাযে সবচেয়ে বেশী সাওয়াব ঐ ব্যক্তির জন্য যে সবচেয়ে দূর থেকে পায়ে হেটে আসেঅতঃপর তার থেকে যে একটু কাছেআর যে ব্যক্তি নামাযের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেঅবশেষে  ইমামের পিছনে নামায পড়েতার ঐ ব্যক্তির থেকে অধিক বেশী সাওয়াব হয় যে ব্যক্তি নামায পড়ে অতঃপর ঘুমায়)। (বুখারী ও মুসলিম)
   জাবের (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: মসজিদের চতুর্দিকে জায়গা খালী ছিলঅতঃপর বানু সালামাহ মসজিদের নিকটে স্থানান্তরিত হওয়ার  ইচ্ছা করলআর এ সংবাদ রাসূল সা. এর কাছে পৌঁছলএরপর তিনি তাদেরকে বললেন: (আমার নিকট এই সংবাদ পৌঁছেছে যে তোমরা মসজিদের নিকটে স্থানান্তরিত হতে চাও) তারা বল্ল: হ্যাহে আল্লাহর রাসূলআমরা ইচ্ছা করেছিতখন তিনি বলেন: (হে বানী সালামাহতোমাদের বাড়ির বর্তমান এলাকাতেই অবস্থান কর, তোমাদের বাড়ির বর্তমান এলাকাতেই অবস্থান কর; তোমাদের পদচিহ্ণ‎‎সমূহ লিখা হবেতোমাদের বাড়ির বর্তমান এলাকাতেই অবস্থান কর; তোমাদের পদচিহ্ণ‎‎সমূহ লিখা হবে)। (বুখারী ও মুসলিম)
  ৪-জামাআতের সাথে নামায আদায়ের উদ্দেশ্যে পথচলার কারণে গুনাহ সমূহ মিটিয়ে দেওয়া হয়কেননা আবু হুরায়রাহ (রা:) থেকে বর্ণিত রাসূল সা. বলেছেন: (আমি কি তোমাদেরকে এমন পথ দেখাবো না যার দ্বারা আল্লাহ তাআলা গুনাহ সমূহ মিটিয়ে দেন এবং মর্যাদা সমূহ বৃদ্ধি করে দেন?) তারা বল্ল: অবশ্যই হে আল্লাহর রাসূলতিনি বলেন: (কষ্টকরে হলেও যথাযথভাবে ওজু করাবেশী বেশী মসজিদে পদচারণাএক নামাযের পর অন্য নামাযের জন্য অপেক্ষা করাআর উহাই তোমাদের সম্পর্কআর উহাই তোমাদের সম্পর্ক অর্থাৎ মসজিদের সাথে গভীর সম্পর্ক)। (মুসলিম)
গুনাহ মিটিয়ে ফেলার দ্বারা গুনাহ মাফ করার দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে।
এবং এই সম্ভাবনাও রয়েছে যে গুনাহ মিটিয়ে ফেলার দ্বারা ফেরেশ্তাদের কিতাব থেকে মুছে ফেলার কথা বলা হয়েছে। তখন এটা গুনাহ মাফের দলীল হিসাবে পরিগণিত হবেআর মর্যাদা সমূহ বৃদ্ধি করা হল: জান্নাতে সর্বোচ্চ মর্যাদা দানইছবাগুল ওজু হল: তার পরিপূর্ণতাআল্মাকারেহ হল: প্রচন্ড শীতের মধ্যে ওজু করা এবং শরীরের ব্যথা বা কষ্ট ইত্যাদিবেশী বেশী পদচারনা হল: বাড়ী অনেক দুরে এবং বারবার গমন। (শারহুন্নববী আলা সহীহ মুসলিম-৩/১৪৩ )
  ৫- যথাযথভাবে ওজু করার পর জামাআতে নামায পড়ার উদ্দেশ্যে পায়ে হেটে চলার বিনিময় গুনাহ সমূহ মাফ করা হয়কেননা উসমান বিন আফ্ফান (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি রাসূল সা. কে বলতে শুনেছি তিনি বলেন: (যে ব্যক্তি নামাযের জন্য ওজু করে অতঃপর পরিপূর্ণভাবে ওজু করে ফরজ নামাযের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় এবং মানুষের সাথে নামায আদায় করেঅথবা জামাআতের সাথে নামায আদায় করেঅথবা মসজিদে নামায আদায় করে আল্লাহ তাআলা তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেন)। (মুসলিম)
  ৬- জান্নাতে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে আতিথ্যের ব্যবস্থা ঐ ব্যক্তির জন্য যে সকালে অথবা বিকালে মসজিদে যায়। কেননা আবু হুরায়রাহ (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি নবী সা. থেকে বর্ণনা করেন: (যে ব্যক্তি সকালে অথবা বিকালে মসজিদে গমন করে আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতে আতিথ্যের ব্যবস্থা করেন। (বুখারী ও মুসলিম)
        আর (غدا ) শব্দটি غدو থেকে এসেছেঅর্থাৎ সকালে সকালে এসেছে এবং راح  : অর্থ হল সন্ধায় ফিরে আসাঅতঃপর উভয় শব্দ বের হওয়া ও ফিরে আসার ক্ষেত্রে সাধারণভাবে ও ব্যাপকার্থে ব্যবহার করা হয়েছে এবং أعد)) হল প্রস্তুত করা, (النزل) হল মেহমানের আগমনের সময় তার সম্মানের জন্য যা প্রস্ত্তত করা হয় এবং উহা প্রত্যেক সকাল সন্ধায়ই হয়ে থাকেইহা আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহ  তিনি এই মর্যাদা তাকেই দিয়ে থাকেন যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধার আমল করে থাকেতার জন্য যাওয়ার বিনিময়ে জান্নাতে প্রস্ত্তত করা হয় আপ্যায়ন এবং ফিরে আসার জন্য প্রস্ত্তত করা হয় আপ্যায়ন ।
  ৭- যে ব্যক্তি জামাআতের সাথে নামায আদায়ের জন্য যায়অতঃপর তার জামাআত ছুটে যায় অথচ সে তার হকদার ছিল অর্থাৎ জামাআতের সাথে নামায পড়া ছিল তার অভ্যাসতার জন্য অনুরূপ সাওয়াব রয়েছে যে পরিমাণ জামাআতে উপস্থিত ব্যক্তির জন্য রয়েছেকেননা আবু হুরায়রাহ (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সা. বলেছেন: (যে ব্যক্তি ওজু করল অতঃপর উত্তমভাবে ওজু করলঅতঃপর চলে গেল অর্থাৎ মসজিদে চলে গেল কিন্তু মানুষদেরকে এ অবস্থায় পেল যেতারা ইতিপূর্বে নামায পড়ে নিয়েছেআল্লাহ তাআলা তাকে ঐ পরিমাণ সাওয়াব দিবেন যে পরিমাণ সাওয়াব রয়েছে ঐ ব্যক্তির জন্য যে ব্যক্তি নামায পড়েছে এবং তাতে উপস্থিত ছিল অর্থাৎ জামাআতে উপস্থিত ছিল এবং এতে তাদের সাওয়াবের থেকে কোন অংশ কমানো হবেনা)। (আবু দাউদ)
  - যে ব্যক্তি পবিত্র হল এবং জামাআতে নামায আদায়ের জন্য বের হলসে ব্যক্তি বাড়ী ফেরার আগ পর্যন্ত নামাযের মধ্যেই থাকেকেননা আবু হুরায়রাহ (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সা. বলেছেন: (তোমাদের কেহ যখন বাড়ীতে ওজু করেঅতঃপর মসজিদে আসেসে নামাযের মধ্যেই থাকে যে পর্যন্ত না সে বাড়ী ফিরে আসে এবং কোন ধরনের ঘাটতি হবেনা: এমনিভাবে) এবং তিনি তার আঙ্গুল গুলো পরস্পর মিলিয়ে দেখালেন। (ইবনে খুযামাহআলহাকেম)
  - যে ব্যক্তি পবিত্রতা সহকারে জামাআতের সাথে নামায আদায়ের উদ্দেশ্যে বের হল তার পূণ্য ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে ব্যক্তি হজ্বের জন্য মুহরিম অবস্থায় বের হয়েছেকেননা আবু উমামাহ (রা:) থেকে বর্ণিত হাদীসে রয়েছেরাসূল সা. বলেছেন: (যে ব্যক্তি পবিত্রতা সহকারে ফরজ নামাযের উদ্দেশ্যে বাড়ী থেকে বের হয়েছে তার পূণ্য ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে ব্যক্তি হজ্বের জন্য মুহরিম অবস্থায় বের হয়েছে)। (আবু দাউদ)
  ১০- জামাআতের সাথে নামায আদায়ের উদ্দেশ্যে বের হওয়া ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার হেফাজতে থাকেনকেননা আবু উমামাহ  আলবাহেলী (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি রাসূল সা. থেকে বর্ণনা করেন: তিনি বলেছেন: (তিন ব্যক্তির প্রত্যেকেই আল্লাহ তাআলার হেফাজতে থাকেন: যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে জিহাদের জন্য বের হয়েছেসে আল্লাহ তাআলার হেফাজতে থাকে যে পর্যন্ত না আল্লাহ তাআলা তাকে মৃত্যুদান করেনঅতঃপর তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করান অথবা তাকে ফিরিয়ে দেন সে যে পূণ্য অর্জন করেছে এবং যে গনীমত অর্জন করেছে তা সমেত। আর ঐ ব্যক্তি যে মসজিদে চলে যায় সে আল্লাহ তাআলার হেফাজতে থাকেন যে পর্যন্ত না আল্লাহ তাআলা তাকে মৃত্যুদান করেন অতঃপর তাকে জান্নাতে প্রবেশ করান অথবা তাকে ফিরিয়ে দেন সে যে পূণ্য অর্জন করেছে এবং যে গনীমত অর্জন করেছে তা সমেত এবং ঐ ব্যক্তি যে তার বাড়ীতে নিরাপদে প্রবেশ করেছে সেও আল্লাহ তাআলার হেফাজতে থাকেন)। এটা আল্লাহ তাআলার করুণা যেতিনি এই তিন ব্যক্তির প্রত্যেককেই  তাঁর হেফাজতের অন্তর্ভুক্ত করেছেন যাতে করে তিনি পরিপূর্ণ প্রতিদান দান করেন। আর (ضامن) এর অর্থ হল: যাকে জামিন দেওয়া হয়তবে রাসূল সা. এর বাণী (এমন ব্যক্তি যে তার বাড়ীতে নিরাপদে প্রবেশ করল) ইহার দুটি দিক রয়েছে:
প্রথম দিক হল: সে যখন বাড়ীতে প্রবেশ করে তখন সালাম দিয়ে প্রবেশ করা।
দ্বিতীয় দিক হল: সে বাড়ীতে প্রবেশের দ্বারা নিরাপত্তা কামনা করেছিল: অর্থাৎ ফিতনার থেকে বাচার উদ্দেশ্যে শুধু বাড়ীতেই বসে থাকাএর মাধ্যমে তার একাকী জীবন যাপনকে পছন্দ করে নেয়া এবং মানুষের দলাদলি থেকে নীরবে দূরে থাকা। এবং এটা তখন হয় যখন ফিতনা ছড়িয়ে পড়ে এবং মুসলিম ব্যক্তি তার দ্বীনের ব্যাপারে শংকিত থাকেপক্ষান্তরে ফিতনা থেকে নিরাপত্তা পাওয়া গেলে তখন ঐ ঈমানদার ব্যক্তি যে মানুষের সাথে মিশে থাকে এবং তাদের পক্ষ হতে কষ্ট পায় ও ধৈর্য্যধারণ করেতাদেরকে আল্লাহর পথে ডাকেসে ঐ ঈমানদার ব্যক্তি অপেক্ষা উত্তম যে মানুষের সাথে মিশে নাতাদের পক্ষ হতে কষ্ট পেলে তাতে ধৈর্য্য ধারণ করে না। আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক জ্ঞাত।
  ১১- জামাআতের সাথে নামায আদায়ের উদ্দেশ্যে পায়ে হেটে চলা ব্যক্তির ব্যাপারে আল্লাহ তাআলার নিকটবর্তী ফেরেশ্তাগণের কথোপকথনকেননা আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রা:) থেকে বর্ণিত রয়েছে তিনি নবী সা. থেকে বর্ণনা করেনযার একাংশে রয়েছে (আল্লাহ তাআলা সপ্নে নবী সা. কে বলেন: (...হে মুহাম্মদ আপনি কি জানেন কোন ব্যাপারে নিকটবর্তী ফেরেশ্তাগণ পরস্পর কথোপকথন করেআমি বললাম: হ্যাঁগুনাহসমূহ মোচনের ব্যাপারে: নামাযের পরে মসজিদে সময় কাটানোপায়ে হেটে নামাযের জামাআতে যাওয়াকষ্ট করে যথাযথ ওজু সম্পন্ন করাযে ব্যক্তি এরূপ করবে সে কল্যাণের সাথে জীবন যাপন করবে এবং কল্যাণের সাথে মৃত্যুবরণ করবে এবং সে গুনাহের ব্যাপারে এমনভাবে নিষ্পাপ হয়ে যাবে যেদিন তার মা তাকে ভুমিষ্ট করেছিল সেদিন যেমন নিষ্পাপ ছিল...)। (তিরমিযি)
  ১২- জামাআতের সাথে নামায আদায়ের উদ্দেশ্যে পায়ে হেটে চলা দুনিয়া এবং আখিরাতের সুখ শান্তির অন্যতম কারণকেননা নবী সা. হাদীসে বলেন: (সে কল্যাণের সাথে জীবন যাপন করবে এবং কল্যাণের সাথে মৃত্যুবরণ করবে)। আল্লাহ তাআলা বলেন:
﴿ مَنۡ عَمِلَ صَٰلِحٗا مِّن ذَكَرٍ أَوۡ أُنثَىٰ وَهُوَ مُؤۡمِنٞ فَلَنُحۡيِيَنَّهُۥ حَيَوٰةٗ طَيِّبَةٗۖ وَلَنَجۡزِيَنَّهُمۡ أَجۡرَهُم بِأَحۡسَنِ مَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ٩٧ ﴾ [النحل: ٩٧]  
অর্থ: ‘‘মুমিন হয়ে পুরুষ ও নারীর মধ্যে যে কেউ সৎকর্ম করবেতাকে আমি নিশ্চয়ই আনন্দময় জীবন দান করবো এবং তাদেরকে তাদের কর্মের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার দান করবো’’। (নাহল-৯৭)
  ১৩- জামাআতের সাথে নামায আদায়ের উদ্দেশ্যে পায়ে হেটে চলা গুনাহ মাফের অন্যতম কারণকেননা পুর্বোক্ত হাদীসে নবী সা. বলেছেন: (সে গুনাহের ব্যাপারে এমনভাবে নিষ্পাপ হয়ে যাবে যেদিন তার মা তাকে ভুমিষ্ট করেছিল সেদিন যেমন নিষ্পাপ ছিল...)।
  ১৪- মসজিদ যিয়ারাতকারীকে আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে সম্মানিত করাকেননা সালমান (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি নবী সা. থেকে বর্ণনা করেন: (যে ব্যক্তি তার বাড়ীতে ওজু করল অতঃপর মসজিদে আসল সে আল্লাহ তাআলার সাক্ষাৎকারী এবং সাক্ষাৎকৃতের উপর হক্ব হচ্ছে সাক্ষাৎকারীকে সম্মান করা)। (ত্বাবরানীইবনে আবি শায়বাহ)
 আমর বিন মায়মুন (রহ:) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি রাসূল সা. এর সাহাবাদেরকে পেয়েছি এ অবস্থায় যেতাঁরা বলতেন: (মসজিদ সমূহ আল্লাহ তাআলার ঘর এবং আল্লাহ তাআলার উপর কর্তব্য হচ্ছে তাকে সম্মান করা যে তার সাক্ষাৎ করে), (ইবনে জারির) অন্য এক শব্দে আমর বিন মায়মুন উমর (রা:) থেকে বর্ণনা করেনতিনি বলেন: (মসজিদ সমূহ যমীনে আল্লাহ তাআলার ঘর এবং সাক্ষাৎকৃতের উপর হক্ব হচ্ছে সাক্ষাৎকারীকে সম্মান করা)। (ইবনু আবি শায়বাহ)
  ১৫- আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দার ওজু অবস্থায় মসজিদে গমনে আনন্দিত হনকেননা আবু হুরায়রাহ (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সা. বলেছেন: (যে কোন ব্যক্তিই উত্তম ও পরিপূর্ণভাবে ওজু করে অতঃপর শুধুমাত্র নামায পড়ার উদ্দেশ্যে মসজিদে আসে আল্লাহ তাআলা তার ব্যাপারেই হাস্যোজ্জল হনঅদৃশ্য জগতের অধিবাসীগণ যেভাবে তাকে দেখে আনন্দিত হয়)। (ইবনে খুযাইমাহ) ইমাম ইবনে খুযাইমাহ এই হাদীসের উপর একটি পরিচ্ছেদ রচনা করেছেন এই নামে: (মহান রবের তাঁর বান্দাহর ওজু অবস্থায় মসজিদে গমন-এ খুশী হওয়ার অধ্যায়)।
  আল্লাহ তাআলার সকল ছিফাত বা গুণবাচক নাম সমূহ আল্লাহ তাআলার শানের সাথে যেভাবে প্রযোজ্য সেভাবেই সাব্যস্ত করতে হবে।
  ১৬- পরিপূর্ণ নূর বা আলো ক্বিয়ামাতের দিন ঐ ব্যক্তির জন্য যে অন্ধকারে মসজিদে হেটে যায়কেননা বুরায়দাহ (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি নবী সা. থেকে বর্ণনা করেন তিনি বলেছেন: (অন্ধকারে মসজিদ সমূহে হেটে চলা ব্যক্তিদের ক্বেয়ামাতের দিনে পরিপূর্ণ নূর বা আলোর সুসংবাদ প্রদান কর)। (আবুদাউদতিরমিযি)

৬ষ্ঠ পরিচ্ছেদ:

   জামাআতের সাথে নামায আদায়ের উদ্দেশ্যে পথ চলার আদবসমূহ:

নামাযের উদ্দেশ্যে পথ চলার ক্ষেত্রে বেশ কিছু বড় ধরনের আদব রয়েছেতার থেকে নিম্নে কিছু আদব উল্লেখ করা হল:
  - বাড়ীতে ওজু করা এবং ওজু যথাযথভাবে করাকেননা ইবনে মাসউদ (রা:) থেকে বর্ণিত হাদীস (যে কোন ব্যক্তিই পবিত্র হয় অতঃপর উত্তমভাবে পবিত্র হয়এরপর  এই মসজিদ সমূহের যেকোন মসজিদের উদ্দেশ্যে রওনা করে আল্লাহ তাআলা তার জন্য প্রত্যেক কদমে পূণ্য লিখে রাখেনঐ কদমের বিনিময় তার মর্যাদা বৃদ্ধি করেন এবং উক্ত পথচলার বিনিময়ে তার থেকে গুনাহ মিটিয়ে দেন...)। (মুসলিম-৬৫৪)
  - দুর্গন্ধ থেকে দূরে থাকবেকেননা জাবের বিন আব্দুললাহ (রা:) থেকে হাদীসে রয়েছে রাসূল সা. বলেছেন: (যে ব্যক্তি রসুন অথবা পিঁয়াজ খাবে সে যেন আমাদের থেকে দূরে থাকেঅথবা আমাদের মসজিদ থেকে দূরে থাকেসে যেন তার বাড়ীতে বসে থাকে)। মুসলিম শরীফের শব্দে রয়েছে: (কেননা ফেরেশ্তাগন ঐ বস্ত্ততে কষ্ট পাণ যাতে মানুষ কষ্ট পায়)। মুসলিম শরীফের আর এক শব্দে রয়েছে: (যে ব্যক্তি পিঁয়াজরসুন এবং পিঁয়াজ জাতীয় অন্য সবজি খায়সে যেন আমাদের মসজিদে না আসেকেননা ফেরেশ্তাগণ ঐ বস্তুতে কষ্ট পা যাতে আদম সন্তানেরা কষ্ট পায়)। (বুখারী ও মুসলিম)
  - সুন্দর পোষাক-পরিচ্ছদ পরিধান করে সজ্জিত  হবেকেননা আল্লাহ তাআলা বলেন: ﴿ ۞يَٰبَنِيٓ ءَادَمَ خُذُواْ زِينَتَكُمۡ عِندَ كُلِّ مَسۡجِدٖ ﴾ [الاعراف: ٣١]   অর্থ: ‘‘হে আদম সন্তান গণ! প্রত্যেক নামাযের সময় সুন্দর পোশাক-পরিচ্ছদ গ্রহণ কর’’। (রাফ-৩১)এবং নবী সা. এর বাণী: (নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা সুন্দর এবং তিনি সুন্দরকে পছন্দ করেন)। (মুসলিম) 
  - বাইরে বের হওয়ার দুআ পড়বে এবং নামাযের নিয়্যতে বের হবেএবং বলবে:  بِسْمِ اللَّهِ تَوَكَّلْتُ عَلَى اللَّهِ، لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللّه  অর্থ: ‘‘আমি আল্লাহর নামে বের হলাম আল্লাহর উপর ভরসা করলামআল্লাহ ব্যতীত কোন ক্ষমতা এবং কোন শক্তি নাই’’। আরও বলবে-:
«اللَّهُمَّ أَعُوذُ بِكَ أَنْ أَضِلَّ، أَوْ أُضَلَّ، أَوْ أَزِلَّ، أَوْ أُزَلَّ، أَوْ أَظْلِمَ، أَوْ أُظْلَمَ، أَوْ أَجْهَلَ، أَوْ يُجْهَلَ عَلَيَّ»
অর্থ: ‘‘হে আল্লাহ আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই বিভ্রান্তি থেকে অথবা অন্য কারো দ্বারা বিভ্রান্ত হওয়া থেকেপদস্খলন থেকে অথবা অন্য কারো দ্বারা পদস্খলিত হওয়া থেকেঅত্যাচার থেকে অথবা অন্য কারো দ্বারা অত্যাচারিত হওয়া থেকেমূর্খতা থেকে অথবা অন্য ব্যক্তি কর্তৃক মূর্খ হওয়া থেকে’’। (আবুদাউদ,তিরমিযি)
«اللَّهُمَّ اجْعَلْ فِي قَلْبِي نُورًا، وَفي لساني نوراً، وَفِي سَمْعِي نُورًا، وفِي بَصَرِي نُورًا، وَمن فَوْقِي نُورًا، ومن تحتي نوراً، وَعَنْ يَمِينِي نُورًا، وَعَنْ شِمالِي نُورًا، وَمِن أَمَامِي نُورًا، وَمِنْ خَلْفِي نُورًا، وَاجْعَلْ لِي نُورًا، واجعل في نفسي نوراً، وأعظم لي نوراً، وعظّم لي نوراً، واجعل لي نوراً، واجعلني نوراً، اللهم اعطني نوراً، واجعلني نوراً، واجعلني نوراً، اللهم اعظني نوراً، واجعل في عصبي نوراً، وفي لحمي نوراً، وفي دمي نوراً، وفي شعري نوراً، وفي بشري نوراً»
অর্থ: ‘‘হে আল্লাহ আমার অন্তরে আলো দান করুনআমার জবানে আলো দান করুনআমার শ্রবণ শক্তিতে আলো দান করুনআমার দৃষ্টি শক্তিতে আলো দান করুনআমার উপর দিক থেকে আলো দান করুনআমার নীচ দিক থেকে আলো দান করুনআমার ডান দিক থেকে আলো দান করুনআমার বাম দিক থেকে আলো দান করুনআমার সামনের দিক থেকে আলো দান করুনআমার পিছন দিক থেকে আলো দান করুনআমার অন্তরে আলো দান করুনআমার জন্য আলো বাড়িয়ে দিনআমার জন্য আলো /নূর বৃদ্ধি করে দিনআমার জন্য আলো দান করুনআমাকে আলো দান করুনহে আল্লাহ আমাকে আলো দিনআমার স্নায়ুতে আলো দান করুনআমার গোশ্তে আলো দান করুনআমার রক্তে আলো দান করুনআমার চুলের মাঝে আলো দান করুনআমার ত্বকে আলো দান করুন)। (বুখারী ও মুসলিম)
  - মসজিদে যাওয়ার পথে সে তার হাতের আঙ্গুলগুলো মিলিয়ে রাখবেনানামাযের মাঝেও সে তার হাতের আঙ্গুলগুলো মিলিয়ে রাখবেনাকেননা উবাই বিন কাব (রা:) থেকে হাদীসে রয়েছে রাসূল সা. বলেছেন: (যখন তোমাদের কেহ ওজু করে অতঃপর উত্তমভাবে ওজু করেঅতঃপর মসজিদের উদ্দেশ্যে বের হয়সে যেন তার আঙ্গুলগুলো মিলিয়ে না রাখে কেননা সে নামাযের মধ্যেই রয়েছে)। (তিরমিযি)
  ৬- সে প্রশান্তি এবং গাম্ভীর্যের সাথে পথ চলবেকেননা আবু হুরায়রাহ (রা:) থেকে হাদীসে রয়েছে তিনি নবী r থেকে বর্ণনা করেন: (যখন তোমরা ইক্বামাত শুনতে পাবে তখন নামাযের দিকে প্রশান্তি ও গাম্ভীর্য নিয়ে হেটে চলবেআর তাড়াহুড়া করবে নাঅতঃপর যতটুকু নামায পাবে তা আদায় করবে এবং যতটুকু তোমাদের থেকে ছুটে যাবে তা পরিপূর্ণ করবে)। অপর শব্দে রয়েছে: (যখন নামাযে দাঁড়িয়ে যাওয়া হয় তখন সে নামাযের দিকে দৌড়ে আসবেনাপ্রশান্ত অবস্থায় হেটে আসবে এবং যতটুকু পাবে সে নামায আদায় করে নিবে এবং যা তোমাদের থেকে ছুটে যাবে তা পরিপূর্ণ করবে)। (বুখারী ও মুসলিম)
  এ হাদীসের মধ্যে নামাযে প্রশান্তি ও গাম্ভীর্য সহকারে আসার জন্য উৎসাহ দেওয়া হয়েছে এবং দৌড়ে আসা থেকে নিষেধ করা হয়েছেসে নামায জুমার নামাযই হোক বা অন্য কোন নামায হোকসে তাকবীরাতুল ইহরাম ছুটে যাওয়ার ভয় পাক বা নাই পাক হুকুম একইআর নবী সা. এর বাণী: (যখন তোমরা ইক্বামাত শুনতে পাবে) ইক্বামাত শব্দটি উল্লেখ করা হয়েছে উহা ব্যতীত অন্য যা রয়েছে সে ব্যাপারে সতর্কীকরণের জন্যকেননা ইক্বামাতের সময়ে যদি দৌড়ে আসতে নিষেধ করা হয় ইক্বামাতের কিছু অংশ ছুটে যাওয়ার ভয় থাকা সত্বেও তবে ইক্বামাতের পূর্বে দৌড়ে আসার নিষেধাজ্ঞা আরও বেশী প্রযোজ্য। এবং তিনি সা. কারণ দর্শিয়ে এ ব্যাপারে আরও তাকীদ করে বলেছেন: (কেননা তোমাদের কেহ যখন নামাযের ইচ্ছা করে তখন সে নামাযেই থাকে)  আর ইহা নামাযের জন্য আগমনের সকল সময়কে শামিল করে। অন্য আরেক স্থানে তাকীদ করে আরো বলেছেন: (যতটুকু পাবে সে নামায আদায় করে নিবে এবং যা তোমাদের থেকে ছুটে যাবে তা পরিপূর্ণ করবে)। সুতরাং এতে চেতনা ও তাকীদ পাওয়া যায়যাতে করে কোন অনুমানকারী এই ধারণা না করে যেনিষেধাজ্ঞা কেবল ঐ ব্যক্তির জন্য যে নামাযের কিছু অংশ ছুটে যাওয়ার আশংকা করেঅতএব স্পষ্টভাবে নিষেধ করে দিয়েছেন যে নামাযের যত অংশই ছুটে যাকনা কেন এবং  ছুটে যাওয়া রাকআত গুলির ব্যাপারেও তার করণীয় বর্ণনা করে দিয়েছেন। (শারহুন্নববী আলা সহীহ মুসলিম-৫/১০৩)
  - মসজিদে প্রবেশের পূর্বে তার জুতাদ্বয় দেখে (চেক করে) নিবে। যদি তাতে কোন আবর্জনা দেখে তবে মাটিতে ঘষে তা মুছে ফেলবেকেননা আবু সায়ীদ খুদরী (রা:) থেকে বর্ণিত হাদীসের একাংশে রয়েছে: (যখন তোমাদের কেহ মসজিদে আসে সে যেন লক্ষ করেযদি তার জুতাদ্বয়ে আবর্জনা দেখে অথবা কষ্টদায়ক কিছু দেখে তবে তা যেন মুছে ফেলে এবং ঐ জুতাদ্বয় নিয়ে নামায পড়ে)। (আবুদাউদইবনে খুযাইমাহ) আর জুতাদ্বয়ের পবিত্রতা অর্জন মাটি দ্বারা করবে কেননা আবু হুরায়রাহ (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সা. বলেছেন: (তোমাদের কেহ যখন তার জুতাদ্বয় দিয়ে ময়লাযুক্ত কিছু পারায় মাটিই তার জন্য পবিত্রকারী)। অপর শব্দে রয়েছে: (যখন মোজা দিয়ে ময়লাযুক্ত কিছু পারানো হয় তখন উভয়ের পবিত্রকারী হচ্ছে মাটি)। (আবুদাউদ)
  - মসজিদে প্রবেশের সময় ডান পা আগে বাড়াবে এবং বলবে:
«أَعُوْذُ بِاللهِ الْعَظِيم  وبِوَجْهِهِ اْلَكِرْيمِ ,وَسُلْطَاِنهِ الْقَدِيمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيِمِ , بِسْمِ اللهِ وَالصَّلاةُ وَالسّلامُ عَلَى رَسُولِ اللهِ , اَللّهُمَّ افْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ»
অর্থ: ‘‘আমি মহান আল্লাহ তাআলার কাছেতার মহান সত্বার কাছে,তার অনাদী-অনন্ত কালের ক্ষমতার কাছে বিতাড়িত শয়তান থেকে আশ্রয় চাই’’। ‘‘আল্লাহ তাআলার নামে প্রবেশ করছিসালাত ও সালাম রাসূল r এর প্রতি’’। (আবুদাউদ‘‘হে আল্লাহ আমার জন্য আপনার রহমাতের দরজাগুলো খুলে দিন’’; কেননা আবু হুমাইদ অথবা আবু উসাইদ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সা. বলেছেন: (যখন তোমাদের কেহ মসজিদে প্রবেশ করে সে যেন বলে:
«اللّهُمَّ افْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ»
অর্থ: ‘‘হে আল্লাহ আমার জন্য আপনার রহমাতের দরজাগুলো খুলে দিন’’ এবং যখন বের হয় তখন যেন বলে:
«اللهم إني أسألك من فضلك»
অর্থ: হে আল্লাহ নিশ্চয় আমি আপনার কল্যাণ চাই )। ( মুসলিম )
  - মসজিদে যখন প্রবেশ করবে তখন মসজিদে যে ব্যক্তি রয়েছে তাকে সালাম দিবেএমন শব্দে সালাম দিবে যাতে করে তার চতুষ্পার্শ্বে যারা রয়েছে তারা যেন শুনতে পায়কেননা আবু হুরায়রাহ (রা:) থেকে বর্ণিত রয়েছে রাসূল সা. বলেছেন: (তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না ঈমানদার হবেআর ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না পরস্পরকে ভালবাসবেআমি কি তোমাদেরকে এমন কিছুর নির্দেশনা দিব না যা পালন করলে তোমরা পরস্পরকে ভালবাসবেতোমাদের মাঝে সালাম ছড়িয়ে দিবে অর্থাৎ বেশী বেশী সালামের প্রচলন শুরু করবে)। (মুসলিম) আম্মার বিন ইয়াছের (রা:) বলেন: (তিনটি বিষয় যে একত্রিত করেছে সে ঈমানকে একত্রিত করেছে: তোমার নিজের অধিকারের ব্যাপারে ন্যায়-পরায়ণতাজ্ঞাতার্থে সালাম দেয়া এবং জমানো সম্পদ থেকে ব্যয় করা)। (বুখারী)
  ১০‘‘তাহিয়্যাতুল মাসজিদ’’ নামায পড়ামুয়াযি্যন যদি নামাযের সময় হওয়ার পর আযান দেয় তাহলে সুন্নাত নামায পড়বে যদি ঐ নামাযে সুন্নাত নামায থাকেআর যদি ঐ নামাযের পূর্বে সুন্নাত নামায না থাকে তাহলে আযান ও ইক্বামাতের মাঝখানের নামায পড়বেকেননা প্রত্যেক আযান ও ইক্বামাতের মাঝে নামায রয়েছেঐ নামাযই ‘‘তাহিয়্যাতুল মাসজিদ’’ নামাযের জন্য যথেষ্ট হবেআর যদি নামাযের সময় হওয়ার পূর্বে মসজিদে প্রবেশ করে তাহলে দুই রাকাআত নামায পড়বেকেননা আবু ক্বাতাদাহ (রা:) থেকে হাদীসে রয়েছে রাসূল সা. বলেছেন: (যখন তোমাদের কেহ মসজিদে প্রবেশ করবে তখন সে যেন দুই রাকাআত নামায আদায় না করে না বসে)। (বুখারী ও মুসলিম)
  ১১- মসজিদের ভেতরে তার জুতাদ্বয় খুলে তার দুই পায়ের মাঝখানে রাখবেকেননা আবু হুরায়রাহ (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি রাসূল সা. থেকে বর্ণনা করেনতিনি বলেছেন: (যখন তোমাদের কেহ নামায পড়ে এবং তার জুতাদ্বয় খুলে ফেলেসে যেন উহা দ্বারা কাউকে কষ্ট না দেয় এবং তার উভয় জুতা তার দুই পায়ের মাঝখানে রাখবে অথবা ঐ জুতাসহ নামায পড়বে)। অপর শব্দে রয়েছে: (যখন তোমাদের কেহ নামায পড়ে সে যেন তার জুতাদ্বয় তার ডানে না রাখে এবং বামেও না রাখেকেননা তা কারো ডানে হয়ে যাবেতবে যদি তার বামে কেহ না থাকে (তাহলে রাখতে পারে) এবং উভয় জুতা তার দুই পায়ের মাঝখানে রাখবে)। (আবুদাউদ)
আমি আমাদের শায়েখ সম্মানিত ইমাম আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহ:) কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন: (জুতাসহ নামায পড়া সুন্নাত যা ইয়াহুদীদের বিপরীততবে দেখাশুনার পরেসুতরাং যদি তাতে কোন কিছু দেখে তাহলে তা মাটিতে ঘষে অথবা পাথর অথবা অন্য কিছু দিয়ে দূর করবেআর মসজিদগুলো যদি কার্পেট বিছানো থাকে তবে কোন কোন ব্যক্তির অবহেলার কারণে ধুলা মিশ্রিত হতে পারেএতে করে মানুষ দূরে সরে যেতে পারেঅতএব এ ক্ষেত্রে আমার কাছে উত্তম হল -আল্লাহ তাআলাই অধিক জ্ঞাত- জুতার জন্য একটি স্থান নির্ধারণ করা)।
  ১২- প্রথম সারিতে ইমামের ডান দিকে বসা যদি  সম্ভব হয় তাহলে তাই করবেকোন ধরণের ভিড়াভিড়ি এবং অন্য কাউকে কষ্ট দেওয়া ব্যতীতকেননা আবু হুরায়রাহ (রা:) থেকে বর্ণিত রয়েছে রাসূল সা. বলেছেন: (যদি মানুষ জানত আযানের মধ্যে এবং প্রথম সারিতে কি রয়েছেঅতঃপর উহা লটারী ব্যতীত পাওয়া না যেত তাহলে অবশ্যই তারা লটারী করত..)। (বুখারী ও মুসলিম) আয়েশা (রা:) থেকে বর্ণিত রয়েছে: (নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা এবং তার ফেরেশ্তাগণ কাতারের ডান দিকের লোকদের উপর সালাত পড়েন)। (আবুদাউদইবনে মাজাহ)
 ১৩- ক্বেবলামূখী হয়ে বসবেক্বোরআন তেলাওয়াত করবে অথবা আল্লাহ তাআলার জিকির করবেকেননা আবু হুরায়রাহ (রা:) থেকে বর্ণিত রয়েছে তিনি বলেন: রাসূল সা. বলেছেন: (নিশ্চয় প্রত্যেক জিনিসের মূল রয়েছেআর বৈঠকের মূল হচ্ছে ক্বেবলামূখী হয়ে বসা)।  (ত্বাবরানী)
  ১৪- নামাযের জন্য অপেক্ষা করার নিয়্যাত করবে এবং কাউকে কষ্ট দিবেনাকেননা সে নামাযের মধ্যেই থাকে যতক্ষণ সে নামাযের জন্য অপেক্ষা করেফেরেশ্তাগণ তার জন্য নামাযের পূর্বে ও পরে দুআ করতে থাকেন যে পর্যন্ত সে নামাযের মুসল্লায় থাকেকেননা আবু হুরায়রাহ (রা:) থেকে বর্ণিত হাদীসে রয়েছে রাসূল r বলেছেন: (বান্দাহ ততক্ষণই নামাযরত অবস্থায় থাকে যতক্ষণ পর্যন্ত সে নামাযের মুসল্লায় নামাযের জন্য অপেক্ষমান থাকে এবং ফেরেশ্তাগণ বলেন: হে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করুনহে আল্লাহ তার প্রতি দয়া করুন...)। মুসলিম শরীফের শব্দে রয়েছে: (ফেরেশ্তাগণ তোমাদের কারো উপর ততক্ষণ পর্যন্ত রহমাতের দুআ করতে থাকেন যে পর্যন্ত সে ঐ বৈঠকে থাকে যেখানে সে নামায পড়েছিল এবং তাঁরা বলতে থাকেন: হে আল্লাহ তার প্রতি রহমত বর্ষণ করুন: হে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিনহে আল্লাহ তার তাওবাহ কবুল করুনযে পর্যন্তনা সে কষ্টদেয় যে পর্যন্তনা সে কিছু ঘটায় অর্থাৎ বায়ু নির্গত করে)। (বুখারী ও মুসলিম)
 ১৫- যখন ইক্বামাত দেওয়া হয় তখন ফরজ ব্যতীত আর কোন নামায পড়বে নাকেননা আবু হুরায়রাহ (রা:) থেকে বর্ণিত হাদীসে রয়েছে নবী সা. বলেছেন: (যখন নামাযে দাঁড়ানো হয় তখন ফরজ ব্যতীত আর কোন নামায নাই)। (মুসলিম) 
 ১৬- মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় বাম পা দিয়ে বের হবে যা ঢোকার সময়ের বিপরীত: কেননা নবী r সকল ব্যাপারে যথা সম্ভব ডান দিক পছন্দ করতেন: তাঁর পবিত্রতা অর্জনের ক্ষেত্রেহাটার ক্ষেত্রেজুতা পরার ক্ষেত্রে। (বুখারী) ইবনে উমর (রা:) ডান পা দিয়ে শুরু করতেন এবং যখন বের হতেন তখন বাম পা দিয়ে শুরু করতেন। (বুখারী তার তালীকাতে নিশ্চিত শব্দে উল্লেখ করেছেন)
  আনাস (রা:) বলেন: (সুন্নাত হল যখন তুমি মসজিদে প্রবেশ করবে তখন তোমার ডান পা দিয়ে আরম্ভ করবে এবং যখন তুমি বের হবে তখন তোমার বাম পা দিয়ে আরম্ভ করবে)। (আল-হাকেম) এবং বলবে:
«بسم الله والصلاة والسلام على رسول الله، اللهم إني أسألك من فضلك»
অর্থ: ‘‘আল্লাহ তাআলার নামে বের হচ্ছিসালাত ও সালাম রাসূল সা. এর প্রতি’’ ‘‘হে আললাহ নিশ্চয় আমি আপনার কল্যাণ চাই’’। (মুসলিম«اللهم اعصمني من الشيطان الرجيم»  অর্থ: ‘‘হে আল্লাহ তাআলা আমাকে বিতাড়িত শয়তান থেকে রক্ষা করু’’। (ইবনে মাজাহ)
       
সপ্তম পরিচ্ছেদ:

       দুই জনের দ্বারা জামাআত প্রতিষ্ঠা হয়:

 ইমাম ও মামুম বা মুক্তাদী -সহীহ বক্তব্যানুযায়ী  যদিও সে ছোট বাচ্চা হয়- অথবা মাহরামের সাথে নির্জনে কোন মহিলা হয়কেননা ইবনে আববাস (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি আমার খালা মায়মুনার কাছে এক রাতে ছিলামনবী সা. উঠে রাতের নামাযে দাঁড়ালেন এবং আমিও উঠে তাঁর সাথে নামাযে দাঁড়ালামআর আমি তাঁর বাম দিকে দাঁড়ালামতিনি আমার মাথা ধরে তাঁর ডান দিকে দাঁড় করালেন)। (বুখারী ও মুসলিম)
মালেক ইবনে হুয়াইরিছ (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: দুই ব্যক্তি নবী সা. এর কাছে এসে তারা সফরের ইচ্ছা করলে নবী সা. বললেন: (যখন তোমরা বের হবে তখন আযান দিবেঅতঃপর ইকামাত এবং তোমাদের মধ্যে যে বড় সে ইমামতি করবে)। (বুখারী) আনাস (রা:) থেকে বর্ণিত হাদীসে রয়েছে আনাসতার মা এবং উম্মে হারাম-আনাসের খালা-তাদের  কাছে নবী সা. প্রবেশ করলেনঅতঃপর নবী   সা. বললেন: (তোমরা দাঁড়াও  তোমাদেরকে নিয়ে আমি নামায পড়ব) ফরজ নামাযের সময় ব্যতীত অন্য সময়েতাদেরকে নিয়ে নামায পড়লেনআনাসকে তাঁর ডান দিকে রাখলেন এবং মহিলাদেরকে তাদের পিছনে রাখলেন। (মুসলিম) এক ব্যক্তি একজন মহিলার দ্বারা জামাআত ছহীহ ও সংঘটিত হওয়ার দলীলের মধ্যে আরও রয়েছেআবুসায়ীদ (রা:) ও আবু হুরায়রাহ (রা:) এর হাদীসতাঁরা নবী r থেকে বর্ণনা করেন যেতিনি বলেছেন: (যখন রাতে কোন লোক জাগ্রত হয় এবং তার স্ত্রীকে জাগ্রত করেঅতঃপর তারা উভয়ে দুই রাকাআত নামায পড়েআল্লাহ তাআলাকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও নারীদের মধ্যে তাদের নাম লেখা হয়)। (ইবনে মাজাহআবুদাউদ)
   আর আসল হচ্ছে পুরুষ-মহিলা মিলে জামাআত সহীহ হওয়া এবং সংঘটিত হওয়া যেমন পুরুষ-পুরুষ মিলে জামাআত করলে সহীহ এবং সংঘটিত হয়। যে ব্যক্তি তার বিরোধিতা করবে তার কর্তব্য হচ্ছে তার পক্ষে দলীল পেশ করা। (নাইলুল আওতারশারহুলমুমতিই) তবে সে মহিলা যদি আজনবি বা মাহরামাদের কেহ না হয় এবং তাদের সাথে অন্য কেহ না থাকেতাহলে ঐ মহিলার ইমামতি করা তার জন্য হারামকেননা ইবনে আববাস (রা:) থেকে হাদীসে রয়েছে রাসূল সা. বলেছেন: (তোমাদের কেহ যেন মাহরাম ব্যতীত কোন মহিলার সাথে একাকীত্বে/নির্জনে না হয়)। (বুখারী ও মুসলিম)
  সঠিক কথা হচ্ছে বালকদের কাতারের মাঝখানে দাঁড়ানো এবং  ফরজ ও নফল নামাযে তাদের ইমামতি করা সহীহসার্বিকভাবে দলীল সমূহের ভিত্তিতে এবং সে দলীল গুলোর মধ্যে সবচেয়ে স্পষ্ট দলীল হচ্ছে আমর বিন সালামাহ (রা:) থেকে বর্ণিত হাদীসতিনি বলেন আমার পিতা বলেছেন: আমি সত্যিই নবী সা. এর কাছ থেকে এসেছিতিনি বলেছেন: (তোমরা অমুক সময়ে অমুক নামায পড়তোমরা অমুক সময়ে অমুক নামায পড়সুতরাং যখন নামাযের সময় হয় তখন তোমাদের একজন আযান দিবে এবং তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী যে কুরআন মুখস্থ পারে সে তোমাদের ইমামতি করবে)। অতঃপর তারা লক্ষ করল আমার থেকে অন্য কেউ কুরআন বেশী পারেনাকেননা আমি যাত্রীদের কাছ থেকে শিখতামঅতঃপর তারা আমাকে তাদের সামনে পাঠালতখন আমি ছিলাম ছয় অথবা সাত বছরের বালক)। (বুখারী)
  আলওয়াযির ইবনে হুবায়রাহ (রহ:) বলেন: (তাঁরা অর্থাৎ মুজতাহেদগণ একমত হয়েছেন যেসবচেয়ে কম সংখ্যক যার দ্বারা জুমা’ ব্যতীত অন্যান্য ফরজ নামাযের জামাআত সংঘটিত হয় তা হল দুইজন: ইমাম ও মামুম বা মুক্তাদী যে ইমামের ডান পার্শ্বে দাঁড়াবে)। (আল ইফছাহ আন মায়ানিচ্ছিহাহ-১/১৫৫)
  ইমাম ইবনে কুদামাহ (রহ:) বলেন: (দুই বা ততোধিক দ্বারা জামাআত সংঘটিত হয় এ ব্যাপারে কোন বিরোধিতা আমার জানা নাই)। (আলমুগনী-২/৭) এবং ইমাম ইবনে আব্দুল বার (রহ:) বলেন: (ওলামায়ে কেরামগণ একমত হয়েছেন যেএকজন মহিলা পুরুষের পিছনে এক সারিতে একা নামায পড়বে তার ডান দিকে নয় এবং সুন্নাত হল পুরুষের পিছনে দাড়ানো তার ডান দিকে নয়)।
আমি আমাদের শায়েখ সম্মানিত ইমাম আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহ:) কে বলতে শুনেছি, তিনি পূর্বোল্লিখিত আমর বিন সালামাহর হাদীসের উপর আলোচনা করতে গিয়ে বলেন: (এই হাদীস প্রমাণ করে ছোটদের ইমামতি জায়েয যদি সে জ্ঞানী হয় এবং কোন জিনিসের ভালমন্দের মাঝে পার্থক্য করতে পারে। অনেক ফকীহগণ বলেন: বালক ইমামতি করবে না এবং তার কাতারের মাঝখানে দাঁড়ানো ধর্তব্য হবে নাএই বক্তব্য ভূল এবং দুর্বল। সঠিক হল সে ইমামতি করবেকাতারের মাঝখানে দাঁড়াবে। আনাস (রা:) ইয়াতীমের সাথে নবী সা. এর পিছনে দাঁড়িয়েছেন। (মুসলিম-৬৮৫) আর আসল হল ফরজ ও নফল নামায সমানশুধুমাত্র যা দলীল দ্বারা নির্দিষ্ট করা হয়েছে তা ব্যতীতআমরের এই হাদীস প্রমাণ করে বুদ্ধিমান ভালমনেদর পার্থক্যকারীর ইমামতি জায়েয। সাত বছরের শিশুর ব্যাপারে সন্দেহ রয়েছেকেননা অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভালমন্দের পার্থক্যকারী সাত বছর থেকে শুরু হয়ে থাকে। নবী সা. এর বাণী: (তোমাদের সন্তানদেরকে সাত বছরে নামাযের আদেশ কর)। (আবুদাউদআহমাদ) সুতরাং যদি সে নামায যথার্থভাবে পড়াতে সক্ষম হয় তাহলে তাকে সামনে দেওয়া যাবে) অর্থাৎ যদি সে তাদের মাঝে সবচেয়ে বেশী ক্বোরআন জানে।


অষ্টম পরিচ্ছেদ:

        এক রাকাআত পেলে জামাআত পাওয়া হয়:

 এক রাকাআত পেলে জামাআত পাওয়া হয় আর রুকু না পেলে তা রাকাআত হিসাবে ধরা হয়নাকেননা আবু হুরায়রাহ (রা:) থেকে বর্ণিত হাদীসে রয়েছে রাসূল সা. বলেছেন: (যে ব্যক্তি নামাযের এক রাকাআত পেল সে নামায পেল অর্থাৎ জামাআত পেল)। (বুখারী ও মুসলিম) এবং যদি ইমাম রুকু থেকে সোজা হয়ে দাঁড়াবার পূর্বে রুকু পায় তাহলে সে রাকআত পেল (নাইলুল আওতার-২/৩৮১মাজমুফাতাওয়া-১২/১৬১)কেননা আবু বাকরাহ (রা:) থেকে বর্ণিত হাদীসে রয়েছে তিনি রুকু অবস্থায় নবী সা. এর কাছে পৌঁছলেন এবং কাতার পর্যন্ত পৌঁছার পূর্বেই রুকু করলেনঅতঃপর নবী সা. এর কাছে তা উল্লেখ করা হলতিনি বললেন: (আল্লাহ তাআলা তোমার উৎসাহ আরও বাড়িয়ে দিন তবে পূণরায় আর করবে না)। (বুখারী) আবুদাউদ উক্ত হাদীসে বৃদ্ধি করেছেন: (অতঃপর তিনি লাইন ছাড়াই রুকু করলেন এবং হেটে লাইনে পৌঁছলেন)। (আবুদাউদ)
   আরও যে সকল দলীল প্রমাণ করে যেযে ব্যক্তি ইমামের রুকু থেকে সোজা হয়ে ওঠার পূর্বে রুকু পেল সে ঐ রাকাআত পেল: আবু হুরায়রাহ (রা:) থেকে বর্ণিত হাদীসতিনি বলেন: রাসূল সা. বলেছেন: (যখন তোমরা নামাযে এ অবস্থায় আস যে আমরা সিজদারত তখন সিজদাহ কর এবং উহাকে কিছু ধরবেনা অর্থাৎ  রাকাআত হিসাবে গণ্য করবেনাআর যে ব্যক্তি রাকাআত পেল সে নামায পেল অর্থাৎ জামাআত পেল)। (আবুদাউদ) ইবনে খুজায়মাদারাকুতনী এবং বায়হাক্বীর শব্দে রয়েছে: (ইমাম পিঠ সোজা করে দাঁড়াবার পূুর্বে যে ব্যক্তি নামাযের এক রাকাআত পেল সে ঐ নামায পেল)। আর এটা হল পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী জামহুর ইমামদের মাজহাব: যে ব্যক্তি ইমামকে রুকু অবস্থায় পেলঅতঃপর তাকবীর দিলরুকু করল এবং ইমাম রুকু থেকে মাথা ওঠানোর পূর্বেই দুই হাত হাটুতে রাখতে পারলসে রাকাআত পেলআর যে ব্যক্তি উহা পেলনা তার রাকআত ছুটে গেলফলে সে ঐ রাকাআত গণ্য করবেনাএটা ইমাম মালেকশাফীআবু হানিফাআহমাদ এর মাযহাবআর আলীইবনে মাসউদযায়েদইবনে উমর (রা:) থেকে ইহা বর্ণিত হয়েছে।  পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি ওজরের কারণে জামাআতে অনুপস্থিত ছিল অথচ সে নিয়মিত জামাআতের সাথে নামায আদায়ে যত্নবানদের একজনঅতঃপর সে এসে নামাযের কিছু অংশ পেল যা এক রাকআতের কম তার জামাআত ছুটে গেলকিন্তু তার ভাল নিয়্যাত ও ওজরের কারণে তার জন্য জামাআতের সাওয়াব ও মর্যাদা রয়েছেকেননা আবু হুরায়রাহ (রা:) থেকে বর্ণিত হাদীসে রয়েছে তিনি বলেন: নবী সা. বলেছেন: (যে ব্যক্তি ওজু করল আর উত্তমভাবে ওজু করলঅতঃপর চলে গেল কিন্তু মানুষদেরকে এ অবস্থায় পেল যেতারা ইতিপূর্বে নামায পড়েছে আল্লাহ তাআলা তাকে ঐ পরিমাণ সাওয়াব দিবেন যে পরিমাণ সাওয়াব রয়েছে ঐ ব্যক্তির জন্য যে ব্যক্তি নামায পড়েছে এবং তাতে উপস্থিত ছিল অর্থাৎ জামাআতে উপস্থিত ছিল এবং এতে তাদের সাওয়াবের থেকে কোন অংশ ঘাটতি হবেনা)। (আবুদাউদ) আবু মূসা (রা:) থেকে বর্ণিত হাদীসে রয়েছে তিনি বলেন: রাসূল সা. বলেছেন: (যখন কোন বান্দাহ অসুস্থ হয় অথবা সে সফর করেতখন উপস্থিত অবস্থায় সুস্থ থেকে যেভাবে আমল করত তার জন্য ঐ পরিমাণ সাওয়াব লেখা হয়); (বুখারী ও মুসলিম) আনাস ইবনে মালেক (রা:) থেকে হাদীসে রয়েছে তিনি নবী সা. থেকে বর্ণনা করেন: তিনি তাবুক যুদ্ধের সময় বলেছেন: (নিশ্চয় মদীনায় কিছু সম্প্রদায় আমাদের পিছনে রয়ে গেছে কিন্তু আমরা এমন কোন গিরি পথউপত্যকা অতিক্রম করিনাই যেতারা আমাদের সাথে ছিলনা তবে ওজর/ওজুহাত তাদেরকে আটকে রেখেছিল)। অন্য এক বর্ণনায় রয়েছে: রাসূল সা. তাবুক যুদ্ধ থেকে ফিরে যখন মদীনার কাছে পৌঁছলেন তখন বল্লেন: (নিশ্চয় মদীনায় অনেক সম্প্রদায় ছিল তোমরা এমন কোন পথ চল নাই এবং এমন কোন উপত্যকা অতিক্রম কর নাই যেতারা তোমাদের সাথে ছিলনা) তাঁরা বলল: হে আল্লাহর রাসূলতারা তো মদীনায় ছিলঅর্থাৎ মদীনায় থেকে তারা কিভাবে আমাদের সাথে থাকেতিনি বললেন: (তারা মদীনায়ওজর তাদেরকে আটকে রেখেছে)। (বুখারী) এই হাদীস প্রমাণ করে যেযাকে শারয়ী ওজর বিরত রাখে অর্থাৎ শরয়ী ওজরের কারণে যে কোন আমল করতে ব্যর্থ হয় তার জন্য অনুরূপ প্রতিদান রয়েছে যতটা প্রতিদান রয়েছে ঐ ব্যক্তির জন্য যে ব্যক্তি শরীয়ত সম্মত আমল করে। (ইবনে তাইমিয়ার বাছাইকৃত ফিকহী মাছয়ালা-১০২মাজমু’ ফাতাওয়া লিবনে বায-১২/১৬৫)

নবম পরিচ্ছেদ:

         মসজিদে ইমামের সাথে যার প্রথম জামাআত ছুটে যায় তার জন্য দ্বিতীয় জামাআত করা শরীয়ত  সম্মত অর্থাৎ বৈধকেননা আবু সায়ীদ (রা:) থেকে বর্ণিত হাদীসে রয়েছে রাসূল সা. এক ব্যক্তিকে একাকি নামায পড়তে দেখে বললেন: (এমন কোন ব্যক্তি কি আছে যেএই ব্যক্তিকে সদ্কাহ করবেঅর্থাৎ তার সাথে নামায পড়বে?)। (আবুদাউদতিরমিযিআহমাদ) এবং তিরমিযির শব্দ হল: এক ব্যক্তি আসল যখন রাসূল সা.  নামায পড়ে নিয়েছেনঅতঃপর তিনি বলেন: {তোমাদের কে আছে যেএই ব্যক্তির সাথে (পূণ্য অর্জনে) ব্যবসা করবে?} তখন এক ব্যক্তি দাঁড়াল এবং তার সাথে নামায পড়ল। ইমাম আহমাদের শব্দ হচ্ছে: এক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করল যখন রাসূল সা. তাঁর সাহাবাদের নিয়ে নামায পড়ে নিয়েছেনঅতঃপর রাসূল সা. বলেন: এমন কোন ব্যক্তি কি আছে যেএই ব্যক্তিকে সদ্কাহ করবেঅর্থাৎ তার সাথে নামায পড়বে?) তখন এক ব্যক্তি দাঁড়াল এবং তার সাথে নামায পড়ল। ইমাম শাওকানী (রহ:) বলেন: (ক্বাওমের এক লোক দাঁড়াল এবং তার সাথে নামায পড়ল)। তিনি ছিলেন আবুবকর ছিদ্দিক (রা:) যেমনটি ইবনে শায়বাহ বর্ণনা করেছেন। (নাইলুল আওতার-২/৩৮০)
   হাদীসটি প্রমাণ করে যে একাকী নামায আরম্ভকারীর সাথে নামাযে প্রবেশ করা শরীয়ত সম্মতযদিও যে ব্যক্তি প্রবেশ করবে সে জামাআতের সাথে নামায আদায় করে থাকে। (নাইলুল আওতার-২/৩৮০) ইমাম তিরমিযি (রহ:) বলেন: (এটা একাধিক আহলে ইল্মের বক্তব্য যাদের মধ্যে রয়েছে রাসূল সা. এর সাহাবীএছাড়াও রয়েছেন তাবেয়ীনদের মধ্যে অনেকে)। তাঁরা বলেন: এতে কোন সমস্যা নাই যেকোন একদল লোক মসজিদে জামাআতের সাথে নামায পড়ল যেখানে ইতিপূর্বে জামাআত পড়া হয়েছেইমাম আহমাদ ও ইছহাক (রাহঃ) এর বক্তব্যও এটাই। এটিই সঠিক বক্তব্যকারণ সার্বিকভাবে দলীল সমূহ যা প্রমাণ করে যে জামাআতের সাথে নামায আদায় ব্যক্তির একাকী নামায অপেক্ষা ২৭গুন বেশী ফযীলত পূর্ণএবং উবাই বিন কাব (রা:) থেকে বর্ণিত হাদীসের একাংশে রয়েছে: (আর নিশ্চয় কোন ব্যক্তির অপর ব্যক্তির সাথে নামায তার একাকী নামায অপেক্ষা অধিকতর পবিত্র এবং  কোন ব্যক্তির অপর দুই ব্যক্তির সাথে নামায তার অপর এক ব্যক্তির সাথে  নামায অপেক্ষা অধিকতর পবিত্রআর যতই সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে তা আল্লাহ তাআলার কাছে অধিক প্রিয়)। (সুনানে আবুদাউদনাসায়ীআহমদ)। আর যে ব্যক্তি বলে: নিশ্চয় জামাআতের ফযীলত প্রথম জামাআতের জন্য খাছ বা নির্দিষ্ট তার কর্তব্য হল দলীল পেশ করা কেননা শুধুমাত্র নিজস্ব অভিমত কোন দলীল নয়। (মাজমুউ ফাতাওয়া লিবনে বায-১২/১৬৬) প্রমাণিত যে একদা আনাস (রা:) আসলেন এঅবস্থায় যে লোকেরা নামায পড়ে নিয়েছেনতখন তিনি তার সাথীদেরকে একত্রিত করলেন এবং তাঁদেরকে নিয়ে নামায পড়লেন। (বুখারী)
 উদ্দেশ্য হল দ্বিতীয় জামাআত তাদের জন্য জায়েয যাদের প্রথম জামাআত ছুটে গেছে এবং এটাই হল মূল বক্তব্য এবং এই আসল থেকে দলীল ব্যতীত বের হওয়া যাবেনা। (মাজমুউ ফাতাওয়া লিবনে বায-১২/১৬৬) আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা তাওফীক দাতা।
       
দশম পরিচ্ছেদ:

         যে ব্যক্তি নামায পড়ার পর জামাআত পেল সে তাদের সাথে নফল হিসাবে পূণরায় নামায পড়বেকেননা আবুজার (রা:) থেকে বর্ণিত হাদীসে রয়েছে তিনি বলেন: আমাকে রাসূল সা.  বলেছেন: (যদি তোমার উপর এমন সব আমিরগণ থাকে যারা নামায তার সময় থেকে দেরী করে পড়েঅথবা নামায তার সময়মত নিষ্প্রাণ করে রাখে অর্থাৎ সময়মত না পড়েতুমি তাহলে কি করবে?) তিনি বলেন: আমি বললাম এমতাবস্থায় আপনি আমাকে কি আদেশ করেনতিনি বলেন: (নামায তার সময়মতই আদায় করঅতঃপর যদি তাদের সাথে নামায আবার পেয়ে যাও তাহলে পূণরায় নামায পড় এবং সেটা হবে তোমার জন্য নফল নামায [এবং বলবেনা যেআমি নামায পড়েছিঅতএব আর নামায পড়ব না]) (মুসলিম-৬৪৮) ইয়াযিদ ইবনে আছওয়াদের হাদীসের একাংশে রয়েছে (...যখন তোমরা দুজন তোমাদের অশ্ব-জিনে নামায পড়বেঅতঃপর মসজিদে আসবে যেখানে জামাআত হচ্ছে তখন তোমরা উভয়ে তাদের সাথে নামায পড়বেকেননা উহা তোমাদের জন্য নফল হিসাবে গণ্য হবে)। অপর এক শব্দে রয়েছে: (যখন তোমাদের কেহ তার অশ্ব-জিনে নামায পড়েঅতঃপর ইমামকে এ অবস্থায় পায় যেসে নামায পড়েনি তখন যেন সে তার সাথে নামায পড়েকেননা এই নামায তার জন্য নফল হিসাবে গণ্য হবে); (তিরমিযিআবুদাউদনাসায়ী)মিহজান থেকে বর্ণিত হাদীস যার একাংশে রয়েছে: অতঃপর রাসূল সা. বলেছেন: (তোমাকে নামায পড়তে কোন জিনিসটি নিষেধ করেছে তুমি কি মুসলিম নও?) সে বলল: অবশ্যইকিন্তু আমি আমার পরিবারের মাঝে নামায পড়ে নিয়েছিঅতঃপর রাসূল সা. বললেন: (যদি তুমি আস তাহলে মানুষের সাথে নামায পড় যদিও ইতিপূর্বে নামায পড়ে থাক)। (নাসায়ী) উবাদাহ বিন ছামেত (রা:) থেকে হাদীস (আহমাদ) ইবনে মাসউদ (রা:) থেকে হাদীস (আবুদাউদ)। আল্লাহ তাআলাই তাওফীক দাতা এবং তিনিই সঠিক পথ প্রদর্শনকারী।

 একাদশ পরিচ্ছেদ:

              মাছবুক বা যে ব্যক্তির ইমামের সাথে নামাযের কিছু অংশ ছুটে যায় সে ইমামের সালাম ফিরানোর পর নামাযের বাকী অংশ কোন রকমের বৃদ্ধি করা ব্যতীত আদায় করে নিবেকেননা মুগীরাহ বিন শোবাহ (রা:) থেকে বর্ণিত হাদীসে রয়েছে তিনি যখন নবী সা. এর সাথে তাবুক যুদ্ধে ছিলেনতিনি বলেন: অতঃপর রাসূল সা. প্রাকৃতিক কাজ সারলেন এবং তাঁর ওজুর কথা উল্লেখ করলেনউহা ছিল ফজরের নামাযের পূর্বেতিনি বলেন: অতঃপর আমি তাঁর সাথে এগিয়ে এলাম এমনকি লোকদেরকে পেলাম যে তারা আব্দুর রহমান বিন আওফকে সামনে বাড়িয়ে দিয়েছেঅতঃপর তিনি তাদেরকে নিয়ে সময়মত নামায পড়লেন এবং আমরা আব্দুর রহমানকে পেলাম যেসে তাদেরকে নিয়ে ফজরের এক রাকাআত নামায পড়েছেনএ অবস্থায় রাসূল সা. দাঁড়ালেনমুসলিমদের সাথে সারিবদ্ধ হলেন এবং আব্দুর রহমানের পিছনে দ্বিতীয় রাকাআত আদায় করলেনঅতঃপর যখন আব্দুর রহমান সালাম ফিরালেন রাসূল সা. দাঁড়ালেনতাঁর নামায পরিপূর্ণ করার জন্য এ অবস্থাটা মুসলিমদেরকে ভীত- সন্ত্রস্ত করে তুল্লতারা বেশী বেশী তাছবীহ পড়তে আরম্ভ করলেনঅতঃপর যখন রাসূল সা. নামায পূর্ণ করলেন তখন তাদের কাছে আসলেন এবং বললেন: (তোমরা উত্তম কাজ করেছঅথবা তোমরা সঠিক কাজই করেছ) তাদেরকে আনন্দিত করেছে যেতারা সময়মত নামায পড়েছে)। (বুখারী ও মুসলিম) তাঁর এই বক্তব্য: (তিনি তাঁর নামায সম্পন্ন করলেন) প্রমাণ করে যেমাছবূক ব্যক্তি ইমামের সাথে নামাযের যে অংশ পেয়েছে তা তার জন্য প্রথম নামাযকেননা আবু হুরায়রাহ (রা:) থেকে বর্ণিত হাদীসে রয়েছে তিনি নবী সা. থেকে বর্ণনা করেনতিনি বলেছেন: (যখন তোমরা ইক্বামাত শুনতে পাবে তখন নামাযের দিকে প্রশান্তি ও গাম্ভীর্য নিয়ে হেটে চলবেআর তাড়াহুড়া করবেনাঅতঃপর যতটুকু নামায পাবে তা আদায় করবে এবং যতটুকু তোমাদের থেকে ছুটে যাবে তা পরিপূর্ণ করবে)। (বুখারী ও মুসলিম) কোন কোন বর্ণনায় এসেছে: (সম্পন্ন কর) আর قضاء শব্দটি কোন কিছু আদায় করা অর্থেও আসে অর্থাৎ পরিপূর্ণ করসুতরাং দুই শব্দের মাঝে কোন রকমের বৈপরিত্য নাই, (নাইলুল আওতার-২/২৫৮সুবুলুস্ সালাম-২/১১৫) আর যারা فاقضوا বর্ণনা আকড়ে ধরেছেতাদের জন্য এটা দলীল নয় যেনামাযের যে অংশ ইমামের সাথে পেয়েছে তা তার নামাযের শেষের অংশ বরং সঠিক হল মাছবুক ব্যক্তি ইমামের সাথে  নামাযের যে অংশ পেয়েছে তা তার প্রথম নামায। 
আমি আমাদের শায়েখ সম্মানিত ইমাম আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহ:) কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন: (وما فاتكم فأتموا) এটা অধিকাংশ বর্ণনা এবং কিছু কিছু বর্ণনায় রয়েছে: (فاقضواঅর্থাৎ أتموا পরিপূর্ণ কর অর্থাৎ উভয় বর্ণনার অর্থ একই কোন পার্থক্য নাইসুতরাং  উভয় বর্ণনা পরিপূর্ণ করা এবং সম্পন্ন করা অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছেঅতএব যা সে পেয়েছে তা তার প্রথম নামায এবং যা পরবর্তীতে আদায় করেছে তা তার নামাযের শেষাংশ।
 আর মাছবুক ব্যক্তি ইমামকে যে অবস্থায় পাবে সে অবস্থায়ই নামাযে প্রবেশ করবেকেননা আলী বিন আবু তালিব এবং মুয়াজ (রা:) থেকে হাদীসে রয়েছে তারা উভয়েই বলেন: রাসূল সা. বলেছেন: (যখন তোমাদের কেহ নামাযে আসে এবং ইমামকে তার অবস্থায় পায় তখন ইমাম যা করবে সে তাই করবে)। (তিরমিযি) ইমাম তিরমিযি (রহ:) বলেন: (আহলে ইল্মগণ এই বক্তব্যানুযায়ী আমল করে থাকেনতারা বলেন: যখন কোন ব্যক্তি এঅবস্থায় আসে যে ইমাম সিজদারত সেও তখন সিজদাহ করবে আর ঐ রাকআতে ইমামের সাথে রুকু ছুটে গেলে তা রাকাআত হিসাবে পরিগণিত হবে না) (সুনানুত্ তিরমিযি-২/৪৮৬)
 আবু হুরায়রাহ (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সা. বলেছেন: (যখন তোমরা নামাযে এ অবস্থায় আস যে আমরা সিজদারত তখন সিজদাহ কর এবং উহাকে কিছু ধরবে না অর্থাৎ রাকাআত হিসাবে গণ্য করবেনাআর যে ব্যক্তি রাকাআত পেল সে নামায পেল অর্থাৎ জামাআত পেল)। (আবুদাউদ)

 দ্বাদশ পরিচ্ছেদ:

          যে সকল কারণে জামাআত ত্যাগ করা বৈধ:

     ভয় অথবা অসুস্থ হওয়া; কেননা ইবনে আববাস (রা:) থেকে বর্ণিত হাদীসে রয়েছে তিনি নবী সা. থেকে বর্ণনা করেন তিনি বলেছেন: (যে ব্যক্তি আযান শুনল অথচ মসজিদে আসেনি ওজর ব্যতীত তার কোন নামায নাই)। (ইবনে মাজাহআবুদাউদ)

    বৃষ্টিঅথবা পিচ্ছিল স্থান; কেননা ইবনে আববাস (রা:) থেকে বর্ণিত হাদীসে রয়েছেতিনি তার মুয়ায্যিনকে একদা বৃষ্টির দিনে বলেন:  أََشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّداً رَسُوْلُ اللهًِ ,  বলার পর حَيَّ عَلَى الصَّلاةِবলবেনা বরং বলবে: তোমরা তোমাদের বাড়ীতে নামায আদায় করলোকেরা যেন বিষয়টা অপছন্দ করলতখন তিনি বল্লেন: আমার থেকে যিনি উত্তম তিনি এমনটি করেছেন...)। (বুখারী ও মুসলিম)

     ঠান্ডা অন্ধকার রজনীতে প্রচন্ড বাতাস থাকলে; কেননা ইবনে উমর (রা:) থেকে বর্ণিত হাদীসে রয়েছেতিনি ঠান্ডা ও বাতাস জনিত এক রাতে নামাযের জন্য আযান দিলেনঅতঃপর বললেন: তোমরা তোমাদের বাড়ীতে নামায পড়এরপর বল্লেন: রাসূল সা. শীতের রাতে বৃষ্টি থাকলে মুয়ায্যিনকে আদেশ করে বলতেন: (জেনে রেখো তোমরা  বাড়ীতে নামায আদায় কর) বুখারীর শব্দে রয়েছে: (রাসূল সা.) মুয়ায্যিনকে আযান দেওয়ার নির্দেশ দিতেনঅতঃপর আযানের পরপরই বলতেন: (জেনে রাখ তোমরা বাড়ীতে নামায পড়বেশীতের রাতে অথবা সফরের সময় বৃষ্টি থাকলে) এবং মুসলিম এর শব্দে রয়েছে: (ইবনে উমর এক শীতের রাতে যখন বাতাস ও বৃষ্টি ছিল নামাযের আযান দিলেনঅতঃপর আযান শেষে বলেন: সবাইকে জানানো যাচ্ছে যেআপনারা আপনাদের বাড়ীতে নামায পড়ুন আপনারা বাড়ীতে নামায পড়ুনঅতঃপর বলেন: রাসূল সা. শীতের রাতে অথবা সফরের সময় বৃষ্টি থাকলে মুয়ায্যিনকে আদেশ করে বলতেন: (জেনে রেখো তোমরা  বাড়ীতে নামায আদায় কর)। (বুখারী ও মুসলিম)
    জাবের (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমরা রাসূল সা. এর সাথে এক সফরে বের হলাম এমতাবস্থায় আমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষিত হলতখন তিনি বল্লেন: (তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি চায় সে তার বাড়ীতে নামায পড়তে পারে)। (মুসলিম) আর উত্তম হল আযানের সব শব্দ পরিপূর্ণভাবে বলাঅতঃপর বলবে: (তোমরা তোমাদের বাড়ীতে নামায পড়)। অথবা বলবে: (তোমরা তোমাদের নিজ নিজ স্থানে নামায পড়)।

     খাবার উপস্থিত হলে এবং মন যদি খাবারের প্রতি থাকে; কেননা ইবনে উমর (রা) থেকে বর্ণিত হাদীসে রয়েছে তিনি বলেন: নবী সা. বলেছেন: (তোমাদের কেহ যদি খাবারের কাছে থাকে সে যেন তাড়াহুড়া না করে যে পর্যন্ত না সে তার প্রয়োজন মিটায়যদিও নামাযে দাঁড়িয়ে যায় অর্থাৎ জামাআত শুরু হয়ে যায়) আয়েশা (রা:) থেকে বর্ণিত হাদীসে রয়েছে তিনি নবী সা. থেকে বর্ণনা করেন যেতিনি বলেছেন: (যখন রাতের খাবার সামনে রাখা হয় আর এঅবস্থায় জামাআত আরম্ভ হয় তখন রাতের খাবার দিয়ে শুরু কর)। (বুখারী ও মুসলিম)

     দুটি খারাপ জিনিস আটকে রাখা [পেশাবপায়খানা]; কেননা আয়েশা (রা:) থেকে বর্ণিত হাদীসে রয়েছে তিনি বলেন: আমি রাসূল সা. কে বলতে শুনেছি: (খাবার উপস্থিত হলে কোন নামায নাই এবং এঅবস্থায়ও কোন নামায নাই যে পায়খানা পেশাব আটকে রেখেছে)। (বুখারী ও মুসলিম)

     কোন ব্যক্তির আতণীয় যদি মৃত্যুর আশংকা করে যার কাছে সে উপস্থিত নাই; কেননা ইবনে উমর (রা) থেকে বর্ণিত হাদীসে রয়েছেতার কাছে উল্লেখ করা হল যেসায়ীদ বিন যায়েদ বিন আমর বিন নুফাইল যিনি বদরী সাহাবী ছিলেনতিনি জুমআর দিন অসুস্থ হয়েছেনঅতঃপর ইবনে উমর (রা:) দিনের আলো প্রকাশের পর তার কাছে চলে গেলেনজুমআর সময় ঘনিয়ে এল কিন্তু তিনি জুমআ পরিত্যাগ করলেন। (বুখারী) আবু দারদা (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: (ব্যক্তির জ্ঞানের পরিচয় হল তার প্রয়োজনের দিকে অগ্রসর হওয়া অর্থাৎ প্রয়োজন মিটিয়ে ফেলাযাতে করে নামাযে এ অবস্থায় আসে যেতার অন্তর সকল   চিন্তামুক্ত)। (বুখারী)  
                  
       অতএব স্পষ্ট হল যেআট অবস্থায় জামাআত পরিত্যাগকারীকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়: অসুস্থ হওয়াভয় থাকা সেটা নিজের উপর হোক বা সম্পদের উপর হোক বা সম্মানের উপর হোকবৃষ্টিপিচ্ছিল পথঅন্ধকার রাত যখন ঠান্ডা এবং প্রচন্ড বাতাস থাকেখাবার উপস্থিত হলে যদি তার প্রতি মনের চাহিদা থাকেদুটি খারাপ জিনিস চেপে রাখা অর্থাৎ পায়খানা ও পেশাবের বেগ থাকা বা তার যেকোন একটির বেগ থাকাকারও যদি কোন আত্নীয় থাকে যার মৃত্যুর আশংকা করছে যার কাছে সে উপস্থিত হতে পারবে না। এ সকল বিষয়ের প্রতিটি মাসআলার ব্যাপারে দলীল পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।

    আল্লাহ তাআলা সালাত ও সালাম প্রেরণ করুন আমাদের নবী মুহাম্মদের প্রতিতাঁর পরিবারের প্রতিতাঁর সাহাবীদের প্রতি এবং যারা ক্বেয়ামাত পর্যন্ত উত্তমভাবে তাঁদের অনুসরণ করবে তাদের প্রতি।
                      

সূচী পত্র

অনুবাদকের কথা
ভূমিকা
        প্রথম পরিচ্ছেদ
জামাআতের সাথে নামায আদায়: শাব্দিক ও পারিভাষিক অর্থ
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ:
জামায়াতের সাথে নামায আদায়ের হুকুম
        তৃতীয় পরিচ্ছেদ:         
 জামাআতে নামাযের উপকারিতা
চতুর্থ পরিচ্ছেদ:
জামাআতে নামাযের ফযীলত
       পঞ্চম পরিচ্ছেদ:
জামাআতে নামায আদায়ের উদ্দেশ্যে হেটে যাওয়ার ফযীলত
৬ষ্ঠ পরিচ্ছেদ:
জামাআতে নামায আদায়ের উদ্দেশ্যে পথ চলার আদবসমূহ
সপ্তম পরিচ্ছেদ:
দুই জনের দ্বারা জামাআত প্রতিষ্ঠা হয়
        অষ্টম পরিচ্ছেদ:
 এক রাকাআত পেলে জামাআত পাওয়া হয়
নবম পরিচ্ছেদ:
 দ্বিতীয় জামাআত করা শরীয়তসম্মত
        দশম পরিচ্ছেদ:
যে ব্যক্তি নামায পড়েছে অতঃপর জামাআত পেল..
       একাদশ পরিচ্ছেদ:
যে ব্যক্তির ইমামের সাথে নামাযের কিছু অংশ ছুটে যায়...
        দ্বাদশ পরিচ্ছেদ:
যে সকল কারণে জামাআত ত্যাগ করা বৈধ
_________________________________________________________________________________

সংকলন : ড. সায়ীদ ইবন আলী ইবন ওয়াহফ আল্ ক্বাহতানি 
অনুবাদক : মোহাম্মদ বায়েজীদ মোহাম্মদ মোসলেম উদ্দীন
সূত্র : ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন