Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

See Our Articles In Different Styles... Grid View List View

বৃহস্পতিবার, ২৫ মে, ২০২৩

পানাহারের আদব

Views:

A+ A-

 পানাহারের আদব




পানাহারের আদব

আল্লাহর বান্দাদের উপর যতগুলি অনুগ্রহ আছে তার মাঝে অন্যতম প্রধান অনুগ্রহ হল পানাহার। মানুষের শরীর গঠন,বর্দ্ধন ও টিকে থাকার মূল উপাদান হচ্ছে পানাহার। এই নেয়ামতের দাবি হল এর দাতার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। আর এ কৃতজ্ঞতা আল্লাহর প্রশংসা এবং তাঁর দেয়া বিধান পালন করার মাধ্যমে আদায় করা যেতে পারে।এ নেয়ামতের আরো একটি দাবি হচ্ছে, এর সহায়তায় আল্লাহর নাফরমানি করা যাবে না।
পানাহারের অনেকগুলো আদব ও বিধান রয়েছে, যাকে দুইভাবে ভাগ করা যেতে পারে :

প্রথমত : যে বিষয়গুলোর গুরুত্ব দেয়া আবশ্যক। 

যেমন:
১) খাদ্য এবং পানীয় জাতীয় জিনিসের এহতেরাম করা আর এই বিশ্বাস রাখা যে এগুলি আল্লাহর নেয়ামত যা আল্লাহ তাআলা তাকে দিয়েছেন।
২) খাদ্য জাতীয় জিনিসকে অবহেলা-অসম্মান না করা ;ডাস্টবিন ও ময়লা আবর্জনার ভিতরে না ফেলা।
৩) খাবার শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা। বিশুদ্ধ অভিমত হল: খাবার শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা ওয়াজিব, কেননা অনেকগুলো সহীহ এবং সুস্পষ্ট হাদীস এ নির্দেশই করে। আর এ নির্দেশের বিপরীত কোন হাদীস নেই। এ মতের বিরুদ্ধে সর্বসম্মত ঐক্যমত্যও সৃষ্টি হয়নি যে, এর প্রকাশ্য অর্থ থেকে বের করে দেবে। আর যে ব্যক্তি পানাহারের সময় বিসমিল্লাহ বলবে না তার পানাহারে শয়তান শরীক হবে।
বিসমিল্লাহ ওয়াজিব হওয়ার প্রমাণ সমূহ :―  
عن عمر بن أبي سلمة أن النبي صلى الله عليه وسلم قال له: «يا غلام، سمّ اللّه، وكل بيمينك، وكل مما يليك». البخاري ( 4958) 
আমর বিন আবু সালামা থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেছেন:হে বৎস! বিসমিল্লাহ বল এবং ডান হাত দিয়ে খাও। আর খাবার পাত্রের যে অংশ তোমার সাথে লাগানো সে অংশ থেকে খাও।[১]

وفي حديث حذيفة -رضي الله عنه- أن النبي صلى الله عليه وسلم قال: «إن الشيطان يستحل الطعام أن لا يذكر اسم الله عليه». مسلم (3761)
অর্থাৎ, হুযাইফা রা. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, শয়তান ঐ খাবারকে নিজের জন্য হালাল মনে করে যার শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা হয় নি।[২]
(১) বান্দা খাবার পাত্রের যেদিক তার সাথে লাগানো সেদিক থেকে খাবে। উপরে বর্ণিত উমর বিন আবু সালামা রা.-এর হাদীসের কারণে। আর খাবার যদি বিভিন্ন ধরনের হয় তা হলে অন্যদিক -যা তার সাথে লাগোয়া নয়- থেকে খাওয়াতে কোন দোষ নেই।
(২) যদি খাবারের কোন লোকমা পড়ে যায় তবে উঠিয়ে খাবে, যদি ময়লা লাগে ধুয়ে ময়লা মুক্ত করে খাবে। কারণ এটিই সুন্নত এবং এর মাধ্যমেই রাসূলুল্লাহর নির্দেশের অনুসরণ করা হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :―
«إذا سقطت لقمة أحدكم فليُمِط عنها الأذى، وليأكلها، ولا يدَعْها للشيطان».مسلم(3794)
অর্থাৎ, যদি তোমাদের কারো খাবারের লোকমা পড়ে যায় তবে তার থেকে ময়লা দুর করবে এবং তা খেয়ে ফেলবে, শয়তানের জন্য রেখে দেবে না।[৩]
(৩) খাবারের প্লেট পরিষ্কার করবে, তার ভিতর যা কিছু থাকবে মুছে খাবে।
عن جابر رضي الله عنه أن النبي صلى الله عليه وسلم  أمر بلعق الأصابع  والصحفة، وقال: «إنكم لا تدرون في أيه البركة». مسلم (3792)
জাবের রা. থেকে বর্ণিত যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আঙুল এবং বর্তন চেটে খেতে নির্দেশ দিয়েছেন এবং বলেছেন তোমরা জানো না কোনটায় বরকত রয়েছে। [৪]
وفي حديث أنس رضي الله عنه أن النبي صلى الله عليه وسلم  أمرنا أن نسلت القصعة، قال: «فإنكم لا تدرون في أيّ طعامكم البركة»،. الترمذي (1725)
আনাস রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থকে বর্ণনা করেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, আমরা যেন বর্তন পরিষ্কার করে খাই। তিনি বলেন―তোমরা জানো না তোমাদের খাবারের কোন অংশে বরকত রয়েছে। বরকত দ্বারা উদ্দেশ্য হল যার দ্বারা উপকার এবং পুষ্টি লাভ হয়।[৫]
(৪) আঙুল ধোয়ার পূর্বে চেটে খাবে―                    
عن كعب بن مالك رضي الله عنه قال: رأيت رسول الله  يأكل بثلاث أصابع، فإذا فرغ لعقها. مسلم(3790)
কা'ব বিন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন : আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছি, তিনি তিন আঙুল দিয়ে খাচ্ছেন এবং খাওয়া শেষে আঙুল চেটে খাচ্ছেন।[৬]
عن أبي هريرة رضي اللّه عنه مرفوعاً: «إذا أكل أحدكم فليلعق أصابعه، فإنه لا يدري في أيتهن البركة».. مسلم (3793)
আবু হুরাইরা রা. থেকে মারফু হাদীসে বর্ণিত, যখন তোমরা কেউ খাবার খাবে তার উচিত আঙুল চেটে খাওয়া কেননা সে জানে না কোন আঙুলে বরকত রয়েছে।[৭]
আলেমগণ বলেন : নির্বোধ-মূর্খ লোকদের আঙুল চেটে খাওয়াকে অপছন্দ করা ও একে অভদ্রতা মনে করাতে কিছু যায় আসে না। তবে হ্যাঁ খাওয়ার মাঝখানে আঙুল চেটে খাওয়া উচিত নয়। কেননা আঙুল আবার ব্যবহার করতে হবে আর আঙুলে লেগে থাকা লালা ও থুতু প্লেটের রয়ে যাওয়া খাবারের সাথে লাগবে আর এটি এক প্রকার অপছন্দনীয়ই বটে।
(৫) খাবারের প্রশংসা করা মুস্তাহাব, কেননা এর মাধ্যমে খাবার আয়োজন ও প্রস্তুত কারীর উপর একটা ভাল প্রভাব পড়বে। সাথে সাথে আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো কখনো এমন করতেন―                 
عن جابر رضي اللّه عنه أن النبي صلى الله عليه وسلم سأل أهلَه الأدُمَ، فقالوا: ما عندنا إلا خلّ، فدعا به، فجعل يأكل به، ويقول: «نعم الأدُم الخلّ، نعم الأُدُم الخل». مسلم (3824)
জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় পরিবারের নিকট তরকারী চাইলেন। তারা বললেন, আমাদের কাছে সিরকা ছাড়া আর কিছু নেই। তিনি সিরকা আনতে বললেন এবং তার দ্বারা খেতে লাগলেন। অতঃপর বললেন, সিরকা কতইনা উত্তম তরকারী; সিরকা কতইনা উত্তম তরকারী।
(৬) পানি পান কারীর জন্য সুন্নত হল:তিন শ্বাসে পান করা। একটু পান করার পর পাত্র মুখ থেকে দুরে সরিয়ে নিয়ে শ্বাস নিবে। অতঃপর দ্বিতীয়বার এরপর একই ভাবে তৃতীয়বার। যেমন আনাস রা.-এর হাদীসে এসেছ―
أن رسول الله صلى الله عليه وسلم كان يتنفس في الشراب ثلاثا، وفي رواية لمسلم: «ويقول: إنه أروى وأبرأ وأمرأ». البخاري (5200)، مسلم (3782)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পান করার মাঝে তিনবার শ্বাস নিতেন। মুসলিম শরীফের অপর এক বর্ণনায় আছে, তিনি বলতেন: এইভাবে পান করা অধিক পিপাসা নিবারণকারী অধিক নিরাপদ অধিক তৃপ্তিদায়ক।
পানাহারের শেষে আল্লাহর নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ স্বরূপ তাঁর প্রশংসা করবে। সর্বনিম্ন স্তর হচ্ছে অন্তত আলহামদুলিল্লাহ বলা।
«إن الله ليرضى عن العبد أن يأكل الأكلة فيحمده عليها، أو يشرب الشربة فيحمده عليها«.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : যে ব্যক্তি খাবারের পর আল্লাহর প্রশংসা করে।অনুরূপ পান করার পর আল্লাহর প্রশংসা করে। আল্লাহ সে বান্দার প্রতি সন্তুষ্ট হন।
আর যদি হাদীসে বর্ণিত কোন দোআ পড়ে তাহলে তাহবে সর্বোত্তম। সবচেয়ে বিশুদ্ধ দোআ যা সাহাবী আবু উমামার হাদীসে এসেছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন দস্তরখান উঠাতেন তখন বলতেন:
«الحمد لله كثيراً طيباً مباركاً فيه، غير مكفي ولا مودع، ولا مستغنى عنه ربّنا»
(৭) যখন অনেক লোকের সাথে বসে পান করবে আর পান করার পর কাউকে দিতে চাইবে তাহলে ডান পাশ্বে বসা ব্যক্তিকে দিবে, সে যদি বয়সে ছোট হয় আর বাম পার্শ্বস্থজন তার থেকে বড়, তবুও। হ্যাঁ; যদি ছোট থেকে অনুমতি নিয়ে বড়কে দেওয়া হয় তাহলে কোন দোষ নেই। আর যদি অনুমতি না দেয় তাহলে তাকেই দিবে কারণ সেই আগে পাওয়ার বেশি অধিকার রাখে।
এর প্রমাণ হল সাহাবী সাহল বিন সা'দ রা.-এর হাদীস :―
أن النبي صلى الله عليه وسلم أتي بشراب فشرب منه وعن يمينه غلام، وعن يساره أشياخ، فقال للغلام: «أتأذن لي أن أعطي هؤلاء؟» فقال الغلام: لا والله! لا أوثر بنصيبي منك أحداً، قال: فتَلَّه رسول الله صلى الله عليه وسلم  في يده. البخاري (2415)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট কিছু পানীয় আনা হল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পান করলেন। রাসূলের ডান দিকে একটি ছোট ছেলে বসা ছিল এবং বামদিকে বয়স্ক লোক। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছেলেটিকে বললেন―তুমি কি আমাকে তোমার আগে তাদেরকে দেয়ার অনুমতি দিবে ? তখন ছেলেটি বলল, না, কখনও নয়। আল্লাহ শপথ! আমি আমার অংশের উপর আপনি ব্যতীত অন্য কাউকে প্রাধান্য দেব না। বর্ণনাকারী বলেন―রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (পানপাত্র) ছেলেটির হাতে দিয়ে দিলেন।[৮]
আর এক হাদিসে আনাস রা. বর্ণনা করেন :― 
وفي حديث آخر: عن أنس رضي الله عنه أنه كان عن يمين النبي r أعرابي، وعن يساره أبو بكر، وعُمَرُ وُجَاهَه، فلما شرب النبي r قال عمر: يا رسول الله أعط أبا بكر، فأعطاه النبي r الأعرابي، وقال:«الأيمن فالأيمن»، مسلم (3784)
এক মজলিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ডানে ছিলেন এক বেদুঈন সাহাবী এবং বামে আবু বকর আর উমর ছিলেন তাঁর সোজাসুজি। যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পান শেষ করলেন উমর বললেন, হে আল্লাহর রাসূল আবু বকরকে দিন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ডানে বসা উক্ত বেদুঈনকে দিলেন এবং বললেন: (নিয়ম হচ্ছে) আগে ডান অতঃপর ডান। অর্থাৎ প্রথমে ডান পাশের জন পাবে অত:পর তার ডান পাসের জন এবং এভাবেই। 
وفي رواية لمسلم قال: «الأيمنون، الأيمنون، الأيمنون». قال أنس رضي اللّه عنه: فهي سنّة، فهي سنّة، فهي سنّة. البخاري (2383)
মুসলিম শরিফের এক বর্ণনায় আছে, তিনি বলেন, ডান দিকের লোক ডান দিকের লোক ডান দিকের লোক। আনাস রা. বলেন : এটিই সুন্নত, এটিই সুন্নত, এটিই সুন্নত।[৯]

দ্বিতীয়ত : যে বিষয়গুলো থেকে বেঁচে থাকা আবশ্যক :

১। পানাহারে অহেতুক খরচ করা, 
আল্লাহ তাআলা বলেন―
كُلُوا وَاشْرَبُوا وَلَا تُسْرِفُوا إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الْمُسْرِفِينَ ﴿الاعراف : 31
অর্থাৎ : খাও ও পান কর এবং অপব্যয় করো না। তিনি অপব্যয়ীদেরকে পছন্দ করেন না।[১০]

২। প্রয়োজন ছাড়া বাম হাতে খাওয়া হারাম। 
বেশ কিছু হাদীস এর প্রমাণ হিসাবে পেশ করা যেতে পারে।

(ক) বাম হাতে খাওয়ার ব্যাপারে সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা―
যেমন জাবের (রা.)-এর হাদীসে মারফুতে এসেছে :―
«لا تأكلوا بالشمال، فإن الشيطان يأكل بالشمال». (3763)
অর্থাৎ : তোমরা বাম হাতে খেয়ো না, কেননা শয়তান বাম হাতে খায়।

(খ) ডান হাতে খাওয়ার ব্যাপারে সুস্পষ্ট নির্দেশ- 
যেমন ইবনে উমর রা. কর্তৃক বর্ণিত মারফু হাদীসে এসেছে―
«إذا أكل أحدكم فليأكل بيمينه، وإذا شرب فليشرب بيمينه، فإن الشيطان يأكل بشماله، ويشرب بشماله».مسلم (3746)
অর্থাৎ: তোমরা কেউ যখন খাবে ডান হাতে খাবে যখন পান করবে ডান হাতে পান করবে, কেননা শয়তান বাম হাতে খায়। বাম হাতে পান করে। [১১]
এই ধরনের নির্দেশের অর্থ হল বাম হাতে খাওয়া হারাম।

(গ) বাম হাতে খেলে শয়তানের সাথে সাদৃশ্য হয়। 
যেমন পূর্বের হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। এবং অমুসলিমদের সাথেও সাদৃশ্য হয়। আর শরীয়তের নির্দেশ মোতাবেক উভয়টিই নিষিদ্ধ ও হারাম।

(ঘ) বাম হাতে খাবার গ্রহন কারী জনৈক ব্যক্তিকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বদ দোআ করা এবং এর কারণ বর্ণনা করা যে এটি অহংকার মূলক কাজ।
عن سلمة بن الأكوع رضي الله عنه أن رجلاً أكل عند النبي صلى الله عليه وسلم  بشماله، فقال: كل بيمينك» » ، قال: لا أستطيع، قال: «لا استطعت»، ما منعه إلا الكبر، قال: فما رفعها إلى فيه.مسلم (3766)
অর্থাৎ সালামা বিন আকওয়া (রা.) থেকে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে বাম হাতে খাচ্ছিল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি ডান হাতে খাও। সে বলল আমি পারব না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: আর কখনও পারবেও না। একমাত্র অহংকারই তাকে ডান হাত দিয়ে খাওয়া থেকে বিরত রাখল। বর্ণনাকারী বলেন: এরপর সে আর কখনো মুখের কাছে হাত উঠাতে পারেনি।[১২]

৩। দাঁড়িয়ে পানাহার করা মাকরূহ, সুন্নত হল বসে পানাহারকার্য সম্পন্ন করা।
عن أنس رضي الله عنه أن النبي  نهى أن يشرب الرجل قائماً، قال قتادة: فقلنا: فالأكل؟ فقال (أنس): ذلك أشر وأخبث. . مسلم (3772)
অর্থাৎ : আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের দাঁড়িয়ে পান করতে নিষেধ করেছেন। কাতাদাহ রা. বলেন : আমরা বললাম তাহলে দাঁড়িয়ে খাওয়ার হুকুম কি ? আনাস বললেন সেটাতো আরো বেশি খারাপ আরো বেশি দূষণীয়।[১৩]

৪। কোন কিছুর উপর হেলান দিয়ে আহার করা মাকরূহ। 
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন―
إني لا آكل متكئاً 
আমি হেলান দিয়ে আহার করি না।
ইবনে হাজার রহ. বলেন : খাওয়ার জন্য বসার মোস্তাহাব পদ্ধতি হচ্ছে। দুই হাটু গেড়ে,দুই পায়ের পিঠের উপর বসা। অথবা ডান পা খাড়া করে বাম পা বিছিয়ে তার উপর বসা।

৫। খাওয়ার পাত্রে ফু দেয়া এবং তার ভিতর নি:শ্বাস ফেলা মাকরুহ।
عن ابن عباس رضي الله عنهما أن النبي  «نهى أن يتنفس في الإناء، أو ينفخ فيه».الترمذي(1810)
অর্থাৎ : ইবনে আব্বাস রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাবার পাত্রে ফু দেওয়া বা শ্বাস ফেলতে নিষেধ করেছেন।[১৪]
وعن أبي قتادة رضي الله عنه مرفوعاً: «لا يمسكن أحدكم ذكره بيمينه وهو يبول، ولا يتمسح من الخلاء بيمينه، ولا يتنفس في الإناء». مسلم (392)
আবু কাতাদাহ রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণন করছেন:তোমাদের কেউ যেন প্রস্রাব করার সময় পুরুষাঙ্গ ডান হাত দ্বারা স্পর্শ না করে এবং ডান হাত দ্বারা যেন ইস্তেনজা না করে। অনুরূপ খাবার পাত্রে যেন শ্বাস না ফেলে।[১৫]

৬। খাবারের দোষ বের করা ও বর্ণনা করা মাকরূহ। 
বরং আগ্রহ হলে খাবে, মনে না চাইলে দোষ ধরা ব্যতীত বাদ দেবে। 
قال أبو هريرة رضي الله عنه: ما عاب رسول الله r طعاماً قط، كان إذا اشتهى شيئاً أكله، وإن كرهه تركه». البخاري (498
আবু হুরাইরা রা. বলেন : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনও কোন খাবারের দোষ বের ও বলাবলি করেননি, মনে চাইলে খেতেন। অপছন্দ হলে রেখে দিতেন।

সমাপ্ত
_______________________________________________________________________________________

[১] বোখারি : ৪৯৫৮
[২] মুসলিম : ৩৭৬১
[৩] মুসলিম : ৩৭৯৪
[৪] মুসলিম : ৩৭৯২
[৫] তিরমিজি : ১৭২৫
[৬] মুসলিম : ৩৭৯০
[৭] মুসলিম : ৩৭৯৩
[৮] বোখারি : ২৪১৫
[৯] বোখারি : ২৩৮৩
[১০] আল-আরাফ-৩১
[১১] মুসলিম : ৩৭৬৩
[১২] মুসলিম : ৩৭৬৬
[১৩] মুসলিম : ৩৭৭২
[১৪] তিরমিজি : ১৮১০
[১৫] মুসলিম : ৩৯২
_________________________________________________________________________________

লেখক : আখতারুজ্জামান মুহাম্মদ সুলাইমান
تأليف: أختر الزمان محمد سليمان
সম্পাদনা : ইকবাল হুসাইন মাসুম
مراجعة: إقبال حسين معصوم
সূত্র : ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব

المكتب التعاوني للدعوة وتوعية الجاليات بالربوة بمدينة الرياض



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন