সৎ মানুষের হৃদয়ে শয়তান প্রবেশের ধরণ ও প্রকৃতি
সূচীপত্র
১- ভূমিকা
২- শয়তান কী ?
৩- শয়তানের কৌশল
৪- শয়তানের প্রবেশপথ
এক. মুসলিমদের পরস্পরকে পরস্পরের বিরুদ্ধে উস্কে দেয়া এবং অন্যের সম্পর্কে কু-ধারণা সৃষ্টি করা
দুই. বেদ‘আতকে মানুষের জন্য সুসজ্জিত করা
তিন. এক দিককে অন্যদিকের তুলনায় অধিক প্রাধান্য দেয়া
চার. করব-করছি, এরকম কাল বিলম্ব করা
পাঁচ. কৃত্রিম পূর্ণতা
ছয়. নিজের সত্ত্বা ও তার সামর্থ্যের সঠিক মূল্যায়ন না করা
সাত. সন্দেহ সৃষ্টি
আট. ভীতি প্রদর্শন
৫- শয়তানের কর্তব্য পালনে সহায়ক স্বভাবসমূহ
ভূমিকা
সমস্ত প্রশংসা সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহ তা‘আলার জন্য। শুভ পরিণতি মুত্তাকীদের জন্য। সালাত ও সালাম প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরিবার বর্গ, সঙ্গী-সাথীদের ওপর এবং কেয়ামত পর্যন্ত যারা অনুসরণ করবেন তাঁর পথ, তাদের ওপর।
হামদ ও সালাতের পরে...
সাম্প্রতিক সময়ে মুসলিম উম্মাহর বিপর্যয়ের কারণ মূলত: জাতির কতিপয় প্রগতিশীল ব্যক্তির চিন্তাগত দৃষ্টিভঙ্গি। ইলমে দ্বীনের সাথেও এদের কেউ কেউ সম্পৃক্ত।
জ্ঞান-বিজ্ঞান ও গবেষণা ক্ষেত্রের মতই এরা দর্শন ও চিন্তা- চেতনার ক্ষেত্রেও যুগোপযোগী ও আধুনিক পশ্চাত্য সভ্যতার উদগীরণ করা বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গী ও ইসলামের মাঝে ‘সমন্বয়’ সাধনের প্রয়াস তারা চালিয়ে যাচ্ছে।
এ উদ্যোগের সুস্পষ্টতম লক্ষ্য হল নিজেদের ‘বুঝ ও সমঝমত’ ইসলামী নির্দেশনাসমূহের ‘যৌক্তিকিকরণের’ প্রয়াস চালানো।
যে কারণে কুরআন-সুন্নাহ কর্তৃক প্রমাণিত ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বহু বিষয়ে তারা হস্তক্ষেপ করেছে। যাতে করে জোর-পূর্বক সেগুলোর অপব্যাখ্যা করতে পারে এবং ইসলামী নির্দেশনাসমূহের এমন যৌক্তিক ব্যাখ্যা জুড়ে দিতে পারে, যা আধুনিক সভ্যতা গ্রহণ করবে।
মতবাদটিতে যদিও আদর্শিক অর্থাৎ ‘শর‘য়ী বিকৃতি’ এবং ‘নছ’ তথা কুরআন ও সুন্নাহর ভাষ্য ব্যবহারে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত অনুসৃত পদ্ধতি পরিত্যাগ জনিত মৌলিক ভুল রয়েছে। তবুও এ আলোচনায় আমরা যে বিষয়টি উত্থাপন করব তা হল, এ নয়া মতবাদ ইসলামের ক্ষতি করেছে। যার ব্যপ্তি দাওয়াতী অঙ্গন জুড়ে। উপরন্তু মতবাদটি তাদের প্রত্যাশার নূন্যতম সাফল্যও বয়ে আনে নি। উল্টো ইসলামী মানসিকতা ও দ্বীনের বিশুদ্ধ জ্ঞানের মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি করেছে। অথচ ইউরোপিয়ান মানসিকতাকে ইসলাম ও ঐশী প্রত্যাদেশের এক কদমও কাছে আনে নি।
পবিত্র কুরআনে বর্ণিত শয়তান সম্পর্কিত আলোচনাকে বিকৃত ব্যাখ্যা পেশ করা এ মতবাদের একটা বিষয়। তাদের একপক্ষ বৈশিষ্টের ক্ষেত্রে পরোক্ষভাবে শয়তানের অস্তিত্ব অস্বীকার করে বলে, ‘শয়তান অশুভ শক্তির রূপক প্রতীক। অন্যপক্ষ বলে, ‘শয়তান আত্মমন্ত্রণার ব্যঙ্গময় প্রকাশ। এ ছাড়াও তারা ধর্ম বিশ্বাসের মূলনীতি ও আল্লাহর কিতাব বুঝা ও গবেষণার ক্ষেত্রে অনুপযুক্ত। তাদের কর্মকাণ্ড উদ্ভট ব্যাখ্যা আর অভিনব ধ্যান-ধারণার উদ্ভব ঘটিয়েছে।
এ বিকৃত ব্যাখ্যার ফলস্বরূপ অনেক মুসলিমের কাছে শয়তানের সম্পর্ক সচেতনতা হ্রাস পেয়েছে। অথচ আল্লাহ বলেন,
﴿ إِنَّ ٱلشَّيۡطَٰنَ لَكُمۡ عَدُوّٞ فَٱتَّخِذُوهُ عَدُوًّاۚ ﴾ [فاطر: ٦]
‘‘নিশ্চয় শয়তান তোমাদের শত্রু, তোমরা তাকে শত্রুরূপেই গ্রহণ কর।’’
(বিকৃত ব্যাখ্যার ফলে) পবিত্র এ আয়াতখানির মর্ম গোলমেলে, দুর্বোধ্য ও অধিক সংশয়পূর্ণ হয়ে গেছে। কারণ, শয়তান যেসব স্খলন, ধ্বংসাত্মক ও মন্দকর্মের উদ্ভব ঘটাচ্ছে আর ঘটিয়েছে, মুসলিম চরিত্রে তার প্রভাব অপ্রতিহত। কারণ, মুসলিম অনুভূতি শয়তানের বাস্তব অস্তিত্ব নির্ভর। যা-তার সাথে ‘লড়াইয়ের’ মনোভাব তৈরী করে। আর এ মনোভাব ভ্রান্তপথ, রিপু ও ফেতনাসমূহের মুখে টিকে থাকার স্পৃহা যোগায়। কিন্তু শয়তানের বাস্তব অস্তিত্বের এ অনুভূতি যখন থাকবে না, লড়াইয়ের মনোভাবও থাকবে না, তখন এসব শয়তানী চক্রান্তের মুখে টিকে থাকার স্পৃহা হ্রাস পাবে বা বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
এ পুস্তিকাটি বিশেষ কিছু ইসলামপন্থীর উপলব্ধির এ বিকৃত প্রবণতা সংশোধনের অম্ল মধুর এক প্রয়াস। উপরন্তু এর মূল মিশন ও লেখকের (আল্লাহ তাঁর উপর রহম করুন এবং তাকে সীমাহীন নেকী দান করুন) উদ্দেশ্য হল, শয়তানের আত্মমুখী প্রবেশপথগুলো সম্পর্কে মুসলিমদেরকে সচেতন করা।
এ পথগুলো ব্যক্তির স্বভাব, ঈমানী শক্তি, আমলের পরিমাণ, ইবাদাতের সততা ও অন্যান্য অবস্থা, প্রকার অনুপাতে বিভিন্ন ধরণের হয়ে থাকে।
সহজ-সরলভাষায় লেখক সেগুলোকে সফলতার সাথে উন্মোচিত করেছেন। সুক্ষ্ম বিষয়গুলো পর্যালোচনা করেছেন এবং প্রতিকারের কিছু পথও তুলে ধরেছেন।
গ্রন্থটির উপকারিতা ব্যাপক হোক, এবং এর সৌরভে বিশ্বাসী অন্তরগুলো সুরভিত হোক- এ প্রত্যাশায়...
আল্লাহ তা‘আলা তাওফীক ও হেদায়াত দানকারী। তিনিই আমদের জন্য যথেষ্ট এবং উত্তম কার্য সম্পাদনাকারী।