Views:
A+
A-
সহীহ সুন্নাহ’র আলোকে জান্নাতেরই বৈশিষ্ট্য
সহীহ সুন্নাহ’র আলোকে জান্নাতেরই বৈশিষ্ট্য (১ম পর্ব)
দ্বিতীয় সংস্করণের ভূমিকা
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য এবং তিনি স্বয়ং সম্পূর্ণ; শান্তি বর্ষিত হউক তাঁর ঐসব বান্দাদের উপর, যাদেরকে তিনি মনোনীত করেছেন; আর আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ক ইলাহ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই; আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল। আর আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, জান্নাত সত্য, জাহান্নাম সত্য, পুনরুত্থান সত্য, কিয়ামত সত্য, সিরাত (পুলসিরাত) সত্য, হিসাব-নিকাশ সত্য এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যা কিছু বলেছেন, তার সবকিছুই সত্য।
অতঃপর:
যখন " وصف الجنة و النار من صحيح الأخبار "(সহীহ হাদিসের আলোকে জান্নাত ও জাহান্নামের বর্ণনা) নামক গ্রন্থের পাণ্ডুলিপি প্রকাশ পায়, তখন আমি দেখলাম যে, তার ব্যাপারে এবং তার বাইরে অন্যান্য গ্রন্থ ও পাণ্ডুলিপির ব্যাপারে মানুষের সবিশেষ আকর্ষণ, যেগুলোতে শুধু সহীহ হাদিসই সংকলিত হয়েছে এবং তার মধ্য থেকে এই বিশাল একটি সংখ্যা বিতরণ করা হয়ে গেছে; আর এটা বার্তা বহন করে নির্ভেজাল জ্ঞান ও সাংস্কৃতিক জাগরণের; আমাদের কাছে স্পষ্ট হলো যে, একজনন সত্যিকার মুসলিম যুবক এমন নয় যে, তার নিকট পঁচা ও মূল্যবান সবকিছু যাই পেশ করা হবে তা সমভাবে গ্রহণ করবে; বরং সে বাছাই ও পছন্দ করে গ্রহণ করবে; কারণ, জীবন সংক্ষিপ্ত, আর জ্ঞানের পরিধি অনেক ব্যাপক।
আর এ জন্যই আমি এই পুস্তিকার মধ্যে পুনরায় দৃষ্টি দিয়েছি; অতঃপর আমি প্রথম সংস্করণের মধ্যে হওয়া ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো সংশোধন করে নিয়েছি এবং ২১ নং হাদিসটি বিলুপ্ত করে দিয়েছি; কারণ, তার সনদের উৎকৃষ্টতা ও বিশুদ্ধতার ব্যাপারে আমি হাফেয আল-মুনযেরীকে অনুসরণ করেছিলাম, অতঃপর আমার নিকট স্পষ্ট হয়েছে যে, এটা হয়েছিল তাঁর উদারত ও নমনীয়তার কারণে; অতঃপর আমি প্রত্যেকটি পরিচ্ছেদের শুরুতে প্রাসঙ্গিক আয়াতসমূহ প্রতিস্থাপন করেছি এবং কয়েকটি হাদিস অতিরিক্ত উল্লেখ করেছি, যা প্রথম সংস্করণের সাথে তুলনা করলে স্পষ্টভাবে ধরা পড়বে। পূর্বের সংস্করণে হাদীস সংখ্যা ছিল ৭৫টি; আর দ্বিতীয় সংস্করণে হাদিসের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৬টিতে[1]।
অতঃপর আমি জানিয়ে দিতে চাই যে, এর মধ্যে যা বর্ণিত হয়েছে, তাকেই আমি চূড়ান্ত সংখ্যা বলে মনে করি না; বরং আমি বিষয়বস্তুর উপর তাকে সংক্ষিপ্ত উদ্দীপক হিসেবে উপস্থাপন করেছি; আর অনুরূপভাবে তথ্য পেশ ও ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে প্রসঙ্গ পরিবর্তন করি নি; তবে পাঠকের সামনে হাদিসের মান সম্পর্কিত একেবারে কাছাকাছি ও সর্বজন প্রসিদ্ধ পদ্ধতিটি পেশ করেছি।
এই তো আমার কথা; আমি আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা‘আলা’র নিকট প্রার্থনা করছি, তিনি যাতে তাঁর অনুগ্রহ ও করুনায় পদস্খলন থেকে রক্ষা করেন, আমাদেরকে উপকারী ও সঠিক জ্ঞান দান করেন এবং আমাদের জ্ঞানকে কিয়ামতের দিনে আমাদের জন্য দলিল-প্রমাণ বানিয়ে দেন।
হে আল্লাহ! তোমার প্রশংসাসহ তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি; আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তুমি ছাড়া কোনো হক্ক ইলাহ নেই, আমি তোমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তোমার নিকট তাওবা করছি।
লেখক:
আল্লাহ তা‘আলার দারস্থ এক ফকীর বান্দা
ওয়াহিদ ইবন আবদিস সালাম বালী
১৪ সাওয়াল ১৪১০ হি.
* * *
প্রথম সংস্করণের ভূমিকা
নিশ্চয়ই সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য; আমরা তাঁর প্রশংসা করি, তাঁর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করি, তাঁর নিকট হিদায়াত চাই এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি; আর আমরা আমাদের নফসের জন্য ক্ষতিকর এমন সকল খারাপি এবং আমাদের সকল প্রকার মন্দ আমল থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই। সুতরাং আল্লাহ যাকে পথ প্রদর্শন করেন, তাকে পথভ্রষ্ট করার কেউ নেই; আর যাকে তিনি পথহারা করেন, তাকে পথ প্রদর্শনকারীও কেউ নেই। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ক ইলাহ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই এবং আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল।
অতঃপর:
সবচেয়ে সত্য কথা হল আল্লাহর কিতাব এবং সর্বোত্তম হিদায়েত হল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হিদায়েত; আর নিকৃষ্ট কাজ হল দীনের মাঝে নতুন উদ্ভাবিত বিষয়; আর প্রত্যেক নতুন উদ্ভাবনই হল বিদ‘আত এবং প্রতিটি বিদ‘আতই গুমরাহী; আর প্রত্যেক গুমরাহীর স্থান হবে জাহান্নামে। নিশ্চয়ই যা কম ও যথেষ্ট, তা ঐ বস্তু থেকে অনেক উত্তম, যা পরিমাণে বেশি ও অনর্থক হয়। আর তোমাদেরকে যেই প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে, অবশ্যই তা বাস্তবে প্রতিফলিত হবে; আর তোমরা তা প্রতিহত করতে পারবে না।
অতঃপর: জান্নাত ও জাহান্নাম প্রসঙ্গে বহু গ্রন্থ রয়েছে, কিন্তু সেই গ্রন্থগুলো সহীহ ও দুর্বল হাদিসকে এক সাথে সংগ্রহ করেছে এবং ঐসব গ্রন্থের লেখকগণ এই ক্ষেত্রে চরম শৈথিল্য প্রদর্শন করেছেন; আর এই ক্ষেত্রে তারা যুক্তি পেশ করেছেন যে, এগুলো হল উৎসাহ-উদ্দীপনা ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের পর্যায়ভুক্ত; অথচ এর মধ্যে দু’টি দৃষ্টিকোণ থেকে ত্রুটি রয়েছে:
প্রথমত: জান্নাত ও তার মধ্যকার নিয়ামত অথবা জাহান্নাম ও তার মধ্যকার শাস্তির বিষয়ে সংবাদ পরিবেশন করার বিষয়টি গায়েব বা অদৃশ্য জগতের বিষয়গুলোর অন্তর্ভুক্ত, আর গায়েবী বিষয়ের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা খাঁটি ইসলামী আকিদার অন্তর্ভুক্ত বিষয়; সুতরাং এই ব্যাপারে কিভাবে শৈথিল্য প্রদর্শন বা অবহেলা করা যাবে?!
দ্বিতীয়ত: যে ব্যক্তি হাদিসের কিতাবসমূহ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করবে এবং সুন্নাহ’র পাশে থেকে পড়াশুনা ও গবেষণায় ব্যস্ত থাকবে, সে বিশুদ্ধ হাদিসসমূহের মধ্যেই এমন সব কাঙ্খিত বিষয় ও বস্তু পেয়ে যাবে, যা সর্বপ্রকার দুর্বল ও জাল (মাউযু) হাদিস থেকে তাকে প্রয়োজনমুক্ত করবে।
এ জন্য আমি জান্নাতের বর্ণনা প্রসঙ্গে এই পাণ্ডুলিপি সংকলনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি এবং তা সংকলনের ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সহীহ হাদিসগুলোর উপর নির্ভর করেছি, যাতে প্রত্যেক খতিব (বক্তা) ও ওয়ায়েয (উপদেশ দাতা) যখন এই বিষয়ের উপর কথা বলবেন বা আলোচনা পেশ করবেন, তখন তার হাতে এর একটি কপি থাকে এবং তার যাতে দুর্বল বা বানোয়াট (মাউযু) হাদিসের আশ্রয় নিতে না হয়।
* * *
প্রথম পরিচ্ছেদ
জান্নাতের ঘ্রাণ
১. আবদুল্লাহ ইবন আমর ইবনিল ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« من قتل معاهدا , لم يرح رائحة الجنة , وإن ريحها توجد من مسيرة أربعين عاما » . ( رواه البخاري ) .
“যে ব্যক্তি কোন যিম্মিকে হত্যা করবে, সে জান্নাতের ঘ্রাণ পাবে না। আর জান্নাতের ঘ্রাণ চল্লিশ বছরের দূরত্ব থেকে পাওয়া যাবে।”[2]
অর্থসহ হাদিসের বিশেষ শব্দ-তালিকা:
(لم يرح): لم يشم অর্থাৎ- সে ঘ্রাণ পাবে না।
* * *
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ
জান্নাতের দরজাসমূহ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿جَنَّٰتُ عَدۡنٖ يَدۡخُلُونَهَا وَمَن صَلَحَ مِنۡ ءَابَآئِهِمۡ وَأَزۡوَٰجِهِمۡ وَذُرِّيَّٰتِهِمۡۖ وَٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ يَدۡخُلُونَ عَلَيۡهِم مِّن كُلِّ بَابٖ ٢٣ سَلَٰمٌ عَلَيۡكُم بِمَا صَبَرۡتُمۡۚ فَنِعۡمَ عُقۡبَى ٱلدَّارِ ٢٤ ﴾ [الرعد: ٢٣، ٢٤]
“স্থায়ী জান্নাত, তাতে তারা প্রবেশ করবে এবং তাদের পিতা-মাতা, পতি-পত্নী ও সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে যারা সৎকাজ করেছে তারাও। আর ফেরেশতাগণ তাদের কাছে উপস্থিত হবে প্রত্যেক দরজা দিয়ে এবং বলবে, তোমরা ধৈর্য ধারণ করেছ বলে তোমাদের প্রতি শান্তি; আর আখেরাতের এ পরিণাম কতই না উত্তম।”[3]
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ هَٰذَا ذِكۡرٞۚ وَإِنَّ لِلۡمُتَّقِينَ لَحُسۡنَ مََٔابٖ ٤٩ جَنَّٰتِ عَدۡنٖ مُّفَتَّحَةٗ لَّهُمُ ٱلۡأَبۡوَٰبُ ٥٠ ﴾ [ص: ٤٩، ٥٠]
“এ এক স্মরণ। মুত্তাকীদের জন্য রয়েছে উত্তম আবাস— চিরস্থায়ী জান্নাত, যার দরজাসমূহ তাদের জন্য উন্মুক্ত।”[4]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ وَسِيقَ ٱلَّذِينَ ٱتَّقَوۡاْ رَبَّهُمۡ إِلَى ٱلۡجَنَّةِ زُمَرًاۖ حَتَّىٰٓ إِذَا جَآءُوهَا وَفُتِحَتۡ أَبۡوَٰبُهَا وَقَالَ لَهُمۡ خَزَنَتُهَا سَلَٰمٌ عَلَيۡكُمۡ طِبۡتُمۡ فَٱدۡخُلُوهَا خَٰلِدِينَ ٧٣ ﴾ [الزمر: ٧٣]
“আর যারা তাদের রবের তাকওয়া অবলম্বন করেছে তাদেরকে দলে দলে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। অবশেষে যখন তারা জান্নাতের কাছে আসবে এবং এর দরজাসমূহ খুলে দেয়া হবে এবং জান্নাতের রক্ষীরা তাদেরকে বলবে, ‘তোমাদের প্রতি ‘সালাম’, তোমরা ভাল ছিলে, সুতরাং জান্নাতে প্রবেশ কর স্থায়ীভাবে অবস্থিতির জন্য।”[5]
২. ‘উবাদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« من شهد أن لا إله إلا الله وحده لا شريك له , وأن محمدا عبده ورسوله , وأن عيسى عبد الله ورسوله وكلمتة ألقاها إلى مريم وروح منه , والجنة حق , والنار حق ، أدخله الله الجنة على ما كان من العمل » . و في رواية : « من أبواب الجنة الثمانية أيها شاء » . ( رواه البخاري و مسلم ) .
“যে ব্যক্তি সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল; আর ঈসা আ. আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল, তাঁর কালেমা, যা তিনি মারইয়ামের নিকট পরিবেশন করেছেন এবং তিনি (ঈসা আ.) হলেন তাঁর পক্ষ থেকে রূহ (নির্দেশ); আর যে ব্যক্তি আরও সাক্ষ্য দেয় যে, জান্নাত সত্য এবং জাহান্নাম সত্য, তাহলে সে যে আমল করত, তার উপর ভিত্তি করে আল্লাহ তা‘আলা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।” অপর এক বর্ণনায় আছে: জান্নাতের আটটি দরজার মধ্য থেকে যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা তিনি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।”[6]
৩. আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« من أنفق زوجين في سبيل الله نودي من أبواب الجنة : يا عبد الله ! هذا خير , فمن كان من أهل الصلاة دعي من باب الصلاة , ومن كان من أهل الجهاد دعي من باب الجهاد , ومن كان من أهل الصيام دعي من باب الريان , ومن كان من أهل الصدقة دعي من باب الصدقة » . فقال أبو بكر رضي الله عنه : بأبي أنت وأمي يا رسول الله ! ما على من دعي من تلك الأبواب من ضرورة , فهل يدعى أحد من تلك الأبواب كلها ؟ . قال : « نعم , وأرجو أن تكون منهم » . ( رواه البخاري و مسلم ) .
“যে কেউ আল্লাহর পথে জোড়া জোড়া ব্যয় করবে, তাকে জান্নাতের দরজাসমূহ থেকে ডাকা হবে, হে আল্লাহর বান্দা! এটা উত্তম। অতএব যে সালাত আদায়কারী, তাকে সালাতের দরজা থেকে ডাকা হবে। যে মুজাহিদ তথা আল্লাহ পথে জিহাদকারী, তাকে জিহাদের দরজা থেকে ডাকা হবে। যে সিয়াম পালনকারী, তাকে রাইয়্যান নামক দরজা থেকে ডাকা হবে। আর যে সাদকা দানকারী, তাকে সাদকার দরজা থেকে ডাকা হবে। এরপর আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! আপনার জন্য আমার পিতা ও মাতা কুরবান হউক! সকল দরজা থেকে কাউকে ডাকার কোনো আবশ্যকতা নেই, তবে কি কাউকে সকল দরজা থেকে ডাকা হবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: হ্যাঁ, আমি আশা করি তুমি হবে তাদের মধ্যে একজন।”[7]
৪. খালিদ ইবন ‘উমাইর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
«خَطَبَنَا عُتْبَةُ بْنُ غَزْوَانَ , فَحَمِدَ اللَّهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ , ثُمَّ قَالَ : أَمَّا بَعْدُ , فَإِنَّ الدُّنْيَا قَدْ آذَنَتْ بِصُرْمٍ , وَوَلَّتْ حَذَّاءَ , وَلَمْ يَبْقَ مِنْهَا إِلاَّ صُبَابَةٌ كَصُبَابَةِ الإِنَاءِ , يَتَصَابُّهَا صَاحِبُهَا , وَإِنَّكُمْ مُنْتَقِلُونَ مِنْهَا إِلَى دَارٍ لاَ زَوَالَ لَهَا, فَانْتَقِلُوا بِخَيْرِ مَا بِحَضْرَتِكُمْ , فَإِنَّهُ قَدْ ذُكِرَ لَنَا أَنَّ الْحَجَرَ يُلْقَى مِنْ شَفَةِ جَهَنَّمَ , فَيَهْوِى فِيهَا سَبْعِينَ عَامًا لاَ يُدْرِكُ لَهَا قَعْرًا , وَوَاللَّهِ لَتُمْلأَنَّ أَفَعَجِبْتُمْ , وَلَقَدْ ذُكِرَ لَنَا أَنَّ مَا بَيْنَ مِصْرَاعَيْنِ مِنْ مَصَارِيعِ الْجَنَّةِ مَسِيرَةُ أَرْبَعِينَ سَنَةً , وَلَيَأْتِيَنَّ عَلَيْهَا يَوْمٌ وَهُوَ كَظِيظٌ مِنَ الزِّحَامِ , وَلَقَدْ رَأَيْتُنِى سَابِعَ سَبْعَةٍ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم , مَا لَنَا طَعَامٌ إِلاَّ وَرَقُ الشَّجَرِ , حَتَّى قَرِحَتْ أَشْدَاقُنَا ... » . ( رواه مسلم ) .
“উতবা ইবন গাযওয়ান আমাদের সামনে ভাষণ দিয়েছেন; তিনি আল্লাহর প্রশংসা ও গুণকীর্তন করেছেন; অতঃপর তিনি বলেছেন: নিশ্চয় দুনিয়া তার চলে যাওয়ার জানান দিচ্ছে, দ্রুত পালিয়ে যাচ্ছে, পানি পানকারী ব্যক্তির পাত্রের অবশিষ্ট পানির মত তার সময় সামান্যই বাকি আছে; আর তোমরা নিশ্চিতভাবে দুনিয়ার জগৎ থেকে এমন জগতের দিকে স্থানান্তরিত হচ্ছ, যার কোনো ধ্বংস নেই; সুতরাং তোমাদের সামনে যে ভাল কাজ আছে, তা নিয়ে প্রস্থান কর। কারণ, আমাদের উদ্দেশ্যে আলোচনা করা হয়েছে যে, একটি পাথর জাহান্নামের কিনার থেকে তার মধ্যে নিক্ষেপ করা হবে, অতঃপর তা নীচের দিকে ধাবিত হবে সত্তর বছর, কিন্তু সে পাথরটি তার (জাহান্নামের) তলার নাগাল পাবে না; আল্লাহর কসম! সেই জাহান্নামকে পূর্ণ করা হবে; তোমরা কি আশ্চর্য হয়েছ? আর আমাদের উদ্দেশ্যে আলোচনা করা হয়েছে যে, জান্নাতের দুই চৌকাঠের মধ্যকার দূরত্ব হবে চল্লিশ বছরের ভ্রমণপথের মত; আর তার (জান্নাতের) সামনে অবশ্যই একদিন আসবে, যেদিনটি ভিড়ের কারণে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থার সৃষ্টি করবে; আর অবশ্যই আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে আমাকে সাত জনের সপ্তম ব্যক্তি হিসেবে দেখেছি, যখন গাছের পাতা ছাড়া আমাদের অন্য কোনো খাবার ছিল না, এমনকি আমাদের দুই গালের অভ্যন্তরস্থ মুখের প্রান্তদেশ ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে ...।”[8]
৫. আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« ... وَالَّذِى نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ إِنَّ مَا بَيْنَ الْمِصْرَاعَيْنِ مِنْ مَصَارِيعِ الْجَنَّةِ لَكَمَا بَيْنَ مَكَّةَ وَهَجَرٍ أَوْ كَمَا بَيْنَ مَكَّةَ وَبُصْرَى » . ( رواه البخاري و مسلم ) .
“... শপথ সেই সত্তার, যাঁর হাতে মুহাম্মদের প্রাণ! জান্নাতের দুই চৌকাঠের মধ্যকার দূরত্ব মক্কা ও হাজরের দূরত্বের মত; অথবা বর্ণনাকারী বলেন: মক্কা ও বসরার দূরত্বের মত।”[9]
৬. সাহল ইবন সা‘দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«في الجنة ثمانية أبواب فيها باب يسمى الريان لا يدخله إلا الصائمون » . (رواه البخاري) . و رواه أحمد عن عتبة بن عبد السلمي مرفوعا بلفظ: «الجنة لها ثمانية أبواب , و النار لها سبعة أبواب » .
“জান্নাতের মধ্যে আটটি দরজা রয়েছে, তাতে রাইয়্যান নামক একটি দরজা আছে, তা দিয়ে শুধু সাওম পালনকারীগণই প্রবেশ করবে।” আর আহমদ র. ‘উতবা ইবন আবদ আস-সুলামী থেকে ‘মারফু’ সনদে বর্ণনা করেছন: “জান্নাতের আটটি দরজা রয়েছে, আর জাহান্নামের রয়েছে সাতটি দরজা।”[10]
৭. আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« تُفْتَحُ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ يَوْمَ الاِثْنَيْنِ وَيَوْمَ الْخَمِيسِ , فَيُغْفَرُ لِكُلِّ عَبْدٍ لاَ يُشْرِكُ بِاللَّهِ شَيْئًا , إِلاَّ رَجُلاً كَانَتْ بَيْنَهُ وَبَيْنَ أَخِيهِ شَحْنَاءُ , فَيُقَالُ : أَنْظِرُوا هَذَيْنِ حَتَّى يَصْطَلِحَا , أَنْظِرُوا هَذَيْنِ حَتَّى يَصْطَلِحَا , أَنْظِرُوا هَذَيْنِ حَتَّى يَصْطَلِحَا » . ( رواه مسلم ) .
“সোমবার ও বৃহস্পতিবার জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়, অতঃপর এমন প্রত্যেক বান্দাকে ক্ষমা করে দেয়া হয়, যে আল্লাহর সাথে কোনো কিছুকে শরীক করে নি; তবে ঐ ব্যক্তি ক্ষমার বাইরে থাকে, যে ব্যক্তি ও তার ভাইয়ের মধ্যে বিদ্বেষ বা শত্রুতা রয়েছে; অতঃপর (ফেরেশ্তাদেরকে) বলা হয়: তোমরা এই দু’জনকে পরস্পরের মধ্যে মিলমিশ হওয়া পর্যন্ত অবকাশ দাও, তোমরা এই দু’জনকে পরস্পরের মধ্যে মিলমিশ হওয়া পর্যন্ত অবকাশ দাও, তোমরা এই দু’জনকে পরস্পরের মধ্যে মিলমিশ হওয়া পর্যন্ত অবকাশ দাও।”[11]
৮. ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« مَا مِنْكُمْ مِنْ أَحَدٍ يَتَوَضَّأُ , فَيُبْلِغُ أَوْ فَيُسْبِغُ الْوُضُوءَ , ثُمَّ يَقُولُ : أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وحده لا شريك له , وَ أشهد أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُه وَرَسُولُهُ إِلاَّ فُتِحَتْ لَهُ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ الثَّمَانِيَةُ , يَدْخُلُ مِنْ أَيِّهَا شَاءَ » . ( رواه مسلم و الترمذي) .
“তোমাদের যে কেউ পূর্ণরূপে উযু করে এই দো‘আ পাঠ করবে: أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وحده لا شريك له , وَ أشهد أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُه وَرَسُولُهُ (আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোনো সত্য উপাস্য নেই, তিনি এক, তাঁর কোন শরীক নেই এবং আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ তাঁর বান্দা ও রাসূল), তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেয়া হবে এবং যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে।”[12]
* * *
তৃতীয় পরিচ্ছেদ
সর্বপ্রথম যার জন্য জান্নাত খুলে দেয়া হবে
৯. আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« أَنَا أَكْثَرُ الأَنْبِيَاءِ تَبَعًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ , وَأَنَا أَوَّلُ مَنْ يَقْرَعُ بَابَ الْجَنَّةِ » . (أخرجه مسلم) .
“কিয়ামতের দিনে নবীগণের মধ্যে আমার অনুসারীর সংখ্যাই হবে সবচেয়ে বেশি এবং আমিই সবার আগে জান্নাতের কড়া নাড়ব।”[13]
১০. আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« آتِى بَابَ الْجَنَّةِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَأَسْتَفْتِحُ فَيَقُولُ الْخَازِنُ: مَنْ أَنْتَ ؟ فَأَقُول:ُ مُحَمَّدٌ, فَيَقُولُ: بِكَ أُمِرْتُ لاَ أَفْتَحُ لأَحَدٍ قَبْلَكَ » . (أخرجه مسلم) .
“কিয়ামত দিবসে আমি জান্নাতের গেইটে এসে দরজা খোলার অনুমতি চাইব। তখন খাজাঞ্চি বলবেন, আপনি কে? আমি উত্তরে বলব, মুহাম্মদ। খাজাঞ্চি বলবেন: ‘আপনার জন্যই দরজা খুলতে আমি আদিষ্ট হয়েছি। আপনার পূর্বে অন্য কারোর জন্য দরজা খুলব না’।”[14]
* * *
চতুর্থ পরিচ্ছেদ
জান্নাতে সর্বপ্রথম প্রবেশকারী মানুষ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَسِيقَ ٱلَّذِينَ ٱتَّقَوۡاْ رَبَّهُمۡ إِلَى ٱلۡجَنَّةِ زُمَرًاۖ حَتَّىٰٓ إِذَا جَآءُوهَا وَفُتِحَتۡ أَبۡوَٰبُهَا وَقَالَ لَهُمۡ خَزَنَتُهَا سَلَٰمٌ عَلَيۡكُمۡ طِبۡتُمۡ فَٱدۡخُلُوهَا خَٰلِدِينَ ٧٣ ﴾ [الزمر: ٧٣]
“আর যারা তাদের রবের তাকওয়া অবলম্বন করেছে তাদেরকে দলে দলে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। অবশেষে যখন তারা জান্নাতের কাছে আসবে এবং এর দরজাসমূহ খুলে দেয়া হবে এবং জান্নাতের রক্ষীরা তাদেরকে বলবে, ‘তোমাদের প্রতি ‘সালাম’, তোমরা ভাল ছিলে, সুতরাং জান্নাতে প্রবেশ কর স্থায়ীভাবে অবস্থিতির জন্য।”[15]
১১. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের আযাদকৃত গোলাম সাওবান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
« كُنْتُ قَائِمًا عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم , فَجَاءَ حَبْرٌ مِنْ أَحْبَارِ الْيَهُودِ , فَقَالَ : السَّلاَمُ عَلَيْكَ يَا مُحَمَّدُ! فَدَفَعْتُهُ دَفْعَةً كَادَ يُصْرَعُ مِنْهَا , فَقَالَ : لِمَ تَدْفَعُنِى فَقُلْتُ : أَلاَ تَقُولُ يَا رَسُولَ اللَّهِ ؟! فَقَالَ الْيَهُودِىُّ : إِنَّمَا نَدْعُوهُ بِاسْمِهِ الَّذِى سَمَّاهُ بِهِ أَهْلُهُ. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : « إِنَّ اسْمِى مُحَمَّدٌ الَّذِى سَمَّانِى بِهِ أَهْلِى ». فَقَالَ الْيَهُودِىُّ : جِئْتُ أَسْأَلُكَ. فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : « أَيَنْفَعُكَ شَىْءٌ إِنْ حَدَّثْتُكَ ؟ ». فقَالَ : أَسْمَعُ بِأُذُنَىَّ , فَنَكَتَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِعُودٍ مَعَهُ . فَقَالَ : « سَلْ ». فَقَالَ الْيَهُودِىُّ : أَيْنَ يَكُونُ النَّاسُ يَوْمَ تُبَدَّلُ الأَرْضُ غَيْرَ الأَرْضِ وَالسَّمَوَاتُ؟ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : « هُمْ فِى الظُّلْمَةِ دُونَ الْجِسْرِ ». قَالَ : فَمَنْ أَوَّلُ النَّاسِ إِجَازَةً ؟ قَالَ : « فُقَرَاءُ الْمُهَاجِرِينَ » . قَالَ الْيَهُودِىُّ : فَمَا تُحْفَتُهُمْ حِينَ يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ ؟ قَالَ : « زِيَادَةُ كَبِدِ النُّونِ » . قَالَ : فَمَا غِذَاؤُهُمْ عَلَى إِثْرِهَا ؟ قَالَ : « يُنْحَرُ لَهُمْ ثَوْرُ الْجَنَّةِ الَّذِى كَانَ يَأْكُلُ مِنْ أَطْرَافِهَا » . قَالَ : فَمَا شَرَابُهُمْ عَلَيْهِ قَالَ : « مِنْ عَيْنٍ فِيهَا تُسَمَّى سَلْسَبِيلاً » . قَالَ صَدَقْتَ » ... (أخرجه مسلم) .
“আমি একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে দাঁড়িয়েছিলাম; ইতঃমধ্যে ইয়াহূদীদের এক পণ্ডিত ব্যক্তি এসে বলল: আসসলামু ‘আলাইকুম ইয়া মুহাম্মদ (السَّلاَمُ عَلَيْكَ يَا مُحَمَّدُ!) ! এরপর আমি তাকে এমন এক ধাক্কা মারলাম যে, সে প্রায় পড়েই গিয়েছিল! তখন সে বলল: তুমি আমাকে ধাক্কা মারলে কেন? জবাবে আমি বললাম: ইয়া রাসূলাল্লাহ (يَا رَسُولَ اللَّهِ!) ! বলতে পার না? ইয়াহূদী বলল: আমরা তাঁকে তাঁর পরিবার পরিজন যে নাম রেখেছে, সে নামেই ডাকি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমার নাম মুহাম্মদ, আমার পরিবারের লোকই আমার এই নাম রেখেছে। তারপর ইয়াহূদী বলল: আমি আপনাকে (কয়েকটি কথা) জিজ্ঞাসা করতে এসেছি; রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন: তোমার কী লাভ হবে, যদি আমি কিছু বলি? সে বলল: আমি আমার কান পেতে শুনব; এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কাছে যে লাঠিটি ছিল তা দিয়ে মাটিতে আঁকা-ঝোকা করলেন; তারপর বললেন: জিজ্ঞাসা কর, ইয়াহূদী বলল: যেদিন এক যমীন ও আসমান পাল্টে গিয়ে অন্য যমীন ও আসমানে পরিণত হবে (অর্থাৎ কিয়ামত হবে) সেদিন লোকজন কোথায় থাকবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম: তারা সেদিন পুলসিরাতের কাছে অন্ধকারে থাকবে। সে বলল: কে সর্ব প্রথম (তা পার হবার) অনুমতি লাভ করবে? তিনি বললেন: দরিদ্র মুহাজিরগণ। ইয়াহূদী বলল: জান্নাতে যখন তারা প্রবেশ করবে, তখন তাদের তোহফা (উপহার) কী হবে? তিনি বললেন: মাছের কলিজার টুকরা। সে বলল: এরপর তাদের সকালের নাস্তা কী হবে? তিনি বললেন: তাদের জন্য জান্নাতে ষাঁড় যবেহ করা হবে, যা জান্নাতের আশে পাশে চরে বেড়াত। সে বলল: এরপর তাদের পানীয় কী হবে? তিনি বললেন: সেখানকার একটি ঝর্ণার পানি, যার নাম ‘সালসাবিল’। সে বলল: আপনি ঠিক বলেছেন। ...।”[16]
অর্থসহ হাদিসের বিশেষ শব্দ-তালিকা:
(حبْرٌ مِنْ أَحْبَارِ الْيَهُودِ): ইয়াহূদী পণ্ডিতগণের মধ্য থেকে এক পণ্ডিত।
(زِيَادَةُ كَبِدِ النُّونِ): মাছের কলিজার অতিরিক্ত অংশ, আর তা খুবই সুস্বাদু।
১২. আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« يدخل الفقراء المسلمين الجنة قبل أغنيائهم بنصف يوم , وهو خمسمائة عام » . ( رواه الترمذي ) .
“দরিদ্র মুসলিমগণ ধনী মুসলিমগণের অর্ধদিন পূর্বে জান্নাতে প্রবেশ করবে; আর সেই অর্ধদিনের পরিমাণ হবে (দুনিয়ার হিসাবে) পাঁচশত বছর।”[17]
১৩. আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« عرض علي أول ثلاثة يدخلون الجنة : شهيد , وعفيف متعفف , وعبد أحسن عبادة الله ونصح لمواليه » . ( رواه الترمذي ) .
“আমাকে প্রদর্শন করানো হয়েছে ঐ তিন ব্যক্তিকে, যারা প্রথমে জান্নাতে প্রবেশ করবে: শহীদ, সচ্চরিত্রবান পবিত্র ব্যক্তি এবং এমন ব্যক্তি, যে সুন্দরভাবে আল্লাহর ইবাদত করেছে ও তার মনিবদের (কর্তৃপক্ষের) কল্যাণ কামনা করেছে।”[18]
* * *
পঞ্চম পরিচ্ছেদ
জান্নাতবাসীগণ কর্তৃক জান্নাতে প্রবেশের বিবরণ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَأُدۡخِلَ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَعَمِلُواْ ٱلصَّٰلِحَٰتِ جَنَّٰتٖ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ خَٰلِدِينَ فِيهَا بِإِذۡنِ رَبِّهِمۡۖ تَحِيَّتُهُمۡ فِيهَا سَلَٰمٌ ٢٣ ﴾ [ابراهيم: ٢٣]
“আর যারা ঈমান আনে ও সৎকাজ করে তাদেরকে প্রবেশ করানো হবে জান্নাতে যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত। সেখানে তারা তাদের রবের অনুমতিক্রমে স্থায়ী হবে, সেখানে তাদের অভিবাদন হবে ‘সালাম’।”[19]
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ أَهَٰٓؤُلَآءِ ٱلَّذِينَ أَقۡسَمۡتُمۡ لَا يَنَالُهُمُ ٱللَّهُ بِرَحۡمَةٍۚ ٱدۡخُلُواْ ٱلۡجَنَّةَ لَا خَوۡفٌ عَلَيۡكُمۡ وَلَآ أَنتُمۡ تَحۡزَنُونَ ٤٩ ﴾ [الاعراف: ٤٩]
“এরাই কি তারা, যাদের সম্বন্ধে তোমরা শপথ করে বলতে যে, আল্লাহ্ তাদেরকে রহমতে শামিল করবেন না? (এদেরকেই বলা হবে,) ‘তোমরা জান্নাতে প্রবেশ কর, তোমাদের কোন ভয় নেই এবং তোমরা চিন্তিতও হবে না।”[20]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ ٱلَّذِينَ تَتَوَفَّىٰهُمُ ٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ طَيِّبِينَ يَقُولُونَ سَلَٰمٌ عَلَيۡكُمُ ٱدۡخُلُواْ ٱلۡجَنَّةَ بِمَا كُنتُمۡ تَعۡمَلُونَ ٣٢ ﴾ [النحل: ٣٢]
“ফিরিশতাগণ যাদের মৃত্যু ঘটায় পবিত্র থাকা অবস্থায়। ফিরিশতাগণ বলবে, ‘তোমাদের প্রতি শান্তি! তোমরা যা করতে, তার ফলে জান্নাতে প্রবেশ কর।”[21]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ إِنَّ ٱلۡمُتَّقِينَ فِي جَنَّٰتٖ وَعُيُونٍ ٤٥ ٱدۡخُلُوهَا بِسَلَٰمٍ ءَامِنِينَ ٤٦ ﴾ [الحجر: ٤٥، ٤٦]
“নিশ্চয় মুত্তাকীরা থাকবে জান্নাতে ও প্রস্রবণসমূহের মধ্যে। তাদেরকে বলা হবে, ‘তোমরা শান্তিতে নিরাপত্তার সাথে এতে প্রবেশ কর’।”[22]
১৪. সাহল ইবন সা‘দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« ليدخلن الجنة من أمتي سبعون ألفا أو سبعمائة ألف , (لا يدري أبو حازم أيهما قال) , متماسكون , آخذ بعضهم بعضا , لا يدخل أولهم حتى يدخل آخرهم , وجوههم على صورة القمر ليلة البدر » . ( رواه البخاري و مسلم ) .
“আমার উম্মত থেকে সত্তর হাজার লোক অথবা সাত লক্ষ লোক একে অপরের হাত ধরে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (বর্ণনাকারী আবূ হাযেমের নিশ্চিত জানা নেই যে, তিনি উভয় সংখ্যার মধ্যে কোনটি বলেছেন) তাদের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সকলেই একসাথে জান্নাতে প্রবেশ করবে; আর তাদের চেহারাগুলো পূর্ণিমার চাঁদের আলোর ন্যায় উজ্জ্বল থাকবে।”[23]
১৫. আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إن أول زمرة يدخلون الجنة على صورة القمر ليلة البدر , ثم الذين يلونهم على أشد كوكب دري في السماء إضاءة , لا يبولون ولا يتغوطون , ولا يتفلون ولا يمتخطون , أمشاطهم الذهب , ورشحهم المسك , ومجامرهم الألوة الألنجوج عود الطيب , وأزواجهم الحور العين, أخلاقهم على خلق رجل واحد على صورة أبيهم آدم: ستون ذراعا في السماء» . (رواه البخاري ومسلم).
“সর্বপ্রথম যে দল জান্নাতে প্রবেশ করবে, তাদের মুখমণ্ডল হবে পূর্ণিমার রাতের চাঁদের মত উজ্জ্বল। তারপর যে দল তাদের অনুগামী হবে, তাদের মুখমণ্ডল হবে আকাশের সর্বাধিক দীপ্তিমান উজ্জ্বল তারকার মত। তারা না করবে পেশাব, আর না করবে পায়খানা। তাদের থুথু ফেলার প্রয়োজন হবে না এবং তাদের নাক থেকে শ্লেষ্মাও বের হবে না। তাদের চিরণী হবে স্বর্ণের তৈরি। তাদের ঘাম হবে মিশকের ন্যায় সুগন্ধময়। তাদের ছাইদানি বা আগরদানি হবে সুগন্ধযুক্ত চন্দন কাঠের। ডাগড় চক্ষু বিশিষ্টা হূরগণ হবে তাদের স্ত্রী। তাদের সকলের দেহের গঠন হবে একই রকম। তারা সকলেই তাদের আদি পিতা আদম আ. এর আকৃতিতে হবে। উচ্চতায় তাদের দেহের দৈর্ঘ্য হবে ষাট হাত।”[24]
অপর এক বর্ণনায় এসেছে:
«ولكل واحد منهم زوجتان يرى مخ سوقهما من وراء اللحم من الحسن , ولا اختلاف بينهم ولا تباغض , قلوبهم قلب رجل واحد , يسبحون الله بكرة وعشيا » . (رواه البخاري و مسلم) .
“আর তাদের প্রত্যেকের জন্য এমন দু’জন স্ত্রী থাকবে, যাদের সৌন্দর্যের ফলে গোশত ভেদ করে পায়ের নলার হাঁড়ের মজ্জা দেখা যাবে। তাদের মধ্যে কোন মতভেদ থাকবে না; পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষ থাকবে না। তাদের সকলের অন্তর এক অন্তরের মত থাকবে। তারা সকাল ও সন্ধ্যায় আল্লাহর তাসবীহ পাঠে রত থাকবে।”[25]
অর্থসহ হাদিসের বিশেষ শব্দ-তালিকা:
(الألنجوج): সুগন্ধময় কাঠ, যা ধূপায়িত করার দ্বারা সুবাস ছড়ানো হয়।
(زمرة): দল বা গোষ্ঠী।
(مجامرهم الألوة): এমন কাঠ, যা ধূপায়িত করার দ্বারা সুবাস ছড়ানো হয়; কেউ কেউ বলেন: সুগন্ধযুক্ত ঐ কাঠকেই তাদের ছাইদানি বানানো।
(المجامر): শব্দটি " مجمرة " শব্দের বহুবচন, তার অর্থ: ধূপপাত্র; আর তাকে" مجمرة " বা ছাইদানি নামে নামকরণ করার কারণ হল, যেহেতু তাতে অঙ্গার রাখা হয় তার মধ্যে রাখা সুগন্ধিযুক্ত কাঠকে পুড়িয়ে সুবাস ছড়িয়ে দেয়ার জন্য।
(مخ سوقهما): হাড়ের অভ্যন্তরে যা থাকে; আর এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল: তার চরম সৌন্দর্যের বর্ণনা দেয়া; আর তা হল হাড়ের অভ্যন্তরে যা কিছু আছে, তাকে হাড়, গোশত ও চামড়া আড়াল করতে পারবে না।
(قلوبهم قلب رجل واحد): অর্থাৎ তাদের মধ্যে কোন হিংসা-বিদ্বেষ ও মতবিরোধ থাকবে না; কারণ, যাবতীয় মন্দ ও নিন্দিত চরিত্র থেকে তাদের অন্তর পবিত্র হয়ে গেছে।
১৬. মু‘আয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« يدخل أهل الجنة الجنة جردا , مردا , مكحلين , أبناء ثلاثين أو ثلاث وثلاثين سنة » . ( رواه الترمذي ) .
“জান্নাতবাসীগণ পশমহীন শরীর, দাড়ি-গোঁফবিহীন মুখ, সুরমা দেয়া চোখের মত কাজল কালো চোখ এবং ত্রিশ বা তেত্রিশ বছর বয়সের যুবক অবস্থায় জান্নাতে প্রবেশ করবে।”[26]
অর্থসহ হাদিসের বিশেষ শব্দ-তালিকা:
" جرد ": " أجرد "শব্দের বহুবচন, তার অর্থ এমন এক ব্যক্তি, যার শরীর তথা চামড়ার উপর কোন পশম নেই।
" مرد ": " أمرد "শব্দের বহুবচন, তার অর্থ এমন এক ব্যক্তি, যার চেহারায় কোনো পশম নেই। (যেমন দাঁড়ি বা গোফ)
" الكحل ": " أكحل "শব্দের বহুবচন, তার অর্থ এমন এক ব্যক্তি, যার চক্ষু এমন কালো বর্ণ ধারণ করেছে, মনে হয় যেন তাতে সুরমা লাগানো হয়েছে।
১৭. মিকদাম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« ما من أحد يموت سقطًا ولا هرمًا , وإنما الناس فيما بين ذلك , إلا بعث ابن ثلاثين سنة , فمن كان من أهل الجنة كان على مسحة آدم , وصورة يوسف , وقلب أيوب , ومن كان من أهل النار عظموا وفخموا كالجبال » . ( رواه البيهقي و الطبراني ) .
“যে কোনো ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করবে মায়ের পেট থেকে মৃত ভুমিষ্ট হয়ে, অথবা বৃদ্ধ বয়সে, আর মানুষ তো এতদোভয়ের মাঝেই হয়ে থাকে, তাদেরকেই পুনরায় জীবিত করা হবে তেত্রিশ বছরের যুবক হিসেবে। অতঃপর তাদের মধ্যে যে জান্নাতবাসীদের অন্তর্ভুক্ত হবে, সে হবে পরিমাপে আদম আ. এর মত, চেহারা-ছবিতে ইউসূফ আ. এর মত এবং অন্তরের দিক থেকে আইয়ূব আ. এর মত। আর সে যদি জাহান্নামের অধিবাসীদের অন্তর্ভুক্ত হয়, তবে তার পুনরুত্থান হবে পাহাড়ের মত বিশাল আকারের শরীর নিয়ে।”[27]
* * *
ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ
সর্বনিম্ন মানের জান্নাতবাসীর মর্যাদা
১৮. মুগীরা ইবন শো‘বা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« سَأَلَ مُوسَى رَبَّهُ مَا أَدْنَى أَهْلِ الْجَنَّةِ مَنْزِلَةً قَالَ هُوَ رَجُلٌ يَجِىءُ بَعْدَ مَا أُدْخِلَ أَهْلُ الْجَنَّةِ الْجَنَّةَ فَيُقَالُ لَهُ ادْخُلِ الْجَنَّةَ. فَيَقُولُ أَىْ رَبِّ كَيْفَ وَقَدْ نَزَلَ النَّاسُ مَنَازِلَهُمْ وَأَخَذُوا أَخَذَاتِهِمْ فَيُقَالُ لَهُ أَتَرْضَى أَنْ يَكُونَ لَكَ مِثْلُ مُلْكِ مَلِكٍ مِنْ مُلُوكِ الدُّنْيَا فَيَقُولُ رَضِيتُ رَبِّ. فَيَقُولُ لَكَ ذَلِكَ وَمِثْلُهُ وَمِثْلُهُ وَمِثْلُهُ وَمِثْلُهُ. فَقَالَ فِى الْخَامِسَةِ رَضِيتُ رَبِّ. فَيَقُولُ هَذَا لَكَ وَعَشَرَةُ أَمْثَالِهِ وَلَكَ مَا اشْتَهَتْ نَفْسُكَ وَلَذَّتْ عَيْنُكَ . فَيَقُولُ رَضِيتُ رَبِّ. قَالَ رَبِّ فَأَعْلاَهُمْ مَنْزِلَةً قَالَ أُولَئِكَ الَّذِينَ أَرَدْتُ غَرَسْتُ كَرَامَتَهُمْ بِيَدِى وَخَتَمْتُ عَلَيْهَا فَلَمْ تَرَ عَيْنٌ وَلَمْ تَسْمَعْ أُذُنٌ وَلَمْ يَخْطُرْ عَلَى قَلْبِ بَشَرٍ » . (رواه مسلم) .
“একবার মূসা আলাহিসসালাম তাঁর প্রতিপালককে জিজ্ঞেস করেছিলেন, জান্নাতে সবচেয়ে নিম্নস্তরের লোকটি কে হবে? আল্লাহ বললেন: সে হল এমন এক ব্যক্তি, যে জান্নাতবাসীদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করানোর পর আসবে। তাকে বলা হবে, জান্নাতে প্রবেশ কর। সে বলবে: হে প্রতিপালক! তা কিরূপে হবে? জান্নাতীগণ তো নিজ নিজ আবাসের অধিকারী হয়ে গেছেন। তারা তাদের প্রাপ্য নিয়েছেন। তাকে বলা হবে: পৃথিবীর কোনো সম্রাটের সাম্রাজ্যের সমপরিমাণ সম্পদ নিয়ে কি তুমি সন্তুষ্ট হবে? সে বলবে: হে প্রভু! আমি এতে খুশি। আল্লাহ বলবেন: তোমাকে উক্ত পরিমাণ সম্পদ দেয়া হল, সাথে দেয়া হল আরও সমপরিমাণ, আরও সমপরিমাণ, আরও সমপরিমাণ, আরও সমপরিমাণ, আরও সমপরিমাণ ; পঞ্চমবারে সে বলে উঠবে, আমি পরিতৃপ্ত, হে আমার রব! আল্লাহ বলবেন: আরও দশগুণ দেয়া হল। এ সবই তোমার জন্য। তাছাড়া তোমার জন্য রয়েছে এমন জিনিস, যার দ্বারা মন তৃপ্ত হয়, চোখ জুড়ায়। লোকটি বলবে: হে আমার প্রভু! আমি পরিতৃপ্ত। মূসা আ. বললেন: হে আমার রব! তাঁদের মধ্যে সর্বোচ্চ কে? আল্লাহ তা‘আলা বলবেন: এরা তারাই, যাদেরকে আমি পছন্দ করে নিয়েছি, তাদের মর্যাদা আমি নিজহাতে চূড়ান্তভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছি, তারপর তাতে মোহর মেরে রেখেছি, তাতে এমন জিনিস তাদের জন্য রেখেছি, যা কোন চক্ষু কখনও দেখেনি, কোন কান কখনও শুনেনি এবং কারও অন্তরে কখনও কল্পনারও উদয় হয়নি।”[28]
* * *
সপ্তম পরিচ্ছেদ
জান্নাতের স্তরসমূহ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَمَن يَأۡتِهِۦ مُؤۡمِنٗا قَدۡ عَمِلَ ٱلصَّٰلِحَٰتِ فَأُوْلَٰٓئِكَ لَهُمُ ٱلدَّرَجَٰتُ ٱلۡعُلَىٰ ٧٥ ﴾ [طه: ٧٥]
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ كُلّٗا نُّمِدُّ هَٰٓؤُلَآءِ وَهَٰٓؤُلَآءِ مِنۡ عَطَآءِ رَبِّكَۚ وَمَا كَانَ عَطَآءُ رَبِّكَ مَحۡظُورًا ٢٠ ٱنظُرۡ كَيۡفَ فَضَّلۡنَا بَعۡضَهُمۡ عَلَىٰ بَعۡضٖۚ وَلَلۡأٓخِرَةُ أَكۡبَرُ دَرَجَٰتٖ وَأَكۡبَرُ تَفۡضِيلٗا ٢١ ﴾ [الاسراء: ٢٠، ٢١]
“তোমার প্রতিপালক তাঁর দান দ্বারা এদেরকে এবং ওদেরকে সাহায্য করেন; আর তোমার প্রতিপালকের দান অবারিত। লক্ষ্য কর, আমি কিভাবে ওদের এক দলকে অপরের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি, আর আখেরাত তো নিশ্চয়ই মর্যাদায় মহত্তর ও গুণে শ্রেষ্ঠতর।”[30]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ لَّا يَسۡتَوِي ٱلۡقَٰعِدُونَ مِنَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ غَيۡرُ أُوْلِي ٱلضَّرَرِ وَٱلۡمُجَٰهِدُونَ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ بِأَمۡوَٰلِهِمۡ وَأَنفُسِهِمۡۚ فَضَّلَ ٱللَّهُ ٱلۡمُجَٰهِدِينَ بِأَمۡوَٰلِهِمۡ وَأَنفُسِهِمۡ عَلَى ٱلۡقَٰعِدِينَ دَرَجَةٗۚ وَكُلّٗا وَعَدَ ٱللَّهُ ٱلۡحُسۡنَىٰۚ وَفَضَّلَ ٱللَّهُ ٱلۡمُجَٰهِدِينَ عَلَى ٱلۡقَٰعِدِينَ أَجۡرًا عَظِيمٗا ٩٥ دَرَجَٰتٖ مِّنۡهُ وَمَغۡفِرَةٗ وَرَحۡمَةٗۚ وَكَانَ ٱللَّهُ غَفُورٗا رَّحِيمًا ٩٦ ﴾ [النساء: ٩٥، ٩٦]
“মুমিনদের মধ্যে যারা অক্ষম নয় অথচ ঘরে বসে থাকে এবং যারা আল্লাহর পথে স্বীয় ধন-প্রাণ দ্বারা জিহাদ করে, তারা সমান নয়। যারা স্বীয় ধন-প্রাণ দ্বারা জিহাদ করে আল্লাহ তাদেরকে, যারা ঘরে বসে থাকে তাদের উপর মর্যাদা দিয়েছেন; তাদের প্রত্যেকের জন্য আল্লাহ জান্নাতের ওয়াদা করেছেন। যারা ঘরে বসে থাকে তাদের উপর যারা জিহাদ করে তাদেরকে আল্লাহ মহাপুরস্কারের ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। এসব তাঁর কাছ থেকে মর্যাদা, ক্ষমা ও দয়া; আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”[31]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ يَرۡفَعِ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ مِنكُمۡ وَٱلَّذِينَ أُوتُواْ ٱلۡعِلۡمَ دَرَجَٰتٖۚ وَٱللَّهُ بِمَا تَعۡمَلُونَ خَبِيرٞ ١١ ﴾ [المجادلة: ١١]
“তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে আল্লাহ তাদেরকে মর্যাদায় উন্নত করবেন; আর তোমরা যা কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে সবিশেষ অবহিত।”[32]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿أَفَمَنِ ٱتَّبَعَ رِضۡوَٰنَ ٱللَّهِ كَمَنۢ بَآءَ بِسَخَطٖ مِّنَ ٱللَّهِ وَمَأۡوَىٰهُ جَهَنَّمُۖ وَبِئۡسَ ٱلۡمَصِيرُ ١٦٢ هُمۡ دَرَجَٰتٌ عِندَ ٱللَّهِۗ وَٱللَّهُ بَصِيرُۢ بِمَا يَعۡمَلُونَ ١٦٣ ﴾ [ال عمران: ١٦٢، ١٦٣]
“আল্লাহ যেটাতে সন্তুষ্ট, যে তারই অনুসরণ করে, সে কি ওর মত, যে আল্লাহর ক্রোধের পাত্র হয়েছে এবং জাহান্নামই যার আবাস? আর সেটা কত নিকৃষ্ট প্রত্যাবর্তনস্থল! আল্লাহর কাছে তারা বিভিন্ন স্তরের; তারা যা করে, আল্লাহ সেসব ভালভাবে দেখেন।”[33]
১৯. আবূ সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« إن أهل الجنة يتراءون أهل الغرف من فوقهم كما تتراءون الكوكب الدري الغابر في الأفق من المشرق أو المغرب لتفاضل ما بينهم » . قالوا : يا رسول الله ! تلك منازل الأنبياء لا يبلغها غيرهم . قال : « بلى ؛ والذي نفسي بيده ؛ رجال آمنوا بالله , وصدقوا المرسلين » . (رواه البخاري و مسلم) .
“অবশ্যই জান্নাতবাসীগণ তাদের উপরের বালাখানার অধিবাসীদের এমনভাবে দেখতে পাবে, যেমন তোমরা আকাশের পূর্ব অথবা পশ্চিম দিগন্তে উজ্জ্বল দীপ্তমান তারকা দেখতে পাও। এটা হবে তাদের মধ্যে মর্যাদার ব্যবধানের কারণে। সাহাবীগণ বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! এ তো নবীগণের জায়গা। তাঁদের ছাড়া অন্যরা তথায় পৌঁছতে পারবে না। তিনি বললেন: হ্যাঁ, সে সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! তারা এমন কিছু লোক যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছে এবং রাসূলগণকে সত্য বলে স্বীকার করেছে (তারা সেখানে পৌঁছতে পারবে)।”[34]
২০. আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إن في الجنة مائة درجة أعدها الله للمجاهدين في سبيل الله ما بين الدرجتين كما بين السماء والأرض , فإذا سألتم الله فاسألوه الفردوس فإنه أوسط الجنة وأعلى الجنة » . (رواه البخاري) .
“আল্লাহর পথে জিহাদকারীদের জন্য আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতে একশ’টি মর্যাদার স্তর প্রস্তুত করে রেখেছেন। দু’টি স্তরের মধ্যে ব্যবধান আসমান ও যমীনের দূরত্বের ন্যায়। সুতরাং তোমরা আল্লাহর কাছে চাইলে ফেরদাউস চাইবে। কারণ, এটাই হল সবচেয়ে উত্তম ও সর্বোচ্চ জান্নাত।”[35]
২১. আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
«أصيب الحارثة يوم بدر وهو غلام , فجاءت أمه إلى النبي صلى الله عليه و سلم , فقالت يا رسول الله ! قد عرفت منزلة حارثة مني , فإن يكن في الجنة أصبر وأحتسب , وإن تكن الأخرى , تر ما أصنع ؟ فقال : ويحك أو هبلت أو جنة واحدة هي؟ إنها جنان كثيرة , وإنه في جنة الفردوس» . (رواه البخاري) .
“বদরের যুদ্ধের দিন হারেসা রা. শহীদ হলেন, আর তখন তিনি অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছিলেন। তাঁর মা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! আমার সাথে হারিসার স্থান সম্পর্কে আপনি তো অবশ্যই জানেন। সে যদি জান্নাতী হয়, তাহলে আমি ধৈর্য ধারণ করব এবং সাওয়াব মনে করব। আর যদি অন্য কিছু হয়, তাহলে আপনি দেখতে পাবেন আমি কি করি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তোমার জন্য আফসোস! অথবা তুমি কি বেওকুফ হয়ে গেল! জান্নাত কি একটা নাকি? জান্নাত তো অনেক। আর সেই হারেসা তো রয়েছে জান্নাতুল ফেরদাউসের মাঝে।”[36]
২২. আবূ সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إن أهل الدرجات العلي ليراهم من هو أسفل منهم كما ترون الكوكب الدري في أفق السماء , وان أبا بكر وعمر منهم وأنعما » . (رواه أحمد و الترمذي) .
“নিশ্চয়ই (জান্নাতের) উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিদেরকে যারা তাদের থেকে নিম্নস্তরে অবস্থান করবে তারা তাদেরকে দেখতে পাবে, যেমন তোমরা আকাশের উচ্চ দিগন্তে উজ্জ্বল দীপ্তমান তারকা দেখতে পাও। আর আবূ বকর ও ওমর রা. তাদের অন্তর্ভুক্ত এবং তাঁরা উভয়ে সে নে‘আমতে প্রবেশ করবে, আর তাদের জন্য সেটা যথাযথ[37]।”[38]
২৩. আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« ان الله عز و جل ليرفع الدرجة للعبد الصالح في الجنة , فيقول : يا رب ! أنى لي هذه ؟ فيقول : باستغفار ولدك لك » . (رواه أحمد) .
“নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতের মধ্যে সৎ বান্দার মর্যাদাকে সুউচ্চ ও সমুন্নত করবেন; অতঃপর সে বলবে: হে আমার প্রতিপালক! আমার এই মর্যাদা কিভাবে হল? তখন তিনি বলবেন: তোমার সন্তান কর্তৃক তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করার কারণে।”[39]
২৪. আবদুল্লাহ ইবন আমর ইবনিল ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« يُقَالُ لِصَاحِبِ الْقُرْآنِ : اقْرَأْ وَارْتَقِ , وَرَتِّلْ كَمَا كُنْتَ تُرَتِّلُ فِى الدُّنْيَا , فَإِنَّ مَنْزِلَكَ عِنْدَ آخِرِ آيَةٍ تَقْرَؤُهَا » . ( رواه أبو داود و الترمذي ) .
“(কিয়ামতের দিন) কুরআন পাঠকারীকে বলা হবে: কুরআন পড় এবং জান্নাতের মানযিলে আরোহন কর এবং থেমে থেমে কুরআন পড়তে থাক যেমন তুমি দুনিয়ায় পড়তে। কারণ, জান্নাতে তোমার স্থান (মানযিল) হবে সেই শেষ আয়াতটি শেষ করা পর্যন্ত, যা তুমি পড়ছ।”[40]
২৫. ফাদালা ইবন ‘উবাইদ এবং তামীম আদ-দারী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« من قرأ عشر آيات فى ليلة ؛ كتب له قنطار , والقنطار خير من الدنيا وما فيها , فإذا كان يوم القيامة ؛ يقول ربك عز و جل : اقرأ وارق بكل آية درجة, حتى ينتهى إلى آخر آية معه , يقول الله عز و جل للعبد: اقبض , فيقبض, فيقول العبد بيده : يا رب ! أنت أعلم . فيقول : بهذه الخلد وبهذه النعيم» . ( رواه الطبراني ) .
“যে ব্যক্তি রাত্রে (আল-কুরআনের) দশটি আয়াত তিলাওয়াত করবে, তার জন্য এক ‘কিনতার’[41] (সাওয়াব) লিখে দেয়া হবে; আর এক ‘কিনতার’ দুনিয়া ও তার মধ্যে যা কিছু আছে, তার চেয়ে অনেক বেশি উত্তম; সুতরাং যখন কিয়ামতের দিন আসবে, তখন আল্লাহ তা‘আলা বলবেন: তুমি পড় এবং প্রত্যেকটি আয়াতের বিনিময়ে একটি করে মর্যাদার সিড়ি বেয়ে উপরের দিকে উঠ, এভাবে করে সে যখন তার আয়ত্তে থাকা সর্বশেষ আয়াত পাঠ করবে, তখন আল্লাহ তা‘আলা বান্দাকে লক্ষ্য করে বলবেন: গ্রহণ কর, তখন সে গ্রহণ করবে, তখন বান্দা তার হাত দিয়ে ইঙ্গিত করে বলবে, হে রব! আপনি ভালো জানেন, (আমি কি গ্রহণ করব?) তখন তিনি বলবেন: এ স্থায়ী জীবন থেকে আর এ সুখের জীবন থেকে।”[42]
* * *
অষ্টম পরিচ্ছেদ
জান্নাতের সর্বোচ্চ মর্যাদপূর্ণ স্থান
২৬. আবদুল্লাহ ইবন ‘আমর ইবনিল ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন:
« إِذَا سَمِعْتُمُ الْمُؤَذِّنَ فَقُولُوا مِثْلَ مَا يَقُولُ ثُمَّ صَلُّوا عَلَىَّ فَإِنَّهُ مَنْ صَلَّى عَلَىَّ صَلاَةً صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ بِهَا عَشْرًا ثُمَّ سَلُوا اللَّهَ لِىَ الْوَسِيلَةَ فَإِنَّهَا مَنْزِلَةٌ فِى الْجَنَّةِ لاَ تَنْبَغِى إِلاَّ لِعَبْدٍ مِنْ عِبَادِ اللَّهِ وَأَرْجُو أَنْ أَكُونَ أَنَا هُوَ فَمَنْ سَأَلَ لِىَ الْوَسِيلَةَ حَلَّتْ لَهُ الشَّفَاعَةُ ».
“যখন তোমরা মুয়াজ্জিনকে আযান দিতে শুনবে, তখন তোমরা সে যা বলে তাই বলবে। তারপর আমার উপর দুরূদ পাঠ করবে। কারণ, যে আমার উপর একবার দুরূদ পাঠ করে, আল্লাহ তা‘আলা তার বিনিময়ে তার উপর দশবার রহমত নাযিল করেন। পরে আল্লাহর কাছে আমার জন্য ওসীলার দো‘আ করবে। ওসীলা হল হল জান্নাতের একটি বিশেষ স্থান, যা আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে কোন এক বান্দাকে দেয়া হবে। আমি আশা করি যে, আমিই হব সেই বান্দা। যে আমার জন্য ওসীলার দো‘আ করবে, তার জন্য আমার শাফা‘আত বৈধ হয়ে যাবে।”[43]
* * *
নবম পরিচ্ছেদ
জান্নাতের ভিত্তি ও তার মাটি
২৭. আদুল্লাহ ইবন ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«سئل رسول الله صلى الله عليه وسلم عن الجنة ؟ فقال : من يدخل الجنة حيّ فيها و لا يموت , و ينعم فيها و لا يبأس , لا تبلى ثيابه و لا يفنى شبابه . قيل : يا رسول الله ! ما بناؤها ؟ قال : «لَبِنةٌ من ذهبٍ , ولبنةٌ من فضةٍ , وملاطُها المِسْكُ، وتُرابُها الزعفَران , وحصباؤها اللؤْلُؤ والياقوتُ» . ( رواه الطبراني ) .
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জান্নাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল? জবাবে তিনি বললেন: যে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে, সে ব্যক্তি তাতে চিরজীবন লাভ করবে এবং সে মৃত্যুবরণ করবে না; সে তাতে সুখ-শান্তি লাভ করবে এবং দুঃখিত ও চিন্তিত হবে না; তার পোষাক-পরিচ্ছদ পুরাতন হবে না এবং তার যৌবন কখনও বিলুপ্ত হবে না। জিজ্ঞাসা করা হল: হে আল্লাহর রাসূল! তার (জান্নাতের) অবকাঠামো কি ধরনের? জবাবে তিনি বললেন: একটি ইট হল স্বর্ণের, আর অপর ইটটি হল রৌপ্যের, তার প্লাস্টার হল মিশক, তার মাটি হল জা‘ফরান এবং তার কঙ্কর বা পাথরকুচিসমূহ হল মুক্তা ও ইয়াকূত (নীলকান্ত মণি)।”[44]
২৮. সাহল ইবন সা‘দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« إن في الجنة مراغا من مسك مثل مراغ دوابكم في الدنيا » . ( رواه الطبراني ) .
“নিশ্চয়ই দুনিয়াতে তোমাদের পশুগুলোর চারণভূমির মত করে জান্নাতের মধ্যে মিশকের একটি চারণভূমি থাকবে।”[45]
২৯. আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আবূ যর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« ... دخلت الجنة فإذا فيها جنابذ اللؤلؤ وإذا ترابها المسك » . (رواه البخاري) .
“... আমি জান্নাতে প্রবেশ করলাম, তখন তাতে দেখি অনেকগুলো মুক্তার গম্বুজ এবং তার মাটিসমূহ মিশক মিশ্রিত।”[46]
অর্থসহ হাদিসের বিশেষ শব্দ-তালিকা:
( الجنابذ ): গম্বুজসমূহ।
* * *
দশম পরিচ্ছেদ
জান্নাতের প্রাসাদ, কক্ষ ও তাঁবুসমূহ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَمَسَٰكِنَ طَيِّبَةٗ فِي جَنَّٰتِ عَدۡنٖۚ ﴾ [التوبة: ٧٢]
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ وَهُمۡ فِي ٱلۡغُرُفَٰتِ ءَامِنُونَ ٣٧ ﴾ [سبا: ٣٧]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ أُوْلَٰٓئِكَ يُجۡزَوۡنَ ٱلۡغُرۡفَةَ بِمَا صَبَرُواْ وَيُلَقَّوۡنَ فِيهَا تَحِيَّةٗ وَسَلَٰمًا ٧٥ ﴾ [الفرقان: ٧٤]
“তারাই, যাদেরকে প্রতিদান দেয়া হবে জান্নাতের সুউচ্চ কক্ষ, যেহেতু তারা ছিল ধৈর্যশীল। আর তারা প্রাপ্ত হবে সেখানে অভিবাদন ও সালাম।”[49]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ لَٰكِنِ ٱلَّذِينَ ٱتَّقَوۡاْ رَبَّهُمۡ لَهُمۡ غُرَفٞ مِّن فَوۡقِهَا غُرَفٞ مَّبۡنِيَّةٞ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُۖ وَعۡدَ ٱللَّهِ لَا يُخۡلِفُ ٱللَّهُ ٱلۡمِيعَادَ ٢٠ ﴾ [الزمر: ٢٠]
“তবে যারা তাদের রবের তাকওয়া অবলম্বন করে, তাদের জন্য আছে বহু প্রাসাদ যার উপর নির্মিত আরো প্রাসাদ, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত; এটা আল্লাহ্র প্রতিশ্রুতি, আল্লাহ্ প্রতিশ্রুতির বিপরীত করেন না।”[50]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ حُورٞ مَّقۡصُورَٰتٞ فِي ٱلۡخِيَامِ ٧٢ ﴾ [الرحمن: ٧٢]
৩০. আবূ মূসা আল-আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« إِنَّ لِلْمُؤْمِنِ فِى الْجَنَّةِ لَخَيْمَةً مِنْ لُؤْلُؤَةٍ وَاحِدَةٍ مُجَوَّفَةٍ , طُولُهَا سِتُّونَ مِيلاً , لِلْمُؤْمِنِ فِيهَا أَهْلُونَ , يَطُوفُ عَلَيْهِمُ الْمُؤْمِنُ , فَلاَ يَرَى بَعْضُهُمْ بَعْضًا » . (رواه البخاري و مسلم) .
“নিশ্চয়ই মুমিনদের জন্য জান্নাতের মধ্যে ফাঁপা মূর্তির একটি তাঁবু থাকবে; আকাশের দিকে এর উচ্চতা হবে ষাট মাইল। তাতে মুমিনের পরিবার-পরিজন থাকবে, তাদের কাছে মুমিন ব্যক্তিগণ যাবে, তবে তাদের একজন অপরজনকে দেখতে পাবে না।”[52]
৩১. আবূ মালেক আল-আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إن في الجنة غرفة يرى ظاهرها من باطنها , وباطنها من ظاهرها , أعدها الله لمن أطعم الطعام , وألان الكلام , وتابع الصيام , وصلى بالليل والناس نيام» . (رواه أحمد و ابن حبان) .
“নিশ্চয়ই জান্নাতের মধ্যে একটি কক্ষ থাকবে, যার ভিতর থেকে বহির্ভাগ দেখা যাবে এবং বহির্ভাগ থেকে তার ভিতরভাগ দেখা যাবে; আল্লাহ তা‘আলা তা তৈরি করেছেন ঐ ব্যক্তির জন্য, যে অপরকে খাদ্য দান করে, নরম সুরে কথা বলে, সাওম পালন করে এবং মানুষ যখন ঘুমায় তখন সে সালাত আদায় করে।”[53]
৩২. আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
«أتى جبريل النبي صلى الله عليه و سلم , فقال : يا رسول الله ! هذه خديجة قد أتت معها إناء فيه إدام أو طعام أو شراب , فإذا هي أتتك فاقرأ عليها السلام من ربها ومني , وبشرها ببيت في الجنة من قصب , لا صخب فيه ولا نصب » . (رواه البخاري و مسلم) .
“জিবরাঈল আ. নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে হাযির হয়ে বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! ঐ যে খাদিজা রা. একটি পাত্র হাতে নিয়ে আসছেন। ঐ পাত্রে তরকারী অথবা খাদ্যদ্রব্য অথবা পানীয় রয়েছে; যখন তিনি পৌঁছে যাবেন, তখন তাঁকে তাঁর প্রতিপালকের পক্ষ থেকে এবং আমার পক্ষ থেকে সালাম জানাবেন, আর তাঁকে জান্নাতের এমন একটি সুরম্য প্রাসাদের সুসংবাদ দিবেন, যার ভিতরদেশ ফাঁকা-মোতি দ্বারা তৈরি করা হয়েছে। সেখানে থাকবে না কোন প্রকার হট্টগোল এবং থাকবে না কোন প্রকার ক্লেশ ও ক্লান্তি।”[54]
৩৩. আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« من بنى لله مسجدا ولو كمفحص قطاة لبيضها , بنى الله له بيتا في الجنة » . (رواه أحمد) .
“যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে একটি মাসজিদ নির্মাণ করল, যদিও তা তিতির পাখির ডিম পাড়ার উদ্দেশ্যে করা গর্তের মত হউক না কেন, তবে আল্লাহ তা‘আলা সেই ব্যক্তির জন্য জান্নাতের মধ্যে একটি ঘর তৈরি করে রাখবেন।”[55]
৩৪. মুমিন জননী উম্মে হাবীবা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« مَا مِنْ عَبْدٍ مُسْلِمٍ يُصَلِّى لِلَّهِ كُلَّ يَوْمٍ ثِنْتَىْ عَشْرَةَ رَكْعَةً تَطَوُّعًا غَيْرَ فَرِيضَةٍ إِلاَّ بَنَى اللَّهُ لَهُ بَيْتًا فِى الْجَنَّةِ أَوْ إِلاَّ بُنِىَ لَهُ بَيْتٌ فِى الْجَنَّةِ » . (رواه مسلم) .
“যে কোন মুসলিম বান্দা ফরয ব্যতীত দৈনিক অতিরিক্ত বার রাকা‘আত সালাত আল্লাহর উদ্দেশ্য আদায় করবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর তৈরি করবেন অথবা বলেছেন, জান্নাতে তার জন্য একটি ঘর তৈরি করা হবে।”[56]
৩৫. আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« دخلت الجنة , فإذا أنا بقصر من ذهب , فقلت : لمن هذا القصر ؟ قالوا : لشاب من قريش , فظننت أني أنا هو , فقلت : ومن هو ؟ قالوا : عمر بن الخطاب » . (رواه البخاري و مسلم) .
“আমি জান্নাতে প্রবেশ করলাম; তখন আমি আমাকে একটি স্বর্ণের প্রাসাদের নিকট দেখতে পেলাম। তখন আমি জিজ্ঞাসা করলাম: এই প্রাসাদটি কার জন্য? তারা বলল: কুরাইশ বংশের এক যুবকের জন্য; তখন আমি ধারণা করলাম যে, আমিই সেই ব্যক্তি; তারপর আমি জিজ্ঞাসা করলাম: কে সেই যুবক? তারা বলল: ওমর ইবনুল খাত্তাব।”[57]
৩৬. আবূ সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« إذا خلص المؤمنون من النار حبسوا بقنطرة بين الجنة والنار , فيتقاصون مظالم كانت بينهم في الدنيا , حتى إذا نقوا وهذبوا , أذن لهم بدخول الجنة , فوالذي نفس محمد صلى الله عليه و سلم بيده لأحدهم بمسكنه في الجنة أدل بمنزله كان في الدنيا » . (رواه البخاري) .
“মুমিনগণ যখন জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে, তখন জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝখানে একটি পুলের উপর তাদের আটকে রাখা হবে। তখন পৃথিবীতে একের প্রতি অন্যের যা যা জুলুম ও অন্যায় ছিল, তার প্রতিশোধ গ্রহণের পরে যখন তারা পরিচ্ছন্ন হয়ে যাবে, তখন তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হবে। সুতরাং সেই সত্তার কসম, যাঁর হাতে মুহাম্মদের প্রাণ! নিশ্চয়ই তাদের প্রত্যেকে পৃথিবীতে তার আবাসস্থল যেভাবে চিনত, তার চেয়ে অধিক সহজে তার জান্নাতের আবাসস্থল চিনতে পারবে।”[58]
* * *
একাদশ পরিচ্ছেদ
জান্নাতের নদী ও ঝর্ণাসমূহ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَبَشِّرِ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَعَمِلُواْ ٱلصَّٰلِحَٰتِ أَنَّ لَهُمۡ جَنَّٰتٖ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُۖ ﴾ [البقرة: ٢٥]
“আর যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে তাদেরকে শুভ সংবাদ দিন যে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত।”[59]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ مَّثَلُ ٱلۡجَنَّةِ ٱلَّتِي وُعِدَ ٱلۡمُتَّقُونَۖ فِيهَآ أَنۡهَٰرٞ مِّن مَّآءٍ غَيۡرِ ءَاسِنٖ وَأَنۡهَٰرٞ مِّن لَّبَنٖ لَّمۡ يَتَغَيَّرۡ طَعۡمُهُۥ وَأَنۡهَٰرٞ مِّنۡ خَمۡرٖ لَّذَّةٖ لِّلشَّٰرِبِينَ وَأَنۡهَٰرٞ مِّنۡ عَسَلٖ مُّصَفّٗىۖ وَلَهُمۡ فِيهَا مِن كُلِّ ٱلثَّمَرَٰتِ ﴾ [محمد: ١٥]
“মুত্তাকীদেরকে যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে তার দৃষ্টান্ত: তাতে আছে নির্মল পানির নহরসমূহ, আছে দুধের নহরসমূহ যার স্বাদ অপরিবর্তনীয়, আছে পানকারীদের জন্য সুস্বাদু সুরার নহরসমূহ, আছে পরিশোধিত মধুর নহরসমূহ এবং সেখানে তাদের জন্য থাকবে প্রত্যেক প্রকারের ফলমূল।”[60]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ إِنَّ ٱلۡمُتَّقِينَ فِي مَقَامٍ أَمِينٖ ٥١ فِي جَنَّٰتٖ وَعُيُونٖ ٥٢ ﴾ [الدخان: ٥١، ٥٢]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ فِيهِمَا عَيۡنَانِ تَجۡرِيَانِ ٥٠ ﴾ [الرحمن: ٥٠]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ فِيهِمَا عَيۡنَانِ نَضَّاخَتَانِ ٦٦ ﴾ [الرحمن: ٦٦]
৩৭. মু‘য়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إن في الجنة بحر الماء , وبحر العسل , وبحر اللبن , وبحر الخمر , ثم تشقق الأنهار بعد» . ( رواه الترمذي ) .
“নিশ্চয়ই জান্নাতের মধ্যে থাকবে পানির সমুদ্র, মধুর সমুদ্র, দুধের সমুদ্র এবং মদের সমুদ্র; অতঃপর নদী-নালার ব্যবস্থা করা হবে।”[64]
৩৮. আবদুল্লাহ ইবন ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« الكوثر نهر في الجنة , حافتاه من ذهب , ومجراه على الدر والياقوت , تربته أطيب من المسك , وماؤه أحلى من العسل , وأبيض من الثلج » . ( رواه الترمذي و ابن ماجه ) .
“কাউসার হচ্ছে জান্নাতের মধ্যকার একটি নদী; তার পার্শ্বদেশ বা কিনারা হল স্বর্ণের; তার স্রোতধারা বা নালা হল মণিমুক্ত ও ইয়াকুতের উপর; তার মৃত্তিকা হল মিশকের চেয়ে অধিক সুগন্ধময়; তার পানি হবে মধুর চেয়ে অধিক মিষ্টি ও বরফের চেয়ে অধিক সাদা।”[65]
৩৯. আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« بينما أنا أسير في الجنة إذا أنا بنهر حافتاه قباب الدر المجوف , قلت : ما هذا يا جبريل ؟ قال هذا الكوثر الذي أعطاك ربك , فإذا طينه أو طيبه مسك أذفر » . (رواه البخاري) .
“আমি জান্নাতে ভ্রমণ করছিলাম, এমন সময় এক ঝর্ণার কাছে আসার পর দেখি যে তার দু’টি ধারে ফাপা মুক্তার গম্বুজ রয়েছে। আমি বললাম, হে জিবরাঈল! এটা কী? তিনি বললেন: এটা ঐ কাউসার, যা আপনার প্রভু আপনাকে দান করেছেন। তখন দেখতে পেলাম যে, তার মাটিতে অথবা ঘ্রাণে ছিল উৎকৃষ্ট মানের মিশকের সুগন্ধি। (বর্ণনাকারী হুদবা র. সন্দেহ করেছেন)।”[66]
৪০. আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
« سئل رسول الله صلى الله عليه و سلم : ما الكوثر ؟ قال : ذاك نهر أعطانيه الله يعني في الجنة أشد بياضا من اللبن , وأحلى من العسل , فيها طير أعناقها كأعناق الجزر منها » . قال عمر : إن هذه لناعمة . قال رسول الله صلى الله عليه و سلم : أكلتها أحسن منها » . (رواه الترمذي) .
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করা হল: কাওসার কি? তিনি বললেন: এটা একটা ঝর্ণা বা নদী, যা আল্লাহ তা‘আলা আমাকে জান্নাতের মধ্যে দান করবেন, যা দুধের চেয়ে অনেক বেশি সাদা এবং মধুর চেয়ে অনেক বেশি মিষ্টি; তাতে (জান্নাতে) এমন সব পাখি থাকবে, যেগুলোর ঘাড় হবে উটের ঘাড়ের মত।” উমর রা. বললেন: নিশ্চয়ই মোটা তরতাজা চিত্তাকর্ষক। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তা যারা খাবে তারা হবে আরও বেশি সুন্দর ও উত্তম বা চিত্তাকর্ষক।”[67]
৪১. সাম্মাক র. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
« أنه لقي عبد الله بن عباس بالمدينة بعدما كف بصره , فقال يا ابن عباس ! ما أرض الجنة ؟ قال : مرمرة بيضاء من فضة كأنها مرآة . قلت : ما نورها ؟ قال : ما رأيت الساعة التي يكون فيها طلوع الشمس؛ فذلك نورها , ألا إنه ليس فيها شمس ولا زمهرير . قلت : فما أنهارها ؟ أفي أخدود ؟ قال : لا , ولكنها تجري على أرض الجنة مستكنة , لا تفيض ها هنا ولا ها هنا , قال الله لها : كوني ! فكانت . قلت : فما حلل الجنة ؟ قال : فيها شجرة فيها ثمر كأنه الرمان , فإذا أراد ولي الله منها كسوة انحدرت إليه من غصنها , فانفلقت له عن سبعين حلة ألوانا بعد ألوان , ثم تنطبق فترجع كما كانت » .
“তিনি আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রা. এর দৃষ্টি শক্তি লোপ পাওয়ার পর তাঁর সাথে মদীনাতে সাক্ষাৎ করেন, তখন তিনি বলেন: হে ইবনু আব্বাস! জান্নাতের ভূমি কেমন হবে? জবাবে তিনি বললেন: তা হবে রৌপ্যের চেয়ে সাদা মার্বেল (মরমর) পাথরের, মনে হবে যেন আয়নার মত। আমি জিজ্ঞাসা করলাম: তার আলো কেমন হবে? জবাবে তিনি বললেন: তুমি সূর্যোদয় হওয়া অবস্থার যে সময়টি লক্ষ্য করেছ, সেটাই হল তার আলো; তবে সেখানে সূর্য প্রখরতাপ কিংবা প্রচণ্ড ঠাণ্ডা কোনটাই থাকবে না। আমি জিজ্ঞাসা করলাম: তার নদীগুলোর অবস্থা কেমন হবে? সেগুলো কি গর্তের মধ্যে হবে? জবাবে তিনি বললেন: না, বরং সেগুলো প্রবাহিত হবে জান্নাতের ভূমির উপর দিয়ে লুক্কায়িত (সুপ্ত) অবস্থায়, এখান সেখান দিয়ে (যত্র-তত্র সীমালঙ্ঘন করে) প্রবাহিত হবে না, আল্লাহ তা‘আলা তাকে উদ্দেশ্য করে বলবেন: হও! তখন হয়ে যাবে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম: তারপর জান্নাতের পোশাক-পরিচ্ছদগুলোর অবস্থা কেমন হবে? জবাবে তিনি বললেন: সেখানে গাছ থাকবে, তাতে আনারের মত ফল থাকবে; তারপর যখন আল্লাহর বন্ধু ব্যক্তি সেখানকার (জান্নাতের) পোশাক-পরিচ্ছদ বা কাপড় পরিধানের ইচ্ছা পোষণ করবে, তখন সেই গাছের ডাল থেকে তার নিকট তা নেমে আসবে, তারপর তা তার জন্য সত্তরটি রং বেরং –এর পোশাকে পরিণত হবে; অতঃপর গাছটি মিলে যাবে এবং পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাবে।”[68]
৪২. আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« الشهداء على بارق نهر بباب الجنة , في قبة خضراء , يخرج عليهم رزقهم من الجنة بكرة وعشيا » . (رواه أحمد) .
“শহীদগণ জান্নাতের দরজায় অবস্থিত চকচকে নদীর তীরে সবুজ গম্বুজ বা তাঁবুর মধ্যে অবস্থান করছে; তাদের নিকট জান্নাত থেকে সকাল ও সন্ধ্যায় তাদের রিযিক বের হয়ে আসে।”[69]
* * *
দ্বাদশ পরিচ্ছেদ
নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাউযের বিবরণ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ إِنَّآ أَعۡطَيۡنَٰكَ ٱلۡكَوۡثَرَ ١ فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَٱنۡحَرۡ ٢ إِنَّ شَانِئَكَ هُوَ ٱلۡأَبۡتَرُ ٣ ﴾ [الكوثر: ١، ٣]
“নিশ্চয় আমরা আপনাকে কাউছার দান করেছি। কাজেই আপনি আপনার রবের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় করুন এবং কুরবানী করুন। নিশ্চয় আপনার প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারীই তো নির্বংশ।”[70]
৪৩. আবদুল্লাহ ইবন ‘আমর ইবনিল ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« حوضي مسيرة شهر , ماؤه أبيض من اللبن , وريحه أطيب من المسك , وكيزانه كنجوم السماء , من شرب منها فلا يظمأ أبدا » . (رواه البخاري) .
“আমার হাউয (হাউযে কাউসার) এক মাসের দূরত্ব সমান (বড়) হবে; তার পানি হবে দুধের চেয়ে সাদা; তার ঘ্রাণ হবে মিশকের চেয়ে বেশি সুগন্ধযুক্ত এবং তার পাত্রগুলো হবে আকাশের তারকার মত অধিক। যে ব্যক্তি তা থেকে পান করবে, সে আর কখনও পিপাসার্ত হবে না।”[71]
৪৪. আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« إن قدر حوضي كما بين أيلة وصنعاء من اليمن , وإن فيه من الأباريق كعدد نجوم السماء » . (رواه البخاري و مسلم ) .
“আমার হাউযের পরিমাণ হল ইয়ামানের আয়লা ও সান‘আ নামক স্থানদ্বয়ের দূরত্বের সমান; আর তার পানপত্রসমূহ আকাশের তারকারাজির সংখ্যাতুল্য।”[72]
৪৫. আবূ হাযেম র. থেকে বর্ণিত, তিনি সাহল ইবন সা‘দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« أنا فرطكم على الحوض , من مر علي شرب , ومن شرب لم يظمأ أبدا, ليردن علي أقوام أعرفهم ويعرفونني , ثم يحال بيني وبينهم » . قال أبو حازم : فسمعني النعمان بن أبي عياش , فقال : هكذا سمعت من سهل ؟ فقلت نعم , فقال : أشهد على أبي سعيد الخدري لسمعته وهو يزيد فيها : « فأقول : إنهم مني , فيقال : إنك لا تدري ما أحدثوا بعدك . فأقول سحقا سحقا لمن غير بعدي » . (رواه البخاري و مسلم ) .
“আমি তোমাদের আগে হাউযের ধারে পৌঁছব। যে আমার নিকট দিয়ে অতিক্রম করবে, সে হাউযের পানি পান করবে; আর যে (হাউযের) পানি পান করবে, সে আর কখনও পিপাসার্ত হবে না। নিঃসন্দেহে কিছু সম্প্রদায় আমার সামনে (হাউযে) উপস্থিত হবে। আমি তাদেরকে চিনতে পারব, আর তারাও আমাকে চিনতে পারবে। এরপর আমার এবং তাদের মাঝে প্রতিবন্ধকতার দেয়াল তৈরি করে দেয়া হবে। বর্ণনাকারী আবূ হাযিম বলেন: নুমান ইবন আবূ ‘আইয়্যাশ আমার কাছ থেকে হাদিস শ্রবণ করার পর বললেন, তুমিও কি সাহল থেকে এরূপ শুনেছ? তখন আমি বললাম: হ্যাঁ। তিনি বললেন: আমি আবূ সা‘ঈদ খুদরী রা. সম্পর্কে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি তার কাছ থেকে এতটুকু অতিরিক্ত শুনেছি যে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আমি তখন বলব: এরা তো আমারই উম্মত; তখন বলা হবে, তুমি তো জান না, তোমার পরে এরা কি সব নতুন নতুন কীর্তিকলাপ করেছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তখন আমি বলব: আমার পরে যারা দীনের মাঝে পরিবর্তন এনেছে, তারা আল্লাহর রহমত থেকে দূরে থাকুক।”[73]
ইমাম বুখারী র. বলেছেন: “ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন: سحقاঅর্থ- দূরত্ব / দূর হউক।
অর্থসহ হাদিসের বিশেষ শব্দ-তালিকা:
( الفرط ): যিনি সর্বপ্রথম আগমন করবেন তাদের জন্য হাউয, বালতি ও পানি পানের অন্যান্য উপকরণসমূহকে যথাযথভাবে প্রস্তুত করে রাখার জন্য।
(فرطكم على الحوض ): হাউযের নিকট পৌঁছার ক্ষেত্রে আমি তোমাদের সকলের অগ্রগামী হব।
৪৬. আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« ما بين بيتي ومنبري روضة من رياض الجنة , ومنبري على حوضي » . (رواه البخاري و مسلم ) .
“আমার ঘর এবং আমার মিম্বরের মধ্যবর্তী স্থান জান্নাতের বাগানসমূহের মধ্য থেকে একটি বাগান। আর আমার মিম্বর আমার হাউযের উপর অবস্থিত।”[74]
৪৭. আসমা বিনত আবি বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« إني على الحوض , حتى أنظر من يرد علي منكم , وسيؤخذ ناس دوني , فأقول : يا رب ! مني ومن أمتي . فيقال: هل شعرت ما عملوا بعدك ؟ والله , ما برحوا يرجعون على أعقابهم » . فكان ابن أبي مليكة يقول : اللهم! إنا نعوذ بك أن نرجع على أعقابنا , أو نفتن عن ديننا » . (رواه البخاري و مسلم ) .
“নিশ্চয়ই আমি হাউযের তীরে থাকব। যাতে করে তোমাদের মাঝ থেকে যারা আমার কাছে আসবে, আমি তাদেরকে দেখতে পাই। তখন কিছু লোককে আমার সামনে থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হবে; তখন আমি বলব: হে আমার প্রতিপালক! এরা আমার লোক, এরা আমার উম্মত। তখন বলা হবে: তুমি কি জান তোমার পরে এরা কি সব করেছে? আল্লাহর কসম! এরা দীন থেকে সর্বদাই পশ্চাদমুখী হয়েছিল।”[75]
তখন ইবন আবি মুলায়কা বললেন: হে আল্লাহ! দীন থেকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করা থেকে অথবা দীনের ব্যাপারে ফিতনায় পতিত হওয়া থেকে আমরা তোমার কাছে আশ্রয় চাই।
৪৮. আবূ যর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
« قُلْتُ : يَا رَسُولَ اللَّهِ ! مَا آنِيَةُ الْحَوْضِ ؟ قَالَ : « وَالَّذِى نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لآنِيَتُهُ أَكْثَرُ مِنْ عَدَدِ نُجُومِ السَّمَاءِ وَكَوَاكِبِهَا , أَلاَ فِى اللَّيْلَةِ الْمُظْلِمَةِ الْمُصْحِيَةِ , آنِيَةُ الْجَنَّةِ مَنْ شَرِبَ مِنْهَا لَمْ يَظْمَأْ آخِرَ مَا عَلَيْهِ , يَشْخُبُ فِيهِ مِيزَابَانِ مِنَ الْجَنَّةِ , مَنْ شَرِبَ مِنْهُ لَمْ يَظْمَأْ , عَرْضُهُ مِثْلُ طُولِهِ , مَا بَيْنَ عَمَّانَ إِلَى أَيْلَةَ , مَاؤُهُ أَشَدُّ بَيَاضًا مِنَ اللَّبَنِ , وَأَحْلَى مِنَ الْعَسَلِ » . (رواه مسلم ) .
“আমি বললাম: হে আল্লাহর রাসূল! হাউযের পাত্র সংখ্যা কত হবে? জবাবে তিনি বললেন: “যাঁর হাতে আমার জীবন, তাঁর কসম! সেই হাউযের পাত্র এমন রাতের আকাশের নক্ষত্র ও তারকারাজির চেয়েও বেশি, যার অন্ধকারে কোন পরিবর্তন ঘটে না। ঐ পাত্র জান্নাতেরই পাত্র; যে ব্যক্তি ঐ পাত্র থেকে পান করবে, সে ব্যক্তি শেষ পর্যন্ত আর পিপাসার্ত হবে না। ঐ হাউযের মধ্যে জান্নাত থেকে প্রবাহিত দু’টি নালার সংযোগ রয়েছে। যে ব্যক্তি ঐ হাউয থেকে পান করবে, সে আর পিপাসার্ত হবে না। সেই হাউযের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ সমান হবে, সেই হাউযের প্রশস্ততা আম্মান থেকে আয়লার মধ্যবর্তী দূরত্বের সমান। সেই হাউযের পানি দুধের চেয়ে বেশি সাদা এবং মধুর চেয়ে বেশি মিষ্টি।”[76]
৪৯. সাওবান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« حوضي ما بين عدن إلى عمان , ماؤه أحلى من العسل , و أشَدُّ بَيَاضًا مِنْ اللَّبَنِ , و أكوابه كنجوم السماء , من شرب منه لم يظمأ بعدها أبدا , أول الناس عليّ ورودا فقراء المهاجرين , الشعث رؤوسا , الدنس ثيابا , الذين لا تفتح لهم أبواب السدد , لا ينكحون المنعمات , والذين يعطون كل الذي عليهم , ولا يعطون الذي لهم » .
“আমার হাউযের বড়ত্ব ‘আদন’ থেকে ‘আম্মান’ পর্যন্ত দূরত্বের সমান; তার পানি মধুর চেয়ে বেশি মিষ্টি, দুধের চেয়ে অনেক বেশি সাদা, তার পাত্রের সংখ্যা আকাশের তারকারাজির মত; যে ব্যক্তি তার থেকে পান করবে, সে আর কোন দিন পিপাসার্ত হবে না। আমার নিকট সর্বপ্রথম আগমনকারী ব্যক্তি হবে হতদরিদ্র মুহাজিরগণ, যাদের এলোমেলো মাথা ও মলিন পোশাক, যাদের জন্য ন্যায্য দরজাসমূহ খোলা হয় না, যারা প্রাচুর্যশালী নারীদেরকে বিয়ে করতে সক্ষম হয় না; আর যাদের কাছ থেকে তাদের উপর ন্যস্ত যাবতীয় বস্তু আদায় করে নেওয়া হয়, অথচ তাদের অধিকার সঠিকভাবে তাদেরকে দেয়া হয় না।”[77]
৫০. ‘উকবা ইবন ‘আমের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
« أن النبي صلى الله عليه و سلم خرج يوما , فصلى على أهل أحد صلاته على الميت , ثم انصرف على المنبر , فقال : « إني فرط لكم , وأنا شهيد عليكم , وإني والله لأنظر إلى حوضي الآن , وإني أعطيت مفاتيح خزائن الأرض أو مفاتيح الأرض , وإني والله ما أخاف عليكم أن تشركوا بعدي , ولكن أخاف عليكم أن تنافسوا فيها » . (رواه البخاري و مسلم ) .
“নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন বের হলেন এবং ওহুদ যুদ্ধে শহীদদের প্রতি জানাযার সালাতের মত করে সালাত আদায় করলেন; অতঃপর তিনি মিম্বরে ফিরে এসে বললেন: “নিশ্চয়ই আমি তোমাদের জন্য হাউযের কিনারে আগে পৌঁছব। নিশ্চয় আমি তোমাদের (কার্যাবলীর) সাক্ষী হব। আল্লাহর কসম! আমি এই মুহূর্তে আমার হাউয দেখতে পাচ্ছি। নিশ্চয়ই আমাকে বিশ্ব ভাণ্ডারের চাবি প্রদান করা হয়েছে, অথবা (বলেছেন) বিশ্বের চাবি প্রদান করা হয়েছে। আল্লাহর কসম! আমার মৃত্যুর পর তোমরা শির্ক করবে এ ভয় করি না; তবে তোমাদের সম্পর্কে আমার ভয় হয় যে, দুনিয়া অর্জনে তোমরা পরস্পরে প্রতিযোগিতা করবে।”[78]
* * *
ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ
জান্নাতের বৃক্ষ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿وَأَصۡحَٰبُ ٱلۡيَمِينِ مَآ أَصۡحَٰبُ ٱلۡيَمِينِ ٢٧ فِي سِدۡرٖ مَّخۡضُودٖ ٢٨ وَطَلۡحٖ مَّنضُودٖ ٢٩ وَظِلّٖ مَّمۡدُودٖ ٣٠ وَمَآءٖ مَّسۡكُوبٖ ٣١ وَفَٰكِهَةٖ كَثِيرَةٖ ٣٢ ﴾ [الواقعة: ٢٧، ٣٢]
“আর ডান দিকের দল, কত ভাগ্যবান ডান দিকের দল! তারা থাকবে এমন উদ্যানে, যাতে আছে কাঁটাহীন কুলগাছ এবং কাঁদি ভরা কলা গাছ; আর সম্প্রসারিত ছায়া; আর সদা প্রবাহমান পানি এবং প্রচুর ফলমূল।”[79]
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ وَلِمَنۡ خَافَ مَقَامَ رَبِّهِۦ جَنَّتَانِ ٤٦ فَبِأَيِّ ءَالَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ ٤٧ ذَوَاتَآ أَفۡنَانٖ ٤٨ ﴾ [الرحمن: ٤٦، ٤٨]
“আর যে তার রবের সম্মুখে উপস্থিত হওয়ার ভয় রাখে, তার জন্য রয়েছে দুটি উদ্যান। কাজেই তোমরা উভয়ে তোমাদের রবের কোন অনুগ্রহে মিথ্যারোপ করবে? উভয়ই বহু শাখা-পল্লববিশিষ্ট।”[80]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ وَمِن دُونِهِمَا جَنَّتَانِ ٦٢ فَبِأَيِّ ءَالَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ ٦٣ مُدۡهَآمَّتَانِ ٦٤ ﴾ [الرحمن: ٦٢، ٦٤]
“এ উদ্যান দুটি ছাড়া আরো দুটি উদ্যান রয়েছে। কাজেই তোমরা উভয়ে তোমাদের রবের কোন অনুগ্রহে মিথ্যারোপ করবে? ঘন সবুজ এ উদ্যান দু’টি।”[81]
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ إِنَّ ٱلۡمُتَّقِينَ فِي ظِلَٰلٖ وَعُيُونٖ ٤١ ﴾ [المرسلات: ٤١]
৫১. আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« إن في الجنة شجرة , يسير الراكب في ظلها مائة عام لا يقطعها » . إن شئتم فاقرؤوا : ﴿ وَظِلّٖ مَّمۡدُودٖ ٣٠ وَمَآءٖ مَّسۡكُوبٖ ٣١ ﴾ (رواه البخاري) .
“নিশ্চয়ই জান্নাতের মাঝে এমন একটি বৃক্ষ হবে, যার ছায়ার মাঝে একজন আরোহী একশ বছর পর্যন্ত ভ্রমণ করতে পারবে, তবুও বৃক্ষের ছায়াকে অতিক্রম করতে পারবে না। যদি তোমরা চাও, তাহলে তোমরা পাঠ কর: (আর সম্প্রসারিত ছায়া এবং সদা প্রবাহমান পানি)।”[83]
৫২. আবূ সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إن في الجنة لشجرة , يسير الراكب الجواد المضمر السريع مائة عام ما يقطعها» . (رواه البخاري و مسلم) .
“নিশ্চয়ই জান্নাতের মাঝে এমন একটি বৃক্ষ হবে, যার ছায়ায় উৎকৃষ্ট, উৎফুল্ল ও দ্রুতগামী অশ্বের একজন আরোহী একশ বছর পর্যন্ত ভ্রমণ করতে পারবে, তবুও তার ছায়া অতিক্রম করতে পারবে না।”[84]
৫৩. আসমা বিনত আবি বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সিদরাতুল মুন্তাহার ব্যাপারে আলোচনা করতে শুনেছি, তখন তিনি বলেছেন:
«يسير الراكب في ظل الفنن منها مائة سنة , أو يستظل بظلها مائة راكب شك يحيى, فيها فراش الذهب , كأن ثمرها القلال» . (رواه الترمذي) .
“তার একটি ডালের ছায়ায় একজন আরোহী একশ বছর পর্যন্ত ভ্রমণ করতে পারবে, অথবা তার ছায়া দ্বারা একশত আরোহী ছায়া লাভ করতে পারবে (বর্ণনাকারী ইয়াহইয়া সন্দেহ করেছেন); তাতে স্বর্ণের পতঙ্গ থাকবে, তার ফলগুলো যেন কলসির মত (বড়)।”[85]
৫৪. আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
« نَخْلُ الْجَنَّةِ جُذُوعُهَا زُمُرُّدٌ أَخْضَرُ ، وَكَرَبُهَا ذَهَبٌ أَحْمَرُ ، وَسَعَفُهَا كِسْوَةٌ لأَهْلِ الْجَنَّةِ ، مِنْهَا مُقَطَّعَاتُهُمْ وَحُلَلُهُمْ ، وَثَمَرُهَا أَمْثَالُ الْقِلالِ و الدِّلاءِ ، أَشَدُّ بَيَاضًا مِنَ اللَّبَنِ ، وَأَحْلَى مِنَ الْعَسَلِ , وَأَلْيَنُ مِنَ الزُّبْدِ , لَيْسَ فيها عَجْمٌ » .
“জান্নাতের খেজুর গাছের কাণ্ডসমূহ হবে সবুজ পান্নার, মূলসমূহ হবে লাল স্বর্ণের এবং তার ডালসমূহ হবে জান্নাতবাসীদের আচ্ছাদন; তার থেকে তাদের কাপড়ের টুকরা ও পোষাক-পরিচ্ছদের ব্যবস্থা হবে এবং তার ফলসমূহ হবে কলসি ও বালতির মত বড় আকৃতির, দুধের চেয়ে অনেক বেশি সাদা, মধুর চেয়ে অনেক বেশি মিষ্টি এবং মাখনের চেয়ে অধিক নরম, তাতে কোনো বীচি থাকবে না।”[86]
৫৫. আবূ সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« طوبى شجرة في الجنة مسيرة مائة عام , ثياب أهل الجنة تخرج من أكمامها» . (رواه أحمد) .
“‘তুবা’ জান্নাতের একটি বৃক্ষ, যার বড়ত্ব একশ বছরের পথের সমান; জান্নাতবাসীদের বস্ত্র তার আবরণ থেকে বেরিয়ে আসবে।”[87]
৫৬. আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« ما في الجنة شجرة إلا وساقها من ذهب » . (رواه الترمذي) .
৫৭. আবদুল্লাহ ইবন ‘আমর ইবনিল ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« سيد ريحان الجنة الحناء » . (رواه الطبراني) .
৫৮. আবদুল্লাহ ইবন মাস‘উদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« لقيت إبراهيم ليلة أسري بي , فقال : يا محمد ! أقرئ أمتك مني السلام , وأخبرهم أن الجنة طيبة التربة , عذبة الماء , وأنها قيعان , وأن غراسها : سبحان الله , والحمد لله , ولا إله إلا الله , والله أكبر » . (رواه الترمذي) .
“মিরাজের রজনীতে আমি ইবরাহীম আ. এর সাথে সাক্ষাৎ করলাম, তখন তিনি বললেন: হে মুহাম্মদ! তুমি আমার পক্ষ থেকে তোমার উম্মতকে সালাম পেশ করো এবং তাদেরকে জানিয়ে দাও যে, জান্নাতের মাটি সুগন্ধময়, মিষ্টি পানি; আর তা হল সমতল ভূমি এবং তার বৃক্ষরোপন হল: সুবহানাল্লাহ (سبحان الله ), আলাহমদুলিল্লাহ ( الحمد لله ), লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ (لا إله إلا الله ) এবং আল্লাহু আকবার (الله أكبر) ।”[90]
* * *
[1] প্রকৃতপক্ষে এই বইয়ের দ্বিতীয় সংস্করণে হাদিসের সংখ্যা হবে ৯৫টি; কেননা, হাদিসের ক্রমিক নং উল্লেখ করার সময় ৭১ এর পরে ৭২ না লিখে ৭৩ লিখেছেন। আর আমিও লেখক যেভাবে হাদিসের ক্রমিক সংখ্যা ব্যবহার করেছেন ঠিক সেভাবে ব্যবহার করেছি। - অনুবাদক।
[2] বুখারী, আস-সহীহ, অধ্যায়: যিম্মীদের থেকে জিযিয়া গ্রহণ এবং হারবীদের সাথে যুদ্ধ বিরতি চুক্তি (أبواب الجزية والموادعة), পরিচ্ছেদ: বিনা অপরাধে যে ব্যক্তি যিম্মীকে হত্যা করবে, তার অপরাধ (باب إثم من قتل معاهدا بغير جرم), হাদিস নং- ২৯৯৫।
[3] সূরা আর-রা‘দ: ২৩ - ২৪
[4] সূরা সোয়াদ: ৪৯ - ৫০
[5] সূরা যুমার: ৭৩
[6] বুখারী, আস-সহীহ, অধ্যায়: নবীগণ (كتاب الأنبياء), পরিচ্ছেদ: তার কথা: হে আহলে কিতাব! তোমরা তোমাদের দীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করো না ... (باب قوله : يا أهل الكتاب لا تغلوا في دينكم...), হাদিস নং- ৩২৫২
[7] বুখারী, আস-সহীহ, অধ্যায়: সাওম (كتاب الصوم), পরিচ্ছেদ: সাওম পালনকারীদের জন্য রাইয়্যান (باب الريان للصائمين), হাদিস নং- ১৭৯৮; মুসলিম (৭ / ১১৬ - নববী)।
[9] বুখারী, আস-সহীহ, অধ্যায়: তাফসীর (كتاب التفسير), পরিচ্ছেদ: সূরা বনী ইসরাঈল [আল-ইসরা] (باب سورة بني إسرائيل [ الإسراء ]), হাদিস নং- ৪৪৩৫; মুসলিম (৩ / ৬৯ - নববী)।
[10] বুখারী, আস-সহীহ (৬ / ৩২৮ – ফতহুল বারী); আহমদ র. এর বর্ণনাটিকে আলবানী বিশুদ্ধ বলেছেন: ‘আস-সহীহা’ ( الصحيحة ), ক্রমিক নং- ১৮১২
[13] মুসলিম, ঈমান অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী: “আমি প্রথম ব্যক্তি, যে জান্নাতের ব্যাপারে আল্লাহর কাছে শাফা‘আত করব, আর নবীগণের মধ্যে আমার অনুসারীর সংখ্যাই হবে সবচেয়ে বেশি” (باب فِى قَوْلِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم: « أَنَا أَوَّلُ النَّاسِ يَشْفَعُ فِى الْجَنَّةِ وَأَنَا أَكْثَرُ الأَنْبِيَاءِ تَبَعًا »), হাদিস নং- ৫০৫
[14] মুসলিম, ঈমান অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী: “আমি প্রথম ব্যক্তি, যে জান্নাতের ব্যাপারে আল্লাহর কাছে শাফা‘আত করব, আর নবীগণের মধ্যে আমার অনুসারীর সংখ্যাই হবে সবচেয়ে বেশি” (باب فِى قَوْلِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم: « أَنَا أَوَّلُ النَّاسِ يَشْفَعُ فِى الْجَنَّةِ وَأَنَا أَكْثَرُ الأَنْبِيَاءِ تَبَعًا »), হাদিস নং- ৫০৭
[15] সূরা যুমার: ৭৩
[16] মুসলিম, হায়েয অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: পুরুষ ও মহিলার বীর্যের বিবরণ এবং সন্তান যে উভয়ের বীর্য ও ডিম্ব থেকে সৃষ্টি হয় তার বর্ণনা (باب بَيَانِ صِفَةِ مَنِىِّ الرَّجُلِ وَالْمَرْأَةِ وَأَنَّ الْوَلَدَ مَخْلُوقٌ مِنْ مَائِهِمَ), হাদিস নং- ৭৪২
[17] তিরমিযী (৩ / ৮৪) এবং তিনি বলেছেন: হাদিসটি হাসান, সহীহ; আর আলবানীও হাদিসটিকে হাসান, সহীহ বলেছেন।
[19] সূরা ইবরাহীম: ২৩
[20] সূরা আল-আ‘রাফ: ৪৯
[21] সূরা আন-নাহল: ৩২
[22] সূরা আল-হিজর: ৪৫ - ৪৬
[23] বুখারী, আস-সহীহ, অধ্যায়: কোমল হওয়া (كتاب الرقاق), পরিচ্ছেদ: জান্নাত ও জাহান্নামের বর্ণনা (باب صفة الجنة والنار), হাদিস নং- ৬১৮৭; মুসলিম (৩ / ৯২ - নববী)।
[24] বুখারী, আস-সহীহ, অধ্যায়: আম্বীয়া (كتاب الأنبياء), পরিচ্ছেদ: আল্লাহ তা‘আলার বাণী (باب قول الله تعالى), হাদিস নং- ৩১৪৯; মুসলিম (১৭ / ১৭১ - নববী)।
[25] বুখারী, আস-সহীহ, অধ্যায়: সৃষ্টির সূচনা (كتاب بدء الخلق), পরিচ্ছেদ: জান্নাতের বর্ণনা প্রসঙ্গে যা এসেছে এবং তা (আল্লাহর) সৃষ্টি (باب ما جاء في صفة الجنة وأنها مخلوقة), হাদিস নং- ৩০৭৩; মুসলিম (১৭ / ১৭৩ - নববী)।
[26] তিরমিযী (৪ / ৮৮); আর হাইছামী ‘আল-মাজমা’ ( المجمع ) গ্রন্থের মধ্যে হাদিসটিকে হাসান বলেছেন (১০ / ৩৯৯)। আর আলবানীও হাদিসটিকে হাসান বলেছেন।
[27] বায়হাকী হাসান সনদে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন, যা আল-মুনযেরী ‘আত-তারগীব’ ( الترغيب ) নামক গ্রন্থের মধ্যে বলেছেন; তাবারানী।
[28] মুসলিম, অধ্যায়: ঈমান ( كتاب الإيمان ), পরিচ্ছেদ: জান্নাতের সবচেয়ে নিম্নস্তরের জান্নাতবাসী (باب أَدْنَى أَهْلِ الْجَنَّةِ مَنْزِلَةً فِيهَا), হাদিস নং- ৪৮৫
[29] সূরা ত্ব-হা: ৭৫
[30] সূরা আল-ইসরা: ২০ - ২১
[31] সূরা আন-নিসা: ৯৫ - ৯৬
[32] সূরা আল-মুজাদালা: ১১
[33] সূরা আলে ইমরান: ১৬২ - ১৬৩
[34] বুখারী, আস-সহীহ, অধ্যায়: সৃষ্টির সূচনা (كتاب بدء الخلق), পরিচ্ছেদ: জান্নাতের বর্ণনা প্রসঙ্গে যা এসেছে এবং তা (আল্লাহর) সৃষ্টি (باب ما جاء في صفة الجنة وأنها مخلوقة), হাদিস নং- ৩০৮৩; মুসলিম (১৭ / ১৬৯ - নববী)।
[35] বুখারী, আস-সহীহ, অধ্যায়: জিহাদ (كتاب الجهاد والسير), পরিচ্ছেদ: আল্লাহর পথে জিহাদকারীদের মর্যাদা (باب درجات المجاهدين في سبيل الله . يقال هذه سبيلي وهذا سبيلي), হাদিস নং- ২৬৩৭
[36] বুখারী, আস-সহীহ, অধ্যায়: মাগাযী (كتاب المغازي), পরিচ্ছেদ: বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীর মর্যাদা (باب فضل من شهد بدرا হাদিস নং- ৩৭৬১
[41] কিনতার ( قنطار ) শব্দের ব্যাখা: ‘কিনতার’ হল একটি বিশেষ পরিমাপ, যা বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন রকম হয়ে আসছে; একশ রতল; কোটি; অধিক সম্পদ। — দেখুন: ইসলামিক ফাউন্ডেশন আরবী - বাংলা অভিধান এবং ড. মুহাম্মদ ফজলুর রহমান, আরবী - বাংলা ব্যবহারিক অভিধান।
[42] হাইছামী ‘আল-মাজমা‘ ( المجمع ) এর মধ্যে (২ / ২৬৭) বলেন: তাবারানী ‘আল-কাবীর’ ( الكبير ) ও ‘আল-আওসাত’ ( الأوسط ) এর মধ্যে হাদিসখানা বর্ণনা করেছেন, তার সনদে ইসমাঈল ইবন ‘আইয়াশ নামে একজন বর্ণনাকারী আছেন, কিন্তু শামবাসীদের নিকট থেকে তার কিছু বর্ণনা রয়েছে, যা গ্রহণযোগ্য, আর এটি সেগুলোর অন্তর্গত।
[43] মুসলিম, অধ্যায়: সালাত (كتاب الصلاة), পরিচ্ছেদ: আযানের জবাবে মুয়াজ্জিনের অনুরূপ বলা মুস্তাহাব; এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ পাঠ করা এবং তাঁর জন্য ওসীলা’র দো‘য়া করা (باب اسْتِحْبَابِ الْقَوْلِ مِثْلَ قَوْلِ الْمُؤَذِّنِ لِمَنْ سَمِعَهُ ثُمَّ يُصَلِّى عَلَى النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم ثُمَّ يَسْأَلُ اللَّهَ لَهُ الْوَسِيلَةَ), হাদিস নং- ৮৭৫
[44] ইবনু আবিদ দুনিয়া; তাবারানী; আল-মুনযেরী ‘আত-তারগীব’ ( الترغيب ) নামক গ্রন্থের মধ্যে (৬ / ২৮৫) হাদিসটিকে হাসান বলেছেন; আর হাইছামীও ‘আল-মাজমা‘ ( المجمع ) এর মধ্যে (১০ / ৩৯৭) হাদিসটিকে হাসান বলেছেন।
[45] তাবারানী উত্তম সনদে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন, যা আল-মুনযেরী ‘আত-তারগীব’ ( الترغيب ) নামক গ্রন্থের মধ্যে (৬ / ২৮৭) বলেছেন।
[46] বুখারী, আস-সহীহ, অধ্যায়: আম্বীয়া (كتاب الأنبياء), পরিচ্ছেদ: ইদ্রিস আ. সম্পর্কে আলোচনা (باب ذكر إدريس عليه السلام), হাদিস নং- ৩১৬৪
[47] সূরা আত-তাওবা: ৭২
[48] সূরা সাবা: ৩৭
[49] সূরা আল-ফুরকান: ৭৫
[50] সূরা যুমার: ২০
[51] সূরা আর-রাহমান: ৭২
[52] বুখারী, আস-সহীহ (৮ / ২৬৪ - ফতহুল বারী) ; মুসলিম, অধ্যায়: জান্নাত এবং তার নিয়ামত ও অধিবাসীদের বর্ণনা (الجنة وصفة نعيمها وأهلها), পরিচ্ছেদ: জান্নাতের তাঁবুসমূহ এবং মুমিনদের জন্য তাতে যে পরিবার থাকবে তার বিবরণ প্রসঙ্গে (باب فِى صِفَةِ خِيَامِ الْجَنَّةِ وَمَا لِلْمُؤْمِنِينَ فِيهَا مِنَ الأَهْلِينَ), হাদিস নং- ৭৩৩৭।
[53] আহমদ; ইবন হিব্বান; ইমাম তিরমিযী র. হাদিসটি আলী রা. থেকে বর্ণনা করেছেন; আর তাবারানী ‘আল-কাবীর’ ( الكبير ) এর মধ্যে আবদুল্লাহ ইবন ‘আমর ইবনিল ‘আস রা. থেকে হাদিসখানা বর্ণনা করেছেন; আর আল-মুনযেরী ‘আত-তারগীব’ ( الترغيب ) নামক গ্রন্থের মধ্যে (২ / ২৪) হাদিসটিকে হাসান বলেছেন; আর অনুরূপ মন্তব্য করেছেন হাইছামী ‘আল-মাজমা‘ ( المجمع ) এর মধ্যে (১০ / ৩৯৭); আর এই হাদিসটি ‘সহীহুল জামে’ ( صحيح الجامع ) এর মধ্যে আছে (২ / ২২০)।
[54] বুখারী, আস-সহীহ, অধ্যায়: সাহাবীদের ফযীলত (كتاب فضائل الصحابة), পরিচ্ছেদ: নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে খাদিজা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার বিয়ে এবং তাঁর মর্যাদা (باب تزويج النبي صلى الله عليه و سلم خديجة وفضلها رضي الله عنه), হাদিস নং- ৩৬০৯; মুসলিম; আরও দেখুন: মিশকাতুল মাসাবীহ (৩ / ২৬৬)।
[55] আহমদ; আর আলবানী হাদিসটিকে ‘সহীহুল জামে’ ( صحيح الجامع ) এর মধ্যে (৫ / ২৬৫) সহীহ বলেছেন; আর সহীহাইন তথা বুখারী ও মুসলিমের মধ্যে উসমান ইবন ‘আফ্ফান রা. থেকে বর্ণনা করা হয়েছে।
[56] মুসলিম, অধ্যায়: মুসাফিরের সালাত (صلاة المسافرين), পরিচ্ছেদ: ফরযের আগে ও পরে নিয়মিত সুন্নাত সালাতের ফযীলত এবং তার রাকাত সংখ্যার বিবরণ (باب فَضْلِ السُّنَنِ الرَّاتِبَةِ قَبْلَ الْفَرَائِضِ وَبَعْدَهُنَّ وَبَيَانِ عَدَدِهِنَّ), হাদিস নং- ১৭২৯; আর এই হাদিসটি ‘সহীহুল জামে’ ( صحيح الجامع ) এর মধ্যে আছে, ক্রমিক নং- ৬২৩৪
[58] বুখারী, আস-সহীহ, অধ্যায়: যুলুম (كتاب المظالم), পরিচ্ছেদ: অপরাধের দণ্ড (باب قصاص المظالم), হাদিস নং- ২৩০৮
[60] সূরা মুহাম্মদ: ১৫
[61] সূরা আদ-দুখান: ৫১ - ৫২
[62] সূরা আর-রাহমান: ৫০
[63] সূরা আর-রাহমান: ৬৬
[64] তিরমিযী (৪ / ১০০), আর তিনি বলেন: হাদিসটি হাসান, সহীহ। আর আলবানী হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন।
[65] তিরমিযী (৫ / ১২০), আর তিনি বলেন: হাদিসটি হাসান, সহীহ। আর আলবানী হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন। ইবনু মাজাহ, হাদিস নং- ৪৩৩৪
[66] বুখারী, আস-সহীহ, অধ্যায়: কোমল হওয়া (كتاب الرقاق), পরিচ্ছেদ: হাউয (কাউসারের) বর্ণনা প্রসঙ্গে (باب في الحوض), হাদিস নং- ৬২১০
[68] ইবনু আবিদ দুনিয়া হাদিসটি হাসান সনদে বর্ণনা করেছেন, যা আল-মুনযেরী ‘আত-তারগীব’ ( الترغيب ) নামক গ্রন্থের মধ্যে (৬ / ২৯১) বলেছেন।
[69] আহমদ; হাকেম; আর আলবানী হাদিসটিকে ‘সহীহুল জামে’ ( صحيح الجامع ) এর মধ্যে (৩ / ২৩৫) হাসান বলেছেন।
[71] বুখারী, আস-সহীহ, অধ্যায়: কোমল হওয়া (كتاب الرقاق), পরিচ্ছেদ: হাউয (কাউসারের) বর্ণনা প্রসঙ্গে (باب في الحوض), হাদিস নং- ৬২০৮
[72] বুখারী, আস-সহীহ, অধ্যায়: কোমল হওয়া (كتاب الرقاق), পরিচ্ছেদ: হাউয (কাউসারের) বর্ণনা প্রসঙ্গে (باب في الحوض), হাদিস নং- ৬২০৯; মুসলিম (৯ / ৬২ - নববী)।
[73] বুখারী, আস-সহীহ, অধ্যায়: কোমল হওয়া (كتاب الرقاق), পরিচ্ছেদ: হাউয (কাউসারের) বর্ণনা প্রসঙ্গে (باب في الحوض), হাদিস নং- ৬২১২; মুসলিম (১৫ / ৫৩ - নববী)।
[74] বুখারী, আস-সহীহ, অধ্যায়: কোমল হওয়া (كتاب الرقاق), পরিচ্ছেদ: হাউয (কাউসারের) বর্ণনা প্রসঙ্গে (باب في الحوض), হাদিস নং- ৬২১৬; মুসলিম (৯ / ৬২ - নববী)।
[75] বুখারী, আস-সহীহ, অধ্যায়: কোমল হওয়া (كتاب الرقاق), পরিচ্ছেদ: হাউয (কাউসারের) বর্ণনা প্রসঙ্গে (باب في الحوض), হাদিস নং- ৬২২০; মুসলিম (১৫ / ৫৫ - নববী)।
[76] মুসলিম, আস-সহীহ, অধ্যায়: ফাদায়েল (الفضائل), পরিচ্ছেদ: আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য হাউয সাব্যস্ত হওয়া এবং তার বিবরণ প্রসঙ্গে (باب إِثْبَاتِ حَوْضِ نَبِيِّنَا -صلى الله عليه وسلم- وَصِفَاتِهِ), হাদিস নং- ৬১২৯
[78] বুখারী, আস-সহীহ, অধ্যায়: কোমল হওয়া (كتاب الرقاق), পরিচ্ছেদ: হাউয (কাউসারের) বর্ণনা প্রসঙ্গে (باب في الحوض), হাদিস নং- ৬২১৮; মুসলিম (১৫ / ৫৭ - নববী)।
[83] বুখারী, আস-সহীহ, অধ্যায়: সৃষ্টির সূচনা (كتاب بدء الخلق), পরিচ্ছেদ: জান্নাতের বর্ণনা প্রসঙ্গে যা এসেছে এবং তা (আল্লাহর) সৃষ্টি (باب ما جاء في صفة الجنة وأنها مخلوقة), হাদিস নং- ৩০৭৯
[84] বুখারী, আস-সহীহ, অধ্যায়: কোমল হওয়া (كتاب الرقاق), পরিচ্ছেদ: জান্নাত ও জাহান্নামের বর্ণনা প্রসঙ্গে (باب صفة الجنة والنار), হাদিস নং- ৬১৮৬; মুসলিম (১৭ / ১৬৭ - নববী)।
[86] ইবনু আবিদ দুনিয়া হাদিসটিকে এভাবে ‘মাওকুফ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন, তার সনদ উৎকৃষ্ট; যেমনটি আল-মুনযেরী ‘আত-তারগীব’ ( الترغيب ) নামক গ্রন্থের মধ্যে (৬ / ২৯৫) বলেছেন।
[87] আহমদ; আর আলবানী হাদিসটিকে ‘সহীহুল জামে’ ( صحيح الجامع ) এর মধ্যে হাসান বলেছেন, ক্রমিক নং- ৫৫২৩।
[88] তিরমিযী; আর আলবানী হাদিসটিকে ‘সহীহুল জামে’ ( صحيح الجامع ) এর মধ্যে সহীহ বলেছেন, ক্রমিক নং- ৫৫২৩।
[89] তাবারানী, ‘আল-কাবীর’ ( الكبير); আর আলবানী হাদিসটিকে ‘আস-সহীহা’ (الصحيحة ) নামক গ্রন্থের মধ্যে (৩ / ৪০৭) সহীহ বলেছেন, ক্রমিক নং- ১৪২০
[90] তিরমিযী; আর আলবানী হাদিসটিকে ‘সহীহুল জামে’ ( صحيح الجامع ) এর মধ্যে হাসান বলেছেন, ক্রমিক নং- ৫০২৮
_________________________________________________________________________________
সংকলন : ওয়াহিদ ইবন আবদিস সালাম বালী
অনুবাদক : মোঃ আমিনুল ইসলাম
সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
সূত্র : ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন