Views:
A+
A-
মুখলিসের সংজ্ঞা: মুখলিস সে ব্যক্তি, যে আল্লাহর সাথে তার আত্মা খাটি ও সংশোধিত হওয়ায়, মানুষের অন্তর থেকে তার মান-মর্যাদা পুরোপুরি বের হওয়াতে কোনো প্রকার পরওয়া করে না। তার আমলের একটি কণা বা বিন্দু পরিমাণ বিষয়েও মানুষ অবগত হোক, তা সে পছন্দ করে না।
হাদিসে রাসূলে ইখলাস:
সালফে সালেহীনদের নিকট ইখলাসের গুরুত্ব:
ইখলাসের ফলাফল
আমল কবুল হওয়া:
সাওয়াব লাভ করা:
সা’আদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনুহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
গুনাহসমূহ ক্ষমা:
ইখলাস গুনাহ মাপের অনেক বড় কারণ। ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ রহ. বলেন, এক প্রকার আমল এমন আছে, যখন কোন মানুষ আমলটি পরিপূর্ণ ইখলাস ও আল্লাহর আনুগত্যের সাথে করে থাকে, আল্লাহ তা‘আলা এ আমলের দ্বারা তার কবিরা গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেন। যেমন- আব্দুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু আনুহু হতে হাদিস বর্ণিত,রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন,
আমলের বিনিময় লাভ করা যদিও আমলটি করতে অক্ষম হয়:
মুবাহ ও স্বাভাবিক কর্মসমূহে ইবাদতে পরিণত করার মাধ্যমে উচ্চ মর্যাদা লাভ করা:
শয়তানে কু-মন্ত্রণা হতে নফসকে হেফাজত করা:
ওয়াস-ওয়াসা বন্দ হওয়া ও রিয়া থেকে দূর হওয়া:
ফিতনা হতে নাজাত লাভ:
দুশ্চিন্তা ও পেরেশানি দূর হওয়া এবং রিজিক বৃদ্ধি পাওয়া:
বিপদ-আপদ দূর হওয়া:
আল্লাহ ও মানুষের মাঝে আল্লাহই যথেষ্ট হওয়া:
মুখলিস ব্যক্তি হিকমত দ্বারা সজ্জিত:
যাবতীয় কল্যাণ ইখলাসের মধ্যেই নিহিত:
জান্নাতে প্রবেশ না করা:
আমল কবুল না হওয়া:
আমলের সাওয়াব নষ্ট হওয়া:
নফসকে ইখলাসের গুণে গুণান্বিত বলে দাবি করতেন না:
আমলকে গোপন করা:
স্ত্রী ও পরিবার-পরিজন থেকে আমলকে গোপন করা:
জিহাদ চলাকালীন আত্ম-গোপন করা:
লৌকিকতা ও কৃত্রিমতা হতে ভয়: আলী বিন বুকার আল-বাসরী আয-যাহেদ রহ. বলেন, শয়তানের সাথে সাক্ষাত করা আমার নিকট অমুকের সাথে সাক্ষাত করা হতে অধিক প্রিয়। আমি তার জন্য কৃত্রিম উপায় অবলম্বন করব আর এর কারণে আল্লাহ দৃষ্টি হতে দূরে সরে যাব।[64] সালফে সালে-হীনগণ কৃত্রিমতা ও লৌকিকতাকে অধিক ভয় করতেন।
জ্ঞানকে প্রকাশ না করা:
কান্নাকে গোপন করা:
ইমাম আল-মাওয়ারদি ও তার কিতাব লিখা:
আলী বিন হুসাইন রহ. এর রাতে দান করা:
ইখলাসের আলামতসমূহ:
রিয়ার আশঙ্কায় আমল ছেড়ে দেয়ার বিধান:
রিয়া করা ও আমলে কাউকে শরিক করার মধ্যে পার্থক্য:
রিয়া হতে দূরে থাকার জন্য মিথ্যার আশ্রয় নেয়া:
পরিশিষ্ট
অন্তরের আমল: ইখলাস
ভূমিকা
الحمد لله رب العالمين، والصلاة والسلام على أشرف الأنبياء والمرسلين، نبينا محمد وعلى آله وصحبهأجمعين.
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি সমগ্র সৃষ্টিকুলের রব। আর সালাত ও সালাম নাযিল হোক সমস্ত নবী ও রাসূলদের সরদার আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর এবং তার পরিবার-পরিজন ও তার সমস্ত সাহাবীদের উপর।
আল্লাহ তা‘আলা আমাকে অন্তরের আমলসমূহ বিষয় সম্বলিত একটি ইলমী প্রশিক্ষণ কোর্স প্রদানের সুযোগ দেন, যাতে মোট বারোটি ক্লাস ছিল। আর আমার সাথে ‘যাদ গ্রপের’ ইলমী বিভাগটি ছিল। তারা আলোচনাগুলোকে বর্তমানে বই আকারে প্রকাশ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
অন্তরের আমলসমূহের প্রথম আমল হল ইখলাস, যা ইবাদতের মগজ ও রুহ এবং আমল কবুল হওয়া বা না হওয়ার মানদণ্ড। আর ইখলাস অন্তরের আমলসমূহের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ও সর্বোচ্চ চূড়া ও আমলসমূহের প্রধান ভিত্তি। আর এটিই হল, সমস্ত নবী ও রাসূলদের দাওয়াতের চাবিকাঠি।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَمَآ أُمِرُوٓاْ إِلَّا لِيَعۡبُدُواْ ٱللَّهَ مُخۡلِصِينَ لَهُ ٱلدِّينَ حُنَفَآءَ ﴾ [البينة: ٥]
“আর তাদেরকে কেবল এই নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যে, তারা যেন আল্লাহর ‘ইবাদাত করে তারই জন্য দীনকে একনিষ্ঠ করে”। [সূরা আল-বায়্যিনাহ, আয়াত: ৫]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿أَلَا لِلَّهِ ٱلدِّينُ ٱلۡخَالِصُ ٣﴾ [الزمر: ٣]
“জেনে রাখ, খালেস দ্বীন তো আল্লাহরই”। [সূরা আয-যুমার: ৩]
আর আল্লাহ্র দরবারে আমাদের কামনা তিনি যেন আমাদের আমলগুলো কবুল করেন, আমাদের নিয়্যতসমূহে ইখলাস তথা নিষ্ঠা প্রদান করেন এবং আমাদের অন্তরসমূহ সংশোধন করে দেন। নিশ্চয় তিনি শ্রবণকারী দো‘আ কবুলকারী।
মুহাম্মাদ সালেহ আল মুনাজ্জেদ
ইখলাসের অর্থ
ইখলাসের আভিধানিক অর্থ:
ইখলাস শব্দটি আরবি أخلَص শব্দ হতে নির্গত। এ শব্দের مضارع [মুজারেয়] হল, يُخْلِص আর এর মাছদার, [إخلاصاً] অর্থাৎ, নিরেট বা খাটি বস্তু; কোনো বস্তু নির্ভেজাল ও খাটি হওয়া এবং তার সাথে কোন কিছুর সংমিশ্রণ না থাকাকে ইখলাস বলে। যেমন, বলা হয় وأخلص الرجل دينه لله অর্থাৎ, লোকটি তার দ্বীনকে কেবল আল্লাহর জন্যই খাস করল। লোকটি তার দ্বীনের বিষয়ে আল্লাহর সাথে কাউকে মিলায়-নি বা শরিক করে নি।আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿إِلَّاعِبَادَكَ مِنۡهُمُ ٱلۡمُخۡلَصِينَ ٤٠﴾ [الحجر: ٤٠]
“তাদের মধ্য থেকে আপনার মুখলিস বা একান্ত বান্দাগণ ছাড়া”। এখানে مخلَصين শব্দটির লাম ‘যবর’ সহকারে রয়েছে। তবে কোনো কোনো কেরাআতে مخلِصين অর্থাৎ লামের নীচে ‘যের’ সহকারেও পড়া হয়েছে।
সা‘লাব রহ. বলেন, مخلِصِين (লাম এর নীচে ‘যের’ সহকারে) এর অর্থ যারা ইবাদতকে কেবল আল্লাহর জন্যই করে থাকেন। আর مُخۡلَصِينَ (লামের উপর ‘যবর’ সহকারে) এর অর্থ, যাদেরকে আল্লাহ একান্তভাবে নিজের করে নিয়েছেন।
যাজ্জাজ রহ. বলেন, আল্লাহর তা‘আলার বাণী-
﴿وَٱذۡكُرۡ فِي ٱلۡكِتَٰبِ مُوسَىٰٓۚ إِنَّهُۥ كَانَ مُخۡلَصٗا وَكَانَ رَسُولٗا نَّبِيّٗا ٥١﴾ [مريم: ٥١]
“আর স্মরণ করুন কিতাবে মূসাকে। অবশ্যই তিনি ছিলেন ‘মুখলাস’ (একান্ত করে নেওয়া) এবং তিনি ছিলেন রাসূল নবী”। [সূরা মারয়াম, আয়াত: ৫১] এখানে مخلَصاًশব্দটির লাম ‘যবর’ সহকারে রয়েছে। তবে কোনো কোনো কেরাআতে مخلِصاً অর্থাৎ লামের নীচে ‘যের’ সহকারেও পড়া হয়েছে। আর مخلَص শব্দের অর্থ: আল্লাহ যাকে খাটি করেছেন এবং ময়লা-আবর্জনা হতে মুক্ত করে, যাকে নির্বাচন করেছেন। আর মুখলিস مخلِص শব্দের অর্থ: যে একান্তভাবে আল্লাহর এককত্ব বা তাওহীদ প্রতিষ্ঠা করেছে। এ কারণেই قل هو الله أحد [তুমি বল, আল্লাহ এক]। এ সূরাটিকে সূরা ইখলাস নামকরণ করা হয়েছে। [কারণ, এ সূরাটিতে আল্লাহকে এককত্বের ঘোষণা রয়েছে]
আল্লামা ইবনুল আসীর রহ. বলেন, এ সূরাটিকে সূরা ইখলাস বলে নাম রাখার কারণ হল, এ সূরাটি আল্লাহ তা‘আলার সীফাত বা গুণাগুণসমূহ বর্ণনার জন্য নির্দিষ্ট। অথবা এ জন্যে যে, এ সূরার তিলাওয়াতকারী আল্লাহর জন্য খালেসভাবে তাওহীদ বা তাঁর এককত্ব সাব্যস্ত করে।
আর ‘কালিমাতুল ইখলাস’ বলতে ‘কালেমাতুত তাওহীদকেই’ বুঝানো হয়ে থাকে।
আল্লামা জুরজানী রহ. বলেন, ইখলাসের আভিধানিক অর্থ: “ইবাদত-আনুগত্যে রিয়া তথা প্রদর্শনেচ্ছা পরিহার করা।”[3]
ইখলাসের পারিভাষিক অর্থ:
আলেমগণ ইখলাসের একাধিক সংজ্ঞা বর্ণনা করেছেন। তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি নিম্নে আলোচনা করা হল:-
- আল্লামা জুরজানী রহ. বলেন, “মানবাত্মার পরিচ্ছন্নতায় বিঘ্ন ঘটায় এ ধরনের যাবতীয় ময়লা-আবর্জনা থেকে অন্তর খালি করাকেই ইখলাস বলে। আর সেটার মূলকথা হচ্ছে, প্রতিটি বস্তুর ক্ষেত্রে এ কথা চিন্তা করা যায় যে, তার সাথে কোনো না কোনো বস্তুর সংমিশ্রণ থাকতে পারে, তবে যখন কোনো বস্তু অন্য কিছুর সংমিশ্রণ থেকে মুক্ত হয়, তখন তাকে খালেস বা খাটি বস্তু বলা হয়। আর এ খাটি করার কাজটি সম্পাদন করার নাম হচ্ছে ইখলাস।” আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَإِنَّ لَكُمۡ فِي ٱلۡأَنۡعَٰمِ لَعِبۡرَةٗۖ نُّسۡقِيكُم مِّمَّا فِي بُطُونِهِۦ مِنۢ بَيۡنِ فَرۡثٖ وَدَمٖ لَّبَنًا خَالِصٗا سَآئِغٗا لِّلشَّٰرِبِينَ ٦٦﴾ [النحل: ٦٦]
“আর নিশ্চয় চতুষ্পদ জন্তুতে রয়েছে, তোমাদের জন্য শিক্ষা। তার পেটের ভেতরের গোবর ও রক্তের মধ্যখান থেকে তোমারকে আমি দুধ পান করাই, যা খাটি এবং পানকারীদের জন্য স্বাচ্ছন্দ্যকর”। [সূরা নাহাল, আয়াত: ৬৬]
এখানে দুধ খাটি হওয়ার অর্থ তার মধ্যে রক্ত ও গোবর ইত্যাদির কোনো প্রকার সংমিশ্রণ থাকার অবকাশ না থাকা।[5]
- হুযাইফা আল মুরআশী রহ. বলেন, “বান্দার ইবাদত প্রকাশ্য ও গোপনে উভয় অবস্থাতে একই পর্যায়ের হওয়ার নাম ইখলাস”।[7]
- আবার কেউ কেউ বলেন, ইখলাস হচ্ছে, আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে স্বীয় আমলের উপর সাক্ষ্য হিসেবে তালাশ না করা, আর বিনিময়দাতা হিসেবেও কেবল তাঁকেই গ্রহণ করা।”[8]
ইখলাসের অর্থে সালাফে সালেহীনদের থেকে বহু উক্তি বর্ণিত হয়েছে, যেমন-
- যাবতীয় আমল একমাত্র আল্লাহর জন্য করা; যাতে গাইরুল্লাহ বা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও জন্য সেখানে কোনো অংশ না থাকে।
- আমলকে সৃষ্টিকুলের সবার পর্যবেক্ষণ মুক্ত করে স্বচ্ছ করা (কেবল আল্লাহর পর্যবেক্ষণে রাখা)
মুখলিসের সংজ্ঞা: মুখলিস সে ব্যক্তি, যে আল্লাহর সাথে তার আত্মা খাটি ও সংশোধিত হওয়ায়, মানুষের অন্তর থেকে তার মান-মর্যাদা পুরোপুরি বের হওয়াতে কোনো প্রকার পরওয়া করে না। তার আমলের একটি কণা বা বিন্দু পরিমাণ বিষয়েও মানুষ অবগত হোক, তা সে পছন্দ করে না।
অনেক সময় দেখা যায়, মানুষের কথায় ও শরীয়তের ভাষায়, ‘নিয়্যত’ শব্দটি ‘ইখলাস’ এর স্থানে ব্যবহৃত হচ্ছে।
তবে ফিকহবিদদের মতে নিয়্যতের মূল হচ্ছে, স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড থেকে ইবাদতকে পৃথক করা এবং এক ইবাদতকে অপর ইবাদত থেকে আলাদা করা।[10]
স্বাভাবিক কর্ম থেকে ইবাদতকে পৃথক করা, যেমন- পরিচ্ছন্নতার জন্য গোসল করা থেকে নাপাক হওয়ার কারণে গোসল করাকে আলাদা করা।
এক ইবাদত থেকে অপর ইবাদতকে পৃথক করা। যেমন- যোহরের সালাতকে আছরের সালাত থেকে পৃথক করা।
উল্লেখিত সংজ্ঞার আলোকে বলা যায় যে, নিয়্যতের বিষয়টি আমাদের আলোচনার আলোচ্য বিষয় নয়। কিন্তু যদি কেউ নিয়ত শব্দ বলে, আমল দ্বারা উদ্দেশ্য নির্ধারণ করা বুঝায় এবং আমলটি মহান আল্লাহ- যার কোনো শরিক নাই- তার জন্য, নাকি আল্লাহ ও গাইরুল্লাহ উভয়ের জন্য? (তা নির্ধারণ করা বুঝায়) তাহলে এ ধরনের ‘নিয়ত’ ‘ইখলাস’ এর অর্থের অন্তর্ভুক্ত (আর তখন তা আমাদের আলোচ্য বিষয় হিসেবে গণ্য হবে)।
ইবাদতে ‘ইখলাস’ ও ‘সত্যবাদিতা’ উভয় শব্দ অর্থের দিক বিবেচনায় প্রায় কাছাকাছি। তবে উভয়ের মাঝে সামান্য পার্থক্য আছে।
প্রথম পার্থক্য: সত্যবাদিতা হল মূল এবং তা সর্বাগ্রে। আর ইখলাস হল, তার শাখা ও অনুগামী।
দ্বিতীয় পার্থক্য: যতক্ষণ পর্যন্ত বান্দা তার আমলে প্রবেশ করে না ইখলাস ততক্ষণ পর্যন্ত অস্তিত্বে আসে না। আমলে প্রবেশ করার পরই ইখলাসের প্রশ্ন আসে। পক্ষান্তরে ‘সত্যবাদিতা’ তা আমলে প্রবেশ করার পূর্বেও হতে পারে।[11]
ইখলাসের আদেশ
কুরআনে করীমে ইখলাস:
আল্লাহর তা‘আলা তার কিতাবের একাধিক জায়গায় তার বান্দাদের ইখলাস অবলম্বন করার নির্দেশ দেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَمَآ أُمِرُوٓاْ إِلَّا لِيَعۡبُدُواْ ٱللَّهَ مُخۡلِصِينَ لَهُ ٱلدِّينَ حُنَفَآءَ وَيُقِيمُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَيُؤۡتُواْ ٱلزَّكَوٰةَۚ وَذَٰلِكَ دِينُ ٱلۡقَيِّمَةِ ٥﴾ [البينة: ٥]
“আর তাদেরকে কেবল এই নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যে, তারা যেন আল্লাহর ‘ইবাদাত করে তারই জন্য দীনকে একনিষ্ঠ করে, সালাত কায়েম করে এবং যাকাত দেয়; আর এটিই হল সঠিক দীন”। [সূরা আল-বায়্যিনাহ, আয়াত: ৫]
আল্লাহ তা‘আলা তার নবী মুহাম্মাদ সা. কে ইবাদতে মুখলিস বলে দাবী করার নির্দেশ দেন এবং বলেন-
﴿ قُلِ ٱللَّهَ أَعۡبُدُ مُخۡلِصٗا لَّهُۥ دِينِي ١٤ ﴾ [الزمر: ١٤]
বল, ‘আমি আল্লাহর-ই ইবাদত করি, তারই জন্য আমার আনুগত্য একনিষ্ঠ করে’। [সূরা যুমার, আয়াত: ১৪]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿ قُلۡ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحۡيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ١٦٢ لَا شَرِيكَ لَهُۥۖ وَبِذَٰلِكَ أُمِرۡتُ وَأَنَا۠ أَوَّلُ ٱلۡمُسۡلِمِينَ ١٦٣ ﴾ [الانعام: ١٦٢، ١٦٣]
বল, নিশ্চয় আমার সালাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও আমার মৃত্যু আল্লাহর জন্য, যিনি সকল সৃষ্টির রব। তার কোনো শরীক নেই এবং আমাকে এরই নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। আর আমি মুসলিমদের মধ্যে প্রথম’। [সূরা আনআম, আয়াত: ১৬১, ১৬২]
আল্লাহ তা‘আলা তার নিজের সম্পর্কে বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, তিনি মানুষের হায়াত ও মওতকে সৃষ্টি করেছেন, যাতে তিনি মানুষকে পরীক্ষা করেন, তাদের মধ্যে উত্তম ও সুন্দর আমলকারী কে? আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ٱلَّذِي خَلَقَ ٱلۡمَوۡتَ وَٱلۡحَيَوٰةَ لِيَبۡلُوَكُمۡ أَيُّكُمۡ أَحۡسَنُ عَمَلٗاۚ وَهُوَ ٱلۡعَزِيزُ ٱلۡغَفُورُ ٢﴾ [الملك: ٢]
“যিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন যাতে তিনি তোমাদেরকে পরীক্ষা করতে পারেন যে, কে তোমাদের মধ্যে আমলের দিক থেকে উত্তম। আর তিনি মহাপরাক্রমশালী, অতিশয় ক্ষমাশীল”। [সূরা মুলুক, আয়াত: ২]
ফুদাইল ইবনু আয়াদ্ব রহ. সুন্দর আমল সম্পর্কে বলেন, “সেটা হচ্ছে, বেশি ইখলাস অবলম্বনকারী ও সঠিক আমলকারী। লোকেরা তাকে জিজ্ঞাসা করল, হে আবু আলী! বেশি ইখলাস অবলম্বনকারী ও সঠিক আমলকারী’ এ কথার অর্থ কি? উত্তরে তিনি বললেন, “আমল যদি খালেসভাবে একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে হয়, কিন্তু তা সঠিক না হয়, তা হলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। আর যদি সঠিক হয় কিন্তু খালেসভাবে একমাত্র আল্লাহর জন্য না হয়, তবে তাও গ্রহণযোগ্য হবে না। আমল অবশ্যই খালেস ও সঠিক হতে হবে। কেবল আল্লাহর জন্য জন্য আমল করাকে খালেস বলে। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নত অনুযায়ী আমল করাকে সঠিক বলে”। ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ রহ. ফুদাইলের কথার সাথে যোগ করে বলেন, এ হল, আল্লাহ তা‘আলার বাণী,
﴿فَمَن كَانَ يَرۡجُواْ لِقَآءَ رَبِّهِۦ فَلۡيَعۡمَلۡ عَمَلٗا صَٰلِحٗا وَلَا يُشۡرِكۡ بِعِبَادَةِ رَبِّهِۦٓ أَحَدَۢا ١١٠﴾ [الكهف: ١١٠]
“সুতরাং যে তার রবের সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম করে এবং তার রবের ইবাদাতে কাউকে শরীক না করে।” [সূরা কাহাফ, আয়াত: ১১০][12] এ আয়াতের বাস্তবায়ন।
আমীর আস-সানআনী রহ. বলেন,
تقَضَّتْ بكَ الأَعْماُر في غَيْرِ طَاعَةٍ سِوَى عَمَل تَرْضَاُه وَهْوَ سَرابُ
إذِا لَم يَكنْ للهِ فعِلُكَ خَالِصاً فَكلُّ بنَاءٍ قَدْ بنيَتَ خَرابُ
فَلِلْعَمَلِ الِإخْلَاصُ شَرْطٌ إذَِا أَتَى وَقَدْ وَافَقَتْهُ سُنَّةٌ وَكِتَابُ
অর্থ, তোমার সারা জীবন আল্লাহর নাফরমানিতে অতিবাহিত হল। কেবল এমন কিছু আমল যা তোমার সন্তুষ্টি বিধান করে, আসলে তা মরিচিকা,
যখন তোমার কর্ম খালেসভাবে আল্লাহর জন্য হবে না তখন তুমি যত ঘরই বানাও না কেন, তা বিরান ঘর।
আমলের জন্য তো ইখলাস শর্ত। যখন তুমি আমলে ইখলাস নিশ্চিত করার সাথে তা কুরআন ও সূন্নাহ অনুযায়ী কর।
আল্লাহর জন্য সর্বাঙ্গিন আত্মসমর্পন এবং ইহসান তথা আল্লাহর রাসূলের সুন্নতের অনুসরণ করাকে আল্লাহ তা‘আলা ‘সর্বাধিক সুন্দর দ্বীন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন,
﴿وَمَنۡ أَحۡسَنُ دِينٗا مِّمَّنۡ أَسۡلَمَ وَجۡهَهُۥ لِلَّهِ وَهُوَ مُحۡسِنٞ وَٱتَّبَعَ مِلَّةَ إِبۡرَٰهِيمَ حَنِيفٗاۗ وَٱتَّخَذَ ٱللَّهُ إِبۡرَٰهِيمَ خَلِيلٗا ١٢٥﴾ [النساء : ١٢٥]
“আর দীনের ব্যাপারে তার তুলনায় কে উত্তম, যে সৎকর্ম পরায়ণ অবস্থায় আল্লাহর কাছে নিজকে পূর্ণ সমর্পণ করল এবং একনিষ্ঠ ভাবে ইবরাহীমের আদর্শ অনুসরণ করল? আর আল্লাহ ইবরাহীমকে পরম বন্ধুরূপে গ্রহণ করেছেন।” [সূরা নিসা, আয়াত: ১২৫] এখানে আল্লাহর জন্য পূর্ণাঙ্গ আত্মসমর্পন বা আনুগত্য করার অর্থ ইখলাস, আর এহসান অর্থ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নতের অনুসরণ।
আল্লাহ তা‘আলা তার স্বীয় নবী ও তার উম্মতকে মুখলিসদের সাথে থাকার নির্দেশ দেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَٱصۡبِرۡ نَفۡسَكَ مَعَ ٱلَّذِينَ يَدۡعُونَ رَبَّهُم بِٱلۡغَدَوٰةِ وَٱلۡعَشِيِّ يُرِيدُونَ وَجۡهَهُۥۖ وَلَا تَعۡدُ عَيۡنَاكَ عَنۡهُمۡ تُرِيدُ زِينَةَ ٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَاۖ ٢٨﴾ [الكهف: ٢٨]
আর তুমি নিজকে ধৈর্যশীল রাখ তাদের সাথে, যারা সকাল-সন্ধ্যায় তাদের রবকে ডাকে, তার সন্তুষ্টির উদ্দেশে এবং দুনিয়ার জীবনের সৌন্দর্য কামনা করে। [সূরা কাহাফ, আয়াত: ২৮]
আর যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করেন, তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “অবশ্যই তারা সফলকাম”। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿فََٔاتِ ذَا ٱلۡقُرۡبَىٰ حَقَّهُۥ وَٱلۡمِسۡكِينَ وَٱبۡنَ ٱلسَّبِيلِۚ ذَٰلِكَ خَيۡرٞ لِّلَّذِينَ يُرِيدُونَ وَجۡهَ ٱللَّهِۖ وَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُفۡلِحُونَ ٣٨﴾ [الروم: ٣٨]
“অতএব আত্মীয়-স্বজনকে তাদের হক দিয়ে দাও এবং মিসকিন ও মুসাফিরকেও। এটি উত্তম তাদের জন্য, যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি চায় এবং তারাই সফলকাম।” [সূরা রুম, আয়াত: ৩৮]
আর আল্লাহ তা‘আলা মুখলিসকে জাহান্নাম হতে মুক্তি দেয়া ও কিয়ামতের দিন আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের প্রতিশ্রুতি দেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَسَيُجَنَّبُهَا ٱلۡأَتۡقَى ١٧ ٱلَّذِي يُؤۡتِي مَالَهُۥ يَتَزَكَّىٰ ١٨ وَمَا لِأَحَدٍ عِندَهُۥ مِن نِّعۡمَةٖ تُجۡزَىٰٓ ١٩ إِلَّا ٱبۡتِغَآءَ وَجۡهِ رَبِّهِ ٱلۡأَعۡلَىٰ ٢٠ وَلَسَوۡفَ يَرۡضَىٰ ٢١ ﴾ [الليل: ١٧، ٢١] “তারা তা থেকে দূরে রাখা হবে পরম মুত্তাকীকে। যে তার সম্পদ দান করে আত্ম-শুদ্ধির উদ্দেশ্যে, আর তার প্রতি কারো এমন কোন অনুগ্রহ নেই। যার প্রতিদান দিতে হবে। কেবল তার মহান রবের সন্তুষ্টির প্রত্যাশায় আর অচিরেই সে সন্তোষ লাভ করবে। [সূরা লাইল, আয়াত: ১৭-২১]
আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতিদের গুণাগুণ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, “তারা দুনিয়াতে মুখলিস।” আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿إِنَّمَا نُطۡعِمُكُمۡ لِوَجۡهِ ٱللَّهِ لَا نُرِيدُ مِنكُمۡ جَزَآءٗ وَلَا شُكُورًا ٩﴾ [الانسان: ٩]
“তারা বলে, ‘আমরা তো আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে তোমাদেরকে খাদ্য দান করি। আমরা তোমাদের থেকে কোনো প্রতিদান চাই না এবং কোন শোকরও না।” [সূরা ইনসান, আয়াত: ৯]
আর আল্লাহ তা‘আলা মুখলিসদের কিয়ামতের দিন মহা বিনিময় দেয়ার ঘোষণা দেন।আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ ۞لَّا خَيۡرَ فِي كَثِيرٖ مِّن نَّجۡوَىٰهُمۡ إِلَّا مَنۡ أَمَرَ بِصَدَقَةٍ أَوۡ مَعۡرُوفٍ أَوۡ إِصۡلَٰحِۢ بَيۡنَ ٱلنَّاسِۚ وَمَن يَفۡعَلۡ ذَٰلِكَ ٱبۡتِغَآءَ مَرۡضَاتِ ٱللَّهِ فَسَوۡفَ نُؤۡتِيهِ أَجۡرًا عَظِيمٗا ١١٤ ﴾ [النساء : ١١٤]
“তাদের গোপন পরামর্শের অধিকাংশে কোনো কল্যাণ নাই। তবে [কল্যাণ আছে] যে নির্দেশ দেয়, সদকা কিংবা ভালো কাজ অথবা মানুষের মধ্যে মীমাংসার। আর যে তা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে করবে তবে অচিরেই আমি তাকে মহা পুরস্কার দান করব।” [সূরা নিসা, আয়াত: ১১৪]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿مَن كَانَ يُرِيدُ حَرۡثَ ٱلۡأٓخِرَةِ نَزِدۡ لَهُۥ فِي حَرۡثِهِۦۖ وَمَن كَانَ يُرِيدُ حَرۡثَ ٱلدُّنۡيَا نُؤۡتِهِۦ مِنۡهَا وَمَا لَهُۥ فِي ٱلۡأٓخِرَةِ مِن نَّصِيبٍ ٢٠﴾ [الشورى: ٢٠]
“যে আখিরাতের ফসল কামনা করে, আমি তার জন্য তার ফসলে প্রবৃদ্ধি দান করি, আর যে দুনিয়ার ফসল কামনা করে, আমি তাকে তা থেকে কিছু দেই এবং আখিরাতে তার জন্য কোন অংশই থাকবে না”। [ সূরা শূরা, আয়াত: ২০]
হাদিসে রাসূলে ইখলাস:
-নিয়তে সত্যবাদিতা ও ইখলাসের গুরুত্ব সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একাধিক হাদিস বর্ণনা করেন এবং তিনি আমলের ভিত্তি এ দুটিকেই নির্ধারণ করেন। যেমন- ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনুহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« إنَّمَا الأعْمالُ باِلنِّيَّاتِ، وَإنَّمَا لكِّل امْرِئ مَا نَوَى...»
হাদিসটি রাসূলের হাদিসসমূহ হতে একটি গুরুত্বপূর্ণ হাদিস। কারণ, শরয়ী বিধানের জন্য এটি একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ ও মৌলিক হাদিস। যাবতীয় সব ইবাদত এরই অন্তর্ভুক্ত, কোন ইবাদত এ হাদিসের বাহিরে নয়। যেমন- সালাত, সাওম, জিহাদ, হজ ও সদকা ইত্যাদি সব ইবাদত বিশুদ্ধ নিয়ত ও ইখলাসের মুখাপেক্ষী।
মনে রাখনে, ‘মানুষের সব আমল নিয়তের উপর নির্ভরশীল’ এ হাদিসটিতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুধু গুরুত্বপূর্ণ কায়দাটির কথা বলেই থেমে যাননি, বরং নিয়ত ও ইখলাসের গুরুত্ব বিবেচনা করে, তিনি কতক আমলের কথা উল্লেখ করেন এবং নিয়তকে বিশুদ্ধ করার উপর বিশেষ গুরুত্ব দেন। আমলসমূহ নিম্নরূপ:
তাওহীদ: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« مَا قَالََ عَبْدٌ: لا إلَهَ إلِا الله قَطُّ مُخلصًا إلا فُتحتْ لَهُ أَبْوَابُ الَّسَماءِ حَّتى تُفْضِي إِلَى العَرْشِ مَا اجْتَنَب الكَبَائِرَ »
আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে যখনই কোন বান্দা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে, তার জন্য আসমানের দরজাসমূহ আরশ পর্যন্ত খুলে দেয়া হবে, যতক্ষণ পর্যন্ত সে কবিরা গুনাহ না করবে।[14]
মসজিদসমূহে গমন করা: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«صَلاةُ الرَّجُلِ فِي الجَمَاعَةِ تُضَعَّفُ عَلَى صَلاتهِ فِي بَيْتهِ وَفِي سُوقهِ خَمسَةً وَعِشِرينَ ضعْفاً، وذلكَ أنه إذِا تَوضَأ فَأحسَنَ الوضوءَ ثُمَّ خَرَجَ إلَى المَسْجِدِ لا يخرِجُهُ إلِا الصَّلاَةُ لَم يخط خَطوَةً إلِاَّ رُفعَتْ لَهُ بَها دََرَجةٌ، وَحُطَّ عَنُه بَها خَطيِئَةٌ، فَإذَِا صَلَّى لَمْ تَزَلِ المَلَائكَةُ تُصَلِّي عَلَيهِ مَا دَامَ فِي مُصَلُّاه: اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَيْهِ، اللَّهُمَّ ارحَمهُ. وَلا يَزَالُ أَحَدُكُم فِي صَلاةٍ مَا انْتَظَرَالصَّلاَةَ »
জামাতে সালাত আদায় করলে, স্বীয় ঘরে বা দোকানে সালাত আদায় করা হতে, পঁচিশগুণ বেশি সাওয়াব দেয়া হবে। কারণ, যখন কোন ব্যক্তি সুন্দর করে ওজু করে, সালাত আদায় করার উদ্দেশ্যে মসজিদের দিক রওয়ানা হয়, প্রতিটি কদমে তার মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয় এবং তার থেকে গুনাহগুলো ক্ষমা করা হয়। আর যখন সালাত আদায় করে, ফেরেশতারা সর্বদা তার উপর রহমত বর্ষণ করতে থাকে। ফেরেশতারা বলতে থাকে, হে আল্লাহ তুমি তার উপর দয়া কর, তাকে তুমি রহম কর। যখন কোন ব্যক্তি সালাতের অপেক্ষায় থাকে, সে সালাতেই থাকে।[15][সালাত আদায় করার সাওয়াব পেতে থাকে]
রোজা রাখা: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« مَنْ صام رَمَضَانَ إِيمَاناً وَاحْتسِاباً غُفِرَلَهُ مَا تَقَّدمَ مِنْ ذَنْبهِِ »
« من صامَ يوْماً فِي سَبِيلِ الله بعَّدَ الله وجْهه عَن الناَّرِ سَبْعِيَن خَرِيفاً »
“যে ব্যক্তি আল্লাহর রাহে একদিন রোযা রাখে, আল্লাহ তা‘আলা তাকে জাহান্নামের আগুণ হতে সত্তর খারিফ পর্যন্ত দূরে সরিয়ে দেন”।[17]
কিয়ামুল-লাইল: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« مَنْ قَامَ رمَضَانَ إِيمَاناً وَاحْتسَاباً غُفِرَ لهُ مَا تَقَّدمَ مِنْ ذَنْبهِِ »
“যে ব্যক্তি বিশ্বাস ও সাওয়াবের আশায় রমযান মাসে রাত জেগে আল্লাহর ইবাদত করে, তার ভবিষ্যৎ জীবনের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হবে”।[18]
সদকা: আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনুহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« سَبْعَةٌ يُظلُهُمْ الله تَعَالَى فِي ظِلِّهِ يَوَْم لاَ ظلَِّ إلِا ظلهُ: إمام عَادِلٌ، وشَابٌّ نشَأ في عِبادَِة الله، وَرجل قْلبُهُ مُعلَّقٌ فِي المَسَاجِدِ، وَرُجلَاِن تَحابَّا فِي الله اجْتَمَعا علَيْهِ وَتَفَرََّقا عَلَيْه، وَرُجٌل دَعته امْرَأَةٌ ذَاُت مَنصبٍ وَجَمَالٍ فَقَالَ: إنِي أََخافُ الله، وَرجلٌ تَصَدقَ فَأَخْفَاهَا حتَّى لا تَعْلَمَ شِمَالُهُ مَا تُنْفِقُ يَمِينُهُ، وَرَجلٌ ذَكَرَ الله خَالِياً ففَاضت عَيْنَاه»
“আল্লাহ তা‘আলা সাত ব্যক্তিকে কিয়ামতের দিন তার ছায়া তলে ছায়া দেবেন, যেদিন আল্লাহর ছায়া ছাড়া আর কোন ছায়া থাকবে না। এক- ন্যায় পরায়ণ বাদশাহ। দুই- যে যুবক তার যৌবনকে আল্লাহর ইবাদতে কাটিয়েছেন, তিন- ঐ ব্যক্তি যার অন্তর মসজিদের সাথে সম্পৃক্ত। চার- ঐ দুই ব্যক্তি যারা একে অপরকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসেন, তারই ভিত্তিতে একত্র হন এবং তারই ভিত্তিতে পৃথক হন। পাঁচ- ঐ ব্যক্তি যাকে কোন সুন্দর ও বংশীয় যুবতী মহিলা অপকর্মের প্রতি আহ্বান করলে, সে বলে আমি আল্লাহকে ভয় করি। ছয়- ঐ ব্যক্তি যে আল্লাহ রাহে এত গোপনে দান করে, তার বাম হাত টের পায় না, ডান হাত কি দান করল। সাত- ঐ ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহর জিকির করল এবং তার চোখ থেতে অশ্রু নির্গত হল।[19]
জিহাদ: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« مَنْ غَزَا فِي سَبِيلِ الله وَلَمْ يَنْوِ إِلاَّ عِقَالا فَلَهُ مَا نَوَى »
“যে ব্যক্তি আল্লাহর রাহে একটি উটের রশি লাভের উদ্দেশ্যে জিহাদ করল, সে তাই পাবে যার নিয়ত সে করল”।
সালাতের জানাজার অনুসরণ: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«من اتَّبَعَ جناَزَةَ مُسْلمٍ إيِمَاناً واحْتسَاباً، وَكَاَن مَعَهُ حَّتى يُصَلى عَليْهَا، وَيفْرغَ مِنْ دفْنهِا؛ فَإنه يَرْجِعُ مِن الأجر بقِيَراطَيْنِ، كُلُّ قِيَراطٍ مثْلُ أُحُدٍ، وَمَن صَلَّى عَلَيْهَا ثُمَّ رجَعَ قبلَ أَنْ تُدْفَنَ فَإِنَّهُ يَرْجع بقيراٍط»
“যে ব্যক্তি কোন মুসলিম ভাইয়ের জানাজায় ঈমান ও সাওয়াবের আশায় শরিক হয় এবং জানাজার সালাত আদায় ও দাফন করা পর্যন্ত মুর্দার সাথে থাকে, সে দুই কিরাত সাওয়াব নিয়ে বাড়ি ফিরবে। প্রতিটি ক্বিরাত অহুদ পাহাড়ের সমান। আর যে ব্যক্তি তার উপর সালাত আদায় করে এবং দাফন করার পূর্বে ফেরত আসে, তাহলে সে এক কিরাত সাওয়াব নিয়ে বাড়ি ফিরবে”।[20]
সালফে সালেহীনদের নিকট ইখলাসের গুরুত্ব:
আল্লাহ তা‘আলার বাণীসমূহের তিলাওয়াত ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদিসসমূহ অধ্যয়ন করার পর সালফে সালেহীনরা ইখলাসের গুরুত্ব সম্পর্কে উম্মতদের অধিক সতর্ক করেন। তারা ইখলাসের গুরুত্ব ও ইখলাস না থাকার ক্ষতি উপলব্ধি করত: ইখলাসের মহা মর্যাদা দিয়ে থাকেন। ফলে দেখা যায়, তারা তাদের লিখনীতে প্রথমে নিয়ত বিষয়ে আলোচনা দিয়ে আরম্ভ করেন। যেমন- ইমাম বুখারি «إنِّمَا الأعَمَالُ باِلنيِّاتِ»“সমস্ত আমল নিয়তের উপর নির্ভরশীল”।[21] হাদিসটি দিয়ে তার কিতাব আরম্ভ করেন। আব্দুর রহমান বিন মাহদী রহ. বলেন,
“বিভিন্ন অধ্যায়ের উপর যদি আমি কোন কিতাব লিখতাম, তাহলে প্রতিটি অধ্যায়ের শুরুতে আমি ওমর বিন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনুহু এর হাদিস-যাবতীয় আমল নিয়তের উপর নির্ভরশীল-কে উল্লেখ করতাম”।[22]
অনুরূপভাবে তারা বলেন, নিয়ত আমল হতেও গুরুত্বপূর্ণ। ইয়াহয়া বিন আবি কাছির রহ. বলেন, তোমরা নিয়ত শেখ, কারণ, তা আমল হতেও অধিক গুরুত্বপূর্ণ।[23] মানুষকে ইখলাস শেখানোর বিষয়ে ওলামাগণ সর্বাধিক গুরুত্ব দিতেন। আল্লামা ইবনু আবি জামরাহ রহ. বলেন, আমি পছন্দ করি যে, যদি কতক ফকীহ এমন হত, তারা মানুষকে তাদের আমলের উদ্দেশ্য শেখানো নিয়ে ব্যস্ত থাকবে এবং তাদের আমলের নিয়ত শেখানোর উদ্দেশ্যে এক জায়গায় বসে থাকবে; তারা আর কোন কাজ করবে না।[24]কারণ, অধিকাংশ মানুষকে দেখা যাচ্ছে তারা নিয়তের কারণে তাদের আমলকে নষ্ট করছে।
অপর দিকে আমরা দেখতে পাই, আল্লাহ তা‘আলা রিয়াকারী যারা তাদের আমল দ্বারা পার্থিব স্বার্থ লাভের ইচ্ছা পোষণ করে, তাদের ভৎসনা ও তিরস্কার করছেন এবং রিয়ার পরিণতি সম্পর্কে মানুষকে সতর্ক করছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ مَن كَانَ يُرِيدُ ٱلۡحَيَوٰةَ ٱلدُّنۡيَا وَزِينَتَهَا نُوَفِّ إِلَيۡهِمۡ أَعۡمَٰلَهُمۡ فِيهَا وَهُمۡ فِيهَا لَا يُبۡخَسُونَ ١٥ أُوْلَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ لَيۡسَ لَهُمۡ فِي ٱلۡأٓخِرَةِ إِلَّا ٱلنَّارُۖ وَحَبِطَ مَا صَنَعُواْ فِيهَا وَبَٰطِلٞ مَّا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ١٦ ﴾ [هود: ١٥، ١٦]
“যে ব্যক্তি দুনিয়ার জীবন ও তার জৌলুস কামনা করে, আমি সেখানে তাদেরকে তাদের আমলের ফল পুরোপুরি দিয়ে দেই এবং সেখানে তাদেরকে কম দেয়া হবে না। এরাই তারা, আখিরাতে যাদের জন্য আগুণ ছাড়া আর কিছুই নেই এবং তারা সেখানে যা করে তা বরবাদ হয়ে যাবে আর তারা যা করত, তা সম্পূর্ণ বাতিল”। [সূরা হুদ, আয়াত: ১৫, ১৬] আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿مَّن كَانَ يُرِيدُ ٱلۡعَاجِلَةَ عَجَّلۡنَا لَهُۥ فِيهَا مَا نَشَآءُ لِمَن نُّرِيدُ ثُمَّ جَعَلۡنَا لَهُۥ جَهَنَّمَ يَصۡلَىٰهَا مَذۡمُومٗا مَّدۡحُورٗا ١٨ ﴾ [الاسراء: ١٨]
“যে দুনিয়া চায় আমি সেখানে তাকে দ্রুত দিয়ে দেই, যা আমি চাই, যার জন্য চাই। তারপর তার জন্য নির্ধারণ করি জাহান্নাম, সেখানে সে প্রবেশ করবে নিন্দিত, বিতাড়িত অবস্থায়”। [সূরা ইসরা, আয়াত: ১৮] আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿مَن كَانَ يُرِيدُ حَرۡثَ ٱلۡأٓخِرَةِ نَزِدۡ لَهُۥ فِي حَرۡثِهِۦۖ وَمَن كَانَ يُرِيدُ حَرۡثَ ٱلدُّنۡيَا نُؤۡتِهِۦ مِنۡهَا وَمَا لَهُۥ فِي ٱلۡأٓخِرَةِ مِن نَّصِيبٍ ٢٠﴾ [الشورى: ٢٠]
“যে আখিরাতের ফসল কামনা করে, আমি তার জন্য তার ফসলে প্রবৃদ্ধি দান করি, আর যে দুনিয়ার ফসল কামনা করে, আমি তাকে তা থেকে কিছু দেই এবং আখিরাতে তার জন্য কোন অংশই থাকবে না”। [ সূরা শুরা, আয়াত: ২০]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« إنِ أَخْوَف مَا أَخَافُ عَلَيْكُم الشِّرْكُ الأَصْغَرُ قَالُوا: وَمَا الشِّركُ الأصْغَرُ يَا رَسُولَ الله؟ قَالَ الرِّيَاءُ، يَقُولُ الله لهْم يْوَم القَياَمِة إذَِا جزي الناَّسُ بِأَعْمَالهِمْ: اذْهَبُوا إِلَى الَّذِينَ كُنْتم تُراءُونَ فِي الدُّْنيَا، فَانْظُرُوا هَلْ تَجدُونَ عِنْدَهْم جَزَاءً»
“আমি তোমাদের উপর যে জিনিষটিকে বেশি ভয় করি, তা হল, ছোট শিরক। সাহাবীরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! ছোট শিরক কি? তিনি উত্তর দিলেন, রিয়া। আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন যখন মানুষকে তাদের আমলের বিনিময় দেবেন, তখন রিয়াকারীকে বলবেন, যাও দুনিয়াতে যাদেরকে তোমরা তোমাদের আমল দেখাতে, দেখ তাদের নিকট কোন সাওয়াব পাও কিনা”?[25]
হে মুসলিম ভাইয়েরা! তোমরা উল্লেখিত দুটি পথের যে কোন একটি পথ ধর। হয় ইখলাসের পথ- আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের ইচ্ছা- অথবা রিয়ার পথ-দুনিয়া হাসিলের ইচ্ছা-। আর মনে রাখবে, মানুষকে কিয়ামতের দিন তাদের নিয়ত অনুযায়ী দাড় করানো হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, إَِّنَما يُبْعَثُ النَّاسُ عَلَى نياتِهمِْ “অবশ্যই মানুষকে তাদের নিয়তের উপর ভিত্তি করে প্রেরণ করা হবে”।[26] যখন তুমি রিয়াকারী ধ্বংস প্রাপ্তদের সাথে ধ্বংস হয়ে যাবে, তখন তুমি তোমার নিজেকে ছাড়া কাউকে দোষারোপ করবে না।
ইখলাসের ফলাফল
নেককার মুমিন বান্দার অন্তরে যখন ইখলাস পাওয়া যাবে, তখন সে ইখলাসের অনেকগুলো উপকারিতা ও গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল রয়েছে তা লাভ করবে।
আমল কবুল হওয়া:
আবু উমামা আল-বাহেলী রাদিয়াল্লাহু আনুহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« إِنَّ الله لاَ يَقْبَلُ من العَمَلِ إِلاَّ مَا كَانَ لَهُ خَالِصاً، وَابتغي بهِ وَجْهُه »
“আল্লাহ তা‘আলা শুধু সে আমল কবুল করবেন, যে আমল কেবল আল্লাহর জন্য করা হবে এবং আমল দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা উদ্দেশ্য হবে”।[27]
সাওয়াব লাভ করা:
সা’আদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনুহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« إنكَ لَنْ تُنْفِقَ نَفَقَةً تَبَتغِي بِها وَجْهَ الله إلِا أُجِرتَ عَلَيْهَا »
যে কোন ছোট আমলকে বড় মনে করার ফলে তা বড় আমলে পরিণত হওয়া: আল্লামা ইবনুল মুবারক রহ. বলেন, অনেক ছোট আমল আছে নিয়ত তাকে বড় করে দেয়, আবার অনেক বড় আমল আছে, নিয়ত তাকে ছোট করে দেয়।[29]
গুনাহসমূহ ক্ষমা:
ইখলাস গুনাহ মাপের অনেক বড় কারণ। ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ রহ. বলেন, এক প্রকার আমল এমন আছে, যখন কোন মানুষ আমলটি পরিপূর্ণ ইখলাস ও আল্লাহর আনুগত্যের সাথে করে থাকে, আল্লাহ তা‘আলা এ আমলের দ্বারা তার কবিরা গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেন। যেমন- আব্দুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু আনুহু হতে হাদিস বর্ণিত,রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন,
« يُصاُح برَجل مِنْ أُمَّتيِ يَوَْم القِيَامَة عَلَى رُُؤوسِ الَخلَائقِ، فَيُنشْر لَهُ تسْعةٌ وتسْعونَ سِجلا، كُلُّ سِجِل مَدّ الَبصَرِ، ثُمَّ يقُولُ الله هَلْ تُنْكِرُ منْ هذَا شَيْئاً؟ فَيَقُولُ: لاَ يَا ربِّ. فَيَقُولُ: لا ظُْلمَ عَلَيْكَ. فَتخْرج لُه بِطَاقَةٌ قدْرُ الكَفِّ فيِهَا شَهادَةُ أَن لا إلَهَ إلِاَّ الله. فَيَقُولُ: أَيْنَ تَقع هذِهِ البطَِاقَةُ مَع هَذِهِ السِّجِلاَّتِ؟! فتوضُع هذِهِ البطَِاقَةُ فِي كَفَّةٍ وَالسِّجِلَّاتُ فِي كَفَّةٍ، فَثَقُلَتِ البِطَاقَةُ، وَطَاشَتِ السِّجِلاَّتُ»
“কিয়ামতের দিন এক ব্যক্তিকে সমগ্র মাখলুকের সামনে উপস্থিত করা হবে, তারপর তার জন্য নিরানব্বইটি দফতর খোলা হবে, প্রতিটি দফতর চোখের দৃষ্টির সমান দূরত্ব। তারপর আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, তুমি কি এর কোন কিছুকে অস্বীকার কর, তখন সে বলবে, না, হে আমার প্রভূ। তখন আল্লাহ বলবে, তোমার উপর কোন জুলুম করা হবে না। তারপর তার জন্য হাতের তালুর সমপরিমাণ একটি কাগজের টুকরা বের করা হবে, তাতে লিপিবদ্ধ থাকবে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই। তখন সে বলবে, এত গুলো বড় বড় দফতরের মুকাবেলায় এ কাগজের টুকরাটি কোথায় পড়ে থাকবে? তারপর এ কাগজের টুকরাটি একটি পাল্লায় রাখা হবে এবং দফতরসমূহ অপর পাল্লায় রাখা হবে। তখন কাগজের টুকরার পাল্লাটি ভারি হয়ে যাবে এবং দফতরসমূহ হালকা হয়ে পড়বে।[30]
এ হল ঐ ব্যক্তির অবস্থা যে এ কালিমা ইখলাস ও একীনের সাথে বলবে যেমনটি উল্লেখিত লোকটি বলেছিল। অন্যথায় যারা কবিরা গুনাহ করার কারণে জাহান্নামে প্রবেশ করবে,তাদের সবাই এ কালিমা বলে থাকে। কিন্তু তাদের কথা তাদের গুনাহের উপর ভারী হয় নাই, যেমনটি ভারী হয়েছিল এ লোকটির কথা। অপর একটি হাদিসে বর্ণিত,
إنَّ امْرَأَةً بَغِيا رََأْت كَلباً فِي يَوٍْم حَارٍّ يطيِفُ ببِئر قَدْ أَْدلَعَ لسَِانَهُ مِن العَطَشِ، فنَزَعْت لَه بمُوقِهَا - أي: سقتهبخفها- فَغُفِرَ لهَا
“একজন ব্যভিচারী মহিলা একটি কুকুরকে একটি কুপের নিকট দেখতে পেল সে পানির পিপাসায় কাতরাচ্ছে। মহিলাটি তার পায়ের মোজা খুলে তাকে পানি পান করালে, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন”।[31] যেহেতু মহিলাটি তার অন্তরে গাথা বিশুদ্ধ ও পরিপূর্ণ ঈমান নিয়ে কুকুরটিকে পানি পান করালেন, আল্লাহ তা‘আলা তাকে ক্ষমা করে দিলেন। অন্যথায় যত ব্যভিচারী মহিলা কোন কুকুরকে পানি করাবে সবাইকে ক্ষমা করে দেবেন এমন কথা এখানে বলা হয়নি।[32]
আমলের বিনিময় লাভ করা যদিও আমলটি করতে অক্ষম হয়:
ইখলাসের দ্বারা মানুষ আমলের সাওয়াব পেয়ে থাকে যদিও সে আমলটি করতে অক্ষম হয়। বরং অনেক সময় মুজাহিদ ও শহীদদের মর্তবা লাভ করবে যদিও সে বিছানায় মারা যায়। আল্লাহ তা’লা যাদেরকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিহাদে নিয়ে যেতে পারেননি তাদের প্রশংসা করে বলেন,
﴿ وَلَا عَلَى ٱلَّذِينَ إِذَا مَآ أَتَوۡكَ لِتَحۡمِلَهُمۡ قُلۡتَ لَآ أَجِدُ مَآ أَحۡمِلُكُمۡ عَلَيۡهِ تَوَلَّواْ وَّأَعۡيُنُهُمۡ تَفِيضُ مِنَ ٱلدَّمۡعِ حَزَنًا أَلَّا يَجِدُواْ مَا يُنفِقُونَ ٩٢ ﴾ [المائدة: 9٢]
“আর তাদের উপরও কোন দোষ নেই, যারা তোমার কাছে আসে, যাতে তুমি তাদের বাহন জোগাতে পার। তুমি বললে, আমি তোমাদেরকে বহন করানোর জন্য কিছু পাচ্ছি না, তখন তারা ফিরে গেল, তাদের চোখ অশ্রুতে ভেসে যাওয়া অবস্থায়, এ দু:খে যে, তারা পাচ্ছে না এমন কিছু যা তারা ব্যয় করবে”।
আনাস বিন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনুহু হাদিস বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إن أَقْوَاماً باِلمدينةَِ خلْفَناَ مَا سَلَكْناَ شعباً وَلا وَادِياً إلِا وَهُمْ معَناَ فيِهِ،حَبَسُهْم العُذْرُ»
“মদিনায় আমরা কতক লোককে রেখে এসেছি, আমরা যত পাহাড়ের চুড়া ও গ্রাম মাড়াইনা কেন, তাদেরকে আমাদের সাথে সাথে পাই। তাদেরকে তাদের অপারগতা আমাদের সাথে অংশ গ্রহণ করা হতে বিরত রাখেন”।[33] যাদেরকে আমরা অপর এক বর্ণনায় বর্ণিত,
إلا شَرُكوُكمْ فِي الأَجْرِ
আনাস বিন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনুহু হাদিস বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« مَن سَأَلَ الشَّهَادَةَ بصِدْقٍ بَلَّغَه الله مَنَازِلَ الشُّهَدَاءِ؛ وَإنْ مَاتَ عَلَى فرِاشهِ »
“যে ব্যক্তি অন্তর থেকে আল্লাহ তা‘আলার নিকট শাহাদাত কামনা করবে, আল্লাহ তাকে শহীদদের মর্যাদা দান করবে। যদিও লোকটি বিছানায় মারা যায়।[35]
অনুরূপভাবে ধনী লোক তার সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে যে পরিমাণ সাওয়াব লাভ করে থাকে, একজন গরীব লোক তার নিয়ত ভালো হওয়ার কারণে সে আল্লাহর রাস্তায় দান না করেও অনুরূপ সাওয়াব লাভ করবে। আবু কাবশা আল-আনমারি রাদিয়াল্লাহু আনুহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« مَثَلُ هَذِهِ الأمُّةِ كَمثَلِ أَرْبَعَةِ نَفَرٍ: رَجُلٌ آتَاهُ الله مَالا وَعِلْمًا، فَهُوَ يْعَملُ فِي مَالهِِ يُنفِقُهُ فِي حَقِّهِ، وَرَُجلٌ آتَاهُ الله عِلْمًا وَلَم يُؤْتهِِ مَالا فَهُوَ يَقُولُ: لَوْ كَانَ لِي مِثْلُ هَذَا عَمِلْتُ فِيهِ مِثْلَ الَّذي يْعَملُ قَال فَهُمَا فِي الأجر سَواءٌ »
“এ উম্মতের উপমা চার শ্রেণীর লোকের অনুরূপ। এক ব্যক্তি যাকে আল্লাহ তা‘আলা মাল ও জ্ঞান উভয়টি দান করেছেন। লোকটি তার মালকে যথাযথ ব্যয় করে। আর এক ব্যক্তি যাকে আল্লাহ তা‘আলা জ্ঞান দান করেছে, তাকে মাল দেয় নাই। সে মনে মনে বলে, যদি আমার নিকট লোকটির মত সম্পদ থাকত, তাহলে আমিও তার মত ব্যয় করতাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তারা উভয়ে সমান সাওয়াবের অধিকারী হবেন।[36]
এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনা করা প্রয়োজন, তা হল, একজন লোক আমলে অক্ষম নয়, তবে সে কাজ করার আশা রাখে, কিন্তু করে না। আর সে ধারণা করে, তাকে তার ভালো কাজের আশার কারণে সাওয়াব দেয়া হবে। সে তার এ ধরনের নিয়তকে নেক নিয়ত বলে বিবেচনা করে। কিন্তু বাস্তবতা হল, এ ধরনের নিয়ত ও আশা শয়তানের ওয়াস-ওসা ও আত্মার ধোঁকাবাজি ছাড়া আর কিছুই নয়।
একজন মানুষ মসজিদে সালাতের জামাতে উপস্থিত না হয়ে, ঘরে বসে থাকে বা বিছানায় শুয়ে থাকে, আর বলতে থাকে আমি সালাতে যাওয়াকে পছন্দ করি বা সালাতে উপস্থিত হতে চাই। সে ধারণা করে যে, তার এ কথা দ্বারা, মসজিদে গিয়ে জামাতের সাথে সালাত আদায় করার সাওয়াব সে লাভ করবে। এ ধরনের ভ্রান্ত ধারণা আমাদের উল্লেখিত বিষয়সমূহের সাথে কোন সম্পর্ক নাই এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদিসসমূহের সাথেও এর কোন সম্পর্ক নাই।
মুবাহ ও স্বাভাবিক কর্মসমূহে ইবাদতে পরিণত করার মাধ্যমে উচ্চ মর্যাদা লাভ করা:
সা’আদ বিন আবি ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনুহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« إنِّكَ لَنْ تُنْفِقَ نَفَقَةً تَبْتغِي بها وَجْهَ الله إلِا أُجِرْتَ عَلَيْهَا، حَتَّى مَا تَجعَلُ فِي فَمِ امْرَأَتِكَ »
“আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে তুমি যে দান কর, তার উপর অবশ্যই তুমি সাওয়াব পাবে। এমনকি তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে খাওয়ারের যে লোকমাটি তুলে দাও”।[37] [তাতেও সাওয়াব পাবে]
এটি কল্যাণের অধ্যায়সমূহ হতে একটি বিশাল অধ্যায়। যখনই একজন বান্দা তাতে প্রবেশ করবে, সে মহা কল্যাণ ও অসংখ্য প্রতিদান লাভ করবে। আর আমরা যদি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের বৈধ কর্মগুলো ও স্বাভাবিক কাজকর্ম দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য লাভের ইরাদা করি, তাহলে আমরা বিশাল প্রতিদান ও অধিক সাওয়াবের অধিকারী হব।
যাবিদ আল-ইয়ামি রহ. বলেন, প্রতি কর্মে এমনকি খানা-পিনার ও নিয়ত করাকে আমি পছন্দ করি। বাস্তব কিছু নমুনা তোমার সামনে তুলে ধরা হল, যাতে তুমি তোমার দৈনন্দিন জীবনে কাজে লাগাতে পার:
অনেকেই এমন আছে, সে সুগন্ধি ব্যবহার করতে অধিক পছন্দ করেন। সে যদি মসজিদে যাওয়ার পূর্বে সুগন্ধি ব্যবহার করে আল্লাহর ঘরের ইজ্জত করার নিয়ত করে এবং মানুষ ও ফেরেশতাদের কষ্ট রোধ করার নিয়ত করে তাহলে সে অবশ্যই সাওয়াবের অধিকারী হবে। আমরা সবাই খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ করতে বাধ্য। কিন্তু আমরা যদি আমাদের খাদ্য ও পানীয় দ্বারা আল্লাহর ইবাদত বন্দেগী করার উপর শক্তি লাভ করার নিয়ত করে থাকি তাহলে আমরা অবশ্যই সাওয়াব লাভ করব। অধিকাংশ মানুষ বিবাহ করতে বাধ্য। যদি একজন লোক বিবাহ দ্বারা এ নিয়ত করে, নিজের ও স্ত্রীর সতীত্বের হেফাজত করা এবং এমন নেক সন্তান রেখে যাওয়ার যারা তারপর আল্লাহর জমিনে আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগী করবে, তাহলে তাকে অবশ্যই সাওয়াব দেয়া হবে। বিভিন্ন বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ছাত্রদের অবশ্যই তাদের উদ্দেশ্য সুন্দর হওয়া উচিত। একজন ডাক্তার ডাক্তারি শিক্ষা দ্বারা মুসলিমদের স্বাস্থ্য-সেবা দেয়ার নিয়ত করবে। অনুরূপভাবে একজন ইঞ্জিনিয়ার মুসলিমদের সেবা করার নিয়ত করবে। মোট কথা, প্রতিটি ছাত্র ইসলাম ও মুসলিমদের খেদমত করার নিয়ত করবে। তাহলে সে তার অধ্যয়ন ও পড়া-লেখা দ্বারা সাওয়াবের অধিকারী হবে। ইত্যাদি-।
আমরা সবাই কামাই রুজি করা ও পরিবার-পরিজনের জন্য খরচ করতে বাধ্য। এ ধরনের যাবতীয় কর্মসমূহ হতে কোন কর্মকেই ছোট মনে করা সাওয়াবে আশা না করা বা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের নিয়ত না করা উচিত নয়। কারণ, হতে পারে এটিই তোমাকে কিয়ামতের দিন আল্লাহর আযাব হতে নাজাত দেবে।
শয়তানে কু-মন্ত্রণা হতে নফসকে হেফাজত করা:
শয়তান যখন আল্লাহ তা‘আলাকে প্রতিশ্রুতি দেন, তখন সে মুখলিস বান্দাদের গোমরাহ করতে না পারার কথা বলেন। আল্লাহ বলেন, সুতরাং যাদের আল্লাহ তা‘আলা ইখলাসের মাধ্যমে হেফাজত করেন আল্লাহ তাদের গোমরাহ করতে পারেন না।
মারুফ আল-কারখী রহ. তার স্বীয় আত্মাকে সম্বোধন করে বলেন, হে আত্মা! তুমি ইখলাস অবলম্বন কর, তবে তুমি রেহাই পাবে।[38]
ওয়াস-ওয়াসা বন্দ হওয়া ও রিয়া থেকে দূর হওয়া:
আবু সুলাইমান আদ-দারমী রহ. বলেন, যখন কোন বান্দা ইখলাসকে অবলম্বন করে, তার থেকে ওয়াস-ওয়াসা ও রিয়া দূর হয়ে যায়।[39]
ফিতনা হতে নাজাত লাভ:
ইখলাসের মাধ্যমে একজন বান্দা ফিতনা হতে নাজাত লাভ করে। ইখলাস প্রভৃতির চাহিদায় পতিত হওয়া এবং ফাসেক ও ফাজেরদের অপরাধে জড়িত হওয়া হতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। আল্লাহ তা‘আলা ইখলাসের কারণে ইউসুফ আ. কে আজিজে মিসরের স্ত্রীর ফিতনা হতে রক্ষা করেন। ফলে, সে অশ্লীল ও অনৈতিক কোন কাজে জড়িত হননি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
দুশ্চিন্তা ও পেরেশানি দূর হওয়া এবং রিজিক বৃদ্ধি পাওয়া:
আনাস বিন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনুহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
ُ «مَنْ كانتِ الآخرةُ هُمَّه؛ جعَلَ الله غِنَاهُ فِي قَلْبِه، وَجََمَع لَهُ شَمْلَهُ، وَأَتَتْهُ الدُّنْيَا وَهِيَ راغمة، ومَنْ كانْت الدُّْنيَا هَّمُه؛ جعَلَ الله فَقْرُه بيْنَ عَينيه، وَفَرَّقَ عَلَيْهِ شَملَهُ، وَلَمْ يَأْتِهِ مِنْ الدُّنْيَا إلِا مَا قُدِّرَ لَه»
“যার লক্ষ্য হবে, আখেরাত অর্জন করা, আল্লাহ তা‘আলা তার অন্তর থেকে অভাবকে দূর করে দেবেন। আর তার জন্য যাবতীয় উপকরণ সহজ করে দেবে। আর দুনিয়া তার নিকট অপদস্থ হয়ে ধরা দেবে। আর যার লক্ষ্য বস্তু হবে, দুনিয়া অর্জন করা, আল্লাহ তা‘আলা অভাবকে তার চোখের সামনে তুলে ধরবে এবং যাবতীয় উপকরণকে তার বিচ্ছিন্ন করে দেবে। আর দুনিয়া তার ভাগ্যে ততটুকু মিলবে, যতটুকু তার জন্য লিপিবদ্ধ করা হয়েছে”।[40]
বিপদ-আপদ দূর হওয়া:
আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনুহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«خرََج ثَلَاَثةٌ يَمْشُونَ، فَأَصَابَهُمُ المطََرُ، فَدخَلُوا فِي غَارٍ فِي جَبَلٍ، فَانْحَطَّتْ عَلَيْهِم صَخْرَةٌ، قَالَ: فَقَاَل بعْضُهُمْ لِبَعْضٍ: ادْعُوا الله بأفْضِل عَمل عَمِلْتُمُوهُ.فَقالَ أََحُدُهمْ: اللَّهُمَّ إِنِّي كَانَ لِي أَبَوَانَ شَيْخَانِ كَبيِرانِ، فَكُنْتُ أَخْرُجُ فَأَرْعَى، ثُمَّ أَجِي فَأَحْلب، فَأَجِيءُ باِلِحلَابِ فَآتِي أَبَوَايَ فَيَشربَانِ، ثُمَّ أَسقِي الصِّبيَةَ وَأَهلِي وَامْرَأَتِي، فَاحْتَبسُت ليَلةً،فَجْئتُ فَإِذَا هُمَا نَائمَانِ، قَالَ: فَكِرهْتُ أَن أُوقِظَهُمَا، وَالِّصْبيَةُ يَتَضَاغَوْنَ عِنْدَ رِجلي، فَلَمْ يزَلْ ذَلكَِ دَأْبِي وَدَأْبَهُمَا حَتَّى طَلَعَ الفَجْرُ. اللَّهُمَّ إنْ كُنت تَعْلَمُ أَنِّي فَعَلْتَ ذَلك ابْتغَاءَ وَجْهِكَ فَاْفُرجْ عناْ فُرْجَةً نَرَى مِنهَا السَّمَاءَ. قَالَ: فُفِرجَ عنْهُمْ وَقَالَ الآخَرُ: اللَّهمَّ إن كُنتَ تَعْلَمُ أَنِّي أُحِبُّ امْرَأَةً مِنْ بَنَاتِ عَمِّي كَأَشَدِّ مَا يُحبُ الرَّجُلُ النساءَ، فَقَالَتْ: لاَ تَنَالُ ذَلكَِ مِنهَا حَتَّى تُعْطيَهَا مِائَةَ دِيناَرٍ. فَسَعيت حَّتى جَمَعْتُهَا، فَلَمَّا قَعَدتُ بَين رِجْلَيْهَا قَالَتْ: اتَّقِ الله، وَلا تَفُضَّ الَخاتَمَ إلِا بِحَقِّهِ. فَقُمْتُ وََترَكتهَا، فَإنْ كُنتَ تعْلَمُ أَنِّي فَعَلْتُ ذَلكَ ابْتغِاءَ وَجْهِكَ فَاْفرُجْ عَنَّا فُرْجَةً. قَالَ: فَفرَجَ عنهُمُ الُّثُلَثيْنِ. وَقَالَ الآخَرُ: اللَّهُمَّ إن كُنت تَعْلَمُ أَنِّي اسْتَأْجَرت أَجِيراً بفَرْقٍ مِنْ ذُرَةٍ، فَأَعْطَيْتُهُ، وَأَبى ذَلكَ أَنْ يَأْخُذَ، فَعَمَدتُ إلَى ذَلكَ الفَرْقِ فَزَرعْتُه حَّتى اشْتَرَيْت مِنهُْ بَقرًا وَرَاعِيَها، ثُمَّ جَاءَ فَقَالَ: يَا عَبْدَ الله، أَعْطِنِي حَقِّي. فَقُلْتُ: انْطَلقِْ إلَى تلِكَ البَقَرِ وَرَاعِيهَا فَإنهاَ لَكَ. فَقَالَ: أَتَسَتْهِزُئ بِي؟ قَالَ: فَقُلْتُ: مَا أَسَتهْزئ بكَ، وَلَكنِهَا لَكَ. اللَّهُمَّ إن كُنت تَعْلَمُ أَنِّي فَعَلْتُ ذَلكَِ ابْتغِاءَ وَجْهِكَ فاْفرُجْ عنَّا. فَكَشَفَ عَنْهُمْ»
“তিন ব্যক্তি ঘর থেকে বের হাটতে ছিল, এমন সময় বৃষ্টি আসলে, তারা পাহাড়ের একটি গর্তের মধ্যে প্রবেশ করল। একটি পাথর উপর থেকে পড়ে গর্তের মুখটি বন্ধ হয়ে তারা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। তারা একে অপরকে বলল, তোমরা তোমাদের জীবনের সর্বোত্তম আমল দ্বারা আল্লাহর দরবারে দোয়া করতে থাক। তখন তাদের একজন বলল, হে আমার দুই বৃদ্ধ মাতা-পিতা ছিল, আমি সকালে বের হতাম আর দিনভর ছাগল চরাতাম এবং সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে দুধ দোহাতাম। আর সে দুধ নিয়ে আমি আমার দুই মাতা পিতার নিকট এসে সর্বপ্রথম তাদের দুধ পান করাতাম, তারপর আমি আমার বাচ্চা, পরিবার-পরিজন ও স্ত্রীকে পান করাতাম। এক রাত আমার দেরি হলে, আমি এসে দেখি, তারা দুইজন ঘুমাই গেছে। লোকটি বলল, আমি তাদের দুইজনকে জাগাতে অপছন্দ করলাম। অপরদিকে বাচ্চারা আমার পায়ের নিকট চটপট করছিল। আমি সারা রাত তাদের পায়ের নিকট দাড়িয়ে থাকি তারা ঘুমচ্ছিল, এভাবে সকাল হল। হে আল্লাহ! যদি তুমি জান যে, এ কাজটি আমি তোমার সন্তুষ্টি লাভের জন্য করছি, তাহলে তুমি আমাদের থেকে পাথরটি একটু সরিয়ে দাও, যাতে আমরা আসমান দেখতে পাই। লোকটি বললেন, তারপর পাথরটি একটু সরিয়ে দেয়া হল। দ্বিতীয় জন বলল, হে আল্লাহ! তুমি জান আমি আমার একজন চাচাতো বোনকে এত বেশি ভালো বাসতাম, যেমনটি একজন পুরুষ একজন মহিলাকে ভালো বাসে। তখন সে আমাকে একটি শর্ত দিয়ে বলল, তুমি কখনোই তাকে পাবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি আমাকে একশটি দিনার দেবে। তারপর কথা শুনে আমি চেষ্টা চালিয়ে গেলাম এবং একশ দিনার একত্র করলাম। তারপর যখন আমি তার দু পায়ের মাঝে বসলাম, তখন সে আমাকে বলল, আল্লাহকে ভয় কর। তুমি তোমার আঁকটিকে খুলবে না, শুধু সেখানে খুলবে যেখানে তার অধিকার আছে। তার কথা শোনে আমি দাড়িয়ে গেলাম এবং তাকে ছেড়ে দিলাম। তুমি অবশ্যই জান আমি কাজটি কেবল তোমার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশেই করেছি। সুতরাং, তুমি আমার থেকে পাথরটি একটু সরিয়ে দাও। লোকটি বলল, পাথরটি দুই তৃতীয়াংশ সরে গেল। অপর একলোক বলল, হে আল্লাহ! তুমি অবশ্যই জান, আমি একজন চাকরকে এক থলে খাদ্যের বিনিময়ে কাজে নিয়োগ দেই। কাজ শেষে আমি তাকে তার মুজুরি দিতে গেলে সে তখন তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করে। তার আমি তার খাদ্য গুলোকে নিয়ে জমিনে ছিটিয়ে দেই এবং তার থেকে যে ফসল হয় তা বিক্রি করে একটি গরু ও রাখাল ক্রয় করি। অনেক দিন পর লোকটি এসে আমাকে বলল, হে আল্লাহর বান্দা! তুমি আমাকে আমার পাওনা পরিশোধ কর। তখন আমি তাকে বললাম, এ সব গরু ও তার রাখাল এখানে যা আছে সবই তোমার। লোকটি আমার কথা শুনে বলল, তুমি কি আমার সাতে বিদ্রূপ করছ? আমি বললাম না, আমি তোমার সাথে বিদ্রূপ করছি না। তবে এগুলো সবই তোমার। হে আল্লাহ তুমি অবশ্যই জান, আমি কাজটি তোমার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যেই করছি। তুমি আমাদের থেকে পাথরটি সরিয়ে দাও, তারপর তাদের থেকে পাথরটির বাকী অংশ সরিয়ে দিলেন।[41]
আল্লাহ ও মানুষের মাঝে আল্লাহই যথেষ্ট হওয়া:
ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনুহু বলেন, হকের বিষয়ে যার নিয়ত খাটি হবে, যদিও স্বীয় আত্মার উপর, আল্লাহ তা‘আলা তার মাঝে ও মানুষের মাঝে যথেষ্ট হবে।[42]
মুখলিস ব্যক্তি হিকমত দ্বারা সজ্জিত:
মাকহুল রহ. বলেন, যে ব্যক্তি চল্লিশ দিন পর্যন্ত ইখলাস অবলম্বন করে, তার অন্তর থেকে হেকমতের নহরসমূহ মুখের উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে।[43]
ইখলাসের কারণে বান্দাকে সাওয়াব দেয়া হয়ে থাকে যদিও সে ভুল করে। যেমন, মুজতাহিদ, আলেম, ফকীহ-ইত্যাদি। যখন ইজতিহাদ দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে সত্য উদঘাটন ও মানবতার কল্যাণ সাধন হয়, তখন সে ভুল করলেও তার উপর তাকে সাওয়াব দেয়া হবে।
যাবতীয় কল্যাণ ইখলাসের মধ্যেই নিহিত:
দাউদ আত-তায়ী রহ. বলেন,
আমি যাবতীয় কল্যাণকে একত্র করতে কেবল সুন্দর নিয়তকেই দেখেছি। ভালো নিয়তই যাবতীয় কল্যাণ লাভের জন্য যথেষ্ট।[44]
সুতরাং, যেহেতু যাবতীয় কল্যাণ ও উপকারিতা মুখলিসদের জন্যই। তাই আমাদের জন্য উচিত হল, আমরা যেন, ইখলাসের অধিকারী হই।
ইখলাস না থাকার ক্ষতি
যেমনি ভাবে ইখলাসের অনেক উপকারিতা ও ফলাফল রয়েছে, যা একজন মুসলিম স্বীয় ইখলাস থেকে লুপে নেয়, অনুরূপভাবে ইখলাস না থাকারও অনেক ক্ষতি রয়েছে, যেগুলোতে একজন গাইরে মুখলিস ব্যক্তি আক্রান্ত হয়। এ সব ক্ষতিসমূহ হতে কতক নিম্নে আলোচনা করা হল।
জান্নাতে প্রবেশ না করা:
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনুহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« مَن تَعلَّمَ عِلْمًا مِمَّا يُبْتَغَى بهِِ وَجْهُ الله لا يَتَعلَّمُه إلِا ليُصيبَ بِه عرضاً مِنْ الدُّنْيَا لَم يَجدْ عَرف الجَنةَِّ يْوَم القياَمةِ يعْنِي رِيحَهَا »
“যে ইলম দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন হয়ে থাকে, সে ইলমকে যদি কোন ব্যক্তি দুনিয়াবি কোন উদ্দেশ্যে শেখে, কিয়ামতের দিন সে জান্নাত পাবে না, এমনকি সুঘ্রাণও পাবে না”।[45]
কিয়ামতের দিন জাহান্নামে প্রবেশ করা: আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনুহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন,
«إن أَولَ الناَّسِ يقضى يْوَم القيامِة عَلَيْهِ: رَجل اسُتشِهَد فَأُتَي بهِِ فَعَرَّفُه نعمَه فَعرَفهَا، قَالَ: فَمَا عَمِلْتَ فيِهَا؟ قَالَ: قَاتلتُ فيِكَ حتَّى اسُتشِهْدتُ. قَالَ: كَذَبْتَ، وَلَكنكَّ قَاتَلْتَ لأن يُقَالَ: جَرِيءٌ، فَقَدْ قِيلَ. ثُّم أُمِر بهِ فَسحبَ عَلى وَجههِ حَتَّى أُلْقِيَ فِي الناَّرِ وَرجل تَعَلَّمَ الْعلمَ وَعَلَّمه وقَرَأَ القُرْآنَ، فَأُتِي بهِ فَعَّرَفُه نعَمَه فَعرَفهَا، قَالَ: فَمَا عَمِلْتَ فيِهَا؟ قَالَ: تَعَلَّمْت العِلْمَ وَعَّلمْتُهُ وقَرَأْتُ فيِكَ القُرْآنَ. قَالَ: كَذَبْتَ، وَلَكنكَ تَعَلَّمْت العلَم ليُقَالَ: عَالِمٌ، وَقَرَأْتَ القُرْآنَ ليقَالَ: هُوَ قَارِئٌ، فَقَدْ قِيلَ.ثم أُمَر بهِ فَسحبَ عَلى وَجْههِ حَتَّى أُلْقِيَ فِي النَّارِ. وَرَُجلٌ وَسَّع الله عَلَيْهِ وَأَعطَاهُ مِن أَْصناَفِ المَالِ كُلِّهِ، فَأُتِيَ بهِ فَعرَّفُه نعَمَه فَعرَفهَا، قَالَ: فَمَا عَمِلْتَ فيِهَا؟ قَالَ: مَا تَرَكْتُ مِنْ سَبيِلٍ تُحبُّ أَنْ يُنفْقَ فيِهَا إلا أَنْفَقْتُ فيِهَا لكَ. قَالَ: كَذَبْتَ، وَلَكنِكَّ فَعَلْتَ ليُقَالَ: هُوَ جَوَاٌد، فَقَدْ قِيلَ. ثُّم أُمِرَ بهِ فَسحبَ عَلى وَجْهِهِ ثُمَّ أُلْقِيَ فِي الناَّرِ»
কিয়ামতের দিন সর্ব প্রথম যে ব্যক্তির বিচার করা হবে, তিনি হলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হন, তারপর তাকে ডাকা হবে এবং তার নিকট তার নিয়ামতসমূহ তুলে ধরা হলে সে তা চিনতে পারবে। তাকে জিজ্ঞাসা করা হবে, তুমি এ সব নিয়ামতের মুকাবালায় কি আমল করছ? সে বলল, তোমার রাহে আমি যুদ্ধ করছি এবং শহীদ হয়েছি। সে বলল, তুমি মিথ্যা বলছ, তুমি যুদ্ধ করছ, যাতে মানুষ তোমাকে বাহাদুর বলে। তা তোমাকে বলা হয়েছে। তারপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপের নির্দেশ দেয়া হলে, তাকে তার চেহারার উপর উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হয়। এক ব্যক্তি ইলম অর্জন করল, মানুষকে শেখাল এবং কুরআন পড়ল। তারপর তাকে আল্লাহর দরবারে উপস্থিত করা হল এবং তার উপর আল্লাহর নিয়ামতসমূহ তুলে ধরা হলে, সে তা চিনতে পেল। তাকে জিজ্ঞাসা করা হল, তুমি এ বিষয়ে কি আমল করছ? বলল, আমি ইলম শিখেছি এবং শিখিয়েছি। তোমার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে কুরআন পড়েছি। সে বলল, তুমি মিথ্যা বলছ, তুমি ইলম শিখেছ, যাতে তোমাকে আলেম বলা হয়। আর কুরআন তিলাওয়াত করেছ, যাতে তোমাকে এ কথা বলা হয়, লোকটি ক্বারি। আর দুনিয়াতে তোমাকে তা বলা হয়েছে। তারপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপের নির্দেশ দেয়া হলে, তাকে তার চেহারার উপর উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হয়।[46]
এক ব্যক্তি তাকে আল্লাহ তা‘আলা সামর্থবান করেছেন এবং তাকে বিভিন্ন ধরনের ধন-সম্পদ দিয়েছেন। তারপর তাকে আল্লাহর দরবারে উপস্থিত করা হল এবং তার উপর আল্লাহর নিয়ামতসমূহ তুলে ধরা হলে, সে তা চিনতে পেল। তাকে জিজ্ঞাসা করা হল, তুমি এ বিষয়ে কি আমল করছ? বলল, তোমার জন্য তুমি যে পথে ব্যয় করাকে পছন্দ কর, সে ধরনের কোন পথ আমি ছাড়িনি যেখানে আমি তোমার জন্য ব্যয় করিনি। বলল, তুমি মিথ্যা বলছ, তবে তা করছ, যাতে লোকেরা তোমাকে এ কথা বলা হয়, লোকটি দানবীর। আর দুনিয়াতে তোমাকে তা বলা হয়েছে। তারপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপের নির্দেশ দেয়া হলে, তাকে তার চেহারার উপর উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হয়।
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনুহু যখনই এ হাদিসটি বর্ণনা করার ইচ্ছা করতেন, হাদিসের ভয়াবহতার কারণে তিনি বেহুশ হয়ে পড়তেন। সুফাই আল আসবাহী রাদিয়াল্লাহু আনুহু হতে বর্ণিত, তিনি একবার মদিনায় প্রবেশ করে, দেখতে পান যে, একজন লোককে কেন্দ্র করে অনেক মানুষ একত্র হয়। তখন সে বলল, লোকটি কে? লোকেরা বললেন, লোকটি আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনুহু। আমি তার নিকটে গিয়ে তার সামনে বসলাম। তিনি মানুষকে হাদিস শোনাচ্ছেন। যখন তিনি চুপ করলেন এবং একা হলেন, আমি তাকে বললাম, আমি তোমাকে সত্যের শপথ দিয়ে বলছি। তুমি আমাকে এমন একটি হাদিস বলবে, যা তুমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জবান থেকে শুনেছ, বুঝেছ এবং জেনেছ। তখন আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনুহু বলল, আমি তাই করব, আমি তোমাকে একটি হাদিস শোনাবো যে হাদিসটি আমাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণনা করেছেন এবং আমি হাদিসটি তার থেকে বুঝেছি এবং শিখেছি। এ কথা বলে কিছু সময় আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনুহু বেহুশ হয়ে পড়লেন এবং কিছুক্ষণ পর হুশ ফিরে আসলে তিনি বলেন, আমি তোমাকে একটি হাদিস শোনাবো যে হাদিসটি আমাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নিকট এ ঘরের মধ্যে বর্ণনা করেছেন, যেখানে আমি ও তিনি ছাড়া আর কেউ ছিলেন না। তারপর আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনুহু আবারও বেহুশ হয়ে পড়লেন এবং কিছুক্ষণ পর হুশ ফিরে পেলেন। তিনি তার চেহারা মুছলেন এবং বললেন, আমি তোমাকে একটি হাদিস শোনাবো যে হাদিসটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বর্ণনা করেছেন, যখন আমি ও তিনি এ ঘরের মধ্যে ছিলাম। আমাদের সাথে আমি ও তিনি ছাড়া আর কেউ ছিল না। তারপর আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনুহু আবারও বেহুশ হয়ে পড়লেন এবং কিছুক্ষণ পর হুশ ফিরে পেলেন। তিনি তার চেহারা মুছলেন এবং বললেন, আমি তোমাকে একটি হাদিস শোনাবো যে হাদিসটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বর্ণনা করেছেন, যখন আমি ও তিনি এ ঘরের মধ্যে। আমাদের সাথে আমি ও তিনি ছাড়া আর কেউ ছিল না। না। তারপর আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনুহু আবারও কঠিন ভাবে বেহুশ হয়ে পড়লেন এবং তিনি তার চেহারার উপর ঢলে পড়লেন, আমি তাকে লম্বা করে আমার আমার উপর হেলান দেওয়ালাম, কিছুক্ষণ পর সে হুশ ফিরে পেল এবং বলল, আমাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদিস বর্ণনা করেন...তিনি উল্লেখিত হাদিসটি বর্ণনা করেন। হাদিসের শেষ অংশে বর্ণিত, “অত:পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার উভয় হাঁটুর উপর আঘাত করে বলেন, হে আবু হুরাইরা! এরা তিনজনই আল্লাহ তা‘আলার প্রথম মাখলুক যাদের দ্বারা কিয়ামতের দিন জাহান্নামকে প্রজ্বলিত করা হবে।[47] মনে রাখবে, আগুনকে যেদিন প্রথম প্রজ্বলিত করা হবে, সেদিন হত্যাকারী, ব্যভিচারী, চোর ও মদ্যপানকারী দ্বারা প্রজ্বলিত করা হবে না, বরং কুরআন তিলাওয়াত কারী, দানকারী, মুজাহিদ প্রমুখদের দ্বারা প্রজ্বলিত করা হবে। আর এ গুলো সবই হবে রিয়ার কারণে।
কায়াব বিন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনুহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ طَلَبَ العِلَم ليِجَاري بهِِ العُلَمَاءَ، أَوْ ليِمَارِيَ بهِِ السُّفَهَاءَ، أَوْيَصْرِفَ بِهِ وجُوَه الناَّسِ إِلَيْهِ؛ أَدْخَلَهُ الله النَّارَ »
“যে ব্যক্তি এলম তালাশ করে, যাতে ইলম দ্বারা আলেমদের মুকাবালা করে অথবা জাহেলদের মধ্যে সন্দেহ সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে অথবা মানুষের দৃষ্টি তার প্রতি আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে আল্লাহ তা‘আলা তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবে”।[48]
আমল কবুল না হওয়া:
«قَالَ الله تَبَارَكَ وَتَعالَى: أَنَا أَغْنىَ الشركَاءِ عَنْ الشِّركِ، مَنْ عِمَل عَمَلًا أَشرك فِيهِ مِعي غَيْري تَرَكْتُه وشَركهُ »
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তোমরা আমার সাথে যে সব শরীকদের শরীক সাব্যস্ত কর, আমি তা হতে পবিত্র। যে ব্যক্তি কোন আমল করে, তাতে আমার সাথে অন্য কাউকে শরিক করে, আমি তার আমল ও শিরক উভয়টিকে ছুড়ে ফেলে দেই।[49] আবু উমামা আল বাহেলী রাদিয়াল্লাহু আনুহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
جاء رجل إلى النبي صلى الله عليه وسلم فقال: أرأيت رجلا غزا يلتمس الأجر والذكر ما له؟ فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم«لا شَيْءَ لَهُ » فَأَعَادَهَا ثَلَاَث مَرَّاتٍ، يُقوُل لَهُ رَسُولُ الله صلى الله عليه وسلم « لا شَيْءَ لَهُ » ثم « قَالَ إن الله لا يَقْبَلُ مِنْ العَمَلِ إلِا مَا كَانَ لَهُ خَالِصاً، وَاْبتُغي بهِِ وَجْهُه »
“এক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! এক ব্যক্তি আল্লাহর রাহে যুদ্ধ করে এবং সে সুনাম অর্জন ও সাওয়াব কামনা করে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে কিছুই পাবে না। লোকটি তিনবার জিজ্ঞাসা করল, প্রতিবারই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তার জন্য কিছুই মিলবে না। আল্লাহ তা‘আলা কেবল ঐসব আমল কবুল করেন, যা একমাত্র আল্লাহর জন্য করা হয় এবং যে আমল দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করা হয়।[50] আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনুহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
أن رجلا قال: يا رسول الله، رجل يريد الجهاد في سبيل الله وهو يبتغي عرضا من عرض الدنيا، فقال النبي صلى الله عليه وسلم « لاَ أَجر لَهُ » فأعظمَ ذلك الناسُ، وقالوا للرجل: عد لرسول الله صلى الله عليه وسلم فلعلك لم تفهمه. فقال: يا رسول رجل يريد الجهاد في سبيل الله وهو يبتغي عرضا من عرض الدنيا. فقال: « لا أَجَر لَهُ » فقالوا للرجل: عد لرسول الله صلى الله عليه وسلم فقال له الثالثة، فقال له « لا أَجَر لَهُ »
“এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! একজন ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় পার্থিব বা দুনিয়ার কিছু সম্পদ লাভের উদ্দেশ্যে জিহাদ করতে চায়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তার জন্য কোন সাওয়াব মিলবে না। লোকেরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কথায় আশ্চর্য হলেন এবং লোকটিকে বললেন, তুমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আবার যাও এবং জিজ্ঞাসা কর, হতে পারে তুমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে কথাটি বুঝিয়ে বলতে পারনি। তারপর লোকটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে গিয়ে আবারও বলল, হে আল্লাহর রাসূল! একজন ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় দুনিয়ার কিছু সম্পদ লাভের উদ্দেশ্যে জিহাদ করতে চায়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তার জন্য কোন সাওয়াব মিলবে না। লোকেরা বলল, তুমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আবার যাও, লোকটি আবার গিয়ে জিজ্ঞাসা করলে, তৃতীয় বার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তার জন্য সাওয়াব ও বিনিময় কিছুই নাই।
আমলের সাওয়াব নষ্ট হওয়া:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَقَدِمۡنَآ إِلَىٰ مَا عَمِلُواْ مِنۡ عَمَلٖ فَجَعَلۡنَٰهُ هَبَآءٗ مَّنثُورًا ٢٣ ﴾ [الفرقان: ٢٣]
হাদিসে কুদসীতে বর্ণিত, আল্লাহ তা‘আলা রিয়াকারীদের বিষয়ে বলেন,
«اذْهَبُوا إِلَى الَّذِينَ كُنْتُم تُراءُونَ فِي الدُّنيَا، فَانْظُرُوا هَلْ تِجدُونَ عِنْدَهُمْ جَزَاءً »
“দুনিয়াতে তোমরা যাদের দেখানোর জন্য আমল করতে তাদের নিকট যাও, দেখ, তাদের নিকট কোন বিনিময় পাও কিনা”?[51] ইখলাস বিষয়ে সালফে সালেহীনদের অবস্থান:
ইখলাস আল্লাহ কুরআনের পঠিত আয়াত বা প্রকাশ যোগ্য হাদিস এ বলে সালফে সালেহীনরা ইখলাস বিষয়ে ক্ষান্ত হননি। বরং ইখলাস বিষয়ে তাদের একটি সু-স্পষ্ট অবস্থান ছিল যা অন্যদের ছিল না। ইখলাস বিষয়ে তাদের অবস্থান ছিল একটি অনুকরণীয় আদর্শ। কারণ, তারা ইখলাসের গুরুত্ব সম্পর্কে জানতেন।[52] ফুজাইল বিন আয়াজ রহ. বলেন, “আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের থেকে তোমাদের নিয়ত ও ইচ্ছাকেই চায়”।
তারপর তারা ইখলাসের গুণে গুণান্বিত হওয়া কঠিন হওয়া সত্ত্বেও তারা মুখলিস ছিলেন এবং তারা মানুষের জন্য বিষয় বর্ণনা করে গিয়েছেন। আব্দুল্লাহ আত-তাসতরী রহ. কে জিজ্ঞাসা করা হল, প্রবৃত্তির জন্য সবচেয়ে কঠিন কাজ কোনটি। তিনি বলেন, ইখলাস। কারণ, তার মধ্যে নফসের কোন অংশ নাই।[53]
ইউসুফ বিন আসবাত রহ. বলেন, আমলকারীদের জন্য নিয়তকে নষ্ট করা হতে বিশুদ্ধ করা, দীর্ঘ ইজতেহাদ করা হতে কঠিন।
ইখলাস বিষয়ে সালাফদের অবস্থান সম্পর্কে তোমার নিকট কতক নমুনা তুলে ধরা হল। আশা করি তা থেকে তুমি উপদেশ গ্রহণ করবে এবং তাদের অনুসরণ করবে।
নফসকে ইখলাসের গুণে গুণান্বিত বলে দাবি করতেন না:
মানুষের জীবনে ইখলাস অর্জন করা একটি কঠিন কাজ। একজন মুসলিম ইখলাস অর্জন করতে হলে, তাকে অবশ্যই প্রকৃত জিহাদ করতে হবে। এ কথা জেনেই সালফে সালেহীনরা তাদের নিজেদের মুখলিস দাবি করা হতে বিরত থাকেন। তারা নিজেরা মুখলিস এ কথা কখনো প্রমাণ করতে চাননি।
হিশাম আত-দোস্তওয়াঈ রহ. বলেন, আমি কখনো এ কথা বলতে পারি না যে, আমি কোন দিন কেবল আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে হাদিসের সন্ধান করতে বের হয়েছি।[54]
তোমরা কি জান হিশাম আত-দোস্তওয়াঈ কে, যিনি হাদিসের অনুসন্ধানে স্বীয় আত্মাকে দোষারোপ করছে?! তার সম্পর্কে শুবা ইবনুল হুজ্জাজ রহ. বলেন, একমাত্র হিশাম আত-দোস্তওয়াঈ ছাড়া আর কাউকে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে হাদিস তালাশ করতে আমি দেখিনি।
তার সম্পর্কে শাজ ইবনুল ফাইয়ায রহ. বলেন, হেশাম এত বেশি কাঁদত যে, তার চক্ষুদ্বয় নষ্ট হয়ে যায়।
হিশাম রহ. তার নিজের সম্পর্কে বলেন, যখন আমি বাতি-আলো হারাই ফেলতাম, তখন কবরের অন্ধকারের কথা চিন্তা করতাম।
আর সুফিয়ান রহ. বলেন, আমি আমার উপর নিয়তের চেয়ে কঠিন কিছুর সম্মুখীন হই নাই। কারণ, তা আমার উপর বার বার পরিবর্তন হয়।[56]
আর ইউসুফ ইবনুল হুসাইন রহ. বলেন, দুনিয়াতে সর্বাধিক প্রিয় বস্তু হল, ইখলাস। আমি আমার অন্তর থেকে রিয়াকে দূর করার জন্য কতনা পরিশ্রম করে থাকি। কিন্তু তা যেন ভিন্ন ভিন্ন রূপে প্রকাশ পায়।[57] মুতার-রাফ বিন আব্দুল্লাহ রহ. এর দু’আ হল,
اللهم إني أستغفرك مما تبتُ إليك منه ثم عدتُ فيه، وأستغفرك مما جعلته لك على نفسي ثم لم أوفِ لك به، وأستغفرك مما زعمتُ أنني أردتُ به وجهك فخالط قلبي فيه ما قد علمتَ
অর্থ, হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি, যে গুনাহ হতে তোমার নিকট তাওবা করার পর, তা পুনরায় আবার করেছিলাম। আর আমি ক্ষমা প্রার্থনা করছি, তুমি আমার উপর যে দায়িত্ব দিয়েছিলে, কিন্তু আমি তা পূরণ করিনি। আর আমি ক্ষমা প্রার্থনা করছি ঐ সব কাজ হতে, যে সব কাজে আমি আমার ধারণা মতে তোমার সন্তুষ্টি কামনা করেছিলাম, কিন্তু তোমার জানা মতে আমার অন্তর অন্য কিছুকে তোমার সাথে শরিক করেছে। তারা ছিলেন, অনুকরণ যোগ্য ইমাম। তা সত্ত্বেও তারা তাদের নিজেদের প্রবৃত্তিকে দোষারোপ করার ব্যাপারে সব মানুষের তুলনায় অধিক কঠোর ছিলেন।
আমলকে গোপন করা:
হাসান বসরি রহ. সালাফদের স্বীয় আমল গোপন রাখার বিষয়ে বলতে গিয়ে বলেন, দেখা যেত তাদের কেউ পুরো কুরআনকে একত্র করত: অথচ তার প্রতিবেশী যারা তারা জানত না। একজন লোক অনেক বেশি ফিকাহ জানত, কিন্তু মানুষের মধ্যে তার কোন সুনাম ছিল না। আবার একজন লোক দেখা গেল, স্বীয় ঘরে দীর্ঘ সময় সালাত আদায় করত, তার ঘরে মেহমান আসত, কিন্তু তারা জানতে পারত না। জমিনের উপর এমন কোন আমল ছিল না যা গোপনে করা যেত, তা না করে প্রকাশ্যে করা হত। মুসলিমরা বেশি বেশি দু’আ করত, কিন্তু তাদের দু’আর আওয়াজ শোনা যেত না। তাদের আওয়াজ তার মধ্যে ও তার আল্লাহর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকত। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ ٱدۡعُواْ رَبَّكُمۡ تَضَرُّعٗا وَخُفۡيَةًۚ إِنَّهُۥ لَا يُحِبُّ ٱلۡمُعۡتَدِينَ ٥٥ ﴾ [الاعراف: ٥٤]
স্ত্রী ও পরিবার-পরিজন থেকে আমলকে গোপন করা:
হাসান বিন আবু সিনানের স্ত্রী তার স্বামী সম্পর্কে বলেন, সে ঘরে এসে আমার সাথে একসাথে বিছানায় প্রবেশ করত। তারপর সে একজন মহিলা তার বাচ্চাকে ঘুম বানিয়ে যেভাবে উঠে যেত, সেভাবে উঠে গিয়ে আমাকে ধোঁকা দিত। যখন সে বুঝতে পারত, আমি ঘুমিয়ে পড়ছি তখন সে বিছানা থেকে উঠে যেত এবং সালাত আদায়ে লিপ্ত হত। তিনি বলেন, আমি তাকে বললাম, হে আবু আব্দুল্লাহ! তুমি তোমার নফসকে আর কত কষ্ট দেবে? তোমার আত্মাকে শান্তি দাও। তখন সে বলে, তুমি চুপ কর। হতে পারে আমি এমন একটি ঘুম দেব, তার থেকে আর কখনো জাগবো না।[59]
অনুরূপভাবে দাউদ বিন আবু হিন্দ রহ. চল্লিশ বছর পর্যন্ত রোজা রাখেন কিন্তু তার স্ত্রী জানত না। সকাল বেলা তার স্ত্রী তার জন্য খানা তৈরি করে দিত। কিন্তু রাস্তায় তিনি খানাটি কাউকে দান করে দিতেন এবং সন্ধ্যায় ঘরে ফিরে ইফতার খেতেন।[60]
জিহাদ চলাকালীন আত্ম-গোপন করা:
জিহাদ এমন একটি যায়গা যেখানে রিয়া করা বা ইখলাস না থাকার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে। মুসলিমদের সাথে যারা অস্ত্র বহন করে এবং যুদ্ধ করে, তাদের সবাই মুখলিস হবে এমন কোন কথা নাই। এ কারণে আমরা দেখতে পাই উপরে এমন কতক হাদিস উল্লেখ করা হয়েছে, যাতে জিহাদে নিয়ত খাটি করা ও ইখলাসের গুরুত্ব সম্পর্কে বিশেষ তাকিদ দেয়া হয়েছে। আমাদের সালফে সালেহীনদের নিকট জিহাদের মধ্যে ইখলাসের চিত্র ছিল, তারা তাদের জিহাদকে এমন গোপন করতেন, তাদের চেনাই যেত না। জিহাদকে গোপন করা বিষয়ে তোমার নিকট দুটি ঘটনা তুলে ধরা হল।
প্রথম ঘটনা: আবদাহ বিন সুলাইমান রহ. বলেন, একদা আমরা আব্দুল্লাহ বিন মুবারকের সাথে রুম শহরে একটি যুদ্ধে ছিলাম। আমরা দুশমনদের দেখা পাই। যখন যুদ্ধের ময়দানে দুটি কাতার মুখোমুখি হল, তখন দুশমনদের থেকে এক লোক বের হয়ে, মোকাবেলা করার আহ্বান করলে একজন মুসলিম ব্যক্তি বের হল এবং তার সাথে মোকাবিলা করল তাকে আঘাত করে হত্যা করে ফেলল। তারপর অপর এক লোক বের হল এবং সে চ্যালেঞ্জ চুড়ে দিল। তখন মুসলিমটি তার সাথে মোকাবিলা করল এবং তাকে হত্যা করল। তারপর তৃতীয় ব্যক্তি আসল এবং তাকেও হত্যা করা হল। এরপর লোকেরা মুসলিম ব্যক্তিটিকে জানার জন্য ভিড় করলে, লোকটি তার চেহারা ডেকে ফেলল। আবদা রহ. বলেন, যারা লোকটিকে চেনার জন্য ভিড় করছিল, আমিও তাদের সাথে ছিলাম। আমি লোকটির জামার একটি হাতা ধরে টান দিলে দেখতে পাই লোকটি আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক। তখন তিনি বকা দিয়ে বললেন, এ জন্যই কি চেহারা খোলা হল: হে আবু ওমর তুমি এমন লোক যে আমাদের বিরুদ্ধে বিপদ ডেকে আন!?।[61]
দ্বিতীয় ঘটনা: [পরিখা খননকারীর ঘটনা]: একবার মুসলিম সৈন্যরা দুশমনদের একটি ঘাটি ঘেরাও করে ফেললে, দুশমনরা মুসলিম উপর তীর মারতে আরম্ভ করে। এ অবস্থা দেখে একজন মুসলিম সৈন্য নিজ উদ্যোগে পরিখা খনন আরম্ভ করেন। পরিখা খনন করে সে দুশমনদের দূর্ঘের ভিতরে পৌছতে সক্ষম হয় এবং দুশমনদের বিরুদ্ধে মুসলিমরা বিজয় লাভ করে। কিন্তু লোকটি কে ছিল কেউ তা জানত না। মুসলিম সেনাপতি মাসলামাহ লোকটি পুরস্কার দেয়ার জন্য খোঁজাখুঁজি করছিল। কিন্তু না পেয়ে তিনি আল্লাহর কাছে দোয়া করেন, আল্লাহ যাতে লোকটির সন্ধান দেন। রাতে যখন সবাই ঘুমিয়ে পড়ল, তখন মাসলামার নিকট একজন আগন্তুক এসে তাকে একটি শর্ত দিয়ে বলল, যদি সে লোকটি সম্পর্কে তাকে সংবাদ দেয়, সে যেন তার পর থেকে আর কোন দিন তাকে তালাশ না করে। তখন মাসলামাহ তার সাথে প্রতিশ্রুতি দিলে, তাকে লোকটি সম্পর্কে জানানো হল, লোকটি কে। মাসলামা রাদিয়াল্লাহু আনুহু সব সময় এ কথা বলত, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে পরিখা খননকারীর সাথে হাসর কর।[62]
গ্রাম্য লোক ও গনিমত:
সাদ্দাদ ইবনুল হাদ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
أن رجلا من الأعراب جاء إلى النبي صلى الله عليه وسلم فآمن به واتبعه، ثم قال: أهاجر معك. فأوصى به النبي صلى الله عليه وسلم بعض أصحابه، فلما كانت غزوة غنم النبي صلى الله عليه وسلم سبيا فقسم وقسم له، فأعطى أصحابه ما قسم له، وكان يرعى ظهرهم، فلما جاء دفعوه إليه فقال: ما هذا؟ قالوا: قسم قسمه لك النبي صلى الله عليه وسلم فأخذه فجاء به إلى النبي صلى الله عليه وسلم فقال: ما هذا؟! قال « قسَمْتُهُ لَكَ » قال: ما على هذا اتبعتك، ولكني اتبعتك على أن أُرمى « لَكَ إلى هاهنا -وأشار إلى حلقه- بسهم فأموت فأدخل الجنة. فقال « إنْ تَصْدُقِ الله يَصْدُقْكَ » فلبثوا قليلا ثم نهضوا في قتال العدو، فأُتي به النبي صلى الله عليه وسلم يحمل قد أصابه سهم حيث أشار، فقال النبي صلى الله عليه وسلم « أهُوَ هوَ » قالوانعم قال صَدَقَ الله فَصَدَقهُ ثم كفنه النبي صلى الله عليه وسلم في جبته- أي جبة النبي صلى الله عليه وسلم ثم قدمه فصلى عليه، فكان فيما ظهر من صلاته « اللُّهُمَّ هَذَا عَبْدَُك، خَرَجَ مُهَاجِراً فِي سَبيِلكَِ، فَقُتلَِ شَهِيداً، أَنَا شَهِيدٌ عَلَى ذَلِكَ »
অর্থ, গ্রাম থেকে একজন লোক এসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি ঈমান আনে এবং তার অনুকরণ করে। তাপর লোকটি বলল, আমি আপনার সাথে হিজরত করব। তার কথা শোনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাহাবীদের তার বিষয়ে অচিয়ত করেন। তারপর কোন একটি যুদ্ধে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছু গণিমত লাভ করলে, তা তিনি বণ্টন করেন এবং লোকটির জন্য একটি অংশ নির্ধারণ করা হয়। লোকটি সাথীদের নিকট তার অংশটি সমর্পণ করল। লোকটি তাদের পিছনে থাকত। যখন সে আসল, তাকে তার অংশটি হস্তান্তর করা হলে, সে বলল, এ কি? তারা এটি তোমার অংশ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমার জন্য এ অংশ তোমার জন্য নির্ধারণ করেন। লোকটি তার অংশটি নিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! এ কি? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি তোমার জন্য তোমার অংশ বণ্টন করে দিয়েছি। লোকটি বলল, আমি এ জন্য তোমার অনুকরণ করিনি। কিন্তু আমি তোমার অনুকরণ করেছি যাতে আমি আমার গলায় তীর দ্বারা আঘাত প্রাপ্ত হই। তারপর আমি যখন মারা যাব, তখন জান্নাতে প্রবেশ করব। এ কথা বলার পর, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদি তুমি সত্য বল, আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে সত্য পরিণত করবে। তারপর সে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে কিছু সময় অপেক্ষা করল এবং দুশমনদের মোকাবেলায় যুদ্ধ করার জন্য উঠে দাঁড়াল। তারপর তাকে যুদ্ধের ময়দান থেকে বহন করে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে নিয়ে আসা হল, তখন সে যে জায়গাটি ইশারা করে দেখিয়ে ছিল, সে জায়গায় তীরের আঘাত প্রাপ্ত হল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দেখে বলল, সে কি সে লোক? তারা বলল, হ্যাঁ। রাসূল বললেন, লোকটি সত্য বলল, আল্লাহ তা সত্যে পরিণত করলেন। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে তার জামার মধ্যে দাফন করলেন এবং তাকে সামনে এগিয়ে দিলেন এবং তার উপর সালাতে জানাজা আদায় করলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সালাত আদায়ে যে দোয়া পড়েন তা ছিল-
«اللُّهُمَّ هَذَا عَبْدَُك، خَرَجَ مُهَاجِراً فِي سَبيلكَ، فَقُتلَ شَهِيداً، أَنَا شَهِيدٌ عَلَى ذَلِكَ»
হে আল্লাহ! এ তোমার বান্দা, তোমার রাস্তায় হিজরতের উদ্দেশ্যে বের হয়েছিল অত:পর সে শহীদ হয়ে মৃত্যু বরণ করল। আমি এর উপর সাক্ষী।[63]
লৌকিকতা ও কৃত্রিমতা হতে ভয়: আলী বিন বুকার আল-বাসরী আয-যাহেদ রহ. বলেন, শয়তানের সাথে সাক্ষাত করা আমার নিকট অমুকের সাথে সাক্ষাত করা হতে অধিক প্রিয়। আমি তার জন্য কৃত্রিম উপায় অবলম্বন করব আর এর কারণে আল্লাহ দৃষ্টি হতে দূরে সরে যাব।[64] সালফে সালে-হীনগণ কৃত্রিমতা ও লৌকিকতাকে অধিক ভয় করতেন।
জ্ঞানকে প্রকাশ না করা:
আবুল হাসান আল-কাত্তান হতে ইবনে ফারেস রহ. উল্লেখ করে বলেন, আমার চোখ আক্রান্ত হল, আমার বিশ্বাস আমার আমার সফরে অধিক কথা বলার কারণে শাস্তির সম্মুখীন হই। অর্থাৎ, তার ধারণা যে, তার অসুস্থতা তার ইলমকে প্রকাশ করার শাস্তিস্বরূপ।
ইমাম যাহবী রহ. বলেন, তিনি অবশ্যই সত্য বলেছেন, কারণ, পূর্বেকার মনিষীরা তাদের নিয়ত সঠিক হওয়া ও ইচ্ছা সুন্দর হওয়া সত্ত্বেও তারা -অধিকাংশ সময়- তারা কথা বলতে, তাদের ইলমকে প্রকাশ করতে ও বুজুর্গি প্রকাশ করতে ভয় করত। কিন্তু বর্তমানে, জ্ঞান কম হওয়া এবং নিয়ত খারাপ হওয়া সত্ত্বেও মানুষ কথা বেশি বলে। তারপর আল্লাহ তা‘আলা অবশ্যই তাদের অপমান করেন, তাদের অজ্ঞতা ও খারাবিকে প্রকাশ করেন তারা যা জানে সে বিষয়ে তাদের ঝগড়া-বিবাদ প্রকাশ করেন।[65]
কান্নাকে গোপন করা:
হাম্মাদ বিন যায়েদ রহ. বলেন, আইউব রহ. যখন কোন হাদিস বর্ণনা করতেন, তখন সে কাঁদত এবং তার চক্ষুদ্বয় থেকে অশ্রু নির্গত হত। তখন আবরাহ এসে নাক ঝাড়ত এবং বলত, কত সর্দি!! কান্নাকে গোপন করার কারণে সর্দি বের হত।[66]
হাসান বসরী রহ. বলেন, এমন এমন লোক ছিল, যারা মজলিসে বসত, তখন তাদের চোখের পানি আসলে, তারা তা প্রতিহত করতে চেষ্টা করত। কিন্তু তারপরও যখন তারা চোখের পানি বের হওয়া আশঙ্কা করত, তখন তারা মজলিশ থেকে উঠে যেত।
মুহাম্মাত বিন ওয়াসে রহ. বলেন, এমন লোক ছিল, যে বিশ বছর পর্যন্ত কান্নাকাটি করত অথচ তার স্ত্রী তার সাথে থেকেও তার কান্না সম্পর্কে জানত না। [67]
তিনি আরও বলেন, আমি কতক লোক এমন পেলাম, তাদের চেহারা চোখের পানি দ্বারা ভিজে যেত, কিন্তু একই বালিশে হওয়া সত্ত্বেও তাদের কান্না-কাটি সম্পর্কে তাদের স্ত্রীরা একটুও টের পেত না। আরও কিছু লোক এমন দেখতে পেলাম, তারা একই কাতারে দাঁড়াত, আর তাদের চোখের পানি তাদের চেহারার উপর দিয়ে প্রবাহিত হত, তার পাশের লোক বুঝতে পারত না। [68]
ইমাম আল-মাওয়ারদি ও তার কিতাব লিখা:
ইমাম আল-মাওয়ারদি ও তার কিতাব লিখা বিষয়ে একটি আশ্চর্য ঘটনা বর্ণিত আছে। তিনি তাফসীর, ফিকাহ ইত্যাদি বিষয়ে একাধিক কিতাবাদি লিখেন। তার কোন কিতাবই তার জীবদ্দশায় প্রকাশ পায়নি। তিনি কিতাব লিখেছেন এবং এমন জায়গায় গোপন করেছেন, তিনি ছাড়া আর কেউ তা জানে না। আর যখন তার মৃত্যু উপস্থিত হল, সে তার একজন বিশ্বস্ত লোককে ডেকে বলল, অমুক জায়গায় যে কিতাবগুলো আমি দেখছি এ গুলো সবই আমার লিখিত কিতাব। আমি এগুলোকে প্রকাশ করিনি, কারণ আমি নিজেকে খালেস নিয়ত কারী হিসেবে পাইনি। আমি যখন মৃত্যুর মুখোমুখি হই এবং মৃত্যু যন্ত্রণায় পতিত হই, তুমি তোমার হাতকে আমার হাতের উপর রাখবে, যদি আমি এ অবস্থায় মারা যাই তাহলে মনে রাখবে আমার কোন লেখাই আল্লাহর দরবারে কবুল হয় নাই। তখন তুমি আমার সমস্ত লেখনী গুলো নিয়ে রাতের অন্ধকারে দিজলা নদীতে নিক্ষেপ করবে। আর যদি আমি আমার হাতকে প্রশস্ত করি এবং এ অবস্থায় মারা না যাই তাহলে, তুমি মনে করবে আমার লিখনি আল্লাহর দরবারে তা কবুল হয়েছে এবং আমি আল্লাহর নিকট থেকে যা আশা করেছিল, তাতে আমি কামিয়াব হয়েছি।
লোকটি বলল, যখন তার মৃত্যু ঘনিয়ে এলো, আমি আমার হাতকে তার হাতের উপর রাখি, তখন সে তার হাতকে প্রশস্ত করল এবং আমার হাতে তার মৃত্যু হয়নি। তাতে আমি জানতে পারলাম যে এ ছিল কবুল হওয়ার আলামত। তারপর আমি তার কিতাবসমূহকে প্রকাশ করলাম।[69]
আলী বিন হুসাইন রহ. এর রাতে দান করা:
জয়নুল আবেদীন আলী বিন হুসাইন রহ. রাতের বেলা তার পিঠের উপর রুটির বস্তা বহন করে মিসকিনদের খুঁজে বেড়াতেন। তিনি বলতেন, রাতের অন্ধকারে সদকা করা আল্লাহর ক্ষোভকে নিবিয়ে দেয়। মদিনাতে কিছু লোক ছিল, তাদের খাবার রাতের বেলায় পৌঁছে যেত; তারা জানত না যে তাদের খাওয়ার কোথা হতে আসত। যখন আলী ইবনুল হুসাইন মারা গেল, তখন তারা তাদের রাতের বেলায় যে খাওয়ার পৌঁছানো হত তা আর পেতো না। তার মৃত্যুর পর তারা তার পিঠে রাতের বেলা আটার বস্তা বহন করার দাগ দেখতে পেল। তিনি একশটি পরিবারের নিকট খাদ্য পৌঁছাত।[70]
এ ধরনের অবস্থা ও ঘটনাবলী যেগুলো তারা গোপন রাখতে চাইতেন, আল্লাহ তা‘আলা তা প্রকাশ করে দিতেন, যাতে তারা উম্মতের অনুকরণ যোগ্য ও ইমাম হয়ে থাকেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
ইখলাসের আলামতসমূহ:
ইখলাসের কতক নিদর্শন আছে যেগুলো একজন মুখলিস বান্দার উপর প্রকাশ পায়। আলেমগণ এ গুলো উল্লেখ করেন।
তারা প্রসিদ্ধি লাভ, প্রশংসা কুড়ানো ও গুণাগুণ করাকে পছন্দ করেন না, তারা দ্বীনের জন্য আমল করতে পছন্দ করেন। তারা নেক আমলের প্রতি প্রতিযোগিতা করেন, আমলের বিনিময় আল্লাহর কাছে চান, তারা ধৈর্য ধারণ করেন, কোন প্রকার অভিযোগ করতে তারা পছন্দ করেন না। তারা তাদের আমলকে গোপন করতে পছন্দ করেন, তারা গোপনে আমল করেন এবং তাদের অধিকাংশ আমল হয়ে থাকে লোক চক্ষুর আড়ালে। তাদের গোপন আমলের সংখ্যা অধিক হয় থাকে প্রকাশ্য আমল থেকে। এগুলো সবই হল, একজন মানুষের মধ্যে ইখলাস থাকার নিদর্শন। তবে হে মুসলিম ভাই! তোমাকে এ কথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি তার ইখলাসের মধ্যে ইখলাসকে প্রত্যক্ষ করে, তখন তার ইখলাসের মধ্যে ইখলাস প্রয়োজন। আল্লাহর নিকট আমাদের কামনা আল্লাহ যেন আমাকে এবং তোমাদেরকে মুখলিসদের অন্তর্ভুক্ত করে এবং আমাদের অন্তরকে এবং আমাদের আমলসমূহকে রিয়া ও নিফাক থেকে হেফাজত করে।
ইখলাস বিষয়ে কতক মাসআলা
আমল প্রকাশ করা কখন বৈধ?
আমরা সালফে সালেহীনদের অবস্থা আমরা উল্লেখ করছি যে, তারা কীভাবে তাদের আমলসমূহকে গোপন করার প্রতি লালায়িত ছিল। আমরা আরও উল্লেখ করেছি যে, ইখলাসের আলামত হল, আমলসমূহকে গোপন করা এবং প্রকাশ না করা। তা সত্ত্বেও কখনো কখনো সময় আমলকে প্রকাশ করা বৈধ হয়ে থাকে এবং তা গোপন করা হতে প্রকাশ করা উত্তম হয়ে থাকে।
আল্লামা ইবনু কুদামাহ রহ. বলেন, পরিচ্ছেদ ইবাদতসমূহ প্রকাশ করার ইচ্ছা করার অনুমতি বিষয়ে বর্ণনা।
তিনি বলেন, আমলকে প্রকাশ করার মধ্যে অনুকরণ করার উপকারিতা রয়েছে এবং মানুষকে কল্যাণের প্রতি উৎসাহ দেয়া। আর কতক আমল আছে, যেগুলো গোপন করার কোন উপায় থাকে না। যেমন- হজ, জিহাদ ইত্যাদি। যিনি আমলকে প্রকাশ করবেন, তাকে অবশ্যই তার অন্তরের দিক লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে তার মধ্যে গোপন শিরক অর্থাৎ রিয়ার মহব্বত না থাকে বরং মানুষ তার অনুকরণ করবে, এ কথারই নিয়ত করবে।
বিষয়টি আরও স্পষ্ট করার জন্য আমরা বলি, আমলকে প্রকাশ করা ও গোপন করার মধ্যে দুটি অবস্থা:
প্রথম অবস্থা: কতক আমল আছে যেগুলো গোপন করা সুন্নত। সেগুলোকে গোপন করবে। যেমন, কিয়ামুল লাইল, সালাতে খুশু।
দ্বিতীয় অবস্থা: কতক আমল আছে, যে গুলো প্রকাশ করা সুন্নত। সেগুলোকে প্রকাশ করবে। যেমন জুমার সালাতের হেফাজত করা, জামাতে সালাত আদায় করা, হকের আওয়াজ তুলে ধরা।
তৃতীয় অবস্থা: কতক আমল আছে যেগুলো গোপন করা ও প্রকাশ করা উভয়ের মাঝামাঝি অবস্থান করে। প্রকাশ করার কারণে যে ব্যক্তি রিয়ার আশঙ্কা করে সে আমলকে গোপন করবে, আর যে মানুষকে শেখানো বা তারা যাতে তার অনুকরণ করে এ ধরনের ইচ্ছা রাখে সে প্রকাশ করবে।
যেমন, নফল সদকা: কোন মানুষ এ বিশ্বাস রাখে যে, যখন মানুষ তাকে দান করতে দেখবে, তখন তার অন্তরে কিছু হলেও রিয়া ও লৌকিকতা আসবে, তখন তার জন্য উচিত হল, সদকাকে গোপন করা। আর যদি তার উদ্দেশ্য হয়, মানুষ দেখার কারণে সে অনুকরণীয় হবে এবং লোকেরা তাকে দেখে দান করা শিখবে, এবং রিয়াকে সে প্রতিহত করতে সক্ষম হবে, তাহলে তার জন্য সুন্নত হল, সদকাকে প্রকাশ করা। যেমন, একজন আলেম মসজিদে প্রবেশ করে নফল সালাত আদায় করা দ্বারা মানুষ নফল সালাত আদায় করার পদ্ধতি ও রাকাত সম্পর্কে জানতে পারবে। আমাদের সালফে সালেহীনদের কতক হতে বর্ণিত, তারা তাদের কতক আমলকে প্রকাশ করত, যাতে মানুষ তাদের অনুকরণ করে। যেমন কেউ কেউ মৃত্যু উপস্থিত হলে, তাদের পরিবারকে বলত, তোমরা আমার উপর কান্না-কাটি করিও না, আমি যেদিন থেকে ইসলাম গ্রহণ করি সেদিন থেকে কোন খারাপ কথা বলিনি। আবু বিন আইয়াশ রহ তার ছেলেকে অসিয়ত করে বলেন, হে ছেলে! এ কামরার মধ্যে আল্লাহর নাফরমানি করা হতে বিরত থাক। কারণ, আমি এ ঘরের মধ্যে বার হাজার বার কুরআন খতম করেছি।[71]
এখানে একটি বিষয় আছে- যে বিষয়টির উপর সতর্ক থাকা খুবই জরুরি। যে ব্যক্তি সব মানুষ থেকে সব ধরনের আমল গোপন করতে বলে, সে অবশ্যই একজন খারাপ লোক- ইসলামকে শেষ করে দিতে চায়। মুনাফেকরা যখন কোন লোককে দেখত বেশি দান করতে দেখত, তখন বলত লোকটি মানুষকে দেখানোর জন্য দান করছে। আর যদি কোন লোক অল্প দান করত, তখন বলত আল্লাহ তা‘আলা তোমার এ দানের প্রতি মুখাপেক্ষী নন। তাদের এ সব কথা বলা দ্বারা উদ্দেশ্য, সমাজ হতে ভালো কাজগুলো তুলে দেয়া, যাতে কোন মানুষ নেককার লোকদের অনুকরণ করতে না পারে। এ কারণেই আমরা দেখতে পাই, যখন কোন ভালো লোক তাদের নেক আমল হতে কোন আমলকে প্রকাশ করে, তখন সে মুনাফেকদের পক্ষ থেকে নানাবিধ কষ্টের সম্মুখীন হয়। এমন কোন পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে,তখন মুনাফেকদের নির্যাতনের উপর ধৈর্য ধারণ করতে হবে। তাদের বিরোধিতা, অপবাদ ও নির্যাতনের প্রতি কোন প্রকার ভ্রূক্ষেপ করা যাবে না। মনে রাখবে, সে অবশ্যই মহা কল্যাণের উপর প্রতিষ্ঠিত।
রিয়ার আশঙ্কায় আমল ছেড়ে দেয়ার বিধান:
ফুজাইল বিন আয়ায রহ. বলেন, মানুষের কারণে আমল ছেড়ে দেয়া রিয়া। আর মানুষের জন্য আমল করা, শিরক। আর আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে এ দুটি থেকে ক্ষমা করা ইখলাস।
ইমাম নববী রহ. বলেন, কোন ব্যক্তি কোন একটি ইবাদত করার প্রতিজ্ঞা করল কিন্তু মানুষ তাকে দেখবে এ আশঙ্কায় সে ইবাদত করা ছেড়ে দিল, তাহলে সে একজন রিয়াকারী।
এটি যখন কোন ব্যক্তি সম্পূর্ণরূপে আমল করাকে ছেড়ে দেয়। আর যদি কোন ব্যক্তি গোপনে আমল করার উদ্দেশ্যে মানুষের সামনে আমল করা ছেড়ে দেয় তাতে কোন অসুবিধা নাই।
অনেক জাহেল-মূর্খ-যারা তাদের দাড়ি কাটে বা দাড়িকে হলক করে থাকে, রিয়া না করার প্রমাণ দিয়ে। তাদের বিষয়টিও আমাদের এ আলোচনার অন্তর্ভুক্ত হবে। কারণ, তারা বলে-দাড়ি রাখা প্রমাণ করে, দাড়িওয়ালা লোকটি ঈমানের দাবিদার এবং নেককার। [আর এটি রিয়া] এ ধরনের লোকেরা সুস্পষ্ট বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদিসসমূহ হতে কোথায় সরে আছে? যাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাড়িকে লম্বা করার নির্দেশ দেন, দাড়িকে ছেড়ে দেয়ার নির্দেশ, দাড়িকে হলক না করার নির্দেশ দেন। আল্লাহ তা‘আলার নিকট দ্বীনের বিষয়ে দূরদর্শিতা কামনা করি যাতে তিনি আমাদের সঠিক বুঝ দান করেন।
রিয়া করা ও আমলে কাউকে শরিক করার মধ্যে পার্থক্য:
শরয়ী আমল করা দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের নিয়ত না করে গাইরুল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন কামনা করাকে রিয়া বলা হয়। আর আমল করা দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করার সাথে অন্য কিছুর সন্তুষ্টির নিয়ত করাকে আমলে অংশীদার করা বলে।
উল্লেখিত দুটি বিষয়ের দিক তাকিয়ে আমরা বলি, শরয়ী আমল বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত প্রকার:
প্রথম প্রকার: আমল একমাত্র আল্লাহর জন্য করা আর কোন কিছুর প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করা।
আর এ প্রকার আমল হল, সবোর্চ্চ ও সর্বোত্তম আমল।
দ্বিতীয় প্রকার: আমল আল্লাহর জন্য করবে এবং অন্য কোন বৈধ বিষয়ের প্রতিও ভ্রুক্ষেপ করবে। যেমন, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রোজা রাখা এবং সাথে সাথে দৈহিক সুস্থতার প্রতিও লক্ষ্য রাখা। অনুরূপভাবে কোন ব্যক্তি আল্লাহ সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে হজ করতে বের হল এবং সাথে সাথে ব্যবসারও নিয়ত করল।
অনুরূপভাবে কোন ব্যক্তি আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশে পায়ে হেটে মসজিদে গমন করে আবার সাথে সাথে শরীর চর্চার নিয়তও করে।
উপরে উল্লেখিত দৃষ্টান্ত গুলোতে যে ধরনের নিয়তের কথা বলা হয়েছে, সে ধরনের নিয়তের কারণে আমল নষ্ট হয় না, তবে সাওয়াব কম হয়। উত্তম হল আল্লাহর নৈকট্য লাভ ছাড়া আর কোন কিছুর নিয়ত না করা।
তৃতীয় প্রকার: আমল আল্লাহর জন্যই, কিন্তু আমল দ্বারা এমন কিছু উদ্দেশ্য থাকে বা নিয়ত করে যেগুলোর উদ্দেশ্য থাকা বা নিয়ত করা বৈধ নয়। যেমন, আমল দ্বারা উদ্দেশ্য হয়, মানুষের প্রশংসা কুড়ানো এবং আমলের বিনিময়ে টাকা-পয়সা উপার্জন করা। এ ধরনের আমলের কয়েকটি অবস্থা হয়ে থাকে:
- যদি আমল শুরু করার আগেই তার অন্তরে এ ধরনের উদ্দেশ্যের উদ্রেক হয় এবং আমল এ উদ্দেশ্যেই করে থাকে, তাহলে এ আমল ফাসেদ তার কোন মূল্য নাই। যেমন কোন ব্যক্তি মানুষকে দেখানোর উদ্দেশ্যে নফল সালাত আদায় করে।
- আর যদি আমলের মাঝে এ ধরনের চিন্তার উদ্রেক হয়, তখন তাকে প্রতিহত করবে এবং প্রতিরোধ করবে। যেমন, কোন ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আমল করা শুরু করল, তারপর কাউকে দেখল, একজন লোক তার দিকে তাকাচ্ছে, এ দেখে সে খুশি হল এবং তাদের প্রশংসা ও সুনামের আশা বা আগ্রহ করল, তারপর সে এ আকাঙ্ক্ষা ও আগ্রহকে প্রতিহত ও প্রতিরোধ করতে করতে সালাত শেষ করল, তাহলে তার আমল বিশুদ্ধ হবে এবং এ ধরনের সংগ্রাম করার কারণে সে বিনিময় পাবে।
- আমল করার মাঝখানে পার্থিব কোন উদ্দেশ্য বা রিয়া দেখা দিল কিন্তু তা প্রতিহত বা প্রতিরোধ কোনটাই করেনি। এ ধরনের অবস্থা আমলকে বাতিল করে দেবে।
চতুর্থ প্রকার:
আমল দ্বারা শরিয়ত ঘোষিত ছাওয়াব ও বিনিময় কোন কিছুর প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করে, এমন কিছু ইচ্ছা করা যার তলব করা বৈধ। যেমন, কোন ব্যক্তি আত্ম-রক্ষার জন্য রোজা রাখল অথবা গণিমতের মালামাল হাসিল করার জন্য জিহাদ করল এবং শুধু মাল বাড়ানোর উদ্দেশ্যে মালের যাকাত দিল। এ ধরনের আমল বাতিল। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
পঞ্চম প্রকার:
আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের প্রতি কোন প্রকার ভ্রূক্ষেপ না করে, আমল দ্বারা এমন কিছুর ইচ্ছা করা যার তলব শরয়ীভাবে যায়েয নাই। যেমন, শুধু মানুষকে দেখানোর জন্য সালাত আদায় করা। এ ধরনের আমলকারীর আমল বাতিল এবং সে অপরাধী।
রিয়া হতে দূরে থাকার জন্য মিথ্যার আশ্রয় নেয়া:
কোন কোন মুসলিম রিয়া হতে দূরে থাকার জন্য মিথ্যা কথা বলা বৈধ বলে দাবি করেন। এটি সম্পূর্ণ ভুল ও অন্যায় কাজ। কারণ, মিথ্যা বলা মুসলিমের চরিত্র হতে পারে না।
যেমন, এক লোক আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে মসজিদ বানাল, তারপর যখন তাকে জিজ্ঞাসা করা হল, সে সরাসরি মিথ্যা কথা বলল; অর্থাৎ, “আমি মসজিদটি নির্মাণ করিনি, অমুক বানিয়েছে” এ ধরনের কথা বলে। এ ক্ষেত্রে সরাসরি মিথ্যা না বলে অস্পষ্ট কোন কথা বলা যেতে পারে। যেমন, বলবে- একজন মুসলিম ভাইয়ের টাকা দিয়ে মসজিদটি বানানো হয়েছে।
কিছু বিষয় আছে মানুষ রিয়া মনে করে কিন্তু বাস্তবে তা রিয়া নয়:
- তোমার ইচ্ছার বাইরে তোমার কোন ভাল কাজের উপর প্রশংসা করা। [এটি রিয়া নয়] বরং এটি মুমিনদের জন্য নগদ সু-সংবাদ।
- ইচ্ছার বাইরে, সুনাম অর্জন করা। যেমন, একজন আলেম বা তালেবে ইলম, যে মানুষকে দ্বীন শিক্ষা দেয়, তাদের দ্বীন বিষয়ে তাদের তালীম দেয়, তাদের বিভিন্ন সমস্যার শরয়ী সমাধান বা ফতওয়া দেয়, তারা কিছুটা হলেও প্রসিদ্ধি পায়। তারা যেন রিয়া থেকে দূরে থাকা দাবি করে এ ধরনের জন কল্যাণমুলক কর্ম হতে বিরত না থাকে। বরং তার উপর কর্তব্য হল, তার মধ্যে যাতে রিয়া বা অহংকার না আসে সে জন্য সংগ্রাম করবে এবং এ ধরনের কর্মগুলো চালিয়ে যাবে।
- কোন ব্যক্তিকে আল্লাহর ইবাদত বন্দেগীতে তৎপর দেখে, লোকটির মত আল্লাহর ইবাদতে তৎপর হওয়া রিয়া নয়। যদি ইবাদত দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করা হয়, তবে সে সাওয়াব পাবে।
- কাপড় সুন্দর রাখা, সুন্দর কাপড় পরিধান করা, সুন্দর জুতা পরিধান করা, সু-গন্ধি ব্যবহার করা ইত্যাদি রিয়া নয়।
- গুনাহকে গোপন করা, গুনাহের আলোচনা না করা, রিয়া নয়। বরং আমরা আমাদের নিজেদের অপরাধ বা অন্য কোন ভাইয়ের অপরাধকে গোপন করা বিষয়ে আমরা শরিয়ত কর্তৃক নির্দেশিত। অনেকে ধারণা করে, গুনাহ করে জানিয়ে দেয়া ভাল, তাতে লোকটি মুখলিস বলে প্রমাণিত হয়। এ ধরণের ধারণা সম্পূর্ণ অমূলক এবং ইবলিসের ধোঁকা বৈই আর কিছুই নয়। কারণ, গুনাহ সম্পর্কে জানানো, মুমিনদের মাঝে অন্যায়কে ছড়ানো বা প্রচার করার নামান্তর।
পরিশিষ্ট
হে মুসলিম ভাই, বর্তমান আমরা এবং উম্মতে মুসলিমাহ যে মহান সংকট ও নাজুক পরিস্থিতির মধ্যে বসবাস করি, তার থেকে পরিত্রাণ, মুক্তি ও সংশোধনের আমরা এখালাসের খুবই মুখাপেক্ষী।
বর্তমানে আমরা দেখতে পাই অনেক বড় বড় দাওয়াতি সংস্থা, সেবামুলক সংস্থা ঘড়ে উঠেছিল, কিন্তু ইখলাস না থাকার কারণে খুব কম সময়ের মধ্যে সেগুলো মুখ থুবড়ে পড়েছে। এ সব সংস্থাসমূহের কোন কোন দায়িত্বশীলের মধ্যে কোন ইখলাস ছিল না তাদের ইচ্ছা ছিল, লোক দেখানো, সুনাম অর্জন ও পার্থিব কোন স্বার্থ হাসিল। ফলে তারা এমন সব কর্মে জড়িত হয়, যার ফলে তাদের সব অর্জন নষ্ট হয়ে যায় এবং সংস্থাগুলো ধ্বংস হয়ে যায়।
প্রতিটি ব্যক্তির জন্য তার আমলে ইখলাস থাকা জরুরি। তবে আফসোস সে ব্যক্তির জন্য যে নিয়তের হাকিকত কি, তা জানে না, সে কিভাবে নিয়তকে ঠিক করবে।
হে আল্লাহ তুমি আমাদের ইখলাস দান কর এবং ইখলাসকে আমাদের অন্তরে অটুট রাখ।
وصلى الله على نبينا محمد، وعلى آله وصحبه وسلم.
অনুশীলনী
আলোচ্য বিষয়টি সম্পর্কে নিম্নে দুই ধরনের প্রশ্ন উল্লেখ করা হল। প্রথম প্রকার প্রশ্ন যেগুলোর উত্তর সাথে সাথে দেয়া যায়। এরগুলো হল, প্রথম প্রকার প্রশ্ন। দ্বিতীয় প্রকার প্রশ্ন যেগুলো চিন্তা ফিকির ও গবেষণা করার দরকার হয়। আর এগুলো হল, দ্বিতীয় প্রকার প্রশ্ন।
প্রথম প্রকার প্রশ্ন:
১- নিয়ত ও ইখলাসের মধ্যে পার্থক্য কি?
২- আমলের মধ্যে ইখলাস ও আমলে সত্যবাদিতা দুটির মধ্যে পার্থক্য কি?
৩- إنما الأعمال بالنيات হাদিসটি কেন সমস্ত হাদিসের তুলনায় অধিক গুরুত্বপূর্ণ?
৪- অনেক লোক এমন আছে যাদের মসজিদে অনুপস্থিত কেন? এক কথা জিজ্ঞাসা করলে সে বলে, ‘আমি সালাতের জামাতে যেতে পছন্দ করি’। এ লোক সম্পর্কে তোমার মতামত কি? সে সত্যিকার অর্থে সালাতের জামাতে হাজির হতে পছন্দ করে?
৫- ইখলাসের উপকারিতা হতে তিনটি উপকারিতা এবং ইখলাস না থাকার ক্ষতিসমূহ হতে তিনটি ক্ষতি উল্লেখ কর।
দ্বিতীয় প্রকার প্রশ্ন:
১- কতক আমল উল্লেখ কর, যাতে বর্তমানে রিয়া ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত হয় এবং এর চিকিৎসা কি ?
২- এমন কিছু স্বাভাবিক কর্মের বর্ণনা কর, যেগুলো নিয়তের কারণে ইবাদতে পরিগণিত হয়।
৩- কতক সালফে সালে-হীনগণ বলেন,
تخليص النية من فسادها أشد على العاملين من طول الاجتهاد
এ কথাটির অর্থ কি?
৪- এক ব্যক্তি তার সমূহকে মানুষ থেকে গোপন রাখতে চায় এবং আমলে এখলাচ প্রমাণ করতে চায়। ফলে সে সালাতের জামাতে উপস্থিত হয় না যাতে মানুষ এ কথা বলতে না পারে যে, লোকটি জামাতে সালাত আদায় করে। এ ধরনের লোকের আমল সম্পর্কে তোমাদের মতামত কি?
৫-ইখলাস বিষয়ে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কিতাবের নাম উল্লেখ কর।
৬-যে সব বিষয়গুলো একজন বান্দাকে ইখলাস বিষয়ে সহযোগিতা করে যেগুলো কি?
৭-সূরা ইখলাসকে কেন এ নামে নাম রাখা হয়েছে?
সূচীপত্র
ভূমিকা
ইখলাসের সংজ্ঞা
ইখলাসের নির্দেশ
ইখলাসের ফলাফল
ইখলাস না থাকার ক্ষতি
ইখলাস বিষয়ে সলফদের অবস্থান
ইখলাসের আলামত
ইখলাস বিষয়ে কতক গুরুত্বপূর্ণ মাসআলা
পরিশিষ্ট
অনুশীলনী
[30] তিরমিযি: ২৬৩৯, ইবনে মাযা: ৪৩০০, হাকেম হাদিসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, হাদিসটি মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী।
[63] নাসায়ী: ১৯৫৩, হাকেম হাদিসটিকে সহীহ বলেন। আর ইমাম যাহবী রহ. হাদিসটিকে ইমাম মুসলিমের শর্তানুযায়ী এ কথা বলেন।
_________________________________________________________________________________
সংকলন: মুহাম্মদ সালেহ আল মুনাজ্জেদ
অনুবাদক: জাকের উল্লাহ আবুল খায়ের
সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
সূত্র: ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন