Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

See Our Articles In Different Styles... Grid View List View

রবিবার, ২ ডিসেম্বর, ২০১৮

আল্লাহ কি নিরাকার ?

Views:

A+ A-
আল্লাহ কি নিরাকার ?


আল্লাহ কি নিরাকার ?

“যারা মনোনিবেশ সহকারে কথা শুনে, অতঃপর যা উত্তম, তার অনুসরণ করে। তাদেরকেই আল্লাহ সৎপথ প্রদর্শন করেন এবং তারাই বুদ্ধিমান”। (জুমার ১৮)

“আল্লাহ যার বক্ষ ইসলামের জন্যে উম্মুক্ত করে দিয়েছেন, অতঃপর সে তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে আগত আলোর মাঝে রয়েছে। (সে কি তার সমান, যে এরূপ নয়) যাদের অন্তর আল্লাহ স্মরণের ব্যাপারে কঠোর, তাদের জন্যে দূর্ভোগ। তারা সুস্পষ্ঠ গোমরাহীতে রয়েছে। আল্লাহ উত্তম বাণী তথা কিতাব নাযিল করেছেন, যা সামঞ্জস্যপূর্ণ, পূনঃ পূনঃ পঠিত। এতে তাদের লোম কাঁটা দিয়ে উঠে চামড়ার উপর, যারা তাদের পালনকর্তাকে ভয় করে, এরপর তাদের চামড়া ও অন্তর আল্লাহর স্মরণে বিনম্র হয়। এটাই আল্লাহর পথ নির্দেশ, এর মাধ্যমে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথ প্রদর্শন করেন। আর আল্লাহ যাকে গোমরাহ করেন, তার কোন পথপ্রদর্শক নেই”। (জুমার ২২-২৩)

• “যে ব্যক্তিকে তার পালনকর্তার আয়াতসমূহ দ্বারা উপদেশ দান করা হয়, অতঃপর সে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তার চেয়ে যালেম আর কে? আমি অপরাধীদেরকে শাস্তি দেব”। (সাজদা ৩২)

সৃষ্টির সেরা মানবজাতির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার শর্ত হল ঈমান গ্রহন করা । আর ঈমান গ্রহনের পূর্বশর্ত হল আল্লাহ্‌ রব্বুল আলামীনের সঠিক পরিচয় জানা । তাই সৃষ্টির সেরা হিসেবে আমাদের সর্বপ্রথম স্রষ্টা সম্পর্কে জানতে হবে । এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্‌ রব্বুল আলামীন পবিত্র কোরআনে বলছেনঃ 
"সুতরাং জান সেই আল্লাহ্‌কে যিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই ।" [সূরা-মুহাম্মদ,আয়াত-১৯]

অথচ দুঃখজনক হলেও সত্য যে অধিকাংশ মানুষ আল্লাহ্‌ সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখে না।
আল্লাহ্‌র সঠিক পরিচয় জানবেন কেন?

• (ক) আল্লাহ্‌ সম্পর্কে ভ্রান্ত আক্বীদা বর্জনের জন্যে
• (খ) আল্লাহর প্রতি সঠিক আক্বীদা রাখার জন্যে।
• (গ) আল্লাহ্‌র সাথে কাউকে শরীক না করার জন্য।
• (ঘ) ভয়াবহ পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য।

আল্লাহ্‌ রব্বুল আলামীনের প্রতি ভ্রান্ত আক্বীদাহ বাদ না দিলে কঠিন শাস্তি পেতে হবে । আল্লাহ্‌ বলেনঃ
"এবং মুনাফিক পুরুষ মুনাফিক নারী ও মুশরিক পুরুষ মুশরিক নারী যারা আল্লাহ্‌ সম্বধে মন্দ ধারণা রাখে তাদেরকে আল্লাহ্‌ শাস্তি দিবেন।" [সুরা-ফাতহ, আয়াত-৬]

খুবই আশ্চর্য বিষয় অধিকাংশ মুসলিম এর আক্বীদাহ সঠিক না । তারা সঠিকভাবে আল্লাহ্‌কে চেনেন না ।
আল্লাহ সুবাহানাহুয়াতাআলা কোরআনে তাঁর সিফাতে যাত এবং গুনাবলী বর্ণনা করেছেন তাঁর নিজস্ব সত্তার বর্ণনায় হাত,পা, মুখ, দৃষ্টিশক্তি , শ্রবণ শক্তি, তাঁর সন্তুষ্টি ও ক্রোধ-ইত্যাদি উল্লেখ করছেন । রসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ্‌র স্বত্তা গুনাবলীর বর্ণনা করেছেন । মুসলিমগণ যে আল্লাহ্‌র ইবাদত করে তাঁর কোন মূর্তি নেই । তাই যেসব মুসলিম সঠিক আক্বীদার খবর রাখে না তারা হিন্দুদের সাকার বা মূর্তিমান দেবতার বিপরীতে নিরাকার আল্লাহ্‌র ধারনা গ্রহন করেছে।

এজন্যই পাক-ভারত উপমহাদেশে প্রায়ই শুনা যায়,
আল্লাহ্‌ নিরাকার এবং সর্বত্র বিরাজমান-এ বিশ্বাস হিন্দু ধর্মের মূল বিশ্বাসঃ ব্রহ্ম একক, অদ্বিতীয় , নির্গুণ ।
তিনি নিরাকার ও সর্বত্র বা সর্বভূতে বিরাজমান ! [স্রীমদ্ভগবত গীতা যথাযথ; কৃষ্ণ কৃপাশ্রীমূর্তি শীল অভয়চরনাবিন্দু ভক্তি বেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ কতৃক সম্পাদিত,অনুবাদঃ শ্রীমদ ভক্তিচারু । ভক্তিবেদান্ত বুক ট্রাস্ট , মায়াপুর ।]

• অথচ কোরআন ও সহীহ হাদীস থেকে আল্লাহ্‌ সুবাহানাহুয়াতালার আকার রয়েছে তা প্রমানিত।

কোরআন মাজিদের বিভিন্ন আয়াত ও রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর হাদিসে আল্লাহ্‌ সুবাহানাহুয়াতালার চেহারা,হাত,পা,চক্ষু,যাত বা সত্তা, সুরাত বা আকারের উল্লেখ হয়েছে যার অর্থ স্পষ্ট । এর মাধ্যমে আল্লাহ্‌র নির্দিষ্ট আকার আকৃতি আছে বলে পাওয়া যায়। যারা বলে আল্লাহ্‌ নিরাকার তারা মূলত কোরআনের এসব আয়াতকে অস্বীকার করার মত স্পর্ধা প্রদর্শন করে থাকে। কারন যিনি নিরাকার তাঁর এসব কিছু থাকার কথা নয়। আল্লাহতাআলা বলেনঃ
"তারা আল্লাহ্‌র যথার্থ মর্যাদা নিরুপন করতে পারেনি। কিয়ামতের দিন সমগ্র পৃথিবী তাঁর হাতের মুঠোতে থাকবে।"[সূরা-যুমার,আয়াত-৬৭]

আল্লাহ্‌ রব্বুল আলামিন বলেনঃ
(কিয়ামতের দিন) ভূপৃষ্ঠের সবকিছুই ধ্বংস হয়ে যাবে । (হে রাসুল) আপনার মহিমাময় ও মহানুভব রবের চেহারা অর্থাৎ সত্ত্বাই একমাত্র বাকি থাকবে। [আর-রাহমান-২৬-২৭]

আল্লাহ তাআলা বলেনঃ 
"হে ইবলিস , তোমাকে কোন জিনিসটি তাকে সেজদা করা থেকে বিরত রাখল যাকে আমি স্বয়ং নিজের হাত দিয়ে বানিয়েছি,তুমি কি এমনি ওদ্ধত্ত প্রকাশ করলে,না তুমি উচ্চমর্যাদা সম্পূর্ণ কেউ" [সূরা-সদ,আয়াত-৭৫]

আল্লাহ্‌ সুবাহানাহুয়াতালা বলেনঃ
"বরং তাঁর দু হাতই প্রসারিত,যেভাবে ইচ্ছা তিনি দান করেন।" [সূরা-সদ-৬৪]

আল্লাহ্‌ সুবাহানাহুয়াতালা আরও বলেনঃ 
"বল -অনুগ্রহ আল্লাহ্‌রই হাতে" [সূরা-আলে ইমরান-৭৩]

অথচ আল্লাহ্‌ সুবাহানাহুয়াতাআলা কোরআনে
"সেদিন কোন কোন মুখ খুব উজ্জল হবে । তারাই হবে তাদের প্রতিপালকের দর্শনকারী" [সুরা-আল-কিয়ামাহ, আয়াত-২৩]

আল্লাহ্‌ সুবাহানাহুয়াতাআলা বলেনঃ
"দৃষ্টি শক্তি তাকে প্রত্যক্ষ করতে পারে না বরং তিনিই দৃষ্টি শক্তিকে প্রত্যক্ষ করেন এবং তিনিই দৃষ্টি শক্তিকে প্রত্যক্ষ করেন এবং তিনি সুক্ষদরশি,সম্যকপরিজ্ঞাত ।" [সূরা-আনআম,আয়াত-১০৩]

আল্লাহ্‌ সুবাহানাহুয়াতাআলা বলেনঃ
"আল্লাহ্‌ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই, তাঁর মুখমণ্ডল ব্যতীত সব কিছুই ধ্বংসশীল ।" [সূরা-আল কাসাস, আয়াত-৮৮]

আল্লাহ্‌ সুবাহানাহুয়াতাআলা নবী মূসা(আঃ)কে লক্ষ্য করে বলছেনঃ
"আমি আমার নিকট থেকে তোমার উপর ভালবাসা ঢেলে দিয়েছিলাম যাতে তুমি আমার চোখের সামনে প্রতিপালিত হও।" [সূরা-ত্বহা, আয়াত-৩৯]

এমনিভাবে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে স্বান্তনা দিতে গিয়ে বলেনঃ
"আপনি আপনার রবের নির্দেশের অপেক্ষায় ধৈর্যধারন করুন আপনি আমার চোখের সামনেই রয়েছেন।" [সূরা-আত-তূর, আয়াত-৪৮]

আল্লাহ্‌ বলেনঃ
"নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ শ্রবণ করেন ও দেখেন ।" [সূরা-মুজাদালাহ, আয়াত-১]
আল্লাহ্‌ সুবাহানাহুয়াতালা বলেনঃ
আল্লাহ্‌র সাদৃশ্য কোন বস্তুই নেই এবং তিনি শুনেন ও দেখেন ।" [সূরা-আশ-শুরা, আয়াত-১১]

"কিয়ামতের দিনে আল্লাহর হাঁটুর নিম্নাংশ উন্মোচিত করা হবে এবং সাজদা করার জন্য সকলকে আহবান করা হবে, কিন্তু তারা তা করতে সমর্থ হবে না ।" [সুরা-কালাম,আয়াত-৪২]

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্‌র রসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর হাদীসে বর্ণিত হয়েছেঃ

উমর(রাঃ)হতে বর্ণিত, রসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বলেছেনঃ 
"কিয়ামতের দিন আল্লাহপাক সমস্ত আকাশমণ্ডলীকে ভাঁজ করবেন অতঃপর সেগুলোকে ডান হাতে নিয়ে বলবেন,আমি হচ্ছি শাহানশাহ(মহারাজা)অত্যাচারী আর যালিমরা কোথায় ?অহংকারীরা কোথায় ? [মুসলিম]

রসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বলেন,
"পাহাড়-পর্বত এবং বৃক্ষরাজি এক আঙ্গুলে থাকবে,তারপর এগুলোকে ঝাঁকুনি দিয়ে তিনি বললেন,আমিই রাজাধিরাজ আমিই আল্লাহ্‌।" [মুসলিম]

অপর এক বর্ণনায় রসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বলেন-
"আল্লাহ্‌ সমস্ত আকাশমণ্ডলীকে এক আঙ্গুলে রাখবেন,পানি এবং ভু-তলে যা কিছু তা এক আঙ্গুলে রাখবেন।"[বুখারী ও মুসলিম]

আবু সাইয়ীদ আল-খুদরী(রাঃ)বলেন,যে আমি রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বলতে শুনেছিঃ
আমাদের প্রতিপালক (আল্লাহ্‌) কিয়ামতের দিনে তাঁর হাঁটুর নিম্নাংশ প্রকাশ করে দেবেন, প্রত্যেক মুমিন, মুমিনা তাতে সাজদা করবেন এবং যে ব্যক্তি দুনিয়াতে লোক-দেখান ও সম্মানের জন্য তা করত সে সাজদা করতে গেলে তাঁর পিঠ সমান হয়ে ফিরে আসবে(বা সিজদা করতে সমর্থ হবেনা)। [বুখারী,মুসলিম,তিরমিযী,আহমদ]

এ সকল কোরআনের আয়াত ও হাদীস আল্লাহ্‌ রব্বুল আলামীন যে নিরাকার নন
তার অকাট্য প্রমান করে বর্ণনা করে । আল্লাহর সিফাতকে তাঁর কোন মাখলুকের সাথে সাদৃশ্য না করে তাঁর উপর বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে । সর্বপরি নিরাকার কথাটি কোরআন ও সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমানিত নয় । বরং হিন্দু সংস্কৃতি থেকে আমদানীকৃত বটে । কোন কল্পনার আশ্রয় না নিয়ে কিংবা প্রকৃত স্বরূপ জানতে না চেয়ে এর উপর বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে ।

• এ প্রসঙ্গে ইবনে কাসীর(রহঃ) বলেছেনঃ
"আল্লাহ্‌ তা'আলা আরশের উপর সমাসীন,
কোন অবস্থা ও সাদৃশ্য স্থাপন ছাড়াই তার উপর বিশ্বাস রাখতে হবে । কোন জল্পনা কল্পনা করা চলবে না,
যার দ্বারা সাদৃশ্যের চিন্তা মস্তিস্কে এসে যায় ; কারন এটা আল্লাহ্‌র গুনাবলী হতে বহুদুরে। মোটকথা, যা কিছু আল্লাহতাআলা বলেছেন ওটাকে কোন খেয়াল ও সন্দেহ ছাড়াই মেনে নিতে হবে কোন চুল চেরা করা চলবে না । কেননা মহান আল্লাহ্‌ রব্বুল আলামীন কোন কিছুর সাথে সাদৃশ্য যুক্ত নন । [তাফসীর ইবনে কাসীর]

এ প্রসঙ্গে ইমাম আবু হানিফা (রাহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ
“ পবিত্র কোরআনে আল্লাহ্‌র যে সমস্ত সিফাত (গুন)বর্ণিত হয়েছে যেমন-আল্লাহ্‌র হাত,পা,চেহারা,নফস ইত্যাদি আমরা তা দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করি। স্বীকার করি এগুলো হচ্ছে তাঁর সিফাত বা গুণাবলী।
আমরা যেমন কখনও আল্লাহ্‌র সিফাত সম্পর্কে এ প্রশ্ন করিনা বা করবোনা যে,এ সিফাতগুলো (হাত,পা,চেহারা,চোখ ইত্যাদি) কেমন,কিরুপ বা কিভাবে,কেমন অবস্থায় আছে,তেমনি আল্লাহ্‌র সিফাতের কোন নিজস্ব ব্যাখ্যা বা বর্ণনা দিতে যাইনা। কেননা তিনি তা বর্ণনা করেন নাই।
যেমন-আমরা একথা কখনো বলিনা যে,
আল্লাহ্‌র হাত হচ্ছে তাঁর কুদরতি হাত,শক্তিপ্রদ পা বা তাঁর নিয়ামত।
এ ধরনের কোন ব্যাখ্যা দেয়ার অর্থ হল আল্লাহ্‌র প্রকৃত সিফাতকে অকার্যকর করা বা বাতিল করে দেয়া বা অর্থহীন করা । আল্লাহ্‌র হাতকে আমরা হাতই জানবো এর কোন বিশেষণ ব্যবহার করবো না। কুদরতি হাত রূপে বর্ণনা করবোনা । কোন রকম প্রশ্ন করা ছাড়াই যেরূপ কোরআনে বর্ণিত হয়েছে হুবুহু সে রকমই দ্বিধাহীনে বিশ্বাস করি”। [আল ফিকহুল আকবার]

• আবু মুতি আল হাকাম ইবনে আব্দুল্লাহ আল বালাখি বলেনঃ
আমি ইমাম আবু হানিফা (রাহিমাহুল্লাহ)কে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে কেউ যদি বলে যে, আমি জানিনা আল্লাহ্‌ কোথায় -আসমানে না পৃথিবীতে, তাহলে তার সম্পর্কে আপনার অভিমত কি? প্রত্যুত্তরে তিনি বলেছেন-সে কাফের,কেননা আল্লাহ্‌ বলেছেন,
"পরম করুণাময় (রাহমান)আরশের উপর সমাসীন। (সুরা-ত্ব হা-৫)

• আবু মুতি বলেছেন, অতঃপর আমি তাঁকে(ইমাম আবু হানিফাকে)জিজ্ঞেস করেছিলাম যে কেউ যদি বলে যে,আল্লাহ্‌ উপরে অধিষ্ঠিত,কিন্তু আমি জানিনা আরশ কোথায় অবস্থিত আকাশে না পৃথিবীতে তাহলে তার সম্পর্কে আপনার অভিমত কি? প্রত্যুত্তরে তিনি বলেছেন- যদি সে ব্যক্তি "আল্লাহ্‌ আকাশের উপরে "এ কথা অস্বীকার করে তা হলে সে কাফের। (শারহুল আকিদাহ আত তাহাওইয়াহ লি ইবনে আবিল ইজ আল হানাফি পৃষ্ঠা নং-২২৮)

• ইমাম মালিক(রাহিমাহুল্লাহ)বলেনঃ
“ "আল্লাহ্‌র হাত"বলতে আল্লাহ্‌র হাতই বুঝতে হবে,এর কোন রুপক(মাজাযী)অর্থ করা যাবেনা,মাজাযী(রুপক)বর্ণনা দেয়া যাবে না। আল্লাহ কেমন,কিসের মত এরকম প্রশ্ন করা বিদআত এমনকি তাঁর হাত বিশেষণে ভূষিত করে,কুদরতি হাত বলাও যাবেনা কেননা কোরআনে ও সহীহ হাদীসে এভাবে বর্ণনা নাই ”। (আল আসমা ওয়াস সিফাত পৃষ্ঠা নং-৫২৬)

আল্লাহ্‌র আরশে অধিষ্ঠিত হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেনঃ
"আল্লাহ্‌ আরশে অধিষ্ঠিত একথা জানি, কিভাবে অধিষ্ঠিত তা জানিনা।
এর উপর দৃঢ় ঈমান পোষণ করা ওয়াজিব
এবং এ সম্পর্কে প্রশ্ন করা বিদআত।"

ইমাম মালিক(রাহিমাহুল্লাহ)আরও বলেনঃ
“আল্লাহ্‌ তাঁর আরশে অধিষ্ঠিত হওয়ার ক্ষেত্রে যতটুকু বর্ণনা দিয়েছেন তার বাইরে কোন প্রশ্ন করা নিষিদ্ধ ।আল্লাহ্‌ আরশে কিভাবে,কেমন করে সমাসীন বা উপবিষ্ট আছেন। এ সম্পর্কে আল্লাহ্‌তাআলা আমাদেরকে অবহিত করেননি। তাই এ বিষয়টির কাইফিয়াত আমাদের কাছে সম্পূর্ণ অজ্ঞাত।"
-আল্লামা ইবনে হাজর(রাহিমাহুল্লাহ)ফাতহ গ্রন্থে(১৩তম খণ্ড পৃষ্ঠা নং ৪০৬) বলেছেন,উপরক্ত বর্ণনার সনদ বিশুদ্ধ-

ইমাম শাফীঈ(রাহিমাহুল্লাহ)জোরালো অভিমত ব্যক্ত করেন এ প্রসঙ্গেঃ
"আল্লাহ্‌তালার আরশে অধিষ্ঠিত হওয়া এবং আল্লাহ্‌র হাত,পা ইত্যাদি যা তাঁর সিফাত বলে বিবেচ্য আর তা কোরআন ও সহীহ সূত্রে সুন্নাহ দ্বারা প্রমানিত হওয়ার পরও যদি কোন ব্যক্তি বিরোধিতা করে,অস্বীকার করে ,নিষ্ক্রিয় করে তবে সে অবশ্যই কাফের বলে গন্য হবে।

তিনি আরও বলেনঃ
"আমরা আল্লাহ্‌র গুণাবলী স্বীকার করি ও বিশ্বাস করি তবে সৃষ্টির কোন কিছুর সাথে আল্লাহ্‌র গুনাবলীর কোন আকার সাব্যস্ত করিনা,সাদৃশ্য(তুলনা)করিনা। কেননা আল্লাহ্‌ নিজেই তাঁর সাদৃশ্যের বিষয়টি বাতিল করে দিয়েছেন এ বলে-
"(সৃষ্টি জগতের) কোন কিছুই তাঁর সদৃশ নয়।" (সূরা-শুরা,আয়াত-১১)
-সিয়ারে আলামিন নুবালা-১০ম খণ্ড,পৃষ্ঠা নং,-৮০;আর দেখুন আইনুল মাবুদ-১৩তম খণ্ড পৃষ্ঠা নং-৪১;তাবাকতে হানাবিল ১ম খণ্ড পৃষ্ঠা নং-২৮৩-

• ইমাম আহমদ বিন হাম্বল(রহঃ)বলেছেনঃ
“আল্লাহ্‌র আসমা ও সিফাতগুলো সম্পর্কে কোরআন ও সহীহ হাদীসগুলোতে যেভাবে বর্ণিত হয়েছে এগুলোকে ঠিক সেভাবে সে পর্যায়েই রাখা উচিৎ । আমরা এগুলো স্বীকার করি ও বিশ্বাস করি এবং আল্লাহ্‌র সিফাতের কোন সাদৃশ্য করি না । আর এটাই হচ্ছে বিচক্ষন ও বিজ্ঞ ওলামায়ে কেরামের অনুসৃত নীতি ”। [-ইবনুল জাওযী প্রনীত মুনাক্বীবে ইমাম আহমদ , পৃষ্ঠা নং-১৫৫-১৫৬]

ইমাম আহমদ (রহঃ)আরও বলেনঃ
“কোরআন ও হাদীসে আল্লাহ্‌র সিফাতগুলোর বর্ণনা যেমনভাবে এসেছে তার বাহ্যিক ও আসল অর্থ স্বীকার করতে হবে,মেনে নিতে হবে, এর প্রকৃত তথা আসল অর্থকে বাদ দেয়া যাবে না। নিস্ক্রিয় করা যাবে না, খারিজ করা যাবে না ।

আল্লাহ্‌র সিফাতগুলো যথা আল্লাহ্‌র আরশের উপর অধিষ্ঠিত হওয়া আল্লাহ্‌র হাত, পা দেখা শোনা ইত্যাদি সম্পর্কে যেরুপ বর্ণিত আছে তার বাহ্যিক ও আসল অর্থ ছাড়া রূপক , অতিরঞ্জিত অথবা অন্তর্নিহিত কোন পৃথক অর্থ বা ব্যাখ্যা বা বর্ণনা রসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কর্তৃক দেওয়া হয়েছে এমন প্রমান নেই।
আমরা যদি এ সত্য উপলব্ধি করি যে, সালফে সালেহীন আল্লাহ্‌র গুনাবলী সঠিক অর্থ বুঝেছেন । তাহলে আমাদের জন্য অত্যাবশ্যকীয় হলো তারা এগুলোর যে অর্থ বুঝেছেন,আমাদেরকে ঠিক সেই অর্থই বুঝতে হবে । [-মাজমুআতুররাসায়িলিল মুনীরিয়্যাহ পৃষ্ঠা নং(১৭৬-১৮৩]

অতএব, সার কথা হল,
আল্লাহ্‌র অবয়ব বিশিষ্ট অস্তিত্বকে, সত্ত্বাকে গুনাবলীকে অস্বীকার করে (অর্থাৎ নিরাকার করে) সন্যাসী,সুফী, পীর সাহেবেরা অলীক সাধনা বলে তাদের ক্বলবে বসিয়ে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমান করার জন্যই আল্লাহ্‌কে নিরাকার বানিয়ে ধর্মীয় সমাজে প্রচার করেছেন। এটি ‘তাওহীদ আল আসমা ওয়াস সিফাত’ এর সুস্পষ্ট খেলাফ।
অবয়ব বিশিষ্ট তথা অস্তিত্বময় আল্লাহ্‌কে নিরাকার না করলে তো তাঁকে (আল্লাহ্‌কে) তাদের ক্বলবে বসানো যাবে না । নিরাকার আল্লাহ্‌কে অলীক সাধনায়,কল্পনায় ক্বলবে বসিয়ে এই মুসলিম রূপধারী পুরোহিতরা নিজেদেরকে দেবতার মর্যাদায় ভূষিত হয়ে সমাজে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে চলেছেন । আসলে এ সবই ভণ্ডামির বেসাতি, স্বার্থোদ্ধারের ধান্দা ।

আল্লাহ আমাদের তাওহীদ বুঝার ও মানার তাওফিক দান করুন, সকল প্রকার শিরক থেকে রক্ষা করুন, আমিন।

সৌজন্যেঃ জুমার খুতবা



Read More---

আল্লাহ তাআলা কোথায় আছেন?

Views:

A+ A-



আল্লাহ তাআলা কোথায় আছেন?

আল্লাহ তাআলা আমাদের রর ও ইলাহ। একমাত্র তিনিই ইবাদত আরাধনার উপযোগী। সে হিসেবে তিনি কোথায় সে বিষয়ে সম্যক ধারণা অর্জন আমাদের জন্য ওয়াজিব, যাতে আমরা তাঁর প্রতি একাগ্রচিত্তে ধাবিত হতে পারি, যথার্থরূপে ইবাদত-বন্দেগি পালনে সক্ষম হই।
আল্লাহ কোথায় আছেন? এ প্রশ্নের সরাসরি উত্তর হল তিনি আরশের উপরে আছেন। আরশের উপরে থাকা আল্লাহ তাআলার একটি অন্যন্য সিফাত, আল কোরআন ও সহিহ হাদীসে এ বিষয়ে স্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে, যেমন রয়েছে আল্লাহ তাআলার শ্রবন করা, দেখা, কথা বলা, অবতীর্ণ হওয়া এবং এ জাতীয় অন্যান্য সিফাতসমূহ। সালাফে সালেহীনদের আকিদা আর মুক্তিপ্রাপ্ত দল বা আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআত এ আকিদাই পোষণ করেন কোনোরূপ পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও সৃষ্টির সাথে তুলনা ব্যতীত। কারণ, আল্লাহ তাআলা বলেন:
لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَهُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ ﴿الشوري11﴾
তাঁর মত কিছু নেই আর তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা।(সূরা শুরা,৪২: ১১ আয়াত)

এ কারণে যখন ইমাম মালেক রহ. কে (আর-রহমান, যিনি  আরশের উপরে উঠেছেন) এ আয়াত সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়েছিল। উত্তরে তিনি বলেছিলেন: استواء তথা আরশের উপরে ওঠার বিষয়টি জানা, কিন্তু তার ধরণ অজানা, আর এ বিষয়ের উপর ঈমান আনা ওয়াজিব। হে মুসলিম ভাই, ইমাম মালেক রহ. এর বক্তব্যের প্রতি খেয়াল করুন। কারণ, তিনি আল্লাহ যে উপরে আছেন, তার উপর ঈমান আনাকে প্রতিটি মুসলিমের জন্য ওয়াজিব বলেছেন। কিন্তু কিভাবে আছেন, তা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না।
Read More---

শনিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৮

আল্লাহর অবস্থান বিবরণে আল কুরআন

Views:

A+ A-
 আল্লাহর অবস্থান বিবরণে আল কুরআন





আল্লাহর অবস্থান বিবরণে আল কুরআন

 সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি মানব ও জিন জাতিকে তাঁর একত্বটা ঘোষণা করার জন্য সৃষ্টি করেছেন। সলাত ও সালাম বর্ষিত হোক আমাদের নাবী ও রাসূল মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের) উপর যিনি তাঁর উম্মতের কাছে আল্লাহর একত্বতার বিস্তারিত জ্ঞান বর্ণনা করে গেছেন। আরও সলাত ও সালাম বর্ষিত হোক তাঁর পরিবার ও সাথীগণের উপর যারা তাঁর কাছ থেকে তাওহীদের সঠিক জ্ঞান অর্জন করেছিলেন।

অতঃপর হে সম্মানিত পাঠক ও পাঠিকাগণ! পরকালে মুক্তি পেতে হলে অবশ্যই সঠিক ইসলামী আক্বীদা জানতে ও তার উপর আমল করতে হবে। অন্যথায় পরকালে মুক্তি পাওয়া যাবে না। এ সঠিক আকীদার অনেক মাসআলা রয়েছে। তন্মধ্যে ‘আল্লাহ কোথায়?’ এটিও একটি আকীদার গুরুত্বপূর্ণ মাসআলা, যাতে ভ্রান্ত দল জাহমিয়াসহ আরও বহু দল পথভ্রষ্ট হয়েছে। আমি আল্লাহর নিন্মের বাণীর উপর আমল করত উক্ত গুরুত্ব পূর্ণ মাস’আলাটি সম্মানিত পাঠক ও পাঠিকাগণের জন্যে এখানে আল কুরআনের আলোকে তুলে ধরলাম, যাতে তারা এর দ্বারা উপকৃত হতে পারে এবং সূফীদের সর্বেশ্বরবাদের ভ্রান্ত বিশ্বাস (আল্লাহ নিরাকার ও সর্বত্র বিরাজমান) থেকে বাঁচতে পারে। সূফীদের সর্বেশ্বরবাদের অর্থ হলো: তাদের নিকট খালিক – সৃষ্টিকারী আর মাখলূক্- সৃষ্টি জীব এর মধ্যে কোন পার্থক্য নাই। সবই মাখলূক–সৃষ্টি জীব, আর সবই ইলাহ-উপাস্য।

আল্লাহ তা’আলা বলেন:
وَإِذْ أَخَذَ اللَّهُ مِيثَاقَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ لَتُبَيِّنُنَّهُ لِلنَّاسِ وَلَا تَكْتُمُونَهُ فَنَبَذُوهُ وَرَاءَ ظُهُورِهِمْ وَاشْتَرَوْا بِهِ ثَمَنًا قَلِيلًا فَبِئْسَ مَا يَشْتَرُونَ
“(স্মরণ কর সেই সময়ের কথা) যখন আল্লাহ তা’আলা আহলু কিতাবদের নিকট থেকে এই মর্মে দৃঢ় অঙ্গীকার নিয়েছিলেন যে, তোমরা অবশ্যই এটি তথা তাওরাত ও ইঞ্জিল মানুষের কাছে বর্ণনা করবে এবং তোমরা তা গোপন করবে না। অতঃপর তারা সে অঙ্গীকারকে তাদের পিছনে ছুড়ে ফেলে দিল এবং তার বিনিময়ে সামান্য অর্থ গ্রহণ করল। কত নিকৃষ্টতম তাদের ক্রয় কৃত বস্তু।” (সুরা আলি ইমরান আয়াত: ১৮৭)
Read More---

আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল :গুরুত্ব ও তাৎপর্য

Views:

A+ A-




আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল : গুরুত্ব ও তাৎপর্য

তাওয়াক্কুল কি?
তাওয়াক্কুল আরবি শব্দ। এর অর্থ হল, ভরসা করা, নির্ভর করা। তাওয়াক্কুল আলাল্লাহ অর্থ হল: আল্লাহ তাআলার উপর ভরসা করা। ইসলামে আল্লাহ তাআলার উপর তাওয়াক্কুল একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি একটি ইবাদত। তাই আল্লাহ তাআলা ব্যতীত অন্য কারো উপর তাওয়াক্কুল করা যায় না। আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো জন্য তাওয়াক্কুল নিবেদন করা যাবে না। মৃত বা জীবিত কোনো ওলীআল্লাহ, নবী-রাসূল, পীর- বুজুর্গের উপর ভরসা করা বা তাওয়াক্কুল রাখা শিরক।

একজন ঈমানদার মানুষ ভাল ও কল্যাণকর বিষয় অর্জনের জন্য সকল ব্যাপারে নিজের সাধ্যমত চেষ্টা করবে, সার্বিক প্রচেষ্টা চালাবে আর ফলাফলের জন্য আল্লাহ তাআলার উপর ভরসা করবে, তাঁর প্রতি আস্থা ও দৃঢ় একিন রাখবে। বিশ্বাস রাখবে যে, আল্লাহ যা লিখে রেখেছেন ফলাফল তা-ই হবে। আর তাতেই রয়েছে কল্যাণ চূড়ান্ত বিচার ও শেষ পরিণামে। বাহ্যিক দৃষ্টিতে যদি আমরা তা অনুধাবন না-ও করতে পারি। এটাই তাওয়াক্কুলের মূল কথা।

তাওয়াক্কুলের নীতি অবলম্বনকারী ব্যক্তি কখনো হতাশ হয় না। আশা ভঙ্গ হলে মুষড়ে পড়ে না। বিপদ-মুসীবত, যুদ্ধ-সংকটে ঘাবড়ে যায় না। যে কোনো দুর্বিপাক,  দুর্যোগ, সঙ্কট, বিপদ-মুসীবতে আল্লাহ তাআলার উপর দৃঢ় আস্থা রাখে। ঘোর অন্ধকারে আশা করে উজ্জ্বল সুবহে সাদিকের। যত জুলুম, অত্যাচার, নির্যাতন-নিপীড়নের ঝড়-তুফান আসুক, কোনো অবস্থাতেই সে আল্লাহ ব্যতীত কাউকে ভয় করে না।

তাই আল্লাহ তাআলার উপর তাওয়াক্কুল হল তাওহীদের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। 
আল্লাহ তাআলা বলেছেন:
“আর মুমিনগণ যখন সম্মিলিত বাহিনীকে দেখল তখন তারা বলল, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূল আমাদের যে ওয়াদা দিয়েছেন এটি তো তাই। আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সত্যই বলেছেন’। এতে তাদের ঈমান ও ইসলামই বৃদ্ধি পেল।” (সূরা আহযাব: ২২)

Read More---

আল্লাহর দর্শন

Views:

A+ A-




আল্লাহ তা‘আলার দিদার প্রতিটি মু’মিনের চির আকাঙ্ক্ষা। মু’মিনের জন্য জান্নাতে সর্বশ্রেষ্ঠ উপহার হলো আল্লাহর দর্শন; কিন্তু দুনিয়াতে কি স্বচক্ষে বা স্বপ্নে আল্লাহকে দেখা সম্ভব? আহলে সুন্নত ওয়াল জামা‘আতের সর্বসম্মত মত হলো, দুনিয়াতে স্বচক্ষে সরাসরি আল্লাহকে দেখা সম্ভব নয়। এমনকি নবী রাসূলগণও দেখেন নি। স্বপ্নে দেখার ব্যাপারে তারা মতানৈক্য করেছেন। অধিকাংশ ‘আলেমের মতে স্বপ্নে আল্লাহকে দেখা সম্ভব; তবে সে যে আকৃতিতে আল্লাহকে দেখেছে তা আল্লাহর হাকীকি বা আসল আকৃতি নয়।


এক ব্যক্তির দাবী যে, সে স্বপ্নে আল্লাহকে দেখেছে। কেউ কেউ বলে থাকেন, ইমাম আহমদ রহ. একশত বার স্বপ্নে আল্লাহকে দেখেছেন। একথাটা কি সঠিক?

আব্দুল আযীয ইবন আব্দুল্লাহ ইবন বা‘য রহ. বলেছেন, “শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. ও অন্যান্য আলেমগণ বলেছেন, মানুষ স্বপ্নে আল্লাহকে দেখতে পারে; তবে সে যে আকৃতিতে আল্লাহকে দেখেছে তা আল্লাহর হাকীকি বা আসল আকৃতি নয়। কেননা আল্লাহ তা‘আলার সদৃশ কিছুই নেই। আল্লাহ বলেছেন,
Read More---

আল্লাহর দয়ার আশা রাখা

Views:

A+ A-


আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ ۞ﻗُﻞۡ ﻳَٰﻌِﺒَﺎﺩِﻱَ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺃَﺱۡﺭَﻓُﻮﺍْ ﻋَﻠَﻰٰٓ ﺃَﻧﻔُﺴِﻬِﻢۡ ﻟَﺎ ﺗَﻖۡﻧَﻄُﻮﺍْ ﻣِﻦ ﺭَّﺡۡﻣَﺔِ ﭐﻟﻠَّﻪِۚ ﺇِﻥَّ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﻳَﻎۡﻓِﺮُ ﭐﻟﺬُّﻧُﻮﺏَ ﺟَﻤِﻴﻌًﺎۚ ﺇِﻧَّﻪُۥ ﻫُﻮَ ﭐﻝۡﻏَﻔُﻮﺭُﻟﺮَّﺣِﻴﻢُ ٥٣ ﴾ ‏[ ﺍﻟﺰﻣﺮ : ٥٣ ‏]

অর্থাৎ “ঘোষণা করে দাও (আমার এ কথা), হে আমার দাসগণ! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি যুলুম করেছ, তারা আল্লাহর করুণা হতে নিরাশ হয়ো না; নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত পাপ মাফ করে দেবেন। নিশ্চয় তিনিই চরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (সূরা যুমার ৫৩ আয়াত)

তিনি আরো বলেন,

﴿ﻭَﻫَﻞۡ ﻧُﺠَٰﺰِﻱٓ ﺇِﻟَّﺎ ﭐﻝۡﻛَﻔُﻮﺭَ﴾ ‏[ ﺳﺒﺎ : ١٧ ‏]

অর্থাৎ “আমি অকৃতজ্ঞ (বা অস্বীকারকারী)কেই শাস্তি দিয়ে থাকি।
(সূরা সাবা ১৭ আয়াত)

আরো অন্য জায়গায় তিনি বলেন,

﴿ ﺇِﻧَّﺎ ﻗَﺪۡ ﺃُﻭﺣِﻲَ ﺇِﻟَﻲۡﻧَﺎٓ ﺃَﻥَّ ﭐﻝۡﻋَﺬَﺍﺏَ ﻋَﻠَﻰٰ ﻣَﻦ ﻛَﺬَّﺏَ ﻭَﺗَﻮَﻟَّﻰٰ ٤٨﴾ ‏[ ﻃﻪ : ٤٨ ‏]


অর্থাৎ “নিশ্চয় আমাদের প্রতি অহী (প্রত্যাদেশ) প্রেরণ করা হয়েছে যে, শাস্তি তার জন্য, যে মিথ্যা মনে করে ও মুখ ফিরিয়ে নেয়।” (সূরা ত্বাহা ৪৮ আয়াত)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,


﴿ ﻭَﺭَﺡۡﻣَﺘِﻲ ﻭَﺳِﻌَﺖۡ ﻛُﻞَّ ﺷَﻲۡﺀٖۚ ﴾ ‏[ ﺍﻻﻋﺮﺍﻑ : ١٥٦ ‏]

অর্থাৎ “আমার দয়া তা তো প্রত্যেক বস্তুতে পরিব্যাপ্ত।” (সূরা আ’রাফ ১৫৬ আয়াত)


Read More---

আল্লাহ্ কি সর্বস্থানে বিরাজমান?

Views:

A+ A-


বাংলাদেশের বহুল প্রচারিত পত্রিকা

“মাসিক মদীনা” র প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রদত্ত একটি উত্তরের প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে। উত্তরটি আল্লাহ্ ও তাঁর গুণাবলী সংক্রান্ত এবং উহা কুরআন-হাদীস ও সালফে সালেহীনের আকীদাহ্ বিরোধী। সে সম্পর্কে সঠিক তথ্য মুসলমান সমাজে তুলে ধরা আমাদের ঈমানী দায়িত্ব। তাই বিষয়টির বিস্তারিত আলোচনায় আমরা প্রবৃত্ত হলাম।


উত্তরটিতে বলা হয়েছে: “আল্লাহ্ পাক নিরাকার। তিনি সর্বত্র সবকিছুতে বিরাজমান। …. পবিত্র কুরআনের বহু আয়াতে এবং হাদীস শরীফেও আল্লাহ্ তা’আলার পরিচয় এভাবেই দেয়া হয়েছে ……।” (মাসিক মদীনা আগস্ট সংখ্যা ৯৯’ইং ৪৪নং প্রশ্নের উত্তর।)

উক্ত কথাটির প্রমাণে উত্তর দাতা মাওলানা সাহেব যদি কুরআন-হাদীস থেকে কিছু দলীল প্রমাণ উপস্থাপিত করতেন তবে পাঠক সমাজ উপকৃত হতেন। প্রকৃত পক্ষে এ কথার কোন দলীল নেই তার কাছে । কুরআন-হাদীসের কোন স্থানেই এ কথা পাওয়া যাবে না যে, আল্লাহ্ পাক নিরাকার, তাঁর কোন আকার আকৃতি নেই, বা তিনি পৃথিবীর সকল স্থানে সকল বস্তুর মধ্যে বিরাজ করছেন। কেননা এ কথার অর্থ দাঁড়ায়, ভাল-মন্দ সকল বস্তু এবং স্থানেই মহান আল্লাহর অস্তিত্ব বিদ্যমান । মানুষ-জিন, গরু€-ছাগল, কুকুর-শুকর, মসজিদ-মন্দির, উপাসনালয়-বেশ্যালয় ইত্যাদি শব্দগুলো ‘সবকিছুর’ই অন্তর্ভুক্ত। মলতঃ উক্ত কথাটি তিনি ইবনে আরাবী, মনসূর হাল্লাজ প্রমূখ বেদ্বীন সুফীদের নিকট থেকে নিয়েছেন। ঐ সকল সূফীদের কথা হল:

Read More---

ইমাম মাহদীর আগমন

Views:

A+ A-


ইমাম মাহদীর আগমন

সহীহ হাদীছের বিবরণ থেকে অবগত হওয়া যায় যে, আখেরী যামানায় ইমাম মাহদীর আত্মপ্রকাশ কিয়ামতের সর্বপ্রথম বড় আলামত। তিনি আগমণ করে এই উম্মাতের নের্তৃত্বের দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন। ইসলাম ধর্মকে সংস্কার করবেন এবং ইসলামী শরীয়তের মাধ্যমে বিচার-ফয়সালা করবেন। পৃথিবী হতে জুলুম-নির্যাতন দূর করে ন্যায়-ইনসাফ দ্বারা তা ভরে দিবেন। উম্মতে মুহাম্মাদী তাঁর আমলে বিরাট কল্যাণের ভিতর থাকবে। 
ইমাম ইবনে কাছীর (রঃ) বলেনঃ তখন ফল-ফলাদীতে প্রচুর বরকত হবে, মানুষের সম্পদ বৃদ্ধি পাবে, ইসলাম বিজয়ী হবে, ইসলামের শত্রুরা পরাজিত হবে এবং সকল প্রকার কল্যাণ বিরাজ করবে।[1]

ইমাম মাহদীর পরিচয়ঃ

তাঁর নাম হবে আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নামের মতই এবং তাঁর পিতার নাম হবে আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর পিতার নামের মতই। তিনি হবেন হাসান বিন আলী (রাঃ) এর বংশ থেকে। 
ইবনে কাছীর (রঃ) বলেনঃ ‘‘তিনি হলেন মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ আল-ফাতেমী আল-হাসানী’’।[2]

তাঁর আগমণের স্থানঃ

তিনি পূর্বের কোন একটি অঞ্চল থেকে প্রকাশিত হবেন। তবে পূর্ব দিক বলতে মদীনা মুনাওয়ারা হতে পূর্বের দিক বুঝানো হয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ ‘‘তোমাদের গুপ্তধনের নিকট তিনজন লোক ঝগড়া করবে। প্রত্যেকেই হবে খলীফার পুত্র। কেউ তা দখল করতে পারবেনা। অতঃপর পূর্বের দিক থেকে কালো পতাকাধারী একদল সৈনিক আসবে। তারা ব্যাপক হত্যাকান্ড চালাবে। হাদীছের বর্ণনাকারী বলেনঃ ‘‘এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমন কিছু বিষয়ের কথা বর্ণনা করলেন যা আমি স্মরণ রাখতে পারিনি। তোমরা যখন তাদেরকে দেখতে পাবে তখন তাদের নেতার হাতে বায়আত করবে। যদিও বরফের উপর হামাগুড়ি দিয়ে উপস্থিত হতে হয়। কেননা তিনি হলেন আল্লাহর খলীফা মাহদী’’।[3]

ইমাম ইবনে কাছীর (রঃ) বলেনঃ ‘‘উল্লেখিত হাদীছে যে ধন-ভান্ডারের কথা বলা হয়েছে তা হল কা’বা ঘরের ধন-ভান্ডার। তিনজন খলীফার পুত্র তা দখল করার জন্য ঝগড়া করবে। কেউ তা দখল করতে পারবেনা। সর্বশেষে আখেরী যামানায় পূর্বের কোন একটি দেশ হতে মাহদী আগমণ করবেন। মূর্খ শিয়ারা সামেরার গর্ত হতে ইমাম মাহদী বের হওয়ার যে দাবী করে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। তারা আরো দাবী করে যে তিনি গর্তের মাঝে লুকায়িত আছেন। শিয়াদের একটি দল প্রতিদিন সে গর্তের কাছে দাঁড়িয়ে আপেক্ষা করে। এ ধরণের আরো অনেক হাস্যকর কাল্পনিক ঘটনা বর্ণিত আছে। এসমস্ত কথার পক্ষে কোন দলীল নেই; বরং কুরআন, হাদীছ এবং বিবেক বহির্ভূত কথা। তিনি আরো বলেনঃ পূর্বাঞ্চলের লোকেরা তাঁকে সাহায্য করবে এবং তাঁর শাসনকে সমর্থন করবে। তাঁরা কালো পতাকাধারী হবেন। মোটকথা আখেরী যামানায় পূর্বদেশ হতে তাঁর বের হওয়া সত্য। কা’বা ঘরের পাশে তাঁর জন্যে বায়আত করা হবে’’।[4] 

• মাহদী আগমণের দলীলসমূহঃ

ইমাম মাহদীর আগমণের ব্যাপারে অনেক সহীহ হাদীছ রয়েছে। কোন কোন হাদীছে প্রকাশ্যভাবে তাঁর নাম উল্লেখ আছে। আবার কোন কোন হাদীছে তাঁর গুণাগুণ উল্লেখিত হয়েছে। তাঁর আগমণ সত্য হওয়ার জন্য এ সমস্ত হাদীছই যথেষ্ট।

১) আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বর্ণনা করেন, ‘‘আখেরী যামানায় আমার উম্মাতের ভিতরে মাহদীর আগমণ ঘটবে। তাঁর শাসনকালে আকাশ থেকে প্রচুর বৃষ্টিপাত হবে, যমিন প্রচুর ফসল উৎপন্ন করবে, তিনি মানুষের মাঝে সমানভাবে প্রচুর সম্পদ বিতরণ করবেন, গৃহপালিত পশুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে এবং উম্মাতে মুহাম্মাদীর সম্মান বৃদ্ধি পাবে। তিনি সাত বছর কিংবা আট বছর জীবিত থাকবেন’’।[5]

২) আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে আরও বর্ণিত আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ ‘‘আমি তোমাদেরকে মাহদীর আগমণ সম্পর্কে সুসংবাদ দিচ্ছি। মানুষেরা যখন মতবিরোধে লিপ্ত হবে তখন তিনি প্রেরিত হবেন। পৃথিবী হতে জুলুম-নির্যাতন দূর করে ন্যায়-ইনসাফ দ্বারা তা ভরে দিবেন। আসমান-যমীনের সকল অধিবাসী তার উপর সন্তুষ্ট হবেন। তিনি মানুষের মাঝে সমানভাবে প্রচুর সম্পদ বিতরণ করবেন’’।[6]

৩) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
الْمَهْدِيُّ مِنِّي أَجْلَى الْجَبْهَةِ أَقْنَى الْأَنْفِ يَمْلَأُ الْأَرْضَ قِسْطًا وَعَدْلًا كَمَا مُلِئَتْ جَوْرًا وَظُلْمًا يَمْلِكُ سَبْعَ سِنِينَ
‘‘মাহদী আসবেন আমার বংশধর হতে। তাঁর কপাল হবে উজ্জল এবং নাক হবে উঁচু। পৃথিবী হতে যুলুম-নির্যাতন দূর করে দিয়ে ন্যায়-ইনসাফ দ্বারা তা ভরে দিবেন। সাত বছর পর্যন্ত তিনি রাজত্ব করবেন’’।[7]

৪) উম্মে সালামা (রাঃ) বলেনঃ ‘‘আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ মাহদীর আগমণ হবে আমার পরিবারের ফাতেমার বংশধর হতে’’।[8]

৫) জাবের (রাঃ) বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ ঈসা (আঃ) যখন অবতরণ করবেন তখন মুসলমানদের আমীর তাঁকে বলবেনঃ আসুন! আমাদের নামাযের ইমামতি করুন। ঈসা (আঃ) বলবেনঃ বরং তোমাদের আমীর তোমাদের মধ্যে হতেই। এই উম্মতের সম্মানের কারণেই তিনি এ মন্তব্য করবেন’’।[9]

   ইমাম ইবনুল কাইয়্যেম আল-মানারুল মুনীফ গ্রন্থে উক্ত হাদীছটি বর্ণনা করেছেন। যেই আমীরের ইমামতিতে মুসলমানগণ নামায পড়বেন, তিন তাঁর নামও উল্লেখ করেছেন। আর তিনি হলেন মাহদী। এই হাদীছ সম্পর্কে ইবনুল কায়্যেম বলেনঃ হাদীছের সনদ খুব ভাল।[10]

৬) আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বর্ণনা করেনঃ ‘‘ঈসা ইবনে মারইয়াম যেই ইমামের পিছনে নামায পড়বেন তিনি হবেন আমাদের মধ্যে হতে’’।[11]

৭) নবী সাললাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ ‘‘ততদিন দুনিয়া ধ্বংস হবেনা যতদিন না আমার পরিবারের একজন লোক আরবদের বাদশা হবেন। তাঁর নাম হবে আমার নামে এবং তাঁর পিতার নাম হবে আমার পিতার নামের অনুরূপ’’।[12] অর্থাৎ তাঁর নাম হবে মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ।

৮) উম্মে সালামা (রাঃ) বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ ‘‘কা’বা ঘরের পাশে একজন লোক আশ্রয় নিবে। তাঁর বিরুদ্ধে একদল সৈনিক প্রেরণ করা হবে। সৈন্যরা যখন ‘বায়দা’ নামক স্থানে পৌঁছবে তখন যমিন তাদেরকে গ্রাস করে ফেলবে। উম্মে সালামা বলেনঃ আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করলাম অপছন্দ সত্ত্বেও যারা তাদের সাথে যাবে তাদের অবস্থা কি হবে? উত্তরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ তাকে সহ যমিন ধসে যাবে। তবে কিয়ামতের দিন সে আপন নিয়তের উপরে পুনরুত্থিত হবে’’।[13]

৯) হাফসা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল সাললাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ ‘‘অচিরেই এই ঘরের অর্থাৎ কা’বা ঘরের পাশে একদল লোক আশ্রয় গ্রহণ করবে। শত্রুর সাথে মোকাবেলা করার মত তাদের কোন উল্লেখযোগ্য সৈনিক কিংবা অস্ত্র-শস্ত্র বা প্রস্ত্ততি থাকবেনা। তাদেরকে হত্যা করার জন্য একদল সৈনিক প্রেরণ করা হবে। সৈন্যরা যখন ‘বায়দা’ নামক স্থানে পৌঁছবে তখন যমিন তাদেরকে গ্রাস করে ফেলবে’’।[14]

১০) আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ ‘‘একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘুমের ঘোরে এলোমেলো কিছু কাজ করলেন। আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ জাগ্রত হলে আমরা তাঁকে বললামঃ ঘুমের মধ্যে আপনি আজ এমন কিছু কাজ করেছেন যা অতীতে কখনও করেন নি। তিনি বললেনঃ আমার উম্মাতের একদল লোক কা’বার পাশে আশ্রয় গ্রহণকারী কুরাইশ বংশের একজন লোকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবে। তারা যখন ‘বায়দা’ নামক স্থানে পৌঁছবে তখন তাদেরকে নিয়ে যমিন ধসে যাবে। আমরা বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! তখন তো রাস্তায় বিভিন্ন ধরণের লোক থাকবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ তাদের ভিতর এমন লোক থাকবে যারা নিজেদেরকে গোমরাহ জেনেও বের হবে, কাউকে বল প্রয়োগ করে আনা হবে এবং তাদের মধ্যে মুসাফিরও থাকবে। তারা সকলেই ধ্বংস হয়ে যাবে। তবে সকলকেই আল্লাহ তা’আলা নিয়তের উপর পুনরুত্থিত করবেন।[15]

   তাদেরকে নিয়তের উপর পুনরুত্থিত করার অর্থ তাদের কেউ জান্নাতে যাবে আবার কেউ জাহান্নামে প্রবেশ করবে। যারা নিজেদের ভ্রান্ত জেনেও উক্ত ইমামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে বের হবে তারা জাহান্নামী হবে। আর যাদেরকে বাধ্য করে আনা হবে তাদের কোন অপরাধ হবেনা। এমনিভাবে পথিক ও পার্শ্ববর্তী স্থানের লোকেরাও উক্ত ভূমিধস থেকে রেহাই পাবেনা। কিন্তু সকল শ্রেণীর লোক নিজ নিজ আমল নিয়ে পুনরুত্থিত হবে।

  উপরের তিনটি হাদীছ থেকে জানা গেল যেই লোকটি কা’বার প্রান্তে আশ্রয় গ্রহণ করবেন তিনি হবেন কুরাইশ বংশের অন্তর্ভূক্ত। তিনি আল্লাহর সাহায্য প্রাপ্ত হবেন এবং তাঁর শত্রুদেরকে ভূমিধসের মাধ্যমে ধ্বংস করবেন।

• বুখারী ও মুসলিম শরীফে ইমাম মাহদী সম্পর্কিত কিছু হাদীছঃ

১) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
كَيْفَ أَنْتُمْ إِذَا نَزَلَ ابْنُ مَرْيَمَ فِيكُمْ وَإِمَامُكُمْ مِنْكُمْ
‘‘সেদিন কেমন হবে তোমাদের অবস্থা যেদিন তোমাদের মধ্যে ঈসা ইবনে মারইয়াম নেমে আসবেন এবং তোমাদের মধ্যে হতেই একজন ইমাম হবেন’’।[16] অর্থাৎ তোমাদের সাথে জামা'তে শরীক হয়ে ঈসা (আঃ) তোমাদের ইমামের পিছনে নামায আদায় করবেন।

২) জাবের (রাঃ) বলেনঃ আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘আমার উম্মাতের একটি দল হকের উপর বিজয়ী থেকে কিয়ামত পর্যন্ত লড়াই করতে থাকবে। অতঃপর ঈসা ইবনে মারইয়াম অবতরণ করবেন। তাকে দেখে মুসলমানদের আমীর বলবেনঃ আসুন! আমাদেরকে নিয়ে নামাযের ইমামতি করুন। ঈসা (আঃ) বলবেনঃ না; বরং তোমাদের আমীর তোমাদের মধ্যে হতেই। এই উম্মাতের সম্মানের কারণেই তিনি এ মন্তব্য করবেন’’।[17]

৩) নবী সাললাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ ‘‘আখেরী যামানায় আমার উম্মাতের মধ্যে একজন খলীফা হবেন যিনি মানুষের মধ্যে মুক্ত হস্তে অগণিতভাবে ধন-সম্পদ বিতরণ করবেন’’।[18]

• মাহদী আগমণের ব্যাপারে কতিপয় বিজ্ঞ আলেমের বক্তব্যঃ

ক) হাফেয আবুল হাসান আল-আবেরী (রঃ) বলেনঃ ‘‘মাহদী সম্পর্কিত হাদীছগুলো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে মুতাওয়াতির হিসেবে বর্ণিত হয়েছে। তিনি আহলে বায়ত তথা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর বংশধরের অন্তর্ভূক্ত হবেন। সাত বছর রাজত্ব করবেন। তাঁর রাজত্বকালে পৃথিবী ন্যায়-ইনসাফে পরিপূর্ণ হয়ে যাবে। তাঁর রাজত্বকালে ঈসা ইবনে মারইয়াম (আঃ) আগমণ করে দাজ্জালকে হত্যা করবেন। ঈসা (আঃ) তাঁর পিছনে নামায পড়বেন’’।[19]

খ) ইমাম শাওকানী (রঃ) বলেনঃ ‘‘যতদূর জানা যায় মাহদীর ব্যাপারে ৫০টি মুতাওয়াতির হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে সহীহ, হাসান ও সামান্য ত্রুটি বিশিষ্ট হাদীছ, যা অন্য সূত্রে বর্ণিত হওয়ার কারণে ত্রুটিমুক্ত হয়ে গেছে। সুতরাং বিনা সন্দেহে হাদীছগুলো মুতাওয়াতির’’।[20]

গ) শায়খ আব্দুল আযীয বিন বায (রঃ) বলেনঃ মাহদীর বিষয়টি অতি সুস্পষ্ট। এ ব্যাপারে হাদীছগুলো মুতাওয়াতির[21] সূত্রে বর্ণিত। তাঁর আগমণ সত্য। তিনি হলেন মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ আল-হাসানী আল-ফাতেমী। আখেরী যামানায় তিনি আগমণ করে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করবেন। অন্যায়-অবিচার প্রতিহত করবেন। তাঁর মাধ্যমে আল্লাহ সত্য ও কল্যাণের ঝান্ডা বলুন্দ করবেন। যে ব্যক্তি আখেরী যামানায় ইমাম মাহদীর আগমণকে অস্বীকার করবে তার কথায় কর্ণপাত করা যাবেনা।[22]

ঘ) শায়খ আব্দুল মুহসিন আল-আববাদ বলেনঃ ‘‘২৬জন সাহাবী থেকে মাহদীর আগমণ সম্পর্কিত হাদীছগুলো বর্ণিত হয়েছে। ৩৬টি হাদীছ গ্রন্থে এ সমস্ত হাদীছ বর্ণিত হয়েছে’’।[23]

   উপরের আলোচনা থেকে আমরা জানতে পারলাম, ইমাম মাহদীর আগমণে বিশ্বাস স্থাপন করা ওয়াজিব। কারণ তাঁর আগমণের ব্যাপারে অনেক সহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। ঈসা ইবনে মারইয়াম (আঃ) যখন আকাশ থেকে অবতরণ করবেন তখন ইমাম মাহদীর নের্তৃত্বে মুসলমানগণ স্বসম্মান ও সুখণ্ডশান্তিতে বসবাস করতে থাকবেন। ইমাম মাহদী মুসলমানদেরকে নিয়ে নামাযের ইমামতি করার জন্য প্রস্ত্ততি নিতে থাকবেন। এমন সময় ঈসা ইবনে মারইয়াম (আঃ) আকাশ থেকে আগমণ করবেন। ইমাম মাহদী ঈসা (আঃ)কে দেখে বলবেনঃ সামনে অগ্রসর হোন এবং আমাদের ইমামতি করুন। হাদীছের ভাষ্য অনুযায়ী আরো জানা যায় যে, ইমাম মাহদীর সময় মুসলমানদের ঈমান ও শক্তি ধ্বংস করার জন্য দাজ্জালের আগমণ ঘটবে। দাজ্জালের মোকাবেলা করার জন্য আল্লাহ তাআলা ঈসা (আঃ) কে পাঠাবেন। ইমাম মাহদীও তাঁর সাথে মিলিত হয়ে দাজ্জালের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে তাকে এবং তার বাহিনীকে খতম করে মুসলমানদেরকে দাজ্জালের ফিতনা হতে মুক্ত করবেন।

ঙ) সিদ্দিক হাসান খান ভূপালী (রঃ) বলেনঃ ‘‘মাহদীর ব্যাপারে অনেক হাদীছ বিভিন্ন গ্রন্থে মুতাওয়াতির সূত্রে বর্ণিত হয়েছে’’।[24]

চ) সুনানে আবু দাউদ শরীফের ভাষ্যকার আল্লামা শামছুল হক আযীমাবাদী (রঃ) বলেনঃ ‘‘সর্ব যুগের সকল মুসলমানদের মাঝে একথা অতি প্রসিদ্ধ যে, আখেরী যামানায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর বংশধর হতে একজন সৎলোকের আগমণ ঘটবে। তিনি এই দ্বীনকে শক্তিশালী করবেন। ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করবেন। মুসলমানগণ তাঁর অনুসরণ করবে। সমস্ত ইসলামী রাজ্যের উপর তাঁর আধিপত্য বিস্তার হবে। তাঁর নাম হবে মাহদী। তাঁর আগমণের পরেই সহীহ হাদীছে বর্ণিত কিয়ামতের অন্যান্য বড় আলামতগুলো প্রকাশিত হবে। তাঁর যামানাতেই ঈসা (আঃ) আগমণ করবেন এবং দাজ্জালকে হত্যা করবেন। এ ব্যাপারে মাহদীও তাঁকে সহযোগিতা করবেন।  

উপরের বিস্তারিত আলোচনা থেকে ইমাম মাহদী সম্পর্কে আমরা যা অবগত হলাম তার সংক্ষিপ্ত কথা হল আখেরী যামানায় এই উম্মতের মধ্যে একজন সৎ লোক আগমণ করবেন। মাকামে ইবরাহীম এবং রুকনে ইয়ামানীর মধ্যবর্তী স্থানে মুসলমানগণ তাঁর হাতে বায়আত করবে। তাঁকে হত্যা করার জন্য সিরিয়া থেকে একদল সৈন্য প্রেরণ করা হবে। সৈন্যদলটি যখন মক্কার পথে ‘বায়দা’ নামক স্থানে পৌঁছবে তখন ভূমিধসে সকল সৈন্য হালাক হয়ে যাবে। আল্লাহ তাআলা ইমাম মাহদীকে এভাবে তাঁর শত্রুদের হাত থেকে হেফাযত করবেন। তিনি মুসলমানদের খলীফা হয়ে ইসলামের মাধ্যমে বিচার-ফয়সালা করবেন। তাঁর যামানায় মুসলমানদের মাঝে চরম সুখণ্ডশান্তি ও নেয়া'মত বিরাজ করবে। অতঃপর তিনি দামেস্কের মসজিদে ফজরের নামাযের সময় ঈসা (আঃ)এর সাথে সাক্ষাৎ করবেন। প্রথমে তিনি ঈসা (আঃ) কে নামাযের ইমামতি করার অনুরোধ জানাবেন। কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখ্যান করলে স্বয়ং ইমাম মাহদী ইমামতি করবেন। ঈসা ইবনে মারইয়াম (আঃ) ইমাম মাহদীর পিছনে মুক্তাদী হয়ে নামায আদায় করবেন। অতঃপর তিনি ঈসা (আঃ) এর সাথে যোগ দিয়ে দাজ্জালের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য বের হবেন এবং দাজ্জাল হত্যার কাজে ঈসা (আঃ) কে সহায়তা করবেন। তারপর তিনি সাত বছর মতান্তরে নয় বছর পৃথিবীতে বসবাস করে মৃত্যু বরণ করবেন। মুসলমানগণ তাঁর জানাযা নামায পড়বে।


_______________________________________________________________________________________

[1] النهاية/ الفتن و الملاحم ( ১/ ৩১) -
[2] - নিহায়া, অধ্যায়ঃ আল-ফিতান ওয়াল মালাহিম।
[3] - ইবনে মাজাহ, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান। ইমাম আলবানী বলেনঃ ‘আল্লাহর খলীফা’ কথাটি ব্যতীত হাদীছের বাকী অংশ সহীহ।
[4] - (النهاية/ الفتن و الملاحم ( ১/২৯-৩০
[5] - মুস্তাদরাকুল হাকিম। ইমাম আলবানী (রঃ) হাদীছটিকে সহীহ বলেছেন। সিলসিলায়ে সাহীহা, হাদীছ নং- ৭১১।
[6] - মুসনাদে আহমাদ। ইমাম হায়ছামী বলেনঃ হাদীছের বর্ণনাকারীগন নির্ভরযোগ্য। মাজমাউ য্ যাওয়ায়েদ (৭/৩১৩-৩১৪)।
[7] - আবু দাউদ, অধ্যায়ঃ কিতাবুল মাহদী, সহীহুল জামে আস্ সাগীর, হাদীছ নং- ৬৬১২।
[8] - আবু দাউদ ও ইবনে মাজাহ। ইমাম আলবানী (রঃ) সহীহ বলেছেন। সহীহুল জামেউ, হাদীছ নং- ৬৬১২।
[9] - আল-মানারুল মুনীফ, (পৃষ্ঠা নং-১৪৭-১৪৮) ইমাম ইবনুল কায়্যিম বলেনঃ হাদীছের সনদ ভাল।
[10] - আল-মানারুল মুনীফ, পৃষ্ঠা নং- ১৪৮।
[11]- আবু নুয়াইম আখবারুল মাহদী নামক গ্রন্থে হাদীছটি বর্ণনা করেছেন। সহীহুল জামে আস্-সাগীর, হাদীছ নং- ৫৭৯৬।
[12] - মুসনাদে আহমাদ, সহীহুল জামেউস্ সাগীর, হাদীছ নং- ৫১৮০।
[13] - মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান।
[14] - মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান।
[15] - মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান।
[16] - বুখারী, অধ্যায়ঃ আহাদীছুল আম্বীয়া, মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান।
[17] - মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান।
[18] - মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান।
[19] - تهذيب الكمال فى أسماء الرجال (৩ /১১৯৪)
[20] - نظم المتناثر من الحديث المتواتر (ص ১৪৫-১৪৬)
[21] - উসূলে হাদীছের পরিভাষায় মুতাওয়াতির ঐ হাদীছকে বলা হয় যার বর্ণনাকারীর সংখ্যা অধিক হওয়ার কারণে মিথ্যার উপর তাদের একমত হওয়ার কল্পনাও করা যায়না।
[22] - আশরাতুস্ সাআ, ডঃ আব্দুল্লাহ সুলায়মান আল-গুফায়লী, পৃষ্ঠা নং- ৮৭
[23] - الرد على من كذب بالأحاديث الصحيحة الواردة فى المهدى
[24] - الإذاعة لما كان و ما يكون بين يدى الساعة ص ১১২
_______________________________________________________________________________________

(বইঃ কিয়ামতের আলামত থেকে সংগৃহীত)
লেখক: শাইখ আব্দুল্লাহ বিন শাহেদ আল-মাদানী। 
লিসান্স: মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, এম,এম, ফাস্ট ক্লাশ।
প্রকাশনায়: জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদী আরব।



পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না কিন্তু।





Read More---

কিয়ামতের বড় আলামত

Views:

A+ A-





কিয়ামতের বড় আলামত

১. ইমাম মাহদীর আগমন

   সহীহ হাদীছের বিবরণ থেকে অবগত হওয়া যায় যে, আখেরী যামানায় ইমাম মাহদীর আত্মপ্রকাশ কিয়ামতের সর্বপ্রথম বড় আলামত। তিনি আগমণ করে এই উম্মাতের নের্তৃত্বের দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন। ইসলাম ধর্মকে সংস্কার করবেন এবং ইসলামী শরীয়তের মাধ্যমে বিচার-ফয়সালা করবেন। পৃথিবী হতে জুলুম-নির্যাতন দূর করে ন্যায়-ইনসাফ দ্বারা তা ভরে দিবেন। উম্মাতে মুহাম্মাদী তাঁর আমলে বিরাট কল্যাণের ভিতর থাকবে। 
ইমাম ইবনে কাছীর (রঃ) বলেনঃ তখন ফল-ফলাদীতে প্রচুর বরকত হবে, মানুষের সম্পদ বৃদ্ধি পাবে, ইসলাম বিজয়ী হবে, ইসলামের শত্রুরা পরাজিত হবে এবং সকল প্রকার কল্যাণ বিরাজ করবে।[1]

ইমাম মাহদীর পরিচয়ঃ
   তাঁর নাম হবে আমাদের নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর নামের মতই এবং তাঁর পিতার নাম হবে আমাদের নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর পিতার নামের মতই। তিনি হবেন হাসান বিন আলী (রাঃ)এর বংশ থেকে। 
ইবনে কাছীর (রঃ) বলেনঃ “তিনি হলেন মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ আল-ফাতেমী আল-হাসানী’’।[2]

তাঁর আগমণের স্থানঃ
   তিনি পূর্বের কোন একটি অঞ্চল থেকে প্রকাশিত হবেন। তবে পূর্ব দিক বলতে মদীনা মুনাওয়ারা হতে পূর্বের দিক বুঝানো হয়েছে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ “তোমাদের গুপ্তধনের নিকট তিনজন লোক ঝগড়া করবে। প্রত্যেকেই হবে খলীফার পুত্র। কেউ তা দখল করতে পারবেনা। অতঃপর পূর্বের দিক থেকে কালো পতাকাধারী একদল সৈনিক আসবে। তারা ব্যাপক হত্যাকান্ড চালাবে। হাদীছের বর্ণনাকারী বলেনঃ “এরপর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমন কিছু বিষয়ের কথা বর্ণনা করলেন যা আমি স্মরণ রাখতে পারিনি। তোমরা যখন তাদেরকে দেখতে পাবে তখন তাদের নেতার হাতে বায়আত করবে। যদিও বরফের উপর হামাগুড়ি দিয়ে উপস্থিত হতে হয়। কেননা তিনি হলেন আল্লাহর খলীফা মাহদী’’।[3]
   ইমাম ইবনে কাছীর (রঃ) বলেনঃ “উল্লেখিত হাদীছে যে ধন-ভান্ডারের কথা বলা হয়েছে তা হল কা’বা ঘরের ধন-ভান্ডার। তিনজন খলীফার পুত্র তা দখল করার জন্য ঝগড়া করবে। কেউ তা দখল করতে পারবেনা। সর্বশেষে আখেরী যামানায় পূর্বের কোন একটি দেশ হতে মাহদী আগমণ করবেন। মূর্খ শিয়ারা সামেরার গর্ত হতে ইমাম মাহদী বের হওয়ার যে দাবী করে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। তারা আরো দাবী করে যে তিনি গর্তের মাঝে লুকায়িত আছেন। শিয়াদের একটি দল প্রতিদিন সে গর্তের কাছে দাঁড়িয়ে আপেক্ষা করে। এ ধরণের আরো অনেক হাস্যকর কাল্পনিক ঘটনা বর্ণিত আছে। এসমস্ত কথার পক্ষে কোন দলীল নেই; বরং কুরআন, হাদীছ এবং বিবেক বহির্ভূত কথা। তিনি আরো বলেনঃ পূর্বাঞ্চলের লোকেরা তাঁকে সাহায্য করবে এবং তাঁর শাসনকে সমর্থন করবে। তাঁরা কালো পতাকাধারী হবেন। মোটকথা আখেরী যামানায় পূর্বদেশ হতে তাঁর বের হওয়া সত্য। কা’বা ঘরের পাশে তাঁর জন্যে বায়আত করা হবে’’।[4]  
Read More---