Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

See Our Articles In Different Styles... Grid View List View

বৃহস্পতিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৩

মুক্তিপ্রাপ্ত দলের পাথেয় (১ম পর্ব)

Views:

A+ A-

মুক্তিপ্রাপ্ত দলের পাথেয় (১ম পর্ব)




ভূমিকা
বিসমিল্লাহির রহমানির রাহীম
(পরম দয়ালু, করুণাময় আল্লাহর নামে শুরু করছি)
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের। আমরা তাঁর প্রশংসা করছি, তাঁর সাহায্য প্রার্থনা করছি এবং তাঁর নিকট ক্ষমা চাচ্ছি । অন্তরের অনিষ্ট (কুমন্ত্রণা) এবং মন্দ আমল হতে তাঁর আশ্রয় প্রার্থনা করছি। যাকে আল্লাহ হিদায়েত দান করেন তাকে কেউ পথভ্রষ্ট করতে পারে নাআর যে গোমরাহ হয়ে যায় তাকে কেউ হিদায়েত দিতে পারে না
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি
আল্লাহ ছাড়া সত্যিকারের কোনো মাবুদ নেই এবং তাঁর কোনো শরিক নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল
পূর্ব যুগে মানুষের দু:খ-দুর্দশা বিশেষত: মুসলমানদের কষ্ট-মুসিবত, যুদ্ধ-ফেতনা ইত্যাদির কারণ অনুসন্ধান করে দেখা গেছে তাওহিদ সম্পর্কে জ্ঞানের অপ্রতুলতা, উদাসীনতা ও নানা শিরকি কাজে জড়িয়ে পড়াই ছিল এর মূল কারণ। শিরকমুক্ত তাওহিদের চর্চ-অনুশীলন না থাকার সুযোগটি শয়তান গ্রহণ করেছে  এবং তাদের বিভ্রান্ত করে বিভিন্ন বিপদে ফেলতে সক্ষম হয়েছে তাই আমরা এ ছোট্ট বইটিতে তাওহিদশিরকসহ ইসলামের বেশ কিছু মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করার চেষ্ট করেছি। এবং বইয়ের মাধ্যমেই বিশ্বের সকল ইসলাম অনুসারীকে যাবতীয় শিরকি কর্মকাণ্ড হতে বিরত থেকে খালেছ তাওহিদের ছায়াতলে অবস্থান নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি পাঠকের সুবিধার কথা বিবেচনায় নিয়ে প্রতিটি বিষয় সংক্ষেপে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি যাতে তারা বিষয়গুলো সহজে বুঝতে পারে
এটি রচনার মাধ্যমে আমরা -মুক্তি প্রাপ্ত দলের আক্বিদাহ ও সাহায্যপ্রাপ্ত দলের রাস্তা- খোঁজার চেষ্টা করেছি যাতে ঐ রাস্তায় চলে জয়যুক্ত ও কামিয়াব হতে পারি
মহান আল্লাহর নিকট আকুল আবেদন, হে আল্লাহ তুমি আমাদেরকে নাযাতপ্রাপ্ত দলের অন্তর্ভূক্ত করে নাও


শায়খ মুহাম্মাদ বিন জামীল যাইনু
শিক্ষক, দারুল হাদিস
মক্কা,সৌদি আরব

জয়যুক্ত দল

 আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّهِ جَمِيعًا وَلَا تَفَرَّقُوا (آل عمران 103)
অর্থাৎ : আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ কর এবং বিভক্ত হয়ো না।  (সূরা আলে ইমরান, ১০৩ আয়াত)
 অন্যত্র বলেন :
وَلَا تَكُونُوا مِنَ الْمُشْرِكِينَ ﴿31﴾ مِنَ الَّذِينَ فَرَّقُوا دِينَهُمْ وَكَانُوا شِيَعًا كُلُّ حِزْبٍ بِمَا لَدَيْهِمْ فَرِحُونَ ﴿الروم32﴾
অর্থাৎ তোমরা ঐ মুশরিকদের অন্তর্ভূক্ত হয়ো না, যারা দ্বীনকে টুকরা টুকরা করে ফেলেছে এবং যারা দলে দলে বিভক্ত হয়েছেপ্রত্যেক দল তাদের কাছে যা ছিল তাই নিয়েই খুশি (সূরা রূম, ৩০৩১ ও ৩২ আয়াত)
 প্রিয় নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : 
 وَقَالَ صلى اللّه عليه وسلَّمَ: أٌوْصِيْكُمْ بتَقْوَى اللَّه عَزَّ وَجَلَّ وَالسًّمْعِ وَالطَّاعَةِ وَإنْ تأمَّرَ عَلَيْكُمْ عَبْدٌ حَبَشِيٌ فَإنَّهُ مَنْ يَعِشْ مِنْكُمْ فَسَيَرى اخْتِلافًا كَثِيْرًا فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلفَاءِ الرَّاشِدينَ الْمَهْديِّينَ تَمَسَّكُوْا بِهَا وَ عَضُّوْا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ وَاِيَّاكُمْ وَ مُحْدَثاتِ الأمُوْرِ فَإنَّ كُلَّ مُحْدَثةٍ بِدْعَةٌ وَ كُلَّ بِدْعَةٍ ضَلالَةٌ وَ كُلُّ ضَلالَةٍ فِى النَّارِ (رواه أبو داود وغيره)
অর্থাৎ, আমি তোমাদেরকে উপদেশ দিচ্ছি আল্লাহকে ভয় করার, শোনা ও মান্য করার, যদিও তোমাদের আমীর হয় কোনো হাবশি দাস কারণ তোমাদের মধ্যে যারা বেঁচে থাকবে নানা মতবিরোধ দেখতে পাবে তখন তোমাদের করণীয় হবে, আমার সুন্নত এবং হেদায়েত প্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদীনদের সুন্নতকে নিজেদের উপর অপরিহার্য করে নেওয়া সেসব সুন্নতকে মুজবুতভাবে, চোয়ালের দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরার ন্যায় আঁকড়ে ধরবে  দ্বীনের মধ্যে নতুন কোনো আমল সংযোজনের ব্যাপারে খুবই সাবধান থাকবেনিশ্চয়ই সমস্ত নতুন আমলই বিদআত এবং সমস্ত বিদআতই গোমরাহী এবং সমস্ত গোমরাহি জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে) (আবু দাউদ এবং অন্যান্য, ছহীহ)
 রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেনঃ
وَقَالَ صلى اللّه عليه وسلَّمَ: ألاَ وَإنَّ مَنْ قَبْلَكُمْ مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ افْتَرَقُوْا عَلى ثِنْتَيْنِ وَسِبْعِيْنَ مِلَّةً وَإنَّ هذهِ الْمِلَّةَ سَتَفْتَرِقُ على ثَلاثٍ وَسَبْعيْنَ‌‌: ثِنْتَانِ وَسَبْعِوْنَ فى النَّارِ وَوَحِدَةً فى الْجَنَّةِ وهِىَ الْجَمَاعَةُ.   (رواه أحمد وغيره وحسنه الحافظ))
অর্থাৎওহেতোমাদের পূর্বে আগত আহলে কিতাব (ইহুদি ও নাসারা)-রা ৭২ দলে বিভক্ত হয়েছিল এবং এ উম্মত বিভক্ত হবে ৭৩ দলে ৭২ দল যাবে জাহান্নামে এবং একটি মাত্র দল প্রবেশ করবে জান্নাতে তারাই হল (আহলে সুন্নাত ওয়াল) জামাআত (আহমদ, হাসান)
অন্য হাদিসে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
كُلُّهُمْ فى النَّارِ إلاَّ مِلّةٌ واحِدَةٌ ما أنا عَلَيْهِ وَأصْحَابيْ      (الترمذي حسن)
আর্থাৎ,একমাত্র আমি এবং আমার সাহাবিদের মতের অনুসারী দল ব্যতীত সকলেই জাহান্নামে যাবে (তিরমিযি, হাসান)
 ইবনে মাসউদ রাহতে বর্ণিতঃ
خَطَّ لَنَا رَسُوْل الله صلى اللّه عليه وسلَّمَ خَطًّا بِيَدِهِ ثُمَّ قَالَ: هذا سَبِيْلُ الله مُسْتَقِيْمًا. وَ خَطّ خُطُوْطًا عَنْ يَمِيْنِهِ وَ شِمَالِهِ ثُمَّ قَالَ: هذه السُّبُلُ لَيْسَ مِنْها سَبِيْلٌ إلا عَلَيْهِ شَيْطَانٌ يَدْعُوا إلَيْهِ ثُمَّ قَرَأَ قَولهُ تَعَالى: (وَأَنَّ هَذَا صِرَاطِي مُسْتَقِيمًا فَاتَّبِعُوهُ وَلَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِيلِهِ ذَلِكُمْ وَصَّاكُمْ بِهِ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ) ﴿الانعام153﴾(رواه أحمد والنسائي صحيح)
অর্থাৎ আমাদের জন্য নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি দাগ টানলেন তারপর বললেনএটা আল্লাহর সোজা (সঠিক) রাস্তা তারপর তার ডানে ও বামে আরো কিছু দাগ টানলেন তারপর বললেনঃ এ রাস্তাগুলোর সবকটিতে শয়তান বসে মানুষদেরকে তার দিকে ডাকছে এরপর কুরআন থেকে পাঠ করলেন: আর এটি তো আমার সোজা পথ। সুতরাং তোমরা তার অনুসরণ কর এবং অন্যান্য পথ অনুসরণ করো না, তাহলে তা তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে। এগুলো তিনি তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর (আহমদ, নাসাঈ, হাকেম সহিহ)
 আব্দুল কাদের জিলানী রহঃ তাঁর গুনিয়াতুততালেবীন গ্রন্থে বলেছেন জয়জুক্ত দল হল আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত এবং তাঁদের একমাত্র নাম হল আসহাবুল হাদিস বা হাদিসের অনুসারী অর্থাৎ যারা হাদিস ও কুরআন মত চলে
 আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে হুকুম করছেনঃ আমরা যেন সকলে কুরআনকে আঁকড়ে ধরি এবং ঐ মুশরিকদের মত যেন না হই যারা তাদের দ্বীনের মধ্যে দলে দলে, গোত্রে গোত্রে বিভক্ত হয়েছে আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের জানাচ্ছেন, ইহুদি ও খৃষ্টানরা বহু দলে বিভক্ত হয়েছে আর মুসলিমরা তাদের থেকেও বেশী দলে বিভক্ত হবে এই দলে দলে বিচ্ছিন্নতার কারণে তারা জাহান্নামের আগুনে প্রবেশ করবে তাদের এ বিভক্তির কারণ হচ্ছে সঠিক পথ হতে বিচ্যুতি, আল্লাহ তাআলার কিতাব ও তাঁর রাসূলের সুন্নাহ থেকে দূরে সরে থাকা। তাদের একদল মুক্তি পেয়ে জয়জুক্ত হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করবে আর তাঁরাই সে দল যারা আল্লাহর কালাম ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহিহ হাদিসকে আঁকড়ে ধরবে এবং সাহাবিদের রাআমলসমূহ অনুসরণ করবে

নাজাতপ্রাপ্ত দলের  রাস্তা (পথ নির্দেশিকা)

 নাজাতপ্রাপ্ত দল বলে সে দলকে বুঝানো হয়েছে, যারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীবিত থাকা কালে তাঁর রাস্তাকে আঁকড়ে ধরেছেন দৃঢ়ভাবে তাঁর ওফাতের পর অনুসরণ করেছেন তাঁর সাহাবিদের রাস্তা অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি অবতীর্ণ আল-কোরআন প্রদর্শিত এবং তাঁর কর্ম-বক্তব্য-সমর্থনের মাধ্যমে কোরআনের ব্যাখ্যায় যে রাস্তা উদ্ভাসিত হয়েছে কাল পরিক্রমায় সহিহ হাদিসের মাধ্যমে যা আমাদের পর্যন্ত পৌঁছেছে এবং তিনি নিজ উম্মতকে মজবুতভাতে ধারণ করার নির্দেশ দিয়েছেন সেটিই হলো নাজাতপ্রাপ্ত দলের রাস্তা
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
تَرَكْتُ فِيْكُم شَيْئَيْنِ لَنْ تَضِلُّوا بَعْدَهُمَا: كِتَابَ اللهِ وَسُنَّتِي  (صححه الالباني في الجامع)
অর্থাৎ, তোমাদের মধ্যে আমি দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি যদি তোমরা সেগুলোকে আঁকড়ে ধর তাহলে কখনও পথভ্রষ্ট হবে না তা হলো আল্লাহর কিতাব ও আমার সুন্নাহ (ছহীহ, জামে সগীর)
 সে দলের অনন্য বৈশিষ্ট্য হল, তারা নিজেদের মাঝে কোনো বিষয়ে মতবিরোধ দেখা দিলে আল্লাহর নির্দেশ পালনার্থে সাথে সাথে আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের হাদিসের দিকে প্রত্যার্পণ করে
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَالرَّسُولِ إِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآَخِرِ ذَلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلًا ﴿النساء59﴾
অতঃপর কোনো বিষয়ে যদি তোমরা মতবিরোধ কর তাহলে তা আল্লাহ ও রাসূলের দিকে প্রত্যার্পণ করাও- যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখ। এটি উত্তম এবং পরিণামে উৎকৃষ্টতর (সূরা নিসা, ৪ ৫৯ আয়াত)
আল্লাহ আরো বলেন :
فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّى يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوا فِي أَنْفُسِهِمْ حَرَجًا مِمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا ﴿النساء65﴾

অর্থাৎ, অতএব তোমার রবের কসম, তারা মুমিন হবে না যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে বিচারক নির্ধারণ করে, তারপর তুমি যে ফয়সালা দেবে সে ব্যাপারে নিজদের অন্তরে কোনো দ্বিধা অনুভব না করে এবং পূর্ণ সম্মতিতে মেনে নেয় (সূরা নিসা ৪ ৬৫ আয়াত)
 এ দল আল্লাহ ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথার উপর কারও কথার প্রাধান্য দেয় না
কারণ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন :
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا لَا تُقَدِّمُوا بَيْنَ يَدَيِ اللَّهِ وَرَسُولِهِ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ سَمِيعٌ عَلِيمٌ ﴿الحجرات1﴾
অর্থাৎ, হে ঈমানদারগণতোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সামনে অগ্রবর্তী হয়ো না এবং আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করনিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতাসর্বজ্ঞ(সূরা হুজুরাত, ৪৯১ আয়াত)
ইবনে আব্বাস রাবলেছেন আমার আশঙ্কা হচ্ছে, না জানি তোমাদের উপর আকাশ থেকে আযাবের পাথর বর্ষিত হয় আমি তোমাদের বলি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এভাবে বলেছেন, আর তোমরা বল আবু বকর রাও উমর রাএভাবে বলেছেন
 নাজাতপ্রাপ্ত দলের আরো একটি পরিচয় হলো, সর্বক্ষেত্রে তারা তাওহিদকে অগ্রাধিকার দেয় তাদের সব কথা ও কাজে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের একত্ববাদের বিকাশ ঘটে, কেবল তাঁরই ইবাদত করে, তাঁর নিকটই সাহায্য প্রার্থনা করে, বিপদে তাঁকেই ডাকে, তাঁর নামেই যবেহ করে, নযর দেয়-মানত করে এবং তাঁর উপরই তাওয়াক্কুল করে ইবাদত-বন্দেগি, বিচার-আচার, লেন-দেন এক কথায় জীবনের যাবতীয় কাজ-কর্ম আল্লাহ প্রবর্তিত শরিয়তের অনুবর্তিতায়ই সম্পাদন করে। এ গুলোর উপর ভিত্তি করেই মূলত: সত্যিকারের ইসলামী রাষ্ট্র গঠিত হয় তবে তাওহিদকে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে শিরকের বিষয়টিকে অবহেলা করলে চলবে না অবশ্যই শিরককে বিতাড়িত করতে হবে জীবনের সকল ক্ষেত্র থেকে বর্তমান বিশ্বের অধিকাংশ মুসলিম দেশ প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য ও ছোট-বড় শিরকের সমস্যায় জর্জরিত। আল্লাহর একত্ববাদ প্রতিষ্ঠিত করণ কর্মসূচিকে স্বার্থক করতে হলে অবশ্যই সেসব শিরক নির্মূল করতে হবে কারণ, তাওহিদের দাবিই হচ্ছে যাবতীয় শিরক দূর করা শিরকের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে না তুলে এবং তাওহিদকে পশ্চাতে রেখে কোনো দলই আল্লাহর সাহায্য পেতে পারে না পৃথিবীতে আগমনকারী সকল রাসূলই এসব কথার উত্তম নিদর্শন। আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও এর ব্যতিক্রম নন। তিনি নিজ জীবনে এ সত্য প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন স্বার্থকভাবে এবং পরবর্তিদের দেখিয়ে গিয়েছেন সে রাস্তা
 এ দল ইবাদত, চরিত্র গঠন ও যাবতীয় কর্মে  রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আদর্শ অনুসরণের মাধ্যমে তাঁর সুন্নতকে জীবিত করে ফলে, নিজেদের সমাজে তারা (স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের নান্দনিকতায়) অপরিচিত-অচেনা মত হয়ে যায় এদের সম্বন্ধে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
إنَّ الاِسْلامَ بَدَأ غَرِيْبًا وسيعود غريبا كَمَا بَدَأ، فَطُوْبى لِلغُرَبَاءِ (رواه مسلم)
অর্থাৎ, ইসলাম শুরু হয়েছিল অপরিচিতর মত এবং আবার ফিরে আসবে অপরিচিতর মত যেমন শুরুতে ছিল সেই অপরিচিতদের জন্য রয়েছে সুসংবাদ (মুসলিম)
ইমাম মুসলিম আরও বলেছেন :
فَطُوْبى لِلغُرَبَاءِ : اَلذِيْنَ يَصْلِحُونَ إذا فَسَدَ النَّاسُ. (رواه أبو عمرو والدانى بسند صحيح)
অর্থৎ, ঐ সমস্ত অপরিচিতদের জন্য সুসংবাদ যারা মানুষের সংশোধনে আত্মনিয়োগ করে যখন তারা নষ্ট হয়ে যায় (ছহীহ, আবু আমর)
 এ দল আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথার বাইরে অন্য কারও অন্ধ অনুসরণ করে না রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন নির্দোষ (গোনাহ থেকে পবিত্র), মনগড়া কোনো কথা বলেননি তিনি ছাড়া অন্যান্য মানুষ যতই বড় হোন না কেন ভুল করতে পারেন। কেউই ভুল-ত্রুটির উর্দ্ধে নন
এ প্রসঙ্গে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন
كُلُّ بَنِى آدمَ خَطَّاءٌ وَ خَيرُ الْخَطًّائِيْنَ التَّوَّابُوْنَ (حسن رواه أحمد)
অর্থাৎ, আদম সন্তান প্রত্যেকেই ভুলকারী ভুলকারীদের উত্তম ঐ ব্যক্তি যারা তওবা করে (এবং ভ্রান্ত পথ হতে ফেরত আসে।) (আহমাদ, হাসান
ইমাম মালেক রবলেছেন, রাসূলুল্লাহর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যতীত এমন কোনো ব্যক্তি নেই যার সমস্ত কথা গ্রহণ করা যায়, অথবা পরিত্যাগ করা যায়
 নাজাত প্রাপ্ত দল হল তারা যারা হাদিস ও কুরআন অনুযায়ী চলে যাদের  সম্বন্ধে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
لا تَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أمَّتِى ظَاهِرِيْنَ عَلى الْحَقِّ لا يَضُرُّهُمْ مَنْ خَذَلَهُمْ حَتّى يَأتِيَ أمْرُ الله (رواه مسلم)
অর্থাৎ, আমার উম্মতের একটি দল সর্বদা হকের উপর প্রতিষ্ঠিত ও বিজয়ী থাকবে আল্লাহর নির্দেশ (কিয়ামত) আসা অবধি যারা তাদের পিছপা-অপমান করবে কোনো ক্ষতি করতে পারবে না (মুসলিম)
 এ দল চার মুজতাহিদ ইমামকে যথাযথ সম্মান করে নির্দিষ্ট কারো অন্ধ অনুসরণ করে না সকলের  থেকেই কুরআন ও ফিকাহর মাসআলা গ্রহণ করে প্রত্যেকের কথাই গ্রহণ করে যদি সে কথা সহিহ হাদিসের সাথে মিলে যায় তাদের অনুসরণের প্রকৃত রূপ এটিই কারণ তাঁরা প্রত্যেকেই নিজ অনুসারীদের সহিহ হাদিস অনুযায়ী আমল করার তাগিদ দিয়েছেন এবং হাদিসের সাথে সাঙ্ঘর্ষিক যাবতীয় মতবাদকে ত্যাগ করতে নির্দেশ দিয়েছেন
 এ দল সৎ কাজের আদেশ দেয় এবং অন্যায় কাজে নিষেধ করে বিদআতের সমস্ত রাস্তা ত্যাগ ও অস্বীকার করে আরো অস্বীকার করে সে সব দলকে যারা ইসলাম ও উম্মতকে শতধা বিভক্ত করছে, দ্বীনের মধ্যে বিদআতের প্রবর্তন করছে এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবিদের রাস্তা হতে নিজেদেরকে দূরে সরিয়ে নিয়েছে
১০ এ দল সকল মুসলিমকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবাদের আদর্শ আঁকড়ে ধরার প্রতি আহ্বান জানায় যাতে তাঁরা পৃথিবীতে জয়যুক্ত হতে পারেন এবং পরকালে আল্লাহর করুণা ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শাফায়াতে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারেন
১১ এ দল ইসলাম ও শরীয়ত পরিপন্থী মানব রচিত আইন ও বিচারের বিরোধিতা করে বরং এরা মানব জাতিকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কিতাব অনুযায়ী বিচার কায়েম করার প্রতি আহ্বান করে আর এতেই রয়েছে তাদের ইহলৌকিক ও পারলৌকিক কল্যাণ কারণ, এটি মহান আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান তিনিই জানেন কিসে তাদের কল্যাণ আর কিসে অকল্যাণ তাছাড়া এ কিতাব অপরিবর্তনীয়সময়ের বিবর্তনের সাথে কখনোই এর পরিবর্তন হবে না এটি সর্ব কালের সর্ব শ্রেণীর লোকদের জন্য প্রযোজ্য বর্তমান বিশ্বমানবতা বিশেষ করে মুসলমানদের দুর্ভোগ ও পেরেশানির অন্যতম কারণ হচ্ছে তারা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান বাদ দিয়ে মানব রচিত অসার সংবিধানে বিচার কার্য পরিচালনা করছে জীবনাচারে কোরআন ও সুন্নাহর অনুবর্তন অনুপস্থিত। তাদের অপমান-অপদস্ত হবার এটিই মূল কারণ এ অবস্থার পরিবর্তন কখনোই হবে না যদি না তারা পরিপূর্ণরূপে ইসলামের শিক্ষার দিকে ফিরে আসে ব্যক্তিগতভাবে হোক বা সমষ্টিগতভাবে। সামাজিকভাবে হোক কিংবা রাষ্ট্রীয়ভাবে
আল্লাহ তাআলা বলেন :
إِنَّ اللَّهَ لَا يُغَيِّرُ مَا بِقَوْمٍ حَتَّى يُغَيِّرُوا مَا بِأَنْفُسِهِمْ (الرعد 11)
নিশ্চয় আল্লাহ কোনো কওমের অবস্থা ততক্ষণ পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে। (সূরা রাদ, ১৩আয়াত ১১)
১২ এ দল সকল মুসলিমকে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের প্রতি আহ্বান করে জিহাদ সার্মথ্য অনুযায়ী প্রতিটি মুসলিমের উপর ফরজ তবে সে জিহাদ হতে হবে নীচের নিয়ম অনুযায়ী,
প্রথমত: জিহবা ও লেখনীর মাধ্যমে মুসলিম ও অমুসলিম নির্বিশেষে সকল মানুষকে সত্যিকারের ইসলাম আঁকড়ে ধরার দাওয়াত দিতে হবে। আরো দাওয়াত দিতে হবে শিরকমুক্ত তাওহিদ লালন করার প্রতি আর এ দিকটির দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে, কারণ শিরক আজ বেশীর ভাগ মুসলিম দেশে ছড়িয়ে পড়েছে মহামারির মত এ সম্বন্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভবিষ্যদ্বাণী করে বলেছেনঃ
لا تَقُوْمُ السَّاعَةُ حَتّى تَلْحَقَ قَبَائِلٌ مِنْ أمَّتِى بِالْمٌشْرِكِيْنَ وَ حَتَّى تَعْبُدَ قَبَائِلٌ مِنْ أمَّتِي الْاوْثَانَ (صحيح رواه أبو داود ومعناه في مسلم)
অর্থাৎ, কিয়ামত সংগঠিত হবে না যতক্ষণ না আমার উম্মতের কিছু কবিলা মুশরিকদের সাথে মিলে যায় এবং যতক্ষণ না আমার উম্মতের কিছু কবিলা (পাথরের) মূর্তি পূজা করে (আবু দাউদ, সহিহ)
দ্বিতীয়ত: সম্পদের মাধ্যমে যেমন ইসলাম প্রচার ও দাওয়াত কাজে সম্পদ ব্যয় করা এ সংক্রান্ত বই-পত্র ছাপিয়ে বিতরণ করা। দুর্বল ঈমানদারদের ঈমানকে মজবুত করে তুলতে বহুমুখী কর্মসূচী গ্রহণ করে তা বাস্তবায়ন কল্পে ব্যয় করা
তৃতীয়ত: জীবন দিয়ে জিহাদ করা যেমন, ইসলামকে জয়যুক্ত করার জন্য যুদ্ধ করা যাতে আল্লাহর কালেমা ঊঁচু হয় এবং কাফিরদের কথা নীচু হয়
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন :
جَاهِدُوْا الْمُشْرِكِيْنَ بِأًمْوالِكُمْ وَ اَنْفُسِكُمْ وَالْسِنَتِكُمْ (صحيح رواه أبو داود)
অর্থাৎ, তোমরা নিজ সম্পদ, জীবন ও জিহ্বার মাধ্যমে মুশরিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ কর (আবু দাউদ, সহিহ)

জিহাদের প্রকার ও তার বিধান

 ফরযে আইন
কাফিররা কোনো মুসলিম রাষ্ট্রকে আক্রমন করলে তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা সকল মুসলমানের উপর সমানভাবে ফরয হয়ে পড়ে যেমন অধুনা ফিলিস্তীন যা আজ ইহুদিরা জোর করে দখল করে আছে এদেরকে সেখান থেকে বিতাড়িত করে মাসজিদুল আকসাকে মুক্ত করার জন্য জান-মাল দিয়ে অব্যহত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া সামর্থবান সকল মুসলমানের উপর ফরজ। এ দায়িত্বে কেউ অবহেলা করলে অথবা পদক্ষেপ নিতে বিলম্ব করলে জিহাদ শুরা করা পর্যন্ত সকলে পাপী বলে সাব্যস্ত হবে
 ফরযে কিফায়া  
প্রয়োজনীয় সংখাক মুসলিম এ জিহাদের জন্য তৈরী হয়ে গেলে বাকীরা দায়মুক্তি পেয়ে যাবে
তবে পৃথিবীর সকল মানুষ যাতে ইসলামি বিধান মেনে চলতে শুরু করে সে লক্ষ্যে ইসলামের দাওয়াত দুনিয়া ব্যাপি  ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে এ কাজে কেউ বাধা দিলে দাওয়াতের কাজ নির্বিঘ্ন করার জন্য তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করতে হবে

মুক্তিপ্রাপ্ত দলের নিদর্শনসমূহ

প্রথমত: এদের সংখ্যা খুবই নগণ্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের জন্য নিম্নোক্ত দুআ করেছেন :
طُوْبى لِلغُرَبَاءِ: أُنَاسٌ صَالِحُوْنَ فِى أُنَاسٍ سُوءٍ كَثِيْرٍ مَنْ يَعْصِيْهِمْ أَكْثَرُ مِمَّنْ يُطِيعُهُمْ (صحيح رواه أحمد)
অর্থাৎ, সুসংবাদ সে সব অপরিচিতদের জন্য  কিছু সৎলোক যারা অনেক অসৎ লোকের মাঝে (বসবাস করবেন) । তাদের যারা অমান্য করবে তাদের সংখ্যা মান্যকারীর সংখ্যা অপেক্ষা অধিক হবে। (আহমেদ, সহিহ)
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাদের প্রশংসা করে বলেনঃ
وَقَلِيلٌ مِنْ عِبَادِيَ الشَّكُورُ ﴿سبا 13﴾
অর্থাৎ, এবং আমার বান্দাদের মধ্যে অল্পই কৃতজ্ঞ। (সূরা সাবা, ৩৪ ১৩ আয়াত)
দ্বিতীয়ত:
তাদের সঙ্গে বেশীর ভাগ লোকেরা শত্রুতা করে তাদের উপর নানাবিধ দোষারোপ করে নানা রকম বিকৃত নাম দিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে নবীদের সাথে যে দুর্ব্যরবহার করা হত ঠিক সে রকম ব্যবহার তাদের সাথেও করা হয় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা তাদের সম্বন্ধে বলেন :
وَكَذَلِكَ جَعَلْنَا لِكُلِّ نَبِيٍّ عَدُوًّا شَيَاطِينَ الْإِنْسِ وَالْجِنِّ يُوحِي بَعْضُهُمْ إِلَى بَعْضٍ زُخْرُفَ الْقَوْلِ غُرُورًا )الانعام 112)
অর্থাৎ, আর এভাবেই আমি প্রত্যেক নবীর শত্রু করেছি মানুষ ও জিনের মধ্য থেকে শয়তানদেরকেতারা প্রতারণার উদ্দেশ্যে একে অপরকে চাকচিক্যপূর্ণ কথার কুমন্ত্রণা দেয় (সূরা আন্‌আম, ১১২ আয়াত)
আমাদের রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মানুষদের তাওহিদের দিকে ডেকেছিলেন তখন তাঁর কওমের লোকেরা তাঁকে চরম মিথ্যাবাদী ও যাদুকর বলেছিল অথচ পূর্বে তারা তাঁকে সত্যবাদী ও বিশ্বাসী বলে অভিহিত করত
গ্রান্ড মুফতি শায়খ বিন বাযকে এঁদের সম্বন্ধে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেনঃ
তাঁরাই ওরা, যারা সকল কাজে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর সাহাবিদের অনুসরণ করে এবং সালাফে সালেহীনের রাস্তায় চলে

কারা জয়যুক্ত দল?

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ সম্বন্ধে বলেছেন :

لا تَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أمَّتِى ظَاهِرِيْنَ عَلى الْحَقِّ لا يَضُرُّهُمْ مَنْ خَذَلَهُمْ حَتّى يَأتِيَ أمْرُ الله (رواه مسلم)
অর্থাৎ, আমার উম্মতের একটি দল সর্বদা হকের উপর প্রতিষ্ঠিত ও বিজয়ী থাকবে আল্লাহর নির্দেশ (কিয়ামত) আসা অবধি যারা তাদের পিছপা-অপমান করবে কোনো ক্ষতি করতে পারবে না (মুসলিম)

নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেনঃ
إذا فَسَدَ أهْلُ الشَّامِ فلا خيْرَ فِيْكُمْ وَلا تَزالُ طَائِفَةٌ مِنْ أمَّتي مَنْصُورُونَ لا يَضُرُّهُمْ مَنْ خَذَلَهُمْ حَتّى تَقُومُ الساعَةُ (صحيح رواه أحمد)

অর্থাৎ, যখন সিরিয়াবাসীরা ফিৎনা ফাসাদে লিপ্ত হয়ে যাবে তখন তোমাদের মধ্যে কোনো মঙ্গল নেই আমার উম্মতের একদল সর্বদাই জয়যুক্ত হবে কিয়ামাহ পর্যন্ত যারা তাদের অপদস্ত করতে চাবে তারা তাদের কোনোই ক্ষতি করতে পারবে না (আহমদ, সহিহ )
 ইমাম ইবনে মোবারক রহ. বলেছেন তারা হলেন হাদিসের অনুসারী
 ইমাম বুখারি রহস্বীয় উস্তাদ আলী ইবনে মাদানী রহথেকে উদ্ধৃত করে বলেছেন তারা হচ্ছেন হাদিসের অনুসারী
 ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল রহবলেছেন: যদি তারা হাদিসের আনুসারী না হন, তাহলে জানি না তাঁরা কারা
 ইমাম শাফেয়ী রহইমাম আহমাদ রহ.-কে বলেছেন হাদিস সম্বন্ধে তোমরা আমার চেয়ে অভিজ্ঞ কোনো সহিহ হাদিসের সন্ধান পেলে আমাকে জানাবে তা হতে আমি মাযহাব (মতবাদউৎসারিত করব হাদিসটি যারাই বর্ণনা করুক, হেজাজবাসী কি কূফাবাসী কিংবা বসরাবাসী
 প্রতি কাজে তাঁরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ খুঁজে বের করে সে অনুযায়ী আমল করে তাঁর চরিত্রের রঙে রঞ্জিত হতে চায় কোনো ব্যক্তির অন্ধ অনুসরণ করে না সর্বক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহর অনুসরণ করে
 খতীব বাগদাদী রহতাঁর আহলুল হাদিস কিতাবে লিখেছেন, কোরআন-সুন্নাহ বাদ দিয়ে যারা নিজ রায় ও মতবাদ অনুযায়ী আমল করে। তারা যদি সে সব উপকারী ইলম নিয়ে ব্যস্ত হত এবং সব বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত তালাশ করত তাহলে দেখতে পেত নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাতই তাদের জন্য যথেষ্ট কারণ মহান আল্লাহর একত্ববাদের সূত্রগুলো, তাঁর  সিফাতসমূহ, জান্নাত-জাহান্নামের খবরদি সুসংবাদ হোক কিংবা দু:সংবাদ- সবই হাদীসে বিদ্যমান
আরও বিদ্যমানমুত্তাকী ও পাপীদের জন্য আল্লাহ তাআলা জান্নাত ও জাহান্নামে কি কি নেয়ামত ও শাস্তির ব্যবস্থা রেখেছেন। আসমান-যমীনে তিনি কি কি সৃষ্টি করেছেন
তাতে রয়েছে পূর্ববর্তী নবীদের ঘটনাসমূহ, দুনিয়া বিমুখ আল্লাহর ওলীদের ঘটনাবলী, ফিকাহ শাস্ত্রবিদদের কথা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ভাষণ ও তাঁর মোজেযাসমূহ আরো রয়েছে পবিত্র কুরআনের তাফসীর, বিশেষ বিশেষ ঘটনাপঞ্জী, জ্ঞানগর্ভ আলোচনা এবং সাহাবায়ে কেরামের নানা বক্তব্য- যার মধ্যে অনেক শরয়ী হুকুমের ব্যাখ্যা পাওয়া যায় আল্লাহ তাআলা রাসূলের হাদিসকে করেছেন শরীয়তের মূল ভিত্তি  এর মাধ্যমে নিকৃষ্ট বিদআদসমূহকে ধ্বংস করেছেন
হাদিস পন্থীরা হচ্ছেন তাঁর সৃষ্টির মাঝে সবচে আমানতদার নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর উম্মতের মধ্যে যোগসূত্র তাঁর হাদিস সমূহ সংরক্ষণকারী তাদের জ্যোতি প্রকাশমান এবং সর্বক্ষেত্রেই তাদের ফযিলত বিরাজমান আহলে রায় ও মতবাদ পূজারীদের উচিত আত্ম-শুদ্ধির জন্য তাদের নিকট আসা এবং তাদের রাস্তা গ্রহণ করা কারণ তাদের অবলম্বন হচ্ছে আল্লাহর কিতাব ও নবীর সুন্নাত তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দলভূক্ত তাঁর সাথেই তাদের সম্পর্ক তারা অন্যের কথায় কর্ণপাত করে না যারা তাদের সাথে শত্রুতা করে আল্লাহ তাদেরকে ধ্বংস করেন। আর যারা তাদের সাথে বিদ্বেষ পোষণ করে তাদেরকে তিনি অপমানিত করেন হে আল্লাহ আমাদেরকে হাদিস অনুযায়ী চালিত কর এর উপর আমল করার তাওফীক দাও। তার উপর যারা চলে তাদের ভালবাসতে শিখাও ও তাদের সাহায্যকারী বানিয়ে দাও

তাওহিদ ও তার শ্রেনীবিভাগ
তাওহিদ হচ্ছে এক আল্লাহর ইবাদত করা, যার জন্য তিনি এই সৃষ্টিজগত সৃজন করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ ﴿الذاريات56﴾
অর্থাৎনিশ্চয়ই আমি জিন এবং মানুষকে সৃষ্টি করেছি একমাত্র আমার ইবাদত করার জন্য। (সূরা যারিয়াত:৫১আয়াত:৫৬)
অর্থাৎ, কেবল আমারই ইবাদত করবে, আমারই নিকট দুআ করবে। যারা বলে দুনিয়া সৃষ্টি করা হয়েছে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কারণে, এই আয়াত তাদের দাবিকে বাতিল করে সুস্পষ্টরূপে

তাওহিদ তিন ভাগে বিভক্ত
। তাওহিদুর রুবুবিয়্যাহ:
আর তা হচ্ছে এ কথার স্বীকৃতি দেয়া যে, আল্লাহই একমাত্র রব ও স্রষ্টা। অমুসলিম-কাফিররা তাওহিদের এ অংশকে স্বীকার করত এতদসত্ত্বেওতারা ইসলামে প্রবেশ করেনি
আল্লাহ তাদের সম্বন্ধে বলেনঃ
وَلَئِنْ سَأَلْتَهُمْ مَنْ خَلَقَهُمْ لَيَقُولُنَّ اللَّهُ (الزخرف 87)
অর্থাৎযদি তাদেরকে প্রশ্ন করকে তাদের সৃষ্টি করেছেতারা অবশ্যই বলবে- আল্লাহ। (সূরা যুখরুফ৮৭)
কিন্তু বর্তমান যুগের নাস্তিকরা আল্লাহর অস্তিত্বকে পর্যন্ত অস্বীকার করে। তারা জাহিলী যুগের কাফিরদের থেকেও শক্ত কাফির
। তাওহিদুল উলূহিয়্যাহ
আর তা হচ্ছে একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করা। তাঁর ইবাদতে আর কাউকে শরীক না করা শরীয়ত সম্মত ইবাদতের মধ্যে রয়েছে, দুআ, সাহায্য প্রার্থনা করাতওয়াফ করাযবেহ করানযর (মানত) দেয়া ইত্যাদি। কাফিররা এ তাওহিদকে অস্বীকার করে। নূহ আলাইহিস সালাম থেকে শুরু করে শেষ নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত সমস্ত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম ও তাঁদের উম্মতের মধ্যে বিরোধ ও শত্রুতা চলেছে এ তাওহীদকে ঘিরেই এসব ঘটনা পবিত্র কোরআনে বহু সূরায় আলোচিত হয়েছে
পবিত্র কোরআনে এক আল্লাহর কাছে দুআ করতে বলা হয়েছে  যেমনসূরা ফাতিহাতে আমরা তিলাওয়াত করি :
إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ ﴿الفاتحة:5﴾
 অর্থাৎআমরা কেবল তোমারই ইবাদত করিআর তোমারই নিকট সাহায্য চাই
অর্থাৎতুমি ছাড়া অন্য কারও কাছে সাহায্য চাই না। এর মধ্যে অন্তর্ভূক্ত আছে তাঁর নিকট দুআ করাকোরআন অনুযায়ী বিচার করাশরীয়ত অনুযায়ী হুকুমাত গঠন করা। আর এ সবকিছুই আল্লাহর ঐ কথার অন্তর্ভূক্ত। যাতে তিনি বলেন :
إِنَّنِي أَنَا اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنَا فَاعْبُدْنِي (طه 14)
অর্থাৎঅবশ্যই আমিই আল্লাহআমি ছাড়া সত্যিকার আর কোনো মাবুদ নেইতাই আমারই ইবাদত কর। (সূরা তাহা, ২০: ১৪ আয়াত)
। তাওহিদুল আসমা ওয়াস সিফাত
আর তা হচ্ছে, পবিত্র কোরআন ও সহিহ হাদীসে বর্ণিত আল্লাহর যাবতীয় গুণাবলীর উপর ঈমান আনা। যে সব গুণাবলীতে আল্লাহ তাআলা নিজেকে ভূষিত করেছেন অথবা তাঁর নবী তাঁকে বিভূষিত করেছেন সে সব গুণাবলীর উপর তাবীল, তাকয়ীফ ও তাতীল ব্যতীত ঈমান আনা। যেমন : "ইসতাওয়া" এর অর্থ হল বসানুযুল অর্থ অবতীর্ণ হওয়া। অনুরূপভাবে হুযূর অর্থ উপস্থিত হওয়া। এসব গুণাবলীর ব্যাখায় সাহাবাদের থেকে যা কিছু বর্ণিত হয়েছে তা সেভাবেই বিশ্বাস করা। যেমন "ইসতাওয়া" সম্বন্ধে বুখারি শরীফে তাবেয়ীনদের রিওয়ায়েতে আছে, উর্দ্ধে  উঠা ও আরোহন করা। আমরা সেটি সেভাবেই বিশ্বাস করব যেভাবে তাঁর জন্য প্রযোজ্য ও সঙ্গতিপূর্ণ হয়
لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَهُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ ﴿الشورى:11﴾
অর্থাৎতাঁর মত কিছু নেই আর তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা। (সূরা শুরা৪২: ১১ আয়াত)
এর অর্থ হচ্ছে : আল্লাহ ছাড়া সত্যিকারের কোনো উপাস্য নেই
। এর অন্তর্ভূক্ত হচ্ছে আল্লাহ ব্যতীত সকল উপাস্যকে অস্বীকার করা- ইবাদত শুধুমাত্র রাব্বুল আলামীনের ক্ষেত্রে স্বীকার করা
। তা'বিল : কুরআনের সুস্পষ্ট আয়াত ও সহিহ হাদিসের বিপরীত কোনো আচরণ করাই হচ্ছে তা'বিল। যেমন ইসতোয়া (উর্দ্ধে আরোহণবসা) ইত্যাদির অর্থ ইসতাওলা বা শক্তি প্রয়োগে দখল করা বুঝায় না
। তা'তীল : হচ্ছে আল্লাহর কোনো সিফাতকে (গুণ) অস্বীকার করা। যেমন আল্লাহ তা'আলা আসমানের উপর আছেন। (এটি আল্লাহর একটি গুণআমরা এটি যেভাবে বর্ণিত হয়েছে কোনোরূপ ব্যাখ্যা ছাড়াই ঠিক সেভাবে বিশ্বাস করি। এর প্রকৃত অবস্থা সম্বন্ধে আল্লাহই ভাল জানেন।) কিন্তু আমাদের অনেকের ভ্রান্ত ধারণা আছে যে আল্লাহ তা'আলা সর্বত্র বিরাজমান
। তাকয়ীফ : হচ্ছে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কোনো গুণকে কোনো নির্দিষ্ট আকারে চিন্তা করা যেমনআল্লাহ তা'আলা যে আরশের উপর আছেন তা তাঁর
অন্য কোনো সৃষ্টির সাথে তুলনা করা
। তিনি কিভাবে আরশের উপর আছেন তা তিনিই জানেন। অন্য কেউ তা জানে না
। তামছীল : হচ্ছে আল্লাহ তা'আলার কোনো গুণকে তাঁর সৃষ্টির সাথে তুলনা করা। যেমনআল্লাহ প্রতি রাত্রে প্রথম আসমানে অবতীর্ণ হন। কিন্তু তাঁর অবতীর্ণ হওয়া ও আমাদের কোনো জায়গায় অবতীর্ণ হওয়া এক নয়। অবতীর্ণ হওয়ার হাদিস মুসলিম শলীফে বর্ণিত হয়েছে সহিহ সনদে অনেকে মিথ্যা বলে যেশাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া র. তার কিতাবে এই ধরণের তামছীল বা তুলনা করেছেন। কিন্তু সত্যিকার অর্থে তার কিতাব পাঠ করলে দেখা যাবে যেতিনি তুলনা কিংবা উপমা এভাবে দেননি
। তাফবীয : সালাফে সালেহীনগণ আল্লাহর আকৃতির ব্যাপারে কোনো প্রসঙ্গ এলে তারা বলতেনঃ আমরা তাঁর আকৃতি জানি না কিন্তু যে সব অঙ্গ সম্বন্ধে বলা হয়েছে তা বুঝি। যেমন ইসতোয়া অর্থ হচ্ছে উর্ধে আরোহণকিন্তু কিভাবে উর্দ্ধে আরোহণ করেছেন তা আমরা জানি না
। কিন্তু কিছু লোক আছে যারা আল্লাহ তাআলার এ সমস্ত সিফাতকে স্বীকার করে ঠিক তবে অর্থ ও অবস্থান উভয়কেই অস্বীকার করে তাদের এমন মন্তব্য উম্মে সালামাহ রা. ইমাম মালেকের (রহ.) উস্তাদ ইমাম রবীয়া (রহ.) এবং ইমাম মালেক (রহ.) প্রমুখ সালাফে সালেহীনের মতের পরিপন্থী। কারণতাদের মতে, ইসতোয়া (বসা বা উর্দ্ধারোহণ)-এর অর্থ সকলেই বুঝেকিন্তু কিভাবে বা তার ধরণ কি ? সে বিষয়ে কেউ জানে না। এর উপর ঈমান আনা ওয়াজিব,আর এর কাইফিয়াত (ধরণ) সম্বন্ধে প্রশ্ন করা বিদআত
। পবিত্র কালেমা (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) উচ্চারণকারীর পক্ষে উপকারী হিসাবে কার্যকর থাকে যতক্ষণ না সে কোনো শিরকের সাথে সংশ্লিষ্ট হয় কালিমা পাঠকারীর দ্বারা কোনো শিরক সংঘটিত হয়ে গেলে তা আর তার জন্য উপকারী থাকে না ব্যাপারটি ঠিক ওযুর মত যা প্রশ্রাব, পায়খানা বা বায়ূ নির্গমণের কারণে অকার্যকর বা নষ্ট হয়ে যায়। তাই আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট কোনো ইবাদত অন্য কারো জন্য সম্পাদন করা হলে তা শিরক বলে বিবেচিত হবে। যেমন, দোয়া করাযবেহ করামাজারে নযর-মানত দেয়া ইত্যাদি

মুহাম্মাদ রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অর্থ কি?

মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ-এর অর্থ হচ্ছে, এ বিশ্বাস পোষণ করা যে তিনি আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নিকট হতে প্রেরিত। ফলেতিনি যা বলেছেন তা সত্য বলে স্বীকার করব, যে সব বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন তা মেনে চলব এবং যে সব বিষয়ে নিষেধ করেছেন বা সতর্ক করেছেন তা হতে বিরত থাকব কারণরাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথা মান্য করা মূলত: আল্লাহকে মান্য করা
। শায়খ আবুল হাসান আলী নদভী রহ. তার নবুয়ত গ্রন্থে বলেছেন: প্রত্যেক এলাকায় আগত সকল নবীর সর্বপ্রথম ও প্রধান দাওয়াত ছিল আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার ব্যাপারে আকীদা শুদ্ধ করা, বান্দা ও তার রবের মাঝে সম্বন্ধকে শুদ্ধ করা ইখলাসের সাথে আল্লাহর দ্বীনকে মেনে চলা এবং এক আল্লাহর ইবাদত করার প্রতি। কারণউপকার ও ক্ষতি তিনিই করেন। তিনিই ইবাদত পাওয়ার যোগ্যতা রাখেন। দোআবিপদে আশ্রয় প্রার্থনা ও জন্তু যবেহ করা সবই তাঁর জন্যই। নবীগণ প্রত্যেকেই তাদের যুগে প্রচলিত এক আল্লাহর ইবাদত পরিপন্থী যাবতীয় পুজা-উপসনা-প্রথার বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দেলন করেছেন। যেমনমূর্তি ও পাথরের পূজাজীবিত কিংবা মৃত নেক লোকদের পূজা ইত্যাদি
। আল্লাহ তা'আলা আমাদের রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্বন্ধে বলেন :
قُلْ لَا أَمْلِكُ لِنَفْسِي نَفْعًا وَلَا ضَرًّا إِلَّا مَا شَاءَ اللَّهُ وَلَوْ كُنْتُ أَعْلَمُ الْغَيْبَ لَاسْتَكْثَرْتُ مِنَ الْخَيْرِ وَمَا مَسَّنِيَ السُّوءُ إِنْ أَنَا إِلَّا نَذِيرٌ وَبَشِيرٌ لِقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ ﴿الاعراف188﴾
অর্থাৎ, বলআমি আমার নিজের কোনো উপকার ও ক্ষতির ক্ষমতা রাখি নাতবে আল্লাহ যা চান। আর আমি যদি গায়েব জানতাম তাহলে অধিক কল্যাণ লাভ করতাম এবং আমাকে কোন ক্ষতি স্পর্শ করত না। আমিতো একজন সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা এমন কওমের জন্যযারা বিশ্বাস করে। (সূরা আ'রাফ৭: ১৮৮ আয়াত)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
لا تُطْرُوْنِي كَمَا أطْرَتِ النَّصَارى اِبْنَ مِرْيَمَ فَإنَّمَا أنَا عَبْدٌ فَقُوْلُوْا عَبْدُ اللهِ وَرَسُوْلُهُ (رواه البخاري)
অর্থাৎআমার (প্রশংসার) ব্যাপারে তোমরা সীমা লংঘন কর না যেমনখৃষ্টানরা ঈসা ইবনে মারইয়াম সম্বন্ধে সীমা লংঘন করেছে। আমার একমাত্র পরিচয় আমি বান্দা। তাই বলআল্লাহর বান্দা এবং তার রাসূল। (বুখারি)
ইতরা শব্দের অর্থ হচ্ছে বাড়ান ও প্রশংসার ক্ষেত্রে সীমা লংঘন করা। আমরা আল্লাহকে ছেড়ে তাঁকে ডাকব না যেমনটি করেছে খৃষ্টানরাযার ফলে তারা শিরকে পতিত হয়েছে
। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মহব্বত করার প্রকৃতরূপ হল, তার হুকুম মেনে চলার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করা এবং তাঁকে ছেড়ে অন্যের কাছে দোয়া না করাযদিও সে কোনো রাসূল হোক কিংবা কোনো ওলী
আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
 إذا سَأَلْتَ فَاسْأَلِ اللهَ وَاذا اسْتَعَنْتَ فاسْتَعِنْ باللهِ (رواه الترمذى وقال حسن صحيح)
অর্থাৎযখন (কিছু) চাইবে আল্লাহর কাছেই চাইবে আর যখন সাহায্য প্রার্থনা করবে আল্লাহর কাছেই প্রার্থনা করবে। (তিরমিযিহাসান ছহীহ)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর কোনো দুঃখ কিংবা পেরেশানী আসলে বলতেন,
 يا حَيُّ يا قَيُّوْمُ بِرَحْمَتِكَ اسْتَغِيْثُ
অর্থাৎহে চিরঞ্জীব! হে চিরস্থায়ীতোমার দয়ার দ্বারা বিপদ উদ্ধার চাচ্ছি
(তিরমিযিহাসান)
إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ

আমরা তোমারই ইবাদত করি
এবং তোমারই কাছে সাহায্য চাই

তোমাকে ছাড়া আমরা অন্য কারও ইবাদত করি না
কারও নিকট দোয়া করি না এবং কারও কাছে সাহায্যও চাই নাহেআল্লাহ!
 ভাষাবিদরা বলেছেন : مفعول به কে আগে আনা হয়েছে  حصر ও تخصيص এর জন্য অর্থাৎ ইবাদত ও সাহায্য একমাত্র আল্লাহ হতে- তিনি ব্যতীত এগুলোতে কারও হাত নেই
। এ আয়াতটি প্রতিটি মুসলিম প্রতি দিন সালাত ও সালাতের বাইরে বার বার পাঠ করে এটি সূরা ফাতিহার মূল আর সূরা ফাতিহা সমস্ত কুরআনের মূল
। ইবাদত বলতে এই আয়াতে সকল প্রকার ইবাদতকে বুঝান হয়েছে। যেমন : সালাতমানতযবেহ্ আর দোয়ার তো কোনো কথাই নেই। কারণরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
الدُّعَاءُ هُوَ الْعِبادَةُ    (رواه الترمذي)
অর্থাৎদোয়া-ই ইবাদত। (তিরমিযিহাসান সহিহ)
সালাত একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। তাই এটি কোনো রাসূল কিংবা ওলীর উদ্দেশে আদায় করা জায়েয নয়। তেমনি দোয়াও। কারণসেটিও ইবাদত। একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জন্য খাস
আল্লাহ বলেন :
قُلْ إِنَّمَا أَدْعُو رَبِّي وَلَا أُشْرِكُ بِهِ أَحَدًا ﴿الجن20﴾
অর্থাৎবলনিশ্চয় আমি আমার রবকে ডাকি এবং তার সাথে কাউকে শরীক করি না(সূরা জিন৭২: ২০ আয়াত)

। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
دَعْوَةُ ذِي النُّوْنِ إذْ دَعَا بِهَا وَهُوَ في بَطْنِ الْحُوْتِ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ لَمْ يَدعُ بِها رَجُلٌ مُسْلِمٌ فِى شَيءٍ قَطُّ الاَّ اسْتَجَابَ الله لَهُ (صححه الحاكم ووافقه الذهبي)
অর্থাৎইউনুসের আ. দোয়া যা তিনি মাছের পেটে বসে করেছিলেন : তুমি ছাড়া সত্যিকার কোনো মাবূদ নেই। হে আল্লাহ! আমি তোমার পবিত্রতা ঘোষণা করছি। নিশ্চয়ই আমি যালিমদের অন্তর্ভূক্ত। এই দোয়া যে কোনো মুসলিমই যে কোনো ব্যাপারে করুক না কেন অবশ্যই আল্লাহ তার দোয়াকে কবুল করবেন। (হাকেমসহিহ)
। আল্লাহ তা'আলার ইবাদত একমাত্র তাঁর জন্যই হবে এবং তাঁর নিকট দোয়ার মাধ্যমে হে আল্লাহ! আমি চাই তুমি আমার দুঃখ দুর কর! কারণ দুঃখ কষ্ট আল্লাহ ছাড়া আর কেউ দূর করতে পারে না

একমাত্র আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
إذا سَأَلْتَ فَاسْأَلِ اللهَ وَاذا اسْتَعَنْتَ فاسْتَعِنْ باللهِ (رواه الترمذى وقال حسن صحيح)
অর্থাৎযখন চাইবে আল্লাহর কাছেই চাইবে আর যখন সাহায্য প্রার্থনা করবে আল্লাহর কাছেই করবে (তিরমিযি, হাসান সহিহ)
। ইমাম নববী ও আল্লামা হাইছামী রহ. এ হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেছেন, যখন দুনিয়া বা আখিরাতের কোনো কাজে সাহায্য চাও তখন একমাত্র আল্লাহর কাছেই চাও। বিশেষ করে সেসব কাজে যা আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ করতে পারে না। যেমনরোগমুক্তিরিযক ও হেদায়েত দান। এগুলো কেবল আল্লাহ তালাই পারেন অন্য কেউ নয়
আল্লাহ বলেন :
وَإِنْ يَمْسَسْكَ اللَّهُ بِضُرٍّ فَلَا كَاشِفَ لَهُ إِلَّا هُوَ (الانعام 17)
অর্থাৎআর যদি আল্লাহ তোমাকে কোনো দুর্দশা দ্বারা স্পর্শ করেনতবে তিনি ছাড়া তা দূরকারী কেউ নেই। (সূরা আনআম৬: ১৭ আয়াত)
। তবে হ্যাঁ, জীবিতদের নিকট সেসব কাজে সাহায্য চাওয়া যায় যা তাদের সামর্থের মধ্যে। যেমন, মসজিদ নির্মাণ বা এ জাতীয় অন্য কোনো কাজ সম্পন্ন করতে সাহায্য চাওয়া
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা'আলা বলেন :
 وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى (المائدة 2)
অর্থাৎসৎকর্ম ও তাকওয়ায় তোমরা পরস্পরের সহযোগিতা কর। মন্দকর্ম ও সীমালঙ্ঘনে পরস্পরের সহযোগিতা করো না। (সূরা মায়িদা৫ : ২ আয়াত)
যে ব্যক্তি (চলার জন্য) দলীল-প্রমাণ চায় পবিত্র কুরআনই তার জন্য যথেষ্ট। আর কেউ উদ্ধারকারী অনুসন্ধান করলে আল্লাহই তার জন্য যথেষ্ট ভীতি প্রদর্শনকারী চাইলে মৃত্যুই তার জন্য যথেষ্ট। আর এগুলোর কোনোটাই যার জন্য যথেষ্ট নয়তার জন্য জাহান্নামই যথেষ্ট। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা বলেন :
 أَلَيْسَ اللَّهُ بِكَافٍ عَبْدَهُ (الزمر 36)
অর্থাৎআল্লাহ কি তাঁর বান্দার জন্য যথেষ্ট নন? (সূরা যুমার, ৩৯: ৩৬ আয়াত)
। শায়খ আব্দুল কাদের জিলানী রহ. আল-ফাতহুর রব্বানী গ্রন্থে বলেছেন, কেবল আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও, অন্য কারো কাছে নয়। ধিক তোমাকে, কোন মুখে দেখা করবে তুমি আল্লাহর সাথে কিয়ামত দিবসেতাঁর সাথে তুমি ক্ষণস্থায়ী এ দুনিয়ায় বিবাদ করেছ। তাঁর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছ তাঁর সাথে শিরক করে সৃষ্টির দিকে মুখ করেছ। তাদের মুখাপেক্ষী হয়েছ। তাদের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় জিনিস যাঞ্ছা করেছ। তাদের উপর ভরসা করেছ। তাদেরকে তোমার ও আল্লাহর মধ্যে সংযোগকারী স্থির করেছ। তাদের সাথে থাকা তোমার জন্য ফিৎনা। তাদের কাছে কিছুই নেইনা রাজত্ব, না ক্ষমতানা দৌলতনা সম্মান। এগুলো আছে একমাত্র আল্লাহর কাছে। তিনি ভিন্ন কারো কাছে এসব কিছুই নেই তাই প্রতিটি মুহূর্ত আল্লাহ তাআলার সাথে থাকতে চেষ্টা কর বান্দার কথার প্রতি দৃষ্টি দিও না
। যে সব সাহায্য প্রার্থনা শরীয়ত অনুমোদন করে:
যেমন কষ্ট-অসুবিধা দূর করার জন্য আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করা। যে কোনো বিষয়ে তার দারস্থ হওয়া ইত্যাদি...
আর যে সব সাহায্য প্রার্থনা শিরকের পর্যায়ভূক্ত:
যেমন আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নিকট এমন বিষয়ে সাহায্য প্রার্থনা করা যার উপর তিনি ব্যতীত আর কারো ক্ষমতা নেই। যথা প্রয়াত আম্বিয়া ও আওলিয়াদের নিকট সাহায্য চাওয়া। অনুপস্থিত জীবিত ব্যক্তির নিকট সাহায্য চাওয়া। এরূপ সাহায্য প্রার্থনা শিরককারণ যাদের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা হলতাদের হাতে না আছে উপকার করার ক্ষমতাআর না আছে ক্ষতি করার সামর্থ এসব আহ্বান ও দোয়া তারা শুনতেই পায় না যদি শুনতে পেতও উত্তর দিতে পারত না। মহান আল্লাহ এসব বিষয় পবিত্র কুরআনে পরিস্কারভাবে বর্ণনা করেছেন
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
وَاللهُ فى عَوْنِ العَبْدِ ما كَانَ الْعَبْدُ فِى عَوْنِ أخِيْهِ . (رواه مسلم)
অর্থাৎআল্লাহ বান্দার সাহায্য করতে থাকেন যতক্ষণ সে তার কোনো ভাইয়ের সাহায্যে নিয়োজিত থাকে। (মুসলিম)

আল্লাহ আরশের উপর আছেন

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরশের উপর আছেন এ বিষয়টি পবিত্র কুরআনের বহু আয়াত, অসংখ্য সহিহ হাদিস এবং সালাফে সালেহীনদের কথা হতে প্রমাণিত
। আল্লাহ তা'আলা বলেন :
إِلَيْهِ يَصْعَدُ الْكَلِمُ الطَّيِّبُ وَالْعَمَلُ الصَّالِحُ يَرْفَعُهُ (فاطر 10)
অর্থাৎতাঁরই পানে উত্থিত হয় ভাল কথা (কালিমা তাইয়েবা) আর নেক আমল তা উন্নীত করে। (সূরা ফাতির৩৫ : ১০ আয়াত)
। অন্যত্র বলেন :
ذِي الْمَعَارِجِ ﴿3﴾ تَعْرُجُ الْمَلَائِكَةُ وَالرُّوحُ إِلَيْهِ (المعارج 3,4)
ঊর্ধ্বারোহণের সোপানসমূহের অধিকারী,ফেরেশতাগণ ও রূহ আল্লাহর পানে ঊর্ধ্বগামী হয় (সূরা মাআরিজ৭০: ৩ও ৪ আয়াত)
 আরও ইরশাদ করেছেন :
سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الْأَعْلَى ﴿1الأعلى﴾
অর্থাৎতুমি তোমার সুমহান রবের নামের তাসবীহ পাঠ কর।(সূরা আলা ৮৭:১ আয়াত)
। অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে :
الرَّحْمَنُ عَلَى الْعَرْشِ اسْتَوَى ﴿5:طه﴾
অর্থাৎরহমান-পরম করুণাময়, আরশের ওপর উঠেছেন সূরা ত্বহা২০ : ৫)
। ইমাম বুখারি রহ. "এসতোয়া" শব্দের অর্থ করেছেন, উর্দ্ধারোহন ও উপরে অধিষ্টিত হওয়া। 
। বিদায় হজে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবায় উচ্চারণ করেছিলেন :
ألا هَلْ بَلَّغْتُ؟ قَالُوا نَعَمْ يَرْفَعُ أصْبَعَهُ إلى السَّمَاءِ وَيَنْكُبُهَا إلَيْهِمْ وَيَقُوْلُ : اَللهمَّ اشْهَدْ (رواه مسلم)
অর্থাৎহে উপস্থিতি! আমি কি পৌঁছেয়েছিসাহাবাগণ রা. বললেন : হ্যাঁঅবশ্যই। তখন তিনি আসমানের দিকে তর্জনী উঠিয়ে সাহাবাদের দিকে ইশারা করে বললেন : হে আল্লাহ! তুমি সাক্ষী থেক। (মুসলিম)
। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : আল্লাহ তাআলা একটি কিতাব লিখেছেনসেটি তাঁর নিকট আরশের উপর আছে। (বুখারি ও মুসলিম)
। অন্যত্র বলেছেন:
তোমরা কি আমাকে বিশ্বাস কর না! যিনি আসমানে আছেন তাঁর নিকট আমি বিশ্বাসী বলে পরিগণিত। সকাল-সন্ধ্যা আসমানের খবর আমার নিকট আসে। (বুখারি ও মুসলিম)
। ইমাম আওযায়ী রহ. বলেছেন:
আমরা ও আমাদের সময়ের তাবেয়ীনরা বলতাম: নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ আরশের উপর আছেন। আমরা হাদীসে বর্ণিত তাঁর সিফাতসমূহের উপর ঈমান এনেছি। (বায়হাকীসহিহ)
১০ ইমাম শাফেয়ী র. বলেছেন :
আল্লাহ আসমানের উপর আরশে আছেন। সেখান থেকে চাহিদা মাফিক সৃষ্টির নিকটবর্তী হন। এবং প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশে দুনিয়ার আসমানে অবতীর্ণ হন যেভাবে চান সেভাবে
১১। ইমাম আবু হানিফা রহ. বলেছেন :
যে বলল, আল্লাহ আসমানে না যমীনে, সে কুফরী করল। কারণআল্লাহ নিজেই বলেছেনঃ তিনি আরশের উপর আছেন। তাঁর আরশ সাত আসমানেরও উপরে। তিনি বলেন : যদি কেউ বলেহ্যাঁ সত্যিই তিনি আরশের উপর আছেন কিন্তু আরশ আসমানে না যমীনে তা জানি নাতাহলে সেও কাফের। কারণতিনি যে আসমানে আছেন সে ব্যক্তি তা অস্বীকার করেছে। আর আসমানে তাঁর বিদ্যমানতাকে যে ব্যক্তি অস্বীকার করে সে কুফরী করল। কারণআল্লাহ ইলি্লয়িনে আছেন
তাছাড়া তাঁকে আমরা উপরের দিকে হাত তুলে ডাকিনীচের দিকে নয়
(শরহুল আকীদাহ আত-তহাবিয়াহ)
১২। যে ব্যক্তি ইসতাওয়াকে ইসতাওলা বলে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করে সে যেন কুরআনের শব্দকে বিকৃত করল। কারণসালাফে সালেহীনদের কেউ একথা বলেননি। তাদের রাস্তাই হচ্ছে সর্বোত্তম গ্রহণযোগ্য রাস্তা। আর ইসতাওলা শব্দের ব্যাখ্যা করলে অর্থ দাড়ায়আরশ আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দখলে ছিল নাতিনি জোর করে দখল করেছেন

তাওহীদের প্রয়োজনীয়তা

। মহান আল্লাহ এ বিশ্ব চরাচরের সব কিছু সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদতের জন্য । তিনি অসংখ্য নবী-রাসূলদের পাঠিয়েছেন, লোকদের একত্ববাদের দিকে ডাকার জন্য। কুরআনের প্রায় সূরাতেই তাওহীদের প্রতি স্ববিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি শিরকের বর্ণনাও এসেছে অবধারিতভাবে তাতে ব্যক্তি ও সমাজের উপর শিরকের ক্ষতিকর দিকটি ফুঠে উঠেছে সুন্দরভাবে। শিরক একটি মারাত্মক পাপ, তার কারণেই মূলত: মানুষ দুনিয়াতে ধ্বংস হয় এবং আখেরাতে চিরকালের জন্য জাহান্নামে প্রবেশ করবে
। পৃথিবীতে আগত সকল রাসূলই সর্বপ্রথম আল্লাহর একত্ববাদের দিকে নিজ নিজ উম্মতদের দাওয়াত দিয়েছেন। কারণমহান আল্লাহ তাদের এ হুকুমই দিয়েছেন
তিনি বলেন,
وَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ مِنْ رَسُولٍ إِلَّا نُوحِي إِلَيْهِ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنَا فَاعْبُدُونِ ﴿الانبياء25﴾
আর তোমার পূর্বে এমন কোনো রাসূল আমি পাঠাইনি যার প্রতি এ ওহী নাযিল করিনি যে, আমি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই; সুতরাং তোমরা আমারই ইবাদত কর।(সূরা আম্বিয়া২১: ২৫ আয়াত)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবুওতের পর মক্কা নগরীতে তের বছর অবস্থান করেছেন তিনি তাঁর কওমকে আল্লাহর একত্ববাদের প্রতি দাওয়াত দিয়েছেন এবং একমাত্র তাঁর কাছেই প্রার্থনা করার শিক্ষা দিয়েছেন
এ সম্বন্ধে আল্লাহ বলেনঃ
قُلْ إِنَّمَا أَدْعُو رَبِّي وَلَا أُشْرِكُ بِهِ أَحَدًا ﴿الجن:20﴾
অর্থাৎবল, আমি কেবলমাত্র আমার রবকে ডাকি আর তাঁর সাথে অন্য কাউকে শরীক করি না। (সূরা জিন ৭২: ২০ আয়াত)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ সহচর ও অনুসারীদেরকে প্রথম হতেই তাওহীদের উপর গড়ে তুলেছেন অল্প বয়স্ক-কিশোর চাচাতো ভাই আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা.-কে এ বলে শিক্ষা দিয়েছেন :
إذا سَأَلْتَ فَاسْأَلِ اللهَ وَاذا اسْتَعَنْتَ فاسْتَعِنْ باللهِ (رواه الترمذى وقال حسن صحيح)
অর্থাৎ, যখন চাইবে আল্লাহর কাছেই চাইবে আর যখন সাহায্য প্রার্থনা করবে আল্লাহর কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করবে (তিরমিযিহাসান সহিহ)
এ তাওহিদই হচ্ছে ইসলামের মূল ভিত্তি যার উপর ইসলাম প্রতিষ্ঠিত। তাওহিদ ছাড়া আল্লাহ বান্দার আমল-ইবাদত কোনো কিছুই গ্রহণ করবেন না
 নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রিয় সাহাবাদের সর্বপ্রথম মানব জাতিকে তাওহিদের দিকে দাওয়াত দেয়ার শিক্ষাই দিয়েছেন। এ দিকটিকেই তিনি সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। তাইতো আমরা দেখতে পাই মুয়াজ রা. কে ইয়ামেনে পাঠানোর সময় তাঁর উপদেশ ছিল,
فَلْيَكُنْ أوَّلَ مَا تَدْعُوْهُمْ إلَيْهِ شَهَادَةُ أن لا إلهَ إلاَّ اللهُ وَفِىْ رِوَايَةٍ إلى أنْ يُّوَحِدُوا اللهَ. (متفق عليه)
অর্থাৎতাদের প্রতি তোমার দাওয়াতের সর্ব প্রথম বিষয় যেন হয় লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মর্মে সাক্ষ্য দানের আহ্বান অন্য একটি রেওয়ায়াতে আছেআল্লাহকে এক বলে মান্য করার প্রতি আহ্বান ( বুখারি ও মুসলিম)
। তাওহিদের বহি:প্রকাশ কালেমা তাইয়্যেবার সাক্ষ্য দানের মাধ্যমে সম্পন্ন হয় অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে নীতি ও বিধান নিয়ে আগমন করেছেন সে নীতি-বিধানের অনুবর্তিতায় যাবতীয় ইবাদত সম্পাদন করতে হবে মর্মে প্রত্যয় ব্যক্ত করে ঘোষণা দেয়ার মাধ্যমেই মূলত: বুঝা যায় তার মাঝে তাওহিদ বিদ্যমান। এ সাক্ষ্য দানের মাধ্যমেই অমুসলিমদের ইসলামে প্রবেশ করতে হয়। এ সাক্ষ্য দান ব্যতীত ইসলামে প্রবেশের আর কোনো পথ নেই। এটি হচ্ছে জান্নাতের চাবি এ কারণেই কালেমা ওয়ালা জান্নাতে প্রবেশ করবে। তবে শর্ত হচ্ছে, তাওহিদ বিনষ্টকারী কোনো শিরকি কাজে জড়ানো যাবে না কিংবা কোনো কুফরি বাক্য উচ্চারণ করা যাবে না
। মক্কার কুরাইশরা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সম্মুখে রাজত্বটাকা-পয়সা, বিয়ে ও অন্যান্য পার্থিব ভোগ সামগ্রীর লোভনীয় প্রস্তাব পেশ করে তাকেঁ প্রলুব্ধ করার প্রয়াস চালিয়েছিল তারা চেয়েছিল তিনি যেন তাওহিদ ও আল্লাহর একত্ববাদের দাওয়াত বন্ধ করে দেন এবং মূর্তি পূজার বিরুদ্ধে কোনো কথা না বলেন। কিন্তু তিনি তাতে সম্মত হননি, নিজ লক্ষ্য হতে পিছপা হননি বিন্দু পরিমাণও। বরং সাহাবাদের সাথে নিয়ে সর্ব প্রকার কষ্ট-যাতনা, নির্যাতন-নিপীড়ন সহ্য করে দাওয়াতি মিশন নিয়ে অগ্রসর হতে থাকেন লক্ষ্য একটাই তাওহিদের জয় হতে হবে, না হয় এ মিশন চলবে আমৃত্যু তের বছর নিরবচ্ছিন্ন চেষ্টা-শ্রমের পর তাঁর সংগ্রাম সফল হয়, সাধনা পূর্ণতা লাভ করে, মিশন জয়ী হয় আর মক্কা হয় বিজিত, ভাঙ্গা হয় সংরক্ষিত মূর্তিদের রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বলেছিলেন :
جَاءَ الْحَقُّ وَزَهَقَ الْبَاطِلُ إِنَّ الْبَاطِلَ كَانَ زَهُوقًا ﴿الإسراء81﴾
অর্থাৎ, হক এসেছে এবং বাতিল বিলুপ্ত হয়েছে। নিশ্চয় বাতিল বিলুপ্ত হওয়ারই ছিল। (সূরা ইসরা১৭: ৮১ আয়াত)
। তাওহিদ হচ্ছে প্রত্যেক মুসলিমের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। তাই জীবন শুরু করতে হবে তাওহিদ দিয়ে, শেষও করতে হবে তাওহিদ দিয়েই। জীবনের প্রতিটি পর্বে, প্রতিটি অনুষঙ্গে তাওহিদকে প্রতিষ্ঠা করা, তাওহিদের প্রতি অপরকে দাওয়াত দেয়াই হচ্ছে তার কাজ। কারণকেবল তাওহিদই পারে মুমিনদেরকে ঐক্যবদ্ধ করতে, দাড় করাতে পারে তাদেরকে কালিমার উপর একতাবদ্ধভাবে
মহান আল্লাহর নিকট বিনীত প্রার্থনাতিনি যেন তাওহিদের কালেমাকেই আমাদের শেষ কথা বানান এবং সকল মুমিন-মুসলিমদের তাওহিদের উপর একত্র করেন। আমীন

তাওহিদের উপকারিতা

মানুষের একক ও সমষ্টিগত জীবনে সত্যিকারের তাওহিদ প্রতিষ্ঠিত হলে মানুষ লাভবান হবে দারুনভাবে, অতীব সুন্দর ফল পাবে সার্বিক ক্ষেত্রে কিছু কিছু লাভের কথা নিম্নে আলোচনা করা হল,
   ১। তাওহিদ তার অনুসারীকে সৃষ্টির দাসত্ব থেকে মুক্ত করে আনে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো কাছে নত হওয়া থেকে রক্ষা করে সৃষ্টি যারা কিছুই সৃষ্টি করতে পারে না বরং তাদেরকেই সৃষ্টি করা হয়েছে যাদের কোনো ক্ষমতা নেই। যারা নিজেদের ভাল-মন্দ, কল্যাণ-অকল্যাণ কিছুই করতে পারে না না তারা মৃত্যু দেয়ার ক্ষমতা রাখেনা মৃত্যু থেকে বাঁচানোর তাওহিদ মানুষকে সে সব অথর্ব সৃষ্টির ইবাদত হতে মুক্তি দেয়। তাদের গোলামী হতে বাঁচিয়ে এক আল্লাহর দাসত্বে লাগিয়ে দেয় যিনি তার রব ও স্রষ্টা। তার বিবেক-বুদ্ধিকে নানা কুসংস্কার ও মিথ্যা ধারণা হতে স্বাধীন করে। অন্যের নিকট নত ও অপমানিত হওয়া থেকে মুক্তি দেয়। তার জীবনকে ফেরাউন জাতীয় অত্যাচারীদের হাত হতে রক্ষা করে। বিভিন্ন নেতা, জিন ও মূর্তি পূজারীর কবল হতে স্বাধীন করে আনে। তাইতো পবিত্র কুরআন অধ্যয়ন করলে দেখা যায়, মুশরিক নেতৃবৃন্দ ও অজ্ঞ সীমা লংঘনকারীরা সর্বদাই নবীদের দাওয়াতের বিরোধিতা করেছে বিশেষত: আমাদের রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দাওয়াতের। কারন, তারা ভালভাবেই বুঝত, মানুষ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ উচ্চারণ করার সাথে সাথেই অন্য মানুষের গোলামী হতে স্বাধীন হয়ে যাবে। অত্যাচারের বেড়া জাল ছিন্ন করে বাইরে বেরিয়ে আসবে তাদের কপাল ঊচুঁ হবে এবং বিশ্ব জগতের রব এক আল্লাহ ছাড়া কারও কাছে মাথা নত করবে না
   ২ তাওহিদ সঠিক ব্যক্তিত্ব গড়ে তুলতে সহায়তা করে। মানুষ এতে সঠিকভাবে জীবন গঠন করতে পারে এবং সত্যিকারের দিক নির্দেশনা পায়। তার লক্ষ্যবস্তুকে নির্দিষ্ট করে দেয়। কারণ, সে বুঝতে পারে এক আল্লাহ ছাড়া তার আর কোনো উপায় নেই। ফলেতার দিকে গোপনে ও প্রকাশ্যে মুখ ফিরাতে পারে। সুখে ও দুঃখে তাঁকে ডাকতে পারে। অন্যদিকে মুশরিকদের অন্তর নানা ধরনের প্রভূ ও উপাস্যের প্রতি বিক্ষিপ্ত অবস্থায় থাকে। ফলেএকবার সে জীবিতদের দিকে মুখ ঘুরায়আবার মৃতদের দিকে । এইকারণেই ইউসুফ আ. বলেছেনঃ
يَا صَاحِبَيِ السِّجْنِ أَأَرْبَابٌ مُتَفَرِّقُونَ خَيْرٌ أَمِ اللَّهُ الْوَاحِدُ الْقَهَّارُ ﴿يوسف39﴾
অর্থাৎহে আমার জেলের সাথীদ্বয়, বহু সংখ্যক ভিন্ন ভিন্ন রব ভাল নাকি মহাপরাক্রমশালী এক আল্লাহ? (সূরা ইউসুফ১২ : ৩৯ আয়াত)
তাই মুমিন ব্যক্তি এক আল্লাহর ইবাদত করে। সে জানে তার রব কি করলে খুশি হবেনআর কি করলে নারাজ হবেন। তাই যে কাজে রব খুশি হন সে কাজ করতে থাকে, যে কাজে অসন্তুষ্ট হন তা হতে বিরত থাকে। ফলে তার অন্তর প্রশান্ত হয়ে যায়। আর মুশরিক ব্যক্তি নানা উপাস্যের উপাসনা করে। কোনোটা তাকে ডানে নিয়ে যায়কোনোটা নিয়ে যায় বামে। আর  এ টানা পড়নে পড়ে সে হয় যায় কিংকর্তব্যবিমুঢ়। এতে করে তার মনে আর কোনো শান্তি থাকে না
    ৩। তাওহিদ হচ্ছে মানুষের জীবনের নিরাপত্তার ভিত্তি। কারণএর দ্বারাই সে নিরাপত্তা ও শান্তি পায় আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করে না। তাওহিদ শঙ্কা-ভয়ের সমস্ত দার বন্ধ করে দেয় যেমন রিযকের ভয়জীবন ও মৃত্যুর ভয়, আত্ময়-পরিজনের জীবনের আশঙ্কামানুষের ভয়জিন-ভূতের ভয় ইত্যাদি একত্ববাদে বিশ্বাসী মুমিন আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকেই ভয় করে না অন্যরা যখন ভয়ের মধ্যে থাকে তখন তাকে দেখা যায় সম্পূর্ণ নির্ভীক। মানুষ যখন চিন্তা পেরেশানীতে জর্জরিত থাকেতখন সে থাকে অবিচলিত
এ সত্যের প্রতি নির্দেশ করে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন :
 الَّذِينَ آَمَنُوا وَلَمْ يَلْبِسُوا إِيمَانَهُمْ بِظُلْمٍ أُولَئِكَ لَهُمُ الْأَمْنُ وَهُمْ مُهْتَدُونَ ﴿الأنعام82﴾
অর্থাৎযারা ঈমান এনেছে এবং নিজ ঈমানকে যুলম (শিরক)-এর সাথে সংমিশ্রণ করেনি, তাদের জন্যই নিরাপত্তা এবং তারাই হিদায়াতপ্রাপ্ত (সূরা আনআম: ৮২ )
     ৪
 তাওহিদ মানুষের মনের শক্তির উৎস। তাওহিদ মানুষের মানসিক শক্তির যোগান দেয় । ফলে তার অন্তর আল্লাহ হতে প্রাপ্তির আশায় ভরে যায়, তাঁর উপর বিশ্বাস জন্মে এবং তাঁর উপর ভরসা করে, তাঁর বিচারে মন খুশি থাকেতিনি হতে আগত বিপদে সহ্য ক্ষমতা আসে। সে শক্তির উপর ভিত্তি করে সৃষ্টি থেকে সে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে নিজ ঈমানের উপর পাহাড়ের মত অটল হয়ে যায়। যে কোনো বিপদে পতিত হলেই মুক্তি পাওয়ার জন্য আল্লাহকে ডাকতে থাকে। কখনও মাজার কিংবা মৃতের কাছে ফরিয়াদ করতে যায় না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামর নিম্নোক্ত হাদিস তাদের পাথেয় :
إذا سَأَلْتَ فَاسْأَلِ اللهَ وَاذا اسْتَعَنْتَ فاسْتَعِنْ باللهِ (رواه الترمذى وقال حسن صحيح)
অর্থাৎ, যখন চাইবে কেবল আল্লাহর কাছেই চাইবে আর যখন সাহায্য প্রার্থনা করবে কেবল আল্লাহর কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করবে। (তিরমিযিহাসান সহিহ)
বিপদ-মুসিবত আসার সাথে সাথে তারা আল্লাহর নিম্নোক্ত নির্দেশের উপর আমল করে :
وَإِنْ يَمْسَسْكَ اللَّهُ بِضُرٍّ فَلَا كَاشِفَ لَهُ إِلَّا هُوَ (الأنعام 17)
অর্থাৎ, যদি আল্লাহ তোমাকে কোনো দুর্দশা দ্বারা স্পর্শ করেন, তবে তিনি ছাড়া তা দূরকারী কেউ নেই (সূরা আনআম৬: ১৭ আয়াত)
    ৫। তাওহিদ ভ্রাতৃত্ব ও একতার বন্ধনের মূল। কেননাআল্লাহকে ছেড়ে একদল লোক অপর দলকে প্রভ হিসাবে মান্য করবে তাওহিদ কখনই এমন অনুমোদন দেয় না একের উপর অপরের এ পর্যয়ের কর্তৃত্বের স্বীকৃতি দেয় না। কারণতাওহিদের দাবী হচ্ছে ইবাদত হবে একমাত্র আল্লাহর সকল মানুষের ইবাদত পাওয়ার যোগ্যতা একমাত্র তাঁরই আছে। পৃথিবীর সকল ইবাদতকারীর মাথার মুকুট হচ্ছেন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, যাকে আল্লাহ সকলের মধ্য হতে নির্বাচন করেছেন 

তাওহিদের দুশমন 
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন :
وَكَذَلِكَ جَعَلْنَا لِكُلِّ نَبِيٍّ عَدُوًّا شَيَاطِينَ الْإِنْسِ وَالْجِنِّ يُوحِي بَعْضُهُمْ إِلَى بَعْضٍ زُخْرُفَ الْقَوْلِ غُرُورًا (الانعام 112)
অর্থাৎআর এভাবেই আমি প্রত্যেক নবীর শত্রু করেছি মানুষ ও জিনের মধ্য থেকে শয়তানদেরকে। তারা প্রতারণার উদ্দেশ্যে একে অপরকে চাকচিক্যপূর্ণ কথার কুমন্ত্রণা দেয়। (সূরা আনআম: আয়াত ১২)  
আল্লাহ তাআলার অপার হিকমতের একটি হচ্ছে, তিনি জিনদের মধ্য হতে নবী ও তাওহিদপন্থীদের কিছু শত্রু  সৃষ্টি করে দিয়েছেন। এরা কিছু মানুষকে কুমন্ত্রণা দিয়ে বাতিল ও ভ্রান্তির দিকে নিয়ে তাদের দলে ভিড়িয়ে নেয় তাদের উদ্দেশ্য মানব সন্তানকে তাওহিদ হতে সরিয়ে বিপথগামী করা। অথচ এ তাওহিদের প্রতিই নবীরা সর্বপ্রথম নিজ কওমকে দাওয়াত দিতেন। তাওহিদই হচ্ছে সবকিছুর মূল, যার পর ভিত্তি করে ইসলামের দাওয়াত দিতে হবে। বড়ই দুঃখের বিষয়,আজ অনেকেই ধারণা করেন তাওহিদের দিকে দাওয়াত দিলে উম্মতের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হবে অথচ বাস্তব সত্য হল, তাওহিদ হচ্ছে উম্মতের ঐক্যের মূল সূত্র। ঐক্যের বিষয়টিতো তাওহিদের নামের মধ্যেই নিহিত আছে
অন্যদিকে মহান আল্লাহকে রব, প্রতিপালক ও সৃষ্টিকর্তা হিসাবে স্বীকারকারী মুশরিকরা ওলী আল্লাহদের মাধ্যম ব্যতীত সরাসরি আল্লাহর কাছে দোয়া করতে অস্বীকার করত অথচ এ দোয়াই হচ্ছে ইবাদত। যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক আল্লাহর ইবাদত ও তাঁর নিকট দোয়া করার দিকে ডকলেনতখন তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্বন্ধে বলল:
أَجَعَلَ الْآَلِهَةَ إِلَهًا وَاحِدًا إِنَّ هَذَا لَشَيْءٌ عُجَابٌ ﴿سورة ص5﴾
অর্থাৎসে কি সকল উপাস্যকে এক ইলাহ বানিয়ে নিয়েছে? নিশ্চয় এ তো এক আশ্চর্য বিষয়। (সূরা সাদ ৩৮ : আয়াত ৫)
অন্যত্র আল্লাহ বলেন :
كَذَلِكَ مَا أَتَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِهِمْ مِنْ رَسُولٍ إِلَّا قَالُوا سَاحِرٌ أَوْ مَجْنُونٌ ﴿52﴾ أَتَوَاصَوْا بِهِ بَلْ هُمْ قَوْمٌ طَاغُونَ ﴿الذريات53﴾
অর্থাৎএভাবে তাদের পূর্ববর্তীদের মধ্য থেকে যে রাসূলই এসেছে, তারা বলেছে, এ তো একজন যাদুকর অথবা উন্মাদ। তারা কি একে অন্যকে এ বিষয়ে ওসিয়ত করেছে? বরং এরা সীমালঙ্ঘনকারী কওম (সূরা জারিয়াত : আয়াত ৫২-৫৩)
মুশরিকদের একটি অভ্যাস ছিল, তাদেরকে এক আল্লাহর নিকট দোয়া করার কথা বলা হলে তাদের অন্তর ঘৃনায় ভরে যেত। এ আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে তারা কুফরি করত। আর আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নিকট দোয়া করা বা এ জাতীয় কোনো শিরকের কথা শুনলেই খুশিতে আত্মহারা হয়ে যেত এবং পরষ্পরকে সুসংবাদ দিত। তাদের বর্ণনা দিয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন :
وَإِذَا ذُكِرَ اللَّهُ وَحْدَهُ اشْمَأَزَّتْ قُلُوبُ الَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِالْآَخِرَةِ وَإِذَا ذُكِرَ الَّذِينَ مِنْ دُونِهِ إِذَا هُمْ يَسْتَبْشِرُونَ ﴿الزمر45﴾
অর্থাৎযারা আখিরাতে বিশ্বাস করে না, এক আল্লাহর কথা বলা হলে তাদের অন্তর সঙ্কুচিত হয়ে যায়। আর আল্লাহ ছাড়া অন্য উপাস্যগুলোর কথা বলা হলে তখনই তারা আনন্দে উৎফুল হয়। (সূরা যুমার:আয়াত ৪৫)
আল্লাহর একত্ববাদে অস্বীকার কারী মুশরিকদের সম্বন্ধে বলেন :
ذَلِكُمْ بِأَنَّهُ إِذَا دُعِيَ اللَّهُ وَحْدَهُ كَفَرْتُمْ وَإِنْ يُشْرَكْ بِهِ تُؤْمِنُوا فَالْحُكْمُ لِلَّهِ الْعَلِيِّ الْكَبِيرِ ﴿غافر12﴾
অর্থাৎ,[তাদেরকে বলা হবে] এটা তো এজন্য যে, যখন আল্লাহকে এককভাবে ডাকা হত তখন তোমরা তাঁকে অস্বীকার করতে আর যখন তাঁর সাথে শরিক করা হত তখন তোমরা বিশ্বাস করতে। সুতরাং যাবতীয় কর্তৃত্ব সমুচ্চ, মহান আল্লাহর। (সূরা গাফির৪০ : ১২ আয়াত)
   এ জাতীয় আয়াতগুলো যদিও কাফিরদের সম্বন্ধে নাযিল হয়েছে, কিন্তু এগুলো সেসব লোকদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য যারা তাদের রং-এ রঞ্জিত যদিও তারা নিজেদের মুসলিম বলে দাবী করে। কারণতাদের অনেকে আল্লাহর কাছে প্রার্থনায় ভয় করে ঈমান ও তাওহিদের প্রতি আহ্বান কারীদের সাথে শত্রুতা পোষণ করে সাধারণ লোকদের তাদের কাছ থেকে দুরে সরানোর জন্য তাদের উপর নানা অপবাদ আরোপ করে ও নানা মন্দ নামে আখ্যায়িত করে। লোকদের তারা সে-ই তাওহিদ হতে দূরে সরিয়ে রাখতে চায় যার জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সমস্ত রাসূলদের প্রেরণ করেছেন। আর যখন রাসূলুল্লাহ বা ওলী আল্লাহদের নিকট দোয়া কিংবা সাহায্য প্রার্থনার বিষয়ে শুনতে পায় তখন স্বচকিত হয়ে উঠে ও খুশিতে অন্তর ভরে যায়

তাওহিদ প্রসঙ্গে আলেমদের ভূমিকা

নিশ্চয়ই আলেমগণ হচ্ছেন নবীদের ওয়ারেছ। নবীগণ তাওহিদের প্রতিই সর্বপ্রথম লোকদের দাওয়াত দিয়েছেন
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَسُولًا أَنِ اُعْبُدُوا اللَّهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ (النحل36)
অর্থাৎআর নিশ্চয়ই আমি প্রত্যেক জাতির কাছে একজন রাসূল প্রেরণ করেছি যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাগুতকে পরিহার কর (সূরা নাহল ১৬ : ৩৬ আয়াত)
তাগুত বলতে তাদেরকে বুঝানো হয়- আল্লাহ ছাড়া যাদের ইবাদত করা হয় এবং তারা তাতে রাযী-খুশি থাকে
তাই আলেমদের কর্তব্য হল, সেখান থেকেই তারা দাওয়াত শুরু করবেন যেখান থেকে শুরু করেছিলেন তাবত নবী-রাসূলগণ। অর্থাৎ তাওহিদ ও আল্লাহর একত্ববাদ দিয়ে দাওয়াতি মিশন শুরু করবে। যাবতীয় ইবাদত যেন এক আল্লহর জন্যই সম্পাদিত হয় সকল মানুষকে সেদিকে আহ্বান করবে। বিশেষত: দোয়া-প্রার্থনা-সাহায্য কামনা ইত্যাদি। 
কারণ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
الدُّعَاءُ هُوَالْعٍبَادَةُ (رواه الترمذي وقال حسن صحيح)
অর্থাৎদোয়া-ই ইবাদত। (তিরমিযিহাসানসহিহ)
বর্তমান বিশ্বের অধিকাংশ মুসলমান দোয়া সংক্রান্ত শিরকে আক্রান্ত। তারা নিজেদের বিপদ-মুসিবতপ্রয়োজন ইত্যাদি ক্ষেত্রে আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যকে ডাকছেতাদের নিকট প্রার্থনা করছেতাদের দারস্থ হচ্ছে। এটাই তাদের দুর্ভাগ্যের মূল কারণ। আল্লাহ তাআলা পূর্ব যুগের মানুষদের ধ্বংস করেছেন তার এক নম্বর কারণ হচ্ছে, তারা আল্লাহকে ছেড়ে আউলিয়াদের কাছে প্রার্থনা করত

তাওহিদ প্রতিষ্ঠা ও শিরক বিরোধী আন্দোলনে আলেমরা কয়েক ভাগে বিভক্ত

প্রথম দলঃ
তারা তাওহিদের মর্ম কথা, প্রয়োজনীয়তা ও তার শ্রেণী বিন্যাসকে যথাযথভাবে বুঝেছেন পাশাপাশি তাকে বিনষ্টকারী- শিরকের প্রকৃতি, ক্ষতিকর দিকসমূহ ও তার শ্রেণী-বিভাগ সম্পর্কেও প্রয়োজনীয় ব্যুৎপত্তি অর্জন করেছেন। এরপর সঠিক নিয়মে সে সব বিষয়ে মানুষদেরকে অবহিত করছেন নিরলসভাবে এ ক্ষেত্রে তারা কুরআন ও সহিহ হাদিসকেই রেফারেন্স হিসাবে গ্রহণ করেছেন। ফলেনবীদেরকে যেমন মিথ্যা অপবাদের সম্মুখীন হতে হয়েছিল তাদের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। প্রতি:নিয়ত প্রতিবাদ-প্রতিরোধ, বাধা-বিপত্তি, নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন তবে তারা আদর্শ হিসাবে গ্রহণ করেছেন নবীদেরকে তাই সহ্য করে চলেছেন শত বাধা ও নির্যাতন। দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছেন আল্লাহর যমিনে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার পূণ্যময় মহান কাজে। কোনোভাবেই কর্তব্য-কাজ হতে বিরত হচ্ছেন না মুহূর্তের জন্যও
তাদের পাথেয় হচ্ছে আল্লাহ তাআলার মহান বাণী,  
وَاصْبِرْ عَلَى مَا يَقُولُونَ وَاهْجُرْهُمْ هَجْرًا جَمِيلًا ﴿المزمل10﴾
অর্থাৎ, আর তারা যা বলে, তাতে তুমি ধৈর্য্য ধারণ কর এবং সুন্দরভাবে তাদেরকে পরিহার করে চল। (সূরা মুযযাম্মিল : আয়াত ১০)
লুকমান তাঁর ছেলেকে উপদেশ দিয়ে বলেছেন :
يَا بُنَيَّ أَقِمِ الصَّلَاةَ وَأْمُرْ بِالْمَعْرُوفِ وَانْهَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَاصْبِرْ عَلَى مَا أَصَابَكَ إِنَّ ذَلِكَ مِنْ عَزْمِ الْأُمُورِ ﴿لقمان17﴾
অর্থাৎহে আমার প্রিয় সন্তান, সালাত কায়েম কর, সৎকাজের আদেশ দাও, অসৎকাজে নিষেধ কর  এবং তোমার উপর যে বিপদ আসে তাতে ধৈর্য্য ধর। নিশ্চয় এগুলো অন্যতম দৃঢ় সংকল্পের কাজ সূরা লুকমান : আয়াত ১৭)
দ্বিতীয় দল:
যারা ইসলামের মূল ভিত্তি তাওহিদের দিকে দাওয়াত দেয়াকে খুব বেশী গুরুত্ব দেন না। তারা ঘুরে ফিরে মানুষকে আকিদাহ-বিশ্বাস সহিহ  না করেই সালাতইসলামী রাষ্ট্র গঠন ও জিহাদের দিকে ডাকে মনে হয় তাঁরা আল্লাহ তাআলার সে বাণীটি শুনেননি, যাতে তিনি শিরক সম্বন্ধে সতর্ক করে বলেছেন,
وَلَوْ أَشْرَكُوا لَحَبِطَ عَنْهُمْ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ ﴿الانعام88﴾
অর্থাৎযদি তারা শিরকে প্রবৃত্ত হয়তাহলে তারা যত আমলই করুক না কেন নষ্ট হয়ে যাবে। (সূরা আনআম: আয়াত ৮৮)
যদি তারা নবী-রাসূলদের অনুসরণ করে তাওহিদকে অগ্রাধিকার দিতেন তাহলে তাদের দাওয়াত জয়যুক্ত হত এবং আল্লাহ তাদের সাহায্য করতেনযেমন সাহায্য করেছিলেন তিনি নবী-রাসূলদের
আল্লাহ বলেন :
وَعَدَ اللَّهُ الَّذِينَ آَمَنُوا مِنْكُمْ وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَيَسْتَخْلِفَنَّهُمْ فِي الْأَرْضِ كَمَا اسْتَخْلَفَ الَّذِينَ مِنْ قَبْلِهِمْ وَلَيُمَكِّنَنَّ لَهُمْ دِينَهُمُ الَّذِي ارْتَضَى لَهُمْ وَلَيُبَدِّلَنَّهُمْ مِنْ بَعْدِ خَوْفِهِمْ أَمْنًا يَعْبُدُونَنِي لَا يُشْرِكُونَ بِي شَيْئًا وَمَنْ كَفَرَ بَعْدَ ذَلِكَ فَأُولَئِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ ﴿النور55﴾
 অর্থাৎ, তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে আল্লাহ তাদেরকে এ মর্মে ওয়াদা দিয়েছেন যেতিনি নিশ্চিতভাবে তাদেরকে যমীনের প্রতিনিধিত্ব প্রদান করবেনযেমন তিনি প্রতিনিধিত্ব প্রদান করেছিলেন তাদের পূর্ববর্তীদের এবং তিনি অবশ্যই তাদের জন্য শক্তিশালী ও সুপ্রতিষ্ঠিত করবেন তাদের দীনকেযা তিনি তাদের জন্য পছন্দ করেছেন এবং তিনি তাদের ভয়-ভীতি শান্তি-নিরাপত্তায় পরিবর্তিত করে দেবেন। তারা আমারই ইবাদাত করবেআমার সাথে কোন কিছুকে শরীক করবে না। আর এরপর যারা কুফরী করবে তারাই ফাসিক (সূরা নূর : আয়াত ৫৫)
তৃতীয় দল:
আলেমদের মধ্যে তৃতীয় একটি দল আছে, তারা মানুষের শত্রুতার ভয়ে অথবা চাকরির ভয়ে কিংবা নিজেদের পজিশন নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয়ে তাওহিদের দাওয়াত দেন না এবং শিরকের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম করেন না।  আল্লাহ তাআলা দ্বীনের তাবলীগ করার জন্য তাদেরকে যে ইলম ও মেধা দান করেছেন তা তারা গোপন করে রাখছেন
তাদের তরে আল্লাহর নিম্নোক্ত বাণী খুবই প্রযোজ্য :
 إِنَّ الَّذِينَ يَكْتُمُونَ مَا أَنْزَلْنَا مِنَ الْبَيِّنَاتِ وَالْهُدَى مِنْ بَعْدِ مَا بَيَّنَّاهُ لِلنَّاسِ فِي الْكِتَابِ أُولَئِكَ يَلْعَنُهُمُ اللَّهُ وَيَلْعَنُهُمُ اللَّاعِنُونَ ﴿البقرة159﴾
অর্থাৎ, নিশ্চয় যারা গোপন করে সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ ও হিদায়াত যা আমি নাযিল করেছিকিতাবে মানুষের জন্য তা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করার পরতাদেরকে আল্লাহ লানত করেন এবং লানতকারীগণও তাদেরকে লানত করে। (সূরা বাকারা: আয়াত ১৫৯)
আল্লাহ দ্বীনের পথে আহবানকারীদের সম্বন্ধে বলেন :
الَّذِينَ يُبَلِّغُونَ رِسَالَاتِ اللَّهِ وَيَخْشَوْنَهُ وَلَا يَخْشَوْنَ أَحَدًا إِلَّا اللَّهَ (الاحزاب 39)
অর্থাৎযারা আল্লাহর রিসালাতকে মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়এবং তাঁকে ভয় করে আল্লাহ ছাড়া আর কাউকেই ভয় করে না। (সূরা আহযাব৩৩: ৩৯ আয়াত)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
 مًنْ كَتَمَ عِلْمًا ألْجَمَهُ اللهُ بِلِجَامِ مِّنَ نَّارٍ (صحيح رواه أحمد)
অর্থাৎযে ইলম গোপন রাখবেআল্লাহ কিয়ামত দিবসে তার মুখে আগুনের লাগাম পরাবেন। (আহমদসহিহ)
চতুর্থ দল:
আলেমদের চতুর্থ দলটির বক্তব্য হচ্ছে, কেবলমাত্র আল্লাহর নিকটই দোয়া করতে হবে এমন কোনো কথা নেই বরং নবীআউলিয়া ও মৃতদের কাছে দোয়া করা জায়েয। তারা বলেনআল্লাহ ছাড়া অন্যের কাছে দোয়া করার ব্যাপারে সতর্ক করে যে সব আয়াত নাযিল হয়েছে তা শুধু মুশরিকেদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য মুসলিমদের কেউই  মুশরিকদের অন্তর্ভূক্ত নয়
মনে হচ্ছে তারা আল্লাহ তাআলার সে বাণীটি শুনতে পানরি যাতে তিনি বলেছেন,
الَّذِينَ آَمَنُوا وَلَمْ يَلْبِسُوا إِيمَانَهُمْ بِظُلْمٍ أُولَئِكَ لَهُمُ الْأَمْنُ وَهُمْ مُهْتَدُونَ ﴿الانعام82﴾
 অর্থাৎযারা ঈমান এনেছে এবং স্বীয় ঈমানকে যুলম (শিরক)-এর সাথে মিশ্রণ করেনি। তাদের জন্য রয়েছে নিরাপত্তা এবং তারাই হেদায়েত প্রাপ্ত। (সূরা আনআম৬: ৮২ আয়াত)
    এই আয়াত হতে বুঝা যাচ্ছে শিরকের মধ্যে মুমিন-মুসলিমও পতিত হতে পারে, যা আজ অধিকাংশ মুসলিম দেশেই পরিলক্ষিত হচ্ছে এসব আলেম আল্লাহ ছাড়া অন্যের কাছে দোয়া করা, মসজিদে কবর দেয়াকবরের চরিদিকে তাওয়াফ করাওলী-আউলিয়াদের নামে নযর-মানত দেয়া সহ বহু শিরক, বিদআত ও মারাত্মক মারাত্মক মন্দ কাজকে মুবাহ করে দিয়েছে
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের ব্যাপারে সাবধান করে বলে গেছেনঃ
إنَّمَا أخَافُ عَلى أمَّتِى الأئِمَّةَ المُضَلِّيْنَ (صحيح رواه الترمذي)
অর্থাৎআমি আমার উম্মতের জন্য বিপথগামীকারী ইমাম ও নেতৃবর্গের আশঙ্কা করছি (তিরমিযিসহিহ)
খুবই বিস্ময়কর ব্যাপারএকবার একটি প্রশ্নের জবাবে জামেয়া আযহারের জনৈক শায়খ কবরের দিকে সালাত আদায় করাকে জায়েয বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, কেন কররের দিকে সালাত আদায় করা জায়েয হবে নাঅথচ আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববীতে শায়িত আছেন এবং মানুষ তার কবরের দিকে সালাত আদায় করছে
আমরা তার যুক্তি খন্ডন করে বলতে পারি, প্রথমত: নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মসজিদে দাফন করা হয়নি। বরং তাঁকে দাফন করা হয় আয়েশা রা.-এর ঘরে। উমাইয়াদের সময় তাঁর কবরকে মসজিদের ভিতরে প্রবেশ করান হয়। দ্বিতীয়ত: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরের দিকে সালাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সব সময় পাঠ করতেন :
اللّهُمَّ إنِّى أعُوْذُبِكَ مِنْ عِلْمٍ لا يَنْفَعْ (رواه مسلم)
হে আল্লাহ, আমি এমন ইলম থেকে বাঁচতে চাই যা কোনো উপকার দেয় না। (মুসলিম) 
অর্থাৎ- যা আমি অপরকে শিখাব নানা আমি নিজে তাতে আমল করব এবং না তা আমার চরিত্রকে সংশোধন করবে
পঞ্চম দল:
এমন আলেম যারা নিজ বুজুর্গদের কথা মান্য করে আর আল্লাহর হুকুম অমান্য করার ব্যাপারে তাদের আনুগত্য করে। প্রকৃত অর্থে তারা নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপদেশের বিপরীতে অবস্থান নিয়েছে, নবীজী বলেন,
لا طَاعَةَ لِمَخْلُوْقٍ فى مَعْصِيَةِ الخَالِقِ (صحيح رواه أحمد)
 অর্থাৎস্রষ্টার অবাধ্যতার কাজে সৃষ্টির আনুগত্য করা যাবে না। (আহমাদসহিহ)
এতে করে তারা অতি শীঘ্রই কিয়ামত দিবসে আফসোস করবেযে দিন আফসোসে কোনো কাজ হবে না
আল্লাহ কাফেরদের আযাব বর্ণনা করছেন, যারা তাদের পথ অনুসরণ করবে তাদের সম্বন্ধেও বলছেন :
يَوْمَ تُقَلَّبُ وُجُوهُهُمْ فِي النَّارِ يَقُولُونَ يَا لَيْتَنَا أَطَعْنَا اللَّهَ وَأَطَعْنَا الرَّسُولَا ﴿66﴾ وَقَالُوا رَبَّنَا إِنَّا أَطَعْنَا سَادَتَنَا وَكُبَرَاءَنَا فَأَضَلُّونَا السَّبِيلَا ﴿67﴾ رَبَّنَا آَتِهِمْ ضِعْفَيْنِ مِنَ الْعَذَابِ وَالْعَنْهُمْ لَعْنًا كَبِيرًا ﴿الاحزاب68﴾
যেদিন তাদের চেহারাগুলো আগুনে উপুড় করে দেয়া হবেতারা বলবেহায়আমরা যদি আল্লাহর আনুগত্য করতাম এবং রাসূলের আনুগত্য করতাম। তারা আরো বলবেহে আমাদের রবআমরা আমাদের নেতৃবর্গ ও বিশিষ্ট লোকদের আনুগত্য করেছিলামতখন তারা আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিল হে আমাদের রবআপনি তাদেরকে দ্বিগুণ আযাব দিন এবং তাদেরকে বেশী করে লা‌‌নত করুন। (সূরা আহযাব: আয়াত ৬৬-৬৮)
আল্লামা ইবনে কাসির রহ. এই আয়াতের তাফসীরে বলেন, আমরা নেতাদের ও বড় বড় বুজুর্গদের অনুসরণ করেছিলাম আর বিরোধিতা করেছিলাম রাসূলদের এবং এ ধারণা পোষণ করেছিলাম যেনিশ্চয়ই তাঁদের কাছে কিছু আছে এবং তারাও কোনো কিছুর উপর আছে। কিন্তু এখন দেখছি তারা কোনো কিছুরই উপর নেই

ওহাবি অর্থ কি

আজকাল সাধারণে ওহাবি শব্দটি বেশ পরিচিত হয়ে উঠেছে, ওহাবি বলে সেসব  লোকদেরকে বুঝানো হয়, যারা কুরআন ও সহিহ হাদিসের পরিপন্থী সমাজে প্রচলিত নানা কুপ্রথা ও নিকৃষ্ট বিদআতের বিরুদ্ধে কথা বলেন এবং কোরআন সুন্নাহ ভিত্তিক আমল করেন।  প্রচলিত ধ্যান-ধারণা এড়িয়ে কোরআন-হাদিস সমর্থিত আকীদা পোষণ করাই তাদের অন্যায়। বিশেষ করে তাওহীদের প্রতি দাওয়াত এবং অন্যদের ছেড়ে একমাত্র আল্লাহর কাছে দোয়া করতে বলা হলেতো কথাই নেই
(লেখক বলছেন) আমি আমার শায়খের কাছে ইবনে আব্বাসের রা. বিখ্যাত সে হাদিসটি পাঠ করেছিলাম: যাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যখন চাইবে আল্লাহর কাছেই চাইবে আর যখন সাহায্য প্রার্থনা করবে আল্লাহর কাছেই প্রার্থনা করবে(তিরমিযি, হাসান সহিহ)
এর ব্যাখ্যায় ইমাম নববী রহ. বলেছেন: প্রার্থিত জিনিস যদি এমন হয় যা মানুষের হাতে নেই। যেমনহিদায়াত, ইলমরোগমুক্তি ও সুস্থতা- তাহলে যেন একমাত্র রবের কাছেই চায়। তখন আমি আমার উস্তাদকে বললাম: এ হাদিস ও তার মর্ম আল্লাহ ছাড়া অন্যের কাছে সাহায্য চাওয়াকে নাজায়েয বলেছে। তিনি বললেন : বরং জায়েয। তখন বললাম : আপনার নিকট এর কি দলীল আছেএতে শায়খ খুব রেগে গেলেন এবং চেঁচিয়ে বলতে লাগলেন : আমার চাচী এভাবে বলেন: হে শায়খ সাদ! (ঐ মসজিদের নীচে কবরে শায়িত ব্যক্তি, তার নিকট সাহায্য চাইতে)। তখন আমি বললামঃ হে চাচী! তোমাকে কি শায়খ সাদ কোনো উপকার করতে পারেউত্তরে বললেন : আমি তার কাছে দোয়া করি এবং তখন তিনি আল্লাহর কাছে গিয়ে আমার জন্য শাফায়াত করেন
আমি তখন শায়খকে বললাম : আপনি জ্ঞানী মানুষ। সারা জীবন কোরআন-কিতাব পাঠ করে কাটালেন। এরপরও কি আপনার আকিদাহ আপনার অজ্ঞ চাচীর কাছ থেকে নিবেনতিনি তখন রেগে বললেন : তোমার মধ্যে ওহাবিদের চিন্তা-ভাবনা দেখা যাচ্ছে। ওমরাহ পালন করতে যাও আর তাদের কিতাব নিয়ে ফেরত আস। আসলে আমি ওহাবিদের সম্বন্ধে বলতে গেলে কিছুই জানতাম নাআমার উস্তাদের কাছ থেকে শুধু এতটুকু শুনতাম যেওহাবিরা সমস্ত মানুষদের বিরুদ্ধাচরণ করেতারা ওলী-আউলিয়া ও তাদের কারামত বিশ্বাস করে না। তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভালবাসে না এবং এ জাতীয় আরও বহু অপবাদ। তখন আমি মনে মনে বললামযদি ওহাবিরা বিশ্বাস করে শুধুমাত্র আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে হবে এবং সুস্থতা দানের মালিক শুধু তিনি। তাহলে অবশ্যই আমাকে তাদের সম্বন্ধে জানতে হবে। তারপর তাদের সম্পর্কে জানতে গিয়ে শুনলামএকটি নির্দিষ্ট জয়গায় তারা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় একত্রিত হয় তাফসির, হাদিস ও ফিকাহ নিয়ে আলোচনা হয়। সে মতে এক বৃহস্পতিবার আমি আমার ছেলেদের সহ আরো কিছু শিক্ষিত যুবকদের নিয়ে সেখানে গেলাম। একটা কক্ষে প্রবেশ করে দরসের জন্য অপক্ষা করতে লাগলাম। কিছুক্ষণ পর আমাদের সামনে একজন শায়খ আসলেন। সালাম জানিয়ে ডান দিক হতে শুরু করে সবার সাথে হাত মিলালেন। এরপর নির্ধারিত চেয়ারে বসলেন। আমি লক্ষ্য করলাম কেউ তাঁর সম্মানে দাঁড়াল না আমি মনে মনে বললাম : এ শায়খ খুবই নম্র ও বিনিত লোক। নিজ সম্মানে অন্যদের দাঁড়ানোকে পছন্দ করেন না। কিছুক্ষণ পর তিনি সে খুতবা পড়ে দরস শুরু করলেন, যা নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ খুতবা ও দরস দেয়ার সময় বলতেন। খুতবার পর অত্যন্ত প্রাঞ্জল ও বিশুদ্ধ আরবী ভাষায় কথা বলতে লাগলেন এবং হাদিস সম্বন্ধে আলোচনা শুরু করলেন- হাদিসের সনদ সহিহ না দুর্বল তাও বলে দিলেন নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নাম যতবার আসল ততবারই দরূদ পাঠ করলেন আলোচনার শেষ ভাগে লিখিত প্রশ্নাবলী পেশ করা হল। তিনি কোরআন ও হাদিসের দলীলসহ সবগুলো প্রশ্নেরই উত্তর দিলেন। উপস্থিত কতিপয় ব্যক্তিবর্গ তার সাথে আলোচনা করতে চাইলে কাউকে বিমুখ করলেন না। দরসের শেষে বললেন : সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর যিনি আমাকে মুসলিম বানিয়েছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবাদের অনুসরণ করে চলার তাওফীক দিয়েছেন। কিছু লোক আমাদের সম্বন্ধে মন্তব্য করে বলে তোমরা ওহাবি। এটা হচ্ছে মানুষকে দেয়া নিকৃষ্ট উপাধি। এরূপ করতে আল্লাহ   নিষেধ করেছেন:
وَلَا تَنَابَزُوا بِالْأَلْقَابِ (الحجرات 11)
অর্থাৎতোমরা একে অপরকে মন্দ উপনামে ডেকো না। (সূরা হুজুরাত৪৯: ১১ আয়াত) 
অতীতে ইমাম শাফেয়ী রহ.-কে রাফেজি বলে আখ্যায়িত করা হলে তিনি এক কবিতার মাধ্যমে তার উত্তর দেনযার সারমর্ম হল:
যদি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর বংশীয়দের ভালবাসার নাম রাফেজি হয় তাহলে মানুষ ও জিন সকলে সাক্ষী থেকো, আমিও রাফেজি
শায়খের দরস শেষ হলে কিছু সংখ্যক যুবকের সাথে বের হয়ে আসলাম তারা তাঁর ইলম ও বিনম্র ব্যবহারে বিমুগ্ধ হয়ে পড়েছিল। তাদের একজন বলেই বসল, ইনি সত্যই শায়খ

ওহাবি বলার ইতিহাস
তাওহিদের শত্রুরা তাওহিদপন্থীদের মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহাবের প্রতি সম্বন্ধযুক্ত করে ওহাবি নামে আখ্যায়িত করে। যদি তারা সত্যবাদিই হত তাহলে তাঁর মূল নাম মুহাম্মাদের সাথে সম্পর্ক করে বলত মুহাম্মাদী। কিন্তু আল্লাহ চাইলেন তাওহিদপন্থীরা তাঁর নাম ওহাব বা দাতা- এর সাথে সম্পর্কিত হউক। তাই থেকে হয়ে গেল ওহাবি। যদি সূফী বলতে সূফ বা পশমী কাপড় পরিধানকারী লোকদের সাথে সম্পর্কিত মানুষদের বুঝায়তাহলে ওহাবি মানে আল্লাহর নাম ওহাব -যিনি মানুষকে একত্ববাদ দান করেন- এর সাথে সম্পর্কিত লোকদের বুঝাবে
মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহেবের জীবনী
মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহাব সৌদি আরবের অন্তর্গত নজদ এলাকায় ওয়াইনাহ নামক স্থানে ১১১৫ হিজরীতে জন্ম গ্রহণ করেন। ১০ বছরে পদার্পণ করার পূর্বেই পবিত্র কোরআন মুখস্থ করেন। নিজ পিতার -যিনি হাম্বলী মাযহাবের একজন বিশেষ আলেম ছিলেন- নিকট হতে ফিকাহ শিখেন। তারপর বিভিন্ন ওস্তাদের নিকট হাদিস ও তাফসীর শাস্ত্রে শিক্ষা লাভ করেন বিভিন্ন এলাকায় বিশেষত: মদিনা শরিফ গিয়ে কোরআন হাদিসের উপর বিশেষভাবে গবেষণার মাধ্যমে তাওহিদের জ্ঞান লাভ করেন। শৈশব থেকেই নিজ এলাকাতে যে সব শিরক বিদআত ও কুসংস্কার প্রচলিত ছিল সেগুলো খুব খেয়াল রাখেন যেমনকবরকে পবিত্র ও বরকতময় জ্ঞান করে পূজা করাযা ছিল সত্যিকারের ইসলাম পরিপন্থী মাঝে মাঝে শুনতেন তার এলাকার মেয়েরা পুরুষ খেজুর গাছের কাছে ওছীলা চেয়ে বলত : হে পালের গোদাবছর পূর্ণ হবার পূর্বে যেন স্বামী পাই। এ ছাড়া হেজাজে দেখতে পান বিভিন্ন সাহাবি ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বংশধরদের কবর পূজা করা হচ্ছে মদিনা শরিফে শুনতেন, লোকেরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কবরে গিয়ে আল্লাহকে ছেড়ে তাঁর নিকট বিপদ মুক্তি চাচ্ছে আল্লাহকে ছেড়ে তাঁকে ডাকাডাকি করছে এ সবই ছিল কোরআন ও নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথার বিপরীত। কারণ রাব্বুল আলামীন বলেন :
وَلَا تَدْعُ مِنْ دُونِ اللَّهِ مَا لَا يَنْفَعُكَ وَلَا يَضُرُّكَ فَإِنْ فَعَلْتَ فَإِنَّكَ إِذًا مِنَ الظَّالِمِينَ ﴿يونس106﴾
অর্থাৎআর আল্লাহ ছাড়া এমন কিছুকে ডেকো নাযা তোমার উপকার করতে পারে না এবং তোমার ক্ষতিও করতে পারে না। অতএব তুমি যদি করতাহলে নিশ্চয় তুমি যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হবে।(সূরা ইউনুস: আয়াত ১০৬)
নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা ইবনে আব্বাসকে রা. বললেন :
إذا سَأَلْتَ فَاسْأَلِ اللهَ وَاذا اسْتَعَنْتَ فاسْتَعِنْ باللهِ (رواه الترمذى وقال حسن صحيح)
অর্থাৎ, যখন চাইবে কেবল আল্লাহর কাছেই চাইবে আর যখন সাহায্য প্রার্থনা করবে কেবল আল্লাহর কাছেই প্রার্থনা করবে। (তিরমিযিহাসান সহিহ)
এতসব দেখে তিনি তার এলাকাবাসীদেরকে তাওহিদ ও এক আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করার দিকে ডাকতে শুরু করলেন। যুক্তি দিয়ে বললেন, তিনিই শ্রষ্টা এবং এবং তিনিই দাতা। অন্যরা কারও কোনো কষ্ট দুর করতে সমর্থ নয়এমনকি নিজেদেরও না নেককারদের সাথে ভালবাসার অর্থ হল তাদের অনুসরণ করাতাদেরকে আল্লাহ ও মানুষের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী বানানো নয়। আল্লাহকে ছেড়ে তাদের কাছে কোনো জিনিস চাওয়া নয়
১-তাঁর এ সব তাওয়াতি কর্মসূচী দেখে বাতিল পন্থীরা তাঁর বিরুদ্ধে খাড়া হয়ে গেল তিনি তাওহিদের দাওয়াত দিতে শুরু করলেন আর বিদআতীরা তার বিরুদ্ধে খাড়া হল। এটা খুবই স্বাভাবিক। কারণনবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন একত্ববাদের দাওয়াত নিয়ে তৈরী হলেন তখন মক্কার কাফেররা আবাক হয়ে বলেছিল:
 أَجَعَلَ الْآَلِهَةَ إِلَهًا وَاحِدًا إِنَّ هَذَا لَشَيْءٌ عُجَابٌ ﴿ص5﴾
অর্থাৎসে কি সমস্ত মাবুদকে এক মাবুদ বানাতে চায়এটাত সত্যই খুব অবাক হওয়ার কথা। ( সূরা সোয়াদ : আয়াত ৫)
তখন তাঁর বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়ে গেল তুমুলভাবে। তাঁর সম্বন্ধে নানা ধরণের মিথ্যা কথার প্রচার শুরু হল- যাতে তাঁর দাওয়াত কর্ম বন্ধ হয়ে যায় কিন্তু মহান আল্লাহ দাওয়াতের হিফাযত করলেন এ কাজের জন্য এমন এক দল লোক তৈরী করে দিলেন, যারা সে দাওয়াতের কাজ নিয়ে ছড়িয়ে পড়ল সারা হেজাজসহ অন্যান্য ইসলামি দেশগুলোয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও আজ পর্যন্ত অনেক লোকই তাঁর সম্বন্ধে মিথ্যা প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের বক্তব্য হচ্ছে, তিনি পঞ্চম মাযহাবের প্রতিষ্ঠা করেছেন। আসলে তিনি হাম্বলী মাযহাবের অনুসারী ছিলেন তারা বলে: ওয়াহাবিরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ভালবাসে না। তাঁর উপর দরূদ পাঠ করে না। অথচ তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবনী গ্রন্থ জাদুল মায়াদকে সংক্ষিপ্ত করেছেন। এ ধরণের আরো বহু অপবাদ দেয়া হয় আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এসব অপবাদের বিচার করবেন কিয়ামত দিবসে। যদি তারা তার বইপত্র পাঠ করত তাহলে দেখত- সেগুলো কোরআনহাদিস ও সাহাবাদের কথায় পূর্ণ
২-হাদীসে আছে :
اللّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِى شَامِنَا وَ فِى يَمَنِنَا قَالُوا وَفِى نَجْدِنَا قَالَ هُنَالِكَ الزِّلازِلُ وَالْفِتَنُ وَ بِهَا يَطْلَعُ قَرْنُ الشًّيْطَانِ (رواه البخاري و مسلم)
অর্থাৎহে আল্লাহ! বরকত দাও আমাদের শামে এবং ইয়ামানে। লোকেরা বলল : আমাদের নজদে। তিনি বললেন : ওখান ভূমিকম্প ও বিভিন্ন ফেতনা হবে। সেখানে শয়তানের শিং উঠবে। ( বুখারি ও মুসলিম)
এ হাদিসের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ইবনে হাজার আসকালানী ও অন্যান্য আলেমরা বলেছেন : হাদীসে যে নজদের কথা বলা হয়েছে তার অবস্থান ইরাকে। কারণ সেখান থেকেই ফিতনা শুরু হয়েছে। যেখানে হোসাইন রা. কে শহীদ করা হয়। কিন্তু কিছু লোক মনে করে বর্ণিত নজদ হল হেজাজের নজদ অথচ ইরাকে যে ধরণের ফিতনা প্রকাশ পেয়েছে সে রকম কোনো ফিতনা সৌদি আরবের নজদ থেকে প্রকাশ পায় নি। হেজাজের নজদ থেকে প্রকাশ পেয়েছে সে তাওহিদ যার জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বিশ্ব জগতকে সৃষ্টি করেছেনএবং সমস্ত রাসূলদের প্রেরণ করেছেন
কিছু ন্যায় পরায়ণ আলেম বলেছেনতিনি হিজরী ১১ শতাব্দীর মোজাদ্দেদ। তারা তার সম্বন্ধে গ্রন্থ লিখেছেন। যেমন শায়খ আলী আল- তানতাভী রহ. যিনি বড় বড় ব্যক্তিত্বদের সম্বন্ধেও বহু বই লিখেছেন। শায়খ মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল ওয়াহাব রহ. নামক বইতে তিনি লিখেছেন,  হিন্দুস্তান ও অন্যান্য প্রত্যন্ত অঞ্চলে একত্ববাদের ধ্যান-ধারণা পৌছেঁছে মুসলিম হাজীদের দ্বারা, যারা মক্কা থেকে এই সম্বন্ধে ধারণা নিয়েছেন। ফলে ইংরেজ ও ইসলামের অন্যান্য শত্রুরা এর বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করল। কারণএকমাত্র তাওহিদই মুসলিমদেরকে নিজ শত্রুদের বিরুদ্ধে একত্রিত করে । ফলেতারা এমন অবস্থা সৃষ্টি করলযে ব্যক্তিই তাওহীদের দিকে মানুষকে ডাকে তাকেই তারা ওহাবি নামে আখ্যায়িত করে। তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল মুসলিমরা যেন সে তাওহিদ থেকে সরে যায় যে তাওহিদ এক আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করার শিক্ষা দেয়

তাওহিদ  শিরকের দ্বন্দ্ব

। তাওহদি ও শিরকের দ্বন্দ্ব বহু পুরাতন। নূহ আ.-এর যুগ থেকেই এর সূচনা। যখন তিনি তাঁর সম্প্রদায়কে মূর্তি পূজা ছেড়ে এক আল্লাহর ইবাদতের দিকে ডেকেছিলেন তখন থেকেই  এটি শুরু হয়। তিনি সাড়ে নয়শত বছর পর্যন্ত তাদেরকে তাওহিদের দাওয়াত দেন কিন্তু তারা তাঁকে অমান্য করে ও তাঁর বিরাদ্ধাচরণ করে সে সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন :
وَقَالُوا لَا تَذَرُنَّ آَلِهَتَكُمْ وَلَا تَذَرُنَّ وَدًّا وَلَا سُوَاعًا وَلَا يَغُوثَ وَيَعُوقَ وَنَسْرًا ﴿23﴾ وَقَدْ أَضَلُّوا كَثِيرًا (نوح 24)

আর তারা বলেতোমরা তোমাদের উপাস্যদের বর্জন করো নাবর্জন করো না ওয়াদসুওয়া, ইয়াগূছইয়াঊক ও নাসরকেবস্ত্তত তারা অনেককে পথভ্রষ্ট করেছে(সূরা নূহ: আয়াত ২৩ ও ২৪)

বুখারি শরিফে ইবনে আব্বাস রা. থেকে এই আয়াতের তাফসিরে বলা হয়েছে: এঁরা ছিলেন নূহ আ.-এর সমপ্রদায়ের মধ্যে ভাল ও নেককার লোক। তারা মারা গেলে শয়তান তাদের গোত্রের লোকদের কাছে গোপনে বললতারা যেখানে বসতেন সেখানে তাদের প্রতিমূর্তি তৈরী কর এবং এগুলোকে তাঁদের নামে বিভূষিত কর। তারা তাই করল কিন্তু তখনও পর্যন্ত তাদের ইবাদত করা হত না। যখন এরা মারা গেল তখন কেন যে মূর্তিগুলি বানান হয়েছিল তা পরবর্তী লোকেরা ভুলে গেল। ফলেতখন থেকেই মূর্তি ও পাথরের পূজা শুরু হয়ে গেল
। এরপর থেকে (অর্থাৎ নূহ আ.- এর পর) যত রাসূল আগমন করেছেন তাদের প্রত্যেকে এক আল্লাহর ইবাদতের দিকে ডাকতে শুরু করলেন এবং আল্লাহ ব্যতীত সকল বাতেল- অযোগ্য মাবুদদের ত্যাগ করতে বললেন এ বিষয়ে পবিত্র কোরআন ভরপুর
আল্লাহ বলেনঃ
وَإِلَى عَادٍ أَخَاهُمْ هُودًا قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُمْ مِنْ إِلَهٍ غَيْرُهُ أَفَلَا تَتَّقُونَ ﴿65:الاعراف﴾
অর্থাৎআর (প্রেরণ করলাম) আদ জাতির নিকট তাদের ভাই হূদকে। সে বলল, হে আমার কওম, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর। তিনি ছাড়া তোমাদের কোন (সত্য) ইলাহ নেই তোমরা কি তাকওয়া অবলম্বন করবে না(সূরা আরাফ : আয়াত ৬৫)
অন্যত্র বলেন :
وَإِلَى ثَمُودَ أَخَاهُمْ صَالِحًا قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُمْ مِنْ إِلَهٍ غَيْرُهُ (هود: 61)
অর্থাৎআর সামূদ জাতির নিকট (পাঠিয়েছিলাম) তাদের ভাই সালেহকে। সে বলল, হে আমার কওম, তোমার আল্লাহর ইবাদত কর, তিনি ছাড়া তোমাদের কোন (সত্য) ইলাহ নেই। (সূরা হূদ : আয়াত ৬১)
আরও ইরশাদ হচ্ছে :
وَإِلَى مَدْيَنَ أَخَاهُمْ شُعَيْبًا قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُمْ مِنْ إِلَهٍ غَيْرُهُ (هود 84)
অর্থাৎআর মাদইয়ানে আমি (পাঠিয়েছিলাম) তাদের ভাই শুআইবকে। সে বলল, হে আমার কওম, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর, তিনি ছাড়া তোমাদের কোন (সত্য) ইলাহ নেই (সূরা হূদ: আয়াত ৮৪)
আল্লাহ তাআলা আরো বলেন :
وَإِذْ قَالَ إِبْرَاهِيمُ لِأَبِيهِ وَقَوْمِهِ إِنَّنِي بَرَاءٌ مِمَّا تَعْبُدُونَ ﴿26﴾ إِلَّا الَّذِي فَطَرَنِي فَإِنَّهُ سَيَهْدِينِ ﴿الزخرف27﴾
অর্থাৎআর স্মরণ কর, যখন ইবরাহীম স্বীয় পিতা ও তার কওমকে বলেছিল, তোমরা যেগুলুর ইবাদত কর, নিশ্চয় আমি তাদের থেকে সম্পূর্ণমুক্ত। তবে (তিনি ছাড়া) যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন। অত:পর নিশ্চয় তিনি আমাকে শীঘ্রই হেদায়াত দিবেন(সূরা যুখরুফ : আয়াত ২৬ ও ২৭)

মুশরিকরা সকল নবীরই বিরোধিতা করত এবং অহঙ্কারের সাথে মুখ ঘুরিয়ে নিত। আর তাদের আনিত দাওয়াত উপেক্ষা করত। একে বাধাগ্রস্ত করার জন্য সকল শক্তি প্রয়োগ করত
 আমাদের রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, যিনি নবুয়ত পাওয়ার আগে নিজ জাতির কাছে আল আমীন তথা বিশ্বাসী বলে পরিচিত ছিলেন এ নামেই সকলের কাছে সমাদৃত ছিলেন। কিন্তু যখনই তাদেরকে এক আল্লাহর ইবাদতের দিকে ডাকলেন এবং বাপ দাদাদের অনুসৃত মূর্তি পূজা ত্যাগের আহ্বান জানালেন। তখনই তাঁর সত্যবাদিতা ও আমানতদারীতার কথা ভুলে গেল। বরং উল্টো বলতে লাগল : তিনি মিথ্যবাদীযাদুকর পবিত্র কোরআন তাদের বিরোধিতা করে বর্ণনা করছে :
وَعَجِبُوا أَنْ جَاءَهُمْ مُنْذِرٌ مِنْهُمْ وَقَالَ الْكَافِرُونَ هَذَا سَاحِرٌ كَذَّابٌ ﴿4﴾ أَجَعَلَ الْآَلِهَةَ إِلَهًا وَاحِدًا إِنَّ هَذَا لَشَيْءٌ عُجَابٌ ﴿ص:5﴾
অর্থাৎআর তারা বিস্মিত হল যে, তাদের কাছে তাদের মধ্য থেকেই একজন সতর্ককারী এসেছে এবং কাফেররা বলে, এ তো যাদুকর, মিথ্যাবাদী সে কি সকল উপাস্যকে এক ইলাহ বানিয়ে নিয়েছে? নিশ্চয় এ তো এক আশ্চর্য বিষয় (সূরা সোয়াদ : আয়াত ৪ ও ৫)
অন্যত্র বলেন :
كَذَلِكَ مَا أَتَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِهِمْ مِنْ رَسُولٍ إِلَّا قَالُوا سَاحِرٌ أَوْ مَجْنُونٌ ﴿52﴾ أَتَوَاصَوْا بِهِ بَلْ هُمْ قَوْمٌ طَاغُونَ ﴿الذريات:53﴾
অর্থাৎএভাবে তাদের পূর্ববর্তীদের মধ্য থেকে যে রাসূলই এসেছে, তারা বলেছে, এ তো একজন যাদুকর অথবা উন্মাদ। তারা কি  একে অন্যকে এ বিষয়ে ওসিয়ত করেছে? বরং এরা সীমালঙ্ঘনকারী কওম (সূরা যারিয়াত: আয়াত ৫২ ও ৫৩)
এটিই হচ্ছে সকল নবী-রাসূলের তাওহিদের প্রতি দাওয়াত দেয়ার পরের অবস্থা। এটিই তাঁদের মিথ্যাবাদী কওম ও অপবাদ দানকারীদের ভূমিকা
। আমাদের বর্তমান সময়ে কোনো মুসলিম তার অপর মুসলিম ভাইদেরকে চরিত্র সংশোধনসততা ও আমানতদারীতা রক্ষা করার প্রতি দাওয়াত দিলে তাকে কোনোরূপ বিরোধিতার সম্মুখীন হতে হয় না। কিন্তু যখনই তাওহিদ তথা এক আল্লাহকে ডাকা ও বিপদ-মুসিবতে কেবল তাঁর নিকটই সাহায্য প্রার্থনা করার প্রতি দাওয়াত দেয় এবং আল্লাহ ব্যতীত নবী, আওলিয়াদের দ্বারস্থ হতে নিষেধ করে _সকল নবীই যা করে গিয়েছেন_ তখনই মানুষ তার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যায় এবং নানা অপবাদে জর্জরিত করে ফেলে বলে ইনি ওহাবি, রাসূলের দুশমন ইত্যাদি- যাতে মানুষ তার দাওয়াত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। আর কোরআনে তাওহিদের বক্তব্য সম্বলিত কোনো আয়াত আসলে তাদের কেউ কেউ বলেএটি ওহাবিদের আয়াত। আর হাদিস যখন বলে : যখন সাহায্য চাইবে এক আল্লাহর কাছেই চাইবেতখন কেউ কেউ বলে, এ হল ওহাবিদের হাদিস কোনো মুসল্লী বুকের উপর হাত বাঁধলে, আত্তাহিয়্যাতুতে তর্জনি নাড়লে _যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বদা করতেন_ বলে: এ তো ওহাবি হয়ে গেছে। আজ অবস্থাটা হয়ে গেছে এমন যে, কেউ একত্ববাদের কথা বললে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নতের অনুসরণ করলে তাকে ওহাবি বলা হয়। বিভিন্নভাবে তিরস্কার করা হয়
। তাওহিদের প্রতি আহ্বানকারী দলকে অবশ্যই ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুসরণ করতে হবে যাঁকে তাঁর রব বলেছেন :
وَاصْبِرْ عَلَى مَا يَقُولُونَ وَاهْجُرْهُمْ هَجْرًا جَمِيلًا ﴿10المزمل﴾
অর্থাৎতারা যা বলে তা তুমি সহ্য কর এবং তাদেরকে সুন্দরভাবে পরিত্যাগ কর। (সূরা মুযযাম্মিল: আয়াত ১০)
অন্য ইরশাদ হচ্ছে :
فَاصْبِرْ لِحُكْمِ رَبِّكَ وَلَا تُطِعْ مِنْهُمْ آَثِمًا أَوْ كَفُورًا ﴿الدهر:24﴾
অর্থাৎঅতএব তোমার রবের হুকুমের জন্য ধৈর্য্য ধারণ কর এবং তাদের মধ্য থেকে কোনো পাপিষ্ঠ বা অস্বীকারকারীর আনুগত্য করো না। (সূরা দাহার : আয়াত ২৪)
 তাওহিদের দিকে দাওয়াত দেয়া হলে তা কবূল করা এবং দাওয়াত দানকারীকে ভালবাসা সকল মুসলিমের উপর ফরজ কারণতাওহিদের দাওয়াত দেয়া ছিল রাসূলদের কাজ, আমাদের রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও এ কাজ করে গেছেন, লোকদের তাওহিদের প্রতি ডেকে গেছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি নবীজীকে ভালবাসবে অবশ্যই সে তাঁর দাওয়াতকে ভলবাসবে। আর যে তাওহিদকে ঘৃণা করল সে যেন নবীকেই ঘৃণা করল। কোনো মুসলিমই কি এ কাজ করতে রাযী হবে?

হুকুম-আহকাম শুধু আল্লাহ হতে

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এ জগতকে সৃষ্টি করেছেন একমাত্র তাঁর ইবাদতের জন্য। আর এ ইবাদত শিক্ষা দেয়ার জন্য পাঠিয়েছেন অসংখ্য নবী-রাসূল। তাঁদের উপর কিতাব অবতীর্ণ করেছেন সত্য ও ন্যায়ানুগ পন্থায় মানুষদের মধ্যে বিচার করার জন্য । সুতরাং ইনসাফ ও ন্যায় বিচার পাওয়া যায় একমাত্র আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হুকুমের মধ্যে আর তাদের এ হুকুম ইবাদত, আকিদা, রাজনীতি, লেন-দেন, বেচা-কেনা,  এক কথায় মানবীয় যাবতীয় কাজের ক্ষেত্রেই বিদ্যমান

। আকিদার ক্ষেত্রে হুকুম :
পৃথিবীতে আগত সমস্ত নবী-রাসূল সর্বপ্রথম আকিদা শুদ্ধকরণ ও মানুষদের তাওহিদের প্রতি আহ্বান কর্মসূচী দিয়ে তাদের কাজ শুরু করেছেন। লক্ষ্য করুনইউসুফ আ.কে যখন তাঁর জেলখানার সঙ্গীদ্বয় স্বপ্নের ব্যাখ্যা জিজ্ঞেস করেছিলেন তখন তিনি তাদের প্রথমে তাওহিদের দাওয়াত দিয়েছেন। এরপর তাদের প্রার্থিত বিষয়ে কথা বলেছেন। তিনি তাদের বললেন:
يَا صَاحِبَيِ السِّجْنِ أَأَرْبَابٌ مُتَفَرِّقُونَ خَيْرٌ أَمِ اللَّهُ الْوَاحِدُ الْقَهَّارُ ﴿39﴾ مَا تَعْبُدُونَ مِنْ دُونِهِ إِلَّا أَسْمَاءً سَمَّيْتُمُوهَا أَنْتُمْ وَآَبَاؤُكُمْ مَا أَنْزَلَ اللَّهُ بِهَا مِنْ سُلْطَانٍ إِنِ الْحُكْمُ إِلَّا لِلَّهِ أَمَرَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ ذَلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ وَلَكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ ﴿40﴾  
হে আমার কারা সঙ্গীদ্বয়বহু সংখ্যক ভিন্ন ভিন্ন রব ভাল নাকি মহাপরাক্রমশালী এক আল্লাহ ? তোমরা তাঁকে বাদ দিয়ে নিছক কতগুলো নামের ইবাদত করছযাদের নামকরণ তোমরা ও তোমাদের পিতৃপুরুষরা করেছযাদের ব্যাপারে আল্লাহ প্রমাণ নাযিল করেননি। বিধান একমাত্র আল্লাহরই। তিনি নির্দেশ দিয়েছেন যেতাঁকে ছাড়া আর করো ইবাদাত করো না। এটিই সঠিক দীনকিন্তু অধিকাংশ লোক জানে না। ( সূরা ইউসুফ: আয়াত ৩৯ও ৪০)

। ইবাদতের ক্ষেত্রে হুকুম:
ইবাদতের যাবতীয় বিধি-বিধান কোরআন-সুন্নাহ হতে গ্রহণ করা আমাদের সকলের উপর ওয়াজিব। যেমনসালাতযাকাতহজ ও অন্যান্য ইবাদত। সবই আমাদের সম্পাদন করতে হবে কোরআনের নির্দেশ ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নতের অনুবর্তিতায়।  
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
صلوا كما رأيتموني إصلي. متفق عليه
অর্থাৎতোমরা সেভাবেই সালাত আদায় কর যেভাবে আমাকে সালাত আদায় করতে দেখেছ। (বুখারি ও মুসলিম)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যত্র বলেছেন :
خذوا عني مناسككم. متفق عليه
অর্থাৎতোমরা হজের নিয়মাবলী আমার নিকট হতে গ্রহণ কর। (মুসলিম)
চার মাজহাবের সকল ইমামই বলেছেনহাদিস সহিহ হলে সেটিই আমার মাজহাব
সুতরাং কোনো মাসআলায় তাদের মধ্যে মতভিন্নতা দেখা দিলে তাদের নির্দিষ্ট একজনের কথাই গ্রহণ করব, এমনটি নয় বরং যার কথার পেছনে কোরআন কিংবা সহিহ হাদিসের সমর্থন পাওয়া যাবে তারটাই গ্রহণ করব

। বেচা-কেনার ক্ষেত্রে হুকুম:
প্রতিটি মুসলিমের বৈষয়িক কারবার, লেন-দেন, বেচা-কনা, কর্জ দান ও গ্রহণভাড়া দেয়া-নেয়া ইত্যাদি কর্ম এক আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লা-এর বিধান মত চলবে সব ক্ষেত্রে তাদের হুকুম কার্যকর হবে
কারণ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন :
فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّى يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوا فِي أَنْفُسِهِمْ حَرَجًا مِمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا ﴿65﴾
অতএব তোমার রবের কসমতারা মুমিন হবে না যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে বিচারক নির্ধারণ করেতারপর তুমি যে ফয়সালা দেবে সে ব্যাপারে নিজদের অন্তরে কোনো দ্বিধা অনুভব না করে এবং পূর্ণ সম্মতিতে মেনে নেয় (সূরা নিসা : আয়াত ৬৫)
তাফসিরকারকগণ এই আয়াত নাযিল হওয়ার কারণ সম্বন্ধে বলেছেন : দুই সাহাবির মধ্যে জমিতে পানি সেচ দেয়া নিয়ে মতবিরোধ ঘটে। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জোবাইর রা.কে সেচের হুকুম দেন। তখন অন্য ব্যক্তি বলল: তার পক্ষে আপনি রায় দিয়েছেন কারণসে আপনার ফুফুর ছেলে। তখন এ আয়াত নাযিল হয়। (বুখারি)

। বিচার ও কিসাসের ক্ষেত্রে হুকুম :
আল্লাহ তাআলা বলেন :
وَكَتَبْنَا عَلَيْهِمْ فِيهَا أَنَّ النَّفْسَ بِالنَّفْسِ وَالْعَيْنَ بِالْعَيْنِ وَالْأَنْفَ بِالْأَنْفِ وَالْأُذُنَ بِالْأُذُنِ وَالسِّنَّ بِالسِّنِّ وَالْجُرُوحَ قِصَاصٌ فَمَنْ تَصَدَّقَ بِهِ فَهُوَ كَفَّارَةٌ لَهُ وَمَنْ لَمْ يَحْكُمْ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ فَأُولَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ ﴿45﴾
অর্থাৎ, আর আমি এতে তাদের উপর অবধারিত করেছি যেপ্রাণের বিনিময়ে প্রাণচোখের বিনিময়ে চোখনাকের বিনিময়ে নাককানের বিনিময়ে কান ও দাঁতের বিনিময়ে দাঁত এবং জখমের বিনিময়ে সমপরিমাণ জখম। অত:পর যে তা ক্ষমা করে দেবেতার জন্য তা কাফ্‌ফারা হবে। আর আল্লাহ যা নাযিল করেছেনতার মাধ্যমে যারা ফয়সালা করবে না,তারাই যালিম। (সূরা মায়েদা: আয়াত ৪৫)

। শরিয়তের ক্ষেত্রে এক আল্লাহর হুকুম :
আল্লাহ তাআলা বলেন :
شَرَعَ لَكُمْ مِنَ الدِّينِ مَا وَصَّى بِهِ نُوحًا وَالَّذِي أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ... ﴿13﴾
অর্থাৎ, তিনি তোমাদের জন্য দীন বিধিবদ্ধ করে দিয়েছেনযে বিষয়ে তিনি নূহকে নির্দেশ দিয়েছিলেনআর আমি তোমার কাছে যে ওহী পাঠিয়েছি... ( সূরা শরা: আয়াত ১৩)

মুশরিকদের বক্তব্যআল্লাহ বিচারের ভার আল্লাহ ছাড়া অন্যের হাতে দিয়েছেন। তিনি তার বিরোধিতা করে বলেন :
أَمْ لَهُمْ شُرَكَاءُ شَرَعُوا لَهُمْ مِنَ الدِّينِ مَا لَمْ يَأْذَنْ بِهِ اللَّهُ ﴿21﴾
অর্থাৎতাদের জন্য কি এমন কিছু শরিক আছে, যারা তাদের জন্য দ্বীনের বিধান দিয়েছে, যার অনুমতি আল্লাহ দেননি? সূরা শুরা: আয়াত ২১)

মূল কথা :
। প্রতিটি মুসলিমের উপর ওয়াজিব হচ্ছে কোরআন ও সহিহ সুন্নত মুতাবেক আমল করা পরস্পরের মাঝে কোরআন-সুন্নাহ দ্বারাই বিচার-ফয়সালা সম্পাদন কর এক কথায় সকল ক্ষেত্রে আল্লাহর কথার উপর আমল করা
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন :
وَأَنِ احْكُمْ بَيْنَهُمْ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ ﴿49﴾
অর্থাৎতাদের মধ্যে আল্লাহ হতে অবতীর্ণ কথায় বিচার কর। (সূরা মায়িদা: আয়াত ৪৯) 
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
 وما لم تحكم أئمتهم  بكتاب الله ، ويتخيروا مما أنزل الله، إلا جعل الله بأسهم بينهم.(حسن رواه ابن ماجه وغيره)
অর্থাৎতাদের ইমামরা আল্লাহর কিতাব ও তাঁর নাযিলকৃত বিধানাবলী দ্বারা যতক্ষণা না বিচার করবে আল্লাহ তাদের মাঝে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে আযাব দিবেন। । (ইবনে মাজাহ, হাসান )
। উপনিবেশিক অমুসলিম শাসকরা কোরআন সুন্নাহ বিরোধী যে সব আইন করে গিয়েছিল  মুসলিমরা সেসব আইন বাতিল করে কোরআন সুন্নাহর আইন প্রবর্তণ করবে এবং সে অনুযায়ী শাসন কর্ম পরিচালনা করবে। যেমনইংরেজ ও ফ্রান্সের শাসকরা বহু বছর যাবত আফ্রীকার বিভিন্ন দেশ শাসন করেছে এবং সে সব দেশে কোরআন সুন্নাহ বিরোধী অনেক আইনের প্রবর্তণ করেছে এখন সে সব দেশের মুসলিমদের কর্তব্য হচ্ছে আল্লাহ বিরোধী আইনগুলো পরিবর্তন করে কোরআনি আইনের প্রবর্তন করা এবং সে মতে সকল কার্য পরিচালনা করা।  
। অমুসলিম শাসক কর্তৃক প্রবর্তিত শরিয়ত বিরোধী এ সব নোংরা ও অন্যায় আইন পরিবর্তন করে ইসলামি হুকুমত প্রতিষ্ঠা করা অবধি মুসলিমদের সম্মান ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হবে না এবং তারা কোনো প্রকার সাহায্যও পাবে না তাদের প্রতি আল্লাহর সাহায্য তখনই আসবে জীবনের প্রতিটি পর্বে যখন তারা আল্লাহর দেয়া শরিয়তকে পূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠা করবে। আল্লাহ প্রদত্ত ন্যায়-নায্য বিচারকে গ্রহণ করবে এবং আল্লাহর বান্দাদের জন্য ন্যায় ও ইনসাফপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠা করবে



সংকলন : শাইখ মুহাম্মদ বিন জামীল যাইনূ
অনুবাদক : ইকবাল হোছাইন মাছুম
 সূত্র : ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব


২য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন